বিয়ের প্রথম রাতে সে আমার কাছে একা আসেনি। সাথে আরো একজন নিয়ে এসেছিলো।
প্রথমে ভেবেছিলাম বন্ধু হবে হয়তো, তাই পরিচয় করাতে নিয়ে এসেছে।
কিন্তু সে আমায় ভুল প্রমান করে নিজে থেকেই বলে ওঠে,
“আজ তোমার সাথে আমি নয়, সে বাসর করবে, খুশি করে দাও ওকে”
নিজের স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিলো। কানকে একদমই বিশ্বাস করতে পারিনি। বুকের ভেতরটা ধুকধুক শুরু করেছিলো। এক মূহুর্তের জন্য ফ্রিজ হয়ে গেছিলাম।
মনে অনেক আসা নিয়ে তার বাড়িতে পা রেখেছিলাম। যদি এই জীবনে একটু সুখের দেখা পাই। আমার বয়স যখন ১২ বছর, তখন মায়ের পরকিয়ার জের ধরে বাবা মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায়।
বাবা অনেক চেয়েছিলো আমায় তার কাছে নিয়ে যেতে। কিন্তু মা আমায় কিছুতেই বাবার কাছে যেতে দেয়নি।
আমিও মাকে ছেড়ে যেতে চাইনি। মায়ের সাথেই রয়ে গেছিলাম।
বাবার সাথে ডিভোর্সের ২ সপ্তাহ পর মা আবার নতুন করে সংসার সাজায়। আমার মায়ের সেই স্বামীকে আমি একটুও পছন্দ করতাম না। ওনাকে বাবা বলে না ডাকায় মা একদিন আমায় খুব মেরেছিলো।
খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। একদিন জানতে পারি এই সেই লোক, যার জন্য আমাদের সাজানো গোছানো সংসারটা তছনছ হয়ে গিয়েছিলো।
বাবা মাকে কোনো মিথ্যে অপবাদ দেয়নি। সত্যিই মা পরকিয়ায় জড়িয়েছিলো।
মায়ের প্রতি মনের মধ্যে প্রচুর ঘৃণা জন্মাতে থাকে।
মা সেই লোকটার জন্য এতটাই পাগল ছিলো যে লোকটা মাকে যা বলতো মা তাই করতো।
শত কষ্ট বুকে চেপে বাবার জন্য অনেক অপেক্ষা করতাম, এই বুঝি বাবা এসে আমাকে এই জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে যাবে।
কিন্তু বাবা আর কখনোই ফিরে আসেনি। এখনো জানি না আমার বাবা কোথায় আছে কেমন আছে।
ওই লোকটার কথায় মা আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়। নিজের মা আমার সাথে সৎমায়ের মত ব্যবহার শুরু করে। ঘরের যাবতীয় সব কাজ আমায় দিয়ে করাতো। পান থেকে চুন খসলেই খুব মারতো।
খুব অত্যাচার হতো আমার ওপর।
একদিন মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলেছিলাম
মা, কেনো তোমরা আমার সাথে এমন করছো? আমি তো তোমারই মেয়ে। কেনো আমায় এত কষ্ট দিচ্ছো? আমি যে আর পারছিনা মা।
মা আমায় একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, আমি নাকি তার নিজের মেয়ে নই। বাবার শারীরিক সমস্যার কারনে মা গর্ভধারণ করতে পারেনি। তাই তারা আমায় দত্তক নেয়।
সত্যি বলতে আমার পুরো দুনিয়াটা এমনিতেই ওলট পালট ছিলো, মায়ের এমন কথায় আমার একটুও কষ্ট হয়নি, শুধু একটু অবাক হয়েছিলাম।
নিজের মেয়ের সাথে কি কেউ এমন করতে পারে?
বাবা আমায় খুব ভালোবাসতো, তাই বাবার কাছে আমায় দেয়নি। বাবার সুখ নাকি মায়ের পছন্দ না, তাই বাবার থেকে আমায় কেড়ে নেয়।
খুব একা হয়ে গিয়েছিলাম।
.
আমার বয়স যখন ১৬, শারীরিক দিক দিকে তখন আমাকে অনেকটা বড় লাগতো।
এমনি একরাতে রান্নাঘরেই ঘুমাচ্ছিলাম, মাঝরাতে কারো হাতের ছোয়ায় ঘুম ভেঙে যায়। চোখ মেলে দেখি ওই লোকটার হাতে আমার ওড়না, আর লোকটা আমার দিকে কুকুরের মতো করে তাকিয়ে লালা ফেলছে।
ভয়ে রান্নাঘরের এক কোনায় চলে যাই।
সেও ধীরেধীরে আমার কাছে এসে বসে।
তার মতলব বুঝতে পেরে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠি।
কোথায় থেকে যেনো মা দৌড়ে আসে।
আমাদের এমন অবস্থায় দেখে মা ভীষণ রেগে যায়।
মাকে দেখে লোকটা আমার ওড়না আমার মুখের ওপর ছুড়ে মেরে চলে যায়।
সেই রাতে মা আমায় খুব মারে।
মা ওই লোকটাকে ভীষণ ভালোবাসতো, তাই হয়তো তার রাগ আমার ওপর দিয়ে ওঠায়।
মায়ের মার খেয়ে ২দিন ভীষণ জ্বর ছিলো, হাটতে পারছিলাম না। তবুও ঘরে প্রতিটা কাজ আমায় করতে হয়েছে।
মায়ের ওই স্বামীর ভয়ে মা আমাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর উপায় খুজতে থাকে। আমার বিয়ে ঠিক করা হয়।
যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করা হয় তাকে আমি বিয়ের আগ পর্যন্ত দেখিনি, চিনিও না।
শুনেছিলাম আমার বর মায়ের ওই স্বামীর সাথে কিসের যেনো ব্যবসা করে। সেই সুত্রে মা তাকে চিনে।
ওই জাহান্নাম থেকে বের হয়ে নিজের স্বামীর বাড়ি এসে একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলি।
এবার যদি জীবনে একটু সুখের দেখা পাই।
স্বামীর বাড়ি এসে জানতে পারি ওনার পরিবারে কেউ নেই। উনি একাই এই বাড়িতে থাকেন।
মনে মনে খুব লোভ হয়েছিলো, ওনার শুন্য মনে শুধু আমারই জায়গা হবে। ওনার সব ভালোবাসা জুড়ে শুধু আমিই থাকবো।
খুব আসা ভরসা নিয়ে বাসর ঘরে বউ সেজে ওনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এই বুঝি উনি এসে আমার ঘোমটা তুলবেন, আর আমি লজ্জায় লাল হয়ে যাবো। তখন উনি আমার লজ্জা ভাঙাবেন।
আমার সব স্বপ্ন মাটি করে উনি বাসর ঘরে অন্য লোক নিয়ে এসে তার সাথেই আমায় রাত কাটাতে বলেন।
খুবই ভয় পেয়ে যাই। এক জাহান্নাম থেকে বের হয়ে বুঝি আরেক জাহান্নামে প্রবেশ করলাম।
উনি আমাকে কিছু কাপড় হাতে ধরিয়ে দিয়ে তৈরী হতে বলে রুমের বাহিরে চলে যান।
ধরেই নিয়েছিলাম আমার জীবনটা শেষ।
স্বামী হয়ে কি করে নিজের বিয়ে করা বউকে অন্যের হাতে তুলে দিতে পারে? কি করে আমার সব স্বপ্ন এভাবে চুরমার করে দিতে পারে?
সেও বুঝি মায়ের সেই স্বামীর মতো?
চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছিলো।
চিৎকার করে বাবাকে ডাকতে ইচ্ছে করছিলো। বাবার সাথে থাকলে হয়তো আজ আমার এমন অবস্থা হতো না।
কিছুক্ষণ আগেও যেই ঘরটাকে আমার দিন বদলে যাওয়ার কারন হবে ভেবেছিলাম, এখন মনে হচ্ছে সত্যিই সেই ঘরটা আমার দিন বদলে যাওয়ার কারন হবে। তবে নতুন করে নয়, পুরোনো কষ্টে ঘি ঢালার মতো করে।
বুকটা চিরে কান্না করতে থাকি।
হঠ্যাৎই আমার স্বামীর সাথে আসা লোকটা আবার রুমে প্রবেশ করে।
রুমে ঢুকে লোকটা আমায় ধমক দেয়, কেনো আমি এখনো বিয়ের কাপড় চেইন্জ করিনি।
ঝাপিয়ে পড়ে ওনার পা দুটো ধরে কান্না করতে থাকি।
কিন্তু লোকটা আমার চুলের মুঠি ধরে আমায় দাড় করায়।
নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।
এত সুন্দর কেনোরে তুই? শুনলাম তুই নাকি এখনো ভার্জিন, একদম কচি মা….. আহ, কত মজা হবে আজ রাতে। তোর জীবটা রঙিন করে দেবো আমি। কাপড় খোল।
মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিলো না আমার, শুধু ওনার দিকে হাত জোড় করে কেঁদেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু ওই লোকটার একটুও মন গলেনি।
আমায় ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে আচল টেনে কাপড় খোলার চেষ্টা করে।
মনে মনে ভেবেই নিয়েছি, এই জীবনটা আর রাখবো না।
লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে টেবিল থেকে ফল কাটার ছুরিটা হাতে নেই।
নিজের গলায় ছুরি ধরে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকি।
লোকটাও বেশ ভয় পেয়ে যায়।
লোকটা নরম গলায় কথা বলতে বলতে ধীরেধীরে আমার কাছে এসে দাড়ায়।
তার উদ্দেশ্য ছিলো এক ঝাটকায় আমার হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে নিবে।
আমার কিছুটা সামনে এসে লোকটা এক লাফ দিয়ে ছুরিটা ধরার চেষ্টা করে।
ছুরিটা ওনার দিকে তাক করে ধরি, লাফ দেওয়ার ফলে লোকটা এসে সোজা ছুরির ওপর পড়ে।
মুখে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে সে।
ভালো করে খেয়াল করে দেখি ছুরিটা ওনার বাম চোখে ঢুকে গেছে।
চোখ দিয়ে ওঝোরে রক্ত বের হতে থাকে।
মূহুর্তেই লোকটা জ্ঞান হারায়।
ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। দরজার বাহির থেকে আমার স্বামী নামক লোকটা জোরে জোরে বলতে থাকে।
জলদি কর, এখনো আমিও ছুয়ে দেখিনি। তাড়াতাড়ি আয়।
এই মানুষ নামক নরপশুর হাত থেকে বাচার জন্য জানালার থাই গ্লাস খুলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ি। জানালায় কোনো গ্রিল না থাকায় বের হতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি।
রুম থেকে বের হয়ে দৌড়াতে থাকি। অন্ধকারে চোখ বন্ধ করেই দৌড়াতে থাকি। জানি না কতক্ষণ দৌড়াই, একটা সময় জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাই।
যখন জ্ঞান ফিরে, তখন নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করি।
পাশেই একটা বয়স্ক মহিলা বসে আছে।
–কি হয়েছে মা তোমার? কোথায় থেকে এসেছো?
–আমি এখানে কি করে এলাম?
–সকালে নামাজের ওজু করতে বের হয়ে দেখি তুমি আমার কলপাড়ে পড়ে আছো। তাই তোমায় তুলে এখানে নিয়ে এলাম। কে তুমি মা?
ওই ভদ্র মহিলাকে সব কিছু খুলে বলি।
উনি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আমার দিকে করুণাময় দৃষ্টিতে তাকান।
–ওই পশুটার ভাগ্যে বুঝি তুমিই পড়লে? জানো সে কে?
–কে?
–এই এলাকার নাম করা পতিতা ব্যবসায়ী। আর তুমি কিনা তাকেই বিয়ে করলে?
–বিয়ের আগে আমি কিছুই জানতাম না।
–এখন সে যদি জানতে পারে যে তুমি এখনো এই এলাকায় আছো, তোমায় সে খুজে বের করবেই।
–এখন আমি কি করবো দাদু?
–আজ সারাদিন তুমি এখানেই লুকিয়ে থাকো। রাতের আধারে এই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাবে।
–কোথায় যাবো আমি? আমার যে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
–বাঁচতে চাইলে তোমাকে যেতেই হবে। তুমি অন্য কোনো শহরে চলে যাও।
–দাদু, পৃথিবীটা বড়ই নিষ্ঠুর। তার চেয়েও নিষ্ঠুর এই পৃথিবীর মানুষগুলো। ওরা আমায় বাঁচতে দেবে না।
–দেখো মেয়ে, তুমি এখনো ছোট। জীবনের মানেটা তুমি এখনো জানো না। তোমাকে বাঁচতে হবে।
–ঠিক আছে, আজ রাতেই আমি অন্য কোথাও চলে যাবো।
.
রাতের আধারেই বেরিয়ে পড়ি এক অচেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
ওই ভদ্র মহিলা আমায় একটা বোরকা দেয়, এবং সাথে কিছু টাকাও দেয়। যেনো খুদা লাগলে কিছু খেতে পারি।
অন্ধকারে হাটতে হাটতে স্টেশন পর্যন্ত চলে আসি।
কিন্তু তখনো আমি জানতাম না আমি কোথায় যাবো। দূরপাল্লার কোনো একটা বাসে উঠে যাবো। যা হওয়ার হবে…
টিকেট নেওয়ার জন্য কাউন্টারে গিয়ে দেখি আমার স্বামী নামক সেই মানুষটা ভেতরে একটা লোকের সাথে কথা বলছে।
ওনাকে দেখেই কাউন্টার থেকে বের হয়ে বড় রাস্তা ধরে দৌড় দেই।
উনিও আমার পেছন পেছন দৌড়াতে থাকে।
তখনই মনে পড়ে আমার মুখটা বোরকা দিয়ে ঢাকা ছিলো। উনি আমাকে চিনতে পারতেন না। ইসস, কেনো আমি বোকার মতো দৌড় দিলাম।
মনে ভয় নিয়ে এলোপাথাড়ি দৌড়াতে থাকি।
নিজের জীবনের প্রতি মায়াটাই উঠে গিয়েছিলো।
কি নিয়ে বাঁচবো? কাকে নিয়ে বাঁচবো? কার ভরসায় বাঁচবো? আমার বেঁচে থাকার কোনো কারনই খুজে পেলাম না।
রাস্তার পাশ ছেড়ে রাস্তার মাঝ দিয়ে দৌড়ানো শুরু করি। তার হাতে ধরা পড়লে হয়তো বেঁচে থেকেও আমাকে মরে যেতে হবে। এরচেয়ে ভালো সহজ মৃত্যুটাই হোক।
একটা গাড়ি এসে স্বজোরে আমায় আঘাত করে। ছিটকে গিয়ে রাস্তার সাইটে পড়ি।
জ্ঞান হারানোর আগে দেখতে পাই আমার স্বামী নামক লোকটাও আমার পাশে পড়ে আছে।
আমার পিছু নিতে গিয়ে সেও আমার সাথে এক্সিডেন্ট করে। পুরো রাস্তা রক্তে সেঁতসেঁতে হয়ে যায়।
.
.
চলবে…
.
#এক_মুঠো_রোদ (০১)
#A_Al_Mamun
গল্প :- #এক_মুঠো_রোদ (০২)
লেখক :- #A_Al_Mamun
.
একটা গাড়ি এসে স্বজোরে আমায় আঘাত করে। ছিটকে গিয়ে রাস্তার সাইটে পড়ি।
জ্ঞান হারানোর আগে দেখতে পাই আমার স্বামী নামক লোকটাও আমার পাশে পড়ে আছে।
আমার পিছু নিতে গিয়ে সেও আমার সাথে এক্সিডেন্ট করে। পুরো রাস্তা রক্তে সেঁতসেঁতে হয়ে যায়।
এরপর আমার আর কিছুই মনে নেই।
জ্ঞান ফেরার পর আপনাকে দেখতে পাই।
সামনে থেকে সানু বেগম একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।
এমন পোড়া কপাল নিয়েও বুঝি মানুষ জন্মায়?
–আন্টি, আপনাকে একটা কথা বলি?
–হ্যা বলো।
–আমি কি করে এখানে এলাম?
–আমার ছেলে তোমায় নিয়ে এখানে ভর্তি করিয়ে দেয়। সেদিন সে কাজ শেষে বাসায় ফিরে আসার সময় তোমায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে। বাসায় এসে এই ব্যাপারে আমায় বলেছিলো। ২ মাস তুমি আইসিইউতে ছিলে। কেউ তোমার খোজ নিতে আসেনি। আজ তোমার জ্ঞান ফিরলে হাসপাতাল কাউন্টার থেকে তারা আমার ছেলেকে ফোন দেয়। ও আসতে পারনি, তাই আমিই তোমাকে দেখতে এলাম।
–আর ওই লোকটা?
–কে?
–আমার সাথে যে এক্সিডেন্ট করেছিলো।
–সে ওখানেই মারা গেছে।
–আলহামদুলিল্লাহ…। আল্লাহ তার বিচার করেছেন।
–তোমার নাম কি মা?
–মিষ্টি।
–বাহ, নামটাও তোমার মত মিষ্টি। চলো আমার সাথে।
–কোথায়?
–আমার বাসায়।
–বাসায় কেনো?
–বাসায় আমার মেয়েকে একা রেখে এসেছি। দেরি হলে চিল্লাচিল্লি করবে। আর তোমার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমার সাথেই চলো।
–আপনাদের সাথে?
–ভয় পেও না, সব পরিবার খারাপ হয় না।
–সেটা নয়।
–এত কথা না বলে ওঠো।
হাসপাতালের সব ঝামেলা শেষ করে মিষ্টিকে সাথে নিয়েই সানু বেগম বাসায় ফেরেন। মিষ্টি অনেকটা অবাক হয়, কোথায় যাবে সে? কি করবে? কোথায় থাকবে? মনের মধ্যে অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে। এই ভদ্র মহিলা তার সাথে করে নিজের ঘরে নিয়ে এলো। কিন্তু এরপরের গন্তব্য কোথায়?
.
–এই মেয়ে, দাড়িয়ে আছো কেনো? ভেতরে আসো।
–জ্বি আন্টি।
ভেতর থেকে মিষ্টির বয়সি একটা মেয়ে বেরিয়ে আসে।
–ওমা, কে গো মা উনি?
–তোর ভাইয়া বলেছিলো যে, সেই মেয়ে।
–ও আচ্ছা, ওনাকে আনতে গিয়েছিলে?
–হুম।
–হাই, এসো এসো, ভিতরে এসো।
–তোমায় বলেছিলাম না আমার একটা মেয়ে আছে, এই হলো আমার মেয়ে রিয়া।(সানু বেগম)
নতুন মানুষের সামনে পড়ে মিষ্টির কথাই বন্ধ হয়ে যায়। বেশ অবাক হয়ে মানুষগুলোকে যাচাই করছে সে। মানুষগুলোর কথাবার্তা কত সুন্দর, কতটা নম্র।
রিয়া মিষ্টির হাত ধরে মিষ্টিকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।
কিছুটা লজ্জা লাগলেও নিজেকে রিয়ার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে যায় সে।
–তোমার নাম কি গো?(রিয়া)
–মিষ্টি।
–কত্ত সুন্দর নাম তোমার। আর আমার নাম হলো রিয়া।
–তোমার নামটাও খুব সুন্দর।
–তাই?
–হুম
–এসো ফ্রেস হয়ে নাও, ভাইয়া খাবার আনতে গেছে, একটু পরই চলে আসবে। আমরা একসাথেই খাবো।
–আমারতো কাপড় নেই।
–ওমা, কি বলো? এই আলমারিতে যা আছে সব আমারই। তোমার যেটা পছন্দ হয় এখান থেকে নিয়ে পড়ে নাও।
—
–কি হলো? লজ্জা পেও না, যাও গোসল করে নাও।
.
মিষ্টি একটা গামছা হাতে নিয়ে বাথরুমে চলে যায়।
গোসল শেষে রিয়ার দেওয়া তোয়ালেটা পড়ে রিয়ার বিছানায় বসে আছে সে।
রিয়ার ব্যবহার করা আলমারিতে হাত দিতে কেমন যেনো লাগছে। মেয়েটা নিজের হাতে একটা কাপড় বের করে দিলে হয়তো পড়া যেত। কোথায় যে গেলো মেয়েটা, ডাকাও যাচ্ছে না।
হঠ্যাৎই একটা ছেলে দরজা খুলে রিয়ার রুমে প্রবেশ করে।
আচমকা চোখের সামনে একটা পুরুষ মানুষ দেখতে পেয়ে মিষ্টি ঘাবড়ে যায়।
পরনে একটা তোয়ালে ছাড়া আর কিছুই নেই। বেসামাল হয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে মিষ্টি।
ছেলেটাও মিষ্টিকে এমন অবস্থায় দেখে আবার বেরিয়ে পড়ে।
একটু পর রিয়া রুমে প্রবেশ করে দেখে মিষ্টি খাটের এক কোনায় গুটি মেরে বসে আছে।
–কি গো? তুমি দেখি তোয়ালে পড়ে বসে আছে। কাপড় পড়বে না?
–আসলে, আপনার আলমারিতে হাত দিতে আমার কেমন যেনো লাগছে। আপনার জন্যই বসে ছিলাম।
–হায় খোদা, কি মেয়েরে বাবা। বলে গেলাম যেটা মন চায় নিয়ে পড়ে নাও, অথচ এখনো সে লজ্জা পাচ্ছে। এদিকে এসো।
রিয়ার ডাকে মিষ্টি আলমারির সামনে যায়। নিজে পছন্দ করে একটা কাপড় নিয়ে মিষ্টি পড়তে শুরু করে।
–উনি কে ছিলো?
–কে?
–একটু আগে এসেছিলো।
–ওওও, আমার ভাইয়া। ওর নাম মামুন। আমিই ওকে পাঠিয়েছিলাম তোমাকে খাবার খেতে ডাকতে। আমিতো ভাবলাম তুমি তৈরী হয়ে বসে আছো। কে জানতো এতক্ষণ তোয়ালে পড়ে বসে থাকবে। বেচারা লজ্জা পেয়ে চলে গেছে।
–আমারই দোষ।
–ধুর, চলো তো। আজ আমরা কিছুই রান্না করিনি। বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসছে ভাইয়া। এসো খাবে।
–আপনারা রান্না করেন না?
–করি তো। শুধু শুক্রবারে করি না। শুক্রবারে ভাইয়ার ছুটি, তাই আমরা এই দিনে বাহিরে গিয়ে খেয়ে আসি। আজ তো তুমি আছো, তাই আজ সব ঘরেই নিয়ে এলাম।
–আমার জন্য আজ আপনারা বাহিরে যেতে পারলেন না।
–এমা, এমন নয়, তুমিতো অনেক ক্লান্ত। তাই ভাইয়াই বললো আজ ঘরে খেতে। পরের সপ্তাহে তোমায় নিয়ে যাবো বাহিরে।
–ততদিন কি আমি থাকবো?
–কেনো থাকবে না? মা বললো তোমাকে আমাদের সাথে রেখে দিবে।
–কি বলছেন?
–চলো তো, মা আর ভাইয়া তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
–আচ্ছা চলেন।
.
খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে মিষ্টি দাড়িয়ে আছে।
–আরে, দাড়িয়ে আছেন কেনো? বসুন(মামুন)
–আমার টেবিলে খাওয়ার অভ্যাস নেই। মাটিতে বসেই খেতাম।
–মা, চলো আজ আমরা ফ্লোরে বসে খাই।(রিয়া)
–তোর মাথা খারাপ হয়েছে?(মামুন)
–সমস্যা কি? এতদিন তো টেবিলেই খেয়েছিস। আজ নাহয় ফ্লোরে বসেই খেয়ে দেখ না।
–তুই খা, আমি খাবো না।
–মা, ওকে বলো না।
–হ্যা রে মামুন, আয় আজ আমরা নিচে বসেই খাই।(সানু বেগম)
–মা তুমিও? ধুর, ভাল্লাগে না।
রিয়া দেরি না করে নিচে জাগয়া করে সব খাবার নিচে নামিয়ে নেয়।
একটু দুরে দাড়িয়ে মিষ্টি অবাক চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো কথা বলবে তারও সাহস করে উঠতে পারছে না।
তার জন্য আজ সবাই নিচে বসে খাবার খাচ্ছে।
মিষ্টি রিয়ার পাশে বসেই খাবার খাচ্ছে। জীবনে প্রথম কতসব নতুন নতুন খাবার সে চোখের সামনে দেখছে।
অদ্ভুত বিষয় হলো খাবারগুলো নামও সে কখনো শুনেনি। মায়ের কাছে যখন ছিলো, কাচা মরিচ বা পেয়াজ বা মাঝে মাঝে কপালে একটু তরকারি জুটলে সেগুলো দিয়েই খেতো। যখন বাবা মায়ের সাথে একসঙ্গে ছিলো, তখনও এমন খাবার খাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি।
–এই মেয়ে খাচ্ছো না কেনো? (সানু বেগম)
–কেমন কেমন যেনো এগুলো।(মিষ্টি)
–ওমা, আগে খাওনি?(রিয়া)
–না।
–হায় আল্লাহ, কষ্ট করে খেয়ে নাও। এখন তো আর কিছু নেইও।
–না না, সমস্যা নেই। আমি খেয়ে নেবো।
–মা, উনি কোথায় যাবে কিছু জানে?(মামুন)
মামুনের এমন কথা শুনে মিষ্টির বুকের মধ্যে একটা মোচড় দিয়ে ওঠে।
সত্যিই তো, সে এখন কোথায় যাবে? এই পৃথিবীতে তো তার আর আপন বলতে কেউ নেই যে তার কাছে গিয়ে আশ্রয় নিবে।
কথাটা ভাবতেই চোখদুটি ছলছল করে ওঠে মিষ্টির।
–কোথায় যাবে সে? তার তো কোথায়ও যাওয়ার জায়গা নেই। আর এই মূহুর্তে মেয়েটা বাহিরে বের হলেও ওর বিপদ হবে, কি করবে সে? এখনো তো সে ছোট।(সানু বেগম)
–তাহলে কি করবে মা?
–সেটাই তো ভাবছি। এই মেয়ে, আমাদের সাথে থাকবে?
সানু বেগমের কথা শুনে মিষ্টি নিজের জবাব হারিয়ে ফেলে। কি উত্তর দেবে?
–আন্টি, আপনারা আমার যেই উপকার করেছেন তার জন্য আমি আপনাদের কাছে ঋণী। আমি আর আপনাদের বোঝা বাড়াতে চাই না। কোথায়ও গিয়ে একটা কাজ আর আশ্রয় খুজে নেবো।
–তুমিতো বাহিরের দুনিয়াটা দেখলেই, কতটা কঠিন এই দুনিয়া। তুমি পারবে না বাহিরে গিয়ে থাকতে।
–কি আর করবো বলুন। কোথাও গিয়ে কাজ করে নিজের পেট চালিয়ে নেবো।
–তোমার কাজ লাগবে?
–হুম।
–আমি তোমাকে কাজ দিবো, করবে?
–সত্যি?
–হুম।
–করবো আমি।
–ঠিক আছে।
–কি কাজ আন্টি?
–সেটা পরে বলবো, এখন খেয়ে রিয়ার রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও।
.
খাবার শেষে মিষ্টি গিয়ে রিয়ার বিছানায় শুয়ে পড়ে।
একটু পর রিয়া নিজের রুমে আসে। রিয়াকে দেখে মিষ্টি উঠে বসে।
–আরে, উঠছো কেনো? বিশ্রাম করো।
–না এমনিই উঠলাম। আপনার খাওয়া শেষ?
