কালো যাদু (প্রথম খন্ড)

    গল্পঃ কালো যাদু
    #Writer_Mst_Moni
    #Part_01

    বিঃদ্রঃ এই গল্পে কালো যাদুর ভয়ানক পরিনতির কথা উল্লেখ করা হবে।

    এক পাশে প্রেমিক এবং অন্য হাতে প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট হাতে নিয়ে বসে আছে মাহি। রিপোর্ট পজিটিভ। বার কয়েক টেস্ট করার পরেও রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। মাহির হাত পা কাঁপছে। সে একবার ডক্টরের দিকে, একবার রিপোর্টের দিকে একবার প্রেমিকের দিকে তাকিয়ে তার ভাবভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করলো। মাহির প্রেমিকের কোনো হেলদোল নেই। তার প্রচন্ড বিশ্বাস আছে মাহির উপর। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব সেটাই বুঝতে পারছে না৷
    ডক্টর মাহিকে উদ্দেশ্য করে বললেন “মিস মাহি, আপনার সম্পর্ক আছে। কখন কোথায় কিভাবে আপনি কি করেছেন তাতো জানিনা। তবে রিপোর্ট পজিটিভ আসবে সেটাও তো স্বাভাবিক।” মাহির প্রেমিক রাব্বি একপ্রকার হুঙ্কার দিয়ে বললেন “স্টপ ডক্টর, সম্পর্ক থাকে মানেই সবাই অবৈধ ভাবে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় সেটা আপনাকে কে বললো? মাহির মানসিক অবস্থা খারাপ, এই সময়ে এই গুলো না বলাই ভালো।” এবার ডক্টর বললেন “কিন্তু তা বললে তো হবেনা মিস্টার রাব্বি। আপনি দাবি করছেন আপনার সাথে কিছুই হয়নি। কিন্তু অন্য কারো সাথে কিছু হয়নি সেটা তো হতে পারেনা। কারন রিপোর্ট পজিটিভ!”

    রাব্বি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে মাহিকে নিয়ে গটগট করে বেরিয়ে আসলো চেম্বার থেকে। সোজা রিকশায় উঠে পার্কে এসে একটা নির্জন বেঞ্চে বসে পড়ে। মাহি হাতে রিপোর্ট পাওয়া থেকে কেঁদেই যাচ্ছে। সে কখনো কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলেনি রাব্বিকে ছাড়া। অথচ রাব্বি এমন ছেলেই না। কোথাও ঘুরতে গেলেও হাত ধরতেও সংকোচ করতো হাত ধরবে কিনা। রাব্বি গম্ভীর কন্ঠে কয়েকবার বললো “কান্না থামাও মাহি!” রাব্বির গম্ভীর কন্ঠ শুনে মাহির কান্নার গতি আরো বেড়ে গেছে। রাব্বি ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো “কান্না করতে বারন করেছিনা তোমায়? প্লিজ কান্না থামাও, কান্না কোনো সমাধান না মাহি।” কান্নার গতি কমিয়ে এনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রাব্বির দিকে তাকালো মাহি। কি নিষ্পাপ চেহারা, এই নিষ্পাপ সরলতায় মুগ্ধ হয়ে গত ৪ বছর মাহির পেছনে ঘুরে গত ২ বছর হলো প্রেম করছে রাব্বি। তাই মাহির প্রতি বিশ্বাসটা একটু বেশিই।

    মাহির গাল দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো “মাহি, আই ট্রাস্ট ইউ। তুমি আমাকে বলো তোমার সাথে কি কখনো কোনো এক্সিডে’ন্ট হয়েছে? আমাকে বলো, আমি প্রমিজ করছি তুমি না চাইলে আমি কখনো তোমার জীবন থেকে যাবো না। আমি জানি তুমি কারো সাথে ইচ্ছে করে কিছু করবে না।” মাহি আবারও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বললো “রাব্বি তুমি জানো গত এক বছর হলো আমি বাইরে বের হইনা। আমি এতো অসুস্থ হয়ে গেছি বিছানা থেকে ওঠার শক্তি পাচ্ছি না। গত এক বছরে তুমি নিজেই গিয়েছো আমার সাথে দেখা করতে। আমি একদিনের জন্যও বের হইনি। এক্সিডে’ন্ট হোক বা ইচ্ছাকৃত, কোনোটাই আমার সাথে হয়নি।”

    রাব্বি নিরাশ হলো, মাহি সত্যি বলছে। মাহি কথা বললে ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা। কিন্তু রিপোর্ট পজিটিভ। এমন ঘটনা আগে কখনো দেখেনি রাব্বি। মাহিকে বুকে টেনে নিয়ে বললো “কেঁদো না, বাচ্চাটা কার আমি জানিনা। তুমি সত্যি বলছো সেটাও আমি জানি। আমি সব সময় তোমার পাশে আছি। বাচ্চাটা অলৌকিক ভাবে আসলেও আমার মেনে নিতে কোনো অসুবিধা নেই। আমি আব্বু আম্মুকে বলবো আমরা আগেই না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি কেমন? তুমি চিন্তা করোনা, এই অবস্থায় চিন্তা করলে বেবির ক্ষতি হবে। চলো বাসায় যাই, তোমার মেডিসিনের সময় হয়েছে।”

    দু’জনেই বাড়ির দিকে রওনা হলো। হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করলেও মুখে চিন্তার ছাপ দুজনেরই। মাহিকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে কাজের লোককে বলে দিলো সম্পূর্ণ খেয়াল রাখতে। মেডিসিন গুলোও চেঞ্জ করে দিয়েছে। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় মেডিসিন খাওয়া উচিৎ না।

    রাব্বি বাড়িতে গিয়ে কাউকে কিছু বললো না। সমস্ত নেটওয়ার্ক ঘেটেও এই সমস্যার সমাধান করতে পারলো না। রাত্রি ১০ টার দিকে মাহিকে কল করলো রাব্বি। কল রিসিভ করতেই মুখে হাসি টেনে বললো “কি বাবুর আম্মু, কি করছো তুমি? আমার বাবুর সাথে গল্প করছো বুঝি? আমাকে রেখেই? আসুক বেবি, আমি বলে দিবো তুমি এই অনাচার করলে আমার সাথে।” মাহি না চাইতেই খিলখিল করে হেঁসে ফেললো। কিছু বলে ওঠার আগেই পেট অসম্ভব ভাবে ফুলতে শুরু করে। পেটের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায় মাহি। আজই তো রিপোর্ট আসলো, এর মধ্যে এতোটা বড় কিভাবে বড় হতে পারে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে দেখে কোনোভাবে ফোনের কাছে মুখ নিয়ে বললো “রাব্বি আমার পেট..আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না। তুমি আসো…”

    রাব্বি হ্যালো হ্যালো করতে করতেই শুনলো মাহির চিৎকার। এক মুহুর্ত দেরি না করে ছুটলো মাহির বাড়ির দিকে। কলিং বেল বাজাতেই একজন নার্স এসে দরজা খুলে দিলো। রাব্বি দৌড়ে মাহির রুমে গেলো। গিয়ে এমন দৃশ্য দেখার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না। মাহির পেট অসম্ভব ফুলে উঠেছে। শরীরে থাকা জামাটা পেটের দিক থেকে ছিঁড়ে পেট ফুলে উপরে উঠেছে। রাব্বি মাহিকে কোলে নিয়ে হাঁটার চেষ্টা করলো। তবে আজ কেমন ভারি হয়ে গেছে। রাব্বি পারছে না কোলে নিয়ে হাঁটতে। হুট করে দরজার দিকে চোখ যেতেই দেখলো মাহির বান্ধবী দাঁড়িয়ে আছে। রাব্বি ইশারা দিয়ে মাহিকে ধরতে বললো। মাহির বান্ধবী মুচকি হেসে মাহিকে ধরে গাড়িতে ওঠালো।

    রাত প্রায় দুটো ছুঁই ছুঁই। হাসপাতালের করিডোরে চিন্তিত মুখে বসে আছে রাব্বি। রাব্বির দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে মাহির বান্ধবী। মাহির অপারেশন চলছে। মাহির বান্ধবী কিছুক্ষণ পরে বললো “রাব্বি ভাইয়া একটা কথা বলবো?” রাব্বি মাহির বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে বললো “বলো, তবে পাগলামো টাইপ কোনো কথা বলবে না।” মাহির বান্ধবী রাব্বির কথা উপেক্ষা করে বললো “আপনি কতো ড্যাসিং জানেন? যে কোনো সুন্দরী মেয়ে এক তুড়িতে পাগল হয়ে যাবে। আর আপনি পড়ে আছেন এই অসুস্থ নষ্টা মেয়ের পেছনে? যার না আছে চেহারা, না আছে চরিত্র। আমি আপনাকে ভালোবাসি ভাইয়া। এই অসুস্থ মেয়ে কতোদিন আর বাঁচবে? বাঁচলেও ওর সেবা করতে করতেই আপনার জীবন শেষ হয়ে যাবে।”

    রাব্বি নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো “তোমার মতে ভালোবাসা চেহারা শুধু তাইনা? আমার বা মাহির কাছে কিন্তু সেটা না। ভালোবাসা মানে কিন্তু স্বার্থপর হওয়া না। তবে হ্যাঁ, নিজের মানুষ নিয়ে স্বার্থপর হওয়া যায়। যেটা মাহির মানায়, তোমাকে না। এই অসুস্থ মেয়েটা আমার কতোটা জায়গা জুড়ে আছে তুমি বুঝবে না। ওর যদি কিছু হয়েও যায় তাও আমার জীবনেও কেউ আসবে কিনা সেটা আমি জানিনা। তোমার তো বান্ধবী তাইনা? তুমি কিভাবে ওর বিষয়ে এই কথা গুলো বলতে পারো? আমি ওকে ভালোবাসি, এটা মাথায় রাখবে সবসময়।”

    রাব্বি কথাগুলো বলেই অপারেশন থিয়েটারের দিকে চলে যায়। মাহির বান্ধবী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো “মাহিকে তো মরতে হবেই ভাইয়া। মরতে হবেই ওকে।” ব্যাগ থেকে কাউকে একটা কল করে বললো “ওকে মারার ব্যবস্থাটা করে ফেলো। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আমি ওর চুল নখ নিয়ে আসছি।”

    রাত তিনটার দিকে রাব্বিকে ডাকা হলো চেম্বারে। বাচ্চা হয়েছে, তবে জীবিত নয় মৃ’ত। বাচ্চা দেখতেও অদ্ভুত ধরনের হয়েছে। সিজার করে বাচ্চাটা বের করা হয়েছে। মাহি সুস্থ আছে হালকা। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারনে একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

    বাচ্চাটাকে দেখতে ইচ্ছে হলোনা রাব্বির। সে সোজা মাহির কাছেই গেলো। মাহির জ্ঞান ফিরেছে, তবে কথা বলার অবস্থায় নেই। মাহিকে দেখে মুখে হাসি টেনে বললো “কি আমার না হওয়া বউ, কেমন আছো তুমি? তুমি তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিলা। এভাবেও ভয় পাওয়াতে পারো তুমি আগে তো জানতাম না।” মাহি রাব্বিকে ইশারায় ডেকে কানে কানে বললো “বাচ্চা কোথায়?” মাহির প্রশ্নে রাব্বি অপ্রস্তুত হয়ে যায়। বাচ্চাটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আসলেও বাচ্চাটার মা কিন্তু মাহি। মায়ের মন এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মানে না। কিন্তু মাহিকে সত্যির মুখোমুখি হতে হবে ভেবেই রাব্বি কোনো মিথ্যা স্বান্তনা দিলো না। মাহির হাত ধরে বললো “মাহি বাচ্চাটা মারা গেছে। বাচ্চাটা একটু অদ্ভুত হয়েছে। কেমন হয়েছে তা আমি জানিনা, দেখিনি৷ তবে ডাক্তার জানিয়েছে কোনো মানুষের দৈহিক সম্পর্কের দ্বারা বাচ্চাটার জন্ম হয়নি। কিভাবে এসেছে ডাক্তার সেটা জানে না। এমন রেয়ার একটা ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই ঘটে গেছে।”

    রাব্বির কথা শুনে মাহি ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। আবারও একবার কানে কানে বললো “আমাকে বাচ্চাটাকে একবার দেখাবে?” রাব্বি মাথা নাড়িয়ে বাচ্চাটাকে আনতে চলে গেলো। ডাক্তার বারন করলেও রাব্বি বাচ্চাটাকে নিয়ে আসলো মাহিকে দেখানোর জন্য। মাহি’র বাচ্চা মাহির দেখার অধিকার আছে।

    মাহির সামনে দাঁড়িয়ে খুব জোরে নিশ্বাস নিয়ে বাচ্চাটার মুখ থেকে সাদা কাপড় সরিয়ে ফেললো। মাহি আগ্রহ নিয়ে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়েই একটা চিৎকার দিলো। ভয়ে তার হাত পা কাঁপছে। রাব্বি বাচ্চাটাকে নার্সের হাতে দিয়ে মাহিকে শান্ত করতে থাকে।

    বাচ্চাটার চেহারা অত্যন্ত ভয়ানক। চোখ দুটো প্রায় অনেকটা বড়। বাইরের দিকে বেরিয়ে আছে। জন্ম হওয়ার আগেই দাঁত দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। সারা শরীরে চামড়া নেই, লাল র’ক্তে ভরা পুরো শরীর। রাব্বি দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছে। মাহির মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললো “মাহি তুমি একদম চিন্তা করো না। আমরা শীঘ্রই বিয়ে করবো। তারপর তোমার কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা এনে দিবো কেমন?”

    মাহি কেঁদে বললো “বাচ্চাটা কোথা থেকে আসলো আব্বুন? আসলোই যখন এভাবে আসার মানে কি ছিল? আমার মাতৃত্বের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে আব্বুন।”

    চলবে?….

