–নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য গলায় রাশি দিচ্ছি। তুই কেনো আমার রুমে আসলি? কেনো বাঁচালি আমাকে? বাচতে চাইনা আমি, ছেড়ে দে আমাকে।
–কি করছো এটা তুমি? তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? এমন পাগলামি কেউ করে?
–হ্যা আমি পাগল হয়ে গেছি। এজন্যই আমি আর বেচে থাকতে চাই না।
–এদিকে আসো, বসো এখানে। একটু পর ছেলেপক্ষ আসবে। বাড়িতে একপ্রকার অনুষ্ঠানই হচ্ছে। এর মাঝে তুমি পাগলামো করতেছো। কি হয়েছে তোমার? আমায় অন্তত খুলে বলো।
–মামুন, এই বিয়ে আমি করতে পারবো না।
–তুমি কি আরো পড়ালেখা করতে চাও? আমি কি মামাকে বলবো?
–সেটা নয়, আমি আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি।
–তো সেটা মামাকে বলেছো?
–কি বলবো আমি? শেষ ২ মাস যাবত আমি তার কোনো খবর পাচ্ছি না। এদিকে আমি ৩ মাসের প্রেগন্যান্ট।
–কিহ? কি বলছো এসব।
–ঠিকই বলছি। এখন বল, কি করে আমি বাবাকে ওর কথা বলবো? ২ মাস আগে মায়ের অসুস্থতার কথা বলে গ্রামের বাড়ি গেছে। এরপর থেকে ওর ফোন বন্ধ, সব দিকে খোজ নিয়েছি, কেউ জানেনা ও কোথায়, ওর গ্রামের বাড়ি কোথায়। এখন আমি বাবাকে কি বলবো?
–প্রেম করলেই কি আকাম করতে হয়? ছাগল কোথাকার(বিড়বিড় করে)
–এখন আমি কি করবো বল, আমার যে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমি যে প্রেগন্যান্ট।
–আচ্ছা, এত তাড়াহুড়ো করো না, ওরা দেখতে আসছে, বিয়ে যে এখনই হয়ে যাবে এমন তো নয়, তুমি রেডি হয়ে যাও। কিছু সময় তো হাতে পাবো। আমি বরং ওকে খুজে বের করবো।
–তুই পারবি?
–চেষ্টা তো করি। না পারলে নাহয় আমি এসে তোমায় ফাঁসি দিয়ে যাবো।
–প্লিজ মামুন, খুজে দে ওকে।
–ওর নাম,নাম্বার, ঠিকানা সব দাও আমাকে। আমি আজ থেকেই ওকে খুজতে নামবো।
–আচ্ছা, নে।
.
হঠ্যাৎ মামুনের মা আর প্রিয়ার মা একসাথে রুমে ঢুকে পড়ে।
প্রিয়া হচ্ছে মামুন এতক্ষণ যার সাথে কথা বলছিলো সে,
প্রিয়া মামুনের মামাতো বোন এবং ২ বছরের বড়।
প্রিয়াকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে তাই প্রিয়ার বাবা বোনকে দাওয়াত দিয়েছে। মায়ের সাথে মামুনও নানুর বাড়িতে বেড়াতে আসে।
প্রিয়ার রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মজা করেই দরজায় ধাক্কা দিয়েছিলো।
ওমনি দরজাটা খুলে যায়। প্রিয়াকে এভাবে গলায় রশি লাগিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মামুন দৌড়ে এসে জাপটে ধরে গলা থেকে রশি খুলে।
তাড়াহুড়োয় প্রিয়া দরজা লক করতেই ভুলে গেছিলো
তাই প্রিয়া এই যাত্রায় বেচে যায়।
.
প্রিয়ার মা আর মামুনের মা প্রিয়ার রুমে ঢুকেই দেখে প্রিয়ার হাতে ফাঁসির দড়ি, যা ফ্যানের সাথে বাঁধা।
মামুনের মা এগিয়ে গিয়ে মামুনকে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
চড়টা এতটাই জোরে ছিলো যে পুরুষ মানুষ হয়েও মামুনের চোখ দুটো পানিতে ভরে ওঠে।
মামুন গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে মায়ের দিয়ে তাকিয়ে আছে। বলা নেই, কওয়া নেই এসেই চড় মেরে বসলো।
চড় কি জন্য খেলো মামুন নিজেই জানে না।
এদিকে প্রিয়াও ফুফুর এমন আচরনে বেশ অবাক হয়।
–ভাবি, আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। আমার ছেলের হয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।(মামুনের মা)
–আফা, ক্ষমা চেয়ে কি হবে? এখন এর একটা বিহিত করতে হবে। আমার সমাধান চাই।(প্রিয়ার মা)
–কি করতে হবে বলেন, আপনি যা বলবেন আমি রাজি।
–বাহিরে আসেন। এই বলে প্রিয়ার মা এবং মামুনের মা দুজনই বাহিরে চলে যায়।
এদিকে প্রিয়া আর মামুন দুজন হ্যা হয়ে মায়েদের চলে যাওয়া দেখছে।
–ভাই তোর লেগেছে? কি করেছিস তুই? ফুফু কেনো মারলো তোকে?
–আমি কিছুই জানি না। মা কখনো আমার গায়ে হাত তোলে নি। আমি হয়তো বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছি। কিন্তু জানি না আমি কি করেছি।
–আমিও বুঝতে পারলাম না কি হলো!
–মামি মাকে কিসের সমাধান করার কথা বললো?
–জানি না রে, কিছু হয়নি তো?
–কিছু একটা তো হয়েছে।
–তুই বরং বাহিরে গিয়ে দেখ কি হয়েছে।
–আচ্ছা।
.
মামুন বাহিরে এসে দেখে সব কিছুই স্বাভাবিক। সবাই সবার মতো কাজ করতেছে। অতিরিক্ত কোনো কিছু বোঝা যাচ্ছে না।
ধীরেধীরে সন্ধ্যা হয়ে আসে। মামুন বেশ অবাক হয়। কারন আজ ছেলেপক্ষ প্রিয়াকে দেখতে আসার কথা।
কিন্তু কেউই আসলো না আজ।
সন্ধ্যায় হঠ্যাৎ নানুর বাড়িতে বাবা এসে হাজির।
মামুন বাবাকে দেখে সামনে এগিয়ে আসে, কিন্তু বাবা মামুনকে পাশ কাটিয়ে ঘরে চলে যায়।
সবার এমন অদ্ভুত আচরণে মামুন বেশ অবাক হয়।
কেউ মামুনের সাথে তেমন একটা কথা বলছে না।
রাতের তখন প্রায় ৮টা।
মা এসে মামুনকে একটা পাঞ্জাবি দিয়ে বলে তৈরী হতে।
সকালে মায়ের হাতে চড় খেয়ে এখনো ভয়ে থাকায় মাকে ২য় বার প্রশ্ন করার সাহস হয়নি যে পাঞ্জাবিটা এখন কেনো পড়তে হবে।
ভয়ে ভয়ে মায়ের সামনেই মামুন তৈরী হয়ে যায়।
হঠ্যাৎ প্রিয়াও বউয়ের সাজে এসে মামুনের পাশে বসে।
মামুন বেশ অবাক হয়।
প্রিয়ারও মামুনে দেখে একই অবস্থা।
একটুপর দুজনই বুঝতে পারে যে তাদের বিয়ে হতে চলেছে।
সবার সামনেই মামুন রেগে যায়।
–সেই সকাল থেকে দেখে আসতেছি তোমরা সবাই আমার সাথে অদ্ভুত আচরন করতেছো। এখন আবার ওনার সাথে আমার বিয়ে দিচ্ছো। কি হচ্ছে এসব?
–কি হচ্ছে? আমার মেয়ের এই অবস্থা করার আগে সেটা ভেবে দেখোনি?(প্রিয়ার মা)
–মানে?
–আমি সব শুনেছি বাহির থেকে। তোমার জন্য আমার মেয়ে আজ মরতে গিয়েছিলো।
–মামি, কি সব বলছেন?
–আমি অন্ধ নই, তোমাকে আমি কতটা বিশ্বাস করতাম। এবাড়িতে আসলে সব সময় প্রিয়া প্রিয়া করতে, সারাক্ষণ ওর রুমেই থাকতে। তখনতো আর বুঝিনি যে পিঠে ছুরি মেরে বসবে।
মায়ের এমন কথা শুনে প্রিয়া দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়, এবং বেশ শব্দ করেই দরজাটা লাগিয়ে দেয়।
মামুন ভালো করেই বুঝতে পারে যে প্রিয়া কিছু একটা করে ফেলতে পারে। তাই সবার সামনেই মামুন প্রিয়ার পেছনে দৌড় দেয়।
মামুনের দৌড় দেখে মামুনের মা ও যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ায়।
–থাক ভাবি, আপনি যাইয়েন না, ওদেরকে ওদের ব্যাপারটা বুঝে নিতে দিন। একটু সময় দিন।
প্রিয়াী মায়ের এমন কথায় মামুনের মা আবার বসে পড়ে।
.
–দেখো আপু, আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না। ওনাদের হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।(মামুন)
–আমি সবই বুঝতে পারছি। ওনারা এটাই ভেবেছে যে এই বাচ্চার বাবা তুই।
–কি বলছো এসব?
–ঠিকই বলছি, এই ভুল ভেবেই তোর সাথে আমার বিয়ে দিচ্ছে।
–না না, এটা হতে পারে না। আমি এক্ষুনি সবাইকে সব খুলে বলবো। এই বিয়ে আমি কিছুতেই করতে পারবো না। আমি কেনো তোমার এই পাপের ভাগ নেবো? এটা কিছুতেই হতে পারে না।
–তোর সাথে বিয়ে হয়ে গেলে হয়তো বিষয়টা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সবাই যদি এটা জানে যে এই বাচ্চার বাবা অন্য কেউ। বিষয়টা আর চাপা থাকবে না, সবাই জেনে যাবে। আমার মরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
–তোমার জন্য আমি আমার লাইফটা নষ্ট করতে পারবো না। তোমার মা আমাকে আর আমার মাকে যেই কটু কথা বলেছে, তার মুখের ওপরই এখন আমি সেই জবাব দিবো।
–এমনটা করিস না, আমি শেষ হয়ে যাবো।
–আরে ভাই, তার জন্য আমাকে কেনো? আমি কি করেছি? কোন ছেলের সাথে গিয়ে নষ্টামি করে পেট বাধিয়ে এসেছো। এখন সেটার দায়িত্ব কি আমাকে নিতে হবে নাকি?
–এভাবে বলতে পারলি?
–তো কিভাবে বলবো? সবাই মিলে অন্যের পাপ আমার ওপর চাপাচ্ছে। আমি কি মুখ বুঝে সহ্য করবো?
–সবাই এখন এটাই জানে যে এই বাচ্চার বাবা তুই, আমি এখন কোথাও পালিয়ে গেলে, বা আত্মহত্যা করলেও সবাই তোকে সন্দেহ করবে।
–ভয় দেখাচ্ছো?
–ভয় না, এটাই সত্য।
–এসব বলে আমাকে কাবু করতে পারবে না। আমি গেলাম।
মামুন এটা বলেই হাটা দেয়, এবং দরজার সামনে গিয়ে দরজা খোলার সময় একবার পেছনের দিকে ফিরে তাকায়।
তাকিয়ে দেখে প্রিয়া টেবিলের ওপর রাখা ফল কাটার ছুরিটা হাতে নিচ্ছে।
মামুন আবার দৌড়ে গিয়ে প্রিয়ার হাত থেকে ছুরিটা কেড়ে নেয়।
–তুমি কি আসলেই পাগল হয়ে গেছো? কি করছো?
–আমার আর বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই। কি নিয়ে বাচবো আমি? যাকে বিশ্বাস করে ভালোবেসেছিলাম, তাকে সেই ভালোবাসার প্রমান দিতে গিয়ে নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে এসেছি। আজ আমার এই সময়ে সে আমার পাশে নেই। জানি না সে ফিরে আসবে কিনা। আবার এই বাচ্চাটা জন্ম নিলেতো সে তার বাবার পরিচয় পাবে না। আমি যে একদম শেষ হয়ে গেছিরে। কি করবো আমি? এর চেয়ে ভালো নিজেকেই শেষ করে দেবো।
–ছাড়ো এটা, কি করছো?
–না, ছুরিটা আমাকে দে। তুই বাবা মাকে সবটা খুলে বল। আর নাহয় চল, আমিই সবটা খুলে বলছি।
–কি বলবে?
–পুরো সত্যটা খুলে বলবো।
–এরপর তোমার কি হবে? যদি তোমার প্রেমিক আর কখনো ফিরে না আসে। তাহলে এই বাচ্চা নিয়ে কই যাবে?
–জানি না।
.
মামুন প্রিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে।
–জানো? কখনো কাউকে ভালোবাসিনি আমি। বিয়ের পর সবটা উজাড় করে বউকে ভালোবাসবো বলে। নিজের দিক থেকে বউয়ের হক নষ্ট করিনি। আর আজ আমার ভাগ্যে তুমি। যে কিনা বিয়ের আগেই…..।
প্রিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।
–আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিবে?
–বল।
–এই বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলবে?
–কক্ষনো না। জন্মদানের ক্ষমতা আমার আছে। কিন্তু কাউকে খুন করার অধিকার আমার নেই। প্রয়োজনে আমি নিজেকে শেষ করতে রাজি, বাচ্চা না।
–আমি পারবো না তোমাকে বিয়ে করতে। যে কিনা বিয়ের আগেই স্বামীর হক নষ্ট করে আসছে। চলো মামা মামিকে তুমি নিজেই সব বলবে।
–ঠিক আছে। চল…..।
.
প্রিয়া এসে সবার সামনে সবটা খুলে বলে।
প্রিয়ার বাবা সবার সামনেই প্রিয়াকে মারতে শুরু করে।
ওমনি মামুনের মা ভাইয়ের সামনে এসে দাড়ায়।
–ভাইয়া ছাড়ো, এভাবে কেউ কাউকে মারে?
–ছেড়ে দে, ওর বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই। আমাদের মান ইজ্জত সব ডুবিয়ে এসেছে। এতক্ষণ ভেবেছিলাম বিষয়টা ঘরের মধ্যেই আছে, যার সমাধান করতে পারবো। এখন কি হবে? আমার মান ইজ্জত কিছু থাকবে?
–শুধু নিজের কথাই ভাবছো। মেয়ের কথাতো একটু ভাবো।
–কি করবো আমি?
–ওই ছেলের খোজ খবর নাও।
প্রিয়ার বাবা ছেলের খোজ বর জানতে চায়। কিন্তু প্রিয়া কিছুই বলতে পারেনি। মোবাইল বন্ধ, আগের ঠিকানায় ও নেই, বন্ধু বান্ধবরাও কেউ তার খবর জানে না।
নিজের ভাইয়ের মেয়ে, তাই ভাইয়ের মান ইজ্জতের কথা ভেবে নিজের ছেলের সাথে এক প্রকার জোর করেই প্রিয়ার বিয়ে দেওয়া হয়।
মামুনের বাবা অবশ্য এতে অমত ছিলো। কিন্তু পরে মামুনের মায়ের জোরাজুরিতে তিনিও রাজি হয়ে যান।
.
সেই রাতেই মামুনের মা প্রিয়া আর মামুনকে নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যায়।
রাতের ২ টায় মামুন নিজের রুমে ঢুকে দেখে প্রিয়া রুমে নেই। বারান্দায় গিয়ে দেখে প্রিয়া বারান্দার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছে।
পায়ের শব্দের প্রিয়া পেছনে তাকায়। তাকিয়ে দেখে মামুন গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ছে।
প্রিয়া ধীরে পায়ে মামুনের পাশে বসে। ওমনি মামুন বিছানা থেকে নিজের বালিশ নিয়ে সোফায় এসে শুয়ে পড়ে।
–মামুন….
–(চুপ)
–মামুন
–(চুপ)
–আমি জানি তোর সাথে যা হয়েছে খুবই অন্যায় হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ। আমি চাইনি এই বিয়েটা করতে, কিন্তু কিভাবে যে সব হয়ে গেলো।
–দয়া করে আমার সাথে আর কোনো কথা বলো না। মাথাটা খুবই খারাপ আছে, দুরে যাও। যে তোমায় বিয়ে করিয়ে নিয়ে এসেছে, তার কাছে গিয়ে দুঃখের কান্না কাঁদো। আমার সামনে না।
–(প্রিয়া মাথা নিচু করে আছে)
–লজ্জা করলো না আমার সব স্বপ্নগুলো এভাবে শেষ করে দিতে? কি অপরাধ করেছিলাম আমি?
–ওরা আমায় জোর করে তোর সাথে বিয়ে দিয়েছে। আমি কি করতাম বল।
–মরে যেতে। কেনো যে আমি ওই বাড়িতে গেলাম, আর কেনো যে ঐ সময় আমি বাচাতে গেলাম। আমারই ভুল হয়েছে।
–এভাবে বলতে পারলি? (মামুনের কাঁধে হাত রেখে)
–ছাড়, তোর ওই নোংরা হাতে আমাকে একদম স্পর্শ করবি না। যা এখান থেকে, আর কখনো আমার সাথে কথা বলবি না।
প্রিয়া চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
কাঁদতে কাঁদতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে প্রিয়া।
ভোরে প্রিয়ার ঘুম ভাঙলে তাকিয়ে দেখে মামুন ঘরে নেই।
তাই সে উঠে ফজরের নামাজটা সেরে নেয়। এবং নামাজের পাটিতে বসে কান্না করতে থাকে। মামুনের মা প্রিয়ার কান্নার শব্দ শুনে মামুনের রুমে আসে।
এসে দেখেন প্রিয়া নামাজে বসে কাঁদতেছে।
প্রিয়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে উনি প্রিয়ার পাশে এসে বসেন।
–প্রিয়া, কি হয়েছে? কাঁদছিস কেনো এভাবে?
নিজের শাশুড়ি অর্থাৎ ফুফুকে নিজের ঘরে দেখে জাপটে ধরে আরো জোরে কান্না করতে থাকে।
–এই পাগলি, এভাবে কাঁদছিস কেনো?
–ফুফু, আমার এই পাপ গাড়ে নিয়ে যে আমি আর থাকতে পারছি না। আমার যে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
–দেখো কি বলে পাগলি মেয়ে। মরে গেলে কি সব কিছুর সমাধান হয়?
–কি করবো আমি? আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
–একটা কথা বলবো, শুনবি?
–কি?
–বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেল…….
.
.
.
চলবে………..
.
.
#শূন্য_থেকে_শুরু
পর্ব :- ১
লেখক #A_Al_Mamun
#শূন্য_থেকে_শুরু
পর্ব :- ২
.
–একটা কথা বলবো, শুনবি?
–কি?
–বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেল।
–ফুফু, কি বলছো এসব?
–দেখ, সবে মাত্র এর ৩ মাস। বাচ্চা এখনো বড় না, বেশি দেরি হয়ে গেলে আর কিছুই করা সম্ভব না।
–না না, এটা ঠিক না। বাচ্চা আমি নষ্ট করবো না।
–তাহলে কি অন্যের পাপের দেখভাল আমাদের করতে হবে? তোর বাবার মান সম্মানের কথা চিন্তা করে তোকে আমার ঘরের বউ করে নিয়ে এসেছি। কিন্তু কিভাবে অন্যের বাচ্চাকে সহ তোকে গ্রহন করবো? এটা কি আমার ছেলের সাথে অন্যায় হয়ে যাবে না?
–তুমিও এভাবে বলতে পারলে?
–দেখ মা, তুই আমার পর না। আমার রক্তের মানুষ, আমার আপনজন। তোর খারাপ হোক তা আমি চাই না।
–তুমি যাই বলো, আমি আমার বাচ্চা নষ্ট করবো না।
–তোর সংসার, তাই সেটা তোর ওপর নির্ভর, আমার বলার ছিলো বলেছি। এই বাচ্চার জন্য এই সংসারে শান্তি আসবে না। মনে রাখিস।
–প্লিজ ফুফু, আমায় জোর করো না।
–মামুন কোথায়?
–জানি না, ঘুম থেকে উঠে দেখি ও রুমে নাই।
–মনে হয় মসজিদে গেছে। কিন্তু সকাল হয়ে গেলো, এখনো আসলো না?
–তা তো জানি না।
–ও ফিরে আসলে বলিস আমি ডেকেছি।
–আচ্ছা।
.
পুরোদিন পার হয়ে যায়, কিন্তু মামুন বাড়ি ফেরেনি। এদিকে মামুনের চিন্তায় বাড়ির সবাই অস্থির।
বের হওয়ার সময় নিজের ফোনটাও নিয়ে যায়নি। রাতের তখন প্রায় ১২টা।
দরজায় টোকা পড়লে মা এসে দরজা খুলে দেয়।
মামুন সোজা নিজের রুমের দিকে চলে যায়।
মা ও পেছন পেছন হাটা দেয়।
–কোথায় ছিলি সারাদিন?
–(মামুন কোনো জবাব না দিয়ে সোজা নিজের রুমে)
মা ও মামুনের পেছন পেছন মামুনের রুমে চলে আসে। প্রিয়া বিছানার এক কোনায় বসে ছিলো।
মামুনকে দেখে প্রিয়াও একটু এগিয়ে আসে।
–কি হলো? জবাব দিচ্ছিস না কেনো? কোথায় ছিলি সারাদিন? বাড়ির সবাই তোর জন্য কত চিন্তা করছিলো।(মা)
–আচ্ছা! আমার জন্য তাহলে সবাই চিন্তাও করে? জানতাম নাতো।
–কই গিয়েছিলি?
–সেটা কারো জানার প্রয়োজন নেই। আমার ব্যাপারে কারো কিছু জানার প্রয়োজন নেই।
–কি হয়েছে তোর?
–কিছুই হয়নি। ঘুম পাচ্ছে, একটু ঘুমাতে দাও।
–খাবি না?
–এখানকার খাবার আর আমার গলা দিয়ে নামবে না। তোমরাই খাও তোমাদের খাবার।
–কি বলছিস এসব?
–মা প্লিজ, ঘুমাবো আমি।
–আচ্ছা ঘুমা।
–সাথে করে যাকে এখানে নিয়ে এসেছো, তাকেও নিয়ে যাও।
প্রিয়া মামুনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ২ দিন আগেও মামুন প্রিয়ার সাথে কত সুন্দর করে কথা বলতো, কতোটা সম্মান করতো।
আজ যেনো সব কিছু ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।
–নিয়ে যাবো মানে? ও তোর বউ।
–মা প্লিজ, আমার বউ না সে। এই বিয়েতো আমি মানিই না। জোর করে আমার বিয়ে দিয়েছো। আমার সাথে যেই অন্যায় তোমরা করেছো তার জন্য আমি কখনো তোমাদের ক্ষমা করবো না। আমার লাইফটা একপ্রকার ধ্বংস করে দিয়েছো তোমরা। একটা নষ্টা মেয়ের সাথে আমায় বিয়ে দিয়েছো।
সাথে সাথে মা মামুনের গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
মামুন রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়াও অবাক দৃষ্টিতে মামুনের দিকে তাকিয়ে আছে। মামুনের এমন কথা যেন তার কলিজায় গিয়ে লাগে।
–বাবা, এমন করিস না, মেয়েটা কই যাবে বল। ও নাহয় একটা ভুল করে ফেলেছে। ওকে একটা সুযোগ দিয়েতো দেখ।
–ওকে তুমি নিয়ে যাও এখান থেকে, না হয় আমি চলে যাবো এই বাড়ি ছেড়ে। আর কখনো আসবো না তোমার বাড়ির সীমানায়।
–কি সব বলে যাচ্ছিস তুই?
