দেখা হবে জান্নাতে

“দেখা হবে জান্নাতে”

একটি ইসলামিক গল্প 

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

 

 

১.

বিয়ের আর মাত্র দুই দিন বাকি।যেখানে অন্যান্য মেয়েরা পার্লার, শপিং নিয়ে ব্যস্ত মালিহা সেখানে গভির ভাবে চিন্তাচ্ছন্ন।কি অপেক্ষা করছে মালিহার জন্য?সে উত্তির্ন হতে পারবে তার ইমানি পরীক্ষায়।

বাবা মায়ের প্রথম সন্তান মালিহা।যেন এক সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপ। আধুনিকতার তীব্র ছোয়ায় বড় হলেও একটা সময় ফিরে আসে মহান রবের ছায়াতলে।নিজেকে পুরোপুরিভাবে পরিবর্তন করলেও পরিবার কে পরিবর্তন করতে ব্যর্থ হয়েছে বারবার।কারন আল্লাহ তো বলেছেন হেদায়েত তো আল্লাহর হাতে, তিনি না চাইলে হেদায়েত পাওয়া অসম্ভব। তাইতো মালিহা আজ এতো চিন্তিতো।তার বিয়ে হতে যাচ্ছে এক ধনীর দুলালের সাথে।যাকে পেয়ে পরিবারের সবাই আনন্দে দিশেহারা।তারা এতোটাই দিশেহারা যে মাহিলার মতামতটা নিতেও ভুলে গেছে।অনেক চেষ্টা করেও মালিহা ব্যর্থ হয়েছে বিয়েটা আটকাতে।সে যেনে শুনে এমন কাউকে কিভাবে 

জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নিবে যার কাছে ইসলামের আদেশ নিষেধ  গুলো কেবল ই গল্প মাত্র।আধুনিকতার তীব্র আকর্ষণ যাকে গভীর ভাবে নেশা ধরিয়ে দিয়েছে।   

নাহ, মালিহা আর চিন্তা করতে পারছে না।মাথাটা যেন অবশ হয়ে আসছে। এভাবেই কেটে দুই টা দিন। সকাল থেকেই সবাই ব্যস্ত আছে বিয়ের নানার কাজে। অনিচ্ছে সত্ত্বেও সেজেগুজে স্টেজ এ বসতে হলো মালিহা কে। অনেক অনুরোধ করে শুধু মাথা টা ঢেকে নিলো।বর বেশে আবরার এসে পাশে বসলো।মালিহা একটি বার ও চোখ তুলে তাকালো না আবরারের দিকে।চাপা কষ্টে যেন বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এক জলন্ত অগ্নিকুণ্ডে বসে আছে মালিহা।যে মালিহা চেষ্টা করতো কেউ যেন তার হাতটার সৌন্দর্য ও উপভোগ করতে না পারে। আর আজ! কেউ যেন বুকের মাঝে ছুড়ি দিয়ে তীব্র ভাবে আঘাত করেই চলছে।যার রক্তক্ষরণ এর রাক্ষী শুধুমাত্র একজন ই।যার কাছে হাজারো বার তওবা করেই যাচ্ছে মালিহা।

“হে আরশের অধিপতি, রহমানুর রহিম, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, ক্ষমা করো তোমার এই অধম বান্দিকে।আমি আজ ব্যর্থ হয়ে গেলাম তোমার আদেশ পালনে। হেরে গেলাম পরিবারের কাছে। হে অন্তর্জামি, তুমি তো জানো আমার অন্তরের খবর।আমি যে নিরুপায়।হাশরের মাঠে আজকের দিনটার জন্য তুমি আমাকে পাকড়াও করোনা মালিক।জান্নামের কঠিন আগুন যে আমি সয্য করতে পারবো না আল্লাহ!”

মনে মনে একনাগাড়ে বলে যাচ্ছিলো মালিহা।জাহান্নামের কথা স্মরণ হতেই নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠলো মালিহা।   

হটাৎ এমন কান্নার শব্দ পেয়ে আবরার তাকিয়ে পরলো তার হবু স্ত্রীর দিকে।

 

 

 

“দেখা_হবে_জান্নাতেঃ

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

 

 

 

২.

জাহান্নামের কথা স্মরণ হতেই নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠলো মালিহা। 

হটাৎ এমন কান্নার শব্দ পেয়ে আবরার তাকিয়ে পরলো তার হবু স্ত্রীর দিকে।আবরার খুব অবাক হয়ে হবু স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলো কোনো সমস্যা? মালিহা কোনোরকম ভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করে কোনো কথা না বলে শুধুমাত্র ইশারায় না সূচক উত্তর দিলো।এর মধ্যেই বিয়ের সব কার্যক্রম সম্পন্ন হলো।

বেলা প্রায় ১ টা বেজে গেছে। খুব অস্বস্তি লাগছে মালিহার।সামনে তাকিয়ে দেখলো কয়েকজন ক্যামেরা ম্যান তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। মালিহার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে বর কনের ছবি তোলার জন্য ই তাদের আগমন। মুহুর্তের মধ্যেই মালিহার বুকের ধুপধাপ শব্দ যেন কোনো হাতুড়ি পেটাকেও হার মানাবে।সে যেন চিন্তা ভাবনা করতেই ভুলে গেলো।শুধু বিরবির করে বলতে লাগলো, 

“O my Lord, my dear Allah, please help me.help me,help me.”

সুদূর থেকে বাতাসের সাথে ভেসে আসছে সুমিষ্ট আজানের ধ্বনি।মালিহা কোনো কিছু না ভেবেই উঠে দাড়ালো।কাউকে কিছু না বলেই হাটতে শুরু করলে আবরার জিজ্ঞেস করলো আবরারঃকোথায় যাচ্ছেন? 

মালিহাঃসালাত আদায় করে আসছি ইংশা আল্লাহ। 

আবরার কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বাতাসের গতিতে হেটে চলছে তার রুমের দিকে।সবাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মালিহার পানে।তাতে কি! কাউকে তোয়াক্কা করার সময় বা ইচ্ছে কোনোটাই যে নেই তার।সে এখন ব্যস্ত, খুব ই ব্যস্ত।মনের কথা গুলো যে খুলে বলতে হবে একজন কে।অনুভূতি গুলো যে বাধ মানছে না আর।

রুমে ঢুকেই দরজা টা বন্ধ করে দিলো মালিহা।

ভারি লেহেঙ্গাটা চেঞ্জ করেই তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে ঢুকলো মালিহা।

মালিহার চলে যাওয়াতে খুব অবাক হলো সবাই।

আবরারের বাসার সবাই আবরারের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো,

আবরারের বড় বোন জিজ্ঞেস করলো,

সাবিহাঃ কিরে আবরার, তোর বউ কোথায় গেলো?

আবরারঃ বললো তো নামাজে যাচ্ছে।(কিছু টা বিরক্তি ভাব নিয়ে।)

সাবিহাঃসময় কি চলে যাচ্ছিলো? এত্ত তাড়ার কি আছে বুঝলাম না। কোথায় এখন ছবি টবি তুলবো তা না? কেমন মেন্টালিটির মেয়ে কে জানে।

আবরারঃদেখ এবার তোরা ই বুঝে দেখ।আম্মি যে এই মেয়েটাকে কি দেখে পছন্দ করলো কে জানে।সারাক্ষণ কেবল জোকারের মতোই নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আম্মিকে যে এখন কি বলতে ইচ্ছে করছে। জীবন টা মনে হয় বরবাদ হয়ে গেলো। এতো করে বললাম, রিয়া খুব স্মার্ট,সুন্দরী,শিক্ষিতা। কে শোনে কার কথা। অত স্মার্ট মেয়ে নাকি ভালো না। এখন তো দেখাই যাচ্ছে এই ক্ষ্যাত টা কতো ভালো!

সাবিহাঃআম অন আবরার। তুই ওকে ট্রেনিং দিয়ে তোর মতো করে তুলবি।

আবরারঃপ্লিজ আপি তুই থাম। ভাল্লগছে না এসব। যেখানে ছিলি সেখানেই যা। একটু একা থাকতে দে আমাকে।

সাবিহাঃহি যাচ্ছি,(মুখে ভ্যাংচি কেটে)।তোর সাথে এতো প্যাচাল পাড়ার ও সময় নেই আমার।

সবার মাঝে যখন হট্টগোল বিরাজ করছে তখন মালিহার আব্বু আম্মু তাদের মাঝে এসে তাদের কে শান্ত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কথা বলাবলি শুরু করলো।

মালিহার মাঃ আপনারা কিছু মনে কইরেন না। আসোলে মালিহা তো ভারি ড্রেস খুব কম ই পড়ে তাই এতো ভারি লেহেঙ্গায় হয়ত ও আনইজি ফিল করছিলো,এজন্যই হয়ত এভাবে চলে গেছে।(হাসতে হাসতে বলছিলো কথাগুলো)

মালিহার আব্বুঃএকটু পরেই চলে আসবে।

আবরারঃ তিনি নাকি নামাজে গেছেন।(কিছুটা ব্যাংগো করে)

মালিহার আম্মুঃ ও হ্যা, আজান হইছে তো। আর বইলেন না মেয়েটা আমার সব কাজেই খুব সিনসিয়ার। সবকিছুই সময় মতো করার চেষ্টা করে।কিন্তু কি সমস্যা একটাই ও আসোলে ভুলে যায় কোন কাজটার গুরুত্ব কতো বেশি।এই যে যেমন এখন ও ভুলে গেলো। আজকের এই দিনটা কি প্রতিদিন আসবে। কি আর বলবো। যাইহোক আপনারা আনন্দ করেন। ও একটু পরেই চলে আসবে।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই জায়নামাজ বিছিয়ে সালাতে দাঁড়িয়ে গেলো।এর মাঝেই কেউ হয়ত দরজায় নক করেছে।সে দিকে মালিহার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।সালাত আদায় শেষ করে গভীর সিজদায় লুটিয়ে পরলো।

“মাবুদ গো দেখো তোমার পাপী বান্দী কিভাবে বাচ্চাদের মতো কেঁদে কেঁদে আবদার করছে।একটি বার তাকাও মালিক। তুমি তো জানোই তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই।কার কাছে সাহায্য চাইবো বলো? আল্লাহ তুমি না বান্দার চোখের পানি পছন্দ করো, দেখো আল্লাহ আমার চোখের পানির সাক্ষী তো তোমার জমিন,তোমার বাতাস, সবকিছুই।  আল্লাহ তুমিইতো বলেছে কেউ যেনো কোনো ভিখারি কে খালি হাতে না ফিরায়,ও মালিক তবুও কেউ যদি ভিখারিকে ফিরিয়ে দেয় এতে কিন্তু সে খুব একটা নিরাশ হয় না কারন তার হাত পাতার মতো আরো অনেক জায়গা আছে।একজনে না দিলে ও সে আরেক জনের আশায় থাকে।হায় রহিম আমি থাকবো কার আশায় বলো? আমার যে হাত পাতার আর কোনো জায়গা নেই।তুমি তো একা ই আমার মালিক। তাই তুমি আমাকে নিরাশ কইরো না রহমান।তুমি আমাকে সাহায্য করো রাব্বুল আলামীন। সব কিছু কে সহজ করে দাও। আমার ইমানী তেজ কে আরো বাড়িয়ে দাও আরশের অধিপতি।আমার ইমান কে এতোটা মজবুত করো যতোটা মজবুত হলে সব বাধা পেরিয়ে আমি পৌঁছে যাবো জান্নাতের আঙিনায়।আমি যে তোমার সাথে সঠিক ভাবে কথাও বলতে পারিনা রাব্বুল আলামীন। বুঝাতে পারিনা অন্তরের অব্যক্ত অনুভূতি। কিন্তু তুমি তো অন্তর্যামী।বুঝে নাও তোমার পাপী বান্দীর অন্তরের কথাগুলো।”        

মালিহার চোখের পানি যেন কোনো বাধ মানছে না। অনেক ক্ষন ধরেই অঝোরে কেদেই চলছে আর প্রকাশ করার চেষ্টা করছে তার অব্যক্ত অনুভূতি। কয়েক বার ই দরজায় নক করে কোনো সারাশব্দ না করলেও মালিহার বাসার কেউ চিন্তা করছে না কারন তারা জানে মালিহা দীর্ঘসময় নিয়ে সালাত আদায় করে।

সিজদা থেকে উঠে মালিহা ড্রেসিং টেবিলের   সামনে গিয়ে দাড়ালো। নিজেকে মনে হচ্ছে নিজেই চিনতে পারছে না। চোখ জোড়া যেন রক্তিম বর্ন ধারন করেছে।ঠোঁটে মুখে এক অদম্যতার ভাব।ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য পাশ ফিরে লেহেঙ্গা টা হাতে নিলো মালিহা। লেহেঙ্গা টা হাতে নিতেই কেউ যেন ভিতর থেকে প্রতিবাদ করে উঠলো।ছুড়ে ফেলে দিলো লেহেঙ্গা টা। মালিহা যেনো রুদ্ধশ্বাসী হয়ে যাচ্ছে।যুদ্ধক্ষেত্রে তরবারী হাতে রুদ্ধশ্বাসে ছুটে চলতে অগ্র পথে।হাতে নিলো তার প্রিয় কুচকুচে কালো জিলবাব টা।নিজেকে এমন মুডে  জিলবাবে আবদ্ধ করছে  যেন সে পরিধান করছে কোনো যুদ্ধের পোশাক।জিলবাব পরা শেষ করে আয়নাতে সে নিজেকে 

 পরিলক্ষন করছে খুটিয়ে খুটিয়ে।ওহহো এখনো তো সে পুরোপুরিভাবে তৈরি নয়।তাড়াতাড়ি হাতমোজা পা মোজা গুলো পরে নিলো। হ্যা এবার মালিহা প্রস্তুত। প্রস্তুত তার অগ্রগামী যাত্রা।এখন কেমন যেনো হালকা লাগছে নিজের কাছে।এতোক্ষণ যেন কোনো একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো সে।আর তো সময় নেই তাড়াতাড়ি বাইরে যেতে হবে তাকে। তার জন্য যে আরো অনেক কিছু অপেক্ষা করছে। পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ। দরজার কাছে যেতেই মনে পড়লো, 

মালিহাঃইরে গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই তো করা হয়নি।(জিভে কামড় দিয়ে)সেই কবে থেকে প্লান করে  রেখেছি আর আজকেই ভুলে যেতে হলো এমন একটা বিষয়।

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

 

০৩.

মালিহাঃইরে গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই তো করা হয়নি।(জিভে কামড় দিয়ে)সেই কবে থেকে প্লান করে রেখেছি আর আজকেই ভুলে যেতে হলো এমন একটা বিষয়।

একটা দোয়া নোট করে সাথে নিয়ে যেতে হবে।যা হবার তো হয়েছেই।তবুও নিজের তো চেষ্টা করতে হবে যেন পুরোপুরিভাবে সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী চলা যায়। 

মালিহা খাতা কলম হাতে ডেক্সে বসে লিখতে শুরু করলো।

“اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَإِذَا اشْتَرَى بَعِيراً فَلْيَأْخُذْ بِذِرْوَةِ سَنَامِهِ وَلْيَقُلْ مِثْلَ ذَلِكَ».

 

(আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি) 

 

“হে আল্লাহ, আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।”

(আবু দাঊদ-২/২৪৮, নং ২১৬০; ইবন মাজাহ্‌ ১/৬১৭, নং ১৯১৮। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ১/৩২৪)

রাসূল সাঃ বলেছেন যখন তোমাদের কেউ কোনো মেয়েকে বিয়ে করবে তখন যেন সে তার মাথায়/কপালে হাত রেখে (উপরের দোয়াটি)বলে।

লেখা শেষ করে কাগজ টাকে ভাঁজ করে বা হাতের মুঠোয় নিয়ে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে আপন মনেই মালিহা বিরবির করে বলতে লাগলো

মালিহাঃযা কিছুই হোক না কেন আজ থেকে ও আমার স্বামী। তাই আমার চেষ্টা করতে হবে ও যেন সঠিক টা বুঝতে পারে।বিয়ের রাতে স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে এই দোয়া পড়তে হবে এটাতো আর আমার লাটসাহেব জনাবের জানা নেই তাইতো এখন নোট করে নিতে হচ্ছে তার জন্য(মুচকি হেসে)।কিভাবেই বা জানবে, হয়ত জানার চেষ্টা ই করেনি। যাইহোক এখন তাড়াতাড়ি বের হতে হবে।

দরজা খুলে বের হতেই  দেখলো তার মা বাবা সবাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মালিহাকে জিলবাব পরিহিতা অবস্থায় দেখে সবাই যেন ভুত দেখার মতো চমকে গেলো। 

মালিহার মাঃ মালিহা,তোর ড্রেস কোথায়? কি পরেছিস এসব?সবার খাওয়া দাওয়া শেষ।  সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে আর তুই? এখনো বলছি তুই রেডি হয়ে আয় তাড়াতাড়ি। 

মালিহাঃক্ষমা করো মা। আমার পক্ষে সম্ভব না।অনেক গুনাহ করে ফেলেছি।

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মালিহার ডান হাতে ধরে রাবেয়া বেগম(মালিহার মা) মালিহাকে রুমের ভিতর নিয়ে গেলো।

রাবেয়া বেগমঃমালিহা তুই কি শুরু করেছিস এসব? সব ই তো ঠিক ছিলো, হটাৎ করে কি হলো তোর? 

মালিহাঃসত্যিই কি শুরুটা আমিই করেছিলাম?তুমি মা হয়ে কিভাবে বলছো যে সব কিছু ঠিক ছিলো।কেন আমার জীবন টাকে এভাবে শেষ করে দিচ্ছো মা? কেন?

রাবেয়া বেগমঃদেখ মা আমি এসব কিছু বুঝিনা।এখন তোকে লেহেঙ্গা পরেই বের হতে হবে। 

মালিহাঃআর যে সম্ভব না। প্লিজ মা তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো।আমি ওভাবে বেপর্দা হয়ে বের হতে পারবো না মা। 

জানো মা হাদিসে এসেছে 

“নারী গুপ্ত জিনিস,সুতরাং যখন সে (বাড়ি থেকে) বের হয়,তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে রমণীর করে তোলে।” (তিরমিজি -১১০৭)।  

আমি একজন প্রাক্টিসিং মুসলিমা হয়ে কিভাবে শয়তান কে সহায়তা করি বলো! 

মা শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু। প্লিজ মা আমাকে তোমরা বাধা দিও না।আমি এভাবেই যাবো।

রাবেয়া বেগমঃ আচ্ছা বুঝলাম, তুই যে এতো কথা বলে যাচ্ছিস,আল্লাহ বলেছেন কেউ যেন  মাতাপিতা কে  অমান্য না করে।আমি তো তোর মা তাহলে কেন তুই আমার কথা অমান্য করছিস?

মালিহাঃআসোলে মা আল্লাহ কি বলেছেন সেইটা মন দিয়ে শোনো,

“পিতামাতার সাথে সদব্যবহার করো,পিতামাতাকে অশুদ্ধ করে কোনো কথা বলো না” (সূরা ইসরা আয়াত ২৩)

দেখো মা, আল্লাহ বলেছেন পিতামাতাকে সম্মান করতে তাই বলে এটা বলেন নি যে তোমরা আল্লাহ কে ভুলে যাও।সৃষ্টির সন্তুষ্টির জন্য কখনোই স্রস্টা কে অসন্তুষ্ট করা যাবেনা।একথাও আল্লাহ পবিত্র কুর’আনে বলে দিয়েছেন। তাহলে তুমিই বলো মা আমার এখন কি করা উচিৎ? 

পবিত্র কুর’আনের সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ আদেশ করেছেন,

“তোমরা জাহেলি যুগের নারীদের  মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না।”

যেখানে আল্লাহ আমাকে নিষেধ করেছেন সেখানে আমার কি আস্পর্ধা আছে এটা অমান্য করার বলো!

এ ব্যাপারে আগেও আমি তোমাদের কে অনেক বুঝিয়েছি। আমি এখন ক্লান্ত,বড্ড ক্লান্ত মা। 

রাবেয়াঃদেখ মালিহা তোর কোনো পাপ হবেনা।তোকেতো আমরা বলছি,তুই পোষাক চেঞ্জ কর কিছু হবেনা। 

মালিহাঃনা। তুমি কি জানো আল্লাহ কি বলেছেন? 

সূরা ইসরার ১৫ নং আয়াতে বলেছেন,

“কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না।”

আমার কবরে আমার ই যেতে হবে আর তোমার কবরে তোমার।

রাবেয়া বেগমঃআমি তোর সব কথাই বুঝতে পারছি কিন্তু মা সম্মান বলতে একটা জিনিস আছে না? তারা কি বলবে মা? আজকের দিনটার জন্য হলেও একটু সেক্রিফাইজ কর মামনি।

মালিহাঃদুঃখিত মা। আমার পক্ষে আর সম্ভব না। দ্বীনের ব্যাপারে এখন থেকে নো কম্প্রোমাইজ ইংশা আল্লাহ। 

রাবেয়া বেগমঃতোর শশুড় বাড়ির লোকজন তো এটা মেনে নিবেনা, কি করবি তাহলে?

মালিহাঃআমি আল্লাহ কে বিশ্বাস করি।ভরসা করি রহমানের উপর।আমি যেই সত্ত্বার উপর নির্ভর করি সেই সত্ত্বা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুমিন দের অভিভাবক তিনি নিজেই,মুমিন দের কে তিনি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসে।আর এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সূরা আল বাকারার ২৫৭ নং আয়াতে।

তিনি আরো বলেন,

“যারা শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন, তিনি তাদেরকে নিরাপত্তা দেন।”

(সূরা নূর আয়াত ৫৫) 

তাই আমি কখনোই চিন্তা করিনা আমার কি হবে। সর্ব ক্ষেত্রেই আল্লাহ আমাকে সাহায্য করবেন ইংশা আল্লাহ।

রাবেয়া বেগমঃ আমি কিছু জানিনা।যা ইচ্ছে তাই কর।তারা কিছু বললেও আমি কিছু করতে পারবো না।তোর একঘেয়েমিতার কাছে হেরে ই যেতে হয়।

এসব বলেই হনহন করে রুমের বাইরে চলে যান রাবেয়া বেগম।

মালিহা যেন এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

হেটে চলছে সম্মুখ পানে।

মালিহা কে দেখে কেউ চিনতে না পারলেও সাবিহা ঠিক ই চিনে ফেললো। মালিহাকে ওভাবে দেখেই সাবিহা ঝড়ো বেগে এগিয়ে গেলো ওর দিকে।সাবিহা এতোটাই বিরক্ত হয়েছে যে যার প্রতিফলন ঘটছে তার আগুন ঝড়া ঝাঝালো কথা গুলোতে।

 

 

 

“দেখা_হবে_জান্নাতেঃ

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

৪ 

মালিহা কে দেখে কেউ চিনতে না পারলেও সাবিহা ঠিক ই চিনে ফেললো। মালিহাকে ওভাবে দেখেই সাবিহা ঝড়ো বেগে এগিয়ে গেলো ওর দিকে।সাবিহা এতোটাই বিরক্ত হয়েছে যে যার প্রতিফলন ঘটছে তার আগুন ঝড়া ঝাঝালো কথা গুলোতে।

সাবিহাঃWhat is this, maliha? You should understand that, it’s not a place of any kinds of Islamik lectures. Don’t forget that it’s a function of your wedding party.

এসব কথা বলতে না বলতেই আবরার এগিয়ে এলো ওদের দিকে।এসেই সাবিহা কে বলতে শুরু করলো,

আবরারঃ কিরে আপি কি শুরু করলি?থাম এবার। যে যেভাবে থাকতে চায় তাকে সেভাবেই ই থাকতে দেওয়া উচিৎ।ওকে আর কিছু বলিস না।

আবরারের বলা কথা গুলো শুনে  মালিহা যে কতোটা খুশি হয়েছে তার জানান দিয়ে যাচ্ছে তার উচ্ছ্বসিত, পুলকিত হরিণী চোক্ষুদয়।যে চোখের দিকে তাকালে নতুন করে কোনো সমুদ্র সৈকত দেখার ইচ্ছে জাগেনা।ইচ্ছে জাগেনা হারিয়ে যেতে কোনো পদ্ম ঝিলে।সেই চোখেই যে ডুবে আছে আস্ত একটা সমুদ্র,পদ্মঝীল। 

মালিহা এই প্রথম চোখ তুলে তাকালো আবরারের দিকে। আবরার সাবিহার দিকে তাকিয়ে উপরের ঠোঁট ডান দিকে বাকিয়ে একটা অদ্ভুৎ হাসি দিলো।যে হাসির মানে মালিহা না বুঝলেও সাবিহা ঠিক ই বুঝে ফেললো।সেও মনে মনে একটা হাসি দিয়ে আর কিছু না বলে অন্যদিকে চলে গেলো। আবরারের অমন কথা শুনে আর কেউ কিছু বললো না। মালিহা নিজ আসনে বসে বসে ভাবছে,

মালিহাঃআচ্ছা মানুষটা অমন করে হাসি দিলো কেন? কি মানে হতে পারে হাসিটার? সে যাই হোক না কেন মানুষ টা কে যত টা খারাপ মনে করেছি হয়ত তার চে একটু ভালো।(এটা বলেই মুচকি হেসে উঠলো আনমনেই।)

 

অনুষ্ঠান প্রায় শেষের পথে। আসরের সালাত আদায় করে এসে মালিহা সেই একই জায়গাতে বসে আছে। আবরার মাঝেমধ্যে আসছে আবার কোথায় যেন যাচ্ছে। 

 

এবার বিদায় এর পালা।

মালিহার বাসার সবাই ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।

কারো মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। বড্ড আদরের মেয়ে তো তাই কে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। 

 মালিহার বাবা মেয়ের হাত ধরে বলেই যাচ্ছেন।

আশরাফ চৌধুরীঃ

খুব ভালো থাকিস মা।আমাদের উপর কোনো কষ্ট রাখিস না।জানিস মা তুই যেদিন জন্মেছিলি সেদিন সবাই বলেছিলো আমাদের ঘরে নাকি চাঁদ উঠেছে।সত্যিই তুই চাঁদের মতো আলো করেই আমাদের ঘরে এসেছিলি।আমি  প্রতিদিন রাতে অফিস থেকে বাসায় এসে তোর মাকে বলতাম আগে আমার চাঁদ মায়ের মুখটা দেখে সারাদিনের ক্লান্তি টা কাটিয়ে নেই।জানিস মা, আমরা কোনোদিন তোকে ছাড়া থাকতে পারতাম না,মার্জিয়া(মালিহার ছোটো বোন) জন্মানোর প্রায় পাঁচ বছর পরে তখন তোর বয়স প্রায় ১০ বছর,একদিন তোর ছোটো আন্টি আমাদের বাসায় এসে বায়না ধরলো যেন তোকে তার সাথে তাদের বাসায় কয়েক টা দিন থাকতে দেই,কি আর করা আমাদের অনুমতি তে সকাল ১০ টার দিকে তোর আন্টি তোকে নিয়ে গেলো।আমি অফিস থেকে এলাম রাত ৮ টার দিকে। এসে দেখি তোর মা তোর কোল বালিস জড়িয়ে অঝোরে কান্না করে যাচ্ছে,আমারো মনে হচ্ছে যেন হৃদয় আকাশের চাঁদ টা অন্ধকারে ছেয়ে আছে তোকে না দেখতে পেয়ে।তোর মাকে সান্ত্বনা  দিবো কি আমার অবস্থা ই নাজেহাল। কি আর করা সেই রাতে তোর মা আর আমি মার্জিয়াকে নিয়ে চলে গেলাম তোর আন্টির বাসায়।পরের দিন সকালে তোকে নিয়েই আমরা বাসায় চলে এলাম।ছোটো থেকে এতো বড় হয়েছিস কোনোদিন তোকে ছাড়া আমরা একটা রাত ও কাটাই নি।কিন্তু আজ কি করবো রে মা।তোকে যে আজ অন্যের নামে দলিল করে দিলাম।  অন্যের হাতে তুলে দিলাম আমার ঘরের চাঁদটাকে।এটুকু বলেই মালিহাকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলেন আশরাফ চৌধুরী। 

(অঝোরে কেঁদে চলছেন আশরাফ চৌধুরী)

মালিহার চোখের পানিতে তার নেকাপ পুরো ভিজে যাচ্ছে।

আশরাফ চৌধুরীর কথা শুনে রাবেয়া বেগম,মার্জিয়া সবাই কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। 

আশরাফ চৌধুরী মালিহাকে আবরারের হাতে তুলে দিয়ে বললো,

আশরাফ চৌধুরীঃআমার মেয়েটাকে দেখে রেখো বাবা,ও সত্যিই একটা হিরের টুকরো। 

সবসময় ওকে তোমার বাধ্য ই পাবে ইনশাআল্লাহ।

একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে 

বর কনের গাড়িতে  বসলো মালিহা। আবরার কে ও সেই গাড়িতে উঠতে বলা হলে সে বললো তার নাকি কি আর্জেন্ট কাজ আছে। এটা বলেই সে অন্য একটা বাইকে উঠে চলে গেলো।

মুহূর্তের মধ্যেই মালিহার আকাশ যেন অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। 

সবাই বেশ কষ্ট পেলেও তখন কিছু করার ছিলো না। সাবিহা উঠে বসলো মালিহার পাশে কারন ফরমালিটি বলতে একটা জিনিস আছেনা? 