    (গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, বাস্তবের সাথে এর কোনো মিল নেই। শুধুমাত্র কালো যাদুর কিছু পরিনতি সহ কল্পনা মিলিয়ে গল্পটি তৈরি করা হয়েছে। সাড়া পেলে পরবর্তী পর্ব লেখা হবে।)

     

     

     

     

     

     

    গল্পঃ কালো যাদু
    #Writer_Mst_Moni
    #Part_02

    মাহি কেঁদে বললো “বাচ্চাটা কোথা থেকে আসলো আব্বুন? আসলোই যখন এভাবে আসার মানে কি ছিল? আমার মাতৃত্বের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে আব্বুন।”

    পাঁচদিন পর মাহিকে বাড়িতে নেওয়া হলো। রাব্বির ইচ্ছে ছিল নিজর বাড়িতেই নিয়ে যাওয়া। কিন্তু বাবা-মা রাজি না থাকায় বাড়ি নিতে পারেনি৷ এই পাঁচদিনে আর কোনো সমস্যা দেখা গেলো না। ঘরে ঢুকেই মাহি বুঝতে পারলো ঘরে কেউ একটা ঢুকেছিল।

    মাহিকে ঠিকভাবে রেখে রাব্বি বাড়ি চলে যায়। টানা পাঁচ দিন জেগে থাকার কারনে বাড়িতে গিয়েই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলো রাব্বি। মাঝরাতে মাহি পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে। কয়েকবার রাব্বিকে কল করতে গিয়েও থেমে যায় মাহি। নিজের জন্য এভাবে রাব্বিকে কষ্ট দিতে ভালো লাগছে না একদম। বাবা-মায়ের কথা এই মুহুর্তে খুব মনে পড়ছে। এক পর্যায়ে পেট আবারও ফুলতে শুরু করে। রাব্বিকে কয়েকবার কল দিয়েও পাওয়া গেলো না। এই মুহুর্তে নিজেকে সবথেকে বেশি অসহায় মনে হচ্ছে মাহির কাছে। ব্যথায় চিৎকার করতেও পারছে না।

    সকাল ১০ টার দিকে রাব্বির ঘুম ভাঙলে ফোন হাতে নিতেই দেখলো মাহির অনেক গুলো কল। ফোনটা সাইলেন্ট হয়ে থাকার কারনে কিছুই টের পায়নি রাব্বি। রাব্বি ফের কল করতেই অপর পাশ থেকে কেউ রিসিভ করলো না৷ তাই গায়ে টি-শার্ট জড়িয়ে কোনোভাবে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
    ছেলেকে এভাবে অস্থির হতে দেখে রাব্বির বাবা-মা অবাক হয়ে যায়। যেই ছেলে জীবনে দ্রুত কোনো কাজ করেনি। দ্রুত করতে বললেই বলতো “এতো দ্রুত করে কি হবে? সময় তো অনেক আছে। আস্তে ধীরে করো, শান্তি!” সেই ছেলে এখন এতো বিজি হয়ে গেছে বাড়িতে আসার সময় পাচ্ছে না। রাতের পর রাত কোথায় থাকে তাও কেউ বুঝতে পারছে না। রাব্বির বাবা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো ছেলেকে বিয়ে করানোর।

    মাহির বাড়ির দরজায় কয়েকবার কলিং বেল বাজানোর পরেও কেউ দরজা খুললো না কেউ। ফোনের কভারে হাত দিয়েই এক্সট্রা চাবি পেয়ে গেলো রাব্বি। চাবি দিয়ে দরজা খুলে সোজা মাহির রুমে চলে যায়। মাহিকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচে রাব্বি। গিয়ে ডাক দিতেই দেখলো মাহি উঠছে না। পেটের কাছে র’ক্ত জমে আছে। পেট ফুলে যাওয়ায় গত অপারেশনের সেলাই খুলে গিয়ে র’ক্ত বের হচ্ছে। অতিরিক্ত ব্যথায় মাহি জ্ঞান হারিয়েছে।

    রাব্বি তাড়াতাড়ি মাহিকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটলো। বের হওয়ার আগে কাজের লোকদের কয়েকবার ডাক দিয়ে কাউকে পেলো না। হাসপাতালে গিয়ে আবার অপারেশনে নিয়ে যাওয়া হলো। রাব্বি কোনো কূলকিনারা পাচ্ছে না। কেন এমন হচ্ছে বারবার? বাচ্চাটা আসলো কিভাবে? আবার এখন কেন পেট ফুলে গেছে?

    মাহিকে হাসপাতালে রেখে রাব্বি ছুটলো মাহির বাড়িতে। বাড়িটা ভালোভাবে সার্চ করতেই দেখতে পেলো ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছোটছোট তাবিজ রাখা। মাহির বিছানার নিচে সরিষার দানা ছিটিয়ে রাখা আছে। আয়নার পেছনে মাহির চুল দিয়ে দড়ি বাঁধা।

    ওয়াশরুমের দিকে যেতেই বেলকনিতে কারো ছায়া দেখতে পেলো। থমকে দাঁড়িয়ে যায় রাব্বি, এই বাড়িতে মাহি ছাড়া কেউ থাকেনা। কাজের লোকদের কাছে খবর নিয়ে জানলো রাতে অদ্ভুত অদ্ভুত আওয়াজ হয় এই বাড়িতে। তাই তারা রাতে এই বাড়িতে থাকেনা। অদ্ভুত আওয়াজ হলেও তো মাহি একবারের জন্যও রাব্বিকে বলতো। তাহলে কি মাহি কিছুই শুনেনি কখনো? এটা কিভাবে হতে পারে? এসব ভাবতে ভাবতে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো রাব্বি। বেলকনিতে কিছুর ছাই অবশিষ্ট আছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে সদ্যই কিছু পোড়ানো হয়েছে। পুরো বাড়ি থেকে মাঝে মাঝে পঁচা আঁশটে গন্ধ আসছে আবার কখনো গোলাপের সুভাস আসছে। এই জিনিসটা আগে খেয়াল করেনি রাব্বি।

    টেবিলে খাতা কলম দেখে এগিয়ে গেলো রাব্বি। খাতায় কিছু একটা আঁকা রয়েছে। একটা বাচ্চা টাইপ কিছু। একদম ওই বাচ্চাটা যেটা মা’রা গেছে সেটা। একদম খাতায় যেমন আঁকা আছে তেমনি জন্ম নিয়েছে বাচ্চাটা। ছবিটা আকার তারিখ এবং মাহির নিজের সাইন দেয়া আছে নিচেই। তার মানে মাহি নিজের অজান্তেই ছবিটা এঁকেছে।
    কয়েক পৃষ্ঠা ওল্টাতেই দেখলো আরো একটা ছবি। আরো একটা বাচ্চা, গতকালকের আঁকা। এই জন্যই আজকে আবার পেট ফুলে উঠেছে। এবারের বাচ্চাটা আরো ভয়ানক ভাবে আঁকা। শরীরের কোনো কোনো অংশ আঁকাই হয়নি। কিন্তু মাহি কেন এমন করছে সেটা বুঝতে পারছে না রাব্বি। মাথার মধ্যে একগাদা প্রশ্ন নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো রাব্বি। হাতে বাচ্চা আঁকার খাতাটা।

    বাচ্চা জন্ম নিলো, একদম খাতায় আঁকা ছবিটার মতো। সিজারের পাঁচদিনের মাথায় আবার বাচ্চা হওয়াটা অস্বাভাবিক। বৈজ্ঞানিক ভাবে এটা অস্বাভাবিক ঘটনা। ডক্টর জানিয়ে দিয়েছেন এটা একদম অবাস্তব ঘটনা।

    চলবে?….

    (পর্ব ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। পরের পর্বগুলো বড় করে দেয়ার চেষ্টা করবো। গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, আপনাদের মন্তব্য আমাদের লেখার প্রতি উৎসাহ দেয়। ধন্যবাদ)

     

     

     

     

     

     

    গল্পঃ কালো যাদু
    #Writer_Mst_Moni
    #Part_03

    সিজারের পাঁচদিনের মাথায় আবার বাচ্চা হওয়াটা অস্বাভাবিক। বৈজ্ঞানিক ভাবে এটা অস্বাভাবিক ঘটনা। ডক্টর জানিয়ে দিয়েছেন এটা একদম অবাস্তব ঘটনা।
    রাব্বি হাতে থাকা খাতাটা নিয়ে এবারের জন্ম নেয়া বাচ্চাটার কাছে গেলো। এবারও একই কাজ হলো আগের মতো। খাতায় আঁকা ছবিটার মতোই হয়েছে বাচ্চাটা। বাচ্চাটার ঠোঁট নেই, কপালে কাটা এবং একচোখ ফুটো। দেখে মনে হচ্ছে কেউ খুব রাগে বাচ্চাটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছে। রাব্বির চোখে পানি চলে এসেছে। কে বা কারা এমন নিষ্পাপ বাচ্চাগুলোকে পৃথিবীতে আনছে এবং এমন নৃশংসভাবে হ’ত্যা করছে সেটা কেউ জানেনা। রাব্বি নিরুপায় হয়ে মাহির কাছে গেলো। মাহির জ্ঞান ফেরেনি। অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। এই মুহুর্তে রাব্বি ছাড়া দেখার মতো মাহির আর কেউ নেই। মাহির অবস্থা বলতে গেলে খুবই খারাপ। সিজার হওয়ার পাঁচদিনের মধ্যে কাঁচা সেলাই খুলে আবার নতুন করে দেয়া হয়েছে। গত একবছর ধরে মাহি অসুস্থ হয়েই পড়ে আছে। মাঝখানে মাহির মা মারা যাওয়ায় মেয়েটা একদম ভেঙে পড়েছে। ভেবেছিল এবারেই দুজনে বিয়ে করে নিবে। সেটা আর হলো কই?

    এসব ভাবতে ভাবতে রাব্বি মাহির হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে রেখে বললো “আমি তোমার কিছু হতে দিবোনা মাহি। আমি তোমাকে এই বিপদ থেকে খুব শীঘ্রই মুক্ত করবো। আমাদের তো একটা না হওয়া সাজানো সংসার আছে বলো। একটা ছোট্ট ঘর হবে, বেবি আসবে আমাদের। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে সারা বাড়ি ঘুরবে। এগুলো এখনো পূরন হওয়া বাকি আছে মাহি। তুমি ফিরে এসো, আমরা আবার আগের মতো হয়ে যাবো দেখো। ”

    পকেটে থাকা ফোনটা বিরক্তিকর আওয়াজ নিয়ে বেজে উঠলো। এই একটা জিনিস রাব্বির পছন্দ নয়। সিরিয়াস কোনো কাজের মধ্যে ফোন আসলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় ওর। কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে শান্ত স্বরে কেউ একজন বললো–

    -তুমি কোথায় রাব্বি?
    -মা আমি একটু কাজে আছি!
    -তুমি যেই কাজেই থাকো তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসো।
    -কেন মা? কিছু হয়েছে? এনিথিং সিরিয়াস?
    -হ্যাঁ সিরিয়াস, আমার সামনে ভাব ধরে ইংরেজি বলবে না বলেছিনা?
    -সরি মা, এবার বলো কি হয়েছে?
    -হয়নি, হবে। তোমার বিয়ে, আমরা পাত্রী দেখতে যাচ্ছি তুমি এসো তাড়াতাড়ি।
    -কি বলছো এসব? বিয়ে মানে? এভাবে হুট করে বিয়ে হয় মা?
    -হুট করে কোথায়? তোমাকে তো বউ সামনে এনে বলা হয়নি যে এখন বিয়ে করো। পাত্রী দেখতে যাচ্ছি, দেখবে কথাবার্তা হবে তারপর বিয়ে।
    -শোনো মা, তোমাদের যা ইচ্ছে করো। আমি একজনকে ভালোবাসি আমি তাকেই বিয়ে করবো। এটাই আমার শেষ কথা।

    বলেই খট করে কল রেখে দিলো। মাথা ফেটে যাচ্ছে রাগে। মাহি এখানে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে আর আমি মেয়ে দেখতে যাবো? এটা হয় কখনো? হাউ ফানি
    বিরবির করে বলতে বলতে হাসপাতাল থেকে আবারও বেরিয়ে যায় রাব্বি। মাহির ব্যপারটা ঠিক বুঝতে পারছে না রাব্বি। বাড়িতে এতো গুলো জিনিস পাওয়া, অদ্ভুত ছবি আঁকা। তার সাথে সম্পর্কিত বাচ্চা হওয়ার বিষয়টা। কিছুই মাথায় ঢুকছে না। আধুনিক ছেলে হওয়ার বদৌলতে কখনোই ভুতপ্রেত কিংবা যাদু টোনায় বিশ্বাসী ছিল না রাব্বি। এবার একবার খুব করে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে তার। পরমুহূর্তেই ভাবলো এসব বিশ্বাস করা বোকামি। কিন্তু যা দেখছে তাতে বিশ্বাস না করেও উপায় নেই।

    মাহিকে হাসপাতালে রেখে রাব্বি বাড়ি যায়। গিয়ে দেখে কেউ বাড়িতে নেই। নিশ্চিত ভাবে ধরেই নিলো সবাই পাত্রী দেখতেই গিয়েছে। মনে মনে মায়ের প্রতি বিস্তর রাগ পুষে রুমে গিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। ল্যাপটপ হাতে নিয়ে কালোযাদু সম্পর্কে সার্চ করতে লাগলো। পাশে থাকা ফোনটা আবারও কর্কশ শব্দে বেজে উঠলো। এক তাল বিরক্ত নিয়ে কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠে কেউ বললো “রাব্বি আপনাকে আমি বারবার বলেছি আপনাকে আমি ভালোবাসি। শুনলেন না তো! এবার আপনাকেই পস্তাতে হবে।” বলেই খট করে কল কেটে দিলো। রাব্বি বুঝতে পারছে না এখন আসলে কি করা উচিত। তার জন্যই তাহলে মাহিকে এভাবে কষ্ট পেতে হচ্ছে।

    হাসপাতাল থেকে কল আসলো মাহির জ্ঞান ফিরেছে। মাহি অদ্ভুত রকমের ব্যবহার করছে। রাব্বি তখনি ছুটলো হাসপাতালের দিকে। মাহি বারবার খাতা কলম চাইছে। সে আঁকবে, বাচ্চা আঁকবে। কিন্তু সবাইকে বারন করে দিলো কেউ যেন খাতা না দেয়। খাতা দিলে বাচ্চা আঁকলে আবার বাচ্চা জন্মানোর সম্ভাবনা আছে। তাই মাহিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এই অবস্থায় মাহিকে একা রাখা কোনো ভাবেই সম্ভব না। তাই রাব্বি সিদ্ধান্ত নিলো মাহিকে বিয়ে করে ফেলবে। বিয়ে করে নিজের বাড়ি নিয়ে যাবে।