–তুই দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? বের হ আমার রুম থেকে।(প্রিয়াকে উদ্দেশ্য করে)
প্রিয়ার চোখের পানি টুপটুপ করে পড়েই যাচ্ছে।
–মা, তুই আমার সাথে আয়, এই গোলামের সাথে এখানে থাকা লাগবে না। গোলামের ঘর থেকে গোলামই হইছে, একদম বাপের মত ব্যবহার। তুই আমার সাথে থাকবি, চল।
.
প্রিয়া হাত ধরে ফুফু তাকে নিজের ঘরে নিয়ে যায়।
প্রিয়া ফুফুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
–কেনো এমন একটা ভুল করলি?
–আমি বুঝতে পারিনি ফুফু, খুব বিশ্বাস করেছিলাম তাকে। সে এভাবে আমাকে রেখে পালাবে তা কখনো কল্পনাও করিনি।
–এই বয়সে কাউকে ভালো লাগতেই পারে, তাই বলে নিজের ইজ্জত বিলিয়ে দিবি? এটা খুব বড় একটা বোকামি।
–মামুন আমায় কতটা সম্মান করতো, আজ তার চোখে আমি পাপি, আমি নষ্টা, আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না ফুফু। আমি আর পারছি না।
–তুই বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেল, দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।
–প্রয়োজনে আমায় মেরে ফেলো, তবুও আমি এই বাচ্চা নষ্ট করবো না। কাউকে খুন করার ক্ষমতা আমার নেই।
–কেনো তুই বোঝার চেষ্টা করছিস না? এই বাচ্চাকে কেউই মেনে নিবে না। আমিও না।
–ফুফু, আমায় ছেড়ে দাও, আমি দুরে কোথাও চলে যাবো। এই বাচ্চা নিয়ে আমি বাকি জীবনটা একাই কাটিয়ে দিবো।
–আমার আর কিছুই বলার নেই। তোর লাইফ, ডিসিশন তোর।
.
মামুন আর এখন প্রিয়ার সাথে তেমন কোনো কথাই বলে না।
প্রিয়াও মামুনের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যায় না। এভাবেই দিনগুলো পার হতে থাকে।
আর প্রিয়ার পেটের বাচ্চাটাও ধীরেধীরে বড় হতে থাকে। এরপর বাচ্চা নষ্ট করার জন্য প্রিয়াকে আর কেউ কখনো জোর করেনি। প্রিয়াও ধীরেধীরে এই পরিবারটার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়।
মামুন যখন বাহিরে যায় তখন প্রিয়া এসে তার রুমটা গুছিয়ে দেয়, কাপড় গুলো ধুয়ে দেয়। খাবারটা টেবিলে রেখে দেয়। অর্থাৎ মামুন যখন বাহিরে থাকে প্রিয়া তখন মামুনের প্রয়োজনীয় সব কাজই করে দিয়ে যায়।
মামুন একদিন দুপুরবেলা কলেজ থেকে ফিরে দেখে প্রিয়া তার রুমের মেঝেতে পড়ে আছে।
মামুন মাকে ডেকে প্রিয়াকে বিছানায় শোয়ায়।
মা দৌড়ে এসে দেখে প্রিয়া অজ্ঞান হয়ে মামুনের বিছানায় শুয়ে আছে।
–কি হয়েছে ওর?
–জানি না, এসে দেখি মেঝেতে পড়ে আছে।
–মেয়েটার তো একটু খেয়ালও রাখতে পারিস, জানিস যে ওর শরীরটা খারাপ।
–ওকে দেখে রাখা আমার কাজ না।
–এই শরীর নিয়েও মেয়েটা সারাদিন কাজ করে যাচ্ছে। আমি বাধা দিলেও আমার কথা শুনে না, তোর মন পাওয়ার জন্য সারাদিন তোর আশেপাশে থাকে, তোর প্রয়োজনের আগেই তোর সব কাজ ও করে ফেলে। কিন্তু তুই মেয়েটা কেমন আছে সেটাও একবার জানতে চাস না। এতটা কঠোর কি করে হলিরে? তুই তো এমন ছিলি না।
–তোমরা আমায় এমন বানিয়েছো, এর জন্য তোমরা দায়ি।
–দেখ বাবা, সব মানুষ পারফেক্ট হয় না। সবার জীবনেই কমতি আছে। আমরা তো মানুষ তাই না? আর মানুষ ভুল করবে এটাই তো স্বাভাবিক।
–মা, কেনো এতো কথা বলতেছো?
–মেয়েটার জন্য কি তোর একটুও মায়া হয় না?
–না হয় না।
হঠ্যাৎ প্রিয়া জ্ঞান ফেরে।
মা ছেলেকে কথা বলতে দেখে প্রিয়া বিছানা থেকে উঠে দাড়ায়।
–কেমন আছিস মা?
–ভালো আছি।
–কি হয়েছিলো তোর?
–জানি না ফুফু, হঠ্যাৎ মাথাটা কেমন যেনো করছিলো। এরপর আর মনে নেই।
–তোকে কতবার নিষেধ করলাম এত কাজ করা লাগবে না। কেনো করিস?
–ওমা, এটা তো আমারই সংসার, আমি কাজ না করলে কে করবে?
–কিসের তোমার সংসার? এটা তোমার সংসার না। তুমি উড়ে এসে জুড়ে বসেছো এখানে।(মামুন)
–কি যা তা বলছিস?(মা)
–ভুল কি বলছি?
–শোন, তোর এমন ব্যবহার আমি অনেক সহ্য করেছি, আর না। অনেক বেশি বেড়ে গেছিস তুই।
–মোটেও বাড়িনি আমি। ওকে ওর বাপের বাড়ি দিয়ে আসো।
–বাপের বাড়ি? প্রিয়া আজ থেকে এই রুমেই থাকবে।
–মানে?
–মানে আজ থেকে এটা প্রিয়ার রুম।
–তো আমি কই থাকবো?
–এই রুমেই যদি প্রিয়ার সাথে থাকতে পারিস, তাহলে থাক। নাহলে যেখানে মন চায় সেখানে চলে যা। আর বাঁধা দিবো না।
বলেই মা হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যান।
.
মামুন রাগি চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
মামুনকে এভাবে তাকাতে দেখে প্রিয়া মাথা নিচু করে নেয়।
–এখন আমার মাকেও আমার থেকে দুরে সরিয়ে দিলে! আমার ঘরটাও আমার থেকে নিয়ে নিলে।
–আমায় ক্ষমা করে দে, আমি জানতাম না ফুফু এমটা বলবে।
–তোমার বয়ফ্রেন্ডের সব ঠিকানা আমায় দাও।
–কিসের বয়ফ্রেন্ড?
–তোমার বাচ্চার বাবার ঠিকানা।
–আমি জানি না।
–আমি চাই না তোমার এই বাচ্চা বাবার পরিচয় ছাড়া বড় হোক, আমি তোমাকে তার কাছে পৌছে দেবো।
–লাগবে না, যেই মানুষটা আমার এই অবস্থা করে কাপুরুষের মত পালিয়ে গেছে, আমি আর তার কাছে ফিরবো না।
–তো কি করবে? আমার ঘাড়ে চাপাবে সব?
–আমি আমার বাচ্চাকে কারো ঘাড়ে চাপাবো না। আমায় এই ঘরের এক কোনায় কোনো রকম পড়ে থাকতে দে। আমারযে যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। আমি তো ঘরের সব কাজ করে দেই। নাহয় আরেকটু বেশি করে করবো। আমি কথা দিচ্ছি, আমি কখনো তোর কাছে স্ত্রীর মর্যাদা চাইবো না। অন্তত আমার বাচ্চাটাকে দুনিয়ার মুখ দেখতে দে।
–রেগে নয়, সুন্দর করে তোমায় বোঝাই, বসো এখানে। এই সন্তানের ভবিষ্যৎ কি? ওর বাবার পরিচয় কি? তুমি কি চাও এই বাচ্চাটা বড় হয়ে তোমার দিকেই আঙুল তুলুক? যার বাবার পরিচয় সে নিজেই জানতে পারবে না কখনো। সমাজে পদে পদে ওকে কটু কথা শুনতে হবে। বুঝতে পারছো আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি?
–এই বাচ্চাটাকে আমায় মেরে ফেলতে হবে?
–এখন তোমার প্রায় ৮ মাস চলছে, কয়দিন পরই তোমার ডেলিভারি হবে। আগে তোমাকে অনেকবার বোঝানো হয়েছে, তখন তুমি কারো কথা শুনো নি। পাপ করেছো, এবং পাপ সাথে বয়ে বেড়াচ্ছো। এখন আর কিছুই করা সম্ভব নয়।
–আমি কি করে পারতাম নিজের গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলতে? এতটা পাষাণ আমি হতে পারিনি।
–জানো, আমি এমটা ছিলাম না, এতোটা রাগ আমার কখনো হয়নি। তোমরা সবাই আমাকে পাগল বানিয়ে দিয়েছো। আমি আর নিজের সাথে পেরে উঠছি না। চেয়েছিলাম অনেক দুরে চলে যেতে। কিন্তু বাবা মাকে ছেড়ে যেতে মনটা চাইলো না। যেই তোমাকে সবসময় নিজের বোনের চোখে দেখে এসেছি, সেই তুমিই আজ আমার স্ত্রী, আমার চেয়ে বড়, বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট। কি করে মেনে নেবো আমি? তোমার সাথে আমি এতটা বাজে ব্যবহার করছি, আমি মন থেকে চাচ্ছি না তোমায় এত কথা শুনাতে। তবুও এসব সহ্য করতে না পেরে তোমায় কত কথা বলে ফেলি। আমায় ক্ষমা করে দিও।
–কি বলছিস এসব? তোর কোনো দোষইতো নেই। তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো আমার সাথে আরো খারাপ কিছুও হতে পারতো। আমি তোর ব্যাপারটা বুঝতে পারছি।
–আমি জানিনা কখনো তোমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবো কিনা। তবে বাচ্চাটাকে আমি কখনোই মেনে নিবো না।
প্রিয়া মাথা নিচু করে মামুনের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনে।
–মানবিক দিক থেকে তোমায় বলছি, এই শরীর নিয়ে এত কাজ করার প্রয়োজন নেই। আমার নিজের কাজ আমি করতে পারি। আর মা সংসারটা ভালোভাবেই সামলে নিতে পারে।তাই তোমাকে কিছুই করতে হবে না। এই কয়দিন একটু বিশ্রাম নাও।
আজ কতদিন পর মামুন প্রিয়ার সাথে কথা বলছে।
খুশিতে প্রিয়ার চোখে পানি চলে আসে।
.
প্রিয়ার চোখের পানি দেখে মামুন রুম থেকে বাহিরে চলে আসে।
এভাবেই দিনগুলো চলতে থাকে। মামুন প্রিয়ার সাথে এখন আর বাজে ব্যবহার করে না। আবার খুব বেশি কথাও বলে না।
যখন প্রয়োজন পড়ে, দৌড়ে এসে প্রিয়াকে সাহায্য করে।
প্রিয়ার শাশুড়িও প্রিয়াকে যথেষ্ট সাহায্য করে।
মামুন সোফায় বসে মোবাইল টিপতেছিলো। আর প্রিয়া বিছানায় শুয়ে ছিলো।
হঠ্যাৎই প্রিয়ার ব্যথা শুরু হয়।
মামুনকে ডাকলে মামুন প্রিয়ার কাছে ছুটে যায়।
এবং সাথে সাথেই প্রিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আর ৮-১০ টা স্বামীর মতো মামুনের মনে কোনো চিন্তা নেই, প্রিয়াকে নিয়ে মনে কোনো ভাবনা নেই। বাবা মায়ের পাশেই বাহিরে বসে আছে।
একটু পর ডাক্তার এসে জানায় একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান হয়েছে।।
–মা, আমি বাসায় গেলাম, ঘুম পাচ্ছে। তোমরা তোমাদের বউকে নিয়ে এসো, আমি গেলাম।
মামুন প্রতিউত্তের অপেক্ষা না করে উল্টো পথে হাটা দেয়।
পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে মামুন তাকিয়ে দেখে প্রিয়া সাথে একটা বাচ্চা নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
কৌতুহল বসত মামুন বাচ্চাটার দিকে উকি দেয়। প্রিয়া তখনো ঘুমে।
বাচ্চাটাকে দেখে মামুন ধীরেধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠ্যাৎ কি মনে করে যেনো বাচ্চাটার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, এবং ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
.
.
.
চলবে………
.
লেখক #A_Al_Mamun
#শূন্য_থেকে_শুরু
পর্ব :- ৩
.
মামুন বেশ কিছুক্ষণ বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠ্যাৎ কি মনে করে যেনো বাচ্চাটার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, এবং ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
বাচ্চাটাকে কেবল প্রিয়াই দেখাশোনা করে। মাঝে মাঝে শাশুড়িও বাচ্চাটাকে কোলে নেয়, কিন্তু মামুন কখনো বাচ্চাটাকে কোলে নেয় না।
প্রিয়া বেশ সখ করে মেয়ের নাম রেখেছে রাহা।
এভাবে আরো ৪ মাস পার হয়ে যায়।
মামুন এখনো বাচ্চার নামটাও জানে না।
একদিন কলেজ শেষে ঘরে ফিরে দেখে প্রিয়া রান্নাঘরে ব্যস্ত। আর বাচ্চাটা রুমে একা একা খেলতেছে।
রুমে কেউ না থাকায় মামুন বাচ্চাটার পাশে গিয়ে বসে।
এই প্রথম মামুন মেয়েটাকে ভালো করে দেখে।
মেয়েটা দেখতে হুবহু প্রিয়ার কপি। কত সুন্দর করে মিটমিট করে হাসে।
সাধারণত সামনে বাচ্চা দেখলে যে কারোই মন চায় একটু আদর করতে।
মামুন বাচ্চাটার মুখের সামনে মুখ নিয়ে বাচ্চাদের মতো করে কি কি যেনো বলে, আর আদর করতে থাকে।
প্রিয়া দরজার সামনে দাড়িয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে।
প্রিয়াকে এভাবে সমানে দেখে মামুন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওঠে।
–বাচ্চাটাকে এভাবে একা রেখে চলে গেছো, যদি পড়ে যেতো?
–ওর নাম রাহা, রাহা বলেই ডাকিস।
–এতো রাহা মাহা ডাকতে পারবো না। নিজের বাচ্চার খেয়াল রাখো।
বলেই মামুন হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
প্রিয়া নিজের গালে নিজেরই চড় মারে আর বলে, “ইসস, আরেকটু পরে আসলে হতো, আমাকে দেখেই চলে গেলো।”
.
পরদিন মামুন কলেজ থেকে আসার সময় হলে প্রিয়া রাহাকে রুমে রেখে রান্নাঘরে চলে আসে।
একটুপর মামুন রুমে ঢুকে, প্রিয়া রুমে উকি দিয়ে দেখে আজও মামুন রাহার সাথে খেলতেছে।
মামুন যেনো বুঝতে না পারে সেই জন্য প্রিয়া আবার রান্নাঘরে চলে আসে।
এভাবে প্রতিদিন মামুন রাহার সাথে খেলতো, আর ভাবতো প্রিয়া কিছুই জানে না।
অথচ প্রিয়া আড়াল থেকে সবই দেখতো, আর দুচোখ ভেজাতো।
ধীরেধীরে রাহার জন্য মামুনের মনে অনুভূতি জন্ম নেয়। এভাবে আরে ৪ মাস পার হয়ে যায়।
মামুন এখন মাঝেমাঝে প্রিয়ার সামনেও রাহাকে নিয়ে খেলে। আর প্রিয়া যখন না থাকে, তখন রাহাকে কোলে নিয়ে খেলতে থাকে।
একদিন হঠ্যাৎ রাহার জ্বর চলে আসে। সেদিন মামুন প্রিয়াকে বেশ বকাবকি করে।
–বাচ্চার খেয়াল রাখতে পারো না? কি করে এত ছোট বাচ্চার জ্বর আসে?
–আজ গোসল করানোর সময় মাথায় মনে হয় বেশি পানি দেওয়া হয়ে গেছে।
–কিজন্য পানি বেশি দিয়েছো? মন কই থাকে সারাক্ষণ?
–কিরে? এত বকছিস কেনো ওকে?(মা)
–দেখো মা, রাহার জ্বর।
–কি বলিস? কখন হলো?
–সন্ধ্যা থেকে।
–ডাক্তারকে ফোন দিছিস?
–হ্যা, আসতেছে।
মা গিয়ে রাহার কপালে হাত রাখে।
–কইরে মামুন, জ্বরতো না। কিসের জ্বরের কথা বলছিস?
–কি জ্বর নাই বলছো। একটু আগেও ছিলো, আমি দেখেছি।
–ধুর, ও ঘুমাচ্ছে। আওয়াজ করিস না।
–মা, আমি একটু আগেও দেখেছি জ্বর ছিলো।
–ওটা জ্বর না, বাচ্চাদের শরীরের তাপমাত্রা এমই থাকে। ওকে দেখার জন্য ওর মা আছে, তুই কেনো এত উতলা হচ্ছিস?
–আমি কেনো উতলা হবো? জ্বর মনে হলো তাই বললাম।
–এত বলতে হবে না। নিজের কাজে মন দেন।
.
মায়ের কথা কথায় মামুন একটু লজ্জা পায়।
সোফায় বসে মনে মনে ভাবতে থাকে, সত্যিই তো, কেনোই বা রাহার কথা এত ভাবছি? ও তো আমার কেউ না। তাহলে ওর জন্য কেনো আমার এমন লাগে? না, আমি আর রাহার কাছে যাবো না।
সন্ধ্যায় প্রিয়া রাতের খাবার বানানোর জন্য রাহাকে রুমে রেখে রান্নাঘরে চলে যায়।
মামুন রুমে সোফায় বসে ছিলো, তাই প্রিয়া নিশ্চিন্তে রান্নায় মনোযোগ দেয়।
প্রিয়া পাশে না থাকায় মামুন রাহার কাছে ছুটে যায়।
মামুনকে দেখে রাহা মিটমিট করে হাসে।
রাহাকে কোলে নিয়ে মামুন খেলতে থাকে।
প্রিয়া তখন দরজার সামনে দাড়িয়ে….
একপর্যায়ে রাহা বলে ওঠে “পা পা”…
ভালো করে শোনার জন্য মামুন রাহার মুখের কাছে কান নেয়। রাহা একটু একটু পা পা বলে যাচ্ছে।
প্রিয়া দরজার সামনে দাড়িয়ে বেশ ভালো করেই রাহার পাপা ডাক শুনতে পায়।
মামুন রাহাকে তুলে বুকে জড়িয়ে নেয়।
রাহার প্রতি মামুনের এমন ভালোবাসা দেখে প্রিয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।
মামুন বুঝে ওঠার আগেই প্রিয়া চুপিচুপি আবার রান্নাঘরে চলে আসে।
–ফুফু জানো আজ রাহা কি করেছে?
–কি করেছে?
–মামুনকে পাপা বলে ডেকেছে।
–তাই? পাপাই ডাকতে হলো? যে ওকে একদম সহ্য করতে পারে না।
–কে বললো সহ্য করতে পারে না? মামুন রাহাকে খুব ভালোবাসে।
–কবে থেকে?
–সেই প্রথম থেকেই।
–কই? আমিতো দেখলাম না।
–আমি যখন রাহাকে রুমে রেখে বাহিরে আসি, ও তখন লুকিয়ে লুকিয়ে রাহাকে আদর করে।
–কি বলিস? সত্যি?
–হুম, এখনও আদর করতেছে। আমি দেখেছি।
–তোকে মা বলে ডেকেছে?
–না, পাপাই প্রথম ডাকলো।
–বাব্বাহ, মেয়েও ভালো করে জানে আগে পাপা বলে রাগ ভাঙাতে হবে। তাই আগে পাপাই ডাকছে।
–আমার মেয়ে আমার মতোই, বুদ্ধি বেশি।
–রাহাকে যখন মেনে নিয়েছে, দেখবি তোকেও মেনে নিবে।
–আমার মেয়েটাকে ও এতটা ভালোবেসেছে, এতেই আমি অনেক খুশি, আমার আর কিছুই লাগবে না।
–আমি এটাই বলতে পারি যে এই রাহাই তোদের মেলাবে।
–ফুফু, আমি তোমাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ, তোমরা আমায় নতুন জীবন দিয়েছো। হয়তো তোমরা না থাকলে আমি আজ বেচেও থাকতাম না, আর যদি বেচেও থাকতাম, জানিনা আমার কি হতো, আমার রাহাকে কেউ মেনে নিতো না। তোমাদের এই ঋণ আমি সারাজীবনও সোধ করতে পারবো না।
–দেখো পাগলি মেয়ে কি বলে, তুই তো আমার মেয়েই। এখানে কৃতজ্ঞতার কিছু নেই।
–তোমার থেকে এতটা সাপোর্ট পাবো আমি কখনো ভাবি নি।
–এত বকবক না করে লবনটা দেখ, তরকারি পুড়ে গেলো।
–ও হ্যা…
.
–শুনো, ভাবছি রাহাকে নিয়ে আজ শপিংয়ে যাবো।(মামুন)
–কেনো কেনো?(প্রিয়া)
–ওর তো ভালো কোনো জামাই নেই, কিছু জামা নিতে হবে না?
–কিন্তু আমার কাছে তো ওত টাকা নেই।
–তোমাকে টাকার কথা জিজ্ঞেস করেছি? আমি কিনে দিবো।
–তুই কেনো কিনে দিবি?
–এমনি দিতে পারি না?
–কোনো কারন ছাড়া?
–কোনো কারন নেই, এমনিই।
–ঠিক আছে, তোর যেমন খুশি।
–ওকে বিকেলে রেডি রেখো, আমি এসে নিয়ে যাবো।
–অ্যাহ? শুধু ওকে নিয়ে যাবি?
–তো আর কাকে নিবো?
–সামলাতে পারবি? কাঁদলে?
–কাঁদবে না, আমি সামলাতে পারি।
–আচ্ছা যা।
–তুমি যাবে?
–আমি গিয়ে কি করবো?
–১ বছর ধরে দেখছি ২ টা জামাই পড়তেছো। কিছু লাগলে বলো না কেনো?
–আমার কিচ্ছু লাগবে না, আমার মেয়েটাকে যা দিবি আমি তাতেই খুশি।
–গত ঈদে মা তোমায় যেই জামাটা দিয়েছিলো ওটা পড়ে বিকেলে তৈরী থেকো।
–কেনো?
–তুমি সহ যাবে।
–আমি কেনো?
–তোমার মেয়েকে সামলাতে।
–ওও, ঠিক আছে।
প্রিয়ার সাথে কথা শেষ করে মামুন রাহার দিকে এগিয়ে যায়।
মামুনকে দেখে রাহা কোলে ওঠার জন্য সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, যেমনটা ছোট বাচ্চারা করে থাকে।
মামুন পরম যত্নে রাহাকে কোলে তুলে নেয়। প্রিয়া সামনে এসে রাহার দিকে হাত বাড়ায়, কিন্তু রাহা কিছুতেই মায়ের কাছে যাবে না।
প্রিয়া একটু জোর করে কোলে নিতে গেলে রাহা কান্না শুরু করে দেয়।
মামুন আর প্রিয়া দুজনই একসাথে হেসে ওঠে।
–দেখো, মেয়ের ভালো করে খেয়াল রাখতে পারো না, তাই তোমার কাছে যেতে চাচ্ছে না।
–তো কে খেয়াল রাখে শুনি।
–কেউ রাখে না।
–জানিস, মেয়েরা একটু বেশিই বাবা পাগল হয়।
–এটা আমায় কেনো শুনাচ্ছো?
