নজরবন্দী

    রাগের মাথায় ভরা রেস্টুরেন্টে মেয়েটাকে একটা চড় মেরে বসি, বয়সে হয়তো আমার থেকে ৫-৬ বছরের বড়ই হবে। বেশ অবাক হয়ে মেয়েটা গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আর বাকিরাও অবাক হয়ে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো, এতটুকু মেয়েটা কি করে তারচেয়ে বয়সে বড় একটা মেয়েকে চড় মারতে পারে। কেনই বা না মারবো?

    স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে আমার ওনাকে অন্য একটা মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করতে দেখে তখনই আমার পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গিয়েছিলো। কিছুটা কাছাকাছি এসে বুঝতে পারি এটা নতুন কেউ নয়, এই মেয়েকে আগেও আমি আমার ভালোবাসার মানুষটার সাথে দেখেছি। প্রায় সময় আমাদের বাড়িতে আসতো। 

    কারন আমার ভালোবাসার মানুষটা আর কেউ নয়, আমার জেঠাতো ভাই মামুন। এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে, মেয়েটাও তার সাথে একই ক্লাসে পড়ে। আর আমি এবার এসএসসি দিবো। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এই মানুষটাকেই আমার আশেপাশে চাইতাম। তাকে অন্য কারো সাথে দেখলে আমার সহ্য হত না। 

    গতবার যখন মেয়েটা আমাদের বাড়ি এসেছিলো, তখন তাকে আমার রুমে ডেকে বলেছিলাম, যেনো আর কখনো আমাদের বাড়ি না আসে, এবং তার সাথে যেনো আর কখনো না দেখি। সে শুধু আমার।

    আমার কথা শুনে মেয়েটা সেদিন শুধু হেসেছিলো। খুব রাগ হয়েছিলো তার হাসি দেখে। তবুও কিছু বলিনি।

    কিন্তু আজ আবার তাকে আমার ভালোবাসার মানুষটার সাথে দেখে মেজাজটাই বিগড়ে গেছে।

    ২য় বার চিন্তা না করে সোজা তাদের সামনে গিয়ে দাড়াই।

    আমাকে দেখেই উনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওঠেন। কিছুর বলতে যাবো তার আগেই উনি আমার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসতে চায়। এক ঝাটকায় তার হাতটা ছাড়িয়ে তার পাশের মেয়েটার কাছে এগিয়ে যাই।

    বেশ রাগ মাথায় নিয়ে মেয়েটাকে ধমক দিয়ে বলি “তোমায় না মানা করছিলাম ওনার সাথে না মিশতে” 

    মেয়েটার সাথে বেশ তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ি। এক পর্যায়ে রাগের মাথায় তাকে একটা চড় দিয়ে বসি।

    পেছন থেকে উনি এসে সবার সামনে আমার গালে চড় মেরে বসেন। খুব রাগ হয়েছিলো, কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি। আর এক মুহূর্তও সেখানে দাড়াইনি, দৌড়ে বাড়ি চলে আসি।

    এখন রাতের প্রায় ১২টা, কিন্তু মানুষটা আজ একবারও আমার খোজ নিতে আসলো না। যাকে নিয়ে এতটা স্বপ্ন দেখি, সে কেনো আমায় এতটা অবহেলা করে? কেনো বুঝতে চায় না আমারও একটা মন আছে, যেই মনটা শুধু তাকেই চায়।

    জেঠিমাতো আমায় সব সময় বলে, আমি নাকি তার ছেলের বউ। তাহলে কেনো সে এটা মানে না? সে কি বুজে না যে আমি তাকে ভালোবাসি?

    প্রতিদিন আসার সময় আমার জন্য চিপস, চকলেট, ফুসকা এসব আনতো, আর জানালা দিয়ে ডেকে দিয়ে যেতো, তাহলে আজ কেনো আসছে না? সে কি ওই মেয়েটার জন্য আমার ওপর রাগ করেছে? তুই একটু তোর ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে দেখনা।

    .

    –না না বাবা, আমি পারবো না। তুই এমনিতেই সব পেছিয়ে রেখেছিস, এখন আমি ভাইয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলে সে আমার ওপর ব্লাস্ট হবে।(মামুনের ছোট বোন সিনথিয়া)

    –এত ভয় পাস কেনো? তুই কি চাস না আমি তোর ভাবি হই।

    –তুই আসলেই একটা পাগল। আমার চাওয়া না চাওয়ায় কিছুই হবে না। যা করেছিস তার জন্য আগে ভাইয়ার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নে।

    –ক্ষমা আমি চেয়ে নিবো, সে চাইলে আমি জানটাও দিয়ে দিতে পারবো, আমার শুধু তাকেই চাই।

    –আমি এখন যাই, অনেক রাত হয়েছে। 

    –গিয়ে তোর ভাইকে বলবি মিষ্টি তার জন্য অপেক্ষা করছে, সে যেনো একবার এসে দেখা করে যায়।

    –আমি পারবো না। তুই যা পাগলামি শুরু করেছিস তাতে মনে হচ্ছে উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যেতে পারে। আমি তোর সাথে নাই, গেলাম।

    .

    মিষ্টিকে বিদায় দিয়ে সিনথিয়া নিজের ঘরে ফিরে আসে। সিনথিয়ার পেছন পেছন মিষ্টিও তাদের ঘরে চলে আসে।

    মামুন তখনো ড্রয়িং রুমে বসে খেলা দেখছিলো।

    মিষ্টিকে নিজের চোখের সামনে দেখে উঠে সোজা নিজের রুমে চলে যায় সে।

    মিষ্টিও দৌড়ে মামুনের রুমে এসে দাড়ায়।

    –তুমি আজ আমায় মারলে কেনো?(মিষ্টি)

    –যা এখান থেকে।(মামুন)

    –না, বলো আগে, ওই মেয়েটার জন্য তুমি আমার গায়ে হাত তুলতে পারলে? কে হয় ওই মেয়ে তোমার?

    –বস এখানে, তোকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে বলছি। একদম লক্ষি মেয়ের মত শুনবি।

    –আচ্ছা বলো।

    –তোর বয়স কত?

    –১৬

    –আর আমার?

    –২৪।

    –তাহলে মেয়েটার বয়স কত হবে?

    –২৩-২৪ এর মতই হবে।

    –এর মানে সে তোর চেয়ে ৬-৭ বছরের বড়। কোন সাহসে তুই ওর গায়ে হাত তুললি?

    –সে আমায় বাজে কথা কেনো বলছিলো? তাকে মানা করলাম তোমার সাথে কথা না বলতে, কেনো সে আমার কথা শুনলো না।

    –আমি কে হই তোর?

    –জানো না?

    –কে হই?

    –জেঠাতো ভাই।

    –আর ওই মেয়েটা হলো আমার বন্ধু, তার একটা আত্মসম্মান আছে।আমার চাচাতো বোন হয়ে কি করে তুই ওকে চড় মারতে পারলি? আমি চাচার কাছে বিচার দিবো?

    –দাও, আমার কোনো আপত্তি নাই।

    –কি চাস তুই? কেনো এমন করছিস? 

    –তুমি কোনো বাহিরের মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবেন না। 

    –তুই কে আমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার? কিছু বলছিনা বিধায় এতটা বেড়ে গেছিস। কালই আমি চাচাকে সব বলবো। 

    –তুমি কি আজও বুঝলে না কেনো আমি এমন করি?

    –আমি বুঝতেও চাই না। কারন তুই আমার চাচাতো বোন, সিনথিয়ার মতই দেখি তোকে। এর চেয়ে বেশি কিছু বোঝা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাছাড়া আজ তুই যা করেছিস তার জন্য আমি কখনই তোকে ক্ষমা করবো না। আর কখনো আমার সাথে কথা বলতে আসবি না, যা এখান থেকে।

    –কি বলছো? পারবে আমার সাথে কথা না বলে থাকতে?

    –যা এখান থেকে, মাথা গরম করিস না।

    –সরি।

    –যা,

    –সরি প্লিজ।

    –তোকে যেতে বলছি এখান থেকে।

    –এই কান ধরছি, আর কখনো এমন করবো না। প্লিজ ক্ষমা করে দাও।

    –ক্ষমা আমার কাছে নয়, যার সাথে অন্যায় করেছিস তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নে।

    –আচ্ছা, আমি কালই ওনার কাছে ক্ষমা চাইবো।

    –আচ্ছা আমায় একটা কথা বল, তুই না খুবই লক্ষি মেয়ে? 

    –হুম

    –তাহলে কেনো এমন করিস?

    –সরি তো।

    –আর কারো সাথে এমন করবি?

    –না।

    –যা ঘরে যা।

    –আমার চিপস?

    –সোফায় রাখা আছে।

    –থ্যাংকু

    বলেই এক লাফে মামুনের সামনে এসে একটা পাপ্পি দিয়ে চিপস নিয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়।

    মামুনের জন্য এটা নতুন কিছু নয়, প্রায় সময় মিষ্টি এই কাজটা করে।

    মিষ্টির এমন অদ্ভুত আচার আচরণ মামুনকে খুব ভাবায়।

    একদম শান্তশিষ্ট মেয়েটা কেনই বা হুট করে রেগে যায়? যার আচার আচরণে বাড়ির সবাই গুণগান গায় সে কেনো হুট করেই ব্যবহার খারাপ করে? 

    বাড়ির সকলের প্রিয় মেয়েটার কাছে কেন শুধু আমিই প্রিয়? কেনো আমার ওপর এতটা অধিকার দেখায়?

    সে কি আমায় সত্যিই ভালোবাসে? কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? সে তো সম্পর্কে আমার চাচাতো বোন, বাড়ির কেউই এটা মেনে নেবে না।

    মিষ্টি ব্যাপারটা ভালো করে বোঝাতে হবে।

    .

    পরদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য মিষ্টি আর সিনথিয়া একসাথে বাড়ি থেকে বের হয়। মামুনও কলেজ যাওয়ার উদ্দেশ্যে একই সময় বাড়ি থেকে বের হয়।

    মামুনকে দেখে মিষ্টি সিনথিয়াকে পাঠিয়ে দিয়ে দৌড়ে মামুনের সামনে এসে দাড়ায়।

    –আজ এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছো যে?

    –কিছু কাজ আছে, তাই।

    –কাজ? নাকি অন্য কিছু?

    –মানে?

    –ওই মেয়েটার কাছে যাচ্ছো নাতো?

    –তোর হাতে সময় আছে? 

    –হ্যা আছে তো। 

    –ক্লাস শুরু হওয়ার আর কতক্ষণ আছে?

    –২ ঘন্টা আছে। আড্ডা দেওয়ার জন্য আগে আগে যাচ্ছি।

    –আমার সাথে যাবি?

    –হুম।

    –চল।

    মিষ্টি নাচতে নাচতে মামুনের সাথে হাটা শুরু করে। মিষ্টির স্কুলের কিছুটা সামনে এসে একটা ফুসকা দোকানের সামনে দাড়ায় দুজন।

    –ফুসকা খাবো।

    –টাকা নাই এখন, অন্য একদিন দিবো।

    –জেঠু টাকা দেয়নি?

    –দিয়েছিলো, শেষ হয়ে গেছে।

    –এমা, কিভাবে চলবে এখন? দাড়াও।

    মিষ্টি ব্যাগ থেকে ১০০০টাকা বের করে মামুনের হাতে দেয়।

    –এটা রাখো।

    –কই পেলি এত টাকা?

    –আব্বু আমায় যা দিতো তার থেকে জমিয়ে রেখেছিলাম।

    –এটা তুই খরচ করিস, আমার লাগবে না।

    –যাহ, রাখো তো। আমার টাকা লাগে না, খরচ করাও লাগে না। তুমি তো এমনিতেই আমার জন্য এটা সেটা নিয়ে আসো। টাকা দিয়ে আমি কি করবো?

    –তাই বলে এতগুলো টাকা।

    –রাখো, পরে পুষিয়ে নিবো।

    –ফুসকা খাবি?

    –না না, জেঠু যখন তোমায় টাকা দিবে, তখন খাবো। এখন যাই।

    –কই যাস? তোকে ডাকলাম কেনো তাহলে?

    –কেনো? কিছু বলবে?

    –নিশিকে সরি বলবি না?

    –নিশি কে?

    –যাকে কাল চড় মেরেছিলি। আমি ওকে ফোন করে এখানে আসতে বলেছি। এক্ষুণি চলে আসবে।

    –সরি বলতেই হবে?

    –দেখ মিষ্টি, নিশি তোর চেয়ে বয়সে অনেক বড়। তাছাড়া বয়সটা বড় বিষয় নয়। প্রতিটা মানুষেরই আত্মসম্মান আছে। এতগুলো মানুষের সামনে তুই ওকে চড় মেরেছিস। সে কি মনে কষ্ট পায় নি? অবশ্যই পেয়েছে। প্লিজ ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নে।

    –আচ্ছা চাইবো। তবে আমার একটা শর্ত আছে।

    –কি? 

    –তুমিও তো তখন আমায় সবার সামনে চড় মেরেছো, আমার কি কষ্ট লাগেনি?

    –সরি।

    –হবে না।

    –তাহলে?

    –আমি যা চাইবো তা আমায় দিতে হবে।

    –উল্টা পাল্টা কিছু চাইবি না।

    –ঠিক আছে, কথা দাও যা চাইবো তাই দিবে।

    –আমার আয়ত্তের বাহিরে কিছু চাইবি না কিন্তু।

    –আচ্ছা।

    –বল, কি চাস।

    –এখন না। সময় ও সুযোগ বুঝে চাইবো।

    –তোর মনে শয়তানি নাই তো?

    –থাকলেও কি? আমায় কথা দিয়েছো।

    –ঠিক আছে বাবা, দিবো।

    .

    প্রায় সময় মিষ্টি মামুনের মায়ের সাথে গিয়ে বেশ জমিয়ে আড্ডা দেয়। মামুনের মা মিষ্টিকে খুব ভালোবাসে। এক কথায় নিজের মেয়ের মতই ভালোবাসে।

    আজও রাতে মিষ্টি মামুনের মায়ের কাছে গিয়ে বসে পড়ে।

    –মিষ্টি, পড়া বাদ দিয়ে এখানে কি করছিস?

    –ধুর জেঠিমা, তুমিও শুধু মায়ের পড়া পড়া করো। এত পড়ে কি হবে? 

    –সামনে না তোর এসএসসি পরিক্ষা?

    –সমস্যা নাই, আমি সব পারি। এখন তোমার সাথে বসে সিরিয়াল দেখবো।

    –তোর মা ঝাড়ু নিয়ে আসতেছে।

    –তো কি হয়েছে? মা ঝাড়ু নিয়ে আসলে শাশুড়ি মা বাঁচাবে।

    –আমি বাবা তোমাদের মাঝে নাই।

    –আচ্ছা জেঠিমা, আমি কি বেশি বড় হয়ে গেছি?

    –নাতো, তুই এখনো সেই ছোট্ট মিষ্টিই আছিস।

    –কবে বড় হবো আমি?

    –বড় হয়ে কি করবি?

    –তোমার ছেলেকে বিয়ে করতে হবে না?

    –বাব্বাহ, আমার ছেলেকে বিয়ে করার এত সখ?

    –হুম।

    –আগে বড় হয়, মন দিয়ে পড়ালেখা করে ভালো রেজাল্ট আন। দেখবি তোর সাথে সব কিছুই ভালো হবে।

    –ওত ভালো দিয়ে আমার কাম নাই। ভালো রেজাল্ট করে কি আমি চাকরি করবো নাকি।

    –ফেল করলে কে তোকে বিয়ে করবে?

    –তোমার ছেলে।

    –খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তো আমার। আমার ছেলেকে বিয়ে দিবো শিক্ষিত মেয়ে দেখে।

    –দেখা যাবে। 

    –খেয়েছিস?

    –না খাবো। সিনথিয়া কোথায়?

    –ওর নিজের রুমে পড়তেছে।

    –আচ্ছা আমার জামাই কইগো জেঠিমা?

    –মার কাবি এখন।

    –তোমার ছেলে কই?

    –পড়তেছে। তোর মত পড়া ফাঁকি দেয় না।

    –দেখে আসি কেমন পড়তেছে।

    –এই মিষ্টি, একদম বিরক্ত করবি না ওকে।

    কে শোনে কার কথা, মিষ্টি সোজা মামুনের রুমের সামনে এসে দাড়ায়।

    দরজাটা একটু ফাক থাকায় মিষ্টি উকি দিয়ে ভেতরের দিকে তাকায়।

    রুমের কোথাও মামুনকে দেখা যাচ্ছে না। 

    ধীরেধীরে মিষ্টি ভেতরে প্রবেশ করে। বারান্দা থেকে ফিসফিস করে মামুনের কথা শোনা যাচ্ছে।

    বেশ আগ্রহ নিয়ে মিষ্টি বারান্দায় কান পাতে।

    কথার ভঙ্গিতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওপর পাশে কোনো মেয়েই হবে।

    মিষ্টি ভালো ভাবেই বুঝতে পারে মামুন কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।

    কেননা ফিসফিস শব্দে মামুনের মুখ থেকে বাবু, সোনা এসবই শোনা যাচ্ছে।

    নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে মিষ্টি দৌড়ে জেঠিমার কাছে ফিরে আসে।

    –দেখলি তো? আমার ছেলে পড়তেছে। তোর মত ফাঁকিবাজ না।

    –হুম দেখলাম। কোন মেয়ের সাথে ফোনে প্রেম করতেছে।

    –থাপ্পড় খাবি একটা।

    –বিশ্বাস না হলে গিয়ে দেখো তোমার ছেলে কেমন পড়া পড়তেছে।

    –কেনো মিথ্যা বলছিস?

    –তুমিতো জানোই জেঠিমা, আমি কখনো মিথ্যা বলি না।

    –ঠিক আছে। চল আমার সাথে।

    –হুম চলো।

    মিষ্টিকে সাথে নিয়ে জেঠিমা মামুনের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

    মামুনের রুমে প্রবেশ করে জেঠিমাও মামুনকে রুমে খুজে পায় না।

    পেছন থেকে মিষ্টি ইশারা দেয় বারান্দায় যাওয়ার জন্য।

    মামুন তখনো বারান্দায় ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে।

    .

    .

    চলবে……..

    .

    গল্প #নজরবন্দী

    লেখক #A_Al_Mamun

    .

    (একটা নতুন ভালোবাসার গল্প শুরু করলাম। সাড়া পেলে পরবর্তী পর্ব খুব তাড়াতাড়ি দিবো)

     

    গল্প #নজরবন্দী (০২)

    লেখক #A_Al_Mamun

    .

    পেছন থেকে মিষ্টি জেঠিমাকে ইশারা দেয় বারান্দায় যাওয়ার জন্য।

    মামুন তখনো বারান্দায় ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে।

    –মামুন…..

    মায়ের ডাকে আতকে ওঠে মামুন। দ্রুত বারান্দা থেকে বেরিয়ে আসে সে।

    –কি করছিলি ওখানে?

    –না মা, এক বন্ধু ফোন দিয়েছিলো। তার সাথেই কথা বলছিলাম।

    –মিথ্যা কথা জেঠিমা। আমি নিজের কানে শুনেছি, বাবু সোনা বলে ডাকছিলো।(মিষ্টি)

    –তুই এখানে কি করছিস?(মামুন)

    –জেঠিমা বড় বড় কথা বলছিলো, তার ছেলে এই তার ছেলে ওই। তাই দেখাতে নিয়ে এলাম যে তার ছেলে বিগড়ে গেছে। পড়ালেখা বাদ দিয়ে কোন মেয়ের সাথে প্রেম করতেছে।

    –একটা থাপ্পড় খাবি, কে বলেছে তোকে আমার রুমে আসতে? যা এখন থেকে।

    –চুপ কর। ও কি মিথ্যা বলছে? কি করছিলি পড়া বাদ দিয়ে?

    –কিচ্ছু করিনি আমি। মিষ্টি মিথ্যা বলেছে তোমায়।

    –কিচ্ছু বলবো না তোকে, যা করার কর।

    বলেই জেঠিমা মিষ্টিকে সাথে নিয়ে মামুনের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

    মিষ্টি পেছন ফিরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে মামুনকে ভ্যাংচি কাটে।

    মা সাথে না থাকলে হয়তো মিষ্টি একটা চড় খেয়ে বসতো।

    জেঠিমার সাথে বসে অনেক্ষন সিরিয়াল দেখার পর মিষ্টি আবার মামুনের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

    –মিষ্টি, কই যাস?

    –দেখে আসি আমার জামাই শুধরেছে কিনা। 

    –মার খাবি এখন। বস এখানে।

    –১ মিনিট, দেখেই চলে আসবো।

    জেঠিমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই মিষ্টি দৌড়ে আবার মামুনের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

    –তুই আবার এসেছিস আমার রুমে?

    –দেখতে এলাম পড়ছো কিনা।

    –এদিকে আয়।

    –না।

    –কেনো?

    –মারবে।

    –মারবো না, আয়।

    –সত্যি তো?

    –হুম।

    –যদি মারো আমি জেঠিমাকে বিচার দিবো।

    –মারবো না বললাম না, এদিকে আয়।

    –হুম

    –আচ্ছা আমাকে এটা বল। কেনো আমায় কাছের মানুষদের সামনে ছোট করিস? খুব মজা লাগে?

    –কই করলাম?

    –কেনো মায়ের সামনে এভাবে আমায় অপরাধী বানালি? 

    –তুমি অন্য মেয়ের সাথে কথা বলছিলে কেনো তাহলে?

    –অন্য মেয়ে কই পেলি? ওটা আমার গার্লফ্রেন্ড।

    –কিহ? তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে?

    –কেনো? থাকতে পারে না?

    –না পারবে না। কে ওই মেয়ে?

    –দেখ মিষ্টি, তুই যা করছিস তা ঠিক না। এখনো তুই অনেক ছোট। তুই আরো বড় হ, দেখবি এসব ভূত তোর মাথা থেকে চলে গেছে।

    –আমি চাই না আমার মাথা থেকে এই ভূত যাক। তুমি আর কখনো ওই মেয়ের সাথে কথা বলবে না, বাস।

    –তোর কথামত হবে নাকি?

    –হুম হবে, নাহলে ভালো হবে না। 

    –বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।

    –আমি জেঠিমাকে সব বলবো।

    –কেনো বলবি?

    –তুমি কেনো বোঝো না? 

    –কি বুঝবো আমি?

    –আমি তোমায় খুব খুব ভালোবাসি। প্লিজ ওই মেয়ের সাথে কথা বলিও না।

    –পাগলামি করিস না মিষ্টি, ভালোবাসার বয়স এখনো তোর হয়নি। এটা মোটেও ভালোবাসা হতে পারেনা।

    –আমি এতকিছু বুঝি না তুমি কোনো বাহিরের মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবে না। শুধু আমার সাথে বলবে। 

    –তুই যা তো এখান থেকে। 

    –প্লিজ অন্য কাউকে ভালোবেসো না। সেই ছোট থেকেই তোমায় মন দিয়ে বসে আছি। ভালোবাসি তোমায়।

    –তুই পাগল হয়ে গেছিস। যা ঘরে যা, কিছুক্ষন ভেবে দেখ তুই যা করছিস তা কি ঠিক নাকি ভুল। উত্তর পেয়ে যাবি। যা।

    –শুনো মিস্টার মামুন, তুমি শুধু আমার। আমায় এখনো চেনো নি তুমি। খুব তাড়াতাড়ি চিনতে পারবে। তুমি ছাড়া এই দুনিয়ার এমন মানুষ এখনো জন্ম নেয়নি যে আমায় কাঁদাতে পারে, আমায় আঘাত করতে পারে। সে অধিকার আমি তোমায় দিয়েছি। কারন তুমি আমার মনের মধ্যখানে আছো। আমার ভালোবাসা আমি আদায় করেই ছাড়বো।

    হনহন করে মিষ্টি মামুনের রুম থেকে বেরিয়ে আসে। পেছন থেকে মামুন হা করে মিষ্টির চলে যাওয়া দেখছে।

    এমন মিষ্টিকে মামুন কখনো দেখেনি। যে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এতটা হুংকার দিয়ে যেতে পারে।

    .

