গ্রামের নাম আনন্দপুর ( প্রথম খন্ড )

    দেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুর এর ফুলবাড়ী উপজেলার একটি গ্রাম হলো আনন্দপুর।‌ গ্রামটা তার সৌন্দর্য দিয়ে যে কাউকে কাছে টানবে। ফসলি মাঠে কৃষকদের ব্যস্ততা, মেঠোপথ ধরে হেঁটে যাওয়া কিছু শিশুদের সোনালী শৈশব, আর এক অবিরাম প্রকৃতি। যেন এক স্বপ্নশালা। গ্রাম টা যেমন সুন্দর, গ্রামের মানুষের মন গুলোও তেমন নির্মল। মাটির মন তাদের। গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বার রা আর ৫ টা গাঁয়ের মতো নিজেদের থলে ভরতে ব্যস্ত নন। ব্যাস্ত গ্রামের মানুষ দের ভালো মন্দ দেখতে। ব্যস্ত তাদের পাশে থাকতে। গ্রামের মানুষ দের দিনকাল এমনি বেশ সুন্দর ও ভালো যাচ্ছিলো। মোরগের ডাকে তাদের সকাল শুরু আর আঁধার রাত নামতেই তাদের দিনের শেষ। এক সুখি, পরিপূর্ণ গ্রামের তালিকায় যেন সবার উপরেই নাম থাকবে আনন্দপুরের। কিন্তু হঠাৎ গ্রামে শুরু হলো এক অভিশপ্ত অধ্যায়। যেই অধ্যায় কিছু মানুষ আর তাদের পরিবারকে নিঃসঙ্গ, নিশ্চিহ্ন করে দিলো সারাজীবনের জন্য। গ্রামের সাহসী কিছু মানুষ রা কী পারবে এই আঁধার অভিশপ্ত অধ্যায়ের ইতি টেনে গ্রামকে আবার আগের রুপে ফিরিয়ে আনতে,,, ? অমানিশা ভরা আঁধার কেটে কী হবে গ্রামে এক নতুন অরুনদয় ,,, ? 

     

    _______________________

     

    মায়া বিছানা রেডি করছে। এখন সময় রাত ১০ টা। হেমন্ত কাল, তাই উত্তরের শীত ভালোই পড়েছে। মায়া ঘুমানোর জন্য বিছানা ঝাড় দিচ্ছে। তার বয়স ২৩। ফর্সা ও উজ্জ্বল চেহারা তার। গড়ন সুন্দর। সে গৃহিণী। মায়া বিছানা রেডি করে বিছানার ঝাড়ুটা যায়গায় রেখে এসে বিছানায় বসে। ঘরে প্রবেশ করে রাতুল। গালে হালকা ছাঁটা দাড়ি আর চোখে চশমা। আনন্দ পুর গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক তিনি। ঘরে এসেই মায়ার পাশে বসে রাতুল। বসেই চোখের চশমাটা খুলে শার্টের কোনে মুছতে মুছতে বলেন।

    – কাল স্কুল নেই। ছুটি নিয়েছি।

    – কী বলো ?  শরীর খারাপ করলো নাকি আবার তোমার ,, ?(বলেই রাতুলের কপালে হাত দিয়ে তাপমাত্রা বুঝতে থাকে মায়া)

    – আরে না, না। একটু ছুটি কাটাতে মন চাইলো তো। তাই আরকি। তো বিছানা কী রেডি বেগম সাহেবা ? (চশমাটা চোখে দিতে দিতে বলে রাতুল)

    – হ্যা জাহাপনা। রেডি। তো এখন কী ঘুমাবেন না আজও গল্পের বই পড়াতে মশগুল হয়ে যাবেন শুনি।

    – আজ বই পড়বো না। আজ তোমার সাথে সারারাত গল্প করবো। (মায়ার গাল গুলো ধরে বলতে থাকে রাতুল)

    – হমম হয়েছে। চলো এখন শুবে চলো। রাত অনেক হয়েছে। রিয়াদ ঐদিকে এতোক্ষণে ঘুমিয়েও পড়েছে হয়তো।

    – হমম চলেন বেগম সাহেবা, আপনাকে প্রেমের রাজ্যের গল্প শুনাই। (বলেই মায়ারা কাছে যেতে থাকে রাতুল)

    – ধুর। যাওতো আমার লজ্জা করে।

    – কী বলো কী। বিয়ের ৫ মাস হয়ে গেলো। আর এখনো তোমার লজ্জা কাটলো না। (কপালে হাত দিয়ে বলে) 

    – না কাঁটেনি। (মায়া লজ্জায় নখ কামড়াতে লাগলো)

    – তাইলে চলো কাটিয়ে দেই। (বলেই তাকে নিয়েই বিছানায় শুয়ে পড়ে রাতুল। মায়া বেশ লজ্জা পায়। লজ্জায় তার মুখ লাল। রাতুল তারপর তাকে গল্প শুনাতে থাকে শুয়ে শুয়ে। মায়াও গল্প শুনতে থাকে মন দিয়ে। গল্প শুনাতে শুনাতে মায়াকে হেঁচকা টান মেরে নিজের আরো কাছে নিয়ে নেয় রাতুল। নিয়েই তার গালে চুমু দেওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে থাকে। আর তখনই ঘরের লাইট অফ হয়ে যায়।

     

    _______________________

     

    একটা বদ্ধ ঘর। ঘরটায় একটা দরজা এবং জানালা। উপরে একটা লাইট নিভু নিভু করে জলছে। ঘরের মধ্যেখানে একটা চেয়ার। একটা টেবিল রয়েছে জানালার সঙ্গে লাগানো। ঘরের উত্তর দিকে রয়েছে একটা ছোট লোহার খাট। ঘরের দরজা এবং জানালা দুইটাই বন্ধ করা। ঘরের মাঝখানের চেয়ারে একজনের হাত দুটো এবং পা দুটো চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাঁধা। মুখে টেপ মারা। হাত, পা নরছেনা সেই ব্যাক্তির। তাতে বুঝা যাচ্ছে যে তার জ্ঞান নেই। উপরের আবছা আবছা আলোয় ব্যাক্তিটির কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায়। চেয়ারে বাঁধা ব্যাক্তিটি আসলে একজন মেয়ে।

     

    তখনই কেউ একজন দরজা খুলে। এক ব্যাক্তির পা দেখা যায়। পায়ে বুট জুতো। সেই ব্যাক্তি এক পা, দুই পা করে চেয়ারের কাছে এগিয়ে আসে। আস্তে আস্তে ঘরের নিভু নিভু করতে থাকা আলোতে ব্যাক্তি টির অবয়ব কিছুটা স্পস্ট হতে থাকে। ব্যাক্তিটির হাতে  একটা বড় বক্স। মাথায় হেলমেট পরা। তাই চেহারা দেখা যাচ্ছে না। সে এসে চেয়ারের সামনে এসে থেমে যায়। সে বক্স থেকে একটা পানির বোতল বের করে। বোতলের ছিপি খুলে বোতলের পানিটা মেয়েটার মুখের দিকে ছুঁড়ে মারতে থাকে।

    আস্তে আস্তে মেয়েটার জ্ঞান ফিরে।

    মেয়েটা জ্ঞান ফিরার পর দেখে যে কেউ একজন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে স্পস্ট করে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না ঘরের আলো কম থাকাতে। সে চিৎকার করতে  চায়, কিন্তু পারে না তার মুখ কসটেপ দিয়ে বন্ধ থাকার কারণে।

    সেই ব্যাক্তিটি তার হাতে থাকা বাক্স টা মাটিতে রাখে। রেখে বাক্সটা খুলে সেখানে থেকে কী কী যেন একটা বের করতে থাকে। এসব দেখেই মেয়েটা তার হাত-পা ছুটানোর অনেক চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাঁধা থাকায় আর পারেনা।

     

    তখনই সে দেখে ব্যাক্তিটা একটা বড় মাংস কাটার ছুরি সেই বক্সটা থেকে বের করছে। বের করে সেটার উপর চোখ বুলাচ্ছে। এদিকে এসব দেখে মেয়েটা ভয়ে চুপসে যায়।

    ব্যাক্তিটা এরপর বড় ছুরি টা উপরে তুলে মেয়েটার হাতের কব্জির উপর একটা জোরে কোপ দেয়। আর সাথে সাথেই কব্জিটা আলাদা হয়ে মেঝেতে ছিটকে পরে। ছিন্ন হয়ে যাওয়া কাঁটা কব্জির আঙ্গুল গুলো হালকা নড়ে উঠে।

      মেয়েটা ব্যাথায় চিৎকার করতে যেয়েও পারছেনা‌। তার মুখটা কসটেপ দিয়ে বন্ধ। মেয়েটার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।  সেই লোকটা মেয়েটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আরেকটা হাতের কব্জি লক্ষ্য করে  জোরেসোরে এক কোপ দেয়। এই হাতের কব্জিটা টা ছিঁড়ে ছিটকে গিয়ে পরে দরজার কাছে। মেয়েটা এতো ব্যাথায় চিৎকার ও করতে পারছেনা। মেয়েটা জন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে শেষমেশ অজ্ঞান হয়ে যায়।

     

    কয়েকঘণ্টা পর,,,,,

     

    মেয়েটা তার চোখ খুলে। সে দেখে যে তাকে এবার সেই লোহার খাট টায় শুইয়ে দেওয়া হয়েছে।  সে তার হাতে এবং পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত করে। তারপর সে যখন হাত পায়ের দিকে তাকায় সে দেখে যে তার হাত গুলোর কনুই দুটি খাটের দুই কোনার সাথে বাঁধা। আর পা দুটো খাটের অপর পাশের দুই কোনের সাথে বাঁধা। সে দেখে দূরে টেবিলের উপরে একটা চুলা, একটা স্ক্রু ড্রাইভার(নাট বল্টু খোলার জন্য যা ব্যবহৃত হয়)। আর একটা কাচি। এবং কিছু সূক্ষ্ম লোহা গরম করার জন্য চুলার আগুনের উপর রাখা হয়েছে। সেগুলো আগুনে উত্তপ্ত হয়ে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। মেয়েটা এসব দেখে কান্নাই করে ফেলে। ঐ ব্যাক্তিটা বিছানার উপরের কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলো। কখন মেয়েটার জ্ঞান ফিরবে তার জন্য অপেক্ষা করছিলো। ব্যাক্তিটা এইবার মেয়েটার জ্ঞান ফিরতে দেখে চুলার দিকে যেতে থাকে। এইবার আর মেয়েটার মুখে কসটেপ মারা নেই। সে ব্যাক্তি টাকে দেখার সাথেই সাথেই কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে 

    – কে আপনি। কেন এমন করছেন আমার সাথে। আমায় যেতে দিন প্লিজ। আমার, আমার মা-বাবা আমায় খুঁজছে। প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন,,!

     

    লোকটা কিছুই বলে না। কিছুক্ষণ চুলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার পর এক আগুনে পুড়ে লাল হয়ে যাওয়া গরম কাঁচি  গ্লাভস পড়া হাতে ধরে নিয়ে আসতে থাকে। এসে মেয়েটার পাশে দাঁড়ায়।  কাপড় কাটতে থাকে মেয়েটার। মেয়েটা থ্রী-পিস পরা ছিলো। লোক টা এসে তার বুকের উপর থেকে জামাটা কাটতে শুরু করে। এদিকে গরম কাঁচি টা দেহের কিছু অংশে লাগতেই মেয়েটা চিৎকার করে উঠে। লোকটা শান্ত মনে পুরো দেহের কাপড় কেটে ফেলে দেয়। অর্থাৎ এখন মেয়েটা উলঙ্গ। তার দেহে এক টুকরোও কাপড় নেই। কাপড় কাটার সময় গরম কাঁচি দেহে ছোঁয়া লাগাতে মেয়ের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পুরে গিয়েছে।

     

    মেয়েটা লোকটাকে অনুরোধ এর সুরে বলে‌।

     

    – প্লিজ আমার সর্বনাশ করবেন না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন । আমি, আমি বাড়ি যেতে চাই।

     

    লোকটা কোন কথাই বলেনা। লোকটা এরপর চুলা থেকে উত্তপ্ত গরম স্ক্রু ড্রাইভার টা নিয়ে আসে এবং চুলায় গরম পানি করতে দেয়।

     

    স্ক্রু ড্রাইভার টা আগুনের তাপে জ্বলে পুরো লাল হয়ে গিয়েছে।

    লোকটা স্ক্রু ড্রাইভার টা নিয়ে মেয়েটার কাছে আসে। মেয়েটা ভয়ে “বাঁচাও বাঁচাও” বলে চিৎকার করতে থাকে। লোকটা মেয়েটার কাছে এসে আগুনে পোড়া গরম স্ক্রু ড্রাইভার টা দিয়ে অনেক জোরে জোরে তার পেট আর বুকের উপর আঘাত করতে থাকে। গরম স্ক্রু ড্রাইভার এর এতো যন্ত্রনাদায়ক আঘাতে মেয়েটা অনেক জোরে জোরে চিৎকার করছে। এতো জোরে জোরে পেটে আর বুকে আঘাত করাতে অনেক ফুটো তৈরি হয়ে যায় এবং সেখান দিয়ে অঝোরে রক্ত গরিয়ে পরতে থাকে। লোকটা এবার কিছুটা ক্ষান্ত হয়। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় চুলার দিকে। গিয়ে চুলার উপর থেকে টগবগ করতে থাকা গরম পানি নামাতে থাকে। চুলা থেকে নামিয়ে সেই পানিতে এক প্যাকেট হলুদ, এক প্যাকেট মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে দিয়ে গরম পানিটা খানিকটা নেড়েচেড়ে দিতে থাকে। নাড়তে নাড়তে ফিরে তাকায় সেই মেয়েটার দিকে। মেয়েটা ব্যাথা আর জন্ত্রনায় ছটফট করছে এবং একসময় ফিরে লোকটার দিকে এক ছলছল চোখ নিয়ে তাকায়। সেই চোখে যেন ছিলো বাঁচার আকুতি। লোকটা আবার চুলার দিকে মুখ করে। তারপর সে সেই গরম পানির পানি নিয়ে ধীর পায়ে মেয়েটার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে‌

     

     মেয়েটা এবার কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতেছে ,,,

    – আমাকে মারিয়েন না ভাই। আমার বাপ মরা একটা ছোট ছেলে আছে। আমাকে মারিয়েন না। আমাকে ছেড়ে দেন।

     

     লোকটা কিছুই বলে না। যেন তার মনের মধ্যে যেন আবেগ, মায়া জিনিসটাই নেই।

     

    লোকটা সেই হলুদ, লবণ মিশানো গরম পানিটা এনে ধীরে ধীরে মেয়েটার ছিদ্র ছিদ্র করা শরীরের উপর করে  ঢেলে দিতে শুরু করে।

    মেয়েটা যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে, শরীর ঝাপটাচ্ছে। বলছে , “ভাইয়া মারিয়েন না আমাকে। আমাকে মারিয়েন না ,,,! “

     

    লোকটা যেন মেয়েটার আর্তনাদ এ আরো মজা পাচ্ছে। হাসছে এক অট্টহাসি। রুম টার মধ্যে মুহূর্তেই এক ভয়ংকর আবহাওয়া তৈরি হয়ে গেলো।

    লোকটা পুরো পাতিলের টগবগ করতে থাকা গরম পানিটা মেয়েটার উপরে ঢেলে দেয়।

     

    মেয়েটার আর চিৎকার করারও শক্তি নেই। শুধু বার বার নিম নিম আওয়াজে বলছে

    – আমার ছোট্ট ছেলে আয়ান আমাকে খুঁজছে। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন। আয়ান আমাকে না পেলে মরেই যাবে(মেয়েটা বলতে বলতে কান্না করে দেয়, তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে তাকে অজস্র ধারায় পানি, বারবার তার চোখের সামনে তার ছোট্ট ছেলেটির চেহারা ভেসে উঠছে)

     

    লোকটা টা এবার চুলায় গরম করতে থাকা আরো বড় একটা স্ক্রু ড্রাইভার নিয়ে আসে। এসে খাটের পাশে দাঁড়ায়। হাত দিয়ে আস্তে আস্তে তার হেলমেট টা খুলে। লোকটা তার চেহারা দেখায়।  চেহারাটা দেখে মেয়েটা আরো ভয় পেয়ে যায়। তার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়। মেয়েটা প্রচন্ড অবাক হয় আর ভয় পায়। মেয়েটার চোখ মুখ দেখে এমন মন হচ্ছিলো যে মেয়েটা সেই লোকটাকে অনেক আগে থেকেই চিনে এবং এই লোকটাকে দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

    মেয়েটা অনেক কষ্টে তার কাপো কাপো কন্ঠ দিয়ে আওয়াজ বের করে বলে 

    – ত,তুমি ,,,?

    সাথে সাথেই লোকটা দুই হাত দিয়ে গরম স্ক্রু ড্রাইভার টা উপরে তুলে সজোরে তার মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। মেয়েটা যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকে। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। লোকটা এবার আরো দুইটা সূক্ষ্ম গরম লোহার দন্ড যেগুলো চুলা থেকে এনেছিলো সেগুলো মেয়েটার দুই কান দিয়ে সজোরে ঢুকিয়ে দেয় পুরোটা। মেয়েটা আর নিতে পারছিলো না, মেয়েটার কান দিয়ে চোখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরছিলো। মেয়েটার শরীর টা বেঁকে যায়। শরীর ঝাঁপটানোর শক্তি টুকুও আর মেয়েটার গায়ে ছিলো না। লোকটা বিছানার নিচ থেকে এক বড় কুড়াল উঠিয়ে মেয়েটার বুকের দুই স্তনের উপর কোপ দিতে থাকে। প্রত্যেকটা কোপের মধ্যেই যেন ফুটে উঠছিলো লোকটার ভিতরে জমে থাকা কষ্টের প্রতিচ্ছবি, প্রতিশোধের তাড়ণা। লোকটা মেয়েটার বুকে কোপ দিতে দিতে যখন দেখে যে মেয়েটা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে তখনই সে ধামাটা উঁচিয়ে ধরে সজোরে মেয়েটার গলা বরাবর একটা কোপ দেয়। সাথে সাথেই মাথা টা আলাদা হয়ে বিছানা থেকে পরে যায়। চারপাশের দেয়ালে রক্ত ছিটকে পড়ে।  মেয়েটার কাটা মাথাটা বিছানা থেকে পড়ে কিছুটা দূরে গড়িয়ে গিয়ে থামে। ছিন্ন মাথাটা থেকে বের হতে থাকে রক্ত। ফ্লোর ভেসে যেতে থাকে সেই গরম তাজা রক্তে। শেষ হয় মেয়েটার জীবন অধ্যায়। মাথাটার মধ্যে থাকা চোখ গুলো এখনো মেলে রয়েছে। চোখের কোন থেকে শেষ ফোটা পানিটা গড়িয়ে পড়ে সেই দেহ বিহীন মাঠাটা থেকে।

     

     লোকটার দুই ঠোটে ফুটে উঠে এক ভয়ংকর চাহনির হাসি। একই সাথে এক চাপা কষ্টের ছাপ,,,,,!

     

    ________________

     

    ঢাকার একটা ৫ তলা বাড়ির ফ্লাট ,, 

     

    শাহারিয়া তার ফোন টা হাতে নিয়ে বারান্দার ব্যালকনিতে গেলো। এক হাত গ্রিলে রেখে আকাশ দেখছে সে। আকাশ আজ বেশ পরিস্কার। জোছনা রাত, তারাদের ঝলমলিয়ে উঠা আর তার সাথে চাঁদ মামার আলোর ঝলকানি। সবমিলিয়ে এক সুন্দর পরিবেশ। শাহারিয়া সেদিকে চেয়ে মনে মনে ভাবছে, “মা কে একটা ফোন দেওয়া দরকার। কাজের চাপে এই দুইদিন ফোন ই দিতে পারিনি। মা আবার আমার উপর রাগ করে আছে নাকি কে জানে। “

     

    (ও হ্যা আমি তো আপনাদেরকে শাহারিয়ার পরিচয়টা দিতে ভুলে গিয়েছি। ওর পুরো নাম মির্জা শাহারিয়া, মির্জা বংশের উত্তরাধিকারী সে। ঢাকায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করছে বর্তমানে। ও ফোন দিচ্ছিলো গ্রামে থাকা ওর মাকে। যদিও তিনি তার সৎ মা। শাহারিয়ার ৬ বছর বয়সে ওর আসল মা মারা যায়। তারপর ওর আব্বু বিয়ে করে নিয়ে আসে নতুন একজনকে এবং সে পায় এক নতুন মা কে। শাহারিয়ার আব্বু গ্রামের মেম্বার। গ্রামে তার আধিপত্য চোখে পড়ার মতো। তাই তিনি এক ১৫ বছর বয়সী একটা মেয়ে বিয়ে করতে পারেন।  ১ বছর পর তাদের ঘরে এক মেয়ে হয়। নাম রাখা হয় তার সুবাইতা নুরান নিপা। তবে মা শাহারিয়াকে আর নিপাকে দুইজন কেই সমান চোখে দেখেন। শাহারিয়াকে কখনোই আলাদা করে দেখেননি। একদম নিজের সন্তানের মতো তিনি ওকে লালন পালন করেছেন। শাহারিয়াও তাকে কখনো সৎ মা ভাবেনা। নিজের মায়ের মতো মান্য করে তাকে সে। সবসময় সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। আজ ৬ মাস হলো গোয়েন্দা বিভাগের চাকরির সুত্রে তার ঢাকায় আসার। আগে সে বগুড়ায় পড়াশোনা করতো। ঢাকার উত্তরায় একটা ভাড়া ফ্লাটে সে একলা থাকে। বুয়া রান্না করে দিয়ে যায়। তার মা আবার ভারি মজার মানুষ। তিনি রুপে এবং গুনে অনন্য। অনেকেই এখনো শাহারিয়াকে আর তার মাকে একসাথে দেখলে ভাই বোন ভেবে ভুল করে। তো এখন আবার ফিরে আসি বর্তমানে)

     

    শাহারিয়া তারপর ফোন দেয় তার বাসায় ,,

    তার মা ফোনটা রিসিভ করে ওপাস থেকে বললো ,,,

     

    – কীরে বাজান। কেমন আছোস তুই। দুইদিন ধইরা ফোন দেই কিন্তু তোরে পাইনা। বউমা-টউমা রেডি করতাছোস নাকি আবার।

    – আরে না মা। কী বলো এসব। আমার কাজের চাপ ছিলো এই দুইদিন। তুমি তো জানোই, গোয়েন্দা বিভাগের কাজে অনেক চাপ। অনেক সময় দিতে হয় এখানে। আর আমার বিয়ে করার এখন কোন ইচ্ছে নেই। বউমা-টউমা ওসব পরে দেখা যাবে।

    – ও তাই ক। আমি তো আরো ভাবলাম আমার ছাওল ডা মনে হয় বউমা-টউমা তৈয়ার করতাছে। (হাসতে থাকেন)

    – না না তেমন কিছু না মা। আমি তোমাকে না জানিয়ে কী বিয়ে করতে পারি বলো ,,,! 

    – সুন্দরী মাইয়া পাইলে করতেও পারোস। হা হা হা ,,,

    – কী যে বলো না মা। তোমার পছন্দ করা পাত্রি ছাড়া আর কাউকেই আমি বিয়ে করছিনা। একদমই না।

    – আইচ্ছা আইচ্ছা বুঝছি। তো খাইছোস রাইতে বাজান ? 

    – হ্যাঁ মা। মাত্র খেয়েই তোমায় ফোন দিলাম। তুমি খেয়েছো মা ? আর বাবা, নিপা ওরা কেমন আছে ? ওরা খেয়েছে ?

    – হ রে আমিও খাইছি। তোর বাপের ভালা থাহোন ও যা , মন্দ থাহোন ও তা। আর নিপায় ও আছে ভালাই বাজান। নিপায় খাইছে বাজান। নিপায় তো ঘুমাইয়াও পরছে এতোক্ষণে। (একটু থেমে) আর তোর বাপেরে আমি যতই খাওয়াই হের মন ভরেনা।

    – কেন মা। বাবা এখন কী খাওয়া দাওয়া বেশি করা শুরু করেছে নাকি। বাবার কিন্তু ডায়বেটিস আছে। একদমই মিষ্টি খেতে দিওনা।

    – তোর বাপে ,, ! তোর বাপে তো খালি সুযোগ খুঁজে। সুযোগ পাইলেই লুকাইয়া লুকাইয়া ফ্রিজ খুইলা মিষ্টি খায়া লায়। আমি আরো ভাবি ফ্রিজের মিষ্টিডি কেডায় খাইতাছে। কাইল তহন যাইয়া ঐ মিষ্টি চোর মতিনরে হাতেনাতে ধরছি। ইচ্ছা মতো কিলাইছি। আরেকবার খালি ধরা পড়ুক। এক্কেরে আসল জিনিস কাইটা মিষ্টির প্যাকেটে ভইরা ফ্রিজে রাইখা দিমূ হ্যা। আমারে হেয় চিনে না।

    – হা হা হা ,,, মা তুমিও পারো বাবাকে জব্দ করতে। বাবার ভয়ে পুরা গ্রাম বাসী কাঁপে। আর এদিকে তোমার ভয়ে বাবার হাঁটু কাঁপে। (বলেই আবার হেঁসে ফেললো শাহারিয়া) 

    – হ হ। এইডাই মোগো বেডি মাইনষের পাওয়ার। স্বামী একটু কথার এদিক ওদিক করলেই ধোলাই। তোর বিয়ার পর তোর বউও তোরে এমনে ধইরা কিলাইবো দেহিস। (বলেই ফোনের উপাস থেকে শিউলি বেগম হেঁসে উঠেন)

    – আমি তাইলে বিয়েই করবোনা। আমার বাপু কিল ঘুষি খাওয়ার শখ নাই।

    – বিয়ার পর ঐ বউয়ের কিল ঘুষিই তোর তহন মজা লাগবো। তোর বউরে শিখায়া দিমু কেমনে জামাই ধোলাই দিতে হয়। হা হা হা,,,

    – আমি চিরকুমার থেকে যাবো। বিয়ে আমি করবোই না। বাবাগো বাবা, বিয়ের পর উঠতে বসতে বউয়ের ঝাড়ি ,,! না না। ইহা মোর দ্বারা মোটেও সম্ভব নহে।

    – হ। তুই চিরকুমার থাকলে তহন আমি নাতি নাতনির মুখ দেখমু কেমনে ,,! না না। তোরে খুব তাড়াতাড়ি বিয়া দিতে হইবো। নাতি নাতনির লগে একটু দুষ্টামি করমু সেই দিনডাই যদি না দেখতে পারি তাইলে মোর জীবন বৃথা।

    – আচ্ছা সে পড়ে দেখা যাবে। তো মা নিপার পড়াশোনা কেমন চলে ? কলেজ ঠিকঠাক মতো যায় তো ?

    – হ বাজান। কলেজ যাইয়া পড়াশোনাও করে আবার কলাগাছের লগে উল্ডাউল্ডিও করে।

    – কীসের কলাগাছ মা ,,! 

    – ঐডি তুই বুঝবিনা । (একটু থেমে) তো অহন ঘুমা । মেলা রাইত হইছে। তোর বাহে আবার ঐদিকে মিষ্টি খাইতে গেলো নাকি কে জানে। আইজ যদি ধরা পড়ছে। ওরে ল্যাংডা কইরা ঘরের মইধ্যে পিডামু। বহুত বার বাড়ছে, ইদানিং কথাই হুনে না আমার।

    – আব্বারে আস্তে মারিও মা। পড়ে কান্না করে দিলে তোমার নামে গ্রামবাসী পুরুষ নির্যাতন কেস দিয়ে দিবে।

    – কেডা কেস দিবো। গ্রামে যেইডা আমার উপরে কথা কইবো হেইডারই যায়গা মতো কোপ মাইরা মাডিত পুইতা দিমূ। তোর বাহে ছাড় দিতে পারে, কিন্তু মোর হাতে পড়লে কারো কুনু ছাড়া নাই। আইচ্ছা ঐডি অহন বাদ দে। তোর সকালে অফিস আছে। তুই অহন ঘুমা। আর দরজা জানালা ঠিক মতো বন্ধ কইরা ঘুমাইস বাপ। নাইলে কোন মাইয়া চোর আইয়া তোরে চুরি কইরা লই যাইবো গা,,,!

    – নেউক গা। কমু আমি শিউলি বেগমের পোলা, আমি কাউরে ডরাই না। (বলেই হেঁসে ফেলে শাহারিয়া)

    – গ্রামের ভাষা অহনো ভুলস নাই দি হ্যা। হা হা হা,,,! 

    – না মানে মা, মাটির মানুষ, মাটির ভাষা ভুলি কেমনে। আইচ্ছা তাইলে ঠিক আছে রাখি মা, কাইল আবার ফোন দিবোনে।

    – আইচ্ছা বাজান। বেশি রাত জাগিস না। ঠিকঠাক মতো থাকিস।

    – আচ্ছা মা। শুভ রাত্রি। আসসালামুয়ালাইকুম।

    – ওয়ালাইকুমুস সালাম বাজান। শরীল ডার যত্ন নিবি কিন্তু। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করিস বাজান।

    – আচ্ছা মা। তুমিও ভালো থেকো।

    – আইচ্ছা বাজান।

     

    কল কেটে দিয়ে বিছানায় আসলো শাহারিয়া। মায়ের সাথে ফোন দিলে বেশ অনেকক্ষণ ধরেই আলাপ হয় প্রতিবার। আসলে নিজের পেটে ধরা সন্তান না হলেও শাহারিয়াকে শিউলি বেগম নিজ সন্তানের মতোই ভালোবাসেন, স্নেহ করেন। তাই যেন এই দুষ্টু মিষ্টি মা-ছেলে ফোনে কথা বলা শুরু করলে যেন শেষ করার নাম গন্ধই থাকেন। শাহারিয়া‌ কথা বলতে বলতে কখন যে ব্যালকনি থেকে রুমে এসেছে বুঝতেই পারেনি। সে শুয়ে পড়ে বিছানায়। হাত বাড়িয়ে বিছানার সাথে লাগানো টেবিলের ল্যাম্প লাইট টা অফ করে দেয় সে। চোখে অনেক ঘুম। সারাদিন অনেক ধকল গেছে। বালিশে মাথা দেওয়ার সাথে সাথেই যেন তার দু চোখে নেমে আসে ঘুমের ছটা। হারিয়ে যায় সে স্বপ্নের রাজ্যে,,,,!

     

    ______________________

     

     রাতুল আর মায়া দের বাসা‌। সময় সকাল ৭ টা। মায়া বাড়ির আঙিনা ঝাড়ু দিচ্ছে। রিয়াদ তার ঘরের দরজা খুলে। খুলে সে হাই তুলতে তুলতে বের হচ্ছে। 

     মায়া বলে।

     – কী খবর দারগা সাব ঘুম হয়েছে।

     – হ ভাবি।(শরীর মোড়াতে মোড়াতে) আইজ ঘুম ডা ভালাই হইছে।

     – আচ্ছা তুমি গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও আমি নাস্তা দিচ্ছি তোমায়।

     – আইচ্ছা ভাবি।(সে তার ঘরের দুই কদম সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে বলে) ভাইয়া কই ?(রাতুল তার বড় ভাই) 

     – এইতো গেছে বাজারে। সকাল সকাল নাকি বলে টাটকা শাকসবজি পাওয়া যায়। আর আজ নাকি সে আর স্কুল যাবেনা। ছুটি নিয়েছে বলে। (মায়া আঙিনা ঝাড়ু দিতে দিতে বলে)

     – ছুটি নিছে ? ভাইয়ার শরীর-টরির খারাপ নাকি আবার।

     – না না। এমনিই নাকি নিয়েছে। আচ্ছা তুমি যাও ফ্রৈশ‌ হয়ে নাও। আমি নাস্তা দিচ্ছি। পরে নাইলে আবার তোমার থানায় যেতে দেরি হয়ে যাবে।

     – আইচ্ছা ভাবি।

     

    ( বি:দ্র: রিয়াদ তাদের গ্রামের একমাত্র পুলিশ স্টেশন আনন্দপুর থানার ওসি পদে চাকরি করে)

     

    ৩০ মিনিট পর,,,,,,

     

    রিয়াদ থানায় যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে তার রুম থেকে বের হয়। পড়নে পুলিশ ড্রেস, পায়ে বুট। আর গায়ে ফুল হাতা শার্ট। শার্টের হাতা গোছাতে গোছাতে সে বলে।

    – আমি গেলাম ভাবি। দুপুরে খাইতে আইতেও পারি আবার না না আইতেও পারি।

     

    তখনই রিয়াদের ফোনে একটা কল আসে। রিয়াদ তার হাতা গুছিয়ে নিয়ে ফোন টা বের করে পকেট থেকে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে কনস্টেবল নয়ন ফোন দিয়েছে। সে রিসিভ করে। বলে।

     

    – হ্যা বলো নয়ন।

    – স্যার গ্রামের উত্তর পাড়ার আম বাগানের পাশের খালে একটা মুন্ডুহীন লাশ পাওয়া গেছে। শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের দাগ স্যার। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন। (বেশ হন্তদন্ত হয়েই কথা গুলো বলে কনস্টেবল নয়ন)

    – আরে কী বলো কী। কখন ? কীভাবে ? আচ্ছা আমি এখুনি আসছি। তুমি বাকি কনস্টেবলদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হও।

    – ওকে স্যার।

    রিয়াদ ফোনটা তাড়াতাড়ি কেটে তরিঘরি করে জুতার ফিতা বাঁধতে লাগলো। বেঁধে ফেলে ঘরের দুয়ারের সামনে থেকে নেমে বের হয়ে যাওয়া শুরু করে। তখনই পিছন থেকে মায়া ডেকে বললো।

     

    – রিয়াদ। তাড়াহুড়ো করছো কেন। কিছু হয়েছে ?

    রিয়াদ পিছনে ফিরে কিছু বলতে যাবে তখনই দেখে তাদের গ্রামের রাশেদ তড়িঘড়ি করে তাদের বাসায় ঢুকতেছে। ওর চোখে মুখে কান্নার ছাপ। চোখ দেখে মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমায় নি।

    রাশেদ ভাঙ্গা ভাঙ্গা কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতে লাগলো

     

    – রিয়াদ ভাই। আমার বড় বোন রিয়ারে কোথাও দেখছেন ? কাল রাত থেইকা তারে কোথাও খুঁইজা পাইতাছি না। আমি, আব্বা-আম্মা মিল্লা অনেক খুঁজছি। কিন্তু কোন খোঁজ পাইতাছি না তার। কাল রাইতে একটা কল আইলো ওর ফোনে আর ও বাইরাইয়া গেলো। জিগ্গেস করছিলাম এতো রাতে  কৈ যাও আপু। হে কইলো আমাগো পুকুর পাড় এ পাইতাছে। একটু পরই চইলা আইবো।(রাশেদ এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠে) কিন্তু তারপর ৩০ মিনিট পার হইয়া যাওনের পরও হে না আওয়ায় সেইহানে খুঁজতে গিয়া দেখি যে হেয় নাই। আমি, আব্বা-আম্মা গ্রামে তারে অনেক খুঁজেছি‌ কিন্তু তারে পাইতাছিই না। আপনি একটু দেহেন না ও কোথায় হারায়া গেলো ,, আমার ভাগিনা ‌আয়ানও তার মারে সারারাইত না দেইখা বাসায় খালি কান্না করতাছে। আয়ান খালি “মা মা” বইলা চিৎকার করতাছে।

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    উপন্যাস :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: সে ফিরে এসেছে

    পর্ব :: ১

    লেখক :: মির্জা শাহারিয়া

     

    গল্প নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা করুন আমার গ্রুপে।

    গ্রুপ লিংক 👇

    https://www.facebook.com/groups/743016887019277/?ref=share_group_link

     

    প্রথম গল্প ,, ভুল হলেও হতে পারে ,, ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🙏 

     

    #গ্রামের_নাম_আনন্দপুর 

    #সে_ফিরে_এসেছে

     

    উপন্যাস :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১ (সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২

    লেখক :: মির্জা শাহারিয়া 

     

    (রাশেদ এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠে) কিন্তু তারপর ৩০ মিনিট পার হইয়া যাওনের পরও হে না আওয়ায় সেইহানে খুঁজতে গিয়া দেখি যে হেয় নাই। আমি, আব্বা-আম্মা গ্রামে তারে অনেক খুঁজেছি‌ কিন্তু তারে পাইতাছিই না। আপনি একটু দেহেন না ও কোথায় হারায়া গেলো ,, আমার ভাগিনা ‌আয়ানও তার মারে সারারাইত না দেইখা বাসায় খালি কান্না করতাছে। আয়ান খালি “মা মা” বইলা চিৎকার করতাছে।

     

    রিয়াদ বলে।

    – সব যায়গায় খুজেছো ?

    – হ, গ্রামে সারারাইত খুঁজছি। কিন্তু পাইনাই।(রাশেদ কাঁদতে কাঁদতে বললো)

    – বড়ই চিন্তার বিষয়। আচ্ছা আমি তোমার সাথে কয়েকজন কনস্টেবল কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওরা তোমার সাথে পুরো গ্রাম টা খুঁজবে। আর না পেলে বিকেলে থানায় এসে একটা মিসিং রিপোর্ট লেখিয়ে যেও। আমি এখন একটু দরকারি কাজে ব্যাস্ত থাকবো। পরে তোমার সাথে আবার কথা হবে।

    – আইচ্ছা রিয়াদ ভাই। একটু দেখিয়েন বিষয় ডা। (রাশেদ তার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলতে লাগলো)

     

    রিয়াদ, মায়া ভাবিকে বিদায় জানিয়ে চলে যায় বাসা থেকে। তার পিছন পিছন রাশেদ ও চলে যায়।

     

    ____________________________

     

     গ্রামের এক কাঁচা রাস্তা। রাস্তার দুইপাশেই ফসলি জমি আর জমি। রাস্তার দুই ধারে কিছু কাঁঠাল ও আম গাছ। মাথার উপর রোদের তেজ বেশি একটা নেই, কম। রাস্তা দিয়ে ৩ জন কলেজ ড্রেস পরিহিত মেয়ে কলেজে যাচ্ছে। তারা ৩ জন হলো নিপা, দিথী এবং জিনিয়া। নিপার পরিচয় তো আপনারা আগেই পেয়ে গেছেন। দিথী হচ্ছে গ্রামের বর্তমান রানিং চেয়ারম্যান অন্তর  ইসলামের মেয়ে। সে একটু চুপচাপ স্বভাবের। আর জিনিয়া হচ্ছে তাদের বান্ধবী। জিনিয়া দক্ষিণ পাড়ার মোতালেব মিয়ার ছোট মেয়ে। 

    তারা ৩ জন সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে এবং কথা বলছে।

     

    নিপা – আচ্ছা, আইজ কলাগাছ টা আইলো না ক্যা। প্রতিদিন আমারে কলেজে যাওয়ার সময় নেওয়ার লাইগা বাড়িত যাইয়া খারায় থাকতো। আইজ আইলো না ক্যা ,,,?

    জিনিয়া – আরে আল্লাহ। দুইদিন হইলো প্রেম শুরু হওয়ার তাতেই এতকিছু ,, ! (একটু মুচকি হেসে) ফারুক ভাই হয়তো অন্য কোন মাইয়ার প্রেমে পরছে। হের লাইগা আইজ আর তোর বাড়িত যায় নায়।

    নিপা – অয় খালি অন্য মাইয়ার দিকে চোখ তুইলা তাকাউক। ওর কলা কাইট্টা আমি ছাগলরে খাওয়ামু।

    (সেই সময় দিথী বলে উঠলো)

    – আজকে হয়তো তার কোন একটা সমস্যা হয়েছে। তাছাড়া শরীর-টরির ও তো খারাপ হইতে পারে নাকি। না যেনে এসব বলা ঠিক না। ফোন দিয়ে দেখ শরীর খারাপ হইলো নাকি আবার।

    জিনিয়া – হ ঠিক কইছোস দোস্ত। ফারুক ভাই মানুষ টা সহজ সরল। আইজ হয়তো কোন সমস্যা হওয়াতে কলেজে পৌছায় দেওয়ার সময় তোরে নিতে আহেনাই।

    নিপা – আচ্ছা আমি ফারুকরে একটা কল দিয়া দেহি।

    (নিপা নিজের ব্যাগ টা থেকে ফোন বের করে। এদিকে জিনিয়া আর দিথী কলেজের পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করতে করতে যাচ্ছে। নিপা ফারুকের নাম্বার টা বের করে কল দেয়।

    কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর ফারুক ফোনটা ধরে।

     

    তারপর তাদের কথোপকথন।

    – ফারুক। তুমি কই। আইজ যে আমারে নিতে আইলানা। তোমার শরীর-টরির খারাপ করলো নি আবার।

    (ফারুক কিছু টা ক্লান্তের সুরে বলতে থাকে)

    – না নিপা। আমি সুস্থই আছি। তবে কাল সারারাত ঘুমাই নাই। এখন একটু বাসায় আসছিলাম। আবার একটা খবর পেয়ে উত্তর পাড়ার আম বাগানের দিকে যাচ্ছি।

    – সারারাইত ঘুমাও নাই মানে ,,? পাডার পু পাডা তুই সারারাইত কোন মাইয়ার লগে ফুর্তি করছোস ক। তোর কী আমার মধু খাইয়া মন ভরেনা যে গেছো আরেক মাইয়ার মধু খাইতে।

    – আরে নিপা। এসব কী বলতেছো। আমাদের রাশেদ আছেনা। আমার ছোটবেলার বন্ধু রাশেদ। ওর বড় বোন রিয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাল রাত থেকে পাওয়া যাচ্ছিলোনা তাই আমি, রাশেদ, রাশেদের বাবা-মা মিলে পুরা গ্রাম খুঁজছি। কিন্তু রিয়াকে পাইনি। একটু আগে খোঁজাখুঁজি শেষ করে বাড়িতে আসলাম। এখন আবার শুনি উত্তর পাড়ার আম বাগানের পাশের খালে বলে এক মুন্ডুহীন লাশ পাওয়া গেছে। এখন আমি ঐদিকেই যাচ্ছি।

    – কী কও কী ! মুন্ডু হীন লাশ ! (নিপা অবাক হয়ে বলে)

     

    (নিপার কথা শুনে জিনিয়া আর দিথীও অবাক হয়ে তার দিকে ফিরে তাকায়। তারা নিপাকে বলতে থাকে।

    – কীসের লাশ রে?

    নিপা ওদের কে হাত দিয়ে থামার ইঙ্গিত দিয়ে আবার বলতে থাকে।

    – আচ্ছা যাও তাইলে। আর সাবধানে যাইয়ো। সকালে নাস্তা খাইছো ?

    – হ্যা নাস্তা করেই বের হলাম।

    – আচ্ছা জান রাখলাম তাইলে।

    – আচ্ছা ঠিক আছে।

     

    নিপা ফোন কেটে দেয়।

     

    জিনিয়া আর দিথী তাকে আবার জিজ্ঞেস করতে থাকে।

    – কীসের লাশ‌ রে। কী হইছে ,,?

     

    নিপা তারপর সব খুলে তাদেরকে বলতে থাকে। তারা শুনতেছে আর অবাক হচ্ছে। আসলেই তো এমন ভাবে একটা মেয়ে কোথায় উধাও হয়ে যেতে পারে ,,,! আর মাথাহীন লাশও একটা পাওয়া গেছে ,,! এইসবের মানে কী ,,? কিছুই তাদের মাথায় ঢুকছেনা।

     

    নিপা সব কিছু বলার পর বলে।

     

    – রিয়া ভাবির ছোট্ট ছেলে আয়ানের কী অবস্থা হয়েছে ভাব একবার (মন খারাপ করে নিম্ন স্বরে নিপা বললো)

    – হ্যা রে। ছেলেটার মাত্র ৬ বছর বয়স। এতো কম বয়সে তার মা তাকে রেখে কোথায় হারিয়ে গেলো। (বিষন্ন মুখ নিয়ে দিথী বললো)

     

    এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে তারা কলেজের সামনে এসে যায়। তারা একে অপরের সাথে কথা থামিয়ে দিয়ে কলেজের গেট দিয়ে কলেজে প্রবেশ করতে থাকে। ভিতরের হলরুমের দিকে চলে যায়।

     

    ___________________

     

     গ্রামের বর্তমান মেম্বার মতিনের বাসা। বাসাটা পাকা। বেশ বড়োই বলা যায়। বাসার সামনে একটা আঙিনা। তারপর দুই কদম সিঁড়ি বেয়ে বারান্দায় উঠতে হয় তারপর ঘর। মেম্বারের বউ শিউলি বেগম (শাহারিয়ার মা) রুমে বারান্দায় ঢুকার দরজার সামনে একটা বসার যায়গা আছে। সেখানে বসে সাজুগুজু করছে। তার মেয়ে বড় হয়ে গেলেও তার রুপ এবং জৌলুস কোনটাই কমেনি। শিউলি বেগম ঠোটে লিপস্টিক দিচ্ছে আর গুন গুন করে গান গেয়ে চলেছে। এমন সময় মতিন মেম্বার কাপড় পরে রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হয়। এসে বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শিউলি বেগম কে সাজুগুজু করতে দেখে বলে।

     

    – ঐ যতই ডলাডলি করো। কাউয়া কহনো ময়ূর হয়না। কাউয়া কাউয়াই থাহে। (হাতের অঙ্গভঙ্গিমার সাথে সাথে বললেন)

     

     শিউলি বেগম লিপস্টিক মাখানো থামিয়ে বললেন।

    – কোনডা কাউয়া আর কোনডা কোনডা ময়ুর হেইডা তুমি বুঝবা কেমনে। আমার চেহারা পুরা ঐশ্বরিয়া রাই এর মতো ফর্সা বুজ্জো। তুমি তোমার দিকে দেহো। মুখ তো কালা কালা লগে তোমার সামনের লেজ ডাও কালা। হা হা হা 

    – লজ্জা শরমের মাথা খাইছোনি। কী কও এসব। মুহে কিচ্ছু আটকায় না। বেহায়া একটা। (একটু থেমে) আচ্ছা হুনো। আমি একটু উত্তরপাড়া যাইতাছি জরুরী দরকারে। টুটুল রে সাথে কইরা নিয়া যাইতাছি। নাসিম আইলে কইয়ো যে আমি উত্তরপাড়া গেছি সেখানে চইলা আইতে।

     

    (টুটুল হচ্ছে মতিন মেম্বারের ডান হাত। মেম্বারের সব কাজের সাক্ষি এই টুটুল। তবে টুটুল মেম্বারের মতো আদর্শবান চরিত্র বহন করেনা। গ্রামে যত আকাম আছে সব এই টুটুল করে বেড়ায়। খুন, মাদক ব্যবসা, নারীর দেহ নিয়ে খেলা, সবই এই টুটুল কাজ‌। আর নাসিম হলো মেম্বারের নতুন চামচা। এই ২ দিন হইলো মেম্বারের দলে দলে যোগ দিছে। দেখতে ভোলাভালা। কিন্তু মেম্বারের সাথে সাথে সবসময় বেড়ায় বিধায় বুদ্ধির দিক দিয়ে বেশ পরিপাটি। সাথে কাজ কামও ভালই পাড়ে। আবার বর্তমানে ফিরে আসি)

     

    শিউলি বেগম বলছেন।

    – নাসিম তোমার দলে যোগ দিছে মোটে ২ ডা দিন হইলো। তাতেই এতো দেরি কইরা আহে। পরের দিনকাল তো আরো পইরাই আছে। কাজ কামে ফাঁকি বাজি দেয়। আর সারাদিন গন্জে গিয়া থাহে। কইত্তে যে তুমি এইসব পোলাডিরে ধইরা আনো তুমিই জানো।

    – হ। তুমি তো এডি দেখবাই। তোমার কী এডি ছাড়া আর কাম আছে। সারাদিন খালি সাজুগুজু আর পাড়াবেড়ানি।

    – আরো কাম আছেনা আমার।  রাইতে তোমার লগে আমি তাই-তাই খেলি। হেইডি কে কইবো,,,! বুইড়া ব্যাডা একটা‌। কিছুই পারেনা। আবার মুহে বড় বড় কথা। হুঁ,,, (ভেংচি কেটে আবার আয়না দেখে সাজুগুজু করতে থাকে শিউলি বেগম)

    – আরে থামো তো। বজ্জাত মহিলা একটা।(একটু থেমে) আইচ্ছা আমি গেলাম। দুপুরে খাইতে আমুনে।

    – হ যাও যাও। সত্য কথা কইলে তো আবার আমার মুখ খারাপ। হা হা হা,,,

    মতিন মেম্বার আর কথা না বাড়িয়ে বারান্দার দুই কদম সিঁড়ি বেয়ে নেমে বাসা থেকে বের হয়ে চলে যেতে থাকে। শিউলি বেগম হাসতে হাসতে তার ঠোঁটে লিপস্টিক মাখাতে থাকে। আর গুনগুন করে গান গাইতে থাকে।

     

    ___________________________

     

    মায়া গোসল করে আসলো।  এসে আঙ্গিনায় কাপড় গুলো শুকানোর জন্য মেলে দিয়ে মাথার চুল মুছতেছে। ঠিক এসময় এক ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে বাসার গেট দিয়ে প্রবেশ করে রাতুল স্যার। মায়া মাথার চুল মুছতেছিলো রান্না ঘরের দিকে মুখ করে। অর্থাৎ রাতুল বিপরীতে মুখ করে দাঁড়িয়ে চুল মুছতেছিলো‌। রাতুল বাসায় ঢুকেই মায়াকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। মায়া এক লাল রঙের শাড়ি এবং কালো রঙের এক ব্লাউজ পরেছিল।

    রাতুল তার চশমাটা খুলে হাতে নেয়। মায়ার ব্লাউজ টা হাফ হাতা ছিলো। এবং পিঠের দিকেও কিছুটা বের করা ছিলো। অর্থাৎ পিঠ কিছুটা দেখা যাচ্ছিল। রাতুল এক দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। বাজারের ব্যাগ টা আস্তে করে মাটিতে রেখে এক পা, দু পা করে মায়া ভাবির দিকেই এগোচ্ছে। তার চোখে যেন লেগেছে এক নেশার ঘোর। সেই ঘোর যে এতো সহজে কাটবার নয়‌। রাতুল গিয়ে মায়া ভাবিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। মায়া এমন হঠাৎ জড়িয়ে ধরা দেখে একটু ভয় পেলেও মাথা পিছনে ফিরিয়ে যখন দেখে সেটা রাতুল ই তখন তার মুখে মুচকি একটা হাঁসি ফুটে উঠে। রাতুল মায়ার কোমড় দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। মায়া তার নিজের হাত গুলোও রাতুলের হাতের সাথে রেখেছে। রাতুল মায়ার ডান কাঁধে মুখ রেছে তার কাঁধে একটা চুমু দেয়।

     

    মায়া বলতে লাগলো।

    – ছাড়ো ,,,! কেউ দেখে ফেলবে।

    – কে দেখবে। বাসায় কেউ নাই। তুমি আর আমি এখন একা। আসো তোমায় একটু আদর করি।

    – হয়েছে। সারারাত আদর করেও তোমার মন ভরেনা হ্যা ,,,! আমি এখন রান্না বসাবো। ওসব আদর সোহাগ পরে হবে।

    – কিন্তু আমি তো তোমাকে এখন যেতে দেবো না ,,,!

    – ছাড়ো তো। অনেক দুষ্টুমি হয়েছে। আর না। আমাকে রান্না বসাতে হবে। তুমি যাও। গিয়ে গোসল দিয়ে এসো।

    – আসো একসাথে গোসল করি।

    – আমি গোসল করে এসেছি। তুমি যাও।(তারপর একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে) আর বাজারের ব্যাগ টা কই।

    (এই বলে মায়া রাতুলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাজারের ব্যাগ আনতে যায়)

     

    রাতুল মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে ,,

    – আজ গরুর মাংস এনেছি। ভাল করে কষিয়ে রান্না করিও তো। আর সাথে পোলার চাউল ও এনেছি। পোলাও ও রেধো।  তোমার হাতের রান্না যা স্বাদ। আ হা। অমৃত ,,,! 

    – হয়েছে হয়েছে। আর বলতে হবে না। (মায়া ভাবি বাজারের ব্যাগ হাতে উঠাতে উঠাতে বলছে) যাও, গোসল দিয়ে এসো।

     

    এরপর রাতুল স্যার আঙ্গিনায় শুকোতে দেওয়া একটা গামছা নেয়। নিয়ে চলে যায় গোসল করতে। আর মায়া ভাবি বাজারের ব্যাগ টা নিয়ে রান্না ঘরে চলে যায় রান্না করার জন্য।

     

    ________________________

     

      উত্তর পাড়ার আমবাগান। অনেক বড় একটা বাগান। সারি সারি আমের গাছ। আম বাগান টা অনেক পুরোনো। গাছ গুলোর সাইজও মোটা মোটা। সকালের সূর্যের আলো গাছের পাতার ফাঁক দিতে আস্তে আস্তে বেড়িয়ে আসছে। চারপাশে হালকা কুয়াশা (তখন হেমন্ত কাল চলছিলো) 

    বাগানের মাঝে একটা ছোট খাল। খালের পাশে লোকদের এক ভিড় দাঁড়িয়ে আছে। খালে আমরা দেখতে পাই এক টা মুন্ডু বিহীন লাশ। লাশের গায়ে কোন কাপড় নেই। লাশটার গায়ে অসংখ্য ছিদ্র। শরীরের চামড়া ঝলসানো। দেখে এমন মনে হচ্ছে যেন আগুন বা গরম পানিতে ঝলসে গেছে। হাতের কব্জি নেই। কেটা ফেলা হয়েছে। খালে কোন পানি নেই। পানি শুকিয়ে গেছে। খালটার ঠিক মধ্যে খানে লাশটা রয়েছে। লাশটার হাত মেলানো অবস্থায় আছে। পা গুলোও ইংরেজি অক্ষর Y এর উপরের দিকটার মতো দুই পাশে ছড়িয়ে রাখা। লাশটাকে দেখে মনে হচ্ছে বেশিক্ষণ হয়নি তাকে মারার। একদম তরতাজা লাগছে লাশটাকে। 

    খালের চারপাশের সেই ভিড়ের মধ্যে ছিলো পুলিশ ইন্সপেক্টর রিয়াদ। তার কয়েকজন কনস্টেবল। ফারুক। বাগানের মালিক আর গ্রামের সাবেক মেম্বার ইসহাক সাহেবের ছেলে আরমান। এবং তাদের ঘিরে গ্রামের কয়েকজন লোককে দাঁড়িয়ে আছে।

     

    পুলিশ ইন্সপেক্টর রিয়াদ বলতে থাকে।

    – আচ্ছা। লাশটাকে আপনাদের সবার মধ্যে কে আগে দেখে।

     

    তখন ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন লোক বেড়িয়ে এসে বলে।

     

    – আমি দেখেচি হুজুর। আমি সক্কাল সক্কাল বেলা ঘুম থেইকা উইঠা বাগানে আইছিলাম একটু দেখতে যে সব ঠিকঠাক আছে কিনা। ঠিক তেমনি ভাবে দেখতে দেখতে যখন খাল টার সামনে দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছিলাম হুজুর। এই মাথা কাটা লাশ টাকে দেখতে পাই(লোকটা কেঁদে ফেলে)। আমি অনেক ভয় পেয়ে যাই হুজুর। আমি এক চিৎকার দিয়ে দৌড়ে এইখান থেকে পালিয়ে যাই। তারপরে আরমান বাবুকে বিষয় টা জানাই। তারপর আরমান বাবু এসে দেখে এবং আপনাদের ফোন করে হুজুর।

     

    লোকটার কথা শুনে রিয়াদ জিগ্গাসু দৃষ্টিতে বলতে থাকে।

     

    – আপনি যখন এসেছিলেন তখন কী কাউকে এখানে বা এখানকার আশেপাশে দেখেছিলেন ? বা কাউকে সন্দেহ জনক মনে হয়েছে ,,?

    – না হুজুর। আমি কাউকে দেখতে পাইনি হুজুর।

     

    রিয়াদ আস্তে আস্তে বলতে থাকে।

    – খুব নিষ্ঠুর ভাবে খুন করা হয়েছে। এতোটা নিষ্ঠুর ভাবে কীভাবে একজন আরেকজনকে মারতে পারে ,,,!

     

    তারপর সে গলা ফুটিয়ে কনস্টেবলদেরকে উদ্দেশ্য করে বলে।

     

    – লাশ টা উঠিয়ে নিয়ে আসো। আর দেখো যেন কাদামাটি কম লাগে লাশটাতে। খুব সাবধানে এনো।

     

    ইন্সপেক্টর রিয়াদের আদেশ পাওয়ার সাথে সাথেই ৩-৪ জন কনস্টেবল খালে নামে। তারা লাশটাকে ধরে বাগানের উপরে উঠায়। এবং একটা কাপড় বিছিয়ে সেখানে রাখতে থাকে।

     

    রিয়াদ কনস্টেবলদেরকে বলে।

    – লাশটা ময়নাতদন্তে পাঠানোর ব্যাবস্থা করো। আর ২ দিনের মধ্যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমার চাই ই চাই।

    – ওকে সার। (কনস্টেবল বলে উঠলো)

     

    বাগানের মালিকের ছেলে আরমান লাশটার দিকে খেয়াল করে তাকিয়ে দেখতে থাকে। লাশটাকে খাল থেকে উঠিয়ে উবুর করে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ লাশের সামনের যৌনাঙ্গের দিকটা নিচে এবং পিছনের দিকটা উপরে রাখা হয়েছিলো। আরমান লাশটার দিকে ভালো করে খেয়াল করে দেখতে থাকে। দেখতে দেখতে হঠাৎ ই তার একটা জিনিসে তার চোখ আটকে যায়। চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়। শরীর কাঁপতে থাকে। ওর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে যেন ও অনেক ভয় পেয়ে গেছে। এই শীতের সকালেও তার কপাল দিয়ে ঘাম ঝড়ছে। ও লাশটা থেকে চোখ সরিয়েই বাসার দিক চলে যেতে থাকে। সে জোড়ে জোড়ে পা চালাচ্ছে আর ভাবতে থাকে  

    – না না। এটা কীভাবে সম্ভব। না এটা হতেই পারেনা। রিয়াকে এতোটা নিষ্ঠুর ভাবে কে মারলো। এ কীভাবে সম্ভব। আমার মাথায় কিচ্ছু আসতেছেনা কিচ্ছুই না। (সে অনেক হাপাচ্ছে , অস্থীর হয়ে গেছে সে) 

     

    আরমান বাসায় আসে। বাসাটা পুরো পাকা। গ্রামের বিত্তশালীদের বাসা যেমন হয় তেমন। তার বাবা-মা বারান্দায় নাস্তা করেছিলো। আরমান বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই তার মা বলে।

     

    – বাবা। আয় নাস্তা করে যা। আর ঐদিকের কী হলো। পুলিশ কী লাশটাকে নিয়ে গেছে ?

     

    আরমান কিছুই বলে না। সে তার রুমে চলে আসে। রুমে এসেই সে তার ফোনটা হাতে নেয়। হাতে নিয়ে আরিফ নামে একটা কন্টাক্ট নাম্বার বের করে। বের করে ফোন দেয়।

     

    (আরিফ হচ্ছে আরমানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। সব সময় তারা একসাথে বেড়ায়। আরিফের বাসা পরের গ্রামেই ,,তার গ্রামের না হরিশপুর। একসাথে একই স্কুলে, একই কলেজে পড়াশোনা করেছে তারা। আরমানের সব কাজের সঙ্গি আরিফ। তো আবার বর্তমানে ফিরে আসি)

     

    কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর আরিফ ফোন ধরে।

    ওপাস থেকে আরিফ বলে‌।

    – হ্যালো দোস্ত, কী খবর।

    – আরে খবর রাখ। জানিস রিয়াকে কে জেনো নিষ্ঠুর ভাবে মেরে তার মাথা আলাদা করে তার মুন্ডুহীন দেহটা আমাদের বাগানের শুকনো খালটাতে রেখে গেছে। ওর শরীরে কোন কাপড় ছিলো না। একদম উলঙ্গ ছিলো। হাতের কব্জি টাও কাটা ছিলো। আমি ওর পায়ের চড়ুতে ওর জন্মদাগ টা দেখে ওকে চিনতে পেরে যাই। কে ওকে এতোটা ‌নিষ্টুর ভাবে মারলো দোস্ত। কাল রাতেও তো তার সাথে আমার কথা হলো।(আরমান কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলছে)

    – আরে আরে কী বলিস। রিয়াকে এতোটা নিষ্ঠুর ভাবে কে মারলো। আর তোদের আম বাগানের খালটাতেই কেন রেখে গেলো।

    – আমিও তো তাই ভাবতেছি দোস্ত। আমার তো ভয় লাগছে। আর টেনশন ও হচ্ছে।

    – আরে ভয় পাইসনা, টেনশন ও করিস না, আমি আসছি তোর বাসায়। ওখানে গিয়ে বিষয় টা ভালো করে শুনবো তোর কাছ থেকে।

    – আচ্ছা দোস্ত। তুই তাড়াতাড়ি আয়।(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আরমান বললো)

     

    আরিফ ফোন রেখে দেয়। আরিফের বাবা তাদের গ্রাম হরিশপুরের মেম্বার। (আরমানরা থাকে আনন্দ পুর গ্রামে)

    বলা যায় যে গ্রামের সবচেয়ে বড় লোক তারাই। আরিফদের বাসাটাও পাকা। রং করা। তাদের বাসায় দুইটা গেট। একটা মেইন গেট, একটা ভিতরের বাসায় ঢুকার গেট।

     

    আরিফ ফোন রেখে যায় ফ্রেশ হতে। কিছুক্ষণ পর ফ্রেস হয়ে সে ঘরে আসে। এসে সে যখন শার্ট পরতে যাচ্ছিলো তখন বাসার দরজায় বেল বেজে উঠল। (এই দরজাটা মেইন দরজাটা না) বাসায় এখন কেউ নেই। আরিফের মা-বাবা গিয়েছে তার দাদু বাসা। যাওয়ার হলো ২ দিন। আজ বিকেলে তাদের আসার কথা। তাই আরিফকেই দরজাটা খুলতে যেতে হয়‌। এদিকে কলিং বেল বাজতেই আছে তো বাজতেই আছে। আরিফ জোড়ে হাঁক দিয়ে বলে।

    – যাচ্ছিরে বাবা যাচ্ছি। একটু কী সবুর হয়না।

     

    আরিফ গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়। খুলার পর সে দেখতে পায় একজন হেলমেট পরা লোক। দুই হাত দিয়ে একটা  মেডিয়াম আকৃতির বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বলছে।

     

    – স্যার আপনার একটা পার্সেল ছিলো। আমি বাইরে বাইকটা রেখে এসেছি। আপনি যদি তাড়াতাড়ি পার্সেল টা নিতেন।

     

    তখন আরিফ অবাক হয় এবং বলে।

    – আমি তো কোন অর্ডার করিনি। আমার আবার কীসের পার্সেল আসবে ,,?

     

    – স্যার পার্সেলে তো আপনার নামটাই লিখা আছে। এইযে দেখুন।

     

    আরিফ বক্স টা হাতে নিয়ে দেখে। বলতে থাকে।

    – তাইতো। বক্সে রিসিভার এ আমার নাম লেখা। আচ্ছা দেখি তো বক্সটার মধ্যে কী আছে।

     

    আরিফ বক্সের উপরের টেপ ছিড়ে বক্সটা খুলতে থাকে। ডেলিভারি ম্যান টা তার সামনেই দাঁড়ানো। বক্স টা খুলেই আরিফ দেখতে পায় একটা লাল রঙের একটা কাপড় দিয়ে পেঁচানো একটা গোলাকৃতির জিনিস। এবং তার পাশে দেখতে পায় একটা ছোট্ট কাগজ। আরিফ কাগজটা কাপড়ের সাইড থেকে হাতে নেয়। কাগজে লেখা ,,, 

     

    “‘ অতীত কখনো কখনো মানুষের জীবনে ভয়ংকর রুপে ফিরে আসে ,,,

    এতোটাই ভয়ংকর রূপে যে মানুষ তা চিন্তাও করতে পারেনা,,, “”

     

    কাগজ টা পরেই আরিফ অবাক হয়। সে কাগজ টা রেখে তাড়াতাড়ি সেই কাপড়ের ভিতরে কী মোড়ানো অবস্থায় আছে তা দেখার জন্য কাপড়টাকে খুলতে থাকে। ডেলিভারি ম্যান টা তখনও সামনে দাঁড়ানো।

     

    আরিফ ‌কাপড় টা খুলে যা দেখে তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো। আরিফের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। আরিফ স্বপ্নেও ভাবেনি যে এমন কিছু সে দেখবে। সে দেখতে পায় রিয়ার মাথা টা ছিলো সেই কাপড়ের ভিতরে। মাথায় কোন চোখ নেই। চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। কী ভয়ংকর দেখতে সেই মাথাটা। আরিফ ভয়ে চিৎকার মেরে সেটাকে হাত থেকে ফেলে দেয়। এদিকে ডেলিভারি ম্যান টাও তখন তার হেলমেট খুলে ফেলে। আরিফ ডেলিভারি ম্যানের দিকে তাকাতেই যেন চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। আরিফ তার চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছেনা। আরিফের মন তাকে জিজ্ঞেস করছে ‘এ কাকে দেখছে সে ,,,’। সে ভয়ে একটা জোড়ে চিৎকার দিয়ে ডেলিভারি ম্যানকে একটা ধাক্কা দিয়ে বাইরের দিকে ফেলে দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দৌড় দেয় তার রুমের দিকে। রুমে ঢুকে সে তার দরজা চাপিয়ে দেয়। আরিফ অনেক ভয় পেয়ে গেছে। সে হাপাচ্ছে। সে তারাতাড়ি তার ফোন টাকে খুঁজছে। কিন্তু সে খুঁজে পাচ্ছে না। এদিকে সেই ডেলিভারি ম্যান লোকটা দরজায় শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করছে এমন শব্দ পায় আরিফ। আরিফ তাড়াহুড়ো করে তার ফোন টাকে খুজতে থাকে। বলতে থাকে।

    – ফোন, ফোন টা কোথায় রাখলাম। আমার তাকে ফোন করতেই হবে। সে ফিরে এসেছে। সে ফিরে এসেছে। সে আর আমাদের ছাড়বে না।(ভয়ার্ত কন্ঠে হাঁপাতে হাঁপাতে আরিফ বলছে) 

     

    আর ঐদিকে দরজায় লোকটার আঘাতের আওয়াজ আরো বেড়েই চলেছে।

     

    আরিফ কী করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। তার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছেনা। কী করবে সে। তাড়হুড়োর মধ্যে খুঁজতে খুঁজতে দেখে ফোন টা বিছানার খুঁটির সামনে পরে আছে। সে ফোনটা তুলে হাতে নেয়। তার হাত কাঁপছে। আর হঠাৎ ই তখন দরজায় জোরে জোরে আঘাত করার শব্দ টা থেমে যায়।

    আরিফ ঢোগ গিলে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনে আরমানের নাম্বারে কল দেয়। রিং হচ্ছে ,, রিং হচ্ছে ,, রিং হচ্ছে ,,

     

    কিন্তু আরমান ফোনটা তুলছে না। এমন সময় আবারো দরজায় আঘাতের শব্দ শুরু হয়। কিন্তু তা এবার আগের থেকে অনেক জোরে হতে থাকে।

     

    আরিফ আরমানকে আবার কল দেয়। দিয়ে রাগের মাথায় বলছে।

    – ফোনটা ধর আরমানের বাচ্চা। ফোনটা ধর। এটা আমাদের জীবন মরনের প্রশ্ন ভাই। ফোনটা ধর।

     

     তখনই দরজায় আঘাতের শব্দ টা থেমে যায়।

     

    ফোনে রিং হতে থাকে রিং হতে থাকে। তখনই হঠাৎ আরমান ফোনটা রিসিভ করে ফেলে। আরিফ তা দেখে ফোনটা কানে নিয়ে বলতে থাকে।

     

    – আরমান। সে,, সে,, ফি,,,,,,,,,,

     

    তখনই পিছন থেকে কেউ একজন একটা লোহার দন্ড দিয়ে জোড়ে আরিফের মাথায় আঘাত করে।

     

    আরিফ জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে তার দুই হাত মাথায় দিয়ে কাতরাতে কাতরাতে মেঝেতে পরে যায়।

     

    ফোনটা মেঝেতে পরে যায়। ফোনের মধ্যে আরমান, আরিফের চিৎকার শুনতে পেরে হ্যালো হ্যালো করছে। বলছে “তোর কী হয়েছে। আরিফ ,, আরিফ ,, “

    লোকটা আস্তে আস্তে হেটে এসে ফোন টা হাতে তুলে নেয়। নিয়ে ধীর গলায় বলে। 

    – আই এম ব্যাক ,,, 

    বলেই একটা ভয়ানক অট্টহাসি হাসি দিতে থাকে।

     

    ওপাস থেকে আরমান বলছে।

    – হ্যালো ,, হ্যালো ,, আপনি কে ,,? আরমান কে কী করেছেন ,,? হ্যালো ,, 

     

    লোকটা ফোন কেটে দিয়ে একটা ভয়ানক হাসি দিতে থাকে।

    হাসতে হাসতে বলে।

    – মরবি। তোরা অবশ্যই মরবি‌‌। হা হা হা হা ,,,

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    উপন্যাস :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১ (সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২

    লেখক:: মির্জা শাহারিয়া 

     

    #গ্রামের_নাম_আনন্দপুর 

    #সে_ফিরে_এসেছে

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১ (সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৩

     

    ওপাস থেকে আরমান বলছে ,,

    – হ্যালো ,,হ্যালো ,, আপনি কে ,, আরিফ কে কী করেছেন ,, হ্যালো ,, 

     

    লোকটা ফোন কেটে দিয়ে একটা ভয়ানক হাসি দিতে থাকে ,, 

    দিতে দিতে বলে

    – মরবি ,,, তোরা অবশ্যই মরবি ,, হা হা হা হা 

     

    _________________________

     

     আরমানের ঘর ,, 

     

    আরমান পায়চারি করছে ,, বলছে ,,

    – না না ,, আরিফের নিশ্চয়ই কোন বিপদ হয়েছে ,, আমাকে সেখানে যেতে হবে ,, আরিফ কে বাঁচাতে হবে ,, আরফিকে বাঁচাতেই হবে ,, 

     

    বলেই আরমান তার শার্ট টা হাতে নিয়ে পরতে পরতে রুম থেকে বের হয়ে যেতে থাকে ,,

     

    তাদের বাসার বারান্দায় বসে থাকা তার মা-বাবা তাকে এভাবে তাড়াহুড়ো করে যেতে দেখে বলে ,,

     

    -আরমান বাবা ,, কোথায় যাচ্ছিস এতো তাড়াহুড়ো করে ,, কোন সমস্যা ?? 

     

    আরমান বলে ,,

    – হ্যা মা ,, আমি পরে এসে তোমায় সবটা জানাবো ,, 

     

    এই বলে আরমান তার বাইক টা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় ,, 

     

    _____________________

     

     আম বাগানের ভিড়ের মাঝে লাশ টাকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে ,, রিয়াদ তার ২-৩ জন কনস্টেবল এর সাথে কথা বলছে ,, ফারুক , সেখানে থাকা এক কনস্টেবল কে কাল রাতের ঘটনা বলতেছে ,, কীভাবে তারা খুজাখুজি করেছিলো রিয়াকে সেই বিষয়ে ,,  ওখানে থাকা গ্রামের লোকজন গুলো বলাবলি করছে ,, ” মাইয়া টারে কী নিষ্ঠুর ভাবে মারলো ,, একদম মায়া দয়া নাই ,, ” , ” হ হ ঠিক কইছো ,, মাইয়াডার শরীরে কত আঘাত ,, না জানি মাইয়াডা মরার সময় কতডা কষ্ট পাইছে ,,  আল্লাহ এমন মৃত্যু যেন আর কাউরে না দেয় ,, ” , ” হ হ কাউরে যেন না দেয় ,,”

     

    ঠিক এইসময় টুটুলকে নিয়ে মতিন মেম্বার সেখানে উপস্থিত হয় ,, তিনি গিয়ে রিয়াদের পাশে দাঁড়ান এবং কে বলতে থাকেন ,,

    – লাশটা কী মর্গে পাঠাইছো না এহানেই আছে ,, ?

    – না পাঠাইনি ,, এম্বুলেন্সকে খবর দিয়েছি ,, আসছে ,,

    – ও ও ,, আচ্ছা লাশটা একটু দেহি ডি ,, কাপড় ডা উডাও তো ,, 

    – এই নয়ন ,, লাশের কাপড় টা একটু উঠিয়ে মেম্বার সাব রে দেখাও (রিয়াদ আদেশের সুরে তার এক কনস্টেবলকে বললো)

     

    কনস্টেবল নয়ন কাপড় টা উঠিয়ে দেখায় ,, মতিন মেম্বার এবং টুটুল লাশ টা দেখেই মুখে হাত দিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয় ,, টুটুল লাশ টা দেখে অস্থির হয়ে যায় ,,তার চোখে মুখে অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট ,, মেম্বার কনস্টেবলকে ইশারা দিয়ে বলে কাপড় দিয়ে লাশ টাকে আবার ঢেকে দিতে ,, কনস্টেবল ঢেকে দেয় ,, 

     

    এরপর মতিন মেম্বার রিয়াদের সামনে যেয়ে বলে ,,

    – ইসস ,, মানুষ মানুষরে কহনো এতোডা নিষ্ঠুর ভাবে মারতে পারে ,, ছিঃ ছিঃ ছিঃ ,, গ্রামে এইসব কী শুরু হইলো ছিঃ ,, 

    – মেম্বার সাব ,, লাশটাকে ফিজিক্যালি অনেক কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে ,, আর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আশা পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে এই বিষয়ে ,,

    – হ দেহো কী হয় ,, আর আমি কিন্তু এই খুনির কঠিন শাস্তি চাই ,, এতোডা নিমর্মভাবে কেউ কাউরে মারতে পারে ,,! (একটু থেমে ধীর গলায়) আচ্ছা লাশটার মাথা কই ,, ?

    – চাচা লাশ টা মাথা বিহীন পাওয়া যায় ,, মাথা টা লাশের আশেপাশে কোথাও ছিলো না ,, 

    – কি কও ,, মাথার খুলি ডা খুঁইজা বাইর করো যেমনে পারো ,, নাইলে কেমনে জানা যাইবো যে এইডা কার লাশ ,, 

     

    তখন ভিড়ের মধ্যে থেকে এক গ্রামবাসী বলে উঠে ,, 

     

    “কাইল রাইত থেইকা রাকিবুল চাচার মাইয়া রিয়ারে খুঁইজা পাওন যাইতেছে না ,, “

    মেম্বার কথাটা শুনেই অবাক হয়ে যায় ,, টুটুল এদিক ওদিক চোখ দিতে থাকে ,, তবে অবাক হওয়ার ছাপ তার চেহারায় নেই ,, 

     

    – কী কও কী ,, কেমনে ,, 

    – কাইল রাইতে বাড়ির পুকুর পাড় থেইকা আর খুঁইজা পাওয়া যাইতেছে না ,,(ভিড়ের মধ্যে থেকে এক গ্রামবাসী বললো)

    – ইন্নালিল্লাহ ,,  মাইয়াডারে কে কিডনাপ করলো আবার ,, মাইয়াডা ভালা আছিলো ,,

     

    তখনই রিয়াদ বলে ,,

     – হ্যা ,, এই বিষয় টা সকালে রাশেদ আমার বাসায় গিয়ে জানিয়ে এসেছে ,, ওর সাথে কয়েকজন কনস্টেবল পাঠিয়ে দিয়েছি ,, তারা খুঁজছে রিয়াকে ,, 

     

    তখন টুটুল বলে উঠে ,,

    – আচ্ছা এই লাশটা রিয়ার নাতো আবার ,, ?

     

    – কী কস এইসব ,, এই লাশ রিয়ার হইতে যাইবো ক্যান আবার ,, রিয়া হয়তো কোথাও হারায়া গেছে (মেম্বার বললো)

     

    – না মানে কাইল রাইত থেইকা রিয়ারে খুঁইজা পাওন যাইতাছে না ,, আবার আইজ সকালেই একটা মাইয়ার লাশ ,, আমার তো মন কইতাছে এইডা রিয়া ,, এইডা রিয়াই হইবো ,,

     

    – চুপ বেয়াদব ,, আন্দাজে ঢিল মারতাছোস ,, এইডা অন্য কোন মাইয়ার লাশ হইতে পারে ,, (মেম্বার বললো)

     

    তখনই রিয়াদ বলে উঠে ,,

    – টুটুল কিন্তু কথাটা খারাপ বলে নি ,, এটা হলেও হতে পারে ,, 

     

    – কী কও এইসব ,, আমাগো গ্রামের মাইয়ারে এতো নিষ্ঠুর ভাবে মারলো কেডা ,, (মেম্বার একটু কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো)

     

    – তার আগে এটা যে রিয়া এই বিষয় টা শিওর হয়ে নিতে হবে ,, আমি এই লাশের ডিএনএ এর সাথে তার মা-বাবার ডিএনএ ম্যাচ করে দেখবো ,, কী হয় ,, আমি রাশেদকে ফোন দিয়ে থানায় আসতে বলছি ,, 

     

    – হ হ একটু দেহো ,, তবে আমার মনে হয় এইডা রিয়া হইবো না ,, এইডা অন্য কেউ হইবো ,, (কাঁদো কাঁদো স্বরে মেম্বার বললেন) 

     

    (মেম্বারের রিয়ার প্রতি টান থাকার কারণ মেম্বার দের কয়েক বাড়ি পরই ই রিয়া দের বাসা ,, ছোট থেকে রিয়াকে বড় হতে দেখেছেন তিনি ,, সেই মেয়েটাকে যে আজ গ্রামের মধ্যে এতোটা নিষ্ঠুর ভাবে খুন হতে হলো তা তিনি মেনে নিতেই পারছেন না)

     

    তখনই সাইরেন বাজিয়ে বাজিয়ে একটা এম্বুলেন্স আম বাগানের প্রবেশ পথের সামনে এসে দাঁড়ায় ,, 

    রিয়াদ তার কনস্টেবলদেরকে লাশ টা উঠিয়ে এম্বুলেন্সসে নিয়ে যেতে বলে ,, কনস্টেবল রাও রিয়াদের কথা অনুযায়ী লাশ টাকে একটা স্টেচারে উঠিয়ে এম্বুলেন্সসে নিয়ে যেতে থাকে ,, রিয়াদ তার দৃষ্টি নিম্নমুখী করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,,,

     

    _______________________________

     

    চট্টগ্রাম শহরের একটা ৩ তলা বাসা। বাসার ২য় তলার একটা ডায়নিং রুম,, সেখানে বসে মিলি , পায়েল আর তাদের বাবা-মা দুপুরের খাবার খাচ্ছে ,, মিলি ও পায়েলের মা সুলতানা বেগম আর মতিন মেম্বার ভাই-বোন ,, অর্থাৎ মিলি-পায়েলদের মামা হলেন মতিন মেম্বার ,, সুলতানা বেগমের বিয়ে হয় চট্টগ্রামের এক বড় বিজনেস ম্যান এর সাথে ,, আর সেই শশুর বাড়ি সুত্রেই আনন্দপুর থেকে চট্টগ্রামে আসা ,, আর এখানেই তারা থাকেন একসাথে ,, তার মেয়ে মিলি ও পায়েল এখানেই একটা কলেজে পড়াশোনা করে ,, সুলতানা বেগম গৃহিণী ,, তো খাওয়ার টেবিলে খেতে খেতে মিলি বলে ,, 

    – মা ,, আর এক সপ্তাহ পর কলেজ ছুটি দিবে ,চলোনা এই সময় মামা বাসা থেকে ঘুরে আসি ,, অনেক দিন হলো সেখানে যাওয়া হয়নি , 

     

    পায়েল ও মিলির সাথে সুর মিলিয়ে বললো ,, 

    – হ্যা মা ,, অনেকদিন হলো মামা-মামিকে দেখা হয়নি ,, ওখানে গেলে কত্ত মজা হয়,, চলোনা এই ছুটিতে ওখানে গিয়ে ঘুরে আসি ,, প্লিজ ,, 

     

    পায়েলের মা বলে ,,

    – আচ্ছা , তোর মামাকে আমি ফোন দিয়ে বলবোনে ,, এখন খা ,, 

     

    মিলি বলে উঠে ,,

    – না মা ,, তুমি আগেই বলো না ,আমরা গিয়ে মামা-মামিকে সারপ্রাইজ দিবো ,,

     

    – আচ্ছা ঠিক আছে , ঠিক আছে যাবোনে,, তোর আব্বু ছুটি নেক ,, একসাথে যাবো ,, 

     

    তখনই মিলি/পায়েল দের বাবা বলে উঠে ,, 

    – আমার এখন অফিস থেকে ছুটি দিবেনা ,, অনেক চাপ এখন ,, তোমারাই গিয়ে ঘুরে এসো ,, আমি নাহয় পরে কোন সময় যাবো ,, 

     

    পায়েলের মা বলে ,,

    – একলা একলা কীভাবে খাওয়া দাওয়া করবে ,, রান্না তো পারোনা ,, 

    – কে বলেছে পারিনা ,, আমি সব রান্না পাড়ি ,, (বুক ফুলিয়ে বলতে থাকে পায়েলের বাবা ,,)

    – হমম ,, জানি কেমন রান্না পারো ,, একবার আমি পাশের বাসার রোজিনা ভাবির সাথে কথা বলতে গেছি ,, তোমাকে বলেগিয়েছিলাম বেগুন গুলো ভেজে রাখতে ,, তুমি তো বেগুন গুলো পুরিয়ে রেখেছো ,, আরো বলো সব রান্না পারো ,,ঢং ,,,

     

    পায়েলের বাবা তখনই একটু কাশতে কাশতে পানি খেতে থাকে ,, 

    মিলি আর পায়েল তারা মুচকি মুচকি হাসতে থাকে ,,

     

    পায়েলের বাবা পানি খেয়ে বলে ,,

    – আমি বাইরে খেয়ে নিবোনে ,, তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা ,, তুমি মেয়েদের নিয়ে একটু তাদের মামা বাড়ি ঘুরে এসো ,, মেয়েরা এতোদিন পর আবদার ধরেছে ,, যাও তাইলে একটিবার তাদের ঘুরিয়েই আনো ,, 

    – আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ,, পরের সপ্তাহেই আমরা রওনা দিবো ,, 

     

    পায়েল আর মিলি খুশিতে আত্মহারা ,, তারা বলতে থাকে ,, 

    – তুমি আমার বেষ্ট মা ,, উম্মাহ ,, 

    – হমম হয়েছে হয়েছে এখন খাওয়া শেষ কর ,, (পায়েলের মা আদেশের সুরে বললেন) 

     

     দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটি শেষে তারা সবাই মিলে আবার খাবার খেতে শুরু করে ,, 

     

    _____________________

     

     আরিফদের বাসার পাশের রাস্তাটা,, রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ ,, ২-১ জন মানুষ হেঁটে যাচ্ছে ,, তখনই একটা বাইককে এদিকে আসতে দেখা যায় ,, বাইক টা খুব দ্রুতই আসছিলো ,, বাইক টা এসে আরিফ দের মেইন গেটের সামনে রেখে একজন আরিফ দের বাসায় প্রবেশ করে ,, বাসার মেইন গেইট দিয়ে বাসায় প্রবেশ করার পর আমরা দেখতে পাই সেটা আরমান ,, 

     

    সে হন্তদন্ত হয়ে ঘরের দরজাটার সামনে আসে ,, সে দেখে যে দরজাটা খোলা অবস্থায় রয়েছে ,,  এবং ঘরের দরজাটার নিচের অর্ধেক অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে ,, দেখে এমন মনে হচ্ছে যে কুড়াল দিয়ে কোপিয়ে কোপিয়ে কেটা ফেলা হয়েছে ,, 

    সে দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ,, সে আরিফের রুমের দিকে যেতে থাকে ,,ঘরের দরজার ৩ রুম পরেই আরিফের রুম ,, সে তাড়াতাড়ি আরিফের রুমের দিকে পা বাড়ায় ,, সে দেখে আরিফের রুমের দরজাটাও খোলা অবস্থায় পরে আছে ,, সে ভিতরে প্রবেশ করে ,, ভিতরে কেউ নেই ,, সে যখনই অন্যান্য রুম যেগুলোতে তার বাবা মা থাকতো সেইগুলোতে আরিফকে খোঁজার জন্য তার শোয়ার রুম থেকে বের হতে পা বাড়ায় ,, তখনই তার চোখ আটকে যায় একটা যায়গায় ,, সে ভয়ে চিৎকার করে উঠে পিছনে পড়ে পিছিয়ে যেতে থাকে ,, আমরা দেখতে পাই যে আরিফের বিছানার উপর দুটো হাতের কাটা অংশ ,, হাত গুলো কব্জি থেকে উপরের অংশের ,, আরমান ভয়ে অস্থির হয়ে যায় ,, সে কাপো কাপো হাতে তার ফোন টা বের করে ,, সে গলা দিয়ে একটা ঢোক গিলে ,, তার মাথা থেকে ঘাম ঝড়ে পরছে ,, 

    সে ফোনে ইন্সপেক্টর রিয়াদের নাম্বার টা বের করে তাকে ফোন দেয় ,, 

     

    তারপর তাদের কথোপকথন ,,

     

    – হ্যা,হ্যা,হ্যালো রিয়াদ ভাই ,, আপনি কোথ কোথায় আছে ,, একটু তাড়াতাড়ি আসুন আরিফদের বাসায় ,, আমার বন্ধু আরিফদের বাসায় ,, তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ,, এবং তার রুমে বিছানায় দুটি কব্জি থেকে কাটা হাত সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ,, আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসুন (কাপো কাপো কন্ঠে আরমান বললো)

    – কী বলো ,, কব্জি কাটা হাত ,, আবার আরিফকেও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা ,, আচ্ছা আমি আসছি ,, তুমি বাসাতেই থেকো ,, আর বাসায় কী আর কেউ নেই ?

    – না রিয়াদ ভাই ,, ওর বাবা-মা বেড়াতে গিয়েছেন এক আত্মীয়ের বাসায় ,, যাওয়ারি হলো দিন ২য়েক ,, আমি তাদেরকেও ফোন করে বাসা আসতে বলছি ,, (কাপো কাপো কন্ঠে আরমান বললো)

     

    – আচ্ছা আমি আমার ফোর্স নিয়ে আসছি ,, তুমি ভয় পেয়োনা ,,সেখানেই থেকো ,, 

    – আচ্ছা রিয়াদ ভাই ,, 

     

    তারপর কল টা রিয়াদ কেটে দেয় ,, 

    আরমান ও তার কান থেকে ফোন টা নামিয়ে নেয় ,, তার চোখ ভিজে যায় ,, সে কাঁদতে শুরু করে ,, আর বলতে থাকে ,,

    ” আরিফরে ,, তুই কোথায় ,, তোকে কে নিয়ে গেলো ,,কে নিয়ে গেলো (কাঁদতে কাঁদতে আরমান বলছে)”

     

    ________________________

     

      মেম্বারের বাড়ি ,, সময় টা তখন বিকেল ৩ টা ,, মেম্বারদের বাসার পিছনে একটা ফুলের বাগান রয়েছে ,, আর সেই ফুলের বাগানের পাশে একটা বসার যায়গা ,, সেখানে আমরা ফারুক আর নিপাকে বসে থাকতে দেখি ,, ফারুক ও নিপা পাশাপাশি বসে আছে ,, ফারুকের ডান কাঁধে নিপা মাথা রেখেছে ,, ফারুক আকাশ পানে চেয়ে রয়েছে ,, নিপা তার হাতে একটা ফুলের পাপড়ি ছিড়ছে ,, 

    চারপাশে পাখি ডাকছে ,, হালকা বাতাস ,, আকাশে হালকা মিষ্টি রোদ ,, 

    তাদের মধ্যে নিরবতা ভেঙ্গে নিপা বলে উঠে ,, 

    – ফারুক ,, তুমি যানো ,, আজ তোমাকে যখন সকালে দেখিনি ,, তখন আমার খুব কষ্ট লাগছিলো ,, আমি ভেবেছিলাম তুমি মনে হয় আমাকে ভুলেই গিয়েছো  ,,

    – ধুর পাগলি ,, তোমাকে কী আমি কখনো ভুলতে পারি ,, তুমি না আমার বউ হতে চলেছো ,, আমি এই জগতের সবকিছু ভুলে গেলেও তোমাকে ভুলতে পারবোনা ,, ভালোবাসি যে তোমায় ,, প্রচন্ড ভালোবাসি ,, 

    – আমরা বিয়ে করবো কবে ,, 

    – আমাদের এখানের মুরগির খামারের ব্যবসাটা ভালোভাবে‌ দাঁড়িয়ে যাক ,, বাবা ঢাকাতে এতো গুলো ফ্রাম এর ব্যবসা চালনা করছে তারপরও নাকি গ্রামে ফ্রাম দিতে হবে তাকে ,, তুমি চিন্তা করো না ,, আমাদের এই পারিবারিক ব্যাবসার বিষয় টা শেষ হলেই আমার আব্বাকে দিয়ে তোমার বাড়িতে বিয়ার প্রস্তাব পাঠাবো ,, 

    – আমার আব্বা যদি না মানে ,, আমাকে যদি অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিতে চায় তখন কী হবে ,, আমি যে তোমায় ছাড়া আমার জীবনে আর কাউকে ভাবতে পারবোনা ফারুক ,, আমি তোমাকে না পেলে কিন্তু মরেই যাবো ,, (কাঁদো কাঁদো হয়ে নিপা বলে,)

    – আরে ধুর পাগলি ,, কানতোছো কেনো ,, আমি আছিনা ,,  কাদিওনা,, তোমার কান্না দেখলে আমার ভালো লাগেনা ,, তুমি সবসময় হাসি মুখে থাকবা ,, সবসময় ,,

    (বলেই ফারুক নিপার চোখের পানি মুছে দেয় ,, নিপা ফারুককে জড়িয়ে ধরে, ফারুকের বুকে মাথা রাখে ,, ফারুকও নিপার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে,,)

     

    তাদের থেকে সরিয়ে আমাদের পাশের গাছে ফুটে থাকা একটা ফুলের উপর দেখানো হয় ,, ফুলের উপরে বসে থাকা মৌমাছি টা সেখান থেকে উড়ে চলে যায় ,, 

     

    __________________

     

     আরিফদের বাড়ি ,, 

     

    আরিফের রুমে একটা বিছানা , একটা পড়ার টেবিল , একটা ডেসিন টেবিল ও একটা আলনা রয়েছে ,, বিছানার উপর হাত গুলো পাশাপাশি খুব ভালোভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ,, বিছানার ঠিক বিপরীত পাশের দেয়ালের জায়গাটা পুরো খালি ,, 

    সেখানে হাটু গেরে মাথা নিচু করে বসে আছে আরমান ,, সে কাঁদছে ,, সে শব্দ করে নয় ,, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে ,, 

    তখনই বাড়ির মেইন দরজাটা খোলার শব্দ পায় সে ,, সে ভয় পেয়ে যায় ,, সে পাশের আলনার পাশে একটা কাঠের লম্বা লাঠির মতো কিছু একটা দেখতে পায় ,, সে সেটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে যায় ,, তারপর ঘরের দরজা টার ক্যারাত ক্যারাত শব্দ শুনতে পায় সে ,, সে রুমের দরজার পাশে ভয়ে ভয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে লাঠিটা শক্ত করে ধরে উচিয়ে রেখেছে ,, যাতে সে সেই অনাগত লোকটাকে সন্দেহজনক মনে হলে মারতে পারে ,, 

     

    কয়েকজন ব্যালকনি দিয়ে বেড়িয়ে তার ঘরের দিকে আসছে ,, জুতার শব্দ এরকমই পাওয়া যাচ্ছে ,, রুমের সামনে দিয়ে যখনই তারা ঢুকতে যাবে আরমান লাঠিটা দিয়ে আঘাত করতে যাবেই তখনই রিয়াদ সরে দাঁড়ায় ,, এবং লাঠির আঘাত টা ফ্লোরে গিয়ে পরে ,, রিয়াদ ইতস্তত হয়ে বলে ,,

     

    – কী করছেন আরমান সাহেব ,, আমরা পুলিশ ,, আর আমি আপনার রিয়াদ ভাই ,, খুনি নই ,,

    (আরমান মুখ উঁচিয়ে দেখে যে রিয়াদ তার ৪-৫ জন কনস্টেবল কে নিয়ে এখানে এসেছে)

     

    আরমান বলতে থাকে ,,

    – আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম রিয়াদ ভাই ,, আমি ভেবেছিলাম যে আরিফকে তুলে নিয়ে গিয়েছে সেই আবার এসেছে ,, আমি তাই লাঠিটা দিয়ে আঘাত করতে চেয়েছিলাম ,, ঐযে দেখুন বিছানায় কব্জি থেকে কাটা হাত পরে আছে ,, 

     

    রিয়াদ বিছানার দিকে তাকায় ,, রিয়াদ বিছানার কাছে যেয়ে দেখে হাত গুলো বেশ তরতাজা ,, হাতে কোন আঘাতের ই চিহ্ন নেই ,, তারপর রিয়াদ তার এক কনস্টেবলকে বলে ,,

    – এই হাত গুলো কে ফরেনসিক বিভাগে পাঠানোর ব্যাবস্থা করো ,, 

    – ইয়েস স্যার ,, (বলেই দুইজন কনস্টেবল হাত গুলোর কাছে চলে গেলো ,, )

     

    রিয়াদ তারপর আস্তে আস্তে বেড়িয়ে আরমান সাহেবের কাছে এসে দাড়িয়ে বলে ,, কী হয়েছে আমাকে প্রথম থেকে বলো ,,

     

    আরমান বলতে থাকে ,, 

    – আরিফের ফোন থেকে একটা ফোন আসে ,, সে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো ,, আর সাথেই সাথেই একটা চিৎকার দিয়ে তার মাটিতে লুটিয়ে পরার আওয়াজ পাই ,, আর ফোনটা মেঝেতে পরে যায় ,, আমি হ্যালো,হ্যালো করতেছিলাম ,, তখনই কেউ একজন ফোনটা হাতে নিয়ে বলে আই এম ব্যাক ,, বলেই একটা ভয়ানক হাসি দেয় ,, আমি কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে যায় ,, তারপর আরো ফোন দেই কিন্তু ফোনটা বন্ধ বলছে ,, 

     

    এসব শুনে রিয়াদ বলে ,, ও এইব্যাপার ,, কে সেই লোকটা এটা আমাদেরকে আগে জানতে হবে ,, লোকটার খোঁজ পেলেই আমরা আরিফের খোঁজ পেয়ে যাবো 

     

    তারপর রিয়াদ তার কনস্টেবলদেরকে ডাকে ,, এবং বলে ,,

    – কিডনাপারের কোন না কোন ক্লু আমরা এখানে পাবো ,, যেটা দিয়ে আমরা তাদের ধরতে পারবো ,, পুরো ঘর টা ভালো করে সার্চ করো ,, কিছুনা কিছু পাবেই পাবে ,, 

    – ওকে স্যার ,, এখুনি চেক করছি ,, (বলেই কনস্টেবল রা পুরো রুম চেক করতে শুরু করে দেয় ,,)

     

    রিয়াদ আরমানের কাঁধে হাত রেখে বলে, “কাদিস না ,, আমরা নিশ্চয়ই আরিফকে খুঁজে বের করবো ,, তুই কাদিস না ,,” বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিয়াদ রুম থেকে বের হয় ,, হয়ে ঘরে ঢুকার গেট টার ওখানে যায় ,, গিয়ে দেখে গেট টার অবস্থা ,, আর আস্তে আস্তে বলতে থাকে ,,

    – গেট টাকে বড় কোন জিনিস দিয়ে ভাঙ্গা হয়েছে ,, কুড়াল জাতীয় কিছু হয়তো ,, 

    রিয়াদ ভাঙ্গা দরজাটা নেড়েচেড়ে দেখতে থাকে ,, তখনই তার চোখ পরে যায় দরজায় কোনে ,, কি যেন একটা চকচক করছে ,, সে কাছে যায় ,, গিয়ে সেই জিনিস টাকে তুলে নিয়ে আসে ,, এবং দেখে সেটা একটা আংটি ,, আংটি টার উপর নীল রঙের পাথর দেওয়া ,, ডিজাইন করা ,,  আংটি টা দেখে বেশ দামিই মনে হচ্ছে ,, সে আরমান কে ডাক দেয় ,, আরমান আসে ,, রিয়াদ আরমানকে জিগ্গেস করে ,,

    – এটাকি আরিফের আংটি ,, ?

    – না না ,, আরিফ আংটি পরতো না ,, ওর ভালো লাগতো না আংটি,

    – তাহলে কী ওর বাবা-মা পরে ? 

    – আমার জানামতে আঙ্কেল, আন্টি কেউই আংটি পরে না ,, আর তাদের হাতে কোন সময় আংটি পরতে দেখিওনি ,, 

     

    রিয়াদ আস্তে আস্তে বলতে থাকে ,,

    – তাহলে এই আংটি টা কার হতে পারে ? কিডনাপার এর নয়তো ,, ? 

     

    রিয়াদ আংটিটা ভালো করে দেখতে থাকে ,, দেখতে দেখতেই তার মনে হতে থাকে যে আংটি টা সে কোথাও দেখেছে ,, একবার দুবার না ,, প্রায় অনেক বারই দেখেছে ,, কিন্তু এখন তার মনে পরছেনা যে কার হাতে দেখেছে এই আংটি ,, সে মাথার উপর প্রেসার দিয়ে মনে করার চেষ্টা করতেছে ,, সে চোখ বন্ধ করে খুবই চেষ্টা করতেছে মনে করার জন্য ,, 

     

    আর তখনই তার চোখ খুলে ফেলে ,, তার মনে পরে যায় ,,

     

     সে বলতে থাকে ,,

    – হ্যা মনে পড়েছে ,, মনে পড়েছে ,, এই আংটি , এই আংটিতো আমি তার হাতে দেখেছিলাম ,, 

    – কার হাতে রিয়াদ ভাই (আরমান জিগ্গাসার সুরে বলে)

    – আমি দেখেছিলাম ,,, 

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর 

    সিজন :: ১ (সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৩

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :; গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১ (সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৪

     

    – হ্যা মনে পড়েছে ,, মনে পড়েছে ,, এই আংটি , এই আংটিতো আমি তার হাতে দেখেছিলাম ,, 

    – কার হাতে রিয়াদ ভাই (আরমান জিগ্গাসার সুরে বলে)

    – আমি দেখেছিলাম ,,, আমি দেখেছিলাম এটা টুটুলের হাতে ,, 

     

    আরমান কিছু বলতে যাবে ,, তখনই আরিফের বাবা-মা এসে উপস্থিত হয় ,, আরিফের মা বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই কান্না শুরু করে দেয় ,, রিয়াদের কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে ,,

     

    – আমার আরিফ কোথায় ,, কে কিডনাপ করেছে আরিফকে ,, আমার আরিফকে এখুনি আপনারা নিয়ে আসুন,, এক্ষুনি ,, (কাঁদতে কাঁদতে আরিফের মা বলে)

    – শান্ত হোন চাচি ,, আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি ,, আমরা আপনার আরিফকে খুঁজে বের করবোই করবো ,, আপনারা ভেঙে পরবেন না ,, শক্ত হোন ,, ধৈর্য ধরুন ,, (রিয়াদ আরিফের মাকে বুঝাতে থাকে)

     

    আরিফের বাবা-মা আরিফের ঘরের দিকে যেতে থাকে ,, গিয়ে দেখে দুইজন কনস্টেবল কাঁটা হাতগুলোকে পলি ব্যাগে এ ঢুকাচ্ছে ,,  এটা দেখে তার বাবা-মা আরো কান্নায় ভেঙে পরে ,, আরিফের মা তার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে ,,

     

    – ওগো ,, আমাদের আরিফের হাত গুলোকেও কেটে ফেলেছে ,, আমার আরিফ কে আমার কাছে এনে দাও ,, আমি আমার সোনার টুকরা ছেলে আরিফকে চাই ,, আমাকে এনে দাও ,, আমাকে এনে দেও ,, (বলতে বলতেই আরিফের মা অজ্ঞান হয়ে যায় )

    আরিফের বাবা শক্ত করে তাকে ধরেন ,, রিয়াদ আর আরমান ও এগিয়ে যেতে থাকে ,, আরিফের মা মেঝেতে শুয়ে পরেন ,, তার স্বামীর কাঁধে তার মাথা ,, এই অবস্থা দেখে রিয়াদ, আরমান আর আরিফের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে ,,

    – আপনারা দুজন মিলে তাকে পাশের রুমে নিয়ে যান ,, নিয়ে গিয়ে একটা বিছানায় শুইয়ে দিন ,, ছেলে হারানোর যন্ত্রনা তিনি আর সইতে পারছেন না ,,

     

    আরমান আর আরিফের বাবা তাই করে ,, তারা দুইজন ও একজন কনস্টেবল মিলে ধরাধরি করে আরিফের মা কে পাশের রুমে নিয়ে যায় ,,

     

    তখনই অন্য একজন কনস্টেবল এসে রিয়াদকে বলে ,, স্যার ,, এই বক্সটা বিছানার নিচে পেয়েছি ,, বলেই কনস্টেবল মাঝারি আকৃতির বক্স টা রিয়াদের দিকে এগিয়ে দেয় ,, রিয়াদ হাতে গ্লাভস পরে বক্স টাকে মেঝেতে রাখে ,, সে বক্সটা খুলে ,, বক্সের ভিতরে একটা কাগজ ,, আর কিছু রক্তও লেগে রয়েছে ,, রিয়াদ কাগজ টা হাতে নেয় ,, কাগজে সেই লিখাটাই লেখা ছিলো ,, 

     

    “‘অতীত কখনো কখনো মানুষের জীবনে ভয়ংকর রুপে ফিরে আসে

    এতোটাই ভয়ংকর রূপে যে মানুষ তা চিন্তাও করতে পারেনা””

     

    রিয়াদ লেখাটা দেখে বেশ চিন্তায় পরে যায় ,, সে ভাবতে থাকে ,, সে ভাবতে থাকে খুনি কে হতে পারে ,, কেনোই সে এটা বলবে ,, কী তার উদ্দেশ্য ,, তখনই পাশের রুম থেকে এই রুমে আসে আরিফের বাবা,, এসে কাঁদো কাঁদো হয়ে রিয়াদ কে বলতে থাকে ,,

    – কে আমাদের আরিফ কে নিয়ে গেলো ,, তার হাত গুলো কেন কাটলো ,, আরিফ তো কখনো কারো ক্ষতি করেনি ,, তাইলে কেন করলো ,, আমাদের ছেলেটা না জানি এখন কী অবস্থায় আছে ,, (বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আরিফের বাবা)

    – আপনি শান্ত হোন ,, আমরা যথেষ্ঠ চেষ্টা করছি আরিফকে খুঁজে বের করার ,, আপনি অস্থীর হবেনা না ,, ঠান্ডা হোন ,, এই নয়ন এক গ্লাস পানি দেওতো তাকে ,,

     

    নয়ন বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিল টার উপরে থাকা কাঁচের গ্লাস টা থেকে পানি দিতে যায় ,, কিন্তু দেখে গ্লাসটা খালি ,, তারপর সে পাশে রাখা জগ টা থেকে পানি ঢেলে আরিফের বাবাকে দেন ,, আরিফের বাবা বিছানার এক কোণে বসে পানিটা খেতে থাকেন ,, অর্ধেক পানি খেয়ে গ্লাস টা নামিয়ে রাখেন ,, এরপর রিয়াদ তার সামনে বিছানায় বসে , বসে বলে ,, 

     

    – আপনি ভয় পাবেন না ,, শক্ত হোন ,,আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি আরিফ কে উদ্ধার করার জন্য ,, আপনি টেনশন করবেন না ,,

     

    আরিফের বাবা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত দেন ,, 

     

    রিয়াদ আবার বলতে থাকে ,, 

    – আপনি আমার সাথে থানায় চলুন,, এই হাত গুলো আরিফে না অন্য কারো তা জানার জন্য হাতের ডিএনএ এর সাথে আপনার ডিএনএ ম্যাচ করে দেখতে হবে ,, আর আপনি চিন্তা করবেন না ,, বাসায় দুইজন কনস্টেবল থাকবে ,, তারা আপনার স্ত্রীর দেখাশোনা করবে যতক্ষণ আপনি আমার সাথে থানায় থাকবেন ,, 

     

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,, ( মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত দিতে দিতে বললো)

     

    রিয়াদ বিছানা থেকে উঠে ,, এবং কনস্টেবল ‌নয়ন কে বলে ,,

    – আমি থানায় যাচ্ছি ,, তুমি আর সেলিম আরিফের মা য়ের দিকে খেয়াল রেখো ,,

    – ওকে স্যার ,, (স্যালুট দিয়ে নয়ন উত্তর দেয়)

     

    – আচ্ছা তো চলুন চাচা ,, যাওয়া যাক ,, (আরিফের বাবাকে উদ্দেশ্য করে রিয়াদ বললো)

    – আচ্ছা চলো বাবা ,, 

     

    তারপর আরিফের বাবা বিছানা থেকে উঠলো ,, রিয়াদ আরিফের বাবাকে নিয়ে ঘর থেকে বের হতে থাকে ,, এবং ৩ জন কনস্টেবল ও তাদের পিছন পিছন যেতে থাকে ,,

     

    _______________________

     

    রাত ৭:৩০ ,, মতিন মেম্বারের বাসা ,, রাত হওয়াতে চারিপাশে অনেক অন্ধকার,, ঝিপি পোকা ডাকছে ,, আকাশে মেঘ ,, মনে হয় বৃষ্টি হবে ,, 

     

     নিপার রুম ,,  দিথী , জিনিয়া , নিপা বসে গ্রুপ স্টাডি(একসাথে পড়াশুনা) করছে ,, আজ তাদের কলেজ থেকে কিছু এস্যাইন্টমেন্ট দিয়েছে ,, এবং সেগুলো সলভ করার জন্যই গ্রুপ স্টাডি করা ,, এবং তাদেরকে হেল্প করার জন্য এসেছে তাদের নাদিয়া আপু,,  (নাদিয়া আপু হলেন গ্রামের মাসুম মিয়ার মেয়ে ,, তার মা জন্মের সময় মারা যায় ,, ছোটো থেকেই পড়াশোনায় অনেক ভালো সে ,, সে রিয়ার ব্যাচ ,, অর্থাৎ সে আর রিয়া একই স্কুলে , কলেজে পরেছে ,, এবং তাদের মধ্যে অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ,, নাদিয়ার বিয়ে হয়েছিলো ৫ বছর আগে ,, কিন্তু তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে চলে যায় ,, তারপর থেকে সে আর বিয়ে করেনি ,, বাসায় তার বুড়ো বাপ টাকে দেখা শুনা করে ,, এবং কয়েকটা প্রাইমারির ছেলে-মেয়েদের টিউশনি করায় ,, তো আবার ফিরে আসি বর্তমানে ,, )

    নিপা , দিথী এরা পড়তেছে ,, জিনিয়া , নাদিয়া আপুর কাছ থেকে একটা জিনিস শিখিয়ে নিচ্ছে ,, 

     

    তখনই নিপার ঘরে প্রবেশ করে শিউলি বেগম ,, বলতে থাকে ,,

    – কী করো আম্মাজানেরা ,, পড়ালেহা না অন্যকিছু ,,

    – এইতো চাচি ,, কলেজের দেওয়া এস্যাইন্টমেন্ট করতেছি ,, (জিনিয়া বললো)

    – আসান্টমান্ট আবার কী আম্মাজান ,, আমি আবার পড়ালেহা করি নাই তো ,, তাই জানিওনা ,, (হাসতে হাসতে বলছে শিউলি বেগম)

    – এস্যাইন্টমেন্ট মানে বাড়ির কাজ চাচি ,, মানে কলেজ থেকে কিছু পড়া দিয়েছে সেগুলো করতেছি ,, (দিথী বললো)

    – বাড়ির কাম তো তোমাগো মাইয়াগো বিয়ার পর আছে ,, জামাইগো বাড়িত ,, দেহোনা আমার কত্ত কাম করতে হয় ,, 

    – তুমি তো মা সারাদিন সাজুগুজু নিয়া পইরা থাহো ,, কাম তো মাঝে মাঝে ফুলমতি আইয়া কইরা দিয়া যায় ,, (নিপা বলছে)

    – আরে বেক্কাল ছেড়ি আমি রাইতের কামের কথা কইছি ,, দিনে বইসা থাকলেও তো রাইতে তোর বাহের লগে কাম কাজ করতে করতে মোর জান যায় যায় অবস্থা ,, আর কস আমার কাম নাই ,,, (বলেই আবার হাসতে থাকেন শিউলি বেগম)

    – আরে মা চুপ করো চুপ করো ,, বান্ধবী গো সামনে কী কও এইসব ,, 

    – আমার তো আরো কথা পেডের মধ্যে আছে ,, কিন্তু কইতে পারিনা ,, 

     

    এই কথা শুনে জিনিয়া ফিসফিসিয়ে বলতে থাকে, ” যা বলেন তাই শুইনাই তো মাথা ঘুড়ায় ,,”

    – কিছু কইলা আম্মাজান ,, ? 

    – না না চাচি ,, আমি কইতাছি যে আপনারে অনেক সুন্দর লাগতাছে ,, 

    – হ হ ,, তোমার চাচায় তো এরলাইগা আমার প্রেমে পরছিলো ,,

     

    সবাই চাচির কথা শুনে হাসতে থাকে,, তখনই দিথী, শিউলি বেগম কে বলে ,, 

    – আচ্ছা চাচি রিয়া আপুর স্বামী কে ,, তার স্বামী কোথায় ,, আমি ২ বছর হলো গ্রামে এসেছি কিন্তু তার স্বামিকে কখনোই দেখিনি ,,

     

    তখন নিপাও দিথীর সুরে বলতে থাকে ,,

    – হ মা ,, রিয়া আপুর স্বামি কই ,, আরিয়ানের বাবা কেডা ,,

     

    (নিপা আর রিয়ার এইসব প্রশ্ন শুনে নাদিয়া একটু অস্বস্তি বোধ করতে থাকে,, সে খালি এদিক ওদিক তাকাতে থাকে )

     

    তখন চাচি বলে,,

    – অনেক দুঃখের কাহিনী গো সেইডা ,, রিয়ার বিয়া হইছিলো ৭ বছর আগে ,, পোলাডা ,,,,,,,,

     

    চাচির কথা থামিয়ে দিয়ে মাঝখানেই নাদিয়া বলতে থাকে ,,

    -চাচি আমি আজ যাই তাইলে ,, বাবা ঘরে একলা আমার লাইগা বইসা আছে ,, আমি না গেলে আবার না খাইয়া থাকবো ,,

    – আরে বসো মা ,,  একটু কাহিনী ডা শুনো তারপর আমি তোমার বাপের লাইগা খাওন দিয়া দিমু নে নিয়া যাইয়ো ,, 

    – কিন্তু চাচি ,,,

    – কোন কিন্তু না চুপ কইরা বসো ,, (চাচি আদেশের সুরে বললো)

     

    নাদিয়া আর কিছু না বলে বসে পড়ে ,,

     

    দিথী বলতে থাকে ,,

    – হ্যা চাচি বলুন ,, রিয়ার বিয়া হইছিলো ৭ বছর আগে ,, তারপর ,,

    – হ্যা ৭ বছর আগে এক পোলার লগে তার বিয়া হয় ,,

    (নাসিম ঠিক সেইসময় নিপাদের জানালার পাশ দিয়ে বাড়ির পিছনে যাচ্ছিলো ,, চাচির এই কথাটা শুনে সে দাড়ায় যায় ,, সে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় ,, এবং কান পেতে শুনতে থাকে চাচির কথা গুলা)

    পোলাডার বাড়ি ছিলো আমাগো পাশের গ্রাম হরিশপুরে ,, পোলাডা ছিলো প্রবাসী ,, নাম ছিলো মনে হয় নোমান না কী জানি একটা ,, ছেলেডার সাথে রিয়ার ঐ ফেবুক না কী বুক যে কস তোরা ,, ঐডি তে পরিচয় হয় ,, আস্তে আস্তে সম্পর্ক গইড়া উঠে,, রিয়ার বাড়ির সবাইরে রিয়া ঐ পোলাডার সম্পর্কে ও তাগো প্রেমের সম্পর্কের সম্মন্ধে জানায় ,,‌রিয়ার বাড়ির সবাই মাইনাই নেয় ,,আর পোলাডার বাড়িরও সবাই মাইনা নেয় ,, তারপর ঠিক হয় পোলাডা এইবার দেশে আইলেই বিয়া হইবো ,, তারপর পরের মাসেই পোলাডা দেশে ফিরে ,, তাদের বিয়া হয় ,, বিয়ার ১ সপ্তা পরই ই পোলাডা আবার বিদেশে চইলা যায় ,, রিয়ারে নিয়া যাওনের কথা ছিলো ,, কিন্তু পরে কয় যে বিদেশে একটা ভালো কাজ পাউক ,, তহন নিয়া যাইয়া বিদেশেই একেবারে থাইকা যাইবো ,, তো তারপর নোমানে বিদেশে যায় গা ,, তারপর সে বিদেশেই থাকে ,, এদিকে রিয়া প্রেগন্যান্ট হয় ,, তার একটা পোলা সন্তান হয় ,, রিয়ার বাবু হওয়ার সময় নোমান আইতে পারে নাই ,, তারপর ৬ মাস কাইটা যায় ,, নোমান রিয়ারে জানায় যে পরের মাসে একেবারে বিদেশ থেইকা চইলা আইবো ,, এতোদিন যা ইনকাম কইরা টাকা জমাইছে সব নিয়া আইবো আর আইয়া ঢাকাতে একটা ফ্লাট কিন্না ওখানেই রিয়ারে নিয়া থাকবো ,, রিয়াও নোমানের দেশে আসার কথায় মেলা খুশি হয় ,, তারপর যেইদিন নোমানের দেশে ফিরার কথা ,, সেইদিন আইলো একটা খারাপ খবর ,, নোমান বিদেশে ট্যাক্সি কইরা এয়ারপোর্টে আইতাছিলো আসার পথেই এক বড় ট্রাকের সাথে তার ট্যাক্সির অনেক বড় একটা এক্সিডেন্ট হয় ,, সেখানেই নোমান মারা যায় ,, নোমানের চেহারা বলে চিনাই যাইতাছিলোনা,, শরীর ক্ষতবিক্ষত হইয়া গেছিলো ,, এই খবর তহন তার সহকর্মীরা দেশে জানায় ,, রিয়া খবর টা জানতে পাইরাই সহ্য না করতে পাইরা অজ্ঞান হইয়া যায় ,, টানা ৫ ঘন্টা তার জ্ঞান ছিলোনা ,, অনেক ভালোবাসতো হেয় নোমানরে ,, তাদের আগত সন্তান রে নোমান আর দেখতে পারলো না ,, পরে সেই বিদেশ থেইকা আর লাশ টা দেশে আনা যাইনাই ,, অনেক চেষ্টা করছিলো নোমানের বাপ-মা ,, কিন্তু লাশ টারে আর দেশে আনতে পারে নাই ,, রিয়া তার নোমানের লাশ টাও একবার দেখতে পারেনাই ,, নোমান বলে কইছিলো পোলা হইলে আয়ান নাম রাখতে ,,তাই পরে তহন আয়ান নাম ডাই দেয় ,,রিয়ার বাবা মা তারে আবার বিয়া দিতে চায়,, কিন্তু  নোমানের শোক ভুলতে না পারায় ,, আর আরিয়ানের মুখের দিকে চাইয়া রিয়া আর পরে বিয়া বহেনাই ,, 

    (নাসিমের চোখ দিয়ে পানি পরছে ,, সে দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ,, তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তার ভিতর টা পুরে যাচ্ছে ,, কোন এক চাপা কষ্ট যেন তার মধ্যে যেগে উঠতে থাকে ,, সে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে ,, চলে যেতে থাকে বাড়ির পিছনের বাগানের দিকে)

     

    – ইসস ,, আয়ান তার বাবার মুখ টা দেখতে পারলোনা ,, আইজ তার মা ও নিখোঁজ ,, বাচ্চা পোলাডার অহন কী অবস্থা ভাব একবার ,, (জিনিয়া বললো)

    – হ্যা রে ,, এই পৃথিবীতে বাবা-মা না হারানোর কষ্ট অনেক রে ,, আরিয়ান এতো কম বয়সে দুইজনকেই হারালো (দিথী ধীর গলায় বললো)

    – আচ্ছা তো মাইয়ারা মন খারাপ কইরো না ,, সবই বিধাতার লিখন ,, তিনি যা আরিয়ানের কপালে লিখছেন তাই হবে ,, এখানে আমাদের কোন হাত নেই ,,

    – হ্যা চাচি ,, সবই উপরওয়ালার ইচ্ছা ,, আমরা তো উছিলা মাত্র ,, (দিথী বলছে)

    – আচ্ছা তো জিনিয়া ,, দিথী ,, তোমরা আইজ আমাগো বাড়িতেই থাকো ,, মেলা রাইত হইছে ,, এতো রাইতে আর বাড়ি যাইতে হইবো না ,, কাইল সকালে নিপার লগে একসাথে কলেজে যাইয়ো তোমরা ,, আমি তোমাগো বাড়িত ফোন দিয়া জানায় দিতাছি ,, 

    – আচ্ছা চাচি ,, আপনি যেহেতু বলছেন ,, আর এতো রাতে বাড়ি যাওয়াটাও ঠিক হইবো না ,,বাইরে আকাশ খারাপ ,, বৃষ্টি নামতে পারে ,, (জিনিয়া বললো)

     

    তখনই নাদিয়া বলতে থাকে ,, 

    – আচ্ছা তো চাচি ,, আমি তাইলে যাই এখন ,, 

    – আরে খারাও ,, তোমারে খাওন দিয়া দিতাছি ,, তুমি নিয়া যাইয়ো ,, যাইয়া তোমার আব্বার লগেই একলগে খাইয়ো ,, আর দিথী , জিনিয়া , নিপা তোমরা খাইতে আহো ,, 

     

    শিউলি বেগম নাদিয়াকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে থাকে ,, নিপা দিথী আর জিনিয়াকে বলতে থাকে , ” আয় তোরা ,,” 

    দিথী বলে ,,

    – আমি বই-খাতা গুলো গুছিয়ে রেখেই আসছি ,, 

     

    নিপা তারপর চলে যায় ,, দিথী তার বইগুলো বন্ধ করে রাখতে থাকে ,, তখনই জিনিয়া বলতে থাকে ,, “দোষ্ত ওয়াশরুম টা কোথায় রে ,, একটু ইমার্জেন্সি,,”

    – মনে হয় পাশের রুমে আছে ওয়াশরুম ,, তুই দেখ গিয়ে ,, 

    – আচ্ছা দোস্ত আমি গেলাম ,, (বলেই জিনিয়া তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বের হয়ে গেলো)

     

    দিথী বই গুলো সাজিয়ে রাখছে খাটের একটা কোনায় ,, 

     

    সিন শিফট হয়ে ঢাকায় দেখানো হয় ,,

     

    শাহারিয়া গোসল করে ঘরে আসলো ,, গামছা দিয়ে মাথা মুছতেছে সে ,, ভাবছে ,, 

    – বাড়িতে একটা ফোন দেওয়া দরকার ,, ঐদিন নিপার সাথে কথাই হলোনা ,, রাগ করে আছে নাকি আবার আমার উপর,,  ওর ফোনেই ফোন দিয়ে দেখি ,, 

     

    বলেই শাহারিয়া ফোন টা হাতে নিলো ,,নিয়ে নিপার নাম্বার টা বের করে ফোন দিলো ,, 

     

    দিথী বিছানার এক কোণায় বই গুলো রেখে বিছানা থেকে নামতেই যাবে , তখনই বালিশের নিচে একটা ফোন বেজে উঠে ,, 

    সে বালিশ টা উঠায় ,, আর দেখে নিপার ফোন টা বাজছে ,, সে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে শাহারিয়া ভাইয়া লেখা ,, সে নিপাকে ডাকতে থাকে ,,

     

    – নিপা,, ও নিপা ,, তোর ফোন আসছে ,, 

    নিপার কোন সারা শব্দই নেই,, দিথী কিছুটা মাথা চুলকায় ,, ভাবতে থাকে ,,

    – ফোন টা কী ধরবো ,, ? আচ্ছা ধরি ,, দেখি কে ,, 

     

    ফোন টা রিসিভ করে দিথী ,,

     

    – হ্যালো নিপা ,, কেমন আছিস ,, (ওপাস থেকে শাহারিয়া বলে)

    (দিথী ধীর গলায় বলে ,,

    – আমি নিপা নই ,,আমি ওর বান্ধবী দিথী ,, 

     

    (শাহারিয়া দিথীর ভয়েস টা শুনেই চুপ হয়ে যায় ,, কী অসম্ভব সুন্দর কন্ঠ ,, যেন হালকা গলা থেকে বেড়োনো মিষ্টি এক আওয়াজ ,, এমন সুন্দর কন্ঠ সে আগে কোথাও শুনিনি ,, )

    – কী হলো কিছু বলছেন না যে ,, নিপা তার মায়ের সাথে গিয়েছে ,, কিছু বলার থাকলে বলুন আমি তাকে বলে দিবো ,, 

     

    (শাহারিয়া তার নিরবতা ভেঙ্গে উত্তর দেয় ,)

    – ন,না তেমন কোন জরুরী কথা না ,, আমি এমনিই নিপার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলাম আরকি ,, আ,,  আপনি কেমন আছেন ,, 

    – আলহামদুলিল্লাহ ভালো ,, আপনি নিপার কী হন ,, ? 

    – আ,আমি ? আমি নিপার বড় ভাই ,, ঢাকায় থাকি ,, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করি ,, (একটু নার্ভাস হয়ে বললাম)

    – ওহহ ,, আমি নিপার বান্ধবী দিথী ,, নিপার সাথে একই কলেজে পরি ,, 

    – কিন্তু আমার তো দিথী নামে গ্রামে কারোও কথা মনে পরছে না  ,, না মানে আরকি গ্রামে প্রায় কমবেশি সবাইর নাম জানা ,, তবে দিথী নামে  তো কারোও কথা মনে পরছেনা ,, 

    – ওহহ হ্যা না মনে পরারই কথা ,, আমি গ্রামে এসেছি ২ বছর হলো ,, আগে আমি আমার মামা বাসায় ছিলাম ,, 

    – ও ,, আমিও গ্রামের বাইরে আছি ৪ বছর হলো ,, এই ৪ বছরে বাসায় যাওয়া হয়নি ,, আপনি গ্রামে কার বাসায় এসেছেন এখন ,,

    – আমার মা-বাবার বাসায় ,, আমার আব্বুর নাম অন্তর ইসলাম ,, 

    – ওহোহো ,, আপনি অন্তর আঙ্কেলের মেয়ে ,, অন্তর আঙ্কেল তো বর্তমানে গ্রামের চেয়ারম্যান ,, তাই না ?

    – হ্যা ,, বাবা এবারের চেয়ারম্যান হয়েছে ,, আপনি ঢাকায় কার সাথে থাকেন ,,

    – আমি ,, ? আমি ঢাকায় একলাই আছি ,, ব্যাচেলর মানুষ ,,  বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে যায় ,,(একটু থেমে) আর পুরো ফ্ল্যাটেও আমি একাই আছি ,, 

    – বিয়ে করেননি ,, ?

    – না না(হাসৌজ্জল মুখ নিয়ে) ,, কাজের চাপে বিয়ের কথা নিয়ে আপাতত ভাবাই হয়নি ,, আর পছন্দের মতো কোন পাত্রিও পাচ্ছিনা ,, তাই আরকি বিয়েটা করে হওয়া উঠেনি ,, 

    – ওহহ ,, একলা একলা থাকেন ভয় করেনা ? 

    – না,নাহ  ,, ভয় কিসের ,, পুলিশের চাকরি করি ,, মনে ভয়ডর থাকলে কী আর হয় ,, 

    – হমম তাও ঠিক ,, তো রাতে খেয়েছেন ,, ? 

    – নাহ ,,এখনো খাওয়া হয়নি ,, মাত্র গোসল দিয়ে আসলাম ,, আপনি খেয়েছেন ? 

    – না খাবো একটু পর,, এতো রাতে গোসল করছেন ,, ঠান্ডা লেগে যাবে তো পরে তখন ,, 

    – নাহ ,, ঠান্ডা লাগবেনা ,, অভ্যাস হয়ে গেছে এখন রাতে গোসল করাটা ,, সারাদিন অনেক কাজের চাপ থাকেতো ,, তাই আরকি আর সময় হয়ে উঠেনা ,,

     

    (নিপা দিথীকে ডাকার জন্য দিথী বলে ঘরে ঢুকতেই যাবে ,, তখনই দেখে যে দিথী ফোনে কথা বলছে ,, নিপা তাড়াতাড়ি পিছিয়ে গিয়ে দরজার পর্দার আড়াল লুকিয়ে পরে ,, এবং কান পেতে শুনতে থাকে কি বলছে দিথী )

     

    – তো নিজে রান্না করতে পারেন না ? বুয়ার রান্না খেতে ভালো লাগে ? 

    – বুয়ার রান্না ? বুয়ার রান্না তো একদমই ভালো লাগে না ,, মাঝে মধ্যে কোনদিন তো আবার বুয়াই আসে না ,, তখন বাইরে গিয়ে খেয়ে আসতে হয় ,,তবে রান্নার করার একদিন চেষ্টা করতে গিয়েছিলাম ,, মাছ ভাঁজতে গিয়েছিলাম ,, মাছ গরম তেলে ছাড়ার সাথে সাথে তেল ছিটকে হাতে পারে যায় ,, আমি হাতে বরফ দেওয়ার জন্য ফ্রিজ থেকে বরফ দিতে থাকি ,, ফ্রিজের ওখানে ছিলাম প্রায় ১০-১৫ মিনিটের মতো ,, একটু পর দেখি পোড়া পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে ,, আমি দৌড়ে রান্না ঘরে গিয়ে দেখি মাছ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ,, তারপর থেকে আর কখনো রান্নার চেষ্টা করিনি ,,

    – হা হা হা ,, দাড়ান দাড়ান আমি হাঁসি টা থামিয়ে নেই  ,,(দিথী হাসতে থাকে)

    – আপনি হাসছেন ,, আমি একটা ছেলে মানুষ ,, রান্না বান্না কী আমার দ্বারা সম্ভব ,, ঐ একেবারে বিয়ের পর বউয়ের হাতের সুন্দর রান্না খাবো ,, ততদিন পর্যন্ত বুয়ার হাতের স্বাদ হীন রান্না ছাড়া আর উপায় নাই ,,  

     

    (দিথী হাসি থামিয়ে বলতে থাকে)

    – তো বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে ফেলুন ,নয়তো বুয়ার রান্না খেয়ে খেয়ে পাকস্থলী কিডনী হয়ে যাবে আর কিডনী পাকস্থলী হা হা হা,,

    – আচ্ছা তাইলে আমার জন্য পাত্রি দেখুন ,, মনের মতো একজনকে পেলেই বিয়ে করে নিবো ,, 

    – তাই ,, ! আচ্ছা সে দেখা যাবে,, তো ঘুমাবেন কখন ,, ? 

    – এইতো এখন খাবো ,, খেয়ে ঘুমিয়ে পরবো ,, 

    – ওহহ ,, (একটু থেমে) নিপা তো এলোনা ,, কথাও হলোনা তার সাথে আপনার ,, 

    – হ্যা ,, ও মনে হয় মায়ের সাথে একটু ব্যাস্ত ,, বাই দা ওয়ে , আপনার কন্ঠটা কিন্তু ভারি সুন্দর ,, খুব মিষ্টি এক কন্ঠের অধিকারিণী আপনি ,,

    – হা হা ,, ধন্যবাদ আপনাকে ,,(একটু থেমে) ভালো থাকবেন ,, 

    – আপনিও ,, আল্লাহ হাফেজ

    – আল্লাহ হাফেজ,,

     

    বলে দিথী ফোনটা কেটে দিলো ,, তখনই নিপা মুচকি হাসতে হাসতে পর্দার আড়াল থেকে বের হয়ে এসে বলতে থাকলো ,, 

     

    – কিরে কার সাথে কথা বলছিলি ,, তুই তো বলে প্রেম করিস না ,, তোর বলে বয়ফ্রেন্ড নেই ,, আর এখন আমি জিনিয়া নেই তুই এই সুযোগে তোর বফের সাথে কথা বলছিস ,, (বলেই নিপা বিছানায় দিথীর পাসে বসে পরলো) 

    – আরে ধুর ,, কী বলিস এসব ,, তুই যা ভাবছিস তেমন কিছুই না ,, তুই ছিলি না তোর ভাই ফোন দিয়েছিলো ,, তাই ফোনটা আমি ধরি ,, তুই খালি সবসময় ওসব ভাবিস ,, পঁচা একটা ,,

    – ওহহ হ্যা এখন তো আমিই পঁচা ,,(দিথীর গাল আলতো করে ধরে বলতে পারি থাকে) দেখিস তুই প্রেম করেই বিয়ে করবি ,, আমি বলে রাখলাম ,, তুই মিলিয়ে নিস ,,

    – ধুর যত সব আলতু ফালতু কথা ,, (বলেই দিথী বিছানা থেকে উঠে চলে যেতে থাকলো ,,)

    – আরে দাড়া দাড়া ,, শরম পাসনা ,, দাড়া ,, (বলতে বলতে নিপাও দিথীর পিছন পিছন চলে যায়)

     

    – মেয়েটার কন্ঠ টা কিন্তু দারুন ,, তার কন্ঠ আমাকে পাগল করে দিয়েছে ,, এবার বাসা গেলে তার সাথে একবার দেখা করতে হবে ,, ওপসস ,, খাবার গুলো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ,, যাই গিয়ে খেয়ে নেই ,, পেটে তো ইঁদুর ভলিবল খেলা শুরু করে দিছে ,, ( বলেই শাহারিয়া বেড রুম থেকে বের হয়ে ডায়নিং রুমের দিকে যেতে থাকে ,,)

     

     __________________

     

     মেম্বারের বাড়ির পিছনের ফূলের বাগান ,, চারিদিকে ঝিঝি পোকার ডাক ,, বাড়ির পিছনে একটা লাইট লাগানো ,, সেই আলোতে বাগান টা ভালোই দেখা যাচ্ছে ,, আমরা দেখতে পাই বাগানের পাশে বসার যায়গাটায় টুটুল আর নাসিম বসে আছে ,, নাসিম হাতে পাতা ছিড়তেছে ,, আর টুটুল বসে বাগানের ফুল গুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ,, 

    টুটুল বলে উঠে ,,

    – আইজ রাইতে মদের একটা চালান আওয়ার কথা ছিলো ,, কিন্তু সেইডা বাতিল কইরা দিছি ,,

    – কেন টুটুল ভাই ,, চালান ডা লইয়া লইতেন ,, 

    – না রে ,, আইজ রাইতে আমার একটা বড় কাম আছে ,, 

    – কী কাম টুটুল ভাই,, 

    – তুই হেইডা বুঝবিনা ,, তুই বাড়িত যা ,, আমার কামে যাইতে হইবো অহন ,, আকাশ খারাপ বৃষ্টি নামতে পারে 

    – মোরেও আপনার লগে লন ভাই ,, 

    – না না ,, তোরে নেওন যাইবো না ,, তুই বাড়িত যা ,, 

    (বলেই টুটুল সেখান থেকে উঠে বাড়ির পিছনের দরজার দিকে যেতে থাকে,, লাইটের আলোতে আমরা দেখতে পাই টুটুলের প্যান্টের পিছনের পকেটে কী যেন চকচক করছে ,, তখনই দূরে কোথাও বাজ পড়ে এবং চারিদিকে আলোকিত হয়ে উঠে ,, আর তখনই আমরা দেখতে পাই তার পিছনের পকেটে একটা স্ক্রু ড্রাইভার ও একটা ছুরি রাখা 

     

    ____________________

     

     মেম্বারের বাড়ির সামনের দিক ,, 

    শিউলি বেগম নাদিয়াকে একটা বড় খাবারের বাটি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতে থাকে ,,

    – ঝড় বৃষ্টির রাইতে না যাইলে হয়না মা ?