–এমনি বললাম আরকি।
–এত বেশি বলা লাগে না। বিকেলে তৈরী থেকো।
.
প্রিয়া আজ বেশ খুশি, ১ বছরের মধ্যে আজই মামুন এতটা নরমালি কথা বলেছে।
রাহার জন্য হয়তো মামুন এতটা নরম হয়েছে।
মেয়েকে বুকে জড়িয়ে প্রিয়া চোখের পানি ফেলতে থাকে।
মামুন বিকেলে ঘরে ফিরে দেখে প্রিয়া মায়ের দেওয়া জামাটা পড়ে হালকা সেজে রাহাকে কোলে নিয়ে বসে আছে।
এই হালকা সাজেই প্রিয়াকে সর্গের অপ্সরীর মত লাগছে। সাথে আছে সর্গের রাজকন্যাও।
মামুন এগিয়ে গিয়ে রাহাকে কোলে নেয়।
–বাহ, রাহাকে কত সুন্দর লাগছে।
–শুধু রাহাই?
–হ্যা, কত্ত কিউট।
প্রিয়া ওমনি মুখ গোমড়া করে থাকে।
–ওত ডং করা লাগবে না, চলো।
বলেই মামুন রাহাকে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে যায়, প্রিয়াও পেছন পেছন হাটা দেয়।
.
বেশ পছন্দ করে রাহার জন্য ৪-৫ টা জামা নেয় মামুন। প্রিয়া বেশ খুশি মনে মামুনের পাশে বসে আছে। রাহার জন্য জামা কেনা শেষে প্রিয়া মামুনকে বলে…
–তোর কাছে কিছু টাকা হবে?
–কেনো?
–আমায় কিছু টাকা ধার দেনা।
–কি করবে?
–আমার কিছু জিনিস কেনার ছিলো।
–আচ্ছা চলো।
–তুই পারবি নাতো। আমাকে দে।
–আমি পারবো না কেনো?
–আমার ব্যক্তিগত কিছু জিনিস। তুই কি আর জানিস আমার ব্যক্তিগত কি কি আছে?
–ডং করিও না, আমাকে বলো, তুমি পারবে না কিনতে।
–আমার লজ্জা করছে।
–কেনো?
–কখনো কাউকে এই ব্যপারে বলিনি তাই।
–তোমার বয়ফ্রেন্ডকেও না?
–কাউকে না, কেনো আবার আমায় ওর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিস? আমি ভুলে গেছি সব।
–হুম ভালো। এই নাও, তোমার যা যা প্রয়োজন নিয়ে নাও।
–এত টাকা?
–কয়েকটা জামাও নিয়ে নিও।
–আমার কাছে তো এত টাকা নেই শোধ করার জন্য।
–শোধ করতে হবে না। মা দিয়েছে এটা তোমার জন্য।
–তাই? আচ্ছা।
প্রিয়া বেশ খুশি হয়ে দোকান ঘুরে ঘুরে নিজের জন্য শপিং করছে। আর মামুন রাহাকে কোলে নিয়ে প্রিয়া পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে।
প্রায় ২-৩ ঘন্টা লাগিয়ে প্রিয়া ২টা জামা আর নিজের ব্যক্তিগত জিনিস কিনে।
–এই জন্যই মেয়েদের সাথে শপিং করতে যেতে নেই।
–কেনো?
–এতক্ষণে আমি পুরো শপিং মলটা কিনে ফেলতে পারতাম।
–হা হা হা, চলো। আমার শেষ।
–চলেন
মামুন রাহাকে প্রিয়ার কাছে দিয়ে জামাগুলো নিয়ে হাটা দেয়। আর প্রিয়া মামুনের পেছন পেছন।
একটু পর মামুন খেয়াল করে দেখে প্রিয়াকে দেখা যাচ্ছে না।
দৌড়ে আবার শপিংমলের ভেতরে আসে। দুর থেকে দেখা যাচ্ছে প্রিয়া কার সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে।
মামুন দৌড়ে গিয়ে প্রিয়ার সামনে দাড়ায়।
–কি হলো? আমি রাস্তা পর্যন্ত চলে গিয়েছি। আর তুমি এখানে দাড়িয়ে আছো, চলো…।
প্রিয়া সামনে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।
–কে উনি?
–শাহিন।
মামুন লোকটার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে
–হায়, আমি মামুন।
লোকটা মামুনের সাথে হাত মেলায়।
–কে হন উনি তোমার?(প্রিয়াকে উদ্দেশ্য করে)
–আমার অতীত।
মামুন ভালো করেই বুঝতে পারে অতীত মানে কি বোঝাতে চেয়েছে।
ওমনি প্রিয়ার হাত থেকে রাহাকে নিয়ে নেয়।
–আমি বাহিরে আছি… (বলেই মামুন বাহিরের দিকে হাটা দেয়।)
আর প্রিয়া অশ্রু ভেজা চোখে লোকটার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।
.
.
.
চলবে……….
.
লেখক #A_Al_Mamun
#শূন্য_থেকে_শুরু
পর্ব :- ৪
.
মামুন প্রিয়ার হাত থেকে রাহাকে কোলে নিয়ে নেয়।
–আমি বাহিরে আছি… (বলেই মামুন বাহিরের দিকে হাটা দেয়।)
আর প্রিয়া অশ্রু ভেজা চোখে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে।
–কেমন আছো?(শাহিন)
–যেমনটা রেখে গেছো তার চেয়ে অনেকটা ভালোই আছি।(প্রিয়া)
–আমায় মনে আছে?
–কি করে ভুলি? আমার জীবনটা নরক বানিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলে, এত সহজে ভুলবো তোমায়?
–আমি নরক বানিয়েছি?
–না, আমার দোষেই আমি নরকে গিয়েছি।
–তুমি এবরশন করিয়েছিলে?
–এই ধরনের কথা একজন কাপুরুষই বলতে পারে, আর তুমি হচ্ছো সেই কাপুরুষ।
–মানে কি? এবরশন করাও নি?
–হ্যা করিয়েছি। আমার প্রেগন্যান্ট হওয়ার খবরটা শুনে সেই যে পালিয়েছিলে, আর কোনো দিন আমার খবর নিয়েছিলে? কেমন আছি আমি?
–আমি পালাইনি, ভাগ্য আমায় পালাতে বাধ্য করেছে।
–মানে?
–মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে বাড়ি গিয়েছিলাম, আমি যাওয়ার আগেই মা মারা যায়। তখনই আমার আপন ভাইয়েরা বাড়িটা ভাগাভাগি করে নেয়। আমার জন্য কিছুই ছিলো না। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে ওরা আমার নামে হত্যাচেষ্টা মামলা করে দেয়। এক সপ্তাহ হলো আমি জেল থেকে বের হয়েছি। এর মধ্যে আমি কি করে তোমার খবর নিতাম?
–কি বলছো এসব? এত কিছু হয়ে গেলো?
–যা হয়েছে হয়েগেছে, তোমার কি খবর বলো।
–আমার বিয়ে হয়ে গেছে আপন ফুফাতো ভাইয়ের সাথে। একটু আগে যে এসেছিলো, সে আমার স্বামী।
–ওটা তোমার বাবু?
–হুম।
–খুব কিউট, দেখতে একদম তোমার মত।
–সেও এটাই বলে। বাবা মেয়ে দুজন দুজনের জন্য একদম পাগল।
–কয় মাস হলো?
–এইতো ৮ মাস।
–তুমি প্রেগন্যান্ট হয়েছিলে প্রায় দেড় বছর। আর এই বাচ্চার বয়স ৮ মাস?
–হুম তো?
–এটা আমার বাচ্চা নয়তো?
–তুমি পাগল হয়ে গেছো? তোমার বাচ্চা আমি তখনই নষ্ট করে ফেলেছি। এটা আমার আর আমার স্বামীর বাচ্চা। এবং সে তোমার ব্যাপারে কিছুই জানে না।
–এত তাড়াতাড়ি কিভাবে আরেকটা বাচ্চা হলো?
–তোমার এত কিছু জানার প্রয়োজন নেই। আমি গেলাম, সে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
–চলে যাবে?
–হুম,
–তোমার নাম্বারটা দিবে?
–কেনো?
–মাঝে মাঝে একটু খবর নেওয়ার জন্য।
–আমার ব্যক্তিগত নাম্বার আমি বাহিরের কাউকে দেই না, ভালো থেকো।
.
শাহিনকে বিদায় দিয়ে প্রিয়া বাহিরে এসে দেখে মামুন রাহাকে কোলে নিয়ে একপাশে বসে আছে।
–এভাবে বসে আছিস যে? যাবি না?
–লোকটা এখানে কি জন্য এসেছে?
–জানি না, হয়তো কোনো কাজে এসেছে।
–কি বলছিলো?
–কিছু না, হঠ্যাৎ দেখা হলো তো, তাই কেমন আছি জিজ্ঞেস করছে।
–রাহার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেছে?
–রাহার ব্যাপারে তাকে আমি কিছুই বলিনি।
–বাড়ি চলো।
.
প্রিয়া বেশ ভালো করেই বুঝতে পারে মামুন শাহিনকে দেখে খুবই বিরক্ত।
তাই মামুনকে শাহিনের ব্যাপারে কিছুই বলে নি।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত হয়ে যায়।
মামুন রাহাকে নিয়ে এখনো বসে আছে।
–কিরে? এত কি ভাবছিস? রাহাকে এদিক দে, ওকে খাইয়ে দেই।
–আমাকে এনে দাও, আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
–কিভাবে তোকে দিবো? গাধা একটা, এদিক দে।
–আমি খাওয়াতে পারবো তো, কি খাওয়াবে সেটা আমাকে দাও।
–ওকে দুধ খাওয়াবো, এবার বল তোকে কিভাবে দিবো?
মামুন একটু লজ্জা পায়, রাহাকে প্রিয়ার হাতে তুলে দিয়ে বাহিরে চলে যায়।
প্রিয়া মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
৫ মিনিট পর মামুন আবার ফিরে আসে।
–হয়েছে?
–না
–হলে ডাক দিও।
–তুই ভিতরে আয়, বাহিরে যাচ্ছিস কেনো?
–তুমি লজ্জা পাবে তাই।
–আমি লজ্জা পাচ্ছি না, তুই পাচ্ছিস। আয় ভেতরে আয়।
মামুন মাথা নিচু করে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে।
–তোকে এত উদাস লাগছ কেনো?
–কই উদাস?
–তোর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
–তুমি কি শাহিনের কাছে চলে যাবে?
–গেলে তুই খুশি?
–রাহাকে নিও না প্লিজ।
–মানে আমি গেলে তুই খুশি, তাইতো?
–রাহাকে ছেড়ে তুমি যেতে পারবে?
–আমার সম্পূর্ণ অতীত আমি ভুলে গেছি। আমি নতুন করে তোদের নিয়ে বাঁচতে চাই। তোদের ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারবো না।
–ঠিক আছে।
–যেই রাহা দুনিয়ায় আসার আগে ওকে নিয়ে এত কথা বলেছিস, সেই রাহাই এখন তোর কলিজা। তাকে নিয়ে কতোটা ভাবিস তুই।
–অন্যায় রাহা করেনি, রাহার মা করেছে। রাহা কেনো সেই ফল ভোগ করবে? রাহার প্রতি আমার কখনোই রাগ ছিলোনা।
–এখনো তুই আমায় ক্ষমা করতে পারিস নি?
–তুমি আমার হক নষ্ট করেছো। চেয়েও ক্ষমা করতে পারছি না। এক রুমে আছি এতদিন যাবত, তবুও কখনো তোমার দিকে বউয়ের নজরে তাকাতে ইচ্ছা করেনি। কতটা কষ্ট আমায় দিয়েছো বুঝো?
অনুতপ্ত হয়ে প্রিয়া মাথা নিচু করে রাখে।
–জানো আমায় সবচেয়ে বেশি কি কষ্ট দিয়েছে? আমি কেনো রাহার বাবা হতে পারলাম না। একদিন রাহা আমায় পাপা বলে ডেকেছিলো। যেদিন আমায় প্রথম পাপা বলে ডেকেছিলো, সেদিন যতটা না খুশি লেগেছিলো তার চেয়ে বেশি কষ্ট লেগেছিলো।
কেনো আমি তার পাপা না। খুব পোড়ায় আমাকে।
–আমি জানি না কিভাবে আমার এই অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করবো। তবে তোকে কথা দিতে পারি, কখনো আর তোকে কষ্ট দিবো না।
–রাহাকে আমার থেকে কখনো দুরে নিওনা প্লিজ, খুব ভালোবেসে ফেলেছি ওকে।
–ওকে তোর থেকে কেউ দুরে নিবে না। রাহা তোরই মেয়ে। তোকেই পাপা ডাকবে। তোর কাছেই থাকবে।
–সত্যি?
–হুম।
–রাহাকে আমার কাছে দাও, আজ ও আমার সাথে ঘুমাবে।
–কিভাবে? সোফা থেকে ও পড়ে যাবে। আচ্ছা আমি সোফায় থাকবো, তুই রাহাকে নিয়ে বিছানায় ঘুমা।
–তুমি সোফায় ঘুমাতে পারবে না, পড়ে যাবে।
–তাহলে তুই কিভাবে ঘুমাস?
–আমার অভ্যাস আছে।
–আমিও অভ্যাস করে নিবে, তুই যখন আমার সাথেই থাকবি না, তাহলে আমাকে তো একাই থাকতে হবে। এখন থেকে অভ্যাস করা শুরু করি।
–লাগবে না, রাহাকে নিয়ে তুমি বিছানায় ঘুমাও। আমি আমার জায়গায় চলে যাচ্ছি।
–আজ বিছানায় ঘুমা না।
–থাক, লাগবে না।
–রাহা নাহয় আমাদের মাঝখানেই থাকবে।
মামুন কিছুক্ষণ চিন্তা করে জবাব দেয়।
–ঠিক আছে।
.
প্রিয়ার সাথে এক বিছানায় ঘুমাতে মামুন বেশ লজ্জাবোধ করছে।
–এমন করছিস কেনো?
–কেমন করছি?
–কাছুমাছু করছিস যে।
–কই নাতো, দাও রাহাকে।
–আজ এতক্ষণ হয়ে গেলো, মেয়েটা এখনো ঘুমাচ্ছে না।
–ও জানে আমি ওর সাথে খেলবো, তাই ঘুমাবে না।
–বাব্বাহ, খেলো খেলো।
মামুনকে সাথে পেয়ে রাহাও বেশ খুশি।
দুজন খেলতে খেলতে রাহাকে বুকের ওপর নিয়ে মামুন আর রাহা দুজনই ঘুমিয়ে পড়ে।
মাঝরাতে প্রিয়ার ঘুম ভাঙলে তাকিয়ে দেখে রাহা মামুনের বুকের ওপর শুয়ে আছে।
আর মামুন দুহাত দিয়ে রাহাকে আগলে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
নিজের আজানতেই প্রিয়ার কেঁদে দেয়।
বুঝতে পারে সে কত বড় ভুলটা করেছে। বিয়ের আগে স্বামীর হক নষ্ট করেছে। নিজেকে অপবিত্র করেছে। এদিকে মামুন মনের মধ্যে সংকোচ নিয়ে রাহাকে নিজের মেয়ে বলতে পারছে না, রাহা পাপা ডাকার পরও নিজিকে গর্বিত মানতে পারছে না। নিজের বউকেও বউ মানতে পারছে না। কাউকে ভালোবাসলেই কি শারীরিক সম্পর্কটা জরুরী? ভালোবাসার প্রমান কি শুধু শারীরিক সম্পর্ক দিয়েই হয়?
ছেলে বা মেয়ে হয়ে জন্মানো তো আমাদের হাতে নেই, বিয়েটাও ও আমাদের হাতে নেই। কেবল চেষ্টা টাই আমরা করতে পারি। তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি এবং বিয়েটা তো তোমাকেই করবো, চলো আমরা শারীরিক সম্পর্কটা সেরে ফেলি। কিভাবে এতটা নিশ্চিত হয়ে এই বিষয়ে রাজি হতে পারি আমরা? জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সে করে যে বিয়ের আগে ভালোবাসার প্রমান দিতে গিয়ে নিজের ইজ্জত বিলিয়ে দেয়। তুমি মেয়ে, বোঝার চেষ্টা করো, এই ইজ্জত দিয়েই ওপরওয়ালা তোমায় এতটা দামী বানিয়েছে। হেফাজত করো নিজেকে। যে বিয়ের আগে তোমায় চায়, তার হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে পতিতালয়ে যেতে বলো।
.
সকালে রাহার টুনটুন শব্দে মামুনের ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে দেখে রাহা একা একা মামুনের বুকের ওপর খেলতেছে। আর প্রিয়া পাশেই শুয়ে মুচকি মুচকি হাসতেছে।
–দেখ, আমার মেয়ে আজ তোর ঘুম ভাঙিয়েছে।(প্রিয়া)
–আমি সারারাত এভাবেই ছিলাম?
–হুম।
–মাগো, যদি কাত হতাম? তাহলেতো রাহা পড়ে যেতো।
–পড়তো না, আমি ছিলাম তো।
–তুমি ঘুমাও নি?
–মাঝরাতেই ঘুম ভেঙে গেছিলো, আর ঘুমাইনি।
–কেনো?
–তোদের এভাবে দেখতে ভালো লাগছিলো, তাই দেখছিলাম।
–এত দেখা লাগবে না। নজর লাগবে।
–কেনো লাগবে? আমি কি বাজে নজর দিছি নাকি।
–ভালো নজরও দিতে হবে না। সরো, আজ ছুটির দিন। বাপ বেটি দুজনের আজ অনেক কাজ, মুখটা ধুয়ে আসি।
–কি এত কাজ?
–তোমায় কেনো বলতে যাবো? সরো…
রাহাকে একটা পাপ্পি দিয়ে মামুন ওয়াশরুমে চলে যায়।
.
–ফুফু, দেখো তোমার ছেলে বাচ্চাদের মতো কি করতেছে।
–কি?
–ওই দেখো, রাহার মতো চিৎপটাং হয়ে শুয়ে আছে।
–শরীরটাই খালি বাড়ছে, ও নিজেও তো এখনো বাচ্চা।
–রাহাকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারে না। সারাক্ষণ শুধু রাহা রাহা করে।
–তোর রাহাও তো কম চালাক না, আমার ছেলেকে পেলে যেনো খাওয়া, কান্না সব ভুলে যায়।
–আচ্ছা ফুফু
–থাম তো, দেড় বছরের মত হতে চললো এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছিস। এখনো ফুফু ডাকিস।
–মা ডাকবো?
–তো আর কি ডাকবি শুনি!
–আমিতো প্রথম থেকেই ডাকতে চাইতাম। যদি রাগ করো, এই ভয়ে ডাকিনি।
–দেখো পাগলি মেয়ে কি বলে, রাগ করবো কেনো?
–কেউ কি এমন পাপি মুখে মা ডাক শুনতে চায়?
–দেখ মা, ওটা তোর অতীত ছিলো। ভুলে যা ওসব, তোর সংসার হয়েছে। সংসারটা নিয়ে ভাব না। তুই এখনো মামুনকে তুই তুকারি করিস, ও না তোর স্বামী হয়!
–একদিন ডেকেছিলাম, বললো পরবর্তীতে এমন ডং আর না করতে। তাই ডাকি না।
–মামুন তোর স্বামী, ওর ওপর তোর পুরো হক আছে। যা চাস তা আদায় করে নিবি। কেউ তোকে বাঁধা দিবে না।
–সে তো আমায় তার কাছেই যেতে দেয় না।
–এই দেড় বছরে তোদের মধ্যে কিছুই হয়নি?
–সেটা তো বহু দুর, আমাকে কখনো ছুয়েও দেখেনি। কাছেও তো আসে না।
–দেখো কান্ড।
–এসব নিয়ে কি কাউকে জোর করা যায়? তবুও করতে পারতাম, যদি আমার একটা জঘন্য অতীত না থাকতো।
–শোন, এসব ভুলে যা, মা হয়ে ছেলেকে এসব বিষয়ে আমি বলতে পারবো না, তাই তোকে বলছি। যেটা তোর জিনিস, সেটাতে তোরই অধিকার। আধিকার খাটা।
–কিন্তু মা, ওকে আমি কথা দিয়েছিলাম, কখনো ওর কাছে জোর করে স্ত্রীর অধিকার খাটাতে আসবো না।
–গাধী কোথাকার। বিয়ে করেছিস, স্ত্রীর অধিকার খাটাবি না? এটা কেমন কথা?
–তখনতো এত কিছু বুঝি নি।
–তো এখন কি বুঝিস?
–আমার রাহার বাবা হিসেবে ওকে আমার চাই। ওর সাথে আমি নতুন করে শুরু করবো। কখনো আমি এমন কিছু করিনি যে ও আমার কাছে আসে, কিন্তু এখন করবো।
–নিজের শরীরের একটু যত্ন নে, ওর সামনে সাজগোছ করে থাক।
.
শাশুড়ির কাছ থেকে গ্রিন সিগনাল পেয়ে প্রিয়া মিশনে নামে।
যে করেই হোক মামুনকে প্রেমে ফেলতে হবে।
দুপুরে মামুন রাহাকে নিয়ে খেলছিলো। তখন প্রিয়া মামুনের কাছে যায়।
–কি করছে আমার মেয়েটা?(প্রিয়া)
–বাবার সাথে খেলতেছে।(মামুন)
–সারাদিন খেললে হবে? খেতে হবে না?
–উফ, তোমাকে নিয়ে আছি এক জ্বালায়। যা দেওয়ার আমাকে দাও, আমি খাওয়াই দিবো। ডিস্টার্ব করো না।
–তোমাকে দিবো?
–তুমি আবার ডং করে তুমি তুমি করতেছো।
–তুমিই বলবো। তুই বলবো না আর।
–আমি তোমার ছোট, তুই করেই বলো।
–ছোট তো কি হয়েছে, আমার স্বামী তো। স্বামীকে কেউ তুই করে বলে?
–এতদিন পর যেনো দরদ উতলে পড়ছে। কই থেকে শিখে আসছো এসব?
–কোথাও না, দাও রাহাকে খাইয়ে দেই। এরপর আবার খেলো দুজন।
–আমাকে দাওনা, আমি খাইয়ে দেই। যাও নিয়ে আসো।
–আজ এখনো দুধ আসেনি, বুকের দুধই খাওয়াতে হবে, দাও।
–অসময়ে আসো শুধু ডিস্টার্ব করতে। জলদি করো, আমি গোসল করে আসি।
প্রিয়া ভালো ভাবেই বুঝতে পারে মামুনের থেকে ভালোবাসা আদায় করা কঠিন।
প্রিয়া রাহাকে কোলে নিয়ে একটা পাপ্পি দেয়। আর নিজে নিজে ওর সাথে কথা বলতে থাকে।
–আম্মু, তোমার আব্বু এতো পচা কেনো? যতটা তোমায় ভালোবাসে, তার ১ ভাগ আমায় বাসলে কি হয়? আমি তোমায় এত ভালো একটা পাপা দিয়েছি, তুমি পারবে তোমার পাপাকে আমায় দিতে?
প্রিয়ার মাথায় একটা ভালো বুদ্ধি আসে। রাহাকে খেতে দিয়ে মামুনের কথা ভেবে মুচকি মুচকি হাসে আর মনে মনে ভাবে,
এখন রাহাই পারে মামুনকে আমার সাথে মিলিয়ে দিতে।
.