    –কিরে? ওকে জ্বালাচ্ছিলি? মানা করলাম যাস না।

    –তুমি তো নিজের ছেলের খেয়াল রাখতে পারো না। তাই আমাকে যেতে হলো।

    –আবার কি করলো সে?

    –কি করবে আবার? বললো সে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলো। 

    –ওর হাতে মোবাইল দেওয়াটাই আমার ভুল হইছে। পড়ালেখার ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

    –জেঠিমা, তোমার ছেলেকে আমার হাতে তুলে দাও। দেখবে ওকে একদম সোজা করে ফেলেছি।

    –তুই নিজে তো আগে সোজা হ, কয়দিন পরই বোর্ড পরিক্ষা, আর তুই আমার সাথে বসে সিরিয়াল দেখতেছিস।

    –আমার সব পড়াই মুখস্থ, তোমার ছেলের মতো আমি ডাব্বা মারি না। 

    –বেশি ফাজিল হয়েছিস তুই।

    –আচ্ছা জেঠিমা, আমি দেখতে কেমন গো?

    –মাশা-আল্লাহ, খুব সুন্দর। একদম পরীর মত।

    –তাহলে তোমার ছেলের বউ করে নাও না আমায়।

    –পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট কর, তাহলে করবো।

    –সত্যি তো?

    –হুম।

    –ঠিক আছে, আমি মন দিয়ে পড়বো। ভালো রেজাল্ট করবো।

    –এই তো লক্ষি মেয়ে, যা পড়তে বস।

    –আচ্ছা।

    আর কোনো কথা না বাড়িয়ে মিষ্টি সোজা নিজের রুমের দিকে হাটা দেয়।

    এবার মামুনের মত জেঠিমাও হ্যা করে মিষ্টির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। 

    এতক্ষণ এত কথা বলেও যাকে তাড়ানো যাচ্ছিলো না, এখন মামুনের সাথে বিয়ের কথা বলায় সোজা পড়তে চলে গেলো।

    মজা করে বলা কথাটাও এবার জেটিমা সিরিয়াসলি নিয়ে নেয়। আসলেই কি মিষ্টি মামুনকে পছন্দ করে? নাকি মজা করছে? সেই ছোটবেলা থেকে মিষ্টির প্রতিটা কার্যকলাপে এটাই ফুটে উঠে যে মিষ্টি বরাবরই মামুনের প্রতি দূর্বল।  মামুনের প্রতিটা বিপদআপদে মিষ্টিই সবার প্রথমে মামুনের পাশে এসেছে, সবসময় খেয়াল রেখেছে। 

    কখনো মামুন অসুস্থ হলে সেবা করার জন্য সবার আগে মিষ্টিই তার পাশে এসে বসেছে।

    তাহলে সত্যিই কি মিষ্টি মামুনকে পছন্দ করে? জেঠিমার চিন্তা এবার মহাচিন্তায় রুপ নেয়।

    .

    হঠ্যাৎ করেই মামুন নিজেকে কেমন যেনো শূন্য অনুভব করে। কয়েকদিন ধরে মিষ্টি আর আগের মত জ্বালায় না, আগের মত অধিকার খাটাতে আসে না। কোনো মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে দেখলেও আগের মত রেগে যায় না।

    বিষয়টা মামুনকে কেমন যেনো পোড়ায়। 

    এমনই এক রাতের প্রায় ১২:৩০ এর কাছাকাছি সময় মামুন মিষ্টির রুমের জানালার কাছে এসে দাড়ায়। ভেতর থেকে রুমের আলো জ্বলছিলো, একবার জানালায় টোকা দেওয়ার সাথে সাথেই ভেতর থেকে আওয়াজ আসে “কে?”

    –আমি, দরজাটা একটু খোল।

    –এত রাতে?

    –কথা আছে তোর সাথে।

    –সবাই ঘুমিয়ে গেছে, এখন দরজা খোলা যাবে না, কাল সকালে বলিও।

    –তুই কি বেশি ব্যস্ত?

    –বেশি গুরুত্বপূর্ণ কথা?

    –ওরকম কিছুই।

    –আচ্ছা দাড়াও, আমি আসছি।

    মিষ্টি ধীরেধীরে দরজা খুলে বাহিরে উকি দিয়ে দেখে মামুন দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।

    হাতে একটা গ্যাসলাইট নিয়ে মামুনের সামনে জ্বালিয়ে দেয়।

    –কি করছিস?

    –চেক করছি, তুমি আসল? নাকি ভূত?

    –ধূর পাগলি।

    –বলো কি বলবে।

    –বেশি তাড়া?

    –হুম ঘুম পাচ্ছে, কাল থেকে তো পরিক্ষা শুরু, তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে।

    –১০ মিনিট সময় হবে?

    –বাব্বাহ, এতদিন আমি সময় চাইতাম, আজ তুমি সময় চাচ্ছো। কি হয়েছে গো তোমার?

    –একটু ওদিকে চল। এখানে ফিসফিস শব্দ শুনলে বাকিদের ঘুমের সমস্যা হবে।

    –এত রাতে?

    –ভরসা করিস?

    –হুম।

    –চল।

    –আচ্ছা।

    .

    –এবার বলো কি বলবে….

    –কি হয়েছে তোর?

    –কই?

    –এই কয়দিন আমার সাথে তেমন কোনো কথাই বলছিস না। কিছু হয়েছে?

    –তুমিতো খুবই বিরক্ত, তাই আর বিরক্ত করি না।

    –এজন্য আর আমার সাথে কথা বলিস না?

    –হুম।

    –হুম বুঝলাম। 

    –কি বুঝেছো?

    –কিছুনা।  যা…..

    –এটা বলার জন্য এত রাতে ডেকেছিলে?

    –হুম

    –ও আচ্ছা। কাল থেকে তো আমার পরিক্ষা শুরু, আমার জন্য দোয়া করিও যেনো ভালো রেজাল্ট করতে পারি।

    –হুম।

    –আমি যাই, ঘুমাতে হবে।

    –আচ্ছা যা।

    .

    মামুনকে বিদায় দিয়ে মিষ্টি আবার ঘরে ফিরে যায়। বিষয়টা কেমন যেনো অসস্থিকর করে তোলে মামুনকে। আসলে মানুষ অভ্যাসের দাস, অবিরত চলতে থাকা বিষয়গুলো একদিন হুট করে বন্ধ হয়ে গেলে নিজেকে সত্যিই মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়। সেটা ভালোবাসা অথবা বেদনাদায়কই হোক না কেনো।

    তবুও নিজেকে কোনে রকম বুঝ দিয়ে মামুন নিজের কক্ষে ফিরে আসে।

    পরিক্ষা চলাকালীন সময় মিষ্টি কখনো মামুনের সামনে আসেনি। কিন্তু বাকি সবার সাথে মিষ্টির আচরণ আগের মতই ছিলো।

    ভালোয় ভালোয় সবগুলো পরিক্ষাই শেষ হয়,

    সারাদিন মামুনকে এদিক ওদিক আড়চোখে দেখে মজা নিতে থাকে। নিজেকে আজ কেমন যেনো পাখি মনে হচ্ছে। বন্দী শিকল আজ খুলে গেছে, খুবই উড়তে ইচ্ছে করছে।

    –কত মজা তাইনারে মিষ্টি আপু? পরিক্ষা শেষ হলে মনে হয় খোলা আকাশে কেউ ছেড়ে দিয়েছে। তোর মত আমারও উঠতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আগামী বছরতো আমারও এসএসসি। পড়াই শেষ হয়না।(সিনথিয়া) 

    –হায়রে পাগলি। আমি কেনো উড়তেছি সেটা জানিস?

    –কেনো?

    –কারন কিছুদিন পরই আমি তোর ভাবি হয়ে যাবো।

    –অ্যাহ? এই গল্প তোকে কে শোনালো?

    –চুপ কর, তোর ভাইতো আমাকে চোখে হারায়, যখনই তার দিকে তাকাই দেখি যে সে আমার দিকে তাকিয়েই আছে।

    –তুই পাগলের মত লাফালাফি করছিস, তাই অবাক হয়ে তোর দিকে তাকাচ্ছে, ওত খুশি হোস না।

    –যাহ, একটা ভালো কথাও তোর মুখ দিয়ে বের হয় না। খালি আমাকে তোদের ঘরে ঢুকতে দে, তোর খবর আছে। পুরো সংসার আমি চালাবো। 

    –দেখ, আরো ভালো করে স্বপ্ন দেখ।

    –সময় আসুক, দেখবি ভাবি ভাবি বলে আমার পেছন পেছন ঘুরবি। আমি পাত্তাও দিবো না।

    –চোখের সামনে একটা ভালো মানুষকে এভাবে পাগল হতে দেখে সত্যিই খুব আফসোস লাগছে। চাচাকে বলে তোকে একটা ভালো ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।

    –তুই আমার ননদ না হলে একটা থাপ্পড় দিতাম।

    –যা ভাগ, আইছে ভাবি হইতে……

    .

    রাতে মিষ্টি জেঠিমার কাছে এসে ড্রয়িংরুমে বসে।

    –জানো জেঠিমা, আজ নিজেকে কত হালকা মনে হচ্ছে। বাব্বাহ, এতদিন মনে হচ্ছিলো পরিক্ষা বোঝা হয়ে গাড়ে চেপে বসেছে।

    –কেমন হলো সব পরিক্ষা?

    –আলহামদুলিল্লাহ, ভালো কিছুই হবে।

    –তাই যেনো হয়।

    –এখন শুধু রেজাল্টের পালা। এরপরই তুমি তোমার কথা রাখবে।

    –আমার আবার কিসের কথা?

    –বাব্বাহ, যেনো ভুলেই গেছো।

    –কি ভুলবো?

    –বলেছিলে না ভালো রেজাল্ট করলে আমাকে তোমার ঘরের বউ বানাবে।

    –তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? কি সব আবোলতাবোল বলছিস? 

    জেঠিমার চোখের দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে মিষ্টি। যেনো সত্যিই পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে।

    –জেঠিমা, তুমি মজা করছো?

    –তুই কি আসলেই সিরিয়াস? আমি তো সেদিন মজা করে তোকে বলেছিলাম। মামুন তোর জেঠাতো ভাই হয়, এটা কি কখনো সম্ভব নাকি? 

    –তাহলে কেনো বলেছিলে আমায় মন দিয়ে পড়তে, পরিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে কথা না বলতে, ভালো রেজাল্ট করলে তাকে আমার হাতে তুলে দিবে। কেনো এত মিথ্যে বলেছো?

    –মিষ্টি, তুই এখনো বাচ্চা, কিন্তু এতটাও বাচ্চা না যে তুই মজা করে বলা কথাটা বুঝবি না। তাছাড়া কাল তোর বাবা তোর জন্য বিয়ের সমন্ধ নিয়ে আসছে।

    –মানে?

    –মানে তোর পরিক্ষা শেষ হওয়ার জন্য এতদিন অপেক্ষা করছিলো, আজ তো তোর পরিক্ষা শেষ। তাই কালই তোর বিয়ের জন্য পাত্রপক্ষকে আসতে বলা হয়েছে।

    –জেঠিমা, সবকিছুর একটা লিমিট আছে। আমাকে পাগল বানিও না, সব শেষ করে দিবো আমি।

    .

    .

    চলবে……..

     

    গল্প #নজরবন্দী (০৩)

    লেখক #A_Al_Mamun

    .

    কালই তোর বিয়ের জন্য পাত্রপক্ষকে আসতে বলা হয়েছে।

    –জেঠিমা, সবকিছুর একটা লিমিট আছে। আমাকে পাগল বানিও না, সব শেষ করে দিবো আমি।

    –মিষ্টি, বাসায় যা। 

    –না, আগে বলো কেনো আমাকে ধোকা দিয়েছো? তোমার কথামত সবই করেছি আমি। কেনো আমাকে মিথ্যে বলেছো?

    –মা আমার, এমন করিস না। এটা কিছুতেই সম্ভব না, মামুন তোর ভাইয়ের মতন।

    –আমার বিয়েটা আটকাও, নাহয় খুব খারাপ হয়ে যাবে।

    –বেয়াদবি করিস না মিষ্টি, ঘরে যা।

    –সে কোথায়?

    –সে কে?

    –তোমার ছেলে।

    –আমার ছেলে যেখানেই থাকুক। তোর কাজ নেই। যা এখান থেকে।

    জেঠিমার সামনে থেকে বেরিয়ে মিষ্টি সোজা মামুনের রুমে ঢুকে পড়ে।

    জেঠিমাও মিষ্টির পেছন পেছন মামুনের রুমের সামনে আসে।

    ভেতরেই ঢুকেই মিষ্টি ভেতর থেকে দরজা আটকে দেয়।

    মিষ্টির এমন পাগলামি দেখে জেঠিমা মিষ্টির বাবা মাকে ডাকতে শুরু করে।

    সবাই দৌড়ে এসে একসাথেই দরজা ধাক্কাতে থাকে থাকে। তবুও মিষ্টি দরজা খোলে না।

    কিছুক্ষণ পরই কোথা থেকে যেনো মামুন এসে দরজার সামনে দাড়ায়।

    –তুই এখানে? কই ছিলি?(মা)

    –দোকানে গিয়েছিলাম। কিন্তু সবাই এখানে কি করছো?

    –আমরা তো ভাবলাম তুই ভেতরে। মিষ্টি ভেতরে গিয়ে দরজা আটকে দিয়েছে।

    –কেনো?

    –জানি না।

    –সরো, আমি দেখছি।

    সবাই সাইটে গিয়ে দাড়ায়। মামুন দরজায় টোকা দিয়ে মিষ্টির নাম ধরে ডাকতে থাকে।

    সাথে সাথেই মিষ্টি দরজা খুলে দেয়।

    মামুন খেয়াল করে দেখে মিষ্টির বাম হাত কাটা, এবং হাত দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে।

    মামুনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মিষ্টি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

    পুরো বাড়িতে হইহুল্লোর শুরু হয়ে যায়। সবাই ধরাধরি করে মিষ্টিকে হাতপাতালে নিয়ে আসে।

    ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তের ব্যবস্থা করা হয়। 

    সবাই ICU এর বাহিরে মিষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে।

    এদিকে মিষ্টির বাবা মা মেয়ের জন্য কান্না করতে করতে তাদেরও অবস্থা খারাপ। 

    তারা এখনো জানে না কেনো মিষ্টির এই অবস্থা।

    সারাদিন পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রাখা মেয়েটা হঠ্যাৎই এমন কিছু করে বসবে ব্যাপারটা কারোই বিশ্বাস হচ্ছে না।

    বেশ কিছুক্ষণ পর ICU থেকে এক নার্স বেরিয়ে এসে মামুনকে খুজতে থাকে।

    –কি হয়েছে ম্যাডাম?  

    –রুগি বেশ কিছুক্ষণ যাবত বিড়বিড় করে মামুন মামুন ডাকছে। তাই ডাক্তার আপনাকে ডাকতে বললো।

    –আমাকে ডাকছে? 

    –হুম।

    –আচ্ছা চলুন।

    নার্সের ডাকে সাড়া দিয়ে মামুন ভেতরে প্রবেশ করে।

    .

    মিষ্টি মুখে অক্সিজেন আর উপরে একটা রক্তের ব্যাগ টাঙানো। বিড়বিড় করে তখনো মামুন মামুন শব্দ করে যাচ্ছে মিষ্টি।

    মামুন এসে মিষ্টি পাশে বসে।

    ধীরেধীরে মামুন মিষ্টিকে ডাকতে থাকে। হালকা একটু চোখ মেলে মামুনের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা মুচকি হাসি দেয়। 

    হাতটা সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে মামুনের হাত ধরার চেষ্টা করে সে। মামুন নিজে থেকে মিষ্টির হাতটা নিজের হাতে নিয়ে নেয় এবং অন্য হাত দিয়ে পরম আদরে মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মামুনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে নেয় সে।

    একটু পর মিষ্টি ঘুমিয়ে পড়লে মামুন বাহিরে আসে।

    –কি হয়েছে মামুন? ডাক্তার কি বললো?(মিষ্টির বাবা)

    –মিষ্টি এখন ঠিক আছে, আর কোনো ভয় নেই। ডাক্তার বললো বিশ্রাম করলেই ঠিক হয়ে যাবে।

    –আলহামদুলিল্লাহ….  কিন্তু কেনো মিষ্টি এমন করলো?

    –আমিও বুঝতে পারছি না চাচা, কি হয়েছিলো ওখানে? আর মিষ্টি আমার রুমেই বা গেলো কেনো? 

    –ও বললো জেঠিমার কাছে যাচ্ছে, কিন্তু ওখানে গিয়ে এমন কাজ কেনো করলো সেটাতো আমিও বুজতে পারছি না।(মিষ্টির মা)

    একটা চেয়ারে মামুনের মা চুপ করে বসে আছে। আর বাকি সবাই কথা বলে যাচ্ছে।

    মিষ্টির মা এগিয়ে এসে পাশের চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করে…

    –ভাবি, কি হয়েছিলো?

    –আমরা বাড়ি গিয়ে এবিষয়ে কথা বলি। এটা হাসপাতাল, ভালো হয় বাড়ি গিয়ে বলি।

    –ঠিক আছে।

    .

    প্রায় মাঝরাতেই মিষ্টিকে নিয়ে সবাই বাড়ি ফিরে। মামুন মিষ্টিকে মিষ্টির রুমে শুইয়ে দিয়ে পাশেই বসে আছে।

    আর মিষ্টির বাবা মাকে নিজের ঘরে ডেকে মামুনের মা বাবা আলোচনায় বসে।

    –ভাবি, কি হয়েছিলো একটু বলবে?(মিষ্টির মা)

    –কি বলবো সেটাই বুজতে পারছি না। তোর মেয়ে এতটা জেদি এটা আমি আগে জানতাম না।

    –কি করেছে মিষ্টি?

    –তোরা কি জানিস মিষ্টি যে মামুনকে পছন্দ করে।

    –কি বলছো এসব?

    –আমি ঠিকই বলছি।

    এরপর সবকিছুই মিষ্টির বাবা মাকে খুলে বলা হয়।

    সবাই মিষ্টির এমন কর্মকাণ্ডে বেশ অবাক হয়। নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎতের কথা চিন্তা করে মিষ্টির বাবা বড় ভাইয়ের কাছে মামুনকে চেয়ে বসে। সাথে সাথেই মামুনের বাবা রাজি হয়ে যায়।

    কিন্তু মামুনের মা সম্পূর্ণ অমত পোষণ করে। 

    –আমি মানি না।

    –তোমার আবার কি হলো?(মামুনের বাবা)

    –আপনি দেখুন, এমন জেদি মেয়ে আমার ছেলের বউ হয়ে এলে এই সংসারে শান্তি আসবে না।

    –তুমি ভুল ভাবছো। আচ্ছা বলোতো, এই জেদ সে কার জন্য করেছে? তোমার ছেলের জন্য। এছাড়া মিষ্টিকে না মানার আর একটা কারন তুমি আমাকে দেখাও।

    –ভাবি, আমি কখনো তোমাদের কাছে কিছু চাইনি। হাত জোর করে তোমাদের কাছে আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ চাইছি। আমার একটাই সন্তান, যদি ওর কিছু হয়ে যায় তাহলে আমিও বাচবো না। মেয়েকে তো কোথাও না কোথাও বিয়ে দিতেই হবে, যদি সেটা আমার নিজের ভাইয়ের ছেলে হয় তাহলে সত্যিই আমি খুশি হবো। একমাত্র সন্তানকে সবসময় চোখের সামনে দেখবো।(মিষ্টির বাবা)

    –আমি বুজতে পারছি না কি করবো, তাছাড়া মামুন রাজি হবে কিনা সেটাও আমি জানি না। (মামুনের মা)

    –রাজি হবে না মানে? ওকে আমি রাজি করাবো। আমার ভাইয়ের মেয়ে মানে আমারও মেয়ে, আমি চাইনা সামনে আবার এমন কিছু হোক। তাছাড়া মিষ্টি খুবই লক্ষি মেয়ে। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। 

    দুই ভাইয়ের সম্মতির কারনে বাকি সবাইকেই বাধ্য হয়ে রাজি হতে হয়। মামুন আর মিষ্টিকে না জানিয়েই পরদিন তাদের বিয়ে ঠিক করা হয়।

    আচমকা বাড়িতে কাজি এসে উপস্থিত। মামুন যেনো কারেন্টের শক খেয়ে বসে। 

    বাবাকে ছোটবেলা থেকেই ভূতের মত ভয় পায় মামুন। মুখ থেকে আর একটা কথাও বের করতে পারেনি সে।

    কোনোরকম অনুষ্ঠান ছাড়াই হুট করে দুজনের বিয়ে হয়ে যায়। 

    বিয়ের কাজ শেষ করে সবাই যখন কথাবার্তায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই মামুন সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

    এবং ফোনটা সুইচ অফ করে রাখে সে। সারাদিন খোঁজাখুঁজি করার পরও মামুনের আর খোজ পাওয়া যায়নি।

    এদিকে মিষ্টি কাঁদতে কাঁদতে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে।

    রাতের ১২টার পর হঠ্যাৎই মায়ের ফোনে কল দেয় মামুন।

    –বাবা কই তুই?

    –ঘরের পেছনে।

    –দাড়া আমি আসছি।

    মা ঘরের পেছনের দরজা খুলে দিয়ে মামুনকে ঘরে নিয়ে আসে।

    –কই ছিলি সারাদিন?

    –এত জিজ্ঞেস করা লাগবে না। খুদা লাগছে, খাবার দাও। খেয়ে আবার চলে যাবো।

    –কি বলিস? কই যাবি?

    –এই বাড়িতে আমার আর থাকার ইচ্ছা নেই।

    –দেখ বাবা, যা হওয়ার হয়ে গেছে। তোর বাবার জোরাজুরিতে আমিও না করতে পারিনি। মিষ্টিকে মেনে নে।

    –কেউ একবার আমার কাছে জানতেও চাইলে না আমি রাজি কিনা। কেনো এমন করলে?

    –তোকে সব খুলে বলবো, আয় ভেতরে আয়।

    রান্নাঘরে বসেই মামুন খাবারটা খেয়ে নেয়। এবং মিষ্টির পুরো কাহিনীটা মামুনকে খুলে বলা হয়।

    –মা, আমি আগে থেকেই জানি মিষ্টি আমাকে পছন্দ করতো। ও জেদ করলো বলে এভাবে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে? আমারও তো পছন্দ অপছন্দের একটা ব্যাপার আছে। কেউ একবার জানতেও চাইলে না।

    –এখন আর কি করবি বল। যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। ঘরে চল।

    –না মা, আমার যাওয়ার ইচ্ছা নেই।

    –পাগলামো করিস না, সবাই তোর জন্য কত চিন্তা করছে। মিষ্টি তো সারাদিন কান্না করছে, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কিচ্ছু খায়নি। তুই না আসলে নাকি খাবে না। ওর কথা একবার ভাব।

    –সবাই ওর কথা ভাবে, কেনো আমার কথা কেউ ভাবলো না। 

    –একটা মেয়ে তোর জন্য মরতে যাচ্ছিলো, তাতে তোর কিছুই যায় আসে না? খালি নিজের কথাই বলে যাচ্ছিস। যা ভেতরে যা, মেয়েটা সেই কখন থেকে উপোষ।

    –বাবা কোথায়?