    টানা তিনদিন মাহিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখার পর মোটামুটি সুস্থ হয় মাহি। বাচ্চা আঁকার কথা বেমালুম ভুলে যায়। মাহি সুস্থ হলে মোটামুটি ভালোভাবে কথা বলার চেষ্টা করে রাব্বি। মুখে হাসি টেনে মাহিকে বললো “আমার মাহি এখন কেমন আছে?” মাহি বাচ্চাদের মতো করে বললো “কেন তোমার মাহির কি হয়েছে? আমাকে হাসপাতালে রেখেছো কেন?” রাব্বি ভ্রু কুঁচকে বললো “তোমার কিছু মনে নেই?” মাহি অবাক হয়ে বললো “না তো, কি মনে থাকবে? কিছু হয়েছে? হাসপাতালে এনেছো কেন?” রাব্বি মাহিকে শান্ত করে বললো “না না কি হবে? কিছুই হয়নি, তোমার মাথাব্যথা করছিল তাই নিয়ে এসেছিলাম।” মাহি হেসে বললো “তুমিও নাহ্! মাথাব্যথা করলে কেউ হাসপাতালে নিয়ে আসে? চলো বাসায় চলো। এখানে দমবন্ধ লাগছে আমার।” রাব্বি ভ্রু কুঁচকে আবারও বললো “তোমার কিছু মনে নেই? সুস্থ হয়ে গেছো? ব্যথা করছে না কোথাও?” মাহি বেড থেকে উঠে রেডি হতে হতে বলে “আশ্চর্য, ব্যথা করবে কেন? কি যে প্রশ্ন করো তুমি। চলো, এসো বাসায় যাবো।”

    রাব্বিও মাহির কথায় হাসপাতাল থেকে মাহিকে নিয়ে বেরিয়ে আসে। মাহি নিজের বাড়ি যেতে চাইলে কিছুতেই রাজি হয়না রাব্বি। শেষে মাহির জোড়াজুড়িতেই মাহির বাড়িতেই যেতে রাজি হয় রাব্বি। বাড়ির দরজায় যেতেই মাহির মধ্যে এক অদ্ভুত পরিবর্তন দেখতে পায় রাব্বি। বাড়ির দরজায় তাবিজ চুল দিয়ে বেঁধে রাখা। মাহিকে দেখাতেই মাহি বললো সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। স্বাভাবিক ভাবেই মাহি গিয়ে ঘর গুছিয়ে রাখলো। মনে এক বছর আগের মাহিকে দেখছে রাব্বি। এতো বড় একটা ঘটনার পর মানুষ এভাবে আবার ঠিক হয়ে যেতে পারে সেটাও অবিশ্বাস্য।

    রাব্বি ভেবেছিল সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। তাই নিশ্চিন্তে মাহিকে রেখে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। বাড়িতে গিয়ে দেখলো বাড়ি সাজানো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রাব্বির মা বাবা সহ আত্মীয় স্বজন এগিয়ে এসে বিয়ের জন্য তৈরি করতে লাগলো। এতক্ষণে বুঝতে পারলো আসলে রাব্বির বিয়ে হচ্ছে। তাই মাকে আলাদা ডেকে নিয়ে বললো “মা তোমাকে আমি বলেছিলাম আমি একজনকে ভালোবাসি। তুমি তাও আমার কথা শুনলে না। লাস্ট আরো একবার বলি আমি ওই মেয়ে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না। বিয়ে বন্ধ করো নাহলে সবার সামনে সিনক্রিয়েট করতে বাধ্য হবো আমি।” বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো।

    পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো ফোনের চার্জ শেষ। অগত্যা নিজেকেই যেতে হলো মাহির বাড়িতে। গিয়ে দেখলো পুরো দেয়াল জুড়ে অসংখ্য বাচ্চার ছবি। বসে বসে মাহি সব আঁকছে। একটা বাচ্চা আকার পরে কিছুক্ষণ কিছু একটা ভাবছে তারপর আবার আবার আঁকছে। বাচ্চার কথা মনে পড়তেই রাব্বি দৌড়ে গিয়ে দেয়াল থেকে বাচ্চা গুলো মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। মাহির সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। ও নিজের মনে ছবি এঁকেই চলেছে। মনে হচ্ছে ও নিজের মধ্যেই নেই। কয়েকবার মাহিকে ডাক দেওয়ার পরেও সাড়া না পেয়ে মাহির শরীরে পানির ঝাঁপটা মা’রে। মুহুর্তেই নিজের হুসে ফিরে আসে মাহি। রাব্বিকে দেখে জিজ্ঞেস করলো কখন এসেছে সে। রাব্বি কিছু না বলে মাহিকে তৈরি হয়ে নিতে বলে।
    অনেক দিন বাইরে বের না হওয়ায় মাহিও আর না করলো না। নীল শাড়ি পড়ে খোঁপায় গাজড়া দিয়ে তৈরি হয়ে নিলো। রাব্বি এসে মুচকি হেসে কপালে টিপ পড়িয়ে দিয়ে মাহিকে নিয়ে বের হলো। বন্ধুদের ফোন করে জানিয়ে দিলো কাজি অফিসে আসতে। মাহিকে নিয়ে সোজা কাজি অফিসে গেলো রাব্বি। পেটে সেলাই থাকার কারনে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না মাহি। তবুও ওর নিজের কাছে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি ওর।

    কাজি অফিসে এসে চমকে গেলো মাহি। বিয়ে? তাও এভাবে? রাব্বির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই রাব্বি ভরসা দিয়ে ইশারা দিলো। মাহি না করতে পারলো না। পৃথিবীতে একমাত্র রাব্বি ছাড়া ভরসার মতো আর কেউ নেই।

    রাত ৯ টা, রাব্বির কোনো খবর পাচ্ছে না রাব্বির বাবা-মা। খোঁজ নিয়েও কোথাও পাওয়া গেলো না। বিয়ে ভাঙার শোক এবং ছেলেকে খুঁজে না পাওয়ার চিন্তায় পুরো বাড়ি থমথমে হয়ে গেছে। ৯ টার দিকে রাব্বি মাহিকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই ওর বাবার গম্ভীর আওয়াজে থমকে দাঁড়ায়৷ মেয়েটা কে জিজ্ঞেস করতেই রাব্বি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে জানিয়ে দিলো মাহি তার বিয়ে করা বউ। বিয়ে কখন করেছে সেটা জিজ্ঞেস করতেই রাব্বি বললো “আমি তোমাদের আগেই বলে দিয়েছিলাম। আমার কখনোই এভাবে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। আমি তোমাদের একমাত্র ছেলে। তোমাদের দুঃখ দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার কোনোদিনই ছিল না। থাকলে আরো দু বছর আগেই বিয়েটা করে নিতাম। কিন্তু তোমরা আমার মন বুঝলে না। যার কারনে তোমাদের কষ্ট দিতে হলো। এখন আমার কিছু করার নেই সরি।”

    পাশ থেকে মাহি বলে উঠলো “আহা রাব্বি এভাবে কথা বলছো কেন? আঙ্কেল আন্টি আমি জানতাম না আপনারা বিয়েতে রাজি না। জানলে কখনো বিয়েটা আমি করতাম না। রাব্বি আমাকে আগেই বলেছিলো বিয়ে করতে। কিন্তু আপনারা জানেন না বলেই বিয়েতে রাজি হইনি আমি। আপনারা কষ্ট পেলে আমি দুঃখিত।”

    বিয়ে বাড়িতে থাকা এক ব্যক্তি বলে উঠলো “এই মেয়েকে তো আমি হাসপাতালে দেখেছিলাম। মেয়েটার বাচ্চাও হয়েছিল, কিন্তু মারা গেছে। আর অদ্ভুত ধরনের বাচ্চা হয়েছিল। একদম সাধারণ মানুষের মতো না।”
    লোকটার কথায় মাহি চমকে যায়। লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলে “বাচ্চা? কিসের বাচ্চা?”
    কেউ কিছু বলার আগেই রাব্বি মাহিকে শান্ত করে বলে “মাহি শান্ত হও বুঝিয়ে বলছি তোমাকে।” তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলে “হ্যাঁ, ওর বাচ্চা হয়েছিল। বাচ্চাটা আমার ছিল। আমরা আগেই বিয়ে করে নিয়েছিলাম। দূর্ভাগ্যবশত বাচ্চাটা আর নেই।”

    তারপর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মাহিকে নিয়ে রুমে চলে যায়। রুমটা একদম মাহির পছন্দ মতো সাজানো হয়েছে। যেমনটা সব সময় চেয়েছে ঠিক তেমনটা। আগে থেকেই রাব্বি সাজিয়ে রেখেছিল। মাহিকে বারবার বলতো “তুমি আমার বাড়িতে আসলে তোমার রুম দেখে অবাক হয়ে যাবে।” আজ ঠিক তেমনটাই হলো।

    মাহি অসুস্থ থাকায় মাহিকে ঘুম পাড়িয়ে রাব্বি মাথার কাছেই বসে রইলো। মাহির আসলে কি হয়েছে সেটা রাব্বি বুঝতে পারছে না। মাঝে কয়েকবার অনেকেই দরজায় ধাক্কা দিয়েছে। তবে রাব্বি খোলেনি, কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছে আপাতত রাব্বির নেই। মাঝরাতের দিকে রাব্বি হালকা ঘুমিয়ে গেলে গোঙানির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় রাব্বির। ও অবাক হয়ে দেখলো মাহির পাশেই একজন কালো ছায়ার মতো কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মাহি ঘুমের ঘোরেই গোঙানির মতো শব্দ করছে। মাহিকে বেশ কয়েকবার ডাক দিয়ে সাড়া না পেয়ে মাহির শরীরে হাত রাখতেই মাহি জোরে এক ঝটকা দিলো। রাব্বি বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে পড়লো।

    চলবে?….

     

     

     

     

     

     

    গল্পঃ কালো যাদু
    #Writer_Mst_Moni
    #Part_04

    মাহিকে বেশ কয়েকবার ডাক দিয়ে সাড়া না পেয়ে মাহির শরীরে হাত রাখতেই মাহি জোরে এক ঝটকা দিলো। রাব্বি বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে পড়লো।
    রাব্বি এসে জগ থেকে পানি এনে মাহির উপরে ছুড়ে মা’রলো। মাহি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে রাব্বিকে জিজ্ঞেস করলো “কি হয়েছে?” রাব্বি মাহিকে ধরে বললো “ঘুমের মধ্যে কি দেখেছিলে তুমি?” মাহি রাব্বির দিকে র’ক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বললো “কই কিছু না তো। সব সময় সব কিছু নিয়ে প্রশ্ন করবে না। আমার পছন্দ নয় এটা।” মাহির কথায় রাব্বি অবাক হয়ে যায়। মাহি কখনো এভাবে রাব্বির সাথে কথা বলেনি। হুট করে এমন ব্যবহার রাব্বি হজম করতে পারলো না। সোজা হেঁটে ছাঁদে চলে যায় রাব্বি। গিয়ে দেখলো সেখানে মাহি নিজেই দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ফের আরো একবার অবাক হয় রাব্বি। মাহিকে তো রুমে রেখে এসেছে তাহলে ছাঁদে কে?
    কাছে গিয়ে মাহির কাঁধে হাত দিতেই মাহি রাব্বির দিকে তাকিয়ে কেঁদে বললো “আমার বাচ্চা, আমার বাচ্চা।” রাব্বি মাহিকে জিজ্ঞেস করলো “কোথায় বাচ্চা?” মাহি হাত দিয়ে নিচে দেখিয়ে দিলো। রাব্বি ছাঁদ থেকে নিচে উঁকি দিয়ে দেখলো একটা বাচ্চা নিচে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। মুখ থে’তলে গেছে একদম, র’ক্তের স্রোত বয়ে চলেছে। রাব্বি ভয় পেয়ে নিচে নামতে গিয়ে রুমের সামনেই দেখলো মাহি। মাহিকে দেখে আরো ভয় পেয়ে যায় রাব্বি। মাহি এখানে থাকলে ছাঁদে কে ছিল? এসব ভাবার এখন সময় নেই, বাচ্চাটাকে বাঁচাতে হবে। এমনটা ভেবে বাড়ির বাইরে যেতেই পেছন থেকে মাহি হাত টেনে ধরে বললো “কোথায় যাচ্ছো? বাচ্চাটা নেই তো, বাচ্চা তো মা’রা গেছে আরো আগেই। তুমি জানো না সেটা?” রাব্বি তাও একবার বাইরে গিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিলো। কিন্তু বাইরে কেউই ছিল না। রাব্বি নিজেও বুঝতে পারছে না মাহির সাথে সাথে রাব্বির সাথেও কেন এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে।

    সেদিন রাতটা কোনো ভাবে কাটানোর পরে সকালে রাব্বি অফিসে চলে যায়। অনেকদিন অফিসে যাওয়া হয়না। জব চলে গেলে বউকে নিয়ে সংসার করা যাবে না। বাবার ব্যবসায় কখনোই ইন্টারেস্ট ছিল না রাব্বির। তাই নিজের যোগ্যতায় অন্য অফিসেই জব করছে রাব্বি।
    বিয়েটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়ে যাওয়ায় মাহিকে সেভাবে কেউ মেনে নিতে পারছে না। তার উপর বাচ্চা হওয়ার ব্যপারটার জন্য রাব্বির বাবা এবং মা বলেই দিয়েছেন এই মেয়েকে তার ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিবেই না৷
    মাহি অসুস্থ থাকায় সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারলো না। রাব্বি অফিসে যাওয়ার সময় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে গেলো মাহির যেন কোনো অসুবিধা না হয়। বোনকে ডেকে নিয়ে আলাদা ভাবে বললো মাহির অদ্ভুত কোনো আচরণ দেখলে রাব্বিকে জানাতে এবং রাব্বি না আসা পর্যন্ত মাহির কাছেই থাকতে। রাব্বির বোন আগে থেকেই মাহির বিষয়টা জানতো। তাই বোন সহজেই মেনে নিলো ভাইয়ের কথা।