.
.
চলবে………
.
লেখক #A_Al_Mamun
#শূন্য_থেকে_শুরু
পর্ব :- ৫
.
রাহাকে খেতে দিয়ে প্রিয়া মামুনের কথা ভেবে মুচকি মুচকি হাসে আর মনে মনে ভাবে,
এখন রাহাই পারে মামুনকে আমার সাথে মিলিয়ে দিতে।
রাতে মামুন বাসায় ফিরলে মা মামুনকে ডেকে পাঠায়।
–মা, ডাকছিলে?
–হুম, সারাদিন কই থাকিস? কাজ কাম তো করিস না। তো কোথায় এত ব্যস্ত থাকিস?
–কোথায় যাবো আর, রাহাকে নিয়ে রুমেই তো ছিলাম।
–এত রাহা রাহা কেনো করিস?
–ওমা, রাহা রাহা করলাম কই?
–ওর জন্য এত পাগল কেনো তুই?
–জানি না মা, রাহা ছাড়া আমার এক মূহুর্তও ভালো লাগে না।
–আর রাহার মা?
–রাহার মা কি?
–তোর মনে কি কোনো দয়া মায়া নাই?
–আমি আবার কি করলাম?
–দেড় বছর হলো মেয়েটা তোর বউ হয়ে এই বাড়িতে এসেছে। রাগ একদিন, দুদিন, ১ মাস, ৬ মাস কিন্তু দেড় বছর ধরে তুই কিসের রাগ দেখাচ্ছিস?
–কই? আমি তো কখনো ওর সাথে রাগ দেখাই নি।
–বুঝলাম রাগ দেখাসনি, ওকে কি স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিস? দেড় বছর যাবত মেয়েটা মুখ বুঝে তোর অবহেলা সহ্য করে আসছে। কখনো মুখ ফুটে একটা কথা বলেনি, কারন সে জানে সে অপরাধী। যার জন্য সে তোর কাছে অধিকার খাটানোর সাহস পাচ্ছে না। কিন্তু সেওতো মানুষ, এভাবে আর কতদিন?
–মা, ওর অপরাধের কথা মাথায় আসলে ওকে আমার একদম দেখতে ইচ্ছে করে না।
–তাহলে ওর মেয়েকে কেনো এত ভালোবাসিস? সেটাও তো ওর অপরাধের ফসল।
–রাহার কি দোষ? দোষ তো ওর মা করেছে।
–দেখ মামুন, এভাবে আর না। মেয়েটার ভবিষ্যৎ আমি তোর জন্য নষ্ট করতে পারবো না। আমি যতদ্রুত সম্ভব তোদের ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করতেছি। প্রয়োজনে অন্য কোথাও আমি ওর বিয়ে দিবো। তোর যেহেতু ওকে সহ্য হয় না, তোকেও তোর পছন্দ মতো অন্য কোথাও বিয়ে দিবো। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। তুই এখন থেকে রাহার কাছে আর যাবি না।
–কি বলছো মা? আমি কি বলছি আমি ওকে মেনে নেবো না? একটু সময়তো দাও।
–আর কত? দেড় বছর শেষ করেছিস।
–আর একটু সময় দাও, আমি রাহাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
–দেখ বাবা, মানুষ তো ভুল করে, স্বামী হয়েও দেড় বছর যাবত ওকে দুরে রেখেছিস, এটা কি ওর জন্য শাস্তি নয়? মেয়েটাকে আর শাস্তি দিস না। ওকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখ। দেখবি ও তোকে অনেক ভালো রাখবে।
–আমি জানি মা, আর একটু সময় দাও আমায়। দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে।
–ঠিক আছে, আর একটা কথা।
–কি?
–আমায় কথা দে, যত যাই হয়ে যাক, কখনো ওকে ওর এই অতীত নিয়ে বকাবকি করবি না। এক কথায় কখনো ওকে এই অতীত মনে করিয়ে দিবি না।
–ঠিক আছে।
–ও অনেক্ষন যাবত তোর জন্য অপেক্ষা করছে, যা রুমে যা।
–হুম, রাহাও আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
–রাহা রুমে নেই। তোর বাবার সাথে খেলতেছে। তুই প্রিয়ার কাছে যা।
–রাহাকে নিয়ে যাই।
–সোজা রুমে যায় বলছি।
–যাচ্ছি।
মায়ের ধমক খেয়ে মামুন সোজা নিজের রুমে আসে।
রুমে এসে দেখে প্রিয়া আজও হালকা সাজে আয়নার সামনে বসে আছে।
হালকা গলার আওয়াজ দিয়ে মামুন রুমে প্রবেশ করে।
–রাহা কই?
–মায়ের কাছে।
–মামি আসছে?
–তোমার মায়ের কাছে।
–আমার মা তোমার মা হলো কবে থেকে?
–যেদিন তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে সেদিন থেকে।
–আবারও ডং করা শুরু করছো।
–ডং করবো কেনো? বিয়ের পর সবাই তো মা বলে ডাকে।
–ডাকো বাবা ডাকো, আমার কি! রাহাকে নিয়ে আসো।
–আমাকে আজ কেমন লাগছে?
–জানি না,
–বলবে না তাইতো?
–না
–রাহাকে পাবে না।
–এটা কেমন কথা?
–এটাই কথা, আগে বলো আমাকে কেমন লাগছে।
–বললে রাহাকে আনবে?
–হুম।
–খুব সুন্দর লাগছে।
–সত্যিই?
–হুম
প্রিয়া দৌড়ে গিয়ে শশুড়-শাশুড়ির কাছ থেকে রাহাকে নিয়ে আসে।
–দাও।
–না দিবো না।
–কেনো?
–আমার একটু তারিফ করো, তারপর।
–বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
–হোক, তারিফ করলে দিবো। নাহলে দিবো না।
–আমার দূর্বলতার সুযোগ নিচ্ছো?
–হুম।
–নিও না, পেরে উঠবে না।
–পারবো, এখন থেকে আর তোমার কাছে রাহাকে দিবো না।
–মানে?
–হুম
–কেনো দিবে না?
–আমার মেয়েকে নিতে হলে আমার একটা শর্ত মানতে হবে।
–কিসের শর্ত?
–আমি তোমাকে যা বলবো সেটা তোমাকে করতে হবে।
–কি?
–আমার তারিফ করো।
–আমি জানি না কিভাবে তারিফ করে।
–১০ মিনিট সময় দিলাম, ইউটিউব দেখে শিখে আসো।
–এটা কোনো কথা?
–হুম, আমি এখন কঠোর হয়ে গেছি।
–ধুর, ভাল লাগে না।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে মামুন বহিরে চলে আসে।
প্রিয়া ভেতরে বসে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর মামুন আবার রুমে প্রবেশ করে।
–শিখেছো?
–হুম।
–বলো।
–চোখ দুটো টানা টানা ঠোঁট দুটো লাল, লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে থাকে তোমার গাল.
কখনো সাজো না, কাজলও পরো না,
তবু রূপেরই বাহার।
বউ তুমি
আমার হৃদপিন্ডের একটি মহাখন্ড,
তুমিহীনা এই জীবন যেন মহাপ্রলয়ের লন্ড-ভন্ড
তুমি লজ্জাবতীর লাজ, ফুলশয্যার সাজ, তুমি ধ্রুবতারার আলো
কোটি নক্ষত্রের মাঝে তুমিই শুধু আমার হৃদয়ে সুখের প্রদীপ জ্বালো।
এর চেয়ে বেশি মিথ্যা আর বলতে পারবো না হ্যা।
–কিহ….? মিথ্যা বলছিস? সর এখান থেকে, তুই রাহাকে পাবি না।
–আরে মজা করছিলাম, সত্যিই বলছি।
–আমায় ছুয়ে বলো।
–এই যে তোমায় ছুয়ে বলছি।
–সত্যিই আমি দেখতে সুন্দর?
–একদম আমার রাহার মতো সুন্দর।
–শুধু রাহা রাহা করো কেনো? রাহার মাকে চোখে পড়ে না?
–পড়ে।
–তাহলে রাহার মাকেও তো রাহার মতো ভালোবাসতে পারো। রাহার মাকেও তো রাহার মতো মিস করতে পারো। সারাক্ষণ রাহাকে নিয়ে যেভাবে সময় কাটাও, সেভাবে রাহার মাকেও তো একটু সময় দিতে পারো।
–আজ হঠ্যাৎ কি হয়ে গেলো তোমার?
–আমার ভেতরটা পূর্ন হয়ে গেছে। আর আবেগগুলো রাখতে পারছিনা। সব বের হয়ে আসছে।
–তুমি কি আমাকে ভালোবাসো নাকি?
–আজ এতদিন পর জিজ্ঞেস করছো?
–এতদিন ইচ্ছে করেনি জিজ্ঞেস করার।
–তাহলে আজ কেনো জিজ্ঞেস করলে?
–জানতে ইচ্ছে হলো তাই।
–হঠ্যাৎ?
–এমনিই।
–ওওও
–কেনো আমায় ভালোবাসো?
–নিজের স্বামীকে কি ভালোবাসা যায় না?
–হুম যায়তো।
–আমার রাহার একটা পাপা লাগবে, হবে আমার রাহার পাপা?
–রাহা তো আমারই মেয়ে। আর আমিই ওর পাপা।
–আর রাহা মা? সে তো অধির আগ্রহ নিয়ে তার স্বামীকে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
–আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। কারন রাহার বাবাও রাহার মাকে খুব পছন্দ করে।
–সত্যি?
–হুম
–ভালোবাসে?
–তাকে একটু সময় দাও, তাহলে সব বুঝতে পারবে।
–আরো সময়?
–আর বেশি না, অল্পই।
–আমি অপেক্ষা করবো। কিন্তু সে যেন আমায় ভালোবাসে।
–বাসবে।
–আমার যে আজ কত খুশি লাগছে।
–কেনো?
–তোমার ওত জানা লাগবে না। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
–হুম
–তোমার প্রথম ভালোবাসা কে?
–আমার মা।
–ধুর, এটা নাতো। আচ্ছা ২য় ভালোবাসা কে?
–রাহা।
–যাহ
–কি?
–৩য় কে?
–৩য় স্থান এখনো খালি।
–আমাকে বসাও ওখানে।
–চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
–চেষ্টা যেনো শুধু আমার জন্য থাকে।
–অন্য কারো জন্য হলে?
–মেরে ঠ্যাং ভেঙে দেবো।
–কি জল্লাদরে বাবা।
–আমি এমনই, এতদিন কিছু বলিনি। এবার দেখাবো কি করে ভালোবাসা আদায় করে নিতে হয়।
–অ্যাহ!
–অ্যাহ না, হ্যা।
–কচু, দাও রাহাকে।
–নাও নাও, এই মেয়েটার জন্য আমার ভালোবাসা তোমার চোখে পড়ে না।
–বাপরে, নিজের মেয়েকেও সহ্য হয় না এখন।
–কেমনে হবে? ভেবেছিলাম ও আমার ভালোবাসা পাইয়ে দিবে। কিন্তু এখন দেখি আমার ভালোবাসার ভাগ নিয়ে বসে আছে।
–তোমার কাছে একটা অনুরোধ করবো, রাখবে?
–বলো না।
–রাহাকে কখনো বলবেনা যে আমি তার আসল বাবা না। আমি ওকে আমার মেয়ের মতোই বড় করবো।
–সেটা কি বলতে হয়? পাগল একটা। আমি কখনোই রাহাকে এসব বলবো না।
–থ্যাংকস।
.
প্রিয়া আজ খুব খুশি, মামুনকে আজও জোর করে বিছানায় ঘুমানোর জন্য রেখে দিছে।
–আমার তোমার সাথে ঘুমাতে লজ্জা লাগে। আমি বরং সোফায় যাই(মামুন)
–একদম না, এখানেই থাকবে তুমি। আমি কি পরনারী? তোমার বিয়ে করা বউ আমি, লজ্জা কেনো পাবা?
–জানি না, হঠ্যাৎ তো, তাই।
–আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। এখানে ঘুমাও।
–আচ্ছা।
–দাও রাহাকে, ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে। ওকে খাইয়ে দেই।
–এত তাড়াতাড়ি ও ঘুমাবে না। আরো খেলবে আমার সাথে।
–আমার ঘুম পাচ্ছে, দাও, ওকে খাইয়ে দেই। এরপর বাপ বেটি সারারাত খেলো।
–ওকে, আমি বাহির থেকে আসি তাহলে।
–চুপচাপ এখানে শুয়ে থাকো।
–না, আমার লজ্জা লাগে।
–লজ্জা যেনো না লাগে তার জন্য থাকতে বলছি। তোমার লজ্জা যেনো একটু কমে।
–লজ্জা কমলে কি হবে?
–কত কিছু হবে।
–কি হবে?
–এবার কিন্তু আমার লজ্জা করছে বলতে।
–হায়, এবার কি হবে?
–আমায় ভালোবাসতে হবে।
–হুম, আর?
–আমায় সময় দিতে হবে।
–আর?
–আর কিছু না। এটাই শুধু।
–ঠিক আছে।
–আমায় তুমি মন থেকে ক্ষমা করতে পেরেছো?
–তোমায় ভালোবাসতে শুরু করেছি, ক্ষমা না করতে পারলে কিভাবে ভালোবাসা যায়?
–সত্যি?
–হুম।
–আজ আমার কি যে শান্তি লাগছে।
–রাগের মাথায় তোমায় আমি অনেক বাজে কথা বলে দিয়েছি। তুমিও প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিও।
–আরে পাগল, আমার কিচ্ছু মনে নেই, ওসব আমি কত আগে ভুলে গেছি।
প্রিয়ার এমন আচরনে মামুনের এবার নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে।
মেয়েটাকে কতই না কষ্ট দিয়েছি, কখনো ঠিক মতো কথা পর্যন্ত বলিনি। কখনো জানতে চাওয়া হয়নি কেমন আছে।
অথচ মেয়েটা সেই কবে থেকে আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে, কখন আমি তার কাছে ফিরবো।
এটাই বুঝি ভালোবাসা? আচ্ছা, সে তো অন্য কাউকে ভালোবাসতো। এখনো কি তাকে মনের মধ্যে রেখেছে?
না না, ভালোবাসা অতীত দেখে না, ভবিষ্যৎ দেখে। মা বারন করেছে ওকে অতীত মনে করিয়ে না দিতে। অনেক কষ্ট দিয়েছি তাকে, আর না।
তার সাথে আমি নতুন করে শুরু করবো। একদম #শূন্য_থেকে_শুরু। যার শুরু থাকবে, কিন্তু শেষ থাকবে না।
.
–জানো মা, মামুনও আমায় পছন্দ করে।(প্রিয়া)
–তাই নাকি?
–হুম, কাল রাতে আমায় বললো।
–যাক, ছেলে তাহলে লাইনে আসছে(বিড়বিড় করে)
–কি বললে?
–কিছু না। তুই ওকে পছন্দ করিস?
–হুম খুব।
–তুই খুশি?
–খুব খুশি।
–আরে, এত লাফাচ্ছিস কেনো?
–খুশিতে। তুমি জানো না, তোমার ছেলে এত লজ্জা পায়, বাবা কি যে বলি।
–একটুআধটু লজ্জা পাওয়া ভালো।
–কাল রাহাকে খাওয়াচ্ছিলাম, লজ্জায় পালিয়ে যেতে চাচ্ছিলো। জোর করে সামনে বসিয়ে রেখেছি।
–ওমা, কেনো?
–কেনো আবার? লজ্জা ভাঙানো লাগবে না?
–তাই বলে এভাবে? পাগলি একটা।
–কি করবো আর? দেখো এখনো রাহাকে নিয়ে বসে আছে, কলেজেও যায়নি আজ। আর আমার সাথে এখনো কথা বলেনি।
–ছেলেটা পুরো পাগল। তোর মেয়ে আমার ছেলেটারে পাগল বানাই ফেলছে।
–আমাকে একটা প্ল্যান দাও না।
–কিসের?
–কিভাবে ওর সাথে শুরু করবো।
–সর এখান থেকে, আমি জানি না।
–এই যাহ, রাগ করো কেনো?
–আমাকে জিজ্ঞেস করিস কেনো? আমি জানি?
–তোমার তো অভিজ্ঞতা আছে।
–নাই, কিচ্ছু নাই। নিজেরটা নিজে কর। আমারে জিজ্ঞেস করে আমার ছেলের সাথে কিভাবে শুরু করবে। শয়তান মাইয়া।
–বা রে, কাকে জিজ্ঞেস করবো আর?
–তোর জামাইকে জিজ্ঞেস কর।
–তোমার ছেলেতো লজ্জায় কাছেই আসে না।
–চেষ্টা কর।
–আজ তাহলে একটা চেষ্টা করে দেখি, কি বলো?
–কর।
–আমায় দোয়া করে দাও। জামাই পটাতে যাচ্ছি।
–যাহ, শয়তান মাইয়া।
–হা হা হা
.
.
.
চলবে……….
.
লেখক #A_Al_Mamun
#শূন্য_থেকে_শুরু
পর্ব :- ৬
.
–আমায় দোয়া করে দাও। জামাই পটাতে যাচ্ছি।
–যাহ, শয়তান মাইয়া।
–হা হা হা
শাশুড়ি মায়ের সাথে দুষ্টুমি শেষে প্রিয়া রুমে এসে দেখে মামুন রাহাকে বুকের ওপর বসিয়ে রেখে রাহার সাথে কথা বলতেছে।
–কি হচ্ছে এখানে? (প্রিয়া)
–বাপ বেটি গল্প করতেছে(মামুন)
–ও তোমার কথা বোঝে? কি কথা বলো ওর সাথে?
–বোঝে বোঝে, সব বোঝে। শুধু জবাব দেয় না।
–যে বোঝে না, তাকে কত কিছু বলতেছো। আর যে বোঝে তার সাথে কথাই বলতেছো না।
–ওমা, কে সে?
–গাঁধা আমি।
–আচ্ছা। তো আপনি সারাক্ষণ মায়ের সাথে বসে থাকলে আমার দোষ? আমি কি ওখানে গিয়ে কথা বলবো?
–এখানে থাকলেও তো কিছু বলো না। শুধু মেয়ের সাথেই বলো।
মামুন রাহাকে বুকের ওপর থেকে নামিয়ে পাশেই শুইয়ে দিয়ে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে আসে।
–আচ্ছা, বলেন কি বলতে হবে আমাকে?
–কথা।
–কি কথা?
–আমি কি জানি? যেকোনো কথা।
–আচ্ছা, আর কি করতে হবে?
–আজ কলেজে যাও নি। আমার সাথেও তো একটু গল্প করতে পারো। কিছুক্ষণ একান্ত সময় কাটাতে পারো।
–আচ্ছা?
মামুন প্রিয়ার দিকে এগোতে থাকে, আর প্রিয়া পিছনের দিকে যেতে থাকে। একটা সময় প্রিয়া দেয়ালের কাছে গিয়ে আটকে যায়।
মামুন প্রিয়ার একদম সামনে চলে আসে।
–কি করছো?
–জানি না, তবে কিছুতো করার চেষ্টা করছি।
–কি?
–যেটা কখনো হয়নি।
–পারবে?
–যদি তুমি চাও।
–সেই কবে থেকেই তো অপেক্ষায় আছি।
–অপেক্ষা? আরো করবে?
–না, আপেক্ষার প্রহরগুলো শেষ করে দিতে চাই।
–আমায় ভালোবাসো?
–খুব
–কতটুকু?
–পরিমান জানতে চাও?
–শুনিনা একটু।
–এই ভালোবাসা জমতে জমতে পাহাড় সমান হয়ে আছে। তাই বলতে পারি, আমি তোমায় পাহাড় পরিমান ভালোবাসি।
–সত্যি?
–হুম।
–কখন থেকে?
–যখন থেকে আমায় অবহেলা শুরু করেছিলে। কেউ আমায় অবহেলা করলে তার প্রতি আমার মনোযোগ বেড়ে যায়। তোমার প্রতিও বেড়েছিলো এবং তা ভালোবাসায় রুপ নেয়।
–সারাজীবন এভাবে বাসতে পারবে?
–কেনো পারবো না? তুমি আমায় নতুন জীবন দিয়েছো। এই ঋণ কিভাবে শোধ করবো? ভালোবেসেই নাহয় শৌধ করে দেবো। তুমি কি পারবে আমার অতীতকে ক্ষমা করে দিয়ে আমার হাতে হাত রাখতে?
–হুম, যদি তুমি ছেড়ে না দাও।
–কক্ষনো ছাড়বো না, কথা দিলাম।
–তোমায় কি ছুয়ে দেখতে পারি?
–আমিতো তোমার বউ, অনুমতি নেওয়ার কি আছে? সেই কবে থেকেই তো অপেক্ষায় আছি।
–আমার কেমন জানি লাগছে। এখন না, পরে।
–তোমার যখন ইচ্ছা। তুমি আমায় মেনে নিয়েছো এতেই আমি খুব খুশি। বাকি সব নাহয় পরেই হবে।
–মা তোমায় কিছু বলেছে?
–নাতো, কি বলবে?
–আমার চাকরি হয়েছে।
–ওমা, কবে?
–এক সপ্তাহ আগে ইন্টার্ভিউ দিয়েছিলাম। আজ ওরা চিঠি পাঠিয়েছে। আগামী মাসেই জয়েন।
–তোমার পড়ালেখা?
–সেটা আর হলো কই? যতদুর পড়ার পড়েছি, আর লাগবে না। এখন থেকেইতো সংসারের হাল ধরতে হবে। বাবা আর একা কতদিন করবে?
–তা তো বুঝলাম, এই বয়সে পারবে সব সামলাতে?
–একটা বউ আছে, একটা মেয়ে আছে। তাদের সামলাতে হলে চাকরিটাও সামলাতে হবে।
–বাব্বাহ, কত কিছু ভাবো।
–ভাবতে হয়, যখন থেকে তোমাদের ভাবতে শুরু করেছি, তখন থেকে সংসার নিয়েও ভাবা শুরু করেছি।
–আমার পিচ্চি জামাই তাহলে এখন থেকে চাকরিও করবে?
–আমি পিচ্চি না। ২৪ বছর বয়স আমার। তোমার পিচ্চি মনে হয়?
–তো? তুমি বড় হয়েছো এমন কিছুতো দেখলাম না।
–দেখতে চাও?
–হুম
–দেখাচ্ছি।
কি দেখাচ্ছে সেটা আর না বলি…
.
রাতে রাহাকে নিয়ে খেলছিলো মামুন, পাশের শুয়ে ছিলো প্রিয়া।
–রাহা তোমায় মা বলে ডেকেছে?
–এখনো ডাকলো না। খালি পাপা ডাকে।
–বুঝলে তো এবার কাকে বেশি ভালোবাসে?
–জ্বি বুঝেছি। তো এখন থেকে নিজের মেয়েকে নিজে সামলান। আমি আর দেখবো না।
–লাগবে না তোমাকে, আমি পারবো।
–ঠিক আছে, দেখা যাবে। রাহা এখন ঘুমাবে। ঘুমানোর আগে কি খাওয়াবে ওকে?