সবকিছুকে পিছনে ফেলে গাড়ি ছুটছে আপন মনে, একই সাথে মালিহাও পিছনে ফেলে আসছে তার সমস্ত পিছুটান।অশ্রু যেন কোনো বাধ মানছে না। মাগরিবের আজান হয়ে গেলে গাড়িতে বসেই মালিহা মাগরিবের সালাত আদায় করে নিলো। কারন যে যেই অবস্থাতেই থাকুক না কেন সালাত তাকে আদায় করতে হবে এবং করতেই হবে।

বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় রাত ৮ টা বেজে গেলো। 

সবাই খুব ক্লান্ত হওয়ায় আর কোনো কাহিনি না করে সবাই সবার রুমে চলে গেলো।মালিহা বসে আছে তার শাশুড়ী রেবেকা বেগমের রুমে। 

রেবেকা বেগমঃ আসোলে কি মা আমার ছেলে মেয়ে গুলা বড্ড জেদি। জীবনের এই পর্যায়ে এসে বুঝতে পেরেছি মা হিসেবে আমি খুব ব্যর্থ।দ্বীন হীন জীবনের ভয়াবহতা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি এখন। তাইতো তোমাকে এঘরে নিয়ে এলাম। তুমি আমার সংসার টাকে দ্বীনের আলোয় আলোকিত করে তুইলো মা। 

মালিহাঃআমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আপনি চিন্তা করবেন না।

রেবেকা বেগমঃমা মালিহা তুমি তো খুব ক্লান্ত,চলো তোমাকে তোমার রুমে দিয়ে আসি।

রেবেকা বেগম মালিহা কে আবরারের রুমে নিয়ে গেলো।যদিও আবরার এখন রুমে নেই।

রেবেকা বেগমঃমালিহা তুমি ফ্রেস হও মা। একটু পরে আবার আসবো।

মালিহা রুম টা ঘুরে ঘুরে দেখছে।খাট টা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।বেলি আর গোলাপের ঘ্রাণে ঘর যেন ময় ময় করছে।খাটের উপরেই দৃষ্টিগোচর হলো একটা গাড়ো মেরুন রঙ এর শাড়ি। শাড়িটা বেশ পছন্দ কলো মালিহার।গোসল সেরে ওই শাড়িটাই পরলো সে।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মালিহা নিজেকে দেখে বলে উঠলো,

মালিহাঃমাশ-আল্লাহ,শাড়িটা তে তো বেশ মানিয়েছে তোকে।সত্যিই তুই খুব সুন্দর রে মালিহা।তিনি তো আজ চোখ ই ফিরাতে পারবে না তোকে দেখে।এটা বলেই খিল খিল করে হেসে পরলো মালিহা।

ইশারের সালাত শেষ করে বসে আছে মালিহা।এমন সময় তার শাশুড়ী তার রুমে এলেন।

মালিহাঃআসসালামু আলাইকুম মা।

রেবেকা বেগমঃওয়া আলাইকুমুল সালাম  মা। ময়না(কাজের মেয়ে) ভিতরে আয় খাবার টা দিয়ে যা।খাবার টা খেয়ে নিও মা। বাহ! খুব সুন্দর লাগছে তো শাড়িটাতে তোমায়।  আমি তো খেয়াল ই করিনি।আচ্ছা মা তুমি রেস্ট নাও, চিন্তা কইরো না আবরার একটু পরেই চলে আসবে । 

আবরারের কথা বলতেই মালিহা লজ্জায় গোলাপি হয়ে গেলো,ও সরি লাল হয়ে গেলো।

রেবেকা বেগমঃথাক আর লজ্জা পেতে হবেনা।  আমি যাচ্ছি, খেয়ে নিও কিন্তু।

এটা বলে রেবেকা বেগম চলে গেলে মালিহা রুম টা লক করে দিলো। সারাদিন খাওয়া হয়নি,উফ খুব ক্ষুধা লেগেছে।খেতে যাবে এমন সময় মনে হলো উনি ও তো খান নি মনে হয়,সে আসুক তারপর একসাথে খাবো।  

এটা বলেই খাবার গুলো ঢেকে রেখে মালিহা বসে রইলো আবরারের অপেক্ষায়।

কিন্তু আবরার? 

কোথায় সে? 

রাত এখন ১১:২০ প্রায়।

কোথায় ও? 

এরকম হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মালিহার মাথায়। 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

সারাদিন খাওয়া হয়নি,উফ খুব ক্ষুধা লেগেছে।খেতে যাবে এমন সময় মনে হলো উনি ও তো খান নি মনে হয়,সে আসুক তারপর একসাথে খাবো। 

এটা বলেই খাবার গুলো ঢেকে রেখে মালিহা বসে রইলো আবরারের অপেক্ষায়।

কিন্তু আবরার? 

কোথায় সে? 

রাত এখন ১১:২০ প্রায়।

কোথায় ও? 

এরকম হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মালিহার মাথায়।

এমন সময় কে যেন দরজায় নক করলো। মালিহার হৃদস্পন্দন যেন দ্বীগুন বেড়ে গেলো। 

হয়ত আবরার এসেছে।

সে কি বুঝতে পারবে আমাকে। 

আবার নক করার শব্দে মালিহার চিন্তা জগতের ছেদ ঘটলো।

তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখলো তার শাশুড়ী দাঁড়িয়ে আছে।

রেবেকা বেগিমঃ আবার আসলাম রে মা। 

 

মালিহাঃআসুন মা ভেরতে আসুন।

রেবেকা বেগম রুমে ঢুকে মালিহার হাত ধরে তার পাশে বসালেন।

 

রেবেকা বেগমঃ দেখ মা আজ থেকে তোমার নতুন জীবনের শুরু। একটা মেয়ের জীবনে স্বামীর গুরুত্ব কতটা এইটা হয়ত তোমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে না। আমি জানি এসব বিষয়ে তোমার যথেষ্ট দখল আছে।তাই তো একটু মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হলেও তোমাকে নিয়ে এসেছি আমার অন্ধকার ঘরে। 

 

মালিহাঃ কিসের মিথ্যে মা?[বেশ অবাক হয়ে]

 

রেবেকা বেগমঃভেবেছিলাম আজ তোমাকে এসব কিছু বলবো না। কিন্তু আবরার টা এখনো আসছে না দেখে চলে এলাম। তোমার হয়ত একা একা ভালো লাগছে না। জানো মা তোমার শশুর যখন মারা যায় তখন সাবিহার বয়স প্রায় ১৫ বছর, আবরারের ১০ আর ওর ছোটো বোন তিন্নির প্রায় ৪। সবাই খুব করে বলেছিলো যেন আবার বিয়ে করে নেই।সন্তান দের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়ে গেলাম স্বামীর ভিটায়। আবরারের বাবার ব্যবসা প্রোপার্টি সব নিজ দ্বায়িত্বে সামলেছি যেটা একটা মেয়ের পক্ষে অসম্ভব প্রায়।খুব করে চেষ্টা করলাম ওদের কে মানুষের মতো মানুষ করার।কিন্তু কি মা জীবনের এই পর্যায়ে এসে অনুভব করছি একটাকেও প্রকৃত মানুষ করতে পারিনি(দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে)।

তবুও হাল ছাড়িনি।একটা মেয়ে চাইলেই অনেক কিছু সম্ভব। ভাবলাম দ্বীনদার কাউকে ঘরের বউ করে আনবো।কিন্তু না,আবরার চায় তার জীবন সংগী হবে খুব মডার্ন আর আধুনিক মনা।ওর জিদের কাছে হারতে বসছিলো আমার শেষ আশা ভরসা টুকুও।বাধ্য হয়ে মিথ্যের আশ্রয় নিতে হলো।আমার আবার হার্টে প্রব্লেম আছে। হটাৎ করেই অসুস্থতার ভান করলাম। আবরার পাগল প্রায় হয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলো আমাকে।ডাক্তার কে আগে থেকেই সবকিছু বলে রেখেছিলাম।ডাক্তার আবরার কে জানালো আমি খুব অসুস্থ যেকোনো সময় চলে যেতে পারি। আবরার আমাকে এতোটাই ভালোবাসে যে ও এইটা শুনেই হাটু গেরে ধপাস করে বসে পরে ফ্লোরের উপর। ডাক্তার ওকে এটাও বলে দেয় যে আমাকে যেন কোনোভাবেই উত্তেজিত করা না হয়।তাহলে খুব বাজে কিছু হয়ে যেতে পারে।তখন ই আমি আবরারের কাছে তোমার কথা বলি।আমার অসুস্থতার কথা ভেবে ও আর না করতে পারেনি।ও হ্যা তোমাদের পাশের বাসার রিজিয়ার বোন আবার আমাদের বাসায় ভাড়া থাকে, সেই সুবাদেই আমি তোমার সন্ধান পাই। আমার বিশ্বাস তুমি পারবে আমার সংসার টাকে গুছিয়ে নিতে।সাবিহা,আবরার,তিন্নি কাউকেই আমি মানুষ করতে পারিনি রে মা।(বলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন রেবেকা বেগম)।তুমি আবার আমাকে ভুল বুঝোনা মা,আমি তোমাকে ঠকাই নি।দেখবে আল্লাহ তোমাকে খুব ভালো রাখবেন ইনশাআল্লাহ। 

 

মালিহাঃমা আপনি কাঁদবেন না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আমি আপনার ইচ্ছে পূরন করবো ইনশাআল্লাহ। এখন আর আপনার একার স্বপ্ন নেই আমারো আজ থেকে স্বপ্ন আর চেষ্টা একটাই আমার পরিবার কে নিয়ে একসাথে জান্নাতের পথে হাটা ইনশাআল্লাহ। 

 

মালিহার কথা শুনে রেবেকা বেগম যেন মরুভূমিতে পানির সন্ধান পেলেন।নিজ বাহু ডোরে জরিয়ে নিলেন মালিহা কে।

 

রেবেকা বেগমঃকি রে মা খাওনি এখনো? 

 

মালিহাঃআসোলে মা, উনি আসুক তারপর খাবো।(লজ্জা পেয়ে) 

 

রেবেকা বেগমঃহাহাহা,পাগল মেয়ে একটা।চিন্তা কইরো না। আমার ছেলেটা খুব একটা খারাপ ও না,যাকে একবার ভালোবাসে তার জন্য সব কিছু করতে পারে।আচ্ছা মা এখন যাই,আবরার হয়ত এসে যাবে এখনি।

 

মালিহাঃআচ্ছা মা, যান গিয়ে শুয়ে পরুন। 

রেবেকা বেগম যাওয়ার পরেই মালিহা আনমনে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বসে পরলো। হারিয়ে গেলো চিন্তার জগতে।

 

মালিহাঃআল্লাহ তুমি আমাকে কোন পরীক্ষার মধ্যে নিয়ে এলে? 

নিজেকে কি টিকিয়ে রাখতে পারবো এই কঠিন সংগ্রামে! তখন তো উনি বেশ ভালো কথাই বলেছিলেন। উনার জন্য ই সাবিহা আপু আমাকে কিছু বলতে পারেনি। মানুষ টা হয়ত খারাপ না। (তখন কার সেই কথা গুলো মনে হতেই মালিহা যেন মনের কোনে একটু খানি আশা খুজে পেলো।)দ্বীনি শিক্ষা পায়নি বলেই হয়ত এই অবস্থা।আল্লাহ তুমি তাকে সঠিক বুঝ দান কইরো।(অঝোরে গড়িয়ে পরছে মালিহার চোখের পানি)।

 

মালিহা

দরজা টা লক করে আবারো বসে রইলো আবরারের অপেক্ষায়।

অপেক্ষার প্রহর গুলো যে কেন এমন হয়! এ যেন শেষ ই হতে চায় না।আবরার এর সাথে কিভাবে কি কথা বলে সেসব ভাবছে মালিহা।

 

হটাৎ করে দরজা ধাক্কানোর শব্দে মালিহা ধরফর করে উঠে বসলো।কখন যেন চোখটা লেগে গিয়েছিলো টের ই পায় নি। 

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১:৩০ বাজে।

তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেরে শাড়িটা ঠিক করলো।

তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।আবরার কিছু না বলেই ঘরে ঢুকে পরলো।মালিহা দরজাটা বন্ধ করে খাটের উপর গিয়ে বসে পরলো।

 

মালিহাঃআসসালামু আলাইকুম। 

 

আবরারঃওয়া আলাইকুমুস সালাম। 

 

আবরার আর কোনো কথা না বলেই সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।

 

মালিহা অবাক দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। 

বালিশের নিচ থেকে সেই দোয়া লেখা কাগজ টা হাতের মুঠোয় নিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো সে।

 

প্রায় ২০ মিনিট পরে ওয়াশরুম থেকে বের হলো আবরার।

মালিহা সেখানেই বসে আছে। 

 

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টাওয়াল দিয়ে নিজের ভেজা চুল গুলো মুছছিলো ছোপায় বসে।

 

রুম টা এতোই নিরব যে মনেই হয় না সেখানে কোনো মানুষ জন আছে।কিছু ক্ষণ পরে আবরার খাটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আবরার যতই এগিয়ে যাচ্ছে মালিহার হৃদস্পন্দন ততই বেড়ে যাচ্ছে।আবরার খাটের কাছে গিয়ে যখন ই হাত বাড়ালো মালিহা সাথে সাথে বলে উঠলো, 

 

মালিহাঃ এই যে মশাই,এতো দেরি করে এলেন কেন? কোথায় ছিলেন?আবরার কিছু বলতে শুরু করলে মালিহা তাকে থামিয়ে দিলো,আবরার কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আবার বলতে শুরু করলো,

 

মালিহাঃওজু না থাকলে যান ওজু করে আসেন।দুজনে মিলে দুই রাকাত সালাত আদায় করতে হবে।আপনাকে তো আরো অনেক কথা বলার আছে। থাক এখন আর কিছু বলবো না।সালাত আদায় শেষে একসাথে বসে অনেক গল্প করবো।ও হ্যা এখনো তো খাই নি, চলেন খেয়ে নেই।বড্ড ক্ষুধা লেগেছে।সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি।

 

এটা বলেই খাট থেকে নিচে নেমে দাড়ালো মালিহা।

 

এরপর আবরার যা বললো সেটা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ধেয়ে আসলো মালিহার দিকে।এক নিমিষেই যেন থমকে দাড়ালো মালিহার পৃথিবী।

 

চলবে ইংশাআল্লাহ

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

পর্বঃ৬ 

 

মালিহাঃওজু না থাকলে যান ওজু করে আসেন।দুজনে মিলে দুই রাকাত সালাত আদায় করতে হবে।আপনাকে তো আরো অনেক কথা বলার আছে। থাক এখন আর কিছু বলবো না।সালাত আদায় শেষে একসাথে বসে অনেক গল্প করবো।ও হ্যা এখনো তো খাই নি, চলেন খেয়ে নেই।বড্ড ক্ষুধা লেগেছে।সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি।

 

এটা বলেই খাট থেকে নিচে নেমে দাড়ালো মালিহা।

 

এরপর আবরার যা বললো সেটা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ধেয়ে আসলো মালিহার দিকে।এক নিমিষেই যেন থমকে দাড়ালো মালিহার পৃথিবী।

 

আবরারঃHey, you. তখন থেকে পাগলের মতো কি সব বলেই যাচ্ছেন। অসয্য। আমি আপনার কাছে স্বামীর অধিকার ফলাতে আসিনি।আপনি ভাবলেন কি করে আপনার মতো একটা গেও ভুত কে আমি আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবো?।বালিশ আর চাদর টা নেওয়ার জন্য ই এসেছিলাম। আপনার সাথে বেড শেয়ার করার মতো কোনো ইচ্ছে নাই।

বাধ্য হয়ে রুম শেয়ার করতে হচ্ছে।

আম্মির খুশির জন্য বিয়ে করেছি আপনাকে।সবসময় মনে রাখবেন এটা। আর হ্যা আমার সাথে বেশি কথা বলতে আসবেন না।কি মনে করেছেন আপনার জন্য এতোক্ষণ না খেয়ে আছি আমি?নাক্যা সাজছেন?বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি আমি। আপনার মতো আপনি থাকবেন,আমার মতো আমি।

আমি কখনোই আপনাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না।  

আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে অন্য কারো জীবন।খুব ভালোবাসি তাকে।তার নখের যোগ্য ও আপনি নন।

আমি আপনাকে কখনোই মেনে নিবো না।মাইন্ড ইট।

 আর হ্যা, ভুল করে হলেও যেন আম্মি এটা  জানতে না পারে।

 

খুব রাগি সুরে আবরার এসব বলেই একটা বালিস নিয়ে সোফার উপর গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরার সাথেসাথেই আবরারের ফোন টা বেজে উঠলো।শোয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কল টা

রিসিভ করে বলতে লাগলো,

আবরারঃআমি তোমাকে বলেছিলাম না আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারো।আরে বাবা হ্যা, আমি কি তোমাকে কখনো মিথ্যে বলতে পারি? তোমাকে দেখার জন্য মন টা খুব আনচান করছে। তাড়াতাড়ি এসো কিনতি।হুম বাই। love you too.

এসব বলেই ফোনটা রেখে আবার শুয়ে পরলো আবরার।

 

মালিহা খুব করে চাইছে আবরার কে বলতে, 

মালিহাঃস্ত্রী হিসেবে যদি মেনে নিতে না ই পারবেন, তাহলে বিয়ে করলেন কেন?নিজের মায়ের কথা ভেবে আমার জীবন টা নষ্ট করলেন কেন? আমার ও একটা জীবন আছে এটা কি ভুলে গেছেন আপনি?   

আপনি কি জানেন বর্তমান যুগের মেয়ে হয়েও আমি ১০০% চরিত্র সম্পন্ন।জানেন খুব স্বপ্ন ছিলো আজকের রাতটা নিয়ে।খুব আশা ছিলো প্রথম রাতে বরের হাতটা ধরে বলবো, জীবনের এতো টা বছর শুধুমাত্র আপনার জন্যই নিজেকে পুরোপুরি হেফাজতে রেখেছি।যেখানে কোনো অপূর্নতা নেই।

ভেবেছিলাম খুব গর্ব করে বলবো এটা।আপনার কি একবার ও মনে হলোনা একটা মেয়ে কতোটা স্বপ্ন নিয়ে তার পরিবারের সবাইকে ছেড়ে স্বামীর হাতে ধরে চলে আসে একটা নতুন পৃথিবীতে।আপনি কি করলেন এটা।আমার নতুন পৃথিবী টা কে যে ডুবিয়ে দিলেন একরাশ অন্ধকারে।

এরকম হাজারো কথা আবরার কে বলতে চাচ্ছে মালিহা।

কিন্তু পারছে না।কিছুই বলতে পারছে না।সে যে কথা বলতেই ভুলে গেছে।

সে বুঝতে পারছে না এখন তার কি করা উচিৎ। 

আচ্ছা এখন কি কান্না করা উচিৎ?  

চিৎকার করে কান্না করা উচিৎ?  

হ্যা তাহলে হয়ত একটু হালকা লাগবে নিজেকে।

কিন্তু মালিহা যে কান্না করতে পারছে না।খুব চেষ্টা করেও একটু কাদঁতে পারছে না। 

সে যেন অনুভূতি শুন্য হয়ে গেছে।

এই মুহূর্তে খুব দরকার একটু কান্না করা।নাহলে যে চোখের পানির সাথে কষ্ট টা ধুয়ে যেতে পারবে না।

নাহ, মালিহা আর পারছে না।

দম বন্ধ হয়ে আসছে। 

শরীর টা নিস্তেজ হয়ে আসছে। 

কিন্তু তার তো বেচে থাকতে হবে।    

অনেক কাজ বাকি আছে এখনো।

যেখানে দাড়িয়ে ছিলো সেখান থেকে এক চুল ও নড়তে পারছে না ও।

এভাবে থাকলে যে হবে না।কিছু একটা যে করতেই হবে ওকে।

হাতে থাকা সেই দোয়ার কাগজ টা বিছানার উপর রেখেই দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো মালিহা।

বাথরুমের দরজা বন্ধ করে সবগুলো পানির কল ছেড়ে দিলো।যাতে 

বাইরে থেকে কান্নার শব্দ শোনা না যায়।

ফ্লোরে বসে পরলো মালিহা। ঝিরঝির পানির ফোটায়  তার সমস্ত শরীর ভিজে গেলেও স্পর্শ করতে পারছে না তার মন কে। 

মানুষের কষ্ট যখন তার সয্য সীমা অতিক্রম করে মানুষ তখন সে  কাদঁতে ভুলে যায়। মালিহার ক্ষেত্রেও হয়ত এমন কিছুই হয়েছে। 

পানিগুলো মালিহার চুল স্পর্শ করে কপাল বেয়ে সূচালো  নাকের ডগায় এসে সেখান থেকে টপটপ করে নিচে পরছে প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে।কয়েক টা ফোটা আবার তার ঠোঁট কেও স্পর্শ করে যাচ্ছে।

হঠাৎ করেই ডুকরে কেঁদে উঠলো মালিহা।এ কান্না যেনো কোনো বাধ মানতে জানেনা।

চিৎকার করে কান্না করছে সে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তার স্মরণ হলো এভাবে কেঁদে তো কোনো লাভ নেই।এ কান্নার যে মূল্য দিবেনা কেউ।

নিজের কাছে নিজের ই খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে, আহারে আমি কত ই না অধৈর্য একটা মেয়ে।

বারবার ধিক্কার দিচ্ছে নিজেকে।এতোটুকু কষ্টেই সে কিভাবে ভুলে গেলো তার মাবুদ কে যিনি কিনা রহমানুর রহিম। যিনি চাইলেই সবকিছু ঠিক করে দিতে পারেন।যিনি বড্ড পছন্দ করেন বান্দার চোখের পানি।

 

শাড়ি চেঞ্জ করে ওজু করে বাইরে এসেই জায়নামাযে দাঁড়িয়ে গেলো মালিহা।

দুই রাকাত সালাত আদায় করে দুই হাত পেতে দিলো মহান রবের  রহমতের আশায়।

সব কষ্টের কথা খুলে বললো আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার কাছে।

কষ্ট টা ক্রমান্বয়ে ই হালকা হয়ে যাচ্ছে। 

সালাত শেষ করে জায়নামাজেই বসে আছে মালিহা।

কিন্তু নাহ্ সে তো পারছে না বসে থাকতে।চোখটা যেন বুজে আসছে।সারাদিন তো আর কম ধকল গেলো না ওর উপর দিয়ে।

ঘড়িতে এখন ৩:৩৫। আর একটু পরেই আজান হয়ে যাবে।

এখন ঘুমালে ফজরের সালাত টা কাজা হয়ে যেতে পারে।এজন্য আর ঘুমানো হলো না মালিহার। রুমের মধ্যেই আনমনে পায়চারী করছে আর ভাবছে, 

মালিহাঃ নাহ্ এভাবে কষ্ট পেয়ে থেমে গেলে চলবে না। বারবার উঠে দাঁডাতে হবে আমাকে।

 

নিজেই নিজেকে বিভিন্ন ভাবে বুঝাচ্ছে  মালিহা।

সুদূর থেকে মুয়াজ্জিন এর সুমিষ্ট কন্ঠে ভেসে আসছে আজানের ধ্বনি। 

সাথেসাথেই সালাত আদায় করে নিলো মালিহা।

সালাত থেকে উঠে আবরারের থেকে হাত খানেক দূরে  ফ্লোরে বসলো ও। 

ডিম লাইটের আলোটা এসে আবরারের একদম মুখের উপর পরেছে।

যে আলোতে খুব নিষ্পাপ লাগছে ওর মুখটা। মালিহা মনে মনে ভাবছে,

 

মালিহাঃ

কে বলবে যে এই নিষ্পাপ চেহারার ভিতরে লুকিয়ে আছে 

এমন বিভৎস মন মানসিকতা। 

না না এ আমি কি ভাবছি।উনি হয়ত এমন নন। হয়ত শুধুমাত্র আমার ক্ষেত্রেই উনি এমন করে।

যাইহোক এখন তো উনাকে ডাকতে হবে।নাহলে সালাত টা যে কাজা হয়ে যাবে। ডাকবো নাকি ডাকবো না?

ডাকলে যদি রেগে যায়?  

কিন্তু আমার যে দ্বায়িত্ব উনাকে ডাকাটা।   

নাহ্ এভাবে দ্বিধাদ্বন্দে থাকলে হবে না।

আমার দ্বায়িত্ব আমাকে পালন করতেই হবে। তাকে বুঝাতে হবে। 

আল্লাহ চাইলে সত্যিই উনি একদিন সঠিক ভাবে দ্বীন বুঝতে পারবেন। 

 

আর কিছু না ভেবেই মালিহা আসতে করে আবরার কে ডাকতে শুরু করলো,

মালিহাঃ এই যে শুনছেন, সালাতের সময় হয়েছে উঠুন। 

আবরারঃ……….(গভীর ঘুম)

 

মালিহাঃউঠুন, নাহলে যে সালাত কাজা হয়ে যাবে।

আবরার একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পরলো।

মালিহা বুঝতে পারছে না কি করবে এখন। 

হটাৎ করেই একটা বুদ্ধি এলো তার মাথায়।

পাশে থাকা জগ থেকে হাতে একটু পানি নিয়ে অল্প করে ছিটিয়ে দিলো আবরারের মুখে।

ধরফর করে উঠে বসলো আবরার।

চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে দাঁড়িয়েই পাশে থাকা জগটা হাতে নিয়ে পুরো একজগ পানি ঢেলে দিলো মালিহার মাথায়।হাত থেকে জগ টা রেখেই 

ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো আবরার।

আবরারঃ…..

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

পর্ব-০৭+০৮

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

 

পর্বঃ৭

আবরার একটু নড়েচড়ে আবার ঘুমিয়ে পরলো।

মালিহা বুঝতে পারছে না কি করবে এখন। 

হটাৎ করেই একটা বুদ্ধি এলো তার মাথায়।

পাশে থাকা জগ থেকে হাতে একটু পানি নিয়ে অল্প করে ছিটিয়ে দিলো আবরারের মুখে।

ধরফর করে উঠে বসলো আবরার।

চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে দাঁড়িয়েই পাশে থাকা জগটা হাতে নিয়ে পুরো একজগ পানি ঢেলে দিলো মালিহার মাথায়।হাত থেকে জগ টা রেখেই 

ঝাঝালো কন্ঠে বলে উঠলো আবরার।

আবরারঃHey rubbish,কোন সাহসে আমার মুখে পানি দিলেন? what a nonsense?  

Don’t cross your limit.  You are nobody of mine, mind it.

এটা বলেই আবার ঘুমিয়ে পরলো আবরার।

আর মালিহা সেখানেই নির্বাক পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

মালিহা ভেবেছিলো আবরার হয়ত শুধুই একটু বকাবকি করবে, এর বেশি আর কি ইবা করবে। কিন্তু ও যে এমন একটা কাজ করবে মালিহা সেটা ভাবতেই পারেনি।

মালিহা মনে মনে ভাবছে,

মালিহাঃকত আশা ছিলো ফজরে তাকে ডেকে উঠিয়ে একসাথে সালাত আদায় করবো,কুরআন তিলাওয়াত করবো, কিন্তু কি হলো এসব? 

সত্যিই কি এসব হওয়ার ছিলো? 

খুব করে চাইতাম আল্লাহ যেন এমন কাউকে আমার লাইফে পাঠান যে আমাকে দ্বীনের পথে চলতে সাহায্য করবে।

দুজনে একি সাথে জান্নাতের পথে হাটবো,সেই পথে হাটতে গিয়ে যদি কখনো  হোচোট খাই কোনো শক্ত পাথরে তখন যেন তার দুহাতে লুকিয়ে রেখে আমার দুহাত,ভরসা দিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “ভয় পেওনা  আছি তো আমি,ক্লান্তি যদি ছুয়ে দেয় তোমায়,আমার পায়েই হেটো তুমি জান্নাতের ই পথে।

আসুক বাধা,আসুক ঝড়।

লড়বো এক ই সাথে।”

হায় সব যে অধরাই থেকে গেলো।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরলো মালিহা।

বেলা প্রায় ৮ টা বাজে।

মালিহা এখনো নিচে ডাইনিং এ আসেনি বলে সাবিহা বেশ কটু কথা বললে রেবেকা বেগম সেটার প্রতিবাদ করে উঠলেন।

রেবেকা বেগমঃআহ্  সাবিহা থামতো,তোর তো কোনো কাজ করতে হচ্ছে না, ময়না তো আছেই তবুও কেন এসব বলছিস?নতুন জায়গা তাই হয়ত ওর ঘুম হয়নি,বা অন্য কোনো কারনে অসুস্থ ও থাকতে পারে।

সাবিহা আর কোনো কথা না বলে ওর রুমের দিকে হাটা দিলো।রেবেকা বেগম একমনে চা পান করে যাচ্ছেন।

 

আবরার ঘুম থেকে উঠে দাঁড়াতেই বেশ চমকে গেলো।

মেয়েটা ফ্লোরে শুয়ে আছে কেন? 

আবরারঃওর কি কিছু হয়েছে নাকি?সে যাই হয় হোক তাতে আমার কি? ফ্রেস হয়ে অফিসে যেতে হবে।

এটা বলেই ওয়াশরুমের দিকে হাটা দিয়েও থেমে গেলো আবরার।

এগিয়ে গেলো মালিহার দিকে।

ও বুঝতে পারছে না এখন ঠিক কি করা উচিৎ। 

আবরারঃ একবার ডাকবো। আচ্ছা ডেকেই দেখি।

Hellow শুনছেন? 