    সকাল সকাল ব্রেকফাস্টের জন্য মাহিকে ডাকা হলো। মাহি স্বাভাবিক ভাবেই নিচে নেমে খেতে বসলো। খাওয়ার সময় কেউ কোনো কথা বললো না মাহির সাথে। ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগলো মাহির কাছে। তাও কিছু না বলে খেতে শুরু করলো। খাওয়ার এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করলো “আন্টি র’ক্ত আছে? আমি র’ক্ত খাবো।” কথাটা শুনে সবাই বেশ ভয় পেয়ে যায়। রাব্বির বোন পাশ থেকে বলে উঠলো “ভাবি চলো রুমে চলো, ভাইয়া র’ক্ত আনতে গেছে। আনলেই তোমাকে দিয়ে দিবো এবার রুমে চলো।” মাহি উঠতে উঠতে বললো “আচ্ছা ঠিক আছে, আমার রুমে পাঠিয়ে দিয়ো।” বলেই নিজে থেকেই উপরে চলে যায়।

    এদিকে রাব্বির মা থেকে থেকে অজ্ঞান হচ্ছে আর বলছে “আমার ছেলে এটা কোন ডাইনি বিয়ে করে এনেছে? শেষে কিনা একটা র’ক্তপিপাসু ডাইনি বিয়ে করলো।”
    রাব্বি বাড়ি থেকে বোনের ফোন পেয়ে দ্রুত বাড়িতে চলে আসলো। রুমে ঢুকে দেখলো মাহি শুয়ে আছে। মাহিকে ডাক দিতে হাসি মুখে উঠে বসলো। স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো “এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলে যে? অফিস শেষ তোমার? ফ্রেশ হও, আমি খাবার নিয়ে আসছি তোমার।” রাব্বি মাহিকে থামিয়ে দিয়ে বললো “না ব্যস্ত হচ্ছো কেন? বসো তুমি, কি হয়েছে তোমার? কখনো ঠিক থাকো, কখনো অদ্ভুত আচরন করছো। তুমি র’ক্ত খেতে চেয়েছিলে কেন?”
    মাহি ভ্রু কুঁচকে বললো “কি বলছো তুমি? আমি র’ক্ত কেন খাবো? পা’গল হয়ে গেলে নাকি?” রাব্বি অবাকের পরে অবাক হচ্ছে। আসলেই রাব্বি এখন পা’গল হয়েই যাবে। এসব কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছে না। সমস্যাগুলো কাউকে বলতেও পারছে না। বন্ধুদের বললে যাদু টোনায় বিশ্বাস করার জন্য আরো সবাই হাসাহাসি করবে।

    বিকেলে মাহিকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো রাব্বি। ভাবলো ঘুরলে মাহির মনটা ফ্রেশ হবে। পার্কের দিকে যেতেই মাহি দৌড়ে বাচ্চাদের সাথে খেলা শুরু করলো। মাহির এই অভ্যাস বরাবরই ছিল। রাব্বি একটা বেঞ্চে বসে দূর থেকে দেখছে। ভাবছে মাহি এমন স্বাভাবিক হয়ে গেলেই হয়তো ভালো হতো। হুট করেই রাব্বির পাশে কারো উপস্থিতির টের পেয়ে রাব্বি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো মাহির বান্ধবী বসে আছে। রাব্বি একটু দূরে সরে বললো–

    -কি ব্যাপার তুমি এখানে?
    -আসতে পারবো না নাকি?
    -আসবে, কিন্তু এভাবে আমার পাশে বসার কোনো উপযুক্ত কারন দেখতে পাচ্ছি না।
    -কারন নিশ্চয়ই আছে কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না। আচ্ছা আপনার কি ইচ্ছে হয়না একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পেতে?
    -হ্যাঁ হয়, কিন্তু এখন কি অস্বাভাবিক আছি?
    -অবশ্যই, মাহির এমন অদ্ভুত আচরন আপনি মেনে নিতে পারছেন? আপনার তো একটা সংসার চাই, কিন্তু মাহি কি সেটা দিতে পারছে? একজন বউ হিসেবে কিছু দিতে পারছে আপনাকে? শুধু ওর সেবা করছেন, আর অদ্ভুত আচরন গুলো প্রশ্রয় দিচ্ছেন। একসময় দেখবেন একটা পা’গল নিয়ে ঘর করছেন আপনি।
    -আশ্চর্য, তুমি এতো কিছু কিভাবে জানলে? আমার যতদূর মনে পড়ে প্রথম দিন মাহি অসুস্থ হওয়ার পরে তোমার সাথে আর দেখাই হয়নি। মাহি ফোন ব্যবহার করছে না এখন। আমিও কিছু বলিনি, বাইরের কেউ কিছু জানলো না। তুমি কিভাবে জানলে বলো তো?
    -ইয়ে মানে এটা এখন কে না জানে?
    -কে জানে বলো তো? শোনো তানি আমি যদি জানতে পারিনা যে আমার মাহির এমন অবস্থার পেছনে তোমার হাত আছে। আমি কিন্তু ওই হাতটা মুড়িয়ে দিবো। আমার মাহি বদ্ধ উন্মাদ হলেও আমি ওকেই ভালোবাসবো। তোমার মতো স্বার্থপর একজন মেয়ে মাহির বান্ধবী কিভাবে হলো সেটাই বুঝতে পারছি না আমি।

    বলে আর এক মুহুর্তও না বসে মাহিকে ডেকে সোজা সামনে হেঁটে গেলো।
    সন্ধ্যা ৭ টা, মাহি বসে বসে বাচ্চাদের মতো আচরন করছে। কখনো হাতের আঙুল গুনছে, আবার কখনো রাব্বির মাথার চুল বাঁধছে। কখনো নিজের চুল দিয়ে নিজের এবং রাব্বির দাঁড়ি বানাচ্ছে। কিছুক্ষন পর ওদের ডাক আসলে রাব্বি মাহিকে নিয়ে ভেতরে যায়। মাহির সামনে মানসিক ডাক্তার বসে আছেন। মাহিকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেও যথাযথ উত্তর পেলেন না তিনি। তাও কয়েকটা ঔষধের নাম লিখে দিলো। রাব্বি নিজের সমস্যার কথা বলতেই ডাক্তার জানায় বেশ কয়েকদিন ধরে অদ্ভুত চিন্তা এবং ঘুম না হওয়ার কারনে মনের ভুল ধারনার থেকে ভুলভাল দেখছে রাব্বি।

    নিস্তব্ধ রাত, রাস্তায় গাড়ি চলাচল একদম কম বললেই চলে। এমন শেষ কবে দুজনে হেঁটেছে রাব্বির মনে নেই। আজ এতো বিপদের সময়ও এমন একটা মুহুর্ত কাটাতে পারছে ভেবেই আনন্দ হচ্ছে তার। মন চাইছে মাহিকে জাপটে ধরে টকাস করে একটা চুমু বসিয়ে দিতে। কিন্তু মাহির অদ্ভুত আচরনের জন্য করার সাহস পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ হাঁটার পর দেখলো মাহি আজ বেশ স্বাভাবিক। আগে কি কি করেছে, সামনে কি কি করবে সব কিছুর প্ল্যান করছে মাহি। সংসার কিভাবে সাজানো যায় সবটাই বলে যাচ্ছে। রাব্বি সুযোগ বুঝে ২ সেকেন্ডের মধ্যেই মাহিকে চুমু খেলো। মাহি চোখ বড় বড় করে কৃত্রিম অবাক হওয়ার ভং ধরলো। মাহি বেশ ভালোভাবেই জানতো রাব্বি এমন কিছুই করবে। তাও কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বললো “এটা কি করলে তুমি? পাবলিক প্লেসে এসব করে বেড়াচ্ছো।” রাব্বি পকেটে হাত দিয়ে ভাব নিয়ে বললো “তাতে কার কি? আমি আমার বিয়ে করা বউকে চুমু দিয়েছি। তাদের বউকে তো চুমু দিতে যাইনি।”

    রাব্বির কথায় মাহি খিলখিল করে হেসে দিলো। হাসার এক পর্যায়ে পেটে হাত দিয়ে বললো “রাব্বি আমার পেটে ব্যথা করছে। তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলো না। আমি ব্যথায় পা’গল হয়ে যাচ্ছি ঠিক প্রথমবারের মতো।” রাব্বি মাহিকে ধরে জিজ্ঞেস করলো মাহি আর কোনো বাচ্চার ছবি এঁকেছে কি না। মাহি জানালো সে ঠিক মনে করতে পারছে না। রাব্বি বাড়িতে কল করে বোনকে বললো রাব্বির রুমের কোথাও কোনো বাচ্চার ছবি আঁকা আছে কিনা সেটা খুঁজে দেখতে। কিছুক্ষণ পরে বোন জানায় কোথাও কোনো ছবি নেই। রাব্বি এক প্রকার নিশ্চিন্ত হয়ে মাহিকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো।

    ডাক্তার বারবার রাব্বিকে বকে যাচ্ছে। মাহির পেটে সেলাই দেওয়া হয়েছে দুই দুই বার। এই জন্য মাহির বেড রেস্ট দরকার ২/৩ মাসের। কিন্তু বেড রেস্ট তো দূরে থাক, মাহির ড্রেসিং ভালোভাবে হচ্ছে না। যার কারনে ইনফেকশন হয়ে ব্যথা বেড়েছে। মাহি বারবার জিজ্ঞেস করছে কিসের জন্য পেটে সেলাই দেওয়া হয়েছে। রাব্বি শান্ত করার চেষ্টা করলেও মাহি তা শুনলো না। এক পর্যায়ে রাব্বি বাচ্চা এবং বাচ্চা মা’রা যাওয়ার কথা বলতেই মাহি কোনো রিয়েক্ট না করেই অজ্ঞান হয়ে যায়।

    অজ্ঞান থাকা অবস্থাতেই হালকা কাশি দিয়ে র’ক্তবমি করে দিলো। বমির সাথে নখ এবং চুলসহ বিভিন্ন ধরনের বস্তু পাওয়া যায়। যার কারনে রাব্বি এবার সিওর ভাবেই বুঝে যায় মাহিকে কালো যাদু করা হয়েছে।

    রাব্বি মাহিকে রেখে ডাক্তারের কাছে যায়। আসার পরে দেখতে পায় মাহি উল্টো হয়ে বসে দেয়ালের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বিড়বিড় করে বলছে “শা আমাকে আমার বাচ্চা ফিরিয়ে দিন। শা আপনি শুনতে পাচ্ছেন? আমার বাচ্চা আমার চাই।”

    চলবে?…

    কারো গল্প ভালো না লাগলে দয়া করে ইগনোর করুন। যারা লেখে তারা অবশ্যই কোনো পাঠক-পাঠিকাদের জোর করে গল্প পড়ায় না। তাই ভালো না লাগলে অপমান বা তাচ্ছিল্য মূলক মন্তব্য করে লেখক লেখিকাদের লেখার মনোভাব নষ্ট করবেন না। লেখক লেখিকারা ২/৩ ঘন্টা বসে লিখতে পারে অথচ আপনারা গল্প পড়ে ২/১ মিনিটের মধ্যে একটা রিয়েক্ট বা কমেন্ট করতে পারছেন না।

     

     

     

     

     

     

    গল্পঃ কালো যাদু
    #Writer_Mst_Moni
    #Part_05

    মাহি উল্টো হয়ে বসে দেয়ালের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বিড়বিড় করে বলছে “শা আমাকে আমার বাচ্চা ফিরিয়ে দিন। শা আপনি শুনতে পাচ্ছেন? আমার বাচ্চা আমার চাই।”
    পেছন থেকে রাব্বি এসে মাহিকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কার সাথে কথা বলছে সে। মাহি র’ক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বললো “তোমাকে বলেছি না সব সময় সব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করবে না। আমি আমার বাচ্চাকে ফিরিয়ে আনতে চাইছি। যেটা তোমার জন্যও ভালো হবে।” রাব্বি ভ্রু কুঁচকে বললো “কিন্তু বাচ্চা তো আমার না মাহি। আমি জানিও না আসলে বাচ্চা কার। আর আমি তোমাকে অবিশ্বাসও করছি না। বাচ্চাটা তো মা’রা গেছে মাহি। তুমি কিভাবে ফিরিয়ে আনবে? আর এই শা কে?”
    হুট করেই মাহি অজ্ঞান হয়ে গেলো। রাব্বি মাহিকে বেডে শুইয়ে দিলো। বেশ কিছুদিন এখানেই রেস্টে থাকতে হবে মাহিকে। রাব্বির অফিস থেকে কল আসলে তাড়াতাড়ি জয়েন করতে বলে অফিসে। কিন্তু রাব্বি জানিয়ে দেয় সে যেতে পারবে না। বলেই খট করে কল কে’টে দেয়। এই মুহুর্তে মাহি ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো কিছু রাব্বির ভাবনায় নেই।
    প্রায় মাঝরাতে গুনগুন শব্দে ঘুম ভাঙে রাব্বির। দেখলো হাসপাতালের রুমের মধ্যেই মাহি ধ্যানরত অবস্থায় বসে আছে। তার চারপাশে অনেক গুলো মোমবাতি। সে গুন গুন করে কাউকে ডাকছে। ভালোভাবে কান দিতেই রাব্বি শুনলো মাহি শা নামের কাউকে ডাকছে। ভয়ে ভয়ে পেছন থেকে মাহির কাঁধে হাত দিতেই মাহি রাব্বির দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বললো “এসো তুমিও বসো, তোমাকেও পরিচয় করিয়ে দেই। তুমিও ডাকো, আমাদের বাচ্চাকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিবে তাহলে।” রাব্বি মাহিকে জোরে ধমক দিয়ে বললো “কি করছো এসব তুমি? পা’গল হয়ে গেছো নাকি? কখনো দেখছি তুমি স্বাভাবিক সুস্থ। আবার কখনো দেখছি তুমি বদ্ধ উন্মাদ। আসলে কি হয়েছে তোমার ক্লিয়ার করে বলবে? এই মাঝরাতে হাসপাতালের মধ্যে তুমি ধ্যান করতে বসেছো? লোক হাসাচ্ছো তুমি? তোমার জন্য কথা শুনতে হচ্ছে আমার। কি চাও তুমি? নিজে পাগলামি করে আমাকেও পা’গল বানাবে তাইতো? আমি জাস্ট আর নিতে পারছি না। আমাকে মুক্তি দেও এর থেকে।” বলেই হু হু করে কেঁদে দেয় রাব্বি। মাহি রাব্বির দিকে একবার তাকিয়ে সোজা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। রাব্বির খেয়াল আসতেই মাহিকে খুঁজতে থাকে। সারা হাসপাতালেও মাহিকে খুঁজে পেলো না। বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেই খুঁজতে লাগলো রাব্বি। একটু আগের বলা কথা গুলো মনে পড়তেই নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে রাব্বির। মেয়েটা তো ইচ্ছে করে এসব করছে না। ও নিজেও বুঝতে পারছে না ওর সাথে এসব কি হচ্ছে। এগুলো ভেবেই অনুশোচনায় ভুগছে রাব্বি।