–হুম শেষ, আর হ্যা, তুমি আমায় আপনি আপনি বলো কেনো? আমি কি তোমার বড়? আমায় রিয়া বলেই ডাকবে।
–আপনি মনে হয় আমার বড়।
–তোমার বয়স কত?
–১৭ বছর।
–আমি তো ১৬, তুমিই আমার বড়। আমায় নাম ধরেই ডাকবে।
–আচ্ছা।
–আমার বন্ধু হবে?
–কি লাভ? আমিতো চলে যাবো।
–কোথায় যাবে?
–আন্টি বললো না আমায় কাজ দিবে।
–আম্মু কোথায় কাজ পাবে? সে এমনি এমনি বললো।
–কি বলছো এসব?
–ওত ভেবো না তো। আমার সাথেই থাকো।
মিষ্টি নিচের দিকে মাথা নামিয়ে কি যেনো ভাবতে থাকে।
–আচ্ছা, তুমি এত কম কথা বলো কেনো?
–আমার লাইফে কথা বলার মতো কোনো মানুষ ছিলো না, তাই কথা বলারও অভ্যাস নেই।
–আমি একটু বেশি কথা কথা বলি, আমার সাথে থাকলে ঠিক হয়ে যাবা।
রিয়ার কথায় মিষ্টি মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
–ওম্মা, তুমি হাসতেও জানো? হাসলে কত সুন্দর লাগে তোমায়।
–তাই?
–হ্যা।
–আচ্ছা, তোমাদের পরিবারে আর কেউ নেই? তোমার বাবা কোথায়?
–না, আমার বাবা মা পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিলেন। তাই পরিবারের কেউই তাদের মেনে নেয়নি। বাবা মা আলাদাই থাকতেন। এইতো ৫ বছর আগেই বাবা মারা গেছেন। এরপর ভাইয়াই আমাদের সংসারের হাল ধরে। আমি, ভাইয়া আর মা মিলেই আমাদের সুখের সংসার।
–ও আচ্ছা, তোমার ভাই আমার জীবন বাঁচিয়েছে, তাকে একটা ধন্যবাদও দেওয়া হয়নি।
–ধন্যবাদ দিতে গেলে বকা শুনবে।
–কেনো?
–তোমায় ওভাবে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে সে তোমার সাহায্য করেছে। ওটা তার দায়িত্ব ছিলো।
–তাই?
–আমি জানি না। মাকে বলতে শুনলাম, মুখস্থ করে তোমায় শুনিয়ে দিলাম।
–বললে যে আমায় বকবে।
–এমনি বললাম, ভাইয়ার সাথে কথা বলবে?
–না না।
–ওমা, লজ্জা পাচ্ছো কেনো?
–লজ্জা না, উনি কি না কি মনে করেন। বাদ দাও।
ঠিক তখনই মামুন রিয়ার রুমে প্রবেশ করে।
মামুনকে সামনে দেখে মিষ্টি একটু নড়েচড়ে বসে। পুরুষমানুষ দেখলে শরীরটা কেমন যেনো ঘিনঘিন করে, আবার এটাও প্রমান হলো সব মানুষ এক না। বিড়বিড় করতে করতে মিষ্টি মামুনকে একটা সালাম দেয়।
–ওয়ালাইকুম আসসালাম, বসেন বসেন। মায়ের সামনে তো কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। এখন আপনার শরীর কেমন আছে?
–জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
–হাটা চলা করতে সমস্যা হয়?
–জ্বি না। আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ।
–যাক ভালো কথা। বিশ্রাম করুন। আর কিছু লাগলে রিয়া অথবা মাকে বলিয়েন।
–আচ্ছা।
–ওনার খেয়াল রাখিস(রিয়াকে উদ্দেশ্য করে)
বলেই মামুন আবার হাটা দেয়।
–শুনুন….
মিষ্টির ডাকে মামুন পেছন ফিরে তাকায়।
–বলুন।
–ধন্যবাদ।
একটা মুচকি হাসি দিয়ে মামুন বেরিয়ে যায়।
–আমার ভাই একটু রাগি স্বভাবের মানুষ, কিন্তু ওর মনটা খুব ভালো।(রিয়া)
–শুধু তোমার ভাই না, তোমাদের সবার মনই খুব ভালো। আমায় চেনো না জানো না, তবুও আশ্রয় দিয়েছো আমায়। তুমি আমায় নিজের কাছে রেখেছো।
–আমার একটা ভালো গুন আছে, আমি মানুষের চেহারা পড়তে পারি। তোমায় প্রথম দেখেই বুঝেছি তুমি কেমন। তোমায় আমার খুব ভালো লেগেছে। আমার তো ইচ্ছে করছে তোমায় এই বাড়িতেই রেখে দেই।
–তুমি বলেছো এটাই অনেক। তবে আমি জানি না আমার পরের গন্তব্য কোথায়।
–বেশি চিন্তা করলে অসুখ করবে, বিশ্রাম নাও।
.
আর বেশি কথা না বাড়িয়ে মিষ্টি শুয়ে পড়ে।
দিনটা খুব ভালোভাবেই কেটে যায় মিষ্টির।
রাতে ঘুমানোর আগে সানু বেগম মিষ্টিকে ডেকে পাঠায়।
–আন্টি আমায় ডেকেছেন?
–হ্যা।
–জ্বি বলুন।
–তোমার কাজের ব্যাপারে কথা বলতে ডেকেছিলাম।
মিষ্টি বেশ খুশি মনে আগ্রহ নিয়ে সানু বেগমের কথায় মনোযোগ দেয়।
–জ্বি বলুন।
–ঘরের কি কাজ জানো?
–রান্না করা, কাপড় কাচা, ঘর গুছানো, এবং ঘরের যাবতীয় সব কাজ জানি।
–মাশা-আল্লাহ। কিন্তু তোমায় এত কাজ করতে হবে না। সারাদিন তো আমি বাসায় একা থাকি। শুধু আমার পাশেপাশে থেকো। আর আমার টুকটাক কাজে সাহায্য করলেই হবে।
–আচ্ছা আন্টি।
–তোমায় কত বেতন দিতে হবে?
–কিছু লাগবে না, টাকা দিয়ে আমি কি করবো? শুধু খাবার আর আপনার ঘরের এক কোনায় পড়ে থাকতে দিলেই হবে।
–পাগলি মেয়ে। টাকা লাগবে না কেনো? আর ঘরের এক কোনায় থাকতে হবে কেনো? তুমি রিয়ার সাথেই থাকবে।
–টাকা দিয়ে আমি কি করবো? এমনি কিছু প্রয়োজন পড়লে আপনাকে বলবো।।
–আচ্ছা, নাস্তা বানাতে পারো?
–জ্বি আন্টি।
–আচ্ছা, সকালে নাস্তা তুমি বানাবে। কাল আমরা তোমার হাতের নাস্তা খাবো।
–ঠিক আছে।
মিষ্টি খুশিতে কেঁপে ওঠে। এই বুঝি তার মাথা গোজার জায়গা হয়ে গেলো।
.
.
চলবে……..
#এক_মুঠো_রোদ (০৩)
লেখক #A_Al_Mamun
.
মিষ্টি খুশিতে কেপে ওঠে। এই বুঝি তার মাথা গোজার জায়গা হয়ে গেলো। ওমনি সানু বেগমকে সালাম করে বসে মিষ্টি।
–কি করছো?
–আপনি আমার জন্য অনেক করতেছেন। সত্যিই আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ।
–দেখতে তো একদম বাচ্চাদের মতো, কিন্তু কথা বলো মুরুব্বিদের মতো। বয়স কত তোমার?
–১৭
–হুম, বয়স কম ঠিকই, কিন্তু দুনিয়া তোমায় অনেক কিছু শিখিয়েছে। অনেকটা ম্যাচিউর তুমি।
—
–অনেক রাত হয়েছে, যাও ঘুমিয়ে পড়ো। সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে পারো?
–জ্বি আন্টি, আমার অভ্যাস আছে।
–নামাজ পড়ো?
–জ্বি আন্টি।
–মাশা-আল্লাহ। যাও
.
হাসিমুখে মিষ্টিকে রুমে ঢুকতে দেখে রিয়া জিজ্ঞেস করে ওঠে।
–কিগো? মা কেনো ডাকলো তোমায়?
–আমায় কাজ দিলো।
–মা কাজ কোথায় পেলো? কি কাজ সেটা?
–ওনার পাশেপাশে থাকা।
–এটা কোনো কাজ হলো? বেতন কত দিবে?
–বেতন লাগবে না।
–লাগবে না? তুমি একটা বোকা মেয়ে।
–টাকা দিয়ে আমি কি করবো?
–জমাবে, বলাতো যায় না কখন কি প্রয়োজন পড়ে।
–আন্টির কাছেই নাহয় জমা থাকুক, কিছু প্রয়োজন পড়লে তখন ওনাকে বলবো।
–আচ্ছা যাই হোক, তুমি তাহলে কোথাও যাচ্ছো না।
–সেটাই তো মনে হচ্ছে।
.
সকালে সবার আগে ঘুম থেকে উঠে নামাজ শেষ করে রান্না ঘরে চলে যায় মিষ্টি।
সানু বেগম তখনো নিজের রুমে নামাজের পাটিতে বসে।
ধীরেধীরে সকালের আলো ফুটলে তিনি রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ান।
রান্নাঘরে প্রবেশ করে দেখেন মিষ্টি আগে থেকেই রান্না ঘরে। এবং নাস্তাও ইতিমধ্যে তৈরী হয়ে গেছে।
–তুমি কখন এলে?
–নামাজ শেষেই এলাম।
–আমায় ডাকলে না যে?
–আপনি তাজবিহ পড়ছিলেন, তাই ভাবলাম বিরক্ত না করি।
–কি বানালে নাস্তা?
–রুটি, আলু ভাজি আর চা।
–আমরা তো এসব খাই না।
সানু বেগমের কথায় মিষ্টি একটা ধাক্কা খেয়ে ওঠে।
–আরে, ভয় পেও না। আমরা এটাই খাবো। মামুন রুটি আর আলু ভাজি বেশ পছন্দ করে।
ওমনি মিষ্টির মলিন মুখে আবার হাসি ফুটে ওঠে।
–রিয়াকে ডাকোনি?
–সেতো ঘুমাচ্ছে।
–প্রতিদিন ওকে তোমার সাথে নিয়ে উঠবে। একদম অলস সে।
–আচ্ছা।
–ওকে উঠিয়ে নিয়ে আসো।
নাস্তা বানানো শেষ করে মিষ্টি রিয়াকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে।
–এই রিয়া, ওঠো। আন্টি ডাকে।
–কেনো?
–নাস্তা করতে।
–আরো পরে খাবো।
–আন্টি বলছে ঝাড়ু নিয়ে আসতেছে।
–হ্যাহ…
তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে রিয়া ফ্রেস হতে চলে যায়।
–চলে এলে যে? রিয়া কোথায়?
–মুখ ধুয়ে আসতেছে।
–আচ্ছা, এই চা টা মামুনকে দিয়ে আসো।
–আমি?
–হ্যা, কেনো? কোনো সমস্যা?
–না আন্টি, কি যে বলেন। উনি উঠে গেছেন?
–একটু আগে আমি ডেকে এসেছি, উঠে গেছে হয়তো।
–আচ্ছা দিন আমি দিয়ে আসি।
–নাও
.
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে মিষ্টি মামুনের রুমের দিকে পা বাড়ায়। হাতটা কেমন যেনো কাঁপছে, এই বুঝি চায়ের কাপটা পড়ে যাবে।
কেনো যেনো মামুনের রুমের দিকে যেতেই মিষ্টি ঘামাতে শুরু করে। কাঁপতে কাঁপতে মামুনের রুমে প্রবেশ করে মিষ্টি।
এখনো বিছানা ছেড়ে ওঠার নাম নেই। আন্টি বললো উঠে গেছে। চা টা কি রেখে চলে আসবো? নাকি ডেকে উঠিয়ে আসবো? নয় ছয় ভাবতে ভাবতে চা টা টেবিলে রেখে মিষ্টি আবার সানু বেগমের কাছে ফিরে আসে।
–চা দিয়েছো?
–জ্বি আন্টি।
–অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে?
–না, ঘুমাচ্ছে দেখলাম।
–দেখো কান্ড, ডেকে তুললে না কেনো?
–যদি বকা দেয়?
–বকবে না, বলবে যে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি। জলদি যাও।
–আচ্ছা।
.
এবারও মিষ্টি ধীরেধীরে মামুনের দিকে পা বাড়ায়।
ভয়ে ভয়ে মামুনের পাশে এসে মামুনকে আস্তে করে ডেকে ওঠে।
কিন্তু মামুনের কেনো সাড়া শব্দ নেই। প্রায় ৫ মিনিট ধরে মামুনকে ডেকে চলেছে, মামুনের ওঠার কোনো নাম নেই।
পেছন থেকে রিয়া এসে মিষ্টিকে বলে ওঠে,
–যেভাবে ডাকতেছো, নিজের আওয়াজ কি নিজে শুনতে পাচ্ছো? ভাইয়া কিভাবে শুনবে?
–আওয়াজ বের হচ্ছে না গলা দিয়ে।
–দেখো কিভাবে ওকে উঠাই।
মিষ্টি একপাশ হয়ে দাড়ায়, আর রিয়া গিয়ে মামুনকে ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে ওঠায়।
–ওঠ বলছি এক্ষুণি।
–কি হয়েছে?
–কয়টা বাজে এখন?
–কয়টা?
–৭:৩০…
–কিহ? ৮:৩০ আমাকে অফিসে পোছাতে হবে, আর তুই এখন ডাকছিস?
–মিষ্টি সেই কখন থেকে তোকে ডাকছে, নাক ডেকে ডেকে ঘুমাচ্ছিস। কেনো হুস আছে তোর?
–ও কেনো ডাকবে? মা কই?
–আম্মুই ওকে পাঠিয়েছে তোকে ডাকতে। অনেক্ষন হয়ে গেলো মিষ্টি এসেছে। তাই আম্মু আমাকে পাঠালো। এখন ওঠ।
–এই শুনেন, আমার ঘুম একটু ঘাড়ো, কারো ডাকে আমার ঘুম ভাঙে না। পরে কখনো ডাকতে আসলে আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়েন।।
–আচ্ছা ভাইয়া।
–আমি আপনার ভাইয়া হলাম কবে?
–রিয়া ভাইয়া ডাকে, তাই আমিও ডাকলাম।
–এই একটার জ্বালায় জীবন শেষ, আর লাগবে না আমার।
–তুই আয় নাস্তা করতে, তোর নাস্তা আমি বের করছি।(রিয়া)
হনহন করে রিয়া মায়ের কাছে চলে যায়। মিষ্টিও আস্তে করে রিয়ার পেছন পেছন ফিরে আসে।
.
–বাহ, আজ আমার প্রিয় খাবার। কিভাবে আজ আমার কথা মনে হলো মা?
–আমি না, মিষ্টি বানিয়েছে।
–কি বলো, সে আমাদের মেহমান, তুমিতো দেখি তাকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছো।
–আরে আমি রান্নাঘরে ঢুকার আগেই দেখি সে নাস্তা বানিয়ে বসে আছে।
–এই যে শুনেন। আপনার কেনো কাজ করতে হবে না। আপনি আমাদের মেহমান। কোনো কাজ করবেন না।
–আমি তো কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নিবো।(মিষ্টি)
–অ্যাহ? কিসের কাজ? কিসের পারিশ্রমিক?
–কাল না সে বললো সে কাজের খোজে এখান থেকে চলে যাবে, তাই তাকে কাজ দিলাম। তার আর যাওয়া লাগবে না। এখানেই থাকুক, কই যাবে সে?
–তা বুঝলাম। কিন্তু…..
.
মায়ের কথার ওপর মামুন আর কেনো কথা বললো না। রিয়া সারাদিন শেষে বিকেলে স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে, মামুনও অফিস শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে।
এদিকে সানু বেগম সারাদিন ঘরে একা। তাই মিষ্টি সারাদিন ওনার সাথেই সময় কাটায়।
মিষ্টিকে পেয়ে তার একাকীত্ব অনেকটাই গুছে গেছে।
ধীরেধীরে মিষ্টি এই পরিবারেরই একজন সদস্য হয়ে যায়। সবাই মিষ্টিকে খুব পছন্দ করে।
এলোমেলো ঘরটা এখন পুরো সাজানো গোছানো।
এভাবে প্রায় ২ মাস কেটে যায়….। মিষ্টিকে এখন আর কেউ পর ভাবে না। রিয়া আর মিষ্টি দুজন খুবই ভালো বন্ধু।
–তুই আমার জন্য আর কখনো চকলেট, আইসক্রিম, চিপস এসব আনবি না।
বোনের মুখে এটা শুনে মামুন বেশ অবাক হয়।
–কেনো? আমার বনু কি কোনো কারনে আমার ওপর রাগ করছে?
–হ্যা।
–অ্যাহ? কি করলাম আমি?
–আমার জন্য এসব নিয়ে আসিস, ওই মেয়েটা আমার দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে থাকে। একদিন আমায় কি বলে জানিস?
–কি?
–আমি বললাম আমার থেকে চিপস নিয়ে খেতে। কিন্তু সে বললো এসব কিছু খাওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই। আর বলে, “তোমার ভাইয়া তোমায় কত ভালোবাসে, সবসময় রাগি মুখে থাকলেও তোমার সামনে সে সবসময় হাসি মুখ করে রাখে। সব ভুলে গেলেও তোমার জন্য এসব নিয়ে আসতে ভুলে না। আমার খুব ইচ্ছা, আমারও নিজের একজন মানুষ হবে, আর যাই হোক, সেও আমার কথা সবসময় মনে রাখবে, সব ভুলে গেলেও আমার কথা ভুলবে না। প্রতিদিন আসার সময় আমার জন্যও কিছু না কিছু নিয়ে আসবে। ” জানিস, তার জন্য আমার আফসোস হয়, মেয়েটা আসলেই খুবই একা রে। তার সামনে আমার জন্য আর কিছুই আনবি না। আমি নিবো না।
–এতে আমার দোষ কোথায়?
–দোষ হলো ওর সামনে আমাকে এসব দেওয়া।
–আচ্ছা কাল থেকে লুকিয়ে দিবো।
–লাগবে না। যদি দিতেই হয় তাহলে আমার জন্য যা আনবি, মিষ্টির জন্যও সেটা আনবি। সে খুব খুশি হবে।
–বাব্বাহ, আচ্ছা আনবো। এখন খুশি?
–হুম, কিন্তু
–আবার কি?
–আর একটা কাজ করতে পারবি?
–কি কাজ?
–পারবি কিনা বল।
–না শুনেই?
–হুম।
–আচ্ছা শুনবো।
–এদিকে আয়, কানে কানে বলবো।
–বাপরে, কি এমন কথা আল্লাহ জানে…..
.
রিয়া আজ স্কুলে না গিয়ে বসে বসে টিভি দেখছে। মিষ্টি পেছনে এসে দাড়িয়ে রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে।
–আজ স্কুলে যাবে না?
–নাহ, ভালো লাগছে না।
–শরীর খারাপ করেছে?
–না না, এমনিই যেতে মন চাইছে না।
–কিছু বানিয়ে দিবো? খাবে?
–এদিকে এসো তো, বসো এখানে।
–হুম।
–এসব তোমার কাজ?
–আমার কাজ কি?
–কোনো কাজ নাই। আমার সাথে এক জায়গায় যাবে?
–যাবো।
–কোথায় সেটা জিজ্ঞেস করবে না?
–কোথাও যাওয়ার সুযোগ মিলছে, এটাই তো অনেক।
–তাই?
–হুম, কখন যাবে?
–বিকেলে।
–আচ্ছা ঠিক আছে।
বিকেলে রিয়া সেজেগুজে মিষ্টিকেও নিজের একটা জামা পড়িয়ে তৈরী করে দেয়।
–রিয়া? কোথায় যাচ্ছিস?(সানু বেগম)
–আমার এক বান্ধবির বাসায়।
–মিষ্টিকে সাথে নিচ্ছিস যে?
–একা তো, তাছাড়া ওতো সারাদিনই বাসায় থাকে, তাই ভাবলাম ওকে একটু ঘুরিয়ে আনি।
–সাবধানে যাস।
–আচ্ছা।
রিয়া মিষ্টিকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। দুজন সোজা মামুনের অফিসের সামনে এসে দাড়ায়।
একটু পর কোথায় থেকে যেনো মামুন আসে।
–এতো দেরি করেছিস কেনো?(রিয়া)
–সরি সরি, চল।
মিষ্টি বেশ অবাক হয়, হচ্ছেটা কি? রিয়া বাসায় বলে এলো বান্ধবীর কাছে যাচ্ছে, কিন্তু এখানে মামুনও যোগ হলো।
হঠ্যাৎ গাড়ির ব্রেকে মিষ্টির ভাবনার অবসান ঘটে।
গাড়ি থেকে নেমে দেখে ইয়া বড় একটা শপিং মল।
–আমরা এখানে কেনো?(মিষ্টি)
–কিছু কিনবো।
–তোমার বান্ধবীর বাসায় যাবে না?
–ধুর, শপিং করবো বললে কি আম্মু বের হতে দিতো? তাই মিথ্যা বললাম।
–আর উনি?
–আমি টাকা কই পাবো, তাই ভাইয়াকেও ডাকলাম।
–বাব্বাহ, কত চালাক তুমি।
–হা হা হা, চলো।
.
দীর্ঘ ৩-৪ ঘন্টা ঘুরে ঘুরে রিয়া শপিং করে। মিষ্টি বেশ অবাক হয়, কারন রিয়া সব কাপড়ই মিষ্টির মাপে নিয়েছে। জিজ্ঞেস করলে বলেছে তোমার আর আমার মাপ তো সমান।
মিষ্টিও আর কথা বাড়ায়নি।
শপিং শেষে অনেক রাত পর্যন্ত সবাই পুরো শহরটা ঘুরে বেড়ায়। রাতের প্রায় ১০টার পর তারা বাসায় ফিরে।
–আজ আমার কত খুশি লাগছে।(মিষ্টি)
–কেনো?(রিয়া)
–রাতের শহরটা এভাবে দেখবো কখনো কল্পনাও করিনি। চটপটি, ফুসকা এসবের নামই শুনেছি শুধু, আজ সেটাও খেলাম। তুমি আর উনি আমার মনের ইচ্ছেটা পূরণ করলে।
–তাই? আজকের এই দিনটা তোমার মনে থাকবে?
–হুম। ধন্যবাদ তোমাকে।
–আমি না, ভাইয়াকে দিও। সে ই তো এসবের ব্যবস্থা করলো।
–আমি পারবো না। ওনার সাথে কথা বলতে আমার লজ্জা করে।
–ওমা, লজ্জা কিসের?
–আজ রাস্তা পার হওয়ার সময় যখন আমার হাতটা ধরলো, যানো কি হয়েছে?
–কি?
–মনে হলো যেনো আমার কারেন্টের শক লেগেছে।
–কি বলো?
–হুম, যা লজ্জা করছিলো আমার। আমি আর ওনার সামনেই যাবো না।
–কেনো?
–এমনিই।
–ভাইয়াকে কি তুমি পছন্দ করো?
–কি যে বলো না। উনি পুরুষ মানুষ, তাই আমার লজ্জা পাওয়াটা স্বাভাবিক। তোমরা আমায় আশ্রয় দিয়েছো, উপকার করেছো, আমি অনেক কৃতজ্ঞ তোমাদের প্রতি। আমার নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে আমি জানি। তোমরা আমায় যেই বিশ্বাস করেছো, তা আমি নষ্ট করবো না।
–আমি তা বলিনি, এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।
–বাদ দাও ওসব। চলো ঘুমিয়ে পড়ি, খুব ক্লান্ত লাগছে।
–আচ্ছা চলো।
.
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় মিষ্টি। সাথে সাথেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়।
রাতের তখন প্রায় ১২টা।
–মিষ্টি….
–হুম
–ওঠো।
–কি?
–ওঠো না।
–তুমি এখনো ঘুমাও নি?
–চোখ তো খোলো।
মিষ্টি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে বিছানার এক পাশে সানু বেগম দাড়িয়ে আছে, আর অন্য পাশে মামুন।
এতোরাতে তাদের চোখের সামনে দেখে মিষ্টি ঘাবড়ে গিয়ে উঠে বসে।
“Happy Birthday To You, Happy Birthday To You মিষ্টি”
এভাবে সবাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে দেখে মিষ্টি একটু নয়, বেশ অবাক হয়।
আঙুলের কর গুনে গুনে হিসাব মিলিয়ে দেখে সত্যিই আজ তার জন্মদিন।
এভাবে নিজের জন্মদিনে কেউ উইস করছে এটা ভেবেই মিষ্টি কেঁদে দেয়।
.
.
চলবে…….
গল্প :- #এক_মুঠো_রোদ (০৪)
লেখক :- #A_Al_Mamun
.
এভাবে নিজের জন্মদিনে কেউ উইস করছে এটা ভেবেই মিষ্টি কেঁদে দেয়।
মিষ্টিকে কাঁদতে দেখে সানু বেগম এগিয়ে এসে মিষ্টির পাশে বসে।
–এই মেয়ে কাঁদছো কেনো?
–টিভিতে দেখেছিলাম এভাবে বলতে, আজ প্রথম দেখলাম চোখের সামনে। আমার জন্মদিনে কেউ আমাকে এভাবে শুভেচ্ছা জানাবে এটা আমি কখনো ভাবি নি।
–পাগলি মেয়ে, তাই বলে কি কাঁদতে হয়?
–খুব খুশি লাগছে।
–চোখ মুছো।
–কিভাবে জানেন আজ যে আমার জন্মদিন?
–তোমার বান্ধবী রিয়াই তো জানালো।
–ও কিভাবে জানে?
–সেটা নাহয় ওকেই জিজ্ঞেস করিও, এখন এসো কেক কাটবে।
–কেক?
–হুম।
–কোথায়?
–আছে, ওঠো। সুন্দর করে সেজে নাও।
–কেনো?
–ছবি তুলতে হবে না?
–ছবি কেনো?
–কেক কাটার সময় ছবি তুলবে না?
–আমার জন্য কেকও এনেছেন?
–তোমার বান্ধবী নিয়ে এলো।
–তাই? কখন নিলো? আমি তো ওর সাথেই ছিলাম সারাক্ষণ।
–রিয়া…. এদিকে আয়…।
মায়ের ডাকে রিয়া সামনে এগিয়ে আসে।
–মিষ্টিকে সুন্দর করে সাজিয়ে দে।
–আচ্ছা আম্মু।
.
মিষ্টি রিয়ার ব্যবহার করা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। আর রিয়া পেছন থেকে এসে শপিং করা সব কাপড় মিষ্টির সামনে এনে রাখে।
–নাও, পছন্দ করে নাও কোনটা পড়বে।
–আমি?
–হুম।
–না না, এত নতুন কাপড় আমাকে ভালো লাগবে না। এর চেয়ে ভালো তোমার একটা দাও। তাতেই চলবে।
–গাধী…. এগুলো সব তোমার।
–আমার?
–হুম। ভাইয়া তোমার জন্য কিনে দিলো।
–কি বলছো? এতো নতুন কাপড় আমার?