–এখন তুমি খাইয়ে দাও। কাল থেকে আমি খাওয়ার ব্যবস্থা করে নিবো।
–জ্বি না। এখনই করেন।
–এত রাতে এখন রান্নাঘরে যেতে পারবো না।
–তাহলে আর কি, আমি ঘুমাই।
–আরে। রাহা কি খায় সেটাতো বলো।
–ফ্রিজে দুধ রাখা আছে। গরম করে ফিডারে করে নিয়ে আসো।
–ওকে
মামুন রান্নাঘরে গিয়ে রাহার জন্য দুধ নিয়ে আসে।
–দেখলে তো? এত কঠিন কাজ না।
–বেশ তো। এখন মেয়ে কাপড় ময়লা করলে সেগুলো পরিষ্কার করবে।
–অ্যাহ? সেটা আমি পারবো না।
–কেনো? বাচ্চা সামলানো না সোজা?
–একটা কথা বলছি আরকি। তাই বলে সব করাতে হবে?
–আর বলবা বাচ্চা সামলানো সহজ?
–না
–মনে থাকে যেনো।
.
পরদিন বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা শেষে রাতের প্রায় ১০টায় মামুন বাড়ি ফেরে।
হনহন করে প্রিয়ার সামনে এসে দাড়ায়।
–আজ এতো দেরি করে আসলে যে, রাহা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলো।
–শাহিনের সাথে দেখা হয়েছিলো।
–কোন শাহিন?
–রাহার বাবা।
–রাহার বাবা তুমি, কোনো শাহিন না।
–বাস্তবতা তো অন্য কিছু।
–না, এটাই বাস্তবতা।
–শাহিনকে তোমার পরিবারের কেউ চেনে।
–না, কেউ চিনে না।
–একটু মনে করে দেখো তো।
–নিশি চিনতো।
–তোমার খালাতো বোন নিশি?
–হুম।
–কি করে চিনতো?
–আমরা যখন দেখা করতে যেতাম, তখন একা থাকার কারনে নিশিকে নিয়ে যেতাম।
–নিশি তোমাদের সাথেই থাকতো?
–হুম
–নিশি এখন কোথায়?
–সে তো এখন বিয়ে করে স্বামীর সংসার করতেছে।
–তার বিয়েতে গিয়েছিলে?
–না। এত কিছু কেনো জিজ্ঞেস করছো?
–কারন আছে।
–কিসের কারন?
–নিশির বিয়ে হয়েছে কতদিন হলো?
–আমাদের বিয়ের ১ মাস পরই।
–এই জন্য তুমি তার বিয়েতে যেতে পারোনি?
–হুম।
–কখনো তার স্বামীকে দেখেছো?
–হ্যা।
–কিভাবে?
–বিয়ের পর নিশি ওর স্বামীর সাথে ওর ফটো পাঠিয়েছিলো।
–ওর স্বামীকে আগে কখনো দেখেছিলে?
–নাতো। কেনো? কি হয়েছে?
–নিশিকে শাহিনের সাথে দেখেছি।
–কি বলছো? নিশি কি করবে শাহিনের সাথে?
–জানি না। দেখলাম দুজনকে হাত ধরাধরি করে গাড়িতে উঠতে।
–তুমি ভুল দেখেছো হয়তো। স্বামী রেখে শাহিনের সাথে ও কি করবে?
–জানি না।
–কোথায় দেখেছো তাকে?
–বাজারে।
–দাড়াও, খালামনিকে ফোন দিয়ে দেখি।
–ওকে
.
প্রিয়া তার খালাকে ফোন দেয়।
মামুন পাশেই বসে আছে। একটু পর প্রিয়া কল কেটে দেয়।
–কি বললেন উনি?
–নিশিকে নাকি ২ দিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না।
–তাহলে আমি ভুল কিছু দেখিনি। তোমার খালাতো বোন শাহিনের ফাঁদে পা দিয়েছে।
–কেনো সে এমন করবে? সে তো বিবাহিত।
–সেই উত্তর তো নিশিই ভালো দিতে পারবে।
–আমি বুঝতে পেরেছিলাম শাহিন ভালো মানুষ না। তবে এটা বুঝতে আমার অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু নিশি এখনো বুঝতে পারলো না।
–কিভাবে বুঝলে?
–শাহিন আমায় বলেছিলো সে তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। এবং তার বাবা একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। সেদিন শপিং মলে যখন তার সাথে আমার দেখা হয়, তখন সে আমায় বলে তার মা মারা গেছে এবং সম্পত্তি নিয়ে তার পারিবারিক সমস্যার কারনে তার ভাইয়েরা তাকে জেলে পাঠায়। এর বাবা বেচে আছে, এবং তার কোনো ভাই নেই। সম্পত্তি নিয়েও কোনো সমস্যা নেই। সে সবই আমায় মিথ্যে বলেছিলো। তখনই আমি বুঝতে পারি শাহিন আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমি তাকে ওতটা গুরুত্ব না দিয়ে চলে আসি।
–হুম বুঝলাম। এবার তোমার খালাতো বোনের কি হবে?
–জানি না, স্বামী রেখে পালিয়েছে। ওর ভাগ্যে খারাপ কিছুই আছে।
–তোমার খালাকে জানাবে?
–না না, ওনারা কষ্ট পাবেন। বাদ দাও।
–দুনিয়ায় এসব কি যে শুরু হলো, চারদিকে শুধু নোংরামি।
–কি আর করবো বলো।
–কিছু করতে হবে না। খাবার দাও, খুদা লেগেছে।
–তুমি হাত মুখ ধুয়ে আসো। আমি খাবার নিয়ে আসতেছি।
–আচ্ছা।
.
–আমি তোমায় খাইয়ে দেই?(প্রিয়া)
–কেনো?(মামুন)
–মন চাইলো।
–আচ্ছা দাও।
–হা করো।
–তুমি খেয়েছো?
–না, তুমি খেয়ে নাও, এরপর আমি খেয়ে নেবো।
–পরে কেনো? এখান থেকে খাও।
–এক প্লেটে?
–কোনো সমস্যা?
–আমার তো ইচ্ছে করছিলো। তুমি বকবে ভেবে খাচ্ছি না।
–বকবো কেনো?
–জানি না, মনে হলো আরকি।
–বেশি বেশি মনে হয় তোমার, খেয়ে নাও।
–আচ্ছা।
–তোমার যা মনে চাইবে, আমাকে বলবে। মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখবে না।
–রাগ করবে নাতো?
–রাগ করবো কেনো?
–আচ্ছা বলবো তাহলে।
এক প্লেটে দুজন খাবার খেয়ে নেয়।
মামুন প্রিয়ার পাশে শুয়ে আছে।
–একটা কথা বলি?(প্রিয়া)
–হ্যা বলো।
–তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাই?
–আমিতো তোমার স্বামী, সব কিছুতে এতো অনুমতি চাওয়া লাগে?
ওমনি প্রিয়া মামুনের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
–বাপরে, বলতে দেরি, করতে দেরি নাই।
–অনেক দিনের অপেক্ষা, তাই দেরি করলাম না।
–কেনো অপেক্ষা করছো?
–ও তুমি বুঝবে না।
–হ্যা সব শুধু তুমিই বুঝো।
–ঘুমাও তো। আমাকেও একটু ঘুমাতে দাও।
–এভাবে জড়িয়ে রেখেছো কেনো? আমার কেমন জানি লাগছে।
–কেমন?
–জানি না, শরীর কাপতেছে।
–কেনো?
–তোমার ছোয়ায়।
–এতো ঘামাচ্ছো কেনো?
–জানি না।
–হায়, আমার জামাইটা কত ভোলা। ছেড়ে দেবো?
–না।
–তাহলে আমায় একটা পাপ্পি দাও।
–বাবাগো, কি জানি হয়ে যায়।
–কি হবে?
–এতটা কাছে এসো না।
–আসবো, কি করবে?
–উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যাবে।
–হতে দাও। আমিও চাই কিছু একটা হোক।
প্রিয়া ধীরেধীরে নিজেকে মামুনের কাছে শপে দেয়।
(তাদের ব্যক্তিগত বিষয় গুলো আর না বলি)
.
–রাহা, মা ওঠো। আজ কত বেলা করে ঘুমাচ্ছো।(মামুন)
–রাহা আর উঠবে না।(প্রিয়া)
–কেনো?
–সারাজীবনের জন্য রাহাকে শুইয়ে দিয়েছি।
–মানে?
–রাহাতো তোমার সন্তান নয়। আমরা নিজেদের একটা সন্তান নিবো। তাই রাহাকে আমি মেরে ফেলেছি।
–কি বলছো এসব?
–এত চিন্তা করিও না। আমরা খুব তাড়াতাড়ি একটা বাচ্চা নিবো। রাহাতো আমার অবৈধ সন্তান ছিলো। আর তুমি আমার এই অবৈধ সন্তানের ওপর বেশি নির্ভর হয়ে যাচ্ছিলে। তাই কাল রাতে ওকে দুধের সাথে বিষ মিষিয়ে খাইয়ে দিয়েছি। এখন আমাদের একটা বেবি হলে তার বাবা হবে তুমি। তোমার মনের মধ্যে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
–তুমি পাগল হয়ে গেছো? কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলছো? মা হয়ে মেয়ে কে?
–হ্যা, আমি মেরে ফেলেছি ওকে। আমার মেয়েকে আমি মেরেছি। কাউকে জবাব দিবো না আমি।
–জবাব তো তোকে দিতেই হবে। তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস। তোকে তো আমি,,,,
ওমনি মামুন প্রিয়াকে একটা চড় দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়।
–ওঠো, ওঠো বলছি। এটা কি হলো?(প্রিয়া)
–তোরও বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।(মামুন)
–ওই, সোজা হয়ে বসো। কি সব বকে যাচ্ছো তখন থেকে?
–কি হয়েছে?
–চড় মারলে কেনো আমাকে?
–রাহাকে কেনো মেরে ফেললে?
–পাগল হয়ে গেছো? এই যে রাহা ঘুমাচ্ছে।
মামুন ভালো করে খেয়াল করে দেখে, এটা স্বপ্ন ছিলো। এবং প্রিয়ার কথার শব্দে রাহা কান্না করতে করতে ঘুম থেকে উঠতেছে।
ওমনি রাহাকে আধা ঘুমন্ত অবস্থায় মামুন বুকে তুলে নেয়।
–এই, কি হয়েছে তোমার? এমন করতেছো কেনো?
–একটা খুবই বাজে স্বপ্ন দেখেছি।
–রাহাকে নিয়ে?
–হুম।
–আমাকে মারলে যে।
–সরি, ঘুমের ঘোরে হয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারি নি।
–ঘুম থেকে উঠে কোথায় আমাকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখবে, উল্টো চড় মেরে আমার ঘুম ভাঙালে।
–বললাম তো সরি।
–কি স্বপ্ন দেখলে?
–দেখলাম তুমি রাহাকে বিষ খাইয়ে দিয়েছো।
–হ্যাহ, কি বলছো?
–এখন থেকে ওকে শুধু বুকের দুধ খাওয়াবে। বাহিরের কিছুই আর খাওয়াবে না।
–সন্দেহ হচ্ছে?
–যেটা বলছি সেটা শুনো। যদি কিছু খাওয়ানোর থাকে, তাহলে সেটা আমি খাওয়াবো।
–আরে পাগল, আমি ওর মা। আমি কেনো এমন করবো?
–আমি কি জানি? এমনটাই তো হলো।
–এটা একটা বাজে স্বপ্ন। এতো ভেবো না।
–আমার কলিজাটা শুকিয়ে গেছিলো। ভাগ্যিস স্বপ্ন ছিলো। আমিতো মরেই যেতাম।
.
.
.
চলবে…………
.
লেখক #A_Al_Mamun
#শূন্য_থেকে_শুরু
পর্ব :- ৭
.
–আমার কলিজাটা শুকিয়ে গেছিলো। ভাগ্যিস স্বপ্ন ছিলো। আমিতো মরেই যেতাম।
–সারাক্ষণ রাহা রাহা করলে তো স্বপ্নে আসবেই।
–তাই বলে বাজে স্বপ্ন?
–সারাক্ষণ রাহা রাহা না করে কিছুসময় প্রিয়া প্রিয়াও করো। আমাকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন আসবে না।
–তুমি আছো তোমায় নিয়ে, এদিকে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো।
–পাগল একটা, ওঠো।
–তুমি যাও, আমরা আসতেছি।
মামুন রাহাকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকে। রাহাও পাপার বুকে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
–এই কি হলো? এখনো উঠলে না?
–রাহা ঘুমিয়ে গেছে আবার।
–ওকে এখানে রেখে তুমি ওঠো, যাও ফ্রেস হয়ে আসো। নাস্তা রেডি
–আরো পরে।
–না, এখনি। আজ দাওয়াত আছে আমাদের।
–দাওয়াত? কোথায়?
–আমার নানুর বাড়িতে।
–কিসের দাওয়াত?
–বড় মামা দেশে এসেছে। ওনারা পুরো পরিবার কানাডা থাকতো। কাল এসেছে, আমাদের আজ যাওয়ার জন্য বললো।
–কে কে যাবে?
–আমি তুমি আর রাহা।
–মা বাবা যাবে না?
–মাকে বলেছি, ওনারা যাবে না। আমাদেরই যেতে বললো।
–ধুর, তোমার নানুর বাড়ির কাউকেই তো আমি চিনি না। গিয়ে কি করবো?
–পরিচিতো হবে না? বড় মামাকে তো তুমি কখনো দেখো নি।
–কখন যাবে?
–একটু পরই, ওঠো। নাস্তা করে তৈরি হয়ে নাও।
.
–আর কত দুর?(মামুন)
–এই তো ৫ মিনিট,
–আমি কাউকে চিনি না, আমার সাথে সাথে থাকবে। নাহয় আমার একা একা লাগবে।
–সমস্যা নেই তো। আমি পরিচয় করিয়ে দিবো। ওখানে শুধু আমার মামা মামী, একটা ছোট্ট মামাতো ভাই, আর একটা মামাতো বোন আছে।
–তবুও পাশে থেকো।
–আচ্ছা।
ও বাড়িতে নেমে মামুন ধীরেধীরে সবার সাথে পরিচিত হয়।
কারন মামুন এর আগে কখনো প্রিয়ার নানুর বাড়ি আসে নি।
মামুন রাহাকে কোলে নিয়ে প্রিয়ার সাথে ঘরে প্রবেশ করছিলো।
পেছন থেকে কেউ একজন প্রিয়া আপু বলে জোরে ডেকে ওঠে।
মামুন পেছন ফিরে দেখে একটা মেয়ে প্রিয়ার দিকে ছুটে আসছে।
প্রিয়া এবং মেয়েটা দুজন দুজনকে দেখে লাফালাফি শুরু করে।
মামুন দরজার সামনে দাড়িয়ে এসব কান্ড দেখছে।
–আয় পরিচয় করিয়ে দেই, এটা হলো তোর দুলাভাই। (প্রিয়া)
–আসসালামু আলাইকুম।(মেয়েটা)
–ওয়ালাইকুম আসসালাম।(মামুন)
–আর ও হলো আমার মামাতো বোন আশা।
–আপু, দুলাভাইকে নিয়ে ভেতরে যাও, আমি নাস্তা নিয়ে আসতেছি।
–আচ্ছা যা।
.
মামুন প্রিয়াকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে।
–এই জন্যই আমি কোথাও যাই না। নতুন কোনো জায়গায় গেলে কেমন জানি একা একা লাগে।
–কেনো? একা লাগবে কেনো? আমি আছি তো।
–হুম, সবসময় পাশেই থাকবে।
–আচ্ছা।
–তোমার মামাতো বোনের এখনো বিয়ে হয়নি?
–না, ওকে বিয়ে দিবে বলেই তো সবাই দেশে আসলো।
–দেখতে তো মাশাআল্লাহ।
–ওই চুপ।
–আরেকটা বিয়ে করতে মন চাচ্ছে। ওনারা রাজি হবে?
–পাগল হয়ে গেছো? চুপ করে এখানে বসে থাকো।
–দেখে তো মনে হলো তোমরা খুবই ক্লোজ, তো বিয়ের পর আশার সাথে মানিয়ে নিতে পারবে না?
–আর একবার যদি এসব বলো, তোমার মাথা ফাটিয়ে দিবো আমি।(রেগে)
–এই সরি সরি, মজা করছিলাম।
–মজাই যেনো থাকে।
–বাবারে, কি রাগ।
–হুম।
একটু পর আশা এসে বোনকে নাস্তা দেয়।
–আপু, তোমার মেয়েটা কত্ত কিউট, একদম তোমার মত দেখতে।(আশা)
–সবাই বলে।
–দুলাভাই এতো ছোট কেনো? বাল্য বিবাহ দিয়েছে?
–চুপ কর শয়তান। ও শুনলে রাগ করবে।
–আরে না, রাগ করবে কেনো? শালির সাথে দুলাভাইরা রাগ করে না।
–এহ, তুমি সব জানো তো, তার রাগ ভাঙানো খুবই কঠিন। রাগাস না।
–দুলাভাই কই? একটু মজা করে আসি।
–ওর নাকি গরম লাগতেছে। তাই উঠানে গেছে,
আশা লাফাতে লাফাতে উঠানে গিয়ে দেখে মামুন একটা চেয়ারে বসে ফোন টিপতেছে।
পেছন থেকে গিয়ে আশা মামুনের কানে কানে বলে,
–আপু জানে?
মামুন একটু চমকে উঠে পেছনে তাকায়, দেখে আশা পেছনে দাড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসে।
–কি জানে?
–আপনি যে লুকিয়ে লুকিয়ে কার সাথে কথা বলতেছেন তা কি আপু জানে?
–আমি কার সাথে কথা বললাম?
–আমি দেখছি, কার সাথে যেনো চ্যাটিং করতেছেন।
–মিথ্যা কেনো বলেন?
–দেখেন দুলাভাই, আমি আপনার ছোট, তুমি করে বলবেন।
–আরে, রাগ করার কি আছে।
–আপু তো বিয়ে আগে অনেক ভাব নিয়ে থাকতো, কেমনে পটাইছেন?
–তোমার আপুকেই জিজ্ঞেস করিও।
–আপু বলবে না, আপনিই বলেন।
–এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো, তারপর বলবো।
–ঘুষ না দিলে এই জামানায় কিছুই হয় না। আপনি ও
বলেই আশা হনহন করে ঘরে চলে গেলো, প্রিয়াও বেরিয়ে এসে মামুনের সামনে দাড়ায়।
–কি হলো? আশা কই যায়?
–পানি আনতে পাঠালাম। এত গরম পড়তেছে।
–আমাকে বলতে, আমি এনে দিতাম।
–আর বলো না, তোমার মামাতো বোনটা এত বেশি কথা বলে, তাই পাঠিয়ে দিলাম।
–ও এমনই, একটু বেশি কথা বলে।
–রাহা কোথায়?
–ঘুমিয়ে গেছে, রুমে রেখে এসেছি।
–এই নেন আপনার পানি(আশা)
–এত তাড়াতাড়ি চলে আসলে যে? (মামুন)
–আপনার না পানি লাগবে, তাই তো নিয়ে আসলাম।
–আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক।
–শেষ?
–আর কি? আরো দোয়া লাগবে? আল্লাহ ভালো একটা জামাই দিক।
–ভালো জামাই কি পামু? আপনাকে তো আপু দখল করে নিলো। আমার কথা একটুও ভাবলো না।
–ওই শয়তান মাইয়া, কি কস? যা ঘরে যা।(প্রিয়া)
–আপু, তোমার জামাইকে আমার পছন্দ হয়েছে। আব্বুকে বলবো এমন জামাই লাগবে আমার।
বলে আশা দোড় দেয়।
–এটা কি হলো?(মামুন)
–মেয়েটা একটু পাগল টাইপের, বাদ দাও।(প্রিয়া)
–হুম বুঝলাম।
.
রাতে খাবার খেয়ে মামুন রাহাকে নিয়ে খেলতেছে। এমন সময় আশা পেছন থেকে দৌড়ে এসে মামুনের হাত থেকে রাহাকে নিয়ে নেয়।
–আরে আরে, পড়ে যাবে। এদিক দাও।
–পড়বে না, বাচ্চা আমার খুব ভালো লাগে। রাহা কিছুক্ষণ আমার কাছে থাক।
–আপনার যখন হবে, তখন আপনি নিয়ে খেলা করিয়েন, এখন আমার জিনিস আমাকে দিন, আমি খেলি।
–আপনি এত হিংসুক কেনো দুলাভাই? আমি ওকে দিবো না, গেলাম আমি।
মামুনের অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাহাকে কোলে নিয়ে আশা নিজের রুমে চলে যায়।
একটু পর প্রিয়া রুমে আসে।
–এই দেখো তো, আশা রাহাকে নিয়ে গেছে। ওকে নিয়ে আসো।
–ও কিছুক্ষণ খেলুক না রাহার সাথে।
–আরে, তোমার মামাতো বোন রাহাকে নিয়ে যেইভাবে লাফালাফি করতেছিলো, কি জানি হয়ে যায়। নিয়ে আসো তো।
–আচ্ছা বসো, আমি আনতেছি।
একটু পর প্রিয়া আশার থেকে রাহাকে নিয়ে এসে মামুনের হাতে তুলে দেয়।
–এবার খুশি?
–হুম।
–কারো প্রতি এতটা দূর্বল হইয়ো না যে সে চোখের আড়াল হলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না। দূর্বলতাটাও একটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাখো।
–আমি আবার কি করলাম?
–কিছুই করো নি, এমনিই বললাম।
–ওও, এখানে আর কয়দিন থাকবো আমরা?
–সবে তো একদিন হলো, একসপ্তাহ থাকবো।
–একদিনেই তোমার মামাতো বোন মাথাটা খারাপ করে ফেলছে, বাকি দিনে কি হয় আল্লাহই ভালো জানে। এত বড় হইছে, তবুও বাচ্চাদের মতো আচরন করে।
–একটু দুরে দুরে থাকো, তাহলেই তো হয়।
–দেখা যাক, তবে রাহাকে দিবো না আর।
–কেনো?
–ঠিক মতো কোলে নিতে পারে না, রাহাকে উপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে আবার ক্যাচ ধরে, এমন কেউ করে?
–আচ্ছা আমি মানা করে দিবো।
–ঠিক আছে।
.
ভোরে দরজায় ঠক ঠক শব্দে মামুন আর প্রিয়ার ঘুম ভাঙে।
–কে? (প্রিয়া)
–আপু আমি, সকাল হয়ে গেছে ওঠো।(আশা)
–তোমার বোনটা খুব জ্বালাইতেছে। আমার কিন্তু মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে।(মামুন)
–কি করি বলোতো, বাচ্চামি এখনো যায়নি।
–মানা করো দরজায় ঠকঠক না করতে।
প্রিয়া এগিয়ে গিয়ে দরজা খোলে।
–কি হয়েছে?
–সকাল হয়ে গেছে, উঠবে না?
–সকাল যখন হয়েই গেছে, উঠতে তো হবেই। তোর দুলাভাই ঘুমাচ্ছে, শব্দ করিস না।
–দাড়াও, আমি জাগিয়ে দিচ্ছি।
–আশা, এটা মজা করার সময় না।
–আমি শালী তো, কিছু মনে করবে না।
–আশা, তোকে বকবে এখন। যাস না।
–কিছু বলবে না, দেখো তুমি।
প্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে আশা রুমে ঢুকে পড়ে। মামুন ঘুমঘুম ভাব নিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
–দুলাভাই ওঠেন। সকাল হয়ে গেছো।
মামুন চোখ মেলে দেখে আশা দাড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসতেছে।
–কি?