    –রুমে।

    –দেখলে বকবে নাতো?

    –আমি বুঝিয়ে বলবো, তুই রুমে যা। মিষ্টি তোর রুমেই আছে। আমি সিনথিয়াকে দিয়ে মিষ্টির জন্য খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

    –আচ্ছা।

    .

    এদিক ওদিক বাবাকে লক্ষ্য করে চুপিচুপি নিজের রুমে প্রবেশ করে মামুন।

    হঠ্যাৎ মামুনকে দেখতে পেয়ে মিষ্টি দৌড়ে এসে মামুনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

    মিষ্টিকে ছাড়িয়ে বিছানায় বসায়।

    –কোথায় ছিলে সারাদিন? বাবা কতবার তোমায় কল দিয়েছে। ফোন কেনো বন্ধ ছিলো?

    –তুই তো আমার লাইফটাই শেষ করে দিলি। কি করবো এখানে থেকে বল?

    –এভাবে বলতে পারলে?

    –তুই জানিস আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। তবুও কেনো আমায় বিয়ে করলি?

    অন্য কাউকে ভালোবাসি কথাটা শুনেই মিষ্টির চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারন করে। চোখের পানি মুছে মামুনের হাত ধরে একটা হেচকা টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে বুকের ওপর উঠে বসে মিষ্টি।

    মামুন বেশ ঘাবড়ে যায়।

    –কি করছিস মিষ্টি, সর।

    –কি বলেছিস আবার বল, কাকে ভালোবাসিস?

    –তুইতোকারি করছিস কেনো? আমি তোর বড়।

    –শোন, তুই শুধু আমার। আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসার কথা বললে তোকে আমি খুন করে ফেলবো। শুধু আমাকেই ভালোবাসবি।

    –মিষ্টি, বেশি হয়ে যাচ্ছে। 

    –আমার ভালোবাসায় আঘাত করলে আমি কাউকে ছাড় দেবো না। একবার ভালোবেসেই দেখোনা। তোমার জন্য জীবনটাও দিয়ে দিতে পারবো। কখনো কমপ্লেইন করার সুযোগটাও পাবে না।

    –বুকের ওপর থেকে নাম।

    –না, আগে ভালোবাসি বলো।

    –নামতে বলেছি।

    –ভালোবাসি না বললে নামবো না।

    –আমি এখন জোর করে উঠতে গেলে পড়ে ব্যথ্যা পাবি।

    –সেটাতো তুমি রোজই দাও। এ আর নতুন কি? এখনতো আমি তোমার বউ। তোমার ওপর আমার পুরো অধিকার আছে। ভালোবাসি না বললে নামবো না।

    দুহাত দিয়ে মিষ্টির কোমড় শক্ত করে ধরে উল্টে মিষ্টিকে বিছানায় ফেলে দিয়ে মামুন উঠে দাড়ায়।

    –তোকে আমি কখনোই ভালোবাসবো না।

    –আচ্ছা? আমিও দেখে নিবো আমায় ভালো না বেসে কই যাও তুমি। 

    –তোকে বললাম না আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। তোকে বউ হিসেবে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।

    –অন্য কাউকে ভালোবাসো? কে সে? নিশি?

    –হুম।

    –আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম। সবার সামনে চড় দিয়েছি, তবুও মেয়েটার লজ্জা নেই।

    –মিষ্টি, বাড়াবাড়ি করিস না। এমনিতেই বাবার ভয়ে কিছু বলতে পারছি না। না হলে তোকে ধাক্কা দিয়ে আমার রুম থেকে বের করতাম।

    –সেটা আর চাইলেও তুমি পারবে না। এখন এটা আমার রুম, রুম আমার, ঘর আমার, পরিবার আমার, তুমি আমার। সব আমার।

    –মরার অভিনয়ে বাবা মাকে ব্ল্যাকমেল করে এই বিয়ে করেছিস। আমিও দেখে নেবো তুই এই সংসারে কি করে থাকিস।

    –অভিনয় করি নি। এসেছিলাম তোমার কাছে শেষ বারের মত জানতে আমায় ভালোবাসো কিনা, কিন্তু তুমি ছিলে না। এতটাই রাগ হয়েছিলো যে কিছু করতে না পেরে হাত কেটেছি। মন থেকে তোমাকে ভালোবেসেছি। তুমি যতই চাও, তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবোনা।

    –সেটা সময়ই বলে দেবে।

    –আচ্ছা, আমি কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে যে আমি তোমায় ভালোবাসি।

    –কিছুই করা লাগবে না। শুধু আমায় ছেড়ে দে। যাকে আমি ভালোবাসি তার সাথে থাকতে দে।

    –তোমার মনে কি আমার জন্য তিল পরিমাণও ভালোবাসা নেই?

    –না নেই, থাকলে সেটা আগেই দেখতি।

    –ঠিক আছে, তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসা জন্মানোর দায়িত্ব আমার। একটা সময় আসবে আমার চেয়েও তুমি আমায় বেশি ভালোবাসবে, দেখে নিও।

    –স্বপ্নই দেখে যা শুধু।

    আর কিছু না বলে মিষ্টি একপাশ হয়ে শুয়ে পড়ে। অন্য দিকে মামুন নিজের বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়ে।

    দুইদিনের মধ্যে হঠ্যাৎই পুরো পরিস্থিতি কেমন যেনো বদলে গেছে। কি হয়েছে, কেনো হয়েছে, কি হবে, করোই কিছু জানা নেই।

    .

    ভোরে নামাজ পড়া শেষে মিষ্টি শাশুড়ির রুমে চলে যায়, তিনি তখনো নামাজের পাটিতে বসা। ওমনি মিষ্টি শাশুড়ির কোলে মাথা রেখে শুইয়ে পড়ে।

    –কিরে পাগলি, এত সকাল সকাল এখানে?

    –খুব খুদা লেগেছে।

    –ওমা, খুদা লেগেছে কেনো? রাতে খাসনি?

    –না।

    –কি বলে পাগলি মেয়ে, কাল সারাদিন না খেয়ে ছিলি? তোদের নিয়ে আর পারি না।

    –জানো জেঠিমা, আমি একদমই এমন নই। জানি না কেনো এমন করছি। সত্যিই আমি ওনাকে খুব ভালোবাসি। জানো, কাল রাতে আমায় বললো সে নাকি তার বান্ধবী নিশিকে পছন্দ করে এবং ভালোবাসে। আমার এখন কি করা উচিত বলো, হুট করেই আমার বিয়েটা হয়ে গেলো। আমি জানি না বউ হিসেবে আমার এখন কি করা উচিত। জানো, খুদায় আমার মরে যাওয়ার মত অবস্থা, কাল রাতে সে আমায় বকাবকি করে বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়ে। একবার জানতেও চাইলো না আমি কেমন আছি, খেয়েছি কিনা। সারারাত ঘুমায়ইনি, কিন্তু সে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে। আমার জন্য বুঝি তার মনে একটুও জায়গায় নেই? কতবার ভেবেছি এই বুঝি উঠে জিজ্ঞেস করবে খেয়েছি কিনা। কিন্তু সে আসলো না, খুব কান্না পেয়েছে। কি করবো আমি বলো। আমি কি এতই খারাপ? আচ্ছা জেঠিমা, ওই নিশি কি আমার চেয়েও বেশি সুন্দর? কেনো সে ওই মেয়েকে ভালোবাসে? 

    এক নজরে জেঠিমা মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। বাচ্চাদের মত মিষ্টি টুনটুন করে মনের কথাগুলো বলেই যাচ্ছে। কতটা নিশ্পাপ লাগছে মিষ্টিকে। কথা বলার সময় ঠোটগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে। এক্ষুণি বুঝি চোখ বেয়ে অশ্রুকণা ঝরে পড়বে। 

    মিষ্টির মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে জেঠিমার মনটা একদম নরম হয়ে যায়। 

    রান্নাঘর থেকে রাতের খাবারগুলো গরম করে নিয়ে এসে মায়ের মত আদর করে নিজের হাতে মিষ্টিকে খাওয়ানো শুরু করে। 

    অশ্রু ভেজা চোখে জেঠিমাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ওঠে মিষ্টি।

    –দেখ মা, তোর বয়সটা এখনো অনেক কম। সংসার সমন্ধে তোর ততটাও ধারণা নেই। শুধু এটাই বলবো তোকে, কাউকে জোর করে আটকে রাখা যায়না এটা ঠিক, তবে মামুন এখন তোর জন্য যে কেউ নয়, তোর স্বামী। ওর ওপর তোর পুরো অধিকার আছে, অধিকার খাটা।

    –আমি পারবো?

    –পারবি, নিজের ওপর ভরসা রাখ।

    –ঠিক আছে, আমি তাহলে এখন থেকে ওনার মনের মতন হওয়ার চেষ্টা করবো। 

    মিষ্টির এমন কথায় শাশুড়ি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে… 

    –পাগলি মেয়ে, যা রুমে গিয়ে বিশ্রাম নে।

    .

    .

    চলবে………..

     

    গল্প #নজরবন্দী (০৪)

    লেখক #A_Al_Mamun

    .

    –পাগলি মেয়ে, যা রুমে গিয়ে বিশ্রাম নে।

    –ওমা, আমি না এখন বউ, তোমার ঘরের পুরো দায়িত্ব এখন আমার। এখন দেখবা তোমাদের কিভাবে জ্বালাই।

    –দেখি আপনি কেমন জ্বালান।

    মন খারাপ করে শাশুড়ির কাছে গিয়েছিলো, কিন্তু হাসিমুখে বেরিয়ে এসে মিষ্টির মাথা ঘুরতে থাকে। কি করবে এমন কিছুই বুঝতে পারছে না।

    কোনো উপায় না পেয়ে সোজা নিজের রুমে এসে পড়ে।

    মামুন তখনো ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে। মিষ্টি ধীরেধীরে মামুনের কাথাটা সরিয়ে কাথার নিচে ঢুকে পড়ে।

    একটু উঞ্চতা পেয়ে মামুন মিষ্টিকে বুকে টেনে নেয়। নিজে থেকে মামুনের আরো কাছে এগিয়ে আসে সে। 

    মিষ্টির গরম নিশ্বাসে ঘুমন্ত মানুষটা জেগে ওঠে। এভাবে মিষ্টিকে নিজের বুকের মাঝে দেখে এক ঝাটকায় মিষ্টিকে সরিয়ে দিয়ে মামুন উঠে দাড়ায়।

    –তুই আমার সাথে এখানে কি করছিস?

    –কেনো? স্বামীর কাছে কি আসতে পারি না?

    –দেখ মিষ্টি, মাথা খারাপ করিস না। একটু ঘুমাতে দে।

    –সারারাত নাক ডেকে ডেকে ঘুমিয়েছো। তবুও আরো ঘুমাতে চাচ্ছো। আর আমার যে এক ফোটাও ঘুম হায়নি। আমার কি ঘুমাতে ইচ্ছে করে না?

    –কে মানা করছে? ঘুমা গিয়ে।

    –তুমিতো তোমার বালিশ নিয়ে নিয়েছো। তাহলে আমি কিভাবে ঘুমাই? তুমি শুয়ে পড়ো। আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো।

    –পারবো না, আমার কোলবালিশটা কোথায়?

    –ওটাতো ছিড়েবিড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিছি।

    –কিহ? আমার কোলবালিশ ছিড়ে ফেলে দিয়েছিস?

    –তো? অনেক হয়েছে, আর না। এখন থেকে মনে করবে আমিই তোমার কোলবালিশ। শুধু আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে।

    –তোর কি মনে হচ্ছে না একটু বেশিই বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে!

    –মোটেও না। তোমার বুকে আমি ছাড়া আর কিছুই থাকতে পারবে না। শুধু আমিই থাকবো।

    –এখন কি আমাকে ঘুমাতে দিবি? নাকি বেরিয়ে যাবো?

    –আমারও ঘুম পাচ্ছে তো।

    –তো আমি কি করবো?

    –তোমার বুকে একটু ঘুমাতে দাও না।

    –নিজের ঘর থেকে বালিশ নিয়ে আয়।

    –না, আমার বালিশের প্রয়োজন নেই। তুমি আছো তো।

    –তোর এই ন্যাকামো সকাল সকাল আমার মাথাটাই নষ্ট করে দিচ্ছে।

    –সরি, যাও ঘুমাও।

    –ধন্যবাদ।

    .

    বালিশটা হাতে নিয়ে মামুন নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। পাশেই মিষ্টি মামুনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।

    কিছুক্ষণ পর হঠ্যাৎই মামুনের ফোনে টুইং করে শব্দ হয়।

    মিষ্টি মামুনের ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ এসেছে। “”শুভ সকাল বাবু”

    ম্যাসেজটা দেখেই মিষ্টির মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।

    নিজেকে কোনোরকম শান্ত রেখে নিজে থেকে রিপ্লাই দেয় ” তোমার বাবু এখন আমার স্বামী, আর আমি কে জানো? যার হাতে চড় খেয়েছিলে। এরপর আর কখনো যদি আমার স্বামীর আশেপাশে তোমাকে দেখি, তো কি করবো জানো? চুলের মুঠি ধরে পেটাবো। মনে রেখো। “”

    ম্যাসেজটা সেন্ড করে নিশির নাম্বারটা ব্লক করে দেয় মিষ্টি। 

    চুপিচুপি ফোনটা আগের জায়গায় রেখে একটা বিজয়ের হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

    বিয়ের পরদিন হওয়ায় মামুনকে সেদিন কলেজ যেতে বারন করা হয়। তাই সারাদিন নিজের ঘরেই শুয়ে বসে কাটায় সে।

    সারাদিন অনেক চেষ্টা করেও নিশির সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলো না সে।

    .

    মিষ্টি তখন নিজেদের ঘরের দরজার সামনে মায়ের সাথে বসে আছে। আর মা মাথায় তেল লাগিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় হঠ্যাৎই নিশিকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

    এভাবে নিশিকে মামুনের ঘরের দিকে যেতে দেখে মিষ্টিও উঠে সেই ঘরের দিকে হাটা দেয়।

    মামুনের মা নিশি দেখে নিজের কাছে ডাকে।

    –কেমন আছেন আন্টি?

    –আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি হঠ্যাৎ এখানে?

    –মামুনতো আজ কলেজ যায়নি, তাই ওর কাছ থেকে আমার নোট টা নিতে এসেছি।

    –ও আচ্ছা, ও ঘরেই আছে। যাও।

    –আচ্ছা।

    নিশি সোজা মামুনের ঘরের দিকে হাটা দেয়।

    পেছন থেকে মিষ্টি দৌড়ে এসে শাশুড়ির সামনে দাড়ায়।

    –জেঠিমা, মেয়েটা কেনো এসেছে?

    –ও তো মামুনের ক্লাসমেট নিশি। কিসের যেনো নোট নিতে এসেছে বললো।

    –কেনো নোট ফোট না, সকালে তোমায় বললাম যে তোমার ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করে। এটাই সেই মেয়ে।

    –কি বলিস? নিশিকে মামুন পছন্দ করে?

    –হ্যা।

    –জলদি রুমে যা। গিয়ে দেখ কি করে।

    –হুম।

    শাশুড়ি মায়ের অনুমতি পেয়ে মিষ্টি দৌড়ে রুমে চলে আসে।

    মামুন নিশির হাতদুটো ধরে দাড়িয়ে আছে, আর তাদের মধ্যে কিসের যেনো কথা শুরু হচ্ছিলো।

    এমন সময় কাবাবের হাড্ডি হয়ে দুজনের মাঝখানে এসে দাড়ায় মিষ্টি।

    –তুই এখানে কি করছিস? যা এখান থেকে।(মামুন)

    –যাবো মানে? হাত ছাড়ো ওর।

    সামনে এসে মামুনের হাতটা নিশির হাত থেকে দ্রুত ছাড়িয়ে নেয়।

    –মিষ্টি, এখান থেকে যা প্লিজ, ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে।

    –একদম না। যা বলার আগে বলেছো, আর না। তোমার সাহস কি করে হয় নিজের বউকে বাহিরে পাঠিয়ে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলার? 

    –দেখ মিষ্টি, বাবা ঘরে থাকায় এর ফায়দা নিস না। একটু সময় দেয় আমায়।

    –অন্য মেয়ের সাথে তোমায় একরুমে রেখে তো আমি যেতে পারি না। যা বলার আমার সামনেই বলো।

    –এই মেয়ে, তোমার কি ব্যাসিক ম্যানার বলতে কিছু নেই? এতবার বলার পরও কেনো যাচ্ছো না?(নিশি)

    –কি বললি? আরেকবার বল তো। তোর চোখ দুটো আমি তুলে নেবো। আমাকে ছোট ভেবেছিস?  সকালে না তোকে বলেছি ও আমার স্বামী হয়। কেনো এসেছিস আবার? বের হ এখান থেকে।

    –মামুন, কি বলছে এসব এই মেয়েটা? 

    –মিষ্টি, মুখ সামলে কথা বল। নাহলে কিন্তু তোর গায়ে হাত উঠে যাবে।(মামুন)

    –ওঠাও, কে মানা করলো? তবুও আমি পিছু হাটবো না। 

    –ঠিক আছে, থাক তুই। নিশি চলো তোমায় এগিয়ে দিয়ে আসি।

    নিশিকে সাথে নিয়ে মামুন বাহিরের দিকে হাটা দেয়।

    –আমিও যাবো তোমার সাথে।

    –এবার কিন্তু চড় খাবি।

    –দাও, তবুও যাবো।

    –মিষ্টি….. অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। একটা মানুষ এতক্ষণ যাবত মেজাজ কন্ট্রোল করে রাখতে পারে না। আমি চাই না খারাপ কিছু হোক, সরে দাড়া।

    –সমস্যা নেই, মেজাজ দেখানোর হলে আমার সাথেই দেখাও। তবুও এই মেয়ের সাথে তোমায় আমি একা ছাড়বো না।

    মিষ্টির একহাত ধরে টান দিয়ে রুমের দিকে ছুড়ে ফেলে নিশিকে নিয়ে মামুন বাহিরের দিকে হাটা দেয়।

    .

    বাড়ির বাহিরে রাস্তার পাড়ে দাড়িয়ে নিশি আর মামুনকে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।

    মিষ্টি সাথে করে জেঠু অর্থাৎ শশুড়কে নিয়ে মামুনের সামনে এসে দাড়ায়।

    –কি করছিস এখানে?

    –না বাবা, আমার ফ্রেন্ড আসলো নোট নিতে। আজ কলেজ যাইনি তো, তাই নিতে আসলো।

    –তো বাড়ির বাহিরে কেনো? ভেতরে যা।

    –মাত্রই বাড়ি থেকে বের হলাম। ওকে গাড়িতে তুলে দিতে আসলাম।

    –আচ্ছা শোন, আমি একটু বাজারে যাচ্ছি। তোকে এখানে দেখে মিষ্টি আমার সাথে চলে এলো। যাওয়ার সময় মিষ্টিকে আবার নিয়ে যাস।

    –আচ্ছা বাবা।

    মিষ্টিকে মামুনের কাছে রেখে বাবা বাজারের দিকে হাটা দেয়।

    দুজনের মাঝখানে আবার মিষ্টি এসে হাজির। মামুনের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে….

    –দ্রুত এই মেয়েকে বিদায় করো। নাহলে জেঠুকে সব বলে দিবো।

    –প্লিজ মিষ্টি, আমার ইমোশন নিয়ে খেলিস না। আমারও তো একটা মন আছে। কেনো এমন করছিস আমার সাথে? চলে যা, নিশির সাথে আমায় একটু কথা বলতে দে।

    –যাবো না, তুমি আমার বর। আজ থেকে তুমি আমার #নজরবন্দী…। সবসময় আমার নজরে নজরে থাকবে। আমি ছাড়া তোমার জীবনে আর কোনো মেয়ে থাকবে না। যা বলার আমার সামনে বলে ওকে বিদায় করো।

    –তুমি এই মেয়ের জন্য আমার সাথে প্রতারণা করতে পারলে? আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলা করলে?(নিশি)

    –বিশ্বাস করো। এক প্রকার জোর করেই আমাকে বিয়ে করানো হয়েছে। এই বিয়েতে আমার মত ছিলো না। 

    –মত না থাকলে কিভাবে বিয়ে করেছো?

    –বাবার ভয়ে আমি কিছুই বলতে পারি নি। 

    –সবই বুঝি আমি। এই মেয়ে আগেও আমায় অপমান করেছিলো, সেদিন রেস্টুরেন্টে সবার সামনে আমায় চড় মেরেছিলো, আজও আমায় এত অপমান করছে। একটু প্রতিবাদ কি তুমি করেছো? কারো প্রতি তোমার ভালোবাসা থাকলে তার প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ অবশ্যই তুমি করতে। কিন্তু না, তুমি শুধু অনুরোধ ই করতে পারো।

    –তুমি ভুল বুঝতেছো আমায়। চাইলেও আমি প্রতিবাদ করতে পারছি না। নাহলে আমাদের বিষয়টা জানাজানি হয়ে যাবে। আমায় একটু সময় দাও, আমি আবার সব আগের মত করে ফেলবো। এরপর আমরা বিয়ে করবো।

    –শুনো মিস্টার মামুন, তোমার স্ত্রী এখনো জীবিত আছে। আমি মরার আগ পর্যন্ত এসব মাথাও এনো না, ভালো হবে না।(মিষ্টি)

    –দেখেছো, এই মেয়েকে তুমিই আস্কারা দিয়ে মাথায় তুলেছো। তাই প্রতি কথায় কথায় বাধা দেয়।(নিশি)

    –এই মেয়ে, তুই যাবি এখান থেকে? নাকি আজ আবার আমার হাতে মার খাবি?

    –দেখেছো মামুন, তোমার সামনে আমায় ধমক দিচ্ছে।

    –ধমক নারে, সত্যি সত্যিই তোকে মারবো। ওইদিন যখন তোকে চড় দিয়েছিলাম, তখন সে আমার কিছুই হতো না। কিন্তু এখন সে আমার স্বামী, অধিকারও আগের চেয়ে বেশি। আমার মাথা খারাপ করলে ভালো হবে না। এই রাস্তার মধ্যেই একটা কিছু হয়ে যাবে। বিদায় হ এখান থেকে।

    –এই, এই মেয়ে কি সাইকো নাকি? আমার তো মনে হয় এর ডাক্তারের প্রয়োজন।

    –ডাক্তার তোর প্রয়োজন, দাড়া।

    বলেই মিষ্টি নিশিকে মারার জন্য রাস্তার পাশে কিছু একটা খুজতে থাকে।

    .