    – না চাচি আমাকে যাইতেই হইবো ,, আব্বায় না খাইয়া আমার লাইগা অপেক্ষা করতাছে ,, আর এহান থেকে তো মাত্র ৫-৭ মিনিটের রাস্তা আমার কোন সমস্যা হইবো না ,, আপনি খাইয়া লইয়েন চাচি ,,আমি তাইলে গেলাম ,,

    – সাবধানে যাইয়ো মা ,, 

     

    (নাদিয়া আঙিনা থেকে দুই কদম সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে চলে যেতে থাকে ,, আকাশে মেঘ জমেছে ভালোই,, মনে হয় বৃষ্টি নামবে ,, আকাশে একটু একটু পর বিজলী চমকিয়ে উঠছে ,, ) 

     

    ______________________

     

     রাতুল-মায়াদের রুম ,, রাতুল, মায়া, রিয়াদ একসাথে বিছানায় খেতে বসেছে ,, রিয়াদ মায়া ভাবিকে বলে ,,

    – ভাবি আমারে আরেকটু মাংস দেওতো ,,

    – এই নেও (মায়া মাংস উঠিয়ে দিতে থাকে ,)

     

    রাতুল বলতে থাকে ,, 

    – বেশি খাইস না মোটা হইয়া যাবি ,, পরে দিয়া তোরে আর বিয়া দিতে পারুম না (মুচকি হেসে রাতুল স্যার বললো)

    – দেহোনা ভাবি ,, ভাইয়ায় আমারে খাওয়ার খোঁটা দেয় ,, তুমি কিছু কও ভাবি ,, 

    – হ্যা রিয়াদ এর ই তো খাওয়ার সময় ,, ও এখন খেয়ে ছাতি চওড়া করবে ,, তুমি নিজের দিকে দেখো ,, ভুড়িটা তো তোমার দিন দিন বেড়েই চলেছে ,, 

     

    রাতুল স্যার কথাটা শুনেই কাশতে থাকে ,,মায়া ভাবি পানির গ্লাসটা এগিয়ে দেয় ,, পানির এক ঢোক খেয়ে রাতুল স্যার বলতে থাকে ,, 

    – খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে নাই ,, চুপচাপ ভাত খাও ,, 

     

    রিয়াদ আর মায়া ভাবি রাতুলের কথা শুনে হাসতে থাকে ,, 

    রিয়াদ বলতে থাকে,, 

    – উচিত কথা কইলেই ভাইয়ার গায়ে লাগে ,, (বলেই হেসে ফেলে রিয়াদ)

    – রিয়াদদদ ,, চুপ কইরা ভাত খা ,, (একটু শাসনের সুরে বললেন রাতুল স্যার )

    – হয়েছে হয়েছে আর ঝগড়া করতে হবে না ,, এই নাও (বলেই রাতুলের পাতে মাংস তুলে দেয় মায়া ,, )

     

     রিয়াদ একবার মায়া ভাবি আর একবার তার ভাই রাতুলের দিকে তাকাতে থাকে খেতে খেতে ,, মায়া ভাবি চোখের ইশারায় তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠতে বলেন ,, রিয়াদও তার খাওয়ায় মনযোগ দিতে থাকে ,, সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করতে থাকে ,, 

     

    _________________________

     

    গ্রামের রাস্তা ,, রাস্তার একপাশে জঙ্গল ,, আরেকপাশে ফসলি ক্ষেত ,, আকাশ অনেক খারাপ হয়ে উঠেছে ,, মনে হচ্ছে আজ ঝড় উঠবে ,, চারিদিকে অনেক বাতাস ,, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকে সবকিছু আলোকিত হয়ে যাচ্ছে ,, নাদিয়া হেটে হেটে যাচ্ছে সেই রাস্তা দিয়ে ,, সে ভাবছে ,,” তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে ,, কিছুক্ষণের মধ্যেই মনে হয় বৃষ্টি নামবে,, “

     

    তখনই সে পিছনে কারো চলার আওয়াজ পায় ,, নাদিয়া মেয়েটা সাহসী ,, সে তৎক্ষণাৎ পিছনে ফিরে তাকায় ,, কিন্তু দেখে কেও নেই ,, আকাশে বিজলী চমকিয়ে উঠে ,,সে আবার সামনে ফিরে যেতে থাকে,, আবার তার মনে হয় কেউ তাকে অনুসরণ করছে ,, সে অসস্তি বোধ করতে থাকে ,, সে এবারও পিছনে ফিরে তাকায় ,, দেখে এবারও কেউ নেই,, সে জোড়ে আওয়াজ করে বলতে থাকে , ” কে আপনি ,, সামনে আসুন ,, পিছনে থেকে কেন বার বার ভয় দেখাচ্ছেন”

    কিন্তু না , কোন সারা শব্দ নেই ,, সে আবার সামনে ঘুরে যেতে থাকে ,, বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে ,, আস্তে আস্তে বেশ জোরেই বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে ,, নাদিয়া দ্রুত পা চালিয়ে যেতে থাকে ,, মুখ থেকে বাতাসে উড়তে থাকা চুল গুলো এক হাতে সড়িয়ে দিচ্ছে ,, আর এক হাতে খাবারে বক্সের হাতল টা ধরে রেখেছে ,, সে যাচ্ছে ,, এবং হঠাৎ করেই কেউ পিছন থেকে এসে তার মূখ চেপে ধরে ,, সে কথা বলতে পারছেনা ,, মুখ টা সম্পূর্ণ চেপে ধরেছে কেউ ,, মুখ টা চেপ ধরেই কেউ একজন তাকে পাশে থাকা জঙ্গলের ভিতরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ,, সে চিৎকার করতে চাচ্ছে কিন্তু পারছেনা ,, আকাশের বৃষ্টির বেগ বেড়ে গেছে ,, বিজলী ও চমকিয়ে উঠছে,, 

    লোকটার মুখ গামছা দিয়ে পেঁচানো ,, লোকটা নাদিয়া মুখ টা পিছন থেকে চেপে ধরে টেনে হিচড়ে জঙ্গলের ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে ,, নাদিয়া তার হাত পা ছড়িয়ে সেই লোকটার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে, সে ছটফট করছে ,, তার হাত থেকে খাবারের বাটিটা পরে যায় ,, এবং তার সম্পুর্ণ বডিটাকে লোকটা জঙ্গলে ভিতরে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায় ,, এবং তারপরই চারিদিক নিস্তব্ধতায় ছেয়ে যায় ,, রাস্তা সম্পূর্ণ জনমানবহীন রয়ে যায় ,, চারিদিকে শুধু বৃষ্টি ,, আর বৃষ্টি ,,

     

    ________________________

     

     সেই বদ্ধ ঘরের দরজাটা কেউ একজন খুলছে এই বৃষ্টির রাতে ,, অনেক বৃষ্টি ,, চারিদিকে বাতাস আর বাতাস ,, গাছপালা গুলো নুইয়ে পরছে বাতাসের জন্য ,, 

     

     ঘরের দরজাটা খুলে যায় ,, দরজাটা সম্পূর্ন মেলে দেয় সেই লোকটা ,, লোকটার ছায়া মুর্তি দেখে বোঝা যাচ্ছে তার কাঁধে করে কোন একজনকে সে এনেছে ,, এবং ঠিক সেইসময়

     অনেক বড় একটা বিজলী চমকায় ,, এবং আমার সেই আলোতে দেখতে পারি সেই লোক রেইনকোট, হেলমেট পরা ,, এবং তার কাঁধে একজন অচেতন মেয়ে ,,

     হঠাৎ করে সিন টা সেখানেই কাট হয়ে যায়,, 

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১ (সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৪

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১ (সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৫

     

    দরজাটা সম্পূর্ন মেলে দেয় সেই লোকটা ,, লোকটার ছায়া মুর্তি দেখে বোঝা যাচ্ছে তার কাঁধে করে কোন একজনকে সে এনেছে ,, এবং ঠিক সেইসময়

     অনেক বড় একটা বিজলী চমকায় ,, এবং আমরা সেই আলোতে দেখতে পারি সেই লোক রেইনকোট, হেলমেট পরা ,, তার কাঁধে একজন অচেতন মেয়ে ,, এবং তারপরই সব অন্ধকার হয়ে যায় 

     

    ______________________

     

    মেম্বারের বাসা ,, নিপাদের রুমে দিথী , জিনিয়া , নিপা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে,, বাইরে অনেক বৃষ্টি ,, মাঝে মাঝে বাজ পরার শব্দ পাওয়া যায়,, নিপারা বিছানা রেডি করতে থাকে ঘুমানোর জন্য ,, ঠিক সেইসময় শিউলি বেগম তাদের রুমে আসে ,, 

     

    – কী করো আম্মাজান রা ,,

    – এইতো চাচি বিছানা রেডি করছি ,, ঘুমানোর জন্য ,, (দিথী বলে)

    – ও আইচ্ছা ,, এই লও কাঁথা ,, বাইরে বৃষ্টি হইতাছে,, আবহাওয়া এমনিতেই ঠান্ডা তার উপর আরো ঠান্ডা হই যাইবো ,,   রাইতে কামে দিবো ,,

    (বলেই চাচি কাঁথা গুলো তাদের দিকে এগিয়ে দেয়)

    – ধন্যবাদ চাচি,, (দিথী বললো)

    চাচি কাঁথা গুলো দিয়েই চলে যায় ঘর থেকে। নিপা আর জিনিয়াও দিথী কথায় থেমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরতে লাগলো ,, বিছানা টা উত্তর-দক্ষিণ মুখি করা ,, তারা লম্বার দিকে মাথা না দিয়ে প্রস্থের দিকে মাথা দিয়েছে ,, অর্থাৎ পশ্চিমে মাথা দিয়েছে আর পূর্ব দিকে পা ,, রুমের পশ্চিমে একটা জানালা রয়েছে ,, সেটা বন্ধ করা ,যেহেতু বাইরে অনেক বৃষ্টি ,, নিপা মাঝখানে শুয়েছে ,, তার ডান পাশে জিনিয়া ও বাম পাশে দিথী ,, তারা সবাই লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরে ,, বাইরে বৃষ্টির বেগ বেড়েছে ,, বিদ্যুৎ চমকানি এখন কিছুটা কমেছে ,, তবে অনেক বাতাস বাইরে ,,

     

    _______________________

     

     রাতুল মাস্টারের ঘর,, রুমে একপাশে বিছানা ,, তার সাথে ডেসিন টেবিল লাগানো ,, বিছানার বিপরীত দেওয়ালে একটা আলনা ও একটা আলমারি রয়েছে ,, রুম অন্ধকার ,, 

    মায়া রাতুলের বিপরীত পাশে ফিরে রয়েছে ,, রাতুল মাষ্টার এখনো ঘুমায় নি ,, মায়াও ঘুমায় নি ,, রাতুল মাষ্টার মায়াকে বলতে থাকে ,,

     

    – এই একটু এদিকে আসোনা ,, আজকে কতসুন্দর একটা পরিবেশ,, এই পরিবেশে খাওয়া দাওয়া না করলে কী হয় ,, 

    – তোমাকে না রাতে এতো গুলা ভাত খাওয়াই লাম ,, তাও ক্ষিধা লাগে গেছে তোমার ,, তুমি গিয়ে উঠে রান্না ঘরে যেয়ে খেয়ে আসো ,, আমি উঠতে পারবোনা ,, 

    – আরে ভাত খাবো না তো ,, 

    – তাইলে কী খাবে,, নাস্তা খেতে চাইলে যাও আলমারির নিচের ড্রয়ারে চানাচুর বিস্কিট রাখা আছে ,, নিজে উঠে নিয়ে খাও ,, 

    – তোমাকে খাবো বউ ,, 

    – জিভ কেটে দিবো ,, আজ কোন খাওয়া-খাওয়ি নাই,, এতো সুন্দর বৃষ্টির আবহাওয়াতে আমি ঘুমাবো ,, তোমার তালে তাল দেওয়ার শখ নাই এখন আমার ,, হুঁ ,, (ভেঙচি কেটে মায়া বলতে লাগলো)

    – এই শুনোনা ,, একটু কাছে আসো না ,, এই বৃষ্টির আবহাওয়াতে কী জামাই বউ ঘুমায় ,, আসোনা একটু মসলা বাটি ,, 

    – রান্না ঘরে শিলপাটা রাখা আছে ওখানে মসলা বাটো গিয়ে ,, আমার পাটায় আজকে শিল দিয়ে বাটাবাটি বন্ধ ,, (মায়া কড়া গলায় বলতে থাকে)

    – রাগ করে আছো কেন বউ ,, আচ্ছা তাইলে কাছে এসো ,, তোমাকে ধরে ঘুমাই ,, তোমাকে ধরে না ঘুমালে যে আমার ঘুম আসতে চায় না গো ,, 

    – পাশে কোলবালিশ আছে ঐটা ধরে ঘুমাও ,, খালি দুষ্টামি করার ধান্দা মাথায় ঘুরে তোমার ,, আজকে আমাকে একদম জ্বালাবেনা ,, আমি এখন ঘুমাবো ,, (বলেই মায়া চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান ধরে)

     

    রাতুল ফিসফিসিয়ে বলতে থাকে,,

    – আজকে এতো সুন্দর আবহাওয়াতেও বউ দিলোনা ,, কী আর করার ,, যাই ঘুমিয়ে পরি ,, পরের বার সুদে-আসলে উঠিয়ে নিবো ,, 

     

    মায়া রাতুলের কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে ,, তারপর চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে যেতে থাকে ,, রাতুলও ওপাস ফিরে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে থাকে ,,

     

    ________________________

     

     বদ্ধ ঘর ,, ঘরের বিছানার মধ্যে একটা মেয়ে শুয়ে রয়েছে ,, হাত পা বিছানার চার টা কোনের সাথে বাঁধা,, হাতের কব্জি গুলো কেটে ফেলা হয়েছে ,, শরীরটা ঝলসে গেছে ,, দেখে মনে হচ্ছে গরম কিছু শরীরের উপরে ফেলানো হয়েছে ,, ঘরের জানালা টা খোলা ,, বাইরে বিজলী চমকিয়ে উঠাতে জানলা দিয়ে মাঝে মাঝে ঘরে আলো সরিয়ে পরছে ,, লোকটা চুলার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ,, মনে হচ্ছে সে কিছু একটা গরম করছে ,, তখনই মেয়েটার জ্ঞান ফিরে ,, ঘরের লাইট টা নিভু নিভু করে জলাতে মেয়েটার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না ,, মেয়েটা জ্ঞান ফিরলে সে বলতে থাকে ,,

    – আমাকে এখানে কে এনেছে ,, কে,,? আমি বাড়ি যাবো ,, বাবা,,, (মেয়েটি কান্না করে ফেলে)

    সে নিজের শরীরটাকেও নড়াতে পারছেনা ,, অনেক জ্বালাপোড়া আর ব্যাথা করতেছে ,, মেয়েটা দেখতে পায় একটা লোক দূরে একটা চুলার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ,, মাথায় হেলমেট পরা তার ,, মেয়েটা চিল্লিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে ,,

    – কে আপনি ,, কেন আমাকে এতোটা নির্যাতন করছেন ,, কী ক্ষতি করেছি আমি আপনার ,, 

     

    লোকটা বরাবরের মতো এবারো চুপচাপ ,, কোন কথাই বলছেনা সে ,, সে আনমনে নিজের কাজ করে যাচ্ছে ,,

    মেয়েটা আবার বলে ,,

    – আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ ,, আমার বুড়ো বাপটা আমাকে না দেখতে পেলে মরেই যাবে ,, আমি ছাড়া যে এই পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই ,, প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন ,, আমি আপনার সব কথা শুনবো ,, আপনি যা বলবেন তাই দিবো ,, (তারপর কেঁদে বলে) তবুও আমাকে ছেড়ে দিন ,, আল্লাহর দোহাই লাগে আপনার ,, ছেড়ে দিন ,, 

     

    লোকটা এবার চুলার দিক থেকে ফিরে তাকায় ,, সে আস্তে আস্তে তার দিকে এগোতে থাকে ,, তার হাতে লাল রঙের লম্বা কিছু একটা দেখা যাচ্ছে ,, 

     

    মেয়েটা আর্তনাদ করতে থাকে ,, বলতে থাকে ,,

     

    – ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিন ,, আমাকে ছেড়ে দিন আমি বাড়ি যেতে চাই ,, আমাকে কিছু করবেন না প্লিজ ,, আমাকে ছেড়ে দিন ,, আমার বুড়ো বাপটা মরে যাবে আমাকে না পেলে ,, 

     

    লোকটা বিছানার কাছে এসে দাঁড়ায় ,, ঘরের লাইটটা বিছানার একটু সাইডের ঠিক উপরে জলছে ,, লোকটা এসে হেলমেট টা খুলে ,, খুলে নিচে ফেলে দিয়ে বলতে থাকে ,, 

    – আমিও তো সেদিন আর্তনাদ করেছিলাম ,, কিন্তু ,, কিন্তু শুনলেনা ,, দেখো আমাকে ,, কিছূ মনে পরে সেদিনের কথা ,,, ? 

    (বলেই ঠিক লাইটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় লোকটা ,,)

     

    মেয়েটা চেহারাটা দেখেই আঁতকে উঠে ,, ঠিক সেই সময় বাইরে একটা বড় বাজ পরাতে সেই আলোতে পুরো ঘর আলোকিত হয়ে যায় ,, আমার দেখতে পারি যে সেই মেয়েটা নাদিয়া ,, সে বিছানায় শুয়ে আছে,, কিন্তু আমরা লোকটার চেহারা দেখতে পাই না ,, কারণ লোকটা জানালার বিপরীত পাশে মুখ করে ছিলো ,, 

     

    নাদিয়া ভয়ে চোখ গুলো বড় বড় করে ফেলে,, তার যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম ,, সে ভয়ে কাঁপতে থাকে ,, তার পুরো দেহটা কাঁপছে ,, নাদিয়া ভয়ে ভয়ে বলতে থাকে ,,

     

    – আঁ আঁ আপনি,,,,,,, 

     

    সাথে সাথেই লোকটা তার হাতে থাকা গরম মোটা স্ক্রু ড্রাইভার টা দুইহাত দিয়ে উপরে তুলে সজোরে তার গলার ঠিক মাঝখানে সম্পুর্ন টা ঢুকিয়ে ফেলে ,, 

     

    নাদিয়া চিৎকার টাও করতে পারনি ,, পুরো শরীর টা বেঁকে উঠে সাথে সাথে তার ,, শরীরটা ঝাপটাচ্ছে সে ,, মুখ দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে আসে ওর ,, চোখের কোন থেকে পানির ফোটা গড়িয়ে পরে ,, গলা দিয়ে বিন্দুমাত্র শব্দ করতে পারেনি সে ,, শরীর ঝাপটানো থেমে যায় ,, একটু একটু করে বুক টা কেঁপে উঠছে তার ,, গরুর জবাইয়ের পর যেমন গরুটা একটু একটু পর কেঁপে উঠে ঠিক তেমন ভাবে ,, লোকটা বিছানার পাশে থাকা কুড়াল টা উঠিয়ে আনে ,, এবং কুড়াল টা দিয়ে জোরে একটা গলা বড়াবড় কোপ দেয় ,, এবং মাথাটা ছিটকে গিয়ে ঘরের কোণে চেয়ারে বসে থাকা কোনো এক ব্যক্তির পায়ের কাছে গিয়ে পড়ে ,, 

     

    ________________________

     

    নতুন দিনের এক নতুন সকাল ,,মেম্বারের বাসা ,, বৃষ্টি নেই এখন ,, কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ,, সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি, ,, সারারাত বৃষ্টি হওয়াতে গাছপালা গুলো সজীব হয়ে উঠেছে ,, গাছের পাতায় জমে থাকা পানি গুলো এক ফোটা , দুই ফোটা করে বাসায় চালে পরতেছে ,, আঙিনার কোথাও কোথাও একটু একটু পানি জমে রয়েছে ,, পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ ও পাওয়া যাচ্ছে ,, একটু একটু পর ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে ,, মেম্বারের বাসায় রুমের সামনেই একটা লম্বা বড় বারান্দা ,, সেই বারান্দার উপর দিয়ে হেটেই প্রত্যেক রুমে যেতে হয় ,, বারান্দার মাঝ বরাবর ঘরে ঢুকার লোহার দরজা ,, আর বারান্দায় গ্রিল রয়েছে ,, লোহার দরজাটার পাশেই একটা কাঠের টেবিল ,, সেখানে বসে নাস্তা করছে দিথী, নিপা ও জিনিয়া ,, তারা জ্যাম দিয়ে পাউরুটি খাচ্ছে ,, এবং কলাও রাখা আছে পাশে ,, শিউলি বেগম টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ,, দেখছেন যে কারো কিছু লাগবে কী না ,, নিপা খেতে খেতে বলে ,,

     

    – আচ্ছা মা ,, আব্বায় কই ,, খাইতে আইবো না ,,

    – তোর আব্বায় ঘুমাইতাছে ,, দেরি উডবো ,, তোরা খা ,, কলেজে যাইতে হইবো তোগো ,, 

    – চাচায় কী প্রতিদিন দেরি কইরা উডে ,, ? (জিনিয়া বললো)

    – না , না ,, যেইদিন রাইতে একটু খাটাখাটনি বেশি হয় হেইদিন ই সকালে একটু দেরি কইরা ঊডে ,, বুইড়া মানুষ তো ,, রাইতে ঘুম আর বিড়াল মারলে তো সেই ঘুমডারে সকালে ঘুমাইয়া পোষায় লইতে হইবো ,, তাই না ,, হা হা হা হা 

    – চাচায় বিড়ালের মতো একটা অবলা প্রাণীরে রাইতে মারে ? বিড়ালরা কিছু কইতে পারেনা দেইখা ,, নাইলে ওরা যে কত্ত কষ্ট পায় এইডা কী চাচা বুঝেনা ,, (মুখ হতাশ , গোমড়া করে জিনিয়া জিগ্গেস করলো)

    – যার বিড়াল হেয় তো কইতে পারে যে বিড়ালডা কতডা কষ্ট পাইছে  ,, আর তাছাড়া বিড়ালের মালিকরে কষ্ট দিলেই তো তোমাগো চাচায় সুখ পায় ,, আর আমার বিড়াল ডাও তোমাগো চাচার ইন্দুর ডা খাইয়াই মজা পায় ,, তাই তো প্রতি রাইতে ইন্দুর বিলাই খেলি আমি আর তোমাগো চাচায় ,, হা হা হা হা,,,

    – মা চুপ করো ,, কী কও এইসব ,, (নিপা বলে)

     

    এদিকে দিথী মুখ চেপে হাসছে ,, আর জিনিয়ার হাবার মতো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে ,, সে যেন কিছুই বুঝতে পারছে না ,, 

     

    চাচি আবার বলে ,, 

    – জিনিয়া মা মনে হয় কিছুই বুঝে নাই ,, আচ্ছা আচ্ছা লও এক গ্লাস কইরা দুধ খাও সবাই ,, তাইলে মাথায় বুদ্ধি বারবো আর সব বুইজ্যা যাইবা ,, (বলেই কাঁচের দুধের জগ থেকে গ্লাসে দুধ দিতে থাকেন শিউলি বেগম) 

    – মা , আমারে একটু কম দিও ,, আমার গরুর দুধ কেমন জানি লাগে ,, (নিপা বলে)

    – তাইলে আয় ,, আমার ডি খা ,, 

     

    শুনেই জিনিয়া , দিথী দুইজনেই জোরে হেসে ফেলে ,, জিনিয়া তো হাসিই থামাতে পারতেছিলো না ,, দিথীও আর মুখ চেপে রাখতে পারছিলো না ,, সেও হাসতে থাকে ,, 

    নিপা চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে অভিমান করে বলতে থাকে ,,

    – মা তুমি সবসময় আমাকে পঁচাও কেন ,, ওরা এখন আমার উপরে সবসময় মজা নিবো ,,

    – আরে নিমুনা নিমূনা ,, তুই গরুর দুধ ডিই খা নাইলে  (জিনিয়া হাসতে হাসতে বলতে থাকে)

     

    তখনই আমরা দেখতে পাই ফারুক গোমড়া মুখ নিয়ে মেম্বারের বাসায় ঢুকে ,, হাতে একটা ছাতা ,, সে বারান্দার সামনে এসে বলতে থাকে ,,

     

    – চাচি ,, নাদিয়া আপুরে কোথাও দেখছেন ,, ? 

     

    সবাই হাসি থামিয়ে দেয় আস্তে আস্তে ,, 

     

    চাচি বলতে থাকে ,, 

    – আমার পেডের ভিতরে আছে বাজান ,, কাইল ডেলিভারি হইবো ,, (কথাটা শুনে আবারো সবাই হাসতে থাকে ,,  চাচিও হাসতেছে ,, ফারুক হাসে না ,, সে গোমড়া মুখ করে আবার বলে ,,)

    – চাচি নাদিয়ারে কাইল রাইত থেইকা খুঁইজা পাওন যাইতেছে না ,, তার বাপে তো এই কথা শুইনা জ্ঞান হারাইছে ,, আপনারা কী নাদিয়া আপুরে কোথাও দেখছেন ,, ?

     

    সবাই হাসি থামায় এবার ,, 

    চাচি বলে ,,

    – কী কও এসব ,, কাইল রাইতেই তো মাইয়াডা আমাগো বাড়িত আইছিলো নিপাগোরে পরাইতে ,, তারপর পরাইয়া তো রাইতেই চইলা গেছে ,, আমি আবার তাগো লাইগা খাওন ও দিয়া দিলাম বাটিতে কইরা ,, 

    – কিন্তু চাচি রাতে আর ও বাড়িত যায়নাই ,, তার বাপে খুজাখুজি করতাছিলো ,, আমাগো বাড়িত গেছিলো তহন জানতে পারলাম ,, তার আব্বা আমাগো বাড়িতেই জ্ঞান হারায় ,, আমাগো বাড়িতেই তার বাপ এহোনো আছে ,, 

    – আমাগো বাড়ি থেইকা কাইল রাগতেই চইলা গেছে ,, তারপর তো আর কিছু জানিনা বাজান ,, (চাচি গোমড়া মুখ করে বললো)

    – আচ্ছা তুমি বাকি সব যায়গায় খুজছো? (নিপা বলে)

    – হ ,, গ্রামের সবার বাড়িতেই গেছি ,, তোমাগো বাড়িই বাদ ছিলো ,, আর এহানেও আইয়া গেলাম ,, 

    – মাইয়াডা কই গেলো ,, আচ্ছা ফারুক তুমি রিয়াদের লগে যাও ,, ও ওর পুলিশ ফোর্স নিয়া তোমার সাহায্য করতে পারবো ,, (শিউলি বেগম বলে)

    – হ এইডাই ভাবতাছি চাচি ,, আচ্ছা চাচি আমি তাইলে গেলাম হ্যা ,, পরে আবার আমুনে ,, 

    – সাবধানে যাইয়ো ,, (নিপা বলে)

    – আইচ্ছা,, 

     

    বলেই ফারুক বেড়িয়ে যায় ,, চাচি সবাইকে খেয়ে নিতে বলেন ,, বলে রুমে ভিতরে চলে যান ,, তাদের সবারই মন টা খারাপ হয়ে যায় ,, 

     

    ফারুক মেম্বার দের বাসা থেকে বের হয়ে হাটছে ,, রাস্তাটা কাঁচা ,, একপাশে ফসলি জমি ,, আরেকপাশে মেম্বারের বাড়ি সহ ২-৩টে ঘরবাড়ি ,,  ঘরবাড়ি গুলো পার হলেই জঙ্গল শুরু হয় ,, 

    ফারুক ভাবতেছে ,, 

    – নাদিয়া আপু কোথায় হারিয়ে গেলো ,, আপু তো সচরাচর কাউকে না বলে কোথাও যায়না,, আর তাছাড়া আপু ঘর থেকেও তেমন একটা বের হতোনা,,  আপু একমাত্র বান্ধবী রিয়াও নেই ,, সেও পরসু হারিয়ে গেলো,, কী হচ্ছে এসব ,, কেন হচ্ছে এসব ,, (তখনই হঠাৎ তার মাথায় একটা বিষয় চলে আসলো ,, শরীরের মধ্যে যেন একটা শিহরণ বয়ে গেলো, মন টা তাকে বলছে যে আমবাগানের সেই খাল টায় গিয়ে দেখ ,, পেলেও পেতে পারিস কিছু ,, যা তুই খুজছিস এখন ,, )

    ফারুকে মাথা ঝাঁকায় ,, কিসব ভাবছে সে ,, কেন এই ভাবনা তার মাথায় এলো ,, 

     

    এতোক্ষণে সে বেড়াতে বেড়াতে জঙ্গলের পাশের রাস্তায় চলে আসে ,, সে যেতে থাকে সেই পথ দিয়ে ,, ভাবতেছে,,

    – আমবাগানের সেই খাল টায় কী গিয়ে একবার দেখা উচিত আমার ,, ? 

    তখনই রাস্তার পাশে কিছু একটা কাঁদার মধ্যে পরে থাকতে দেখে সে ,, সে এগিয়ে যায় ,, কাঁদা থেকে তুলতে থাকে ,, তুলার পর দেখে যে সেটা একটা খাবারের বাটি ,, সে বলে উঠে ,,

    – আরে ,, এটাতো নিপার বাটি ,, সে মাঝে মাঝে কলেজে এই বাটিতে করেই খাবার নিয়ে যেতো ,, হ্যা এটাই সেই বাটি ,, আমার চিনতে একদমই ভুল হতে পারে না ,, কিন্তু বাটিটা এখানে আসলো কীভাবে ,, ? 

     

    সে বাটিটা খুলতে থাকে ,, বাটির ঢাকনা টা খোলার পর দেখে যে ভিতরে এখনো খাবার রয়েছে ,, তাও সতেজ ,, মনে হচ্ছে কাল রাতেই রান্না করা হয়েছে এই খাবার গুলোকে ,, সে বাটিটার ঢাকনা বন্ধ করে সাথে নিয়ে যেতে থাকে ,, আকাশ আবার অন্ধকার হয়ে আসছে ,, সে তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে যেতে থাকে ,, 

     

    _______________________

     

     রাশেদের বাসা ,, বাসায় তাদের সবারই মন খারাপ ,, রাশেদ গায়ে একটা শার্ট পরে হাতে একটা ছাতা নিয়ে বেড়িয়ে যেতে থাকে ,, রাশেদের বাবা গোমড়া মুখে তাকে জিজ্ঞেস করে ,, 

     

    – কোথায় যাচ্ছিস বাবা ,, ? 

    – এইতো থানায় যাচ্ছি ,, তাড়াতাড়িই চলে আসবো ,, তোমরা খেয়ে নিও ,, 

    – আমাগো রিয়ারে এখনো খুইজা পাওন যায়নাই ,, তারে কী আর আমরা পামু না ,, 

    – বাবা ,, ধৈর্য ধরো ,, আমি যাচ্ছি থানায় ,, কিছু না কিছু একটা ব্যবস্থা করে নিবো ,, 

     

    বলেই বাসা থেকে বেড়িয়ে যায় রাশেদ ,,  

     

    _______________________

     

      আম বাগানের প্রবেশ পথ ,, রাস্তা কাঁদা হয়ে আছে কাল রাতের বৃষ্টির কারণে ,, ফারুক আম বাগানের গেট দিয়ে ঢুকতে যায় ,, সে খেয়াল করে যে বাগানের মালি (যিনি বাগানের দেখা শুনা করতেন) আজ বাগানের গেটে নেই ,, সে ভাবতে থাকে ,,

    – মালিটা আবার কোথায় গেলো ,, 

     

    সে বাগানের ভিতরে প্রবেশ করে ,, বৃষ্টি হওয়াতে ভিতরের পরিবেশ স্যাতস্যাতে ,, গাছের পাতা থেকে এক ফোঁটা দু ফোটা করে পানি তার ছাতার উপর পরতেছে , সে বাগানের খালটার দিকে যেতে থাকে ,, বাগানটার চারিদিকে দেওয়াল ,, বাগানের ঠিক মাঝবরাবর পশ্চিম পাশে সেই খাল টা ,, সেই খাল টা রাখা হয়েছিলো কারণ যখন বৃষ্টি থাকবে না তখন সেখান থেকে পানি নিয়ে যেন ব্যবহার করা যেতে পারে ,, ফারুক খাল টার প্রায় কাছাকাছি কাছাকাছিই চলে আসে ,, সে একবার ভাবতেছে না ,, লাশ এখানে থাকবে না ,, আরেকবার ভাবতেছে লাশটা এখানেই আছে ,, সে খালের পাসে গিয়ে দাড়ায় ,, সে দেখে খালে পানি জমে গেছে ,, আর খালের মধ্যে পানি ছাড়া আর খালি পাতা আর পাতা ,, বলা যায় পুকুর যেমন কচুরিপানা দিয়ে ছেয়ে যায় ,, ঠিক তেমনি খালটাতেও কাল রাতের বৃষ্টির পানিতে বাগানে পরে থাকা গাছের পাতা গুলো এসে জমা হয়েছে ,, সে দেখে হাফ ছেড়ে বাচে ,, ভাবতে থাকে ,, 

    – না এখানে কিছুই নেই ,, শুধু শুধু উল্টাপাল্টা ভেবেছিলাম ,,

     

    তারপর সে যখনই মুখে ফিরিয়ে চলে যেতে থাকবে তখনই তার চোখ একটা যায়গায় আটকে যায় ,, তার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায় ,, সে গলা দিয়ে একটা ঢোক গিলে ,, সে দেখতে পায় যে খাল টার থিক মাঝখানে পাতার ভিড়ে একটা পায়ের আঙ্গুল দেখা যাচ্ছে ,, কিছু ঠান্ডা বাতাস এসে তার পিঠে এক টুকরো বরফ ঘষে দিয়ে যায় ,, এতো বড় একটা শুনশান বাগানে সে একা ,, তাও আবার সে বাগানের মাঝখানে একলা দাঁড়িয়ে ,, আপনি নিজে ভাবুন তো একলা একা আপনি সেই শুনশান বাগানে দাঁড়িয়ে একটা লাশের পায়ের আঙ্গুল দেখলে আপনার অনুভূতি টা কেমন হবে ,, ফারুক ভয় পেয়ে দৌড় দিতে থাকে ,, কোনমতে দৌড়ে সে বাগানের মেইন গেটের সামনে এসে দাঁড়ায় ,, সে হাপাচ্ছে ,, সে পকেট থেকে ফোনটা বের করে ,, করে রিয়াদ কে ফোন দেয় ,, ফোন দিয়ে কাপো কাপো কন্ঠে বলতে থাকে 

     

    – রি রিয়াদ ভাই,, রিয়াদ ভাই আপনি কোথায় ,, তাড়াতাড়ি উত্তর পাড়ার আমবাগানে চলে আসেন ,, 

    – কেন রে কী হয়েছে ,, 

    – ভাই লাশ ,, আমি লাশ দেখতে পাইছি একটা ,, 

    – কী বলিস ,,? কার লাশ ,,

    – লাশের পায়ের আঙ্গুল খালের পানিতে ভেসে উঠেছে আমি তাই দেখেছি ,, আপনি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসুন ,, প্লিজ ,,

    – আচ্ছা আমি আসছি ,, 

     

    ফারুক ফোনটা কেটে দিয়ে বাগানের ফটকের সাথে হেলান দিয়ে উপরে দিকে চেয়ে থাকে ,, অনেক ক্লান্ত সে ,, অনেক ক্লান্ত ,,

     

    ________________________

     

    ঢাকায় শাহারিয়ার বাসা  ,, শাহারিয়া ডেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে ,, অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে ,, অফিস শুরু ৯ টায় ,, হাতে আরো আধা ঘন্টা সময় রয়েছে ,, তবে যেতে যেতেই অনেকক্ষণ লেগে যায় ঢাকার জ্যামের কারণে ,, আজকে বাইরে এখন আকাশ গর্জন করতেছে ,, হয়তো বৃষ্টি নামতে পারে ,, শাহারিয়া শার্টের বোতাম লাগিয়ে সোফায় বসে ,, বসে পায়ে মুজা পরতে থাকে ,, তখনই তার ফোনটা বেজে উঠে ,, সে ফোনটা হাতে নেয় ,, নিয়েই দেখে তার স্যার (গোয়েন্দা বিভাগের শাহারিয়াদের টিমের প্রধান) নাঈম  ফোন দিয়েছেন,, শাহারিয়া হন্তদন্ত হয়ে মুজা পরা বাদ দিয়ে ফোনটা ধরে ,, তারপর তাদের কথোপকথন,,

     

    – হ্যালো স্যার আসসালামুয়ালাইকুম ,, আমি রেডি হয়ে গিয়েছি ,, এখুনি বেড়িয়ে পরবো ,, আজ আর লেট হবেনা স্যার ,,

    – আরে আরে ভয় পাচ্ছো কেন ,, এতো ভয় পাও আমাকে ? 

    – না মানে স্যার ,, 

    – হ্যা হ্যা , বুঝেছি ,, তো শোনো আজ আর আসতে হবেনা ,,

    – কেন স্যার ,, আমাকে কী সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে ,, আমি তো কোন ভুল করিনি স্যার ,, প্লিজ আমাকে সাসপেন্ড করবেনা না ,, প্লিজ ,,

    – আরে না ,, তুমি আমাদের টিমের চাক্ষুষ একজন গোয়েন্দা ,, তোমাকে সাসপেন্ড কেন করতে যাবো ,,

    – তাহলে স্যার ? 

    – আজকে নতুন কোন কেস আসেনি ,, কালকে তো রানি মন্ডলের মার্ডার কেস টা সমাধান হলো ,, আজ কোন নতুন কেস আসেনি ,, তাই আজ আর আসতে হবে না ,, আমাদের টিমের  সবাইকেই আজকে আমি ছুটি দিয়েছি ,,

    – ধন্যবাদ স্যার ধন্যবাদ ,, 

    – আচ্ছা তাইলে আমি এখন রাখি ,, পরে কোন মিশন আসলে ফোন করে জানিয়ে দিবো ,,

    – জ্বি হ্যা স্যার ,, অবশ্যই ,, ভালো থাকবেন , আসসালামুয়ালাইকুম ,, 

    – ওয়ালাইকুমুস সালাম ,,

     

    শাহারিয়া ফোন কেটে দিয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো ,, সে আবার ভেবেছিল স্যার মনে হয় আজকে আরো তাড়াতাড়ি যেতে বলবে ,, কিন্তু উল্টো ছুটি দিয়ে দিয়েছে ,, 

     

    শাহারিয়া মনে মনে ভাবতে থাকে ,,

    – আচ্ছা দিথী কেমন আছে ,, তার নাম্বারটাও তো কাল নেওয়া হলোনা,, ধুরর ,,,, আচ্ছা ও কী এখনো আমাদের বাসায় আছে ,, থাকতেও পারে ,, যাই একটা নিপার ফোনে কল দিয়ে দেখি ,, 

     

    নিপা আর দিথী নাস্তা করে এসে ঘরে বসে আছে ,, নিপা দিথীর সাথে নাদিয়া আপুর বিষয় নিয়ে কথা বলছিলো ,, তখনই নিপার ফোনটা বেজে উঠে ,, নিপা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে শাহারিয়া ফোন দিয়েছি ,, সে ফোন টা রিসিভ করে ,,

     

    – হ্যালো ,, কেমন আছেন , (ওপাস থেকে শাহারিয়া অতি উৎসাহের সুরে বলে ,,)

    – ভাইয়া ,, আমি নিপা ,, আমাকে আছিস না বলে আছেন বলছিস কেন ,, তোর মাথাটা কী গেছে নাকি ,,?

     

    শাহারিয়া মনে মনে ,, ” এই খাইছেরে এখন আবার নিপা ফোন ধরছে ,, “

    সে বলতে থাকে ,, 

    – না মানে , ইয়ে মানে , আ, আমি ভাবছিলাম অন্যকেউ ফোনটা ধরেছে ,, (শাহারিয়া নার্ভাস হয়ে তোতলাতে তোতলাতে কথা গুলো বলে)

    – ওহ আচ্ছা আচ্ছা ,, হ্যা বুঝে গেছি সব ,, 

    – ক,কী বুঝলি তুই ,, 

    – বুঝে গেছি যে তোর মনের খাঁচায় ময়না পাখি ঢুকেছে ,,(নিপা হাসতে হাসতে বলল,, নিপার কথা শুনে দিথীও মুচকি হেসে মুখ লুকিয়ে নিলো )

    – ক,কী বলিস এসব ,, বাদ দে তো এসব ,, এখন বল কেমন আছিস ,, 

    – আমি তো ভালো আছি ,, সাথে দিথীও ভালো আছে ,, (নিপার মুচকি হেসে বললো)

    – ও আচ্ছা ভালো আছে সে ,, ভালো ভালো ,, তো তোর বান্ধবী গুলো কোথায় রে ,, একটু দে তো ,, জিগ্গেস করি যে তুই কলেজে গিয়ে কেমন পড়াশোনা করছিস ,, 

    – ও তাই নাকি ভাইয়া ,, আচ্ছা ঠিক আছে ,, দিথী নে কথা বল তোর খাঁচার  মালিকের সাথে ,, (নিপা ধং করে বলতে থাকে এবং দিথীকে ফোন টা ধরিয়ে দেয় ,, 

     

    দিথী ফোনটা নিয়েই বলে ,, 

    – হ্যালো ,, কেমন আছেন ,, 

    কন্ঠ টা শুনেই যেন শাহারিয়ার মনে যেন একটা প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায় ,, সে বলতে থাকে ,, 

     

    – হ্যা আলহামদুলিল্লাহ ভালো ,, আ,আপনি কেমন আছেন ,,

    – আমিও ভালো আছি ,, কী করেন ,, 

    – এইতো আমি অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিলাম এখন স্যার ফোন দিয়ে বললো আজ ছুটি ,, 

    – খেয়েছেন ? 

    – না আজ বুয়াও আসেনি ,, বাইরে গিয়ে কিছু একটা খেয়ে নিবো ,,

    – ওহ আচ্ছা ,, (শান্ত গলায় দিথী বললো)

    – আপনি খেয়েছেন ? 

    – হ্যা একটু আগে সবাই মিলে খেলাম ,, 

    – কলেজে যাবেন না ,, ?

    – না আজ যাবোনা ,, মন টা একটু খারাপ ,, 

    – কী বলেন ,, কী হয়েছে ,, মানে পার্সোনাল কিছু না হলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন ,, 

    – না না তেমন কিছু না ,, গ্রামে এই দুই দিনে ২ জন হারিয়ে গেছে ,, একটা গলাকাটা লাশ ও পাওয়া গেছে ,, আজ সকালে আবার ফারুক ভাইয়া এসে বললো নাদিয়া আপুকেও নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ,, তাই মন টা একটু খারাপ ,, 

    – গ্রামে আবার এসব কী শুরু হলো ,, আপনি সাবধানে থাকবেন কিন্তু ,, 

    – হ্যা আমি বেশ ভয়ে আছি এই বিষয় টা নিয়ে ,, তো এখন কী করবেন ,, অফিস তো ছুটি ,, 

     

    আমি কিছু বলতে যাবো তখনই নিপা ফোনটা দিথীর কাছ থেকে নিয়ে বলে ,, 

    – ভাইয়া ফোনে চার্জ নেই পরে কথা হবে ,,

     

    বলেই কেটে দেয় ,, 

     

    দিথী বলে ,, 

    – তোর ফোনে তো ৬৩ পার্সেন্ট চার্জ ,, তাইলে উনাকে মিথ্যে বললি কেন ,, 

    – মিথ্যে না বললে তোরা যেই আলাপ শুরু করেছিস তাতে সবটুকু চার্জ হাওয়া হয়ে যেতো ,,

     

    তখনই জিনিয়া রুমে প্রবেশ করে ,, বলতে থাকে,,

     

    – কীরে ,, তোরা আবার কীসের আলাপ করস ,, 

    – তোর বিয়ের ,, (নিপা ধং ধরে বলে)

    – আমার আগেই তোর বিয়া হই যাইবো দেখিস ,, (জিনিয়া বলে)

    – হ দেহা যাইবোনে ,, 

     

    তারা একে অপরের সাথে মজায় খুনসুটিতে কথা বলতে থাকে ,,,

     

    _______________________

     

     আম বাগানের খাল ,, খালের চারপাশে উৎসুক গ্রামবাসী ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে ,, বাগানের মালিকের ছেলে আরমান ও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে,,  কয়েকজন কনস্টেবল সেই খাল থেকে লাশ টা উঠাচ্ছে,, ওসি রিয়াদ সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের নির্দেশনা প্রদান করছে ,, আকাশ থেকে এক দু ফোটা করে হালকা বৃষ্টি নেমেছে ,, চারিদিকে বাতাস ,, ফারুক ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ,, তখনই আমরা দেখতে পাই মতিন মেম্বার তার ডান হাত টুটুল ও তার চামচা নাসিম কে নিয়ে হন্তদন্ত করে এদিকেই আসছে ,, নাসিম মেম্বারের উপর ছাতা ধরেছে ,, টুটুল আলাদা একটা ছাতা  নিয়েছে ,, তারা খালের সামনে এসে থেমে যায় ,, মেম্বার সাব এসে দেখতে থাকে লাশ উঠানো টা ,, মেম্বারের দুইপাশে নাসিম আর টুটুল দাঁড়ানো ,, আরমান তাকিয়ে দেখে যে মেম্বার এসেছে ,, সে মেম্বারের পাশে দাঁড়ানো নাসিমকে দেখে ভাবতে থাকে ,,

    – মেম্বারের পাশে ঐ মাথায় ব্যান্ডেজ লাগানো ছেলেটা কে ,, তাকে কোথাও দেখেছি দেখেছি বলে মনে হচ্ছে ,, কিন্তু মনে পরছেনা ,, (আরমানের একটা রোগ আছে ,, যার ফলে সে কাউকে দেখলে অনেক সময় চিনতে পারে ,, অনেক সময় মনে হয় যে কোথায় যেন দেখেছে ,, তবে সে তাকে কোথায় দেখেছে তা মনে করতে পারে না ,, এই রোগটা তার জন্মের পর থেকেই ছিলো ,, )

     

    তখন মেম্বার সাব রিয়াদকে বলে ,,

    – আচ্ছা এইডা কার লাশ ,, ?

    – লাশ টা উঠাক তারপরই বুঝতে পারা যাবে ,,

    – ওহহ আইচ্ছা ,, আর শুনলাম কাইল বলে পাশের গ্রামের আরিফরেও কেউ তুইলা নিয়া গেছে ,, ? এইসব কী হইতাছে ,, তুমি তো গ্রামের ওসি ,, তুমি থাকতে এইসব হয় কেমনে ,?

    – আমি যদি বলি যে আরিফকে টুটুল গুম করে দিয়েছে ?

    – কি যাতা কইতাছো ,, টুটুল কেন গুম করবো ,,

     

    – ওসি সাব ,, আপনে না যাইনা না বুইজ্যা কিন্তু আমার উপরে দোষ দিতে পারেন না ,, (টুটুল বলে)

     

    তখন রিয়াদ পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে ,, বের করে টুটুলের দিকে দেখিয়ে বলে ,, 

     

    – সেই কাজ করার সময় যে তোমার আংটি টা সেখান পরে যায় টুটুল ,,! এখন কী বলবে তুমি ,,, ?

     

    টুটুল ঘাবড়ে যায় ,, ভয় পেয়ে যায় ,, ভাবতে থাকে ,, 

    – তাইলে কী ঐদিন আংটি টা সেখানেই পরে গিয়েছিলো ???

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১ (সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৫ 

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১ (সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৬ 

     

    তখন রিয়াদ পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে ,, বের করে টুটুলের দিকে দেখিয়ে বলে ,, 

     

    – সেই কাজ করার সময় যে তোমার আংটি টা সেখান পরে যায় টুটুল ,, এখন কী বলবে তুমি ,,, ?

     

    টুটুল ঘাবড়ে যায় ,, ভয় পেয়ে যায় ,, মনে মনে ভাবতে থাকে ,, 

    – তাইলে কী ঐদিন আংটি টা সেখানেই পরে গিয়েছিলো ???

     

    – কী হলো টুটুল সাহেব ,,চুপ করে গেলেন যে ,, ? (রিয়াদ বলে)

    – ন,না,,, মানে হইছে কী যে ,,,,, (টুটুল তোতলাতে থাকে)

    – হ্যা বলুন কী হয়েছে ? 

    – এই আংটি ,,,,, এই আংটিটা ,,, আমার হারিয়ে গিয়েছিলো ৩ দিন আগে ,, হ‌্যা হারিয়ে গিয়েছিল ,,, (টুটুল আমতা আমতা করে বলতে থাকে)

    – ওহ আচ্ছা ,,, আপনার আংটিটা হারিয়ে গিয়েছিলো ? নাকি আরিফদের বাসায় দরজা ভাঙার সময় সেখানে পরে গিয়েছিলো ? 

    – কী কন এডি ওসি সাব ,, যেইদিন ঐ আরিফ গুম হয় ঐদিন তো টুটুল আমার লগে পৌরসভা অফিসে গেছিলো ,, আমরা একটা জরুরী কামে ঐদিন সেইহানে গেছিলাম,, (মতিন মেম্বারের হকচকিয়ে বলে)

    – ও আচ্ছা তাই ,,, আমি কিন্তু ঠিকি বিষয় টা তদন্ত করে বের করে ফেলবো যে টুটুল পৌরসভায় ছিলো না আরিফের ,,,,,

    (রিয়াদের কথার মাঝখানে তার ফোন বেজে উঠে ,, )

     

    রিয়াদ ফোন টা পকেট থেকে বের করে হাতে নেয় ,, দেখে কনস্টেবল নয়ন ফোন দিয়েছে ,, সে ফোন টা রিসিভ করে ,, 

    ওপাস থেকে নয়ন বলে ,, 

    – স্যার কালকে যে মাথাকাটা লাশটা পাওয়া গিয়েছিল তার ডিএনএ রিপোর্ট চলে এসেছে ,, আপনি যতদ্রুত পারেন থানায় চলে আসুন স্যার ,, 

    – ওকে ,, আমি এখানে পাওয়া লাশটাকে এম্বুলেন্সসে উঠিয়ে দিয়ে আসছি ,, 

    (বলেই রিয়াদ ফোন রেখে দেয় ,, লাশ টা ততক্ষণে খালের পানি থেকে উঠানো হয়েছে ,, সেটাকে উঠিয়ে কাপড় দিয়ে ঢেকে মাটির উপরে রাখা হয়েছে ,, সবাই লাশটার দিকে তাকিয়ে আছে,,সবার মধ্যেই কেমন একটা ভয় কাজ করছে ,, গ্রামে দুই দিনে দুটো লাশ ,, তার সাথে আবার পাশের গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলেও কিডন্যাপ হয়েছে ,,সবার মনেই এই নিয়ে ভয় কাজ করছে ,, তখনই সাইরেন বাজিয়ে এম্বুলেন্স এসে আম বাগানের প্রবেশ গেটের সামনে দাঁড়ায় ,, রিয়াদ তার কনস্টেবলদেরকে আদেশ করে ,,,,,

    – আমি একটু থানায় যাচ্ছি ,, তোমরা লাশটাকে এম্বুলেন্সসে করে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাও ,, আর সাবধানে ,, লাশের শরীর থেকে কোন কাঁদা মাটি নাড়তে যাবেনা ,, লাশটাকে ভালো করে পরীক্ষা করা হবে ,, তোমরা যাও এম্বুলেন্স এসে গেছে ,, 

     

    – ওকে স্যার ,, (কনস্টেবল দের মধ্যে থেকে উত্তর আসে)

     

    তারপর রিয়াদ চলে যায় ,, কনস্টেবলরা এম্বুলেন্স থেকে একটা স্টেচার (যেটাতে করে দেহ আনা নেওয়া করা হয় হসপিটালে) নামিয়ে এনে সেখানে লাশ টাকে তুলতে থাকে ,, দুই এক জন কনস্টেবল আশে পাশের উৎসুক গ্রাম বাসীদের সরে যেতে বলতেছে যাতে কোন সমস্যা না হয় ,, 

     

    এদিকে আমরা দেখতে পাই গ্রামবাসী দের থেকে কিছুটা দূরে একটা আম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মেম্বার সাব আর টুটুল কথা বলতেছে , নাসিম তাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে ,, আকাশ থেকে এখনো এক ফোঁটা, দু ফোটা বৃষ্টি পরতেছে ,, মেম্বার সাব একটা হাত গাছের সাথে রেখেছেন ,, এবং নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছেন,, টুটুল তখন বলে উঠে ,,

     

    – মেম্বারসাব ,, আপনি কেন কইলেন যে আমি ঐদিন আপনার লগে পৌরসভা অফিসে গেছিলাম ,, আমি তো ঐদিন শহরে গেছিলাম ,, আপনি মিছা কতা কেন কইলেন রিয়াদরে ,, ? 

    – চুপ থাক ,,! আমি যে তোগোরে পাইলা পুইষা বড় করতাছি কেন হেইডাই বুঝিনা ,, তোগো থেইকা ফারুকগো ফার্মের মুরগীও ভালা বুঝে ,, আহাম্মক কোনহানকার (বলেই সেখান থেকে হকচকিয়ে চলে যেতে থাকেন মতিন মেম্বার)

     

    টুটুল ও নাসিম তার পিছন পিছন যেতে থাকে ,,, 

     

    _________________________

     

    ঘড়িতে ১০:৩০ বাজে ,, 

    চট্টগ্রামে মিলি ও পায়েলদের ফ্ল্যাট ,, মিলি এবং পায়েল দুই বোন এক ঘরেই ঘুমায় ,,আজ ওদের মা তাদের বাবার সাথে নির্বাচন কেন্দ্রে গিয়েছে ,, তাদের ভোটার আইডি কার্ডের সমস্যা সমাধান করতে ,, এদিকে পায়েল আর মিলি একলা বাসায় ,, তারা যেই বাসায় থাকে সেটা ৩ তালা,, দোতলায় তারা ভাড়া থাকে ,, নিচতলাতেও একটা ছেলে ভাড়া থাকে ,, আর ৩য় তলায় বাড়িওয়ালারা থাকে ,, তাদের ফ্লাটের ৪ টা রুম ,, মিলিদের রুমে একটাই বিছানা ,, বিছানাটা ঘরের মাঝ বরাবর ,, বিছানার ডান পাশে বেশি যায়গা রয়েছে ,, বাম পাশে কম ,, ডান পাশে রয়েছে একটা বড় আলমারি ,, তার পাশেই দেয়ালে একটা টিভি লাগনো ,, খাটের সাথেই লাগানো ডেসিন টেবিল ,, আর বাম পাশে রয়েছে আলনা ,, এবং ঘরের দেওয়াল জুড়ে নানারকম চিত্রশিল্প ,,, তারা দুইজনেই বসে টিভি দেখতেছে ,, মিলি পায়েলের পাশে হেলান দিয়ে আছে ,, মিলি হঠাৎ বলে ,,

    – আচ্ছা মা আমাদের কবে আনন্দপুর নিয়ে যাবে ,, আমার তো আর এই ইট-পাথরের চার দেওয়ালের মধ্যে থাকতে ইচ্ছে করছেনা রে ,, (মিলি গোমড়া মুখ করে পায়েল কে বলে ,,)

    – আচ্ছা দেখি আজ মা আসুক ,, মা কে বলবো যে আমাদেরকে এই শুক্রবার এই নিয়ে যেতে হবে ,, মা না শুনলে বাবার কাছে আবদার করবো ,, বাবা নিশ্চয়ই নিয়ে যাবে ,, 

     

    (পায়েল কথাটা বলে শেষ করার সাথে সাথেই কারেন্ট চলে যায় ,, )

     

    – ধ্যাত ,, ভাল্লাগেনা ,,  কারেন্ট টাকেও এখনি যাইতে হইলো ,, টিভিতে পছন্দের সিরিয়াল টা চলতেছিলো ,,, (মিলি বলে)

     

    তাদের ঐদিকের আবহাওয়া এখন গরম ,, রোদ উঠেছে ,, তবে সূর্যের তাপ অতটাও বেশি না ,, 

     

    তখনই পায়েল বলে উঠে ,,,

    – আচ্ছা মন খারাপ করিস না ,, আমি মামিকে একটা ফোন দিতেছি ,, অনেক দিন হলো ফোন দেওয়া হয়নি ,, তার সাথে কথা বললে ভালো লাগবে ,, 

     

    পায়েল তার ফোন থেকে শিউলি মামি লেখা একটা নাম্বারে কল দেয় ,, 

     

    এদিকে দেখানো হয় মেম্বারের বাসায় ,, হালকা একটু রোদ দেখা যাওয়াতে শিউলি বেগম আঙ্গিনায় এসে চুলে তেল মালিশ করতেছে ,, নিপা , দিথী , জিনিয়া বারান্দায় বসে কলেজের পড়া পরতেছে ,, তখনই ঘর থেকে ফোনের রিংটোন বাজার শব্দ আসতে থাকে ,, 

    শিউলি বেগম নিপাকে হাঁক দিতে থাকে ,,

    – নিপা ,, ও নিপাআআ ,, এ বজ্জাত ছেড়ি ফোন ডা ধর গিয়া ,, 

    – যাইতাছি যাইতাছি ,, (বলেই ঘরে চলে যায় নিপা এদিকে দিথী আর জিনিয়া, চাচি আর নিপার কথা শুনে হাসতেছে ,, )

     

    নিপা ঘরে গিয়ে গিয়ে ফোন টা তুলে দেখে পায়েলের নাম্বার থেকে কল এসেছে ,, সে রিসিভড করে ,,

     

    – কীরে পায়েল কেমন আছোস ,, আমাগো কতা তো তুই ভুইলাই গেছোস ,, (বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে নিপা)

    – এইতো আছিরে ,, তোদের কথা অনেক মনে পড়ে রে ,, একবার তো ফোনও দিস না একটা ,, (পায়েল বলে)

    – আরে না ,, কলেজের পড়াশোনার চাপে একটু ব্যাস্ত তো ,, আর আম্মা তো নিজেরে লইয়া ব্যাস্ত ,, আর আব্বা গ্রাম লইয়া ব্যাস্ত ,, তাই আরকি সময় হয় উঠে না রে ,, ফুফু , ফুফা কেমন আছে ,, ?

    – হ্যা আম্মু,আব্বু আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছে ,, 

     

    (চাচি হাঁক দিয়ে বলতে থাকে ,,,)

     

    – এ ছেড়ি , ফোন ডা এদিক দে ,, দেহি কে ফোন দিছে ,, 

    – মা , পায়েল রা ফোন দিছে ,, (ফোনে কথা বলতে বলতে উত্তর দেয় নিপা)

    – এদিকে আন ,, আমিও কতা কই ,, 

     

    (নিপা কথা বলতে বলতে ফোন টা নিয়ে নিচে নামে ,, )

     

    – আচ্ছা নে মায়ের লগে কতা ক ,, (বলেই শিউলী বেগম কে ফোন টা দিয়ে দেয় নিপা ,, )

    – আচ্ছা দে ,, (পায়েল বলে)

    – কী খবর আম্মাজান কেমন আছো ,, তোমার আব্বা-আম্মা ভালো আছে নি ,,

    – আলহামদুলিল্লাহ মামি ,, আমরা ভালো আছি ,, তুমি আর মামা কেমন আছো ,,? (পায়েল বলে)

    – এইতো আছিরে মা ,, তোর মামায়ও ভালো আছে ,, আমাগো এহানে কবে আবি মা ,, সেই তো ২ বছর আগে ঈদে আইছিলি ,, তারপর থেইকা আর কোন খবর ই নাই ,, 

    – মামি যাবো যাবো ,, খুব শীঘ্রই যাবো ,, গিয়ে তোমাকে সারপ্রাইজ করে দিবো ,, 

    – আইচ্ছা আইচ্ছা আহিস ,, তো তোগো আম্মা-আব্বা কই ,, ওগোরে দে দেহি ,, 

    – মা-বাবা দুজনেই একটু বাইরে কাজে গেছে মামি ,, সকালে বের হয়েছে ,, আসনি এখনো ,,

    – ও ,, তোমার মামাও হেই সকালে গেছে ,, এহনো আহেনাই ,, 

     

    (তখনই হন হন করে বাসার গেইট দিয়ে প্রবেশ করে মেম্বার ,, )

     

    – ঐ দেহো নাম নিতে না নিতেই আমার গোয়ালের গরুডা হাজির ,, কতা কইবানি তোমার মামার লগে ,, 

    – দেও দেও মামি ,, মামার সাথেও একটু কথা বলি ,, 

     

    মেম্বারের চোখ মুখ দেখে বুঝা যায় যে তার মাথা গরম ,, সে শিউলি বেগমের কাছে এসে বলে ,, 

    – আমি ঘরে গেলাম ,, তাড়াতাড়ি খাবার দেও ,, ক্ষিধা লাগছে ,, 

    – সকালে এত্তডি নাস্তা গিল্লা তাও এই ১১:৩০ ডার দিকে ক্ষিধা লাগে ,, ?

    – হ লাগছে ,, তাড়াতাড়ি ঘরে আইয়া দিয়া যাও ,, (বলেই ঘরে চলে যায় মেম্বার সাব ,, নাসিম এখনো দাড়িয়ে আছে চাচির সামনে ,,)

     

    তখন চাচি ফোনে পায়েল দের বলে,,,

    – আইজ তাইলে রাহি মা ,, তোমাগো মামারে খাওন দিতে হইবো ,, তোমাগো মামার মাথা মেলা গরম ,,

    – আচ্ছা মামি ,, মামাকে আমার সালাম দিয়েন ,, 

    – আইচ্ছা ,, ভালো থাইকো তোমরা ,, হ্যা ,, 

    – আইচ্ছা মামি ,,, 

     

    বলেই ফোন রেখে দেয় পায়েল ,, শিউলি বেগম নিপাকে বলতে থাকে ,,

    – এ ব্যাক্কেল ছেড়ি ,, আমার দিকে চাইয়া না থাইকা যাইয়া দেখ তোর আব্বার কী লাগবো ,, খালি হাবার লাহান চাইয়া থাহে তো চাইয়াই থাহে ,, 

    – উফফ ,, যাইতাছি মা ,, (বলেই ঘরে চলে যায় নিপা ,)

     

    শিউলি বেগম রুমের দিক দিয়ে সামনে মুখ ফিরিয়ে দেখে নাসিম এখনো দাড়িয়ে আছে ,, তিনি বলতে থাকেন ,,

    – কীঃ ,, তোমারো পেডে খাওনের খিদা লাগছে নি ,, খাইবা ,, আহো খাওয়াই দেই মুখে তুইলা ,, 

    – ছিঃ ছিঃ চাচি ,, কি কন ,, আসতাগফিরুল্লাহ ,, আমি গেলাম গা ,, আমার মেলা কাম আছে ,, 

    – আচ্ছা খাড়া খাড়া ,, তোর কপালের কোনে ঐ ব্যান্ডেজ টা কীসের ,, ? 

     

    নাসিমের কপালের ডান পাশে একটা ছোট্ট ব্যান্ডেজ ,, আমরা কেটে গেলে সাধারণত যেই ব্যান্ডেজ গুলো ইউজ করি ওয়ানটাইম ,, সেগুলা ,,

     

    – ও,ঐ ডা ? ঐডা কিছু না চাচি ,, এমনেই একটু কাটা গেছিলো দেইখা লাগাইছিলাম ,, 

    – কেমনে কাঁটা গেছে ? মেম্বারের লগে চলস একটু দেইখা শুইনা চলবিনা ,, !  তাই বইলা ১ সাপ্তা ধইরা লাগায়া রাখবি ,,? তুই যবে থেইকা মেম্বারের লগে আইছোস তবে থেইকাই তোর কপালে ঐ ব্যান্ডেজ টা দেখতাছি ,, কী এমন কাটা গেছে যে এতো দিন ব্যান্ডেজ ল

    – না মানে চাচি কাইলকা মাথার উপরে গাছের ডাল ভাইঙ্গা পড়ছিলো তো ,, ফাইটা গেছিলো কপাল ডা,, তাই ব্যান্ডেজ দিয়া রাখছি ,, 

    – ওহহ আচ্ছা তাইলে অহন যা ,, আর হুন ,, খাওন নিয়া যাইস ,, 

    – আইচ্ছা চাচি ,, 

     

    চাচি টুল থেকে উঠে দাড়ায় ,, নাসিম গিয়ে বারান্দায় বসে ,, দিথী , জিনিয়া ,, আগেই নিপার ঘরে চলে গিয়েছে ,, চাচি তার তেলের বোতল টা এক হাতে ,, এবং আরেক হাতে তার বাটন ফোন টাকে নিয়ে বারান্দায় উঠতে থাকে ,, নাসিমকে বলে ,, 

    – তুই এহানে ব ,, আমি খাওন পাডায়া দিমুনে লইয়া যাইস ,,

    – আইচ্ছা চাচি ,, 

     

    বলেই চাচি ঘরে চলে যায় ,, নাসিম এক দৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকে ,, এবং একটা হাফ ছেড়ে মুখের ঘাম হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বারান্দায় বসে  ,, 

     

    __________________________

     

     রিয়াদের পুলিশ স্টেশন ,, পুলিশ স্টেশন টা পাকা ,, বেশ বড় বলা যায় ,, সেখানে জেলখানাও আছে সাথে লাগানো ,, পুলিশ স্টেশন টা গ্রামের পাকা রাস্তার ডান পাশে ,, পুলিশ স্টেশন এর দুইপাশে সুপারি গাছ ,,, আমাদের স্টেশনের ভিতরের একটা কক্ষ দেখানো হয় ,, কক্ষটা ইন্সপেক্টর রিয়াদের ,, কক্ষের মাঝখানে বড় একটা টেবিল ,, সাথে রিয়াদের জন্য চেয়ার ও রয়েছে এবং টেবিলের সামনে রয়েছে ২ টা চেয়ার অন্যদের বসার জন্য ,, দেয়ালের সাথে লাগানো রয়েছে বেঞ্চ ,, বেঞ্চে বসে রয়েছে রাশেদ ,, তার পাশে কনস্টেবল নয়ন দাঁড়ানো ,, রাশেদ মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বসে আছে ,, তখনই রিয়াদ সেখানে প্রবেশ করে ,, রিয়াদকে দেখেই রাশেদ দাড়িয়ে পরে ,, কনস্টেবল নয়ন রিয়াদকে একটা স্যালুট দেয় ,, রিয়াদ নয়ন কে বলে ,,,

    – কোথায় সেই রিপোর্ট ,, দেও আমাকে ,,

     

    নয়ন তার কথাটা শুনে পাশের রুমে চলে যায় ,, এবং চলেও আসে ,, তার হাতে একটা খাম ,, সে সেই খামটা রিয়াদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,

    – এইযে স্যার ,, 

    রিয়াদ হাতে নেয় খাম টা ,,সে খাম টা খুলে একটা কাগজ বের করে ,, করে সে পড়তে থাকে কাগজ টা ,, এদিকে রাশেদ কৌতুহল নিয়ে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে ,, কিছুক্ষণ পর রিয়াদ কাগজ টা থেকে চোখ উঠায় ,, সে হাতে কাগজ টা নিয়ে হতাশার দৃষ্টিভঙ্গিতে রাশেদের দিকে তাকায় ,, 

    রাশেদ চোখে পানি মুছতে মুছতে বলে ,,

    – রিয়াদ ভাই ,,, নিশ্চয়ই এডা ম্যাচ করেনাই তাই না ,, তারমানে আমার বোন রিয়ার লাশ ঐডা ছিলোনা ,, ছিলোনা সেই লাশ টা আমার রিয়ার ,,

     

    রিয়াদ কিছুই বলে না,,

    রাশেদ আবার বলে ,,

    – কী হইলো বল ,, এটা রিয়া না তাই না ,,(রাশেদ একহাত দিয়ে চোখ মুছে ,, আবার বলতে থাকে) আমার বোন রিয়া অন্য কোথাও আছে ,,  আমি খুঁজে বের করবো,, বের করবোই ,, 

    (বলেই যখনই রাশেদ চলে যেতে থাকে তখনই রিয়াদ নিরবতা ভেঙ্গে ধীর গলায় বলে ,,, )

    – ঐটা রিয়ার লাশ ই ছিলো,, রিপোর্ট ম্যাচ করেছে ,, 

     

    রাশেদ কথাটা শুনেই থ হয়ে যায় ,, ভেঙে পরে সে অনেক ,, সে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে পরে যেতে থাকে ,,তখনই নয়ন সহ কয়েকজন কনস্টেবল তাকে ধরাধরি করে দাঁড় করায় ,, রিয়াদেরও চোখেও পানি চলে আসে ,, সে চোখ মুছতে মুছতে তার চেয়ারে বসে ,, আর কনস্টেবল দের বলে,,,

     

    – রাশেদকে পাশের রুমে আছে নিয়ে যাও ,, তাকে পানি খাওয়াও ,, 

     

    দুইজন কনস্টেবল ধরাধরি করে তাকে পাশের রুমে নিয়ে যেতে থাকে ,, রিয়াদ তার চেয়ারে বসে উপরের দিকে ভিজে চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে ,, ভাবতেই থাকে কী হচ্ছে এসব ,, কেন হচ্ছে ,, আরিয়ানের মতো ছোট্ট ছেলেটার কী হবে ,, 

     

    সে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে ,, তখনই তার ফোনটা বেজে উঠে ,, সে ফোন টা রিসিভ করতে গিয়ে দেখে তার উপর মহল থেকে ফোন এসেছে ,,

     

    সে তাড়াতাড়ি ফোন টা হাতে নিয়ে রিসিভ করে ,,

     

    – হ্যালো ,, রিয়াদ সাহেব ,, দুইটা নির্মম খুন হয়ে গেলো ,, পাশের গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলেও উধাও ,, আপনি থাকতে এগুলো হয় কীভাবে ,,? আপনি কেন এখনো খুনিদের ধরতে পারেন নি ,, হোয়াই ? 

    – স,স্যার আমি চেষ্টা করছি ,, চারিদিকে ফোর্স লাগিয়ে দিয়েছি ,, খুনিটা অনেক চালাক ,, সে খুন আর কিডন্যপিংয়ের যায়গায় অন্য জনের আংটি রেখে গেছে ,, স্যার আমাকে আরেকটু সময় দিন ,, আমি নিশ্চিত খুনি আমাদের কাছে ঠিকই ধরা দিবে ,, 

    – হ্যা ,, খুনি কবে ধরা দিবে ,, সেই আশায় বসে থাকো ,, ততদিনে গ্রামে আরো মানুষ মারা যাক তাইনা ,,

    – না মানে স্যার আমি তা বলতে চাইনি,,,,

    – আমি কোন কথা শুনতে চাই না ,, আমি  তোমার সাহায্যর জন্য উপর মহলে আবেদন পাঠিয়েছি ,, খুব তাড়াতাড়ি সাহায্য আসবে ,, আমি খুনিকে জেলের মধ্যে দেখতে চাই ই চাই ,, এটাই আমার শেষ কথা ,,

    – ও,ও,ওকে ,, স্যার ,, আপনি চিন্তা করবেনা না ,, 

    – চিন্তামুক্ত থাকবো কী করে ? চিন্তা মুক্ত থাকাই যাচ্ছে না যতদিন না খুনিটা ধরা পরছে ,,(একটু থেমে) ফাঁদ পাতো ,, খুনিটাকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতো ,, খুনিকে আমাদের ফাঁদে পরতে বাধ্য করো ,, 

    – ও,ওকে স্যার ,, আমি দেখছি বিষয় টা ,, 

    – আচ্ছা ,, আমি রাখলাম ,,

    (বলেই ফোন রেখে দিলেন তিনি ,, রিয়াদ ফোন টা কান থেকে নামায় ,, সে পড়ে গিয়েছে অনেক টেনশনে ,, কী করবে ভেবে পাচ্ছে না ,, খুনি এভাবে তার শিকার চালাতে থাকলে তো তার চাকরির স্থায়ীত্ব সংকটে পরবে ,,, সে তার চেয়ার থেকে উঠে রুমে পায়চারি করতে থাকে ,, ভাবতে থাকে কী করে খুনিকে ধরবে ,, তখনই পাশের রুম থেকে কনস্টেবল নয়ন আসে ,, এসে বলে ,,

    – স্যার ,, দুপুর ২ টা বাজে ,, লাঞ্চ টাইম তো পেড়িয়ে যাচ্ছে ,, আপনি আসুন ,, লাঞ্চ করে নিন ,,

    – আমার মাথায় যে টেনশন ঢুকছে ,, আমার গলা দিয়ে খাবার নামবেনা,,,

    – এমন বলবেন না স্যার ,, আপনি আসুন তো ,, খেয়ে নিন ,, আপনার ভাই শুনলে আমাদের উপর রাগ হবে ,, বলবে আমরা কেন আপনাকে জোর করে খাওয়াইনি ,, আপনি আসুন স্যার ,, খেয়ে নিন প্লিজ ,, 

     

    রিয়াদ কনস্টেবল নয়নের দিকে তাকায় ,, হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ,, সে নয়নের কাঁধে হাত দেয় ,, দিয়ে বলে ,, 

    – আচ্ছা ,, চলো ,, তুমি খেয়েছো ,, ?

    – না স্যার ,, আমরা কেউই খাইনি ,, আপনার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম ,, 

    – আচ্ছা চলো তাইলে ,, 

     

    রিয়াদ , আর কনস্টেবল নয়ন একসাথে পাশের রুমের দিকে যেতে থাকে ,,

     

    ________________________

     

    দিথী আর জিনিয়া মেম্বারের বাসার গেইট দিয়ে বের হচ্ছে ,, নিপা তাদেরকে বাসার ভিতর থেকে বিদায় জানাচ্ছে ,, দিথী এবং জিনিয়া বের হয়ে রাস্তা দিয়ে যেতে থাকে ,, সময় এখন ২:৩০ ,, আকাশে মেঘ আবার একসাথে হয়েছে ,, তবে কালো মেঘ নয় ,, সাদা মেঘ ,, সূর্য দেখা যায় না ,, হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে ,, আবহাওয়া ঠান্ডা ঠান্ডা ,, 

     

    দিথী আর জিনিয়া যাচ্ছে পথ ধরে ,, এই পথেই কাল রাতে নাদিয়া গিয়েছিলো ,, যেতে যেতে জিনিয়া বলতে থাকে ,,

    – আইচ্ছা আইজকাও নিপাগো বাসায় থাইকা যাইতাম ,, চইলা আইলি ক্যা ,, ?

    – নিপার বাসার এদিকে কী তোর কোন মনের মানুষ জুটছে ? 

    – কই ,, না তো ,, 

    – তাইলে নিপা দের এখানে এতো থাকতে চাস কেন ,, আমাদের বাসার লোক কী ভাববে এখানে এভাবে দিনের পর দিন থাকলে ,, ? প্রতিদিন ই তো একবার ঘুরতে আসি ,, তারমানে কী প্রতিদিন ই রাত থাকতে হবে ,, ?

    – তাও ঠিক কইছোস ,, কিন্তু আমার না চাচির কতা অনেক ভাল্লাগে ,, অনেক হাসির হাসির কথা কয় চাচি ,, (মুচকি হাসতে হাসতে জিনিয়া বলে)

    – হ তা মন্দ বলিসনি ,, চাচি আসলেই একটা মজার মানুষ ,, অনেক মজা দিতে পারে ,, 

     

    তখনই আমরা দেখতে পাই তাঁদের সামনের দিক থেকে আসছে টুটুল ,, হাতে একটা পেয়ারা ,, পেয়ারা খেতে খেতে আসছে সে ,, পরনে একটা খয়েরি শার্ট , ব্লু জিন্স প্যান্ট ,, শার্টের বুকের বোতাম খুলা ,, গলায় চেইন জুলছে ওর ,, কানে রিং এর মতো দুল পরা ,, সে দিথীদের সামনে এসে তাদের কে হাত দিয়ে পথ রোধ করে বলে ,,

     

    – আরে আরে ,, কই যাও তোমরা ,, 

    – আন্নের গোয়ালঘরে ,, গরু দেখতে ,, (জিনিয়া বলে)

    – আমার তো গোয়ালঘর নাই ,, গোডাউন আছে ,, যাইবা সেহানে তোমরা ,, সেহানে অনেক কিছু আছে ,, তোমাগো ভালা লাগবো ,, আর মজাও পাইবা ,, (বলেই হাসতে হাসতে দিথীর দিকে কুনজর দিয়ে নিচ থেকে উপরের দিকে চোখ বুলাতে থাকে টুটুল ) 

    – নিজের গোডাইনে নিজে যেয়ে মরেন ,, রাস্তার কুকুর বিড়ালের আস্তানায় যাওয়ার ইচ্ছা নাই ,, চল রে জিনিয়া ,, 

    (বলেই জিনিয়ার হাত ধরে চলে যেতে থাকে দিথী ,, জিনিয়াও ঘৃণার চোখে টুটুল কে দেখে চলে আসতে থাকে ,, টুটুল তাদের দিকে ঘুরে হাসতে হাসতে বলতে থাকে ,,

    – জিনিয়ারে আস্তানায় নিতে হইবো ,, তান্দুরি চিকেন খাইতে হইবো ,, আর দিথীরে আস্তানায় নিমু না ,, তারে আমার মনে ধরছে ,, আমার জানেমন সে ,, উম্মাহ বেবি ,, খুব শীঘ্রই দেখা হবে ,, হা হা হা হা ,, ( হাসতে হাসতে উল্টোদিকে ফিরে পেয়েরায় কামড় বসিয়ে খেতে খেতে চলে যেতে থাকে টুটুল ,, 

     

    _________________________

     

     ঘরে লাইট বন্ধ ,, জানালাটা খোলা সেটা দিয়ে আলো ঘরে এসেছে ,, শাহারিয়া ঘুমাচ্ছে একটা কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে,, পরনে হাফ প্যান্ট ,, মানে হাটু পর্যন্ত যেই প্যান্ট গুলো থাকে ওগোলো ,, এবং একটা টি-শার্ট ,, ঘরের দরজা বন্ধ ,, তখনই শাহারিয়ার ফোনটা বাজতে থাকে ,, ফোনটা তার মাথার বালিশের পাশে রাখা ছিলো ,, ফোনের জোড়ালো শব্দে শাহারিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায় ,, সে এক হাত দিয়ে চোখ কচলাতে থাকে ,, এবং এক হাত দিয়ে ফোনটা হাতে নেয় ,, 

    – ধুর ,, কে ফোন দিলো এখন ,, একটু ঘুমাইতেও দিবেনা মনে হচ্ছে ,, (বলেই হামিয়াতে থাকে শাহারিয়া) 

    ফোনের স্ক্রিনে চোখ পরতেই দেখি নাঈম স্যার ফোন দিয়েছে ,, আমি তাড়াতাড়ি হকচকিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে তুলি ,, 

     

    – হ্যালো শাহারিয়া ,, ব্যস্ত নাকি ,,

    – ন,না স্যার ,, একটু ঘুমাচ্ছিলাম আরকি ,, জি বলুন স্যার কি বলবেন ,,

    – তোমার জন্য একটা মিশন পেয়েছি ,, ঐযে তোমাদের গ্রাম আনন্দপুর আছে না ? ঐখানে যে খুন , কিডনাপিং হচ্ছে সেটার জন্য আমাদের এখান থেকে একটা টিম কে সেখানে পাঠানো হবে,, আমি তোমাকে সেই টিমের হেড বানাতে চাচ্ছি ,, এবং সেইখানে গিয়ে খুনিকে ধরার অপারেশন এ সামিল হওয়ার জন্য বলছি ,, তুমি কী রাজি ? 

    – জ্বী হ্যা স্যার অবশ্যই ,, নতুন একটা অপারেশন এর হেড ,, আবার সেই অপারেশন টাও আমার নিজের জন্মস্থান আনন্দনগরে ,, আমি রাজি স্যার ,, আমি যাওয়ার জন্য রাজি ,, কবে রওনা দিচ্ছি আমরা ,, আর কে কে থাকছে আমার টিমে ,, একটু বিস্তারিত যদি বলতেন ,, 

    – তোমার টিমে তুমি সহ মোট ৫ জন মেম্বার থাকছো ,, তুমি হেড এবং তোমার সাথে আরো ৪ জন যাচ্ছে ,, তারা চার জন হলো ,, ইন্সপেক্টর নিলয় , ইমন , কল্পনা , আর ইন্সপেক্টর সাম্মি ,,তারা ৪ জনই আমাদের গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্টেরই ,, ২ জন ছেলে এবং ২ জন মেয়ে হিসেবে দিয়েছি ,, যেন খুনি ছেলে হোক বা মেয়ে ,, ধরতে যেন সমস্যা হয় ,, আর তারা তোমার সাথেই আনন্দ পুরে থাকবে এই কয়দিন ,, মানে যতদিন অপারেশন থাকবে তারাও থাকবে তোমার সাথে ,, তুমি কী তোমার টিম মেম্বারসদের থাকার ব্যবস্থা করতে পারবে ,, ? নাকি আমি ওখান কার থানার ওসির সাথে কথা বলবো এই বিষয় টা নিয়ে ,, ? 

    – স্যার আমাদের বাসাতেই তারা থাকতে পারবে ,, আমাদের বাসাতে থাকতে তাদের কোন সমস্যা হবে না ,, আমার বাবাও বর্তমান রানিং মেম্বার ,, তাই ওদের কোন অসুবিধা হবে না আশা করি ,, 

    – ও ,, আচ্ছা ঠিক আছে ,, তবে এই মিশন টা কিন্তু সম্পূর্ণ সিক্রেট মিশন ,, তোমার সাথে যেই টিম মেম্বারসরা যাবে তাদের পরিচয় তুমি তোমার বন্ধু হিসেবে দিবে , গোয়েন্দা বিভাগের লোক হিসেবে দিবেনা ,, এই মিশন টা সম্পূর্ণ গোপনে অর্থাৎ তোমার টিম আর আনন্দ পুর থানার ওসি রিয়াদ ছাড়া আর কেউ যেন জানতে না পারে ,, ঠিক আছে ,,? তোমরা তাইলে কালই রওনা দিয়ে ফেলো ,, আমি বাকি টিম মেম্বার দের রেডি থাকতে বলেছি ,, আর এই অপারেশনে সাকসেসফুল কিন্তু তোমাদের হতেই হবে ,, এই অপারেশন টা কিন্তু উপর মহল থেকে করার জন্য এসেছে ,, বড় দায়িত্ব তোমার জন্য ,, সাকসেসফুল হলে তোমার প্রমোশন কনফার্মড ,, কাজ টা ভালো করে সম্পূর্ণ করিও ,,

    – ওকে স্যার ,, ইনশাআল্লাহ আমি পারবো ,, 

    – আচ্ছা আমি এখন রাখি তাইলে ,, পরে কথা হবে ,, 

    – ওকে স্যার ,, ওকে ,, আসসালামুয়ালাইকুম 

    – ওয়ালাইকুমুস সালাম ,,

     

    শাহারিয়া ফোনটা রেখে দেয় ,, সে ভাবতেও পারছেনা এতো বড় একটা গুরু দায়িত্ব তার কাঁধে ,, শাহারিয়ার মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিতে থাকে ,, এবং বলতে থাকি , ” এই মিশন টা সাকসেসফুল করতেই হবে ,, যে করেই হোক ,, আনন্দপুর ,, আমি আসছি ,, আমি আসছি ,,,,,,,,,,,,,,!”

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর 

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৬ 

    (অনেক অসুস্থ ছিলাম তাই গল্প দিতে দেরি হয়ে গেছে ,, আপনাদের কাছে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ,, আজ থেকে রেগুলার হবো গল্পে)

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৭ 

     

    – ওকে স্যার ,, ইনশাআল্লাহ আমি পারবো ,, 

    – আচ্ছা আমি এখন রাখি তাইলে ,, পরে কথা হবে ,, 

    – ওকে স্যার ,, ওকে ,, আসসালামুয়ালাইকুম 

    – ওয়ালাইকুমুস সালাম ,,

     

    শাহারিয়া ফোনটা রেখে দেয় ,, সে ভাবতেও পারছেনা এতো বড় একটা গুরু দায়িত্ব তার কাঁধে ,, শাহারিয়ার মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিতে থাকে ,, এবং বলতে থাকি , ” এই মিশন টা সাকসেসফুল করতেই হবে ,, যে করেই হোক ,, আনন্দপুর ,, আমি আসছি ,, আমি আসছি ,,,,,,,,,,,,,,!”

     

    বলেই শাহারিয়া ছোট খাটো একটা চিৎকার দিয়ে ফেলে রুমের মধ্যে ,, তারপর ফোন টা আবার হাতে নেয় ,, সে মনে মনে ভাবছে,,, ” রিয়াদ কে একটা কল দেই ,, ও যখন জানতে পারবে তার কেস সামলানোর সঙ্গি হিসেবে আমি আসছি ,, সে অনেক খুশি হবে”  

    শাহারিয়া রিয়াদের নাম্বার টা বের করতে থাকে ,, বের করে একটা ফোন দেয় ,,

    কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর রিয়াদ ফোন টা রিসিভ করে ,, শাহারিয়া বলতে থাকে ,,

     

    – কীরে দোস্ত ,, কেমন আছিস ,, 

    – আর ভালো থাহোন ,, বর্তমানের কেস টা মোরে জ্বালাই খাইতেছে ,, মেলা পেরার মধ্যে আছি দোস্ত ,, তো তোর কী অবস্থা ? দিন-কাল কেমন যাইতাছে ? 

    – আমি তো বিন্দাস ,, তবে তোর লাইগা একটা খুশির খবর আছে ,, 

    – কী খুশির খবর ,, ক তো হুনি ,, 

    – আমি আইতাছি তোর কেস টা সামলাইতে তোরে সাহায্য করতে ,, উপর মহল থেকে যে তোরে সাহায্য পাঠানোর কথা ছিলো ,, হেই সাহায্য ডা আমিই ,, 

    – আরে বন্ধু কী কস ,,, ! সত্যি ,, ! 

    – হ দোস্ত ,, সত্যি,, আমি আইজ রাইতেই ট্রেনে রওনা দিমু ,, আর আমার টিম যাবে আমার সঙ্গে ,, কেস টা গিয়েই সলভ করে ফেলবো ,, তুই কোন টেনশন করিস না ,,

    – দোস্ত তুই আমারে বাচাইলি ,, অনেক টেনশনে ছিলাম যে একলা কেমনে কী করুম ,, তবে তুই আইবি এইডা হুইনা মনের মধ্যে সাহস বাড়তাছে , এইবার আর ঐ খুনি বাইচা যাইবো কই ,, ওরে ধরা পরতেই হইবো ,, হা হা হা ,, 

    – হ তা তো অবশ্যই ,, সেই খুনিকে ধরা পরতেই হবে ,, তো তুই আরিফ যে গুম হয়েছে তার বাসা সিলগালা করছিস তো ? আর লাশ যেই খালে পাওয়া গেছে সেইটা সুরক্ষিত রাখছিস তো ? 

    – হ হ রাখছি ,, আরিফ গো বাসায় আরিফের রুম আর যেই দরজাডা ভাঙছিলো খুনি দুইডাই সিলগালা কইরা রাখছি ,, আর লগে আম বাগান আর খাল ডাও বন্ধ কইরা রাখছি যেন কেউ যাওয়া আসা না করতে পারে ,, তুই এইসব নিয়ে চিন্তা করিস না ,, আর এইবার কিন্তু থেকে যেতে হবে তোকে কয়েকদিন ,, কেস টা সলভ করে আমরা সেই আগের মতো দুইজন গ্রাম ঘুইড়া বেড়ামু ,, 

    – আইচ্ছা আইচ্ছা তাই হইবো ,, তো তুই তোর কাজ কর ,, কাল সকালে দেখা হবে ,,

    – আইচ্ছা , সাবধানে আহিস ,, আর ট্রেনে উঠলে ফোন দিয়া জানাইস ,,

    – আইচ্ছা দোস্ত ,, রাখলাম ,,

    – আইচ্ছা ,,

     

    শাহারিয়া ফোন টা রেখে দেয় ,, নিজের মধ্যে একটা আনন্দ কাজ করতেছে ,, কতদিন পর গ্রামে যাবে সে ,,সেই ৪ বছর আগে গিয়েছিলাম ,, এতো দিন পর আবার যাবো ,, ভেবেই কেমন খুশি খুশি লাগতেছে ,, শাহারিয়া বিছানা থেকে উঠে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যেতে থাকে ,, বাইরে দেখে মনে হচ্ছে আবাহাওয়া খারাপ ,, বৃষ্টি নামতে পারে ,, 

     

    _______________________

     

    মেম্বারের বাসার পিছনের দিকে ,, 

    ফুলের বাগানের পাশে বসার যায়গাটায় বসে রয়েছে ফারুক ,, সে হাতে একটা ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছে ,, সময় তখন বিকাল ৫:৩০ ,, অর্থাৎ কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যা নামবে ,, আকাশের গৌধূলি দেখা দিয়েছে ,, পাখিরা তাদের নিড়ে ফিরে যাচ্ছে ,, আমরা দেখতে পাই নিপা চুপিচুপি বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে নিচে নামছে ,, সে এদিক ওদিক দেখছে যে কেউ আসছে কী না , সে দেখে কেউ নাই ,, সে আস্তে আস্তে করে পা ফেলে ফারুকের দিকে বাগানের সাইডে বসার যায়গাটায় আসছে ,, ফারুক পশ্চিম দিকে মুখ করে বসে আছে অর্থাৎ নিপার বিপরীতে,, নিপা আস্তে আস্তে পা ফেলে এসে ফারুকের গলায় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ,, ধরে ফারুকের গলায় একটা চুমু খায় ,,  ফারুক নিপার গালে হাত দিয়ে বলে ,, 

    – তুমি আইছো ,, কেমন আছো গো তুমি ,, 

     

    নিপা ফারুকের পিছন থেকে বেড়িয়ে সামনে আসে ,, এসে ফারুকের পাশে বসে ,, বসে সে দেখতে পায় ফারুকের হাতে একটা ফুল ,, সে ফারুকের হাত থেকে ফুল টা হাতে নিয়ে বলে ,,

     

    – বাহ্ ,, অনেক সুন্দর তো ফুল ডা ,, আমার অনেক পছন্দ হইছে ,, উম্মাহ ,,( বলেই ফারুকের গালে একটা চুমু দেয় নিপা ,,)

    – ফুল ডা তোমার লাইগাই আনছিলাম ,, কেমন আছো গো তুমি ,, 

     

    নিপা হাতে থাকা ফুলটার ঘ্রাণ নিতে থাকে আর বলে ,,

     

    – এইতো তুমি যেমন রাখছো ,, তুমি আমার সাথে থাকলে আমি সবসময় ভালো থাকি গো ,, তুমি কেমন আছো ,, 

    – আমি সারাদিন যেমন ই থাকি ,, তোমার দেখা একটা বার পাইলেই আমার আমার মনের মরুভূমিতে সিহরণ ঠান্ডা বাতাস বইয় যায় ,, তুমিই আমার একমাত্র সুখের কারণ ,, 

    – আচ্ছা শুনো না গো ,, আব্বারে আমাগো বিয়ার কথা কোনসময় কইবা কও তো ,, আমি তোমারে সবসময় আমার কইরা রাখতে চাই ,, আমার তোমারে ছাড়া একটা মূহূর্তও ভালা লাগেনা,, তুমি আমারে তোমার লগে নিয়া চল ,, 

    – আমার আব্বারে আমি আইজকাই যাইয়া কমু আমাগো বিষয় ডা,, তুমি চিন্তা কইরো না,, আব্বায় পড়ে সময় কইরা তোমার আব্বারে প্রস্তাব দিতে আইবো,, বুঝোইতো, অনেক গুলি ফার্ম দেখাশোনা করোন লাগে ,,(একটু থেমে নিপার দিকে ফিরে) আর জানো আমিও তোমারে ছাড়া একটু থাকতে পারি না ,, সারাদিন পর যখন এক বেলা তোমার দেখা পাই ,, মনডা একদম ঠান্ডা হইয়া যায় ,, তুমি আমার নিঃশ্বাস,, তুমি আমার প্রস্বাস ,, তোমারে আমি আমার কইরা লমুই লমু ,,

    – কিন্তু যদি আমার আব্বায় না মানে ,, তহন,, 

    – মানবোই মানবো ,,, আর না মানলে,, না মানলে আমরা পালায় যামু ,, (ফারুক নিপার দিকে ফিরে তার দুই গালে হাত রেখে বলে ) তবুও তোমারে কোন কিছুর বিনিময়ে ছাড়তে রাজী না ,, বাঁচলে এক সাথে বাচমু মোরলেও একসাথে মরমু ,, 

     

    নিপার গালে হাত রেখে কথা গুলো বলাতে নিপা অনেক অনেক বেশি দূর্বল হয়ে পরে ,, সে একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় ,, তার চোখ গুলো সরু হয়ে যায় ,, ফারুক তার গাল গুলো এখনো ছাড়েনি ,, ফারুক তারপর বলে ,, 

     

    – আমার লগে সারাজীবন কাটাইবা কথা দেও ,, আমি তোমারে নিয়া সুখের সমুদ্রে পাড়ি দিতে চাই ,, এক সাথে সব সুখ-দুঃখ গুলা ভাগাভাগি কইরা নিতে চাই

     

    নিপা ফারুকের প্রতিটি কথা শুনেই তার প্রতি একটা নেশায় পরে যেতে থাকে ,, সে ফারুকের হাত টা গাল থেকে নিয়ে চুমু খায় ,, চুমু খেতে খেতে বলে ,,

    – কথা দিলাম ,, সারাজীবন আমি তোমার লগেই কাটামু ,, শুধু তোমার লগেই ,, 

     

    ফারুক নিপার গালে আবার হাত দিয়ে বলে ,, 

    – আমার চোখের দিকে তাকায়া বলো ,, 

     

    নিপা সরু চোখ নিয়ে প্রেমের নেশায় বলে ,,, 

    – সবসময় থাকমু ,, তোমার সাথে ,, আজীবন ,, 

     

    ফারুক ও আস্তে আস্তে একটা ঘোরে চলে যেতে থাকে,, সে নিপার প্রতি এক আলাদা টান আলাদা অনুভুতি অনুভব করে ,, সে আস্তে আস্তে তার ঠোঁট গুলো নিপার দিকে এগিয়ে দিতে থাকে ,, নিপাও ফারুকের দুই গালে হাত দিয়ে দেয় ,, সেও তার ঠোট গুলো এগিয়ে নিয়ে ঠোট ঠোট মিলিয়ে দেয়  ,, তারা চুমু খেতে থাকে একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ,, 

     

    আমাদের কে তাদের থেকে সিনটা সড়িয়ে একটা ফুলের উপর দেখানো হয় ,, যেখানে দুইটা মৌমাছি এক সাথে ফুলের মধু খাচ্ছে ,, এবং তায পিছনের আকাশে এক টুকরো গৌধূলির হলুদ মেঘ ভেসে যেতে থাকে ।

     

    _______________________

     

     আরমানের বাসা ,, অর্থাৎ আম বাগানের মালিকের ছেলের বাসা ,, চারিদিকে অন্ধকার নেমে গেছে বলা যায় ,, মাগরিবের আযান দিচ্ছে গ্রামের মসজিদে,, আমরা দেখতে পাই আরমানের বাড়ির সামনের রাস্তা টা ,, কেউ কেউ তাদের পালিত গরু , ছাগল বাসায় নিয়ে যাচ্ছে ,, কেউ বা পান্জাবি পরে মাথায় টুপি ঠিক করতে করতে মসজিদের দিকে যাচ্ছে ,, এই লোক গুলোর যাওয়া আসার মধ্যেই আমরা দেখতে পাই একটা কালো জ্যাকেট পরা একজন কে ,, মাথায় হেলমেট ,, চেহারা দেখা যাচ্ছে না ,, সে হেঁটে হেঁটে আরমানের বাসার মেইন গেটের সামনে এসে দাঁড়ায় ,, তার হাতে একটা মাঝারি ছোট আকারের গিফট বক্স ,, বক্সটা গোলপি , সাদা রংয়ের গিফট রেইপ দিয়ে মোড়ানো ,, লোকটা এসে আরমানের বাসায় কলিং বেল বাজাতে থাকে ,, কলিং বেল এর অনবরত শব্দ শুনতে পেয়ে আরমানের মা ভিতর থেকে হাক দিয়ে বলতে থাকে ,,

     

    – আরে বাবা যাচ্ছি যাচ্ছি ,, কলিং বেল টাকে তো একদম ভেঙেই ফেলবে মনে হচ্ছে ,, 

     

    আরমানের মা দরজার সামনে আসেন ,, এসে দরজা টা খুলেন ,, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে তিনি দরজা খুলে কাউকেই দেখতে পান না ,, তিনি মনে মনে বলতে থাকেন ,, ” এতোক্ষণ তাইলে কে বেল বাজাইতে ছিলো ,, এখানে তো কেউই নাই ,,  ধুরর আমি ঐদিকে রান্না বসায় আসছি ,, এদিকে লোকজন মশকরা করতেছে ,, আরমানের বাবাকে বলতে হবে ,, খুব বাড় পেয়ে গেছে গ্রামের মানুষ ,,”

     

    তিনি দরজা টা লাগাতেই যাবেন ,, তখনই তার চোখ পরে মাটিতে ,, তিনি দেখতে পান একটা গিফ্ট বক্স সেখানে পরে আছে ,, তিনি মাটি থেকে সেটা তুলে হাতে নেন ,, বক্সের গায়ে লেখা ,, ” মি, আরমান সিদ্দিকী” 

     

    তিনি ভাবতে থাকেন ,, 

    – আরমানের নাম দিয়ে এসেছে ? তারমানে আরমানের জন্য কোন পার্সেল হবে হয়তো ,, আর আরমান টাও তো সেই কবে দুপুরে বেড়িয়েছে তো বেড়িয়েছেই ,, তার ফিরার আর নাম গন্ধ নাই ,, যাই বক্স টা আরমানের ঘরে রেখে চুলার পাড়ে যাই ,, ঐদিকে আবার তরকারি পুরা গেলো নাকি আল্লাহ জানে ,, 

     

    বলেই তিনি তারাহুড়ো করো গেট টা লাগিয়ে দিয়ে বক্স টা নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যান ,, 

     

    ________________________

     

    রাতুল মাস্টারের ঘর ,, তিনি বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে গল্পের বই পরছেন ,, বইটার নাম “সেই রাতের পাঠশালা” ,,

    মায়া ভাবি তখনই ঘরে প্রবেশ করে ,, তিনি ঘেমে গিয়েছেন ,, তাই শাড়ির আঁচল দিয়ে গলার ঘাম , মুখের ঘাম মুছতেছেন ,, মুছতে মুছতে তিনি বই পরতে থাকা রাতুল মাষ্টারের পাশে এসে বসেন ,, তিনি বলতে থাকেন,,,

     

    – আজ রাতের রান্না-বান্না করা শেষ ,, তুমি একটু সরে যাও তো ,, আমি একটু ভালো করে উঠে বসি বিছানায় ,, হেমন্তের সময় তাও এতো গরম বাপু ,, আর ফ্যান টাও জোরে ঘুরে না বাল ,, গরমে গা জ্বলে যায় ,,

    – ফ্যান টার রেগুলারে সমস্যা ,,কালকে নিয়ে গিয়ে ঠিক করে আনবো ,, তো কী কী রাঁধলে আজ ? 

    – এইতো আজ যে মাগুর মাছ আনলা সকালে সেটা রান্না করছি ,, আর গাজর , আলু , লাউ দিয়ে একটা সবজি বানাইছি ,, আর ডাল ,, এই গুলাই ,, 

    – তোমার হাতের রান্নায় কিন্তু জাদু আছে বউ ,, এতো খাই তাই খালি খাইতেই মন চায় ,, শুধু তোমার রান্নায় না ,, তোমাতেও জাদু আছে ,, বিয়ের পর তোমাকেও যতই ,,,,,,

    – হইছে চুপ করো ,, খালি দুষ্টু দুষ্টু কথা বার্তা ,, পঁচা হয়ে গেছো তুমি ,, খালি সবসময় দুষ্টুমি ঘুরে তোমার মাথায় ,, আমি গেলাম ফ্রেশ হইতে ,, তোমার তো এই সময় বই পরা ছাড়া কোন কাজ নাই ,, এতো বই পরে কী মজা পাও হ্যা ,, ? আমাকেও তো একদিন একটু বই পরিয়ে শুনাইতে পারো ,, কিন্তু তোমাকে তো এসব বলে দিতে হবে ,, রোমান্টিকতা তো তোমার মাঝে বিন্দুমাত্র নাই, হুঁ ,, (ভেংচি কেটে বলে মায়া ,, )

    – ও তাই ,, আজ আমি তোমাকে নিজের লেখা একটা গল্প পরে শুনাবো ,, ভূতের গল্প ,, পরে শুনবার পর ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকবে তুমি ,, দেখিও ,, 

    – আমি ঐসব ভূতের গল্প পরে ভয় পাইনা ,, 

    – ও তাই ,, তাইলে আসো ,, তোমাকে এখুনি গল্পটা পরে শুনাই ,, 

    – না না ,, আমি এখন একটু ফ্রেশ হবো ,, রাতে শুয়ার পরে শুনাইয়ো ,, এখন আমি গেলাম ,, আর হ্যা ,, রিয়াদ কই ,, আজকে কী দেরি হবে ওর ? 

    – মনে তো হয় ,, আমি ফোন দিবোনে ,, আর তুমি যাওয়ার সময় দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে যেও ,, একলা একলা ঘরে ভূতের গল্প পরি ,, আবার দরজা মেলা থাকলে মনে হয় বাইরের অন্ধকার থেকে দুইটা চোখ আমার দিকে চেয়ে আছে ,, ভয় লাগে তখন বেশি বেশি ,,

    – ঘরের মধ্যে দরজা মেলে থাকতে পারে না ,, সে নাকি বলে আরো মাষ্টার ,, হুঁ ,, (ভেংচি কেটে বিছানা থেকে উঠে চলে যেতে থাকে মায়া ,, )

    – ও বউ দরজা ডা চাপায় দিয়া যাইয়ো গো ,, (হাক মেরে রাতুল মাস্টার বলতে থাকে)

     

    কিন্তু মায়া ভাবি দরজা না চাপিয়ে দরজা থেকে বের হয়ে যায়,, আর বাইরে গিয়ে হাক দিয়ে বলতে থাকে ,, ” নিজে উঠে লাগিয়ে দেও দরজা ,, “

     

    – উফফ ,, কী একটা বউ আমার ,, একদম কথা শুনেনা ,, আমাকেই যাইতে হবে মনে হয় ,, (বলেই বিছানা থেকে উঠে রাতুল মাষ্টার ,, উঠে যেতে থাকে দরজা চাপিয়ে দিতে ,, ) 

     

    _________________________

     

      শাহারিয়া ল্যাগেজ এ কাপড় ঢুকাচ্ছে ,, রাত ১০ টায় ট্রেন ,, এখন বাজে রাত ৮ টা ,, সে যেখানে থাকে সেখান থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে যেতে সবমিলিয়ে এক ঘন্টা লাগে ,, তাই ৯ টার মধ্যে যেন বের হতে পারে সেই অনুযায়ী সব রেডি করতেছে ,, শাহারিয়ার গ্রামের বাসা আনন্দপুর , দিনাজপুর জেলায় পরে ,, ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে যেতে কাল সকাল  ৬-৭ টার মতো বেজে যাবে ,, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পার হয়েই তাদের গ্রাম ,, তার বাকি টিম মেম্বারস দের সে বলে দিয়েছে রেলস্টেশনে চলে যেতে ,, সবার টিকেট সে বিকালেই অনলাইনে কেটে রেখেছিলো ,, এরই মধ্যে শাহারিয়ার ব্যাগ গুছানো শেষ হয় ,, সে ল্যাগেজ টার চেইন আটকিয়ে সেটার পাশে বসে ,, বসে ভাবতে থাকে ,, ” মা কে একটা ফোন দিতে হবে ,, আমরা যে যাচ্ছি সেটাতো জানানোই হয়নি ,, আরো দেরী করে জানালে পরে তখন আবার রাগ করবে ,,” 

     

    শাহারিয়া পকেট থেকে ফোন টা বের করে ,, বের করে মায়ের নাম্বার টা খুঁজে বের করে ,, এবং ফোন দেয় ,, 

     

    এদিকে শিউলি বেগল তার ঘরে তার শাড়ি ভাজ করছিলো ,, তখনই তার ফোন টা বেজে উঠে ,, ফোন টা বিছানার বালিশের পাশে বাজছে ,, তিনি শাড়ি গুছানো রেখে গিয়ে ফোন টা তুলেন ,, তুলেই দেখতে পান যে শাহারিয়া ফোন দিয়েছে ,, তিনি প্রায় হকচকিয়ে ফোন টা রিসিভ করে বলতে থাকেন ,,

     

    – হ্যালো ,, বাবা কেমন আছোস তুই ,, ?

    – এইতো মা আলহামদুলিল্লাহ ভালো ,, তুমি ? 

    – এইতো আছিরে বাপ ,, ভালো মন্দ ‌নিয়াই ,, তো কী করস ,, ?

    – ব্যাগ গুছিয়ে উঠলাম মা ,, 

    – ব্যাগ গুছাইলি ? কই যাবি তুই ? নতুন কোথাও ট্রান্সফার কইরা দিছে নি তোরে আবার ? 

    – না না মা ,, আমি তোমাদের ওখানে আসতেছি ,, আর আজ রাতেই ট্রেনৈ উঠবো ,, 

    – আরে আরে কী কস ,, সত্যিই তুই আইতাছোস ‌,, তোরে কতদিন দেখি সোনার টুকরা মানিক আমার ,, সেই যে ৪ বছর আগে গেছোস ঢাকা ,, আর আছ নাই ,, এইবার কিন্তু অনেক তোরে থাইকা যাইতে হইবো কইয়া দিলাম ,, 

    – আচ্ছা আচ্ছা মা থাকবো ,, আর মা ,, আমার সাথে আমার কিছু বন্ধুও যাবে ,, তারাও আমার সাথে ‌কয়েকদিন সেখানে থাকবে আমাদের বাসায় ,, ওরা অনেক রিকোয়েস্ট করলো তো আমার গ্রাম ঘুরার জন্য ,, আর তোমাকে দেখার জন্য ,, তাই না করতে পারলাম না ,, ওদেরকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি মা ,, 

    – ও তাইলে তো ভালোই হয়,, মেলাদিন পরে আবার আমার বাড়ি ছাওল-পাওল দিয়া ভইরা যাইবো ,, অনেক ভালো লাগবো আমার ,, তুই লইয়া আয় ,, আর কয়জন তারা ? 

    – বেশি না মা ,, ৪ জন মাত্র ,, ২ জন ছেলে , দুইজন মেয়ে ,, 

    – তো তোরো কী ঐ দুইজন মাইয়ার মধ্যে কাউরে পছন্দ ‌নাকি হ্যা ,, ! বিয়া সাদি করার মতলব নি ,, ! 

    – আরে না না মা ,, কী কও ,, ঐরা জোড়ায় জোড়ায় আছে ,, আমার ঐহান থেইকা কাউরেই পছন্দ না ,, 

    – ও আচ্ছা তাইলে তো ভালাই ,, তো ট্রেন কয়ডায় তোর ? 

    – রাত ১০ টায় মা ,,

    – ব্যাগ পত্র সব গুছাইছোস ? 

    – হ্যা মা ,, মাত্র গুছিয়েই তোমায় ফোন দিলাম ,,

    – রাইতে খাইছোস বাপ আমার ,, ? 

    – না মা ,, বাইরে কিছু খেয়ে ট্রেনে উঠবো,, 

    – আর কতদিন বাইরে খাবি বাপ আমার ,, আচ্ছা তুই আয় ,,তোর সব পছন্দের রান্না কইরা তোরে খাওয়ামু ,, আর তোর কোন মাইয়া পছন্দ হইলেই বিয়া দিয়া তোগোরে ঢাকায় পাডামু ,, তাইলে আর বাইরের খাওন খাইয়া শরীর খারাপ করতে হইবো না ,,

    – আচ্ছা আচ্ছা মা ,, বিয়ে সাদি পরে দেখা যাবে , আগে যাই ,, তো তুমি খাইছো ,, ? 

    – না তোর বাপরে রাইতে খামু ,, ( হাসতে হাসতে শিউলি বেগম বলেন)

    – আরে না মা ,, রাতের খাবার ‌খাইছো ? 

    – ও ,, তাও খাই নাই ,,একটু পরেই খামু ,, 

    – ও আচ্ছা তাড়াতাড়ি খেয়ে নিও ,, বাবা ভালো আছেতো ? 

    – হ হ ,, হেইয়ার আইজকাইল এই বৃষ্টির রাইতে যা পাওয়ায় বাড়ছে কী আর কমু ,, তুই আয় ,, তোরে সব কিছুর গল্প হুনামু ,, 

    – আচ্ছা আচ্ছা মা ,, সেসব দেখা যাবে পরে ,, তুমি আর বাবা খেয়ে নিও ,,

    – হ হ একলগেই খাই আমরা ,, তুই সাবধানে আহিস ,, আর ট্রেন চলা অবস্থায় কিন্তু জানালা দিয়া মাথা বাইর করবি না কইয়াদিলাম ,, আর যা যা লাগে কমলাপুরেই কিনা লইস ,, পরের কোন স্টেশনে নামতে যাইস না কইলাম ,, পরে দিয়া হারাইয়া যাবি ,,

    – হা হা হা ,, মায়ের কাছে আমি এখনো সেই ছোট্ট বাবুই রয়ে গেলাম ,, 

    – তুই আমার কাছে সেই ছোট্ট বাবুই থাকবি ,, 

    – আচ্ছা তাইলে মা এখন তাইলে রাখলাম ,, ট্রেন ছাড়ার সময় কল দিয়ে জানিয়ে দিবো ,, 

    – আইচ্ছা বাপ ,, সাবধানে আহিস ,, রাখলাম ,,

    – আচ্ছা মা আসসালামুয়ালাইকুম,,

    – ওয়ালাইকুমুস সালাম বাপ আমার ,,

     

     ফোনটা রাখলাম ,, মা আমায় নিয়ে কত্ত চিন্তা করে ,, মা তো মা ই,,, সন্তানদের নিয়ে তাদের কত্ত চিন্তা ভাবনা ,, আচ্ছা এখন যাই , ফ্রেশ হয়ে নেই ,, বের হতে হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ,, ঘড়িতে চেয়ে দেখি ৮:৩০ বেজে গেছে ,, আমি উঠে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যাবোই ,, তখন দেখি আমার টিম মেম্বার ও আমার ভালো বন্ধু ইমন ফোন দিয়েছে ,, আমি ফোন টা হাতে নিয়ে রিসিভ করি ,,

    ওপাস থেকে ইমন বলে ,,

    – কী রে তুই কই ,, ?

    – আমি তো বাসায় ,, বের হবো একটু পর ,, 

    – তো শোন ,, আমি বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসবো সবার জন্য ,, তাই তোকে আর বাইরে থেকে খাবার আলাদা করে নিতে হবে না ,, মা বানিয়েছে খাবার গুলো ,, তাই নো টেনশন ,, 

    – ও তাইলে তো ভালোই হলো ,, আর তুই হচ্ছে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে নিস ,, আর নিলয় , কল্প , আর শাম্মিকেও নিয়ে নিতে বলিস ,,গ্রাম্য এলাকা ,, কারেন্ট অনেক ডিসটার্ব দিবে ,, আমি আমার ৩ টাই নিয়ে নিছি ,, তোরাও তোদের যতগুলো আছে নিয়ে নে ,, আর টিকিট আমি কেটে রাখছি ,, তোরা খালি রেলস্টেশনে গিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা কর ,, 

    – আচ্ছা ,, আর তুই তাড়াতাড়ি আছিস ,, দেরি করিস না একদম ,, 

    – আমি এই ফ্রেশ হয়ে কাপড় পরেই বের হবো ,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে রাখলাম তাইলে ,, 

    – আচ্ছা ,, 

     

    বলেই ফোনটা কেটে দেয় শাহারিয়া ,, ঘড়ির দিকে মুখ তুলে তাকায় সে ,,দেখে ৮ টা ৩৭ বেজে গেছে ,, সে ফোনটা বিছানার উপরে ছুড়ে মেরে তাড়াতাড়ি টাওয়াল (গামছা) টা হাতে নিয়ে গোসলখানার দিকে দৌড় দেয় ,, 

     

    ________________________

     

     আরমানের ঘর ,, আরমানের ঘরে উত্তরপশ্চিম কোনে বিছানা ,, বিছানার সাথে লাগানো ছোট্ট একটা টেবিল ,,তার উপর টেবিল ল্যাম্প ,, তারপাশেই কাপড় রাখার আলমারি ,, আলমারির বিপরীত পাশে তার পড়ার টেবিল ,, এখন সে পড়াশোনা করেনা ,, তবে তার পড়াশোনার টেবিলটা রয়েই গেছে ,, সেখানে কয়েকটা গল্পের বইয়ের থাক দেখা যাচ্ছে ,, এবং সেই বই গুলোর সামনে সেই গিফট বক্স টা রাখা ,, যেটা আরমানের মা সন্ধ্যায় তাদের দরজার সামনে থেকে এনেছিলো ,, বিছানা টা গোছানো ,, আরমান কে আমরা ঘরে ঢুকতে দেখতে পাই ,, তার গায়ে সাদা সোয়েটার ,, সে দুপুরে বেড়িয়েছিলো তার বাইক নিয়ে ,, দিনাজপুর শহরে গিয়েছিলো একটু দরকারি কাজ এ ,, মাত্র বাসায় ফিরলো সে ,, ঘরে ঢুকেই হাতের গ্লাভস গুলো খুলে ফেলতে থাকে সে ,, সেগুলো খুলে বিছানার উপর রাখে ,, সোয়েটার খুলতে থাকে সে ,, সোয়েটার খুলতে খুলতে তার চোখ যায় টেবিলের উপরে থাকা সেই গিফট বক্স টার উপর ,, সে সোয়েটার টা খুলে হাতে রাখা অবস্থায় টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে ,, তার মন কৌতুহল সৃষ্টি হয় এই বক্স টাকে নিয়ে ,, সে সোয়েটার টাকে বিছানায় ছুড়ে মেরে টেবিলের কাছে আসে ,, এসে চেয়ার টা টেনে সে বসে ,, বসে বক্স টা হাতে নেয় ,, সে বক্স টার উপর দেখে তার নাম লিখা রয়েছে ,, কিন্তু তার যতদূর মনে পরছে সে তো কোন অনলাইনে অর্ডার দেয় নি ,, তাহলে ? 

     

    সে বক্সটার উপরে থাকা ফিতার বাঁধন টা খুলতে থাকে ,, তারপর গোলাপি , সাদা রঙের বক্স রেইপ টাও খুলতে থাকে ,, ঐগুলো খুলে ফেলার পর সে দেখে মোটা কাগজের বক্স ,, সে বক্সের ঢাকনা টা খুলে ফেলে ,, খুলার সাথে সাথে একটা সুগন্ধি বক্স থেকে বেড়িয়ে যায় ,, সুগন্ধি টার সুবাস অনেক ,, আরমানের ‌কাছে সুগন্ধি টা বেশ ভালো লাগে ,, সে তারপর বক্সটার ভিতরে তাকায় ,, সে দেখে যে একটা কাগজ ,, সে কাগজ টাকে হাতে নিয়ে খুলতে থাকে ,, কাগজ টা খুলার পর দেখতে পায় সেখানে কিছু লিখা আছে ,, সে লেখাটা পরতে থাকে ,, লিখাটা ছিলো ,,,

     

    “””সে অনেক অনেকদিন আগের কথা ,,

    এক দেশে ছিল এক রাণী আর রাজা ,,

    রাণী মেরে ফেললো রাজাকে নিজ হাতে ,, 

    আদেও কী রাজা মরেছিলো সেই নির্জন রাতে ,,,,??””

     

    লেখাটা পরেই আরমানের কাছে কেমন একটা রহস্য রহস্য লাগতে থাকে ,, সে তাড়াতাড়ি কাগজ টা পাশে রেখে বক্সের ভিতরে দেখতে যায় ,, যে আর কী আছে ,, সে বক্সের ভিতর থেকে একটা কালো পলিথিন বের করে ,, সে স্পর্শ করে বুঝতে পারছিলো যে পলিথিনের ভিতর কিছু আছে ,, সে সেই কালো পলিথিনের মুখ টা খুলে এবং টেবিলের উপর উল্টো করে ঢেলে দেয় ,, সেই কালো পলিথিন থেকে একটা একটা করে বেড়িয়ে আসতে থাকে মানুষের কাটা আঙ্গুল ,, সে ভয়ে পলিথিন টা টেবিলের উপর ফেলে দিয়ে চেয়াল থেকে দাঁড়িয়ে পিছনে পিছিয়ে যায় ,, সে ভয় পেয়ে যায় ,, সে দেখে কাটা আঙ্গুলের একটাতে একটা আংটি পরানো ,, তা দেখেই আরমানের চোখ বড় বড় হয়ে যায় ,, সে জোরে একটা চিৎকার মারে ,, কারণ সেই কাটা আঙ্গুলের একটাতে থাকা আংটিটা তার বন্ধু ‌আরিফ পরতো ,, এবং তার মানে এই কাটা আঙ্গুল ‌গুলো আরিফের ,,, 

    সে ভয়ে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় ,, 

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৭ 

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৮

     

    (আজকের পর্বে কিছু ১৮+ বিষয় রাখা হয়েছে ,, বাচ্চারা দূরে থাকো)

    সে সেই কালো পলিথিনের মুখ টা খুলে এবং টেবিলের উপর উল্টো করে ঢেলে দেয় ,, সেই কালো পলিথিন থেকে একটা একটা করে বেড়িয়ে আসতে থাকে মানুষের কাটা আঙ্গুল ,, সে ভয়ে পলিথিন টা টেবিলের উপর ফেলে দিয়ে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে পিছনে পিছিয়ে যায় ,, সে ভয় পেয়ে যায় ,, সে দেখে কাটা আঙ্গুলের একটাতে একটা আংটি পরানো ,, তা দেখেই আরমানের চোখ বড় বড় হয়ে যায় ,, সে জোরে একটা চিৎকার দেয় ,, কারণ সেই কাটা আঙ্গুলের একটাতে থাকা আংটিটা তার বন্ধু ‌আরিফ পরতো ,, এবং তার মানে এই কাটা আঙ্গুল ‌গুলো আরিফের ,,, 

    সে ভয়ে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় ,, 

     

    তার বের হয়ে যাওয়ার পর আমাদের কে তার খোলা জানালা দেখানো হয় ,, যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো একটা ছায়া ,, ছায়াটা একদমই নড়ছিলো না ,, বাইরে বিজলী চমকিয়ে উঠে ,, বিষয় টা দেখতে অনেক ভয়ংকর লাগছিলো ,, এবং কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ছায়া টা সেখান থেকে সড়ে যায় ,, 

     

    ________________________

     

    কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন,, চারিদিকে কোলাহল , মানুষ অপেক্ষা করছে তাদের ট্রেনের জন্য ,, প্লাটফর্মে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে ,, কেউ কেউ বসার যায়গায় বসে কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে ,, কেউ কেউ গল্পের আসর জমিয়েছে ,, সময় এখন ৯ টা ৫৫ ,, আমরা দেখতে পাই নিলয় , ইমন , কল্পনা , সাম্মি তারা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে শাহারিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে ,, তখনই দেখতে পাই আমরা শাহারিয়াকে ,, তার কাঁধে একটা ব্যাগ , আর হাতে লাগেজ ,, সে প্লাটফর্ম গেইট দিয়ে প্রায় তাড়াহুড়ো করেই প্রবেশ করছে ,, করেই সে নিলয়-ইমন দের দিকে আসতে থাকে ,, তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে হাপাতে থাকে ,, ইমন বলে ,, 

     

    – কী রে ,, তোর এতো দেরি হয়ে গেলো ,, ? ট্রেন তো ছেড়ে দিবে ,, আর মাত্র ৪ মিনিট বাকি আছে ,, তাড়াতাড়ি ট্রেনে উঠ ,, কতো দেরি করে ফেলছিস দেখ একবার ,, 

    – আরে ,, (একটু থেমে) আর বলিস না ,, রাস্তা , রাস্তায় এতো জ্যাম ,, (শাহারিয়া হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে) 

    – ও আচ্ছা ঠিক আছে ,, তাড়াতাড়ি ট্রেনে উঠ ,, (নিলয় বলে) 

     

    শাহারিয়া তার ল্যাগেজ টা হাতে নেয় ,, নিয়ে ট্রেনের দরজার হাতল টা ধরে উঠে পরে ,, ওর পরে শাম্মি উঠে ,, তারপর কল্পনা , তারপর ইমন আর নিলয় ,, শাহারিয়া ৫ টা সিট একই সিরিয়ালে কেটে ছিলো ,, তাদের বগি ছিলো “ঙ” ,, সিট নাম্বার ছিলো ২৫,২৬,২৭,২৮,২৯ ,, শোভন চেয়ার গুলোতে এক পাশে ৩ টি সিট ও একপাশে ২ থাকে ,, শাহারিয়া গিয়ে যেপাশে ৩ টি রয়েছে সেপাশের জানালার সিট টাতে বসে ,, বলতে থাকে,,,,

     

    – ইমন আয় ,, আমার পাশে বস ,, 

     

    ইমন আসতে যাবে ,, তখনই কল্পনা তার আগে এসে আমার পাশের সিট টাতে বসে পরে ,, শাহারিয়া একটু ইতস্তত বোধ করতে থাকে ,, বলে ,,

     

    – কল্প তুই বসবি ,, ? 

    – হ্যা ,, কেন কোন সমস্যা ,, ? সমস্যা থাকলে বল, আমি উঠে যাই ,, (বলেই উঠতে থাকে কল্পনা)

     

    শাহারিয়া তার হাত ধরে বলতে থাকে ,,

    – আরে না না ,, সমস্যা নাই ,, থাক ,, যেহেতু তুই বসেই পরছিস ,, 

     

    কল্পনা দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় শাহারিয়া যে তার হাত ধরেছি তার দিকে তাকায় ,, শাহারিয়া ভয় পেয়ে তার হাত ছেড়ে দেয়  ,,  ধীর গলায় বলে ,,,

    – বসে পর ,, ট্রেন ছেড়ে দিবে ,, 

     

    কল্পনা তারপর বসে যায় শাহারিয়ার পাশেই,, কল্পনা সাম্মীকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে ,,,

     

    – দোস্ত ,, আয় ,, তুই আমার পাশে বস ,, আর নিলয় আর ইমন আলাদা বসুক ,, 

     

    সাম্মি এসে তার পাশে বসে যায় ,, নিলয় আর ইমন পরে তখন গিয়ে দুইটা সিটে বসে পরে ,, এখন তিনটা সিটে আমি , কল্প , আর সাম্মি ,, আর বাকি ওপাসের সাড়ির দুইটা সিটে ইমন আর নিলয় ,, ট্রেন তার হুইসেল বাজায় ,, বাজিয়ে চলতে শুরু করে ,, 

     

    আমি ফোন টা বের করি পকেট থেকে ,, বের করে মায়ের নাম্বারে কল দেই ,, 

     

    শিউলি বেগম এদিকে বিছানা রেডি করতেছিলেন ,, তারা শুয়ে পরবেন ,, মতিন মেম্বার ঘরের একটা চেয়ারে বসে কবিতার বই পরছেন চোখে চশমা দিয়ে ,, তখনই ডেসিন টেবিলের উপরে থাকা ফোন টা বেজে উঠে ,, শিউলি বেগম শলার বিছানা ঝাড়ু টা রেখে ফোন টা হাতে তুলে নেন ,, হাতে নিয়ে রিসিভ করে বলেন ,, 

     

    – হ বাজান ক ,,

    – মা ট্রেন মাত্র ছাড়লো ,,

    – ও আইচ্ছা ঠিক মতো আহিস বাজান ,, রাস্তায় কোন সমস্যা হইলে ফোন দিস ,, 

    – আইচ্ছা মা ,, তোমরা খাইছো ,, ? 

    – হ বাজান ,, এক বার খাইছি ,, আরেকবার খাওয়া দাওয়া করবার লাইগা রেডি হইতাছি ,, 

    – মা ,, কী বলো এসব ,, আচ্ছা বাদ দেও ,, আমি কাল সকালে নেমে ফোন দিবো তোমায় ,, তোমরা ঘুমিয়ে পরো ,, রাত হয়েছে অনেক ,, 

    – আইচ্ছা বাজান ,, নাইমাই ফোন দিবি কিন্তু ,, আমি তাইলে রাখলাম ,,

    – আচ্ছা মা ,, আসসালামুয়ালাইকুম,,

    – ওয়ালাইকুমুস সালাম বাজান ,, 

     

    আমি ফোন টা রেখে দেই ,, ট্রেন তার পূর্ণ গতিতে চলতে শুরু করেছে ,, জানালা দিয়ে অনেক বাতাস আসছে ,, সবকিছু খালি দ্রুত বেগে পিছনের দিকে ছুটে চলেছে ,, আকাশে দূরে কোথাও বাজ পড়ার দৃশ্য,, সাথে ঠান্ডা এক বাতাস ,, শাহারিয়া জানালা দিয়ে বাইরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ,, মনে অনেক খুশি আর আনন্দ ,, এতো দিন পর মা বাবাকে দেখতে পাবে ,, তাদের আদর, স্নেহ পাবে ,, ছোট বোন এসে আবদার করবে ,, মা কে , বাবাকে জড়িয়ে ধরবে সেই আগের মতো ,, অনেক খুশি লাগছে মনে ,, শাহারিয়া এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যেতে থাকে ,, কল্প আর সাম্মি ফোন টিপতেছে ,, নিলয় আর ইমন ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করেছে ,, ট্রেন চলেছে তার মতো করে ,, ঝকঝক ,, ঝকঝক ,, 

     

        মেম্বারের রুম ,,  শিউলি বেগম ফোন টা রেখে বিছানা রেডি করছেন ,, মতিন মেম্বার বই থেকে চোখ না উঠিয়েই জিগ্গেস করছেন ,, 

    – কেডা ফোন দিছিলো ,, ? শাহারিয়ায় ? 

    – হ ,, অয় আইতাছে ,, ট্রেনে উডছে ,, ট্রেন ছাড়লো তাই ফোন দিছিলো ,,

     

    কথাটা শুনেই মতিন মেম্বার বই থেকে চোখ টা উঠিয়ে ফেলেন ,, তিনি বলেন ,,

     

    – কী কইলা তুমি ,, ? সত্যি সাহারিয়া আইতাছে ,, ? আমার পোলাডা সত্যিই আইতাছে ,, আমার যে কী খুশি লাগতাছে শিউলি বেগম ,,  তোমারে আমি কেমনে বুঝামু ,, ও আবার আইসা আমারে আব্বা কইয়া ডাকবো ,, 

    – হ ,, অয় আইতাছে ,, আর লগে অর ৪ জন বন্ধুও আইতাছে ,, থাকবো কয়েকদিন ,,

    – তো আমাগো যে মেহমান খানার লাইগা ৬ ডা রুম আছে ,, সেইগুলির মধ্যে ৪ ডা খুইলা দেও ,, আর সাহারিয়ার রুম ডাও পরিস্কার কইরা রাইখো ,, 

    – হ ,, আমার তো খাইয়া দাইয়া কাম নাই যে আমি ঘর পরিষ্কার করতে যামু ,, তুমি কামের বেডি আনো ,, আমি এসব পারুম না ,, ঐযে সাহিন কাকার মাইয়া ফুলমতি আছেনা ,, ওরে সকাল সকাল লই আইয়ো ,, শাহারিয়া যতদিন থাকবো ততদিন কাম কইরা দিবো ,, শুধু ঘরের কাম ,, রান্না-বান্না সব আমি করুম ,, শাহারিয়া আমার হাতের রান্ধন অনেক পছন্দ করে ,, 

    – আইচ্ছা আইচ্ছা আমি কাইল সকালে ফজরের নামাজ পইরাই যামু সাহিন গো বাড়িতে ,, তো বিছানা রেডি হইছে ? আমি ঘুমামু ,, 

    – হ হইছে ,, আহো ,, বইডা যায়গা মতো টেবিলের থাকে রাইখা আসো ,, প্রতিদিন বই এদিক ওদিক রাইখা দেও তুমি,, 

    – আইচ্ছা ঠিক যায়গাতেই রাখতাছি ,,(বইটা টেবিলের একটা থাকে রাখতে রাখতে) নিপা কী ঘুমাইছে ? 

