বৃষ্টি হয়ে নামবো

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 1
    মাঠে বাচ্চাদের সাথে খেলছিলাম হঠাৎ কোথা থেকে আদনান ভাই আসলো আর আমার বাহু শক্ত করে ধরে রাগী চোখে তাকিয়ে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে এলো। কিছুই বুঝতে পারলাম না কিন্তু ভীতু হয়ে চুপচাপ ভাইয়ার সাথে আসলাম। আসলে আমি আদনান ভাইয়া কে প্রচন্ড ভয় পাই আর আদনান ভাই আমাকে বাচ্চাদের সাথে লাফালাফি করে খেলা করতে মানা করেছে। কিন্তু আমিতো শুনার পাত্রী না বাচ্চাদের সাথে খেলতে তো আমি খুবই ভালোবাসি।আদনান ভাইয়ের ভয় কি সেইটা আমি মিস করবো নাকি।কিন্তু ভাইয়ার মুখের উপরে কথাটা বলার সাহস আমার নাই যদিও কয়বার সাহস করে বলেছি কিন্তু আমার বাসার সবাই যে আদনান ভাইয়ের পক্ষে।তাই দাঁতে দাঁত চেপে থাকে আমাকে নিরবে সহ্য করতে হয় কিন্তু মনে মনে তাকে আমি একদমই পছন্দ করি না এই জোর-জবরদস্তির জন্য আরো বেশি হেট করি।এজন্যই তো আজকের লুকিয়ে-চুরিয়ে এখানে এসেছিলাম আজকে ভাইয়া ঢাকার বাইরে গিয়েছিল। কিন্তু কোথা থেকে চলে এলো সেটাই বুঝতে পারলাম না।

    ভাইয়া আমাকে একদম আমাদের বাসার ড্রয়িং রুমে এনে ছাড়লো হাত ব্যথা হয়ে গেছে। গন্ডার একটা রাক্ষস শরীরে যত শক্তি আছে সব শক্তি দিয়ে আমার হাতটা ধরে ছিল। আমি নাক মুখ কুঁচকে আছি আর একটু পর পর ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি আমার দিকে একবার তাকালো না চিৎকার করে আমার মাকে ডাকল মামনি বলে। আদনান ভাইয়ের চিৎকারে আমি লাফিয়ে উঠলাম।দুই হাত নিয়ে কান চেপে ধরলাম বাবারে এতো জোরে কেউ ডাকে আমার কান ফেটে গেল মনে হয়।
    একটু পরেই মা এক প্রকার ছুটে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালো রান্নাঘরে ছিল হয়তো। হাতে যে খুন্তি আছে তা দেখেই বুঝতে পেরেছি। মা এসে ভাইয়াকে দেখে সে কি খুশি খুশিতে বাকবাকুম হয়ে গেল।বাকবাকুম তো হবেই মাঝে ভাইয়াকে খুবই ভালোবাসি আমি যে তাদের মেয়ে আপন মেয়ে আমার মনে হয় না আমার মনে হয় আমি তাদের সৎ মেয়ে আর ভাইয়া তাদের নিজের ছেলে। এজন্য আমার দুঃখের সীমা নাই কিন্তু এই দুঃখের মাঝেও সুখ আছে। আর সেটা হলো আমার মামনি পাপ্পা। বলছি তারা কে তারা হল এই খাটাশ আদনানের মা-বাবা। খুবই ভালোবাসে আমাকে আমি ও তাদের এত ভালোবাসি।
    আম্মু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,
    “আদনান কখন আসলি বাবা। এত রেগে আছিস কেন কি হয়েছে?”
    প্রচন্ড চিন্তিত ভঙ্গিতে মা কথাটা জিজ্ঞেস করেই আদনান ভাই এর গালে হাত দিল।
    আমি মায়ের এত আদিখ্যেতা দেখে ভেংচি কাটলাম। অসহ্য লাগে এই ভালোবাসা দেখলে।

    আদনান ভাইয়া আমার দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে আম্মুকে বলল,,
    “ও বাইরে কিভাবে গেল মামনি ওকে আমি বাচ্চাদের সাথে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করতে মানা করেছিলাম।”
    আদনান ভাইয়ের কথা শুনে মা খ্যাপা বাঘিনীর মত আমার দিকে তাকালো মনে হচ্ছে আমি কোন ভয়ঙ্কর অন্যায় করে ফেলেছি আমি।
    আমি আম্মুর তাকানো দেখে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি মুখে ভয়ের আভাস কিন্তু মনে মনে আদনান ভাইয়ের চোদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করছি। একবার সুযোগ পায় ভাইয়ের উচিত শিক্ষা দিব আমি।
    “আমিতো জানিনা রে ওতো আমাকে বলল ও নাকি ওর বান্ধবীর বাড়ি যাবে কোন নোট আনতে।”

    “কিসের নোট কোন নোট না। ও গিয়েছিলো তোমাকে মিথ্যা কথা বলে মাঠে ওই বাচ্চাদের সাথে লাফালাফি করতে। আশেপাশে কত লোকজন ছিল তুমি জানো সবার সামনে এরকম পোশাক পরে ও লাফাচ্ছিল কতোটা বেয়াদপ হয়ে গেছে। আমি ওকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি মামনি। আর কখনো যদি ও মাঠে গিয়ে বাচ্চাদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করে তো আমার হাত থেকে কেউ ওকে বাঁচাতে পারবে না সেইদিন এমনি কি তোমরা ও না।”
    চিৎকার করে কথাগুলো বলে আমার দিকে আদনান ভাই রাগী চোখে তাকিয়ে কটমট করে তারপর গট গট পাঁয়ে বেরিয়ে গেল। পেছনে থেকে আম্মু ভাইয়া কে ডাকল ভাইয়া একবার তাকিয়ে খালি বলল পরে আসবো মামনি।
    তারপর চলে গেল।আম্মু আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলবে আমি দৌড়ে রুমে চলে এলাম।জানি এখন ওখানে থাকলে আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাবে।তাই না থাকাটাই বেটার।

    রুমে এসে বারান্দায় গেলাম বারান্দায় থেকে আদদান ভাইদের বাসার দিকে তাকিয়ে রইলাম আমার রুমের সোজাসুজি আদনান ভাই এর রুম। ভাইয়াকে দেখলাম রুমে আছে শার্টের বোতাম খুলতেছে তখনই ফোন বেজে উঠল ফোনে নিয়ে ওই ভাবেই বারান্দায় আসতে লাগল তার বারান্দার আমার বারান্দা সাথে সাথে তাই সে বারান্দায় এসে আমাকে দেখবে তাই দৌড়ে রুমে চলে এলাম কোথাও থাকতে পারবো না খাটাশটার জন্য।

    রাগে ফুসফুস করতে করতে রুমে চলে এলাম তারপর বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পরলাম। ঐ ভাবি ঘুমিয়ে পরেছি রাতে জাগানো পেলাম।আব্বু এসেছে আব্বুর আওয়াজ পেয়ে খুশিতে নাচতে নাচতে বেরিয়ে পড়লাম।এখন আর মা বকতে পারবেনা আব্বুর সামনে বকতে পারেন আব্বু আম্মু ধমক দিয়ে দিবে।
    সত্যি মা বকতে পারল না মা আমার দিকে শুধু কটমট করে তাকিয়ে ছিল আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আব্বুর সাথে খেতে বসলাম।খেয়ে রুমে এসে আবার দরজা লাগে ফেসবুকে ঢুকলাম। ফেসবুক চালাতে চালাতে কখন রাত এগারোটা বেজে গেছে আমি খেয়ালই করিনি। খেয়াল করলাম একটা অচেনা আইডি থেকে মেসেজ আশাতে। সে আমাকে এক প্রকার হুমকি দিয়েছে মেসেজ দিয়েছে,,
    “তাড়াতাড়ি অফলাইন হয়ে ঘুমাও না হলে তোমার কপালে শনি আছে।”
    মেসেজ দেখেই আমি শোয়া থেকে বসে পড়লাম কথার ধরনে একদম আদনান ভাইয়ের মতো।আমি তো আপনার ভাইয়ের সবগুলো আইডি আমার আইডি থেকে ব্লক করে রেখেছি। তাহলে ভাই আমার আইডি কোথায় পেল আর এইটা কি ভাইয়ের আইডি?
    আঙ্গুল মুখে নিয়ে কামরাতে লাগলাম আর ভাবতে লাগলাম তারপর।
    ঐ আইডিতে ঢুকলাম আইডির নাম,
    ‘অদ্ভুত আমি’
    একটা কার্টুন পিক দেওয়া প্রোফাইলে আর জীবনে মনে হয় না কিছু পোস্ট করছে। প্রোফাইল ফাঁকা ইনফরমেশনে কিচ্ছু নাই এটা এক নাম্বার ফ্যাক আইডি দেখেই বোঝা যায়।প্রোফাইল পিকটা দেওয়া হয়েছে 3 ঘণ্টা আগে।আচ্ছা এইটা কি আদনান ভাই আমি তার সব আইডি ব্লক করছি দেখেই এই আইডি দিয়ে আমারে উপর নজর রাখে। কথাটা ভাবতে আমার হাতে ফোন পরে গেল এটা নিশ্চিত আদনান ভাই।
    আদনান ভাই এর কাছে ধরা পড়লে তো আমার খবর আছে। আমি তাড়াতাড়ি ডাটা অফ করে শুয়ে পড়লাম চিন্তায় এদিকেওদিক করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই সকালবেলা।
    পরদিন শুক্রবার এর জন্য কলেজ অফ।বাসায় কাটাতে হবে আদনান ভাইয়ের ভয়ে আমি আর রুম থেকে বের হলাম না দুই তিনবার তার কণ্ঠ শুনলাম সকালে একবার খাবার রুমে খেলাম দুপুরে চুপিচুপি খেলাম।সারাদিন রুমে থেকে এতো বোর হয়ে গেছি এবার আমার একবার মাঠে যেতে হবে একটু খেলতে হবে নয় মনটা ফ্রেশ হবে না জিম মেরে রুমে বসে আছি।গালে হাত দিয়ে কি ভাবে বের হব মাকে আজকে কোন অজুহাত দিতে পারব না জানি এ জন্য লুকিয়ে বের হতে হবে। আজ শুক্রবার ভাইয়া কে নিয়ে ভয় ছিল কিন্তু আজকে ভাইয়াকে নিয়ে ভয় নেই।কারণ হলো সে নাকি দুপুরের পর কোন এক ফ্রেন্ডের সাথে কোথাও যাবে। সেই সুযোগে আমার এখন মাঠে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা হয়েছে।মা এখন রুমে আছে কারণ আব্বু বাড়িতে আব্বু সাথে মা বিকাল টাইমে বসে চা খাওয়া আর গল্প করে।

    আমি সুযোগ বুঝে লুকিয়ে-চুরিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে মাঠে আসলাম আজকে আমি ক্রিকেট খেলব। বাচ্চারা সব তো আমাকে দেখি লাফিযচ্ছে সেই খুশিতে। আর কালকের জন্য সবার কতো চিন্তা আমাকে আদনান ভাই মেরেছে কিনে আন তেন।অবশেষে খেলা শুরু হলো খেলছি প্রথমে বল মারলাম তারপর আমার দ্যান আসলো আমি ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে আছি প্রথমবারই বল মারলাম খুব বিশ্রী ভাবে। কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবার সামনে লজ্জায় মাথা কাটা।বাচ্চাদের সাথে কিনা নাম পারছি না এবার আমি প্রবল সাহসিনী শক্তি সঞ্চয় করে দাঁড়িয়ে আছি ভালভাবে মারবি একদম ছক্কা।
    আমি পাকা খেলোয়ার এর ব্যাট ধরে আছি।ওই পাস থেকে বল চলবে এমন সময় একজনকে মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম যাকে দেখে আমার হৃদপিণ্ড চলাচল বন্ধ হয়ে গেল আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাট উচু করে ধরলাম আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে এতটাই ভয় পেয়েছি যে আমার হাত থেকে ব্যাটটা ঠাস করে পড়ে গেল।শুধু পড়ে খান্ত হল না শয়তান ব্যাট গিয়ে পড়ল আমার পায়ে।আমি মাগো বলে চিৎকার করে পাঁ ধরে নিচে বসে পড়লাম। একে তো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক সিংহ যাকে আমি প্রচন্ড ভয় পাই।যার জন্য এমনিতে আমি আধমরা সে আমার আজকে কি অবস্থা করবে সেটা কেউ জানে না। তারপর এই ব্যাটা আমার পা ভেঙে দিল।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 2

    বড় বড় চোখ করে বিষ্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আদনান ভাইয়ের দিকে। জীবনে এতো বড় শক মনে হয় খাই নাই আর। আদনান ভাইয়ের দৃষ্টি সামনের দিকে ভুলে ও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।একইভাবে সামনে দিকে তাকিয়ে হেটে যাচ্ছে আর আমি তার কোলে থেকে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি হতভম্ব হয়ে। আদনান ভাইয়ের ফর্সা মুখ লাল টকটকে হয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে চোখ একটু ছোট করে হেঁটে যাচ্ছে। তার এই শক্ত কঠিন মুখ দেখেই আমার হার্ট এটাক করার অবস্থা। শেষমেষ কিনা আজ কেউ ধরা খেলাম তার হাতে।নিজের কপাল নিজের ই চাপরাতে ইচ্ছে হচ্ছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। এতো পোড়া কপাল আমার একটু শান্তি পায় না এরজন্য। আহারে বেচারা পা আমার কি অবস্থা হয়েছে। এই খাটাশ টার জন্য আমার পায়ের এই হার হলো।

    তখন ভাইয়াকে দেখে আমি ভয়ে হাত থেকে ব্যাট নিজের পায়ের উপর ফেলে দেই।আর ও মাগো বলে চিৎকার করে পা ধরে নিচে বসে পড়ি আমি বসার সাথে সাথে ভাইয়া এক প্রকার ঝড়ের গতিতে আমার কাছে এসে পা ধরে ঘাসের উপর বসে নিজের হাঁটুর উপর আমার পা নিয়ে দেখতে থাকে কি হয়েছে? কাঠের ব্যাড সেটা তো আর কম ভাড় না এক আঙ্গুলে পড়ে সেটা সাথে সাথে ফুলে উঠেছে আর সাইড দিয়ে লাল হয়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে আমার পা।আহ কি ব্যথা ভাইয়া আমাকে অবাক করে দিয়ে একটু বকলো না বরংচ আলতোভাবে ছুঁয়ে দিয়ে বলল,,
    “জানি এটা হ‌ওয়ার বাকি ছিল আমি জানতাম এমন কিছুই ঘটবে। এই জন্যই তোকে আমি বারবার বাচ্চাদের মত লাফালাফি করতে মানা করি তুই এখন আর ছোট্ট বাচ্চা রোশনী বড় হয়েছিস। কিন্তু তুই তো আমার কথা শোনার মেয়ে না। আর তোর ওড়না কোথায় ওড়না কি কোমর এ বেঁধে রাখার জিনিস বেয়াদব মেয়ে তুই কি এখনো ছোট বাচ্চা রয়েছিস। এই মাঠ ভর্তি লোকের সামনে এভাবে ওনার কোমরে বেঁধে লাফালাফি করছিস।”
    ভাইয়ার কথা গুলো একদমই চিৎকার আর রাগ নিয়ে ছিল না খুব করুন গলায় ছিল সে আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিল তারপর একটু মুখটা শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে তারপর আর কিছু না বলে কোলে তুলে নিল।ভাইয়ার আচমকা কাজে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম স্তব্ধ হয়ে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি। মাঠের সবাই আমাদের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমরা সিনেমা দেখাচ্ছে অসহ্য।
    আমি সবার দিকে তাকিয়ে একবার ভেংচি কেটে তারপর ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলাম।
    আজকে যে ফাস্ট ভাইয়ের কোলে উঠেছি এমনটা না এর আগেও বহুবার আদনান ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়েছে।এমনি এমনি না সব সময় আমি কোন না কোন আকাম করেছি আর তখনই রেগে বকাবকি করে খোলে নিয়ে বাসায় গিয়েছে। আর এখন যদি কোলে নেওয়া নিয়ে কিছু বলি খাব একটা ধমক তার থেকেই ভাবে থাকায় বেটার। আর যে ব্যথা পেয়েছি এই পা নিয়ে আমি হাটতেও পারবোনা।

    ভাইয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম। আচমকা ভাইয়ার গম্ভীর কণ্ঠে বাস্তবে ফিরে এলাম,
    “এমন অসভ্যের মত গলা জড়িয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
    লেহালুয়া তিনি আমাকে কোলে নিয়ে সবার সামনে চলতে পারবে আর আমি তার গলা জড়িয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবো না।
    কত বড় বদমাইশ হলে এমন ভাবে আমাকে বলতে পারে। আমি কটমট করে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
    আদনান ভাই সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলেছিল এবার আমার মুখের দিকে তাকালো।
    “কি হলো এভাবে চোখ কটমট করছিস কেন?”

    আমি ভীতু ভাইয়ার সামনে তো উপর এবার বলেই ফেললাম সাহস করে নিজে আমাকে কোলে নিয়ে যাচ্ছে তাতে কিছু হচ্ছেনা আর এখন আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকলেই নাকি আমি অসভ্য হয়ে যাব।

    “তুমি আমাকে অসভ্য বললে তোমার দিকে তাকিয়ে আছি বলে আমাকে অসভ্য বলবে নিজে যে আমাকে এমন সবার সামনে নির্লজ্জের মত কোলে নিয়ে হাঁটছো এতে তুমি অসভ্য হচ্ছে না আর আমি তোমার গলা জড়িয়ে ধরেছে আরেকটু তাকিয়েছি বলে অসভ্য হয়ে গেলাম।কালকে তুমি আম্মুর সামনে আমাকে জা নয় তাই বলে বকে এসেছ তার জন্য কিনা আমার দুই দিন ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়েছে মার কাছ থেকে আবার আজকে তোমার জন্য শুধু মাত্র তোমার এই খাটাশ মুখটা দেখে আমার পা ভেঙে গেল এই অবস্থা হলো আর তুমি কিনা আমাকে সারারাস্তা ধমকাতে ধমকাতে আসছো। মামুনির সাথে আজকে দেখা করব তোমার নামে যদি আমি বিচার না দিয়েছি তো আমার নাম ও দোলা নয় হুহ।”
    খুব সাহসী হয়ে একদমই কথাগুলো বলে উঠলাম।এই কথা বলতে বলতে কখন যে বাসার চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি। আমরা এখন আমাদের বাগানে আছি।আমার কথা শেষ হতেই আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে নেই সে সামনে দিকে তাকিয়ে হেটে যাচ্ছে আমি তো ভাবতেছি এতগুলো কথা যে বলে ফেললাম রাগের মাথায় এখন আমার উপর দিয়ে যে কি যাবে তাই ভাবছি কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাই আমাকে আর কিছুই বলো না এসব বিষয় এ ।
    ড্রইংরুমে এনে সোফায় বসিয়ে দিল ভাইয়া আমাকে আমাদের এভাবে বাসায় আসতে দেখি মা এক প্রকার ছুটতে ছুটতে এসে দাঁড়াল পাশে আমার দিকে কঠিন করে তাকিয়ে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে?
    আমার নামে একশো কুড়ি বদনাম করতে শুরু করে দিলো আদনান ভাই আমি রাগে ফুসফুস করছি আদনান ভাই এর বিচার দেওয়া দেখে একবার তোমাকে বাঘে পাই বাছাধন কি হাল করবো তুমি ভাবতেও পারবে না।এই দোলা কে এভাবে শায়েস্তা করার শাস্তি তো তুমি অবশ্যই পাবে। আহারে আমার পা। বলেই পা নাড়াতে গিয়েই দিল আমি চিৎকার। এত ব্যথা আমি কল্পনাও করিনি। আমার চিৎকার শুনে আদনান ভাইয়ের আর মায়ের কথায় ব্যাগাত ঘটল ভাইয়া ফ্লোরে বসে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগল কি হয়েছে? আমি চিৎকার দিলাম কেন? আমার মা ও তো ব্যস্ত হয়ে গেল দুজনেই এখন ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করছি কী হয়েছে?
    আহ্লাদ‌দেখাতে আসছে এখন আমাকে এতক্ষণ যে আমার নামেই কুটকাচালি করছিল দুইজন।কিছুক্ষণের মাঝেই মামনি চলে এলো আমাদের বাসায়। ভাই আমার পায়ে তখন ব্যথার মলম লাগিয়ে দিয়েছিল।মামুন এসে আমার পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করতে লাগল কী হয়েছে আমি ও মামনীর বুকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চুপ করে রইলাম।একটু পরে আদনান ভাইয়ের নামে বিচার দেওয়া শুরু করবো ভাইয়া পাশে আছে এখন কিছু বলা যাবে না। একটু পরে বলব।ভাইয়া এতো সল্ট ভাবে আমার পায়ে মলম দিচ্ছে যেন ব্যথা আমি না উনি নিজেই পেয়েছে। এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে কেনো এমনিতে তো আমাকে দু’চোখে সহ্য করতে পারে না।
    জানি জানিকেন এত আদর যত্ন করছে এই ব্যাথাটা যমুনার জন্য পেয়েছে এটা বললে তুমি বকা খাবে।অবশ্য সেই বকাটা আমার পরিবারের কেউই দেবে না সেটা একমাত্র মামনি কে বললে হবে।একটু আগে আম্মুকে বলেছিলাম এই ব্যাথাটা পাওয়ার জন্য একমাত্র দায়ী আদনান ভাই।কিন্তু কি শত্রু মামার আজাদ ভাইকে তো কিছু বলবে না উল্টা সব দোষ আমার ঘাড়ে দিয়ে চলে গিয়েছে গরমপানি করতে গরম পানি পায়ে স্যাক দেবে এজন্য।

    আদনান ভাই আমার পায়ে মলম দেওয়া শেষ করে চলে যাওয়ার আগে একবার আমার কানে কানে বলে গেল,,
    “তুই তো আমার কাছে এমনিতেই আজ শাস্তি পেতে অমান্য করে মাঠে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এবার সেইটার আরো বেশি হল পা টা ঠিক হতে দে তারপর তোরে বাচ্চামো‌ আর অসভ্যের মতো লাফালাফি করে বেয়াদবের মত খেলার জ্বাল মেটাবো।”
    কানে কানে ফিসফিস করে কথাটা বলে বেরিয়ে গেল আমি তারপা আদনান ভাই এর নামে মামুনির কাছে বিচার শুরু করলাম।
    পায়ে ভালোই জখম হয়েছে রাতে আমার গা কাঁপিয়ে জ্বর চলে এলো। জ্বর এলে আমি মা ছাড়া কিছু বুঝিনা। রাতে জ্বর আসার পর থেকে মা মা করতে লাগলাম মা বাবা দুজনেই ভয়ে আমার রুমে আসলো তখন মাঝ রাতে এসে দেখে আমার শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।পায়ের ব্যথা থেকে জ্বর এসেছে আম্মু তো ভয় পেয়ে গেছে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে আমি মাকে জড়িয়ে বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছি অন্য সব রোগের থেকে জর আমাকে কাবু করতে পারে ভালো। জ্বর আসলে আমি একদমই নেতিয়ে পরি। আর আজেবাজে কথা বলতে থাকি। আমিও জ্বরের মাঝে আদননা ভাইকে বকে যাচ্ছি।
    আমাদের বাড়িতে এতকিছু এইসব আদনান ভাইয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছে কারণ পাশাপাশি বাড়ি হয় আমাদের বাড়িতে চেঁচামেচিতে তারা জেগে গিয়েছে মাঝরাতে আদনান ভাই রুমে শুয়েছিল তার ঘুম আসছিল না আমার পায়ের ব্যথার জন্য।কেবলই ঘুমটা ধরে ছিল তখনই চিৎকার-চেচামেচি উঠে বসে আমার রুমের দিকে তাকায় রুমের লাইটের আলো দেখে নিজের রুমে থেকে রুমের দিকে তাকিয়ে কান্নার শব্দ পেয়ে চমকে উঠে আমার জন্য। তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় আসে আর সব জানতে পেরে ডাক্তারকে কল দেয়। আমার যখনই কোনো বিপদ আসে বা আমি অসুস্থ হই সবথেকে বেশি আদনান ভাই পাগল হয়ে যায় আজকেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।পাগলের মত ডাক্তার কে ফোন করে আসতে বলে কিন্তু ডাক্তার মাঝ রাতে আসবে না বলে দেয় আর পায় কে আদনান ভাই সে ডাক্তারের বাসায় চলে যায় আর জোর করে ধরে নিয়ে আসে আসবি না আবার।
    আর আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি।
    ডাক্তার আমাকে দেখে তেমন সিরিয়াস কিছু বলল না কারণ আমার সিরিয়াস তেমন কিছুই হয়নি। পায়ের ব্যথা বাড়ার কারণে এত জর এসেছে। পায়ের ব্যথা কমে গেলে জ্বর সেরে যাবে এটা তেমন গুরুতর কিছুই না। এজন্য কেউ এমন পাগলামো করে তাকে মাঝরাতে নাকি হুমকি দিয়ে নিয়ে এসেছে। আদনান ভাই তো আমি বলতে পাগল।অবস্থা দেখে তিনি নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি ‌ ডাক্তারি কথা শুনে কিছুটা শান্ত হলো ডাক্তারকে সরি বলে আবার বাসায় পৌঁছে দিতে গেল।ডাক্তার আমাকে একটা প্যারাসিটামল ও ব্যথার ট্যাবলেট সাথে গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খাইয়ে দিয়ে চলে গেল। একটা ছোট প্যাকশিকশন লিখে দিয়ে।

    দুই দিন ধরে শুয়ে থাকতে হলো জ্বর অবশ্য পরের দিনই কমে গিয়েছে আর আসেনি।কিন্তু আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয়না আর আমি চাইলেও বের হতে পারি না পা যে ব্যথা কিছুটা কমলেও হাটতে পারি না। অদ্ভুত ব্যাপার আদনান ভাই আমাকে দুই দিন আর দেখতে এল না। তার এই কাজে আমি একটু না অনেক খানি অবাক হয়েছি। আমার কিছু হলে তো তিনি সারাদিন আমার পেছনে পড়ে থাকে।কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হলো সেদিন রাতের পরে তাকে আর দুদিন দেখলাম না কোথাও।তিন দিনের মাথায় পায়ের ব্যথা কমেছে একটু খুরিয়ে খুরিয়চ হাঁটি আমি সেদিন মামুনির বাসায় চলে এলাম।তার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই খাটাশ আদনানের খবর নিতে ওকে আমি সহ্য করতে পারিনা তবুও দুই দিন না দেখে কিছুটা শূন্যতা অনুভব করলাম। কেন মিস করলাম জানিনা আমি তো সব সময় চাই আদনান ভাই আমার চোখের সামনে থেকে দূরে থাকুক তাহলে আমি আমার নিজের লাইফটা শান্তি মতো নিজের লাইফটা এনজয় করতে পারবো। এই যেমন ভাইয়ের জন্য আমি কারাগারে বন্দি থাকি।আর অদ্ভুত বিষয় আমার ফ্যামিলির সবাই সেটা মেনে ও নেই।
    কোথাও তার জন্য শান্তি মত থাকতে পারি না কলেজের কোন ছেলের সাথে কথা বলতে পারি না কারো সাথে কথা বলা যাবে না এই যেমন মাঠে খেলা যাবে না সবসময় বাসায় থাকো পরও এই দুঃখ
    পিকনিকে যতবারই গিয়েছে আমি তার জন্য যেতে পারি নাই আর যদিও গিয়েছি সে আমার সাথে বডি কাট হয়ে গিয়েছে
    আপনারাই বলুন আদনান ভাইয়ের মত মানুষেরা আমার সাথে যায় তাহলে কি আমি শান্তি মত পিকনিক ইনজয় করতে পারব।সে আমাকে এটা করতে দেবে না ওটা করতে দিবে না ওটা খেতে দেবে এটা পড়তে দেবেনা অফ অশান্তি সেখানে গিয়েও আমাকে এরকম কড়া শাসনে রাখা হয়।
    সবকিছু নিয়েই তার বাড়াবাড়ি অসহ্য এজন্য তাকে আমি একদম সহ্য করতে পারি না তবুও তাকে কিনা আমি মিস করেছি ভাবা যায়।
    ভাবনা-চিন্তা করতে করতে মা মণির বাসায় চলে এলাম।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো (রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 3

    আদনান রুমে এসে গায়ে শার্ট খুলে সোফায় ছুড়ে মারলো। রাগে ওর শরীর কাঁপছে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হয়েছে হাত দিয়ে তা মুছে রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে এলো।ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বাম হাত বাড়িয়ে ঝর্না ছারলো ঠান্ডা পানি আদনান এর গা বেয়ে পরছে সাথে ওর রাগ কমছে।
    আদনানের রাগের কারণ হচ্ছে।
    কিছু ক্ষন আগে একটা ছেলের সাথে মারামারি করে এসেছে আদনান। ছেলেটার নাম সেলিম। এলাকার বখাটে ছেলে। ছেলেটা কয়েকদিন ধরেই দোলাকে ফলো করছে‌। ছেলেটার খারাপ মতলব আছে সেটা আদনান ভালো করেই বুঝেছে। ছেলেটা খবর পেয়েছে রাজিব এর কাছে। রাজিব খেয়াল করেছে দোলাকে ছেলেটা বাজে নজরে দেখে ও ফলো করে।
    রাজিব হচ্ছে আদনান দের ডাইভার এর ছেলে।
    ওর থেকে কালকেই খবরটা জানতে পেরেছে তারপর‌ই ওই ছেলের খোঁজ নিয়েছে সারাদিন আজকে ওই ছেলেকে ইচ্ছামতো দোলাই দিয়েছে।
    ওই ছেলের এত বড় স্পর্ধা আমার জিনিসে দিকে নজর দেয়। শুধু ওর হাত-পা ভেঙেছি কিন্তু আমার তো ওকে খুন করে ফেলতে চেয়েছিলাম। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে আদনান।
    চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। আস্তে আস্তে নিজেকে শান্ত করে। গোসল শেষ করে তোয়াল পেচিয়ে একহাতে চুল ঝাকাতে ঝাকাতে বেরিয়ে আসে আদনান।
    দুইদিন এসবের ঝামেলায় দোলার কাছে যায় নি‌। খোঁজ নেয়নি এমন না কিন্তু সামনে যায় নি।

    এদিকে,,,
    আমি আদনান ভাইদের বাসায় এসেছি। দেখলাম মামনি কি জানো সিলি করছে সোফায় বসে খুব মনোযোগ সহকারে।দরজা খোলা ছিল বিধায় কলিং বেল চাপতে হয় নাই আমি কথা না বলে চুপে চাপে মামনি পাশে গিয়ে বসলাম। তারপর আস্তে করে মামুনিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলাম মামনি চমকে উঠলো আর সাথে সাথে আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে দেখেই মামনি শক খেল।
    “কি হয়েছে মামণি এত শক খাচ্ছ কেন? আমি, আমাকে চেনো না তুমি।”
    মামনি বলল, “তুই তোর না পা ভাঙ্গা তুই এই ভাঙ্গা পা নিয়ে এখানে কি করে এলি?”
    আমি মামনি কে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে সিরিয়াস হয়ে বললাম,, “আসলাম! খুব কষ্টের করে। এখন তো আমি খুব একটা হাটতে পারি না। কিন্তু তুমি তো আজকে আমাকে দেখতে গেলে না। এজন্যই, তো আমাকে আসতে হল।”
    মামনি তখন বলল,, অবাক হয়ে,, “কি বললি আমি তোকে দেখতে যায় নি আজকে সকালেও না গেলাম। আবার ভেবেছি একটু পরে যাব।”
    নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেলাম,,”তুমি গেছিলে!”
    “তো গেলাম না সকালে ও না বসে থাকলাম কতক্ষন।”
    মামনি বলল। মামনি কথা শুনে,
    আমি নিজের জিভে কামড় দিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,
    “একদমই মনে ছিল না! মামনি তুমি কিছু মনে করো না কেমন? আমি না তোমাকে মিস করছিলাম সত্যি আমার বাসায় বসে থাকতে এতোটা বোরিং লাগছিল বলে বুঝাতে পারবো না। এজন্যই তো লুকিয়ে চলে এলাম।”
    “ধুর এত ভয় পাচ্ছিস কেন এসেছিস বেশ করেছিস। কিন্তু এভাবে একা চলে আসা ঠিক হয় নি যদি কোথাও পড়ে টড়ে ব্যথা পেতি তখন কি হতো বল তো।”

    আমি মাথা নীচু করে ফেললাম । মামনি আমার মাথায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কিনা তারপর, আমাকে টেনে ধরে বললো, “থাক থাক আর মন খারাপ করতে হবে না।”
    তার পর মামনি আবার সেলাই করতে লাগল আমি মামনি পাশে বোরিং হয়ে বসে আছি। মামনিকে কি বলে যে এখানে থেকে উঠে আদনান ভাই রুমে যাব সেটাই ভাবছি,,
    আর এক হাত মুখে দিয়ে কামড়াকামড়ি করছি।
    “কিরে এমন হাত কাঁমরাচ্ছিস কেন?”
    মামুনের কথায় চমকে হাত মুখে থেকে সরিয়ে ফেললাম।
    “ওই না মানে আসলে।”
    “কিছু খাবি কিছু রান্না করে দেবো নাকি বিস্কুট চানাচুর খাবি।”
    খাবার কথা বলতেই মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।মামুনিকে আমার জন্য রান্না করতে বলি। সেই সুযোগে আমি এক ঝলক আদনান ভাইয়ের রুমে উঁকি দিয়ে আসবো।
    “কিরে কিছু বলছিস না কেনো ? খাবি কিছু।”
    “হ্যাঁ খাবো।”
    “আচ্ছা কি খাবি বল?”
    আমার ফেভারিট নুডুলস তাই মামণিকে নুডুলস রান্না করতে বললাম।
    মামনি হাতের কাজ ফেলে রান্নাঘরে ছুটল। আমি মামনি যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম, তারপর সহজে আদনান ভাইয়ের রুমের সামনে চলে এলাম।
    দরজা চাপানো একটু ফাঁক করে দেখি আদনান ভাই শুধু প্যান্ট পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কোন এক শার্ট নেই ।আমার একটু লজ্জা লাগল তাই তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়ালাম,,কিন্তু বেশিক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলাম না আবার ঘুরে তাকালাম ভাইয়ার দিকে নির্লজ্জের মত ভাইয়াকে এইভাবে দেখার প্রবল ইচ্ছা জাগল।
    এত নির্লজ্জ কবে হয়ে গেলাম।ভাইয়া দেখতে কি জোস আহ কি হ্যান্ডসাম,আমার প্রথম ক্রাশ আহা যখন প্রথম বান্ধবীদের কাছে ওদের বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনতাম তখন ফাস্ট মনে মনে জল্পনা কল্পনা করেছিলাম আদনান ভাইকে নিয়ে।তখন দিন রাত ভাবতাম যদি আদনান ভাই আমার বয়ফ্রেন্ড হতো ইস সবাই কি বলতো ইস দোলার বয়ফ্রেন্ড টা কি সুন্দর হ্যান্ডসাম হট। কিন্তু সেটাতো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভাইয়া আমাকে দুই চোখে দেখতে পারেনা।শুধুমাত্র ছোট বোন হিসেবে যতটুক ভালোবাসার বাসে সে আমাকে কড়া শাসনে রাখে আমি জানি যদি বাই ইনি চান্স জানতে পারে আমি ভাইয়াকে বয়ফ্রেন্ড বানানোর ধান্দা করেছিলাম আমার হাড়গোড় আর থাকবে না।

    এখন আমি কলেজের ওই ফাহাদকে লাইক করি।ওকে আমি আমার বয়ফ্রেন্ড বানাবো সবার বয়-ফ্রেন্ড আছে আমার কেন থাকবে না কিন্তু বেচারা হাঁদারাম আমাকে প্রপোজ করল না।ভাইয়াকে দেখে আমার হিংসে হয় ইস কোথায় ভাইয়া আর কোথায় ফাহাদ হ্যাঁ ভাইয়ের মতো ফর্সা কিন্তু এ তো হ্যান্ডসাম না। ভাইয়ের মতো একটু হ্যান্ডসাম হতো ভাইয়ের কি বডি মাস আল্লাহ সব দিক দিয়ে পারফেক্ট গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি আমার ফার্স্ট ক্রাশ যেটা ফাহাদের নাই।
    আহাম্মক‌ ফাহাদ ওর নাকি খোঁচা দাড়ি ভালো লাগে না এজন্য ফ্রেশ থাকে।এটা অবশ্য আমাকে বলে নাই আমি ওর চাচতো বোনের থেকে জেনেছি ওর চাচতো বোন তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মেঘলা। মেঘলা থেকেই জেনেছি ফাহাদ আমাকে লাইক করে।
    তখন থেকে ভাবছি ফাহাদ আমাকে প্রপোজ করলেই হ্যাঁ বলে দেবো আমার অবশ্য খুব একটা ভালো লাগে না ফাহাদকে। কিন্তু আমার তো বয়ফ্রেন্ড দরকার সবার বয়-ফ্রেন্ড আছে। কত গল্প করে আমার কাছে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে। আমারও তো বয়ফ্রেন্ড নিয়ে গল্প করার ইচ্ছে।
    আমি আকাশ পাতাল ভাবছিলাম আদনান ভাইয়ার দরজার উঁকি মেরে।আমার তো মনেই ছিলনা সিংহে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমি এইসব ভেবে নিজের চরম বিপদ ডেকে আনছি।
    আচমকা আদনান ভাইয়ার কর্কশ আওয়াজে আমার সমস্ত ধ্যান-ধারণা সমাপ্তি ঘটল। দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে কাপতে লাগলাম।আসলে দরজার মাঝে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম একটুর জন্য পড়ে যায় নাই।তারপর পায়ে ব্যথা তাই ভেতরে ঢুকেই জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
    হাই সর্বনাশ কি করলাম? আমি তো ধরা পড়ে গেলাম। এখন আমার কি হবে?
    কাচুমাচু করে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি চোখ ছোট্ট ছোট করে আদনান ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালাম। ভাইয়া একদম আমার সামনে দাড়িয়ে আছে তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে । আমি তার গম্ভীর মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললাম,,
    “তুই এখানে কি করছিস দোলা? আমার রুমের দরজার সামনে লুকিয়ে উঁকি দিচ্ছিলি কেন?”
    কথাটা বলে আরও একটু এগিয়ে একদম আমার গা ঘেষে দাড়ালো।

    আমি ভাইয়াকে এমন ভাবে নিজের কাছে আসতে দেখে আরো কাঁপতে লাগলাম। কাঁপতে কাঁপতে আমি ব্যাথা পা দিয়ে পেছাতে গিয়ে আহ করে উঠলাম।
    ভাইয়া আমাকে আহ করতে দেখে বিচলিত হয়ে এক হাতে জড়িয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে এলো।
    একেতে পায়ে ব্যথা তার ওপর দরজার একটু বাড়িয়ে খেয়েছি।
    “গাধা একটা! নরলি কেন? আর তুই এই পা নিয়ে এমন ঢং ঢং করে ঘুরছে কেন?, হ্যাঁ! ইডিয়েট!!”
    আমি ব্যথা ভুলে স্তব্ধ হয়ে আছি আদনান ভাই আমাকে খালি শরীরে জড়িয়ে ধরেছে। আমি তার উদাম বুকের সাথে লেপ্টে আছি ভাবতে আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে।
    বুক ধরফর করছে আমি হতভম্ব হয়ে আদনান ভাইয়ের বুকের সাথে লেপ্টে আছি।

    আমি মাথা উঁচু করে হা করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম,,
    ভাইয়া রেগে বলল,, ” এমন হা করে তাকিয়ে না থেকে উওর দে তুই এখানে কি করছিস?”
    বলে আমাকে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে র‌ইল পুলিশের মতো। যেন আমি চোর চুরি করে ধরা পরেছি তাই পুলিশ আমাকে জেরা করছে।
    ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,,
    ” আমি তো এমনি ঘুরছিলাম।”
    ভাইয়া আমার কথা শুনে বলল,,” কি ঘুরছিলি?”
    আমি বললাম,,”হ্যা।”
    ভাইয়া রেগে শক্ত হয়ে বলল,,,” এই পা নিয়ে তোকে ঘুরতে বলেছে কে?”
    আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।
    “কি হলো করি বলছিস না কেন? তুই এই পা নিয়ে লাফালাফি করে বেরাচ্ছিস কেন?”
    চিৎকার করে।
    ভাইয়ার চিৎকার শুনে আমি কেঁপে উঠলাম। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলছি ভাইয়ার দিকে সরাসরি তাকাতে লজ্জা করছে ভাইয়া এখন ও খালি গায়ে।
    ভাইয়া বলল,,
    ” তুই নিচের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
    আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না নিজের হাত মুচরাচ্ছি।
    “কি হলো কথা বলছিস না কেন?”
    আমতা আমতা করে বললাম,, “তুমি শার্ট পরো আমার লজ্জা করছে।”
    আমার কথা শুনে ভাইয়া গম্ভীর হয়ে বলল,, “লজ্জা করছে তাইনা।”
    আমি মাথা নাড়লাম।
    ভাইয়া আবার বলল,,,” তাহলে এতোক্ষণ লুকিয়ে দেখছিলি কেন?”
    ভাইয়ার কথা শুনে আমার হেঁচকি উঠে গেল। ভাইয়া জানলো কিভাবছ আমি লুকিয়ে দেখেছি। বড় বড় চোখ করে তাকালাম ভাইয়ার দিকে ভাইয়া কঠিন মুখ করে তাকিয়ে আছে।
    “কি হলো আমার দিকে তাকিয়ে ছিস যে তোর না লজ্জা করছে।”
    আমি নিজের জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলাম। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।
    ভাইয়া ফট করে বসে পরলো আমার পায়ের কাছে।আমি চমকে উঠলাম,,
    “কি করছো?”
    “চুপ।” ভাইয়া কঠিন হয়ে বলল।
    আমি ভাইয়ার কথা শুনে চুপ করে গেলাম। ভাইয়া আমার পা ধরে দেখতে লাগল তারপর বলল,,,
    “কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস?”
    আমি বললাম,,”ব্যাথা পাই নাই।”
    ইচ্ছে করে মিথ্যা বললাম।
    “একটা চড় মারবো। আবার মিথ্যা বলছিস।”
    রেগে বলল।

    ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর ড্রয়ার খুলে ব্যথার মলম এনে আমার পায়ে লাগিয়ে দিল খুব যত্ন সহকারে। আমি মুগ্ধ হয়ে ভাইয়ার যত্ন করা দেখলাম। তখনই মামনির কন্ঠ এলো মামনি আমাকে ডাকতেছে। ভাই হয়তো মামনির ডাক শুনেছে।
    ভাইয়া শার্ট পরতে লাগল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
    আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। এখন আমার মাথায় আকাশ সমান চিন্তা। এখন মামনি যদি জিজ্ঞেস করে বলে আমি এখানে কেন এসেছি?
    কি বলবো তখন?
    ভাইয়া শার্ট পরে চুল ঠিক করে একদম নায়ক হয়ে আমার দিকে ঘুরে বলল,,
    ” তুই দাড়িয়ে আছিস কেন?”
    আমি কিছু না বলে বেরিয়ে আসতে যাব, ভাইয়া আবার চিৎকার করে উঠল,
    ” আর এক পা নরলে তোর পা আমি একেবারে ভেঙে দেব।”

    বৃষ্টি হয়ে নামবো (রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 4

    আদনান ভাইয়ের ধমকি শুনে আমি ওইখানে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ওদিকে মামণির ডাক ভালো শোনা যাচ্ছে। আজকে আমি বড়োসড়ো কেস খাবো মামনি আমাকে পুলিশের মত জেরা করে বলবে আমি এখানে কেন? কি বলবো? কি বলবো? যদি আদনান ভাইয়া বলে দেয় আমি তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম ছিঃ ছিঃ ছিঃ মান সম্মান সব ডুবিয়ে দিলাম।
    কাঁদো কাঁদো মুখ করে আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,,
    তিনি কি শান্তিতে সাজুগুজু করছে ছেলেরা মেয়েদের মত এত সাজুগুজু করতে পারে আল্লাহ। চুল ঠিক করছে হাতে ঘড়ি পড়ছে নিজেকে আয়না একশ ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে।
    আর এদিকে আমার যে কি হচ্ছে সেটা শুধু আমি জানি।
    “ভাইয়া আমি নিচে যাই মামনি আমাকে ডাকছে।”
    কাচুমাচু করে বললাম।
    ভাইয়া আমার দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে বলল,,
    ” বিছানায় বস।”
    “কিন্তু মামুনি তো ডাকছে।”
    “তোকে বসতে বলেছি।”
    ভাইয়ার শক্ত কথা শুনে আর কিছু বলতে পারলাম না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিছানায় গিয়ে বসলাম। ওমনি মামুনি নুডুলস এর বাটি হাতে করে আদনান ভাইয়ের রুমে এলো আমার নামে হাক ছাড়তে ছাড়তে।
    আমাকে এখানে দেখে অবাক হয়ে বলল,,
    ” একি রে দোলা তুই এখানে কি করছিস? আমি তোকে সেই কখন থেকে ডাকছি।”
    মামনি বলতে বলতে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। আমি আমতা আমতা করছি আর ভয়ে ভয়ে আড়চোখে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছি।
    এখানে আছি সেটা আমার ভয় না ওতোটা কারণ এই রুমে আমি আসি‌ই কিন্তু ভয় হচ্ছে অন্য জায়গায়।
    আদনান ভাই যদি বলে দেয় আমি লুকিয়ে লুকিয়ে ভাইয়াকে দেখছিলাম। ছিঃ ছিঃ ছিঃ মামনি জানলে কি ভাববে আমাকে নিয়ে ভেবেই আমার লজ্জার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

    হতদম্ব হয়ে বসে আছি। আমার পাশে বসে আছে আদনান ভাই। মামনি নিচে নেমে গেছে একটু আগে নুডুলস এখানে রেখে। আদনান ভাই আমাকে অবাক করে দিয়ে কিছু বলে নি। উল্টা মামনি কে বলেছে যে তিনি আমাকে ডেকেছিল এখানে আসতে বলেছে। তাই মামনি আর কিছু না বলে চলে গেছে।
    পায়ের জন্য ভাইয়া বলেছে‌ এতো নড়াচড়া না করা ভালো এখানেই খেয়ে নিক।তাই রেখে গেছে। আমি ভাইয়ার মিথ্যা কথা শুনে হতভম্ব হয়ে আছি।ভাইয়া তখন আমার পাশে বসলো আর আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
    “তোর আসল ব্যাপারটা বলি নাই ভাবিস না তোকে বাচিয়ে দিয়েছি। সেটা আমি এখন ও বলে দিতে পারি।”
    ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
    আমি বুঝলাম না কিছু তাই বললাম,,” মানে।”
    ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর হয়ে বলল,,,” তোর ফেসবুক পাসওয়ার্ড দে।”
    আমি ৪৪০ ভোল্টের শক খেলাম মনে হয়। ভাইয়ের কথা শুনে আমার শ্বাস আটকে যাবার উপক্রম। তাহলে এই ছিল মনে মনে শয়তানটার।
    “ফেইসবুক পাসওয়ার্ড দিবি নাকি বলে দেব যে তুই আমার দরজায় উকি দিয়ে আমার খালি গা দেখছিলি নির্লজ্জের মতো।”
    ভাইয়ার কথা শুনে লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম। নিজের গালে নিজেরই কষে একটা চড় মারতে ইচ্ছে করছে। ছিঃ কেন যে এখানে এসে নিজের পায়ে নিজেই কোরাল মারলাম। ভাই আমাকে কি বেহায়া মেয়েই না ভাবছে।

    “কি হল মাথা নিচু করলি কেন? পাসওয়ার্ড দিতে বলেছি।”
    ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে বললাম,,,” আমি ফেসবুক চালাই না ভাইয়া সত্তি।”
    আদনান ভাই কঠিন মুখ করে বলল,,,” আবার মিথ্যা বলছিস মিথ্যা বলে লাভ নাই। আমি কিন্তু জানি সব তাই তাড়াতাড়ি পাসওয়ার্ড দে তুই না দিলেও পাসওয়ার্ড নিতে আমার দুই মিনিট সময় লাগবে না। কিন্তু আমি একা নিতে চাইছিনা তোর কাছ থেকে নিতে চাইছি। ভালোই ভালোই দে।”
    আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম,,,” আমি সত্যিই…
    এবার ভাইয়া মৃদু চিৎকার করে বলল,,,”আরেকবার মিথ্যা বললে কিন্তু মার একটাও মাটিতে পড়বে না।”

    ভাইয়ার সাথে আর মিথ্যা কথা বলতে পারলাম না। সব বলে দিলাম। ভাইয়া আমার সামনে বসে আমার শখের আইডিটা রিমোভ করে দিল আর আমি তা কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে দেখলাম।
    আমার মতো হতভাগা আর কেউ কি আছে।
    ভাইয়া আমার চরম সর্বনাশ করে ক্ষান্ত হলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নুডুলসের বাটি নিজের হাতে নিল। আমি দাঁত কিড়মিড় করে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
    “এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নাই। আমাকে না জানিয়ে আইডি খুলে খুব বড় অন্যায় করেছিস তুই?”
    চামচ দিয়ে নুডুলস নিজের মুখে পুরে কথাটা বলল।
    আমি আগুন চোখ করে তাকিয়ে আছি। এখন যদি আমার হাতে কোন অদৃশ্য ক্ষমতা থাকত। আমি এই খাটাশ, শয়তান আদনানকে আগুনের গুলি ছোড়ে ভষ্স করে দিতাম।
    এত রাগের মাঝে আমার রাগটা আরো বেড়ে গেল।আমার ফেভারিট খাবার কি না আমার সামনে বসেই আদনান ভাই গিলছে সেটা আমি একদমই সহ্য করতে পারলাম না।আইডি আমার শখের থাকলেও ওইটা জন্য নিজেকে সামলে রাখতে পারব কিন্তু নিজের পছন্দের জিনিস অন্য কে খেতে দেখতে পারবোনা। আর যদি দেখতে হয় সেটা হবে আমার কাছে সবচেয়ে কষ্টদায়ক।
    “তুমি নুডুলস খাচ্ছো কেন? ওইটা আমার জন্য রান্না করেছে মামনি।”
    আদনান ভাই যেন আমার কথা শুনলে না।আমার কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। আমার এবার রাগ উঠল আমি একটু জোরে গলার সাউন্ড বাড়িয়ে বললাম,,,
    “কি হলো কথা কানে যাচ্ছেনা নুডুলস দাও।আমার খাবার তুমি খাচ্ছ কেন? আর তুমি জানো না এটা আমার কতো পছন্দের। আমাকে না দিয়ে নিজে একা খাচ্ছ কেন?”
    এবার আদনান ভাই চামচ বাটিতে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল খুব ধীরে,,”আজকে তুই নুডুলস পাবি না এটা আমি তোর সামনে বসে একা খাব।”
    আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,,,” আমি পাবোনা মানে কি?”
    ভাইয়া আবার এক চামচ মুখে দিয়ে বলল,,,” পাবি না মানে পাবি না চুপচাপ বসে থেকে আমার খাওয়া দেখ।”
    “দেখবো মানে কি আমি দেখব না আমি খাব দাও আমাকে বাটি। শেষ করে ফেললে তা আর একটু খাবে না দাও আমাকে।”
    বলে হাত বাড়িয়ে বাটি নেওয়ার চেষ্টা করতেই ভাইয়া বাটি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
    আমি গোল গোল চোখ করে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি।
    “ডোন্ট টাচ মি। আজকে তুই নুডুলস পাবিনা এইটা তোর শাস্তি।তোর ফেভারিট জিনিস তার চোখের সামনে বসে আমি খাব আর তুই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবি আর জ্বলবি কিন্তু খেতে পারবি না। আমার চোখের আড়ালে লুকিয়ে ফেসবুক খুলার এটাই শাস্তি।”
    ভাইয়া কথাটা বলে আবার খেতে লাগলো আর আমি বিছানায় বসে বড় বড় চোখ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। কাঁদো কাঁদো মুখ করে।

    সত্যি আদনান ভাই আমাকে দিলনা লুডুলস। আমার সামনে বসে চেটেপুটে লুডুলস খেল জীবনে আমি তাকে এভাবে নুডুলস খেতে দেখিনি। আর আমি অসহায় মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে বসে ছিলাম। কান্না পাচ্ছিলো আমার কিন্তু গরিলাটার একটু মায়া হলো না আমার প্রতি। কি যে খারাপ লাগছিল বলে বুঝাতে পারব না খাওয়ার জন্য।
    ভাইয়া খাওয়া শেষ আমার হাত ধরে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।বাইরে এসে মামুনি কে কি সুন্দর মিথ্যায় না বলল আমি নাকি সবটুকু নুডুলস খেয়েছি।
    ভাইয়ার কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। ভাইয়ার দিকে তাকালাম ভাইয়া আমাকে চোখ টিপে মামনি কে বলল,,
    “আম্মু আমি দোলাকে বাসায় দিয়ে আসি।”
    মামা নি বলল,, ” এখন‌ই আমি না হয় পরে দিয়ে আসতাম।”
    “ওর এখন মেডিসিন নিতে হবে।”
    আমার মেডিসিন নিতে হবে এটা আদনান ভাইয়ের মুখে শুনে চমকালাম ভাইয়া জানালো কিভাবে?