 

নাহ্ কোনো সাড়াশব্দ নেই।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও আবরার মালিহার কপালে হাত দিয়ে বেশ চমকে গেলো।

গা যেন পুড়ে যাচ্ছে।

গতকাল রাতের কথা মনে পরে গেলো। আবরার ভাবতে লাগলো,

আবরারঃনাহ্ এটা হয়ত ঠিক হয়নি।অত সকালে মাথায় পানি ঢেলে দিয়েছি বলেই হয়ত এতো জ্বর এসেছে মেয়েটার।

(ও তো জানেনা এটা ছাড়াও গতকাল রাতে ঘন্টা খানেকের মতো পানিতে ভিজে ছিলো মালিহা।)

খুব অনুশোচনা হচ্ছে আবরারের।

বিরবির করে বলতে লাগলো,

আবরারঃআমি তো কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি।আমার কিছু করার নেই, আমি জেনেশুনে এরকম একটা আনসোসাল মেয়েকে কিভাবে মেনে নিবো।

তার যে বড় কথা হচ্ছে আমি তো কখনোই ভুলতে পারবো না রিয়াকে।

এজন্যই তো এতো কষ্ট দিচ্ছি এই মেয়েটাকে,যাতে করে সে নিজে থেকেই এ বাড়ি ছেরে চলে যায়।

কিন্তু এখন কি করবো আমি,এভাবে ফ্লোরে থাকলে তো জ্বর আরো বেড়ে যাবে।

এখন তো সে ঘুমিয়েই আছে দেখবে না,যাই খাটে শুইয়ে দিয়ে আসি।

এটা বলেই মালিহাকে পাচকোলা করে উঠে দাড়ালো আবরার।

ধীরেধীরে খাটের উপর শুইয়ে দিয়ে গায়ের উপর টেনে দিলো চাদর টা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই অফিসের জন্য রেডি হয়ে ডাইনিং রুমে গেল আবরার।

ওকে দেখেই রেবেকা বেগম জিজ্ঞেস করলেন, 

 

রেবেকা বেগমঃ কিরে বাবা বৌমা কোথায়? 

 

আবরারঃ ঘুমোচ্ছে।

 

রেবেকা বেগমঃএতো বেলা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছে?  শরীর খারাপ নাকি?

 

আবরারঃউফ্ আম্মি, আমি কি তোমার বকবকানি শোনার জন্য এখানে এসেছি?

তুমি চেয়েছিলে আমি ওকে বিয়ে করি। হ্যা করেছি তো। তোমার ইচ্ছে তো পূর্নতা পেয়েছে।এখন আর কিছু বলতে আসবে না আমাকে। 

 

এটা বলেই চলে যেতে লাগলো আবরার।

রেবেকা বেগমঃ খেয়ে যা বাবা।

আবরারঃখাওয়ার ইচ্ছে টা ই মরে গেছে।

 

আবরার না খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হবার সাথেসাথেই সাবিহা বলে উঠলো,

 

সাবিহাঃ এবার খুশি হয়েছো তো আম্মি।তুমি তো এটাই চেয়েছিলে। কোথা থেকে এক গেও ভুত কে নিয়ে এলে আবরার এর জন্য।নিজের ছেলের সুখ শান্তির কথা একবারের জন্য ও ভাবলে না তুমি।কেমন মা তুমি? 

কখনোই সন্তান দের কে বুঝতে চেষ্টা করলে না।

 

তিন্নিঃআহ্ আপি, থামতো।আম্মি কে এভাবে বলছিস কেন? 

তিন্নিকে থাকিয়ে দিয়ে রেবেকা বেগম বলে উঠলেন,

রেবেকা বেগমঃ তোরা সবাই একদিন বুঝতে পারবি যে মালিহা সত্যিই একটা হিরের টুকরো।ও গেও ভুত না।ও ই প্রকৃত স্মার্ট। 

তিন্নি মা দেখে আয় তো কি করছে মালিহা।

তিন্নিঃ আচ্ছা আম্মি যাচ্ছি।

(তিন্নির মধ্যে দ্বীনের বুঝ না থাকলেও তিন্নি আবরার আর সাবিহার থেকে ভিন্ন,ওদের মতো অতটা উচ্ছ্রিংখল না)। 

 

তিন্নি মালিহার রুমে গিয়ে মালিহাকে অনেক বার ডাকলেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আস্তে করে ধাক্কা দেওয়ার সময় খুব চমকে ওঠে। এত্ত জ্বর।

তিন্নি দৌড়ে ওর মায়ের কাছে চলে আসে।

তিন্নিঃআম্মি ভাবির গা তো অনেক গরম। খুব জ্বর এসেছে।

রেবেকা বেগমঃ সে কিরে,এজন্যই হয়ত এখনো ঘুম থেকে উঠতে পারেনি।চল তো গিয়ে দেখি।

 

রেবেকা বেগম মালিহার কপালে হাত দিয়ে জ্বর টা বোঝার চেষ্টা করছে। জলপট্টি দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে মালিহা চোখ মেলে তাকায়।

রেবেকা বেগমঃএখন কেমন লাগছে মামনি? 

মালিহাঃভালো মা। কিন্তু কি হয়েছে বুঝতে পারছি না। 

 

রেবেকা বেগমঃঅনেক বেলা হবার পরেও তুমি নিচে যাওনি বলে তিন্নিকে পাঠিয়েছিলাম তোমার রুমে। পরে তিন্নি বললো তোমার নাকি খুব জ্বর এসেছে। এসে দেখি সত্যিই জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।ময়নাকে বলছি তোমার নাস্তা টা উপরে নিয়ে আসতে।নাস্তা খেয়ে এই ঔষধ টা খেয়ে নিও মা।

 

মালিহা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

 

সাবিহাঃ বাসায় আসতে না আসতেই জ্বর বাধিয়ে নিয়েছো।

ভালো তো খুব ভালো।১০ টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকার ধান্দা। সব ই বুঝি আমরা।

 

রেবেকা বেগমঃআহ্ সাবিহা কেন এসব বলছিস।থাম তো।

 

সাবিহা আর কিছু না বলেই দমদম করে রুমের বাইরে চলে গেলো।

মালিহা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না।গতকাল সারাদিনের না খাওয়া তার উপর এত্ত জ্বর ও যেন কথা বলার শক্তি টুকুও হারিয়ে ফেলেছে।

কোনো রকম নাস্তা টা খেয়েই ঔষধ খেয়ে নিলো মালিহা।

এখন হয়ত

জ্বর টা একটু কমেছে। 

ভালো লাগছে কিছুটা।

মালিহা এখন ভাবতে শুরু করলো কিভাবে কি হলো।

মালিহাঃআমি তো তাকে সালাতের জন্য ডাকছিলাম।তারপর উনি উঠলো না। 

আমি পানি ছিটিয়ে….  

(ওসব কথা মনে পরেই মালিহার চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে এলো।)

মা বললো তিন্নি এসে আমাকে খাটেই দেখেছে।কিন্তু আমি তো ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম। খাটে এলাম কি করে?  

তাহলে কি উনি…. 

 

এটা ভাবতেই মালিহার দুটি চোখ খুশিতে ঝাপসা হয়ে এলো।

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

পর্বঃ৮

 

মালিহাঃআমি তো তাকে সালাতের জন্য ডাকছিলাম।তারপর উনি উঠলো না। 

আমি পানি ছিটিয়ে…. 

(ওসব কথা মনে পরেই মালিহার চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে এলো।)

মা বললো তিন্নি এসে আমাকে খাটেই দেখেছে।কিন্তু আমি তো ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম। খাটে এলাম কি করে? 

তাহলে কি উনি….

 

(এটা ভাবতেই মালিহার দুটি চোখ খুশিতে ঝাপসা হয়ে এলো।)

উনি আমাকে কোলে করে খাটে শুইয়ে দিয়েছেন!

লজ্জায় দুহাতে মুখটা ঢেকে ফেললো মালিহা।

আয়নার সামনে গিয়ে বারবার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে নিজেকে আর হেসে যাচ্ছে আনমনেই।

 

কিছুটা সুস্থ ফিল করায় মালিহা  কিচেন রুমে গেলো।

রেবেকা বেগম রান্না করছেন আর তাকে সাহায্য করছে ময়না।

 

রেবেকা বেগমঃএখন কেমন লাগছে মা? জ্বর টা কি একটু কমেছে?

 

মালিহাঃজ্বী আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে। 

আপনি এদিকে আসুন মা আমি রান্না টা শেষ করি।এই বয়সে এখনো রান্না ঘরে আসতে ভালো লাগে আপনার?  

এদিকে আসুন মা,আমি পারবো।

 

রেবেকা বেগমঃ দূর বোকা মেয়ে,তুমি যাও রুমে গিয়ে রেষ্ট নাও।আমার ছেলেমেয়ে গুলা খুব পছন্দ করে আমার হাতের রান্না।তাই একটু কষ্ট হলেও রান্না টা নিজেই করি। 

এখন তো তুমি এসে গেছো আমার আর চিন্তা নেই।

তোমার সংসার তুমিই বুঝে নিও কিন্তু আগে তো একটু সুস্থ হতে হবে।

(এটা বলেই হেসে দিলেন রেবেকা বেগম।)

 

মালিহাঃ আচ্ছা মা তিন্নি কোথায় ওকে তো দেখছি না।

 

রেবেকা বেগমঃ  তিন্নি তো কলেজে গেছে। ৩ টার দিকে আসবে।

 

রেবেকা বেগম ময়নাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

রেবেকা বেগমঃসাবিহার রুমে একটু  যাতো ময়না,গিয়ে দেখতো সুবাহ(সাবিহার মেয়ে)

কান্না করছে কিনা।

 

ময়নাঃ আইচ্চা আম্মা যাইতাছি।

 

রেবেকা বেগমঃসত্যি করে একটা  কথা বলবে মালিহা? 

 

মালিহাঃজ্বী মা বলুন।

 

রেবেকা বেগমঃ গতকাল রাতে কি আবরার খুব খারাপ ব্যবহার করেছে তোমার সাথে? 

 

এমন প্রশ্ন শুনতেই মালিহা যেন চুপশে গেলো। চোখ যেন ভিজে আসছে।তবুও খুব কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে হাসি মুখেই উত্তর দিলো, 

মালিহাঃ না মা তেমন কিছু হয়নি।

 

রেবেকা বেগমঃ আমি আমার ছেলেকে চিনি রে মা।খুব বদ মেজাজী ও।

আমার জন্য ই তুমি এতো কষ্ট পাচ্ছো মা।আমাকে ক্ষমা করে দিও। 

(এটা বলেই কেঁদে দিলেন রেবেকা বেগম)

মালিহাঃ এটা কি বলছেন মা? নিজেকে এভাবে দোষারোপ করবেন না। আমি আমার তকদীর কে মেনে নিয়েছি।

শুধু এতোটুকুই দোয়া করবেন, আমি যেন ধৈর্য্য হারা না হয়ে যাই।

 

ময়নাকে রুমে দেখেই সাবিহা বলে উঠলো, 

সাবিহাঃকিরে তুই এখানে?  

ময়নাঃআম্মায় পাঠাইলো, সুবাহ মামনি কানদে নাকি হেইডা দেহোনের লাইগা।

সাবিহাঃআম্মি কি করছে রে? 

 

ময়নাঃনতুন বউ এর লগে গল্প করতাছে আর রান্না করতাছে।

 

সাবিহাঃআচ্ছা তুই সুবাহ কে একটু দেখে রাখ আমি আসছি।

আর হ্যা, সুবহা কান্না করলে আমাকে ডাক দিবি, তুই ধরবিনা কিন্তু।দূরে বসে থাক।

 

সাবিহা রান্নাঘরে ঢুকে মালিহা কে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করলো,

সাবিহাঃবাহ্, শাশুড়ী রান্না করছে আর তুমি বসে বসে মজা দেখছো।

চক্ষুলজ্জা বলতেও কি কিছু নেই তোমার? নাকি নিজেকে  নবাবজাদি মনে করো?

জ্ঞান বুদ্ধি বলতে তো কিচ্ছু নেই।গেও ভুত একটা। 

 

রেবেকা বেগমঃ এমন করে বলছিস কেন সাবিহা। আমিই ওকে নিষেধ করেছি রান্না করতে।তাছাড়া ও তো এখনো নতুন। দুটো দিন যাক, তারপর ওর সংসার তো ও ই বুঝে নিবে।

 

সাবিহাঃওর সংসার মানে? 

আবরার কোনো দিন ওকে মেনে নিবে না।সারাজীবন এ বাড়ির চাকরানী হয়েই থাকতে হবে ওকে। আর হ্যা তুমি যেন ওকে একটুও আস্কারা না দাও,এই বলে রাখলাম আমি।

 

আর কিছু না বলেই সাবিহা হনহন করে হেটে গেলো ওর রুমে। 

 

রেবেকা বেগমঃওর কথায় কিছু মনে করো না মা।ও ছোটো বেলা থেকেই খুব জেদি আর একরোখা টাইপের।ভালো মন্দ বোঝেনা বললেই চলে।সাবিহা আর আবরার হয়েছে একরকম। তিন্নি আবার ওদের থেকে আলাদা।খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে।কিছুদিন আগে সাবিহা এবাড়িতে এসেছে।সুবহার বাবা ব্যবসার কাজে বাইরে গেছে। আগামী মাসেই চলে আসবে।তারপরেই ও চলে যাবে ওর শশুর বাড়ি।এ কয়টা দিন একটু সয্য করো মা।

 

মালিহাঃনা মা, কি বলেন এসব। আপির যতোদিন ইচ্ছে এখানে থাকবে। হয়ত তার দৃষ্টিতে আমি আপনার ছেলের যোগ্য নই এজন্য ই এসব বলছে। কিন্তু সে যখন সত্যি টা বুঝতে পারবে তখন দেখবেন আর কোনো সমস্যা ই থাকবে না।আল্লাহ চাইলে আমার যথাযথ সম্মান অবশ্যই পাবো।

আচ্ছা মা আমি এখন যাচ্ছি।

 

রেবেকা বেগমঃআচ্ছা যাও।

 

সন্ধার পরে তিন্নি এলো মালিহার রুমে।

 

তিন্নিঃভাবি আসবো? 

 

মালিহাঃএতে আবার অনুমতি লাগে? এসো ভেতরে এসো।

 

তিন্নিঃএখন কেমন লাগছে ভাবি? 

 

মালিহাঃআলহামদুলিল্লাহ,, ভালো লাগছে বোন। 

 

তিন্নিঃভাবি তুমি কি পড়াশোনা বন্ধ করে দিবা? 

 

মালিহাঃএখনো বুঝতে পারছি না।আর কয়েকমাস পরেই অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল এক্সাম।ভাবছি এক্সাম টা দিবো।

 

তিন্নিঃহ্যা ভাবি এক্সাম টা দিও। জীবনে নিজের পায়ে না দাঁড়ালে কারো কাছে দাম পাওয়া যায় না। অনার্স কমপ্লিট করে মাস্টার্স ও কমপ্লিট করবা। তারপরেই জবে ঢুকে যাবা। 

 

মালিহাঃনিজের পায়ে দাঁড়ানো বলতে তুমি কি বোঝো তিন্নি? 

 

তিন্নিঃ এই ধরো জব করলে নিজের ইচ্ছে মতো চলতে পারবা,কাউকে পরোয়া করতে হবেনা। কেউ কিছু বলতে পারবেনা। নিজের পায়ে দাঁড়ানো বলতে তো এটা ই বুঝায়। 

 

মালিহাঃআচ্ছা এতে কি লাভ হয়? 

 

তিন্নিঃ এতে তুমি স্বাধীনতা পাবে। কারো অধীন থাকতে হবেনা।

 

মালিহাঃ আচ্ছা তিন্নি তুমি আমাকে বলোতো আমরা স্বাধীনতা চাই কেন? 

 

তিন্নিঃএতে তুমি শান্তিতে থাকতে পারবে,কষ্ট থাকতে না।

 

মালিহাঃহুম, বুঝলাম। তাহলে তোমার মতে এই সবকিছু করতে হবে শান্তির জন্য,কি তাইতো? 

 

তিন্নিঃহুম।

 

মালিহাঃআচ্ছা তিন্নি এবার বলো তুমি কি আমাকে এমন কোনো সিওরিটি দিতে পারবে যে, যারা জব করবে তারা ই হ্যাপি হবে।

জব না করলে হ্যাপি হওয়া যাবেনা? 

আসোলে কি জানো তিন্নি,আমাদের কার জীবন কিভাবে অতিক্রম করতে হবে, কাকে কোন পথে চলতে হবে, এই সবকিছু যে আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত। সেই নির্ধারন পথে চললে জীবনে কেউ কখনো ব্যর্থ হবেনা। 

তুমি বলছো জবের কথা, কিন্তু তিন্নি তুমিকি জানো পুরোপুরিভাবে দ্বীনের পথে থেকে আমাদের দেশে জব করাটা অসম্ভব প্রায়।

আগে তোমার দেখতে হবে কখন তোমার জন্য জব করা বৈধ।

জানো তিন্নি আল্লাহ আমাদের কে এমন একটা জীবন ব্যবস্থা দিয়েছেন যেখানে,

 

*তুমি যখন কণ্যা তখন তোমার দ্বায়িত্ব -তোমার পিতার উপর।

 

*তুমি যখন স্ত্রী তখন-তোমার স্বামীর উপর।

 

*সেই তুমিই যখন মা-তখন তোমার সন্তানের উপর।

 

আলহামদুলিল্লাহ,,,, 

 

বয়স ভেদে তোমার ভরনপোষণ থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ দ্বায়িত্ব তাদের।

 

তাদের দ্বায়িত্ব যদি তুমি পালন করতে যাও তাহলে তুমি পারবে সঠিক ভাবে তোমার দ্বায়িত্ব পালন করতে? 

 

এবার আসো তোমার দ্বায়িত্ব কি।

 

আল্লাহ তোমাকে দ্বায়িত্ব দিয়েছেন, 

*সময় মত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায় করা।

*রমজানে সিয়াম রাখা।

*লজ্জা স্থানের হেফাজত করা।

*স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

 

ব্যাস এনাফ।

 

তুমি যদি এই চারটি কাজ করতে পারো তাহলে জান্নাতের আটটি দরজা ই তোমাকে ডাকবে, 

এসো তিন্নি,আমার দিকে এসো।

 

যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি প্রবেশ করবে চিরসুখের বাগান জান্নাতে।

 

তুমি অফিস এ গেলে,

 

*সময় মতো সালাত আদায় নাও করতে পারো। 

 

*সিয়াম রেখে সারাদিন ডিউটি করা কতটা কষ্টের সেটা একমাত্র সেই পুরুষ ই জানবে যাকে সারাদিন বাইরে ঘুরঘুর করতে হয়।

 

*এবার আসো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে,

লজ্জা স্থানের হেফাজত অথবা পরিপূর্ণ পর্দা করে জব করা আমাদের দেশে অসম্ভব প্রায়।এটাতো আগেই বলেছি।

 

*সবচে ইমপোর্টেন্ট পয়েন্ট হচ্ছে এটাই যে তুমি সারাদিন অফিস করে ক্লান্ত শরীরে কিভাবে তোমার সংসারের সব দ্বায়িত্ব পালন করে স্বামীকে সন্তুষ্ট করবে এটা বলো।

 

তিন্নি জানো সন্তানের সবচে বড় শিক্ষক কে? 

তার মা। 

মা হচ্ছে সন্তানের আদর্শ শিক্ষিকা। প্রত্যেক বাচ্চা ই নরম কাদা মাটির মতো।

যাকে চাইলেই তুমি যেকোনো আকার দিতে পারো।

তুমি চাইলেই তাকে ভালো বা মন্দ হিসেবে গড়ে তুলতে পারো। তুমি তাকে কিভাবে গড়ে তুলবে সেটা তোমার উপর নির্ভর করবে।আদর্শ সন্তান তৈরি করার জন্য ছোটোবেলা থেকেই তাকে ট্রেনিং দিতে হবে।কারন বড় হলেযে কাদা মাটি শক্ত হয়ে যাবে।যাকে চাইলেই তুমি যেকোনো আকার দিতে পারবে না। 

 

এখন বলো তোমার এতো দ্বায়িত্ব থাকা সত্যেও তুমি কি যাইবে তাদের দ্বায়িত্ব পালন করতে? 

ইহি চাইবে না। 

কেন চাইবে বলো!

তোমাকে তো পাগলা কুকুরে কামড়ে দেয়নি।

 

পুরুষেরা কি চায় জানো? 

আনুগত্য। 

স্ত্রীর আনুগত্য। 

সে চায় তুমি যেন তার উপর ডিপেন্ডেট হও।

তবে ভেবোনা যেন সে তোমার স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায়।

 

সে চায় তুমি তাকে মূল্যায়ন করো।

সম্মান করো সবচে বেশি।

 

প্রকৃত পুরুষেরা কখনোই চায়না 

তুমি বলো,

“আমি একাই ১০০”

সে চায় তোমার ৫০ আর তার ৫০ মিলেই ১০০ হোক। 

 

এটা আবার ভেবোনা যেন, ইইইই সম্মান, ভালোবাসা সবকিছু কি আমিই দিয়ে যাবো? 

আরে বোকা না শুধু তুমি দিবে কেন? 

আমি বলছি তুমি যদি তাকে পর্যাপ্ত সম্মান, ভালোবাসা দিতে পারো তাহলে সে তোমাকে সম্মান করতে ভালোবাসতে বাধ্য।

সত্যিই বাধ্য। 

 

ভালোবাসা কি জানো? 

 

“আমি চাই জান্নাতে তুমিই আমার ৭০ টা হুরের রানি হও।”

 

“আমি চাই জান্নাতে যেন আমিই তোমার ৭০ টা হুরের রানি হই।”

 

বিশ্বাস করো তিন্নি এটাই ভালোবাসা।

প্রকৃত ভালোবাসা। 

 

(এসব বলতে বলতে কখন যে ভিজে গেলো দুটি চোখ মালিহা বুঝতেই পারলো বা)

 

তিন্নিঃভাবি তুমি কিভাবে  এতো সুন্দর করে বললে বলোতো একটু।

সত্যিই আমি কখনোই ভাবিনি এভাবে।

খুব ভালো লাগছে এখন।

অনেক কিছুই বুঝতে পারলাম। 

অনেক কিছু বলবো তোমাকে। 

অনেক কিছু শেখার আছে।

 

মালিহাঃআচ্ছা বোন তোমার যখন যে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করবে নির্দিধায় চলে আসবে আমার কাছে। 

 

তিন্নিঃআচ্ছা ভাবি এখন যাই তাহলে।

 

মালিহাঃহুম,আচ্ছা তিন্নি তোমার ভাইয়া অফিস থেকে আসে কখন? 

 

তিন্নিঃপ্রায় তো ৯ টা বেজে গেছে।অন্যান্য দিন তো আরো আগে চলে আসে। 

চিন্তা কইরো না এসে পরবে।

তুমি তো দেখছি ভাইয়াকে চোখে হারাচ্ছো।

 

মালিহাঃযাও কি যে বলো না! (লজ্জা পেয়ে)

 

তিন্নি চলে যাওয়ার প্রায় ঘন্টা খানেক পরে আবরার এলো।

মালিহা খাটের উপরেই বসে আছে। আবরার

রুমে ঢুকেই শার্ট টা খুলে খাটের উপর ছুড়ে মেরে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

 

মালিহা একটু সামনের দিকে এগিয়ে আবরারের শার্ট টা হাতে নিলো।

মনে হচ্ছে এর চেয়ে সুন্দর ঘ্রাণ দুনিয়াতে আর নেই।

শার্ট টা জড়িয়ে ধরে মালিহা হারিয়ে গেলো গভীর আবেশে।

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

পর্ব-০৯+১০

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

 

পর্বঃ৯

মালিহা একটু সামনের দিকে এগিয়ে আবরারের শার্ট টা হাতে নিলো।

মনে হচ্ছে এর চেয়ে সুন্দর ঘ্রাণ দুনিয়াতে আর নেই।

শার্ট টা জড়িয়ে ধরে মালিহা হারিয়ে গেলো গভীর আবেশে।

 

আকাশে অনেক মেঘ করেছে।মনে হচ্ছে যেন ঝড়ো হাওয়া বইছে, বৃষ্টি হচ্ছে না যদিও।

 

মালিহা একমনে বলেই যাচ্ছে,

 

মালিহাঃআচ্ছা মানুষটার মধ্যে কি কোনো ভালো লাগা নেই? 

এমন করে কেন আমার সাথে? 

সত্যিই কি আমি গেও ভুত!

 

এটা বলেই মালিহা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

 

মালিহাঃসত্যিই তো এখন  আমাকে গেও ভুতের মতোই লাগছে।আমিও না!

এভাবে অগোছালো ভাবে থাকে কেউ।

উনি আসার আগে  কোথায় একটু সেজেগুজে থাকবো তা না,এভাবে অগোছালো হয়ে বসে আছি।

আজ দেখবো আপনি কিভাবে পারেন আমার থেকে চোখ ফেরাতে।

 

এটা বলেই মালিহা তার সব শাড়ি গুলো বের করলো।

অনেক খুঁজে, চিন্তা ভাবনা করে 

নিল রঙের সিল্কের শাড়িটা হাতে নিলো।গোল্ডেন কালারের পাড়ের সাথে মেচিং করে মিনি হাতার ব্লাউজ টা পরে নিলো মালিহা।

যদিও সে মিনি হাতার পোশাক পরেনা তবুও স্বামীর খুশির জন্য পরছে।কারন স্বামীর খুশির জন্য স্বামীর মনের মতো করে নিজেকে সাজানোটাও সাওয়াবের কাজ।কিন্তু আমরা মেয়েরা ভুলটা এখানেই করি।

আমরা নিজের স্বামীর জন্য না সেজে অন্যের স্বামীর জন্য সাজতে পছন্দ করি। সবচেয়ে ভালো পোশাক টা আমরা তখন ই পরি যখন আমরা বাসা থেকে বের হই।যখন আমাদের কে অন্যের স্বামীরা দেখবে।

আসোলে আমাদের হিসেব টা আজ এমন যে 

“আমি সাজি তোমার স্বামীর জন্য, 

আর তুমি আমার স্বামীর জন্য।”

যার ফলাফল =পরক্রিয়া আর ডিভোর্স বেড়ে চলছে কোষ বিভাজনের মতো।একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি,চারটি থেকে আটটি, আটটি থেকে…. 

 

শাড়ির ছোটো ছোটো কুচি গুলো পায়ের কাছে এসে ফুটে আছে যেন পদ্ম ফুলের মতো।

 

শাড়ির আঁচল টা বা হাতের উপর  মেলে রাখলো মালিহা।

 

মাঝারি সাইজের একটা ঝুমকো দুল কানে  ও গলার সাথে মেশানো প্রায় লকেট সহ একটা চিকন চেন পরে নিলো গলায়।

 

হালকা মিষ্টি রঙের লিপস্টিক এ মালিহার গোলাপি ঠোঁট টা যেন আরো আকর্ষণীয় লাগছে।

 

পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে আছে একগুচ্ছ মেঘ বরণ চুল। 

 

মালিহাঃহাহ্,এতোক্ষণে শেষ হলো। 

না না শেষ হয়নি তো।আর একটু বাকি আছে।

 

গাড়ো করে কাজল একে দিলো তার চোখে।এতে করে মালিহার মায়াবি চোখ দুটো যেন আরো মায়াবি হয়ে উঠলো।

এতোটাই মায়াবি লাগছে যে, একবার কেউ এই মায়ার সাগরে ডুব দিলে সেখার থেকে ফিরে আসা টা অসম্ভব। 

 

আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই চোখ ফেরাতে পারছে না মালিহা।আনমনেই বলে উঠলো মাশা-আল্লাহ।।বারবার শুক্রিয়া আদায় করছে মহান রবের।

এবার ও বুঝতে পেরেছে কেন ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই ওকে হিংসে করতো।

 

কুচি গুলো ছড়িয়ে দিয়ে,  আচঁল টা বা হাতের উপরে দিয়ে খাটের উপর মেলে দিয়ে বসে আছে মালিহা।

 

বাইরের দমকা হাওয়া এসে উড়িয়ে দিচ্ছে কেশগুচ্ছ।

 

 মনে হচ্ছে যেন বসে আছে কোনো এক অপ্সরী।

 

ওয়াশরুম থেকে একটু বামে প্রায় ১২ ফুট সামনেই খাট,যেখানে বসে আছে মালিহা। ওয়াশরুমের দরজা খুলে বামে তাকালেই পরিলক্ষিত হয় খাট টি। খাটের পাশেই ড্রেসিং টেবিল, তার কাছেই সোফা সেট, তারপর ডানদিকে হাত দুয়েকের মতো গলির সাথেই ওয়াশরুম। 

 

প্রায় ৪০ মিনিট পরে ওয়াশরুম এর দরজা খুললো আবরার।

দরজা খুলে বাইরে পা বাড়াতেই চোখ পরলো মালিহার দিকে।

 

আবরার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। 

 

-এভাবে কে বসে আছে আমার রুমে।

 

এতো সুন্দরী মেয়ে জীবনে হয়ত দ্বিতীয় বার দেখেনি আবরার।

 

উড়ন্ত খোলা চুলে মনে হচ্ছে যেন বসে আছে এক ডানা কাটা পরি।

 

যার শরীরের উজ্জ্বলতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে পুরো রুম। 

 

আবরার যেন হাটতে ভুলে গেছে। 

মালিহার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক।

মালিহা এটা দেখে মুচকি হাসছে আর ভাবছে এভার কাজ হবে হয়ত।

 

ঠোঁট বাকানো হাসিটা যেন মালিহার সৌন্দর্য দ্বীগুন করে তুলেছে। 

 

আবরার যেন হাটতে ভুলে গেছে।কোনো কথা বের হচ্ছে না কন্ঠস্বর দিয়ে।

আবরার মালিহার দিকে তাকিয়ে আনমনেই হাটছে আর ভাবছে 

 

আবরারঃ কোনো মেয়ে কি এতো সুন্দরী হতে পারে? 

আদৌ কি সম্ভব এটা?