    – হ অয় শুইছে ,, আহো বিছানা রেডি ,,, (তখনই বাইরে বিজলী চমকিয়ে উঠে, শিউলি বেগম একবার বন্ধ জানালার দিকে তাকান তারপর আবার মতিন মেম্বারের দিকে তাকিয়ে বলেন) আইজকাও মনে হয় বৃষ্টি নামবো ,,, এই হেমন্ত কালে এতো বৃষ্টি কইত্তে আহে বুঝিনা ,,

    – হইছে বুঝা লাগবোনা ,, হুইয়া পড়ো ,, (বিছানায় বসেন মতিন মেম্বার,,, শিউলি বেগম শুয়ে পড়তে থাকেন ,, মতিন মেম্বার তার চোখের চশমা খুলে বিছানার পাশের টেবিলে রেখে লাইট অফ করে দেন এবং শুয়ে পড়েন ,,,

     

    ________________________

     

    আরমানের বাসা ,, তখন আরমান চিৎকার করতে করতে বাইরে এসেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলো ,, তার বাবা-মা তাকে ধরে তার রুমে নিয়ে এসে শুইয়ে দেন ,, বাইরে অনেক বৃষ্টি ,, তারা দুইজনেই আরমানের পাশে বসে তার হাত মালিশ করছেন ,, আরমানের মা কান্না করছেন ,, আরমানের বাবা আয়েশা বেগমের কাঁধে হাত রেখে বলতে থাকেন ,, 

    – কেঁদো না আরমানের মা ,, কেঁদো না ,, তুমি আরমানের কাছে থাকো ,, আমি এখনি গিয়ে তুষার ডাক্তার কে নিয়ে আসছি ,, 

    – ওগো ,, আমাদের আরমান চোখ খুলছেনা কেনো গো ,, আরমানের কী হলো ,, আরমান,, চোখ খুল বাবা,, চোখ খুল (আরো কান্নায় ভেঙে পড়েন  আরমানের মা) 

    – তুমি শান্ত হও ,, কিছু হয়নি ,, আমি ডাক্তার কে নিয়ে আসছি ,, (বলেই বিছানা থেকে উঠে পরেন আরমানের বাবা ,, তিনি ঘর থেকে বের হয়ে যান ,, আরমানের মা তার ছেলের হাত গুলো মালিশ করছেন ,, আর আরমানের কপালে হাত বুলোচ্ছেন ,, আমরা দেখতে পাই সেই টেবিল ,, টেবিল টা ঘরের কোনে ,, তাই সেখানে আরমানের বাবা-মায়ের চোখ যায় নি ,, টেবিলে উপর এখনো সেই লেখা চিরকুট আর কাটা আঙ্গুল গুলো পরে আছে ,, 

     

    _______________________

     

     রাতুল স্যারের বাসা ,, রাত এখন ১১:৩০ টা ,, বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পরছে ,, মাঝে মাঝে বাজ পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে ,, রাতুল আর মায়া দুজনেই একটা কাঁথা ঢাকা নিয়ে শুয়ে আছে,, বৃষ্টি তার উপরে হেমন্ত কাল তাই ঠান্ডা পড়েছে বেশ ভালোই ,,, রাতুল মায়াকে ডাক দিয়ে বলতে থাকেন ,,

     

    – মায়া ,,ও মায়া ,, ঘুমাই গেলা নাকি ,, 

     

    মায়া ভাবি রাতুলের বিপরীত দিকে মুখ করে ছিলেন ,, তিনি রাতুলের ডাক শুনে চোখ কচলাতে কচলাতে এপাসে ফিরে বলেন ,, 

    – না গো ,, ঘুমাই নি ,, তবে ঘুম ধরছে ,, কেন গো ,, কিছু বলবা ,,

    – হ্যা ,, তুমি যে ঐ ভূতের গল্প শুনতে চাইলা তখন ,, তো ভূতের গল্প শুনবানা ,, নাকি ভূত ভয় পাও বলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে চাচ্ছো হ্যা ,, 

    – আমি কোন ভূত-তুতে ভয় পাই না বুজছো ,,(ওপাস থেকে ফিরে চিৎ হয়ে শুয়ে) আচ্ছা বলো দেখি তোমার সেই গল্প ,, শুনি ,, কেমন ভয়ংকর ,, 

    – তাই,,,! আচ্ছা শোন তাইলে ,,, 

     

    রাতুল স্যার গল্প বলা শুরু করে ,,,

     

    একটা বৃষ্টির রাত ,, ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির সাথে মাঝে মাঝেই আকাশে বিজলী চমকিয়ে উঠছে ,, ‘শো শো’ করে বয়ে যাচ্ছে ঠান্ডা বাতাস ,, একটা কাঁচা রাস্তা ,, ঘন এক জঙ্গলের ভিতর দিয়ে চলে গিয়েছে সেই পথ ,, সেই পথের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো কেয়া ,, বয়স মোটে ২০ ,, সে শহর থেকে তার মামাবাড়ি যাচ্ছিলো ,, যাওয়ার পথিমধ্যে এই জঙ্গলে ঘেড়া পথ টা পরে ,, রাস্তা টা একদম নির্জন ,, কেয়া ছাড়া আর কেউ নেই ,, আর ঘুটঘুটে অন্ধকার ও ,, কেয়া তার মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে পথ ধরে চলছে ,, মাঝে মাঝে বাজ পরার আলোতে চারিপাশ আলোকিত হয়ে উঠছে ,, কেয়া সাহসী মেয়ে ,, তাই সে ততটাও ভয় পাচ্ছিলো না ,, কিন্তু সেই সাহস আর তার মধ্যে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হলোনা ,, কেয়া যখন হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলের পথ টার ঠিক মাঝামাঝি চলে আসলো ,, তখন সে অনুভব করলো হঠাৎ করেই তার ঘাড়ে কারো জানি নিঃশ্বাস পরছে ,, হ্যা , আসলেই নিঃশ্বাস পড়ছে , সে অনুভব করতে পারছে ,, সে হাঁটা থেকে দাঁড়িয়ে যায় ,, তখনই সে বুঝতে পারে নিঃশ্বাস টা পরাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে ,, সে আবার ধীরে ধীরে পা চালাতে শুরু করে ,, তখন আবার তার ঘাড়ে কারো নিঃশ্বাস পরতে থাকে ,, এবার তার কিছুটা ভয় হতে থাকে ,, এমন একটা বৃষ্টির রাতে একটা ঘন জঙ্গলের পথে সে একা ,, আর তার সাথে এসব কী হচ্ছে ,, ! সে তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে যায় ,, আর বুকে সবটুকু সাহস নিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়,, দেখে ঘুটঘুটে অন্ধকার ,, কিছুই দেখা যাচ্ছে না ,, শুধুই বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে ,, সে আবার সামনে ফিরে ,, ধীরে ধীরে পথ ধরে এগিয়ে চলতে থাকে ,, সে ভাবতে থাকে তার মনের ভুল হবে হয়তো ,, সে যাচ্ছে ,, যাচ্ছে ,, এবং হঠাৎ করেই তার ফোনের ফ্লাস টা অফ হয়ে যায় ,, কেয়া ফোন টাকে হাতের মধ্যে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে ,, দু-একটা বাড়িও দেয় ফোনটাতে ,, কিন্তু না ফোন টা আর অন হচ্ছে না ,, তারমানে হয়তো ফোনের ব্যাটারি শেষ তাই পাওয়ার অফ হয়ে গিয়েছে ,, সে বলতে থাকে ,, “ধুর ,, এখনই অফ হতে হলো ফোন টাকে ,, আমি এখন কীভাবে রাস্তা দেখে যাবো ,, ” তখনই একটা বড় বাজ পরে ,, আর সেটার আলোতে চারিদিক আলোকিত হয় ,, সে দেখতে পায় রাস্তা টা সোজা চলে গিয়েছে ,, তানিয়া মনে সাহস সঞ্চয় করে সেও সেই অনুপাতে রাস্তা ধরে লাইট বিহীন চলতে থাকে ,,আস্তে আস্তে বৃষ্টির বেগ বাড়তে থাকে ,, সে তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে রাস্তা দিয়ে চলতে থাকে ,, হঠাৎ সেই নিঃশ্বাস তার ঘাড়ে আবারো পরতে থাকে ,, এবার কেয়া বেশ ভয় পেয়ে যায় ,, সে এবার একদম দাঁড়িয়ে যায় ,, তবে এবার দাঁড়ানোর পরও তার ঘাড়ে নিঃশ্বাস পড়াটা বন্ধ হয় নি ,, তার বুকের ধুকপুকানি বাড়তে থাকে ,, সে ধীরে ধীরে পিছনে ফিরে তাকাতে যায় ,, সে দেখে কিছুই দেখা যাচ্ছে না , সব ফাঁকা ,, সে এবার সামনে ফিরে জোরে জোরে পা চালাতে থাকে সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ,, এবার তার কানে কারো হাঁটার শব্দ শোনা যেতে থাকে ,, ঘাড়ে এখনো নিশ্বাস পরছে ,, নিঃশ্বাস টা উপর থেকে তার ঘাড়ে পরছে ,, সে এবার অনেক ভয় পেয়ে যায় এবং দৌড় লাগায় ,,  জোড়ে দৌড় দিতে শুরু করে এই রাস্তাটা থেকে বের হওয়ার জন্য ,, সাথে সাথে তার পিছনেও কারো দৌড়ে আসার শব্দ আসতে থাকে,, সে এবার তার মনের সকল সাহস এক সাথে করে পিছনে ফিরে তাকায় ,, সে দেখে সব কিছু কালো ,, হঠাৎ সে উপরে তাকায় ,, সে দেখতে পায় দুটো লাল চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে ,, সে চিৎকার দিয়ে সামনে ফিরেই দৌড় দিতে যাবেই,, তখনই সে দেখে সামনে অনেক অনেক লাল চোখ ,, শুধুই লাল চোখ ,,আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না অন্ধকারে ,, তখনই বিজলী চমকিয়ে উঠে ,, চারিদিক আলোকিত হয়ে যায় ,, এবং কেয়া যা দেখে তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ,, সে দেখে ওর সমান লম্বা অনেক গুলো কালো কুকুর জাতীয় প্রাণি ,, শরীর টা কুকুরের হলেও মাথাটা কিছুটা শিয়ালের মতো ,, তাদের জলজল লাল চোখ ,, সে এসব দেখে ভয়ে জঙ্গলের ভিতরে দিকে দৌড় দেয়,,সে জঙ্গলে ঢোকার পর বুঝতে পারে যে সেগুলোও তার দিকে ধেয়ে আসছে ,, সে দৌড়াতে থাকে দৌড়াতেই থাকে সেগুলোও পিছনে দৌড়ে আসতে থাকে ,, দৌড়াতে দৌড়াতে কেয়া জঙ্গলে ভিতরে একটা ফাকা জায়গায় এসে পরে ,, সে পিছনে ফিরে তাকায় ,, দেখে যে কিছুই আসছে না ,, তার বুক কাঁপছে ,, এসব কী দেখলো সে ,, ওগুলো কী ছিলো ,, না না যে করেই হোক তাকে এই যায়গাটা ছাড়তে হবে ,, এখান থেকে চলে যেতেই হবে ,, তখনই তার কানে একটা শব্দ আসে ,, সে আস্তে আস্তে করে মুখ তুলে তাকায় ,, ‌এবং হঠাৎ দেখে অনেক গুলো কালো কাপড় পরা লম্বা লম্বা মানুষ ,, সে ভয় পেয়ে যায় ,, হঠাৎ সে তার পায়ে কোন ঠান্ডা কিছু অনুভব করে ,, সে নিচে তাকায় ,,  দেখে অনেক পঁচা গলা লাশ ,, কোনটার হাত নেই ,, কোন টার মাথা বিচ্ছিন্ন ,, আর তার পায়ে একটা কাটা হাত এসে ধরে রয়েছে ,, সে দৌড়াতে চায় ,, তখনই সে মুখ থুবড়ে লাশ গুলোর উপরে পড়ে যায় ,, আর তার মুখ টা একটা খুলির উপর পরে ,, এবং খুলিটা একটা জোড়ে চিৎকার দিয়ে উঠে ,, এবং পঁচা গলা লাশ গুলো জেগে উঠে ,, লাশ গুলো কেয়ার উপরে স্তুব হয়ে উঠতে থাকে ,, কেয়া বাঁচার জন্য সবটুকু শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতে থাকে ,, চিৎকার করতে থাকে , আর্তনাদ করতে থাকে ,, কিন্তু কেউ শুনেনি সেই আর্তনাদ ,, কেয়া তার শেষ চিৎকার দেয় ,, এবং আকাশে বিজলী চমকিয়ে উঠে ,, কিছুক্ষণ পর চারিদিকে নিস্তব্ধতা ,, শুধু বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না ,, আর মায়া যানো ,, আমিও সেই খানে সেই লাশ গুলোর শিকার হয়েছিলাম গত বছর ,, লাশ গুলো আমাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছিলো ,, সেখানে যে একবার যায় ,, তার ফিরে আসা অসম্ভব ,, একদম অসম্ভব ,,( বলেই একটা অট্টহাসি দিতে থাকে রাতুল স্যার ,,

     

    মায়া ভাবি রাতুল স্যারের এই কথাটা শুনে একটা জোড়ে চিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে পরে যায় ,,বলতে থাকে ,,

    – কাছে আসবেননা আমার ,, রি,রি,রিয়াদ ,,(বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে) আমাকে বাঁচাও ,, এই আত্মার কাছ থেকে আমাকে বাঁচাও,,, 

    – আরে আরে মায়া আমি আত্মা না আত্মা না ,, আমি তো মজা করছি ,, আরে এদিকে আসো ,, উঠো ,, আমি তো মজা করছি বোকা ,,(বলতে বলতে নিচে নেমে মায়ার হাত ধরে দাড় করাতে থাকে রাতুল স্যার ,,)

    – তুমি এইসব মজা আর কখনো করবেনা ,, জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ,, 

    – আচ্ছা আচ্ছা আর করবোনা ,, এখন উঠোতো ,, 

     

    তখনই তাদের দরজায় কেউ কড়া আঘাত করতে থাকে ,, রাতুল আর মায়া সেই হঠাৎ শব্দে ভয় পেয়ে যায় ,, রাতুল স্যার ভয়ে ভয়ে বলে ,, 

     

    – ক,কে ,, দরজার সামনে কে ,, 

    – ভাইজান আমি ,, রিয়াদ ,, ভাবি চিল্লাই তাছিলো যে এরলাইগা আইলাম ,, কোন সমস্যা নাকি ভাইজান ,, 

    – আরে না না রিয়াদ ,, আমি তোমার ভাইয়ার সাথে একটু মজা করতেছিলাম ,, তুমি যাও ,, গিয়ে ঘুমিয়ে পরো ,, (মায়া বলতে থাকে ,, )

    – আইচ্ছা ঠিক আছে ভাবি ,, (বলেই দরজার সামনে থেকে চলে যেতে থাকে রিয়াদ) 

     

    মায়া ভাবি রাতুলের হাত ধরে বিছানায় উঠতে থাকে ,, রাতুল মায়া ভাবিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে ,, 

     

    – বেশি ভয় পাইছিলা ,, ? আমি তো শুধু তোমারে ভয় দেখানোর জন্য এমন টা করছি ,,

    – ভয় পাবোনা ,, এরকম করলে তো যে কারোরই ভয় পাওয়ার কথা ,, 

    – আচ্ছা আচ্ছা ভয় পায়না আমার লক্ষী বউ ,, আসো শুয়ে পরি ,, 

     

    মায়া ভাবি শুয়ে পরে ,, রাতুল ও উঠে শুয়ে পরতে থাকে ,, রাতুল শুয়ার পর বলে ,,

    – এই এখন এদিকে আসো না ,, এই বৃষ্টির রাতে একটু রোমান্স করি ,, ভয় কেটে যাবে তাইলে তোমার ,, 

    – ইসস যাও ,, আমাকে ভয় দেখিয়ে আমার সাথে রোমান্স করার ধান্ধা ,, আমি পারবোনা ,, 

    – ওগো আসোনা গো ,, 

    – আসবো ,, ? এলে কিন্তু তোমার শরীর আজ দূর্বল করে ছাড়বো ,, আমার জ্বালা তুমি উঠাইয়ো না ,, যাও ,, (বলেই রাতুলের অপর পাশে মুখ ফিরায় মায়া ,, )

    রাতুল মায়ার কাছে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে ,, 

     

    – আসো ,, দেখি কত পারো শরীর দুর্বল করতে ,, আমার গায়ে কী বল কম আছে নাকি ,, আমিও একসময় আনন্দপুর গ্রামের ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন ছিলাম ,, তুমি আমার সাথে খেলতে ভয় পাও তাই আসতে চাও না সেটা বলো,,

     

    মায়া এই কথা শুনে তার দিকে ফিরে ,, ফিরে তার দিকে চোখ সরু করে বলে ,,

    – আমি খেলতে ভয় পাই ,, ? দাঁড়াও , আজকে যদি তোমার শরীর অবশ না করছি তাইলে আমারো নামও মায়া না ,, 

    ( বলেই মায়া শুয়া থেকে উঠে ,, উঠেই রাতুলের তল পেটের উপর বসে ,, ) 

    রাতুল আবার মজা করে বলে ,, 

    – আমিও দেখি ,, কেমন আমার শরীর অবশ করতে পারো ,, আমার দেহো কী এতোটাই দূর্বল ,, আমিও কী কম ,, (বলেই মায়ার হাত ধরে মায়াকে তার দেহের উপরে শুইয়ে তার ঠোঁটে চুমু দেয় রাতুল ,, 

     

    আমাদের কে সিন টা তাদের থেকে সরিয়ে জানালা দিকে দেখানো হয় ,, মুষলধারে বৃষ্টির মাঝে বিজলী চমকিয়ে উঠে আকাশে ,,, 

     

    ______________________

     

    রাত এখন ১.৩০ ,, আহাদ তার সিএনজি নিয়ে বাড়ি ফিরছে ,, আহাদ, আরমান, আরিফদের সাথে একসাথে একই ব্যাচে পড়াশোনা করেছিলো ,, কিন্তু ভাগের পরিহাসে আজ সে সিএনজি চালক ,, সে দিনাজপুর মেইন শহরে সিএনজি চালিয়ে উপার্জন করে ,, এখন সে বাড়ি ফিরছে দিনাজপুর থেকে সিএনজি নিয়ে ,, বৃষ্টির রাত ,, তার উপর আরো এই পাকা রাস্তা টা রাত হলেই নির্জন হয়ে যায় ,, সে ধূলাগড়ের কাছাকাছি চলে এসেছে ,, ধূলাগড় পাড় হলে মাধবপুর ,, তা পার হলেই হরিষপুর ,, আহাদের বাসা হরিষপুর গ্রামেই ,, তার বাবা নেই ,, মাও নেই ,, বাবা ৭ বছর আগে মারা গিয়েছে ,, মা মারা গিয়েছে গত বছর ,, সে এখন তার মামা বাসাতেই থাকে ,, সেখানেই খায় ,, আর সিএনজি চালিয়ে উপার্জন করে প্রতি মাসে তাদেরকে থাকা , খাওয়ার টাকা দেয় ,, তো আবার ফিরে আসি বর্তমানে ,, আহাদ সিএনজি চালিয়ে যাচ্ছে ,,একটা গান ও ছেড়ে দিয়েছে,, যাতে এতো রাতে ভয় না লাগে ,,সে মনের সুখে গুন গুন করছে ,, এবং যাচ্ছে ,, হঠাৎ সে দেখতে পায় রাস্তার সামনে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে ,, লোকটা ঠিক রাস্তার মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে ,, বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে লোকটার জামা ,, মাথায় হেলমেট পরা ,, চেহারা দেখা যাচ্ছে না তার ,, হাত দুটো পিছনে রাখা ,, আহাদ সিএনজি দাড় করায় ,, করিয়ে হর্ণ বাজাতে থাকে ,, কিন্তু লোকটা সড়ে না ,, আহাদ সিএনজি এর ভিতর থেকে চিল্লিয়ে বলতে থাকে ,, ” এই কে আপনি ,, রাস্তা থেকে সড়ে যান ” 

     

    কিন্তু ঐ লোকটার কোন সাড়াশব্দ নেই ,, আহাদ এইবার একটু বেশিই বিরক্ত হয় ,, সে সিএনজি তে থাকা ছাতাটা নিয়ে সিএনজি এর দরজা খুলে বের হয়ে আসে ,, বাইরে অনেক বৃষ্টি ,, মাঝে মাঝে বাজ পড়ার শব্দ ,, আহাদ বের হয়ে জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে ,, 

     

    – ঐ ব্যাটা ,, এতো জোড়ে ডাকতাছি কানে যায় না ? পথ আটকাইয়া রাখছেন কেন ? সইড়া যান মিঞা ,,

     

    লোকটা এবার পিছন থেকে হাত টা সামনে আনে ,, তার হাতে বড় একটা কুড়াল ,, 

     

    আহাদ কুড়াল টা দেখেই ভয় পেয়ে যায় ,, চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার ,, সে বলতে থাকে ,,

     

    – এই এই ,, কেডা আপনে ,, আপনে কেডা ,, আপনি ,, আপনি কুড়াল নিয়া দাঁড়াইয়া আছেন কেন ,, 

     

    সেই হেলমেট পরা লোকটা আহাদের কথা গুলো শুনে সেই বড় কুড়াল নিয়ে আহাদের দিকে তেড়ে আসতে থাকে ,, আহাদ ভয় পেয়ে যায় ,, সে হাতের ছাতাটা ফেলেই দৌড় দিতে থাকে ,, হেলমেট পরা লোকটাও আহাদের পিছনে পিছনে দৌড় দিতে থাকে ,, আধা পাকা রাস্তা ,, অনেক যায়গায় রয়েছে খানাখন্দ ,, এই রাস্তা দিয়ে রাতে অনেক কম মানুষ চলা ফেরা করে ,, আর বৃষ্টি,, সাথে রাতও গভীর ,, তাই কোন মানূষের দেখা পাওয়া যায় না ,, রাস্তারি দুইপাশেই খালি ফসলের মাঠ আর মাঠ ,, দূর-দূরান্ত পর্যন্ত কোন লোকালয়ের দেখা নেই ,, আহাদ চিৎকার দিতে দিতে দৌড় দিতে থাকে ,, সে দৌড়াতে দৌড়াতে বলতে থাকে ,,

     

    – কেউ আমারে বাচাও ,, আমারে মাইরা ফালাইবো ,, বাচাও ,,(বলতে বলতে সে দৌড় দিচ্ছে ,, জান প্রাণ দিয়ে সে দৌড় দিচ্ছে ,, পিছনে সেই লোকটাও বড় কুড়াল টা হাতে নিয়ে তেরে আসছে তার দিকে ,, ) 

     

    আহাদ হঠাৎ ই রাস্তার একটা খানাখন্দে পা ফেলে ,, সাথে সাথেই তার পা মচকে সে পড়ে যায় ,, সে দৌড়াতে চায় ,, কিন্তু পারেনা ,, সে লোকটার দিকে ফিরে দুইহাত দিয়ে পিছনে টেনে টেনে ঘেঁষে পিছিয়ে যেতে থাকে ,, লোকটাও দৌড়ানি থামিয়ে আস্তে আস্তে করে তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে ,, আহাদ হাত জোড় করে বলতে থাকে ,,  

    – আমারে মাইরেন না ,, আমারে ছাইড়া দেন ,, আপনি যা কইবেন তাই হুনমু ,, আমারে যাইতে দেন ,, আমি বাঁচতে চাই ,, আমি বাঁচতে চাই ( বলেই আহাদ কান্না করে ফেলে ,, দুইহাত দিয়ে নিজেকে পিছনে টেনে নিতে থাকে)

     

    লোকটা তার হেলমেট টা খুলে রাস্তার উপর ফেলে দেয় ,, দিয়ে একটা টর্চ বের করে জ্বালিয়ে তার নিজের মুখের উপর ধরে ,, আমাদেরকে তার চেহারা দেখানো হয় না ,, শুধু গলা থেকে নিচ টা দেখানো হয় ,, লোকটা টর্চ ধরে বলতে থাকে ,,

     

    – কী ,, মনে পরে সেই রাতের কথা ? আমার আর্তনাদ ,, আমার চিৎকার ,, আমার অসহায়ত্ব ,, কিছুই তোদের মন গলাতে পারেনি ,, আমার বোন টাও ঠিক এভাবেই বাঁচতে চেয়েছিলো ,, বাঁচতে দিস নি তোরা ,, তোদেরও বাঁচার কোন অধিকার নেই ,, তোদের মৃত্যু আমার হাতেই লেখা ছিলো রে ,, আমার হাতেই ,, 

     

    আহাদ সেই চেহারা দেখেই চোখ গুলো বড় বড় করে ফেলে ,, একটু হলেই যেন ওর চোখ গুলো খুলে বেড়িয়ে আসবে ,, সে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছেনা যে এটা সেই ,, আহাদের শরীর যেন অবশ হয়ে গিয়েছে ,, সে অনেক কষ্টে শুধু তার মুখ দিয়ে একটাই কথা বের করে ,,

     

    – ত,ত,তুই ,,? তুই বেঁচে আছিস ,, ? ত,তুই বেঁচে আছিস কীভাবে ,, ? 

     

    আরো কিছু বলার আগেই লোকটা তার কুড়াল দিয়ে সজোরে এক কোপ মারে আহাদে কাঁধ বরাবর ,, আহাদের মাথাটা আলাদা হয়ে ছিটকে ৩ ফুট দূড়ে গিয়ে পরে ,, তার মাথা ছাড়া শরীর টা হাত পা ঝাপটাচ্ছে ,, রক্তে ভেসে গিয়েছে চারিপাস ,, লোকটা গিয়ে আহাদের কাটা মাথাটা তুলে  ,, তুলে সিএনজি এর হেডলাইটের সামনে আসে ,, বৃষ্টি এখনো পরছে ,, লোকটা এসে মাথার চুল গুলো ধরে চোখ খোলা রক্তাক্ত মাথাটাকে বলতে থাকে ,, 

     

    – প্রতিশোধ নিতে এসে গেছি আমি ,, তোদের সবার থেকে প্রতিশোধ নিয়েই আমি থামবো ,, রক্তের খেলা হবে ,, শুধুই রক্তের খেলা ,, হা হা হা হা (অট্টহাসির দিতে দিতে মাথাটাকে নিয়ে চলে যেতে থাকে সেই লোকটা ) 

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৮

    লেখক:: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৯

     

    লোকটা গিয়ে আহাদের কাটা মাথাটা তুলে  ,, তুলে সিএনজি এর হেডলাইটের সামনে আসে ,, বৃষ্টি এখনো পরছে ,, লোকটা এসে মাথার চুল গুলো ধরে চোখ খোলা রক্তাক্ত মাথাটাকে বলতে থাকে ,, 

     

    – প্রতিশোধ নিতে এসে গেছি আমি ,, তোদের সবার থেকে প্রতিশোধ নিয়েই আমি থামবো ,, রক্তের খেলা হবে ,, শুধুই রক্তের খেলা ,, হা হা হা হা (অট্টহাসির দিতে দিতে মাথাটাকে নিয়ে চলে যেতে থাকে সেই লোকটা ) 

     

    _______________________

     

    ভোর ৫:৩০ ,, ট্রেন চলেছে নিজের মতো করে ,, শাহারিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায় ,, চোখ কচলাতে কচলাতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় ,, ভোরের নীল আভা দেখা যাচ্ছে জানালা দিয়ে ,, অনেক বাতাস আসছে ,, শাহারিয়া জানালা টা অর্ধেক নামিয়ে দিলো ,, পাশে চেয়ে দেখে কল্প আর সাম্মি গভীর ঘুমে ,, ইমন , নিলয় দের দিকে চোখ ফিরিয়ে তাকায় , ইমন জানালা দিয়ে ট্রেন ভ্রমণ উপভোগ করছে ,, নিলয় ফোনে নাটক দেখছে , কানে ওর হেডফোন দেওয়া ,, শাহারিয়া পানির বোতল টা নিচে থেকে তুলে এক ঢোক পানি খায়,, বাইরে চেয়ে দেখতে থাকে , চারিদিকে শুধু ফসলের ক্ষেত , আর ক্ষেত ,, কিছু দূরে ছোট ছোট বাড়িও দেখা যাচ্ছে ,, শাহারিয়া ইমন কে ডাক দিয়ে জিগ্গেস করতে থাকে ,,

     

    – ইমন ,, এই ইমন ,, পার্বতীপুর স্টেশন কী আমরা পার হইছি ? 

     

    ইমন আমার কথাটা শুনে জানালার দিক থেকে মুখ ফিরায় ,, ফিরিয়ে বলে ,,

    – হ্যা পার্বতীপুর স্টেশন পাড় হয়েছি ,, সামনেই দিনাজপুর স্টেশন মনে হয় ,, 

    – ওহহ ,, আর নিলয় কোন নাটক দেখতেছে রে ? নতুন নাটক আসছে নাকি ঈগলের ? 

    – হ্যা আমার তো তাই মনে হয় ,, 

     

    নিলয় আমাদের কথোপকথন দেখে ,, কান থেকে হেডফোন বের করে বলে ,,

    – আমাকে কী কিছু বলছিস ? 

    – না না ,, তেমন কিছুনা ,, সামনেই আমাদের স্টেশন আসছে ,, নামতে হবে ,,(শাহারিয়া বলে)

    – হময় ,, তো কল্পনা , শাম্মী ওদের ডাক দে ,, 

    – পরে ডাক দেই ,, ঘুমাইছেই তো দেরি করে ওরা ,, সারারাত তো মনে হয় ফোনই টিপছে খালি ,, (শাহারিয়া বলে)

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,, (বলে ইমন আবার জানালা দিয়ে ট্রেন ভ্রমণ উপভোগ করতে থাকে ,,) 

     

    শাহারিয়াও জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায় ,, অনেক ঠান্ডা বাতাস ,, কুয়াশাও পরেছে ,, হেমন্ত কাল বলে কথা ,, ভাগ্যেস গরম কাপড় এনেছিলো সে আর ওদেরকেও নিতে বলছিলো ,, নাইলে তো শীতে একপ্রকার কাপাকাপি শুরু হয়ে যেতো ,, 

     

    শাহারিয়া জানালা দিয়ে এক পলকে বাইরে তাকিয়ে আছে ,, ট্রেন চলেছে তার মতো করে ,, ঝকঝক ,, ঝকঝক,, 

     

    ________________________

     

    মতিন মেম্বারের বাসা ,, সময় এখন সকাল ৬ টা ,,  চারিদিকে দিনের আলো ফুটেছে ,, তবে কুয়াশা রয়েছে খানিকটা ,, ফুলমতি আঙ্গিনা ঝাড়ু দিচ্ছে ,, বয়স তার মোটে ১৮-১৯ এর মতো ,, আঙ্গিনার পাশে মুরগি তার ছোট ছোট ছানাদের নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে দানা খুঁজে বেড়াচ্ছে ,, শিউলি বেগম রান্না ঘরে সকালের নাস্তা বানাচ্ছেন ,, রান্না ঘর টা আঙ্গিনার দক্ষিণ পাশে ,, মেম্বার সাব গিয়েছেন বাজারে ,, নিপা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গামছায় মুখ মুসছে ,, নিপা মুখ মুছে রান্না ঘরের দিকে ফিরে ডাকতে থাকে ,,

     

    – মা ,, ও মা ,, আমার কলেজ ড্রেস গুলা কই ,, আমার ঘরে তো পাইতাছি না ,, 

     

    শিউলি বেগম হাঁক দিয়ে বলতে থাকে ,,

    – আরে আমাগো ঘরের আলমারিতে যাইয়া দেখ ,, আমি কাইল ধুইয়া আলমারিতে রাইখা দিছিলাম ,, 

    – আইচ্ছা ,, আর মা ,, নাস্তা কী হইছে ,, ? আমারে তো আইজ কলেজ যাইতে হইবো ,, 

    – হইতাছে হইতাছে ,, তুই রেডি হ আমি আনতাছি ,, 

    – আইচ্ছা,, আমি তাইলে কাপড় বদলাইতে গেলাম ,, আমার দরজা খুলতে আইয়ো না ,, 

    – আমি কী তোর জামাই ,, ! যে তোরে দেখতে যামু ? আর তোর তো সবকিছু আমি হেই লেদা কালেই দেখছি রে ছেড়ি ,,

    – মা ,,, তুমিও না ,, ! হইছে এহন চুপ করো ,, (বলেই ঘরের দিকে যেতে থাকে নিপা ,,

     

    শিউলি বেগম হাঁক দিয়ে বলতে থাকে ,, 

    – তোর জামাইরে ফোন দিতাম নি ,, আইয়া তোরে এহন একটু দেখতো ,, হা হা হা হা ,,,(বলেই হাসতে থাকেন শিউলি বেগম)

     

    ফুলমতি এসে বলে শিউলি বেগম কে বলতে থাকে ,,

     

    – চাচি ,, আঙিনা ঝাড়ু দেওন তো শেষ ,, এহন কী করুম ,, 

    – যাইয়া নিপার ডেরেস বদলানি দেখ গিয়া ,, হে হে হে ,,,

    – আরে চাচি ,, কী কন এসব ,, এক মাইয়া আরেক মাইয়ারে নতুন কইরা আর কী দেখবো ,, 

    – খুব তো কথা শিখছোস হ্যা ,, যা ,, নিপার পাশে যে ৬ ডা রুম আছে তার মধ্যে ৪ ডা রুম ঝাড়ু দিয়া দে আর ঐ রুম গুলার বিছানাও গুছায়া রাখ ,, ওরা আইয়া ঘুমাইতে পারে ,, আর নিপারে কইস নতুন চাদর ডি বাইর কইরা দিতে কইছি আমি ,, তুই চাদর ডি নিয়া গিয়া বিছায়া দিস ,, আমি যাই ,, গিয়া পায়েস বানাই ,, তুই তাড়াতাড়ি কাম গুলা শেষ কর গিয়া ,, যা ,,

    – আইচ্ছা চাচি ,, (বলেই রান্না ঘরের দরজার সামনে থেকে ঘরের দিকে যেতে থাকে ফুলমতি ,, ) 

     

    নিপা ততক্ষণে বের হয়ে আসে কলেজ ড্রেস পরে ,, ওদের কলেজ ড্রেস সম্পূর্ণ সাদা ,, নিপা বারান্দায় থাকা আয়না টায় এসে মুখ ধুতে থাকে ,, ফুলমতি একটা ঝাড়ু হাতে নিয়ে গিয়ে গেস্ট রুমের দরজা খুলে সেখানে প্রবেশ করতে থাকে ,, 

     

    _______________________

     

     শাহারিয়াদের ট্রেন দিনাজপুর স্টেশনে পৌঁছেছে ,,ট্রেন থেকে সব যাত্রী রা নামছে ,, শাহারিয়া ট্রেন থেকে নামলো ,, তার পিছন পিছন বাকিরাও নামলো ,, কী নির্মল সুদ্ধ বাতাস ,, শাহারিয়া প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে লাগলো ,, প্লাটফর্মে তেমন একটা ভিড় নেই ,, তাদের ট্রেন পৌঁছেছে সকাল ৭:১৭ তে ,, শাহারিয়া সবাইকে নিয়ে প্লাটফর্মের বহিরাগতদের গেইট দিয়ে বের হয়ে আসলাম ,, আশেপাশে অনেক সিএনজি আর অটো এসে দাঁড়িয়েছে ,, এই সময় টা তাদের জন্যই ,, যত প্যাসেন্জার নিতে পারবে ততই লাভ ,, এক একটা সিএনজি গুলোতে ৬ জন করে বসতে পারে ,, শাহারিয়া গিয়ে একটা সিএনজির ড্রাইভার কে ডেকে বলতে লাগলো ,,

    – মামা যাবেন ,, ? 

    – হ মামা ,, যাওয়ার লাইগাই তো খারাইছি ,, কন কই যাইবেন ,, ? 

    – আনন্দপুর যাবো ,, যাবেন ? 

    – হ যাওয়া তো যাইবো ,, তবে আমি ভিতরের কাঁচা রাস্তা দিয়া নিয়া যাইতে পারুম না ,, আপনাগো রে মেইন রোড থেইকা কাঁচা রাস্তার মুখেই নামায়া দিমু ,, 

    – এইটা কী বলেন ,, ভিতরে যাবেন না ?

    – এই কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ভিতরের কাঁচা রাস্তার অবস্থা খারাপ ,, আমি কেন ,, অন্য কোন সিএনজি ওয়ালাই যাইতে চাইবো না ,,

    – আচ্ছা ,, কী আর করার ,, উঠ সবাই ,, এটাতে করেই যাই ,, 

     

     সবাই উঠে পরে সেই সিএনজিতে ,, তাদের সাথে আরেকটা অজানা ছেলেও উঠেছে ,, হয়তো তাদের সাথে একই ট্রেনে ঢাকা থেকে ফিরেছে ,, সিএনজি চলা শুরু করে ,, এবং ট্রেন স্টেশনের রাস্তা থেকে বেড়িয়ে মেইন হাইওয়ে তে উঠে পরে ,,

     

    _________________________

     

     মেম্বারের বাসা ,, নিপা বারান্দার ডায়নিং টেবিলে বসে নাস্তা করছে ,, ফুলমতি তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ,, দেখছে যে নিপার কিছু লাগবে কি না ,, নিপা খেতে খেতে বলে ,, 

     

    – ফুলমতি ,, তুই নাস্তা খাবি না ? 

    – হ ,, খামুই তো আফা জান ,, সব কামডি শ্যাষ হইলেই খামু ,, ঘর ডি পরিষ্কার করন শেষ ,, এহন খালি আপনে খাইয়া উঠলে এই টেবিল ডা পরিষ্কার কইরা রাখমু ,, তারপর খামু ,,

     

    শিউলি বেগম রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসেন ,, তিনি ঘেমে গিয়েছেন ,, শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছছেন ,, মুছতে মুছতে বারান্দায় উঠে ফুলমতি কে বলেন ,, 

    – পাকের ঘরে যাইয়া পায়েস ডি লই আয় ,, আইনা নিপারে দে এত্তু ,, আর বাকিডি আমি ঢাকা দিয়া রাখছি ,, ঐডি ঢাকনা ঠিক আছে কি না দেহিস ,, 

    – আইচ্ছা চাচি ,, (বলেই বারান্দা থেকে রান্না ঘরের দিকে যেতে থাকে ফুলমতি ,, ) শিউলি বেগম ঘাম মুছতে মুছতে নিপা কে বলতে থাকেন ,, 

    – আইজ কলেজে একদম দেরি করিস না ,, শাহারিয়া আইবো , ওর লগে কিছু মেয়ে বন্ধুও আইবো ,, তুই আইয়া ওগোর লগে গল্প করিস ,, আর কলেজের পরীক্ষার ফিস ডা তোর আব্বায় কাইল যাইয়া দিয়া আইছে ,, বুজছোস ,, 

    – হ ,, আম্মা ,, ঠিক আছে ,, 

    তখনই মেম্বারদের মেইন গেট দিয়ে ডাকতে থাকে ফারুক ,, 

    – নিপা ,, নিপা ,, কলেজের সময় হইয়া আইছে তো ,, আহো ,, 

    – ঐ যে দেখ ,, তোর জামাই আইছে তোরে লইতে ,, যা ,, অর লগে রংঢং করতে করতে কলেজ যা ,, 

    – উফফ মা ,, চুপ করো তো ,, 

     

    নিপা ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে পরে ,, উঠে পাশের চেয়ারে থাকা ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে বারান্দা থেকে নেমে যেতে থাকে ,, বলতে থাকে ,,

    – আমি গেলাম মা ,, 

    – হ , হ , যা ,, সাবধানে যাইস ,, 

    (বলেই ঘরের দিকে চলে যান শিউলি বেগম ,, নিপা বাসা থেকে বের হয় ,, আজ আকাশে মেঘ নেই ,, হালকা মিষ্টি রোদ উঠেছে ,, কুয়াশাও কমে গিয়েছে ,, আশেপাশে পাখির কিচিরমিচির শব্দ ,, নিপা বের হয়ে ফারুকের সাথে একসাথে যেতে থাকে ,, নিপা যেতে যেতে ফারুক কে বলে ,, 

    – তোমারে না কইছি তুমি বাড়ির ভিতরে আইবা ,, বাইরে থেইকা প্রতিদিন ডাকো ক্যা ,,

    – না মানে তোমার বাপে যদি বাড়িত থাহে ,, তহন তো রাগ করবো ,, তাই বাইরে থেইকা ডাক দেই  ,,

    – এরপর থেইকা আর এমন ভাবে ডাইকো না ,, মায়ে অন্য কিছু ভাবে ,, 

    – কী ভাবে ,, ! 

    – ভাবে তুমি আমি পিরিত করি ,, 

    – হেইডা তো আমরা হাচাই করি ,,(নিপার কাঁধে হাত দিয়ে) জানলে জানুক ,, উল্টা আমাগোরই ভালা ,, যানতে পারবো আগে থেইকাই ,, তাই পলায়া গেলেও তুমি যে আমার লগেই পলাইছো ,, এইডা তোমার মা শিওর থাকবো ,,, 

    – হ তোমারে কইছে ,, হুঁ ,, (ভেঙ্চি কেটে ফারুকের হাত ছিটকিয়ে দিয়ে আগে আগে যেতে থাকে নিপা ,, ) 

    – আরে নিপা শোনো না ,, রাগ করো ক্যা ,, নিপা ,,,,,,, (ফারুক ও নিপার পিছনে পিছন যেতে থাকে ,, ) 

     

    ________________________

     

    রাতুল মাষ্টার রেডি হয়ে ঘর থেকে বের হয় ,, আজ স্কুলে যাবেন তিনি ,, এই দুইদিন যাওয়া হইনি স্কুলে ,, আজ যাচ্ছেন ,, পরনে তার একটা সাদা পাঞ্জাবি ,, পাঞ্জাবির বুকের উপর কারুকার্য করা ,, সাথে সাদা পায়জামা ,, তিনি বের হয়ে চোখে চশমা টা মুখের ভাব দিয়ে মুছতে থাকেন ,, মায়া ভাবি আঙিনা ঝাড়ু দিচ্ছেন ,, রাতুল মাস্টার মায়া কে দেখে বলতে থাকেন ,,

    – রিয়াদ কী চলে গেছে ? 

    – হ্যা ,, একটু আগেই গিয়েছে ,, তুমি আজকে আসার সময় বাজার করে নিয়ে আসিও ,, আজ দুপুরে বলে রিয়াদ বাসায় আসবে না বলে ,,নাহলে ওকেই বলতাম ,, 

    – আচ্ছা নিয়ে আসবোনে ,, তুমি খেয়ে নিও ,, ইসস্ কোমড়ে কী ব্যাথা ,, কোমড় টা সোজা করলেই ব্যাথা করে গো ,, 

    – ব্যাথা তো হবেই ,, মানা করেছিলাম যে আমার আগুন তুমি জ্বালাইয়ো না ,, শুনলে কোথায় ,, এখন বুঝো ঠেলা ,, 

    – তোমারে ঠেলা দিতে যাইয়াই আইজ আমার এই অবস্থা ,, বাবাগো ,, কী ব্যাথা ,, আহহ ,, 

    – হইছে হইছে ,, এখন যাও ,, দেরি হয়ে যাচ্ছে তোমার ,, বিকেলে গরম তেল মালিশ করে দিবোনি ,, 

    – আচ্ছা ,, আমি তাইলে গেলাম ,, আর তুমি সময় মতো খাবার খেয়ে নিয়ো,,,

    – আচ্ছা ,,, (চলে যেতে থাকে রাতুল মাষ্টার ,, মায়া ভাবি আবার ঝাড়ু দিতে থাকে আঙিনা ,, 

     

    ________________________

     

    শিউলি বেগম বারান্দায় চেয়ারে বসে ফোনে কথা বলছেন ,, ফুলমতি তার নিজের শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো ,, এসে শিউলি বেগমের পাশে এসে দাঁড়ালো ,, 

    শিউলি বেগম ফোনে বলছেন ,, 

    – তুই কাঁচা রাস্তার মুহে আইস আমি আমাগো নাসিম রে পাঠায় দিমুনে ,, 

    – আচ্ছা মা ঠিক আছে ,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে রাখি তাইলে বাজান ,, 

     

    শিউলি বেগম ফোন টা কান থেকে নামান ,, নামিয়ে কেটে দিয়ে পাশের টেবিল টায় রাখেন ,, এতোক্ষণ তিনি শাহারিয়ার সাথে কথা বলছিলেন ,, তিনি ফোন টা রেখেই ফুলমতি কে বলতে থাকেন ,,

     

    – শোন ,, ওরা নামছে ,, আইতাছে ,, ঘর গুলা পরিস্কার করছোস তো ঠিক মতোন ? 

    – হ চাচি ,, আপনি যেমনে যা করতে কইছেন ,, সব কইরা ফালাইছি ,, 

     

    তখনই নাসিম আসে বাসায় ,, এসে বারান্দায় সামনে দাঁড়ায় ,, দাঁড়িয়ে শিউলি বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে ,,

     

    – আচ্ছা চাচি ,, চাচায় কই ,,

    – তোমার চাচারে তো আমি খাইয়া বইয়া আছি ,, তুমিও আহো তোমারেও খাই ,, 

    – না মানে চাচি একটু দরকার আছিলো ,, 

    – তোমার চাচায় হেই সকালে গেছে বাজারে ,, সেই মে গেছে আর ফিরার কোন নাম গন্ধই নাই ,, 

     

    এদিকে আমরা দেখতে পাই ফুলমতির দিকে ,, সে কুসুম কোমল দৃষ্টিতে এক পানে চেয়ে রয়েছে নাসিমের দিকে ,, নাসিমের দিকে এমন ভাবে চেয়ে রয়েছে যেন সে তার মনের মানুষ কে দেখছে ,, নাসিম ফুলমতির দিকে তাকায় নি , বা খেয়াল করে নি ,, কিন্তু ফুলমতি এক পলকে তার চাহনি রেখে দিয়েছে নাসিমের দিকে ,, 

     

    নাসিম শিউলি বেগম কে বলতে থাকে ,,

    – আইচ্ছা তাইলে আমি যাই অহন,, চাচায় আইলে তহন আমুনে ,, 

    – আরে খারা খারা ,, তোর লাইগা একটা কাম আছে ,, আমার পোলা আইতাছে ঢাকা থেইকা মেলাদিন পর ,, মেইন রোড পর্যন্ত তো গাড়ি দিয়া আইতে পারবো ,, কিন্তু ভিতরের রাস্তা ডি তো মনে হয় চিনতে পারবোনা ভালা কইরা,, ৪ ডা বছর পর আইতাছে আমার পোলায় ,, তুই একটা কাম কর ,, মেইন রোড থেইকা যেই কাঁচা রাস্তাডা দিয়া আমাগো বাড়িত আইতে হয় তুই হেই কাঁচা রাস্তার মুখে গিয়া দাঁড়ায়া থাক ,, ওরা আইলে ওগোরে লই আইস ,, বুজছোস ,,

    – আইচ্ছা চাচি ,, ঠিক আছে ,, (বলেই নাসিম চলে যেতে থাকে ,, তখনই শিউলি বেগম তাকে পিছন থেকে ডাক দেন ,,)

    – আচ্ছা ‌শোন তো ,, 

    নাসিম ডাক শুনে পিছনে ফিরে তাকিয়ে ‌বলতে থাকে ,,

    – হ চাচি কন ,, 

    – তোর পায়ে কী হইছে ,, ? খোরায়া খোরায়া হাটোস যে ,, ব্যাথা-ট্যাথা পাইছোস নাকি আবার ,, ? 

     

    নাসিম একটু নার্ভাস হয়ে যায় ,, সে বলতে থাকে ,,

     

    – ক,কই চাচি ,, না,নাতো ,, আমার পা তো ঠিকি আছে ,, এইযে আমি সাধারন ভাবে বেড়াইতে পারি ,, (বলেই সে আঙ্গিনার মধ্যে একটা ছোট চক্কর দিতে থাকে ,,)

    – হইছে , হইছে থাম ,, আমার কেন জানি অমন মনে হইতাছিলো তোর হাঁটা ‌দেইখা ,, আচ্ছা বাদ দে ,, অহন তুই তাড়াতাড়ি ‌যা ,, হেরা আইয়া পরবো ,, 

    – আইচ্ছা চাচি ,, (বলেই তাড়াতাড়ি ‌চলে যেতে থাকে নাসিম ,, তার যাওয়ার সময়কার চেহারা দেখে মনে হলো সে হাফ ছেড়ে বাঁচলো, , এদিকে ফুলমতি কে দেখানো হয় ,, সে এখনো নাসিমের যাওয়ার পথ পানে চেয়ে আছে ,, তার চোখের পলক যেন পরছেই না ,, শিউলি বেগম সামনে ফিরেই বলতে থাকে ,,

    – শোন ফুলমতি ,, তুই যাইয়া খাইয়া নে ,, পরে ওরা আইলে সুযোগ পাবি না ,, 

     

    (ফুলমতি উত্তর দেয় না ,, )

    শিউলি বেগম আবার বলেন,,

    – কীরে চুপ কইরা গেলি ক্যা ,,   

     

    এবার শিউলি বেগম পিছনে ফিরেন ,, ফিরে জোড়ে ডাক দিতে থাকেন ,, 

    – ফুলমতি ,, এই ফুলমতি ,, তোর মন কোন দেশে ঘুরতে গেছে হ্যা ,, 

     

    ফুলমতির ঘোর ভাঙে ,, সে হঠাৎ চমকে উঠে বলতে থাকে ,,

    – হ ,হ কন চাচি ,, 

    – কই ছিলি তুই এতক্ষণ ,, ? 

    – চাচি ,, আমি যে কই হারায়া গেছিলাম ,, আমি নিজেও কইতে পারিনা ,, 

    – যা যাইয়া খাইয়া নে ,, পরে ওরা আইলে আর সুযোগ ‌পাইবি না ,, 

    – আইচ্ছা চাচি ,, ঠিক আছে ,, (বলেই চলে যেতে থাকে ফুলমতি ,, )

    শিউলি বেগম ও চেয়ার থেকে উঠে ঘরের ভিতরে চলে যেতে থাকেন ,,

     

    ______________________

     

    একটা মোড় ,, মোড় টা কাঁচা রাস্তারই ,, তিন রাস্তার মোড় ,, জারুল গাছ আছে সেখানে বড় একটা ,, অনেকেই তাই মোড় টাকে জারুল মোড় বলে ডাকে ,, সেই মোড় টাতে দাঁড়িয়ে ছিলো দিথী আর জিনিয়া,, তারা ‌নিপার জন্য অপেক্ষা করছে ,, একসাথে ‌কলেজে যাওয়ার জন্য ,, এখন কুয়াশা প্রায় পুরোপুরি কেটে গিয়েছে ,, রোদ উঠেছে আজ ,, রাস্তায় কয়েকজন কৃষক কাঁধে ‌লাঙল ও হাতে গরুর দড়ি নিয়ে হালচাষে জন্য যাচ্ছে ,, ছোট ছোট কয়েকজন ছেলে মেয়ে দলবেঁধে স্কুলের দিকে যাচ্ছে ,, মাঝে মাঝে দু-একটা সাইকেল চলে যাচ্ছে তাদের সামনে দিয়ে ,, আমরা দেখতে পাই নিপা আর ফারুক আসছে তাদের দিকে ,, তারা কথা বলতে বলতে আসছে ,, ফারুকের পরনে একটা হলুদ শার্ট ,, আর নিপা কলেজ ড্রেস পরিহিত ,, তারা কথা বলতে বলতে দিথী জিনিয়া দের সামনে চলে আসে ,, দিথী , জিনিয়ারা তার দিকে যায় ,, গিয়ে জিনিয়া বলে ,,

     

    – তাড়াতাড়ি চল ,, মিষ্টি ফোন দিয়েছিলো ,, কাল তো আমরা কলেজ যাইনি ,, কাল বলেছে আজকে নাকি একটা ক্লাস টেস্ট নিবে ,, (মিষ্টি তাদের সাথে একই কলেজে পরে ,, তার বাবা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক,, নাম মকবুল হোসেন ,, )

    নিপা বলে ,,

    – কী বলিস ,, আমার তো তেমন কোন প্রিপারেশন ই নাই ,,

    – আরে সমস্যা ‌নাই ,, তাড়াতাড়ি চল ,, গিয়ে চোখ বুলিয়ে নিবো বইয়ের উপর একবার ,, 

    – আচ্ছা চল ,, (নিপা বলে)

     

    নিপা , ফারুক , দিথী , জিনিয়া একসাথে যেতে থাকে কলেজের উদ্দেশ্য ,, 

     

    সিন চেন্জ হয় ,, 

     

    শাহারিয়াদের সিএনজিটা এসে গ্রামের রাস্তার মুখে থামে ,, সিএনজি মামা বলতে থাকে ,, 

    – এইযে মামা ,, এইডাই আনন্দ পুর গ্রামের রাস্তা ,, 

    – এই নাম তোরা ,, আমরা চলে আসছি ,, 

     

    শাহারিয়ারা একে একে সিএনজি থেকে নামতে থাকে ,, সে সিএনজির ভাড়া দিয়ে দেয় ,, সিএনজি ওয়ালা চলে যায় ,, শাহারিয়া একসাথে কাঁচা রাস্তা দিয়ে যেতে থাকে ,, পিছনে বাকিরাও আসতে থাকে ,, রাস্তার একটা পাশ কর্দমাক্ত ,, পানি জমে আছে ,, আমরা যেই পাশটা শুকনো সেই পাশ‌ দিয়ে যেতে থাকি ,, ইমন বলে ,,

    – কতদূর রে এখান থেকে তোদের বাসা ? 

    – এইতো বেশি না ,, ৭-৮ মিনিটের রাস্তা ,, 

    – এই গ্রামেই কী তোর বড় হওয়া ? (নিলয় বলে)

    – হ্যা ,, আমার জন্ম এখানেই ,, এখানের স্কুল থেকে পড়ালেখা করেছি ,, গ্রামে সারাদিন আমি আর রিয়াদ টই টই করে ঘুরে বেড়াতাম ,, পরে আমি দিনাজপুর কলেজে যাই পড়াশোনার জন্য ,, আর রিয়াদ এখান কার কলেজেই পড়াশোনা করে ,, আমার চাকরি টাও হয়ে যায় ঢাকায় ,, আর রিয়াদের চাকরি টাও হয় এই গ্রামেই ,, গ্রামের পুলিশ ইন্সপেক্টর এখন সে ,, তার কেস এর জন্যই আমাদের এখানে আসা ,,

    – ওহহ আচ্ছা ,, 

     

    শাহারিয়ারা একে অপরের সাথে কথা বলতে বলতে আসছে ,, আর তাদের ঠিক সামনে দিয়ে নিপা,দিথীরাও আসছে ,, শাহারিয়া প্রথমে খেয়াল করেনি ,, পরে একটু কাছাকাছি আসাতে নিপা তাকে দেখতে পায় ,, সে চিনতে পারে শাহারিয়াকে ,, নিপা দৌড়ে এসে শাহারিয়ার গলায় হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ,, শাহারিয়াও ওকে চিনতে পারি ,, নিপা তাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে ,, 

    – ভাইয়া ,, কেমন আছিস ,, এতো দিন পর তোকে দেখলাম,,(তাকে ছেড়ে দিয়ে) আমার কথা কী তোর মনে পরেনা হ্যা ,, 

     

    শাহারিয়া তাকে স্বাভাবিক ভাবে দাড় করায় ,, তার কাঁধে হাত রেখে বলতে থাকে ,, 

    – মনে তো পরেই রে বনু ,, কিন্তু চাইলেই তো আসতে পারিনা রে ,, কেমন আছিস তুই ,,

     

    নিপার চোখ মুছতে মুছতে বলতে থাকে ,,

    – হ্যা আমি ভালো আছি ,, কিন্তু তুই এতোটা শুকিয়ে গেছিস কেন ভাইয়া ,, খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করিস না ,,‌?  

    – করি তো বনু ,, কিন্তু বাইরের খাওয়া দাওয়া ,, বুঝতেই তো পারছিস ,, 

     

    নিপার সাথে কথা বলতে বলতে আমার চোখ যায় দিথীর উপর ,, কী অপরূপ সৌন্দর্য ,, আমি যেহেতু দিথীকে দেখিনি তাই জানতাম না সেটা দিথী ,, তবে আমার মনের অনুভূতি বলছিলো এটা দিথীই হবে ,, কাজল কালো সরু চোখ ,, গরনে শ্যামলা ,, গালে একটা ছোট্ট তিল রয়েছে ,, শারীরিক গঠন সুন্দর ,, তার রূপে একটা আলাদা মায়া আছে ,, শাহারিয়া তার ভয়েস শুনে তার প্রতিচ্ছবি যেমন টা ভেবেছিলো ,, সেই ভাবনার চেয়েও সে অনেক সুন্দর ,, 

     

    দিথী তখনই আমার দিকে তাকায় ,, আমি এখনো তার দিক থেকে চোখ সড়াইনি ,, সে বলে ,, 

    – আপনি নিশ্চয়ই নিপার বড় ভাইয়া ,, ? 

     

    আমি তার কন্ঠ টা শুনতে পাই ,, হ্যা এটা সেই কন্ঠ যা আমি শুনেছিলাম সেদিন ,, আমার মনে আর কোন সন্দেহই রইলো না যে এটা দিথী ,, আমি নিশ্চিত হয়ে যাই ,, 

     

    আমি বলতে থাকি ,, 

    – হ,হ্যা ,, আমিই নিপার বড় ভাইয়া ,, আপনি নিশ্চয়ই দিথী ,, তাই না ? 

    – হ্যা ,, তবে বুঝলেন কী করে ,, ? 

    – আপনার সেই মায়া জড়ানো কন্ঠ কী আমি ভুলতে পারি ,, 

     

    নিপা আমার দিকে তাকিয়ে দেখে ,, ও কিছুটা বুঝে যায় আমাদের ব্যাপার টা ,, সে আমার পেটে গুঁতো দিয়ে বলে ,, 

    – ভাইয়া ,, মা তোদের জন্য অপেক্ষা করছে ,, তোরা তাড়াতাড়ি বাসায় যা ,, 

     

    নিপার কথাতে আমার ঘোর ভাঙে ,, আমি স্বাভাবিক হয়ে বলতে থাকি ,,

    – ও হ্যা তাইতো ,, তুইও কলেজে চলে যা ,, বাসায় আছিস তখন অনেক অনেক আড্ডা হবে ,, (আমি তারপর একটু ধীর গলায় বলি)  আর দিথী তুমিও এসো ,, একসাথে সবাই মিলে গল্পের আসর জমাবো ,,

     

    দিথী লজ্জা পেয়ে যায় ,, বলে ,, 

    – আচ্ছা ,, সময় পেলে যাবো ,, 

     

    পিছন থেকে ইমন ডেকে বলতে থাকে ,, 

    – চল সাহারিয়া ,, আমরা এবার যাই তাহলে ,, 

     

    ওদিক থেকে জিনিয়াও বলতে থাকে ,,

    – চল ,, আমাদের কলেজেও দেরি হয়ে যাচ্ছে ,, (বলেই দিথীর হাত ধরে সে নিয়ে চলে যেতে থাকে ,, দিথী যেতে যেতে এক পলক শাহরিয়ার দিকে তাকিয়ে এক মিষ্টি হাসি দেয় ,, শাহারিয়ার পরাণ টা যেন মুহুর্তেই একদম শীতল হয়ে যায় ,, নিপাও যেতে থাকে ,, তাদের পিছন পিছন ফারুক ও পা চালায় ,, 

     

    আমিও যেতে থাকি বাসার দিকে ,, পিছনে ইমন গ্রাম দেখছে ,, নিলয় ফোন টিপছে ,, কল্প আর সাম্মী গল্প করতে করতে আসছে ,, আমি আমার বুকে হাত রেখে দিথীর কথা ভাবতে ভাবতে সবার সামনে দিয়ে যাচ্ছি ,, 

     

    ________________________

     

    আহাদের সিএনজি রাস্তার পাশে পরে আছে ,, আশেপাশে লোকজনের ভিড় দাঁড়িয়ে আছে ,, সিএনজি এর হেডলাইট টা এখনো জ্বালানো অবস্থায় রয়েছে ,, রিয়াদ তার কনস্টেবলদেরকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয় ,, সে বলতে থাকে ,,

     

    – এই কে আমাকে এখান থেকে কল দিয়েছিলে ? 

     

    তখনই ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন মধ্যবয়সী লোক বলে ,,

    – জ্বী স্যার আমি ,, আমিই আপনেগোরে ফোন দিছিলাম ,, এই সিএনজি ডা এমনে খালি খালি রাস্তার মাঝখানে পইরা আছে ,, পাশে একটা ছাতা ,, আর কিছু রক্তও দেহা যাইতাছে ,, আমি সকালে এই রাস্তা দিয়া সাইকেল চালায়া যাইতে ছিলাম ,, এমন সময় এইডা দেহি ,,

    – ও আচ্ছা ,, আপনিই তাইলে সবার আগে দেখেন ,, 

    – জ্বী স্যার ,, আমিই আগে দেহি ,,

    – ওকে ,, আচ্ছা সবাই সরে যান ,, আমাদেরকে বিষয় টা দেখতে দিন ,, সরে যান সবাই ,, 

    (ভিড় ঠেলে সিএনজি এর কাছে আসে রিয়াদ ,, সিএনজির দরজাটাও খোলা অবস্থায় পরে আছে ,, সে এসে সিএনজি টাকে ভালো ভাবে চেক করতে থাকে ,, সিএনজি এর দরজার পাশে একটু রক্ত দেখা যাচ্ছে ,, তবে তাছাড়া আর কোথাও কোন রক্তের ছিটেফোঁটাও নেই ,, সে সিএনজির পিছনের দরজাটা খুলে ,, সে ভালো ভাবে দেখতে থাকে সবকিছু যদি কিছু পায় ,, কিন্তু না, পিছনের সিটেও কিছুই নেই ,, সে সামনে ড্রাইভারে বসার যায়গাটায় দেখতে থাকে ,, কিন্তু না তেমন কিছু এখানেও সে পায় না ,, সে যখই তার মাথাটা বের করতে যাবে তখন তার চোখ পরে একটা সবুঝ রঙের কাগজের উপর ,, কাগজ টা গাড়ির পরিচালনা হাতলের উপর লাগানো ,, সে কাগজ টা হাতে নেয় ,, নিয়ে মাথা বের করে সিএনজি থেকে বের হয় ,, হয়ে পাশে হাঁটতে হাঁটতে ভিড় থেকে একটু সাইডে আসে ,, সে কাগজ টা খুলে, কাগজ টা পরতে থাকে ,, কাগজে লেখা ছিলো ,,,

     

    “”সেই বৃষ্টির রাতে নূপুর হয়ে ছিলো রক্তে লাল,,

    যার প্রমাণ হয়ে এখনো রয়েছে সেই মধ্যস্ত খাল ,,

    খুঁজতে থাকো ,খুরতে থাকো ,, যদি হাতে কিছু মিলে,,

    ইতিহাসের পাতা ঘাঁটতে থাকো যেথায় তুমি একদিন ছিলে,,!””

     

    রিয়াদ অবাক হয় কাগজ টা পরে ,, সে ভাবতে থাকে ,,

     

    – এটা কী কোনো সংকেত আমাদের জন্য‌? এটা নিশ্চয়ই ‌খুনি রেখে গিয়েছে ‌,, তবে খুনি আমাদের কী বুঝাতে চাচ্ছে ? নিশ্চয়ই এর পিছনে কোন বড় রহস্য রয়েছে ,,আমাকে তা খুঁজে বের করতে হবে ,, বের করতেই হবে ,, 

     

    বলেই সিএনজির দিকে যেতে থাকে ,, তখনই হঠাৎ তার ফোনে ফোন আসে ,, সে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে আমবাগানে পাহারায় থাকা সেই কনস্টেবল এর ফোন ,, সে ফোনটাকে রিসিভ করে ,, ওপাস থেকে সেই কনস্টেবল বলে ,, 

    – স্যার স্যার ,, বাগানের খালে আরো একটা মাথাকাটা লাশ স্যার ,, আপনি তাড়াতাড়ি আসেন ,, 

    – কী বলো কী ,, ? আরো লাশ ,, আমি আসছি ,, তোমরা সেখানেই থাকো ,, (বলেই রিয়াদ ফোন টা কেটে দিয়ে যেতে থাকে আম বাগানের দিকে ,, )

     

    রিয়াদ মনে মনে ভাবতে থাকে ,, 

    – আচ্ছা আমি তো সারারাত ওখানে আমার কনস্টেবলদের দিয়ে পাহারা বসাইছিলাম , তাইলে খুনি লাশটা সেখানে রাখলোই বা কীভাবে ? এতো বড় লাশটা রেখে আসলো , আর আমার কোন কনস্টেবল দেখতেও পেলোনা ? খুনির সাথে কী তবে আমার কনস্টেবলদের মধ্যে কেউ জড়িত ? 

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ৯

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প ::  গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ১০

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া 

     

    – কী বলো কী ,, ? আরো লাশ ,, আমি আসছি ,, তোমরা সেখানেই থাকো ,, (বলেই রিয়াদ ফোন টা কেটে দিয়ে যেতে থাকে আম বাগানের দিকে ,, )

     

    রিয়াদ মনে মনে ভাবতে থাকে ,, 

    – আচ্ছা আমি তো সারারাত ওখানে আমার কনস্টেবলদের দিয়ে পাহারা বসাইছিলাম , তাইলে খুনি লাশটা সেখানে রাখলোই বা কীভাবে ? এতো বড় লাশটা রেখে আসলো , আর আমার কোন কনস্টেবল দেখতেও পেলোনা ? খুনির সাথে কী তবে আমার কনস্টেবলদের মধ্যে কেউ জড়িত ? 

     

    _______________________

     

    এদিকে আমরা দেখতে পাই আরমানদের বাসায় একটা মেয়ে এসেছে,, আরমানের বোন ,, নাম আনিকা , দিনাজপুর কলেজে পড়াশোনা করছে সে ,, সেখানেই হোস্টেলে থাকতো ,, কাল রাতে ভাইয়ের হঠাৎ অসুস্থের কথা শুনে সকাল সকালই বাসায় চলে এসেছে,, আনিকা আরমানের ছোট বোন ,, 

    আরমান বিছানায় শুয়ে আছে ,, তার হুস আছে ,, তবে কাল রাতে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়াতে আজ গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসেছে ,, আরমানের মাথার পাসে তার মা বসে আছে ,, মাথায় জ্বলপট্টি দিচ্ছে ,, আনিকা ঘরে প্রবেশ করলো ,, তার মা কে বললো ,,

    – মা ,,তুমি এখন একটু রান্না ঘরের দিকে যাও ,, আমি ভাইয়ার মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছি ,, আর বাবাও বাইরে যাবেন বললেন ,, তুমি গিয়ে একটু দেখে আসো না ,, 

    – আচ্ছা,, আর তুই কিন্তু তোর ভাইয়ার মাথার পাস ছেড়ে একদম উঠবিনা ,, আমি ঐদিক টা সামলে আসছি ,, 

     

    আনিকা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত দেয় ,, আনিকার মা উঠে চলে যায় ,, আনিকা গিয়ে তার ভাইয়ের মাথার পাশে গিয়ে বসে ,, মাথায় জলপট্টি দেওয়া শুরু করে ,, ভাবতে থাকে “হঠাৎ কাল রাতে কী দেখে ভাইয়া ভয় পেয়ে এমন অসুস্থ হয়ে গেলো ,,”

    সেসময় ঘরে চোখ বুলাতে গিয়ে তার চোখ আটকে গেলো আরমানের ঘরে থাকা পড়ার টেবিল টার উপর ,, আনিকার জানামতে ঐ টেবিলে এখন সব গুছানো পরিপাটি থাকার কথা ,, আর আরমান ভাইয়াও তো সবকিছু গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করে ,, কিন্তু সে দেখছে টেবিলের এক থাকের বই গুলো টেবিলের উপর পরে ছড়িয়ে আছে ,, সাথে কীসের যেন একটা কালো রঙের একটা ছোট পুটলিও দেখা যাচ্ছে,, আনিকা তার ভাইয়ের মাথায় কাপড় টা দিয়ে বিছানার কোন থেকে উঠে দাড়ায় ,,আস্তে আস্তে টেবিলের দিকে পা বাড়াতে থাকে ,, টেবিলের চেয়ার টাও এলোমেলো হয়ে পাশে পড়ে রয়েছে ,, 

    আনিকা টেবিল টার কাছে আসতেই দেখে টেবিলের উপর কয়েকটা কাটা আঙ্গুল আর কিছু রক্ত পড়ে আছে ,, ভয়ে তার চোখ মুখ বড় হয়ে যায় ,, সে চিৎকার দিয়ে তার মা কে ডাকতে থাকে ,, ” ম,মা , মা ,, “

     

    আনিকা ভয়ে পিছিয়ে যাই দ্রুতবেগে,, তারপর দৌড়ে ঘর থেকে চলে যায় ,, 

     

    ________________________

     

    – নে বাবা আরেকটু পায়েস নে ,, ফুলমতি , পায়েসের বাটি টা এদিকে দে তো ,, 

    – না মা আর দিও না ,, যা দিয়েছো তাই তো বেশি হয়ে গেছে ,,

    – উহু বাবা,, এখন মায়ের কাছে এসেছো ,, তোমাকে আমি আমার মন মতো খাওয়াবো ,, (বলেই শাহারিয়ার পাতে আরো পায়েস তুলে দিলেন ,) পরোটা নিবি নাকি আরো বাবা ,, এই ফুলমতি পরোটার প্লেট টা এদিকে দে তো ,, 

    – না না মা ,, আর খেতে পারবোনা ,, তুমি নিপাকে দেও ,, ওর পরোটা শেষ হয়ে এলো বলে ,, 

     

    শিউলি বেগম তারপরও তার ছেলের পাতে দুটো পরোটা তুলে দিলেন ,, অনেক দিন পর দেখা নিজের ছেলের সাথে ,, আজ তিনি অনেক খুশি,, এবং সেই ছেলেকে মন মতো খাওয়াবেন আজ ,, 

    – আচ্ছা মা ,, বাবা কোথায়,, (খেতে খেতে শাহারিয়া বলে)

    – তোর বাবাতো একটু গন্জে গেছে বাজান ,, গন্জে আজ বলে কীসের মিছিল মিটিং আছে ,, হেইডা নিয়া প্রচার প্রচারণা করতে গেছে ,, তুই খাইতে থাক ,, তোর আব্বায় চইলা আইবো,, 

     

    হঠাৎ শাহারিয়ার ফোনে একটা কল আসে ,,সে ফোন টা বের করে দেখে রিয়াদ ফোন দিয়েছে ,, খেতে খেতে ফোন রিসিভ করে বলতে থাকে ,,

    – হ্যা রিয়াদ বল ,, 

    – দোস্ত,, তুই কোথায় ,, বাসায় নাকি ,,

    – হ্যা ,, কেন ,, দরকার নাকি এখন ,,

    – আরো একটা লাশ পাওয়া গেছে দোস্ত,, ঠিক সেইম যায়গায় সেইম ভাবে,, তুই একটু তাড়াতাড়ি আয় ,, ঐ যে পুরনো আম বাগান টা আছে না ,, ঐখানে ,, 

    – লাশ ‌,,, ! (একটু থেমে) আচ্ছা আমি আসছি,, আর তুই গ্রামের কোন লোক কে বাগানের ভিতরে প্রবেশ করতে দিবিনা ,,

    – আচ্ছা দোস্ত,,

     

    শাহারিয়া খাওয়ার টেবিল থেকে উঠতেই যাচ্ছিলো ,, তখনই তার মা বলে উঠে ,,

    – খাওয়া না শেষ করে কোথায় যাচ্ছিস বাজান ,,

    – মা একটু কাজ পরে গিয়েছে , আমি একটু বাইরে বেরুবো ,,

    – না বাজান ,, খাওয়া শেষ করে তারপর যেখানে যাওয়ার যাও ,, খাবারের মাঝপথে এভাবে উঠে যেতে নেই ,,

    – মা একটু,,,,,,,,,

    শাহারিয়ার কথা থামিয়ে দিয়েই মা বললো ,,

    – কোন কথা আমি শুনবো না ,, তুই খাবার শেষ করে তারপর কোথায় যাবি যা ,, খাবার খাওয়াটাও একটা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত  বাবা,, খাবার নষ্ট করতে নেই ,, সম্পুর্ন টা খেয়ে তারপরই যাবি ,, 

     

    শিউলি বেগম কড়া ভাষায় বলাতে ,, শাহারিয়াও বসে পরলো , বাকি খাবার টুকু শেষ করতে থাকলো,, বাকি টিম মেম্বারসদেরও ফিসিফিসিয়ে বলতে লাগলো ,, “তাড়াতাড়ি কর , লাশ আছে ,,”

     

    ওরা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত দিলো ,, 

     

    ________________________

     

    অন্তর সাহেব বাড়ির আঙিনায় চেয়ারে বসে চা খাচ্ছেন এবং খবরের কাগজ পড়ছেন ,, চোখে চশমা , পরনে সাদা পাঞ্জাবি,,  বাসাটা পাকা , রং করা ,, সামনে ছোট্ট সুন্দর আঙিনা ,, সকালের হালকা মিষ্টি রোদ এসে আঙিনায় পড়েছে ,, নিবীড় কাঁধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে এসে অন্তর সাহেবের পাশে দাঁড়ালো,, তার পড়নে স্কুল ড্রেস ,, অন্তর সাহেব দিথির বাবা ,, বর্তমান গ্রামের রানিং চেয়ারম্যান ,, নিবিড়, দিথির ছোট ভাই ,, ক্লাস ৬ এ পড়ে ,, 

    নিবিড় বলতে থাকে,,,

    – বাবা ,, আজ স্কুলে পরীক্ষার ফি চেয়েছে ,, 

    – কত ,,

    – ৩৫০ টাকা ,,

     অন্তর সাহেব খবরের কাগজ টা বন্ধ করে পকেট থেকে বের করে ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন ,,

     – নে ,, আর তোর প্রাইভেট ম্যাডাম সামিহাকে বলিস আজকে দেখা করতে ,, বেতন নিয়ে যাবে আমার থেকে,,

     – আচ্ছা বাবা,, আমি গেলাম আমার স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে ,, 

     – আচ্ছা,, ঠিক মতো যাস ,, আর স্কুলে দুষ্টামি করিস না আবার ,,

     

    নিবিড় চলে যায় ,, অন্তর সাহেব আবার খবরের কাগজ পড়ায় মন দেয় ,, তখনই ঘর থেকে নাজিয়া বেগম বের হন ,, হয়ে আঙ্গিনার প্রবেশ মুখের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে থাকেন ,, 

    – দিথীকে কত করে বললাম আজ কলেজ যেতে হবেনা,, তাও সে যাবেই যাবে ,, ঘরে এতো কাজ আমাকে একলা একলাই করতে হয় ,, তোমাদের এই ফাই-ফরমাস খেটে আমি আর বাচিনা বাপু ,, তোমার কী এদিকের খোঁজ খবর আছে ? তুমি তো সারাদিন ঐ গ্রাম আর তোমার ঐ পেপার নিয়েই পড়ে থাকো ,, 

     

    অন্তর সাহেব পত্রিকা থেকে চোখ না উঠিয়েই বলতে থাকেন ,,

    – দিথীর আজ পরীক্ষা ছিলো কলেজে ,, আর তোমাকে তো  রান্না বান্না ছাড়া আর কিছু করতে হয় না ,, সব তো দিথীই ঐ কলেজ থেকে ফিরে করে ,, নিজের মেয়েকে দিয়ে কাজ করাও ,, তার উপর এতো চিল্লাচিল্লি কেন ,, 

    – নিজের মেয়ে নয় সৎ মেয়ে ,, 

     

    অন্তর সাহেব এবার একটু বিরক্ত বোধ করেন,, খবরের কাগজ টা বন্ধ করে পাশে রেখে দেন ,, 

     

    আবার নাজিয়া বেগম বলতে থাকেন ,,

    – ঘরের কাজ ও না করলে কী আমি করবো ,, ? কতবার বললাম যে আমার গ্রামের পছন্দ করা সেই ছেলেটার সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেই ,, না ,, ইনার বলে মত নেই (ভেঙচি কেটে) ,, ছেলে বলে পছন্দ হয় না ,,  ঐ মেয়েকে কোন রাজপুত্তুর বিয়ে করে সেটা আমিও দেখবোনি ,, 

    (অন্তর সাহেব এবার একটু রেগে যান )

    – ঐ ছেলে মাদক ব্যবসা করে,, গ্রামে সন্ত্রাসী করে বেড়ায় ,, তার সাথে বিয়ে দিবো আমার দিথীকে,, এইটা তুমি ভাবতে পারো কিভাবে,, বক বক না করে গিয়ে ঘুমাও ,, আমার মা দিথী ঠিকিই এসে সব করে দেয় তোমার এই মুখের কথার জন্য,, তারপরও তো তোমার মনে ওর জন্য একটু মায়াও হয়না,, 

    – হু ,, অন্যের মেয়ের জন্য দরদ দেখাতে যেতে আমার বয়েই গেছে ,, (বলেই ঘরের ভিতরে চলে যেতে থাকেন নাজিয়া বেগম)

     

    দিথির বাবা এবার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান ,, খবরের কাগজ আর চায়ের কাপ টা চেয়ারে রেখে বাহিরের‌ দিকে চলে যেতে থাকেন ,,,

     

    __________________________

     

    শাহারিয়া আর তার টিম মেম্বার আম বাগানের গেইটের সামনে এসে দাঁড়ায়,, বেশ ভালো রকমেরই ভিড়,, সবাই গ্রাম বাসী ,, ভিতরে লাশ পাওয়া গেছে এই খবর ছড়িয়ে পরাতে তাদের আগমন ,, শাহারিয়ারা ভিড় ঠেলে প্রবেশ মুখের সামনে এসে দাঁড়ায়,, কনস্টেবল রা তাদের আটকে দিয়ে বলে, ” ভিতরে যাওয়া নিষেধ , ওসি স্যারের আদেশ এটা , “

    শাহারিয়া বলে ,,

    – আমি রিয়াদের কথাতেই এসেছি ,, 

    – পাসওয়ার্ড বলেন ,, 

    – ট্রিপল থ্রি নাইন টু

     

    তারা সড়ে যায় গেটের সামনে থেকে,, এবং শুধু শাহারিয়াদের ভিতরে ঢুকতে দিয়ে বাকি গ্রাম বাসিদের আবার আটকাতে থাকে ,, 

     

    শাহারিয়ারা ভিতরে এসে পড়ে ,, সকাল বেলার মিষ্টি রোদ এসে পরেছে বাগানের ভিতরে ,, পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে চারিপাশ মুখর ,, বাইরের থেকে আম বাগানের ভিতরের পরিবেশ টা তুলনামূলক ঠান্ডা,, আমরা দেখতে পায় কিছু দূরে রিয়াদ আর তার কনস্টেবল রা একটা খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে ,, বাগান টা গ্রামের সবচেয়ে বড় বাগান ,, ব্রিস্তিতিও অনেক,, আমরা এগিয়ে যাই রিয়াদ দের কাছে ,, রিয়াদ পিছনে ফিরে দেখে আমি চলে এসেছি,, সে আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে ,, 

    – কতদিন পর দেখা তোর সাথে ,, সেই আগের মতনই আছিস তুই ,,

    – তুইও ,,

    রিয়াদ তারপর আমাকে ছেড়ে বলতে থাকে,, 

    – ঐ দেখ ,, লাশটা এখনো খালের মাঝখান টায় ভাসছে ,, তুই আসবি তাই তোর সামনেই উঠাবার জন্য রেখে দিয়েছি ,, 

     

    আমি সামনে তাকিয়ে দেখতে থাকি ,, খাল টায় পানি বেশি নেই ,, মধ্যম পরিমাণে ,, মাঝখানে একটা অর্ধ দেহি মানুষের অবয়ব ভাসছে ,, আমি বলতে থাকলাম,,

    – আচ্ছা লাশ টাকে উঠিয়ে আনতে বল ,,

    – এই নয়ন ,, যাও দুইজন কে নিয়ে নেমে লাশ টাকে তুলে নিয়ে আসো ,, খুব সাবধানে তুলবে ,,

     

    নয়ন কয়েকজন কনস্টেবলকে নিয়ে খালে নেমে লাশ টাকে উদ্ধার করতে থাকে ,, এদিকে রিয়াদ শাহারিয়ার কাঁধে হাত দিয়ে খাল টার বিপরীত দিকে ফিরে বেড়াতে বেড়াতে বলে ,, 

    – এই নিয়ে ৩ টা হলো ,, ঐদিকে আরিফ এখনো নিখোঁজ,, কমিশনার সাহেব খালি ফোনের উপর ফোন দিচ্ছে ,, তুই কিছু একটা কর দোস্ত ,, 

    – হমম ,, বিষয় টা নিয়ে আমাকে আজ থেকেই কাজে নেমে পরতে হবে ,, আচ্ছা ,, এই খুন গুলো যাদের হচ্ছে তাদের মধ্যে কোন মিল ,, বা কোন সন্দেহজনক বিষয় তাদের পরিবার সম্মন্ধে এমন কিছু,, ?

    – না ,, পরিবারিক বিষয়ে আগের দুইটা ভিক্টিম স্বাধারণ পরিবার থেকেই বিলং করতো ,, তবে এটা কার লাশ এখনো জানা যায়নি ,,প্রত্যেকটা লাশের ই মাথা কাটা ,, একজনেরও লাশের সাথে মাথা আমরা পাইনি,, এইজন্যই তো লাশ সনাক্ত করতে এতো বেগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের,, 

     

    তখনই কনস্টেবল নয়ন এসে বলে ,,

    – স্যার লাশ উঠাইছি ,,

     

    শাহারিয়া চোখের ইশারায় কল্পনা আর সাম্মিকে কাজে লেগে যেতে বলে ,, ওরা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত দিয়ে কাজে লেগে যায় ,, ওরা দুইজনেই ফরেনসিক স্পেশালিস্ট,, ওরা ওদের কাজ চালাতে থাকে ,, এদিকে শাহারিয়া রিয়াদের সাথে কথোপকথন চালাতে থাকি ,, রিয়াদ বলতে থাকে ,,

    – তবে একটা জিনিস দোস্ত,, কিছু ইঙ্গিতসূচক কাগজ রেখে গেছে সেই খুনি লাশ গুলোর বিভিন্ন বিচরণ ক্ষেত্রে ,, আরিফের বাসায় পেয়েছি একটা ,, আর আজ পেলাম একটা ,, মনে হয় এগুলো দিয়ে খুনি আমাদের কিছু বুঝাতে চাচ্ছে ,, 

    – আচ্ছা ,, ? আজকের কাগজ টা কী তোর কাছে আছে ? 

    – হ্যা,, 

     

    রিয়াদ কাগজ টাকে পকেট থেকে বের করলো ,, একটা পলিথিনে মুড়িয়ে রেখেছিলো সে ,, রিয়াদ যখনই কাগজ টা শাহারিয়াকে দিতে যাবে তখনই তাদের ডানে কিছুটা দূরে থাকা একটা গাছ থেকে একটা লোক দৌড়ে রিয়াদের হাতের কাগজ টা নিয়ে ছুটে চলে যেতে থাকে ,, শাহারিয়া আর রিয়াদ মোটেও প্রস্তুত ছিলো না এই মুহূর্তের জন্য,, শাহারিয়াও সাথে সাথে নিলয় আর ইমন কে বলতে থাকে ,, “ধরো ওকে,, ফাস্ট ” 

    নিলয় আর ইমন তাড়াতাড়ি সেই লোকটার পিছু নিতে থাকে ,, লোকটা দিকবিদিক না দেখেই ছুটতে থাকে ,, সে বাগানের বহিরাগমন পথের দিকে যাচ্ছে ,, নিলয় দৌড়ে থাকা অবস্থায় ইমন কে চোখের ইশারা দেয় ,, ইমন সাথে সাথে একটা বন্দুক বের করে সেই লোকটার পায়ের দিকে তাক করে ট্রিগার চেপে দেয় ,, সাথে সাথে বন্দুক থেকে একটা ছোট্ট গুলি গিয়ে লোকটার পায়ে লাগে ,, লোক টা নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে সামনের একটা গাছের সাথে অনেক জোরে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় ,, ইমন আর নিলয় গিয়ে তাকে ধরে ,, ধরে তার হাত থেকে কাগজ টা নেয় ,, আর সেই লোকটার মাথায় বন্দুক তাক করে ধরে থাকে ,, শাহারিয়া আর রিয়াদ দৌড়ে গিয়ে সেখানে উপস্থিত হয় ,, রিয়াদ বলতে থাকে ,,

    – খুব সাহস হইছে না ,, ? আমার হাত থেকে জিনিস নিয়ে পালাস ,, (বলেই দিয়ে সজোরে একটা লাথি দেয় লোকটাকে), তোকে কে কাগজ নিতে পাঠাইছে বল ,, বল ,,,,

    – আ , আমাকেই মাফ করে দেন ,, আমি বলতে পারবোনা ,, আমি বললে সে আমাকে মেরে ফেলবে ,,

    – আর তুই না বললে আমাদের হাতে তোর প্রাণটা যাবে ,, বলবি নাকি গুলি চালাবো ,, (বলেই তার মাথায় বন্দুক ধরে শাহারিয়া)

    – আমি বলতে পারবোনা,, আমি বলতে পারবোনা ,, আমাকে মেরে ফেললেও বলতে পারবোনা,, 

    – বুঝছি তোর জীবনের মায়া নাই ,, 

    শাহারিয়া বন্দুকে গুলি সেট করে তার মাথার সামনে এনে তার কাঁধ বরাবর বন্দুক রাখে ,, লোকটার ভয়ের চোটে মাথা দিয়ে ঘাম ঝড়ে পড়তে থাকে ,, শাহারিয়া ট্রিগারে আঙ্গুল দেয় ,, লোকটা চোখ বন্ধ করে ফেলে,,‌লোকটা কাঁপছে ,, শাহারিয়া হঠাৎ ট্রিগার চেপে গুলি চালিয়ে দেয় ,, সেই লোকটা সজোরে চিৎকার করে উঠে ,, সে চোখ মেলে দেখে গুলিটা শাহারিয়া আসলে গুলিটা তার মাথায় নয় মাটিতে চালিয়েছে ,, এবার‌ শাহারিয়া যখনই আবার গুলি সেট করে মাথার কাছে ধরলো সাথে সাথেই সেই লোকটা বলতে শুরু করলো ,,

    – টু,, টু,, টুটুল ভাই আমাকে বলছে এই কাজ করতে ,,

     

    তখনই আমরা দেখতে পাই দূরে একটা গাছের পিছনে কে যেনো দাঁড়িয়ে আছে ,, তার শুধু হাত টা দেখা যাচ্ছে ,, আর বাকি শরীর টুকু গাছের পিছনে,, আমরা দেখতে পাই সে হতাশায় হাতের তালু টা মুঠোবন্দী করে গাছের সাইটে একটা ছোট খাটো ঘুষি মেরে বসে ,, এবং তার হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে দেখতে পাই একটা আংটি পড়া ,, আংটি টা আর করো নয় ,, ছিলো টুটুলের,, 

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ১০

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ১১

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া 

     

    – টু,, টু,, টুটুল ভাই আমাকে বলছে এই কাজ করতে ,,

     

    তখনই আমরা দেখতে পাই দূরে একটা গাছের পিছনে কে যেনো দাঁড়িয়ে,, আছে ,, তার শুধু হাত টা দেখা যাচ্ছে ,, আর বাকি শরীর টুকু গাছের পিছনে,, আমরা দেখতে পাই সে হতাশায় হাতের তালু টা মুঠোবন্দী করে গাছের সাইটে একটা ছোট খাটো ঘুষি মেরে বসে ,, এবং তার হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুলে দেখতে পাই একটা আংটি পড়া ,, সেই আংটি টা আর করো নয় ,, টুটুলের,, 

     

    __________________________

     

    – টুটুল এইসবের সাথে জড়িত ,,, ? 

    – টুটুল কে,, (শাহারিয়া বলে)

    – আঙ্কেলের খাস চামচা ,, তার সাথেই সবসময় বেড়ায়,,

    – বাবা এসব লোক সাথে রাখে ! ,, আমি আজকেই এই টুটুলকে থানায় চাই ,, ওর খুঁটিনাটি সব ডিটেইলস চাই,,

    – হয়ে যাবে ,, তুই চিন্তা করিস না,, এই নয়ন ,,, একে নিয়ে যাও ,, হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ স্টেশনে পাঠিয়ে দেও ,, 

     

    নয়ন আর ২ জন কনস্টেবল এসে ঐ লোক টাকে নিয়ে যেতে থাকে,,

     

    – কাগজ টা বের কর ,, দেখি কী লেখা আছে ,, 

     

    রিয়াদ পলিথিনের প্রলেপ থেকে কাগজ টা বের করে ,, করে শাহারিয়াকে দেয় ,, কাগজ টা হাতে নেয় শাহারিয়া ,, পড়তে শুরু করে ,,

     

    “”সেই বৃষ্টির রাতে নূপুর হয়ে ছিলো রক্তে লাল,,

    যার প্রমাণ হয়ে এখনো রয়েছে সেই মধ্যস্ত খাল ,,

    খুঁজতে থাকো ,খুরতে থাকো ,, যদি হাতে কিছু মিলে,,

    ইতিহাসের পাতা ঘাঁটতে থাকো যেথায় তুমি একদিন ছিলে,,!””

     

    – ওওও ,, কথা গুলো কিন্তু খুব গভীর কিছুকে ইঙ্গিত করতেছে ,, (আমি বলি)

    – হ্যা ,, আমারো তেমন ই লাগছে,, কথা গুলো কিন্তু নরমাল ভাবে বলে নাই ,, তোর কী মনে হচ্ছে খুনি কী বুঝাতে চাচ্ছে ?

    – প্রথম লাইন আর দ্বিতীয় লাইনটা খেয়াল কর ,, “সেই রাতে নূপুর হয়ে ছিলো রক্তে লাল , “

    – এই নূপুর টা আবার কে ,, ? 

    – আরে দাঁড়া ,, দ্বিতীয় লাইন টা দেখ ,, “যার প্রমাণ হয়ে আছে সেই মধ্যস্ত খাল ,, ” এখানে কোন খালের কথা বলা হয়েছে,, যেখানে কোন প্রমাণ লুকায়িত আছে ,, 

    – খাল টা কোন খাল হতে পারে ? 

    – এই যে এখান কার খাল টা নয়তো ,, 

     

    শাহারিয়া আর রিয়াদ বড়ো বড়ো চোখ করে আম বাগানের সেই খাল টার দিকে তাকায় ,,

     

    – দোস্ত,, আমি শুনেছি এই খাল টা বেশ পুরনো,, সেই ৩০ বছর আগে যখন এই আমবাগান তৈরি হয় ,, তখন থেকেই এই খাল টা এখানে আছে ,,

    – আর লাশ গুলাও গ্রামের কোন যায়গায় না পাওয়া গেলেও এই খাল টার মধ্যেই পাওয়া যায় ,, পর পর তিন দিনে, তিনটা লাশ ,,(একটু থেমে) আমার তো মনে হচ্ছে এই খাল টার মধ্যেই রহস্য লুকিয়ে আছে ,, 

    – আচ্ছা দেখ ,, পরের লাইন টা ,, ” খুঁজতে থাকো,, খুরতে ,,,,,,,,

     

    রিয়াদের কথার মাঝখানে হঠাৎ একজন কনস্টেবল এসে তাকে বলতে থাকে ,,

    – ইসহাক সাহেবের ছেলে আরমানের বাসায় কিছু কাঁটা আঙ্গুল পাওয়া গেছে স্যার ,, একটা আঙ্গুলে বলে নিখোঁজ হওয়া আরিফের আংটিও পরানো আছে ,, আপনি জলদি চলুন সেখানে ,, 

    – আরে কী বলো ,, কখন পাওয়া গেছে ,, তাড়াতাড়ি চলো ,,

    – রিয়াদ দাঁড়া,, আমিও যাবো তোর সাথে ,, 

    – তাহলে উদ্ধার হওয়া লাশ ,,,?

    – ওটা আমার টিম দেখে নিবে ,, তুই তোর কনস্টেবল দের বলে দে আমার টিম যা আদেশ দিবে তা করতে ,,

     

    রিয়াদ আমার কথা অনুযায়ী কনস্টেবল দের বলে দেয় সবকিছু, আমাদের আসল পরিচয় সম্পর্কেও জানিয়ে দেয়,, আমি টিমকে বলতে থাকি,,

    – আমরা একটা স্পটে যাচ্ছি ,, এদিক টা তোমরা সামলে নিয়ো ,,

    তারা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত দেয়,,

     

    আমি আর রিয়াদ ওদের সব বুঝিয়ে দিয়ে পা বাড়াতে থাকি আরমানের বাসার উদ্দেশ্যে,,, 

     

    __________________________

     

    আনন্দ মোহন কলেজ ,, সামনে বিশাল বড়ো মাঠ ,, রোদ্রজ্জল আকাশ ,, কলেজ ভবন টা তিন তালা ,, মাথে হালকা সবুজ ঘাস রয়েছে ,, কিছু কিছু শিক্ষার্থীরা তাদের পারিপার্শ্বিক আলাপ চারিতা করতে করতে মাঠের মধ্যৈ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে,, মাঠের এক পাশে ভলিবল কোর্ট কেটে কিছু ছেলে রা ভলিবল প্র্যাকটিস করছে ,, মাঠের উত্তর প্রান্তে এক বড় গাছের নিচের বসায় জায়গায় বসে রয়েছে দিথী , জিনিয়া , সেতু , জান্নাত ,, তারা সবাই ভালো বন্ধু,, সেতু আর জান্নাত থাকে পাশের গ্রাম হরিশপুরে ,, তাদের বাসা ঐ গ্রামেই ,, তারা একে অপরের সাথে কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে ,,আজ থেকে তাদের সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু,, তখনই তাদের ব্যাচের আরেক বান্ধবী মিষ্টি তার নতুন বয়ফ্রেন্ড ইমরান কে নিয়ে তাদের সামনে এসে দাড়ায় ,, জিনিয়া আর সেতু তাদের দিকে মাথা তুলে তাকালেও দিথী আর জান্নাত তাদের খেয়াল করে নি,, মিষ্টি এসেই বলতে থাকে ,, 

    – কীরে সিঙ্গেলস খ্যাত পোলাপাইন ,, এই দেখ আমার নিউ বয়ফ্রেন্ড ইমরান,, দিনাজপুর শহরে তার তিন, তিনটা কমপ্লেক্স আছে ,, তার বাবা উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় কাজী ফার্মস গ্রুপের এমডি ,, ইমরান বলেছে আমাকে বিয়ে করে শহরে শিফট হয়ে যাবে ,, আর তোরা,, তোরা ঐ পড়াশোনা করতে করতেই মর ,, আসল যায়গায় আমিই ছক্কা মেরে দিছি ,, হা হা হা ,,

     

    দিথী আর জান্নাত এবার মিষ্টি আর তার বয়ফ্রেন্ড এর দিকে তাকায় ,, মিষ্টির পরনে ওয়েস্টার্ন জিন্স , শার্ট , পাশে দাড়ানো ছেলেটাও বেশ হ্যান্ডসাম আছে বলা চলে ,, তবে নাক টা একটু বোচা ,, একটু বিচ্ছিরি লাগছে ঐখান টায় ,, তাছাড়া শারীরিক গঠন , মাসল ,, বডি , সবই মোটামুটি পারফেক্ট,, 

     

    সেতু ফিসফিসিয়ে বলতে থাকে,, 

    – এই নিয়ে ৪ টা বয়ফ্রেন্ড কে দেখলাম এই ২ মাসে ,, এতো গুলা সামলায় কেমনে অয় ,, নিজে একটা বারোভাতারি ,, আসছে আমাদের বারোভাতারি বানাইতে ,, 

    – সেতু তুই কী কিছু বললি ? (মিষ্টি বলে)

    – না, না,, কই ,, কিছু না ,,

     

    দিথী মিষ্টিকে বলে ,, 

    – তুই ঐ বাইরে চমলক্কো আর ভিতরে বোচা দের নিয়েই জীবন কাটা ,, দুইদিন পর তৃষ্ণা মিটে গেলে ঐ ঠিকই ছুড়ে ফেলবে,, মন দেখে প্রেম কর ,, ফ্রামের ছেলের মুরগি দেখে না ,,

     

    – baby ও আমাদের কী বলছে ,, I don’t understand this ,, 

    – baby তুমি চলো ,, ওর ভাগ্যে তোমার মতো handsome মানুষ নেই তো ,, তাই আমাদের জুটি দেখে জলতেছে ,, 

    – yess baby ,, they are burning at us ,,

     

    – এই যে আংরেজি ম্যান কুদ্দুস ,, ইংলিশ কম মারেন , আর এলাকা ছাড়েন ,, নাইলে আপনার আংরেজি মুরাইয়া জায়গা মতো একবারে উমমম ,, (জান্নাত হাতের অঙ্গভঙ্গি করে বলে)

     

    – baby let’s go,, this girl is very dengerous ,, 

    মিষ্টির কনফিডেন্স ও নিমেষেই হাওয়া হয়ে যায় ,, সে তার বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে যায়গা ত্যাগ করতে থাকে ,, এদিকে উৎফুল্লের বিজয় পেয়ে জান্নাত , জিনিয়া , সেতু হাসতে থাকে ,, দিথীও মুচকি মুচকি হাসে ,, তখনই সময় হয়ে যায় পরীক্ষার ,, হলের বেল বাজতে শুরু করে ,, তারা খাতা গুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চলে যেতে থাকে হলের দিকে ,,,

     

    _________________________

     

    – চাচি ,, দুপুরের রান্না কবে বসাইবেন ,, সাড়ে ১১ ডা তো বাইজ্জাই গেলো ,, 

    – তোর চাচাই তো আইতাছে না ,, দুপুরে রান্না বহামু কী ,, কাঁচা মাংস , মুরগি কিছুই ঘরের ফ্রিজে নাই,, সেই সকাল বেলা বাইর হইছে লোকটা,, এখনো বাড়িত আসার কোন নাম গন্ধই নাই,, 

    – চাচা এতোক্ষণ ধইরা করে ডা কী চাচি ,, 

    – আমি কেমনে কমু,,(একটু শান্ত হয়ে) আচ্ছা হুন ,, তুই পিঁয়াজ রসুন কাটা শুরু কর গিয়া ,, রান্না আইজ মেলা করতে হইবো ,, আর ঐ দিকে,,,,,,,

     

    চাচির কথা থামিয়ে দিয়ে সেখানে হঠাৎ উপস্থিত হয় নাসিম ,, আর বলতে থাকে ,, 

     

    – চাচি ,, চাচা আমারে পাডাইছিলো ,, বাসায় মাছ, মাংস কী কী লাগবো তার লিস্ট কইরা দিতে কইছিলো ,, 

    – ও এতক্ষণে তার বাড়িত কথা মনে পড়ছে ,, এই তোর চাচায় আছে ডা কই ,, করে ডা কী হেই সকাল থেইকা ,, 

    – না মানে চাচি , সামনে ইলেকশন আইতাছে তো ,, বুঝেন ই তো কত কাজ ,, 

    – হইছে ,, ঐ কাজ আর আমার জানা লাগবো না,, তুই এক কাম কর ,, তোর চাচারে যাইয়া কবি দেশি মুরগি লাগবো ,, ৩ ডা নাইলে ৪ ডা ,, আর খাসির কলিজা নিতে কইবি ,, আর হাটে যদি আইজ গরু জবাই হইয়া থাকে তাইলে চর্বি ছাড়া গরুর মাংস নিতে কইবি ,, নলা সহ হইলে ভালো হয় ,, রাইতে রান্ধুম ঐডি ,,(বিড়বিড় করে) আর পোলার চাউল তো বাসায় ই আছে ,, মশলা পাতিও আছে ,,(আওয়াজ করে) ও  আরেকটা জিনিস,, রোস্টের মশলার প্যাকেট লইস ,, ফুলমতি , আর কি কিছু বাদ পরছে ,,

     

    চাচি ফুলমতির দিকে তাকিয়ে দেখেন ফুলমতি নাসিমের দিকে এই দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ,,তার অক্ষিকোটর যেন নাসিমের দিক থেকে সড়তেই চাইছেনা ,, চাচি এইবার ফুলমতি কে ধরে নাড়াচাড়া করে ডাকেন ,,

    – এই ফুলমতি ,, তোর হুস কই ,, 

    – হু,হা , চাচি চাচি,, হ কন চাচি কী,, 

    – তুই কই আছিলি এতক্ষণ,,

    – ক,কই চাচি,, এহানে আপনার পাশেই তো দাঁড়ায়া ছিলাম ,, 

    – শরীর এহানে থাকলেও মন কই গেছিলো তোর ,, 

    – না মানে চাচি ,,,,

    – হইছে থাক ,, অহন হুন, তেল আর মশলা পাতি তো সব আছে না রান্না ঘরে ? 

    – হ চাচি ঐসব আছে পর্যাপ্ত ,,

     

    তারপর চাচি নাসিমের দিকে ফিরে বলতে থাকেন ,,

    – তাইলে খালি ঐডিই লাগবো ,, 

    – আইচ্ছা চাচি আমি চাচারে সব কমুনে ,,আমি তাইলে যাই চাচি,,

    – হ যা ,, আর তোর চাচারে কইস যে দুপুরে বাড়িত আইয়া খাইতে ,, আর তুইও আহিস ,, লগে ঐ পাজি টুটুল রেও আনিস ,, দাওয়াত আইজ তোগো ,, 

    – আইচ্ছা চাচি ,,আমি গেলাম তাইলে,,

    – যা,, 

     

    নাসিম চলে যেতে থাকে ,, শিউলি বেগম ফুলমতিকে রান্না ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি বাড়ির উঠোনে টুল পেতে বসেন ,, বসে চুল আঁচড়াতে থাকেন ,,

     

    _________________________

     

    – কাটা আঙ্গুল গুলো আপনাদের মাঝে কে আগে দেখেন ? 

    – আ,আ, আমি স্যার ,,(আনিকা বলে উঠে)

    – কখন দেখেছিলেন,, আর আঙ্গুল গুলো কী টেবিলের উপর এইভাবেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো ? 

    – হ্যা , এভাবেই ছিলো ,,

    – হমম ,, তারমানে এই গুলা আপনার আগেও একজন দেখেছিলো ,, তাইজন্যই এই কালো পুটলি থেকে আঙ্গুল গুলো বের করাছিলো,, (কালো পুটলিটা হাতে নিয়ে রহস্যের চোখে দেখতে দেখতে রিয়াদ বলে) আচ্ছা আরমানের কী হয়েছে ,, ও কি অসুস্থ নাকি,,

    – হ্যা ,, কাল রাতে হঠাৎ জোরে চিৎকার দিয়ে বাইরে আসে আর এসে আঙিনায় অজ্ঞান হয়ে পরে যায় ,, তারপর কালরাত থেকে জ্ঞান নেই ,, ভোরের দিকে গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর ও আসে ,,(আরমানের মা বলে)

     

    শাহারিয়া গিয়ে টেবিলের সামনে দাঁড়ায় ,, টেবিলে ২ টা থাক বই সাজানো আছে ,, তবে আরেকটা থাকের বই পরে গিয়েছে,, পরার টেবিলের পাশেই জানালা আছে ,, আর বই গুলোর সামনেই আঙ্গূল গুলো পরে আছে ,, শাহারিয়া আঙুল গুলো ঘেটে দেখতে থাকে ,, সেগুলো দেখার সময় ই হঠাৎ ই তার চোখ যায় নিচে ,, একটা বক্স পরে আছে ,, গিফট বক্স টাইপের ,, সে বক্স টাকে উঠায়,, দেখে ভিতরে একটা কাগজ ও রয়েছে ,, শাহারিয়া কাগজ টা হাতে নিয়ে দেখে এখানেও একটা সংকেত ছন্দ লেখা,, শাহারিয়া কাগজ টাকে ফরেনসিক পলিব্যাগে ঢুকিয়ে নিজের কাছে রাখে ,, আর বক্স হাতে নিয়ে তাদের দিকে ফিরে বলে ,,

    – এই বক্স টা কেউ দেখছিলেন এর আগে ,, ? 

    – হ,হ্যা ,, এটাতো সেই বক্স যেটা কাল সন্ধ্যায় আমি গেটের সামনে পেয়েছিলাম,, কলিংবেল শুনে মেইন গেইট যখন খুলি তখন দেখি বাইরে কেউ নেই,, শুধু এই বক্স টা পরে আছে ,, আমি হাতে নিয়ে দেখি বক্সের উপরে আরমানের নাম লেখা ,, আমি ভেবেছিলাম ওর কোন পার্সেল হবে হয়তো ,, তাই নিয়ে এসে এই টেবিলে রেখে দেই ,, 

    – তারমানে আঙ্গুল গুলো এই বক্সেই ছিলো ,, কিন্তু এই বক্স টা কেন কেউ আরমানকে পাঠাবে ,, তার সাথে আরিফের আংটি যুক্ত আঙ্গুল ?(শাহারিয়া ধীরে ধীরে বলতে থাকে)

    – আচ্ছা তাইলে আমরা এখন গেলাম,, আরমানের জ্ঞান ফিরলে আমাদের খবর দিবেন ,, আমরা আবার আসবো ,,(রিয়াদ বলে) 

    – কিছু মুখে দিয়ে যাও বাবা ,,(শাহারিয়ার দিকে ফিরে ধীর গলায়) শাহারিয়া এতো দিন পর আসলো ,,

    – না আন্টি আজ না ,, আজ কাজের প্রেশার আছে আমারো,, অন্য একদিন এসে খেয়ে যাবো ,, (আমি বলি)

     

    ________________________

     

    গ্রামের রাস্তা ,, দুই পাশে গাছগাছালি,, রৌদ্রউজ্জল আকাশ ,, কয়েকজন কৃষক তাদের গরু ও কাঁধে লাঙল ‌নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ,, একটা সাইকেল ও চলে গেলো রাস্তা দিয়ে ,, ছোট ছোট কিছু ছেলে রাস্তার পাশে বসে দড়িলাফ খেলছে ,, রাস্তা দিয়ে আসতে দেখি আমরা একটা ছেলেকে ,, পরনে নীল, সাদা রঙের শার্ট , ডেনিম ব্ল্যাক জিন্স প্যান্ট ,, মাথায় কাউহ্যাট টুপি , চোখে চশমা,, হাতে কালো ঘড়ি ,, কাঁধে একটা ছোট ব্যাগ ,, হাতে একটা বড় সূটকেস টেনে নিয়ে আসছে ,, গ্রাম্য পরিবেশের‌ মধ্যে যেন এক মর্ডানতার ছোঁয়া নিয়ে এগিয়ে আসছে কেউ ,, সে আসতে আসতে মেম্বারদের বাড়ির সামনে থেমে যায় ,, ভালো করে বাসাটা টা দেখে শুনে পর্যবেক্ষণ করে বলে ,,

     

    – হ্যা ,, এটাই হবে ,, 

     

    সে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে ফেলে ,,  করেই ডাকতে থাকে ,,

    – চাচি আম্মু ,, ও চাচি আম্মু ,, 

    কিছুক্ষণ পর শিউলি বেগম ঘর থেকে বের হয়ে বলতে থাকে 

    – কেডা তুমি বাজান ,, 

    – আরে চাচি আম্মু আমি ফয়সাল ,, সিলেটের ফয়সাল ,,

    – ফয়সাল ? ওহোহোহো ,, ফয়সাল ,, এবার চিনতে পারছি ,, তুমি তো ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য সিলেট গেছিলা তাই না? সিকদারের পোলা ফয়সাল তুমি ,,

    – হ চাচি আম্মু ,, 

    (ফয়সাল হচ্ছে মতিন মেম্বারের ছোট ভাই সিকদার সাহেবের একমাত্র ছেলে,, তারা দেবনগর এ থাকে ,, কুড়িগ্রাম জেলায় ,, ফয়সাল সিলেটে গিয়েছিলো ডাক্তারি পড়াশোনার জন্য,, )

    – তো কেমন আছো বাজান ,,

    – এইতো চাচি আম্মু আছি ভালোই ,, 

     

    তখনই নিপা ঘরে থেকে বের হয়ে আঙ্গিনায় নেমে আসে ,, দেখেই একজনের সাথে তার মা কথা বলছে ,, নিপা শিউলি বেগমের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে ,,

    – মা ,, কে উনি ,,

    – তোর চাচাতো ভাই ,, ফয়সাল ,,

     

    নিপা একটা হালকা সবুজ রঙের ফরমাল থ্রি পিস পরা ছিলো ,, ফয়সাল চোখ থেকে চশমাটা খুলে হাতে নিয়ে নিপার পা থেকে আস্তে আস্তে পুরো শরীর টা চোখ দিয়ে খারাপ নজরের সহিত দেখতে থাকে ,, নিপা কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতে থাকে , সে তার ওড়নাটা আরো ভালো করে দিয়ে তার জামাটা টেনে ঠিক করে বলতে থাকে ,, 

    – মা আমি একটু বাইরে গেলাম ,, পরে আসবোনে,,

    – আরো ‌কই যাস ,, ফয়সাল রে একটু ঘরে নিয়া যা ,, আমাদের সবার উত্তরের রুমডা খুইলা দিস,,

     

    নিপা আর না করতে পারেনা তার মায়ের কথার ,, শিউলি বেগম ফয়সাল কে বলতে থাকে,,

    – যাও বাজান ঘরে যাও ,, এই নিপা ব্যাগ টা নে ,, নিয়া ওরে ঘরে দিয়া আয় ,, আমি ঐদিক রান্না বহাইছি ,, আমি গেলাম 

     

    বলেই রান্না ঘরের দিকে চলে যায় চাচি ,, নিপা অস্বস্তি বোধ করতে থাকা সত্ত্বেও ফয়সালের সূটকেস ব্যাগটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায় ,, সুটকেসের হাতল টা ধরে ,, সে নিয়ে যাওয়ার জন্য যখনই যেতে থাকে ,, তখনই ফয়সাল নিপার হাত ধরে ফেলে ,,

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ১১

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ১২

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া 

     

    নিপা আর না করতে পারেনা তার মায়ের কথার ,, শিউলি বেগম ফয়সাল কে বলতে থাকে,,

    – যাও বাজান ঘরে যাও ,, এই নিপা ব্যাগ টা নে ,, নিয়া ওরে ঘরে দিয়া আয় ,, আমি ঐদিক রান্না বহাইছি ,, আমি গেলাম 

     

    বলেই রান্না ঘরের দিকে চলে যায় চাচি ,, নিপা অস্বস্তি বোধ করতে থাকা সত্ত্বেও ফয়সালের সূটকেস ব্যাগটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায় ,, সুটকেসের হাতল টা ধরে ,, সে নিয়ে যাওয়ার জন্য যখনই যেতে থাকে ,, তখনই ফয়সাল নিপার হাত ধরে ফেলে ,,

     

    নিপা হকচকিয়ে উঠে ,, সে অস্থিরতা অনুভব করতে থাকে ,, বলতে থাকে ,,

    – আরে , কী করছেন ,, ছাড়ুন আমায় ,, ছাড়ুন ,, 

     

    ফয়সাল নিপার হাত টা ছেড়ে দেয় ,, তবে কোন কথা বলে না ,, নিপা তাড়াতাড়ি ব্যাগ টা নিয়ে বাসার ভিতর লগে যেতে থাকে ,, ফয়সাল তার দুই চোখ দিয়ে নিপার চলে যাওয়াটাকে খারাপ নজরে দেখতে থাকা ,, যেন সে চোখ গুলো দিয়ে নিপাকে ছিঁড়ে খাচ্ছে ,,আর বলতে থাকে ,”জিনিস কিন্তু একের,, হ্যা ,,হা হা হা ,,” 

    নিপা চলে যায় ,, ফয়সাল হাতে ধরে রাখা চশমাটা খুলে চোখে সুন্দর করে পরে বাসার ভিতরের দিকে যেতে থাকে ,,

     

    ________________________

     

    – এই শোনো ,, আমি গোসলে যাচ্ছি ,, রান্নার কাজ শেষ,, রিয়াদ খেতে আসলে বলবে একটু বসতে ,, আমি তাড়াতাড়িই বের হয়ে যাবো ,,

    হাতে গামছা , কাপড় আর সাবান‌ দানি নিয়ে মায়া গোসল খানার দিকে যাচ্ছে,,

    রুম থেকে বের হয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চশমা গেন্জিতে মুছতে মুছতে রাতুল স্যার বলে ,,,

    – দাঁড়াও আমিও আসছি ,,

    – কোথায় আসছো ,, 

    – তোমার সাথে ,, গোসলে ,,

    – না বাপু,, তোমাকে নিয়ে আমি গোসল দিতে পারবোনা  ,, তুমি অনেক দুষ্ট ,, তোমার মাথায় খালি দুষ্টুমির ভূত চাপে গোসল খানায় গেলে ,, তুমি পরে গোসল দিয়ো ,,

     

    রাতুল স্যার বারান্দা থেকে নেমে গামছা টা নিয়ে কাঁধে দিয়ে বলে ,,

    – দুষ্টামির আর দেখছো কী ,, আজকে চলো গোসল খানায় ,,  দেখাবো দুষ্টামি কত প্রকার ও কী কী ,, 

     

    বলতে বলতেই মায়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে গোসলখানার দিকে যেতে থাকে রাতুল,, মায়ার মুখে এক মিষ্টি ভয়ের ছাপ ,, এ যেন এক যুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত ,, রাতুল গোসল খানার ভিতরে গিয়ে মায়াকে টেনে ভিতরে নিয়ে যায় ,, আর বাইরে মাথা উঁকি দিয়ে দেখে যে রিয়াদ বাসা আসলো কি না,, তারপর গোসল খানার দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়,, 

     

    __________________________

     

    বাইকে করে বাসায় ফিরছে শাহারিয়া আর রিয়াদ ,, রিয়াদ চালাচ্ছে ,, শাহারিয়া পিছনে বসে রয়েছে ,, আরমান দের বাসায় ইনভেস্টিগেশন শেষ করে বাড়ি ফিরছে তারা ,, রিয়াদ বলে উঠে ,,

    – দোস্ত,, আরমান দের বাসায় আঙ্গুল গুলো পাওয়ার পর কেস টা তো আরো জটিল হয়ে গেলো ,, এই আঙ্গুল গুলো কার ,,আর এগুলা আরমানদের বাসাতেই কেনো পাওয়া গেলো ,,  অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মাথায় ,, তোর কী মনে হয় এই বিষয়ে ,, 

    – আমার তো মনে হয় খুনি, আরমানকে কোন সংকেত দিলো ,, আর আঙ্গুল গুলোতে থাকা আংটিটা যে আরিফের এটা যদি নিশ্চিত হয় তাহলে  আমাদের আরিফ কে খুজাতে বেশি মনযোগ দিতে হবে ,, কারণ আরিফের এখন ঘোর বিপদ,, 

    – কিন্তু দোস্ত,, আমার এটা মনে হয় না ,, আমার সন্দেহই হয় আরিফের উপর,, মনে হয় সেই এই খুন গুলো করছে বা এর সাথে জড়িত ,,

    – কেন ,, হঠাৎ তোর এমন মনে হলো কেন ,,

    – কারণ দেখ , যেই নিখোঁজ হয় তারই লাশ পরের দিন সকালে খালের পানিতে পাওয়া যায় ,, সে যেই হোক না কেন,, কিন্তু আরিফ নিখোঁজ হয়েছে আজ দিয়ে হবে ৩ দিন , কিন্তু ওর কোন লাশ পাওয়া যায়নি ,, তারমানে আরিফ খুন গুলো করছে,, এবং নিজেকে গাঁ ঢাকা দিতে এইসব নিখোঁজ-ফিখোজের খবর রটিয়েছে ,, 

    – তুই একেবারে ফেলে দেওয়ার মত কথা বলিস নি কিন্তু,, এটা হলেও হতে পারে ,, কিন্তু আরিফ কেন এই খুন গুলো করবে ,, ওর গ্রামেই ওর বন্ধুদেরকে ও কেন মারবে ,,

    – সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে জানিস,, এতো সব কিছুর মাধ্যৈ কী কেন ,,কি কারণে ইত্যাদি প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে,, 

    – আচ্ছা এখন ঐসব বাদ দে বিকালে থানায় আলোচনা করে নিবোনে ,, এখন শুন ,, মা তোকে আজ বাসায় নিয়ে যেতে বলেছে,,

    – কোন সমস্যা ‌নাকিরে‌ দোস্ত,,

    – না না ,, এমনিতেই একটু ভালোমন্দ রান্না করেছে আরকি,, তুই একদম না করিস না ,, মা বলেছে তোকে জোর করে হলেও নিয়ে যেতে ,,

    – আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে চল তাইলে ,, 

    – আমার সাথে কথা না বলে সামনে দেখ ,, গাড়ির সংখ্যা কিন্তু এই রাস্তায় বেড়ে গেছে ,, 

    – আচ্ছা আচ্ছা,,,

     

    রিয়াদ আর শাহারিয়া চলে যেতে থাকে বাড়ির উদ্দেশ্যে,, 

     

    __________________________

     

    গ্রামের কাঁচা রাস্তা ,, রাস্তার দুইপাশে শুধু ফসলি মাঠ আর মাঠ,, দুপুর বেলা ,, আকাশে মেঘ নেই ,, কাঠ ফাটা রোদ পরেছে ,, রাস্তায় তেমন লোকজন দেখা যাচ্ছে না ,, শুধু মাঝেমধ্যে কয়েকটা সাইকেল চলে যাচ্ছে ,, দিথী , জিনিয়া , সেতু আর জান্নাত একসাথে আসছে সেই রাস্তা দিয়ে ,, দিথীর ছাতার নিচে জিনিয়া ,, আর জান্নাতের ছাতার নিচে সেতু ,, তারা কলেজ শেষে বাসায় ফিরছে ,, জিনিয়া বলতে থাকে ,,

    – আজ নিপা কলেজ আসলো না কেনো ,, আজকের পরীক্ষা যে মিস দিলো ,, তখন ,, 

    – আরে সমস্যা নাই ,,অত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাও না ,, আর তারউপর ওর বড় ভাই এতো দিন পর বাসায় আসছে ,, তাইজন্য আজ আসে নাই হয়তো ,, (দিথী বলে)

    – আচ্ছা সেতু ,, তোর ভাইয়া বলে ঢাকা যাবে শুনলাম ,, সত্যি নাকি ,, (জিনিয়া বলে)

    – হ রে ,, ভাইয়া এই কয়েকদিনের মধ্যেই যাবে,, 

    – তুই তো তখন একলা হয়ে যাবি রে ,, ভাইয়া ছাড়া আঙ্কেল,আন্টি ছাড়া ,, কীভাবে কী তখন ,,(জিনিয়া বলে)

    – ভাইয়া বলেছে এখন গিয়ে ২-১ দিনের মধ্যেই ফিরে আসবে ,, এখন শুধু গিয়ে কাজের সোর্স টা দেখে আসবে ,, তারপর ফিরে এসে আমাকে সহ নিয়ে চলে যাবে ঢাকায়

    – কী আর বলবো ,, সবই কপাল রে ,, এক মাস আগে আঙ্কেল, আন্টি হঠাৎ রোড এক্সিডেন্ট এ মারা গেলো ,, এখন তোদের এই অবস্থা,,একলা হয়ে যাবি তখন খুব ,, আর আমরাও অনেক মিস করবো রে ,, এইটুকু সময়ের মধ্যে তোর জীবনে কতটা পরিবর্তন নেমে আসলো বল ,, (মন খারাপ করে জিনিয়া বলে)

    – সবই উপর ওয়ালার ইচ্ছে ,, সবই তাহার লেখা ,,(দিথী বলে)

    – হুম রে ,, আচ্ছা আমরা গেলাম তাইলে ,, কাল কলেজে আছিস ,,

    – আচ্ছা,,

     

    সেতু আর জান্নাত দের গ্রাম হরিশপুরে যাওয়ার রাস্তা এসে গেছে ,, তারা ঐ রাস্তা দিয়ে তাদের বাসার দিকে চলে যেতে থাকে ,, এদিকে দিথী, জিনিয়া নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে তাদের বাসার উদ্দেশ্যে যেতে থাকে ,, 

     

    __________________________

     

    – আজ জম্পেশ খাওয়া হয়েছে,, কী বলিস ,, 

    – হ্যা তা কিন্তু মন্দ বলিস নি ,, চাচির হাতের রান্না অসাধারন,, চাচি তো সচরাচর রান্না করে না,, কিন্তু তুই এসেছিস বলে রান্নায় বসেছে ,, 

    – হ্যা ,,মা আমাকে নিয়ে একটু বেশিই আনন্দিত হয়েছে এবার ,, 

    – চাচি কি জানে তোদের মিশন সম্পর্কে? বা টিম মেম্বারসদের আসল পরিচয়? 

    – না না ,, মাথা খারাপ,, ঐসব বলিনি ,, আর এমনিতেও নাঈম স্যার এই মিশন টাকে সিক্রেট রাখতে বলছে ,, আমি বলছি যে তারা আমার বন্ধু হয় ,, আর মা ও আর এইসব বিষয় নিয়ে জিগ্গেস করে নি ,,

     

    শাহারিয়া আর রিয়াদের কথা মাঝখানে হঠাৎ ফয়সাল রুমে ঢুকে পরে ,, ঢুকেই বলতে থাকে ,,

    – কী খবর শাহারিয়ার কেমন আছো ,, আমাদের কথা তো ভুলেই গেলা, হ্যা ,, একটা ফোন ও দেওনা ,,

    – না , মানে কাজের অনেক প্রেসার তো ,,তাই সময় হয়ে উঠে না আরকি ,, তো এবার কোন মেডিকেলে ভর্তি হচ্ছো ,, 

    – এইতো দেখা যাউক দিনাজপুর বা রংপুর যেকোনো একটা মেডিকেলে ঢুকে যাবো ,, তো কি এমন চাকরি করিস যে এতো প্রেসার ,, বেতন কেমন দেয় ওরা ,,

    – গোয়েন্দা সংস্থার চাকরি ,, চাপ তো থাকবেই ,, আর সরকারি চাকরি,, স্যালারি বিষয়ে অবশ্যই তোকে আর ধারনা দিতে হবে না আশাকরি,, 

     

    ফয়সাল শাহারিয়ার কথাটা  শুনেই ভিতরে ভিতরে ঈর্ষান্বিত বোধ করতে থাকে ,, বলতে থাকে,,

    – ঐ সব গোয়েন্দা চাকরিতে যত দূর্নীতি,, সবাই তো খালি ঘুষখোর,, যার কাছে টাকা পায় ,, তার কথায় চলে ,, ঐসব আমি জানি ,, তোকে আর বলতে হবে না,, মেডিকেলে চান্স পাবো এমনিতেই তখন অনেক টাকা আসবে আর যাবে ,,

    – ডাক্তার রাও কিন্তু টাকার জন্য মানুষ মারতে দ্বিধাবোধ করে না,,! (কথাটা বলেই ফয়সালের দিকে আড়চোখে তাকায় শাহারিয়া)

     

    এবার ফয়সাল একটু বেশিই ঈর্ষায় জ্বলতে থাকে ,, মনে মনে বলতে থাকে ,, ” তোমার ঐ চাকরি কীভাবে টিকে আমিও দেখে নিবো ,, আমার সাথে পাঙ্গা হ্যা ,, দরজার আড়াল থেকে সব শুনছি তোমাদের কথা ,, চাচি আম্মাকে বলে তোমার আর তোমার ফ্রেন্ড দের অবস্থা খারাপ করতেছি দাঁড়াও,, এই ফয়সালের সাথে টক্কর হ্যা ,, ! হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াবো ,, “

     

    – কী হলো ,, চুপ করে গেলা যে,, মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় কী টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট নিছিলা ,, হ্যা ,, হা হা হা,,

    – আচ্ছা শাহারিয়া তোরা থাক ,, আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি ,, (বলেই মুখের মধ্যে একটা রাগান্বিত মনোভাব এনে সেখান থেকে উঠে যেতে থাকে ফয়সাল ,, যাওয়ার সময় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলতে থাকে ,, “ফয়সাল কখনো হারতে শিখে নাই ,, ফয়সাল অবশ্যই জিতবে ,, হোক সেটা হাতে,, হোক সেটা ভাতে ,,” বলেই ফয়সাল চলে যায় রুম থেকে,,

     

    – কে ঐটা ,, এতো বড় বিয়াদব , গোয়েন্দার মতো এতো বড় একটা জব নিয়ে মসকরা করে ,, 

    – আমার চাচাতো ভাই ,, সিলেটে থাকতো ,, খুব অহংকার ওর ,, ওকে আমার দুই চোখে সহ্য হয় না,, 

    – আচ্ছা ঠান্ডা হ ,, নিলয় , শাম্মী ওরা কোথায়,,

    – ওরা তো খাবার খেয়ে পাশের রুমে রেস্ট নিচ্ছে ,,

    – আচ্ছা তাইলে তুই থাক ,,আমি একটু বাসা গেলাম,, ৪ টার দিকে থানায় আছিস ,, কেস নিয়ে বসবো,,

    – আচ্ছা ঠিক আছে যা ,,আর ফরেনসিক ল্যাব থেকে ফাইল গুলো নিয়ে আছিস কিন্তু,, 

    – ওকে,,

     

    রিয়াদ বিছানা থেকে উঠে রুম থেকে চলে যেতে থাকে ,, শাহারিয়া, রিয়াদের চলে যাওয়ার পর দরজা লাগিয়ে দেয়,, দিয়ে আরমানের বাসায় যেই ছন্দ সংকেত পেয়েছিলো তা তার পকেট থেকে বের করে ,, করে কাগজ টা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে পরতে থাকে,,

     

    _________________________

     

    বিকেল ৩ টা ,, কাঁচা রাস্তার পাশেই এক আধাপাকা বাসা ,,বাসার ইট গুলো বেশ পুরনো,, ৩ রুমের ঘর ,, সামনে বারান্দা নেই , তবে আঙিনা রয়েছে , ঘর গুলোর সামনাসামনি একটা ছোট্ট খড়ের রান্না ঘর ,, আঙিনায় একটা মুরগি তার ছানা দের নিয়ে দানা খুঁজে বেড়াচ্ছে,, রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সেতু(দিথীর সেই বান্ধবী) , হাতে একটা ছোট বাটি আর একটা বড় গামলা জাতীয় কিছু,, সে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে এসে রুমে প্রবেশ করলো ,, রুমে তার বড় ভাই সিয়াম বিছানায় বসে রয়েছে,, তার চোখে মুখে ক্ষুধার ছাপ,, সেতু এসে বিছানায় গামলা আর ছোট বাটি টা রাখলো , বাটির উপর থেকে ঢাকনা সড়ালো ,, সাথে গামলার উপরে স্টিলের প্লেট ঢাকা দেওয়া ছিলো তা উঠিয়ে তার ভাইয়ের সামনে দিলো ,, গামলায় ছিলো ভাত , আর ছোট বাটি টায় ছিলো ১ টা ডিম ভাজা আর একটা কেটে রাখা পিয়াজ আর ২-৩ টে কাঁচা মরিচ , সেতু তার ভাইয়ের প্লেটে ভাত উঠিয়ে দিলো,, ডিম ভাজা টাকে দুই টুকরো করে বড় ভাগ টা তার ভাই সিয়ামকে দিলো,, আর ছোট ভাগ টা বাকিতে রেখেই আরেকটা স্টিলের প্লেটে নিজের জন্য ভাত উঠাতে লাগলো ,, 

     

    – সেতু ,, তুই বড় ডা নে বোন ,,সারাদিন কলেজ কইরা আসলি ,, আর আজকে পরীক্ষাও আছিলো ,, নে তুই তো বড় টা নে ,, (বলেই বড় ভাগ টা সেতুকে উঠিয়ে দিতে যাচ্ছিলো তার ভাই)

    – না না ভাইয়া ,, আমি তো পরীক্ষা দিয়া আসলাম,, তুমিই নেও ডিমটা ,, পরীক্ষার পর ডিম খেতে নেই যে ,,

    – তাইলে তুই কী দিয়া খাবি ,, আর তো কিছু নাই,, তোর পরীক্ষা গেলো ,, তোর লাইগা কিছু আনতে পারলাম না রে ,, কেউ কোন কাজ দিতাছে না,, অনেক চেষ্টা করছি ,,সবাই দূর দূর কইরা তাড়ায়া দেয় ,, তুই এইডা নে বনু ,, তোর শরীর টা এই এক মাসে একদম শুকায় গেছে ,, ভাই হইয়া আর আমি এইসব দেখতে পারতাছিনা ,, (বলেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সিয়াম)

    – ভাইয়া ,, কাইন্দো না,, সব ঠিক হইয়া যাইবো ,, 

    (সিয়াম তার চোখের পানি মুছতে থাকে ,, তারপর আস্তে আস্তে বলে ,,

    – তুই আয় ,, আমি তোরে খাওয়াই দেই,, (বলেই খাবার তুলে সেতুর মুখের সামনে ধরে সিয়াম ,, সেতুর চোখ পানিতে ছলছল করছিলো ,, সে মুখ বাড়িয়ে খাবার টা মুখে নিয়ে নেয় ,, 

     

    ১ মাস আগেও সেতুদের পরিবার ছিলো সচ্ছল ,, সেতুর বাবা ঢাকায় কাজ করতো ,, সেখান থেকে তিনি টাকা পাঠাতেন ,, আর এখানে সেতু তার মা একটা ছোট বোন ও তার বড় ভাই সিয়ামের সাথে থাকতো ,, সিয়াম দিনাজপুর শহরে একটা ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতো ,, বেশ ভালোই উপার্জন হতো ,, আর সংসার টাও ভালোভাবেই চলে যেতো ,, প্রতি মাসে তার বাবা ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরতেন ,, আগের মাসেও তার বাবা ফিরেছিলেন বাসায় ,, কিন্তু তার ফেরার দুইদিন পর তিনি , সেতুর মা , আর সেতুর ছোট বোন যায় দিনাজপুর শহরে কেনাকাটা করতে ,, প্রতি মাসেই সেতূর বাবা এসে এভাবে কেনা কাটা করে দিয়ে যেতেন ,, ঐদিনি বিকেলে তারা যখন কেনাকাটা করে অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলো তখনই মেইন রাস্তায় একটা চাল বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের অটোরিকশার উপরে উঠে যায় ,, ট্রাকের নিচে অটোরিকশা একদম পিষে যায় ,, ট্রাক টা অটোরিকশার উপরে দিয়ে গিয়ে রাস্তার পাশের খালে পড়ে যায় ,, এতে অটোরিকশার ৬ যাত্রীর ঘটনাস্থলেই নির্মম মৃত্যু হয় ,, সেতুদের বাড়িতে পরে যায় শোকের মাতম ,, এই ঘটনার এক সপ্তাহ পরেই তার ভাই যেই ফার্নিচার কারখানায় কাজ করতো সেখানেও আগুন লেগে যায় ,, তার ভাই সিয়াম কোন মতে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে পারলেও তার ডান পা পুড়ে যায় ,, এতোটাই খারাপ ভাবে পুরে যায় যে গোড়ালীর নিচ থেকে কেটে বাদ দিয়ে দিতে হয়েছিলো ,, তার ভাইয়ের চিকিৎসায় তাদের জমানো টাকা একদম ফুরিয়ে আসে,, তার ভাই আর পরে কোন কাজের সন্ধান ও করতে পারে না ,, সবমিলিয়ে তাদের সংসারের অবস্থা একদম সংকটাপন্ন হয়ে যায় ,, সেতু পড়ালেখা বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিলো ,, কিন্তু তার ভাই সিয়াম তা হতে দেয়নি ,, সিয়াম বলেছিলো,,”আমি আমার দেহের রক্ত বেঁচে হলেও তোর পড়াশোনার খরচ চালাবো ,, তবুও তোকে ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত করে ডাক্তারি পড়াবো, তোর এই ভাই এখনো বেঁচে আছে রে ,, আমি যে করেই হোক সব ঠিক করে ফেলবো , তুই শুধু মন দিয়ে পড়াশোনা টা চালিয়ে যা ,, আমার আর কিচ্ছুটি চাই না বনু ,, কিচ্ছুটি না ” আর এই কথার উপর ভর করে সেতূ আজও তার পড়াশোনা টা চালিয়ে যাচ্ছে,, তার ভাই প্রায় দিন দশেক আগে পৌরসভা অফিস থেকে কিছু সামান্য সাহায্য পায় ,, তা দিয়েই আজ পর্যন্ত চলছে ,, ঘরের চাল ফুরিয়ে এসেছে,, আর ৩-৪ টা দিন চলবে ,, হাতে টাকা একদম নেই বললেই চলে ,, তাই সিয়াম ঢাকা যাবে , তার বাবা তাকে বলে গিয়েছিলেন ঢাকায় তিনি একটা ডিপোজিট অর্থ জমা রেখেছেন ব্যাংকে ,, খুব জরুরী হলে যেন ব্যবহার করতে পারেন সেইজন্য,, তাই সিয়াম ঢাকা যাবে ,, গিয়ে সেই টাকা গুলো ‌নিয়ে এসে এখানে একটা ছোট খাটো ব্যবসা দিবে ,, সংসার এবং বোনের পড়ালেখা,, দুটোই চালাতে হবে তাকে ,, পরিবারের বড় ছেলেরা তো এমনি হয় ,, নিজের কথা চিন্তা করার আগে পরিবারের কথা চিন্তা করতে হয় ,, পরিবারের হাল ধরতে হয় ,, শত কষ্ট বুকে চেপে ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি দিয়ে জানান দিতে হয় ,, “আমি ভালো আছি” ,, কিন্তু রাতের আঁধারে সেই চাপা কষ্ট গুলো যখন বেড়িয়ে আসে চোখের কোনে অশ্রু রুপে নিজেকে তখন বড্ড অসহায় মনে হয়, বড্ড অসহায় ,, ঠিক তার প্রতি মুহূর্তে নিজেকে নিজে সামলিয়ে উঠে মনকে এটা বুঝাতে হয় যে ” পরিবার টা আমারই ,, এর শিকল ধরে আমাকে টেনে নিয়ে যেতেই হবে ,,”

     

    _________________________

     

    বিকেল ৪ টা ,, মেম্বারদের বাড়ির পিছনের বাগান ,, বাগানের বসার যায়গাটায় বসে রয়েছে টুটুল আর নাসিম ,, বিকেলে বাসায় সবাই রেস্ট নিচ্ছে কিংবা ঘুমালেও তারা দুজন এখানে ,, টুটুল সিগারেট টানছে ,, বেশ দামী সিগারেট,, নাসিম বাগানের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে,, টুটুল বলে উঠে ,,

    – বুঝলি নাসিম ,, সামনের ইলেকশনে মেম্বার চাচারেই টিকতে হইবো ,, মেম্বার চাচার টিকা মানেই আমাগো লাভ আর লাভ ,, হা হা হা ,,(বলেই সিগারেটে টান দেয় টুটুল)

    – ইলেকশনে চাচার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো এমন কোন লোক ই নাই গেরামে ,, আর ঐদিকে ইসহাক সাহেবের পোলাও তো অসুস্থ,, গ্রামে একের পর এক লাশ পাওয়া যাইতাছে ,, মুন্ডুহীন লাশ, সব মিলায়া পরিস্থিতি তেমন একটা সুবিধার না ইসহাক সাহেবের লাইগা ,, 

    – হ ,, খারাপ কস নাই,, মুন্ডু হীন লাশ ,, হা হা হা হা,,

    – গুরু আপনি হাসতাছেন ,, ইসস সেই লোকগুলারে কী কষ্ট ডাই না দিয়া মারলো,, এমন মৃত্যু ভাবলেও শরীরে কাঁটা দেয় ,, 

    – ডরাইস না ডরাইস না ,, টুটুলের লগে চলস তুই ,, এইসব ডরাইলে কী হইবো ,, হ্যা ,, হা হা হা হা,,(আবার সিগারেট টানতে থাকে টুটুল)

    – আমি বুঝিনা ,, আপনি হাসতাছেন এতো গুলা মৃত্যুর খবর নিয়া ,, আমার তো ডর করে ,, না জানি কহন আমারেই ঐ খুনি মাইরা লায় ,, 

    – মারবোনা মারবোনা ,, চিন্তা করিস না ,, তয় এই টুটুল যেই মিশনে নামছে , এই মিশনে টুটুল রে সফল হইতেই হইবো ,,

    – কোন মিশন গুরু,,

    – তুই এডি বুঝবিনা ,, আমি গেলাম ,, আইজ আরেকটা দাও মারতে হইবো ,, কঠিন দাও ,, হা হা হা ,,

     

    (হাসতে হাসতে উঠে চলে যেতে থাকে টুটুল,, নাসিম টুটুলের যাওয়ার দিকে এক অমলীন চাহনিতে চেয়ে থাকে ,, এবং তার পরমূহূর্তেই নাসিমের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে এক রহস্যময় হাসি)

     

    _________________________

     

    – আসবো স্যার ,,

    – আরে দোস্ত তুই ,, আয় ,,আসার সময় আবার পারমিশন নেওয়া লাগে নাকি হ্যা ,, তুইও না,,

     

    শাহারিয়া এসে রিয়াদের টেবিলের সামনের চেয়ার টায় বসে ,, বলতে থাকে ,,

    – হমম ,, তুই গ্রামের ওসি বলে কথা ,, পারমিশন তো নেওয়াই লাগে,,

    – হইছে রাখ তোর মশকরা ,, নিজে এতো বড় পদে চাকরি করে আমার মতো একটা ছোট খাটো অফিসারের কাছ থেকে পারমিশন চাইতে আসে ,, আচ্ছা শোন ,, আহাদের ফরেনসিক রিপোর্ট চলে আসছে ,,

    – কই ,, দে ,

     

    রিয়াদ তার টেবিলের বাম কোণ হতে একটা ফাইল বের করে তা শাহারিয়ার দিকে এগিয়ে দেয় ,, শাহারিয়া ফাইল টা খুলে পরতে থাকে ,, তার পরার মাঝেই রিয়াদ বলতে থাকে ,,

    – বুজছিস ,, আহাদের বডিতে কিন্তু আগের গুলোর মতো ওতো আঘাত করা হয়নি,, সিম্পল ভাবেই মারছে বলা যায় ,, বডি থেকে মাথাটা আলাদা করার পর শরীরে কয়েকটা ধারালো জিনিস দিয়ে কোপ ,, এই ,,,,,,

    – আগের ডেড বডি গুলোর ফাইল গুলো দে দেখি ,,

     

    রিয়াদ তার টেবিলের ডান পাশ হতে দুইটা ফাইল বের করে শাহারিয়ার দিকে এগিয়ে দেয় ,, শাহারিয়া আহাদের ফাইল টা পাশ কাটিয়ে রেখে রিয়া , আর নাদিয়ার ডেড বডির ফাইল গুলো হাতে নেয় ,, পরতে থাকে মন দিয়ে,, রিয়াদ আবার বলতে থাকে ,,

    – এদের দুইজনকে আবার কিন্তু একদম সেইম টু সেইম পদ্ধতিতে মারছে ,, হাতের কব্জি কাটা , শরীরে গরম কিছু ঠেলে দেওয়া,, হয়তো ফুটন্ত পানি , তারপর গরম লোহা দিয়ে সারা শরীরে ফুটো করা , আর শেষ মূহুর্তে মুন্ডু টা আলাদা করে দেওয়া,, দুইজনের মারার পদ্ধতি হুবহু সেইম ,,

    – একটা জিনিসে পার্থক্য আছে ,,

    – একটা জিনিস,,? কোন জিনিস,,? আমি তো দেখলাম সব একই ,, 

    – নাদিয়া কে রেপ করা হইছে কিন্তু রিয়া কে রেপ করা হয়নি,, 

    – কী বলিস,, কোথায় দেখলি তুই ,,

    – এই যে ফাইলের এখান টায় লেখা ,,

    (বলেই শাহারিয়া ফাইলটাকে রিয়াদের দিকে ঘুড়িয়ে ফাইলের ঐ যায়গা টাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ,, রিয়াদ এগিয়ে এসে দেখে আসলেই নাদিয়া কে রেপ করার কথা লেখা ,, তার দেহে ধর্ষণের আলামত ও পাওয়া গেছে ,, রিয়াদ অবাক হয়ে যায় ,, শাহারিয়া আবার ফাইল টাকে ঘুড়িয়ে নিজের সামনে রেখে বলে ,,

    – নাদিয়া আর রিয়া ভালো বন্ধু ছিলো তাই না ? 

    – হ্যা ছিলো ,, তবে ,,ঐ খুনির মূল উদ্দেশ্য কী তাদের ধর্ষণ করা ছিলো ? 

    – না মোটেও না ,, ধর্ষণ করা যদি মেইন মোটিভ হয়ে থাকতো তাইলে রিয়াকেও ধর্ষণ করতো ,, কিন্তু তার দেহে কোন আলামত নাই,, উল্টো লেখা আছে রিয়ার প্রাইভেট পার্টে বিন্দু মাত্র আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নি,, যা আঘাত করছে সব খুনিটা রিয়ার কোমর থেকে গলা পর্যন্ত করছে ,, আর নাদিয়ার ক্ষেত্রেও তাই ,, তবে নাদিয়ার ধর্ষনের আলামত পাওয়া গেছে আর প্রাইভেট  পার্ট খুব খারাপ ভাবে আঘাত করা হইছে ,, এইটুকুই পার্থক্য,,

    – তবে কী খুনি দুইজন? একজন আঘাত করছিলো আরেকজন ধর্ষণের সাথে যুক্ত ছিলো ? 

    – এটাও একটা বড় প্রশ্ন ,, আচ্ছা ওয়েট ,, তুই ফরেনসিক ল্যাবে কল দিয়ে নাদিয়ার লাশ থেকে স্পার্মের (পুরুষ বির্য) এর ডিএনএ স্যাম্পল নিতে বল ,, আর আমাদের খুনির রেকর্ড লিস্টে থাকা সকল খুনি দাগি আসামীদের ডিএনএ র সাথে ম্যাচ করে দেখ ,, কী ফল আসতেছে ,,  

    – আচ্ছা ঠিক আছে আমি বলে দিবো নে,, তবে আরেকটা বিষয় আমার মাথায় আজ ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক,, 

    – কি ,,?

