- Part 1
- Part 2
- Part 3
- Part 4
- Part 5
- Part 6
- Part 7
- Part 8
- Part 9
- Part 10(বোনাস)
- Part 11
- Part 12
- Part 13
- Part 14
- Part 15
- Part 16
- part 17
- Part 18 (বোনাস)
- Part 19
- Last part (First)
- last part (Second)
প্রমিতির মা ভীষণ জোরে একটা চড় বসিয়ে দিল প্রমিতির গালে ঘরভর্তি মেহমানের সামনে।
সকলের দৃষ্টি এখন প্রমিতির দিকে। থাকবেই বা না কেন? বিয়ের কনে যদি তার হলুদের আগ মূহুর্তে পালাতে ধরে এবং তাকে পালাতে না দিয়ে আটকে রেখে থাপ্পড় দেওয়া হয়, তাহলে তো মানুষ উৎসাহ নিয়ে দেখবেই, এটাই নরমাল।
(যেহেতু আমরা বাঙ্গালী, সুতরাং এখানে দর্শক হয়েই গ্রেট কিউরিসিটি নিয়ে সবটা দেখব। )
মা প্লিজ! যেতে দাও আমাকে দোহাই লাগে। ওর সাথে আমার বিয়ে হলে আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
গালে হাত দিয়েই কাদতে কাদতে উপরের কথা গুলো বলছিল প্রমিতি।
প্রমিতির মা আরো একটা কষে থাপ্পড় মারল প্রমিতির গালে। এতে প্রমিতি ছিটকে পড়ল। এবং টেবিলের কোণার সাথে ঠোঁট লেগে তার ঠোঁটের এক পাশ কেটে,রক্ত পড়তে লাগলো।
প্রমিতির মা আমেনা জোর গলায় বলল, তোর মতো মেয়ে যেন কারো ঘরেই না আসে। কোন দুঃখে যে তোকে আমি আমার বাসায় রাখছি, আল্লাহ মালুম।
প্রমিতি চারপাশে তাকালো। যদি কাউকে পেয়ে যায় যে তার আপনজন। কিন্তু নাহ, আপনজন বলতে নিজের ছায়াটা ছাড়া আর কিছুই নেই এখন তার পাশে!
এমন সময় হুট করে কেউ তার হাত ধরে টানতে টানতে মেহমানদের সামন থেকে সরে নিয়ে গিয়ে, একটা রুমে ঢুকে এবং রুমে ঢুকেই গেট লাগিয়ে দেয়। প্রমিতি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়ে, রুম থেকে চলে আসতে চাইলে, প্রমিতির চুলের মুঠি অনেক শক্ত করে ধরে সামনের ব্যক্তিটা। সেই সাথে প্রমিতির নরম হাত টাও অনেক জোড়ে ধরে ফেলে । প্রমিতির মনে হচ্ছে তার হাতটা এই বুঝি মড়মড় করে ভেঙে যাবে৷ সে কেদে দিয়ে বলে, আমাকে ছাড়ো।
তোর সাহস কিভাবে হয় বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করার? আজকে তোকে জানে মেরে ফেলব।
আমি তোমাকে মরে গেলেও বিয়ে করব না। তাই পালিয়ে যেতে চাই। (কান্না করতে করতে)
প্রমিতির সামনে থাকা ব্যক্তিটা প্রমিতিকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিল।
এবার প্রমিতির সামনে থাকা ছেলেটা নিজে প্রমিতির উপর উঠে, প্রমিতির দুই হাত চেপে ধরে বলে, তোকে আমাকেই বিয়ে করতে হবে। এই কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নে। আজকে রাতেই তোর আর আমার বিয়ে। তারপর দেখব তোর এই সস্তা দেমাগ কই যায়?
বললাম তো আমি তোমাকে বিয়ে করব না।
বিয়ে তো হবেই। বিয়ে হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। তোর মরা বাপ ও কবর থেকে উঠে আসে পারবে না আমকে ঠেকাতে।
প্রমিতি কেদে দিয়ে বলে, আমি তোমাকে ভালোবাসি না৷ ঘৃণা করি৷ আমাকে বিয়ে করে কোন লাভ নেই তোমার।
সামনে থাকা ব্যক্তিটা প্রমিতির চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে ফেলে আর বলে, তোর ভালোবাসার দরকার নাই। তোকে আর তোর সম্পত্তিকে ভোগ করতে পারলেই হলো৷
প্রমিতি অনেক কষ্টে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে একটা থাপ্পড় মারল। আর বলল, কু **** বাচ্চা! তুই আর তোর খালা দুইজনকেই আমি জেলের ভাত খাওয়াব।
একথা শুনে ছেলেটা হোহো করে হেসে দিল আর বলল, খালি বিয়েটা হোক না! দেখবি কতো কষ্ট দিই তোকে৷
প্রমিতি ছেলেটাকে নিজের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ছেলেটাও নাছোরবান্দা। সে প্রমিতির সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিল।
প্রমিতি বুঝতে পারল, ছেলেটার মনে অশুভ কামনা বিরাজ করছে। তাই সে নিজেকে বাচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এতে আরো ক্ষেপে গিয়ে পাশে থাকা ব্যক্তিটা প্রমিতিকে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিল৷ ফ্লোরে পড়ে গিয়ে প্রমিতি কোমড়ে ভীষণ জোরে ব্যথা পেল। এদিকে ছেলেটা তার বেল্ট খুলে পিটাতে লাগল প্রমিতিকে। এক একটা বেল্টের মার যেন প্রমিতির শিরা-উপশিরায় গিয়ে আঘাত হানছে। প্রমিতি ব্যথায় কুকিয়ে উঠে আর কাদতে লাগে।
ছেলেটা হুংকার দিয়ে বলল, আর পালানোর চেষ্টা করলে জিন্দা কবর দিব!
বলে হনহন করে হেটে চলে গেল।
প্রমিতি সেদিকে চেয়ে রইল আর কিছুক্ষন পর কেদে দিল৷ সে মনে মনে বলল, যে করেই হোক আমাকে পালাতে হবে। কিছুতেই আমি এই বিয়ে করব না৷ যেই ছেলে বিয়ের আগে আমার সাথে এমন করে অত্যাচার করতে পারে সে বিয়ের পর আমার কি হাল করবে তা আমি দিব্যি বুঝতে পারছি৷ আমি কিছুতেই তোমাকে বিয়ে করব না।,রোহান।
প্রমিতি চোখের পানি মুছল এবং নাক টেনে উঠে দাড়ালো। সে চারপাশে তাকালো। মরিচবাতি দিয়ে সারা বাড়ি সাজানো। মরিচবাতির আলোয় চারপাশ ঝলমলে করছে কিন্তু তার মুখজুড়ে কালো মেঘ ছেয়ে গেছে।
সে তার বাবার প্রথম পক্ষের মেয়ে। তার সৎ মায়ের একটাই ছেলে আছে। নাম প্রিয়। কিন্তু প্রিয় অটিস্টিক মানে স্পেশাল চাইল্ড। আর তার মা অনেক আগেই মারা গেছে। প্রমিতির মা মারা যাওয়ার কিছু দিন পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার সৎ মায়ের ব্যবহার প্রথমের দিকে ভালো থাকলেও যখন সে জানতে পারল, প্রমিতির বাব সব সম্পত্তি প্রমিতির নামে লিখে দিয়েছে সেইদিন থেকে তার ব্যবহার এতোটা কঠোর হয়েছে প্রমিতির উপর যা বলে বুঝানো যাবে না! বছর ছয়েক আগে প্রমিতির বাবাও ইন্তেকাল করে। দূর-দূরান্তে তার কোন আত্মীয় নেই তাই তো সৎ মায়ের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। সৎ মায়ের বাড়ি বলতে হচ্ছে কারন এই বাড়িটা এককালে তার বাবার নামে লেখা থাকলেও এখন তার স্টেপ মায়ের নামে লেখা আছে। প্রমিতির নামে বাকি সব সম্পত্তি লেখা আছে জেনে প্রতিনিয়ত আমেনা প্রমিতির উপর অত্যাচার চালায়, এতেও কাজ না হলে রোহানের সাথে বিয়ে দেওয়ার কৌশল বের করে ফেললেন।
আজকে প্রমিতির রোহানের সাথে বিয়ে হবার কথা। কিন্তু এই বিয়েতে কিছুতেই রাজী না প্রমিতি। তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। তাই আজকে সকালে প্রমিতি সবার চোখকে ফাকি দিয়ে পালাতে গেলেও ধরা খেয়ে যায়। আজকে।সকালেই তার হলুদের আয়োজন করা হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলুদ লাগেনি প্রমিতির গায়ে।
আজকে প্রমিতির রোহানের সাথে বিয়ে হওয়ার কথা৷ রোহান তার সৎ মায়ের ভাগ্না হয়। দুই খালা-ভাগ্না চুক্তি করে এই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় । যেন রোহান বিয়ের পর সব সম্পত্তি প্রমিতির কাছ থেকে হাতিয়ে নিতে পারে। যেহেতু প্রমিতির কোন অভিভাবক নেই তাই তার উপর জোর খাটাচ্ছে তারা।
এসব ভাবতে ভাবতেই প্রমিতির সৎ মায়ের আগমন ঘটলো।
সে এসেই ঝাঝালো কন্ঠে বলে, এই যে নবাবজাদির বেটি! এভাবে আরাম-আয়েশ করে বসে না থেকে কাজ-কর্ম করে আমাকে উদ্ধার করেন।
প্রমিতি তার সৎ মায়ের দিকে তাকিয়ে যন্ত্রের মতো বলে, আমি রোহানকে বিয়ে করব না।
একথা শুনে আমেনা চটে গিয়ে আবারো অনেক জোড়ে প্রমিতির গালে থাপ্পড় মারে৷ এতো জোরে ছিল এইবারের থাপ্পড়টা যে প্রমিতির গাল লাল হয়ে যায়৷ এবং ঠোঁটের ঠিক সেই সাইড টাই আরেকবার কেটে যায় যেখানে একটু আগে লেগেছে ।
প্রমিতি আহ করে কুকিয়ে উঠে কেদে দেয়।
এম্নি কিছুক্ষন আগে রোহানের বেল্টের আঘাতে প্রমিতির সারা শরীরে বিষ ব্যথা করছে আর থাপ্পড় খেয়ে যেন প্রমিতি চোখে সরষে ফুল দেখতে লাগলো।
সে টলমল চোখে তাকিয়ে থাকে।
আমেনা কটমট করে বলে, বিয়ে না করলে তোর এই বাসায় এক দানা ভাত ও পেটে পড়বে না। বিয়ে না করলে কি যে অবস্থা করব না তোর! ভালোই ভালো রাজী হয়ে যা নাহলে তোর কপালে শনি আছে। (কটমট করে বলে আমেনা)
প্রমিতি চিল্লিয়ে বলে, আমি বিয়েও করব না আর না কোন সম্পত্তি তোমাদের নামে লিখে দিব।
কি বল্লি?
, যা শুনেছো তাই। করব না আমি বিয়ে! (ঝাঝালো কন্ঠে)
আমেনা ভীষণ রেগে গিয়ে বলে, তোর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। উচিত শিক্ষা দিতে হবে।
এইটুকু বলে তিনি প্রমিতিকে টেনে রান্নাঘরে নিয়ে যান এবং একটা খুন্তি বের করে চুলার সামনে ধরে গরম করতে দেয়।
আর প্রমিতি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। একসময় ছাড়িয়েও নেয়। কিন্তু কথায় আছে না, অভাগী যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়!
ঠিক সেই মূহুর্তে রোহান এসে তার হাত ধরে ফেলে। আমেনার সাথে শক্তিতে পারলেও রোহানের সাথে কিছুতেই পারল না প্রমিতি।এম্নি আজকে সকাল থেকে তার পেটে কিছুই পড়ে নি। তাই নিজেকে ছাড়াতে পারছে না সে।
আমেনা শয়তানি হেসে বলে, খুব দেমাগ বেড়েছে তাই না তোর?
বলে প্রমিতির কাধে গরম খুন্তির ছ্যাক দিতে লাগলো। প্রমিতি চিৎকার করতে লাগলো আর বলল, প্লিজ, মা ছাড়ো আমাকে।
রোহান প্রমিতির চুলের মুঠি ধরে বলে, মা কাকে বলিস রে ?
প্রমিতি নিরুপায় হয়ে কেদে দিল।
আমেনা বলল, আগেই বলছিলাম সব কিছু আমাদের নামে লিখে দে কিন্তু দিস নাই। এখন বুঝ কতো ধানে কতো চাল। আর শোন , দুপুরের সব রান্না তুই করবি। আর বিকেলে পার্লারে গিয়ে বউ সাজবি আর যদি কোন ন্যাকামি করিস,,,,,,,, এটুকুই বলে তিনি রোহানের দিকে তাকালো।
সঙ্গে সঙ্গে রোহান বলে উঠে , তাহলে বাকিটা আমি দেখে নিব।
প্রমিতি অসহায়ভাবে চেয়ে থাকে। চোখের জলে তার গাল ভিজে যাচ্ছে।
আমেনা আর রোহান চলে গেলে প্রমিতি রান্না করতে লাগলো। তার মাথায় একটা জিনিস ই ঘুরপাক খাচ্ছে যে কিভাবে পালাবে সে। তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে গিয়ে তার হাতে ফুটন্ত গরম পানি ছিটকে পড়ে আর গরম পানি লাগায় সে চেচিয়ে উঠে বলে।,ও মাগো! আহ,,,,,,
বলে কাদতে লাগে।
সকল কষ্টের সমাধান কি তবে কান্না?
চলবে।
চলবে
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 1
Arishan Nur
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 2
Arishan Nur
প্রমিতি রান্না করা বাদ দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে মলম খুজতে লাগে কারন গরম পানি পড়া জায়গাটা খুব জ্বলছে। সহ্য করতে না পেরে সে মলম খুজতে এসেছে।
মলম তো লাগানো হলো না বরং ব্যথা জায়গায় আরো ক্ষত, যন্ত্রণা সইতে হলো তাকে।
কারন তাকে রুমে কিছু খুজতে দেখে আমেনা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং তেড়ে এসে বলে, তোকে না রান্না করতে বললাম?
আ,,,আসলে,, আমা,,,আমার হাত (ভয় পেয়ে)
উনি দেখলেন প্রমিতির হাত পুড়ে গেছে তারপর ও সেই হাতটা শক্ত করে ধরে বলে, এই সামান্য কারনে তুই এখন মলম নষ্ট করবি? তোকে নিয়ে আর পারি না! কখন যে আপদ বিদায় করব?
প্রমিতি আবারো কেদে দিল। তার হাতটা দগদগে হয়ে আছে। এরই মধ্যে কালচে আস্তরণ পড়ে গেছে৷ সে কেদে দিল ব্যথায় এবং কষ্টে, অপমানে !
-অলক্ষি, অপয়া মেয়ে কোথাকার! আবার এখান দাড়ায় দাড়ায় তামাশা করছিস? বলি নাটক-সিনেমায় কাজ কর, অনেক সুনাম কামাবি। কি একটু লাগছে, তাতেই মহারানী ঢং করা শুরু করছে! বাপের মতো অকর্ম হয়েছিস।
এইসব কটু কথা শুনে বিশেষ করে তার বাবার নামে বাজে কথাটা শুনে প্রমিতি আর থাকতে না পেরে কেদে দিল। আর বাচতে ইচ্ছা করেনা তার। এতোটই তিক্ততা চলে এসেছে তার বেচে থাকার প্রতি!
আচ্ছা আজকে তার নিজের মা বেচে থাকলে কি তাকে এভাবে কথা শুনাত? নাকি আদর করে দিয়ে হাতে মলম লাগিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে রাখত। কে জানে?
প্রমিতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল এবং বলে উঠে, থাক, আর কিছু বলো না বাবার নামে। আমি রান্না করতে যাচ্ছি।
বলে প্রমিতি রান্না করতে গেল। বিয়ে বাড়ি হলেও কোন মেহমান এখন আর নেই ।সবাই কেই বিদায় করা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। তাই নরমাল রান্না-বান্নাই করা হবে। ভাত আর ছোট মাছের তরকারি। মাছ পরিষ্কার করতে হবে তাকে। কিন্তু এই ফোসকা পড়া হাতে যদি পানি পড়ে তবে আবার জ্বলবে। প্রমিতি বইয়ে পড়েছে, হাত পুড়ে গেলে ডিমের সাদা অংশ দিতে হয়। তাহলে ব্যথা কমে আসে।
তাই সে দেরি না করে ফ্রিজ থেকে একটা ডিম বের করে, ডিমের সাদা অংশ হাতে লাগালো।
ঠিক সেই সময় আমেনা আবারো চলে আসলেন তার উপর নজরদারি করতে । উনি প্রমিতির হাতে একটা ফাটা ডিম দেখে বলে, হায়! হায়! এই মেয়ে একটা ডিম নষ্ট করলো! বলি টাকা কি তোর বাপ এসে দিয়ে যাবে।
প্রমিতি কিছুটা কড়া গলায় বলে, একটা ডিম ই তো। এতো চিল্লাচিল্লি করার কি আছে?
দেখো দেখো, মেয়ের মুখে খই ফুটছে। তোর মুখ আমি সুই-সুতা দিয়ে সেলাই করে দিব। অসভ্য মেয়ে জানি কোথাকার। আজকে তোর বিয়ে না হলে আমি তোকে সত্যি বাসা থেকে বের করে দিতাম। আমার খাবে, আমার পড়বে আবার আমাকেই কথা শুনাবে।
এইসব কিছু আমার বাবার টাকা। আমার বাবার টাকায় কেন বাড়ি। বাবার জমানো টাকা।বাবার টাকায় আপনার চেয়ে আমার বেশি অধিকার আছে।
আমেনা বেশ খেপে গেলেন। উনি হাক ছেড়ে রোহানকে ডাকতে লাগলেন।
প্রমিতি ভয় পেয়ে গেল। যতোই সে বাহাদুর দেখাক না কেন। সে একজন নারী। কিছুটা হলেও দুর্বল। আর এই বাসার দেয়াল গুলোও তার আপন না। প্রমিতি ভয়ে ঢোক গিলল।
রোহান তার খালার কাছে এসে বলে, কি হইসে খালা?
আমেনা কড়া গলায় বলে।,এই মাইয়ার একটা ব্যবস্থা কর বাবা!
রোহান প্রমিতির দিকে মূলত তার শরীরের দিকে তাকিয়ে লোভাতুর দৃষ্টিতে বলল, আজকে রাতেই ব্যবস্থা করব। তুমি চিন্তা করো না।
রাত হতে দেরি আছে৷ এখনি কিছু কর, বাবা। মেয়ে আমাকে ধমকায়। সাহস কতো।
রোহান শার্টের হাতা গুটিয়ে বলে, ঠিক আছে। তুমি রুমে যাও। আমি দেখছি ব্যাপারটা।
আচ্ছা।বাবা। আমি বরং রুমে যাই বলে আমেনা রান্নাঘর থেকে চলে গেল।
এদিকে রোহান প্রমিতির দিকে তাকিয়ে বলল, তাইলে এখনি বাসরটা সেরে নিই, কি বলিস?
খবরদার তুমি আমার কাছে আসা তো দূর, এমন চিন্তা মাথায় ও আনবে না।(কিছুটা ভয় পেয়ে)
রোহান আবারো শয়তানী হাসি হেসে প্রমিতির হাতটা অনেক জোড়ে টান দিল, এতে প্রমিতি রোহানের কিছুটা কাছে চলে আসল।
রোহান প্রমিতির দিকে তাকিয়ে বলে, আজকে তো তোকে আমি আমার করেই ছাড়ব। এতোক্ষন ভেবে ছিলাম বিয়ের পর করব কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আগেই করি ফেলি। শুধু শুরু রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করার কি মানে?
প্রমিতি রোহানকে ধাক্কা মেরে বলে, আমি তোর মতো বেহায়াকে কোনদিন ই বিয়ে করব না!
এ্যাহ! বললেই হলো। তোকে বিয়ে করতেই হবে।
বলে আবারো প্রমিতির কাছে এসে দাড়ালো।
প্রমিতি এবারো সরে আসতে চাইলে রোহান তাকে খপ করে ধরে ফেলে।বলে, পালাস কোথায়?
ছাড়ো আমাকে।
হাহাহা। ছাড়ার জন্য কি ধরেছি নাকি?
প্রমিতি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছুটাছুটি করতে করতে লাগলো। রোহানও তার সাথে আরেকদফা ধস্তাধস্তি করা শুরু করল৷
তারা দুইজন রান্নাঘরেই ছিল। প্রমিতি গরম পানির হাড়িটা ইচ্ছা করেই রোহানের পায়ে ফেলে দিল।
এতে রোহান চেচিয়ে উঠে এবং কটমট করে প্রমিতির দিকে তাকালো এবং যেই তাকে খপ করে ধরতে ধরবে,ওম্নি বেল বেজে ওঠে।
যেহেতু রোহানের পায়ে গরম পানি পড়েছে তাই রোহান হাটু গেড়ে বসে পড়ে আর প্রমিতি এই সুযোগে দৌড়ে গিয়ে গেট খুলে দিয়ে দেখে পাশের বাসার চাচি।
এই চাচি তাকে খুব আদর করে। প্রমিতি চাচিকে জড়িয়ে ধরে বলে, ভাগিস তুমি এসেছো। নাহলে যে কি হতো!
উনি প্রমিতিকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, তোদের বাসা থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ পাচ্ছিলাম তাই চলে এলাম।
ভালো করেছো। প্লিজ আর যেও না। (কাদো কাদো হয়ে প্রমিতি)
না। বিকেল পর্যন্ত থাকব। তোকে মেহেদী লাগিয়এ দিব৷
প্রমিতি মুখ কালো করে বলে, আমি আমার হাতে মেহেদী পড়ব না।
চাচি হেসে বলে, রোহানের নাম তোর হাতে লিখব না। আয় ভেতরে আয়।
প্রমিতি চাচিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল। আমেনা আবারো বের হলো। এবং পাশের বাসার ভাবিকে দেখে মুখ কালো করে বলে, কি হয়েছে, ভাবি?
কি আবার হবে? প্রমিতি কে মেহেদী পড়াতে আসলাম। এরপর প্রমিতির দিকে তাকিয়ে বলে, আয় মা, তোর দুই হাত মেহেদী দিয়ে রাঙ্গিয়ে দিই।
প্রমিতি মৃদ্যু হেসে তার নিজের রুমে গিয়ে বসল
চাচি এসে মেহেদীর টিউব বের করতে লাগলো।
প্রমিতি আস্তে করতে বলল, কিন্তু আমি তো রোহানকে বিয়ে করব না। তাহলে ওর নামে মেহেদী পড়লে কি আমাকে ওকেই বিয়ে করতে হবে?
চাচি ভ্রু কুচকে বলে।,মেহেদী আবার কারো নামে পড়ে নাকি বোকা মেয়ে। বাঙ্গালী বউ রা মেহেদী পড়ে সাজসজ্জার জন্য। বুঝলি?আর বিয়ে কার সাথে হবে, তোর জোড়া কে হবে, এটা স্বয়ং আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না রে পাগলি। মেহেদী পড়লেই তোকে রোহানকেই বিয়ে করতে হবে এমন কোন কথা নাই।
হুম। বুঝলাম। (মাথা নেড়ে বলে প্রমিতি)
সব প্লান ঠিক আছে তো?
হ্যা।
রোহান কি তোকে নিয়ে যাবে।পার্লারে ?
হুম।
থাকবে ওখানে?
হ্যা।
চাচি বলল, তাহলে পালাবি কেমনে?
পার্লারে আমার এক ফ্রেন্ড আছে। ও ম্যানেজ করবে।
চাচি বললো, কিভাবে শুনি।
আমার ফ্রেন্ড রোহানকে বললে পার্লারের ভেতরে ছেলেদের প্রবেশ নিষেধ। তাই রোহানকে ঢুকতে দিবে না। রোহান গেটের সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করবে আর আমি পেছনের গেট দিয়ে পালাবো।
চাচি বলল, প্লান তো ভালোই বানিয়েছিস। কিন্তু পালাবি কোথায়?
ঢাকায় যাব। তারপর গান ধরাবো, ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে,,,,,ওরে ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে।
চাচি হেসে দিয়ে বলে, টাকা আছে তোর কাছে?
হুম। আছে। পাচ হাজার। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না। জাস্ট মাকে সামলে রাখো।
আচ্ছা। তুই প্লিজ এই নরক থেকে পালা রে মা।
চিন্তা করো না চাচি। আমাকে এবার আর আটকাতে পারবে না। আমি গেলে তুমি প্রিয়র একটু খেয়াল রাখবে।
আচ্ছা।
প্রমিতি জানালার দিকে তাকালো। তার হাতে চাচি মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছে। সে শুনেছে বিয়ের মেহেদী যার নামে পড়ানো হয় তার সাথেই বিয়ে হয়। এই মেহেদী তো রোহানের নামে পড়ানো হচ্ছে না।
তবে কার নামে সে রাঙ্গাচ্ছে তার হাতজোড়া?
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 3
Arishan Nur
লাল শাড়ি পড়ে প্রমিতি ঢাকা শহরের ধানমণ্ডি সাত মসজিদ রোডের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে। সন্ধ্যা নেমে রাত হয়ে এলো। কিন্তু সে কি করবে তাই বুঝে পাচ্ছে না। কার কাছে যাবে সে? আর কার কাছে চাইবে সাহায্য। এই এতো বড় রাস্তায় বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত কতো শত মানুষ যে অতিক্রম করল তার নেই কোন হিসেব। আচ্ছা ঢাকায় এতো মানুষ কেন। পুরা জায়গাটা গিজগিজ করছে। আর কারো দিকে কেউ একবারো ঘুরেও তাকায় না। এতো নির্জীব কেন এই শহরটা? কোন মায়া কিংবা আবেগ নেই কি এই শহরের?
যে শহরেরই মাঝেই কোন আবেগ নেই সেই শহরের বাসিন্দা যে আবেগহীন হবে তা বুঝাই যাচ্ছে। প্রমিতির হাতে মোটামুটি সাইজের একটা ব্যাগ। এইখানে তার বাবা-মায়ের স্মৃতিগুলি আছে আছে। আর পাচ হাজার টাকা। এখন আর পাচ হাজার টাকা নেই। তিন হাজার টাকা আছে। এই টাকায় ঢাকায় সে একদিন ও চলতে পারবে না। কারন সে বিকেলের নাস্তাই ধানমণ্ডির বিবিকিউ বাংলাদেশে৷ রেস্টুরেন্টে খেয়েছে। একজন খেয়েছে তাও একটা প্লাটার, সেটাই সাত শ টাকা। তাও নাকি সেখানে অফার চলছে৷
প্রমিতি বুঝে পায় না ঢাকার মানুষের এতো টাকা! কারণ রেস্টুরেন্টটায় অনেক ভীড় ছিল। তবে রেস্টুরেন্টটার ওয়েটার দের বিহেইভ খুব ভালো ছিল৷
সে এতোক্ষন ওইখানেই বসে ছিল৷ বাইরে বএর হতেই দেখল, লাল সিগন্যাল পড়ে গেছে আর একে একে সব গাড়ি, বাস থেমে গেল। সে গাড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। তার কান্না পাচ্ছে। সে কোন দিন একা একা কলেজ ছাড়া কোথাও যায় নি। আর আজকে একা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক শহরে। তাও রাতের বেলা। তবে মনেই হচ্ছে না এখন রাত। চারপাশে এক বিন্দু ফাকা নেই। গাড়ি আর গাড়ি। আর যেখানে গাড়ি নেই সেখানে মানুষ, ছোট ছোট দোকান পাট।
প্রমিতির চোখ গেল একটা ছোট দোকানে। সেখানে অনেক ভীড়। কোল্ড কফি বেচা হচ্ছে। কোল্ড কফি দেখে তার খেতে মন চাইলো।
সে দোকানদার কে গিয়ে বলে, আমাকে ও একটা দেন।
আচ্ছা। বলে দোকানদার কোল্ড কফি মগে ঢালা শুরু করল।
প্রমিতি ভেবেছিল এই লোক তাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে যে সে একা কেন? এভাবে দাঁড়িয়ে কেন কিংবা শাড়ি পড়ে আছে কেন?
কিন্তু নাহ। কিছুই জিজ্ঞেস করল না। তার মতো কাজ করেই যাচ্ছে।
প্রমিতি কোল্ড কফিটায় চুমুক দিল। খেতে বেশ মজা। ৬০ টাকা রেখেছে দাম। কিন্তু সাধ খুব মজা। রাস্তার ধারে অনেকেই মজা করে খাচ্ছে।
প্রমিতি আশেপাশে তাকালো। রাত এগারোটা বাজতে চলল। ভীড় আস্তে আস্তে কমে আসছে।জ্যাম কমলেও একেবারে যে কমেছে গেছে তা না। রেস্টুরেন্ট গুলো ও খোলা আছে। আচ্ছা ঢাকায় কি চব্বিশ ঘণ্টাই সব খোলা থাকে।
প্রমিতি ফুটপাতে বসে পড়ল।ব্যাগ থেকে পানি বের করে একটু খেয়ে নিল।
রোহান তাকে পার্লারে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই সে পেছনের গেট দিয়ে পালিয়ে গেছে। তারপর বাস স্টেশন এসে ডিরেক রংপুর টু ঢাকা। ভাগ্যিস দুপুরের একট বাস ছিল যেটা ঢামাগামী ছিল। নাহলে আরো ঝামেলা হতো। বাসা থেকে বিয়ের শাড়ি পড়েই বেরিয়ে ছিল। সেটা আর চেঞ্চ ও করেনি সে। ওভাবেই পালিয়ে আসে। আজকে বাস সাই সাই করে এসেছে। এক ফোটা জ্যাম পায় নি সে। তাইতো এতো দ্রুত পৌছে গেল ঢাকায়।
প্রমিতি আশেপাশে তাকালো। সে দেখতে পেল বেশ কয়েকটা মেয়ে এই সময় কোথা থেকে যেন বের হয়ে রাস্তায় হাটছে। প্রমিতি ভাবতে লাগে এরাও কি তবে তার মতো বাসা থেকে বের হয়ে এসেছে?
প্রমিতি বিষ্ময়ভরা চোখে তাদের দিয়ে তাকিয়ে রইল, সে দেখল একটা বড় মাইক্রোকার আসল এবং বেশ কয়েকটা মেয়ে সেই গাড়িতে উঠে বসল। তারা উঠে বসতেই গাড়িটা চলতে শুরু করল।
প্রমিতি মনে মনে বলল, আমার জন্যও যদি কোন গাড়ি আসত আর আমি সেই গাড়িতে উঠে বসতাম আর গাড়িটা সাথে সাথে উড়াল দিত কোন বরফের দেশে!
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
এমন সময় পেছনে থেকে কেউ বলে উঠে, কি রে, ধান্দায় নতুন নাকি?
প্রমিতি কারো কন্ঠস্বর শুনে পেছনে তাকালো এবং বলল, সর্যি কি বললেন, বুঝলাম না?
বলি, কাস্টমার পাস নি একটাও?
প্রমিতি ভ্রু কুচকে বলে, কিসের কাস্টমার?
এ্যাহ! আইসে ঢং করতে। বলতেছে যা করতে আইসোস তা না করে বইসা আছোস কেন? কাস্টমার না পাইলে আমারে বল। মেলা কন্ট্রাক্ট হাতে আছে।
প্রমিতি কিছুটা আন্দাজ করতে পারল। সে বুঝতে পারছে মহিলাটা ভালো না। তাই উঠে দাড়ালো এবং বলল, আপনার কোন ভুল হচ্ছে। আপনি অন্য কোথাও যান।
কেন রে মাইয়া! ঠিকই তো শাড়ি-চুরি, পইড়া কাস্টমার খুজোস আর আমাগো সামনে ঢং মারস।
বলে মহিলাটা প্রমিতির দিকে এগাতে লাগে।
প্রমিতি ভয় পেয়ে বলে, আগাচ্ছেন কেন। বলছি দূরে থাকেন। আমি এমন মেয়ে না। একটা কাজে এসেছি রংপুর থেকে।
মহিলাটা বললেন, বুঝছি তোর কাজ কোন থাকতে পারে।
বলে উনি খপ করে প্রমিতির হাত ধরে ফেলে।
প্রমিতি চিৎকার জুড়ে দেয়।
মহিলাটা হোহো করে হেসে কাকে যেন ফোন দিয়ে বলে, স্যার, একটা নিউ কালেকশন আছে। লাগবে নাকি?
প্রমিতি ভ্রু কুচকে ভাবে, তাকে নিউ কালেকশন কেন বলছে এই মহিলা।
মহিলাটা ওপাশের ব্যক্তিকে বলল, জি স্যার। আমার সাথেই আছে। দেখতে একদম আসমানের হুরের মতো। এখনি পাঠায় দিই? আচ্ছা, আচ্ছা। বলে ফোন রেখে প্রমিতির উদ্দেশ্য তিনি বললেন, শোন মেয়ে, তোর ভাগ্য বদলে দিব৷ খালি এই শহরের হাওয়া দশ দিন লাগা, মহারানীর হালে জীবন কাটাবি। বুঝলি? স্যার আসতেছে। খুব বড় লোক। একবার ওনাকে ইম্প্রেস করতে পারলে লাইফ সেট তোর।
প্রমিতি কেদে দিয়ে বলে, আমি এমন মেয়ে না। আমি ভদ্র পরিবারের মেয়ে। প্লিজ আমাকে এসবের সাথে জড়াবেন না। তাহলে আমি কিন্তু আইনের সাহায্য নিব।
মহিলাটা হেসে বলে, আইনের বহু লোক আমার পুরান কাস্টমার। কিছু ই হবে না আমার। বুঝলি?
প্রমিতি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল। সে দেখতে পেল কয়েকটা ছেলেও তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে৷
সে মাথা ঘাটালো। এই ছেলেগুলো যদি এই মহিলার লোক হয় তাহলে তার সাথে অনেক কিছু হয়ে যাবে৷ এর আগেই এখান থেকে পালাতে হবে।
প্রমিতি হুট করে নিচে বসে পড়ে এবং রাস্তা থেকে একটা ইট কুড়িয়ে নিয়ে মহিলাটার মাথায় আঘাত এবং নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মহিলাটাকে একটা ধাক্কা মেরে তার ব্যাগটা শক্ত করে ধরে দেয় এক দৌড়। তাকে দৌড়াতে দেখে ছেলেগুলোও তার পেছনে পেছনে আসতে লাগে। তারা বেশ খানিকটা পিছনে থাকায় প্রমিতিকে ধরতে পারছে না। এদিকে প্রমিতি শরীরের সমস্ত শক্তি ব্যয় করে দৌড়াচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে এমন একটা জায়গায় আসল যার বাম পাশেও রাস্তা গেছে, ডান পাশেও। সে কোন কিছু না ভেবে ডান দিকে ই আগালো।
★★★
পিলখানা রোড ক্রস করে অনেক জোড়ে গাড়ি নিয়ে কেবি স্কয়ারের সামনে আসল নিরব।ফোন একাধারে বেজেই চলেছে৷ সেদিকে হুশ নেই তার৷ সে গাড়ি চালাতে ব্যস্ত। আবারো ফোন বাজতে লাগলো। নিরব এক প্রকার বিরক্ত হয়েই ফোন উঠালো এবং ধমক দিয়ে ওপাশের ব্যক্তিকে বলল, কতোবার বলেছি আমি একবারে ফোন না ধরলে আর দিবা না। কথা কানে যায় না কেন?