–হুম। পছন্দ করে নাও একটা।
–আমি তো বুঝি না এসব। তুমিই পছন্দ করে নাও।
রিয়া নিজের পছন্দের একটা কাপড় মিষ্টিকে পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়।
এদিকে মামুন ড্রয়িংরুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে নেয়। কেকের মাঝখানটায় ছোট্ট করে লেখা আছে,
“শুভ জন্মদিন মিষ্টি”
একটু পর রিয়া মিষ্টিকে সাথে নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ায়।
সানু বেগম আর মামুম বেশ কিছুক্ষণ ধরে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে।
এভাবে সবাইকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিষ্টি খুব লজ্জা পায়।
সানু বেগম এগিয়ে এসে কি যেনো বিড়বিড় করে পড়ে মিষ্টিকে ফু দিয়ে দেয়।
–কি করলে আম্মু?(রিয়া)
–যেনো কারো নজর না লাগে, তাই দোয়া পড়ে ফু দিয়ে দিলাম। আজ মিষ্টিকে নতুন করে দেখলাম। খুব সুন্দর লাগছে।
–আমাকে তো কখনো দিলে না!
–দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তোর ওপর কেউ নজর দিবে না।
মায়ের পেছন থেকে রিয়াকে উদ্দেশ্য করে মামুন এই লাইনটা বলে ওঠে।
–কি বললি?
–সত্য কথা।
–আম্মু ওকে কিছু বলবা?
–থামবি তোরা?
মায়ের ধমকে দুজন চুপ হয়ে যায়।
এই প্রথম মিষ্টি জন্মদিনের কেক কাটছে।
মিষ্টি মাঝে মাঝে আড়চোখে মামুনের দিকে তাকাচ্ছে…। কারন একটা জিনিস কেনো যেনো মিষ্টিকে বার বার তার দিকে তাকাতে বাধ্য করছে।
মিষ্টি আড়চোখে যতবারই তাকায়, ততবারই মামুনের সাথে চোখাচোখি হয়ে পড়ে।
মিষ্টি ভালো করেই বুঝতে পারে মামুন এক নাগাড়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে।
খানিকটা লজ্জা পেয়ে রিয়ার আড়ালে চলে যায় সে।
রিয়ারও ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারে। মামুনের নজর থেকে আড়াল হতেই মিষ্টি রিয়ার পেছনে গিয়ে দাড়িয়ে আছে।
.
–রাত তো অনেক হলো। ঘুমাবে না?(রিয়া)
–ঘুম তো আসছে না।
–কেনো?
–চোখ বন্ধ করলেই চোখের সামনে কত কিছু ভেসে ওঠে।
–কি?
–এই যে আজ জীবনে প্রথম অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা হলো।
–হুম বুঝতে পারলাম। আর কি কি মনে পড়ে?
–সবই।
–আমি কিন্তু কিছু একটা নোটিশ করেছি।
–কি?
–তোমাদের চোখের খেলা।
–বুজলাম না।
–থাক বোঝা লাগবে না।
–তুমি ভুল ভাবছো, এমন কিছুই নয়। আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারো।
–আরে আরে, এতো সিরিয়াস হয়ে গেলে কেনো? আমি তো মজা করছিলাম।
–ও আচ্ছা।
–ঘুমাবে না?
–হুম, আচ্ছা, আজ আমার জন্মদিন এটা তুমি কি করে জানলে? আমি তো কখনো তোমাকে বলিনি।
–তোমার ডায়েরী থেকে।
–আমার ডায়েরী তুমি কোথায় পেলে?
–আমার পড়ার টেবিলে।
–অন্যের ব্যক্তিগত ডায়েরী পড়া বারণ এটা জানো না?
–সরি, খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো তোমার ব্যাপারে। তাই ডায়েরীটা সামনে পেয়ে আর লোভ সামলাতে পারিনি।
–আমার জীবনটা আমারই থাক, আমি আর কাউকে এই বিষয়ে জানাতে চাইনা।
–হুম বুঝেছি, কিন্তু আরো অনেক কিছুই দেখলাম তোমার ডায়েরীতে।
–ওই সব নিয়ে আর ভেবো না। অনেক রাত হয়েছে, এসো ঘুমাবে।
–তোমার হাতের লেখা কত সুন্দর, তুমি অনেক মেধাবী ছিলে তাই না?
–ওরকম কিছু না।
–কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছিলে?
–এসএসসি দিয়েছিলাম। তাও লুকিয়ে লুকিয়ে, মা পড়তে দেয়নি।
–রেজাল্ট কি ছিলো তোমার?
–গোল্ডেন এ(+)
–হ্যাহ!
–অবাক হওয়ার কিছু নেই।
–জানো, তোমার কথা বার্তায় মনে হয় তুমি অনেক ম্যাচিউর। কত স্মার্টলি কথা বলো তুমি। তাহলে আমাদের সাথে ওরকম আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলো কেনো?
–এটাই আমার ভাষা, বাদ দাওতো ওসব।
–হুম
–শুয়ে পড়ো।
.
পরদিন সবাই যার যার কাজে চলে যায়। বাসায় শুধু সানু বেগম আর মিষ্টি।
রোজকার মতো সময় কাটানোর জন্য মিষ্টি সানু বেগমের কাছে চলে যায়।
–মিষ্টি….।
–জ্বি আন্টি।
–তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।
–জ্বি বলুন না।
–আমাদের পাশের বাসার ফাতেমা চাচিকে চিনো?
–হ্যা চিনিতো। কালও তো এসেছিলো।
–হুম।
–কিছু হয়েছে?
–হুম।
–কি হয়েছে আন্টি?
–রাগ করিয়ো না প্লিজ।
–না না, বলুন প্লিজ।
–সবাই কানাঘুষা করছে, কেনো আমি একটা যুবতী মেয়েকে বাসায় রেখেছি! যেখানে আমার একটা যুবক ছেলেও আছে।
—
–সবাই বলছে একটা যুবতী মেয়েকে এভাবে ঘরের মধ্যে রাখা মোটেও ঠিক কাজ নয়।
মিষ্টি হালকা মুচকি হেসে জবাব দেয়,
–আমিও শুনেছি এটা, ওনারা ঠিকই বলছেন। আমি জানি আপনি আমায় খুব ভালোবাসেন। যদি মাঝেমধ্যে আপনাদের সাথে দেখা করতে আসি, আমার সাথে দেখা করবেন?
–আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই তুমি বলা শুরু করছো, ভারী বেয়াদব মেয়েতো তুমি।
মিষ্টি চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
–তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো, দিবে?
–আপনারা আমায় না চাইতেও অনেক দিয়েছেন। আর আমি দিতে পারবো না? বলুন কি চান।
–সবার কানাঘুষা বন্ধ করতে চাই।
–আচ্ছা, আমি আজই চলে যাবো।
–কোথায় যাবে?
–তা তো জানি না। যেদিকে দুচোখ যায়।
–তুমি তো দেখি বেশি পণ্ডিত। এতো কথা কেনো বলো?
–কোথায় আর যাবো বলুন। আমার তো কোনো ঠিকানা নেই।
–কোথাও যেতে হবে না।
–তাহলে?
–সারাজীবনের জন্য আমার ঘরে থাকবে?
–আপনি যদি রাখেন। তবে যদি আমায় কিছু টাকা দিতেন, তাহলে আমি একটা ভাড়া বাসা নিয়ে থাকতে পারতাম। আর কেউ কানাঘুষা করতো না। আমি আগের চেয়ে আরো বেশি কাজ করে দিবো।
–এতো বেশি বুঝো কেনো তুমি? আমি কি জিজ্ঞেস করি শুধু তার উত্তর দিবে।
–আচ্ছা।
–আমার ঘরে সারাজীবনের জন্য থেকে যাবে?
–ইচ্ছে তো আছে, বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
–আমার ছেলেকে বিয়ে করবে?
সানু বেগমের এমন কথায় মিষ্টি কেঁপে ওঠে। তার কথায় মিষ্টি একটু নয়, বেশ অবাক হয়।
আশ্চর্যবোধক ভঙ্গিতে সানু বেগমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।
–কিছু বলবে না?
–আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
–দেখো, সেই প্রথম থেকেই তুমি আমার পছন্দ। সত্যি বলতে তুমি আমার ঘরে আসার আগে এই ঘরটা একদম ফাকা ফাকা ছিলো। এই ঘরে যেনো প্রানই ছিলো না। তোমার আগমনে আমার ঘরটা যেনো প্রান ফিরে পায়। আমি চাইনা আমার ঘরটা আবার আগের মতো মরা ঘর হোক।
–আন্টি, আমি জানিনা আমার কি জবাব দেওয়া উচিত। তবে এটা বলতে পারি যে আমার ওই যোগ্যতা নেই আপনার ঘরের বউ হওয়ার।
–যোগ্যতা নিয়ে আমি কোনো প্রশ্ন করিনি। তোমায় আরো আগেই বলতাম, কিন্তু বলিনি তুমি কি না কি মনে করো, কিন্তু এখন তুমি ১৮ বছর বয়সী একটা মেয়ে। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার বয়স তোমায় হয়েছে। তাই তোমাকে এমন একটা প্রস্তাব দিলাম। এখন এত চাপ না নিয়ে পরে ভেবে চিন্তে আমায় জানিও।
–আপনিতো জানেনই, আমার আগেও এক বিয়ে হয়েছে। এরপরও আপনি আমায় আপনার ঘরের বউ বানাতে চান?
–দেখো মিষ্টি, ওটা তোমার অতীত, এমন তো নয় যে তোমার স্বামী বেচে আছে। সে তো মারা গেছে। তো এখন তোমার বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায়? যদি আমাদের অথবা আমার ছেলেকে তোমার পছন্দ না হয়, তাহলে তুমি বলতে পারো।
–কি যে বলেন আন্টি। আমি কি ওসব বলেছি? আপনারা আমার আশ্রয়দাতা, কত ভালো মনের মানুষ আপনারা। আর উনিও খুব ভালো মনের মানুষ। এমন একটা পরিবার আর স্বামী পাওয়া যে কারো জন্যই ভাগ্যের ব্যাপার। আমাকে একটু সময় দিন।
–আমি শুধু তোমায় আমার ইচ্ছাটা জানিয়েছি। বাকিটা তোমার সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর।
.
মিষ্টি মাথা নিচু করে ছাদে চলে যায়। মেঘলা আকাশটায় আজ কেমন করে যেনো রোদ উকি দিচ্ছে।
আকাশটা কি আবার পুরোপুরি মেঘে ছেয়ে যাবে? নাকি আড়ালে থাকা রোদগুলো আলো দিতে বেরিয়ে আসবে?
নিজের অজানতেই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে মিষ্টির। আর মনে মনে ভাবছে…
আমার কপালে কি সত্যিই এমন কিছু আছে? নাকি ২ দিনের সুখ? নাকি আবার কিছু একটা হতে চলেছে আমার জীবনে? এই অভাগা কপাল নিয়ে জন্মেছি যে নিজের মা বাবা কে সেটাই জানি না, যাদের কাছে মানুষ হলাম তারাই একসময় আমায় ছেড়ে দিলো। এরা তো আমার আপন কেউ নয়, শুনেছি মাঝে মাঝে কিছু সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের চেয়েও মজবুত হয়। কি করা উচিত আমার? যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা বলছে সেও এখনো এই ব্যাপারে জানে না।
সে কি একটা কাজের মেয়েকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নিবে? নাকি মায়ের জোরাজুরিতে রাজি হয়ে বিয়ে করে পরে আমায় অবহেলা করবে!
বিয়ের পরের এমন অশান্তির কথা তো অনেক শুনেছি। কিন্তু তিনি মানুষটাতো এমন নয়। সে কি আমায় মেনে নিবে?
.
–মিষ্টি….. বৃষ্টি হচ্ছে, ভেতরে এসো।(সানু বেগম)
পেছনে দুহাত দিয়ে মাটিতে ভর করে উপরের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে বসে আছে মিষ্টি। পেছন থেকে সানু বেগম জোরে জোরে ডেকেই যাচ্ছে, কিন্তু মিষ্টি কান পর্যন্ত আওয়াজ পোঁছাচ্ছে না।
একটু পর সানু বেগম মিষ্টির সামনে এসে দাড়ায়।
–মিষ্টি…..
আচমকা সানু বেগমকে সামনে দেখে উঠে দাড়ায় মিষ্টি।
–জ্বি আন্টি।
–বৃষ্টিতে ভিজতেছো কেনো? ভেতরে চলো।
–জ্বি….
সানু বেগমের সাথে দৌড়ে ভেতরে গিয়ে দাড়ায় মিষ্টি।
–কি হয়েছে তোমার?
–কিছু হয়নিতো।
–কি ভাবছিলে ওতো?
–অতীতগুলো মনে পড়ছিলো।
–ভুলে যাও ওসব। তোমার সামনে পুরো ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। এখন ওসব নিয়ে ভাবো।
–আমি না পারছি হ্যা বলতে, না পারছি না বলতে। আমার চেয়েও ভালো কাউকে ওনার জন্য বেছে নিতে পারবেন আপনি।
–তোমার মতামত কি?
—
–বলো।
—
–তুমি কি আমাদের সাথে থাকতে পারবে না?
–আমি খুব চাই আপনাদের সাথে থাকতে।
–তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
–আমি রাজি।
–আলহামদুলিল্লাহ….. এতক্ষণ এমন বললে কেনো?
–বুঝতে পারছিলাম না কি বলবো।
–আমি আমার ছেলের জন্য যাকে তাকে তো আর বউ করে আনতে পারি না। এই ৩ মাসে সারাক্ষণ আমাদের সাথেই ছিলে..। এমন মেয়েকে তো আমি হাত ছাড়া করতে পারি না। তুমিই আমার ছেলের জন্য পারফেক্ট।
–উনি কি রাজি হবেন?
–ওটা তুমি আমার ওপর ছেড়ে দাও।
–আমার খুব ভয় করছে। জানি না আমার সাথে কি হতে চলেছে।
–পাগলি মেয়ে, এতো ভেবো না তো।
—
–রাতে মামুন বাসায় আসুক, তার সাথে আমি কথা বলবো।
–আচ্ছা।
.
মিষ্টি আজ মামুনের আসার অপেক্ষায় আছে। সময় যেনো কোথায়ও থমকে আছে। এক চুলও নড়তে চাইছে না।
সন্ধ্যায় রিয়া পড়ার টেবিলে বসা, আর মিষ্টি নিজের ডায়েরীটা নিয়ে বিছানার এক কোনায় বসে কি যেনো লিখছে।
হঠ্যাৎই কলিং বেলটা বেজে ওঠে।
ঘন্টা যেনো দরজায় নয়, মিষ্টির বুকের ভেতর বেজে ওঠে…। এক দৌড়ে গিয়ে দরজার সামনে দাড়ায়।
ওড়নাটা মাথায় দিয়ে আস্তে করে দরজা খুলে দেয়।
দরজা খুলে মিষ্টি মামুনের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।
–কি হলো? ভেতরে আসবো না?
–হুম।
–তো সরো না। হা করে দাড়িয়ে আছো কেনো?
–ওহ, সরি। আসুন।
মামুনের হাত থেকে তার ব্যাগটা নিয়ে মিষ্টি রুমে ফিরে আসে।
–কে এলো? ভাইয়া?(রিয়া)
–হুম
–কি আনলো?
–কি জানি, দেখো ব্যাগে আছে।
–ওমা, ফুসকা…..।
–তাই?
–নাও।
–আমি খাবো না, তুমি খাও।
–কেনো?
–ভালো লাগছে না।
–কি হয়েছে?
–কিছু হয়নি, এমনি খেতে ইচ্ছে করছে না।
–তাহলে আমিই খাই….
বলেই রিয়া গপগপ করে খাওয়া শুরু করে দেয়।
মিষ্টি ধীরেধীরে মামুনের রুমের কাছে এসে দাড়ায়।
আজ কেমন যেনো লাগছে মিষ্টির..। দরজা দিয়ে উকি দিতেই মামুন মিষ্টিকে দেখে ফেলে।
–কে ওখানে?
মিষ্টি মুখে হাত দিয়ে চুপ করে দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে।
–এই মেয়ে এদিকে আসো…।
মিষ্টির বুকটা কেপে ওঠে। এক্ষুণি হয়তো কাছে ডেকে ঝারি দিবে।
ধীরেধীরে সে মামুনের সামনে এসে দাড়ায়।
–দরজায় উকি দিচ্ছিলে কেনো?
–সরি।
–কিছু বলবে?
–না।
–কোনো কারন ছাড়ায়ই এসেছো?
—
–কি হলো? চুপ করে আছো যে? আজ তোমাকে এরকম লাগছে কেনো? আসার পর থেকেই দেখছি কেমন করে আছো। মা বকেছে?
–না।
–তাহলে?
–আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।
–কিহ? কেনো?
–আন্টি আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
–কোথায়?
–জানি না।
–না জেনেই রাজি হয়ে গেছো?
–জ্বি।
–কেনো?
–আর কয়দিন থাকবো এই বাড়িতে, একদিন না একদিন তো চলেই যাবো। তাই এখনই চলে যাই। মায়া বাড়িয়ে তো লাভ নেই।
–তোমার অসুবিধা হচ্ছে এখানে?
–না।
–তাহলে কেনো?
–আন্টি বললো, কি করে মানা করি?
–মা বললো আর ওমনি বিয়েতে রাজি হয়ে গেলে? দাড়াও.. মা……. ও মা……. কই তুমি?
.
.
চলবে………
গল্প :- #এক_মুঠো_রোদ (০৫)
লেখক :- #A_Al_Mamun
.
–মা বললো আর ওমনি বিয়েতে রাজি হয়ে গেলে? দাড়াও.. মা……. ও মা……. কই তুমি?
–আন্টিকে কেনো ডাকছেন?
–জিজ্ঞেস করতে হবে, কেনো তোমার জোর করে বিয়ে দিচ্ছে।
–জোর করলো কই? আমিই তো রাজি হলাম।
–ওও আচ্ছা।
–আমি চলে গেলে আপনার কাজ গুলো কে করে দেবে? পারবেন না নিজের কাপড়গুলো নিজে ধুয়ে নিতে? নিজের ঘরটা নিজে গুছিয়ে রাখতে? সময় মতো নাস্তা করে অফিসে যেতে?
–জানি না।
–সকালে এলার্ম দিয়ে ঘুমাবেন। আমি আর ডাকতে আসবো না।
–সত্যিই চলে যাবে?
–সমস্যা কি? আন্টিকে বলবেন আরেকটা কাজের লোক আনতে।
–তোমায় কখনো কেউ কাজের লোক হিসেবে ট্রিট করেনি। তুমি এই ঘরেরই একজন সদস্য ছিলে।
–তাহলে আর কি বলবো, বিয়ে করে বউ নিয়ে আসেন। সে আপনার খেয়াল রাখবে।
–তোমার মতো হয়তো পারবে না।
–আমি আর আপনার খেয়াল রাখবো না। যাকে বিয়ে করবো শুধু তার খেয়াল রাখবো।
–মাকে একটু ডেকে দিবে?
–কেনো?
–এমনিই, দাও না।
–আপনার কি কিছু হয়েছে?
–না। একটু মাকে ডেকে দাও।
–আচ্ছা।
.
মিষ্টি দরজার বাহিরে এসে মুচকি হেসে ওঠে।
সানু বেগমের রুমে এসে দেখে তিনি নামাজের পাটিতে বসে আছে। তার পাশে বসে মিষ্টি মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
–মিষ্টি, কিছু বলবে?
–উনি আপনাকে ডাকছে।
–কেনো?
–ওনাকে বললাম যে আপনি অন্য কোথায়ও আমার বিয়ে দিচ্ছেন। ওমনি ওনার মুড খারাপ হয়ে যায়।
–কেনো কেনো?
–আমি কি করে বলবো?
–তোমাকে পছন্দ করে নাকি?
–জানি না।
–এই পর্যন্ত বিয়ের জন্য ৭-৮ টা মেয়ে দেখিয়েছি মামুনকে। একটাও তার পছন্দ হয়নি। তাহলে কি আমার আর আমার ছেলের পছন্দ এক?
—
–ওকে গিয়ে বলো আমি নামাজটা শেষ করে আসতেছি।
–আচ্ছা।
মিষ্টি আবার মামুনের কাছে ফিরে আসে।
–মা কই?
–উনি ব্যস্ত আছেন। আসবে না। বলেছে আমার বিয়ে নিয়ে যেনো আপনি কোনো কথা না বলেন।
–এমন কেনো বললো?
–তা তো জানি না। হাত মুখ ধুয়ে খেতে আসেন। শেষ বারের মতো আপনাকে খাবার দেই।
–আমার খুদা নেই। আমি বাহির থেকে খেয়ে এসেছি।
–মিথ্যা কেনো বলেন? আপনার মুখটা শুকিয়ে আছে। দেখেই বোঝা যায় আপনার খুদা লেগেছে।
–আর কিছু বোঝা যায় না?
–নাতো।
–নিজের রুমে যাও। আমার খাওয়ার ইচ্ছা নেই।
–রেগে যাচ্ছেন?
–না, যাও।
মিষ্টি বুঝতে পারে সত্যিই মামুনের মুড খারাপ হয়ে গেছে।
আস্তে করে বেরিয়ে মিষ্টি আবার সানু বেগমের রুমে ফিরে আসে।
–আন্টি শেষ?
–হুম..। চলো দেখি কেনো ডাকছে।
–ওনাকে বললাম আপনি যাবেন না কথা বলতে। আর বলেছেন উনি যেনো আমার বিয়ের ব্যাপারে কোনো কথা না বলে। ওমনি রেগে গেলো। বললো খাবে না।
–দেখো কি করেছে শয়তান মেয়েটা।
–যাইয়েন না, দেখি কি করে।
–না গেলে আরো রেগে যাবে। চলো আমার সাথে।
–আমি কেনো?
–ওকে সব খুলে বলতে হবে না?
–আপনি বলেন। আমি থাকতে পারবো না। আমার লজ্জা করে।
–ওমা, তুমি না গেলে বলি কি করে?
–এখন বলিয়েন না। দেখি উনি কি করে। যদি সত্যিই উনি আমাকে পছন্দ করেন। তাহলে আমি দুপায়ে রাজি। আর একটু সময় দিন প্লিজ।
–দেখো তোমরা যা ভালো বোঝো।
মিষ্টি এগিয়ে গিয়ে সানু বেগমকে জড়িয়ে ধরে।
–অনেকদিন হলো মা ডাকতে পারিনা। খুব মা ডাকতে ইচ্ছে করছে।
–মানা করলো কে?
–আপনি যদি রাগ করেন।
–রাগ কেনো করবো?
–আচ্ছা মা, আমি উনার কাছে যাই। নাহয় রাগ করে হয়তো খাবারই খাবে না।
–আচ্ছা যাও।
.
মিষ্টি আবার মামুনের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। সানু বেগম পেছন থেকে মিষ্টির চলে যাওয়া দেখছে আর ভাবছে। এমন একটা লক্ষ্মী মেয়েকে কি করে আমি হাতছাড়া করতাম? যার রুপে-গুনে কোনো অংশে কমতি নেই। একমাত্র সেই পারবে আমার সংসারটাকে সাজাতে।আমার মর্ডান মেয়ে চাই না, বেশি শিক্ষিত মেয়ে চাই না, বেশি জ্ঞানী মেয়ে চাই না। ঠিক যেমনটা চেয়েছিলাম তেমনটাই পেয়ে গেছি আমি। এবার শুধু বিয়েটা হওয়ার বাকি।
–আন্টি বলেছেন আপনাকে খাবারটা খেয়ে নিতে।
–আমার খুদা নেই।
–এই কয়দিনে যতটা বুঝলাম, আপনি সাজিয়ে মিথ্যে বলতে পারেন না। ধরা পড়ে যান।
–কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে যাও।
–রেগে যাচ্ছেন কেনো? অনেক কষ্ট করে রান্না করেছি। না খেলে আমি কালই চলে যাবো এই বাড়ি ছেড়ে। অবশ্য আমি গেলেই বা কি, আর না গেলেই বা কি।
–তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?
–মজা কেনো করবো? সত্যি বলছি, আন্টি আজই আমাকে বিয়ের কথা বললো।
–খাবারটা টেবিলে রেখে নিজের রুমে যাও।
–আচ্ছা আমার বিয়ের কথা শুনে আপনি কেনো রেগে যাচ্ছেন?
–আমি কেনো রাগবো?
–আপনি কি আমাকে পছন্দ করেন?
–কিহ? তোমাকে? আমার কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নাই? যে তোমাকে পছন্দ করবো! নিজের সীমানা অতিক্রম করো না।
মিষ্টি যেনো একটা ধাক্কা খেয়ে ওঠে। মামুনের মুখে এমন কথা মিষ্টি আসা করেনি।
মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে এসে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।
পেছন থেকে মামুন কয়েকবার ডাক দিলেও মিষ্টি পেছন ফিরে তাকায়নি।
.
–মিষ্টি, কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে?(রিয়া)
—
–এই মিষ্টি।
–কিছু হয়নি, এমনিই।
–আরে, এমনি এমনি কেউ কাঁদে? আম্মু কিছু বলেছে?
–না।
–ভাইয়া?
–না।
–তাহলে?
–কিছু হয়নি।
–আমি এক্ষুণি আম্মুকে ডাকে আনছি।
বলেই রিয়া দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মিষ্টি চেষ্টা করেও রিয়াকে আটকাতে পারেনি।
চোখ মুছে বিছানার এক কোনায় বসে আছে সে। সানু বেগম এসে মিষ্টির পাশে বসে।
মিষ্টি তখনো নিচের দিকে তাকিয়ে বাসে আছে। দুচোখ তখনো পানিতে ভরে আছে।
–মিষ্টি, কি হয়েছে?
দ্রুত দুহাত দিয়ে চোখ মুছে হালকা মুচকি হাসি দিয়ে মিষ্টি বলে ওঠে
–কই কিছুনা তো।
–কাঁদছো কেনো?
–বাবা মাকে খুব মনে পড়ছিলো।
–মিথ্যা কবে থেকে বলা শুরু করেছো? আমি দরজার বাহিরেই ছিলাম।
ওমনি মিষ্টি সানু বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।
–আম্মু, কি হয়েছে? ও কাঁদছে কেনো?(রিয়া)
–তোর ভাই বকছে ওকে।
–ভাইয়া কেনো বকবে ওকে?
–তোর ভাইকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।
রিয়া হনহন করে মামুনের রুমে চলে যায়।
–আমার আর আপনাকে মা ডাকা হলো না।
–কে বলেছে হবে না? সব হবে, আমি গিয়ে ওর সাথে কথা বলবো।
–কি হবে বলেন। উনি মন থেকে কখনোই আমাকে মানতে পারবেন না। জোর করে কি সব হয়? দোষটা আমারই, ভুলেই গিয়েছিলাম আমার সীমানা কতটুকু।
–এত কিছু বুঝি না। তুমিই হবে আমার ঘরের বউ।
–জোর করবেন না প্লিজ, ওনার অমতের বিয়েটা হলে এই সংসারটা টিকবে না। অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। আর পারবো না, মরেই যাবো হয়তো।
–এভাবে কেনো বলছো? আমরা কি এতটাই খারাপ?
–কি বলছেন এসব? আমি কি এমন কিছু বলেছি?
–ওকে আমি বুঝিয়ে বলবো।
–থাক, আমি কাল সকালে চলে যাবো।
–চলে যাবে? কোথায়?
–জানি না, এখানে থেকে আমি আপনাদের মায়ায় জড়িয়ে পড়েছি। আমাকে অনেক দুর যেতে হবে। সব কিছু ভুলে যেতে হবে।
–কি বলছো এসব? তুমি কোথাও যাবে না, এখানেই থাকবে।
–আর সম্ভব না।
–দেখো মেয়ে, মুখে মুখে তর্ক করবে না। যা বলছি তা শুনো।
–প্লিজ আন্টি।
–আমি আর তোমায় বিয়ের জন্য জোর করবো না। তবুও যেও না আমাদের ছেড়ে।
–কি করবো আমি এখানে থেকে?
–আমাদের ছেড়ে গিয়ে কি করবে?