    – দেখ ,, পরপর ৩ দিনে ৩ টা লাশ ,, মানে খুন গুলো কিন্তু খুনি বিরতিহীন ভাবে করছে ,,(একটু থেমে ধীর গলায়) তো সেই হিসাবে কী আজ রা,,,,,,,,,,

     

    কথার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী মেয়ে (১৮-১৯) হঠাৎ থানায় রিয়াদের কক্ষে ঢুকে পড়ে ,, তার পরনে বোরকা ,, মুখে মাস্ক নেই,, মাথায় হিজাব দেওয়া,, সে এসেই বলতে থাকে ,,

     

    – আমার ভাইয়া কোথায়,, আমার ভাইয়াকে আমি দেখবো ,, ভাইয়া ,, ভাইয়া,,

    – আরে আরে , আপনি শান্ত হোন ,, কে আপনার ভাইয়া ,, আর আপনার পরিচয়,,

    – আমি আরোহী ,, আহাদের ছোট বোন ,, আমি দিনাজপুর কলেছে পড়ি , সেখানের হোস্টেলেই থাকতাম ,, কাল রাতে ভাইয়ার নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসে ,, মেসেজে লেখা ছিলো “আরোহী,, তুই বাসায় আয় ,, তোর জন্য এক বড় সারপ্রাইজ রেখেছি আমি,,” আমি মেসেজ টা দেখেই ভাইয়াকে কল দেই ,, কারণ ভাইয়া আমাকে কখনো মেসেজ করতো না,, আর মেসেজ টাও এসেছিলো রাত ৩-৪ টার দিকে ,, এতো রাতে ভাইয়ার মেসেজ আমাকে অবাক করেছিলো ,, ভাইয়াকে সকালে ফোন দেওয়াতে ফোন অফ পাই ,, আমার মনে এই বিষয়ে কিছুটা খটকা লাগায় আমি আজ সকালেই বাসা চলে আসি ,, কিন্তু আসার পর বাসায় গিয়ে দেখি ভাইয়া বাসায় নেই,, ভাইয়ার অটো টাও‌ নেই,, ভাইয়া এখানে ৩ মাস যাবত একলাই থাকতো ,, আমি আশেপাশের প্রতিবেশীদের জিজ্ঞেস ও করেছিলাম ,, তারা আমাকে কোন উত্তর ই দেয় না,, আমি আজ সারাদিন হন্য হয়ে ভাইয়াকে খুঁজে বেড়িয়েছি ,, কোথাও পাইনি ,, আমার ভাইয়া কোথায়,, আপনারে আমার ভাইয়াকে খুঁজে দিন ,, প্লিজ আপনারাও চুপ হয়ে থাকবেন না,, আমার এই দুনিয়ায় ভাইয়া ছাড়া আর কেউ নেই ,, মা জন্মের সময় মারা গিয়েছে,, বাবা আমাদের ছেড়ে অন্য যায়গায় বিয়ে করে চলে গিয়েছে ,, ছোট বেলা থেকে আমার ভাইয়াই আমাকে মানুষ করেছে ,, ভাইয়াকে ছাড়া আমি বাঁচবো না,, আমার ভাইয়াকে খুঁজে দিন প্লিজ ,, প্লিজ,, (বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে আরোহী )

     

    রিয়াদ আর শাহারিয়া , আরোহীর কথা শুনে একেঅপরের দিকে তাকায় ,, আহাদের মৃত্যুর সংবাদ কীভাবে তাকে দিবে তারা ,, সে যে সহ্য করতে পারবে না ,, রিয়াদ শাহারিয়াকে ইশারায় বলে “বিষয় টা কী জানানো ঠিক হবে ?” ,, শাহারিয়া মাথা নাড়িয়ে না সূচক ইঙ্গিত দেয় ,,

    তখনই রিয়াদ আরোহীর দিকে ফিরে স্বাভাবিক স্বরে বলতে থাকে ,,

    – আচ্ছা আপনি একটু শান্ত হোন ,, আমরা আপনার ভাইয়াকে খুঁজে বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো , আপনি ধৈর্য হারা হবেন না,(বলেই এক হতাশা মিশ্রিত চেহারা নিয়ে রিয়াদ শাহারিয়ার দিকে তাকায় তারপর আবার আরোহীর দিকে তাকিয়ে) আপনি এক কাজ করুন , একটা সাধারণ ডায়েরি করে যান , আমরা আপনার ভাইয়াকে ঠিক আপনার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ায় জন্য আমাদের সবটুকু চেষ্টা করবো ,,

     

    আরোহী কিছুটা শান্ত হয় ,, চুপচাপ হয় ,,তার গাল বেয়ে ঘাম পড়ছে ,, কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর মুখ ফুটে সে বলে উঠে ,,

    – আমাকে কী এক গ্লাস পানি দেওয়া যাবে ,,

    – হ্যা অবশ্যই ,, কেন নয় ,, এই নয়ন ,, এক গ্লাস পানি দিয়ে যাও ,,

     

    নয়ন এসে এক গ্লাস পানি দিয়ে যায় ,, আরোহী পানি টা নিয়ে এক ঢোকে খেয়ে ফেলে,, তাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে সে খুব ক্লান্ত,, সারাদিন হয়রান হয়ে ভাইকে খুঁজেছে সে ,, শাহারিয়া রিয়াদ কে ডায়েরির কথাটা উঠিয়ে নিতে বলে ,, রিয়াদও শাহারিয়াকে ইশারায় আশ্বস্ত করে ,, তারপর আরোহীর দিকে ফিরে ধীর গলায় বলে  ,, 

    – আচ্ছা আপনাকে তো অনেক ক্লান্ত দেখা যাচ্ছে ,, আপনি রেষ্ট নিন বাসা গিয়ে,, সাধারণ ডায়েরি টা করা লাগবে না ,, আমরা আপনার ভাইয়ের সন্ধানে বের হচ্ছি ,,

    – ডায়েরি করা লাগবেনা ,, ? (উৎসুক চোখে রিয়াদের দিকে তাকায় আরোহী)

    – না ,, আপনি এখন গিয়ে রেষ্ট নিন,, সারাদিন ভাইকে খোঁজাখুঁজি করে অনেক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন ,, এখন আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন ,, 

    – আ,আচ্ছা ঠিক আছে,, স্যার ,, আমি কিন্তু আমার ভাইয়ার আশায় বসে থাকবো ,, ভাইয়ার মুখ টা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো ,, ভাইয়াকে পেলে বলবেন আমি তার উপর অনেক রাগ করেছি,, ও কেন এমন করে আমার লুকোচুরি খেলছে ,, ভাইয়াকে পেলে আমি অনেক বকবো ,, অনেক,, (চোখের পানি মুছতে মুছতে ছোট বাচ্চার মতো বায়না ধরে আরোহী বলে)

     

    রিয়াদ আর শাহারিয়ার বুকে যেনো এক নিদারুণ কষ্টের অনুভূতি জেগে উঠে,, বোন টা তার ভাইকে কতটা ভালোবাসে , এতো বড় হয়ে যাওয়ার পরও তার ভাইকে হারিয়ে কষ্টে বাচ্চার মতো অভিমান করেছে , রিয়াদ শাহারিয়ার থেকে মুখ নামিয়ে নেয় ,, আরোহীকে বলতে থাকে ,,

    – আচ্ছা আজ বাসায় তো তুমি একলাই তাই না, তুমি চাইলে আজ রাত আমার কিংবা শাহারিয়ার বাসায় থাকতে পারো , যদি তোমার মত থাকে আরকি ,,

    – না, না,, আমি বাসাতেই থাকবো ,, ভাইয়া যদি রাতে বাসা এসে আমায় খুঁজে তখন ,,ভাইয়া আমাকে না পেলে অনেক কষ্ট পাবে, আমি বাসাতেই থাকবো ,,

    – আচ্ছা ঠিক আছে , তুমি তাইলে বাসায় যাও ,, আমরা দেখছি বিষয় টা ,,

    – আচ্ছা স্যার ,, একটু তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করবেন আমার ভাইয়াকে,, আসসালামুয়ালাইকুম,,

    – ওয়ালাইকুমুস সালাম,,

     

    আরোহী রিয়াদের কক্ষ থেকে বের হয়ে চলে যায় ,,

     

    রিয়াদ আর শাহারিয়া একে অপরের দিকে তাকায়,, রিয়াদ বলে ,,

    – ওকে বলে দিতাম ওর ভাই আর নেই ,, ও তো এখন আশায় বুক বাধবে ,, 

    – কিন্তু ওর অবস্থা টা একবার দেখছিলি ,, সারাদিন ভাইকে খুঁজে হয়রান ,, ভাইকে না পেয়ে ১৮-১৯ বয়সী মেয়েটা ১০-১১ বছর বয়সী বাচ্চা দের মতো আচরণ করছে ,, তোর কী মনে হয় এই অবস্থায় ওর ভাইয়ের মৃত্যুর খবর টা ও নিতে পারতো ,, !

    – তাও ঠিক বলেছিস ,, একদম কাহিল হয়ে গেছে ও ,, ওর চেহারার ক্নান্তির ছাপ স্পষ্ট,, ওকে উচিত ছিলো আমাদের বাসাতেই রেখে দেওয়া,, এখন গ্রামের যে পরিস্থিতি,, এই অবস্থায় ফাঁকা বাসায় একলা একটা মেয়ে ,, ওকে রাখার জন্য আমাদের আরো জোর করা উচিত ছিলো ,, 

    – আমারো ভয় হচ্ছে ,,(একটু থেমে) আচ্ছা তুই দাঁড়া ,, আমি ওকে গিয়ে নিয়ে আসছি ,, বুঝিয়ে বললে ও নিশ্চয়ই বুঝবে আমার কথা গুলো ,,(চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে) ও হয়তো এইটুকু সময়ের মধ্যে বেশি দূর যেতে পারেনি ,, 

    – আচ্ছা যা ,, ওকে নিয়েই ফিরিস কিন্তু,, 

    – আচ্ছা,,

    (বলেই শাহারিয়া পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়ে যায় ,, 

    এদিকে আরোহী মেইন রোডের এদিকে চলে এসেছে,, সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে ,, চারিদিকে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে,, ওর হাতে একটা ছোট্ট পারস ব্যাগ ,, ও রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে ,, এখন ওর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে আগের থেকে এখন ও কিছুটা স্বাভাবিক ,, হঠাৎ একটা অটোরিকশা এসে তার পাশে দাঁড়ায়,, আরোহী ও হঠাৎ অটোরিকশার আগমন দেখে দাঁড়িয়ে যায় ,, ভাবতে থাকে এটা নিশ্চয়ই ওর ভাই আহাদ হবে ,, হঠাৎ সেই অটোরিকশার ভিতর থেকে এক আগন্তুক লোক বেড়িয়ে আসে,, লোকটার মুখে গামছা পেঁচানো,, আরোহী কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটা একটা রুমাল তার মুখে চেপে ধরে অটোরিকশা ভিতরে উঠিয়ে নেয় ,, সে লোকটার সাথে ধস্তাধস্তিতে আরোহীর হাতে থাকা হ্যান্ড পার্স টা সেখানেই রাস্তায় পরে যায় ,, আরোহী অটোরিকশার পিছনের গ্লাসের জানালা উপর হাত দিয়ে সাহায্যের জন্য আকুতি করছিলো ,, কিন্তু সেসময় আশেপাশে কোন লোকজনের উপস্থিতি ছিলো না,, অটোরিকশাটা চলতে শুরু করে এবং দেখতে দেখতে রাস্তায় চলা অজস্র গাড়ির মধ্যে অটোরিকশাটা মিলিয়ে যায় ,, 

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ১২

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ১৩

    লেখক:: মির্জা সাহারিয়া

     

    আরোহী কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটা একটা রুমাল তার মুখে চেপে ধরে অটোরিকশা ভিতরে উঠিয়ে নেয় ,, সে লোকটার সাথে ধস্তাধস্তিতে আরোহীর হাতে থাকা হ্যান্ড পার্স টা সেখানেই রাস্তায় পরে যায় ,, আরোহী অটোরিকশার পিছনের গ্লাসের জানালা উপর হাত দিয়ে সাহায্যের জন্য আকুতি করছিলো ,, কিন্তু সেসময় আশেপাশে কোন লোকজনের উপস্থিতি ছিলো না,, অটোরিকশাটা চলতে শুরু করে এবং দেখতে দেখতে রাস্তায় চলা অজস্র গাড়ির মধ্যে অটোরিকশাটা মিলিয়ে যায় ,, 

     

    _________________________

     

    সন্ধ্যার আকাশে দেখা মিলেছে গৌধুলির,, পাখিরা তাদের নিড়ে ফিরে যাচ্ছে ,, মেম্বারদের বাসার বারান্দার দরজার সামনে বসে পেয়ারা মাখা খাচ্ছে ফুলমতি ,, আর দেখছে আকাশের হলদে আভা মিশ্রিত গৌধুলি ,, নাসিম মেম্বারদের বাসায় প্রবেশ করে ,, করেই দেখে বারান্দার দরজার সামনে ফুলমতি বসে আছে ,, সে ফিরে চলে যেতে চায় , কিন্তু কী একটা মনে করে সে আর যায় না,, সে ফুলমতির সামনে হেঁটে এসে দাঁড়ায়,, বলে ,, 

     

    – চাচা কী বাড়িত আছে ,, 

    ফুলমতি সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নাসিম এসেছে ,, ফুলমতি নাসিমের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে থ হয়ে ,, নাসিম ফুলমতি সামনে হাতের ইশারা করে বলে ,, 

    – ফুলমতি ,, ফুলমতি ,,,,,, চাচা কী বাড়িত আছে ,, একটু দরকার আছিলো ,, 

     

    ফু্লমতির এবার ঘোর ভাঙে ,, ফুলমতি বলে ,,

    – হ্যা মানে না ,, চাচা বাসায় নাই,, 

    – ওহহ ,,, আচ্ছা তাইলে আমি যাই ,, চাচা মনে হয় গন্জে গেছে ,, 

     

    নাসিম ফিরে চলে যেতে উদ্যত হয় তখনি ফুলমতি পিছন ডেকে বলে ,, 

    – চাচা একটু দক্ষিণ পাড়ার দিকে গেছে মনে হয়,,(একটু থেমে) আপনি বসেন চাচা চলে আসবে ,,

     

    নাসিম থেমে যায় ,, পিছনে ফিরে বলে ,,

    – চইলা আইবো?

    – হ্যা চলে আসবে ,, আসেন বসেন ,, পেয়ারা খান ,, 

    – না না ঠিক আছে ,, আমি এইহানেই খাড়ায়া অপেক্ষা করতাছি ,,

    – আরে না,, সমস্যা নাই,,, আসেন তো ,, বসেন এখানে,, (তার পাশে বসার জন্য হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে বলে)

     

    নাসিম আস্তে আস্তে চলে আসে ফুলমতির কাছে ,, মনে তার ভয় ,, সে মেয়ে মানুষ থেকে সবসময় দূরে থাকে কিন্তু এখানে ফুলমতির কথাটা সে ফেলতেও পারছেনা কেন জানি,, সে এসে ফুলমতির পাশে বসে ,, ফুলমতি হাতে পেয়ারার বাটি ,, সে বাটিটা নাসিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ,,

    – নেন পেয়ারা খান ,, আমি মাখিয়েছি ,, অনেক ঝাল ,, সাথে মজাও ,, 

    – আ,আমার হাত তো অপরিস্কার ,, কীভাবে নিবো ,, 

    – আচ্ছা দাঁড়ান আমিই আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি ,, হা করেন ,, 

     

    নাসিম এক পলক দৃষ্টিতে ফুলমতির দিকে তাকিয়ে থাকে ,, ফুলমতি তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিতে চেয়েছে,,এটা তার কাছে স্বপ্নের মতন , ফুলমতি একটা পেয়ারা ফালি উঠিয়ে নাসিমের মুখের সামনে ধরে,, নাসিম এখনো ফুলমতির দিকে তাকিয়েই আছে ,, একদম স্তব্ধ হয়ে,, ফু্লমতি বলে ,, “হা করেন ,,” নাসিম তার কথায় হা করে ,, এবং ফুলমতি তাকে খাইয়ে দেয় ,, নাসিম মনে মনে ভাবছে,, “আজ পর্যন্ত কেউ এভাবে তাকে খাইয়ে দেয়নি ,, ফুলমতি আসলেই অনেক ভালো ,, অনেক,, ” 

    – কী ভাবছেন ,, মজা হয়নি পেয়ারা গুলো,, 

    (ঘোর থেকে বের হয়ে নাসিম হকচকিয়ে উত্তর দেয় ,,,

    – না না হয়েছে ,, অনেক মজা হয়েছে ,, 

    – আচ্ছা নিন আরেকটা,, (ফুলমতি আরেকটা মাখা পেয়ারার ফালি উঠিয়ে নাসিম কে খাইয়ে দেয় ,, নাসিম ও এক পলকে ফুলমতির দিকে তাকিয়ে আছে ,, আর খাচ্ছে ,, ফু্লমতি সামনে আকাশ পানে চায় ,, বলতে থাকে ,,

    – আজকের আবহাওয়াটা অনেক সুন্দর তাই না,, এরকম পরন্ত সন্ধ্যৈ আমার বেশ পছন্দের,,(একটু থেমে) আমার অনেক ইচ্ছে ,, দিনাজপুরের মহারাজা দিঘী দেখতে যাওয়ার ,, পার্কে ঘুরতে যাওয়ার ,, কিন্তু কেউ ই নেই আমাকে নিয়ে যাওয়ার ,, কাজের মেয়ে তো ,, তাই স্বপ্ন আর সত্যি হয়নি ,,

    – আমি যদি তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে চাই ,, যাবে আমার সাথে ,, ? 

    – (নাসিমের দিকে ফিরে) সত্যি তুমি নিয়ে যাবে,,(বলেই নাসিম কে জড়িয়ে ধরে ফুল ,,) আমি অবশ্যই যাবো তোমার সাথে ,, কবে যাচ্ছি আমরা ,, 

     

    এদিকে ফুলমতির এমন হঠাৎ জড়িয়ে ধরাতে নাসিম হয়ে গেছে থ ,, সে যেন পেলো এক প্রিয় মানুষের ছোঁয়া,, সে একদম মুর্তির মতো হয়ে গিয়েছে ,, ফুলমতি তাকে ছেড়ে দিয়ে আবার বলে,,

    – কী হলো কথা বলছোনা কেন ,, কবে যাবো আমরা ,, ( অমনি নাসিমের ঘোর ভাঙে,, নাসিম যেন হারিয়ে গিয়েছিল এক ডুবন্ত সাগরে,, সে বলে ,,

    – কাল ই ,, 

    – সত্যি,,? তুমি অনেক ভালো ,, (বলেই আরেকবার তাকে জড়িয়ে ধরে ফুল ,, নাসিম এবার আবার থ হয়ে যায় ,, সে আস্তে আস্তে করে হাত গুলো উঠিয়ে ফুলমতিকেও জড়িয়ে ধরে ,, ফুলমতি কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দিয়ে বলে ,, 

    – চাচা আসার সময় হয়ে গেছে,, আমি এখন গেলাম ,, পরে তোমার সাথে কথা বলবো ,, আচ্ছা,,,, !

    নাসিম কিছুই বলতে পারে না ,, শুধু মাথা নাড়িয়ে  হ্যা সূচক ইঙ্গিত দেয় ,, এই এক পরশ কাছে আসাটা যেন নাসিমের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে ,, সে তার ডান হাত যেটা ফুল ধরেছিলো সেটা উঠিয়ে তার গালের সাথে লাগিয়ে রেখে ফুলমতির কথা ভাবতে থাকে ,, তখনই পরমূহূর্তে সে ঘোর থেকে বের হয়ে বলতে থাকে ,, ” না না ,, সম্পর্কে জড়ানো যাবেনা ,, সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতে হবে যতটা সম্ভব,, একদমই সম্পর্কে জড়ানো যাবে না ,,” বলেই সে উঠে হনহন করে চলে যেতে থাকে বাসা থেকে ,,

     

    _________________________

     

    শাহারিয়া রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ,, চারপাশে ভালোভাবে দেখছে ,, আরোহীকে খুঁজছে সে ,, অন্ধকার একদম ভালো ভাবেই নেমে গিয়েছে,, রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট গুলোও জ্বলে উঠেছে ,, শাহারিয়া আশেপাশে ঘুরে ফিরে তাকাচ্ছে,, সে মনে মনে ভাবছে ,”এতো তাড়াতাড়ি মেয়েটা কোথায় চলে গেলো ,, বের হওয়ার তো হয়েছেই ৫-৬ মিনিটের মতো ,, ” এসব ভাবতে ভাবতে শাহারিয়া রাস্তার পাশ ধরে যেতে থাকে ,, হঠাৎ কোন কিছুর উপরে তার পা পড়ে ,, সাথে সাথেই তার পা টা মচকে যায় ,, সে রাস্তাতেই পরে যায় ,, পা য়ে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে সে ,, মনে মনে বলে ,, “রাস্তায় কীসব ফেলে রাখে রে বাপ ,, পা টা মনে হয় গেলো ,, ” সে বসে থাকা অবস্থাতেই পকেটে থেকে মোবাইল বের করে আলো জ্বালিয়ে দেখতে থাকে যে সে কীসের উপর পা ফেলে তার পা মচকে গেছে,, সে দেখে একটা হ্যান্ড পার্স, মেয়েদের,, তার পায়ের ‌নিচে পড়াতে ব্যাগ টার মাঝখানে একটু দেবে গেছে ,, সে ব্যাগ টা হাতে নিয়ে দেখে ,, 

    – আরে ,, এটা তো মনে হয় আরোহীর হাতে দেখছিলাম,, হ্যা হ্যা মনে পরছে, এটা আরোহীর ই  ,, কিন্তু এই ব্যাগটা এভাবে রাস্তার মাঝে পরে আছে কেন ,, 

    এসব ভাবতে ভাবতে সে উঠৈ দাঁড়ায়,, তখনই পরমূহূর্তে তার মনে উদয় হয়, “আচ্ছা ও কী খুনির কব্জায় পরেছে ,, ? ও মাই গড ,, শিট ,, ওকে আমাদের একা ছাড়া একদমই উচিত হয়নি ,, ধুরর ,, এখন কী হবে ,, ? ওকে আমাদের খুঁজতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ” শাহারিয়া ফোন টা বের করে তার টিম কে কল দেয় ,, দিয়ে তাদের দ্রুত আসতে বলে ,, 

     

    __________________________

     

    সন্ধ্যা ৭ টা ,,দিথী তার রুমে পড়ার টেবিলে বসে পরের দিনের পরীক্ষার প্রিপারেশন নিচ্ছে ,, তার রুমে সে একলাই থাকে ,, রুমের মাঝখানে একটা বিছানা , পাশে ছোট্ট পড়ার টেবিল, তার পাশে একটা ডেসিন টেবিল,, রুম টাকে নিজের মতো করে গুছিয়ে রেখেছে সে ,, বিড়াল পালা তার শখ ,, ঘরে একটা ছেলে বিড়াল সে পুষে ,, বয়স হবে ৩ মাস এর মতো ,, তার নাম রেখেছে সে আবুল,, বিড়াল টা ফ্লোরে খেলা করছে একটা লাল বল নিয়ে ,, আর দিথী তার পড়ার টেবিলে বসে পরছে ,, হঠাৎ ঘরে আসেন নাজিয়া বেগম (দিথীর সৎ মা) ,, এসে রাগান্বিত স্বরে বলেন ,, 

    – এইযে পড়ুয়া বেগম রোকেয়া সাহেবা ,, রাতে যে খাবেন রান্না বসাইছেন ,,? নাকি আমি আপনাকে কোলে করে রান্না ঘরে দিয়ে আসবো গিয়ে হ্যা ,,, ৭ টা পাড় হয়ে গেছে এখনো পড়ার টেবিলে বসে আছে ,, দুইদিন পর শশুর বাড়ি যায় চুলা খুন্তি নাড়তে হবে আর সে নাকি এখন করে পড়াশোনা,, ঢং দেখে বাচিনা বাপু,, (একটু দম নিয়ে) তাড়াতাড়ি যায় রান্না বসা নাইলে তোর কপালে কিন্তু আজকে শনি আছে ,, আমার নিবিড় নুডুলস খাবে ওর জন্য আগে নুডুলস রান্না কর যা ,,(একটু থেমে) কিরে কথা কানে যায় না ? যাআআআ (জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলেন নাজিয়া বেগম)

    দিথী তার বই বন্ধ করে বলে ,,

    – আমার কাল পরীক্ষা আছে ,, বাসায় শেফালী(কাজের মেয়ে) আছে ,, ওকে বলো গিয়ে ,, আমাকে বলতে আসছো কেন ,, 

    – শেফালীরে আমি বাড়ি পাঠায় দিছি ,, তুই রান্না করবি মানে তুই ই করবি ,, তোর পড়াশোনা ‌সব বাদ ,, আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করতেছি খাড়া ,, খুব বার বারছিস তুই ,, 

    – ঐ ৭০ বছর বয়সি বুড়া টাকে আমি বিয়া করবো ,, থুউউ ,, তুমি ভাবো কীভাবে যে আমি তোমার ঐ চাচাতো বুড়ার সাথে বিয়েতে বসবো ,, 

    – এই তুই কী বল্লি ? আমার ভাই বুড়া,,? আমার ভাই বুড়া ,, দাড়া তোরে আমি ,,তোরে আমি(আশেপাশে লাঠি জাতীয় কিছু খুঁজতে থাকেন নাজিয়া বেগম ,, হাতের সামনে কিছু না পেয়ে তিনি ঘর থেকে হনহন করে বের হয়ে চলে যান ,, ) 

     

    সামিহা এসেছে দিথীদের বাসায় ,, সে নিবিড়ের প্রাইভেট টিচার,, এই ১ সপ্তাহ হলো তিনি নিবিড়কে পরাতে আসেন ,, বয়স বেশি না,, ২২-২৩ এর মতো হবে ,, তিনি দিথীদের বাসায় ঢুকে বারান্দায় উঠে নিবিড়ের ঘরের দিকে যান ,, পড়নে একটা হালকা সবুজ,সাদা রঙের ফরমাল থ্রি পিস ,, চোখে হালকা ফ্রেমের চশমা , কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলানো ,, সে জুতো খুলে বারান্দায় উঠে,, উঠে নিবিড়ের ঘরে ঢুকে দেখেন নিবিড় তার পড়ার টেবিলের সামনে বসে বই খুলে চুপচাপ বসে আছে ,, সামিহা গিয়ে একটা চেয়ার পড়ার টেবিলের পাশে রেখে বসে ,, নিবিড় মুখ তুলে দেখে তার ম্যাডাম এসে গেছে,, সে এবার সোজা হয়ে বসে ,, সামিহা নিবিড়কে বলতে থাকে ,,

    – নিবিড় ,, কেমন আছো ,, 

    – আলহামদুলিল্লাহ ভালো ম্যাডাম,,(ধীর গলায় নিবীড় বলে)

    – হোমওয়ার্ক যেগুলো দিয়েছিলাম সেগুলো কমপ্লিট করেছো ,, ? 

    – হ্যা ম্যাডাম,, এই যে (টেবিলের কোণ থেকে দুটো খাতা নিয়ে সামিহাকে দেয় সে)

    সামিহা খাতা গুলো নিয়ে চেক করতে থাকে তার হোমওয়ার্ক,,  হোমওয়ার্ক চেক করার মাঝেই সে আড়চোখে নিবিড়ের দিকে তাকায় ,, খেয়াল করে আজ নিবিড় খুবই চুপচাপ,, সামিহা, নিবিড় কে বলে ,, 

    – আজ পড়া হয়নি বলে চুপচাপ হয়ে আছো নাকি হ্যা ,, 

    – না ম্যাডাম,, আমার সব পড়া কমপ্লিট হয়েছে,, 

    – তাইলে ,, ? অন্যকোন বিষয় নিয়ে মন খারাপ ,, ? 

    নিবিড় চুপ হয়ে থাকে ,, কোন কথাই বলেনা ,, সামিহা আবার বলে ,,

    – আমায় তোমার কাছের কেউ ভেবে শেয়ার করতে পারো ,, আমাকে ভালো বন্ধু মনে করে বলতে পারো ,,

    – না মানে ম্যাডাম ,, (থেমে) দিথী আপুর সাথে মা ঝগড়া করছে ,, 

    – দিথীর সাথে ,, ? তোমার মা ,, ? কেন ,, কোনো বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছে নাকি তাদের মধ্যে,, 

    – না ম্যাম ,, আম্মু বিনা কারণে আপুকে বকছে ,, আপুর কাল পরীক্ষা,, বাসায় কাজের আন্টি শেফালী আছেন সব রান্না করার জন্য তবুও মা শেফালীকে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন দিথী আপুকে পড়তে দিবেন না বলে ,, রাতের রান্না ত করাবেই ,, সাথে আমার নাম করে নুডুলস রান্না করে নিয়ে নিজে খাবে,, দিথী আপুর সাথে মা সবসময় লেখে থাকে ,, ঝগড়া করে ,, 

    – কেন এমনটা করে তোমার মা ,, ? 

    – মা চেয়েছিলো তার গ্রামের এক লোকের সাথে আপুর বিয়ে দিবে,, সেই লোকটার বয়স অনেক,, আর লোকটা মাদকাসক্তও ছিলো ,, আপু তাই বিয়েতে রাজি হয়নি ,, আর মা তখন থেকেই আপুর পড়ালেখার পিছনে লেগেছেন ,, যেকরেই হোক তিনি পড়াশোনা করতে দিবেন না আপুকে ,, 

     

    তখনই দিথীর রুম থেকে জোড়ে দিথীর চিৎকার শোনা যায় ,, 

    ” আমি যাচ্ছি ছোট আম্মু ,, যাচ্ছি ,, তুমি আর মেরোনা আমায় ,, আঃ,, উঃ,, আমি যাচ্ছি এখনি ,, আমায় আর মেরোনা ,, মেরোনা ,,আঃ,,, ” দিথীর কান্না মিশ্রিত চিৎকার শোনা যায় দিথীর ঘর থেকে,, নিবিড় আর সামিহাই জলদি উঠে দিথীর রুমের দিকে যেতে থাকে ,, গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নাজিয়া বেগম গরম খুন্তি দিয়ে দিকবিদিক না দেখে দিথীকে অবিরত মারতেই আছেন ,, সামিহা দৌড়ে গিয়ে নাজিয়া বেগম কে আটকায় ,, 

    – ছাড়ো আমাকে , ছাড়ো ,, আমার ভাইকে বুড়া বলিস ,, (বলেই আবার মারার জন্য তেরে আসতে থাকেন নাজিয়া বেগম ,, সামিহা তাকে আবার গিয়ে আটকিয়ে রাখেন ,,)

    – তুমি যা বলো তাই করি ,, কাল আমার পরীক্ষা,, আমি পড়া শেষ করে রান্না ঘরে যেতাম ,,(একটু থেমে) তুমি আমার কোন কথাকেও গ্রাহ্য করো না ,, 

    – এই তোর পড়ালেখার খেতা পুরি ,, তোর বই গুলা কই ,, দাড়া ,, দাড়া আজকে এগুলাই আমি আগুনে দিবো ,, 

    – আন্টি আন্টি দাড়ান ,, শান্ত হোন ,, দিথী তুমি পাশের ঘরে যাও ,,

    তখনই বাসায় আসেন অন্তর সাহেব ,, এসে ঘরের দিকে এসব কথা শুনে তিনি দিথীর ঘরের দিকে আসেন,, এসে দেখেন নাজিয়া বেগম দিথীকে মারতে উদ্যত হচ্ছেন,,

    – এইই থামো ,, কী শুরু করছো তোমরা ,, আর দিথী ,,(শীতল কন্ঠে) তোর এই অবস্থা কেন মা ,, তোর হাতে পুরে গেলো কীভাবে,, 

    – ম,মা আমাকে মারতে এসেছিলো,, (হাতের কনুই টায় আরেক হাত দিয়ে ঘষতে ঘষতে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে দিথী বলে)

    – নাজিয়া ,, এই নাজিয়া ,, তুমি আমার মায়ের উপর হাত তুলতে গেছো কেন ,, তোমার কত্ত বড় সাহস ,, তুমি ওর গায়ে হাত তুলছো কেন ,, 

    – আমার ইচ্ছা হইছে আমি মারছি ,,তুমি চুপ থাকো 

     

    অন্তর সাহেব গিয়ে থাটিয়ে একটা চড় মারেন নাজিয়া বেগমের গালে ,, মুহুর্তেই ঘরের আবহাওয়া একদম শান্ত আর নিরব হয়ে যায়,, নাজিয়া বেগম গালে হাত রেখে বলেন ,”ত,তুমি আমাকে মারলে?” সাথে সাথেই অন্তর সাহেব নাজিয়া বেগমের মুখের থুতলি চেপে ধরে দাঁতে দাঁত কড়মড়িয়ে বলেন ,, ” তোকে তো মার না এইবারি তালাক দিয়ে দিতাম ,, কিন্তু তোর ঐ শালা গুলার জন্য দিতে পারলাম না,, কিন্তু এরপর দিথীর গায়ে যদি তোরে হাত তুলতে দেখছি ,, (চোখে চোখ রেখে) তোর মাথা নেড়া করে গ্রামের সবার সামনে বেল্ট দিয়ে এমন মাইর দিবো জীবনে ভুলতে পারবিনা ,,(থুতনি ছেড়ে দিয়ে) যা এখান থেকে,, যাআআআ ” (চিৎকার দিয়ে বেড়িয়ে যেতে বলেন নাজিয়া বেগম কে ,, নাজিয়া বেগম গালে হাত দিয়ে বের হয়ে যায় ঘর থেকে,, অন্তর সাহেব ধীর পায়ে দিথীর পাশে গিয়ে দাঁড়ান ,, দাঁড়িয়ে শীতল গলায় বলেন, ” মা ,,(দিথী মুখ তুলে তাকায়) তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস ,, এই পাষান টাকে আমি চাইলেও ছাড়তে পারতেছি না,,(একটু থেমে) ইসস ,, আমার মা টাকে কীভাবে মেরেছে,,(সামিহার দিকে ফিরে) সামিহা ,, আমার ঘরে বিছানর পাশে একটা ফার্স্ট এইড বক্স আছে ,, নিয়ে আসোতো ,, (সামিহা চলে যায় আনতে ,,) এবার কলেজ পাশ করার পর তোর পছন্দ অনুযায়ী ভালো একটা যায়গায় তোকে বিয়ে দিয়ে দিবো ,, ঐ রাক্ষসীর কথায় আর যাই হোক আমি তোকে যেই সেই যায়গায় বিয়ে দিবো না ,,(একটু থেমে) তুই শুধু এখন মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যা মা আমার,, ঐ দজ্জাল ছোট টা যদি এবার আবার তোর গায়ে হাত তুলতে আসে ওর হাত কেটে গ্রামের সবার সামনে লাত্থি মারতে মারতে মেরে ফেলবো ,, এই চেয়ারম্যান অন্তর এর রাগ খুবই খারাপ রাগ ,, খুবই খারাপ,, রাগ যখন উঠবে তখন ঐ ছোট মোট দেখবে না সোজা মেরে পুতে ফেলবে,,(একটু থেমে শীতল গলায়) তুই শুয়ে রেষ্ট নে মা ,, আমি শেফালিকে ফোন দিয়ে আসতে বলছি ,, ” বলেই দিথীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘর থেকে চলে যেতে থাকেন অন্তর সাহেব,, নিবিড় ও চোখ মুছতে মুছতে চলে যায় অন্তর সাহেবের পিছন পিছন ,, দিথীর হাত ও পিঠে গরম খুন্তির আঘাতের দাগ এখন আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে,, সামিহা ঘরে আসে,, হাতে ফার্স্ট এইড বক্স (প্রাথমিক চিকিৎসা বক্স) ,,

     

     সামিহা দিথীর পুড়ে যাওয়া যায়গা গুলোতে স্যভলন লাগিয়ে দিচ্ছে ,, দিথীর অনেক জ্বালা করতেছে ,, ওর চোখে মুখে তার ভাব স্সষ্ট ,, সামিহা দিথীর পুড়ে যাওয়া যায়গা গুলো মালিশ করতে করতে বলে ,, 

    – তোমার মা এতো খারাপ কীভাবে হতে পারে ,,

    – নিজের মা না,, সৎ মা ,, 

    (সামিহা অবাক হয়ে দিথীর দিকে তাকায় ,, বলে ,,,

    – তোমার নিজের মা কোথায়,,? 

    দিথী চুপ হয়ে থাকে,, কথা বলেনা ,, 

    – আমায় নিজের আপন কেউ ভেবে শেয়ার করতে পারো ,, আমি কাউকেই বলবো না,, বন্ধূ ভাবতে পারো আমায় ,,(সামিহা দিথীকে আসশ্ত করতে থাকে ,,,দিথী বলতে শুরু করে,,,

     ” তখন আমার বয়স ৩ কী ৪ হবে ,, আমার এক জটিল রোগ হয় ,, আমাকে অনেক যায়গায় অনেক ভালো ডাক্তার দেখায় আমার বাবা-মা ,, কোন কিছুতেই কোন সুফল আসে না ,, আমার রোগ টা অনেক বেড়ে যায়,,  ডাক্তার রা আমার বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন,, তখন আমার মা আশ্রয় নেন কালোজাদুর ,, তিনি আমাদের উত্তরের যেই তালা বন্ধ ঘর টা আছে সেখানে কীসব রক্ত , মানুষের হাড় , এমনকি একটা খুলিও বলে নিয়েছিলেন তার কাজের জন্য,, তিনি অন্য জগতের মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলেন,, আমার জীবন টাকে তিনি যেকোনো কিছুর বদলে ফিরে পেতে চেয়েছিলেন,, ঐ রুমে প্রতিরাতে কিসব‌ জানি করতেন আমার মা ,, অন্য জগতের কোন কিছুকে তিনি ডাকতেন ,, সেটার সাথে যোগাযোগ করতেন ,, কথা বলতেন ,, 

     ঐদিন রাতেও মা ঐ রুমে যান ,, হঠাৎ মাঝরাতে তার আত্মচিৎকার শোনা যায় সেই রুম থেকে,, চিৎকার টা বলে এতোটাই জোড়ালো ছিলো যে রুমের গ্লাস গুলো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় ,, তার চিৎকার শুনে যখন তার রুমে সবাই যায় ,, গিয়ে দেখে রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ,, মাঝখানে একটা গোলাকার বৃত্ত ,, তারমাঝের মোমবাতির গুলো পড়ে নিভে আছে,, ঘরে কোন হাড়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি ,, এমনকি সেই মাথার খুলিটারও ,, ঠিক তার পরের দিন হঠাৎ আমি একদম সুস্থ হয়ে যাই ,, ডাক্তার রা পরীক্ষা করে বলেন যে আমার শরীরে আর কোন রোগ নেই ,,এবং তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আমার বড় কোন রোগ হয়নি,,  মায়ের হঠাৎ গায়েব হয়ে যাওয়াটা আমাকে অনেক পড়ে আমার দাদি বলেছিলো,,সেই রাতে মায়ের ঐ বদ্ধ ঘর থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়াটা আজো রহস্য হয়ে আছে ,, ঐ ঘর টা আজো আছে ,, উত্তর দিকে পরিত্যাক্ত অবস্থায়,, কেও থাকেনা এখন ঐটায় ,, আমার মায়ের কী পরিণতি হয়েছিলো সেদিন ,, তা আজও জানতে পারিনি আমি ,, মা ছাড়া এই ১৬ টা বছর আমার খুব একটা যে ভালো গিয়েছে তা নয় ,, বাবা ঐসময় গ্রামের মেম্বার ছিলেন ,, বাবা হঠাৎ একদিন বিয়ে করে ফেলেন ,,বাবা আমাকে কথা দিয়েছিলেন যে বিয়ে করবেন না,, কিন্তু হঠাৎ কেন সেই ওয়াদা ভেঙে বিয়ে করেন তা আজো অজানা,, বাবার মুখে আমি তখন থেকেই অসহায়ত্বের ছাপ দেখছি ,, আমি নিশ্চিত বাবা নিজ ইচ্ছায় পরের বিয়েটা করেন নি ,, বাবা আমাকে ৫ বছর বয়সে মামা বাড়িতে পাঠিয়ে দেন ,, আমার নানি আছে এখনো ,, তিনিই আমাকে অনেক যত্ন সহকারে দেখভাল করতেন,, বাবা সেখানে প্রতি মাসে টাকা পাঠিয়ে দিতেন যাতে আমার কোন সমস্যা না হয় থাকতে ,, আর মাসে একবার এসে দেখা করে যেতেন ,, তারপর এই দুইবছর আগে তিনি আমায় নিয়ে আসেন সেখান থেকে,, এখন এখানেই থেকে কলেজ করছি ,, আর এমন জীবন যাপন করছি,, (বলেই দিথী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

    – তোমার জীবন গল্প টা আসলেই করুণ ,,  শুনে খারাপ লাগলো ,, আসলে আমি জানতাম না কিছুই,, তোমার ঐহাত টা দেও ,, (ঐহাতে স্যাভলন লাগিয়ে দিতে থাকে সামিহা ,,) আচ্ছা তোমার এই মা কী তোমার সবসময় মারেন ,, ? 

    – না ,, আজই প্রথমবার মেরেছেন ,, আগে কখনো মারেন নি তবে মারবার হুমকি দিতেন,, তবে আজ তিনি মেরেছেন ,, আজ আমার মা বেঁচে থাকলে নিশ্চিত তাকে এর শাস্তি দিতেন ,,

     

    তখনই নাজিয়া বেগমের চিৎকার শুনতে পাই আমরা ,, চিৎকার টা রান্না ঘর থেকে আসছিলো ,, সামিহা আর দিথী বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে ছুটে যায় রান্না ঘরের দিকে ,, রান্না ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তারা ,, দেখে নাজিয়া বেগমের দুই হাত আর শরীরের উপর ফুতন্ত গরম পানির পাতিল উল্টে পড়ে  একদম পুরো শরীর ঝলসে গেছে ,, তার চিৎকারে পুরো বাড়ি যেন কাঁপছে,, পুরো ফ্লোরে গরম পানির ছড়াছড়ি,, দিথী আর সামিহা রান্না ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার এই করুণ অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যায়,,তখনই একটা ঠান্ডা শীতল হাওয়া দিথীর কানের সামনে এসে বলে যায় ,, “তোর গায়ে হাত তোলার শাস্তি আমি ওকে দিয়ে দিয়েছি”

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ১৩

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ১৪

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    – আচ্ছা তোমার এই মা কী তোমার সবসময় মারেন ,, ? 

    – না ,, আজই প্রথমবার মেরেছেন ,, আগে কখনো মারেন নি তবে মারবার হুমকি দিতেন,, তবে আজ তিনি মেরেছেন ,, আজ আমার মা বেঁচে থাকলে নিশ্চিত তাকে এর শাস্তি দিতেন ,,

     

    তখনই নাজিয়া বেগমের চিৎকার শুনতে পাই আমরা ,, চিৎকার টা রান্না ঘর থেকে আসছিলো ,, সামিহা আর দিথী বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে ছুটে যায় রান্না ঘরের দিকে ,, রান্না ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তারা ,, দেখে নাজিয়া বেগমের দুই হাত আর শরীরের উপর ফুতন্ত গরম পানির পাতিল উল্টে পড়ে  একদম পুরো শরীর ঝলসে গেছে ,, তার চিৎকারে পুরো বাড়ি যেন কাঁপছে,, পুরো ফ্লোরে গরম পানির ছড়াছড়ি,, দিথী আর সামিহা রান্না ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার এই করুণ অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যায়,,তখনই একটা ঠান্ডা শীতল হাওয়া দিথীর কানের সামনে এসে বলে যায় ,, “তোর গায়ে হাত তোলার শাস্তি আমি ওকে দিয়ে দিয়েছি”

    এবং সাথে সাথেই সেই ঠান্ডা হাওয়াটা মিলিয়ে যায় ,, দিথীর চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়,, সে সাথে সাথেই আশেপাশে ফিরে তাকাতে থাকে ,, কিন্তু না ,, আশেপাশে আর কেউ নেই ,, তার

    পাশে শুধু সামিহা দাঁড়ানো,, তখনই আকাশে বিজলী চমকিয়ে উঠে ,, আবহাওয়া যেন মুহুর্তের মধ্যেই পাল্টে গেলো ,, নাজিয়া বেগম এখনো ফ্লোরে যন্ত্রনায় চিৎকার দিচ্ছেন এবং গড়াগড়ি খাচ্ছেন ,, তার কাছে দিথী বা সামিহা কেউই যায়নি,, চারিদিকে বাতাস উঠে ,, আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছে ঝড় উঠবে ,, তখনই এক মেয়েকে আমরা একটা ছাতা হাতে করে দিথীদের বাড়ান্দার দিকে দৌড়ে আসতে দেখি ,, দিথী পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে মেয়ে টা বারান্দায় উঠে দাঁড়িয়ে ছাতাটা বন্ধ করে দরজার পাশে রাখলো এবং তাদের দিকে ফিরে তাকালো ,, মেয়েটা টা আর কেউ নয় ,, তাদের কাজের মেয়ে শেফালী,, শেফালী বারান্দায় উঠে চিৎকারে শব্দ শুনে দ্রুত রান্না ঘরের দরজার দিকে আসতে থাকে ,, এসে দেখে নাজিয়া বেগমের এই অবস্থা ,,দিথী শেফালীকে কাছে ডাকে ,, ডেকে বলে,, 

    ” উনাকে গোসল খানায় নিয়ে গিয়ে ঠান্ডা পানি ঢাল ,,” শেফালী মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত দিয়েই দৌড়ে নাজিয়া বেগমের কাছে যায় ,, তাকে ধরে উঠিয়ে দাড় করিয়ে কোনমতে গোসল খানার দিকে নিয়ে যেতে থাকে ,, দিথী আর সামিহা চলে যেতে থাকে তাদের রুমের দিকে ,, যেতে যেতে দিথীর মনে বার বার সেই কথাটাই ঘুরতে থাকে ,, হঠাৎ এমন কিছু হবে এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে ,, কী এর রহস্য,, তাহলে তার মা তার সাথেই আছেন ,, কিন্তু দিথী তার মা কে দেখতে পাচ্ছে না কেন ,, কী হতে চলেছে এরপর,, ? 

     

    __________________________

     

    রাত ৮:৩০ ,, শাহারিয়া আর নিলয় থানায় রিয়াদের কক্ষে বসে রয়েছে,, তারা আজ সকালে ঘটে যাওয়া আহাদের মৃত্যুর কেস টা নিয়ে আলোচনা করছে,, আর রিয়াদ , নিলয় , শাম্মী ওরা আরোহীকে খোঁজার জন্য গিয়েছে,, শাহারিয়া তাদের পাঠিয়েছে কারণ সে এই গ্রামে অনেক দিন ছিলো না ,, অনেক রাস্তাই তার কাছে নতুন,, শাহারিয়া বসে আছে রিয়াদের চেয়ারে ,, নিলয় তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে,, নিলয় বলে উঠে ,,

    – আচ্ছা দোস্ত ,, এই তিন দিন ধরে একের পর এক মার্ডার হচ্ছে তাই না ,, ? এই মৃত্যুর শুরু টা হয়েছে রিয়াকে দিয়ে ,, তারপর আরো দুইজন এর শিকার হলো ,,(থেমে) খুনিটা কেন এদের মারছে ,, আর মারলে একনাগাড়েই কেন মারছে ,, কোন গ্যাপ না দিয়েই ,,

    – আমারো মনে এই প্রশ্ন টা উদয় হয়েছিলো ,, কিন্তু এর উত্তর আমি খুঁজে বের করতে পারিনি ,, ঐদিকে আরিফ এখনো নিখোঁজ,, ওকে খুঁজে বের করা যায় নি ,, আবার আজ আরোহী নিখোঁজ,, কী যে হচ্ছে এসব,, 

    – আচ্ছা দোস্ত ,, খুনি টা কোন সিরিয়াল কিলার নয়তো,, ? 

    – গ্রামে সিরিয়াল কিলার এর উত্থান হবে কোত্থেকে,, না ঐসব সিরিয়ার কিলার টিলার না,, এই খুন গুলোর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে এক রহস্য,, বিরাট রহস্য,, আমাদের শুধু এই রহস্যের উপর থেকে পর্দা টা উঠিয়ে দিতে হবে ,, তাহলেই,,,,,

     

    শাহারিয়ার কথার মাঝখানেই চলে আসে রিয়াদ ,, সে আর তার সাথে দুইজন কনস্টেবল,, শাহারিয়া রিয়াদ দের কে আসতে দেখে বলে ,,

    – কীরে কোন খোঁজ পেলি ,, 

    – না রে ,, ওর বাসায় খুঁজেছি,, ওর যত আত্মীয় স্বজন ছিলো সবার বাসাতেই খোঁজ নিয়েছি ,, ও কোথাও নেই ,, 

    – ওকে আমাদের একলা ছেড়ে দেওয়াটা মোটেও উচিত হয়নি,, এখন না জানি ও কী অবস্থায় আছে ,, আচ্ছা ও যেই রাস্তার পাশে থেকে কিডনাপ হয়েছে ,, সেখানে আশেপাশে কোন সিসি ক্যামেরা নাই ? 

    – আছে ,, গ্রামীণ ব্যাংকর সামনেই ঐ রাস্তাটা ,, হয়তো ব্যাংকের কোন সিসি ক্যামেরায় কিডনাপার দেখা গিয়েছে ,, আমি ইমন আর সাম্মিদের ঐ ব্যাংকে পাঠিয়েছি ফুটেজ কালেক্ট করার জন্য,, 

    – ওহহ ,,(একটু থেমে) আচ্ছা আহাদের ফরেনসিক রিপোর্ট কই ,, আমি খুঁজলাম কিন্তু পাই নি ,, 

    – নয়নের কাছে রেখে গিয়েছিলাম,, ও মনে হয় ওর ড্রয়ারে রাখছে,, এই নয়ন,, গিয়ে রিপোর্ট গুলো নিয়ে এসো ,, 

    (নয়ন , রিয়াদের পাশ দিয়ে হেঁটে পাশের রুমে চলে যায় রিপোর্ট আনতে ,, তখনই থানায় উপস্থিত হয় ইমন আর সাম্মি ,, ইমন আর সাম্মিকে দেখে শাহারিয়া বলে উঠে ,, 

    – ফুটেজ পেয়েছিস ? 

    – হ্যা পেয়েছি ,, এইযে ,, (বলেই একটা পেন ড্রাইভ শাহারিয়ার দিকে এগিয়ে দেয় ,,শাহারিয়া পেনড্রাইভ টা নিয়ে তার পাশে থাকা নিলয় কে দেয় ,, নিলয় কম্পিউটারে ইনপুট করে ,, করেই সে আজ বিকেলের ফুটেজ খুঁজতে থাকে ,, তখন রিয়াদও পাশের ঘর থেকে চলে আসে ,, রিয়াদ  ফাইল টাকে তার পাশের টেবিলে রেখে দিয়ে কম্পিউটারের দিকে নজর দেয় ,, 

    নিলয় আজ বিকেলে ঠিক ঐসময়ের ফুটেজ চালিয়ে দেয় ,, তারা দেখতে পায় আরোহী রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে ,, হঠাৎ একটা অটোরিকশা তার পাশে এসে দাঁড়ায়,, আরোহী পিছনে ফিরে অটোরিকশাটা দেখে খুশি হয় প্রথমে,, কিন্তু তারপরই একজন মুখে গামছা পেঁচানো লোক সেই অটোরিকশা থেকে বের হয়ে আরোহীর মুখ চেপে ধরে তাকে অটোরিকশায় উঠিয়ে নিয়ে যেতে থাকে ,, শাহারিয়া তখনই বলতে থাকে ,,

    – পজ করো এখানে ,,,

    (নিলয় ভিডিওটাকে আটকায় ,,)

    – ভিডিওটাকে আরেকটু রিভার্স করে আবার চালাও ,, 

     

    নিলয় এবার যখন লোকটা আরোহীকে চেপে ধরে অটোরিকশাতে তুলছিল তখন কার যায়গাটা চালু করে ,, শাহারিয়া তখনই বলতে থাকে ,, 

    – পজ পজ ,, এখানেই পজ করো ,, 

     

    নিলয় থামিয়ে দেয় যখন লোকটা আরোহীকে ধরে টেনে অটোতে নিচ্ছিলো,, শাহারিয়া বলো ,,

    – লোকটা ফুল হাতা গেঞ্জি পরেছে ,, হাতে কোন ট্যাটুও নেই দেখছি ,, আচ্ছা প্লে করো এবার ,,

     

    নিলয় প্লে করে ভিডিওটাকে ,, এবার যখন অটোটা আরোহীকে নিয়ে চলে যেতে থাকছিলো ,, তখনই শাহারিয়া বলে ,,

    – এখানেই থামাও ,, 

     

    নিলয় ভিডিওটা পজ করে ফেলে,, শাহারিয়া অটোটার উপরে জুম করতে বলে ,, নিলয় অটোটার উপরে জুম করে ,, তারা দেখতে পায় যে অটোটার পিছনে একটা বড় রেড স্টার লাগানো ,, তবে নাম্বার প্লেট ঢেকে দেওয়া ,, শাহারিয়া বলতে থাকে ,, 

    – এইটাই হচ্ছে সূত্র,, এই রেড স্টার চিহ্ন সহ যত অটো গ্রামে আছে সব অটোর চালক কে ধরে নিয়ে এসো ,, ওদের মুখ থেকেই সব সত্য বেড় হবে ,, রিয়াদ ,,তুই তোর কনস্টেবল দের তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দে এই কাজের জন্য,, 

    রিয়াদ তখনই তার কনস্টেবলদেরকে ডেকে কাজ করে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয় ,, রিয়াদ এবার পাশের টেবিল থেকে আহাদের ফাইল টা নিয়ে শাহারিয়ার হাতে দেয় ,, বলে ,,

    – এই যে নে আহাদের ফাইল টা ,,

    – আচ্ছা তুই আহাদের ফাইল টা রাখ ,,(একটু থেমে কৌতুহলী হয়ে) আচ্ছা ঐ রকম ছন্দ সংকেত কয়টা পেয়েছিস এই পর্যন্ত ? 

    – ৩ টা,, 

    – আচ্ছা সবগুলোকে বের করে পর পর সাজা ,, 

     

    রিয়াদ সবগুলোকে বের করে পর পর সাজায় ,, সেখানে শাহারিয়া সহ তার টিমের ৪ জন আর রিয়াদ উপস্থিত রয়েছে ,, হঠাৎ রুমের কারেন্ট চলে যায়,, বাইরে আকাশ খারাপ,, ঝড় উঠবে মনে হয় ,, তাই হয়তো কারেন্ট গিয়েছে ,, রিয়াদ নয়ন কে একটা মোমবাতি আনতে বলে ,, তারপর মোমবাতি জ্বালিয়ে টেবিলের মাঝে রাখা হয় ,, এবং সবাই চেয়ার নিয়ে গোল করে টেবিলের চারপাশে বসে ,, মোমবাতির আলোয় ঘরের অনেকটাই আলোকিত হয়েছে,, বাইরে বিজলী চমকিয়ে উঠে ,,,

     

    রিয়াদ সবগুলো কাগজ কে সাজায় ,, এরপর শাহারিয়া প্রথম কাগজ টার দিকে নজর দেয় ,, কাগজ টার উপর আঙ্গুল রেখে পরতে শুরু করে ,, 

    “অতীত কখনো কখনো মানুষের জীবনে ভয়ংকর রুপে ফিরে আসে

    এতোটাই ভয়ংকর রূপে যে মানুষ তা চিন্তাও করতে পারেনা “

     

    শাহারিয়া এটা পরার পর বলে উঠে ,,

    – দেখ প্রথম লাইনটা খেয়ার কর ,, কোন অতীত এর ভয়ংকর রূপ নিয়ে ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে ,, মানে বুঝতে পারছিস ? 

    – তারমানে যারা মারা গিয়েছে তাদের কোন একটা খারাপ অতীত ছিলো ? কিন্তু তাদের সবাই তো আমার ব্যাচ ,, একসাথেই ছোট থেকে বড় হতে দেখেছি ,, ওরা অতীতে কী এমন করেছে যে তার জন্য তাদের প্রাণ টা খোয়াতে হলো ? (রিয়াদ বলে)

    – হ্যা ,, ঠিক এটাই বলেছে দ্বিতীয় লাইনে ,, যে “এতোটাই ভয়ংকর রূপে যে মানুষ তা চিন্তাও করতে পারবেনা,, ” তার মানে এটা শিওর যে অতীতের কোন কিছুর ফল তারা পাচ্ছে,, কিন্তু অতীতে কি এমন ঘটেছিলো যে তার ফলাফল এতোটা ভয়ংকর হলো ,, আর কেইবা দিচ্ছে তাদেরকে এই ফল গুলো ? অনেক প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে ,,(একটু থেমে) আচ্ছা এর পরের চিরকুটটা দেখ ,, (শাহারিয়া দ্বিতীয় চিরকুট টার উপর আঙ্গুল রেখে ঐটা পরতে শুরু করে)

    – “সে অনেক অনেকদিন আগের কথা

    এক দেশে ছিল এক রাণি আর রাজা

    রাণি মেরে ফেললো রাজাকে নিজ হাতে

    আদেও কী রাজা মরেছিলো সেই নির্জন রাতে ??” এই দেখ ,, এখানের প্রথম লাইনটাতেও অতীত কথাটা স্পষ্ট ,, বলছে “সে অনেক অনেকদিন আগের কথা ” ,, তারপর দেখ কোন এক রাণি আর রাজার কথা বলা হইছে ,, মানে রুপ কথার গল্পের মতো শুরুটা ,, কোন এক দেশে অনেকদিন আগে কোন রাণি-রাজার কথা বলা হইছে ,, তারপর দেখ ” রাণি মেরে ফেললো রাজাকে নিজ হাতে “

    – রাণি কেন রাজাকে মেরে ফেলতে যাবে ,, (রিয়াদ বলে)

    – দাড়া পরের টা দেখ ,, “আদেও কী রাজা মরেছিল সেই নির্জন রাতে ,,? “

    – শেষের লাইনটা একদম রহস্যে ডুবানো একটা ঝিলাপির মতো লাগছে ,, প্যাচ ও আছে ,, রহস্য তো আরো আছে (ইমন‌ বলে উঠে)

    – তৃতীয় লাইন টাতে হিংস্রতার প্রকাশ আর শেষের লাইনটা রহস্যে মাখা ,, মানে রাণি রাজাকে মেরে ফেললো,, কিন্তু রাজা আসলে মরেই নি,,

    – তার মানে সেই রাজাই এইসব প্রতিশোধ নিচ্ছে? 

    – কিন্তু গ্রামেই তো রাজা নেই কোন ,, গ্রামে তো কোন রাজত্ব প্রথাও চালু নেই তবে ? (নিলয় বলে)

    – আরে ,, এটা তো একটা সাহিত্যের মিশ্রনে মেলানো ছন্দ ,, (একটু থেমে হঠাৎ উৎসুক হয়ে) ওয়েট, ওয়েট,, আচ্ছা দেখ একটা বিষয়,, তুই যখন তোর সংসার করবি তখন সেই সংসারে তুই রাজা থাকবি ,, মানে তখন তুই যা আদেশ দিবি সংসারে তাই চলবে ,, ঠিক এমনি ভাবে কোন এক রাজাকে তার রাণি মেরে ফেলতে চেয়েছিল,, আর রাজা সেই রাতে মরেও মরেনি ,, 

    – কিন্তু তৃতীয় লাইন টাতে দেখ ,”রাণি মেরে ফেললো রাজাকে নিজ হাতে” মানে রাজা যে মরে গিয়েছে তা তৃতীয় লাইনে স্পষ্ট ,, (রিয়াদ বলে)

    – তাইলে চতুর্থ লাইনে “আদেও কী মরেছিলো” কথাটা ইউজ করলো কেন ,,?  উফফ এতো রহস্যে ডুবানো ছন্দ তো আমার মাথা পাগল করে দেবে ,, 

    – আচ্ছা তৃতীয় ছন্দ টা দেখ ,, (রিয়াদ বলে)

    শাহারিয়া এবার দ্বিতীয় ছন্দ টা রেখে তৃতীয় ছন্দের দিকে যায় ,, ঐটাতে আঙ্গুল দিয়ে পরতে থাকে ,,

    – “সেই বৃষ্টির রাতে নূপুর ছিলো রক্তে লাল,,

    যার প্রমাণ হয়ে এখনো রয়েছে সেই মধ্যস্ত খাল ,,

    খুঁজতে থাকো ,খুরতে থাকো ,, যদি হাতে কিছু মিলে

    ইতিহাসের পাতা ঘাঁটতে থাকো যেথায় তুমি একদিন ছিলে ,, ” এখানেও প্রথম লাইনে অতীতের ছাপ স্পষ্ট ,, খুনি বুঝাতে চেয়েছে কোন ঘটনা ,, একটা বৃষ্টির রাত ,, যেই রাতে নূপুর নামের একটা মেয়ে হয়ে ছিলো রক্তে লাল,, 

    – নুপুর টা আবার কে ,, ? (নিলয় বলে)

    – আমার মনে হচ্ছে এই নুপুর চরিত্র টার ভিতরেই সব রহস্য লুকায়িত আছে ,, আচ্ছা তারপর দেখ ,, দ্বিতীয় লাইনে বলছে ,, “যার প্রমাণ হয়ে এখনো রয়েছে সেই মধ্যস্ত খাল ,,” এই খাল টা সেই আম বাগানের খাল টা নয়তো ,, ? 

    – আরে হ্যা হ্যা ,, হতে পারে ,, কারণ সব গুলো লাশ আমরা ঐ খাল টাতেই পেয়েছি ,, আর কোথাও কোন লাশের চিহ্ন নেই ঐ খাল টা ছাড়া ,, (রিয়াদ বলে)

    – তার মানে এটা ধরে নে নিশ্চিত যে ছন্দে কথিত খাল টা ঐ আম বাগানের টাই হবে ,, এখন দেখ এখানে বলছে খাল টা প্রমাণ হয়ে আছে ,, মানে খাল টা ঐ রক্তে ভেজা নুপুরের প্রমাণ হয়ে এখনো রয়েছে ,, 

    – আচ্ছা খাল টা কত পুরোনো ,,(নিলয় বলে)

    – এই খাল টা অনেক দিনের ই পুরোনো বলা যায় ,, আম বাগান টা যখন হয় তখন কার ই এই খাল টা ,, আর আম বাগান টা হয়েছেও অনেক আগে প্রায় ৩০-৪০ বছর তো হবেই,, দেখো নাই আম গাছ গুলো কতো মোটা মোটা ,, (রিয়াদ বলে)

    – আচ্ছা দেখ পরের লাইনটা ,, ” খুঁজতে থাকো খুরতে থাকো যদি হাতে কিছু মিলে ,, ” এখানে আমাদের কোন কিছু খুঁজতে বলা হইছে ,, 

    – কিন্তু কোথায় খুজবো,,? (ইমন বলে)

    – আরে এখানে খাল টার কথা যেহেতু চলছে সেহেতূ খাল টাতেই কোন কিছু খুঁজতে বলছে হয়তো ,, আবার খুরতেও বলা হইছে ,, মানে খাল টাতে আমরা খোরাখুরি করবো ? কিন্তু খালে তো এখন পানি ,, আর পানি মধ্যে খোড়াখুড়ি কেমনে কী তখন ,,? 

    – কী যে বাবা ,, আমি তো কিছুই বুজছিনা ,, নুপুর একটা বৃষ্টির রাতে রক্তে ভেজা ছিলো ,, যার প্রমাণ হিসেবে আছে ঐ খাল টা ,, আর খুঁজতে আর খুরতে বলছে ঐ খাল টায় ,, আচ্ছা তাইলে আমরা কাল খাল টা থেকে পানি সেচে ফেলে ঐ খালটাকে পানি শুন্যা করে খোড়াখুড়ি করতে পারি ,, আর খাল টাও অতোটা গভীর নয় ,, এই ৯-১০ ফুটের মতোই গভীর হবে ,, (রিয়াদ বলে)

    – আচ্ছা পরের লাইন টা দেখ ,, “ইতিহাসের পাতা ঘাটতে থাকো যেথায় তুমি একদিন ছিলে ,, ” এখানে কার থাকার কথা বলা হইতেছে ,, ? আচ্ছা এই কাগজ টা আগে কে পেয়েছে,, ?

    – আমি (রিয়াদ বলে)

    – তারমানে তোকেই ইঙ্গিত করছে হয়তো ,, কারণ খুনিটা জানতো যে তুই ই কাগজ টাকে আগে হাতে পাবি,, 

    – কিন্তু আমি কোথায় ছিলাম ,, আর কোন ইতিহাস,, ?(রিয়াদ বলে)

    – এটাই তো কথা ,, তোর কোন একটা সময়ের কথা বলা হইছে যেটার সাথে এই খুন গুলো যুক্ত ,, কিন্তু একটা পুলিশের অতীত ইতিহাসের সাথে কীভাবে একটা ভিন্ন সময়ের সিরিয়াল মার্ডার এর যোগ সূত্র থাকতে পারে ,, ? উফফ উফফ উফফ মাথা আর কাজ করতেছেনা ,, আচ্ছা এখন বাসায় যাই সবাই ,, এই জিনিসটা সবাই মন দিয়ে ভাববো আজ রাতে ,, কারো না কারো মাথায় তো এই সব রহস্যের জট খুলবেই খুলবে ,, 

    – আচ্ছা চল ,, আর তোর আম্মুও আমাকে তখনই ফোন দিয়ে বলতে বলছিলো তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার জন্য,,(রিয়াদ বলে) 

    – তুই আগে বলবিনা ,,(হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) আরে বাপরে ,, রাত ১০ টা বেজে গেছে ,,,,,! মা তো এতোক্ষণ আমাদের জন্য বসে বসে অপেক্ষা করতেছে ,, চল তাড়াতাড়ি,, 

    – না মানে ইয়ে,, বলতে ভুলে গেছিলাম এই সব চিরকুটের রহস্য ডুবে ,, 

    – হইছে তুইও এখন বাসায় যা ,, আমরা গেলাম,, আর শোন ,, তুই তোর একটা পুরো ফোর্স কে ঐ বাগানে সারারাত পাহারা দেওয়ার জন্য পাঠায় দে ,, ওরা যেন না ঘুমায় ,, না জানি সেই খুনির পরবর্তী টার্গেট কে ,, 

     

    _________________________

     

    রাত ২ টা ,, একটা শুনশান জঙ্গল ,, চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ,, জঙ্গল টা খুব ঘন ,, আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে না,, মেঘে পুরো আকাশ কে ঢেকে রেখেছে,, জঙ্গলে গাছপালার মধ্যে একটা গাছের নিচে একটা মেয়ে পরে আছে ,, মেয়েটা আর কেউ নয় ,, আরোহী ,,তার পরনে এখন আর বোরকাটা নেই ,, তার পাশেই সেটা পরে আছে ,, তার পরনে এখন শুধু একটা ছেড়া থ্রি পিস ,, হয়তো সে এটা বোরকার ভিতরে পরেছিলো ,, বুকের উপর থেকে তার কাপড় ছেড়া ,, যেন কেউ টেনে ছিঁড়েছে,, গালে মুখে খামছির দাগ ,, তার নিচের দিকে পরনে কিছুই নেই,, পায়জামা টা একদিকে পড়ে রয়েছে ,, অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় অচেতন হয়ে সে পড়ে রয়েছে ,, কিছু খর(শুকনো ধানের গাছ) এর উপর তার অচেতন দেহ টা পড়ে রয়েছে,, আশেপাশের আবহাওয়া আরো খারাপ রুপ ধারণ করতে থাকে ,,এক ফোঁটা, দু ফোঁটা করে বৃষ্টি শুরু হয় ,, এবং তখনই আমরা দেখি একটা গাছের আড়াল হতে বেড়িয়ে আসছে এক লোক ,, কালো জ্যাকেট তার পরনে ,, মাথায় কালো হেলমেট,, হাতে, হাত মোজা পড়া ,, সে এসে আরোহীর অচেতন দেহের পাশে দাঁড়ায়,, তারপর সে সেই অর্ধনগ্ন অচেতন দেহ টাকে কাঁধে তুলে নেয় ,, আকাশে বড় একটা বিজলী চমকিয়ে উঠে ,, চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠে,, লোকটা আরোহীর দেহটাকে নিয়ে চলে যেতে থাকে ,, এবং তার মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে এক রহস্য মিশ্রিত হাঁসি  ,, আর যেতে যেতে বলতে থাকে ,, 

    “ইসস,, তোমার ভাইয়ের কৃতকর্মের ফল তোমায় ভোগ করতে হচ্ছে ,, চিন্তা করোনা ,, আমিও তোমাকে ঠিক ততটাই কষ্ট দিয়ে মারবো যতটা কষ্ট আমার বোন পেয়েছিলো ওদের থেকে ,,”

    এবং সেই লোকটা কেঁদে ফেলে এবং পরমুহূর্তেই আবার হেঁসে উঠে বলে , “প্রতিশোধ হবে এবার ,, ঘোর প্রতিশোধ,, হা হা হা হা”

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    [কী মনে হয় আপনাদের কে হতে পারে সেই অতীত? আর কে নিচ্ছে এই প্রতিশোধ গুলো ? কেমন হচ্ছে জানাবেন 😊]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ১৪

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ১৫ 

    লেখক:: মির্জা সাহারিয়া

     

    আশেপাশের আবহাওয়া আরো খারাপ রুপ ধারণ করতে থাকে ,,এক ফোঁটা, দু ফোঁটা করে বৃষ্টি শুরু হয় ,, এবং তখনই আমরা দেখি একটা গাছের আড়াল হতে বেড়িয়ে আসছে এক লোক ,, কালো জ্যাকেট তার পরনে ,, মাথায় কালো হেলমেট,, হাতে, হাত মোজা পড়া ,, সে এসে আরোহীর অচেতন দেহের পাশে দাঁড়ায়,, তারপর সে সেই অর্ধনগ্ন অচেতন দেহ টাকে কাঁধে তুলে নেয় ,, আকাশে বড় একটা বিজলী চমকিয়ে উঠে ,, চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠে,, লোকটা আরোহীর দেহটাকে নিয়ে চলে যেতে থাকে ,, এবং তার মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে এক রহস্য মিশ্রিত হাঁসি  ,, আর যেতে যেতে বলতে থাকে ,, 

    “ইসস,, তোমার ভাইয়ের কৃতকর্মের ফল তোমায় ভোগ করতে হচ্ছে ,, চিন্তা করোনা ,, আমিও তোমাকে ঠিক ততটাই কষ্ট দিয়ে মারবো যতটা কষ্ট আমার বোন পেয়েছিলো ওদের থেকে ,,”

    এবং সেই লোকটা কেঁদে ফেলে এবং পরমুহূর্তেই আবার হেঁসে উঠে বলে , “প্রতিশোধ হবে এবার ,, ঘোর প্রতিশোধ,, হা হা হা হা”

     

    দিথীর রুম দেখানো হয় ,, দিথী আর সামিহা ঘুমিয়ে রয়েছে,, বিছানা টা দেওয়ালের সাথে লাগানো ,, বিছানার মাথার দিকে পাশে একটা ছোট্ট টেবিল বিছানার গা ঘেঁষে বসানো ,,সামিহা দেয়ালের পাশ টায় শুয়েছে ,, দিথী শুয়েছে তার বিপরীতে,, দিথীর উপর আজ ঐরকম হঠাৎ শারীরিক ও মানসিক ট্রমা যাওয়াতে ওর রাতে অনেক জ্বর চলে আসে ,, তাই অন্তর সাহেব সামিহা কে বাসা যেতে না দিয়ে আজ রাত টা দিথীর সাথেই কাটিয়ে দিতে বলেন ,, সামিহাও আর না করেনি ,, দিথী আর সামিহা এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন,, তখনই দিথীর সবুজ লকেট টা যেটা সবসময় ও পরে থাকে আর রাতে ঘুমানোর সময় বিছানার পাশের টেবিলে রাখে সেটা জ্বলে উঠতে থাকে ,, এবং একটা সাদা ধোঁয়ার উদয় হয় দিথীর মাথার পাশে,, ধোঁয়া টা আস্তে আস্তে একটা মেয়ের দেহের আকার নিতে থাকে,, কিন্তু কোন চেহারা নেই ওটার ,, শুধুই সাদা একটা ঘন ধোঁয়া,, মেয়ে রুপি ধোঁয়াটা দিথীর মাথার পাশে এসে বসে ,, দিথীর‌ কাঁথা টা তুলে ঠিকঠাক করে দেয় ,, দিয়ে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে ,, যেন সে দিথীর খুব কাছের কেউ,,দিথী এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ,,  ধোঁয়া টা আস্তে করে দিথীর কপালে একটা ছোট্ট চুমু দেয় ,, দিয়ে তার মাথায় শেষ বারের মতো হাত বুলিয়ে দিয়ে ধোঁয়া টা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যেতে থাকে ,, যেন ধোঁয়াটা তার খুব কাছের কাউকে এসে একটুকরো মায়া মিশ্রিত ভালোবাসা দিয়ে গেলো,,

     

    সকাল ৬:৩০ ,, পূর্বের আকাশে সূর্য মেঘেদের মাঝে উঁকি দিচ্ছে ,, কুয়াশা পরেছে আশেপাশে,, হেমন্তের সময় আর তার উপরে উত্তরাঞ্চলে শীত আগেই পড়ে যায় , তাই অন্তত সকাল বেলার জন্য হলেও কম্বল , লেপ প্রয়োজন পড়ে ,, আকাশে সূর্যের হালকা মিষ্টি আভা উঠোনে পরেছে ,, শিউলি বেগম বারান্দার বেসিনে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছে ,, ফুলমতি গিয়ে রান্না ঘরের তালাটা খুলে দিয়ে আসলো ,, এসে বারান্দার চেয়ার গুলোর মধ্যে একটা চেয়ারে বসলো ,, শিউলি বেগম মুখ ধুয়ে একটা গামছা হাতে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ফুলমতির পাশে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে,, ফুলমতি বলতে থাকে,,

    – চাচি ,, চাচারে কী ডাক দিমু ,, ? 

    – না থাক ,তোর চাচায় কাইল মেলা দেরি কইরা ঘুমাইছে ,, 

    – চাচায় এতো সুন্দর একটা বৃষ্টির রাইতে ঘুমাইতে দেরি করছে,, ? আমি তো বৃষ্টির রাইতে শুয়ার লগে লগে ঘুমায়া পড়ি,, ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় ঘুমাইতে অনেক মজা ,, 

    – হ ,, তোর তো মজার দিন ,, আর আমাগো লাহান বিবাহিত গো বৃষ্টির রাইত মানেই বিছানা গরম ,, তোর চাচায় ঐ বাইরে বিলাই হইলেও ,,বিছানায় বাঘ ,, একবার ধরলে আর ছাড়ে না যতক্ষণ না শখ মিটে ,, 

    – চাচি ,, কী যে কন না,, আপনার শরম করেনা এডি কইতে ,, 

    – তোর জামাই যহন বিয়ার পর রাইত বিরাইতে বিলাই মাইরা দিবো ,, তহন তোরও শরম আমার লাহান যাইবোগা ,, বুজ্জো, হা হা হা,, 

    – ধূর চাচি ,, এসব কইয়েন না মোর অহনি লজ্জা লাগতাছে ,, (মুখে আঙ্গুল দিয়ে লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে ফুলমতি)

    – হ হ ,, লাগবোই তো ,, বিয়াডা একবার হোক ,, তারপর যহন জামাইয়ে রড দিয়া ছেচা দিবো তহন বুঝবি ,, 

    – আমি গেলাম চাচি পাকের ঘরে ,, আপনার ‌লগে থাহোন যাইবো না,, (বলেই উঠে যেতে থাকে ফুলমতি)

    – আরে ব ছেড়ি ,,আইজ আবার এতো জনের নাস্তা রেডি করা লাগবো ,, ফয়সাল ডাও আওনের সময় পাইলো না,, এতো জনের রান্না বান্না, দেখভাল সব কেমনে করুম আমি একলা ,, তুই আছোস ,, তারপরও আমার তো কাম কইরা অভ্যাস নাই এইবারো করতাম না ,, তয় শাহারিয়া এতো দিন পর আইছে দেইখা করতেছি ,, তয় অনেক চাপ হইয়া যাইতাছে ,,

    – আইচ্ছা চাচি ,,? আমার এক খালাতো বইন আছে ,, অয় সব কাম পারে ,, রান্না করা , কাপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সব পারে ,, অর নাম লায়লা,, অয় ও আমার বয়সীই ,,

    – তাইলে দেরি ক্যা ,,ওরে লই আয় ,, আমাগো চাপ তাইলে একটু হইলেও কমতো ,,

    – কিন্তু চাচি একটা সমস্যা আছে ,, 

    – কীয়ের আবার সমস্যা,, আমাগো লগেই খাইবো ,, তোর লগে দক্ষিণের ঘর টায় ঘুমাইবো,,তুই তো একলা ঘুমাস ,, এহন লগে একটা সঙ্গিও পাবি ,, কোন সমস্যাই নাইতো ,,

    – না মানে চাচি ,,অয় একটু তোতলা ,, কতা কওনের সময় মাঝে মাঝে একটু তোতলায় ,, 

    – তোতলায়, ,? কেমন,? বেশি না অল্প ,, ?

    – বেশি কওয়া যায় না আবার অল্পও কওয়া যায় না,, মেডিয়াম কইতে পারেন ,, 

    – তাইলে সমস্যা নাই ,, তুই আইজকাই সবার সকালের নাস্তা পানি খাওয়ানো হইলে যাইয়া ওরে লইয়া আবি ,,কইবি বেতনের লগে আমাগো বাড়িত থাকা খাওয়া ফিরি ,, এই যে কয়ডা দিন এরা আছে এই কয়ডা দিনের লাইগা তো অবশ্যই লাগবো ,, ঐদিক আবার পায়েল আর মিলি রাও আইতে চাইছিলো ,, ওরা আইতে পারে কয়েকদিন পর ,, সবমিলায়া ওরে আমাগো দরকার খুব ,, তুই আইজ নাস্তা পানি রেডি কইরা রওনা দিয়া দিস ওরে আনার লাইগা,,

    – আইচ্ছা চাচি ,,

    – তো চল,, নাস্তা পানি বানাইতে যাই ,, একটু পর আবার ওরা উইঠা পরবো,, আর নিপারেও আইজ কলেজে পাডাইতে হইবো ,, অর নাকি পরীক্ষা শুরু হইছে ,, 

    – আইচ্ছা চাচি আমি যাইতাছি রান্না ঘরে,,আপনিও আহেন ,,

    – আমি ঘরের বিছানার চাদর ডি ভিজায়া দিয়া আহি ,, 

    – কী কন চাচি ,, চাচায় এই বয়সেও বিছানায় মুতে ,, ? 

    – হ মুতে ,, তয় এই মুত ঘন সাদা ,, 

    – ধুর চাচি,, আপনেও না ,, (বলতে বলতে ফুলমতি চলে যেতে থাকে ,,)

    – যাইস না যাইস না ,, খাড়া ,, তোর জামাইয়ে যহন এরম কইরা মুতবো তহন কী করতে হইবো শুইনা যা ,,, হা হা হা হা ,,

    (হাসতে হাসতেই চাচি ঘরের দিকে চলে যেতে থাকে ,)

     

    উত্তর পাড়ার সেই আমবাগান,, আকাশে রোদের দেখা মিল্লেও বাগানের গাছের পাতা ভেদ করে খুব কমই আলো ভিতরে ঢুকতে পেরেছে ,, আমরা দেখতে পাই আমবাগানের মেইন দরজা লাগানো ,, দরজার বাইরে দুইজন পুলিশ কনস্টেবল যারা পাহারায় ছিলো তারা ঘুমিয়ে আছে ,, আস্তে আস্তে আমরা বাগানের ভিতরের টা দেখতে পাই,, বাগানের ভিতরে প্রায় ৬-৮ জন কনস্টেবল ছিলো ,, এবং রহস্যজনক ব্যাপার এই যে প্রত্যেকটা কনস্টেবল ই অজ্ঞান হয়ে মাটিতে হাত পা ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে ,, তাদের দেখে মনে হচ্ছে তারা দাঁড়িয়ে ছিলো কোন একসময় কিন্তু হঠাৎ তারা কোন কারণে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে, , এবং আস্তে আস্তে আমাদের সেই খাল টা দেখানো হয়,, কিন্তু এইবার সেই খাল টায় শুধু পানি নয় ,, ছিলো ,, ছিলো আরো একটা মাথা বিহীন লাশ ,, লাশ টা পানিতে এবার একদম সম্পূর্ণ ভেসে ছিলো ,, লাশ টা উবুড় করা ছিলো ,,  শুনশান বড় আমবাগানের মাঝে চারপাশে অনেক কনস্টেবল অচেতন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা এবং খাল টার ঠিক মাঝবরাবর রয়েছে একটি মুন্ডু বিহীন লাশ ,, মুহূর্তের মধ্যেই যেন একটা শান্ত আমবাগানর ভয়ংকর রূপ আমাদের সামনে উন্মোচিত হলো ,,, 

     

    সেতু ব্যাগ গুছাচ্ছে ,, সে কোথাও যাচ্ছে না ,, তার ভাই সিয়ামের ব্যাগ সে গুছিয়ে দিচ্ছে সে ,, সিয়াম আজই ঢাকা যাবে ,, সেখানে গিয়ে তার বাবার সেই জমানো অর্থ তুলে আনবে ,,ব্যাগে কিছু কাপড় ও দিয়ে দেয় সেতু ,, সেখানে গিয়ে যদি ১ বা ২ দিন থাকা লাগে তাই ,, সিয়াম ঢাকায় গিয়ে তার এক দুঃসম্পর্কের চাচার বাসায় উঠবে,, সেতু ব্যাগ গুছানো শেষ হলে রান্না ঘরের দিকে চলে যায় ,, সিয়াম একটা সাধারণ শার্ট আর একটা প্যান্ট পরে রেডি হতে থাকে যাওয়ার জন্য ,, সেতু রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে ,,  হাতে একটা ছোট্ট বাটি ,,সেতু ঘরে প্রবেশ করে বাটিটা বিছানার উপর রাখে ,, সিয়াম চুল আঁচড়াচ্ছে ,, সেতু সিয়ামকে বিছানায় বসতে বলে ,, সেতু ঢাকনা টা সড়ায় বাটি থেকে,, বাটিতে সে একটু সেমাই এনেছিলো তার ভাইয়ের জন্য,, তার ভাই সিয়াম বিছানায় বসে এবং বলে উঠে ,,

    – সেমাই কোথায় পেলি বনু ,, 

    – পাশের বাসার সালমা আন্টির কাছ থেকে নিয়ে এসেছি ,, চিনি আর দুধ ও তার কাছ থেকেই এনেছি ,, তুই ঢাকা যাচ্ছিস একটা বড় কাজে ,, একটু মিষ্টি মুখ করে যা ,, আর তখন ঢাকা থেকে এসে এটার টাকা পরিশোধ করে দিবি ,, তখন তো আমাদের সংসার একটু হলেও ভালো অবস্থানে যাবে ,, 

    – আমার লক্ষী বনু ,, ভাইটার জন্য এতো চিন্তা করিস ,, কোন দিন যদি আমি হারিয়ে যাই ,, তখন কী করবি রে বোকা ,, 

    – ভাইয়া,, এসব কথা কখনোই বলবে না ,,,আবার বললে আমি কিন্তু অনেক রাগ করবো ,, (অভিমানের সুরে সেতু বলে)

    – আচ্ছা বনু আর বলবো না,, নে তুই একটু নে ,, (চামচে সেমাই উঠিয়ে সেতুর দিকে এগিয়ে দেয় সিয়াম ,, সেতু মুখ বাড়িয়ে হা করে সেমাই টুকু নিয়ে নেয় ,, দুই ভাইবোনের এ যেন এক আবেগ মিশ্রিত অপলক ভালোবাসা,, ছোট্ট বোন টার জন্য ভাইয়ের স্নেহ কিংবা বড় ভাইয়ের জন্য ছোট্ট বোনের সম্মান , ভালোবাসা,, সবটুকুই যেন একটা সুন্দর ভাইবোনের প্রতীকি ,, 

    সিয়াম সেমাই খাওয়া শেষ করে,, করে উঠে দাঁড়িয়ে কাঁধে ব্যাগ টা নেয় ,, নিয়ে বোন কে জড়িয়ে ধরে বলে ,, 

    – বনু ,, তুই এই দুইটা দিন জান্নাত দের বাসায় গিয়ে থাক ,, বাসায় একলা রেখে যেতে যে আমার মন চাইছে না,, 

     

    সেতু তার ভাইয়াকে ছাড়িয়ে দিয়ে বলে,,

    – আমি কী এখনো ছোট আছি ,, আমি এখন বড় হয়েছি,, সাহসী হয়েছি,, আমার কোন সমস্যা হবেনা ভাইয়া ,, তুমি ঠিকঠাক মতো যেও ,,

    – তারপরও বনু গ্রামের অবস্থা ভালো না,, এই কয়েকদিনে খালি লাশ আর লাশ পাওয়া যাচ্ছে ,, তোকে একা রেখে আমার মন যেতে সাই দিচ্ছে না রে ,, তুই এক কাজ কর ,, তুইও আমার সাথে চল ,, 

    – না ভাইয়া তা হয়না,, আমার পরীক্ষা চলছে ,, তুমি যাও ,, চিন্তা করিও না ,, আমার ভয় লাগলে আমি জান্নাতের বাসায় গিয়ে থাকবো ,, তুমি একদম টেনশন করিও না ,, ঐদিকে সকালের ট্রেনের সময় হয়ে এলো বলে ,, তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পরো নাহলে মিস করে ফেলবে তখন ,, 

    – আচ্ছা বনু ,, যাই রে ,, ভালোভাবে থাকিস ,, কিছু হলে জান্নাতের বাসায় যাইস ,, আর কোন সমস্যা হলে তোর সালমা আন্টির ফোন দিয়ে ফোন দিস ,, ঠিক আছে ,, খেয়ে নিস সময় মতো ,, (বলতে বলতে বাসার উঠোনে নেমে চলে যেতে থাকে সিয়াম) 

    – আচ্ছা ভাইয়া সাবধানে যেও ,, (ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভাইকে বিদায় দেয় সেতু,,)

     

    সিয়াম বাসা থেকে বের হয়ে কাঁচা রাস্তা টায় উঠে ,, কিছু দূর গেলেই মেইন রোড ,, ওখান থেকে অটো নিয়ে সোজা দিনাজপুর রেল স্টেশনে চলে যাবে ,, সিয়ামের মন সেতুকে একলা রেখে যেতে একদমই সাই দিচ্ছে না,, মাথায় নানা রকম দুঃচিন্তা ঘুরছে ,, সে হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে ,, এবং তখনই একটা অস্বাভাবিক বড় কালো রঙের বিড়াল তার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যায় ,, সিয়াম তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে যায়,, ভয়ে যেন তার পা একটুও আগাতে চাচ্ছে না ,, সে ভাবতে থাকে “এটা কী হলো ,,কালো বিড়াল টা আমার রাস্তা ক্রস করলো,, এটা কোন অঘটন এর লক্ষণ নয়তো ,,?”

     

    এদিকে আমরা দেখতে পাই সেই বদ্ধ ঘর ,, ঘর টার জানালা টা খোলা ,, তা দিয়েই ঘরে দিনের আলো ঢুকেছে ,, ঘরের ভিতরে বদ্ধ পরিবেশ,, আর দূর্গন্ধ,, জানালার আলো এসে পড়েছে একটা চেয়ারের উপর ,, এবং সেই চেয়ারে আমরা একজন কে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পাই ,, লোকটা মাথা নিচু করা ,, দেখে মনে হয় অচেতন অবস্থায় রয়েছে,, চেয়ারের পাশেই একটা প্লেটে কিছু খাবার আর একটা স্টিলের গ্লাসে পানি দেখা যাচ্ছে ,, হঠাৎ লোকটার পায়ের আঙ্গুল গুলো নড়ে উঠতে থাকে ,, তার মানে লোকটার সেন্স ফিরেছে ,, পা গুলোকে নাড়াতে চাচ্ছে কিন্তু পারছেনা,, পা গুলো কাঠের চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাঁধা ,, লোকটা আস্তে আস্তে তার মাথা উঠায় ,, এবং দেখতে পাই সেই লোকটা আর কেউ নয় ,, নিখোঁজ হয়ে যাওয়া সেই আরিফ ,, 

     

    এদিকে সিয়ামের মনের মধ্যে আরো নতুন ভয় ঢুকে যায় এই কালো বিড়ালের জন্য,, সে কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা ,, এদিকে ট্রেনের সময়ও হয়ে এলো বলে ,, তখনই তার পিছন থেকে একটা অটো আসতে থাকে হর্ণ দিয়ে ,, সে রাস্তা থেকে সড়ে সাইডে দাঁড়ায়,, সে ভাবতে থাকে “এই অটো টাকে থামিয়ে এটাতে করেই স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দেই ,,” যেই ভাবা সেই কাজ ,, সে হাত উঠিয়ে অটো টাকে থামানোর ইঙ্গিত দেয়,, অটো টা তার সামনে এসে থেকে যায় ,, সে দেখতে পায় অটোতে কোন যাত্রী নেই ,, সে মনে মনে বেশ খুশিই হলো ,, তারপর সে অটোর ড্রাইভারের উপর তাকিয়ে দেখে তার মুখ মাথার ক্যাপের আড়ালে ঢাকা পড়েছে ,, পরনে নীল শার্ট (অটোওয়ালা দের যেমন টা সাধারণত হয়ে থাকে আরকি ,, সিয়াম অটোওয়ালাকে বলে ,, 

    – স্টেশন যাবেন ? 

     

    অটোড্রাইভার মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত দেয় ,, 

    সিয়াম তার কাছ পজেটিভ সাড়া পেয়ে উঠে যায় অটোরিকশাটায় ,, অটোরিকশাটা চলতে শুরু করে ,, এবং চলে যেতে থাকে মেইন রোডের উদ্দেশ্য ,, আমরা অটোরিকশাটার পিছন টা দেখতে পাই ,, এবং অটোরিকশা টা আর অন্য কোন অটো নয় ,, সেই রেড স্টার চিহ্ন লাগানো অটোটাই ছিলো ,, 

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    [কী মনে হয় আপনাদের, এর পর কী হতে চলেছে ,,? আর দিথীর মাথার পাশে উদয় হওয়া ঘন সাদা ধোঁয়ার রহস্য টাই বা কী ,,? জানাবেন কেমন হচ্ছে 😊 ]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ১৫

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ১৬

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া 

     

    সিয়াম অটোওয়ালাকে বলে ,, 

    – স্টেশন যাবেন ? 

     

    অটোড্রাইভার মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত দেয় ,, 

    সিয়াম তার কাছ পজেটিভ সাড়া পেয়ে উঠে যায় অটোরিকশাটায় ,, অটোরিকশাটা চলতে শুরু করে ,, এবং চলে যেতে থাকে মেইন রোডের উদ্দেশ্য ,, আমরা অটোরিকশাটার পিছন টা দেখতে পাই ,, এবং অটোরিকশা টা আর অন্য কোন অটো নয় ,, সেই রেড স্টার চিহ্ন লাগানো অটোটাই ছিলো ,, 

     

    দিথী বিছানায় একটা বালিশের উপর হেলান দিয়ে রয়েছে ,,তার অর্ধেক দেহে কাঁথা ঢাকা ,, বিছানার পাশেই জানালা ,, জানালা দিয়ে কুয়াশা ভেদ করে মিষ্টি রোদ এসে  ঘরে পরেছে ,, সামিহা ঘরে প্রবেশ করে ,, হাতে দু কাপ চা ,, সে এসে দিথীর পাশে বসে ,, তার দিকে একটা চায়ের কাপ এগিয়ে দেয় ,, দিথী চায়ের কাপ নেয় ,, সামিহা বলে ,,

    – এখন কেমন ফিল করছো দিথী ,, 

    – আগের থেকে বেটার আপু ,, (বলেই চায়ে চুমুক দেয় দিথী )

    – আজ কলেজ যেতে পারবে ? 

    – যেতে তো হবেই আপু,, আজ পরীক্ষা আছে ,, 

    – অতটাও গুরুত্বপূর্ণ নয় ,, শরীর বেশি খারাপ লাগলে যেওনা ,,

    – না আপু আমি ঠিক আছি ,, বাই দা ওয়ে,, তুমি কিন্তু খুব সুন্দর চা বানাতে পারো ,, আমাকে শিখিয়ে দিয়োতো ,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,, তো চলো ফ্রেস হয়ে নাও ,, শেফালী নাস্তা বানিয়েছে,, খেয়ে নেও ,, আমি এখন একটু বাসায় যাবো ,, 

    – চলে যাবে এখনি ,, ? 

    – আমারো তো সামনে পরীক্ষা শুরু,, পরতে হবে ,, তাই যাচ্ছি 

    – আচ্ছা আপু ,, তুমি এখানে আমার সাথেই থেকে যাও ,, আমি বলতে গেলে এখানে একদম একলা ,, ছোট মা তো আমায় দেখতে পারে না ,, আর বাবাও সারাদিন গ্রাম , পৌরসভা অফিস, এসব নিয়ে ব্যাস্ত থাকে ,, তুমি আমার সাথে থাকলে আমি একটা সঙ্গি পেতাম ,, 

    – আরে না বোকা,, এমন টা হয় নাকি,, বাসায় মামা তখন বকবে আমায় ,, (বিঃদ্রঃ,সামিহার ও মা বাবা নেই ,, সে এখানে তার মামা বাসায় থাকে ,, মামা মামী তাকে তেমন একটা আদর মিশ্রিত চোখে দেখেনা)

    – আমি বাবাকে বলে দিবো তোমার মামাকে বলে দিতে ,, বাবা ম্যানেজ করে নেবে ,, তুমি একদমই চিন্তা করোনা ,, 

    – আচ্ছা সে দেখা যাবে ,, চলো এবার ফ্রেস হয়ে নেবে চলো ,, কলেজের সময় হয়ে এলো বলে ,, 

    – আচ্ছা আপু ,, যাচ্ছি ,, তুমি শেফালীকে বলে দিয়ো যে বাবা আসলে যেন আমার ঘরে পাঠিয়ে দেয় ,, বাবা কোন সময় আসে বাসায়,, আর কোন সময় যায় বুঝতেই পারিনা ,,

    – আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে,, 

    দিথী বিছানা থেকে উঠে চলে যেতে থাকে ,, সামিহাও বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপ টা টেবিলে রাখে,, রেখে বিছানা গুছাতে থাকে ,, 

     

    সকাল ৭:৩০ ,, শাহারিয়া , তার টিম মেম্বারস ও ফয়সাল বারান্দার টেবিলে বসে নাস্তা করছে ,, তাদের পাশে ফুলমতি দাঁড়ানো,, দেখছে যে তাদের কিছু লাগবে কি না ,, ঘরে থেকে কলেজ ড্রেস পরে বেড়িয়ে আসে নিপা ,, তার কাঁধে স্কুল ব্যাগ ,, বাইরে এসে জুতো পরতে পরতে বলতে থাকে ,, 

    – মা ,, আমি গেলাম ,, 

     

    রান্না ঘর থেকে শিউলি বেগম আওয়াজ দিয়ে বলেন,,

    – আচ্ছা ভালো কইরা যাইস মা ,, আর পরীক্ষা ভালো কইরা দিস ,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে মা ,, আর বাবা কোথায় মা ? 

    – তোর বাপে তো গেছে গন্জে ,, সেই সকাল সকাল বাইর হইছে ,, কীয়ের বলে ভোট, ইলেকশন সামনে হের লাইগা গেছে,, 

    – ও আচ্ছা,, ঠিক আছে আমি তাইলে গেলাম,, 

     

    শাহারিয়া তাদের কথোপথনের মাঝে খেতে খেতে বলতে থাকে ,, 

    – আজ তোর পরীক্ষা ?

    – হ্যা ভাইয়া ,, আজ কেমিস্ট্রি পরীক্ষা,, 

    – ও আচ্ছা ঠিক আছে ভালো করে দিস ,, আর এই নে ,,(পকেট থেকে টাকা বের করে নিপার দিকে এগিয়ে দেয় এবং বলে,,) কিছু খেয়ে নিস,, 

    – আচ্ছা ভাইয়া,, 

    – আমি এগিয়ে দিবো তোকে? 

    – না থাক ভাইয়া ,, আমার বান্ধবীরা এসেছে ,, তারা বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে ,, ওদের সাথেই যেতে পারবো ,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে তাইলে যা ,, আর পরীক্ষা ঠান্ডা মাথায়, ভালো করে দিস ,,

    – ঠিক আছে ভাইয়া ,,

     

    নিপা বারান্দার ২ধাপ সিঁড়ি বেয়ে আঙিনায় নেমে চলে যেতে থাকে ,, নিপার চলে যাওয়াটাকে খারাপ নজর দেখতে থাকে ফয়সাল ,,ও খাবারের টেবিল থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিপার দিকে ,, শাহারিয়া খেতে খেতে দেখে যে ফয়সাল খারাপ নজর তার বোনের দিকে নজর দিচ্ছে,, সে বলে উঠে ,,

    – ফয়সাল ,, ফয়সাল,,,,

    – হ্যা হ্যা বলো ,, (হঠাৎ চমকে উঠে বলে)

    – বলছিলাম যে খাওয়ার সময় এদিক ওদিক তাকাতে নেই ,, খাওয়ার দিকে মনোযোগ দেও ,, 

    – হ্যা আচ্ছা ঠিক আছে,, (ফয়সাল কিছুটা সংকোচ বোধ করে বলতে থাকে)

     

    বাকিরা সবাই আবার খেতে থাকে নিজেদের মতো করে ,, তখনই বাসায় আসে টুটুল,, এসে বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে ডাকতে থাকে ,,

    – চাচি ,, ও চাচি ,, 

     

    রান্না ঘর থেকে জোড়ে আওয়াজ দিয়ে চাচি উত্তর দেন ,,

    – কিতা ,,,,

    – চাচি ,, নাসিম আইজ আইছিলো আপনাগো এহানে ? 

    – কই নাতো,, নাসিম আইজ সকাল থেইকা এ বাড়িত আহেই নাই,, কেন কিছু হইছে ,,(বলতে বলতে রান্না ঘর থেকে একটা মেলামাইনের বড় বাটি হাতে বের হয়ে আসেন শিউলি বেগম)

    – না মানে চাচায় তারে খুজতাছে,, চাচায় গন্জে ইলেকশনের প্রচারণার কাম করতাছে কিন্তু নাসিম নাই এর লাইগাই কইতাছিলাম ,, 

    – ও ,, নাসিম আহে নাই আইজ ,, আর তোর চাচাও কেমন ,, না যাইনা বুইজ্যা একজন রে নিলো ,, তাও মাত্র ১ সাপ্তা আগে ,, কিন্তু এইকয়দিনেই ফাঁকি বাজি শুরু কইরা দিছে ,, ? 

    – হ চাচি ,, চাচার আরো ভালো দেইখা লোক নেওয়ার দরকার আছিলো ,, আচ্ছা চাচি মুই গেলাম,, চাচায় ঐদিকে আবার আমার লাইগা অপেক্ষা করতাছে,, 

    – আইচ্ছা যা ,, 

     

    শিউলি বেগম বারান্দায় উঠে পড়েন ,, এবং টুটুল চলে যেতে থাকে বাসা থেকে ,, শিউলি বেগম বারান্দায় উঠে ডায়নিং টেবিলে বাটি টা রেখে সেটা থেকে ঢাকনা তুলে সবাইকে মাংস তুলে দিতে থাকেন ,, ফুলমতি কে বলতে থাকেন ,,

    – আরো কয়ডা পরটা নিয়া আয় তো রান্না ঘর থেইকা ,, 

    – আইচ্ছা,,

    ফুলমতি চলে যায় রান্না ঘরে ,,

    – তো বাজান রা ,, কেমন হইছে রান্না ,,

    – চাচি আপনার হাতের রান্না তো অসাধারণ,,(সাম্মি বলে)

    – হ হইবোই তো ,, তোমার চাচা তো দিনের বেলা রান্না খাইয়াও রাইতে আমার হাত চাইটা বেড়ায়,, কয় আমার হাতে নাকি মশলা আছে ,, হেরলাইগা রান্না মজা হয় ,, হা হা হা হা ,, 

     

    খাবার টেবিলের সবাই হেঁসে উঠে ,, 

    ফুলমতি পরটা নিয়ে আসে ,, সবাইকে পরোটা তুলে দিতে থাকে ,, 

    তখনই শাহারিয়ার ফোনে কল আসে ,,‌শাহারিয়া কল টা উঠিয়ে দেখে যে রিয়াদ ফোন দিয়েছে ,, সে কল টা রিসিভ করে ,, রিয়াদ ওপাস থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে থাকে ,,

    – দোস্ত,, আরেকটা,, আরেকটা ,,,

    – লাশ পাওয়া গেছে ,, তাইতো ? 

    – হ্যা ,, কিন্তু তুই কীভাবে বুঝলি ,, ? 

    – আর ঐ লাশ টা আরোহীর ই হবে ,, 

    – কিন্তু তুই কীভাবে শিওর হচ্ছিস ? 

    – এই ৪ দিন টানা লাশ পাওয়া গেছে ,, এইটুকু আন্দাজ তো করাই যায় ,,

    – এখন কি করবো ,, ?

    – তুই লাশ টাকে ফরেনসিকে পাঠা ,, আর লাশ যে পাওয়া গেছে এইটা আমাদের ডিপার্টমেন্টের লোক ছাড়া যেন আর কেউ না জানে ,, নাহলে গ্রামের মানুষদের মধ্যে প্যানিক ছড়িয়ে পড়বে,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,, তুই আসবি কখন,,

    – আমি আসছি এখনি,, আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ,, তুই যারা মারা গেছে তাদের সবারই কলেজ লাইফের ইনফরমেশন নে,, ওরা কলেজ লাইফে কেমন ছিলো ,, তাদের স্বভাব , চরিত্র এভরিথিং,, 

    – কিন্তু এই খুনের ধারাবাহিকতার সাথে মারা যাওয়া ব্যাক্তিদের কলেজ লাইফের কি সম্পর্ক ? 

    – পরে তোকে সব বলবো ,, তুই শুধু ইনফরমেশন কালেক্ট করে আমাকে জানা ,,

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,, 

     

    কল টা কেটে দেয় শাহারিয়া ,, শিউলি বেগম বলতে থাকে ,,

    – কী হইছে বাজান  ? কই যাবি তুই ?

     

    শাহারিয়া কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখনি ফয়সাল বলে উঠে ,, 

    – চাচি আম্মু ,, ওরা এখানে ছুটি কাটাইতে না ,, (মুখে একটু পরটা গুঁজে দিয়ে আবার বলে) আসছে গ্রামের খুনের ঘটনার সমাধান করতে ,, 

     

    শাহারিয়া এবার একটু রেগে যায় ,, যখনই কিছু বলতে যাবে ,, তখনই চাচি বলে ,, 

    – সত্যি?? এইডা তো ভালোই হইলো,, নিজের গ্রামের খুনের কেস নিজেই সমাধান করলো ,, আর আমাদের সাথে থাইকাও যাইতে পারলো ,, আর গ্রামে এমনিতেও সবার মনে ঐ খুনি গুলা  নিয়া আতংক ঢুকছে ,, সেই খুনিরে যদি আমার বাজান ডা ধরতে পারে তাইলে আমার অনেক খুশি লাগবো ,, গর্ব করুম তহন আমার পোলারে লইয়া ,, তাই না বাজান ,, 

    – হ্যা হ্যা মা অবশ্যই,, (আমি একটু নার্ভাস হয়েই উত্তর টা দিলাম ,, মনে মনে ভাবছি” মা যে এতো সহজে মেনে নিবে আমি ভাবতেও পারিনি ,, যাই হোক ,, মা আমাদের পাশেই আছেন তাইলে ,, আর কোন ভয় নেই ,, ” 

    শাহারিয়া এবার বলে ,, 

    – মা ,, আমি তাইলে এখন যাই , , খাওয়া শেষ আমার ,, ঐদিকের বিষয় টা দেখে আসি একটু গিয়ে ,, 

    – আচ্ছা বাজান যা ,, সাবধানে যাইস ,,

     

    আমি ফয়সালের দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে খাবার টেবিলে থেকে উঠে যেতে থাকি ,, ফয়সাল রাগে খালি গজগজ করছে ,, 

    আমি উঠে গিয়ে আঙিনায় রাখা বাইক টা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি ,, বাইক টা রিয়াদের,, তবে কাল রাতেই তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরার জন্য ওর বাইক টা নিয়ে এসেছিলাম,, আমি দ্রত গতিতে যেতে থাকি থানার উদ্দেশ্য,,

     

    আরমানের বোন আনিকা তার ঘরে বিছানায় বসে ফোন টিপছে ,, ফোনে সে তার কোন বন্ধুর সাথে চ্যাট করছে ,, তখনই ঘরে প্রবেশ করে আরমান ,, আনিকা তার ভাইকে দেখে ফোন টা নামিয়ে নেয়,, তার ভাইয়ার দিকে চেয়ে দেখে তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ,, সে এসে আনিকা কে কাপো কাপো কন্ঠে বলতে থাকে ,,

    – আনি ,, তুই , তুই আমার ঘরে কোন ছোট্ট চিরকুট পেয়েছিলি ? 

    – কেমন চিরকুট ভাইয়া? 

    – ঐযে ,, ঐদিন রাতে যে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম ,, তারপর আমার ঘরে কে আসছিলো ? আর ঐ কাঁটা আঙ্গুল গুলো কে নিয়ে গেছিলো ? 

    – কাটা আঙ্গুল গুলো তো রিয়াদ ভাইয়া এসে নিয়ে গেছিলো ,, 

    – ও তারমানে ওদের কাছেই আছে সেই চিরকুট টা,,

    – কীসের চিরকুট ভাইয়া ,, আর কেন ভাইয়া,, ? 

    – পরে বলবো তোকে বোন ,, তুই ,, তুই সাবধানে থাকিস ,, আর তুই আজ থেকে একদম ঘর থেকে বের হবি না ,, একদমই না ,,

    – কিন্তু কেন ভাইয়া ,, ? আমি কী করলাম ,,? (বলেই মাথা নিচু করে ফেলে আনিকা)

    – তোকে যা বলছি তাই ,, তুই বের হবিনা মানে বের হবিই না,, (ধমকিয়ে বলতে থাকে আরমান ) 

    – আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে (গোমড়া মুখে বলে আনিকা)

     

    আরমান আনিকার রুমে তার বিছানার নিচ টা একবার দেখতে থাকে ,, টর্চ জ্বালিয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে ,,

     

    – কি খুজছো ভাইয়া ? 

    – আচ্ছা তুই কী কোন বড় সাইজের বই দেখছিলি ? বইয়ের মলাট টা স্টিলের ,, আর বইয়ের কভারে একটা ক্রস চিহ্নের মাঝে মানুষের কাটা মাথার ছবি খচিত ছিলো ,, বইটার নাম ছিলো , “পুনর্জন্ম”

    – না ভাইয়া ,, এমন তো কোন বই দেখিনি,,

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,, 

    আনিকা কিছু বলার আগেই হনহন করে চলে যায় আরমান ,, আনিকা এবার চুপ করে বসে থাকে ,,

     

    আরমান বারান্দা দিয়ে ওর ঘরের দিকে যেতে থাকে,, তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ,, সে যেন উতলা হয়ে কিছু খুঁজছে ,, সে নিজের ঘরে এসে তার বিছানার উপর বসে ,, মনে মনে ভাবতে থাকে ,,

    – সেই বইটা কোথায় রাখলাম,, একমাত্র সেটাই বাঁচাতে পারবে আমায় ,, নাহলে ও ,, ও আমাকে আর আনিকা কেও মেরে ফেলবে ,, সেই রাতে ,, সেই রাতে ওর মাথাটাও আলাদা করে দেওয়ার দরকার ছিলো,, কিন্তু রিয়া বলে ,, না না থাক মাথাটা আলাদা করিও না ,,(ভেঙ্চি কেটে বলে আরমান) এখন রিয়া তো নিজের জীবন দিয়ে তার খেসারত দিছে ,, আর আমাদের সার্কেলের বাকিদেরও দিতে হচ্ছে ,, আরিফকেও মনে হয় সে মেরে ফেলছে ,, এখন ,, এখন আমাদেরও ,, না না ,, এ হতে দেওয়া যাবেনা,, সেই বইয়েই আছে এই সবকিছুর উত্তর,, সবকিছুর বিনাশ ,, বই টা কোথায় গেলো,, ধুরর ,, 

     

    – আরমান,,, এই বই টা খুজছো না তো ? (জানালার দিক থেকে এক ভারি কন্ঠে ভেসে আসে এই কথা)

     

    আরমান ভয়ে চোখ বড় করে ফেলে,, জানালার দিকে ফিরে তাকায় ,, তার চোখ জানালায় পড়ার সাথে সাথেই সে একদম থ হয়ে যায়,,  দেখে জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে হেলমেট পড়া একজন,, এবং তার হাতে ছিলো সেই “পুনর্জন্ম” বইটা,, সে বইটা কে উঁচিয়ে আরমানের দিকে ধরে ,, এবং চোখের পলকেই আগুন ধরে যায় সেই বইতে ,, সেই লোকটা হাসতে থাকে এক ভয়ংকর হাসি,, যেন সে তার মৃত্যু টাকেই তার হাতে পুড়িয়ে ফেলছে,,

     

    আরমান জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে ,,

    – নাআআআআআ ,, এটা করোনাআআআআ‌ ,,

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    [আরমান কেন খুজছিলো সেই বইটাকে ? আর কার মাথা আলাদা করার কথা বলছিলো সে ? সামনের পর্ব গুলোতে উন্মোচিত হবে এর রহস্য,, পরতে থাকুন ,, এবং মনে রাখতে থাকুন গল্পের প্রত্যেকটা ঘটনা ,, প্রথম থেকে এই পর্যন্ত ঘটে যত গুলো ঘটনা রয়েছে সবগুলো ,,  ঘটনার মধ্যৈই আছে সকল রহস্যের উত্তর,, ]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ১৬

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ১৭

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    – সেই বইটা কোথায় রাখলাম,, একমাত্র সেটাই বাঁচাতে পারবে আমায় ,, নাহলে ও ,, ও আমাকে আর আনিকা কেও মেরে ফেলবে ,, সেই রাতে ,, সেই রাতে ওর মাথাটাও আলাদা করে দেওয়ার দরকার ছিলো,, কিন্তু রিয়া বলে ,, না না থাক মাথাটা আলাদা করিও না ,,(ভেঙ্চি কেটে বলে আরমান) এখন রিয়া তো নিজের জীবন দিয়ে তার খেসারত দিছে ,, আর আমাদের সার্কেলের বাকিদেরও দিতে হচ্ছে ,, আরিফকেও মনে হয় সে মেরে ফেলছে ,, এখন ,, এখন আমাদেরও ,, না না ,, এ হতে দেওয়া যাবেনা,, সেই বইয়েই আছে এই সবকিছুর উত্তর,, সবকিছুর বিনাশ ,, বই টা কোথায় গেলো,, ধুরর ,, 

     

    – আরমান,,, এই বই টা খুজছো না তো ? (জানালার দিক থেকে এক ভারি কন্ঠে ভেসে আসে এই কথা)

     

    আরমান ভয়ে চোখ বড় করে ফেলে,, জানালার দিকে ফিরে তাকায় ,, তার চোখ জানালায় পড়ার সাথে সাথেই সে একদম থ হয়ে যায়,,  দেখে জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে হেলমেট পড়া একজন,, এবং তার হাতে ছিলো সেই “পুনর্জন্ম” বইটা,, সে বইটা কে উঁচিয়ে আরমানের দিকে ধরে ,, এবং চোখের পলকেই আগুন ধরে যায় সেই বইতে ,, সেই লোকটা হাসতে থাকে এক ভয়ংকর হাসি,, যেন সে তার মৃত্যু টাকেই তার হাতে পুড়িয়ে ফেলছে,,

     

    আরমান জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে ,,

    – নাআআআআআ ,, এটা করোনাআআআআ‌ ,,

     

    কিন্তু লোকটা কোন কথাই শুনে না ,, এবং একনাগাড়ে সে ভয়ংকর হাসি হেসেই যাচ্ছে,, তখনই আরমানের চিৎকার শুনে ঘরে চলে আসে আরমানের মা ও তার বোন আনিকা ,, এসে দেখে আরমান বিছানায় বসে জানালার দিকে হাত বাড়িয়ে চিৎকার করছে ,, তার আকুতি মিশ্রিত চিৎকার পুরো ঘর টা যেন কাঁপিয়ে তুলছে ,, তারা জানালার দিকে তাকায় ,, কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় এই যে জানালায় কেউই ছিলো না ,, আরমানের মা তাড়াতাড়ি আরমানের কাছে এসে বসে,, বসে তাকে বলতে থাকে, “তোর কী হয়েছে বাবা ,, তুই কী দেখে ভয় পাচ্ছিস ,, ? কী হয়েছে তোর ,, ?” কিন্তু আরমান কোন জবাব ই দিচ্ছে না ,, এবং সে তার চিৎকার থামিয়ে দেয় ,, কিন্তু সে এখনো একদম থ হয়ে বসে জানালার দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে ,, আরমানের মা আনিকাকে বলে ,, ” দেখতো জানালার ঐদিকে গিয়ে,, কিছু আছে নাকি,, আরমান বাবা আমার,, তুই কী দেখি ভয় পেলি বাবা “আরমানকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে তার মা ,, আনিকা জানালার কাছে যায় ,, সে জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখে,,” না ,, আশেপাশে কিছুই নেই ,, সব কিছুই স্বাভাবিক দেখাচ্ছে ,,” তখনই আরমান হঠাৎ একটা জোড়ে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় ,, আনিকা পিছনে ফিরে তাকায় ,, আরমানের মা কান্না শুরু করে দিয়েছে রিতীমতো ,, আরমান অজ্ঞান হয়ে তার মার কোলেই পড়েছে ,, আনিকা এসব দেখে তাড়াতাড়ি জানালার পাশ থেকে যেতে থাকে তার ভাইয়ের দিকে ,, এবং তখনই তার ওড়নাটা পিছনে কোন কিছু তে লেগে আঁটকে যায় ,, আনিকা আসতে গিয়েও থেমে যায় ,, সে পিছনে ফিরে তাকায় ,, দেখে যে তার ওড়নাটা জানালার একটা কোনের সাথে লেগে গিয়েছে,, সে ওড়ানটাকে জানালার ওখান থেকে ছাড়িয়ে নেয় ,, ছাড়িয়ে নিয়ে যেই ও তার ভাইয়ের বিছানার কাছে যেতে থাকে তখনই কোন উঁচু কিছুর উপর তার পা পড়ে তার পা টা মচকে যায় ,, সে ব্যাথায় তৎক্ষণাৎ মুখ দিয়ে “আহহ” শব্দ করে উঠে ,, এবং এক পায়ে দাঁড়িয়ে আরেক পা হাত দিয়ে কিছুটা তুলে লাফিয়ে লাফিয়ে বিছানার কোন টা ধরে ,, সে অনেক ব্যাথা পেয়েছে ,, সে পা টাকে হাত দিয়ে সোজা করতে করতে চোখ দেয় ফ্লোরে ,, দেখতে থাকে কীসের উপর তার পা পড়ে পা টা মচকে গেছে ,, তখনই সে দেখতে পায় ,, বড় সাইজের একটা বই,, প্রস্থে এক হাত আর লম্বায় দেড় হাত হবে ,, মলাট টা স্টিলের,, দেখে মনে হচ্ছে অনেক অনেক পুরাতন একটা বই ,, সে এক হাত দিয়ে পা টা উঁচিয়ে ধরা অবস্থায়তেই আস্তে আস্তে করে হেলে হাটু গেড়ে বসে ,,বসে বই টা কাছে নেয় ,, নিয়ে দেখে বইটার মলাটের উপর বড় বড় করে খোদাই করে লেখা “পুনর্জন্ম”,,

     

    শাহারিয়া বাইক নিয়ে উত্তরপাড়ার আম বাগানের দিকে যাচ্ছে,, বাসা থেকে সেখানে যেতে বেশ সময় লাগে বলতে গেলে,, দূর আছে কিছু টা ,, সে মেডিয়াম স্পিডে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে সেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে,, রাস্তা কিছুটা কর্দমাক্ত,, কাল রাতে যে বৃষ্টি আসছিলো সেই জন্য হয়তো ,, আকাশে রোদ উঠেছে ভালোই ,, তবে গরম টা শরীরে লাগছেনা ,, শাহারিয়া বাইক চালানো অবস্থায় বাম হাত টা উঠিয়ে হাত ঘড়িতে দেখে সময় এখন ৭:৪৫ ,, সে হাত টা নামিয়ে আবার বাইক চালানো তে মনযোগ দেয় ,, মনে মনে সে ভাবছে ,, “আজ সে খালটায় কিছু না কিছু তো পাবে ,, আজ সেই ছন্দ রহস্যের পর্দা সে টানবেই ,, যেকরেই হোক ,, নিরীহ মানুষদের আর মরতে দেবেনা সে ,” এমন ভাবতে ভাবতেই সামনে ৩ রাস্তার মোড়ের জারূল গাছ টার নিচে চোখ যায় তার ,, দেখে দিথী সেখানে স্কুল ড্রেস পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ,, শাহারিয়ার বুকের হার্টবিট ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে ,, আজ সে দিথীর সাথে একলা দেখা করবে ,, দেখার সাথে সাথে তার সঙ্গে ভাবও করবে ,, কেমন একটা আলাদা আনন্দ আর ভয় কাজ করছে তার মাঝে ,, সে তাড়াতাড়ি বাইক ছুটিয়ে দিথীর দিকে যায় ,, দিথির সামনে গিয়ে বাইক টা ব্রেক করে ,, তার মনে নার্ভাসনেস কাজ করছে ,, তারপরও সে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলতে থাকে ,,

    – কলেজে যাচ্ছো ,, ? 

    – হ্যা ,, কিন্তু এদিকে কোন অটোরিকশাও পাচ্ছি না যাওয়ার জন্য,, তাই দাঁড়িয়ে আছি ,, 

    শাহারিয়া মনে মনে একটু খুশিই হয় ,, সে ভাবে “আজ দিথীকে নিয়ে সে বাইকে একটা সুন্দর রাইড করতে পারবে ,, পছন্দের মানুষটাকে নিয়ে বাইকে যাওয়া ,, উফফ ,,” তার মনে অনেক খুশি লাগছে,, তারপর সে বলে ,,

    – আমার বাইকে উঠো ,, তোমায় কলেজে নামিয়ে দিয়ে আসি ,, 

    – না না সমস্যা নেই ,, অটো পেয়ে যাবো আমি ,, 

    – এখন তো আশেপাশে দূর দূরান্ত পর্যন্ত কোন অটোও দেখা যাচ্ছে না ,, আর আজ তো তোমার পরীক্ষা,, পরে দেরি করে ফেলবে ,, বাইকে উঠো ,, আমি তাড়াতাড়ি তোমায় কলেজে দিয়ে আসি ,, 

    – কিন্তু,,, 

    – এখন ৭:৪৮ বেজে গিয়েছে ,, ৮ টায় পরীক্ষা শুরু,, পরে যে অটোর আশায় থাকতে থাকতে তুমি পরীক্ষায় লেট করে ফেলবে ,, আসো বাইকে ,, আমিও কলেজের ঐদিকেই যাবো ,,

     

    দিথী এবার আস্তে আস্তে করে এগিয়ে আসে ,,ওর কেমন জানি লাগছে ,, ও তারপরও সব ভয়কে দূরে ঠেলে এসে বাইকের উঠে ,, উঠেই ব্যাগ টা কাঁধ থেকে খুলে তার কোলের মধ্যে রেখে দুই হাত তার উপর গুঁজে বসে থাকে,, শাহারিয়া বলে উঠে ,,

    – আমায় ধরো ,, নাহলে পরে কিন্তু পড়ে যাবে ,, আমি কিন্তু আবার বাইক জোড়ে চালাই ,, 

     

    দিথী শাহারিয়ার কথা শুনে আস্তে আস্তে তার ডান হাত টা উঠিয়ে শাহারিয়ার কাঁধে দেয় ,, শাহারিয়ার শরীরে তার ছোঁয়া পড়ার সাথে সাথে যেন তার পুরো শরীর কেঁপে উঠে ,, এই প্রথম তার ছোঁয়া,, শারা শরীরে যেন কারেন্ট শক খেলো সে ,, পরক্ষণেই সে নিজেকে আবার স্বাভাবিক করে বাইক স্টার্ট দেয় ,, বাইক চলতে থাকে ,,

     

    শাহারিয়া বাইক চালানো অবস্থায় দিথী কে বলতে থাকে ,,

    – তোমার সাথে তো ঐদিন সকালের পর আর দেখাই হলো না ,, আর আমিও বিজি হয়ে পড়েছিলাম,, তোমার খোঁজ ও নেওয়া হয়নি ,, কেমন আছো ,, 

    – হ্যা ভালো ,, তবে ,,

    – তবে কী ,,?

    – কাল রাতে একটু জ্বর আসছিলো ,, শরীর তাই একটু দূর্বল ,, 

    – ওহ ,, আজ পরীক্ষা দিতে পারবে তো ,, ? 

    – হ্যা হ্যা পারবো ,, পরীক্ষা টা দিয়েই সোজা বাসায় চলে যাবো ,, 

    – ওহহ আচ্ছা,, 

    – হমম ,, 

    – তোমার কন্ঠ টা না অনেক সুন্দর,, 

     

    দিথী কথা টা শুনেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফেলে ,, আমি বাইকের সাইড গ্লাস দিয়ে দেখছিলাম তাকে ,, হাসলে যেন তাকে আরো অনেক সুন্দর লাগে ,, সে বলে উঠে ,, 

    – হয়েছে, হয়েছে,, সামনে বাইক চালানোয় মন দেও ,, নাইলে কোন গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে উপরে চলে যাবো ,, তখন কিন্তু আর কন্ঠ শোনা হবে না ,, 

    – কী বলছো এসব,, আমি বাইক চালানোয় পটু আছি ,, আর তুমি কখনো এসব উপরে চলে যাবার কথা বলবেনা (কিছুটা মিষ্টি রাগের সুরে শাহারিয়া বলে)

    – আচ্ছা বাবা আর বলবোনা ,, খুশি ,, ? 

    – হ্যা অনেক খুশি,, (বলেই বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দেয় শাহারিয়া,

    হঠাৎ বাইকের স্পিড বেড়ে যাওয়াতে দিথী শাহারিয়া কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফেলে ,, শাহারিয়ার শরীরের রক্ত চলাচল ও যেন এক মুহুর্তের জন্য থেমে গিয়েছিলো ,, তার ছোঁয়া যেন পাথর মন থেকেও পানি বের করতে সক্ষম ,, দিথি এবার জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে শাহারিয়ার কাঁধের পিছনে মাথাও রেখে দেয় ,, শাহারিয়া আর কিছু বলতে পারছেনা ,, সে একদম শব্দ হারা হয়ে গিয়েছে ,, তার পছন্দের মানুষ যে তাকে জড়িয়ে ধরেছে ,, দিথী বলতে থাকে ,,

    – আস্তে চালাও ,, আমার ভয় করছে ,, 

    শাহারিয়া যেন তার কথা শুনে ঘোর থেকে বেড়িয়ে আসে ,, এবং পরমুহূর্তেই বলে ,,

    – জোড়ে না চালালে যে তোমার ঐ উষ্ণ শীতল ছোঁয়া আমি পেতাম না,, 

    – নিজের করে নিলেই তো হয় ,, তাইলে তো আর ছোয়াছুয়ির অভাব হবেনা মিষ্টার ,, (বলেই একটা মিষ্টি হাসি দেয় দিথী)

    শাহারিয়া খুশিতে চোখ মুখ বড় করে ফেলে ,,  বলে

    – সত্যি তুমি আমার হবে ? 

    – মজা করছি ,, হি হি হি ,, 

    – সত্যিই মজা করেছো ,, 

    – হ্যা বাবা সত্যিই মজা করেছি ,, (বলেই দিথী মনে মনে ভাবতে থাকে ” তোমার মতো কাউকে নিজের করেই পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার,, তবে সেই প্রাত্তন অতীত আমি ভুলতে পারছিনা বলেই কারো সাথে আর সম্পর্কে জড়াতে পারছিনা” এবং এসব ভাবতে ভাবতেই দিথীর মুখ টা একটু হতাশা মিশ্রিত হাঁসি ভেসে উঠে ,,

    তখনই দিথীর কলেজ চলে আসে ,, কলেজের গেটের সামনে কোন শিক্ষার্থী নেই ,, সবাই হলে চলে গেছে ,, শাহারিয়া বাইক টা কলেজের গেটের সামনে দাঁড় করায় ,, বলে ,,

    – এই যে মিস ,, শুনেন প্লিজ ,, আমরা চলে এসেছি ,, 

    দিথী এতক্ষণ শাহারিয়ার পিঠে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো,, বাইক টা যে জোড়ে চলছিলো তাতে তার ভয় করছিলো,, এখন সে চোখ খুলে দেখে যে কলেজ চলে এসেছে,, দিথী শাহারিয়াকে ছেড়ে দেয় ,, এবং বাইক থেকে নামতে থাকে ,, শাহারিয়া তার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দিথীকে বলতে থাকে ,,

    – দেখছো ,, মাত্র ৭ মিনিটে আমরা পৌছে গেছি ,, 

     

    দিথী বাইক থেকে নামার পর বলতে থাকে ,,

    – তুমি এতো জোরে বাইক চালাও ,, বাবাগো বাবা ,, আমার তো ভয়ে পরান যায় যায় অবস্থা,, 

    – আচ্ছা আচ্ছা,, (শাহারিয়া মুচকি হাসে ) তো ম্যাডাম ,, এখন মাথা ঠান্ডা করে ফেলুন,, নাইলে তখন পরীক্ষার খাতায় ভালো করে লেখতে পারবেন না ,, 

    – আচ্ছা স্যার ঠিক আছে ,, আমি যাই এখন তাইলে ,, (বলেই একটা মুচকি দিয়ে হাত নাড়িয়ে শাহারিয়াকে বিদায় জানাতে থাকে দিথী ,, শাহারিয়াও তাকে বিদায় জানায়,, কলেজ গেট থেকে দিথী কিছু ভিতরে যাওয়ার পর শাহারিয়া বলে ,, 

    – ভালো করে পরীক্ষা দিও ,,,

    – আচ্ছাআআআ ,, (দিথিও দূর থেকে জোড়ে উত্তর দেয়)

     

    শাহারিয়া মনে মনে ভাবছে ,, (আজ আমাদের মধ্যে কতসুন্দর আন্ডাস্ট্যান্ডিং হয়ে গেলো ,, ও অনেক মিষ্টি,, আর গলার স্বর তো মাশাআল্লাহ,, ওকেই আমার মিষ্টি বউ বানাইতে হবে ,, মা কে বলতে হবে তাড়াতাড়ি,, মা তো আবার আমার বিয়ের জন্য পাত্রি খুঁজে খুঁজে হয়রান কিন্তু আমার পছন্দ হয়না , ,এখন তো আমিই পছন্দ করে ফেলছি আগে ,, মা কে বলে ওকে তাড়াতাড়ি হবু বউ বানায় ফেলবো,,  হি হি হি ,, ) শাহারিয়া বাইকে উঠে পড়ে ,, এবং আবার বাইক স্টার্ট করে আম বাগানের উদ্দৈশ্য চলে যেতে থাকে ,,

     

    সকাল ৯ টা ,, মেম্বারের বাড়ির সামনের রাস্তা,, এক পাশে ফসলি মাঠ আরেকপাশে জঙ্গল ,, এই ঝোপ জঙ্গল টা অনেক আগে থেকেই এই গ্রামে আছে ,, আগে জঙ্গল টা আরো বড় ছিলো ,, কিন্তু আস্তে আস্তে জনবসতি বাড়তে থাকায় তার আয়তন টা একটু কমে গিয়েছে ,, জঙ্গলের ভিতরের দিকটায় সাধারণত কেউ যায় না ,, রাস্তায় তেমন মানুষ ও নেই ,, মাঝে মধ্যে ২-১ টা সাইকেল চলে যায় ,, আর ফেড়িওয়ালা যাচ্ছে মাঝে মধ্যে ২-১ টা ,, আমরা দেখতে পাই ফুলমতি একটা তার সমান বয়সী মেয়েকে নিয়ে মেম্বারদের বাড়ির দিকে আসছে ,, ফুলমতির পরনে একটা খয়েরি রঙের থ্রি পিস ,, আর সেই মেয়েটার পরনে একটা সবুজ থ্রি পিস,, তারা রাস্তা থেকে মেম্বারদের বাসায় ঢুকে ,, ঢুকে আঙিনায় এসে দাঁড়ায়,, আঙিনায় রশিতে দুই একটা কাপড় শুকাতে দেখি আমরা ,, আঙিনায় এসে ফুলমতি বলতে থাকে ,, 

    – চাচি ,, ও চাচি ,, আপনে কই ,, 

     

    ডাক শুনে ঘর থেকে গোলাপী শাড়ি পড়া শিউলি বেগম বেড়িয়ে আসেন ,, তার হাতে একটা ছোট্ট আয়না ,, আয়নায় মুখ দেখতে দেখতে বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে থাকেন ,, 

    – কী হইছে ছেড়ি ,,ডাকতাছোস কেন ,, 

    – না মানে চাচি এইযে লায়লারে লই আইছি ,, (বলেই লায়লার দুই কাঁধে হাত দিয়ে তাকে সামনে এগিয়ে দেয় ফুলমতি)

    – ও আইচ্ছা এই হইতাছে লায়লা ,, দেখতে শুনতেও খারাপ না সুন্দর ই আছে ,, তো লায়লা মা ,, তুমি কী কী কাম পাড়ো ,, 

    – চাচি ,, আমি ঘর মোছা পাড়ি ,, ঝাড়ু দিবার পাড়ি রান্না পা আ আ আ আ (তখনই ফুলমতি পিছন থেকে তার পিঠিতে জোড়ে একটা থাপ্পর দেয়) আ ড়ি ,, কাপড় ধোয়া পাড়ি ,, বাগান দেখতে পাড়ি ,, মসলা বাটতে পাড়ি সব কিছু পাড়ি ,,

    – বা বাহ ,, অনেক কামই দেহি জানো ,, তো হাত টানার অভ্যাস আছে নি আবার তোমার,, ? 

    – না না,, চা আ আ আ (ফুলমতি আবার তার পিঠিতে জোড়ে থাপ্পর দেয়) আ চি ,, আমার কোন খারাপ অভ্যাস নাই গা ,, 

    – হম বুঝছি ,, তোমারে মাঝেমধ্যে কয়ডা পিডিতে কসায় দিতে হইবো ,, তাইলে তোমার জিনিস গড় গড় কইরা বাইর হইবো ,, 

    – না মানে চাচি ঐ আ আ আ আরকি ,,

    – তো এহন যাও ঘর গুলা মুইছা দিয়া আহো ,, দেইখো আবার ভালো কইরা মুইছো ,, কোন ময়লা যেন না থাহে ,, 

    – না চাচি ,, কো ও ও ও নো ময়লা থাকবো না,, নাম আমার লায়লা ,, করি কাম থাকেনা কোন ময় য় য় য় য়লা ,, (ফুলমতি আবার তাকে জোড়ে থাপ্পর দেয় পিঠিতে)

    – হইছে হইছে আর পিডাইস না মাইয়াডারে ,, ওর পিঠি তো গরম কইরা দিছোস ,, যাও মা লায়লা ,, গিয়া কাম শুরু কইরা দাও,, 

    – আইচ্ছা চা আ আ আ ,,,,

    – হইছে হইছে বুজ্জি ,, আর কওন লাগবো না ,, যাও গিয়া কাম শেষ করো ,, আর ফুলমতি তুই আমার লগে পাকের ঘরে আয় ,, 

    – আইচ্ছা চাচি ,, (ফুলমতি বলে)

    লায়লা বারান্দায় উঠে চলে যেতে থাকে কাজ করতে ,, আর শিউলি বেগম নিচে নেমে ফুলমতিকে নিয়ে যেতে থাকে রান্নাঘরের দিকে ,, 

     

    সময় এখন সকাল ৯:৩০ ,, উত্তর পাড়ার আমবাগান,, আমবাগানের ভিতরের দিক দেখানো হয় ,, রিয়াদ তার দুইজন কনস্টেবল এর সাথে কথা বলতেছে ,, শাম্মি,কল্প ওরা লাশ টার বডি চেক করছে হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে ,, শাম্মি, ইমন রা শাহারিয়ার আগেই এখানে পৌঁছে গিয়েছিলো ,, শাহারিয়া দিথীকে স্কুলে ছাড়তে গিয়ে তার দেরি হয়ে যায় ,, আর ইমন,নিলয় আর দুই জন কনস্টেবল মিলে কাল রাতে যারা পাহারার দায়িত্বে ছিলো তাদের হুশ ফিরিয়ে তাদের থেকে কাল রাতের ঘটনার বিবরণ শুনছে   ,,

    শাহারিয়া আমাবাগানের গেটের সামনে এসে বাইক থামায় ,, বাগানের গেটের সামনে দুইজন কনস্টেবল দাঁড়ানো,, তারা শাহারিয়াকে দেখে স্যালুট দেয় ,, তারা এখন জানে যে শাহারিয়া গোয়েন্দা সংস্থার লোক,, শাহারিয়া বাইক থেকে নামে ,, নেমে বাইকের চাবি টা খুলে তাদের দিকে আসে ,, এসে জিগ্গেস করে ,, 

    – রিয়াদ কী এখনো ভিতরেই আছে ? নাকি থানায় চলে গেছে ? 

    – ভিতরেই আছে স্যার ,, 

    – ও আচ্ছা,, আর এই আজকের লাশ পাওয়ার ঘটনা আর তোমাদের কয়েকজন কনস্টেবলদের অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যাওয়ার বিষয় টা যেন বাইরে কোন ভাবেই না ছড়ায়,,ক্লিয়ার ,, ? 

    – ওকে স্যার ,,

    দাঁড়িয়ে থাকা দুই জন কনস্টেবল আমবাগানের গেইট খুলে দেয় ,, আগে এমন বড় গেইট ছিলো না ,, তবে খুন গুলো হওয়ার পর রিয়াদের কথায় বাগানের মালিক ইসহাক সাহেব এই গেইট টা লাগান ,, শাহরিয়া ভিতরে চলে আসে ,, এসে দেখে শাম্মি,ইমন রা তার আগেই এখানে উপস্থিত হয়ে গিয়েছে ,, শাহারিয়া আশেপাশে তাকাতে তাকাতে রিয়াদের কাছে যায় ,, রিয়াদ দুইজন কনস্টেবলদের সাথে কথা বলতে দেখে শাহারিয়া কনস্টেবলদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে,, রিয়াদ শাহারিয়াকে দেখেই তার কনস্টেবলদেরকে বলে ,, 

    – তোমরা এখন যাও ,, গিয়ে যাদের জ্ঞান ফিরলো তাদের কাছ থেকে ইনফেকশন নেও যে কাল রাতে কী হয়েছিলো,, 

    – ওকে স্যার ,, (বলেই দুইজন কনস্টেবল চলে যেতে থাকে ,, ) 

    – তোর আসতে এতো দেরি হয়ে গেলো ,, ?

     

    শাহারিয়া তার সামনে দাড়ায় ,, বলে,,

    – না মানে একজনকে একটু কলেজে দিয়ে আসলাম তো ,, 

    – কাকে ? নিপাকে.? 

    – না না ,, তোকে পড়ে বলবোনে ,, এখন বল এদিকের কী অবস্থা,, 

    – এইতো সকালে আসে দেখি যাদেরকে পাহারায় রাখে গেছিলাম তারা সবাই অজ্ঞান , অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে আছে ,, আমরাই এসে তাদের জ্ঞান ফেরাই ,, এবং লাশ ও পাওয়া যায় একটা,, খালটার মধ্যৈ ,, পরে সাম্মিরা চেক করে দেখলো ঐটা একটা মেয়ের লাশ ,, তারমানে আ,,,

    – আরোহীর ই লাশ ,, আমি বলছিলাম না ,, 

    – হ্যা ,, তবে এখন কথা হচ্ছে আরোহীকেও কেন মেরে ফেললো খুনিটা ? 

    – এই কারণ টাই তো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে,, তো এখন শোন ,, লাশ টা উঠাইছে খাল টাই থেকে ? 