 

হঠাৎ করেই আবরার ঠাস করে ধাক্কা খেলো সোফার সাথে।

 

এতোটাই জোরে ধাক্কা খেলো যে ফ্লোরে পরে গেলো।

 

আবরারঃউহ্ ,কি ব্যাথাটাই পেলাম রে বাবা।

 

আবরারের কথা শুনে  খিলখিল করে হেসে উঠলো মালিহা।

 

মালিহাঃহাহাহাহা,,

 

আবরারঃএতো হাসার কি আছে?(লজ্জা পেয়ে)

 

মালিহাঃহাহাহা,,হাহাহাহা,,হাহাহাহা

(হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ালো মালিহা)

আবরারঃআজব তো,এভাবে পাগলের মতো হাসার কোনো মানে হয় না। 

 

মালিহাঃ হাসবো না?  নিজের বউকে দেখে যে অবস্থা হয়েছে আপনার। মনে হচ্ছে দুনিয়াতে আর মেয়ে দেখেন নি।ওহ দেখবেন ই বা কি করে, আমার দিকে  তো এই প্রথম ই চোখ তুলে তাকালেন।আর এখন থেকে শুধু আমার দিকেই তাকাবেন।কারন আল্লাহ আমাকে আপনার সম্পত্তি হিসেবেই পাঠিয়েছেন।

দূর থেকে না দেখে কাছে এসে দেখলেই পারতেন,তাহলে আর এই আছাড় টা খেতে হতো না। 

 

আচ্ছা, এবার বলুন তো আপনার ওই রিয়া, ওহ সরি আপনার রিয়া হবে কেন, আপনার তো শুধুই আমি। ওই রিয়া মেয়েটা কি আমার চেয়েও সুন্দরী? 

 

রিয়ার  সাথে নিজেকে তুলনা করায় আবরার খুব রেগে গেলো,

 

আবরারঃআপনার সাহস তো কম না। কাকের সাথে ময়ুরের তুলনা করছেন? 

ময়ুরের পালক লাগালেই কাক কখনো ময়ুর হয়ে যায় না। আপনি কি মনে করেছেন আপনার রুপ দেখে আমি গলে যাবো? 

কে বলেছে আপনি আমার? আমার রিয়া,শুধুই রিয়া।

আপনি কোন সাহসে ওর সাথে নিজেকে তুলনা করলেন? 

আমি রিয়াকে ভালোবাসি,আমার দুনিয়া জুড়ে শুধুই ও। Understand?  

একটা কথা কি জানেন,নির্লজ্জ, খুউউউউউব নির্লজ্জ। কে জানেন? 

আপনি। খুব নির্লজ্জ আপনি। 

একটুও কি লজ্জা লাগলো না নিজেকে জোকারের মতো সাজাতে। একটুও কি লজ্জা লাগলো না নিজের রুপ দিয়ে পরপুরুষের মন ভোলানোর চেষ্টা করতে। মানুষ কিভাবে এতোটা নিচে নামতে পারে এটা আপনাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। 

 

এক নিমিষেই মালিহার হাসোজ্জল মুখটা গভীর অন্ধকারে ঢেকে গেলো।

যে কাজল তার চোখের সৌন্দর্য কে বাড়িয়ে দিয়েছিলো এখন সেই কাজল ই লেপ্টে গিয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে ওর সৌন্দর্য কে।

কান্না যেন কোনো বাধ মানছে না।

অনেক কষ্টে বললো,

 

মালিহাঃআপনি আমার জন্য পরপুরুষ নন। আপনি আমার জন্য সবচে আপন পুরুষ।বিশ্বাস করুন কোনো পরপুরুষ কে আমি আমার সৌন্দর্য দেখাইনি।

 

আবরারঃHey stop. আপনি যে নির্লজ্জ এটা তো এখনি প্রমাণ হয়ে গেলো।

আপনার জায়গাতে অন্য কেউ হলে সেই কখন আমার সামনে থেকে চলে যেতো। আর আপনি?  

নির্লজ্জের মতো আমার সামনে এসে ছিছিছি। 

 

হঠাৎ করেই খুব জোড়ে একটা বজ্র পরলো।

 

বজ্রপাত কে খুব ভয় পায় মালিহা।

বজ্র পরার সাথেসাথেই মালিহা দৌঁড়ে গিয়ে আবরারের বুকে মুখ লুকালো নিজের ভয়ের কাছে হেরে গিয়ে।

যতটা শক্ত করে ধরে রাখলে পৃথিবীর কোনো ভয় স্পর্শ ও করতে পারেনা ঠিক ততোটা শক্ত করেই আবরার কে জড়িয়ে ধরলো মালিহা।

                            চলবে ইংশা আল্লাহ

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

পর্বঃ১০ 

 

১০।

হঠাৎ করেই খুব জোড়ে একটা বজ্র পরলো।

বজ্রপাত কে খুব ভয় পায় মালিহা।

বজ্র পরার সাথেসাথেই মালিহা দৌঁড়ে গিয়ে আবরারের বুকে মুখ লুকালো নিজের ভয়ের কাছে হেরে গিয়ে।

যতটা শক্ত করে ধরে রাখলে পৃথিবীর কোনো ভয় স্পর্শ ও করতে পারেনা ঠিক ততোটা শক্ত করেই আবরার কে জড়িয়ে ধরলো মালিহা।

 

আচমকা মালিহার এমন কাজে আবরার খুব অবাক হলেও কেন যেন ওর বুক থেকে সরাতে পারছে না মালিহাকে।

আবরার খুব করে চাচ্ছে ওকে সড়িয়ে দিতে,কিন্তু ওর চুলের পাগল করা মিষ্টি গন্ধটা যে পাগল করে দিচ্ছে আবরার কে।

কেন যেন খুব ইচ্ছে করছে ওকে অভয় দিয়ে বুকের আরো গহীনে পৌঁছে দিতে।

 

কিন্তু না,কিছুই পারছে না আবরার। খুব দোটানায় পরে গেছে ও।

 

হঠাৎ করেই ওর খেয়ালে আসলো আনসোসাল,গাইয়া ভুত মেয়েটা ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। যে কিনা ওর দুচোখের শাল।

যার জন্য রিয়া কে এখনো ঘরে তুলতে পারছে না ও।

 

রিয়া দেশের বাইরে ছিলো বলে বিয়ের কথা শোনা স্বত্তেও এখনো কিছু বলেনি। আগামীকাল ই দেশে ফিরবে ও।

না জানি কি তুলকালাম টা ই না বাধাবে ও। 

 

এসব ভাবতে ভাবতেই প্রচন্ড রাগ উঠে যায় আবরারের।

 

গভীর আবেশে হারিয়ে যাওয়া মালিহার দুটি হাত শক্ত করে ধরে খুব জোরে ধাক্কা দিলো আবরার।

 

ধাক্কার বেগ সামলাতে না পেরে  খুব জোরেসোরে সোফার হাতলের উপর পরে গেলো মালিহা।

 

খুব কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো মালিহা।

 

কপাল কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত পরছে।

 

নাহ্ সেদিকে কোনো খেয়াল নেই আবরারের।

 

রাগে যেন ফেটে যাচ্ছে ও।

 

আবরারঃতোকে আমি যতটা নিকৃষ্ট ভেবেছিলাম তুই তার চেয়েও খারাপ,খুব বাজে।

একটুও লজ্জা লাগলো না এভাবে জড়িয়ে ধরতে? 

এখন তো তোর চরিত্র নিয়েও সন্দেহ হচ্ছে। ওহ নো, তোকে নিয়ে সন্দেহ করবো কেন? তুই যা ইচ্ছে তাই হ তাতে আমার কিছুই এসে যায় না। 

প্রথম রাতেই তোকে যা বলার বলে দিয়েছিলাম, তোর জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে সেই রাতেই চলে যেতো।কিন্তু তুই তো একটা বেহায়া।

হাজার কথা বললেও তোর গায়ে লাগে না। 

 

আমার জীবনের সবকিছু রিয়া,শুধুই রিয়া। 

 

এটা বলেই আবরার খাট থেকে একটা বালিশ ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।

 

আবরারঃগতকাল খাটে ঘুমাতে দিয়েছিলাম,সম্মান দেখিয়েছিলাম। 

কিন্তু তুই সে সম্মানের যোগ্য নস।

তাই এখন থেকে ফ্লোরেই ঘুমাবি। 

 

খাটে শুয়ে পরলো আবরার।

 

মালিহা সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

 

কপাল বেয়ে মুখে, মুখ বেয়ে গলায় আর সেখান থেকে শাড়িতে নিজ গতিতে গড়িয়ে পরছে রক্ত।

 

আচ্ছা কপালে কি খুব ব্যাথা করছে মালিহার? 

 

হয়ত করছে। কিন্তু ব্যাথা করলেও তো ও কান্না করতো, ব্যাথা সারানো চেষ্টা করতো।

 

অথচ কাটা জায়গার দিকে ওর কোনো খেয়াল ই নেই।

 

তবে কি ব্যথা করছে না? 

 

গভীর কিছুর কাছে অল্প কিছুকে সবসময়ই খুব ক্ষুদ্র লাগে,তুচ্ছ মনে হয়।

 

মালিহার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ  এতোটাই বেশি যে কপালের রক্তক্ষরণ খুব তুচ্ছ লাগছে।

 

হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কারো দৃষ্টিগোচর হয় না,দৃষ্টিগোচর হয় বাহ্যিক রক্তক্ষরণ। 

 

মালিহা কোনো কথা না বলেই ফ্লোরে রাখা বালিশের উপর মাথা রেখে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পরলো। 

 

চিৎকার করে কাঁদতে গিয়ে ও থেমে যাচ্ছে, লজ্জায়,ঘৃণায়।

 

নিজের উপর নিজের ই ঘৃণা হচ্ছে।

কেন করলাম অমন কিছু। 

সত্যিই তো ও ইচ্ছে করে করেনি, খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। 

 

কেউ যেন খুব ধাড়ালো ছুড়ি দিয়ে খুব জোড়ে আঘাত করছে কলিজায়।যে আঘাতে সবকিছু ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। 

 

চোখের পানি যদি বিভিন্ন রঙে রঙিন হতো তাহলে হয়ত ভোরের  আলোয় খুব বিশ্বস্ত সেই রাতের বালিশ টা ও বিশ্বাসঘাতকতা করতো। সবাই কে বলে দিতে তার সাথে  শেয়ার করা সমস্ত কষ্ট গুলো। 

আল্লাহর অসীম দয়া যে চোখের পানি রঙিন নয়।

নাহলে আজ হয়ত মালিহার বালিশ টা ও রঙিন হয়ে যেতো। 

 

কাঁদতে কাঁদতে কখন যেন ঘুমিয়ে পরলো মালিহা।

 

মুয়াজ্জিন এর ডাক কানে পৌঁছাতে ই ঘুম ভেঙে গেলো মালিহার।

 

ঘুম ভাংলেও চোখ টা তো খুলতে পারছে না। 

প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় মাথাটা যেন ভার হয়ে আছে। 

 

রক্ত গুলো জমাট বেধে তরল থেকে কঠিন এ পরিনত হয়েছে।

 

পোশাক চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে সালাত করে

ভয়ে ভয়ে  আস্তে করে আবরার কে কয়েক টা ডাক দিলেও ঘুম ভাংলো না ওর।

 

দরজা খুলে তিন্নির রুমে গিয়ে নক করার কিছুক্ষণ পরেই দরজা খুললো তিন্নি।

 

মালিহাঃআসসালামু আলাইকুম, তিন্নি।

 

তিন্নিঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। হাহাহা,ভাবি আমাকে সালাম দিচ্ছো কেন? আমি তো তোমার ছোটো।

 

মালিহাঃ সালাম শুধু ছোটোরা দিবে এটা কে বললো তোমাকে। 

সালাম হচ্ছে দোয়া,যেটা সবাই সবার জন্যই করতে পারবে। যে আগে সালাম দিবে সে আরো বেশি নেকি পাবে।

হাদিসে এ ব্যাপারে কি এসেছে শোনো।

“আগেই সালাম দেওয়ার চেস্টা কর। কেননা আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা উত্তম ব্যক্তি হচ্ছে 

প্রথমে সালাম প্রদানকারী। ” 

(সিলসিলা ছাহীহ হা/৩৩৮২)।

 

তিন্নিঃ ওহ, আচ্ছা ভাবি এতো সকাল সকাল ডাকলে কেন? 

 

মালিহাঃ আমার মিষ্টি বোনটা শয়তান কে খুশি করবে আর আমি কি চেয়ে চেয়ে দেখবো? 

 

তিন্নিঃ কি বলছো বুঝতে পারছি না তো। 

 

মালিহাঃ সালাতের সময় শেষ হয়ে আসছে আর তুমি এখনো শুয়ে আছো,শয়তান তো খুশিতে লাফাচ্ছে। 

যাও যাও তাড়াতাড়ি যাও ওজু করে সালাত আদায় করে শয়তানের মুখে কালি মাখিয়ে দিয়ে সন্তুষ্ট করো তোমার রবকে। 

যে সন্তুষ্ট হলে সার্থক তোমার জীবন। 

 

তিন্নিঃ ভাবি আরেকটু ঘু… 

 

মালিহানঃ ইহি, আর কোনো কথা নেই। তাড়াতাড়ি ওঠো।আজ থেকে পাচঁ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হবে, কোনো অজুহাত নেই। 

 

তিন্নিঃ হাহাহা। আচ্ছা ভাবি। 

 

সাবিহার রুমে কয়েকবার নক করা সত্ত্বেও কোনো সারাশব্দ না পেয়ে রেবেকা বেগমের রুমে গিয়ে দেখলো তিনি কুরআন তিলাওয়াত করছেন। 

 

নিজের রুমে এসে ভোরের আলো না ফোটা পর্যন্ত মধুর সুরে  কুরআন তিলাওয়াত এর পরে ড্রয়ার থেকে সেই চিরো চেনা ডাইরি টা হাতে নিলো মালিহা।

 

এই কয়েক দিনের ব্যস্ততার কারনে ডাইরিটা মোটেও ধরা হয়নি।মনের আবেগ গুলা ডাইরেতে প্রকাশ পেতে বেশ সময় লাগলো। 

 

৮ টার  দিকে রান্না ঘরে গেলো সবার জন্য চা করতে। 

 

মালিহাঃ আসসালামু আলাইকুম  ময়না বু। 

 

ময়নাঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম  ভাবিজান। আপনে আমারে সালাম দিলেন? 

 

মালিহাঃকেন দিবো না? দ্বীনের খাতিরে তুমিও আমার বোন। 

সালাম মানে দোয়া।আমি তোমার জন্য একটু দোয়া করলাম আরকি।(মুচকি হেসে)

জানো তো ময়না বু ইসলামে বলা হয়েছে, 

 

“কথা বলার পুর্বে সালাম দাও।কেউ সালাম দেওয়ার পুর্বে কথা আরম্ভ করলে তার উত্তর দিও   না।” (সিলসিলা ছাহীহ হা/৮১৬/৩৪৭)

 

এখন থেকে যত মুসলিম এর সাথে কথা বলা শুরু করবা সালাম দিয়ে শুরু করবা। 

বুঝছো?  

 

ময়নাঃ হ ভাবিজান, বুচ্ছি। (মুচকি হেসে)

এতো সকালে আপনে রান্নাঘরে ক্যান? 

 

মালিহাঃ সবার জন্য চা বানাতে এলাম। 

 

ময়নাঃ আপনে ঘরে যান ভাবিজান। আমি সবাইরে চা দিয়ামুনে।  আমি থাকতে আপনে  কষ্ট করবেন ক্যান? 

 

মালিহাঃ আজ থেকে এসব কাজ আমিই করবো। 

তুমি শুধু আমাকে একটু সাহায্য করলেই হবে। 

 

ময়নাঃ আইচ্চা ভাবিজান। 

 

মালিহাঃ আসসালামু আলাইকুম, আপি।

 

সাবিহাঃওয়া আলাইকুমুস সালাম। 

 

মালিহাঃ আপি চা রেখে গেলাম। খেয়ে নিও। 

 

সাবিহাঃ বেশ তো ন্যাকামো করতে পারো। ভুলাতে এসেছো? 

 

মালিহাঃ আরে দূর,কি যে বলো আপি। ভুলাতে আসবো কেন,এমনিতেই আমার ফিদা হয়ে যাবে।

 

সাবিহা কে আর কিছু বলতে না দিয়েই হাসতে হাসতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো মালিহা। 

 

তিন্নি কে চা দিয়ে রেবেকা বেগম কে চা দিতে গেলো মালিহা।

মালিহাঃ আসসালামু আলাইকুম, মা। 

রেবেকা বেগমঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তুমি আবার এসব করতে গেলে কেন মা? ময়না আছে তো। 

 

মালিহাঃ মা আপনিও না,চা বানাতে কিসের কষ্ট। আর এসব কাজ আমি একাই করতে পারি কোনো সমস্যা নেই। একটু আধটু কাজ করা স্বাস্থের পক্ষে ভালো। 

নিন মা চা টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। 

 

রেবেকা বেগমঃ হ্যা নিচ্ছি। আজ তো তোমার বাবার বাড়ি যেতে হবে। সকাল সকাল গেলেই ভালো হবে বোধহয়।যাওয়ার ব্যাপারে আবরার কে কিছু বলেছো? 

মালিহাঃ না মা এখনো কিছু বলিনি। আপনি তাকে একটু বুঝিয়ে বইলেন। 

 

রেবেকা বেগমঃ আচ্ছা, ব্রেকফাস্ট এর সময় বলে দিবো।  

 

মালিহাঃ আমি তাহলে যাই মা,আপনার ছেলের চা টা দিয়ে আসি। 

 

আবরার খুব ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ।  

নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। 

 

আবরার গোসল সেরে অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে। 

 

মালিহাঃ আপনার চা। 

আবরার কিছু না বলে চা টা হাতে নিয়ে এক চুমুক দিয়ে রেখে দিলো। 

 

আবরারঃ আরে বাহ! বেশ টেষ্টি হয়েছে তো চা টা ( মনে মনে) 

 

খাবার টেবিলে সবাই কে খাবার সার্ভ করছে।

 

আড়ালে মালিহার সাথে হাজারো খারাপ ব্যবহার করলেও মায়ের সামনে খারাপ ব্যবহার করেনা। যদিও অতিব প্রয়োজন ছাড়া মালিহার সাথে কথা ও বলেনা। 

 

রেবেক বেগমঃ আজ কি অফিসে বেশি কাজ আছে আবরার? 

 

আবরারঃ না আম্মি তেমন চাপ নেই। কিন্তু কেন? 

 

রেবেকা বেগমঃ বেয়াই কল করেছিলেন। আজ বিকেলে মালিহাকে নিয়ে দু একদিন বেড়াতে বলেছে ও বাড়িতে। 

 

রেবেকা বেগমের কথা শুনেই চেয়ার পিছনে ঠেলে খাবার রেখে উঠে দাঁড়ালো আবরার।

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

১১

রেবেক বেগমঃ আজ কি অফিসে বেশি কাজ আছে আবরার?

আবরারঃ না আম্মি তেমন চাপ নেই। কিন্তু কেন?

 

রেবেকা বেগমঃ বেয়াই কল করেছিলেন। আজ বিকেলে মালিহাকে নিয়ে দু একদিন বেড়াতে বলেছে ও বাড়িতে।

 

রেবেকা বেগমের কথা শুনেই চেয়ার পিছনে ঠেলে খাবার রেখে উঠে দাঁড়ালো আবরার।

 

আবরারঃSorry আম্মি আমি যেতে পারবো না। 

 

রেবেকা বেগমঃ এই যে বললি কাজের তেমন চাপ নেই,তাহলে না করছিস কেন? 

 

আবরারঃ যেতে ইচ্ছে করছে না তাই। 

 

রেবেকা বেগমঃ ইচ্ছে করছে না মানে কি? শশুর বাড়ি যাবি এতে আবার ইচ্ছে অনিচ্ছের কি আছে?  দেখ বাবা আর কিছু বলিস না, তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে বৌমা কে নিয়ে চলে যাস।

 

আবরারঃ প্লিজ আম্মি তোমার সব ইচ্ছে গুলো আমার উপর চাপিয়ে দিও না। আমার ও কিছু স্বাধীনতা ,ভালো লাগা, মন্দ লাগা আছে। তোমার ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে জীবনের সবচে বড় ভুলটা করে ফেলেছি।

 

রেবেকা বেগমঃ মা হয়ে তোর খারাপ ভালো লাগা গুলোকে আমি কখনোই প্রশ্রয় দিতে পারিনা।আমি যেটা বুঝি তুই সেটা বুঝছিস না।আশা করি খুব তাড়াতাড়ি ই বুঝতে পারবি।আর জেদ করিস না বাবা। তাড়াতাড়ি চলে আসিস।

 

সাবিহাঃ আম্মি তুমি কি শপথ করেছো যে আবরারের অনিচ্ছে গুলোকে জোর করে ওর উপর চাপিয়ে দিবে? তোমার বোঝা উচিৎ ও এখন বড় হয়েছে। 

 

রেবেকা বেগমঃআমার কাছে এখনো তোরা সেই ছোট্টোটি ই আছিস। তাইতো তোদের ভুল গুলোকে এখনো শুধ্রে দেই।

 

চলে যাচ্ছিস কেন বাবা? নাস্তা টা তো করে যা।

 

আবরারঃক্ষুধা নেই। 

 

আবরারের চলে যাওয়ার দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে মালিহা। 

 

রেবেকা বেগমঃ চিন্তা করো না মা।ও ঠিক সময় মতো ই চলে আসবে। বসো খেয়ে নাও।

 

৫ টা বেজে গেছে, আসরের সালাত আদায় করে বসে আছে মালিহা। আবরারের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। 

মালিহাঃআসসালামু আলাইকুম  মা। 

রাবেয়া বেগমঃওয়া আলাইকুমুল সালাম।  কি মা কেমন আছিস? 

সেই কখন থেকে কল করে যাচ্ছি,রিসিভ করছিস না কেন? 

 

মালিহাঃএইতো আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। সালাত আদায় করছিলাম, মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো তাই শুনতে পাইনি। তোমরা কেমন আছো মা? 

 

রাবেয়া বেগমঃআছি কোনোরকম। তোকে ছাড়া কি আমরা ভালো থাকতে পারি বল? 

তা এখনো বের হসনি কেন? তোর বাবা,মার্জিয়া ওরা তো পথের দিকে চেয়ে আছে। 

 

মালিহাঃ আসোলে মা ওনার তো অনেক কাজ থাকে তাই অফিস থেকে ফিরতে পারেনি এখনো। 

তুমি চিন্তা কইরো না আমরা চলে আসবো ইনশাআল্লাহ। 

রাবেয়া বেগমঃআচ্ছা মা তাড়াতাড়ি আসিস। রাখছি এখন। 

মালিহাঃহুম,আসসালামু আলাইকুম। 

 

রাবেয়া বেগমঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম।

 

খুব অস্থির লাগছে মালিহার। আবরার কি আসবে নাকি আসবে না। 

 

বাবা,মা,মার্জিয়া কত আশা নিয়ে বসে আছে। এখন যদি শোনে যে আমাদের যাওয়া হবেনা তাহলে তো খুব কষ্ট পাবে।

 

রেবেকা বেগমঃ কিরে মা কি করছিস? 

 

মালিহাঃ না মা কিছু করছি না। 

 

রেবেকা বেগমঃ মন খারাপ, তাইনা? 

 

মালিহাঃ আসোলে তেমন কিছু না। ভাবছি বাবা মা কত আশা নিয়ে অপেক্ষা করছে। 

 

রেবেকা বেগমঃ চিন্তা কইরো না,আমি আবরার কে কল করছি।

 

মালিহাঃ আচ্ছা। 

 

রেবেকা বেগমঃ আবরার কোথায় তুই? 

 

……..

 

রেবেকা বেগমঃ এখনো অফিসে কি করছিস? 

 

দেখ বাবা এমন করিস না। অন্ততপক্ষে আমার মানসম্মানের কথা টা চিন্তা করে হলেও এবারের মতো যা বাবা।

 

প্লিজ বাবা না করিস না। 

 

………..

 

আচ্ছা ঠিক আছে বাবা তুই যা বলবি তাই হবে। আগে তো বাসায় আয়। 

 

…………..

 

আচ্ছা বাবা রাখি তাহলে। 

 

রেবেকা বেগমঃচিন্তা কইরো না মা। এখনি অফিস থেকে বের হবে আবরার। 

 

খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠলো মালিহার। আলহামদুলিল্লাহ বলার পরেই শুক্রিয়া সিজদা দিলো মালিহা।

 

আমরা যখন অনেক বেশি খুশি হই বা খুশির খবর শুনি তখন আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার শুক্রিয়া আদায় করার জন্য সিজদা দেওয়া উচিৎ যাকে শুক্রিয়া সিজদা বলে। এতে করে আল্লাহ খুব খুশি হন তাঁর বান্দার উপর।

 

মালিহার খুশি দেখে রেবেকা বেগমের চোখেও পানি এসে গেল। 

 

রেবেকা বেগমঃ কিছু মনে করোনা বৌমা।আবরার বলেছে তোমাকে ও বাসায় পৌঁছে দিয়েই ও চলে আসবে।আমিও ওকে আর কিছু বলিনি কারন আমার বিশ্বাস তুমি বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠিক ই ওকে রেখে দিতে পারবা। 

 

মালিহাঃ আপনি চিন্তা কইরেন না  মা, আগে তো তিনি ও বাড়ি যাক তারপর দেখা যাবে আসতে পারে কিনা। 

 

বলেই দুজনে হেসে উঠলো। 

 

কিছুক্ষণের মধ্যেই আবরার চলে এলো। 

 

আবরারঃ আম্মি আমার খুব তাড়া আছে।তাড়াতাড়ি রেডি হও। 

 

রেবেকা বেগমঃ আমাকে রেডি হতে বলছিস কেন? যাবি তো বৌমাকে নিয়ে,ওকে বললেই পারিস।

বৌমা যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।আবরার তুই ও একটু ফ্রেস হয়ে পোষাক চেঞ্জ করে তারপর যা।শশুর বাড়ি যাচ্ছিস বলে কথা। হাহাহাহা। 

 

আবরারঃ সময় নেই আম্মি। মজা কইরো না এখন। 

 

মালিহা খুব তাড়াতাড়ি তার প্রিয় জিলবাব টা পরে নিলো। 

যেটা দেখেই আবরার  রাগে ফেটে যাচ্ছে মনেমনে। 

মায়ের সামনে কিছু বলতেও পারছে না। 

 

মালিহাঃমা আমি রেডি। 

 

রেবেকা বেগমঃ আচ্ছা তোমরা কি শুরু করেছো বলোতো। একে অপরের সাথে কথা না বলে আমাকে সব কিছু বলছো। 

না বাবা না আমি আর পারবো না  একজনের হয়ে অন্যজনকে   কিছু বলে দিতে। 

 

এটা বলেই হাসতে রুম থেকে বের হলেন রেবেকা বেগম,তার পিছে পিছে আবরার, আবরারের পিছে মালিহা।

 

মালিহাঃ সময় মতো ঔষধ গুলো খেয়ে নিবেন মা।

 

 রেবেকা বেগমঃআচ্ছা মা, তুমি চিন্তা কইরো না। তুমি সাবধানে থেকো। 

 

মালিহাঃ তিন্নি সময় মতো সালাত আদায় করে নিও। ফজরে এলার্ম দিয়ে রেখো। 

মা তোমাকে ডাকলে আবার রাগ হয়ে যেও না যেন। 

 

তিন্নিঃহাহাহা,,আচ্ছা ভাবি। তুমি যে বই গুলো দিয়েছো ওগুলো পড়ে আমি সালাতের গুরুত্ব সম্পর্কে একটু একটু বুঝতে পেরেছি। এখনো সবগুলো পড়া হয়নি,তবে খুব তাড়াতাড়ি ই পড়ে নিবো। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো কিন্তু। 

 

মালিহাঃখুব তাড়াতাড়ি আসবো ইনশাআল্লাহ। আমার মিষ্টি বোনটি। 

সাবিহা আপি সুবার দিকে খেয়াল রাইখেন। 

 

সাবিহাঃ তোমার সে চিন্তা করতে হবেনা। নিজের চরকায় তেল দাও। নিজেকে কিভাবে টিকিয়ে রাখবে সেকথা ভাবো। 

 

মালিহাঃএমন টক ঝাল মিষ্টি একটা আপি থাকতে চিন্তা কিসের। 

 

আর কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে সালামের মাধ্যমে সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো মালিহা।

 

আবরার নিজেই ড্রাইভ করার জন্য সিটে বসলো। মালিহা পিছনে বসতে গিয়েও সামনে এসে আবরার এর পাশে বসলো।আজ রাস্তায় কোনো জ্যাম নেই বললেই চলে। 

গাড়ি ছুটে চলছে তার আপন গতিতে। হালকা ভলিউমে রবীন্দ্র সংগীত ছেড়ে দিলো আবরার,

 “আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে,

দেখতে আমি পাইনি তোমায়,

দেখতে আমি পাইনি।

বাহির পানে চোখ মেলেছি, আমার হৃদয় পানে চাইনি,

আমার হিয়ার মাঝে………………..”

 

ঠাস করে গানটা অফ করে দিলো মালিহা। 

 

আবরারঃ প্রব্লেম কি আপনার? 

 

মালিহাঃসত্যি বলতে কি মিউজিক সহ গানে খুব এলার্জি আছে আমার।

 

আবরারঃWhat? গানে এলার্জি?  