    তারপর ভাইয়া আমার হাত ধরেই বাসা থেকে বেরিয়ে এলো ওষুধ খেতে হবে শুনে মামনি আর না করেনি।
    দরজার বাইরে আসতেই ভাইয়াকে প্রশ্ন করলাম,,
    “তুমি মামনি কে মিথ্যা বললে কেন?”
    আদনান ভাই ঘাড় বাঁকিয়ে বললো,,” কি মিথ্যা বললাম।”
    “আমি নুডুলস খাই নাই। আমাকে সামনে বসিয়ে রাক্ষসের মতো তুমি একা খেয়েছো।আর মামনি কে কিনা বললে আমি খেয়েছি।”
    ক্ষোভ নিয়ে বললাম।
    “বাসায় গিয়ে খাস। আমি দেখতে আসবো না ওইটা তোর জন্য শাস্তি ছিলো। আর আম্মু তো তোর জন্য করেছিল তাই এই টুকু মিথ্যা না বললে আবার আমাকে ঝাড়ি খেতে হতো।”
    “আমি এখন গিয়ে বলে দেব তোমাকে আমি ঝাড়ি খাওয়াবো।”
    বলে হাত চালাতে লাগলাম।
    “হাত ছার রাক্ষস। আমি আজকে তোকে ঝাড়ি খাওয়াবোই আমার ফেবারিট খাবার নিজে রাক্ষসের মতো গিললি।”
    আদনান ভাই হাত তো ছারলোই না উল্টা আমাকে শক্ত করে ধরে কোলে তুলে নিলো আমি ছটফট করছি নামার জন্য।
    ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়ে কর্কশ গলায় বললো,,
    “নড়াচড়া করলে এখানে তোকে আছাড় মারবো স্টুপিট। আর তোকে আমি বলছি না আমাকে তুই তোকানি করবি না। আপনি করে বলতে বললে তো শুনিস‌ই না এখন তুমি করে বলিস আবার তুই।”

    ভাইয়ার কথা শুনে আমি ও বলল,,, ” নিজে তুই তোকানি করলে দোষ নাই আমি করলেই দোষ তাই না।”
    ভাইয়া চোখ মুখ শক্ত করে বলল,,” আমি তোর বড় তাই তুই বলতেই পারি কিন্তু তুই বলতে পারিস না।”
    “আমি এখন থেকে তুই করেই বললো তোকে। তুই একটা শয়তান, খাটাস, হনুমান , বাঁদর, বিলাই, গরিলা তোর জন্য আমার সাধের আইডিটা গেল। আহা কতো শক করেই না খুলেছিলাম আইডিটা‌। আবার আমার নুডুলস একা নিজের পেটে দিলি কতো বড় খাটাস তুই একটু ও মায়া হলো না আমার জন্য।”
    আর একটা বাজে কথা বললে কিন্তু এখানেই ফেলে দেবো বলে দিলাম।
    আদনান ভাই কথাটা বলেই হাত আগলা করে দিলো।আমি হকচকিয়ে গেলাম আদনান ভাইয়ের কান্ড দেখে তারাতাড়ি হাত বাড়িয়ে ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
    চোখ বন্ধ নিলাম ভয়ে। আমি ভাইয়ার গলা জরিয়ে মাথাটা বুকে মিশিয়ে নিয়েছি এটা দেখে ভাইয়া হাত শক্ত করে নিলো।
    “এখন ভয় পাচ্ছি কেন? আমাকে ওইসব বলার সময় তো ভয় পাচ্ছিলিনা।”
    আমি ভয়ের মধ্যে থেকে ও বললাম,, ” ভয় পেলে কি বলতে পারতাম।”
    আদনান ভাই রেগে বলল,,,”তুই আমাকে বকে খুশি।”
    যদি আমি এক সত্যি ফেলে দেয় না না ,,‌ আমি মাথা নেড়ে না বললাম।
    আমাদের বাসায় রেখে চলে গেল আদনান ভাই।
    বাসায় এসে আম্মুকে নুডুলস রান্না করতে বললাম রান্না করে দিল কিন্তু আমার আর খেতে ভালো লাগল না‌ একটু ফ্রি রেখে দিলাম এত পছন্দের জিনিস তাও খেতে ইচ্ছে করলোনা একটা জেদ চেপে বসেছে ভাই আমাকে ওই ভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য। ভাবলাম আর জীবনে নুডুলস খাব‌ই না হূহ।
    চলব

    বৃষ্টি হয়ে নামবো (রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 5

    কলেজের শিমুল গাছের নিচে বসে আছি গালে হাত দিয়ে। আমার পাশে বসে আছে আমার ফ্রেন্ড সার্কেল। একটু আগে ওদের এই দুইদিনে আমার উপর করা সব অত্যাচারের কথা শেয়ার করেছি। তারপর থেকে সব গুলা আমাকে এতো এতো সান্ত্বনা দেওয়া শুরু করেছে।
    এবার নেহা বলল,
    ” কষ্ট পাস না সোনা আমার। তুই মন খারাপ করে থাকলে আমাদের কারো ই ভালো লাগে না। কিরে বল! আর তোর ওই ভাইয়াকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করবো।”
    নেহার কথায় সবাই সায় দিলো( আমার ফ্রেন্ড সার্কেল মোট পাঁচজন নেহা, মুসকান, ইলমা, আবিদা আর আমি) শুধু আবিদা বাদে ও একা বলল,,
    ” কি সব বলছিস মাই জানেমান কে তোরা শাস্তি দিবি। এটা কিন্তু ঠিক না আমি মেনে নেব না।”
    ওর কথা শুনে আমার গায়ে আগুন ধরে গেল।
    গমগম করে বলে উঠলাম,,,” কি বললি তুই জানেমান? এই আদনান খাটাশ আমাকে এতো এতো অত্যাচার করলো আর তুই ওকে শাস্তি দিতে না করছিস। বান্ধবী নামের কলঙ্ক তুই। হায় কপাল আমার।”
    আবিদা আবার বলল,, ” সরি মাই জান্টুস। রাগিস না প্লিজ আদনান তোর সাথে অন্যায় করেছে কিন্তু ও তো আমার একটা মাত্র ক্রাশ আমি ওকে শাস্তি দিতে রাজি হয় কি করে বল আমার তো কষ্ট হবে।”
    মলিন মুখ করে বলল। ওর কথায় ইলমা বলে উঠলো,,
    ” ওরে আমার একটা ক্রাশ আলা আইছে রে তুই না ঘন্টায় ঘন্টায় ক্রাশ খাস।”
    “আগে খাইতাম এখন তো খাইনা। আমি ভালা হ‌ইয়া গেছি।”
    গর্বিত হয়ে বলল।
    ” খাও না কাল ও না একজন কে দেখে বললি, কি দেখতে মাইরি এটাকে আমি লাইন মারবো।”
    তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল ইলমা”
    আবিদা রেগে তাকালো আমার দিকে।

    আবিদার দিকে তাকিয়ে বলল,,,”কিরে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?”
    রেগে বলল আবিদা,,,”ওদের বলতে মানা করেছিলাম ইলুর বাচ্চা।”
    ইলমা হতাশ হয়ে বলল,,”আমি ইলুর বাচ্চা না তায়েফ এর বাচ্চা ভুলে কেন যাস বারবার?”
    ওইটা নিয়ে লাগল দুজনের মধ্যে ঝগড়া। বিরক্ত হয়ে নাক মুখ কুঁচকে আছি। একে তে আমি আছি আমার জ্বালায় আবার এই বান্ধরনীর প্যারা। আমি একটা চিৎকার দিয়ে ওদের থামালাম।
    সব গুলা চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
    “আর একটা কথা বললে তোদের সব কটাকে আমি করলার জোশ খাওয়াবো।”
    আমার কথায় ওরা থামলো।
    সবগুলা নাক মুখ ছিটকে বলল,,নো
    আমি বললাম,,
    “আমার জন্য কিছু করবি তা না নিজেরা ঝামেলা করছিস। তোরা আমার বান্ধবী‌ই না একজন ক্রাশ খেয়েছে বলে কিছু করবে না। আর তোরা এই ভাবে আমাকে কষ্ট দিলি। এমন বান্ধবীর কি দরকার কোন কথা নাই তোদের সাথে।”
    বলে মনে খারাপ করে উঠে দাঁড়ালাম।আমাকে উঠে দাঁড়াতে দেখে ওরা উঠে সরি বলে আমাকে জোর করে আবার বসিয়ে দিল।
    “প্লীজ জানু রাগ করিস না ওই আদনান কে শায়েস্তা করবোই দেখিস।”
    আমি গাল ফুলিয়ে বসে আছি।
    “আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসছে রে।” চিৎকার করে উঠল নেহা।
    সবার সাথে আমি ও বললাম,,,”কি?
    উৎফুল্ল হয়ে বলল,,,,”তুই ও তোর ভাইয়ের পছন্দ এর খাবার তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খা তাকে না দিয়ে।”

    আমি খুব উৎসুক হয়ে ছিলাম ওর কথা শুনার জন্য কিন্তু শুনার পর ওকে একটা কষিয়ে চর মারতে ইচ্ছা করছে।
    আমি কিনা ভাইয়ার পছন্দের খাবার খাব। ছিঃ তার পছন্দ বলতে তো ব্ল্যাক কফি উয়াক থু।
    “জীবনে না।” নাক ছিটকে বললাম।
    ওরা আমাকে কোন ‌ইসু দিতে পারলো না। ক্লাস শেষ করে গেটের বাইরে আসতেই নজর পরলো আদনান ভাইয়ের উপর গাড়িতে হেলান দিয়ে চোখ সানগ্লাস পড়ে এ্যাটিডিউট লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
    এমন লুক যে কেউ দেখেই ক্রাশ খাবে আমি খেলাম। তারপর ভাবতে লাগলাম এই খাটাশটা আমার কলেজে কি করছে?
    “ও মাই জানেমান এখানে ও উফ কি হট‌ই না লাগছে। উফ আমি পাগল হয়ে যাব।”
    আবিদার নেকামির কথা শুনে আমার গা পিতৃ জ্বলে যায়।
    ওরা ও ভাইয়াকে ভয় পায় তাই কেউ আর আমার সাথে গেল না যার যার বাসায় গেল।
    আমি একবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে গাড়ির জন্য দাঁড়ালাম একটু দূরে ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। আর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো,,

    ” আমাকে দেখতে পাস নি।”
    আমি একবার তার মুখের দিকে তাকিয়ে রাস্তা দিকে তাকালাম।
    “কথা কানে যায় না। আমাকে দেখে ও এখানে এলি কেন?”
    ক্ষোভ নিয়ে বললাম,,,”আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাইনা‌। আর তোমার সাথে আমি যাব না। তুমি এখানে কি করছো?”
    “আমার সাথে যাবি না কেন? আর আমি তোকে নিতে এসেছি কে বলল?”
    আমি ভাইয়ার কথা শুনে হকচকিয়ে গেলাম।
    “আমাকে নিতেই তো এসেছো আমি জানি।”
    ভাইয়া বাঁকা হাসলো তারপর বললো,, ” জী না আপনি ভুল জানেন। আমি আপনাকে নিতে আপনি নাই একটা নিউজ দিতে এসেছি।”
    ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম।
    “কি নিউজ?”
    “আন্টি আন্কেল বাসায় নাই। তোকে আমাদের বাসায় যেতে বলেছে রাতে তারা আসবে।”
    “এ্যা আম্মু আব্বু কোথায় গেছে? আমাকে তো কিছুই বলল না।”
    “আসলে জেনে নিস। আসি বাই।”
    বলেই ভাইয়া পকেটে থেকে সানগ্লাস বের করে চোখে দিয়ে চলে গেল আমি হাঁ করে তাকিয়ে ‌র‌ইলাম।
    আমার চোখের সামনে আদনান ভাইয়ের গাড়ি চলে গেল।আমি দাঁড়িয়ে দেখলাম অপমান এই সব কিছুর সুদ আমি একদিন তুলবোই খাটাশ।

    তার কিছুক্ষণ পর অটো এলে আমি সোজা মামনি বাসায় চলে এলাম। আদনান ভাই সোফায় বসে ছিল। আমার দিকে চোখ বাঁকিয়ে একবার তাকিয়ে উঠে চলে গেল।
    ভেংচি কেটে মামনির কাছে গেলাম।‌ আমার জামা রেখে গেছে তাই ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ছাদে চলে গেলাম।
    আদনান ভাইকে আজকে আমি ভয় দেখাবো রাতে ভূত সেজে ইয়েস। এই বাসায় আজকে থাকবো আমি সব ভেবে পরিকল্পনা করে এসেছি অটোতে উঠে।
    এখন শাড়ি দরকার। মামনির কাছে থেকে একটা শাড়ি নিতে হবে।
    “এখানে কি করছিস?”
    আদনান ভাইয়ের আওয়াজে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
    “কি করছি দেখতে পাচ্ছ না।”
    “দেখছি তুই না ঘুমিয়ে এখানে এসেছিস কেন?”
    “আমার ইচ্ছে করছে তাই।”
    “নিচে যা ঘুমা।”
    “না আমি এখন ঘুমাবো না।
    “যা।”
    “উফফ যাব না বললাম তো ঝালাচ্ছো কেন?”
    “তুই সোজা কথা শুনার মেয়ে না”। বলেই ভাইয়া আমার একদম কাছে চলে এলো। আমি ওয়ালে হেলান দিয়ে আছি ভাইয়া আমার কাছে এসে বলল,,
    ” তুই এতো ঘাড় তেরা কেন ?”
    “আমি ঘাড় তেরা না। তুমি আমার পিছে লাগ কেন বলো তো সবসময়।”
    আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলাম ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। কিছু বলছে না কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই চাহনি একদম অন্যরকম আমি ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম কি গভীর এই তাকানো আমাকে ঘায়েল করে ফেলে। বুকের ভেতরটা ধড়াস ধড়াস করছে ভাইয়াকে যেন অচেনা লাগছে আমি আমতা আমতা করে কিছু বলবো ভাইয়া বললো,,,
    ” তোর পিছে শুধু আমিই লাগবো বুঝছিস আর যেন কেউ না আসে।”
    কথার আগামাথা কিছু বুঝলাম না ভাইয়া পিছু ঘুরে চলে গেল।
    আমি হা করে তাকিয়ে র‌ইলাম।

    নিচে নেমে মামুনির কাছে বসে পরলাম। মামনি বসে ছিলো আমি ও বসে বললাম,,
    মামনি, ও মামনি ” আহ্লাদী গলায় বললাম।
    আমার ডাক শুনে তাকালো আমার দিকে তারপর ভ্রু নাচিয়ে জিগ্গেস করলো কি?
    “মামনি তোমার না কত সুন্দর সুন্দর শাড়ি আছে আমাকে একটা দিবে আজকে আমি শাড়ি পড়তাম। আমার না খুব শাড়ি পরতে ইচ্ছে করতেছে।”
    আমার কথা শুনে মামনি চোখ বড় বড় করে তাকালো,, কথাটা হজম করতে পারেনি মনে হয়।পারবে কি করে এর আগে আমি কখনও শাড়ি পরি নাই। আর যতবারই কেউ পড়তে বলেছে আমি না করে দিয়েছি। কোন বিয়েতে ও পরিনাই।
    ” কি হলো দিবে না শাড়ি?”
    “তুই শাড়ি পরবি।এটা আমি ঠিক শুনছি তো।”
    “এমন‌ করছো কেন পরবো তো বললাম। আগে না করতাম বলে কি এখন পরতে চাইতে পারবো না।”
    মন খারাপ করে বললাম। আরে গাল ফুলাচ্ছিস কেন দেব না বলেছি কি?
    “লাল টকটকে শাড়ি আছে আমার ওইটা পর তোকে না
    পরী লাগবে।”
    মামির কথা শুনে টাক্সি খেলাম লাল শাড়ি বলে কি ভূত সাজতে তো সাদা শাড়ি লাগবে না না লাল শাড়ি পড়া যাবে না।
    “আমার সাদা শাড়ি চাই।”
    মামনি আমার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলল,,” তুই সাদা শাড়ি পরবি?”
    “হুম আমার সাদা শাড়ি পরতে ইচ্ছে করছে। প্লীজ মামনি দাও না।”
    “এটা আবার কেমন ইচ্ছে রে বাবা? সাদা তো ভালো শাড়ি নাই একটা সাদার মধ্যে কালো আছে।”
    বলে মামনি উঠে শাড়ি বের করতে লাগলো তারপর সাদার মধ্যে কালো টা বের করলো আরো কিছু সুন্দর শাড়ি আমি ভূত সাজতে না চাইলে অন্য শাড়ি পরতাম।
    মামনির শাড়ি জর্জেট এর কালো পুরো ছোট ছোট ফুল এটা পরলে আমাকে ভূত লাগবে না‌।
    “এটাতে হবে না।”
    “কি হবে না?” অবাক হয়ে বলল।
    মামণির কথার উত্তরে কিছুই দিলাম না মন খারাপ করে শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছি। শাড়ির মাঝে হঠাৎ একটা সাদা কি যেন চোখে পড়ল আমি হাত বাড়িয়ে সেটা হাতে নিয়ে বললাম ,,,, এটা কি মামনি?
    “আর বলিস না এইটা একটা সুতির সাদা শাড়ি। আমার কলেজের একটা ফাংশন আমাকে ভূত সাজার জন্য এই শাড়িটা কিনতে হয়েছিল। আমরা একটা নাটক করছিলাম ফ্রেন্ডরা মিলে তখন কিনা আমাকে ভূত সাজার পার্ট দিল কি আর করব তখন এই শাড়িটা কিনে ছিলাম ভূত সাজবো বলে তারপর থেকেই ঘরেই পড়ে আছে।”
    মামনি কথা শুনে আমার চোখ চিকচিক করে উঠলো।ও মায় আল্লাহ ভূত সাজা জন্য মামনি এই শাড়ি ব্যবহার করেছিল। আমি ও তো তাহলে এইটাই ব্যবহার করতে পারব।

    “মামনি আমি এই শাড়িটাই পরবো আমাকে এইটাই দাও।”
    বলেই শাড়িটা হাতে নিলাম খুশি হয়ে।
    “তুই পাগল হইলি নাকি রে দোলা। এই শাড়ি পড়বি পাগল এটা কোন শাড়ি?”
    “ইস মামনি দাওনা আমার এমন একটি শাড়ি পরতে ইচ্ছে ছিল এই জন্যই তো বললাম দেখো পেয়ে ও গেলাম প্লিজ প্লিজ প্লিজ না করো না।”
    “তুই সত্যিই এটা পরবি তোর মাথাটা একদম গেছে রে দোলা মা।”
    “আমার মাথায় কিচ্ছু হয় নাই তুমি বুঝতে পারতেছ না দাও শাড়িটা আমি এইটাই পরবো।”
    মামনি হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। মামনি কে দিয়ে এই শাড়িটা পড়লাম।এখন আর ভূত সাজতে পারবেনা এখন সুন্দর করে সেজেগুজে থাকি।
    মামনি আমাকে শাড়িটা পরিয়ে দিল পাথর হয়েই। তারপর আমি সুন্দর করে সেজেগুজে রুমে বসে র‌ইলাম থেকে আজ বের হবো না। আদনান ভাই যদি আমাকে আবার এই শাড়ি পরা দেখি নাই তাহলে।
    দরকার নেই বাবা।
    “তোকে এই বাজে শাড়িতে সুন্দর লাগছে রে দোলা। আমার দোলা সোনাটাকে একদম সাদা পরী লাগছে।”
    “থ্যাংক ইউ মামনি।”মিষ্টি করে হেসে বললাম।
    মামনি আমার গালে হাত রেখে চুমু খেলো।
    মামনি কে বলে দিলাম আজকে আমি এখানেই থাকব মামনি ও খুশি হল বলল আমার সাথে ঘুমাবে সন্ধ্যার আগে খেয়ে নিয়েছিলাম এজন্য আর রাতে খেলাম না। রুমে বসে থাকলাম মামনি খালি আমাকে দেখছিল। আগে আগে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য শুয়ে পরলাম।
    মামনিকে ও টেনে আমার পাশে শুইয়ে দিলাম।
    “কিরে শাড়ি পরিয়া ঘুমাবি নাকি।”
    “হ্যাঁ মামুনি আজকে আমি শাড়ি পরে ঘুমাবো।
    “তোর মাথাটা সত্তি গেছে।”
    “ওফ আমার মাথায় বিলি কেটে দাও না প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।”
    মামুনি আর কথা বইলোনা আমার মাথায় বিলি কেটে দিল।
    আমি ঘুমের অ্যাক্টিং করছি মামনি ঘুমিয়ে পড়লে আমি আমার মিশন শুরু করে দেবো। প্রায় আধাঘণ্টা পর মামুনির নাকে শব্দ বেড়ে গেল জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।আমি ফট করে চোখ মেলে তাকালাম মামনি ঘুমিয়ে পড়েছে ওর আমি উঠে বসে মামনি মুখের কাছে এগিয়ে মামুনকে ভালো করে দেখে বিছানা থেকে নেমে পড়লাম।

    আয়না সামনে এসে শাড়িটা সুন্দর করার একটু ঠিক করে নিলাম। তারপর চুলগুলো ছেড়ে এলোমেলো করে দিলাম। ঠোটে লাল লিপস্টিক ঠোঁটে বাইরে দিয়ে ও দিলাম। তারপর চুল গুলো সামনে এনে মুখ ঢেকে ফেললাম। আরেব্বাস একদম তো ভূত লাগছে আমাকে।নিজেই নিজেকে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম আমি আবার ভূতে ভয় পাই খুব তাড়াতাড়ি আয়না সামনে থেকে সরে এলাম। মাই গড নিজেকে দেখে নিজে ভয় পেলাম।
    আদনান ভাইয়া তো আজকে ভয় পাবেই পাবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এগারোটা বাজে এখন যাব না বারোটায় খাব বারোটার সময় ভূত আসে।
    আমার উপর অত্যাচার করার সুদ আজকে আমি নিয়েই ছাড়বো।
    ওইভাবেই রুমে বসে রইলাম উঠে একবার পায়চারি করছি আবার বসছি। মাঝে মাঝে মামনি নড়ে উঠছে আমি আবার বিছানার কাছে এসে বসছি। ঘড়ির কাঁটার নড়ে না যেনো। ভাই এখনো জেগে আছে আমি জানি।কারণ অফিসের কাজ দিয়ে বেশিরভাগ সময়ই জেগে থাকে ভাইয়া।
    বারান্দায় এসে দেখলাম লাইট জ্বলছে। বারান্দা থেকে দরজার সামনে এসে। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছি ভাইয়ার রুম বেশি দূরে না দুইটার পরে। ভাইয়া দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ভাইয়াকে দিয়ে তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকলাম।
    গটগট আওয়াজ হচ্ছে কিছুক্ষণ পর আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল। রুমের ভেতর অন্ধকারে বসে আছি। সময় বারোটার সময় ঘড়ির কাঁটা যেতেই আমি উঠে দাড়াই।
    অন্ধকারে আমি ভাইয়ার রুমে এলাম অদ্ভুত ভাইয়ের রুমে ডিমলাইট নাই। অন্ধকারের নিজেরই ভয় করছে। আমার হাতে ম্যাচ আছে এইটা ধরাবো রুমে গিয়ে। দরজা খুব সাবধানে খুলে ভেতরে ঢুকে আমি ভূতের আওয়াজ চালালাম এটা আমার আওয়াজ না এটা আমি মোবাইলে দিয়েছি।
    এবার আমি মোমবাতি জ্বালাতে এমন সময় আমার সামনে আগুনের একটুখানি কুণ্ডলী জ্বলে উঠলো। আচমকা এটা হ‌ওয়ায় আমি থমকে গেলাম। বড় বড় চোখ করে সেদিকে তাকিয়ে আছি।
    আগুনের কুন্ডুলিতে একাই নড়ছে আমার চোখ সেখানে স্তব্ধ । আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। শুধু সেটাই দেখছি সেটা আমার চারপাশে ঘুরছে। এটা কিভাবে হচ্ছে?কে করছে বিছানায় তাকালাম কেন কেউ শুয়ে আছে তার মানে আদনান ভাই বিছানায় শুয়ে আছে। এটাকে করছে ভূত??
    ভুতের কথা ভাবতে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে এলো শরীর ঘেমে একাকার। আমি ঠিক বারোটার সময় এসেছি ভূত সেজে ভাইয়াকে ভয় দেখাতে। আর আমি ভয় দেখানোর আগেই অন্য কেউ আমাকে ভয় দেখাচ্ছে তার মানে এটা সত্যি কারের ভূত। ভয়ে আতঙ্কে আমি কাঁদতে লাগলাম। আমার শরীর ভয়ে থর থর করে কাঁপছে আমার হাতের ম্যাচ কট করে হাত থেকে পড়ে গেল। পড়ার শব্দ পেয়ে নিজে ভয় পেয়ে নিজেও পড়ে যেতে লাগলাম কেউ আমাকে পেছন থেকে কোমর জরিয়ে ধরে পড়ার হাত থেকে বাঁচালো।
    আমি অস্পষ্ট সুরে ভূত ভূত বলে কাপাকাপি করছি। আচ্ছা আমাকে কি ভুতে জড়িয়ে ধরেছে?কি হয়েছে আমাকে কি ভুতে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। এদিকে সেই আগুনের কুন্ডুলিটা আর দেখা যাচ্ছে না। রুম একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার।অন্ধকার আমি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না শুধু একটা শরীর আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। তার হাত আমার কোমরে। সেকি ভুত ভূত কি আমাকে ধরেছে।এখন সত্যি কারের ভূতের হাতে কিনা আমার ঘাড় মটকানো হবে। ইস কেন যে ভাইয়াকে ভয় দেখানোর জন্য আসলাম। একবারও ভাবলাম না যদি যদি সত্যি কারের ভূত আছে আমার কি হবে?
    আচ্ছা ভাইয়া তো রুমে আছে আমি ভাইরে ডাকি।
    আমি ডাকলে ভাইয়া আমাকে বাঁচাতে পারবে।
    ভাইয়াকে যে ডাকবো সেই শক্তিও নাই। কথা বলতে পারছিনা কথা জানো গলায় আটকে আছে কথা বলার কোন শক্তি নাই। ওই ভূত আমার ঘাড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আচ্ছা ভূত কি নিঃশ্বাস নেয়?অমনি ভূত আমার ঘাড়ে নরম উষ্ণ ছোঁয়া দিল। সাথে মনে হয় কামড়ে দিল। কামড় দিতেই আমার মনে পড়ে গেল ভ্যাম্পায়ার আচ্ছা এটা কি কোন ভ্যাম্পায়ার আমার রক্ত খেয়ে নেবে। এখন কি আমাকে মেরে ফেলবে।
    আমি অতি উত্তেজনা আর ভয়ে ওইখানে জ্ঞান হারালাম।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো ( রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 6

    মুখে ঠান্ডা পানির স্পর্শে চোখ মেলে তাকালাম অগ্নিদৃষ্টিতে আদনান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাইয়ার তাকানো দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললাম।
    নিজের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম ভূত হয়ে আছি। ভাইয়ার কাছে ধরা পড়ে গেলাম। আর সেই ভূত ক‌ই আচ্ছা সকাল হয়ে গেছে কি?
    ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা বাজে। তারমানে এখনো মাঝরাতে। আমি ভাইয়ার বিছানায় শুয়ে আছি।
    ধরফরিয়ে উঠে বসলাম।
    হাট উচু করে শাড়ির আচল হাতে নিয়ে বসে আছি আর কাপাকাপি করছি। ভাই আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাগী ভাবে মনে হয় আমাকে এখন খুন করতে পারলে সে শান্তি পাবে। তার দিকে একবার কাঁপতে কাঁপতে চোখ উঁচু করে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে ভাবলাম এখন আমাকে ভাইয়ার হাত থেকে যে করেই হোক বাঁচতে হবে। এখান থেকে পালাতে হবে কি ভাবছ পালাবো ভাইয়ার রাগ যে করেই হোক কমাতে হবে।
    আমি এক চোখ খুলে ভাইয়াকে দেখে ফট করে তিন চারবার সরি সরি সরি বলো উঠলাম।
    তারপর চোখ খুলে কানে হাত দিয়ে বললাম,,

    “আই এ্যাম ভেরি সরি ভাইয়া! প্লিজ, আমাকে কিছু বলো না। আমার না খুব ভয় লাগছে।আমাকে দেখো আমার শরীর কাপছে আমি আবার জ্ঞান হারাবো এতো ভয় পেলে প্লিজ তোমার চোখটা অন্যদিকে নাও না। কি ভয়ঙ্কর ভাবে তাকিয়ে আছো মনে হচ্ছে।আমাকে চোখের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে ও মাই গড।কোন দুঃখে যে তোমাকে আমি ভয় দেখাতে আসলাম।কোথা থেকে সত্যি কারের ভূত চলে এলো আমাকে ভয় দেখাতে।”

    কথাগুলো শেষ করে চোখ ভালো করে খুললাম। ভাই এখনো সেই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
    আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে কান থেকে হাত নামিয়ে বললাম,,
    “সরি সরি প্লিজ অ্যাকসেপ্ট করে নাও না। আর জীবনে তোমাকে শাস্তি দেওয়ার কথা ভাববো না।‌ তুমি যা বলবে তাই শুনবো এই যে দেখো প্রমিস করছি।”
    ভাই আমার দিকে সেইভাবেই তাকিয়ে আছে রোবটের মত। আমার ভয় আত্মা শুকিয়ে আসছে। এইসব যদি ভাইয়া আব্বু আম্মু মামনি কে বলে দেয়। আমার মান সম্মান সব চলে যাবে। আর ভাই না জানি আমাকে এর জন্য কি কি শাস্তি দেবে।এখন আমার কি হবে কেন যে এমন একটা প্ল্যান করতে গিয়েছিলাম।

    গভীর ভাবনায় বিভোর আমি।তখন হঠাৎ পিকচার তোলার শব্দ আমার কানে এলো আমি চমকে সামনে তাকিয়ে দেখি। আদনান ভাই নিজের ফোনের ক্যামেরা অন করে আমার এই ভূত সাজা পিকচার তুলছে। আমি স্তব্ধ হয়ে তার ছবি তোলা দেখছি।এবার ভাইয়া ফোনটা নিজের পকেট এ ভরে মুখে হাত দিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো।
    সাথে চেপে ধরে আছে এমন হাসি হাসছে।যেন কোন বড়োসড়ো জোকস শুনছে আর জোকার দেখছে। আচ্ছা ভাইয়া কি আমাকে জোকার ভাবছে। নিজের দোষে নিজেই এখন জোকার হয়ে বসে আছি। ভাই হাসতে হাসতে নিজের ওয়ারডপের কাছে চলে গেল আমার থেকে অনেকটা দূর। তখনই হঠাৎ আমার ভুতের সেই আওয়াজ কানে এলো তখনই আমার সেই সময় কার ভূত আসার কথা মনে পড়ে গেল আর আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। এখনো তো একটা বাজে তারমানে ভূতটা এই ঘরে আছে। আমি ভীতু মুখ করে চারপাল দেখছি।যতসব আজে বাজে কথা এখন আমার মাথায় আসছে। আমি একটা চিৎকার দিয়ে উঠলাম ভয়ে।আমার চিৎকার শুনে আদনান ভাই চমকে উঠলো আর এক প্রকার দৌড়ে আমার কাছে এসে বসলো।

    আমি ভয়ে কাপাকাপি করছি চোখ বন্ধ করে। ভাইয়া আমার হাত স্পর্শ করে বলল,,
    “হোয়াটস হ্যাপেনস দোলা?”
    আমি ভয়ে কথা বলতে পারছি না কাঁদছি।
    এত কাঁপছিস কেন আর কাঁদছিস কেন কি হয়েছে তোর? বল আমাকে?
    আমি ওইভাবে থেকে আস্তে আস্তে তোতলাতে তোতলাতে বললাম,,”ভুওওওত ভুওওওত আছে তোমার ঘরে!
    ভাইয়া মনে হয় ব্যাপারটা বুঝতে পারল তখন একটা ধমক দিল আমাকে,,
    “স্টপ?একটু কান্নার আওয়াজ যেন না পাই চুপচাপ কাপাকাপি আর কান্নাকাটি বন্ধ করে চোখ মেলে তাকিয়ে সোজা হয়ে বস ইডিয়েট একটা?”
    আমি শুনছি না।
    “কি হলো আমার কথা কানে যায় না আমি তোকে কান্নাকাটি করতে মানা করেছি ইডিয়েট।”
    “আমার খুব ভয় করছে তুমি আমাকে ধমকাচ্ছে কেন? এত নির্দয় তুমি কবে থেকে হলে ভাইয়া?”
    আমি ভাইয়ার দিকে কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে মৃদু গলায় বললাম।
    ভাইয়া আমার দিকে গম্ভীর হয়ে কঠিন মুখ করে বলল,,,”ইডিয়েট কোন ভূত-পেত্নী নেই এখানে?ও সরি একটা পেত্নী এখানে আছে যে এখন আমার সামনেই বসে কান্নাকাটি করছে? ডাফার একটা এমন আজগুবি কাজকর্ম কে ঢুকিয়েছে বলতো?”
    তুমি এখন ও আমাকে ধমকাচ্ছ? তোমার ঘরে ভুত আছে আমি নিজের চোখে দেখেছি?
    ভাইয়া এবার সিরিয়াস হয়ে বলল,, আচ্ছা তা কি দেখেছেন আপনি?
    “আমি এবার বলতে লাগলাম,,আমি নিজের চোখে দেখেছি তোমারে ঘরে আগুন হ্যা আগুন ছিল সেটা কেউ ধরে ছিল না একাই সেটা আমার চারপাশে ঘুরতে শুরু করে। তারপর তারপর কেউ আমাকে জাপ্টে ধরল তারপর তারপর ইয়েস আমাকে কামড়ে দিয়েছে। এই যে দেখো কামড়ের দাগ আছে।”
    বলে ঘার দেখানোর জন্য হাত বাড়ালাম।

    ভাইয়া এবার বলল,,
    আচ্ছা আমার ঘরে না হয় ভূত ছিল তা তুই আমার ঘরে কি করছিলি এমন ভূত সেজে।
    আমি হাত নামিয়ে ফেললাম,,,
    মায়ের কথা শুনে আমি হকচকিয়ে গেছি কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা,,,
    “কি হল আমার প্রশ্নের উত্তর দে। ভূত সেজে কি আমাকে ভয় দেখাতে এসেছিলি?”
    ভাইয়ের কথা আমার পিল চমকে উঠলো। আমি হুহু করে কেদে উঠলাম,,
    এ ছাড়া উপায় নাই। বাঁচতে হলে কাঁদো দোলা কাঁদ বেশি করে কাঁদ নাকের জল চোখের জল এক করে ফেলো। ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে আদনান ভাই কে যদি একটু কাজে দেয়।

    ভাইয়া আমার কান্না দেখে চুপ করে যায় আমি কেঁদেই যাচ্ছি।
    একটু সময় আদনান ভাই চুপ করে থেকে চিৎকার করে বলে,,
    “একদম কান্না অ্যাটিং করবিনা। সাহস কী করে হল তুই আমার রুমে এসে আমাকে ভয় দেখাতে চাষ। তোর মত ভীতু কিনা আমাকে ভয় দেখাবে সত্যি আমি অবাক হই তোর কাম কাজে।”
    ভাইয়ার গমগম কণ্ঠ শুনে আমার কান্না অফ হয়ে গেছে।
    তুই একটা কি কি বললি আমি যা বলব তাই শুনবি?
    আমি একবার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল হুম
    আচ্ছা তোকে ক্ষমা করলাম। শুধুমাত্র এই কথাটা বলার জন্য।শুধু বলা পর্যন্ত থাকলে হবে না আমার কথা শুনতে হবে আজ থেকে আমি যেটা বলবো তাই তাই করবি ওকে।
    আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।আর মনে মনে ভাবছি কি কি যে করাবে আমাকে দিয়ে আল্লাহ মাবুদ জানে।
    কাল থেকে যেন আমি তাকে কোনোভাবেই মাঠে যেতে না দেখি বিকেলে।লোকে যদি যেতে চাস তাহলে আমার কানে খবর আসবে কারণ তোকে ফলো করার লোক আছে। তাই যদি লুকিয়ে যাস আমি সেটা খবর পাবোই। আর এইভাবে যদি আমি খবর পায় তাহলে জানিচ্ছিস‌ই তো আমি তোর কি হাল করবো?

    আমার মাঠে না গেলে তো ভালো লাগে না বাড়িতে বোরিং লাগে।
    সারাদিন কি বাড়িতে বসে থাকতে কারো ভালো লাগে তোমার জন্য তো আমি কোথাও যেতে পারি না।
    আমার জন্য তুই কি বলছিস আমি তাকে বন্দী করে রাখি?
    ভাইয়া রেগে বলল কথাটা।
    আমিও মলিন মুখ করে বললাম,, বন্দী করে না রাখলেও তো এইতো মাঠে যেতে দেবে না তাহলে আমি কি সারাদিন ঘরে বসে থাকবো।
    ঘরে বসে থাকবি কেন ছাদে যাবে আমাদের বাসায় আসবি।
    ঘুরলে আমার কি হবে শুধু আমার তো খেলতে ভালো লাগে।।তুমি সব সময় আমার সাথে এরকম করো জন্য তোমাকে আমার সহ্য হয় না তুমি কেন আমাকে এত কড়া শাসন করো?কি শত্রুতা তোমার আমার সাথে সবকিছুতেই কেন লন্ডভন্ড করে দাও। আমার সমস্ত শখ আহ্লাদ তুমি নষ্ট করে দাও কেন?

    বেশ করছি তুই এখন বড় হয়েছিস কেন বুঝিস না তুই। বাচ্চাদের মত লাফালাফি করাটা তোকে সোভা পায় না এখন। মাঠ ভর্তির লোকের সামনে তুই বাচ্চাদের মত লাফালাফি করিস তোর লজ্জা করেনা।কে তোর দিকে খারাপ নজরে তাকায় তোর তো সেদিকে খেয়াল থাকে না। সব সময় বাচ্চা মো না করলে তো চলে না আজকে তুই এসে পড়ছিস ভূত সেজে এটা কি কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ করবে।আমাকে ভয় দেখাতে এসে কিনা নিজেই ভয় পেয়ে জ্ঞান হারালি। এখন যদি তোর ভালো মন্দ কিছু হয়েছে তো আমার কী হতো? কতক্ষণ অজ্ঞান হয়ে ছিলি জানিস?এ এতটা সময় আমার মধ্যে কি ঝড় বয়ে গেছে জানিস?সবকিছুর একটা লিমিট আছে এই বারোটা পর্যন্ত জেগে বসে ছিলি কিনা এই আকাম করার জন্য?

    ভাইয়া ক্রোধের সাথে কথাগুলো বলল।আমি মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলছি এখন আমার সত্যি কষ্ট লাগছে।
    আদনান রেগে কথা গুলো বলল দোলাকে কে কিন্তু দোতলার চোখের জল দেখে নরম হয়ে গেল। এগিয়ে এসে দোলা মুখ উঁচু করে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,,
    “এমন পাগলামী আর কখনো করবে না বুঝেছিস?”
    আমি কিছু বলছি না চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
    কি হলো আমার কথা কানে যাচ্ছেনা এতক্ষণ তো মুখে কথার খৈ ফুটেছিল এখন চুপ করে আছিস কেন?”
    আমি অভিমান সুরে বললাম,, এতো এতো বকে এখন আবার দরদ দেখানো হচ্ছে। তোমাকে আমি বুঝতে পারিনা ভাইয়া একেক সময় একেক রুপ ধরো কেন?
    সেটা তুই বুঝতে পারবি না তোর মাথায় কি বুদ্ধিশুদ্ধি কিছুই নাই। বলে ভাই আমার মাথায় গাট্টা মারলো।
    যা এখন ঘুমিয়ে পড় কি হয়েছিস একবার আয়নায় নিজেকে দেখে যাস।
    না বাবা তার দরকার নাই আমার ভয় লাগে।
    ভিতুর ডিম একটা ভয় লাগে তাহলে এরকম সাজছিস কেন?

    রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে। ড্রেস চেঞ্জ করে গেছে মামনি র পাশে শুয়ে পড়লাম।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো(রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 7+8

    আজকে কলেজে এসে জানতে পারলাম ফাহাদ আমার সাথে দেখা করবে বলেছে। মেঘলার থেকে জানতে পারলাম ( ওইদিন দোলার ফ্রেন্ডদের নাম বলেছিলাম কিন্তু সেখানে মেঘলার নাম বলতে মনে ছিলো না সরি।আর দোলাকে নিয়ে পাঁচ জন ফ্রেন্ড বলেছিলাম। সেখানে হবে দোলাকে ছাড়াই ৫ জন ফ্রেন্ড মোট ছয় জন।)
    মেঘলা আমাকে বলল,, আজকে কলেজে ক্লাস শেষ করে ফাহাদের সাথে দেখা করতে সামনের একটা পার্কে যেতে।
    আমি রাজি ‌হয়ে গেলাম।
    “আচ্ছা কিন্তু বাসায় যাইতে তো লেট হয়ে যাবে।”
    মন খারাপ করে বললাম কারন বাসায় যেতে লেট হলে তো সবাই চিন্তা করবে!
    নেহা বলল,, হ্যাঁ তাও ঠিক।
    আমি আবার বললাম,,”আর তখন বলতে হইব কেন লেট করলাম? তখন কি বলব? আমার তো কখন গেট হয়না বাসায় যেতে। সব সময়‌ তো ক্লাস শেষ হলেই বাসায় চলে যায়।”
    মেঘলা বলল,,, তাহলে কি তুই যাবি না?
    আমি বললাম,, আমি তো যেতে চাই কিন্তু?
    মেঘলা তখন বলল,, আচ্ছা একটা কাজ করা যায়।
    সবাই বললাম কি? ও বলল,
    “আমরা তাহলে এক ক্লাস না করে চলে যায়। তারপর ক্লাস টাইম শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাসায় রওনা দেব। তাহলে আর এক্সট্রা টাইম লাগবে না সবাই ভাববে আমরা ক্লাস করে আসছি বাড়িতে।”
    মেঘলা কথাটা আমাদের সবার পছন্দ হলো।বাড়িতে আর কিছু মিথ্যা বলতে হবে না সময়মতো পৌঁছাতে পারবো।
    ক্লাস শেষ করে আমরা পায়ে হেঁটেই পার্কে চলে এলাম। কারন পার্ক খুব একটা দূরে না।
    অবশেষে আমার বয় ফ্রেন্ড হবে। ফাহাদ আজকে আমাকে প্রপোজ করবে সেটা আমি মেঘনা থেকে জানতে পেয়েছি।
    তবুও ভয় করছে বায় ইনি চান্জ যদি আমার চেনা জানা কেউ দেখে ফেলে তাহলে তো আমার খবর আছে।
    ভয়ে ভয়ে ওদের সাথে পার্কে ভেতরে ঢুকলাম।

    এদিকে
    আদনান একটা মিটিং করার জন্য ক্লায়েন্টের সাথে রেস্টুরেন্টে এসেছে। রেস্টুরেন্টটা আবার দোলার কলেজের পাশে ও ভেবেছে দোলার ক্লাশ শেষ হলে ওকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং শেষ করে দোলার কলেজের সামনে যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠে। কিন্তু আর আধাঘণ্টার টাইম আছে।এত সময় আগে গিয়ে কি করবো ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
    তাইও পাশে পার্কে আসে।
    কিন্তু কি মনে করে যেন পার্কে না গিয়ে পাশে লেকের পাড়ে যায় আদনান।
    লেকের পাড়ে এসে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। রোদের মাঝে হুড়মুড় করে বাতাস বইছে শরীরে। চোখে থেকে সানগ্লাস খুলে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে আদনান।
    হঠাৎ তার মন চাইছে এমন নিস্তব্ধ একটা জায়গায় ওর পাশে আর দোলা রানীকে চাই। যার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে। যার হাতে হাত রেখে কিনার ঘেঁষে হাঁটবে। দুজন দুজনের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবে। চোখে থাকবে না বলা অনেক ভালোবাসার কথা।
    এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আদনান।কিন্তু এত তাড়াতাড়ি মে দোলাকে ও নিজের করে পাবেনা আর না মনের কথা বলতে পারবে। কারণ তোমার বাবা-মা কি যে কথা দিয়েছে?দোলা এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে এইসব বিষয়ে জানানো যাবে। এখন ও দোলা অনেক ছেলে মানুষি, অবুজ, বাচ্চা। কিন্তু আমার মন তো এসব মানে না মন প্রাণ দিয়ে তো শুধু একজনকে ভালোবাসি যে আমার চোখের সামনে সব সময় থাকে তাকে দেখে যা আমার তৃষ্ণার্ত মনকে বাধা দিতে খুব কষ্ট হয়।
    আদনান লেগে দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল ওর চোখের সামনে দোলার হাসিমুখটা ভেসে উঠলো ডলার হাসিমুখ দেখে আদনানের ও ঠোট আলাদা হয়ে গেল। মুখে মুচকি হাঁসি ফুটে উঠলো।

    আদনান নানা কথা ভাবছিল তার সব কিছু ছিল দোলাকে ঘিরে ঠিক তখনই ওর চোখ যায় কিছুটা দুরে।
    কলেজ ড্রেস পরা কয়েকটা মেয়ে দাড়িয়ে হাসাহাসি করছে। একবার তাকিয়ে বুঝতে পারে এটা দোলার কলেজ ড্রেসের কালার তার মানে তো দোলার কলেজের শিক্ষার্থী। কিন্তু দোলাদের ক্লাসে এখনো শেষ হয় নাই এরা তো আগেই বের হয়েছে কেন?
    মাথা না ঘামিয়ে আদনান ফোন বের করে কাউকে ফোন দেওয়ার জন্য। ফোন করে আর এক ফ্রেন্ডকে?কথা বলতে বলতে একটু নড়াচড়া করতে লাগে তখনই ওর চোখে পরে দোলাকে আবসা একটু দেখেই থমকে যায়।
    কলের ওপাশ থেকে অর বন্ধ বলে যাচ্ছে,,,
    “কিরে আদনান আসবি আমার বিয়েতে?”
    আদান কথা বলছে না ও থমকে দাঁড়িয়ে আছে দোলাকে দেখলে মনে হয় তাড়াতাড়ি ঘুরে তাকায় সাইট থেকে দোলার মতোই লাগছে মেয়েটাকে।
    আদনান উৎসুক চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা বাম সাইড দেখতে পাচ্ছেন আদনান এতে স্পষ্ট দোলায় লাগছে।মেয়েটার সামনে একটা ছেলে গোলাপ হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। আর পাশে চার পাঁচটা মেয়ে কি যেন বলে হাসাহাসি করছে?
    কানের ওপাশ থেকে বলেই যাচ্ছে কথা,,,
    “আদনান ভাই তুই লাইনে আছিস তো কথা বলছিস না কেন আসবি না নাকি?'”
    আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি।আর কিছু বলল না আদনান ফোন কানে থেকে নামিয়ে ফোন পকেটে রেখে সামনে এগুতে লাগলো।যতই এগিয়ে যাচ্ছে তত স্পষ্ট হচ্ছে এই মেয়েটার কেউ না দোলা ছাড়া।
    রাগে ওর শরীর কাঁপছে।চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে চোখমুখ শক্ত গম্ভীর করে এগিয়ে যাচ্ছে।দোলা সেখানেই চোখের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারলে ওর শান্তি লাগতো। কলেজ বাদ দিয়ে এখানে প্রেমলীলা চলছে। গটগট পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে আদনান।

    দোলা ফাহাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর ফাহাদ ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। দোলা ফাহাদের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে যাচ্ছে।আর ফাহাদ লজ্জিত হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে।দোলা এবার মুখে হাত দিয়ে হাসতে পেট ফেটে যাচ্ছে হাসির চোটে। হাসবে না কেন পাশে ওর বান্ধবীরা ও হাসতেছে একমাত্র মেঘলা বাদে যত‌ই হোক মেঘলার ভাই বলে কথা,,
    আর আপনারা তো হাসির কারণটা জানেন না হাসির কারণ হচ্ছে ফাহাদ এর প্যান্টা অতিরিক্ত টাইট এর জন্য বসার সময় খুব কষ্টে বসেছে। চিপায় বসে ছেলেটা বড় কষ্টে আছে এই বসা নিয়ে কতই না কষ্ট করেছে।
    বসতে চেয়েছিল না কিন্তু আমাদের দোলা রানী তো আবার বসে নাই নায়কি স্টাইলে প্রপোজ না করলে একসেপ্ট করবে না।
    তাই বেচারা পড়েছে বে কায়দায়।

    অনেক কষ্টে দোলা নিজের হাসি থামাল তা ও নিজের ইচ্ছায় না মেঘলার ধমক এ।
    “কি হচ্ছে কি দোলা? তোরা সবাই ভাবে হাসলে আমার ভাইটার কি হবে বুঝতে পারছিস না। ওতো লজ্জায় মরে যাচ্ছে। আহারে বেচারা কেমন নিষ্পাপ হয়ে তাকিয়ে আছে তোদের একটু মায়া লাগছেনা। এমন করলে ও কি প্রপোজ করতে পারবে। তার চেয়ে বড় আমি ওকে বলি চলে যেতে তুই প্রেমট্রেম কিছু করবিনা। তাও ভাই এমন হাসিস না।”
    দোলার এখন এইটাই চাইছি।ও এই ছেলেটাকে একটু বয়ফ্রেন্ড বানাবে না।ডিসাইড করে নিয়েছে। বাবারে বাবা ছেলের কি স্টাইলবাবা এত টাইট কেন পড়বে যেটা পড়ে কারও সামনে ইজি ফিল করবে না।
    দোলা তাই হাসি থামালো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে এখন। মেঘলা ভেবেছে হয়তো এখন আর হাসবে না। প্রপোজ এখন হবে।
    কিন্তু দোলা করল কি?
    “এই যে ফাহাদ না টাহাদ দাড়ান দেখি?”
    ফাহাদ দোলায় এইভাবে কথা বলায় ভরকে গেল। ছোট ছোট করে দোলার দিকে তাকিয়ে আছে।
    “কি হলো মশাই এভাবে বসে আছেন কেন আপনি তো খুবই কষ্টে আছেন কখন না যেন আবার ছিড়ে যাবে।
    তখন তো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে তারচেয়ে বরং দাঁড়ান। ওইসব কেলেঙ্কারি হলে কিন্তু বাসায় পৌঁছাতে পারবেন না।”
    ফাহাদ হুড়মুড় করে দাঁড়িয়ে গেল।
    তারপর আমতা আমতা করে বলল,,”আপনি তো ওইভাবে প্রপোজ না করলে একসেপ্ট করবেন না এখন…
    দোলা ফাহাদকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল,,,,”থাক ভাই তোমাকে আর আমাকে এভাবে প্রপোজ করতে হবেনা আমার প্রেম করার সাধ মিটে গেছে। তুমি এবার ফটো।”
    মেঘলা তাড়াতাড়ি ওর কানে কানে বলে কি সব বলছিস?
    দোলা বললো,,,” ঠিকই বলছি আমি এই হাদারামের সাথে প্রেম করব না। আমার এমন হবে না আমার তো হ্যান্ডসাম কিউটি বয় লাগবে। আর তুই কিনা আমার জন্য একটা হাঁদারাম জুটালি।”
    মেঘলা রেগে বলে তুই আমার ভাইকে একদম হাদারাম বলবি না।
    “অফ তোর কি নিজের ভাই এত ভাই করছিস কেন? তোর নিজের ভাই হলে ভেবে দেখতাম হাঁদারাম হলেও হতো। কিন্তু এটাকে নিতে পারবো জানু। নিজের ভাইয়া কিসের চাচতো ভাই নিয়ে এসেছিস বলদ একটা ওর সাথে কিনা আমি প্রেম করবো? ইম্পসিবল দোস্ত!”

    মেঘলা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে দোলা এগিয়ে ফাহাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,,”এইযে আপনার হাতের ফর্সা দিয়ে জান আমার না খুব পছন্দ! প্রপোজ করলে তো আমি পেতাম আমার জন্যএনেছিলেন প্রপোজ করতে না পারলেও বোন হিসেবে দিয়ে যান।
    ছেলেটা সত্যি দোলার দিকে ফুলটা বাড়িয়ে দিতে যাবে তখনি,,,
    আদনান দ্রুতগতিতে এসে দোলার হাত শক্ত করে ধরে ফাহাদের সামনে থেকে সরিয়ে নেয়। আচমকা কেউ শক্ত করে হাত ধরায় দোলা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আদনানকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আদনানকে দেখে ওর চোখে এত বড় হয়েছে যেন চোখ বের হয়ে আসবে। হতভম্ব হয়ে গেছে,, আদনান ভাই এখানে কোথা থেকে আসলো?
    আমার সমস্ত চিন্তা ধারণা শূন্য হয়ে গেল। ভাইয়াকে দেখে আমি বুদ্ধি শূন্য হয়ে গেছি একবার ফাহাদের দিকে তাকিয়ে ভাইয়া দিকে তাকাচ্ছি ভাইয়া কঠিন চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ভাইয়া মুখের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলছি। আজ আমার কপালে কিছু নিয়ে যাচ্ছে আল্লাহ জানে্ ভাইয়া এখানে কি করে চলে এলো?

    আমার মুখে ভয়ের রেস বেড়ে গেছে। ভয়ে আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি‌। ভাইয়া হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে আমার ব্যাথা লাগছে কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না। ভাইয়ার কঠিন চোখ মুখ দেখে আমার ভেতর টা ভয়ে শেষ। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে আমি শুকনো ঢোক গিলে নিলাম। জ্বিবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,,
    “ভাইইইয়া তুওওওমি এখানে কি করছছছছো?”
    ভাইয়া আমার কথায় প্রেক্ষিতে কিছু বললো না চোখ সরিয়ে ফাহাদ ও আমার বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে আমাকে বলল,,
    ” তুই এখানে কি করছিস দোলা? তোর তো এখন ও ক্লাস হচ্ছে।”
    আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না ভয় পাচ্ছি খুব।
    “কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন? এখানে কি করছিস?”
    আমি আমতা আমতা করছি।
    এবার ভাইয়া চিৎকার করে উঠল,,,
    ” কথা বল কি করছিস এখানে? আনসার মি।”
    ভাইয়ার কথা শুনে আমি কেঁপে উঠলাম।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 8

    ভাইয়া চিৎকারে তো আমার দফারফা। আমি চোখ বন্ধ করে কাপাকাপি করছি ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে শুধু। আচমকা ভাইয়া থেমে গেল। আর কিছু জিজ্ঞেস না করে শান্তভাবে ফাহাদের দিকে তাকালাম তারপর আমার হাত ছেড়ে দিলো।
    আমি ভেবেছিলাম ভাইয়ের সবার সামনে অনেক সিনক্রিয়েট করবে কিন্তু তেমন কিছুই হলো না খুব ভদ্রভাবে আমাকে জিজ্ঞেস করল,,,
    “এই ছেলেটাকে?”
    আমি হকচকিয়ে গেলাম ভাইয়ের কথায়। আমতা আমতা করছি আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কি বলব ভাবছি?
    “কি হল ভয় পাচ্ছিস কেন বল তোরা ক্লাস মিস দিয়েছিস কেন? ছেলেটা কি তাদের সাথে পরে।দেখে তো সেম ইয়ার মনে হচ্ছেনা। বড় লাগছে। সমস্যা নাই অনেকে ফেল করে এক ক্লাসের অনেকদিন পরে থাকে। তাই হতেই পারে।”
    আমি ভাইয়ার কথা শুনে ভয়ের মাঝেও হুহু করে হেসে উঠলাম।ভাই আমার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে তার চোখ-মুখ বিরক্ত স্পষ্ট। চোখ লাল হয়েছে তার মানে এখনো রেগে আছে। কিন্তু ভাইয়া রাগ দেখাচ্ছে না। ‌আমি ভাইয়ার রাগী মুখ দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম।
    আমি নিজের হাসি থামিয়ে বললাম,,
    “উনি তো আমাদের সাথে পড়েনা ভাইয়া। উনি আমাদের বড়।”
    তাহলে উনি এখানে কি করছে? আর তোরাই বা কি করছিস?
    আমি কিছু বলার আগে মেঘলা বলে উঠলো,,,
    “ভাইয়া দোলা কে কিছু বলবেন না প্লিজ। এটা আমার ভাই আমি ওদের জোর করে নিয়ে এসেছে ভাইয়ের সাথে দেখা করতে।”
    মাথা নিচু করে বসে পড়ে মেঘলা কথাটা বললো।
    “তোমার ভাই?”
    “জি ভাইয়া।”
    “তা তোমার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে বাড়িতে না গিয়ে এখানে এসেছ কেন?”
    মেঘলা পরলো বিপাকে এখন কি বলবে?
    “আসলে ভাইয়া আমাদের আজকে ট্রিট দিবে এজন্য ভাইয়া তো। মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে সেজন্য।”
    “ট্রিট দিবে? না খেয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
    “আমরা তো যাবো কিন্তু তার আগে ভাবছিলাম এই খানে একটু ঘুরে যায়। কি গরম পড়েছে আজকে?”
    গরম গরম ভাব করে বললাম মেঘলা।
    “এবার আদনান ফুলটা দেখালো এই ফুলটা কিসের জন্য।”
    এতক্ষণ যা ও মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে ম্যানেজ করতে গিয়েছিল ওরা। এখন সব-গুলাই চোখ বড় বড় করে ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে আমিও।

    আমি বাম হাতে আঙুল কামড়াচ্ছে আর ভাবছি! কি বলবো? কি বলবো? এখন ফাহাদ যদি ভাইয়াকে বলে দেয়! আমাকে প্রপোজ করতে এসেছে। তাহলে তো ভাইয়া আমাকে মেরেই ফেলবে।
    “আহসান মি। ফুল কিসের জন্য? আর ফুলটা দোলাকেই কেন দেওয়া হচ্ছিল। প্রপোজ এর মত করে।”
    ভাইয়ার কথা শুনে আমার কাশি উঠে গেল। তখনই আমি বলে বসলাম,,,
    “আসলে ভাইয়া এই যে ফাহাদ ভাই কে দেখছো না। উনি আমাদের নেহাকে পছন্দ করে তাই নিহাকে প্রপোজ করতে আসছে। আমাদের ট্রিট দিবে প্লাস নেহা কে প্রপোজ করবে।আর তুমি তো জানো আমার ফুল কত প্রিয় ওনার হাতে একটা ফুল ছিল সেটা দেখে আমি ওইটা নেওয়ার জন্য পাগল করে ফেলি তাই ভাইয়া বাধ্য হয়ে ফুল আমাকে দিচ্ছিলো।”
    এক দুমে বানাই বানাই এক্ষুনি মিথ্যা কথা বলে ফেললাম ভাইয়াকে।
    ভাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে প্লাস ফাহাদ আমার শাঁকচুন্নি ফ্রেন্ড গুলো।
    আমি কথাগুলো বলে নেহার দিকে একবার তাকালাম ও খেপা বাঘিনীর মত করে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়ে গিলে খাবে।
    ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি ভাইয়া মনের কথাটি বিশ্বাস করেছে তার চোখের রাগ লাগছে না কিন্তু বিরক্ত।
    বিরক্ত হয়ে বলল,,,
    “এখানেও পাগলামো করা শুরু করে দিয়েছিস।আর উনি যে নেহাকে প্রপোজ করবে লাইক করে এটা তো আমাকে মেঘলা বলল না।”
    আমি মেঘলার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,,
    “ও তো ভয় পেয়েছে এইসব জানলে তুমি যদি বকো।”

    মেঘলা দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল ভাইয়া । মেঘলা তো আমার দিকে শুধু কঠিন মুখ করে তাকাচ্ছে
    তাই আমি সামাল দেওয়ার জন্যই কথাটা বললাম।
    অবশেষে সব ঝামেলা মিটলো। ভাই আমার কথা বিশ্বাস করে নিয়েছে। নেহা তো লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।আর আমি কাচুমাচু মুখ করে সবার দিকে তাকাচ্ছি ফাহাদের দিকে তাকিয়ে দেখি সে চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ রাঙিয়ে দিলাম ফাহাদ কে যাতে ভুল করেও ভাইয়াকে সত্যিটা না বলে আর এই গাধাকে তো আমি আমার বয়ফ্রেন্ড বানাবে না অযথা ঝামেলা করে কি লাভ?
    কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নেহা ও যে আমাকে কি করবে? থাক সেসব পরে ভাবা যাবে।
    ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
    “চল বাসায় চল এখন?”
    আমি বললাম আচ্ছা চলো।
    এখন আর ঝামেলা করে লাভ নাই বাসায় যেতে পারলেই বাঁচি এখানে থাকলে কখন কি ঘটে যায়।
    ভাইয়া আমার হাতে ফাহাদের সামনে গিয়ে বলল,,
    “সরি ব্রো আমার মিষ্টেক হয়ে গেছে। তোমার হাত থেকে দোলার হাতে ফুল দেওয়া টা দেখে আমি অন্যটা ভেবে ফেলেছিলাম। দোলাকে বাদে অন্য যাকে খুশি তাকে ফুল দাও আই ডোন্ট কেয়ার।”
    আমি একটু দুরে আর ফাহাদ আমার থেকে একটু দূরে ছিল। তাই ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে কি যেন বলতে লাগল আমি কিছুই শুনছি না।দূরে দাঁড়িয়ে কান খাড়া করে সেদিকে তাকিয়ে আছে আর ভয় ভয় পাচ্ছি যদি কিছু বলে দেয় ভাইয়াকে।
    ওই হাঁদারাম ফাহাদ টা।
    কিছু শুনছে না তাই অধৈর্য হয়ে সে দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে আমাকে নেহা টেনে ধরল। আমি আর যেতে পারলাম না নেহা খেপা বাঘিনীর মত আমার হাত ধরে আমাকে ফিসফিস করে বকতে লাগল।
    চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে যেন। কিন্তু সেদিকে আমার খেয়াল নাই আমিতো খালি ফাদার আর আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
    “তুই এটা কি বললি দোলা। এভাবে তুই আমাকে ফাঁসিয়ে দিলি।”
    “ওফ সার তো ঐদিকে কি কথা হচ্ছে বুঝতে পারছি না আর তুই এসে ঝামেলা করছিস।”
    “করব একশ বার করব তুই কেন এই মিথ্যে কথাটা বললি। আদনান ভাইয়ের সামনে আমার মান-সম্মান এভাবে ডুবালি।”

    নেহা সর-লোই না আর ওদিকের কথা শেষ হবে আদনান ভাই আমাদের দিকে তাকাতেই আমি নেহার হাতে চিমটি কাটলাম।
    নেহা কিছু বলবে আমি ফিসফিস করে বললাম,,, চুপ করবি শয়তানি বান্দরনি ভাই আসতেছে।”
    আদনান ভাইয়ের কথা শুনে নেহা চুপ করে গেল নেহা।

    নেহা আমাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো আদনান ভাই এসে সবার দিকে তাকাতে সবাই কাচুমাচু করতে লাগলো। ভাইয়া সবাইকে বাই বলে আমাকে নিয়ে ছুটতে লাগলো।
    গাড়িতে বসে আছি।
    ভাইয়া এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,”তুই আমাকে মিথ্যে বলিস নি তো আবার।”
    ভাইয়ার কথা শুনে আমার হেঁচকি উঠে গেল।
    আমি হেঁচকি দিচ্ছি দেখে ভাইয়া তাড়াতাড়ি গাড়ির পেছন থেকে ওয়াটার এনে আমার হাতে দিলো।
    আমি কি চোখ গোল গোল করে বললাম।
    মিথ্যা কেন বলব ভাইয়া?
    ভাই আবার বলল,, আচ্ছা ঠিক আছে ক্লাস আর কখনো মিস দিবি না। ওকে।
    আমি মাথা নেড়ে হ্যা জানালাম।
    ভাই আমাকে নিয়ে বাসায় না এসে রেস্টুরেন্ট আসলো।
    এখানে কেন?
    কথা না বলে চুপচাপ চল।
    বাসা নাকি এখানে কেন আসলে ভাইয়া?
    অন্যের কাছে টিট কেন চাস। যত ইচ্ছে আমার কাছে বলবি আমি খাওয়াবো।

    আর ওই তো আমি চাইছি না কেউ এটা তো মেঘলা চাইছিল।
    ভাইয়া কিছু বললো না ভেতরে আমরা রেস্টুরেন্টে একটা কেবিনে বসলাম।ভাইয়া বিরিয়ানি অর্ডার দিল ভাইয়া জানে আমার বিরিয়ানি ফেভারিট।
    আসে তো একটু সময় লাগবে বোরিং হয়ে গেল হাত দিয়ে বসে আছি আর চিন্তা করছি ওইখানে কী হচ্ছে কে জানে?
    আচমকা ভাইয়া বলে উঠলো,,,
    এত কি চিন্তা করছিস? তোর মুখ দেখে মনে হচ্ছে তুই আমাকে মিথ্যা বলছিস।
    ভাইয়ের কথা শুনে আমি হকচকিয়ে গেলাম। গালে থেকে হাত নামিয়ে সোজা হয়ে হাসি হাসি মুখ করে বসলাম। জোর করে কি আর হাসা যায় তো দাঁত বের করে রাখলাম।
    ভাই আমার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে থেকে ফোন টিপতে লাগল।

    15 মিনিট পর খাবার এলো আবার দেখি আবার খিদা বেড়ে গেল সমস্ত চিন্তা এক পাশে ফেলে খাওয়ার মনোযোগ দিলাম।
    এক লোকমা হাসি হাসি হাসি মুখ করে মুখে দিতেই। চোখ গোল গোল করা অবস্থা হল আমার। আমার চোখে ইয়া বড় হয়ে গেল আমি খাবার মুখে না দিয়ে থ মেরে আছি।
    আমার এত অবাক হওয়ার কাহিনী কথা শুনবেন নাকি।
    আমার সামনে একটা মেয়ে আসলো আর ফট করে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল।
    মেয়েটাকে আমি চিনি না মেয়েটা আসতে ভাইয়া চরম অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পরল আর মেয়েটা কিছু না বলেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরল।আমি হাঁ করে একবার ভাইয়া দিকে তাকাবার মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটাকে জীবনে দেখেছি বলে আমার মনে পড়ে না। ফর্সা করে একটা মেয়ে চুলগুলো জুটি করে রেখেছে। পরনে একটা হাঁটু অব্দি প্লাজো আর একটা সাদা নীল ফতোয়া তার হাতা নেই।মেয়েটা এমন ড্রেস পরে আছে দেখে আমি হতভম্ব।
    ড্রেসটা খুবই বাজে আমিও ছোট ড্রেস পড়ি তাই বলে এমন শরীরের দিক বের করে রাখি না। আর মেয়েটার বয়স ভালোই লাগছে কিন্তু খুবই সুন্দরী।ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি একটু বিরক্তি মাখা মুখ করে আছে। মেয়েটা এবার ভাই আগে ছাড়লো।
    “অফ আদনান তোকে ফোন করতে-করতে আমি পাগল হয়ে গেছি সকাল থেকে।”
    এবার ভাইয়া বলল,,,”তিথি তুই কোথা থেকে এলি?”
    মেয়েটা,,, “কোথা থেকে আর আসবো সিলেট থেকে এসেছি আজ কে? ভাবছি কিছুদিন এখানে বেরিয়ে যায়!ঢাকায় এসে পৌঁছেছি একঘন্টা আসার পর থেকে তোকে কল করছি তুই তো ফোন রিসিভ করছিস না এজন্য হতাশ হয়ে এখানে আসলাম প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।”
    “তা আসার আগে জানিয়ে আসবি না কোথায় উঠেছিস?”
    “আর কোথায় উঠা উঠি ভাবছি একটা হোটেলে উঠবো কিছুই তো চিনি না। তাই তোকে কল করলাম।”
    “ও আচ্ছা আয় এখানে বস খা। আর হোটেলের তোর থাকতে হবে না। তুই আমাদের বাসায় থাকতে পারিস।”
    “রিয়েলি আদনান!”
    উজ্জ্বল মুখ করে বলল মেয়েটা।
    হ্যাঁ।
    এবার তাদের নজর আমার দিকে ঘুরল মেয়েটার জিজ্ঞেস করলো আমি কে?
    আদনান বলল কাজিন।
    মেয়েটা কেমন কেমন করে যেন আমার দিকে তাকাল পা থেকে মাথা অব্দি দেখে তারপর আদনান ভাইয়ের পাশের সিটে বসে পড়ল।
    আমি বসে খায় মনোযোগ দিলাম আর তারা দুটোই বলতে হায়রে হাসাহাসি কথা।আদনান ভাই যে এতো হাসাহাসি করতে পারে জীবনে জানতাম না। আদনান ভাই আর ওই মেয়েটা হাসাহাসি করতে লাগল।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো(রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 9+10

    আমি চোখ গোল গোল করে একটু পর পর ওই মেয়েটা আর আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছি। হঠাৎ মেয়েটা আধিক্ষেতা করে আদনান ভাইকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য হাত তুলল। সেটা দেখে আমার চোখ ইয়া বড় বড় হয়ে গেল।
    মেয়েটার হাবভাব বলে দিচ্ছে মেয়ে আদনান ভাইকে পছন্দ করে। আচ্ছা ভাইয়া ও কি করে।
    আচ্ছা ওদের মাঝে কি প্রেমের সম্পর্ক আছে।
    ভাবনার মাঝে খাচ্ছিলাম। আর বিপত্তি ঘটল খাবার গলায় আটকে গেল। আমি খুক খুক করে কেশে উঠলাম।
    আমার কাশি দেখে ভাইয়া আমার দিকে তাকালো।
    এই ভাবে কাশতে দেখে হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে দাঁড়িয়ে পানি দিলো।
    পানি খেয়ে কাশি থামলো কিন্তু চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে।‌ আমি পানি মুছলাম একহাতে ভাইয়া কর্কশ গলায় বললো,,,
    ” কোন ধ্যানে থাকিস খাবার গলায় আটকায় কিভাবে?”
    আমি মাথা উঁচু করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে তাঁরপর আবার মাথা নিচু করে পিলেটের দিকে তাকায়।
    ভাইয়া রেগে বলল,,” কি হলো উওর দিচ্ছিস না কেন?”
    আমি বললাম,,” আমি কিছু ভাবছিলাম না। আমি তো তোমাদের দেখছি….
    এইটুকু বলেই জ্বিভে কামড় দিলাম। কি বলে ফেললাম….
    ভাইয়া ও তিথি মেয়েটা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তিথী মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে খাবারে হাত দিলাম ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি না তাকাবো না ভাবছি‌।
    ভাইয়া অবাক করা কন্ঠে বলল,,” কি বললি?”
    আমি খাবার মুখে দিয়ে দিলাম তারপর তাকালাম মুখে হাসি ফুটিয়ে কথা বলার ট্রাই করলাম। কিন্তু আমি জানি এখন ভাইয়া আমাকে একটা ধমক দিয়ে বলবে,, ” ইডিয়েট খাবার মুখে দিয়ে অমন করছিস কেন? এখন কথা বলে আর ঝামেলা বাড়াতে হবে না।”
    ভাইয়া গিয়ে বসে পরলো। আমি খেতে লাগলাম।

    আদনান নিজের সিটে বসতেই তিথি বলল,,,
    ” বেশি ন্যাকা তোর বোন। এতো বড় মেয়ে তার আবার খাবার গলায় আটকায়।”
    তিথির কথা শুনে আদনান রেগে ওর দিকে তাকালো,,
    “কিরে আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?
    “দোলাকে নিয়ে বাজে কথা যেন তোর মুখে না শুনি।”
    গম্ভীর হয়ে বলল আদনান। তিথি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,,” দোলাটা আবার কে?”
    একটু জোরেই বলেছে কথাটা তিথি তাই আমি খাওয়ার সময় শুনতে পাই আর মুখে বিরিয়ানি নিয়ে তার দিকে তাকায়।
    আমার নাম নিলো কেন মেয়েটা আমাকে নিয়ে কি কথা বলছ?
    মেয়েটা আদনান এর দিকে ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে।
    আমি খাবার শেষ করে বললাম,,, ” আমার না দোলা কেন কি হয়েছে?”
    আমার কথা শুনে তিথি ও সাথে আদনান ভাই আমার দিকে তাকালো।
    তিথি কিছু বলবে আদনান বলল,,,” কিছু না। তুই চুপচাপ খা। কথা না বলে।”
    আমি তাকিয়ে র‌ইলাম তাও আমাকে নিয়ে কি বলছে জানতে কিন্তু আর কিছু বলছে না‌। তাই খাওয়ায় মন দিলাম।

    তিথি আদনান কে বলল,, ওই মেয়েটার নাম দোলা।
    কেমন করে যেন দোলার দিকে তাকিয়ে বলল। আদনান কিছু বলছেনা।
    তিথি এই সব কথা বাদ দিয়ে বলল,,” তুই আমার হাতে খেলি না কেন আদনান।”
    আদনান শক্ত মুখ করে বলল,,” তুই ভালো করেই জানিস আমার এসব পছন্দ না। দেখা হতেই পুরো রেস্টুরেন্টে এর সবার সামনে জরিয়ে ধরলি। আবার এখন খাবার দিচ্ছিস হোয়াই এইসব আমি লাইক করি না। তাই এসব করা থেকে বিরত থাকবি। তুই আমার ফ্রেন্ড বলে কিছু বললাম না নেক্সট টাইম ফ্রেন্ড বলে ছেরে দেব না‌।”
    তিথি অভিমান করে বলল,,” তুই আমাকে বকছিস আদনান। আমি তো তোকে এতদিন পর দেখে একটু ইমোশনাল হয়ে এসব করছি‌। আর তুই তো জানিস আমি তোর প্রতি দূর্বল।”
    আদনান ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,
    ” তুই ভাড়া বাসায় ই থাক।”
    কথাটা শুনে তিথির পিল চমকে উঠলো,,
    ” না না প্লিজ। আমি তোর বাসায় থাকবো!”
    “না তোকে সুবিধার লাগছে না। আবার যদি ঝামেলা করিস।”
    তিথি মুখটা একটু খানি করে বলল,,
    ” এই ভাবে বলতে পারলি। আমি এমন করবো আমাকে ফ্রেন্ড ও ভাবিস না।”
    ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে লাগল।

    আদনান আর না করতে পারলো না।
    রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে আসলাম ওই তিথি টা আদনান ভাইয়ের সাথে বসে পরলো হাসি মুখ করে দাঁত কেলিয়ে।
    আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে পেছনে বসে পরলাম।
    সারা রাস্তা তাদের কৃতি দেখতে দেখতে। মেয়েটা কি যে গায়ে পড়া ভাবতে পারবে না কেউ নির্লজ্জ ও লাগছে এমন বেহায়া মেয়ে কিনা ভাইয়ার ফ্রেন্ড।
    আমি নিজের বাসায় চলে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে সোজা।
    বাসায় এসে আর কিছু খেলাম না খাবার তো খেয়েই আসছি। রুমে এসে গোসল করেই দিলাম এক ঘুম।
    ঘুম থেকে উঠলাম পাঁচটায়।
    উঠে আমি চোখে মুখে পানি দিয়ে মাঠে গেলাম।
    ভাইয়ার না সত্তেও। আসলে আজ খেলবো না ভেবেছি ঘুরবো।
    আমি মাঠে যেতেই সব বাচ্চারা লাফিয়ে উঠলো আর দৌড়ে আমার কাছে আসলো। খুশিতে নাচছে সব কটা আমাকে দেখে খুশি হয়েছে। নাফিস, এসেই বলল,,
    “আপু তুমি এসেছো তোমাকে এই কদিন কতো মিস করেছি জানো।”
    আমি ওর গাল টেনে দিয়ে বললাম,,,”তাই নাকি। আগে তো বলতি আমি না আসলেই ভালো এখন এতো মিস করেছিস কেন?”
    নাফিস মুখটা ছোট করে বলল,,” সরি আপু আসলে তোমার সাথে পারতাম না এজন্য বলতাম কিন্তু মন থেকে তোমাকে আমরা সবাই অনেক বেশি ভালোবাসি। তোমাকে সবাই অনেক মিস করেছি তুমি চলে এসেছো আমরা খুব খুশি হয়েছি। খেলবে না আমাদের সাথে।”
    আমি বললাম,,” না রে খেলা বারণ আছে ।”
    “কেন আপু কে বারন করেছে।”
    *আছে।”
    “তাহলে কি আর খেলবে না আমাদের সাথে।
    আমি তৈ খেলতে তাই কিন্তু সে জানলে যে আমাকে বকবে।”

    “কে তোমাকে বকবে বলো। ”
    তোরা যেনে কি করবি?
    আমরা তাকে সবাই মিলে বকবো।
    তাই, এসব করতে হবে না। আমরা ইচ্ছা হলেই চলে আসবো খেলতে। নো প্রবলেম! আমি কারো কথা শুনার মেয়ে নাকি আজ আমার‌ই খেলতে ইচ্ছে করছে না তোরা খেল আমি দেখি‌।”
    ওরা আচ্ছা বলে চলে গেল।আমি কিছু ক্ষন থেকে চলে এলাম বাসায় না গিয়ে কি মনে করে যেন আদনান ভাইয়ের বাসায় গেলাম।
    ওই তিথি মেয়েটা করছে কি দেখতে।

    কলিং বেল চাপতে মামনি না এসে রুশা আসলো।
    রুশা এই বাসায় কাজ করে আমাকে দেখেই একটা হাসি দিলো তারপর বলল,,
    ” আপা আমনে আইছেন। আমনের লগে আমার কতা আছে।”
    আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,,” আমার সাথে তোর কি কথা?”
    (রুশা আমার থেকে তিন বছর এর বড়।ওর মা এই বাসায় কাজ করে। সেই সূত্রে ও ও করে মাঝে মাঝে)
    রুশা মুখটা বিকৃত করে মাথা আমার দিকে এনে ফিসফিস করে বলল,,,” হুনেন তায়লে আইজকা না একতা মাইয়া নিয়া আইছে ছোট স্যার। মাইয়াডা কি যে অসভ্য। কি বিচ্ছিরি জামা কাপড় পরছে পাওডা পুরা খালি। আর আইয়াই খালি ছোট স্যারের পেছনে ঘুরঘুর করছে।স্যার বিরক্ত হলেও হুনে না। বড় মা তো মাইয়া দেইখাই আদনান ভাইজান রে ডাইকা বকছে। ইমন খারাপ মাইয়া বাড়ি আনছে দেইখা‌।”
    আমি ওর কথা শুনে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছি। তারপর রুশা কে চুপ করিয়া ভেতরে গেলাম ও শুরু করলে আর শেষ করে না‌।

    মামনি নাকি ঘুম তাই আর তার কাছে গেলাম না। সোজা ওই তিথির রুমে গেলাম। কারন রুশার থেকে জানতে পেরেছি আদনান ভাই নাকি নিজের রুমে থেকে ওই মেয়েকে বের করে ঘুমিয়েছে। তিথির রুমে ফাঁকা ভ্রু কুঁচকে আদনান ভাইয়েরুমে এলাম। আদনান ভাইয়ের রুমে গিয়ে আমার চোখ চরক গাছ।

    (আজকে আগেই গল্প দিলাম তার জন্য কিন্তু আমি আপনাদের কাছে ধন্যবাদ পাই। আর কালকে দিতে লেট হতে পারে আর নাও দিতে পারি ধন্যবাদ সবাইকে।কাল আমি একটু বিজি থাকবো।)

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 10

    আদনান ভাইয়া নিজের বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।আর ওই তিথী মেয়েটার ভাইয়ার পাশে বসে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। তারপর ভেতরে ঢুকলাম।আমার ঢুকার আওয়াজ পেয়ে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল তিথী মনে হলে চমকে পেছনে তাকালো।
    আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি তিথির দিকে।
    তু—মি ?
    তোতলাতে তোতলাতে বললো তিথী‌।
    আমি বললাম,,”হুম আমি। আপনি এখানে কি করছেন?”
    সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বললাম।
    আমার কথায় তারাতাড়ি আমার কাছে এলো আর ফিসফিস করে বলল,,”আস বাইরে কথা বলি আদনান জেগে যাবে।”
    ওনার মুখে ভয় স্পট আমি দেখতে পাচ্ছি।
    ওনার ভয় আমি ধরতে পারলাম ভাইয়া জেগে গেল কিনা দেখে ভয়। আমি এখন ভাইয়া কে জাগানোর ইচ্ছে পুষন করলাম।
    “বাইরে কেন যাব মা বলার এইখানে বলুন।”
    আর হাত ধরে ফেললো। তিথির হাতে কাঁপছে।
    “এতো জোরে কথা কেন বলছো?”
    “ভাইয়া তো ঘুম আপনি তাহলে একা জেগে কি করছিলেন?”
    আরে চলো তো।
    বলেই আমাকে টেনে বাইরে আনতে গেল।

    আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি কিন্তু ভাইয়াকে জাগিয়েই ছারবো।
    তাই চিৎকার করে বললাম,,,
    “আরে আপু আমার হাত ছার না।এভাবে টানছো কেন ?”
    আমার কাজ সম্পূর্ণ হলো ভাইয়া জেগে গেল।
    ভাইয়া ধরফরিয়ে উঠে বসলো আর আমার হাত শক্ত করে ধরে তিথি বাইরে নিয়ে যাচ্ছে দেখলো।
    এটা দেখে ভাইয়া হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না।
    তাই তিথি কে ডেকে উঠলো,,
    “হোয়াট হ্যাপেনস তিথী কি হয়েছে এভাবে টানছিস কেন দোলাকে।ছার ওকে”
    বলে বিছানায় থেকে উঠে দাড়ালো‌।
    তিথি আদনান ভাইয়ার কথা শুনে ভয়ে আমার হাত ছেড়ে দিলো আর চমকে পেছনে তাকালো।
    আদনান ভাই এগ এগিয়ে এসে বলল,,
    “কি হয়েছে? তোরা আমার রুমে কি করছিস ?”
    আমি কিছু বলার আগেই তিথি মেয়েটা বলল,,
    “আদনান আমি নিচে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম দোলা তোর রুমে আসছে তাই ওকে বারন করলাম যাতে না আসে। তুই তো কাউকে তোর ঘুমে ডিস্টাব করতে মানা করছিলি তাই‌। কিন্তু দোলা আমার কথা শুনলো না জোর করে চলে এলো তাই ওকে টেনে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিলাম।”

    আমি তিথির কথা শুনে হতদম্ব সাথে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। হা করে তাকিয়ে আছি তিথির দিকে চোখ সরিয়ে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকালাম ভাইয়া ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
    তিথি শয়তানি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
    কি অসভ্য খারাপ মেয়ে বাবা কি মিথ্যা টাই না বলল‌। নিজের দোষ আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছে।
    আমি কটমট করে তাকিয়ে আছি‌।
    “আচ্ছা তুই যা।”
    আদনান ভাই তিথি কে চলে যেতে বলল।
    আমি তখন বললাম,,,” ও তো মিথ্যা বলতে ভাই আমি না ওই তো…
    ভাইয়া আমাকে হাতের ইশারায় চুপ করতে বলে তিথি কে যেতে বলল,
    “কি হলো যেতে বললাম তো।”
    তিথি আমার দিকে শয়তানি হাসি দিয়ে চলে গেল।

    তিথি বাইরে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচলো। অফ বানিয়ে মিথ্যা বলে আমার দোষ ওই দোলার ঘাড়ে দিয়েছি। ভালোই হয়েছে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আদনান দোলাকে ভালোবাসে। এই কি সেই মেয়ে তার জন্য আমার প্রপোজাল রিজেক্ট করেছিল।
    তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে আমাকে তো কিছু করতেই হবে। আর প্রথম দিন সবাই আমাকে খারাপ ভাবলো নো প্রবলেম বাসায় একবার ঢুকেছি এতো সহজে বের হবো না সবাইকে
    কি করে বাঘে আনতে হয় খুব ভালো করে জানি আমি।
    ভাবতে ভাবতে রুমে চলে এলো তিথি।

    এদিকে আদনান ভাইয়া আমার দিকে কঠিন মুখ করে তাকিয়ে আছে।আমি সব বলার জন্য বসে আছি।
    যেই মুখ খুলতে যাব ভাইয়া আমার একদম কাছে চলে এলো।আমি ভয়ে পিছিয়ে গেলাম।আর বললাম,,
    “তুমি ওর কথা বিলিভ করছো ? আমি না ওই তো তোমার রুমে ছিলো আর সেটা আমি দেখেছি।ও সব মিথ্যা বলেছে।”
    ভাইয়া যেন কথা শুনলোই না আমার দিকে আস্তে লাগলো।
    আমি ভয় পেয়ে পেছাতে পেছাতে আলমারির সাথে ঢেকে গেলাম। কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া আমার কাছে এসে এক হাত আমার পাশে রেখে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
    তাই আমি কিছু বলবো তার ভাই আগে বলল,,,
    “তুই সত্যি বললি আমি কেন বিশ্বাস করবো।”
    “আমার থেকে ওই মেয়েটাকে তুমি বেশি বিলিভ করো।”
    “তোর থেকে ওকে বিশ্বাস করাও ভালো।”
    আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া একদম আমাকে টাচ করেনি একদম কাছে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কোথায় ও টাচ করেনা‌।
    “তা তো করবেই গার্লফ্রেন্ড বলে কথা‌।”

    আমার কথা ভাইয়া ভ্রু কুঁচকালো।
    “মানে।”
    “তিথি তোমার গার্লফ্রেন্ড আমি জানি।”
    ভাইয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
    “তোমার গার্লফ্রেন্ড এতো মিথ্যা বলে কেন? আর ভয় ও পায় ভালো। কীভাবে নিজের দোষ আমার উপর চাপিয়ে চলে গেল।”
    “তুই ও তো মিথ্যা বলিস ?”
    ভাইয়ার নরম কন্ঠ কিন্তু চোখ মুখে অসম্ভব রাগ।
    আচমকা কথায় থমকে গেলাম। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আছে।
    “আমি কি মিথ্যা বলেছি?”
    কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম।
    “ফাহাদ নেহাকে না তোকে প্রপোজ করতে এসেছিল।”
    ভাইয়া কথা শুনে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। বড় বড় চোখ করে ভাইয়ার দিকে ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি।

    ভাইয়া আবার বলল,,” আমি মিথ্যা বলতে মানা করেছিলাম।তোর সম্পর্কে সব কিছু আমার জানা। তুই কি করিস না করিস সব আমার জানা আছে।”
    আমি ভয়ে কাঁপা কাঁপি করছি।
    “কাঁপছি কেন? আমাকে ভয় পাচ্ছিস?”
    আমি চুপ করে আছি।
    “তাকা আমার দিকে।”
    ভাইয়ার ধমক খেয়ে তাকালাম।
    “তোর খুব প্রেম করার শখ তাইনা।”
    আমি শুকনো ঢোক গিললাম। আর মাথা নেড়ে না বললাম।
    “মিথ্যা বলছিস আবার।” চিৎকার করে উঠল।
    “না আর জীবনে এমন করবো না সরি এবারের মতো মাপ করে দাও ভাইয়া।”
    “সব সময় ই তুই এই কথা বলিস।”
    এই বার ই শেষ আর বলবো না।”