    সারারাত চারদিক খুঁজেও মাহিকে পাওয়া গেলো না। শেষে ক্লান্ত হয়ে রাব্বি বাসায় চলে যায়। গিয়ে দেখে মাহি নিজের রুমে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। দেখে প্রচন্ড রাগ হলো রাব্বির। পরমুহূর্তেই হারিয়ে যাওয়ার পরের মুহুর্তের কথা চিন্তা করেই মাহিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো রাব্বি।

    মাহি জেগে গিয়ে রাব্বিকে ধরে জিজ্ঞেস করলো “কি হয়েছে?” রাব্বি ফুপিয়ে কেঁদে বললো “আমি সরি মাহি, আমি ওভাবে বলতে চাইনি। তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে? আমি তোমাকে কতো খুঁজেছি। তুমি আমাকে বলে আসবে তো। তুমি হাসপাতাল থেকে চলে আসলে কেন? তোমার ট্রিটমেন্ট দরকার।” মাহি ভ্রু কুঁচকে বললো “কেন কি হয়েছে? আমি তো দিব্যি ভালো আছি। জানো আজ কি হয়েছে?” রাব্বি বুঝতে পারলো মাহির কিছু মনে নেই তাই কথা না বাড়িয়ে উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো “কি হয়েছে বলো” মাহি একগাল হেঁসে বললো “শা আছে না? উনি আমাকে আমার বাচ্চা ফিরিয়ে দিয়েছেন।” রাব্বির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। কি বলছে মাহি? মারা যাওয়া বাচ্চা কিভাবে ফিরিয়ে আনবে? হয়তো বাচ্চা মা’রা যাওয়ার ধাক্কাটা নিতে পারেনি। তাই এমন পাগলামি করছে। তাই মাহির তালে তাল মিলিয়ে বললো “আচ্ছা? কোথায় বাচ্চা?” মাহি পাশে তাকিয়ে কাউকে এনে বললো “এই যে বাচ্চা।” রাব্বি এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না। তাও মাহিকে দেখানোর জন্য বাচ্চাকে কোলে নেয়ার ভং ধরলো। মাহি বাচ্চাকে নিয়ে চলে যাওয়া নিলেই পেছন থেকে রাব্বি ডেকে বললো “মাহি, শা কে? কাকে ডাকো তুমি?” মাহি ভ্রু কুঁচকে হাসিমুখে বললো “ওমা জানোনা তুমি? উনি আসলে..আসলে আমি নিজেও জানিনা। আমার মনে আসে, আমার মনে হয় তাকে ডাকলে আমি আমার হারিয়ে যাওয়া জিনিস ফিরে পাবো। তাই সব সময় ডাকি, দেখো বাচ্চাকেও ফিরিয়ে দিলো। খুব ভালো লোক ইনি।”

    বিকেলে রাব্বির খুব ভালো একটা বন্ধু আসলো বাড়িতে। মাহিকে আগে থেকেই চিনতো। ওদের রিলেশনের কথা বন্ধুমহলে সবাই জানতো। চর্চাও হতো বেশ। কিন্তু মাহিকে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলো। রাব্বিকে পরামর্শ দিলো মাহিকে দ্রুতই চিকিৎসা করানোর জন্য। কিন্তু রাব্বি কান দিলো না। রাব্বি মানসিক রোগ হিসেবেই উড়িয়ে দিলো বিষয়টা।

    রাতে মাহি ঘুমিয়ে গেলে গতরাতের মতো এবারও একই কাহিনি ঘটলো। মাহির পাশে গতরাতের মতো এবারও কালো ছায়া দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এবার মাহি উঠে বসে হাসিমুখে হাত পেতে কালো ছায়াটার থেকে কিছু নিলো। রাব্বি পুরোটা তাকিয়ে দেখেই গেলো কিছু বলতে পারলো না। মাহি রাব্বির দিকে তাকিয়ে ভয়ঙ্কর এক হাসি দিলো। রাব্বি ভয় পেয়ে নিজেই অচেতন হয়ে গেলো।

    সকালে রাব্বিরই আগে ঘুম ভাঙলো। গতরাতের কথা মনে করে এদিক ওদিক খুঁজে মাহির গলায় একটা তাবিজ দেখতে পায়। তাবিজে হাত দিতেই ফট করে মাহি চোখ খুলে অদ্ভুত কন্ঠে বললো “নিজের সীমার মধ্যে থাক, নাহলে তোর বউয়ের যেই অবস্থা হয়েছে তোরও হবে। যদিও তোর বউ বেশিদিন তোর থাকবে না। হয়তো ম’রবে, নয়তো ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান হয়ে যাবে। তোর বউ কিন্তু ভালোই ব্ল্যাক ম্যাজিকের কাজ জানে।” বলেই খিল খিল করে হেসে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো। রাব্বি ভয় পেয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। কি দেখেছে বা কি শুনেছে সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না। তাহলে তার স্বল্প ধারনাই সঠিক। মাহিকে কালো যাদু করা হয়েছে।

    চলবে?…

    ব্যস্ত থাকার জন্য সময়মত এবং বড় করে গল্পের পার্ট দিতে পারছি না। দুঃখিত

     

     

     

     

     

     

     

     

    গল্পঃ কালো যাদু
    #Writer_Mst_Moni
    #Part_06

    তাহলে তার স্বল্প ধারনাই সঠিক। মাহিকে কালো যাদু করা হয়েছে।
    কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না। মায়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বলা যাবেনা। বিয়েটা সে মেনেই নেয়নি আবার এসব কালোযাদুর কথা শুনলে একদমই উল্টা পাল্টা ব্যবহার শুরু করবে। তাই বোনকে ডেকে এনে বোনের সাথেই কথাটা শেয়ার করলো।
    কথা বলার পর রাব্বি গতকাল বিকেলে আসা সেই বন্ধুকে কল করলো। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না ফোনে। তাই অগত্যাই অপেক্ষা করতে লাগলো। আপাতত অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার।
    হাসপাতাল থেকে কল আসায় দ্রুত ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিলো রাব্বি। ডাক্তার জানায় মাহির সুস্থ হওয়াটা জরুরি। তাই জোর করেই রাব্বি হাসপাতালের দিকে ছুটলো মাহিকে নিয়ে। সিজারের পর এমন সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে চলতে এর আগে কাউকে দেখেনি রাব্বি। তাও আবার দু দুবার সিজার হয়েছে। তাও একটুও ব্যথা অনুভব হচ্ছে না মাহির। মনে মনে মাহির সহ্যশক্তির প্রশংসা করে নিলো রাব্বি। পরেই মনে পড়লো মাহি তো স্বাভাবিক না এখন। হয়তো এই জন্যই ব্যথা অনুভব করতে পারছে না।

    মাহি হাসপাতাল যাবে না। তার একটাই কথা সে তার বাচ্চাকে রেখে কোথাও যাবে না। তাই রাব্বিও অভিনয় করে বাচ্চাকে সাথে নিলো। এবার রেস্ট এবং ট্রিটমেন্টের জন্য মাহিকে বেঁধে রাখা হলো। নাহলে সে নিজেই উঠে বাসায় চলে যায়। রাব্বি প্রথমে বারন করলেও ডাক্তারের কথার উপরে আর কোনো কথা বলতে পারলো না। আসলেই তো মাহির সুস্থ হওয়াটা জরুরি।
    মাহির ট্রিটমেন্ট শুরু হলো। কিছুক্ষণ পরপর জ্ঞান ফিরলেই শুরু করে পাগলামি। তার বাচ্চা কোথায়, তার বাচ্চা কোথায়? ডাক্তার বারবার করে রাব্বিকে বলছে মাহি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। তাই এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে। এদিকে রাব্বি বলতেও পারছে না মাহির সমস্যার কথা। সে যতটা পারছে মাহির জ্ঞান ফিরলে তাকে শান্ত করছে। মাহিকে এভাবে দেখে তারও ভালো লাগছে না। মানসিক ভাবে সে নিজেও ভেঙে পড়েছে। এই মুহুর্তে পাশে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল পরিবারের। কিন্তু রাব্বির পাশে পরিবারই নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অসহায় মানুষ মনে হচ্ছে নিজেকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্রার্থনা করলো আল্লাহ যেন মাহিকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দেয়।

    মাহির জ্ঞান ফিরলে মাহি অনেক কষ্টে রাব্বিকে ডাক দেয়। গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না তার৷ রাব্বি টের পেয়ে ছুটে আসে মাহির কাছে। মাহি কেঁদে বলে “রাব্বি আমাকে এভাবে বেঁধে রেখেছে কেন? আমাকে আমার বাচ্চার কাছে যেতে দিচ্ছে না কেন। আমার হাত পায়ে ব্যথা লাগছে খুব। তুমি বলোনা একটু খুলে দিতে। তুমিও তো কিছু বলছো না। আমাকে কেন বেঁধে রেখেছে? আমি কি খাারাপ মা?”

    রাব্বির প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে মাহিকে এই অবস্থায় দেখে। তাও মুখে হাসি টেনে বললো “কি বলো তো, তুমি তো একটু অসুস্থ। তোমাকে তো সুস্থ হতে হবে আগে। নাহলে তুমি তোমার বাচ্চাকে কিভাবে বড় করবে বলো। তোমার বাচ্চা আমার কাছে ভালো আছে। আমি তো ওর বাবা। আমার কাছে খারাপ থাকবে বলো? তুমি একদম চিন্তা করবে না কেমন?”

    মাহিকে রেখে রাব্বি মাহির বান্ধবী তানির খোঁজে বের হলো। সোজা তানির বাড়িতে গিয়ে অবাক হয় রাব্বি। সারা ঘর কেমন লাল এবং হলুদ কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে। সারা ঘরে মোমবাতির ছড়াছড়ি। তানি রাব্বির উপস্থিতি টের পেয়ে যেই রুমে বসা ছিল সেই রুম থেকে দ্রুত বের হয়ে রুমে তালা মে’রে দিলো। রাব্বির মনে খটকা লাগে। তাও তানিকে কিছু বললো না রাব্বি। তানি রাব্বিকে দেখে একদম গায়ে ঢলে পড়ে। তানি ভেবেছিল মাহিকে ছেড়ে বোধহয় রাব্বি তানির কাছেই চলে এসেছে। কিন্তু রাব্বি তানির এই ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়ে বললো “কি মিস তানি? ভালোই তো ছক কষেছো দেখছি। কি ভেবেছো এগুলো করেই তুমি আমাকে পেয়ে যাবে?” তানি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো “কি বলছো তুমি? আমি কি করেছি?” রাব্বি তানিকে বলে “সেটা তুমিও ভালো ভাবে জানো, আমিও জানি। আশা করছি আর বুঝিয়ে দিতে হবেনা। আমি প্রমান ছাড়া কথা বলিনা। যেদিন প্রমান পাবো সেদিন না হয় পুরোটা বিশ্লেষণ করে বলবো। আজ না হয় অনুমানের ভিত্তিতে ও’য়ার্নিং দিয়ে গেলাম৷” বলেই চলে যেতে গিয়েও ফিরে এসে বললো “শোনো মেয়ে, মাহি আমার কাছে থাকুক আর না থাকুক আমি অন্য কারোরই হবো না। তোমার তো আরো আগেই না। তাই আমাদের সংসারটা নষ্ট করে আমার এবং মাহির চোখে খারাপ বানাবে না নিজেকে। মাহি বড্ড সহজ সরল তো, তোমাকে খুব বিশ্বাস করে মেয়েটা। আসছি!”
    তানি হেঁসে বললো “যখন জেনেই গেছো আমিই করেছি, তাহলে বলে রাখি মাহির যখন অবস্থা এমন করতে পেরেছি। আপনাকে বশ করতেও আমার একদিন বা দুদিন লাগবে না৷ তবে আমি চাইনি আপনার কোনো ক্ষতি হোক। যতই হোক ভালোবাসি তো। তবে এবার দেখছি করতেই হবে, আপনাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি।”