–উঠবেন না? সকাল হয়ে গেছে।
–আমি দেখেছি সকাল হয়ে গেছে। উঠতেছি, তুমি যাও।
–না, আমার সামনেই ওঠেন।
মামুন চোখ গরম করে প্রিয়ার দিকে তাকায়।
প্রিয়া ভালোভাবেই বুঝতে পারে মামুন রেগে যাচ্ছে।
এগিয়ে এসে আশার সামনে দাড়ায় সে।
–বোন আয়, বাহিরে চল।
–ওই দেখো, তোমার মেয়েও উঠে গেছে। আর তোমার জামাই, একদম অলস। ওঠেই না।
–চল তো।
প্রিয়া আশাকে নিয়ে বাহিরে চলে আসে। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটে গেছে।
মামুন পাশ ফিরে রাহাকে বুকে জড়িয়ে আবার শুয়ে পড়ে।
–দেখ আশা, এভাবে কাউকে জাগিয়ে দিলে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এভাবে ডাকতে নেই।
–ওমা, আমিতো আব্বুকেও সবসময় এভাবে ডেকে তুলি। আব্বুতো রাগে না।
–কারন মামা তোকে ভালোবাসে, তাই তোর করা সব কাজই তার ভালো লাগে। কিন্তু তোর দুলাভাইতো তোর আপন কেউ না। তার তো রাগ হবেই।
–বাব্বাহ, কতো কন্ডিশন তোমাদের। আর ডাকবো না যাও।
–রাগ করিস কেনো? চল নাস্তা বানাবো।
.
প্রিয়া আশাকে সাথে নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।
মামুন ভালো করেই বুঝতে পারে, আশা দেখতে যতটা সুন্দর, ততটাই বোকা মেয়ে। কে তার ওপর রাগ করলো, কে তাকে পছন্দ করো এতে তার কিছুই যায় আসে না।
সে নিজের মত করেই চলে, যখন যা মন চায় তখন সে তাই করে।
বিকেলে মামুন রাহাকে নিয়ে বিছানায় খেলছিলো। আর পাশেই প্রিয়া বসেছিলো।
কোথায় থেকে যেনো আশা দৌড়ে আসে।
–আপু, চলো আজ তোমাদের গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাবো।
প্রিয়া মামুনের দিকে ঘুরে তাকায়।
মামুনও প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ ভেবে মামুন চোখের ইশারায় প্রিয়াকে সায় দেয়।
–কি হলো? যাবে না?
–আচ্ছা চল।
–দুলাভাই যাবে না?
–হ্যা যাবে তো, বাহিরে চল, সে আসতেছে।
–আচ্ছা চলো।
মামুন আর প্রিয়া আশার সাথে তাদের নিজেদের এলাকার সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখে।
–জানেন দুলাভাই, অামিও আজ অনেকদিন পর আপনাদের সাথে এসে গ্রামটা দেখলাম। আমাদের গ্রামটা সুন্দর না?
–হুম, খুব সুন্দর। শহরের মতো কোলাহল নেই, চিৎকার চেঁচামেচি নেই, বিশুদ্ধ বাতাস, খুব ভালো লাগতেছে।
–সবসময় আসবেন আমাদের বাড়িতে, আমি আপনাকে ঘুরিয়ে দেখাবো।
–তোমার বিয়ে হয়ে গেলে কি আর তুমি এই বাড়িতে থাকবে নাকি, কি করে দেখাবে?
–তাও তো ঠিক।
–রাত হয়ে যাচ্ছে, চলো বাড়ি চলো।
–আপু, তোমার জামাইতো দেখি রাত ভয় পায়।
–আরে, ভয় পাবো কেনো? সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফেরা ভালো, তাই বললাম।
–তুই এতো কথা বলিস কেনোরে আশা? চল বাড়ি চল।(প্রিয়া)
–আচ্ছা চলো।
.
–বাপরে, তোমার এক মামাতো বোন আমাকে পাগল বানাই ফেলছে। ওর বয়স কতো?
–১৮
–মনে তো হয় না, ৫-৬ বছরের বাচ্চার মতো আচার আচরন।
–ও এমনি,
–আমার আর এখানে থাকতে মন চাচ্ছে না, চলো কালই চলে যাই।
–ধুর, পাগল হলে? মামা মামী কি ভাববে?
–তুমি একটু বুঝিয়ে বললেই তো হয়।
–পারবো না, আরো ৫ দিন থাকবো আমরা।
–আমার ভালো লাগছে না এখানে।
–আমি তো সবসময় তোমার পাশেই থাকি।
–রাহা কোথায়?
–মামী নিয়ে গেছে।
–সবাইকেই কোলে নিতে হয় নাকি?
–বা রে, বাচ্চাদের তো সবাই আদর করে।
–ওকে নিয়ে আসো না। ওর পাপা ওকে মিস করতেছে।
–তুমি একটা পাগল। দাড়াও নিয়ে আসছি।
প্রিয়া মামীর কাছে যায় রাহাকে নিয়ে আসার জন্য।
–মামী, রাহা কোথায়?
–রাহাকে তো তখনই নিয়ে গেলো।
–কে?
–আশা।
–ও আচ্ছা।
মামীর রুম থেকে প্রিয়া আশার রুমের দিকে পা বাড়ায়।
–আশা….
–হুম
–রাহাকে দে, তোর দুলাভাই ওকে খুজতেছে।
–এখন না, ওকে বউ সাজাবো, মেকাপ করা বাকি আছে। পরে নিও।
–তুই কি এখনো বাচ্চা? এসব তো বাচ্চারা করে।
–যত যাই বলো, এখন দিবো না। ওকে সাজিয়ে ছবি তুলে ফেইসবুকে দিতে হবে। তুমি যাও, একটুপর আমি গিয়ে দিয়ে আসবো।
–তোর দুলাভাই ওকে খুজতেছে, না নিয়ে গেলে আমাকে বকবে। কাল সকালে সাজিয়ে ছবি দিস। এখন দিয়ে দে।
–একটা মুহূর্তও কি মেয়েকে ছাড়া থাকা যায় না? সারাক্ষণ শুধু রাহা রাহা করে। তোমার জামাইর কপালে দুঃখ আছে।
–দে তো, কত কথা বলিস।
–নিয়ে যাও, লাগবে না তোমার মেয়ে কে। আমারও এদিন মেয়ে হবে। তখন আমিও তোমার সাথে এমন করবো।
–বোন, রাগ করিস না। এখন তো ঘুমানোর সময় হয়ে গেছে, এখন রাহাকে না নিয়ে গেলে তোর দুলাভাই রাগ করবে।
–হুম যাও।
আশা একপ্রকার রাগ করেই রাহাকে ফিরিয়ে দেয়।
.
.
.
চলবে………
.
লেখক #A_Al_Mamun
#শূন্য_থেকে_শুরু
পর্ব :- ৮
.
আশা একপ্রকার রাগ করেই রাহাকে ফিরিয়ে দেয়।
প্রিয়াও বুঝতে পারে আশা রাগ করেছে।
তবুও কিছু না বলে রাহাকে নিয়ে মামুনের হাতে তুলে দেয়।
–বাপরে, আমার মেয়েকে এত সজিয়ে দিলো কে?
–আশা।
–একদম পরির মতো লাগছে।
–রাহাকে নিয়ে আসায় সে খুব রাগ করছে।
–কেনো?
–নিয়ে এলাম যে, ও রাহাকে রাখতে চেয়েছিলো।
–আশার কাছে রাহাকে দিতে আমার ভয় লাগে। ও ঠিকমত কোলে নিতে পারে না। আর একটু বিরক্তিকর।
–কিরকম?
–এই যে, যেটা বারণ করা হয় সেটা আরো বেশি করে করে। ও কি এখনো ছোট?
–ছোটই তো, থাক বাদ দাও। শুয়ে পড়ো।
–এত তাড়াতাড়ি?
–হুম, নাহয় ভোরে এসে আবার ডাক দিবে। রাহাকে দাও, খাইয়ে দেই।
–এটা কোনো কথা? তার জন্য বুঝি এখন তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে?
–হুম।
–এত জ্বালা আর ভালো লাগে না।
–পাগল একটা, ঘুমাও।
.
সকালে একটু দেরি করেই মামুনের ঘুম ভাঙে। প্রিয়া আর রাহা কেউই পাশে নেই। সবাই উঠে গেছে।
মামুনও উঠে ফ্রেস হয়ে বাহিরে আসে।
প্রিয়া দরজার সামনে বসে মামীর সাথে গল্প করছে।
মামুনকে দেখে উঠে মামুনের সামনে আসে।
–আমার জামাই উঠে গেছে?
–হুম।
–আসো তোমায় নাস্তা দেই।
–তোমরা খেয়ে ফেলছো?
–আমি খাইনি, এসো খাবে।
–রাহা কই?
–আশার কাছে।
–কোথায়?
–রুমে নিয়ে গেলো, রাহাকে বউ সাজাচ্ছে।
–বউ সাজাচ্ছে কেনো?
–ফেইসবুকে নাকি ছবি দিবে, তাই।
–আমি একটু দেখে আসি।
–নাস্তা করে নাও, এরপর যাও।
–রাহা খেয়েছে?
–খাইয়ে দিলাম তো।
–আচ্ছা চলো।
নাস্তা শেষে মামুন আশার রুমের দিকে যায়।
আশা রাহাকে সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছে। মামুন দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে মেয়েকে দেখছে।
আশা এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে রাহার ছবি নিচ্ছে, আর রাহা মিটমিট করে হাঁসছে।
প্রিয়া এসে মামুনের পাশে দাড়ায়….
–দেখো, তোমার মেয়েকে কত্ত সুন্দর লাগছে(প্রিয়া)
–একদম তোমার মতো।(মামুন)
–আমি সুন্দর?
–বেশি না, একটু।
–হ্যাহ! একটু?
–নাতো, কে বললো একটু সুন্দর?
–তুমি বলেছো।
–আমার বউটা কত্ত সুন্দর। ওরকম কথা কি আমি বলতে পারি?
–এবার ঠিক আছে।
–ও ম্যাডাম… আপনার হয়েছে? হলে আমার মেয়েটাকে একটু দিন। (আশাকে উদ্দেশ্য করে)
–মাত্রই তো নিয়ে এলাম, মেয়েকে ছাড়া বুঝি কিছুক্ষণ থাকতে পারেন না? যান, আরো পরে আসেন।
–কিভাবে থাকবো? একটাই তো মেয়ে আমার।
–আরেকটা নিয়ে নেন।
–চেষ্টা চলতেছে, সামনের বছর তোমাদের বাড়িতে ডাবল নিয়ে বেড়াতে আসবো।
–বাপরে, একটা এখনো মাটির সাথে কথা বলে, আর আপনি আরেকটা?
–কি করবো বলো, সবার কথাই তো ভাবতে হয়।
–আপু দেখছো তোমার জামাই কি বলে।
–আমাকে বলিস কেনো? আরো তাল মিলা ওর সাথে।(প্রিয়া)
–যেমন জামাই, তেমন বউ। বাব্বাহ…. নিয়ে যাও তোমার মেয়েকে। আমি আর আনবো না(আশা)
–আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মামুন রাহাকে কোলে নিয়ে দুষ্টুমি করতে করতে রুমে চলে আসে।
দুপুরে খাওয়ার জন্য প্রিয়া আর মামুনের ডাক পড়ে। রাহাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে দুজন খাবার টেবিলে রওয়ানা দেয়।
পেছন পেছন আশা রুমে ঢুকে।
–তোমরা খেতে যাও, আমি রাহাকে ছাদে নিয়ে যাচ্ছি।
বলেই রাহাকে ছো মেরে নিয়ে যায়।
–এখন খেতে চলো, এই ফাঁকে আশা ওকে নিয়ে খেলুক।(প্রিয়া)
–আশা রাখতে পারে না।
–আচ্ছা আগেতো খেয়ে নাও, খাওয়া শেষে নিয়ে এসো।
–হুম চলো।
.
প্রিয়াকে সাথে নিয়ে মামুন দ্রুত খাবারটা সেরে নেয়।
খাওয়া শেষে রাহাকে আনার জন্য মামুন ছাদে যায়, ছাদে গিয়ে দেখে আশা রাহাকে নিয়ে খেলছে।
একবার উপরের দিকে ছুড়ে মারছে, আবার ক্যাচ ধরছে। আর রাহা খিলখিল করে হাসছে।
মেয়ের হাসির আওয়াজ শুনে মামুনের মুখেও হাসি চলে আসে।
হাসিমাখা মুখে আশার সামনে গিয়ে দাড়ায়। আশা তখনো রাহাকে উপরের দিকে ছুড়ে মারে, আবার ক্যাচ ধরে।
হঠ্যাৎই রাহা বমি করা শুরু করে।
–এই যাহ, আপু মাত্র খাইয়ে দিলো, সব বমি করে ফেলে দিলো।
–ও এখনো ছোট, কেনো ওকে উপরের দিকে ছুড়ে মারছো? যদি পড়ে যায়, দাও এদিক দাও।
মামুন আশার হাত থেকে রাহাকে নিজের কাছে নিয়ে নেয়।
রাহা তখনো বমি করে যাচ্ছিলো। মামুন খেয়াল করে দেখে রাহার মুখ দিয়ে লালা বের হওয়া শুরু করে।
বেশ ঘাবড়ে গিয়ে মামুন রাহাকে কোলে নিয়ে দৌড়ে ঘরে এসে বিছানায় শোয়ায়।
রাহার শ্বাস নেওয়াটাও বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
রাহাকে নিয়ে মামুনকে দৌড়ে রুমে ঢুকতে দেখে প্রিয়াও দৌড়ে রুমে আসে।
পেছন পেছন আশাও এসে দাড়ায়।
–কি হয়েছে আমার মেয়ের? এমন করছে কেনো?(প্রিয়া)
–জানি না, আশা ওকে নিয়ে খেলছিলো, হঠ্যাৎই বমি করা শুরু করে।(মামুন)
রাহার এমন অবস্থা দেখে প্রিয়া কান্না করা শুরু করে।
বমি শেষে চোখগুলো কেমন যেনো উল্টানো শুরু হয়। এই বুঝি চোখের মনি উল্টে যাবে।মেয়ের এমন কষ্ট দেখে প্রিয়া পাগল হয়ে যায়। ধীরেধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে
অবস্থা গুরুতর দেখে মামুন রাহাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটে।
এ বাড়ি ওবাড়ির সবাই ততক্ষণে হাসপাতালে হাজির।
রাহার এমন অবস্থা দেখে ডাক্তার রাহাকে আইসিইউতে নিয়ে যায়।
জানালা দিয়ে মামুন ভিতরের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। ছোট্ট মেয়েটার শরীরে কতগুলো তার লাগিয়ে দেওয়া হয়, একটা অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে দেওয়া হয়।
প্রিয়া এসে মামুকে জাপটে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। কেউ বুঝতে পারছে না রাহার হঠ্যাৎ কি হয়ে গেলো।
মামুনের পেছনে দাড়িয়ে আশা কেমন যেনো কাঁপতে শুরু করে।
ঘণ্টা দুয়েক পর একটা ডাক্তার বহিরে বেরিয়ে আসে।
মামুন দৌড়ে গিয়ে ডাক্তারের সামনে দাড়ায়।
–সার সার, আমার মেয়ের কি হয়েছে?
–(ডাক্তার চুপ করে মামুনের দিকে তাকিয়ে আছে)
–সার, কিছু বলছেন না কেনো? আমার মেয়ে ঠিক আছে তো?
–সরি, আপনার মেয়ে আর বেচে নেই।
ডাক্তারের কথা শুনে প্রিয়া ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়, মামী আর মা এসে প্রিয়াকে ধরে। মামুনও ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়ে।
পরিবারের বাকি সবাই অবাক দৃষ্টিতে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছে।
মামুনের হাত ধরে টেনে ডাক্তার মামুনকে আবার দাড় করায়।
–সার, কি বলছেন আপনি এসব? আমার মেয়ের তো কোনো সমস্যাও ছিলো না। সকালেও খেলা করছিলো। আপনার কোথায়ও ভুল হচ্ছে নাতো?(কান্না করতে করতে)
–না ভাই, আমার ভুল হচ্ছে না। আপনার মেয়ে কোনো রোগে মারা যায় নি। সাবডুরাল হেমাটোমায় শিকার আপনার মেয়ে।
–এটা কি?
–বাচ্চার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও পেশি ছিড়ে গিয়েছে।
–হঠ্যাৎ কেনো এমন হলো?
–এই সমস্যা দেখা দেওয়ার আগে বাচ্চা কি করছিলো?
–আমার শ্যালিকা ওকে নিয়ে খেলছিলো।
–কি রকম?
–শূন্যে ছুড়ে আবার ক্যাচ ধরছিলো।
–হুম বুঝেছি। এটাই ছিলো বাচ্চার মৃত্যুর কারন।
–মানে?
–শিশুকে যখন ঝাঁকানো হয় বা শূন্যে ছুঁড়ে মারা হয় তখন তার মস্তিষ্ক বারবার খুলির গায়ে ধাক্কা খায়। এর ফলে ছিঁড়ে যায় তার মস্তিষ্ক ও খুলির মাঝের ছোট ছোট রক্তনালি। যে কারণে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। জমাট বেঁধে যায় রক্ত। শিশুর ঘাড় সংবেদনশীল হওয়ার কারণে যখন তাকে ঝাঁকানো হয় তখন পেশি ছিঁড়ে যায়। এর ফলে স্পাইনাল কর্ড মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কে মারাত্মক ইনজুরি এবং পেশি ছিড়ে যাওয়ার কারণে বাচ্চা মারা যায়।
.
(পাঠকদের উদ্দেশ্য করে বলছি, ভুলেও কেউ বাচ্চাদের সাথে এমন কাজ করবেন না)
.
মামুন যেই রাহাকে কোলে করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলো, সেই রাহাকে এখন এম্বুলেন্সে করে নিয়ে মামুন বাড়ি ফেরে।
এদিকে প্রিয়া শোকে পাথর হয়ে আছে।
আশাও নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে।
প্রিয়ার শশুড় শাশুড়িও দরজার সামনে বসে চোখের পানি ফেলছে।
নিজে হাতে মেয়েকে দাফন করে মামুন প্রিয়ার পাশে এসে বসে।
প্রিয়া এক পলকে মামুনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই বুঝি মামুন কেঁদে উঠবে।
–এক গ্লাস পানি দেবে? খুব পিপাসা পেয়েছে। গলাটা একদম শুকিয়ে গেছে।
প্রিয়া দৌড়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে।
মামুন একটানে পুরো গ্লাস পানি খেয়ে প্রিয়ার দিকে তাকায়।
প্রিয়া অপেক্ষায় আছে মামুন একটু সুযোগ দিলে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করবে। অনেকক্ষণ যাবত কান্না আটকে রেখেছে।
প্রিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে মামুন বা হাত দিয়ে প্রিয়াকে বুকে টেনে নেয়। ওমনি প্রিয়া হু হু করে কেঁদে ওঠে।
নিজেকে সামলে মামুন প্রিয়াকে শান্ত করায়।
প্রিয়া একে একে বাবা মা, শশুড় শাশুড়ি সবার দিকে তাকায়। যে সন্তান দুনিয়ায় আসার আগে কেউ তাকে মেনে নিতে চায়নি, আজ তার জন্য সবার চোখে পানি।
এই কয়দিনে মেয়েটা সবার মন জয় করে নিয়েছে।
হঠ্যাৎই কোথা থেকে আশা এসে মামুন আর প্রিয়ার পা জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করে।
–আপু, আমি বুঝতে পারিনি এমনটা হয়ে যাবে। আমায় ক্ষমা করে দাও
প্রিয়া মামুনের দিকে ঘুরে তাকায়, মামুনের দুচোখ পানিতে ভরে আছে, চোখের পলক পড়লেই এখন টুপ করে পানি পড়া শুরু হবে।
জামার হাতা দিয়ে চোখ দুটো মুছে মামুন আশাকে দাড় করায়।
–বিশ্বাস করুন দুলাভাই, আমি জানলে কখনো রাহাকে শূন্যে ছুড়তাম না। ভেবেছিলাম সে মজা পাচ্ছে, তাই বার বার এমন করছিলাম। আমি বুঝতে পারিনি। আমায় ক্ষমা করে দিন প্লিজ।
মামুন নির্বিকার করে অসহায় দৃষ্টিতে আশার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো এটাই ভাবছে জবাবটা কি হবে।
–রাহাকে আমিও খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম, তার মৃত্যু আমার জন্য হয়েছে এটা কিছুতেই মানতে পারছি না।
–আশা, মন খারাপ করো না, কেউই তোমায় দোষারোপ করছে না। এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। জেনে বুঝে তো আর তুমি এমন করোনি। ভুলে যাও এসব।
–কেউ আমায় দোষারোপ করছে না। কিন্তু আমার ভেতরটা জ্বলছে, এর জন্য তো আমিই দায়ী।
–তুমি দায়ী হবে কেনো? তুমিতো আর জানতে না এমনটা হয়ে যাবে।
আশা কেঁদেই যাচ্ছে।
–কেঁদো না..(মামুন এক হাত দিয়ে আশার চোখের পানি মুছে দেয়) কিচ্ছু হয়নি, যাও মায়ের কাছে যাও।
আশা বাধ্য মেয়ের মতো মায়ের কাছে এসে দাড়ায়।
প্রিয়া মামুনের হাত ধরে দাড়িয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
হয়তো নিজের কষ্ট বুকের মধ্যে চেপে রেখেছে। যা কেউ বুঝতে না পারলেও প্রিয়া ভালো করে বুঝতে পারে।
রাহা ছিলো মামুনের কলিজার টুকরা, তবুও মামুন কেমন যেনো শান্ত হয়ে আছে।
যেখানে রাহা কান্না শুরু করলে মামুন নিজেই উতলা হয়ে যেতো, সেখানে আজ নিজের মেয়েকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলেও চুপ করে আছে।
মামুনকে দেখে প্রিয়া নিজেও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। কান্না করতে না পারলেও চোখের পানি ঝর্ণাধারার মতো বয়ে চলছে।
.
.
চলবে…….
.
লেখক #A_Al_Mamun
.
(নিয়মসংবলিত কিছু সমস্যার কারনে এই পর্বটা দিতে দেরি হয়ে গেছে, এবং কিছু শব্দ সংশোধন করতে গিয়ে এই পর্বটা ছোট হয়ে গেছে। আগামী পর্ব বড় করে দিবো, ধন্যবাদ)
#শূন্য_থেকে_শুরু
পর্ব :- ৯
.
রাহা ছিলো মামুনের কলিজার টুকরা, তবুও রাহার মৃত্যুতে মামুন কেমন যেনো শান্ত হয়ে আছে।
মামুনকে দেখে প্রিয়াও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।
রাত তখন প্রায় ২ টা…
মামুন রাহার ছোট্ট বিছানাটার পাশে বসে আছে, আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। রাহার ছোট্ট বালিশ টার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।
বিছানা থেকে উঠে প্রিয়া মামুনের পাশে এসে বসে।
–বসে আছো যে?(প্রিয়া)
–কিচ্ছু ভালো লাগছে না। হঠ্যাৎই কি থেকে কি হয়ে গেলো। কেনো এমনটা হলো?
প্রিয়া মামুনের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে, ছেলেটা সারাদিন নিজেকে অনেক শান্ত রেখেছে, অনেকটা সামলে নিয়েছে।
রাত জিনিসটা এমনি, সবকিছু মনে করিয়েই ছাড়ে। মনের আবেগ/কষ্ট সব ফুটিয়ে তোলে।
–কি ভাবছো?(প্রিয়া)
–রাহার মিটমিট হাসিটা খুব মিস করছি। এখনো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না রাহার আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। ওর খিলখিল হাসির শব্দ এখনো আমার কানে বাজে।
–তুমি এভাবে কান্না করলে আমি কি করে নিজেকে ঠিক রাখবো বলো? প্লিজ কেঁদো না।
–আমি কাঁদছি নাতো।
–অনেক রাত হয়েছে, এসো ঘুমাবে।
–আমার কি আজ ঘুম আসবে? বার বার রাহার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
–খুব কষ্ট হচ্ছে?