    বৃষ্টি হয়ে নামবো

    Nondini Nila
    Part 11+12+13

    হাতে আদনান ভাইয়ের শার্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।ভাইয়া রুমে থেকে চলে গেছে।আর নিজের দুইটা শার্ট দিয়ে গেছে ধুয়ার জন্য। এটা আমার শাস্তি আমি কটমট করে তখন থেকেই এইভাবে দাঁড়িয়ে আছি। জীবনে আমি জামাকাপড় ধুইনি আর আজকে আমার চির-শত্রুর জামা ধুতে হবে।
    না ধুলে ও তো আমার কপালে শনি আছে।
    ভাইয়া বলে গেছে যদি কথা না শুনি তাহলে আজকের করা বোকামির কথা আব্বু আম্মু কে বলে দেবে। আর আব্বু জানে তার মেয়ে কলেজে গিয়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রেমের সপ্ন বুনেছিল তাহলে আর রক্ষে নাই‌।
    আমি রাগে ফুসফুস করতে করতে বাথটাবে গেলাম।
    একঘন্টা ভড়ে কি করে কি যে ধুইলাম ঠিক নাই‌। শার্ট আর কি ধুইলাম নিজেই ভিজে একাকার।
    বারান্দায় গিয়ে শার্ট মেলে রুমে এসে চিৎ হয়ে পরে যেতে নিলাম আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম। পরার কারন ও আছে তা হলো ভেজা শরীরে বাথরুমে থেকে এসেছি শরীর থেকে পানি পরেছে রুমে সেই পানিতে পিছিল খেয়েছি পরলে আমার কোমর যাবে।
    আল্লাহর রহমতে পরা থেকে বাঁচলাম কোথা থেকে আদনান ভাই আসলো আর আমাকে পরা হাত থেকে বাচালো।
    ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে আছি‌। ভাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তার মুখে রাগ স্পস্ট।
    ভাইয়া আমাকে ধরে রেখেই গম্ভীর গলায় বলল,,,
    “ইডিয়েট একটা। কি করেছিস নিজের দুইটা শার্ট ধুতে কেউ গোসল করে ফেলে।”
    ভাইয়ার ককর্শ গলায় বলা কথা শুনে পিটপিট করে তাকায় আমি।
    আমি তাকাতেই ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দেয় আর নিজের শার্ট ঝাকাতে ঝাকাতে বলে,,”ওফ দিলি তো আমাকে ভিজিয়ে।”
    আমি রাগ নিয়ে বললাম,,”একদম আমাকে ধমকাবে না তোমার জন্য আমি এই সন্ধায় ভিজে গেলাম। উফ শীত করছে এমন কাজ কেউ দেয় হাত ব্যাথা হয়ে গেছে।”
    হাত দেখতে দেখতে বললাম।

    ভাইয়া আমার কথা শুনে তীক্ষ্ণ চোখে আমার হাতের দিকে তাকালো। আমার হাত সত্যি ব্যাথা করছে সাথে লাল হয়ে আছে। ভাইয়া শক্ত মুখ করে তাকিয়ে বলল,,
    “এতো বড় হয়েছিস সামান্য জামা কাপড় ধুতে গিয়ে এই অবস্থা করিস নিজের। তোর মতো অর্কমা আমি একটাও দেখি নাই।”
    আমি কঠিন মুখ করে তাকিয়ে বললাম,,” একদম আমাকে অর্কমা বলবে না।”
    ভাইয়া আমার কথা শুনলো কিন্তু কিছুই বললো না নিজের ড্রয়ার খুলে একটা মলম আনলো হাতে দিতে তখন কোথা থেকে মামনি আমাকে ডাকতে ডাকতে আর এসে এমন ভেজা দেখে হতদম্ব হয়ে গেল।
    অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
    “একি দোলা তুই ভেজা কেন?”
    আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে বললাম,,,
    “তোমার এই গরিলা ছেলে আমার কি অবস্থা করেছে দেখো।”
    আমি অভিযোগ সুরে বললাম।
    আমার কথা শুনে মামনি রেগে তাকালো ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
    “বলবো তোর কৃতি কাহিনী।”
    ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম।ভাইয়ার কথা শুনে একটা ঢোক গিলে মামনির দিকে তাকালাম।
    “মামনি চল তো।”
    বলেই মামনির হাত ধরে টেনে বেরিয়ে আসতে নিলাম।

    “কিরে টানছিস কেন? আর আদনান কি বলবে বলল?”
    বলেই সন্দেহ চোখে তাকালো আদনান ভাইয়ের দিকে।আমি জোর করে ধরে বললাম।
    “ক‌ই কিছু না এমনি খালি আমাকে বকা খাওয়াতৈ চাওয়ার ধান্ধা বুঝো না।”
    “সত্যি তো।”
    “তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না মামনি।”
    “আরে করি তো খুব করি।”
    “তাহলে চলো।”
    “আরে চলে যাব কেন আদনান তোর এই অবস্থা করলো কেন? কি করেছে তোর সাথে বল। ভিজলি কি করে?”
    “আমি ওই….
    কি বলবো বুঝতে পারছি না। আদনান ভাই সোফায় পায়ের উপর পা তোলে মজা নিচ্ছে।
    মামনি বললো,,
    “কি করে বল? আদনান তোকে আবার কাজ করিয়েছে? কি করেছে বল আজকে ওর একদিন তো আমার একদিন।”
    কি মছিবতে পরলাম রে বাবা। এখন ভাইয়ার কাছে আমাকে ফাঁসানোর প্রমান না থাকলে আমার থেকে খুশি আর কে হতো। মামনি ভাইয়া কে আচ্ছা মতো বকে দিত আর শাস্তি ও। আমি পৈশাচিক আনন্দ পেতাম তা দেখে কিন্তু তা হচ্ছে না। হবে ও না এখন বলে দিলে আমার কথাও বলে দেবে আর আমি ফেসে যাব।
    “নানানা মামনি ভাইয়াকে কিছু বলো না।”
    মামনি আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে।
    আমি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া শয়তানি হাসি মুখে নিয়ে তাকিয়ে আছে।
    আমি মামনি কে টেনে রুমে থেকে নিয়ে এলাম।

    বাইরে এসেই দেখা হলো তিথির সাথে ডয়িং রুমে বসে আছে। মুখটা ছোট করে।
    আমি যেতেই মাথা উঁচু করে তাকালো আমার দিকে। চোখে রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
    আমি ভেংচি কেটে চলে এলাম।
    বাসায় আসতেই হাজার কথা আমি ভেজা কেন? কারো কথার উত্তর না দিয়ে রুমে এসে রাগে গজগজ করতে লাগলাম। ড্রেস চেঞ্জ করে এসে রাহেলা (আমাদের কাজের লোক তার বাসা আমার আম্মু দের বাসায় পাশে ছিলো গরিব। তাই আম্মু তাকে আমাদের বাসায় এনেছে তাকে আমি নানু বলি) নানুকে আমি চা দিতে বললাম।
    তারপর চা নিয়ে বেলকনিতে বসলাম। এখন হালকা শীত পরছে শীত এসে পরলো। আজকে এইসময় গোসল করার জন্য শীত ভালোই লাগছে।
    এদিকে আদনান ভাই নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল তখন হঠাৎ আমার বারান্দায় চোখ আসে আর আমাকে খেয়াল করে।
    আদনান দোলাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। দোলাকে খুব আবেদন ময়ী লাগছে ভেজা চুল পেছনে খোলা ।দোলা বারান্দায় লাইট দেয় নি অন্ধকারের মাঝে ও বাসায় বাসায় থেকে হালকা আলো এসে ওর মুখে লাগে এ যাতে ওকে অপ্সরার লাগছে।
    নীল চাদর গায়ে জড়িয়ে ধরে কাপে চুমুক দিচ্ছে আর আশেপাশে তাকাচ্ছে।
    দূরে থেকে নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদনান।
    এই মুখটা দেখলে সমস্ত চিন্তাভাবনা ওলটপালট হয়ে যায়।ওর কি আছে এই মেয়েটার মাঝে ওকে এতো কেন ঘায়েল করে।

    কিছুক্ষণ আগে আদনান গিয়ে কড়া গলায় শাসিয়ে এসেছে তিথিকে।তিথি খুব ভার বেরেছে।মেয়েটা এতোদিনেও একটু ও চেঞ্জ হয় নি।
    ওর সাথে ফ্রেন্ডশীপে যাওয়ার পর থেকেই ও আদনান থেকে ডিস্টাব করে।
    এই নিয়ে আদনান ওর সাথে কথা কাটাকাটি করে ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু আবার তিথি কান্না আর ক্ষমার জন্য মেনে নিয়েছে।
    আজ আবার এতো দিন পর এসেও আমাকে জ্বালাতন করছে।একে বাসায় আনাটাই ভুল হয়েছে।দোলা যা বলেছে সব ঠিক আমি জানি‌।
    দোলাকে শাস্তি দিয়েছি জাস্ট ফাহাদের জন্য। আর তারপর তিথি কেউ শাসিয়েছি। কালকেই ওটাকে বিদায় করতে হবে।
    আদনান দোলার দিকে তাকিয়ে ছিলো তখন তিথি রুমে আসে আর দেখে আদনান সা করে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে।
    কৌতুহল নিয়ে তিথিও তাকায় আর দেখে দোলাকে।
    আদনান এখন ও নিজের মুখে বলেনি ও দোলাকে ভালোবাসে তাই তিথি আদনান এর সামনে এসে বলে।
    “আদনান তোর সাথে একটু কথা ছিলো।”
    আদনান তিথির আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে।আর ভ্রু কুঁচকে তাকায় তিথির দিকে।

    “কি কথা?”
    “তুই কি দোলাকে ভালোবাসিস।”
    আদনান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তিথির দিকে।
    “হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
    “বল না।”
    “জেনে কি করবি?”
    “একটা কথায় বলতাম। তুই আমাকে একবার না বার বার রিজেক্ট করেছিস। কিন্তু কেন এই দোলার জন্য কি ? ”
    “হ্যা।”
    হ্যা শুনে তিথি গজে উঠলো ভেতরে ভেতরে কিন্তু বাইরে প্রকাশ করলো না।
    তীব্র রাগ নিয়ে একবার দোলার দিকে তাকালো।
    তারপর আদনানের দিকে তাকিয়ে বলল,, ” ওর মধ্যে কি আছে তা আমার নেই। ওর থেকে সব দিক দিয়েই আমি ফাস্ট। তাহলে আমাকে রেখে ওকে কেন তুই বেছে নিলি।”
    রেগে বলল।
    আদনান স্বাভাবিক ভাবেই বলল,,” ভালোবাসা রুপ ,গুন, দিয়ে হয়না‌। ভালোবাসা আসে মন থেকে। আর আমি ছোট থেকে শুধু একজনকে ভালোবাসি সে হলো আমার দোলারানী। আমার নেশা। যেসব ফিলিংস দোলার জন্য আসে তা আর কোন মেয়েকে দেখে আসেনি। সে যত‌ই সুন্দর হোক না কেন এই মনে শুধু একজনের বসবাস। আর তুই এমন পাগলামী করে আমাকে ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট করলি বেশি কিছু না।তোকে আমি ফ্রেন্ডের বাইরে কখনো কিছু ভাবিনাই‌।”
    তিথি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।ও মন প্রান দিয়ে আদনান কে ভালোবাসে।
    ভার্সিটিতে থেকে প্রথম দেখেই আদনানের প্রতি দূর্বলতা প্রকাশ করেছে বারবার বুঝিয়েছে কিন্তু আদনান বুঝেনি।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 12

    ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে আদনান এর দিকে তিথি।
    আদনান আবার বলল,,” যা রুমে যা। আজ এখানেই থাক। কাল তোকে বাসা ঠিক করে দিয়ে আসবো।”
    তিথি হকচকিয়ে বলল,,” মানে।”
    আদনান বলল,,”মানে সিম্পুল তোকে বাসায় রাখা যাবে না। আজকে আনাটাও ভুল হয়েছে আমার।”
    তিথি হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আদনান এর দিকে। বরাবরের মতো আজকেও তিথীকে আদনান ফিরিয়ে দিলো।
    “যা রুমে যা।”
    আদনান এর কথায় আর কিছু বলল না তিথী একবার তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো দোলার দিকে তারপর গটগট পায়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
    তিথি রুমে এসে রাগে দুঃখে কাঁদতে লাগলো।
    আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে কী নেয় আমার।ওই দোলার থেকে সব দিক দিয়ে আমি ফাস্ট‌।

    কতো ছেলে আমার পেছনে পাগলের মত। আমি তাদের পাত্রা দেয় নাই। শুধু একজন কে ভালোবাসেছি আদনান। বিনিময়ে এ শুধু ইগনোর পেলাম যত বার বলেছি ততবার আমাকে অপমান করেছে রিজেক্ট করেছে আদনান।
    এবার ও তাই করলো শুধু মাত্র ওই দোলার জন্য।
    আয়নার কাছেই ফ্লোরে বসে দুহাতে চুল টেনে ধরলো তিথী।
    ( তিথী ধনী বাবার একমাত্র মেয়ে। যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে তিথী কখনো ওর চাওয়া অপূর্ণ রাখেনি তায়েফ আহমাদ। তিথির এক ভাই আছে নাম আরাফাত বোনকে প্রচন্ড ভালোবাসে।)
    তিথি ফ্লোরে বসে কাঁদছিল তখন ওর ফোন বেজে উঠলো,, কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। ওই ভাবেই তাকালো ফোনের স্ক্রিনে ভাইয়ের নাম্বার দেখে রিসিভ করলো।
    হ্যালো,
    বোনের গলা পেয়েই বুঝে গেছে আরাফাত বোনের কিছু হয়েছে।
    “তিথি বোন আমার কি হয়েছে তোর?”
    উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল।
    ভাইয়ের আওয়াজে তিথি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।

    “কি রে কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে বল আমাকে?”
    তিথি কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না।
    তবুও বললো,,,”ভাইয়া কালকেই তুই ঢাকা আয়?”
    তিথির আচমকা এমন কথায় আরাফাত হতবাক হয়। আর বলে?
    “কেন বোন কি হয়েছে বলবি তো?”
    “তুই আসবি কিনা বল?”
    তিথি খুব জেদি সেটা আরাফাত খুব ভাল করেই জানেই। এখন কিছু বলবে না তাই আর কিছু জিজ্ঞেস না করে রাজি হলো।

    আদনানের রুমে থেকে তিথি যেতেই আদনান বারান্দায় যায়।আর গলার আওয়াজ বারিয়ে দোলাকে ডাকে।
    আমি আরামছে বসে চা খাচ্ছিলাম আর রাস্তায় তাকিয়ে ছিলাম তখন কোথা থেকে ভাইয়া বারান্দায় এসে আমাকে ডাকতে লাগলো।
    ভাইয়ার বাক শুনে চমকে উঠলাম,,
    আমি দাঁড়িয়ে ভাইয়ার বারান্দায় তাকিয়ে দেখী ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
    “ওই তোর কানে কি আমার ডাক যায় না।”
    গম্ভীর হয়ে বলল।
    আমি মনে মনে হাজার টা গালি দিলাম তারপর ভেংচি কেটে আবার বসে পরলাম।
    “আমাকে ভেংচি দেওয়া হচ্ছে তোকে তো..
    “চুপ যাও তো জালিয় না। আবার জ্বালাতে এসেছো কেন?”
    ভাইয়া আমার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে। “আমি তোকে জ্বালায়?”
    রেগে বলল।
    আমি বললাম,,,”তোমার গার্লফ্রেন্ড আর তুমি আমাকে জ্বালিয়ে খেলে।”
    বলেই ভাইয়াকে পাস করে রুমে চলে এলাম।

    আদনান হা করে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। দোলার রেগে বলেছে কথাটা রাগলেও কি সুন্দর লাগে কপাল কুঁচকে বিরক্ত হয়ে বলে। দোলা থাকা কালীন মুখ গম্ভীর করে রাখলেও দোলা রেগে চলে যেতেই আদনান মুখে বাঁকা হাঁসি ফুটিয়ে তোলা।
    পরদিন তিথীকে একটা বাসা ঠিক করে দিতে যায় কিন্তু তিথি রেগে বলে লাগবে না।
    আমি আমার ব্যবস্থা করতে পারবো।
    আদনান তাও ছাড়ে নি তিথি কে তিথি ওর কোন ফ্রেন্ড এর বাসায় যাবে বলে ছারিয়েছে আদনান কে।

    তিথি সোজা ওর ভাইকে কল করে ওর ঠিকানায় চলে আসতে বলেছে ও এখন একটা হোটেলে উঠবে‌।
    ওর ভাই আসার পর তাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে সব বলেছে।ওর ভাই সাথে বাসার সবাই ই জানতো তিথী আদনান কে ভালোবাসে। আরাফাত সব শুনে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে।
    ওর বোনের চোখে বারবার জল এসেছে ওই স্কাওন্ডার জন্য ওকে আমি ছারবো।
    “আমি ওকে খুন করে ফেলবো।”
    রেগে বলল আরাফাত।
    তিথী বলল,,”নানানা ভাইয়া কি সব বলছো আদনান এর কিছু করবে না তুমি ওকে আমি মন থেকে ভালোবাসি। ওর কিছু হলে আমি মরে যাব।”
    আরাফাত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাকায় বোনের দিকে।
    “ওই দোলা মেয়েটাকে ওর জীবন থেকে সরাতে হবে ভাইয়া ওর জন্য আদনান বারবার আমাকে ইগনোর করেছে।”
    “মানে।”
    “ওই দোলাকে আদনান এর চোখে খারাপ করতে হবে ওকে ভালোবাসে আদনান ভুল করেছে এটা ওকৈ বুঝাতে হবে।”
    কিন্তু কিভাবে?
    সেটা আমি জানি না তোমার বোনের খুশির জন্য তোমাকে কিছু করতেই হবে ভাইয়া।
    আরাফাত এমনিতে ভালো কিন্তু রগচটা তাই খারাপ ভাল বিবেচনা না করে বোনের চোখের জল দেখে তিথি তা বলে রাজি হয়ে যায়।এটা জীবনের চরম ভুল করে ও।

    দোলা কলেজের মাঠে বসে আছে। সবাই ওকে জালিয়ে খাচ্ছে একটা কারনে সামনে ১৬ ডিসেম্বর তাই নিয়ে কলেজে অনুষ্ঠান হবে আর তাতে ওকে গান গাওয়ার জন্য পাগল করেছে ফ্রেন্ডরা।
    আরে যুদ্ধের গান পারিনা ভাই তার আমাকে ইলমাকে বল।
    সবাই ব্যর্থ হয়ে থামলো।
    “আচ্ছা শাড়ি পড়ে আসবি তো নাকি এটাও না।”
    “আমি আর শাড়ি ইম্পসিবল দোস্ত তোরা তো জানিস আমি শাড়ি সামলাতে পারিনা।”

    সবাই গজে উঠলো,,”সব কিছু তেই তোর না কিছু করতে হবে না তোর।
    মন খারাপ করে বললো সবাই আমি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে।
    আমার দিকটা বুঝার চেষ্টা কর।
    কি আর করার রাজি হলাম সবার জন্য আল্লাহ জানে কি হবে।
    বাসায় এসে শাড়ির ব্যবস্থা করলাম আম্মুর শাড়ি লাল সবুজ মিক্স করা। ব্লাউজ লাল।
    আমি শাড়ি পরবো শুনেই আম্মু আমাকে মার্কেট এ নিয়ে এলো আর সিমপুল গহনা কিনে দিল সাথে শাড়ি নিউ কিনে দিতে চেয়েছিল আমি মানা করেছি। বাসার ওইটাই পরবো‌।
    বিজয় দিবস এর দিন মামনি আর আম্মু মিলে আমাকে সাজিয়ে দিল কুচি করে উপরে চীকন করে উঠিয়ে শাড়ি পরলাম কোমরে বিছা, গলায় লাল পাথরের হার, কানে জোমকা, চুল খোঁপা করে গাজরা দিয়ে দিল মামনি। হাতে লাল সবুজের মিক্সড করা চুড়ি হাত ভর্তি।ভালো করে পিন আপ করে দিল যাতে না খুলে আয়নার নিজেকে দেখছি কি সুন্দর লাগছে নিজেকে দেখে নিজেই চোখ ফেরাতে পারছি না। আম্মু আর মামনি তো প্রশংসা করতে করতেই শেষ। ঠোঁট লাল লিপস্টিক, চোখে কাজল দিয়েছি মোটা করে এসব মামির পছন্দের।
    হাঁটতে গিয়ে পরলাম জ্বালায় বাপরে এটাই তো টেনশন।
    ঢোক গিলে হাঁটছি পরলাম পরলাম ভাব এজন্য শাড়ি আমি পরতে চাইনা।
    তবুও সবাই আমাকে এটা পরার জন্য ব্লাকমেইল করে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে কুঁচি ধরে বেরিয়ে এলাম বাসা থেকে মামনি ও আসলো আমার সাথে আম্মু ও।

    বাইরে এসেই মুখোমুখি হলাম আদনান ভাইয়ের সাথে।ভাইয়া গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে। আমার দিকে একবার তাকালো ফোন থেকে মাথা উঁচু করে ভাইয়া । তাকিয়ে হা হয়ে গেলে।
    আদনান দোলার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।
    দোলা আদনান এর তাকানো দেখে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেল। তার পর ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল,,
    “ভাইয়া এখানে কেন?”
    “তোর সাথে যাবে।”
    আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,,”কি আমার সাথে কেন যাবে?”
    ভাইয়া বলল,,”তারাতাড়ি উঠ। রেডি হতে এতো সময় লাগে।”
    বিরক্ত হয়ে বলল।
    আমি একবার রেগে তাকিয়ে আম্মুকে বললাম।
    “না আমি যাব না আমি একা যাব।”

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 13

    সবার জরাঝরিতে ভাইয়া গাড়িতে উঠতে হলো। আমি কটমট করে গাড়িতে উঠে বসলাম। আদনান ভাই ও ড্রাইবিং সিটে বসে গাড়ি স্টাট দিলো। আমি চুপ করে একবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে র‌ইলাম।
    শাড়ির কুচি হাত দিয়ে ঠিক বসে আছি ভাইয়া গাড়ি ছেড়েছে কিছু দূরে আসতেই গাড়ি থামালো। আমি ভ্রু কুঁচকে অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
    ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে। আমি ভাইয়ার তাকানো দেখে হকচকিয়ে গেলাম। এভাবে তাকালে লজ্জা করে আচ্ছা আমার কি কিছু ভুল হয়েছে এইভাবে গাড়ি থামিয়ে ভাইয়া তাকিয়ে আছে কেন?
    আমি গাড়ির আয়না নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিজের মুখ দেখতে লাগলাম না সব‌ই তো ঠিক আছে তাহলে।
    শাড়ির আঁচল, কুচি ঠিক করলাম তাও। আজকে ভাইয়ার সাথে কথা বলবে না ভাবছিলাম কিন্তু এখন না বলে থাকা যাবে না।
    আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
    “কি হয়েছে? এমন হা করে তাকিয়ে আছো কেন? আগে জীবনে দেখো নাই আমাকে?”

    আমার কথার জন্য ই ছিল মনে হয়। আমি কথা বলতেই ভাইয়া বলল,,
    “দেখছি কিন্তু আজকের মতো দেখি নি।”
    ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,,” মানে।”
    মানে বলেই আবার বলে উঠলাম,,
    “ও বুঝেছি আজ বুঝি খুব সুন্দর লাগছে আমাকে দেখতে যে চোখ সরাতে পারছো না। আমি এমনিতে সুন্দর আজকে আরো বেশি সুন্দর হয়ে গেছি সেজে তাই না। তোমার চোখ‌ই সরছে না।”
    খুশি হয়ে বললাম। কারন ভাইয়া আমাকে দেখে ফিদা হয়ে গেছে। কেমন হা করে তাকিয়ে আছে। এক্সট্রা ভাব নিয়ে কানের দুল ঠিক করছি। মনে মনে আমার লাড্ডু ফুটছে।
    সব খুশি ধপ করে নিভে গেল ভাইয়ার কথা শুনে।

    “তোকে মুটেও সুন্দর লাগছে না। বরং আজকে সব চাইতে বাজে লাগছে দেখতে। ছিঃ কেমন লাল লিপস্টিক দিয়েছিস ঠোঁটে একটুও মানায় নাই।আবার চুল খোঁপা মাই গড বুড়ি লাগছে দেখতে।”
    আদনান ভাইয়া আমার দিকে নাক ছিটকে তাকিয়ে বলছে।
    “আর শাড়ি কেমন করে পরেছিস পেট দেগ যাচ্ছে। ছেলেদের তোর পেট না দেখালে হয় না তাই।”
    এই কথাটা ভাইয়া মৃদু রাগ নিয়ে বলল।
    আমি মলিন মুখ করে হা করে ভাইয়ার কথা শুনছিলাম। পেট দেখা যাচ্ছে শুনেই চমকে উঠলাম।
    বড় বড় চোখ করে তাকালাম সত্যি শাড়ি সরে গেছে। ভাইয়া আমার পেটের দিকে তাকিয়ে আছে আমি তারাতাড়ি শাড়ি দিয়ে ডেকে নিলাম পেট।
    লজ্জা লাগছে অনেক ভাইয়া আমার পেট দেখে নিল ছিঃ। আর কি বলল আমাকে বাজে লাগছে কিন্তু মামনি আম্মু যে বলল অনেক সুন্দর লাগছে।
    তাহলে কি তারা মিথ্যা বলেছে।
    গভীর চিন্তা করছি। নাকি ভাইয়া মিথ্যা বলল। আমাকে রাগানোর জন্য। গালে হাত দিয়ে ভাবছিলাম তখন হঠাৎ মনে হল কেউ আমার চুল ধরে ছে আমি চমকে উঠলাম।
    দেখি আদনান ভাই আমার চুল খুলে দিচ্ছে।

    আমি হাঁ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
    তারপর বললাম,,,”ভাইয়া আমার চুল খুলছিস কেন?”
    আদনান ভাই কড়া চোখে তাকালো আমার দিকে । আমি চুপ করে গেলাম।
    ভাইয়া আমার চুল খুলে ছেড়ে দিল।
    আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া এলোমেলো চুল ঠিক করে দিল।
    তারপর একটা টিস্যু এনে আমার একদম কাছে চলে এলো ভাইয়ার গরম নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। আমি অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম ভাইয়াকে এই মাঝরাস্তায় আমার এতো কাছে আসতে দেখে।
    ভাইয়া প্রতি আমি এমনিতে দূর্বল তাকে পছন্দ করি আমি‌ আর পছন্দের মানুষ এতো কাছে এলে কি নিজেকে কন্ট্রোল করা যায়। ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি। আচ্ছা ভাইয়া আমার এতো কাছে আসছে কেন আমাকে কি চুমু দিবে। ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি ভাবছি ভাইয়া আমাকে চুমু কেন দিবে‌? ভাইয়া তো আমাকে পছন্দ ও করে না ভালো ও বাসে না‌।
    আচ্ছা এমন নয় তো ভাইয়া ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু বুঝতে দেয় না। আর আজকে আমাকে এতো সুন্দর লাগছে যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কাছে চলে এসেছে।
    আমি তো এসব আকাশ পাতাল ভেবে মহা খুশি হয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।এই বুঝি আমাকে চুমু খাবে।

    আমার খুশি দেখে কে? কিন্তু একি আমার সমস্ত ভাবনা ভুল প্রমাণ করে ভাইয়া নিজের হাতে টিস্যু দিয়ে আমার ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দিলো। আমি হাঁ করে ভাইয়া কান্ড দেখছি।
    “ফাউল চিন্তা ভাবনা করা থেকে বিরত থাক ইডিয়েট।”
    আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে মনে মনে বললাম,,,”কি ভাবলাম আর কি করলো খরিলা টা, শালা খাটাশ,।”
    ভাইয়া নিজের কাজ শেষ করে নিজের জায়গায় বসে পরলো।
    আমি বললাম,, “এটা কি করলা তুমি আমার লিপস্টিক মুছে দিলা কেন?”
    “তোকে বাজে লাগছিল বললাম না। লিপস্টিক দিলে তোকে একদম মানায় না‌।”
    আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,, “সত্যি।”
    ভাইয়া সিকার করলো আর আমি বিলিভ করলাম।
    “আর চুল কেন খোলা হলো। মামনি কতো সুন্দর করে খোঁপা করে দিয়েছিল।”
    “খোঁপা থেকে খোলা চুলে তোকে ভালো লাগে। মায়াবতী লাগে…
    ভাইয়া কথা শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

    কি বললা?
    ভাইয়া হকচকিয়ে গেল। আর বলল,,
    “কিছু না। আর কখনো ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে আমার সামনে আসবি না।”
    বলেই গাড়ি স্টাট দিলো ভাইয়া।
    আমি হাঁ করে তাকিয়ে র‌ইলাম ভাইয়ার দিকে।
    ভাইয়া আর তাকালো না।
    আয়নার দেখলাম সত্যি আমাকে চুল খোলা বেশি ভালো লাগছে বাট লিপস্টিক ছাড়া কেমন জানি। আগেই ভালে লাগছিল কিন্তু ভাইয়া যে বলল লিপস্টিক এ বাজে লাগছে।
    আমি একটু পর পর ভাইয়ার দিকে তাকালাম। তাঁরপর বলেই ফেললাম,,
    “ভাইয়া তুমি কি আমাকে মিথ্যা বলছো? দেখো আমাকে লিপস্টিক ছাড়াই খারাপ লাগছে থাকতে বেশি ভালো লাগছিল।”
    আমার কথায় ভাইয়া কি যেন বলল,, আমি শুনতে
    পেলাম না।
    কি বললা শুনি নাই‌?
    ভাইয়া ধমক দিয়ে থামালো।
    “চুপ এক্সিডেন্ট হবে এমন করিস কেন?”
    আর কথা বললাম না।
    কলেজে চলে এলাম। সব মেয়েরাই লাল সবুজের শাড়ি কেউ সেলোয়ার কামিজ, পরে এসেছে। আমি আস্তে করে গাড়ি থেকে নামলাম।

    আশেপাশে তাকাচ্ছি সবাই সবার মতো ইনজয় করছে ভাইয়া গাড়ি পার্ক করে ভেতরে যাবে বাট আমার সাথে না।
    আমি নেহাদের খুঁজছি আর পেয়ে ও গেলাম ওরাও শাড়ি পরে এসেছে কি সুন্দর লাগছে ওদের আমাকে দেখেই তো চিৎকার করে উঠল সব কটা‌।
    আমি ওদের দিকে তারাতাড়ি করে এগিয়ে যাচ্ছি আমার মনেই ছিলো না আমি কি পরে আছি।
    আর পরলাম বিপদে শাড়ির কুচি খুলে গেল আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।
    কুঁচি ধরে থমকে চারপাশে তাকাচ্ছি। কারো তেমন আমার খেয়াল নাই সবাই সবার খেয়াল এ। আমার ফ্রেন্ড গুলো বুঝে গেছে আর এগিয়ে আসছে। আমি লজ্জায় লাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ইশ এখন কি হবে এজন্য আমি শাড়ি পরতে চাইনা।
    হঠাৎ কোথা থেকে ভাইয়া এসে দাঁড়ালো আমার পাশে আর আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্কান করলো।
    হয়তো বুঝে গেছে তাই আমার হাত ধরে শিমুল গাছের তলে আড়ালে নিয়ে গেল।

    “ইডিয়েট আসতে আসতেই আকাম করে ফেলেছিস। দেখে হাটবি না।”
    রেগে ধমক সুরে বলল।
    আমি মুখ ছোট করে দাঁড়িয়ে আছি।
    “গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে ঠিক কর।”
    আমি কুচি ধরে ঠিক করতে গেলাম কিন্তু ন
    নিচে বেকা হয়ে গেছে কাউকে ধরতে হবে।
    “কি হলো তারাতাড়ি কর?”
    “আরেকজনের লাগবে।”
    ভাইয়া বলল,,”কেন?”
    আমি সব বলতেই ভাইয়া নিচে বসে পরলো আমি এটা দেখে থমকে গেলাম।
    বিষ্ময় হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
    “হা করে তাকিয়ে না থেকে ঠিক কর ইডিয়েট।”

    বৃষ্টি হয়ে নামবো(রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 14+15+16

    ভাইয়া কুঁচি ঠিক করে ধরে নিচে বসে আছে আর আমি উপরে ঠিক করছি। এদিকে আমার বান্ধবীর দল এসে উপস্থিত হলো এখানে সব গুলো বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
    এদিকে ভাইয়া আমার এতো দেরি দেখে বলল,,,
    “আর কতো সময় লাগবে তোর?”
    ভাইয়ার কথা শুনে তারাতাড়ি কাজ শেষ করলাম।
    “হয়েছে।”
    আমি কাচুমাচু করে বললাম,,,”হুম।”
    ভাইয়া তরিৎ গতীতে উঠে দাঁড়ালো। তারপর শার্টের হাতা ঠিক করে বুকের কাছে থেকে সানগ্লাস বের করে চোখে দিল। তারপর আমার ফ্রেন্ডের দিকে একবার তাকিয়ে আমার দিকে তাকালো আর মুখ দিয়ে বিরক্তি এনে বলল,,
    “যতসব ফালতু ঝামেলা।”
    বলেই চলে যেতে নিল তখন আমার ফ্রেন্ড ইলমা ভাইয়া বলে ডেকে উঠলো আদনান ভাইকে,,,
    ভাইয়া ঘাড় বাঁকিয়ে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,
    “কিছু বলবা।”
    ইলমা বলল,,”কেমন আছেন ভাইয়া?”
    ভাইয়া বলল,,”ভালো। তোমরা কেমন আছো?”
    আমার বান্ধবী সব গুলো বলে উঠলো ভালো ভাইয়া।
    আর কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে ভাইয়া বলে উঠলো,,,
    ” এই ( আমাকে দেখিয়ে) ইডিয়েট টাকে দেখে রেখো কখন কোথায় কি ঘটিয়ে ফেলে। কেয়ারলেস একটা।”

    ভাইয়া কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। গাল ফুলিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া কিছু না বলে সানগ্লাস ঠিক করে স্টাইল করতে করতে চলে গেল।
    আমি কটমট করে ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
    খাটাশ একটা আমাকে আবার বকে গেল।
    “ওই এমন ফুসফুস করছিস কেন?”
    ইলমার কথায় ভাইয়ার থেকে চোখ সরালাম।
    “আমাকে কি বলে গেল দেখলি।”
    “ঠিকই তো বলেছে।”
    বলেই জ্বিভে কামড় দিল নেহা।
    আমি রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,”কি বললি তুই?”
    নেহা ভীতু মুখ করে বলল,,
    “ক‌ই কি বললাম? আমি তো বলেছি হ্যা তোর ভাইটা আসলেই খারাপ এইভাবে কেউ বলে। আমাদের দোলা কতো ভালো।”
    আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,,,”তুই অন্য কথা বলছিলি।”
    নেহা সবার দিকে তাকিয়ে বলল,,”এই তোরা বল আমি এটাই বলছিলাম তাই না।”
    বলেই অসহায় মুখ করে তাকালো সবার দিকে।
    “উফ তোরা কথা শেষ কর আর চল তো।”
    আমি আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলাম শাড়ি পড়ে সাবধানে যাতে খুলে না যায়।

    প্রথমেই যে আকাম হলো।
    “দোস্ত তোকে তা লাগছে না আজকে। সব ছেলেরা তো তোকে দেখে আজ ফিদা হয়ে যাবে।”
    আমি কিছু বললাম না। মিষ্টি করে হাসলাম শুধু। আর আমার ফ্রেন্ড সার্কেল আমাকে নিয়ে প্রশংসা করতে লাগলো।
    আমিও ওদেরকে নিয়ে করলাম। কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে শব্দে আমাদের একটা স্যার দেশের গান গাইছে ওনার কন্ঠস্বর একটুও সুন্দর না কিন্তু উনি ওই বেসুরো কন্ঠে গান গাইবে। স্যার বলে ওনাকে সবাই সহ্য করে। সেই সাথে আমরা ও করছি। বিরক্ত আর রাগ নিয়ে থাকতে পারলাম না স্যার ওই বেসুরো গলায় একটা না দুইটা গাইছে রাগে ফোন বের করে গান ছেড়ে ইয়ারফোন লাগিয়ে কানে দিলাম। উফফ শান্তি।
    গান আমার পছন্দ তাই বলে এমন পা ধা নি তা গান না।
    এই রমিজ উদ্দিন স্যারের গান শুনলে আমার গান শুনার আগ্ৰহ কমে যায়।

    এখন শুরু হলো নাচ। আমাদের ক্লাসের চৈতি নাচ্ছে ওর নাচ বরাবরের মতো আজকেও সুন্দর হলো। বাট এর সাথে আমি কথা বলি না। মেয়েটার খুব ভাব।
    নাচ শেষে শুরু হলো বক্তব্য আল্লাহ আজ কতোবার বক্তব্য দিবে। বোরিং হয়ে বসে শুনছি।

    “ওই উঠ তো আমার কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে বসে এই বোরিং কথা শুনতে শুনতে।”
    “হ ঠিক বলছিস। চল আমরা ওই দিকে যায়।”
    সবাই চলে এলাম আর মাঠের অপর প্রান্তে এলাম।এখানে সবাই জোটা জোটা বসে আছে।
    ছেলে মেয়ে আমি সবার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। এগিয়ে যাচ্ছি।
    নেহা আমার হাত ধরে আটকে দিল।
    “ওই আর যাস না।এই প্রেমিক প্রেমিকা দের দিকে।”
    “না আমি ওইদিকে যাব।”
    সমানে একটা পুকুর আছে ওইখানে গিয়ে ছবি তোলার ইচ্ছে করছে।তাই বললাম।
    “পাগল নাকি ওইদিকে আর যাব না।চল।”
    “চুপ কর তো ওদের যা ইচ্ছা করুক আমি ছবি তুলবো চল তো।”
    বলেই নেহার হাত শক্ত করে ধরলাম।
    আমার সাথে কেউ পারলে তো যেতে লাগলো।
    তখন ভাইয়াকে চোখে পরলো আমার। আদনান ভাই ও তার সাথে কয়েকটা ছেলে বসে আছে সামনে আর হাসাহাসি করছে। আমরাও পুকুর এর কাছে এসে গেছি। ভাইয়া রাও এখানেই আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি।ভাইয়ার সামনেই আবার চলে এলাম।
    ভাইয়া এখন ও দেখে নাই। আমি ফটাফট অন্য দিকে ঘুরে গেলাম।ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে পেছনে দেখতে পাচ্ছে চিনে ফেলবে জানি কারণ গ্যাং নিয়ে এসেছি। ওদের দেখলেই আমি আছি বুঝে যাবে।
    “ওই ছবি না বলে তুলবি। এইভাবে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
    আমি ওদের হাতের ইশারায় ভাইয়াকে দেখালাম।
    “ভাইয়া এখানেও ও দেখিস এখানে আসার জন্য আমাকে কি বকাটাই না দেয়।”
    “চল তাহলে চলে যাই। এজন্য আসতে মানা করছিলাম।”
    “আমি কি জানতাম গরিলাটা এখানে এসে বসে আছে।”
    আমাদের কথার মাঝেই ভাইয়া আমাকে ঠেকে উঠল আদনান ভাইয়ের আওয়াজ শুনে আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম।
    “আমাকে খাটাশ দেখে ফেলেছে।”
    কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে বললাম।

    আমি কাঁপতে কাঁপতে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া ওইখানে বসেই আমাকে ডাকছে।
    আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার সাথে আর ও তিনজন ছেলে আছে যারা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
    আমি তাকাতেই ভাইয়া উঁচু গলায় জিজ্ঞেস করলো।
    “দোলা এখানে কি করছিস?”
    আমি হকচকিয়ে গেলাম ভাইয়ার প্রশ্ন শুনে এই এতো লোকের মাঝে না জানি কতো বকা খেতে হয়।
    ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিলাম লোকজন ভালোই‌।
    এক হাত দিয়ে আরেক হাত মুচরাতে মুচরাতে বললাম,,,,”ওই আমি তো…
    ভাইয়া বলল,,,”তোতলাচ্ছিস কেন ভালো করে কথা বল?”
    “আমি…
    “ওয়েট আমি আসছি।”
    বলেই ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।

    আমি শাড়ির আঁচল ধরে কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
    ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে একদম আমার সামনে দাড়িয়ে বলল,,,
    “এখানে কি করছিস?”
    শক্ত গলায় বলল। আমি চুপ করে আছি।
    “কি হলো কথা বলছিস না কেন?”
    আমি চমকে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
    “ভাইয়া আমি আসলে ওই ছবি তুলতে এসেছি।”
    আদনান ভাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
    “ছবি তুলতে।”
    আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।
    “এখানে কেন আর জায়গা পাসনি।”
    আমি অবাক হয়ে তাকালাম।
    “এখানে কি হয়েছে। তুমি ও তো এখানেই আছো।
    আমি আছি বলে কি তোকেও এখানে আসতে হবে।”
    “আমি তো জানতাম‌ই না তুমি এখানে আছো জানলে আমি ভুলেও এখানে আসতাম না।”
    “কি বললি।”
    “ঠিক‌ই বলছি তোমার বকা খাওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই। আর তোমার সাথে দেখা হ‌‌ওয়া মানে‌ই বকা খাওয়া।”
    ভাইয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি হকচকিয়ে এদিকে ওদিকে তাকাতাকি করতে লাগলাম।

    “আমি তোকে খালি বকি।”
    আমি ঢোক গিলে বললাম,,,”না না। তুমি আমাকে বকবে কেন? তুমি তো বকতেই পারনা।”
    মিনমিন করে বললাম,,,” গরিলা একটা বকে কিনা জিজ্ঞেস করছে? সারাক্ষণ আমার পেছনে পুলিশের মতো ঘেরাও করে বলে।”
    “আচ্ছা চল আমি তোকে পিকচার তুলে দেব।”
    ভাইয়ার কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। চমকে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
    “কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? এখন তো বকছি না তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন?
    আমি মিনমিন করে বললাম,,,”বকছো না বলেই তো ভয় আরো বেশি পাচ্ছি।”
    ‘কি বললি‌?”
    ‘তুমি আমাকে ছবি তুলে দিবে।”
    “হুম চল।”
    “কিন্তু।”
    “আবার কিন্তু কিসের?”