ওপাশ থেকে বলল, সর্যি স্যার। খুব আর্জেন্ট তাই কল দিলাম।
নিরব গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, কি কথা?
মিটিংয়ে আসলেন না যে স্যার,,,,,
নিরব আবারো ধমক দিয়ে বলে, ধানমন্ডির ওই রেস্টুরেন্টের মিটিংয়ের কথা বলছো?
জি স্যার।
তুমি জানো না নিরব চৌধুরি এইসব কমদামি রেস্টুরেন্টে যায় না৷ আমি ওয়েস্টির্ন, লে মেরিডিয়ান, আমারি আর ফোর সিজন বাই শেরাটোন ছাড়া যাই না। ধানমন্ডির এইসব সস্তা রেস্তোরাঁয় নিরব চৌধুরি ঢোকে না। গেট ইট?
জি স্যার।
রাখলাম।
বলে নিরব ফোন কাটলো। তাকে বাসায় যেতে হবে। আজকে একটু দেরি হয়ে গেছে। সে ফোন রাখতে গিয়ে ফোনটা নিচে ফেলে দিল। গাড়ি চালাতে চালাতে নিরব সামনে তাকালো। রাস্তা সম্পূর্ণ ফাকা। তাই সে ব্রেক না মেরেই নিচ থেকে ফোন তুলে সামনে তাকাতেই একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল৷
তার গাড়ির সাথে একটা মেয়ের ধাক্কা লেগে, মেয়েটা রাস্তায় পড়ে গেল।
নিরব ড্রাইভিং এ খুব দক্ষ। তাই ব্রেক কষতে সময় নিল না। আজকে ড্রাইভিং এ দক্ষ না হলে মেয়েটার উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিত৷
নিরব গাড়ি থামিয়ে এক প্রকার মেজাজ গরম করে বলে, হুয়াট দ্যা হেল!ঢাকা শহরে নতুন নাকি যে গাড়ির সামনে এসে পড়বে? রেডিকুলাস!
বলে গাড়ির স্টেয়ারিং এ একটা কিল মেরে নিজের রাগকে কমানোর চেষ্টা করল। এরপর জোড়ে করে একটা শ্বাস নিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে মেয়েটার কাছে গেল।
মাথায় লেগেছে সম্ভবত মেয়েটার। রক্ত ঝড়ছে। রাস্তায় লাল রক্ত পড়ে আছে।
নিরব মেয়েটার সামনে গিয়ে দাড়াতেই পায়ে কিছু বাজলো। সে নিচে তাকিয়ে দেখে একটা ব্যাগ।
নিরব হাটু গেড়ে বসে পড়ে। মেয়েটার পরনে শাড়ি। তাও আবার লাল।
সে ভ্রু কুচকে মেয়েটার দিকে এক ধ্যানে চেয়ে থাকে। তার কেমন যেন লেগে উঠল। মাথায় একটা সুক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করল নিরব৷
মেয়েটাকে দুই হাত দিয়ে একটু উচু করে ধরল। চেহারা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু কেমন যেন লাগতে শুরু করে নিরবের। সে ভ্রু কুচকেই বসে থাকে।
মেয়েটা পিটপিট করে তার দিকে তাকালো এবং কাপা কাপা হাতে তার শার্টের কলার ধরল।
নিরব মেয়েটার হাতের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে, নিরব চৌধুরির গায়ে হাত দিলা!
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 4
Arishan Nur
নিরব মেয়েটার দিকে কিছুক্ষন সেভাবেই তাকিয়ে থাকে। সে বাম হাতের ঘড়ি থেকে সময় দেখে নিল। ঘড়ির কাটা দেড়টা ছুইছুই। এই সময় তো কোন ভদ্র পরিবারের মেয়ের বাইরে বের হওয়ার কথা না। তবে কি মেয়েটা প্রস্টি,,,,,,,,
নিরব আর কিছু ভাবল না। এটা তার দেখার বিষয় না৷ মূলত এই সময় তাকে মেয়েটাকে হসপিটালে নিতে হবে। এটাও একটা ঝামেলার কাজ। এখন এই মেয়েকে হসপিটালে নিলে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হবে। আর যদি কেউ জানে নিরব চৌধুরির গাড়িতে লেগে কেউ আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যস তাইলে হইসে কাম। মিডিয়া থেকে শুরু করে সবাই তার বারোটা বাজানোর জন্য প্রস্তুত থাকবে। এক বিন্দু ছাড় দিবে না তাকে।
নিরব আশেপাশে তাকালো, কেউ দেখেছে কিনা। মেয়েটা ভালোই চোট পেয়েছে। সামান্য পান থেকে চুন ঘষলেই তার উপর সব বন্যা যাবে। তাই বন্যা আসার আগেই বাধ দিতে হবে।
সে বুঝে পাচ্ছে না কি করবে। তাই আবারো মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনো ঠিক তার হার্ট বরাবর হাত দিয়ে শার্ট খামচে রেখেছে।এই হার্ট বরাবর যে হাত রেখেছে ব্যাপারটা নিরব আগে খেয়াল করেনি। মাত্র করল। সে মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকালো। চুল গুলো মুখের উপর পড়ে আছে। হাতে চিকন দুইটা সোনার চুরি।
নিরব সোনার চুরিটা ধরে দেখল। তারপর মনে মনে বলল, বাহ বেশ ভালো মানের সোনা তো! বাইশ ক্যাডেট হলেও সৌদি আরবের সোনা মনে হচ্ছে।
যাগ গে , সে এবার মেয়েটাকে রাস্তায় শোয়ালো। রক্তে রাস্তা লাল হয়ে গেছে৷ আপাতত আবেগী হলে চলবে না। আবেগী হওয়া আর চোখ বন্ধ করে রাস্তা পাড় হওয়া একই কথা। সে গাড়ি থেকে পানি বের করল। তারপর গাড়ির হেডলাইন জ্বালানো এবং ফোনের ফ্লাশ অন করে দেখল কোথায় কোথায় রক্ত পড়ে আছে। ঠিক সেই সেই জায়গায় পানি ঢেলে দিল। এবং পা দিয়ে মোটামুটি রক্ত সাফ করল। বেশি রক্ত ঝড়েনি -মনে মনে আওড়ালো নিরব।
গাড়িতে বেশ বড় সাইজের একটা পানির বোতল রাখে জব্বার। আজকে কাজে দিল।
সে ফোন হাতে নিয়ে বরকত কে কল দিল। কিন্তু বরকত ফোন ধরছে না।
নিরব এবার বিরবির করে বলে, কাজের সময় কেউ ফোন উঠায় না। সে আবারো ট্রাই করতে লাগলো।
এক সময় ওপাশ থেকে ঘুম ঘুম কন্ঠে কেউ হ্যালো বলতেই নিরব ধমক দিয়ে, এদিকে আমি ঝামেলায় পড়ছি আর তুই হ্যালো নিয়ে পড়ে আছিস, আহাম্মক!
বরকত ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল, তুই ঝামেলায় পড়ছিস এটা আমি কেমনে জানব?
নিরব বলল, ভালোই তো ঘুমাচ্ছিলি আরাম করে বউয়ের সাথে তাই না?
বউয়ের সাথে কথাটা শুনে মনটা বিষিয়ে গেল বরকতের। সে তবুও বলে, কি ঝামেলা হইসে সেটা বল?
নিরব এবার বলে, একটা মেয়েকে ধাক্কা মারসি।
বরকত ওপাশ থেকে এক্সাইটেড হয়ে, আল্লাহ, সিরিয়ালে যে রোম্যান্টিক সিনে দেখায়, ওই ভাবে ধাক্কা মারছিস আর মেয়ে তোর কোলে গিয়ে পড়ছে নাকি?
না। গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মারছি আর মেয়ে আমার কোলে না রাস্তায় পড়ছে।
বরকত বিচলিত হয়ে বলে, হায়, আল্লাহ! এখন কি করবি?
ওইজন্য ই কল দিসি। কি করব? খবরটা লিক হইলে সামনে ইলেকশন, সব যাবে গা!
শোন, চেপে যা ব্যাপারটা।
মানে? মেয়েটাকে রেখে চলে যাব? গুড আইডিয়া।
ছিঃ! আমি এই কথা কখন বললাম রে?
মাত্র ই বললি।
আমি মোটেও এই কথা বলি নি। তুই,,,
নিরব আর কিছু শুনল। তার কানে পুলিশের সাইরেনের শব্দ ভেসে উঠ৷ মানে আশেপাশে পুলিশ টহল দিচ্ছে। তাকে যদি দেখে ফেলে তাইলে তো আরো বড় বিপদ হবে।
সে ফোনে বরকতকে বলল, সাইরেন বেজে উঠল।
বরকত বলে।,এটা বুঝি যৌগিক বাক্য।
জাস্ট সাট আপ! পুলিশ আসতেছে! কি করব বল!
কালকের হেড লাইন হবে, ধানমন্ডিতে একটা পথচারীকে রাস্তায় ধাক্কা মারার দায়ে নিরব চৌধুরি জেলে। এতো এতো ধারায় তাকে অভিযুক্ত পেলে শাস্তি দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে হাই কোর্ট নিশ্চিত করেছে।
মজা পাইসোস? নাকি বউয়ের আদর খেয়ে তোর মাথা গেছে?
বরকত আবারো বউয়ের আদর কথা শুনে কষ্ট পেল। এমন সুভাগ্য হলে তো কথাই ছিল না৷।
সে একদন্ড ভেবে বলে, মেয়েটাকে গাড়িতে উঠা। আর সোজা পপুলারে যা।
ডোমিনোস এর উল্টা দিকে না পপুলার?
হো। হো। তুই যা। আমি রওনা দিচ্ছি।
আচ্ছা।
বলে নিরব ফোন পকেটে ঢুকিয়ে মেয়েটাকে আবারো পাজ কোলে নিল। মেয়েটা এখনো কালো ব্যাগটা ধরে রেখেছে।
নিরব ব্যাগটা ফেলতে চাইলেও ফেলল না। পরে এই ব্যাগ রেখে গেলে পুলিশের হাতে পড়লে ঝামেলা হবে।
সে ব্যাগ এবং মেয়ে দুইজনকেই গাড়িতে তুলে মারল এক টান!
সোজা পপুলার হসপিটালটির সামন এসে থামল।
সে মেয়েটাকে কোলে করে ইমার্জেন্সিতে ঢুকল। যেহুতু জরুরি ভিত্তিতে ঢুকেছে তাই কেউ কিছু এখনো জিজ্ঞেস করেনি। তবে কয়েকজন তার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে।
সে পাত্তা দিল না। কারন নিরব চৌধুরি পাবলিক ফিগার। এক কথায় সেলিব্রেটির মতোন! তাকে দেখতেই পারে মানুষজন!
সে ফোন বের করে বরকতকে কল দিয়ে আবারো এক দফা ঝাড়ি মেরে, কই তুই?
আসতেছি! দুই মিনিট সময় দে।
আয়। (বিরক্ত হয়ে)
নিরব আবারো আশেপাশে তাকালো। তার পিপাসা পেয়েছে। সে পানি খাবে ভাবল। কিন্তু কোথা থেকে খাবে? চোখের সামনে একটা ফিল্টার আছে। আর কয়েকটা প্লাস্টিকের গ্লাস। এইসব দেখে আর রুচি হল না পানি খাওয়ার। বাঙ্গালী যে জাতি! দেখা যাবে কেউ গ্লাসে মুখ লাগিয়ে পানি খেয়ে না ধুয়েই আবার রেখে দিয়েছে গ্লাস।সুতরাং পানি খেতে চাইলে এইসব নোংরা গ্লাসেই খেতে হবে। তাই পানি খাওয়ার কথা পরিকল্পনা বাদ দেয় নিরব।
নিরব ফোন হাতে নিয়েই বরকতের অপেক্ষা করতে লাগে।
কিছুক্ষন পর বরকত হাপাতে হাপাতে এসে বলে, সর্যি! সর্যি! রিকশা পাচ্ছিলাম না।
নিরব ভ্রু কুচকে বলে, রিকশা!
হু। একটা যা পাইলাম অর্ধেক আসে বলে আর যাব না। বল তো কেমন লাগে?
এতো বড় বিসম্যান ওম্যানের জামাই হয়ে তুই রিকশায় ঘুরস ক্যান? ল্যাম্বারগিনিতে ঘুরবি, বুঝলি?
বরকত অসহায়ের হাসি হাসল। এবং কিছু বলল না।
তাকে চুপ থাকতে দেখে নিরব বলে,আমার ঝামেলাটার একটা সমাধান দে।
আচ্ছা। মেয়েটা কোথায়?
ওয়ার্ডে মেবি।
বরকত মাথায় হাত দিয়ে বলে, জেনারেল ওয়াডে কেন রাখলি? কেবিনে রাখ!
কেন?
বুঝবি না। চল।
বলে বরকত ডাক্তারের কাছে গেল এবং বলল, ভাই, আপা কেমন আছে?
ডাক্তারটা বলে, কোন আপা?
বরকত বলল, আরে, ওইযে নিয়ে আসলো। এক্সিডেন্ট কেসটা।
ও। আপনার কাছেই যেতাম। পুলিশ ডাকব৷
পুলিশের কথা শুনে নিরব ভয় পেল।বরকত মৃদ্যু হেসে বলে, পুলিশ কেন ডাকবেন?
ডাক্তারটা বলে, কেন আবার। আপনার এক্সিডেন্টে করবেন আর আমি হাত গুটিয়ে থাকব। ভিকটিমের ক্ষতির দায় কে নিবে? আপনার ওই নেশাঘোর বন্ধু?
নিরব মনে মনে ডাক্তারটাকে গালি দিয়ে বলে, আমি মোটেও নেশা করি না।
ডাক্তারটা নিরবের উদ্দেশ্য বলে, আর জনাব আপনি! গাজা খাবেন ভালো কথা। কিন্তু তাই বলে ড্রাইভ কেন করবেন। ভিকটিমের এই ক্ষতিটা কে পূরন করবে?
বরকত বলল, একজ্যাক্টলি স্যার। সবচেয়ে বড় ক্ষতি তো আমার বন্ধুর হলো।
মানে?
মানে হলো নতুন বিয়ে করল। কই যাবে হানিমুনে তা না যেয়ে আসতে হলো হসপিটালে।
নিরব বরকতের সাথে সাড়া দিতে গিয়েও থেমে গিয়ে অবাকের শেষ পর্যায়ে গিয়ে বলে, কি বললি?
বরকত বলল, থাক। দোস্ত টেনশন করিস না। ভাবির কিছু হবে না।
নিরব বড়সড় একটা শক খেল। কে ভাবি? মাথা ঠিক আছে তো বরকতের?
ডাক্তারটা বলল, মানে? উনি পেশেন্ট এর কে হন?
বরকত খুবই কনফিডেন্সের সাথে বলে, আমার বন্ধু পেশেন্টের হাসবেন্ড হয় আর পেশেন্ট আমার বন্ধুর বউ হয়। ক্লিয়ার?
ওহ। ওনারা হাসবেন্ড- ওয়াইফ?
জি।
নিরব হ্যাবলার মতো বরকতের দিকে চেয়ে রইল। চেনা নেই জানা নেই, একটা মেয়ে নাকি তার বউ? এতো সস্তা নাকি নিরব চৌধুরির বউ হওয়া?
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 5
Arishan Nur
নিরব বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। কারন এবার ডাক্তারটা তাকেই সরাসরি জিজ্ঞেস করছে যে নিজের স্বামীর সাথে থাকা সত্ত্বেও কেন মেয়েটার সাথে এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটলো।
নিরব কি উত্তর দিবে? সে আমতাআমতা করে বলে, আ,,,,আব,,আসলে ঝ,,ঝগড়া। হ্যা আমাদের মাঝ ঝগড়া হয়েছিল। (হুট করে মাথাই যা এলো তাই বলে ফেলল নিরব)
ডাক্তারটা ভ্রু কুচকে বলে, মানে? কিসের ঝগড়া?
বরকত ও নিরবের দিকে তাকালো।
নিরব হালকা হেসে বলে, আসলে, আমার বউ হানিমুনে বালি যেতে চাচ্ছিল কিন্তু আমি প্যারিস যেতে চাচ্ছিলাম, এই নিয়ে দন্দ্ব চলছিল৷ এক সময় ও প্রচুর রেগে যায় এবং বাসা থেকে বের হয়ে হাটা ধরে। আমিও ওর পেছন পেছন আসছিলাম,,,,,,এর মধ্যে ও আমাকে দেখে আরো রেগে গিয়ে মেইন রোড ধরে জোরে জোরে হাটছিল আর হঠাৎ এই দুর্ঘটনা ঘটে গেল।
ডাক্তার বলল, যাইতেন বালি। সমস্যা কি ছিল? এই যে ঝগড়া করলেন শুধু শুধু। লাভ কি হলো? শেষেমেষ তো বউকেই কষ্ট দিলেন।
বউ কে কষ্ট দিলেন কথাটা শুনে কেমন জানে লাগতে শুরু করে নিরবের। হাসফাস লাগতে শুরু করল তার। নাহ, এখন পানি না খেয়ে চলবে না। পানি খেতেই হবে। কি করবে সে?
আশেপাশে তাকালো নিরব। এখন মনে হচ্ছে একবার ওয়াশরুমে গেলে ভালো হয়৷
সে নরম গলায় বলে, আমি ওয়াশরুমে যাব।
বরকত সাথে সাথে বলে, তো যা না। তুই কি বাচ্চা যে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে।
নিরব বেশ বিরক্ত হয়ে বলে।,ইউ নো না! আমি কমোড ছাড়া যেতে পারি না। আর পাবলিক টয়লেটের কমোডে বসব না। নিরব চৌধুরি যে-সে বাথরুমে যেতে পারবে না।
এবার বরকত বলল, তো চাপে রাখ!
নিরব হতাশ হয়ে বলে, আমি বাসায় যাই৷
ডাক্তারটা বলল, কেমন স্বামী আপনি? এদিকে আপনার ওয়াইফের লাইফ ডেঞ্জারে আর আপনি পাবলিক টয়লেট ইউস করেন না জন্য এখন বউকে রেখে বাসায় গিয়ে বাথরুম করবেন? আপনার মতো পুরুষের জন্য আজকে আমরা নারীরা এতো টা অবহেলিত। আপনার জন্য আপনার বউয়ের জীবনের চেয়ে আরাম করে বাথরুম করা বেশি ইমপোর্টেন?
নিরব মিইয়ে গেল। সে একবার বরকতের দিকে তাকালো তারপর লেডি ডাক্তারটার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল, মহিলা তার উপর বেশ ক্ষ্যাপা!
সে নরম গলায় বলে, আমার কাছে আমার বউ বেশি ইমপোর্টেন না! কি অবাক হচ্ছেন যে বউ কে কম প্রাধান্য দিচ্ছি? আজ্ঞে না! আমার বউয়ের সাথে বেশি বা কম প্রাধান্য দেওয়া শব্দটি বেমানান। কারন ও আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। আর অস্তিত্বকে কেউ প্রাধান্য দেয় না। বরং এটা ছাড়া জীবন চলবে না। আমার জন্য ও আমার বউ খুব বেশি একটা জরুরি না কিন্তু ওকে ছাড়া আমি অচল!
বরকত তো হা হয়ে গেল। নিরবের মুখে এমন কথা শুনে। সে তো ইতিমধ্যে বিষম খেল৷
ডাক্তারটা একবার নিরবকে দেখে নিল আর বলল, আপনার কথাটা ভালো লাগলো। আসলে ওল ম্যান আর ডগ হলেও কেউ কেউ লয়াল!
নিরব মুখ বাকালো। সে বুঝতে পারছে এই মহিলার সাথে ঝামেলা করা মানে ই কুকুরের লেজে পা দেওয়া। সে চুপ করে থাকল৷
ডাক্তারটা বলল, আপনার বউয়ের মাথায় অনেক জোড়ে চোট লেগেছে। সিরিয়াস কন্ডিশন। কালকের মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে আইসিইউতে রাখতে হবে। বুঝেছেন?
নিরব মাথা ঝাকিয়ে বলে। জি। কিন্তু এখনি চাইলে আইসিইউতে রাখতে পারেন। মানি ডাস নট ফ্যাক্ট টু মি, ডক্টর!
ডাক্তার টা বিরক্ত হয়ে বলে, আমার সামনে টাকার গরম দেখাবেন না । গুলশানে আমার দুইটা ফ্লাট আছে। টাকার গরম অন্য কোথাও দেখান।
নিরব বেশ খেপে গেল। মহিলার গুলশানে মাত্র দুইটা ফ্লাট আছে তাতেই এতো ঢং দেখাচ্ছে। তার তো ছয়তলা বিল্ডিংই আছে তাহলে সে কেন ভাব দেখাবে না। নিরবের খুব করে বলতে মন চাচ্ছে, যে তার ও গুলশানে ছয় তলা বাড়ি আছে৷ কিন্তু নিজের ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখল কারন এসব মেয়ালি স্বভাব। মেয়েরাই গল্প-গুজব করতে করতে বলে, ভাবি জানেন, আমার গুলশানে ছয়তলা যেই বাড়ি আছে না সেই বাড়ির ছাদে লেবুর গাছ লাগিয়েছি কি যে রস না ভাবি লেবুগুলোয়। নেক্সট বার ভাড়া তুলতে গেলে আপনার জন্য এক ডজন আনব,,,,,,
কিন্তু সে ছেলে তাই এসব গোসিপিং তার সাথে মানায় না।
ডাক্তারটা চলে গেল। নিরব শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে, বাচলাম!
বরকত বলল, তুই চাইলে যেতে পারিস বাসায়।
না রে। সকাল তো হয়েই আসছে ডাইরেক অফিসে যাব৷
চাচি টেনশন করবে তো।
ওহো, বাসার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তুই বস। আমি মাকে কল করে জানাই যে আজকে আর ফিরছি না৷
হুম। তাড়াতাড়ি কল দে চাচিকে।
নিরব এক সাইডে গিয়ে তার মাকে কল লাগায়। কিছুক্ষন পর ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠে, এতোক্ষণ পর তোর মায়ের কথা মনে হলো?
আরে, মনে হওয়ার কথা কেন তুলছো? ঝামেলায় পড়ছি তাই বাসায় আসতে পারি নি। ডিরেক কালকে সন্ধ্যায় অফিস করে আসব।
বাসায় আসার কি দরকার? বাইরেই থাক। আসতে হবে না তোর বাসায়।
শুধু শুধু রাগ কেন করছো? বললাম না একটু প্রবলেম হইসে। বাদ দাও, জেগে ছিলে তুমি?
তো? রাত বারোটায় আসার কথা তোর? অথচ এখন সাড়ে চারটা বাজে। টেনশন করব না আমি? এই রকম সিচুয়েশনে কি করে আমি ঘুমাই?
সর্যি মা। আমার উচিত ছিল তোমাকে জানানো। বাট এতো বেশি ঝামেলায় জড়ায় গেছি যে কি বলব,,,,,
থাক। সাফাই দিতে হবে না। কোথায় আছিস এখন?
হাসপাতালে।
ও আল্লাহ! কেন রে? কি হইসে তোর বাবা?
আরে আরে আমার কিছু হয় নি। আসলে আমি ভুলে একটা মেয়েকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছি।
মেয়েটা এখন কেমন আছে?
ভালোই আছে মা। (মিথ্যা বলল)
মেয়েটা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তুই হাসপাতাল থেকে নড়বি না৷
আচ্ছা।রাখি
নিরব ফোন রেখে দিল। এবং মেয়েটার বেডের কাছে গেল।
নিরব এই প্রথমবার মেয়েটার চেহারা দেখল!
চোখ বন্ধ করে আছে মেয়েটা। কালো ঘন চুল গুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে।
নিরব একটু ঝুকে মেয়েটাকে সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো।
খুব মিস্টি দেখতে মেয়েটা! গোলাপি রংয়ের ঠোঁট। খুব একটা ফর্সা না । বোচা নাক। নিরব এক ধ্যানে মেয়েটার দিকে চেয়ে রইল।
এদিকে সকালের আলো ফুটতে শুরু করল। প্রায় সাতটা বাজতে চলল। নিরব এখনো মেয়েটার কাছে বসে আছে।বরকত বাইরে বসে আছে।
নিরব কি মনে করে মেয়েটার ব্যাগটা বেডের নিচ থেকে বের করল। যদিও কারো পারসোনাল জিনিসে হাত দেওয়া উচিত নয় কিন্তু তবুও নিরব ব্যাগের চেইন খুলল। কারন তার মধ্যে এতোটা ভদ্রতা নেই।
সে এক এক করে সব জিনিস বের করতে লাগলো৷ অতি আগ্রহের সাথে। প্রথমে একটা পেন্সিল পেল। সে কিছুটা অবাক হয়ে ভাবল, পেন্সিল কেউ কেন রাখবে ব্যাগে।
এরপর আরেকটা জিনিস বের করল, সেটা একটা সোনার চেইন। ইংরেজি অক্ষরে পি লেখা লকেট।
আরো কিছু জিনিস পেল। সব মেয়ালি জিনিসপত্র। হুট করে নিরব ব্যাগের তলানিতে দেখল একটা ডায়েরী।
সে দ্রুত ডায়েরীটা খুলল। প্রথম পেজেই গোপালী কলমে গুটি গুটি করে লেখা “প্রমিতি”
নিরব মনে মনে তিনবার প্রমিতি নামটা আওরালো। বেশ সুন্দর তো নামটা!
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 6
Arishan Nur
এবার নিরব বসা থেকে উঠে দাড়ালো এবং প্রমিতির সামনে ঝুকে আস্তে করে প্রমিতির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠে , কেমন আছো প্রমিতি!
নিজের করা এহেন কান্ডে নিরব নিজেই আহাম্মক হয়ে গেল। আশ্চর্য ! সে একটা অজ্ঞান মেয়ে, যার কোন জ্ঞান নেই তাকে জিজ্ঞেস করছে যে সে কেমন আছে? এটা কি আদৌ যৌক্তিক ?নিরবের তো এমনটা মনে হয় না।
সে আবারো মেয়েটার দিকে তাকালো । তার কেন যেন প্রমিতিকে দেখতে বেশ ভালো লাগছে।
আমরা কিছু কিছু কাজ মনের অজান্তেই করে ফেলি! নিরবের বারবার প্রমিতিকে দেখাটাও মনের অজান্তেই হয়ে যাচ্ছে৷
নিরব ভাবতে লাগলো , আমরা কোন সব কাজ মনের অজান্তেই করি?
উত্তর টা নিরব নিজেই দিল তা হলো, যেসব কাজ আমাদের ব্রেইন চায় না আমরা করি সেইসব কাজ আমরা মনের অজান্তেই করে বসি। নিরবের কাছে এমনটাই মনে হয়। এখন অন্যদের কাছে অন্য কিছু লাগতে পারে। নিরবের মনে হয় তার ব্রেইন আর মন দুইজন দুইজনের শত্রু! মন যদি বলে ডানে যাই তাইলে ব্রেইনে বলল, শালা, বামে যা!
নিরব আবারো প্রমিতির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে, তোমার কি কোন বয়ফ্রেন্ড আছে?
একথাটা বলে সে অজ্ঞান প্রমিতি র দিকে তাকিয়ে তার মুখের সামনে ফু দিল। এবং ফ্যানের বাতাসে প্রমিতির মুখে কিছু সংখ্যক চুল পড়ে ছিল। সেগুলো আলতো করে নিরব তার হাত দিয়ে সরালো। তার এক ধ্যানে প্রমিতি কে দেখতে লাগলো ।
হুট করে নিরব কারো হাতের ছোয়া তার কাধে পেল। সে তড়িৎ গতিতে প্রমিতি থেকে দূরে সরে এসে পেছনে তাকায়৷
সে দেখল বরকত তার সামনে দাড়িয়ে আছে৷
নিরব জোড়পূর্বক হাসি হাসল।
বরকত বলল,তুই মেয়েটার এতো কাছে কি করছিলি?
নিরব ঘাবড়ে গিয়ে বলে, কিছুই করছিলাম না৷ কি করব আবার?
না। না। তুই কিছু করছিলি! চুমা-টুমা দিসোস নাকি?
আরে না। কি যে বলিস না! আমি কি এমন নাকি,,,, আর কিছুই করছিলাম না আমি। লিনার সাথে কথা হলো তোর?
না। ফোন রিসিভ করছে না ও।
আবার দে কল। তোকে ঘুম থেকে উঠে আশেপাশে না পেলে ম্যাডাম টেনশড হয়ে যাবে।
বরকত মৃদ্যু হেসে মনে মনে বলে, কিছু ই হবে না ওর। জানবেই না আমি বাসায় নেই।
কি রে, কল দে।
হু, দিচ্ছি৷
বলে বরকত কল দিতে লাগলো লিনাকে।
★★★
লিনা ঘুমাচ্ছিল। বেশ গভীর ঘুম ঘুমাচ্ছিল সে। হুট করে ফোনের আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে গেল। সে বেশ বিরক্ত হলো। কালকে রাতে বেশ টায়ার্ড ছিল সে। এখন মাত্র ভোর! আর কে তাকে কল করতে পারে এই সময় সেইটাই সে ভাবছে?
লিনা উঠে বসল এবং তার ফোনটা হাতে নিল। ফোনের স্ক্রিনে বরকতের নামট ভেসে উঠল। সে ভ্রু কুচকালো। পাশের রুম থেকে কল করার কি আছে? আজব!
ফোনটা কেটে গেল৷ সাথে সাথে লেখা উঠল, মিসড কল।
লিনা যেই না ফোনটা রেখে দিবে ওমনি আবারো বরকতের কল আসতে লাগে৷
এবার সে রিসিভ করে হাই বা হ্যালো না বলে ডিরেক বলে, সমস্যা কি? কল কেন দিচ্ছো? তাও এতো সকালে?
আরে, আরে একবারে এতো প্রশ্ন কেন করছো? আস্তে আস্তে প্রশ্ন করো।
সময় নেই আমার। কেন কল দিচ্ছো পাশের রুম থেকে ?
আমি বাসায় নেই৷
মানে?
আসলে নিরব একটা সমস্যায় পড়েছিল তাই রাতে আমি বাসা থেকে বের হয়েছি। তুমি গভীর ঘুমে ছিলে, তার উপর ক্লান্ত ছিলে এবং জন্য আর ডাকি নি৷
ডাকো নি যখন খুবই ভালো কথা কিন্তু এখন কেন কল করছো? (রেগে গিয়ে)
রাগ কেন করছো। জানিয়ে দিলাম যে আমি নেই। তুমি সকালের নাস্তাটা একটু ম্যানেজ করে নিও৷ কেমন?
হু।
বলে লিনা ফোন কেটে দিল।
বরকত ফোন পকেটে ঢুকিয়ে ভাবতে লাগে, আজকে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক থাকলে কি এমন কিছু হত? নাকি রাতে সে বাসায় ছিল না জন্য লিনা চিন্তা করত। কে জানে?
বরকত একটা হতাশার নিশ্বাস ফেলল। সে মাথা নিচু করে হাসপাতালের সোফায় বসে পড়ে৷
এদিকে নিরব প্রমিতির বেড থেকে বের হয়ে বলে, চল, নাস্তা করে নিই।
এতো জলদি?
হু। খুদা লাগছে। চল খেয়ে নিই৷
চল। ক্যান্টিনে চল।
নিরব শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে, চল।
বরকত আর নিরব ক্যান্টিনে গেল। পরোটা আর সবজি ওডার দিল।
কিছুক্ষন পর খাবার চলে এলো।
নিরব খেতে খেতে বলে, শোন আমাকে অফিসে যেতেই হবে৷
বরকত বলল, কিন্তু মেয়েটা যে,,,,,
প্রমিতি নাম ওর!
তুই কেমনে জানলি?
জানছি কোন একভাবে।
তোর বউ হয় না! তুই তো জানবিই।(মজা করে)
নিরব বাকা হাসি হেসে একটা সিগারেট ধরালো । তা দেখে বরকত বলে, হাসপাতাল এটা। এখানে এসব না খাওয়াই হলো। বাচ্চা-কাচ্চা থাকতে পারে। ওরা দেখে ফেলবে,,,,,
নিরব বলল, তোর এইসব নীতিবান কথা ভার্সিটি গিয়ে বলিস। আমার সামনে না। বুঝলি? আমি এখন উঠছি। বিকেলে এসে মেয়েটাকে তার বাসায় পাঠায় দিব। তুই যা বাসায়৷
বলে নিরব চলে গেল।
কিন্তু বরকত গেল না। তার মন সায় দেয় নি। সে ঠিক করল আজকে ভার্সিটি যাবেনা। বরং প্রমিতির সাথে থাকবে।
সে নাস্তা করে প্রমিতির বেডের কাছে গেল। মেয়েটা এখনো অজ্ঞান।
সে হাসপাতালের বারান্দায় গেল। সেখানে পায়চারি করতে লাগলো। মেয়েটা মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত পেয়েছে। কি যে হয়।
★★★
রোহানের গালে একটা প্রচন্ড জোরে থাপ্পড় বসালেন আমেনা৷
রোহান ভেজা বেড়ালের মতো বলল, খালা আমার কি দোষ? মেয়ে যদি আমাকে বোকা বানায় পালায় যায় সেখানে আমার দোষ কোথায়?
এটাই তোর দোষ । কিভাবে ও তোকে বোকা বানালো? আহাম্মক একটা। (হুংকার দিয়ে)
খালা। ও পার্লারে সাজতে যাওয়ার নাম করে সামনের গেট দিয়ে ঢুকে পেছনের গেট দিয়ে পালাইসে।
আর তুই বসে বসে আঙুল চুষলি? কই যাইতে পারে প্রমিতি ?
জানি না।
ওর সব ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়ে দেখ। কোথায় লুকিয়ে আছে ও।
আচ্ছা।
বলে রোহান বাসা থেকে বের হয়ে গেল প্রমিতি কে খুজতে৷ সে ঠিক করল, সারা রংপুর খুজবে সে। তবুও তার প্রমিতিকে চাই-ই-চাই! কালকে বিকেলে সে পার্লারে গিয়ে দেখে প্রমিতি নেই। পালারের মহিলা গুলো বলে।,প্রমিতি অনেক আগেই চলে গেছে।
রোহান যখন চিল্লা-পাল্লা শুরু করে তখন সব মহিলা মিলে পুলিশ ডাকে আর বলে সে নাকি তাদের ডিস্টার্ব করছিল। ব্যস পুলিশ ও তাকে থানায় নিয়ে যায়। অনেক ঝামেলা পোহায় সে আজকে সকালে ছাড়া পেয়েছে।
এদিকে দুপুর গড়িয়ে ভর দুপুর হতে চলল।
নিরব সবে মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে ঢুকল। তখনি বরকতের কল এলো৷
সে দ্রুত রিসিভ করে বলে, হ্যা বল৷
দোস! প্রমিতির জ্ঞান ফিরেছে৷
আলহামদুরিল্লাহ!
কিন্তু।
কিন্তু কি? (ভ্রু কুচকে)
বরকত বিচলিত হয়ে বলে, কিন্তু ওর কিছু মনে নেই৷
কিহ? কি বললি?