    – হ্যা উঠাইলো ,, উঠায় শাম্মী,কল্প ওরা পরীক্ষা করছে ,, 

    – ও আচ্ছা,, তাইলে তুই এখন এই লাশ টাকে থানায় পাঠানোর ব্যবস্থা কর ,, আর ,,

    – আর কি,, 

    – আর এই খাল টার পানি বের করার ব্যবস্থা কর ,, পাম্পের মাধ্যমে উঠাবে না কেমনে উঠাবে জানি না কিন্তু খাল আমার পানি শুন্য চাই ,, 

    – কিন্তু তখন ইসহাক চাচা ? (বাগানের মালিক আরমানের বাবা ইসহাক সাহেব)

    – এখানে লাশ পাওয়া গেছে এখন পুলিশ এখানে খোঁজ চালাবার জন্য যা ইচ্ছা তাই করতে পারে,, মালিক পক্ষের কোন অনুমতি নেওয়া লাগবে না,, তুই তাড়াতাড়ি খাল টার পানি অপসারণের ব্যবস্থা কর ,, 

    – আচ্ছা,, আমি এখনি একটা পানি উঠানোর পাম্প আনছি,, 

    – হ্যা তাড়াতাড়ি যা ,, 

    এদিকে আমার দেখতে পাই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে ,, কালো মেঘ,, এই হেমন্তের সময় এমন আবহাওয়া হওয়াটা একটু অবাক করার মতো ,, রিয়াদ একজন লোক কে ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি পাম্পিং মেশিন আনার কথা বলে ,, এদিকে শাহারিয়া যায় সে লাশ টার কাছে ,, লাশ একটা প্লাস্টিক বস্তার উপর বিছানো,, লাশটাকে তুলে খাল টা থেকে কিছুটা দূরে রাখা হয়েছে ,, যাতে কোন অপরিচিত ‌লোক বাগানে ঢুকলে যেন তার চোখে আগে লাশ টা না পড়ে ,, লাশ টার দুই পাশে শাম্মি আর কল্পনা হাটু গেড়ে বসে হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে ছোট একটা চিমটা দিয়ে কী যেন লাশটার দেহ থেকে তুলছে ,, লাশটার একটা হাতের কবজি কাটা এবং লাশটা মাথা বিহীন ,, কোন মাথাই নেই লাশটার সাথে ,, শুধু এই লাশ টা না ,, যত লাশ পেয়েছে এই খালে এর আগে তারা ,, সব গুলো লাশের ই কোন মাথা ছিলো না,, শুধু ক্ষতবিক্ষত শরীরটা পাওয়া গেছিলো,, কোন কোন‌ লাশের আবার হাতের কব্জি কিংবা পায়ের আঙ্গুল ও কাটা ছিলো ,, শাম্মি আর কল্পনা আজকের পাওয়া লাশটার ফুটো করা করা শরীর থেকে কিছু বড় বড় চুল খুঁজে পেয়েছে ,, তারা এই একেক টা চুল গুলোকে ছোট ছোট ফরেনসিক পলিব্যাগে ঢুকিয়ে সংরক্ষণ করছে ,, শাহারিয়া তাদের কাজ দেখে চলে যেতে থাকে কাল রাতে পাহারা দেওয়া কনস্টেবল দের কাছে ,, এদিকে ৩-৪ জন লোক চলে আসে একটা সেলো পাম্প নিয়ে ,, (সেলো পাম্প হলো গ্রামে ফসলি ক্ষেতে ভূ গর্ভস্থ পানি সেচ করার জন্য যে পাম্প ব্যবহার করা হয় ঐটা ,,) তারা পাম্প টাকে এনে খাল টার সাথে ফিট করতে থাকে ,, এবং ফিট করা হয়ে গেলে তারা খাল টার একটু দূরে ছোট একটা যায়গা কোদাল দিয়ে খুরে ফেলে ,, যেন সেচ করা খালের পানি টা উঠয়ে ঐখানে রাখতে পারে ,, সেচ মেশিন স্টার্ট করে তারা ,, খটর খটর শব্দ করে চলতে শুরু করে মেশিন,, পানি উঠতে থাকে খাল থেকে,, তাদের কাজের তদারকি করছে খোদ রিয়াদ নিজেই ,, এদিকে শাহারিয়া চলে যায় বাগানের সাইডে যেখানে কাল রাতের পাহারাদারদের জ্ঞান ফিরিয়ে রাখা হয়েছে ,, তারা এখন সেখানে বসে আছে ,, এবং তাদের সাথে কথা বলছে নিলয় ও ইমন ,, শাহারিয়া সেখানে যেতেই নিলয় আর ইমন হাঁটু গেড়ে বসা হতে দাঁড়িয়ে যায় ,, শাহারিয়া গিয়ে তাদের কাল রাতের ঘটনা সম্পর্কে জিগ্গেস করতে থাকে ,, তখনই তাদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠল,,

    ” কাইল রাইতে আমরা ৬ জন এইহানে পাহারা দিতাছিলাম ,,রাত তহন অনেক গভীর ,, হয়বো দুইডা ,আড়াইডার মতো,, সেই সময় হঠাৎ আমরা গেটে কারো বাড়ি দেওয়ার শব্দ পাই ,, আমরা তহনই সাথে সাথে এলার্ট হইয়া যাই ,, আর আস্তে আস্তে গেটের দিকে পা বাড়াইতে থাকি ,, তহন সব আবার শান্ত হইয়া যায় ,, আমরা ভাবছিলাম মনে হয় গেটের বাইরে পাহারা দেওয়া আব্দুল আর কাশেম এমন মজা করতাছে ,, তহনই হঠাৎ গেটের উপাশ থেইকা একটা বোতল জাতীয় ‌জিনিস আইসা আমাগো এহানে পড়ে ,, আমরা ভাবছিলাম ঐডা হয়তো কোন আরসি বা সেভেন আপের বোতল ,, আমরা আসতে আসতে যহনই হেই বোতলের সামনে যাই লগে লগে একটা গ্যাস বাইর হইতে থাকে বোতল থেইকা আর গ্যাস আমাগো সংস্পর্শে আসার লগে লগে আমাগো আর কিছু মনে নাই ,, “

    শাহারিয়া এসব কথা শুনার পর বলতে থাকে,,

    – খুনিটা তারমানে জানতে পেরেছিলো যে বাগানের ভিতরে কেউ আছে ,, কিন্তু ‌কীভাবে ?

     

    তখনই রিয়াদ পিছন থেকে ‌শাহারিয়াকে ডাক দেয় ,,

    – দোস্ত,, পানি সেচে ফেলছি পুরো খাল টার ,,

    আমি রিয়াদের কথা শুনে উঠে খালের দিকে যেতে থাকি ,, আসলে খাল টা অতো বড়ও না,, হবে ৭-৮ ফুট চওড়া আর ৬-৭ ফুট গভীর, ,তাই পানি তাড়াতাড়ি সেচে ফেলতে পেরেছে,, শাহারিয়া গিয়ে খাল টার পাশে দাঁড়ায়,,খাল টায় এখন শুধু কাদা আর ভেদা পলিমাটি ,, আর কিছু কচুরিপানার অবশিষ্টাংশও দেখা যাচ্ছে,, শাহারিয়া রিয়াদ কে বলে ,,

    – তুই আর কয়েকজন মিলে খাল টায় নাম ,, আর ঠিক মাঝখান টায় খুড়তে থাক ,,

    – কী বলিস ,, খাল টাকে খুরবো ? কিন্তু কেন ,, ?

    – আগে নাম ,, খুর , তারপরই নিজেই এর উত্তর পেয়ে যাবি ,,

    – তুই যে কখন কি বলিস ,, কিছুই বুঝিনা,, 

    বলেই রিয়াদ তার দুইজন কনস্টেবল দের ডাক দেয় এবং বলে ৩ টা কোদাল নিয়ে আসতে,,(কোদাল যেটা কৃষিকাজে মাটি খোড়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়) 

    ২ জন কনস্টেবল ৩ টে কোদাল ‌নিয়ে চলে আসে ,, তারপর রিয়াদ আর দুইজন কনস্টেবল খাল টায় নেমে পড়ে,, রিয়াদ তার পুলিশ ইউনিফর্মের প্যান্টের হাতা উঠিয়ে তার হাটুর উপর এনেছে ,, কনস্টেবল রাও তাই ,, তারপর তার একের পর এক কোপ দিয়ে খুরতে থাকে ঠিক খালের মাঝখান টায় ,, এদিকে আকাশে কালো মেঘ জমে চারদিক অন্ধকার হয়ে উঠতে থাকে ,, চারপাশে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে,, ঠান্ডা বাতাস যেন সবার গায়েই কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে ,, “শো শো” করে বাতাস বয়ে যাচ্ছে চারদিকে,,  হঠাৎ আকাশে একটা বড় বিজলী চমকিয়ে উঠে ,, শাহারিয়া রিয়াদকে বলতে থাকে ,,

    – একটু তাড়াতাড়ি কর ,, বৃষ্টি নামবে কিছুক্ষণের মধ্যেই,, 

    – করছি ,, মাটি টার যত ভিতরে যাচ্ছি,, ততটাই শক্ত হয়ে আসছে ,, (কোদাল চালাতে চালাতে রিয়াদ বলে) 

    – সমস্যা নেই একটু তাড়াতাড়ি কর ,,

    এদিকে চারপাশে বাতাস উঠেছে অনেক,, গাছ পালা গুলো বাতাসের জন্য দুলতে শুরু করেছে ,, আশেপাশের পরিবেশ যেন মুহুর্তের মধ্যেই ঝড়ের পরিবেশে রুপ নিচ্ছে ,, মাটিতে পরে থাকা গাছের পাতা,,‌পলিথিন সব উড়ে এদিক ওদিক যাচ্ছে,, রিয়াদ জোড়ে জোড়ে হাত চালিয়ে মাটি কোপাচ্ছে ,, ঠান্ডা বাতাস আর ধুলোবালিতে যেন তার চোখে মুখে পরে কাজের গতি কমিয়ে দিতে চাচ্ছে ,, কিন্তু রিয়াদ তারপরও চেষ্টা করছে যত তাড়াতাড়ি পাড়া যায় খুরে ফেলার,, এবং তখনই তার কোদাল টা মাটিতে ‌শক্ত কিছুর বাড়ি খায় ,, সে কোদাল টা রেখে হাত দিয়ে কিছুটা মাটি সরিয়েই দেখতে পায় একটা বড় হাড়ে তার কোদাল টা বাড়ি খেয়েছে,, রিয়াদ তার দুইজন কনস্টেবল দের বলে ,,

    ” দাঁড়াও দাঁড়াও,, এখানে একটু আস্তে কোদাল‌ চালাও ,, এখনে ,, এখনে কিছু একটা রয়েছে ,, ” জোড়ে ছুটে চলা বাতাস যেন তার কথা বলার গতিটাকেও কমিয়ে দিচ্ছে ,, রিয়াদের কথায় তারা আস্তে আস্তে কোদাল চালাতে থাকে ,, এবং ধীরে ধীরে মাটির ভিতর‌ থেকে বেড়িয়ে আসে একটা পা য়ের অবশিষ্টাংশ,, তারা তাদের কাজের গতি বাড়িয়ে দেয়,, এবং এবার কোদাল টাকে অতি সাবধানের সহিত চালাতে থাকে ,, শাহারিয়া খাল এর উপর থেকে থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে ,, সে যেন তার কিছু একটা সাফল্যের দাড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে ,, এদিকে বাতাসে গতি ‌বাড়তে থাকে ,, চারিদিকে অন্ধকার গাড় হতে থাকে ,, আকাশ থেকে এক ফোঁটা দু ফোটা করে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়,, এবং তখনি রিয়াদ খালের মাঝখান হতে চিৎকার করে বলে ,,

    ” দোস্ত,, তুই যা খুঁজছিলি ,, তা হয়তো,, তা হয়তো আমরা পেয়ে গিয়েছি ” 

    শাহারিয়া রিয়াদের কথাটা শুনে হকচকিয়ে খালের একদম পাড়টায় এসে দাড়ায় ,, বাতাসের ধাক্কা , উড়ন্ত ধূলাবালি হাত দিয়ে ঠেলে নিচের দিকে তাকায় ,, এবং দেখতে পায় ,,

    একটা সম্পূর্ণ মানব কঙ্কাল তারা মাটি খুঁড়ে বের করেছে ,, আকাশে তখনই একটা বিজলী চমকিয়ে উঠে ,, কঙ্কাল টার দুই পাশে রিয়াদ ও কনস্টেবল রা কোদাল হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে,, শাহারিয়া ঠোঁটে ভেসে উঠে একটা জয়ের হাসি ,, যেন সে ধাঁধার সমাধান পেয়ে গিয়েছে ,,এইবার সে এই খুন গুলোর রহস্যর উপর থেকে পর্দা টা উন্মোচন করবে ,, শাহারিয়া লাশ টার দিকে একনজরে চেয়ে মনে মনে বলতে থাকে ,,

     

    ” এই তাইলে সেই নুপুর,, যে  ঐ বৃষ্টি ভেজা রাতে ছিলো রক্তে লাল ,,‌! “

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    [তারমানে কী খালটায় পাওয়া নরকঙ্কাল টাই নুপুর ছিলো ? কী হয়েছিলো তার সাথে ? আর তার এই কঙ্কালের সাথে বর্তমানে চলা খুন গুলোর কী মিল রয়েছে ? কী হতে চলেছে এরপর? জানাবেন কেমন হচ্ছে 😊 ]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ১৭

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ১৮

    লেখক:: মির্জা সাহারিয়া 

     

    এদিকে বাতাসে গতি ‌বাড়তে থাকে ,, চারিদিকে অন্ধকার গাড় হতে থাকে ,,বাতাসে যেন গাছের ডালপালা গুলো একদম নুইয়ে পড়ছে ,, আকাশ থেকে এক ফোঁটা দু ফোটা করে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়,, এবং তখনি রিয়াদ খালের মাঝখান হতে চিৎকার করে বলে ,,

    ” দোস্ত,, তুই যা খুঁজছিলি ,, তা হয়তো,, তা হয়তো আমরা পেয়ে গিয়েছি ” 

    শাহারিয়া রিয়াদের কথাটা শুনে হকচকিয়ে খালের একদম পাড়টায় এসে দাড়ায় ,, বাতাসের ধাক্কা , উড়ন্ত ধূলাবালি হাত দিয়ে ঠেলে নিচের দিকে তাকায় ,, এবং দেখতে পায় ,,

    একটা সম্পূর্ণ মানব কঙ্কাল তারা মাটি খুঁড়ে বের করেছে ,, আকাশে তখনই একটা বিজলী চমকিয়ে উঠে ,, কঙ্কাল টার দুই পাশে রিয়াদ ও কনস্টেবল রা কোদাল হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে,, শাহারিয়া ঠোঁটে ভেসে উঠে একটা জয়ের হাসি ,, যেন সে ধাঁধার সমাধান পেয়ে গিয়েছে ,,এইবার সে এই খুন গুলোর রহস্যর উপর থেকে পর্দা টা উন্মোচন করবে ,, শাহারিয়া লাশ টার দিকে একনজরে চেয়ে মনে মনে বলতে থাকে ,,

     

    ” এই তাইলে সেই নুপুর,, যে  ঐ বৃষ্টি ভেজা রাতে ছিলো রক্তে লাল ,,‌! “

    রিয়াদ তখনই বলতে থাকে ,, 

    “দোস্ত এখন ,, এখন কী করবো ,, ঝড়ের বেগ তো বেড়েই চলছে ,, “

    – তুই ,, তুই তাড়াতাড়ি কঙ্কাল টাকে উপরে নিয়ে আয় ,, খুবই সাবধানে উঠাবি কিন্তু,, অনেক জোড়ে বইছে এই ঝড় ,, এই ঝড় আর থামবার নয় ,, আবহাওয়া প্রচন্ড খারাপ,, “

    শাহারিয়ার কথায় রিয়াদ ও বাকি দুইজন কনস্টেবল কাজে লেগে পড়ে ,, তারা আস্তে ধীরে সেই কঙ্কাল টাকে ধরে উপরের দিকে উঠতে থাকে ,, এদিকে শাহারিয়াও কিছুটা এগিয়ে যায় হাত লাগানোর জন্য,, কঙ্কাল টার যেন কোন ক্ষতি না হয় সেইজন্য খুবই সাবধানে তাড়াতাড়ি খাল থেকে কঙ্কাল টাকে উপরে তোলে ,, চারপাশ একদম অন্ধকার হয়ে গেছে ,, মনে হচ্ছে একটু পড়েই যেন রাত হয়ে যাবে ,, বাতাস আর ঝড়ের বেগ যেন ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে ,, তখনই সাইরেন বাজিয়ে একটা এম্বুলেন্স আমবাগানের গেইটের সামনে দাঁড়ায়,, শাহারিয়া আর রিয়াদ রা মিলে ধরে সেই কঙ্কাল টাকে সেই এম্বুলেন্সে তুলার জন্য সেটার দিকে ছুটে যেতে থাকে ,, ঐদিকে ইমন আর নিলয় রা মিলে ধরাধরি করে সেই খাল টায় পাওয়া মাথা বিহীন লাশটাকেও আনতে থাকে এম্বুলেন্সের দিকে ,, তাদের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে যেন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ ,, দৌড়াদৌড়ি করে তারা কাজ গুলো শেষ করছে ,, বাগানে থাকা সবাই সেই কঙ্কাল আর লাশ টাকে এম্বুলেন্সে কোনমতে উঠিয়ে যায়গা ত্যাগ করে ,, এখন আমবাগানে নেই কোন মানুষের চিহ্ন ,, তাদের এম্বুলেন্স চলে যাওয়া সাথে সাথেই আমবাগানের দরজা লাগিয়ে দেয় সেখানে পাহারায় থাকা দুইজন কনস্টেবল,, এরা বাগানের গেটের বাইরে পাহারা দেয় ,, তারা কোন মতো গেটের উপরের ছাওনির কারণে টিকে আছে এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে,, তাদের ভিজে যাওয়া শরীরে আবহমান হাওয়া যেন কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে,, তারপরও তাড়া কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের ডিউটি পালনে বদ্ধপরিকর,, 

     

    আনন্দ মোহন কলেজ ,, সব শিক্ষার্থীরা কলেজের রুম গুলোতে পরীক্ষা দিচ্ছে ,, নিচতলায় সিট পড়েছে সেতুর,, পরীক্ষা প্রায় তার শেষ দিকেই ,, কিন্তু শেষ হলেও সে মনে মনে ভাবছে ,, ” আজ মনে হয় আর তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা হবে না ,, কী ঝড় উঠছে বাবা গো বাবা ,,” ভাবতে ভাবতেই জানালা দিয়ে কলেজ মাঠের দিকে তাকায় সেতু ,, সেতুর রুমের পরেই ছোট্ট বারান্দা ,, আর তারপরই মাঠ ,, মাঠ টাও অনেক বড় যে তা নয় ,, অনেক বড়ও না একদম ছোটও না ,, মধ্যাম আকৃতির আয়তাকার মাঠ ,, আর সেতু বসেছে একদম জানালার সাইটে ,, তাই তার অবস্থান থেকে কলেজ মাঠ টা অনেক সুন্দর ভাবেই উপভোগ করা যাচ্ছে,, সে আনমনে চেয়ে আছে সেই মাঠের দিকে ,, দাঁত দিয়ে কলম কামড়াচ্ছে আর ভাবছে ,, “তার ভাইয়াকে ছাড়া এই প্রথম একলা থাকছে সে ,, পারবে তো ” 

    তখনই সেতু দেখতে পায় এই মুষলধারের বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও মাঠের মধ্যে একটা মেয়ে দৌড়ে আসছে ,, মেয়েটার শরীর বৃষ্টির পানিতে ভিজে চুপচুপে হয়ে গিয়েছে,, মেয়েটা হঠাৎ ই ভারী বৃষ্টির মাজ থেকে উদয় হলো মনে হচ্ছে ,, এবং তখনই সে দেখতে পায় মেয়েটার পিছনে কয়েকজন ছেলে দৌড়ে আসছে ,, “আকাশ একদম অন্ধকার হয়ে এসেছে,, বিজলী চমকিয়ে উঠছে আর তার মাঝে ভারি বর্ষণ,, এই সব কিছুর মাঝে ঐ মেয়েটার পিছনে কয়জন ছেলে কেন দৌড়াচ্ছে,,  ?” মনে হতে থাকে সেতুর ,, ঠিক তখনই মেয়েটা আর সেই ছেলেগুলোর চেহারাটা স্পষ্ট দেখা যেতে থাকে ,, সেতু মেয়েটার চেহারা দেখে চিনতে পারেনা ,, এই মেয়েটাকে সে কোনদিন ই দেখেনি ,, এই কলেজের কেউ হবে বলেও মনে হচ্ছে না তার ,, তাহলে সেই মেয়েটাই বা কে ,, তখনই সেতু দেখতে পায় সেই মেয়েটাকে ধাওয়া করতে থাকা ছেলেদের চেহারা ,, এবং সেতু সাথে সাথেই আতকে উঠে,, সে দেখে সেখানকার ছেলেদের মধ্যে হরিশপুর গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলে আরিফও আছে ,, কিন্তু সে তো জানে যে আরিফ নিখোঁজ,, তাকে কিডনাপ করা হয়েছে ,, কিন্তু এখানে কীভাবে,, ? আর তারপর বাকি ছেলেদের দিকে চোখ দিতেই তার চক্ষু চড়কগাছ,, “আরে তাদের মধ্যে তো আমার ভাই সিয়াম ও রয়েছে ,, কিন্তু এটা কীভাবে হতে পাড়ে ,, সিয়াম ভাইয়া তো আজকেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে সেই সকালে,, সে আরেকটা জিনিসও লক্ষ করে ,, এখনে থাকা সব ছেলেকে এমন কী তার ভাইকেও অনেক ইয়াং দেখা যাচ্ছে,, তার ভাইয়ের গাল একদম ক্লিন সেভ ,, আর আরিফের গালেও কোন দাড়ি নেই ,, কিন্তু এ কীভাবে সম্ভব,, সেতুর ভাই সিয়ামের তো এখন গালে দাড়ি আছে ,, মোছ ও আছে কিছুটা ,, এবং দেখে যে মেয়েটা দৌড়াতে দৌড়াতে পড়ে গিয়েছে কোন কিছুতে পা লেগে ,, এবং সেই ৪ জন আস্তে আস্তে সেই মেয়েটার দিকে এগুচ্ছে,,  সেতু মাঠের দিক থেকে চোখ সরিয়ে খাতার দিকে ফিরে বসে ,, সে হাত দিয়ে চোখ কচলাতে থাকে ,, ” ভাবতে থাকে এ কি ভুলভাল দেখছে সে ,, এসব কী করে সম্ভব ,, ” সেতু চোখ কচলিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করতে থাকে ,, এবার আবার সে মাঠের দিকে তাকায় ,, কিন্তু এবার কার ঘটনা যেন তাকে এতোটাই অবাক করে দেয় যে তার চোখ গুলো পর্যন্ত বড় বড় হয়ে যায় ,, সে দেখে বারান্দার ওপাসেই মাঠে একটা বিছানা ,, হাসপাতালে রোগীদের যেই বেড গুলাতে রাখে সেই বেড গুলা ,, আর বিছানার পাশেই একটা টেবিল,, সেখানে কাঁচি, দাঁ ,সহ আরো নানা কাটা কাটির জিনিসপত্র,, তার পাশেই একটা উঁচু কিছুর উপর একটা চুলা ,, এ যেন দেয়াল বিহীন একটাই ঘর ,, সেতুর থেকে মাত্র ৫-৬ হাত দূরে এসব কিছু,, সেতু সব জানালা দিয়ে দেখছে ,, মাঠের মধ্যে এসব আসলো কোথা থেকে ,, আর এবার সেতূ দেখে সেই মেয়েটাকে,, তাকে একদম উলঙ্গ করে তার হাত দুটো সেই খাটের উপরের দুই কোনের সাথে,, আর পা দুটো খাটের নিচের দুইকোনের সাথে বেঁধে রাখা ,, একদম X অক্ষর টার মতো দেখাচ্ছে এখন সেই মেয়েটাকে ,, তার পাশে ৪ জন ছেলে দাঁড়ানো ,, সে দেখে আরিফ এসে সেই মেয়েটার পাশে দাড়ায় ,, মেয়েটা আকুতি করছে ,, কাঁদতে কাঁদতে বলছে ,,”আমায় ছেড়ে দেও ,, আমি বাড়ি যেতে চাই ,, আমায় মেরোনা তোমরা ,,” কিন্তু ছেলেগুলো যেন তার আকুতিতে আরো মজা নিচ্ছে,, আরিফ গিয়ে সেই মেয়েটার স্তন নিয়ে খেলা করতে থাকে ,, বাকি ছেলেরা তা দেখে হাসছে মজা নিচ্ছে,, মেয়েটা কান্নায় ভেঙে পড়েছে ,, মেয়েটার দুঃখ দেখে যেন ছেলেগুলোর ভালো লাগছে ,, সিয়ামও হাসছে ,, এবং তখনই একটা ছেলে এসে আরিফের হাতে একটা কাঁচি দেয় ,, আরিফ কাঁচি টাকে খুলে কাঁচির এক প্রান্ত উপরে উঠিয়ে জোড়ে মেয়েটার স্তনের উপর ঢুকিয়ে দেয় ,, মেয়েটা এই হঠাৎ আঘাতে এক জোড়ে চিৎকার দেয় ,, ছেলেরা সেই চিৎকার দেখে মজা নিচ্ছে,, আরিফ স্তনের ভিতর ঢুকানো কাচির অংশটা আসতে আসতে ঘুরাতে থাকে ,, ব্যাথায় মেয়েটা আর্তনাদ করছে ,, তার আর্তনাদ দেখে ৩ জন ছেলে অনেক আনন্দ পাচ্ছে ,, এরপর সিয়াম কিছু লম্বা লম্বা পেরেক ও দুটো লোহার হাতুড়ি এনে আরিফের সামনে রাখে ,, পেরেক গুলো বড় বড় ,, ৩ ইন্চি হবে একেকটা,, আরিফ এরপর একটা একটা করে পেরেক নিতে থাকে ,, আর মেয়েটার পেটের উপর রাখে ,, রেখে জোড়ে হাতুড়ি উঁচিয়ে এক কোপ দিতেই পেরেক টা মেয়েটার শরীরে একদম গুজে যাচ্ছে,, আর মেয়েটা জন্ত্রনায় চিৎকার দিচ্ছে ,, এভাবে একটা একটা করে পেরেক গেথে মেয়েটার স্তনের নিচ থেকে তলপেট পর্যন্ত গেঁথে ভরিয়ে ফেলেছে আরিফ ,, মেয়েটা যেন তার চিৎকার করার শক্তিটাও হারিয়ে ফেলেছে ,, মুখ দিয়ে শুধু আস্তে আস্তে বলছে ,, ” তোমরা যা করতে বলবে আমি করবো ,, আমাকে ছেড়ে দাও ,, আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে ,, আমি সহ্যা করতে পারছিনা ,, আমায় ছেড়ে দাও ,,”

    ছেলে গুলো যেন তার কথাও হেসে আরো লুটোপুটি খাচ্ছিলো,, সেতূ এসব দেখে তার মুখে হাত দিয়ে দেয় ,, সেতুর চোখের কোন থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে ,, তখনই দেখে তার ভাই সিয়াম একটা প্লাস আনে ,, প্লাস টা নিয়ে সিয়াম মেয়েটার মুখে সামনে যায় ,, আরিফ মেয়েটার পাশেই বসে আছে,, বাকি দুইজন ছেলে যায় সিয়ামের কাছে ,, সিয়াম তাদের ইশারা দেয় ,, তখনই তারা মেয়েটার মুখ টা টেনে জোড়ে খুলে ধরে ,, আরেকটু হলে যেন তার চোয়াল টাই ছুটে আসবে ,, মেয়েটা জন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে,, হাত গুলো দিয়ে বিছানার চাদর টা মুড়িয়ে ধরছে,, সিয়াম প্লাস টা দিয়ে মেয়েটার উপরের চোয়ালের একটা দাঁত চেপে ধরে ,,একটা হাত দিয়ে বিছানার কোন টা ধরে আরেকটা হাত দিয়ে দাঁতে আটকানো প্লাস টা জোড়ে টান দেয় ,, এবং সাথে সাথেই মেয়েটা একটা আত্ম চিৎকার দিয়ে উঠে ,, তার একটা দাঁত সিয়াম প্লাস দিয়ে উঠিয়ে ফেলছে ,, মেয়েটা যেন কার কাঁদতেও পারছেনা ,, তার চোখের কোনা দিয়ে খালি পানি গড়িয়ে পরছে ,, এভাবে একটার পর একটা ,, একটার পর একটা করে দাঁত প্লাস দিয়ে খুলতে থাকে সিয়াম ,, প্রতিবারই যখন সিয়াম দাঁতে আটকানো প্লাস টা ধরে টান দেয় তখনই মেয়েটার দেহ কাঁপুনি দিয়ে উঠৈ ,, এরকম করে তারা সেই মেয়েটার উপরের চোয়ালের সবগুলো দাঁত খুলে ফেলে ,, রক্ত এতো পরিমাণ বের হচ্ছে বলার মতো না,, এদিকে পেরেক দিয়ে করা ফুটো গুলোর জন্যেও মেয়েটার শরীর থেকে ফোটায় ফোটায় রক্ত বের হতেই থাকছে ,, মেয়েটা যেন কাঁদার শক্তি টুকুও হারিয়ে ফেলেছে ,, এরপর আরিফ উঠে আসে ,, এসে সিয়ামের হাত থেকে প্লাস টা নেয় ,, এবং ইশারায় বাকিদের অন্য দিকের কাজে যেতে বলে ,, তখনই সিয়াম গিয়ে টেবিলের উপর থেকে একটা হলুদ ও একটা মরিচের গুঁড়ার প্যাকেট নিয়ে আসে ,, এদিকে আরেকজন একটা ছোট ব্লেড দিয়ে আসে ,, এবং আরেকজন যায় চুলার কাছে এবং গিয়ে ফুটন্ত গরম পানির পাতিল নামিয়ে মেয়েটার দিকে আনতে থাকে ,, এনে সে মেয়েটার পাশে দাড়ায় ,, তারপর আরিফ ইশারায় তাদের পজিশন নিতে বলে ,, বাকি তিন জন একদম মেয়েটার চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়ায় তাদের সাথে আনা জিনিসগুলো নিয়ে ,, আরিফ হাসতে হাসতে মেয়েটার মুখের ভিতরে প্লাস টা ঢোকাতে থাকে ,, কিন্তু দাঁত গুলো তো নেই তাহলে কী করবে ?? এদিকে প্লাস টা মেয়েটার মুখে ঢুকাতে যাওয়ার সময় মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে শেষ আকুতি করছে ,, শেষ আকুতি কেন জানেন ?? কারণ আরিফ প্লাস টা দিয়ে মেয়েটার জিহ্বা টা একদম চেপে ধরে ছিলে ,, ধরে আরিফ মুখ টা ঘুড়িয়ে বাকি ছেলেদের দিকে ফিরায় ,, এবং তখনই সিয়াম মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত দিয়ে তার হাতে থাকা লবণ, মরিচের গুঁড়ার প্যাকেট টা মেয়েটার ফুটো হয়ে থাকা শরীরটার উপর ঢালতে থাকে ,, মেয়েটা জন্ত্রনায় ছটফট করছে ,, সে যেন এখন মৃত্যুকেই স্মরণ করছে এই জন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য,, সিয়াম সেই মেয়েটার যন্ত্রনা দেখে হাসছে এক ভয়ানক হাসি ,, এবং তখনই আরেকজন তার গলায় ব্লেড দিয়ে ছোট ছোট ক্ষত করতে থাকে ,, মেয়েটা জন্ত্রনায় খালি হাত পা ছুটি ছুটি করছে,, কিন্তু সেগুলো বিছানার সাথে বাঁধা থাকায় বিছানাটা সহ কাঁপছে,, এবং তখনই আরিফ হাসতে শুরু করে ,, এবং হাসতে হাসতে এক জোড়ে টান মারে প্লাস দিয়ে মেয়েটার জিহ্বা টাকে ,, মেয়েটার জিহ্বাটা ছিঁড়ে বের হয়ে আসে তার প্লাসের সাথে ,, এবং তখনই আরেকজন ফুটন্ত গরম পানিটা সম্পূর্ণ সেই মেয়েটার উপর ঢেলে দেয় ,, মেয়েটা আর চিৎকার করতে পারেনি ,, জবাই করা মুরগির মতো খালি ছটফট করছিলো ,, এবং ছটফট করতে করতে তার কামনা করা মৃত্যু তার কাছে এসে ধরা দেয়,, মেয়েটা শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর মাধ্যমে এই নরপিশাচ গুলোর জন্ত্রনা থেকে মুক্তি পায় ,, শেষ হয় মেয়েটার জীবন অধ্যায় ,, মেয়েটার চোখ গুলো এখনো খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে,, শুধু চোখে কোন থেকে শেষ ফোটা পানিটা গড়িয়ে পড়ে যায় ,,

     

    সেতু এসব দেখে চিৎকার করে উঠে ,, আকাশেও তখনই একটা বিজলী চমকিয়ে উঠে ,, সেতু চিৎকার দিয়ে তার নজর ঐদিক থেকে ঘুড়িয়ে নিজের পরীক্ষার টেবিলের উপর দেয় সেতুর চিল্লানি তে পরীক্ষার হলের সবাই তার দিকে ফিরে তাকায় ,, হলে থাকা গার্ড দ্রুত তার কাছে আসে ,, এসেই জিগ্গেস করতে থাকে ,,

    – কী হয়েছে ,, তুমি এমন করে চিল্লায় উঠলে কেন ,, ? কোন সমস্যা,, ? (কৌতূহল নিয়ে জিগ্গেস করে ম্যাডাম)

    – ম্যাম ,, ঐদিকে ,, ঐদিকে ওরা ,,ওরা মেয়েটাকে মেরে ফেলছে ম্যাম ,, (বলেই কান্না করে দেয় সেতু)

    সেতু হাত দিয়ে মাঠের দিকটায় দেখায় ,, কিন্তু ম্যাডাম বা হলে থাকা বাকিরা যখন সেদিকে তাকায় ,, তারা দেখে একদম ফাঁকা মাঠ ,, মাঠের মধ্যে কিছুই নেই ,, ম্যাম বলে উঠে ,, 

    – কই ,, এখানে তো কিছুই নেই ,, 

    সেতু ফিরে আবার সেদিকে তাকায় ,, এবং দেখে আসলেই সেখানে কিছুই নেই,, সম্পূর্ণ ফাঁকা আর মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে,, সে একদম অবাক হয়ে যায় ,, বলতে থাকে ,,

    – ম্যাম ,, এখানে,, এখানে একটা মেয়েকে ৪ জন মিলে হত্যা করেছে ,, আমি নিজ চোখে দেখেছি,, (কাঁদতে কাঁদতে বলে সেতূ)

    – কোথায় সেই মেয়ে ,, আমরা তো সম্পূর্ণ ফাঁকা দেখছি ,, 

    – কিন্তু এখানে তো তখন ছিলো,, কোথায় গেলো এক মুহুর্তেই ,,

    – সেতু তুমি ঠিক আছো তো ? পরীক্ষার চাপে মনে হয় তোমার ভাবনায় ভুলভাল কিছু ভেবেছো ,, চেয়ে দেখো সেখানে কোন কিছুই নেই,,

    – কিন্তু ম্যাম একটু আগে আমি দেখেছি (একটু থেমে) ,, মেয়েটাকে কী কষ্ট দিলো ,, মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছিলো ,, আমি দেখেছি এখানেই ,, (মাঠের দিকটায় আঙ্গুল দিয়ে বলতে থাকে সেতু)

    – তাইলে আমরা দেখছিনা কেন ,, ? তুমি দেখে থাকলে আমাদেরও দেখার কথা ,,

    – এখানেই তো ছিলো ,, কোথায় গেলো,, 

    – সেতু তুমি নিজেকে সামলাও ,, পরীক্ষা হয়ে গেলে তুমি খাতা জমা দিয়ে যেতে পারো,, পড়ালেখার চাপে হয়তো তোমার মাথাটা একেবারেই গেছে ,, (বলেই গার্ডে থাকা ম্যাডাম তার নিজের যায়গায় আবার ফিরে যায় ,, সবাই আবার আগের মতো পরীক্ষা দিতে থাকে শান্ত হয়ে ,, এদিকে সেতু কলম টা হাতে নিয়ে খাতার উপর ধিরে ধিরে হাত চালাতে থাকে,, মাথায় তার বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে সেই ঘটনা টা ,,  “আসলেই কী সে এসব দেখেছিলো? নাকি সবই তার মনের ভুল,,” এক দৃষ্টিতে খাতার দিকে তাকিয়ে ভাবাতে থাকে সেতু,,

     

    আনিকা তার বিছানায় বসে আছে ,, বিছানা টা ঘরের জানালার সাথে লাগানো,, ঘরের দরজা সে বন্ধ করে রেখেছে,, সে সবসময় একলা থাকতে পছন্দ করে ,, কিন্তু তার ভাই আরমানের ইদানিং কার আচরণ তাকে ভাবিয়ে তুলছে ,, আরমান আগে তো এমন ছিলো না ,, এখন কেমন জানি ভয়ে ভয়ে থাকে ,, তার ঘর থেকে কাঁটা আঙ্গুল পাওয়া যায় ,, আবার তখন হঠাৎ চিৎকার করতেছিলো ,, কী হচ্ছে এসব ,, কিছুই আনিকার মাথায় ঢুকছে না,, তখনই তার মনে পরে,, আরমান তার ঘরে একটা বই খুঁজতে এসেছিলো ,, “পুনর্জন্ম” ছিলো বইটার নাম,, কিন্তু বইটা পরে তো সে নিজেই আরমানের ঘরে পায় ,, ওটার উপর পা পড়ে এতো ব্যাথা পেয়েছে যে সেই ব্যাথাটা এখনো যায় নি,, সে তার বালিশের নিচ থেকে বইটাকে বের করে নিয়ে আসে ,, এসে জানালার সামনে বসে ,, ঘরে কারেন্ট নেই ,, ঘর একদম অন্ধকার,, দিনের সময় এখন ১১ টা ,, কিন্তু আবহাওয়া দেখে মনে হচ্ছে এখন যেন সন্ধ্যা,, একটু পরই রাত নামবে ,, সে জানালার সামনে এসে বসে একটা বালিশ নেয় তার কোলে ,, নিয়ে সেই বালিশের উপর সেই “পুনর্জন্ম” বই টা রাখে ,, বেশ ভারি আছে বইটা ,, আজ সে পড়ে দেখবে বই টার ভিতরে কী এমন জিনিস আছে যার জন্য আরমান ভাইয়া এই বইটাকে এতো হন্য হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিলো ,, তবে বইয়ের মলাট টা দেখে তার একটু ভয় ই হচ্ছে ,, মলাট টা দেখতে অনেক ভয়ংকর আর পুরোনো ,, সে একদম জানালার সামনাসামনি বসা ,, সে ভয় টাকে কিছুটা দূর করে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বলে বইটা খুলে ফেলে,, বইয়ের মলাট খুলে সে প্রথম পৃষ্ঠা টায় কিছু লেখা দেখতে পায় ,, লেখাটা এমন ছিলো যে ,, 

    “নতুন দুনিয়ায় তোমাকে স্বাগতম ,, 

    এই বইয়ে রয়েছে তিনটা ধাপ ,, 

    প্রথম ধাপে তুমি বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় যেই প্রশ্ন টাই লিখবে ,, তার উত্তর সেই পাতায় ভেসে উঠবে ,, হোক সেটা অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন,, সবই তুমি জানতে পাবে সেখানে ,, 

    দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে একটা চক্র বিশেষ,, 

    যার নাম পুনর্জন্ম চক্র ,, 

    এই চক্রের মাধ্যমে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় কালোজাদুর সাহায্য তুমি মৃত লাশ কে জীবিত করতে পারবে ,, লাশ টা হোক অনেক পুরোনো ,, শুধু তোমার কাছে লাশের কোন না কোন অংশ বিশেষ থাকতে হবে ,, এবং তবেই তুমি লাশ টাকে জীবিত করতে পারবে ,,

    তৃতীয় ধাপে রয়েছে ,,,,,,,,,,,,,

    আনিকা আর তৃতীয় ধাপ টা পারেনা,, কারণ সে প্রথম ধাপ টা একবার ট্রাই করতে চায় ,, প্রথম ধাপ টা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে তার কাছে ,, সে ভাবে যে এই বই টা কী আসলেই বিশেষ কিছু ? নাকি শুধু মজা করে এসব লেখা,, সে এটা যাচাই করার জন্য সূচির পৃষ্ঠাটা বদলিয়ে পরবর্তী ১ম পৃষ্ঠায় যায় ,, এবং এখানে বড় বড় করে লেখা আছে ,, 

    “নিচের ঘরে প্রশ্নটি লেখো” এবং লেখাটার নিচে একটা ঘর দেওয়া,, আনিকা খুবই এক্সাইটেড হয়ে পড়ে জিনিস টার জন্য,, এদিকে বাইরের আবহাওয়ার কোন পরিবর্তন নেই,, এখন যেন মনে হচ্ছে ঝড় আরো বেশি শক্তি প্রদর্শন করছে ,, এদিকে অনিকা একটা কলম আনে ,, এনে আগে বইটাকে যাচাই করার জন্য ‌লেখে যে ,,

    ” আমার জন্মদিন কোন মাসের কয় তারিখ ” 

    এবং পরক্ষনেই প্রশ্নের নিচে উত্তর টা ভেসে উঠে ,, 

    “২৪শে এপ্রিল”

    আনিকা এবার বুঝে যায় যে এইটা আসোলেই একটা অলৌকিক বই ,, সে এরপর বক্স টাতে আবার একটা প্রশ্ন লেখে ,, 

    “আমি এবার কলেজে সিজিপিএ কত পয়েন্ট পাবো ?”

    এই প্রশ্নটা লেখার সাথে সাথেই আগের প্রশ্ন ও উত্তর টা গায়েব হয়ে যায় ,, এবং এই প্রশ্নের উত্তরে ভেসে উঠে না ,, সে এবার একটু অবাক হয়ে যায় ,, সে তো নিয়মাবলী তে পরেছিল ভবিষ্যত প্রশ্নের উত্তর ও পাবে ,, কিন্তু এখন তো কিছুই লেখা উঠছে না ,, তারপর সে লেখে,,

    ” তার বয়ফ্রেন্ড সাদিক কত সিজিপিএ পাবে ,,?”

    এবং পরক্ষনেই আগের প্রশ্ন গায়েব হয়ে গিয়ে এটার উত্তর ভেসে উঠে ,, “৪.৫০ পয়েন্ট পাবে “

    আনিকা অনেক খুশি হয়ে উঠে ,, যাক আলহামদুলিল্লাহ তার সঙ্গি ভালো একটা রেজাল্ট ভবিষ্যতে আনতে পারবে এটা ভেবেই তার অনেক খুশি লাগতেছে ,, তখনই তার মনে একটা কোতুহলী প্রশ্ন আসে ,, সে কলম টা হাতে নেয়,, এবং সেই প্রশ্নটা বক্সে লেখে ফেলে,, এবং লেখার সাথে সাথেই আগের প্রশ্ন উত্তর গুলো গায়েব হয়ে যায় ,, এবং এবার আনিকা লিখেছিলো ,, 

    ” আমার মৃত্যু কবে হবে ,, এবং সেই সময়টা দিন থাকবে নাকি রাত ,, এবং কয়টা বাজবে তখন”

    প্রশ্নটা ‌লেখার পর পরই যা উত্তর ভেসে উঠলো ,, তা দেখে আনিকার চোখ একদম বড় বড় হয়ে যায় ,, আকাশে তখনই একটা বড় বিজলী চমকিয়ে উঠে ,, জানালা দিয়ে তার এক চিমটে আলো ঘরে প্রবেশ করেই আবার মিলিয়ে যায় ,, উত্তর টা ছিলো,, 

    “দুইদিন পর তার মৃত্যু হবে ,, এবং মৃতুকালে সময় হবে রাত ২ টা ৩৮ মিনিট “

    আনিকার হাত থেকে কলম টা পড়ে যায় ,, তার গলা একদম শুকিয়ে আসে ,, এ কী দেখছে সে ,, এটা হতে পারেনা,, এটা অসম্ভব বলেই বই টাকে কোল থেকে ফেলে দিয়ে পিছিয়ে আসে সে ,, তার ঘরটা একদম অন্ধকার,, সেই পিছনে পিছিয়ে বসে বলতে থাকে ,, “এইসব ফেইক ,, এটা নিশ্চিত কোন প্রাংক করার ডিভাইস ,, আমি এটা বিশ্বাস করি না,, ” এবং তখনই তার পিছনে থেকে কে যেন তার কাঁধে হাত দেয় ,, হাত টা খুবই ঠান্ডা,, সে এবার একদম ভয়ে থ হয়ে যায় ,, তার ঘরের দরজা সে নিজে বন্ধ করে এসেছে ,, ঘর টা একদম অন্ধকার,, তাইলে তার কাঁধে এখন কে হাত দিলো ,, তার মাথা বেয়ে ঘাম ঝড়ে পরছে ভয়ে ,, সে আস্তে আস্তে পিছনে ফিরে তাকাতে থাকে ,, এবং সে পিছনে ফিরে তাকিয়ে যা দেখে তা যেন কেউ স্বপ্নেও দেখার চিন্তা করবে না,,  ওর চোখ মুখ বড় হয়ে যায় এবং সে জোড়ে এক আত্মচিৎকার দেয় ,, কারণ তার পিছনে আর কেউ নয় ,, ছিলো তার ভাই আরমান ,, যার মুখের একপাশ ছিলো সম্পূর্ণ রক্ত মাংস বিহীন কঙ্কাল ,,

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    ((এই গল্পের সবগুলো পর্বের লিংক 👇

    https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=195116923177126&id=100080364595427&mibextid=Nif5oz))

     

    [সেতু ঐসময় জানালা দিয়ে যেই মেয়েটাকে মরতে দেখেছিলো সে কে ছিলো ? আর সেতুই বা কেন সেটা দেখতে পেলো ,, বাকিরা কেন নয় ? আর আরমানের ও সেই বই “পুনর্জন্ম” এর রহস্য টাই বা কি ? আনিকার কী তবে মৃত্যু হতে চলেছে ? কী হতে চলেছে এরপর ? জানাবেন কেমন হচ্ছে 😊 ]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ১৮

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ১৯

    লেখক:: মির্জা সাহারিয়া

     

    “দুইদিন পর তার মৃত্যু হবে ,, এবং মৃতুকালে সময় হবে রাত ২ টা ৩৮ মিনিট “

    আনিকার হাত থেকে কলম টা পড়ে যায় ,, তার গলা একদম শুকিয়ে আসে ,, এ কী দেখছে সে ,, “এটা হতে পারেনা,, এটা অসম্ভব” বলেই বই টাকে কোল থেকে ফেলে দিয়ে পিছিয়ে আসে সে ,, তার ঘরটা একদম অন্ধকার,, সে পিছনে পিছিয়ে বসে বলতে থাকে ,, “এইসব ফেইক ,, এটা নিশ্চিত কোন প্রাংক করার ডিভাইস ,, আমি এটা বিশ্বাস করি না,, ” এবং তখনই তার পিছনে থেকে কে যেন তার কাঁধে হাত দেয় ,, হাত টা খুবই ঠান্ডা,, সে এবার একদম ভয়ে থ হয়ে যায় ,, তার ঘরের দরজা সে নিজে বন্ধ করে এসেছে ,, ঘর টা একদম অন্ধকার,, তাইলে তার কাঁধে এখন কে হাত দিলো ,, তার মাথা বেয়ে ঘাম ঝড়ে পরছে ভয়ে ,, সে আস্তে আস্তে পিছনে ফিরে তাকাতে থাকে ,, এবং সে পিছনে ফিরে তাকিয়ে যা দেখে তা যেন কেউ স্বপ্নেও দেখার চিন্তা করবে না,,  ওর চোখ মুখ বড় হয়ে যায় এবং সে জোড়ে এক আত্মচিৎকার দেয় ,, কারণ তার পিছনে আর কেউ নয় ,, ছিলো তার ভাই আরমান ,, যার মুখের একপাশ ছিলো সম্পূর্ণ রক্ত মাংস বিহীন কঙ্কাল ,, এবং আরেকপাশের মাংস গুলো যেন পচে গলে পড়ছে ,, বাকি পুরো শরীর টা থেকে পঁচা গলা মাংস গুলো খুবলে খুবলে পড়ছে ,, ছোট দুটো একদম লাল ,, আনিকা এসব দেখে একদম পিছিয়ে পিছিয়ে পিছনের দেয়ালের সাথে পিঠ লাগিয়ে দেয় ,, তার ৫-৬ ইন্চি পাশেই জানালা ,, সেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করা আরমান এক ভারি ভৌতিক কন্ঠে বলতে থাকে ,,” তোর মৃত্যু কার হাতেই হবে জানিস ,, ? আমার হাতেই ,, হা হা হা হা ” এবং অট্টহাসি হাসতে থাকে আরমান ,, আনিকা হাত জোড় করে বলছে,, “আমাকে ছেড়ে দেও ,, আমাকে যেতে দেও ,,মা,,আমাকে বাচাও ,, মা ,,,,, ” বলেই চিৎকার দিয়ে কান্না করতে থাকে আনিকা ,, এবং তখনই আরমানের ভয়ংকর দেহ টা তার দিকে আসতে থাকে ,, আনিকা ভয়ে হাত-পা একসাথে করে গুটিসুটি হয়ে যায় ,, সেই অর্ধ গলিত ভয়ংকর আরমানের লাশ টা আস্তে আস্তে তার দিকে এগুতে থাকে ,, ” আমায় ছেড়ে দেও ,, আমার কাছে আসবে না ,, মা,,,,,, আমাকে বাঁচাও,, আমি মরতে চাই না ,,” কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে আনিকা ,, এদিকে লাশ টা আস্তে আস্তে তার কাছে এসে পড়ে ,, আনিকা একদম ভয়ে গুটিসুটি হয়ে হাত দিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে রেখেছিলো,, এবং তখনই তার বাড়ির বাইরে টা দেখানো হয় ,, এবং আমরা শুনতে পাই আনিকা এক জোড়দার আত্মচিৎকার ,, আকাশে বিজলী চমকিয়ে উঠে,,

     

    রিয়াদের পুলিশ স্টেশন দেখানো হয় ,, রিয়াদ , শাহারিয়া , ইমন , নিলয় একটা রুমে বসে আছে ,, তারা কি বিষয় নিয়ে যেন আলোচনা করছে ,, তাদের পাশের রুমেই শাম্মী আর কল্পনা আজকের পাওয়া দুটি লাশের ময়নাতদন্ত করছে ,, আকাশের বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমেছে ,, তবে অন্ধকার হয়ে আছে এখনো আকাশ ,, রিয়াদের পুলিশ স্টেশনেও কারেন্ট নেই ,, সেখানকার জানালা দিয়েই যা আলো প্রবেশ করেছে তাই দিয়েই ঘরের ভিতর টা আলোকিত হয়ে আছে ,, রিয়াদ তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় ,, আস্তে আস্তে মেঝেতে পায়চারি করতে থাকে ,, বলতে থাকে ,,

    – আজকে যে ঐ খালে একটা আস্ত কঙ্কাল উদ্ধার করতে পারবো ,, তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি,, আচ্ছা দোস্ত,, তোর মাথায় এই কথাটা কীভাবে আসলো যে ঐ খাল টায় একটা কঙ্কাল আছে ,, আর ঐ কঙ্কাল টা নুপুরের ই ?

     

    শাহারিয়া চেয়ারটা ঘুরিয়ে তার দিকে নেয় ,, বলতে থাকে ,,

    – তৃতীয় ছন্দ সংকেত টার কথা মনে আছে ? 

    – কোনটা যেটা আহাদের অটো থেকে পেয়েছিলাম ঐটা ? 

    – হ্যা ,, ঐখানে প্রথম আর দ্বিতীয় লাইটায় লেখা ছিলো ,, “সেই রাতে নুপুর হয়ে ছিলো রক্তে লাল ,, যার প্রমাণ হয়ে এখনো রয়েছে সেই মধ্যস্ত খাল” এই কথাটা দাঁড়াই আমি বুজে গেছিলাম যে ঐ খাল টা কোন কিছুর সাক্ষি বা প্রমাণ হয়ে আছে ,, এমন কিছুর প্রমাণ ,, যা বর্তমানকার চলা খুন গুলোর রহস্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত,,

    – কিন্তু খাল টা খুড়লেই যে লাশ টা আমরা পাবো ,, এটা তোর মাথায় কীভাবে আসলো ,, ?

    – পরের লাইনেই আছে এর উত্তর,, “খুঁজতে থাকো খুরতে থাকো , যদি হাতে কিছু মিলে ,,” এতেই বুজা যাচ্ছে যে খাল টাতে খুঁজতে বলা হয়েছে কিছু,, আর সেই খোঁজটা আমাদের খালটাকে খুরার মাধ্যমেই চালাতে হবে ,,

    – বাহ্ বাহ্,, এতো কিছু কীভাবে আসলো তোর মাথায় ,, আমি চিরকুট গুলা নিয়ে কাল সারারাত ভাবছি,, তাও কোন উত্তর পাইলাম না ,, আর তুই এতো তাড়াতাড়িই পেয়ে গেলি ,, ?

    – গোয়েন্দাতে জব করি ,, এইসব ছন্দের রহস্য আমাদের হরহামেসাই বের করতে হয় ,, তো এখন আমাকে বল যে তোকে যে ইনফরমেশন বের করতে বলেছিলাম,,করছিলি ?

    – কোনটা ,, ? ও ও ও ,, মনে পড়ছে ,, ঐযে যারা মারা গেলো তাদের কলেজ লাইফের সকল ইনফরমেশন গুলো ,, ? দাঁড়া ওগুলো আনতে বলছি ,, (বলেই রিয়াদ নয়ন কে ডাক দেয়,, দিয়ে তাকে পাশের রুম থেকে কাগজ গুলো নিয়ে আসতে বলে ,, নয়ন চলে যায় কাগজ গুলো আনতে ,, এদিকে রিয়াদ আবার শাহারিয়াকে বলতে থাকে ,,

    – আচ্ছা , এইগুলো এখনকার কী কাজে লাগতে পারে? তাদের কলেজ লাইফ তো সেই ৬-৭ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে ,, এতো দিন পর এসে তাদের মৃত্যুর সাথে তাদের কলেজ লাইফের কী সম্পর্ক ? 

    – ছন্দের শেষের লাইনটা মনে আছে ? 

    – কোনটা ? যেটার মাধ্যমে নুপুরকে খুঁজে বের করলি ওটা ? 

    – হ্যা ,, ওটাই ,, ওটার শেষের লাইনটা কী ছিলো মনে আছে ?

    – হ্যা আছে ,, ঐযে ঐখানে বলছিলো যে ,, “ইতিহাসের পাতা ঘাটতে থাকো, যেথায় তুমি একদিন ছিলে” 

    – এখানে তুমি দ্বাড়া কাকে সম্মোধন করা হইছে বল তো? 

    – তুমি দ্বাড়া ? তুমি দ্বাড়া তো মনে হয় তোকে সম্মোধন করছে ,, 

    – চিরকুট টা সবার আগে কে হাতে পাইছিলো ? 

    – আমি পাইছিলাম ,, আহাদের অটোরিকশার সিটের উপরে,, 

    – কাগজ টা যে সবার আগে তোর হাতেই পড়বে সেটা খুনি ভালো করেই জানত,, তাই এই শেষের লাইনের “তুমি” কথাটা দ্বাড়া আর কেউ নয়, তোকেই বুঝাইছে ,, 

    – আরে আরে কী বলিস,, এই ছন্দ চিরকুটে আমি ? আমার সাথে এই কেসের তো কোন সম্পর্কই নাই ,, 

    – তোর মনে আছে ,, স্কুল লাইফ শেষ করার পর আমি দিনাজপুর জেলা শহরের কলেজে গিয়ে ভর্তি হই ,, আর তুই এই গ্রামেরই আনন্দ মোহন কলেজে ভর্তি হয়েছিলি ? 

    – হ্যা মনে আছে ,, কিন্তু এই কথা এখানে কেন,, ?

    – তোর ব্যাচের যে আরিফ আরমান রা,, সেটা কী তুই ভুলে গেছিস ? 

    – ও ও ও ,, আসলেই তো ,, আমার ব্যাচের ই তো ওরা ,, কিন্তু ওরা আলাদা শাখায় অধ্যায়ন রত ছিলো বিধায় ওদের সাথে তেমন একটা ভাব আমার ছিলো না ,, 

    – এই একটা যায়গাতেই তো ওদের সবার সাথেই তোর মিল ,, 

    (তখনই নয়ন পাশের রুম থেকে রিপোর্ট টা নিয়ে এই রুমে প্রবেশ করে ,, করে রিয়াদের কাছে গিয়ে রিয়াদের হাতে রিপোর্ট টা দেয় ,, রিয়াদ রিপোর্ট টা হাতে নিয়েই তা শাহারিয়ার দিকে এগিয়ে দেয় ,, এবং বলে ,,

    – এই নে তোর রিপোর্ট,, এখানে সব ইনফরমেশন আছে ,,

    – রিপোর্ট টা তুই খোল ,, খোলার পর আমি যা যা প্রশ্ন করছি সেটা রিপোর্ট দেখে উত্তর দে ,,

    – আচ্ছা বল ,,

    – আহাদ , রিয়া , নাদিয়া ,, ওরা একই শাখার স্টুডেন্ট ছিলো কী ? 

    – উমম ,, হ্যা ,, ওরা একই শাখার ই ছিলো ,, 

    – ওদের নামে সেইসময় কোন কম্প্লেইন ছিলো প্রধান শিক্ষক এর কাছে?

    – উমম (ফাইল দেখতে থাকে) ,, হ্যা ,, ওদের নামে বেশ কয়টা কম্প্লেইন ছিলো,, ওদের নাম বলা যায় না ,, মূলত ওদের গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে নানারকম কম্প্লেইন ছিলো,, গ্যাংয়ের নাম ছিলো “কার্পিও গ্যাং”

    – এই টাই হচ্ছে পয়েন্ট,, ওদের গ্যাংয়ে কারা কারা ছিলো ? কী কী অপরাধ করছিলো ওরা? 

    – ওদের গ্যাংয়ে ছিলো,,,,(ফাইল দেখতে থাকে) ,, হ্যা ওদের গ্যাংয়ে ছিলো আরিফ ,,,,, 

    (কথার মাঝখানেই শাহারিয়া বলে উঠে,,)

    – সে নিখোঁজ,, তারপর,, 

    – আরিফ ছিলো,, আরমান ছিলো , আহাদ ছিলো, নাদিয়া ছিলো, রিয়া ছিলো আর সিয়াম ছিলো,, 

    – আহাদের ডেড বডি আমরা পেয়েছি , নাদিয়া ,রিয়ার টাও পেয়েছি ,, আর বাকি থাকলো আরিফ , আরমান আর সিয়াম,, আচ্ছা এই সিয়াম টা কে ? 

    – ফাইলে তো লেখা আছে তার বাসা হরিশপুরে ,, এই গ্রামের সে না,, হরিশপুরের হলো গিয়ে সিয়াম , আরিফ আর আহাদ ,, আর বাকিরা আমাদের গ্রামের ,,

    – হমম ,, আচ্ছা,, কিন্তু একটা প্রশ্ন আমার মনে উদয় হচ্ছে যে ,, আহাদের বোন আরোহীকে কেন মারলো ,, সেতো ঐসময় এই গ্যাংয়েরও কেউ ছিলোনা ,, তার উপর তার বয়সও তখন অনেক কম ছিলো ,, আরোহীর দোষ কী এখানে,, ? 

    – হ্যা ,, সবকিছুর পর এটাও কিন্তু একটা প্রশ্ন হিসেবে থেকে যাচ্ছে ,, 

    – আচ্ছা ইমন ,, গিয়ে পাশের রুম থেকে শাম্মিকে ডেকে নিয়ে আয় তো ,, দেখি ওরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কী বের করতে পারলো ,, (শাহারিয়া বলে)

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,,(বলেই চেয়ার থেকে উঠে চলে যেতে থাকে ইমন) 

    শাহারিয়া আবার বলতে থাকে ,,

    – আচ্ছা তাদের কোন কাজ টার জন্য তাদের নামে কমপ্লেইন গেছিলো হেড স্যারের কাছে ? 

    – তাদের তোওও ,, হমম তাঁদের নামে কমপ্লেইন গেছিলো কারণ তারা অনেক শিক্ষার্থীকে বলে টর্চার করতো একটা রুমে আবদ্ধ করে ,

    – আচ্ছা,, তারমানে দাদাগিরি করতো তারা ,, আর তারপর,,

    – তারা কলেজের অনেক মেয়েদের চুল বলে ন্যারা করে দিতো ,, ছেলেদের রুমে আটকিয়ে অনেক নির্যাতন করতো ,, হকি স্টিক দিয়ে বলে পিটাতো ,, 

    – নাদিয়া , রিয়া এরা নিজে মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও অন্য মেয়েদের সাথে এমন টা করতো ,, ? আচ্ছা তাদের বিরুদ্ধে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের কোন অভিযোগ,, কিংবা ধর্ষণের কোন অভিযোগ ছিলো ?

    – উমমম (ফাইল দেখতে থাকে) ,, না ,, এরকম কিছু ছিলো না,, তারা শুধু নির্যতন করতো ,, আর চুল কেটে দিতো ,, ছেলেদেরও কাটতো ,, মেয়েদেরও কাটতো ,, 

    – মাথার টা নাকি ,,,,,,,,,

    – হ্যা মাথার টাই কাটতো ,, তুই উল্টাপাল্টা ভাবিস ক্যান এতো,, ঢাকায় গিয়ে বদ হয়ে যাচ্ছিস দিন দিন ,,

    – না মানে,, হি হি হি,,

    (তখনি পাশের রুম থেকে শাম্মি আর ইমন চলে আসে ,, এদিকে বৃষ্টি এখন বলা যায় থেমেই গিয়েছে ,, দুই এক ফোঁটা করে পড়ছে ,, আকাশের অন্ধকার ভাব টা কিছুটা কেটেছে,, তবে পুরোটা কাটেনি ,, শাহারিয়ার সামনে এসে শাম্মী দাঁড়ায়,, শাহারিয়া বসা থেকে উঠে সাম্মিকে জিগ্গেস করতে থাকে ,,

    – লাশ টা আরোহীর ই ছিলো তো ?

    শাম্মি বলতে থাকে ,,

    – হ্যা ,, তার ভাই আহাদের সাথে তার ডিএনএ ম্যাচ করেছে ,, এটা আরোহীই ছিলো ,,

    – আরোহীর মৃতূটাও কী বাকিদের মতো হয়েছে ? নাকি কোন ভিন্নতা আছে ? 

    – সবকিছু একদম বাকিদের মতো সেইম টু সেইম ,, তবে তাকে রেপ করা হয়েছে ,, 

    – কী বলো (অবাক হয়ে) ,, একেও কী সেই নাদিয়ার মতোই রেপ করা হয়েছে ? 

    – হ্যা ,, এর বডি টার সব আঘাত একদম নাদিয়ার বডির মতোই,,

    – আচ্ছা নাদিয়ার দেহ থেকে পাওয়া বীর্যের স্যাম্পল আর আরোহীর বডি থেকে পাওয়া বীর্যের স্যাম্পল কী এক ? 

    – হ্যা ,, আমি টেস্ট করে দেখেছি ,, তাদের দুইজনেরই দেহে পাওয়া বীর্যের স্যাম্পল ম্যাচ করেছে ,,

    – ও ও ও ,, তারমানে এরও খুনি সেই সেইম মানুষ ই ,,

    – আচ্ছা আমি ভাবছি এদের দুইজনকে রেপ করা হলে রিয়া কে কেন করা হলোনা ? ও কেন ছাড় পেলো? (রিয়াদ বলে)

    – কেন তুই কী চাস যে রিয়াকেও রেপ করুক ,, ? খুশি হইতি তাইলে ?(রিয়াদের দিকে তাকিয়ে শাহারিয়া বলে)

    – না মানে রিয়ার খুনিও কি একজন ই নাকি আলাদা সেই বিষয় টা মনে উঁকি দিচ্ছিলো ,,

    – মনকে বল উঁকি পরে দিতে ,, (বলেই আবার শাম্মীর দিকে ফিরে তাকায় শাহারিয়া ,, এবং আবার বলতে থাকে)

    – আচ্ছা ঐযে কঙ্কাল টা আমরা পেলাম ,, ঐটা সম্পর্কে কী কী জানতে পেরেছো ,, মানে তাকে কীভাবে মারা হয়েছিলো,, কিংবা তার মৃত্যু কতবছর আগে হয়েছিলো ?

    – ৬-৭ বছর ,, আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানতে পেরেছি তার খুন ৬ থেকে ৭ বছর আগেই হয়েছিলো,, তবে তার শরীরের হাড়ে আমরা কোন আঘাত দেখতে পাইনি ,,  তাই তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা প্রাথমিকভাবে বলতে পারছি না ,, তবে আরো সময় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারলে একটা ফলাফল তখন জানাতে পারবো ,, তবে মৃত্যু কালে তার বয়স ছিলো আনুমানিক ১৯ বা ২০ ,,

    – আচ্ছা ৬ বছর আগে না ৭ বছর আগে ,, কোনটা ,, মানে স্পেসিফিকলি করে যদি বলতে বলি তাহলে কোনটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ৬ না ৭ ?

    – সেভাবে যদি বলতে বলিস তাহলে বলবো ৬ হওয়ার সম্ভাবনা বেশিই ,, 

    – দেখছিস ,, আস্তে আস্তে রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে ,, (রিয়াদের দিকে ফিরে তাকিয়ে শাহারিয়া বলে)

    – যেমন ? (রিয়াদ বলে)

    – যেমন ৬ বছর আগে তাদের গ্যাং কলেজে দাপট দেখিয়ে বেড়াতো ,, আর ৬ বছর আগে এই নুপুর নামের মেয়েটা মারা গিয়েছে ,,এদিকে নুপুরের সেই সময় বয়স ছিলো ১৯ বা ২০ যার মানে দাঁড়ায় সে তাদের ই ব্যাচ ছিলো ,, আর সেই গ্যাং ই এই মেয়েটাকে হয়তো মেয়েটাকে কোনভাবে মেরে ফেলেছিল,, যার প্রতিশোধ এখন কেউ তাদের গ্যাংয়ের উপর থেকে নিচ্ছে ,, 

    – আরে আরে,, হ্যা ,, ২য়ে ২য়ে ৪ হয়ে যাচ্ছে ,, কিন্তু কে সেই লোক যে এখন প্রতিশোধ নিয়ে বেড়াচ্ছে? 

    – নুপুরের কাছের কেউই হবে হয়তো ,, তুই খোঁজ লাগা ,, নুপুর নামে আজ থেকে ৬ বছর আগে এই গ্রামে কোন মেয়ে ছিলো ,, আর তার পরিবারে এখন কে কে আছে তার সম্পূর্ণ ডিটেইলস আমার চাই ই চাই ,, 

    – ওকে ,, হয়ে যাবে ,, তূই চিন্তা করিস না,,

    – আর তার থেকেও বড় কথা ,, আরমান আর সিয়াম কে তাড়াতাড়ি থানায় নিয়ে আয় ,, ওদের মুখ থেকেই আমরা জানতে পারবো এর রহস্য,, আরমানরা এতো দিন আমাদের চোখের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো একটা মার্ডার করে ,, আর আমরা কিছু বুঝতেই পারিনি,, তাড়াতাড়ি যা ,,

    – আচ্ছা ,, আমি এখনি যাচ্ছি ,, 

    রিয়াদ তার টুপি টা নিয়ে রূম থেকে বের হয়ে যেতে থাকে ,,

    শাহরিয়া সাম্মিকে বলে ,,

    – তুমি যাও ,, গিয়ে দেখো আর কী কী ইনফরমেশন পাও সেই কঙ্কাল টার বিষয়ে ,, তবে হ্যা আরেকটা কথা ,, কঙ্কাল পাওয়ার খবর টা যেন‌ গ্রামে লিক না করে ,, সাবধানে কিন্তু,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,, 

    শাহারিয়া ঘড়ির দিকে তাকায় ,, দেখে ১১ টা ৩ বেজে গিয়েছে ,, দিথীর তো মনে হয় ছুটি হয়ে গিয়েছে ঐদিকে ,, শাহারিয়া তাড়াতাড়ি রেইনকোট পড়তে পড়তে বলে ,,

    – আমি গেলাম ,, ঐদিকে একজন আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে ,, কাজ মন দিয়ে করিস ,, 

    – কে অপেক্ষা করতেছে তোর জন্য ? (শাম্মি বলে )

    রিয়াদ রেইনকোট পড়ে হন হন করে যেতে যেতে বলে ,,

    – তোদের হবু ভাবি,, 

    – তুই বিয়ে করলি কবে রে ,, একটা বার আমাদেরকে বল্লিও না,, 

    এদিকে শাহারিয়া ততক্ষণে চলে গিয়েছে বের হয়ে ,, শাম্মিও একটা হাফ ছাড়ে ,, সেও চলে যেতে থাকে পাশের রুমে ,, এবং তখনই আমরা জানালার দিকটা দেখতে পাই ,, এবং আশ্চর্যজনক ভাবে সেখানে একটা ছায়াকে দেখতে পাই জানালার সাইডে ,, কেউ মনে হয় দাঁড়িয়ে আছে ,, এবং শাম্মি চলে যাওয়ার সাথে সাথেই জানালার সাইডে থাকা ছায়াটা দ্রুত সেখান থেকে সড়ে যায় ,,

     

    মেম্বারের বাড়ির পিছনের বাগান দেখানো হয় ,, বৃষ্টি হওয়াতে সবুজ প্রকৃতি যেন আরো সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে ,, ফুলের পাতায় বৃষ্টির পানির ফোঁটা লেগে আছে ,, ফুল গুলোর পাপড়ি যেন আরো রঙিন হয়ে উঠেছে ,, আশেপাশে থাকা বড় গাছে বাস করা পাখি গুলোর কিচিরমিচির আওয়াজ ,, সবমিলিয়ে একটা মনমুগ্ধকর আবহাওয়া,, বৃষ্টি এখন নেই,, এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে পরছে মাঝে মাঝে ,, আকাশের অন্ধকার ভাবটাও কিছূটা কেটে গিয়েছে ,, বাগানের মধ্যেকার বসার যায়গাটায় দেখতে পাই আমরা ফুলমতি ও নাসিমকে ,, দুইজনেই ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে ,, বুঝতে আর বাকি রইলো না যে তারা একটু আগে আসা বৃষ্টিটায় অনেক আনন্দের সহিত ভিজেছে ,, ফুলমতি হাত দিয়ে তার মুখের উপর থেকে চুল গুলো সড়িয়ে কানের পাশে রাখতে রাখতে বলতে থাকে ,,

    – আজ অনেক মজা হয়েছে ,, এরকম বৃষ্টি যেন আরো আসে ,, তোমার সাথে ভিজতে আমার অনেক অনেক ভালো লাগে,, (বলতে বলতেই নাসিম কে জড়িয়ে ধরে ফুলমতি ,, নাসিম ঐঅবস্থায় বলতে থাকে ,,

    – আরে ছাড়ো ছাড়ো,, কেউ দেখে ফেলবে তখন ,, 

    – দেখলে দেখুক ,, তাতে আমার কী ,,

    – আমার যে শরম করতাছে ,, 

    – বিয়ার পর সব শরম ভাইঙ্গা দিমু ,, 

    – আহা অমন করে না ,, চাচি , চাচারা এদিকে আইয়া আমাগোরে এই অবস্থায় দেখলে কী ভাববো কওতো ,, 

    – কিছুই ভাববো না,, আজকে তুমি আমারে বৃষ্টির মধ্যে যে কোলে নিলা ,, ঐসময় যে আমার কী অনুভূতি ডা হইতাছিলো তোমার কইয়া বুঝাইতে পারুম না,, (বলেই আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরলো নাসিমকে )

    – আচ্ছা আচ্ছা এহন শোন ,, গোসল ও তো করতে হইবো আমাগো ,, এমনে ভেজা শরীলে আরো কিছুক্ষণ থাকলে তো তহন তোমার ঠান্ডা লাইগা যাইবো ,,

    – এতো কেয়ার করো আমারে ,, বিয়ার পর আমিও তোমারে অনেক অনেক কেয়ার করমু গো জান,, (বলার পরই একটা হাচিঁ দিয়ে ফেলে ফুলমতি ,,)

    – এই দেখছো ,, কইছিলাম না ঠান্ডা লাইগা যাইবো,, এইযে লাইগাও গেছে ,, এতোক্ষণ কেউ বৃষ্টিতে ভিজে কও ,, যাও গোসল দিয়া আহো ,, আমি পুকুরপাড়ে গেলাম গোসল দিতে ,, 

    – না,, আইজ তুমি আমার লগে একসাথে গোসল দিবা ,, চলো চলো ,, (বলেই তাকে জড়িয়ে ধরা থেকে ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে তার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে বাড়ির দিকে ,, নাসিম বলে ,, 

    – আরে আরে কী কইতাছো এইসব ,, পরে দিয়া চাচা, চাচি দেইখা লাইলে ,, 

    – আরে দেখবো না,, ইনাগো গোসল খানা ২ ডা ,, আর ২ ডাই পাকা ,,তুমি আমি একটাতে গিয়া সুন্দর কইরা গোসল ও করুম আর,,,,,,,,,

    – আর কী ,, ? 

    – যাহ দুষ্টু ,, (লজ্জায় মুখ ঢেকে ) অতকিছু আমি অহন কইতে পারমু না তুমি চলো তো ,, (বলেই নাসিমের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে ফুলমতি ,, আসলে নাসিমের সাথে ফুলমতিই বেশ খোলামেলা,, খোলামেলা বলতে ঐসব না,, মন টা খোলামেলা তার,, কোন সংকোচ বোধ নেই তেমন,, ভালোবেসেছে এতো গভীর ভাবে ,, যে তার দিন রাত সব জুড়েই এখন সে শুধু নাসিম আর নাসিম ,, ফুলমতি নাসিমকে নিয়ে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বাসায় ঢুকে পড়ে ,, আজকের দিনটা নাসিম আর ফুলমতির জন্য একটা সুন্দর সুখের দিন ,, পরিবেশ এখন শান্ত নিরব ,, আকাশ দিয়ে দু একটা পাখি উড়ে যেতে দেখা যায় ,, আর মাঝেমধ্যে পানির ফোঁটা পড়ার আওয়াজ ,, 

     

    আরমানের বাসায় দেখানো হয় ,, থানা কিংবা মেম্বারদের বাসার উপর থেকে কালো মেঘ সড়ে গেলেও আরমানের বাসার উপর এখনো কালো মেঘ বিরাজ করছে ,, ঠান্ডা বাতাস কিছুক্ষণ পর পর বয়ে শরীরটাকে কাপিয়ে তুলছে ,, রিয়াদ আর ২ জন কনস্টেবল আরমানের বাসার দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ,, প্রবেশ করার সাথে সাথেই তাদের কানে একটা কান্নার সড় ভেসে আসতে থাকে ,, তারা এগিয়ে বাসার ভিতরে দিকে যায় ,, গিয়ে আঙিনায় দাঁড়িয়ে তারা দেখে আরমানের মা ও একটা ছোট মেয়ে একটা ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে ,, আর কান্না করছে ,, রিয়াদ এগিয়ে যায় ,, গিয়ে বারান্দায় উঠে জিগ্গেস করে ,,

    – কী হয়েছে এখানে ? আপনি এভাবে কাঁদছেন কেন ,,?

    – বাবারে ,, আমার মা ডার মনে হয় কিছু হইছে রে ,, আনিকা ,, মা দরজা খোল ,, মা দরজা খোল ,, (কাঁদতে কাঁদতে একদম ভেঙে পড়েন তিনি,, ছোট মেয়েটা আর রিয়াদ তাকে ধরে ,, রিয়াদ বলতে থাকে ,,

    – আরে আন্টি শান্ত হোন  ,, কী হয়েছে আমাদের বলুন ,,(বলেই ইশারায় ছোট মেয়েটাকে একটা চেয়ার আনতে বলে রিয়াদ ,, ছোট মেয়েটা পাশে থাকা একটি চেয়ার আনে ,, রিয়াদ সেই চেয়ারে আরমানের মা কে বসিয়ে দেয় ,, বলতে থাকে ,,

    – আন্টি আমাদের বলূন যে কী হয়েছে ,, আমরা আপনাকে সাহায্য করবো ,,

    – বাবারে ,, আনিকা মা আমার কিছুক্ষণ আগে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করছিলো ,, কিছুক্ষণ পড় চিৎকার দিয়ে আমারে ডাকতে থাকে,, তারপর এক জোড়ে চিৎকার দেয় আমি দরজার সামনে আইসা তারপর থেকে তারে অনেক ডাকছি ,, কোন সারা শব্দ পাইনাই ,, কোন সারা শব্দ পাইনাই,, (বলেই আরো কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি,, 

    – আচ্ছা আচ্ছা আন্টি শান্ত হোন ,, আমরা দরজা ভেঙে দেখছি যে ভিতরে কী হয়েছে ,, এই নয়ন,, তুমি আন্টির কাছে আসো ,, আমি দরজা টা ভাঙছি ,, (বলেই আরমানের মায়ের পাশ থেকে উঠেই যায় রিয়াদ ,, নয়ন সেখানে এসে দাঁড়ায়,, রিয়াদ উঠে দরজাতে কয়েকবার ধাক্কা দেয় ,, কিন্তু না ,,এই দরজা অনেক শক্ত মনে হচ্ছে ,, তারপর যে একটু দূরে গিয়ে জোড়ে দোড়ে এসে দরজার উপর ধাক্কা দেয় ,, দরজা টা ভেঙে যায় ,, সে একদম ভিতরে গিয়ে পড়ে ,, আরমানের মা ও বাকি কনস্টেবল রাও ভিতরে চলে আসে ,, কিন্তু তাড়াতাড়ি ভিতরে এসে দেখে যে ভিতরে কেউই নেই ,, ঘর একদম ফাঁকা,, আরমানের মা তো এসব দেখে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে ,, আজব,, একটা ঘর ভিতর থেকে লাগানো ছিলো আর ভিতরের মেয়েই উধাও ,, এটা কী করে সম্ভব,, রিয়াদ আরমানের মা কে জিগ্যেস করে ,,

    – আরমান কোথায় ,, 

    তার মা বলে ,,

    – আনিকার চিৎকারে সাথে সাথে আমি এসে দরজায় বাড়ি দিয়েছিলাম,, কোন সাড়াশব্দ না পাওয়াতে আরমানের ঘরে যাই ,, কিন্তু তার ঘরে গিয়েও তাকে পাইনা,, আরমান ,, আনিকা কই গেলি সোনার টুকরা জাদু আমার ,, কই গেলি ,, (কাঁদতে কাঁদতে বলে আরমানের মা) 

    রিয়াদ মনে মনে ভাবতে থাকে “আনিকা কোথায় গেলো এই বন্ধ রুম থেকে,, আর সাথে আরমানও গায়েব ,, কিছুতো একটা হতে চলেছেই ,, আমাদের তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করতে হবে ,, ” ভাবতে ভাবতে রিয়াদ বিছানার দিকে এগিয়ে যায় ,, গিয়ে দেখে ,, বিছানার উপর বড় একটা বই ,, সেই বই টা আর অন্য কোন বই নয় ,, সেই “পূনর্জন্ম” বইটাই ,, সে বইটাকে দেখে অবাক হয়ে যায় ,, ভয়ও পায় ,, আসলে বইয়ের কভার টা আর কভারে থাকা মাথার কঙ্কালের ছবিটা দেখলে যে কেউই ভয় পেয়ে যাবে ,, তার চেয়েও বেশি সে অবাক হয় বইটার পাশে থাকা চিরকুট টা দেখে হয়েছে ,, বইয়ের পাশেই একটা চিরকুট লেখা ছিলো ,, দেখে মনে হচ্ছে একদম লাল তাজা রক্ত দিয়ে কিছুক্ষণ আগেই লেখাটা লেখা হয়েছে ,, লেখাটা ছিলো এই যে ,, 

    “আমার প্রতিশোধ আমি নিবোই ,, তোরা যতকিছুই কর না কেন ,, আমার ধরা তোরা পাবিনা ,, তবে আমার খোঁজ তোরা তখনই পাবি যখন একদম শেষ গুটি টাকে আমি মারবো ,, তার আগে যতই যা করে ফেল ,, আমার নাগাল তোরা পাবিনা ,, মেঘ দেখে ভয় পাসনে ,, তার আড়ালে সূর্য হাসে,,! “

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    [ সেই খুনির নাগাল কী তারা পাবে ? আর ৬ বছর আগের ইতিহাস টাই বা কী ? যেটা সময়ের আড়ালে চাপা পড়ে গিয়েছে ? জানাবেন কেমন হচ্ছে 😊 ]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ১৯

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২০

    লেখক:: মির্জা সাহারিয়া 

     

    রিয়াদ মনে মনে ভাবতে থাকে “আনিকা কোথায় গেলো এই বন্ধ রুম থেকে,, আর সাথে আরমানও গায়েব ,, কিছুতো একটা হতে চলেছেই ,, আমাদের তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করতে হবে ,, ” ভাবতে ভাবতে রিয়াদ বিছানার দিকে এগিয়ে যায় ,, গিয়ে দেখে ,, বিছানার উপর বড় একটা বই ,, সেই বই টা আর অন্য কোন বই নয় ,, সেই “পূনর্জন্ম” বইটাই ,, সে বইটাকে দেখে অবাক হয়ে যায় ,, ভয়ও পায় ,, আসলে বইয়ের কভার টা আর কভারে থাকা মাথার কঙ্কালের ছবিটা দেখলে যে কেউই ভয় পেয়ে যাবে ,, তার চেয়েও বেশি সে অবাক হয় বইটার পাশে থাকা চিরকুট টা দেখে ,, বইয়ের পাশেই একটা চিরকুট লেখা ছিলো ,, দেখে মনে হচ্ছে একদম লাল তাজা রক্ত দিয়ে কিছুক্ষণ আগেই লেখাটা লেখা হয়েছে ,, লেখাটা ছিলো এই যে ,, 

    “আমার প্রতিশোধ আমি নিবোই ,, তোরা যতকিছুই কর না কেন ,, আমার ধরা তোরা পাবিনা ,, তবে আমার খোঁজ তোরা তখনই পাবি যখন একদম শেষ গুটি টাকে আমি মারবো ,, তার আগে যতই যা করে ফেল ,, আমার নাগাল তোরা পাবিনা ,, মেঘ দেখে পাসনে ভয় ,, তার আড়ালে সূর্য হাসে,,! “

    রিয়াদ চিরকুট টা পড়ে বেশ অবাকই হয় ,, বিশেষ করে শেষের রহস্যময় লাইনটা পড়ে ,, “শেষের লাইনটা দাঁড়া খুনি আমাদের কী বুঝাতে চাচ্ছে,, ? অনেক বড় রহস্য আছে এর মধ্যে,, অনেক বড়” ভাবতে থাকে রিয়াদ ,, তখনই তার পাশে থাকা কনস্টেবল বলে ,,

    – স্যার ,, কী লেখা আছে ঐ চিরকুটে,, ? আপনে পইরাই যে চুপ হইয়া গেলেন ? 

    – না তেমন কিছুনা ,, (আমতা আমতা করে রিয়াদ বলে ,) 

    – আচ্ছা স্যার তাইলে আমরা অহন কী করুম ,, ? 

    – আ্য ,, আপাতত চলো আরমানের ঘর টা খুঁজে দেখি ,, কোন কিছু পাওয়া যায় কিনা ,, আর আন্টি আপনি চিন্তা করবেন না ,, আমরা দ্রুতই আনিকার কোন না কোন খবর নিয়ে আপনার সামনে উপস্থিত হবো ,,আপনি শুধু শান্ত হোন ,, আর ধৈর্য ধরুন ,,

    – আচ্ছা বাবা ,, তোমার কথায় একটু ভরসা করলাম,, আমার আনিকা মা আর আরমান বাবাকে প্লিজ তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করিও ,,আমি তাদের না পেলে কিন্তু বাঁচবোই না ,, (বলেই আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন আরমানের মা) 

    – আচ্ছা আন্টি আপনি এখন শান্ত হোন,, পাশের রুমে গিয়ে বসুন ,, আমাদের কে আমাদের খোঁজ চালাতে দিন  ,, (বলেই রুম থেকে বের হয়ে আসে রিয়াদ ,, তার পিছন পিছন দুইজন কনস্টেবল ও বের হয়ে আসে,, কনস্টেবল দুইজন রিয়াদ কে জিগ্যেস করে ,

    – কই যাইতাছেন স্যার ,,? 

    – আরমানের রুমে চলো ,, ওর রুম টাও আমাদের ভালো করে সার্চ করতে হবে ,, আরমানই সকল রহস্যের মূলে রয়েছে,, ওকে ধরতে পারলেই সব কিছু বের হয়ে আসবে ,, (বলতে বলতে আরমানের রুমের ভিতরে তদন্ত চালানোর জন্য চলে যায় রিয়াদ ও তার দুইজন কনস্টেবল ,, 

     

    এদিকে আমাদের দেখানো হয় আনন্দ মোহন কলেজের মাঠ,, এখন বৃষ্টি নেই ,, আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করেছে ,, এখন সময় সকাল ১১ টা ১৫ মিনিট,, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা শেষ করে তাদের বাসার দিকে যাচ্ছে ,, পরীক্ষা শেষ হয়েছে ১১ টার দিকে ,,মাঠে স্টুডেন্টদের পদচারণা ,, পরীক্ষা কে কেমন দিয়েছে তাই নিয়ে আলোচনা করছে ,, মাঝে মাঝে হালকা ঠান্ডা বাতাস এসে তাদের শরীরে একটু কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে ,, আসলে এতোক্ষণ বৃষ্টি হওয়ার পর আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে ,, আর এখন হেমন্তেরও শেষ বেলা ,, তাই উত্তরের শীত ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে,, কলেজ হলের ভিতর থেকে কথা বলতে বলতে বেড়িয়ে আসে দিথী ও সেতু ,, তারা পরীক্ষার বিষয় নিয়েই আলোচনা করছে ,, তারা এসে হলের সামনের ছাওনিটায় দাড়ায় ,,ছাওনিটার পরেই মাঠ ,, আর তারপর সোজা কলেজের বড় গেট ,, তাদের মধ্যে শুধু দিথীই একনাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছে,, পরীক্ষায় কী সঠিক হয়েছে ,, কী ভুল হয়েছে তাই সে বলছে ,, সেতু কোন কথা বলছেনা ,,ও চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু ভাবছে “ঐসময়  ও ঐসব কী দেখলো ,, না এটা স্বপ্ন হতেই পারেনা ,, সে মেয়েটার আত্মচিৎকার সে নিজের কানে শুনেছে ,, এটা ভুল কীভাবে হতে পারে ,, ?” এদিকে দিথী কথা বলা শেষ করে ,, দেখে সেতুর মন যেন অন্য কোথাও ,, সে যেন দিথীর কথা গুলো শুনছেই না ,, দিথী সেতু কে হাত দিয়ে নাড়িয়ে দিয়ে বলতে থাকে ,, 

    – কীরে ,, তুই কী আমার কথা গুলো শুনছিস? তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে তোর মন অন্য কোথাও ,, 

    দিথীর কথা বলাতে সেতুর ঘোর ভাঙে ,, সে যেন এবার বাস্তবে ফিরে এসেছে ,, এতোক্ষণ যেন সে কোথাও হারিয়ে গিয়েছিলো ,, দিথী সেতুর মুখে হাতাশার চিহ্ন দেখে আবার বলতে থাকে ,, 

    – কীরে ,, ? তোর কী কিছু হয়েছে ? শরীর খারাপ ? 

    – ন,, না ,, না ,, তে,,, তেমন কিছু হয়নি ,,

    – তাইলে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন ,, ? কিছু হয়ে থাকলে খুলে বল ,, বান্ধবীদের থেকে কোন কিছু লুকাতে নেই ,, 

    – না মানে হয়েছিলো কী ,,

    – কী হয়েছিলো ? কোন ছেলে কী তোকে ডিসটার্ব করে ? 

    – না,, তেমন কোন বিষয় নয়,, তবে ,, 

    – তবে কী ? 

    – আমি জানি তুই এটা বিশ্বাস করবি না ,, 

    – আরে বলেই দেখ না একবার ,, আমি তোর কথা অবিশ্বাস করবো এটা কখনো হতে পারে ,, ?

    – আজ যখন আমি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম,,,,,,,,,,(তারপর সেতু তার সেই সময়কার ঘটনা খুলে বলতে থাকে দিথীকে,, দিথী তো শুনছে আর খালি অবাক হচ্ছে ,, এরকম টা কীভাবে হতে পারে ,, দিথীর চোখমুখ বড় হয়ে যায় বিস্ময়ে ,, সে যেন কোন ভয়ানক মৃত্যুর গল্প শুনছে ,, সেতু পুরো ঘটনাটা বলে শেষ করে ,, তারপর দিথীর দিকে চেয়ে বলতে থাকে ,, 

    – আমার মাথায় খালি এই ঘটনাটাই বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে,, তাছাড়া আমি সেই মেয়ের আর্তনাদ নিজ কানে শুনেছি ,, এটা কখনো ভুল হতেই পারেনা ,, 

    – কিন্তু দোস্ত,, আমিও তো দোতলায় ছিলাম ,, বৃষ্টির সময় তো এমন কিছু মাঠের মধ্যে দেখলাম না ,, আর চিৎকারও শুনতে পেলাম না ,, 

    – আমি জানি তুই এটা এটা অবিশ্বাস করবি ,, এজন্যই আমি আগে তোকে বলতে চাইনি ,, 

    – আচ্ছা বাবা ,, আমি বিশ্বাস করলাম ,, কিন্তু আমি বিশ্বাস করলেও অন্য কেউ তো এটা বিশ্বাস করতে চাইবেনা ,, 

    – কিন্তু আমি সত্যি ঐসব দেখেছি ,, আমি নিজের চোখে ঐ মেয়েটাকে খুন হতে দেখেছি ,, কী বিভৎস ছিলো সেই দৃশ্য গুলা ,, ভাবতেই আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠে ,, 

    – আচ্ছা আচ্ছা তুই শান্ত হ ,, বাসায় গিয়ে রেষ্ট নে ,, তোর ভাই চলে গিয়েছে,, তারউপর পরীক্ষার ধকল ,, সবমিলিয়ে তুই একটু হতাশায় আছিস ,, তাই এমনটা তোর মনে হচ্ছে,,

    – কিন্তু,,,,,,,,,,,,,,

    কথার মাঝখানেই আমরা দেখতে পাই শাহারিয়া তার বাইক টা কলেজ গেটের সামনে থামালো ,, থামিয়ে সে নেমে ভিতরে দিকে আসতে থাকলো ,, মাঠ টা কর্দমাক্ত ,, কোথাও কোথাও পানিও জমে গিয়েছে একদম ,, তাই শাহারিয়া বাইকটা বাইরেই পার্ক করে রেখে এসেছে,, শাহারিয়া কে আসতে দেখে দিথী সেতুর দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে শাহারিয়ার দিকে তাকায় ,, দেখে যে ও হেঁটে হেঁটে তাদের দিকেই আসছে ,, দিথী মনে মনে বলতে থাকে “ও আমাকে নিতেও চলে এসেছে ,, ? প্রেমে-ট্রেমে পড়ে গেলো নাকি আবার কে জানে,, ” 

    সেতুও দিথীর দিকে তাকিয়ে দেখে সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে ,, সেতু তারপর চুপচাপ হয়ে যায় ,,

    শাহারিয়া তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়,, মাথার চুল গুলো হালকা ভিজে গিয়েছে,, পরনে কালো শার্ট টাও কিছুটা ভিজে গিয়েছে ,, শাহারিয়া দিথীকে বলতে থাকে ,, 

    – কেমন পরীক্ষা দিলেন ম্যাডাম ,, ! 

    – এইতো ,, আপনি যেমন আশা করেছিলেন তেমনই দিয়েছি ,, এখন ভালো আশা করেছিলেন না খারাপ আশা করেছিলেন সেইটা আপনিই জানেন ,, (বলেই মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে এদিক সেদিক তাকাতে থাকে দিথী ,,)

    – আমার ম্যাডামের পরীক্ষা ,, আর আমি ভালো আশা করবোনা ,, এটা কী কখনো হতে পারে ,, ! 

    – হয়েছে হয়েছে,, থামেন ,, আর বলতে হবেনা ,, আমার পরীক্ষা ভালো হয়েছে,, এখন চলুন বাসায় যাবো ,, 

    – আপনার জন্য আমি হাজির বেগম সাহেবা ,, ঐযে দেখছেন ঘোড়ার গাড়ি (দুই হাতে দিয়ে বাইকের দিকে ইশারা করে) যা শুধু আপনার জন্যই এনেছি ,, 

    – হইছে ,, আর ঢং করতে হবে না ,, চলো ,,(তারপর সেতুর দিকে ফিরে তাকিয়ে আবার বলতে থাকে) আর দোস্ত ,, তুই মন খারাপ একদম করিস না ,, আর ঐটা নিয়ে এতো চিন্তাও করিস না ,, বাসায় একলা থাকতে সমস্যা হলে আমাদের বাসায় চলে আসছি কেমন ,, 

    – আচ্ছা দোস্ত,, গেলাম আমি ,(বলেই সিয়ামের বোন সেতু শাহারিয়ার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে,, শাহারিয়া যানেও না যে তার সেই রহস্যের কেসটার সাথে সিয়াম কতটা ওতোপ্রতভাবে জড়িত ,, আর সেই সিয়ামের বোন শাহারিয়ার পাশ দিয়ে চলে গেলো ,, যেন এক রহস্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত শাহারিয়া,, সেতু চলে যায় ,, শাহারিয়া দিথীর কাঁধ থেকে তার ছোট ব্যাক টা তাকে দিতে বলে ইশারায় ,, দিথী বলে “লাগবে না ,, আমিই নিতে পারবো ,, এবার চলেন ,,” বলেই দিথী আর শাহারিয়া যখনই যেতে যাবে তখনই তাদের পিছনে নিপা আর জান্নাত এসে উপস্থিত হয় ,, হয়ে শাহারিয়াকে পিছন থেকে ডেকে বলতে থাকে,, 

    – আরে ভাইয়া ,, তুই এখানে ?? 

    শাহারিয়া নিপার কথা শুনে একদম দাঁড়িয়ে যায় ,, মনে মনে ভাবে ,, ” নিপাটাও আসার আর সময় পেলো না ,,” শাহারিয়া মিটিমিটি করে হাসতে হাসতে নিপার দিকে ফিরে তাকায় দিথীও পিছন ফিরে দেখে পিছনে নিপা দাঁড়িয়ে,, কখন যে এসেছে সে তারা তা খেয়ালই করেনি ,, দিথীকে দেখে নিপা বলতে থাকে ,, 

    – আরে দিথী,,তুইও ?? তোরা একসাথে এখানে কী করছিস ,, ? 

    – না মানে ইয়ে মানে নিপা,,, ঐ আরকি দিথীর শরীর একটু খারাপ তো,, তাই তাকে বাসা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এসেছিলাম ,, (একটু নার্ভাস হয়ে শাহারিয়া বলে )

    – আমার প্রাণের বান্ধবী দিথীর শরীর খারাপ ,, ! আর আমিই জানি না ? কিরে দিথী ,, একটা বার বললিও না ,, (মুখ গোমড়া করে নিপা বলে) 

    – না মানে তেমন কিছু না রে ,, ঐ আরকি কাল রাতে একটু জ্বর আসছিলো ,, 

    – অহহ আচ্ছা,, আমি জানতাম ই না রে ,, 

    – আচ্ছা তো আমরা এখন যাই তাইলে বনু ,, ! তুই ঠিকঠাক মতো আছিস ,, (বলেই দিথীর হাত ধরে চলে যাওয়াতে উদ্যত হতে যায় শাহারিয়া,,)

    – আরে আরে ,, যাই মানে ? তুই বাইক আনছিস আর আমি একলা যাবো কেন ? আমিও তোর বাইকে করেই বাসায় যাবো ,, চল ,, 

    বলেই শাহারিয়াদের আগে আগেই যেতে থাকে নিপা,, 

    এদিকে শাহারিয়া দিথীর হাত ধরে তাকে নিয়ে যাচ্ছে ,, সে সামনের নিপাকে বুঝাচ্ছে যে তুই একলা যা ,, আমাদের একা ছেড়ে দে ,, কিন্তু নিপা শুনছেই না ,, এদিকে দিথী দেখে শাহারিয়া তার হাত ধরে রেখেছে,, দিথী হাতের দিকে তাকিয়ে শাহারিয়ার দিকে নয়ন তুলে তাকায় ,, সে যেন অবাক আর সাথে সাথে আনন্দিতও,, তার মুখো এক চিমটে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠে ,,

    অবশেষে তারা বাইকে তিনজনই উঠে যায় ,, বেশি একটা সমস্যা হয়নই তাদের,, বাইক চালিয়ে শাহারিয়া কলেজ গেট ত্যাগ করে বাসার ঐদিকে ছুটতে থাকে ,, 

     

    সময় এখন বিকাল ৪ টা ,, আনন্দ নগর গ্রামের দক্ষিণ দিকে এক বিশাল বড় দিঘি রয়েছে ,, সাধারণ বাংলায় যাকে পুকুর বলতে পারেন ,, দিঘি টা অনেক পুরোনো,, পুরোনো বলতে বেশ পুরোনো,, বৃটিশ আমলের বলতে পারেন ,, দিঘির পাড় গুলোও সেই বৃটিশ শাসনের আমলেই পাকা করা হয়েছিলো ,, আজও টিকে রয়েছে ,, তবে সময়ের পরিক্রমায় কিছুটা সংস্কার করা হয়েছে এই আরকি ,, দিঘি টা বড় বলতে বেশ বড় ,, এক পাশ থেকে আরেক পাশের মানুষকে একদম ছোট মনে হয় ,, এই দিঘিটাই আনন্দ নগর গ্রামের শেষ সিমানা ,, তারপর থেকে হরিশপুর গ্রামের শুরু,, বলতে পারেন এই দিঘিটাই দুইটা গ্রামের সংযোগ স্থল,, দিঘির উত্তর পাড়ে বসে রয়েছে টুটুল আর নাসিম ,, মেম্বারের ডান হাত ও বাম হাত দুইজনই ,, 

    নাসিম বসে হাত দিয়ে ঘাসের ছোট গাছ উঠিয়ে ছিড়ছে ,, আর টুটুল দিঘির দিকে চেয়ে আছে ,, কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে টুটুল বলে উঠে ,, 

    – বুঝলি নাসিম ,, তুই ঐদিন সাহায্য ডা না করলে ,, আমার ঐ কাম ডা সম্পূর্ণই হইতো না ,, 

    – কোন কাম ডা বস ,, ?

    – আরে ঐযে ,, পরসুদিন বিকালে যে তুই একটা অটো ম্যানেজ কইরা দিলি ঐডা ,, মোর কিন্তু মেলা উপকার হইছে হেইডার লাইগা ,, 

    – কি কন ,, সত্যি বস ,, ? আমার আপনারে কামে সাহায্য কইরা খুব ভাল্লাগতাছে ,, তো বস ,, অটো ডা নিয়া গিয়া কী করছিলেন,, আমারে তো লগে লইলেন না ,, কইলেন একটা অটো জোগাড় কইরা দে ,, আমিও দিলাম ,, কিন্তু ঐডা দিয়া কী কাজ করছেন হেইডা মোরে অহনো জানাইলেন না,, 

    – জানবি , জানবি ,, সব জানবি ,, সময় হোক,, সব তোরে একদিন খুইলা কমুনে ,, 

    – কিন্তু বস ,, এদিকে তো গেরামের অবস্থা ভালা না ,, প্রতিদিন বলে লাশ পাওন যাইতাছে ,, মাইয়া, পোলা সবারই লাশ পাওয়া যাইতাছে ,, মোর ডর করে ,, কোনদিন না জানি কি মোরেও মাইরালায় ,, 

    – আরে আরে ডরাইস না ,, তোর কিচ্ছূ হইবো না ,, তুই চলস এই টুটুলের লগে ,, গেরামের এক নাম্বার সিংহের ‌লগে ,, তোর গায়ে কেউ হাত দেওয়ার সাহস পাইবো না ,, 

    – তাই যেন হয় গুরু ,, তাই যেন হয় ,, 

    – আইচ্ছা ,, তোর গ্রামের কোন মাইয়াডিরে সবথেইকা বেশি ভালা লাগে ? 

    – আমার ,, ? না না গুরু কি কন ,, আমি এই গ্রামে আইছি মোটে ১ সাপ্তা আগে ,, আমি কোন মাইয়া-মুইয়ার দিকে নজর দেইনা ,, আমি তো শুধু ঐ চাচি আর চাচার আদেশ মোতাবেক কাম করি ,, 

    – আমার আদেশ অনুযায়ী কাম করলে কিন্তু তোরে অনেক টাকা দিয়া ভরায় রাখমু নাসিম ,, তোর কিন্তু তহন আর টাকার অভাব হইবো না,, 

    – কী আদেশ ,,‌অহনি কন ,, টাকার বদলে সবকিছু করতে এই নাসিম প্রস্তুত,, 

    – অহন না রে, অহন না,, সময় হোক ,, 

    – আচ্ছা তাইলে গুরু ,, লন যাই বাড়ির দিকে ,, চাচায় আরো আমাগোরে খুঁজতে পারে ,, মেলাক্ষণ ধইরা এই নদীর পাড়ে বইসা আছি ,, 

    – হ হ ,, তাও খারাপ কস নাই (শরীর মুড়াতে মুড়াতে বলে টুটুল,, ) বাড়ির দিকে যাওন লাগবো ,, চল উডি ,, 

    – আইচ্ছা গুরু চলেন তাইলে ,, (বলেই নাসিম আর টুটুল আর নাসিম উঠে পড়ে পুকুর পাড় থেকে,, উঠে প্যান্ট টা ঝাড়ে নিতে থাকে হাত দিয়ে ,, তারপর পাড়ের কয়েকটা ধাপ উপরে উঠেই চলে যেতে থাকে বাসার ঐদিকে ,, টুটুল কিছুটা এগিয়ে গিয়েছে,, নাসিম তার পিছন পিছন আসছে ,, তখনই আমরা নাসিমের দিকে লক্ষ্য করে দেখতে পাই তার ঠোঁটের কোনায় এক ছোট্ট রহস্য মিশ্রিত হাসি ফুটে উঠেছে ,, 

     

    রাত ৮ টা ,, নিপা , দিথী , জিনিয়া , মেম্বারের বাসায় নিপার ঘরে বসে গ্রুপ স্টাডি করতেছে ,, কাল ছুটি আছে ,, মানে পরীক্ষার মাঝে গ্যাপ আছে আরকি ,, তারপরের দিন গণিত পরীক্ষা ,, নিপাদের ঘরে বসে তারা পড়াশোনা করছে ,, আর রুমের দরজা টা ভিরানো ,, পড়ার মাঝেই দিথী বলে উঠে,, 

    – আচ্ছা নিপা ,, এই জ্যামিতি টা কীভাবে হবে ,, একটু শিখায় দে না রে ,,

    – আমি জ্যামিতি এমনিতেও কম পাড়ি ,, তুই এক কাজ কর ,, ভাইয়ার কাছ থেকে শিখে আয় যা ,, ভাইয়া জ্যামিতি অনেক ভালা পারে,,

    – আমি একলা যাবো ,, আমার কেমন কেমন যানি লাগতেছে ,, 

    – হইছে ,, আর ভয় পাইতে হইবো না ,, তুই যে ভাইয়ার লগে পিরিত করস হেইয়া আমরা জানি ,, 

    – ধুর কী বলিস এসব ,, আমি ,, আমি ঐসব কিছুই করিনা ,, 

    – হ করোনা বইলাই তো ভাইয়া তোমারে কলেজে নিতে আহে ,, একসাথে হাত ধরাধরি কইরা বেড়াও ,,, ঐসব আমাগোরে শিখাইস না ,, ফারুক আর আমি এগুলা বহুত করছি ,, 

    – ফারুক তোর ডা ধরছে ,, ? (অবাক হয়ে বলে জিনিয়া)

    – হ ধরছে ,, প্রেম করি আর ধরাধরি করবো না ,,? এইডা তো স্বাভাবিক,, 

    – আসলেই তুই একছের চাচির লাহান হইছোস ,, দেখছোস দিথী ওরা বলে ধরাধরিও কইরা লাইছে ,, (জিনিয়া বলে)

    – তোরা হাতই ধরাধরি করছোস না কি আরো ,, (কাশি দিয়ে দিথী বলে )

    – ধূর বা*ল ,, হাতই তো ধরমু ,, তোরা কী ভাবছিলি ,, ওওও ,, ঐডি ,, ঐডি তো বিয়ার পর ,, তোরাও না ,, কী সব ভাইবা ফালাস ,, 

    – তুই যেমনে কস ,, আমাগো লুচু মাইন্ড তো এইসবই ভাইবা লয় ,, (জিনিয়া বলে)

    – হইছে চুপ থাক ,, মন দিয়া পড় ,, আর দিথী ,, তুই খাড়া আমি ভাইয়ারে ডাক দিয়া আনতাছি ,, তোরে জ্যামিতি সহ প্রেমের আরো অনেক অধ্যায় শিখায়া দিবো ,, 

    – তোরে কইছে ,, আমি জ্যামিতি পরে করমু ,, তুই ডাকিস না ,, 

    – না না ,, তুই অহনি শিখবি ,, 

    তখনই হঠাৎ শাহারিয়া নিপার রুমের দরজা ঠেলে তাদের রুমে ঢুকে পড়ে ,, কিন্তু ঢুকেই যা দেখে তার জন্য সে প্রস্তুত ছিলোনা ,, ঘরে দিথী আছে ,, হায় হায় ,, সে লুঙ্গি পড়া আর খালি গায়ে ,, আর ভিতরে দিথী ,, দিথী জিনিয়া রাও হা করে শাহারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ,, শাহারিয়া শরম পেয়ে তাড়াতাড়ি হনহন করে কোনমতে বের হয়ে যায় ঘর থেকে ,,

    নিপা হেঁসে উঠে ,, বলে ,,

    – তোর জামাই আইছিলো ,, তোরে দেখতে ,, হা হা হা হা ,, 

    – ধুর কীসব বলিস না ,, ও কী জানে যে আমি এখানে আছি ? জানলে তো ও ভুলেই এই অবস্থায় চলে আসতো না,, 

    – তারমানে তোগো ভিতরে যে প্রেম লাগছে এইডা সত্যি,, হা হা হা হা ,, (হেঁসে উঠে নিপা) 

    – ধূরর তোরা থাম তো ,, পড়া ‌শুরু কর ,, তোরা অনেক বদ হয়ে গেছিস ,,(তারপর একটু লজ্জা মুখ করে বলে) তোদের দুলাভাই কে নিয়ে এভাবে মজা করতে নাই,, 

    – ওহোহোহো,, দুলাভাই,, হা হা হা ,, জিনিয়া এহন আমি ভাইয়ারে ভাইয়া কমু না দুলাভাই কমু ,, হা হা হা হা ,, 

    – তুই দুলাভাই ই কইস ,, ভাইয়া কওন লাগতো না ,, (জিনিয়া বলে)

    – চুপ থাক তোরা ,,পড় ,, (দিথী বলে)

     

    এদিকে দেখানো হয় শিউলি বেগম ওরফে মেম্বার চাচির রুম ,, শিউলি বেগম ডেসিন টেবিলের সামনে বসে আয়না দেখে দেখে চুল আঁচড়াচ্ছে ,, মতিন মেম্বার চোখে চশমা পড়ে একটা চেয়ারে বসে গল্পের বই পড়তেছে ,, বইটার নাম “জীবন-মৃত্যুর চক্রাবর্তন”  ,, তার আবার রহস্যময় বই পরতে ভালো লাগে ,, তো তখন শিউলি বেগম চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলতে থাকেন ,,

    – মাইয়াডার ,, (একটু থেমে) বিয়া দিবা কবে ,, 

    – কোন মাইয়া,, ? কার মাইয়া ,, ? (বই থেকে চোখ উঠিয়েই হন হন করে বলতে থাকেন মতিন মেম্বার)

    – আমি ,, আমি তো তোমার ছোড মাইয়া,, আমারে বিয়া দিবা কবে,, 

    – ধুররো কিসব যাতা কও ,, তুমি তো আমার মিষ্টি একটা বউ ,, 

    – হেই মিষ্টি বউয়ের মিষ্টি খাইয়া খাইয়া তো ডায়বেটিস ধরাইছো ,, তাও তো ২-১ দিন পর পর দেহে কারেন্ট আইয়া পড়ে আর আমার উপর যাপাইয়া পড়ো ,, তাই না ,, 

    – আস্তে কও ,, আস্তে কও ,, বাড়িঘর মেহমান দিয়া ভরা ,, কেউ শুইনা লাইবো ,, 

    – শুনলে শুনোক ,, কাইল পুরা গেরামে মাইকিং করুম যে তুমি মোরে ধর্ষণ করছো ,, 

    – নিজের বউরে আবার ধর্ষণ করে কেমনে ,, কী সব কথা কইতাছো ,, এসব হুনলে মাইনষে আরো হাসবো ,, 

    – হাসুক গে ,, ঐদিকে মাইয়ার বিয়া দিবা কবে ? নিপা নিপা,, তুমি তো আবার জনম দেওয়া মাইয়ার কতাও ভুইলা যাও ,, কোনদিন না জানি কইবা আমি তোমার ছোট বোন ,, 

    – হা হা হা হা ,, তোমার রূপ দেইখা তো কহনো কহনো মনে হয় তুমিই আমার মাইয়া ,, মা আর মাইয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নাই ,, হা হা হা হা ,, 

    – হইছে ,, আমারে মাইয়া মনে করলে আর ঐ রাইত বিরাইতে বিলাই মাইরা দিতা না ,,

    – আরে আরে চুপ করো বেক্কেল বেডি ,, মাইনষে হুনলে খারাপ কইবো ,,

    – তাইলে অহন কও যে নিপারে বিয়া তো দিতে হইবো ,, পোলা দেখতে হইবোনা ,, ? 

    – তুমি দেহা শুরু করো ,, 

    – হ ,, আমার ধারে তো খালি পাত্র আর পাত্র ,, পাত্র লইয়া সারাদিন আমি বইয়া থাহি ,, (বলেই আয়নার দিকে থেকে মুখ ফিরান শিউলি বেগম)

    তখনই শাহারিয়া ঢুকে পড়ে তাদের ঘরে ,, ঢুকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে ,, 

    – মা ,, আমি বিয়া করুম ,, 

    তার এই কথা শুনার সাথে সাথে শিউলি বেগম তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে ফিরে তাকায় ,, মতিন মেম্বারও তার বইটা রেখে দ্রুত তার দিকে ফিরে তাকিয়ে হা করে চেয়ে থাকে ,, 

    – কী হইলো ,, তোমরা আমারে এমনে দেখতাছো ক্যা ,, আমি বিয়া করুম ,, আমারে বিয়া দেও,, 

    শিউলি বেগম নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে ,, 

    – তুই কী আমার পোলা সাহারিয়াই ? নাকি কোন জীন ভূত সাহারিয়ার রূপ ধইরা আইছো ,, (শিউলি বেগম বলেন)

    – আমারো তো তাই মনে হইতাছে ,, যেই পোলা বিয়ার নাম শুনলে দৌড় দিয়া পলায় ,, হেই পোলা কয় বিয়া করমু ,, ? 

    – আরে সত্যিই মা ,, আমি বিয়ে করবো ,, পাত্রিও ঠিক করছি ,, 

    – এই নিপার বাপ ,, আমারে ধরো ,, আমি অজ্ঞান হইয়া যামু ,, আমি মনে হয় ঘুমের মধ্যে আছি ,, (বলেই মাথায় হাত দিয়ে অজ্ঞান হতে থাকার ভান করতে থাকেন শিউলি বেগম,, মতিন মেম্বার উঠে শিউলি বেগমের দিকে যায়)

    – আরে মা ,, কী শুরু করলা ,, আমি বিয়ে করবো আমাকে বিয়ে দেও ,, 

    – আচ্ছা সেই মাইয়াডা কেডা যারে বিয়া করবি,, ? 

    – মা মোর কইতে শরম করতাছে ,, (লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে শাহারিয়া )

    – আচ্ছা কিন্তু তার আগে তো নিপারে বিয়া দিতে হইবো ,, আগে নিপার বিয়া হইবো তারপরে তোর বিয়া ,, তার আগে আর বিয়া বিয়া করবি না ,,

    – এসব কী কও মা ,, এতোদিন আমি কেমনে সবুর করুম ,, 

    – এই ৬ ডা বছর যেমনে সবুর করছোস ,, 

    – মা ,,, ! প্লিজ ,, বিয়াডা দিয়া দেও না ,, 

    – কইছি তো, আগে নিপা, তারপরে আমি, তারপরে তোর বাহে,  তারপরে তোর বিয়া ,, তুই গিয়া সিরিয়ালে খাড়া, যা ,,(বলেই আয়নার দিকে ফিরে চুল আঁচড়াতে থাকে শিউলি বেগম)

    – মা মজা না সত্যি আমি বিয়া করুম ,, তাড়াতাড়ি নিপার বিয়া দিয়া আমার বিয়ার ব্যবস্থা করো ,, 

    – আইচ্ছা করুম নে ,, তুই দেহি তোর বাপের লাহান বিলাই কিলার হই গেছস ,, শীতকাল আইছে এর লাইগা তোর বাহের লাহান দেহে জ্বালা উইডা গেছে,, তুই যা ,, আমি তোর বিয়ার বিষয় ডা দেখতাছি ,, যা ,,,,, 

    – আইচ্ছা মা যাইতাছি ,, (মাথা নিচু করে বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় শাহারিয়া,, )

    – দেখছো,, তোমার পোলা একছের তোমার লাহান হইছে ,, খালি বউ পাগলা ,, (শিউলি বেগম বলেন)

    – আইচ্ছা হেরে এমন পাগল করলো কেডা বিয়ার লাইগা ? 

    – হইবো আমার মতোই কোন সুন্দরী,, আমি যেমনে তোমারে এতো পাগল করছি হেমনে কেউ ওরেও পাগল কইরা দিছে ,, 

    – আমি তো তোমার রুপ দেইখা পাগল হইছি ,, তোমার রূপ তো যে কাউরে হার মানাইবো ,, আমার সুন্দরী বউডা ,, (শিউলি বেগমের চেয়ারের পিছনে দাঁড়িয়ে তার গাল গুলো ধরে টানতে টানতে বলতে থাকে মতিন মেম্বার,, )

    – হইছে হইছে ,, বুজ্জি ,, আমি এহন আর বিছানায় যাইতে পারুম না ,, সব কাম রাইতে ,,

    – একটু মন ভইরা সুনাম ও করতে দিলানা ,,

    – তোমার সুনাম মানেই বিছানার একটা নাটবল্টু ঢিলা হইয়া যাওয়া ,, সড়ো আমার সামনের থে ,, (বলেই উঠে হন হন করে ঘর থেকে চলে যেতে থাকে শিউলি বেগম ,,)

    – ও শিউলি বেগম,, আমার মনে আগুন লাগায়া কই যাইতাছো ,, খারাও শিউলি বেগম ,, আমিও আইতাছি ,,, (বলেই শিউলি বেগমের পিছনে পিছনে যেতে থাকে মতিন মেম্বার,, ) 

     

    রাত এখন গভীর ,, কয়টা বাজে জানা নেই ,, আরমান তার চোখ খুলে ,, সে নিজেকে অনেক ক্লান্ত অনুভব করছে ,, সে তার মুখ তুলে তাকায় ,, দেখে যে সে একটা বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ,, ঘরের মাঝখান টায় একটা ছোট ডিম লাইট নিভু নিভু করে জলছে ,, আলো খুবই কম ,, সাথে দেখে তার হাত বাধা, সাথে পাও বাঁধা,,  সে কিছু বলতে যাবে তখন দেখে মুখেও কাপড় বেঁধে দেওয়া,, তার হাত গুলো চেয়ারের দুই হাতলের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে ,, পা গুলো নিচের খুঁটির সাথে বাঁধা,, ঘরের মধ্যে কেমন একটা বিচ্ছিরি টাইপ গন্ধও তার নাকে আসে ,, গন্ধ টা যেন কোন কিছুর পচে যাওয়ার গন্ধ ,, সে এদিক ওদিক ফিরে তাকায় ,, সে হঠাৎ দেখে তার পাশেও একজন ঠিক তার মতো করে চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় রয়েছে ,, মাথা নিচু করা তাই চেহারা দেখতে পাচ্ছে না ,, আরমান তার মাথায় অনেক ব্যাথা অনুভব করে ,, তার মনে পড়তে থাকে ,, সে আজ সকালে বৃষ্টির মধ্যে যখন জানালার দিক থেকে পাওয়া শব্দ টা শুনতে গিয়েছিলো তখনি কেউ তার মাথায় পিছন থেকে বাড়ি মেরে থাকে অজ্ঞান করে ফেলেছিল,, তারপর থেকে তার আর কিছুই মনে নেই ,, এবং তখনই তার চোখ যায় সেই ছোট্ট ঘরের মাঝখানে রাখা লোহার খাট টার উপর ,, এবং উপরে জ্বলতে থাকা সেই নিভু নিভু আলোটার মাধ্যমেই সে দেখতে পায় বিছানার উপর কেউ মনে হয় আছে ,, তখনই রুমের দরজা খুলে যায় ,, সে ফিরে দরজাটার দিকে তাকায় ,, সে দেখে একজন হেলমেট পরিহিত লোক ঘরে প্রবেশ করছে ,, হাতে একটা ড্রিল মেশিন (যেটা দিয়ে সিমেন্টের দেওয়াল ফুটো করে ,, ) সে ঘরে প্রবেশ করে একটা সুইচে চাপে ,, সাথে সাথে একটা লাল আলো জ্বলে উঠে ,, লাল লাইট বলা যেতে পারে ,, লাল আলোটা জ্বলে উঠার পর থেকে এখন ঘরের অবয়ব টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,, ঘরের একপাশে একটা ছোট্ট টেবিল ,, তার উপর চুলা রাখা ,, তার একটু দূরেই একটা লম্বা টেবিল,, তাতে অনেক ধরনের কাটাছেঁড়া করার ছুড়ি কাচি , দেখা যাচ্ছে,, এবং সে পাশে ফিরে তাকায় ,, দেখে তার পাশের চেয়ারে বাঁধা থাটা লোকটা আর কেউ নয় ,,তার বন্ধু আরিফই ,, আরমান এটা দেখে নিজেকে চেয়ার থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে ,, কিন্তু পারছেনা ,, হাত ,পা গুলো শক্ত করে বাঁধা,, তখনই তার চোখ যায় বিছানার উপর,, বিছানার উপর ছিলো তার একমাত্র প্রিয় আদরের বোন আনিকা ,, তাকে একদম উলঙ্গ করে বেঁধে রাখা হয়েছে,, তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার সেন্স নেই ,, আরমান এসব দেখে কেদেই ফেলে ,, তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ,, সে জোড়ে জোড়ে নড়েচড়ে নিজেকে চেয়ার টা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেছে ,, কিন্তু পারছেনা ,, তখনই লোকটা তার ড্রিল মেশিন টা চালু করে ,, ভোঁ, ভোঁ শব্দ করে চলে উঠে মেশিন টা ,, মেশিন টা চালু করে লোকটা এসে আনিকার পাশে দাঁড়ায়,, আরমান ভয়ে খালি তার দিকে চেয়ে মাথা নাড়াচ্ছিলো,, সে যেন বলতে চাচ্ছিলো তাকে মেরোনা ,, কিন্তু মুখ বাঁধা থাকায় সে মুখ দিয়ে না বলতে পারলেও মাথা নাড়িয়ে না করছে ,, এদিকে আনিকার জ্ঞান ফিরে আসে ,, সে চোখ খুলেই যখন দেখতে পায় একজন হেলমেট পড়া মানুষ তার সামনে ড্রিল মেশিন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ,, তখনই সে অনেক ভয় পেয়ে যায় ,, চিৎকার দিয়ে উঠে কান্না করতে থাকে ,, সে পাশে তাকিয়ে দেখে তার ভাইকেও বেঁধে রাখা হয়েছে তার ভাইয়ের চোখে পানি ,, মাথা নাড়িয়ে লোকটাকে কোন কিছু করতে নিষেধ করছে ,,  কিন্তু সেই লোকটা যেন আরো আনন্দ পাচ্ছিলো এসব দেখে ,, এবং লোকটা হাসতে হাসতে মেশিন টার ঘুরতে থাকা লোহার প্রান্ত টা আস্তে করে আনিকার নাভির মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে থাকে ,, আনিকা জোড়ে চিৎকার দিয়ে উঠে ,, আরমান তার আনিকাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মাথা নাড়িয়ে না করছে লোকটাকে ,, কান্নায় তার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে ,, কিন্তু লোকটা যেন আরো মজা পাচ্ছে,, লোকটা একটা ফুটো করেই আবার মেশিন টাকে পেট থেকে বের করে নেয় ,, আনিকার চিৎকার যেন কিছুটা থেমেছে,, সে তার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আকুতি মিনতি করে বলছে ,, 

    – ভাইয়া ,, আমাকে বাঁচাও,, আমি মরতে চাই না,, আমাকে বাঁচাও ,, (বলেই কান্না করতে থাকে আনিকা ,, ) 

    কিন্তু লোকটার মন একদম গলে না ,, যেন তার মনে কোন মায়া দয়াই নেই ,, সে এবার আরো একবার ড্রিল মেশিন দিয়ে আনিকার পেটে ফুটো করতে লাগলো ,, আনিকা নিজের মাথা এদিক ওদিক নাড়াচ্ছে আর চিৎকার আর্তনাদ করছে ,, বারবার খালি ‌বলছে ,,

    – ভাইয়া আমাকে বাঁচাও,, আআআআ ,, ভাইয়াআআ ,, 

    তার চিৎকার এবং তার মাঝে লোকটার হাঁসি,, সবমিলিয়ে ঘরে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়ে উঠে ,, এবং তখনই লোকটা ড্রিল মেশিন টা আনিকার পেট থেকে বের করে ফেলে ,, করে বলতে থাকে ,, 

    – আমি এতো সহজেই তোকে আর তোর ভাইকে মারবোনা ,, তোদের দুইজনকে তিলে তিলে মারবো ,, আজকে যাকে মারবো তাকে দেখতে চাস ,, ? দাঁড়া,,,

    বলেই লোকটা হেলে বসে পড়ে ,, বিছানার নিচ থেকে একটা দেহ কে টেনে হিচড়ে বের করে ,, এবং আরমান তখনি দেখতে পায় এটা আর কারও বডি নয় ,, সিয়ামের বডি ,, লোকটা টেনে সিয়ামের বডি টাকে আরমানের পায়ের সামনে রাখে ,, এদিকে রক্ত পাত ও ব্যাথায় আনিকা আবার অজ্ঞান হয়ে গেছে ,, আরমানের পায়ের সামনে বডি টা রেখে লোকটা জোড়ে জোড়ে ড্রিল মেশিন চালাতে থাকে সিয়ামের পেটে ,, সিয়ামের জ্ঞান ও নেই ,, তাই সে চিৎকার ও করেনি,, লোকটা ড্রিল করতে করতে সিয়ামের দেহটাকে একদম ক্ষত বিক্ষত করে ফেলে ,, আরমানের পা ভিজে যায় সিয়ামের রক্তে,, তারপর লোকটা উঠে আরমানের কানের সামনে গিয়ে বলে ,,

    ” মানুষের মৃত্যু দেখতে তোদের ভালো লাগতো,, তাই না ? দেখ ,, এখন তুই আস্তে আস্তে তোর সব বন্ধু এমনকি তোর বোনের মৃত্যুও নিজ চোখে দেখতে পারবি ,, আর আমাকে চিনতে পেরেছিস ? পারিস নি বোধহয়,, ” বলেই লোকটা তার মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেলে ,, আরমান লোকটার চেহারা দেখে তার চোখ গুলো এতো বড় করে ফেলে ,, যেন সে কখনো ভাবতেও পারেনি এই লোকটাকে সে দ্বিতীয় বারও দেখতে পাবে ,,

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    [ টুটুল কেন অটোরিকশা চেয়েছিলো নাসিমের কাছ থেকে ? আর খুনিটা আরিফকে এখনো কেন বাঁচিয়ে রেখেছে ? অন্যদের মতো মেরে ফেলেনি কেনো ? সবমিলিয়ে কেমন হচ্ছে জানাবে কমেন্টে 😊 ,, আর আমি কাল অসুস্থ থাকাতে পর্ব দিতে পারিনি ,, আজ দেওয়ার কথা ছিলো রাত ৯ টায় ,, কিন্তু ৩ ঘন্টা লেট করে ফেলেছি ,, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত,, তবে আজকের পর্বটা বড় করেই লিখেছি ,, বাকি পর্ব গুলোও একদিন একদিন পর পরই পাবেন,, ইনশাআল্লাহ,, ]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ২০

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ২১

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    – ভাইয়া আমাকে বাঁচাও,, আআআআ ,, ভাইয়াআআ ,, 

    তার চিৎকার এবং তার মাঝে লোকটার হাঁসি,, সবমিলিয়ে ঘরে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়ে উঠে ,, এবং তখনই লোকটা ড্রিল মেশিন টা আনিকার পেট থেকে বের করে ফেলে ,, করে বলতে থাকে ,, 

    – আমি এতো সহজেই তোকে আর তোর ভাইকে মারবোনা ,, তোদের দুইজনকে তিলে তিলে মারবো ,, আজকে যাকে মারবো তাকে দেখতে চাস ,, ? দাঁড়া,,,

    বলেই লোকটা হেলে বসে পড়ে ,, বিছানার নিচ থেকে একটা দেহ কে টেনে হিচড়ে বের করে ,, এবং আরমান তখনি দেখতে পায় এটা আর কারও বডি নয় ,, সিয়ামের বডি ,, লোকটা টেনে সিয়ামের বডি টাকে আরমানের পায়ের সামনে রাখে ,, এদিকে রক্ত পাত ও ব্যাথায় আনিকা আবার অজ্ঞান হয়ে গেছে ,, আরমানের পায়ের সামনে বডি টা রেখে লোকটা জোড়ে জোড়ে ড্রিল মেশিন চালাতে থাকে সিয়ামের পেটে ,, সিয়ামের জ্ঞান ও নেই ,, তাই সে চিৎকার ও করেনি,, লোকটা ড্রিল করতে করতে সিয়ামের দেহটাকে একদম ক্ষত বিক্ষত করে ফেলে ,, আরমানের পা ভিজে যায় সিয়ামের রক্তে,, তারপর লোকটা উঠে আরমানের কানের সামনে গিয়ে বলে ,,

    ” মানুষের মৃত্যু দেখতে তোদের ভালো লাগতো,, তাই না ? দেখ ,, এখন তুই আস্তে আস্তে তোর সব বন্ধু এমনকি তোর বোনের মৃত্যুও নিজ চোখে দেখতে পারবি ,, আর আমাকে চিনতে পেরেছিস ? পারিস নি বোধহয়,, ” বলেই লোকটা তার মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেলে ,, আরমান লোকটার চেহারা দেখে তার চোখ গুলো এতো বড় করে ফেলে ,, যেন সে কখনো ভাবতেও পারেনি এই লোকটাকে সে দ্বিতীয় বারও দেখতে পাবে ,, আরমানের চোখে মুখে ভেসে উঠেছে ভয়ের ছাপ ,, সে যেন একদম থ হয়ে গিয়েছে,, 

     

    আরমানের ভয় পাওয়া মুখটি দেখে জোড়ে এক অট্টহাসি হেসে উঠে লোকটা ,, তার হাসি যেন থামছেই না ,, হাসতে হাসতে লোকটা চলে যেতে থাকে দরজার দিকে ,, গিয়ে দরজার পাশে থাকা একটা কুড়াল এনে সজোরে একটা কোপ দেয় আহত সিয়ামের গলা বরাবর ,, সাথে সাথেই সিয়ামের মুন্ডু টা ছিটকে গিয়ে পড়ে ঘরের এক কোনায়,, আর সিয়ামের গলা থেকে গলগল করে বের হতে থাকে রক্ত ,, সেই অবস্থাতেই লোকটা সিয়ামের পা এক হাতে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকে দরজার দিকে ,, দরজা দিয়ে বের হয়ে বাইরে চলে যায় লোকটা ,,আর দরজাটা লাগিয়ে দেয় ,, আরমান এখন যেন একদম থ হয়ে আছে ,, নড়াচড়াও করতে পারছেনা ভয়ে ,, কারণ এই মানুষটাকে সে কখনো দেখতে পাবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি ,, সে এক দৃষ্টিতে আনিকার দিকে চেয়ে থাকে ,, তার চোখ বেয়ে শুধু গড়িয়ে পড়ছিলো এক ফোঁটা, দু ফোঁটা পানি ,, 

     

    শীতের সকাল ,, পাখির কিচিরমিচির ডাক ,, দিথীর রুম দেখানো হয় ,, দিথী তার পড়ার টেবিলের সামনে বসে অংক প্র্যাকটিস করছে ,, তার পড়ার টেবিলের ডান পাশে জানালা ও বাম পাশে একটা ছোট্ট টেবিল এবং তারপরই বিছানা ,, জানালা দিয়ে দিনের আলো ঢুকেছে ঘরে ,, দিথীর পড়নে সোয়েটার,, শীত একদম জেঁকে বছেসে ,, জানালা দিয়ে বাইরে খালি কুয়াশা আর কুয়াশা দেখা যাচ্ছে ,, ঘরে প্রবেশ করলো সামিহা ,, হাতে  একটা ট্রে ,, নাস্তা নিয়ে এসেছে সে দিথীর জন্য,, সামিহা এসে ট্রে টা দিথীর পড়ার টেবিলের পাশের ছোট্ট টেবিল টায় রাখে ,, তারপর সেখান থেকে এক কাপ চা উঠিয়ে দিথীর পড়ার টেবিলে রাখে ,, আর সাথে একটা বাটিও উঠিয়ে রাখে ,, বাটিতে ভাপা পিঠা ছিলো ,, শীতের সকালে খেজুর গুড় দিয়ে ভাপা পিঠা , আহা আর কি চাই,,, দিথী তার খাতা-বই বন্ধ করে পাশে সড়িয়ে রাখে ,, সড়িয়ে রেখে চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে সামিহাকে বলতে থাকে ,, 

    – এতো সকালে ভাপা পিঠা কোথায় পেলে আপু ,,?

    – তোমাদের বাসার পাশের বাসায় যে আমেনা দাদি আছেনা ,, সে পাঠিয়েছে,, তোমার বলে অনেক পছন্দের তাই ,, 

    – ওহহ আমেনা দাদির পিঠা ,, ! উনার পিঠা অনেক মজার হয় ,, (বলেই চায়ের কাপ টা রেখে পিঠার একটু অংশ তুলে খেতে থাকে দিথী ,, তারপর বলে ,, 

    – উমম ,, (একটু থেমে) অনেক মজা হয়েছে ,, তুমিও নেও আপু ,,

    – আমি নিয়েছি ,, 

    – আচ্ছা আপু ,, একটা কথা জিগ্যেস করি ,, (খেতে খেতে বলতে থাকে দিথী)

    – হ্যা বলো ,, কী বলবা ,, 

    – আচ্ছা তুমি কী কখনো প্রেম করেছিলে আপু ,, ? 

     

    দিথীর প্রশ্নটা শুনেই একটু থেমে যায় সামিহা ,, কিছুক্ষণ পর উত্তর দেয় ,, 

    – যখন কলেজে ছিলাম ,, তখন একজনকে ভালো লাগতো ,, তবে তাকে আমার মনের কথাটা আর বলা হয়ে উঠেনি ,, আর তাছাড়া তার গার্লফ্রেন্ড ছিলো ,, তাই আরকি ,,,,,,,(ধীর গলায় শান্ত ভাবে বলে সামিহা)

    – ওহহ ,,, আচ্ছা তোমার এখানে আমার সাথে থাকতে কেমন লাগছে ,, 

    – এমনিতে তো ভালোই লাগছে ,, চাচাও অনেক স্নেহ করেন,, সবমিলিয়ে ভালোই ,, (একটু থেমে) তবে ,,,, 

    – তবে কী আপু ,, ? 

    – তবে আমার কেন জানি মনে হয় কেউ মনে হয় সবসময় আমাদের দেখছে ,, সবসময় আমাদের দিকে একনজরে তাকিয়ে থাকছে ,, যদিও আশেপাশে তাকালে এমন কাউকে দেখতে পাই না ,, তবুও মনের মধ্যে কেমন জানি আনইজি ফিল হয় ,, তোমার কী একরম টা হয় দিথী ? 

    – আমার ? না তো ,, আমার এমন কিছুই মনে হয়নি,, তুমি নতুন তো ,,তাই মানিয়ে নিতে একটু আনকমফরটেবল ফিল হচ্ছে ,, ব্যাপার না ,, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে ,, 

    – হমম সেটাই ,, নেও আরো ভাপা পিঠা লাগলে নেও ,, এখানে অনেক আছে (বলেই ট্রেতে থাকা একটা বড় বাটি থেকে আরো ভাপা পিঠা উঠিয়ে দিতে থাকে সামিহা ,, একটা দেওয়ার পর দিথী বলে ,,)

    – আর লাগবেনা আপু এইটাই হবে ,,তুমিও নেও ,, 

    – হমম নিচ্ছি ,, 

    – মজা হয়েছে কিন্তু অনেক,, তাই না বলো ,,

    – হ্যা ,, আমিনা দাদির হাতের পিঠা, পায়েস বেশ মজার ,, 

     

    তারা খেতে থাকে আর এভাবেই দুইজন খেতে খেতে গল্প করতে থাকে ,, যেন দুইবোনের এক সুন্দর মিষ্টি খুনসুটি,,, 

     

    – ভাবি ,,আমি গেলাম,, আইজ দুপুরে খাইতে না আইতে পারি ,, 

    (ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাত ঘড়ি পরতে পরতে বলছে রিয়াদ ,, তার পড়নে পুলিশ ইউনিফর্ম ,, বুঝতে বাকি নেই যে সে থানার দিকেই যাচ্ছে,, তার কথা শুনে রাতুলদের ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে মায়া ,,মায়া বলে ,, 

    – ঠিকঠাক মতো যাইয়ো ,, আর আজকে কারো দাঁড়া বাজার পাঠায় দিয়ো ,, তোমার ভাই একটূ অসুস্থ,, আইজ মনে হয় বাজারে যাইতে পারবোনা ,, 

    – ভাইয়ার কী হইছে ?

    – তোমার ভাইয়ার ভোর থেকে জ্বর আর মাথা ব্যাথা ,, এখনো ঘুমাচ্ছে আমি ডাক দেই নি ,, তুমি কারো দাঁড়া বাজার পাঠিয়ে দিয়ো ,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে ভাবি, আমি বাজার আর দরকারি ঔষধ পাঠায়া দিমুনে ,, আর তুমি আর ভাইয়া নাস্তা কইরা নিয়ো ,,

    – আইচ্ছা দেবর জি ,,ঠিক ভাবে যাইয়েন ,,

    – আইচ্ছা ভাবি,, 

    বলেই ঘরের দরজা থেকে নেমে মায়াকে বিদায় জানিয়ে বাসার মেইন দরজা দিয়ছ বের হয়ে যায় রিয়াদ ,,বাইক টা শাহারিয়া নিয়ে গিয়েছে,, তাই সে হেঁটে হেঁটেই যাচ্ছে ,, রাস্তায় হাঁটছে সে ,,দুইপাশেই মাঠ ,, রাস্তার কিনারায় বিভিন্ন রকমের গাছের সাড়ি ,, সকাল বেলা অনেকে কৃষকই গরু নিয়ে হালচাষে বেড়িয়েছে ,, রিয়াদের ফোন টা বেজে উঠে,, সে রাস্তার সাইডে গিয়ে দাঁড়ায় ,, দাড়িয়ে ফোন টা বের করে ,, দেখে তার কনস্টেবল নয়ন ফোন দিয়েছে ,,রিয়াদ কল টা রিসিভ করে ,, ওপাস থেকে নয়ন বলে ,, 

    – স্যার স্যার ,, আজকেও একটা লাশ পাওয়া গেছে,,

    – আরে কী বলো ,, ? লাশ টা ছেলের না মেয়ের ? 