আপনি যেমন অদ্ভুৎ ঠিক তেমন ই অদ্ভুৎ আপনার প্রব্লেম গুলা। 

 

কারো মুখে কোনো কথা নেই। 

বেশ বাতাস থাকা সত্ত্বেও খুব গরম লাগছে মালিহার। 

প্রায় রাত হয়ে গেছে,ফাকা রাস্তা। মানুষ জন নেই বললেই চলে। 

তাই পুরো নেকাপ টা খুলে ফেললো ও। 

 

বাইরে থেকে বাতাস এসে ওর লম্বা চুলগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে আবরারের দিকে। 

 

জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে মালিহা তার মিষ্টি কন্ঠে গাওয়া শুরু করলো,

 

“তোমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে আছি, 

দেখতে আমায় পাওনি তুমি 

দেখতে আমায় পাওনি।

রিয়ার পানে চোখ মেলেছো, 

আমার পানে চাওনি 

তুমি আমার পানে চাওনি।…………”

 

একটা মেয়ের কন্ঠ এতোটা মিষ্টি কিভাবে হতে পারে এটা হয়ত মালিহার কন্ঠ না শুনলে বোঝা যাবে না। 

 

আবরার খুব অবাক হয়ে গেলো এতো সুন্দর করে কিভাবে গাইছে ও। 

মালিহার সুরের ছন্দে আবরার এতোটাই মুগ্ধ হয়েছে যে, 

মালিহা যে গানের ভাষা গুলো চেঞ্জ করে দিয়েছে এটা ওর খেয়ালেই আসেনি। 

 

হালকা বাতাসে মালিহার চুলগুলো উড়ে গিয়ে ছড়িয়ে পরছে আবরারের হাতে,গলায় 

মাঝেমধ্যে মুখেও। 

এমন একটা পরিবেশ তার উপর যোগ হয়েছে মালিহার মিষ্টি সুর।

এ যেন এক অনন্য ভালো লাগা,সুখের ও অনাবিল আনন্দের মুহুর্ত। 

 

আবরার যেন হারিয়ে গেছে কোনো এক সুখের উদ্দ্যানে। 

 

আচমকাই  আবরারের কানে ভেষে উঠলো মালিহার গানের ভাষাগুলো। 

 

সাথেসাথেই খুব জোড়ে ব্রেক করলো আবরার। 

 

মালিহা জানালার দিকে মুখ করে আছে। 

 

হঠাৎ ব্রেক করায় বেগ  সামলাতে না 

পেরে মালিহা হেলে পরলো আবরারের দিকে। 

 

খুব জোরে ধাক্কা খেলো দুজন দুজনার মাথায়। 

 

চলবে ইংশা আল্লাহ

 

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো) 

১২

 আচমকাই আবরারের কানে ভেষে উঠলো মালিহার গানের ভাষাগুলো।

সাথেসাথেই খুব জোড়ে ব্রেক করলো আবরার।

মালিহা জানালার দিকে মুখ করে আছে।

হঠাৎ ব্রেক করায় বেগ সামলাতে না 

পেরে মালিহা হেলে পরলো আবরারের দিকে।

খুব জোরে ধাক্কা খেলো দুজন দুজনার মাথায়।

আবরারঃউহ্! কি ব্যথাটাই না পেলাম।এই ফাজিল মেয়ে সবসময়ই কি ফাজলামো করতে হয় আপনার?  

মালিহাঃ আহ্,আল্লাহ রে মাথাটা বোধহয় ফেটেই গেছে।  এই রাগি ছেলে সবসময়ই কি রাগতে হয় আপনার?  

আবরারঃ রাগবোনা মানে? 

আপনার সাহস দেখে তো রীতিমতো অবাক হচ্ছি আমি। 

উলটা পালটা গান গাচ্ছেন,তারউপর আবার মাথায় যে টাক টা দিলন। ওহ্ নো কি ব্যথা, উউউউউ।

মালিহাঃআমি টাক দিয়েছি?

আপনিইতো হঠাৎ ব্রেক করে…..

উউউউউউউহহহহহ!আল্লাহ গো!

আবরারঃ Hey rubbish, shut up,just shut up. 

মালিহাঃ Hey praise man, talking talking. I like your sweet voice.

আবরারঃদাড়াঁন বের করছি আপনার রসিকতা, 

এটা বলে মালিহার দিকে আগানোর সাথে সাথেই আবরারের মোবাইলটা বেজে উঠলো। 

আবরারঃসরি জানপাখি,বিশ্বাস করো খুব ই বিজি ছিলাম। 

 

………………..

 

এখন একটা কাজে বের হইছি। 

একটু পরেই বাসায় ফিরবো।

 

 

এই, আমি কি কখনো মিথ্যে বলি তোমায়? 

 

 

হাহাহা,জানিতো খুব বিশ্বাস করো এজন্য ই তো এত্ত লাভ করি আমার জান টা কে। 

 

 

আচ্ছা love you too. 

Bye. 

 

মোবাইলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে যাচ্ছে আবরার। 

 

মালিহার বুঝতে আর বাকি রইলো না যে রিয়া ই কল করেছিলো। 

 

আবরার আর কোনো কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট করলো।

 

নেকাপ পরে মুখ ঢেকে একমনেই জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে মালিহা। অঝোরে ই ঝরে যাচ্ছে বাধ না মানা চোখের জল। 

 

-উনি রিয়ার সাথে কথা বললে এতো কষ্ট হয় কেন আমার? 

তবে কি খুব ভালোবেসে ফেলেছি তাকে? 

বাসবোই তো। আমি তার স্ত্রী, তাকে ভালোবাসার অধিকার একমাত্র আমার ই আছে। 

 

এরকম হাজারো কল্পনা ঝল্পনা করতে করতে ই গাড়ি এসে থামলো মালিহাদের বাসার সামনে। 

 

মালিহাঃ কই বাইরে আসুন,ভিতরে বসে আছেন কেন? 

 

আবরারঃ আমি আমাদের বাসায় যাবো,আপনি যান। 

 

মালিহাঃ সে কি? এটা বললে হয় নাকি। আমার বাসার সবাই কি মনে করবে বলুন তো? খুব কষ্ট পাবে তারা। 

 

প্লিজ, প্লিজ,আসুন। 

 

আবরারঃ আপনার কপাল ভালো যে আমি আপনাকে ড্রপ করে দিয়েছি। 

কোনো অধিকার খাটাতে যাবেন না। 

আমার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই আপনার সাথে যাওয়ার। 

 

মালিহাঃআমার মা বাবার কথা চিন্তা করে হলেও একবার আসুন প্লিজ!

আপনি না গেলে খুব কষ্ট পাবে তারা। 

 

আবরারঃ অন্য কারো কষ্টে আমার কিছু এসে যায় না। 

I Don’t care it. 

Good bye.

 

মালিহাঃ দেখেন এভাবে বইলেন না। একবার ভিতরে গেলে তো খুব বেশি অসুবিধে হবেনা আপনার। 

হাত জোর করে বলছি প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।

(কান্না করছে আর বলছে মালিহা)

জানেন আমিও না আমার বাবা মাকে খুব ভালোবাসি যেমন আপনি আপনার মাকে ভালোবাসেন।

আপনি যেমন খুব কষ্ট পান আপনার মায়ের কষ্টে তেমনি আমিও পাই আমার বাবা মায়ের কষ্টে। 

 

(চোখের পানি সমেত আবেগি কথার আবেগে পরে গেলো আবরার।)

 

আবরারঃআচ্ছা আমি শুধু বাসার ভেতরে যাবো, একটু পরেই চলে আসবো কিন্তু।

 

মালিহাঃআগে তো ভেতরে চলুন তারপর দেখবো কে আপনাকে বেরোতে দেয়।হাহাহা। (মনেমনে) 

 

মালিহাঃখুব ভালো আপনি। সত্যিই আমার দেখা সেরা মানুষ আপনি। 

আসুন। 

 

কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দিলো মার্জিয়া। 

 

মার্জিয়াঃ আপুউউউউউউউউউউ,

(বলেই জড়িয়ে ধরলো)

 

মালিহাঃ আসসালামু আলাইকুম। 

 

মার্জিয়াঃওয়া আলাইকুমুস সালাম। 

আপু কেমন আছিস? 

মালিহাঃ আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। 

তুই কেমন আছিস? 

 

মার্জিয়াঃআয় আয় ভিতরে আয়।

আবরার ভাইয়া কেমন আছেন?  

 

আবরারঃহুম ভালো। 

 

আর কোনো কথা না বলেই ঘরে ঢুকলো আবরার মালিহা।

 

মালিহাঃ আসসালামু আলাইকুম।  মা কেমন আছো? 

 

রাবেয়া বেগমঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম।  আছি রে মা। মনে হয় যেন কতোদিন দেখিনা তোকে। 

 

এটা বলেই মা মেয়ে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। 

 

আশরাফ চৌধুরীঃ কিরে মা বাবা কে তো ভুলেই গেছিস। 

 

মালিহাঃ না আব্বু ভুলিনি। তাইতো চলে এলাম। 

 

আশরাফ চৌধুরীঃআবরার কেমন আছো বাবা? 

 

আবরারঃ ভালো আছি। 

 

আর কোনো কথা না বলেই ঠেই দাড়িঁয়ে রইলো আবরার। ওর

খুব অসয্য লাগছে এমন পরিবেশে।  

 

কারো সাথে একটা কথাও বললো না আবরার। 

 আশরাফ চৌধুরী, রাবেয়া বেগম, মালিহা, মার্জিয়া সবাই ই খুব কষ্ট পেলো আবরারের এমন  ব্যবহারে। 

 

আশরাফ চৌধুরীঃ মালিহা জামাইবাবাকে নিয়ে ঘরে যা মা। ফ্রেস হ গিয়ে। 

 

মালিহাঃ হুম যাচ্ছি বাবা। 

 

-আসুন। 

 

মালিহাঃআপনি এখানেই বসুন আমি পাচঁ মিনিটের মধ্যেই আসছি।

(জিলবাব টা খুলে রেখে রান্না ঘরের দিকে গেলো মালিহা)

 

আবরার এই প্রথম মালিহার রুমে ঢুকলো।

 

আবরার বেশ মুগ্ধ হয়ে গেলো রুমের ডেকোরেশন দেখে।বেলি ফুলের গন্ধে রুম যেন মৌ মৌ করছে। আহ! কি নেশা ধরানো ঘ্রাণ! 

 

খুব সৌখিন ভাবে সাজানো রুমটা। 

 

বুক সেল্ফ টায় সোভা পেয়েছে অনেক ধরনের বই। 

 হাদিস, কুরআন, উপন্যাস, রহস্যাত্মক গল্প থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক বই, 

সব ধরনের বই মিলে বুকসেল্ফ টাকে মনে হচ্ছে একটা আস্ত পাঠাগার।

 

রুমে ঢুকলে যে কেউ ই বুঝতে পারবে যে রুমের মালিক অতিশয় বইপোকা। 

 

বিভিন্ন ডিজাইনের ওয়ালমেট গুলো রুমের সৌন্দর্য যেন আরো  বৃদ্ধি করে দিয়েছে। 

 

রুমের সাথে ঠিক দক্ষিন পাশেই বেলকুনি।

 

একটা বেলকুনি যে ঘোটা একটা রাজ্য হতে পারে তার জলয্যান্ত উদাহরন মালিহার বেলকুনি টা। 

 

বেলকুনি তে ঢুকলেই হাতের ডান পাশে ছোট্ট একটা দোলনা যেখানে দুজন বসতে গেলে বেশ কাছাকাছি হয়েই বসতে হয়। 

 

দোলনার বা পাশে ছোট্ট একটা টেবিল কে ঘিরে আছে ৩ টা বেতের চেয়ার।

 

যার পাশেই উঁকি দিয়ে আছে বেশ কয়েকটা টিউলিপ। 

যার মিষ্টি রঙ টা দেখলে মন ও রঙিন হয়ে ওঠে।

 

দোলনার ডান পাশটা রঙিন হয়ে উঠেছে কাঠগোলাপের গোলাপি, সাদা ও হলুদ রঙে।

 

চন্দ্রমল্লিকারাও কম কিসে? তারাও নেমে পরেছে সৌন্দর্য বাড়ানোর প্রতিযোগিতায়।

 

বেলিটা যেন সবকিছুকে মুগ্ধ করে রেখেছে ওর মিষ্টি সুভাসে। 

 

এই প্রথম এতো মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ পেলো আবরার।সারাদিনে একটু রেস্ট হয়নি আবরারের। 

ক্লান্তি যেন শরীর কে এলিয়ে দিচ্ছে বিছানার দিকে। 

ধপাস করে শুয়ে পরলো আবরার।

 প্রায় মিনিট পাঁঁচেক পরে লেবুর ঠান্ডা সরবত নিয়ে হাজির হলো মালিহা। 

 

মালিহাঃ এটা খান, ভালো লাগবে ইনশাআল্লাহ। 

 

আবরার খুব তাড়াতাড়ি উঠে বসলো,এমন একটা ভাব নিলো যে ওর কোনো ক্লান্তি ই নেই। 

 

আবরারঃ দেখুন আমি এখানে খাওয়ার জন্য আসিনি। 

আপনি খুব রিকোয়েস্ট করেছেন এজন্য ই এসেছি। এখনি যেতে হবে আমাকে। 

 

মালিহাঃ আচ্ছা যাবেন ঠিক আছে,আগে তো সরবত টা খান। 

 

আবরার আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সরবত টা হাতে নিলো। 

 

গলার যে স্থান দিয়ে সরবত যাচ্ছে সে স্থান গুলো যেন জানান দিয়ে যাচ্ছে,

আহ্! কি প্রশান্তি।

 

এক নিমিষেই যেন সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো।

 

আবরারের মুখ দিয়ে অজান্তেই বের হয়ে এলো,

 

আবরারঃThanks a lot. 

 

মাহিলাঃ উহু এখন থেকে not thanks, only  জাযাকাল্লাহু খইরন। 

 

আবরারঃ What?

 

মালিহাঃ জাযাকাল্লাহু ক

খইরন অর্থ আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। As a Muslim you should pray your brother like jazakallahu  khoiron. I think you better understand. 

 

আবরারঃ অনেক লেট হয়ে যাচ্ছে এখন যেতে হবে।

 

এমন সময় মার্জিয়া ট্রে হাতে রুমে এলো। 

 

মার্জিয়াঃ এসে গেছে, এসে গেছে, এসে গেছে।নাস্তা এসে গেছে।  

 

সে কি ভাইয়া আপনি এখনো ফ্রেস হননি? 

আমি তো নাস্তা নিয়ে এলাম। কিরে আপু ভাইয়াকে এখনো ফ্রেস হতে বলিস নি? 

তুই ও না। যান যান ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি নাস্তা খেয়ে নিন। মা সকাল থেকেই তোদের জন্য রান্না করেই যাচ্ছে। ডিনারে দেখতে পারবি মা আজ কি করেছে। এলাহি কান্ড। হাহাহা।

 

আপু আমি যাচ্ছি,তোরা ফ্রেস হয়ে হালকা খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ডাইনিং রুমে আসিস। 

 

মালিহাঃআচ্ছা, তুই যা আমরা একটু পরে আসছি ইনশা আল্লাহ। 

 

মার্জিয়া চলে গেলো।

 

আবরারঃ যাচ্ছি।

 

যাচ্ছি বলেই মোবাইল টা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো আবরার। 

 

মালিহা পিছন থেকে আবরারের ডান হাতটা টেনে ধরে বলতে লাগলো,

 

মালিহাঃ প্লিজ এখন যাবেন না আপনি। 

একটা রাত থেকে গেলে কোনো সমস্যা হবেনা। মা সেই সকাল থেকেই কত কাজ করে যাচ্ছে এখন যদি আপনি চলে যান মা তাহলে অনেক কষ্ট পাবে। 

 

একছটকায় মালিহার হাত থেকে নিজের হাত টি ছাড়িয়ে নিলো আবরার। 

 

আবরারঃকি ভেবেছেন আপনি? বারবার আপনার চোখের পানি দেখে গলে যাবো আমি? ভেবেছিলাম কাউকে কিছু বলবো না। এখন দেখছি বলতেই হবে। আপনার আব্বু কে বলে যাচ্ছি যে আপনাকে মেনে নেওয়া সম্ভব না আমার পক্ষে।

 

মালিহাঃ না দেখুন এসব কিছু বইলেন না। খুব কষ্ট পাবে তারা। প্লিজ দয়া করুন। প্লিইইইইইইইইইজ!

 

আবরারঃ সত্যি বলতে কি আপনি না খুব ছ্যাচড়া টাইপের মেয়ে। লোভে পরে গেছেন আমার অর্থ সম্পত্তি দেখে,তাইনা? 

খুব নিচু শ্রেনীর মেয়ে আপনি। তাইতো বারবার চেষ্টা করছেন আমাকে আপনার বশে আনার জন্য। But it’s not possible. 

Mind it.

 

মালিহাঃ আল্লাহ জানেন আমার অন্তরের খবর। এখন না একটুও ইচ্ছে নেই আপনার সাথে ঝগড়া করার। শুধু বলবো আজ আপনি যেতে পারবেন না।  কিছুতেই না। 

 

মালিহা যেন কথা বলতে পারছে না।ধপধপে গাল দুটো লাল হয়ে গেছে কষ্টে দুঃখে।কিন্তু আবরার কে কিছুই বুঝতে দিচ্ছে না। 

 

আবরারঃ আজ ই আপনার সাথে আমার শেষ দেখা। আর কোনো দিন আমার সামনেও আসবেন না। যা বলার আপনার আব্বু কে বলে যাচ্ছি। 

 

মালিহাঃদয়া করুন। প্লিজ এসব কিছু করবেন না। আজ কের রাতটা থেকে যান। বিনিময়ে আপনি যা চান তাই হবে। 

 

আবরারঃহাহাহা, বিনিময়? হাহাহা। আপনি আমাকে বিনিময় দিবেন? কি আছে আপনার কাছে? একটা ছলনাময়ীর কাছে কি থাকতে পারে? 

 

মালিহাঃ আমার সাধ্যের মধ্যে যা আছে তাই পাবেন ইনশাআল্লাহ। 

 

আবরারঃ ok fine. মুক্তি চাই।  মুক্তি চাই আমি। 

আপনি নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই। 

 

মালিহাঃ মানে? 

 

আবরারঃ I want to divorce. 

 

এক নিমিষেই যেন মাথার উপর থেকে ছাদ টা সরে গেলো মালিহার।পুরো দুনিয়া যেন অন্ধকার হয়ে আসছে।

 

কিন্তু না আবরার কে কিছুই বুঝতে দেওয়া যাবে না। 

 

মালিহাঃ আমি যদি আপনার জন্য কল্যাণকর না হই তাহলে অবশ্যই আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিবো ইংশা আল্লাহ। 

 

তবে আমার একটা শর্ত আছে।

 

মালিহার মুখে মুক্তির কথা শুনে আবরারের হৃদয়ে যেন আনন্দে সিহরিত হয়ে উঠলো। 

 

যে কোনো মুল্যেই হোক না কেন এই মেয়েকে আমার ঘার থেকে নামাতেই হবে। 

 

আবরারঃ কি শর্ত? 

 

মালিহাঃ ১ বছর সময় চাই আমি। আল্লাহ চাইলে আগামী এক বছর পরেই আমি আপনার জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। 

 

আবরার আগে পরে কিছু না ভেবেই বলে দিলো,

 

আবরারঃ হুম আমি রাজি। 

তবে হ্যা শুধুমাত্র ১ বছর কিন্তু। 

 

মালিহাঃআকের টা কথা, এই ১ বছরে আপনি আমার কোনো কাজে বাধা দিতে পারবেন না।চিন্তা করবেন না আপনার মানসম্মানের বিন্দু মাত্র ক্ষতি করবো না। আর হ্যা আমাদের মধ্যে যে ডিল হয়েছে এটা আমি আর আপনি ছাড়া কেউ জানতে পারবে না। 

 

আবরার মনেমনে বলতে লাগলো,

আবরারঃ ১ টা বছর ই তো। তারপর তো ও নিজের ইচ্ছেতেই চলে যাবে। আম্মি কে সামলানোর ও কোনো ভয় থাকবে না। কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই রিয়া কে ঘরে তুলতে পারবো।

 

এসব ভেবে আবরার বলতে শুরু করলো।

 

আবরারঃ হুম রাজি। 

 

মালিহাঃবুঝে শুনে উত্তর দিচ্ছেন তো?

আবরারঃ Yes. 

 

দুজনার মধ্যে আর কোনো কথা হয়নি। মালিহা যেন পাথর হয়ে আছে। খুব আফশেট হচ্ছে এটা ভেবে যে,

 

মালিহাঃ আমার লাইফ টা কেন এমন হলো। পরোক্ষণের মনে হলো আল্লাহ যা করেন কল্যানের জন্য ই করেন। এর মাঝেও কল্যান আছে নিশ্চয় ই। এই যুদ্ধে আল্লাহ অবশ্যই আমাকে সাহায্য করবেন। 

 

আবরার মনেমনে খুব খুশি। 

মাত্র একটা বছর। 

এরপরেই রিয়া তার ঘরের বউ।

 

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে এসে খাটে বিছানা করে দিলো আবরারকে। আর নিজের জন্য বিছানা করলো ফ্লোরে।

 

আবরার শুয়ে পরলেও মালিহা বসে আছে তার চিরোচেনা পড়ার টেবিলে।

 

আবরার খুব নিড়িক ভাবে ফলো করছে মালিহা কে। 

 

কি যেন লিখছে ও। 

 

আবরারের মনে বেশ কৌতূহল জাগলো। 

 

আচ্ছা মেয়েটা কি কষ্ট পেয়েছে? 

কি লিখছে ওখানে? 

এরকম হাজারো চিন্তা এসে ভির করছে আবরারের মাথায়। 

 

দূর! যা ইচ্ছে তাই করুক গিয়ে তাতে আমার কি?

 

নাহ্ একথা বলেও নিজেকে শান্ত করতে পারছে না আবরার। 

 

এমন সময় মার্জিয়া ভিতরে না ঢুকে শুধু দরজায় নক করে বলে গেলো।

মার্জিয়াঃ আপু মা তোকে ডাকছে। 

 

মালিহাঃ ভিতরে আয়।

 

মার্জিয়াঃ না এখন আসবো না। তুই তাড়াতাড়ি আসিস। যাচ্ছি। 

 

এটা বলেই চলে গেলো মার্জিয়া। 

 

ডাইরির মধ্যে কলম টা রেখে মায়ের রুমে গেলো মালিহা।

 

আবরার আর শুয়ে থাকতে পারলো না। ধপাস করে উঠে বসলো।  

তাড়াতাড়ি হেটে গেলো মালিহার টেবিলের ওখানে। চেয়ার টা টেনে বসে পরলো। বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে ও। 

 

একটা ডাইরি রাখা টেবিলে।

এটাতেই কিছু লিখেছে ও। 

 

প্রথম পেইজ খুলতেই চোখে পরলো বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে,

 

“ইহি,খোলা যাবেনা।

 অন্যের ডাইরি ধরতে মানা।”

 

নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের কৌতুহল বেশি। যেখানে কলম রাখা ছিলো সরাসরি সেই পেইজ খুললো আবরার। 

 

এটাই লিখছিলো। 

 

মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে শুরু করলো ও।

 

_

ভালোবাসতে বলবো না কখনওই,

জানি আমার ভালোবাসায় বাধ্য

হয়েই তুমি বাধ্য প্রেমিক হবে।

কখনওই বলবো না

আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও,

জানি শুধু আমাকেই রেখেছো তোমার মনের

মনিকোঠায়।

বিশ্বাস করো একবার ও বলবো না

তোমার ভালোবাসার গভীর আবেশে হারাতে

চাই

জানিতো এখন আর হারানোর কিছু নেই

তোমাতেই সব আবেশ।

কখনো বলবো না দুঃখ দিয়ো না,

জানিতো আমার চোখের নোনা জল

তোমার মনে শ্রাবনের ধারা হয়ে ঝরবে।

শুধু চাইবো তোমার কাছে

যখন তোমায় বলবো খুব ভালোবাসি তোমায়

তখন তুমি হাসতে হাসতে চুল গুলো এলোমেলো

করে দিয়ে বলবে “আমাকে ভালোবাসবি

নাতো কাকে বাসবি? আমি যে শুধুই তুই নামক

পাগলীটার

আর আমাতেই তুই।

 

পড়া শেষ হতে না হতেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো মালিহা  কোমড়ে দুই হাত রেখে কিছুটা বাকা হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

 ১৩

ভালোবাসতে বলবো না কখনওই,

জানি আমার ভালোবাসায় বাধ্য

হয়েই তুমি বাধ্য প্রেমিক হবে।

কখনওই বলবো না

আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও,

জানি শুধু আমাকেই রেখেছো তোমার মনের

মনিকোঠায়।

বিশ্বাস করো একবার ও বলবো না

তোমার ভালোবাসার গভীর আবেশে হারাতে

চাই

জানিতো এখন আর হারানোর কিছু নেই

তোমাতেই সব আবেশ।

কখনো বলবো না দুঃখ দিয়ো না,

জানিতো আমার চোখের নোনা জল

তোমার মনে শ্রাবনের ধারা হয়ে ঝরবে।

শুধু চাইবো তোমার কাছে

যখন তোমায় বলবো খুব ভালোবাসি তোমায়

তখন তুমি হাসতে হাসতে চুল গুলো এলোমেলো

করে দিয়ে বলবে “আমাকে ভালোবাসবি

নাতো কাকে বাসবি? আমি যে শুধুই তুই নামক

পাগলীটার

আর আমাতেই তুই।

 

পড়া শেষ হতে না হতেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো মালিহা কোমড়ে দুই হাত রেখে কিছুটা বাকা হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

 

আবরার বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো। 

 

কিছু না বলেই ডাইরিটা রেখে খাটে গিয়ে অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পরলো। 

 

মালিহা শুধু বললো,

 

মালিহাঃ বিনা অনুমতি তে কারো ব্যক্তিগত কিছু ধরতে নেই। 

 

ohh sorry আমার আর আপনার মাঝে তো ব্যক্তিগত বলতে কিছু নেই।

আমিই আপনি আর আপনি ই আমি।  

 

মালিহার এসব  কথা শুনেও আবরার কিছু বললো না। 

দুচোখ বন্ধ করে ভাবছে ডাইরীতে সেই গোটা অক্ষরে লেখা লেখনী টির কথা। 

 

-আচ্ছা ও তো কোনো লেখিকা নয়।

তাহলে এতো মনোমুগ্ধকর রোমান্টিক কবিতা কিভাবে লিখলো ও। 

 

একটা আনস্মার্ট মেয়ে কি পারে এসব লিখতে?

 

দূর কি সব ভাবছি আমি ও পারলেই আমার কি না পারলেই কি। মাত্র তো একবছর।

আগামী বছরের জুলাই মাসের ৭ তারিখেই আমি মুক্ত। 

 

এটা ভেবেই একটা তৃপ্তির হাসি হাসলো আবরার। 

 

ভাবনার ঘোরেই কখন যেন ঘুমিয়ে পরলো ও। 

 

রাত প্রায় ১ টা বেজে গেছে। 

এতো রাতেও ঘুম নেই কিছু অদম্য প্রানীর।কেউ জেগে আছে

কিছু না পাওয়ার বেদনায়।

কেউ বা জেগে আছে কিছু পাওয়ার আনন্দে। 

আবার কেউ বা জেগে আছে কিছু হারানোর ভয়ে। 

 

মালিহা ও ঠিক একারনেই জেগে আছে। 

 

-আচ্ছা সত্যিই কি ও আমার জীবন থেকে চলে যাবে? 

 

অংকুরেই কি বিনষ্ট হয়ে যাবে আমার সমস্ত আশা,ভরসা,ভালোলাগা ভালোবাসা? 

 

ঘুমন্ত আবরারের মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে অজস্র কল্পনায় বিভোর হয়ে আছে মালিহা।

 

-আমার সাথে আপনি কেন করেন এমন?  একটু কি কষ্ট হয় না আপনার, একটু কি খারাপ লাগেনা এমন করতে? কি অন্যায় করেছিলাম, বলেন! 

যার কারনে এতো বড় শাস্তি দিচ্ছেন আমাকে? 

 

খুব কষ্ট হয় জানেন! খুউউউউব কষ্ট হয়। 

 

মনে মনে এটা বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলো মালিহা। 

তাড়াতাড়ি দুহাতে নিজের মুখটা চেপে ধরলো মালিহা। 

কান্নার আওয়াজ যদি শুনে যায় আবরার।

 

আবরারের পাশ থেকে উঠে গিয়ে জায়নামাযে সিজদায় লুটিয়ে পরলো মালিহা। 

 

আবরারের পাশে বসতে গিয়ে খাটের সাথে হোচট খাওয়ার সময় যে শব্দ হয়েছিলো, সে শব্দেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো আবরারের। কিন্তু ও মালিহাকে বুঝতে দেয়নি। ঘুমন্ত মানুষের মতোই চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো। 

 

শুধু দেখে যাচ্ছে কি করছে  মালিহা। 

 

খুব চেষ্টা করছে নিরবে কান্না করার। কিন্তু মাঝেমধ্যে সশব্দেই ডুকরে কেঁদে উঠছে মালিহা।

 

মনে হচ্ছে যেন কান্না করছে পৃথীবির সমস্ত মাখলুক। 

 

মহান রবের কাছে দুটি হাত বাড়িয়ে দিয়ে সশব্দে বলছে মালিহা

 

-ও রহমান! রহমান! তুমিতো রহমানুর রহিম,একটু দয়া করো না তোমার অধম বান্দিকে। 

একটু দয়া করো!

আল্লাহ তুমি তো জানো আমার অন্তরের খবর। 

কতোটা ভালোবেসে ফেলেছি তাকে। তাকে ছাড়া থাকাটা যে আমার পক্ষে অসম্ভব প্রায়। 

তার দেওয়া বকা গুলো ও যে খুব ভালো লাগে আমার। কিন্তু এটা কি করলাম আমি? 

 

এক বছর পরে যদি সত্যিই আমাকে ছেড়ে দূরে চলে যায় সে! 

তাহলে কিভাবে বাঁচবো আমি? 

 

তুমি আমাকে সাহায্য করো আল্লাহ। 

তাকে তুমি হেদাএত প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করো রাব্বুল আলামীন।  

তোমার খুব কাছে টেনে নাও তাকে। 

তুমি তো জানো মালিক,খুব শখ তাকে নিয়ে জান্নাতের বাগিচায় ঘুরে বেড়াবো। 

তাকে তুমি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করো মালিক। 

আমার সাথে এমন ব্যবহার করে বলে তুমি ওর উপর অসন্তুষ্ট হয়ো না মাবুদ। তুমি তো জানো খুব অবুঝ ও। দেখবে যখন ও সঠিক টা বুঝতে পারবে তখন কতোটা অনুতপ্ত হবে,অনুশোচনায় ভুগবে ও। তুমি ওকে সাহায্য করো আল্লাহ।

প্লিইইইইইজ আল্লাহ সাহায্য করো তাকে। 

 

দুচোখের পানি গড়িয়ে কখন যে দুপাশ ভিজে গেছে খেয়াল করেনি আবরার। 

 

হাত দিয়ে পানিটা স্পর্শ করে খুব অবাক হলো ও। 

 

লাষ্ট কবে যে ও ওর মা ছাড়া অন্য কোনো কারনে চোখের পানি ফেলেছে এটা তো ভুলেই গেছে ও।

 

-ও আমার জন্য এতো দোয়া করছে কেন? 