বললাম ওর কিছু মনে নাই। ও সব আগের স্মৃতি ভুলে গেছে।
একথা শুনে নিরব হোহো করে হেসে বলে , নাইস জোক, ম্যান।
জোক না। আমি সিরিয়াস। তুই আয় জলদি।
-আসছি।
বলে নিরব হাসপাতালে চলে এলো খুব তাড়াতাড়ি।
এসেই প্রমিতির কেবিনে গিয়ে থমকে গেল৷
কারন প্রমিতি বসে আছে। চোখ দুইটা খোলা। কি যে অদ্ভুত সুন্দর সেই চোখ জোড়া!
নিরবের বুকের মধ্যে কেমন যেন তোলপাড় শুরু হলো।
একজন নার্স প্রমিতির উদ্দেশ্য বলল, ম্যাম, আপনার নাম কি?
প্রমিতি কেদে দিয়ে বলে, জানি না। আমি কিছু মনে করতে পারছিনা।
নিরব প্রমিতির কন্ঠ শুনে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেল। অন্য এক জগতে ট্রাভেল করতে চলল সে।
চলবে৷
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 7
Arishan Nur
প্রমিতি অসহায় হয়ে মাত্র আসা ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ-মুখ ফোলা ফোলা। চোখ গুলো টলমল করছে। ঠিক এই বুঝি চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়বে।
নিরব ধীর পায়ে প্রমিতির দিকে এগুলো। এতোক্ষন তার খুব তাড়া ছিল, ব্যস্ততা কাজ করছিল মনের মধ্যে। কিন্তু হুট করে কেন যেন সবকিছু থেমে গেছে। সে হঠাৎ ঘামতে শুরু করল। মনের মধ্যে কেমন যেন তোলপাড় শুরু হলো। তার কপাল বেয়ে ঘাম ছুটতে লাগলো।
সে কাপা কাপা ঠোঁটে বিরবির করে বলে, ও আল্লাহ!
প্রমিতি চোখ তুলে সামনে থাকা ব্যক্তিটার দিকে তাকালো । বেশ লম্বা ছেলেটা। কালো শার্ট পড়া। শার্ট ইন করে রেখেছে। চুল গুলো খুব সুন্দর করে গুছানো। প্রমিতি পরখ করে দেখে নেয় ছেলেটাকে।
নার্সটা নিরব কে দেখিয়ে প্রমিতির উদ্দেশ্য বলে উঠে, ওনাকে চিনতে পেরেছেন?
প্রমিতি কাদো কাদো হয়ে বলে, নাহ,,,,,,,
নাসটা আবারো বলে, ভালো করে দেখুন তো! চিনেন আপনি ওনাকে?
নিরব কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না। মেয়েটা তো তাকে আসলেই চিনে না। কি এক মসিবত রে বাবা!
প্রমিতি আবারো নিরবের দিকে তাকালো । সোজা তার চোখে চোখ রাখল।
নিরব সেই দৃষ্টি উপক্ষে করে বরকতের দিকে তাকালো ।
বরকত ও বেশ মনোযোগ দিয়ে প্রমিতির দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছু ক্ষন পিনপিনা নিরবরা। তার পর হুট করে প্রমিতি তার মাথা চেপে ধরে কাদতে কাদতে বলে, আমি কিছু ই মনে করতে পারছি না। মাথায় খুব ব্যথা হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমি মারা যাচ্ছি। খুবই কষ্ট হচ্ছে আমার! আমার,,,, আমার কিছু ই মনে নেই।
নিরব এবার প্রমিতির দিকে তাকালো । মেয়েটা কেমন অস্থির করছে। কাদলে মেয়েটার ঠোঁট দুটি মূহুর্তের মধ্যে লাল হয়ে যায়। নিরব এক দৃষ্টিতে প্রমিতির দিকে তাকিয়ে থাকে।
আর প্রমিতি মাথা নিচু করে বসে থাকে।
এবার নিরব একটা পরীক্ষা করল। তা হলো সে বেশ জোরে করেই প্রমিতি বলে ডেকে উঠে৷
কিন্তু প্রমিতি সাড়া দেয় না। সে চুপচাপ মাথা নিচু করেই আগে যেভাবে বসে ছিল সেভাবেই বসে আছে। কোন নড়চড় নেই। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা না। বিজ্ঞান তো অন্য কিছু বলে!
নিজের নাম শুনে রেসপন্স করাকে প্রতিবর্তী ক্রিয়া বলে।
প্রতিবর্তী ক্রিয়া বলতে উদ্দীপনার আকস্মিকতা এবং তার কারনে স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়াকে বোঝায়৷ হঠাৎ আঙুলে সুচ ফুটলে যেমন হাত আপনা আপনি সরিয়ে নিই ঠিক তেমনি নিজের নাম শুনলে আশেপাশে তাকানো বা “কি” বলে ডাকা কিংবা চোখ নাচানোও এক ধরনের প্রতিবর্তী ক্রিয়া। আর এই ক্রিয়া মস্তিষ্ক থেকে ক্রিয়েট হয় না বরং সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে নিয়ন্ত্রিত ।
তাই নাম ধরে ডাকলে মানুষ রেসপন্স করবেই কেননা ছোটকাল থেকেই সে তার নাম শুনে আসছে। তাই তো নিজের নামের মতো কোন নাম শুনলেও মানুষ আশেপাশে তাকাবে মূলত মস্তিষ্কে উদ্দীপনা ঘটার কারনে। কিন্তু মেয়েটা কোন সাড়া দিল না কেন? তবে কি মেয়েটার নাম প্রমিতি না ?
তবে কি সত্যিই সে সব ভুলে গেছে। কিন্তু এটা কেমনে সম্ভব? মেডিকেল সাইন্সে এমন কিছু কোন দিন সে এই জনমে শুনে নি যে এক্সিডেন্ট করে মাথায় আঘাত পেল আর নাম,ঠিকানা ভুলে গেল। এটা অসম্ভব! এমন কিছু হলো সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে পড়বে৷
স্মৃতি ধারনের ক্ষমতা চলে-টলে গেল নাকি!
নিরবের কানে গুনগুনিয়ে কান্না করার আওয়াজ আসল।
সে এসব চিন্তা ছেড়ে সামনে আগাতেই কালকের সেই লেডি ডাক্তারের আগমন।
উনি এসেই প্রমিতির কাছে গিয়ে বলে, এই যে মিসেস, আপনি নাকি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন?
প্রমিতি কাদতেই থাকল। কোন উত্তর দিল না।
ডাক্তার টা বলল, আরে! কাদার কি আছে? আপনার হ্যাসবেন্ডই তো আপনার সাথে আছে। সমস্যা কোথায়? তাই না? নিরবের দিকে তাকালো ডাক্তার টা৷
নিরব ও আহাম্মকের মতো করে হেসে বলে হ্যা। আসলেই তো ! দেয়ার ইস নো সমস্যা।
উনি হলো আপনার স্বামী! আপনার ভরসার স্থান।
প্রমিতি চোখ তুলে নিবের দিকে আবারো তাকালো।
নিরব এবার আর সেই চাউনি উপেক্ষা করতে পারল না৷ সেও প্রমিতির চোখে চোখ রাখল। তার কেমন জানি লাগতে শুরু করল। আবারো ঘামতে লাগে নিরব।
ডাক্তার টা বলল, আপনি আপনার ফ্যামিলির সাথেই আছেন।সো নো ওরিস। কোন কিছু মনে না থাকলেও চলবে। আপনার হ্যাসবেন্ড আপনাকে আগলে রাখবে৷ তাই না মিস্টার চৌধুরি?
নিরব ছোট্ট করে হু বলে।
লেডি ডাক্তার টা আগ বাড়িয়ে বলে, আপনার হ্যাসবেন্ড আপনাকে অনেক ভালোবাসে! আপনারা তো হানিমুনে যেতে চাচ্ছিলেন। মনে আছে এসব কথা?
প্রমিতি না বলল।
সমস্যা নেই। আস্তে আস্তে মনে পড়বে।
বলে ডাক্তারটা হাটা দিল। নিরব ও তার পিছনে পিছনে এসে তাকে ডাকতে লাগে।
এবার ডাক্তারটা ভ্রু কুচকে বলে উঠে, আমি তো আগেই বলেছিলাম ওল ম্যান ইস এ ডগ। ভেবেছিলাম আপনি লয়াল। কিন্তু বউ অসুস্থ এই সুযোগে অন্য মহিলার সাথে লাইন মারতে চলে আসলেন।
নিরব মুখ বাকিয়ে বিরবির করে বলে, আমার আর খায়ে-দায়ে কাজ নাই! আপনার মতো বুড়ি আন্টির লগে লাইন মারব? এবং প্রকাশ্য বলে, আরে না আপা!ভুল ভাবছেন আমাকে। আমি তো কথা বলতে এসেছি ওর ব্যাপারেই।
এমন সময় বরকতও চলে এলো তাদের কাছে।
ডাক্তারটা বলে, কি বলবেন?
মানে আপনি কোন দিন এমন কেস পেয়েছেন যেখানে এভাবে একজন রুগী সব ভুলে যায়? মানে স্মৃতিশক্তি?
ডাক্তার টা ভেবে বলে, না। পাইনি। তবে আজকে পেলাম।
এই তো! মেডিকেল সাইন্স এ এমন কিছু কোন দিন হয় না।
হয়। হয়। আই নো। এমন হয়। (ডাক্তার টা)
নিরব এবার বলল, আচ্ছা কোথায় হইসে একটু বলেন তো আমিও শুনি।
ডাক্তার টা একদন্ড না থেমে বলে, কোথায় আবার! স্টার জলসা আর জি বাংলা, স্টার প্লাসেও দেখেছি।
নিরব আকাশ থেকে পড়ল। সে কড়া গলায় বলে, স্টার জলসা আর জীবন কি এক?
ডাক্তার টা হাত গুটিয়ে বলে, স্টার জলসা আর জীবন এক না হলেও জীবন মানেই জি বাংলা!
নিরবের নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছা করছে৷ সে কটমট করে বলে, এইসব সিরিয়ালে হলেও বাস্তবে কোন দিন সম্ভব না। আর আপনি ডাক্তার হয়েও এমন লজিকলেস কথা কেমনে বলছেন?
ডাক্তার টা বলল, মেডিকেল সাইন্স এ সব সম্ভব। । আর জীবনের কাহিনি থেকেই সিরিয়াল বানানো হয়।
এইটুকু বলে তিনি চলে গেলেন।
এবার বরকত বলল, আমারো মনে হয় মেয়েটার সত্যি কিছু মনে নাই। দেখলি কেমনে কাদছে?
নিরব মুখ কালো করে বলে, সব ঢং! যেই না দেখছে নিরব চৌধুরি তাকে বাচাইছে,ওমনি আমাকে ফাসানোর জন্য এইসব করছে মেয়েটা।
মেয়েটা শুধু শুধু তোকে কেন ফাসাতে যাবে?
কেন আবার! আই আম রিচ। দ্যাটস হুয়াই।
দেখ! টাকার গরম কম দেখা। ও তো জানেও না তুই কে। আর মনে হচ্ছে মেয়েটা তার গুরুমস্তিষ্কে আঘাত পাইসে। এজন্য ই ওর স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে৷
নিরব পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে, আচ্ছা। যা মেনে নিলাম গুরুমস্তিষ্কে ব্যথা পেয়েছে। তাই স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তাই যদি হয় তাহলে সে বসে আছে কেমনে? বাকি সব তো ঠিক আছে। আবার যখন ডাক্তার টা বলল, কিছু মনে আছে কিনা তখন কিভাবে না বলল?
ওর যদি কিছু নাই মনে থাকে দেন ও কেমনে জানল, ‘না’ একটা নেগেটিভ অর্থ বহন করে। বল? এটার উত্তর দে?
দোস। ওর স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে।হয়তো পনসে লাগে নি তাই সমন্বয়, ভারসাম্য ঠিক রাখতে পেরেছে।
দেখ। বিজ্ঞানের কোথাও এমন গাজাখরি কথা বলা নেই ।
বরকত এবার বলে, কেন রে এতো বিজ্ঞান বিজ্ঞান করছিস? তুই কি বিজ্ঞানী?
হু।আমি বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানী নিরব। খুশি?
আচ্ছা। লিনাকে এব্যাপারটা জানাই। দেখি ও কি বলে। ওর উত্তরের উপর ভিত্তি করে আমরা ডিসিশন নিব যে মেয়েটা সত্য বলছে কিনা৷ লিনা যদি বলে স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়া সম্ভব দেন মেয়েটার রেসপনসেবলিটি তোর। আর যদি বলে অসম্ভব তবে মেয়েটাকে রেখে আমরা এখনি চলে যাব।
হো। জানা।।ও আমার মতোই কথা বলবে। আর আমরা মেয়েটাকে ফেলে রেখে চলে যাব।
বরকত লিনাকে কল লাগালো। লিনা ফোন উঠালো।
বরকত লাউডস্পিকার এ দিয়ে লিনাকে এসব কিছু জানিয়ে দিল৷
সব জানানোর পর নিরব প্রশ্ন করল,লিনা এটা কি সম্ভব যে একজন ব্যক্তি মাথায় আঘাত পেলে সব ভুলে যাবে?
লিনা ওপাশ থেকে বলে, হ্যা। সম্ভব!
নিরব বলল, তুমি এমন কাউকে দেখেছো যার স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে?
হ্যা দেখেছি।
নিরব উত্তেজিত হয়ে বলে, কে? নাম কি?
জুই।
নিরব প্রশ্ন করে, জুই কে?
লিনা এবার উত্তরে বলে, আরে ওই যে হিন্দি সিরিয়ালের একটা নায়িকা (কাল্পনিক )
নিরব বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। কিছু বলার নেই তার। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সিরিয়ালের লেইম কাহিনি প্রভাব ফেলে বারোটা বাজাচ্ছে সবার। মানে লিনার মতো এতো সাকসেসফুল বিসনেস ওম্যান ও এই ধরনের কথা বলতে পারল? বিজ্ঞানের এভাবে অপমান! বিজ্ঞানের চেয়ে সিরিয়াল বেশি নির্ভরযোগ্য মানুষের কাছে! সত্যিই ব্যাপার টা কষ্টজনক।
সে দিব্যি বুঝতে পারছে প্রমিতি নামের মেয়েটা তাকে ঘোল খাওয়াচ্ছে। সব কিছু তাকে ফাসানোর জন্য করছে। সব মেয়েরাই লোভী৷ টাকার জন্য এমন মিথ্যা অভিনয় করছে৷
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 8
Arishan Nur
নিরব বরকতের দিকে তাকালো। বরকত তৃপ্তিময় হাসি হেসে বলে, এবার তো বিশ্বাস হলো তোর?
না। হয় নি৷
মানে এখনো বলতে চাস যে মানুষের স্মৃতি শক্তি লোপ পায় না?
হ্যা। পায় না। (জোড় গলায়)
বরকত একটা শ্বাস ফেলল এবং বলল, ঘাড়ত্যাড়ামি বাদ দে। তুই ওয়াদা করেছিলিস যে লিনা যদি বলে মানুষের স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যেতে পারে তবে মেয়েটার রেসপন্সেবিলিটি নিবি। মনে আছে তো সেই কথা নাকি ভুলে গেলি?
নিরব এবার চোখ সরু করে বলে, আমাকে একটা কথা একবার বললেই হয়। সহজে ভুলে নি।
এবার প্রমিতিকে বাসায় নিয়ে যা। ও সুস্থ হোক। তারপর একটা ব্যবস্থা নিব।
নিরব ভ্রু কুচকে বলে, ওই মেয়েকে আমার বাসায় নিয়ে যাব?
হুম।
নো ওয়ে। ওই মেয়ে কেন আমার বাসায় যাবে?
কারন মেয়েটা তোর বউ হয়। (মজা করে)
বরকত! (রাগী গলায়)
আচ্ছা। সর্যি। কিন্তু প্রমিতির আজকে এই অবস্থা তোর জন্য ই তো হয়েছে তাই না?
নিরব কিছু বলল না।
বরকত এবার বলে, যেহুতু তুই ভুল করেছিস, আইনের ভাষায় কিন্তু এটা অপরাধ। সুতরাং তোকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাই প্রমিতিকে বাসায় নিয়ে যা। সেবা কর। বুঝলি?
নিরব মুখ গোমড়া করে বলে, বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে না৷ ওকে আমি বরং কোন হোটেলে রাখব। দরকার হলে ফাইভ স্টার হোটেলে রাখব। হোটেলে খাবে-দাবে, থাকবে। সুয়িংমিং পুলে ঘুরবে। বিল দিব আমি। নো ওরিস!
বরকত কিছু একটা ভেবে বলে, আচ্ছা। কিন্তু মেয়েটাকে কি বলবি?
ডোন্ট নো।
একটা মেয়ে একা হোটেলে থাকবে, এটা কি সেইভ?
আরে হ্যা। সেইভ ই থাকবে।
তুই প্রতিদিন অফিস করে প্রমিতিকে দেখে তারপর বাসায় যাবি ।
নিরব মেকি হাসি হেসে বলে, হ্যা। হ্যা। চল বের হই হাসপাতাল থেকে। তুই ওকে নিয়ে পাকিং লটে যা। আমি হাসপাতালের বিল মিটিয়ে বের হচ্ছি। জাস্ট দুই মিনিট লাগবে।
বরকত আচ্ছা বলে প্রমিতির কাছে গেল।
প্রমিতি এখনো মাথা নিচু করে বসে আছে।
বরকত ভেতরে ঢুকে বলে, এই যে আপু! মাথা টা একটু উচু করো।
প্রমিতি মাথা উচিয়ে দেখে নিল কে এসেছে। তারপর আবার মাথা নিচু করে বসে থাকল।
বরকত বলল, এখন আমরা বাসায় যাব। বুঝেছে? উঠো এবার। ফ্রেস হতে চাও বা ওয়াশরুমে যাবে কি?
প্রমিতি মৃদ্যু গলায় বলে, উহু।
আচ্ছা।তোমার নাম কিন্তু প্রমিতি।
প্রমিতি মাথা তুলে তাকালো। কিন্তু কিছু বলল না। চুপচাপ বসে রইল।
বরকতের ফোনে নিরবের কল এলো। নিরব ফোনের ওপাশ থেকে বলে, তোরা পার্কিং লটে যা। আমি আসছি৷
বরকত ফোন রেখে বলে, আপু৷ চল বের হই।
প্রমিতি উঠে দাড়ালো। এবং বরকতের সাথে গুটিগুটি পায়ে হাটা ধরল। তার পরনে এখনো লাল শাড়ি টি ই আছে। সে আচলটা ঠিক করে নিল। হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকার ফলে শাড়িটা কোচড়া-মোচড়া হয়ে আছে।
সে হাত দিয়ে আচলটা ধরে মাথা নিচু করেই হেটে চলল।
বরকত কে অনুসরণ করে প্রমিতি আগালো। তারা হাসপাতালের গেটের বাইরে আসতেই দেখল একটা কালো গাড়ি তাদের সামনে দাড়িয়ে আছে।
বরকত পেছনের গেটটা খুলে দিয়ে বলে, আসো, আপু, ভেতরে গিয়ে বস।
প্রমিতি ও বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসে। আর এদিকে বরকত গেট লাগিয়ে সামনের সিটে গিয়ে বসে পড়ে।
প্রমিতি মনে মনে সেই লম্বা, কালো শার্ট পড়া ছেলেটাকে খুজচ্ছে।ওই যে ডাক্তার টার সাথে বেরিয়ে গেল আর তো দেখা মিলল না।
নিরব ড্রাইভিং সিটে বসে আছে। তারা দুইজন গাড়ি তে উঠে বসতেই সে ড্রাইভিং শুরু করল।
তার চোখ বারবার পেছনের সিটে বসা মেয়েটার দিকে আটকে যাচ্ছে। লুকিং গ্লাস দিয়ে নিরব মেয়েটাকে কিছুটা হলেও দেখতে পাচ্ছে। সে মেয়েটার চোখজোড়া ই দেখতে পাচ্ছে কেবল৷
চোখের চাউনি টা বেশ টানছে নিরব কে। কে জানে কেন এমন হচ্ছে নিরবের সাথে? প্রমিতির চোখ ছলছল করছে। আচ্ছা সে কি কান্না করছিল বা করছে? কে জানে?
নিরব দৃষ্টি সরিয়ে নিল। বরকত বলে উঠে, আমাকে সামনের রোডে নামায় দে।
নিরব বলে উঠে, কেন?
প্রমিতি ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা লোকটার ভয়েস শুনে খানিকটা কেপে উঠে। প্রমিতি একটা ঢোক গিলল। তার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল।
বরকত বলে, কালকে রাত থেকে বাইরে। আজকে একবারো বাসায় যায়নি। বিকেল হয়ে এলো৷ লিনা চেতে যাবে। তুই তো জানিস ও একটুতেই রেগে যায়।
নিরব হেসে দিল।
নিরবের হাসির শব্দে প্রমিতির মাথা ভোভো করতে লাগলো। এমন কেন লাগতে শুরু করেছে তার? সে যদি ভুল না হয় তবে এটাই সেই কালো শার্ট পড়া সেই ছেলেটা। প্রমিতির হাত একটু একটু করে কাপতে লাগল।
গাড়ি সামনের রোডে এসে থামল। এখন ই বরকত নেমে যাবে।প্রমিতির খুব করে বলতে ইচ্ছে করছিল, ভাইয়া প্লিজ আপনি যায়েন না। আপনি গেলে আমি একা হয়ে যাব। আর আমি একা এই ছেলেটার সাথে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাব। যাবেন না প্লিজ। কিন্তু এই কথা গুলো প্রমিতির মুখেই আটকা পড়ল। প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারল না সে।
একটা সময় বরকত নেমে গেল। প্রমিতি অসহায় দৃষ্টিতে জানালার বাইরে চেয়ে রইল।
বরকত নামার পর ও নিরব গাড়ি স্টার্ট দিল না। বরং যেখানে থামিয়েছিল সেখানেই গাড়ি টা থামিয়ে রাখল। সে স্টেয়ারিং এ হাত দিয়ে বলে, তোমার সিটের সামনের পকেটে পানির বোতল আছে। বোতলটা আমাকে দাও তো। (ভারী কন্ঠে)
প্রমিতি অস্থির হয়ে গেল। তাকেই কি কিছু বলা হচ্ছে? তার মাথা ঘুরাতে লাগল। সে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।
নিরব বলেন, তোমাকেই বলছি। তোমার সামনে একটা সিট পকেটে আছে।ওই পকেটেই বোতলটা আছে। বের করে দাও। (ভরাট কন্ঠে)
প্রমিতি রোবটের মতো হাতটা সিট পকেটে ঢুকালো এবং পানির বোতল বের করে হাত বাড়িয়ে দিল।
নিতব এবার বোতল সহ প্রমিতির হাত চেপে ধরে। নিরব প্রমিতির হাত স্পর্শ করতেই প্রমিতি কেপে উঠে। শরীরে এক শিহরণ বয়ে যায়।
আর নিরব খুব শক্ত করে প্রমিতির হাত ধরে ফেলে এবং লুকিং গ্লাসে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, প্রমিতি!
প্রমিতি চুপচাপ বসেই থাকে। এমন কি চোখ ও স্থির থাকে তার।
নিরব সেকেন্ড টাইম প্রমিতির পরীক্ষা করল। প্রথমবার যখন তার নাম ধরে ডেকেছিল তখন সে প্রমিতির চোখ দেখতে পায় নি কারন সেই সময় প্রমিতির মাথা নিচু করে রাখা ছিল৷
নিরব প্রমিতির হাতটা চেপে ধরেই মনে মনে বলে, এবার ও পাশ করল। তবে কি সত্যিই মেয়েটা সব ভুলে গেছে। নিরব নিজেই আবার মনে মনে বলে, আরো একবার পরীক্ষা করে দেখি। এবার ও যদি পাশ করে তবে মেনে নিব মেয়েটা সব ভুলে গেছে৷ আর ফেল মারলে বুঝে নিব আমাকে ফাসানোর জন্য অভিনয় করেছে তখন এমন শাস্তি দিব যে ওর রুহ কেপে উঠবে।
প্রমিতি চুপচাপ নিরবের দিকে তাকিয়ে আছে৷ সে ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। তার মনে হচ্ছে সে মিরপুরের চিড়িয়াখানার বাঘের খাজার ভেতরে ঢুকে পড়েছে।
নিরব বলল।,আমি তোমার কে হই জানো?
প্রমিতি দ্রুত মাথা আবারো নিচু করে ফেলে।
নিরব বলল, কি হলো বল? আমি তোমার কে হই?
প্রমিতি কাপা গলায় বলে, আ,,,,আপনি,,,আপনি আমা,,,আমার স্বামী হ,,হন। (এইটুকু বলতেই হাপিয়ে গেল প্রমিতি)
কথাটা বলে প্রমিতি একটা বুক ভরে নিশ্বাস নিল।
নিরব কিছু টা বিরক্ত হলো। সে বলল, তোমার না কিছু ই মনে নেই? তবে এই কথা কিভাবে মনে আছে?
প্রমিতি আবারো ভয়ে ভয়ে বলে, সবাই বলছিল।ভাইয়াটা বলেছে।
নিরব বুঝল ভাইয়া মানে সে বরকতকে মিন করছে৷ নিরব মনে মনে গালি দিল বরকত।
সে এখনো প্রমিতির হাত অনেক শক্ত করেই ধরে আছে। ছাড়ার কোন নাম-গন্ধ নেই৷
প্রমিতি ব্যথা অনুভব করছে। কিন্তু ভয়ের জন্য বলতে পারছে না হাত ছেড়ে দিতে।
প্রমিতির চোখ এখনো ছলছল করছে।
এবার নিরব তার হাত ছেড়ে দিয়ে বোতলটা নিল। এবং বোতলের মুখ টা খুলে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিল৷
প্রমিতি একদৃষ্টিতে নিরবকে দেখে নিল।
নিরব পানি খেয়ে বোতলটা পেছনে ছুড়ে মারল। আরেকটু হলে প্রমিতির গায়ে লাগত কিন্তু লাগে নি।
প্রমিতি সরে আসে তাই ব্যথা পাওয়া থেকে রক্ষা পেল। নিরব এবার বলে উঠে, নামো।
হ্যা?(কিছু না বুঝেই)
গাড়ি থেকে নামো।
প্রমিতি কিছু না বুঝে নিরবের দিকে তাকালো।
নিরব তার চোখে চোখ রেখে কিছু টা ধমকে বলে, গাড়ি থেকে নামো।
প্রমিতি এবার নিরবের কথাটা বুঝতে পারল৷ কিন্তু মানল না।
প্রমিতি এবারো চুপ থেকে মাথা নিচু করল।
নিরব ভরাট কন্ঠে বলে, মাথা নিচু করলেই সব ঠিক হয়ে যায় না। বের হও গাড়ি থেকে।
প্রমিতি হতবাক হয়ে যায়। সে আস্তে আস্তে কি যেন বলল।
কথা বলার ভলিউম এতো কম ছিল যে যেটা নিরবের কান অব্দি গেল না। সে কেবল দেখল, প্রমিতি তার গোলাপী ঠোঁট দুটি নাড়াচ্ছে। কিন্তু কি বলল শুনতে পায় নি।
জোড়ে বল যা বলতে চাও৷
আ,,আমি,,
হ্যা তুমি কি? (রেগে গিয়ে চিল্লিয়ে)
প্রমিতি নিরবের ধমক খেয়ে রীতিমতো কাপতে লাগে সেই সাথে ভয় ও পায়। হুট করে তার গাল বেয়ে একটা ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে৷
নিরব সেই অশ্রু দেখতে পেল৷
এবার নিরব প্রমিতির কোন কথা বলার অপেক্ষা না করেই নিজেই গাড়ি থেকে বের হয়ে প্রমিতিকে জোর করে গাড়ি থেকে নামালো। এবং রাস্তার সামনে দাড় করিয়ে নিজে গাড়িতে উঠে গাড়ি চালাতে শুরু করল৷
প্রমিতি হতবিহ্বল হয়ে গেল। সেই সাথে বাকরুদ্ধ ও। সে কেদে দিল এবং আস্তে করে নরম গলায় বলে, চলে গেলেন উনি আমাকে রাস্তায় একা ফেলে দিয়ে?
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 9
Arishan Nur
প্রমিতি বিকেলের হালকা মিস্টি রোদের নিচে মাঝ রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। হুট করে কানে গাড়ির হর্ণ বেজে উঠল। সে পেছনে তাকিয়ে দেখে, একটা প্রাইভেট কার তার সামনে দাড়িয়ে আছে।
প্রমিতি হতাশার একটা শ্বাস ফেলল। সে ভেবেছিল কালো শার্ট পড়া ছেলেটাই তাকে নিতে এসেছে। কিন্তু তার ধারনা ভুল ছিল।
প্রমিতি টলমলে চোখে রাস্তার এক সাইডে গিয়ে দাড়ালো। সে আশেপাশে তাকালো। যে যার মতো ব্যস্ত। কারো দিকে কারো তাকানোর সময় পর্যন্ত নেই।
প্রমিতি বুক ফেটে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে কি করবে? এই রাস্তায়ই বসে থাকবে? নাকি হাটা ধরবে? আর হাটা ধরেই বা লাভ কি? কোথায় যাবে সে?
মাথায় কিছুই ঢুকছে না তার। প্রমিতি ফুটপাতে বসে পড়ে। বসতে গিয়ে হাতে একটু লাগল তার। সে খেয়াল করলো, তার হাতে ব্যান্ডেজ। প্রমিতি ব্যান্ডেজের জায়গায় হাত বুলালো। তার খুব করে কাদতে মন চাইছে৷
★★★
নিরব ইউটার্ণ নিল এবং প্রমিতিকে যেইখানে রেখে এসেছে তার সামনের গলিতে গাড়ি ঢুকালো। এবং প্রমিতিকে যেই স্পটে রেখে এসেছে ঠিক সেই জায়গায় আসল। গাড়ি থামাতেই তার চোখ কপালে। কারন রাস্তায় একটা ছোট-খাটো জটলা পেকে গেছে।দুই ঘন্টা আগেই তো সব ঠিক ছিল। যদিও বা এটা ঢাকা শহর। সেকেন্ডর মধ্যে রাস্তায় ঝামেলা লেগে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সে গাড়ি থেকে নেমে ভীড় ঠেলে সামনে আগাতেই এক দফা শক খেল।
কারন জটলা পাকার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে প্রমিতি। তাকে ঘিরেই সবাই দাঁড়িয়ে আছে। তা
আর প্রমিতি একাধারে কেদেই যাচ্ছে।
ভীড়ের মধ্যে একজন বলে উঠে, এই আপা, আপনে রাস্তা-ঘাট কিছু চেনেন না?
প্রমিতি কাদতে কাদতে উত্তর দেয়, নাহ!
লোকটা বলল, আপনার স্বামীকে এখন কেমনে খুজে বের করবেন?
প্রমিতি কাদতে কাদতেই বলে, জানি না।
ভীড় থাকায় প্রমিতি নিরবকে দেখতে পেল না।
নিরব এই কান্ড দেখে ঘামতে লাগল। মেয়েটা এই বার ও পাশ করে গেল। তাহলে বুঝি আসলেই মেয়েটার মেমোরি লস হয়েছে। যদি মেয়েটা তাকে ফাসানোর ধান্দায় থাকত তবে দুই দুইটা ঘন্টা রাস্তায় বসে কান্না করত না।
নিরব ভীড় ঠেলে প্রমিতির সামনে গেল।
প্রমিতি তাকে দেখে কান্না থামিয়ে দিল এবং তার দিকে অবাক নয়নে চেয়ে থাকে তারপর আবার কান্না করতে লাগলো এবং বলল, আমাকে রেখে কেন চলে গিয়েছিলেন?
নিরব কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা। সে তো মেয়েটার পরীক্ষা নিচ্ছিল।
লোকজন বলে উঠে, কে আপনাকে রেখে গেছে?
প্রমিতি হিচকি তুলতে তুলতে বলে, আমার স্বামী।
স্বামী শব্দটা শুনতেই নিরবের বুক কেপে উঠে। সে আবারো ঘামতে লাগল। যদিও বা এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল। সূর্যের উত্তাপ নেই বলতেই চলে তবুও প্রচন্ড গরম লাগতে শুরু করে নিরবের।
নিরব প্রমিতির কাছে গিয়ে দাড়িয়ে আশেপাশের লোকজনের উদ্দেশ্য বলে, আপনারা এখন যেতে পারেন।
ভীড়ের মধ্যে একজন বলে উঠে, আপনি কে?
নিরব আমতাআমতা করতে থাকে। কি বলবে সে? জামাই লাগি বলবে? নিজের মনেই ভাবতে লাগলো এসব নিরব।
প্রমিতি এবার বলে উঠে, আমার উনি!
নিরব প্রমিতির দিকে হতভম্ব হয়ে তাকালো। তার এতো সুন্দর একটা পরিচয় আছে তাহলো নিরব চৌধুরি। সেই পরিচয় বাদ দিয়ে সে এখন সামনে দাড়িয়ে থাকা লাল শাড়ি পড়া মেয়েটার আমার উনি হয়ে গেল?
লোকজন বলতে লাগলো, কেমন মানুষ আপনি? বউকে রেখে পালাইছেন?
নিরব বলল, পালায় নি৷ একটা কাজে গিয়েছিলাম।
বলে প্রমিতির হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির কাছে গেল। এবং পকেট থেকে চাবি বের করে লক খুলল আর সামনের সিটে প্রমিতিকে বসালো। প্রমিতিও চুপচাপ বসে পড়ে।
নিরব নিজের চুল ঠিক করে ড্রাইভিং সিটে বসল।
এবং গাড়ি চালাতে শুরু করল। একটানে ভীড় থেকে দূরে সরে এলো।
এরপর বলল, তুমি এই দুই ঘন্টা রাস্তাই দাঁড়িয়ে ছিলে?
হু।
কেন?
আমি কোথায় যাব? কিছু ই তো চিনি না। শুধু আপনাকে ই চিনি।
নিরব কিছু টা বিরক্ত হয়ে বলে, আচ্ছা। ঠিক আছে।
সে গুলশানের একটা আবাসিক হোটেলের দিকে গাড়ি চালাতে লাগে। গাড়ি তে তাদের মাঝে আর কোন কথা হয় না।
হোটেলে পৌছে নিরব প্রমিতিকে নিয়ে হোটেল রুমে গেল।
রুমে ঢুকে সে কর্কষ গলায় বলে উঠে, যাও ফ্রেস হয়ে নাও। আমি খাবার ওর্ডার দিচ্ছি।
প্রমিতি আচ্ছা বলে বাথরুমে ঢুকল।
নিরব হোটেলের টেলিফোন দিয়ে দুইজনের খাবার ওর্ডার দিল।
তারপর বেডে গিয়ে বসল। তার গা ছেড়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনি ঘুমিয়ে পড়বে। কালকে রাতে ঘুম হয় নি। আজকে সারা দিনে একবারো চোখের পাতা এক করার সময় পায় নি সে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে।
নিরব আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। বেডে গা এলিয়ে দিল। এবং ঘুমিয়ে গেল।
প্রমিতি গোসল করে বের হলো। গোসল করে আবার সেই লাল শাড়িটাই পড়েছে। চুল থেকে টিপটিপ করে পানি পড়ছে৷ সে বেডের সামনে এসে দাড়ালো। এবং দেখতে পেল, নিরব ঘুমাচ্ছে। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।
প্রমিতি নিরবের দিকে চেয়ে রইল। ছেলেটাকে চাপ দাড়িতে খুবই সুন্দর লাগছে। লম্বা হলেও দেখে মনে হয় না জিম-টিম করে।ওয়েট ভালোই হবে। প্রমিতি ঘুটিয়ে ঘুটিয়ে বড়ই আগ্রহের সাথে নিরবকে এমনভাবে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো যেমনটা একজন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রথম দিন ল্যাবে গিয়ে সব কিছু দেখে !