    ভয় পেয়ে নিশি ওখান থেকে খুব দ্রুতই সরে পড়ে।

    মামুন বার বার ডেকেও নিশিকে আটকাতে পারেনি। মিষ্টি হাতে একটা ছোট লাঠি নিয়ে রাস্তার পাশ থেকে উঠে আসে।

    –কই গেলো তোমার ভালোবাসা? পালিয়েছে? যত্তসব ন্যাকামো নিয়ে হাজির। চলো বাসায়।

    –কেনো এমন করছিস তুই? কি চাই তোর?

    –তোমাকে। সেই ছোটবেলা থেকে নজরবন্দী করে রেখেছি কি অন্য কেউ নিয়ে নেওয়ার জন্য? তুমি শুধু আমার। বুঝেছো? চলো

    মামুনের হাত ধরে মিষ্টি বাসার দিকে হাটা দেয়। চেয়েও মিষ্টির ওপর রাগ ঝাড়তে পারছে না সে। কারন মিষ্টি আর মামুন দুজন দুইদিকে দাড়ালে সবাই মিষ্টিকেই বেছে নেবে।

    ঘরের সবার কাছে মিষ্টি একটা লক্ষি মেয়ে, কিন্তু সেই লক্ষি মেয়েটাকে এখন পর্যন্ত মামুন দেখেনি।

    দেখেছে এমন একজন মানুষকে, যে সবসময় তাকে নিয়ে পজেসিভ। সে না চাইলেও মিষ্টি তাকে নিয়ে অধিকার দেখায়। এভাবে অতিরিক্ত অধিকার দেখানোও একসময় বিরক্তির কারন হয়ে দাড়ায়। যা আজ মাত্রাতিরিক্ত করছে মিষ্টি।

    মামুনের হাত ধরে শাশুরির সামনে এসে দাড়ায় মিষ্টি।

    –কিরে? ওকে এভাবে টেনে আনছিস কেনো?

    –দুরে চলে যাচ্ছিলো, আমি যেতে দেইনি।

    –দুরে যাবে কেনো?

    –ওই যে একটা ডাইনি এসেছিলো, আমার থেকে নিয়ে যাচ্ছিলো। 

    –দেখো কি বলে মেয়ে! ও কি এখনো বাচ্চা? কেউ নিবে না। যা ঘরে যা।

    –আচ্ছা।

    মিষ্টি আবার মামুনের হাত ধরে তার রুমের দিকে হাটা দেয়।

    মামুন একটা ছোট বাচ্চার মতো মিষ্টির সাথে সাথে হেটে চলেছে। মুখ দিয়ে যেনো একটা কথাও বের হচ্ছে না।

    মামুনকে সোজা রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসায়…..

    –তুমি কি আমার ওপর রেগে আছো?

    –এই, কথা বলছো না কেনো? রেগে আছো?

    চোখ তুলে মামুন মিষ্টির দিকে তাকায়। মামুনের লাল চোখ দুটো দেখে মিষ্টি একটু ভয় পেয়ে যায়।

    –বেশি রাগ হচ্ছে বুঝি? কি করবো আমি? তুমি চলে গেলে আমি কি করে থাকবো? ভালোবাসি তোমায়। একটা সময় ছিলো যখন শুধু একপাশ থেকে আমিই ভালোবাসতাম। কিন্তু এখনতো তোমার জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছি আমি। কি করে তোমায় অন্যের হতে দেবো? আমি কি এতটাই উদার মনের মানুষ? যে নিজের স্বামীকে অন্যের হাতে তুলে দিবে?

    –আমার সাথে বুঝি কথা বলবে না? এই যে, নিজের রাগটা মিটিয়ে নাও।(গালটা সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে) মারো আমায়।

    –আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কথা ভাবছিস?

    –কথা দিলাম তোমায়, কাউকে কিচ্ছু বলবো না। মারো। যতক্ষণ না তোমার রাগ কমে।

    .

    .

    চলবে……..

     

    গল্প #নজরবন্দী (০৫)

    লেখক #A_Al_Mamun

    .

    –আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কথা ভাবছিস?

    –কথা দিলাম তোমায়, কাউকে কিচ্ছু বলবো না। মারো। যতক্ষণ না তোমার রাগ কমে।

    –মিষ্টি, একটা কথা শুনবি আমার?

    –হুম বলো না।

    –আমাকে একটু একা থাকতে দে।

    –খারাপ লাগছে?

    –আমার মাথা ঠিক নেই, যা এখান থেকে।

    বিছানার সামনে এসে মামুনের মাথাটা বুকে জড়িয়ে নেয় মিষ্টি। 

    চেয়েও নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছে না সে, মিষ্টি বেশ শক্ত করেই জড়িয়ে রেখেছে।

    –কেনো এত রাগ করো? আগে আমার সাথে কত সুন্দর করে কথা বলতে। এখন যেনো আমায় তোমার সহ্যই হয় না। আমার বয়সটা কম ঠিকই, কিন্তু আমার ভালোবাসায় একটুও কমতি নেই। খুব ভালোবাসি তোমায়।

    –ছাড়।

    মামুনকে ছেড়ে দিয়ে মিষ্টি সোজা বাহিরে চলে যায়।

    মামুন অবাক চোখে মিষ্টির চলে যাওয়া দেখছে। মেয়েটা কখন কি করে কিছুই বোঝা যায় না। কাউকে ভালোবাসা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু তাকে নিয়ে এতটা পাগলামি করা মোটেও স্বাভাবিক নয়

    নিশির নাম্বারটা ব্লক করার ব্যাপারটা এখনো মামুনের অজানা। নিশির সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় সে।

    এদিকে একটু পর পর মিষ্টি রুমে এসে ২০-৩০ সেকেন্ড ঘুরেফিরে আবার চলে যায়।

    এভাবে ৪-৫ বার আসার পর ৬ বারের সময় মামুন মিষ্টির হাত ধরে আটকায় মিষ্টিকে।

    –কি হয়েছে?(মামুন)

    –কই?

    –বার বার বিনা কারনে কেনো আসতেছিস?

    –কই যাবো বলো, সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সিনথিয়া একটু আগে স্কুল থেকে এসে ফ্রেস হতে গেছে। কথা বলার মতো তো এমন আর কেউই নেই, কার সাথে কথা বলবো? কার রুমে যাবো? আমার রুমে গেলে আম্মু বলে এখন থেকে এটাই নাকি আমার ঘর, বার বার ওই ঘরে গেলে নাকি তোমরা রাগ করবে। এমন মনে হচ্ছে আমি এই বাড়ির পর কেউ, কিছুই নিজের মনে হচ্ছে না। এখন আমি কই যাবো বলো? তাইতো একবার বাহিরে আরেকবার এখানে আসাযাওয়া করছি।

    –বস এখানে।

    –কিছু বলবে?

    –না বললে চলে যাবি?

    –কি করবো বলো, আম্মু বললো এটা আমার রুম, এবং আমার প্রথম কাজ হচ্ছে তোমার সেবা করা, তোমার মন মত চলা। কিন্তু তুমিতো আমার সাথে ঠিকমত কথাই বলো না। যদি এখন থেকে এটা আমারই রুম হয়, তাহলে কেনো আমার এমন মনে যে এখানে আসতেও আমার অনুমতির প্রয়োজন?

    –ব্যাপারটা এমন কিছুই নয়।

    –আমাকে বলে দাও, এখন আমার কি করা উচিত? তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো।

    –কি বলবো বল, আগেও তুই আমার পরিবারের সদস্য ছিলি, এখনো আমার পরিবারের সদস্য। আমি কিছুই করতে পারছি না। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। কেনো এভাবে সব তছনছ হয়ে গেলো? 

    –আমার জন্য?

    –আমার ভাগ্যের জন্য। 

    –এখন আমার কি করতে হবে?

    –কিছুই করতে হবে না। যা চেয়েছিলি তা তো পেয়েছিস, আর কি করবি?

    মামুনের এমন কথায় মিষ্টি বেশ কষ্ট পায়। সাধারণত শান্ত স্বভাবের কারনে মামুন কারো সাথে দুকথায় জড়ায় না। 

    কিন্তু সবারই তো একটা মন আছে। কষ্ট পাওয়ার অনুভূতিও তো সবার সমান। নিজের মনের কষ্টগুলো বুকে চেপে মামুন আর মিষ্টি দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। 

    কাছে থেকেও যেনো ভালোবাসার মানুষটাকে কত দুরে মনে হচ্ছে। এক ঘর, এক রুম, তবুও মনের কথাগুলো প্রকাশ করার মতো কেউ যেনো পাশে নেই।

    মিষ্টি সবসময় মামুনের আশেপাশেই থাকে। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া বাড়তি তেমন কোনো কথা হয়না বললেই চলে।

    এদিকে নিশিও মামুনের সাথে ব্রেকাপ করে কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

    মামুন অনেক চেষ্টা করেও নিশিকে ফেরাতে পারেনি। 

    .

    মিষ্টি এই সুযোগটাই নেওয়ার চেষ্টা করে। 

    সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত মামুনের যাবতীয় কাজ গুলো মিষ্টি নিজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে নেয়। যেখানে কিছু চাওয়ার আগেই মিষ্টি সব করে দেয়।

    ধীরেধীরে ব্যাপারটা এমন দাড়ায় যে মামুন মিষ্টিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

    পুরো দিনের একটা অংশও মিষ্টি না থাকলে তার চলে না। তবুও মিষ্টি হাজার চেষ্টা করেও মামুনের মুখ থেকে ভালোবাসার কথা বের করতে পারে নি।

    –তোমায় একটা কথা বলার ছিলো।(মিষ্টি)

    –হুম বল।(মামুন)

    –আমি কি কলেজে ভর্তি হতে পারবো?

    –মানা করলো কে?

    –মা বললো তোমায় জিজ্ঞেস করতে।

    –জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই। তোর আরো পড়তে মন চাইলে পড়বি, জিজ্ঞেস করতে হবে কেনো?

    –কিন্তু আমি ভর্তির টাকা পাবো কোথায়? স্বামীর সংসারে এসে পড়েছি। বাবার কাছে এখন টাকা চাইতেও লজ্জা করে। এই সংসারে স্বামী থাকা অবস্থায় কি করে বাবা বা জেঠুর কাছে টাকা চাইবো?

    –তোর টাকা লাগবে তাইতো?

    –হুম।

    –আমি বাবাকে বলে দিচ্ছি। টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

    –প্রায় ২ মাস হয়ে গেলো আমি তোমার সংসারে এসেছি। আসলেই কি আমার প্রতি তোমার কোনো দায়িত্ব নেই? কখনো কি জিজ্ঞেস করেছো আমার কি লাগবে? আমি কেমন আছি এটাও তো অন্তত জিজ্ঞেস করতে পারো। আমার কি মন নেই? এতটা ভালোবাসার ফল এটা?

    –দেখ মিষ্টি, আমার ফাইনাল পরিক্ষা শুরু হবে কয়েকদিনের মধ্যে। এরপরই আমি কোথাও চাকরির চেষ্টা করতে পারবো বা বাবার ব্যবসাতে হাত লাগাতে পারবো। এখন আমি কি করবো বল। 

    –পরিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা এসব কোনো ফ্যাক্ট না। আমি আমার কথা বলছি। তোমায় জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু বিয়ের পর থেকে আমি শত চেষ্টা করেও একটু ভালোবাসা পাইনি। কাঁদতে পারি না, মন খারাপ করতে পারি না, অভিযোগও করতে পারি না, কারো কাছে কিছু চাইবো তারও সাহস করে উঠতে পারি না। নিজেকে নিজের মাঝেই খুজে পাই না। তোমায় ভালোবাসাটা আসলেই আমার অপরাধ হয়ে গেছে। আর সহ্য হচ্ছে না আমার।

    –কি বলতে চাইছিস তুই?

    –আমায় মুক্ত করে দাও, দুর থেকেই তোমায় ভালোবাসবো। যেই ভালোবাসায় কোনো চাওয়া থাকবে না। সবার এত ভালোবাসা পাওয়ার পরও মনে হয় আমি শূন্য, কারন তাতে তোমার ভালোবাসা নেই। আমি চলে যেতে চাই আমার আগের জীবনে। যেখানে নিজের মনের সব কথা সবাইকে খুলে বলতে পারবো। মনে কোনো কষ্ট থাকবে না, চাওয়া থাকবে না।

    মিষ্টির কথার কেনো জবাব না দিয়ে মামুন চুপ করে বসে আছে আর ভাবছে এই কথার কি জবাব দেবে সে? 

    মিষ্টি আর অপেক্ষা না করে নিজের ঘরে ফিরে যায়।

    .

    রাতের প্রায় ১০টায় মিষ্টির বাবা মামুনকে নিজের কাছে ডেকে পাঠায়।

    –চাচা, ডেকেছো?

    –হুম। কিছু কথা ছিলো তোর সাথে।

    –কি কথা?

    –মিষ্টির ব্যাপারে।

    –কি হয়েছে?

    –প্রায় ২ মাস হয়ে গেলো, আমি এখন পর্যন্ত জানতাম না যে আমার মেয়েটা সুখে নেই। ভেবেছিলাম ওর নিজের পছন্দের মানুষের সাথেই তো ওর বিয়ে হয়েছে, নিশ্চই ও সুখে আছে। ওকে এভাবে কাঁদতে আমি কখনো দেখি নি। কি হয়েছে তোদের?

    –কিছু হয়নিতো চাচা। ওর মন খারাপ করেছে বোধয়। ঠিক হয়ে যাবে আবার।

    –ও কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য আমার কাছে টাকা চাচ্ছে। যেই কথা ওর স্বামীকে বলার কথা, সেটা এসে আমাকে বলছে। কিছুতো একটা হয়েছে।

    –চাচা, তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো, এমন কিছুই হয়নি। দেখবে একটু পর সব ঠিক হয়ে যাবে।

    –হুম, সেটাই যেনো হয়।

    –মিষ্টি কই?

    –ওর নিজের রুমে।

    –আচ্ছা, আমি একটু আসতেছি। একটু পর এসে ওকে নিয়ে যাবো।

    –ঠিক আছে।

    .

    চাচার ঘর থেকে বের হয়ে মামুন আবার নিজেদের ঘরে ফিরে আসে।

    ড্রয়িংরুমে বসে সিনথিয়া টিভি দেখছিলো।

    –বাবা কইরে?

    –এখনো আসে নি। 

    –আসলে আমাকে একটু ডাক দিস।

    –কেনো?

    –কিছু টাকা লাগবে, তাই।

    –বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

    –হুম।

    –কত লাগবে?

    –তুই জেনে কি করবি? শুধু বাবা আসলে আমাকে ডাক দিস।

    –আমার কাছে কিছু টাকা আছে। নিয়ে যা…

    –কত আছে?

    –৫ হাজার।

    –কোথায় পেয়েছিস?

    –তুই জেনে কি করবি? লাগলে নিয়ে যা, নাহয় ভাগ।

    –আলে আলে, আমার কলিজা টা। দে টাকাটা।

    –এহ, এখন মিষ্টি মিষ্টি কথা বের হচ্ছে। কি জন্য লাগবে টাকা?

    –পরে বলবো।

    –না বললে দিবে না।

    –তোর ভাবির কলেজে ভর্তির জন্য টাকা লাগবে?

    –হুম বুঝলাম। আচ্ছা ভাইয়া, তুই এখনো মিষ্টিকে মেনে নিস নি?

    –তোকে কে বললো?

    –মিষ্টিতো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, আমাকে কিছুই বলা লাগে না। তাকে আমি ভালো করেই চিনি। বিয়ের আগে সে তোর জন্য কতটা পাগল ছিলো, কিন্তু এখন সবসময় সে মন মরা হয়ে বসে থাকে।

    –এমন কিছু নারে।

    –একটা কথা বলি?

    –বল।

    –আমি তো মেয়ে, তাই তোকে মেয়েদের বিষয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি। মেয়েরা সহজে কাউকে মনে জায়গা দেয় না। যাকে জায়গা দেয়, তার জন্য জীবনও দিতে পারে। তবে একবার যদি মন থেকে উঠে যাস, ভাঙা কাচ জোড়া দেওয়ার চেয়ে বেশি কষ্ট করতে হবে তোকে। ও তোকে ভালোবাসে, এর মর্যাদা দিতে শেখ।

    –জ্ঞান দিস না তো। টাকাটা দে।

    সিনথিয়ার থেকে টাকাটা নিয়ে মামুন আবার মিষ্টির রুমে ফিরে যায়।

    একটা কাথা মুড়ি দিয়ে মিষ্টি অপর পাশ হয়ে শুয়ে আছে।

    –মিষ্টি…..

    মামুনের ডাকে মিষ্টি পাশ ফিরে তাকায়। 

    –তুমি এখানে? কিছু লাগবে?

    –তুই এখানে ঘুমাচ্ছিস যে? 

    –এখন থেকে আমি এখানেই থাকবো। অনেকদিন হলো তুমি ফ্লোরে ঘুমাও, আজ থেকে আর ফ্লোরে শুতে হবে না। তোমার বিছানায় ঘুমিও।

    –এত পাকা পাকা কথা না বলে চল।

    –না, আমি যাবো না। কেনো এসেছো বলো।

    –তোর না টাকা লাগবে? কত লাগবে?

    –লাগবে না। আমি আব্বুকে বলেছি। তোমার এসব বিষয়ে চিন্তা করতে হবে না।

    –কত লাগবে?

    –বললাম না লাগবে না।

    –রাগ দেখাচ্ছিস?

    –রাগ তার সাথেই দেখানো যায় যে রাগ বোঝে। তোমার সাথে কেনো রাগ দেখাবো?

    –এখানে কিছু টাকা আছে। আরো লাগলে বলিস।

    বালিশের পাশে টাকাগুলো রেখে মামুন সোজা নিজের রুমের দিকে হাটা দেয়।

    পেছন থেকে মিষ্টি হু হু করে কেঁদে ওঠে।

    কেনো সে আমার সাথে এমন করে? সে কি বোঝে না আমার মন কি চায়? সে কি পারতো না আমায় জোর করে নিয়ে যেতে? ওই অধিকার তো তার আছে, নাকি সে অধিকার খাটাতে চায় না? কেনো আমি তার জন্য এতটা পাগল হয়ে আছি? যে আমার ভালোবাসা বুঝতেই চায় না। আমি আর কখনো ওই ঘরে যাবো না, যতদিন না সে এসে আমায় নিয়ে যায়। আমিও দেখবো কতদিন এভাবে চলে

    .

    পরদিন বাবাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে ফেনী সরকারি কলেজে ভর্তি হয় সে। ভালো রেজাল্ট হওয়ার ভর্তি হতে তেমন কোনো সমস্যাই হয়নি মিষ্টির। মামুনও একই কলেজেই অনার্স ফাইনালের ছাত্র। ফেনী সরকারি কলেজ হওয়ায় অনেক বড় কলেজ ছিলো ওটা। ইন্টার থেকে শুরু করে অনার্স এবং মাস্টার্স পর্যন্ত সবই এক কলেজে ব্যবস্থা করা আছে। 

    মামুনের অজান্তেই নিজের মত করে সব গুছিয়ে নেয় মিষ্টি।

    দুই পরিবারই মামুন আর মিষ্টির দুরত্বের ব্যাপারটা বুঝতে পারে।

    মামুন সবাইকে বোঝায় এটা কোনো দুরত্ব নয়, পড়ালেখার জন্য দুজনই দুজনকে নিয়ে ব্যস্ত।  সবই ঠিক হয়ে যাবে।

    ধীরেধীরে মামুনের পরিক্ষা এগিয়ে আসে।

    আজ কলেজে মামুনদের বিদায়ী অনুষ্ঠান এবং অপরদিকে মিষ্টিদের নবীন বরন অনুষ্ঠান।

    একই অডিটোরিয়ামে এই অনুষ্ঠান করা হয়। সবাই যার যার মত করে আজ কলেজে সেজেগুজে এসেছে। অনুষ্ঠানে সবাই কোনো না কোনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত। 

    কিন্তু বাকি বন্ধুদের সাথে মামুন আড্ডায় ব্যস্ত। এমন সময় মামুনের এক বন্ধু(অভি) বলে ওঠে

    –দোস্ত দেখ, এবারের ইন্টারের মেয়েগুলো সেই।

    মামুন অডিটোরিয়ামের অপর প্রান্তে তাকিয়ে দেখে নবীন বরনের ছাত্রছাত্রী গুলো সবাই স্টেজের সামনের কাতারে বসে আছে, বেশ সেজেগুজেই বসে আছে সবাই। বিশেষ করে মেয়েগুলো সবাই এক রঙের(নীল) শাড়ি পড়ে বসে আছে। আর ছেলেগুলো পাঞ্জাবি।

    –দোস্ত, চলেই তো যাবো। একটা মেয়ে পটাতে পারলে সেই হতো। এবারের গুলো তো জোস…।(অভি)

    –ছাগল, আজই শেষ দিন। কেমনে পটাবি?(মামুন)

    –চেষ্টা তো করি।

    –কেমনে?

    –দেখ।

    বাকি বন্ধুদের সামনে রেখে অভি উঠে মেয়েদের দিকে হাটা দেয়।

    –শালায় আজ শেষ দিনেও ইতরামি ছাড়তে পারলো না। বাচ্চাদের হাতে থাপ্পড় খেয়ে নি ফিরে আসে দেখ।(অন্য বন্ধু)

    মামুন অভির দিকে তাকিয়ে দেখছে সে কি করে।

    হঠ্যাৎই তার চোখ পড়ে একটা মেয়ের দিকে। আর সবার মতই সেই মেয়েটাও একটা নীল শাড়ি পড়ে সবার চেয়ে একটু আলাদা হয়েই দাড়িয়ে আছে। হালকা মেকাপে মাথায় গাজরা ফুলের কুড়ি দেওয়া। দুর থেকে মনে হচ্ছে একটা অপ্সরী দাড়িয়ে আছে, তার থেকে চোখ সরানো যেনো দায় হয়ে যাচ্ছে।

    অভিকে সোজা ওই মেয়ের দিকে যেতে দেখে মামুন অভির পেছনে দৌড় দেয়।

    অভি মেয়েটাকে কিছু বলে ওঠার আগেই মামুন অভির সামনে এসে দাড়ায়।

    –তুই এখানে কি করছিস?(অভি)

    মামুন মুখটা অভির কানের সামনে এনে ধীরেধীরে বলে ওঠে

    –উল্টাপাল্টা কিছু বলিস না। তোর ভাবি হয়।

    –কি বলিস?

    –আমার বউ শালা।

    –অ্যাহ?

    –হ্যা।

    মেয়েটার দিকে ফিরে অভি বলে ওঠে

    –আসসালামু আলাইকুম ভাবি, ভাই আপনার সাথে কথা বলবে।

    বলেই মামুনের দিকে তাকিয়ে একটা রাগি লুক দিয়ে চলে যায় সে।

    –এতটা সেজেগুজে আসতে কে বলেছে?(মামুন)

    –কেউ বলেনি। একটা মানুষের জন্য সাজতাম, সে কখনো আমার দিকে ফিরেও তাকায় নি। তাই আজ নিজের জন্য সেজেছি, কেমন লাগছে আমাকে?

    –জঘন্য।

    –কিহ? আসার সময় একটা ছেলে প্রপোজ ও তো করলো। এমনি এমনি করলো?

    –কে প্রপোজ করেছে?

    –তোমার জেনে কাজ নেই। যাও নিজের কাজ করো।

    –চুপচাপ এখানে বসে থাক, একদম এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করবি না।

    –কেনো? আমি ঘুরলে তোমার কি?

    –মুখে মুকে তর্ক করিস কেনো? 