    রাব্বি কিছু না বলেই বেরিয়ে যায়। রাব্বি বুঝতে পারেনা জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় কি না। মেয়েটা বদ্ধ উন্মাদ। মনে মনে পন করে যেভাবেই হোক তানির কবল থেকে মাহিকে সে বাঁচাবেই। রাব্বি বাড়িতে গিয়ে সাহস করে বাবা-মাকে ডাকে। সবার সামনেই বলে “আমি জানি তোমরা আমার উপরে রাগ। তবে আমি কিন্তু মাকে আগেই জানিয়েছিলাম মাহির কথা। মা কথাটা কানেই নেয়নি। তাই আমিও বাধ্য হলাম তোমাদের বিপক্ষে যেতে। আমি জানি তোমরা আমাকে ভালোবাসো অনেক। ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছি সব দিয়েছো। সামনেও দিবে হয়তো, সঠিক জানিনা। তোমরা চিন্তা করছো আমার সুখের কথাটা। কিন্তু তোমরা একবারও ভাবছো না মাহি’ই আমার সুখ। সন্তানদের খারাপ সময়ে নাকি বাবা-মা পাশে থাকে। অথচ আমি একা আমার এই দুঃসময়ে ধুঁকে ধুঁকে শেষ হচ্ছি। তোমরা খবরও নিচ্ছো না। যাই হোক এটা কোনো ব্যাপার নাহ। মা তুমি বিপদে পড়লে বাবা নিশ্চয়ই তোমাকে ছেড়ে যাবেনা। কারন বাবা তোমাকে ভালোবাসে। আমিও মাহিকে ভালোবাসি মা। তোমরা কথাটা বুঝতেই চাইছো না। মাহির কিছু একটা হয়েছে মা। তোমাদের কাছে শেয়ার করতে পারছি না আমি। তবে ওর কিছু হয়ে গেলে আমাকেও পাবেনা তোমরা বলে দিলাম।” বলে ঘর থেকে বের হতে নিলেই পেছন থেকে রাব্বির মা ডেকে বললো “আমি মাহিকে মেনেই নিতাম। কিন্তু মেয়েটা পা’গল। র’ক্ত খেতে চায়, প্রেগন্যান্ট ছিল বিয়ের আগে। আমি কিভাবে এই মেয়েকে মেনে নিবো?” রাব্বি হালকা হেঁসে বললো “তুমি সমস্যা টা বুঝতেই পারোনি না। বলেছি তো মাহির কিছু একটা হয়েছে। ও থেকে থেকে সবকিছু ভুলে যায়। ও প্রেগন্যান্ট ছিল ঠিকই কিন্তু বাচ্চা আমার ছিল। বাচ্চাটা মারা গেছে মা। ও কষ্ট পেয়েছে এই বিষয়টা নিয়ে। মাহিকে কেউ কালো যাদু করেছে মা। ওর বাড়িতে সমস্ত জায়গায় তাবিজ, যাদু করার বিভিন্ন জিনিস এগুলো রয়েছে। রাতে কালো ছায়া আসে ঘরে। ও কারো সাথে কথা বলে মা। আমি বুঝতে পারছি না কি করবো। এই আধুনিক যুগে এসে তোমরা এসব বিশ্বাস করবে না জানি। আমিও করিনি, এখন করতে হচ্ছে মা। এটা সত্যি ওর সাথে খারাপ কিছু হচ্ছে।”

    মাহির চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ ১৫ দিন আর কোনো রকমের চর্চা হলোনা এই বিষয় নিয়ে। মাহির পেটের অবস্থা আস্তে আস্তে ঠিক হলেও, মানসিক অবস্থা দিনে দিনে অবনতি হচ্ছে। মাহিকে বেঁধে রাখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সে কারো সাথে একা একাই কথা বলে। প্রতিদিন কেউ একজন এসে একটা করে তাবিজ দিয়ে যাচ্ছে। মাহির পুরো শরীর তাবিজ দিয়ে ভর্তি। তাবিজে কেউ হাত দিলেই এমন মনে হয় যেন ওর উপরে কোনো প্রেতাত্মা ভর করেছে। রাব্বি দিন দিন ভেঙে পড়ছে মাহির এই অবস্থার জন্য। কোথাও কোনো কূল কিনারা পাচ্ছে না। এই যাদু টোনা কোনোদিন বিশ্বাস না করার কারনে এই বিষয়ে তেমন কোনো জ্ঞান নেই রাব্বির।

    মাহিকে বাসায় আনার পরের রাতে রাব্বি চুপি চুপি তানির বাসার বেলকনি বেয়ে উপরে উঠে এলো। তানি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তানির বিছানার পাশ থেকে চাবি নিয়ে এগিয়ে গেলো বন্ধ রুমটার দিকে। এখনো তালা ঝুলছে। তালা খুলে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখলো কেউ একজন বসে আছে মোমবাতি জ্বালিয়ে। রাব্বি ভেবে পাচ্ছে না রুমের দরজা তালা দেয়া ছিল। তাহলে রুমে ঢুকলো কিভাবে ইনি। সাহস করে এগিয়ে বসে থাকা ব্যক্তির মুখ দেখতেই চমকে ওঠে রাব্বি। মাহি বসে আছে, বসে বিড়বিড় করে কিছু বলছে। অথচ মাহিকে রেখে এসেছে রাব্বি বাড়িতে। মাহিকে ডাক দিতেই মাহি চোখ বড় বড় করে রাব্বির দিকে তাকিয়ে ভয়ঙ্কর কন্ঠে বললো “এই ছেলে তোর সমস্যা কি? বারবার আমার কাজে বাঁধা দিচ্ছিস তুই। মাহির থেকে দূরে থাক, নাহলে তোরও ম’রন হবে দেখে নিস। তোর জন্য একটা কাজও ঠিক ভাবে করতে পারছি না আমি।” সাথে সাথেই পুরো ঘরে ঝনঝন শব্দ হতে শুরু করলো। সাথে আর্তচিৎকার, ভয়ঙ্কর শব্দ। রাব্বি আর নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেলো।

    চলবে?….

    (গল্পটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হতে চলেছে। রেসপন্স কমে যাচ্ছে, তাই আগেই শেষ করা ভালো হবে।)

     

     

     

     

     

     

    #গল্প_কালো_যাদু
    #Writer_Mst_Moni
    #Part_07

    সাথে আর্তচিৎকার, ভয়ঙ্কর শব্দ। রাব্বি আর নিতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেলো।
    ভোরের দিকে সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভাঙে রাব্বির। চোখ পিটপিট করে দেখলো কেউ একজন পাশেই আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে। মনে মনে মাহিকে ভেবেই জড়িয়ে ধরে রাব্বি। কয়েক মিনিট পর নিজের খেয়াল ফিরে আসতেই বুঝতে পারলো আসলে সেটা মাহি নয়, অন্য কেউ।
    রাব্বি দূরে সরে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করলো কে। বুঝতে পারলো সামনে মাহি নয়, তানি বসে আছে। তানি একটু কাছে এসে রাব্বিকে বললো “দূরে চলে যাচ্ছো কেন? ভয় পাচ্ছো? কি লাভ হবে বলো? তুমি যে আমার সাথে আমার ঘরে আছো তার ছবি তুলে মাহিকে পাঠিয়ে দিয়েছি। এবার যা করার মাহি করবে। এইতো আসলো বলে।” তানির কথার মাঝেই মাহি চলে আসলো। এসে হাসিমুখে বললো “তোমার তানিকে পছন্দ হয়েছে? তাহলে তুমি তানিকে বিয়ে করে নেও৷” মাহি এমন ভাবে কথাগুলো বললো যেন কেউ পুতুলের মতো ওকে বলাচ্ছে। রাব্বি উঠে মাহির হাত ধরে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে গেলো। অনেক হয়ে গেছে, এসব আর সহ্য করতে পারছে না রাব্বি। রাগ করে মাহিকে ভেতরে রেখে বাইরে থেকে তালা মে’রে দিলো। এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে সে। ছুটলো মাহিকে বাঁচানোর জন্য।
    ভাগ্যক্রমে একজন তান্ত্রিক পেয়েও যায়। সন্ধ্যার পরে তান্ত্রিককে বাড়িতে নিয়ে আসলে মাহি পুরো ঘরে তান্ডব চালায়। তান্ত্রিক ঘরে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। যদিও ব্যাপারটা মোটেই রাব্বির পছন্দ হলো না। তাও বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো।
    অন্যদিকে তান্ত্রিক রুমে গিয়ে আগুনের কুন্ডলী তৈরি করতেই মাহি তেড়ে আসলো একদম। টেবিলের উপরে থাকা কলম দিয়ে তান্ত্রিকের গলায় বেশ কয়েকটা ফুটো করে দিয়ে। তান্ত্রিক তার কাজ শুরু করার আগেই চিৎকার শুরু করলো। বাইরে থেকে রাব্বি দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। কিন্তু দরজা খুলছে না। অবশেষে মাহি নিজেই দরজা খুলে দিয়ে পৈশাচিক হাসি দিলো। রাব্বি মাহিকে সরিয়ে আগে গিয়ে তান্ত্রিককে ধরলো। তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে কল করে বাড়িতেই ডেকে নিলো। মাহিকে দরজা বন্ধ করে বাইরে গিয়ে তান্ত্রিকের চিকিৎসা করলো আগে। তান্ত্রিকের জ্ঞান এখনো ফিরেনি।
    রাব্বি মাহির কাছে গিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রাব্বির মাহির মতো। আগের পাগলামি গুলো মেনে নিতে পারলেও এবার মাহি একদম বেশিই করছে। মাহি রাব্বির হাত ধরতেই রাব্বি এক ঝটকা মারে। রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বললো “কি সমস্যা তোমার? আমার লাইফটা একদম শেষ করে দিচ্ছো। আমিও তো সুস্থ স্বাভাবিক একটা সংসার ডিজার্ভ করি নাকি? তুমি সুস্থ স্বাভাবিক হচ্ছো না কেন? এসব কি? মানুষকে আ’ঘাত করছো? মা’রার চেষ্টা করছো? আমি তো এই মাহিকে ভালোবাসি না। আমার জীবন থেকে বিদায় হও। আমি একদম হাপিয়ে গেছি প্লিজ।”

    মাহি কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ছাঁদে চলে যায়। রাব্বি কথাগুলো বলার সময় মাহি নিজের মধ্যেই ছিল। তাই খারাপ লেগেছে মাহির। নিজের জীবনের প্রতি তার একরাশ অভিমান জমা হয়েছে।

    এদিকে তান্ত্রিককে গেস্ট রুমে নিয়ে রেস্ট করতে দিয়ে রাব্বি নিজেও ঘুমিয়ে যায়। মাহির কথা একদম মাথা থেকে বেরিয়েই যায়। সকালে তান্ত্রিক হালকা সুস্থ হলে তান্ত্রিকের কাছে যায় রাব্বি তান্ত্রিকের ভাষ্যমতে গতকাল রাতে সে মাহির পেছনে কালো ভয়ঙ্কর কিছু দেখেছিল। গলায় কলমের আ’ঘাত ওই কালো জিনিসটাই করেছে। তান্ত্রিক বললো “আপনার বউকে কালো যাদু করা হয়েছে। যিনি করেছেন তিনি শ’য়তানের পূজারী। তিনি শা নামের একজনকে পূজা করেন। তার অনেক শক্তি। তারা যেহেতু শ’য়তানের পূজা করেন সেহেতু এদের অনেক পোষ্য শ’য়তান আছে। যারা এদের নির্দেশে বিভিন্ন ভালো বা খারাপ কাজ করে থাকে। এরকম এক শ’য়তানের সাহায্যেই আপনার বউ প্রেগন্যান্ট হয়েছিল। হয়েছিল কিনা?” রাব্বি কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলো “হুম হয়েছিল, কিন্তু এই কথাটা তো আমি আপনাকে বলিনি।” তান্ত্রিক মুচকি হেঁসে বললো “এতো কথা যখন জানতে পেরেছি, এটা জানতে পারবো না এমন কোনো কথা? কিছু না পারলেই তান্ত্রিক কিভাবে হলাম?” রাব্বি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। তান্ত্রিক আবার বলতে লাগলো “আরো অনেক অজানা বিষয় আছে, যা আমি জানতে পারিনি। আপনার বউকে চোখে চোখে রাখবেন। আপনার বউকে নিয়ে যেতে বা পা’গল করে দিতে সময় লাগবেনা এদের। সমস্যাটা অনেক গভীরে চলে গেছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করুন। আমি সমস্যার সমাধান করতে পারবো না। এদের শক্তির সাথে আমি পেরে উঠবো না। আপনি আমার গুরুর কাছে যেতে পারেন। আশা করি সমাধান পাবেন।” হুট করেই কথার মাঝেই তান্ত্রিকের মুখের ভাবগতি পরিবর্তন হয়ে গেলো। এমন মনে হলো যে তান্ত্রিকের মুখ ভয়ে চুপসে গেছে। কোনো ভাবে কথা শেষ করেই গুরুর নামটা বলে এবং ঠিকানা না দিয়েই একপ্রকার পালিয়ে গেলো। রাব্বি কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। আপাতত তান্ত্রিকের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে মাহিকে খুঁজতে লাগলো। ভেবেছিল মাহি রাগ করে পাশের রুমে শুয়ে আছে। কিন্তু তার ভাবনা পুরোটাই ভুল প্রমান হলো। সারা বাড়ি খুঁজেও মাহিকে খুঁজে পাওয়া গেলো না। শেষে ছাঁদের কথা মনে পড়তেই দৌড়ে ছাঁদে চলে যায় রাব্বি। ছাঁদের এক কোনায় মাহি হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। গতরাতে বৃষ্টির জন্য ভিজে একাকার হয়ে আছে মাহি। রাব্বি দ্রুত মাহিকে কোলে নিয়ে রুমে নিয়ে আসলো। রাতের কথা মনে করে নিজের উপরেই নিজের খুব রাগ হলো। মাহির ড্রেস চেঞ্জ করে মাথার পাশে বসে রইলো কিছুক্ষন। মাহির ঝেঁকে জ্বর এসেছে। এই মুহুর্তে জ্বর কমাতে না পারলে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। তাই আগে ঘরে থাকা ঔষধ খাওয়ার জন্য মাহিকে ডেকে তুললো রাব্বি। মাহি উঠে রাব্বিকে দেখেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না মাহি। রাব্বির দু হাত ধরে বললো “রাব্বি তুমি আমাকে ছেড়ে দেও। তুমি তো ঠিকই বলেছো তুমি একটা সুন্দর সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ডিজার্ভ করো। যা আমি তোমাকে দিতে পারিনি বা পারছি না। আমি কি করবো বলো? আমি কি করি আমি নিজেই জানিনা। আমি তো আমার মধ্যেই থাকিনা। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেও প্লিজ। আমাকে গ্রামের বাড়িতে দিয়ে আসো। আমি আর কখনো তোমার সামনে আসবো না। আর যদি থাকতে না পেরে চলেও আসি তাহলে আমাকে মে’রে ফেলো।” মাহিকে চুপ করিয়ে দিয়ে কোনো কথা না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় রাব্বি। তান্ত্রিককে খুঁজতে হবে, তার থেকে তান্ত্রিকের গুরুর ঠিকানা নিয়ে তার সাথে কথা বলতে হবে৷ বের হওয়ার আগে মায়ের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করে রিকুয়েষ্ট করলো মাহিকে দেখে রাখার জন্য।