    আমি আর কিছু বললাম না। হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া আমাকে বলেই নিজের ক্যামেরা বের করলো।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 15

    ভাইয়া আমার ছবি তুলে দিল। তারপর আমাকে যেতে বলল,,
    “কোথায় যাব?”
    ভীতু মুখ করে বললাম,,,,,
    ভাইয়া বলল,”কোথায় যাবি মানে? এখানে থাকবি নাকি।”
    গম্ভীর হয়ে বলল। ভাইয়ার গম্ভীর কন্ঠ শুনে আমি থমকে গেলাম।
    ভাইয়া বলল,,”চারপাশে দেখেছিস। তাও এখানে থাকতে চাইছিস যা।”
    ভাইয়ার কথা শুনে আমি আমার পাশে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম।
    ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি দেখলাম একটা ছেলে একটা মেয়েকে চুমু খাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে আবার খুললাম তারপর ভাইয়াকে বললাম,,
    “তুমি এখানে কি করছো?”
    আমার কথায় ভাইয়া সরু চোখ করে তাকালো,
    “দেখলি না ফ্রেন্ডদের সাথে আছি।”
    আমি আশেপাশে তাকিয়ে বললাম,,”তুমি ও এখানে থেকে চলে যাও। ছিঃ কি অসভ্য ছেলে মেয়ে।”
    বলে নাক ছিট কালাম। তার পর নেতাদের কাছে গিয়ে বললাম,,,
    “চল এই জায়গায় আর না। ছিঃ কি নির্লজ্জ ছেলে মেয়ে গুলো।”
    বলেই চলে এলাম।

    ভাইয়া আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।
    তারপর আমি চোখের আড়াল হতেই ফ্রেন্ডের কাছে গিয়ে বসলো। ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা বলল,,
    “আদনান এই তোর মায়াবতী তাই না।”
    আদনান ভাই কিছু বলল ফোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
    আরেক জন বলল,,
    “হ্যা এই তো আমাদের ভাবি। ছোট্ট ভাবি আমাদের সেই ছোট বেলা থেকেই তো আদনান ওকে ভালোবাসে। কিন্তু এখন ও মনের কথা বলতে পারলো না।”
    বলতে পরলো না কেন?
    “আর বলিছ না ওর হিটলার শশুর মানে দোলার বাবা তো শর্ত দিয়ে রেখেছে। আগেই জানানো যাবেনা।”
    আরেকজন বলল,,”বেচারা আদনান নিজের ভালোবাসার মানুষটির এতো কাছে থেকেও অনেক দূরে।”
    সবাই কথা বলতে আদনান কে নিয়ে আর আদনান নিজের মন মতো ওর মায়াবতীর ছবি দেখছে।
    একটু আগে যে ছবি গুলো তোলেছে সব ছবি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। আজকে দোলাকে ওর ভাবনার থেকে ও বেশি সুন্দর লাগছে। এতো সুন্দর লাগছে যে নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে যাচ্ছে।
    তৃষ্ণার্ত মনটা বারবার অন্যমনষ্ক হয়ে পরছে।

    আমরা আবার চেয়ার এ বসলাম শাড়ি পরে হাঁটা খুব কষ্ট। বসতেই বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে এলো মামা আর আমাদের সবাইকে দিয়ে গেল।
    এতো সুন্দর করে সেজেগুজে এসেছি কি খাওয়ার জন্য। বিরিয়ানি আমার অনেক পছন্দের কিন্তু খেলেই সাজ নষ্ট হবে জানি।তাই খাচ্ছি না কিন্তু না খেয়ে থাকতেও পারছিনা পছন্দের জিনিস থাকলে “কি থাকা যায়।”
    “ওই খাস না কেন?”
    “আমি খাব না রে। খেলেই দেখবি পুরো হাত মুখ নষ্ট হয়ে গেছে।”
    “তাই বলে না খেয়ে থাকবি।”
    “আসলাম তো মাত্র দুই ঘন্টা হয়েছে?”
    “তোর কি খিদে পায় নি তাহলে আমাকে দে।”
    আমাকে দে শুনেই চমকে উঠলাম। বিরিয়ানির প্যাকেট শক্ত করে ধরে বললাম,,
    “কেন নিজেরটাই হয় না আমার টা কেন দিমু।”
    তুই তো খাবি না তাই।”
    “খাব না তাই কি পরে খাব।”
    “আচ্ছা আমার মা লাগবে না।”
    “ওই আমি তোর মা । ”
    রেগে বললাম।
    ” না না তুই আমার মা হবি কেন তুই তো আমার নানি?”
    আমি কটমট করে তাকিয়ে আছি।ওকে চোখ দিয়ে ভষ্স করে দেব।
    “আরে এমন করে তাকাচ্ছিস কেন?”
    “আমি তোকে …
    বলেই মারতে যাব ও ভৌ দৌড়। পলকে আমার সামনে থেকে দূরে সরে গেছে। শাড়ি পড়ে এরা কি দৌড়ানো শুরু করছে পারেও আর আমি অর্কমার ঢেকি ঠিক মতো হাঁটতে ও পারিনা।
    এই প্রথম ভাইয়ার একটা কথা ঠিক লাগছে।ভাইয়া এর জন্যই আমাকে অর্কমার ঢেকি বলে।

    সবার খাওয়া শেষ আমি একমাত্র প্যাকেট নিয়ে বসে আছি তখন ভাইয়া এলো আর আমার হাতে দিকে তাকিয়ে বলল,,
    “এটা হাতে নিয়ে বসে আছিস কেন ?”
    আমি ভাইয়ার কথায় বললাম,,
    “তো কি করবো ফেলে দেব নাকি।”
    “আমি কি ফেলে দিতে বলেছি ইডিয়েট। খাস নি কেন?”
    “কিভাবে খাব দেখো না আমাকে হাতে লাগবে আবার মুখেও লাগবে তাই পরে খাব।”
    “এতো সময় না খেয়ে থাকবি।”
    রেগে বলল।আমি কিছু বলার আগেই ভাইয়া আমার হাতে থেকে প্যাকেট নিল।আমি তো বড় বড় চোখ করে ভাইয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে আছি।
    “কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন চল আমার সাথে?”
    “তুমি আমার বিরিয়ানি নিলে কেন ?”
    রেগে বললাম আমার এখন মনে হচ্ছে ভাইয়া আমার বিরিয়ানি খেয়ে নিবে।
    ভাইয়া আমার উওর না দিয়ে হাত শক্ত করে ধরে নিলো।
    “আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?”
    “কথা বাদ দিয়ে চল।”
    আর কিছু বললাম না।

    ভাইয়া আমাকে নিয়ে তার গাড়িতে এলো আর আমাকে ভেতরে বসিয়ে নিজেও বসলো।
    আমি ভ্রুকুটি করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
    ভাইয়া পানির বোতল নিয়ে নিজের হাত ধুয়ে প্যাকেট খুললো তার আমার সামনে খাবার তুললো।
    আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া এটা করবে আমি কল্পনা ও করি নাই‌।
    “হা করে তাকিয়ে না থেকে খা।”
    আমি তাও হা করে তাকিয়ে আছি।
    “খেতে বলেছি।”
    এবার আমি কথা বললাম।
    “তুমি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছ?”
    আমার কথায় ভাইয়া বলল,,,
    “এমন ভাবে বলছিস যেন এই ফাস্ট খাইয়ে দিচ্ছি।”
    আমি কিছু বললাম না।আসলেই ভাইয়া আমাকে আগেও খাইয়ে দিয়েছে কিন্তু সব সময় অসুস্থ থাকা কালীন।
    আমি ভাইয়ার হাতে খেতে লাগলাম ভাইয়া বরাবরের মতো যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে আমাকে আর আমি ভাইয়ার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি।

    “এভাবে তাকিয়ে থাকিস না প্রমে পরে যাবি ‌।”
    আচমকা ভাইয়ার এমন কথায় আমার হেঁচকি উঠে গেল।
    আমি তো সেই কবেই ভাইয়ার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। আর ভাইয়া কিনা বলছে পরে যাব।
    আমি মাথা নিচু করে ফেললাম ভাইয়া যদি বুঝে যায় তাই।

    দিনটা এইভাবেই কাটলো।তিনটার দিকে ভাইয়া আমাকে নিয়ে বাসায় এলো আমি নিজের বাসায় গিয়ে গোসল দিয়ে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরলাম।
    খুব ক্লান্ত লাগছে শুয়েই ঘুমিয়ে পরলাম।
    পরদিন—
    কলেজে গিয়ে আমি থমকে গেলাম একজন কে দেখে। সে আর কেউনা তিথি। উনি আমার কলেজে কি করছে?
    আমাকে দেখেই এগিয়ে এলো।
    মুখে তার শয়তানি হাসি।
    আমি কাচুমাচু করে সরু চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি।
    “হাই দোলা!”
    আমি কিছু বললাম না চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
    “বাবাহ কথা বলবা না নাকি?”
    আমি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছি। মেয়েটার হাবভাব লক্ষ্য করছি।

    “কেমন আছো দোলা?”
    আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বললাম,,” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?”
    “এতো আছি কোনো রকম। এই খানে পড় বুঝি?”
    আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।
    “ওহ ভালো।”
    “আপনি এখানে কি করছেন?”
    “এই তো আসলে এইদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ তোমাকে দেখলাম তাই নামলাম।”
    আমার কথাটা বিশ্বাস হলো না কারণ জনি এখানেই ছিলো।
    আমার আগে থেকেই কিন্তু বলল অন্য কথা।
    “ওহহ”
    তাও কিছু বললাম না মেয়েটাকে আমার একদম ই পছন্দ না। কথা বলতেই চাই না।
    তাই কথা বাড়ালাম না।
    “আচ্ছা আমি আসি।”
    বলেই পাস কাটিয়ে চলে এলাম কলেজে।
    তিথি আমার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিল।
    আমি কলেজে যেতেই আমার বান্ধবীরা জিজ্ঞেস করলো,,,” কে রে ওই মেয়েটা?”
    আমি একবার তিথির দিকে তাকিয়ে বললাম,,”আদনান ভাইয়ের ফ্রেন্ড না গার্লফ্রেন্ড জানিনা।”
    তখন ইলমা বলে উঠলো,,,
    “আমার কি মনে হয় জানিস দোলা।”
    আমি বললাম,,,”কি মনে হয়?”
    ইলমা বলল,,,”আদনান ভাই তোকে ভালোবাসে।”
    আমি ওর কথায় চমকে উঠলাম।
    “হ্যাত কি বলিস?”
    “সত্যি আমার এইটাই মনে হয়।দেখিস না তোকে কতো কেয়ার করে। কোন ছেলের সাথে কথা বলতে দেয় না। সব সময় ছায়ার মতো আগলে পাশে থাকে ভালো না বাসলে এমন করতো বল।”
    আমি সরু চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 16

    কলেজে থেকে বাসায় এসে নিজের রুমে থ মেরে বসে আদনান ভাইয়ের বারান্দায় তাকিয়ে আছি। আমার মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু। ইলমাদের কথা গুলো আচ্ছা সত্যি কি আদনান ভাই আমাকে ভালোবাসে।
    ভ্রু কুঁচকে গালে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছি আদনান ভাইয়ের রুমের দিকে আর আকাশ পাতাল ভেবে যাচ্ছি।
    ভাইয়া আমাকে ভালোবাসলে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে কেন?
    আর এতো ধমকায়‌ই বা কেন? ভালোবাসার কথা জানায় না কেন?
    কিন্তু ওদের কথাও তো ঠিক ভাইয়া আমার কোন ছেলেদের সাথে মেলামেশা পছন্দ করে না। আমি তার কথা না শুনলে আমাকে সেটা নিয়ে বকে‌। আবার আমার কিছু হলেই ভাইয়া পাগলামো করে সেটা ভালোবাসা থেকে জানি আমি তো সেটা শুধু বোন হিসেবে ভেবেছি। কিন্তু শুধু কি বোনের হিসেবে নাকি আমাকে ভালোবাসে।

    ইশ কি করে জানবো? কলেজ ড্রেস ও খুলি নাই ওইভাবেই বসে ছিলাম উঠে বারান্দায় এসে ভাইয়ার রুমে উঁকি দিতে লাগলাম। তখনই ভাইয়া রুমে থেকে বারান্দায় এলো আমি এইভাবে ভাইয়াকে আশা করেনি। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম।
    ভাইয়া আমার দিকে ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে বলল,,”তুই এইভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
    আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে আর ভাবছি ভাইয়া আমাকে সত্যি ভালোবাসে কিনা।
    “দোলা,,,
    ভাইয়া ডাকে চমকিত হয়ে ধ্যান ভাঙলাম।
    “কি হয়েছে?”
    “তুই কলেজ ড্রেস পরে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?”
    ভাইয়ার কথা শুনে নিজের দিকে তাকিয়ে আবার ভাইয়ার দিকে দিকে তাকালাম।
    “কি হলো তুই ইদানিং আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে এতো কেন লেট করিস? যেন সব সময় কি উত্তর দিবি বানাতে থাকিস?”
    বানাতে থাকি কথাটা ভাইয়ার মুখে শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। ভাইয়া জানালো কি করে আমি কথা বানায়।

    আমি না নেড়ে না বললাম।
    “ক‌ই না তো আমি বানাব কেন?”
    “তাহলে কথা না বলে কি ভাবছিস?”
    আমি কিছু ভাবছি না তো।”
    ভাইয়া সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
    “ফ্রেশ না হয়ে এখানে এসে আমার রুমে উঁকি দিচ্ছিলি কেন?”
    ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম।
    এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। ভাইয়া‌ দেখলো কিভাবে আমি ভাইয়ার রুমে উঁকি দিচ্ছিলাম।
    “আবার ভাবনায় চলে গেলি ইডিয়েট।”
    আমি গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি এখন। কিছু হলেই ভাইয়া আমাকে ইডিয়েট বলে।
    “আবার গাল ফুলালি কেন?যা ফ্রেশ হ আর এক সেকেন্ড ও জানি এখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে না থাকতে দেখি।এতোটা কেয়ার লেস কেউ কিভাবে হয়।”
    আমি ভাইয়ার দিকে কটমট করে তাকিয়ে গটগট করে চলে এলাম রুমে।
    তারপর ওয়াশরুমে গোসল করতে চলে এলাম।
    আর ভাবতে লাগলাম ধুর এই গরিলা আমাকে একটু ও ভালোবাসে না আমি জানি। ভালোবাসা বলে এইভাবে বকতোই না।

    গোসল শেষ করে একটা লম্বা ঘুম দিলাম। উঠে খেলাম।
    পরদিন সকালে কলেজে এসেই জানতে পারলাম আজ আমার প্রান প্রিয় ইলমার জন্মদিন। তাই সবাই মিলে চলে এলাম মার্কেট এ আমার কাছে বেশি টাকা ছিল না আসলে আজ ইলমার জন্মদিন আগে থেকেই মনে থাকলে টাকা বেশি নিয়ে আসতাম। কিন্তু এখন তো আর সম্ভব না তাই মে কয়টাকা ছিল তাই দিয়ে ইলমার জন্য কানের দুল কিনলাম। ইলমা কানের দুল খুব পছন্দ করে। পাইজ লাগল,, দুইশ আশি টাকা। সবাই কম বেশি কিছু কিনলাম আরো পঞ্চাশ টাকা দিতে হলো সবাই মিলে কেক ও কিনে আনলাম।

    আমার হাতে কেক দিয়ে সবাই হাঁটছে আমি বলছি আমি নিতে পারবো না যদি পরে যায় কিন্তু ওরা সেদিকে লক্ষ্য করছে না।আর বিপত্তি ঘটল তখন।
    মার্কেট থেকে সবাই সব কিছু নিয়ে আগেই চলে গেল আমি একা কেক নিয়ে সাবধান এ আস্তে আস্তে আসছি কিন্তু একটা অসভ্য ছেলের জন্য আমার সাবধানে চলাটাও বৃথা হলো‌।
    ছেলেটার সাথে ধাক্কা লেগে পুরো কেক উলটা হয়ে পরে ঢাকনা খুলে গেল আর সব ফ্লোরে ছরিয়ে কি বিচ্ছিরি অবস্থা মাই গড।
    সেই কেক কিছুটা সামনের লোকটার শরীরে ছিটকে গেল। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আমার কেকের দিকে। তারপর চোখ সরিয়ে ওই খাটাশ লোকটার দিকে রেগে তাকালাম কিন্তু রাগ র‌ইলো না রাগ হাসিতে পরিনত হল।
    আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে হা হা করে হেসে উঠলাম।
    লোকটা বিরক্তিকর চোখ দিয়ে আমাকে দেখছে।আমি তো হেসেই যাচ্ছি হাসবো না আবার আরে লোকটার মুখে লেগেছে কেক আর বিশেষ করে উনার হাতে উনি নিজের হাত দিয়ে যখন মুখ থেকে মুছতে যায় তখন আরো বরে এটা দেখে আমি পেট ধরে হাসছি। লোকটাকে জোকার থেকে কম লাগছে না।
    “এই মেয়ে তুমি এইভাবে পাগলের মত হাসছো কেন হোয়াই?”
    রেগে বলল লোকটা।

    আমি তাও হাসান থামাতে পারছি না।আমার ফ্রেন্ড সার্কেল আমাকে না পেয়ে পেছনে তাকিয়ে এসব দেখে ছুটে আসে।
    আমি অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামালাম তারপর মুখটা গম্ভীর সিরিয়ার মুখ করলাম।
    নেহা বলল,,,”এটা কি করলি দোলা ইশ কেকটা নষ্ট হয়ে গেল। এখন কাজ হবে?”
    সবাই এক‌ই কথা বলতে লাগল।
    আমি ওই লোকটাকে বললাম,,
    “এই যে আপনি কি করলেন আমাদের কেকটা নষ্ট করে ফেললেন কেন? দেখে চলতে পারেন না চোখ কি পকেটে নিয়ে ঘুরেন?”.
    রেগে বললাম। লোকটা ও রেগে বলল,,,
    “আমার জন্য মানে কি আমি কি করেছি? দোষ তো আপনার আপনার জন্য আমার ড্রেসের কি হলো দেখুন তো।”
    আমি রেগে উঠলাম সাথে আমার ফ্রেন্ড গুলো ও।
    “কি বললেন দোষ আমার? নিজের দোষ এখন “আমাদের ঘাড় এ চাপাতে চাইছেন এটা আমরা একদম মেনে নেব না‌।”
    “দোষ আপনার আপনি আমার সাথে ধাক্কা খেয়েছেন আমি না।”
    “অসম্ভব আমি না আপনি আমি খুব দেখে শুনে যাচ্ছিলাম।”
    “নো ম্যাডাম আপনার দোষ।”
    “বললাম না আপনার।”
    এবার আমার ফ্রেন্ড রাও বলতে লাগলো।
    “আপনার দোষ আপনি এখন আমাদের কেক কিনে দিবেন আপনার জন্য আমাদের কেক নষ্ট হয়েছে।”
    “ইম্পসিবল।”
    “কিনে আপনাকে দিতেই হবে।”
    এই নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল।
    অবশেষে লোকটা হার মানলো।
    আর কেক কিনে দিল কি করবে বেচারা এতো গুলো মেয়ের সাথে পারলে তো।

    দোস্ত দোষটা কার বল তো।
    ফারজানার কথায় আমি বললাম,,”,ওই লোকটার আমি খুবই সাবধানে যাচ্ছিলাম। আর একটা কথা সব চেয়ে দোষ তোদের বেশি?”
    ওরা অবাক হয়ে বলল,,”আমাদের মানে?”
    “তোদের মানে তোদের। তোরা আমাকে কেন দিলি ওটা নিতে।”
    কথা বলতে বলতে কলেজে চলে এলাম।ক্লাসে না গিয়ে শিমুল গাছের তলে গেলাম ইলমা আসতেই ওর চোখ বেঁধে ওকে নিয়ে আসলো সবাই আমি ওইগুলো সাজিয়ে দিয়েছিলাম তখন।
    চোখ খুলতেই চমকালো ইলমা খুশিতে সবাইকে জরিয়ে ধরলো।
    কেঁদে ও দিল। কেক কেটে সবাই হ‌‌ইহুলা করলাম সবাই ক্লাস বাদ দিয়ে আমাদের এখানে এসে পরেছে সবাই একটু একটু কেক ও দিলাম।
    ক্লাস শেষ এ ইলমা আমাদের ফুসকার ট্রিট দিল আমি পরপর তিন প্রিলেট ফুসকা একা খেলাম। খাওয়ার পর মনে পরলো আমার এতো খাওয়া ঠিক হয়নাই। কারন ফুসকা বেশি খেলে আমার পেট ব্যাথা হয়। কোন মতে বাসায় চলে এলাম। কাউকে বলার সাহস করলাম না বকে শেষ করবে।

    রাতে আর থাকতে পারলাম না আম্মুকে বলে দিলাম। আম্মু শুনে চিন্তায় পরে গেল কারণ আজ আব্বু বাসায় নাই। কাজে ঢাকার বাইরে গেছে। আমি পেট ধরে কান্না করছি ফুঁপিয়ে। মামনি চলে এলো বাসায় কিন্তু আন্কেল আর ভাইয়া বাসায় নাই তাদের আজ আর্জেন্ট মিটিং আছে আসতে লেট হবে আম্মু আমাকে ধরে কাঁদছে আর বকে যাচ্ছে।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো(রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 17+18

    পেট চেপে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছি আমি। আমার সামনে বসে আছে ডাক্তার আর পাশে গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে আদনান ভাই। আমার দিকে শক্ত লাল চোখ করে তাকিয়ে আছে পেট ব্যাথার মাঝেও ভাইয়ার দিকে তাকালে আমার কান্নার রেশ কমে যাচ্ছে ভয়ে।
    ডাক্তার চলে গেল আমাকে দেখে ভাইয়া তার সাথে গেল বাইরে। তখন আম্মু গরম পানির ভাপ দিতে এলো আমার পাশে আমাকে ছুঁতে বলে ভাপ দিতে লাগলো এতে নাকি ব্যাথা কমে।
    কাঁদতে কাঁদতে আমার নাক মুখ লাল হয়ে গেছে।
    ভাপ দেওয়ায় ব্যাথা কম লাগছে হালকা দশ মিনিট পর ভাইয়া এলো ওষুধ নিয়ে। তার দিকে তাকালেই আমি ভয়ে আতকে উঠি।
    আম্মু উঠে বাইরে চলে গেল গরম পানি রাখতে মামনি আমার পাশে বসে আছে।
    ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।

    কি খেয়েছিলি?
    ভাইয়া এখন ও জানে না কি জন্য এতো পেট ব্যাথা হয়েছে আমার। তখন মামনি ভাইয়াকে কল করে বলেছিল আমার কথা আর ছুটে চলে এসেছে। ডাক্তার নিয়ে এসেছে ভাইয়া জানে আমি গন্ডগল করে কিছু খেলেই এমন হয়। তাই তো এমন গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে ছিল এখন সূযোগ পেয়েছে আর দেবে আমাকে।
    “কি হলো বল? কি খেয়েছিলি আজকে আবার?”
    ভাইয়া শক্ত কন্ঠে আমি ভয়ে মামনির হাত শক্ত করে ধরে শুয়ে আছি।
    আমি কিছু বলছি না দেখে ভাইয়া এবার চিৎকার করে উঠল।
    আমি কেঁপে উঠলাম। মামনি ও আতকে উঠলো এবং ভাইয়াকে একটা ধমক দিল।
    “কি হচ্ছে কি আদনান তুই এমন করে দোলাকে ভয় কেন দেখাচ্ছিস? দেখছিস তো ভয় পাচ্ছে?”
    ভাইয়া উত্তেজিত হয়ে হয়ে আবার বলল,,,” এন্সার মি। আর আম্মু প্লিজ ওর হয়ে কথা বলো না।”
    আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,,,
    “ভাইয়া আমি কিছু করিনি।”

    আমার বলতে দেরি হলো ভাইয়ার আরেক ধমক দিতে দেরি হলো না।
    “চুপ মিথ্যুক। সত্যি করে বল।”
    আম্মু ও ততক্ষণে এ চলে এসেছে। আর রেগে ভাইয়াকে সব বলে দিল।ভাইয়া সব শুনে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে টেনে বিছানার উপর বসিয়ে দিল।
    আমি কাঁপতে কাঁপতে উঠে বসলাম। ভাইয়া কিছু বলবে তার আগেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।
    সবাই আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে আগেই বলেছি। আমার কান্না দেখেই ভাইয়া ও থেমে গেল।

    আমি কান্না গলায় বললাম,,,”আর এমন করবো না প্রমিজ।”
    ভাইয়া কড়া গলায় বলল,,”ইডিয়েট একটা তিন প্রিলেট ফুসকা কেউ খায়। রাক্ষসী একটা মরার শক হয়েছে তোর তাইনা। এতো খেয়ে আবার লুকিয়ে ছিলি‌।”
    “আর খাব না। আমি আর জীবনেও ফুসকা খাব না।”
    কাঁদতে কাঁদতে বললাম।
    ভাইয়া আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি কান্না করছি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। ভাইয়া আমার দুগালে নিজের হাত রাখলো। আচমকা ভাইয়া এভাবে ধরায় চমকে উঠলাম।
    কান্না থেমে গেল আমি স্তব্ধ হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমার চোখের পানি নিজের হাত দিয়ে মুছে দিল আমি হতদম্ব হয়ে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি।
    ভাই আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,,
    “আর কখনো যেন এমন করতে না দেখি।নিজের ভালোটাতো বুঝবি কবে বল। তোর ভুলে অন্যের ক্ষতি তো হলো না তোর নিজের ক্ষতি হলো। নিজে কষ্ট পেলি সাথে আমাদের কেও কষ্ট দিলি।”

    “সরি ভাইয়া আর এমন করবো না। আসলে তখন সবার সাথে খেতে খেতে কখন যে এতো বেশি হয়ে গেছে বুঝিনি।”অসহায় মুখ করে।
    ভাইয়া রেগে না নরম হয়েই বললো,,
    “আচ্ছা। এতোটা ছেলে মানুষি ভালো না এখন নিজের কেয়ার নিতে শিখ।”
    আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
    ভাইয়া আচমকা আমার কপালে কিস করলো। আমি বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে গেলাম। বড় বড় চোখ করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম কিন্তু ভাইয়া কাজটা করে এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেল।
    আমি বাকরুদ্ধ হয়ে ভাইয়ার যাওয়ার পাশে তাকিয়ে আছি।

    আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। ভাইয়া এমন করলো কেন? চারপাশে তাকিয়ে দেখি আম্মু মামনি কেউ নেই আমি একা তারমানে কেউ দেখেনি।
    আমি বিস্মিত হয়ে নিজের হাত কপালে রাখলাম সাথে সাথে কেঁপে উঠলাম। মনে হচ্ছে ভাইয়ার শরীরে স্পর্শ করছি।
    হার্টবিট অতিরিক্ত মাত্রায় লাফাচ্ছে। আমি ওইভাবেই স্তব্ধ হয়ে বসে র‌ইলাম। তখন আম্মু আসলো।
    আর আমাকে বললো,,
    ” কিরে এভাবে বসে আছিস কেন পাথর হয়ে?”
    আমি হকচকিয়ে গেলাম আম্মুর কথায়।
    “কি হলো চমকালি কেন?”
    আম্মু কথায় নিজেকে স্বাভাবিক করলাম।
    “ক‌ই কিছু হয়নি তো।”
    “তাহলে…
    “আম্মু আমার পেট…
    মাকে কথা ঘুরানোর জন্য বললাম। আম্মু আমার পেট এর কথা শুনেই আর কিছু বলল না আমাকে শুতে বলল।
    আমি ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করলাম আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
    আমি চোখ বন্ধ করে ও ঘুমাতে পারছি না বারবার ওই সময়ের কথা মনে পরছে।

    ওইভাবে কখন ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই। পরদিন সকালে উঠে চমকালাম। কারন রাতে আমি একটা সপ্ন দেখেছি তাও রোমান্টিক সপ্ন সেটা আর কাউকে নিয়ে না ভাইয়া কে নিয়ে।
    দেখেছি ভাইয়ার আর আমি হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছি সাগর পারে। ভাইয়া আমার হাতে চুমু খেয়ে বলছে আমকে খুব ভালোবাসে।
    আমি বড় বড় চোখ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি যেন সপ্ন দেখছি।
    সপ্নে আমি এসব দেখেছি। ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে এসব কেন দেখলাম।

    উঠে ওইভাবেই বারান্দায় এলাম আর ভাইয়ার রুমে জানালা দিয়ে উঁকি দিলাম।
    ভাইয়া ঘুমিয়ে আছে আমি হাঁ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছি ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে।
    হ্যা হতেই পারে কাল ইলমা রাও তাই বলেছিলি।
    কিন্তু ভাইয়া আমাকে ভালোবাসলে বলে না কেন? সমস্যা কি?
    আজকে থেকে আমার মিশন শুরু ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে কিনা জানতেই হবে।
    আমি নাচতে নাচতে রুমে এলাম পেট ব্যাথা কমছে কিন্তু একটু একটু আছে আর লাফালাফি করলাম না ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে সোফায় বসলাম।
    হাতে চিপস নিয়ে খেতে লাগলাম আম্মু এসেই দিল ধমক আর চিপস নিয়ে চলে গেল।
    আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি আম্মুর দিকে এসব খেলে নাকি পেটের পেন বারবে তাই।

    আমি কি মনে করে বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম।সোজা মামনির বাসায় চলে এলাম।
    বাসায় এসেই মামনির সাথে দেখা না করেই আদনান ভাইয়ের রুমে এলাম পা টিপে টিপে।
    আদনান ভাই বুকে ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। আমি আস্তে আস্তে ভাইয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম তারপর হা করে তাকিয়ে র‌ইলাম।
    ভাইয়ার পরনে কালো গেঞ্জি আর ট্রাউজার।
    হালকা পাতলা একটা চাদর গায়ে জড়ানো ভাইয়ার মাথায় খাড়াখাড়া চুল এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে আছে। ভাইয়ার কপালে একটা তিল আছে বাম ভ্রু এর উপরে হাল্কা লাল লাল। ভাইয়ার ফর্সা ধবধবে গায়ে রং। ভাইয়ার চাপ দাঁড়ি যেটা আমার সব থেকে ফেবারিট।
    আমি নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ভাইয়াকে দেখলেই আমার কেমন কেমন জানি লাগে। এতো ভালো কেন লাগে সত্যি কি ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে।
    এটা যদি সত্যি হয় আমি তো খুশিতে মরেই যাবো।
    আমি ভাবতে ভাবতেই চিৎকার করে উঠলাম।
    আর ভুল করলাম ভাইয়া জেগে গেল। হকচকিয়ে গেলাম ভাইয়ার আওয়াজ পেয়ে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ভাইয়া আমার দিকে ঘুম ঘুম চোখে। আমি ভাইয়ার তাকিয়ে দেখেই ভৌ দৌড় দিলাম কিন্তু আমার কপাল সব থেকে খারাপ।
    এই দেখুন কি করে ফেললাম,,
    উত্তেজিত হয়ে দৌড়ে দিয়েছি কিছু না দেখেই মে আমি যাচ্ছি কোথায় তাই তো পরলাম বিপদে। আমি দৌড়ে একদম খাটে গিয়ে পরলাম তাও ভাইয়ার উপরে।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 18

    চোখ বন্ধ করে ছিলাম ভয়ে। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। একেতে আদনান ভাইয়ের গায়ে সাথে ঘেঁষে আমিও বিছানায় পরে আছি। তার উপর ভাইয়ার আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি একবার তাকিয়ে আবার ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছি।
    আদনান ভাইয়া হতদম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই সময় এখানে আমাকে একদম আশা করেনি।
    হতদম্ব নেস কাটিয়ে বলল,,
    “তুই আমার রুমে কি করছিস?”
    আমি হকচকিয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে এদিক ওদিক তাকাতোকি করতে লাগলাম।
    তারপর ফট করে উঠে বসতে গেলাম বিছানায় থেকে ভাইয়া আমার হাত ধরে আটকে দিল।
    আমি থমকে গেলাম। ভয়ার্ত চোখে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আমার চোখ মুখে অসম্ভব ভয়। ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
    উওরের আশায়।

    “ভাইয়া আমি আসলে ওই তোমাকে ডাকতে এসেছিলাম।”
    কেন? আজকে শুক্রবার তুই জানিস না আমি এতো সকালে উঠিনা।
    “হুম কিন্তু আমি তো ভুলে গেছিলাম।”
    তুই এখানে কেন এসেছিস সেটা বল।
    আমি আচমকা বলে উঠলাম,,,” তোমাকে দেখতে।”
    মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে এলো। কথাটা বলেই চোখ বড় বড় করে জ্বিভে কামড় দিলাম। হায় আল্লাহ কি বলে ফেললাম ভাইয়ার দিকে ঢোক গিলে তাকালাম ভাইয়া আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
    আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। একটা ধমক খাওয়ার জন্য এই বুঝি খেলাম একটা ধমক।
    কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া আমাকে অবাক করে দিয়ে কিছু বলছে না নীরব হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

    আমি কিছু বলতে যাব আদনান ভাই আমার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিল। আমার বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়া তার হাত দিয়ে আমার কপালে চুল সরিয়ে দিল আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। আমার সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ শক খেলে। ভাইয়া আলতো স্পর্শে আমি নাম না জানা অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম দিচ্ছিলাম।
    তখন আমার জল্পনা কল্পনা ভঙ্গ করে ভাইয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসলো।আমি হকচকিয়ে উঠে বসলাম।
    ভাইয়া…
    তুই এখানে এসে ঠিক করিস নি।
    আমি থমকে চুপ করে গেলাম।
    ভাইয়া উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেল। আমি হতদম্ব হয়ে বসে আছি তারপর উঠে বেরিয়ে আসতে গিয়ে দেখি দরজা লক করা।
    মাথায় হাত দিয়ে পিছিয়ে এলাম। ভাইয়া দরজা লক করেছে কেন?
    আমি পেছাতে পেছাতে কারো সাথে ধাক্কা খেলাম তাকিয়ে দেখি ভাইয়া। আমি ভাইয়ার বুকের সাথে ধাক্কা খেয়েছি। আমি ছটকে সরে এলাম।

    ভাইয়া আমাকে বলল,,
    “এবার বল কি বলেছিলি আমাকে দেখতে এসেছিস?”
    বলতে বলতে ভাইয়া আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আমি কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে সরু চোখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে।
    তাঁরপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
    “কি হলো বল?”
    আমি আমতা আমতা করে বললাম,,
    “না মানে আমি তো…
    “তুই একটু আগে এটাই বলেছিলি।”
    আমি মাথা নেড়ে না বললাম।
    “আবার মিথ্যা বলছিস?”
    বলেই আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো আমি হকচকিয়ে পেছাতে লাগল। আচ্ছা ভাইয়া কি আমাকে মারবে। পেছাতে পেছাতে আলমারির সাথে ঢেকে গেলাম। ভাইয়ার আসতে আসতে একদম আমার কাছে চলে এলো।
    “সত্যি আমি ওইটা বলি নাই ভাইয়া।”
    “আচ্ছা তাহলে কি বলেছিস? ”
    “আমি তো বলেছি মা–মনি তো-মা-কে ডা-কতে ব-লেছিল।”
    “তাই কিন্তু আমার তো শুনেছি তুই আমাকে দেখতে এসেছিস।”
    আমি ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে।
    “দেখছিস ও। আচ্ছা কি দেখতে এসেছিলি আমাকে।‌ আগে কখনো দেখেসনি‌।”
    দেখেছি।”
    “তাহলে কি দেখতে এসেছিলি।”
    ‘কিছু না।”
    “সত্যি করে বল।”
    ” তুমি বলে আমাকে ভালোবাস।”
    হুক করে প্রশ্ন করে উঠলাম,,, ভাইয়া আমার কথা হয়তো হজম করতে পারেনি। কথা বলতে বলতে ভাইয়া আমার দিকে ঝুঁকে ছিল আমার কথায় হকচকিয়ে গেল আর মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়ালো।

    আমি নিজেও প্রশ্ন করে ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি।
    ভাইয়া আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে ফুসফুস করে উঠলো।
    “যা বেরিয়ে যা আমার রুম থেকে। এমন কথা তুই বললি কি করে? আর কে বলেছে এই কথাটা।”
    আমি ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম।
    “কি হলো বল কেন এমন কথা বলেছে?”
    আমি ভাইয়ার কথায় কেঁপে উঠলাম।
    “কেউ বলেনি।”
    “তাহলে বললি কেন আর আমার কি দেখে তোর মনে হলো আমি তোকে ভালবাসি।”
    আমি বললাম,,”তুমি
    “হ্যা বল আমি।”
    আমি বললাম,,” কিছু না আমার মনে হয়েছে জাস্ট।”
    ভাইয়া ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,”এইসব মনে কেন হবে তোর।ইডিয়েট?”
    ভাইয়া আমার মাথায় ঢোকা দিয়ে বললো,,
    “লেখাপড়া কর ভালো করে। এসব আজেবাজে চিন্তা মাথায় আনবি না আর।”
    আমি হুম বললাম।
    ভাইয়া বলল,,”মনে থাকবে তো। আর আমার রুমে আসবি না এইভাবে।”
    আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।
    ভাইয়া আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,,,
    ” তোর ব্যাথা কমেছে?”
    আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
    “আর কখনো এমন কাজ করবি না যাতে তোর নিজের ক্ষতি হয়।”
    “আচ্ছা।”
    “যা এবার।”
    “হুম।”
    ভাইয়া হাতের ইশারায় চলে যেতে বলল আমি ছারা পেতেই ভৌ দৌড় দিলাম।
    এক দৌড়ে নিচে এসে হাঁপাতে লাগলাম।
    বুকের উপর হাত রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।
    মামনি আমাকে এতো সকালে বাসায় থেকে চমকালো সাথে হাঁপাতে দেখেও বিস্মিত হলো।

    “কিরে দোলা তুই কখন এলি? আর তোর পেট ব্যাথা কমেছে।”
    “হ্যা মামনি। ”
    “কখন এলি আর উপরেই বা গেলি কখন?”
    মামনি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল।
    আমি বললাম,,” ওই একটু আগে।”
    “ওহ উপরে গেছিলি কেন ?”
    “আমি আসলে ওই…
    কি বলবো বুঝতে পারছি না। এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।
    “কি বল?”
    “তুমি উপরে কিনা দেখতে।”
    মামনি বলল,,”আমি এই সময় উপরে থাকি না। জানিস তো আমি রান্না করি।”
    “আমার ভুলেই গেছিলাম।”
    “আচ্ছা ঠিক আছে।”
    আমি মামনির সাথে চলে গেলাম।

    আজকে কলেজে নেই অফ। তাই বাসায় এসেই ঘুম দিলাম। ঘুম ভেঙে গেল উঠে ছাদে এলাম হাতে ফোন নিয়ে কি মনে করে যেন ভাইয়ার নাম্বার এ কল করলাম। কিন্তু রিসিভ হলো না। কি করবো ভাবতে ভাবতে নেহা কে কল করলাম ও আজকের সব বললাম।
    ও সব শুনে একটা কথায় বলল,,
    “তোর ভাই তোকেই ভালোবাসে আমি সিউর দোলা কিন্তু শিকার করছে না। কোন কারণ অবশ্যই আছে।”
    “আমাকে এতো ধমকাধমকি করলো তাও বলছি।”
    “এখানে ধমক কোথায় খেলি তোর কেয়ার ও তো করলো।”
    “হুম।”
    ফোন কেটে দাঁড়িয়ে আছি। ওমনি চোখ গেল আদনান ভাইয়ের ছাদে ভাইয়া কিনারায় দাড়িয়ে আছে হাতে ফোন। আমি তাকাতেই উঁচু গলায় বলল,,
    “ফোন কেন দিয়েছিস?”
    আমি সব আকাম করেই বসে থাকি ফোন কেন দিলাভ জিজ্ঞেস করতে চলে এসেছে।
    “তোমার সাথে প্রেম করতে।”
    আমার কথায় ভাইয়া হকচকিয়ে গিয়ে।

    “কি বললি?”
    আমার এখন সাহস বেড়ে গেছে। তার মূল কারণ ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে।কেন জানি আমার কথাটা খুব বড় বিশ্বাস হয়েছে।
    “তোমার সাথে প্রেম করার ইচ্ছা হয়েছে।”
    নির্বাক ভঙিতে বললাম।
    “হোয়াট! আর ইউ ম্যাড!”
    “না আমি সত্যি বলছি ভাইয়া তোমার সাথে প্রেম করবো আমি।”
    ভাইয়া এবার রেগে গেল।
    “চর খাবি কিন্তু একটা।”
    “উফফ সব সময় বকো না তো। ভাল্লাগেনা!”
    “বকার মতো কাজ করে বলছিস বকবো না।”
    “হুম বলছি। আর বকার মতো কাজ কি করলাম?”
    “ভাই কে প্রেম করার কথা বলছিস এটা বকার মতো কাজ না বলছিস?” দাঁতে দাঁত চেপে বললো ভাইয়া।
    আমি বললাম,,” কিসের ভাই ভাই করো বলো তো‌। তুমি কি আমার মায়ের পেটের ভাই নাকি হ্যা।আজ থেকে তোমাকে আর ভাই বলবো না যাও ‌”
    “তুই এমন পাগলামী করছিস কেন? আর….
    “এতো কথা না বলে বল প্রেম করবা কিনা।”
    ভাইয়া রেগে চলে গেল ছাদ থেকে আমি সেদিকে তাকিয়ে থেকে দৌড়ে রুমে এসে দরজা আটকে দিলাম।জানি এখন ভাই এখন এখানে আসবে।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো(রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    part 19+20

    দরজা অফ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আর মিটিমিটি হাসছি ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে এটা আমি সিউর হয়ে গেছি। আজ যখন ভাইয়াকে বলেছিলাম ” তুমি বলে আমাকে ভালোবাস?”
    ভাইয়া আমার কথা শুনে হকচকিয়ে গেছিলো তাঁর চোখে মুখে আমি ভয় দেখতে পেয়েছি যেন আড়াল করা জিনিস সামনে চলে এসেছে। ভাইয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
    কিন্তু সমস্যা একটাই ভাইয়া শিকার করছে না। কেন শিকার করছে না এটাই মাথায় আসছে না। কপাল কুঁচকে আঙ্গুল চিবাতে চিবাতে ভাবছি
    কি জন্য ভাইয়া আমাকে নিজের ভালোবাসার কথা বলছে না। আর নাকি আমি ভুল ভাবছি ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে না।
    উফ মাথা খারাপ হয়ে যাবে এতো কিছু ভাবতে গেল। সব ভাবনা দূরে যা। আদনান ভাই আমাকে ভালোবাসে এটাই ঠিক হুম ঠিক না হলে ঠিক করবো।
    ভাইয়া আমাকে ভালো বাসলে ভালো আর না বাসলে বাসিয়েই ছারবো।
    আর তোমাকেও আমি ভয় পাব না ভাইয়া এবার থেকে আমার মিশন শুরু তোমাকে দিয়ে আমি বলিয়েই ছারবো তুমি আমাকে ভালোবাস হু।
    সামনের কাটা ছোট চুল গুলো ফূ দিয়ে উরিয়ে সরিয়ে দিলাম।

    তখনই ঠাস ঠাস শব্দ এলো কানে সাথে ডাক আওয়াজ ভাইয়ার। ভাইয়া জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে দরজায় আমি শব্দ শুনেই চমকে উঠলাম সাথে ভয় পেলাম।
    উফ দোলা তুই এতো ভীতু কেন? এতো ভীতু হলে ওই গম্ভীর খাটাশ আদনান এর সাথে প্রেম করবি কেমনে? তোকে সাহসী হতে হবে।
    আমি আর তোমাকে ভয় পাব না ভাইয়া।
    ওই পাশ থেকে দরজার এতো জোরে ধাক্কাচ্ছে যেন দরজা ভেঙে ফেলবে?
    “দরজা খোল দোলা।”
    ভাইয়া আমাকে দরজা খুলতে বলছে খুললেই আমাকে দ
    ধমকানো শুরু করবে জানি কিন্তু আজকে আমি ধমক খাবো ইচ্ছে করে।
    তার আরো আধাঘণ্টা পর আমি দরজা খুললাম। ততক্ষনে আমার দরজা মনে হয় অধেক ভেঙে গেছে উফ।

    আদনান দরজার বাইরে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আধাঘণ্টা ধরে দরজা ধাক্কা ধাক্কি করছে কিন্তু খুলছে না দোলা। রাগে ওর শরীর কাঁপছে।
    অবশেষে দরজা খুলা হলো দরজা খুলতেই আদনান রেগে ভেতরে ঢুকে গেল।
    “তোকে আজকে আমি কি করবো নিজেও জানি না দোলা। তুমি লিমিটের বাইরে চলে গেছিস আজ তোর…
    আর কিছু বলতে পারলো না দোলাকে দেখে। আমি মুচকি মুচকি হাসছে আদনান ভাই এর দিকে তাকিয়ে।
    আদনান ভাই আমার দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থাকবে না কেন আমি যে শাড়ি পরে আছি আসলে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না তখন মনে পরলো ভাইয়া শাড়ি পছন্দ করে শাড়ি পরে ফেলি কিন্তু সমস্যা আমি তো শাড়ি পরতে পারি না।
    ইউটিউব দেখে কোন রকম পেচিয়ে পরেছি শাড়ি।
    ভাইয়া আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে আমি এখানে ঠিক করছি তো ওখানে এই ভাবে হা করে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় পড়া ভুল হয়েছে।
    “উফ ভাইয়া এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার শাড়ি পড়া কি ভুল হয়েছে।”
    ভাইয়া কিছু না বলে আচমকা হাহাহা করে হেসে উঠলো আমার তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে।
    “কি হলো ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো হাসছো কেন?”

    “এটা কি পরেছিস?”
    “তোমার কি চোখ নাই দেখছো না শাড়ি পরেছি।”
    গাল ফুলিয়ে বললাম।
    “এটা শাড়ি পড়া হয়েছে।” বলেই আবার হাসতে লাগলো।
    “উফ এতো ভুল ধরো না তো! কতো কষ্ট করে শাড়ি পরলাম কোথায় প্রশংসা করবে তা না ভুল ধরছো!এ আমি কার প্রেমে পরলাম রে বাবা।”
    আমার কথা শুনেই ভাইয়ার হাসি থেমে গেল আর মুখ টা গম্ভীর করে ফেলল।
    “কি বললি?”
    আমি বললাম,,”ক‌ই কি বললাম?”
    “কার প্রেমে পরেছিস?”
    আমি ভয় পাচ্ছি ভেতরে ভেতরে এই বুঝি খাবো একটা চর। ভীতু হয়ে আসছে আমার চোখ মুখ।
    তবুও সাহস রাখছি না না একদম ভয় নয় ভয় পেলে ভাইকে পাওয়া হবে না।
    সব ভয় ভুল সাহসী হতে হবে। হুম দোলা সাহসী ইয়েস।
    ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমি ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিলাম এবার না পিছিয়ে থেমে গেলাম। আর সাহসী হয়ে ভাইঢ়ার চোখের দিকে তাকালাম।
    আমাকে থেমে যেতে দেখে ভাইয়া ও থেমে গেল।
    হয়তো আমার এমন লুক ভাইয়া আশা করছি নি। আমার ভয় পাচ্ছি না এটা ভাইয়া দেখে চরম অবাক।
    আমি দুইপা এগিয়ে একদম ভাইয়া কাছে চলে এলাম ভাইয়া থতমত খেয়ে গেল আমার এগিয়ে আসা দেখে।
    “ভাইয়া ভয় পেলে আমাকে এগিয়ে আসতে দেখে।”
    ভাইয়া বড় বড় চোখ করে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার কথা হয়তো হজম করতে পাচ্ছে না যে আমি কিনা ভাইয়াকে দেখলে ভয়ে কাঁপতে থাকি সেই আমি এতো সাহস দেখাচ্ছি। আসলেই আজ ও কাঁপছি সেটা বাইরে না ভেতরে।যা ভাইয়া দেখতে পাচ্ছে না আমি জানি সেটা।
    আমি ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললাম ভাইয়া কিছু বলল না অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
    আমার এটা দেখে আরও সাহসি হয়ে উঠলাম কারণ এখনো ভাইয়া আমাকে ধমক দেয়নি। আর আচমকা ভাইয়ার গলা জরিয়ে ধরলাম।
    আমি জ্বিভা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছি ভয়ে এর কারণে এর পরিমান কি হবে জানি না। ভাইয়া এবার চমকের চরম সীমায় পৌঁছে গেল। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চমক নেস কমিয়ে বললো,,,

    “কি করছিস এসব ছার আমাকে?”
    গলার হাত ছুকানোর চেষ্টা করতে করতে। আমি ছারছি না আর ও শক্ত করে ধরে নিয়েছি।
    “কি অসভ্যতামি হচ্ছে ছার? আমি তোর ভাই হয় সম্পর্কে?”
    “ভাই মাই ফুট।ইউ আর মাই লাভ। আমি ভালোবাসি তোমায় তূমিও তো আমি জানি তাই এতো আক্টিন না করে শিকার করো।”
    “দোলা আমার গলা থেকে হাত সরা আমি তোকে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করতে চাইছি না। ভালোই ভালোই ছেড়ে দে আর পাগলামি করা বাদ দে।”
    “আমি কোন পাগলামি করছিস না ভাইয়া। তুমি আমাকে ভালোবাসো শিকার করো না।”
    ভাইয়া বিরক্ত হয়ে নাক মুখ কুঁচকে বলল,,
    “কে তোকে এমন আজগুবি কথা বলেছে আমাকে বল?”
    “কেউ বলে নি আমি জানি।”
    “আচ্ছা বলতো আমাকে শাড়ি পরে কেমন লাগছে। আজ প্রথম তোমার জন্য নিজে কষ্ট করে শাড়ি পরেছি‌।”
    ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
    “ছারবি নাকি?”
    আর সাহস কোলালো না ফট করে ছেড়ে দিলাম ভাইয়াকে আর একটু দূরে এসে দাঁড়ালাম।

    “তুই খুব ভার বেড়ে গেছিস। এইসব…
    “ভাইয়া ওফ সরি ভাইয়া তো বলবো না বলেছিলাম “কিন্তু অনেকদিনের অভ্যাস তো তাই ভুল হচ্ছে।”
    আর একবার বাজে কথা বললে একটা চর মেরে দাঁত ফেলে দেব।”
    “উফ ভাইয়া একটা চর মারলে কি দাঁত পরে। তুমি কি যে বলো না।”
    “আবার মুখ মুখে তর্ক করছিস ইডিয়েট।”
    “তর্ক কোথায় করলাম ভাইয়া।আর তুমি আমার সাথে প্রেম করবে থেকে করবা বললে না তো।”
    “আবার এবার কিন্তু সত্যি…
    ভাইয়া কথা শেষ করার আগেই আম্মু চলে এলো রুমে আর আমাদের বলল,,
    “কি হয়েছে আদনান বেটা?”
    আমি কাচুমাচু মুখ করে একবার ভাইয়া তো একবার আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছি। আম্মু এক এসব বলে দেবে না তো।
    আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
    ” তুই শাড়ি পরেছিস কেন?”
    আমি আমতা আমতা করে বললাম,,
    “ওই আসলে পড়া শিখেছিলাম।”
    আম্মু অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, সত্যি
    আমি হুম বললাম। আম্মু বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
    আদনান ভাই আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে থেকে ফুসফুস করতে করতে আম্মু কে নিয়ে চলে গেল।
    আমি দাঁত দিয়ে নখ কাটছি আর ভাবছি আম্মু কে সব বলে দেবে না তো ভাইয়া।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 20

    রাতে একেবারে খেতে বের হলাম আম্মুর রিয়াকশণ দেখে তো মনে হচ্ছে না ভাইয়া কিছু বলেছে। ভাইয়া তার মানে কিছু বলে নি খুশিতৈ খাওয়ার টেবিলেই চেঁচিয়ে উঠলাম,,,
    আমার চেঁচানো দেখে আব্বু আম্মু দুজনেই চমকে তাকালো।
    “কিরে এভাবে চেঁচিয়ে উঠলি কেন?”
    আম্মু বলে উঠলো আব্বু বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
    আমি আম্মুর কথায় চমকে উঠলাম।‌ হতদম্ব হয়ে র
    তাদের দিকে তাকালাম।
    “কি হলো এমন অবাক হয়ে তাকাচ্ছিস কেন? চেচালি কেন?”
    “আম্মু আমি ওই আসলে।”
    তোতলাতে লাগলাম।
    “তোতলাচ্ছিস কেন?” আম্মু সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
    আব্বুর চোখে মুখেও প্রশ্ন।
    ‘আম্মু আব্বু আমি না একটা কথা মনে করে চিৎকার করেছি?”
    “কি কথা?”
    “ওই আসলে হ্যা আমার না একটা সিনেমার কথা মনে পরেছিল তাই।”
    আমি ভয়ে ভয়ে দুজনের দিকে তাকাচ্ছি বিশ্বাস করেছে কিনা কে জানে? কিন্তু কেউ আর কিছু বলল না। খাওয়া শেষ করে রুমে এসে দরজা আটকে দিলাম।

    বিছানায় শুয়ে ভাবছি কি করা যায় হুট করেই উঠে বসলাম আর ফোন বের করলাম। তারপর ভাইয়ার নাম্বার এ কল করলাম।
    রিং হচ্ছে আর আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে আজকে আমি ভাইয়ার সাথে প্রম করবো? ভাবতেই মন টা নেচে উঠছে।
    ফোন বেজে কেটে গেল আমি রেগে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি আবার কল করলাম। এবারো তাই আবার করলাম এবার ভাইয়া কেটে দিল।তারমানে ইচ্ছে করে ফোন রিসিভ করছে না।
    আমার ফট করে উঠে বারান্দায় এলাম আর এসেই দেখি ভাইয়া রেগে দাড়িয়ে আছে হাতে ফোন।
    আমি আবার কল করলাম কারণ এখন কথা বলল বাসর কেউ জেগে যেতে পারে।
    এবার ভাইয়া রিসিভ করলো আর কর্কশ গলায় বললো,,,
    “এতো রাতে না ঘুমিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে জ্বালাচ্ছিস কেন?”