আমিতো খুব খারাপ ব্যবহার করি, তবুও…..

 

না না আমি কখনোই ওর প্রতি দুর্বল হবো না। ও আমাকে ভোলানোর চেষ্টা করছে।  

ও বুঝতে পেরেছে আমি জেগে আছি। 

 

কি মনে করেছো খুব চালাক তুমি? 

না মোটেও না। তুমি একটা ছলনাময়ী। 

 

সোজা থেকে ডান পাশ হয়ে আবার ঘুমিয়ে পরলো আবরার।

 

মনের সমস্ত চাওয়া পাওয়া গুলোকে মহান রবের কাছে খুব সুন্দর ভাবে ধরছে মালিহা। 

 

আরবিতে একটা দোয়া ও পাঠ করছে বারবার। 

 

(ُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)

(রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্কিনা আজাবান নার)

 

হে আল্লাহ তুমি আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করো, আখিরাতেও কল্যাণ দান করো এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। 

 

যে কোনো সময় এই দোয়াটি পাঠ করা যাবে। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা দোয়া এটি। 

 

মোনাজাতের শেষ করতেই মালিহার মনে পরে গেলো পবিত্র কুর’আনের সেই আয়াত টির কথা, যেখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

 

ان مع العسر يسرا

( ইন্না মাআ’ল উ’সরি ইয়ুসরা.)

 

নিশ্চয় কষ্টের পরেই রয়েছে সস্তি!

[সূরা ইনশিরাহ, আয়াত:৫]

 

এ আয়াত টির কথা স্মরণ হতেই একটা সস্তির নিশ্বাস নিলো মালিহা। 

 

মনে মনে বললো আমি তো আল্লাহর উপর ভরসা করি, তাহলে আমার জন্য তো আল্লাহ ই যথেষ্ট।  এর প্রতিশ্রুতি যে আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ করেছেন।

 

আল্লাহ্ বলেন:

وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنتُمْ مُؤْمِنِينَ

“তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাকে তবে আল্লাহর উপরেই ভরসা কর।” [সূরা মায়েদা- ২৩]

তিনি আরও বলেন:

وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلْ الْمُؤْمِنُونَ

“মু’মিনগণ যেন একমাত্র আল্লাহর উপরেই ভরসা করে।” [সূরা তওবা- ৫১]

তিনি আরও এরশাদ করেন:

وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হবেন।” [সূরা ত্বলাক- ৩]

তিনি আরও বলেন:

فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ

“যখন তুমি দৃঢ়ভাবে ইচ্ছা করবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ্ ভরসা কারীদের ভালবাসেন।” [সূরা আল ইমরান- ১৫৯]

হাদীছ গ্রন্থ সমূহেও তাওয়াক্কুলের গুরুত্ব ও তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ওমার বিন খাত্তাব (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা যদি সঠিকভাবে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে তবে তিনি তোমাদেরকে রিযিক দান করতেন- যেমন পাখিকে রিযিক দান করে থাকেন- তারা খালি পেটে সকালে বের হয় এবং পেট ভর্তি হয়ে রাতে ফিরে আসে।” (আহমাদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনু মাজাহ্)

হাফেয ইবনু রজব (র:) বলেন, তাওয়াক্কুলের ক্ষেত্রে এ হাদীছটিই হল মূল। আর তাওয়াক্কুলই হল জীবিকা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ

“আর যে আল্লাহ্‌কে ভয় করে, আল্লাহ্ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।” [সূরা ত্বালাক-২,৩]

 

এসব আয়াত স্মরণ হওয়াতে সাথেসাথেই একটা শুক্রিয়া সিজদা দিলো মালিহা। 

 

মুচকি হেসে বলে উঠলো আলহামদুলিল্লাহ!

 সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। 

 

ঘুমিয়ে পরলো মালিহা। 

 

রাবেয়া বেগমঃ বললাম তুই আর দুই একটা দিন থেকে যা,কিন্তু কোনো কথাই শুনলি না। আমরা কি পর হয়ে গেলাম? 

 

মালিহাঃ এভাবে বলছো কেন মা। ওনার তো অফিস আছে, তাড়াতাড়ি অফিসে যাবেন এখন। খুব ব্যস্ত থাকে তো, তাই হয়ত দুই একদিন পরে আমাকে নিতে ও আসতে পারবে না। তাছাড়া আমার শাশুড়ীর শরীর টা ও খুব একটা ভালো না। কয়েকদিন পরেই আবার আসবো ইনশাআল্লাহ।  

 

আবরার মালিহাকে ইশারা দিয়ে বলে উঠলো,

 

-আমার কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে। 

 

-আচ্ছা আসছি দাড়ান। মার্জিয়া সময় মতো সালাত আদায় করে নিবি কিন্তু। আব্বু তোমার শরীরের দিকে খেয়াল রেখো। 

আর মা তুমি চিন্তা কইরো না আমি খুব ভালো আছি। 

আলহামদুলিল্লাহ।  যাচ্ছি, বাই। 

 

আসসালামু আলাইকুম।  

 

আবরারের সাথে শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে বেশ হলো মালিহা। 

 

আসার দিন খোলা হাওয়া আর জ্যাম না থাকায় কোনো প্রব্লেম হয়নি মালিহার। 

আজকের প্রচন্ড গরম আর জ্যামে খুব অসস্তি লাগছে মালিহার। 

 

কেমন যেন বমি বমি ভাব হচ্ছে। 

 

মালিহাঃ এই যে শুনছেন? 

 

আবরার কোনো কথা না বলে মালিহার দিকে একনজর তাকালো শুধু। 

 

মালিহাঃ বলছি কি আমার না খুব খারাপ লাগছে।লং জার্নিতে খুব প্রব্লেম হয় আমার। জার্নি করতে পারিনা বললেই চলে। 

গাড়িটা সাইড করে একটা আইসক্রিম অথবা কিছু চকোলেট এনে দিবেন! 

খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। 

 

আবরারঃগেও ভুত একটা। জার্নিতেও প্রব্লেম। আমার অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এখন গাড়ি থামাতে পারবো না। 

 

মালিহাঃ সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। প্লিজ গাড়িটা একটু থামান। 

 

আবরার কিছু না বলে গাড়ির স্প্রিড আরো বাড়িয়ে দিলো। 

 

মালিহা নিজেকে সামলাতে না পেরে নেকাপ টা সড়িয়ে গাড়ির মধ্যেই গরগর করে বমি করে দিলো। 

 

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

১৪ 

আবরারঃগেও ভুত একটা। জার্নিতেও প্রব্লেম। আমার অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এখন গাড়ি থামাতে পারবো না।

 

মালিহাঃ সত্যিই খুব খারাপ লাগছে। প্লিজ গাড়িটা একটু থামান।

 

আবরার কিছু না বলে গাড়ির স্প্রিড আরো বাড়িয়ে দিলো।

 

মালিহা নিজেকে সামলাতে না পেরে নেকাপ টা সড়িয়ে গাড়ির মধ্যেই গরগর করে বমি করে দিলো।

 

আবরার সাথেসাথেই গাড়ি থামিয়ে নাকে রুমাল চেপে নাক শিটকাতে শিটকাতে খুব ঘৃণার ভাব নিয়ে বলে উঠলো। 

 

আবরারঃনামুন। এখনি গাড়ি থেকে নেমে যান। 

 

মালিহাঃখুব কষ্ট হচ্ছে আমার। 

একটু পানি দিবেন? প্লিজ না কইরেন না। 

 

আবরারঃ I say get out. 

 

মালিহাঃ দিন না একটু পানি। বাসায় গিয়েই আপনার গাড়িটা পরিষ্কার করে দিবো। 

প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে।

খুব তেষ্টা পেয়েছে। 

 

আবরার খুব ধমক দিয়ে বলে উঠলো, 

 

আবরারঃআর একটা কথা ও বলবি না। এখনি নেমে যা। নাহলে ডিল এর কথা সবার কাছে প্রকাশ করে দিবো।

 

মালিহাঃ আমি এখানে কিছুই চিনিনা। প্লিজ এমন কইরেন না। 

সত্যিই আমি বুঝতে পারিনি এমন কিছু হবে। আমি তো কতো বার বললাম গাড়ি থামাতে। 

বিশ্বাস করুন খুব টায়ার্ড আমি। 

খুব কষ্ট হয় জার্নিতে। 

 

আবরার আর কিছু না বলে  গাড়ি থেকে বের হয়ে মালিহার পাশে গিয়ে একপ্রকার জোর করেই হাত ধরে টেনে বের করলো ওকে। 

মালিহাকে বাইরে রেখে আবরার গাড়ি স্টার্ট করেই চলে গেলো। 

 

মালিহা মূর্তির মতো সেখানে দাঁড়িয়ে ই অপলক তাকিয়ে রইলো আবরারের চলে যাওয়ার দিকে। 

 

নিজেকে দাঁড় করিয়ে রাখার মতো শক্তিটুকুও পাচ্ছে না মালিহা। 

 

সত্যিই কি এমন নির্দয় মানুষ দুনিয়াতে আছে। শারীরিক কষ্টের চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে মালিহার।

 

চোখের পানিতে নেকাপ ভিজে যাচ্ছে। 

 

কোথায় যাবে,কি করবে,বাসার ঠিকানা কিছুই জানেনা।

কিন্তু এসব নিয়ে কোনো চিন্তা হচ্ছে না ওর। 

 

সেখানে দাঁড়িয়ে ই শুধু ভেবে যাচ্ছে,

কি করে পারলো উনি এমন টা করতে? 

 

এমন সময় কে যেন মালিহাকে খুব জোড়ে ধাক্কা দিলো সাথে নিজেও পরে গেলো রাস্তার পাশেই।

 

একটা বড় ট্রাক প্রায় ওদের কে ঘিষেই অতি দ্রুত চলে গেল।

 

মালিহার আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না। 

 

নিজেকে সামলে নিয়ে দাঁড়াতেই পাশ থেকে একটা মিষ্টি কন্ঠে ভেসে এলো। 

 

পথিকঃ আসসালামু আলাইকুম।  

 

মালিহা পাশ ফিরেই খুব চমকে গেলো।সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি পরা, শুভ্র মুখে কালো কুচকুচে দাড়িওয়ালা একটা যুবক৷ চেহারায় এক অলৌকিক নূর খেলা করছে।সেই নূরের জ্যোতি তে যেন চারপার আলোকিতো হয়ে উঠেছে মুহুর্তের মধ্যেই। 

 

সাথেসাথেই মালিহা চোখ নামিয়ে ফেললো। 

 

মালিহাঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

 

পথিকঃকি হয়েছে আপনার?  এভাবে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন? এখন যদি আল্লাহ আমাকে এখানে না পাঠাতেন ভাবতে পারছেন কি হতো তাহলে? 

 

মালিহাঃ……….. 

 

পথিকঃ কথা বলছেন না কেন? 

 

আরে আরে কি হয়েছে আপনার?  এমন করছেন কেন? 

আপনি কি অসুস্থ? এদিকে আসুন এই চেয়ার টা তে বসুন। 

 

পথিকঃআসসালামু আলাইকুম,মামা একটা পানি দিন তো। 

 

দোকানদারঃওয়া আলাইকুমুস সালাম৷ এই নাও বাবা। 

 

পথিকঃএই নিন একটু পানি খান। আর উলটো দিকে ঘুরে নেকাপ টা জাগিয়ে নাক চোখে একটু পানির ছিটা দিন। ভালো লাগবে ইনশাআল্লাহ। 

ভয় নেই উলটো দিকে কোনো পুরুষ নেই। 

 

মালিহা বেশ ইতস্ত বোধ করা সত্ত্বেও বোতল টা হাতে নিয়ে নাকে মুখে পানির ছিটা দিয়ে কিছু টা পানি পান করে নিলো। 

 

পথিকঃ কেমন লাগছে এখন? 

 

মালিহাঃ আলহামদুলিল্লাহ একটু ভালো। 

 

পথিকঃ আমি আব্দুল্লাহ। এইতো এই পাশেই আল্লাহ আমাকে একটা বাড়ি দিয়েছেন, সেখানেই থাকি। কলেজ বন্ধ থাকায় বাসায়তেই ছিলাম। আম্মার জন্য ঔষধ নেওয়ার জন্য বের হইছিলাম। এসেই দেখি আপনার এই অবস্থা। 

দেখেছেন সেই তখন থেকে নিজের ব্যপারে বকবক করেই যাচ্ছি,আমি একটু বেশিই কথা বলি।কিছু মনে করবেন না যেন। 

(মুচকি হেসে বললো আব্দুল্লাহ) 

 

মালিহা কোনো কথা না বলেই একমনেই আব্দুল্লাহর কথা শুনে যাচ্ছিলো। 

 

আব্দুল্লাহঃ আচ্ছা আপনি কোথায় যাবেন, কোথা থেকে এসেছেন কিছুই তো বললেন না। 

 

মালিহা খুব ঘাবড়ে গেলো,

কি বলবো এখন তাকে? 

লোকটা যদি সুবিধের না হয়? 

যদি আমার বিপদের কথা শুনে সুযোগ খোজে। 

 

আব্দুল্লাহঃকি ব্যপার কিছু বলছেন না যে? 

আমাকে সুবিধের মনে হচ্ছে না,তাইতো? 

হাহাহা। 

ভয় নেই। আমি আল্লাহ কে বিশ্বাস করি। ভয় পাই তাঁর কঠিন জাহান্নাম কে। আর যার মনে জাহান্নামের ভয় থাকে সে কখনো পাপ করতে পারেনা। 

 

যাইহোক মনে হলো আপনি বিপদে পরেছেন তাই সাহায্য করতে এলাম।  একজন মুসলিম হিসেবে এটা আমার দ্বায়িত্ব। আর আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও সঠিক ভাবে দ্বায়িত্ব পালন করতে কুন্ঠিত হই না। 

আপনার প্রব্লেম হলে sorry মুহতারিমা। 

 

মালিহাঃ না না আসোলে তা না। আমি এখান কার রাস্তা ঘাট কিছুই চিনিনা। বেশ বিপদে পরে গেছি। আর কিছু জানতে চাইবেন না প্লিজ!

 

আব্দুল্লাহঃ আচ্ছা জিজ্ঞেস করবো না। শুধু একটা প্রশ্ন করতে পারি? 

 

মালিহাঃ জ্বী। 

 

আব্দুল্লাহঃকোথায় যাবেন কোনো ঠিকানা আছে কি? 

 

মালিহাঃআমি আসোলে সেভাবে কিছু জানিনা। 

 

আব্দুল্লাহঃ কি বলেন, কোথায় যাবেন তাহলে? 

 

কিছুক্ষণের মধ্যেই আবরার বাসায় পৌঁছালো। 

 

আবরারঃ করিম চাচা,করিম চাচা।

 

করিমঃজ্বী বাবা বলো।

 

আবরারঃগাড়িটা একটু পরিষ্কার করে দাও তো। 

 

করিমঃআইচ্চা বাবা দিচ্ছি। 

 

রেবেকা বেগম রান্না ঘরে বসে দুপুরের রান্নার প্রিপারেশন নিচ্ছিলেন। 

 

রেবেকা বেগমঃ কিরে আবরার আজ ই চলে এলি যে?  

 

আবরারঃ হুম ভাল্লাগছিলো না। আর আমি তো তোমাকে বলেছিলাম ই যে আমি সেখানে থাকবো না। কিন্তু বজ্জাত,বেয়াদব, বদের হাড্ডিটার জন্য থাকতেই হলো। 

 

রেবেকা বেগমঃ সে ভালো করেছিস থেকেছিস। অফিস যাবিনা? 

 

আবরারঃনা আম্মি আজ আর যাবোনা। 

 

রেবেকা বেগমঃবৌমা কোথায়? 

 

আবরারঃ সেটা আমি কি করে জানবো? 

 

রেবেকা বেগমঃ মানে? তুই জানবি না তো কে জানবে? 

বৌমা কি আসেনি ও বাড়ি থেকে? 

 

আবরারঃ আমি এখন খুব ট্যায়ার্ড আম্মি। পরে কথা বলি। 

 

রেবেকা বেগম কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আবরার ওর রুমে চলে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।

 

রেবেকা বেগম খুব চিন্তায় পরে গেলেন। 

 

ও বাড়িতে কল করবো? 

না না বৌমা যদি আবরারের সাথে এসে থাকে আর আমি যদি ওবাড়িতে কল করে বৌমার কথা জিজ্ঞেস করি তাহলে  ব্যপার টা খুব জটিল হয়ে যাবে। 

 

রেবেকা বেগম বিচক্ষণ মহিলা। 

যা করেন চিন্তা ভাবনা করে তারপরেই করেন। 

 

মালিহার মায়ের কাছে কল করলেন তিনি। 

 

রাবেয়া বেগমঃ আসসালামু আলাইকুম।

 

রেবেকা বেগমঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছেন আপা? 

 

রাবেয়া বেগমঃ আছি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন আপা? 

 

রেবেকা বেগমঃ আলহামদুলিল্লাহ।  আচ্ছা আপা বৌমা ওরা কি করছে? 

 

রাবেয়া বেগমঃ আর বইলেন না আপা। মালিহাকে এতো করে বললাম আর কয়েক টা দিন থেকে যা। কিন্তু না সে আমার কোনো কথা ই শুনলো না।

আপনাকে ছাড়া নাকি ও থাকতে পারছে না, তাই চলে গেলো। হাহাহা। 

 

এতোক্ষণে তো ওদের পৌঁছে যাওয়ার কথা। 

 

রেবেকা বেগমঃ ওহ,আচ্ছা এখন রাখি তাহলে। আসসালামু আলাইকুম। 

 

কথা শেষ করেই চেয়ারে ধপ করে বসে পরলেন রেবেকা বেগম। 

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

 ১৫

রাবেয়া বেগমঃ আর বইলেন না আপা। মালিহাকে এতো করে বললাম আর কয়েক টা দিন থেকে যা। কিন্তু না সে আমার কোনো কথা ই শুনলো না।

আপনাকে ছাড়া নাকি ও থাকতে পারছে না, তাই চলে গেলো। হাহাহা।

 

এতোক্ষণে তো ওদের পৌঁছে যাওয়ার কথা।

 

রেবেকা বেগমঃ ওহ,আচ্ছা এখন রাখি তাহলে। আসসালামু আলাইকুম।

 

কথা শেষ করেই চেয়ারে ধপ করে বসে পরলেন রেবেকা বেগম।

 

কোথায় গেলো মেয়েটা? 

আবরার কিছু বলছে না কেন? কোনো অঘটন ঘটলো নাতো? 

 

রেবেকা বেগমঃআবরার দরজা খোল বলছি। বৌমা কোথায় সত্যি করে বল। 

 

আবরার দরজা না খুলেই উত্তর দিলো,

 

আবরারঃ আম্মি আমি খুব ট্যায়ার্ড। প্লিজ ডিস্টার্ব কইরো না। 

 

রেবেকা বেগম কেঁদে কেঁদে অনুরোধ করছে,

 

রেবেকা বেগমঃ এমন করিস না বাবা। দরজা টা খোল। 

 

দরজা খুলে,

আববারঃ কি হয়েছে আম্মি এভাবে মড়া কান্না জুড়ে দিলে কেন? 

 

রেবেকা বেগমঃও বাড়িতে কল করেছিলাম, বৌমা ওখানেও নেই। তোর সাথেই নাকি এসেছে। কিন্তু কোথায় বৌমা? 

 

আবরারঃ ওই গন্ডার টার কথা আমি কিভাবে জানবো৷ দেখো হয়ত কোথাও চলে টলে গেছে। 

 

রেবেকা বেগমঃ প্লিজ আবরার মজা করিস না। খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে বাবা। তুই কি সত্যিই কিছু জানিস না?  

 

আবরারঃ না আম্মি জানিনা। 

আম্মি কি হলো তোমার? 

খারাপ লাগছে? 

আম্মি কষ্ট হচ্ছে তোমার? 

 

মাথা ঘুরে পরে গেলেন রেবেকা বেগম। 

 

আবরার তাকে পাচকোলা করে খাটে শুইয়ে দিয়ে সাবিহা কে ডাকলো। 

সাবিহা ডাঃ তানভীর রহমান কে কল করে তাড়াতাড়ি ওদের বাসায় আসতে বললেন। ডাঃ তানভীর রহমান ই রেবেকা বেগম এর ট্রিটমেন্ট করেন। 

 

আব্দুল্লাহঃ আচ্ছা আপনি কি এখন সুস্থ ফিল করছেন?

 

মালিহাঃ হ্যা। 

 

আব্দুল্লাহঃআলহামদুলিল্লাহ।  আচ্ছা কোথায় যাবেন এখন? 

 

মালিহাঃ জানিনা তো। শুধু জানি আবরার ভিলায় যাবো। 

 

আব্দুল্লাহঃ কি? 

 

মালিহাঃ ও হ্যা ও বাড়ির নাম তো আবরার ভিলা। 

 

আব্দুল্লাহঃ ওই যে রেবেকা ইন্ডাস্ট্রির মালিক যে? 

 

মালিহাঃ হ্যা হ্যা,চিনেন আপনি?  

 

খুব খুশি হয়ে গেলো মালিহা। 

 

আব্দুল্লাহঃ কি যে বলেন চিনবো না কেন? এতো নামকরা একজন মানুষ।  

এখান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দুরেই আবরার ভিলা। 

 

মালিহাঃ আপনি প্লিজ আমার একটা উপকার করুন না প্লিজ!

সেখানে একটু পৌঁছে দিয়ে আসুন আমাকে। দেখুন না কইরেন না প্লিজ!

আব্দুল্লাহঃ হাহাহা, এতো অনুরোধ করার কি আছে? চলুন যাই। 

 

মালিহা হঠাৎ করে উঠতে গিয়েই মাথা ঘুরে পরে যাচ্ছিলো, তাই ধপ করেই আবার বসে পরলো।

 

আব্দুল্লাহঃ আপনি নাকি সুস্থ? দেখেছেন পরে যাচ্ছিলেন। এখান থেকে আমার বাসায় যেতে ২-৩ মিনিট সময় লাগে। একটা কাজ করুন, আমাদের বাসায় চলুন। বাসায় শুধু আমি আর আম্মা ই থাকি।কোনো সমস্যা হবেনা ইনশাআল্লাহ। একটু রেস্ট নিয়ে তারপর ই চলে যাইয়েন।

 

অনিচ্ছা সত্ত্বেও আব্দুল্লাহর সাথে যেতে হলো মালিহার।ও যে পেরে উঠছে না নিজের শরীরের সাথে। 

 

রাস্তা থেকে একটু ভেতরেই দোতলা একটা বিল্ডিং। বিল্ডিং টা বেশ পুরোনো মনে হচ্ছে। বেশ একটা ঐতিহ্যের ভাব আছে। 

 

আব্দুল্লাহঃ এভাবে দেখার কিছু নেই।আব্বা খুব সৌখিন মানুষ ছিলেন তাই এমন নকশা করা বিল্ডিং বানিয়েছিলেন। আম্মা চেয়েছেন বলে বিল্ডিং টা এমন ই রেখেছি।  চেঞ্জ করিনি।

 

আর কিছু না বলে কলিং বেল এ শব্দ করার সাথেসাথেই প্রায় ৫০ বছর বয়সী একজন মহীলা দরজা খুলে দিলেন। 

 

আব্দুল্লাহঃ আসসালামু আলাইকুম আম্মি। 

 

মহিলাঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কে আপনি?  

 

আব্দুল্লাহঃ আম্মা আমি, তোমার ছেলে। চিনতে পারছো না? মজা করছো? 

 

মহিলাঃ আমার ছেলে তো এমন না। আপনি বললেই হবে। যান যান দূরে যান। 

 

আব্দুল্লাহঃ আম্মা প্লিজ!

 

মহিলাঃ কিসের প্লিজ? তুই এমন একটা কাজ করলি আর আমাকে একটি বার জানানোর ও প্রয়োজন মনে করলি না? 

আর এই যে আম্মাজান আপনি কি ভুলে গিয়েছিলেন যে ছেলের একটা মা আছে? 

 

মালিহা খুব অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। 

 

আব্দুল্লাহঃআম্মা এসব কি বলছো তুমি? 

আরে আগে শোনোই না কি হইছে।

 

আব্দুল্লাহ ওর মাকে সবকিছু খুলে বলার পর রিজিয়া বেগম(আব্দুল্লাহ মা) খুব লজ্জা পেয়ে লেগেন।

 

রিজিয়া বেগমঃ তুই ও না আগে বলবি তো। এসো আম্মি ঘরে এসো।

 

মালিহাকে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন রিজিয়া বেগম।

 

রিজিয়া বেগমঃআবরার ভিলা কি তোমার কোনো আত্মিয় থাকে? 

 

মালিহাঃ আসোলে ওইটা আমার শশুর বাড়ি। 

 

রিজিয়া বেগমঃ আল্লাহ! তারমানে তুমি বিবাহিতা?  

 

মালিহাঃ জ্বী আন্টি। 

 

রিজিয়া বেগমঃ এখানে কোনো পুরুষ নেই আম্মি, নেকাপ টা খুলে ফেলো। 

 

নেকাপ খোলার পর রিজিয়া বেগম অপলক তাকিয়ে রইলো মালিহার দিকে। 

 

রিজিয়া বেগমঃ মাশা আল্লাহ। 

কি অপরুপ রুপে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তোমাকে। 

দূর আমি আরো মনে মনে কতো প্লান করতে শুরু করেছিলাম। 

ভেবেছিলাম এখানেই রেখে দিবো তোমাকে।আমার আব্বুল্লাহ খুব ভালো ছেলে। 

আহারে আমার কল্পনা কল্পনাই রয়ে গেলো। 

হাহাহা। 

 

মালিহা বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো।

 

রিজিয়া বেগমঃআমার কথায় কিছু মনে করো না মা। এমনিই একটু মজা করলাম আরকি। যাও মা ওয়াশরুমে গিয়ে একটু ফ্রেস হয়ে এসো, ভালো লাগবে ইনশা আল্লাহ। 

 

মালিহা ওয়ার রুমে চলে গেলে রিজিয়া বেগম আব্বুল্লাহর রুমে চলে গেলো। 

 

রিজিয়া বেগমঃ কি হয়ে গেলো রে মেরা বেটা? 

 

আব্বুল্লাহঃ কি হয়েছে আম্মা?

 

রিজিয়া বেগমঃ দিল ক্যা লাড্ডু ফাটগেয়া লিকেন বেবি কো শাদি হোগেয়া।

 

আব্দুল্লাহঃ আম্মা কি বলছো এসব? 

 

রিজিয়া বেগমঃ আরে বাবা একটু হিন্দি বলার ট্রাই করছিলাম। ভুলভাল হয়েছে বলে বুঝতে পারছেন  না মনে হয়। 

জানেন আব্বাজান ওই মেয়েটার না বিয়ে হয়ে গেছে।

 

আব্দুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কিন্তু কি হয়েছে তাতে? 

 

রিজিয়া বেগমঃ আব্বাজান এইটা আপনি কি বলছেন? ওই আম্মাজান কে দেখিয়া আপনার মনের লাড্ডু ফাটেনি? 

 

আব্দুল্লাহঃ ওহ এই কথা। আম্মা তুমি পারো ও বটে। 

কি সব উলটা পালটা বকবক করো আল্লাহ ই ভালো জানেন। 

 

তাকে দেখে আমার মনের লাড্ডু ফাটবে কেন? 

 

জানো আম্মা আমরা যারা একটু দ্বীনদার যারা আছি তারা অধিকাংশ ই এই ভুল টা ই করে থাকি। রাস্তার অর্ধ-উলঙ্গ কাউকে দেখলে আমাদের মনে মিষ্টি হাওয়া বয় না। মিষ্টি হাওয়াটা তখন ই বয় যখন মেয়েরা কোনো দাড়ি টুপি ওয়ালা ছেলে আর ছেলেরা কোনো বোরখা ওয়ালী কে দেখি।

ইশ! ইচ্ছে হয় যেন আরেক টু তাকাই।

আহ!কি ভালো টা ই না লাগে তখন। 

কেউ কেউ আবার বোরখা ওয়ালী/দাড়ি টুপি ওয়ালার সাথে একটু কথা ও বলতে চাই মনে মনে। কিন্তু এটা কি জানো আম্মা?