–জানি না।
–তুমি এখানেই থাকবে… আর কোনো কথা নয়…। প্রয়োজনে মামুনের সাথে কথা বলবে না। শাস্তি ওকে দিবো, তুমি কেনো শাস্তি পাবে?
–কি বলছেন?
–হুম ঠিকই বলছি, ওর এত সাহস হয় কি করে তোমাকে এমন কথা বলার? ওকে তো শাস্তি পেতেই হবে। কাল থেকে ওর কোনো কাজ তুমি করবে না। খাবার দিবে না। তখন বুঝবে তোমার গুরুত্ব ওর কাছে কতটুকু। আমি আর রিয়া তো করবোই না। বুঝবে মজা।
মিষ্টি মুচকি হেসে ওঠে…..
–কি বলেন, উনি পারবেন না।
–এটাই তো ওর শাস্তি।
পেছন থেকে রিয়া রুমে প্রবেশ করে…।
–আম্মু, তোমার ছেলে আমার কোনো কথার জবাব দেয় না। চুপ করে বসে আছে।
সানু বেগম রিয়া আর মিষ্টিকে সামনে বসিয়ে সোজাসুজি বলে দেন, কাল থেকে মামুনের সাথে কথা বন্ধ, ওর কোনো কাজে সাহায্য করা যাবে না।
মিষ্টি আর রিয়াকে রুমে রেখে সানু বেগম নিজের রুমে চলে যান।
সেই রাতে মামুনও আর রুম থেকে বের হয়ে কারো সাথে কথা বলেনি।
.
পরদিন সকাল সাড়ে নয়টায় মামুনের ঘুম ভাঙে, লাফ দিয়ে উঠে মাকে ডাকতে থাকে, আর চিৎকার করে বলতে থাকে কেনো তাকে কেউ ৯টার আগে ডেকে দেয়নি।
কোনো দিক থেকে জবাব আসেনি। দ্রুত তৈরী হয়ে নাস্তার টেবিলে এসে দেখে মিষ্টি রিয়া আর মা সবাই নাস্তা করে চলে যাচ্ছে।
–মিষ্টি….
-(চুপ)
–রিয়া….
–(চুপ)
–আরে, কেউ জবাব দিচ্ছো না কেনো? বয়রা হয়ে গেলে নাকি সবাই?
—
–আমার নাস্তা কই?
–তোর জন্য নাস্তা নিয়ে কেউ বসে নাই, টেবিলে রাখা আছে, নিয়ে নে।(রিয়া)
–বাবারে, গলার আওয়াজ এত বদলে গেলো কেনোরে?
কেনো উত্তর না দিয়ে রিয়া স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
–মা…….
–কি হয়েছে?
–দুপুরে চলে আসবো আজ। কি রান্না করবে?
–রান্না আমি করি না। যে রান্না করে তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।
–কি ব্যাপার? সবাই এতো রেগে আছো কেনো?
কোনো জবাব না দিয়ে সানু বেগমও নিজের রুমের দিকে হাটা দেয়।
–যাব বাবা… কি হয়ে গেলো আজ সবার? মিষ্টি……
—
–মিষ্টি……
—
মিষ্টি চেয়েও যেতে পারছে না, সানু বেগম শক্ত করে মিষ্টির হাত চেপে ধরে বসে আছে।
একটু পর মামুন কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
–এত লাফালাফি করো কেনো? কাল রাতে না তোমায় বকেছিলো।(সানু বেগম)
–ডাকলো যে!
–ডাকুক। যাবে না ওর কাছে। তোমার কাছে এসে ক্ষমা না চাইলে কথা বলবে না।
–কি যে বলেন।
–ঠিকই বলছি। চলো রান্নাটা বসিয়ে দেই।
–আপনি বিশ্রাম করুন, আমি করতেছি।
–এখন না, বিশ্রাম করবো যেদিন তোমায় সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারবো সেদিন। তখন তোমার সংসার তুমি সামলাবে, আমি আসবো না মাঝখানে।
–ধুর, শুধু বিয়ে বিয়ে করেন। চলেন…..
.
দুপুরে মামুন অফিস শেষে বাসায় ফিরে আসে।
মিষ্টি আর সানু বেগম দুজনই খেয়ে যার যার রুমে চলে যায়।
–মা, খুদা লেগেছে।
—
–ও মা….।
–চেঁচাস কেনো? টেবিলে রাখা আছে। খেয়ে নে।
–তোমরা খাবে না?
–আমাদের খাওয়া শেষ।
–ওমা, বললাম আজ দুপুরে আসবো, তবুও আমাকে রেখে খেয়ে নিলে?
–তো তোর জন্য বসে থাকতে হবে?
–এতো রেগে আছো কেনো সকাল থেকে? কি করেছি আমি?
–জানি না, জ্বালাস নাতো, যা।
–বাপরে…। কি যে করলাম আমি।
খাবার টেবিলে বসে মামুন মিষ্টিকে ডাক দেয়।
মিষ্টি দৌড়ে এসে মামুনের সামনে দাড়ায়।
–খেয়েছো?
–জ্বি।
–মা এতো রাগ দেখাচ্ছে কেনো আমার সাথে? কিছু হয়েছে?
–জানি না।
–সকালে আজ আমায় ডাকলে না কেনো?
–আমাকে কেনো ডাকতে হবে? আন্টি আমাকে আপনাকে ডাকার কাজ দেয়নি।
–বাপরে.. কি হয়ে গেলো সবার? সবাই রেগে আছে। কি করেছি আমি?
–জানি না।
বলেই মিষ্টিও নিজের রুমের দিকে হাটা দেয়।
.
টেবিলে রাখা খাবার খেয়ে মামুন সোজা মায়ের রুমে চলে যায়।
–মা….
—
–ও মা… কি হয়েছে বলো তো।
–কি?
–আমার সাথে কেউ কথাই বলছো না, বললেও জবাব দিয়ে চলে যাচ্ছো। কি হয়েছে?
–তোর সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে নাই।
–কেনো? কি করেছি আমি?
–কাল রাতে মিষ্টিকে কি বলেছিলি?
–কি বলেছি?
–মনে করে দেখ।
–সে তোমায় বিচার দিয়েছে?
–না,আমি ওখানেই ছিলাম। এভাবে কাউকে ছোট করে কথা বলা কে শিখিয়েছে তোকে? এমন শিক্ষাতো তোকে আমি দেইনি।
–আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। সত্যিই আমি এটা বলতে চাইনি। মাথাটা গরম হয়ে গেছিলো, তাই কি বলতে কি বলে ফেলেছি জানি না।
–কেনো মাথা গরম ছিলো?
–ওকে অন্য কোথাও বিয়ে দিচ্ছো, আমাকে কেউ জানালেও না।
–জানালে কি করতি?
–আমি তো এই ঘরেরই সদস্য তাই না! আমি জানতে পারি না?
–কোথাও ওর বিয়ে ঠিক হয়নি, ও দুষ্টুমি করেছিলো তোর সাথে।
–দুষ্টুমি?
–হুম।
–বিয়ে নিয়ে?
–হুম, আমিই মিষ্টির বিয়ের কথা তুলেছিলাম। তাই তোর সাথে গিয়ে দুষ্টুমি করলো।
–এতদিন আমার পেছনে লেগেছিলে বিয়ে নিয়ে, এখন মিষ্টিকে নিয়ে লেগেছো। মেয়েটা আমাদের মেহমান, কে বলেছে তোমায় ওর বিয়ে নিয়ে কথা বলতে?
–ওকে তো আমার ভীষণ পছন্দ, একদম লক্ষ্মী একটা মেয়ে। আজ কালতো এমন মেয়ে পাওয়াই যায় না। তাই বিয়ের কথা বললাম ওকে।
–এত লক্ষ্মী মেয়ে হলে কেনো তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছো?
–তোকে তো কত মেয়ে দেখালাম বিয়ের জন্য, তোর তো কেনো মেয়েই পছন্দ হয় না। মিষ্টিকে তোর পছন্দ হয়?
–কি যে বলো না মা, এসব পছন্দ অপছন্দ নিয়ে আমি কখনো ভাবি নি। ও থাকুক এবাড়িতে, এত বিয়ে বিয়ে করিও না।
–মেয়েটার একটা ভবিষ্যৎ আছে, তাছাড়া সে এবাড়ির কাজের মেয়ে না। বিপদে পড়েই মেয়েটা এখানে আছে। আর তার এই বিপদের সুযোগ নেওয়াটা অমানুষের কাজ। এই কাজ আমি করতে পারবো না। যদি তুই রাজি থাকিস তাহলে আমাকে বল, আমি মিষ্টিকে জানাই। আর না হয় যদি পারি মিষ্টির অনুমতি নিয়ে ওকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবো। এভাবে আর না।
.
.
চলবে…….
গল্প :- #এক_মুঠো_রোদ (০৬)
লেখক :- #A_Al_Mamun
.
–মেয়েটার একটা ভবিষ্যৎ আছে, তাছাড়া সে এবাড়ির কাজের মেয়ে না। বিপদে পড়েই মেয়েটা এখানে আছে। আর তার এই বিপদের সুযোগ নেওয়াটা অমানুষের কাজ। এই কাজ আমি করতে পারবো না। যদি তুই রাজি থাকিস তাহলে আমাকে বল, আমি মিষ্টিকে জানাই। আর না হয় যদি পারি মিষ্টির অনুমতি নিয়ে ওকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবো। এভাবে আর না।
–আমি সেটা বলিনি, এখনি কেনো বিয়ে? কিছুদিন সময় নাও না।
–সম্ভব না, প্রতিবেশীরা বাজে মন্তব্য করছে।সম্পর্কে ও তোর বোন নয়, একটা যুবতী মেয়ে সে। এভাবে ওকে ঘরে রাখা সম্ভব না।
–তাহলে এখন কি করতে হবে?
–যদি মিষ্টিকে তোর পছন্দ হয়, তাহলে এই বিষয়ে তাকে জানাতে হবে। আমি চাই সে এখানেই থাকুক, এবাড়ির বউ হয়ে।
–কিন্তু মা, তার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তার পরিবার সম্পর্কেও কিছু জানি না। কিভাবে???????
–দেখ বাবা, ৩-৪ মাস যাবত দিনের বেশিরভাগ সময় আমি মিষ্টির সাথে কাটিয়েছি। একটা মানুষকে জানতে-বুঝতে এটা কম সময় নয়। আমার ওপর ভরসা করতে পারিস।
–কি করতে হবে এখন???
–সেটা আমি দেখতেছি। কাল ওকে যা যা বলেছিস এখন তার জন্য ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নে।
–এখন?
–হুম, যা।
–আচ্ছা।
.
মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে মামুন মিষ্টির রুমের দিকে যায়। দরজাটা খোলা, মিষ্টির বিছানার এক কোনায় গুটি মেরে বসে আছে।
দরজার সামনে এসে মামুন গলার আওয়াজ দেয়,
মামুনকে দরজার সামনে দেখে মিষ্টি বিছানা থেকে উঠে দাড়ায়।
–আসবো?
–জ্বি আসুন।
ধীরে পায়ে মামুন মিষ্টির সামনে এসে নিচেই বসে পড়ে।
–আমার ওপর কি রেগে আছো?
–না।
–তাহলে আজ আমাকে ঘুম থেকে জাগাতে এলে না যে?
–সীমানা অতিক্রম করতে চাইনি।
–সরি।
–কেনো?
–মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছিলো। বলতে চাইনি এমন কথা।
–তার জন্য সরি বলতে হবে কেনো? আপনি তো ভুল কিছু বলেন নি।
–ভুলই বলেছি, আসলে তোমার বিয়ের কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিলো। কি বলেছি নিজেও জানি না।
–আমার বিয়ের কথা শুনে আপনার মেজাজ কেনো বিগড়ায়?
–তা জানি না।
–আর কিছু বলবেন?
–আমায় ক্ষমা করেছো?
–সত্যি বলতে আপনার ওপর আমার কোনো রাগ নেই যে ক্ষমা করতে হবে। আপনারা আমার জন্য এত করতেছেন, কি করে আমি আপনার ওপর রাগ করবো বলুন। ছোট বেলা থেকেই কারো ওপর রাগ দেখাতে পারতাম না, ওরকম কেউ আমার জীবনে ছিলোই না। তাই কারো ওপর আমার রাগ হয়না।
–আমার ওপর রাগ দেখাতে পারো।
–কেনো?
–এমনিই,
–না থাক, আমার ওই অধিকার নেই আপনার ওপর রাগ দেখানোর।
–সত্যিই আমি অনুতপ্ত, এমন একটা কথা তোমায় বলেছি যা আমার মাথায়ই ছিলো না।
–বাদ দিন না, ওসব আমি কত আগেই ভুলে গেছি ।
–তোমার মুখ দেখলে বোঝা যায়, রেগে আছো আমার ওপর।
–না আমি রেগে নেই।
–তাহলে একটু হাসো।
–কেনো হাসবো?
–বাব্বাহ, এতো রাগ। আগেতো কখনো দেখিনি।
–আমি থাকবো না আর এখানে, চলে যাবো।
–কোথায় যাবে?
–জানি না। যেদিকে দুচোখ যায়।
–তাহলে মা আমায় মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিবে। আচ্ছা চলো আমরা একসাথে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই।
–আপনি কেনো যাবেন?
–তোমার খেয়াল রাখতে।
–আমার খেয়াল আমি রাখতে পারবো।
–পারবে না। মা বলেছে তোমার খেয়াল রাখার দায়িত্ব নিতে।
–সব শুধু মা বলে, নিজের থেকে কিছুই করেন না?
–করি তো।
–কি করছেন শুনি তো।
–মা বলার আগে থেকেই তোমায় পছন্দ করি।
–মিথ্যা বলবেন না।
–সত্যি বলছি।
–তাহলে কাল আমাকে এমন কেনো বকা দিলেন?
–বললাম তো তোমার বিয়ের কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।
–তাই বলে কি আমার বিয়ে হবে না?
–আমার মা সারাদিন খুব একা থাকে। তার একজন সঙ্গির খুব প্রয়োজন। তুমি চলে গেলে আমার মায়ের দেখাশোনা কে করবে? আমাকে সব কাজে সাহায্য কে করবে? পারবে রিয়াকে একা করে চলে যেতে?
–না, খুব কষ্ট হবে। এত ভালোবাসা আমি কখনো পাইনি যতটা আপনারা দিয়েছেন। আমারও তো খুব ইচ্ছে করে এইবাড়িতে সারাজীবন থেকে যেতে। আপনাদের ছেড়ে কোথাও না যেতে।
–এই বাড়ির বউ হবে?
নিচের দিক থেকে মাথা তুলে মিষ্টি মামুনের চোখের দিকে তাকায়। ওমনি মামুন চোখ নামিয়ে নেয়।
–আন্টি শিখিয়ে দিয়েছে তাই না?
–শিখিয়ে দেয় নি, আন্টি অনুমতি দিয়েছে। বাকিটা আমারই মনের কথা।
–কি এমন দেখলেন আমার মধ্যে? যে বিয়ের চিন্তা করছেন। একটা কাজের মেয়েকে বিয়ে করলে কেউ আপনাকে ভালো বলবে না।
–কাজের মেয়ে হলে কবে? আমি দেখেছি মা নিজের সন্তানদের চেয়ে তোমায় বেশি ভালোবাসে। তোমার ব্যবহার, নমনীয়তা, সাংসারিক মনোভাব আর বিশেষ করে তোমার মায়া ভরা মুখটা, এর চেয়ে বেশি আর কি চাইতে পারি? সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাসায় ফিরে যখন দরজায় তোমায় দেখি, মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার প্রথমে তোমার মুখটা দেখা, খেতে বসলে পাতে খাবার বেড়ে দেওয়া, গোসল শেষে রুমে এসে নিজের জামা চোখের সামনে রাখা, সারাক্ষণ চোখের সামনে তোমার হাসি মাখা মুখটা দেখাতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এই অল্প কিছুদিনেই তোমার প্রতি অনেকটা দূর্বল হয়ে গেছি। পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়।
–বলেননি তো কখনো।
–সাহস পাইনি। তোমার বিশ্বাস ভাঙতে চাইনি। এমনিতেই পুরুষ মানুষ তুমি ঘৃণা করতে, সেই কাতারে আমি পড়তে চাইনি। তবে আজ এই সুযোগ হাতছাড়া করতে পারি নি।
–আমার ভয় করছে খুব।
–কেনো?
–জানি না, আপনি যা বলতেছেন এসব শুনে আমার খুশি হওয়া উচিত নাকি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
–আমায় বিশ্বাস করো?
–হুম।
–তোমার হাতটা দেবে?
–কেনো?
–দাও না।
–হুম
মিষ্টির হাতটা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে…
–এই যে তোমায় ছুয়ে কথা দিলাম। অতীতে যতটা কষ্ট পেয়েছো, তার ১% ও তোমায় পেতে দিবো না। মাথায় করে রাখবো তোমায়। জীবনের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত তোমায় ভালোবেসে যাবো।
.
মামুনের চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি চোখের পানি ছেড়ে দেয়। মামুনও মিষ্টির দিকে একনজরে চেয়ে আছে। মেয়েটাকে কতটা নিশ্পাপ লাগছে।
–আচ্ছা, কাঁদলে তোমায় এত সুন্দর লাগে কেনো?
–কই লাগে?
–খুব সুন্দর লাগছে তোমায়।
–মোটেও না।
–আমি কিন্তু তোমায় রোজ কাঁদাবো।
–তাহলে আমি চলে যাবো।
–কোথায়?
–অনেক দুরে।
–পাগলি…. আজ সারাদিন আমার ওপর রাগ করে ছিলে?
–হুম।
মিষ্টির হাতটা ছেড়ে দিয়ে মামুন রিয়ার পড়ার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। টেবিলের ওপর রাখা ফুলদানি থেকে একটা লাল গোলাপ নিয়ে মিষ্টির সামনে এগিয়ে আসে।
গোলাপটা মিষ্টির দিকে এগিয়ে দিয়ে হাটু গেড়ে বসে…….
–এই ছোট্ট জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছো, দুঃখ পেয়েছো, কাছের মানুষদের হারিয়েছো,
এই জোয়ারভাটার মাঝে পড়ে অনেক কিছুই শিখেছো। তবুও সাহস করে তোমায় একটা অনুরোধ করতে চাই। আমায় একবার সুযোগ দিয়ে তোমার নিশ্পাপ জীবনে আর একবার ঝুঁকি নিয়ে দেখো। কথা দিলাম, এটাই তোমার জীবনের শেষ ঝুঁকি।
–কিছুই বুঝিনি।
–🙄🙄
–এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
–কত সুন্দর করে প্রপোজ করলাম।
–ওও আচ্ছা, প্রপোজ করেছেন? এত কঠিন করে বলার কি আছে? আমি বুঝিনা এমন।
–আচ্ছা সরি, আবার বলছি।
–কি?
–আমায় কি আপনার জীবনে আসার সুযোগ দিবেন? খুব ইচ্ছা জীবনের বাকি দিন গুলো আপনার সাথে কাটানোর। হবেন আমার মনের সিংহাসনের রাজকুমারী? “Will You Marry Me?”
লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচুৃ করে মামুনের হাত থেকে ফুলটা নিয়ে মিষ্টি একটু দুরে গিয়ে দাড়ায়।
–উত্তরটা পেলাম না।
–সব কি বলতে হয়? বুঝে নিতে পারেন না?
–না, বলো।
–না, পারবো না।
–কেনো?
–আমার বুঝি লজ্জা করে না?
–আচ্ছা? আপনি লজ্জা পাচ্ছেন?
–হুম, খুব।
–আচ্ছা থাক, আমি আর কিছু বলবো না। এই লজ্জা ভাঙানোর কাজটা বিয়ের পরের জন্য তুলে রাখলাম।
–কেনো?
–বিয়ের পরেই বলি, এখন কিছু বলবো না।
–জমাচ্ছেন?
–হুম।
….
–মামুন…………
নিজের রুম থেকে সানু বেগম মামুনকে ডাকতে থাকে।
–এই যান যান, আন্টি ডাকতেছে।
–হুম। এক্ষুণি মাকে বিয়ের ব্যাপারে বলবো।
–আপনার যা ইচ্ছা।
–কেনো? তোমার ইচ্ছা নেই?
–যানতো, আন্টি কতক্ষণ যাবত ডাকতেছে।
–যাচ্ছি।
মামুন কিছুক্ষণ মিষ্টির দিকে চেয়ে থেকে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
.
রাতে মামুন আর মিষ্টি দুজনকেই সানু বেগম তার রুমে ডাকেন।
–মা ডেকেছো?(মামুন)
–হুম, মিষ্টি কই?
–এই তো আন্টি, আমি চলে এলাম।(মিষ্টি)
–তুমি না কাল আমাকে মা ডেকেছিলে, আবার আন্টি কেনো?
–অ্যাহ! কাল থেকেই মা ডাকা শুরু করছে?(মামুন)
–চুপ করতো।
–সরি আন্টি, এখন থেকে মা ডাকবো।
–আবার?
–সরি মা।
–বসো এখানে।
–আমাদের ডাকলে যে?(মামুন)
–কিছু কথা ছিলো, তাই ডাকলাম।
–হুম বলো না।
–যেহেতু তোরা দুজনই বিয়েতে রাজি, তাই আমি আগামী শুক্রবারই তোদের বিয়ে দিয়ে দিতে চাই।
–এত তাড়াতাড়ি?
–হুম, আমার মনে হয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হয়ে গেলেই হয়।
–তুমি যেমনটা ভালো বোঝো।
–মিষ্টি, তোমার কোনো আপত্তি আছে?
–না মা। আপনি যা ভালো মনে করেন।
–তাহলে আর ৪ দিন পরই তোদের বিয়ে।
–অনুষ্ঠান হবে না মা?
–আমাদের তো কোনো আত্মীয় স্বজনই নেই, অনুষ্ঠান করে কি করবো? কয়েকজন প্রতিবেশীকে দাওয়াত দিয়ে কাজি ডেকে বিয়েটা সেরে ফেলবো।
–আচ্ছা।
–অনেক রাত হয়েছে, যা।
–আচ্ছা।
মিষ্টি আর মামুন দুজন দুজনের রুমের দিকে হাটা দেয়।
–এতো রাতে মা তোমায় কেনো ডাকলো?(রিয়া)
–তোমার ভাই তোমায় কিছু বলেনি?
–নাতো।
–মা?
–না। কেনো? কি হয়েছে?
এমন সময় মামুন রিয়ার রুমে প্রবেশ করে।
–ওই গাঁধা, এতরাতে এখানে কি? (রিয়া)
–তোকে বলতে হবে?
–তো কাকে বলবি?
–তোর বান্ধবীকে।
–আচ্ছা? কি বলবি?
–আচ্ছা বনু, ওকে তোর কেমন লাগে রে?
–কোন বিষয়ে?
–যদি তোর ভাবি হয়, কেমন হবে?
রিয়া মুখে হাত দিয়ে মামুনকে ইশারা করে চুপ করার জন্য।
–কি হলো?
–যা বাইরে যায়, কি সব বলতেছিস?
–কেনো? ওকে তোর পছন্দ না?
রিয়া বিছানা থেকে উঠে এসে মামুনের হাত ধরে টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে আসে।
–কি সব উল্টাপাল্টা বলতেছিস? মিষ্টি কি ভাববে? মেয়েটা এসবে একদম অভ্যস্ত নয়, কষ্ট পাবে। মজা করিস না ওর সাথে।
.
.
চলবে…….
গল্প :- #এক_মুঠো_রোদ (০৭)
লেখক :- #A_Al_Mamun
.
রিয়া বিছানা থেকে উঠে এসে মামুনের হাত ধরে টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে আসে।
–কি সব উল্টাপাল্টা বলতেছিস? মিষ্টি কি ভাববে? মেয়েটা এসবে একদম অভ্যস্ত নয়, কষ্ট পাবে। মজা করিস না ওর সাথে।
–মিষ্টিকে ভাবি হিসেবে তোর পছন্দ হয়?
–হয়ে লাভ কি? তোর কপালে এমন মেয়ে নাই।
–বিয়ে করবো মিষ্টিকে।
–স্বপ্নই দেখে যা।
–বিশ্বাস হয় না?
–না। আম্মু তোর জন্য ৭-৮টা প্রোপজাল নিয়ে এসেছিলো। একটাও তো তোর পছন্দ হয়নি। এখন বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেলি কেনো?
–ওদের মধ্যে তো আর মিষ্টি ছিলো না।
–চাপাবাজি বন্ধ করে রুমে যা, ঘুমাবো।
–আচ্ছা…।
বলেই রিয়াকে পাশ কাটিয়ে মামুন রিয়ার রুমে ঢুকে পড়ে।
–আরে, এখনে না। তোর রুমে যা।
কে শোনে কার কথা। মামুন সোজা মিষ্টির সামনে গিয়ে বসে।
রিয়াও পেছন পেছন এসে মামুনের পেছনে দাড়ায়।
–ভাইয়া, ঘুম পাচ্ছে, এখন যা।
–যাবো তো, তোর ভাবির একটু খেয়াল রাখিস।
পেছন থেকে রিয়া মামুনের পিঠে চিমটি কেটে ওঠে।
–যা এখান থেকে।
–যাচ্ছি বাবা, তুই শুধু আমার রুমে যাইস। দেখবি আমিও প্রতিশোধ নিবো।
রিয়া পেছন থেকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে মামুনকে বাহিরে এনে দরজা লাগিয়ে দেয়
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মিষ্টি ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতেছে।
–ভাইয়ার কথায় কিছু মনে করিও না। ও এমনই, শুধু মজা করে।
–কিন্তু এটা তো মজা না। উনি সত্যিই এমন বলেছে।
–কি সত্যি?
–তুমি কি আসলেই কিছু জানো না?
–নাতো।
–সকালে তোমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করিও।
–না না, এখন বলো কি হয়েছে।
–তোমার ভাইয়া যা বলেছেন সবই সত্যি।
–কোন ব্যাপারে? ভাবি?
–হুম।
–কি বলছো? কিভাবে?
–কাল তোমার আম্মু ডেকে আমায় জিজ্ঞেস করলো আমি রাজি কিনা।
–তাই? রাজি হয়ে যাও প্লিজ, না করিও না।
–আগামী শুক্রবার বিয়ে।
–অ্যাহ? বিয়েও ঠিক করে ফেলেছে?
–হুম।
–আমিকে তো কেউ কিছুই বললো না।
–একটু আগে আমায় ডেকে বললো।
–যাক বাবা, ভালো হয়েছে। ওই গাধা কিভাবে তোমায় রাজি করালো?
–প্রপোজ করেছিলো দুপুরে…।
–ইসসস, এত তাড়াতাড়ি রাজি না হয়ে শয়তানটাকে নাকে রশি লাগিয়ে ঘুরাইতা। আমায় অনেক জ্বালিয়েছে।
–তাই?
–হুম। আমার তো সেই খুশি লাগতেছে। আমার ভাইয়ের বউ হিসেবে তুমিই পারফেক্ট। আমি তো অনেক আগে থেকেই মনে মনে ভাবতাম তোমায় যদি ভাইয়ার বউ বানাইতে পারতাম। কিন্তু কি না কি মনে করো এই ভয়ে কখনো জিজ্ঞেস করতে পারিনি। এখনতো আর ভয় নেই, সারাজীবন আমাদের সঙ্গেই থাকবে।
–আমারো খুব খুশি লাগছে। যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
–ভাইয়াকে পেয়ে?