    –এই মিষ্টি, চলে আসো। তোমার জন্য জায়গা রেখেছি।

    পেছন থেকে একটা মেয়ে মিষ্টিকে এভাবে ডেকে ওঠে।

    –কে ওই মেয়ে?

    –আমার নতুন বান্ধবী।

    –চল।

    সবার সামনেই মিষ্টির হাতটা নিজের হাতে নিয়ে নেয় মামুন।

    সোজা ওই মেয়েটার পাশের সিটে নিয়ে মিষ্টিকে বসিয়ে মেয়েটার সামনে দাড়ায় মামুন।

    –কেমন আছো আপু?

    –জ্বি ভালো। আপনি কে?

    –ওকে চেনো?(মিষ্টিকে দেখিয়ে)

    –আমার ফ্রেন্ড। 

    –আমি তোমার ফ্রেন্ডের বর।

    –ওমা, তোমার বিয়ে হয়ে গেছে? বলোনি তো।

    –আমি তো বললাম। তোমার ফ্রেন্ডের একটু খেয়াল রেখো। 

    –জ্বি ভাইয়া, চিন্তা করবেন না।

    –কোনো ছেলে কথা বলতে আসলে তাকে বলে দিও মিষ্টি বিবাহিত।

    –আচ্ছা ভাইয়া।

    –শোন, অনুষ্ঠান শেষে গেইটের সামনে দাড়াস, একসাথে যাবো।(মিষ্টিকে)

    –আচ্ছা।

    মামুন আবার সোজা নিজের বন্ধুদের সাথে কাজে যোগ দেয়।

    –তোমার বর কি খারাপ?

    –ওমা, খারাপ হবে কেনো?

    –এই যে তোমাকে তুই তোকারি করছে।

    –ও আমার জেঠাতো ভাই ছিলো। তাই অভ্যাসটা রয়ে গেছে।

    –ও আচ্ছা, প্রেম করে বিয়ে করেছো বুঝি?

    –না, পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছে।

    –তোমার খেয়াল রাখে বুঝি?

    –হুম খুব।

    –বাহ, ভালো তো।

    মিষ্টি দুর থেকে মামুনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে ভাবছে। আজ কতটা পরিবর্তন লাগছে মামুনকে, কত যত্ন নিচ্ছে। আচ্ছা সে কি আমার প্রতি আসলেই যত্ন নিচ্ছে? নাকি হিংসে হচ্ছে? 

    .

    .

    চলবে……..

     

    গল্প #নজরবন্দী (০৬)

    লেখক #A_Al_Mamun

    .

    মিষ্টি দুর থেকে মামুনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে ভাবছে। আজ কতটা পরিবর্তন লাগছে মামুনকে, কত যত্ন নিচ্ছে। আচ্ছা সে কি আমার প্রতি আসলেই যত্ন নিচ্ছে? নাকি হিংসে হচ্ছে? 

    দুর থেকে মামুনের প্রাক্তন নিশিকেও দেখা যাচ্ছে। তবে এখন কেউ কারো সাথে কথা বলে না। হয়তো বা রাগ করে, নয়তো ভবিষ্যৎতের কথা ভেবে। মিষ্টির নজর কেবল মামুনের দিকেই, কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কার সাথে কথা বলছে।

    ঠিক একই ভাবে মামুনও মিষ্টির দিকে একটু পর পর তাকিয়ে দেখছে মিষ্টি কোথাও যাচ্ছে কিনা, কারো সাথে কথা বলছে কিনা বা কি করছে।

    বিকেলে অনুষ্ঠান শেষে দুজন একসাথে কলেজ থেকে বের হয়।

    –শোন, কলেজ লাইফটা স্কুলের মত এত সহজ না। মন দিয়ে পড়ালেখা করবি। বিশেষ  করে কোনো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করবি না এখানে। শহরের ছেলেগুলো সারাক্ষণ মেয়েদের পেছনে লেগেই থাকে।

    –তোমার এত চিন্তা হচ্ছে কেনো? কোনো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হলে তোমার সমস্যা কি?

    –থাপ্পড় খাবি, মুখে মুখে তর্ক করিস কেনো?

    –সরি।

    –বাড়ি চল।

    –ফুসকা খাওয়াবে?

    –টাকা আছে?

    –লজ্জা করে না বউয়ের কাছে টাকা চাইতে।

    –তোর জেঠু আমায় খুবই হিসেব করে টাকা দেয়। বাড়ি যাওয়ার ভাড়া হবে না ফুসকা খেলে।

    –আমি দিবো ভাড়া, ফুসকা খাবো।

    –টাকা আছে তো?

    –হুম।

    মিষ্টির কথায় দুজন একসাথে একপ্লেটে বেশ মজা করে ফুসকা খায়, খাওয়া শেষে দুজন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথে মামুন গাড়িতে উঠার চেষ্টা করলে মিষ্টি বলে ওঠে…..

    –গাড়িতে যে উঠবে টাকা আছে?

    –কেনো? তোর কাছে না আছে?

    –আমি টাকা কই পাবো? আমার জামাই তো এখনো বেকার।

    –মানে? বললি যে টাকা আছে।

    –না বললে ফুসকা খাওয়াতে?

    –এখন বাড়ি যাবো কি করে?

    –হেটে।

    –তোর মাথা ঠিক আছে? ২ ঘন্টা লাগবে হেটে গেলে। 

    –আমি পারবো, তুমি পারবে না?

    –তুই পাগল হয়ে গেছিস। দাড়া কোনো বন্ধুকে পাই কিনা দেখি।

    –লাগবে না, চলো না আজ হেটে যাই।

    –এতদুর হেটে যাওয়া সম্ভব? পায়ে ব্যথা করবে।

    –বাড়ি গেলে আমি তোমার পা টিপে দেবো। চলো না আজ হেটে হেটে যাই।

    –তোকে নিয়ে তো দেখি বিপদে পড়লাম। তোর কথা শোনাই আমার ঠিক হয়নি।

    –যাবে না?

    –ঠিক আছে চল। 

    –আমার জামাইটা কত্ত ভালো।

    –এত জামাই জামাই করবি না, সোজা হাট।

    –তোমার হাত ধরে হাটবো।

    –তোর চাহিদা শুধু বাড়তেই আছে।

    –এত ভাব নাও কেনো? নিজের জামাইর হাতও ধরা যাবে না?

    –ধর, ধরে চুপচাপ হাট।

    –তুমি এমন রাগ দেখাও কেনো আমার সাথে?

    –কখন রাগ দেখালাম?

    –এখন পর্যন্ত আমার সাথে কখনো একটু ভালোবেসে কথা বলেছো?

    –কিরকম ভালোবেসে কথা বলতে হবে?

    –সেটা কি আমায় শিখিয়ে দিতে হবে?

    –হুম।

    –হ্যা দিবো, বাড়ি চলো। তোমায় অনেক কিছুই শিখিয়ে দিবো।

    এভাবে দুজন খুনশুটি করতে করতে দেড় ঘন্টা পর বাড়ি এসে পৌছায়।

    তখন প্রায় শেষ বিকেল।

    বেশ ক্লান্ত হয়ে বাড়ির সামনে এসে মামুন কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়ায়।

    –বাবারে…. এখনই তো পায়ে ব্যথ্যা শুরু হয়েছে।

    –তাই বুঝি? ঘরে বসে বসে কত্ত বড় পেট বানিয়েছো। আজ ভালো করে ব্যায়াম করালাম তোমায়। এই নাও তোমার ভাড়ার টাকা।

    –তোর কাছে টাকা ছিলো?

    –হুম।

    –তবুও হেটে আনালি?

    –হুম।

    –কথা বলবি না আমার সাথে আর।

    মিষ্টির সাথে রাগ দেখিয়ে মামুন হন হন করে বাড়ির ভেতর চলে যায়।

    মুচকি হেসে মিষ্টিও নিজের ঘরের দিকে হাটা দেয়।

    .

    রাতের তখন প্রায় ১০টা। চুপি চুপি মামুনের রুমের সামনে এসে উকি দেয় মিষ্টি।

    মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে মামুন।

    মিষ্টি ধীরেধীরে মামুনের সামনে এসে বিছানায় বসে। মিষ্টির উপস্থিতি টের পেয়ে মামুন চোখ খুলে তাকায়।

    –এভাবে শুয়ে আছো যে? ঘুমাবে না?

    –হুম

    –পায়ে ব্যথ্যা করছে?

    –একটু।

    –দাও, আমি মালিশ করে দেই।

    –লাগবে না, ঠিক হয়ে যাবে।

    –দাও না।

    –লাগবে না।

    –তোমাকে কথা বলার সুযোগ দিলে একটু বেশি ভাব নাও। চুপ করে শুয়ে থাকো।

    মামুন লক্ষি ছেলের মতো চুপ করে শুয়ে আছে।

    আর মিষ্টি তার নরম হাতে ধীরেধীরে পায়ের পেশীগুলো মালিশ করে দিচ্ছে।

    এভাবে প্রায় আধাঘণ্টা মিষ্টি মালিশ করতে থাকে।

    –মিষ্টি, হয়েছে। এবার ছাড়।

    –ব্যথ্যা কমেছে?

    –হুম।

    –আমার জন্য আজ তোমার এত কষ্ট হলো।

    –আরে আরে, তোর চোখে পানি কেনো?

    –আমার জন্য তুমি এত কষ্ট করলে।

    –এই পাগলি, কাঁদছিস কেনো? তোর চোখে পানি মানায় না।। কাঁদলে তোকে পেত্নীর মত লাগে।

    –যাহ।

    –এই যে আয়নায় দেখ। একদম পেত্নী একটা।

    –তোমার মাথা। আমি কত্ত সুন্দর।

    –এত বড় মিথ্যে কথাটা কে বললো তোকে? এসব কথায় কান দিস না, কেউ তোকে বোকা বানিয়েছে।

    –তোমার মাথা ফাটিয়ে দিবো আমি। 

    –আরে, রাগ করিস কেনো?

    –আমায় সুন্দর না লাগলে আজ সারাক্ষণ ওভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছিলে কেনো?

    –খেয়াল রাখছিলাম, যদি কোথাও হারিয়ে যাস।

    –আমি হারিয়ে গেলে তোমার কি?

    –বাড়ির মেয়ে হারিয়ে গেলে তো সবাই চিন্তা করবে।

    –করা লাগবে না। আজ একটা ছেলে আমায় প্রপোজ করেছে। কত তারিফ করেছে আমার, আমাকে নাকি কত্ত সুন্দর লাগে। সে নাকি আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু আমি কিচ্ছু বলিনি।

    –ভালো করেছিস।

    –হুম, ২-৩ দিন দেখবো কি করে।

    –এর পর?

    –এরপর আর কি? হ্যা বলে দিবো।

    –মানে? তোকে বললাম না শহরের ছেলে গুলো ভালো না।

    –ও তো শহরের না, গ্রামে থাকে।

    –আচ্ছা, তাহলে সব খবর নিয়ে রেখেছিস।

    –হ্যা।

    –ভালো তো, তাহলে আমাকে কেনো বলছিস?

    –কারন তোমার সাথে সম্পর্ক শেষ করতে হবে তো, তাই।

    –বুঝলাম না

    –জেঠু জেঠিমা তোমার সাথে অন্যায় করে ফেলেছে। আমি তাদের বুঝিয়ে বলবো, আমাদের যেনো ডিভোর্স দিয়ে দেয়।

    –তুই রাজি এতে?

    –হুম।

    –তুই না আমায় ভালোবাসিস?

    –এভাবে একতরফা আর কতদিন? আমিতো তোমার গার্লফ্রেন্ড না, বউ হই। সব রকম চেষ্টাই তো করলাম। এবার নাহয় তোমার ইচ্ছেটাই পূর্ণতা পাক।

    –আমি কি কখনো ডিভোর্সের কথা বলেছি?

    –বাদ দাও ওসব, ঘুমিয়ে পড়ো। এ নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো। আমি যাই, নাহয় আম্মু দরজা লাগিয়ে দিবে।

    –মিষ্টি শোন।

    –মিষ্টি

    .

    মামুন অবাক চোখে মিষ্টির চলে যাওয়া দেখছে। হঠ্যাৎ করেই মিষ্টি কথার মোড় কোন দিকে চলে গেলো? এরকম কথা মিষ্টির মুখ থেকে মামুন কখনোই আসা করেনি।

    মামুনের রুম থেকে বাহিরে বের হয়ে মিষ্টি এক দৌড়ে শাশুড়ির রুমে চলে যায়।

    –জেঠিমা……

    –হুম।

    –ও জেঠিমা।

    –বল না।

    –জেঠু কই?

    –ড্রয়িংরুমে টিভি দেখতেছে। কেনো?

    ওমনি শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে একটা পাপ্পি দিয়ে বসে।

    –ওই পাগলি, ছাড়।

    –তুমি তো জানো না কি হয়েছে।

    –কি হয়েছে।

    –ওইদিন আমাকে যেই প্ল্যান দিয়েছো, সেটা এখন কাজে লাগিয়ে দিয়েছি। কাজ হচ্ছে মনে হয়।

    –কি বলিস?

    –হুম। সে তো আমায় পেছন থেকে ডাকছে, আমি তাকাই নি।

    –ভালো করেছিস। এখন আর ওর সামনে বেশি যাবি না।

    –আমার যে ওনাকে দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছে করবে।

    –তুই যদি এখন কথা বলা বন্ধ করে দিস, দেখবি সে নিজে থেকেই আসবে কথা বলতে।

    –সত্যি?

    –হুম। কারন বন্ধু হোক বা শত্রু, কারো কাছ থেকেই মানুষ অবহেলা সহ্য করতে পারে না। তুই নিশ্চিন্তে থাক, দেখবি মামুনই আসবে তোর কাছে।

    –ঠিক আছে, আমার লক্ষি জেঠিমা….. উম্ম্ম্ম্মাহ….

    –ধুর পাগলি, যাতো…

    –হি হি হি….

    .

    প্রতিদিনের মত সকালে আজ আর মিষ্টি মামুনকে ঘুম থেকে জাগাতে যায়নি। এই ঘরে এসে শাশুড়ির সাথে নিত্যদিনের কাজে লেগে পড়ে। আজ মামুনকে জেগে না তোলায় বেশ বেলা করেই মামুন ঘুম থেকে ওঠে।

    উঠেই ২ মাসের অভ্যাস অনুযায়ী মিষ্টির নাম ধরে চায়ের জন্য ডাকতে থাকে।

    শাশুড়িমা মিষ্টির হাত আর মুখ চেপে ধরে বসে আছে।

    –চুপ করে বসে থাক এখানে। এত মুচড়ামুচড়ি করছিস কেনো?

    –সে ডাকছে তো।

    –যাবি না।

    –তুমিতো দেখি সংসার জোড়া দেওয়ার বদলায় ভাঙার চেষ্টা করছো।

    –চুপ করে বস এখানে। কোথাও যাবি না।

    –সারাদিনে তো এই একবারই আমার নাম ধরে ডাকে। যেতে দাও না জেঠিমা। চা টা দিয়েই চলে আসবো।

    –এখান থেকে উঠলে এখন মাইর খাবি।

    –সে ডাকছে তো।

    –ডাকুক, তুই এত ছটফট করছিস কেনো? প্ল্যানের কথা মনে নেই? দেখবি একটু পরই মামুন এখানে চলে আসবে।

    –কি বলো? সত্যিই আসবে?

    –হুম। তুইও ভাব নিয়ে কথা বলবি।, একদম পাত্তা দিবি না।পারবি না?

    –হুম পারবো তো।

    –মনে থাকে যেনো।

    –আচ্ছা।

    প্রায় ২০ মিনিট পর ফ্রেস হয়ে মামুন মিষ্টি মিষ্টি বলে ডাকতে ডাকতে রান্নাঘরের দিকে আসতে থাকে।

    মামুনকে নিজের দিকে আসতে দেখে মিষ্টির বুকের ভেতর ধুকধুক করতে থাকে।

    –এতবার ডাকছি, শুনছিস না?

    –হুম।

    –তো আসছিস না কেনো?

    –আমি কি তোমার চাকর? যে ডাকলেই আসতে হবে।

    –কি বলছিস? আমি কি তা বলছি?

    –টেবিলের ওপর চা রাখা আছে, নিয়ে নাও।

    –বাবারে… এক রাতেই টোন এতটা বদলে গেলো।

    –কি আর করবো, নিজেকে তো বদলাতে সময় লাগছে, তাই টোনটাই আগে বদলাচ্ছি।

    –ভালো তো।

    –হুম।

    –কি হয়েছে তোর?

    –কিছু হয়নি।

    –সিওর?

    –হুম।

    –ওকে… আমি বাহিরে যাচ্ছি।

    –আমাকে বলার কি আছে?

    –কালকের পাঞ্জাবিটা একটু ধুয়ে দিস। ঘামের গন্ধ হয়ে গেছে।

    –আমাকে কি তোমার ঘরের চাকর বানিয়ে ফেলেছো?

    –কি বলছিস?

    –আমি তোমার কে হই যে তোমার কাপড় আমাকে ধুতে হবে?

    –সরি…. 

    মিষ্টি আর কিছু বলার আগেই মামুন বাহিরে বের হয়ে যায়। 

    জিব্বাহ কামড় দিয়ে মিষ্টি মামুনের চলে যাওয়া দেখছে। “এই যাহ, বেশি বলে দিলাম মনে হয়। হিতে বিপরীত না হয়ে যায়”

    .

    আজ প্রায় দুইদিন হয়ে গেলো কেউ কারো সাথে কথা বলে না। এখন আর মামুনও আগ বাড়িয়ে মিষ্টির সাথে কথা বলতে যায় না। মামুন আসবে এমনটা ভেবে মিষ্টিও নিজে থেকে কথা বলতে যায় না। দুই পরিবারের মধ্যে ব্যাপারটা বেশ সিরিয়াস মনে হয়।

    তাই দুজনকে ডেকে কথাবার্তার মাধ্যমে ব্যাপারটা সমাধানের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু তাতে তেমন কেনো লাভ হয়নি।

    সব শেষ ডিভোর্সের কথাও ওঠে। কিন্তু কেউ কাউকে ডিভোর্স দিতেও রাজি নয়।

    নিজের রুমে মিষ্টিকে বালিশ বুকে চেপে কাঁদতে দেখে মিষ্টির শাশুড়ি পাশে এসে বসে।

    শাশুড়িকে পাশে পেয়ে জাপটে ধরে হু হু করে কেঁদে ওঠে মিষ্টি।

    –এভাবে কাঁদছিস কেনো?

    –আমার যে কিছুই ভালো লাগছে না। সে আর আমার সাথে কোনো কথা বলে না।

    –তুইও তো বলিস না। গিয়ে কথা বল।

    –না, যতদিন না সে এসে কথা বলবে, আমিও বলবো না।

    –তাহলে কাঁদছিস কেনো? 

    –খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি বলেছিলে সে এসে আমার সাথে কথা বলবে, কিন্তু সে আর কোনো কথাই বলেনি। আমি কি এতটাই খারাপ জেঠিমা?

    –কি বলে পাগলি মেয়ে, খারাপ হবি কেনো? তুই তো আমার লক্ষি মেয়ে।

    –তাহলে সে কেনো আমায় মেনে নেয় না?

    –দেখ মা, সে হয়তো এই বিয়েটা আসা করেনি। তাই তোকে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। দেখবি ধীরেধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।

    –তার সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। ৩ দিন হয়ে গেলো সে আমার সাথে কথা বলে না।

    –তো যা না, মামুন তো ঘরেই আছে।

    –না, সে আসবে।

    –তোর পাগলামি আমিও বুঝিনা বাবা। 

    –দেখবে তোমার ছেলে একদিন আমার জন্য পাগল হয়ে যাবে। 

    –পাকা পাকা কথা তো ভালোই বলিস। 

    –দেখে নিও তুমি।

    –আচ্ছা দেখবো নি, এখন আর কাঁদিস না। ওঠ, চোখ মুছে খেতে আয়।

    –না, আমি ওই ঘরে যাবো না।

    –খাবার তো খেয়ে নে।

    –না, যেদিন সে আমায় নিয়ে যাবে, সেদিন ওই ঘরে খাবো।

    –তোকে নিয়ে তো জ্বালায় পড়লাম। 

    –তোমরা খেয়ে নাও, আমি আব্বুর সাথে খাবো।

    –ঠিক আছে, খেয়ে নিস। আমি গেলাম।

    –আচ্ছা।

    .

    মিঃ মামুন, তুমি আমায় অনেক কাঁদিছো। এত ভালোবাসি তোমায়, তবুও চুল পরিমাণ ভালোবাসা পাইনি। আমাকে তো ভালো করেই চেনো, আমি আমার আগের রুপে ফিরে এলে দুদিন লাগবে না তোমার থেকে ভালোবাসা আদায় করতে। কিন্তু ওই যে আম্মু বললো, স্বামীর সাথে নরম গলায় কথা বলতে, রাগ না দেখাতে। কোনো লাভই তো হলো না। আমার নামও মিষ্টি, নামের ওপর ভর করে থেকো না। মিষ্টি তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সব করতে পারে। আমার ভালোবাসা আমি আদায় করেই ছাড়বো। সেটা যে করেই হোক। 

    আজ কলেজের পরিক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে মিষ্টিকে সেই ফুসকা দোকানে দেখতে পায় মামুন, যেখানে মিষ্টির সাথে এক প্লেটে ফুসকা খেয়েছিলো।

    বেশ আগ্রহ নিয়ে মামুন একটু সামনে এগিয়ে যায়। মিষ্টির পাশে দুইটা মেয়ে আর একটা ছেলেও আছে। বেশ হাসাহাসি চলছে ওদের মধ্যে।

    মিষ্টির পাশে ছেলেটাকে দেখে মামুন খুব বেশি জ্বলতে থাকে।

    ছেলেটা বার বার মিষ্টির প্লেট থেকে ফুসকা নেওয়ার চেষ্টা করছে। আর মিষ্টি প্লেট সরিয়ে নিচ্ছে। এ নিয়ে তারা বেশ হাসাহাসি করছে।

    নিজেকে কন্ট্রোল করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে দেখে মামুন দ্রুত সেই জায়গা ত্যাগ করে।

    এর পরদিনও পরিক্ষা দিতে হলের দিকে যাওয়ার সময় মামুন মিষ্টির ক্লাসের দিকে তাকায়। দুর থেকে দেখা যাচ্ছে কলেজের বারান্দায় মিষ্টি সেই ছেলেটার সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে।

    আজ আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে মিষ্টির ক্লাসের দিকেই হাটা দেয় সে।

    নিচ থেকে দোতলায় থাকা ছেলেটাকে ডাক দেয় মামুন। মিষ্টিও অবাক হয়ে মামুনের দিকে তাকায়।

    মামুনের ডাকে ছেলেটা নিচে নেমে আসে।

    ছেলেটার কাঁধে হাত দিয়ে কথা বলতে বলতে মামুন আর ছেলেটা সামনের দিকে হাটা দেয়।

    মিষ্টি পেছন থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

    একটু পর ছেলেটা ক্লাসে ফিরে আসে।

    মিষ্টির সাথে কোনো কথা না বলেই ক্লাসে গিয়ে বসে পড়ে।

    মিষ্টি ভালো করেই বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে। 

    এই একটা বিষয়ে মামুন মিষ্টির প্রতি দূর্বল। কোনো ছেলেকে তার সাথে কথা বলতে দেখলে সে রিয়েক্ট করে।

    এর দুই দিন পর ঠিক একই ভাবে মিষ্টি আর সাথে দুইটা মেয়ে এবং সেই ছেলেটাকে ফুসকা দোকানে দেখতে পায় মামুন।

    রাস্তা থেকে এগিয়ে গিয়ে সোজা ফুসকা দোকানের সামনে এসে দাড়ায় মামুন।

    ছেলেটা মামুনকে সামনে দেখে মিষ্টির থেকে একটু দুরে সরে যায়।

    কোনো কথা না বলে ছেলেটার সামনে এসে একটা চড় দিয়ে বসে মামুন।

    উপস্থিত সবাই মামুনের এমন কান্ডে বেশ অবাক হয়।

    গালে হাত দিকে একপাশে দাড়িয়ে আছে ছেলেটা।

    –এদিকে আয়…

    –জ্বি ভাই।

    –সেদিন তোকে কি বলেছিলাম?