 

নিহাত শয়তানের ওয়াছওছা বই কিছুই নয়। 

 

শয়তান প্রথমে মানুষের দুর্বল জায়গা টা খুজে বের করে তারপর তাকে ঘায়েল করে। 

এজন্য ই তো সে দাড়ি টুপি ওয়ালা কে বোরখা ওয়ালী আর বোরখা ওয়ালী কে দাড়ি টুপি ওয়ালার বেশে ধোকা দেয়। 

 

আমাদের মনে রাখতে হবে বিয়ের আগে কাউকে নিয়েই ওসব কল্পনা জল্পনা করা যাবে না। হোক সে বোরকা ওয়ালী অথবা অর্ধ-উলঙ্গ নারী। দুজনার কে নিয়ে কল্পনার জগতে হারিয়ে যাওয়া হারাম। 

 

রিজিয়া বেগম একমনেই ছেলের কথা গুলো শুনে যাচ্ছেন। 

 

রিজিয়া বেগমঃ আসোলে আমি ভেবেছিলাম যে যেহেতু আপনি তাকে বাসায় নিয়ে এসেছেন তাই হয়ত ডাল মে কুচ কালাহে। 

 

আব্দুল্লাহঃ আম্মা আমি কিন্তু ওসব কিছু ভেবে তাকে সাহায্য করিনি। মুসলিম হিসেবে অন্যের বিপদে তার পাশে দাঁড়ানো টা আমার কর্তব্য। আর আমি শুধু এতোটুকুই করেছে। তার জায়গাতে অন্য কেউ হলেও হয়ত আমি এমন টাই করতাম ইনশাআল্লাহ। 

 

রিজিয়া বেগমঃ জ্বী আব্বাজান আমি আপনার কথা গুলো বুঝতে পেরেছি।  অনেক অনেক জাযাকাল্লাহু খইরন আমার ভুলটাকে ভাংইয়ে দেওয়ার জন্য। 

 

আব্দুল্লাহঃ আম্মা সে যাই বলো আর তাই বলো না কেন তিনি অবিবাহিতা হলে কিন্তু মন্দ হতোনা।

 

একথা বলেই মা ছেলে দুজনেই হেসে উঠলো।

 

ডাঃ তানভীর রহমান রেবেকা বেগম কে খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে জানালেন যে ভয়ের কিছু নেই, অধিক চিন্তা থেকেই এমন হয়েছে।

 

তানভীর রহমানঃ এমন টা হলো কি করে আবরার? 

 

আবরারঃ আসোলে আংকেল আমি তো তেমন কিছু জানিনা। 

তবে একটা বিষয় নিয়ে আম্মি একটু দুশ্চিন্তায় ছিলো। 

 

তানভীর রহমানঃ দেখো আবরার আমি তোমাকে আগেই বলছি তোমার আম্মির হাই প্রেসার সাথে হার্টে প্রব্লেম।  তাকে কখনো দুশ্চিন্তা করতে দিবে না।  যাইহোক তার পরিপূর্ণ রেস্টের জন্য একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি,ভয়ের কিছু নেই। তবে সাবধান ঘুম থেকে উঠে যেন তিনি কোনো প্রকার উত্তেজিত না হয়। নাহলে কিন্তু প্রব্লেম হয়ে যাবে। 

 

ডাঃ তানভীর রহমান চলে যাবার পরে আবরার খুব চিন্তায় পরে গেলো।

 

-আম্মি ঘুম থেকে উঠে যদি ওই গেও ভুতটাকে না দেখে তাহলে তো আবার…….। না না আমাকে কিছু করতেই হবে। 

 

আবরারঃ আপি একটু বের হবো দরকারী কাজ আছে। তুই আম্মির পাশেই থাকিস। তিন্নি কে কল করে কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলছি। আম্মির পাশেই থাকিস  কিন্তু। 

সাবিহাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

গাড়ি নিয়ে মালিহার খোঁজে বেড়িয়ে পরলো আবরার। 

 

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো)

১৬

 আবরারঃ আপি একটু বের হবো দরকারী কাজ আছে। তুই আম্মির পাশেই থাকিস। তিন্নি কে কল করে কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলছি। আম্মির পাশেই থাকিস কিন্তু।

 

সাবিহাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।

 

গাড়ি নিয়ে মালিহার খোঁজে বেড়িয়ে পরলো আবরার।

 

যেখানে ওকে রেখে এসেছিলো সেখান টার আশেপাশে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মালিহার সন্ধান পেলো না আবরার।

 

গাড়ি টা সাইড করে আবরার রাস্তার পাশে পায়চারী করছে আর ভাবছে,

 

-গেও ভুত টা কে যদি খুঁজে না পাই তাহলে কি বলবো আম্মিকে। আম্মি যে আরো অসুস্থ হয়ে পরবে। 

দূর কেন যে তখন এতো রাগ দেখাতে গেলাম। নিজের উপর ই রাগ হচ্ছে এখন। 

 

হঠাৎ করেই আবরারের মোবাইলটা বেজে উঠলো। 

 

আবরারঃ হ্যা রিয়া বলো। 

আবরারঃ কি! আগামী মাসে দেশে ফিরবা? What a good news!   

 

আবরারঃ হুম একটু বিজি আছি। কতো টাকা লাগবে বলো।

 

আবরারঃ মাত্র দুই লাখ। হাহাহা। আচ্ছা আগামীকাল ই পেয়ে যাবা। এখন রাখি তাহলে। বাই। লাভ ইউ বেবি। 

 

মোবাইলটা রেখে আবার চিন্তার জগতে পাড়ি দিলো আবরার। 

 

নাহ্ মাথাটা যেন অবস হয়ে আসছে। 

 

আজ একবার হাতের কাছে পাই অটিস্টিক টাকে তারপর বুঝাবো আমাকে ঘুরানোর মজা কি। 

 

কিন্তু না মালিহাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। 

শহরের প্রতিটা অলি গলি তন্নতন্ন করে খুঁজে যাচ্ছে আবরার। 

 

মালিহা ফ্রেস হয়ে বের হবার আগেই রিজিয়া বেগম নিজের রুমে চলে এলো। 

 

রিজিয়া বেগমঃ ফ্রেস হবার পরে এখন কেমন লাগছে মামনি? 

 

মালিহাঃ এইতো আলহামদুলিল্লাহ এখন ভালোই লাগছে। 

 

রিজিয়া বেগমঃ যাক আলহামদুলিল্লাহ ভালো।  আচ্ছা মা এসো কিছু খেয়ে নাও। 

 

মালিহাঃ না আন্টি এখন কিছু খাবো না। তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে। মা হয়ত খুব চিন্তা করছে। 

 

রিজিয়া বেগমঃ আচ্ছা মা এটা বলো তো এরকম অসুস্থ অবস্থায় একা একা কি করছিলে ওখানে? 

 

মালিহাঃ আল্লাহ চান তো পরে কোনো একদিন বলবো আন্টি। 

 

রিজিয়া বেগমঃ আচ্ছা বইলো ইনশাআল্লাহ। দুপুর হয়ে গেছে কিছু একটা খেয়ে সালাত আদায় করে তারপর বের হবো ইনশাআল্লাহ। 

 

মালিহাঃ না আন্টি আমি এখনি বের হতে চাচ্ছি। প্লিজ আন্টি আর কিছু বইলেন না। 

 

রিজিয়া বেগমঃ হাহ্। বললাম না আর কিছু। একটু দাঁড়াও আসছি। 

 

একটু পরেই পায়েস ভর্তি একটা বাটি নিয়ে হাজির হলেন রিজিয়া বেগম। 

 

রিজিয়া বেগমঃনাও মা এটুকু তো খেয়ে নাও। বেশি কিছু দিলাম না৷ নাও খেয়ে নাও।

 

মালিহা পায়েসের বাটি টা হাতে নিয়ে খুব দ্রুত খেয়ে নিলো। 

 

মালিহাঃ আন্টি এখন আর দেরি করবেন না প্লিজ! 

 

রিজিয়া বেগমঃ আচ্ছা মা রেডি তো হয়ে নেই। 

 

মালিহাঃ আন্টি আপনার মোবাইল নাম্বার টা দিবেন? 

 

রিজিয়া বেগমঃ পাগলী মেয়ে বলে কি?  দিবো না কেন? 

আমিও ভেবেছিলাম তোমার নাম্বার টা চাইবো। দ্বীনদার মানুষের সাথে যতো ভালো সম্পর্ক থাকবে ততই ভালো। আমাদের প্রত্যেকের ই উচিৎ দ্বীনদার মানুষ দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। 

 এমন মানুষদের সাথেই আমাদের বেশি সময় কাটানো উচিৎ যাদের সাথে কথা বললে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়,জান্নাত জাহান্নামের কথা স্মরণ হয়। 

 

মালিহাঃ জ্বী আন্টি একদম ঠিক কথা ই বলেছেন।

 

রিজিয়া বেগমঃ নাও নাম্বার টা তুলে নাও। 

 

মালিহাঃআসোলে আন্টি আমার মোবাইল টা তো অফ হয়ে গিয়েছে। চার্জ শেষ।  আমি ডাইরিতে তুলে নিচ্ছি, বলেন। 

 

রিজিয়া বেগমঃ আচ্ছা লিখো,০১৭২*******

 

মালিহাঃ জাযাকিল্লাহু খইরন আন্টি। 

 

রিজিয়া বেগমঃ ওয়া আংতুম ফি জাযাকিল্লাহু খইরন।  নেকাপ টা পরে নাও। আমিও রেডি হচ্ছি। 

 

মালিহাঃ আচ্ছা আন্টি। 

 

মালিহা,আব্দুল্লাহ আর রিজিয়া বেগম একসাথে বের হলেন মালিহাকে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে।

 

একটা সিএনজি তে উঠলেন তারা। সিএনজি ড্রাইভার কে আস্তে চালাতে বলায় আবরার ভিলায় পৌঁছাতে প্রায় আধা ঘন্টা সময় লেগে গেলো। একটু দ্রুত চালালে ২০ মিনিটেই পৌঁছাতে পারতো। 

 

আবরার ভিলার সামনে সিএনজি টা থামলো। 

 

রিজিয়া বেগমঃ আব্বাজান আপনি গিয়ে মালিহা কে একটু এগিয়ে দিয়ে আসেন, আমি আর নামবো না। নামতে উঠতে বেশ কষ্ট হয় আমার। 

 

আব্দুল্লাহঃআচ্ছা আম্মা তুমি এখানেই বসে থাকো৷ যাচ্ছি আমি। 

 

রিজিয়া বেগমঃ আল্লাহ যেন তোমাকে অনেক ভালো রাখেন। আল্লাহ চান তো আবার দেখা হবে। 

 

মালিহাঃ জ্বী ইনশা আল্লাহ। আচ্ছা আন্টি একটা কথা বলবো কিছু মনে করবেন না তো? 

 

রিজিয়া বেগমঃ আগ পাচ না ভেবে ঠাস করে বলে ফেলো। 

 

মালিহাঃ হাহাহা। আচ্ছা বলছি। 

আপনি কি সবসময়ই আপনার ছেলেকে  আপনি করে সম্মোধন করেন? 

 

মালিহার প্রশ্ন শুনে রিজিয়া বেগম আর আব্দুল্লাহ একসাথেই খিলখিল করে হেসে উঠলো।

 

রিজিয়া বেগমঃ মুচকি হাসা সুন্নত৷ কিন্তু মা তোমার প্রশ্ন শুনে অজান্তেই  খিলখিল করে হেসে উঠলাম।  

 

আমরা মা ছেলেরা এমন ই।  মজা করে আপনি করে বলি। 

পরিবারের সদস্য বলতে আমরা দুজন ই তো। আল্লাহর ইচ্ছেয় বেশ হেসে খেলেই আমাদের দিন কেটে যায়। আলহামদুলিল্লাহ।  

 

মালিহাঃ যাক আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আন্টি আপনারা চলেন না আমার সাথে। এক কাপ চা খেয়েই নাহয় চলে এলেন। 

 

শুধুমাত্র ফরমালিটি রক্ষার জন্যই তাদের কে সাথে যেতে বলেছে মালিহা।  মনে মনে বারবার আল্লাহ কে বলে যাচ্ছে, আল্লাহ ওনারা যেন না আসেন। বাসায় এখন কোন পরিস্থিতি বিরাজ করছে এটা একমাত্র তুমিই জানো মালিক। তুমি আমার মানসম্মান রক্ষা করো আরশের অধিপতি।  

 

হঠাৎ করেই রিজিয়া বেগম বলে উঠলেন,

 

রিজিয়া বেগমঃ না মা আজ আর যাবো না। অন্য একদিন আবার আসবো ইনশাআল্লাহ।  

 

মালিহা মনে মনে বলে উঠলো 

-আলহামদুলিল্লাহ।

 

খুব খুশি হবো যদি একদিন সময় করে আসেন আন্টি। আচ্ছা আন্টি যাই তাহলে,আসসালামু আলাইকুম। 

 

রিজিয়া বেগমঃ আচ্ছা যাও। ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

আব্দুল্লাহ যা ওকে গেট পর্যন্ত দিয়ে আয়। 

 

আব্দুল্লাহঃ আচ্ছা যাচ্ছি। 

 

আব্দুল্লাহর প্রায় একহাত পিছনে আব্দুল্লাহর বা পাশে হাটছে মালিহা। 

 

গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে, 

 

মালিহাঃ আপনাকে অনেক অনেক জাযাকাল্লাহু খইরন।  অনেক উপকার করলেন। এর প্রতিফল হিসেবে আল্লাহ যেন আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আমিন। 

 

আব্দুল্লাহঃ আমিন, সুম্মা আমিন।  বারাকাল্লাহু ফিকুম। 

 

আমি শুধু আমার দ্বায়িত্ব পালন করেছি আরকি। আচ্ছা এখন যাই তাহলে।

 

মালিহাঃ জ্বী, আসসালামু আলাইকুম।  

 

মালিহাকে খুজে না পেয়ে বাসার উদ্দেশ্য চলে এলে বাসার সামনেই জিলবার পরা মালিহাকে দেখে চিনতে একটুও ভুল হয়নি আবরারের। 

দূর থেকেই দেখে যাচ্ছিলো কোনো একটা ছেলের সাথে গল্প করছে মালিহা। ইচ্ছে করেই তাদের সামনে এলো না আবরার। মনে মনে আরো বেশি ঘৃণা জন্মালো মালিহার উপর। 

 

আব্দুল্লাহ চলে যেতেই দ্রুত পায়ে গেটের কাছে হাজির হলো আবরার। 

 

মালিহা গেটের ভিতর পা রাখবে এর ই মধ্যে আবরার পিছন থেকে বলে উঠলো,

 

আবরারঃ এই দাঁড়া……

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে” 

লেখিকাঃরহিমা খানম (দ্বীনের আলো)

১৭

আব্দুল্লাহ চলে যেতেই দ্রুত পায়ে গেটের কাছে হাজির হলো আবরার।

 

মালিহা গেটের ভিতর পা রাখবে এর ই মধ্যে আবরার পিছন থেকে বলে উঠলো,

 

আবরারঃ এই দাঁড়া। কোথায় ছিলি?  

 

মালিহা কোনো উত্তর না দিয়েই দমদম করে হেটে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলো। 

 

আবরারের রাগ যেন দ্বীগুন বেড়ে গেলো। 

হাতে থাকা মোবাইল টা ছুড়ে মারলো। সিড়িতে গিয়ে আছাড় খেয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। মোবাইল টা। 

 

শব্দ পেয়ে তিন্নি বাইরে ছুটে এলো। 

 

তিন্নিঃ কি হয়েছে রে ভাইয়া? 

 

তিন্নিঃ সে কি রে মোবাইলটার কি অবস্থা করেছিস? 

 

আবরার কোনো উত্তর না দিয়েই নিজের রুমে চলে এলো। 

 

মোবাইলের টুকরো গুলো হাতে নিয়ে তিন্নিও রুমে চলে এলো।  

 

মনের মধ্যে হাজারো চিন্তা ভাবনা নিয়ে সরাসরি রেবেকা বেগম এর রুমে ঢুকলো মালিহা। 

 

ইতিমধ্যেই জ্ঞান ফিরিছে রেবেকা বেগমের। তার পাশেই বসে আছে সাবিহা। 

ডাঃ তানভীর রহমান কিছুক্ষণ আগেই চলে গেছেন। রেবেকা বেগম এর শরীরে স্যালাইন সেট করা। 

 

মালিহাঃ আসসালামু আলাইকুম।  

 

রেবেকা বেগমঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম।  (আস্তে আস্তে বললো)

 

মালিহাঃ আপনার কি হয়েছে মা? (খুব অস্থির হয়ে)

 

সাবিহাঃ সে কথা তো তোমার জানতে হবেনা। যেখানে ছিলে সেখানেই যাও। 

 

মালিহা বেশ ভয় পেয়ে গেলো। 

– উনি কি তাহলে বাসায় কিছু বলে দিলো?

 

রেবেকা বেগমঃ এতোক্ষণ কোথায় ছিলি মা? তোর চিন্তায় আমার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছিস? 

আবরারের কাছে কত্ত জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কিছুই বললো না। 

 

রেবেকা বেগম এর কথা শুনে মালিহা যেন মরুভূমিতে পানির সন্ধান পেলো। স্বস্তির নিশ্বাস নিলো ও। 

 

মালিহাঃ আর বইলেন না মা। এখানেই আমার এক আন্টি থাকে, আগে তো জানতাম না। রাস্তায় তার ছেলের সাথে দেখা হয়ে গেলো। বাসায় না নিয়ে আর ছাড়লো না। (ওনার কীর্তি কলাপ গুলো তো আর বাসায় বলা যাবে না,খুব কষ্ট পাবেন মা। আবার মিথ্যেও বলা যাবে না তাইতো একটু কৌশল অবলম্বন হলো)

 

রেবেকা বেগম খুব জোরে একটা নিশ্বাস নিলেন। 

 

রেবেকা বেগমঃ এটা তো আমাকে একটু কল করে জানাতে পারতি নাকি? 

 

সাবিহাঃ তা করবে কেন? ওনার কি আর বাসার কোনো চিন্তা ভাবনা আছে। নবাব জাদী তো। তার চিন্তেয় যে তুমি অসুস্থ হয়ে পরেছো সে খেয়াল কি ওনার আছে? 

যত্তসব জ্ঞানহীন, মুর্খ মেয়ে কোথাকার। 

 

রেবেকা বেগমঃ আহ্ সাবিহা, থামতো৷ আগে ওকে বলতে দে। 

 

মালিহাঃ আসোলে হয়েছে কি মা আমার মোবাইলে একটুও চার্জ ছিলোনা। বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। আর বাসার কারো নাম্বার ও মুখস্থ ছিলো না।

 

রেবেকা বেগম সজোরে কেঁদে উঠলেন। 

 

রেবেকা বেগমঃ কতো যে দুঃশ্চিন্তা  হয়েছে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। ভেবেছিলাম না জানি আবরার টা আবার কোনো অঘটন ঘটালো কিনা। 

 

কেঁদে কেঁদে বলছিলেন কথা গুলো। 

 

মালিহা খাটের উপর বসে রেবেকা বেগমের বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরে নিজেকে আর সামলাতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।

 

মালিহাঃ I’m sorry মা। আর কখনোই এমন হবেনা ইনশাআল্লাহ। 

 

(আবরারের দেওয়া কষ্ট আর রেবেকা বেগমের চোখের পানি এই দুটো মিলে যেন কষ্টের পাহাড় গড়ে উঠেছে মালিহার মনে।চোখের পানিতে সেই পাহাড় কে ধুইয়ে দিতে চাইলেও পারছে না মালিহা।কারন পাহাড় টা যে পাথরের মতো। বড্ড শক্ত হয়ে গিয়েছে।)

 

রেবেকা বেগম মালিহাকে তার তার ডান হাতে আবদ্ধ করে নিলেন। 

 

দুজনার কান্নার পরিমান যে দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। 

 

রেবেকা বেগমঃ তুই যে আমার নিজের মেয়ের মতো রে মা।ছেলের বউ কখনো নিজের মেয়ে না হলেও নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসা সম্ভব। মায়ের ভালোবাসা যে সীমাহীন।ঘাটতি পরার সুযোগ নেই সেখানে।  খুব চিন্তা হয় তোর জন্য মা। তোর সুন্দর জীবন টা হয়ত আমি নষ্ট করে দিলাম। 

 

মালিহাঃ না মা এসব বলবেন না। আপনি কিছুই করেন নি। আমি আমার তকদীর কে মেনে নিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে খুব সুখে

রেখেছেন। 

 

রেবেকা বেগম মালিহার চোখের পানি মুছিয়ে দিলেন।

 

রেবেকা বেগমঃ যা মা নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে। আমি এখন সুস্থ আমি আলহামদুলিল্লাহ।  তুই চিন্তা করিস না। যা মা। 

 

মালিহাঃ আচ্ছা মা। 

 

সাবিহাঃএদের আদিখ্যেতা দেখে আর বাঁচি না।

 

মালিহা কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো। 

 

দু হাত সামনে এনে মুঠো করে কপালের সাথে ঠেকিয়ে  সামমের দিকে ঝুঁকে সোফায় বসে আছে আবরার।

 

মালিহা রুমে আসতেই আবরার অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মালিহার দিকে। কিন্তু সেদিকে মালিহার কোনো ভ্রুক্ষেপ না করাটা আবরারের রাগ কে দ্বীগুন বাড়িয়ে দিলো।

 

মালিহা একমনেই নেকাপ খোলায় ব্যস্ত।আবরার কে যেন দেখছেই না ও। 

 

রাগে যেন আগুন হয়ে উঠলো আবরার।

 

বসা থেকে দাঁড়িয়ে ধপধপ করে হেটে গেলো মালিহার দিকে।

 

কিন্তু না সেদিকে কোনো কর্ণপাত নেই মালিহার। 

 

পিছন থেকে  ডান বাহু ধরে খুব জোরে টান দিয়ে মালিহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফেললো আবরার।

 

একহাতে বাহু আর অন্য হাতে মালিহার বা কব্জি খুব শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবরার।

 

মালিহাঃআহ্,খুব লাগছে ছাড়ুন আমাকে৷ 

 

আবরারঃ………. 

 

মালিহাঃ সত্যিই খুব লাগছে। ছাড়ুন প্লিজ!

 

আবরারঃএতো সাহস তোর কিভাবে হলো? আমাকে নেগলেট করছিস? 

আমার উপর রাগ দেখাচ্ছিস? 

 

মালিহাঃ সত্যিই কি আমি রাগ দেখাচ্ছি? আমার জায়গায় আপনি থাকলে কি করতেন বলুন তো? আজ যেটা করেছেন এর পর আপনি কেমন ব্যবহার আশা করেন আমার থেকে?

কি ভেবেছিলেন আর ফিরবো না?  

অনেক দূরে চলে যাবো? 

তাহলে শুনে রাখুন ডিল করা এক বছরের আগে আমি কোথাও যাবো না ইনশাআল্লাহ।  কখনোই যাবো না ইনশাআল্লাহ। 

 

আবরার কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিজের দুহাত সজোরে ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো মালিহা।

 

আবরার শুধুই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মালিহার চলে যাওয়ার দিকে। 

 

ওর মাথায় মধ্যে শুধু একটা কথা ই বাজতে লাগলো।

“আজ যেটা করেছেন এর পর আপনি কেমন ব্যবহার আশা করেন আমার থেকে?”

 

চলবে ইংশা আল্লাহ

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম (দ্বীনের আলো) 

পর্বঃ১৮

 

আবরার কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিজের দুহাত সজোরে ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো মালিহা।

 

আবরার শুধুই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মালিহার চলে যাওয়ার দিকে।

 

ওর মাথায় মধ্যে শুধু একটা কথা ই বাজতে লাগলো।

“আজ যেটা করেছেন এর পর আপনি কেমন ব্যবহার আশা করেন আমার থেকে?”

 

-আমি কি সত্যিই খুব খারাপ ব্যবহার করেছি ওর সাথে? 

এতো টা খারাপ ব্যবহার না করলেও পারতাম।ও যদি আর ফিরে না আসতো তবে কি বলতাম আম্মিকে। 

ওর সাথের ওই ছেলেটা কি হয় ওর? কেন সেই ছেলেটা এসেছিলো ওর সাথে। 

ছিঃ ছিঃ ছিঃ 

তারমানে কি………… 

খুব ভালো করেছি ওর সাথে অমন ব্যবহার করে। ইশ আরেক টু কষ্ট দিতে পারতাম যদি ওকে। 

যে মেয়ের মুখে এর আর অন্তরে আরেক তারসাথে অমন ব্যবহার ই করা উচিৎ।  

 

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আচরাচ্ছে মালিহা।

 

আবরার শোয়া থেকে উঠে বসে বলতে শুরু করলো,

 

আবরারঃ অনেক তো নামাজ পরিস,দ্বীনদারিত্ব দেখাস। তাহলে নিশ্চয়ই মুনাফিক কেও চিনি থাকবি। যার মুখে এক অন্তরে আরেক সেও মুনাফিক এর অন্তর্ভুক্ত।  যার জলন্ত উদাহরণ তুই নিজেই। সবাই কে দেখিয়ে বেড়াস তুই কত ভালো, কিন্তু তুই তো একটা চরিত্রহীনা। 

 

আবরারের কোনো কথায় কর্ণপাত না করলেও শেষের কথা টা শুনে হাত থেকে চিরুনি টা পরে গেলো মালিহার। 

 

মালিহাঃ কি বলছেন এসব?

 

আবরারঃবুঝতে পারছিস না কি বলছি? একদম নাটক করবি না। পরপুরুষের সাথে বাসায় আসিস আর এখন কিছুই বুঝতে পারছিস না? 

 

মালিহা এতোক্ষণে বুঝতে পারলো আবরার কেন এসব বলছে। 

 

মালিহাঃ দেখুন আপনি ভুল বুঝছেন। আসোলে আপনি যা ভাবছেন তেমন টা নয়। 

 

আবরারঃ এই থেমে যা, আর একটা কথা ও বলবি না। নষ্টা মেয়ে একটা। 

 

মালিহার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। 

-কি বলছেন উনি এসব? উনি আমাকে ন…….. 

দুচোখ দিয়ে অঝোর শ্রাবণ বয়ে যাচ্ছে। 

 

মালিহাঃ প্লিজ আমার কথাটা একটু শোনেন! 

 

আবরারঃ নতুন করে কি গল্প শুনাবি আবার? 

 

মালিহাঃ জানেন আপনি আমাকে এ পর্যন্ত যত কষ্ট দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম ছিলো এখনের দেওয়া কষ্ট টা। 

আমার আল্লাহ জানেন আমি কতোটা পবিত্র। আপনিও বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ আজ না হয় কাল।

আম্মাজান আয়েশা রাঃ এর উপর দুশ্চক্রিরা যখন কুৎসা রটনা করেছিলো আল্লাহ তখন আয়াত নাজিলের মাধ্যমে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে আম্মাজান আয়েশা রাঃ সম্পূর্ন পবিত্র।  

 

যেখামে রাসূল সাঃ এর স্ত্রীর উপর ই অভিযোগ উঠতে পারে সেখানে আপনার স্ত্রী আমি তো অতি তুচ্ছ। আমার উপর যে এমন অভিযোগ আসবে এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে অচিরেই আমার আল্লাহ আপনাকে বুঝিয়ে দিবেন আমি কতোটা পবিত্র।  

 

মালিহার কথা শুনে আবরার বেশ তাচ্ছিল্য করে বলে উঠলো, 

 

আবরারঃ তাহলে ওই টা কে ছিলো আপনার সাথে মিস পবিত্র ম্যাডাম?  

 

মালিহাঃ সত্যি বলতে কি জানেন,

যে আল্লাহ কে ভালোবাসে 

তাকে আল্লাহ ও ভালোবাসেন। 

যে আল্লাহ কে আপন মনে করে,

আল্লাহ ও তাকে আপন মনে করেন। 

নিজের বিপদে যে আল্লাহ কে স্মরণ করে,

তার বিপদে আল্লাহ সরাসরি সাহায্য করেন। 

 

যেমন টা আল্লাহ আমার সাথে করেছেন। 

 

আবরারঃ মানে? 

 

(মালিহা সব ঘটনা খুলে বললো আবরার কে)

 

আবরার সব কিছু শুনে চুপ করে রইলো।

 

 মালিহাঃ আসোলে কি জানেন তো একটা মানুষ তখন ই অন্য কাউকে প্রকৃত অর্থে ভালোবাসতে,সাহায্য করতে পারে যখন সে আল্লাহ কে ভালোবাসে। যে আল্লাহ কে ভালোবাসে না সে দুনিয়াতে কাউকে ভালোবাসতে পারেনা। 

সেই লোকটা(আব্দুল্লাহ) আল্লাহ কে ভালোবাসে,ভয় করে বলেই আজ আমার এতো বড় উপকার করেছেন। জানেন তো আমরা যারা একটু মোটামুটি দ্বীন পালনের চেষ্টা করি আমরা না খুব লোভী, খুউউব লোভী। কিসের লোভী জানেন? 

জান্নাতের লোভী।  

We want to Jannah,

Only Jannah,

It’s enough for us. 

 

জানেন আমি না কখনোই কল্পনা ও করিনি যে আপনি আমার সাথে এমন টা করতে পারবেন। এভাবে ফেলে আসবেন কখনোই ভাবিনি এটা। যদি আমার খুব বড় কোনো বিপদ হয়ে যেতো? 

যদি আর ফিরে না আসতাম? 

একটুও কি খারাপ লাগতো না আপনার?  আমি কি খুব বড় ক্ষতি করে ফেলেছি আপনার?  

আর কিছু না হলেও আপনার মায়ের কথা ও কি  চিন্তা করলেন না একটু?

আপনি কিন্তু আমাকে ১ টা বছর সময় দিয়েছেন। এই সময় টা শেষ হবার আগ পর্যন্ত আপনি কিচ্ছু করবেন না। হাত জোর করে বলছি কিচ্ছু করবেন না। 

আমি না পারবো না আপনাকে ছেড়ে থাকতে। আল্লাহ যে এত্তগুলা ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছেন আমার অন্তরে আপনার জন্য। 

 

(ডুকরে কাঁদছে আর কথা গুলো বলছে মালিহা) 

 

আবরার কিছু না বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে সরাসরি রেবেকা বেগমের রুমে ঢুকলো। 

 

আবরারঃ এখন কেমন লাগছে আম্মি? 

 

রেবেকা বেগম কিছু না বলে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পরলেন। 

 

আরবার রেবেকা বেগমের মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে,

 

আবরারঃ আমার মিষ্টি আম্মি টা অভিমান করেছে? 

 

রেবেকা বেগমঃ আমি কারো সাথে কথা বলবো না। 

 

(রেবেকা বেগমের কথা শুনে খুব ভয় পেয়ে গেলো আবরার।

– গেও ভুতটা কি সবকিছু বলে দিলো আম্মিকে? এখন কি করবো আমি। কি করে ম্যানেজ করবো আম্মিকে?)