–একটা পরিবার পেয়ে। কখনো ভাবিনি আমার একটা পরিবার হবে। যাদের নিয়ে আমি ভাববো, যাদের ওপর আমার অধিকার থাকবে। ভেবেছিলাম জীবনটা বুঝি শেষই হয়ে যাবে। পুরো অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো জীবনটা। শুধু #এক_মুঠো_রোদ এর অপেক্ষায় ছিলাম। আল্লাহর কাছে লাখো-কোটি শুকরিয়া আমায় একটা পরিবার দেওয়ার জন্য।
–ধুর, এখানে কান্না করার কি আছে? আমরা সবাইও খুব খুশি তোমায় পেয়ে। আল্লাহ কার ভাগ্যে কি রেখেছেন তা আমরা কেউ জানি না। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
–হুম।
–এখন আর কি, ইনজয় করো। চুটিয়ে প্রেম করো দুজন।
–যাহ, কি যে বলো না!
–ওমা, এত লজ্জার কি আছে?
–আমি পারবো না এসব প্রেম টেম করতে।
–বিয়ের তো এখনো ৪ দিন বাকি। দেখবো আপনি কি করেন।
–কিছুই করবো না।
–দেখা যাবে।
.
পরদিন সকালে মিষ্টি নাস্তা বানানো শেষে প্রতিদিনের মতো মামুনকে ঘুম থেকে জাগাতে যায়। প্রতিদিনের মতো জাগাতে আসলেও আজ অনুভূতিটা প্রতিদিনের মতো না।
কেমন যেনো সারা শরীরে শিহরণ বয়ে চলছে। মিষ্টি মামুনের রুমটা চারদিকে ভালো করে লক্ষ্য করে। কিছুদিন পরতো এই রুমটা তারই হবে।
রুমটায় ঘুরে ঘুরে মনে মনে ভেবে রাখে কোন জায়গায় কি জিনিস রাখবে, কিভাবে সাজাবে, কি পরিবর্তন করবে। ধীরেধীরে মামুনের কাছে এসে ঠায় দাড়ায়।
কিছুদিন পরতো মানুষটাও আমার হবে, সম্পূর্ণ আমার। যার ওপর শুধু আমার অধিকার থাকবে, যাকে মনের সব কথা খুলে বলতে পারবো, যার বুকে মাথা রেখে ইচ্ছে মতো কাঁদতে পারবো, যে আমার কষ্টগুলো নিজের করে নিয়ে আমায় হালকা করে দিবে, আমায় খুব ভালোবাসবে, যার সুখ-দুঃখ হাসি-কান্না জুড়ে শুধু আমিই থাকবো।
আচ্ছা, বিছানাটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে না? ওই পাশটায় বুঝি আমি ঘুমাবো? ইসসসস, ভাবতেই আমার কি লজ্জা লাগছে। এক বিছানায় আমার পাশে একটা পুরুষ মানুষ থাকবে, যে হলো আমার স্বামী। আচ্ছা, তাকে আমি কি বলে ডাকবো? ওগো শুনছো? নাকি শুনছেন?
যা ইচ্ছা তাই ডাকবো, সে তো আমারই। তার ওপর না আমার পুরো অধিকার আছে? সে একদম রাগ করবে না আমার ওপর। কেনই বা রাগ করবে? আমার এক পৃথিবী জুড়ে তো শুধু এই মানুষটাই থাকবে। সে আমায় একটুও কষ্ট দিবে না। দিলেও ভালোবেসে আমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবে। এত্তগুলো ভালোবাসবো তাকে, এএএএএত্তগুলোওওওও।
ধীরেধীরে মামুনের মাথার সামনে দাড়ায় মিষ্টি। একটু নিচু হয়ে মামুনের মুখোমুখি হয়ে বসে।
মিঃ… আপনাকে কি এখন থেকেই ভালোবাসবো? নাকি বিয়ের পর? এত্ত এত্ত ভালোবাসা আসছে আপনার জন্য। জানেন, মনে মনে আপনাকে নিয়ে কত স্বপ্ন বুনেছি। আপনার সাথে এটা করবো ওটা করবো আরো কত কি। আপনাকে না আমি সেই প্রথম থেকেই খুব পছন্দ করতাম। আমার কি দোষ বলুন। এই জীবনে যত পুরুষ মানুষের সামনাসামনি হয়েছি তারমধ্যে শুধু দুজনই আমার কাছে ভালো মানুষ ছিলো। এক আমার বাবা, আর এক হলেন আপনি, বাবাতো হারিয়ে গেছে। আপনি হারিয়ে যাইয়েন না প্লিজ। এতকিছু হারিয়ে শেষ হয়েই যাচ্ছিলাম, সেই আপনিই আমায় বাচালেন, স্বপ্ন দেখালেন। এখন আমার খুব বাঁচতে ইচ্ছে করে, আপনাকে নিয়ে। আচ্ছা আপনার ওপর যদি আমি অধিকার দেখাই, তাহলে আপনি কি রাগ করবেন? করিয়েন না প্লিজ, একটু কষ্ট করে মেনে নিয়েন।
–এত বিড়বিড় না করে স্পষ্ট করে বলো। কিছুই বুঝি না।
মামুনের জবাব শুনে মিষ্টি ঘাবড়ে গিয়ে উঠে দাড়ায়।
–একি, আপনি কখন উঠলেন?
–যেভাবে শুরু করেছো, ঘুমিয়ে থাকা যায়?
–কিছু কি শুনেছেন?
–শুনেছিতো সবই, কিন্তু কি বলেছো বুঝিনি।
–আল্লাহ বাঁচাইছে। উঠেন, নাস্তা রেডি।
–আসছি।
–তাড়াতাড়ি আসেন, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
–আচ্ছা।
.
মিষ্টির বকুনি খেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেস হয়ে সোজা নাস্তার টেবিলে বসে মামুন। ততক্ষণে সবাই নাস্তার টেবিলে হাজির।
টেবিলে বসে মামুন মাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে।
–আচ্ছা মা, বিয়ের জন্য কিছু কেনা-কাটা করা প্রয়োজন না?
–হুম তা তো লাগবেই।
–হাতে তো শুধু দুইদিন সময়। কিভাবে কি করবো? কেনাকাটা, অফিসের ছুটি, দাওয়াত দেওয়া, সব কিছুর ব্যবস্থা করা। একটু তো সময় লাগবেই। বলি কি, বিয়েটা একটু পিছিয়ে দিলে হয় না?
–কয়দিন লাগবে?
–আগামী শুক্রবারে দিলে হয়না?
–এতদিন?
–এতদিন বলতেতো শুধু ৯ দিন।
–সেটাতো অনেক সময়।
–আমার এখনো ছুটির আবেদন করা হয়নি। ২দিন তো এমনিতেই লেগে যাবে। তো বাকি সব কিভাবে করবো?
–মিষ্টি….
–জ্বি মা।
–তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?
–না না মা, আমার কোনো সমস্যা নেই।
–তাহলে আর কি, আগামী সপ্তাহেই বিয়ে হবে।
মামুন মিষ্টির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপি দেয়।
মিষ্টি লজ্জা পেয়ে মামুনের পাশ থেকে এসে সানু বেগমের পাশে দাড়ায়।
–তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো? বাসো, নাস্তা করবে না?
–আপনারা খেয়ে নিন, এরপর আমি খাবো।
–রিয়াকে ডাকদিয়ে এসে এখানে বসো, একসাথে খাও।
–আপনাদের কিছু লাগলে?
–সবার হাত পা আছে, যার যেটা লাগবে সে নিয়ে খাবে। বসো।
–আচ্ছা।
নাস্তা শেষে মামুন মিষ্টিকে নিজের রুমে ডাক দেয়।
মামুনের আওয়াজ শুনে মিষ্টি দৌড়ে মামুনের কাছে ছুটে যায়।
–ডেকেছেন?
–হুম।
–কিছু লাগবে?
–শুধু কি প্রয়োজন পড়লেই তোমায় ডাকা যাবে? এমনি ডাকা যাবে না?
–তা নয়, আচ্ছা বলুন কি বলবেন।
–না বললে চলে যাবে?
–রিয়ার টিফিন রেডি করতে হবে।
–সেটা রিয়া নিজেই করে নিতে পারবে।
–তো এখন আমায় কি করতে হবে?
–তোমায় একটা জিনিস শেখাবো।
–কি?
–কিভাবে টাই বাঁধতে হয়।
–কেনো শিখতে হবে?
–বিয়ের পর তো তুমিই বেঁধে দিবে। তো শিখে নিবে না?
–আচ্ছা? আপনি চান আমি বেঁধে দেই?
–হুম।
–ঠিক আছে, শিখিয়ে দিন।
–এদিকে এসো।
.
–আচ্ছা, তখন চোখ টিপি দিলেন কেনো?
–চালাকি করে বিয়ের সময়টা বাড়িয়ে নিলাম।
–কেনো?
–ইচ্ছে ছিলো প্রেম করে বিয়ে করবো। সেটা আর হলো কই, তাই এই এক সপ্তাহ তোমার সাথে প্রেম করবো।
–যাহ, কি যে বলেন।
–কি হলো?
–আমি এসব করতে পারবো না।
–কেনো?
–আমার লজ্জা করে।
–ওমা, এত লজ্জা?
–হুম, যা করার বিয়ের পর করিয়েন। বিয়ের আগে আমি পারবো না।
–আচ্ছা? এদিকে এসো……
মিষ্টির হাতটা ধরে একটা হেচকা টান দিয়ে একদম নিজের সামনে নিয়ে এসে…
–এবার বলো কি যেনো বলছিলে….
মিষ্টির একনজরে মামুনের চোখের দিকে চেয়ে আছে…।
–কি দেখছো?
–আপনাকে।
–এভাবে দেখার কি আছে?
–আপনাকে কখনো এতটা কাছ থেকে দেখিনি। বুকের মধ্যে কেমন ধুকধুক করছে।
–আমায় কি মন থেকে মানতে পেরেছো?
–হুম।
–ভালোবাসো?
–জানি না।
–ছেড়ে দেবো?
–না
–তাহলে বলো, ভালোবাসো?
–হুম
–সারাজীবন এভাবে ধরে রাখি এটা চাও?
–হুম
–বিনিময়ে আমি কি পাবো?
–যা চাইবেন তা।
–পারবে দিতে?
–যদি আমার সাধ্যের মধ্যে থাকে।
–আছে।
–তাহলে পারবো, বলুন কি চান।
–তোমার ভালোবাসা।
–হুম। আর কিছু?
–হুম, অনেক কিছু। সেটা না হয় বিয়ের পরই বলি।
–এখন বললে হয় না?
–বললেই তো লজ্জা পাও।
–তাহলে থাক।
উহু উহু…… পেছন থেকে রিয়া কাশি দিয়ে ওঠে।
রিয়ার কাশির শব্দে মামুন আর মিষ্টি দুজন আলাদা হয়ে যায়..।
–মিষ্টিকে সারা বাড়ি খুজেও পেলাম না, তাই এখানে আসলাম। বিরক্ত করলাম নাতো?(রিয়া)
মিষ্টি আস্তে করে রিয়াকে পাশ কাটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়
–দেখছিস তোর ভাবির সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা চলছিলো, মাঝখানে কাবাবের হাড্ডি হয়ে চলে এলি। চলে গেলে কি হতো?
–সরম কর, দরজা খুলে এসব করছিস। আম্মু দেখলে তোর খবর আছে।
–দেখবে না। যা স্কুলের সময় হইছে।
–হুম, তোকে আম্মু ডাকে।
–কেনো?
–জানি না।
–আচ্ছা আসতেছি।
অফিসের জন্য তৈরী হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মামুন মায়ের রুমের দিকে যায়।
–মা ডেকেছো?
–হুম।
–কিছু বলবে?
–হুম, একটা বিষয় খেয়াল করলাম। তাই ভাবলাম তোকে বলি।
–কি?
–শেষ ৩-৪দিন যাবত একটা লোককে বাসার সামনে ঘুরঘুর করতে দেখি।
–অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়?
–হ্যা, কাল দুপুরে বারান্দায় বসে ছিলাম। লোকটাকে দেখলাম বাসার আশেপাশে পায়চারী করতেছে।
–অস্বাভাবিক কি দেখলে?
–নির্দিষ্ট ভাবে আমাদের বাসার সামনেই পায়চারি করছে। এটা কি অস্বাভাবিক নয়? দেখলাম কিছুক্ষণ পর পর বারান্দার দিকে তাকায়, কিন্তু যখন মিষ্টি বারান্দায় এলো, লোকটা মিষ্টির দিকে এক নজরে তাকিয়ে ছিলো। এমন মনে হলো যেনো লোকটা মিষ্টিকে চেনে।
.
.
চলবে…….
গল্প :- #এক_মুঠো_রোদ (০৮)
লেখক :- #A_Al_Mamun
.
–অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়?
–হ্যা, কাল দুপুরে বারান্দায় বসে ছিলাম। লোকটাকে দেখলাম বাসার আশেপাশে পায়চারী করতেছে। কিন্তু যখন মিষ্টি বারান্দায় এলো, লোকটা মিষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিলো। এমন মনে হলো যেনো লোকটা মিষ্টিকে চেনে।
–তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে না? কেনো এভাবে তাকিয়ে থাকে? কিরকম দেখতে লোকটা?
–তোর বয়সি…
–আচ্ছা আমি দেখতেছি বিষয়টা। তুমি মিষ্টিকে কিছু বলিও না।
–ঠিক আছে।
মামুন অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। বাহিরে বের হয়ে দেখে একটা লোক সামনের বাসার গেইটের সামনের সিড়িতে বসে বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে।
মামুন সন্দের চোখে লোকটার দিকে তাকায়। মামুনকে সামনে দেখে লোকটা হাতে বাদাম নিয়ে চিবুতে চিবুতে এদিক ওদিক তাকিয়ে উঠে রাস্তা ধরে হাটা দেয়।
অফিসের তাড়া থাকায় লোকটার পেছনে সময় নষ্ট না করে অফিসের দিকেই রওয়ানা দেয় মামুন।
অফিস শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার সময় মামুন খেয়াল করে সেই লোকটা মামুনকে দেখে সোজা অন্যদিকে হাটা দেয়। সন্দেহটা যেনো আরো ঘাড়ো হতে থাকে।
কলিংবেল দেওয়ার পর মিষ্টি এসে দরজা খুলে হাসিমুখে মামুনের সামনে দাড়ায়।
মিষ্টির হাসিমুখটাও যেনো আজ মামুনকে খুশি করতে পারছে না। মনের মধ্যে কত প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
কে এই লোক? কার জন্য এখানে এসে দাড়ায়? মিষ্টির পরিচিত কেউ নয়তো? কেনো ক্ষতি করে ফেলবে নাতো?
–এই, কি ভাবছেন এতো? ভিতরেতো আসুন।
–হুম।
–ব্যাগটা দিন। এতো উদাস লাগছে কেনো আপনাকে?
–ক্লান্ত লাগছে। একটু পানি দিবে?
–আপনি রুমে যান, আমি নিয়ে আসছি।
–আচ্ছা।
.
মামুন রুমে এসে ভাবতে থাকে…
মিষ্টিকে কি একবার জিজ্ঞেস করে দেখবো সে এই ব্যাপারে কিছু জানে কিনা?
না থাক, পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিলে হয়তো কষ্ট পাবে। আমি নিজেই দেখবো কে এই লোক।
–নিন লেবুর শরবতটা খেয়ে নিন।
–কষ্ট করে আবার এটা বানাতে গেলে কেনো?
–আপনাকে কেমন যেনো লাগছে। কিছু হয়েছে?
–না না, কি হবে? কাজের চাপে একটু ক্লান্ত লাগছে।
–ওও আচ্ছা, তাহলে খেয়ে এসে শুইয়ে পড়ুন।
–খাবারটা একটু এনে দিবে?
–আচ্ছা, আপনি হাত মুখ ধুয়ে নিন। আমি এনে দিচ্ছি।
–ঠিক আছে।
মামুন ঠিক করে নেয় কাল যে করেই হোক লোকটার পরিচয় জেনে নিবে।
কে সে? কেনই বা এই বাসার সামনে এসে ঘুরঘুর করে।
অফিস থেকে ১০ দিনের ছুটি নিয়ে আসে মামুন। একটাই প্ল্যান, সারাক্ষণ মিষ্টির সাথেই সময় কাটাবে সে। কিন্তু একটা চিন্তা কিছুতেই সেই কাজটা করতে দিচ্ছে না।
কোনো রকমে রাতটা পার করে পরদিন সকাল থেকে মামুন মায়ের বারান্দায় এসে বসে থাকে। মোটামুটি পুরোদিনই মামুন বারান্দায় এবং বাসার সামনের রাস্তার সময় কাটায়। কিন্তু লোকটাকে আর খুজে পাওয়া যায় নি।
.
–তোমায় কিছু কথা বলার ছিলো।
–জ্বি বলুন না।
–কাল তো শুক্রবার। কেনাকাটা করতে হবে না?
–যেমনটা আপনি ভালো বুঝেন।
–মাকে বলেছি, কাল আমরা শপিংয়ে যাবো।
–আমিতো এসব বুঝি না। রিয়াকে নিয়ে গিয়ে আপনি কিনে নিন।
–পাগলি, তোমার পছন্দের জিনিস তুমি কিনবে। রিয়া কি করে জানবে তোমার পছন্দ কি।
–আপনি নাহয় পছন্দ করে নিবেন।
–আমি মাকে বলে দিয়েছি, কাল সকালে তৈরী থেকো।
–আমার কেমন যেনো লাগে শপিংয়ে যেতে। সবার মাঝে নিজেকে কেনো যেনো তুচ্ছ মনে হয়। বাবাগো, ১ম যখন গিয়েছিলাম, এত বড় বিল্ডিং দেখে মনে হচ্ছিলো এই বুঝি মাথায় এসে পড়বে।
–কেনো এমন লাগে?
–প্রথমবার গিয়েছিলাম তো তাই হয়তো এমন লেগেছে।
–আর লাগবে না, সকালে রিয়াকে নিয়ে তৈরী থাকবে।
–আচ্ছা।
.
আজও প্রতিদিনের মত মিষ্টি নাস্তা বানানো শেষ করে মামুনকে ডাকতে আসে।
–শুনছেন? অনেক বেলা হলো তো, উঠুন।
—
–এই যে মিঃ(হালকা ধাক্কা দিয়ে)
–হুম।
–উঠবেন না?
–আজ অফিস নেই, আর একটু ঘুমাই।
–নাস্তা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
–আর একটু পর উঠি।
–আমি এক্ষুণি মাকে ডাকতে গেলাম।
বলেই মিষ্টি পেছন ফিরে হাটা দিবে, এমন সময় মিষ্টির হাত ধরে নিজের দিকে একটা হেচকা টান দেয় মামুন।
নিজেকে সামলাতে না পেরে মিষ্টি গিয়ে মামুনের ওপর পড়ে।
দুহাত দিয়ে মিষ্টিকে নিজের বুকের ওপর শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে যায় মামুন।
মামুন ওপরে আর মিষ্টি নিচে।
চোখ দুটো বন্ধ করে চুপ করে শুয়ে আছে মিষ্টি।
–কই যাচ্ছিলে? বিচার দিতে?
—
–চোখ খোলো।
–পারবো না।
–কেনো?
–ছাড়ুন প্লিজ।
–ছাড়ার জন্য কি ধরেছি? চোখ খোলো।
–না না… প্লিজ ছেড়ে দিন। দরজা খোলা, মা এসে পড়বে।
–আসবে না।
–তবুও, আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি। কেনো এভাবে জড়িয়ে নিয়েছেন আমায়? আমার কেমন যেনো লাগছে। প্লিজ ছেড়ে দিন।
–কেমন লাগছে?
–শরীর কাঁপতেছে।
–একটা পাপ্পি দেই?
–একদম না।
–জোর করবো?
–পারলে করেন।
–না পারার তো কোনো কারন নেই। কিন্তু দিবো না।
–তাহলে ছাড়ুন।
–ছাড়বো, তবে একটা শর্ত আছে।
–কি?
–বিয়ের পর প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জাগাতে আসলে আমার জড়িয়ে ধরে একটা পাপ্পি দিতে হবে।
–পারবো না।
–কেনো?
–আমার লজ্জা করে।
–বিয়ের পরও?
–হুম।
মিষ্টিকে ছেড়ে দিয়ে মামুন অন্য পাশে সরে যায়।
–ঠিক আছে যাও, লাগবে না।
–রাগ করেছেন?
–না।
–আচ্ছা করবো, আপনি যেভাবে চান।
–লাগবে না।
ওমনি মামুনকে জড়িয়ে ধরে একটা পাপ্পি দিয়ে বসে।
–প্লিজ আর রাগ করে থাকবেন না। আপনি যদি রাগ করেন তাহলে আমি কোথায় যাবো?
–এই পাগলি, আমিতো মজা করছিলাম। তোমার ওপর কি রাগ করা যায়?
–আপনি যা বলবেন আমি সব শুনবো, সব করবো। তবুও রাগ করে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করবেন না। প্লিজ….
–ধুর, আমি কি এমনটা করতে পারি?
–কথা দিন, আমার সাথে কখনো কথা বলা বন্ধ করবেন না।
–কথা দিলাম। যত যাই হয়ে যাক, তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করবো না।
–মনে থাকে যেনো।
–জ্বি থাকবে।
–উঠুন, কত কষ্ট করে নাস্তা বানিয়েছি। সব ঠান্ডা হয়ে গেলো।
–৫ মিনিট, আমি আসতেছি।
–জলদি….।
–আচ্ছা।
.
নাস্তা শেষে বারান্দায় বসে মামুন পত্রিকা পড়ছিলো। এমন সময় খেয়াল করে সেই লোকটা আজও গেইটের সামনে পায়চারি করতেছে।
দ্রুত নিচে নেমে মামুন লোকটার সামনে এসে দাড়ায়।
–এই যে ভাই, কে আপনি? এখানে কি করছেন?
–কই? কিছু না।
–প্রতিদিন এই বাড়ির সামনে কেনো ঘুরঘুর করেন? কি চান?
–না ভাই, কিছু না। আমি আসি….।
বলেই লোকটা সামনের দিকে হাটা দেয়। মামুন দৌড়ে গিয়ে লোকটার সামনে দাড়ায়।
–এমনি এমনি ৪-৫ দিন ধরে কারো বাড়ির সামনে কেউ ঘুরঘুর করে না। কোনো কারন তো আছেই। কেনো ঘুরঘুর করছিলেন?
–এমনি সময় কাটাচ্ছিলাম। কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি ভাই, সত্যি বলছি।
–আপনাকে দেখতে তো কোনো ভালো ফ্যামিলির ছেলে বলেই মনে হয়। কিন্তু যেই কাজ করতেছেন, এসে না জিজ্ঞেস করে যদি সোজা মারা শুরু করতাম, কিছু করতে পারতেন?
–ভাই, কি যে বলেন। কেনো এমন করবেন? আমি কি কারো ক্ষতি করেছি?
–ক্ষতি করেননি, কিন্তু করবেন না যে তার কি গ্যারান্টি আছে? ৪-৫ দিন যাবত সকাল-সন্ধ্যা একই বাসার সামনে ঘুরঘুর করতেছেন। এই বাড়ির কাউকে চেনেন? পুলিশে কমপ্লেইন দিবো?
–না না ভাই, আমি আর আসবো না।
–কেনো এখানে আসতেন?
–ওই বারান্দায় একটা মেয়েকে দেখেছিলাম। ওই মেয়েটাকে ভালো লাগে, তাই তাকে দেখতে আসি।
–মেয়ে? কোন মেয়ে?
–একটু আগেও এসেছিলো। এখন চলে গেছে।
–হালার ঘরে হালা ওইটা আমার বউ। থাপ্পড় চিনস? কানের নিচে এমন একটা দিমু আজীবন মনে রাখবি।
–সরি ভাই। আর আসবো না।
–যা ভাগ এখান থেকে।
— এক্ষুণি চলে যাচ্ছি।
–আর যেনো এই বাসার সামনে না দেখি।
–ঠিক আছে।
.
মামুনের ধমক খেয়ে লোকটা একটু তাড়াহুড়া করেই পালায়।
–কে ছিলো লোকটা?(সানু বেগম)
–তুমি দেখেছো?
–হুম, বারান্দা থেকে দেখলাম তার সাথে কথা বলছিলি। কে সে?
–আর বলো না, মিষ্টিকে মনে হয় এই বারান্দায় দেখেছে। তাই প্রতিদিন চলে আসে… তবে কথাবার্তা শুনে মনে হলো ভয় পাওয়ার মতো কোনো কারন নেই।
–এসব ছেলেদের কি কোনো কাজ নেই?
–বাদ দাও। এমন ধমক দিছি, আর আসবে না।
–না আসলেই ভালো।
–মিষ্টিকে একটু বলো না এক কাপ চা দিতে।
–পাঠাচ্ছি ওকে।
একটু পর হাতে চা নিয়ে মিষ্টি বারান্দায় আসে।
–চা চেয়েছিলেন?
–হুম, থ্যাংকস।
–আমাকেই ডাকতে পারতেন। মাকে কেনো অর্ডার দিলেন?
–অর্ডার দিলাম কই? তোমাকে বলতে বললাম।
–এরপর থেকে আমাকে সরাসরি ডাক দিবেন।
–আচ্ছা বাবা, সরি। বসো এখানে, তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিলো।
–কি কথা?
–তোমার বাড়ির ঠিকানা মনে আছে?
–কেনো?
–একবার গিয়ে দেখে আসতাম।
–কেনো?
–কেনো কি? তোমার বিয়ে, ওনাদের জানালে ভালো হতো না?
–ওরা আমার কেউ না। কেনো ওদের জানাবেন?
–শত হলেও তো তোমার মা। ছোট থেকে তোমায় মানুষ করেছে। অন্তত ওনারা জানুক যে তাদের মেয়ে স্বামীর বাড়িতে আছে।
–দেখুন, ওনাদের জানালেও কোনো লাভ নেই। আপনি ওসব ভুলে যান। এই পৃথিবীতে আমার আপনজন বলতে শুধু আপনারাই আছেন। আর কাউকে আমি চিনি না।
–আচ্ছা আমায় ঠিকানাটা তো দিতে পারো। ওনারা তো আর আমায় চেনে না। দুর থেকে দেখে আসবো ওনারা কেমন আছেন, কিভাবে আছেন।
–হঠ্যাৎ ওনাদের কথা মনে পড়লো কেনো?
–ওনারা ছোট থেকে তোমায় মানুষ না করলে আজ কি আমি তোমাকে পেতাম? তাই মন থেকে ওনাদের একটা ধন্যবাদ দিতে মন চাচ্ছে।
–লাগবে না।
–দাও না।
–ওনারা কখনোই আমার মঙ্গল চান নি। আর আমার শত বাবা অনেক খারাপ মানুষ। বিপদ বাড়ানোর দরকার নাই।
–আচ্ছা আমি তাদের সাথে কথা বলবো না। শুধু ঠিকানাটা দাও। দেখেই চলে আসবো।
–কথা বলবেন নাতো?
–না।
–ঠিক আছে। ঠিকানা “————“
সন্ধ্যায় মিষ্টি আর রিয়াকে সাথে নিয়ে মামুন শপিংয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
বিয়ের বাকি আর ৭ দিন। মোটামুটি কিছু প্রতিবেশী আর মামুনের কিছু কাছের সহকর্মীকে দাওয়াত দেওয়া হয়ে গেছে।
এখন শপিং করা হয়ে গেলে প্রায় ৫০% কাজ এগিয়ে যাবে।
শপিং মলে পোছানোর ১০ মিনিটের মাথায় বাড়ি থেকে সানু বেগমের ফোন আসে।
–হ্যা মা বলো।
–কোথায় তুই?
–এইতো দোকানে, রিয়া আর মিষ্টি কাপড় দেখতেছে।
–বাড়িতে পুলিশ এসেছে।
–কিহ? কেনো?