হুট করে গেটে নক করল কেউ। প্রমিতি গিয়ে গেট খুলতেই দেখল, ওয়েটার খাবার নিয়ে এসেছে। সে খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে বলে, আমার কাছে এখন টাকা নেই৷
ওয়েটারটা বলল, নো প্রবলেম ম্যাম। চেক আউটের সময় দিলেই হবে।
আচ্ছা। বলে প্রমিতি খাবারের প্যাকেটটা টেবিলে রাখল।
চুল থেকে পানি এখনো চুইয়ে পড়ছে ফলে ব্লাউসটা ভিজে উঠেছে৷
প্রমিতি আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো এবং চুল গুলো হাত দিয়েই ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে পানি ঝাড়তে শুরু করে।
এ্যাট দ্যাট মুমেন্ট নিরবের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাংতেই চোখ চলে যায় প্রমিতির দিকে। সে পলকহীন ভাবে প্রমিতির দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রমিতিকে দেখে সে কোন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে। প্রমিতি তার চুল ছাড়ছে।আর ফ্যানের হাওয়ায় চুল শুকাচ্ছে।
আর নিরব মুগ্ধ হয়ে দেখছে প্রমিতিকে। এখন যদি তার কেউ কোন ইন্টারভিউ নেয় আর সেই ইন্টারভিউয়ে প্রশ্ন করে, একটা মেয়েকে কোন সময় সবচেয়ে বেশি রুপবতী লাগে?
সে নিদ্বিধায় উত্তর দিতে পারবে। উত্তর টা হলো সদ্য স্নান করে যখন একটা মেয়ে চুল শুকায়।
তার কেমন যেন লাগতে শুরু করল। এর আগেও তো কতো মেয়ে দেখেছে কিন্তু এমন তো কোন দিন ফিল হয় নি। এই অদ্ভুত অনুভূতি টা কেবল প্রমিতিকে দেখা মাত্র শুরু হচ্ছে। নিরবের মধ্যে একটা খারাপ চিন্তা আসল। সে দ্রুত প্রমিতির থেকে চোখ সরিয়ে নিজেই নিজেকে গালি দিয়ে বলে, এই পুরুষজাতীর মনটা একদম আর্বজনার মতো!
পরে নিজেই নিজের বলা কথাটা সুধরে নিল। আসলে পুরুষের মন ময়লায় ঘেরা না বরং কাপুরুষের মন ময়লার স্তুপ!
নিরব দ্রুত তিন বার তওবা পড়ে নিল আর মনে মনে বলে, ইবলিস শয়তানে ধরছে, ভাগ্যিস তওয়া পড়ে নিলাম। নিরব চোখ খুলেই রেখেছিল। তাই তো প্রমিতি তার কাছে এসে বলে, আপনার ঘুম ভাংলো?
নিরব কিছুটা চমকে উঠে বলে, হু।
প্রমিতি আরো একবার তার চুল ঝাড়া দিল। নিরব হা করে তার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে থাকল। সরাসরি তাকাতে লজ্জা লাগছে নিরবের।
প্রমিতি বলে উঠে, খাবার দিয়ে গেছে।
ও৷
আপনি কি এখানেই থাকেন? এটা কি কোন বাসা? মানে,,, আগেও কি আমরা এখানে থাকতাম? (একসাথে এতো গুলো প্রশ্ন করে থামল প্রমিতি)
নিরব হালকা গলায় বলে, নাহ। এটা বাসা না। একটা হোটেল।
আমরা হোটেলে কেন আছি? আমাদের কোন বাসা নাই?
নিরব এ প্রশ্ন শুনে মনে মনে বলে উঠে, আমরা না। তুমি থাকবা। আমি তো বিরিয়ানি খেয়েই চলে যাব আমার বাসায়। কিন্তু মুখে বলে, আছে তো বাসা। কিন্তু একটা সমস্যার কারনে এখন আমরা বাসায় থাকতে পারব না। চল, ডিনার করে নিই।
প্রমিতি চুল গুলো কাধের এক সাইডে ছেড়ে দিয়ে বলে, হু।
তারপর নিরব আর প্রমিতি খেতে বসল।
প্রমিতি মাথা নিচু করে গুটিসুটি মেরে বসে খেতে লাগলো।
নিরব তা দেখে কিছুটা অবাক হলো। মানুষ খাওয়ার সময় কিভাবে মাথা নিচু রেখে খায়?
মেয়েটার মাথা নত করে রাখাটা বুঝি অভ্যাস!
সে গলা খাকিয়ে বলে, খাবারটা কেমন? ভালো লাগছে?
প্রমিতি খেতে খেতে উত্তর দিল, হু। মজা আছে।
নিরব আরো একটা ব্যাপার খেয়াল করল তাহলো মেয়েটা বেশ শান্ত, গম্ভীর। একদমই চঞ্চল না। সে প্রমিতিকে দেখে নিল। কতোই আর বয়স হবে, বিশ কিংবা একুশ । এতো কম বয়সেই এতো চুপচাপ। মেয়েরা নাকি এই বয়সটায় চড়ুই পাখির মতো তিড়িং বিড়িং করে ঘুরে বেড়ায়।
প্রমিতি খাওয়া শেষ করে উঠে দাড়ালো এবং বাথরুমে গিয়ে হাত ধুয়ে নিল।
এরমধ্যে নিরবের ও খাওয়া শেষ হয়ে যায়। সেও হাত ধুয়ে আসে।
এখন প্রমিতিকে এখানে রেখে চলে যেতে হবে।প্রমিতি কে কি জানিয়ে যাবে? নাকি মিথ্যা বলে চলে যাবে?
মিথ্যা যদি বলে তবে কি বলবে? কিছু কিনতে যাচ্ছে এমনটা বলা যায়। কিন্তু প্রমিতি যদি আগের বারের মতো কান্না-কাটি শুরু করে তাইলে ফের ঝামেলা হবে। তার চেয়ে সত্যটা বলে দিই৷
নিরব প্রমিতির কাছে গিয়ে বলে, শোন!
নিরবের কন্ঠ শুনে প্রমিতি খানিকটা কেপে উঠে। সে মাথা নিচু করেই বলে, জি, বলুন।
আমাকে বাইরে যেতে হবে।
প্রমিতি চোখ তুলে নিরবের দিকে তাকায়।
চোখাচোখি হতেই নিরবের অস্থির লাগতে শুরু করে। সে কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে, কাজ আছে একটা। সকালের মধ্যেই ফিরব। না, সকাল না সর্যি, বিকেলের মধ্যেই চলে আসব।
একথা শোনা মাত্র প্রমিতি ভ্যা করে কেদে দিল। প্রমিতিকে কাদতে দেখে কিছুটা ভড়কে গেল নিরব। সে মোটেও এটার জন্য প্রস্তুত ছিলনা।
প্রমিতি কাদতে কাদতে বলে, আপনি আমাকে রেখে চলে যাবেন তাই না? আর ফিরে আসবেন না আমি জানি৷
প্রমিতির কথাগুলো শুনে কেন যেন নিরবের খুব মায়া হতে লাগলো প্রমিতির প্রতি।
সে প্রমিতির কাছে গিয়ে বলে, না। তুমি ভুল ভাবছো। আমি আসব তো। আবার আসব।
প্রমিতি বলে উঠে, সত্যি?
হুম। এখন যাই। কেমন?
হু বলে প্রমিতি আবার মাথাটা নিচু করল।
নিরব যেই না পাশ ঘুরে দরজার কাছে যেতে ধরল , ওমনি প্রমিতির আচলের সাথে পা লেগে ধুম করে প্রমিতিকে নিয়েই সে বিছানায় পড়ে যায়।
নিরব সোজা গিয়ে প্রমিতির উপর পড়ে। এরই মধ্যে আরো একটা কান্ড ঘটে গেল তাহলো ফ্যানের বাতাসে হুট করে প্রমিতির শাড়ির আচল খানা সরে গেল। নিরব হতভম্ব হয়ে প্রমিতির উপর ই শুয়ে রইল । সে এক ধ্যানে প্রমিতি কে দেখেই যাচ্ছে। আর প্রমিতি ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। নিরব খেয়াল করল, প্রমিতির ঠোঁটের কাপছে। সে এক ধরনের মোহ নিয়েই প্রমিতিকে অবলোকন করতে থাকে। কাহিনি যদি এই পর্যন্ত ই ঘটত তাহলে তা আর বলা লাগত না।
কিন্তু ঠিক সেই সময় তাদের রুমের গেট খুলে পাচ-ছয় জন পুলিশ ভেতরে ঢুকে। এবং সেই পুলিশের মধ্যে থেকে একজন সিনিয়র লেডি পুলিশ তাদের কে এমন অবস্থায় দেখে জোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠে, আস্তাগফিরুল্লাহ! এইসব কি হচ্ছে? ছি ছি!
নিরবের হুশ আসল। কিন্তু তবুও সে প্রমিতির উপর শুয়ে থেকেই পেছন ঘুরল এবং যা দেখল তা দেখার পর তার চোখ প্রায় বেরিয়ে আসার উপক্রম। সে ঘামছে আর বিরবির করে বলে উঠে, খালা এখানে কি করে? আজকে আমি শেষ! আম্মু জানলে হয় আমাকে ত্যাজো করবে নাহলে নিজেই হার্ট এটাক করবে।
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 10(বোনাস)
Arishan Nur
নিরব মাথা ঘুরিয়ে এবার প্রমিতির দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। নিরব মনে মনে বলে, মেয়েটা ঘুমায়-টুমায় গেল নাকি আবার!
পেছন থেকে পুলিশ গুলো বলে উঠে, এই যে! এইসব অনৈতিক কাজ বন্ধ করেন।
এবার প্রমিতি চোখ খুলল। নিরবকে তার এতো কাছে দেখে সে একটা ঢোক গিলে ফেলে। এবং অপলক নয়নে নিরবকে দেখতে লাগে। এতো কাছে নিরবকে দেখে তার বেশ অস্বস্তি লাগছে। তার উপর তাদের রুমে মানুষ ঢুকে পড়েছে। ইশ!কি লজ্জা।
প্রমিতি নিরবকে নিজের থেকে সরানোর জন্য নিরবকে ধাক্কাতে লাগে।
নিরব বেশ ঘাবড়ে গেছে। সুমি খালাকে সে খুব ভালো করেই চেনে। বাড়াবাড়ি করা খালার রক্তে মিশে আছে। তার এই খালা আবার এসপি। বাশ যে খাবে এটা নিরব দিব্যি বুঝতে পারছে।
সে প্রমিতির উপর থেকে উঠে আসল এবং দাড়িয়ে পড়ল। কিন্তু পেছন ঘুরল না। খালা বুঝি তাকে এখনো দেখে নি। কারন দেখলে এতোক্ষনে উনি চুপ থাকার মানুষ না।
প্রমিতি ও নিরবের দেখাদেখি উঠে দাড়ালো এবং দ্রুত তার শাড়ির আচল ঠিক করে নেয়।
নিরবের খালা প্রমিতির মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। নিরব যেহেতু প্রমিতির দিকে মুখ করে ছিল তাই খালা নিরবের চেহারা দেখতে পায় নি। কেবল পেছনটা দেখতে পাচ্ছেন।
খালা কিছুটা ধমক দিয়ে প্রমিতিকে বলে, এই মেয়ে? তোমার লজ্জা শরম নাই? এভাবে একটা ছেলের সাথে একা একটা রুমে আছো? সমাজ আজকে কোথায় চলে গেল! এই দিন ও দেখা লাগল।
নিরব আর প্রমিতি দুইজন ই চুপ মেরে গেল। নিরব মনে মনে বলে, হোটেলে কি রেট পড়ছে নাকি? কিন্তু রেট তো কমদামি, সস্তা হোটেলে পড়ে। গুলশানের হোটেলে তো পড়ার কথা না।
খালা সাহেবা আবারো বলল, দোষ তো কেবল মেয়ের না। ছেলেটার ও আছে। বেহায়া ছেলে কোথাকার!
এবার প্রমিতি মুখ খুলল। সে বলল, আপনি ভুল ভাবছেন।
খালা আবারো বলল, মানে? তোমরা খারাপ কাজ করতে আসো নি?
না৷
ছেলেটা কে হয় তোমার? বয়ফ্রেন্ড?
না। না। উনি,,,,, আম,,
খালা আবার বলল, হ্যা বল কে হয় ছেলেটা তোমার?
নিরব প্রমিতির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে, বলো, বলো, বেশি করে বলো, আমার উনি হয়। বাল। আমি আসলেই একটা অভাগা। তারপর আবার নিজেই নিজেকে বলে, না। না। অভাগা না। অভাগা হলে কি আর গুলশানে আমার ছয়তলা বাড়ি থাকে? মিরপুরেও আছে। আবার বনানীতে একটা ফ্লাট ও আছে। আই আম নট এ অভাগা। আজকের দিনটা খারাপ। এই যা।
প্রমিতি সুন্দর করে বলে, উনি আমার হ্যাসবেন্ড হন।
নিরব চোখ বন্ধ করে ফেলে একটা নিশ্বাস নেয়।
খালা আবারো বলে, হ্যসবেন্ড হলে হোটেলে আসার কি দরকার ছিল? আর এই যে মিস্টার চেহারা দেখান। লুকায় আছেন কেন?
বলে খালা নিরবের সামনে দাড়ালো।
খালাকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে নিরব মুচকি হেসে বলে, আসসালামু আলাইকুম খালা। ভালো আছেন? খালুর শরীর কেমন? অনেকদিন ধরে বাসায় আসেন না। কোন খোজ-খবর নাই আপনার। শুধু ফেসবুকে স্টোরি দিলে একটা করে লাভ রিয়্যাক্টশন দেন।
খালা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে, নিরব তুই?
জি খালা।
তুই বিয়ে করে ফেলেছিস? আর আমরা কেউ কিছু জানিই না!
নিরব গেল ফেসে। তাও যে-সে রকম ভাবে ফাসে নি সে। বেশ বড় ধরনের ঝামেলায় জড়িয়ে গেল।
নিরব আমতা আমতা করে বলে, আসলে,,,,খালা,,, হইসে কি! আমি বিয়ে করি,,
বিয়ে করে বউ লুকায় রাখছোস। ছিঃ নিরব। লজ্জা করে না তোর। আবার বলিস কেমন আছি। তোকে ধরে থাপড়ানো দরকার।
খালা। আমার কথা তো শুনেন।
খালা নিরবের কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে প্রমিতিকে বলে, নিরব তোমার স্বামী হয়?
এতোক্ষন যাবত প্রমিতি জানত না কালো শার্ট পড়া, তার হ্যাসবেন্ডের নাম নিরব। মাত্র জানল। সে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে।
খালা প্রমিতিকে দেখে নেয়। আর বলে,সেকি রে! নিরব তুই বাসর রাত করতে আসছিস নাকি?
নিরব হন্তদন্ত হয়ে বলে, না। না।তুমি ভুল ভাবছো খালা। এমন কিছু না।
খালা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে, মেয়েটা লাল শাড়ি পড়ে আছে। শাড়ির কোন ভাজ ঠিক নাই।কোচড়া মোচড়া হয়ে আছে। আর হবেই বা না কেন? তোর মতো দামড়া ছেলে যদি শাড়ির উপর শুয়ে থাকে তাইলে শাড়ির ভাজ তো নস্ট হবেই।
নিরব কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সে চুপচাপ খালার কথা শুনে যাচ্ছেব।এই মূহুর্তে খালাকে রাগানো যাবে না।
খালা প্রমিতিকে জিজ্ঞেস করল, আজকে তোমাদের বাসর রাত?
প্রমিতি হালকা গলায় বলে, না।
নিরব পকেটে হাত ঢুকিয়ে নেয়।
এদিকে প্রমিতি আগ বাড়িয়ে বলে, উনি তো আমাকে রেখে চলে যেতে ধরেছিলেন,,,,, কিন্তু তার আগেই আপনারা চলে আসলেন।
সুমি খালা নিরবের দিকে তাকালো এবং কড়া গলায় বলে, কতো দিন ধরে এইসব চলছে?
কি চলছে খালা?
এই যে আপনার সংসার! বউকে হোটেলে রাখছ,প্রতিদিন বিকেলে দেখা-সাক্ষাৎ, ভালোবাসা বিনিময় করে তুই বাসায় যাস। তাই না? বেগম আপা আমাকে সেদিন ফোনে বলছিল তুই নাকি দেরি করে বাসায় ফিরিস। এখন বুঝলাম কাহিনি কি।
খালা। আমার কথা তো শুনেন।
চুপ কর। আহাম্মক৷ (ধমক দিয়ে খালা)
নিরব চুপসে গেল। আর কিছু বলল না। এই মূহুর্তে তার প্রমিতিকে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মারতে মন চাচ্ছে ।
সুমি খালা ফোন হাতে নিয়ে নিরবের মা বেগমকে কল লাগালেন।
নিরবের মা ফোন ধরতেই সুমি খালা বলতে শুরু করলেন, আপা রে সব শেষ হয়ে গেল। তোর ছেলে আমাদের কোন ইজ্জত ই রাখল না। এই যে আমি এতো বড় অফিসার কি ভাব নিয়ে অফিস যেতাম-আসতাম, কালকে থেকে আমাকে বোরখা পড়ে মুখ লুকায় অফিস যেতে হবে। তারপর খানিকক্ষণ চুপ থাকল। অপর পক্ষ থেকে কিছু বলা হচ্ছে,সেটাই শুনছে বুঝি।
তারপর খালা আবারো বলতে লাগলো, কি হইসে মানে? কি হয় নি আপা! তোর ছেলে বিয়ে করে হোটেলে বউয়ে কে লুকায় রাখছে। এখানে সংসার ও শুরু করে দিসে। কবে বিয়ে করছে তা জানি না। কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গেছে। তুমি দ্রুত আমার বাসায় আসো। আজকে এর একটা মীমাংসা করেই আমি ছাড়ব। হ্যা হ্যা৷ আপা, নিরব আমার সাথেই আছে। ওকে আমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। তোমরাও চলে আসো। হুম। এখনি আসো। একদম দেরি করিও না। আমার তো মনে হয় নিরবের বাচ্চা-কাচ্চা ও আছে। বাচ্চা লুকায় রাখছে,,,,,,,
নিরব বিরক্ত হলো। খালা এতো বেশি কথা কেন বলে? এখন যে কি করবে? মাকে কি বলবে? সত্যটা বলতে হবে। তা নাহলে আরো ঝামেলায় পড়বে সে।
খালা প্রমিতি আর নিরবকে নিজের বাসায় নিয়ে গেল।
গেট খুলল নিরবের কাজিন আশা। আশা নিরবকে দেখেই বলে, ওহ মাই গড! ব্রো তুমি? হুয়াটস আপ?
নিরব জোড় করে হেসে বলে, মাইকের চিপায় পড়ছি আমি! আর কও কেমন আছি!
কিছু ক্ষনের মধ্যে ই নিরবের মা, দাদি চলে আসল। নিরবের কোন ভাই-বোন নেই।
নিরবের মা বেগম এসেই প্রমিতিকে দেখে বলে, এটাই সেই মেয়ে?
প্রমিতিও কম না, সে মাথা ঝুকিয়ে বলে, জি। আমিই সেই মেয়ে।
বেগম প্রশ্ন করে, মা তুমি আমার ছেলের বউ?
প্রমিতি ডাগর ডাগর চোখে জবাব দেয়, হ্যা।
আলহামদুরিল্লাহ। কি মিস্টি মেয়ে! হ্যা রে সুমি। একটা ভালো দেখে শাড়ি পড়া বউ মাকে।
সুমি খালা আচ্ছা বলে প্রমিতিকে ভেতরে নিয়ে গেল।
কিছুক্ষনের মধ্যে বাসার পরিবেশ বদলে গেল। বিরিয়ানির,রোস্টের গন্ধ আসতে লাগল। নিরব কিছু ই বুঝে উঠতে পারছে না। সে যে কারো সাথে কথা বলবে তার ও উপায় নেই।
ড্রয়িং রুমে কেউ নেই। কেবল আশা আর সে বসে আছে। আশা গুনগুন করে গান গাচ্ছে, চান্দের বাত্তির কসম দিয়া,,,, ভালোবাসলি, সূর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পুড়াইলি,,,,
নিরব আর কিছু শুনল না। কারন তার দৃষ্টি প্রমিতির উপর গিয়ে পড়ল।
নিরবের চোখ তো চড়ক গাছে! প্রমিতিকে বউ সাজানো হয়েছে। লাল ঘোমটা, গলায়, হাতে গহনা। হাতে যেই বালা পড়া সেটা তার মায়ের। নিরবের চোখ আটকে গেছে প্রমিতির। চোখ আর নড়াতে পারছে না সে। উফ, আল্লাহ! একটা মেয়ে এতো সুন্দর কি করে হতে পারে। নিরব টেবিলে থাকা পানির জগ থেকে পানি গ্লাসে ঢেলে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলো।
সে ঢোক গিলল। কি হতে চলেছে তা সে অনুমান করতে পারল খানিকটা হলেও। যদি এমনটা হয় তবে তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
সে আশেপাশে তাকালো। দেখল বরকত আর লিনা ও আসছে। তাদের আসতে দেখে নিরব শান্তি পেল। এখন মাকে সত্য কথা বলতে পারবে। সাক্ষী আছে। মাকে সব সত্য বলেই প্রমিতি নামক ঝামেলা টাকে সুমি খালার মতো দায়িত্বশীল অফিসারের হাতে তুলে দিবে।
কিন্তু বিধি বাম। বরকত একা আসেনি। সাথে করে নিয়ে এসেছে তাদের পারিবারিক কাজী সাহেব কে।
কাজী সাহেব এসেই বেগম আর সুমিকে সালাম দিয়ে জমজমের পানি বের করব বলে, আপা গন, পশ্চিম দিকে তাকিয়ে আল্লাহ নাম নিয়ে একটু জমজমের পানি খান। মনের আশা পূরণ হবে।
বেগম জমজমের পানি খেয়ে নিল৷
এরপর এক মূহুর্তের মধ্যে কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।
কাজী অনেক কিছু ই বলল কিন্তু লজ্জা আর নার্ভাসের কারনে প্রমিতি ঠিক মতো কিছু ই শুনল না। শুধু শেষের টুকু শুনল সে। জামিল চৌধুরির একমাত্র পুত্র নিরব চৌধুরি ঢাকার বাসিন্দা, উকিল বাবা সালাম সাহেবের কন্যা প্রমিতির নিকট বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো। কন্যা যদি এই বিয়েতে রাজী থাকে তাহলে বলুন, আলহামদুলিল্লাহ কবুল৷
প্রমিতি কিছুক্ষন পর উত্তর দিল, আলহামদুলিল্লাহ কবুল৷
তিনবার বলেন আম্মাজান।
কবুল, কবুল, কবুল!
সবাই শুনেছেন?
বাড়ির সবাই একসাথে বলল, জি শুনেছি।
কাজী সাহেব মুখে মিস্টি পুড়ে নিয়ে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে সম্পন্ন হলো।
নিরব আহাম্মকের মতো চেয়ে রইল। তার কানে কিছু ই যাচ্ছে। সে কিছু ই শুনতে পাচ্ছে না। কেবল নাকে গরুর মাংস কষানোর গন্ধ আসছে। এই বিরিয়ানি, গরুর মাংস কি তার বিয়ের খাওয়া নাকি?
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 11
Arishan Nur
প্রমিতি আড় চোখে নিরবের দিকে বারবার তাকাছে। যতোবারই সে নিরবের দিকে তাকাচ্ছে ততোবারই তার লজ্জায় মরে যেতে মন চাচ্ছে। আচ্ছা, ছেলেটা কালো শার্টটা পড়েই বিয়ে করে ফেলবে? কে জানে? এই মূহুর্তে তো আর পাঞ্জাবি পড়ানো সম্ভব না নিরবকে। কারন কাজী সাহেব বিয়ে পড়িয়ে ফেলেছেন।
এবার কাজী সাহেব মিস্টি চাবাতে চাবাতে নিরবের উদ্দেশ্য বললেন, বাবা এবার আপনি রাজী থাকলে একটু কষ্ট করে তিনবার কবুল বলে ফেলেন।
নিরব একবার প্রমিতির দিকে তাকালো। প্রমিতির দিকে তাকাতেই তার মনের মধ্যে তুমুল ঝড় বয়ে গেল। সে একটা বড়ো করে শ্বাস নিয়ে প্রমিতির চোখের দিকে তাকালো। মেয়েটা তাকেই দেখছে বোধহয়। প্রমিতির চোখে আকুলতা! কিসের অনুরোধ জানাচ্ছে সে নিরবকে? বিয়ে করার? হতে পারে৷
নিরব দৃষ্টি সরিয়ে বরকতের দিকে তাকালো। বরকত দাত কেলিয়ে হাসছে। বরকতের পাশেই লিনা বসে বসে প্রমিতির ছবি তুলছে। বরকতকে দেখেই নিরবের গা জ্বালা দিয়ে উঠল। এই ব্যাটার জন্য আজকে সে ফেসে গেল। একবার বরকত কে হাতের নাগালে পেলে আস্ত রাখবে না।
নিরবের মা নিরবের কাছে গিয়ে বলে, কি হয়েছে বাবুই। কবুল বলছিস না কেন? মেয়েটা তোর উত্তরের অপেক্ষা করছে। বলে ফেল কবুল। (করুন গলায়)
নিরব তার মায়ের অনুরোধ ফেলতে পারল না। সে বলে ফেলে, কবুল, কবুল, কবুল!
কবুল বলার সময় তার গলা আটকে আসছিল।সে নিজেকে সামলে নিল। তারপর আবার প্রমিতির দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনো তার দিকেই চেয়ে আছে। তবে চোখ-মুখে একটা খুশির ঝলক! কি অদ্ভুত! এতো সুন্দর লাগছে কেন মেয়েটা কে? মনে হচ্ছে চেহারা দিয়ে নূর বের হচ্ছে!
নিরব মাথা নিচু করে ফেলল। তার কিছু ই ভালো লাগছে না। এভাবে বিয়ে হওয়া লিখা ছিল তার ভাগ্য! এইটা বিয়ে নাকি দুর্ঘটনা?
যদিও বা সব বিয়ের অপর নাম ই দুর্ঘটনা। এরেঞ্জ ম্যারেজ হলো, রাস্তা দিয়ে চলার সময় গাড়ি এসে ধাক্কা দেওয়া আর লাভ ম্যারেজ হলো রেললাইনে গিয়ে শুয়ে এক ঘুম দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানো।
নিরবের বুক ফেটে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অবশেষে সেও এখন ম্যারিড। তার মানে আজকে থেকে সে ম্যসেঞ্জারে কোন মেয়েকে ইনবক্সে নক দিতে পারবে। মেয়েদের ছবিতে নো লাভ ওর কেয়ার রিয়্যাক্টশন!
নিরব বিরবিরিয়ে বলে উঠে, ও আল্লাহ! জীবনের সব সুখ শেষ হতে চলল নাকি!
প্রমিতি নিরবের দিকে তাকিয়েই আছে আর হাত দিয়ে শাড়ির আচল মোচড়াচ্ছে। সে বুঝে পাচ্ছে না নিরব এতো কি ভাবছে?
এবার আশা এসে বলে, ভাবি! চল তোমাকে ভাইয়ার পাশে বসাই। আসো।
বলে প্রমিতিকে উঠে দাড়ানোর জন্য তাগদা দিল। প্রমিতি বাধ্য হয়ে উঠে দাড়ালো এবং আশার সাথে নিরব যে সোফায় বসে আছে, সেখানে গিয়ে দাড়ালো।
আশা নিরবকে বলল, ভাইয়া, একটু সরে বসো। ভাবিকে তোমার পাশে বসাব।
নিরব কিছু না বলে সরে বসল। আশা প্রমিতিকে নিরবের পাশে বসিয়ে দিল।
প্রমিতি মাথা নিচু করে বসে রইল। তার কেমন যেন লাগতে শুরু করল। হাত-পা কাপতে শুরু করল। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ আওয়াজটা বেড়ে গেল। হার্টবিট ও জোড়ে জোড়ে কম্পিত হতে লাগল।
এমন সময় লিনা এসে দাড়ালো। সেই সাথে বরকত ও৷ লিনা পাশের চেয়ারে বসে বলে, বরকত আমার আর প্রমিতির সুন্দর কয়েকটা ছবি তুলে দাও তো। বলে ফোন এগিয়ে দিল।
বরকত লিনা আর প্রমিতির কয়েকটা ছবি তুলে দিল। এরপর সবাই মিলে সেলফি তুলল।
লিনা বলে উঠে, বেগম আন্টি তো হুট করে বলল নিরবের বিয়ে। আমি প্রিপারেশন নেওয়ার একদম সুযোগ পাইনি। আগে জানলে তোমাদের জন্য পারিসে হানিমুনের ব্যবস্থা করতাম।
নিরব একথা শুনে বিষম খেয়ে বলে, আর শখ নাই প্যারিসে হানিমুনে যাওয়ার!
লিনা বলল, আই এম সর্যি। বাট আজকে জাস্ট প্রমিতির জন্য একটা গিফট এনেছি।
বলে ব্যাগ থেকে একটা ডায়মন্ড নেকলেস বের করে দিল। তা দেখে নিরব বলে উঠে, ইটস টু এক্সপেন্সিভ, লিনা।
লিনা হেসে বলে, কাম অন, নিরব। প্রমিতি আমার ছোট বোনের মতো। আমার ছোট বোনের বিয়েতে তো এটা সামান্য একটা উপহার।
তারপর প্রমিতিকে জোড় করে নেকলেসটা পড়িয়ে দিয়ে লিনা বলে উঠে,এটা আমার আর বরকতের তরফ থেকে প্রমিতির জন্য একটা উপহার।
বরকত আপত্তি করে বলে, না। আমি প্রমিতির জন্য আলাদা একটা গিফট এনেছি।
বলে প্রমিতির হাতে একটা প্যাকেট দিল।
প্রমিতি মিস্টি করে হেসে প্যাকেটটা খুলে দেখে একটা গোলাপী রংয়ের শাড়ি।
সে শাড়িটা নেড়ে-চেড়ে দেখে বলে, খুব সুন্দর তো শাড়িটা! আমার খুব পছন্দ হয়েছে। থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া।
বরকত হেসে বলে, যাক পছন্দ হইসে তাইলে। আমি ধন্য!
প্রমিতি একথা শুনে হেসে দেয়।
নিরব চমকে প্রমিতির দিকে তাকালো। তার হৃদয়ে রক্তক্ষরন হতে লাগল মেয়েটার হাসির আওয়াজ শুনে।
বরকত বলল, নিরব, তোর ই বউ হয়। এভাবে লুকায় দেখার কি আছে? একেবারে রুমে গিয়ে মন ভরে দেখিস, বন্ধু।
নিরব রাগান্বিত দৃষ্টিতে বরকতের দিকে তাকালো। বরকত শুকনো ঢোক গিলে একটা হাসি দিয়ে বলে, দোস, খেয়ে নে। রান্না-বান্না শেষ প্রায়। আমার তো ক্ষুদা লাগছে। রাতে ডিনার করি নি। এখন বারোটার বেশি আছে।
নিরব অনুভব করল, তার খুদা লাগে নি। কারন সে রাতেই হোটেলের ফুল প্লেট বিরিয়ানি খাইছে। এখন আর গলা দিয়ে খাবার নামবে না।
প্রমিতি বলে উঠে, ভাইয়া, আপনি খেয়ে নেন।
হ্যা।চল, লিনা। খেয়ে নিই। তোরাও আয় না।
নিরব দাতে দাত চেপে বলে, না রে। আমার খিদা নাই। পেট ভরা।
একথা শুনে লিনা আর বরকত দুইজন ই মিটমিটিয়ে হেসে উঠে।
তাদের হাসতে দেখে নিরব বিরক্ত হয়ে গেল।
আমরা ডিনার করছি।তোরা খা।
বরকত বলল, অল্প একটু খা আমাদের সাথে৷
না রে, পেট ভরা।
লিনা বলল, থাক, থাক জোড় করো না।
বরকত যে কি বুঝল কে জানে? সেও মিটমিট করে হেসে বলে, ঠিক আছে। চলো আমরা খেয়ে নিই।
এমন সময় আশার বাবা সালাম সাহেব (সুমি খালার হ্যাসবেন্ড) এসে বলে, তোমরা খেতে যাও।
বরকত বলল, হ্যা, আংকেল যাচ্ছি।
সালাম খালু বলল, প্রমিতি তো এখন আমার আরেকটা মেয়ে। আফটার ওল আমি ওর উকিল বাবা হয়ে গেলাম। হাহা।
প্রমিতি হালকা হাসি হাসল। নিরব জোড়পূর্বক হেসে বলে, খালু, আমরা বাসায় যাই। রাত তো অনেক হলো।
সালাম খালু চোখ থেকে চশমা খুলে বলে, হেই ইয়ং ম্যান, হাভ সাম পেশেন্ট। এতো তাড়াহুড়ো কিসের? আজকে তোমরা এখানে থাকবা। নিরব আর প্রমিতির সেকেন্ড বাসর রাত আমার বাসায় হবে। আর বরকত তোমরাও থেকে যাও রাত হয়ে গেছে।
বরকত বলল, আচ্ছা। আংকেল।
বরকত আর লিনা খেতে চলে গেল। ড্রয়িং রুম কিছু টা ফাকা হয়ে গেল। সবাই খেতে গেছে।
প্রমিতি নরম কন্ঠে বলে উঠে, আপনি কি আমাকে সত্যি ই লুকিয়ে বিয়ে করে রেখেছিলেন?
নিরব একথা শুনে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সে বলে উঠে, না,,,,আসলে,,,,
আপনার ফ্যামিলির কেউই তো আমাকে চেনে না। জানেই না আমি আপনার স্ত্রী। এতো বড় সত্য লুকিয়েছেন কেন?
আব,,,,,(কি বলবে ভেবে না পেয়ে নিরব উঠে দাড়ালো)
নিরব গমগমে গলায় বলে, এইসব কথা বাদ দাও। যা হওয়ার হয়ে গেছে।
বলে নিরব চলে গেল। আর প্রমিতি একাই বসে রইল ড্রয়িং রুমে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই আশা আর লিনা এসে প্রমিতিকে বাসর ঘরে বসিয়ে দিল।
আশা মজা করে বলে, ভাবি, ভাইয়া আজকে যা যা করবে সব আমাদের কে বলবা কিন্তু!
প্রমিতি আশার এমন কথায় বেশ লজ্জা পেল। সে মাথা নিচু করে ফেলে। তা দেখে লিনা শব্দ করে হেসে বলে।,লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। শোন প্রমিতি। স্বামীকে আজকে রাত থেকেই টাইট দিয়ে রাখবা। শাড়ির আচলে বেধে রাখতে হবে। বুঝেছো?