 

আবরারঃ রাগ কইরো না আম্মি।

I’m sorry my sweet আম্মি। 

 

রেবেকা বেগমঃ এত ভাব না করে বললেই তো পারতি যে মালিহা ওর আন্টির বাসায় গিয়েছিলো। 

রাস্তায় ওর আন্টি ছেলে ওকে দেখে জোর করে তাদের বাসায় নিয়ে গেলো এটা তুই জানতি,কি জানতিস না?

 

(আবরার খুব খুশি হলো রেবেকা বেগমের কথা শুনে।

-তারমানে গেও ভুতটা কিছু বলেনি আম্মিকে। বেশ সুন্দর ভাবেই সবকিছু ম্যানেজ করে নিয়েছে। বাহ্!

এত্ত কষ্ট দেওয়ার পরেও গেও ভুতটা কিচ্ছু বললো না আম্মিকে? 

মুহুর্তের মধ্যেই মালিহার প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে গেলো আবরারের মন। 

আহারে কি বাজে বিহেব টা ই না করলাম ওর সাথে, ছিছিছি।  কত্ত পচা কথা শুনিয়ে দিলাম।) 

 

রেবেকা বেগমঃ কিরে কথা বলছিস না কেন? তুই জানতি না ও ওর আন্টির বাসায় গিয়েছে?  

 

আবরারঃ আসোলে কি আম্মি আমি আসোলে জানতাম বলতে আসোলে….

 

রেবেকা বেগমঃ কিরে তোতলাচ্ছিস কেন? 

আবরারঃ আম্মি আমি এখন যাই, একটু পরে আসছি। 

 

আর কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো আরবরার। 

 

অনুশোচনা হচ্ছে খুব। 

রুমে গিয়ে কান্নার শব্দ পেয়ে পাশে তাকাতেই দেখলো জায়নামাজে সিজদা রত অবস্থায় কান্না করছেমালিহা। কান্নার শব্দ টা অনেক টা এরকম, কেউ খুব করে চাচ্ছে শব্দহীন কান্না করতে,কিন্তু কষ্ট টা এত্ত বেশি যে নিরবতা ভেঙে যাচ্ছে। চাপা কান্নার আওয়াজে মুখোরিত পুরো রুম। 

 

আবরারের মধ্যে খুব অনুশোচনা হচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে হাত জোর করে ক্ষমা চাইতে। কিন্তু পারছে না। আত্মসম্মান এ লাগবে। 

 

তবুও বারবার নিজেকে তৈরি করছে কিভাবে মালিহাকে সরি বলা যায়। 

-আমিতো খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি। এমন টা না করলেও পারতাম।  যাইহোক না কেন এটলিষ্ট সরি তো বলতেই হবে। 

 

জায়নামাজ রেখে রুম থেকে বের হবে এর মধ্যে আবরার বলে উঠলো,

 

আবরারঃ এই যে শুনছেন!

 

সাথে সাথেই পিছন ফিরে তাকালো মালিহা,

 

মালিহাঃ কিছু বলবেন?  

 

আবরারঃহুম। 

 

মালিহা খুব আগ্রহ নিয়ে কান্না লুকিয়ে ঠোঁটের কোনে মিথ্যে হাসি টেনে বললো,

 

মালিহাঃ জ্বী বলেন। 

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম(দ্বীনের আলো) 

১৯

য়নামাজ রেখে রুম থেকে বের হবে এর মধ্যে আবরার বলে উঠলো,

 

আবরারঃ এই যে শুনছেন!

 

সাথে সাথেই পিছন ফিরে তাকালো মালিহা,

 

মালিহাঃ কিছু বলবেন?

 

আবরারঃহুম।

 

মালিহা খুব আগ্রহ নিয়ে কান্না লুকিয়ে ঠোঁটের কোনে মিথ্যে হাসি টেনে বললো,

 

মালিহাঃ জ্বী বলেন।

 

আবরারঃ আমি আসোলে আমি স.. 

 

মালিহা অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছে আবরারের পানে। 

 

মালিহাঃ হ্যা বলুন, আপনি আসোলে,

 

আবরারঃ আমি আসোলে খুব সরি। সত্যিই খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আপনাকে।

I’m extremely sorry.  

 

কথা গুলো বলে ই মালিহার চোখে চোখ তুলে তাকালো আবরার। 

 

মালিহা যেন নির্বাক হয়ে গেলো। 

আবরারের কথা গুলো যেন  দগ্ধ উত্তপ্ত মরুর মাঝে এক পশলা বৃষ্টির সন্ধান যোগালো মালিহার মনে। 

 

দুনিয়াতে যে এর চে বেশি ভালো লাগা,প্রশান্ত অনুভূতি আর কিছু আছে কিনা ভুলে গেলো মালিহা। 

 

মালিহার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ব্যর্থ হলো আবরার। 

ব্যর্থ যে হতেই হবে, সে চোখ  প্রচন্ড দাবানল থেকে  মুহুর্তের মধ্যেই নেশা ধরিয়ে দিয়েছে।

 

মায়ার বিচ্ছুরণ ঘটছে চারদিকে। 

 

হঠাৎ করেই ডুকরে কেঁদে উঠলো মালিহা। 

 

আবরার আর এক মুহুর্ত ও রইলো না সেখানে। 

 

মালিহাকে পাশ কাটিয়ে রুমের বাইরে চলে গেলো। 

 

মালিহা যেন ভেসে বেরাচ্ছে এক সুখের রাজ্যে। 

 

সরাসরি ফ্লোরেই সিজদায় লুটিয়ে পরলো। 

 

কারো মুখের সামান্য একটা কথা যে এতোটা অসামান্য হয়ে অন্য একটা মানুষের এতোটা সুখের খোরাক কিভাবে হয় আজ এটা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে মালিহা। 

 

খুশিতেও যে এতোটা অশ্রুক্ষরণ হয় তা হয়ত নিজে এই পরিস্থিতির স্বীকার না হলে অজানাই রয়ে যেতো মালিহার।

 

আল্লাহ সত্য,সত্য তাঁর ওয়াদা।

 

“নিশ্চয়ই কষ্টের পরেই রয়েছে স্বস্তি।”

 

(সূরা ইনশিরাহ আয়াত ৫)

 

বারবার শুক্রিয়া জানাচ্ছে মহান রবের। 

-হে আরশের অধিপতি! জানিতো তুমি আমাকে অন্নেক ভালোবাসো। তাইতো কখনোই খালি হাতে ফিরাও না আমায়। আল্লাহ তুমি আমার ধৈর্য শক্তিকে আরো বাড়িয়ে দাও। 

উনাকে তুমি হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করো রাব্বুল আলামীন। তুমি চাইলেই তো সব সম্ভব।  তুমি তো রহমানুর রহিম। ও রহমান দাওনা এই ইচ্ছে টা পূরণ করে,দাওনা প্লিজ!

তাকে নিয়ে দুনিয়াতেই যেন জান্নাতের পথে হাটতে পারি। 

প্লিজ রহিম,এই তামান্না টা মঞ্জুর করে নাও। 

 

খুশিতে যেন বাধ মানছে না নোনা অশ্রুজল। 

 

শুক্রিয়ার সাথে সাথে মহান রবের কাছে হাজারো তামান্না তুলে ধরছে মালিহা। 

 

 বিকেলের দিকে ছাদে আসা হয়না কখনোই। তবুও আজ কেন যেন ইচ্ছে হলো, তাই চলে এলো আবরার। দুই হাতে রেলিঙে ভর করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আবরার। অন্যদিন হলে হয়ত এসময় আকাশের দিকে তাকানো সম্ভব হতো না রোদের ঝলকে। কিন্তু আজ  তো মেঘলা আকাশ।  কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশের বিশাল হৃদয়।

যদিও  আকাশের দিকে সময় ভাবে তাকানো হয়নি কখনোই। 

হয়ত ইচ্ছে টা ই হয়নি।খোজা হয় নি কখনো আকাশের সৌন্দর্য।  

ইচ্ছে হয়নি আকাশের নীলের মাঝে হারিয়ে যেতে। নীলের মাঝে শুভ্র মেঘ গুলোও মন কাড়েনি কখনোই।  কিন্তু আজ কেন যেন মেঘলা আকাশ টা ই নাড়া দিয়ে যাচ্ছে মনের গহীনে। 

আজ যেন এই প্রথম মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে আবরার। 

কাউকে সরি বলার মাঝে এতো প্রশান্তি কিভাবে পাওয়া যায়!

নিজেকে খুব হাকলা মনে হচ্ছে। 

 

-কত খুশিটাই না হয়েছে মেয়েটা! 

ওর চোখে খেলা করছিলো এক অনন্য আনন্দ।আচ্ছা আমার কি উচিৎ হয় ওর সাথে  সবসময় এতো বাজে বিহেভ করা? 

ও তো বলেছেই এক বছর পরে চলে যাবে। আর ও তো কোনো অন্যায় ও করেনি। তাহলে কেন বাজে ব্যবহার করবো ওর সাথে? 

নাহ্! এখন থেকে ভালো ব্যবহার ই করবো। না না ভালো ব্যবহার করলে যদি ও অন্য কিছু মনে করে। 

বেশি খারাপ ব্যবহার না করলেও ভালো ব্যবহার করবো না। একটা বছর ই তো এরপর তো রিয়াকেই নিয়ে আসবো এ বাড়িতে।

ইরে আমার মোবাইল তো ভেঙে ফেলেছি রিয়া হয়ত কল করছে। ও নো। 

 

তাড়াতাড়ি নিচে এসে তিন্নির রুমে গেলো আবরার। 

 

আবরারঃ এই তিন্নি তুই কি আমার সিম টা এনেছিলি? 

 

তিন্নিঃ হুম ভাইয়া এনেছিলাম। আমিতো জানি তুমি পরে আবার খুঁজবা তাই নিয়ে এসেছি। 

 

আবরারঃ ভালো করেছিস,সিমটা  দে তো, তাড়াতাড়ি দে।

 

তিন্নিঃ প্রতিদান হিসেবে কি পাবো? 

 

আবরারঃ মানে? 

 

তিন্নিঃ এই যে কষ্ট করে এনে রাখলাম! 

 

আবরারঃ ওহ, তো বল কি চাস? 

 

তিন্নিঃ ভাইয়া আমাদের কলেজ থেকে ট্যুরে যাবে কয়েকদিনের মধ্যে। আমার বান্ধবীরা সবাই যাবে। আমিও যেতে চাই। প্লিজ ভাইয়া না কইরো না। 

 

আবরারঃ ছেলেরাও যাবে? 

 

তিন্নিঃ হুম ভাইয়া যাবে তবে অন্য গাড়ীতে।  

 

আবরারঃ কোনো দরকার নেই যাওয়ার। এসব চিন্তা বাদ দে। ওখানে অনেক প্রব্লেম হয়। 

 

তিন্নি প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,

 

তিন্নিঃ প্লিজ ভাইয়া! সুমা,তিনা, মিনা ওরা সবাই যাবে। 

 

আবরারঃ তিনা ও যাবে? 

 

তিন্নিঃ হ্যা ভাইয়া,ওর মুরাদ ভাইয়া  নাকি অনুমতি দিয়েছে।  

 

(আবরারের বন্ধু মুরাদ) 

 

আবরারঃআমি আম্মির সাথে আলাপ করে দেখছি কি করা যায়। 

 

তিন্নিঃ ভাইয়া তুমি তো জানো আম্মি কোনো দিন ও যেতে দিবে না। এর আগের বছর ও আম্মির জন্য যেতে পারিনি।প্লিজ ভাইয়া। প্লিজ না কইরো না!

 

তিন্নির চুল গুলো হালকা টান দিয়ে বলে উঠলো,

আবরারঃ আচ্ছা তিন্নি বুড়ি, যাস। 

 

তিন্নিঃ সত্যি বলছো ভাইয়া? 

 

আবরারঃ হুম সত্যি বলছি,আমি মুরাদের সাথে কথা বলে শিওর হয়ে নেই তিনা যাবে কিনা। 

 

তিন্নিঃ থ্যাংক ইউ ভাইয়া।

 

খুশিতে লাফাতে শুরু করলো তিন্নি।  

 

(মালিহা সবসময় তিন্নিকে দ্বীনের তালীম দেওয়া সত্ত্বেও তিন্নি প্রায় ই নিজেকে গুলিয়ে ফেলে তথা কথিত আধুনিক বান্ধবীদের সাথে)

 

আসরের সালাত আদায় করে কুরআন টা নিয়ে বসেছে মালিহা। 

আবরার রুমে এসে ওর অন্য মোবাইলে সিমটা ঢুকিয়ে তাড়াতাড়ি কল দিলো রিয়াকে।

 

খুব চিন্তা হচ্ছে আবরারের। 

 

-আহারে রিয়া হয়ত অনেক বার কল করেছে। দূর আমিও না! 

না জানি রাগ করলো কিনা। 

উহ্ এতো ওয়েটিং কেন। 

১০ মিনিট ধরে ট্রাই করছি। ও কি দেখছে না। 

 

প্রায় ২০ মিনিট পরে রিয়া কল করলো। 

 

আবরারঃ I’m sorry জানপাখি।  

 

রিয়াঃ But why?

 

আবরারঃ কেন মানে? তুমি সারাদিন কল করোনি আমাকে? 

 

রিয়াঃ আসোলে কি বাবু, খুব বিজি ছিলাম তাই কল করতে পারিনি। 

 

এটা শুনে একটু কষ্ট পেলো আবরার। 

-তারমানে আমার ধারনা ভুল। ও একবার ও কল করেনি আমাকে।

 

আবরারঃ ওহ,আচ্ছা এতোক্ষণ কার সাথে কথা বললা? 

 

রিয়াঃহঠাৎ জিজ্ঞেস করছো যে?

 

আবরারঃ কেন, এটা জিজ্ঞেস করার অধিকার কি নেই আমার? 

 

রিয়াঃ Come on আবরার। থার্ড ক্লাস মানুষদের মতো কি সব অধিকার অধিকার করছো? 

যাইহোক ইমপোর্টান্ট কিছু বলবা?

 

আবরারঃ সারাদিন কথা বলো নি আর এখন জিজ্ঞেস করছো ইমপোর্টান্ট কিছু বলবো কিনা? 

 

রিয়াঃ তো কি বলবো?  I’m sorry jan, ক্ষমা করে দিও আমাকে,এসব বলবো? 

ন্যাকামো করবো?

 

আবরারঃ এভাবে বলছো কেন? ভালোভাবে একটু কথা বললেই তো পারো। 

 

রিয়াঃ ওহ হ্যা তোমাকে তো বলা ই হয়নি, মনে আছে তো আগামী মাসে আমার জন্মদিন?

 

আবরারঃ হুম আছে। 

 

রিয়াঃ এবার জন্মদিনে কিন্তু ডায়মন্ড এর নেকলেস চাই। ok babu? 

 

আবরারঃ তুমি যা বলো তাই হবে। এই সামান্য একটা জিনিস চাইছো আমি তো ভেবেছিলাম কি না কি দাবি করো, হাহাহা। 

 

রিয়াঃ আচ্ছা জানু আমার না কিছু টাকা লাগবে।

 

আবরারঃকত লাগবে সেইটা বলো। 

 

রিয়াঃ বেশি না আপাতত ৫ লাখ দিলেই হবে। 

 

আবরারঃ ok, কিন্তু কি করবে? 

 

রিয়াঃ তুমি আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছো?

 

আবরারঃ আরে বাবা না। এখন যাই তাহলে। love you sona. 

 

রিয়াঃ love you too baby. 

 

জায়নামাযে বসেই আবরারের সব কথা শুনছিলো মালিহা। 

 

মন খারাপ করতে না চাইলেও বারবার দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে মালিহা। 

 

আবরার কে কিছু না বলেই  জায়নামাজ টা উঠিয়ে রেবেকা বেগম এর রুমে চলে গেলো মালিহা। 

 

রিয়ার সাথে কথা বলে মন টা খুব খারাপ হয়ে গেলো আবরারের। 

 

-ও এমন করে কথা বলে কেন আমার সাথে? একটু ভালো করে কথা বললে কি হয়! 

 

নাহ্! কিচ্ছু ভালো লাগছে না। 

 

আররার ও চলে গেলো রেবেকা বেগমের রুমে। 

 

মালিহা আর রেবেকা বেগম গল্প করছে। 

 

আবরারঃ আম্মি তোমার সাথে একটু ইমপোর্টান্ট কথা আছে। 

(মালিহা চলে গেলে খুশি হয় আবরার)

 

রেবেকা বেগম সেটা বুঝেই বলে উঠলো,

 

রেবেকা বেগমঃ হুম বল। বৌমা তুমি এখানেই বসো। 

 

আবরারঃ Mr.এ.কে কল করেছিলো।

(এ.কের সাথে অনেক পুরনো শত্রুতা আবরার দের সাথে) 

 

রেবেকা বেগম খুব অবাক হয়ে গেলো। 

 

রেবেকা বেগমঃ কেন কল করেছিলো, কি বললো? 

 

আবরারঃ সে আপোষ চায়। 

 

রেবেকা বেগমঃ মানে? 

 

আবরারঃ আগামীকাল তার অফিসে ইনভাইট করেছে। সেখানে সে আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়। পুরোনো শত্রুতা ভুলে যেতে চায়। 

 

রেবেকা বেগমঃ দেখ বাবা আমার কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না। 

এটা হয়ত ওর কোনো চক্রান্ত। 

 

আবরারঃ না আম্মি,খুব ভালো ভাবেই কথা বললো। ওর সাথে বন্ধুত্ব হলে আমাদের ও উপকার হবে। 

 

রেবেকা বেগমঃ দেখ বাবা যেভাবে  করলে ভালো হয় সেভাবেই কর। তবে সাবধান কিন্তু। 

 

আবরারঃ আচ্ছা আম্মি চিন্তা কইরো না। এখন যাই তাহলে। 

 

রেবেকা বেগমের কাছ থেকে এ.কের ব্যাপারে সবকিছু শুনে নিলো মালিহা৷ 

 

সকালে ব্রেকফাস্ট শেষ করে অফিসে গেলো আবরার। 

 

রেবেকা বেগম আর মালিহা তার রুমে বসে গল্প করছে,এমন সময় রেবেকা বেগমের মোবাইল টা বেজে উঠলো। 

 

আবরারের পি.এ. রিয়াদ কল করেছে৷ 

 

রেবেকা বেগমঃ আসসালামু আলাইকুম।  

 

রিয়াদঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ম্যাডাম, তিন্নি ম্যাডাম বা সাবিহা ম্যাডাম কি কাছে আছেন? 

 

(রেবেকা বেগম অসুস্থ বিধায় তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে না রিয়াদ)

 

রেবেকা বেগমঃ না বাবা,কেন  কি হয়েছে আমাকে বলো। 

 

রিয়াদঃ না ম্যাডাম তেমন কিছু না। অন্য কেউ আছে পাশে? 

 

রেবেকা বেগমঃ হ্যা বৌমা আছে। 

 

রিয়াদঃ তাকে একটু দিন প্লিজ! 

 

রেবেকা বেগম মালিহার কাছে মোবাইল টা দিলো। 

 

মালিহাঃ আসসালামু আলাইকুম।  

 

রিয়াদঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ম্যাডাম আবরার স্যারকে পুলিশে ধরে থানায় 

নিয়ে গেছেন। আপনি প্লিজ থানায় চলে আসুন। আমি ম্যাসেজে ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি। 

 

 

মালিহার মুখ দিয়ে একটা শব্দ ই বের হলো,

 

ইন্নালিল্লাহ…….

 

 

“দেখা হবে জান্নাতে”

লেখিকাঃরহিমা খানম (দ্বীনের আলো)

২০ 

 

মালিহাঃ আসসালামু আলাইকুম।

 

রিয়াদঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমি রিয়াদ। আবরার স্যারের PA. ম্যাডাম আবরার স্যারকে পুলিশে ধরে থানায় 

নিয়ে গেছেন। আপনি প্লিজ থানায় চলে আসুন। আমি ম্যাসেজে ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

 

মালিহার মুখ দিয়ে একটা শব্দ ই বের হলো,

 

ইন্নালিল্লাহ…….

 

মালিহার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। এটা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের ন্যায়। 

 

কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো মালিহা। 

 

নিঃশব্দে মোবাইল টা কানে নিয়েই দাঁডিয়ে রয়েছে ও। 

 

রেবেকা বেগম খুব উদবিগনো হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

 

রেবেকা বেগমঃ কি হয়েছে বৌমা? 

আমার আবরার ঠিক আছে তো? 

কি হলো বৌমা, কথা বলো।

 

রেবেকা বেগম এর ডাকে হুশ ফিরলো মালিহার। 

 

সাথে সাথে স্মরণ হলো মানবতার সমাধান আল-কুর’আন এর এই আয়াত টার কথা। 

 

“এবং অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।”

–সূরা বাক্বারা : ১৫৫

 

-আল্লাহ নিশ্চয় ই আমাদের কোনো পরীক্ষা নিচ্ছেন। না না এভাবে ভেঙে পরলে চলবে না। 

আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। 

(মনে মনে ভাবছে মালিহা) 

মুহুর্তের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিলো মালিহা। 

 

রেবেকা বেগমঃ কি হলো বউমা? কিছু বলছো না কেন? 

 

মালিহাঃ হ্যা মা বলছি একটু অপেক্ষা করুন। 

 

রিয়াদঃ হ্যালো,হ্যালো, ম্যাডাম শুনছেন? হ্যালো ম্যাডাম কথা বলুন। 

 

মালিহাঃ হ্যা রিয়াদ সাহেব আপনি ঠিকানা পাঠিয়ে দিন আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই আসছি ইনশাআল্লাহ। আর হ্যা আপনিও সেখানে চলে আসুন। 

 

রিয়াদঃ জ্বী ম্যাডাম। 

 

রিয়াদের সাথে কথা বলা শেষ হলেই রেবেকা বেগম বলে উঠলেন, 

 

রেবেকা বেগমঃ বৌমা, আমাকে কিছু বলছো না কেন? কি হইছে? কোথায় যাবে? 

 

মালিহা রেবেকা বেগম কে এমন ভাবে কথাটা বললেন যেন কিছুই হয়নি। বিভিন্ন হাদিস কুর’আন এর মাধ্যমে মালিহা শান্তনা দিলো শাশুড়ী কে। 

রেবেকা বেগম ভেঙে পরলেও মালিহার কথা বার্তা শুনে নিজেকে কিছুটা শান্ত করলেন। 

 

রেবেকা বেগমঃ কিভাবে কি হলো বৌমা কিছুই তো বুঝতে পারছি না। ভেবেছিলাম হয়ত এমন কিছুই হবে। হয়ত এ.কের ওইখানে গিয়েই এমন হয়েছে। এখন আমি কি করবো বৌমা? 

 

মালিহাঃ আপনি চিন্তা করবেন না মা। ওখানে গিয়েই সবকিছু জানতে পারবো ইনশাআল্লাহ।  আমি তিন্নিকে নিয়ে যাচ্ছি।  

আপনি ওজু করে তাড়াতাড়ি দুই রাকাত সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন। 

আমিও সালাত আদায় করে তারপরেই বের হবো ইনশাআল্লাহ।  

 

আল্লাহ সবকিছুর সমাধান করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।  এই প্রতিশ্রুতি তো আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। 

 

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা সবর ও সালাতেরর মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।”

–সূরা বাক্বারা : ১৫৩

 

রেবেকা বেগমঃ হ্যা মা আমি সালাত আদায় করেই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছি। আমাকে ও সাথে নিয়ে চলো মা। 

 

মালিহাঃ না মা, আপনি এখানেই থাকেন। যা হবে আমি কল করে আপনাকে জানিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ।  

 

এখন যান তাড়াতাড়ি সালাতে যান। 

 

দুই রাকাত সালাত আদায় করে মহান রবের কাছে সাহায্য চেয়ে রিয়াদের দেওয়া ঠিকানায় রওনা হলো মালিহা আর তিন্নি। 

 

তিন্নিঃ ভাবি আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। কি দিয়ে যে কি হয়ে গেলো?

 

মালিহাঃতা’আক্কালতু আল্লাহ। আল্লাহর উপর তা’আক্কুল করো। 

আল্লাহ উত্তম সমাধান ই দিবেন ইনশাআল্লাহ।  

 

মালিহার কথা শুনে তিন্নি কেমন যেন অবাক হয়ে গেলো।

 

-এই বিপদের মধ্যে ভাবির চোখে না আছে একটু পানি আর না আছে একটু হা হুতাশ।  এটা কি ধৈর্য নাকি অন্য কিছু? 

আমিও না কি যে ভাবি না, ভাইয়া তো আমাদের ই আপন বেশি, ভাবির সাথে বিয়ে হলো এই তো কয়েকটা দিন। তাইতো ভাবির হয়ত অতটা খারাপ লাগছে না যতটা আমাদের লাগছে।

(মনে মনে বলছে তিন্নি) 

 

তিন্নিকে স্বান্তনা দিলেও ভিতরে ভিতরে ঝলসে যাচ্ছে মালিহার।

 

-এই কয়েকটা দিনে কিভাবে যে মানুষ টাকে এতো ভালোবেসে ফেলেছি। ভালোবাসবোই না কেন, এটা যে আল্লাহ প্রদত্ত।

 

“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।”[সূরা রূম, আয়াত: ২১]

 

 প্লিজ আল্লাহ তুমি তাকে তোমার হেফাজতে ই রেখো।

বিন্দু মাত্র আঁচড় ও যদি ন না লাগে তার গায়ে। 

 

(মনে মনে বলছে আর হৃদয়ের অশ্রু ক্ষরণ হচ্ছে মালিহার)

 

আধা ঘন্টার মধ্যেই ওরা পৌঁছে গেলো নির্দিষ্ট থানায়। 

 

থানার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ। 

তিন্নি কে দেখে ই সামনে এগিয়ে এলো রিয়াদ। 

 

রিয়াদঃ তিন্নি ম্যাডাম এসেছেন আপনারা?  

 

তিন্নিঃ হ্যা এসেছি। ভাইয়া কোথায়? 

 

রিয়াদঃ ভেতরেই আছেন। ইনি কে? 

 

তিন্নিঃ ইনি আমার ভাবি মানে ভাইয়ার স্ত্রী। 

 

মালিহাঃ আসসালামু আলাইকুম।  

 

রিয়াদঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ম্যাডাম আসুন,ভেতরে আসুন। 

 

রিয়াদ কে অনুসরণ করে তিন্নি আর মালিহা ভিতরে প্রবেশ করলো। 

 

আবরার কে এখনো জেলে ঢুকানো হয় নি৷ পুলিশের হেফাজতে DIG অফিসারের সামনেই বসে আছে আবরার। 

বিশিষ্ট নামকরা বিজনেসম্যান হওয়ায় সবার ই পরিচিত আবরার। 

কেস টা একটু হাই লেভেলের তাইতো থানায় নিয়ে আসা হয়েছে আবরার কে। 

আবরারের সাথে উপরের লেভেলের প্রায়  সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক। 

কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। 

আবরার কে যে হাতেনাতেই ধরা হয়েছে। এখানে না এনে যে কোনো উপায় ও ছিলো না।

SP আনিচুর রহমান আবরারের খুব ঘনিষ্ঠ  বন্ধু।খবর পেয়েই ছুটে এসেছে আবরারের কাছে। কিন্তু তার ও কিছু করার নেই। 

আবরার এতো করে বলছে যে ও এসব করেনি।  কিন্তু না কেউ ই শুনছে না ওর কথা। কিভাবেই বা শুনবে, সব প্রমান যে ওর এগেইনষ্টে। 

২৪ ঘন্টা সময় দেওয়া হয়েছে

এর মধ্যে যদি আবরার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারে তাহলে জেলে পাঠানো হবে ওকে। 

তারপর দুই একদিনের মধ্যে কেস টা হয়ত কোর্টেও উঠে যাবে। 

 

বিশিষ্ট বিজনেসম্যান আবরারের এমন কর্মের খবর পেয়েই মিডিয়া যেন তোলপাড় হয়ে উঠেছে। আবরারের অনুরোধে কোনো সাংবাদিক ই আবরারের ইন্টারভিউ নিতে পারেনি। 

মিডিয়া জগৎ ওত পেতে আছে এমন এক খবরে  মিডিয়া জগৎ কে কিভাবে রমরমা করে তোলা যায়। তাইতো আবরার কে নিয়ে  তাদের আগ্রহের শেষ নেই।

 

রিয়াদ,তিন্নির সাথে মালিহাকে দেখে বেশ অস্বস্তি তে পরে গেলো আবরার। 

রিয়াদের মাধ্যমে মালিহা আনিচুর রহমার এর ব্যাপারে জেনে নিয়ে,রিয়াদ কে দিয়েই এক সাইডে ডেকে নেয় ওকে। 

আপাদমস্তক ঢাকা আবরারের স্ত্রীকে দেখে বেশ অবাক হয় আনিচ(আনিচুর রহমান)

-আবরার এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে? 

ওহ নো!

মালিহাঃআসসালামু আলাইকুম, আনিচ ভাই। 

আনিচঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম।  ভাবি কেমন আছেন। 

 

মালিহাঃ এইতো ভাই আছি আলহামদুলিল্লাহ। একজেক্টলি কি হয়েছে আমাকে একটু খুলে বলবেন প্লিজ! 

 

(এ মেয়েকে যেমন গাইয়া মনে করেছি আসোলে তো তেমন না,কথা বার্তা শুনেতো বেশ স্মার্ট ই মনে হচ্ছে)-আনিচ।

 

আনিচঃ আসোলে ভাবি কিভাবে কি হয়ে গেলো কিছু ই বুঝতে পারলাম না। আমার বিশ্বাস আবরার এমন টা করতেই পারেনা। 

 

ও খুব ভালো মনের মানুষ।  কিন্ত্য কি করবো ভাবি, সব প্রমান যে ওর এগেইনষ্টে। আর সব কিছু যে সিসি টিভি তে রেকর্ড করা আছে। নিজের চোখ কে ই যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।