–জানি না। ওরা আমার সামনেই বসে আছে, মিষ্টিকে খুজতেছে।
.
.
চলবে…….
গল্প :- #এক_মুঠো_রোদ (০৯)
লেখক :- #A_Al_Mamun
.
–বাড়িতে পুলিশ এসেছে।
–কিহ? কেনো?
–জানি না। ওরা আমার সামনেই বসে আছে, মিষ্টিকে খুজতেছে।
–মিষ্টিকে খুজতেছে? কি করেছে মিষ্টি?
–ওর নামে নাকি থানায় মামলা আছে।
–মামলা? কিসের মামলা?
–জানি না। ওরা মিষ্টিকে চাচ্ছে। তুই তাড়াতাড়ি বাসায় এসে ওদের সাথে কথা বল।
–আমি এক্ষুণি আসছি।
–তাড়াতাড়ি আয় বাবা।
মিষ্টি আর রিয়াকে সাথে নিয়ে মামুন দ্রুত বাসায় ফেরে।
ড্রয়িংরুমে তখনো ২ জন পুরুষ আর একজন মহিলা পুলিশ বসে আছে।
মামুনকে রুমে প্রবেশ করতে দেখে একজন পুলিশ সামনে এগিয়ে আসে।
–এনাদের মধ্যে মিষ্টি কে?
–কি হয়েছে স্যার? মিষ্টি কি করেছে?
–ওনার নামে মার্ডার কেইস আছে।
–কিহ? মার্ডার? কি বলছেন এসব?
–আমি ঠিকই বলছি।
–কবে করেছে খুন?
–৬ মাস আগে, এরপর থেকেই উনি পলাতক। আজ গোপন সুত্রের ভিত্তিতে ওনার খবর পেয়েছি আমরা। ভালোয় ভালোয় ওনাকে আমাদের হাতে তুলে দিন। নাহলে আপনাকেও বিপদে পড়তে হবে।
–আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন?
–মনে করেন হুমকি…। আপনি খুনের আসামিকে সাহায্য করছেন।
–কি প্রমান আছে যে মিষ্টি খুনি। যদি আপনি প্রমান দিতে পারেন, তাহলে আমি নিজেই মিষ্টিকে আপনার হাতে তুলে দিবো।
–প্রমান আদালত করবে, আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন।
–অন্তত এটা তো বলতে পারেন যে কাকে খুন করেছে বা কোথায় খুন করেছে।
মিষ্টি আর রিয়া দুজন পুলিশের ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে একটু দুরে দাড়িয়ে আছে।
–৬ মাস আগে উনি ওনার বিয়ের রাতে তার স্বামীর বাড়ির এক লোককে ছুরি দিয়ে আঘাত করে বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। ঠিক তার পরদিন রাতে সেই লোকটাকে তার স্বামী ঢাকা নিয়ে যাচ্ছিলো চিকিৎসার জন্য। মিষ্টি সেখানে এসে ওনার স্বামীকে গাড়ির সামনে ধাক্কা দিয়ে খুন করে। মিষ্টি যাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে সেই লোকটাই এর সাক্ষী এবং তিনিই মামলা করেন। মিষ্টির পরিবারকে সবসময় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে রাখা হতো। আজ তারাই আমাদের মিষ্টির ঠিকানা দিয়েছেন।
–স্যার, আপনি যা বলছেন সবই আমি বুঝেছি, এখানে সম্পূর্ণ কাহিনীটা ভুল ভাবে আপনাদের উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি আপনাদের সবটা খুলে বলছি।
–দেখুন ভাই, কাহিনী শুনা আমাদের কাজ না, আপনাদের যা বলার কোর্টে এসে বলবেন বা প্রমান করবেন। আমরা তদন্ত করে দুটো ঘটনার সাথেই মিষ্টির সম্পৃক্তা পেয়েছি।
–স্যার, কি বলছেন এসব? আগামী সপ্তাহে আমাদের বিয়ে, এখন যদি ওকে আপনারা নিয়ে যান, তাহলে একটা সুন্দর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।
–আগামী সপ্তাহে আমরা ওনাকে কোর্টে চালান দিবো, এর আগে যদি কিছু করতে পারেন তাহলে তো ভালোই, নাহলে ঝামেলা অনেক বাড়বে।
.
আর কোনো কথা না শুনে মিষ্টিকে চিহ্নিত করে পুলিশ সাথে করে নিয়ে হাটা দেয়।
মিষ্টি দুচোখের পানি ফেলতে ফেলতে পেছন ফিরে তাকায়… মামুন দৌড়ে মিষ্টি কাছে আসে।
–একদম চিন্তা করবে না। তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনবোই… এখনো এক সপ্তাহ সময় আছে। এর আগেই আমি তোমায় নিয়ে আসবো…
মিষ্টির সাথে কথা বলতে বলতে মামুন রাস্তায় চলে আসে। ততক্ষণে মিষ্টিকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়।
যাওয়ার আগ পর্যন্ত মিষ্টি আর কোনো কথা বলেনি।
ঘরে এসে ঠাস করে সোফায় এসে বসে মামুন।
মা আর রিয়াও পাশে বসে আছে।
–সব আমার দোষ, আমার জন্যই মিষ্টিকে আজ জেলে যেতে হলো।
–কি করেছিস তুই?
–বিকেলে মিষ্টির বাবা মায়ের কাছে গিয়েছিলাম। মিষ্টি আমায় বার বার নিষেধ করেছিলো যে ওরা মানুষ ভালো না, তবুও চলে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম মানুষতো পরিবর্তন হয়, হয়তো তারাও হয়েছে। ওরা আমায় কেঁদে কেঁদে বলেছিলো যেনো ঠিকানাটা দেই, বিয়ের দিন লুকিয়ে লুকিয়ে এসে একবার মিষ্টিকে দেখে যাবে। বিশ্বাস করে ঠিকানাটা দিয়েছিলাম।
–যারা মেয়েটার জীবনটা নরক বানিয়ে দিয়েছিলো, তুই তাদের কাছে কোন ভরসায় গিয়েছিলি? এতটা বোকা কি করে হলি তুই?
–বুঝতে পারিনি মা, অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমি।
–যেভাবেই হোক ওকে বের করে নিয়ে আয়।
–হুম, ওকে আমি নিয়ে আসবো। সব প্রমান আমি জোগাড় করবো।
বলেই মামুন ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে।
.
সোজায় থানায় এসে মিষ্টির মুখোমুখি দাড়ায় মামুন।
–আমায় ক্ষমা করে দিও, তোমার কথা না শুনে তোমায় বিপদে ফেলে দিলাম।
–কি করেছেন আপনি?
–তোমার মায়ের কাছে গিয়েছিলাম। পুলিশ ওখান থেকেই ঠিকানাটা পেয়েছে।
মুচকি হেসে মিষ্টি জবাব দেয়।
–আপনি একটা পাগল, কথা বলবেন না বলে ঠিকানাটা নিয়েছিলেন। যাই হোক, আল্লাহ ভাগ্যে যা রেখেছেন তাই হবে।
–কিচ্ছু হবে না, আমি আছি কি করতে? একদম চিন্তা করবে না।
–আপনাদের খুব মনে পড়বে। রিয়া তো আমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারে না। ওকে বলবেন কয়েকদিন কষ্ট হবে, পরে ঠিক হয়ে যাবে।
–তোমার মৃত স্বামীর ঠিকানাটা দিবে?
–আমিতো ভিতরে, এবার কি নিজের বিপদ বাড়ানোর চিন্তা করছেন? বাসায় যান।
–ঠিকানাটা দাও।
–কি করবেন ঠিকানা দিয়ে?
–যে তোমার নামে এই মিথ্যে মামলা করেছে তাকে খুজে বের করে মামলা তুলে নিতে বলবো।
–দিবো না।
–দিতে বলেছি।
–না। আপনি চলে যান।
–না দিলে আমি আর বাসায় ফিরবো না।
–কেনো এমন করছেন? ওর ভালো মানুষ না, আপনার ক্ষতি করে ফেলবে।
–যদি তুমি না দাও তাহলে কি আমি ওকে খুজে বের করতে পারবো না?
–প্লিজ এমন করবেন না, বাসায় ফিরে যান।
–চিন্তা করো না, তোমাকে নিয়েই আমি বাসায় ফিরবো। এর আগে না।
.
মিষ্টিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মামুন বেরিয়ে পড়ে। জোরে জোরে চিৎকার করে মিষ্টি মামুনকে ডাকছে, কিন্তু সেই আওয়াজ আর মামুনের কান পর্যন্ত পোঁছাচ্ছে না।
–আম্মু… রাতের প্রায় ৩ টা। ভাইয়া এখনো ফিরলো না।
–হ্যা রে মা, অনেক্ষন যাবত ওকে ফোন দিচ্ছি। ফোনটাও বন্ধ বলছে। আমারতো খুব চিন্তা হচ্ছে।
–ভাইয়া কি মিষ্টির জন্য থানায় বসে আছে। চলো আমরা গিয়ে দেখি।
–এত রাতে বাহিরে বের হওয়া ঠিক হবে না। সকাল পর্যন্ত দেখি, এরপর যাবো।
পরদিন সকাল সকাল সানু বেগম রিয়াকে সাথে নিয়ে থানায় যায়।
–আমার (———) মেয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি।
–ওনারতো জামিন হয়ে গেছে।
–জামিন হয়ে গেছে? কখন?
–কাল রাতেই ওনার স্বামী এসে ওনাকে নিয়ে গেছে।
–স্বামী?
–জ্বি…
পুলিশের কথার আগা মাথা কিছু বুঝতে না পেরে থানার বাহিরে এসে বসে সানু বেগম।
–আম্মু, মিষ্টির স্বামী কে? (রিয়া)
–জানি না রে মা, আমিও তো প্রথম শুনলাম। তোর ভাইও তো ফোন ধরতেছে না। কি যে করি আমি? আমার প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে।
–চলো বাসায় চলো।
–বাসায় গিয়ে কি করবো? মিষ্টি কোথায় চলে গেলো? তোর ভাইয়েরও কোনো খবর নেই।
একটু পর মামুনের ফোন থেকে সানু বেগমের কাছে কল আসে।
–মা, কই তোমরা?
–তুই কই বাবা? তোকে কত খুজতেছি।
–আমি তো বাসায় আসলাম। তোমরা কই গেছো?
–আমরা থানায়।
–থানায় কেনো? জলদি বাসায় এসো।
–আচ্ছা আসতেছি।।
.
–কে আম্মু? ভাইয়া কল দিছে?
–হ্যা।
–কই সে?
–বাসায় বললো। চল…
–হ্যা চলো।
রিয়া আর সানু বেগম বাসায় এসে দেখে মামুন ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখতেছে।
–কই ছিলি তুই সারা রাত?
–কোথাও যাইনি তো।
–তাহলে বাসায় কেনো আসলি না?
–একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে গিয়েছিলাম। তোমরা থানায় কেনো গেলে?
–তুই ফিরে আসছিলি না। তাই ভাবলাম মিষ্টির জন্য হয়তো থানায় বসে আছি। কিন্তু গিয়ে দেখি মিষ্টিও থানায় নেই। ওর স্বামী নাকি ওকে জামিন করিয়ে নিয়ে গেছে। আর তুই এখন রুমে এসে টিভি দেখছিস। কোথায় থেকে এলো মিষ্টির স্বামী?
–শুনবে?
–কি শুনবো?
–কাল রাতে কি হয়েছে শুনবে?
–কি?
–বসো এখানে।
–হুম।
–মিষ্টিকে বাঁচানোর কোনো উপায় না পেয়ে পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। আমার প্রয়োজন ছিলো সেই লোকটাকে যে মিষ্টির নামে মামলা করেছিলো। কিন্তু তার ঠিকানা আমি জানতাম না। তাই রাতেই মিষ্টির মায়ের কাছে গিয়েছিলাম। ওরা আমার দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো। হতাস হয়ে ওদের বাড়ি থেকে ফিরে আসছিলাম। সামনেই একটা লোকের সাথে ধাক্কা লাগলো। আমার সাথে ধাক্কা লেগেই লোকটা পড়ে যায়। ওই লোকটাকে দেখে বেশ অবাক হলাম। এত রাতেও লোকটা সানগ্লাস পড়ে ছিলো। আমার সাথে ধাক্কা খাওয়ায় তার সানগ্লাসটা পড়ে যায়, খেয়াল করে দেখলাম তার এক চোখ নষ্ট। তড়িঘড়ি করে লোকটা সানগ্লাস পড়ে সামনের দিকে হাটা দেয়। পেছন ফিরে দেখি সে মিষ্টির মায়ের ঘরের দিকেই যাচ্ছে। তখনই মিষ্টির কথা মনে পড়ে গেলো। যেই লোকটা মামলা করেছিলো তার তো এক চোখ নষ্ট ছিলো। যা মিষ্টিই নষ্ট করেছিলো।
লোকটার পিছু নিয়ে দেখি সে মিষ্টির মায়ের ঘরেই প্রবেশ করে।
মিষ্টির মায়ের ঘরটা বেড়ার ঘর হওয়ায় আমার জন্য বেশ সুবিধা হয়।
তাদের ঘরের পেছনে গিয়ে বেড়ার ফাঁকে উকি দিয়ে কিছু কথা শুনলাম।
–এই নিন ৫০ হাজার, বাকি ৫০ ওকে আমার হাতে তুলে দিলেই পেয়ে যাবেন।
লোকটার দেওয়া টাকাটা হাতে নিয়েই মিষ্টির মা খুশিতে গজগজ করতে থাকে।
বেশ অবাক হলাম ওদের কর্মকান্ডে। তাই ফোনটা বের করে বেড়ার ফাঁকে দিয়ে ভিডিও শুরু করি।
–মিষ্টিকে আজই তুমি পেয়ে যাবে। শুনেছি পুলিশ ওকে থানায় নিয়ে গেছে। এখনই ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসবো। তুমি টাকাটা রেডি রাখো।
–টাকা রেডি আছে। ওকে শুধু আমার কাছে এনে দাও।
–একটু আগে মিষ্টিকে যেই লোকটা আশ্রয় দিয়েছিলো সেই লোকটা এসেছে। তোমার ঠিকানা চেয়েছে। তাকে আমি তাড়িয়ে দিয়েছি।
–ভালো করেছো। কাউকে আমার ঠিকানা দিবে না। জলদি তোমার মেয়েকে আমায় এনে দাও। ও আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। আমার চোখ নষ্ট করেছে। ছুরির আঘাতে আমার চেহারাটা কুৎসিত বানিয়ে ফেলেছে। এর প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। ওকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেললেও আমার গায়ের জ্বালা মিটবে না। ওর জন্য আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারি না। ওর মতো কত মেয়েকে রেপ করে বুক ফুলিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটতাম। কিন্তু ওই মেয়ের জন্য এখন আমায় মাথা নিচু করে হাটতে হয়। আমার এই কুৎসিত চেহারার জন্য আমার দিকে কেউ তাকায়ও না। সেদিন ওকে রেপ করতে পারি নি, আমায় ছুরি মেরে পালিয়েছিলো। আর দেরি নয়। জলদি ওকে এনে দাও।
–চিন্তা করো না। তোমার করা মিথ্যে মামলায় সে ফেঁসে গেছে। তার পালানোর কোনো রাস্তা নেই। আমিই ওকে বের করে নিয়ে আসবো থানা থেকে। চলো আমার সাথে।
তারা তাদের কথা শেষ করেই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে।
মিষ্টির মায়ের এমন মানসিকতা দেখে অবাক হওয়া ছাড়া আর কেনো উপায় নেই। নিজের মেয়ে না হলেও, ছোট থেকে তো নিজের মেয়ের মতো করেই মানুষ করেছিলো। তার মনে কি একটুও মায়া জন্মায়নি? কিভাবে সে টাকার জন্য মেয়েকে শেষ করে দিতে পারে?
মিষ্টির মতো আমার মনেও তার মায়ের জন্য প্রচন্ড ঘৃণা জন্মায়।
.
তাদের আগেই থানায় এসে পৌছাই, এবং ভিডিওটা পুলিশের হাতে তুলে দেই।
এর প্রায় ১ ঘন্টা পর মিষ্টির মা বাবা আর ওই লোকটা থানায় এসে পৌছায়।
আমি পেছনেই বসে ছিলাম।
মিষ্টির মা এসে পুলিশের কাছে বলে যে তারা যেই মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে সেটা আসল অপরাধী নয়, ঠিকানা সম্ভাবত ভুল ছিলো। তাই ওই মেয়েটাকে যেনো তারা ছেড়ে দেয়। মেয়েটা সম্পূর্ণ নিরপরাধ।
পুরো অফিস চারদিক থেকে পুলিশ ঘিরে ফেলে।
তাদের অবাক করে দিয়ে সবাইকে গ্রেপ্তার করে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি ওখানেই বসে ছিলাম।
ঘন্টা দুয়েক পর সেই পুলিশটা আমার সামনে আসে যে বাসা থেকে মিষ্টিকে নিয়ে এসেছিলো।
–আপনার দেওয়া ভিডিও দেখে ওদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সবাই নিজেদের দোষ শিকার করেছে। তাই সবাইকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
–স্যার মিষ্টি?
–একটু অপেক্ষা করুন। কিছু কাগজপত্রের কাজ আছে। শেষ হলেই ওনাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
–স্যার বাঁচালেন। সামনের সপ্তাহেই আমাদের বিয়ে। বুঝতেই পারছেন কি হতো।
–সরি ভাই, এটা আমাদের ডিউটি। নিজের মন মতো কিছু করার সুযোগ নেই।
–আমাদের বিয়েতে আপনার দাওয়াত রইলো। আসবেন কিন্তু।
–সময় নাইরে ভাই। এমন চাকরি করি যে ২ মাস হলো নিজের বউটারেই চোখে দেখি না। সামনের মাসে বাড়ি যামু। বউটা প্রতিদিন ফোন দিয়া আসতে বলে।
–তোর ফাও পেচ্যাল বন্ধ করে কাজের কথায় আয়। এরপর কি হলো?(রিয়া)
–এরপর আরকি, পুরো পুলিশ স্টেশনকে বিয়ের দাওয়াত দিলাম।
–রাখ তোর দাওয়াত? সারারাত কই ছিলি? মিষ্টি কোথায়?
.
.
চলবে?
গল্প :- #এক_মুঠো_রোদ (১০)
লেখক :- #A_Al_Mamun
.
এরপর কি হলো?
–এরপর আরকি, পুরো পুলিশ স্টেশনকে বিয়ের দাওয়াত দিলাম।
–রাখ তোর দাওয়াত? সারারাত কই ছিলি? মিষ্টি কোথায়?
–মাঝরাত হয়ে যাওয়ায় আর বাসায় আসিনি। সামনে যেই পার্কটা আছে, ওখানেই বসে ছিলাম।
–এখন মিষ্টি কই?
–সবগুলো পাতিল খালি। ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। তাই মিষ্টি নাস্তা বানাচ্ছে। রান্নাঘরে আছে গিয়ে দেখ।
–মেয়েটা ওপর দিয়ে এতটা ধকল গেলো। আর তুই ওকে রান্নাঘরে পাঠিয়ে এখানে পায়ের ওপর পা তুলে টিভি দেখছিস?(সানু বেগম)
–আমার কি দোষ? সে তো আমার সাথে কথাই বলছে না।
–কেনো?
–রেগে আছে বোধয়। সেই রাত থেকে একটা কথাও বলেনি।
–রাগার দরকারও আছে, থাক তুই এখানে।
মামুনকে ড্রয়িংরুমে রেখে রিয়া আর সানু বেগম রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায়।
–মিষ্টি….
–আরে মা, কোথায় ছিলেন আপনারা?
–থানায় গিয়েছিলাম।
–ওও, আমি তো চলে এসেছি।
–হ্যা মামুন সব বলেছে। বুকের ওপর থেকে পাথর নেমে গেছে মনে হচ্ছে। তুমি রুমে যাও, আমি নাস্তা বানাচ্ছি।
–না না মা, আমি পারবো।
–পারলেও এখন করা লাগবে না। রুমে গিয়ে একটু বিশ্রাম নাও।
–বিশ্রাম তো পরেও নিতে পারবো।
–যেতে বললাম না! যাও।
–আচ্ছা।
রিয়া মিষ্টিকে সাথে করে নিয়ে রুমে এসে বসে। মিষ্টিকে রুমে যেতে দেখে মামুনও পেছন পেছন রিয়ার রুমে এসে মিষ্টির সামনে দাড়ায়।
–তোর এখানে কি?(রিয়া)
–তোর ভাবির সাথে একটু কথা বলতাম।
–সে বলবে না।
–একটু রান্না ঘরে গিয়ে মাকে সাহায্য কর। আমি ওর সাথে একটু কথা বলি।
–রিয়া তুমি যাবে না। এখানেই বসে থাকো।(মিষ্টি)
–আমার অপরাধটা কি সেটা তো বলো। কেনো আমার সাথে কথা বলছো না?
—
–এটার ও জবাব দেবে না?
–রিয়া, ওনাকে বলো আমি ওনার সাথে কথা বলবো না।
–কিন্তু কেনো?
–যে আমার কথা শোনে না, কেনো তার সাথে কথা বলবো?
–বাবারে….. একটা ভুল নাহয় করে ফেলেছি। তাই বলে কথা বলবে না?
–না।
–ঠিক আছে, আমার সাথে কথা না বললে আমি খাবো না।
–রিয়া, ওনাকে ঢং করতে মানা করো।
–আমি ঢং করতেছি? ঠিক আছে, কাল দুপুরের পর থেকে আমি এখনো কিছু খাইনি, একটু পর জ্ঞান হারাবো, তখন যেনো আমার কাছে না আসে।
–ভাই, এবার কিন্তু ওভার এক্টিং করছিস, যা নিজের রুমে যা।(রিয়া)
–থাক তোরা, আমিও আর কারো সাথে কথা বলবো না।
.
মিষ্টির সাথে রাগ দেখিয়ে মামুন সোজা নিজের রুমে চলে আসে।
–আচ্ছা, ভাইয়ার সাথে কথা বলছো না কেনো?
–সে আমার কোনো কথাই শুনে না।
–কি এমন কথা? শুনি তো।
–জানো কাল রাতে কি করেছে?
–কি?
–আমি তাকে কতবার বারন করলাম আমার শতমায়ের বাড়িতে না যেতে। কিন্তু সে আমার কথা না শুনেই ওদের বাড়িতে চলে যায়। কত বড় বিপদ হয়েছে জানো তুমি?
–বিপদ? কি বিপদ?
–কাল রাতে সে থানা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারছিলাম সে আবার আমার শত মায়ের বাড়িতেই যাবে। কারন যে মামলা করেছে আমি তার ঠিকানা দেই নি। তাই ঠিকানা নেওয়ার জন্য সে ওই বাড়িতেই যাবে। আমি অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করে পুলিশকে বলছিলাম যেনো কেউ গিয়ে ওনাকে নিয়ে আসে। ওরা মানুষ ভালো না, ওনার ক্ষতি করে ফেলবে। কেউ আমার কথা শুনছিলো না। এভাবে ২ ঘন্টা চলার পর অতিষ্ঠ হয়ে এক পুলিশ আমার শতমায়ের বাড়িতে যেতে রাজি হয়। এর প্রায় ১ ঘন্টা পর তোমার ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে আসে। জানো কি হয়েছিলো?
–কি?
–তোমার ভাইকে ওরা ওই বাড়িতে বেঁধে রেখেছিলো। যদি ওরা ওনার কোনো ক্ষতি করে ফেলতো? ভাগ্য ভালো পুলিশ গিয়ে ওনাকে ছাড়িয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। এর কিছুক্ষণ পরই পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেয়।
–আচ্ছা… তাহলে এই ব্যাপার?
–কোন ব্যাপার?
–কি চাপাবাজিটাই না করলো। দেখাচ্ছি মজা। তুমি বসো আমি আসতেছি।
–কই যাও।
–বসো তো। আমি আসতেছি।
রিয়া দৌড়ে এসে মামুনের রুমে প্রবেশ করে।
–আমার রুমে কি? তোর রুমে আমি গেছি?
–যাবিও না আর।
–তো তুইও বের হ আমার রুম থেকে।
–তুই কিভাবে এত চাপাবাজি করলি আমার আর আম্মুর সাথে?
–কিসের চাপাবাজি?
–আমাদের বললি কিভাবে হিরোর মতো গিয়ে মিষ্টিকে ছাড়িয়ে নিয়ে এলি। এখন কাহিনী তো দেখি পুরোই উল্টা।
–উল্টা? মিষ্টি কিছু বলছে?
–সব বলে দিছে।
–ধ্যাত…. মেয়েটার পেট পাতলা। কথা রাখতে জানে না।
–মিথ্যুক কোথাকার।
–বনু, আম্মুকে বলিস না প্লিজ।
–মিথ্যা কেনো বললি?
–অল্প একটু মিথ্যা বলছি শুধু। ভিডিও করার সময় বেড়াতে হেলান দিয়ে ভিডিও করছিলাম। বেড়া এতটাই পাতলা ছিলো যে ভেঙে ভেতরে পড়ে যাই। পরে ওরা আমায় ধরে বেঁধে ফেলে। তবে হ্যা, আমায় মারতে পারে নি। এর আগেই কি করে যেনো পুলিশ এসে পড়ে। পরে আমাদের সবাইকে থানায় নিয়ে আসা হয়। ভিডিওটা পুলিশকে দেখালে আমাকে আর মিষ্টিকে ছেড়ে দিয়ে পুলিশ ওদের গ্রেপ্তার করে। শুধু এতটুকুই মিথ্যা বলছি।
–কেনো মিথ্যা বললি?
–আমার একটা মানইজ্জত আছে না! আমাকে বেঁধে ফেলেছে এটা কিভাবে বলি।
–ছাগল কোথাকার, যা ভাগ।
রিয়ার ধমক খেয়ে মামুন চুপ করে বসে আছে। একটু পর রিয়া হাতে নাস্তার প্লেট নিয়ে আবার মামুনের কাছে ফিরে আসে।
–এই নে, নাস্তা খা।
–খাবো না আমি, নিয়ে যা।
–কেনো?
–ইচ্ছা নাই।
–না খেলে তোর ১২টা বাজাবো আমি।
–কি করবি?
–আম্মুকে সব বলে দিবো।
–কি বলবি?
–তুই হিরো না, জিরো। উল্টা আরো কতকিছু বানিয়ে বানিয়ে বলবো।
–তুই আমার বোন নাকি শত্রু?
–খা বলছি।
–মিষ্টি এলো না কথা বলতে।
–দরজার বাহিরেই দাড়িয়ে আছে সে। তুই খেয়ে নে। খাওয়া শেষ হলেই সে আসবে।
–ওকে একটু ভেতরে পাঠা। কথা আছে তার সাথে।
–পাঠাচ্ছি, খাওয়া শুরু কর।
–হুম।
.
রিয়া বাহিরে এসে মিষ্টিকে ভেতরে পাঠায়। হাতে প্লেট নিয়ে মামুন বিছানায় বসে আছে। আর মিষ্টি এসে ধীরেধীরে মামুনের পাশে বসে।
–কথা বলবে না আমার সাথে? এতটা রাগ আমার ওপর?
–আপনি কেনো আমার কথা শুনেন না?
–এখন থেকে সব শুনবো।
–যদি ওরা আপনার কোনো ক্ষতি করে ফেলতো? তখন কি হতো?
–আমি না গেলে তোমায় ছাড়াতাম কি করে?
–তাই বলে বিপদে পড়তে হবে আপনাকে?