প্রমিতি মাথা ঝাকালো।
লিনা আর আশা একটা দুধের গ্লাস টেবিলে রেখে চলে গেল। প্রমিতি বিছানায় বসে নিরবের অপেক্ষা করতে লাগলো।
এদিকে নিরবকে ঘিরে ছোটোখাটো একটা ঝটলা পেকে গেছে। নিরবের আরো কয়েকজন কাজিন, আশা, বরকত আর লিনা মিলে তাকে রুমে ঢুকতে দিবে না।
নিরব বিরক্ত হয়ে গেল আর বলল, আশ্চর্য। রুমে ঢুকতে কেন টাকা দিব? পাগল নাকি আমি!
আশা উচু গলায় বলে, না না দিতে হবে। টাকা না দিয়ে বউয়ের কাছে যেতে পারবে না।
নিরব এক প্রকার বাধ্য হয়েই পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে দেখে সাড়ে তিনশ টাকা আছে। কালকে থেকে তো বাসায় যায় নি। তার উপর হাসপাতালের বিল, হোটেলের বিল দিতে গিয়ে সব ক্যাশ শেষ হয়ে গেছে।
নিরব সাড়ে তিন শ টাকা বের করে আশার হাতে দিয়ে বলে, তুই আমার কাজিন গ্রুপে সবার ছোট। নে ছোট বোন। কিছু কিনে খাস এই টাকায়।
আশা টাকার পরিমান দেখে মুখ কালো করে বলে, মাত্র তিনশ টাকা।
সাড়ে তিনশ!
ওই একই। এতো কম কেন ভাইয়া? তোমার না গুলশানে ছয়তলা বিল্ডিং আছে।
নিরব ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, এর বেশি দিতে পারব না। বলে সে রুমের ভেতর ঢুকে পড়ল।
প্রমিতিকে বিছানায় বসে থাকতে দেখে নিরবের খুব অদ্ভুত অনুভূতি জাগ্রত হলো। আচ্ছা সে কি এখন সিরিয়ালের নায়কের মতো প্রমিতিকে গিয়ে বলবে, এই বিয়ে মানি না। যাও ফ্লোরে গিয়ে ঘুমাও। তাহলে তার আর বাসর করার স্বপ্ন স্বপ্ন ই থেকে যাবে। নিরব মনে মনে ভাবতে লাগলো, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 12
Arishan Nur
নিরব রুমে ঢুকেই গেট লাগিয়ে দিল। তার এখন নার্ভাস লাগছে। মনের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। নিরব নিজেকে নিজেই গালি দিয়ে বলে, এইসব মেয়েদের মতো বাসর রাতে ভয় পাচ্ছিস কেন হাদারাম!
নিরব গলা খাকিয়ে একটা শুকনো কাশি দেয়। প্রমিতি বিছানায় বসা ছিল। সে নিরবের কন্ঠ শুনে উঠে দাড়ালো এবং নিরবের কাছে গিয়ে পা ছুয়ে সালাম করতে গেলে নিরব তাকে বাধা দিয়ে বলে, আরে, আরে এসব কি করছো? ইসলামে মাথা ঝুকে সালাম করার বিধান নাই। আল্লাহ ছাড়া কারো নত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে। আর কোন দিন পা ছুয়ে সালাম করবে না। ক্লিয়ার?
প্রমিতি মাথা নেড়ে বলে, আচ্ছা।
নিরব তার শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে আলমারির কাছে গেল। পরমূহুর্তে ই মনে পড়ল,এটা তার বাসা না। সে চোখ চারপাশে বুলালো। সোফার উপর দুইটা প্যাকেট৷
সে সোফার সামনে গিয়ে দেখল, একটা প্যাকেটে বরকতের দেওয়া শাড়ি আর অপর প্যাকেটে একটা গেঞ্জি। সে গেঞ্জির প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বাথরুমে গেল।
কিছুক্ষন পর নিরব চেঞ্জ করে এসে দেখে প্রমিতি এখনো ঠায় দাঁড়িয়েই আছে।
তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিরব ভ্রু কুচকে বলে উঠে, এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন? নাকি তুমি ঘোড়ার মতো দাঁড়িয়েই ঘুমাও?
প্রমিতি কিছুটা চমকে উঠে বলে, আমি কি শাড়িটা বদলে আসব?
নিরব কঠিন গলায় বলে, না। এটা পড়েই আজকে রাত পার করবা।
নিরবের কন্ঠে কঠিনতা দেখে প্রমিতি ঘাবড়ে গিয়ে বলে, আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?
নিরব এবার প্রমিতির কাছে গিয়ে দাড়ালো এবং কটমট করে বলে, তোমার কি সত্যিই কিছু মনে নেই?
প্রমিতি ভয় জড়ানো কন্ঠে বলে, না।
নিরব প্রমিতির দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে, সত্যিই কিছু মনে নেই? নাকি নাটক করছো?
এতো শক্ত করে প্রমিতির হাত ধরে আছে নিরব যে ব্যথায় প্রমিতি কেদে দিল।
নিরব প্রমিতিকে কাদতে দেখে অবাক হয়ে গেল। কান্না করলে একটা মেয়েকে এতো অপরুপ কিভাবে লাগতে পারে?
নিরব মুগ্ধ নয়নে প্রমিতির দিকে তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বলে, তোমাকে কান্না করলে খুবই সুন্দর লাগে। খুব খুব রূপবতী লাগে। মনে হয় তোমার চেহারায় কেউ এক বালতি মায়া উপচে ফেলে দিয়েছে ! এই মায়াবী চেহারা দেখার জন্য হলেও তোমাকে দিনে একবার হলেও কাদাতে হবে।
প্রমিতি কান্না করতে করতে নাক টেনে বলে, আমার সত্যিই কিছু মনে নেই।
নিরব তখনও প্রমিতিকে শক্ত করে ধরে ছিল। এবার আরো শক্ত করে তার হাত ধরে বলে শান্ত স্বরে বলে, তাহলে আর কি করার? পাস্ট ইস পাস্ট। অতীতে যা হয়েছে তা তো তোমার মনে নেই। তাহলে বর্তমান নিয়েই থাকো।আজকে থেকে আমার সাথে তোমার নতুন করে পথচলা শুরু! তোমার কোন সমস্যা আছে এতে?
প্রমিতি লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে গেল। আর আস্তে করে বলে, না।
গুড।
নিরব যেই না প্রমিতির অতি নিকটে আসতে ধরবে ওমনি হুট করে ভীষণ শব্দ করে এলার্ম বেজে উঠল।
নিরব ধড়ফড়িয়ে উঠে। সেই সাথে প্রমিতিও।
নিরব বলল, এলার্ম কে অন করে রাখছে তাও এই টাইমে?
জানি না তো।
এলার্ম বেজেই যাচ্ছে। নিরব আর প্রমিতি মিলে এলার্ম ক্লক খুজতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষন পর প্রমিতি বেডের নিচ থেকে এলার্ম ক্লক বের করে এনে নিরবের হাতে দেয়৷
নিরব এলার্ম অফ করতেই বাইরে থেকে হাসাহাসির শব্দ শুনল নিরব-প্রমিতি।
নিরব বিরক্র হলো।
প্রমিতি বলে উঠে, ওরা বোধহয় এলার্ম অন করে বিছানার নিচে রেখে দিয়েছে।
সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে। বেয়াদবের দল গুলো।
এমন সময় নিরবের ফোনে কল আসল। সে ফোন বের করে দেখে আশা ম্যাসেঞ্জারে কল দিচ্ছে। তাও ভিডিও কল।
নিরব অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন ধরল। ভিডিও অন করে দিল।
নিরব দেখল খালু সাহেবরা বাদে সবাই আশার ফোনের ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে আছে।
নিরবকে দেখে তার দাদি বলে উঠে, কি রে নিরব! বিরক্ত করলাম নাকি তোকে?
নিরব হোহো করে হেসে বলে, একদম ই না দাদিজান। এক কাজ করেন, আপনারা এই রুমে চলে আসেন। সবাই মিলে একসাথে রাতে থাকি। মুভি দেখি। কি বলেন? (দাতে দাত চেপে)
আশা বলল, হেই ব্রো। রেগে যাচ্ছো কেন?
এবার বরকত বলল, আরে আশা বুঝবা ন। তোমার ভাইয়া কেন রেগে যাচ্ছে? তুমি ছোট আছো না এখনো। তাই বুঝো না। আজকে তোমার ভাইয়ার হ্যাপি বাসর রাত। আর আমরা ডিস্টার্ব করছি, তাই রেগে যাচ্ছে।
নিরব দাতে দাত চেপে ফোনের স্ক্রিনের সামনে বলে উঠে, হো। তুই তো এই ব্যাপারে এক্সপার্ট।
বরকতের মুখটা কালো হয়ে গেল। সে আড় চোখে লিনার দিকে তাকালো। লিনা তার ফোন চালাতে ব্যস্ত আছে।
বরকত দৃষ্টি সরিয়ে নিল এবং হেসে বলে, বলছে তোকে।
এমন সময় সুমি খালা বলে উঠে, নিরব ও কম না। আজকে কি প্রথম নাকি! বেহায়াটা বিয়ে করে তো চুপ চুপ করে সবই করছে। বাসর করাও শেষ ওর। নিরব যদি আমার ছেলে হতো ওরে আমি বাসার সামনে কান ধরে রেখে দিতাম। আপা নরম মনের মানুষ দেখে, মাফ করে দিসে। এই নিরব তুই গেট খুল। আজকে তোর বাসর হবে না। এটা তোর শাস্তি, লুকায় বিয়ে করার শাস্তি। আজকে আমরা সবাই একসাথে মুভি দেখব। গেট খুল বেয়াদব।(ঝাড়ি মেরে)
নিরব ধমক খেয়ে প্রমিতির দিকে তাকালো। প্রমিতি মিটমিট করে হাসছে। প্রমিতিকে হাসতে দেখে নিরবের গা জ্বলে উঠে। তখনি গেটে নক করা শুরু হয়।
প্রমিতি রিনরিনে আওয়াজে বলে, গেট খুলে দিব?
হ্যা। যাও। খুলে দাও। নাহলে এরা গেট ভাংচুর করবে। পরে আমার থেকেই ক্ষতিপূরণ নিবে। যাও দ্রুত গেট খুলো।
প্রমিতি গেট খুলতেই নিরবের কাজিনরা খালা, দাদি, মা, এবং বরকত-লিনা ভেতরে ঢুকল। সবাইকে সুমি খালা লিড দিচ্ছে।
খালার বাসায় যে মহিলা সাহায্যকারী উনি এসে ফ্লোরে একটা তোষক বিছিয়ে দিল।
তা দেখে নিরব তার বাম চোখ চুলকিয়ে মনে মনে বলে উঠে, R.I.P my basor night! রেস্ট ইন পিস৷
আশা টিভি অন করে ফোনের সাথে কানেক্ট করে দিল এবং ইউটিউবে কনজুরিং হরর মুভি অন করল।
তারপর আর কি? মুভি শুরু হলো। প্রমিতিকে বিছানায় বসানো হলো। আর নিরবকে ফ্লোরে। তাদের মাঝে বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রাখা হলো। সব কিছু ই সুমি খালার তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। বিছানায় নিরবের মা আর তার দুই খালা আর দাদি বসল।
নিরবের দাদি বেগমকে মুভি চলাকালীন এক সময়ে ফিসফিস করে বলে,এভাবে হুট করে ছেলের বিয়ে দিয়ে দিলা, বউমা? মেয়েটা যদি ভালো না হয়?
বেগম মুচকি হেসে বলে, আর কিছু কি করার ছিল? নিরব তো আগেই বিয়ে করে ফেলেছে।এখন যদি আমরা মেয়েটাকে না মেনে নিতাম, মেয়েটা তো সমাজে মুখ দেখাতে পারত না। তাই না, মা?
তা ঠিক। সুমি নাকি ওদেরকে একসাথে ধরেছে একটা হোটেল রুমে?
বেগম হতাশ হয়ে গেল এবং বলল, হুম।
মেয়েটা কি ভালো ঘরের মেয়ে হবে? এভাবে একা একটা ছেলের সাথে,,,,,
বেগম তার শ্বাশুড়িকে থামিয়ে দিয়ে বলে, যদি এমনটাই হয়, তাহলে আমার ছেলের ও চরিত্র খারাপ আর প্রমিতি তো বলেছে সে নিরবের স্ত্রী। এখন এখানে আমাদের কিছু করার নেই মা। মেয়েটা যদি খারাপ ও হয় তবে নিরব কে পস্তাতে হবে। আমার মনে হয়, মেয়েটা ভালোই হবে। ভদ্রই মনে হচ্ছে।
নিরবের দাদি বলল, হ্যা, খুব মিস্টি দেখতে মেয়েটা।
নিরবের মায়েরা তিন বোন। নিরবের মা হলো সবার বড়। তারপর বরকতের মা সীমা খালা। সীমার খালার তিন সন্তান। বরকত সবার বড় আর দুইজন মেয়ে। একজন কলেজে পড়ে আর একজন মেডিকেলে। সুমি খালা তার দুই বোনের চেয়ে বয়সে একটু ছোট। ওনার মেয়ে আশা এবার ক্লাস এইটে পড়ে। নিরব আর বরকত সেইম এইজ।
টিভিতে মুভি চলছে। নিরব মুখ গোমড়া করে ফ্লোরে বসে আছে। বরকত লিনা এক সাইডে বসে বসে মুভি দেখছে। আধ ঘন্টা যেতেই সুমি খালা অনেক গুলো পপকর্ণ, চিপসের প্যাকেট এনে সবার হাতে হাতে দিল।
সুমি খালা প্রথমে প্রমিতির হাতে চিপসের প্যাকেট ধরিয়ে দিল। প্রমিতি প্রথমে নিতে চাচ্ছিল না কিন্তু খালা শ্বাশুড়ির জোড়াজুড়ি তে নিল। আজকে তার খুব ভালো লাগছে। নিরবের ফ্যামিলির সবাই খুব ভালো। আচরণ ও অমায়িক। সবাইকে খুব সাপোর্টিভ আর আধুনিক চিন্তাভাবনার মনে হচ্ছে। নিরবের মাকে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তার। প্রমিতি আড় চোখে নিরবের দিকে তাকালো। ছেলেটা টিভি দেখছে। প্রমিতির কেন যেন লজ্জা লেগে উঠল। সে মুচকি হেসে টিভির দিকে চোখ দিল।
নিরবের হাতেও দিলেন। নিরব দেখল, একটা পপকর্ণ আর সান চিপস। সে সান চিপস টা খুলে খেতে লাগলো।
সুমি খালা নিরবের পাশে বসে বলে, কি রে নিরব? মন খারাপ করলি নাকি?
নিরব খেতে খেতে উত্তর দেয়, নাহ।
করছিস তুই মন খারাপ। আমার বাসর রাত ও তুই এভাবে নস্ট করছিলি, মনে আছে?
নিরব ভ্রু কুচকে বলে, আমি আবার কি করেছি?
খালা ব্যঙ্গ করে বলে, কি করিস নি তুই? ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে করতে বলিস নাই আমি খালার সাথে ঘুমাব? এখন তো মনে থাকবে না৷
নিরব মুখ কালো করেই বলে, তোমার মতো একটা মায়ের বোন থাকলেই হলো, তার আর শক্রুর দরকার নাই।
খালা বিজয়ের হাসি হেসে উঠে গেলেন আর আশাকে বলতে লাগলো, এই আরো একটু জোড়ে দে না। কিছু ই তো শুনি না। সাদা ফ্রক পড়া মেয়েটি কি বলল রে? সাউন্ড বাড়া।
নিরব ঘাড় ঘুরালো এবং প্রমিতিকে দেখে নিল। প্রমিতি তার মায়ের সাথে কথা বলছে আর মিস্টি করে হাসছে। নিরব দেখলো, সবাই খুব ইনজয় করছে। সে কিছুটা খুশি হয়ে মনে মনে বলে, যতোই পাগল হোক না কেন আর যতোই অতিষ্ঠ করুক আমার জীবন, তবুও আই লাভ মাই ফ্যামিলি। ওলসো লাভ সুমি খালা!
নিরব এবার টিভির পর্দার দিকে তাকালো, হুট করে একটা ভুতের সিন চোখের সামনে আসল। সে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল এবং বিরবির করে বলে, বাসর রাতে ফ্যামিলির সাথে কনজরিং মুভি দেখছি। ভালোই তো।
আচ্ছা, আমার ম্যারিড লাইফ কি তবে কনজরিং মুভিটার সাদা জামা পড়া ভুতটার মতো ভয়ংকর হবে? হু নোস?
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 13
Arishan Nur
এবার তো সবাই যে যার রুমে যাও? আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাব। মিনমিনে সুরে কথাটা বলল নিরব।
সুমি খালা মুচকি হেসে বলে, হ্যা,হ্যা তুই তো চাসই আমরা যেন চলে যাই। আর তুই তোর বউয়ের সাথে সময় কাটাতে পারিস। বুঝি তো সব৷
নিরব মুখ বাকিয়ে বলে, রাত শেষ। একটু পর ফজরের আযান দিবে। আর মুভিও তো শেষ হলো, তাই না? আর কি কিছু বাকি আছে?
সুমি খালা বলল, তুই আর বরকত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আয়। আমরা মেয়েরা আজকে সবাই একসাথে নামাজ পড়ে যে যার রুমে ঘুমাতে যাব। তারপর থাকিস তুই তোর বউ নিয়ে।
নিরব বলল, বাসায়ই নামাজ পড়ি। মসজিদে,,,,,,,,
সুমি খালা হুংকার দিয়ে বলে, না, তোরা মসজিদে যাবি।
বরকত বলল, ঠিক আছে, আন্টি মনি। আমি নিরবকে নিয়ে যাব।
ঠিক সেই সময় আযানের ধ্বনি ভেসে উঠে। কিছু ক্ষন পর বরকত আর নিরব নামাজ পড়তে চলে যায়।
আর মেয়েরা বাসায়ই পড়ে নেয়। তারপর যে যার রুমে চলে আসে।
সবাই চলে যাওয়ায় প্রমিতির রুমটা ফাকা হয়ে গেল। প্রমিতি বিছানা গুছিয়ে, বিছানায় বসে পড়ে। সে অপেক্ষা করছে নিরবের আসার।
বেশকিছু ক্ষন পর নিরব আসল। রুমে ঢুকেই দেখে প্রমিতি তার জন্য অপেক্ষা করছে।
সে প্রমিতিকে দেখে মুচকি হাসল। তারপর বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসল।
সে বাথরুমে বসে বসে ভাবতে লাগলো, এখনো একটু হলেও সময় আছে। অল্প কিছুক্ষনের জন্য হলেও বাসর রাতের ভাইভ পাওয়া যাবে৷
এইসব ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিল নিরব। সে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিল।
তারপর চুল ঠিক করে বাথরুম থেকে বের হয় নিরব। সে দেখতে পেল প্রমিতি এখনো সেইভাবেই বসে আছে।
নিরব প্রমিতির কাছে গিয়ে বসে পড়ে বলে, হ্যা বলছিলাম কি,,,,,
প্রমিতি ডাগর ডাগর চোখে নিরবের দিকে তাকালো। তা দেখে নিরব চমকে উঠল। মেয়েটার চোখে এক অদ্ভুত ধরনের নেশা আছে বুঝি!
নিরব এক ধ্যানে প্রমিতির দিকে তাকিয়ে থেকে প্রায় ফিসফিস করে বলে উঠে, কালকে সবাই ভেতরে ঢোকার আগে আমাদের মধ্যে কিছু একটা হতে যাচ্ছিল,,,,,,,চল সেখান থেকে আবার শুরু করি।
প্রমিতি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
তা দেখে নিরব বেশ খুশি হয়। সে আবারও বলল, আমার সাথে বাকি জীবনটা পায়ে পা মিলিয়ে চলতে রাজী আছো?
প্রমিতি মুখে কিছু বলল না, কিন্তু মাথা নাড়িয়ে সায় দিল যে সে নিরবের সাথে আগামী জীবনের পথচলায় পাশে থাকতে রাজী আছে।
তা দেখে নিরব প্রমিতি নরম হাতটা নিজের হাতের মধ্যে ঢুকিয়ে নিল।
নিরবের স্পর্শ পেতেই প্রমিতির মধ্যে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল। তার মধ্যে কেমন যেন এক কম্পন সৃষ্টি হতে লাগলো। হুট করে হাত-পা কাপতে লাগল প্রমিতির।
তা দেখে নিরব ভ্রু কুচকে বলে উঠে, তোমার কি কাপা-কাপির রোগ আছে নাকি?
প্রমিতি চোখ তুলে নিরবের দিকে তাকালো, তারপর ছোট্ট করে বলে, উহু।
তাহলে তোমার হাত কেন কাপছে?
কই কাপছে?
এই যে কাপছে।
নাহ!
নিরব প্রমিতির হাত আরো শক্ত করে ধরে বলে, আই ক্যান ফিল!
নিরবের বলা কথাটা প্রমিতির কানে গিয়ে বাজলো। বাক্যটি যেন প্রতিধ্বনি হয়ে বারবার তার কানে বাজতে লাগলো।
এবার নিরব তার আরেকটা হাত প্রমিতির ডান গালে রাখল।
গালে নিরবের হাতের ছোয়া পেতেই প্রমিতি শিউরে ওঠে এবং দ্রুত চোখ বুজে ফেলে।
প্রমিতির ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যেতে লাগলো। কেমন যেন লাগতে শুরু করেছে তার। অস্থির লাগছে। মনে হচ্ছে দৌড়ে কোথায় পালিয়ে গেলে বেচে যাবে সে। প্রমিতির নিশ্বাস ভারী হতে লাগলো।
নিরব প্রমিতির মুখের উপর ফু দিল। এতে যেন চারশ চল্লিশ ভোল্টের কারেন্ট প্রবাহিত হলো প্রমিতির দেহে। প্রমিতি তার হাত বিছানার চাদরের সাথে খামচে ধরে।
নিরব আস্তে আস্তে এগুতে লাগে প্রমিতির দিকে। প্রমিতির মাঝে কোন নড়চড় নেই। সে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে নিরব তার অতি নিকটে। সে আবারো চোখ বুজে ফেলে।
নিরব প্রমিতিকে স্ক্যানার মেশিন যেভাবে কোন বস্তুকে খুটে খুটে স্ক্যান করে ঠিক সেই ভাবে দেখছে৷
প্রমিতির গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট দুটি কাপছে। বেশ জোড়েই কাপছে ঠোঁট জোড়া। নিরব তা দেখতে পাচ্ছে। আবার হাতটাও কাপছে।
নিরব মনে মনে ভাবতে লাগলো, মেয়েটার কি মৃগ্মী বেরাম আছে নাকি?
সে প্রমিতির ঠোঁটের উপর হাত রাখল। তারপর যেই না প্রমিতির দিকে এগাবে নিরব ওমনি প্রমিতি কাপা গলায় বলে উঠে, আমার খুদা পেয়েছে।
নিরব তো আকাশ থেকে পড়ল। এই রকম সময় কেউ যে এমন কথা বলতে পারে তা জানা ছিল না নিরবের।
নিরব অবাক হয়ে গেল এবং বলল, কি বললে?
প্রমিতি কিউট করে বলে, আমার না খুদা লেগেছে খুব। খাওয়ার মতো কিছু আনতে পারবে আমার জন্য?
বাসর ভোরে নতুন বউয়ের মুখে যে এমন কিছু শুনবে তা মোটেও আশা করে নি নিরব।
সে অস্ফুট স্বরে বলে, সাবাশ! এই না হলো নিরব চৌধুরির বউ!
নিরব বলল, খুব বেশি খুদা লেগেছে?
প্রমিতি ছোট করে বলে, হুম।
খেতেই হবে?
হ্যা।
আচ্ছা, ওয়েট দেখি কি আনা যায় তোমার জন্য।
বল্র নিরব রুমের বাইরে গিয়ে রান্নাঘরে গেল। রান্নাঘরে তেমন কিছু ই নেই। খালার বাসায় ফ্রিজ যে কই তা জানে না নিরব৷
নিরব দেখল একটা মি.নুডুলসের প্যাকেট আছে। সে উপায় না পেয়ে নুডুলস রান্না করতে লাগলো।দ্রুত কিছু খাওয়াতে হবে প্রমিতিকে। তাই রান্না করতে এক বিন্দু ভাবলো না নিরব। খাওয়া -দাওয়ার চক্করে তার যেন বাসর ভোরটাও মাটি না হয় এমনটাই দোয়া করছিল নিরব।
রান্না করে গরম গরম নুডুলস বাটিতে সার্ভ করে রুমের দিকে যেতে লাগলো।
রুমে যেতেই তার চোখ কপালে। কারন প্রমিতি বিছানায় শুয়ে পড়েছে। শুধু তাই না বরং গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে৷
তা দেখে নিরব মনে মনে কষ্ট পেল। সে গিয়ে প্রমিতিকে ডাকতে লাগে কিন্তু প্রমিতির কোন সাড়া পেলনা।
তাই নিরব হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়ে ধপ করে। এরপর বলতে লাগলো, বাহ! এতো সুন্দর বাসর রাত টা কাটলো আমার! আজীবন মনে থাকবে। প্রথমে কনজরিং দেন মি.নুডুলস। ভালোই।
তারপর আর কি? নিজের বানানো নুডুলস নিরব নিজেই খেয়ে-দেয়ে প্রমিতির পাশে শুয়ে পড়ল। নিরবের প্রমিতির উপর খুব মেজাজ গরম হচ্ছে। কি দরকার ছিল এই সময়ে ঘুমানোর? এক রাতে না ঘুমালে কি তার হ্যালুয়েশন হত নাকি? আজব! সবাই মিলে তার সাধের বাসর রাতটা এভাবে ত্যাজ পাতা বানিয়ে দিল।
বরকতের ঘুম ভাংলো।সে চোখ খুলে দেখে লিনা তার পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। লিনাকে দেখে বরকত মুচকি হাসল। এখন ঘড়িতে সোয়া দশটা বাজে।
বরকত দেখল লিনা গভীর ঘুমে আছে। তাই এই ফাকে বরকত লিনার গালে টুপ করে একটা চুমু বসিয়ে দিল।
এবং আস্তে আস্তে বলে উঠে, আই লাভ ইউ! কবে যে তুমি বুঝবা আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি! যতো দিন তুমি আমাকে নিজ থেকে কাছের আসার পারমিশন না দিচ্ছো, আমি অধিকার খাটাব না। আফটার অল, আই লাভ ইউ সো মাচ!
এরপর বরকত উঠে ফ্রেস হতে গেল৷ ফ্রেস হয়ে লিনাকে ডাকতে লাগে।
লিনা ঘুম ঘুম চোখে বলে উঠে, কেন ডিস্টার্ব করছো?
উঠবা না?
নাহ।
আরো ঘুমাবে?
লিনা বলে উঠে, হু।
বেলা তো অনেক হলো। উঠতে হবে না।
লিনা বলল, কয়টা বাজে?
দশটার বেশি।
লিনা ঝটপট উঠে বসল এবং বরকতকে ঝাড়ি মেরে বলে, এতো দেরিতে ডাকলা তুমি আমাকে? আগে কেন ডাকো নি?
আরে আমিও ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। কালকে তো ঘুম হয় নি না তাই,,,,,,,
লিনা দ্রুত উঠে বাথরুমে গেল।
এদিকে এগারোটার দিকে আশা নিরব দের রুমে গিয়ে গেট ধাক্কাতে লাগে।
গেটে নক করার শব্দে প্রমিতির ঘুম ভাংলো। সে উঠে বসে দেখে নিরব তার পাশে ঘুমাচ্ছে।
নিরবকে দেখতেই প্রমিতির লজ্জা পেয়ে গেল।
দে দ্রুত পায়ে উঠে গেট খুলে দিল।
গেট খুলতেই আশা ঢুকে পড়ে রুমে আর বলে,সেকি! ভাইয়া ঘুমাচ্ছে! আই থট তোমরা রোম্যান্স করছিলে।
একথা শুনে প্রমিতি আবারো এক দফা লজ্জা পেল। এবং বলল , এমন কিছু না।
হুম। হুম। বুঝতে পেরেছি।আচ্ছা চল। আম্মু ডাকছে তোমাকে।
আশা প্রমিতিকে নিয়ে তার আম্মু মানে সুমি খালার কাছে গেল।
খালা প্রমিতিকে দেখে বলে, গোসল করো না?
প্রমিতি মৃদ্র কন্ঠে বলে,না। খালা।
যাও গোসল করে তারপর আসো।
আচ্ছা, খালা।
বলে প্রমিতি ফের রুমে এলো। তখনো নিরব ঘুমাচ্ছে।
প্রমিতি গোসল সেরে বরকতের দেওয়া শাড়ি টা পড়ে বের হলো এবং আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল মুছতে লাগল।
আজকেও ঠিক এই সময় নিরবের ঘুম ভাংলো এবং সে চোখ খুলতেই প্রমিতিকে দেখতে পেল৷
নিরব হালকা হেসে প্রমিতির দিকে এগুলো এবং তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে তার কানের কাছে মুখ এনে চুপিচুপি বলে, কালকে তুমি কেন ঘুমিয়ে পড়েছিলে?
প্রমিতি হালকা কেপে উঠে।
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 14
Arishan Nur
প্রমিতি যেন বরফের মতো জমে গেল। তার নিশ্বাস আটকে আসছে। নিরব প্রমিতির আরো কাছে গেল। এবং প্রমিতিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। প্রমিতি লজ্জায় লাল হয়ে মাথাটা টুপ করে নিচু করে ফেলে।
তা দেখে নিরবের মনের মধ্যে ছোট-খাটো ভূমিকম্প হয়ে গেল। সে মুগ্ধ নয়নে প্রমিতির পানে চেয়ে রইল। ইশ! লজ্জা পেলেও বুঝি মেয়েদেরকে এতো বেশি সুন্দর লাগে?
এই মূহুর্তে নিরবের কাছে প্রমিতিকে খুব আপন লাগছে। অথচ পড়শুদিনের আগে এই মেয়েটাকে সে চিনত পর্যন্ত না। আর আজকে নাকি তার বউ হয়ে গেল! কি অদ্ভুত!
নিরব প্রমিতিকে মন ভরে দেখছে এবং চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।
হুট করে নিরব প্রমিতির দিকে অগ্রসর হতে লাগলো, এবং নিরব প্রমিতির কোমড় চেপে ধরল। প্রমিতি আবারো কেপে উঠে।
নিরব প্রমিতির মাথাটা জোড় করে উচু করায়৷
প্রমিতির লজ্জায় নিরবের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না।
নিরব আস্তে আস্তে প্রমিতির দিকে এগিয়ে যেই না প্রমিতির ঠোঁট ছোয়াবে ওমনি প্রমিতি নিরবের মুখের উপর হাঁচ্চু বলে একটা হাঁচি দিল।
তারপর প্রমিতি নাক টেনে বলে উঠে, সর্যি! সর্যি! আসলে এতো সকালে গোসল করার জন্য ঠান্ডা লেগে গেছে।
নিরব মুখটা কালো করে বলে, সর্দি ও তো লেগেছে?
প্রমিতি নাক টানতে টানতে বলে, হুম।
এতো সকালে কেন গোসল করতে গেলে?
সুমি খালা বলেছিল তাই।
নিরব মনে মনে বলে, খালামনি আপনার সমস্যাটা কি? কেন আমার পিছনে লেগে আছে? ধ্যাত! ভালোই লাগেনা।
বলে নিরব গটগট করে বাইরে বেরিয়ে গেল।
প্রমিতি অবাক হয়ে নিরবের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। সে বুঝতে পারছে না যে নিরব রেগে গেল কিনা?
একটু পর প্রমিতিও নিরবের পিছু পিছু বাইরে বেরিয়ে দেখে নিরবের নাস্তা খাওয়া ওলমোস্ট শেষ।
তাকে দেখে বেগম বলে উঠে, বউমা, তুমি বসে পড়ো। একসাথে নাস্তা খাও।
প্রমিতি হালকা হেসে নিরবের পাশের চেয়ারে বসে পড়ল।
কিছুক্ষন পর লিনা আর বরকত ও চলে এলো।
সবাই একসাথে নাস্তা করতে লাগলো।
নিরব খাওয়ার মাঝে বলে উঠে, আমাকে অফিস যেতে হবে। সো এখনি রওনা হবো।
সুমি খালা তা শুনে বলে৷ সেকি! বিয়ের পরের দিন তুই অফিস যাবি? একদিন না গেলে কি হবে? যাস না আজকে।
নিরব বিরক্তি নিয়ে মনে মনে বলে, থেকেই বা লাভ কি? আপনি তো খুব বউয়ের সাথে একা কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে দিবেন। খুব ভালো করেই জানা আছে, কিছুক্ষন পর আবার দল-বল নিয়ে হাজির হয়ে মুভি দেখতে বসবেন। যে মহিলা বাসররাতে একা থাকতে দেয় নি, সে কিনা দিনের বেলা থাকতে দিবে, যতোসব আজাইরা ঢং মারতেসে এখন। কিন্তু মুখে বলল, আর্জেন্ট একটা কাজ আছে।
লিনা বলে উঠে, আমাকেও যেতে হবে। মিটিং আছে।
বরকত বলল, আমারো ভার্সিটিতে ক্লাস আছে। লিনা তোমাকে আমি ড্রপ করে দিব।
লিনা খেতে খেতে বলে, ওকে।
কিছুক্ষনের মধ্যে বরকত-লিনা আর নিরব বেরিয়ে গেল।
নিরব একবারো প্রমিতির সাথে কথা বলে নি। এতে কিছুটা মন খারাপ হয় প্রমিতির। ছেলেটার প্রতি একদিনেই দুর্বল হয়ে পড়েছে প্রমিতি । নিরব তার সাথে কথা না বলায় প্রমিতির এখন কান্না করতে মন চাচ্ছে।
প্রমিতিরা দুপুরের পরপর নিরবের বাসায় চলে আসে।
বেগম প্রমিতিকে নিজের বাসায় ঢুকিয়ে বলে, আজকে থেকে আমার ছেলেটার দায়িত্ব তোমার সেই সাথে এই বাসার দায়িত্বটাও তোমার কাধে দিয়ে দিলাম। আজকে থেকে আমি আর মা রিটায়ার্ডমেন্টে চলে গেলাম। বলে এক গাল হাসল।
প্রমিতি হালকা হেসে চারপাশে তাকালো। চারিপাশে আভিজাত্যর আভাস। টিভিতে যেরকম বাসা-বাড়ি দেখায় ঠিক সেই রকমভাবেই সাজানো ঘরটা। ভেলভেটের সোফা। সোফার সামনে বড় টিভি। ওয়ালপেইন্ট করা।
বেগম প্রমিতিকে নিরবের রুমে নিয়ে গেল। এবং বলল।,আজ থেকে এটা তোমার রুম।
প্রমিতি হেসে দিল আর বলল, আপনি অনেক ভালো মনের মানুষ , আন্টি।
বেগম ভ্রু কুচকে বলে, আন্টি কাকে বললে? আমি তোমার মা হই। মা বলে ডাকবে।
একথা শুনে প্রমিতি আবেগী হয়ে বেগমকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিল।
তা দেখে বেগম বিচলিত হয়ে গেল এবং বলল কি হয়েছে, মা কাদছো কেন? কেউ কিছু বলেছে?