    তান্ত্রিককে আগে যেখানে পেয়েছিল সেখানেই গেলো রাব্বি। কিন্তু গিয়ে সে বড়সড় এক ধাক্কা খেলো। তান্ত্রিক মা’রা গেছে, সকালে রাব্বির বাড়ি থেকে ফেরার পরেই ভয়ানক ভাবেই তান্ত্রিকের মৃ’ত্যু হয়েছে। তান্ত্রিকের পুরো শরীর কালো হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ মাত্রই পু’ড়িয়ে ফেলেছে। চোখ দুটো একদম বাইরে বেরিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে মৃ’ত্যুর সময় খুব ভয় পেয়েছে। রাব্বি বুঝতে না পেরে তান্ত্রিকের সহকারীদের জিজ্ঞেস করলো কিভাবে মৃ’ত্যু হয়েছে। তার সহকারী জানায় একটু রাব্বির বাড়ি থেকে ফেরার পর জানায় সে রাব্বির সাথে কথা বলার সময় কালো শ’য়তানটাকে দেখেছে। এবং তার সহকারীর ধারনা রাব্বিকে এসব বলার কারনেই ক্ষুব্ধ হয়ে তান্ত্রিককে মে’রে ফেলেছে।

    চলবে?….
    ব্যক্তিগত কারনে দু’দিন গল্প দেয়া হয়নি। এখন থেকে প্রতিদিন গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো।

     

     

     

     

     

     

    #গল্প_কালো_যাদু
    #Writer_Mst_Moni
    #Part_08

    তার সহকারী জানায় একটু আগে রাব্বির বাড়ি থেকে ফেরার পর জানায় সে রাব্বির সাথে কথা বলার সময় কালো শ’য়তানটাকে দেখেছে। এবং তার সহকারীর ধারনা রাব্বিকে এসব বলার কারনেই ক্ষুব্ধ হয়ে তান্ত্রিককে মে’রে ফেলেছে।

    রাব্বি মনে মনে দুঃখ পেলো। তান্ত্রিকের মৃ’ত্যুর জন্য বেশ জোরালো ভাবেই নিজেকে দায়ী করছে সে। কিন্তু এসব ভাবার সময় এখন নয়। সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানুষের মৃ’ত্যুতে এসে ঠেকেছে সমস্যা। মন খারাপ করে বাড়ির দিকে রওনা দিলো রাব্বি। বাড়িতে এসে শুয়ে পড়লো সোজা। মন একদম বেশিই খারাপ করছে তার। রুমে এসে মাহিকে দেখতে পেলো না রাব্বি। খোঁজার চেষ্টাও করলো না একবারও। ভেতর থেকে শক্ত হয়ে গেছে একদম। কপালে হাত রেখে কিছুক্ষন শুয়ে থাকার পরেই রুমে প্রবেশ করলো মাহি। রাব্বির কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিজে রাব্বির কপালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো “কি হয়েছে? কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করছো?” রাব্বি চোখ খুলে মাহির দিকে তাকিয়ে মাহিকে বসা অবস্থায় জড়িয়ে ধরে হু হু করে কান্না করে দিলো। রাব্বি কখনোই ভাবেনি ওর আর মাহির জীবন এমন হবে। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর মাহিকে বুঝিয়ে বাসায় রেখে ফের আরো একবার তানির বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো রাব্বি। কিছু একটা প্রমান যোগাড় করতেই হবে। মাঝপথে গিয়ে তান্ত্রিকের বলে দেয়া গুরুর কথা মনে পড়ে রাব্বির। প্রমানের থেকেও গুরুর থেকে সমাধান পাওয়াটা জরুরী। তাই পথে মোড় দিয়ে সোজা তান্ত্রিকের আস্তানায় চলে গেলো রাব্বি। তান্ত্রিককে কবর দেয়া হয়েছে। রাব্বি গিয়ে তার সহকারীকে জিজ্ঞেস করে গুরুর কথা। তার সহকারী জানায় সে এখানে নতুন, গুরুর বিষয়ে সে কিছুই জানেনা। রাব্বি পরপর অনেক জনকে জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু কেউ যথাযথ উত্তর দিতে পারলো না। অগত্যা বাধ্য হয়ে চলে আসতে নিতেই বুড়ো টাইপের একজন লোক এসে বললো “আমি ওস্তাদের সবথেকে পুরোনো শিষ্য ছিলাম। আমি জানি গুরু কে? আমি আপনাকে গুরু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবো।” রাব্বি এগিয়ে গিয়ে লোকটাকে দুহাত দিয়ে ধরে বললো “না আপনার যেতে হবেনা, আপনি আমাকে ঠিকানা দিন। আপনি গেলে আপনার বিপদ হতে পারে। যেমনটা আপনার ওস্তাদের সাথে হয়েছে।” লোকটা হেসে বললো “তাতে কি? আমি আর কয়দিন বাঁচবো? আমার তো আর সন্তান-সংসার নেই। এই বয়সে এসে কাউকে সাহায্য করতে পারলেও আনন্দে ম’রতে পারবো। আর আমাদের ধর্মই তো মানুষকে সাহায্য করা। আপনাকে ঠিকানা বললে আপনি যেতে পারবেন না। চলুন আপনাকে আমিই নিয়ে যাচ্ছি। এখন যাবেন? নাকি পরে? রাস্তায় বিপদ হতে পারে। পরিবারের কারো সাথে দেখা করার ইচ্ছে থাকলে দেখা করে নিতে পারেন।”
    রাব্বি দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে মা বাবা-মা, বোন এবং মাহির কথা মনে করে নিলো একবার। বড় করে নিশ্বাস নিয়ে বললো “সমস্যা নেই, এখনি চলুন। খুব দ্রুত গুরুকে পাওয়া আমার দরকার।”

    তারা দুজনেই রওনা দিলো গুরুর কাছে। যাওয়ার পথ একটাই, বড় বড় পুরোনো গাছের মধ্য দিয়ে রাস্তা। গাছের বিশালাকার পাতাগুলো হলুদ বর্ন ধারন করেছে। কিছুক্ষণ পর পর ঘুটঘুট শব্দ হচ্ছে। শহরের বুকেও এমন জায়গা আছে সেটা জানতো না রাব্বি। তার ইচ্ছে হলো এই বনেই ঘর বানিয়ে থেকে যেতে। রাব্বির মনোভাব তান্ত্রিকের সহকারী বুঝতে পেরে বললো “কি? এখানে থেকে যেতে ইচ্ছে করছে? ভুলেও এমনটা ভাব্বেন না। এটা মায়াবন, এখানে যত অদ্ভুত চিন্তা মনে করবেন সব পূরন হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে এসে এখানে থেকে যাওয়া ছাড়া আর কোনো অদ্ভুত চিন্তা আসেনা কারো। আর যার এই ইচ্ছে পূরন হয়ে যায় সে এই মায়াবন থেকে বের হতে পারেনা। একটু পরেই টের পাবেন সবটা।” আসলেই লোকটার কথা সত্যি হলো। কিছুক্ষণ পরেই রাব্বি দেখতে পেলো ছোট ছোট স্বপ্নের মতো ঘর। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো এখানে কোনো মানুষ নেই। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের কঙ্কাল।

    কিছুদূর এগিয়ে যেতেই হলুদ একটা বিড়াল লাফ দিলো রাব্বির সামনে। খুব করে ধরতে ইচ্ছে হলো তার। সব সময় শুনে এসেছে কালো বিড়াল অশুভ। তাই বিড়ালটা হলুদ হওয়ায় হাতে নেওয়ার চেষ্টা করলো রাব্বি। পাশে থাকা লোকটা খপ করে হাতটা ধরে ফেলে ওর। ইশারায় ধরতে বারন করলে রাব্বি পিছিয়ে যায়। সাথে সাথে বিড়ালটা ভয়ঙ্কর আকার ধারন করে ধাড়ালো দাঁত গুলো বের করে এগিয়ে আসে রাব্বির মুখের দিকে। লোকটা চিৎকার করে রাব্বিকে চোখ বন্ধ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। রাব্বি লোকটার কথা মতো চোখ বন্ধ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এক দমকা হাওয়া এসে লাগলো রাব্বির শরীরে। সাথে সাথে সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।

    লোকটা রাব্বিকে নিয়ে এগিয়ে গেলো সামনে। আর কোনো বিপদ নেই আপাতত। তাই আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে সামনে এগিয়ে যায় দুজনে।
    গুরুর আস্তানায় গিয়ে থমকে দাঁড়ালো রাব্বি। জায়গাটা চেনা চেনা লাগছে। বেশ কয়েকদিন আগে ঠিক এমন একটা জায়গা সে স্বপ্নে দেখেছে। ধু ধু মরুভূমির মতো জায়গাটা, শত শত আগুনের মশাল জ্বলছে। সাথে ধ্যানরত অবস্থায় কতো লোকজন বসা। ঠিক কোনটা গুরু সেটা ঠাহর করতে পারছে না সে।
    সহকারী লোকটা রাব্বির বয়সী একজন লোকের দিকে এগিয়ে গেলো। লোকটা অন্যদের মতো কালো কাপড় পড়ে নেই কিংবা চুল-দাঁড়িতে জটা নেই। সাধারণ শার্ট প্যান্ট পড়া একজন তরুন যুবক বলা যেতে পারে। লোকটা হেঁসে সহকারী লোকটাকে অভ্যর্থনা জানালেন। সহকারী লোকটা হাতজোড় করে বললেন “গুরু আমার ওস্তাদ আজকেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। এই লোকটার আপনাকে খুব প্রয়োজন। আপনি দয়া করে তাকে সাহায্য করুন।” রাব্বিকে দেখিয়ে কথাটা বললেন সহকারী লোকটা। গুরু বলা ছেলেটা সহকারী লোকটার হাত ধরে বললেন “ওহ্ চাচা, আপনাদের বলেছিনা আমাকে এই গুরু টুরু বলবেন না। এভাবে এসে হাতজোড় করে মাথা নত করবেন না। আমি দেখছি বিষয়টা, ধৈর্য্য ধরুন।” বলেই এগিয়ে আসে রাব্বির দিকে। এসে আবারও একগাল হেঁসে বললো “আসুন মিস্টার রাব্বি, আমি জানতাম আপনি আসবেন। আপনাকে আসতেই হতো, আমি যে আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।” রাব্বি খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো “আপনি কিভাবে জানলেন আমি আসবো? আমার নামও তো আপনাকে বলিনি।” লোকটা হাসিমুখেই বললো “চলুন বাড়ির দিকে রওনা দেই, যেতে যেতে কথা বলি।” আস্তানায় থাকা লোকদের উদ্দেশ্য করে বললেন “আমি আসছি, আপনারা তৈরি থাকবেন। প্রয়োজন হতে পারে, আমি খবর পাঠালে চলে আসবেন কেমন?” কারো কোনো প্রতুত্তর পাওয়া গেলো না। যে যার মতো ধ্যানে মগ্ন। রাব্বি বিষয়টা দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। রাব্বির মনোভাব বুঝে ছেলেটা রাব্বিকে বললো “এরা ধ্যানে আছে, কথা বলতে পারবে না। কিন্তু আমার কথা শুনেছে। চলুন, আমার নাম জোহান। আমাকে গুরু টুরু বলবেন না আপনি অন্তত।”
    রাব্বি মাথা নাড়িয়ে নিজের পরিচয় দিতে যেতেই রাব্বিকে থামিয়ে দিয়ে জোহান বললো “আমি জানি আপনি রাব্বি। আপনার আরো আগেই আসা উচিত ছিল। আমি আপনাকে স্বপ্নের মাধ্যমে খবরও পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি আসেন নি।” রাব্বি এবার বুঝতে পারলো জায়গাটা আগেই স্বপ্নে দেখার কারন।
    জোহান আবারও বলতে শুরু করে–

    -আমাকে দেখে বাবা টাইপের কিছু মনে হচ্ছে না তাইনা?
    -না, মানে আসলে..
    -আমি বুঝেছি। তবে আমার বাবা হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। তবে মানুষের সাহায্য করার ইচ্ছের জন্যই এই কাজগুলো করি। আমিও তো সাধারণ একজন মানুষ। তাই সাধারণ মানুষের মতোই থাকি বুঝলেন?
    -তবে আপনি কিন্তু বেশ স্মার্ট!
    -ধন্যবাদ, লজ্জা দিবেন না। আপনি কিন্তু কম সুন্দর নয়। বিশেষ করে আপনার গালের টোলটা।

    রাব্বি হাসলো, তবে লজ্জা পেয়ে টোল যেন না দেখা যায় সেভাবেই হাসার চেষ্টা করলো। রাব্বিকে এমন অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে জোহান খিলখিল করে হেঁসে ফেললো। রাব্বিকে উদ্দেশ্য করে বললো “উঁহু, ঢাকার চেষ্টা করবেন না। এভাবেই থাকুক, বিধাতার প্রদত্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এটা আপনার। এই জন্যই বোধহয় মাহি আপনার জন্য পাগল হয়ে গেছে তাইনা? আমি যখন এই ঘটনাটা জেনেছি তখন ভেবেছিলাম মিসেস মাহি অবিবাহিত। তাকে দেখার পরে খানিকটা ভালো লাগাও কাজ করে আমার মধ্যে। প্রশ্ন জেগেছে কিভাবে দেখলাম? আমি কালো যাদুর বিষয়টা আগেই জেনে মিসেস মাহিকে দেখে এসেছিলাম। তবে আমাদের ধর্ম হলো কেউ যতক্ষণ না আমাদের কাছে সাহায্য চাইতে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো সাহায্য আমরা করতে পারিনা। কি? হিংসে হচ্ছে? কুল কুল, ভালোবাসেন তো হিংসে একটু হবেই। তবে ভয় নেই, অন্যের জিনিস কেড়ে নেইনা আমি। আপনাকে দেখেও হিংসে হয়েছিল প্রথমে। তবে এখন মনে হচ্ছে মানুষটা আপনি মন্দ নন।”