    – স্যার আপত দৃষ্টিতে দেইখা মনে হইতাছে যে এইডা পোলার ,,

    – ও আচ্ছা ,, তাইলে ঠিক আছে ,,

    – ঠিক আছে মানে স্যার ? 

    – কিছুনা ,, তোমাকে পরে বলবোনে ,, আমি ইমন,শাম্মীদের তোমার ঐখানে পাঠাচ্ছি ,, ওরা যা যা করতে বলে করবে ,, ঠিক আছে ? 

    – আচ্ছা স্যার ,, তবে আপনি আইবেন না ? 

    – না ,, আমি আজ কাজে একটা যায়গায় যাচ্ছি,, ইমন,শাম্মিরাই লাশের ব্যাপার টা সামলিয়ে নিবে ,,

    – আইচ্ছা স্যার ,, 

    – আর একটা কথা ,, লাশ পাওয়া যাওয়ার কথা যেন বাইরে গ্রাম বাসীর মধ্যৈ ভুলেও না ছড়ায় ,, বুঝতে পেরেছো ? 

    – ওকে স্যার ,,

    – ঠিক আছে রাখলাম, ,

     

    রিয়াদ ফোন টা কেটে দেয়,, সে এখনো রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ,, রিয়াদ তার ফোনে শাহারিয়ার নাম্বার উঠিয়ে সেটাতে ফোন দেয় ,, 

    – হ্যালো ,, হ্যা রিয়াদ বল ,, (ওপাস থেকে শাহারিয়া বলে)

    – দোস্ত তুই কোথায় এখন ,, ?

    – আমি ,, ? আমি তো নাস্তা করছি ,, কেন কোন দরকার নাকি ? আরো লাশ পাওয়া গেছে ? (খাবার চিবোতে চিবোতে শাহারিয়া বলে)

    – হ্যা লাশ তো আরেকটা পাওয়াই গেছে ,, তুই ইমন,শাম্মীদের ঐ আম বাগানের ঐদিক যেতে বল ,, আর তুই খাওয়া শেষ করে জলদি আয় ,, একটা যায়গায় যাবো ,, 

    – একটা যায়গা ,, ? কোন যায়গা ,, ? কোথায় যাবো আমরা ? 

    – পরে বলি সব ,, তবে জরুরি একটা কাজের জন্যই যাবো ,, তুই একটু তাড়াতাড়ি আয় ,, আর ইমন,শাম্মীদের ঐদিকে পাঠিয়ে দে ,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে,,আমি এই ধর ১০ মিনিটের মধ্যেই আসছি ,, তুই এখন কোথায় আছিস ,, 

    – আমি তো রাস্তাতেই,, তুই এক কাজ কর ,, তুই তিন রাস্তার মোড়ে চলে আছিস ,, আমি তিন রাস্তার মোড়ের মানিক মিয়ার চা’য়ের দোকানে থাকবো ,, 

    – আচ্ছা,, ঠিক আছে ,, আমি এই খাওয়াটা শেষ করেই বাইক নিয়ে জলদি আসছি ,, মা আবার খাবার না শেষ করে যেতে দিবেনা ,,

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,, আছিস ,,

    – আচ্ছা  ,, 

    রিয়াদ ফোন টা কেঁটে দেয় ,, দিয়ে আবার পথ চলতে শুরু করে ,, পথের মধ্যে বেল বাজিয়ে ১ টা সাইকেল চলে গেলো ,, পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজও পরিবেশে সুন্দর ভাবে বেজে চলেছে,, 

     

    সকাল ১১ টা,,, দিথীদের বাড়ির কাজের মেয়ে শেফালী রান্না ঘরে রান্না করছে ,, তার পরনে থ্রী পিস ,, ওড়নাটাকে বেঁধে রেখেছে,, রান্নার চুলায় কড়াইয়ে মাছ বসিয়েছে সে ,, তার চুলার পাশেই একটা জানালা ,, যাতে ধোয়াটা বাইরের দিকে চলে যেতে পারে,, রান্না ঘরটাও পাকা আর রুম গুলোর শেষপ্রান্তের দিকে রান্নার এই ঘর টা,, মাছ ভুনা রান্না করছে সে ,, হাতের খুন্তি টা দিয়ে নেড়েচেড়ে দিচ্ছে তরকারি টা ,, তখনই ঘরে আসেন নাজিয়া বেগম,, মানে দিথীর সৎ মা ,, তার একটা হাত পুরো পুড়ে গিয়েছে ,, সেটা ব্যান্ডেজ করে গলার সাথে বেঁধে রাখা ,, মুখের একপাশ সম্পূর্ণ রূপে পূরে গিয়েছে ঐদিন ফুটন্ত গরম পানি পড়ার পর পরই,, বেশি পুড়েছে শরীরের ভিতরে অংশ ,, বাম পা টাও অনেকটা পুরে গিয়েছে ,, তাই এখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটেন কিছুটা ,, তাকে লক্ষ্য করেনি শেফালী,, নাজিয়া বেগম খোড়াতে খোড়াতে শেফালীর পাশে এসে দাঁড়ায়,, শেফালী পিছনে তাকায় ,, দেখে বেশ অবাকই হয় ,, কারণ নাজিয়া বেগম খুব বেশি একটা রান্না ঘরে আসতেন না,, শেফালী বলে উঠে ,,

    – আরে চাচি আফনে ,,, আপনে উইঠা আইতে গেলেন ক্যা ,, আমারে কইতেন ,,কী লাগতো আইনা দিতাম ,, 

    – না রে শেফালী ,, তেমন কিছু লাগতো না,, কী রান্না করতাছোস ,, 

    শেফালী কড়াইয়ের দিকে ফিরে খুন্তি দিয়ে নাড়তে নাড়তে বলে ,, 

    – এইতো মাছের ভুনা করতাছি দিথী আপুর লাইগা,, দিথী আপু বলে খাইবো কইলো ,, তাই একটা মাঝারি মাগুর মাছ রান্না করতাছি ,, তারপর আপনেগো লাইগা মুরগি বহামু ,, 

    – আইচ্ছা ঠিক ভাবে রান্না কর ,, (রোগীদের মতো কাপোকাপো কন্ঠে বলেন নাজিয়া বেগম ,,)

    – চাচি আপনের কিছু লাগবো নাকি ,, মোরে কন মুই দিতাছি ,, 

    – নারে ,, (একটু থেমে) তেমন কিছুনা ,, তবে নিবিড় একটু তোকে ডাকতেছিলো ,, তাই আরকি আসলাম তোকে বলতে ,,(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলেন নাজিয়া বেগম) 

    – নিবিড় বাবায় আমারে ডাকতাছিলো ,, ? কিন্তু আমি তো হুনতে পাইলাম না ,, ! আচ্ছা খাড়ান আমি দেইখা আইতাছি ,,(বলেই কড়াইয়ের আঁচ একটু কমিয়ে দিয়ে ঢাকা দিয়ে চলে যায় শেফালী,, 

    আপনারা হয়তো ভাবছেন নাজিয়া বেগম ভালো হয়ে গেছে ,, তিনি আর দিথীর পিছনে লাগবেন না , ঝগড়াও করবেন না ,, কিন্তু আপনার ধারনা ভুল ,, 

    নাজিয়া বেগম তার পোড়া হাত টার কনুইয়ের ভাঁজ হতে একটা ছোট্ট কাচের শিশি বের করেন ,, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় যেমন ছোট ছোট কাচের শিশি বোতল ব্যাবহার করা হয় ঐগুলো ,, তিনি এক হাত দিয়ে কোনমতে কষ্ট করে ছোট্ট কাচের বোতলের ছিপি টা খুলেন ,,খুলে সেই ছোট্ট বোতল টাকে চুলার পাশে রাখেন ,, তারপর এক হাত দিয়ে লুছনি দিয়ে মাছের কড়াইয়ের উপরে দেওয়া ঢাকনা টা তুলে ফেলেন ,, তুলে ফেলে চুলার পাশে থাকা শিশি টা উঠিয়ে তা মাছের তরকারির মধ্যৈ উবুর করে ধরেন ,, শিশিটা থেকে একটা তরল পদার্থ বের হয়ে তরকারিতে পড়তে থাকে ,, নাজিয়া বেগমের ঠোঁটের কোনায় ফুটে উঠে এক রহস্যময় হাসি,,  এবং নাজিয়া বেগম বলতে থাকে ,,

    “আমি জানি,, তুই ঐদিন ইচ্ছে করেই পানির পাতিল টা একপাশে হেলিয়ে রেখেছিলি তা আমার উপরই পড়ে , আমার এমন অবস্থা করেছিস না ?? এখন এর ফল ভোগ করবি ,, এই তরকারি খাওয়ার ১ ঘন্টার মাঝেই তোর এক যন্ত্রনাদায়ক মৃত্যু হবে ,, তোর প্রতি আমার সকল রাগ আর ঘৃণার অবসান হবে ,, হা হা হা হা ,,” এক শয়তানি হাসি হাসতে থাকে নাজিয়া বেগম ,, 

     

    শিশি থেকে পুরো তরল টাই তরকারি তে পড়েছে ,, নাজিয়া বেগম জলদি শিশি টা আর তার ছিপি টাকে পাশের জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেন ,, দিয়ে খুন্তি টা দিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে দিতে থাকেন ,, এবং তখনই রান্না ঘরে চলে আসে শেফালী,, শেফালী এসে নাজিয়া বেগম কে দিথীর তরকারি নাড়তে দেখে বেশ অবাক হন ,, কারণ যেই লোক দিথীকে দুই চোখে দেখতে পারতোনা,, সেই লোক দিথীর রান্না নেড়ে দিচ্ছে ,, ? শেফালি গিয়ে নাজিয়া বেগমের পাশে দাঁড়ায়,, নাজিয়া বেগম খেয়াল করেন নি যে কখন শেফালী এসেছে,, শেফালী এসে নাজিয়া বেগমকে বলেন ,,

    – চাচি আপনারে নাড়তে হইবো না,, আমারে দেন আমি নাইড়া দিতাছি ,, 

    শেফালীর কথাটা শুনে কিছুটা চমকে উঠেন নাজিয়া বেগম ,, তিনি হুট করে পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখেন শেফালী দাড়িয়ে আছে ,,তিনি নার্ভাস হয়ে বলতে থাকেন ,, 

    – শে,শে, শেফালী,, তুই কী কিছু দেখছিস,,? 

    – কী দেখমূ চাচি,, আইসা তো দেখতাছি আপনে তরকারি নাইড়া দিতাছেন যানি লাইগা না যায় ,, এতো তাড়াতাড়ি একটা মানুষের পরিবর্তন,, আমার তো বিশ্বাসই হইতাছে না,, 

     

    নাজিয়া বেগম যেন শেফালির কথা গুলো শুনে হাফ ছেড়ে বাঁচলেন,, তিনি মনে মনে বলছেন ,, ” যাক ,, শেফালী তাইলে কিছু দেখেনি,, দেখলে তো আবার বিশাল কেলেঙ্কারি হয়ে যেতো” 

     

    – চাচি আপনি কী ভাবতাছেন চুপ হইয়া ,, ? 

    – না না তেমন কিছু না ,,

    – আমি তো নিবিড় বাবার ধারে গেলাম ,, হেয় কইলো আমারে বলে ডাকে নাই ,, কিন্তু আপনে যে কইলেন হেয় মোরে খুজতাছে ,, ? 

    – ওহহহ ,, মনে হয় ভুল শুনে ফেলেছি,, (একটু হাসি দিয়েই কথাটা বললেন ,, তারপর আবার বলেন) আচ্ছা তুই রান্না কর ,, আমি গেলাম ,,(বলেই এক পা খোড়াতে খোড়াতে চলে যেতে থাকেন নাজিয়া বেগম ,, 

    শেফালী রান্নার কড়াইয়ের সামনে দাড়ায় ,, দাঁড়িয়ে তরকারি নাড়তে থাকে ,, আর বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে ,,

    – কে জানে কী শুনতে কী শুইনা লাইছে ,, বেকার আমারে খালি একটা ঘুড়ান দেওয়াইয়া আনাইলো ,, যত্তসব,, হুঁ,, (ভেঙচি কেটে বলে শেফালী,,)

     

    সময় এখন সকাল ১১:৩০ ,, নাসিম কে আমরা দাড়িয়ে থাকতে দেখি মেম্বারের বাড়ির পিছনের বাগানটায় ,, সে বাগানের বসার যায়গাটার পাশেই একটা বড় কাঠাল গাছে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে ,, দাড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে আর হাত দিয়ে গাছের পাতা ছিঁড়ছে,, তখনই আমরা আসতে দেখি ফুলমতিকে ,, সে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে তার দিকে আসতে থাকে ,, তার পরনে থ্রি পিস ,, সে ওড়না ঠিক করে ওড়নার কোণ টায় হাত মুছতে মুছতে এসে নাসিমের পাশে দাঁড়ায়,, বলে ,,

    – এই যে মিষ্টার ,, ডাকছেন কিল্লাই ,, 

    – ও ফুল তুমি চইলা আইছো ,, (ফুলমতির দিকে ফিরে নাসিম বলে)

    – হ আইছি ,, তয় তুমি জানো না যে এইসময় আমি রান্না-বান্নায় বিজি থাকি ,, তারপরও এই সময় ডাকলা ক্যা ,, 

    – না মানে ফুল তোমারে একটা জিনিস দেওয়ার লাইগা ডাকছি ,, (ফুলমতির হাত ধরে এক লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে নাসিম) 

    – এই ভর দুপুরের গরমে তুমি কী জিনিস দিবা ,, দেও দেহি জিনিসটা,, 

    – আগে তুমি চোখ বন্ধ করো ,, 

    – দিনের বেলায় কী কেউ এমন জিনিস দেয় ,, যাহ দুষ্টু,,,(লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে ফুলমতি বলতে থাকে )

    – আরে না গো জান ,, ঐ জিনিস তো রাইতে ঘুমাবার আগে দিমু ,, এহন অন্য জিনিস দেওয়ার লাইগা ডাকছি ,, তুমি চোখ বন্ধ করো ,, 

    – এমনিই দেওনা গো জান ,, (লজ্জা মাখা স্বরছ বলে ফুলমতি)

    – না না ,, তুমি প্লিজ চোখ টা একটু বন্ধ করো ,, প্লিজ,, 

    – উফফ ,, আচ্ছা এই নেও চোখ বন্ধ করলাম ,, এখন কী জিনিস দিবা দেও দেখি ,, (চোখ বন্ধ করে হাত বাড়িয়ে বলে ফুলমতি ,, )

     

    নাসিম একটু হেলে কাঠাল গাছের পাশ থেকে একটা মাঝারি সাইজের বক্স , একটা চিঠির খাম ,, এবং কয়েকটা বড় চকলেট উঠিয়ে আনে ফুলমতির সামনে ধরে,, এরপর বলে ,,

    – এই বার চোখ খুলো ফুল,,, 

     

    ফুলমতি চোখ খোলে ,, নাসিমের হাতে এতসব কিছু দেখে অবাকও হয় সাথে বেশ খুশিও হয়,, খুশি হওয়ার ছাপ তার চোখে মুখে স্পষ্ট,, নাসিম বলে ,,

    – Happy Birthday ফুল ,, 

    ফুলমতি খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে ,, সে নাসিমকে জড়িয়ে ধরে ,, নাসিমের দুই হাতেই গিফট গুলো,, ফুলমতি নাসিমকে জড়িয়ে ধরেই বলতে থাকে ,, 

    – তুমি কেমনে জানলা যে আজকে আমার জন্মদিন,,?

    – তোমার বান্ধবী লায়লার কাছ থেইকা জানছি ,, 

     

    ফুলমতি নাসিমকে ছেড়ে দিয়ে বলে ,, 

    – তোমার মতো কেয়ারিং কাউকে পাইছি ,, এটা আমার সৌভাগ্য,, 

    – আরে না না তেমন কিছুই না ,, নেও গিফট গুলা খোলো ,, 

     

    ফুলমতির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতে থাকে নাসিম ,, ফুলমতি নাসিমের হাত থেকে চকলেট গুলো নেয় আগে,, নিয়ে বলে ,, 

    – আমার চকলেট অনেক অনেক পছন্দের,, 

    – এরলাইগাই তো আনছি ,, এবার নেও এই বক্স টা ,, (মাঝারি সাইজের একটা চ্যাপ্টা আয়তাকার বক্স এগিয়ে দেয় ফুলমতির দিকে ,, ফুলমতি হাতের চকলেট গুলোকে পাশের বসার যায়গাটায় রেখে বক্স টা হাতে নেয়,, বলে ,,

    – কী আছে এই বক্সে ?

    – খুলেই দেখো ,, ! 

    ফুলমতি বক্স টা খুলতে থাকে ,, বক্সটার উপর গিফট রেপিং দিয়ে প্যাক করা ছিলো ,, ফুলমতি বক্সটার উপরের কাগজ ছিঁড়ে ভিতরের বক্স টা খুলে ফেলে ,, ভিতরে জিনিস দেখে সে আরো অনেক খুলি হয়ে যায় ,, সেখানে ছিলো একটা ছোট্ট টেডি বিয়ার(পুতুল),, এবং একটা সোনার চেইন ও আংটি ,, ফুলমতি খুশিতে বলতে থাকে ,, 

    – এইসব ,, এইসব তুমি আমার জন্য এনেছো ,, 

    – হ্যা বেগম সাহেবা ,, এই সবগুলোই আপনার ,, দেখুন তো চেইন আর আংটি টা পছন্দ হয়েছে কি না ,, !

    – হ্যা হ্যা অনেক পছন্দ হয়েছে ,, উম্মাহ ,, (নাসিমের গালে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে দেয় ফুলমতি ,, ফুলমতি এবার বসার যায়গাটায় বসে ,, সাথে নাসিম ও বসে ,, ফুলমতি গিফট গুলো কে হাতে রেখেই বলতে থাকে ,,

    – এতো টাকা খরচ করার কী দরকার ছিলো গো,, চেইন , আংটি ,, এসব কিনতে তো অনেক টাকা লেগেছে ,,

    – আরে চিন্তা করোনা ,, আমি এই মাসে চাচার কাছ থেইকা পাওয়া বেতন ডা দিয়া কিনা ফেলছি,, তোমার পছন্দ হইছে তো ,, !

    – হ্যা অনেক পছন্দ হইছে ,, (হাসি মুখে বলতে থাকে ফুলমতি ,, তারপর কিছুক্ষণ পর ফুলমতি আবার বলে ,, 

    – আচ্ছা ঐ খাম টা কীসের(চিঠির খাম টাকে উদ্দেশ্য করে বলে)

    – এই খাম টা ,, ? (খাম টাকে এগিয়ে দেয় ফুলমতির দিকে ) নেও এটাও তোমার ,, 

    – এটার মধ্যে কি আছে ? (একটু থেমে) আচ্ছা দাঁড়াও খুলে দেখতেছি ,,

    – দাঁড়াও দাঁড়াও ,, এটা খুলিওনা ,, এটা এভাবেই তোমার কাছে রেখে দাও ,, এটা তুমি ঠিক তখনই খুলবে যখন আমি তোমার কাছে থাকবোনা ,, আমায় খুব মিস করতেছো এমন সময়েই খুলবে ,, 

    – তুমি কি কোথাও চলে যাবে ,, (মন খারাপ করে গোমড়া মুখ করে বলে ফুলমতি)

    – আরে না না,, আমি আবার কোথায় যাবো ,, তোমায় ছেড়ে কী আমি কোথাও যেতে পারি ,,(ফুলমতির গাল গুলো ধরে টেনে বলতে থাকে নাসিম)

    – তাহলে ঐযে বললে ,, 

    – ও,, না মানে আমাকে তো চাচার সাথে অনেক যায়গাতেই যেতে হয় ,, অনেক সময় অনেক বড় কাজ থাকে ,, তাই ফিরতে দেরী হয় ,, তাই এমন আমার অনুপস্থিতিতে তোমার যদি আমার কথা অনেক মনে পড়ে বা মিস করো তখন ঐ খাম টাকে খুলিও ,, ঠিক আছে ,, 

    – ঠিক আছে ,, (ফুলমতির মুখে এবার একটু হাসি ফুটে উঠে ,, এবং সে নাসিমকে জড়িয়ে ধরে ,, আশেপাশে সুন্দর প্রকৃতির মাঝে তার দুইজন এক নিরহারা পাখি যেন মিলিত হয়ে গিয়েছে এক বিন্দুতেই,, বাগানের ফুলগুলো বাতাসে দোলে উঠে যেন কোন এক আনন্দের হাওয়া তাদের নাচিয়ে যাচ্ছে,,, 

     

    সময় এখন দুপুর ১২ টা ,, আকাশে রোদ উঠেছে ভালোই ,, সকালে ঠান্ডা আর কুয়াশা থাকলেও দুপুর হতে হতে রোদের তাপ কিছুটা বেড়ে যায় ,, রিয়াদ আর শাহারিয়া দুইজনেই তাদের বাইক থামায় ,, এলাকা টা নির্জন,, রাস্তার দুইপাসেই জঙ্গল আর গাছপালা ,, বলা যায় জঙ্গলের মাঝ দিয়েই রাস্তাটা দিয়েছে ,, শাহারিয়া আর রিয়াদ এখানে একটা বাড়ির সামনে নেমেছে ,, এইবাড়ির আশেপাশে তেমন আর কোন বাড়ি দেখা যাচ্ছে না ,, কেমন একঘেয়েমি একটা পরিবেশ ,, গাছ গাছালি বেশি থাকায় এদিক টায় একটু বেশিই সতেজ হাওয়া ,, রিয়াদ রা যেই বাড়িটার সামনে থেমেছে বাড়িটা পাকা বাড়ি ,তবে দেখে মনে হচ্ছে অনেক অনেক পুরোনো,, অনেক পুরোনো বলতে অনেক পুরোনো ,, প্রায় ১০০ বছর তো হবেই এই বাড়ির বয়স,, শ্যাওলা ধরে গিয়েছে বাড়ির দেওয়ালে,, রিয়াদ রা দরজার পাশে বাইকটা রেখে দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে ,, বাড়িটার চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেড়া ,, আর বাড়িটা বড়ও না ,, মাত্র তিন রুমের বাড়ি ,, আর‌ তার সামনে মাটির চুলা দেখা যাচ্ছে,, মনে হয় এখানেই রান্না বান্না করা হয় ,, রিয়াদ রা বাসার আঙ্গিনায় দাঁড়ায়,, পরিবেশ টা ব্যাপক ভূতুড়ে,, এতো বড় জঙ্গলের মাঝে রাস্তার পাশে বাড়ি ,, রাস্তা দিয়েও তেমন লোক যাওয়া আসা করে না ,, রিয়াদ রা ভিতরে ঢুকার পর ডাকতে শুরু করে,, 

    – কেউ আছেন বাড়িতে ? হ্যালো ,, কেউ কী আছেন ? 

    তখনই বাড়ির ভিতরের একটি দরজা কেরাত কেরতা শব্দ করে খুলে উঠে ,, এবং ভিতর থেকে একজন বৃদ্ধ লাঠি হাতে বেড়িয়ে আসে ,, 

     

    শাহারিয়া রিয়াদকে ফিসফিসিয়ে বলে ,,

    – আমিতো ভাবছিলাম এই বাড়িতে কেউ থাকেনা ,, এখন দেখছি আছে ,, 

    – হ্যা রে ,, আচ্ছা দেখি তাকে জিজ্ঞেস করে,,যে সে নুপুরের কে হয় ,,

    আসলে রিয়াদ আর শাহারিয়া এসেছে হরিশপুর গ্রামের বড় জঙ্গলের ভিতরটায় ,, এবং এখন যেই বাড়িতে তারা অবস্থান করছে এটাই নুপুরের বাড়ি ,, অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেয়েছে তারা ,, আগে ভেবেছিলো আনন্দ নগর গ্রামেই মনে হয় নুপুরের বাসা ,, কিন্তু না ,, নুপুরের বাসা হরিশপুর গ্রামে ,, 

    বৃদ্ধ লোকটা লাঠি হাতে বেড়িয়ে এসে বারান্দায় দাঁড়ায় ,, দেখেই মনে হচ্ছে তার বয়স অনেক ,, কম করে হলেও ৯০+ ,, এতো বয়স ,, তবুও হাঁটতে পারেন ,, যদিও লাঠির সাহায্য নিতে হয় ,,বৃদ্ধ লোকটি ধীর গলায় তাদের বলে ,,

    – তোমরা কারা বাবা ,, ? 

    – ইয়ে মানে দাদু আমরা আনন্দ নগর গ্রামের পুলিশ ,, আচ্ছা আপনি নুপুরের কে হন ? (রিয়াদ বলে)

    – কোন নুপুর ,, (একটু থেমে) আমার তো কোন নুপুর নামের কারো কথা মনে পড়ছে না (ধীর গলায় ভারি কন্ঠে বৃদ্ধ বলে)

    – দাদু আজ থেকে ৬ থেকে ৭ বছর আগে কী আপনার বা আপনার পরিবারের কোন মেয়ে গায়েব হয়ে গিয়েছিলো ? 

    – ৬ বছর আগে ? (একটু থেমে) আচ্ছা তোমরা চাঁদনী মায়ের কথা বলছোনা তো ? 

    – চাঁদনী ??(রিয়াদ আর শাহারিয়া অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকায় ,, শাহারিয়া ফিসফিসিয়ে রিয়াদকে বলে ,, 

    – আচ্ছা আমরা ঠিক ঠিকানায় এসেছি তো ? 

    – হ্যা এইটাই ছিলো ঠিকানা ,, আমি এইটাই পৌরসভা অফিস থেকে পেয়েছি ,, 

    রিয়াদের কথা শুনে আবার স্বাভাবিক হয়ে শাহারিয়া বৃদ্ধকে বলতে থাকে ,, 

    – আচ্ছা দাদু ,, চাঁদনী আপনার কী হতো ? 

    – চাঁদনী ?? (একটু থেমে) চাঁদনী আমার নাতি ছিলো ,, আমরা একই সাথে এই বাসাতে থাকতাম ,, তার দাদিও ছিলো তখন ,, 

    – আচ্ছা দাদু ,, চাঁদনী কী আনন্দ মোহন কলেজে পড়াশোনা করতো ? (শাহারিয়া জিগ্গেস করে ,, কারণ আনন্দ মোহন কলেজ টাও অনেক পুরোনো,, নাম তো তিনি শুনেই থাকবেন ,, তাই )

    – হ্যা ,,সে ৬ বছর আগে আনন্দ মোহন কলেজেই পড়তো,, (একটু থেমে) ও হ্যা ওর নাম নুপুরই ছিলো ,, চাঁদনী নামে আমরা তাকে ডাকতাম ,, বুড়ো হয়ে গেছিতো বাবা ,, তাই আর মনে থাকেনা সবকিছু,, (কাপো কাপো কন্ঠে ধীরে ধীরে বলে বৃদ্ধ ,,)

    বৃদ্ধার কথা শুনে রিয়াদ আর শাহারিয়ার মুখে হাসি ফুটে উঠে ,, যাক শেষমেষ ওরা ঠিক যায়গাতেই এসেছে ,, এরপর শাহারিয়া বৃদ্ধকে জিগ্গেস করে ,, 

    – আপনি কী এখন একলাই থাকেন দাদু ? 

    – হ্যা রে বাবা ,, (একটূ থেমে) আমার ছেলে মারা গিয়েছে অনেক আগেই ,, ছেলের বউও মারা গিয়েছে ,, আর তোমাদের দাদিও ৩ বছর আগে গত হয়েছেন ,, (ভারী কন্ঠে ধীরে ধীরে বলেন বৃদ্ধ)

    – আপনাদের পরিবারের আপনি ছাড়া কী আর কেউই বেঁচে নেই ? (রিয়াদ বলে)

    – না বাবা ,,, (ধীর কন্ঠে বৃদ্ধা উত্তর দিলেন,)

    রিয়াদ এবার শাহারিয়ার দিকে ফিরে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ,, 

    – এই বৃদ্ধার তো দাঁড়ানোর ই জোড় নেই ,, আর তার ভাষ্যমতে আর কেউ বেঁচেও নেই ,, তাইলে খুন গুলো কে করতেছে ,, ? 

    – আরে তুই থাম ,, আমাকে আরো জিগাইতে দে (শাহারিয়া ফিসফিসিয়ে বলে)

    – আচ্ছা দাদু ,, নুপুর ,, মানে চাঁদনী সম্পর্কে বা আপনার পরিবার সম্পর্কে একটু যদি বলতেন ,, 

    বৃদ্ধা আসতে আসতে গিয়ে বারান্দায় রাখা একটা কাঠের পুরোনো চেয়ার টায় বসলেন ,, বসে বলতে শুরু করলেন ,,

    – আচ্ছা শুনো তাহলে ,, (একটু থেমে) আমার ছেলের নাম ছিলো বিপ্লব ,, সে ও আমাদের সাথেই এখানেই থাকতো ,, সে পঙ্গু ছিলো জন্ম থেকেই ,, তার বিয়ের পর তার তার ঘরে দুটো সন্তান আসে ,, একটা কণ্যা সন্তান ,, আর একটা পুত্র সন্তান,, পুত্র সন্তান টা বড় ছিলো ,, (একটু থেমে) আমার নাতি নাতনিদের জন্ম দেওয়ার ৩ বছর পরেই আমার বউমা মারা যায় ,, আমার অঢেল সম্পদ,, আমার ছেলে সেগুলাই ভেঙে খেতো ,, আমার বড় নাতি কলেজে পড়াশোনা শেষ করে বিদেশে পাড়ি জমায় ,, ঐযে বিদেশে যেয়ে যে কাজ করে ,, 

    – প্রবাসী বলে তাদের দাদু ,, (রিয়াদ বলে)

    – হ্যা ঐ প্রবাসীই ছিলো ,, তার নাম ছিলো “নোমান” ,, সে বিদেশে থেকে টাকা ইনকাম করে দেশে পাঠাতো ,, আর আমরা চলতাম ,, তার বোন চাঁদনী, ঐ তোমরা যাকে নুপুর বলছো ,, ওকেও কলেজে ভর্তি করালাম ,, সবই ভালো চলছিলো ,, তারপর নোমানের বিয়ে দেওয়া হয় ,, আনন্দ পুর গ্রামে ,, রিয়া নামের একটা মেয়ের সাথে ,, (বৃদ্ধ আর কিছু বলতেই যাবেন তার কথা থামিয়ে রিয়াদ বলে,, 

    – রিয়া নাম ? রাকিব চাচার মেয়ে রিয়া ? 

    – হ্যা ঐ রাকিবের মেয়ে রিয়ার সাথেই ,, রাকিব আর আমার ছেলে বিপ্লব এক কালে ভালো বন্ধু ছিলো ,, 

    রিয়াদ ফিসফিসিয়ে শাহারিয়াকে বলে ,,

    – আরে এই রিয়াকে খুনের মধ্যৈ দিয়েই তো এই সিরিয়াল কিলিং শুরু হয় ,, 

    – হ্যা শুরু হয় ,, তুই এখন থাম বাকি কথাটা শুনতে দে ,, হ্যা দাদু তারপর কী হলো ,, 

    – আমার নাতি নোমান প্রবাসী ছিলো ,, সে এসে রিয়াকে বিয়ে করে তার ২ দিন পরই রিয়াকে রেখে বিদেশ চলে যায় ,, বিয়ের আগে কথা ছিলো ২ বছর পর এসে রিয়াকেও বিদেশে নিয়ে যাবে ,, (একটু থেমে) নোমান যাওয়ার ১ বছর পর আমরা জানতে পারি নোমান তার অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে পারবে ,, তারমানে রিয়া গর্ভবতী হয় ,, তারপর আমার ছেলে বিপ্লব আর রিয়ার বাবা রাকিব মিলেই তার ডেলিভারির সময় ছিলো ,, একটা ছোট্ট সুন্দর ছেলে সন্তান হয় তাদের,,নোমান যে সেই বিয়ের ২ দিন পর গিয়েছিলো আর কিন্তু আসতে পারে নাই এই মাঝখানের সময় টায় ,, (একটু থেমে,) তারপর ৫ মাস কেটে যায় ,, আজ থেকে ৬ বছর আগে এক বৃষ্টির দিনে চাঁদনী কলেজে যায় ,, তার দাদি এই বৃষ্টির মধ্যে তাকে যাইতে নিষেধ করছিলো ,, কিন্তু তারপরও সে বাঁধা অমান্য করে যায় ,, (একটু থেমে) ঐযে ঐদিন সকালে আমার নাতনি টা বের হলো ,, আজও ফেরেনি ,, চাঁদনীর এমন হঠাৎ হারিয়ে যাওয়াতে আমার ছেলে বিপ্লব অনেক কষ্ট পেয়েছিলো ,, এবং চাঁদনীর হারিয়ে যাওয়ার ২ দিন পর আমার ছেলেটাও মারা যায় হার্ট এটাক করে ,, আমার ছেলেটা অনেক অনেক কষ্ট পেয়েছিলো তার আদরের মেয়ে হারিয়ে যাওয়াতে(বৃদ্ধ হাত দিয়ে তার চোখের পানি মুছেন ,, এবং আবার বলতে শুরু করেন) নোমান কে এসবের কিছুই জানানো হয়নি ,, আরো একটা বছর কেটে যায় ,, নোমান যে বলেছিলো সে বিয়ের ২ বছর পর আসবে ,, সেই আসার দিন চলে আসে ,, নোমান তার সন্তান কে দেখার জন্য অনেক আনন্দিত ছিলো ,, কিন্তু তাকেও যে আমরা হারিয়ে ফেলবো ,, তা যদি জানতাম তাহলে তাকে আসতেই বলতাম না ,, (বলেই বৃদ্ধ চোখের পানি হাত দিয়ে মুছেন)

    – কেন দাদু ,, কী হয়েছিলো নোমানের সাথে ? (শাহারিয়া বলে)

    – ওর যেইদিন আসার ডেট ছিলো ,, ঐদিন ওর বউ রিয়া আমার নাতবৌমা অনেক খুশি ছিলো, অনেক সেজেগুজে আমাদের এই বাসায় এসে অপেক্ষা করছিলো,, তখনই এক ফোন আসে ,, নোমানের সাথে যারা প্রবাসে কাজ করতো তারা ফোন দিয়েছিলো,, (একটু থেমে) নোমান বলে তার বাসা থেকে এয়ারপোর্টে আসার সময় এক দূর্ঘটনায় খুব খারাপ ভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলো ,, তার লাশ বলে একদমই চেনা যাচ্ছিলো না,, তার মৃত্যুর খবরে আমাদের বাসায় শোকের মাতম পড়ে যায় ,, অবশ্য রিয়াকে আমি অতটা শোকাহত হতে দেখিনি ,, সে শুধু একটু কেঁদেছিলো ,, তাছাড়া তার পড়ে আর কোন দুঃখ আমি তার মাঝে দেখিনি ,,আমার নাতি নোমানের লাশ টা আমরা আজও পাইনি ,, বিদেশে মারা গিয়েছে লাশ টাকে অনেক চেষ্টা করেও আমরা আনতে পারিনি ,, (একটু থেমে) তোমাদের দাদিও ৩ বছর আগে পরলোকগমন করেন ,, আমার সেই সুখের সংসার তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যায় ,, আর আমি হয়ে যাই একলা ,, আল্লাহ যে আমাকে কেন নিয়ে যাচ্ছেন না,, (বলেই লাঠিতে মাথা রেখে কাঁদতে থাকেন বৃদ্ধ)

    শাহারিয়া আর রিয়াদও তাদের চোখের পানি মুছে ,, কত সুন্দর পরিবার টা এখন একজনে এসে দাঁড়িয়েছে ,, সত্যিই জিনিসটা তাদের খুব খারাপ লাগে ,, 

     

    শাহারিয়া ধীর গলায় বলে ,, 

    – দাদু শান্ত হোন ,, আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের আগেই তুলে নিয়েছেন,, নিজেকে সামলান ,, ধৈর্য ধরুন ,,

     

    বৃদ্ধা চোখ মুখ মুছে ধীরে ধীরে বলে ,,

    – এইভাবে ধৈর্য ধরেই এতোগুলা দিন আমি একলা কাটাচ্ছি বাবা ,, 

     

    রিয়াদ বলে ,,

    – আচ্ছা দাদু ,, আপনি যে একলা থাকছেন ,, তখন আপনার খাওয়া দাওয়া,, ?

    – তোমাদের ‌দাদি থাকতে তিনিই রান্না করতেন ,, এখন আমার দক্ষিণ পাড়ার একটা বড় জমি বেঁচে দিয়েছি এই গ্রামের ই পলাশ নামের এক লোকের কাছে ,, তারাই দিনের বেলা এসে আমায় দু মুঠো খাবার দিয়ে যায় ,, আমিও আমার শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত এই ভিটেমাটি কামড়েই পরে থাকবো ,, এখানেই আমার শুরু হয়েছিলো,, এখানেই আমার শেষ হবে ,,

    – দাদু এখানেই শুরু এখানেই শেষ বলতে ? (রিয়াদ জিগ্গাসু দৃষ্টিতে চেয়ে বলে)

    – মানে আমার জন্মও এখানে ,, এই বাসা আমার বাবার তৈরি করা ,, এখানেই আমি জন্মেছি ,, মৃত্যুকেও এইখানে থেকেই গ্রহণ করতে চাই ,, 

    – ওহহ আচ্ছা ,, 

    – তোমরা বসো ,, (একটু থেমে) আমার ঘরে তো নাস্তাপাতি কিছুই নেই ,, তবুও বসো একটু ,, এসেছো যখন ,, (ধীর গলায় শান্ত ভাবে বৃদ্ধ বলে)

    – না না দাদু সমস্যা নেই,, আমরা আবার আসবো অন্য কোন একদিন ,, আপনি ভালো থাকবেন ,, 

    – আচ্ছা বাবা ,, তোমারাও ভালো থেকো (ধীর গলায় বলেন বৃদ্ধ)

     

    রিয়াদ আর শাহারিয়া বৃদ্ধকে বিদায় দিয়ে একে অপরের সাথে কথা বলতে বলতে বের হয়ে আসে ,, এসে তাদের বাইক চড়ে ,, শাহারিয়া বাইকে উঠে বলে ,, 

    – কী মনে হয় তোর ,, এই খুনের রহস্য উন্মোচন হওয়ার থেকে আরো জটিল হয়ে গেলো নাতো?

    – সেসব বাদ দে আগে এই যায়গাটা ত্যাগ কর ,, আমার এই রকম নির্জন যায়গা দেখলেই ভয় করে ,, বৃদ্ধ যে কীভাবে একলা থাকে ,, আমি বুঝিনা বাবা ,, 

    – তুইও না হা হা হা হা ,,

     

    শাহারিয়া বাইক স্টার্ট দেয় ,, এবং তারা চলে যেতে থাকে ,, তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে,, তখনই আমরা দেখতে পাই সেই জঙ্গলের ভিতরে একজন হেলমেট পড়া লোক কুড়াল হাতে ভয়ংকর দৃষ্টিতে বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে ,, 

     

    দুপুর ১ টা ,, দিথীর বাসা দেখানো হয় ,, সবাই ডায়নিং টেবিলে এসে উপস্থিত হয়েছে ,, অন্য সময়ের খাবার গুলো তারা নিজ ঘরে বসে খেলেও দুপুরের খাবার টা তারা ডায়নিং টেবিলে বসে এক সাথে খায় ,, ডায়নিং টেবিলে দিথী , সামিহা , দিথীর বাবা অন্তর সাহেব ও তার সৎ মা নাজিয়া বেগম ও আছেন,, সবাই টেবিলে বসে পড়লেও নাজিয়া বেগম একপাশে দাড়িয়ে আছেন ,, 

     

    শেফালী সব তরকারি আর ভাত রান্না ঘর থেকে নিয়ে আসছে ,, আর তাকে একটু সাহায্য করছে সামিহা ,, টেবিলে সব খাবার আনা হয়ে যায় ,, দিথী তার প্লেটে ভাত উঠিয়ে নেয় ,, অন্তর সাহেবকে ভাত উঠিয়ে ‌দিচ্ছে সামিহা ,,অন্তর সাহেব নাজিয়া বেগম কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে বলেন ,,

    – কী হলো বসছোনা কেনো,, ওভাবে দাড়িয়ে আছো যে ,,

    – ন,না,না ,, তেমন কিছুনা ,, তোমরা খাও খাও (একটু নার্ভাস হয়ে হাসি মুখেই বললেন নাজিয়া বেগম)

     

    দিথী শেফালীকে ডাক দেয় বলে ,, 

    – শেফালী আমার মাগুর মাছ টা কোথায়,, ?

    – ওহহ খারান ম্যাডাম ,, ঐডা ভুলে রান্না ঘরেই রাইখা আইছি ,, 

    – আচ্ছা যাও নিয়ে এসো ,,

     

    দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন নাজিয়া বেগম ,, দরজা দিয়ে মাছের বাটিটা আনার জন্য বেড়িয়ে গেলো শেফালী,, নাজিয়া বেগমের যেন এক আলাদা খুশি লাগছে,, শেফালী কিছুক্ষণ পর মাগুর মাছ বাটিতে উঠিয়ে নিয়ে আসে  ,, এদিকে বাকিরা সবাই নাজিয়া বেগম বাদে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে ,, আর নাজিয়া বেগমের ছোট্ট ছেলে নিবিড় এখনো স্কুল থেকেই আসে নি ,, 

    শেফালী মাছের বাটিটা এনে দিথীর প্লেটের পাশেই রাখে ,, 

    দিথী মাছের বাটিটার উপর থেকে ঢাকনা টা সড়িয়ে পাশে রাখে ,,নাজিয়া বেগমের চোখে মুখে ফুটে উঠছে এক খুশির আবহ ,, দিথী সেখান থেকে এক পিস মাছ উঠিয়ে তার পাতে নেয়,, নাজিয়া বেগম এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আনন্দম চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে দিথীর পাতের দিকে ,, দিথী মাছের পিস থেকে একটু ছিড়ে নিয়ে ভাতের সাথে মিলিয়ে মুখে এক নলা তুলতে যায় ,, নাজিয়া বেগম এদিকে খুশিতে আত্মহারা,, দিথী ভাতের নলাটা মুখের মধ্যে দিয়ে দেয় ,,, 

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    [ সামিহার কেন মনে হতে লাগলো যে তাদের উপর কেউ নজর রাখছে ? আর চাঁদনী ওরফে নুপুর যে খুন হওয়া রিয়ার স্বামী নোমানের বোন এটা জানার পর আপনার অনুভূতি কেমন‌ ছিলো ? আর বৃদ্ধার উপর কী কোন বিপদ আসতে চলেছে ? কারণ আমরা দেখতে পেয়েছি হেলমেট পড়িহিত একজন সেই জঙ্গলের ভিতরে দাঁড়িয়ে ছিলো ,, আর দিথী কী তাইলে মারা যাবে ?? কী হতে চলেছে এরপর ,, ? জানাবেন কেমন হচ্ছে 😊 ,, আর আজকের পর্বটা ৯ টায় দেওয়ার কথা ছিলো কিন্তু একটু লেইট হয়ে গিয়েছে ,, কারণ এইটা এই গল্পের সবথেকে বড় পার্ট এই পর্যন্ত,, লেখতে লেখতে একটু লেইট হয়ে গেছে ,, আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত  ]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ২১

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২২

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    অন্তর সাহেব নাজিয়া বেগম কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে বলেন ,,

    – কী হলো বসছোনা কেনো,, ওভাবে দাড়িয়ে আছো যে ,,

    – ন,না,না ,, তেমন কিছুনা ,, তোমরা খাও খাও (একটু নার্ভাস হয়ে হাসি মুখেই বললেন নাজিয়া বেগম)

     

    দিথী শেফালীকে ডাক দেয় বলে ,, 

    – শেফালী আমার মাগুর মাছ টা কোথায়,, ?

    – ওহহ খারান ম্যাডাম ,, ঐডা ভুলে রান্না ঘরেই রাইখা আইছি ,, 

    – আচ্ছা যাও গিয়ে নিয়ে এসো ,,

     

    দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন নাজিয়া বেগম ,, দরজা দিয়ে মাছের বাটিটা আনার জন্য বেড়িয়ে গেলো শেফালী,, নাজিয়া বেগমের যেন এক আলাদা খুশি লাগছে,, শেফালী কিছুক্ষণ পর মাগুর মাছ বাটিতে উঠিয়ে নিয়ে আসে  ,, এদিকে বাকিরা সবাই নাজিয়া বেগম বাদে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে ,, আর নাজিয়া বেগমের ছোট্ট ছেলে নিবিড় এখনো স্কুল থেকেই আসে নি ,, 

    শেফালী মাছের বাটিটা এনে দিথীর প্লেটের পাশেই রাখে ,, 

    দিথী মাছের বাটিটার উপর থেকে ঢাকনা টা সড়িয়ে পাশে রাখে ,,নাজিয়া বেগমের চোখে মুখে ফুটে উঠছে এক খুশির আবহ ,, দিথী সেখান থেকে এক পিস মাছ উঠিয়ে তার পাতে নেয়,, নাজিয়া বেগম এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আনন্দম চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে দিথীর পাতের দিকে ,, দিথী মাছের পিস থেকে একটু ছিড়ে নিয়ে ভাতের সাথে মিলিয়ে মুখে এক নলা তুলতে যায় ,, নাজিয়া বেগম এদিকে খুশিতে আত্মহারা,, দিথী ভাতের নলাটা মুখের মধ্যে দিয়ে দেয় ,, নাজিয়া বেগম যেন এবার খুশিতে চোখ বন্ধ করে হাসতে থাকেন মুখ চেপে ,, তার চেহারার আনন্দের ছাপ একদম স্পষ্ট ,, তিনি মনে মনে ভাবতে থাকেন ,, ” যাক ,, শেষ মেষ আপদ টার অবসান হবে ,, সব সম্পত্তি আমার ছোট্ট সোনা নিবিড় পাবে ,, ওহোহোহো কী মজা ,, ” ভাবতে থাকেন আর মুচকি মুচকি হাসতে থাকেন ,, 

    এদিকে আমাদের দেখানো হয় দিথীদের বাড়ির আঙিনার দিকটা ,, বেশ রোদ উঠেছে,, সকালে শীতের প্রবাহ থাকলেও দুপুর বেলায় রোদের তাপও কড়া থাকে ,, নিবিড় বাসায় প্রবেশ করে গেইট দিয়ে ,, পড়নে স্কুল ড্রেস ,,সে ক্লাস 6 এ পড়ে ,, কাঁধে স্কুল ব্যাগ ,, সে এসে বারান্দার সিঁড়িতে জুতা গুলো খুলে রেখে বারান্দায় উঠে ,,উঠে তার কাঁধ থেকে ব্যাগ টা খুলে বারান্দার দরজার পাশে থাকা একটা চেয়ারে রেখে রান্না ঘরের দিকে যেতে থাকে ,, ওর পানির পিপাসা পেয়েছে ,, ভর দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় একলা একলা হেঁটে এসে সে ক্লান্ত ,, আর দিথীদের বাসার ফ্রিজ টাও রান্না ঘরেই ,, নিবিড় রান্না ঘরে প্রবেশ করে ,ক্লান্ত অবসন্ন চেহারা নিয়ে ফ্রিজের দরজাটা খুলে,, ভিতর থেকে একটা পানির বোতল বের করে চুমুক লাগিয়ে এক নাগাড়ে খেতে থাকে ,, তখনই একটা “ঠং” করে শব্দ তার কানে আসে ,, সে মুখ থেকে পানির বোতল টা নামায় ,, কৌতুহল দৃষ্টিতে ফ্রিজের দরজা টা লাগিয়ে পাশের থাক টায় দেখে একটা বড় মেলামাইনের বাটির উপর থেকে তার স্টিলের ঢাকনা টা সড়ে পড়ে গিয়েছে পাশেই ,, সে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে , কিন্তু না,, আশেপাশে কেউ নেই ,, সে ভেবেছিল তার দিথী আপুর বিড়াল হয়তো রান্না ঘরে কিছু ফেলে দিয়েছে ,, কিন্তু না,, এখানে আশেপাশে তো সে এমন কিছুই দেখতে পাচ্ছে না ,, সে পানির বোতল হাতে এগিয়ে যায় বাটিটার দিকে ,, সে এগিয়ে গিয়ে দেখে যেই বাটির ঢাকনা টা পড়ে গিয়েছে , সেই বাটিতে মাছের তরকারি আছে ,,

    এদিকে আমাদের দেখানো হয় দিথীদের ডায়নিং টেবিলে,, দিথী মুখে নলাটা নিয়ে কিছুক্ষণ চিবানোর পর গিলে ফেলে ,, তবে মাছ টা তার কাছে কেমন জানি খেতে লাগে ,সে ভাতের নলাটা গিলে ফেলবার পর শেফালী কে বলে ,, 

    – আচ্ছা শেফালী,, তুই কি মাগুর মাছের যায়গায় ভুল করে শিং মাছ রান্না করে ফেলছিস ?

    – কই নাতো আফা ,, আমি তো মাগুর মাছই ,,,, (একটু থেমে) ওওও ,, হ আমি তো চাচার লাইগা শিং মাছ রানছিলাম,, আর আপনের লাইগা মাগুর মাছ ,, দুইডা একই সাইজের মাছ ফ্রিজ থেইকা বাইর করছিলাম তোহহ ,, তাই আলাদা আলাদা রান্ধনের পর কোন ডা যে কী হেইডা গুলায়া ফেলছি,, আচ্ছা আপনে খারান আমি আপনের লাইগা মাগুর মাছের বাটি ডা আনতাছি ,, (বলেই ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য উদ্যত হয় শেফালী,, তখনই অন্তর সাহেব বলেন ,, 

    – তাড়াতাড়ি যা ,, এরজন্যই তো বলি ,, আমি যে শিং মাছ খাইতে চাইছিলাম ,,তুই কী আবার রান্না করতে ভুলে গেলি নাকি,, 

    – না মানে চাচা ,, রানছিলাম দুইডাই আলাদা আলাদা কইরা ,, কিন্তু আপনের ডা ভুলে দিথী আফারে দিয়া দিছি ,, আর দিথী আফার ডা রান্না ঘরেই রাইখা আইছি ,, আচ্ছা একটু খারান ,, আমি যাইতাছি আর আইতাছি ,, (বলেই হনহন করে বেড়িয়ে গেলো শেফালী,, শেফালীর মুখে এসব শুনে যেন নাজিয়া বেগমের মাথায় বাজ পড়লো,, তিনি এতক্ষণ যেই খুশিটা হয়েছিলেন তা নিমিষেই মিলিয়ে গেলো ,, তার চোখে মুখে হতাশা ,, অন্তর সাহেবের দিকে দিথী শিং মাছের বাটিটা এগিয়ে দেয় ,, দিয়ে বলে ,, 

    – নেও বাবা ,, তুমি খেতে শুরু করো ,, (অন্তর সাহেব ও বাটিটা থেকে একটা মাছ তুলে নিয়ে যখনই খেতে যাবেন , তখনই রান্নাঘর থেকে শেফালীর এক জোড়ে আত্মচিৎকার শোনা যায় ,, শেফালী চিৎকারের সাথে সাথে ওর কথাও ভেসে আসছিলো ,,  এক আতংক মিশ্রিত গলায় চিৎকার করে বলতেছিলো ,,

    – আল্লাহ গোওও ,, চাচাআআ ,,চাচিইই তাড়াতাড়ি আহেন ,, নিবিড় বাপজান ,, আপনের কী হইলো ,, চাচাআআআ ,,, 

    শেফালীর আত্মচিৎকার শুনে সবাই খাবার টেবিল থেকে উঠে হনহন করে রান্না ঘরের দিকে যেতে থাকে ,, নাজিয়া বেগমও তাদের পিছুপিছু যায় ,, তার পায়ে পুড়ে যাওয়ার কারণে আস্তে ধীরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে যান ,,

    দিথী, সামিহা, অন্তর সাহেব গিয়ে রান্না ঘরে ঢুকেই দেখতে পান ,, নিবিড় ফ্লোরে চিৎ হয়ে শুয়ে ছটফট ছটফট করছে ,, তার এক হাতের পাশে পানির বোতল টা পড়ে আছে ,, আরেক হাতে একটা কামড় দেওয়া মাছের টুকরো ধরে আছে ,, দিথী জলদি গিয়ে নিবিড়ের মাথার পাশে বসে তার মাথাটা কোলে নেয় ,, নিবিড়ের চোখ গুলো কেমন বেঁকিয়ে গিয়েছে ,, হাত পা খালি ছটফট করছে,, কিন্তু তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা ,, দিথী জোড় গলায় তাড়াতাড়ি শেফালীকে বলে ,, 

    – শেফালী তারাতাড়ি মগে করে পানি আন ,, নিবিড় ,, নিবিড় উঠ ভাই ,, তুই ,, তুই এমন করছিস কেন ,, 

    শেফালী একটা মগে করে পানি নিয়ে আসে ,, দিথী পানি নিবিড়ের চোখে মুখে ছিটাতে থাকে ,, এদিকে নাজিয়া বেগম কেবলমাত্র রান্না ঘরে পৌঁছেছেন,, ভিতরে ঢুকেই তিনি নিবিড় কে দেখে এক জোড়ে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠেন ,, তিনি তাড়াতাড়ি নিবিড়ের পাশে বসে তার শরীর টাকে নাড়াচাড়া করতে করতে কাঁদতে থাকেন ,, নিবিড় যে তার নিজের পেটের ছেলে ,, আর নিজের পেটে ধরা সন্তান কে এভাবে কাতরাতে দেখলে কোন মা’ই যে ঠিক থাকতে পারে না,, তিনি নিবিড়ের হাতে থাকা মাছ টা দেখে আরো জোড়ে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠেন ,,

    – নিবিড় ,, বাবা আমার চোখ খোল ,, তুই এই মাছ কেন খেতে গেলি বাপ ,, কেনো খেতে গেলো (নিবিড়ের বুকে মাথা দিয়ে হাঁউমাঁউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন নাজিয়া বেগম ,, তখনই অন্তর সাহেব জোড় গলায় নাজিয়া বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলেন ,, 

    – কেন কী ছিলো এই মাছে যে আমার নিবিড় এমন করছে ,, তুমি কী মিশিয়েছিলে এই মাছে ,, 

    – আমি ,, আমি দিথীর মাছে বিশ মিশিয়ে ছিলাম যাতে ও এটা খেয়ে মরে যায় , কিন্তু নিবিড় ,, আমার নিবিড় সেই মাছ টাকে খেয়ে ফেললো ,, আল্লাহ,,,,(অনেক জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন নাজিয়া বেগম)

    অন্তর সাহেব নাজিয়া বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ,, তার মুখ দিয়ে এই কথা শোনার পর পা দিয়ে জোরে এক লাত্থি দেন নাজিয়া বেগমের উপর ,, নাজিয়া বেগম পাশে গিয়ে ছিটকে পরেন,,

    – বান্দীর বাচ্চা তুই আমার মেয়েকে মারতে চাইছিলি ,, বান্দীর বাচ্চা তোরে,, তোরে আমি আজকেই মাইরেই ফেলবো ,, (বলেই ফ্রিজের পাশে থাকা বটিটা তুলে নাজিয়া বেগমের দিকে যেতে উদ্যত হতে থাকেন অন্তর সাহেব , শেফালী আর সামিহা দৌড়ে গিয়ে তাকে পিছন থেকে টেনে ধরে ,,

    – ছাড়ো আমাকে ,, এই বান্দীর বাচ্চাকে খুন করে আমি জেলে যাবো ,, আমার আদরের প্রিয় মেয়েটাকে বিশ দিয়ে মারতে চাইছিলি , ,ছাড়ো আমাকে ,, (শেফালী আর সামিহার হাত ছুটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন ,, দিথী এসব দেখে কেঁদেই ফেলে ,, এদিকে তখনই আমরা দেখতে পাই নিবিড়ের শরীরের বিভিন্ন যায়গা নীল বর্ণ হতে শুরু করেছে ,, তার মুখ দিয়ে ফেনার মতো কিছুটা বের হতে থাকে ,, সামিহা এসব দেখে চাচাকে ধরে থাকা অবস্থায় বলতে থাকে ,,

    – চাচা ,পড়ে মারিয়েন ,, আগে নিবিড় কে হসপিটালে নিয়ে যান ,, ওর মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছে ,, 

    অন্তর সাহেব সামিহার কথা শুনেই ফিরে তাকিয়ে দেখেন নিবিড়ের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে,, তিনি বটি টাকে ফেলে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে নিবিড়কে কোলে তুলেন ,, তুলেই বলেন “সামিহা তাড়াতাড়ি রাস্তার একটা ভ্যান, রিস্কা আটকাও তাড়াতাড়ি, ,নিবিড় বাবা আমার ,, চোখ বন্ধ করিস না বাবা ,, চোখ মেলে রাখ বাবা ,, চোখ মেলে রাখ” বলেই এক আবেগ মিশ্রিত কাঁদো কাঁদো গলায় নিবিড় কে কোলে নিয়ে হনহন করে বেড়িয়ে যান অন্তর সাহেব,, আর অন্তর সাহেবের আদেশ শুনার সাথে সাথেই সামিহা দৌড়ে রাস্তার দিকে যেতে থাকে ,, শেফালীও অন্তর সাহেবের পিছন পিছন যায় ,, 

    রান্না ঘরে এখন নাজিয়া বেগম ফ্লোরে বসে খালি কাঁদছেন,, দিথী ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলে ,, 

    – আমার উপর এতো রাগ কেনো তোমার ,, কী এমন ক্ষতি করছি আমি,, আমাকে মেরে ফেলার চিন্তা করতে গিয়েও তোমার একবার বুক কাপলো না,, ছিঃ,, তুমি মা না ,, তুমি,, তুমি মা নামের কলঙ্ক,, মা জাতির সম্মান তুমি আজ ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছো ,,(একটু থেমে) আজ যদি নিবিড়ের কিছু হয় ,, তুমি ,, তুমি আর ক্ষমার যোগ্য থাকবেনা ,, তোমাকে আমি ঘৃণা করি ,,(বলেই ঘর থেকে বের হয়ে চলে যায় দিথী ,, নাজিয়া বেগম এখন কাঁদছেন আর নিজের উপর রাগ হচ্ছেন,, তার জন্যই আজ নিবিড় জীবন-মৃত্যূর সন্ধিক্ষণে,, তিনি নিজের মাথায় ফ্লোরে বাড়ি মারছেন,, আর অনুতাপ, অনুতপ্তে কাঁদছেন,, তার কান্না এখন যেন এক অসহায়ত্বের কান্না ,, এক মায়ের তার সন্তানের জন্য কান্না ,, নাজিয়া বেগম ফ্লোরে মাথা গেড়ে রেখে কাঁদছেন,,, 

     

    সিন চেন্জ হয় ,, মেম্বারদের বাসা দেখানো হয়,,সময় এখন দুপুর ২:৪৫ ,, নিপা ‌তার ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে ঘরে আসে,, সে ঘরে এখন একলাই ,, রাতে সে আগে ফুলমতিকে সাথে নিয়ে ঘুমাতো ,, এখন একলাই ঘুমায় ,, নিপা মাত্র খাওয়া শেষ করে আসলো ,, ঘরে ঢুকে সে দরজাটা চাপিয়ে দেয় ,, বিছানার সাথেই লাগানো জানালা ,, জানালা দিয়ে সুন্দর আলো এসে বিছানায় পড়েছে ,, সে গিয়ে বিছানায় একটা বালিশের উপর উবুর হয়ে শুতে ,, শুয়ে দুই হাত গালে দিয়ে ভাবতে থাকে ,,” আমার ফারুকটা এখন কী করছে ,, তার সাথে ২ দিন হলো দেখা নেই ,, সেই যে ঢাকা গিয়েছে কাজে ,, ফিরবে যে কবে ,, ধুরর ,, তাকে ছাড়া একদমই ভালো লাগে না ,,” তারপর সে উবুর থেকে চিৎ হয়ে শুয়ে তার পেটের উপর একটা বালিশ রেখে বালিশ টাকে বলতে থাকে ,, 

    ” তোমাকে না বলেছি যে তাড়াতাড়ি চলে আসতে ,,আসোনি কেন হুমম ? তুমি জানো না তোমায় সারাদিন টায় একবার না দেখলে আমার মন কতটা খারাপ থাকে ,, সেই দুইদিন আগে বললা যে ঢাকায় যাচ্ছো তোমার ফার্মের বায়ার আনতে ,, এখনো কী বায়ার পাওনা ,, তাড়াতাড়ি ফিরে এসোনা গো ,, আমার আর একলা থাকতে ইচ্ছে করতেছেনা ,, তুমি বাবা-মাকে আমাদের বিয়ের কথা বলো ,, তোমাকে আমি কাছে পেতে চাই ,, অনেক কাছে ,,” বলছি বালিশ টাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে থাকে বালিশটাকে নিয়ে,, সে যেন তার আবেগ তার ভালোবাসা ফারুককে মিস করলে বা দেখতে না পেলে এই বালিশ গুলোকেই ফারুক ভেবে তার সাথে মনের কথা বলতে থাকে , অনুভূতি ভাগাভাগি করতে থাকে ,, ফারুককে সে অনেক মন দিয়ে ভালোবাসে ,, এখন সে চায় অতি দ্রুত তাদের সম্পর্ক পূর্ণতা পাক,, এবং ফারুক কে সে চিরজীবনের জন্য নিজের করে নিতে পারে ,, নিপা বালিশ কে ফারুক ভেবে জড়িয়ে ধরেই চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে যেতে থাকে ,, 

     

    আনন্দ নগর থানা ,, সময় এখন বিকেল সাড়ে ৩ টে ,, বাইরে সূর্যের তেজ একদম কমে গিয়েছে ,, ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে আবারো ,, রিয়াদ,শাহারিয়া বসে রয়েছে ,,নয়ন রুমে ঢুকে একটা ট্রে থেকে ২ কাপ চা নামিয়ে একটা শাহারিয়ার সামনে, আরেকটা রিয়াদের সামনে রাখে ,, রিয়াদ চায়ে চুমুক দেয় ,, দেওয়ার পর বলতে থাকে ,,

    – আচ্ছা দোস্ত,, এখন এটা বল যে আমাদের এখন কী করা উচিত,, নুপুরের বাসায় গেলাম ,, কিন্তু তার দাদু ছাড়া আর দুনিয়াতে কেউ বেঁচে নেই ,, আর তার দাদুর বয়সও তো ৯০+ , লাঠি ছাড়া এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায় চলাচল করতে পারেন না ,, খুন গুলা তাইলে করছে টা কে ,, ?

    (শাহারিয়া চায়ে চুমুক দিয়ে কাপ টা রেখে বলতে থাকে,, 

    – আমাদেরকে আবার প্রথম থেকে শুরু করতে হবে ,, এভাবে হবেনা,, এই মৃত্যুর খেলার শুরু টা হয় কাকে দিয়ে ? 

    – রিয়াকে দিয়ে ,, 

    – হমম ,, আর রিয়া ছিলো নোমানের স্ত্রী ,, তারপর কে মরলো ,,

    – তারপর নাদিয়া ,, নাদিয়া ছিলো আবার রিয়ার ভালো বান্ধবী,, আর সাথে সেই ৬ বছর কার আগের গ্যাং মেম্বার,, আর রিয়াও কিন্তু সেই গ্যাংয়েরই ছিলো ,,

    – আচ্ছা রিয়া আর নাদিয়া কীভাবে কিডন্যাপ হয়েছিলো ?  (চায়ের কাপ টা মুখে তুলতে তুলতে বলতে থাকে শাহারিয়া)

    – রিয়ার ভাই রাশেদের ভাষ্যমতে রিয়ার ফোনে একটা কল আসে ,, আর সে তাদের টিউবওয়েল খানার ঐদিকে চলে যায় কথা বলতে ,, তারপর থেকেই গায়েব আর পরের দিন সকালে লাশ ,, আর নাদিয়ার বিষয় টা আরো ইন্টারেস্টিং,, নাদিয়া তোদের বাসায় থেকে রাতে বাড়ি ফিরার সময়ই কিডন্যাপ হয় ,, 

    – কীহহ? সত্যি ? 

    – হ্যা ,, ও তোদের বাসায় নিপা আর তার বান্ধবী দিথী , জিনিয়া দের পড়াইতে গেছিলো ,, তারপর পড়ানো শেষ হলে নাদিয়া বাড়ি ফিরে আসতে চায় ,, কিন্তু চাচি ওকে আসতে মানা করেছিলো ,, কারণ ঝড় বৃষ্টির রাত ছিলো ,, আর একলা একটা মেয়ে ,তাই ,, কিন্তু নাদিয়া বাঁধা মানেনি ,,তাই চাচি তাকে খাবার দিয়ে দেয় বলে বাটিতে করে ,, আর তারপর তোদের বাসা থেকে বের হয়েই নাদিয়া গায়েব ,, আর পরেরদিন খালে লাশ হয়ে পাওয়া যায় ,, 

    – আমার আগে এই গুলা নিয়েই ঘাঁটাঘাঁটি করার দরকার ছিলো ,, কিন্তু আমি বর্তমানকে নিয়ে পড়ে গেলাম ,, এই প্রথমদিকের খূন গুলাতেই আসল রহস্য লুকায় আছে ,, আচ্ছা তারপরে কার কিডন্যাপ হলো ,, 

    – কিডন্যাপ হয়নি ,, ডিরেক্ট লাশ ই পাওয়া গেছে ,, আহাদের ,,

    – তার টাও তো আমরা খালের পানিতেই পেয়েছি ,, 

    – হ্যা ,, তবে আহাদের অটো টা কোথায় ,, ? ঐ অটোটা টা থেকেই তো তুই একটা চিরকুট পাইছিলি ,, অটোটাকে যদি একটু সার্চ করা যাইতো ,, তবে আমরা কোন না কোন ক্লু আমরা পেয়েই যেতাম ,, 

    – অটোটা তো দিনাজপুর থানার গ্যারেজে আছে ,, ওসি সাহেব ই বলেছিলেন ঐখানে রাখতে ,, তবে আমার কাছে অটোটার কয়েকটাই ছবি আছে ,, আমি অটোটা পাওয়ার সাথে সাথেই ছবি গুলা তুলছিলাম,,

    – আচ্ছা তাইলে দেখা , (বলেই চা’য়ে চুমুক দেয় শাহারিয়া)

    রিয়াদ তার ফোন টা বের করে সেই অটোটার ছবিই গুলো দেখাতে থাকে শাহারিয়াকে ,, শাহারিয়া ছবি গুলো মন দিয়ে দেখতে থাকে ,, এবং একটার পর একটা ছবি দেখতে দেখতে একটা ছবি দেখে তার চোখ বড় হয়ে যায় ,,  সে যেন কোন কিছু দেখে অনেক অবাক হয়ে গেছে ,, শাহারিয়া মোবাইল থেকে চোখ না উঠিয়েই রিয়াদ কে বলে ,,

    – দোস্ত,, এইটা কী আসলেই আহাদের গাড়ির ছবি ? 

    রিয়াদ চায়ের কাপ টা মুখ থেকে নামাতে নামাতে বলে ,, 

    – হ্যা ,, কেনো? 

    – এই দেখ ,, (বলেই ফোনে থাকা একটা ছবি রিয়াদকে দেখায় শাহারিয়া ,, রিয়াদ তো সেটা দেখার সাথে সাথেই চোখ বড় করে ফেলে ,,

    – আরে ,, এটাইতো সেই রেড স্টার চিহ্ন লাগানো অটোটা ,, যেটাকে আমরা খুঁজছিলাম,, এই অটোটা তো ছিলো দিনাজপুর পুলিশ স্টেশনে ,, এটা খুনি কীভাবে পেলো,, ? 

    – খুনি আমাদের ব্রেইন নিয়ে খেলতেছে ,, ও আমাদের ব্রেইন কে পাগল করে দিয়ে নিজে খুনের খেলায় মেতে উঠেছে ,, 

    – এখন কী করবো দোস্ত,, 

    – তুই অটোটা সার্চ করার জন্য যা ,, আর আমি যাচ্ছি একটু বাসার ঐদিকে ,, ঐদিন রাতে নাদিয়ার বিষয় নিয়ে মা-বাবার কাছে জানতে ,, 

    – এখনি যাবি ,, ? 

    – হ্যা ,, আমাদের খুব তাড়াতাড়ি কাজ করতে হবে,, মনে রাখতে হবে আনিকা আর আরমান কিন্তু এখনো সেই খুনিটার দখলেই আছে ,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে আমি খবর লাগাচ্ছি দিনাজপুর পুলিশ স্টেশনে,,

    শাহারিয়া চায়ের কাপে শেষ চুমুক টা দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে পড়ে,, বলে ,,

    – আমি তোর বাইকটা নিয়ে গেলাম ,,

    – আচ্ছা যা ,, সাবধানে চালাইস ,, 

    – আচ্ছা 

    থানা থেকে বেড়িয়ে গেলো শাহারিয়া,, রিয়াদ টেলিফোনে দিনাজপুর পুলিশ স্টেশনের নাম্বার উঠিয়ে কল দেয় ,, দিয়ে কথা বলতে থাকে ,, 

     

    আনন্দ পুর গ্রামের ক্লিনিক,,সময় এখন বিকাল ৫টা ,, একটা রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় অন্তর সাহেব , দিথী , সামিহা আর নাজিয়া বেগম কে ,,এইটাই অত্র গ্রামের একমাত্র চিকিৎসালয়,, গ্রামের মানুষের কিছু হলে এখানেই তারা আগে আসে ,, অন্তর সাহেব , দিথীদের চোখে মুখে টেনশন,, কিছুক্ষণ পর রুম থেকে ডাক্তার বেড়িয়ে আসেন ,,ইনি এই ক্লিনিকের প্রধান ডাক্তার তুষার হাসান ,, তাকে দেখে সবাই তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে এগিয়ে যায় ,, তিনি বের হয়ে মুখের থেকে মাস্ক সড়ান,, বলেন ,,

    – ছেলেটা এখন সুস্থ আছে ,, আপনারা যদি আরেকটু লেট করে ফেলতেন ,, তাহলে হয়তো আর নিবিড়কে বাঁচানো যেতো না ,, সময়মতো এনেছেন বলেই নিবিড় আজ বেঁচে গিয়েছে ,, এখন রেষ্ট নিচ্ছে ,, কাল সকালে আপনারা তাকে নিয়ে যেতে পারেন ,, তবে এখন ভিতরে কেউ যাবেন না ,, সে ঘুমাচ্ছে ,, তাকে ঘুমাতে দিন ,,

    তুষার হাসানের মুখে এ কথা শুনতে পেরে অন্তর সাহেব আর দিথী আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে থাকেন ,, তুষার হাসানকে অন্তর সাহেব অনেক ধন্যবাদ দেন,, তুষার সাহেবও তাদের সাথে কথা বলে তার চেম্বারের দিকে যেতে থাকেন ,,  

    অন্তর সাহেব দিথীকে বলতে থাকে ,,

    – মা ,, তোর তো কালকে পরীক্ষা,, তুই বাসায় গিয়ে প্রিপারেশন নে ,, ডাক্তার সাব তো বলেই গেলেন ভয় পাওয়ার আর কিছুই নেই, নিবিড় সুস্থ আছে ,, তুই এদিক টা নিয়ে চিন্তা করিস না ,, আমি সামিহা মা , এখানে আছি ,,তুই বাসায় গিয়ে পড়াশোনায় মন দে মা ,, 

    – আচ্ছা বাবা ,, আর তুমি খেয়ে নিয়ো,, দুপুরে তো খেতেই পারলেনা ,, 

    – আচ্ছা মা আমি খেয়ে নিবোনে ,, তুই সাবধানে যাস কিন্তু ,, 

    – আচ্ছা বাবা ,, 

    দিথী চলে যেতে থাকে ,, অন্তর সাহেব গিয়ে বসে পড়েন সেখানে থাকা বসার যায়গা গুলোতে ,, বসেই একটু রেস্ট নিতে থাকেন ,, বয়স হয়েছে ,, আর তারমধ্যে এই দৌড়াদৌড়ি,, উনি একটু হাঁপিয়েই উঠেছিলেন,, তাই একটু রেষ্ট নিচ্ছেন ,, সামিহাও অন্তর সাহেবের পাশে গিয়ে বসে ,, এদিকে নাজিয়া বেগম এক অসহায় মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে ফ্লোরের দিকে এক পানে চেয়ে রয়েছেন ,,

     

    দিথী ক্লিনিক থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় আসে ,, রাস্তাটা কাঁচা ,, দুইপাশেই ফসলি জমি , গ্রামের রাস্তা মানেই তো খালি চারপাশে মাঠ আর মাঠ ,, এখন সময় বিকাল ৪:৪৫ ,, চারিদিকে কুয়াশার চাদর পড়তে শুরু করেছে ,, এই শীতের সময়টায় যা রোদের দেখা পাওয়া যায় সবই ঐ দুপুর ১২ টা থেকে ২ পর্যন্তই ,, তারপর আর সূর্যি মামার কোন দেখা মিলেনা ,,দিথী হাঁটছে রাস্তার পাশ দিয়ে ,, মাঝে মধ্যে দুই একটা সাইকেল চলে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে ,,দিথীর পড়নে গোল জামা ও ট্রাউজার ,, গোল জামার উপরে সোয়েটার পড়েছে সে ,, শীত পড়ছে এখন বেশ ভালোই ,, তাই শীতের কাপড় ছাড়া বাইরে বেরই হওয়া যায় না ,, দিথী তার হাত দুটো সোয়েটারের পকেটে দিয়ে সামনের পথ চেয়ে হাঁটছে,, মনে বারবার সেই দুপুরের ঘটনাটাই ভেসে উঠছে ,, তারপরও সে ঐসব মাথা থেকে ঝেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে থাকে ,, তখনই তার পাশে একটা বাইক এসে দাঁড়ায়,, হঠাৎ তার পাশে বাইক থামায় সেও থেমে পাশে ফিরে তাকায় ,,দেখে শাহারিয়া বাইকে ,, শাহারিয়াকে দেখে দিথী বলে ,,

    – আরে তুমি ,, 

    – হ্যা আমিই ,, তুমি এই সময় কোথায় যাচ্ছো একা একা,, ?

    – এইতো বাসার দিকেই ,, 

    – উঠো ,,

    – কোথায়,, ?

    – আমার কোলে ,, (মুচকি হেসে বলে শাহারিয়া)

    – ধুরর,, আমি গেলাম,,(বলেই আরো দুই কদম এগিয়ে যেতে থাকে দিথী ,, শাহারিয়াও বাইক স্টার্ট দিয়ে আবার দিথীর কাছে গিয়ে ব্রেক করে ,, শাহারিয়া বলে ,,

    – বাইকো উঠো তোমায় নামিয়ে দিয়ে আসি ,, 

    – না থাক সমস্যা নেই আমি এমনিই যেতে পারবো ,,

    – আরে উঠো তো ,, একসাথে গল্প করতে করতে যাই ,, আর এখান থেকে বাসা হেঁটে যেতে তোমার অনেক সময় লাগবে ,, তারচেয়ে ভালো আমরা একসাথে গল্প করতে করতে যাবো ,, তাড়াতাড়ি পৌছেও যাবো ,, 

    – আচ্ছা বাবা ঠিক আছে ,, (বলেই দিথী গিয়ে শাহারিয়ার কাঁধ ধরে বাইকের পিছনে উঠে বসে ,, একপাশে ফিরে বসেছে সে ,, একটা হাত শাহারিয়ার কাঁধে রেখেছে আরেকটা হাত তার কোলেই ,, শাহারিয়া বাইক স্টার্ট দেয় ,, বাইক চলতে শুরু করে ,, আজকে শাহারিয়া বেশি জোড়ে বাইক চালাচ্ছে না ,, স্বাভাবিক ভাবেই চালাচ্ছে ,, কারণ যানে তাড়াতাড়ি চালালে সে বেশিক্ষন দিথীর সাথে থাকতে পারবেনা, তার স্পর্শ পাবে না ,, তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ নিরবতা থাকে ,, শাহারিয়া তাদের মধৌকার নিরবতা ভেঙ্গে বলে ,,

    – কোথায় এসেছিলে এদিকে ,, 

    – নিবিড় একটু অসুস্থ তো ,, ও ক্লিনিকে ভর্তি,, সেখানেই গিয়েছিলাম,, 

    – নিবিড় ,, মানে তোমার ছোট ভাই,, তাই না ?

    – হ্যা ,, 

    – কী হয়েছে ওর ,, জ্বর ? 

    – না ,, এমনি আরকি পেটে ব্যাথা (দিথী আজকে ঘটে যাওয়া বিষয় টা বলে না)

    – ওহহ ,, তোমার পরীক্ষা গুলো কেমন চলছে ,, ?

    – এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালোই ,, তবে তোমাকে কাল রাতে খালি গায়ে প্রথম দেখছি ,, (একটু হেসে) ভালোই তো বডি বানিয়েছো হ্যা ,, 

    – না মানে,, (একটু নার্ভাস হয়ে) ঢাকায় থাকতে জিমে যেতাম তো ,, তাই আরকি একটু আধটু হয়েছে ,, 

    – তোমার বডি কিন্তু দারুণ,, মাসল সুন্দর,, (বলতে থাকে আর শাহারিয়া হাতের মাংস পেশীটা টিপতে থাকে)

    – আরে আস্তে আস্তে,, ব্যাথা পাই তো ,, 

    – পাইলে পাও ,, তাতে আমার কী (মাসলে ঘুষি দিতে দিতে বলে) 

    – আচ্ছা আচ্ছা দাঁড়াও,, (বলেই বাইকটাকে শাহারিয়া দাঁড় করায় ,, এই রাস্তাটা তুলনামূলক ছোটই ,, রাস্তাটা কাঁচা,, পশ্চিম দিগন্তে সূর্য ডুবে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ,, আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ছে ,, আবহাওয়াটা বেশ মনোরম,, দিথী বলে ,, 

    – এখানে থামলা যে ,, ? 

    – এতো সুন্দর প্রকৃতির এতো সুন্দর একটা সময় কী মিস করা যায় ,, (দিথী শাহারিয়ার কথা শুনে বাইক থেকে নামে ,, শাহারিয়াও বাইক থেকে নামে,, দুইজনেই পশ্চিম দিগন্তের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ,, দিথী দুই হাত একে অপরের সাথে ঘষে গরম করতে থাকে ,, সময় যতোই পেরোচ্ছে , ঠান্ডা আরো গভীর হচ্ছে,, শাহারিয়া তার পাশে এসে দাঁড়ায়,, সে তার পকেটে হাত দুটো ঢুকিয়ে তাকিয়ে আছে দিগন্তের দিকে ,, দিথী বলে ,

    – আবহাওয়াটা আসলেই সুন্দর,, সাথে ঠান্ডাও ,,(বলেই ঘষতে থাকা হাত গুলো সোয়েটারের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে ,, )

    – আচ্ছা দিথী ,, একটা কথা বলি ,, 

    – হ্যা বলো ,,

    – তুমি কী কখনো প্রেম করেছিলে,, (দিগন্তের দিকে চেয়ে শাহারিয়া বলে)

    – সত্যি কথা বলতে গেলে করেছি ,, 9 এ থাকতে একজনের সাথে রিলেশন করেছিলাম ,, কিন্তু সে শুধু টাইম পাস করেছিল,, ভালোবাসা বলে কিছুই ছিলো না তার মাঝে ,,

    – ওহহ ,, আমি ভেবেছিলাম তুমি কখনো রিলেশনই করোনি,, আচ্ছা যাইহোক ,, কতদিন ছিলো সেই রিলেশনশিপ,, (একটু ধীর গলাতেই বলে শাহারিয়া ,, )

    – আসলে আমি তার সাথে গভীর ভালোবাসাতে যাওয়ার আগেই বুঝতে পারি ও আসলে চরিত্রহীন ,, ও শুধু দেহ পেতে চেয়েছিলো ,, ওর মনে আর কিছুই ছিলো না,, 

    – তারপর,, 

    – আমি রিলেশন টা ১.৫ মাসের মধ্যেই ব্রেকআপ করে দেই ,, আর ঠিক করি ,, মনের মতো ভালো মানুষ না পেলে আর কখনো রিলেশনে জড়াবো না ,, (মুখের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট মিশ্রিত হাসি এনে দিথী বলে)

    – তো এখনো কী সেই মনের মানুষের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছো নাকি পেয়েও গেছো ,, (একটু দিথীর দিকে ফিরে মুচকি হেসে বলে শাহারিয়া)

    – বলতে পারো পেয়ে গেছি ,, তবে সে আমায় ভালোবাসে কিনা জানিনা ,, তবে তার সাথে থাকলে আমার অনেক ভালো লাগে ,, 

    (শাহারিয়া এই কথাটা শুনে একটু কষ্টই পায় ,, সে মাথা নিচু করে ফেলে,, তার চোখ মুখ কিছুটা কালোই হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গেই,, দিথী শাহারিয়ার দিকে চেয়ে দেখে যে শাহারিয়া মন খারাপ করেছে ,, দিথী একটা মুচকি হাসি দিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে পশ্চিম দিগন্তের দিকে চেয়ে পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখতে থাকে ,, এবং দৃষ্টি না সড়িয়েই ‌দিথী বলে ,, 

    – আমার এখন অনেক ভালো লাগছে ,, কারণ,, আমি এখন তার সঙ্গেই আছি ,, 

    (সাথে সাথেই শাহারিয়ার দেহে যেন প্রাণ ফিরে আসে ,, শাহারিয়া মাথা উঠিয়েই ফিরে তাকায় দিথীর দিকে ,, দিথী একটা দুষ্টু মুচকি হাসি দেয় ,, শাহারিয়া আবার দুষ্টুমি করে চোখ ইশারা করে দিগন্তের দিকে চেয়ে বলে বলে ,, 

    – আমিও যাকে ভালোবাসি তার সাথে থাকলে আমার অনেক ভালো লাগে ,, মনে হয় যেন এই ত্রিভুবনের সবটুকু সুখ আমার কাছে আছে ,, আমার পাশেই আছে ,,(দিথীর দিকে ফিরে তাকিয়ে) তোমার জীবন যাত্রার সঙ্গী হতে চাই আমি ,, তুমি কী সেই সুযোগ দিবে,, ? 

    (দিথী এবার শাহারিয়ার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে)

    – দিবো ,, যদি সেই যাত্রার সবটুকু তুমি শুধু আমাকে নিয়েই পাড়ি দেও ,, যেই যাত্রায় থাকবে শুধু একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান, ও মূল্যায়ন,, আর থাকবে না কোন সংকোচ, আর অন্য কারো প্রতি টান ,, 

    (শাহারিয়া দিথীর কথা শুনে এবার একদম তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়,, দাঁড়িয়ে তার কাঁধে হাত দেয় ,, দুইজনেই এবার দিগন্তের গৌধূলীর দিকে তাকিয়ে আছে ,, সূর্য পশ্চিম দিগন্তের অর্ধেক নিমজ্জিত হয়েছে ,, দিথী শাহারিয়ার কাঁধে মাথা রাখে ,, শাহারিয়া আরেক হাত দিয়ে গৌধূলীর মাঝে ছুটে চলা দুই নিড়েফেরা পাখি দেখিয়ে বলতে থাকে ,, 

    – ঐ যে ,, ঐ ডান পাশের টা হলাম আমি ,, আর বাম পাশের টা হলে তুমি ,, (দিথীর দিকে ফিরে তাকিয়ে) আর সবসময় তুমি আমার বুকের বা পাশেই থাকবে ,, (বলেই শাহারিয়া তার ঘাড়ে মাথা রাখা দিথীর গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে এক মলিন ছোঁয়া দেয় ,, একটা ভালো সময় কাটায় তারা ,, এ যেন এক স্বপ্নের বিকেল ,, এক নতুন পথচলার শুরু,, শুভ হোক তাদের যাত্রা ,, 

     

    মেম্বারদের বাসা দেখানো হয় ,,সময় এখন ৫:৪৫ ,, মেম্বারনি চাচি নিজের ঘর থেকে বের হয়ে শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে রান্না ঘরের দিকে যেতে থাকেন ,,  আগে ভাগেই নাস্তা বানিয়ে নিচ্ছেন ,, পরে রাত নামলে তার আবার রান্না ঘরে যেতে মন চায়না তো,, তাই ,, তখনই ফয়সাল বারান্দার সিড়ি বেয়ে বারান্দায় উঠে ,, তখনই চাচি বলেন ,, 

    – আরে ফয়সাল, কই গেছিলা তুমি ,,?

    – এইতো চাচি গ্রাম ঘুরতে বাইর হইছিলাম একটু ,, আপনি কই যান ,,

    – নাস্তা বানামু অহন ,, আচ্ছা যাও ঘরে যাও ,,

    – আচ্ছা ঠিক আছে চাচি ,, (বলেই ঘরের দিকে যেতে থাকে ফয়সাল ,, তখনই চাচি হাক দিয়ে বলেন ,, 

    – নিপারে ডাক দিয়া কইয়ো তো যে আমি ডাকতাছি ,, আচ্ছা? 

    – আচ্ছা চাচি আমি ডেকে দিচ্ছি ,, (ফয়সাল মনে বেশ খুশিই হয় ,, সে ভাবে ,,”নিপা মাল ডারে যাইয়া একটু দেইখাও আহি ,, ডাক পরে দেওয়া যাইবো ,, ” তারপর চলে যেতে থাকে নিপার রুমের দিকে ,, 

    নিপার রুমের সামনে এসে দেখে যে দরজাটা খোলাই ,, ফয়সাল দরজা টা হালকা ঠেলে দিয়ে ভিতরে উঁকি দিতে থাকে ,, সে দেখে নিপা ঘুমাচ্ছে,, কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে আছে ,, আর শরীরে কোন কাঁথা ঢাকাও ছিলো না তাই ফয়সাল নিপার দিকে খারাপ ‌নজর দিতে থাকে ,, ঘুমাবার পর কাপড়ের উপর তো আর কন্ট্রোল থাকে না ,, তাই কাপড় একটু এলোমেলোভাবেই ছিলো ,, আর ওড়না টাও সে খুলে রেখেই ঘুমিয়েছিলো ,, 

    ফয়সাল তো এই অবস্থায় নিপাকে দেখে আর নিজেকে কন্ট্রোল ই করতে পারেনা,, সে দরজাটা শব্দ ছাড়াই খুলে ভিতরে যেতে থাকে ,, সে ভাবছে এরকম আর কখনো নিপাকে একলা ঘরে পাবে না ,, তার মাথায় অনেক খারাপ জিনিস ঘুরতে থাকে ,, সে এক পা এক পা করে এগোতে থাকে ,, তার মনে আজ নোংরা বাসনা ,, সে যে কতটা নোংরা তা কারোর ধারনাতেই নেই ,, সে গিয়ে একদম নিপার পাশেই দাড়ায় ,, এবং তখনই তার হাত পাশে থাকা টেবিলের পানির গ্লাস টায় লাগাতেই গ্লাসের ঢাকনা টা পরে যায় আর শব্দ হয়ে উঠে ,, এবং তৎক্ষণাৎ নিপার ঘুম ভেঙ্গে যায় ,,

     

    – ছাড়ো আমায় ,, শরীর ঠিক হয়ে যাওয়ার সারে সাথেই আবার দুষ্টুমি শুরু ,, ? 

    – রিয়াদ তো বাসায় নাই একটু জড়িয়ে ধরলে মন্দ কী হয় বলো ,, 

    – হইছে এখন ছাড়ো আমি রাতের রান্না বসাতে যাবো ,, সবসময় তোমার সাথে রং-ঢং করতে পারবোনা ,, ছাড়ো,, 

    (রাতুলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে থাকে মায়া ,, রাতুল ঘরের বিছানায় হেলান দেওয়া অবস্থায় বলতে থাকে ,,

    – বউ ,, এই শীতের সময় একটু উষ্ণতার ছোঁয়া দিলে কী এমন হইতো ,, আমার তো এখন ঠান্ডা লাগতাছে ,, উহুহু ,, উড়ি বাবাগো কী ঠান্ডা ,, (বলতে বলতে কাঁথা ঢাকা নেয় রাতুল ,, রাতুলের কথা শুনে ঘরের বাইরে আঙিনা থেকে হাঁক দিয়ে মায়া বলতে থাকে ,, 

    – ইসস ,, শখ কত ,, উষ্ণতার ছোঁয়া না ছাই ,, পরে তখন আবার গোসল করতে হবে ,, তোমারে উষ্ণতা দিতে গিয়ে আমি এই শীতের সময় রাতে গোসল করতে পারবো না ,, যত্তসব আদিক্ষেতা,, 

    – ও বউ ,, এমনে বইলোনা গো ,, আহোনা ঘরে একটু ,, এহন রিয়াদ নাই রাইতে রিয়াদ আইলে তহন মন ভইরা প্রেম ডাও করতে পারিনা গো ,, ও বউ ,, 

    – তোমার বউ জাহান্নামে গেছে ,, আমি আগামী ৩ ঘন্টা তোমার বউ না ,, 

    – কী কও এডি বউ ,, আমার মনের আগুন যে জ্বালায়া গেলা এইডা নিভায়া দিয়া তো যাও ,, 

    – মনের আগুন নিভাইতে পুকুরে গিয়া ঝাঁপ দেও ,, আগামী ৩ ঘন্টা আমি তোমারে চিনিনা ,, তুমি কেডা ,, 

    – আমি তোমার সোনার ময়না শালিক পাখি ,,

    – আমি গেলাম রান্না বহাইতে ,, তোমারে আমি চিনিনা ,, আই ডোন্ট নো ইউ ,, (বলেই রান্না ঘরের দিকে চলে যায় মায়া ,, এদিকে তা দেখে পাশে থাকা কোলবালিশের উপর ঝাপিয়ে পড়ে রাতুল ,,পড়েই কোলবালিশ কামড়াতে থাকে আর মায়া মায়া বলে বাচ্চাদের মতো বাহানা করতে থাকে,,

     

    নিপা ঘুম ভাঙ্গার পর দেখে ,, ফয়সাল তার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ,, সে তাড়াতাড়ি করে ওড়নাটা বুকে দেয় আর হাত দিয়ে কাপড় টেনেটুনে ঠিক করতে থাকে এবং বলতে থাকে ,,

    – আপনি এখান আসছেন কেন,, ? আপনাকে এই ঘরে ঢুকার পারমিশন দিছে কে,, ? জান বেড়িয়ে জান ,, 

    – জান ,, আমারে জান কইলা , ! আহাহাহা ,, 

    – আপনি জাবেন নাকি আমি মাকে ডাকবো ,, 

    – যাইতাছি যাইতাছি ,, আর তোমার মা তোমারে ডাকে ,, যাইয়ো ,, খুবই সুন্দর তুমি,, খুবই সুন্দর,, (এক নেশা মিশ্রিত গলায় ফয়সাল বলে)

    – বের হোন এখনি,, মাআআ ,, মাআআ

    – আইচ্ছা আইচ্ছা যাইতাছি ,, যাইতাছি ,, উফফ কী জিনিস মাইরি ,, জিনিস কিন্তু এক পিস,, হেহেহে ,,  (এক নেশা মিশ্রিত হাঁসি হাসতে হাসতে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে থাকে ফয়সাল ,, যাওয়ার আগে কয়েকবার পিছনে ফিরে তাকায় আবার সামনে তাকায় ,, 

    নিপা মনে মনে ভাবছে ,, ” ধুরর দরজা টা লাগিয়ে শুয়ার দরকার ছিলো ,, এই কুকুরের নজর খুব খারাপ,, খুবই খারাপ,, কুকুর একটা ,, থুউউ ,, ” নিপা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ডেসিন টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিতে থাকে ,, 

     

    রাত ৯ টা ,, দিথীর রুম দেখানো হয় ,, তার বন্ধু জিনিয়া আর জান্নাত এসেছে তার বাসায় ,, আজকে রাত টা তারা একসাথেই থাকবে ,, অন্তর সাহেব , নাজিয়া বেগম আর সামিহা আজ রাত টা ক্লিনিকেই থাকবে ,, শেফালী পড়ে আবার নতুন করে সবকিছু রান্না করে রেখে চলে যায় ,, দিথী আর তার বাকি বান্ধবীরা সবাই মিলে একসাথে পড়তে বসেছে ,, কাল গণিত পরীক্ষা,, যে যেই টপিক কম পাড়ে তাকে আরেকজন শিখিয়ে দিচ্ছে ,, এভাবে গ্রুপ স্টাডি করছে তারা ,, তাদের পড়াশোনার মাঝেই দিথী বলে উঠে,,

    – জানিস ,, আজকে না শাহারিয়াকে আমি আমার মনের কথা বলতে পারছি ,, 

    – কী বলিস ,, ? সত্যি ? ভালোই তো ,, তবে তুই যে বলেছিলি তুই রিলেশন করবি না,, ডিরেক্ট এরেন্জড ম্যারেজ করবি,, ?(জিনিয়া বলে)

    – আরে ঐটা আমি এমনিতেই বলতাম ,, মনের মতো কাউকে পাইনি তাই জড়াইনি ,, তবে এখন পেয়েছি ,, তাই জড়িয়েও গেছি,, 

    – ওহোহো,, আচ্ছা,, তো,, কে আগে কার মনের কথা বললি ? তুই নাকি শাহারিয়া ভাইয়া ? 

    – আমি শুধু ইঙ্গিত দিয়েছি ,, আর ও তখন আমাকে করছে ,,

    – আয় হায় ,, কী করছে ,, কেমনে করছে ,, (জান্নাত বলে)

    – আরে ধুরর ,, প্রপোজ করছে ,, তোরা আর ভালো হইলি না ,, সবগুলা ফাজিলের দল ,,

    – তুইও কী কম যাস নাকি হ্যা ,, তুই তো ছুপা রুস্তম ,, হা হা হা হা ,,(হেসে উঠে জিনিয়া)

    – আচ্ছা এসব কথা বাদ দে তোরা ,, সেতু কোথায় ,, ওকে আনলিনা কেন ,, ও তো আরো বাসায় একলা আছে ,, ওকেও নিয়ে আসতি ,, একসাথে থাকতাম আজকের রাত টা ,, 

    – ওর সাথে যখন বিকালে দেখা হলো তখন তো বললাম যে চলে আসতে ,, আসলোনা যে কেন,, 

     

    এদিকে আমাদের সেতুর বাসা দেখানো হয় ,, সেতু একলা তার ঘরে বসে আছে ,, তাদের বাড়িতে ২ টাই রুম,, একটা তালা বন্ধ করা ,, আরেকটায় সে,, তাদের বাসা থেকে ৬ ফিট দূরে তাদের প্রতিবেশীর বাসা ,, আর মাঝখান টায় বাঁশঝাড় ,, সেতু তার পড়ার টেবিলে বসে আছে ,, পড়ায় তার একদমই মন বসছে না,, তার মনে খালি ঐ ঘটনা টাই ভাসছে ,, এমন আজব ঘটনা খালি ওই কেন দেখলো ,, বাকিরা কেন দেখলো না,, তার পড়ার টেবিলের পিছনে বিছানা ,, বিছানাটা দেওয়ালের সাথে লাগানো আর সেখানেই জানালা,, অর্থাৎ তার পড়ার টেবিলের সমান সমান জানালা,, সে জানালার বিপরীতে মুখ করা ,, মানে জানালা টা উত্তরে হলেও সে দক্ষিণে মুখ করা ,, সেতু ঐসব জোড় করে মাথা থেকে বের করার চেষ্টা করে ,, সে বইয়ের জ্যামিতি গুলা জোড়ে জোড়ে রিডিং পড়তে থাকে ,, এবং আমরা দেখতে পাই তার জানালার বাইরের অন্ধকার হতে দুইটা জল জল করতে থাকা লাল চোখ তার দিকে চেয়ে আছে ,, সেতু একলা ঘরে ,, দরজাও লাগানো,, সারা বাড়িতে সে একলা ,, এবং এটাই তার প্রথম একলা থাকা ,, সেতু বইটা বন্ধ করে ফেলে ,,সে ভাবতে থাকে ,, ” এই চিন্তা যতক্ষণ না যাবে ততক্ষণ সে স্বাভাবিক হতে পারবেনা,, সে ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১০  টা বেজে গিয়েছে ,, শীতের সময় গ্রামে রাত ১০ টা মানেই অনেক রাত ,, তাদের বাড়ির পাশেই রাস্তা ,, তবে রাত গভীর হতে থাকলে রাস্তাও একদম শুনশান হয়ে যায় ,, কোন গাড়িঘোড়া এমনকি সাইকেলও চলে না ,, সেতু বইটাকে পড়ার টেবিলে রেখে দিয়ে উঠে পড়ে ,, এবং তখনই আমরা দেখতে পাই তার পিছনের জানালায় থাকা জল জল করে জ্বলতে থাকা লাল দুই চোখ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে ,, সেতু বইটা রেখে বিছানায় চলে আসে ,, সে এই রুমে আগো একলা ঘুমাতো ,, তবে তখন তো পাশের ‌রুমে তার ভাইয়া সিয়াম থাকতো বলে তার একটা সাহস থাকতো ,, কিন্তু এখন পুরো বাড়ি ফাঁকা,, তাই তার মনের মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গিয়েছে ,, সে বিছানায় শুয়ে পড়ে ,, সেতুর পড়নে থ্রি পিস ,, ঘরে যেহেতূ কেউ নেই তাই সে ওড়না দেয়নি ,, সেতু বিছানায় শুয়ে লেপ ঢাকা নিয়ে ফেলে লাইট টা নিভিয়ে দেয় ,, পুরো ঘর এখন অন্ধকার,, সে একপাশে ফিরে চোখ বন্ধ করে কোলবালিশটাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছে ,, তার মাথায় তখনও সেই ঘটনা টাই ঘুরছিলো,, এবং আমরা তখন আবার সেই দুইটা লাল চোখ কে ভেসে উঠতে দেখি ,, কিন্তু এইবার আর জানালার বাইরে নয়,, একদম সেতুর মুখের সামনে বরাবর ,, সেতু চোখ বন্ধ করে আছে ,, তাই কিছুই দেখতে পায়নি,, কিছুক্ষণ পর ওর একটূ অশ্বস্তীবোধ হওয়াতে সে চোখ না খুলেই লেপ টা ঠিক করে নিতে থাকে ,, তার কেন জানি মনে হচ্ছিলো তার বিপরীত পাশে কেউ তার লেপ টা টানছে,, সেতু ভাবে এটা তার মনের ভুল ,, ঘরে কেউ নেই ,, কিন্তু এবার সেতু চোখ খোলে ,, কেননা আসলেই ‌লেপ টা তার বিপরীত পাশে মানে সে যে পাশে মুখ করে ফিরে আছে তার বিপরীত পাশে কেউ টানছিলো ,, সেতুর কাছে কোন ফোনও নেই যে ফোনের টর্চ অন করবে ,, সেতুর মনে এবার ভয় একদম জেঁকে বসে ,, সে আস্তে আস্তে করে পাশে দিকে ফিরে ,, এবং দেখে আসলেই কেউ তার পাশে চিৎ শুয়ে আছে ,, অন্ধকারে শুধু অবয়ব বুঝা যাচ্ছে,, কিন্তু চেহারা দেখা যাচ্ছে না,, সেতুর ভয়ে হার্টবিট বেড়ে যায় ,, সে একলা ছিলো ঘরে তাহলে কে তার পাশে এসে শুইলো ,, সে হাত দিয়ে বেড সুইচ টা খুঁজছিলো,, (গ্রামে লাইট/ফ্যান অন অফের সুইচ বিছানার পাশেই ঝুলানো থাকে ,,) সেতু অন্ধকারে মধ্যৈ হাত দিয়ে খোঁজা খুঁজির পর বেড সুইচ টা পেয়ে যায় ,, এখনো লোক টা তার পাশে সুয়ে আছে ,, কোন নড়াচড়া করছে না ,, সেতু কোনমতে সাহস করে নিজের চোখ টা বন্ধ করে বেড সুইচ টা চালু করে দেয় ,, এবং আস্তে আস্তে চোখ খুলে,, সে চোখ খুলে দেখে যে তার পাশে কেউ নেই ,, সে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে,, তবে সেতু ঐ অবস্থাতেই যখনই লাইট টা বন্ধ করে , তখনই তার মনে হতে থাকে এবার যেন লোকটা আরো তার দিকে ফিরে শুয়েছে ,, সেতু ভাবে এইটাও হয়তো তার মনের ভুল তাই এবার আর চোখ বন্ধ না করে ফট করে সুইচ টা টিপে দেয় ,, এবং আলো জ্বলে উঠার সাথে সাথেই সে যা দেখতে পায় তা যেন কেউ স্বপ্নেও দেখতে চাইবে না,, দেখতে পায় তার ভাইয়ের শরীর এটা ,, চোখ গুলো একদম সাদা ,, মুখে পঁচা গলা মাংস  , পুরো শরীর থেকে মাংস খুলে খুলে পড়ছে ,, সেতু জোড়ে এক আত্মচিৎকার দিয়ে উঠে ,, এবং সাথে সাথেই লাশটা হাত দিয়ে সেতুর মুখ টা তার মুখের সাথে লাগিয়ে আরো ভয়ংকর চেহারা নিয়ে চোখ লাল করে এক ভয়ানক চিৎকার দেয় ,, সেতুর রুহ যেন সাথে সাথেই বের হয়ে যাচ্ছিলো ,, সেতুর চিৎকার শুনা যায় পুরো পাড়া জুড়েই ,, লোকজন এই চিৎকার শুনেই কেঁপে উঠে ,, যেন কোন মেয়েকে কেউ জীবন্ত অবস্থায় নিষ্ঠুর ভাবে মেরে ফেলছে ,, 

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    [ নিবিড় যখন পানি খেতে গিয়েছিলো তখন টং করে শব্দ হয়ে মাছের বাটির ঢাকনা টা একলা একলাই পড়ে গিয়েছিলো? নাকি এইটার পিছনেও কোন কিছুর হাত আছে ,, ? সেতুর ভাইকে তো খুনি মেরে ফেলেছে ,, তাহলে তার ভাই তার পাশে কিভাবে আসলো ? গল্পের কোন জায়গাটা ভালো লেগেছে জানাইয়েন ,, আর কেমন হচ্ছে এটাও জানাইয়েন 😊 ,, আর এই পর্বটা পর্ব ২১ এর থেকেও বড় মানে এইটাই এখন এই গল্পের সবচেয়ে বড় পর্ব ,, sorry for late upload 😥  ]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ২২

    লেখক:: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২৩ 

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    সে আস্তে আস্তে করে পাশে দিকে ফিরে ,, এবং দেখে আসলেই কেউ তার পাশে চিৎ শুয়ে আছে ,, অন্ধকারে শুধু অবয়ব বুঝা যাচ্ছে,, কিন্তু চেহারা দেখা যাচ্ছে না,, সেতুর ভয়ে হার্টবিট বেড়ে যায় ,, সে একলা ছিলো ঘরে তাহলে কে তার পাশে এসে শুলো ,, সে হাত দিয়ে বেড সুইচ টা খুঁজছিলো,, (গ্রামে লাইট/ফ্যান অন অফের সুইচ বিছানার পাশেই ঝুলানো থাকে ,,) সেতু অন্ধকারে মধ্যৈ হাত দিয়ে খোঁজা খুঁজির পর বেড সুইচ টা পেয়ে যায় ,, এখনো লোক টা তার পাশে সুয়ে আছে ,, কোন নড়াচড়া করছে না ,, সেতু কোনমতে সাহস করে নিজের চোখ টা বন্ধ করে বেড সুইচ টা চালু করে দেয় ,, এবং আস্তে আস্তে চোখ খুলে,, সে চোখ খুলে দেখে যে তার পাশে কেউ নেই ,, সে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে,, তবে সেতু ঐ অবস্থাতেই যখনই লাইট টা বন্ধ করে , তখনই তার মনে হতে থাকে এবার যেন লোকটা আরো তার দিকে ফিরে শুয়েছে ,, সেতু ভাবে এইটাও হয়তো তার মনের ভুল তাই এবার আর চোখ বন্ধ না করে ফট করে সুইচ টা টিপে দেয় ,, এবং আলো জ্বলে উঠার সাথে সাথেই সে যা দেখতে পায় তা যেন কেউ স্বপ্নেও দেখতে চাইবে না,, দেখতে পায় তার ভাইয়ের শরীর একটা ,, চোখ গুলো একদম সাদা ,, মুখে পঁচা গলা মাংস  , পুরো শরীর থেকে মাংস খুলে খুলে পড়ছে ,, সেতু জোড়ে এক আত্মচিৎকার দিয়ে উঠে ,, এবং সাথে সাথেই লাশটা হাত দিয়ে সেতুর মুখ টা তার মুখের সাথে লাগিয়ে আরো ভয়ংকর চেহারা নিয়ে চোখ লাল করে মুখ খুলে এক ভয়ানক চিৎকার দেয় ,, সেতুর রুহ যেন সাথে সাথেই বের হয়ে যাচ্ছিলো ,, সেতুর চিৎকার শুনা যায় পুরো পাড়া জুড়েই ,, লোকজন এই চিৎকার শুনেই কেঁপে উঠে ,, যেন কোন মেয়েকে কেউ জীবন্ত অবস্থায় নিষ্ঠুর ভাবে মেরে ফেলছে ,, 

     

    – মা , এটা কীসের শব্দ ,, ? 

    – তেমন কিছুনা মামুনি ,, মনে হয় বাইরে শিয়াল ডাকছে ,, তাই এমন চিৎকারের মতো শোনা যাচ্ছে ,, 

    সেতুর চিৎকার এতোটাই জোড়ে হয়েছিলো যে তার বাড়ি থেকে ৪ বাড়ি পর থাকা ছোট্ট রিমাও তা শুনতে পেয়েছিলো,, তার মা বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলেন,, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন গ্রামের অবস্থা ভালো নয় ,, রাতে খুন খারাবি শুরু হয়েছে,, কিন্তু তার মেয়ে যেন ভয় না পায় তাই শেয়ালের ডাক বলে তার মেয়েকে শান্ত করলেন ,, ছোট্ট রিমা চোখ বন্ধ করে ফেলে,, তার মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে থাকে,, 

     

    সকাল ৭:৩০ ,, শীতের সকাল ,, কুয়াশা সাথে মিষ্টি হালকা রোদ ,, ঠান্ডা বেশ পড়েছে ,, শীতের কাপড়ও বের হয়ে গিয়েছে আলমারি থেকে,, আঙিনায় মুরগি তার ছোট ছোট ছানাদের নিয়ে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে,, গাছের ডালে বসে পাখিও তার মনের সুখে ডাক পেড়ে যাচ্ছে,, একটা বাটি হাতে আঙিনা থেকে বারান্দায় উঠলো লায়লা ,, উঠে নিয়ে গিয়ে শিউলি বেগম কে দিলো ,, সবাই সকালের নাস্তা খেতে বসেছে ,, বরাবরের মতোই মতিন মেম্বার নেই নাস্তার টেবিলে,, শাহারিয়া , ফয়সাল আর শাহারিয়ার টিমমেট রা বসেছে নাস্তা করতে ,, শীতের সকালে এখন ভাপা পিঠার মতো কী আর দ্বিতীয় ভালো নাস্তা আছে ? ভাপা পিঠা সহ নানান রকমের পিঠে-পুলি ও খেজুরের রস ,,এই নিয়েই তো গ্রামের শীতের সকাল ,, শিউলি বেগম একটা ভাপা পিঠা উঠিয়ে দিলেন শাহারিয়ার প্লেটে ,, শাহারিয়া খেতে খেতে বললো ,, 

    – মা ,,(একটু থেমে) তুমি সকাল সকাল উঠে এতো গুলো পিঠা কীভাবে বানালা ,, ?

    – আমি কী একলা নাকি ,, ফুলমতি , লায়লা রাও সাহায্য করছে ,, কেমন হইছে বাজান পিঠা গুলা ,,

    – উমম ,, মা ,, অনেক মজার হইছে,, আফসোস হচ্ছে বাবার জন্য,, সকাল সকাল এই গরম গরম পিঠা খেয়ে যেতে পারলোনা ,,

    – হ ,, তোর বাপে পড়ছে পৌরসভা আর ইলেকশন লইয়া ,, তোর বাপের কী আর বাড়ির হুশ আছে ,, 

    ফয়সাল বলে উঠে,, 

    – চাচিআম্মা , কালকে রাতের রান্না ডাও কিন্তু বেশ হইছিলো ,, 

    – হ ,হ ,, তোমার চাচা তো আমার রান্না খাইয়াই পাগল হইয়া গেছিলো বিয়ার পর , আমার হাতের রান্না কী কহনো খারাপ হইতে পারে ,, হা হা হা হা ,, 

    – ও মা আরেকটা জিনিস,, আমি তোমাকে কালকে বলতে ভুলেই গেছিলাম,, আচ্ছা ঐযে নাদিয়া, যে মারা গেলো কিছুদিন আগে ,,(একটু থেমে) সে বলে কিডনাপ হওয়ার রাতে আমাদের বাসা থেকেই বের হইছিলো ? 

    – হ বাজান ,, ঐরাইতে তো ও নিপাগোরে পড়াইতে আইছিলো ,, পড়াইয়া বাড়ি যাইতে চাইলো ,, কিন্তু আকাশ খারাপ থাহোনের কারণে আমি আরো বাঁধা দিলাম,, কিন্তু শুনলোই না ,, জোর কইরা গেলো ,, আর তারপর এই অবস্থা,, 

    – জোর করে গেলো বলতে ? তেমন কোন অস্বাভাবিক জিনিস কী তার মাঝে লক্ষ্য করছিলা মা ? 

    – হ ,, ওর কী জানি হইছিলো ,, এমনিতে তো ভালোই আছিলো ,, কিন্তু আমি যহন ওগো পড়ার রুমে যাই আর নিপা ,দিথীরা ঐ তার কয়দিন আগে মারা যাওয়া রিয়ার সম্পর্কে জানবার চায় ,, তহন আমি তার গল্প হুনাইতাছিলাম,, প্রথম প্রথম নাদিয়া স্বাভাবিক ই ছিলো ,, তয় যখনই তার স্বামী নোমানরে নিয়া কথা কইতে গেলাম,, তখনই কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো ,, বারবার কইতাছিলো যে অয় বলে বাড়ি যাইবো ,, আমিই পরে ধমক দিয়া বহায় রাখছিলাম আর নোমানের সাথে রিয়ার বিয়া , নোমানের মারা যাওয়া এডি কইতাছিলাম নিপা গোরে ,, কিন্তু ওগো পাশে বইসা থাকা নাদিয়া তহন অন্যমনস্ক আছিলো ,, দেইখা মনে হইতাছিলো যে অন্য কিছু ভাবতাছে ,, তারপরই তো গল্প শেষ কইরা খাইতে ডাকলাম ,, আইলোনা ,, পরে দিয়া ও আর ওর বাপের লাইগা বক্সে কইরা খাওন দিয়া দিলাম ,, ঝড় বৃষ্টির রাইত ছিলো ,, যাইতে মানা করছিলাম,, হুনে নাই মাইয়াডা ,, (একটু থেমে) এহন নিজের জীবন ডা অকালে খোয়াইলো ,, (মুখ গোমড়া করে মন খারাপ করে বলেন শিউলি বেগম)

    – মন খারাপ করিও না মা ,, ওর খুনিকে আমরা ঠিকই ধরে শাস্তি দিবো ,, আচ্ছা তুমি যে বললে যে ওকে বলে খাবার একটা বক্সে করে দিয়েছিলে ,, ? ঐ বক্স টা কেমন ছিলো মাঝারি না বড় ,,? বা কী রংয়ের ছিলো ? 

    – আমার তো অতকিছু মনে নাই বাপ ,, রাইত ছিলো ,, কোন বক্স ডা যে দিছিলাম ভুইলা গেছি ,,

    তখনই আমরা দেখতে পাই স্কুল ড্রেস পরিহিত নিপা রুম থেকে বের হয় ,, কাঁধে ছোট ব্যাগ ,, পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে সে ,, নিপা বের হয়ে বারান্দার গ্রিলের দরজার সামনে গিয়ে জুতো পরতে  থাকে ,, 

    শাহারিয়া শিউলি বেগমের প্রতিউত্তরে বলে ,,

    – বক্স টাই এখন আমাদের সেই খুনির কোন ক্লু দিতে পারবে ,, 

    – কিন্তু কীভাবে? (ইমন বলে)

    – পরে বলবোনে তোকে,, তুই এখন খাওয়া শেষ কর ,, থানায় যাইতে হবে ,, 

    – আচ্ছা ,, (ইমন বলে)

    তাদের কথা বলা শেষ হওয়ার পর জুতা পরে খাবার টেবিলের এদিকে এসে নিপা বলতে থাকে ,,

    – তোমরা কোন বক্স নিয়া কথা কইতাছো ,, 

    – আরে ঐযে নাদিয়ারে যে বক্সে কইরা খাবার দিলাম না ,, ঐডার কথা ,, তুই এইসব চিন্তা মাথায় ঢুকাইস না ,, তুই যা আর ভালো কইরা পরীক্ষা দিস (শিউলি বেগম বলেন)

    – পরীক্ষা আমি ভালা কইরাই দিমুনে ,, কিন্তু কথা হইতাছে যে বক্স টা তো এহন আমার কাছে,, 

    নিপার কথা শুনে হঠাৎ সবাই খাবার খাওয়া থামিয়ে অবাক দৃষ্টিতে নিপার দিকে তাকায় ,, 

    – তুই ঐ বক্স টা কই পাইলি ? (অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে শাহারিয়া বলে)

    – ফারুক আমারে দিছিলো ,, ও বলে আমাদের বাড়ির কিছুদূরের জঙ্গল টার সামনের রাস্তায় পাইছিলো বক্স টা ,, 

    – নীলগিরি জঙ্গল টার সামনের রাস্তায় ? এই রাস্তা তো আমাদের বাসার পাশের রাস্তা টাই ,, এটাই তো নীলগিরি জঙ্গলের সামনে দিয়ে চলে গেছে ,, (শাহারিয়া বলে)

    – হ্যা এই রাস্তা তেই পাইছে ,, বক্সে মা যা যা খাবার দিছিলো সব অক্ষত অবস্থায় ছিলো ,, আমার টিফিন বাটি ছিলো তো ঐ বক্স টা ,, তাই ফারুক চিনতে পেরে বাসায় এসে দিয়ে যায় ,, 

    – এই ফারুক টা আবার কে ? (শাহারিয়া জিগ্গেস করে)

    – দক্ষিণ পাড়ার দিকে থাকে ,, ওর বাবার নাম রবিউল,,, (নিপা বলে)

    – তো তুই এতো কিছু কেমনে জানলি ? 

    – ন,না মানে (তোতলিয়ে) ফারুক আমার ভালো বন্ধুতো ,, ভালো বন্ধু,, সেইজন্য আরকি চেনা,, 

    – ওহহ আচ্ছা তুই পরীক্ষা দিতে যা ,, আর , (পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা বের করে ) এই নে,, পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে কিছু খেয়ে নিস,,

    – আচ্ছা ভাইয়া ,,

    – ভালো করে পরীক্ষা দিস কিন্তু,,

    – আচ্ছা ভাইয়া গেলাম আমি ,, মা গেলাম,,  (বলেই বারান্দার ২ ধাপ সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে চলে যেতে থাকে নিপা ) 

    এদিকে বাকিদেরও খাওয়া শেষ,, কল্পনা আর সাম্মি উঠেও পড়েছে টেবিল থেকে,, শাহারিয়াও উঠে পড়ে ,, চলে যেতে থাকে হাত ধুতে ,, লায়লা তাদের প্লেট গুলো তুলে ধুইতে নিয়ে যায় ,, চাচিও রান্না ঘরের দিকে চলে যায়,, 

     

    গ্রামের রাস্তা দেখানো হয় ,, কাঁচা রাস্তা,, দুপাশেই সেই চিরচেনা ফসলি খেত ,, সকাল এখন ৭ টা ৪৫ ,, রাস্তা দিয়ে গরু আর লাঙল কাঁধে নিয়ে কৃষকরা ছুটে চলেছে তাদের ফসলি জমি চাষ করতে ,, দুই একটা সাইকেল মাঝে মধ্যে চলে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে,, সেই রাস্তা দিয়ে আমরা যেতে দেখতে পাই দিথী , জিনিয়া আর জান্নাত কে ,, তাদের সবারই পরনে সাদা স্কুল ড্রেস , কাঁধে ছোট ব্যাগ ,, তারাও পরীক্ষা দিতেই যাচ্ছে,, তাদের মধ্যে দিথী বলে উঠে ,, 

    – গণিতে আমার অন্য কোন টপিক নিয়ে সমস্যা নাই ,, খালি জ্যামিতি টাই কম পাড়ি ,, এটা সহজ পরলে আলহামদুলিল্লাহ, ,আর কঠিন পড়লে ইন্নালিল্লাহ,, 

    – তোর তো বাকি গুলা ঠিকঠাক আছে ,, আমাদের তো বাকি গুলাও ভরাডুবি,, কে জানে পরীক্ষায় কী লেখবো ,,(জিনিয়া বলে)

    – তোর শশুরবাড়ির পরিচিত লেখে দিস ,, (মুচকি হেসে দিথী বলে)

    – হ ,, আর তুই জ্যামিতির যায়গায় জামাইতি লেখিস ,, জামাইয়ের লগে যা ডলাডলি করছোস ঐগুলা লেহিস ,, (জান্নাত অভিমানের সুরে বলে মজা করে)

    – হমম বলছে তোদেরকে ,, নিজেরা ডলাডলি করতে করতে জামাইয়ের অবস্থা খারাপ করে দেয় ,, আর আমি একটু কাঁধে মাথা রাখছি তাতেই বলে ডলাডলি হয়ে গেলো,, 

    – এহন মাথা রাখছো কান্ধে ,, কয়দিন পর মাথার যায়গায় কতকিছু রাখবা কান্ধৈ ,, আমরা কী বুজিনা ,,, (জান্নাত বলে)

    – চুপথাক তোরা ,, উল্টাপাল্টা বকতেই থাকোস খালি ,,সেতু কই ,, ওরে দেহিনা ক্যা ,,(দিথী বলে)

    – সেতু তো প্রতিদিন আমাগো বাড়ি আইতো আর একলগে কলেজে যাইতাম ,, আইজ তো আমি তোর বাড়িত ছিলাম ,, মনে হয় সকাল বেলা যাইয়া ও আমার বাড়ি থেইকা আমারে খুঁইজা আইছে ,, আমারে পায়নাই তাই কলেজের উদ্দেশ্য একলাই রওনা দিয়া দিছে , (জান্নাত বলে)

    – ওহহ আচ্ছা,, এখন তাড়াতাড়ি পা চালা ,, দেরি হয়ে যাবে নাহলে ,, (বলেই একটা একটু তাড়াতাড়ি হাঁটতে থাকে দিথী )

    – হ চল ,

    তিন ‌বান্ধবী এভাবেই একসাথে যেতে থাকে তাদের কলেজের উদ্দেশ্য,, প্রতিদিন তাদের মাঝে এমন একটু আধটু দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি হয় ,, নিজেদের মাঝে নিজেরা ঝগড়া করলেও কিছুক্ষণ পর আবার ঠিক মিল হয়ে যায় ওদের ,, বন্ধুত্ব অনেক গভীর তাদের মাঝে ,,

     

    – স্যার ,, আরো একটা লাশ পাওয়া গেছে ,, 

    – কী বলো ,, ? আরো ? 

    – হ স্যার ,, তবে এইডা মাইয়ার লাশ ,, 

    – কী ? মেয়ের লাশ ? ঐ খাল থেকেই পাইছো ? নাকি অন্য কোথাও ?

    – না স্যার ,, খাল থেকেই পাইছি ,, একদম আগের লাশ গুলার মতোনই মাথা বিহীন ক্ষতবিক্ষত দেহ ,, কী করবো এহন স্যার ,, ? 

    – আচ্ছা আমি ইমন,সাম্মীদের ওখানে পাঠাচ্ছি ,, ওরা দেখে নিবে ঐদিকের বিষয় টা ,,

    – আপনি আইবেন না স্যার ? 

    – আমার আসতে দেরি হবে ,, আমি ওদের পাঠিয়ে দিচ্ছি,, লাশ টাকে উঠিয়ে থানায় নিয়ে আসো ,,

    – ওকে স্যার ,,ঠিক আছে ,, 

    উত্তর পাড়ার আম বাগানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল নোমান কল দিয়েছিলো রিয়াদকে ,, রিয়াদ তার পুলিশ ইউনিফর্ম পড়ছে তার রুমে ,, আজ একটু ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় থানায় যেতে দেরী হচ্ছে,, রিয়াদ তার শার্ট টা গায়ে দিয়ে বোতাম লাগাতে থাকে ডেসিন টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে,, বোতাম লাগানো শেষ হলে সে বিছানা থেকে তার ফোন টা নেয়,, নিয়ে সেখানে শাহারিয়ার নাম্বারটা বের করে ফোন দেয় ,, এদিকে শাহারিয়াকে দেখানো হয় ,, সে বারান্দা থেকে নেমে আঙিনার পাশের ছোট্ট ডালিম গাছ টার নিচে রাখা বাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়ানো মাত্র তার ফোন বেজে উঠে ,, সে পকেট থেকে ফোন টা বের করে দেখে রিয়াদ ফোন দিয়েছে ,, সে ফোন টা রিসিভ করে কানে তুলে,, রিয়াদ কিছু বলার আগে শাহারিয়া বলে ,,

    – আমি তোর ওখানেই যাচ্ছিলাম,, 

    – আচ্ছা আয় ,, আর ঐদিকে তো আরো লাশ পাইছে ,, এইবারের টা বলে আরো মেয়ের ,, এইটা আনিকার লাশ নয়তো আবার ? 

    – এখন পরীক্ষা ছাড়া তো বলতে পারি না কার লাশ ,, সাম্মী, কল্প ওরা লাশ টা থানায় নিয়ে পরীক্ষা করুক ,,তাইলে জানতে পেরে যাবে , 

    – আচ্ছা,, ঠিক আছে ,, আমার তো ভয় হইতেছে ঐটা আনিকার লাশ যদি হয়ে যায় ,,

    – আরে না হবে না ,, তুইও খালি কীসব ভেবে ফেলিস ,, এখন শোন ,, গ্রামে ফারুক নমে কে আছে ? 

    – ফারুক ? ফারুক নামে তো একজনই আছে ,, রবিউল চাচার ছেলে ফারুক,, কেন? কী হইছে ? 

    – দরকার আছে ,, তুই তাড়াতাড়ি রেডি হ ফারুকরে নিয়ে একটা খোঁজ করতে যাবো ,, 

    – খোঁজ ? কীসের খোঁজ? আর আমাদের কেসের সাথে ফারুকের সম্পর্কটাই বা কী ? 

    – আছে আছে ঐটা পরে বলবোনে তোকে ,, আর এখন বল যে দিনাজপুর থানা থেকে কী বললো অটো টার ব্যাপারে ? 

    – আমি তো ফোন দিলাম ,, তারা তো বললো অটোটা চুরি হয়ে গেছিলো ,, পরে বলে আবার একদিন পর অটোটা যায়গা মতো ফিরে এসেছে,, ওরা এই কান্ড দেখে তো হতবাক ,, 

    – কী বলিস ?  

    – হ্যা ওরা তো তাই বললো ,,

    – আচ্ছা ঐসব নিয়ে পরে আলোচনা হবে ,, তুই রেডি হয়ে থাক আমি আসতেছি  ,, 

    – আচ্ছা আয় তুই ,, কিন্তু ফারুককে নিয়ে যাবো টা কোথায় ? 

    – নীলগিরি জঙ্গলে,, ঐটার সামনের রাস্তাটায় কাজ আছে ,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,, আমি রেডি হচ্ছি ,,

    শাহারিয়া ফোন টা কেটে দেয় ,, দিয়ে বাইকে উঠে মাথায় হেলমেট পড়ে বাইক নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় ,,

     

    আপনাদের এই  নীলগিরি জঙ্গল টার সম্পর্কে কিছুটা বলি , এই জঙ্গল টা অনেক পুরোনো,, অনেক বলতে অনেক,, এই গ্রাম টা আগে সম্পূর্ণই এই নীলগিরি জঙ্গল ছিলো ,, কিন্তু মানুষের পদচারণায় জঙ্গল ছোট হতে থাকে ,, যার ফলাফল স্বরুপ এখন জঙ্গল টা তার পুর্বের আয়তনের অর্ধেক হয়ে গিয়েছে ,, আর বাকি ভূমিটায় এখন মানুষের বাস এবং গড়ে উঠেছে গ্রাম ,, জঙ্গলটা আনন্দ পুর গ্রাম ও হরিশপুর গ্রামকে একই সাথে গেঁথেছে,, অর্থাৎ এই জঙ্গল দুই গ্রাম জুড়েই ব্রিস্তিত ,, ঐদিন যে রিয়াদ আর শাহারিয়ারা চাঁদনী ওরফে ‌নুপুরের খোঁজ করতে যেই বুড়ার বাসায় গিয়েছিলো ,, ঐ বুড়ার বাসাটাও এই নীলগিরি জঙ্গলটাতেই,, জঙ্গলটার যত ভিতরের দিকে যাওয়া হয় ততই জঙ্গল টা ঘন হতে শুরু করে ,, এতোটাই ঘন যে সূর্যের আলো পর্যন্ত গাছের পাতা ভেদ করে মাটিতে আসতে পারতো না ,, আর এই জন্যই নুপুরের দাদা বাসার আশেপাশের পরিবেশ টা ছিলো এতো ভয়ানক আর শুনশান ,, শাহারিয়াদের বাসা অর্থাৎ মেম্বারদের বাসার পাশ দিয়ে যেই রাস্তা গিয়েছে সেই রাস্তা টাই জঙ্গলের ধার বেয়ে চলে গেছে বাজার পর্যন্ত,, রাস্তার এক পাশে ফসলি মাঠ ,, আরেকপাশে জঙ্গল,, শাহারিয়া দের বাড়ির ৩ বাড়ি পর একটু ফাকা যায়গা আর তারপর থেকেই এই জঙ্গলের শুরু,, জঙ্গল টার ভিতরে কেউ যায় না ,, অনেক আগে বলে লোকজন গেলে ফিরে আসতো না আর তাই জঙ্গল টায় কোন মানুষ যায় না তেমন একটা ,, কুসংস্কার জন্মে গেছে তাদের মাঝে,, আর নাদিয়াকেও কিন্তু ঐ রাতে কেউ একজন মুখ চেপে এই জঙ্গলটার ভিতরেই নিয়ে গেছিলো ,, আর আরোহীর দেহ টাও কিন্তু নীলগিরির জঙ্গলটা থেকেই সেই খুনি টা নিয়ে গেছিলো,, জঙ্গলটা এসব খুনের সাথে কতটা জড়িত ? নাকি তেমন কোন যোগসূত্রই নেই এর মাঝে ? জানতে পারবেন সামনের পর্ব গুলাতে ,, 

     

    এরপর আমাদের দেখানো হয় থানার ভিতরের দৃশ্য,, থানার যেই রুমটায় রিয়াদ বসতো তার পাশের রুমটায়,, ঐ রুমটাকে এখন অস্থায়ী ল্যাব বানানো হয়েছে ,, আমরা সেখানে দেখতে পাই শাহারিয়ার টিমমেট কল্পনা আর সাম্মিকে ,, সাম্মি নুপুরের কঙ্কালটা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে ,, আর নুপুর আজকে পাওয়া মেয়ের লাশ টা পরীক্ষা করছে ,, এখন সময় সকাল ১১ টা ,, নুপুরের কঙ্কাল টা একটা স্টেচারে (হসপিটালে রুগি বহন করার বেড গুলো) রাখা আছে ,, আর তার পাশের স্টেচার টায় আজকে পাওয়া যাওয়া মেয়েটার লাশ রাখা ,, সাম্মি নুপুরের কঙ্কাল টার মাথার খুলি টা পরীক্ষা করার সময় একটা জিনিস খুঁজে পায় ,, একটা চিহ্ন ,, চিহ্ন টা ঠিক দেখতে (~+~) এইরকম ,, চিহ্ন টা দেখে এমন মনে হচ্ছে যেন সেটা তার মাথার খুলিতে খোদাই করে লেখা ,, কিন্তু এটা কীভাবে হতে পারে ,,মাথার খুলিতে কেউ কীভাবে এতো নিখুঁত ভাবে খোদাই করতে পারে ? চিহ্ন টা দেখার পর এই চিন্তাই সাম্মির মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ,, এই চিহ্ন টা ছাড়া আর তেমন কিছুই সে খুঁজে পায়নি কঙ্কাল টা থেকে,, এদিকে কল্পনা আজকে পাওয়া সেই লাশ টার পাশ থেকে হেঁটে সাম্মির পাশে আসে ,, বলে ,,

    – কীরে ,, তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো ? শরীর খারাপ ?

    – না না ,, তেমন কিছুনা ,, তবে একটা জিনিস দেখ ,, ঐ যে মাথার খুলিটায় কী একটা চিহ্ন খোদাই করে রাখা ,, এটা কীভাবে হইতে পারে ? এতো নিখুঁত ভাবে একটা চিহ্ন একটা মেয়ের মাথার খুলিতে আঁকা ? 

    – আরে তুইও না ,, হয়তো কোন গরম লোহায় চিহ্নটা খচিত করা ছিলো আর সেটা তার মাথায় বসিয়ে দিয়েছে,, এইটা নিয়ে এতো চিন্তা করার কী আছে ,, আর শোন ,, এই মেয়েটার শরীর থেকে আবার কোন ধর্ষনের আলামত পাইনি ,, শুধু নির্মম ভাবে মেরে ফেলা হয়েছে এই টুকুই ,, 

    – আচ্ছা তুই এটা তাহলে শাহারিয়াকে কল দিয়ে জানা,, এমিনতেও এতো লাশ পাওয়া আর গুম হওয়াতে উপর মহল থেকে চাপ বাড়তেছে ,, যদিও গ্রাম্য এলাকা ,, কিন্তু মিডিয়ায় একবার খবর টা ছড়ায় গেলে তো মুশকিল,, 

    – হ ,, তাড়াতাড়ি কেস টা শেষ করতে হবে ,, আচ্ছা তুই দেখ আর কিছু পাইলি কিনা ,, আমি শাহারিয়াকে কল দিচ্ছি ,, 

    – আচ্ছা যা ,, 

    কল্পনা পাশের রুমে চলে যায় ,, শাম্মিও তার পিছন পিছন ধীরে ধীরে চলে যায় ,, এদিকে আমরা দেখতে পাই নুপুরের কঙ্কালটার দিকে ,, কঙ্কালটার একটা আঙ্গুল যেন নড়ে উঠলো ,, এবং সিন কাট হয়ে যায় ,,

     

    এরপর দেখানো হয় মেম্বারদের বাসা,, বারান্দায় ছোট টুলের উপর বসে আছেন শিউলি বেগম,, তার পড়নে শাড়ি ,, তার মাথার চুলে তেল মালিশ করে দিচ্ছে ফুলমতি ,, দুপুরের রান্না আজ আগেভাগেই শেষ হয়ে গিয়েছে ,, তাই গোসল সেরে এসে বারান্দায় বসে মাথায় তেল দিচ্ছেন শিউলি বেগম,, তখনই আমরা একটা মেয়েকে বাসার ভিতরে আসতে দেখি ,, বয়স ১৮-১৯ হবে ,, পরনে থ্রি পিস ,, হাতে একটা মাঝারি আকৃতির লাউ ,, সে বারান্দার দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়,, দাঁড়িয়ে চাচিকে বলে ,,

    – চাচি ,, কিরাম আছেন ,, 

    – আরে আয়োশা ,, তোর বলে ১২ মাসই থাহে আমাশা ,, বাথরুমে গিয়া বলে করশ তামাশা ,, হা হা হা (বলেই শিউলি বেগম হেঁসে উঠে ,, তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ফুলমতিও মুচকি হেসে উঠে ,, )

    – চাচির আর মজা করার স্বভাব টা গেলোনা ,, সবসময় খালি মজা করতেই থাহে ,, 

    – দুইদিনের দুনিয়ায় কাচাল ঝগড়া কইরা কী লাভ ,, তাই মজ মাস্তি করতাছি ,, তো কী খবর ,, মেলাদিন পরে তোরে দেখলাম,, আছোস কেমন,, ?

    – এইতো চাচি আল্লাহয় রাখছে ,, চাচি আপনারে এই লাউ ডা দিতে আইলাম ,, আমাগো মাচার এইবার মেলা লাউ ধরছে ,, ভাবলাম যে আপনারে একটা দিয়া আহি ,, লন ,, (লাউ টা শিউলি বেগমের দিকে এগিয়ে দেয় আয়েশা ,, শিউলি বেগম হাত বাড়িয়ে লাউ টা নেয় ,, নিয়ে বলতে থাকে ,,

    – লাউ এর সিজিন তো প্রায় শেষের দিকেই ,, ভালোই হইছে আমগোরে দিছোস ,, তোর চাচায় বাজারে গিয়া কাঁচা তরকারি কিনতেই পারেনা ,, ভালাডি যে বাইচ্ছা আনবো ,, হেইডাই পারেনা ,, ভাবতাছি এইবার থে তোগো সবজির ক্ষেত থেইকাই টাটকা শাকসবজি কিনমু ,, তো এইডার দাম কত হইছে ক ,, 

    – আরে কি কন চাচি এইসব ,, আমি লাউ কী বেচতে আইছি নাকি ,, আপনে গেরামের মেম্বারের বউ ,, আপনার থে কী আমি টাকা লইতে পারি ,, 

    – আইচ্ছা আইচ্ছা ব তাইলে ,, নাস্তা পানি কইরা যা ,, ফুলমতি যা ওরে নাস্তা দে ,, 

    – না না চাচি ,, অন্য একদিন ,, বাড়িত রান্না বহাইতে হইবো ,, সয়ামী মাঠ থেইকা আইয়া খাবার না পাইলে তুলকালাম কান্ড শুরু কইরা দিবো ,, অন্য একদিন আইয়া খাইয়া যামুনে ,, 

    – আইচ্ছা ঠিক আছে ,, যা তাইলে ,, তোর জামাইরে লইয়া একদিন আমাগো বাড়িত আহিস ,, 

    – আইচ্ছা চাচি ,, (বলেই চলে যেতে থাকে আয়েশা ,, আয়েশা গ্রামেরই মেয়ে ,, এখানেই বিয়ে হইছে ,, আয়েশার সাথে চাচির সম্পর্ক ভালো তো ,তাই মাঝেমধ্যেই এসে এভাবে টাটকা শাকসবজি দিয়ে যায় ,, তার স্বামী কাশেম কৃষি কাজ করে ,, তাদের নিজেদের ক্ষেতেরই ফসল এগুলা ,, চাচিও লাউটাকে বারান্দার দরজার পাশে রেখে মাথায় তেল মালিশ করিয়ে নিতে থাকে ফুলমতির কাছ থেকে,,,

     

    এদিকে আমরা দেখতে পাই নীলগিরি জঙ্গলের সামনের রাস্তাটায় ,, ফারুক , শাহারিয়া , রিয়াদ হেঁটে আসতেছে ,, আকাশে মেঘ আছে তবে বৃষ্টি হওয়ার মতো অতটাও না ,, রোদ আছে হালকা ,, সময় এখন ১২:৩০ ,,রোদ আজকে মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে ,, তারা তিনজন হেঁটে আসতে আসতে পথিমধ্যেই থেমে যায় ,, ফারুক বলতে থাকে ,, 

    – এই যায়গা,, এই যায়গা থেইকাই আমি বাটি ডা পাইছিলাম ,, সকাল বেলা যখন হাইটা আসতাছিলাম তখন বাটিটা এই হানেই কাঁদার মধ্যে ছিলো ,, 

    শাহারিয়ারা ফারুকের কথা শুনে ঐ যায়গাতে দাঁড়িয়ে সে বরাবর নীলগিরি জঙ্গল টার দিকে তাকায় ,, গাছ পালার ঘনত্ব কম থাকায় বেশ অনেকটাই ভিতরের অংশ দেখা যাচ্ছে ,, এই বরারব একটা ছোট্ট যাওয়ার মতো ফাঁকাও তারা দেখতে পায় জঙ্গলটার মাঝে,, যেন এই বরবার জঙ্গলটার ভিতরে যাওয়ার জন্য গাছের ডাল-পালা গুলোকে কেটে রাখা হয়েছে ,, তাদের এই বিষয়টা দেখে সন্দেহ হতে থাকে ,, শাহারিয়া জঙ্গলের দিকে চোখ রেখেই রিয়াদ কে বলতে থাকে ,,

    – কিছু বুঝতে পারতেছিস ? 