প্রমিতি নাক টেনে বলে, নাহ। আসলে আপনার কাছ থেকে যে এতো ভালোবাসা পাব তা কল্পনা ও করতে পারিনি।
বেগম প্রমিতির মাথায় হাত রেখে বলে, পাগল মেয়ে কোথাকার। একি! তোমার তো ঠান্ডা লেগে গেছে।
প্রমিতি হালকা স্বরে বলে।,হু।
আচ্ছাব,তুমি রেস্ট নাও। আমি মেডিসিন পাঠিয়ে দিচ্ছি।
জি ঠিক আছে।
বেগম প্রমিতিকে নিরবের রুমে রেখে চলে গেল।
প্রমিতি বেগম যাওয়ার পর নিরবের রুমটা দেখতে লাগল। নিরবের রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো। একটা দেয়াল জুড়ে বিশাল বড় ফ্রেমে নিরবের ছবি বাধানো। প্রমিতির চোখ আটকে গেল নিরবের ছবিটার দিকে। সত্যি মনোমুগ্ধকর একটা ছবি। প্রমিতিকে যে বিষয়টা টানছে তাহলো নিরবের মুচকি হাসি!
হাসির আকার খুব বেশি না। হালকা হাসি ঝুলে আছে মুখে। কিন্তু প্রমিতির কাছে মনে হচ্ছে, নিরবের এই হাসির মতো নিখুত হাসি দুনিয়া তে আর একটাও নেই।
আচ্ছা, প্রমিতি কি এই ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেল নাকি?
এমন উদ্ভট চিন্তা মাথায় আসতেই প্রমিতি আনমনে হেসে উঠে। আর শাড়ি আচল হাতের সাথে প্যাচাতে লাগে।
কোন কিছু করার না থাকলে প্রমিতি ওড়না দিয়ে এভাবে খেলা শুরু করে। আজকে ওড়না নেই তাই শাড়ির আচল দিয়েই কাজ চালাচ্ছে সে।
কিছুক্ষন পর বেগম প্রমিতিকে মেডিসিন দিয়ে গেল। প্রমিতি তা খেয়ে নিল এবং রেস্ট নেওয়ার জন্য বিছানায় শুয়ে পড়ল।
★★★
বরকত টিচারস রুমে বসে আছে। নিরব কিছুক্ষন আগে ফোন দিয়ে ভার্সিটিতেই থাকতে বলেছে। সে নাকি বরকতের সাথে কথা বলবে। বরকত জানে আজকে তার অবস্থা কাহিল। কারন নিরব তো তাকে ছাড়বে না। ধোলাই তো খাবেই।
বরকত এসব ভাবতে ভাবতেই পিপাসা পেয়ে গেল তার। সে সামনে থাকা গ্লাসটা থেকে পানি খেয়ে নিল আর মনে মনে আল্লাহকে স্মরন করতে লাগলো।
কিছুক্ষন পর সত্যি নিরব তার রুমে আসল। বরকত তাকে দেখে জোড়পূর্বক হেসে বলে, কেমন আছিস রে?
নিরব বরকতের বিপরীতে বসে পড়ে এবং বলে, আছি ভালোই। আপনি বলেন, আপনি কেমন আছেন?
আ,,,আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
সবকিছু কিন্তু তোর জন্য হয়েছে।
বরকত বলল, আমার জন্য কি হয়েছে?
নিরব দাতে দাত চেপে বলে, হাসপাতালে আগ বাড়িয়ে কে তোকে মিথ্যা বলতে বলেছে শুনি?
বরকত অবাক হওয়ার ভান করে বলে,মিথ্যা কই বললাম?
প্রমিতি যে আমার বউ হয় -এই কথাটা মিথ্যা বলিস নি?
না তো। মিথ্যা কেন বলব। প্রমিতি তো তোর ই বউ হয়।
এবার নিরব নিজেই টাস্কি খেল। এক দন্ড ভেবে নিয়ে বলে, সেটা ঠিক যে আমার বউ হয়।কিন্তু তুই যদি মিথ্যা না বলতি তবে আজকে এমন দিন দেখার লাগত না। তাই সব দোষ তোর।
বরকত জোড় গলায় বলে, দেখ, তোকে কে রেকলেসলি ড্রাইভিং করতে বলেছিল?
আমি রাফ ভাবে গাড়ি চালাই নি। ও গাড়ির সামনে চলে আসছিল। এখানে আমার ফল্ট কোথায়?
বরকত বলল, তোর কোন দোষ নাই? কে বলছিল তোকে প্রমিতিকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে রাখতে? আমি বলছিলাম?
নিরব মিইয়ে গেল এবং বলল, তো কি বাসায় আনতাম?
দেখ। দোষ কিন্তু তোর ই। ওইসব এখন বাদ দে। সংসারে মন দে।
নিরব এবার বলে, সত্যি কথা বলি একটা?
বল৷
আমার না প্রমিতিকে খুব মনে ধরেছে। (লজ্জা পেয়ে বলে নিরব)
একথা শুনে বরকত বলে, ও আল্লাহ! তাই নাকি?
ইয়েস, দোস। তোকে আমি ধোলাই দিতে আসি নি বরং থ্যাংকস জনাতে এসেছি। তুই যদি ওইরকম বোকামি না করতি তাইলে আমি প্রমিতিকে এভাবে কাছে পেতাম না। জানিস, ওর চোখের দিকে তাকালে না, আমি সব ভুলে যাই। ওর চোখে চোখ রাখলে বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠে। নিশ্বাস আটকে যায়। সবকিছু গুলিয়ে ফেলি। প্রমিতির দিকে তাকালে মনে হয় জগতটা থেমে গেছে বা আমি আর ও ছাড়া এই জগতে কেউ নেই৷ ওকে দেখলে কেমন জানি অনুভূতি জাগে মনের গহীনে। কালকে যখন তোরা আমাকে আর ওকে আলাদা রাখলি না? বিশ্বাস কর, ওই সময় তোদের সব ক’টার মাথা ফাটিয়ে দিতে মন চাচ্ছিল। জেলাস ফিল হচ্ছিল! আমার বউয়ের সাথে তোরা কেন থাকবি? আমি, জাস্ট আমি থাকব! আর কালকে ভোরে যখন ও বলল, ওর খুদা লাগছে, তখন আমি নিরব চৌধুরি যার কিনা গুলশানে ছয়তলা বিল্ডিং সে স্বয়ং প্রমিতির জন্য রান্না করতে চলে গেলাম। ভেবে দেখ!
বরকত খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনে বলে, বন্ধু তুমি তো রোমিও হয়ে গেলা৷
নিরব লাজুক হেসে বলে, হয়তোবা!!
বরকত বলে, হয়তোবা আবার কি? 100%! তুই প্রেমে পড়ছিস।
আচ্ছা। চল উঠি। তোকে ট্রিট দিব।
বরকত বলে, আরে, লাগবে না। আমার বউ বাসায় একা আছে।
লিনাকে কল করে বলে দিয়েছি। তুই চল তো।
ওকে।
তারপর বরকতের অফিস থেকে নিরব আর বরকত বেরিয়ে চলে গেল।
★★★
রোহানের হাতে ঢাকা যাওয়ার টিকিট। কিছুক্ষন পর সে গাড়িতে উঠবে। অনেক কষ্টে সে জানতে পেরেছে প্রমিতি পার্লার থেকে পালিয়ে সোজা বাস স্টান্ড এ গিয়েছিল এবং তার কিছুক্ষন পর সে ঢাকার পথে রওনা দেয়। রোহান বুঝে পাচ্ছে না, ঢাকার মতো এতো বড় শহরে কোথায় খুজে পাবে সে প্রমিতিকে? কিন্তু রংপুরে বসে থেকেও তো লাভ নেই। আর খালা তার উপর বেশ চেতে আছে। রোহান পড়েছে বিপাকে।
না পেল হাস আর না পেল হাসের সোনার ডিম। কথায় আছে না আমও গেল ছালাও গেল রোহানের হয়েছে সেই অবস্থা!
চলবে৷
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 15
Arishan Nur
প্রমিতির ঘুম ভাংলো। সে পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে রাত হয়ে গেছে। সেই বিকেলের পরপর ঘুমিয়েছে। প্রমিতি চোখ ডোলতে ডোলতে উঠে বসে। সামনের দেয়াল ঘড়িটায় আবছা আলোয় সে দেখতে পেল, এখন সাড়ে বারোটা বাজে।
আচ্ছা এখন কি রাত না দিন? রাত ই তো হওয়ার কথা। কারন চারপাশ অন্ধকার। প্রমিতি ঘাড় ঘুরিয়ে আশপাশে দেখে নিল। রুমে সে বাদে দ্বিতীয় কোন প্রানী নেই। আচ্ছা নিরব কোথায়? সে কি বাসায় ফেরেনি?
প্রমিতি ধড়ফড় করে উঠে, রুমের বাইরে গেল। রুমের বাইরে গিয়ে কাউকে খুজে পেল না। না দাদি আর না মাকে খুজে পেল সে৷
প্রমিতি মনে মনে, কোথায় গেল সবাই?
প্রমিতি গুটিগুটি পায়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই নিরবের বাসার সাহায্যকর্মী কে পেয়ে গেল।
সে বলল, আচ্ছা শুনেন?
তাকে দেখে সাহায্যেকর্মী বলে উঠে, জি, বলেন ভাবী?
প্রমিতি ভাবী ডাক শুনে একটু অস্বস্তিবোধ করল। সে বলে উঠে, বাসার সবাই কোথায়?
উনি বললেন, খালা আর দাদি রাতের ভাত খেয়ে শুয়ে পড়েছে। আর ভাইয়া এখনো ফিরে নি। খালা বলেছে আপনি সজাগ হলে আপনাকে রাতের ভাত দিতে। দিয়ে দিব এখন?
প্রমিতি মাথা নাড়িয়ে না বলল৷
তাহলে কি ভাইয়া আসলে খাবেন?
প্রমিতি স্মিত হেসে বলে, হুম।
সে ড্রয়িং রুমে গেল। কিছুক্ষন ড্রয়িং রুমে বসে থেকে আবারো নিরবের রুমের দিকে গেল৷
প্রমিতির কেমন যেন অস্থির লাগছে। সেই যে সকালে বের হয়েছে নিরব। এখনো ফিরল না। রাত একটা ছুইছুই। এখন না ফিরলে কখন ফিরবে? নাকি আজকে ফিরবেই না?
প্রমিতির কান্না পাচ্ছে। নিরবের প্রতি এক প্রকার অভিমান জেগে উঠছে।
এমন সময় সাহায্যকর্মী এসে বলে, ভাবী জেগে আছেন?
প্রমিতি নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,হু।
ভাইয়া আসা অব্দি কি আপনি জেগে থাকবেন?
হ্যা।
তাহলে আমি শুয়ে পড়ি। টেবিলে খাবার বেড়ে রেখেছি।
আচ্ছা। ঠিক আছে৷ আপনি শুয়ে পড়েন। আমি জেগেই আছি সমস্যা নাই।
যাই তাহলে।
উনি যাওয়ার পর প্রমিতি বারান্দায় গেল। নিরবরা এপার্মেন্ট এ থাকে। নিরবের বাসা তিনতলায়। বারান্দায় দাড়াতেই হুহু করে বাতাস আসতে লাগল। প্রমিতির মনটাও ভালো হয়ে গেল। সে চোখ বন্ধ করে বাতাসটা উপভোগ করতে লাগে।
এমন সময় গাড়ির হর্ণের শব্দ কানে ভেসে উঠল। প্রমিতি চোখ খুলে দেখে নিচে সেই কালো
গাড়িটা এসে থেমেছে।
প্রমিতির ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। সে দ্রুত পায়ে মেইন গেটের সামনে গিয়ে দাড়ালো। আর নিরবের অপেক্ষা করতে লাগে।
প্রায় দশ মিনিট পর বেল বেজে উঠল। বেল বাজার শব্দে প্রমিতি হালকা কেপে উঠে। তার হুট করে কেমন যেন লাগতে শুরু করল। মাথাটা ঝিম মেরে উঠে।
দরজার ওপারে নিরব দাঁড়িয়ে আছে এটা ভাবতেই মাটির সাথে মিশে যেতে মন চাচ্ছে প্রমিতির!
আরেকবার বেল বেজে উঠল। সেই সাথে দ্বিতীয়বারের মতো প্রমিতিও কেপে উঠে এবং হন্তদন্ত হয়ে গেট খুলে দেয়।
নিরব গেট খুলতে দেখে কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু প্রমিতিকে দেখা মাত্র চুপ বনে গেল।
নিরবকে চুপ হয়ে দেখে প্রমিতি মনে মনে আহত হয়।
নিরব ভেতরে ঢুকল এবং চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে নিজের রুমের দিকে হাটা দিল।।
তাকে অনুসরণ করে প্রমিতিও হাটা দিল। কিন্তু নিরব রুমের ভেতরে ঢুকে ই গেট আটকে দিল। যার জন্য প্রমিতির আর ভেতরে ঢোকা হলো না৷
সে বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল। প্রমিতি একবার ভাবল গেট খুলে ভেতরে ঢুকে পড়বে। কিন্তু পরমূহুর্তে এই চিন্তা বাদ দিয়ে খাবার টেবিলের দিকে হাটা দিল। এবং খাবার প্লেটে সার্ভ করে চেয়ার টেনে বসে পড়ল। সে নিরবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
এদিকে নিরব রুমে ঢুকেই সোজা গোসল করতে চলে গেল। রাতে গোসল না করলে তার ঘুম আসেনা।
গোসল শেষ করে বাইরে বের হয়ে দেখল বিছানাটা এলোমেলা। কাথাটার ভাজ খুলে রাখা। বোঝাই যাচ্ছে কেউ এই বেডে শুয়ে ছিল। আজ পর্যন্ত কোন দিন ই সে অফিস থেকে এসে তার বেড এলোমেলো পায় নি৷ মা প্রতিদিন আগেভাগেই বিছানা গুছিয়ে রাখে। নিরব গোছানো বিছানা ছাড়া ঘুমাতে পারেনা।
নিরব রুমের প্রতিটা জিনিসের দিকে চোখ বুলালো। সব কিছু ই ঠিক আছে। শুরু সোফার উপরে দুইটা শাড়ি সুন্দর করে ভাজ করে রেখে দেওয়া আছে। শাড়ি দুই টি তার চেনা। প্রমিতির শাড়ি এগুলো।
আচ্ছা প্রমিতি কি পড়ে ছিল? খেয়াল করে নি সে? আর প্রমিতিই বা কোথায়? প্রমিতির তো তার সাথে তার রুমে থাকার কথা। কিন্তু রুমে তো নেই৷
নিরব কিছুটা চিন্তিত হয়ে রুমের বাইরে বের হলো। ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখে প্রমিতি খাবার নিয়ে বসে আছে।
দুইটি প্লেটেই ভাত বেড়ে রেখেছে। নিরব ভ্রু কুচকে বলে, তুমি খাও নি?
হুট করে নিরবের কন্ঠ শুনে সামান্য কেপে উঠে প্রমিতি। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, না৷
নিরব ঘড়ি দেখে নিল এবং গমগমে গলায় বলে, এখন রাত একটা বাজে। এই সময় কেউ রাতের ভাত খায় না। সাহরি খাইতে উঠে মানুষ আরেকটুপর।
প্রমিতি বলে উঠে, আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উঠার পর আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি।
একথা শুনে নিরব মনে মনে খুশি হলো। সে বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে খেতে বসে গেল। বরকতের সাথে একবার ওলরেডি খেয়েছে। তারপর ও প্রমিতির তার জন্য অপেক্ষা করতে দেখে মন এতোটাই ভরে গেছে যে আরেকদফা খেতে বসল।
নিরব খেতে খেতে প্রমিতিকে দেখতে লাগল। মেয়েটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে। নিরব এই প্রথম প্রমিতিকে সালোয়ার কামিজে দেখল। কামিজ পড়ায় মেয়েটার চেহারায় বাচ্চা-বাচ্চা ভাব ফুয়ে উঠেছে। অথচ শাড়ি যখন পড়েছিল তখন তার মাঝে একটা গুরুগম্ভীর ভাব চলে এসেছিল!
নিরব পরখ করে প্রমিতিকে দেখে যাচ্ছে। প্রমিতি মাথা নিচু করে খাচ্ছে।
নিরবের পেট ভরা থাকায় সে তেমন একটা খেল না। অল্প কিছু খেয়েই উঠে পড়ল।
তখনো প্রমিতির প্লেটে অর্ধেক ভাত আছে। নিরব খেয়াল করেছে প্রমিতি খুব স্লোলি ভাত খায়। তার আবার দ্রুত খেয়ে নেওয়ার স্বভাব আছে।
নিরব হাত ধুয়ে প্রমিতি কে একবার দেখে নিয়ে রুমে ঢুকে গেল।
প্রমিতি আরো পনের মিনিট ধরে খেয়ে থালা-বাসন ধুয়ে নিরবের রুমে গেল।
গিয়ে দেখে নিরব তার শাড়ি দুইটার উপর বসে ল্যাপটপ অন করে কি যেন করছে।
প্রমিতি কিছু টা চটে গিয়ে বলে উঠে, আমার শাড়ির উপর কেন বসেছেন?
নিরব ল্যাপটপে চালাতে চালাতে বলে, বিছানা টা ঝাড়ো। আমি অগোছালো বিছানায় ঘুমাতে পারিনা।
একথা শুনে দ্রুত প্রমিতি বিছানা ঝাড়তে চলে গেল।
নিরব আড়চোখে প্রমিতিকে দেখে নিল এবং ল্যাবটপটা বন্ধ করে দিয়ে প্রমিতির কাছে গিয়ে দাড়ালো।
প্রমিতি সেটা বুঝতে পারল বিধায় সে কাজ বাদ দিয়ে সটাং হয়ে দাড়ালো ।
নিরব পেছন থেকে বলে, কি হলো? বিছানা গুছাও। আমি ঘুমাব। কালকে সকালে আবার অফিস যেতে হবে। ভীষণ ক্লান্ত আমি।
প্রমিতি আবারো বিছানা গুছিয়ে দিল। নিরব চিটপাটাং হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
প্রমিতিকে কিছু ই বললনা। প্রমিতি চুপচাপ কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইল। তারপর সে গিয়ে সোফায় বসে পড়ে।
প্রমিতি ঠিক করে যে সে সোফায় ঘুমাবে। নিরব তো তাকে বেডে শোয়ার পারমিশন দেয় নি।
★★★
বরকত শুয়ে পড়েছে। অনেক ক্লান্ত সে।কিন্তু ঘুম আসছে না। বরকতের একটা দোষ হলো, ক্লান্ত থাকলে তার আর ঘুম হয় না।
তাই বরকত অতীতে ডুব দিল। লিনার সাথে তার পরিচয় নিরবের অফিসে হয়। যেহুতু লিনা নিরবের বিসনেস পাটনার ছিল, তাই মাঝে মাঝেই নিরবের অফিসে সে আসত বিভিন্ন কাজে। সেদিন ও এসেছিল কোন এক কাজে। ফরচুনেটলি বরকত ও কি মনে করে নিরবের সাথে দেখা করতে অফিসে আসে।
অফিসে আসা মাত্র সে লিনাকে দেখতে পায়। সেদিম লিনা হালকা সবুজ রঙের একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছিল।
বরকতের সবুজ রঙ এমনি খুব পছন্দ। তাই তো চোখ আটকে যায় লিনাতে। আর যখন সে লিনার মুখমণ্ডল দেখতে পেল। তার মধ্যে কি যেন হয়ে যায়। সে বুঝে ফেলে এক দেখাতেই লিনার প্রেমে পড়ে গেছে।
এরপর নিরবের সাহায্য দিয়ে লিনার সাথে পরিচয়। তারপর আস্তে আস্তে লিনা আর সে অনেক ক্লোস হয়। বরকত ভেবেছিল লিনাও তার প্রতি উইক। কিন্তু তার এই ধারনা ভুল প্রমানিত হয় যখন সে লিনার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়৷
লিনা রিজেক্ট করে দেয়। কারন সে বরকতকে জাস্ট ফ্রেন্ড ভাবত।
বরকত উঠে বসল। লিনা গভীর ঘুম। চোখে-মুখে পানি দিতে পারলে শান্তি লাগবে। তাই সে উঠে দাড়ালো।
তাদের রুমের বাথরুমের কল নষ্ট তাই বরকত গেস্ট রুমের বাথরুমে গেল। বাথরুম গিয়ে সে গেটে ছিটকিনি লাগালো। ছিটকিনি লাগাতে গিয়ে সে বুঝল, ছিটকিনি তে সমস্যা আছে।
বরকত বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে যেই না ছিটকিনি খুলবে ওমনি ছিটকিনির হাতল টা ভেঙে নিচে পড়ে গেল৷
বরকত, ওহ শিট বলে উঠে।
এখন কি করবে? লিনা তো ঘুম। সাথে মোবাইল ও নেই৷ এখান থেকে ডাকলে লিনা কোন দিন শুনবে না। বরকত কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
সে বাথরুমেই পায়চারি করতে লাগলো।
হুট করে অনেক বিকট আওয়াজ হলো। কোথাও যেন বিস্ফোরণ ঘটল।
বরকত জানলার সামনে গিয়ে দেখল, তাদের পাশের বিল্ডিং এ দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। তা দেখে ঘাবড়ে গেল বরকত।
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 16
Arishan Nur
বরকত চারপাশে তাকাতে লাগলো। ইতিমধ্যে আশেপাশে চিৎকার-চেচামেচি শুরু হয়ে গেছে। চারপাশে হাহাকার। ওই বিল্ডিং থেকে চিৎকারের ধ্বনি ভেসে উঠছে। বরকতের বুকটা ধুক করে উঠল। না জানি কার কার গায়ে আগুন ধরে গেছে। কারন এখন রাত। সবাই বাসাতেই আছে। বরকত দোয়া করতে লাগলো। যখন তখন এই বিল্ডিংয়ে আগুন লেগে যেতে পারে। কারন তাদের বিল্ডিংটা থেকে ঐ বিল্ডিংয়ের মধ্যে তফাত মাত্র এক হাত।
বরকত দরদর করে ঘামছে। সে আবারো গেটটা খোলার চেষ্টা করল। কিন্তু কোন লাভ হলো না। বরকত নিজেকে নিয়ে চিন্তা করছে না। সে লিনাকে নিয়ে ভয়ে আছে। লিনা কি আওয়াজ পেয়েছে? তাদের বেড রুম সাউন্ড প্রুফ৷ লিনার মাইগ্রেন সমস্যা জন্য বিয়ের পর পর এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারন এই বিল্ডিংয়ের ডান পাশে কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। এখন সে কি করবে?
সে যদি বের না হতে পারে তবে লিনাকে কে জাগাবে?
বরকত বিরবির করে বলে, আল্লাহ একটা রাস্তা দেখাও।
বরকত বাথরুম থেকেই শুনতে পেল তাদের বাসার বেল বাজছে। সে আশার আলো খুজে পেল। এদিকে হৈচৈ মূহুর্তের মধ্যে বেড়ে গেল। কারন এই বিল্ডিংয়েও আগুন লাগতে শুরু করেছে৷
বরকত বারবার গেট খোলার চেষ্টা করছে সেই সাথে গেটে লাথি মারছে। যদি ভেঙে যায় তাহলে বের হতে পারবে।
বেল বাজা থেমে গেল। বরকত মনে মনে বলে, তবে কি লিনা জেগে গেছে?
মিনিট খানেক এমনি চিৎকার-হাহাকারের মাঝে কাটলো বরকতের!
হুট করে লিনার আওয়াজ পেতে লাগল। তার ই নাম ধরে ডাকছে লিনা। বরকত বলে উঠে, লিনা আমি বাথরুমে আটকে গেছি। তুমি প্লিজ নিচে নামো। কথাটা লিনা শুনল কি না জানে না বরকত। তবে কিছুক্ষনের মাঝে সব চুপচাপ হয়ে গেল! আসলে আবারো একটা বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হওয়ায় কানে এতো জোড়ে শব্দটা বেজে উঠল যে কিছু সময়ের জন্য বরকত কানে কিছু শুনতে পেল না। তাদের বিল্ডিংয়ের ট্রান্সমিটার ব্লাস্ট হয়েছে সম্ভবত। এদিকে ও দাউদাউ আগুন জ্বলছে। তাদের বিল্ডিং ও রক্ষা পেল না।
বাহির থেকে লিনার কান্নার আওয়াজ আসছে। বরকত খুব অসহায় বোধ করতে লাগলো। এক সময় বাথরুমের দরজা ধাক্কার আওয়াজ পেয়ে বরকত উত্তেজিত হয়ে গেল এবং বলল, লিনা?
বাহির থেকে লিনার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসল সাথে তিন-চার জন লোকের ও। তারা বরকতের প্রতিবেশী।
একজন বলে উঠে, ভাই বের হন। আগুন লাগছে।
বরকত বলল, জানি আমি। আপনারা লিনাকে নিয়ে যান। আমি আসতে পারব না। গেটের ছিটকিনি ভেঙে গেছে। ফায়ার সার্ভিসকে কল দেন।
দিয়েছে। রাস্তায়। আসতেছে।
এমন সময় বরকত বুঝতে পারল তাদের বাসার দিকেও আগুন লেগে যাচ্ছে।
বরকত চেচিয়ে বলে, ভাই শুনছেন?
আমরা চেষ্টা করতেছি গেট ভাঙ্গার। আপনি ভয় পেয়েন না। (প্রতিবেশী বলে উঠে)
বরকত তড়িঘড়ি করে বলে, আমাকে বাচাতে হবে না৷ আপনারা নেমে যান। সিড়ি তে আগুন লাগলে আপনারাও আটকা পড়বেন৷ একজন কে বাচাতে গিয়ে আপনারা চারজন নিজের জীবনের রিস্ক নিয়েন না। প্লিজ চলে যান।
লিনা কেদে দিল এবং বলল, আমি যাব না বরকত।তোমাকে রেখে।
দেখো আবেগী হয়ে লাভ নেই। প্লিজ চলে যাও। ভাই ওকে জোড় করে এখান থেকে নিয়ে যান।
লিনা চিৎকার করে বলে, নাহ। আমি যাব না।
বরকত বলল, প্লিজ লিনা! বোঝার চেষ্টা করো!
কি বুঝব আমি?এখানে বোঝাবুঝির কি আছে? তোমাকে আমি বিপদে ফেলে চলে যাব না।
বরকত অন্যদের উদ্দেশ্য করে করে বলে, আপনারা প্লিজ যান। সাথে লিনাকে জোড় করে নিয়ে যান।
একজন বলে উঠে, ঠিক বলছে বরকত ভাই৷ এখানে থেকে আমরা কিছুই করতে পারব না। তার চেয়ে বরং নিচে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিই। চলেন নামি।
লিনা কান্না মাখা গলায় বলে উঠে, না। আমি যাব না। আপনারা যান।
বরকত আবারো হন্তদন্ত হয়ে বলে, ওর কথায় কান দিয়েন না। প্লিজ ওকে জোড় করে নিয়ে যান।
লিনাকে জোড় করে নিয়ে যাওয়া হলো। লিনার কান্নার শব্দ বরকত শুনতে পেল। তার জন্য কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে। একটা সময় লিনার কান্নার ধ্বনি আর শোনা গেল না।
বরকত বলে উঠে, আল্লাহ লিনাকে রক্ষা করো। আর কিছু চাই না আমি।
বরকত ভাবতে লাগলো, লিনা কান্না করছে কেন? লিনা না তাকে ভালোবাসে না? যদিও বা কোন সংবিধানে লেখা নেই ভালো না বাসলে কারো জন্য কাদা যাবে না। তবুও তার জন্য মরন হতে পারে জেনেও কেন থাকতে চাইল?
এতো এতো ভয়ংকর পরিস্থিতিতে ও বরকতের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল। এখন মরে গেলেও শান্তি পাবে।
বরকত বাথরুমের মেঝেতে বসে পড়ল। খুব গরম লাগছে। আগুনের উত্তাপ পাচ্ছে। তবে কি তার খুব কাছাকাছি আগুন? একটু পর কি তাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই বানাবে? যদিও বা আগুনে পুড়ে মরা শহীদী মৃত্যু তাও বরকতের বুকটা দুমড়েমুচড়ে যেতে লাগলো। চিৎকার দিয়ে কান্না করে খুব করে বলতে ইচ্ছা করছে, আমাকে প্লিজ বাচাও। কিন্তু পারল না চিৎকারটা দিতে। চিৎকারটাকে এক রাশ দীর্ঘশ্বাসে পরিনত করে আল্লাহ তায়ালা কে স্মরণ করতে লাগলো হায়াত, জন্ম-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ। আল্লাহ যা লিখে রেখেছে তাই হবে৷
বরকত চোখ বুজে ফেলে। বেচে থাকা কিংবা মরে যাওয়াটা সে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছে। তার চোখের সামনে মা আর ফ্যামিলির সবার চেহারা ভেসে উঠে। লিনার হাসিমাখা ফেসটা ভেসে উঠে। আচ্ছা সে যদি মারা যায় তবে কি লিনা আরেকটা বিয়ে করবে? করতে পারে। আরেকটা বিয়ে করলে বরকত খুশিই হবে। শুধু খুশি না, খুব খুশি হবে।
মৃত্যুর আগে মানুষ অবান্তর চিন্তা করে যেগুলো না করলেও চলে!
বরকত বিরবির করে বলে, আল্লাহ খুব একটা কষ্ট দিয়ে মৃত্যু দিও না আমার।আরামে জান টা নিয়ে নিও।
তার চোখ বেয়ে এল ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
★★★
ভোরের মিস্টি আলোয় প্রমিতির ঘুম ভাংলো। সে ঘুমের মধ্যেই ফজরের আযান শুনতে পাচ্ছে। প্রমিতি চোখ পিটপিট করে খুলেই অবাক হয়ে যায়। কারন সে বেডে শুয়ে আছে। সে তো সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। তবে এখানে আসল কিভাবে? রাতে স্লিপওয়াক করার বদঅভ্যাস হলো নাকি?
সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল নিরব তার পাশে ঘুমিয়ে আছে।
নিরবকে দেখে তার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। তবে কি নিরব ই তাকে সোফা হতে বিছানায় এনে শুইয়ে দিয়েছে? আর যদি দেয় তবে তো নিরব তাকে কোলে উঠিয়েছে সম্ভবত।
এসব কথা ভাবতেই প্রমিতির মুখটা লজ্জায় লাল হতে লাগে।
সে মৃদ্যু হেসে উঠে পড়ে নামাজ পড়তে বসবে। বাথরুম থেকে ওযু করে নামাজ পড়ে নিল।
তারপর নিরবকে ডাকতে লাগে। কিন্তু নিরব তো ঘুমে এতোটাই মগ্ন যে উঠতে পর্যন্ত নারাজ!
ডাকলেই শুধু হু হু করে উঠছে কিন্তু উঠার কোন নাম নাই।
প্রমিতি আবারো ডাকতে লাগলো, নিরব উঠেন। নামাজের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে।
নিরব ঘুমের মধ্যে এপাশ থেকে ওপাশ হয়ে বলে। হুম। হু।
প্রমিতি নিরবের এই কান্ড দেখে মৃদ্যু হাসল। তারপর বাথরুমে গিয়ে একটা মগ পানি এনে আস্তে করে নিরবের মুখে ছিটা দিল। দেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করল যেন নিরবের জামা ভিজে না যায়।
পানির ছিটা পেতেই তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ে নিরব।
তাকে দেখে খিলখিল করে হেসে উঠে প্রমিতি।
নিরব প্রমিতির হাসির মায়ায় আটকা পড়ল। সে হা করে প্রমিতির পানে চেয়ে থাকে।
নিরব মনে মনে বলে, এমন সুন্দর ভোর যেন প্রতিদিন আসে আমার জীবনে!
প্রমিতি হাসি থামিয়ে বলে, নামাজে যান।
নিরব হালকা হেসে বলে, হুম। যাচ্ছি।
নিরব নামাজ পড়া শেষ করে এসে দেখে প্রমিতি আবারো সোফায় শুয়েছে।সে ভ্রু কুচকে প্রমিতিকে উদ্দেশ্য করে বলে, এতো বড় বেড থাকতে ওখানে কেন?
প্রমিতি কিছু না বলে চুপ থাকে। তা দেখে নিরব ধীর পায়ে সোফার সামনে গিয়ে হুট করে প্রমিতিকে কোলে তুলে নেয়৷
প্রমিতি মোটেও এটার জন্য প্রস্তুত ছিলনা। সে খানিকটা চমকে উঠে বলে, আরে! আরে! কি করছেন?
কিছু না। আর কোন দিন সোফায় শোয়ার কথা মাথায় আনবে না।
প্রমিতি অপলক নয়নে নিরবের দিকে তাকালো। আচ্ছা নিরব কি কোন রাজ্যের রাজপুত্র? কারন তার কাছে নিরবকে কোন রুপকথার গল্পের রাজপুত্র ই লাগছে!
★★★
বাসের ঝাকুনিতে ঘুম ভেঙে যায় রোহানের। রোহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখে বাস থেমে আছে। যাত্রীরা নেমে যাচ্ছে।সে বুঝতে পারল, গন্তব্যে পৌছে গেছে৷
সে গাড়ি থেকে নামল। বাস শ্যামলী স্ট্যান্ডে থেমেছে। এখান থেকে সে ধানমণ্ডি, তার এক ফ্রেন্ডের বাসায় উঠবে।
রোহান হাটা ধরল। রিকশা নিতে হবে। এতো পথ হাটা যাবে না। তার উপর বাসাটা সে চিনে না। বন্ধুকে কল দিতে হবে।
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
part 17
Arishan Nur
ফযরের নামাজ পড়ে শোয়ার পর নিরবের আর ঘুম আসছে না। হাজার চেষ্টা করেও তার চোখে ঘুম নেই। সে বারবার এদিক-ওদিক পাশ ফিরছে। একবার ডান দিকে তো আরেকবার বাম দিকে। তাকে নড়াচড়া করতে দেখে প্রমিতি ঘুম ঘুম স্বরে বলে উঠে, কি হলো, আপনি ঘুমাচ্ছেন না কেন? সকালে তো অফিস যেতে হবে। ক্লান্ত অনেক। (প্রমিতি নাক ফুলিয়ে কালকের রাতে নিরবের বলা কথাগুলোই রিপিট করল।)
এই ব্যাপার টা নিরবের ধরতে খানিকটা সমস্যা হলো। যখন সে বুঝতে পারল যে প্রমিতি তার কথাই তাকে বলেছে, তখন নিরব মিটমিট করে হেসে বলে, হ্যা, হ্যা, শুক্রবার ও আমি অফিস করি!
প্রমিতি আবারো অভিমানী সুরে বলে, আপনিই তো বলেছেন আজকে সকালে অফিস যাবেন। আচ্ছা এক কাজ করুন, আজকে রাতে আর আসার ই দরকার নাই। অফিসে রাতটা কাটিয়ে দিয়েন।
নিরব কিছুটা অবুঝের মতো বলে উঠে, বাই এনি চান্স, তুমি কি কষ্ট পেয়েছে বা রাগ না, না অভিমান করেছো?
প্রমিতি ভারী গলায় বলে, না তো অভিমান কেন করব? আজব!
এবার নিরব প্রমিতির দিকে ঘুরে শুইলো। এতে প্রমিতি কিছুটা ঘাবড়ে গেল সেই সাথে হচকচিয়ে উঠে।
তা দেখে নিরব মুচকি হেসে বলে, তো? কি চাও? সারা দিন বাসায় বসে বসে তোমাকে দেখব?