    –ভুল হয়ে গেছে ভাই, মিষ্টিই আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে।

    –আর কখনো জোর করলেও আসবি না। মনে থাকবে?

    –জ্বি ভাই।

    –আবার যদি তোকে ওর সাথে দেখি…………. যা এখান থেকে….।

    .

    .

    চলবে……

     

    গল্প #নজরবন্দী (০৭)

    লেখক #A_Al_Mamun

    .

    –আর কখনো জোর করলেও আসবি না। মনে থাকবে?

    –জ্বি ভাই।

    –আবার যদি তোকে ওর সাথে দেখি…………. যা এখান থেকে….

    ছেলেটা দ্রুত ফুসকা দোকানের সামনে থেকে সরে পড়ে।

    –তোকে চাচা এসব করতে কলেজে পাঠিয়েছে?

    –দেখো, এখানে কোনো সিন ক্রিয়েট করো না। 

    –বাড়ি চল।

    –তোমার সাথে আমি যাবো না। তোমার যাওয়া তুমি যাও।

    –মিষ্টি…. ভালো হবেনা কিন্তু।

    –কি করবে? মারবে?

    –চল…

    মামুন একপ্রকার জোর করেই মিষ্টির হাত ধরে টেনে গাড়িতে এনে বসায়।

    পুরো পথ মিষ্টি মামুনের দিকে ফিরেও তাকায়নি…. বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলে মিষ্টি নিজের ঘরের দিকে হনহন করে হাটা দেয়। 

    মামুনও মিষ্টির পেছন পেছন মিষ্টির ঘরের দিকে হাটা দেয়।

    –এখানে কি চাই? তোমার ঘরে যাও…।

    –ওই ছেলেটা কে?

    –তোমাকে বলতে হবে? কে তুমি?

    –আমি তোর বর… এটা ভুলে যাস না।

    –আচ্ছা? ভাগ্গিস মনে করিয়ে দিলে। নাহয় ভুলেই গেছিলাম।

    –মশকারি করছিস আমার সাথে?

    –নাতো।

    –ছেলেটা কে?

    –আমাকে যে প্রপোজ করেছিলো সে।

    –তোকে না বলেছিলাম কোনো ছেলের সাথে কথা না বলতে।

    –তোমাকে জিজ্ঞেস করে কথা বলবো নাকি? আমার যার সাথে ইচ্ছা তার সাথেই কথা বলবো।

    ওমনি মামুন ঠাস করে একটা চড় দিয়ে বসে। গালে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিষ্টি। হঠ্যাৎ করে মামুন এতটা রিয়েক্ট করবে এটা সে বুঝতেই পারেনি।

    মিষ্টিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মামুন নিজের রুমে চলে যায়।

    না, আজ আর মিষ্টি কাঁদছে না। বরং অবাক হয়ে ভাবছে। এভাবে কোনো ছেলের সাথে দেখলে কেনো সে রিয়েক্ট করবে? সে তো আমায় ভালোবাসে না। যদি সে আমায় ভালোবেসেই থাকে, তাহলে কেনো প্রকাশ করেনা? কেনো সে আমায় এতটা কষ্ট দেয়? আমি আরো এমন করবো… যতদিন না সে নিজের মুখে ভালোবাসার কথা বলবে, ততদিন আমি এমনই করবো। 

    .

    রাতের প্রায় ১০:৩০…  মিষ্টি তখন পড়ার টেবিলে বসা।

    দরজায় টোকা পড়লে মিষ্টি এসে দরজা খুলে দেয়। দরজার বাহিরে মামুন দাড়িয়ে আছে…।

    –তুমি এখানে?

    –কেনো? আসতে পারি না?

    –কি চাই?

    –বাবারে… এমন ভাবে কথা বলছিস যেনো আমাকে চিনিসই না।

    –আমি পড়তেছি, কিছু বলার হলে বলো।

    –ভেতরে আসতে দিবি না?

    মিষ্টি কোনো কথা না বলে সোজা পড়ার টেবিলে এসে বসে পড়ে।

    মামুনও পেছন পেছন এসে পাশেই বিছানায় বসে।

    –রাগ করেছিস?

    –কথা বলবি না?

    বিছানা থেকে উঠে মিষ্টির সামনে এসে দাড়ায় মামুন। মিষ্টিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে গালের ওপর হাত বুলিয়ে……

    –সরি রে। মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিলো। রাগের মাথায় চড় দিয়ে দিয়েছি। আমায় ক্ষমা করে দে।

    –ঠিক আছে, এটা কোনো ব্যাপার না।

    –গালটা লাল হয়ে আছে। চাচা চাচি কেউ দেখেনি?

    –না।

    –ব্যথা করছে?

    –না।

    –আমার ওপর রাগ করে আছিস?

    –না।

    –সরি।

    –আর কিছু বলবে?

    –ফুসকা খাবি? নিয়ে এসেছি।

    –লাগবে না। তুমি যাও, আমার এখনো অনেক পড়া বাকি আছে।

    –খেয়েছিস?

    –না।

    –কেনো?

    –খুদা নেই।

    –চল।

    –কোথায়?

    –তোর শশুড় বাড়ি।

    –যাবো না আমি।

    –কেনো?

    –ওই ঘরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।

    –কারনটা কি আমি?

    –জানি না।

    –চল না।

    –না।

    –এখন তুলে নিয়ে যাবো কিন্তু।

    –ওই সাহস আছে তোমার? পারলে নিয়ে দেখাও।

    –সাহস তো নেই। কিন্তু নিজের বউকে তো নিয়ে যেতেই পারি।

    বলেই মামুন মিষ্টিকে কোলে তুলে নিয়ে সোজা নিজের ঘরের দিকে হাটা দেয়।

    মিষ্টিও নিজেকে ছাড়ানোর মিথ্যে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কারন সে নিজেই চাচ্ছে মামুন জোর দেখাক, অধিকার দেখাক।

    ঘরের সবার সামনে দিয়ে মামুন নিজের বউকে কোলে করে নিজের ঘরে নিয়ে যায়।

    মিষ্টিকে এভাবে নিয়ে যেতে দেখে বাকিরা কিছুটা প্রশান্তির নিশ্বাস নেয়। এবার যদি তারা এক হয় আরকি……..

    নিজের ঘরে এনে মিষ্টিকে বিছানায় বসানো হয়।

    –তুই বস, আমি খাবার নিয়ে আসতেছি।

    –আমি খাবো না।

    –চুপ করে বসে থাক।

    মিষ্টিকে বসিয়ে রেখে মামুন রান্নাঘরের দিকে হাটা দেয়। মামুন দরজা দিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথেই সিনথিয়া রুমে প্রবেশ করে।

    –কিরে? কি এমন হলো যে ভাইয়া নিজেই তোকে নিয়ে এলো।

    –তুই জানিস না? তোর ভাই আমাকে ভালোবাসে, তাই নিয়ে এসেছে। 

    –আচ্ছা? কোথায় গেলো এখন?

    –আমার জন্য খাবার আনতে গেছে। দেখবি নিজের হাতেই খাইয়েও দিবে।

    –কচু দিবে। আমি কত বলেছি আমাকে খাওয়াই দিতে, কখনো দেয়নি। আর তুই কি আমার চেয়েও ভাইয়ার কাছে বড় নাকি যে তোকে খাওয়াবে।

    –গাধী, দেখিস কেমনে খাওয়ায়।

    –এই, তুই কি এমন করেছিস যে ভাইয়া নিজে থেকে তোকে নিয়ে এলো।

    –তেমন কিছুই না। হালকা একটু অভিনয় করতে হলো।

    –অ্যাহ?

    –অ্যাহ না, হ্যা। যা ভাগ, তোর ভাই আসতেছে।

    –ড্রামা কুইন একটা। তোর কপালে মাইর আছে দেখবি।

    মামুন আসার আলামত পেয়ে সিনথিয়া আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

    .

    –এই নে, খেয়ে নে।

    –আমি খাবো না।

    –কেনো?

    –খুদা নেই আমার।

    –খেতে বলেছি।

    –খাবো না।

    মামুন বেসিং থেকে হাত ধুয়ে এসে নিজের হাতেই মিষ্টিকে খাওয়ানো শুরু করে।

    মিষ্টিও বেশ মজা করে খাওয়া শুরু করে।

    –আজ এমন কি হয়েছে যে আমার এমন যত্ন নিচ্ছো!

    –বউয়ের যত্ন নেওয়া যায় না?

    –তুমি আবার কবে থেকে বউ মানলে?

    –এত প্রশ্ন করিস কেনো?

    –আচ্ছা বাদ দিলাম। আমি যাই, ঘুমাতে হবে।

    –কই যাস?

    –আমার রুমে।

    –এটাই তোর রুম, এখানে ঘুমা।

    –সত্যি করে বলোতো, কি হয়েছে তোমার?

    –কই?

    –এতদিন তো এমন করো নি।

    –তুইওতো এতদিন কোনো ছেলের সাথে মেলামেশা করিস নি।

    –আচ্ছা, এই জন্য?

    –তুই তো আমায় ভালোবাসিস, তাহলে কেনো অন্য ছেলের সাথে কথা বলিস?

    –আমি ভালোবেসে কি লাভ বলো, আমায় তো কেউ ভালোবাসে না।

    –আমিতো তোকে ভালোবাসি।

    –কি বলছো?

    –হুম সত্যি।

    –মজা করছো? 

    –মজা করবো কেনো? 

    –কিভাবে হঠ্যাৎ ভালোবাসলে?

    –সে অনেক কাহিনী, পরে বলবো।

    –এখন বলো, না বললে এক্ষুণি চলে যাবো।

    –রাগ করিস কেনো? বলবো তো।

    –বলো। তুমি সত্যিই আমায় ভালোবাসো?

    –হুম।

    –কবে থেকে?

    –যেদিন তোকে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম, সেদিন থেকে।

    –নতুন এমন কি দেখলে সেদিন? 

    –নজরটা নতুন ছিলো, সেদিন অডিটোরিয়ামের একপাশে একটা নীল শাড়ি পড়ে সেজেগুজে দাড়িয়ে ছিলি, দুর থেকে মুখটা পরিচিত মনে হওয়ার একটু ভালো করে খেয়াল করি। যেনো ওই নীল আকাশ থেকে কোনো একটা অপ্সরী আমাকে জ্বালাতে টুপ করে নেমে এলো। হালকা মেকাপ, সাথে মাথায় গাজরা ফুলের কুড়ি। এক কথায় মন ছুয়ে যাওয়ার মতো কেউ, দুর থেকে দেখলাম আমারই বউ। দেরী না করে দ্রুতই তোর সামনে এসে দাড়াই। ইচ্ছে করছিলো তোকে কোথাও লুকিয়ে ফেলি, যেনো আমি ছাড়া আর কেউ তোকে না দেখে। কোনো উপায় না পেয়ে মনটা তোর প্রেমে পড়তে বাধ্য হলো। 

    –ওও আচ্ছা, তাহলে তুমি আমার প্রেমে পড়েছো?

    –হুম।

    –যদি সেটা আমি না হয়ে অন্য কেউ হতো?

    –হয়তো আফসোস হতো, কিন্তু এখন আর আফসোস নেই।

    –তোমার নজর ভালো না। কেনো অন্য মেয়েদের দিকে তাকাবা?

    –কই অন্য মেয়ের দিকে তাকালাম? নিজের বউই তো ছিলো।

    –কচু, একবারও তো আমায় বলো নি।

    –বলতাম, তবে একটু সময় নিচ্ছিলাম। কারন এত বছরের সাধনা, পরিক্ষাটা ভালোয় ভালোয় শেষ করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তুই যা শুরু করেছিস, তাতে মনে হয়না আমার আর পরিক্ষাটা ভালো হবে।

    –সত্যি তুমি আমায় ভালোবাসো?

    –কয়বার বলবো আর?

    –বলো না, শুনতে ভালোই লাগে।

    –হুম ভালোবাসি।

    –আর ওই নিশি? তাকে ভালোবাসো না?

    –আমি জানি ভুলটা আমার দিক থেকেই হয়েছিলো। কিন্তু সে আমায় তা সংশোধন করার সুযোগ দেয়নি। যে আমাকে ব্রেকাপ বলে পরদিন অন্য ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারে। তার জন্য কিভাবে আমার ভালোবাসা বেচে থাকে? 

    –ভালোই করেছো, ওই মেয়েকে এমনিতেই আমার পছন্দ না। চড় দিয়ে ভালোই করেছিলাম।

    –একদম না। সে তোর চেয়ে অনেক বড়।

    –তোমাকে আমার থেকে কেউ কেড়ে নিতে চাইলে আমি বড় ছোট মানবো না। খুন করে ফেলবো।

    –বাপরে… এতো ভালোবাসিস?

    –আমার জীবনের চেয়েও বেশি। কতরাত আশায় বুক বেধে ছিলাম, এই বুঝি এসে আমায় নিয়ে যাবে। তুমি আসতে না, খুব কাঁদতাম। 

    –সরি, আমি তোর ভালোবাসা বুঝি নি।

    –জানো আমার কত খুশি লাগছে। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

    –একদম না, তোকে না বললাম কাঁদলে তোকে পেত্নীর মত লাগে।

    –যাহ, আমি পেত্নী না।

    –কমও না।

    –ঠিক আছে, এখন থেকেই তোমার রক্ত খাওয়া শুরু করবো।

    –ছোটবেলা থেকেই তো খাচ্ছিস, আর কত?

    –জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।

    –বাপরে…..

    –তোমায় একবার জড়িয়ে ধরি?

    –কেনো?

    –খুব ইচ্ছা।

    –আয়

    .

    চোখে লাইটের আলো পড়ে আজ ভোরে ভোরেই মামুনের ঘুম ভেঙে যায়।

    পড়ার টেবিলের চেয়ারটা নিয়ে আয়নার সামনে কেউ একজন বসে আছে। আয়নায় মামুনকে জেগে উঠতে দেখে পেছন ফিরে তাকায় মিষ্টি।

    ভেজা চুলগুলো মুছতে মুছতে মামুনের পাশে এসে বসে সে।

    –আজ এত তাড়াতাড়ি উঠে গেলে যে।

    –ঘুমাতে দিলি কই?

    –কি করলাম আমি?

    –ঘরে এমন একটা বউ থাকলে কি ঘুমানো যায়?

    –তাই বুঝি?

    –হুম। শাড়িটা কে দিলো?

    –বিয়ের পরদিন জেঠিমা দিয়েছিলো।

    –খুব সুন্দর লাগছে তোকে। 

    –তাই?

    –হুম

    শোয়া অবস্থায় মিষ্টির কোমড়ে হাত দিয়ে এক টান দিয়ে মিষ্টিকে নিজের ওপর নিয়ে নেয় মামুন।

    –কি করছো? ছাড়ো।

    –ভেজা চুল নিয়ে আমার সামনে কেনো এলি?

    –আসলে কি হয়েছে?

    –তোর চুলের ঘ্রাণে আমার ঘুমের ঘোর টাই কেটে গেছে।

    –আগে কখনো ঘ্রাণ লাগেনি?

    –ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করিনি, তাই লাগেনি।

    –এখন কেনো নিচ্ছো?

    –বউয়ের ঘ্রাণ নিবো না?

    –কে বারণ করলো?

    –শাড়িতে তোকে খুব সুন্দর লাগছে।

    –শাড়ি পড়ে আমারও আজ কেমন জেনো লাগছে। কেমন বউ বউ অনুভূতি হচ্ছে।

    –বউয়ের মতই লাগছে তোকে। 

    –তাই? এবার ছেড়ে দাও, চুল শুকিয়ে নি।

    –না, কে যেনো বলেছিলো। সকালে ঘুম ভাঙার পর বউকে জড়িয়ে শুয়ে থাকা প্রয়োজন।

    –তোমার মধ্যে এত রোমান্টিকতা আগে কই ছিলো?

    –হয়তো তোর জন্য বাচিয়ে রেখেছিলাম।

    –ঠিক আছে, দেখবো নি কত রোমান্টিক তুমি। এবার ছাড়ো।

    –আর একটু থাক না?

    –একদম না। তুমিও ওঠো।

    –এ নাহ, আর একটু ঘুমাই।

    –আর না, উঠে গোসল করে এসো।

    –এই ঠান্ডার মধ্যে?

    –হুম, আজ আমাদের প্রথম রাত ছিলো। এক কথায় বিয়ের পর আমাদের প্রথম মেলামেশা। বাকি জীবনটা আমি তোমার সাথেই কাটাতে চাই। তোমায় আমার করে পেয়েছি, এরচেয়ে খুশি আমার জন্য আর কি হতে পারে? আল্লারহ কাছে শুকরিয়া আদায় করতে হবে না? ওঠো, গোসল করে এসো। একসাথে নামাজ পড়বো। অনেক হয়েছে তোমার শয়তানি, আর না। এখন থেকে প্রতিদিন আমার সাথে উঠবা।

    –বাবারে… কত ঠান্ডা।

    –ওঠো বলছি।

    –উঠছি।

    আজ প্রথমবার মিষ্টি রুমের বাহিরে বের হতে লজ্জা পাচ্ছে। রাতে মামুন সবার সামনে দিয়েই কোলে করে নিয়ে গিয়েছিলো। 

    এখন সবাই কি না কি ভাবছে, এটা ভেবেই মিষ্টি লজ্জায় একাকার। 

    সকাল সকাল মিষ্টির শাশুড়ি রান্নাঘরে এসে দেখে মিষ্টি নাস্তা বানানো শুরু করে দিয়েছে।

    মিষ্টিকে এত ভোরে রান্নাঘরে দেখে তিনি বেশ অবাক হন।

    –এ কিরে…. কাকে দেখছি আমি?

    –তোমার ছেলের বউ।

    –তা তো বুঝলাম, কিন্তু আপনি এত সকালে এখানে?

    –ওমা, বউদের না সকাল সকাল উঠে নাস্তা বানাতে হয়?

    –কে বললো?

    –আম্মু।

    –তো এতদিন কই ছিলেন আপনি?

    –আমার ঘরে।

    –আজ হঠ্যাৎ?

    –তোমায় বলেছিলাম না সে আমায় ওই ঘর থেকে নিয়ে আসবে? দেখলে তো, কাল রাতে আমায় কোলে করে নিয়ে এসেছে।

    .

    .

    চলবে……..

     

    গল্প #নজরবন্দী (০৮)

    লেখক #A_Al_Mamun

    .

    –তোমায় বলেছিলাম না সে আমায় ওই ঘর থেকে নিয়ে আসবে? দেখলে তো, কাল রাতে আমায় কোলে করে নিয়ে এসেছে।

    –এখন খুশি?

    –অন্নেক।

    –পাগলি মেয়ে… জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি, তোর মত এমন পাগলি দেখিনি।

    –দেখবে কিভাবে? মিষ্টি এক পিস…। সবার ভাগ্গে মিষ্টি নেই, তোমাদের কপাল ভালো তাই আমার মত বউ পেয়েছো। 

    –বাপরে..

    –আল্লাহর কাছে শোকর করো। 

    –করলাম। 

    –এখন সরো, অনেক কাজ আমার। কত কিছু বানাতে হবে।

    –একা পারবি না। আমি দেখিয়ে দেই, তুই বানা।

    –আচ্ছা।

    .

    মিষ্টি আজ এঘর থেকে ওঘর, ওঘর থেকে এঘরে শুধু লাফালাফি করছে। এককথায় মিষ্টি আর বাড়ির সবাই আজ খুব খুশি।

    দুজনের সম্পর্কটা বাড়ির সকলের চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছিলো। তাই দুজনের এভাবে মিলে যাওয়াটা সবার জন্যই আনন্দের।

    নিজেদের ঘর আর স্বামীর ঘর দুটো একা হাতেই সামলাম মিষ্টি। 

    খুব আনন্দেই মিষ্টির দিনগুলো পার হতে থাকে। এর মাঝে মামুনের ফাইনাল পরিক্ষাও শেষ হয়ে যায়।

    –তোমায় একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম।

    –কি বলবি? বল।

    –তোমার পরিক্ষাতো শেষ? এবার কি করবে?

    –সেটাই ভাবছি। কি করবো এখনো ঠিক করিনি।

    –কাল জেঠিমাকে বলতে শুনলাম, তোমার জেঠুর ব্যবসার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিবে।

    –ধুর, ওসব আমি বুঝি নাকি?

    –জেঠু তোমায় বুঝিয়ে দিবে বললো।

    –তুই এখনো ছোট, এসব তোর মাথায় ঢুকবে না। চুপ করে থাক।

    –হুম, কি আর করবো আমি? এটাই করতে হবে। নিজের স্বামী থাকা অবস্থায় কিছু প্রয়োজন পড়লে এখনো আমায় বাবার কাছে চাইতে হয়। কেনো আমি নিজের স্বামীর কাছে চাইতে পারি না?

    –এই পাগলি, সবে তো পরিক্ষাটা শেষ করলাম। একটু সময় তো দে। কারো কাছে তোর কিছু চাইতে হবে না। তোর যা যা লাগবে সব আমি দিবো।

    –আমারও তো ইচ্ছে করে আর ৮-১০টা বউয়ের মতো তোমার পকেট থেকে টাকা চুরি করে লুকিয়ে রাখতে। তুমি কাজ থেকে ফিরলে তোমার সেবা করতে। কবে হবে?

    –একটু ধৈর্য ধর, সব হবে।

    –তুমি আমায় সবার সামনে তুই তুই বলো কেনো? তুমি বলতে পারো না?

    –চেষ্টা তো করি, পুরোনো অভ্যাস তো, তাই বলে ফেলি।

    –বাদ দাও ওমন অভ্যাস, তুমি করে বলবে।

    –আচ্ছা বলবো। খুশি?

    –হুম। তোমার তো পরিক্ষা শেষ, চলো না কাল কোথাও থেকে ঘুরে আসি।

    –কই যাবি?

    –তুমি যেখানে নিয়ে যাবে।

    –সামনের সপ্তাহে তো আশার(খালাতো বোন) বিয়ে। কয়েকদিন ধরে খালামনি ফোন দিচ্ছে, চল তাদের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। একবারে বিয়ে শেষ করে এরপর আসবো। 

    –কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে আমার লজ্জা করে। এমনি বাহিরে চলো না কোথাও থেকে ঘুরে আসি।

    –দাওয়াত যখন পেয়েছি আজ নাহয় কাল তো যেতেই হবে। পরিক্ষা শেষ, কাজে লেগে পড়লে এরপর আর কোথাও যাওয়া হবে না। চল না খালামনিদের বাসা থেকে ঘুরে আসি।

    –আচ্ছা, কখন যাবে?