    – হ্যা ,,(একটু থেমে) এই বরাবর জঙ্গলের ডাল আর আগাছা গুলো কাঁটা,, তারমানে এইখান দিয়ে কেউ জঙ্গলের ভিতরে যাওয়া আসা করে ,, কিন্তু আমি যতদূর শুনেছি জঙ্গলটার ভিতরে ভয়ে কেউ যেতে চায়না ,, তাইলে এইটা কে যে জঙ্গলের ভিতরটায় যাওয়ার জন্য এরকম ডালপালা গুলো কেটে রেখেছে,, ? 

    – আচ্ছা চল তো এই বরবার ভিতরে গিয়ে দেখি ,, কী পাওয়া যায় ,, 

    – আচ্ছা চল ,, 

    – ভিতরের দিকে যাইবেন স্যার ,, ! কিন্তু এই জঙ্গল ডাতো অভিশপ্ত,,, (হঠাৎ তাদের দুইজনের পিছন থেকে কে জানি এই কথাটা বলে উঠে ,, শাহারিয়া আর রিয়াদ অবাক হয়ে সঙ্গে সঙ্গে পিছনে ফিরে তাকায় ,, তারা দেখে, আরে এটাতো নাসিম ,, নাসিম এখানে কখন আসলো ? তারা তো এখানে ফারুক সহ তিনজন ছিলো ,, আর নাসিম যে তাদের পাশে এসে দাঁড়ালো,, তা তারা বুঝতেও পারলোনা ? শাহারিয়া নাসিমের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে ,,

    – তুই কীভাবে জানলি এই জঙ্গলটা অভিশপ্ত ? তুই তো এই গ্রামে আসলি মোটে ৮ দিনের মতো হইছে ,, তাইলে ? 

    – না মানে চাচার লগে চলাফেরা করি তো ,, গেরামের অনেক যায়গার থে শুনছি যে এই জঙ্গলডা অভিশপ্ত,, এরলাইগা কেউ এই জঙ্গলের ভিতরে যায়না ,, আপনারাও যাইয়েন না,, 

    – হ ,, বললেই হলো ,, ঐসব কুসংস্কার আমরা মানি না ,, এই রিয়াদ ,ফারুক চল ,, 

    – আমার কথাডা হুনলেন না তো ,, পরে পস্তাইবেন ,, (কেমন একটা গম্ভীর গলায় মাথা নিচু করে বলে উঠে নাসিম ,,তার কথায় ফারুক কিছুটা ভয় পেলেও রিয়াদ আর শাহারিয়া পায়না ,,তারা নাসিমের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জঙ্গলের ভিতরে যাওয়ার জন্য পা চালাতে থাকে ,, তাদের পিছন পিছন ফারুকও যেতে থাকে ,, নাসিম এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ,, তারপর মাথাটা একটু তুলে তাদের যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে,, এবং তার ঠোঁটের কোনায় ফুটে উঠে একটা রহস্যময় হাসি ,,, 

    সাহারিয়া , রিয়াদ , ফারুক ,, তারা জঙ্গলের ঐ ছোট্ট অস্থায়ী পথ বেয়ে ভিতরের দিকে যাচ্ছে,, যেতে যেতে ফারুক বলে ,, 

    – রিয়াদ,, আমার তো ডর করতাছে ,, 

    – আরে ভয়ের কিছুই নাই ,, তুমি আসোতো ,, কিছু হবেনা ,, গ্রামের মানুষ সব কুসংস্কার নিয়ে পড়ে আছে ,, 

    – তারপরও আমার মন কেমন জানি সায় দিতাছে না ,, 

    তারা তিনজন কথা বলতে বলতেই জঙ্গলের ভিতরে একটা ছোট গোল ফাঁকা জায়গায় এসে উপস্থিত হয় ,, যায়গাটা যেন কেউ নিজে থেকেই পরিস্কার করে ফাকা করে রেখেছে,, চারপাশে গাছ আর গাছ ,, কিন্তু এই গোল যায়গাটার গাছ কেটে পরিষ্কার করে রাখা,, তারা সেখানে কিছু খড় দেখতে পায় ,, আর তার পাশেই কিছু মেয়েদের কাপড় পড়ে থাকতে দেখতে পায় ,, শাহারিয়া গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে কাপড় গুলো হাতে নেয় ,, একটা ওড়না সাথে পায়জামা , আর বোরকা ,, “আরে এইটাতো আরোহীর বোরখা ,, এটা এখানে কীভাবে আসলো ,, ” শাহারিয়া বলে উঠে ,, “আর এদিকে ব্লাড ও দেখা যাচ্ছে দোস্ত,,” রিয়াদও শাহারিয়ার পিছন থেকে বলে উঠে ,, শাহারিয়া বোরখা আর ওড়না গুলো রেখে উঠে দাড়ায় ,, পিছনে ফিরে দেখে যে খড়ের মাঝে রক্তও দেখা যাচ্ছে,, শাহারিয়া বলতে থাকে ,,

    – এই যায়গাটা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিস্কার করা হয়েছে ,, যাতে সবার চোখের আড়ালে থেকে এখানে খুন গুলো করা যায় ,, আর এই জঙ্গলের ভিতরে কেউ আসবেনা ,, তাই এইসব প্রমাণও পাবে না,, খুনি এই প্ল্যান নিয়েই খুন গুলো চালাচ্ছিলো ,, 

    – হ্যা ,, আমারো তাই মনে হয় ,,  মেয়েদের কাপড় , রক্ত , সুন্দর করে রাখা খড়,, খুনি সব কিছু এখানেই করছে ,, (রিয়াদ বলে)

    শাহারিয়া কিছু একটা বলতে যাবে ,, তখনই সে খেয়াল করে এখানে থেকে ৭-৮ ফিট দূরে জঙ্গলের ভিতরে একটা ঘর দেখা যাচ্ছে,, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে ঘড়টা পাকা করা ,, এতো বড় এতো ঘন জঙ্গলের মাঝে এরকম ঘর কোথা থেকে আসলো,, ঘরের আংশিক অংশ এখান থেকে দেখা যাচ্ছে,, কারণ জঙ্গল টা সেই দিকে বেশি ঘন , শাহারিয়া রিয়াদ কে ডেকে বলতেই থাকে ,,

    – রিয়াদ ,, তাড়াতাড়ি এদিকে আয় ,, ঐযে দেখ,, ঘন জঙ্গলের ভিতরের দিকে একটা ছোট্ট ঘর দেখা যাচ্ছে,, 

    – হ্যা রে আসলেই ,, চল তো গিয়ে দেখি ,, এই জঙ্গলের মাঝে ঘর আসলো কীভাবে,, 

    শাহারিয়া আর রিয়াদ যখনই ফাঁকা যায়গাটা থেকে ঘন জঙ্গলের ভিতরের  সেই ঘর টার দিকে যেতে থাকে তখনই তারা তাদের পিছন থেকে কারো দৌড়ে আসার আওয়াজ পায় ,, তারা পিছনে ফিরে দেখে কেউ একজন একটা কুড়াল হাতে সেই ছোট পথ টা ধরে তাদের দিকে দৌড়ে ছুটে আসছে ,, মাথায় হেলমেট,, পড়নে জ্যাকেট ,, ফারুক ভয়ে শাহারিয়াদের পিছনে এসে দাড়ায় ,, বিশাল কুড়াল টা দিয়ে লোকটা প্রায় তাদের ফাঁকা যায়গাটার কাছে এসেই গেছে ,, শাহারিয়া তার পকেটে থাকা বন্দুকের কাছ হাত নিয়ে যায় ,,লোকটা প্রায় ফাঁকা যায়গাটায় ঢুকেই পড়বে ,, তখনই তাদের পিছন থেকে কেউ বলে উঠে ,, 

    ” আগেই বলছিলাম না, ভিতরে আসলে পস্তাইতে হবে ,, ” 

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    [ সাম্মি নুপুরের কঙ্কালের খুলি টায় যে চিহ্ন টা দেখতে পেলো ,, সেটার সাথে কী এই কেসের কোন যোগসূত্র আছে ? শাম্মি ,কল্পনা চলে যাওয়ার পর পরই কঙ্কালের আঙ্গুল টা কেন নড়ে উঠলো ? আর শাহারিয়া আর রিয়াদ কী তাইলে শেষমেষ খুনিকে ধরেই ফেললো ? নাকি ঘটনা আরো অন্যদিকে মোড় নিবে ? এরপর কী হতে চলেছে ?  এই গল্পের সিজন ১ শেষের দিকে চলে এসেছে বলা যায়,, আর হয়তো ২-৩ টা পর্ব হবে ,, কেমন হচ্ছে জানাইয়েন ,, আর গল্প লেট করে দেওয়ার জন্য আবারো সরি ,, হঠাৎ স্কুল যেতে হয়েছিলো+বাসায় একটু সমস্যা হওয়ায় লেখার সময় করে উঠতে পারিনি ,, পরবর্তী পর্ব কালকেই পোস্ট করবো,, sorry for late upload 😥  ]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ২৩

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২৪

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া 

     

    – এই যায়গাটা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিস্কার করা হয়েছে ,, যাতে সবার চোখের আড়ালে থেকে এখানে খুন গুলো করা যায় ,, আর এই জঙ্গলের ভিতরে কেউ আসবেনা ,, তাই এইসব প্রমাণও পাবে না,, খুনি এই প্ল্যান নিয়েই খুন গুলো চালাচ্ছিলো ,, 

    – হ্যা ,, আমারো তাই মনে হয় ,,  মেয়েদের কাপড় , রক্ত , সুন্দর করে রাখা খড়,, খুনি সব কিছু এখানেই করছে ,, (রিয়াদ বলে)

     

    শাহারিয়া কিছু একটা বলতেই যাবে ,, তখনই সে খেয়াল করে এখানে থেকে ৭-৮ ফিট দূরে জঙ্গলের ভিতরে একটা ঘর দেখা যাচ্ছে,, তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে ঘড়টা পাকা করা ,, এতো বড় এতো ঘন জঙ্গলের মাঝে এরকম ঘর কোথা থেকে আসলো,, ঘরের আংশিক অংশ এখান থেকে দেখা যাচ্ছে,, কারণ জঙ্গল টা সেই দিকে বেশি ঘন , শাহারিয়া রিয়াদ কে ডেকে বলতেই থাকে ,,

    – রিয়াদ ,, তাড়াতাড়ি এদিকে আয় ,, ঐযে দেখ,, ঘন জঙ্গলের ভিতরের দিকে একটা ছোট্ট ঘর দেখা যাচ্ছে,, 

    – হ্যা রে আসলেই ,, চল তো গিয়ে দেখি ,, এই জঙ্গলের মাঝে ঘর আসলো কীভাবে,, 

    শাহারিয়া আর রিয়াদ যখনই ফাঁকা যায়গাটা থেকে ঘন জঙ্গলের ভিতরের  সেই ঘর টার দিকে যেতে থাকে তখনই তারা তাদের পিছন থেকে কারো দৌড়ে আসার আওয়াজ পায় ,, তারা পিছনে ফিরে দেখে কেউ একজন একটা কুড়াল হাতে সেই ছোট পথ টা ধরে তাদের দিকে দৌড়ে ছুটে আসছে ,, মাথায় হেলমেট,, পড়নে জ্যাকেট ,, ফারুক ভয়ে শাহারিয়াদের পিছনে এসে দাড়ায় ,, বিশাল কুড়াল টা দিয়ে লোকটা প্রায় তাদের ফাঁকা যায়গাটার কাছে এসেই গেছে ,, শাহারিয়া তার পকেটে থাকা বন্দুকের কাছ হাত নিয়ে যায় ,,লোকটা প্রায় ফাঁকা যায়গাটায় ঢুকেই পড়বে ,, তখনই তাদের পিছন থেকে কেউ বলে উঠে ,, 

    ” আগেই বলছিলাম না, ভিতরে আসলে পস্তাইতে হবে ,, ” 

    শাহারিয়া আর রিয়াদ তৎক্ষণাৎ পিছনে ফিরে তাকায় ,, দেখে তাদের পিছনে নাসিম দাঁড়িয়ে আছে ,, কিন্তু নাসিম এখানে আসলো কীভাবে ? তারা তো ৩ জন এখানে এসেছিলো ,, তাইলে ? 

    তখনই তারা সামনে ফিরে তাকায় ,, দেখে সেই ছোট পথ টায় কেউ নেই ,, অথচ একটু আগেও তারা একজনকে কুড়াল হাতে ছুটে আসতে দেখেছিলো ,, তখনই নাসিম পিছন থেকে বলে ,, 

    – আমি আগেই বলেছিলাম না ,, এই জঙ্গল টা অভিশপ্ত,, এইখানে যা দেখবেন তা হয়না ,, আর যা দেখবেন না তাই হয় ,, একটু আগে যাকে দৌড়ে আসতে দেখেছিলেন তা ছিলো দৃষ্টিভ্রম ,, এই জঙ্গল আমাদের এইরকম নানা জিনিস দেখিয়ে ভয় পাইয়ে মেরে ফেলে ,, এই জঙ্গলে থাকাটা একদমই নিরাপদ নয় ,, তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলুন ,, (বলেই নাসিম শাহারিয়ার হাত ধরে যখনই যেতে উদ্যত হবে তখনই তাদের চারপাশ অন্ধকার হয়ে যেতে থাকে ,, তারা মাথার উপর তাকিয়ে দেখে হঠাৎ একদল কালো মেঘ এসে তাদের জঙ্গলটার ঠিক উপরে থেমেছে ,, আবহাওয়া বদলাতে থাকে ,, একটু আগের রৌদ্র উজ্জ্বল আবহাওয়া নিমেষেই ঝড়ে রুপ নেয় ,, আকাশে বিজলী চমকিয়ে উঠতে থাকে ,, শো শো করে বাতাস বইতে থাকে ,, আশেপাশে সব বাতাসে এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে ,, শাহারিয়া , রিয়াদ রা কোন মতে তাদের হাত মুখের সামনে এনে উড়ন্ত ধূলোবালি থেকে মুখ কে প্রটেক্ট করছে ,, নাসিম আবার জোড়ে জোড়ে চিল্লিয়ে বলতে থাকে ,, 

    – আমি আগেই বলেছিলাম না ,, এই জঙ্গল টা অভিশপ্ত,, এই জঙ্গলটা আমাদের ছাড়বে না ,, তাড়াতাড়ি ছোট পথ টা দিয়ে বাহিরের দিকে বের হতে থাকুন ,, জলদি ,, 

    – কিন্তু ঐ ঘর টা ,, ঐ ঘর টার দিকে আমি যেতে চেয়েছিলাম,, (শাহারিয়াও জোড়ে জোড়ে বলে ,, কারণ বাতাসের শো শো শব্দ আর বিজলী চমকানোর মধ্যৈ তাদের কথা ঠিক মতো শোনা যাচ্ছিলো না,, নাসিম প্রতিউত্তরে বলে ,,

    – ঐটাও দৃষ্টিভ্রম ই হবে ,, চলুন তাড়াতাড়ি এখান থেকে ,,(বলেই শাহারিয়ার হাত ধরে টানতে টানতে সেই ছোট পথ টার দিকে নিয়ে যেতে থাকে নাসিম ,, শাহারিয়া যেতে চাইছে না ,, কিন্তু আবহাওয়া আর পরিস্থিতির এমন ভয়াবহ রুপ দেখে তাকে যেতেই হচ্ছে ,, জোড় বাতাসে গাছের ডালপালা গুলো একদম নুইয়ে পড়ছে ,, রিয়াদ জোড়ে চিৎকার করে ফারুক কে বলে ,, 

    – ফারুক ,, নিচে পরে থাকা মেয়েদের কাপড় গুলা যেকয়টা নিতে পারিস হাত দিয়ে নিয়ে নে ,, আমি রক্ত মাখা কিছু খড় নিয়ে নিচ্ছি,,(একটু থেমে) তাড়াতাড়ি কর ,, (বলেই হাটু গেড়ে বসে চোখ মুখ বন্ধ করে হাত দিয়ে বিছড়িয়ে কয়টা রক্ত মাখা খড় হাতে তুলে নেয় রিয়াদ ,, রিয়াদের কথা অনুযায়ী ফারুকও কিছুটা হেলে এক হাত দিয়ে চোখ মুখ বন্ধ করে আরেক হাত দিয়ে কয়েকটা কাপড় নিয়ে নেয় ,, নিয়েই দৌড় দিতে থাকে শাহারিয়ার পিছন পিছন,, শাহারিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নাসিম ,, তার পিছনে ফারুক,, আর তার পিছনে দৌড় দিয়ে আসতে থাকে রিয়াদ ,, তারা ৪ জন দ্রুত বেগে দৌড় দিয়ে সেই পথ টা ধরে বের হচ্ছে,, তখনই রিয়াদ দৌড়াতে দৌড়াতে দেখে যে তাদের পিছনে আবার কেউ একজন কুড়াল নিয়ে দৌড়ে এগিয়ে আসছে ,, আরেকটু হলেই যেন তাদের কাছে চলে আসবে ,, রিয়াদ জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে ,, 

    – তাড়াতাড়ি দৌড়া ,, আবার সেই অবয়ব মূর্তি আমাদের পিছনে কুড়াল নিয়ে আসছে ,, 

    – চোখ বন্ধ করে রাখো ,, তুমি যা দেখছো তা কিছুই বাস্তবে হচ্ছে না ,, সব এই নীলগিরি জঙ্গল টা আমাদের দেখাচ্ছে,, তুমি চোখ বন্ধ করে ফারুকের কাধ ধরে দৌড়াতে থাকো ,, আর ফারুক তুমি শাহারিয়ার কাধ ধরো ,, সবাই চোখ বন্ধ করে রাখো ,, আমি পথ দেখে তোমাদের বাইরে নিয়ে যাচ্ছি,, (জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বলে নাসিম ,, নাসিমের কথা অনুযায়ী সবাই চোখ বন্ধ করে ,, সবার সামনে থাকা নাসিম দৌড়ে রাস্তা দেখে দেখে যাচ্ছে,, আর তাকে ধরে পিছনে সবাই সাড়িবদ্ধ ভাবে দৌড়াচ্ছে,, এবং কিছুক্ষণ পর এক জোড়ালো সাদা আলো তাদের পথের সামনে ফুটে উঠে দরজার মতো কিছূ একটা তৈরি হয় ,, নাসিমও এবার চোখ বন্ধ করে তাদের সবাইকে নিয়ে সেই দরজা দিয়ে চলে আসে ,, এবং তারা জঙ্গলের বাইরে রাস্তার উপর এসে সবাই হুমড়ি খেয়ে একজন আরেকজনের উপরে পরে যায় ,, সবাই এখন রাস্তা টায় এসে পড়েছে ,, ৪ জনই রাস্তায় শুয়া থেকে উঠে দাঁড়াতে থাকে ,, তারা একজন আরেকজনের উপরে পড়ে গেছিলো রাস্তাটায় সেজন্য ,, তারা উঠে দাঁড়ায়,, তারা হাঁপাতে থাকে ,, শাহারিয়া হাঁপাতে হাঁপাতে কোমড়ে দুই হাত দিয়ে বলে ,, 

    – তুমি ঐখানে কখন আর কীভাবে আসলা ,, আর , আর তুমি চোখ মেলে রাখতে পারতেছিলা, কীভাবে,, ? 

    –  আমি ,, আমি ফারুকের পিছন পিছন আপনাদের সাথে জঙ্গলে ঢুকে পরি ,, আপনাদের থেকে অনেকটা পিছনে থাকায় আমাকে দেখতে পারেননি আপনারা ,, আমি গিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত না হয়ে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে গিয়ে আপনাদের পিছনে উপস্থিত হয় ,, (হাঁপাতে থাকে) আর আমার কাছে এই লকেট টা আছে ,, তাই আমার উপর কোন জাদুবিদ্যা বা অভিশাপ কাজ করে না ,, এইযে ,, (হেলা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তার গলায় থাকা একটা বিশেষ লকেট শাহারিয়াকে দেখাতে থাকে নাসিম ,, লকেট টা গোলাকৃতির ,, লকেটের মাঝখান টায় একটা চিহ্ন আঁকা ,, চিহ্ন টা কীসের তা বুঝা মুশকিল,, তখনই আবার নাসিম বলে ,, 

    –  এইটা আমার দাদার দেওয়া,, এই লকেট টা লাকি লকেট ,, এই লকেটটা পড়া থাকলে কোন অশুভ শক্তি আমার কোন ক্ষতি করতে পারে না ,, তাই জঙ্গল থেকে বের হওয়ার রাস্তা আমি পরিস্কার ভাবে দেখতে পেরেছিলাম ,, (একটু থেমে) এবং আপনাদেরকে ঐ পথ অনুযায়ী বের করে আনতে পেরেছি ,, 

    – রিয়াদ,, কিছু প্রমাণ আনতে পারছিলি সেখান থেকে ? (শাহারিয়া রিয়াদের দিকে ফিরে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে , 

    – আমি তো কিছু রক্ত মাখা খড় আনতে পারছি ,,

    – আর আমি এই বোরকা আর এই ওড়না টা আনতে পেরেছি ,, (হাঁপাতে হাঁপাতে ফারুক বলে ,, )

    – গুড ,, এই কয়টা দিয়েই আমাদের প্রমাণের কাজ হয়ে যাবে ,, 

    – তো আমি এখন গেলাম ভাইয়া ,, বাসায় চাচা আবার আমাকে খুঁজতে পারে ,, (বলেই বাড়ির দিকের উদ্দেশ্যৈ ধীরে ধীরে যেতে থাকে নাসিম,, 

    – একমিনিট ,, তুমি সুদ্ধ ভাষা জানো ? 

    – হ্যা ,, আমি দিনাজপুরের না আমি ঢাকার অধিবাসী ,, এইখানে তো আসছি এই ৮-৯ দিন হলো ,, চাচাদের সাথে চলিত ভাষাতেই কথা বলি ,, আপনি তো ঢাকায় থাকেন,বড় ‌গোয়েন্দা ,, তাই আপনার সাথে সাধু ভাষায় কথা বললাম ,,

    – বাহ ,,‌বেশ বেশ ,, আমি ভাবছিলাম তুমি এখান কার স্থানীয় কেউ ,, 

    – না আমি এখান কার না ,, আচ্ছা তাইলে আমি বাসার দিকে গেলাম,, আপনার আব্বু মানে চাচা আবার আমারে খুঁজতে পারে ,, 

    – আচ্ছা যাও ,, 

     

    নাসিম বাড়ির দিকে চলে যেতে থাকে ,, শাহারিয়া বিপরীত দিকে ফিরে রিয়াদ আর ফারুকের হাত দিয়ে জিনিস গুলো নেয়,, নিয়ে কথা বলতে বলতে থানার দিকে যাইতে থাকে হেঁটে হেঁটে ,, এবং তখনই আমরা দেখতে পাই সেই জঙ্গলের সরু পথটার কিছুটা ভিতরে হাতে কুড়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হেলমেট পড়া কেউ ,, একদমই নড়ছিলো না সে ,, একদম মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে ছিলো,,

     

    আনন্দমোহন কলেজ ,, এখন সময় দুপুর ১২:৩০ টা ,, দিথী , জান্নাত , জিনিয়া তাদের হল থেকে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়েছে ,, আকাশ পরিষ্কার,, রোদের তাপ কম ,, কিছুটা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায় মাঝে মাঝে ,, দিথী রা মাঠের একটা পাশে এসে দাঁড়ায় ,, দিথী বলে ,,

    – যাক ,, পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হইছে ,, জ্যামিতি নিয়ে যতটা ভয় পাইছিলাম ,, সহজ গুলাই পড়ছে ,, 

    – হ ,,‌ আমি যে বললাম আমারে ৪ নাম্বার প্রশ্নের উত্তর টা দেখাইতে,, তখন তো দেখাইলি না ,, বজ্জাত বান্দুপি একটা ,, হুঁ ,, (কিছুটা অভিমানী সুরে বলে জিনিয়া ,, )

    – আরে তখন ম্যাডাম দেখে ফেলতো ,, তাছাড়া তোর পাশে তো ক্লাস টপার পড়ছিলো ,, ওর কাছ থেকেই জিগ্গেস করলেই পারতি ,, (দিথী বলে)

    – হইছে ,, তুই দেখাতে চাস না এটা বল ,, হুঁ ,,, 

    – হইছে বইন, তোরা থাম ,, ঐদিকে সেতু তো পরীক্ষাও দিতে আসলো না,, ওর আবার কী হইলো ? 

    – আসলেই তো ,, ওরে আমি পরীক্ষার কক্ষেও দেখলাম না,, ওর কী শরীর টরির খারাপ করলো নাকি আবার ? (জিনিয়া বলে)

    – হয়তো ,, কারণ ও কলেজ মিস দেওয়ার মতো মেয়ে না ,, আর সেই যায়গায় কলেজ পরীক্ষা ?? ওর ভাইয়াও বলে বাসায় নাই ,, চল গিয়ে দেখি তো ওর বাসায় ,, ওর কী হইলো ,, (জিনিয়া বলে)

    – আচ্ছা চল ,, এখনি যাই ,, ওকে দেখে তারপর বাসা যাবোনে ,, নিবিড়কে তো ক্লিনিক থেকে রিলিজ দিবে আজ রাতের দিকে ,, ওর বাসা থেকে এসে আমাদের বাসাতেই আজকে দুপুরের খাবার খাবি তোরা ,, বাসায় শেফালী কিন্তু রান্না করে রাখছে ,, 

    – আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ,, চল এখন ,, ( তারা একসাথে যেতে থাকে কলেজের গেটের দিকে ,, তারা ৪ জনই খুব ভালো বান্ধবী ,, সেই যায়গায় সেতুর এমন ভাবে একদিন পরীক্ষা দিতে না আসা তাদের ভাবাচ্ছে ,, তারা একে অপরের সাথে নানা আলাপ করতে করতে চলে যেতে থাকে কলেজ থেকে ,, 

     

    দুপুর ১:৩০ ,, মেম্বারদের বাসা দেখানো হয় ,, বারান্দার ডায়নিং টেবিলে খাবার খাওয়ার জন্য বসতেছে ইমন,শাম্মীরা ,, ডায়নিং টেবিলে খাবার আনছে লায়লা ,, শাহারিয়া এখনও থানায় ,, বাসা আসতে বলে লেইট হবে তাই চাচি এদের কে আগেই খেতে বসিয়ে দিয়েছেন ,, শিউলি বেগম ডায়নিং টেবিলের পাশে এসে দাঁড়ান,, লায়লা খাবারের বাটিটা ডায়নিং টেবিলে রাখে ,, শিউলি বেগম লায়লাকে বলতে থাকেন ,,

    – ফুলমতি কই রে ,, ? 

    – অয় তো রান্না শেষ কইরা গোসল কইরা পিছনের বাগানে বইসা আছে ,,

    – ওহহ আইচ্ছা ,, তাইলে যা রান্না ঘর থেইকা বাকি খাবার গুলা বাটিতে তুইলা নিয়া আয় ,, 

    – জে আইচ্ছা ,,(বলেই বারান্দার দুই ধাপ সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে রান্না ঘরের দিকে চলে চলে যেতে থাকে লায়লা ,, শিউলি বেগম ভাত উঠিয়ে দিতে থাকেন তাদের প্লেটে ,, 

    এদিকে আমাদের দেখানো হয় বাড়ির পিছনের বাগানটায় ,, ফুলমতি আর নাসিম সেই বসার যায়গাটায় বসে রয়েছে ,, ফুলমতির পড়নে একটা খয়েরি রঙের থ্রি পিস ,, গোসল করে এসেছে তাই চুল গুলো খোলা ,, বাতাসে সেগুলো সুন্দর করে উড়ছে ,, তার পাশে বসা নাসিম ফুলমতির মুখের উপর থেকে আলতো করে উড়তে থাকা চুল গুলো সড়িয়ে দিচ্ছে ,, নাসিম বলতে থাকে ,, 

    – খোলা চুলে তোমায় কিন্তু বেশ লাগে ,, 

    – হ কইছে তোমারে ,, আমি গোসল দিয়া আইলাম ,, এরলাইগা চুল গুলা খোলা রাইখা শুকাইতাছি ,, তুমি গোসল করছো ,, ? 

    – আমি তো তোমার আগেই করছি ,, একখানে পড়ে গেছিলাম ,, শরীরের ময়লা লাগছিলো ,, তাই ১২ টা সাড়ে ১২ টার দিকেই করে ফেলছি ,, 

    – ওহহ ,খাইছো ? 

    – না খাবো একটু পরই ,, আচ্ছা একটু দাঁড়াও ,, (বলেই সেই বসার যায়গাটা থেকে উঠে বাগানের জবা গাছ থেকে একটা জবা ফুল ছুটিয়ে আনে ,, এনে তা ফুলমতির মাথার খোলা চুলে গেঁথে দেয় ,, ফুলমতির ঠোঁকে এক এক সুন্দর মুচকি হাসি ফুটে উঠে ,, নাসিম এসে ফুলমতির পাশে বসে ,, বলে ,,

    – এইবার তোমায় আরো সুন্দর লাগতেছে ,, (ফুলমতি এক হাত দিয়ে তার খোলা চুলে লাগানো জবা ফুলটা ছুঁয়ে বলতে থাকে ,, 

    – আমার বেলী ফুল সবচেয়ে বেশী পছন্দের ,, বেলী ফুলের সুবাস আমার বেশ লাগে ,, কিন্তু এই বাগানে বেলী ফুলের গাছই নাই ,, 

    – হ ,,(একটু থেমে) সমস্যা নাই আমি তোমার জন্য নিয়ে আসবোনে ,, বেলী ফুলে তোমাকে আরো সুন্দর লাগবে ,, (ফুলমতির গাল গুলো ধরে বলতে থাকে নাসিম) 

    – আচ্ছা শোনো ,, আমার গালে এখন একটা পাপ্পি দেও ,, 

    – এখন ,, ? আমার কেমন কেমন জানি লাগতেছে ,, (বলেই সোজা হয়ে বসে নাসিম)

    – হ্যা এখনি দিতে হবে ,, দাও ,, (গাল টা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে ফুলমতি বলে ,, নাসিম কিছুটা এদিক সেদিক তাকিয়ে নার্ভাস হয়ে ফুলমতির গালে চুমু খেতে আসে আর তখনই হঠাৎ ফুলমতি তার দিকে ফিরে তাকায় আর চুমু টা তার ঠোঁটে পড়ে যায় ,, নাসিম চুমু টা দিয়েই আবার ঠোঁট সড়িয়ে ফেলে ,, নাসিম একটু লাজুক প্রকৃতির ,, তাই একটু লজ্জাই পেয়ে গেলো বেচারা ,, আর এদিকে ফুলমতি একটা হাসি দিয়ে উঠে দৌড়ে বাড়ির দিকে চলে যায় ,, নাসিম এক হাত দিয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবতে থাকে ,, “ও মনে হয় আমার থেকেও বেশী লজ্জা পাইছে ,, ” 

    ফুলমতি এদিকে বাড়ির সামনে চলে আসে ,, লজ্জায় তার গাল লাল হয়ে আছে ,, চাচি তাকে দেখতে পেয়েই ডাক দেয় ,, চাচির ডাক শুনে সে কাছে যায় ,, চাচি বলতে থাকে ,,

    – আচ্ছা তুই টুটুল বা নাসিম কাউরে দেখছোস ? 

    – হ ,, নাসিম পিছনের বাগানে বইসা আছে ,,কেন কোন দরকার ? হেরে ডাক দিমু ? 

    – দেতো একটু ,, শাহারিয়ায় শশা খাইতে চাইছিলো আইজ ,, আর শশাও শেষ হইয়া গেছে ,, তুই একটু ওরে ক তো আয়েশা গো বাড়ি তন শশা লই আইতে ,, এই ল টাকা ,, 

    – আইচ্ছা ,, কতটুকু আনতে কমু ,,

    – এই এক কেজিই লইতে কইস ,, আর ঐ রান্না ঘরের পিছনে একটা সাইকেল আছে ,, ঐডা নিয়া যাইতে ক ,, তাইলে তাড়াতাড়ি হইবো ,, শাহারিয়ার চইলা আহোনের টাইম হইয়া গেছে ,, 

    – আইচ্ছা কইতাছি ,, (বলেই টাকাটা নিয়ে বাড়ির পিছনের দিকে চলে যেতে থাকে ফুলমতি ,, 

    নাসিম এখনো সেখানটায় বসে আছে ,, হাতে পাতা ছিঁড়ছে আর বাগানের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে কী যেন ভাবছে ,, ফুলমতি বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে দেখে নাসিম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু ভাবছে ,, ফুলমতির মাথায় তখন একটু দুষ্টুমির ভূত চাপে ,, সে চুপচাপ বাগানের সাইড দিয়ে গিয়ে নাসিমের পিছনে এসে দাড়ায় ,, নাসিম এখনো এক পানে চেয়ে আছে ,, তখনই ফুলমতি নাসিমকে পিছন থেকে জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে ,, “নাসিম্মাআআআআ” 

    নাসিম হঠাৎ শব্দ শুনাতে ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠে ,, তার ভয় পাওয়া দেখে ফুলমতি হেঁসে ফেলে ,, ফুলমতি হাসতে হাসতে তার সামনে আসে ,, এসে তার নাসিমের দিকে আঙুল তুলে খালি হাসতেই থাকে ,,

    – তুমি হাসতেছো ,,জানো আমি কতটা ভয় পায় গেছিলাম ,, এমনে কেউ হঠাৎ করে চিল্লায় উঠে ,, 

    – বেশি ভয় পেয়ে গেছো নাকি হ্যা ,, আহারে আমার সোনাডা ,, হা হা হা  ,,,

    – এখন তো আমাকে দেখে হাসবাই ,, আমি কতসুন্দর একটা জিনিস ভাবছিলাম ,, তুমিও না ,, (কিছুটা অভিমানী সুরে বলে) 

    – আচ্ছা আচ্ছা বাবা ,, আর এমন করবো না ,,এখন চলো তোমার কাজ এসে পড়ছে ,, এই নেও টাকা ,, চাচি শশা আনতে বলছে ,, 

    – এই ভর দুপুরে শশা কোথায় পাবো ,, ?

    – আরে আমার সাথে চলতো ,, আমি দেখায় দিচ্ছি ,, (বলেই নাসিমকে হাত ধরে টেনে বসার যায়গা থেকে তুলে নিয়ে যেতে থাকে ফুলমতি ,, তারা বাড়ির সামনের টায় আসে ,, নাসিম আঙিনায় গিয়ে রান্নাঘরের পিছনে থাকা সাইকেল টা নিয়ে আসে ,, নিয়ে বাসার গেইট থেকে বের হয়ে সাইকেলে উঠে বসে ,, ফুলমতিও তার পাশে দাঁড়ানো ,, ফুলমতি বলে ,, 

    – আমিও যাবো তোমার সাথে চলো ,, (বলেই সাইকেলের সামনে উঠতে থাকে ফুলমতি ,, 

    – আরে আরে আস্তে উঠে ,, পড়ে যাবো তো আমি ,, 

    – না পড়বা না ,, এই উঠে পড়লাম ,, (উঠে বসে ফুলমতি) এখন সুইই করে চালাও তো ,, 

    – ভালো করে ধরিয়ো হ্যান্ডেল টা ,, পরে যাবা নাহলে কিন্তু

    তখন ,, 

    নাসিম সাইকেলের প্যাডেলে পা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করে ,, তারা যে পাশ টায় জঙ্গল শুরু হয় তার বিপরীত পাশে যাচ্ছে ,, আয়েশাদের বাসা এদিকেই ,, এদিকের রাস্তার দুইপাশেই ফসলি খেত আর ফসলি খেত ,, ধান হয়েছে এবার ভালোই ,, তাই সোনালী ধানে ছেয়ে গেছে রাস্তার দুই পাশ ,, ফুলমতি সাইকেলে চড়ে বেশ আনন্দিত ,, সে একটু পর পর পিছনে ফিরে তাকাচ্ছে ,আবার সামনে তাকাচ্ছে , নাসিম তাকে শান্ত হয়ে বসে থাকতে বলতেছে ,, কিন্তু ফুলমতি আরো বেশি দুষ্টামি করতেছে ,, তারা দুইজনে এইরকম দুষ্টু মিষ্টি কাজ আর কথা বলতে বলতে চলে যায় আয়েশাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে ,,, 

     

    দিথীরা সেতুর বাসার গেইট ঠেলে সেতুর বাসায় প্রবেশ করে ,, সেতুদের বাসাটাও পূরোনো , আপনাদের আগেই বলেছিলাম ,, আর সেতুদের বাসার ১৫-২০ ফিটের আশেপাশে কোন বসতি নেই ,, তারা সেতূদের বাসায় ঢুকার পরই কেমন একটা গন্ধ পেতে থাকে ,, বাসাটা একদম শুনশান ,, তারা এক টা দু পা করে ভিতরের আঙিনাটায় আসে ,, দুই রুমের বাসা ,, আধাপাকা ,, আর তার সামনে আঙিনা তার পর রান্নাঘর ,, দিথীরা ভিতরে আসার পর বেশ অবাক হয় এমন নিরবতা দেখে ,, তারা দেখে দুইটা রুমের মধ্যে একটা তালা মারা ,, আরেকটা ভিতর থেকে বন্ধ ,, দিথী বলে ,,

    – সেতু কী রুমের ভিতরে আছে নাকি ? আর থাকলেও এতো বেলা পর্যন্ত ? 

    – আচ্ছা তুই রান্না ঘরের ঐদিক টায় দেখ ,, আমি আর জান্নাত দেখি দরজা শব্দ করে ,, যদি ঘরের ভিতরে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই সাড়া দিবে ,, (জিনিয়া বলেই সেই ভিতর থেকে লাগানো দরজাটার ঐদিকে যায় ,, আর দিথী যায় রান্না ঘরের ঐদিকে টায় দেখতে ,, রান্না ঘর টা কাঁচা ,, রান্না ঘরের এদিকটা একদম ফাঁকা ,, দরজা বন্ধ করা ,, দিথী দেখে দরজায় একটা খিল দিয়ে রাখা ,, সে খিল টা যখনই খুলতে যাবে তখধই পিছন থেকে জিনিয়া আর জান্নাতের চিৎকার শুনতে পায় ,, দিথী তাদের চিৎকার শুনে দৌড়ে ঘরের দিকটায় যায় ,, দরজা খোলা তারা দুইজন ভিতরে আছে ,, দিথী দৌড়ে রুমের ভিতরে গিয়ে দেখতে পায় সারা রুমে রক্ত আর রক্ত ,, বিছানা ফ্লোর রক্তে একদম ভেসে গেছে ,, এদিকে এসব দেখে চিৎকার করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যায় জান্নাত ,, তারা কখনো ভাবেও নি যে এমনকিছু তারা দেখতে পাবে ,, জিনিয়া জান্নাতের দেহ টা ধরে ,, জান্নাতের জ্ঞান হারা দেহটাকে ঘরের দরজার পাশে ধরে রাখে ,, জিনিয়া এসব দেখে একদম কেঁদেই ফেলে ,, দিথীও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে ,, তখনই জিনিয়া দেখে যে দরজার পিছনে কয়েকটা কাঁটা আঙ্গুল পড়ে আছে , ,তারা এই গুলো দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে ,, দিথী ভয়ে ঘর থেকে দৌড়ে বের হয়ে আসে ,, এসে কাপো কাপো হাতে তার ব্যাগ টা থেকে ফোনটা বের করে ,, বের করে শাহারিয়ার ‌নাম্বার টা উঠিয়ে কল দেয় ,,

    এদিকে আমরা দেখতে পাই শাহারিয়া আর রিয়াদ থানায় বসে আজকের জঙ্গলে ঘটে যাওয়া বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করছিলো ,, তখনই শাহারিয়ার ফোন বেজে উঠে ,, শাহারিয়া ফোন টা বের করে দেখে দিথীর নাম্বার ,, সে তাড়াতাড়ি ফোন টা রিসিভ করে কানে তুলে ,, ওপাস থেকে দিথী বলতে থাকে ,, 

    – ত,ত,তুমি কই ,, তাড়াতাড়ি সেতুদের বাসায় আসো ,, (একটু থেমে) সেতুর ঘরে অনেক রক্ত আর কাঁটা আঙ্গুল ,, (বলেই কান্না করে ফেলে দিথী ,,, 

    – কী বলছো ,, কোথায় ,, সেতুর বাসা কোথায় ,, এই রিয়াদ সেতুদের বাসা কোনটা  ,, দিথী তুমি খালি ২ টা মিনিট দাঁড়াও আমি বাইকটা নিয়ে এখনি আসতেছি ,, তুমি সেই বাসাটা থেকে বের হয়ে গেটের বাইরে থাকো ,, আমি আসতেছি (খুবি দ্রুত কথা গুলো বলে শাহারিয়া ,, কারণ সে ভেবেছে দিথীও হয়তো কোন বিপদে পড়েছে ,, 

    – তুমি তাড়াতাড়ি আসো প্লিজ ,, তাড়াতাড়ি ,, (কাঁদতে কাঁদতে দিথী বলে ,,) 

    – হ্যা আমি এখনি আসছি ,, তুমি ভয় পেয়োনা ,, আর তুমি সেই বাসাটা থেকে এখনি বের হয়ে যাও ,, সেই বাসায় থেকোনা , আমি এখনি আসছি ,, (বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে রিয়াদের হাত টা ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় , কারণ সে সেতুদের বাসা চিনে না ,, তাই রিয়াদকে নিয়ে যাচ্ছে যাতে তাড়াতাড়ি সেতুদের বাসা পৌঁছাতে পারে ,, শাহারিয়া নিজে তাড়াতাড়ি বাইকে উঠে বসে ,, বসে রিয়াদকে তাড়াতাড়ি উঠতে বলে ,, রিয়াদ উঠে পড়ার পর শাহারিয়া বাইক স্টার্ট দিয়ে সজোরে বাইক চালিয়ে সেতুদের বাসার উদ্দেশ্যে যেতে থাকে ,,

     

    এখন সময় বিকেল ৩ টা ,, রিয়া”দের বাসা দেখানো হয় ,, মানে নোমানের স্ত্রী রিয়ার বাসা ,, তাদের বাসাটা পাকা করা ,, আমাদেরকে একটা রুমের ভিতর টা দেখানো হয় ,,  আয়ান তার ঘরে বিছানায় বসে মনমরা হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে ,, আয়ানই রিয়ার সেই ছোট্ট ছেলে ,, যার বয়স ৬ বছর ,, আয়ানের ঘরে একটা প্লেটে খাবার নিয়ে প্রবেশ করে রাশেদ ,, রাশেদ রিয়ার ছোট ভাই, ফারুকের ব্যাচ ও ,,ঘরে ঢুকেই সে আয়ানের বিছানায় গিয়ে বসে ,, তারও মন খারাপ ,, আয়ান পিছনে ফিরে দেখে যে তার মামা খাবার নিয়ে এসেছে ,, সে মামার দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলে ,, 

    – মামা ,, আমার আম্মু কী এসেছে ? 

    রাশেদ আয়ানের কথা শুনে মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকে ,, তার কাছে তো দেওয়ার মতো কোন উত্তর ই নেই ,, আয়ান আজও জানে না যে তার মা আর বেঁচে নেই ,, তার মায়ের ক্ষতবিক্ষত লাশ যে পাওয়া গেছে তা এই ছোট্ট অবুঝ  আয়ানের অজানা ,, রাশেদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলে ,, 

    – মামা ,, এসো এই ভাত টুকু খেয়ে নাও ,, তুমি ইদানিং ঠিক মতো একদমই খাওয়া দাওয়া করছো না ,, তোমার শরীর খারাপ করবে পড়ে তখন ,, (একটু থেমে) তোমার মা তো তখন অনেক কষ্ট পাবে মামা ,, (ধীরে এক মলিন গলায় কথা গুলো বলে রাশেদ ,,)

    – না আমি খাবোনা ,, মা কে বলো আমি তার উপরে রাগ করছি ,, সেই কয়দিন আগে যে মা আমাকে একলা রেখে ঘুরতে চলে গিয়েছে আমাকে নেয়নি ,, আমি অনেক রাগ করছি ,, তুমি মা কে বলে দিও ফোন করে যে আমি তার সাথে আর কথা বলবো না ,, আর খাওয়া দাওয়াও করবো না ,, মা নিজে এসে আমাকে না খাইয়ে দিলে আমি আর কখনো খাওয়া দাওয়া করবো না ,, (অভিমানের সুরে ছোট্ট আয়ান কথা গুলো বলে ,, সে তো অবুঝ ,, সে তো জানেও না যে তার মা আর কখনোই ফিরে আসবেনা ,, রাশেদ আর কান্না ধরে রাখতে পারে না ,, সে আয়ানের কথা গুলো শুনে কেঁদে উঠে ,, আয়ান জানালার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে দেখে তার মামা কাঁদছে ,, সে তার মামার কাছে যায় ,, গিয়ে তার চোখ মুছে দিতে দিতে বলতে থাকে ,, 

    – মামা তুমি কাঁদছো কেন ,, কেঁদো না ,, আমি এইযে খাবার খেয়ে নিচ্ছি ,, তুমি কেঁদো না একদমই ,, মা আমাকে রেখে কোথাও চলে গেছে ,, তাই বলে আমি তোমাকে কষ্ট দিতে পারিনা মামা ,, (ছোট্ট আয়ানের মুখে এসব কথা শুনে রাশেদ আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে ,, তার সব চাপা পড়া কষ্ট যেন এখন তার কান্নার মাধ্যমে বেড়িয়ে আসছে ,, আয়ানেরও চোখে পানি চলে আসে ,, ও তো অবুঝ ,, নিজের কাছের কাউকে কাঁদতে দেখে নিজেও কেঁদে ফেলেছে ,, ওকে এখন কে বুঝাবে যে তার মা এখন আকাশের তারা হয়ে গেছে ,, মা কে হারানোর কষ্ট টা সে এখন বুঝতে পারবে না ,, যখন বড় হবে তখন নিরবে রাত্রিশেষে তার মা কে মনে করবে সে স্মৃতির পাতায় , অজান্তেই তখন তার চোখ জলে শিক্ত হয়ে উঠবে ,, আয়ান তার মামাকে জড়িয়ে ধরে রাখে, রাশেদও আয়ানকে জড়িয়ে ধরে তার সবটুকু জমিয়ে রাখা কষ্ট আজ কান্না রুপে বের করে দিচ্ছে ,, আমরা দেখতে পাই এক মা হারা ছোট্ট ছেলের প্রতি তার মামার অগাধ ভালোবাসা,,

     

    এখন এদিকে আমাদের আবার দেখানো হয় সেতুর বাসা ,, এখন সময় বিকেল ৫ টা ,, আকাশে এখন সূর্য দেখা যাচ্ছে না ,, মেঘ দিয়ে ঢাকা পুরো আকাশ ,, তবে বৃষ্টি হওয়ার মতো আবহাওয়া নয় ,, সেতুদের ঘর থেকে কাঁটা আঙ্গুল আর কাটা হাত তুলে নিয়ে যাচ্ছে শাম্মী,, আর কল্পনা ঘরে থাকা রক্তের স্যাম্পল গুলো কালেক্ট করছে ,, এখন এখানে পুলিশের কনস্টেবল রাও চলে এসেছে ,, বাড়ির বাইরে উৎসুক জনতার ভিড় ,, কিন্তু পুলিশরা বাইরের কোন লোককে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না ,, রিয়াদ ঘরের ভিতরেই আছে , কোন প্রমাণ বা মোটিভ পাওয়া যায় কিনা তা খুঁজে দেখছে ,, এদিকে ঘরের বাহিরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে শাহারিয়ার কাঁধে মাথা রেখে কাঁদছে দিথী ,, তার প্রিয় বান্ধবীদের মধ্যে একজনের হঠাৎ এমন মৃত্যু সে কল্পনাও করতে পারেনি ,, শাহারিয়া তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে ,, দিথী কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে ,,

    – ওকে এমন ভাবে কে মেরে ফেললো ,, ওর সাথে তো কালকেও আমাদের কথা হয়েছিলো ,, অনেক ভালো বন্ধু ছিলো ও আমার অনেক ভালো ,,,, (বলেই আরো কান্নায় ভেঙে পড়ে দিথী ,,)

    – কেঁদো না দিথী ,, শান্ত হও ,, আমরা ঠিকই ওর খুনিকে ধরে ফেলবো ,, (একটু থেমে) গ্রামে যে কী শুরু হলো এসব ,, আল্লাহ ,,, 

    – জানো ,, ও এই কয়েকদিন থেকেই একটু অন্যরকম ছিলো ,, বিশেষ করে যেদিন যে তুমি আমাকে নিতে এসেছিলে ঐদিন থেকে ,, ও জানি কী একটা দেখেছিলো ,, এবং ঐটা নিয়েই ও বারবার চিন্তিত থাকতো ,, ঐটার জন্যই হয়তো ওকে কেউ মেরে ফেলেছে ,, এতো নিষ্ঠুর মানুষ কীভাবে হয় ,, কীভাবে ,, (শাহারিয়ার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলে দিথী)

    – শান্ত হও দিথী ,, আর কেঁদো না ,, আমি আছি তো ,, আমি ঠিকই সব বের করে ফেলবো ,, এখন বলো ও কী দেখেছিলো ? কাউকে কোন খারাপ কাজ করতে দেখে নিয়েছিলো ? নাকি অন্যকিছু ,, আমায় সব খুলে বলো ,, 

    দিথী বলতে শুরু করে ঐদিন যা যা সেতু তাকে বলেছিলো ,, শাহারিয়ার দিথীর কাছ থেকে এসব শুনতে থাকে আর অবাক হতে থাকে ,, “এতো হুবহু বর্তমান কার পাওয়া লাশ গুলোর সাথে ঘটছে ,, কিন্তু এইটা সেতু কোন মেয়ের সাথে হতে দেখলো ? আর স্কুল মাঠ থেকে তো তারা কোন লাশই পায়নি,, তাহলে ? ” শাহারিয়ার মাথায় এসব প্রশ্ন খালি ঘুরপাক খাচ্ছে ,, সব টুকু বলা শেষ করার পর দিথী আবার কাঁদো কাঁদো গলায় বলে ,, 

    – আচ্ছা এখন তুমিই বলোতো ,, আমি আর সেতূ একই কক্ষে থাকার পরও ও একাই কেন এসব দেখলো ,, আমি বা কক্ষের বাকি কেউ কেন দেখতে পেলো না ? ওর ভাইও বাসায় নেই ,, ওর ভাই যখন জানতে পারবে যে তার বোনের এমন মৃত্যু হয়েছে আর আঙ্গুল কাঁটা পাওয়া গিয়েছে তাইলে ওর ভাই তো এসব নিতেই পারবেনা ,, সেতু ছাড়া তার ভাইয়ের যে আর কেউ নেই ,, 

    – তার ভাইয়ের নাম কী ? 

    – সিয়াম ,, সিয়াম তার বড় ভাই ,, 

    শাহারিয়া সিয়ামের কথাটা শুনেই আঁতকে উঠে ,, সিয়ামের ডেড বডিও তো তারা কাল সেই খালটা থেকে উদ্ধার করেছে ,, আর এখন তার বোন সেতু ,, এই মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায় ,, ? কার দাঁড়া শেষ হবে এই মৃত্যুর মিছিল ,, ? এই গ্রাম কবে রেহাই পাবে ঐ খুনির হাত থেকে ?? নানা প্রশ্ন শাহারিয়ার মাথায় ,, শাহারিয়া আর কিছু বলেনা দিথীকে ,, দিথী আজ তার প্রিয় বান্ধবীকে হারিয়ে শোকে কাতর ,, শাহারিয়া তাকে বুকে নিয়ে শান্তনা দিতে থাকে ,, 

     

    সন্ধ্যা ৭ টা ,, রাতুল ঘরে বসে বরাবরের মতো গল্পের বই পড়তেছে ,, মায়া পাশের ঘর থেকে নামাজ পরে এসে এই রুমের আলমারিতে জায়নামাজ টা রেখে দেয় ,, তার পড়নে লালচে শাড়ি , মাথায় কাপড় দেওয়া ,, আলমারিতে জায়নামাজ রাখতে রাখতে রাতুলকে বলে ,, 

    – নামাজ পরেছো ? 

    – হ্যা পরে উঠেই বসলাম ,, তোমার পড়া হয়েছে ? 

    – হ্যা ,, নাস্তা কী খাবে বলো ,, 

    – নিয়ে এসো যেকোনো কিছু ,, চা আনিও ,,সাথে মুড়ি চিড়া বা বিষ্কিট ,, 

    – আচ্ছা নিয়ে আসছি ,, 

    – রাতের রান্না শেষ ? 

    – হ্যা রান্নার পালা বিকালেই শেষ করে দিয়েছি যাতে রাতে না যাইতে লাগে ,, এখন ঠান্ডা আবহাওয়ায় রান্না করতে মন চায়না ,, আজকে ফুলকপির সবজি আর মাছের তরকারি রান্না করেছি ,, সিম শেষ হয়ে গেছে ,, নাইলে মাছ সিম দিয়ে রাধতাম ,, কালকে মনে করে স্কুল থেকে আসার সময় শিম নিয়ে আসিও ,, 

    – আচ্ছা ,, রিয়াদ আসে নাই এখনো ? (বইয়ের দিক থেকে ‌নজর না উঠিয়েই বলেন রাতুল স্যার)

    – না ,, এখন গ্রামে যেমন খুন খারাবি হওয়া শুরু হইছে ,, রিয়াদ আর তার বন্ধু শাহারিয়ার কী আর দম ফেলবার ফুসরত আছে নাকি ? 

    – শাহারিয়া আসছে নাকি ? কবে আসলো ? 

    – এইতো হইলো ৪-৫ দিন ,, আমার সাথে দেখা হইছিলো একদিন ,, ঐদিনও কেসের বিষয়ে তদন্ত করতে কোথায় জানি যাচ্ছিলো ,, 

    – ওহহ আচ্ছা যাও গিয়ে চা নিয়ে এসো ,, একসাথে চা খেতে খেতে গল্প করি ,, 

    – আচ্ছা ,, 

    মায়া চলে যায় রান্না ঘরের দিকে ,, রাতুল স্যার আবারো তার বই পড়ায় মনোযোগ দেয় ,, তার ভূতের গল্প , রহস্য গল্প, এইসব পড়তে দারুন লাগে ,, আর এখন আবার শীতকাল ,, এখন তো আরো কথাই নেই ,, রাইতের বেলা মায়াকে সাথে নিয়ে একসাথে গল্প পড়ে তারা লেপের নিচে ঢুকে ,, শুধু কিন্তু গল্পই পড়ে,, অন্য কিছু কিন্তু আবার ভাইবেন না ,, ভাবলেও নিজ দায়িত্বে ভাববেন ,, হা হা হা হা ,, 

     

    এখন সময় রাত ৮ টা ,, দিথীর বাসা দেখানো হয় ,, দিথী এখনো বাসায় ফিরেনি ,, সে সেতুর বাসায় ঐসব দেখার পর অনেকটা ভেঙে পড়েছিলো ,, তাই শাহারিয়া তাকে নিজের বাসায় নিয়ে যায় ,, ওখানেই নিপার সাথে চাচির সাথে আছে ও  ,,

     এদিকে আমরা দেখতে পাই নিবিড় তার বিছানায় শুয়ে আছে ,, তাকে আজ সন্ধ্যায় ক্লিনিক থেকে রিলিজ দিয়েছে ,, সে এখন ঘুমুচ্ছে ,, তার মাথার পাশে বসে রয়েছে তার নিজের মা নাজিয়া বেগম ,, তিনি এখন বিষন্ন মুখ নিয়ে তার ছেলের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন ,, তিনি যেন বুঝতে পেরেছেন একজন ছেলে বা মেয়েকে হারালে তার পিতা-মাতার যন্ত্রনা কতটুকু হয় ,, তিনি হয়তো নিবিড় কে এই যাত্রায় ফিরে পেয়েছেন ,, কিন্তু তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে যদি আর একটু দেরি করে ফেলতেন তাহলে তো তিনি চিরকালের জন্য নিবিড় কে হারিয়ে ফেলতেন ,, তিনি তার করা কাজের জন্য অনুতপ্ত ,, তিনি মনে মনে ঠিক করেছেন দিথীর কাছে তিনি ক্ষমা চাইবেন ,, তিনি আর দিথীর সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না ,, নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করবেন এবার থেকে দিথীকে ,, এখন থেকে তার দুই সন্তান ,, দিথী আর নিবিড় ,, নিবিড়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে এসব ভাবছেন নাজিয়া বেগম ,, শেফালী দরজা দিয়ে কোন কিছু বলার জন্য ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিলো কিন্তু নাজিয়া বেগমের বিষন্ন চেহারা দেখে আর তাকে ডাক দেয়নি সে ,, নাজিয়া বেগমকে একরকম মন খারাপ ও নিশ্চুপ হতে সে আগে কখনোই দেখেনি ,, সে দরজার আড়াল হতেই চলে যায় ,, নাজিয়া বেগমও একদৃষ্টিতে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে নিজের পাপের জন্য মনে মনে ক্ষমা চাচ্ছেন আল্লাহর কাছে ,, 

     

    সময় এখন রাত ১১ টা ,, শীতের রাত ,, বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে ,, সারাদিনের সকল কাজের ধকল শেষ করে ফুলমতিও ঘুমিয়ে পড়েছে তার ঘরে এসে ,, ফুলমতি আর লায়লাকে দক্ষিণের ঘর টায় থাকতে দিয়েছেন শিউলি বেগম,, ঘর টা মাঝারি আকৃতির ,, অনেক টা বড়ও না অনেক টা ছোটও না ,, ঘরে একটা বিছানা ,, একটা ডেসিন টেবিল ,, একটা সাধারণ টেবিল আর একটা ছোট আলমারি আছে ,, বিছানাটা দক্ষিণ পূর্ব দিকে দেয়ালের সাথে লাগানো ,, বিছানাটার যেপাশে ফুলমতিরা মাথা দিয়েছে সেই মাথার পাশেই জানালা ,, জানালা আর বিছানার মাথার পাশটা একদম লাগানো ,, বিছানার ভিতরের পাশ টায় শুয়েছে লায়লা ,, আর বাহিরের পাশ টায় ফুলমতি ,, এবং তখনই হঠাৎ একটা লোককে আমরা ফুলমতির মাথার পাশে থাকা জানালার ওপাশে এসে দাড়াতে দেখি ,, এবং বাইরের লাইটের আলোয় আমরা তার চেহারা দেখতে পাই ,, নাসিমই এসে দাঁড়িয়েছে জানালার ওপাশে ,, সে এসে জানালো ওপাশ দিয়ে চেয়ে ফুলমতিকে একনজর দেখছে ,, যেন আর কখনোই দেখা হবে না তাদের ,, তার চাহনিতে মিশে আছে কিছু কষ্টের ছাপ ,,  সে তার হাত টা জানালার ভিতরে ঢুকিয়ে ফুলমতির মাথার পাশে একটা বেলী ফুলের মালা রাখে ,,রেখে দিয়ে ফুলমতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে সে ,, তার চোখে পানি ,, সে কাঁদছে ,, ফুলমতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তার সাথে কাটানো সুন্দর স্মৃতি গুলো সম্পর্কে ভাবছে ,, একটা ছেলে কখনই এমনি কাদেনা ,, যখন সে তার কোন প্রিয় জিনিসকে ছেড়ে যায় ,, বিসর্জন দিয়ে দেয় ,, তখনই একটা ছেলের পাথর হ্রদয় থেকে কান্না বেড়িয়ে আসে ,, নাসিম হাত টা জানালার বাইরে বের করে নেয় ,, নিয়ে চোখ মুছতে থাকে ,, চোখ মুছে ফুলমতির দিকে শেষবারের মতো ফিরে তাকায়,, আর বলে ,, “ভালো থেকো ফুল”

     কথাটা বলেই সে চোখের পানি মুছতে মুছতে সেখান থেকে চলে যেতে থাকে ,, এবং আমাদের সেই ফুলের মালাটার দিকে দেখানো হয় ,, মালাটা বেশ সুন্দর ,দেখে মনে হচ্ছে একটু আগেই সতেজ ফুল দিয়ে হাতে গেঁথে বাঁনানো ,, নাসিমের দেওয়া ফুলমতির জন্য একটা উপহার স্বরুপ এটা ,, নাসিমের এমন কিছু করার মানে কী হতে পারে ? 

     

    রাত এখন গভীর ,, আমাদের আবার সেই বদ্ধ রুম টাকে দেখানো হয় ,, আরমানের জ্ঞান নেই ,, ঘর অন্ধকার ,, তখনই কেউ ঘরের দরজাটা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতে থাকে ধীরে ধীরে ,, লাইটাও জালিয়ে দেয় ,লাল লাইট ,, জালিয়ে দিয়ে লোকটা ধীরে ধীরে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে একটা পানির বোতল নিয়ে আসে ,, এসে বোতলের ছিপিটা খুলেই আরমানের মুখের উপরে ছুঁড়ে মারে পানি ,, ২-৩ বার পানি ছুড়ে মারবার পর আরমানের জ্ঞান ফিরে আসে ,, আরমানের জ্ঞান ফিরে আসা দেখে লোকটা পিছিয়ে গিয়ে লোহার খাট টার পাশে দাঁড়ায় ,, আরমান তার চোখ খুলে ,, প্রথমে সে সব ঝাঁপসা ঝাঁপসা দেখতে পাচ্ছিলো ,, পরে তার কাছে সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে উঠে ,, সে ঐরাতের পর থেকে এখনো পর্যন্ত অজ্ঞান ছিলো ,, সেই লোকটা তাকে অজ্ঞানের ঔষধ পুষ করে ছিলো ,, তাই সে ঐ এতোক্ষণ অজ্ঞান ‌ছিলো ,, আরমান জ্ঞান ফিরে পাওয়ার ‌পর এদিক ওদিক তাকাতে থাকে , , তখনই তার চোখ পরে তার পাশে , যেখানে সে আরিফকে বাঁধা অবস্থায় দেখেছিলো ,, সেখানে চোখ পরতেই তো তার চোখ একদম বড় বড় হয়ে যায় ,, আরিফের সম্পূর্ণ বডিটাই বাঁধা অবস্থায় আছে ,, শুধু ‌আরিফের মাথাটাই নেই ,, মাথাটা কেটে ফেলা হয়েছে ,, কী বিভৎস দেখতে ,, আরমান ভয়ে আবার ঘামতে থাকে ,, তখনই একটা শব্দ তার কানে আসাতে সে সামনে ফিরে তাকায় ,, সামনে তাকিয়ে দেখে ঐ হেলমেট পরা লোকটা আনিকার মুখেও পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে ,, আনিকার দেহটাও ঐদিনের মতো বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে ,, কিন্তু আধমড়া,, শরীর থেকে অনেক রক্ত বেড়িয়ে গিয়েছিলো ঐদিন ,,

     আনিকার জ্ঞান ফিরে আসে ,, আনিকা জ্ঞান ফিরে পাবার পর খালি কাদছিলো ,, কারণ তার শরীরে করা সেই ফুটো দুইটার যন্ত্রনা সে একদমই সহ্য করতে পারছেনা ,, তার মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ নেই ,, দুইদিন ধরে সে অভুক্ত ,, 

     লোকটা আস্তে আস্তে হেঁটে যায় টেবিলের কাছে ,, গিয়ে একটা প্লাস , একটা বড় হাতুড়ি আর গরম করা লাল লোহা নিয়ে আসে কয়েকটা ,, লোহা গুলো অনেকক্ষণ ধরে আগুনে উত্তপ্ত করা হয়েছিলো তাই এখন ‌লাল বর্ণ ধারণ করেছে ,, লোকটা এসে সেই গরম লোহা গুলো প্লাস দিয়ে তার শরীরের উপর ধরে হাতুড়ি দিয়ে জোড়ে জোড়ে বাড়ি দিচ্ছিলো ,, যখনই বাড়ি গুলো পড়ছিলো তখনই আনিকার আধমড়া দেহ টা কেঁপে উঠছিলো ,, আনিকার উপর এমন অত্যাচার দেখে আরমান তার চেয়ার থেকে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতেছে ,, কিন্তু পারছেনা ,, আরমানের মুখও বাঁধা ,, চিৎকারো করতে পারছেনা ,, তার সামনে এখন দেখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই ,, লোকটা গরম লোহা গুলো আনিকার শরীরে গাথতে গাথতে তার মাথার কাছে চলে আসে ,, এটা দেখে আরমান মাথা নাড়িয়ে বার বার লোকটাকে না করতে থাকে ,, কিন্তু লোকটা যেন এসব দেখে আরো ভালো লাগছে ,, লোকটা একটা লোহা আনিকা ডান চোখের উপর ধরে ,, গরম লোহাটা চোখের পাতা স্পর্শ করায় চোখের পাতা একদম পুড়ে গেছিলো ,, লোকটা লোহাটাকে আনিকার চোখের উপর ধরে তার বরাবর হাতুড়ি উঁচিয়ে ধরে আরমানের দিকে নিজের মাথা উঁচিয়ে তাকায় ,, আরামন খালি ছটফট করে তাকে এটা না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছিলো ,, মাথা বার বার নাড়াচ্ছিলো ,, আর তখনই ‌লোকটা আরমানের দিকে তাকিয়েই আনিকার চোখের উপর বড় লোহার হাতুড়ি টা দিয়ে সজোরে আঘাত করে ,, এবং পুরো ৪ ইন্চির গরম লোহাটা আনিকার চোখের ভিতরে ঢুকে যায় ,, আনিকার আধমড়া দেহ এখন খালি ছটফট করছে ,, লোকটা হাতুড়ি টা ঘুড়িয়ে হাতুড়ি যেই পাশের সুচোলো অংশ টা দিয়ে লোহা তুলে সেই পাশ টা দিয়ে অনেক জোরে জোরে আনিকার মুখে আঘাত করতে থাকে ,, আনিকার হাত পা গুলো খালি মরা মুরগীর মতো ছটফট করছে ,, তখনই ফ্লাস ব্যাকে দেখানো হয় ‌আমাদের সেই অন্ধকার বৃষ্টি ভেজা দিনের কথা ,, যখন আনিকা সেই “পুনর্জন্ম” বইটাতে লিখছিলো ,, আমার মৃত্যু কবে হবে ,, ? আর প্রতি উত্তরে লেখা উঠলো আজ থেকে দুইদিন পর রাত ১ টায় ,, এবং আনিকা সেই বইটা কোল থেকে ফেলে দিয়ে তা অস্বিকার করছিলো ,, এবং আবার আমাদের বর্তমানে ফিরিয়ে এনে দেখানো হয় সেই আনিকার নির্মম মৃত্যু টাকে ,, লোকটা কয়েকবার সজোরে আঘাত করার পর হেলে খাটের নিচ থেকে একটা বড় কুড়াল উঠিয়ে আনে ,, এটা দেখে আরমান আরো ছটফট করতে লাগলো ,, সে যেন‌ বলতে চাচ্ছিলো আমাকে মেরে ফেলে তবুও আমার আদরের ছোট বোন আনিকাকে মেরোনা ,, কিন্তু তার বাঁধা মুখ থেকে আর সেই কথাটা বের হলোনা ,, এবং সেই লোকটা কুড়াল টাকে উপরে তুলে একদম আনিকার গলা বরাবর একটা সজোরে কোপ দেয় ,, আনিকার ক্ষতবিক্ষত মুখ সহ মাথাটা এসে আরমানের পায়ের সামনে পড়ে ,, নিজ চোখে তার ছোট প্রিয় বোনটার মৃত্যু দেখলো সে ,, সে আর নিতে পারতেছে না এসব ,, সে চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে কাঁদতেই  থাকে ,, আনিকার মাথা বিহীন দেহটা কিছুক্ষণ জবাই করা মুরগির মতো ছটফট করে থেমে গেলো ,, সেই হেলমেট পড়া ‌লোকটা আস্তে আস্তে হেঁটে এসে আরমানের সামনে দাঁড়ালো ,, দাঁড়িয়ে আনিকা মাথাটা হাতে তুললো ,, আরমানও তার মাথা তুলে তাকায় হেলমেট পরা লোকটার দিকে ,, লোকটা আনিকা মাথা টার চুল ধরে উঁচিয়ে ধরে সেটার দিকে তাকি বলতে থাকে ,,

     “কারো মৃত্যুই কারো জন্মের কারণ ,, আজ আনিকা মরেছে ,, কাল তোর পালা ,, নুপুর কে মনে আছে নুপুরকে ? নুপুরের পুনর্জন্ম টা যে এবার করতেই হবে ,, আর তোকেও মরতে হবে হি হি হা হা হা ,, পুনর্জন্ম হবে এবার পুনর্জন্ম ,, হা হা হা হা ,, ”  

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    [ নীলগিরি জঙ্গলটা কী আসলেই অভিশপ্ত ? যার কারণে ঐখানে গেলে এমন‌ দৃষ্টিভ্রম হয় ? আর নাসিম আর ফুলমতির জুটি টাতো অনেক ভালো ,, কিন্তু নাসিম কেন আজ রাতে হঠাৎ ফুলমতির মাথার পাশে এসে এভাবে কান্না করলো ? আর নাজিয়া বেগমও নিজের ভুল বুঝতে পারলো ,, সে এখন থেকে ভালোও হয়ে গেছে ,, আর সেই খুনিটা পুনর্জন্ম দাঁড়া কী বুঝাতে চাচ্ছিলো ,, ? কী হতে চলেছে এরপর ?? সবকিছুর উত্তর পাবেন ,, আর মাত্র দুইটা পর্বই বাকি আছে সিজন ১ এর ,, এই দুইটা পর্বেই উন্মোচন হবে রহস্যের দুয়ার,, জানাবেন কেমন হচ্ছে 😊 আর যতই দিন যাচ্ছে পর্ব একটা আরেকটার থেকে বড় হইতেই থাকতেছে 😅 এইটা এখন আগের পর্বটার থেকেও বড় তারমানে এই গল্পের সবচেয়ে বড় পর্ব এখন এটাই 😅 ]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ২৪

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২৫ (প্রথম ভাগ)

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    (এই পুরো পর্বটা মন দিয়ে পরুন ,, পর্বটা থেকে অনেক কিছু জানতে পারবেন এই গল্পের,, পর্ব টা দুই ভাগে বিভক্ত,, এইটা প্রথম ভাগ আর দ্বিতীয় ভাগের লিংক প্রথম কমেন্টে,, এই ভাগ টা পরে তারপর দ্বিতীয় ভাগটা পরুন)

     

    লোকটা হাতুড়ি টা ঘুড়িয়ে হাতুড়ির যেই পাশে সুচোলো অর্থাৎ যেই অংশ টা দিয়ে লোহা তুলে সেই পাশ টা দিয়ে অনেক জোরে জোরে আনিকার মুখে আঘাত করতে থাকে ,, আনিকার হাত পা গুলো খালি মরা মুরগীর মতো ছটফট করছে ,, তখনই ফ্লাস ব্যাকে দেখানো হয় ‌আমাদের সেই অন্ধকার বৃষ্টি ভেজা দিনের কথা ,, যখন আনিকা সেই “পুনর্জন্ম” বইটাতে লিখছিলো ,, আমার মৃত্যু কবে হবে ,, ? আর প্রতি উত্তরে লেখা উঠলো আজ থেকে দুইদিন পর রাত ১ টায় ,, এবং আনিকা সেই বইটা কোল থেকে ফেলে দিয়ে তা অস্বিকার করছিলো ,, এবং আবার আমাদের বর্তমানে ফিরিয়ে এনে দেখানো হয় সেই আনিকার নির্মম মৃত্যু টাকে ,, লোকটা কয়েকবার সজোরে আঘাত করার পর হেলে নিচু হয়ে খাটের নিচ থেকে একটা বড় কুড়াল উঠিয়ে আনে ,, এটা দেখে আরমান আরো ছটফট করতে লাগলো ,, সে যেন‌ বলতে চাচ্ছিলো আমাকে মেরে ফেলে তবুও আমার আদরের ছোট বোন আনিকাকে মেরোনা ,, কিন্তু তার বাঁধা মুখ থেকে আর সেই কথাটা আর বের হলোনা ,, এবং সেই লোকটা কুড়াল টাকে উপরে তুলে একদম আনিকার গলা বরাবর একটা সজোরে কোপ দেয় ,, আনিকার ক্ষতবিক্ষত মুখ সহ মাথাটা এসে আরমানের পায়ের সামনে গিয়ে পড়ে ,, নিজ চোখে তার ছোট প্রিয় বোনটার মৃত্যু দেখলো সে ,, সে আর নিতে পারতেছে না এসব ,, সে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে কাঁদতেই  থাকে ,, আনিকার মাথা বিহীন দেহটা কিছুক্ষণ জবাই করা মুরগির মতো ছটফট করতে করতে থেমে গেলো ,, সেই হেলমেট পড়া ‌লোকটা আস্তে আস্তে হেঁটে এসে আরমানের সামনে দাঁড়ালো ,, দাঁড়িয়ে আনিকা মাথাটা হাতে তুললো ,, আরমানও তার মাথা তুলে তাকায় হেলমেট পরা লোকটার দিকে ,, লোকটা আনিকা মাথা টার চুল ধরে উঁচিয়ে ধরে সেটার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে ,,

    “কারো মৃত্যুই কারো জন্মের কারণ ,, আজ আনিকা মরেছে ,, কাল তোর পালা ,, নুপুর কে মনে আছে, নুপুরকে ? নুপুরের পুনর্জন্ম টা যে এবার করতেই হবে ,, আর তোকেও মরতে হবে  হা হা হা ,, পুনর্জন্ম হবে এবার পুনর্জন্ম ,, হা হা হা হা ,, ”  বলেই লোকটা এক পিশাচ রূপি হাঁসি দিতে দিতে চলে যেতে থাকে ঘর টা থেকে ,, আরমান মাথা নিচু করে খালি কাঁদতেই থাকে ,, তার সেই দিন গুলোর কথা মনে পড়তে থাকে যখন সে তার বোনের সব আবদার পূরণ করে দিতো ,, স্নেহ করতো ,, স্কুলে গিয়ে পৌঁছে দিতো ,, ছোট বেলায় তাদের মধ্যকার খুনসুটি,, সবই এখন অতীত ,,নিজের উপর রাগ উঠতে থাকে তার ,, কেনো সে ৬ বছর আগে তেমনটা করলো ,, কেন ?? সেদিন ঐ কাজ টা না করলে আজ তার বোন বেঁচে থাকতো ,, আনিকার গলায় “ভাইয়া’ ডাকটা আজও সে শুনতে পেতো ,, ঘরে এখন খালি রক্ত আর আনিকা ও আরিফের মাথা বিহীন লাশ পড়ে আছে ,, এই যেন এক মৃত্যুপুরী ,,

     

    ভোর ৫ টা ,, গ্রামের মসজিদে ফজরের আযান দিচ্ছে ,, এখনো আলো ফুটেনি ,, ভোরের দিকে ঠান্ডা পড়ে অনেক ,, ফুলমতির ঘুম ভাঙ্গে ,, প্রতিদিনই সে ফজরের আযানের সময় ঘুম থেকে উঠে পড়ে ,, ফুলমতি তার গায়ের উপর থেকে কাঁথা টা সরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে ,, বসে হাই তুলতে থাকে ,, সে ঘুম মিশ্রিত কন্ঠে তার পাশে শুয়ে থাকা লায়লাকে নাড়িয়ে দিয়ে বলতে থাকে ,, 

    – এই লায়লা ,, উঠ ,, আযান দিয়ে দিছে ,, নামাজ পরবি না ,, উঠ ,, (বলেই হাই তুলতে থাকে ফুলমতি ,, লায়লা এখন গভীর ঘুমে ,, ভোরের মিষ্টি ঠান্ডা মিশ্রিত আবহাওয়া ঘুমকে আরো গভীর করে তোলে ,, ফু্লমতি বসে হাই তুলতে তুলতে দেখে তার মাথার বালিশের উপরের দিকে কী যেন একটা রাখা ,, সে ঘুম ঘুম চোখে হাত বাড়িয়ে সেই জিনিসটাকে হাতে নেয় ,, “আরে ,, এটাতো একটা মালা ,, (ঘ্রান নিতে থাকে) হ্যা এটা বেলী ফুলেরই মালা ,, কিন্তু এইটা এখানে কীভাবে আসলো ,, ?” মালাটা হাতে নিয়ে এসব ধীর গলায় বলতে থাকে ফুলমতি ,, ফুলমতি আবার লায়লাকে নাড়িয়ে দিতে থাকে ঘুম থেকে উঠার জন্য ,, কিন্তু লায়লা উঠছেই না ,, ফুলমতি হাই তুলতে তুলতে মালাটা হাতে নিয়ে বলতে থাকে ,, “আমি তো কালকে দুপুরে নাসিমকে বেলী ফুলের মালা দিতে বলেছিলাম ,, তাই বলে রাতে এভাবে আমার মাথার পাশে রেখে গেলো ? নাসিমই রাখলো নাকি অন্য কেউ ,? নাসিমই হবে হয়তো ,, যাই নামাজ টা পড়ে ফেলি ,, দেরি হয়ে যাচ্ছে ঐদিকে ,,” বলেই বিছানা থেকে নামতে থাকে ফুলমতি ,, অনেক ঠান্ডা পড়েছে ,, শীতের সময় উত্তর বঙ্গের শীত একদম হাড়কাঁপানো ,, সেতু কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে আলনা থেকে শাল টা গায়ে জড়িয়ে রুমের দরজাটা খুলে বাইরের দিকে চলে যায় ,, বাইরে আকাশে হালকা হালকা ভাবে আলো ফুটতে দেখা যাচ্ছে ,, ফুলমতি চলে যায় অযু করতে ,, 

     

    এখন সময় সকাল ৬ টা ৩০ ,, ভোরের আলো এবার ফুটেছে ভালো ভাবেই ,, মায়া আঙ্গিনা ঝাড়ু দিচ্ছে , তার গায়ে শাল জড়ানো ,, চারপাশে অনেক কুয়াশা ,, ঘর থেকে হাই তুলতে তুলতে বের হয় রাতুল ,, বাইরে পাখির কিচিরমিচির ডাক অনেক ভালোই শুনতে পাওয়া যাচ্ছে ,, গ্রামের কুয়াশা মিশ্রিত সকাল বলে কথা ,, রাতুল হাই তুলতে তুলতে বলতে থাকে ,,

    – রিয়াদ কী উঠছে ? 

    – না ও উঠে নাই ,, ডাক দিতে হবে ,, ইদানিং ওর ঘুম খুব গভীর হয়ে গেছে ,, আচ্ছা তুমি যাও ফ্রেশ হইতে ,, আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি ,, 

    – আচ্ছা থাক ,, আরেকটু ঘুমাক ,,সারাদিন অনেক ধকল যায় ,, পরে ডাক দিও ,, থানায় যেতে দেরী আছে ওর ,,

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,, তুমি যাও ,, গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও ,, 

    – আচ্ছা ,,

    রাতুল ঘরের সামনের সিঁড়ি বেয়ে নেমে চলে যায় টিউবওয়েল খানার দিকে ,, মায়া ঝাড়ু দেওয়া শেষ করে ঝাড়ুটা একটা গাছের গুঁড়ির পাশে রাখে ,, তারপর চলে যায় রান্না ঘরের দিকে নাস্তা বানানোর জন্য ,, 

     

    সময় এখন ৭ টা ,, মেম্বারের বাসা দেখানো হয় ,, এখনো কুয়াশার প্রভাব কমেনি ,, সকাল ৯-১০ টা পর্যন্ত কুয়াশা এমনি থাকে ,, সবাই মিলে বারান্দার টেবিলে নাস্তা করতে বসেছে ,, শিউলি বেগম তাদের পাশে দাঁড়িয়ে দেখছেন কারো কিছু লাগবে নাকি ,, লায়লা একটা বাটি নিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির বারান্দায় উঠে শিউলি বেগম কে দেয় ,, বেশ হাসিখুশিই আছেন তারা ,, কারণ টা অবশ্য এই যে নিপার বিয়ে নিয়ে আলাপ করতেছেন ,,কোনটা পাত্র ভালো কোনটা পাত্র খারাপ তাই নিয়ে কথা বলতেছেন সাম্মি আর কল্পনার সাথে ,, তখনই বাসায় প্রবেশ করেন মতিন মেম্বার ,, তিনি কিছুটা হন্তদন্ত হয়েই ছুটে আসেন ,, এসে বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে শিউলি বেগম কে ডাকতে থাকেন ,, শিউলি বেগম তার ডাক শুনে বারান্দার দরজার সামনে এসে দাঁড়ান ,, 

    – আরে আল্লাহ ,, তোমারে হেই দুপুরের আগে দেহাই পাওন যায়না ,, তাইলে আইজ এই সময় আইলা যে ,, (হাসি মুখে শিউলি বেগম বলেন)

    – নাসিম কী বাড়িত আছে ? ওরে আমি কাইল কইছিলাম সকাল সকাল আইয়া পরতে আইজ পৌরসভার যাইতে হইবো ,,কাজ আছে ,, কিন্তু অয় এহনো আইয়া আমার লগে দেহা করে নাই ,, অয় কী বাড়িত আইছিলো ? 

    – না তো,, কাইল ঐ সন্ধ্যার দিকে যাওনের পর আর ওরে দেহিও নাই ,, 

    – কই যে গেলো ছেমড়াডা ,, এই কাজের সময় নাই ,, টুটুলরে না লইয়া ওরে লইয়া যাইতে চাইলাম ,, আর এহন দেহি অই নাই ,,

    – অর বাড়িত যাইয়া নিয়া আহো ,, নাইলে আর ফোনে কল দেও ,, 

    – অর বাড়িই তো আমি চিনিনা ,, আর ওর নাম্বারে তহন থেইকা ফোন দিতাছি ফোন বন্ধ কইতাছে ,, 

    – আজব ,, তুমি একটা লোকরে তোমার দলে লইয়া আর ওর বাড়ি কোনডা কই থাহে এইসব জানবানা ? তোমারে যে কি দেইখা গেরামের মেম্বার বানাইছে লোকজন হেইয়াই আমার মাথায় ঢোকে না ,, 

    – চুপ কর শিউলি বেগম ,, এমনিতে কামের জ্বালায় কিন্তু মাথা গরম হইয়া আছে কইলাম ,, তার উপরে এমন আউংফাউং কথা কইবানা ,, 

    – তো তুমি টুটুলরে না নিয়া গিয়া নাসিম রে লইতে চাইলা ক্যা ? নাসিমরে দলে ভিড়াইছোই তো এই ৭-৮ দিন আগে,, টুটুলরে লইতা ,,

    – কেন লইতে চাইছি এইডা তুমি বুঝবানা ,, আমি গেলাম ,, নাসিম আইলে কইবা জলদি পৌরসভা অফিস যাইতে কইছি ,, নাইলে অর খবর আছে কইয়াদিলাম ,, 

    – আইচ্ছা আইচ্ছা কমুনে ,, আইছো যহন নাস্তা ডা কইরা যাও ,, 

    – না ,, আমার ধারে সময় নাই ,, আমি গেলাম ,, (বলেই আঙিনা থেকে হেঁটে চলে যেতে থাকে মতিন মেম্বার ,, শিউলি বেগমও চলে আসে ডায়নিং টেবিলের এদিকে ,, শাহারিয়ারা এতোক্ষণ সব কথাই শুনেছে ,, শাহারিয়া তার মা’কে বলে ,,

    – বাবা এমন নতুন লোকদের উপর ভরসা করে চলে কেন ? নতুন লোক আজকে আছে কালকে নাই ,, এদের উপর বেশি নির্ভর করে থাকে বলেই আজ এই অবস্থা ,,

    – আর কইস না বাপ ,, তোর বাহে ঘর আর গ্রাম সামলাইতে সামলাইতেই পাগল হইয়া গেছে ,, কারে দিয়া কী করাইতে হইবো এইডা সিদ্ধান্তও এহনো ঠিক মতন নিবার পারেনা,, আচ্ছা বাদ দে ,, ল আরেকটা ল (বলছি একটা চিতই পিঠা উঠিয়ে দিতে থাকে শাহারিয়ার প্লেটে ,, 

    এদিকে নাসিমের এমন হঠাৎ উধাও এর কথা শুনে ফুলমতির মুখ টা কালো হয়ে যায় ,, ওর মন টা খারাপ হয়ে যায় ,, ও খাবার টেবিলের পাশে একদম চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে ,, আর ভাবতে থাকে,” নাসিম কই চলে গেলো ,, ? নাসিম তো কখনো আগে এমন ভাবে উধাও হয়নি ,, নাসিমের কোন বিপদ হলো না তো ? না না ,, আমি এসব কী ভাবছি,, নাসিমের কিচ্ছূ হবেনা ,, কিচ্ছু হবেনা ” এভাবেই মনকে শান্তনা দিতে থাকে ফুলমতি ,, এমন হঠাৎ করে একটা মানুষের গায়েব হয়ে যাওয়াটা আসলেই চিন্তারই বিষয় ,, 

     

    এদিকে আমাদের দেখানো হয় দিথীদের বাসা ,, দিথী আর সামিহা ঘরে বসে গল্প করতেছে আর নাস্তা খাচ্ছে ,, দিথী তার পড়ার টেবিলের চেয়ার টা ঘুড়িয়ে বিছানার দিকে মুখ করে বসেছে আর সামিহা বিছানায় বসে আছে ,, সামিহাই গল্প বের করেছে ,, দিথী কালকের বিষয় টা নিয়ে অনেক মনমরা হয়ে ছিলো তাই সে ভাবলো যদি একটু গল্প করলে দিথীর মন ভালো হয়, তাই আরকি ,, সামিহা বের করেছে তার কলেজ লাইফের গল্প ,, যাকে সে ভালোবসাতো তার বিষয় নিয়ে গল্প ,, এমন সময় ঘরে প্রবেশ করেন নাজিয়া বেগম,, তার চোখে মুখে বিষন্নতার‌ ছাপ ,, নাজিয়া বেগমকে হঠাৎ এই সময় ঘরে আসতে দেখে দিথী আর সামিহা কিছুটা অবাকই হলো ,, নাজিয়া বেগম স্বাধারণত দিথীর রুমে খুব কমই আসেন ,, আর তার উপর এই সকাল বেলায় কখনো আসেননি ,, তাই বেশ অবাকই হয় দিথী আর সামিহা ,, তাদের গল্পও থেমে যায় ,, নাজিয়া বেগম আস্তে আস্তে করে খোড়াতে খোড়াতে দিথী সামনে এসে দাঁড়ান ,, দিথী এখনো বসেই আছে ,, তিনি দিথীর সামনে এসে তার হাত ধরেন ,, দিথী কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতে থাকে আর মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকাতে থাকে ,, হাত ধরে নাজিয়া বেগম বলেন ,, 

    – মা দিথী , আমায় ক্ষমা করে দে মা ,, আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি ,, তোকে মেরেছি ,, তোর উপর নির্যাতন করেছি ,, আরো কত জুলুম চালিয়েছি তোর উপর ,, জানিস এসব আমি শুধু আমার নিবিড়ের জন্য করেছিলাম ,, নিবিড় যেন একলা সব সম্পত্তি পায় সে জন্য করেছি ,, আমি , আমি তোকে বিষ দিয়ে মারতে পর্যন্ত চেয়েছি ,, আমি তোকে কখনো বুঝতে চেষ্টা করিনিরে মা ,, সবসময় তোর উপর নিজের জোড় খাটাতে চেষ্টা করেছি , আজ আমি অনুতপ্ত ,, আমায় ক্ষমা করে দে মা ,, প্রত্যেকটা মা বাবার কাছেই তার সন্তান সবার আগে ,, আমি তেমনি নিবিড়কে আগলে রেখে সব জুলুম তোর উপরে করতাম ,, কিন্তু আজ যদি তোর মা বেঁচে থাকতো ,তোর উপরে কখনোই জুলুম করতে দিতো না ,, তোকে সবসময় আমার নিবিড়ের মতো করে আগলে রাখতো ,, কাল আমার নিবিড়ের আর্তনাদ আমি দেখেছি ,, আমার জন্য আমার নিবিড়কে কত কষ্ট পেতে হয়েছে ,, মা হয়ে আমার এসব আর সহ্য হচ্ছিলো না,, কাল যদি বিশ টা তুই খেয়ে ফেলতি তাহলে তোর বাবার কী অবস্থা হতো ,, তোর মা নেই, কে তোর জন্য কাঁদতো ,, আমি দেখেছি একজন সন্তানের জন্য তার বাবা মা কতটা ব্যাকুল হয়ে পড়ে ,, আমি তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছিরে মা ,, আমাকে ক্ষমা করে দে ,, আমি তোকে এখন থেকে নিজের মেয়ের মতো করে দেখবো ,, নিজের সন্তানের মতো করে দেখবো ,, আমার অতীত কর্মের জন্য আমায় ক্ষমা করে দে ,, তুই ক্ষমা না করলে যে আমি নিজেকে নিজে ক্ষমা করতে পারবো না রে মা ,,(বলেই দিথীর হাতে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে নাজিয়া বেগম ,, দিথীর চোখে পানি এসে পড়ে ,, সে এসব কথা শুনে তার  আবেগ ধরে রাখতে পারেনি ,, সে নাজিয়া বেগম কে জড়িয়ে ধরে ,, বলতে থাকে

    – কেঁদো না মা ,, তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো তাতেই আমি খুশি ,, তোমার উপর আমার কোন রাগ ক্ষোভ নেই আজ থেকে ,, তুমি কেঁদো না ,, 

    নাজিয়া বেগম দিথীকে জড়িয়ে ধরে রাখেন ,, তিনি নিজের ভুল টা শেষমেষ বুঝতে পেরেছেন ,, এভাবেই সকল সৎ মা গুলো বুঝতে পারুক যে তার পেট থেকে বের হওয়া সন্তানের মতোই তার আগের পক্ষের থাকা সন্তান কারো না কারো কাছে একদিন সন্তান ছিলো ,, তাদের রক্ষিতা মা আজ হয়তো নেই ,, কিন্তু এখন যেন আপনি আসার পর তাদের উপর জুলুম অত্যাচার না করেন ,, নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসা আর স্নেহ দিয়ে তাকে বুকে টেনে নিন ,, সেই সন্তানও বড় হয়ে আপনাকে মায়ের মতই সন্মান ও শ্রদ্ধা করবে ,, 

     

    রিয়াদের পুলিশ স্টেশন দেখানো হয় ,, এখন সময় সকাল সাড়ে ১০ টা ,, থানায় শাহারিয়া,রিয়াদ ও বাকিরা মিলে মিটিং বসিয়েছে ,, এখন ঠান্ডার প্রভাব কিছুটা কমেছে ,, সবাই থানায় গোল হয়ে একটা টেবিলের চারপাশে বসেছে ,, তাদের লক্ষ্য আজ এবং কালকের মধ্যেই খুনিকে খুঁজে বের করা এবং তা যে করেই হোক ,, শাহারিয়ার নেতৃত্বে মিটিং শুরু হয় ,, শাহারিয়া বলতে থাকে ,,

    – খুনি যেই হোক না কেন ,, আজ কিংবা কালকের মধ্যে তাকে ধরতেই হবে ,, নাঈম স্যার আমাদের উপর যেই ভরসা করে এখানে পাঠিয়েছেন সেই ভরসার মূল্যা রাখতে হবে ,,

    – কিন্তু কীভাবে কী করবো আমরা ,, খুনিতো আমাদের রহস্যের মধ্যে একদম চুবিয়ে রেখেছে , ৬ বছর আগের ইতিহাস, নুপুর নামের এক মেয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ ,, কিন্তু তার এক বুড়ো দাদা ছাড়া আর কারোর বেঁচে না থাকা ,, সবমিলিয়ে এক গোলক ধাঁধায় পড়ে গেছি আমরা ,, (রিয়াদ বলে)

    – আজকেও কী লাশ পাওয়া গেছে ? 

    – হ্যা আজকেও একটা মেয়ের লাশ ঠিক আগের গুলার মতোই পাওয়া গেছে ,, 

    – হমম ,, লাশ টা নিয়ে পরে কথা বলছি, আচ্ছা তুই এটা বল যে এই রকম সিরিয়াল কিলিং কী আগে কখনো এই গ্রামে হইছিলো ? 

    – সিরিয়াল কিলিং তো ঠিক বলতে পারিস না ,, তবে এই বিগত এক বছর থেকেই প্রতি ২-৩ মাস অন্তর অন্তর ঐ নীলগিরি জঙ্গলটার আশেপাশে কিছু কম বয়সী মেয়েদের লাশ পাওয়া গেছিলো ,,তুই আসার ১৫-২০ দিন আগেও এমন একটা মেয়ের লাশ পাওয়া গেছিলো ,, দেখে মনে হচ্ছিলো কোন জন্ত বা জানোয়ার ছিঁড়ে খেয়েছে সেই দেহ গুলাকে ,, সবাই মনে করে ঐ অভিশপ্ত জঙ্গলে ওরা ঢুকেছিলো আর যার ফলে এইরকম অবস্থা ,,(রিয়াদ বলে)

    – আরে ঐসব অভিশাপ-টভিশাপ কিছুই না ,, ঐসবই কুসংস্কার,, (শাহারিয়া বলে)

    – কিন্তু কাল যে তুই আর আমি জঙ্গল টার ভিতর গেলাম ,, তারপর যা দেখলাম, ঐসব কে কী দ্বারা ব্যাখা করবি তুই ? 

    – ঐটাও কোনা একটা রহস্য ,, শুধু আমাদের সেইটা খুঁজে বের করতে হবে ,, 

    – কিন্তু কখন ,কখন সেই রহস্যটা আমরা খুঁজে বের করবো ,, 

    – আচ্ছা তুই এটা বল যে এর আগে কিংবা কোন সময়েই কী এইরকম কোন সিরিয়াল কিলিং যেমন এই একটানা মৃত্যুর কোন ঘটনা ঘটেছিলো কী ? (শাহারিয়া বলে)

    – আমি কীভাবে বলবো ,, আমি তো এই থানায় চাকরিই নিছি এই ২ বছর আগে ,, আমি এর আগের ঘটনা কীভাবে জানবো ,, আর তুই আর আমি তো সেই দিনাজপুর হোস্টেলে ছিলাম ,, ঐখানেই থাকছি ঐখানেই পড়াশোনা করছি ,, এর মাঝে গ্রামে কী হইছে না হইছে তার তো কোন খবর ই আমাদের জানা নাই ,,(রিয়াদ বলে) 

    – ওহহ তাই তো ,, আমি ভুলেই গেছিলাম ,,  

    তখনই তাদের কথার মাঝখানে থানার এক বৃদ্ধ কনস্টেবল ভিতরে এসে তাদের সামনে দাঁড়ায় ,, এবং বলতে থাকে ,,

    – আজ্ঞে বাবু,, আমি কিছু বলতে চাইছেলাম ,, 

    – হ্যা বলেন ,, (শাহারিয়া বলে)

    – বাবু আমি এই থানায় চাকরি করি তা হবে ৩০-৩৫ বছর ,, (বৃদ্ধের বয়স ৬০ এর আশেপাশে) আমি এই থানায় থাইকে অনেক বাবুদের(থানার ওসি) আসা যাওয়া দেখেচি ,, তাদের মধ্যে অন্তর বাবুর থাকাকালীন সময়ে একরকম একটা একটানা খুনের ঘটনা ঘটেছিলো বটে ,, 

    – অন্তর বাবু ? কোন অন্তরের কথা বলছেন উনি ? (শাহারিয়া জিগ্গাসু দৃষ্টিতে রিয়াদের দিকে তাকায়)

    – দিথীর বাবা অন্তর সাহেবের কথা বলছেন উনি ,, অন্তর সাহেব আমার আসার আগে এই থানার ওসি ছিলেন ,, তারপর তিনি অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে এই গ্রামের চেয়ারম্যান হন ,, আর আমি হই এই থানার ওসি ,, 

    – ওহোহো ,, তারমানে দিথীর বাবা এই থানার ওসি ছিলেন এক সময় ,, আচ্ছা তো বলুন তারপর কী বলবেন ,, আর আপনার নাম টা ? 

    – আজ্ঞে বাবু আমার নাম রহিম ,, আমি এই গেরামের পাশের গেরাম হরিশপুরে থাকি ,, হরিশপুর আর এই গেরামের মাঝখানে যেই বড় পুকুর টা আছে না সেইডার পাশেই আমার বাশা ,, 

    – আচ্ছা রহিম চাচা বলুন আপনি কী যেন একটা সিরিয়াল কিলিং ‌কেস নিয়ে বলছিলেন  ,, 

    – হ্যা বাবু ,, আজ থেইকে পেরায় ২০ বছর আগের ঘটনা ,, তখনও আমি এই থানার কনস্টেবলই ছিলাম বাবু ,, তখন এইরকম একটানা খুনের ঘটনা ঘটেছিলো বাবু ,, ঐযে আমি যেই বড় পুকুর টার নাম বলিলাম না বাবু , ঐ পুকুরে সব লাশ পাওয়া যাইতো বাবু,, খুবই নির্মম ভাবে মারা হইতো বাবু তাদের,, সেই লাশ গুলোর কোন মাথা থাকতোনা বাবু ,, মুন্ডু বিহীন সেই লাশ পাওয়া যাইতো  ,, অন্তর স্যার এই কেস টা নিয়ে অনেক খেটেছিলেন ,, কিন্তু এর কোন কুলকিনারা করে উঠতে পারেনি বাবু ,, তারপর একদিন হঠাৎ একটা লোক সেই পুকুরের সামনে দাঁড়িয়ে সবার সামনে ‌নিজের হাতে নিজের মুন্ডু টা আলাদা করে নদীতে গড়িয়ে পরে ,, তারপর থেইকে আর কারও লাশ সেখানে পাওয়া যায়নি বাবু ,, আর যেই লোকটা সেইখানে এভাবে আত্মহত্যা করেছিলেন না বাবু ,, সেই লোকটার লাশও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি ,, তারপর অন্তর বাবু এই কেস টা কোলজ করে দেন ,, আর ঐ পুকুরেও এখন কেউ নামেনা বাবু ,, শুধু মাঝেমধ্যে ২-১ জন কে সেই যায়গায় ঘোরাঘুরি করতে দেখি  ‌,, 

    – আচ্ছা আপনি কোন পুকুরের কথা বলছেন ? নাম কী পুকুরটার ? 

    – নীলপদ্ম পুকুর নাম ঐডার বাবু ,, 

    – ওহহ তারমানে এই রকম আগেও ঘটছিলো ,, কিন্তু ঐটা ঐ পুকুর টা ঘিড়েই ছিলো ,,  এখন ঐ পুকুর টা কী পরিত্যাক্ত ? 

    – হ্যা বাবু ,, তবে মাঝে মধ্যে ঐটার আশেপাশে গেরামের মেম্বারের চেলা টুটুলকে ঘুরাফেরা করতে দেখা যেতো বাবু ,, ঐখানে দিঘীটার পাশে একটা ছোট্ট ঘরও বানিয়েছে সে ,, তবে কেউ তার ঘরের ঐদিকে যায় নে বাবু ,, রাতের বেলা ঐ ঘর থেকে কীসব আওয়াজ পাওয়া যায় ,, ভয়ে কেউ সেই ঘরটার দিকে যায়নে ,, 

    – টুটুল ? মানে বাবার যে ডান হাত নামে যেই টুটুলকে ডাকা হয় সেই টুটুল ? 

    – হ বাবু ,, সেই টুটুল,, আমার বাশা হরিশপুর গেরামের শুরুর দিকে ,, নীলপদ্ম পুকুর থেকে কিছুটা দূরে আমার বাশা ,, 

    – ওহহ আচ্ছা ,, আপনি এখন যেতে পারেন ,, 

    – জে আইচ্ছা বাবু ,, (বলেই রহিম চাচা চলে যেতে থাকেন থানার সেই কক্ষ থেকে ,, শাহারিয়া এখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে ,, 

    – সবাই শোন এখন ,, তিনি যা বলে গেলেন তা নিয়ে পরে আলোচনা হবে এখন এইটা বলো যে তোমাদের এই বর্তমান চলা খুন গুলোর জন্য কাকে বেশি সন্দেহ হয় ? আর কেন ? 

    – আমার তো সন্দেহ হয় আরিফ কে ,, কারণ তাকে সেই রিয়ার খুনের পর থেকেই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি ,, সবাই বলছে যে সে কিডন্যাপ হয়েছে ,, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ও এই কিডন্যাপিংয়ের ঘটনাটা সাজানো ,, (রিয়াদ বলে)

    – সাজানো ,, ? 

    – হ্যা ,, আর টুটুলের আংটিও সেই ঘটনাস্থলে আরিফই রেখেছিলো যাতে টুটুলকে সবাই এই কিডন্যাপিংয়ের জন্য সন্দেহ করে ,, কিন্তু যেইসময় আরিফ কিডন্যাপ হয়েছে বলে খবর রটিয়েছিলো সেই সময় টুটুল তোর বাবার সাথে দক্ষিণ পাড়ার ঐদিকে ছিলো ,, তোর বাবা নিজে এই কথার সত্যতা নিশ্চিত করেছে ,, আর আমাদের খবরও দিয়েছিলো আরমান , আর আরমান আর আরিফ যে কত ভালো বন্ধু তা গ্রামের সবাই জানে ,, আরমানও আরিফের সঙ্গে মিলে ছিলো বলে আমার সন্দেহ হয় ,, 

    – তোর সন্দেহ টাও ফেলে দেওয়ার মতো না ,, আচ্ছা ইমন তোর কাকে সন্দেহ হয় ? (ইমনের দিকে ফিরে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে শাহারিয়া ,,)

    – আমার তো আবার সন্দেহ হয় আরমানের বাবা ইসহাক সাহেবের উপর ,, 

    – ইসহাক সাহেব ? কিন্তু কেন ? (শাহারিয়া বলে)

    – ইসহাক সাহেব কিন্তু গ্রামের প্রাত্তন মেম্বার ,, আর বর্তমান মেম্বার তোর বাবা ,, আর সামনে ইলেকশন ,, তো ইসহাক সাহেব এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন যাতে তোর বাবার ভাবমূর্তি নষ্ট হয় আর সামনে ইলেকশন যেন তোর বাবা দাঁড়াতে না পারে সেইজন্য,, পরের মাসেই কিন্তু নির্বাচন ,, তাই ইসহাক সাহেব এইরকম ঘটনা সাজিয়ে গ্রামের মানুষদের এটা বুঝাতে চাচ্ছে যে তারা তোর বাবার অধীনে সুরক্ষিত নয় , আর সামনের নির্বাচনে যেন তোর বাবাকে ভোট না দেয় ,, আর গ্রামে তোর বাবার মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বি একমাত্র ইসহাক সাহেব ছাড়া আর কেউ নেই ,, 

    – কথাটা কিন্তু একদম ফেলে দেওয়ার মতো বলিস নি ,, এই দিকটা আমরা কেউ ভেবেও দেখিনি ,, কিন্তু এই লাশ গুলোও তো তার নিজের আমবাগানের খালেই পাওয়া যাচ্ছে,, তিনি কেন জেনেশুনে তার আমবাগানের খালেই লাশ গুলোকে রাখবেন ? (শাহারিয়া জিগ্গাসু দৃষ্টিতে ইমনের দিকে তাকায়)

    – কারণ যেন তার উপরে কারোর সন্দেহই না হয় ,, আমরাও তাকে তখন সন্দেহ করতাম না বা তোরা এখনো করিসওনি কারণ তোরা ভাববি যে নিজের বাগানে নিজে তো কেউ লাশ রাখার বোকামি টা করবে না ,, আর যদি এমন ইলেকশনের দিক দিয়ে এই কেস টাকে তোরা ভাবতিও তাইলে তোদের কাছে মতিন চাচাকে খুনি মনে হইতো ,, কারণ তিনি রানিং মেম্বার,, আর ইলেকশনের জন্য প্রাত্তন মেম্বারকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য তার বাগানে লাশ গুলো রেখেছে , আর তুই তখন তোর বাবাকে সন্দেহ করতি,, আর ইসহাক সাহেব থেকে যেতে সবার মাথার বাইরে ,, আর এই টেকনিক টাই ইউজ করেই ইসহাক সাহেব আমাদের ব্রেইন নিয়ে খেলেছেন ,, 

    – আরে আরে আসলেই তো ,, এটা হতেও পারে ,, এটা কিন্তু ইমন ঠিক বলেছে ,, আমরা ইসহাক সাহেবকে আমাদের গোনার মধ্যে ধরবোও না কারণ তার বাগানে লাশ গুলো পাওয়া যাইতেছে বিধায় ,, ভালো একটা পয়েন্ট তুলে ধরছিস কিন্তু তুই ,, এইটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক রয়েছে বলা যায় ,, তো আরকি কাউকে সন্দেহ হয় তোমাদের ? হইলে বলো ,, (সবার দিকে তাকিয়ে শাহারিয়া বলতে থাকে ,, )

    – আমার হয় ,, (নিলয় বলে উঠে)

    – কাকে সন্দেহ হয় ? 

    – টুটুলকে ,, 

    – টুটুল ? ওকেও সন্দেহের তালিকায় রাখছো ? কী জন্য মনে হয় টুটুল এইসব কিছুর পিছনে আছে ? 

    – প্রথমত টুটুল ঐদিন দক্ষিণ পাড়াতে যায় নাই ,, আমি পারসোনালি এই জিনিসটা নিয়ে খোঁজ করেছিলাম ,, টুটুল ঐদিন তার বাসাতেই ছিলো ,, বাসা বলতে সেই নীলপদ্ম পুকুরের পাশের ছোট ঘর টা ,, আর দ্বিতীয়ত , টুটুল গ্রামে যাকে যাকে উত্তক্ত্য করতো তাদের লাশই বিগত এক বছর ধরে সেই জঙ্গলটার আশেপাশে পাওয়া যাচ্ছে ,, টুটুল দেহলোভী ,, তার মেয়েদের দেহের প্রতি আলাদা ঝোঁক আছে ,, তারপর তোদের মনে আছে ? আহাদের লাশ যেদিন আমরা উদ্ধার করেছিলাম সেইদিন সেইখানে একটা লোক রিয়াদের হাত থেকে ছন্দ কাগজ টা নিয়ে দৌড় দিছিলো ? আর পরে তাকে ধরার পর বলেছিলো টুটুল তাকে এই কাজ টা করতে বলেছিলো ,, এই জিনিসটা কী তোরা ভুলে গেলি ? (একটু থেমে) টুটুল কিন্তু এই গ্রামে ১ বছর আগেই এসেছে ,, আর এই এক বছর থেকেই কিন্তু জঙ্গলটার আশেপাশে জন্তু খাওয়া মেয়েদের লাশ পাওয়া গেছে ,, আর যেই মেয়েদের লাশ পাওয়া গেছে তাদের বান্ধবী, বাসা সবখান থেকে জানতে পেরেছি টুটুল সেই মেয়েদের উত্যাক্ত করতো ,, বাজে প্রস্তাব দিতো ,, টুটুলই এই খুন গুলোর পিছনে থাকতে পারে বলে আমি মনে করে ,, 

    – তুই এতোসব কিছুর খোঁজ কখন করলি ? 

    – তুই , রিয়াদ আর ইমন তোদের মতো করে খোঁজ চালাচ্ছিলি দেখে আমি ভাবলাম কল্পনার সাথে আলাদা খোঁজ চালাই , আর এভাবেই আমরা এই কয়েকদিনে খোঁজ করে এইসব তথ্য পাইছি ,, 

    – আরে বাপরে ,, কল্পনাও ? (অবাক হয়ে কল্পনার দিকে যেতে তাকায় শাহারিয়া ,, 

    – হ্যা আমিও ছিলাম ,,(কিছুটা ভয় পেয়েই বলতে থাকে কল্পনা)

    শাহারিয়া কিছূ বলে না আর ,, সে সবার কথা গুলো শুনে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাদের বিপরীত দিকে মুখ করে কিছু একটা ভাবতে থাকে ,, বাকিরা শাহারিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে ,, শাহরিয়া কিছুক্ষণ ভাবার পর এক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আরেক হাতের তালুতে জোড়ে রেখে বলতে থাকে ,, 

    – ইয়েস ,, পেয়ে গেছি ,, 

    – কী পেলি ? (রিয়াদ জিগ্গেস করে)

    শাহারিয়া ঘুরে এসে টেবিলেই দুই হাত রেখে নিচু হয়ে বলে ,,

    – খুনিকে পেয়ে গেছি ,, এখন শুধু প্রমাণ দরকার ,, 

    – কে খুনি ,, কীভাবে পাইলি ? 

    – সব তোদের পরে বলবো ,, শুধু এইটাই জেনে রাখ যে খুনি আজকেই ধরা পরবে ,, আজকে মানে আজকেই ,, 

    – আজকেই ? এতোদিন ধরে খুনির কাছে যেতে পারলাম না আর আজকে ধরে ফেলবো ? 

    – হ্যা ,, আজকে আমরা ধরে ফেলবো ,, আজকে সে তার শেষ গুটি টাকে মারবে ,, গ্যাংয়ের লিষ্টে থাকা সবার মধ্যে এখন শুধু আরমান বাকি ,, আজকে আরমানকে মেরে ফেলার আগেই ওকে ধরতে হবে ,, শুধু কিছু প্রমাণ লাগবে ,, 

    – কী প্রমাণ ? 

    – আমি এখন তোদের যা যা করতে বলবো তা মন দিয়ে শোন ,, রিয়াদ আর ইমন ,, তোরা যাবি দিনাজপুর পুলিশ স্টেশনে যেখানে আহাদের অটোটা রাখা আছে ,, মানে সেই রেড স্টার চিহ্নের অটো টা ,, সেটা খুনি ব্যবহার করে এসে আবার সেখানেই রাখছে ,, সেটাতে কোন না কোন ক্লু তোরা পাবিই পাবি ,, আর সাম্মি,কল্পনা আর নিলয় ,, তোরা এই থানায় থেকে আজকে পাওয়া লাশ টার ময়নাতদন্ত করে ফেলবি ,, আজকের লাশটাতে কিছু না কিছু তোরাও পাবি ,, আর আমি যাবো বাসায় ,, 

    – তুই বাসায় যাবি ? আমাদের সবাইকে মিশনে পাঠিয়ে তুই বাসায় কেন যাবি ? 

    – আজকের খুনি ধরার ক্ষেত্রে আমার বাসায় যাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ,, তোদের যা যা বলছি তাই তাই কর ,, নিরাশ তোরা হবিনা ,, আর আমাকে ঐদিন যে আরোহীকে তুলে নিয়ে গেলো সেই সিসিটিভি ফুটেজ টার পেনড্রাইভ টা দে ,, ঐটার দরকার আছে ,,

    – এই নে ,,(রিয়াদ টেবিলের ড্রয়ার থেকে পেনড্রাইভ টা বের করে শাহারিয়ার দিকে এগিয়ে দেয় ,, )

    – আজকে আমরা খুনিকে পাবোই পাবো ,, তোরা শুধু মন দিয়ে তোদের কে দেওয়া কাজ গুলো করে যা ,, 

    – ওকে , (সবাই টেবিল থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে )

    – আর একটা কথা ,, রিয়াদ,, তুই তোর বাইকটা থানায় রেখে যা ,, তুই এমনি বাসে করে দিনাজপুর পুলিশ স্টেশনের দিকে রওনা হয়ে যা ,, 

    – তুই বাইকটা নিয়ে যাবি ? (রিয়াদ জিগ্গেস করে)

    – না ,, ঐটা এই থানাতেই থাক ,, আমি কোন ভ্যান বা অটোতে করে বাসা চলে যাবো ,, 

    – কিন্তু বাইকটা এখানে রেখে কী হবে ,, ? 

    – যা বলছি তাই কর ,, পরে বুঝতে পারবি,, আমি এখন গেলাম (বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায় শাহারিয়া ,, বাকিরাও সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে চলে যেতে থাকে যার যার দেওয়া কাজে ,, বাইকটা থানাতেই রাখা হয় ,, রিয়াদ আর ইমন একটা গাড়ি ভাড়া করে দিনাজপুর পুলিশ স্টেশনের দিকে চলে যায় ,, আর শাম্মি , কল্পনা আর নিলয় চলে যায় পাশের রুমে আজকে পাওয়া আনিকার লাশ টা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে ,, 

     

    [[[[ এই পর্ব টা অনেক বড় হয়ে গেছিলো তাই একসাথে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া যাচ্ছিলো না ,, তাই এই পর্বটাকে ভেঙে দুই ভাগ করে একই সময়ে পোস্ট দিয়েছি ,,এই পর্বের পরবর্তী ভাগের লিংক প্রথম কমেন্টে 👇 ]]]]

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২৫ (প্রথম ভাগ)

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর 

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২৫ (দ্বিতীয় ভাগ)

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    {{{ যারা যারা পর্ব ২৫ এর প্রথম ভাগ টা পরেন নি তাদের জন্য প্রথম ভাগ টার লিংক কমেন্টে দেওয়া রইলো ,, প্রথম ভাগ টা পরে এসে তারপর এইটা পরুন ,, নাইলে আগা-মাথা কিচ্ছু বুঝতে পারবেন না }}}

     

    – কিন্তু বাইকটা এখানে রেখে কী হবে ,, ? 

    – যা বলছি তাই কর ,, পরে বুঝতে পারবি,, আমি এখন গেলাম (বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায় শাহারিয়া ,, বাকিরাও সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে চলে যেতে থাকে যার যার দেওয়া কাজে ,, বাইকটা থানাতেই রাখা হয় ,, রিয়াদ আর ইমন একটা গাড়ি ভাড়া করে দিনাজপুর পুলিশ স্টেশনের দিকে চলে যায় ,, আর শাম্মি , কল্পনা আর নিলয় চলে যায় পাশের রুমে আজকে পাওয়া আনিকার লাশ টা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে ,, 

     

    এদিকে আমাদের দেখানো হয় মেম্বারদের বাসা ,, সময় এখন দুপুর ১২ টা ,, বাসায় আমরা একপ্রকার চিল্লাচিল্লি দেখতে পাই ,, রান্না ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে শিউলি বেগম মতিন মেম্বারের সাথেই চিল্লাচ্ছে,,  শিউলি বেগম জোরে রাগের স্বরে বলতে থাকে ,, 

    – তোমারে আগেই কইছিলাম না পিছনের ডাব গাছ টা থেইকা ডাব পারো ,, তুমি কেন এই গাছ টা থেইকাই পারতে গেলা ? ডাব পইরা আমার রান্নাঘরের টিনের চাল কানা হইছে ক্যান ?

    – না মানে শিউলি বেগম ,, টুটুলরে কইলাম ডাব টা যেন চালের উপর না পরে এরকম কইরা ডাবের গোড়ায় গুতা দিতে ,, কিন্তু এহন অয় যে কেমনে কী করছে ডাব তোমার রান্না ঘরের চালের উপরে পইরা গেছে (শিউলি বেগমের রাগ ভাঙানোর জন্য হাসি মুখে মলিন ভাবে কথা গুলো বলে মতিন মেম্বার)

    – তুমি আমারে মারার লাইগা আমার রান্না ঘরে ডাব ফালাইছো ,, ভাগ্গেস আমি ঘরে আছিলাম ,, আমি মরলে তো তুমি আরেকটা বিয়া বইতে পারবা ,, আমি সব বুজ্জি ,, 

    – আহা শিউলি বেগম,, ইত কিতা কও ,, তুমি না আমার ময়না পাখি,, তোমারে কেন মারতে যামু ,, ভুল কইরা টুটুল ডাব গুলারে তোমার রান্না ঘরের টিনের চালে ফালায় দিছে ,, রাগ কইরো না সোনা পাখি আমার ,, (বলেই শিউলি বেগমের গাল গুলো ধরে টানতে থাকে মতিন চাচা)

    – ছাড়ো,, আধঘণ্টা , আধঘন্টার মধ্যৈ রান্না ঘরের টিনের চাল ঠিক না করলে তোমার যায়গা মতো গরম খুন্তি দিয়া ফুডা কইরা দিমু কইয়া রাখলাম ,, (বলেই রাগে হন হন করে আঙিনা থেকে ঘরের দিকে চলে জান শিউলি বেগম)

    – ও শিউলি বেগম ,, হুনোতো ,, আরে হুনোতো ,, (একটু থেমে) দেখছো চইলা গেলো গা ,, উফফ কী জ্বালায় পরলাম আমি কওতো ,, এই টুটুল ,, হারামজাদা এদিক আয় ,,

    – হ হ কন চাচা ,, (গাছের পাশে থেকে টুটুল কিছুটা নিম্নমলিন স্বরে উত্তর দেয়)

    – হারামজাদা তোরে না কইলাম ডাব ডি যেন রান্না ঘরের চালের টিনের চালের উপরে না পড়ে ,, তারপরও পড়লো কেমনে ? 

    – না মানে চাচা ,, ডাব কাটার সময় ডাব ধরার কথা ভুইলাই গেছিলাম,, (মাথা চুলকাতে চুলকাতে কিছুটা হাসি মুখে বলে টুটুল)

    – হাসি বন্ধ কর ,, তোগোরে যে আমি কেন পালতাছি নিজেও বুঝিনা,, একটাতো কাইল রাইতে কই পালাইছে খোঁজ খবর নাই আরেকটা এইদিকে কাম বাড়াইয়া থুইছে ,, 

    – না মানে চাচা ,,

    – হইছে চুপ থাক ,, এলা তাড়াতাড়ি যা ,, আমাগো রুমের পাশের রুম যেইহানে অনেক জিনিসপত্র রাহা ঐহানে কিছু টিন আছে ,, ছোডো ছোডো ,, ঐডি আইনা তারাতারি টিনের ফুডা ডা বন্ধ কর ,, যা ,, 

    – অহনি যাইতাছি মেম্বার সাব ,, (বলেই ফুসস করে মেম্বারের পাশ দিয়ে দৌড় সেই ঘরের দিকে চলে গেলো টুটুল ,, মেম্বার ঘুরে রান্না ঘরের চালের দিকে দেখতে থাকে কতটা ফুটা হইছে ,, 

    এদিকে চাচি বারান্দার উঠে চেয়ারে বসে রাগে মেম্বারের দিকে তাকায় আছে ,, মেম্বার তো ভয়ে চাচির দিকে ফিরেই তাকাইতেছে না ,, মতিন মেম্বাররে গ্রামের সবাই ভয় পাইলেও মতিন মেম্বার ভয় পায় শিউলি বেগম রে ,, কারণ জানে যে কথার একটু হেরফের হইলেই রাইতে যখন শুইতে যাইবে তখন দিবে আসল ছেচাডা ,,এদিকে শিউলি বেগমের পাশে লায়লা দাঁড়ানো,, চাচি লায়লার দিকে ফিরে তাকায় ,, শিউলি বেগমের রাগান্বিত মুখ দেখেই লায়লা কিছুটা হকচকিয়ে যায় ,, শিউলি বেগম বলতে থাকে ,, 

    – ফুলমতি কই ? 

    – চাচি অয় তো সকালে নাস্তার পর থেইকাই কেমন জানি হইয়া গেছে,, পিছনের বাগানে মনমরা হইয়া বইসা আছে ,, 

    – ওরে কী বকছিলি নাকি তুই ? বা ঘরের কেউ ওরে বকা টকা দিছিলো নাকি ? 

    – তেমন কিছু তো কয়নাই আমারে,, (এক মলিন স্বরেই কথা গুলো বলে লায়লা ,, ) 

    – এ মতিন ,, মতিন ,, (মতিন চাচাকে ডাকতে থাকেন শিউলি বেগম,, কিন্তু মতিন মেম্বার ভয়ে শিউলি বেগমের দিকে তাকাইতেছে না ,, ) কীরে কানে কি আমার বা**ল ঢুকাইয়া রাখছোস ,, কথা কানে যায়না ,, 

    মতিন মেম্বার এখন ভয়ে ভয়ে রান্না ঘর থেকে ফিরে শিউলি বেগমের দিকে চেয়ে তাকায় ,, তিনি জানেন যে শিউলি বেগমের রাগ উঠলে মুখ দিয়ে যা তা গালি শুনায় দিবে ,, মতিন মেম্বার কিছুটা আমতা আমতা করে বলতে থাকে

    – হ,হ কও ,

    – ফুলমতিরে কিছু কইছিলি তুই ? 

    – দেখছো ,, জামাইরে কী কেউ তুই কইরা কয় ,, 

    – তোরে বালেন্দ্রনাঠ কইরা ডাকমু ,, যেইডা কইছি ঐডার উত্তর দে ,,ফুলমতিরে কিছু কইছিলিই তুই ? 

    – ন, না তো ,, আমি ক,ক,কি কমু ,, আমি কিছু কইনাই ,, (কিছুটা ভয়ের স্বরে তোতলিয়ে কথা গুলো বলেন মতিন মেম্বার)

    – মাইয়াডারে তাইলে কেডা কী কইলো ? (শিউলি বেগম ধীর গলায় বলেন)

    তখনই বাসার গেইট দিয়ে প্রবেশ করে শাহারিয়া,, শাহরিয়া ভিতরে আসার পর দেখে যে বাড়ির অবস্থা এই রকম ,, সে হেঁটে হেঁটে এসে বারান্দায় উঠে ,, ঐদিকে টুটুল কিছু টিন আর হাতুরি নিয়ে মেম্বারের কাছে যায় ,, 

    শাহারিয়া বারান্দায় উঠেই তার মা’কে বলে ,, 

    – কি হইছে মা ,, পরিবেশ থমথমে দেখতেছি ,, 

    – তোর বাহে ,, ঐ মতিনে আমার রান্না ঘরের টিনের চাল ফুডা কইরা লাইছে ,, আধঘন্টার মধ্যৈ চাল ঠিক না করলে ওরে আইজ কাইটা রান্না কইরা খাইয়ালামু ,, 

    শিউলি বেগমের কথা শুনে শাহারিয়াও কিছুটা হকচকিয়ে যায় ,, সে কিছুটা নার্ভাস হয়ে বলতে থাকে ,, 

    – ওহহ , সমস্যা নাই ঠিক বাবা করে ফেলবে ,, আমি গেলাম ঘরের দিকে ,, 

    – আইচ্ছা যা ,, আরা লায়লা শুন ,, আমি গোসলে গেলাম গোসল থেইকা আইসা যদি দেহি যে চাল ঠিক হয়নাই , তাইলে বাড়িতে আইজ মতিনের মাংস রান্না হইবো কিন্তু কইয়া দিলাম ,, (বলেই বারান্দায় শুকাতে থাকা গামছা টা হাতে নিয়ে গোসল খানার দিকে চলে যেতে থাকে শিউলি বেগম ,, শাহারিয়াও তার ঘরের দিকে চলে যায় ,, লায়লা দেখে দুইজনেই চলে গেছে তাই সে গিয়ে চেয়ারে বসে ,, বসে পায়ের উপর পা তুলে কিছুটা ভাব নিতে থাকে ,, ঐদিকে টুটুল একটা মই বেয়ে উপরে উঠে টিন ঠিক করতেছে ,, ফুলমতি বাড়ির পিছন থেকে হেঁটে এসে বারান্দায় উঠে,, তাকে দেখে লায়লা বলতে থাকে ,, 

    – কই গেছিলা আপু ,, আর তোমার মন খারাপ কেন,, 

    লায়লা দেখে যে ফুলমতির চোখে পানি ,, 

    – আপু তুমি কানতাছো ,, ? কেউ কি কিছু কইছে তোমারে ? 

    ফুলমতি কোন উত্তর ই দেয়না ,, সে লায়লার পাশ দিয়ে তার ঘরের দিকে চলে যেতে থাকে ,, 

    এদিকে তখনই মতিন মেম্বারের কথার আওয়াজ পাওয়া যায় ,, 

    – কীরে ,, কাটলো কেমনে,, (একটু থেমে) দেইখা কাটবি না ব্যাডা ,, এই ফুলমতি ,, লায়লা ,, এদিকে আয় তো একটু ,, 

    লায়লা আঙিনা থেকে মতিন মেম্বারের কথা শুনে দৌড়ে সেখানে যায় ,, গিয়ে দেখতে পায় টুটুল মই থেকে নামতেছে ,, আর তার হাত কেটে গেছে ,, 

    – তুই দেইখা শুইনা টিন ডা ধরবি না ? এহন কতটা কাইটা গেছে দেখছোস ,, নাম আস্তে কইরা ,, 

    টুটুল ধীরে ধীরে নামে,, তার হাত থেকে অনেক টা রক্ত পরতেছে ,, লায়লা দৌড়ে গিয়ে বারান্দায় থেকে একটা সুতি কাপড় নিয়ে আসে ,, এসে টুটুলের কাঁটা হাতে চেপে ‌ধরে ,, হাতের তালুতে লম্বা ভাবে কেটে গেছে টিনের কোন লেগে ,, এদিকে ফুলমতি চলে আসে তার চোখে এখনো পানি ,, ফুলমতি পানি গুলো মুছে লায়লার পাশে গিয়ে দাঁড়ায় ,, লায়লা কাপড় টা ধরে আছে টুটুলের হাতে ,, মতিন মেম্বার ফুলমতিকে বলতে থাকে ,, 

    – তুই কই আছিলি এতক্ষণ ? তোর চাচি তোরে খুজতাছিলো,,(একটু থেমে) যা তো যাইয়া একটু তোর চাচির ডেসিন টেবিলের ড্রয়ার থেইকা ফ্রাস্ট এইড বক্স টা লই আয় ,, 

    ফুলমতি মতিন মেম্বারের কথা শুনে ফার্স্ট এইড বক্স আনার জন্য চলে যায় ঘরের দিকে ,, এগিয়ে রক্ত থামছেই না ,, যেই কাপড় টা এনেছিলো সেটা সাদা ছিলো এখন ঐটা রক্তে একদম ভরে গেছে ,, কিছুক্ষণ পর ফুলমতি বক্স ‌টা নিয়ে আসে ,, মতিন মেম্বার লায়লাকে কাপড় টা সরিয়ে নিতে বলে তারপর তিনি স্যাভলন এন্টিসেপটিক লিকুইড লাগিয়ে দেন ,, টুটুল তো ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে আছে ,, মতিন মেম্বার স্যাভলন লাগানোর পর একটা ওষুধ লাগিয়ে দেন ,, তারপর লায়লা কে বলেন রক্ত মাখা কাপড় টা ফুলমতির হাতে দিয়ে টুটুলের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিতে ,, লায়লাও তাই করে ,, ফুলমতির হাতে রক্ত মাখা কাপড় টা দিয়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিতে থাকে টুটুলের হাতে ,, মতিন মেম্বার টুটুলকে বলতে থাকেন,, 

    – আমার লগে ‌ল তোরে ড্রেসিং করাইয়া আনি ,, চামড়া তো দুই ফাঁক হইয়া গেছে ,, তোরে ড্রেসিং করাইয়া একটা মিস্ত্রিও আনতে হইবো ,, তোর চাচি আইয়া যদি দেহে তোর হাত কাটছে এই কাম করতে গিয়া তহন আমারে আরো নানা কথা শুনাইবো ,, লায়লা তুই খালি কোনমতে ব্যান্ডেজ টা কইরাই দে ,, আমি ওরে ফার্মেসিতে লইয়া যাইতেছি ,,

    লায়লাও তাই করতে থাকে ,, এদিকে ফুলমতি একটা বিষন্ন চেহারা নিয়ে সেই রক্ত মাখা কাপড় টা হাতে আঙিনা থেকে বারান্দায় উঠে ,, আর তখনই শাহারিয়া বারান্দা দিয়ে যেতে থাকে ,,এখন শাহারিয়ার পরনে একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর একটা টি শার্ট,, শাহারিয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ফুলমতিকে বলতে থাকে ,, 

    – ঐদিকে কী হইছে রে ? 

    – টুটুল ভাইয়ের হাত কাইটা গেছে,, এই দেহেন মেলা রক্ত বাইর হইছে ,, (বলেই রক্ত মাখা কাপড় টা শাহারিয়ার ‌দিকে বাড়িয়ে দেখায় ,, )

    – ও আচ্ছা ,, আর তুই নিপাকে কোথাও দেখছিলি ? 

    – নিপা আফা তো সকালে নাস্তা কইরা জিনিয়া আপু গো বাড়ির ঐদিক গেছে ,, 

    – ওহ আচ্ছা ঠিক আছে,, তুই না কোথায় যাচ্ছিলি যা ,, 

    ফুলমতি তারপর আর কিছু বলে না ,, সে হাতে থাকা রক্ত মাখা কাপড় টাকে বারান্দায় কোনে রেখে চলে যেতে থাকে তার ঘরের দিকে ,,  শাহারিয়া দাঁড়িয়ে থাকে ,, ফুলমতি যখনি তার রুমে ঢুকে পরে শাহারিয়া গিয়ে সেই রক্ত মাখা কাপড় টা উঠিয়ে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে হনহন করে চলে যায় ,, 

    ঘরের ভিতর এসে সে বিছানায় গিয়ে বসে ,, বসে নিজের ফোন টা বের করে নিলয়ের নাম্বার টা ডায়াল করে সেখানে কল দেয় ,, 

    এদিকে নিলয় থানায় শাম্মি আর কল্পনাদের সাথে লাশ পর্যবেক্ষণ করছিলো ,, তার ফোন বেজে উঠে,, সে ফোন টা রিসিভ করে কানে তুলে ,, ওপাস থেকে শাহারিয়া বলতে থাকে ,, 

    – তুই এক্ষনি বাইক ‌টা নিয়ে আমার বাসায় চলে আয় ,, 

    – এক্ষনি ? 

    – হ্যা ,, একলা আসবি ,, দরকার আছে ,, 

    – আচ্ছা আসছি ,, 

    শাহারিয়া কলটা কেটে দেয় ,, দিয়ে বিছানায় একটা বালিশের উপর হেলান দিয়ে রক্ত মাখা কাপড় টার দিকে দেখতে থাকে ,, দেখে কাপড় টাকে পাশে রেখে কেসের প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত যা যা হয়েছে তা ভাবতে থাকে ,, 

     

    সময় এখন দুপুর ২:৩০ ,, মেইন রোড দেখানো হয় ,, এখন আকাশে মেঘ আছে ,, রোদ নেই ,, ভালোই ঠান্ডা করতেছে ,, কুয়াশা নেই তবুও ঠান্ডার উপস্থিতি বেশ ভালোভাবেই টের পাওয়া যায় ,, মেইন রোডে বাস ট্রাকের উপস্থিতি বেশ ভালোই ,, মাঝে মধ্যেই দুই একটা ট্রাক চলে যাচ্ছে ,, আর মেইন রোডে পাশে দাঁড়িয়ে আছে সামিহা আর দিথী ,, তারা দিথীর ফুফুর বাসা ফুলবাড়ীতে যাবে ,, দিথী মন ভালো নেই ,, কাল তার বান্ধবীর এমন মৃত্যু অবস্থা দেখার পর থেকে সে কেমন জানি মনমরাই হয়ে আছে তাই সামিহা তাকে বললো কোথাও ঘুরতে যাওয়া যাক তাই তারা দিথীর ফুফুর বাড়িতে যাচ্ছে ,, তারা রোডের পাশে দাঁড়িয়ে অটোর জন্য অপেক্ষা করতেছে ,, গ্রাম থেকে ডিরেক্ট ফুলবাড়ীর অটো পাওয়া যায় না তাই তারা মেইন রোডের পাশে দাঁড়িয়ে আছে অটোতে উঠার জন্য,,রোড দিয়ে আরেকটা বড় ট্রাক চলে গেলো ,, এইসময় টায় রোডে যানবাহনের চাপ বেশ ভালো রকমেরই থাকে ,, তখনই তারা দেখতে পায় একটা অটো তাদের দিকেই আসছে ,, তারা আটোটাকে থামায় ,, অটোটা ফাঁকা কোন যাত্রী নেই ,, সামিহা সেই অটোওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে ,,

    – ফুলবাড়ী বাজার যাবেন ? 

    – হ যামু আফা ,, রোডেই নামবেন না গ্রামের ভিতর পর্যন্ত ?

    সামিহা দিথীর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলতে থাকে ,,

    – রোডে নামে তো কিছু একটা নিতে হবে তাইনা ,, রোডেই নামি তাইলে ,, ? 

    দিথী মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত দেয় ,, সামিহা অটো ড্রাইভারের দিকে ফিরেই তাকিয়ে বলতে থাকে ,, 

    – রোডেই নামবো,, 

    – উডেন তাইলে ,, 

    – ভাড়া কত ? 