না। মোটেও না। আমাকে কেন দেখবেন? আমি তো দেখতে সুন্দর না।
তাই? তুমি দেখতে সুন্দর না?
নাহ। শ্যামলা আমি। (করুন গলায়)
আসলে ঠিক ই বলেছো। তুমি দেখতে ওতোটা সুন্দর না। (মজা করে)
একথা শুনেই প্রমিতি কান্না জুড়ে দিল।
প্রমিতির হুট করে কেদে দেওয়ার ফলে এবার নিরব নিজেই কিছুটা হচকচিয়ে যায়। এবং বিচলিত হয়ে বলে, আম সর্যি! মজা করছিলাম আমি তোমার সাথে।
প্রমিতি কাদতে কাদতেই বলে, যদি সুন্দর না হই তাহলে বিয়ে করার কি প্রয়োজন ছিল? খোটা মারার জন্য বিয়ে করেছেন? (নাক টানতে টানতে)
একথা শুনে নিরবের মধ্যে কি যেন একটা পরিবর্তন আসল। সে হুট করে প্রমিতিকে জড়িয়ে ধরে।
আচমকা এমন কিছু হওয়ায় প্রমিতি চমকে উঠে নিজেকে নিরবের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।
নিরব নিজের হাত দিয়ে প্রমিতিকে ধরে ফেলে এবং ফিসফিস করে বলে, যাও আজকে সারা দিন তোমাকে নিয়ে ঘুরব।
প্রমিতি মুখ ঘুরিয়ে নিল এবং গোমড়া মুখে বলে,
উইকেন্ড জন্য বাসায় থাকবেন! এটা আমি মানি না।
তুমি কি মন খারাপ করেছো? আর করলেও কারনটা কি?
আচ্ছা আপনি কাউকে দেখেছেন বিয়ের পরের দিন বউকে রেখে সকাল সকাল অফিস চলে যায় আবার এতো রাত করে ফিরে?বলেন দেখেছেন এমন কোন ব্যক্তিকে? (ঠোঁট উল্টিয়ে)
নিরব একদন্ড ভেবে বলে, ইয়েস! আমার ক্যামিস্ট্রি প্রাইভেট টিচার বিয়ের পরের দিন সকাল সাতটায় স্কুলে গিয়েছিল। স্যারের বিয়ের পরের দিন স্কুলে খাতা বিতরণ দিবস ছিল।
প্রমিতি মুখ কালো করে বলে, এখন এসব সাফাই দেওয়ার জন্য বলবেন ই।
নিরব প্রমিতিকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে, তুমি যে আমাকে খাবার আনতে পাঠিয়ে ঘুমিয়ে গেছো তার বেলায় কি? আমার অভিমান জাগতে পারেনা?
না। পারেনা। (শক্তপোক্ত ভাবে)
কেন? কেন? (ভ্রু কুচকে)
প্রমিতি মৃদ্যু গলায় বলে, অভিমান শব্দটা কেবল মেয়েদের জন্য প্রযোজ্য।
নিরব হালকা হেসে বলে, নাহ। অভিমান সবার ই হয়। তবে ছেলেরা প্রকাশ করেনা।
কেন করে না?
লজ্জা পায় সম্ভবত! অভিমান সবার উপর হয়না। যারা খুব আপন কেবল তাদের উপর অভিমান জাগ্রত হয়।
প্রমিতি নিরবের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে ধরলে,
নিরব খপ করে প্রমিতির হাত ধরে ফেলে আর অতি নমনীয় কন্ঠে বলে উঠে,
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি
বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে
ফিরে এসো সুরঞ্জনা
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার
দূর থেকে দূরে -আরো দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেওনাকো আর
কি কথা তাহার সাথে? তার সাথে?
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ
তার প্রেমে ঘাস হয়ে আসো
সুরঞ্জনা
তোমার হৃদয় আজ ঘাস
বাতাসের ওপারে বাতাস
আকাশের ওপারে আকাশ
জীবনানন্দ দাশ।
প্রমিতি নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, এই সুরঞ্জনা টা আমার কে? আপনার গার্লফ্রেন্ড?
একথা শুনে নিরব হোহো করে হেসে বলে, তুমি সুরঞ্জনাকে চেনো না?
প্রমিতি ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, উহু চিনিনা। এখন এটার ও মজা নেন।
না। না। মজা কেন নিব? আচ্ছা বলছি সুরঞ্জনা কে। আকাশলীনা কবিতার নায়িকা হলো সুরঞ্জনা। মাত্র যে কবিতাটা বললাম না? এটাই হলো জীবনানন্দ দাশের এক বিখ্যাত কবিতা আর এই কবিতার এক কালজয়ী চরিত্র এই সুরঞ্জনা।
ও। আপনার সুরঞ্জনা কে? (অবুঝ প্রশ্ন প্রমিতির)
নিরব প্রমিতির কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে, কে আবার? তুমি। তুমি হলে আমার সুরঞ্জনা। জানো সুরঞ্জনা চরিত্রটা একেক জনের কাছে একেক অর্থ বহন করে। কারো কাছে সুরঞ্জনা ছলনাময়ী নারী তো কারো কাছে সুরঞ্জনা রহস্যময়ী। কিন্তু আমার কাছে সুরঞ্জনা হলো প্রসিদ্ধ ভালোবাসার এক অন্যতম উদাহরণ। কবিতার এইটাই বৈশিষ্ট্য যে একেক জনের কাছে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করবে।
প্রমিতি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনল কথাটা। তারপর বলে উঠে, আপনি তো আমাকেই সুরঞ্জনা বললেন। তার মানে,,,,,,,,, এইটুকু বলে প্রমিতি বুঝতে পারল নিরব কি বলতে চাইছে৷
সে সরাসরি নিরবের চোখের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো।
নিরব প্রমিতির দিকে তাকিয়েই ছিল। চোখাচোখি হতেই নিরব প্রমিতির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।
★★★
লিনাকে নিচে নামানোর পরপর ই ফায়ার সার্ভিসের লোক বরকত কে বাচাতে তাদের ফ্ল্যাটে চলে যায়। এদিকে লিনা টেনশনে মরে যাচ্ছে। তাকে প্রতিবেশী রা হাত ধরে আটকে রেখেছে। কারন এরই মাঝে লিনা একবার সুযোগ বুঝে উপরে উঠে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তাকে তাদের পাশের বাসার আংকেল ধরে ফেলে।ফলে আর যেতে পারেনি বরকতের কাছে।
লিন সমান তালে কেদেই চলেছে। তার চোখের সামনে দু দুটো বিল্ডিং দাউদাউ করে জ্বলছে। এই অবস্থায় ভেতরে কারো পক্ষে থাকা সম্ভব না। না জানি বরকত কিভাবে আছে। লিনা এতোটাই জ্ঞানহীন হয়ে পড়েছে যে বাসার কাউকে কল দিবে সেই ভাবনাও মাথায় নেই।
পাশ থেকে এক ফায়ার সার্ভিসের লোকের কথা লিনার কানে বেজে উঠল।
উনি বলছিলেন, আরো কেউ কি আছে যাকে উদ্ধার করা হয়নি?
আরেকজন বলে উঠে, হ্যা। একটা লোক বাথরুমে আটকে পড়েছে। ওনাকে উদ্ধার করতে গেছে।
যে অবস্থা মনে হয় না বাচবে।
তাই তো দেখছি। এইজন্য ই রাফসারকে পাঠিয়েছি। ইউ নো হি ইস বেস্ট।
আল্লাহ যেন লোকটাকে রক্ষা করে।
লিনা আর কিছু শুনতে পেল না। তার কানে একটা কথাই ভাসছে তা হলো যে অবস্থা মনে হয় না বাচবে।
তবে কি সে বরকত কে হারাতে চলেছে? লিনা ডুকরে কেদে উঠে।
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 18 (বোনাস)
Arishan Nur
রাফসার, ফায়ার সার্ভিসের বেস্ট অফিসার কে পাঠানো হয়েছে। সে যথেষ্ট প্রটেকশন নিয়ে তড়িঘড়ি করে দাউদাউ আগুনের মাঝে ঢুকে পড়ল। যদিও বা আগুনের সাথে খেলা করা রাফসারের মতো ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটা অফসারের জন্য খুবই সাধারণ ব্যাপার। এ যেন প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার মতো স্বাভাবিক হয়ে গেছে রাফসারের কাছে। আপাতদৃষ্টিতে তার কাছে সাধারণ ব্যাপার হলেও বাস্তবটা কিন্তু অনেক জটিল। এই আগুনে সে কাউকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজে না ও ফিরে আসতে পারে। এতোটা রিস্ক দিয়েও ফায়ার ফাইয়াররা মানুষ কে বাচায়। রাফসার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র হাতে নিয়ে জ্বলন্ত বিল্ডিংয়ের দিকে আগালো। যত দ্রুত সম্ভব তাকে পাচ তলায় পৌছাতে হবে। কেউ একজন তার অপেক্ষা করছে।
এক মূহুর্তর জন্য ও পিছপা হয়না রাফসার। তার কাজ ই আগুন নেভানো।
বিল্ডিংটার ভেতরে ঢুকতেই রাফসার তীব্র উত্তাপ অনুভব করল। এই বিল্ডিংটাকে এখন জাহান্নামের মতো লাগছে রাফসারের কাছে। সে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র তথা সিলিন্ডার থেকে তরল কার্বন ডাই অক্সাইড স্প্রে করে আগুন নিভিয়ে নিজের পথ বের করে নিতে লাগল।
পনের মিনিটের ব্যবধানে সে পাঁচতলায় উঠে পড়ে। তার জায়গায় অন্য কেউ হলে আরো কিছু টা সময় লাগাত কিন্তু রাফসার বেস্ট ফায়ার ফাইটার আওয়ার্ড পেয়েছে এইবার। এ থেকে বোঝা যায় সে বেশ দক্ষ! তাই সময় ও তুলনামূলক কম নিয়েছে।
পাঁচ তলায় উঠে সে জায়গায় মতো পৌছে গেল। তারপর আবারো স্প্রে ছিটিয়ে নিল। এদিকটায় আগুনের প্রকট অনেক বেশি।
রাফসার দোয়া-দরুদ পড়তে পড়তে ভেতরে ঢুকে পড়ে তাকে ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছে যে লোকটা বাথরুমে আটকা পড়েছে। এখন বাথরুম খুজে পেলেই হলো।
রাফসার আগাতে লাগে। চারপাশে আগুনের লাল আভা। দাউদাউ আগুনের সাথে ছাই হয়ে যাওয়া এক কালের স্বপ্ন! যেকোন স্বাভাবিক মানুষ এই সিন দেখলে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে।
রাফসার বাথরুম খুজে পেল। বাথরুমের দরজার এক পাশ পুড়ে গেছে। সে যথাসম্ভব আগুন নিভিয়ে সামনে পা বাড়াতেই থমকে গেল।
একটা লোককে বাথরুমের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেছে সে। আশেপাশে পানি আর পানি তাই আগুন খুব একটা নেই। দরজার এক পাশ যেহুতু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তাই গেট ভাঙ্গতে হয় নি আর।
রাফসার দেখল কেবল ঝর্ণা থেকেই পানি পড়ছে না। সব কল থেকেই পানি আশেপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে। কলের পানি নরমালি কল থেকে পড়লে নিচে পড়ে যায়। কিন্তু লোকটা কৌশলে মগ, বদনা, শ্যাম্পুর বোতল বালতি এমন ভাবে রেখেছে যেন পানি কল থেকে পড়ে এসবের সাথে ধাক্কা খেয়ে দিক পরিবর্তন করে চারপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
রাফসার তাও স্প্রে মারল এবং মনে মনে লোকটার বুদ্ধির প্রশংসা করল।
সে নিচে থাকাকালীন দেখেছে একটা মেয়ে পাগলের মতো কান্না করছে এবং আগুন লাগা সত্ত্বেও বিল্ডিংয়ের ভেতর যেতে চাচ্ছে।
এতে কিছুটা অবাক হয় রাফসার। কারন এতো বছর যাবত সে দেখে এসেছে আগুন লাগলে মানুষ সেই জায়গা থেকে পালায় কিন্তু এই প্রথম দেখল আগুনের কাছে যেতে চায়৷
পরে জানতে পারল। মহিলার হাসবেন্ড বাথরুমে আটকে পড়েছে। তাই এরকম করছে।
মহিলাটাকে দেখে রাফসার মনে মনে ভাবে,কতো ভাগ্যবান তার স্বামী! কপাল করে এমন বউ পেয়েছে। আর এদিকে তার ভাগ্য! একটা হতাশার শ্বাস ফেলে ভেতরে প্রবেশ করে লোকটার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করল।
কিছুক্ষনের মধ্যে বরকতের জ্ঞান ফিরে। সে রাফসারকে দেখেই হালকা গলায় বলে, আমার লিনা কই? ও কি ঠিক আছে? কিছু হয় নি তো ওর?
রাফসার অবাক হয়ে গেল।এমন দুর্যোগের মাঝেও কেউ অন্য কারো কথা ভাবতে পারে? আচ্ছা এই লিনা টা কে? তাই বলে উঠে,লিনা কে?
বরকত নিস্তেস গলায় বলে উঠে, আমার বউ!
বেগুনি জামা পড়া মহিলাটা আপনার বউ?
হু।
ঠিক আছে উনি। কিন্তু আপনি নিজে ঠিক নেই। পানি খাবেন?
নাহ। এইটুকু বলে বরকত অজ্ঞান হয়ে গেল।
রাফসার দেখল বরকতের হাত খানিকটা জ্বলে গেছে। সে সেখানে মলম লাগালো।
এবং তাকে ধরে উঠায়।ঠিক সেই মূহুর্তে ওয়াকিটকি তে রাফসার খবর পেল নিচে সিড়ি দিয়ে নামা যাবে না। সিড়ি সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে।
অগত্যা সে বরকতকে নিয়ে বারান্দায় গেল। নিচ থেকে তাদের লোকরা দাড়িয়ে আছে। সে তার নিজের এবং বরকতের দুই জনের কোমড়ে দুইটা রশি বেধে বারান্দার সাথে বেধে দিল।
তারপর লাফ দিল। নিচে সেভটি দেওয়া আছে। তাই বরকতের কোন সমস্যা হলোনা। কিন্তু হুট করে রাফসারের দড়ি ছিড়ে পড়ায় সে সেভটি কিটের উপর না পড়ে পয়তাল্লিশ ডিগ্রি কোন করে একটু বেকে অন্য দিকে পড়ল যার দরুন হাতে ভীষণ জোড়ে ব্যথা পেল।
অবশেষে রাফসার বরকতকে রক্ষা করবে সক্ষম হলো।
দ্রুত তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়া হলো। লিনাও বরকতের পিছে পিছে হাসপাতালে যেতে লাগলো। তার সাথে তাদের প্রতিবেশী ও আছে।
সাধারণ জীবন-যাপনে বিপদেআপদে আত্মীয়ের চেয়ে প্রতিবেশী আগে এগিয়ে আসে।লিনা আর বরকতের ক্ষেত্রেও তাই হলো।
ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করানো হলো। সাথে আরো পেশেন্ট ও আছে। যারা অগ্নি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে।
লিনা হাসপাতালে দাড়িয়ে কান্না করতে লাগলো। তার এক প্রতিবেশী বলে উঠে, আপনার ফ্যামিলি মেমবারদেরকে ইনফর্ম করুন।
এই বিষয়টা মাত্র মাথায় আসল লিনার। কিন্তু তার কাছে ফোন নেই। নাম্বার ও মুখস্ত না। এখন কি করবে?
তাই বলে উঠে, আগে ওর ট্রিটমেন্ট শুরু হোক তারপর ডাক দিব। আমার কাছে ফোন নেই।
লিনা বাকিটা সময় প্রার্থনা করতে করতেই কাটিয়ে দিল। আল্লাহর দরবারে কোটি কোটি শুকরিয়া যে তার বরকতের কিছু হয় নি।
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Part 19
Arishan Nur
সকাল সাতটার মধ্যে প্রমিতি উঠে পড়ে। যদিও বা নামাজের পর তারা আর ঘুমায় নি। গল্প করেই কাটিয়েছে। প্রমিতি ফ্রেস হয়ে বাইরে বের হলো। সে দেখল বাসার সবাই উঠে গেছে। দাদি পেপার পড়ছে। আর মা রান্নাঘরে ঢুকবে মাত্র।
শ্বাশড়িমাকে রান্নাঘরে ঢুকতে দেখে প্রমিতি তার কাছে গিয়ে বলে, মা আমি রান্না করব আজকে।
বেগম বলে উঠে, আরে না। তুমি কেন রান্না করবে? শায়লা আছে। ও করবে। তুমি গিয়ে আরো একটু ঘুমাও।
প্রমিতি মাথা নিচু করে বলে, আমাদের বাসায় বিয়ের পরে নতুন বউ সবার জন্য রান্না করে।
ও তাই নাকি!তাহলে আমাদের জন্য রান্না করো। খেয়ে দেখি আমার ছেলের বউয়ের হাতের রান্না! (এক গাল হেসে)
প্রমিতি খুশিমনে রান্নাঘরে ঢুকে সবার জন্য রান্না করে।
কিছুক্ষন পর নিরব সহ সবাই খেতে বসে।
পরেটা আর পায়েস রান্না করেছে প্রমিতি।
নিরব প্রমিতির হাতের পায়েস খেয়ে তো পুরাই অবাক। এতো মজার রান্না রাধতে পারে প্রমিতি? এমনি নিরবের পায়েস খুব পছন্দ। তার উপর প্রমিতি রান্না করেছে সেই সাথে আবার অনেক মজা হয়েছে। নিরব তো একাই দুই বাটি পায়েস খেয়ে নিল।
বেগম খেয়ে বলে, বাহ। অনেক মজা হয়েছে তো।
দাদি খাওয়ার পর বলে, আমি নিজেই তো এতো মজার রান্না করতে পারি না। আমার নাত বউ তো অনেক গুনী তাহলে।
প্রমিতি মুচকি হাসল ।
★★★
বরকতকে জেনারেল ওয়ার্ডেই রাখা হয়েছে।
বরকতের পাশের বেডে রাখা হয়েছে রাফসার কে। যেহুতু তারা একই সাথে এসেছে তাই বেডের সিরিয়াল নাম্বারও পাশাপাশি। রাফসার চোট পাওয়ায় অজ্ঞান হয়েছে গেছে। বরকত ও আগে থেকেই অজ্ঞান ছিল।
প্রায় সকাল আটটার দিকে বরকতের জ্ঞান ফিরে। কিন্তু রাফসার তখনো অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে আছে বেডে।
লিনা বরকতের পাশে বসে কান্না করেই যাচ্ছে। এমনটা না হলেও পারত! কেন বরকতের সাথেই এমন হলো? তবুও লিনা আল্লাহর কাছে ঋনী যে বরকত জীবিত আছে সেই সাথে সুস্থ ও
আর কিছু চাই না তার।
বরকত চোখ খুলতেই তার পাশে লিনাকে দেখতে পেল। লিনার চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে। চোখের ডগায় পানি চিকচিক করছে।
বরকত কিঞ্চিৎ অচেতন অবস্থায় ই হাত বাড়িয়ে লিনার চোখের জল মুছে দিল।
লিনা মাথা নিচু করে একাধারে কাদছিল। হুট করে কারো স্পর্শ পাওয়ায় সে চমকে উঠে সামনে তাকাতেই দেখল বরকত চোখ খুলে আছে। বরকত কে চোখ খুলা অবস্থায় দেখে লিনার জানে প্রান আসল। সে কান্না করতে করতেই বলল, বরকত! তুমি ঠিক আছো?
বরকত হালকা হেসে বলে, হু। তুমি কেমন আছো? কোথাও ব্যথা পেয়েছো? চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে কেন?
লিনা অবাকের শেষ সীমায় পৌছে গেল। বরকত নিজেই ঠিক ভাবে কথা বলতে পারছে না অথচ তাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। আচ্ছা, বরকত তাকে এতো ভালোবাসে? কই আগে তো উপলব্ধি করতে পারেনি সে?
লিনা আবার কেদে দিল হুহু করে। তা দেখে বরকত বিচলিত হয়ে উঠে বসতে চাইলে লিনাকে হন্তদন্ত হয়ে থামিয়ে দেয়।
বরকত নিস্তেস গলায় বলে, প্লিজ লিনা, তুমি কেদো না। তোমাকে কাদতে দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।
একথা শোনামাত্র লিনার বুকটা দুমড়েমুচড়ে যেতে লাগলো। সে নিজেকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছে না। বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছে। বরকত তাকে এতো ভালোবাসে অথচ সে বিনিময়ে কি দিয়েছে? কেবল অবহেলা? আর তো কিছু ই দেয়নি!
বরকত লিনার হাতটা ধরে বলে, কান্না থামাও লিনা। তোমাকে কাদতে দেখলে আমার কষ্ট হয়। আর আমি ঠিক আছি তো। এইটুকু বলে বরকত থেমে গিয়ে বলে, নাকি আমার চেহারা পুড়ে গেছে?
বরকতের কথা শুনে লিনা আবারো কেদে দিল।
বরকত বলল, কি হলো? বল? সত্যি পুড়ে গেছে আমার চেহারা?
লিনা কিছু বলতে পারছে না। শুধু কেদেই চলেছে।
বরকত তার মুখে হাত দিল। সত্যি বাম গাল ব্যান্ডেজ করা। বরকত চোখ বুজে ফেলে। তার চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। তার যা বোঝার বুঝে গেছে৷ এতোক্ষন পর তার অনুভূতি ফিরে এসেছে। সে বাম গালে প্রচন্ড জ্বালা-পোড়া অনুভব করছে। সেই সাথে ডান হাতেও! এই দুই জায়গা নিশ্চয়ই পুড়ে গেছে৷ চামড়া ঘসে গেছে কি? দগদগে দাগগুলো কি আজীবন বয়ে নিয়ে বেড়াবে সে?
বরকত বলে উঠে, লিনা, ডাক্তার কি বলেছে? আমার চেহারার পোড়া সাইড আর কোন দিন ঠিক হবে না?
লিনা কান্না করতে লাগলো কিছু বললনা।
বরকত চুপ মেরে গেল। হুট করে বলে উঠে, চেহারা দিয়ে আর কি আসে-যায় বল? আর আমি তো এমনি সুন্দর না দেখতে!
লিনা আবারো কাদতে থাকে। আর বলে উঠে, ডাক্তার বলেছে ছয় মাস থেকে পোড়া জায়গায় মেডিসিন লাগাতে। এখন লাগানো যাবে না। আর কে বলেছে যে তোমার চেহারা পড়ে গেছে? সবসময় বেশি বুঝো।
তুমি কাদছিল তো তাই মনে কু ডেকে উঠল৷
লিনা বরকত কে জড়িয়ে ধরে বলে, সব ঠিক আছে। হালকা পুড়ে গেছে জাস্ট। প্রোপার ট্রিটমেন্ট হলেও সেরে উঠবে।
বরকত লিনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে, ভালোবাসি তোমাকে লিনা! প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না!
লিনা আবারো কেদে দিল এবং বলল, না। কোথাও যাব না আমি।
কেন?
লিনা গড়গড় করে বলে দিল,আমিও তোমাকে ভালোবাসি!
বরকত যেন নিজেত কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।এই দিনটার প্রতিক্ষায় সে কতো দিন যে গুনেছে তার নেই হিসাব। আজকে তার মানত পূর্ণ হলো। অবশেষে সে লিনার মন জয় করতে পারল।
কিছুক্ষন সেভাবেই থাকার পর লিনা বলল, তুমি কিছু খাবে?
বরকত বলে, পানি খেলে পারলে ভালো হয়৷
লিনা দ্রুত পানি এনে দিল বরকত কে। বরকত পানিটা খেয়ে দিল৷
ওমনি দেখল, একটা এপ্রোন পড়া মেয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ওয়ার্ডে ঢুকে পাগলের মতো কাউকে খুজছে।
বরকত বিষ্মিত হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো। সে ভাবতে লাগলো, মেয়েটার কি হয়েছে? এমন কেন করছে? তাও আবার ডাক্তার মেয়ে।
মেয়েটা ওয়ার্ডে ঢুকে একদম ঐ মাথায় চলে গেল। যার জন্য বরকত তাকে আর দেখতে পেলনা।
সে লিনার হাত ধরে বলে, বাসার কেউ কি কিছু জানে না?
না।
জানাও।
আমার কাছে ফোন নাই।কারো নাম্বার মুখস্ত ও নাই।
এক কাজ কর,নিরবের ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দাও। ও সিন করবে।
এই বুদ্ধি লিনার মাথায় আগে আসে নি। বরকত বলায় সে দ্রুত বাইরে গেল। তাদের পাশের বাসার আংকেলের কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিরবকে জানাবে।
লিনা যেতেই ওই এপ্রোন পড়া মেয়েটা বরকত আর রাফসারের বেডের মাঝখানে এসে থামলো।
মেয়েটা একবার বরকত কে দেখে নিল তারপর রাফসারের দিকে তাকিয়ে কান্না জুড়ে দিল।
এতে বরকত ভড়কে গেল এবং মেয়েটার উদ্দেশ্য করে বলে, ডাক্তার আপা , কিছু হয়েছে আপনার? আর ইউ ওকে?
মেয়েটা কান্না করতে করতে বলে, ও,,ওর কি হয়েছে?
সর্যি বুঝলাম না। কার কি হবে?
মেয়েটা বরকতের পাশের বেডে অজ্ঞান হয়ে শুয়ে থাকা রাফসারকে দেখিয়ে দেয় এবং কান্না মাখা সুরে বলে, ওর কি হয়েছে?
বরকত রাফসারের দিকে তাকায়। তার আবছা আবছা মনে পড়ে যায়,এই ছেলেটাই তাকে আগুন থেকে বাচিয়েছিল। এই ছেলের কাছ থেকেই সে শুনেছিল লিনা ঠিক আছে। কিন্তু একটা অপরিচিত ছেলের জন্য এই হাসপাতালের ডাক্তার কেন কাদবে?
বরকত বলে উঠে, উনি ফায়ার সার্ভিসের অফিসার৷
মেয়েটা বলে, জানি আমি। কিন্তু কি হয়েছে?
আমাকে বাচাতে গিয়ে নিজেই আহত হয়েছে।
মেয়েটা বরকতের দিকে তাকালো। বরকত বলল, আমাদের বিল্ডিং এ আগুন লেগে গিয়েছিল। আর আমি বাথরুমে আটকে পড়ে ছিলাম। উনি নিজের জীবনের বাজি নিয়ে আমাকে বাচিয়েছে।
মেয়েটা কিছু না বলে, রাফসারের কাছে গিয়ে রাফসারকে চেক করে বলে, ওর তো হাতের জয়েন্টে লেগেছে।
তাই নাকি?
হু। রেডিয়াস নড়ে গেছে৷ প্লাস্টার করে রাখতে হবে পনের-বিশ দিন।
ওহ।
তারপর মেয়েটা একটা চেয়ার টেনে রাফসারের পাশে পড়ে।
বরকত বলে, আপনি কি এখানকার ডাক্তার?
হ্যা। আমি এখানকার ই স্টুডেন্ট ছিলাম। তিনআস আগে ডাক্তার হিসেবে জয়েন করেছি।
এটা কোন হাসপাতাল?
ঢাকা মেডিকেল।
বরকত বলে, সরকারী হাসপাতাল তো।
হু।
তুমি তো অনেক ব্রিলিয়ান্ট একটা মেয়ে।
মেয়েটা মৃদ্যু হেসে চোখের পানি মুছে ফেলে। এই মেধাবি হওয়াটাই কাল হয়ে গেছে তার জন্য ।
ইতিমধ্যে লিনা চলে এলো। লিনা এসেই বলল,নিরব সবাইকে নিয়ে আসছে।
আচ্ছা। ঠিক আছে। তুমি বসো তো লিনা। এতো চিন্তা করতে হবে না।বসো আমার পাশে।
লিনা চুপচাপ বরকতের পাশে বসে পড়ে।
কিছুক্ষন পর মেয়েটা উঠে চলে যায়। যা বরকতের চোখ এড়ায় না।
তার ই পাচ মিনিট পর রাফসারের জ্ঞান ফিরে। সে চোখ খুলেই সিলিং ফ্যান ঘুরতে দেখে মনে মনে খুশি হয়।
রাফসার কিছুক্ষন সেইভাবে থেকে ঘাড় ঘুরালো এবং বরকতকে দেখে বলে উঠে, আপনি এখন কেমন আছেন?
বরকত ততোক্ষনে উঠে বসেছে। বেডে হেলান দিয়ে বসে ছিল। রাফসারের কথায় তার দিকে তাকিয়ে বলে, আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছি। আপনি?
ভালো ই আছি। জানেন আপনি অনেক লাকী। আপনার ওয়াইফ আপনাকে অনেক ভালোবাসে।
একথা শুনে বরকত লিনার দিকে তাকালো। লিনা তার দিকেই চেয়ে আছে।
রাফসার বলে, সবাই যেন আপনার মতো একটা ভালোবাসার মানুষ পায়!
এটা শুনে বরকত বলে উঠে, আপনার জন্য একটা ডাক্তারনী কান্না করছিল।
বরকতের কথা শুনে রাফসার বলে উঠে, আমার জন্য?
হুম। আপনার জন্য ই কান্না করছিল।
রাফসার বলে উঠে, অসম্ভব। আমার জন্য কেন কোন ডাক্তার কাদবে। এরপরে এক দন্ড ভেবে বলে, এটা কি ঢাকা মেডিকেল?
হ্যা। উনি ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার। এই মেডিকেলেই পড়েছে।
রাফসার থমকে গেল। সে যার কথা ভাবছে সত্যি কি বরকত সাহেব তার কথা বলছে?
নিরবরা বরকতের কাছে চলে আসে। তেমন সিরিয়াস না জন্য বরকত কে রিলিজ দিল।
নিরব আর বরকত এক গাড়িতে করে রওনা দিল।
গাড়িতে বরকত প্রায় সব কিছু ই নিরবের সাথে শেয়ার করল।
ধানমন্ডির সামনে গাড়ি জ্যামে আটক পড়ল। নিরব গাড়ি থামিয়ে বলে, তোর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিল রে৷
আরে, বাদ দে তো। আমি খুব খুশি। কারব ফাইলানি লিনা আমাকে ভালোবাসতে পেরেছে৷
এমন সময় নিরবের চোখ গেল একটা কিশোরী মেয়ের দিকে। মেয়েটা কান্না করছে।
সে বরকতকে বলে, মেয়েটা কাদছে কেন?
কি জানি? চল নেমে দেখি।
না। না। তুই নামবি না৷
ধুর। আমার কিছু হয় নি। নাম।
বলে দুইজন ই নেমে গেল।
তারা দেখল মেয়েটাকে দুইটা বখাটে টিজ করছে।
তা দেখে ছেলে দুই টার কাছে নিরব আর বরকত গেল।
নিরব বলল, এসব কি হচ্ছে?
ওদের মধ্যে একটা ছেলে বলে, কিছু ই হচ্ছে না।
নিরব ধমক দিয়ে বলে, তোরা মেয়েটাকে ইভটিজিং করছিলি না?
কে রে তুই কে? এলাকার নেতা তুই? যা এখান থেকে। ভাগ এখান থেকে।
একথা শুনে বরকত চেতে গিয়ে বলে, তোরা জানিস ও কে? ও হলো নিরব চৌধুরি । ওর গুলশানে ছয়তলা বিল্ডিং আছে। প্রত্যক ফ্লাটে চারটা করে বেডরুম। ভাড়া কতো জানিস? পঞ্চাশ হাজার করে। গুলশানে যাওয়ার সাহস আছে তোদের? আমার ভাইয়ের সেখানে ছয়তলা বিল্ডিং। প্রত্যেক ইউনিটে দুই দুই টা করে ফ্লাট।
নিরব বরকতের দিকে তাকালো এবং বলল, রিল্যাক্স ভাই। পুলিশ কল কর।
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
Last part (First)
Arishan Nur
নিরব ধানমণ্ডি সাতাশ নাম্বার রোড থেকে পুলিশ স্টেশনে কল করল।
পুলিশকে কল করতে দেখে ছেলে দুইটা পালাতে চাইলে নিরব একটার কলার ধরে ফেলে আর বরকত আরেকটা ছেলের হাত ধরে ফেলে।
ছেলে দুই টা মিনতি করে বলে, আমাদের যাইতে দেন। ভুল হয়ে গেছে৷
নিরব ঝাড়ি মেরে বলে, চুপ কর!
যাইতেন দেন স্যার, ভুল হয়ে গেছে। এইবারের মতো মাফ করেন। আর করব না৷
কিন্তু নিরব বা বরকত কেউই তাদের কথায় পাত্তা দিলনা। মিনিট পনের পর পুলিশ আসলে নিরব তার পরিচয় দিল এবং ছেলে দুইটাকে পুলিশের হাতে তুলে দিল।
একজন পুলিশ অফিসার বলে উঠে, খুব ভালো করেছেন আমাদেরকে কল করে। আজ-কাল এমন হ্যারেসমেন্ট বেড়ে গেছে৷ আপনাদের মতো সবাই সোচ্চার হলে আমাদের অপরাধীদের খুজতে বা ধরতে সুবিধা হবে৷
নিরব মুচকি হেসে বলে, জি। অবশ্যই সবসময় আপনাদের সাহায্য করার চেষ্টা করব৷
পুলিশ অফিসার ওই দুইটা ছেলেকে ধরে জিপে বসিয়ে থানায় নিয়ে গেল।
বরকত আর নিরব মেয়েটার কাছে গিয়ে বলে, একা বাসায় যেতে পারবে নাকি রেখে আসব আমরা?
মেয়েটা বলল, আমার বাসা পাশেই৷ আমি যেতে পারব। আর আপনাদের ধন্যবাদ আমাকে সেইভ করার জন্য।
এবারে বরকত বলল,শোন কখনো এমন কোন বিপদে পড়লে মাথা ঠান্ডা রাখবে। কখনোই চুপ থেকে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবে না আর কান্না করে নিজেকে দুর্বল বানাবে না। কান্না করে বা চুপ থাকলে এই শ্রেণির লোকদের সাহস বেড়ে যায়। কিন্তু ওদেরকে জয়ী হতে দেওয়া যাবে না। গট ইট?