–বুঝতে পারছি না। সেই স্বপ্নটা বুঝি এত তাড়াতাড়ি বাস্তবে রুপ ধারন করলো? কেনো আমি রাহাকে আগলে রাখলাম না? আমারই দোষ।
–কি বলছো এসব? মৃত্যু কি কাউকে বলে কয়ে আসে? তুমি কি জানতে নাকি? আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। সবার মুখ বন্ধ থাকবে এখন। কেউ আর বলতে পারবে না আমি জারজ সন্তানের মা। আমার মেয়েটা এই অপবাদ থেকে বেঁচে গেলো।
(কিছু পাঠক/পাঠিকা বলতেন, জারজ সন্তান নিয়ে গল্প লিখি, বাজে ভাষায় কমেন্ট করতেন, গালি দিতেন। আসা করি এখন আপনাদের আর বাজে ভাষা ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না)
–কি বলছো এসব?
–ঠিকই বলছি, রাহাকে সবাই ভালোবাসতো ঠিকই, কিন্তু আড়ালে সবাই বলতো রাহা একটা জারজ সন্তান। কেউ আমার সাথে কথা বলতো না, কারন আমি জারজ সন্তান জন্ম দিয়েছি। এখন হয়তো আর কেউ আমার ওপর রেগে নেই। সবাই আবার আমার সাথে কথা বলবে।
–এমন কিছু নয়, সবাই তোমায় ভালোবাসে ওই রাহার জন্যই। আমিও সেই রাহার জন্যই তোমার কাছে ফিরেছিলাম। জানিনা কেনো হঠ্যাৎ সব এভাবে এলোমেলো হয়ে গেলো।
প্রিয়া একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে মামুনকে কাছে টেনে এনে কোলে মাথা রেখে শোয়ায়। মামুন বাচ্চাদের মতো প্রিয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর প্রিয়া মামুনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
একটু পরই মামুন ঘুমিয়ে পড়ে।
মামুনের নিশ্পাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে প্রিয়ার চোখে পানি চলে আসে। ওভাবেই বিছানায় হেলান দিয়ে প্রিয়াও ঘুমিয়ে পড়ে।
.
প্রায় সপ্তাহ খানেক পার হয়ে যায়, প্রিয়া নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নেয়। তবে মামুন এখনো পারেনি।
ঘরে প্রবেশ করেই অানমনে রাহা রাহা বলে ডেকে ওঠে। হঠ্যাৎই প্রিয়াকে জিজ্ঞেস করে ওঠে রাহা কোথায়।
মামুনকে এরকম করতে দেখলে প্রিয়া আড়ালে গিয়ে কেঁদে ওঠে।
ধীরেধীরে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মামুন সংসারের হাল ধরতে চাকরিতে জয়েন করে।
রাহাকে হারানোর কষ্ট ধীরেধীরে সবাই ভুলে যায়।
সারাদিন কাজ শেষে রাতে মামুন বাসায় ফিরলে প্রিয়া হাসিমুখে দরজা খুলে দাড়ায়।
প্রিয়ার হাসিমাখা মিষ্টি মুখখানা দেখলেই মামুনের সব কষ্ট/ক্লান্তি দুর হয়ে যায়।
পুরো সংসার এখন প্রিয়া নিজের হাতে সামলায়, আর বাহিরটা মামুন।
এমনই একদিন মামুন কাজ থেকে ফিরে এসে প্রিয়াকে জিজ্ঞেস করে।
–আজ খবর দেখেছিলে?(মামুন)
–দেখবো, অনেক সময় আছে। তুমি ফ্রেস হয়ে নাও।
–জানো কি খবর?
–নাতো, কি?
–আসার সময় ফেইসবুকে দেখলাম তোমার খালাতো বোন নিশির মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
–কি যা তা বলছো?
–দাড়াও, আমি তোমার দেখাচ্ছি।
মামুন ফোন থেকে একটা ভিড়িও বের করে প্রিয়ার সামনে ধরে।
প্রিয়া তার খালাতো বোন নিশিকে ভালোভাবেই চিনতে পারে।
–কিভাবে হলো এসব?
–তা তো জানি না।
সাথে সাথে প্রিয়ার মা ফোন করে প্রিয়াকে নিশির মৃত্যুর খবরটা জানায়, ২ মাস আগে নিশি কাউকে কিছু না জানিয়ে স্বামীর সংসার ছেড়ে অন্য এক পুরুষের সাথে পালিয়ে যায়।
আর আজ রাস্তায় তার নিথর দেহ পড়ে আছে।
মায়ের কথা শুনে প্রিয়া বেশ অবাক হয়।
–আচ্ছা, নিশিতো শাহিনের সাথে গিয়েছিলো। শাহিনই কি ওকে মেরেছে?(প্রিয়া)
–তা তো বলতে পারবো না, তবে পুলিশ হন্য হয়ে তাকে খুজছে।(মামুন)
–চলো আমরা থানায় গিয়ে বলে আসি, তুমি সেদিন নিশিকে শাহিনের সাথে যেতে দেখেছিলে।
–এত কিছুর কোনো দরকার নেই। ওসব দেখার জন্য থানা পুলিশ আছে। অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে দিনগুলো পার করছি, আর ঘাড়ে করে ঝামেলা বয়ে বেড়াতে পারবো না। এমনিতেই দুটো পরিবারের মান ইজ্জত ডুবিয়ে অন্য পুরুষের সাথে পালিয়েছে। এরচেয়ে ভালো শাস্তি আর হয় না। এসব নোংরা মানুষের এভাবেই মরা উচিত।
–এভাবে বলছো কেনো?
–কিভাবে বলবো? এরা কি মানুষের কাতারে পড়ে? পরিবারের কথা একটুও ভাবে না। এখনকার মেয়েরা স্বামীর কদর বুঝেই না, হালাল সম্পর্ক ছেড়ে হারাম সম্পর্কে জড়িয়েছে। এর শাস্তি সে পেয়েছে। আর শাহিনও এর শাস্তি পাবে।
প্রিয়া ভালোভাবেই বুজতে পারে মামুন রেগে গেছে। তাই আর দুকথা না বাড়িয়ে ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়।
মামুন ফ্রেস হয়ে আসলে তাকে খাবার টেবিলে ডাকা হয়।
নিজেকে শান্ত করে মামুন খাবার টেবিলে আসে।
–মা বাবা খেয়েছে?
–হুম ওনারা খেয়ে শুয়ে পড়েছে।
–আমার জন্য বুঝি এতক্ষণ বসেছিলে?
–হুম।
–কষ্ট হয় না?
–ওমা, কষ্ট কেনো হবে? বরং ভালোই লাগে, প্রিয় মানুষটার জন্য অপেক্ষা করার মজাই আলাদা। ও তুমি বুঝবে না।
–সব তুমি বুঝো?
–হুম। কি এনেছো আমার জন্য?
–খাবারটা তো শেষ করো আগে, পরে বলবো।
–না, এখন বলো।
–না, আগে শেষ করো। নাহলে দেখা যাবে তুমি খাবার ছেড়ে উঠে গেছো, খেয়ে নাও।
–উঠবো না, বলো।
–সত্যি তো?
–হুম
–আইসক্রিম।
–হ্যাহ, কোথায়?
–ফ্রিজে।
ওমনি প্রিয়া খাবার রেখে উঠে চলে যায়।
একটু পর আইসক্রিম খেতে খেতে মামুনের সামনে এসে দাড়ায়।
–শুধু দুইটা কেনো? এটাতো এখনি শেষ হয়ে যাবে। কাল কি খাবো? ৫ টা করে আনবে।
–খাবারটা কে শেষ করবে এখন?
–আমার পেট ভরে গেছে।
–কাল থেকে আর কিছুই আনবো না।
–না আনলে দরজা খুলবো না।
–দেখা যাবে, সময় আসুক।
.
মামুন প্রিয়ার পাশেই শুয়ে আছে। আর প্রিয়া মামুনের চোখের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।
–কি দেখছো এভাবে?
–তোমাকে।
–দেখার কি আছে?
–দুনিয়াটা খুবই অদ্ভুত তাই না?
–কিছুটা।
–একটা সময় আমার সব ছিলো, হঠ্যাৎই সব হারিয়ে ফেলি। ধীরেধীরে জীবনটাকে আবার সাজাতে শুরু করি। আমার জীবনটা পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিলো। এক ঝড়ে আমার পরিপূর্ণ জীবনটা আবার শূন্য হয়ে যায়।
–শূন্য হবে কেনো? আমি আছি না? আমরা আবার #শূন্য_থেকে_শুরু করবো।
–হুম, রাহাকে আজ খুব মনে পড়ছে। জানি তোমারও মনে পড়ছে।
–হুম খুব।
–বুকের ভেতটা খুব ব্যথা করে।
–কেনো?
–সেটা তুমি বুঝবে না। রাহার জন্য।
–কোনো সমস্যা হয়েছে?
–না।
–বলো না কি হয়েছে।
–২ মাস হয়ে গেলো রাহাকে দুধ খাওয়াই না। তাই আমার একটু শারীরিক সমস্যা হচ্ছে।
–কি সমস্যা?
–ওটা তুমি বুঝবে না বললাম না, মাকে বলেছি, মা আমায় শিখিয়ে দিয়েছে কি করতে হবে। আর কোনো সমস্যা নেই। শুধু রাহার কথা মনে পড়ছে।
–আমারো, খুব মিস করছি আমার পরিটাকে।
–একটা কথা বলবো?
–বলো।
–গত দুই মাসে আমার পিরিয়ড হয়নি।
–হুম
–মানে বুঝেছো?
–না।
–তুমি একটা গাঁধা।
–কেনো?
–কারন তুমি কিচ্ছু বোঝো না।
–কি বুঝবো সেটা তো বলো।
–কাল আমায় একটা প্রেগন্যান্সি টেষ্ট কিট এনে দিতে পারবে?
–কি করবে?
–মাথায় দেবো, তুমি জানো না প্রেগন্যান্সি কিট দিয়ে কি করে? এতো কথা কেনো বলো?
–বাবারে, দিবো দিবো।
–মনে করে কাল প্রেগন্যান্সি টেষ্ট কিট নিয়ে এসো।
–আচ্ছা আনবো।
.
এর কিছুদিন পর…..
কাজ শেষে মামুন ঘরে ফিরে। প্রতিদিনের মতো প্রিয়া এসে দরজা খুলে দেয়।
–সরো না, ভেতরে যেতে দিবে না?
–না, আগে আমার জন্য কি আনছো বলো।
–আজ কিছু আনি নি। অনেক ব্যস্ত ছিলাম।
–সত্যিই আনো নি?
–না, সরি।
প্রিয়া আর কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে ভেতরে চলে যায়।
খাবার শেষে মামুন প্রিয়াকে কাছে ডাকে। চুপচাপ মামুনের পাশে এসে বসে।
–কি হয়েছে? কিছু আনিনি বলে রাগ করেছো?
–হুম।
–ব্যাগের মধ্যে ফুসকা আছে, দেখো।
প্রিয়া এক দৌড়ে গিয়ে ব্যাগ থেকে ফুসকার প্যাকেটটা নিয়ে নেয়।
এসে কোনো কথা না বলে মামুনকে একটা পাপ্পি দেয়।
–পাগলি, বসো।
–প্রথমে কেনো মিথ্যা বলেছো?
–খাবার খেতে না যে ওই জন্য।
–শয়তান।
–এবার খুশি?
–হুম, এখন তোমাকে আমার খুশি করার পালা।
–আচ্ছা! করেন তো খুশি।
–যদি তুমি খুশি হও, আমায় কি দিবে?
–ফুসকা দিলাম না?
–এটা না, আর কি দেবে?
–আগে তো খুশি করো, এরপর ভেবে দেখবো।
প্রিয়া প্রেগন্যান্সি কিট টা মামুনের হাতে তুলে দেয়।
–এটা আমি বুঝি না, তুমি বলো রেজাল্ট কি।
–গাধা, তুমি বাবা হতে চলেছো।
–সত্যি?
–হুম।
–এত তাড়াতাড়ি?
–হুম একটু তাড়াতাড়ি, ৩ মাস চলতেছে।
–অ্যাহ! রাহার মৃত্যুর আগে?
–হুম
–ছেলে নাকি মেয়ে?
–তা আমি কি করে জানবো?
–প্রেগন্যান্সি কিটে লেখা ওঠেনি?
–তুমি আসলেই একটা গাধা।
–আর যাই বলো, আমার রাহা লাগবে।
–তাই?
–হুম, মা জানে?
–তোমাকেই প্রথম জানালাম।
–মাকে জানিয়ে আসি।
–সকালে বলিও, এখন ঘুমাচ্ছে।
মামুন প্রিয়াকে টেনে বুকে নিয়ে আসে। প্রিয়াও মামুনকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
–তুমি খুশি হয়েছো?
–অনেক।
–আমায় একটু আদর করবে?
–লাগবে?
–অনেক বেশি লাগবে।
–বাব্বাহ, কেনো?
–ইচ্ছে করছে তাই। করবে না?
–করবো না বলছি? ১০টা না ৫টা না, আমার একটা মাত্র বউ। আদর করার মতো কি আর কেউ আছে তুমি ছাড়া?
প্রিয়া মামুনকে নিজের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়।
একটা সময় ছিলো যখন মামুনের মনে প্রিয়ার জন্য শুধু ঘৃণা ছিলো।
কিন্তু এখন ঘৃণার চেয়েও ভালোবাসাটা বহুগুন বেশি।
প্রিয়ার প্রায় ৮ মাস চলছে।
ইদানীং মামুন প্রিয়ার বেশ খেয়াল রাখে, কখন কি লাগে তা বলার আগেই মামুন করে ফেলে।মা তো মামুনের পরিবর্তনে মুগ্ধ।
যেই ছেলে খাওয়ার পর প্লেটটা ধুয়ে রাখতো না, গোসল করার পর কাপড়গুলো ওভাবেই ফেলে আসতো, সে এখন পুরো সংসারী হয়ে গিয়েছে। মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করা, কাপড় ধোয়া, ঘর গোছানো, সব কাজেই এখন সাহায্য করে।
প্রিয়া দুর থেকে মামুনকে চোখে হারায়।
.
বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে প্রিয়া মামুনকে ডাক দেয়।
–শুনছো, এদিকে আসো।(প্রিয়া)
–হুম।
–কাপড় নিয়ে ওত যুদ্ধ করতে হয় না, ওগুলো ভিজিয়ে রেখে এদিকে আসো।
–আচ্ছা।
–হায়, আমার জামাইটা ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। বসো এখানে।
মামুন প্রিয়ার পাশে এসে বসে। কাপড়ের আচল দিয়ে মামুনের মুখটা মুছে দিয়ে মামুনকে নিজের কোলে শোয়ায়।
–এত কাজ করা লাগে না, আমি করতে পারবো।
–এখন কোনো কাজ নয়, শুধু বিশ্রাম নিবা।
–কার যত্ন নিচ্ছো? আমার নাকি বাবুর?
–তোমার, তোমার যত্ন নিলে বাবুর যত্ন নেওয়া হবে।
–তুমি এত ভালো কেনো?
–আমি?
–হুম। এত ভালোবাসা পাবো এটা কখনো কল্পনাও করিনি আমি।
–তাই বুঝি?
–হুম।
–কেমন ভালোবাসি আমি?
–কেউ যদি আমায় জিজ্ঞেস করে তোমার জীবনের সেরা মূহুর্ত কোনটা? আমি তাদের বলতে পারবো, আমার প্রেগন্যান্সির সময়টা। এই সময়টায় শারীরিক কষ্ট হলেও, মানসিক দিক দিয়ে আমি ছিলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখি মানুষ। আমার স্বামী আমায় এতটা ভালোবাসা দিয়েছে যা আমি মরার আগ পর্যন্ত ভুলতে পারবো না। তার কাছে আমি সারাজীবন ঋণি থাকবো।
–পাগলি একটা, এভাবে বললে হবে? আমি কি ভালোবাসতে পারি না? আর তুমি কি আমায় কম ভালোবেসেছো? আমার কাছে তুমি আমার বেচে থাকার অক্সিজেন। যেই অক্সিজেন আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লাগবে।
–তাই বুঝি?
–হুম। তোমায় লজ্জা পেলে এত সুন্দর লাগে কেনো?
–কই লাগে?
–একদম কিউটের ডিব্বা লাগে।
–কচু লাগে, কত মোটা হয়ে গেছি।
–কই মোটা?
–এই যে কত বড় পেট।
–ওটাতো কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।
–কবে?
–আমার বাবুটা দুনিয়ায় আসলেই।
–এহ, তোমার হয়ে গেলো? আমি এত কষ্ট করতেছি। এটা আমার।
–দেখবে এবারও আগে আমায় পাপা বলে ডাকবে।
–তোমায় ডাকবে না, এবার আমায় ডাকবে।
–এসো বাজি।
–ঠিক আছ।
–দাও ৫০০০, জিতলে ১০০০০ নিয়ে যেও।
–তাহলে আমাকে ৫০০০ টাকা ধার দাও।
–কখন ফেরত দেবে?
–আগামী মাসে তুমি বেতন পেলেই দিয়ে দেবো।
–অ্যাহ!
–দাও তো।
–বাবা দরকার নাই বাজি ধরার, আমারই লসস হয়ে যাবে।
–ভয় পেয়ে গেলে?
–হুম ভয় পেয়েছি। তুমি জিতে যাবে তাই।
–আমি জানতাম আমি জিতবো। আমার বাবু আমায় আগে ডাকবে।
–দাড়াও, আমি জিজ্ঞেস করে দেখি কাকে আগে ডাকে।
–কিভাবে?
–দেখো
.
প্রিয়ার কোল থেকে মাথা তুলে আলতো করে পেটে কান দিয়ে বলতে থাকে।
পাপা, তুমি কাকে আগে ডাকবে? আমাকে নাকি তোমার আম্মুকে?
–ঐযে শুনেছো? বলেছে আগে পাপা ডাকবে।
মামুনের কান্ড দেখে প্রিয়া হাসতে হাসতে একাকার।
ধীরেধীরে প্রিয়ার ডেলিভারির সময় হয়ে আসে।
–আমার রাহার জন্মের সময়তো তুমি আমার পাশে ছিলে না। এবার আমার পাশে থাকবে?
–আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবো।
–তখন আমার বাচি কি মরি এই নিয়ে কোনো চিন্তা ছিলো না। কিন্তু এবার আমার চিন্তা হচ্ছে। আমাকে বাচতে হবে, তোমাকে ছেড়ে আমি যাবো না।
–ধুর পাগলি, কি বলছো! আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মাথায়ও আনবে না।
–তোমায় ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না, মরে ভূত হয়েও তোমার কাছে চলে আসবো। তোমার সাথেই থাকবো।
–বাবা, আমি তো ভয় পেয়ে গেছি।
–যাহ শয়তান।
–মা বললো এবার ডাক্তারের কাছে নেবে না।, ঘরেই তোমার নরমার ডেলিভারি করবে। সমস্যা হবে না?
–মা যখন বলেছেন তখন চিন্তার করার কোনো কারণ নেই। নরমালই হবে।
–খুব কষ্ট হবে তাই না?
–একটু তো হবেই।
–রাহা কষ্ট দিয়েছিলো?
–তখন আমার শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিক কষ্ট বেশি ছিলো, তাই শারীরিক কষ্ট তেমন গায়ে লাগে নি। শুধু এটাই ভেবেছিলাম, এই বাচ্চা জন্ম দিয়ে বাচ্চাকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো। কেউ আমায় মেনে নিবে না। আল্লাহর দরবারে অনেক কান্নাকাটি করেছি, অনেক ক্ষমা চেয়েছি। এখন আমি আল্লাহর করছে শুকরিয়া আদায় করি, তিনি তোমাকে আমার স্বামী হিসেবে দিয়েছেন।
–পুরোনো কথা আবার শুরু করছো। বর্তমান ভাবো।
–এখন আমার একটাই চাওয়া, তোমাকে আমার বাবুর মুখটা দেখানো। আমায় বলেছিলে, কেনো তুমি রাহার বাবা হতে পারলে না। আল্লাহর কাছে এটাই চেয়েছি, যেনো একটা মেয়ে হয়। তার নাম রাখবো রাহা।
–আমিও সেটাই ভেবেছিলাম।
–আল্লাহর কাছে দোয়া করো।
.
ডেলিভারির সময় হলে মামুনের মা বাহির থেকে একজন ডাইমাকে খবর দেন।
প্রিয়াকে ভেতরে রেখে মামুনকে বাহিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
মামুন রুমের বাহিরে এদিক ওদিক পায়চারি করছে।
আর প্রিয়ার জন্য খুব চিন্তা করছে।
ভেতর থেকে প্রিয়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, মেয়েটা হয়তো খুব কষ্ট পাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।
প্রিয়ার ডেলিভারি শেষে মামুনের মা আর ডাইমা একসাথে দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসে।
মামুনকে পাশ কাটিয়ে ডাইমা নিজের গন্তব্যের দিকে হাটা দেয়। আর মা এসে মামুনের সামনে দাড়ায়।
.
.
চলবে……
.
লেখক #A_Al_Mamun
#শূন্য থেকে শুরু
পর্ব :- ১০(শেষ)
.
প্রিয়ার ডেলিভারি শেষে মামুনের মা আর ডাইমা একসাথে দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসে।
মামুনকে পাশ কাটিয়ে ডাইমা নিজের গন্তব্যের দিকে হাটা দেয়। আর মা এসে মামুনের সামনে দাড়ায়।
–মা, প্রিয়া কেমন আছে?
–ভালো আছে, তুই ভেতরে যা, আমি ফ্রেস হয়ে আসতেছি।
–আচ্ছা।
মামুন ধীরে ধীরে ভেতরে প্রবেশ করে।
প্রিয়া একপাশ হয়ে শুয়ে আছে, পাশে একটা বাচ্চাও আছে।
–প্রিয়া
মামুনের আওয়াজে প্রিয়া পেছনের দিকে ঘুরে তাকায়।
–এসেছো? কোথায় ছিলে এতক্ষণ? কত ডেকেছি তোমায়। আসোনি কেনো?
–মা আসতে দেয়নি, দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। আমি দরজার বাহিরেই ছিলাম।
–এদিকে আসো।
মামুন বিছানার পাশ ঘুরে এসে প্রিয়ার সামনে দাড়ায়।
–মা তোমায় কিছু বলেছে?(প্রিয়া)
–না।
–দেখো কে এটা(বাচ্চাকে দেখিয়ে)
–মেয়ে?
–হুম, তোমার রাহা।
মামুন আলতো করে নিজের মেয়েকে কোলে নেয়।
মেয়েটাও দেখতে হুবহু প্রিয়ার মতো, রাহার সাথে চেহারার অনেকটা মিল আছে।
খুশিতে মামুন মেয়েকে আদর করতে থাকে।
–মেয়েকে পেয়ে খুশি হয়ে গেছো, আমাকে জিজ্ঞেস করলে না কেমন আছি আমি?
–ও হ্যা, সরি সরি। কেমন আছো?
–বলবো না।
–কেন?