    – এইতো ৩০ টাকা দিবেন ,, 

    – আগে না ২৫ টাকা ছিলো ? (দিথী আগবাড়িয়ে বলে )

    – না আফা এহন বাইড়া গেছে ,, 

    – আচ্ছা চলো এইটাতেই উঠে পড়ি ,, অনেকক্ষণ পর একটা অটো পাইছি ,, অটো আজকে কম রাস্তায় ,, 

    – আচ্ছা চলো ,, (বলে যখনই দিথী আর সামিহা অটোটায় উঠতে যাবে ,, তখনই একটা বোরকা পড়া মহিলা হুট করে তাদের পাশ দিয়ে চলে এসে উঠে পড়ে অটোতে,, মহিলার সম্পূর্ণ শরীর বোরকা দারা আবৃত,, এমনকি চোখ ও দেখা যাচ্ছে না কারণ মুখের উপরে যে একধরনের কালো কাপড় দেয় বোরখা পড়লে সেটা ‌দেওয়া, হাতে হাত মোজা পড়া আর কাঁধে একটা পার্স ব্যাগ ,, দিথী আর সামিহা ঐ মহিলার এমন হঠাৎ আগমন দেখে কিছুটা অবাকই হয় ,, তারপর তারা যখন আবার উঠতে যেতে থাকে তখনই মহিলাটা তার ভারী কন্ঠে অটোওয়ালাকে বলতে থাকে ,, 

    – এই অটোটা সম্পূর্ণ আমি ভাড়া করে নিবো ,, আপনি যান ,, 

    – আরে আশ্চর্য তো ,, আমরাও যাই ,, আপনি একলাই পুরো অটোটার ভাড়া দিতে যাবেন কেন ,, ? (দিথী কৌতুহলী দৃষ্টিতে মহিলার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে ,, কিন্তু মহিলাই টা দিথীর দিক থেকে ফিরে অটোওয়ালার পাশে তাকিয়ে ভারি কন্ঠে বলতে থাকে ,,

    – কী হলো ,, যাচ্ছেন না কেন ,, আপনাকে বল্লাম না পুরো অটোটার ভাড়া আমি দেবো ,, তাড়াতাড়ি চলুন আমার তাড়া আছে ,, 

    মহিলা টার এরকম ব্যবহারে দিথীরা বেশ অবাক হয় ,,দিথী অটোওয়ালাকে বলতে থাকে

    – আচ্ছা ভাই আপনি যান ,, আমরা অন্য কোন অটো নিয়ে নিবো,, ইনি তো আমাদের উঠতেই দিতে রাজি নন,,

    মহিলাটা দিথীর কথা শুনে তার দিকে মুখ ফিরায় ,, কিন্তু মহিলার চোখ মুখ সব ঢাকা থাকাতে দিথীরা মহিলার আসল চেহারা দেখতেই পায়না,, অটোটা চলতে শুরু করে,, এবং চলে যেতে থাকে ,, 

    দিথী সামিহার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলতে থাকে ,, 

    – কেমন আজব মহিলা দেখছো আপু ,, হুট করে কোথা থেকে চলে এসে বসে পড়লো ,, আবার বলতেছে যে পুরো অটোটার ভাড়া তিনি দিবেন ,, কেন আমাদের যেতে দিলে কি এমন হতো তার ,, আজকালকার মানুষের মধ্যে এতো হিংসে বাপরে বাপ ,, 

    – আচ্ছা বাদ দেও ,, ঐযে দেখো আরেকটা অটো আসছে ,, 

    আরো একটা আটোকে তারা থামায় ,, এই অটোটাও পুরো ফাঁকা ,, দিথী অটো ওয়ালাকে তাড়াতাড়ি বলতে থাকে ,, 

    – ফুলবাড়ী বাজার যাবেন ?

    – হ আফা যামু ,, একজন ৩০ টাহা ,, 

    – চলো আপু এটাতেই উঠে পড়ি ,, 

    – হমম চলো,, ভাড়াও ঐ একি ,, 

    দিথী আর সামিহা উঠে পরে অটোটায় ,, অটো টা চলতে শুরু করে ,, তাদের পাশ দিয়েই একটা ট্রাক চলে যায় ,, দিথীরা যেই অটোটায় আগে উঠতে চেয়েছিলো সেটা তাদের থেকে ১৫-২০ ফিট সামনেই আছে ,, দিথী সামিহাকে বলতে থাকে ,, 

    – ঐ মহিলাটা অমন কেন করলো আপু ,, ? 

    – কে জানে,, হয়তো উনারি জামাই তাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছেন অটো সহ, নিজেরা নিজেরা ঘুরবেন ,, তাই রাগের মাথায় পুরো অটোটাই ভাড়া করে নিয়ে গেছেন ,, হে হে হে ,, 

    – হমম তোমাকেই বলছে ,, আচ্ছা তো আমরা কী নিয়ে যাবো তাদের বাসায় ,, 

    সামিহা কিছু একটা বলতেই যাবে তখনই তাদের অটোর খুব কাছ দিয়ে একটা দূরপাল্লার বাস সজোরে সামনের দিকে চলে যায় ,, দেখে মনে হচ্ছিল বাসের গতি অনেক,, প্রায় ১২০ থেকে ১৩০ তো হবেই ,, বাস টা একে বেঁকে চলতে থাকে ,, যেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ,, আর এভাবেই আঁকাবাঁকা করে যেতে যেতেই তাদের থেকে ১৫-২০ ফিট সামনে থাকা অটোটাকে একদম পিষে তার উপর দিয়ে গিয়ে রোডের পাশে থাকা এক বট গাছের সাথে গিয়ে সজোরে বাড়ি খায় বাসটা ,, বিকট এক শব্দ হয় ,, চারিদিকে আবহাওয়া একদম থেমে যায় ,, শুধু হার্টবিটের শব্দ শোনা যাচ্ছে,, দিথীরা কিছু বুজে উঠার আগেই তাদের আগের অটোটা মানে যেই অটোটায় তারা আগে উঠতে চেয়েছিলো সেটাকে একদম পিষে ফেলে সামনের এক বড় বট গাছের সাথে বাড়ি খেয়ে বাস টা সামনের দিক থেকে দুই ভাগ হয়ে যায় ,, রাস্তার চলা গাড়ি গুলো সব ব্রেক করে থেমে যায় ,, রাস্তার দুইটাশে যারা ছিলো তারা এগিয়ে যেতে থাকে ঘটনাস্থলের দিকে,, চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যায়,, রোডে থামা বাস আর ট্রাক থেকে লোকজন নেমে সেই ঘটনাস্থলের দিকে দৌড়ে যেতে থাকে ,, দিথীরা এখন সেই ঘটনাস্থল থেকে ১০-১৫ ফিট দূরে ,, রাস্তায় দেখতে পাওয়া যায় খালি রক্ত আর রক্ত , ,দিথী যাচ্ছিলো তার মন ভালো হওয়ার জন্য ফুফুর বাড়ি আর যাওয়ার এখ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেখলো সে নিজের চোখের সামনেই,, দিথী জ্ঞান হারায় ,, জ্ঞান হারিয়ে তার মাথা সামিহার কাধে ঢলে পরে ,, 

    – দিথি ,, এই দিথী ,, কী হলো তোমার,, দিথী ,, 

    তখনই তাদের অটো ড্রাইভার বাইরে উঁকি মেরে বলতে থাকে ,, 

    – মানুষ মনে হয় অনেক মারা গেছে ,, রাস্তা একদম রক্তে ভাইষা গেছে ,, (বলেই লোকটা অটো টা থেকে নামতে উদ্যত হয় ,, তখনই সামিহা চিন্তিত গলায় বলতে থাকে ,, 

    – ভাইয়া আপনি ঐদিকে যাইয়েন না ,, আমাদেরকে একটু বাসায় দিয়ে আসুন ,, দিথী ,, চোখ খোল দিথী ,, ভাইয়া প্লিজ আমাদেরকে বাসায় দিয়ে আসন ,, 

    অটোওয়ালাও আর কিছু বলেনা ,, তিনি অটোতে চড়ে বসে অটোটাকে ঘুড়িয়ে নিতে থাকেন ,, এদিকে লোকজন গিয়েছে বাস টার দিকে ,, দেখে মনে হচ্ছে অনেক হতাহত হবে ,, বাসের সামনের অর্ধেক টা পুরোটাই একদম চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে ,,বাসের ভিতর থেকে মানুষের আর্তনাদও শোনা যাচ্ছে,, দিথীদের অটোটা ঘুড়িয়ে বিপরীত দিকে চলতে শুরু করে ,, পিছন থেকে অনেক মানুষের হৈচৈ আর কোলাহল শোনা যাচ্ছে,, দিথীর মাথা সামিহার বুকে ,, সামিহার উতলা হয়ে তাড়াতাড়ি অটোওয়ালাকে বাসার দিকে নিয়ে যেতে বলছে ,, অটো চলে যেতে থাকে বাসার উদ্দেশ্যে,, 

     

    আমাদের দেখানো হয় শাহারিয়ার রুম ,, তার ল্যাপটপের সামনে বসে রয়েছে সে ,, ঘরে কারেন্ট নেই ,, এখন সময় বিকেল ৩ টে ,, ল্যাপটপে সে সিরিয়াল কিলিং কেস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতেছে ,, দেখতেছে সিরিয়াল কিলার দের ব্যবহার চাল চলন কেমন থাকে এইসব জিনিস ,, তখনই তার ফোনে ফোন আসে ,, শাহারিয়া ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে রিয়াদ ফোন দিয়েছে ,, শাহারিয়া ফোন টা কানে তুলে কাঁধ দিয়ে চেপে ধরে ,, 

    – হ্যা বল রিয়াদ ,, কোন কিছু পেলি সেখান থেকে ?

    – হ্যা পেয়েছি বলা যায় ,, একটা গামছা পেয়েছি অটোটার মধ্যে থেকে আর তেমন কিছুই ছিলো না সেখানে ,, 

    – গামছা ? আচ্ছা গামছা টার ছবি তুলে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ এ সেন্ড কর ,, 

    – আচ্ছা ,, আর আমি এখন গাড়িতে ,, রওনা দিয়ে দিছি ,, ঐদিকে বলে এক্সিডেন্ট হইছে ,, 

    – এক্সিডেন্ট ? কোথায় এক্সিডেন্ট হইছে ? কীসের এক্সিডেন্ট ? 

    – আমাকে ইনফর্মার তো বললো বেশ বড়সড়ই এক্সিডেন্ট,, হতাহত বলে অনেক হইতে পারে ,, আমাদের আনন্দ পুর বাজার থেকে বলে বেলি দূরে না কাছেই ,, যায়গাটার নাম রজলিপাড়া ,, বড় বাসের বলে এক্সিডেন্ট,, আমি এখন সেদিকেই যাচ্ছি,, তবে সময়মতো পৌছাবো কিনা জানিনা,, 

    – আচ্ছা আমি তাইলে নিলয়কে ঐখানে যেতে বলছি ,, তুই ফায়ার সার্ভিস কে জানিয়ে দিস ,, কেমন ?

    – আচ্ছা ঠিক আছে ,, আমি রাখলাম,, 

    – আচ্ছা 

    শাহারিয়া ফোন টা কানা আর কাঁধের মাঝখান থেকে নামিয়ে সেখানে নিলয়ের নাম্বার উঠিয়ে কল দিতে থাকে ,, কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর নিলয় ফোনটা ধরে ,, শাহারিয়া বলতে থাকে ,,

    – তুই কোথায় এখন ? 

    – থানাতে,, কেন কোন দরকার,, ?

    – হ্যা ,, তুই তাড়াতাড়ি বাইকটা নিয়ে রজলিপাড়া নামে একটা যায়গা আছে হাইরোডে ,, সেইখানে যা ,, বড় সড় বলে একটা এক্সিডেন্ট হইছে বাসের ,, তুই তাড়াতাড়ি গিয়ে এদিক টা সামাল দে ,, রিয়াদ দিনাজপুর থেকে রওনা দিছে,, কিন্তু এসে সময় মতো পৌঁছাতে পারবেনা ,, তুই তাড়াতাড়ি যা ,, হতাহত বলে অনেক হইছে ,, 

    – আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখনি যাচ্ছি ,, 

    – আর একটা কথা ,, পরীক্ষা করতে দিয়েছিস ? 

    – হ্যা দিয়েছি ,, তারা ম্যাচ করে দেখতেছে ,, ম্যাচ হলেই তোকে জানাবে ,, 

    – আচ্ছা,, ওদের একটু তাড়াতাড়ি করতে বল ,, আজকে রাতই আমাদের মিশন ,, 

    – ওকে ,, আমি গেলাম ঐদিকে,, 

    – আচ্ছা,, 

    শাহারিয়া কল টা কেটে দেয় ,, দিয়ে আবার ল্যাপটপে মনযোগ দেয় ,, সিরিয়াল কিলার দের কে নিয়ে রিসার্চ করতে থাকে সে ,,

     

    এদিকে আমাদের মায়াদের বাসা দেখানো হয় ,, ঘরে বিছানায় হেলান দিয়ে গল্পের বই পড়ছে রাতুল ,, বাইরে আবার কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে ,, বিকেল সময় ,, কুয়াশা আর তার সাথে ঠান্ডাটা আবার জেঁকে বসতে শুরু করেছে ,, রাতুল আজ একটা গোয়েন্দা গল্প পড়ছে ,, বইয়ের নাম “Mystery of 7 murders”,, তখনই ঘরে একটা ছোট বাটি নিয়ে প্রবেশ করে মায়া ,, তার হাতের বাটিটায় বাদাম ,, তার পরনে শাড়ি আর সোয়েটার,, মায়া এসে বিছানায় রাতুলের পাশে বসে ,, বসে বাদাম ফুরে খেতে খেতে বলতে থাকে,,

    – কী করো ,, 

    – এইতো পড়তেছি ,, 

    – বাদাম খাবে ,, ? এখনি ভাজলাম ,, হা করো খাইয়ে দিচ্ছি,, 

    রাতুল হা করে আর তখনই মায়া একটু দুষ্টুমি করে বাদামের যায়গায় বাদামের খোসা দিয়ে দেয় মুখের মধ্যে,, দিয়েই মুখ চেপে হাসতে থাকে ,, রাতুল মুখ বন্ধ করে চাবাতে গিয়েই বুঝতে পারে এটা খোসা ,, সে ওয়াক থু ওয়াক থু করতে করতে হেলান থেকে সোজা হয়ে বসে,, বসে বইটা পাশে রেখে বলতে থাকে 

    – বাদাম না দিয়ে খোসা দিলা কেন ,, আমার মুখে এখন খোসার গুঁড়া দিয়ে ভরে গেছে ,, ওয়াক থু ,, 

    – হা হা হা ,, বই পরতে পরা অবস্থায় তোমাকে কেউ বিশ খাইয়ে দিলেও টের পাবানা ,, বইয়ের প্রতি এতো নেশা না দেখায় যদি আমার প্রতি দেখাইতা তাইলে এতোদিনে আমাদের ঘরে ফুটফুটে একটা সন্তান চলে আসতো ,, তুমি খালি তোমার বই নিয়েই সারদিন পরে থাকো ,, হুঁ,, 

    রাতুল আবার হেলান দিয়ে বই খুলে বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,, 

    – আজকের বই টা না সেই ,, অনেক মজার আর রহস্যময়,, খুনিকে প্রায় ধরেই ফেলবে ,, 

    – আচ্ছা ধরুক গে ,, চলো না একটু মজা করি ,, (বলেই রাতুল কাঁধে মাথা রেখে বইয়ের দিকে তাকায় মায়া ,, )

    – মজা সব রাতে বউ ,, এখন আমি গল্প পরবো ,, (এক হাত দিয়ে বই ধরে আরেক হাত দিয়ে মায়ার গাল ধরে বলতে থাকে রাতুল)

    – ও জান চলো না একটু লেপের নিতে ঢুকে গল্প করি ,, (রাতুলের পেটে উপর মাথা রেখে তার দিকে ফিরে বলতে থাকে মায়া ,, )

    – না সোনা ,, এখন আমি গল্প পরি ,, তারপর তোমাকে গল্প শোনাবো,, 

    এবার মায়া কিছুটা বিরক্ত হয়ে রাতুল উপর থেকে মাথা উঠিয়ে দাঁড়িয়ে বলে ,,

    – পরে আমিও ঠান্ডা হয়ে যাবো আর বাদামও ঠান্ডা হয়ে যাবে ,, তখন খালি খাইতে আইসো ,, একদম মিটার বক্স আমি লাইত্থেই ভাইঙ্গে ফেলবো ,, দেইখো তুমি ,, (বলেই ঘর থেকে বাদামের বাটি নিয়ে হন হন করে চলে যায় মায়া ,, 

    – আচ্ছা ভাইঙ্গে ফেইলো ,, আমি এখন গল্প পরবো ,, 

    (বলেই আবার গল্প পড়াতে মনোযোগ দেয় রাতুল ,, 

     

    এদিকে দেখানো হয় সেই এক্সিডেন্ট এর যায়গা ,, চারপাশে অনেক মানুষের ভিড় ,, সেই মানুষ গুলোকে আটকিয়ে রেখেছে পুলিশ কনস্টেবলরা ,, সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে ,, চারিদিকে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে ,, বাস টাকে এতোক্ষণে ক্রেইন দিয়ে টেনে সাইডে সড়ানো হয়েছে ,, বাসের নিচ থেকে অটো টাকেও টেনে বের করা হয়েছে ,, অটোটার অবস্থা বলার মতো না,, একদম পিষে গেছে,, পিষে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে ,, ফায়ার সার্ভিসের লোকরা এখন সেই অটোটা থেকেই মৃতদেহ গুলো উদ্ধারের কাজ করছে ,, গনমাধ্যমের লোকও এসে উপস্থিত হয়েছে ,, তারা এইটা নিয়ে নিউজ করছে ,, নিলয় আর দিনাজপুর ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কর্মকর্তা আলামীন সাহেব দূর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটার পিছন দাঁড়িয়ে একে অপরের সাথে কথা বলছেন ,, নিলয় বলে ,,

    – আচ্ছা দূর্ঘটনাটা ঘটলো কীভাবে ?

    – স্যার আমরা এখানে এসে প্রত্যক্ষদর্শী যাদের পেয়েছিলাম তাদের ভাষ্যমতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ঠাকুরগাঁও গামী শ্যামলী পরিবহনের একটা বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটা অটোকে চাপা দিয়ে ঐ বড় বট গাছ টার গায়ে সজোরে ধাক্কা খায় ,, দেখতেই তো পারছেন বাস টার অবস্থা কী করুণ ,,!

    – কয়টা লাশ উদ্ধার করতে পেরেছেন এখান থেকে ? 

    – স্যার আমরা বাস থেকে তো ৫ টা মৃতদেহ উদ্ধার করতে পেরেছি ,, ৫ জনই পুরুষ,, বাসে কোন নারী মৃতদেহ ছিলোনা ,, এখন ঐ অটোটায় খোঁজ চালাচ্ছি দেখা যাক ওখানে কয়জনের লাশ পাওয়া যায় ,, তখনই আমরা দেখতে পাই দুই জন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা একটা লাশ সেই পিষে যাওয়া অটোটা থেকে বের করছে ,, লাশ টার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো,, লাশটার বর্ণনাটা আপনাদের একটু দেই, লাশের চোখ গুলো মেলানো অবস্থা ছিলো, ডান চোখের পাশ টার হাড় ভেঙে ভিতরের মাথার মগজ বের হয়ে গেছিলো ,, মুখ হা করে ছিলো,, একটা হাত বডি থেকে টোটালি বিচ্ছিন্ন ,, আরেকটা হাত ভেঙে কোনমতে বডির সাথে লেগে ঝুলে আছে ,, আর পেটের একপাশ টা একদম বাসের সামনের চাকার উপর পরেছিলো তাই পেটের একপাশ টা ফেটে প্রচুর রক্ত বের হয়েছিলো ,, মূলত এই কারণেই রাস্তা রক্তে ভেসে গিয়েছিলো ,, আর কোমড় থেকে বাকি টুকু শরীর বিচ্ছিন্ন হয়ে বাসের সামনের বডির সাথে এখনো লেগে আছে ,, কি বিভৎস দেখতে সেই লাশ টা ,, লাশ টা পুরুষের,, অর্থাৎ সেই অটো ড্রাইভারের লাশ ,, আমাদের ফ্লাসব্যাকে সেই অটো ড্রাইভারের চেহারা টা দেখানো হয় ,, তখন কত সুন্দর ভাবে কথা বলছিলো সে দিথীদের সাথে ,, তার রুপ , জৌলুস তখন কতসুন্দর ছিলো,, কিন্তু নিমেষেই তা কি ভয়ংকর  রূপে পরিবর্তিত হলো ,, মৃত্যুর কাছে সবাই হেরে যায় ,, 

    দুইজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মিলে সেই লাশ টাকে তাদের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে যেতে থাকে ,, আর এক জন কর্মী এসে প্রধান কর্মকর্তা আলামীনকে বলতে থাকে ,,

    – স্যার ,, অটোটা থেকে শুধু একজনেরই লাশ পাওয়া গেছে ,, আর কোন লাশ নেই অটোটায় ,, 

    – তাইলে এই নিয়ে মোট ৬ টা মৃতদেহ পেলাম আমরা ,, নিলয় সাহেব,, মোট ৬ টা মৃতদেহ,, ৫ টা বাসের ভিতর থেকে পেয়েছি আমরা ,, সেই ৫ টা পুরুষ ডেডবডি ছিলো ,, আর এখন একটা অটো থেকে উদ্ধার হলো এটাও পুরুষ ডেডবডি ,, আর কোন মৃতদেহ নেই এই দূর্ঘটনাস্থলে ,, 

    – হমমম ,,খুবই নির্মম মৃত্যু,, আচ্ছা ঠিক আছে আপনারা লাশ গুলোকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দিন ,, আর এই বাস টাকে ক্রেন দিয়ে সড়ানোর ব্যবস্থা করুন ,, রাস্তার দুইপাশেই দীর্ঘ ‌জ্যাম লেগে রয়েছে ,, এদিকে রাত নেমে গিয়েছে ,, তাড়াতাড়ি রাস্তাটা ফাঁকা করে ফেলুন,, 

    – ওকে স্যার ,, (বলেই আলামীন সাহেব তাদের কর্মীদের সব কাজ বুঝিয়ে দিতে চলে যান ,, 

    এদিকে সন্ধ্যা রাতে রূপ নিতে শুরু করেছে ,, চারপাশে উৎসুক জনতার ভিড় এখনো কমেনি,, কেউ ফোন দিয়ে ভিডিও করছে ,, কেউবা ফেসবুক ‌লাইভে এসে যায়গাটাকে দেখাচ্ছে ,, এদিকে গনমাধ্যম কর্মীরা এসে নিলয়ের সামনে ভিড় করে দাঁড়ায়,, নিলয় সবকিছু বিষয়ে তাদের জানায়,, কী করে বাসটা দূর্ঘটনা হয়েছে কতজন মারা গেছে এইসব,, 

    এদিকে ফায়ার সার্ভিসের একটা ক্রেন এসে সেই বাস টাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে ,, রাস্তাটাকে স্বাভাবিক করতে তারা চেষ্টা করে ,, রাত নেমে আসে ,, আশেপাশের উৎসুক জনতার ভিড় কে পুলিশ কনস্টেবলরা কমিয়ে ফেলছে,, গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তার একটা পাশ খুলে দেওয়া হয়,, এবং সেখান দিয়ে গাড়িই গুলো যেতে থাকে ,, 

     

    এদিকে আমাদের দেখানো হয় শাহারিয়ার রুম ,, রাত নেমে গেছে ,, ঘরে লাইট জ্বালানো,, সে বিছানায় বসে ল্যপটপ চালাচ্ছে,, তার মাথায় নানান চিন্তা নানা টেনশন,, কীভাবে সে খুনি কে সেটা নিশ্চিত হতে পারবে ? কীভাবে সে প্রমাণ জোগাড় করবে ,, ইত্যাদি ইত্যাদি চিন্তায় তার মাথা একদম ব্যাথা হয়ে উঠছিলো ,, তখনই হঠাৎ তার মনে পরে ঐদিন আরোহীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ভিডিওটা তো দেখতে ভুলেই গেছি ,, সে পেনড্রাইভ টা বের করে পকেট থেকে,, বের করে সেটা ল্যপটপে ইনপুট করে ,, করে সেই ভিডিও ফুটেজ টা চালু করে দেখতে থাকে ,, সে ভিডিও টাকে বার বার প্লে করে দেখতে থাকে ,, খুঁজতে থাকে এমন কিছু যা তার মনে থাকা সন্দেহের সাথে মিলবে ,, সে বার বার ভিডিও খুব মনযোগ সহকারে দেখতে থাকে ,,আর দেখতে দেখতে হঠাৎ ভিডিওর একটা যায়গায় সে পজ করে ,,সে ভিডিওটার যায়গায় জুম করে ,, সে নিজের মাথটাকেও ল্যাপটপের কাছে আনতে থাকে ,, তার চোখ মুখ বড় হতে থাকে ,, এবং সে খুশিতে জোড়ে এক চিৎকার দিয়ে বসে,, 

    – ইয়েসসসস ,, পেয়ে গেছি ,, পেয়ে গেছি ,, খুনি তাইলে এই ছিলো ,, আর এতোদিন আমাদের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াতো কিন্তু আমরা বুঝতেই পারিনি ,, ? আলহামদুলিল্লাহ খুনিকে শেষ মেষ খুঁজেই পেলাম ,, এখন ফোন করে জানতে হবে যে ঐ জিনিষটা ম্যাচ করেছে কি না ,, ঐটাই এখন আমার মুক্ষুম প্রমাণ ,, (বলেই শাহারিয়া নিজের ফোন টা হাতে নেয় কাউকে কল করার জন্য ,, আর তখনই দেখে শাম্মিই তাকে ফোন দিয়েছে ,, শাহারিয়াও তাকেই কল করতে যাচ্ছিলো ,, যাইহোক শাহারিয়া তাড়াতাড়ি ফোন টা রিসিভ করে ,, করেই বলতে থাকে ,, 

    – ম্যাচ করছে তাইনা ? 

    – হ্যা দুইডা স্যাম্পল ম্যাচ করছে ,, 

    – ইয়েসস ,, খুনিকে এখনি ধরতে যেতে হবে ,, এখনি ,, শোন শাম্মি,, আমি রিয়াদ নিলায় আর ইমন যাচ্ছি খুনিকে ধরতে ,, তোরা ল্যাবেই থাক ,, আমরা খুনিকে নিয়ে থানাতেই যাবো ,, ওকে ,,

    – আমিও তোদের সাথে যেতে চাচ্ছিলাম,,

    – নানানা ,, খুনি খুবই ডেন্জেরাস,, তোরা মেয়ে তোদেরকে আমি বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারিনা ,, আমরা তোর ভাইরা আছিনা , আমরাই সব সামলে নেবো ,, 

    – আচ্ছা ,, ঠিক আছে,,

    – আরেকটা কথা শোন ,, 

    – হ্যা বল ,, 

    – তুই ম্যাচ করার রিপোর্ট টার ছবি তুলে আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ এ সেন্ড কর জলদি ,, 

    – ওকে ,, 

    শাম্মি কল টা কেটে দেয় ,, সে নুপুরের লাশ টার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো,, সে কল্পনাকে রিপোর্ট টা দিতে বলে ,, কল্পনা রিপোর্ট টা তার হাতে দেয় ,, শাম্মি তার হাতে রিপোর্ট টা ধরে সেটার ছবি নেয়,, রিপোর্ট টার ছবি তো আসেই ,,আর তার সাথে নুপুরের মাথার খুলিটার ছবিটাও চলে আসে সেই ফ্রেমে ,, ছবিটা তুলে শাম্মি শাহারিয়াকে সেন্ড করে দেয় ,, 

    এদিকে শাহারিয়া তাড়াতাড়ি জ্যাকেট পরে নিচ্ছে ,, মিশনে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে ,, তখনই তার ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ এ কোন কিছু আসার নোটিফিকেশন বেজে উঠে ,, সে জানে যে এইটা ঐ রিপোর্ট টাই হবে ,, সে জ্যাকেট পরে তার অস্ত্র রেডি করে রিয়াদকে কল দেয় ,, 

    – হ্যা বল ,, 

    – তুই কোথায় এখন ,, ? 

    – আমি তো এই চলে আসছি,, মেইন রোড থেকে থানার দিকে যাচ্ছি ,, 

    – ঐদিকে যাইতে হবে না,, তুই গ্রামের তিন রাস্তার জারুল গাছের মোড়ের ওখানে আয় ,, খুনি কে পেয়ে গেছি,, 

    – কি বলিস ? খুনির সন্ধান পাইছিস ? কে খুনি ? 

    – বলবো বলবো সবই বলবো ,, তুই তাড়াতাড়ি আয় আর তোর সাথে তো ইমন আছে তাই না ,, ওকেও রেডি থাকতে বল ,, আজ রাতে বড় মিশন ,, আর এই মিশনই এই কেসের শেষ মিশন,, 

    – ওকে আসতেছি ,,

    শাহারিয়া কল কেটে দেয় ,, দিয়ে রেডি হয়ে সে নিলয়কে কল দিয়ে জারুল গাছের ওখানে আসতে হবে এটার কথা বলতে বলতে ঘর থেকে হনহন করে বেড়িয়ে যায় ,, লায়লা ট্রেতে করে নাস্তা নিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু সে দেখে শাহারিয়া হনহন করে তার সামনে দিয়ে চলে গেলো ,, অবশ্য সে শাহারিয়ার জন্য নাস্তা নিয়ে যাচ্ছিলো না ,,সে যাচ্ছিলো শাহারিয়ার এক রুম পরের ফুলমতির রুমে ,, লায়লা ফুলমতির রুমে প্রবেশ করে ,, ফুলমতি বিছানায় হেলান দিয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ডেসিন টেবিলের দিকে ,, তার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক কান্না করেছে,, লায়লা গিয়ে ফুলমতির পাশে বসে , ট্রে টা পাশে থাকা টেবিল টায় রাখে ,, লায়লা ফুলমতিকে বলতে থাকে ,,

    – বনু ,, নাস্তাডি খাইয়া নে ,, সেই সকাল থেইকা মুখে পানি ছাড়া আর কিচ্ছু তুলস নাই ,, নাস্তাডি খাইয়া নে বনু ,, 

    ফুলমতি কোন কথাই বলেনা ,, শুধু হাত দিয়ে তার চোখের পানি মুছে, 

    – বনু এমন করিস না ,, নাসিম ভাই আইয়া পরবো ,, তার লাইগা আর কষ্ট পাইস না ,, 

    – অয় কেমনে পারলো আমারে রাইখা কোথাও চইলা যাইতে,, আমি কী তারে কম ভালোবাসতাম ,, লায়লা,, আমার নাসিমের কিছু হয়নাই তো ,, গ্রামের অবস্থা অনেক খারাপ,, নাসিমরে যদি কেউ অমন কইরা ,, (আর বলতে পারে না ফুলমতি ,, লায়লা কে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে থাকে সে ,, সে ভাবছে নাসিমকেও হয়তো কেউ মেরে ফেলবে বা ফেলেছে ,, অনেক ভালোবাসতো সে নাসিম কে ,, নাসিমকে ভালোবেসে “পিউ” নামেওও ডাকতো সে , শখ করে দিয়েছিলো নামটা ,, কিন্তু কাল সন্ধ্যার পর থেকে নাসিমের অর্ধাৎ পিউ’য়ের আর কোন দেখা নেই,, গ্রামে এমন খুনাখুনি চলার মাঝে তার এই ভাবনাটা আসাটাই স্বাভাবিক,, 

    লায়লা ফুলমতিকে শান্ত করার চেষ্টা করে ,, বলতে থাকে ,,

    – তার কিছু হইবোনা বনু ,, তুই এই গুলা খাইয়া নে ,, আর কান্না করিসনা বনু ,, দেখিস তোর পিউ ঠিক ফিরা আইবো ,, ঠিক ফিরা আইবো ,, 

    – আমারে তুই একটু একা থাকতে দে ,, তুই যা ,, (বলেই আবার বিছানায় বসে চোখ মুছতে থাকে ফুলমতি ,, 

    – কিন্তু,,,,,(লায়লা কিছু বলতে চেয়েছিলো ,, কিন্তু ফুলমতির অবস্থা দেখে আর বলেনা,, সে ফুলমতিকে একা ছেড়ে দিয়ে চলে যায় ঘর থেকে,, 

    ফুলমতির মনে হতে থাকে সেই দিন গুলোর কথা ,, যখন তারা এক সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিল,, মনে হতে থাকে নাসিমের সাথে প্রথম দেখা হওয়ার মুহূর্ত গুলো ,, সেই সন্ধ্যায় গৌধূলী দেখতে দেখতে দুইজনের একসাথে পেয়ারা মাখা খাওয়া ,, কত্ত সুন্দর সুন্দর স্মৃতি আছে তার পিউ’য়ের সাথে ,, সবগুলো সে মনে করতে থাকে ,, তার চোখ বেয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পরতে থাকে ,, এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সে ডেসিন টেবিলের দিকে ,, 

     

    রাত ৭ টা,, নীলপদ্ম পুকুর দেখানো হয় আমাদের,, পুকুর টা বড় ,, আগেও একবার বলেছিলাম আপনাদের ,, পুকুরের এক পাশ থেকে আরেক পাশের জিনিস গুলোকে বেশ ছোট দেখা যায় ,, আমরা দেখতে পাই একজন লোক পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে ,, পুকুর পাড়ে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় আমরা সেই লোকটার চেহারা দেখতে পাই না,, লোকটার পিছনে একটা ছোট্ট ঘর ,, ঘরের ভিতরে লাল আলো জ্বলছে ,, লোকটা ঘর থেকে কিছুটা সামনে দাঁড়ানো,, তার পরনে কালো জ্যাকেট ,, কালো প্যান্ট ,, তবে মাথায় হেলমেট নেই,, লোকটা ফোনে কারো সাথে জানি কথা বলছে ,, আমাদের কে লোকটার পিছন থেকে তাকে দেখানো হয় ,, লোকটার কথা গুলো ছিলো কিছুটা ভারি কন্ঠের ,, লোকটা ফোনে কাউকে বলছিলো ,, 

    – ঘরে সব ঠিকঠাক আছে তো ? ,,(তারপর ওপাস থেকে কেউ একজন কথা বলে ,) আচ্ছা আচ্ছা ,, আজকে রাত টা কিন্তু উৎসবের রাত ,, উৎসব হবে আজ উৎসব ,,হা হা হা হা ,,(ওপাস থেকে তারপর কেউ একজন কথা বলে) হ্যা ,, আজকে রাতের পর থেকে এইসব ছেড়ে দিতে হবে,, নাহলে শাহারিয়াদের আবার আমার উপরে সন্দেহ করতে পারে ,, (তারপর ওপাস থেকে কেউ একজন কথা বলে ),, আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে রাখলাম,, খাবার বেশিক্ষণ আবার ফেলে রাখতে নেই ,, নষ্ট হতে শুরু করে দিবে তখন,, হা হা হা হা ,, কাজ শেষ করে ফোন দিবোনে কেমন ? ,,(ওপাস থেকে কেউ একজন কথা বলে) আচ্ছা ঠিক আছে ,, (বলেই ফোন টা কান থেকে নামিয়ে নেয় সেই লোকটা ,, নিয়ে ফোনটা পকেটে রাখতেই যাবে তখনই কেউ তার পিছন থেকে তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধরে ,, ধরে বলে 

     

    ” তোমার খেলা শেষ টুটুল,, তুমি ধরা পড়ে গিয়েছো ,, You are under arrest”

     

    চলবে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

     

    [ তাইলে টুটুলই ছিলো এতো সব কিছুর পিছনে ? কেন মারলো সে এতোজন কে ? নুপুর কী হয় তার ? আর দিথীদের প্রথম অটোতে তো একজন বোরখা পরিহিত মহিলা উঠেছিলো ,, কিন্তু পরবর্তীতে এক্সিডেন্ট হওয়ার পর অটো থেকে শুধু অটো চালকের লাশ ছাড়া আর কারোর লাশ পাওয়া যায়নি কেন ? কে ছিলো সেই বোরখা পরিহিত মহিলা ? টুটুলই যে খুনি শাহারিয়া তা কীভাবে বুঝতে পারলো ? নানা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে তাই না ? উত্তর পাবেন‌ পরবর্তী পর্বে ,, আর এর পরের পর্বটাই এই গল্পের এই সিজনের লাষ্ট পর্ব ,, আর সেখানেই আপনারা সব রহস্যের খোলাসা দেখতে পাবেন ,, জানাবেন কেমন হচ্ছে 😊 ,,আর এইটা এখন এই গল্পের সবচেয়ে বড় পর্ব ,, এই পর্বে দুইটি ভাগই মিলিয়ে মোট ৯৭৬০ টা শব্দ ব্যবহার করা হইছে, তাইলে ভাবেন কী পরিমাণ সময় লাগছে এইটা লেখতে ,, সেই দুপুর ১ টায় লেখতে বসছি আর মাত্র লেখা শেষ করলাম ,, এখন বাজে রাত ১১ টা,, মাঝখানে অবশ্য খাওয়া দাওয়ার জন্য উঠছি,, লেখতে লেখতে হাতের অবস্থা পুরা শেষ,, সোজা করতে পারতেছিনা ,, পরবর্তী পর্ব টা খুব শীঘ্রই পাবেন ,, 😊💖 ]

     

    গল্প:: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব:: ২৫ (দ্বিতীয় ভাগ)

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প : গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২৬ ও শেষ (১ম ভাগ)

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    রাত ৭ টা,, নীলপদ্ম পুকুর দেখানো হয় আমাদের,, পুকুর টা বড় ,, আগেও একবার বলেছিলাম আপনাদের ,, পুকুরের এক পাশ থেকে আরেক পাশের জিনিস গুলোকে বেশ ছোট দেখা যায় ,, আমরা দেখতে পাই একজন লোক পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে ,, পুকুর পাড়ে পর্যাপ্ত আলো না থাকায় আমরা সেই লোকটার চেহারা দেখতে পাই না,, লোকটার পিছনে একটা ছোট্ট ঘর ,, ঘরের ভিতরে লাল আলো জ্বলছে ,, লোকটা ঘর থেকে কিছুটা সামনে দাঁড়ানো,, তার পরনে কালো জ্যাকেট ,, কালো প্যান্ট ,, তবে মাথায় হেলমেট নেই,, লোকটা ফোনে কারো সাথে জানি কথা বলছে ,, আমাদের কে লোকটার পিছন থেকে তাকে দেখানো হয় ,, লোকটার কথা গুলো ছিলো কিছুটা ভারি কন্ঠের ,, লোকটা ফোনে কাউকে বলছিলো ,, 

    – ঘরে সব ঠিকঠাক আছে তো ? ,,(তারপর ওপাস থেকে কেউ একজন কথা বলে ,) আচ্ছা আচ্ছা ,, আজকে রাত টা কিন্তু উৎসবের রাত ,, উৎসব হবে আজ উৎসব ,,হা হা হা হা ,,(ওপাস থেকে তারপর কেউ একজন কথা বলে) হ্যা ,, আজকে রাতের পর থেকে এইসব ছেড়ে দিতে হবে,, নাহলে শাহারিয়াদের আবার আমার উপরে সন্দেহ করতে পারে ,, (তারপর ওপাস থেকে কেউ একজন কথা বলে ),, আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে রাখলাম,, খাবার বেশিক্ষণ আবার ফেলে রাখতে নেই ,, নষ্ট হতে শুরু করে দিবে তখন,, হা হা হা হা ,, কাজ শেষ করে ফোন দিবোনে কেমন ? ,,(ওপাস থেকে কেউ একজন কথা বলে) আচ্ছা ঠিক আছে ,, (বলেই ফোন টা কান থেকে নামিয়ে নেয় সেই লোকটা ,, নিয়ে ফোনটা পকেটে রাখতেই যাবে তখনই কেউ তার পিছন থেকে তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধরে ,, ধরে বলে 

     

    ” তোমার খেলা শেষ টুটুল,, তুমি ধরা পড়ে গিয়েছো ,, You are under arrest”

    লোকটা এই কথাটা শুনেই আস্তে আস্তে ফিরে তাকায়,, এবং আমরা দেখতে পাই আসলেই সে টুটুল ,, টুটুল পিছনে ফিরে দেখে শাহারিয়া তার মাথায় বন্দুক ধরেছে ,, আর তার পিছনে রিয়াদ,ইমন,নিলয় আর দুই জন কনস্টেবল ,, টুটুলের চেহারায় অবাক হওয়ার ছাপ স্পষ্ট ,, টুটুল এদিক ওদিক তাকাতে থাকে ,, এবং পরমুহূর্তেই শাহারিয়ার হাতে ধাক্কা দিয়া শাহারিয়ার হাত থেকে বন্দুক টা ফেলে দিয়ে দৌড় দেয় সে ,, শাহারিয়া কিছুটা পড়ে যায় ,, শাহারিয়া রিয়াদ দেরকে বলে টুটুলকে ধরার জন্য  ,, রিয়াদ, নিলয় রা দৌড় দিতে থাকে টুটুলের পিছনে ,, টুটুল প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে ,,সে জানে যে সে ধরা পরলে তাকে জেলে যেতে হবে ,, সে দৌড়াতেই থাকে ,, পুকুরের সামনে একটা রাস্তা গ্রামের ভিতর চলে গিয়েছে ,, টুটুল সেই রাস্তার দিকেই দৌড় দিচ্ছে ,, বাকিরা তার পিছনে সজোরে দৌড়াচ্ছে,, টুটুল সেই রাস্তার কাছে প্রায় চলেই এসেছে ,, তখনই আমরা শুনতে পাই একটা গুলি চলার আওয়াজ,, টুটুল দৌড়াতে দৌড়াতে পড়ে যায় মাটিতে ,, রিয়াদ,নিলায় রা টুটুলের কাছে গিয়ে থামে ,, তারপর পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে শাহারিয়া গুলিটা করেছে ,, শাহারিয়া এখনো বন্দুক টা উঁচিয়ে ধরে আছে ,, আমরা এদিকে দেখতে পাই টুটুল যন্ত্রনায় মাটিতে চিৎকার করছে ,, আসলে গুলি টা শাহারিয়া টুটুলের শরীরে করেনি , করেছে পা’য়ে ,, শাহারিয়াও চলে আসে টুটুলের কাছে ,, টুটুল এখন মাটিতে বসে হাত দিয়ে পায়ের গুলি লাগার যায়গায় ধরে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে ,, আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে শাহারিয়া সহ সবাই ,, শাহারিয়া সামনে এগিয়ে এসে দাড়িয়ে বলতে থাকে ,, 

    – কেন করেছিস খুন গুলো ? কেন মেরেছিস সেই তাদের ? 

    – আ,আমি কোন খুন করিনি ,,আমি কোন খুন করিনি,, (ভয়ে কাপোকাপো গলায় বলতে থাকে টুটুল)

    – তুই খুন করিস নি হ্যা ,, (বলেই টুটুল কে একটা জোড়ে লাত্থি দেয় শাহারিয়া,,) তুই খুন করিস নি ,, আগের গুলি টা পায়ে করেছিলাম, এবারকার টা একদম তোর মুখ বরাবর করবো ,, আমার টার্গেট কিন্তু কখনোই মিস হয়না ,, কখনোই না,, আরোহীকে তুই কিডন্যাপ করেছিলি তাই না ? 

    – ক,কই ,, না আমি কিডন্যাপ করিনি (এদিক ওদিক চোখ দিতে দিতে টুটুল বলে)

    – সিসিটিভি ফুটেজে তোর হাতের এই ট্যাটু খুব ভালো ভাবেই বোঝা গেছে টুটুল,,খুব ভালো ভাবেই ,, বল কেন আরোহীকে কিডন্যাপ করেছিলি ? তাকে রেপ আর খুন কেন করেছিস ? 

    – আমি আরোহীকে কিডন্যাপ করি ,, কিন্তু তাকে আমি রেপ বা খুন কোনটাই করিনি ,, কোনটাই না ,, (এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে টুটুল বলে )

    – তুই নাদিয়াকেও রেপ করিসনি ,, হ্যা ,, এটাও বলবি এখন ,, (রাগের মাথায় বলে শাহারিয়া)

    – হ,হ্যা ,, আমি নাদিয়াকেও রেপ করিনি ,, 

    শাহারিয়া তার ফোন টা বের করে শাম্মির পাঠানো সেই ছবিটা বের করে টুটুলের দিকে ফোন দেখিয়ে বলে ,,

    – দেখ ,, তোর ব্লাড থেকে পাওয়া ডিএনএ স্যাম্পল আর নাদিয়া ও আরোহীর দেহে পাওয়া বির্যের ডিএনএ স্যাম্পল ম্যাচ করেছে ,, এবারও কী তুই বলবি যে তুই ওদের দুইজনকে ধর্ষণ করিস নি ? 

    – তু,তুমি আমার রক্ত কোথায় পেলে ? (টুটুল অবাক হয়ে কাপোকাপো গলায় বলে)

    শাহারিয়ার টুটুলের কথা শুনে হেঁসে ফেলে ,, বলতে থাকে ,, 

    – রিয়াদ,, আজ আমি থানা থেকে বাসায় কেন গিয়েছিলাম জানিস ? এই টুটুলের ব্লাড স্যাম্পল যেকোনো মতে নেওয়ার জন্য ,, আমি নানা চিন্তা ভাবনা করে গিয়েছিলাম যে কীভাবে কৌশলে টুটুলের ব্লাড নেওয়া যায় ,, কিন্তু বাসায় গিয়ে দেখি অলরেডি তার হাত কেটে গিয়েছে টিন লেগে ,, ফুলমতি যখন সেই রক্ত মাখা কাপড় টা এনে বারান্দার কোন টায় রাখে ,,আমি সেই কাপড় টা নিয়ে ঘরে চলে আসি ,, এসে নিলয় কে ফোন দেই এই কাপড় টা নিয়ে যাওয়ার জন্য,, আর বাইক টা যে আমি থানায় রেখে যেতে বলেছিলাম মনে আছে ? কারণ যাতে আমার বাসা থেকে গিয়ে নিলয় ব্লাড স্যাম্পল গুলো দ্রুত নিয়ে আসতে পারে থানায় ,, আর নিলয়ও তাই করে,, ও আমার ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে রক্ত মাখা কাপড় টা নিয়ে যায় থানায়,, পরীক্ষা করে ম্যাচ হয় কি না তা যাচাই করার জন্য,, আর তারপর ম্যাচ করে গেলো,, 

    – তুই এতো কিছু ভেবে রাখছিলি ? কিন্তু তোর কেন মনে হলো যে টুটুলই আসল খুনি ? (রিয়াদ জিগ্গেস করে)

    – কারণ টুটুল এই গ্রামের মেম্বারের সাথে চলাফেরা করে ,, আর আমরা তাকে সন্দেহ তালিকার বাইরে রাখবো কারণ সে বাবার সাথে সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে ,, আর ও এই সুযোগে কাজে লাগিয়ে খুন গুলো শুরু করে দেয় ,, (বলেই টুটুলের দিকে তাকায়) তুই নাদিয়াকে কীভাবে কিডন্যাপ করেছিলি ,? বল ,, (ঝাড়ি মেরে টুটুলকে বলতে থাকে শাহারিয়া)

    – সেই রাতে, সেই রাতে যখন নাদিয়াকে আমি মেম্বারদের বাসায় ঢুকতে দেখি তখনই আমি তাকে টার্গেট হিসেবে ঠিক করে নেই ,, তারপর যখন রাতে সে জোড় জবরদস্তি করে বাসা থেকে বের হয়ে যায় ,তখন আমার কাজ আরো সহজ হয়ে যায় ,, আমি তার পিছু নিতে থাকি ,, ঐ রাতে আবহাওয়া খারাপ ছিলো ,, নাদিয়ার পিছন পিছন তাকে ফলো করতে থাকি মুখে গামছা পেঁচিয়ে,, আর সেইসময় আকাশ খারাপ থাকাতে রাস্তায় কোন লোকও ছিলো না ,, তাই নিজের কাজ করতে কোন সমস্যাও হয়নি ,, আমি গিয়ে পিছন থেকে তার মুখ চেপে ধরি ,, ধরে তাকে নীলগিরি জঙ্গলের সেই ছোট পথ টা ধরে টেনে হেঁচড়ে ভিতরে নিয়ে যাই আমার আস্তানার দিকে ,, সেই জঙ্গলের ভিতরে আমি একটা যায়গা রেখেছিলাম ,, গোলাকার যায়গা ,, সেখানে আমি নিয়ে গিয়ে নাদিয়াকে রেপ করি ,, কিন্তু আমি তাকে রেপ করে ওখানেই ফেলে রেখে যাই যাতে জঙ্গলের জীব জন্তু তাকে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলে ,, কিন্তু সে এভাবে খুন আর সেই আমবাগান টায় কীভাবে গেলো আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা ,, আমি সত্যি বলছি আমি খুন করিনি তাকে ,, (হাত জোড় করে শাহারিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলে টুটুল)

    – তুই আরোহীকে কীভাবে কিডন্যাপ করেছিলি ? 

    – আরোহীকে কিডন্যাপ করার সময় আমাকে সাহায্য করেছিলো নাসিম,, আরোহীকে ঐদিন সকালে যখন তার ভাই আহাদের খোঁজ করার জন্য ছুটোছুটি করতে দেখেছিলাম তখনই তার প্রতি একটা নজর পরে যায় আমার ,, ঠিক করি আজ বিকেলেই তাকে কিডন্যাপ করে নিজের আস্তানায় নিয়ে গিয়ে খাবো ,, সেই দিন বিকেলে আরোহী যখন রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো তখনই আমি আর নাসিম মিলে তাকে সেই অটোতে তুলে নেই ,, তুলে নিয়ে সেই নীলগিরি জঙ্গলটার সামনের রাস্তায় আরোহীর অচেতন দেহ টা নিয়ে আমি নেমে যাই ,, নাসিম জানতোনা যে আমি আরোহীকে নিয়ে কী করবো,, আমি তাকে বলিওনি যে আরোহীকে দিয়ে আমি আমার খায়েস মিটাবো ,, তারপর আমি আরোহীকে জঙ্গলের সেই ভিতরের গোল যায়গাটায় নিয়ে যাই ,, আর নিজের মনমতো তাকে ভোগ করতে থাকি ,, কিন্তু আমি শুধু তাকে রেপ ই করেছিলাম,, আমি তাকে মারিনি ,, তাকে রেপ করে সেই যায়গাতেই রেখে গিয়েছিলাম যাতে জঙ্গলের কোন জন্ত খেয়ে ফেলে ,, কিন্তু এই লাশটাও ঠিক নাদিয়ার লাশের মতো মুন্ডুহীন অবস্থায় খুন হয়ে সেই আমবাগানের খালে পড়ে থাকে ,, আমি স্বীকার করছি যে আমি নাদিয়া আর আরোহীকে রেপ করেছি,, কিন্তু আমি তাদেরকে মারিনি ,, আমি তাদেরকে মারিনি ,,(বলেই কাঁদতে কাঁদতে মাথা নিচু করে ফেলে টুটুল)

    – দোস্ত,, ও এভাবে মুখ খুলবে না ,, থানায় নিয়ে গিয়ে আচ্ছা ধোলাই করলে তারপর মুখ খুলবে ,, (বলেই টুটুলের দিকে যেতে উদ্যত হয় রিয়াদ ,, কিন্তু তখনই শাহারিয়া তাকে থামিয়ে দেয়,, দিয়ে টুটুলকে বলতে থাকে ,, 

    – তুই আজকে তোর ছোট ঘরটায় আরমানকে আনিস নি ? 

    – না ,, আমি কেন আরমানকে আনতে যাবো , তোমরা আমার সেই জঙ্গলের যায়গাটার খোঁজ পেয়ে গেছো দেখে আমি আমার এই ছোট্ট করে আরো একটা মেয়েকে কিডন্যাপ করে এনে রেখেছি নিজের মনের খায়েশ মিটানোর জন্য,, চাইলে গিয়ে দেখে আসতে পারো ,, (টুটুল বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়েই কথা গুলো বলো)

    শাহারিয়া টুটুলের কথা গুলো শুনে বেশ আশ্চর্য হয় ,, সে তার একজন কনস্টেবলকে বলে ,,

    – যাও ,, গিয়ে দেখোতো সেই রুমটায় আরমান আছে কিনা ? 

    কনস্টেবল অর্ডার পাওয়ার সাথে সাথেই চলে যায় সেই রুমটার দিকে ,, এদিকে রিয়াদ শাহারিয়াকে বলতে থাকে ,,

    – ওকে থানায় নিয়ে গিয়ে দু ঘা দিলেই মুখ খুলবে ,, ও এখন নাটক করতেছে,, যাতে ওকে আমরা ছেড়ে দেই ,, তুই ওকে থানায় নিয়ে চলতো ,, (বলেই আবার টুটুলের দিকে যেতে উদ্যত হয় রিয়াদ , এবং তখনই রিয়াদকে থামিয়ে দিয়ে শাহারিয়া বলে,, 

    – দাঁড়া,, মাথা গরম করিসনা ,, এখানে অন্য কোন রহস্য আছে ,, 

    – আরে রাখ তোর রহস্য,, খুনি আমাদের সামনেই ,, এই আমাদের খুনি , একে ধরে কয়েকটা লাগায় দিলে ঠিকই মুখ খুলবে দেখিস ,, (বলেই আবার টুটুলের দিকে যেতে উদ্যত হয় রিয়াদ ,, তখনই সেই কনস্টেবল চলে আসে ,, এসে বলতে থাকে ,,

    – স্যার ,, ভিতরে একটা মেয়ে আছে ,, মেয়েটা উলঙ্গ অবস্থায় আছে ,, তাকে খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে ,, 

    (শাহারিয়া এমন উত্তর পেয়ে আরো চিন্তিত হয়ে পড়ে ,, টুটুল বলতে থাকে ,,

    – দেখছো ,, আমি বলছিলাম না ভিতরে একটা মেয়ে আছে,, আর আমি তাকে ধরে এনেছি আমার খায়েশ মিটানোর জন্য,, আর আগের নাদিয়া আর আরোহীকেও আমি ভোগ করেছিলাম,, কিন্তু আমি তাদেরকে খুন করিনি ,, সত্যি বলছি ,,,

     

    শাহারিয়া টুটুলের কথাটা শুনেই তার ফোন টা বের করে ,, বের করে সেই রিপোর্ট টা দেখতে থাকে ভালো ভাবে ,, সে যেন কিছু একটা জুম করে দেখছে সেই রিপোর্টের ছবিটার মাঝে ,, রিয়াদ খালি টুটুলকে নিয়ে যাওয়ার জন্য শাহারিয়াকে বলছে,, কিন্তু শাহারিয়ার এইদিকে কোন মন নেই ,, সে ফোনের ছবিটার কিছু একটা জুম করে দেখতেই থাকে ,, এবং কিছুক্ষণ দেখার পর সে চোখ গুলো বড় করে নিয়ে ফোন টাকে নামিয়ে ফেলে ,, ফেলেই সে বলতে থাকে ,,

    – তাহলে এই আসল খুনি ,, ও মাই গড ,, খুনি এতোক্ষণ আমাদের মাথা নিয়ে খেলেছিলো ,, (বলেই রিয়াদের দিকে তাকায় ,, তাকিয়ে আবার বলে ,, 

    – টুটুল আসল খুনি নয় ,, আসল খুনি কে এখন আমি তা জানতে পেরেছি ,, (চোখ গুলো বড় বড় করে কথা গুলো বলে শাহারিয়া )

    – কে সেই খুনি ,, ?

    – এখন বলার সময় নেই ,, আমাদের তাড়াতাড়ি সেই নীলগিরির জঙ্গলটায় যেতে হবে ,, ফাস্ট ,, আর এই টুটুলকে তোমরা থানায় নিয়ে যাও ,, আমাদের আসল মিশন এখনো বাকি ,,( বলেই হনহন করে যেদিকে তারা তাদের বাইক গুলা রেখেছিলো সেদিকে যেতে থাকে ,, রিয়াদ,ইমন আর নিলয়ও পিছু পিছু যেতে থাকে,,রিয়দ যেতে যেতে বলতে থাকে ,, 

    – আসল খুনি কে ,, বলবিতো নাকি ,, 

    – কথা বলার সময় নাই,, তাড়াতাড়ি বাইকে উঠ ,, (তারা বাইকের সামনে চলে আসে ,, এসেই শাহারিয়া আর রিয়াদ একটা বাইকে উঠে পড়ে আর নিলয় আর ইমন একটা বাইকে উঠে পড়ে,, উঠেই তারা সজোরে বাইক ছুটিয়ে যেতে থাকে সেই নীলগিরি জঙ্গল টার দিকে ,, এদিকে আকাশে মেঘ জমতে থাকে ,, বাতাস উঠে ,, আকাশে মাঝে মাঝে ছোট ছোট বিজলী চমকিয়ে উঠছে ,, শাহারিয়ারা সজোরে বাইক ছুটিয়ে যাচ্ছে সেই জঙ্গলটার দিকে ,, আর ঐদিকে টুটুলকে থানায় নিয়ে যাওয়ার অর্ডার দিয়েছে কনস্টেবলদের ,,আর মেয়েটাকেও উদ্ধার করার আদেশ দিয়ে এসেছে শাহারিয়া,, 

    শাহারিয়ারা জঙ্গলটার সেই ছোট পথটার সামনে চলে আসে ,, শাহারিয়ারা বাইক থামায় রাস্তায়,, রাস্তার এখান থেকেই জঙ্গলের সেই ছোট পথ টা যেই পথে সেইদিন তারা গিয়েছিলো,, 

    শাহারিয়ারা বাইক থেকে নেমে পড়ে ,, আকাশ থেকে এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে ,, চারিদিকে শো শো করে বাতাস বইছে ,, শাহারিয়ারা সবাই মিলে সেই ছোট পথ টা ধরে দৌড়ে যেতে থাকে ,, হাতে টর্চ লাইট ,, জঙ্গলের ভেতর টা একদম অন্ধকার,,  বৃষ্টিতে তাদের শরীর একদম ভিজে গিয়েছে ,, মাঝে মাঝে বিজলী চমকিয়ে উঠছে,, শাহারিয়ারা দৌড়াতে দৌড়াতে জঙ্গলটার সেই মাঝখানের গোল যায়গাটায় এসে উপস্থিত হয় ,, তারা সেখানে উপস্থিত হয়ে চারপাশে দেখতে  থাকে ,, শাহারিয়া চারপাশে লাইট দিয়ে যেন কিছু একটা জিনিস খুঁজে ফিরছে , তারা সেই গোল যায়গাটার একদম মাঝখান টায় দাঁড়ানো,, তখনই তারা দেখতে পারে জঙ্গলের ভিতর থেকে অনেক গুলো জোড়ায় জোড়ায় লাল চোখ দেখা যাচ্ছে,, এবং আস্তে আস্তে সেগুলো তাদের ‌দিকে আসছে ,, শাহারিয়া সবাইকে এলার্ট হতে বলে ,, সবাই সাবধান হয়ে একজন আরেকজনের সাথে পিঠ লাগিয়ে চারজন একদম গোল যায়গাটার মধ্য বিন্দুতে এসে দাঁড়ায়,, তখনই ‌জঙ্গল থেকে সেই লাল চোখ গুলো বের হয়ে এসে তাদের সামনে প্রায় উপস্থিত হয়ে যায় ,, তারা টর্চ মেরে দেখে এগুলো একপ্রকার বন্য শিয়াল,, যাদের শরীর টা একদম কালো,, আর চোখ গুলো লাল ,, শাহারিয়ারা সবাই এটা দেখে অবাক হয়ে যায় ,, এবং তখনই শাহারিয়া সেই জঙ্গলটার ভিতরে সেই পাকা ছোট ঘর টা দেখতে পায় ,, শাহারিয়া সবাইকে বলতে থাকে ,,

    – ঐযে দেখো জঙ্গলটার মাঝে একটা ঘর ,, সেই ঘরটার দিকেই আমাদের যেতে হবে ,, সবাই পকেট থেকে ছুরি গুলো বের করে ফেলো ,, এই বুনো শেয়ালদের মোকাবেলা করে আমাদের সেই ঘরের সামনের দিকে যেতে হবে ,, ক্লিয়ার ,, ?

    – ওকে ,  ,, 

    – আচ্ছা ,, 

    – ওকে ,, 

    – তো তাইলে ‌রেডি , ১ , ২ , ৩ 

    (বলেই তারা সেই ঘর টার দিকে তেরে যেতে থাকে ,, আর রাস্তায় সামনে যেই বুনো শেয়াল আসছে তাদের সাথে লড়াই করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ,, শাহারিয়া এক বুনো শেয়ালের ঘাড়ে ছুড়ি ঘুচে দেয় তারপর ওটা বের করে আরেকটা বুনো শেয়ালের মুখের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয় ,, রিয়াদ একটা বুনো শেয়ালের চোখে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে বের করে আরেকটা শেয়ালের পায়ে আঘাত করে ,, এভাবে দারুন এক ফাইট হতে তাদের মধ্যে,, এভাবে ফাইট করতে করতে তারা ঘর টার কাছাকাছি প্রায় চলেই আসে ,, সেই গোলাকার যায়গাটা থেকে এই ঘরের দিকে আসার কোন রাস্তা ছিলো না ,, পুরোটাই গাছ ‌দিয়ে ভরা ,, শাহারিয়ারা এই গাছগুলোর মধ্য দিয়েই যেতে থাকে শেয়াল দের সাথে ফাইট করতে করতে ,, তারা বাড়িটার একদম কাছে চলে আসে ,, তারা মুলত এখন বাড়ির পিছনের দিকটায় আছে ,, আর সেই গোলাকৃতি যায়গাটা থেকেও এই বাড়ির পিছনের দিক টাই দেখা যায় ,,  তারা যখন বুনো শেয়াল দের সাথে ফাইট করতে করতে বাড়ির সামনের দিকটার উদ্দেশ্য যেতে থাকে তখনই দেখে সব বুনো শেয়াল গুলো গায়েব হয়ে গেছে ,, তারা বাড়ির সামনের দিকটায় এসে উপস্থিত হয় ,, তারা এদিকটায় এসে তো আরো অবাক হয় ,, বাড়ির সামনে একটা আঙ্গিনার মতো ,, আর সবচেয়ে বড় কথা আঙিনায় একটা লাইটও জলছে আর আঙিনা থেকে সামনে একটা ছোট রাস্তা চলে গিয়েছে জঙ্গলটার মাঝে,, তারা ঐদিকটা না গিয়ে বাড়ির বারান্দায় উঠে ,, বাড়িটা ছোট ,, এক ‌রুমের বাড়ি ,, শাহারিয়া গিয়ে সেই রুমটার দরজা এক জোড়ে লাত্থি মারে ,, দরজাটা ভেঙ্গে ভিতরের দিকে পড়ে যায় ,, তারা দরজা দিয়ে ঘরেই ঢুকেই সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে ,, তারা শুধু দরজা দিয়ে ঢুকে ২ কদম পা ফেলেছে এবং তারপরই তারা থেমে যায় ,, তারা থেমে যায়নি ,, এমন মনে হচ্ছে যে কেউ তাদের পা ধরে রেখেছে ,, তারা পা ছোটানোর চেষ্টা করতেছে কিন্তু পারছেনা,,  তারা সামনে তাকায় আর দেখতে পায় ,,ঠিক তাদের থেকে ৩ হাত দূরে একটা চেয়ার আর চেয়ারে বসে আছে আরমান,, বসে নয় আসলে আরমানকে বেঁধে রাখা হয়েছে সেই চেয়ারে,, আরমানকে শাহারিয়াদের দিকেই মুখ করিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে,, তার মুখে কাপড় দেওয়া,, তার চোখ মেলা আর চোখে ভয়ের ছাপ ,, এবং তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে একজন লোক ,,‌লোকটা পিছনে ফিরে আছে ,, তার মানে শাহারিয়াদের বিপরীতে মুখ করে দাঁড়ানো,, শাহারিয়ারা দাড়িয়ে খালি দেখছে ,, শাহারিয়ার ঠোটের কোন থেকে রক্ত পড়ছে ,, রিয়াদের গাল কেটে গিয়েছে,, মূলত সেই বুনো শেয়াল দের সাথে মারামারি করতে করতেই এই অবস্থা হয়েছে তাদের,, শাহারিয়া সেই লোকটাকে উদ্দেশ্য করে ভারি গলায় বলতে থাকে ,, 

    – তোর বুদ্ধি আছে অনেক বলতে হবে ,, এরকম ভাবে যে আমাদের ঘোল খাইয়ে দিবি ভাবতেও পারিনি,, এখন তো তুই ধরা পড়ে গিয়েছিস নাসিম ,, 

    শাহারিয়ার মুখ থেকে নাসিয় কথাটা শোনার সাথে সাথে তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রিয়াদ, নিলয় আর ইমন অবাক হয়ে শাহারিয়ার দিকে তাকায় ,, এবং তখনই সেই ওপাসে ফিরে থাকা লোকটা হাসতে থাকে ,, এক অদ্ভুত অট্টহাসি,, এবং হাসতে হাসতে সে শাহারিয়া দের দিকে ফিরে তাকায় ,, এবং আমরা দেখতে পাই আসলেই সেটা নাসিম ,, তারমানে নাসিম ছিলো এতো কিছুর পিছনে ? নাসিম এপাসে ফিরে হাসতে হাসতে শাহারিয়াকে বলে ,,

    – তোরও বুদ্ধির তারিফ করতে হয় ,, এতো ফাঁদ পেতেছি এতো ব্রেইন নিয়ে খেলেছি,, তারপরও আমাকে শেষমেষ ধরেই ফেললি ,, হ্যা ,, হা হা হা হা ,, 

     

    নাসিমকে দেখার পর শাহারিয়ার ডান পাশ থেকে রিয়াদ বলতে থাকে ,,

    – নাসিমই যে আসল খুনি, তা তুই কীভাবে বুঝতে পারলি ,, 

    তখনই শাহারিয়া তার ফোনটা বের করে একটা ছবি জুম করে ফোন টা রিয়াদের হাতে দেয় ,, রিয়াদ হাতে ফোনটা নিয়ে দেখে নূপুরের মাথার খুলির ছবি ,, শাহারিয়া বলতে থাকে ,,

    – মাথার খুলিতে একটা চিহ্ন দেখতে পাচ্ছিস ? 

    – হ্যা একটা চিহ্ন,, কিন্তু এইটা কোথায় যেন দেখেছি দেখেছি মনে হচ্ছে,, 

    – ঐদিন যখন নাসিম আমাদেরকে এই জঙ্গলটা থেকে বের করে আমাদের বলছিলো যে তার গলায় থাকা লকেট টার কারণে তার কোন ক্ষতি করতে পারেনা এই জঙ্গল টা, তখন তার লকেটে এই চিহ্ন টাই ছিলো ,,

    তখনই ফ্লাসব্যাকে আমাদের দেখানো হয় নাসিয় একটা লকেট দেখাচ্ছে আর বলতেছে এই লকেট টার জন্যই আমার উপর এই জঙ্গলের কোন অভিশাপ কাজ করে না,, এবং আমাদেরকে আবার বর্তমানে নিয়ে আসা হয় ,, শাহারিয়া বলতে থাকে ,, 

    – টুটুলের রিপোর্ট টার ছবি যখন আমি পরে দ্বিতীয় বার দেখছিলাম ঐ পুকুর পাড় টায় দাঁড়িয়ে, তখনই আমি দেখতে পাই রিপোর্ট টার ছবি তুলার সময় নুপুরের মাথার খুলিটার ছবিটাও এই ফ্রেমে চলে এসেছে আর সেই মাথাটায় ছিলো এই নাসিমের লকেটে থাকা চিহ্ন টা ,, তখনই নাসিম একটা হাসি দিয়ে হাত তালি দিতে দিতে বলতে থাকে ,, 

    – গোয়েন্দা বেশ ভালোই তোমরা ,, আমি ভেবেছিলাম আমাকে ধরতেই পারবেনা ,, কিন্তু ‌শেষমেষ ধরেই ফেললে ,, বেশ বুদ্ধি খাটিয়েছো বলতে হবে ,, হ্যা,, হা হা হা হা ,, 

     

    তখনই রিয়াদ শাহারিয়ার ডান পাশ থেকে শাহারিয়াকে বলতে থাকে ,, 

    – নাসিম কীভাবে এতো গুলা খুন করলো ? 

    – সেটা নাহয় নাসিমের মুখ থেকেই শোনা যাক ,,(নাসিমের দিকে ফিরে তাকিয়ে) নাসিম ,, এতো গুলা খুন কীভাবে করলে তুমি ?

    – হমম ,এখন যেহেতু শেষ খুন টা করবোই , তো এই শেষ খুনটা করার আগে তোমাদের বলেই দেই কীভাবে আগের খুন গুলা করেছিলাম,, (বলেই চেয়ারের পাশ থেকে পায়চারি করতে করতে শাহারিয়াদের সামনে হাঁটতে থাকে আর বলতে থাকে সেই খুন গুলো সে কীভাবে করেছিলো,, 

    ” আমি এই গ্রামে আসি আজ থেকে ৮ দিন আগে ,, এসেই আমার প্রথম টার্গেট রিয়াকে ঠিক করে ফেলি ,, তাকে আমার নাম্বার দিয়ে কল দিয়ে তাদের টিউবওয়েল খানার দিকে আসতে বলি ,, তাকে আমি আমার পরিচয় দিয়ে কথা বলিনি ,, তাকে আমি ফোনে বলেছিলাম আমি আরমান ,, আর তাই সে আসে টিউবওয়েল খানার দিকে ,, আর আমি আরমানের পরিচয়টা কেন দিয়েছিলাম সেটাও বলছি কিছুক্ষণ পর ,, রিয়া চলে আসে টিউবওয়েল খানায়,, সে এসে আরমান আরমান করে ডাক দিয়ে আরমানকে খুঁজছিলো আর আমি তখনই তার পিছন থেকে এসে তার মুখ চেপে ধরি এবং অজ্ঞান করে ফেলি ,, তারপর কাঁধে করে নিয়ে আসি এই রুমটায় ,, অনেক যত্ন সহকারে মেরেছি আমি তাকে ,, আলাদা তৃপ্তি পেয়েছি তাকে মারার সময় ,,

    তারপর আসলো নাদিয়ার পালা ,, আমি ভেবেছিলাম নাদিয়াকে আমিই কিডন্যাপ করবো তখন আমার তথাকথিত গুরু , গুরুও বলা যায় না বলা যায় গরু ,, হা হা হা হা ,, টুটুলের কথা বলছি ,, সে আমাকে বলে যে তার নাকি নাদিয়ার উপর একটু সুনজর আছে ,, আর রাতেই নাকি তাকে ভোগ করবে ,, কিন্তু তেমন যায়গা খুঁজে পাচ্ছিলো না সে,, তারপর আমিই টুটুলকে এই জঙ্গলের ঐ গোলাকার যায়গাটার সন্ধান দেই ,, আর বলি এখানেই এনে নাদিয়াকে ভোগ করতে,, টুটুল তারপর ঐরাতে নাদিয়াকে জঙ্গলের গা ঘেঁষে যাওয়া রাস্তা টা থেকে কিডন্যাপ করে এই জঙ্গলটার মাঝে নিয়ে আসে ,, তারপর সে নাদিয়াকে ভোগ করে,, আমি ওখানেই গাছের আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তা দেখছিলাম ,, তবে সেটা আমার দৈহিক চাহিদা মিটায় নি,, মিটিয়েছে প্রতিশোধের আগুন,, টুটুল নাদিয়াকে ভোগ করে তাকে আধমরা অবস্থায় সেখানে রেখেই চলে যায় ,, সেই রাতে বৃষ্টি ছিলো ,, আজও কিন্তু আছে ,,(শাহারিয়ার মুখের সামনে দাঁড়িয়ে বলে কথাটা তারপর আবার বলতে শুরু করে নাসিম) তো তারপর টুটুল নাদিয়াকে ধর্ষন করে সেখানে রেখে যাওয়ার পর আমি নাদিয়াকে তুলে নিয়ে আসি এই রুমটায় ,, এবং তাকেও মন মতো মেরেছি ,, তার আর্তনাদ তার চিৎকার আমার অনেক ভালো লেগেছিলো,,

    তারপর আসে আহাদের পালা ,, ঐ রাতে আহাদ যখন অটো নিয়ে যাচ্ছিলো আমি সেই অটোটাকে থামাই ,, সে আমাকে দেখে চিনতে পেরেছিলো ,, সে ভয়ে সেই বৃষ্টির মধ্যে দৌড়াচ্ছিলো ,, কিন্তু পারেনি ,, তার মুন্ডু টাও আমি এক কোপে আলাদা করে দিয়েছি,, তারপর আসে আহাদের বোন আরোহীর পালা ,, তোরা জানিস ? টুটুলকে সেই আহাদের অটোর সন্ধান কে দিয়েছিলো ? এই আমি ,, আমি দিয়েছিলাম ,, আর তার সাথে মিলে আরোহীকে কিডন্যাপ ও করি ,, আর তারপর টুটুল আরোহীকে নিয়ে চলে আসে এই জঙ্গলের সেই গোলাকার যায়গাটায় ,, মনের সাধ মিটিয়ে খেয়েছিলো সে আরোহীকে ,, আমি তারপর আরোহীকে নিয়ে আসি এই রুমে ,, তাকেও ঠিক একই ভাবে মেরে ফেলি ,,

      তারপর আসে সিয়ামের পালা ,, (একটু থেমে) সিয়াম সেদিন সকালে যাচ্ছিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে,, আর সকাল বেলা ও যেই অটোটায় উঠেছিলো সেই অটোটার ড্রাইভার আমিই ছিলাম ,, আমার মুখ গামছা দিয়ে পেঁচানো ছিলো , তাই আমাকে আর সে চিনতে পারেনি ,,  আর অটোটাও ছিলো সেই আহাদের টাই ,, তারপর তাকে অটোতে উঠিয়ে নিয়ে যাই মৃত্যুর রাস্তায় ,, যেখান থেকে আর সে ফিরতে পারেনি আর পারবেও না ,, হা হা হা হা ,, (বলেই অট্টহাসি হাসতে থাকে নাসিম ,, 

    শাহারিয়া রাগে গজগজ করতে থাকে ,, সে নাসিম কে ধরতে যেতে চায় ,, কিন্তু তার পা সে এখনো নাড়াতে পারছেনা ,, কোন অদৃশ্য হাত যেন ‌শক্ত করে তার পা গুলোকে ধরে রেখেছে,,

    শাহারিয়া রাগান্বিত গলায় বলে ,,

    – তুই কেন এতো গুলা নিরীহ লোক কে মারলি ?  কী ক্ষতি করে ছিলো ওরা তোর ,,

    – নিরীহ ? ওরা নিরীহ ? নুপুরকে তারা কীভাবে মেরেছিলো জানিস ? কতটা কষ্ট দিয়ে মেরে ছিলো ? 

    তারপর নাসিম আরো পায়চারি করতে থাকে আর বলতে থাকে ,, 

    ” নুপুর সেই আনন্দ মোহন কলেছে পড়তো আরমান,রিয়া’দের ব্যাচেই ,, খুব হাসিখুশি মেয়ে ছিলো সে ,, সবসময় চুপচাপ আর শান্ত শিষ্ট থাকতো ,, কিন্তু, এই আরমান রা ,, তারা করতো গ্যাং (রাগের চোখে আরমানের দিক তাকিয়ে) ,, তারা করতো রেগিং ,, তারা কলেজের ভালো ভালো মেয়েদেরকে কু প্রস্তাব দিতো ,, আর রাজী না হলে জোড় করে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের ধর্ষণ করতো ,, আর বলছিস ওরা নিরীহ ? 

    ওরা নুপুরকেও কু প্রস্তাব দেয়,, কিন্তু নুপুর রাজী হয় না ,, তারপর তারা ভেবে নেয় যে ওরা নুপুরকে তারা ভোগ করবেই করবে যেকরেই হোক ,, 

    সেই দিন বৃষ্টি ছিলো ,, নুপুরকে তার দাদি কলেজে যেতে মানা করলো ,, কিন্তু সে শুনলো না ,, তার দাদির অবাধ্য হয়ে কলেজের দিকে গেলো সে ,, এদিকে বৃষ্টির বেগ অনেক থাকার কারণে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঐদিনের জন্য,, নুপুর ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল ছিলো,, তাই যতই যা হয়ে যাক না কেন সে কখনোই কলেজ মিস দিতো না,, সেদিন সে কলেজের মাঠে গিয়ে উপস্থিত হয় ,, আকাশ থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে,, তার হাতে একটা ছাতা ,, সে কলেজের মাঠ দিয়ে ভিতরে গিয়ে দেখে কেউ নেই,, আর সেদিন বৃষ্টি বেশি হওয়ায় কলেজের নিরাপত্তা রক্ষী রাও কলেজে সেদিন আসেনি,, নুপুর কলেজ বন্ধ দেখে বাসায় যাওয়ার জন্য যখনই পিছন ফিরে তাকায় ,, দেখে আরমান, আরিফ,আহাদ,আর সিয়াম তার পিছনে দাঁড়িয়ে,, তাদের চোখে ছিলো এক খারাপ চাহনি,, তারা জানতো যে নুপুর যতই বৃষ্টি হোক না কেন কলেজে সে আসবেই ,, আর কলেজে আজ কেউ নেই আর এইটাকেই সুযোগ হিসেবে বেছে নেয় তারা ,, তারা নুপুরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে ,, নুপুর তাদের দেখে দৌড়ে যেতে থাকে বৃষ্টির মধ্যে,, তার ছাতাটা পরে যায় হাত থেকে,, সে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে দৌড়াতে থাকে ,, পিছন পিছন এই নরপশু গুলো তাকে ধাওয়া করতে থাকে ,, আর শাহারিয়া জানিস ,, এই জিনিসটাই সেতু ঐদিন দেখেছিলো পরীক্ষার হল থেকে,, নুপুর দৌড়াতে দৌড়াতে কোন কিছুতে পা লেগে সে পড়ে যায় মাঠের মধ্যে,, বৃষ্টির পানিতে ভিজে তার শরীর চিপচিপে হয়ে গিয়েছিলো ,, পশু গুলো আরো হিংস্র হয়ে নুপুরের দিকে চেয়ে থাকে ,, নুপুর কাদার মধ্যে বসে হাত টেনে টেনে পিছনে পিছিয়ে যাচ্ছিলো ,, কিন্তু তার আর সেদিন ভাগ্য সহায় হয়নি ,, নরপশু গুলো একে একে তার উপর হামলে পড়ে ,, ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে থাকে নুপুরকে ,, নুপুর ঐদিন অনেক চিৎকার করেছিলো,, কিন্তু কেউ তার এই চিৎকার শুনতে পারেনি ,, বৃষ্টির মাঝে সব চাপা পড়ে গিয়েছিলো ,,

    নাসিমের কথার মাঝখানেই শাহারিয়া ধীর গলায় বলে উঠে ,, 

    – সেতু এই সময়টা ঐদিন দেখতে পায়নি তাইনা ,, ? দিথীর সাথে সেতু সবটুকু শেয়ার করেছিলো ,, দিথী আমাকে তারপর বলেছিলো ,, সেতু এই সময়টা বাদে বাকি টুকু দেখছিলো ,, তাই না ? 

    – হ্যা ,হ্যা ,, (রাগের স্বরে) ,, এইটুকু তাকে দেখাইনি ,,(নাসিম আবার পায়চারি করতে করতে সেদিনের ঘটনাটা বলতে থাকে,,

    ” তারপর তারা নুপুরকে কলেজের বায়োলজি ল্যাবে নিয়ে যায় ,, ওখানে একটা খাটের সাথে বেঁধে খুব নির্মম ভাবে মেরে ফেলে তাকে ,, 

    (তারপর নাসিম বলতে থাকে কীভাবে তারা মেরেছিলো নুপুরকে ,, শাহারিয়া এই গুলো আগেই ‌দিথীর থেকে শুনেছিলো,, তাই বেশি অবাক হয়নি,, কিন্তু বাকিরা বেশ অবাক হয় ,, মৃত্যুর বর্ণনাটা শুনে তারা খুবই কষ্ট পায় ,, আমি এইটা এখানে আর বললাম না কারণ আপনারা এইটা আগেও পড়েছেন,,  নাসিম সম্পুর্ন ঘটনাটা বলা শেষ করে ,, করে চেয়ারের একটা কোনায় হাত দিয়ে আবার পিছনে ফিরে তাকায় ,, নাসিমের চোখে পানি,, সে কাঁদছে,, শাহারিয়ারাও এইসব শুনে মাথা ‌নিচু করে আছে ,,

     

    এদিকে আমাদের দেখানো হয় ফুলমতির রুম,, ফুলমতি বিছানায় বসে আছে,, সেও কাঁদছে,, নাসিমকে হারানোর ব্যাথায় সে কাঁদছে,, সে পুরোনো কথা গুলো মনে করছিলো ,, এবং তখনই তার মনে পরে যায় একটা কথা ,, নাসিম তাকে জন্মদিনের দিন গিফটের সাথে একটা চিঠির খাম দিয়েছিলো ,, আর বলেছিলো যখন সে থাকবেনা, যখন ফুলমতি তাকে অনেক অনেক মিস করবে তখনই সেই খাম টা খুলতে ,, ফুলমতি সেই কথাটা মনে পড়ার সাথে সাথে সে কোল থেকে মাথার বালিশ টা ফেলে দিয়ে হন হন করে বিছানা থেকে উঠে পড়ে ,, উঠে চলে যায় ডেসিন টেবিলের কাছে ,, সে টেবিলের প্রথম ড্রয়ার টা খুলে ,, খুলে তাড়াতাড়ি সবগুলো জিনিস  তাড়াতাড়ি নাড়িয়ে দেখতে থাকে,, 

    এদিকে শাহারিয়ার কিছু একটা মনে পড়ে ,, 

    ঐদিকে ফুলমতির পরের ড্রয়ার টা খুলে ওখানে সব জিনিস ওলট পালট করে দেখতে থাকে ,, এবং দেখতে দেখতে সে চিঠির খাম টা পেয়ে যায় ,, 

    এদিকে শাহারিয়ার মনে এমন কিছু জিনিস এসেছে যার জন্য সে মাথা উঠাতে থাকে আর অনেক অবাক হয়ে উঠে ,,তার চোখ মুখ বড় হয়ে যায় ,, 

    ঐদিকে ফুলমতি সেই চিঠিটা নিয়ে এসে তারা বিছানার উপর বসে ,, বসে চিঠির প্যাকেট টা খুলতে থাকে ,, 

    এদিকে শাহারিয়া তার অবাক চোখ মুখ নিয়ে নাসিমের দিকে চেয়ে বলতে থাকে ,, 

    – নাসিম ,, 

    ফুলমতি এদিকে চিঠির খামের স্টিকার তুলে ফেলে ,, 

    – তুমি কী তারমানে ,,,

    ফুলমতি খাম থেকে বের করে চিঠিটা খুলে ফেলে ,,

    – নুপুরের ভাই নোমান ? 

     

    এবং তখনই আমরা দেখতে পাই নাসিমের ঠোটের কোনে এক রহস্যময় হাসি ,, নাসিম আস্তে আস্তে পিছনে ফিরে তাকায় ,,তাকিয়ে এক ছোট্ট হাসি দিয়ে বলে ,, 

    – হ্যা ,, আমিই নোমান ,, আমি নাসিম নই ,, 

    আর এই কথা ‌শোনার সাথে সাথেই বাকিরা যারা মাথা নিচু করে ছিলো তারা তৎক্ষণাৎ মাথা উঠায় ,, আর অবাক দৃষ্টিতে নাসিমের দিকে তাকিয়ে থাকে ,, শাহারিয়া অবাক চাহনিতে বলতে থাকে ,, 

    – তুমিতো মারা গিয়েছো ,, আর তুমি যে ফিরে আসলে তোমাকে গ্রামের লোক কেউ চিনলোনা কেন ? 

    নাসিম হাসতে হাসতে উত্তর দেয় ,, 

    – আমাকে গ্রামের কেউই দেখেনি ,, আমি সেই ১৬ বছর বয়সেই গ্রাম ছেড়ে চলে যাই দিনাজপুর শহরে ,, আর ওখান থেকে এক বন্ধুর সাথে চলে যাই প্রবাসে ,, আর তারপরে গ্রামে শুধু একবারই এসেছিলাম ,, আর তা হচ্ছে বিয়ের সময় ,, তাও ২ দিন গ্রামের মানুষ আমায় দেখেছিলো ,, তাই সেই ৬ বছর আগে আমায় এক পলক দেখে এতোদিন মনে রাখা তাদের পক্ষে অসম্ভব ,, আর তাই গ্রামের কেউই আমায় চিনতে পারেনি ,, 

    – কিন্তু তুমিতো মারা গিয়েছো ,, তাইলে ,, ? 

    – তোমাদেরকে পুরো ঘটনাটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বলি ,, তাইলে বুঝতে পারবে ,, (বলেই পায়চারি করতে করতে চেয়ারের পিছনের দিকটায় চলে যায় নোমান মানে নাসিম ,, গিয়ে বলা শুরু করে ,, 

     

    {{{{ এই পর্ব টাও অনেক বড় হয়ে গেছে ,, যার কারণে একসাথে পোস্ট হচ্ছিলো না ,, তাই আমি দুই ভাগে ভাগ করে পোস্ট দিয়েছি,, এটা প্রথম ভাগ , দ্বিতীয় ভাগের লিংক প্রথম কমেন্টে 👇}}}

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২৬ ও শেষ (১ম ভাগ)

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    গল্প : গ্রামের নাম আনন্দপুর

    সিজন:: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২৬ ও শেষ (২য় ভাগ)

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া 

     

    {{{{ পর্ব ২৬ দুই ভাগে বিভক্ত,, এইটা ২য় ভাগ ,, প্রথম ভাগ না পড়ে থাকলে সেটা আগে পড়ে এসে তারপর এটা পড়ুন , নাহলে কিছুই বুঝতে পারবেন না ,, প্রথম ভাগের লিংক কমেন্ট সেকশনে দেওয়া আছে }}}

     

    – কিন্তু তুমিতো মারা গিয়েছো ,, তাইলে ,, ? 

    – তোমাদেরকে পুরো ঘটনাটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বলি ,, তাইলে বুঝতে পারবে ,, (বলেই পায়চারি করতে করতে চেয়ারের পিছনের দিকটায় চলে যায় নোমান মানে নাসিম ,, গিয়ে বলা শুরু করে ,, 

    ” আমি কম বয়সেই প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিলাম ,, তখন আমার বয়স হয়ে ১৮ কি ১৯ ,, আমার বাসায় তখন আমার ছোট্ট বোন নুপুর , আমার বাবা , দাদু আর দাদি ছিলো,, আমার বাবা জন্ম থেকেই পঙ্গু থাকায় ,, তার উপার্জন করার ক্ষমতা ছিলোনা ,, আর এদিকে দাদুর ও বয়স হয়ে যায় ,, আমাদের জমি জমার পরিমাণও কমে যেতে থাকে ,, কারণ তখন বাবা দাদুর জমি বিক্রি করে সংসার চালাতো ,, একজন বড় ছেলে হয়ে আমি এসব আর দেখতে পারছিলাম না,, সিদ্ধান্ত নেই চাকরি করবো ,, কম বয়সেই গ্রাম ছেড়ে শহরের পাড়ি জমাই ,, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় আমার বয়স ছিলো ১৬ ,, ২ বছর দিনাজপুরে একটা ফিড মিলে চাকরি করি আমি ,, কিন্তু তেমন আশানুরূপ উপার্জন হচ্ছিলো না যা দিয়ে আমার সংসার চলবে ,, তখন আমার সাথে সেই ফিড মিলে চাকরি করা এক বড় ভাই আমাকে বলে সে প্রবাস যাবে ,, আমি যেতে চাইলে সে আমাকে নিবে ,, আর সে আমার পরিবারের কথা জানতো ,, তাই আমার যাওয়ার খরচ টা সেই দিয়েছিলো,, আমার বয়স ১৮ হয় ,, আমি তার সাথে প্রবাসে পাড়ি জমাই ,, আমরা মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছিলাম টাকা উপার্জনের জন্য,, সেখান থেকে প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে শুরু করি ,, আমার টাকা দিয়ে আমার পরিবারে সচ্ছলতা আসে ,, নুপুরকে কলেজে ভর্তি করায় আমার বাবা ,, এদিকে প্রবাসে আমার এভাবে করেই ৮ বছর পেড়িয়ে যায় ,, আমার বয়স তখন ২৬ ,, আমার সাথে পরিচয় হয় এক মেয়ের ,, পরিচয় টা হয় ফেসবুকের মাধ্যমেই ,, তখনকার দিনে ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ এসবের প্রচলন ছিলোনা ,, আর ফেসবুকেও খালি মেসেজ আদান-প্রদান করা যেতো ,, ভিডিও কল কিংবা অডিও কল করা যেতো না ,, আর সেই মেয়েটা আর কেউ নয় রিয়া ছিলো ,, তার সাথে আমার সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়ে যায় ,, আমরা ঠিক করি বিয়ে করবো ,, কিন্তু আমি তখনও জানতাম না যে রিয়া আমাদের পাশের গ্রাম আনন্দ পুরের মেয়ে ,, আমি বাবাকে জানাই,, বাবা বলে মেয়ের বাসা কোথায় তা জেনে তাকে জানাতে,, আমি তাই যখন রিয়ার কাছ থেকে এড্রেস নেই তখন জানতে পারি যে রিয়ার বাসা আমার পাশের গ্রামেই ,, আর বাবাকে এই কথা জানানোতে তিনি আরো অনেক খুশি হন কারণ রিয়া তার বাল্যকালের বন্ধু রাকিবুল ইসলামের মেয়ে,, দুই পরিবার থেকেই বিয়ের জন্য সম্মতি দেয় তারা ,, আমার বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমি প্রবাসে ছুটির জন্য আবেদন করি,, কিন্তু আমায় ছুটি দেওয়া হয় মাত্র ৩ দিনের ,, মানে এই তিন দিনের মধ্যে আমাকে কাজে আবার জয়েন করতে হবে ,, আমিও আর পথ না পেয়ে রাজী হয়ে যাই ,, আমি দেশে আসি ,, আমাদের বিয়ে হয় ,, বিয়ের পর আমি রিয়াকে তার বাসাতেই রেখে আবার প্রবাসে চলে আসি ,, কেঁটে যায় ৬ মাস ,, আর আমার বিয়ের ৬ মাস পরেই রিয়া আমায় খবর দেয় যে আমি বাবা হতে চলেছি ,, আমি প্রথমে একটু অবাকই হই কারণ আমি তার সাথে মাত্র এক রাত ই কাঁটিয়েছি ,, আর ঐ এক রাতের জন্য আমার রিয়া প্রেগন্যান্ট পর্যন্ত হয়ে গেলো ,, আমি পরে এই চিন্তাটা মাথা থেকে সড়িয়ে ফেলি ,, ভাবি এরকম হতেই পারে ,, আল্লাহ চেয়েছেন তাই হয়েছে,, আমি তখন রিয়াকে টাকা পাঠাতে শুরু করি আরো বেশি করে ,, নিজে আগে যেখানে ১২ ঘন্টা কাজ করতাম সেখানে কাজ বাড়িয়ে আমি ১৮ ঘন্টার করে নেই ,, কারণ আমাকে তখন রিয়াকেও টাকা দিতে হতো , নিজ বাড়িতেও টাকা দিতে হতো ,, আর ভবিষ্যত পরিকল্পনাও করছিলাম আমি ,, তাই সবকিছু মাথায় রেখে আমাকে অনেক টাকা উপার্জন করতে হতো ,, দিনরাত হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম শুরু করি ,, আর প্রবাসের কাজ এরকমই, একটুও বসে থাকার সময় নেই,, টানা কাজ করে যেতে হয় ,, এক বেলা ভাত খেতাম আর বাকিই দুই বেলা নাস্তা ,, আমি সঞ্চয় করতে শুরু করি ভবিষ্যতের জন্য,, কারণ নতুন একজন অতিথি আসছে ,, 

    বিয়ের ৮ মাস পেড়িয়ে যায় ,, আর তারপরই নুপুরের সাথে ঐ ঘটনাটা ঘটে ,, এই নরপশু গুলো আমার ছোট্ট বোন নুপুরকে মেরে সেই আমবাগানের খালে মাটি চাপা দিয়ে দেয় ,, খালে তখন পানি একদমই কম ছিলো ,, আর ছোট ছিলো তখন খাল টা ,, ওরা নুপুরের নিখোঁজের খবর রটাতে শুরু করে ,, আমার বাবা, দাদা , দাদি হন্য হয়ে নুপুর কে খুঁজে বেড়িয়েছে ,, থানা পুলিশ সব করেছে ,, কিন্তু নুপুর কে পায়নি তারা ,, পাবেই বা কী করে ,, নুপুরকে তারা এমন যায়গায় মাটি দিয়েছে যা সবার চোখের সামনেই থাকবে কিন্তু কেউ সন্দেহ করবে না,, পরিবারের কেউই নুপুরের নিখোঁজের খবর টা আমায় দেয়নি ,, কারণ তারা জানতো আমি নুপুরের নিখোঁজের খবর শুনে কাজ ফেলে রেখে দেশে চলে আসবো ,, আর তাতে আমার চাকরিটাও চলে যাবে ,, তখন তো তারা আর টাকা পাবেনা ,, তাই এই বিবেকে তারা আমাকে খবর টা আর জানায় নি ,, বিয়ের ১০ মাস পেড়িয়ে যায় ,, রিয়ার ছেলে হয় ,, ও নিজেই ছেলেটার নাম রাখে “আয়ান” ,, আমি ছুটি নিতে পারিনি বলে আসতে পারিনি ,, বাবা আর শশুরই ছিলো তার ডেলিভারির সময় ,, আমারও তারপর থেকে দুই বাড়িতেই টাকা পাঠাতে হতো ,, নিজের বাড়িতে ,, আর তার সাথে আমার রিয়া আর আয়ানের জন্য রিয়ার বাড়িতেও ,, দুই বাড়িতে টাকা পাঠানো , ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় , নিজের থাকা খাওয়া সবমিলিয়ে আমার অনেক পরিশ্রম করতে হতো টাকা উপার্জনের জন্য,,  এমনও দিন গিয়েছে না খেয়ে ছিলাম ,, অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলাম, কিন্তু দেশ থেকে আমাকে একটা কল পর্যন্ত দেয়নি,,  আমিই শুধু নিঃস্বার্থ ভাবে খেটে যাচ্ছিলাম তাদের জন্য,, আবার কোন মাসে টাকা পাঠাতে দেরি হলে রিয়ার কাছ থেকে কথাও শুনতে হতো ,, আমি তার কথা গুলো তেমন আমলে নিতাম না , কারণ আয়ান এখন ছোট , তার তো অনেক কিছুই লাগতে পারে ,, তাই হয়তো রিয়া এমন করে বলছে ,, 

    এভাবেই কেটে যায় আরো ১ বছর ,, আয়ানের বয়স এখন ১ বছর ২ মাস ,, এদিকে আমি এতোদিনে বেশ ভালোই সঞ্চয় করতে পেরেছিলাম ,, আমি ঠিক করি দেশে যাবো ,, গিয়ে এতোদিনের সঞ্চয়ের টাকা গুলো দিয়ে ঢাকায় ফ্লাট কিনবো আর একটা ব্যবসা ধরবো ,, কারণ আমার পক্ষে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো প্রবাসে এতো কঠোর পরিশ্রম করাটা,, আমাকে এখানে বড় বড় বিল্ডিংয়ের কনস্ট্রাকশনের কাজে লেবার হিসেবে খাটতে হতো ,, টাকা ভালোই পেতাম ,, কিন্তু ১৭-১৮ ঘন্টা টানা কাজ করে নিজের অবস্থা অনেক কাহিল হয়ে যেতো ,, আমি দেশে আসার জন্য দিনখন ঠিক করি,,,আমি যে দেশে আসবো এই কথাটা শুধু রিয়া জানতো, সে ছাড়া তার বাড়ির কিংবা আমার বাড়ির কেউ জানতো না ,, আমি কাউকে বলিনি ,, আমার দেশে আসার দিন ঠিক হয়ে যায় ,, আমি প্রবাসের চাকরি টা ছেড়ে দিয়ে এতো দিনের জমানো সব টাকা নিয়ে দেশে আসার জন্য রওনা দেই,,  আমি প্রবাসে ফ্লাইটে উঠি ,, আর আল্লাহর রহমতে সুস্থ ভাবেই দেশে ল্যান্ড করি ,, 

    – তারমানে তুমি মারা যাওনি ,, ? (নোমানের কথা থামিয়ে দিয়েই তার মাঝে জিগ্গেস করে শাহারিয়া ,, )

    – কথার মাঝখানে কথা বলা আমি পছন্দ করি না ,, সম্পূর্ণ কাহিনীটা শুনো তারপর কথা বলো ,, (শাহারিয়ার দিকে বিরক্ত সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথা গুলো বলে নোমান ,, নোমান আবার বলতে শুরু করে ,, 

    ” দেশে এসে আমি সহীহ সালামত ভাবে ল্যান্ড করি,, আমার ফ্লাইট ঢাকায় ল্যান্ড করে বিকাল ৪ টার দিকে ,, আমি ঢাকা থেকে  দিনাজপুরে যাওয়ার জন্য একটা মাইক্রোবাস ঠিক করি ,, সেখানে আমি একলাই এসেছিলাম পুরো মাইক্রোবাসটা নিয়ে কারণ আমার কাছে ব্যাগ ভর্তি কারি কারি টাকা ছিলো ,, যদি কোন ছিনতাই চক্র গাড়িতে উঠে, এই ভয়ে নিজেই পুরো মাইক্রোটাই ভাড়া করে আসতে থাকি দিনাজপুরের দিকে ,, মাইক্রোবাস টা আমাকে দিনাজপুর জেলা শহরের নামিয়ে দেয় ,, তখন রাত প্রায় ১ টা বাজে ,, আমি মাইক্রোর ড্রাইভার টাকে বলছিলাম যে আমাকে একটু গ্রামের দিকে নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দিতে ,, কিন্তু তিনি কোন কিছুর বিনিময়েই যেতে রাজী নন ,, তিনি আমাকে সেখানেই নামিয়ে দিয়ে চলে যান ,, এতো রাতে আমি দুই ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে শুনশান শহরের মধ্যে একলা দাঁড়িয়ে আছি ,, ছিনতাইকারীর ভয় হচ্ছিল,, তখনই ‌দেখতে পাই একটা অটো আমার দিকেই আসছে ,, এবং আমার সামনে এসে সেই অটোটা থেমে যায় ,, সেই অটো থেকে বেড়িয়ে আসে আহাদ,, আমি তাকে চিনতে পেরেছিলাম কারণ তার বাবার সাথে আমার ভালো বন্ধুত্ব ছিলো ,, আর আমি যখন গ্রাম ছেড়েছিলাম তখন সে যেমন দেখতে ছিলো ,, আজও তার চেহারার পরিবর্তন তেমন একটা ঘটেনি,, শুধু শরীরেই পরিবর্তন এসেছে ,, তাকে দেখে আমি বলি ,, 

    – তুই এখন অটো চালাস ? 

    – হ্যা ভাইয়া আমি অটো চালাই রাতে ,, কারণ দিনে চালালে আমাকে যদি আমার কোন কলেজ ফ্রেন্ড দেখে ফেলে তাই লোকলজ্জার ভয়ে রাতেই অটো নিয়ে বের হই ,, রাতে যেই যাত্রি গুলা ঢাকা থেকে এসে পৌছায় তাদের কে নিয়ে যাই ,, 

    – ওহহ আচ্ছা,, তাইলে আমাকে একটু বাসায় নিয়ে গিয়ে দে না,, ভাড়া দিবো বেশি করে ,, 

    – আচ্ছা তুমি উঠো ,, 

    আমি আহাদের অটোতে উঠে পড়ি ,, আকাশ খারাপ ছিলো ,, তাই দেরি না করে ঝটপট করে উঠে পরি টাকা আর গহনা ভর্তি দুইটা ব্যাগ নিয়ে,, আহাদ অটো চালাতে শুরু করে ,, বাইরে বাতাস প্রচন্ড,, আমরা মেইন রোড দিয়ে যাচ্ছিলাম ,, তবে তেমন কোন গাড়ি চলছিলো না তখন ,, আমি অনেক দিন পর দেশে এসেছি আর গ্রামে যাচ্ছি তাই আমার মনে একটু বেশিই আনন্দ,, আহাদ আমাকে জিগ্গেস করে ,,

    – ভাইয়া ,, রিয়া আপুর ছেলেডা কিন্তু অনেক সুন্দর,, 

    – আমি তো এখনো দেখি নিরে ,, এই দেখার জন্যই তো ছুটে আসা ,, আয়ান ভালো আছে তো না রে ? 

    – হ ভাইয়া ,, ভালোই আছে ,, 

    তখনই আহাদ অটো চালাতে চালাতে একটা ছোট্ট পানির বোতল আমার দিকে এগিয়ে দেয় ,, বলতে থাকে ,, 

    – ভাইয়া আপনি তো অনেক দূর থেইকা জার্নি করে আসলেন ,, নেন একটু পানি খান ,, 

    – না না ,, লাগবেনা ,, আমি ঠিক আছি ,, 

    – ভাইয়া আপনার গলা শুইনা বুঝা যাইতেছে যে আপনার পানির পিপাসা লাগছে ,, নেন পানি খান ,, গ্রামের টিউবওয়েলের পানি ,, স্বাদ পাইবেন ভালোই ,,

    আমিও আর কথা বাড়াইনা ,, আমারো একটু পানির তৃষ্ণা পেয়েছিল,, তাই সেই পানির বোতল টা নিয়ে এক ঢোকে সব পানি টুকু খেয়ে ফেলি ,, খেয়ে বোতল টা তাকে দিয়ে দেই ,, সে অটো চালানো অবস্থায়তেই বোতল টা আমার হাত থেকে নেয় ,, নিয়ে বলতে থাকে ,, 

    – পানি টা স্বাদ ভালো ছিলো না ভাইয়া ? 

    – হ্যা ,, ভালোই ,, অনেক দিন পর গ্রামের পানি খেলাম,, ভালোই,, 

    পানি টা খাওয়ার পর পরই আমার মাথাটা কেমন জানি ‌ঝিম ঝিম করতে থাকে ,, আমি হাত দিয়ে মাথা টা ধরি,, আমার চোখের পাতা গুলো বন্ধ হয়ে আসছিলো,, আমি নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না আর ,, আমি জ্ঞান হারাই ,, 

     

    আমার শরীরে আমি ব্যাথা অনুভব করছি ,, আর মাথাতেও ব্যাথা করছিলো আমার ,, আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলি ,, শরীরে অনেক ব্যাথা ,, চোখ খোলার পর দেখতে পাই উপরে খোলা আকাশ ,, এখন আকাশ পরিস্কার,, জোছনা রাত ,, আমি কোথায় তা বুঝতে চেষ্টা করছিলাম,, তখন চারপাশে তাকিয়ে দেখি আশে পাশে মোটা মোটা গাছ ,, দেখে মনে হচ্ছিলো আম গাছ ,, আমার হাত পা গুলোকে আমি নাড়াতে চেষ্টা করি ,, কিন্তু আমি পারিনা ,, দেখি ,, আমার হাত গুলো বাধা আর পা গুলোও বাঁধা,, আমি নিজেকে আবিষ্কার করি এক কাঠের খাটের উপর শোয়া অবস্থায় ,, আমি এবার ভালো করে চোখ মেলে তাকাই ,, দেখি আমার পায়ের দিকে কিছুটা দূরে একটা গেইট আর গেইটের একটা কোন এক হলুদ ফিলামেন্ট বাতি জলছে ,, আমার মনে হতে থাকে সব ঘটনা ,, আমি তো আহাদের অটোটায় ছিলাম ,, তাইলে এখানে কী করে আসলাম,, আমি আমার টাকা গুলোকে খুঁজতে থাকি ,, কিন্তু আমার হাত পা বাঁধা,, আশেপাশে কোন ব্যাগ দেখতে পাই না আমি ,, তখনই আমি দেখতে পাই সেই বড় গেইট দিয়ে কারা যেন ভিতরে আসছে ,, তাদের মুখ ভালো করে দেখতে পারিনি কারণ তাদের পিছনে গেটের লাইটের আলোটা পড়ছিলো ,, তারা এসে আমার পাশে দাঁড়ায় ,, আমি দেখি তারা ৪ জন ,, ২ জন ছেলে ২ জন মেয়ে ,, তাদের কারো হাতে হকি স্টিক ,, কারো হাতে চাকু ,, আর একজনের হাতে আমার সেই ব্যাগ দুটি ,, আমি বলে উঠি ,,

    – তোমরা কারা ,, আমাকে এখানে বেঁধে রেখেছো কেন,, আমার টাকা ,, আমার টাকা আমাকে ফেরত দেও ,, 

    তখনই গেটের সামনে থাকা আলোতে আমি ছেলে দুইটার চেহারা দেখতে পাই ,, একজন ছিলো আহাদ ,, আর আরেকজন ছিলো আরমান ,, আমি আহাদকে বলি ,,

    – বেইমানের বেইমান ,, তুই আমাকে অজ্ঞান করে আমার টাকা গুলা নিয়ে নিতে পারলি ?  

    তারা কিছু বলে না ,, তারা দুইজনেই হকি স্টিক দিয়ে আমাকে বেদরম মারতে থাকে ,, আমি ব্যাথায় খালি চিৎকার করছিলাম ,, আমার শরীর ফেটে রক্ত বের হতে থাকে ,, আমি নিম্ন গলায় ধীরে ধীরে বলি ,,

    – আমাকে ছেড়ে দেও ,, আমাকে মেরো না ,, আমাকে যেতে দাও ,, রিয়া আর আয়ান আমার জন্য অপেক্ষা করছে,, আমাকে যেতে দাও ,, 

    আর তখনই সেই মেয়ে ২ জনের মধ্যে থেকে যেই মেয়েটা ছুড়ি ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো সে বলে উঠে ,, 

    – আমি এখানে নোমান ,, 

    আমি এই কথা শুনে সেই মেয়েদুটোর দিকে ফিরে তাকাই ,, তারা অন্ধকার কার থেকে সামনে এসে আমার ডান পাশে দাঁড়ায়,, একজন ছিলো নাদিয়া,যে ব্যাগ গুলো ধরে রেখেছিলো ,, আর আরেকজন যে ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলো সে আর কেউ নয় ,,আমার রিয়া ছিলো ,, আমি রিয়াকে ওখানে দেখতে পেরে একদম ভেঙে পরি ,, আমার চোখে পানি চলে আসে ,, আমি রিয়াকে উদ্দেশ্য করে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলতে থাকি ,, 

    – তোমাকে এরা তুলে এনেছে তাই না ,, তুমি পালিয়ে যাও এখান থেকে ,, নাহলে ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে ,, আমার আয়ান বাসায় একলা আছে ,, তুমি পালিয়ে যাও ,, 

    কিন্তু আমার কথা শুনে উল্টো রিয়া আরো হাসতে থাকে ,, সে এসে আমার কানের পাশে হেলে বসে ,, বসে বলতে থাকে ,, 

    – আমিও এদের সাথেই আছি ,, 

    এই কথাটা শুনে আমি অনেক আঘাত পাই বুকে ,, আমার ভিতর টা একদম কষ্টে পুড়ে যেতে থাকে ,, আমি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতে থাকি ,, 

    – রিয়া ,, শোনো না ,, আমাদের ছেলে আয়ানের কী হবে ,, সে কী তার বাবার মুখ টা একবারো দেখতে পাবেনা ,, আমি কী আমার সন্তানের মুখ টা একবারো দেখতে পারবোনা ,, আমাকে ছেড়ে দাও,,

    – কে তোমার সন্তান ,, আয়ান তো তোমার সন্তান নয় ,, আয়ান তো আরমানের সন্তান ,, আরমান আর আমার সন্তান ,, 

    এই কথাটা শুনে আমার মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে,, আমি কষ্টে একদম ভেঙ্গে পরি ,, আমার চোখ দিয়ে খালি অনগরত পানি পরতে থাকে ,, আমি সেই কান্না কান্না স্বরে তাকে বলি ,,

    – তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না রিয়া ,, তুমি বলে দেও যে এতোক্ষণ তুমি যা বললে সব মিথ্যে,, তুমি বলো ,, (চিৎকার দিয়ে) তুমি বলো ,, 

    – গলা নিচে নোমান ,, (একটু থেমে) গলা নিচে,, তোমার সাথে আমি ভালোবাসার নাটক করেছিলাম টাকার জন্য,, তোমার টাকা বেশি ছিলো, তাই প্রতি মাসে টাকা নিয়ে আমি আর আরমান এখন সংসার করছি ,, আর তুমি এতোক্ষণে মৃত হয়ে গেছো গ্রামবাসীর মাঝে ,, তোমার আর এখন অস্তিত্বই নেই তোমার পরিবারের কাছে,,

    – আমার মন নিয়ে তুমি খেলতে পারলে রিয়া ,, ! আমি তো তোমায় মন দিয়ে ভালোবেসে ছিলাম রিয়া ,, তোমাকে নিয়ে ভবিষ্যত সপ্ন ,, আমাদের আয়ান কে নিয়ে স্বপ্ন ,, (একটু থেমে) তুমি কেন এমন করলে রিয়া ,, কেন ,, (এক কান্না ভেজা চোখে আমি তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে ,, এবং তখনই সে আমার কানের সামনে এসে বলে ,, 

    – তোর বোন নুপুরও তো মারা গিয়েছে ,, তুই কী জানিস ,, ওহোহোহো ,, তুই কীভাবে জানবি তোর পরিবারই তো তোর টাকা দেওয়া যেন বন্ধ না হয় সে জন্য তোকে জানায় নি ,, ইসস বেচারা ,, 

    নিজের প্রিয়তমার দেওয়া কষ্টের মাঝে নিজের ছোট্ট বোনের মৃত্যুর সংবাদ যেন আমার হৃদ স্পন্দন কেও থামিয়ে দিচ্ছিলো,, আমার প্রিয় বোন টা পৃথিবীতে নেই ,, আমার বুক টা খা খা করে উঠছিলো ,, তখনই রিয়া আবার বলে ,, 

    – জানিস ,, তোর বোনকে কারা মেরেছে ? (একটু থেমে এক শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ) আমরা ,, তোর বোন মৃত্যুর সময় অনেক বার তোর নাম ধরে ডেকেছিলো রে, অনেক বার ,, তোর বোনকে ছিঁড়ে খেয়েছে আরমান আহাদরা ,, ইশশ ,, তোর বোনের সেই মৃত্যুর আগের চেহারাটা আজও আমার চোখে ভাসে ,,(বলেই চোখে হাত দিয়ে কান্নার ঢং করতে থাকে রিয়া) 

    তার মুখে এই কথা শুনে আমার শরীরের রক্ত গরম হয়ে যায় ,, আমার বোন কে তারা মেরে ফেলেছে ,, আমার সেই ছোট্ট বোনটাকে তারা কষ্ট দিয়েছে ,, আমি জোড়ে এক চিৎকার দিয়ে উঠি ,, নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকি ,, আরমানকে গালি দিতে থাকি ,, 

    – কুত্তার বাচ্চা তুই আমার বোন কে কেন মারছিস ,, আমার বোন টা তোর কী ক্ষতি করেছিলো ,, আমার বোন টাকে কেন কষ্ট দিয়েছিস ,, কুত্তার বাচ্চা আমি তোকে শেষ করে দিবো ,, 

    বলতে থাকি আর নিজের হাত গুলোকে বিছানার বাঁধন থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকি,, তখনই আরমান বলে উঠে ,, 

    – তোর বোনটা না বাঁচতে চেয়েছিলো,, আর বলেছিলো তূই বিদেশ থেকে ফিরে আসলে নাকি এর প্রতিশোধ নিবি ,, কিন্তু তারপরই ওর জিহবাটা আমি প্লাস দিয়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলি ,, ইসস মরা মুরগীর মতো ছটফট করছিলো তোর বোন ,, অনেক কষ্ট পেয়েছে বোধহয় ,, 

    আমি এই কথা গুলো শুনে জোড়ে এক টান দেই ডান হাত টা ,, আর কাঠের খাটের খুঁটি টা ভেঙে যায় ,, আমি আরেক হাতের টানে আরেক পাশের খুটিটাও ভেঙ্গে যায় ,,আমার শরীরে এক গরম রক্ত চলে আসে ,, মনে তখন খালি প্রতিশোধের আগুন ,, আমি এতো জোড়ে খাট টায় কনুই দিয়ে বাড়ি মারি যে খাট টা একদম ভেঙে যায় ,, তাদের চোখের পলকেই আমি খাট টাকে ভেঙে ফেলি ,, ফেলে কাঠের একটা খুটি নিয়ে ক্ষতবিক্ষত শরীরের সাথে আমি এগিয়ে যেতে থাকি আরমানের দিকে ,, শরীরে আমার অনেক রাগ ,, বুক ভাঙার কষ্ট, প্রতিশোধের আগুন ,, আমি আরমানের একদম কাছে এসে তাকে খুটি টা দিয়ে বাড়ি মারতেই যাবো তখনই দেখি আমার সামনের পেটের  ঠিক মাঝ বরাবর একটা ছুরির কোন বের হয়ে রয়েছে ,, আমি সাথে সাথেই থেমে যাই ,, আমার হাত থেকে খুটিটা পড়ে যায় ,, আমি আস্তে আস্তে পিছনে ফিরে দেখি রিয়া তার হাতে থাকা ছুরিটা আমার শরীরে ঢুকিয়ে দিয়েছে,, আমি কিছুই বলতে পারিনি তখন ,, রিয়া সজোরে আবার ছুরিটাকে বের করে নেয়,, আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ,, তার মুখে এক শয়তানি হাসি,, আমার পেটের সাথে সাথে বুকেও রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো ,, কারণ ছুরিটা আমাকে আমার ভালোবাসার মানুষটা মেরেছে ,, আমি পেটে হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে যাই ,, অনেক রক্ত বের হচ্ছিল আমার ,, রিয়া তখনই এসে আমার পেটের উপর বসে ,, বসে হেলে আমার ডান কানের সামনে তার মুখ টা আনে ,, এনে বলতে থাকে ,, 

    – তোর বোনের প্রতিশোধ নিবি তাইনা ,, হ্যা ,, আমাকে খুব ভালোবাসতি তুই ,, শেষ বারের মতো তাইলে শুনে নে ,, আমি তোকে কখনোই ভালোবাসিনি ,, কখনোই না ,, এখন তুইও তোর বোনের মতো মর,, 

    বলেই তার হাতে থাকা ছুরি টা নিয়ে সেই হেলে থাকা অবস্থাতেই আমার বুকের বা পাশে ছুরি দিয়ে জোরে আঘাত করতে থাকে ,, এভাবে অজস্র বার আঘাত করার পর সে আমার উপর থেকে উঠে যায় ,, আমার ক্ষতবিক্ষত বুক টা থেকে শেষ কয়েকটা স্পন্দন বের হতে থাকে ,, মনে পড়তে থাকে রিয়ার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার মুহূর্ত গুলো ,, তার সাথে আমার ভালোবাসার মুহূর্ত গুলো, বোনের মৃত্যুর খবরের থেকেও সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছি যখন আমার ভালোবাসার মানুষটাকে এমন হতে দেখেছি ,, আমি তাদের চলে যাওয়াটা দেখছিলাম ,, অনেক ইচ্ছে করছিলো রিয়াকে বলার যে আমাকে ছেড়ে যেওনা ,, কিন্তু তারা সবাই চলে যায় ,, তাদের যাওয়ার পথে হাত বাড়িয়ে শেষবারের মতো আমার মুখ থেকে বেড়িয়ে ছিলো রিয়ার নাম ,, তারপরই আমার শেষ শ্পন্দন ,, আমার জীবন অধ্যায়ের ইতি হয় ,, 

     

    বলেই বর্তমানে নোমান তাদের দিকে ফিরে তাকায় এবং বলে ,, 

    – আমি মৃত ,, আমি আমার বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আবার ফিরে এসেছি ,, আমার মৃত্যু ঘটলেও আমার আত্মা মুক্তি পায়নি ,, আজ আমার আত্মা মুক্তি পাবে ,, (একটু থেমে) আমার খুনি আর আমার বোনের খুনি, আমার আর রিয়ার ভালোবাসার খুনি এই আরমানকে মেরে ,, (শাহারিয়ার দিকে ফিরে বলে) আচ্ছা তোমরাই বলতো ,, আমি কী দোষ করেছিলাম ? নিঃস্বার্থভাবে একজনকে ভালোবাসা কী আমার ভুল ,, ? নিজে খেয়ে না খেয়ে পরিবার আর আমার ভালোবাসার মানুষটার জন্য টাকা জমিয়েছিলাম একটা সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য,, সেই ভালোবাসার মানুষটাই কি না শেষ পর্যন্ত টাকার জন্য আমাকে ধোঁকা দিলো ,, আমাকে , আমার বোন কে মেরে ফেললো ,, আমার মতো হাজারো প্রবাসী তাদের নিজেদের কথা না চিন্তা করে তাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে শতকষ্টের মাঝে টাকা পাঠায় ,, দিনরাত খেটে যায় ,, দিনশেষে কী তারা তাদের প্রাপ্প ভালোবাসা টা পায় , ? নাকি সবই অভিনয় , ? আমার শেষ টা অনেক দুঃখের ,, আমার মতো এই শেষ যেনো আর কারও না হয় ,,, কারও না,, (বলেই কেঁদে ফেলে নোমান,,

     

    এদিকে ফুলমতি এতক্ষণ এই সব টুকু পরে চিঠিতে ,, সে পরার পরই চিঠি টাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে ,, তার প্রিয় নাসিম মৃত্যুর সময় কতটা কষ্ট পেয়েছে কতটা আঘাত পেয়েছে,, ফুলমতি আর নিজেকে সামলাতে পারে না,, সে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় সেই আমবাগানে যাওয়ার জন্য,,

     

    শাহারিয়া আর রিয়াদ দের চোখেও পানি ,, আসলেই তো নোমানের ভুল কী ছিলো ,, এতো কষ্ট করার পর ও এমন ফল কেনো পেলো ,, এতো আঘাত ,, এতো দুর্বিষহ মৃত্যু আসলেই অনেক কষ্ট দায়ক ,, 

    শাহারিয়া তার চোখের পানি মুছে,, বলতে থাকে,, 

    – তোমার সাথে যা হয়েছে ,, তা আসলেই খুব খারাপ হয়েছে ,, আমরা এসব কিছুই জানতাম না,, তবে তুমি আরমনের বোন আনিকা আর সেতুকে কেনো মারলে ,, তারা তো এসবে জড়িত ছিলো না,, 

    নোমান চোখ মুছতে মুছতে বলে ,, 

    – আমি চেয়েছিলাম যাতে তারাও বুঝে যে একজন বড় ভাই তার বোনের মৃত্যুর খবর শোনার পর কতটা কষ্ট পায় ,, কতটা,, এখন আমি আরমানকে মেরে ফেলবো ,, তার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই,, ও আমার ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছে,, আমার বোনকে মেরে ফেলেছে ,, ওকে আমি বাঁচতে দিবোনা ,, (বলেই শাহারিয়াদের দিকে এক অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকায় নোমান ,, শাহারিয়া বলে ,,

    – তুমি আরমানকে মেরে ফেলো,, আমরা কেউ কিচ্ছু বলবোনা ,, আরমান তার প্রাপ্য শাস্তি পাক ,, ওকে তুমি মেরে ফেলো,, 

    শাহারিয়ার মুখ দিয়ে থেকে এমন কথা শুনে আরমান ছটফট করতে থাকে ,, সে ভেবেছিল শাহারিয়ার উছিলায় সে বেঁচে যাবে ,, কিন্তু তা আর হলোনা ,, নোমান গিয়ে একটা ছুরি নিয়ে আসে ,, এসে আরমানের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে ,,

    – আমার বোন প্রতিশোধ নিতে বলেছিলো তাই না ,, ? এখন , এই ৬ বছর পর হলেও আমি সেই প্রতিশোধ নিচ্ছি ,, আমার বোনের প্রতিশোধ ‌নিচ্ছি ,,(জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে আরমানের সারা দেহে খালি ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকা নোমান,, আরমানের দেহটা খালি কাঁপছে,, নোমান ছুরি দিয়ে আঘাত করতে করতেই জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে,,,

    – আমার ভালোবাসা কেড়ে নেওয়ার শাস্তি ,, (একটু থেমে) আমার রিয়াকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার শাস্তি ,, সব সব সববববব (বলে জোড়ে এক চিৎকার দিয়ে উঠে নোমান,, আর ছুরিটা দিয়ে গলায় এতো জোড়ে আঘাত করে যে মাথাটা ছুটে ঘরের এক কোনায় গিয়ে পড়ে ,, রক্তে নোমানের সারা শরীর ভিজে গিয়েছে ,, সে উঠে দাঁড়ায়,, দাঁড়িয়ে শাহারিয়াদের দিকে ফিরে তাকায় ছলছল চোখ নিয়ে ,, তার হাত দুটো মুষ্টি করে বাড়িয়ে দিয়ে বলে ,, 

    – আমায় এরেষ্ট করবে না শাহারিয়া  ,, ?

    – তোমার প্রতিশোধ নিতে তুমি এসেছিলে,, এরেষ্ট করার সাধ্য আমার নেই ,, 

    – আমার চলে যাওয়ার সময় চলে এসেছে শাহারিয়া ,, আমার লাশ টা আজ আমবাগানের সেই খাল টার পাশে মাটি থেকে উপরে উঠে থাকবে ,, আমার লাশটাকে দাফন করে দিও ,,, ভালো থেকো ,,আর (একটু থেমে) আমার ফুলমতি কে দেখে রেখো ,,

     

    বলেই আস্তে আস্তে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে থাকে নোমানের আত্মা ,, তার মুখে শেষ বারের মত ফুটে উঠে ছিলো এক বিজয়ের হাসি,, শাহারিয়া তাকে হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চায়,, নোমানের আত্মার শেষ অংশ টা তার আঙ্গুল স্পর্শ করে মিলিয়ে যায় হাওয়াতে ,, 

     

    এদিকে আমরা দেখতে পাই সেই আমবাগান টায় ,, অনেক বৃষ্টি হচ্ছে,, দরজার সামনে আজও লাইট লাগানো ,, দরজা দিয়ে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে ফু্লমতি ,, সে দৌড়ে যায় সেই খাল টার পাশে ,, আকাশে বিজলী চমকাচ্ছে ,, সে দেখতে পায় নোমানের আধ গলা লাশ টা মাটির মধ্যে ভেসে উঠেছে ,, কিছুটা শরীর এখনো মাটির ভিতরে,, ফুলমতি কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে নোমানের পায়ের উপর বসে ,, সে হাত দিয়ে অর্ধগলিত লাশ টার মুখ থেকে মাটি সড়াতে থাকে ,, এইটাই তার নাসিম ,,এইটাই তার ভালোবাসা,, সে লাশ টাকে ধরে বুকে টেনে নেয়,, তার সবটুকু কষ্ট কান্নার মাধ্যমে বের হয়ে আসছে ,, সে আবার বুকে সড়িয়ে নোমানের লাশের চেহারাটা দেখে আবার কোলে টেনে নেয়,, কাঁদতে কাঁদতে জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে ,, “পিউউ ,, আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি,, অনেক,,” 

    সে লাশ টাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে ,, তার কান্না শুনে গাছে থাকা পেঁচা টারও ডাক নিশ্চুপ হয়ে যায় ,,

    তখনই তার কিছুটা পিছন থেকে কেউ একজন তাকে মিষ্টি সুরে ডাকে ,, 

    – ফুল ,,,,,, ! 

    ফুলমতি ডাক টা শুনেই চিনতে পেরে যায় ,, এটা, এটা তার নাসিমের গলা ,, সে লাশ টা কোল থেকে সড়িয়ে পিছনে ফিরে তাকায় ,, দেখে কিছুটাই দূরে নাসিম দাঁড়িয়ে আছে ,, ফুলমতি উঠে দৌড়ে যায় নাসিমের কাছে ,, গিয়েই তাকে জড়িয়ে ধরে ,, সে এখন জড়িয়ে ধরতে পারছিলো ,, নাসিমের অবয়বকে সে স্পর্শ করতে পারছিলো ,, নাসিম তাকে শান্ত করায় ,, তাকে ভালোভাবে দাঁড় করায় ,, দাঁড় করিয়ে হাত দিয়ে তার দুইচোখের পানি মুছে দিতে থাকে ,, বলতে থাকে ,, 

    – কোদোনা ফুল ,, আমি জীবিত কেউ নই ,, তোমার সাথে কাটানো আমার প্রতিটা মুহূর্তই অনেক ভালো ছিলো ,, তোমার ভালোবাসাটা নিঃস্বার্থ ছিলো ,,  কিন্তু আমি তোমাকে এ জীবনে পেলাম না ,,,,

    – তুমি কী আমাকে ছেড়ে চলে যাবে ,, আমি কিন্তু অনেক কাঁদবো,, অনেক,, (ছোট বাচ্চার মতো আবেগ গলায় বলতে থাকে ফুল)

    – জানি আবার একটি জন্ম আমার কভু হবেনা ,, জানি আবার এমন করে তোমার দেখা পাবোনা ,, আমি আকাশের তারা আজকে থেকে,, আমায় তুমি তারাদের ভিড়ে খুঁজে পাবে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে,, 

    – আমি তোমায় যেতে দিবোনা ,, তুমি আমায় ছেড়ে যেওনা ,, তোমায় ছাড়া যে আমি থাকতে পারবোনা,, যেওনা প্লিজ ,,

    – আমার যে মুক্তির সময় এসে গেছে ,, আমাকে যে এবার যেতে হবে ,, তুমি কষ্ট পেওনা ,, আমার থেকে আরো অনেক ভালো ছেলে তুমি পাবে ,, তবে আমি এটাই চাই যদি পুনর্জন্ম হয় তবে যেন আমি তোমাকেই পাই ,, তোমাকেই ,, 

    – চলে যাবে তুমি ,, 

    – জন্ম মৃত্যুর আবর্তনে , পুনর্জন্ম হবে ,, তোমার আবার দেখা পাবো কখন কে জানে ,, (একটু থেমে) ভালো থেকো ফুল ,, (বলেই ফুলমতির কপালে একটা ছোট্ট চুমু দেয় নোমান ,, আর বেশ বারের মতো বলে ,, 

    – তোমার এই পিউ সবসময় তোমার সাথে তারা হয়ে থাকবে ,, 

    (বলেই একটা সাদা ধোঁয়ার পরিনত হতে থাকে নোমান,, )

    – তুমি যেওনা ,,(কাঁদতে কাঁদতে) তুমি যেওনা,, 

    নাসিম এক সাদা ধোঁয়ায় পরিণত হয়ে যায় ,, হাওয়ায় মিলিয়ে যায় ,, ফুল হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে,, তার ভালোবাসার সাথে সে শেষ দেখা করলো ,, আর কখনোই সে নাসিমকে দেখতে পাবেনা ,, কখনোই না,, তখনই তার মনে পরতে থাকে নাসিমের সাথে কাটানো একটা সুন্দর ঘটনা ,, এবং ফ্লাসব্যাকে দেখানো হয় আমাদের ,

    নোমান গিয়ে ফুলবাগান থেকে একটা জবা ফুল তুরে আনে,, এনে ফুলমতি মাথায় গুঁজে দেয় সে ,, দিয়ে তাকে পাশে নিয়ে এক সুন্দর হাসিতে মেতে উঠে দুজনে ,, ) 

     

    সকাল ৭ টা ,, শাহারিয়া আর বাকি টিমের সবাই এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে ,, আকাশে ছোট ছোট মেঘ ,, চারপাশে কুয়াশা ,, নোমানের ডেড বডি নিয়ে যাচ্ছে পুলিশের দুজন কনস্টেবল এবং তার সামনে আমরা দেখতে পাই শাহারিয়া আর রিয়াদ দাঁড়িয়ে আছে ,, তারা দুইজনেই জ্যাকেট পরিহিত ,, তাদের দুইজনেরই মন খারাপ,, রিয়াদ তার মাথার টুপি টা খুলে হাতে নেয় ,, বলতে থাকে ,, 

    – কাল সারারাত বৃষ্টির মাঝে ফুলমতি নোমানের লাশের পাশে শুয়ে ছিলো ,, আহা ভালোবাসা,, বেঁচে থাকতে পেলো এক বুক ভরা কষ্ট,, আর মৃত্যুর পর পেলো এক আসল ভালোবাসার সন্ধান ,, কিন্তু আফসোস,, এখন আর ফিরে আসার উপায় নেই ,, 

    – আমরা মানুষই বড় বিচিত্র এক প্রাণী,, একেকজন একেক রুপি ,, কেউ ভালোবাসার অভিনয় করে ,, টাকার জন্য মন নিয়ে ছলনা করে ,, ছেলে খেলা করে ,, আবার কেউ এক মৃত আত্মাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে নিজের জীবন উৎসর্গ করে,, আমরা মানুষই যদি পরিবর্তন না হতে শিখি ,, খারাপ কে দূরে ঠেলে ভালোকে গ্রহণ করতে না শিখি তাহলে তো আমাদের ধ্বংস সন্নিকটে,, সার্থ ছাড়াও যে একজন কে ভালোবাসা যেতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ফুলমতি ,, মেয়েটা আমার ছোট বোনের মতো, সে আজ নাসিমকে হারানোর শোকে পাথর ,, 

    – হমম,, (একটু থেমে) আচ্ছা নাইম স্যার কে কী জবাব দিবি ,, তিনি যদি এসব কিছু না মানেন ,, ?

    – টুটুল আছে না ? ও যা করছে ও ঐটার শাস্তি পাবে ,, আর বাকিটা আমি নাঈম সাহেবের সাথে দেখে নেবো ,, 

    – আচ্ছা,, (একটু থেমে) তবে দোস্ত,, জানিস একটাই বিষয় আমার মনে খালি বারবার উঁকি দিচ্ছে,, 

    – কী বিষয় ? 

    – আচ্ছা এই যত গুলা খুনই হলো তার একটারও কিন্তু আমরা মাথা খুজে পাইনি ,, এমনকি নোমানের সেই ঘরটাতেও না,, আর তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে কাল যে আরমান মারা গেলো তার মাথাও কিন্তু আমরা এখনো সেই ঘর থেকে পাইনি ,, 

    – কী বলিস ,, ? ভালো করে খুজেছিস তো ? 

    – হ্যা আমি আর আমার টিম নোমানের বাড়ি আর বাড়ির আশপাশ খুব ভালো করে খুঁজছি,, কোন মাথার হদিস পাইনি ,, না পাওয়া গেছে আরমানের টা , না পাওয়া গেছে বাকিদের টা ,, 

     

    কথাটা শুনেই শাহারিয়া কিছুটা এগিয়ে দাঁড়ায়,, দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলতে থাকে ,, 

    – এই মাথার খুলি গায়েব হওয়ার রহস্য টাইবা কী ? এতো গুলা খুলি কোথায় উধাও হলো ,, ? কে নিলো ,, ? নোমান তো মুক্তি পেয়ে গেছে ,, তাইলে ?? নতুন কোন অধ্যায়ের শুরু নয়তো ?? 

     

    তখনই আমাদেরকে দেখানো হয় থানার ভিতর টায় ,, থানায় এখন কেউ নেই সম্পূর্ণ ফাঁকা,,  সবাই চলে গিয়েছে সেই বাগানে ,, রুম গুলো একদম ফাঁকা আর শুনশান ,, আশেপাশে আমরা হঠাৎ বাতাস উঠতে দেখি,, জোড়ে জোড়ে বাতাস বইতে থাকে ,, বাতাসে জানালা গুলো খালি খুলতেছে আর বন্ধ হইতেছে,, তখনই আমাদের দেখানো হয় থানার সেই ল্যাব রুম,, যেখানে লাশ রাখা  হয়ে ছিলো ,, আমাদের দেখানো হয় নুপুরের লাশের হাত টা,, আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই যে হাতের ছোট ছোট হাড়ের জয়েন্টে মাংস গজাতে শুরু করেছে  সেটা হঠাৎ নড়ে উঠলো ,, নড়ে উঠে হাতের আঙ্গুল গুলো খোলা থেকে মুষ্টিবদ্ধ হয় ,, এবং সিন সেখানেই কাট হয়ে যায় ,, 

     

    সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, না সমাপ্ত এখানেই না। এর সিজন ২ এ আরো অনেক রহস্যের উপর থেকে পর্দা উঠা বাকি আছে ,,, 😉

    নিচের লিংকে যান। সেখানে পর্ব ২৭ থেকে সিজন ২ শুরু। 

    লিংক 👇

     

     

    (সিজন ১ এর শেষ টা কেমন লেগেছে আপনাদের ? আসল খুনি যে টুটুল নয় নাসিম সেটা জানার পর কেমন লেগেছিলো ? আর সেই নাসিমই যে নোমান এটা জানার পর আপনার অনুভূতি কেমন ছিলো ? আয়ান যে নোমানের সন্তান নয় এবং রিয়ার ছলনা, এক প্রবাসীর কষ্টের জীবন ,, এই জিনিস গুলো কেমন লেগেছিলো ? এই সিজন এখানেই শেষ ,, কিছু প্রশ্ন কিন্তু এখনো রয়ে গিয়েছে যেমন সেই খুন হওয়া মানুষ গুলোর মাথা কোথায় ? লাশ গুলো কিন্তু সবই মাথা ছাড়া উদ্ধার করেছিলো রিয়াদ রা  ,, আর নুপুরের সেই কঙ্কাল টার হাতে মাংস গজাতে শুরু করলো কেন ? পরবর্তী সিজনে এই বিষয় গুলোর খোলাসা করবো ,, এই সিজনের টার্গেট ছিলো খুনিকে বের করা যা আমি করে দিয়েছি ,, আর দিথীর সাথে অলৌকিক ঘটনা আর উপরিউক্ত প্রশ্ন গুলো তোলা রয়ে গেলো সিজন ২ এর জন্য,, এটা আমার লাইফে লেখা প্রথম গল্প ,, জানিনা কতটা আনন্দ, রহস্য আর ইমোশন দিতে পেরেছি,, তবে আমার চেষ্টার মধ্যে কোন কমতি ছিলো না,, আমি এই পুরো গল্প টা লেখার আগে শুধু একটা লাইন ভেবে গল্প লেখা শুরু করেছিলাম “নাসিম খুন করবে , আমি এমন ভাবে দেখাবো যাতে খুনি অন্যজন কিংবা টুটুলকে মনে হয় এবং শেষে এসে নাসিমের পর্দা ফাস করবো” এইটুকু ভেবে লেখতে বসে এতো দূর আসা ,, সবই আপনাদের জন্য,, আপনাদের দেওয়া সাপোর্ট আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে ,, গল্পে নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার সাহস যুগিয়েছে ,, গল্পের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অনেকেই গল্পটা চুপি সারে পরেছিলেন ,, তারা আজকের পর্বের কমেন্ট সেকশনে একটা কমেন্ট করিয়েন ,, আপনাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই আমি,, এই পর্বের শব্দ সংখ্যা  ৯৬২৫ ,, অর্থাৎ এটাই এখন এই গল্পের সবচেয়ে বড় পর্ব ,, ধন্যবাদ পাশে থাকার জন্য খুব খুব শীঘ্রই আমি সিজন ২ নিয়ে ফিরে আসবো ,, খুবই শীঘ্রই,, আর গল্পের কোন চরিত্র টা আপনার পছন্দের আর কেমন হয়েছে ফিনিশিং টা তা কমেন্টে জানাইয়েন ,, আমি সেখান থেকে ধারনা পেয়ে পরবর্তী সিজনে আরো ভালো করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো,,আর এই গল্পটার থীম,  মূলভিত্তি সবই মৌলিক এবং আমার নিজের লেখা, নিজের মাথা থেকে বের হওয়া, কপি ভেবে ভুল বুঝবেন না আমায়,, পুরো ১ মাসের ফসল এই গল্প,, অনেক চিন্তা ভাবনা আর রিসার্চ করে লেখা ,, আপনার মূল্যবান মন্তব্য টুকু কমেন্টে জানাইয়েন ,,  আসসালামুয়ালাইকুম 🥰  )

     

    গল্প :: গ্রামের নাম আনন্দপুর 

    সিজন :: ১(সে ফিরে এসেছে)

    পর্ব :: ২৬ ও শেষ (২য় ভাগ)

    লেখক :: মির্জা সাহারিয়া

     

    মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।