–আচ্ছা বাবা যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর করবো না এমন। তুমি যা বলবে তাই শুনবো।
–সত্যিতো?
–৩ সত্যি।
–আপনি আমায় খুব ভালোবাসেন তাইনা?
–ওমা, তুমি কিভাবে জানো এটা?
–ধুর, বলুন না।
–হুম বাসি, খুব।
–আমার যদি কিছু হয়ে যেতো, আপনি কষ্ট পেতেন?
–মরেই যেতাম।
–এত ভালোবাসেন?
–হুম।
–আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?
–বাবারে, আজ নিজে থেকেই?
মামুনকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিষ্টি নিজে থেকেই মামুনকে জড়িয়ে ধরে।
এই প্রথম মিষ্টি জড়িয়ে ধরায় মামুন লজ্জা পাচ্ছে।
মামুনকে জড়িয়ে ধরেই মিষ্টি কান্না করা শুরু করে।
মিষ্টির মুখটা উপরের দিকে তুলে আলতো করে চোখের পানি মুছে দেয় মামুন।
–এই পাগলি, কাঁদছো কেনো?
–আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভেবেছিলাম আমি বুঝি আর কখনো আপনাদের কাছে ফিরে আসতে পারবো না।
–এমনটা কি হতে পারে? তুমি না ফিরলে আমরা কি করে থাকতাম হ্যা? তুমি তো এখন এই পরিবারের একটা বড় অংশ। না চাইলেও তোমায় ফিরতে হতো, শুধু আমাদের জন্য।
–সত্যিই কি আমার ভাগ্যে এত ভালোবাসা ছিলো?
–তোমায় তো কেউ এমনি এমনি ভালোবাসেনি। এই ভালোবাসা তুমি জয় করে নিয়েছো।
–একটা কথা বলি?
–হ্যা বলো না।
–ভালোবাসি।
–শুনি নি।
–ভালোবাসি।
–শুনতে পারছি না, আরো জোরে বলো।
-যাহ, বলবো না আর।
–আর একবার বলো প্লিজ।
–আপনাকে আমি খুব খুব ভালোবাসি।
–আমিও।
–বিয়েটা কেনো পেছালেন? আমার আর দেরি সহ্য হচ্ছে না।
–ওমা, এত তাড়া?
–হুম।
–বিয়ের শপিংই তো করা হলো না, কাল আবার যাবে?
–শপিংয়ে?
–হুম।
–আচ্ছা।
.
ভালোয় ভালোয় পুরো দিন কেটে যায়। পরদিন সকালে মামুন আর মিষ্টি আবার বিয়ের শপিংয়ের জন্য বের হয়।
রিয়ার স্কুল থাকায় মামুন আর মিষ্টিকে একাই বের হতে হয়।
বাসার বাহিরে বের হয়ে দেখে সেই লোকটা আজ আবার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে। যে প্রতিদিন এখানে দাড়িয়ে বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকতো।
মামুন আর মিষ্টিকে গেইট দিয়ে বের হতে দেখে লোকটা তাদের দিকে এগিয়ে আসে।
–কেমন আছেন ভাই?
–তুমি আজও এসেছো? কি চাই?
–না ভাই, আজ জ্বালাতে আসি নি। একটা কথা জিজ্ঞেস করতে আসলাম।
–কি কথা?
–ভাবিকে জিজ্ঞেস করতাম।
মিষ্টি লোকটাকে এই প্রথম দেখলো।
মামুনকে উদ্দেশ্য করে মিষ্টি বলে ওঠে।
–কে উনি?
–জানি না। শুনো কি বলে।
–হ্যা বলুন কি বলবেন।
মিষ্টির অনুমতি পেয়ে লোকটা মিষ্টির সামনে এসে দাড়ায়।
–আপনি আমাকে কখনো দেখেন নি?(লোকটা)
–নাতো।
–আমি প্রতিদিন এখান থেকে আপনাকে দেখতাম।
–ওই মিয়া, কি বলতে আসছো সেটা বলো।(মামুন)
–আচ্ছা উনি কি আপনার স্বামী?
লোকটার এমন প্রশ্নে মিষ্টি একটু অবাকই হয়। কে এই লোক, হঠ্যাৎ কেনই বা এমন প্রশ্ন করছে।
মামুন মিষ্টির উত্তরটা শোনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। মিষ্টিও ঘুরে মামুনের দিকে তাকায়। একটুখানি ভেবে লোকটাকে জবাব দেয়।
–জ্বি, উনি আমার স্বামী। কেনো?
–উনি বলেছিলেন তখন আমার বিশ্বাস হয়নি। তাই আবার এলাম জিজ্ঞেস করতে।
–এই যে ভাই, এবার তো বিশ্বাস হয়েছে? এবার যান।(মামুন)
লোকটা আর কোনো কথা না বলে উল্টোদিক ঘুরে সোজা হাটা দেয়।
–কে এই লোকটা?
–কি জানি, তোমাকে পছন্দ করে।
–আমাকে? কিভাবে? আমি তো চিনিই না।
–যখন বারান্দায় আসতে, সে এখান থেকে উকি দিতো।
–ধুর, চলুন তো।
–চলো।
.
শপিংমলে প্রবেশ করে মিষ্টি নিজে পছন্দ করে করে কাপড় দেখছে। পুরো দিন শেষ করে মামুনের জন্য, নিজের জন্য, মায়ের জন্য, রিয়ার জন্য, সবার জন্যই মিষ্টি পছন্দ করে কাপড় নেয়।
বাসায় ফিরে সানু বেগমের সামনে সব কাপড় রেখে দেয় মিষ্টি। সানু বেগম আর রিয়া মিষ্টির পছন্দ দেখে খুব খুশি হয়।
ধীরেধীরে বিয়ের দিনক্ষণ এগিয়ে আসে।
বিয়ের আগে থেকেই মিষ্টি পুরো সংসারের দায়িত্ব নিয়ে নেয়। শুধু মামুনের সাথে একরুমে থাকা হয় না।
তখন রাতের প্রায় ১১টা.. মিষ্টি ছাদে গিয়ে বসে আছে। সারা বাড়ি খুজে মিষ্টিকে না পেয়ে মামুনও ছাদে চলে আসে।
–তুমি এখানে, আর আমি তোমাকে পুরো বাড়ি খুজতে খুজতে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।
–ওমা, কেনো?
–ভাবলাম বিয়ের আগে বুঝি পালিয়ে গেলে।
–ধুর, কি বলেন এসব। এদিকে আসুন।
মামুন এগিয়ে গিয়ে মিষ্টির পাশে বসে। সুযোগ বুজেই মিষ্টির কোলে মাথা রেখে শুইয়েও পড়ে।
–কি করছেন? মা এসে পড়লে?
–মা ঘুমিয়ে গেছে।
–রিয়া এসে পড়বে।
–আসবে না।
–তবুও
–এত ভয় পাও কেনো হ্যা? আজতো এভাবে এখানেই ঘুমিয়ে যাবো।
–তো আমাকে এভাবে বসে থাকতে হবে?
–হুম।
–ইসসসস, শখ কত।
–পারবে না বুঝি?
–পারবো। আচ্ছা একটা কথা বলি?
–বলো।
–বিয়ের পর আমরা এভাবে ছাদে এসে গল্প করতে পারবো?
–ভালো লাগে বুঝি?
–খুব, দেখুন না চাঁদের আলোয় চারদিকটা কত সুন্দর লাগছে।
–লাগবেই তো। চাঁদ যে আজ দুইটা উঠছে।
–দুইটা কই পেলেন?
–একটা ওই যে ওপরে।
–আরেকটা কই গেলো?
–যায়নি তো, আমি তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি।
–ইসসসসসস.
.
.
চলবে…….
গল্প :- #এক_মুঠো_রোদ (১১)
লেখক :- #A_Al_Mamun
.
–চাঁদ দুইটা কই পেলেন?
–একটা ওই যে ওপরে।
–আরেকটা কই গেলো?
–যায়নি তো, আমি তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি।
–ইসসসসসস.
–ইসসস কি? আমি কি মিথ্যা বলছি?
–তো?
–ওই আকাশের চাঁদটাকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করছে। ওখানে কি করো, নিচে এসে দেখো আমার চাঁদটা কত সুন্দর।
–আমায় এত লজ্জা কেনো দিচ্ছেন?
–লজ্জা দিচ্ছি কই?
–আমার যে লজ্জা লাগছে।
–পাগলি একটা..। আচ্ছা বিয়ের পর রোজ এভাবে ছাদে এসে তোমার কোলে মাথা রেখে চাঁদ দেখার সুযোগ দিবে?
–আমি কি মানা করছি? আমারও খুব সখ আপনার সাথে এভাবে সময় কাটানোর।
–আচ্ছা তোমার আর কি কি সখ বা ইচ্ছা আছে?
–তা তো জানি না। তবে একটা ইচ্ছা আছে।
–শুনি তো।
–আপনার ওপর অধিকার খাটাতে দিবেন?
–ওমা, এটা বলার কি আছে।
–আমি কিন্তু খুব ভালোবাসবো।
–সেটাই তো চাই।
–আমায় বাসবেন না?
–আমি তো তোমায় এমনিতেই খুব ভালোবাসি।
–তাই বুঝি?
–হুম
–ভাবিইইই,,,,, ও ভাবি। কই তুমি?
পেছন থেকে রিয়ার আওয়াজ শুনে মামুন লাফ দিয়ে মিষ্টির কোল থেকে মাথা তুলে নেয়।
–এখানে কি করছো এত রাতে?(রিয়া)
–হাতের কাছে একটা ঝাড়ু থাকলে নিয়ে আয়।(মামুন)
–কেনো?
–তোকে কিছুক্ষণ পিটাইতাম।
–কেনো?
–দেখতেছিস ভাই আর ভাবি এখানে বসে আছে। কেনো এলি?
–আমি এক্ষুণি আম্মুকে ডাকতে গেলাম।
–এই না না, বনু আমার। আমিতো মজা করছিলাম।
–মিষ্টি চলো তো, অনেক রাত হয়েছে।
–তুই যা না। একটু পরই সে আসবে।
–চুপ থাক, বিয়ের আগেই এই অবস্থা। বিয়ের পরতো মনে হয় আমাদেরই ভুলে যাবি।
–কি বলে মেয়েটা। ভুলবো কেনো?
–আচ্ছা বাদ দিন না, আসলেই অনেক রাত হয়েছে। আমি যাই, সকালে তো তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।(মিষ্টি)
–চলে যাবে?
–হুম।
–আচ্ছা যাও।
–বাবারে… তোদের ঢং দেখে বাঁচি না। চলো তো ভাবি…..।
রিয়া মিষ্টির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়।
রাতের প্রায় অর্ধেকটা সময় পার হয়ে গেছে।
মিষ্টি বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে থাকে, আজ তার কিছুতেই ঘুম আসছে না।
প্রায় মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে মিষ্টি বারান্দায় এসে দাড়ায়।
গত ৬ মাস ধরে তার সাথে কত কিছু ঘটে গেলো। কত কিছু হারিয়েছে, নতুন করে পেয়েছে। জীবনের এপারওপার পুরো বদলে গেছে।
একটা সময় এই বাড়ির আশ্রিতা হয়ে ছিলো সে, কিন্তু কালই সেই নাম পরিবর্তন হয়ে এইবাড়ি বউ হবে মিষ্টি। নিজের একটা ঘর হবে, নিজের একটা মানুষ হবে।
পেছন থেকে রিয়া এসে মিষ্টির কাঁধে হাত রেখে বলে ওঠে।
–কিগো ভাবি, আজ বুঝি ঘুম আসছে না?
–তুমি উঠে গেলে যে?
–আমারো ঘুম আসছিলো না। তাই তোমার কাছে এলাম। তুমি এখানে কি করছো?
–এমনিই চাঁদটা দেখতে এলাম।
–ওও, কাল থেকে তো চাঁদ দেখার জন্য তোমার পাশে আরেকজন থাকবে, তখন মন ভরে দেখিও। এখন চলো, অনেক রাত হয়েছে।
–আচ্ছা চলো।
.
বিয়ের আর মাত্র একদিন বাকি। বাড়িতে বড় ধরনের কোনো অনুষ্ঠানও হচ্ছে না। শুধু কিছু পরিচিত মুখ আর বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজি সাহেবকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।
বাড়ি ভর্তি অনেক কাজ। রিয়া মায়ের সাথে বিয়ের যাবতীয় কাজগুলো সামলাচ্ছে।
মামুন মিষ্টির কাছে এসে দেখে মিষ্টি হাত দুটো সামনের দিকে বাড়িয়ে বিছানায় বসে আছে।
বিষয়টা ভালো করে বুঝার জন্য মামুন মিষ্টির সামনে এসে দাড়ায়।
ফর্সা হাতদুটোতে কত সুন্দর করে মেহেদী লাগানো আছে। সাথে হাতের তালুর মাঝখানে (M+M) লিখা।
–ওয়াও, কে লাগিয়ে দিলো?
–রিয়া।
–রিয়া পারে?
–হুম
–আমাকে তো লাগিয়ে দিলো না।
–আমি দিবো তো।
–তুমিও পারো?
–একটু একটু।
–M+M তে কি হয়?
–মিষ্টি + মামুন হয়।
–আচ্ছা, আমিতো ভাবলাম এটাও হয়তো ডিজাইন।
–মিথ্যা কেনো বলেন? আপনি কি এতোই বোকা?
–আমি কি চালাক?
–হুম।
–আচ্ছা? জানতাম নাতো।
–একটু সাহায্য করুন না।
–কি?
–নাকের মধ্যে বিড়বিড় করতেছে। একটু চুলকিয়ে দিন না।
–শুধু নাক?
–হুম।
–দিলাম…. আর কোথাও চুলকায় না?
–আপাতত না।
মুখের সামনে উড়ে আসা চুলগুলো ধীরে হাতে কানের পাশে গুজে দিয়ে মিষ্টির দুবাহু ধরে এক ঝাটকায় কাছে নিয়ে আসে।
দুহাতে মেহেদী লাগানো থাকায় হাত দিয়ে কিছুতে সাপোর্ট দিতে না পারায় সোজা মামুনের বুকে গিয়ে পড়ে।
মামুনও দুহাতে জড়িয়ে নেয় মিষ্টিকে।
–কি করছেন? মা এসে পড়বে।
–আসবে না, মা ব্যস্ত।
–আমি কিন্তু জামায় মেহেদী লাগিয়ে দিবো, ছাড়ুন।
–লাগাও, তোমাকেই ধুতে হবে।
–সুযোগ নিচ্ছেন?
–হুম।
–গালে লাগিয়ে দিবো।
–লাগাও, ভয় পাই নাকি?
–এত ভালোবাসা উতলে পড়ছে কেনো? দেখবো বিয়ের পর এই ভালোবাসা কই যায়।
–তখনতো ভালোবাসা আরো বাড়বে। সহ্যই করতে পারবে না।
–বাব্বাহ, এতো ভালোবাসবেন?
–হুম।
–সত্যি?
–মিথ্যে মনে হয়?
–নাতো, আমি কি তা বলছি?
–তোমাকে দেখলেই শুধু আদর করতে ইচ্ছে। এত্ত মিষ্টি কেনো তুমি?
–যাহ, ছাড়ুন।
–একটু আদর করি না!
–ইসসসসস, ছাড়ুন বলছি।
–তোমার নামটা যে রেখেছে, তাকে সামনে পেলে একটা ধন্যবাদ দিতাম।
–আমার বাবা রেখেছিলো।
–শশুড় মশাই, আপনাকে ধন্যবাদ।(চিৎকার করে)
–এই পাগল হলেন নাকি? মা শুনলে কি বলবে?
–মা জানে তার ছেলে একটু পাগল টাইপের। তুমিও জেনে নাও।
–আসলেই পাগল।
–হুম, এবার আরো পাগল হয়ে যাবে।
–আর পাগল হওয়া লাগবে না। এমনিতেই যতটুকু পাগল আছেন ততটুকু সামলাতে পারছি না।
–চেষ্টা করো। পারবে….
–সেটাই তো করতেছি।
–তোমার মেহেদী তো শুকিয়ে গেলো, এবার আমায় লাগিয়ে দাও না।
–আচ্ছা, ছাড়ুন। আপনি বসুন আমি হাত ধুয়ে আসি।
–আচ্ছা যাও।
—
–কি হলো যাও।
–আপনার হাত কোথায়?
–ওহ সরি সরি।
–শয়তান একটা।
.
আজ মিষ্টির বিয়ে। মামুনের স্ত্রী হয়ে রুমে বিছানার এক কোনায় লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে সে। আনমনেই ভাবতে শুরু করে।
জীবনে অপূর্ন স্বপ্ন হিসেবে যা ভেবেছিলাম, তা আর পূর্ন হতে চলেছে। সত্যিই আমি #এক_মুঠো_রোদ এর দেখা পেয়েছি। কখনো ভাবিনি আমার বিয়ে হবে, একটা সংসার হবে, একটা পরিবার হবে। সে আমায় এতটা ভালোবাসে যে মাঝেমাঝে কান্না চলে আসে। সত্যিই কি আমি এই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?
ছোটবেলায় বাবা বলতো, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
সত্যিই আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
কোথায় যেতাম আমি, কোথায় আশ্রয় হতো আমার, কি খেতাম আমি? কিন্তু আল্লাহ আমায় এমন মানুষের কাছে পাঠিয়েছে যেখানে থেকে আমার নতুন করে কিছু চাওয়ার নেই। সবই পেয়ে গেছি আমি। এখন শুধু ভয় আছে, হারানোর। কিন্তু আমি কিছুই আর হারাতে দিবো না। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমার স্বামী, সংসার, পরিবার আগলে রাখবো। সত্যিই আজ নিজের প্রতি নিজের হিংসে হচ্ছে। না চাইতেও কত কিছু পেয়ে গেছি। আর অনেকে চেয়েও পায় না।
মিষ্টির কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মামুন রুমে প্রবেশ করে। সাথে সানু বেগম আর রিয়াও আছে।
মিষ্টি বিছানা থেকে নেমে এসে প্রথমে সানু বেগম এবং পরে মামুনকে সালাম করে।
মিষ্টির হাত ধরে টেনে নিয়ে মিষ্টিকে বিছানায় বসায় সানু বেগম।
–সব শাশুড়ির মতো আজ আমার নতুন করে কিছুই বলার নেই। এমনিতেই পুরো সংসারটা তোমার হাতে। তবে হ্যা, নতুন করে কিছু দিতে এসেছি। এই নাও।
–এটা কি মা?
–আমার বিয়ের গহনা। তোমার শশুড় এগুলো আমাকে বিয়ের পরে গিফট করেছিলো। আমার গহনা পড়ার সখ নেই। তাই ভবিষ্যৎতের জন্য তুলে রেখেছিলাম। আমার পক্ষ থেকে এগুলো তোমার উপহার।
–কিভাবে পড়বো? আমিতো কখনো পড়িনি।
–পাগলি মেয়ে, আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
.
সানু বেগম অতি যত্ন করে মিষ্টিকে গয়না পড়িয়ে দিচ্ছে। মিষ্টিও মায়াভরা চোখে শাশুড়ির দিকে চেয়ে আছে।
–মা, শুধু মিষ্টির জন্য? আমার জন্য কিছু নেই?
–গয়না পড়বি?
–ধুর, বাবার কিছু নেই আমার জন্য?
–একটা লুঙ্গী আছে।
–আর কিছু নেই?
–সেন্ডেল আছে একজোড়া।
–মিষ্টির বেলায় গহনা, আর আমার বেলায় সেন্ডেল?
–তোকে যা দিলাম তা কি কম দামি?
–কি দিয়েছো?
–মিষ্টিকে।
–এটা ঠিক বলেছো মা। খুব দামি জিনিস পেয়েছি আমি।
–হুম…। তো তোরা থাক, আমি গেলাম।
–আচ্ছা।
মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সানু বেগম বেরিয়ে পড়ে। রিয়া এসে মিষ্টির পাশে বসে।
–কিরে? তোকে বের হওয়ার জন্য কি এপ্লিকেশন পাঠাতে হবে? সব জায়গায় কাবাবের হাড্ডির মতো ডিস্টার্ব করিস কেনো?
–চুপ করতো। তোর জন্য আমি একা হয়ে গেলাম। মিষ্টি আর আমার সাথে ঘুমাবে না। কত কষ্ট হবে আমার।
–বাবারে, এতো ইমোশনাল হইয়েন না আপু, আপনাকেও খুব তাড়াতাড়ি বিদায় করা হবে এই বাড়ি থেকে। তখন আর একা ঘুমানো লাগবে না। আপাতত এখন আমাদের ডিস্টার্ব করিয়েন না, রুমে চলে যান।
–ভাবি, আমার একটা কথা রাখবে?
–কি?
–এই শয়তানটাকে সারাক্ষণ মাইরের ওপর রাখতে পারবে?
–সে কি তোর মতো? আমার তো আফসোস হয় তার জন্য, যে তোর জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করবে। আমার কপাল ভালো আমি মিষ্টি পেয়েছি।
–তোর সাথে আমি আর কথা ই বলবো না। গেলাম আমি।
–যা যা।
–All The Best ভাবি। শুভ রাত্রি।
.
রিয়া রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই মামুন দরজা লাগিয়ে দেয়।
মিষ্টির পাশে এসে বসতেই মিষ্টি বলে ওঠে।
–আপনি সবসময় রিয়ার সাথে এমন ঝগড়া করেন কেনো?
–ঝগড়া করি কই? রিয়া আমার কলিজা। আর আমিও রিয়ার কলিজা। শুধু বলে প্রকাশ করাই ভালোবাসা না। তোমার জন্য কি করতে পারবো তা আমি জানি না, কিন্তু আমার বোনের জন্য আমি জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি। সেই ছোটবেলা থেকে ওকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। ওর একমাত্র খেলার সাথি আমি, বন্ধু আমি, শত্রু আমি, সবই আমি।
–তাহলে ওকে এতো বকা দেন কেনো?
–কই বকি? আমাদের কথাই এমন।
–বাবাহ, বুঝি না।
–ওতো বুঝতেও হবে না।
–আপনি তো এখনো আমার ঘোমটাই তুললেন না।
–ঘোমটা কই?
–দিচ্ছি, আপনি আবার বাহিরে যান। আবার আসেন।
–কেনো?
–যান না। আমি ঘোমটা দিয়ে বসতেছি।
–আচ্ছা।
মিষ্টি আবার নতুন করে ঘোমটা দিয়ে বিছানার মাঝখানটায় বসে। চারদিকটা ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে। পুরো রুমটা কত সুন্দর করে সাজানো। মিষ্টি নিজের হাতেই নিজের বাসর ঘর সাজিয়েছে, সুন্দর না হয়ে উপায় আছে?
মামুনের দরজা আটকানোর শব্দে মিষ্টি ধীরেধীরে বিছানা থেকে নেমে দাড়ায়।
মামুন বিছানার সামনে এসে দাড়ালে মিষ্টি এগিয়ে গিয়ে মামুনকে সালাম করে।
মিষ্টির দুবাহু ধরে বিছানায় বসানো হয়।
–আমার ঘোমটা তুলবেন না?
–না তুললে হয় না?
–আমাকে দেখবেন না?
–দেখতেই হবে?
–আপনার জন্য কত সুন্দর করে সেজেছি।
–আমার জন্য?
–তো কার জন্য সাজবো?
–দেখে নিজেকে সামলাতে পারবো তো?
–আমি কি করে বলবো?
–যদি না পারি?
–সমস্যা নেই, আজ বাঁধা দেওয়ার মতো কোনো যুক্তি আমার কাছে নেই। আমি যে পুরোপুরি ভাবে আপনার হয়ে গেছি। আর আপনি আমার।
–তাই? তুলবো?
–হুম।
মামুন ধীরেধীরে মিষ্টির ঘোমটার দিকে হাত বাড়াতে থাকে।
–১ মিনিট.
–কি হলো?
–আমার খুব লজ্জা লাগছে।
–বলেছিলাম না একদিন তোমার লজ্জা ভাঙাবো! আজ সেই দিন চলে এসেছে।
–কিসের দিন?
–আজ তোমার লজ্জা ভাঙাবো।
–কিভাবে?
–দেখবে?
–হুম।
.
.
চলবে…….
.
(Nice/Next না লিখে আপনার মতামত জানাবেন প্লিজ। আগামী পর্বে শেষ করে দিবো? নাকি গল্পটা সামনের দিকে আগানো উচিত সে বিষয়ে আপনার মতামত জানাবেন।ব্যস্ততার কারনে পর্বগুলো বড় করে দিতে পারছিনা, সেই জন্য খুবই দুঃখিত। ধন্যবাদ)
গল্প :- #এক_মুঠো_রোদ (১২)
লেখক :- #A_Al_Mamun
.
বলেছিলাম না একদিন তোমার লজ্জা ভাঙাবো! আজ সেই দিন চলে এসেছে।
–কিসের দিন?
–আজ তোমার লজ্জা ভাঙাবো।
–কিভাবে?
–দেখবে?
–হুম।
মামুন ধীরেধীরে মিষ্টির ঘোমটা সরিয়ে মুখটা উপরে তোলে।
সাধারণত মিষ্টি একটুও সাজগোছ করে না। তাতেই মিষ্টিকে অপ্সরীর মতো লাগে।
কিন্তু আজ মিষ্টি সেজেছে, একটা লাল বেনারসি, সাথে হালকা মেকাপ আর লাল লিপস্টিক। এতেই মামুনের নাজেহাল অবস্থা। যেনো সর্গের কোনো পরী এসেছে মামুনকে জ্বালাতে।
চোখ দুটো বন্ধ করে মিষ্টি চুপ করে বসে আছে। আর মামুন এক নজরে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে।
–চোখ বন্ধ করে আছো যে?
–খুব লজ্জা করছে।
–একটু তাকাও।
ধীরেধীরে চোখ খুলে মামুনের দিকে তাকায় মিষ্টি। দুজন দুজনকে এমনভাবে দেখছে, যেনো কখনো এই দেখার শেষ হবে না। দুজন অনেকটা কাছাকাছি এসে বসে।
–মাকে একবার জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো দোয়াটার ব্যাপারে।
–কিসের দোয়া?
–কারো নজর যেনো না লাগে সেই দোয়া।
–কেমন লাগছে আমায়?
–এতটা মিষ্টি লাগছে যে ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলতে।
–যাহ, মুখে কিছু আটকায় না বুঝি?
–চেষ্টা তো করছি, কিন্তু আটকিয়ে রাখতে পারছি না।
–পারবেন।
–সত্যিই ইচ্ছে করছে।
–কি?
–মিষ্টি টেস্ট করতে।
–ইসসসসসস।
–ভাবছি আমার ডায়াবেটিস না হয়ে যায়।
–কেনো হবে?
–বেশি মিষ্টি খাওয়া তো ভালো না। ডায়াবেটিস হয়ে যাবে।
–তো কম খাবেন।
–এমন মিষ্টি কি কম খাওয়া যায়?
–আজ রাতটা নিয়ে আপনার কোনো প্ল্যান নাই?
–ছিলো অনেক, সব ভুলে গেছি। তোমার আছে?
–হুম।
–শুনি তো।
–ছাদে যাবেন?
–এত রাতে?
–চাঁদ দেখতে ইচ্ছে করছে।
–কালই তো দেখলে।
–চলুন না, আজও দেখবো। আপনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকবেন। আর আমি আপনার চুলে বিনি কেটে দিবো। চাঁদ দেখবো আর গল্প করবো।
–আচ্ছা চলো।
.