    –কালই চল।

    –বাকিরা?

    –মা বাবারা পরে আসবে। 

    –আচ্ছা চলো।

    .

    এই প্রথম স্বামীর সাথে কোথাও বেড়াতে বের হলো মিষ্টি। পাশে একটা পুরুষ মানুষের হাতে হাত রেখে চলাটা যতটা ভালোবাসার, মিষ্টির কাছে ব্যাপারটা ঠিক ততটাই লজ্জার।

    খালামনির বাড়িতে পৌছানোর পর সবাই মামুন আর মিষ্টিকে বরণ করে নেয়। মামুনের হাত ধরে মিষ্টি ঘরে প্রবেশ করে। চারদিকের কোলাহল মিষ্টিকে একদম অতিষ্ঠ করে তোলে।

    অপরিচিত কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে সবারই একটু মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়।

    মামুনের খালা আর খালাতো বোন আশাকে ২ বার দেখেছিলো মিষ্টি। তাদের সাথে ওতটা ভাব নেই। 

    মামুন আর মিষ্টিকে একটা রুম দেওয়া হয়। মিষ্টি মামুনকে নিয়ে রুমের মধ্যেই বসে আছে। না মামুনকে বের হতে দিচ্ছে, না নিজে বের হচ্ছে।

    –কেউ কি বেড়াতে এসে এভাবে বসে থাকে? বাহিরে আয় না, সবার সাথে পরিচিত হয়ে নে।

    –না, যে দেখে সে শুধু এটা ওটা জিজ্ঞেস করে। নতুন বিয়ে করলে বুঝি এত কিছু জিজ্ঞেস করতে হয়?

    –পাগলি, দুনিয়াটাই এমন। একটু তো মানিয়ে নিতে হয় তাই না?

    –কাল বের হবো। আজ রুমেই থাকো।

    –তোকে নিয়ে তো এক জ্বালা দেখছি।

    –ঠিক আছে, তুমি যাও। আমি যাবো না।

    হঠ্যাৎ আশা রুমে প্রবেশ করে….

    –কিগো ভাবি, সারাক্ষণ ভাইয়ার সাথে বসে থাকলে হবে? বাহিরে তো আসো।

    –ও লজ্জা পাচ্ছে, ওকে একটু তোর সাথে নিয়ে যা না।

    –ওমা, লজ্জা কিসের? আমি আছি তো, আমার সাথে চলো।

    –আজ থাক, কাল যাবে বললো। এখন তো রাত হয়ে গেছে। আর গিয়ে লাভ নাই।

    –খাবার খাবে না তোমরা?

    –হুম। একটু পর।

    –তাহলে আর কি, ভাবির সাথে একটু আড্ডা দেই। ভাবি তো এখনো আমার সাথে কথাই বললো না। কিগো ভাবি? তুমি এত লজ্জা পাও?

    –ওরকম কিছু নয়, নতুন মানুষ তো। তাই একটু সময় লাগছে।(মিষ্টি)

    –নতুন কই? আমিতো কতবার তোমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। অবশ্য তোমার সাথে কখনো কথা হয়নি। 

    –হুম

    –তোমাদের বিয়েটা কিভাবে হলো গো? আমারও কত সখ ছিলো প্রেম করে বিয়ে করবো। তা আর হলো কই? 

    –প্রেম করলাম কই? সে তো আমায় ভালোই বাসে না।

    –কিহ? আমি তোকে ভালোবাসি না?(মামুন)

    –বিয়ের আগে কি বাসতে?

    –বিয়ের আগে বাসি নি, কিন্তু এখন তো বাসি।

    –হুম।

    –জানো, আমিও মামুন ভাইয়ের ওপর কত লাইন মারছি, একটুও পাত্তা দেয়নি আমায়। এমনও হতে পারতো আমি ওই বাড়ির বউ হয়ে যেতাম। তখন তোমার সাথে খুব আড্ডা দিতাম।

    আশার এমন কথা শুনে মিষ্টি নিচ থেকে মাথা তুলে চোখ লাল করে আশার দিকে তাকায়। মামুন ভালো করেই বুঝতে পারে আশার মজা করে বলা কথাটা মিষ্টির পছন্দ হয়নি। 

    –ভাবি কি রাগ করলে?

    –ফাজলামো করিস নাতো। গিয়ে খাবার রেডি কর, আমরা আসছি।(মামুন)

    –ভাবির চেহারাটা এমন হয়ে গেলো কেনো?

    –এখানে আর ১ মিনিট থাকলে তোর কপালে শনি আছে। যা…..

    –যাচ্ছি, জলদি আসো তোমরা।

    .

    আশা চলে যাওয়ার পর মামুন মিষ্টির পাশে এসে বসে।

    –কিরে? ওভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?

    –মেয়েটা কি বললো?

    –আরে ও মজা করেছে।

    –এই ধরনের মজা আমার একদম পছন্দ নয়।

    –বাদ দে না এসব, খেতে চল।

    –তুমি যাও, আমি খাবো না।

    –এত রাগ করলে হয়? এটা কোনো রাগ করার বিষয়?

    –খুব মজা লাগছে তোমার তাই না?

    –মজা লাগবে কেনো? আশা মজা করে বলেছে এটা।

    –মজা? যাও, ওর কাছে যাও।

    –আচ্ছা গেলাম আমি।

    পেছন থেকে মামুনের জামা টেনে ধরে এক টানে বিছানায় এনে ফেলে মিষ্টি। দরজা টা লাগিয়ে এসে মামুনের বুকের ওপর উঠে বসে।

    –কি বলেছো আবার বলো।

    –আমি কিছু বলিনি।

    –ওর কাছে যাচ্ছো তাই না?

    –একদম না। আমার কলিজা টাকে রেখে আমি কোথাও যেতে পারি?

    –একদম মশকারি করবা না আমার সাথে। তোমাদের আগে রিলেশন ছিলো?

    –এই যাহ, কি বলিস এসব?

    –তাহলে মেয়েটা এটা কি বললো?

    –আরে ও মজা করেছে। ওর সাথে তো আমার তেমন কথাও হতো না।

    –চুপ করো। কালই বাড়ি চলো, এখানে আর না।

    –অ্যাহ! কি বলিস? 

    –ঠিকই বলছি।

    –বাবা এই যে কানে ধরছি, আমি আর আশার সাথে কথাই বলবো না। মাফ করে দে।

    –শুনো, সব সময় আমার চোখে চোখে থাকবে। একদম আমার চোখের আড়াল হবে না।

    –জ্বি ম্যাডাম। এবার তো নামুন।

    –এখন আমার ভারও নিতে পারছো না। কয়দিন পর আর আমাকেও নিতে পারবে না।

    –ওমা কি বলে, আমার বউয়ের ভার আমি সারাজীবন নিতে পারবো। 

    –হুম দেখলাম তো।

    –চল না খেয়ে আসি, খুদা লেগেছে।

    –ঠিক আছে, কিন্তু ওই মেয়ের থেকে দুরে থাকবা কিন্তু।

    –যথা আগ্গা ম্যাডাম।

    ভালোয় ভালোয় রাতটা পার হয়। পরদিন মামুন আশাকে ছাদে ডেকে মিষ্টির ব্যাপারে সবটা খুলে বলে। 

    যেনো মিষ্টির সামনে এইধরনের কোনো কথা না বলে। মজা হোক বা সিরিয়াস, এসব শুনলে মিষ্টি ভীষণ রেগে যায়।

    এর আগেও মিষ্টি নিজের চেয়ে বয়সে বড় একজনকে মেরেছে। সেই যায়গায় আশা প্রায় মিষ্টির সমবয়সী। 

    বেশ আনন্দের সাথে দিন গুলো কাটতে থাকে। বাড়ির সবার সাথেই মিষ্টির ভাব জমে গেছে। আর একদিন পরই আশার বিয়ে। বাড়িতে অনেক মেহমানের আনাগোনা..। মামুনের বাবা মা সিনথিয়া সহ পুরো পরিবার বিয়েতে হাজির হয়। আশার অনেক বান্ধবীও বিয়ের দাওয়াতে আসে। 

    আশা সবার সাথে মিষ্টির পরিচয় করিয়ে দেয়। সবাই মিলে বেশ আড্ডা জমায়.।। বিয়ে বাড়ির পরিবেশটা চারদিক থেকে জমে উঠেছে। রঙিন লাইট দিয়ে পুরো বাড়ি সাজানো। সবাই যার যার মত করে সেজেগুজে হলুদ সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে হাজির হচ্ছে।

    –আমার একটা আফসোস থেকেই গেলো।(মিষ্টি)

    –কিসের?(মামুন)

    –আমাদের বিয়ের কোনো অনুষ্ঠানই তো হয়নি। আমি বউ সাজতে পারিনি।

    –সব তো হুট করেই হলো। বউ সাজবি কি করে?

    –আমাকে আজ সাজিয়ে দাও না। আমরা একসাথে স্টেজে উঠবো।

    –আমি কি পারি নাকি। সিনথিয়াকে ডেকে দেই, ও সাজিয়ে দেবে।

    –ধুর, আমার বর আমায় সাজাবে। সেটা যেমনই হোক না কেনো।

    –বাবারে… আমি পারি নাতো।

    –পারবে…এদিকে এসো।

    দুজনের ম্যাচিং করে নীল রংয়ের শাড়ি আর নীল পাঞ্জাবি পড়ে। সাজগোছ শেষে মিষ্টি আয়নার সামনে এসে দাড়ায়….।

    –কেমন লাগছে গো আমায়?

    –একদম পরীর মতো। শাড়িতে আমার পাগলিটাকে খুব মানায়। এই শাড়িতেই তোর প্রেমে পড়েছিলাম।

    –তাই বুঝি? আমি তাহলে রোজ শাড়ি পড়বো।

    –রোজ না, মাঝে মাঝে পড়িস।

    –কেনো?

    –রোজ রোজ এক তরকারী মজা লাগে না।

    –তবে রে……… 

    –সরি সরি…..

    –চলো.. একদম আমার সাথে সাথে থাকবে।

    –আচ্ছা.. এখন তুই সিনথিয়ার সাথে গিয়ে আড্ডা দে। এর ফাকে আমি কিছু বিয়ের ছবি তুলে নেই। এরপর আমরা স্টেজে উঠবো।

    –আচ্ছা, তাড়াতাড়ি শেষ করবা।

    –ঠিক আছে।

    .

    হাতে ক্যামেরা নিয়ে মামুন এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

    মিষ্টি আর সিনথিয়া আশার রুমে বসে আশার বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দেওয়া শুরু করে।

    প্রায় রাতের ১২টায় আশাকে সাজিয়ে স্টেজে নিয়ে আসা হয়।

    একে একে সব আত্মীয় স্বজন স্টেজে উঠে আশার সাথে ছবি তুলতে থাকে। মিষ্টি আর সিনথিয়া আশার বান্ধবীদের সাথে স্টেজের সামনেই চেয়ার নিয়ে বসে আছে।

    –সিনথিয়া…….

    –হ্যা ভাইয়া।

    –মা আর বাবাকে ডাক দে তো, ওনাদের ছবি নিয়ে নেই।

    –আচ্ছা ভাইয়া।

    –মিষ্টি…..

    –হ্যা,

    –চাচা চাচিকেও ডাক দে…। ওনাদের ও ছবি নিয়ে নেই।

    –আচ্ছা।

    –ওই ছেলেটা কে গো?(আশার বান্ধবী)

    –আমার ভাইয়া।(সিনথিয়া)

    –তোমার ভাই কিন্তু মাশা-আল্লাহ।

    –দেখতে হবে না কার ভাই।

    –নাম্বারটা দাও, তোমার ভাইয়ের সাথে লাইন মারবো। এখনো আমি সিঙ্গেল। 

    পাশেই বসেছিলো মিষ্টি। নাম্বারের কথা শুনে মিষ্টি মাথা ঘুরিয়ে তাদের দিকে তাকায়।

    –মিষ্টি, বাবা মাকে একটু ডেকে দেনা। আমার পায়ে ব্যথা করছে।(সিনথিয়া)

    –ঠিক আছে।

    মিষ্টি আশার বান্ধবীদের দিকে একটু রাগি ভাব নিয়ে তাকিয়ে ঘরের দিকে হাটা দেয়।

    একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে সিনথিয়া আশার বান্ধবীদের বলতে শুরু করে।

    –মজা করছো?

    –রেগে গেলে মনে হয়?

    –না রাগি নি। তবে আমার ভাইয়ের নাম্বার দেওয়া যাবে না।

    –কেনো?

    –আমার ভাবি জানতে পারলে খবর আছে।

    –তোমার ভাই বিবাহিত?

    –জ্বি সে বিবাহিত।

    পেছন থেকে মিষ্টি জবাব দিয়ে বসে…..।

    –বাব্বাহ, তুমি আবার রেগে গেলে যে?

    –একটা সুন্দর ছেলে দেখলেই প্রেম করতে ইচ্ছে করে? নাম্বার নিতে ইচ্ছে করে?

    –আরে, আমি তো মজা করছি, তুমি এভাবে রেগে যাচ্ছো কেনো.

    সিনথিয়া মিষ্টির ধরে হাত টেনে এনে চুপ করে পাশে বসায়।

    –কারন ইনিই আমার ভাইয়ের বউ, মানে আমার ভাবি। এই জন্য রাগতেছে।

    –কাল যে বললে সে তোমার চাচাতো বোন?

    –হুম, আমার চাচাতো বোনের সাথেই আমার ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। 

    –হুম বুঝলাম, কিন্তু এত রেগে যাওয়ার কি আছে? আমি তো মজা করছি।

    –আমি তোমাকে এটাই বলার চেষ্টা করছি যে মজা করো না। সমস্যা হবে….। 

    –বুজলাম না, বিয়ে করছো ভালো কথা। তাই বলে জামাইকে নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি করা লাগে? এত সমস্যা হলে ঘরেই রেখে আসতে। বাহিরে কেনো নিয়ে এসেছো?

    .

    .

    চলবে…….

     

    গল্প #নজরবন্দী (০৯)

    লেখক #A_Al_Mamun

    .

    –বুজলাম না, বিয়ে করছো ভালো কথা। তাই বলে জামাইকে নিয়ে এতো বাড়াবাড়ি করা লাগে? এত সমস্যা হলে ঘরেই রেখে আসতে। বাহিরে কেনো নিয়ে এসেছো?

    –মিষ্টি… চল এখান থেকে। (সিনথিয়া)

    সিনথিয়া মিষ্টি হাত ধরে মিষ্টিকে নিয়ে দ্রুত তাদের সামনে থেকে সরে পড়ে।

    মিষ্টির চোখ দুটো লাল হয়ে আসে। সিনথিয়া ভালো করেই বুঝতে পারে মিষ্টি রাগ কন্ট্রোল করে আছে।

    মিষ্টিকে সাথে নিয়ে জায়গা বদল করে অন্য চেয়ারে গিয়ে বসে সিনথিয়া।

    –আম্মু আর আব্বুকে ডেকেছিস?(সিমথিয়া)

    –ওই, কথা বলিস না কেনো?

    –হুম।

    –এখনো ওদের কথা নিয়ে ভাবছিস?

    –ভাবছি না, ইচ্ছে করছে গিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে আসতে। 

    –আরে পাগল, ওরাতো মজা করছিলো।

    –এই বিষয়ে মজা করা আমার একদম পছন্দ না।

    –বাদ দে তো, ওই দেখ আশাকে।

    –তুই দেখ….

    সিনথিয়াকে বসিয়ে রেখে মিষ্টি মামুনের দিকে হাটা দেয়। মামুন তখনো ছবি তোলায় ব্যস্ত।

    –শুনছো.।

    –হ্যা বল।

    –এদিকে এসো।

    –কিছু বলবি?

    –হুম।

    –হুম বল।

    –ঘরে চলো।

    –কেনো?

    –আসতে বললাম না? এত কথা কেনো বলো?

    মিষ্টির রাগ দেখে মামুন কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। আর দুকথা না বাড়িয়ে মিষ্টির সাথে ঘরের দিকে হাটা দেয় মামুন।

    মামুনকে রুমে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দেয় মিষ্টি।

    –কিরে? কি হয়েছে তোর?

    –কিছু হয়নি। ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাবে এসো।

    –কি বলছিস? এখনো তো অনুষ্ঠান শেষই হলো না। স্টেজে উঠবি না?

    –না। 

    –আচ্ছা তুই শুয়ে পড়। আমি আর কয়েকটা ছবি তুলে আসি।

    –একদম বাহিরে যাবে না।

    –কেনো?

    –আমি বলছি তাই।

    –কিছু হয়েছে?

    –কিছু বাজে মেয়ে বসে আছে বাহিরে, যেও না।

    –এমা, কিরকম বাজে মেয়ে?

    –ছেলেদের দিকে বাজে নজর দেয়।

    –কি বলিস? সারাজীবন শুনে আসলাম ছেলের এমন করে, আজ দেখি উল্টা।

    –হুম, শুয়ে পড়ো। একদম বাহিরে যাবে না।

    –হুম, একদম যাবো না। আমার বউ বলেছে, কেনো আমি বাহিরে যাবো? চল ঘুমিয়ে পড়ি।

    –সত্যি যাবে নাতো?

    –একদম না। 

    –আমার লক্ষি জামাই, বুকে আসো।

    .

    পরদিন বিয়েটা কোনো রকম শেষ করে মিষ্টি মামুনকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।

    পরিবারের বাকি সবাই বিয়ে বাড়িতেই রয়ে যায়।

    –শুনো, এখনকার যুগের মেয়ে গুলো একদম ভালো না। কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাবে না।

    –একদম না। আমার তো বউ আছে, কেনো অন্য মেয়েদের দিকে তাকাবো?

    –হুম, আর আমায় বেশি বেশি ভালোবাসবে। তাহলে অন্য মেয়েদের কথা তোমার মাথায় আসবে না।

    –আল্লাহ আমার কপালে এমন একটা বউ দিছে যে অন্য মেয়ের কথা মাথায় আসার আগে তারা নিজেরাই ভাবে যে আমার মাথায় আসবে নাকি আসবে না। 

    –এটা কি কমপ্লিমেন্ট ছিলো? নাকি আমায় পচালে?

    –আরে না, পচাবো কেনো? কমপ্লিমেন্টই….। এমন মিষ্টি বউ কি সবার ভাগ্যে আছে নাকি? 

    –আমার লক্ষি বাবু। শুনো, তাড়াতাড়ি জেঠুর ব্যবসা বুঝে নাও। জামাই বেকার থাকলে সত্যিই বউয়ের খুব কষ্ট হয়।

    –ওমা, কেনো?

    –তুমি ইনকাম করা শুরু করলে আমি তোমার কাছে কিছুতো চাইতে পারবো। আমার বুঝি কিছু চাইতে ইচ্ছে করে না?

    –আচ্ছা, আমার বউয়ের জন্য খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করে দিবো।

    –উম্মাহ…..

    ধীরেধীরে মামুন মিষ্টির প্রতি মিষ্টির চেয়েও বেশি দূর্বল হয়ে পড়ে। মিষ্টির বাচ্চাদের মত ব্যবহার, ভালোবাসা, প্রতিটি কথায় মামুন মুগ্ধ।

    ভালোবাসা সত্যিই এমন হয়, তার করা প্রতিটা কাজই ভালো লাগে। 

    কাজ শেষে বাড়ি ফিরে সবার আগে তার মিষ্টিকে চাই। মিষ্টি শাশুড়িমাকে গর্ব করে বলে, “তোমায় বলেছিলাম না সে আমার জন্য পাগল হয়ে যাবে, আমাকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসবে। দেখলে তো? “

    বাড়ির সবাই মিষ্টির কথায় খিলখিল করে হাঁসে।

    যখন যা মনে আসে সবার সামনেই তা বলে দিতে ২বার ভাবে না। 

    প্রতি রাতের মতোই মিষ্টি শাশুড়ির সাথে বসে সিরিয়াল দেখছিলো।

    –আচ্ছা জেঠিমা, তোমার কি মনে হয়না তোমরা আমার সাথে অন্যায় করে ফেলেছো!

    –কি বলিস? কি অন্যায় করলাম?

    –এই যে কিছুদিন পর সিনথিয়ার বিয়ে হয়ে গেলে সে চলে যাবে, তখন আমি কার সাথে সময় কাটাবো? কার সাথে গল্প করবো? 

    –আমি আছি তো, আমার সাথে করবি।

    –তুমি তো বুড়ি হয়ে গেছো, এমনিতেই তোমার এক পা কবরে। কয়দিন পরতো তুমিও চলে যাবা।

    –তবে রে…..

    হাতের সামনে ঝাড়ু পেয়ে জেঠিমা সেটা নিয়েই মিষ্টির পেছনে ছুটতে থাকে। কিছুক্ষণ দৌড়ে কোমরে হাত দিয়ে জেঠিমা ফ্লোরেই বসে পড়ে।

    মিষ্টিও ধীরেধীরে এসে জেঠিমার পাশে বসে।

    –দেখলেতো? ১ মিনিটও দৌড়াতে পারলে না। বুড়ি বললাম আর ওমনি রেগে গেলে।

    –শোন, আমার এখন ৩০ বছর চলে। বলতে গেলে তোর চেয়ে সামান্য বড়।

    –অ্যাহ? ৩০ বছর?

    –হ্যা।

    –তোমার ছেলের বয়স ২৫, আর তোমার ৩০?

    –চুপ কর তো। আমি বুড়ি হইনি এখনো।

    –এতই যোয়ান হলে জেঠুকে বলে আমাকে একটা দেবর এনে দাও না। অন্তত ঘরে ঝা আসলে তো কথা বলার মত কাউকে পেতাম।

    –তোরে তো এবার মাইরই ডাকতেছে। 

    আবারো মিষ্টিকে দৌড়াতে দৌড়াতে মিষ্টির বাবার ঘর পর্যন্ত দিয়ে আসে।

    জেঠিমার সাথে মিষ্টি এভাবে সারাক্ষণ লেগেই থাকে।

    শুধু জেঠিমা বা মামুন নয়, এই পরিবারের প্রতিটা সদস্যের কাছেই মিষ্টি এক টুকরো বেচে থাকার সম্বল। 

    .

    খুবই সুখে শান্তিতে মিষ্টির দিনগুলো কাঁটতে থাকে। মামুনও বাবার সাথে নিজেদের ব্যবসায়ে লেগে পড়ে।

    এর মাঝে হঠ্যাৎই মিষ্টি কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দেয়…

    –চাচি বললো তুই নাকি আর কলেজ যাবি না?

    –হুম

    –কেনো?

    –ওসব পড়ালেখা দিয়ে আর কাজ নেই। এখন আমার কাজ হলো তোমার এবং বাকি সবার খেয়াল রাখা। 

    –তাই বলে পড়ালেখা ছেড়ে দিবি? তোর তো ভবিষ্যৎ আছে তাই না?