    “জ্বালানি শুরু করার আগেই বলছো জ্বালাচ্ছি?”
    ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম।
    “মানে!”
    “মানে আবার কি? মানে তো বিকেলেই বলে দিলাম আমি প্রম করবো। কিন্তু তুমি তো ফোন‌ই রিসিভ করছিলে না।”
    “তোর পাগলামি আবার শুরু হয়েছে‌।”
    “এটা পাগলামো না এটাকে ভালোবাসা বলে।”
    মুচকি হেসে বলে উঠলাম।
    ভাইয়া দাঁত কিড়মিড় করে বলল,, “আর একটা বাজে কথা বললে কিন্তু আমি তোকে ঠাস করে চর মারবো।”
    “তুমি আমাকে মারতে পারবা।”
    “পারবো না কেন?”
    “উফ মারবা কেন ভালোবাসার মানুষ কে কেউ বুঝি মারে। চাইলে কিস করতে পারো।”
    লজ্জা মাখা গলায় বললাম।
    ভাইয়া বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে‌।
    “ছিঃ লজ্জা করছে না তোর ভাই কে এসব বলতে।”
    “তুমি আর আমার ভাই না বলছি না।এখন একবার ও ভাই বলেনি দেখ না‌। আর বলবো না।”
    “তুই পাগল হয়েছিস।”
    “বারবার পাগল কেন? বলছো আমি পাগল কেন হবো‌?”
    “ফোন রাখ ফালতু কথা বার্তা না বলে আর এসব বলতে আমাকে কল করবি না।”
    “এমা কি বলছো এখন‌ই ফোন কেন রাখবো ? এখনো ও তো করা শুরু ই করলাম না।”
    “হোয়াট কিসের কথা?”
    “প্রমের কথা।”
    “তুই এখন সামনে থাকলে চরিয়ে তোর গাল লাল করে ফেলতাম ইডিয়েট!”
    “পারতা না তুমি আমাকে একটু ও মারতে পারতা না।”
    “কে বলছে আপনাকে মারতে পারতাম না?
    আমি জানি।”
    ‘ভুল জানিস। তুই দিন দিন একটা বেয়াদব হয়েছিস তোকে আমার মারতে একটু হাত কাঁপপে না।”
    “ধুর ভালো লাগেনা, কোথায় একটু প্রেম করবা রোমান্টিক কথা বলবা তা না খালি ধমকাচ্ছো।”
    “ফাজিল রুমে গিয়ে ঘুমা ফালতু কথা না বলে।”
    কথাটা বলে ভাইয়া ফোন রেখে দিল। আর হাত দিয়ে আমার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়তে বলল।
    আমি ও ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কি আর করব আসলে এখন আমার ঘুম পাচ্ছে।

    পরদিন সকালে কলেজে যাব তাই রেডি হয়ে নিচে নামতেই ভাইয়ের সাথে হলো। ভাইয়া রেখে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে যেতে দেখে ঝড়ের গতিতে আমার সামনে এসে হাতের বাহু শক্ত করে ধরল। আমি হকচকিয়ে গেলাম। দূর থেকে আমি যত‌ই সাহস দেখায় না কেন কাছে এলেই ভীতু হয়ে যাই‌।
    “ভাইয়া কি করছো ছাড় আমার ব্যাথা লাগছে!”
    হাত ছারানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম।
    ভাই আরো শক্ত করে ধরে বলল,,,
    “কাল রাতে কি বলছিলি কি বলছিলি বল?”
    “কি বলছিলাম?”
    “চড় মারবো কিন্তু একটা। বল কি বলছিলি? প্রেম করবে আমার সাথে? আমি তোকে কিস ছিঃ এসব কথা কি করে বলতে পারলি।”
    ‘বলেছি বেশ করেছি। আমি কি তোমার মতো ভীতু নাকি?”
    ভাইয়া হতভম্ব হয়ে বলল,,,”কি বললি আমি ভীতু? ভীতুর কি করেছি আমি।”
    “করেছে তো ভালোবাসা অথচ বলতে পারো না।”
    “কে কাকে ভালোবাসে?”
    “কে আবার তুমি আমাকে?তুমি আমাকে “ভালোবাসো কিনা সেটা বলো না লুকিয়ে রাখ আমিতো তোমার মতো ভীতু না। দেখনা কত সাহসী তোমাকে বলে দিয়েছি আমার মনের কথা।”
    “কি হল কথা বলছো না কেন ভাইয়া তুমি আমাকে ভালোবাসো না সত্যি করে বল।”
    “বললাম তো ভালোবাসি না। না এসব কথা আর বলবে না।”
    বলে ভাই আমাদের ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। আমি ভাইয়া যাওয়া দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর কলেজে চলে এলাম।

    দুইটা ক্লাস আজকে হলো না তাই আগেই ছুটি হয়ে গেল গেটের বাইরে এসে আইসক্রিম কিনে খাচ্ছি আর গাড়ির জন্য ওয়েট করছি তখনই কোথা থেকে একটা ছেলে এলো।ছেলেটাকে দেখে কিছুটা চেনা চেনা লাগছে কিন্তু চিনতে পারছিনা ছেলেটা একদম মুখোমুখি দাঁড়ালো। আমি ব্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি।
    “হ্যালো মিস চিনতে পারছেন আমাকে?”
    ছেলেটার কথায় অবাক হলাম তারপর মাথা নেড়ে বললাম না।
    ‘আরে ম্যাডাম এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন।”
    “আচ্ছা আমি কি আপনাকে চিনি আমার চেনা চেনা লাগছে কিন্তু মনে করতে পারছিনা।”
    “অবশ্যই চেনেন আপনার জন্য আমার কি হাল হয়েছিল।”
    “আচ্ছা আপনার সাথে আমার কোথায় দেখা হয়েছে কিভাবে চিনি আপনাকে?”
    “ওইযে শপিংমলে আপনি আমার শরীরে কেক ফেলে দিয়েছিলেন।”
    “ওপসস ভুলে গিয়েছিলাম। মনে পড়েছে।”
    তাও ভাল মনে পরেছে আমি তো ভাবলাম একদম ভুলে গেছেন।”
    ‘তা আপনি এখানে কি করছেন?”
    “এই দিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই আপনাকে দেখলাম চলে এলাম কথা বলতে।”
    ‘ও তা কি কথা বলবেন?”
    “এমনি পরিচিত হয় সেই দিন তো শুধু ঝগড়াই করেছিলাম।”
    “তা ঝগড়া করবোনা আপনার জন্যেই তো এসব হয়েছিল।”
    “এই যে ম্যাম পড়ে কিন্তু আমি আপনাকে কেক কিনে দিয়েছিলাম।”
    “হুম তা দিয়েছিলেন।”
    “আচ্ছা তা ম্যাডামের নাম কি?”
    ‘নাম দিয়ে কাম কি?”
    “কেন নাম কি জানতে পারি না।”
    “বলেন নাম জেনে কি করবেন?”
    “কি আর করব জেনে রাখবো যদি কখনো দেখা হয় নাম ধরে ডাকবো।”
    ‘আচ্ছা আমার নাম দোলা। আমার নাম কি?”
    ‘আমার নাম আরাফাত হোসেন।”
    ‘ও আচ্ছা আমার গাড়ি চলে এসেছে যায়।”
    ‘ওকে আপনার বাসাটা কোথায় চলে যান।”
    আমি বাসার ঠিকানা দিলাম না চলে এলাম।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো(রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 21+22

    লোকটা আমার কলেজে আসলো আবার আমার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা ও বলল। দূর থাক গে।
    বাসায় এসে আদনান রুমে উঁকি মারলাম কেউ নাই‌।
    ভাইয়া অফিস এ মনে হয় সন্ধ্যায় পরে আসবে।
    আমি খাবার খেয়ে ঘুম দিলাম উঠে মাঠে এলাম। আজকে খেলবো ওরনা কোমরে বেঁধে খেলতে লাগলাম।
    আমি বল ছুরছি। সামনের জনকে একবারেই আউট করে দিলাম সবাই মিলে আনন্দ এ লাফিয়ে উঠলাম।
    আর ইমন মুখ ছোট করে বাট রেখে চলে গেল। আবার আরেক জন এলো আমি আবার বল করার জন্য দৌড় দিলাম তখন বল ছুরার আগেই কোথা থেকে ভাইয়া চলে এলো।
    ভাইয়াকে দেখেই আমি বল হাতে নিয়েছি দাঁড়িয়ে পরলাম।
    ভাইয়া রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

    আমি ভাইয়া দেখেই হতদম্ব হয়ে গেলাম। ভাইয়া এখানে কা করছ? এখন অফিসে থাকার কথা।
    ভাইয়ার দিকে ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি ভাইয়া আশেপাশে তাকিয়ে বলল,,,
    “আবার তুই এখানে লাফালাফি করছিস?”
    শক্ত মুখ করে বলল।
    আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি ভাইয়া দিকে ভাইয়া আমার কোমরের দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বললো,,,
    “ওরনা কি কোমরে বেঁধে রাখার জিনিস?”
    রেগে বললো।
    আমি বললাম,,” না তো। ”
    “তাহলে ওখানে কেন?”
    “খেলছিলাম তাই।”
    ভাইয়া কোমর থেকে ওরনা ছারিয়ে আমার গলায় দিয়ে দিল। তারপর আর কিছু না বলে হাত শক্ত করে ধরে বলল।
    ‘চল।”
    আর কিছু বললাম না। ভাইয়ার সাথে চলতে লাগলাম ভাইয়া মাঠ ছেড়ে আসতেই থামলো আর বলল,,,
    “তোকে বলেছিলাম না এখানে এসে লাফালাফি না করতে।”
    আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।
    “তাহলে কেন এসেছিস? এসে থামিসনি বাচ্চাদের মত লাফালাফি করছিস?”
    ভাইয়া মৃদু চিৎকার করতে লাগলো।

    নাক মুখ কুঁচকে ভাবছি কি করা যায়?
    “কি হলো এখন বোবা হয়ে গেলি কেন?”
    ভাইয়া আমার দুই কাঁধে হাত রেখে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বললো।
    “উফ ভাইয়া ঝাকাচ্ছো কেন?”
    বলেই হাত সরাতে চাইলাম।
    ‘তুই আমার কথা অমান্য করে কেন খেলেছিস?”
    ‘খেলেছি বেশ করেছি।”
    র্নিবিক ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললাম।
    ভাইয়া আমার কথা শুনে রাগে ফায়ার হয়ে যায়।
    “কি বললি? তা করেছিস বেশ করেছিস?”
    “হুম, আমি তোমার কথা কেন শুনতে যাব। তুমি কি আমার কথা শুন!”
    ভাইয়া রেগেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
    “রাগছো কেন? তুমি কি আমার কথা শুনেছো শুনোনি তো। আমার সাথে প্রম করতে বলছি করছোই না খালি ধমকাধমকি করো।”
    “ফাজিল মেয়ে ভাইয়া কে প্রমের প্রস্তাব দিতে লজ্জা করেনা।”
    “না করে না তুমি আমার আপন ভাই নাকি। চাচাতো ভাইও না তুমি আমার কোন সম্পর্কের ভাই না। আব্বু আর আন্কেল বন্ধু তাই জাস্ট ভাই বলি। তোমার সাথে প্রেম করাই যায়।”
    “তোর মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে।”
    “হুম শুধু তোমার জন্য।”
    “চুপ বেয়াদব।”
    “ধুর সব সময় ধমকাবেনা তো। একটু সুন্দর করে রোমান্টিক হয়ে কথা বলতে পারোনা!”
    “তোর সাথে কথা বলাই বেকার।”
    বলে ভাইয়া আমাকে রেখেই বিরক্ত হয়ে চলে যেতে লাগল।

    আমি দৌড়ে ভাইয়ার হাত ধরে ফেললাম।
    ভাইয়া আমার দিকে শক্ত চোখে তাকালো।
    ‘কি হলো হাত ধরলি কেন তার?”
    “না চলো আমার সাথে।”
    “হাত ছার। আমি কোথাও যাব না তোর মতো বেয়াদবের সাথে।”
    ভাইয়াকে নিতেই পারলাম না। তাও হাত ছারলাম না।
    “হাত মারতে বলেছি তো।”
    “ছারবো না।”
    ভাইয়া গম্ভীর হয়ে বলল,,,
    “দোলা।”
    “হুম ছারবো কেন? একটু আগে তো তুমি‌ই জোর করে হাত ধরে নিয়ে এলে। এখন আমি তোমাকে ধরে থাকবো।”
    “পাগল করে ছারবি তুই আমাকে।”
    বলেই ভাইয়া আর হাত ছারালো না বিরক্ত হয়ে হাঁটতে লাগলো।
    আমি বাসার কাছে এসে হাত ছেড়ে দৌড়ে বাসায় চলে এলাম।

    পরদিন কলেজে গিয়ে আবার দেখি হলো আরাফাতের সাথে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
    আমাকে দেখেই দাঁত কেলিয়ে হেসে আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি লোকটা আজ আবার এখানে কি করছ?
    “হাই দোলা , কেমন আছো?”
    আমি নাক মুখ কুঁচকে বললাম,, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?”
    “আলহামদুলিল্লাহ।” হেসে উঠলো।
    ‘তা আজ আবার এখানে কি করছেন?”
    চোখ ছোট ছোট করে বললাম।
    “এতো এই দিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যাই।”
    “আপনি আজকেও এই দিক দিয়ে যাচ্ছিলেন কেন?”
    “একটা কাজ আছে।”
    “ভালো তা কাজ না করে আমার জন্য দাঁড়ানোর কারণ টা বুঝলাম না।”
    “এমনি ভাবলাম।”
    “উফফ আপনি এটা কেন ভাবলেন ? আর আমার সাথে দেখা করে আপনার কি লাভ?”
    “সে তো কতোই লাভ?”
    “কি বললেন?”
    “কিছু না আসলে কাল পরিচিত হলাম তাই আর কি।আপনি কি বিরক্ত আমাকে দেখে।”
    আমার লোকটার দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছি। লোকটাকে কেন জানি সুবিধার মনে হচ্ছে না। কিন্তু সেটা তো বলা যায় না তাই বললাম,,

    “না না তা হতে যাব কেন?”
    ‘আমার মনে হচ্ছে আমাকে দেখে আফনি খুশি না।”
    “আপনাকে দেখে আমি কেন খুশি হতে যাব। কে না কে কিন্তু অবাক হয়েছি।”
    “আচ্ছা আর আসবো না‌।”
    ‘আমি আপনাকে আসতেও মানা করেনি‌। কিন্তু আমার জন্য এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন না আমার ভালো লাগেনা।”
    “আপনি আমাকে খারাপ ভাবছেন?”
    “সেটা ভাবাটা কি অস্বাভাবিক?”
    “না এটা ভাবাটাই ঠিক আছে। কিন্তু আমার খারাপ না।”
    “ওকে ভালো থাকবেন। আমার ক্লাস আছে।”
    ‘আচ্ছা বাই।টেক কেয়ার!”
    হালকা হাসির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে কলেজে ঢূকে গেলাম।

    নেহাদের সাথে ক্লাসে বসে আছি আর ওই আরাফাতের কথা বলছি ওরা শুনেও অবাক। আবার বলল,
    “ওই ছেলেকে আবার দেখলে আমায় ঢাকিস তো।”
    সুমাইয়ার কথায় সবকটা চোখ বড় করে তাকালো।
    ‘কেন তোকে কেন থাকবে?”
    “এমনি!”
    “এমনি নাকি অন্য কিছু।”
    ওরা সবাই সুমাইয়াকে জেরা করতে লাগলো আমি থামালাম।
    “আমি এখন কি করবো বল তো ভাইয়া তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।”
    মুখটা মলিন করে বললাম।
    নেহা বলল,,”আসলেই তোর ভাই এতো চাপা কেন রে?”
    “আচ্ছা আমাদের বুঝতে ভুল হচ্ছে না তো। এমন না তো ভাইয়া আমাকে ভালোই বাসে না আমাদের ধারনা ভুল।”
    ইলমা বললো,,” ইম্পসিবল দোস্ত। এটা ভুল হতেই পারেনা। তোর ভাই তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে আমি সিউর!”
    “তুই এতো সিউর হচ্ছিস কি করে বল তো!”
    “আরে এখন ও বুঝিসনি গাধা। তোকে ভালো না বাসলে এখন ও না মেরে আস্ত রাখতো। তুই যা সব শুরু করছিস এসবের জন্য কি তোর বাবা মাকে জানাতো না। ”
    জানিনা।
    “গাধা এসব করে নি তার একটাই কারণ তোকে আদনান ভাই পাগলের মত ভালোবাসে। কিন্তু সমস্যা একটাই বলে না কেন? স্বীকার করতে সমস্যা কোথায়?”
    “জানিনা।ভাইয়া সব সময় ইগনোর করে রে আমাকে। কতো পাগলামো না করলাম।”
    বলেই মুখটা ছোট করলাম।
    “ডোন্ট ওয়ারি দোস্ত আমরা আছি তো ঠিক একটা বুদ্ধি বের করবোই তোর ওই গোমড়া মুখ ভাইয়ের মুখ থেকে ভালোবাসি বের করেই ছাড়বো।”

    ক্লাস শেষে বাসায় আসলাম। তারপর খাওয়া দাওয়া করে ঘুম উঠে আদনান ভাইয়ের বাসায় এসে পরলাম।
    ভাই এখন বাসায় নাই আমি তার রুমে গিয়ে ল্যাপটপ ধরলাম। ভাইয়ার আইডিতে ঢুকতে হবে দেখবো কোন গার্লফ্রেন্ড আছে কিনা।
    ওপেন করতেই চমকে উঠলাম ভূত দেখার মত।
    ল্যাপটপের স্কিনে আমার ছবি। এইটা কবে তুলছে কে জানে? আমি ছাদে দাঁড়িয়ে আছি বাতাসে আমার চুল উড়ছে কিছু দেখে আমি হাহাহা করে হাসছি। ছবিটা অনেক সুন্দর হয়েছে।
    হতদম্ব হয়ে কিছু ক্ষন তাকিয়ে র‌ইলাম তারপর পরলাম বিপদে পাসওয়ার্ড দেওয়া এখন খুলবো কি করে?

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    part 22

    গালে হাত দিয়ে চিন্তিত হয়ে বসে আছি। বানিয়ে বানিয়ে কিছু দিয়ে ট্রাই ও করলাম পারলাম না। অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছি। তারপর ল্যাপটপ অফ করে উঠে দাঁড়ালাম ওমনি ভাইয়া আসলো রুমে। ভাইয়াকে দেখেই আমি হতদম্ব হয়ে গেলাম। চমকে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়াকে ক্লান্ত লাগছে অনেক চোখ মুখ ক্লান্তে ভরা ভাইয়া আমাকে দেখে নি আয়ি ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
    ভাইয়া আমার দিকে তাকালো আর ভ্রু কুটি করলো।
    আমি ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি‌।
    ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,
    “এখানে কি করছিস?”
    আমি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ঝড়ের গতিতে ভাইয়ার সামনে এসে বললাম,,,
    “ভাইয়া তুমি এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে যে।”
    ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
    “তাড়াতাড়ি এসেছি এতে কি তোর সমস্যা হয়ে গেল।”
    “এই না না সমস্যা হবে কেন? আমার তো ভালো হলো।”
    ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,” ভালো হলো মানে!”
    “ভালোই তো আমি তো তোমার অপেক্ষায় করছিলাম।”

    “আমার অপেক্ষা করছিলি কেন?”
    সন্দেহ চোখে তাকিয়ে।
    আমি হকচকিয়ে বললাম,,
    “করছিলাম একটা কারনে!”
    “কি কারন?”
    আমি চিন্তা করছি এখন কি বলবো?আমি চিন্তা করছি তখন ভাইয়া বলে উঠলো,,
    “বুঝতে পেরেছি আবার আজেবাজে কাজের কথা ভাবছিল।”
    ভাইয়া শক্ত কন্ঠে বলল।
    আমি বুঝতে পারছি না কি আজেবাজে কাজ আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি।
    ভাইয়া বলল,
    “দেখ দোলা এখন আমি খুব ক্লান্ত এখন প্লিজ আমাকে ডিস্টার্ব করিসনা।”
    “আমি তোমায় ডিস্টাব কোথায় করলাম।”
    “করিস নি করবি আমি জানি।এখন আমি রেস্ট করবো প্লিজ যা।”
    সত্যি ভাইয়াকে অনেক ক্লান্ত লাগছে আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।ভাইয়া আমার দিকে নীরব হয়ে তাকিয়ে বাথটাবে চলে গেল।
    কিছু ক্ষন পর এসে বিছানায় শুয়ে পরলো আর আমাকে এখনো ও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,,,
    “,এখন ও যাস নি কেন?”
    আমি আসলে ইচ্ছে করেই যাইনি। আমার কেন জানি যেতে ইচ্ছে করেনি। ভাইয়ার ক্লান্ত মুখ দেখে থেকে গেছি।
    আমি ভাইয়ার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ভাইয়ার মাথায় কাছে বসে পরলাম।
    ভাইয়া আমাকে নিজের মাথায় কাছে বসতে দেখে বসতে গেল।
    “কাল হচ্ছে কি দোলা ?তোকে আমি যেতে বলছিলাম। তুই এখানে এসে বসলি কেন?”
    আমি ভাইয়াকে উঠতে দিলাম না টেনে ধরে রাখলাম। ভাইয়া চরম বিস্মিত হল আর বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,,
    “কি করছিহ?”
    আমি বললাম,,
    “উফফ ভাইয়া উঠছো কেন? শুয়ে থাকো।”
    “মানে।”
    ‘আরে শুয়ে পরো তো আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তোমার তো মাথা ব্যথা ও করছে তাইনা।”
    বলেই ভাইয়ার মাথায় হাত দিলাম।

    ভাইয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি বললাম,,
    “কি হলো এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
    “তুই চলে যা দোলা।”
    “কোথায় যাব?”
    “বাসায় যা আমার কাছে এতো আসিস না।”
    বলেই ভাইয়া চোখ বন্ধ করে ফেলল।
    আমি ভাইয়ার মাথা হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম,,
    “সত্যি আসবো না।”
    ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো কিছু বলল না।
    “কি হলো বলো সত্যি আসবো না।আমি না আসলে তুমি হ্যাপি থাকবে তাইনা।”
    বলেই মুখটা ছোট করে ফেললাম।
    ভাইয়া আচমকা আমার হাত মাথা থেকে টেনে নিয়ে নিজের বুকের কাছে রাখলো শক্ত করে।আমি থমকে গেলাম। ভাইয়া আমার হাতে নিজের বুকে শক্ত করে ধরে রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলল আর বলল,,,
    “না রে তুই আমার কাছে এলেও কষ্ট হয়। দূরে গেলেও কষ্ট হয়। এই কষ্ট আমি কাটাতে পারছিনা।বুকের ভেতরটা প্রচন্ড ব্যাথা করে।‌মাথা বিগড়ে যায়। এই কষ্ট আমি কাউকে দেখাতে পারিনা কাউকে না।”
    আমি হাঁ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনলাম আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।হা করে তাকিয়ে বুঝতে চাইছি।
    ভাইয়া আবার বলল,,
    “আমার বুকের ভেতরটা পুরে ছারখার হয়ে গেছে রে। একটু ভালোবাসার জন্য ভালোবাসার মানুষটি কাছে থেকেও দূরে এতো কাছে তবু আপন করতে পারছি না। বলতে পারছি না দেয়ালে আটকে আছি সেই সময়ে জন্য। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত থাকাটা কতোটা কষ্ট তা শুধু আমি জানি না বলতে পারছি না স‌ইতে। আমার আর এই কষ্ট সহ্য হচ্ছে না। ভালোবাসা পাবার জন্য এই মনটা ছটফট করছে খুব।”
    ভাইয়ার কথার মাথা কিছুই বুঝলাম না।

    “ভাইয়া কি সব বলছো ভালো করে বলো বুঝতে পারছি না তো।”
    আমার কন্ঠ কানে যেতেই ভাইয়া চমকে তাকালো আর আতকে উঠলো।
    তাড়াতাড়ি আমার হাত ছেড়ে উঠে বসলো।
    আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি।
    তারপর বললাম,,
    “ভাইয়া কি যেন বলছিলে ভালোবাসা আমি বুঝিনি ভালো করে বলো।”
    ভাইয়া আমার মুখে ভালোবাসা শুনে আতকে উঠলো। কিন্তু বুঝিনি বলতেই একটা নীরব হয়ে শক্ত করে মুখ আমার হাতের বাহু ধরলো।
    “কি করছো এভাবে ধরছো কেন?”
    “তোকে আমি চলে যেতে বলছিলাম এখন ও আছিস কেন?”
    “আমি তো…
    “চুপ আর একটা কথা ও শুনতে চাইনা। আর আমার এতো কাছে আসবি না।”
    “ভাইয়া আমি
    “আমি কিছু শুনতে চাই না।”
    বলেই টেনে রুমের বাইরে এনে দরজা আটকে দিল।

    আমি কিছু ক্ষন হতদম্ব হয়ে থেকে বাসায় ফিরে এলাম। পরদিন কলেজ করে আসার পথে আবার ওই আরাফাতের সাথে দেখা হলো। আমি সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকে ইগনোর করে গাড়ির দিকে গেলাম সে এক প্রকার দৌড়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো আর বললো,,
    “এই যে ম্যাম আমাকে দেখেন নি নাকি কথা না বলে চলে এলেন।”
    আমি কর্কশ গলায় বললাম,,
    “আপনাকে দেখলেই আমার কথা কেন বলতে হবে।আর আপনি আজ ও এখানে কি করছেন?”
    “আমি ওই তো কাছে এসেছিলাম।”
    আমি রেগে বললাম,,
    “আপনার প্রতিদিন এইখানেই কাজ থাকে।”
    উনি বললো,,
    “না তো।”
    “আপনাকে আমি প্রতিদিন এইখানেই দেখতাছি।”
    “প্রতিদিন কোথায় দুইদিন না দেখলে।”
    “জি না আরেকদিন আসছিলেন। আর আপনার সমস্ত কাজ ইদানিং এই দিকেই পরছে নাকি‌।”
    আমার কথা উনি একটু বিচলিত হলো কিন্তু প্রকাশ করলো না মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,,
    “তা হচ্ছে। কিন্তু আরেক কথা আপনার সাথে পরিচিত হবার পর বেশি হচ্ছে মানে আপনার সাথে আমার দেখা হ‌ওয়ার একটা পথ হয়েছে।বিষয়টা কিন্তু ভালো হয়েছে কি বলেন?”
    “মুটেও না এই কাজটা আমার একটু ও ভালো লাগেনি। ফালতু কাজ আমার মনে হচ্ছে আপনি আমাকে ফলো করছেন।আর ক্রমাগত আমাকে মিথ্যা বলছেন।”
    আরাফাত চমকে উঠলো আর মনে মনে ভাবলো কি মেয়েরে বাবা? এইভাবে বললো এটা আমার করছি ঠিক তাই না জেনে অপমান আর জানলেও কি এভাবে বলা যায়।মেয়েটাকে নরম ভেবেছিলাম কিন্তু মনে হচ্ছে ধানি লন্কা এটা।
    “কি হলো ধরা পরে মুখ বন্ধ হয়ে গেল নাকি?”
    ” নো ম্যাম আপনি তো সত্যি বুদ্ধি মতি। অথৈ তাড়াতাড়ি বুঝে গেলেন।”
    “সেসব পরে হবে আগে বলেন আমাকে ফলো করার কারন কি?”
    ” সত্যি বলতে ,”আই লাইক ইউ” আমি তোমাকে পছন্দ করি।”
    “বাবাহ এটা বলতেই আপনার থেকে তুমি তে চলে এলেন।”
    “তা তো আসতেই হবে গার্লফ্রেন্ড কে কি আপনি করে বলবো নাকি।”
    ‘গার্লফ্রেন্ড। বলতে না বলতেই।”
    “হুম আমি বলেছি আপনি রাজি তো..
    “এক মিনিট আমার রাজি হলাম কখন?”
    “হোননি হবেন।”
    “আমি হবো কে বলল।”
    “বলার কি দরকার রাজি হবে আমার মনে হয়।”
    “এমনটা মনে হ‌ওয়ার কারণ টা জানতে পারি।”.
    “রাজি না হওয়ার কোন কারণ দেখছি আমি দেখতে সুন্দর, স্মার্ট, ধনী আমার সব আছে। একটা মেয়ের পছন্দের সো রাজি না হ‌ওয়ার কোন আফিডেন্স দেখছি না।”
    আমি ওনার কথায় হাহাহা করে হেসে উঠলাম।
    “তুমি হাসছো কেন?”
    আমার বললাম,,
    “আপনার কথা শুনে।কি মিস্টার আরাফাত আমি তো রাজি না।”
    “মানে।”
    “বিকজ আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি সো আপনার সব থাকলেও আমার কিছু ই ভালো লাগে না। আসি বাই‌”
    বলেই গাড়িতে উঠে পড়লাম।
    পাগল ছেলে।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো (রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 23+24

    কলেজে থেকে এসে গোসল করে, খাবার খেয়ে টিভির সামনে বসে আছি।অনেকদিন ধরে টিভি দেখা হয় না।
    টিভি দেখছি আর ওই আরাফাতের কথা ভাবছি কি অসভ্য ছেলে দুইদিন ভালো করে কথা বলেই প্রপোজ করে বসলো। আগেই এই ছেলের মতিগতি আমার ভালো ঢেকছিল না আজ বুঝেই গেলাম।
    টিভি না দেখে এইসব ভাবছিলাম ওমনি আম্মুর শক্ত কন্ঠ কানে এলো।
    আমি ভাবনার থেকে ফিরে ভ্রু কুটি করে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,,
    “কি হয়েছে আম্মু?”
    আম্মু বললো,,
    “এইসব কি দেখছিস? ছিঃ ছিঃ বাবা মার সামনে এসব দেখতে লজ্জা করে না।”
    আমি হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি আমি আবারা কি দেখছি যে লজ্জা করবে।
    ভাবতে ভাবতে টিভির দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। বিষ্ময় হতদম্ব হয়ে গেলাম টিভি থেকে চোখ সরিয়ে আম্মুর দিকে তাকাতেই আতকে উঠলাম আম্মু রেগে তাকিয়ে আছে আমি তাড়াতাড়ি রিমোট খুঁজতে লাগলাম।
    টিভিতে যে কিস দেখাচ্ছে যেটা আম্মু দেখেই আমাকে ধমকালো।
    কি মুসকিল রিমোট গেল কোথায় ধুর দরকারের সময় কিছু পাই না।

    আম্মু আমার দিকে কটমট চাহনি দিতে দিতে চলে গেল। আমি শেষে সোফার নিচে রিমোট পেলাম আর থপ করে বন্ধ করে রুমে চলে এলাম।
    কি করবো কি করবো ভাবছি তারপর ইলমাকে কল করলাম আর আজকে ওই আরাফাতের কথা গুলো সব ওকে বললাম।
    ও শুনে অবাক সাথে হাসতে হাসতে শেষ কারন সুমাইয়া তাকে পছন্দ করে। আর সে কিনা আমাকে প্রপোজ করে বসলো। দুজনে এসব বলে হাসতে হাসতে শেষ।
    পরদিন কলেজে গিয়ে সবাই মিলে এসব বলছি আর হাসছি এক কোণে গোমড়া মুখে বসে আছে সুমাইয়া। ওকে দেখে আরো বেশি করে হাসছি সবাই। হুট করে নেহা বলে উঠলো,,
    “দোলা তুই প্রস্তাব এ রাজি হয়ে যা!”
    ওর কথা শুনে আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকালাম।
    “কি রে সব কটা এইভাবে তাকাচ্ছিস কেন? যেন দিয়ে গিলে খাবি।”
    আমি বললাম,,
    “কি বললি তুই আমি প্রপোজ এ রাজি হবো।”
    শক্ত মুখ করে বললাম।
    ও নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,, “হ্যা আমি তো তাই বলছি।”
    আমি রেগে বল্লাম,,”আবার স্বীকার করছিস? তুই জানিস না আমি আদনান ভাইকে ভালোবাসি আর ভাইয়া ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু স্বীকার করে না। এসব জেনেও তুমি এই কথা বলছিস?”
    “হুম বলছি আর বলার কারন ও আছে।”
    “কি কারন শুনি তুই জেনে শুনে আমাকে ওই ছেলের প্রপোজ এ রাজি কি করে হতে বলছিস?”
    কটমট করে তাকিয়ে বললাম।
    “আরে আরো রাগিস না রাগিনী।শুন আমার কথা আমি তোর ভালোর জন্যই রাজি হতে বলছি তুই রাজি হয়ে দেখ কি ভাবে তোর ভাই…
    ,”চুপ আমি রাজি কিছু তেই হবো না‌”
    “আরে শুনো এটা জাসট ফান হিসেবে রাজি হ।”

    ওরা আমাকে বুঝালো নাটক করতে যে আমি যদি এটা করা তাহলে নাকি ভাইয়া ভালোবাসা স্বীকার করবে। বাট আমি রাজি হলাম না কারন কারো ইমোশনাল নিয়ে আমি খেলতে চাইনা।
    ওরা বুঝালো আমি মানলাম না। কিন্তু কাজটা পছন্দ হয়েছে।তাই আমি মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম।
    বিকেলে ছাদে এসে দাঁড়ালাম ভাইয়া ফেবারিট কালার নীল কালো আমি নীল ছেলোয়ার কামিজ পরলাম। কপালে ছোট টিপ ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক হাতে চুরি খোলা চুল নিয়ে ছাদে এলাম।
    তারপর ফোন বের করে কাউকে কল না দিয়ে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড এর মতো কথা বলতে লাগলাম। এদিকে ভাইয়া দুপুর বেলা বাসায় এসেছিল আর যাই নাই। তাই বিকেলে ছাদে এসেছে এসেই আমাকে এমন সেজে গুজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কর্নারে এসে দাঁড়াল। আমি ভাইয়ার ফেবারিট কালার পরেছি ভাইয়া মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি সেদিকে লক্ষ্য করছি না ফোনে কথা বলছি।
    ভাইয়া দাঁড়িয়ে আমার কান্ড কারখানা দেখছি সব সময় আমি ভাইয়াকে দেখেই পাগল করে ফেলি বা ফোন থাকলে হাতে লুকাই আজ তা করছি না দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
    আমি হেসে হেসে কথা বলছি ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। তারপর বিরক্ত হয়ে বলল,,
    “দোলা কার সাথে এতো কথা বলছিস?”
    আমি ভাইয়ার কথা শুনে ভয় পাওয়ার মত করে ফোন কানে থেকে নামিয়ে বললাম।
    “ভাইয়া তুমি কখন এলে?”
    “কেন আমি এসে ডিসটাব করলাম নাকি?”
    আমি বললাম,, “ক‌ই না তো।”
    ভাইয়া বলল,, “এতো সেজে গুজে আছিস কেন? আর এতো হেসে হেসে কার সাথে কথা বলছিলি।”
    আমি লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বললাম,,
    “কেউ না।”
    ভাইয়া আমাকে লজ্জা পেতে দেখে সন্দেহ চোখে তাকালো।
    “লজ্জা পাচ্ছিস কেন?”

    ভাইয়ার কথায় আরো লজ্জাঢ় মিলিয়ে গেলাম ভাইয়া রেগে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আমার ভাব ভঙ্গি দেখছে।
    তারপর বলল,,
    “কি হলো কথা বলছিস না কেন? কার সাথে কথা বলছিলি বল।”
    আমি লজ্জা মাখা কন্ঠে বললাম,,”আমার বুঝি লজ্জা করে না তোমাকে বলতে। যত‌ই হোক তুমি তো আমার ভাই হ‌ও।”
    ভাইয়া কিছু টা আন্দাজ করতে পেরেছে মনে হয়।
    বললাম,,”ঢং বাদ দিয়ে সত্যি কথা বল!”
    আমি বললাম,,” বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছিলাম।”
    কথাটা বলেই ভাইয়ার দিকে তাকালাম ভাইয়া আগুন চোখ দিয়ে আমাকে দেখছছ চোখ দিয়ে ভষ্স করে দেবে।
    আমি ভয় পেলাম তার চাহনি দেখে কিন্তু কিছুই বুঝতে দিলাম না। ভাইয়া সাথে সাথে গম্ভীর গলায় বলল,,
    “এসব কবে থেকে চলছে কাল ও না আমাকে জ্বালালি।”
    আমি বললাম,,”আজ থেকে। আর তোমাকে জ্বালাবো না ভাইয়া তুমি আমার ভাইয়ায় থাক বয়ফ্রেন্ড আমি পেয়ে গেছি।কতো ভালোবাসে আমাকে আহা এমন একজন কেই তো চেয়েছিলাম। শুধু শুধু তোমাকে ছ
    জ্বালিয়ে মেরেছি। আচ্ছা ভাইয়া তুমি যাও আমার উনি কল করছে আবার রাগ করবো।”
    বলেই ফোন কানে নিলাম আর হেসে হেসে কথা বলতে লাগলাম ভাইয়া আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
    আমি উলটো ঘুরেই ফোন কানে নিয়ে হাসছি বুঝ ঠেলা।
    ভাইয়া রেগে গমগম করতে করতে চলে গেল।

    আর আমার ছাদে এলো।আমি ভাইয়াকে দেখে বললাম,
    “একি ভাইয়া তুমি এখানে কেন দেখছো না কথা বলছি‌।”
    ভাইয়া আমার হাত থেকে টান মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো আমি আঁতকে উঠলাম। কারন করে কেউ নাই।
    ভাইয়া ফোন নিয়ে চেক করতে গেল আর ফোনের দিকে তাকিয়ে রেগে তাকালো আমার দিকে।
    তারপর শক্ত করে হাতের বাহু ধরে বললো,,
    “তুই আমাকে মিথ্যা বলছিলি।”
    আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
    “কি হলো আনসার মি।”
    আমি কিছু বলছি না এইভাবে ধরা খাব ভাবিনি।
    “কি হলো বলছিস না কেন ?এসব করে কি বুঝাতে চাইছি লি?”
    আমি বললাম,,”আমি ভাবছিলাম তুমি এসব দেখে স্বীকার করবে আমাকে ভালোবাস কিন্তু ধরা খেয়ে গেলাম।”
    ভাইয়া শান্ত চাহনি দিয়ে তাকিয়ে আছে।
    “ইডিয়েট একটা এসব কে ঢোকায় তোর মাথায়।”
    “কেউ না।”
    গাল ফুলিয়ে।
    “ভাইয়া শেষ বারের মতো বলছি ভালোবাসি স্বীকার করো নয়তো।”
    ভাইয়া বলল,,”নয়তো কি?”
    আমি বললাম,,”নয়তো আমি ওই আরাফাত ছেলেটাকে হ্যাঁ বলে দেব।”
    ভাইয়া ভ্রুকুটি করে বলল,,”এটা ও বানানো কেউ।”
    আমি বললাম,,” না। এটা বানানো না সত্যি কাল আমাকে প্রপোজ করেছে তুমি যদি আমাকে ভালো না বাসো তো তার সাথেই প্রেম করবো সেও দেখতে সুন্দর স্মার্ট।”
    ভাইয়া আচমকা আমার গাল চেপে ধরল।আমি বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে গেলাম ভাইয়া আমাকে টেনে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ধরলো।
    তারপর মৃদু চিৎকার করে বললো,,
    “এই মুখে অন্য কারো প্রশংসা শুনলে খুন করে ফেলবো।”
    আমি গালে ব্যাথা পাচ্ছি। ভাইয়াকে এতোটা হিংস্র হতে কখনো দেখি নি। আমার চোখে পানি টলটল করছে ভাইয়া রেগে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। আচমকা গাল ছেড়ে দিয়ে বলল,,
    “লেখা পড়া ছাড়া অন্য দিকে মন দিলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”

    বলেই চলে গেল আমি হতদম্ব হয়ে ভাইয়া যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 24

    ভাইয়া তুমি আমাকে ভালোবাসো একটু না পাগলের মতো।আজকে আমি তোমার চোখে আমার জন্য অফুরান্ত ভালোবাসা যা খুব গভীর। এই ভালোবাসা অন্ত নেই কিন্তু তাহলে আমাকে বলছো না কেন? এই ভাবে লুকিয়ে কেন রাখছো কিছু তো কারন আছেই। আমার সেই কারন টাই জানতে হবে ইয়েস।
    যেভাবেই হোক জানতেই হবে কি সেই কারণ তার জন্য তুমি তোমার সমস্ত অনুভূতি আড়াল করে রেখেছো।
    উফফ গালে ব্যাথা করছে গরিলা একটা এতো শক্ত করে কেউ ধরে। গালে হাত বুলাতে বুলাতে নিচে নেমে এলাম।
    চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি তখন আম্মু আমার পাশে এসে বসলো। আমি চোখ খুলে আবার বন্ধ করে ফেললাম।আর আমার মাথা আম্মুর কোলের উপর রাখলাম।
    আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে।
    “দোলা আজকে তোর মামনির বাসায় যেতে হবে।”
    আমি মামনির বাসায় যাওয়ার কথা শুনেই চোখ খুলে ফেললাম।
    আম্মু বলল,,” আমাদের সবার‌ই যেতে হবে। ডিনার এর জন্য দাওয়াত আছে।”
    আমি বললাম,,”আচ্ছা আমি তাহলে রেডি হয়।”

    আম্মু আমার রেডি হ‌ওয়ার কথা শুনে বলল,,
    “কি আবার রেডি হবি।”
    “ওই একটু সাজবো।”
    “সাজার কি দরকার এমন করছিস যেন আগে কখনো যাস নি।”
    “আম্মু গেছি তখন তো এমনি এখন আমার সাজতেই ইচ্ছে হচ্ছিল তাই তারপর ওই বাসায় যাব এটা তো দাওয়াত বলো। সেখানে সেজে গেলে সমস্যা কি আম্মু।”
    আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম।
    “বুঝি না বাবা কি হয় তোর।আগে তো শত বলেও সাজগোজ করানো যেত না আর এখন যখন তখন সাজতে ইচ্ছে হয়।”
    “তোমরা আমার সব কিছু তেই প্রশ্ন করো খালি।”
    “আচ্ছা তোর যা ইচ্ছে কর।”
    বলেই আম্মু চলে গেল আমি উঠে সাজতে বসলাম আমার সাজ হচ্ছে অন্যরকম আজ।আমি গালে লাল ফ্রেস পাওডার দিলাম। তারপর কাজল দিয়ে নিচে নেমে এলাম।
    আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
    “কি করে এটা কি হয়েছে গাল এতো লাল কেন? ব্যাথা পেয়েছিস নাকি তখন তো দেখলাম না।”
    “ওইটা কিছু না চলো।”
    আব্বু বললো, “সত্যি ব্যাথা পাওনি তো।”
    “নো আব্বু আমি এ্যাম ফাইন।”
    “ওকে ডেয়ার চলো।”
    এখানে এসেই আম্মু মামনির কাছে রান্না ঘরে চলে গেল।

    আব্বু তার প্রান প্রিয় বন্ধুর কাছে বসে পরলো সোফায় শুরু হলো তাদের গল্প। আমি আব্বুর পাশে এতিমের মতো বসে আছি। আর সুযোগ খুঁজছি এখানে থেকে কেটে পরার জন্য। পেয়েও গেলাম উঠে সোজা আদনান ভাইয়ের রুমে চলে এলাম। ভাইয়া রুমে নেই বাথরুমের থেকে শব্দ আসছে আমি দরজা ভেতরে থেকে বন্ধ করে দিলাম। তারপর বিছানায় উপর বসলাম ভাইয়া পাঁচ মিনিট এ আসলো আর আমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো।
    ‘তুই এখানে কি করছিস?”
    “বসে আছি দেখতে পাচ্ছ না।”
    “বসে কেন আছিস সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি।”
    আমি কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালাম আর ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
    ভাইয়া হকচকিয়ে গেল আমার কান্ডে সাথে হতদম্ব হয়ে গেল।
    “কি করছিস?”
    আমি গাল ফুলিয়ে অভিমানী গলায় বললাম,
    “কি করেছো দেখ?
    বলে গাল দেখালাম।
    ভাইয়া আমার গালে দিকে তাকিয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে। এক হাত উঁচু করে ভাইয়া আমার গাল স্পর্শ করলো তারপর নিজের হাতে দিকে তাকিয়ে বলল,,
    “কি এসব লাগিয়েছিস?”
    “কিছু লাগায়নি, তুমি আমার গাল টিপে কি করেছো দেখ লাল হয়ে গেছে কি ব্যাথা ?”
    বলেই ভাইয়ার গলা থেকে হাত সরিয়ে নিলাম।