মিষ্টিকে কোলে নিয়ে মামুন ছাদে এসে এক কোণায় বসে।
মামুন আজও মিষ্টির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
–দেখুন, চাঁদটা কত সুন্দর।
–হুম, খুব সুন্দর।
–উপরে দেখুন না।
–হুম।
–গাঁধা আমাকে না, আকাশে।
–আমার চাঁদতো তুমিই। আমি শুধু তোমাকেই দেখবো।
–এত দেখার কি আছে?
–মন ভরে না যে, শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে।
–আচ্ছা দেখুন।
–চলো না।
–কোথায়?
–রুমে।
–মাত্রই তো আসলাম।
–চাঁদ তো দেখা হয়ে গেছে।
–চলে যাবেন?
–হুম।
–আচ্ছা চলুন।
মিষ্টিকে কোলে করে আবার রুমে আনা হয়।।
–আপনি না বললেন আমার লজ্জা ভাঙাবেন?
–হুম।
–কই?
–আচ্ছা,,,,! আমার বউ তাহলে প্রস্তুত?
–সেই কবে থেকে। আপনি ভালোবেসে কাছে টেনে নিবেন, এই আসায় কতরাত ঘুমাতে পারিনি। চোখ বন্ধ করলেই আপনাকে দেখতাম। আর আজ আপনি আমার এতটা কাছে। আপনাকে বোজাতে পারবো না এমন সময় একটা মেয়ের অনুভূতি কেমন থাকে।
–কেমন থাকে?
–লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে এত কিছু বলেছি, আর পারবো না।
মিষ্টির দিক থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে মামুন মিষ্টির দিকে এগিয়ে যায়।
(এইবার কি হয় সেটা আর না বলি)
.
সকালে মুখে পানি ছিটায় ঘুম ভাঙে মামুনের। জানালা দিয়ে একটা নতুন সকাল উকি দিচ্ছে। বাহিরে এখনো আলো ফুটে নি।
বিছানার পাশেই মিষ্টি বসে চুলের পানি মুছতেছে।
মামুনের আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা কিসের পানি।
সামনের ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আয়নায় নিজের দেখছে মিষ্টি। পেছন থেকে আয়নায় মিষ্টিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মামুনকে জেগে উঠতে দেখে মিষ্টি মামুনের পাশে এসে বসে।
–উঠে গেছেন?
–তোমার চুলের পানি কি আর ঘুমাতে দিলো?
–পানি পড়েছে বুঝি?
–হুম।
–সরি সরি।
–হবে না।
–তাহলে?
মামুন ওমনি মিষ্টিকে ঝাপটে ধরে বিছানা ফেলে দেয়। ভেজা চুলগুলোতে একটা পাতলা তোয়ালে পেচানো।
চেষ্টা করেও মামুনের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছে না সে।
–ছাড়ুন, মাত্র গোসল করেছি, আর পারবো না।
–তাহলে এমন ভেজা চুল নিয়ে আমার সামনে কেনো এসেছো?
–আমার ইচ্ছা।
–এখন আমারও ইচ্ছা।
–যাহ, ছাড়ুন।
–তোমার মধ্যে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ আছে। যা আমার পাগল করে দেয়।
–কেমন ঘ্রাণ?
–এটা এমন একটা ঘ্রাণ যা শুধু আমিই পাই।
–আচ্ছা!
–বলেছিলে সকালে জড়িয়ে ধরে আমার ঘুম ভাঙাবে।
–আপনি ঘুমাচ্ছিলেন, তাই ভাবলাম না জাগাই।
–এখন তো এর মূল্য দিতে হবে।
–কি মূল্য?
–মিষ্টি দাও।
–যাহ, সকাল সকাল কি শুরু করলেন। ছাড়ুন, মা উঠে যাবে। নামাজ পড়ে রান্না ঘরে যেতে হবে।
–একটা দাও না, আর কিছু লাগবে না।
–দিবো, তাহলে উঠুন। গোসল করে নামাজটা পড়ে নিন।
–আগে দাও, এরপর উঠবো।
–আপনি যেই শয়তান, এমনিতেই নামাজ পড়েন না। এখনতো আপনার ওপর আমার পুরো অধিকার আছে। উঠে নামাজ পড়বেন। এরপর যা চাইবেন তাই দিবো।
–বাবারে।
–উঠেন, আজ থেকে আর নামাজ বাদ দেওয়া যাবে না।
–উঠছি তো।
–না, এক্ষুণি উঠুন। আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছি, একসাথে নামাজ পড়বো।
মামুনকে একপ্রকার জোর করেই বিছানা থেকে তুলে গোসল করতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
.
সানু বেগম নামাজ শেষ করে রান্না ঘরে এসে দেখে মামুন রুটি বানাচ্ছে। আর মিষ্টি মামুনকে সাহায্য করতেছে।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে না পেরে দুইবার নিজেকে নিজে চিমটি কাটে।
–কে রে এটা?(সানু বেগম)
মাকে এভাবে সামনে দেখে মামুন লজ্জা পেয়ে রুটি বানানো ছেড়ে একটু দুরে গিয়ে দাড়ায়।
–আব্বা, আজ এত সকাল সকাল কিভাবে?
–এমনিই ঘুম ভেঙে গেলো। তাই ভাবলাম মিষ্টিকে একটু সাহায্য করি।
–২৮ বছর ধরে আপনার মা একা একা রুটি বানিয়েছে, কখনো তো আপনার ঘুম ভাঙেনি।
–ধুর,আমি গেলাম।
বলেই মামুন মাকে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।
–মিষ্টি, আজ তোমার আসার প্রয়োজন ছিলো না। আমি পারতাম।
–কেনো মা? আমি কি নতুন? আমি সেই মিষ্টি, নতুন কেউ না তো।
–ধুর পাগলি, আমি কি সেটা বলছি? অন্তত আজ তো বিশ্রাম করতে পারতে।
–সমস্যা নেই মা। আপনি গিয়ে বিশ্রাম করুন।
–আমি রুটি বানাই দাও। পাগলটা আজ এত তাড়াতাড়ি উঠে গেলো কিভাবে? আবার এসে রুটিও বানাচ্ছে।
–তুলে নিয়ে আসলাম। নামাজ পড়ালাম, এরপর রান্না ঘরে নিয়ে আসলাম।
–মাশা-আল্লাহ, প্রতিদিন এভাবে তুলে নামাজ পড়াইবা।
–দোয়া করবেন মা।
.
নাস্তা শেষে রিয়া মিষ্টিকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
–কি খবর ভাবি?
–হুম ভালো(মুচকি হেসে)
–এক রাতেই আমায় ভুলে গেলা?
–ওমা, ভুললাম কই?
–আমায় ডাকতেও আসলে না আজ।
–তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে, তাই ভাবলাম বিরক্ত না করি।
–আচ্ছা বাদ দাও, কেমন কাটলো কাল রাত?
–সবার যেমন কাটে।
–বাব্বাহ, সবার কেমন কাটে সেটা তুমি কিভাবে জানো?
–বললাম আরকি, ভালোই কেটেছে।
–আমাদের সবারই মনের আসা পূরণ হলো। তুমি চেয়েছিলে পরিবার, আর আমরা তোমায়।
–হুম, আজ আমি খুব খুশি। আল্লাহর কাছে এই দুনিয়ায় আমার আর কিছুই চাওয়ার নাই। না চাইতেও আমি সব পেয়ে গেছি।
–ওমা, চাওয়ার নেই মানে? আমাদের একটা বাবু লাগবে না?
–আল্লাহ চাইলে আমাদের বাবুও হবে। চিন্তা করো না।
–খুব তাড়াতাড়ি চাই কিন্তু। এরা আমায় বাড়ি থেকে তাড়ানোর প্ল্যান করছে। যাওয়ার আগে যেনো বাবুর সাথে খেলাধুলা যেতে পারি।
–তাই বুঝি?
–হুম। গিয়েই ভাইয়াকে বলবে আমাদের সবার একটা বাবু লাগবে, তাড়াতাড়ি।
–আচ্ছা বলবো।
.
মিষ্টির খুশিতে পুরো বাড়ি যেনো খিলখিল করছে। সানু বেগম তো সোজাসুজি বলে দিয়েছেন। “এবার আমি শুধু বিশ্রাম নিবো। তোমার সংসার তুমি সামলাও” মিষ্টিও মুচকি হেসে শাশুড়ির কথায় শায় দেয়।
স্বামী সংসার নিয়ে মিষ্টির এখন অনেক চিন্তা।
একটা সময় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হতো মিষ্টিকে, কিন্তু এখন এই সংসারের ভবিষ্যৎ নিয়েও তাকে ভাবতে হয়।
ধীরেধীরে দিনগুলো পার হতে থাকে। এমনি একদিন অফিস শেষে মামুন বাসায় ফিরে দেখে পুরো ঘর নিস্তব্ধ, রিয়া নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত, মা নিজের রুমেই বসে আছে। আর মিষ্টি বিছানার এক কোনায় জড়ো হয়ে বসে আছে।
মামুন কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে আজ ঘরের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে। যার জন্য সবাই চুপ করে আছে।
–কিগো? আজ দরজা খুলতেও আসলে না। দরজা দেখি আগে থেকেই খোলা।
–আমিই খুলে এসেছিলাম।
–কিছু হয়েছে?
–হুম।
–কি?
–আমি বলতে পারবো না। মাকে জিজ্ঞেস করুন।
–মা বকেছে?
–না।
–মুখ দেখেতো মনে হচ্ছে কেঁদেছিলে।
–একটু।
–ঝগড়া হয়েছে?
মিষ্টি মামুনের দিকে মুখ তুলে তাকায়…
–কি বলছেন এসব?
–তাহলে এভাবে চুপ করে আছো কেনো?
–আমি বলতে পারবো না। মাকে জিজ্ঞেস করুন।
–মাত্রই অফিস থেকে আসলাম। এসেই এটা নিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করা যায়?
–ফ্রেস হয়ে নিন, খাবার খান, এরপর যান।
–কি হয়েছে সেটা তো বলবে।
–মা বলবে।
–তুমি বললে সমস্যা?
–আমি বলতে পারবো না।
–ধুর….।
মামুন কিছুটা রাগ মাথায় নিয়ে মায়ের রুমে এসে দাড়ায়, সানু বেগম তখনো নামাজের পাটিতে বসে তাজবিহ পড়ছেন।
মামুনকে নিজের রুমে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করেন,
–কিরে বাবা, চলে এলি?
–হুম।
–আয় বস।
–বসবো না, খুদা লেগেছে।
–আচ্ছা খেয়ে আয়।
–মিষ্টি বললো তুমি নাকি আমাকে কিছু বলবে।
–সে বলেনি?
–না।
–আচ্ছা বস এখানে। আমিই বলছি।
–মিষ্টি কি ঝগড়া করেছে?
–ধুর গাধা, তোর কি মনে হয় সে ঝগড়া করতে পারে?
–তাহলে?
–দুপুরে রান্নার সময় হঠ্যাৎই মিষ্টি মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে যায়। কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম কি হতে চলেছে। তবুও শিওর হওয়ার জন্য ডাক্তারকে খবর দেই। ডাক্তারও সেটাই বললো যেটা আমি ভেবেছিলাম।
–কি হয়েছে মা?
–আমাদের ঘরে নতুন মেহমান আসবে।
–কে?
–বলদ, তুই বাবা হতে চলেছিস?
–অ্যাহ! সত্যি?
–হুম
–তাহলে মিষ্টি বললো না কেনো?
–মেয়েটা সারাদিন কেঁদেছে।
–কেনো?
–ওকে গিয়েই জিজ্ঞেস কর।
–তা তো করবোই। তোমার ঘরের চেরাগ আসতেছে। আগে জানালে আসার সময় তো মিষ্টি নিয়ে আসতাম।জানালে না কেনো?
–কাল আনিস। এখন মিষ্টির কাছে যা।
–আচ্ছা।
.
.
চলবে………..
গল্প :- #এক_মুঠো_রোদ (১৩) শেষ পর্ব
লেখক :- #A_Al_Mamun
.
তোমার ঘরের চেরাগ আসতেছে। আগে জানালে আসার সময় তো মিষ্টি নিয়ে আসতাম।
–কাল আনিস। এখন মিষ্টির কাছে যা।
–আচ্ছা।
এক প্রকার দৌড়েই মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে আসে মামুন।
নিজের রুমের সামনে এসে উকি দিয়ে দেখে মিষ্টি এখনো বিছানার এক কোনায় বসে আছে।
নিজের চেহারায় একটু রাগি ভাব নিয়ে মামুন আবার রুমে প্রবেশ করে।
মামুনকে ভেতরে আসতে দেখে মিষ্টি উঠে দাড়ায়।
–তোমরা বউ শাশুড়ি মিলে কি আমায় পাগল বানিয়ে ছাড়বা?
–কেনো?
–তুমি বলছো মা বলবে, আর মা বলছে তুমি বলবে। কাহিনী কি?
–সত্যিই কি মা কিছু বলেনি?
–না।
–আমাকেই বলতে হবে?
–থাক, কারো কিছু বলা লাগবে না। শুনবো না আমি।
–এত রাগ করেন কেনো?
–তো কিছু বলছো না কেনো?
–বলবো তো।
–বলো।
–আজ একটু শরীর খারাপ থাকায় মা ডাক্তার ডেকেছিলো। জানেন ডাক্তার এসে কি বলেছে?
–কি?
–বুঝে নিন না।
–বুঝতে পারবো না, তুমি বলো।
–এমন করেন কেনো?
–বলবে? নাকি চলে যাবো?
–বলছিতো। ডাক্তার বললো…..
–কি?
–আমার খুব লজ্জা লাগছে।
–তবুও বলো।
–আমি মা হবো।
মামুন মিষ্টিকে বুকে টেনে নিয়ে কপালে আলতো করে একটা চুমু একে দেয়।
–মা আমায় আগেই বলে দিয়েছে। এই পাগলি, তোমার চোখে পানি কেনো?
–মা খুব খুশি হয়েছে।
–তো তুমি কেনো কেঁদেছো?
–এতটা খুশি কখনো লাগেনি। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না, তাই কেঁদেছি।
–তুমি আসলেই একটা পাগলি।
–আপনি খুশি হন নি?
–খুব।
–খুব লজ্জা লাগছে আমার। সারাদিন রুম থেকেই বের হইনি।
–কেন?
–কি ভাববে ওরা? ৩ মাসেই মা হতে চলেছি।
–এতে ভাবা ভাবির কিছু নেই। ৩ বছর লাগাবো নাকি?
–তা নয়, তবুও কেমন না?
–ধুর, পাগলী মেয়ে। আমার অফিসের এক কলিগ তো বিয়ের আগেই সুখবর পেয়ে গিয়েছিলো। এরপর বিয়ে করেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের কি ওতো তাড়াতাড়ি হয়েছে নাকি? ঠিক সময়েই হয়েছে।
–আচ্ছা বাদ দিন, ফ্রেস হয়ে আসুন। আমি খাবার দিচ্ছি।
–আচ্ছা।
এতদিন যাবত মিষ্টি সংসারটাকে একা হাতেই সামলাতো। কিন্তু এখন থেকে সাথে আরো ৩জোড়া হাত যোগ হয়েছে।
মিষ্টিকে তেমন কোনো কাজই করতে দেওয়া হয় না। রান্নাবান্না সব সানু বেগম রিয়াকে সাথে নিয়েই সেরে ফেলেন। আর মামুন অফিস থেকে ফিরে এসে মিষ্টিকে টুকিটাকি কাজে সাহায্য করে।
দিন শেষে ভালোবাসার মানুষটা যখন বুকে জড়িয়ে নেয়, তখন নিজের আবেগগুলো কান্না হয়েই বেরিয়ে আসে। যাকে সুখে রাখার জন্য দিন রাত এক করে দেওয়া হয়, সেই যখন দিন শেষে কান্নায় ভেঙে পড়ে, তখন কারই বা ভালো লাগে? মামুন যখন কান্নার কারনটা জানতে চায়, তখন উত্তর আসে এত সুখ নাকি তার সহ্য হচ্ছে না।
মিষ্টি গর্ভবতী থাকা কালিন পুরো পরিবার এতটাই যত্ন করেছে যে খুশির সময়ও মিষ্টি কান্না করে দিতো। বড্ড আনন্দে মিষ্টির দিনগুলো পার হতে থাকে।
ধীরেধীরে ডেলিভারি সময় এগিয়ে আসে।
১ মাসের জন্য ছুটি নিয়ে মামুন সারাক্ষণ মিষ্টির পাশেই সময় কাটায়।
–আর কত দিন লাগবে পাপা ডাক শুনতে?
–পাপা ডাক শুনার এত শখ?
–ওমা, কার শখ নাই?
–বুঝলাম, একটু তো অপেক্ষা করাই লাগবে।
–একটু জিজ্ঞেস করে দেখবো?
–কাকে?
–আমার বাবুটাকে।
–কিভাবে?
–এই দেখো।
মিষ্টির পেটের ওপর কান লাগিয়ে মামুন কথা বলা শুরু করে।
ওদিকে মিষ্টি মামুনের কান্ড দেখে খিলখিল করে হাসতে থাকে।
–কি বলেছে জানো?
–কি?
–বললো আর বেশিদিন অপেক্ষা করা লাগবে না। উনি খুব তাড়াতাড়ি আসতেছে।
–আপনাকে বলেছে?
–হুম।
–তাহলে আর অধৈর্য হইয়েন না। একটু অপেক্ষা করুন।
–এছাড়া তো আর কোনো উপায়ও নাই।
–খালি খালি চিন্তা করেন। শুয়ে পড়েন, অনেক রাত হয়েছে।
–আচ্ছা তুমিও শুয়ে পড়ো।
–হুম
.
মামুন মিষ্টির মাথা হাত বুলিয়ে দিতে দিতে দুজনই একসাথে ঘুমিয়ে পড়ে।
মাঝরাতে মিষ্টির বোবা আর্তনাদে মামুনের ঘুম ভেঙে যায়, দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে লাইট জ্বালিয়ে দেখে মিষ্টি মুখে আচল গুজে দিয়ে কাঁদছে। যার জন্য কোনো শব্দ হচ্ছে না।
মুখ থেকে আচল সরিয়ে মামুন জিজ্ঞেস করে।।
–কি হয়েছে তোমার?
–খুব ব্যথ্যা করছে, আর পারছি না।
–আমায় জাগালে না কেনো? দাড়াও মাকে ডেকে আনছি।
একটু পর সানু বেগম মামুনের সাথে দৌড়ে রুমে প্রবেশ করে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দ্রুত এম্বুলেন্সে খবর দেওয়া হয়।
মাঝরাতেই মিষ্টিকে সাথে নিয়ে সবাই হাসপাতালে রওয়ানা দেয়।
সানু বেগম রিয়াকে সাথে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের বাহিরের চেয়ারে বসে আছে। আর মামুন দরজার এদিক ওদিক পায়চারী করছে।
–মামুন, এখানে এসে বস।
–না মা, আমি ঠিক আছি।
–একটু তো সময় লাগবেই, কতক্ষণ এভাবে হাটবি? এদিকে আয়।
মায়ের ডাকে মামুন এসে চেয়ারে বসে।
–মা, ভয়ের কোনো কারন নেইতো?
–কিসের ভয়? আল্লাহকে ডাক। দেখবি সব ভালোয় ভালোয় শেষ হবে।
–তুমিও করো।
–আমি করতেছি।
–ভাই, ওতো চিন্তা করিস না। ভাবির কিচ্ছু হবে না।(রিয়া)
–তাই যেনো হয়।
দীর্ঘ ৩ ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে লাল বাতি বন্ধ হয়ে যায়।
মামুন দৌড়ে দরজার সামনে এসে দাড়ায়।
একটু পর ভেতর থেকে একজন মহিলা ডাক্তার বের হয়।
–ম্যাডাম, আমার স্ত্রী কেমন আছে?
–আলহামদুলিল্লাহ উনি ভালো আছেন।
–আমার বাবু হয়েছে?
–হ্যা ভাই, আপনার মেয়ে হয়েছে। তবে সবচেয়ে খুশির বিষয় হলো আপনার জমজ মেয়ে হয়েছে।
ডাক্তারের কথায় মামুন ওখানেই হেঁসে দেয়।
সানু্ বেগম আর রিয়াও ডাক্তারের কথায় খুব খুশি।
–আমরা ভেতরে যেতে পারবো?
–না ভাই, একটু পর ওনাকে কেবিনে দেওয়া হবে। তখন দেখিয়েন।
–ম্যাডাম তাড়াতাড়ি, আর তর সইছে না।
–চুপ কর পাগল, এত লাফাচ্ছিস কেনো?(রিয়া)
–শুনেছিস? তোর জমজ ভাইঝি হয়েছে। খুশি না হয়ে উপায় আছে? মা শুনেছো?
–শুনেছি শুনেছি, একটু চুপ কর। ওরা দেখলে কি ভাববে?
–যা ভাবার ভাবুক। আমার কি?
.
একটু পর মিষ্টিকে কেবিনে দেওয়া হয়। সবাই একসাথে মিষ্টির সামনে এসে দাড়ায়।
সানু বেগম আর রিয়া দুজন দুই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে নেয়। আর মামুন রিয়ার পাশে এসে বসে।
–আমাদের মেয়ে দেখেছেন? জমজ।
–মেয়ে পরে, তুমি কেমন আছো?
–আপনাদের দোয়ায় খুব ভালো।
–মেয়েদের দেখেছো?
–হুম। আপনি দেখেছেন?
–না।
–দেখুন না।
মামুন উঠে মায়ের সামনে এসে দাড়ায়, মায়ের কোলে একটা মেয়ে, আর রিয়ার কোলে একটা মেয়ে। মামুন দুই মেয়েকে একসাথে নিজের কোলে নিয়ে নেয়। নিজের অজানতেই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে মামুনের। রিয়া, মা আর মিষ্টি মামুনের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। বাবা হওয়ার অনুভূতিটা বুঝি কাউকে প্রকাশ করা যায় না? কেনো এতটা খুশি লাগে? পাথরে গড়া হৃদয়ের ছেলেটাও কেনো খুশিতে চোখের পানি ফেলে?
রাতে রাতেই মিষ্টিকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। মিষ্টি বিছানায় শুয়ে আছে, আর পাশেই শুয়ে আছে দুটো ছোট্ট পরি। মামুন মেয়েদের মাথার পাশে বসে বাচ্চা বাচ্চা কথা বলছে। আর মিষ্টি মামুনের কান্ড দেখে হেসেই যাচ্ছে।
–আপনিতো মেয়ে চেয়েছিলেন। আপনার মনের আসাই পূরণ হলো। খুশি হয়েছেন?
–খুব। এখন পর্যন্ত তোমার কাছে যা চেয়েছি, একটু বেশিই পেয়েছি। মেয়েও।
–আপনি যা চেয়েছেন তা পেয়েছেন। এখন যেনো আমার ভালোবাসায় কোনো কমতি না থাকে।
–কমতি থাকবে কেনো?
–এই যে দুইজন নতুন মানুষ এলো, এরাই তো আমার ভালোবাসায় ভাগ বসাবে। আমি ভালো করেই জানি।
–আরে নাহ।
–কচু না, মা ও তো এখন এদের নিয়ে থাকবে। কেউ আর আমায় ভালোবাসবে না।
–কে বললো?
–আমি জানি।
–কারো ভালোবাসায় কেউ ভাগ বসাতে পারে না।
–পারে, এখনো একবারও আপনি আমায় বুকে জড়িয়ে নেন নি। অথচ মেয়েদের কতবার নিয়েছেন তার হিসেব নেই।
–হায় খোদা, কি হিংসেরে বাবা।
–উমম
মামুন এগিয়ে গিয়ে মিষ্টিকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
–থাক, এখন এতো ভালোবাসা দেখানো লাগবে না, নিজে থেকে তো নেন নি।
–আমার ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করে দেন।
–আদর করছেন একবারও? আর ওদের কতবার করছেন?
–হায়, কই যামু আমি? এ দেখি মহা হিংসা। নিজের মেয়েদের প্রতিও হিংসা।
–আমার ভালোবাসায় কেনো ভাগ বসাবে হ্যা? ওদের যত আদর করবেন, তার চেয়ে আমায় বেশি আদর করবেন। মনে থাকে যেনো।
–ঠিক আছে ম্যাডাম।
–জানেন, খুব কষ্ট হচ্ছিলো। আপনাকে কতবার ডেকে দিতে বলেছি। কিন্তু ওরা আপনাকে ডাকে নি।
–খুব মিস করছিলে বুঝি?
–হুম, আপনি আমার পাশে থাকলে হয়তো আমার এত কষ্ট হতো না।
–তোমায় আর কখনো কষ্ট পেতে দিবো না। সারাজীবন তোমায় এই বুকের মধ্যে আগলে রাখবো।
–মনে থাকে যেনো।
–থাকবে।
.
–ভাবছি দুটো মেয়েকে একসাথে কি করে সামলাবো?
–পুরো একটা পরিবার এক হাতে সামলে নিয়েছো, আর নিজের মেয়েদের পারবে না?
–হুম পারবো তো। কখনো ভেবেছেন আমাদের টুইন হবে?
–ভাবি নি, তবে সখ ছিলো। যদি আমারও টুইন হতো। আজ আমার সখও পূরণ হলো।
–আমায় বেশি বেশি ভালোবাসলে এমন আরো সখ পূরন হবে।
–আচ্ছা? টিম হবে?
–কিসের টিম?
–একটা ফুটবল টিম।
–যাহ শয়তান।
মিষ্টিকে এক টানে বুকে নিয়ে এসে
–বলো, কতটা ভালোবাসতে হবে তোমায়?
–যতটা ভালোবাসলে আপনি সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে ভাববেন ততটা।
–এতটা?
–হুম। ৭ মাস যাবত আপনাকে ওতটা কাছে পাইনি। অনেক মিস করছি আপনার ছোয়া। সব উসুল করে নিবো।
–কি মেয়েরে বাবা।
–খুব ভালোবাসি আপনাকে।
–এই পাগলি, কাঁদছো কেনো? আজতো আমাদের খুশির দিন।
–এই বাড়িতে আসার পর আমি কখনো কষ্টে কাঁদিনি, কাঁদতে হয়নি। এতটা সুখ আমার ভাগ্যে ছিলো যে কষ্টের চেয়ে সুখের পরিমানটাই বেড়ে গেছে। কান্নাটা তো আমার অভ্যাস ছিলো, শুধু কান্নার কারনটা বদলেছি। এখন আর কষ্ট পেলে কাঁদি না, খুশিতে কাঁদি। আমি সত্যিই খুব খুশি, একটা মা পেয়েছি, ননদ নামের একটা বোন পেয়েছি। সারাজীবন পাশের থাকার জন্য আপনাকে পেয়েছি। আর কি চাই বলুন তো। আল্লাহর রহমতে আমাদের কোল আলোকিত করে দুটো মেয়ে এলো। বাকি জীবনটা হাসিখুশি কাটানোর কারনটাও পেয়ে গেছি। এবার আপনিই বলুন, কেনো কাঁদবো না?
মিষ্টিকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নেন মামুন।
সত্যিই তো, ভালোবাসার মানুষটাকে সারাজীবন পাশে পেলে আর কি লাগে? ভালো থাকার জন্য কি এটা যথেষ্ট কারন নয়?
যে মানুষটার কল্পনায় আপনি ছাড়া দ্বিতীয় কারও অস্তিত্ব নেই,
যে মানুষটা হাজারটা বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে আপনাকে জয় করেছে,
তার চোখে আপনাকে পাওয়ার আনন্দের অশ্রু থাকবেই।
আপনি সারাজীবন তাকেই মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসুন,
যে তার ভালোবাসার শক্তি দিয়ে আপনাকে জয় করেছে।
“বেচে থাকুক ভালোবাসা”
.
.
……..সমাপ্ত………