    –পড়ালেখা করে কি হবে বলো, চাকরি করবো? নিজের ক্যারিয়ার বানাবো? এসব ক্যারিয়ার আমি চাই না, নাম কামাতে চাই না। তুমি আমার স্বামী মামুন, আর আমি মিসেস মামুন। এটাই আমার নাম, আমার পরিচয়, আমার ক্যারিয়ার। যতটুকু পড়ালেখা করেছি ততটুকু দিয়ে ইনশাল্লাহ বাচ্চা মানুষ করতে পারবো। 

    মামুন বেশ অবাক হয়ে মিষ্টির মুখের দিকে চেয়ে ভাবছে। কি অদ্ভুত মেয়ে, তার সবটা জুড়ে শুধু আমি। কি আছে আমার মাঝে? যার জন্য সে এতটা পাগল? কেউ আমায় এতটা ভালোবাসবে এটা আমি কখনো ভাবি নি। সত্যি বলতে এমন একজনকেই চেয়েছিলাম। যে আমার, আমার পরিবারের খেয়াল রাখবে, সংসারটা নিজের হাতে সাজাবে, সুখে দুঃখে সব সময় আমায় সাহারা দেবে। 

    –এই কি ভাবছো এত?

    –এদিকে আয়।

    –কেনো?

    –আয় না।

    মিষ্টি ধীরেধীরে মামুনের পাশে বিছানায় এসে বসে।

    শোয়া অবস্থায় মামুন মিষ্টিকে হেচকা টান দিয়ে নিজের ওপর নিয়ে নেয়।

    কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে মিষ্টি নিজেকে মামুনের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়।

    –শয়তান, দরজা খোলা দেখতেছো না?

    –তো কি হইছে? কেউ আসবে না।

    –তোমার মাথা, লজ্জা সরমের মাথা খাইছো।

    –দরজাটা লাগিয়ে আয়।

    –হুহ, আজ যেনো ভালোবাসা একদম বেয়ে বেয়ে পড়ছে। কই ছিলে এতদিন? খেয়ে এসেই ঘুমের দেশে চলে যাও। আমার কথা কি মনে থাকে?

    –এদিকে আয়।

    .

    বকতে বকতে দরজা লাগিয়ে রুমের মধ্যে হাতের সব কাজ শেষ করে মিষ্টি বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে।

    মিষ্টিকে নিজের বুকের ওপর টেনে নেয় মামুন। 

    –এত রাগ করে আছিস কেনো? 

    –তুমি আমায় আগের মত একদম ভালোবাসো না।

    –ওমা কে বললো?

    –আগে আমার সাথে কত সময় কাটাতে, এখন সারাক্ষণ কাজ, বাড়ি এসে ঘুম। আমি কই?

    –ক্লান্ত শরীর নিয়ে কি করবো বল। শোয়ার সাথে সাথেই তো ঘুম চলে আসে। 

    –একটা কথা বলবো?

    –হুম বল।

    –না থাক, পরে বলবো।

    –সমস্যা নেই, এখনই বল।

    –এখন না, আমার লজ্জা করছে।

    –বাব্বাহ, আমার বউ দেখি লজ্জাও পায়। দেখি তো একটু.।।

    –যাহ, 

    –কি এমন কথা যে লজ্জা পেতে হচ্ছে?

    –তুমি বুঝবে না।

    –বল না।

    –আমায় একটা বাবু দিতে পারবে?

    –আচ্ছা এই ব্যাপার?

    –হুম, দাও না একটা। তুমি তো সারাক্ষণ কাজ নিয়ে থাকো। আমি তো অন্তত সময় কাটানোর জন্য একজনকে পেয়ে যাবো। আমার খুব ইচ্ছা বাবুর সাথে খেলবো।

    –এখন বাবু নেওয়া কি ঠিক হবে? তুই তো এখনো ছোট।

    –তোমার মাথা, আমার কত বান্ধবী বাবুর মা হয়ে গেছে। আমিও পারবো।

    –মাকে জিজ্ঞেস করিস একবার, দেখ মা কি বলে।

    –জেঠিমাকে জিজ্ঞেস করে বুঝি বাবু নিবে? তুমি একটা আসলেই গাঁধা।

    –এখনো তো তোর বয়স কম, এখন যেভাবে চলাফেরা করিস বাবু নেওয়ার পর পারবি? তুই নিজেও এখনো বাবু, বাবুর দায়িত্ব নিবি কিভাবে?

    –তোমার মত গাঁধার দায়িত্ব নিতে পেরেছি, আর বাবুর পারবো না?

    –পারবি না।

    –কামড় দিবো কিন্তু এখন। আমার বাবু লাগবে, আমি পারবো।

    মিষ্টিকে শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে মামুন একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে

    –কি হয়েছে গো তোমার? 

    –রিয়ার কথা মনে আছে তোর?

    –আমাদের ফুফাতো বোন রিয়া?

    –হুম।

    –তুমি বুঝি ওটাই ভাবছো?

    –হুম।

    –আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো, আমার কিচ্ছু হবে না।

    –বাবু নেওয়া এত সহজ না, রিয়া মৃত্যুর আগে অনেক কষ্ট করেছিলো। একটা সুন্দর জীবন নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। তাই আমি কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না।

    –ডাক্তার বলেছিলো আপুর কিছু শারীরিক সমস্যা ছিলো, ওই জন্যই বাচ্চা নিতে গিয়ে মারা গেছে। এ নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।

    –কেনো বোঝার চেষ্টা করছিস না? এখন কোনো বাবু টাবু লাগবে না।।

    –আমায় বাবু দিবে না?

    –তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কি করে বাঁচবো বল? চাচা চাচি কি নিয়ে বাচবে? 

    –আমায় বুঝি এত ভালোবাসো?

    –হুম, খুব।

    –সারাজীবন আমায় এভাবে ভালোবাসতে পারবে?

    –হুম।

    –ঠিক আছে, আমরা তাহলে এখন বাবু নেবো না। খুশি?

    –হুম।

    –এবার তো একটু হাসো। গোমড়া মুখো…..

    –পাগলি একটা….

    .

    খুনশুটি, ঝগড়াঝাঁটি, রাগ অভিমান এসব নিয়ে দুজনের দিনগুলো বেশ আনন্দেই কাটতে থাকে। মামুন বাবার ব্যবসা পুরোপুরি ভাবে বুঝে নেয়। মিষ্টিও পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে সংসার নিয়ে মনোযোগী হয়।

    এভাবে প্রায় দেড় বছর পার হয়ে যায়।

    আজ সিনথিয়ার বিয়ে… আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে বেশ ধুমধাম করেই সিনথিয়াকে বিয়ে দেওয়া হয়।

    রাতের প্রায় ১২:৩০…….

    –এতক্ষণ যাবত ছাদে বসে আছো, ঘরে যাবে না?(মিষ্টি)

    –সিনথিয়ার কথা খুব মনে পড়ছে।(মামুন)

    –কেনো এত মন খারাপ করে আছো? কাল তো আমরা ও বাড়িতে যাবই। তখন দেখে নিও।

    –পাগলিটা পুরো বাড়ি মাথায় করে রাখতো। সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে ওর আওয়াজ শোনা যেতো। এতদিন চোখের সামনে ছিলো, একদম গুরুত্ব দেইনি। তাহলে কেনো আজ ওকে এতটা মিস করছি? 

    –ভালোবাসা এমনি হয়, চোখের সামনে থাকলে কেউ গুরুত্ব দেয় না।

    –ডায়লগ মারিস নাতো। যা…..

    –একা যাবো না, তুমিও চলো।

    –আমি আসতেছি। তুই যা….।

    –তাহলে আমিও তোমার পাশে বসবো।

    –চুপ করে বসে থাক। একদম কথা বলবি না।

    –আচ্ছা।

    মামুনের পাশেই মিষ্টি বসে পড়ে। মিষ্টিকে পাশে পেয়ে মামুন ওমনি মিষ্টির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।

    –এখানেই শুয়ে পড়লে, রুমে চলো না, কত ঠান্ডা পড়ছে।

    –তুই চলে যা তাহলে।

    –না না, ঠিক আছে। আর বলবো না।

    –খেয়েছিস?

    –না।

    –কেনো?

    –তুমিও তো খাও নি।

    –গিয়ে খেয়ে নে।

    –তুমিও চলো।

    –আমি খাবো না।

    –আমিও খাবো না।

    –কেনো এসেছিস এখানে?

    –৩-৪ দিন ধরে তোমায় একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু বলতে পারিনি। ভেবেছিলাম এখন বলবো, কিন্তু এখনও বলা হবে না।

    –কি কথা?

    –আজ নয়, যখন তোমার মুড ঠিক হবে তখন বলবো।

    –কিছু লাগবে?

    –না

    –টাকা?

    –না

    –কোথাও যাবি?

    –ওরকম কিছু না।

    –তাহলে কি?

    –এখন না, পরে বলবো। এখন ওঠো, ঘরে চলো।

    –কি কথা সেটাতো বল।

    –তোমার এখন মুড ঠিক নেই, আমার কথাটা শুনে তোমার মুড আরো খারাপ হয়ে যাবে।

    –কি কথা সেটা বল।

    .

    .

    চলবে…….

     

    গল্প #নজরবন্দী (১০) শেষ পর্ব

    লেখক #A_Al_Mamun

    .

    –তোমার এখন মুড ঠিক নেই, আমার কথাটা শুনে তোমার মুড আরো খারাপ হয়ে যাবে।

    –কি কথা সেটা বল।

    –এখন বলা যাবে না।

    –নিশ্চই কোনো আকাম করেছিস। কি করেছিস বল।

    –আমি না, তুমি করছো।

    –আমি কি করছি?

    –গত ২ মাস যাবত আমার মধ্যে শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। সে খেয়াল কি রাখো?

    –তুই কি অসুস্থ?

    –বাবু আসবে…..

    –কি বলছিস?

    –সত্যি বলছি।

    –কিভাবে বুঝলি?

    –সন্দেহ হওয়ায় গত সপ্তাহে প্রেগন্যান্সি কিট নিয়ে এসেছিলাম। ওটা দিয়েই বুঝেছি।

    শোয়া থেকে উঠে দাড়ায় মামুন। মিষ্টিও কিছুটা ভয় পেয়ে উঠে দাড়ায়।

    –তুমি কি চাও না আমাদের বাবু হোক? যদি তুমি না চাও তাহলে কালই আমায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো। আমরা বাবু নেবো না। আমি এখনো কাউকে বলিনি। কেউ জানতে পারবে না।

    মামুন অবাক দৃষ্টিতে মিষ্টির দিকে চেয়ে আছে। চাঁদের আলোতে তার চোখের পানি ঝিকমিক করছে।

    –কাউকে কেনো জানাস নি?

    –তোমার সিদ্ধান্তের প্রয়োজন ছিলো। তাই তোমাকে জানানোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

    –ঠিক আছে। কাল আমরা সিনথিয়াকে দেখতে গেলে আসার সময় ডাক্তারের কাছে যাবো।

    অবিশ্বাসী চোখে মামুনের দিকে চেয়ে মুখে হাত দিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে মিষ্টি। নিজেকে কোনোরকম সামাল দিয়ে রুমের দিকে দৌড় দেয়।

    পুরো বাড়িতে বিয়ের মেহমান ভর্তি। এই মাঝরাতেও বাড়িতে হইহুল্লোর চলছে। মামুনও মিষ্টির পেছন পেছন রুমে প্রবেশ করে।

    .

    রুমের কোথাও মিষ্টির খোজ নেই। সাওয়ারের আওয়াজে কান পেতে মামুন বাথরুমের সামনে এসে দাড়ায়। দরজা বন্ধ করে ভেতরে মিষ্টি গুঙিয়ে গুঙিয়ে কাঁদছে। 

    –মিষ্টি…. বাহিরে আয়….

    –মিষ্টি…. দরজা খোল।

    –মিষ্টি……..

    –আসছি, তুমি যাও।

    –এক্ষুণি বেরিয়ে আয়..।

    –মিষ্টি…. বেরিয়ে আসতে বলেছি

    বেশ কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে অর্ধনগ্ন অবস্থায় বেরিয়ে আসে মিষ্টি….। ধীরেধীরে মামুনের সামনে এসে তার হাতটা নিজের পেটের ওপর রেখে কান্না জড়ানো গলায় বলে ওঠে

    –কিছু অনুভব করতে পারছো? প্লিজ একবার ভেবে দেখো।

    মিষ্টিকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় এনে শুইয়ে দেয়।

    –এখন চুপচাপ ঘুমা, অনেক রাত হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা কাল কথা বলবো।

    মিষ্টিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মামুন বাহিরে চলে যায়।

    .

    পরদিন পরিবারের সবাই একসাথে সিনথিয়ার শশুড় বাড়িতে বিয়ের দাওয়াতে যায়। বিয়ে বাড়িতে সবাই বেশ আনন্দের সাথেই সময় কাটায়। মিষ্টি সিনথিয়ার রুমে এসে রুমের একপাশে পুরোটা সময় মন মরা হয়ে বসে ছিলো। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলেও তার জবাব দিচ্ছিলো না। 

    দাওয়াত শেষে সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে মামুন মিষ্টিকে নিয়ে সোজা ডাক্তারের কাছে চলে যায়।

    মামুনকে পাশে বসিয়ে রেখে ডাক্তার মিষ্টির কিছু পরিক্ষা করে। 

    সন্ধ্যায় মিষ্টিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে মামুন। 

    পুরো দিন একটা বোবা প্রানীর মতই মিষ্টি সবার সাথে ব্যবহার করে। বাড়ি ফিরে এসে কারো সাথে কোনো কথা বলেনি।

    নিজের রুমে চুপটি করে মন মরা হয়ে শুয়ে আছে। মামুনও আগ বাড়িয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করতে যায়নি।

    তখন রাতের প্রায় ১২টা……..

    মিষ্টি গায়ে কাথা মুড়ি দিয়ে নিরবে কেঁদে যাচ্ছিলো…. দরজা খুলে মামুন ভেতরে এসে মিষ্টির পাশে বসে।

    –কেনো কাঁদছিস?

    –এমনি।

    –উঠে বস।

    –আমি ঘুমাবো।

    –ঘুমাস, এখন উঠে তো বস।

    –বলো কি বলবে।

    –বাব্বাহ, এত রেগে আছিস?

    –না, রাগ করিনি। বলো কি বলবে…।

    –আমি তোর থেকে তোর বাবু কেড়ে নিচ্ছি। তবুও বুঝি আমার ওপর রাগ হচ্ছে না?

    –আচ্ছা, আমাকে কি তোর অমানুষ মনে হয়? যে নিজের বাচ্চাকেই মেরে ফেলবো।

    ভেজা চোখ দুটো নিয়ে মিষ্টি অদ্ভুত দৃষ্টিতে মামুনের দিকে তাকায়।

    –মারবো না। কিন্তু তোর থেকে কেড়ে নেবো। 

    –মানে?

    –মানে আমি না, অন্য কেউ বলবে।

    –কে?

    মামুন মিষ্টির দিকে থেকে একটু সরে বসে মিষ্টিকে দরজার দিকে ঘুরিয়ে দেয়। দরজা দিয়ে একে একে মিষ্টির বাবা মা, শশুড় শাশুড়ি হাতে কেক নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।

    “Happy Birthday Toyou Misti” 

    মিষ্টি একটু নয়, বেশ অবাক হয়। আজ তার জন্মদিন, অথচ সারাদিনে নিজেকে হারিয়ে বাবুর চিন্তায় জন্মদিনের কথা তার মনেই ছিলো।

    সে নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে মুখে হাসি এনে খুব স্বাভাবিক ভাবেই সবার শুভেচ্ছা গ্রহন করে।

    .

    –কিরে? শুনলাম সারাদিন মন খারাপ করে ছিলি? কি হয়েছে?(শাশুড়ি)

    –কিছু হয়নি তো। 

    –মামুন আমাদের কাল রাতেই সব বলেছে।

    –কি বলেছে?

    –বলেছে আমার লক্ষি বউমা মা হতে চলেছে।

    মিষ্টি পেছন ফিরে মামুনের দিকে তাকায়… মুখে হাত দিয়ে মামুন মুচকি মুচকি হাঁসছে।

    –কেনো বলেছে? সে তো বাবু রাখতে চায় না।

    –কে বললো চায় না? ও তো কাল রাতে আমার কাছে এসে খুশিতে কেঁদেই দিয়েছে।

    –তাহলে যে আমাকে বললো সে বাবু চায় না, আজ ডাক্তারের কাছেও নিয়ে গেলো।

    –গাধী তোর চেকাপ করাতে নিয়ে গেছে। তোর সাথে মজা করছিলো।

    দুহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে মিষ্টি বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।

    –সত্যিই আমার বাবু নিয়ে কোনো সমস্যা নেই?

    –নারে পাগলি, ওই বলদে তোর সাথে মজা করেছে।

    –আমার সাথে মজা করছিলো?

    –হুম।

    –আমাকে এত কাঁদিয়ে মজা করছিলো হ্যা? এবার মজা আমি দেখাবো।

    টেবিলের ওপর রাখা বিছানা ঝাড়ার ঝাড়ুটা হাতে নিয়ে মিষ্টি মামুনের পিছু নেয়।

    পুরো বাড়িতে হাসির রোল পড়ে যায়…। মামুন কোনো রকম মায়ের পিছনে গিয়ে মিষ্টির হাত থেকে রক্ষা পায়।

    –জলদি কেক দাও, শেষ করি। তোমরা যাওয়ার পরই আজকে তোমার ছেলের ১২টা বাজাবো। অনেক কাঁদিয়েছে আমাকে।

    –আরে…। আমি তো তোর জন্মদিনের সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিলাম। 

    –সারপ্রাইজ দেওয়াচ্ছি তোমাকে।

    মিষ্টি বেশ মজা করেই সবার সাথে জন্মদিন পালন করে।বাড়িতে নতুন মেহমান আসার খবরে বাড়ির সবাই আজ খুব খুশি। বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি হু হু করে কেঁদে ওঠে। চারদিক থেকে যেনো মিষ্টির ওপর প্রশান্তির বাতাস বইছে।

    .

    রাতের প্রায় ১টা……

    বাথরুমের দরজা আটকে মামুন ভেতরে বসে আছে।

    –জলদি বাহিরে আসো বলছি, না হলে একদম ভালো হবে না।

    –আর কখনো এমন করমু না, মাফ করে দে প্লিজ।

    –যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমার চুল ছিড়মু আমার শান্তি নাই। বাইরে আসো বলছি।

    –আর কখনো এমন ভুল হবে না।

    –বাহিরে আসবা? নাকি তোমার মোবাইল ভাঙমু?

    –এই না না, এক্ষুণি আসতেছি।

    হালকা দরজা খুলে মাথা বের করতেই মিষ্টি এক লাফে চুল ধরে ফেলে। চুল টেনে এনে মামুনকে বিছানায় ফেলে মিষ্টি বুকের ওপর উঠে বসে।

    –এবার বলো, তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে কাঁদানোর?

    –মাফ করে দে, আমার ভুল হয়ে গেছে। তোকে জীবনেও আর কাঁদামু না।

    –সারাদিন যে আমি এতটা কষ্ট পেয়েছি, তার হিসেব কই? একবারও জিজ্ঞেস করেছো আমার কেমন লাগছে?

    –ইচ্ছে করেই তো কিছু জিজ্ঞেস করিনি।

    –কেনো করো নি?

    –তোকে অনেকটা খুশি দেখতে চেয়েছিলাম, তাই একটু কাঁদিয়েছি।

    –আমাকে কাঁদাতে ভালো লাগে?

    –না, কান্নার শেষে তোর হাসি মুখটা দেখতে ভালো লাগে।

    –তুমি অনেক খারাপ। আমি আর তোমার সাথে কথা বলবো না।

    –কতক্ষণ?

    –কক্ষনো না। আমি তোমাকে আমার বাবুর ভাগও দিবো না। তোমাকে আব্বু ডাকতেও মানা করবো।

    –অ্যাহ? কি ডাকবে তাহলে?

    –বলবো মামা ডাকতে।

    –মাফ করে দে না। আর কখনো এমন হবে না।

    –কোনো মাফ নাই। আমার গিফট দাও আগে।

    –গিফট তো দিলামই।

    –কি দিছো?

    –বাবু।

    –দিতে হবে না যাও। দেখো জেঠু জেঠিমা আম্মু আর আব্বু কত টাকা দিছে, জেঠিমা একটা চেইনও দিছে। তোমাকে আর লাগবে না। যাও…..

    –আচ্ছা? আমাকে সত্যিই আর লাগবে না? 

    –না?

    –ঠিক আছে, বুকের ওপর থেকে ওঠ। আমি চলে যাবো।

    –কই যাবা?

    –দুরে কোথাও, যেনো তোকে আর কষ্ট না দিতে পারি।

    –কেনো এসব বলো? পারবে আমাকে ছেড়ে যেতে?

    –হুম পারবো।

    মিষ্টি মামুনের দিকে চেয়ে বাচ্চাদের মতো মুখ বাকা করে কান্না শুরু করে দেয়।

    –আরে আরে… সরি সরি সরি…..। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি তো মজা করছিলাম। কাঁদিস না প্লিজ, আর বলবো না।

    –কেনো এমন করো? কেনো এত কষ্ট দাও? আমি কিন্তু মরে গেলে আমাকে খুব মিস করবে। এমন মিষ্টি পুরো পৃথিবীতে ২য় টা খুজে পাবে না। যে তোমায় এতটা ভালোবাসবে।

    মামুন বুকের ওপর থেকে মিষ্টিকে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়।

    –এই পাগলি, কি বলছিস এসব? আমার ২য় মিষ্টি লাগবে না। এক মিষ্টিই আমার জন্য যথেষ্ট।

    –আমায় আর কখনো কাঁদাবে?

    –কক্ষনো না।

    –আমার বাবু নিয়ে তুমি খুশি?

    –অন্নেক। আমি বাবা হবো, এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে বল।

    –জানো, মাঝে মাঝে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। এত ভালোবাসা আমার সহ্য হয় না। যখন তোমার বুকে মাথা রেখে শুই, মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তির জায়গায় শুয়ে আছি। যখন বুকে আগলে নাও, মন চায় সারাজীবন ওভাবেই থাকতে। বাবা মা জেঠু জেঠিমা সবাই আমার। যাকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি সেও আমার। পুরো সংসারটাই আমার। যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম, সেও আজ আমার মাঝে বেড়ে উঠছে। আমি মা হবো, আমারও একটা ফুটফুটে বাবু হবে। কত আনন্দ হচ্ছে তোমায় বলে বুঝাতে পারবো না।

    –পাগলি একটা। এত বেশি ভাবলে সত্যিই পাগল হয়ে যাবি। অনেক রাত হয়েছে, এখন ঘুমা।

    –আরো শক্ত করে জড়িয়ে রাখো। আজ তোমার বুকের ওপরই ঘুমাবো।

    –অ্যাহ? 

    –অ্যাহ কি? এখন আর আমায় নিতে পারবে না তাই তো? আমি তো পুরোনো হয়ে গেছি। কেনোই বা নিবে আমাকে?

    –আরে, আমি কি কিছু বলছি? মনের সব কথা যদি তুই বলে দিস তাহলে কিভাবে হবে? আমাকে তো বলতে দে।

    –কিহ? এটা তোমার মনের কথা ছিলো?

    –তোর অনেক বুদ্ধি।।

    –আমি আর থাকবো না এখানে। ছাড়ো, চলে যাবো আমি।

    –আমাকে ছেড়ে কই যাবি? কোথাও যেতে দিবো না। সারাজীবন তোকে এভাবে বুকের মধ্যে রাখবো। কক্ষনো ছেড়ে দিবো না।

    –সত্যি?

    –হুম।

    –এত্তগুলা ভালোবাসি তোমায়। উম্ম্ম্ম্মাহ….

    –পাগলি একটা……..

    .

    .

    —–সমাপ্ত——–

    মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।