–রাগ করেছি তাই।
মামুন মেয়েকে আস্তে করে আবার প্রিয়ার পাশে শুইয়ে দিয়ে প্রিয়াকে শোয়া থেকে উঠে বসায়।
.
প্রিয়া অপলক দৃষ্টিতে মামুনের দিকে তাকিয়ে আছে আর মামুন প্রিয়ার দিকে।
প্রিয়াকে আলতো করে বুকে টেনে নেয় মামুন।
–জানো মা কি বললো?(প্রিয়া)
–কি বললো?
–রাহা আবার ফিরে এসেছে। কিন্তু এবার তোমার মেয়ে হয়ে এসেছে। যেই ভালোবাসা তুমি রাহাকে দিয়েছো, রাহা কি তোমায় ছেড়ে ওপারে থাকতে পারবে? তাই আবার ফিরে এসেছে।
–ও আমার রাহাই। দেখ, দেখতেও একদম রাহার মতো।
–হুম। তুমি খুশি?
–অন্নেক খুশি। আল্লাহর কাছে খুব করে চেয়েছিলাম, যেনো আমার মেয়ে হয়। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। এর চেয়ে খুশির আর কি হতে পারে?
–পাগল একটা।
–যখন রাহা জন্ম নিয়েছিলো, কেউ তোমার পাশে ছিলো না। আমিও না। কারনটা তুমি নিজেও জানো। কিন্তু এখন সবাই তোমার পাশে আছে। কেনো তোমার পাশে আছে এর কারনটাও তুমি জানো। আমার সেই রাহা জন্মের পর সবার ভালোবাসা পায়নি। কিন্তু এই রাহা সবার ভালোবাসা পাবে। তার অধিকার বুঝে নিবে। হয়তো এই জন্যই আমাদের ছেড়ে চলে গেছিলো, যেনো নিজের অধিকার নিয়ে আবার ফিরে আসতে পারে।
প্রিয়া মামুনের বুকে মাথা রেখে বসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠ্যাৎ মা আর বাবা রুমে প্রবেশ করে।
–কই কই? আমার নাতনি রাহা নাকি ফিরে এসেছে? দেখিতো।(বাবা)
–এই যে দেখো কেমনে শুয়ে আছে, একদম প্রিয়ার মতো হয়েছে। (মা)
–দাও দাও, আমাকে দাও।
নাতনিকে কোলে নিয়ে দাদার সে কি আনন্দ। দাদা দাদি দুজনই নাতনির সাথে কথা বলছে। আর মামুন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
–বাবা কি রাহাকে কখনো কোলে নিতো?(মামুন)
–১ম ৮ মাস রাহার দিকে তাকায়ও নি। পরে মা কোলে নিয়ে রুমে গেলে বাবাও মাঝে মাঝে নিতো।
–এখন দেখো, কত্ত খুশি।
–হবেই তো, নিজের নাতনি বলে কথা।
–হুম।
মা নিজের গলা থেকে চেইটা খুলে দিয়ে নাতনির গলায় পড়িয়ে দেয়।
–আমার বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী এসে গেছে।(মা)
–বাবা, আমার জন্মের পর মা কি এমন খুশি হয়েছিলো?(মামুন)
–একদম না।(বাবা)
–খুশি হতে হবে কেন? তুই কোন জমিদারের ছেলে?(মা)
–তো আমার মেয়ে কি জমিদারের মেয়ে?
–চুপ থাক।
মামুন মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
মা ছেলের এমন কান্ডে প্রিয়া হাসতে হাসতে শেষ।
–হ্যা রে, কি নাম রাখবি ওর কিছু ঠিক করেছিস?
–হ্যা মা।
–কি রাখবি?
–যদি ওর নাম রাহা রাখি, কেমন হয়?
–খারাপ না। আমিও মনে মনে সেটাই ভাবছিলাম।
–ঠিক আছে মা, তাহলে ওর নাম রাহা ই রাখবো।
–আচ্ছা
.
–রাত তো অনেক হলো, ঘুমাবে না?(প্রিয়া)
–ঘুম আসছে না।
–কেন?
–অনেক কিছুই মাথার মধ্যে ঘুরতেছে।
–কি?
–মা বাবাকে এতটা খুশি হতে আমি কখনো দেখিনি।
–আমিও।
–মা আজ তোমায়ও কত আদর করলো।
–হুম।
–জানো প্রিয়া, সম্পর্কগুলো এমনই। তোমার এই প্রাপ্য সম্মানটা তুমি যেদিন এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছিলে, সেদিন থেকেই পেতে। একটা ভুলের কারনে অনেকটা সময় লেগে গেছে।
–আমি বুঝতে পারছি কত বড় ভুল আমি করেছিলাম। আমার মতো ভুল যেনো কেউ না করে।
–আমি সেই সব ভুলে গেছি। কখনো মনেও আনতে চাই না ওসব। বাকি জীবনটা তুমি আর রাহাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারলেই হয়।
–হুম, তোমাদের কাছে আমি অনেক ঋণী।
–কিরকম?
–সেটা তুমি জানো।
–বাদ দাও ওসব, ওসব আর ভাবার প্রয়োজন নেই। এখন শুধু তুমি, আমি, আমার মেয়ে আর আমার পরিবার নিয়ে ভাববে।
–হুম, আমি সবাইকে নিয়ে ভাববো, কিন্তু তুমি শুধু আমাকে নিয়ে ভাববে। আর তোমার হয়ে বাকি সবার ব্যাপারে ভাবার দায়িত্ব আমার।
–অ্যাহ?
–অ্যাহ না, হ্যা।
–এতো ভেবে কি হবে?
–কত কষ্ট করে তোমাকে বাবা বানালাম। তাও আমাকে নিয়ে ভাববে না?
–এমনিতেই তো ভাবি, না ভাবলে কি বাবা হতে পারতাম?
–এখন আরো বেশি বেশি আমাকে ভালোবাসবে।
–এত কেন?
–ভালো লাগে তাই। জানো, আমার তোমাকে নিয়ে ভাবতেই কত্ত ভালো লাগে।
–কেনো কেনো?
–আমার কত্ত কিউট একটা বর, কত্ত ইনোসেন্ট, কত্ত কেয়ারিং। এমন বর কি সবার কপালে জোটে?
–তাই?
–হুম। তোমাকে দেখলেই খালি আদর করতে ইচ্ছে করে।
–ছিঃ, কি বলো এসব?
–বাব্বাহ, আমার বোকা জামাই টা যেন কিছুই বোঝে না।
–বোঝা লাগবে না, এসো ঘুমাবো।
–আমার আর তোমার বুকে ঘুমানো হলো না।
–কেনো? কি সমস্যা?
–তোমার মেয়ে।
–কি করেছে আমার মেয়ে?
–এখন বুঝবে কি করে, রাতে কেঁদে উঠবে, বিছানা নষ্ট করবে, ঘুমাতে দিবে না।
–আমার মেয়ে এসব করবে না। আগেও তো এমন করতো না, খুবই ভদ্র ছিলো।
–দেখবে এখন কতটা ভদ্র তোমার মেয়ে।
–দেখা যাবে।
মেয়েকে নিয়ে পরিবারের সবাই খুব খুশি, এই মেয়ের নামও রাহা রাখা হয়েছে। সারাক্ষণ মামুন রাহাকে নিয়ে পড়ে থাকে। আগে রাহাকে নিয়ে যতটা ব্যস্ত থাকতো, এখন তার চেয়ে দ্বিগুন ব্যস্ত।
–১ সপ্তাহ হলো তোমার ছুটি শেষ। তুমি এখন কাজে যাওনি কেন?
–ছুটি শেষ হয়েছে তো কি হয়েছে? আবার ছুটি।
–এমন করলে চাকরি থাকবে?
–চাকরি একটা গেলে আরেকটা জোগাড় করে নিবো। আগে আমার মেয়ে।
–মেয়ে কি হারিয়ে যাচ্ছে? কাল থেকে সোজা কাজে যোগ দিবে।
–আরো পরে যাবো।
–কাল মানে কাল, মালিক কি তোমার দুলাভাই লাগে যে বসিয়ে বসিয়ে তোমায় বেতন দিবে।
–দেবে দেবে।
–কাল থেকে কাজে না গেলে তোমার ঘরে খাওয়া বন্ধ।
–বাহির থেকে খেয়ে নেবো।
–তো রাহাকে আর কোলে নিতে দিবো না।
–এহ, রাহা আমার মেয়ে।
–তো?
–এরকম করো কেনো? আর ২ দিন থাকি শুধু।
–বাচ্চা কি আর কারো হয় না? তারা কি কাজ ফেলে সারাক্ষণ বাচ্চার কাছে বসে থাকে?
–তাদের ঘরে কি আর রাহা আছে? আমার তো রাহা আছে।
–ঢং দেখে বাচি না। আমি এক্ষুণি মাকে বলতে যাচ্ছি।
–আরে আরে, কাল থেকেই যাবো। মাকে বলতে হবে না।
–এইতো আমার লক্ষি জামাই।
.
২ সপ্তাহ পর…..
–শুনছো? (মামুন)
–কি?
–এই দেখো।
–কি এটা?
–ভালো করে দেখো।
–শাহিন?
–হুম
–কি বলছে?
–শুনো কি বলছে।
প্রিয়া মামুনের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে কানের সামনে ধরে।
–হায়, এটা কিভাবে হলো?
–কাল রাতে পুলিশ ওকে ওর কোন বন্ধুর বাড়ি থেকে মাদক সহ গ্রেফতার করে। ওকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে ওর বন্ধুরা পুলিশের ওপর হামলা করে। এতে দুইপক্ষের হামলায় শাহিন সহ ওর আরো ২ বন্ধু বন্দুকের গুলিতে মারা যায়, এবং বাকিরা গ্রেফতার হয়।
–কি বলছো এসব? একটা মানুষ আর কত দিক দিয়ে খারাপ হতে পারে?
–যে খারাপ, সে সব দিক দিয়েই খারাপ।
–আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। ওর সাথে আমার বিয়ে হলে তো আমি শেষ হয়ে যেতাম।
–তোমার খারাপ লাগছে না ওর জন্য?
–ও এমন কি করেছে যে ওর জন্য খারাপ লাগবে?
–কাদের জন্য খারাপ লাগে?
–যারা মনের মধ্যে থাকে, আপন মানুষ, অথবা অপরিচিত কোনো ভালো মানুষ। এরা মারা গেলে সবাই আফসোস করে, খারাপ লাগে।
–যদি একদিন আমি মরে যাই, আমার জন্য খারাপ লাগবে?
–কি বলছো এসব?
–বলো না শুনি।
ওমনি প্রিয়া এসে মামুনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
–আরে পাগলি, এখন নাতো। ভবিষ্যতের কথা বলছি।
–একদম বলবে না। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাচবো?
–তাই বলে কি মানুষ মারা যায় না?
–হুম যায়, কিন্তু এসব কখনো মুখেও আনবে না। তুমি ছাড়া আমার কে আছে বলো। তোমাকে ছাড়া আমি বাচবো কি করে?
–এই এই, কি করছো? এখানে কান্নার কি হলো?
–বলো এসব আর কখনো বলবে না।
–আচ্ছা বাবা, এই যে কানে ধরলাম। আর বলবো না।
–তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি মরেই যাবো। কারন আমার বেচে থাকার একমাত্র সম্বল শুধু তুমি।
–আমি?
–তো আর কে?
–আরেকটা বিয়ে করে নিলেই তো হয়।
–মেরে তোমার মুখ ভেঙে দেবো। এত অসভ্য কেন তুমি?
–তুমি রেগে গেলে কত্ত কিউট লাগে তোমায়।
–এমনি কিউট লাগে না?
–লাগে তো। কিন্তু রেগে গেলে একটু বেশিই লাগে।
–শয়তান, তুমি একদম ভালো না।
–খারাপ?
–না, ভালো ও না, খারাপ ও না।
–এটা কেমন কথা?
–জানি না।
–আমার রাহা কই?
–বলবো না।
–এই যে কান ধরছি, আর কখনো বলবো না। এবার তো বলো।
–আগে প্রমিস করো।
–আচ্ছা প্রমিস।
–মা রাহাকে নিয়ে ছাদে রোদে বসে আছে।
–রোদে কেন?
–বাচ্চাদের নাকি রোদ লাগে, তাই। আমি তো জানি না। মা বললো।
–আমাকেও নিশ্চয়ই রোদে রেখেছিলো, এই জন্যই আমি এত কালো।
–বেশি বোঝো তুমি। রোদে রাখলে নাকি অনেক উপকার হয়, তাইতো রোদে রেখেছে।
–ওও আচ্ছা।
–আজ মা আমাকে কিছু জিনিস দিয়েছে।
–কি?
–বাচ্চার নিচে দিয়ে শোয়ানোর জন্য কিছু ছোট কাথা।
–কিনে আনলো?
–না।
–কোথায় পেলো?
–তোমার ছোট বেলায় নাকি ওগুলো ব্যবহার করেছিলো। আজ আলমারি থেকে নামিয়ে দিলো।
–কিহ? আমার ছোটবেলার কাথা মা এত বছর ধরে রেখে দিয়েছিলো?
–হুম
–দেখো কারবার, আর কিছু আছে আমার ছোটবেলার?
–তোমার ছবি দেখিয়েছে। একদম গুলুমুলু ছিলে ছোটবেলায়।
–বাবারে, এত বছরেও আমি জানতে পারলাম না। আর তুমি জেনে গেলে।
–শুধু তুমি না, সব মায়েরা বাচ্চাদের জিনিসগুলো এবাবেই যত্ন করে রেখে দেয়। এবং সেটা বাচ্চারা জানতেও পারে না।
–তাই বলে এবাবে? বাবার ছোটবেলার কাথা মেয়েকে ব্যবহার করাবে?
–সমস্যা কি?
–সমস্যা তো নেই, তবুও কেমন না?
–পাগল। বসো এখানে।
–হুম বলো।
প্রিয়া মামুনের কোলে উঠে মামুনকে জড়িয়ে ধরে বসে।
–ওই হাতি, নামো।
–আমি হাতি?
–কত্ত ওজন।
–নামবো না আমি।
–আমার পা ঝি ঝি করতেছে।
–তবুও নামবো না। একটু আদর করে দাও, তাহলে নামবো।
–কেমন আদর লাগবে?
–যেমন আদরে আমার মন ভরবে, তেমন।
–আচ্ছা? এত আদর করতে গেলে দেখা যাবে আগামী বছর আর একটা মেহমান চলে আসবে।
–এত কনফিডেন্স?
–হুম
–তো আদর করবে না?
–করবো না কখন বললাম? আসো……………….
.
৬ মাস পর….
–আম্মু, পাপা ডাকবে কখন?
রাহার পাশে শুয়ে রাহার দিকে তাকিয়ে মামুন রাহাকে জিজ্ঞেস করে।
–ডাকবে ডাকবে, এত তাড়া কিসের?
–তাড়া কই? ৬ মাস তো হয়ে গেলো। আগের বার তো রাহা এমন সময়ই ডেকেছিলো।
–এবার আমাকে আগে ডাকবে তাই সময় নিচ্ছে।
–একদমই না, আগে পাপা ডাকবে।
ঠিক তখনই রাহা পা পা পা পা পা করতে থাকে।
মামুন চমকে উঠে রাহার দিকে তাকায়।
হাত পা নাড়াতে নাড়াতে রাহা পা পা পা পা করে যাচ্ছে।
প্রিয়াও অবাক হয়ে রাহার দিকে তাকিয়ে আছে।
–শুনেছো শুনেছো?
–এবারও তোমায় ডাকলো?
–হুম হুম,
মামুন রাহাকে কোলে উঠিয়ে দৌড়ে মায়ের কাছে যায়।
–মা, ও মা।
–কি হলো?
–দেখো রাহা কি বলে?
–কি?
–পাপা বলেছে।
–কই?
–এখন চুপ করে আছে, একটু আগে ডেকেছে, বিশ্বাস না হলে প্রিয়াকে জিজ্ঞেস করো।
–বিশ্বাস না করার কি আছে? ডাকতেই তো পারে!
–প্রথমেই আমাকে ডাকলো।
–আরে, এত উতলা হচ্ছিস কেন?
মামুন রাহাকে নিয়ে আবার দৌড়ে রুমে চলে যায়।
–তুমি এমন করছো কেন? ওকে রাখো এখানে।
–তোমাকে তো পাপা ডাকে নি, আমাকে ডেকেছে।
–ধুর, আমাকে কেন পাপা ডাকবে? আমাকে তো মা ডাকবে।
–ওহ সরি, জানো কত খুশি লাগছে? সেদিন খুব কষ্ট হয়েছিলো। কিন্তু আজ কত্ত আনন্দ লাগছে। আমার মেয়ে আমাকে পাপা ডেকেছে।
প্রিয়া মামুনের দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে।
রাহাকে বিছানায় রেখে মামুন প্রিয়ার কাছে এগিয়ে আসে।
–এই পাগলী, তোমার চোখে পানি কেন?
–তোমাকে আমি কখনো এতটা খুশি হতে দেখিনি।
–তাই বলে কাঁদতে হবে?
–কাঁদছি কই? এমনিই চোখে পানি চলে এলো।
–তুমি আসলেই একটা পাগলি।
–হুম, তোমার পাগলি।
–তাই?
–হুম, একটা কথা বলি?
–বলো।
–তোমায় খুব খুব খুব ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি যেমন রাহাকে এক মূহুর্ত না দেখলে উতলা হয়ে যাও, তেমনি আমিও তোমায় এক মূহুর্ত না দেখলে ভীষণ উতলা হয়ে যাই। একদম ভালো লাগে না।
–বাব্বাহ।
–পাপ তো করেছি জানি, কিন্তু কি এমন পূর্ণ করেছি জানি না, যার জন্য আমি তোমায় পেয়েছি। সারাজীবন তোমায় এভাবেই ভালোবাসতে চাই। তোমাকে বোঝাতে চাই তুমি আমার জন্য আমার পৃথিবী। আমার বেচে থাকার একমাত্র কারন।
ওমনি মামুন প্রিয়াকে বুকে টেনে নেয়….
প্রিয়াও চুপটি করে মামুনের বুকে আশ্রয় নেয়।
–আমায় সারাজীবনের জন্য তোমার এই বুকে আশ্রয় দেবে?
–হুম।
–তোমার কাছে আরো কিছু চাওয়ার আছে আমার, দেবে?
–কি লাগবে শুনি।
–অনেক আবদার আছে।
–আচ্ছা? কি কি?
–কোন এক খুব ভোরে,
পূর্বের আকাশটা যখন হবে কালচে সাদা
একটু ভালবাসা দিও।
পরম আদরে, তোমার উষ্ণ বুকে টেনে নিও,
বিছানার এক কোনে পরে থাকা আমার আধো ঘুমন্ত দেহটাকে,
খুব বেশি না …শুধু একটু ভালোবাসা দিও।
যখন কোন এক ঘন ঘন জন্ডিসের মতন হলুদে দুপুরে,
চোখের দৃষ্টি যখন প্রখর রোদের প্রতিরোধে
বাধ্য মেয়ের মতন উপন্যাসের বইয়ে মুখ গুঁজবে,
পিছন থেকে খুব আলতো ছোঁয়ায় চোখ দুটি ধরবে আড়াল করে,
তোমার অদ্ভুত পুরুষালী গন্ধে
পাগল করা ভালবাসা দিও।
আর কিছু না শুধু একটু ভালোবাসা দিও।
যখন কোন ক্লান্ত দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবে,
আমার এই আনমনা উদাসী মন থাকবে
দুষ্ট মেঘেদের সাথে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলায় ব্যস্ত,
গরম ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে ভুলে চুমুক দিয়ে
হঠাৎ সংবিধ ফিরে পাওয়া ঠোঁটে তখন ভালবাসা দিও।
দগ্ধ পোড়া লালচে যাতনায় খুব বেশি না একটু, জাস্ট একটু ভালোবাসা দিও।
কোন এক মন খারাপের দিনে
যখন ঘোর বর্ষার মেঘ গুমট অভিমান টলটল করবে আমার দু’চোখে,
দুটি হাত বাড়িয়ে খুঁজবে একটু সান্ত্বনাময় আশ্রয়,
তখন তোমার প্রস্তত্ব বুকে আর শক্ত বাহুডোরে একটু ঠাঁই দিও,
চুপচাপ নিঃশব্দ জলে ভিজবে তুমি, ভিজবো আমি,
খুব না, একটু ভালোবাসা চাই…
জাস্ট একটু বেশি ভালবাসা দিও।
–এইতো অনেক কিছু চেয়ে বসলে।
–পারবে না দিতে?
–পারবো। যাকে ভালোবাসা যায়, তার জন্য জীবনটাও দিয়ে দেওয়া যায়। আর তুমি তো সামান্য কিছুই চেয়েছো। এটা দেবো না?
–কেনো জানি আজ তোমায় ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। এভাবেই থাকো আজ সারাক্ষণ। কোনো এক শান্তির খনি আছে তোমার বুকে। প্লিজ ছেড়ো না আমায়।
–ছাড়বো না, ছাড়তে ইচ্ছেও করছে না। সারাজীবন তোমার এই বুকে আগলে রাখবো।
.
যে মানুষটা আপনাকে পাওয়ার তীব্র আনন্দে কেঁদে দেয় তার চেয়ে ভালো বোধহয় পৃথিবীতে আপনাকে দ্বিতীয় কেউ বাসতে পারবে না!
যার চোখের জল পড়েছে আপনার জন্য, সে আর যাইহোক প্রতারক হতে পারে না!
দু’চার দিন ভালোবাসতে সবাই পারে,
শুধু পারে না সারাজীবন হাতটা ধরে থাকতে,
সারাজীবন ভালবাসতে।
যে মানুষটা সত্যি আপনাকে ভালোবাসবে,
তাঁর দুইদিনের ভালোবাসা দুই যুগের সমান।
ভালোবাসলে এমন মানুষকে বাসুন,
যার পৃথিবীটা আপনাকে ঘিরে,
যার চোখের পানির বন্যা বয়ে যায় শুধু আপনার জন্য।
যে মানুষটার কল্পনায় আপনি ছাড়া দ্বিতীয় কারও অস্তিত্ব নেই,
যে মানুষটা হাজারটা বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে আপনাকে জয় করেছে,
তার চোখে আপনাকে পাওয়ার আনন্দের অশ্রু থাকবেই।
আপনি সারাজীবন তাকেই মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসুন,
যে তার ভালোবাসার শক্তি দিয়ে আপনাকে জয় করেছে।
“বেঁচে থাকুক ভালোবাসা”
.
.
……..সমাপ্ত………
.
লেখক #A_Al_Mamun
.
(প্রতিটা পোষ্টেই ফেইসবুকের Community Standard এর বিরুদ্ধে যাচ্ছে। আমি নিজেই জানি না কি এমন বেআইনি লেখা লিখতেছি। যার জন্য গল্পের মোড় বার বার পরিবর্তন করতে হচ্ছে, এভাবে কতবার গল্প পরিবর্তন করা যায়? এরজন্য গল্প পোষ্ট করতেও দেরি হয়ে গেছে। এমন বিরক্তির কারনে গল্পটা এখানেই শেষ করে দিলাম। এমন হতে থাকলে আমার আইডি ব্যান হয়ে যাবে। যারা গ্রুপ থেকে আমার গল্প পড়তে এসেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, গ্রুপে আমার আইডি থেকে পোষ্ট করা যাচ্ছে না, তাই শুধু আমার টাইমলাইনেই গল্প পাবেন। সব পর্বই আমার আইডিতে পোষ্ট করা আছে।)