    আদনান ভাইয়া আচমকা আমার হাত শক্ত করে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। এক হাত আমার কোমর ধরলো শক্ত করে। আদনান ভাইয়ার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ নিজের নিজের কোমরে পেয়ে আমি জমে গেলাম। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। বিস্মিত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আমার হার্টবিট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে।
    “কি রে এমন কাঁপছিস কেন?”
    ভাইয়া নির্বিকার ভাবে কথাটা বলল।
    আমি ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি।
    স”ব সময় তো আমার গা ঘেঁষতে তোর ভালো লাগে। তা এখন আমি ধরলাম
    এমন করছিস কেন?”
    “ভাইয়া ছার আমার কেমন জানি লাগছে।”
    “কেন ছারবো কেন? আর কেমন লাগছে শুনি।”
    “কেমন জানি লাগছে। আমি ধরলে তো এমন লাগে না।”
    ‘কেমন লাগছে বল!”
    বলেই ভাইয়া নিজের এক হাত উঁচু করে আমার গালে রাখলো। আমার কাপাকাপি আরো বেরে গেল।
    আমি ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ভাইয়া আমার গাল মুছে দিচ্ছে অনুভব করছি।
    “তাকা আমার দিকে।”
    আমি চোখ খিচে বন্ধ করে আছি।
    বন্ধ অবস্থায় বললাম,,” ছার প্লিজ আমাকে ভাইয়া।”
    ভাইয়া আবার বলল,,,” কি হলো চোখ খোল? আর ছাড়বো কেন? এখন থেকে বেশি করে ধরবো তুই তো এইটাই চাইছিলি তাহলে এখন এমন আন‌ইজি ফিল করছিস কেন?”
    ভাইয়ার গরম নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পরছে। আমি থরথর করে কাঁপছি ভাইয়ার নরম কন্ঠ শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে তাকালাম। ভাইয়া নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি এমন ভয়ঙ্কর চাহনি দেখে ভয়ে ঘামতে লাগলাম।
    আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম,,”আমি এসব কখন চাইলাম।”
    চোখ ছোট করে ভীতু মুখ করে তাকিয়ে বললাম।ভাইয়া আমাকে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো কোমর আমি ছটফট করছি ছুটার জন্য। কিন্তু ভাইয়ার সাথে পারলে তো।
    ভাইয়া আমার মুখের কাছে চলে এলো একদম আমি ভয়ে ঘাড় পিছিয়ে নিলাম ভাইয়া আমার ঘাড় ধরে নিলো শক্ত করে তারপর বলল,,
    “কেন প্রেম করবি না?”
    ভাইয়ার কথা শুনে আমি চকিতে চাইলাম। স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছি।
    “কি হলো প্রেম করবি না আমার সাথে?”
    আমি বললাম,,” হুম কিন্তু তার সাথে এসবের কি মানে?”
    “প্রেম করলো তো এসব করবোই। আরো‌ কতো কিছু। কেন তুই জানতি না? আচ্ছা প্রেম মানে কি বুঝিস।”
    আমি ভীতু মুখ করে বললাম,,”কি আবার তোমার সাথে ফোনে কথা বলবো, তারপর তুমি আমাকে গোলাপ দিবে, ঘুরতে নিয়ে যাবে এসব।”
    “শুধু এইগুলো আর কিছু না।”
    “না তো।”
    “কে বলেছে এসব তোকে প্রেম করলে আরো অনেক কিছু হয় এই যেমন
    বলেই ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আনতে লাগলো নিজের মুখ তারপর ফট করে আমার গালে চুমু খেল আমি চমকে উঠলাম।
    বড় বড় চোখ করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।ভাইয়া কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমি ভাইয়ার এমন দৃষ্টিতে আমার বুকটা ধক করে উঠল। কান আমার গরম হয়ে গেছে মনে হচ্ছে গরম হাওয়া বের হচ্ছে আমি জোরে একটা ঝামটা মেরে ভাইয়ার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। বুকে হাত দিয়ে হাপাচ্ছি। ঝড়ের গতিতে লাফাচ্ছে আমার হার্টবিট। কি ডেঞ্জারাস অনুভূতি হচ্ছে।

    আচ্ছা তুই কি প্রেম করবি না ভাবছিস।
    ভাইয়ার কথা শুনে আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।
    “কি রে চুপ না থেকে বল। কারন প্রেম করলে এমন কয়েকটা কিস তোকে সহ্য করতে হবে।আর একটা খেয়েই তোর এই অবস্থা আমার তো.
    আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে রুমে থেকে বেরিয়ে এলাম। ভাইয়াকে চিনতে পারছি না কেমন করছে। আর প্রেম করলে চুমু খেতে হয় জানতাম না তো।
    বুকটা এখন তো ধুকধুক শব্দ করছে।
    নিচে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। আমি আসার কিছু ক্ষন পর আদনান ভাই ও নেমে এলো আমি একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার শরীর কাঁপছে ভাইয়ার সামনে থাকতে পারছি না এতো লজ্জা লাগছে। আবার ভাইয়ার দিকে আড়চোখে তাকালাম ভাইয়া এখন ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি সোজা পেছনে ঘুরে রান্না ঘরে চলে গেলাম।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো(রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 25 +26

    বুকের ভেতর টা হাতুড়ি পেটা হচ্ছে। বুকে হাত দিয়ে বড় বড় শ্বাস নিলাম। রান্না ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে তখন মামনি ডেকে উঠলো।
    “দোলা নাকি রে ওইখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এখানে আয়!”
    মামনির ডাকে চকিতে চাইলাম। আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নাভাস নেস কমাতে কমাতে এগিয়ে গেলাম মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে।
    আমি কাছে যেতেই মামনি বলল,,
    “কি রে ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলি কেন?”
    আমি মামনির কথা। হকচকিয়ে গেলাম। কি বলবো ভাবছি আর এদিকে ওদিকে তাকাতাকি করছি।তখন আম্মু বলল,
    “খিদে পেয়েছে বোধহয় বাসায় ও তো এমন করে খিদে পেলে।”
    আমি আম্মুর দিকে চাইলাম।
    আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
    “কি রে তাই তো।”
    আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। এটাই ভালো হলো।
    মামনি আমার গালে হাত দিয়ে বলল,,
    “আহারে কতো খিদে পেয়েছে। এই তো রান্না শেষ তুই গিয়ে সবাইকে নিয়ে বস টেবিলে আমরা খাবার নিয়ে আসছি।”
    আমি আচ্ছা বলে চলে এলাম।

    ডয়িং রুমের কাছে এসে দেখি আব্বু বাবাই আর আদনান ভাইয়া কি যেন বলে হাসাহাসি করছে।আমি মুগ্ধ হয়ে ভাইয়ার হাসির দিকে তাকিয়ে আছি কি অপূর্ব হাসি।
    আচমকা আলো বাম হাত গান গালে চলে গেলো এইখানে ভাইয়া আমাকে চুমু দিয়েছে।ইশ কি লজ্জা? সাথে আমি দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে লজ্জায় লাল নীল বেগুনী হতে লাগলাম।
    আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ ঢেকে ব্লাসিং হচ্ছি।
    “কি রে এখানে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছিস কেন পাগলের মতো?”
    ভাইয়া আওয়াজ পেয়ে হকচকিয়ে চোখ খোলে ফেললাম। মুখে থেকে হাত সরিয়ে দেখলাম ভাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। আমি সোফার দিকে তাকিয়ে দেখি কেউ নাই।
    বিস্মিত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,,
    “তু–মি এখানে কখন এলে? তুমি না ওইখানে বসে ছিলে!”
    “হুম ছিলাম কিন্তু তুই তো পাগলের মত অনেকক্ষণ ধরে এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস তাই এলাম আবার সত্যি মাথা খারাপ হলো নাকি দেখতে।”
    “আমার মাথা খারাপ হয়নি তুমি বাজে কথা একদম বলবে না।”
    গাল ফুলিয়ে বললাম।
    “মাথা খারাপ হয়নি তো এখানে এমন করে দাঁড়িয়ে ছিলি কেন?”
    “আমি তো লজ্জা…
    বলেই থামলাম কি বলছিলাম এসব বললেই ভাইয়া আমাকে ইনসাইড করবে।
    ‘কি লজ্জা?”
    ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল।
    আমি কিছু বললাম না।
    ভাইয়া আমার দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে।আমি এবার বললাম,,
    “তুমি সরো তো আমার খিদে পেয়েছে।”
    “তো খা না এখানে না দাঁড়িয়ে থেকে। ”
    বলে উঠলো আমি আসতে গেলেই বলল,,” ওই ওয়েট!”
    আমি ঘাড় বাঁকিয়ে বললাম,” কি?”
    বললি না তো প্রেম করতে রাজি নাকি আমার সাথে।
    আমি সোজা হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম খুশি হয়ে।
    ‘আমি তো সেই কবে থেকেই রাজি।”
    উত্তেজিত হয়ে।
    ভাইয়া বলল,,”খুশি পরে হ‌ও আমার কথায় রাজি নাকি তাই বল।”
    “কোন কথায়?”
    ‘ওই যে আমি তোকে কিস করবো‌।”
    “কিসের কথা শুনেই চোখ বড় করে ফেললাম।
    তুমি আমাকে থপ দিচ্ছে আগে তো শুনিনি প্রেম করলে এসব করতে হয়।”
    “হয় না তো।”
    “তাহলে তুমি আমাকে এই বাজে বাজে কথা বললে কেন?”
    রাগ নিয়ে বললাম।
    ভাইয়া বলল,,”আমি অন্যের কথার কথা বলি নি আমার সাথে প্রেম করলে তোকে এসব সহ্য করতে হবে। কারন আমার তো আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে এসব করার ইচ্ছা। তাকে অনেক অনেক জ্বালাবো যেমন ধর রাতে ঘুমাতে দেব না সারা রাত কথা বলবো।সহ্য করতে পারবি তো।”
    “ও মাই গড সারারাত কথা বলতে হবে। আমার তো ঘুম আসবে।”
    “তো আমি কি করবো? আমার সাথে প্রেম করলছ আমার সব কথা তোকে শুনতে হবে।’
    “সব।”
    “হুম সব।”
    আমি আগুল মুখে দিয়ে ভাবছি ভাইয়া আমকূ ভয় দেখাচ্ছে নিশ্চিত যাতে না বলি আমি এতো বোকা না রাজি আমি হবোই।
    “আমি রাজি সব কিছু তেই।”
    ‘ভেবে বলছিস?”
    “হুম আর এত ভাবাভাবি কি আছে এমন ভাবে বলছ যেন আমি প্রেম না যুদ্ধ করতে যাচ্ছি।”
    গাল ফুলিয়ে বললাম। ভাই আমার গালের মধ্যে ঢোকা মেরে বললো,,
    “একদম গাল ফুলাবি না আমার সামনে।”
    “কেন তোমার জন্য গাল ফুলালে কি সমস্যা?”
    চোখ ছোট ছোট করে বললাম।
    “যেটা বলছি সেটাই করবি না হলে ব্রেকআপ করে দেবো।”
    “ও আল্লাহ কি কও প্রেম শুরু করার আগেই ব্রেকআপ।”
    চল খেতে চল।

    আমি আর ভাইয়া এক পাসেই বসলাম।আমি খাচ্ছি কম ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি ভাইয়া কড়া চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি তখন একটা হাসি দিয়ে খেতে লাগলাম। আবার ভাইয়ের দিকে তাকালাম হঠাৎ করে আমার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসলো। আমি আমার পা নিয়ে ভাই এর পায়ের উপর রাখলাম ভাইয়াকে জ্বালানোর জন্য ভাই আমার দিকে তাকাচ্ছে না খালি খাচ্ছে কোথায় প্রেম শুরু করলো আমার দিকে তাকাবে। তা না খালি খেয়ে যাচ্ছে।
    আমি হাজার বার তাকালে ভাইয়া একবার তাকায়।খাবার টেবিলে বসে জানতে পারলাম ডিনারের জন্য ডেকেছে কারণ আমাদের আদনান ভাই বিজনেস এইবার টপ হয়েছে। সেই নিয়ে একটা অনুষ্ঠান হবে।তার আগে আগে আমাদের দাওয়াত খাইয়ে নিল কারণ আমার আব্বু আদনান ভাইয়ের আব্বুর বেস্ট ফ্রেন্ড।
    ভাইয়ের পায়ে নিজের পা নিয়ে খোচা মারছে। ভাইয়া খাবার মুখে দিয়েছিল সে আমার দিকে তাকালো প্রচন্ড রেগে। আর ইশারায় আমাকে পা সরাতে বলল।
    আমি শুনেও না শোনার ভান করলাম।
    ভাইয়া এবার আমার দিকে তাকিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
    “পা সরাতে বলেছি।”
    “না সরাবো না।”
    ভাইয়া চোখ শক্ত করে বলল,,
    “মার খাবি কিন্তু।”
    ‘ধুর ছাই। ভাল্লাগেনা তুমি আমার দিকে তাকাও না কেন হ্যা আমি কতো বার তাকালাম আর তুমি একবার ও না।”
    “বাবা মা কে তোর চোখে পরছে না তাদের সামনে বসে এমন করিস ভয় পাস না।”
    ‘ভয় কেন পাব?”
    “তুমি আসলেই পাগল।”
    “ভালোবাসি তো তাই পাগল বলবাই। যখন ভালোবাসবো না তখন বুঝবা।”
    বলেই ভেংচি কেটে পা সরিয়ে নিলাম। আর খেলাম ও না হাত ধুয়ে সোফায় এসে বসলাম খুব অভিমান হয়েছে আমার। ভাইয়া সব সময় বকে একটুও কি ভালোবাসা যায় না।
    আমি গালে হাত দিয়ে চুপটি করে বসে আছি।
    ভাইয়া হুক করে আমার পাশে এসে বসলো আর আমার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো।আমার ভাইয়া কে দেখেও চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছি। ভাইয়া আমার থুতনিতে ধরে নিজের দিকে তাকানোর চেষ্টা করে বললো,,
    “কি বললি তখন?”
    ভাইয়া চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে ।চোখমুখ লাল করে আমাকে জিজ্ঞেস করলো ভাইয়ের চোখের দিকে তাকালাম আমি আর ভয় পেয়ে গেলাম।
    “কি বললি যখন ভালোবাসবি না? আমাকে ভালবাসবি না তো কাকে ভালবাসবি?”
    আমি চোখ ছোট করেই বললাম,,
    “অন্য কাউকে এই ধরে ওই আরাফাত ছেলেটাকে।
    আচমকা ভাই আমার গলা টিপে ধরল।”
    “বলছি না ওই ছেলেটার নাম মুখে নিবিনা আর একবার তোর মত মুখে ওই ছেলেটার নাম শুনলে একদম মেরে ফেলবো। জানে মেরে দেবো ওই ছেলেটাকে।”
    “বলবো 100 বার বলবো তুমি কাউকে ভালবাসো কি করলা ভালবেসে? এখন পর্যন্ত তো ভালবাসি বললা না।”
    “সবকিছু তোকে মুখে বলতে হবে কেন।বুঝতে পারছিস না মুখে বললেই কি ভালোবাসা হয়ে যায় অনুভব করতে না।”
    “আমি এতকিছু জানি না তুমি মুখে বলবা আর আমাকে নায়কের মত প্রসোজ করবা ফুল দিয়ে।”
    গাল ফুলিয়ে বললাম।
    কি হলো এই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন করবা না প্রপোজ?
    “প্রপোজ ইম্পসিবল আমি ওসব করতে পারবো না।
    “দেখছো তুমি আমার কোন কথাই রাখো না আর ছাড়ো তো আবার আসছি মেরে ফেলতে তোমার থেকে আরাফাতে ভালো। আমাকে ঠিক প্রপোজ করত।
    আবারে আরাফাতে কথা বলছিস। তোকে বলছিলাম তুই আমার সব কথা শুনবি।
    হ্যাঁ বলছিলে না শুনলে ব্রেকআপ করে দেবে করে দাও। আমি আরাফাতের সাথে রিলেশন করব তোমার সাথে না। তুমি আমাকে সামান্য প্রপোজ তাই করতে পারবানা।
    বলে ভাইয়া কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাঁড়াতে গেলাম ভাই আমাকে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
    আচমকা ভাইয়ার জরিয়ে ধরাতে আমি ফ্রিজড হয়ে গেলাম।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 26

    এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে যে আমি শ্বাস নিতে পারছি না। জরোসরো হয়ে ভাইয়া বুকে নিজের নাক ঠেকিয়ে আছি। শরীর একটু ও ধরাতে পারছি না কি শক্ত করে ধরেছে।
    হঠাৎ পায়ের শব্দ শুনে ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
    আমি ছাড়া পেয়ে যেন বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলাম। উফ আর একটু হলে নিশ্চিত দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম। আব্বু আম্মু এসেছে। ভাইয়া তাদের সাথে কথা বলছে সহজ ভাবে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
    রাতে আর ওইবাসায় থাকলাম না চলে এলাম সবাই।
    পরদিন কলেজে থেকে এসেই ভাইয়া দের বাসায় চলে এলাম। সাজানো হয়েছে বাসা দরজার কাছে এসেই ভাইয়ার উপর নজর পরলো ভাইয়া কাজ পরছে। ঘেমে একাকার হয়ে গেছে আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
    তারপর আমি সোজা ভাইয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

    “কি হয়েছে সামনে এসে দাড়ালি কেন? দেখতে পাচ্ছিস না আমি কাজ করছি।”
    আমি চোখ ছোট করে বললাম,,
    “আমি কি বলেছি তুমি কাজ করছো না? আর আমি কানা না যে দেখতে পাব না।”
    “তাও ভালো এমন ভাবে আসছিলি কানাই ভাবছিলাম।”
    গাল ফুলিয়ে বল্লাম, কি বললে?
    ভাইয়া বলল, কানা না বুঝলাম বয়রা কড়ে থেকে হলি।”
    “ঝগড়া করছো কেন? গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কেউ ঝগড়া করে বুঝি।”
    অভিমানী হয়ে।
    “আচ্ছা ঝগড়া করে না তো কি করে।”
    “সুন্দর করে কথা বলতে হয়।
    “আমার কথা তোর সুন্দর না লাগলে আমি কি করবো।”
    “তুমি সুন্দর করে বললে কোথায় খালি তো খোঁচা মারলো? আমাকে ইনসাল্ট করলা।”
    “তো তুই কি চাইছিল আমার কাছে।”
    বলেই ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো। আমি বড় বড় চোখ করে ফেললাম,
    “কি করছো?”
    বলেই এদিক ওদিক তাকাতে থাকলাম। তাও ভালো এখানে কেউ নাই।
    তুই তো এসব‌ই চাস। বলেই আমাকে একদম নিজের কাছে নিয়ে ডান হাত উঁচু করে কপালে থেকে চুল সরিয়ে কানে গুঁজে দিল। আমি ভাইয়ার স্পর্শ পেয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি বুকের ভেতর হাতুড়িপেটা হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে ভাইয়া কাছে আসলি ইদানিং আমার সাথে ঘটছে এইসব। ভাইয়া আমার একদম মুখের কাছে এসে তারপর বলল,,
    “ইদানিং তুই আমাকে একটু ও ভয় পাচ্ছিস না খুব ভার বেড়েছিস।আর এই অসভ্যতামি করার জন্য আমার কাছে ঘেষলে চরিয়ে দাঁত ফেলে দেব।”
    আমি হাঁ করে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম ভাইয়ের স্পর্শে আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যাচ্ছি মনে হয়। তখনই হুট করে ভাইয়া আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে সরিয়ে দিল।

    ভাইয়া আবার ধমক দিয়ে বলল,, কি হলো যা এখান থেকে।
    আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বললাম,,” গরিলা একটা এইভাবে আমার সুন্দর মুহূর্তটাকে নষ্ট করে দিল।”
    ভাইয়াকে চোখ পাকাতে পাকাতে আমি পেছাতে লাগলাম তখনই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম জোরে। পেছনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম তিথি দাঁড়িয়ে আছে।
    আমাকে দেখে একটা মুখ বিকৃতি অবস্থা করে আবার তাতে হাসি ফোটালো। আমি ব্রু কুঁচকে একবার তিথি দিকে তাকিয়ে ভাইয়া দিকে তাকালাম।
    “হাই দোলা, কেমন আছো?
    আমি ছোট ছোট করে দিয়েছি দিকে তাকিয়ে আছি।
    “আরে দোলা কথা বলছো না কেন ?আমার সাথে কথা বলবা না নাকি? এখনো মাইন্ড করে আছো?
    “মাইন্ড কেন করবো আপনি না ওই দিন কলেজ এসে সরি বললেন?
    আমার কথা শুনে তিথি মুখে ভয়ের আবাস দেখতে পেলাম তারপর হেসে বলল,,
    “ও হ্যাঁ আমার তো মনে ছিলো না দোলা কি মন ভুলা আমি।”
    ও।
    আদনান ভাই এগিয়ে এসে বলল,
    “তুই দোলার কলেজে গেছিলি?
    শক্ত মুখ করেই বললো আদনান ভাই।
    ভয়াত মুখ করে বলল তিথি,, “ওই হ্যাঁ গেছিলাম আসলে ওই দিক দিয়ে চাচ্ছিলাম তাই আর কি?
    “ওই দিক দিয়ে তুই কোথায় যাচ্ছিলে?
    “ওই একটা দরকারে চাচ্ছিলাম এখনও মনে পড়ছে না আমিতো ওইটাই ভুলে গেছিলাম।”
    ভাইয়ের সন্দেহের চোখে তিথি দিকে তাকিয়ে আছে তিথি হেসে হেসে কথা বলছে সাথে ভয় ও মুখে।

    আমি চলে এলাম দুজনকে একা ছেড়ে দিয়ে তিথি আবার এই বাড়িতে কি করছে? ভাইয়া কি আবার নিয়ে এসেছে ওকে।
    মন খারাপ করে মামনি কাছে এসে দাঁড়ালাম। তিথি টাকে আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। মেয়েটা আদনান ভাইয়ের গায়ে পড়া পড়া ভাব। ভাইয়া তো আমাকে ভালোবাসে তবুও মেয়েটার ভাব ভঙ্গি ভালো লাগেনা।
    মামনি আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি মন খারাপ করে আছো কেন?
    আমি কিছু বললাম না।
    চলে এলাম ভালো লাগছে না। হঠাৎ কে যেন আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। ভালো করে তাকিয়ে দেখি আদনান ভাই। ভাই আমাকে সোজা নিজের রুমে নিয়ে এসে দরজা আটকে দিল।
    আমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
    ‘কি হয়েছে মুখটা এমন বাংলার পাঁচের মতো করেছিস কেন?”
    আমি চুপ করে ভাইয়া কে জরিয়ে ধরলাম শক্ত করে।ভাইয়া চমকে উঠলো,,

    ‘আবার শুরু করলি।
    ছারাতে চেয়ে। আমি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম।
    “হুম করলাম। আর করবোই আমার মা ইচ্ছে তাই করবো তুমি মানা করতে পারবে না।”
    ‘ওরে বাবা তাই এতো অধিকার।”
    “হুম অনেক। তুমি ওই তিথি ফিতি কে এনেছো কেন”
    এনেছি‌ তো কি হয়েছে?
    কেন আনবে ওকে আমার একটু ও ভালো লাগে না।
    তোর না ভালো লাগুক আমার তো লাগে।
    কথাটা শুনেই আমার চোখ জ্বলে উঠলো আমি ভাইয়াকে ছেড়ে শার্টের কলার শক্ত করে ধরলাম।
    “কি বললে তোমার ভালো লাগে।”
    নাক ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে।
    “আরে কি করছিস কলার ছার!”
    হতদম্ব হয়ে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
    “ছারবো না কি করবে ধমকাবে ধমকাও। কিন্তু ছারবো না তুমি ওই মেয়েকে ভালো লাগে বললে কেন? তোমার শুধু আমাকে ভালো লাগবে আর কাউকে না।”
    বলেই ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি ভাই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।আমি ভাইয়ার নিরব নেশাতুর চোখের দিকে তাকিয়ে শার্টের কলার ছেড়ে দিলাম।
    দূরে সরে দাঁড়াতে গেলাম পারলাম না ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আমি থমকে গেলাম ভাইয়া আমাকে একদম কাছে নিয়ে নেশা নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইলো আমার মুখের দিকে আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া নিজের মুখ আমার দিকে এগিয়ে আনছে আমি ভোট গিলছি ভাইয়ার প্রতিটা নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে।
    ভাইয়া নিজের কপাল আমার কপালের সাথে ঢেকিয়ে দিলো আমি সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি চোখ খুলে রাখতে পারছি না। ভাইয়া এবার নরম কন্ঠ বলতে লাগলো,,
    “তুই আমাকে এতো ভালোবাসিস দোলা রানী। আমি বিশ্বাস করতে পারছি আমার এসব সপ্ন লাগছে যেন আমি একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখছি যেখানে আমার দোলার রানী আমাকে পাগলের মত ভালবাসে। জোর করে আমাকে ভালোবাসে যেটা আমি দশ বছর ধরে একা বেসে আসছি।না প্রকাশ করতে পারছি না সইতে পারছি দুকেদুকে ভালোবাসাটা নিজের মাঝে লুকিয়ে রেখেছি।আর মনে মনে সব সময় চেয়েছি আমার দোলা রানী আমি যেন আমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে। কারো সাথে যেন সহ্য করতে না পারে যেমন টা আমিও পারিনা।আজ কয়েকদিন ধরে আমি তার পাগলামো ভালোবাসা দেখছি আর ভাবছি এটা কি সত্যি মনের অনুভূতি ভালোবাসা নাকি শুধুই তার পাগলামো। যা আবার সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যাবে আমার ভয় হয়
    দোলা রাণী এমন হবে না তো।তুই আমাকে সত্যিই ভালবাসিস তো আবার অস্বীকার করবি নাতো।”

    আমি ভাইয়ের কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছি।
    “কখনো না ভাই‌য়া।”
    ভাই বলল,,এতো ভালো কবে থেকে বাসা শুরু করলি।
    সে তো অনেক দিন। কিন্তু বলার সাহস পায়নি যদি বকো তাই।
    কতো দিন।
    দু বছর।
    বলিস কি এতো দিন।
    হুম কিন্তু তোমার থেকে কম।ভাইয়া তুমি লুকালে কি করে বলো? আমি একটু ও বুঝতে পারি না তাহলে এতো দিন লুকাতাম না আগেই বলে দিতাম
    আমি আরো কতো কি ভাবতাম।
    কি ভাবতি?
    অনেক কিছু তুমি আমকে মারবে বকবে এসব ভেবেই তো বলবো না ভেবেছিলাম কিন্তু আমার ফ্রেন্ড রা বলল তুমি নাকি আমাকে ভালোবাস।
    ওরা বুঝলো কি করে?
    তা তো জানি।
    তা জানবি কি করে? খালি জানো আকাম করতে।
    হুম তাইতো জানতে পারলাম আমার গরিলা ভাইটা আমাকে কতো ভালোবাসে।
    বলেই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম।
    আরে কি করছিস ছার।
    না ছারবো না। এতো ছার ছার করো কেন ধরো ধরো করতে পারো না আনরোমান্টিক একটা।
    ভাইয়াও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,
    “কি বললি আমি আনরোমান্টিক একবার বিয়ে হতে দে দেখিয়ে দেব।”
    এখন দেখাও।
    মাথা উঁচু করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম।ভাইয়া আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল।
    হ্যাত আমি হারাম কাজ করি না।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো(রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 27+28

    মুচকি মুচকি হাসছি সোফায় বসে। খুশিতে আমার হাত পা তুলে নাচতে ইচ্ছে করছে। ফাইনালি ভাইয়া ভাইয়া ভালোবাসি স্বীকার করলো।ও গড এতো খুশি আমি রাখবো কোথায?
    ভাইয়া কোন এক কাজে বাসার বাইরে গেছে তখন থেকে আমি এখানে বসে মুচকি মুচকি হাসছি।
    এদিকে তিথি আমাকে ভাইয়ার সাথে ভাইয়ার রুমে যেতে দেখেছিল। ও রাগে গজগজ করতে করতে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। এখন দুতালায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে আছে। আমার তো আর সেদিকে খেয়াল নেই।
    তিথি রেগে তাকিয়ে আছে ওর মন চাইছে দোলা কে খুন করে ফেলতে নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য কাউকে দেখা কতো কষ্ট এর ও জানে।
    এই সব কিছুর জন্য দায়ী ওই দোলা ওর জন্য আদনান আমাকে বার বার না করেছে।
    ওকে আমার ছারবো না ভাইয়ার ভরসা করলে কিছু হবে না যা করার আমি করবো।

    রাগে গজগজ করতে করতে দোলার পাশে এসে বসলো।
    আমি ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম তখন মনে হলো কেউ আমার পাশে বসেছে তাকিয়ে দেখি তিথি রেগে তাকিয়ে আছে।আমি রাগ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।
    মাথা সোজা করে উনার দিকে তাকালাম,
    “আপনার কি হয়েছে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?”
    আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বললাম,
    আমার কথা শুনেই মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।
    “কি করছো দোলা? আর তোমাকে এতো খুশি পাস দেখাচ্ছে যে?”
    মুখে হাসি নিয়ে বললো কিন্তু তার এই হাসিটা আমার একদম‌ই সত্যি লাগছে না মনে হচ্ছে দেখানে একটা মেকি হাসি।
    তবুও কিছু বললাম না,,
    “বসে আছি দেখতে পারছো না।”
    “হুম তা দেখছি। আচ্ছা তুমি এখন ও আমার সাথে রেগে আছো?”
    আমি বললাম, ” না তো রেগে কেন থাকবো?”
    “রেগে নাই তাহলে কথা বলতে এতো সংকোচ করো কেন?”
    “ওই আপনাকে ভালো করে চিনি না তো তাই।”
    “চেনো চিনি নাও। আমি তো তোমার আপুর মতো তাই না।”
    আমি বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছি তাও বললাম,
    “হুম। আচ্ছা আমি আসি আপনি থাকেন?”
    বলেই উঠে দাঁড়ালাম।তিথির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে গটগট করে চলে এলাম। বাসায় এসে থপ করে বিছানায় শুইয়ে পরলাম।

    নেহা ইলমা সুমাইয়া সবাই কে কনফারেন্স এ কল করলাম তারপর সব বলে দিলাম।সব শুনে তো ওরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল।কথা শেষ হতেই আমি আজকে কোন ড্রেস পরবো সেটা দেখতে লাগলাম।
    আলমারী থেকে সব ড্রেস বের করে সব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছি কোন টা পরবো। একটা দেখছি আর ফেলে আরেকটা সব ড্রেস সুন্দর কিন্তু আমার ভালো লাগছে না মনে হচ্ছে আরো সুন্দর দরকার। আজকে ভাইয়া আমাকে ভালোবাসি বলেছে আজকে আমার ভাইয়ার মন মতো সাজা উচিত।
    ড্রেস বিছানায় রেখে চুপ করে বসে আছি গালে হাত দিয়ে।

    বিকেলে ভাইয়া আমার জন্য ড্রেস পাঠালো। রুমে এসে প্যাকেট খুলে চমকে উঠলাম অনেক সুন্দর ড্রেস। কালো গাউন।ভাইয়ার পছন্দ আছে বলতে হয় আমার খুব পছন্দ হয়েছে আমি ওই ড্রেসটাই পরলাম।
    পছন্দ না হলেও আমি এইটাই পরতাম কারণ ভাইয়া দিয়েছে। সন্ধ্যার পর রেডি হয়ে আসলাম এই বাসায় লোকজন এর অভাব নাই।
    এতো মানুষ দেখে কিছু টা নার্ভাস ফিল হচ্ছে আব্বু আম্মু পেছনে আছি আমি।তারা চলেই গেছে আমি ভাইয়াকে খুঁজছি চারপাশে। এমন সময় তিথি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
    তিথির দিকে তাকিয়ে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। তিথির দিকে তাকিয়ে আশেপাশে তাকালাম সব ছেলেরা হুমকি খেয়ে পরছে ওর উপর। আর পরবেই না কেন পরছে কি অসভ্য ড্রেস ছিঃ আমার তাকিয়ে লজ্জা লাগছে।
    তিথি লাল টকটকে গাউন পরেছে হাতা কাটা। গলার দিকে বেশি নামানো, আবার এদিকে হাঁটু উপর পর্যন্ত শুধু পেট ঢাকা। ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক দিয়েছে চুল ফুলিয়ে উপরে খোঁপা করা কি বাজে লাগছে আমি নাক ছিটকে তাকিয়ে আছি।আর ছেলেরা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
    তিথি এসবে মজা পাচ্ছে মনে হচ্ছে সবার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে আমাকে বলল,
    ‘হাই দোলা লেট করে এলে দেখছি।”

    ‘হুম আমার রেডি হতে সময় লেগেছে।”
    “পার্লারে যাও নাই।”
    ‘না।”
    “ও এজন্যই তোমাকে ভালো লাগছে না।আর চুল ছারছো কেন? কেমন জানি লাগছে ঠোটেও লিপস্টিক দাও নাই। কিন্তু ড্রেসটা সুন্দর এটা তোমার থেকে আমাকে বেশি মানাতো।”
    ভাব নিয়ে বলল।
    তিথি রীতিমতো আমাকে অপমান করছে তাও কিছু বলছি না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। চোখে আমার জল চিকচিক করছে সত্যি কি আমাকে খারাপ লাগছে। ভাইয়া তো বেশি সাজ পছন্দ করে না আর চুল খোলা রাখাটাই ভাইয়া পছন্দ করে এজন্য তো আমি এভাবে এসেছি।
    ” আচ্ছা মন খারাপ করো না নেক্সট আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব কিভাবে সাজ গোজ করতে হয়।তুমি তো বাচ্চা পারবে কি করে দেখ সবাই আমার দিকে কি ভাবে তাকিয়ে আছে আর তোমার দিকে কেউ তাকাচ্ছে না।”
    বলেই আশেপাশে তাকালো।
    আমি সবার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তখন কোথা থেকে ভাইয়া চলে এলো। আর আমার পাশে দাঁড়িয়ে এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো,,
    ভাইয়ার জরিয়ে ধরাতে আমি চমকে তাকালাম, ভাইয়া আমার দিকে না তাকিয়ে তিথির দিকে নিজের দৃষ্টি রেখে বলল,
    “তোর মতো নিজের শরীরের অংশ অন্যকে দেখিয়ে নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে না আমার দোলা। তাই নিজের সাথে দোলাকে মিলাতে আসবি না। আর কি বলেছিলি সবাই তোকে খেয়াল করছে এটা ভুল সবাই তোকে না তোর শরীর খেয়াল করছে। যে ড্রেস পরেছিস এটা পরার থেকে না পরা বেটার ছিলো আর এসব বাজে পোশাক সাজগোজ আমাদের বাড়ির মেয়েরা করে না।”
    বলেই আমার দিকে তাকালো আমার গভীর ভাবে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।আমার চোখে এখনো পানি আছে ভাইয়া বাম হাত বাড়িয়ে আমার চোখের জল মুছে দিলো।
    আর বল্ল,,
    ” ইডিয়ট ওর কথায় কাঁদছিলি। একটু তেই এতো কাদিস কেন বলতো।”
    তিথি রেগে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।তারার কটমট করে বলল,,
    ” তুই আমাকে এভাবে অপমান করতে পারলি এই মেয়েটার সামনে।”
    ফুঁসে উঠলো।
    “এই মেয়ে না দোলা বলবি।চাইলে ভাবিও বলতে পারিস।”
    তিথি রেগে ফুসফুস করতে করতে চলে গেল আমাদের সামনে থেকে।

    আমি ভাইয়ার দিকে অভিমানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
    ‘ভাই আমাকে সত্যিই কী বাজে লাগছে দেখতে?”
    ভাইয়া আমাকে ছেড়ে হাতের বাহু শক্ত করে ধরে এক সাইটে নিয়ে এলো।
    তারপর আমার কোমর শক্ত ধরে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল,
    ‘দাঁড়া ভালো করে দেখে বলি।”
    আমি মাথা নিচু করে বললাম,
    ” আমাকে দেখতে বাজে লাগছে তাই না। তিথি আপু ঠিকই বলছি।”
    মন খারাপ করে। ভাইয়া আমার দিকে এক দিকে তাকিয়ে আছে কি বলছে না?
    আমার ভ্রু কুঁচকে বললাম,
    ” কি হলো কথা বলছো না কেন?”
    ভাইয়া চোখের পলক ও ফেলছে না।
    ভাইয়া নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
    “দোলা রানী তুই আজ আমার মন মতো সেজেছিস আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না।”
    ‘কেন বিশ্বাস না করার কি আছে? ”
    ভাইয়া আমার চুল কানে গুঁজে দিয়ে আদুরে গলায় বলল,
    “ভালোবাসি দোলা রানী।”
    আমি ভাইয়া মুখে ভালোবাসি দোলা রানী শুনে স্তব্ধ হয়ে হয়ে তাকিয়ে আছি।কথাটা আমার কানে বাজছে শরীর কাঁপছে আমার ভাইয়ার এতো আবেগ মাখা কন্ঠ শুনে আমি খুশি বাকবাকুম হয়ে গেলাম।
    খুশির ঠেলায় ভাইয়ার গালে চুমু একে দিলাম।আমি চুমু দিয়ে নিজেই বোকা বনে গেলাম অতি আনন্দে কি করে ফেললাম লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। ভাইয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি কোমরে রাখা হাত আলগা হয়ে গেছে। আমার এমনটা হয়তো আশা করে নি।
    আমি লজ্জা মাথা নিচু করে আছি একবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে চলে এলাম ছিঃ কি করে ফেললাম এখন ভাইয়ার সামনে যাব কি করে?

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 28

    আমি সবার আড়ালে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কান দিয়ে আমার গরম হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। ইশ ভাইয়াকে আমি চুমু খেলাম ছিঃ ভাইয়া আমাকে কি ভাবছে? এই লজ্জা আমি ক‌ই রাখি ভাইয়ার সামনে কি করে যাব আমি‌।
    সবাই কতো ইনজয় করছে আমি একা লুকিয়ে বাগানে আছি। ভাইয়ার জন্য তো এখানে এসে আমি আমার তো ভাইয়ার কাছে যেতেই লজ্জা করছে কিভাবে যাব তার সামনে।
    এক হাত দিয়ে আরেক হাত মুচরাতে মুচরাতে ভাবনা ভাবছি।
    তখন হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি চমকে পেছনে ফিরে তাকায় কিন্তু কেউ নেই। কিন্তু আমার মনে হলো কেউ আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। এবার আমি ভয় পেয়ে গেলাম এভাবে বাসায় বাইরে আশা ঠিক হয়নি আমার। এদিকে কেউ নেই আমি বাসায় আশার সিদ্ধান্ত নিলাম।
    আমি এক পা এগিয়ে যেতেই খচ করে শব্দ হলো আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম দ্রুত পাশ ফিরতেই কেউ আমার মাথায় আঘাত করলো,
    আঘাত পেয়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলাম এক হাতে মাথায় চেপে ধরে।
    মাথায় হাত দিয়ে ভিজা অনুভব করলাম ঝাপসা চোখে হাত চোখের সামনে এনে ধরতেই লাল টকটকে রক্ত ভাসলো আমি থমকে গেলাম। ব্যাথা চোখ খুলে রাখতে পারছি না। ওইভাবেই ওইখানে পরে গেলাম তীব্র ব্যাথা আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসছে।

    এতো কষ্ট আমার কখনো হয়নি কখনো না। মনে হচ্ছে এই কষ্টে আমি আমার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবো। পৃথিবীতে সময় কি তাহলে আমার শেষ। হঠাৎ চোখের সামনে বাবা মার মুখ টা ভেসে উঠলো তাদের ভালোবাসার কথা কতো ভালোবাসে আমাকে বকে কিন্তু ভালোবাসার খুবই। আমি মরে গেলে খুব কষ্ট পাবে তারা খুব। কাঁদবে আমার জন্য আদনান ভাই সেও কি কষ্ট পাবে হুম পাবে তো কালকেই ভাইয়ার আমাকে ভালোবাসি বলল আর আজ আমার এই অবস্থা ভাইয়ার ভালোবাসা পাওয়া কি আমার কপালে ছিলো না। হয়তো ছিলো না আমার সময় এই পর্যন্ত ছিলো।চোখ খুলে রাখতে পারছি না বন্ধ হয়ে গেল চোখের কোণে পানি পরছে। কেউ আমার সামনে দাড়িয়ে কিন্তু কে সে যে আমার এই অবস্থা করলো আমি তাকাতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে কষ্টে।

    তিথি পৈশাচিক আনন্দ নিয়ে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। ওর আনন্দ যেন উপচে পরছে। এতো দিনে আদনান ওর হবে খুশি ওর নাচতে ইচ্ছে করছে। আচমকা দোলার পাশে বসে পরলো।
    “ইশ বেচারি। ভালোবাসা পেয়ে কি আনন্দটাই না করছিল আর কিছু ক্ষনের মাঝে তার এই অবস্থা। তোমার জন্য খারাপ লাগছে দোলা আমি এমন টা করতে চাইনি কিন্তু কি করবো বলো তুমি বেঁচে থাকলে আদনান কখনো আমার হতো না। এবার তুমি নেই এই কষ্টে পাগল হয়ে যাবে নিংস হয়ে মাবূ আর আমি হব ওর সব কিছু।এবার আদনান কে আমায় ভালোবাসতেই হবে।”
    দোলার দিকে তাকিয়ে আরো কিছু কথা বলে তিথি লুকিয়ে পার্টিতে চলে এলো।
    পার্টিতে এসে ড্রিংস এর কাছে এসে বসলো। একটা ওয়ানার হাতে নিয়ে তাতে চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছে আজকে তো আমাকে সেলিবেশণ করতেই হবে আমার পথের কাঁটা দূর করতে পেরেছি বলে কথা।
    আদনান এখন করছে কি আচ্ছা একটু পর যখন ওর প্রানের দোলা রানীর ওই অবস্থা দেখবে ওর কি হাল হবে? ও কি করবে?
    আদনান তোকে আমি এই কষ্ট দিতাম‌ই এটা না পেলে মে তুই আমার সত্যি না কখনো। জানি আমার অন্যায় করেছি কিন্তু ভালোবাসার ক্ষেত্রে কিছু অপরাধ না আমার কাছে।

    আদনান দোলার কাছে হতদম্ব হয়ে গেছে। দোলা এমন ভাবে কিস করবে ও ভাবেনি। কিন্তু মেয়েটা গেল কোথায় সে কখন থেকে খুঁজে যাচ্ছি। লজ্জায় ওর মুখে লাল হয়ে গেছিল ঝুঁকের বসে কিস করে নিজেই লজ্জা মরে যাচ্ছে পাগলি একটা। দোলার কথা ভেবে আদনান এর মুখে ও হাঁসি ফুটে উঠেছে। বারবার দোলার স্পর্শের কথা মনে হচ্ছে। আমি যে নিজের ভালোবাসার মানুষটির কাছে থেকে এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা পাব কল্পনাতেও ভাবিনি‌। পার্টিতে দোলাকে খুজছে আদনান কিন্তু পাচ্ছে না বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।

    গেল কোথায় এখানে তো নাই ওই তো দোলার মা আন্টি আম্মু সবাই ওই খানে যার সবাই সবার মতো ইনজয় করছে। হঠাৎ কোথা থেকে তিথি এসে আমার হাতে বাহু জরিয়ে ধরলো আমি চমকে উঠলাম। রেগে ওর দিকে তাকালাম তিথির সেদিকে লক্ষ্য নেই ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে হা করে আমি ঝামটা মেরে ওর হাত নিজের বাহু থেকে সরিয়ে দিলাম।
    “কি হচ্ছে এসব? এমন করছিস কেন অসভ্যের মতো।”
    তিথি আমার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে মুখ বেকা করে তখন আমার দিকে‌ তাকালো।
    “তুই আমাকে আবার অসভ্য বললি আদনান।”
    “অসভ্যের মত কাজ করলে বলবো না।”
    ‘আমি ধরলে ফোসকা পড়ে তোর গায়ে আর ওই দোলা তোকে কিস করলে কিছু হয় না তাই না।”
    তিথির মুখে কিসের কথা শুনে আদনান বিশ্মিত হয়ে তাকালো ওর মুখের দিকে।
    “কি রে অবাক হচ্ছিস কেন ভাবছিস আমি কি করে জানলাম এই সব?”
    প্রশ্ন তো চোখে তাকিয়ে আছে আদনান।
    “খোলামেলা জায়গায় এসব করলে তো আমাদের মত অনেকেই দেখতে পাবে তাই না।”
    তিরস্কার করে বলল তিথি।
    “সর আমার সামনে থেকে তুই ড্রাংক।”
    তিথি শুনলো না উল্টা আদনান এর কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
    “আই লাভ ইউ আদনান। আমি তাকে খুব ভালোবাসি ওই দোলার থেকে ও বেশি। প্লিজ লাভ মি।”
    “ছার আমাকে তিথি। কি করছিস সব কিছুর কিন্তু একটা লিমিট আছে।”
    “না ছারব না আগে বল তুই আমাকে ভালবাসবে!”
    ‘পাগলামো করিস না বাবা-মা আছে এখানে এভাবে দেখলে কিন্তু ওনারা মাইন্ড করবে।”
    “আই ডোন্ট কেয়ার।
    তিথিকে বলেও আদনান কিছু বোঝাতে পারলো না তাই নিজেই জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে আচমকা তিথির গালে ঠাস করে চড় মেরে বসলো। রাগে আদনান এর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। কপালের রগ ফুলে উঠেছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
    “বাসায় এত লোকের সামনে এর থেকে আর ভালো কোন পানিশমেন্ট তোর জন্য পেলাম না।নেক্সট টাইম আমি যেন তোকে আমার চোখে সামনে আর না দেখি আজকে বাসায় চলে যাবি।”
    কথাগুলো বলে আদনান ওর সামনে থেকে চলে এলো।