মেয়েটা মাথা নেড়ে বলে, হু।
নিরব বলল, শুধু হু বললেই হবে না। আশেপাশে এমন ঘটনা দেখলে চুপ থাকবে না। বরং প্রতিবাদী হবে। আওয়াজ করবে। মনে রাখবে আওয়াজ করলেই প্রতিধ্বনি হবে। এর আগে না। তাই চুপ থাকা সমাধান না৷ এবার সাবধানে বাসায় যাও৷
মেয়েটা আবারো একবার ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল।
বরকত নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে, ছোট একটা মেয়ে, তাও দেখ হ্যারেসমেন্টের শিকার হতে হচ্ছে।আর চারপাশের মানুষের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই৷
নিরব তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, যতদিন নিজের কারো সাথে কোন অন্যায় হয় না, ততোদিন পর্যন্ত এই শহরের মানুষ সব দেখেও ঘুমায়।
কথাটা বলতে বলতে নিরব রাস্তায় থাকা একটা ইটে ঢিল মারল।
বরকত গিয়ে গাড়ি তে গিয়ে বসল৷
নিরব ও তার পিছনে পিছনে গিয়ে গাড়িতে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করল৷
বরকত কে সীমা খালার বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। কারন লিনা আর বরকত যে বিল্ডিং এ থাকে সেটা এখন আর বসবাসযোগ্য নয়৷ তাই এখন বরকত তার বাবা-মায়ের সাথে থাকবে৷
বরকতকে বাসায় ড্রপ করে কিছুক্ষন তাদের সাথে থেকে নিরব রওনা হলো তার নিজের বাসার উদ্দেশ্য।
বাসায় পৌছে যেই না গাড়ি থেকে নামবে ওমনি নিরবের প্রমিতির সাথে থাকা ব্যাগের কথা মনে হলো। সে গাড়ির পেছন থেকে ব্যাগটা বের করল। কালো রংয়ের৷ মিডিয়াম সাইজের ব্যাগ।
নিরব সেটা হাতে নিল। কিন্তু বাসার ভেতর ঢুকল না। ব্যাগটা হাতে নিয়ে ছাদে গেল। এখনা থেকে যদি প্রমিতির পরিচয় পায়। এর আগে একজন বিশেষজ্ঞর সাথে কথা বলে প্রমিতির চিকিৎসা শুরু করতে হবে৷
★★★
রাফসার বিকেল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলেই থাকল। তার কোন ফ্যামিলি নেই। এতো বড় শহরে যেখানে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস সেখানে সেই বুঝি একমাত্র প্রানী যার কোন আপনজন নেই৷ বড্ড আপনজনহীনতায় ভুগছে সে৷ নাহ, একটু ভুল বলল, ছিল একজন কেউ! তাকে আপন ভাবত না। বরং নিজের শরীরের একটা অংশ ভেবে বসেছিল। কিন্তু সে আর নেই। রাফসার ভেবেছিল ও চলে গেলে আর বুঝি বাঁচবে না সে। কিন্তু এ ধারনা ভুল। ঠিকই তো তিন বছর তার চেহারা না দেখে দিব্যি দিন চলে যাচ্ছে রাফসারের।
রাফসার আশেপাশে তাকালো। বরকত সাহেব কি তবে অতসীর কথা বলছিল? অতসী তো এই মেডিকেলেই পড়ে। না পড়ত৷ এখন পড়া শেষ। রাফসার খবর পেয়েছে যে অতসী এখানেই চাকরি পেয়েছে। কিন্তু যদি আসলেই মেয়েটা অতসী হয়ে থাকে তবে আর কেন দেখা দিল না সে?
রাফসার একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। সে উঠে দাড়ালো। মনস্থির করল যে একবার হলেও অতসীকে খুজে দেখবে। যদি না পায় তবে উড়াল দিবে। আর খুজে পেলেও যে কাছে গিয়ে ধরা দিবে এমনটা মোটেও না! বরং দূর থেকে একবার দেখেই সরে আসবে।
আচ্ছা, অতসী কি এখনো লিপস্টিকের উপর ভেসলিন লাগায়? চুল গুলো কি আজো ঝুটি করে ডান পাশের ঘাড়ের ছেড়ে রাখে? চশমা পড়ে? আচ্ছা ওর কি চশমার পাওয়ার বেড়েছে? ডান চোখে তো মাইনাস ছিল। এখন কি অবস্থা কে জানে?
রাফসার ধীর পায়ে ওয়ার্ডের বাইরে গেল। অনেক মানুষের ভীড়। যে যার মতো ব্যস্ত। রোগীর চেয়ে রোগীর সাথে আসা লোকেদের ভীড় বেশি। রাফসার এই হাসপাতালের রোগীদের দেখে কিছুটা জেলাস ফিল করছে। সে দেখতে পেল একটা মেয়ে অসুস্থ। তাকে তার মা আদর করে খাওয়াচ্ছে। আর মেয়েটার বাবা পাশেই বসে মেয়েকে পাখা বাতাস করছে৷
রাফসার সেদিকটায় খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে অতসীকে খুজতে বের হলো৷
ওয়ার্ড হতে কলিডোরে এসেই সে বুঝতে পারল, কতো বড় বোকার মতো কাজ করেছে। এতো বড় হাসপাতাল! এতো এতো ওয়ার্ড৷ কেবিন, রুম যার কোন হিসাব নেই। আবার কতো তলা বিল্ডিং তা জানে না রাফসার।
হতাশার একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। সরকারি হাসপাতাল। রিসিভশনে জিজ্ঞাসা করে খুব একটা লাভ হবে না বুঝি!
তাও রিসিভশন গেল রাফসার। সেখান থেকে খবর পেল। ডা.অতসীর ডিউটি টাইম মাত্র শেষ হয়েছে।
রাফসার সময় দেখল, সাড়ে পাঁচটা বাজে। সে হাসপাতালের গেটের সামনে দাড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো।
অতসীর সাথে পরিচয়টা খুব সাদামাটা ভাবেই হয়েছিল৷
ফ্লেক্সিলোড করতে অতসী গিয়েছিল দোকানে। সেই দোকানের সামনে রাফসার দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল। রাফসার নতুন এসেছে এলাকায়।
অতসী তাকে দেখে দোকানদারকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে, আজ-কাল বখাটেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। দোকানের সামনে মেয়েদের নাম্বার শোনার জন্য ওত পেতে দাড়িয়ে থাকে। আপনি এক কাজ করেন রবির একটা কার্ড দেন।
একথাগুলো রাফসারের কান অব্দি যায়। এতো লজ্জা লাগতে লাগে তার। লজ্জায় কান থেকে ধোয়া বের হতে লাগে তার। আর সিগারেট খাওয়ায় মন দিতে পারেনা সে। ওখানেই সিগারেটের আগুন নিভিয়ে চলে আসে।
পরে জানতে পারে রাফসার যে সাবলেটে উঠেছে সেই বাসার মালিকের একমাত্র কন্যা হলো অতসী। কিন্তু তাও কিভাবে কিভাবে যেন তাদের মধ্যে প্রেমের সূচনা ঘটে যায়। এটার জন্য অবশ্য রাফসারের চেহারা দায়ী। সে কিছুটা বাংলা চলচিত্রের নামকরা গায়ক তাহসানের মতো দেখতে। তখনকার দিনে তাহসান ছিল আইকনিক ক্যারেক্টার। তার জন্য হাজার হাজার মেয়ে পাগল। অতসীও ছিল তার মধ্যে একজন। অতসী প্রায়ই আক্ষেপ করে বলত, মিথিলার জায়গায় যদি আমি হতাম!
রাফসারের সিগারেটের টান দেওয়া থেমে গেল।
সে তার চোখের সামনে অতসীকে দেখতে পেল। সিড়ি থেকে নামছে। হাতে এপ্রোন। চোখে চশমা পড়া। কিন্তু আজকে চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া। আগে তো চুল ছেড়ে দিত না। ইদানিং দেয় নাকি ছেড়ে? নাকি আজকেই দিয়েছে।
রাফসার আস্তে করে সরে এল। যেন তাকে অতসী দেখতে না পায়।
ঢাকা মেডিকেলের গেটের সামনেও রোগী বসা থাকে। মানুষের গিজগিজ গেটের সামনেও। তবুও একটা পিলারের পেছনে দাঁড়িয়ে গেল রাফসার৷
মাথাটা হালকা ঝুকিয়ে অতসীকে দেখতে লাগল। কাউকে ফোন লাগাচ্ছে অতসী।
রাফসার তাকিয়ে আছে অতসীর দিকে। খুব করে গিয়ে অতসীর সামনে ধরা খেতে চাচ্ছে সে। কিন্তু পারছে না৷ পা দুটি যেন আসড় হয়ে গেছে৷
গাড়ি চলে আসল। অতসী গাড়িতে ঢুকে পড়ে। রাফসার তাকে ডাকতে গিয়ে ও ডাকল না।
থ মেরে দাঁড়িয়ে রইল সেখানেই।
অতসী আর তার প্রেম ভালোই চলছিল। কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন অতসীর বাবা এটা জানতে পারে৷ অতসীর বাবা কিছু তেই রাফসার আর অতসীর সম্পর্ক মেনে নিবে না৷ এরই মধ্যে অতসী ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেল৷
এই কারনে অতসীর বাবা আরো উঠেপড়ে গেলে যায়, রাফসারের পেছনে। তার ঢাকা মেডিকেল পড়ুয়া মেয়ে কেন একটা সামান্য ফায়ার ব্রিগেডে জব করা ছেলের সাথে প্রেম করবে!
উনি অতসীকে অনেক বুঝিয়েছিল কিন্তু সম্ভবত অতসী বুঝতে নারাজ ছিল। তাই তো রাফসারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয় যে রাফসার আরও দুইটা মেয়ের সাথে প্রেম করে৷ ব্যাস, অতসী তাকে এবার ভুল বুঝল। ভাবল রাফসার তাকে ঠকাচ্ছে। কিন্তু এর পেছনের ষড়যন্ত্র টা আর দেখল না।
অতসীর বাবাও তাকে তাদের বাসা থেকে বের করে দেয়। উনি রাফসারের কাছ থেকে ওয়াদা করিয়েছিলেন যার দরুন রাফসার আজকে আর অতসীর এতো কাছে থেকেও সামনে গেল না।
জীবনে মাত্র দুইবার শপথ নিয়েছে সে। প্রথম শপথ ছিলঃ নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে হলেও বিপদে পড়া মানুষ কে বাচাবে আর দ্বিতীয় শপথ হলোঃ অতসীর সামনে আর কোন দিন আসবে না।
দুইটি ওয়াদাই সে রেখেছে আর ভবিষ্যতে রাখবে।
রাফসার সিগারেটে টান মারল এবং ধোয়ার দিকে তাকিয়ে রইল আর মনে মনে বল,চেহারা তাহসানের মতো দেখতে হলেও ভাগ্যটাও কিছুটা একই রকম! দুজনই প্রিয়তমা হারিয়েছি!!!
রাফসার মনে মনে বলতে লাগে,
প্রতিটা দিনই তোমায় দেখার ইচ্ছেটাকে পুড়িয়ে মারি।
প্রতিটা দিন তোমার প্রতি ভালোবাসাগুলোকে বহুদূর পাঠানোর প্রয়াস করি।
আচ্ছা ভালোবাসা কি কেবল কি প্রতরক?
উত্তর জানা নেই তার।
★★★
নিরব প্রায় আধ ঘন্টা ধরে প্রমিতির জিনিস-পত্র গুলো দেখল। সে যা বুঝলো তা হলো প্রমিতির বাবা তাকে খুব খুব ভালোবাসে!
আর প্রমিতির মা নেই এটা বুঝতে পেরেছে নিরব৷
প্রমিতির বাবা কি তার মেয়েকে খুজছেন না? খুজতে পারে।
নিরব ফোন লাগালো তার এক পরিচিত নিউরোলজিস্টকে। উনাকে প্রমিতির ব্যাপারে সব বললেন৷
উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলতে লাগলেন, এমন হতে পারে। সম্ভাবনা আছে। কিন্তু খুব রেয়ার!
নিরব বলে উঠে, তাহলে ও ভাষা কিভাবে বুঝতে পারল? আর খাবারের স্বাদ এসব কিভাবে বুঝে ফেলে?
হ্যা উত্তর দিচ্ছি। ব্রেইনের সব স্নায়ু একই কাজ করে না। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন স্নায়ু দায়ী। সহজভাবে বলি?
বলেন।
ভাষা আর স্মৃতি এক স্তরে থাকে না। মানুষের বেইসড মেমরি লোপ পায়না কোন দিন। বেইসড মেমরি হলো জন্মের পর থেকে চার বছর অব্দি যা ঘটে। তাই ভাষা, খাবারের স্বাদ, হাটা-চলা এগুলো কোন দিন ভুলবে না কেউ। অনেকে এটাকে গ্রে ম্যাটার মেমরি বলে। আর এবার সাইন্টিফিক ভাবি বলি, মানুষ স্মৃতিশক্তি হারালে তার কগনিটিভ, মটর স্কিল, একুওয়ারড ফাংশন লস করে যা পুরোপুরি ব্রেইনের লিম্বিক সিস্টমের সাথে সম্পর্কিত। মাতৃভাষা কোন একুয়ারড নলেজ না। তাই ভুলে না। কিন্তু স্মৃতিশক্তি হারালে মানুষ সব ভুলে যায় এটা সঠিক না। তবে কিছু সিরিয়াস রেয়ার কেসে ঘটতে পারে। আমি এমন কোন কেস পাইনি এখনো।
ও। আচ্ছা। ধন্যবাদ। রাখি তাহলে
ওকে।
নিরব চিন্তায় পড়ে গেল৷ প্রমিতি কি তার সাথে ছলনা করছে? প্রমিতি কে যে সে ভালোবেসে ফেলেছে। এখন তাকে ছাড়া থাকা যে বড্ড কঠিন!
নিরব আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ দেখলেই তার মন মূহুর্তের জন্য ভালো হয়ে যায়৷ কিছু সময়ের জন্য সব চিন্তার অবসান ঘটে।
★★★
এদিকে পুলিশ স্টেশনে ধোলাই খেল রোহান। ধানমণ্ডি ফ্রেন্ডের ম্যাসে উঠেছে সে। তার বন্ধু আরিফ নাকি বিকেল হলে মেয়েদের ইভটিজিং করে। তাই আজকে তাকেও সঙ্গে নিয়ে গেল৷ রোহান অবশ্য ইন্টারেস্টেড ছিল তাই রাজী হয়ে যায়।
যার ফলে মিলল পুলিশের লাথি। আরিফের অবস্থা ভালো না। তাই দ্রুত হাসপাতালে নিল। ধানমন্ডির আশেপাশের হাসপাতালেই নিল।
চলবে।
তুই আমার সুরঞ্জনা
last part (Second)
Arishan Nur
নিরব ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিল। বাসায় গিয়ে বেল বাজালো।
পাচ মিনিটের মধ্যে প্রমিতি এসে গেট খুলে দিল। প্রমিতিকে দেখে মুচকি হাসল নিরব।
প্রমিতিও বিনিময়ে একটা হাসি উপহার দিল নিরবকে। নিরব এক পলক প্রমিতির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ভেতরে ঢুকল।
নিজের রুমে গিয়ে একটা আলমারি তে রাখল। তারপর ফ্রেস হওয়ায় জন্য বাথরুমে গেল।
এদিকে প্রমিতি গুটিগুটি পায়ে নিরবের রুমে এসে আলমারির সামনে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল। নিরব যখন-তখন বের হয়ে যেতে পারে৷
প্রমিতির মনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সে শাড়ির আচল হাত দিয়ে মোচড়াতে লাগে৷
হুট করে পেছন থেকে কারো স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠে প্রমিতি।
নিরব প্রমিতির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, কি ব্যাপার? আলমারির সামনে কি করছো? হুম?
নিরবের মুখের গরম বাতাস কানে লাগতেই প্রমিতি ঘামতে শুরু করল। সে আমতাআমতা করে বলে, আব,,,,আমি তো তো,,,তোমার জ,,জন্য অপেক্ষা ক,,করছিলাম।
নিরব প্রমিতির কোমড়টা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে বলে, তাহলে তোতলাচ্ছে কেন? আমার কাছ থেকে কি কিছু লুকাচ্ছো?
প্রমিতি ঘাবড়ে গেল। সে বলল, না তো।
প্রমিতিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিরব তার দুইহাত ধরে এবং চোখে চোখ রেখে বলে, আই লাভ ইউ, প্রমিতি।
প্রমিতি চমকে উঠে। তার বুকের ভেতর অজস্র হাতুড়ি একসাথে পেটাচ্ছে বুঝি কেউ। প্রমিতি একটা ঢোক গিলে। সে কিছু না বলে নিরবের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে চোখের দৃষ্টি নিচু করে ফেলে।
নিরব প্রমিতির মুখটা উচু করে তার চোখে চোখ রেখে বলে, যারা কিছু লুকায় তারা চোখে চোখ রাখতে পারেনা। তুমি তো কিছু লুকাচ্ছো না। তাহলে কেন চোখের দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছো?
প্রমিতি মৃদ্যু হাসলো। কিন্তু মুখে কিছু বললনা।
নিরব হালকা করে প্রমিতির কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিল এবং আস্তে করে বলে, আমার জন্য এক কাপ চা আনো।
আচ্ছা বলে প্রমিতি রান্নাঘরে চলে যায়।
প্রমিতি নিরবের রুম থেকে বের হয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। সে কোন মতো চুলোয় গরম পানি করতে দিল৷ কিন্তু কিছুতেই কোন দিকে তার মন বসছেনা৷ কানে শুধু নিরবের বলা একটা কথাই ভাসছে, আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো নাতো?
প্রমিতির হাত কাপতে লাগলো। এদিকে পানি গরম হয়ে গেছে।সে দ্রুত হাড়ি থেকে পানি কাপে ছাকতে গিয়ে গরম পানি নিজের হাতে ফেলে দিল এবং ও মাগো বলে চেচিয়ে উঠে।
তার চেচানোর আওয়াজে নিরব বের হয়ে এলো। এবং প্রমিতির হাত দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। সে দ্রুত প্রমিতিকে রুমে নিয়ে আসল এবং সোফায় বসিয়ে দিল।
নিরব কিছুটা রাগান্বিত স্বরে বলে, সাবধানে কাজ করবে না? যদি চা বানাতে না পারো তাইলে করতে না। সিম্পেল। দেখি হাত দাও। আমি মলম লাগিয়ে দিচ্ছি।
প্রমিতি হাত বাড়িয়ে দিল।
নিরব কিছুটা হেসে বলে, টিভি-সিনেমার নায়িকার মতো ঢং শুরু করবে না তো আবার?
না। একদমই না। তুমি লাগিয়ে দাও।
নিরব প্রমিতির হাতে মলম লাগিয়ে তার পাশে বসল।
এবং নরম সুরে বলে, তোমার কি কোন সমস্যা হচ্ছে?
প্রমিতি কাপা কন্ঠে বলে, না, তো। আমার কেন কোন সমস্যা হবে৷
তাহলে কাপছো কেন?
প্রমিতি এবার নিরবের দিকে তাকালো। নিরবের চোখে সন্দেহ। সেই সাথে প্রশ্ন ও রয়েছে।
প্রমিতি কিছু বলতে পারল না। তাই চুপ রইল।
নিরব কিছুটা প্রমিতির দিকে ঝুকে বলে, তুমি কিন্তু এখনো একবারো বলনি যে আমাকে ভালোবাসো। তাহলে কি আমি মেনে নিব দ্যাট ইউ ডোন্ট লাভ মি?
প্রমিতি আরেকদফা কেপে উঠল।
নিরব প্রমিতির দুই কাধ শক্ত করে চেপে ধরে বলে, কি হলো উত্তর দাও না!
প্রমিতির ঠোঁট কাপতে লাগল। বিরবির করে কিছু বলছে যা মোটেও ধ্বনি হিসেবে বাইরে বেরুচ্ছে না তাই নিরব ও শুনতে পেল না।
সে প্রমিতির আরেকটু নিবিড়ে গিয়ে শক্ত করে প্রমিতিকে জড়িয়ে ধরে। আর এদিকে প্রমিতির বুকে জলোচ্ছ্বাস বয়ে যাচ্ছে৷
নিরব প্রমিতির দিকে ঝুকে আসতেই প্রমিতি বিছানায় ঠপ করে পড়ে গেল। এতে প্রমিতির চুল কাধ থেকে সরে গেল।
নিরবের দৃষ্টি সেদিকে। নিরব প্রমিতির কাধে হাত দিতেই প্রমিতি একটু কোকিয়ে উঠে।
নিরব কঠিন গলায় বলে, এই মার্ক টা কিসের?
প্রমিতি চমকে গিয়ে উঠে বসল৷
নিরব আবারো প্রশ্ন করে, এটা কিভাবে হয়েছে? মনে হচ্ছে ছ্যাকা লাগছে৷ কিন্তু কিভাবে?
প্রমিতি আস্তে করে বলে, জানি না তো!
নিরব ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন প্রমিতির দিকে তাকিয়ে রইল। এরপর প্রমিতির হাত ধরে দিল এক টান। যার ফলে প্রমিতি সোজা নিরবের বুকে আছড়ে পড়ল।
প্রমিতি নিরবকে জড়িয়ে ধরে বলে,
আমার মনের ঘরটা বড্ড অন্ধকার ছিল!
আমার মনের সেই কুঠুরিটা তুমি আলোকিত করে দিয়েছো৷
আজ আমি কেবল তোমার জন্য মনের ঘরটায় মরিচবাতির আলোয় লাল-সবুজের স্বপ্ন বুনছি!
আমাকে কখনো একা ছেড়ে যেও না নিরব!
তুমি ছেড়ে চলে গেলে আমার মনের ঘরটার সব আলো নিভে যাবে আবারো৷
নিরব প্রমিতিকে শক্ত করে ধরে দুষ্টোমি করে বলে, কেন? আমি কি কারেন্ট নাকি?
একথা শুনে প্রমিতি হেসে দিল।
★★★
লিনা বরকত কে স্যুপ খাওয়ালো। বরকত বেশ মজা করে স্যুপ খাচ্ছে আর বলছে, খুব মজা হয়েছে খেতে।
লিনা হালকা হেসে বলে, থ্যাংকস। আরেকটু দিব?
আছে আরো?
হ্যা। হ্যা। অনেক গুলো আছে।
বরকত স্যুপের বাটি এগিয়ে দিয়ে বলে, তাহলে আরেকটু দাও।
লিনা বাটি নিয়ে গেল৷ কিছুক্ষন পর গরম গরম স্যুপ আর অন্থন আনলো।
বরকত অন্থন হাতে নিয়ে বলে, তুমি অন্থনো বানাতে পারো?
লিনা এক গাল হেসে বলে, চাইনিজ সব আইটেম বানাতে পারি আমি৷
বরকত অন্থনে কামড় বসিয়ে দিল এবং বলল, ফাস্ট ক্লাস হয়েছে৷
তারপর খেতে খেতে বলে, আর কি কি বানাতে পারে আমার বউ শুনি একটু?
লিনা বলল, শুধু চাইনিজ আইটেম ই পারি।
বিফ সিজলিং বানাতে পারো?
লিনা বলে, হ্যা পারি।
আমাকে বানায় খাওয়াতে পারবে?
অবশ্যই।
বরকত স্যুপের মধ্যে অন্থন ডুবিয়ে নিয়ে অন্থনটা ভিজিয়ে নিয়ে খেতে লাগলো।
লিনা কিছুটা সময় বরকতের দিকে চেয়ে থেকে বলে, তোমার সাথে অনেক মিসবিহেইভ করেছি তাইনা?
বরকত খাওয়া থামিয়ে দিয়ে বলে, নাহ, মোটেও না৷
বরকত! আমি তো জানি কেমন বিহেইভ করতাম তোমার সাথে৷ আমাকে ক্ষমা করা তোমার ঠিক হয় নি৷
বরকত খাওয়া প্লেট সরিয়ে রেখে লিনার কাছ্ব গিয়ে লিনাকে শক্ত করে চেপে ধরে বলে, পাগল নাকি তুমি? আর আমার সাথে রাগ করবা না তো কার সাথে করবা? শুনি?
লিনা কেদে দিল। তাকে কাদতে দেখে বরকত বিচকিত হয়ে বলে, প্লিজ লিনা কেদো না৷
লিনা কাদতে কাদতে বলে, আমি ক্ষমার অযোগ্য বরকত!
আচ্ছা৷ একটা কাজ করলে আমি তোমাকে মাফ করে দিব৷ করবে কি সেই কাজটা?
লিনা কান্না থামিয়ে বলে,কোন কাজ?
বাবাকে এখুনি ফোন করে তার কাছে ক্ষমা চাও৷
লিনা নিষ্পলক ভাবে বরকতের দিকে তাকালো।
বরকত হালকা হেসে দিল এবং বলল, আমি জানি বিয়ের পর তুমি বাবার সাথে ঠিক মতো কথা বলনা৷ ওনার উপর রেগে আছো। কল হিম।
লিনা দ্রুত তার বাবাকে কল লাগালো এবং ক্ষমা চাইল। তার বাবা তো অবাক। লিনার বাবা জানেই না লিনার সাথে কতো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছিল৷
উনি নির্দ্বিধায় মেয়েকে ক্ষমা করে দেয়।
এবার বরকত বলল, যেহুতু বাবা ক্ষমা করেছে তাই আমার ক্ষমা না করার কোন কারন নেই৷
একথা শুনে লিনা বরকতের বুকে মাথা রেখে বলে, আমি সত্যি কোন পুন্য কাজ করেছিলাম তাই তো তোমাকে লাইফ পাটনার হিসেবে পেয়েছি৷ থ্যাংকস টু ওলমাইটি আল্লাহ
বরকত এবার বলে উঠে, তোমাকে আমি নিজের স্ত্রী হিসেবে পেয়েছে অজীবন আলাহর উপর কৃতজ্ঞ!
★★★
রোহান আর আরিফ পপুলারে এডমিট হয়েছিল কালকে রাতে। আজকে সকালে রিলিস পেয়েছে।
রোহান ক্যাশ কাউন্টারে টাকা দিচ্ছে৷ এদিকে আরিফ বলেই যাচ্ছে, এরা মানুষ নাকি ডাকাত! এতো টাকা বিল নেয়!
রোহান বিল মিটালো৷ এমন সময় পাশ থেকে এক নারী কন্ঠে শুনতে পেল, কেউ নিরব চৌধুরির নাম নিচ্ছে৷
এই নাম আগেও শুনেছে সে। তাই পেছন ঘুরলো। এক লেডি ডাক্তার একজন ওয়াড বয়ের সাথে কথা বলছে।
উনি বলছে, নিরব চৌধুরির ওয়াইফ প্রমিতি কিছু দিন আগে এখানে এডমিট হয়েছিল।এক্সিডেন্ট কেস৷
প্রমিতি নাম শুনে রোহান আর এক দন্ড না থেমে ডাক্তার টার কাছে গেল৷ এবং বলল, ম্যাডাম একটু শুনবেন?
লেডি ডাক্তার টা বলল, জি বলেন।
আপনি মাত্র প্রমিতির নাম নিয়েছেন?
হু৷ কেন?
রোহান ফোন থেকে প্রমিতির ছবি বের করে দিয়ে বলে, ওই কথা বলছিলেন৷
লেডি ডাক্তার টা বলল, হ্যা। ওনার ই তো প্রমিতি৷
রোহান যেন চাঁদ হাতে পেল। সে দ্রুত ডাক্তারের কাছ থেকে নিরবের বাসার এড্রেস নিল। তারপর ছুট লাগালো নিরবের বাসার দিকে।
★★★
রাফসার মহাখালি ফ্রাইওভারের সামনে দাড়িয়ে আছে। রাস্তা ক্রস করে দশ মিনিট হাটলেই তার বাসা। সে দাঁড়িয়ে সিগারেট টা শেষ করে নিল। তারপর পাশের দোকানে গিয়ে বলে, এক হালি ডিম দেন তো। আর কতো করে?
বিক্রেতা বললো, চল্লিশ টাকা৷
রাফসার বলে, সব খানে তো ত্রিশ করে। তোমার এইখানে দাম বেশি ক্যান?
এইটুকু বলেই থেমে গেল সে৷ সে কি ভুল দেখছে? অতসী এখানে কেন? আর এটা কি অতসীই নাকি তার ভ্রম?
সে হ্যাবলার মতো চেয়ে রইল। তার মনে হচ্ছে সে ভুল দেখছে।
বিক্রেতা বললো, স্যার পয়ত্রিশ করে দেন।
রাফসারের ঘোর কাটলো। সে মৃদ্যু সুরে বলে, দাও৷
ডিম হাতে নিয়ে রাফসার হাটা ধরল। ইদানীং তার কি যেন একটা সমস্যা হয়েছে৷ যেখানে-সেখানে অতসীকে কল্পনা করে৷ ভয়ে সাইক্রিয়েটিস্টের কাছে যাচ্ছে না। তার সমস্যা শুনলে ডিরেক পাগল ভাববে৷
রাফসার তার বাসার সামনে আসল। হুট করে কেউ তার ডিম গুলোর ব্যাগ ধরে দিল টান। যার ফলে ডিম চারটে ভেঙে গেল৷
রাফসার হতভম্ব হয়ে পেছনে তাকিয়ে বিষম গেল।
বিরবির করে বলে, অতসী!
অতসী বলে উঠে, কেমন আছো?
রাফসারের পিপাসা পেয়ে গেল। সে মনে মনে বলে, আজকেই ডাক্তার দেখাতে হবে৷
এই বিরবির করে কি বলছো?
রাফসার অতসীর দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি বাস্তবে আছো নাকি আমার কল্পনা?
কল্পনা কেন হতে যাব? বলে রাফসারের হাতে অনেক জোড়ে চিমটি বসিয়ে দিল৷
রাফসার আহ করে উঠে৷
অতসী হিহি করে হেসে বলে, তুমি নাকি অনেক ব্রেভ? এই তার নমুনা?
রাফসার কিছু বললনা।
অতসী বলল, আমাকে দেখে পিলারের পেছনে লুকালে কেন? ভয় পাও আমাকে?
বড্ড!
এই ভয়ের সাথেই বাকিটা জীবন থাকতে হবে৷ রাজী?
এক হাজার বার!
একবার হলেই হবে।
★★★
বেল বাজার শব্দে প্রমিতি উঠে গিয়ে গেট খুলতেই থমকে গেল। তার হাত-পা জমে বরফ হতে লাগল। প্রমিতি থ মেরে দাড়িয়ে রইল। কোন কথা বলতে পারছেনা৷
বাসায় সবাই আছে। বরকত রাও ঘুরতে এসেছে কিছুক্ষন আগে।
প্রমিতিকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিরব তার কাছে যায়।
সে শুনতে পায়, প্রমিতি আস্তে করে বলছে, রোহান! এখানে কি করছে?
নিরব ভ্রু কুচকে প্রমিতির দিকে তাকালো তারপর গেটের দিকে তাকাতেই তার মাথা গরম হয়ে গেল।
সে ধমক দিয়ে বলে,এই ছেলে তুই এখানে কেন?
রোহান জোর গলায় বলে, আমি রোহান। প্রমিতির হবু বর৷
একথা শুনেই প্রমিতি ভয়ে পেছাতে লাগে৷ রোহানের নিরবের বাসায় ঢুকবে তার আগেই নিরব রোহানের কলার ধরে ফেলে আর বলে,ও আমার বউ। ওকে? জাস্ট গেট আউট।
রোহান বলে, না, প্রমিতির সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা। ওকে আমার হাতে তুলে দেন৷
একথা শুনে নিরব অনেক রেগে যায় এবং কড়া চোখে প্রমিতির দিকে তাকালো।
প্রমিতি ভয়ে গড়গড় করে বলে, আমি রোহানকে বিয়ে করতে চাইনি৷ ও জোড় করে বিয়ে করত্ব চায় আমাকে।
নিরব আর কিছু না শুনে রোহানকে বাসা থেকে বের করে দেয়। এবং ফিরে এসেই প্রমিতির গালে অনেক জোড়ে একটা থাপ্পড় বসায়৷
এবং চিৎকার-চেচামেচি শুরু করে প্রমিতির সাথে।
নিরবের কন্ঠ শুনে সবাই বেরিয়ে আসে।
বরকত ও আসে সবার সাথে।
নিরব ভীষণ রেগে গিয়ে বলে, হাউ ডেয়ার ইউ? ইউ চিট অন মি৷ আমাকে মিথ্যা বলেছে তুমি? এতো সাহস তোমার?
প্রমিতি কিছু ই বলছে না জাস্ট কেদেই চলেছে৷
বরকত প্রমিতির কাছে গিয়ে বলে, ওকে এসব আমিই করতে বলেছি৷ স্মৃতি শক্তি হারানোর নাটক করতে আমি বলেছি ওকে।
নিরবঃ হুয়াট?
হুম।
নিরব আরো রেগে গিয়ে বলে, তোরা দুইজন ই আমার চোখের সামন থেকে দূর হ।
কান্নারত অবস্থায় ই প্রমিতিকে নিয়ে বের হলো বরকত ।
বাসার কেউ ই কিছু বুঝতে পারছেনা৷
নিরব তার রুমে গিয়ে গেট লাগিয়ে দিল এবং আশেপাশে যা পাচ্ছে তাই ভাংচুর করছে৷
এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। প্রমিতি আর বরকত নিরবের বাসার সামনের ব্রেঞ্চে বসে আছে৷
প্রমিতি কান্না করতে লাগলো এবং বলল, আমি আগেই বলেছিলাম মিথ্যা অভিনয় না করি৷ এখন দেখলেন ও আমাকে ভুল বুঝলো। আই লস্ট হিম ফর ফরইভার!
আরে রিল্যাক্স। আর দশ মিনিট ওয়েট করো৷ও নিজে তোমার কাছে আসবে৷
প্রমিতি কান্না করেই যাচ্ছে। হুট করে দেখতে পেল রাস্তার শেষ মোড়ে নিরব দাড়িয়ে আছে। প্রমিতি চোখের পানি মুছে ঠিক ভাবে তাকালো। সত্যি এটা নিরব।
সে দেখতে পেল। নিরব এক প্রকার দৌড়ে তার কাছে আসছে৷
নিরবক্ব আসতে দেখে বরকত অন্য দিকে সরে গেল৷
নিরব হাপাতে হাপাতে প্রমিতির কাছে এসে কোন রকম বলে, তুমি আকবর করিমের মেয়ে?
প্রমিতি কান্না করতে করতে বলে, হু৷ কিন্তু কি হয়েছে?
নিরব বিজয়ের হাসি হেসে বলে, তোমার বাবা আর আমার বাবা বন্ধু ছিল। আকবর আংকেল আমাদের অনেক বড় একটা উপকার করেছিল।তোমার সৎ মা কি খুব অত্যাচার করত তোমাকে?
হু। এসব কে বলল আপনাকে?
বরকত। ম্যাসেজ দিয়েছে আমাকে একটু আগে। আই এম সর্যি প্রমিতি।
প্রমিতি বলল, সর্যি তো আমার বলা উচিত! আপনাকে মিথ্যা বলে বিয়ে করেছি৷
নিরব প্রমিতির মুখে আঙুল দিয়ে বলে উঠে,
যে হৃদয়ে তুমি নেই, ভেবে নিও সে হৃদয় আমার না!
যে চোখে তোমার প্রতিচ্ছবি নেই, ভেবে নিও সেই চোখজোড়া আমার না!
যে নিশ্বাসে তুমি নেই, ভেবে নিও সেই প্রশ্বাস আমার না!
তুমিহীনা এই আমি! কল্পনাতীত!
যে আষাঢ়ে তুমি নেই, সে আষাঢ়ের বৃষ্টির ফোটা যেন আমার গা না ভেজায়!
যে বসন্তে তুমি নেই, সে বসন্তের ফুলের সুভাস
যেন আমার গায়ে না মাখে!
যে শহরে তুমি নেই, সে শহরের সড়কবাতির হলদে আলো যেন আমায় না ছোয়!
যে হৃদয়ে তুমি নেই, সে হৃদয় যেন আমার না হয়!
কারন? কারনটা অতি তুচ্ছ এবং নূন্যতম।
তাও জানিয়ে রাখি, কারনটা হলো,
তুই আমর সুরঞ্জনা!!!!
নূর।
[সমাপ্ত]