    তিথি গালে হাত দিয়ে ফুসফুস করতে করতে আদনান এর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। তুই আমাকে চড় মারলি আর কি বললি আমি যেন চলে যাই আমি কখনো যাবনা। চলে যাবে ওই দোলা যার জন্য তুই আমাকে এতো ইন্সাল্ট করলি।
    আদনান রাগে গজগজ করতে করতে বাসার বাইরে চলে রাগে মাথার চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। তিথিকে বাসায় আনা উচিত হয় নাই। ও নিজে তো না কখনো কিন্তু ঐদিন অফিস থেকে আসার পথে তিথির সাথে দেখা হয়ে যায় আর তিথি নিজেই বলে যে আদনান,” তোর বাসায় পার্টি হচ্ছে আর তুই আমাকে একটু বললি ও না।”
    তিথির মুখে পার্টির কথা শুনে আদনান চমকে ছিল কারণ তিথি এসব জানলে কিভাবে? জিজ্ঞেস করায় বলে তাদের এত বড় কোম্পানি ফার্স্ট হয়েছে সেটা কি আমরা জানব না।
    আদনানর এর বিশ্বাস হয় ওর কথা আর এতো দিনে বন্ধুত্ব ওদের তাই নিজে থেকে আসা র জন্য বলাতে আর মানা করে না‌‌। আর এসে এসব শুরু করেছে।
    আস্তে আস্তে বাগানে চলে এসেছে আদনান। তিথি কে নিয়ে ভাবছে আর রাগে ফুসফুস করছে। হাঁটতে হাঁটতে পায়ে নিজে কিছু পরে নরম কিছু ও চমকে পা সরিয়ে নেয় তাড়াতাড়ি।
    হালকা আলোয় ও নিচের দিকে তাকিয়ে থমকে যায় সাথে সাথেই স্তব্ধ-হতভম্ব হয়ে যায়।স্তব্ধ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে এসব কি দোলা এ ভাবে শুয়ে আছো কেনো তাও এই খানে।ভয়ে তাড়াতাড়ি নিচে বসে পড়ে ওর বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে অজানা ভয়ে।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো(রি-পোস্ট)
    Nondini Nila
    Part 29+30

    (২৯ পার্ট বারবার দেখে হয়তো ভাবছেন একবার দুইবার পোস্ট কেন করছি? এইটা এডিট করা হয়েছে! আগে তাই কিছু ভুল করেছিলাম যেটা আমার না বুঝে তার জন্য সবাই আমাকে ক্ষমা করবেন। আমার পাঠক-পাঠিকা আমার ভুল ধরিয়ে দিয়েছে তাদেরকে অনেক অনেক ভালোবাসা। এভাবে পাশে থাকবে ভুল হলে অবশ্যই জানাবেন। জাতে শুধরে নিতে পারি। ধন্যবাদ সবাইকে সবাই আমার ভালোবাসা নিবেন।)

    হসপিটালে কডিটরে মাথা নিচু করে পাথর হয়ে বসে আছে আদনান। চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। প্রচন্ড শক্ত গম্ভীর মানুষ আদনান এতো সহজে ভেঙে পরে না কিন্তু আজকে ভেঙে পরেছে। নিজেকে শূন্য লাগছে ওর। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু অদ্ভুত পারছে না আর পারবে কি করে? ও তো মেয়ে না ও ছেলে মেয়েদের মতো নিজের কষ্ট সবার মাঝে বিলিন করতে পারেনা। মেয়েদের মতো সহজেই কাঁদতেও পারেনা।পারলে বোধহয় ভালো হতো যন্ত্রনা টা কমতো।এতো কষ্ট হচ্ছে যে ওর বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। চোখ মুখ টকটকে লাল রং ধারণ করেছে
    ভেঙে পরেছে আদনান। নিজের ভালোবাসার ওই অবস্থা ও কিছু তেই সহ্য করতে পারছেনা।কিভাবে এসব হলো আদনান এর মাথায় আসছে না।
    দোলাকে সেই মুহূর্তে ওই অবস্থায় দেখে আদনান সেই মুহূর্তে দোলার মাথাটা টেনে নিজের বুকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে। পাগলের মত করে দোলাতে ডাকতে থাকে। আদনান এর ওই চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে দাড়োয়ান। তিনিও স্তব্ধ হয়ে যায় দোলার অবস্থা দেখে। সাথে আদনান পাগলের মত দোলার গালে হাত দিয়ে ডাকছে। রক্ত দেখে আরো পাগলামো বাড়িয়ে ফেলে। সেসব দেখে দারোয়ান ছুটে ভিতরে গিয়ে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে। সবাই বাইরে এসে থমকে যায়। দোলার মা তো দোলা বলে চিৎকার দিয়ে ওইখানেই জ্ঞান হারায়। তাকে কোনমতেই সামলায় আদনান এর মা। তার চোখেও জল ভরে আসে। দোলার বাবা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে তার একমাত্র কলিজার টুকরা মেয়ে দিকে। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দোলার ছেড়ে আর নিচে আদনান দোলা কে ধরে পাগলামো করছে। দোলা রানী জান কলিজা বলে ডেকেই চলেছে দোলা সাড়াশব্দ দিচ্ছে না।

    আদনানের বাবা দোলার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে বন্ধু তাড়াতাড়ি চল দোলাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে ‌হবৈ। ভেঙে পরিস না বন্ধু আমাদের দোলার কিছু হবে না।

    আদনান দোলাকে ছাড়বে না ওভাবে ধরে ডেকে চলেছে দোলা কে। তাই সবাই আদনান কে টেনে সরিয়ে দোলাকে গাড়িতে উঠায়।
    আদনান দোলার জন্য কতোটা পাগল পরিবারের সবাই জানে তাই আদনান কে বুঝিয়ে হসপিটালে নিয়ে আসে।
    দোলার মাথার শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে ডাক্তার জানিয়েছে।
    দোলার অবস্থা ক্রিটিক্যাল অনেক কারণ আঘাতটা গুরুতর ভাবেই লেগেছে।
    একঘন্টা পর অটি থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এলো আর জানালো,
    ডাক্তার আমার মেয়ের কি অবস্থা? ও ঠিক হয়ে যাবে তো।
    দোলার বাবা দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করে।
    ডাক্তার বলে,
    সরি মিস্টার বারো ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে আমাদের পক্ষ্যে কিছু করা সম্ভব না।
    দোলার বাবা এটা শুনে পরে যেতে নেয় আদনান এর বাবা তাকে আগলে নেয়।
    আদনান বসেই ছিলো ডাক্তার এর কথা শুনেই এক ঝটকায় ছুটে আসে আর ডাক্তার এর শার্টের কলার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ক্রোধ নিয়ে বলে।
    “কি বললেন আপনি কিছু করা সম্ভব না?”
    ডাক্তার আদনান এর এমন কান্ডে বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে যায়। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে,
    কি করছেন ছাড়ুন?
    আপনি আমার দোলাকে বাঁচাতে পারবেনা না কেন? দোলার কিছু হলে খুন করে ফেলবো।
    এবার ডাক্তার রেগে যান আর আদনান কে অনেক কষ্টে এক নিজের থেকে সরিয়ে বলে,,,
    এসব কি‌ গুন্ডামু হচ্ছে আপনি আমাকে থ্রেট দিচ্ছেন কেন? আর শুনেন কোন ডাক্তার চায় না তার পেশেন মারা যাক তাই এমন করবেন না আমাদের সাথে আমরা চাই তারা আমাদের কাছে আসে তাদের যেন ঠিক করতে পারি কিন্তু আমাদের হাতে তো সব নেয়। কারন উপরে একজন আছে যিনি সব কিছু নির্ধারণ করে রাখেন। মহান আল্লাহ তাআলা তাই আমাকে এভাবে না ধমকের আল্লাহর কাছে দোয়া করুন চাইলে তিনিই পারবেন আপনাদের কাছে মানুষ কে ফিরিয়ে দিতে।
    রাগে উনার চোখ লাল হয়ে এসেছে আদনান এর বাবা আদনান কে সরিয়ে বলল,,
    ডাক্তার আই এম সরি ওর হয়ে বলছি আসলে দোলাকে খুব ভালোবাসে তো তাই এমন করে ফেলেছে।প্লিজ কিছু মনে করবেন না।

    ডাক্তার বলল, উনার কষ্ট হচ্ছে বুঝেছি বাট এসব কি তবুও ক্ষমা করলাম ভালোবাসার মানুষটির কিছু হলে কেমন লাগে সেটা আমি জানি। বাট নেক্সট এমন করলে আর না।
    বলেই ডাক্তার চলে গেল।
    ছেলের দিকে রেগে তাকালো উনি আদনান আর দাঁড়ালো না জানালার কাছে এসে আবসা ভাবেই দোলার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে র‌ইল।
    তারপর কি যেন ভেবেই হসপিটালে থেকে বেরিয়ে এলো।
    আদনান কে বেরিয়ে যেতে দেখে আদনান এর বাবা চিন্তা করছে কডিটরে বসে ছেলে এই রাতে কোথায় গেল এদিকে বন্ধু কে একা রেখে যেতেও পারছেনা। ছেলেটাকে নিয়ে আর পারিনা। দোলার এই অবস্থা ও যদি নিজের কোন ক্ষতি করে বসে ভয় পাচ্ছে উনি।
    আদনান সোজা মসজিদে চলে আসে। ডাক্তার এর কথা শুনার পর ওর এটাই মনে হচ্ছিল।
    দুহাত তুলে দোলার জীবন চাচ্ছে দোলাকে ছাড়া ও বাঁচবে না। এতো দিন পর এতো প্রতিক্ষার পর আমি আমার ভালোবাসা মানুষকে পেয়েছি আল্লাহ তাকে এইভাবে আমার থেকে কেড়ে নিও না।
    ওর জীবন তুমি ভিক্ষা দাও আমাকে আমার ভালোবাসা অপূর্ণ রেখে না আল্লাহ।

    এদিকে তিথি নিজে আদনান এর মার কাছে বসে আছে। আর দোলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে।
    দোলার মাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে সে এখন ঘুমিয়ে আছে। পাগলামা করছিল অনেক তাই এই অবস্থা।
    তিথি আদনান এর মাকে বশ‌ করতে চাইছে। কারন একদিন এই বাড়ির বউ হবার কথা তার শাশুড়ি কে পটিয়ে রাখবে।
    এই তুমি যাও তো।
    তিথি কথা অফ করে বলল,
    কেন আন্টি কি হয়েছে?
    তোমার কথা আমার ভালো লাগছে না। আমার দোলার চিন্তায় আমার মরছি আর তুমি আজেবাজে বলছো।
    তিথি রেগে চলে এলো। অসভ্য মহিলা এটাকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে একবার ব‌উ হয়ে আসি তারপর দেখাবো।

    ভোরের দিকে আদনান হসপিটালে আসে। মুখটা শুকিয়ে একটু খানি হয়েই আছে।এসেই দোলার কাছে যাওয়ার জন্য জরাজরি করতে লাগে।দোলাকে একবার নিজের কাছ থেকে না দেখতে পারলে একটু স্পর্শ না করতে পারলে একদম বন্ধ হয়ে আসছে। এদিকে ডাক্তার যেতে নিষেধ করেছে কিন্তু আদনান এর জরাজরির সাথে না পেরে পাঁচ মিনিট এর জন্য এলাও করে।
    আদনান ধীরপায়ে এগিয়ে যায় দোলা কাছে মাথা ব্যান্ডেজ করা ও এগিয়ে গিয়ে নিঃস পলক ফেলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দোলার কপালে আস্তে করে চুমু খায়।তারপর হাতটা আস্তে করে ধরে নিজের বুকের চেপে ধরে। ছলছল চোখে দোলার দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু কন্ঠে বলে,
    দোলা রানী তোর কিছু হবে না দেখিস। আল্লাহ আমার কাছ থেকে তোকে নেবে না আমার ভালোবাসাকে অপূর্ণ রেখে।আর তোর এই অবস্থা যে করেছে তাকে আমি এর থেকেও কঠিন শাস্তি দেব। তুই খালি তাড়াতাড়ি আমার বুকে ফিরে আয়। আমার বুকটা মে ফাঁকা হয়ে গেছে শূন্য হয়ে গেছে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা এইভাবে যন্ত্রণা হচ্ছে খুব। এই যন্ত্রনা একমাত্র তোর সুস্থ তা ঠিক করতে পারবে।
    বলে কপালে আরেকটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে বেরিয়ে আসে।

    বারো ঘন্টা হতে আর আধা ঘন্টা কিন্তু দোলার নো রেসপন্স সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে আদনান ছটফট করছে কিন্তু ওর বিশ্বাস দোলা ঠিক হবেই।
    দোলার মা আদনান এর মা সকালেই চলে এসেছে।সাথে খাবার নিয়ে এসেছে।সবার জন্য কিছু বলতে পারছে না আসলে দোলা জ্ঞান না ফিরলে বলতেও পারবে না দোলার মা এসব জানে না ঘন্টার খবর সে জানে দোলা ঠিক আছে।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Part 30

    12 ঘন্টা হতে আর মাত্র 10 মিনিট আছে। অথচ এখন অব্দি দোলার জ্ঞান ফেরেনি। ওটির রুম খুলে দেওয়া হয়েছে। ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছে। তাই তারা বলেছে আত্মীয়-স্বজন সবাই চাইলে এখনও ওর কাছে যেতে পারবে কারণ বেশী সময় নাই তারা ভাবছেন দোলার আর জ্ঞান ফিরবে না কারণ ফেরার হলে আগেই ফিরত।
    এখন আর দোলার মাকে না জানিয়ে লাভ নেই তিনি এসে বুঝতে পেরেছেন কিছু একটা হয়েছে এখনতো তিনি তার মেয়ের পাশে বসে করে কেঁদে যাচ্ছে।

    একটি মাত্র মেয়ে তার আর তার কিনা অবস্থা। চোখের জল কোনমতেই বাঁধ মানছে না। সবাইয়ের চোখ ভরা পানি নিয়ে ওটির ভেতরে দাঁড়িয়ে নীরব হয়ে দাঁড়ায় দোলার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। দোলার মা আচমকা আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন।
    তাকে নিয়ে আবার ভর্তি করতে হলো।
    এদিকে আদনান হসপিটালে নেই। দোলার সাথে পাগলামো করে দেখা করে আবার চলে গেছে কোথায় যেন।
    ডাক্তাররাও চোখে পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদেরও কষ্ট হচ্ছে তারা কখনোই চায়না কোন পেশেন তাদের কাছে এসে এভাবে সবাইকে ছেড়ে চলে যাক। কিন্তু সবাই কে তো বাঁচানোর সম্ভব না। যদি তার হায়াত না থাকে। কিন্তু তারাতো নিরুপায়।

    চোখের চশমাটা খুলে চোখটা মুছে নিল তখনই হঠাৎ চোখে পরলো দোলার হাতের আংগুল নড়ছে। উনি চমকে উঠল তাড়াতারি দোলার কাছে গেলেন। সবাই ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিলেন দোলার মা বাদে তাকে আরেকটা কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে।সবাই আশা ছেড়ে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তখন হঠাৎ ডাক্তারকে দোলার কাছে দৌড়ে যাওয়া তে সবাই অবাক হয়ে তাকালো। ডাক্তার দোলার পালস চেক করছেন। তারপর নার্সকে দেখে অক্সিজেন দিতে বলল।আর অক্সিজেন দোলার নাকে দিতেই দোলা জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নেওয়া টা স্বাভাবিক হলো। সবাই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে সবার চোখে-মুখে আশার আলো ফুটে উঠল।
    ডাক্তার দোলাকে একটা ইনজেকশন দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, আর মামনি দের কাছে গেল,
    মামনিরা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
    ডঃ দোলা..
    মিরাক্কেল আপনাদের দলা বেঁচে গেছে। আমি তো একদমে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম তখন কিভাবে কি হলো সত্যি আই এম শকড।
    কিন্তু ডঃ দোলা তাহলে কথা বলছো না কেন?
    তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। এখন আর কোন চিন্তা নেই যা ছিল সব কেটে গেছে। আপনারা একদম নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন উনি 4/5 দিনের ভেতরে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ আমরা তো আশা করছি।

    সবার মুখে খুশি দেখা পাওয়া গেল
    সবাইকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমার দিকে রুম থেকে বেরিয়ে এলো,,
    এবার সবার চিন্তা করতে লাগল আদনান ভাই কোথায় গেছে। অনেকক্ষণ ধরে তাকে দেখা যাচ্ছে না। আমার জন্য ভাইয়া কেমন পাগল সবাই তা জানে। তাই আমার এই খবরটা ভাইয়া এখন জানানো দরকার। না হলে ভাইয়া কি থেকে কি করে বসবে সন্দেহ আছে।
    কিন্তু কোথায় ভাইয়া কোথায় সবাই পাগলের মতো ভাইয়াকে খুজতে লাগলো। তারপর ফোন করতে লাগলো, কিন্তু রিসিভ করছো না?

    সবাই আমার চিন্তা বাদ দে এখন ভাইয়া চিন্তা করছে।এদিকে ভাইয়া মসজিদে চলে এসেছিল আমার জন্য দোয়া করার জন্য যাতে আমি সুস্থ হয়ে যায়। আর ডাক্তার কে নিজের নাম্বার দিয়ে সে বলেছিল আমার জ্ঞান ফিরলে যেন জানায় আর না হলে সে ওখান থেকে আসবেনা। ডক্টর আঙ্কেল বুদ্ধি করে আমার জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে কল করে জানিয়ে দিয়েছে। ভাইয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মসজিদ থেকে আমার এখানে আসতে নেয়। গাড়ি চালাচ্ছে তাড়াতাড়ি তখনই ভাইয়ের চোখ যায় রাস্তার বাম কর্নারে।

    সেখানে দাঁড়িয়ে আছে তিথি আর একটা ছেলে।ভাইয়া গান্ড়িটা খুব সাবধানে থামিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে সে দিকে তাকায় ভাইয়া তাকানোর মাঝে সামনে ছেলেটির তিথির গালে ঠাস করে চড় মারে রেগে।
    এটা দেখে ভাইয়া হকচকিয়ে যায় সাথে সন্দেহ হয়
    তাই লুকিয়ে তিথিদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা শোনার চেষ্টা করে।
    তিথি বলছে,
    ভাইয়া তুই আমাকে মারলি?
    হ্যাঁ মারলাম। তুই কোন সাহসে দোলা কে মারার প্ল্যান করেছিস?
    আমি ওকে মারবো সেটা তো আগে থেকেই জানো।
    না আমি জানিনা আমি জানি শুধু এটুকুই তুই দোলাকে আদনানের থেকে দোলা কে সরাতে বলেছিলি।
    হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু তুমি সেই সব পারছ না।আর আমি আদনানের থেকে দোলাকের সরাবো বলেছি সরাতে না পারলে আমি পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবো দোলাকে ওর জন্য আদনান আমাকে বারবার অপমানিত করে। ইগনোর করেছে।

    আদনান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে দোলার এই অবস্থায় জন্য তিথি দায়ী। ও ইচ্ছে করে দোলার এই অবস্থা করেছে।রাগে ওর ফর্সা মুখ রক্ত বর্ণ ধারণ করছে।
    ও আড়াল থেকে তিরিশের কাছে যাওয়ার জন্য এক পা এগিয়ে যায় ওমনি ওর ফোন বেজে উঠে আর ওইদিকে থেকে তিথিরা ও ফোনের আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকায় চমকে।
    আদনান তাড়াতাড়ি ফোন বের করে রিং অফ করে লুকিয়ে পরে।
    এদিকে আরাফাত বদে উঠে,
    তুই কাজটা ভুল করেছিস যদি দোলার কিছু হয় আমি তোকে বোন বলে ক্ষমা করবো না মনে রাখিস।
    তিথি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে ,
    মানে এসব কি বলছো?
    ঠিকই বলেছি। দোলাকে আমি ভালোবাসি ওকে আমার চাই।আর তুই কিনা ওকে মেরে হসপিটালে পাঠিয়েছিস।
    হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে তিথি তারপর বলল,
    হোয়াট,
    দোলার কিছু হলে আমি তোকে ক্ষমা করবো না।আমি চেয়েছিলাম দোলা আমার হবে আর আদনান তোর কিন্তু তুমি কি করলি।
    আমি তো এসব জানতাম না। আর তুই ওই দোলাকে পছন্দ করিস কবে থেকে‌।
    আরাফাত কিছু না বলে হনহনিয়ে চলে গেল।এদিকে আদনান বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সমস্ত কথায় ও শুনেছে।
    আদনান কি যেন ভেবে নিজের গাড়িতে ওঠে হসপিটালে চলে এলো। তারপর ধরে দোলার কেবিনে এলো সবাই চিন্তিত হয়ে দোলার কেবিনের বাইরে বসে ছিল। তখন ছুটে আদনান কে আসতে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে পরে ওর কাছে আসে।
    নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগে। আদনান কোনমতে কাটিয়ে দোলার কাছে আসে।
    দোলার অক্সিজেন খুলে দেয়া হয়েছে হাতে স্যালাইন চলছে। নিষ্পলক ভাবে দোলা দিকে তাকিয়ে থেকে আদনান পাশে গিয়ে বসে। দোলা ইনজেকশনে খুব ভয় পায় আর এখন কিনা ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হবে কতটা ভয় পাবে ঘুম ভাঙলে।আদনান নিজের কাঁপা হাতটা আস্তে করে দোলার শুকনো গালে স্পর্শ করে। নিজের ভুলের জন্য দোলার এই অবস্থা। তিথিকে আমার আনা উচিত হয়নি ও ভালো হবার মানুষ না আমার আগে বোঝা উচিত ছিলো। ওর জন্য আমার দোলা রানী কত কষ্ট পাচ্ছে। আদনানের চোখের কোনে পানি জমে ওঠে। তিথিকে ও ওর ভাইকে এর চরম শাস্তি দিয়েই ছাড়বে। আদনানের চোখের পানি গাল বেয়ে দোলার হাতে পড়ে। আর তখনই দোলা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। আদনান কে নিয়ে যে সামনে বসে থাকতে দেখে আমার চোখ ছল ছল করে ওঠে।আমার চোখ কেম গোলা হয়ে আসছে আমি আবার চোখ বুজে চোখ মেলে ভাইয়া দিকে তাকায়।
    ভাইয়া আমার দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে তার চোখের কোনে পানি জমে আছে। আমি দুর্বল গলায় ভাইয়াকে ডেকে উঠি,
    ভা–ই–য়া
    ভাই আমার মুখে কথা শুনে আমার আরেক পাশে এসে বসেছে যে পাশে স্যালান দেওয়া হয় নাই।
    তারপর হাত শক্ত করে ধরে তিন-চারটা চুমু খেয়ে বলে,
    কথা বলিস না তোর কষ্ট হবে দোলা রানী।
    আমি আবার কিছু বলতে গেলে ভাইয়া হাত দিয়ে আমাকে চুপ করে থাকতে ইশারা করে।
    একদম কথা বলিস না তুই আমাকে কত ভয় পায় দিছিলি জানিস।আমার মনে হচ্ছিল আমি আমার প্রাণ ভোমরা হারিয়ে ফেলছি।বুকের ভেতরটা কত ব্যথা করছিল জানিস আর কখনো এমন ভয় পাওয়াবি না আমাকে। না হলে কিন্তু সত্যিই তোর সাথে প্রেম করবো না।
    কষ্টের মাঝেও ভাই আর এই কথা শুনে আমি মৃদু হাসলাম। আর ভাইয়ার বারণ সত্তেও বললাম,
    আমি তো প্রেম করবই না আমি তো এবার বিয়ে করবো।
    ভাই আমার কথা শুনে শকড হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
    তারপর ভাইয়া বলল, পাগলি। বলে ভাইয়া মাথা উচু করে আমার সারা মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিল। আমি চোখ বন্ধ করে ভাইয়ার স্পর্শ অনুভব করছি।কেমন যেন মাথা যন্ত্রণা করছে আমি নিজের মধ্যে থাকতে পারছিনা আসতে আসতে আমি ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলাম।

    বৃষ্টি হয়ে নামবো
    Nondini Nila
    Last Part

    তিথি আদনানদের বাসায় নিজের রুমে বসে রাগে ফুসফুস করছে। রাগে একবার রুমে এই কোনায় আসছে একবার ওই কোনায়।ওকি থেকে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ওর ভাই কিনা ওই দোলার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোথায় ভাইকে দিয়ে দোলা রাস্তা ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এ তো তার প্রেমে মশগুল হয়ে আছে।
    এখন সে তোর দোলার কোনো ক্ষতি করবে না। অল্টো ওর এই অবস্থা করেছি বলে আমাকে এতগুলো কথা শোনালো।
    নিজের ভাই কিনা বোনের থেকে ওই মেয়েটাকে বেশি পার্টি দিচ্ছে।
    রাগে ওর চোখ ফুলে যাচ্ছে। এই দোলা কিনা আমার ভাইকে বশ করে ফেলল। মেয়েটা আসলেই জাদু জানে। আদনানকে তো বশ করেই রেখেছে এখন আবার আমার ভাইকে।
    কোথায় নিজের বোনকে সাহায্য করবে তা না নিজের প্রেমে পাগল হয়ে গেছে।
    এখন যা করার আমাকেই করতে হবে তাহলে হয়ে গেছে দিপ আসতে দেওয়া যাবেনা। এসব ভাবছিল তখন কোথা থেকে আদনান এসে তিথির হাত শক্ত করে ধরে।
    আচমকা শক্ত করে হাত ধরার ভয় পেয়ে দেখে আদনান।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হাত সরানোর চেষ্টা করে কারণ আদনান খুব শক্ত হাত ধরেছে মনে হয় হাত ভেঙে ফেলবে।

    কী করছিস কী আদনান। আমার হাতে এতৈ শক্ত করে ধরেছিস কেন ভেঙে ফেলবি নাকি ছার হাত।
    ছড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল।
    আদনান ওর দিকে ফিরেও তাকাল না যেন ওর কোন কথা কানে যায় নি।
    আদনান নিজের মত তিথির হাত ধরে টানতে টানতে ওকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এলো। আর সবার সামনে এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। তিথি মুখ থুবরে পড়ল ফ্লোরে। আদনানের বাবা-মা ও দোলার বাবা সোফায় বসে ছিল। দোলার মা এখন হসপিটালে আছে ওনার জ্ঞান এখনো ফিরে নি।
    সবাই বসে শরবত খাচ্ছিল কারণ কাল থেকে কারও কিছু খাওয়া হয়নাই দোলার চিন্তায়। এমন সময় আচমকা এই ঘটনায় সবাই থমকে যায়। আর গ্লাস নামিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে পড়ে।

    তিথি ফ্লোরে পড়ে হাতে ও পায়ে ব্যথা পেয়েছে। ওইভাবে পড়ে থেকেই অবাক চোখে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলল,
    হোয়াট হ্যাপেনস আদনান এসব কি করছিস তুই আমাকে ফ্লোরে কেন ফেললি? অফ কত ব্যথা পেলাম।
    বলে ওঠার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু উঠতে পারল না ভালোই ব্যথা পেয়েছে।
    তিথি বুঝতে পারছে না ওর সাথে এমন করছে কেন আদনান?
    আদনান এগিয়ে এসে তিথি চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে দাঁড় করালো।
    আর বলল,
    তুই ইচ্ছে করে আমার দোলা কে আঘাত করেছিলি ওকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে চেয়েছিলে।
    আদনান দাঁতে দাঁত চেপে চোখ রক্ত লাল করে বলল। তিথি আদনানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে আদনান হিংস্র বাঘের মত হয়ে গেছে। ভয়ে তিথি চুপসে যায়। আদনান কিভাবে জানলো?
    আমার চুল ছাড়া আমার লাগছে।
    লাগুক লাগার জন্যই তো ধরেছি তুই যদি এখন মেয়ে না হতিস তাহলে তো আমি এখন মার্ডার করে ফেলতাম মারতে মারতে তোকে। মেয়ে বলে কম খাচ্ছিস।
    আমি কিছু করিনি আমাকে ছেড়ে দে।
    তিথি জানে এখন স্বীকার করলে আর রক্ষা নাই তাই মিথ্যা বলল।
    কিন্তু তিথি তো আ্য জানে না আদনান সব জেনেই এসেছে। আদনান তিথির মিথ্যা কথা শুনে আরো শক্ত করার চুলের মুঠি ধরলো। তিথি ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে,
    ছেড়ে দে আমাকে আমি না তোর বন্ধু।
    তুই আমার বন্ধু না তুই আমার চিরশত্রু। তোকে আমার বাসায় আনাই উচিত হয় নাই‌।খাল কেটে কুমির এনেছি আমি।
    এর আগে আদনানের চোখ দিয়ে আগুন জ্বলছে পড়ছে যেন।
    বাসার সবাই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেউ কিছু বুঝতে পারছেনা।কিন্তু আদনানের কথা শুনে বুঝতে পারছে দোলার এইসবের জন্য এই মেয়েটা দায়ী।
    তাই সবাই এখন হিংস্র হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। তবুও আদনানের মা আদনান এর বাবাকে বলে আদনানকে তিথির থেকে সরিয়ে আনলো।
    বাবা ছাড় আমাকে আর কত বড় সাহস আমার কলিজায় হাত দেয়। দোলাকে মারার প্ল্যান করে ছিল শুধুমাত্র আমার বউ হবে বলে। কিন্তু ও তো জানেনা দোলার কিছু হয়ে গেল ওআমি কখনই ওকে বিয়ে করতাম না। আমি শুধুমাত্র আমার দোলারানী কে ভালবাসি আমি আর কাউকে ভালবাসতে পারব না। দোল আমার প্রাণভোমরা আমার নিশ্বাস প্রশ্বাস আমার জীবন আর ও কিনা তাকে মারতে চেয়েছিল। ওকে আমি খুন করে ফেলবো।
    আদনান মাই ডিয়ার সন্ শান্ত হও তুমি। এইসব করোনা মার্ডার কেস। ওকে আমরা পুলিশের কাছে দিয়ে দেব।
    আদনান পাগলের মত ছটফট করছে সবাই মিলে ওকে শান্ত করলো।
    তিথি ফ্লোরে পড়ে ব্যথায় কাঁদছে। তিথি হচ্ছে আদরের দুলালী এত আঘাত একদমই সহ্য করতে পারেনি মেয়েটা। কেঁদে কেঁদে নাকের জল চোখের জল এক করছে।
    পুলিশের নাম শুনতে আঁতকে ওঠে। ওর পিল চমকে ওঠে। তাড়াতাড়ি এসে আদনানের পা জড়িয়ে বসে পড়ে।
    আদনান আমাকে ক্ষমা করে দে আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। আমার দোলাএই অবস্থা করা উচিত হয় নাই। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে।পুলিশের কাছে দিস না আমাকে আমার লাইফটা শেষ হয়ে যাবে। আমি তোর জীবন আর কখন আসব না।তোকে কথা দিচ্ছি আমি চলে যাব সিলেট ফিরে যাব। আমাকে পুলিশের কাছে দিস না বাবা-মা মরে যাবে পুলিশের কাছে দিলে আমাকে। প্লিজ ক্ষমা কর আমাকে।
    বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ল।ভাই এখন আর পাশে নাই আর বাবা-মা সত্যি যদি জানতে পারে আমাকে ত্যাজ্য করবে। আদনান এর জন্য আমি সবকিছু কেন হারাবো। তার থেকে আদনানকে ছেড়ে দেয়।
    না তোকে আমি একটুও বিশ্বাস করিনা তোকে তোর প্রাপ্য শাস্তি পেতেই হবে। তোর জন্য আমার দোলা যে কষ্ট পেয়েছে তার সাথে তো তোকে শাস্তি পেতে হবে।
    এইবারের মত শেষ বারের মত বিশ্বাস কর
    আর কখনো তোর সামনে আসভো এই প্রতিজ্ঞা করছি। ক্ষমা করে দে।
    বললাম তো তোকে পুলিশের কাছে দেবো। আর না হলে আমি নিজে তাকে শাস্তি দেবো।
    আদনান কিছুতেই তিথিকে ছাড়বে না আর এদিকে তিথি কান্না করতে করতে অনেক কিছু বলছে কিন্তু আদনান শুনছে না।
    আদনান ফোন বের করে পুলিশকে কল দিতে যাবে তখন দোলার বাবা এসে ফোন কেড়ে নেয়।
    আদনান অবাক হয়ে দোলার বাবার দিকে তাকায়।
    ওকে ছেড়ে দাও আর ভুল বুঝতে পেরেছে।আমার মনে হচ্ছে ওকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।
    ওকে যদি এখন আমরা পুলিশের কাছে দিয়ে দেই তাহলে ও আরো খারাপ হয়ে যাবে।হয়তোবা জেলে থেকে বের হয়ে আবার খারাপ কিছু করার চেষ্টা করবে।তা থেকে এতই যেহেতু সুযোগ চাইছে একটা সুযোগ দাও।

    দোলার বাবার কথা শুনে আদনান আর কিছু বলার সাহস পেলো না তিথিকে একটা সুযোগ দিল।
    তিথি খুশি হয় দোলার বাবাকে সালাম করল।নিজের ভুল কিছুটা হলেও বুঝতে পারল রাগে জেদেও সত্যিই খুব বড় অন্যায় করেছে।
    আদনান বললো ও যেন আজকে সিলেট চলে যায় টিকিট কেটে এনে দেব। শেষে আদনান টিকিট কেটে নিয়ে আসে তিথি চলে যায়।
    দোলাকে হসপিটাল একসাথে থাকতে হবে।
    হসপিটালে একদিন সকালে,
    দোলা কে সুপ খেতে হয় কিন্তু দোলা একদমই খাবে না তাই চুপ করে বসে আছে। প্রতিদিনই এমন করে একদিন মার কাছে খায় একদিন মামুনের কাছে। আজকে আদনান এসেছে
    আদনান এসেদেখে ওর দোলা রানী সুপ ‌খাবে না বলে মন খারাপ করে বসে আছে।
    এগিয়ে এসে দোলার পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,
    আমার দোলা রানীর এত মন খারাপ কেন?

    দোলা খুশি হয়ে আদনান এর দিকে তাকিয়ে বলে,
    ভাইয়া প্লিজ আমাকে বাইরে থেকে কিছু খাবার এনে দে আমি এটা খেতে পারছি না খুবই বাজে খেতে।
    অনুরোধ করে বলল।
    আদনান দোলার কপালে কিস করে বলে।
    কয়দিন এটাই খেতে হবে। ডাক্তারের নিষেধ বাইরের খাবার খাওয়া যাবেনা। প্লিজ খেয়ে নে।
    না ভাইয়া প্লিজ এটা খুবই বাজে তুমিএকটু ট্রাই করে দেখ। আমি এটা কিছুতেই খেতে পারব না আমার মুখ একদম বাজে হয়ে গেছে খেতে খেতে।
    নাক মুখ ছিটকে বলল দোলা।
    আদনান দোলা এমন বাচ্চা মো দেখে হেসে ফেললো আর নিজে স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে বলল,
    আমার কথা তো তুই সব শুনিস তাহলে আমার হাতে খা প্লিজ যা কালকে তোকে আমি বাইরে থেকে বিরানি খাওয়াবো।
    বিরানির কথা শুনেই দোলা চোখ-মুখ চিকচিক করতে লাগলো।
    সত্যি।
    ইয়াহ মাই লাভ।
    আদনানের হাতে দোলা কিছু টা খেলো তারপর আর খাওয়ানো গেলো না। তাই বাধ্য হয়ে আদনান বাকিটুকু রেখে দিল।
    ভাইয়া বাসায় যাব কবে। এখানে আমার ভালো লাগেনা।
    আর দুদিন তারপরে বাসায় চলে যাব।
    আমাকে তোমার ফোনটা একটু দাও তো।
    ফোন দিয়ে কি করবি?
    দরকার আছে দাও সারাদিন আমার এখানে বোরিং হয়ে থাকতে হয় একা একা ভালো লাগেনা।
    তাই তাহলে এখন থেকে আমি থাকি এখানে।
    আচ্ছা থাকবে তাহলে থাকো তাহলে ফোন লাগবে না।
    আমি তো থাকতে চাই কিন্তু।
    কিন্তু আবার কি তুমিই থাকবে আজকে আমার সাথে।
    তোর মা আছে তো তার সামনে আমি কিভাবে থাকবো।
    তাহলে মাকে বাসায় চলে যেতে বল আর তুমি থাকো।
    পাগল নাকি। তার বাবা-মাকে পিটিয়ে তক্তা বানাবো এখানে থাকতে চাইলে।
    কেন তক্তা বানাবো কেন? আব্বু আম্মু তো জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো!
    জানি এইটাই তো সমস্যা?
    এটা সমস্যা কেন?
    বুঝবি না তুই ঘুমা আমি তোর মাথা টিপে দিচ্ছি।
    না আমি ঘুম আসবো না তোমার সাথে গল্প করবো।
    চুপচাপ ঘুমাও মাথা ব্যথা করবে। গল্প যত পারো পরে কইরো।
    মন খারাপ করে অন্য দিকে তাকালো দোলা।
    দোলা তুই কিন্তু দিন দিন পাজি হচ্ছিস।
    ভাইয়া তোমাকে জড়িয়ে ধরি।
    আচমকা দোলার এমন কথা শুনে আদনান থতমত খেয়ে যায়।
    দোলা উত্তরের অপেক্ষা না করে আদনানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
    তারপর নরম কন্ঠে বলল,
    জানো ভাইয়া যখন আমি মাথায় আঘাত পেয়ে ছিলাম না আমার তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল।আমার মনে হয়েছিল আমি আর তোমাকে বাবা-মাকে মামনি বাবাকে দেখতে পাবোনা তোমাকে আমার শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছিল কিন্তু পারবো না আর মনে হচ্ছিল।তোমাকে বিয়ে করতে পারবোনা, সংসার করতে পারবও না প্রেম করতে পারবোনা। আমার না সত্যি খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমি যদি মরে যেতাম তুমি খুব কষ্ট পেতে তাইনা।
    দোলার কথা শুনে চোখে জল চলে আসে। দুই হাত উঁচু করে দোলাকে শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরে আর বলে,
    তোকে আমি মরতে দিতাম না কষ্ট কেন হবে? আদনান কে ছেড়ে তার দোলা রানী মরতে পারে না! এই পৃথিবীতে আমি থাকলে তুইও থাকবি আমার সাথে আর তুই না থাকলে আমিও থাকব না! খুব ভালোবাসি যে তোকে দোলার রানী।

    দোলা মাথা উঠিয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে, ভাইয়া বাসায় গিয়ে আমরা বিয়ে করে ফেলব তারপর আমাদের ছোট্ট একটা বেবি হবে ছেলে বাবু। আমি তার নাম রাখব আহান মুনতাসির।
    আদনান দোলার বাচ্চা মো আর এতো সব ভাবনা দেখে বলল,
    ওরে আমার বাবুর মা রে। তুই এসব কবে ভাবলি‌।
    এই তো কালকেই ভাবছি।
    এখানে থেকে এসব ভাবা হচ্ছে বুঝি।
    হুম তাই তো হচ্ছে। এখন বলো বিয়ে করবে তো।
    আদনান মুখ মলিন করে বলল,
    আমি তো করতেই চাই কিন্তু সম্ভব না।
    কেন? আহ্লাদী গলায়।
    ওই যে আমার হিটলার শশুর মশাই।তোর বাবা তো আমাকে শর্ত দিয়ে রেখেছে আমার মেয়ে ইন্টার পাস না করলে মেয়ে আমি কিছুতেই বিয়ে দেবো না। আমার মেয়ে তো বাচ্চা আমি বাচ্চা মেয়ের উপর এত পেশার দিতে চাইনা।
    এসব বাবা বলেছে তোমাকে।
    হ্যাঁ এসব বলেই তো তোর থেকে আমাকে দূরে রেখেছে।এমনকি ভালোবাসার কথা বলতে মানা করেছে না হলে নাকি বিয়ে দেবে না।
    বাবা তোমার সাথে এসব করেছে দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা বাবাকে।
    না না কিছু করবিনা আমি আমার দোলা রানীকে আরো একবছর পরেই চাই। একদম নিজের করে। আপন ভাবে সবার সম্মতিতে।
    বলে আদনান দোলার গালে হাত রেখে কপালে চুমু খায়।
    দোলা চোখ বন্ধ করে আদনান এর স্পর্শ অনুভব করে। তারপরে চোখ খুলেই ফট করে আদনানের নাকের চুমু দেয় সাথে কামড়।
    আদনান চমকে উঠে বলে, কি করলি তুই?
    ঠিকই করেছি বাবার ভয়ে ভালবাসি বলতে পারো নাই এজন্য এটা তোমার শাস্তি। কথাটা বলে দোলা আবার আদনান এর গলায় কামড়ে ধরল।
    রাক্ষসী হয়েগেছিস কামড়াচ্ছিস কেন?
    এটা আরো এক বছর আমাকে নিজে থেকে দূরে রাখার জন্য।
    এখন আমি দেই।
    আচ্ছা দাও।
    না এটা এক বছর পর সুদে-আসলে ফিরত পাবি।

    (আরাফাতকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে! দোলাকে অপহরণ করতে চেয়েছিল সেই অপরাধে। দোলাকে কলেজ থেকে অপহরণ করতে চায়।তিথি ভালো হয়ে গেছে তারপর সত্যিই আর আদনানের জীবনে ফিরে আসেনি।)

    এক বছর পর

    দোলা আর আদনানের বিয়ে হয়ে গেছে শর্ত অনুযায়ী। সবার শর্ত মতো দোলা ইন্টার পরীক্ষা দেওয়ার পরই বড় অনুষ্ঠান করে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।একটা বছর আদনানকে দোলায় কতভাবে যে টর্চার করেছে একমাত্র আদনান জানে। কিন্তু ভালোবাসার মানুষের থেকে সব টর্চার ই সুখের মনে হয় আর তা অতি আনন্দে নেওয়া যায়।
    বধু বেশে দোলাকে অপ্সরার মতো লাগছে আদনান তার দোলা রাণীর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে বাসর ঘরে। দোলা লজ্জায় লাল নীল বেগুনী হচ্ছে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে এক হাত দিয়ে আরেক হাত মুচরামুচরি করছে।

    দোলা রানী।
    আদনানের জড়ানো কণ্ঠে দোলায় সারা শরীর হিম শীতল হাওয়া বয়ে গেল। পিট পিট আদনান এর দিকে তাকালো। তগন বাইরে ঝরঝর বৃষ্টি নামল।
    শেষমেষ তুই আমার রানী হলি। এইবার সব কিছু সুদে-আসলে বুঝে নেব।

    দোলা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
    তারপর আচমকা বলল,
    ভাইয়া দেখো বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। চল না আজকে আমরা বৃষ্টিতে ভিজি দুজন।
    কি বললি তুই ভাইয়া আবার। এখন আমি তোর ভাইয়া না আমি তোর হাসবেন্ড। আমাকে একদম ভাইয়া ডাকবি না।
    আচ্ছা তা নাহয় চেষ্টা করব এখন চলো ছাদে যাই‌। প্লিজ।
    আচ্ছা চল আজকে তোর কোন আবদার ফেলবো না। আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় টা না হয় বৃষ্টিতে ভিজে শুরু করবো।
    আমি খুশি হয়ে বিছানা থেকে নামতে যাব ভাইয়া ছুটে এসে আমাকে পাঁচকোলে তুলে নিল।
    আমি বিশ্মিত হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
    ভাইয়া আমার নাকের মাথা চুমু দিয়ে বলল,
    চমকাচ্ছিস কেন? তোকে আজকে আমি হাটতে দেবো না তুই আমার কোলে চরছ ছাদে যাবি। বলে ভাইয়া হাঁটতে লাগলো আমি মুগ্ধ হয়ে ভাইয়া মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আর শক্ত করে ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরে আছি।
    ছাদে পা রাখতেই ভাইয়ার কপাল বেয়ে জল গড়িয়ে আমার মুখে পড়ল। আমি চোখ বন্ধ করে পানির ফোটা অনুভব করলাম।
    ভাইয়া আমাকে ছাদের মাঝখানে এনে দাঁড় করালো। আমাদের দুজনের শরীর গড়িয়ে ঠান্ডা পানি ফোটা ফোটা পরছে। দুজনকে ভিজিয়ে দিচ্ছে।আমি মুগ্ধ হয়ে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি ভাইয়া কপাল বেয়ে মুখ বেয়ে পানির বুকে নামছে।
    ভাইয়া আমার দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ভাইয়ের চোখে নেশা ভরা আমাকে পাবার নেশা। আমি চোখ বন্ধ করে পানির ফোটা অনুভব করছি।
    আদনান মুগ্ধ হয়ে তার দোলা রাণীর দিকে তাকিয়ে আছে। দোলাকে যত দেখছি ততই কাছে পাবার তীব্র বাসনা মনে জাগছে। কত বছরের ভালোবাসা ওর আজকে নিজের করে পেয়েছে।
    দোলা চোখ বন্ধ করে দুই হাত মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আদানা দিকে একপা দু পা করে এগিয়ে কাছে যে ওকে স্পর্শ করবে। দোলা ছুটে চলে গেলো আর পুরো ছাদে লাফালাফি করতে লাগলো।
    দোলার বাচ্চামো দেখছে আদনান আর ওর মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছে।
    আদনান ছুটে গিয়ে দোলাকে দুহাতে জাপটে ধরল। তারপর দোলার দু গালে হাত রেখে,
    ভালোবাসি দোলা রানী।
    দোলা চোখে চোখ রেখে এবার বললাম,
    আমিও ভালবাসি।
    আদনানের খুশি দেখে কে আদনান খুশিতে পাগল হবার উপক্রম। নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখ থেকে ভালবাসি শুনার থেকে সুখ এই পৃথিবীতে আর কিছুই নেই।
    নেশা দৃষ্টিতে আদনান দোলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে দোলার কপালে ঠোঁট দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না আদনান। দোলার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিল। পাগলের মত কিস করতে লাগল। ঠিক 10 মিনিট পর দোলাকে ছেড়ে দিল আর দুজনে হাঁপখতে লাগলো। দোলা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। এমন কিছু জন্য মটেও প্রস্তুত ছিলনা দোলা। আদনান দৌলা থুতনিতে হাত রেখে উঁচু করে ধরে বলল,
    কিরে লজ্জা পাচ্ছিস? লজ্জায় তো লাল হয়ে গেছিস। এখন এত লজ্জা পেলে হবে এখনো তো শুরুই করলাম।
    আদনানের কথায় দোলা লজ্জায় আরো মি‌ইয়ে গেল আদনান এর দিকে তাকাতে পারছে না তাই লজ্জায় লুকাতে আদনান এর বুকে জায়গা দখল করে নিল। শক্ত করে আদনান কে জরিয়ে ধরল।
    আদনান দোলার কাছে বলল,
    ওরে আমার লজ্জাবতিরে।
    সব সময় আমার পাশে থাকিস দোলা কখনো ছেড়ে যাস না না হলে আদনান বাচতে পারবেনা।
    এখানে ছেড়ে দাও না ভাইয়া। আমিও তো তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না।

    (সমাপ্ত)

    মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।