    ইতিমধ্যেই রাব্বি বুঝে গেলো জোহান কথা একটু বেশিই বলে। একদম মাহির কার্বন কপি। মাহির কথা মনে পড়তেই চোখ ভিজে এলো রাব্বির। কথায় কথায় মায়াবনে এসে পৌঁছালো ওরা। সামনে কতোগুলো কালো মহিষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সতর্ক হয়ে যায় জোহান। রাব্বিকে নিজের পেছনে দিয়ে জোহান এগিয়ে যায় সামনে। কুরআনের আয়াত সহ কয়েকটা সূরা পাঠ করে রাব্বির শরীরে ফুঁ দিলো জোহান। সাথে থাকা সহকারী কিছুটা বুঝতে পেরে রাব্বির হাতটা শক্ত করে ধরে রইলো। বয়সটা ৯০ এর কোঠায় পৌঁছে গেছে বলে হাতে তেমন শক্তি তার নেই।

    সামনে থাকা মহিষগুলো তেড়ে আসতেই জোহাক এক ফুঁ দিলো। সাথে সাথে মহিষ থেকে আসল রুপ ধারন করলো সবাই। থেমে যায় সব শ’য়তানগুলো। একজনে এসে জোহানের কাছে বললো “আপনার সাথে আমার ওস্তাদ শা বুঝে নিবে। আমাদের সামনে যেতে দিন।” জোহান পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো “দাঁড়ালাম আমি, সামনে যা তো দেখি কার কতো বড় কলিজা।” কেউ সামনে আগানোর সাহস পেলো না। পেছনে পিছিয়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে বিকট এক আ’ঘাত করলো সহকারী লোকটার উপর। লোকটা আ’ঘাতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। জোহান চমকে উঠে পেছনে তাকিয়ে সামনে তাকালো র’ক্তচক্ষু নিয়ে। মনে হচ্ছে এখনি ভস্ম হয়ে যাবে সব। সামনে কিছু না দেখতে পেয়ে ক্রোধে বিরাট এক চিৎকার দিলো জোহান। পেছনে এসে লোকটাকে ধরতে ধরতে লোকটা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে।
    রাব্বি নিজের মাথা ধরে বসে পড়ে মাটিতে। লোকটাকে বারবার বারন করেছিল সে না আসতে। তাও লোকটা আসলো। এবং আগের বারের মতো এবারের লোকটার মৃ’ত্যুর জন্যও বেশ জোরালো ভাবে নিজেকেই দায়ী করলো রাব্বি।

    জোহান রাব্বির কাঁধে হাত রেখে বললো “কষ্ট পেয়ো না, চোখের সামনে অনেকর মৃ’ত্যু দেখেছি। শ’য়তানের সাথে খেলা মানেই আগুনের সাথে খেলা। ওঠো, নিজেকে দায়ী করো না একদম। কিছু মনে করো না, তুমি করে বলে ফেলেছি।”

    চলবে?…

     

     

     

     

     

     

     

     

    #গল্প_কালো_যাদু
    #Writer_Mst_Moni
    #Part_09

    “কষ্ট পেয়ো না, চোখের সামনে অনেকর মৃ’ত্যু দেখেছি। শ’য়তানের সাথে খেলা মানেই আগুনের সাথে খেলা। ওঠো, নিজেকে দায়ী করো না একদম। কিছু মনে করো না, তুমি করে বলে ফেলেছি।”

    রাব্বি লোকটার লা’শ কোলে তুলতে যেতেই জোহান ইশারা দিয়ে না করলো কোলে নিতে। রাব্বির জিজ্ঞাসু দৃষ্টির উত্তর দিয়ে জোহান বললো “এখান থেকে কারো লা’শ নিয়ে যাওয়া যায় না। রেখে দেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই কঙ্কাল হয়ে যাবে। এই মায়াবনে যত পোকামাকড় আছে সব এখন কিলবিল করে এগিয়ে আসবে। নিমিষেই শরীরটাকে পরিনত করবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু হাড়ে। দ্রুত চলো,নাহলে এই জোহানের তন্ত্র মন্ত্রও কিন্তু কাজে দিবে না।” বলেই হিস হিস করে হাসলো। লোকটা বড়ই অদ্ভুত, দেখে মনে হচ্ছে না সহকারীর মৃ’ত্যুর বিষয়টা নিয়ে বেশি ভাবছে। এসব সাধারণ ঘটনা তার কাছে। রাব্বিকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জোহান বলে “কি ভাবছো? দুঃখ আমিও পেয়েছি, হাসতে শিখো। জীবন সুন্দর!”

    জোহান রাব্বির হাত ধরে দাঁড় করালো। মুহুর্তেই টের পেলো চারদিক থেকে পোকামাকড়ের আওয়াজ আসছে। রাব্বি আর জোহান কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো। লাল কালো শতশত পোকা কিলবিল করে সহকারী লোকটার শরীরের উপরে উঠে চোখের পলকেই পুরো শরীরের মাংস খেয়ে ফেললো। পড়ে রইলো বৃদ্ধ লোকটার ভেঙে যাওয়া বাঁকা হাড়গুলো। রাব্বির চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। জোহান এবং রাব্বি এগিয়ে চলেছে। রাব্বি বারবার পেছনের দিকে তাকাচ্ছে। সহকারী লোকটার মৃ’ত্যুর জন্য অনুশোচনায় ভুগছে সে। তবে বরাবরের মতোই জোহানকে দেখে অবাক হচ্ছে। লোকটা চমৎকার, মিশুক স্বভাবের। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে পারে কিংবা যেকোনো ভারি পরিস্থিতি মুহুর্তেই হালকা করে দিতে পারে। মনে মনে রাব্বি ভাবে সে নিজে মেয়ে হলে নির্ঘাত এই ছেলেটার প্রেমে পড়তো।

    শহরের দিকে এসে জোহান আগে মাহির প্রথম বাড়িটায় নিয়ে যেতে বললো রাব্বিকে। রাব্বি জোহানের কথা মতো মাহির প্রথম বাড়িতে নিয়ে গেলো। কয়েকমাস এই বাড়ির আশেপাশেও আসেনি রাব্বি। তবে রাব্বি কেন, এই বাড়িতে আসার মতো আর কোনো লোক নেই। তাও দেখে মনে হচ্ছে এই বাড়িতে নিয়মিত কেউ বসবাস করছে। বাড়িতে ঢোকার আগে পকেট থেকে একটা তাবিজ বের করে রাব্বির হাতে দিলো জোহান। এবং সতর্ক করে দিলো যা’ই হয়ে যাক না কেন যেন ভয় না পায়।

    জোহান দরজায় পা দেয়ার সাথে সাথে বাড়িটা বেশ জোরালো ভাবেই নড়ে উঠলো। মনে হলো বড়সড় একটা ভূমিকম্প হয়ে গেছে মাত্রই এই বাড়িতে। জোহান দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো, পেছনে রাব্বি। পুরো বাড়ির ভেতরের পরিবেশটা মুহুর্তেই বদলে গেলো। কয়েকটা অদ্ভুত কন্ঠ কেমন যেন কথা বলতে শুরু করলো। জোহানের মুখ মুহুর্তেই র’ক্তিম বর্ন ধারন করেছে। সে চিৎকার করে বললো “যা তোদের বাদশাকে গিয়ে জানিয়ে দে রাজা এসে গেছে। এবার ও বুঝতে পারবে বাপেরও বাপ আছে। বলিস ওর সাথে আমার সামনা সামনিই কথা হবে। তৈরি থাকতে বলিস তোদের বা’পকে।”
    সাথে সাথেই ঘরটা ঠান্ডা হয়ে গেলো।

    জোহান পুরো ঘরটা ঘুরে দেখে মুখের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন করে ফেললো। টেবিলের উপরে রাখা কাগজ কলমে বাচ্চার ছবি আঁকা দেখে আৎকে ওঠে। তবে এবারের বাচ্চাটা স্বাভাবিক ভাবেই আঁকা। মনে হচ্ছে কোনো শিল্পী তার নিপুণ হাতে ছবিটি যত্নসহকারে এঁকেছে। ছবিটি হাতে নিয়ে জোহান খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো। রাব্বিকে সামনে বসিয়ে বললো–

    -মিস্টার রাব্বি, আমার উপর তোমার ভরসা আছে?
    -আছে তো
    -কতোটুকু?
    -এই মুহুর্তে আপনাকে ছাড়া আর কাউকে ভরসা করার মতো দেখছি না। তাহলে বুঝতেই পারছেন কতোটা ভরসা করি।
    -চমৎকার, বেশ ভালো গুছিয়ে কথা বলতে পারো তুমি। আচ্ছা কেউ যদি তোমার সামনে আমার নামে কিছু বলে, ধরো তোমার একদম কাছের কেউ যদি তোমার কাছে বলে আমি এই অন্যায় করেছি বা তোমার সাথে বেঈমানী করেছি। বিশ্বাস করবে সেটা?
    -না, কারন একমাত্র ভরসা আপনি।
    -মিসেস রাব্বিকে ভালোবাসো?
    -বাসি
    -যদি তিনি আমার নামে এমন কিছু বলে যেটা তুমি মেনে নিতে পারবে না কিংবা আমার প্রতি সন্দেহের সৃষ্টি হয় তাহলেও কি বিশ্বাস করবে না?
    -এ কথা কেন বলছেন?
    -কারন আছে বৈকি, শ’য়তানের ধোকাকে বিশ্বাস করো না। চলো খুব বেশি দেরি হয়ে গেছে। আবার আসতে হবে এখানে।

    খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চললো জোহান। রাব্বি বুঝতে পারছে না কেন এমনটা করছে। পুরোটা সময় চুপ করে থাকা ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় দেখছে না সে। অগত্যা চুপ করেই জোহানের কান্ড কীর্তি দেখে যেতে লাগলো।
    রাব্বির বাড়ি চিনিয়ে দিতে হলোনা রাব্বিকে। জোহান নিজে থেকেই রাব্বিকে নিয়ে চলে এসেছে এখানে। কাহিনীটা আগে থেকেই জোহান জানতো বলেই রাব্বি অবাক হলো না। বাড়ির ভেতরো ঢুকেই মাহের আহাজারির শব্দ শুনতে পেলো রাব্বি। বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠলো নিমিষেই। মনের মধ্যে মাহির কিছু একটা হয়ে যাওয়ার বিষয়টা উঁকি ঝুঁকি মারছে।

    জোহানকে পেছনে ফেলেই রাব্বি দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো। জোহান মুচকি হাসলো বিষয়টা বুঝতে পেরে। রাব্বির মা যেই কারনে বুকফাটা আর্তনাদ করছে সেই কারনটার আঁচ আগেই করতে পেরেছিল জোহান। তাই রাব্বিকে নিয়ে দ্রুত চলে আসলো বাড়িতে। তবে পরবর্তীতে যা ঘটবে সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে জোহান।
    রাব্বি ওর মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। কিন্তু ওর মা কোনো জবাব না দিয়ে আগের মতোই আর্তনাদ করে যেতে লাগলেন৷ এবার রাব্বি ধৈর্য্যহারা হয়ে মা’কে ধমক দিয়েই বসলো। রাব্বির মা থতমত খেয়ে রাব্বির দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বললো “তুই কি বউ এনেছিস বাপ? তোর বউ আবারও প্রেগন্যান্ট। এমন অদ্ভুত অদ্ভুত খাবার খেতে চাইছে। কখনো মাথার মগ’জ, আবার কখনো র’ক্ত, কখনো বা বাচ্চাদের হাতের আঙুল।” বলেই আবারও চিৎকার শুরু করলেন। রাব্বি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ও ভেবেছিলো মাহির কিছু হয়ে গেছে। তবে বাচ্চা হওয়ার বিষয়টা এবারও স্বাভাবিক ভাবে নিলো রাব্বি। শুধু মাকে উদ্দেশ্য করে বললো “মা, বউ আমার সো সবটা আমি বুঝবো। তোমার এমন গগনবিদারী চিৎকার থামাও। মিস্টার জোহান, আসুন আমার সাথে।”

    জোহান বাঁকা হেঁসে রাব্বির মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে উপরে চলে গেলো রাব্বির সাথে। দরজা অবশ্য বাইরে থেকেই তালা দেয়া ছিল। রাব্বি এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে অবাক হয়ে গেলো। মাহির পেট অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে উঠেছে। চুল গুলো এলোমেলো পা’গলের মতো হয়ে আছে। সারা দেয়াল জুড়ে বাচ্চাদের ছবি আঁকছে সে। এতো ভারি পেট নিয়ে একদমই নড়তে কষ্ট হচ্ছে না তার। দেখে মনেই হচ্ছে না প্রেগন্যান্টের বিষয়টা মাহি জানে।

    জোহানকে বসতে দিয়ে রাব্বি এগিয়ে যায় মাহির দিকে। মাহি ওদের উপস্থিতি টের পেয়ে হেঁসে রাব্বির দিকে না গিয়ে জোহানের দিকে এগিয়ে আসলো। রাব্বি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মাহি জোহানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো “কোথায় ছিলে তুমি? তুমি জানো তোমার বেবি তোমার জন্য কতো কান্না করে? এই তোমার আসার সময় হলো?” জোহান মাহির দিকে তাকিয়ে আছে। মুহুর্তটা মন্দ লাগছে না তার কাছে। জীবনের প্রথম ভালোলাগা ছিল মাহি। কিন্তু পরে জানতে পারে মাহি বিবাহিত। তাই নিজের অনুভূতিগুলোকে চাপা দিয়ে রেখেছিল। রাব্বি এগিয়ে এসে মাহিকে ধরে দাঁড় করালো। জোহান অপ্রস্তুত হয়ে এদিক ওদিক তাকালো। রাব্বি মাহিকে জিজ্ঞেস করলো “মাহি কি হয়েছে? তুমি এনাকে চিনো?” মাহি মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলে সে চেনে। রাব্বি আবারও জিজ্ঞেস করলো “কিভাবে চিনো তুমি? তোমার এই অবস্থা কিভাবে হলো? বাচ্চা কার মাহি?” মাহি খানিকটা লজ্জা পেয়ে আঙুল দিয়ে জোহানকে দেখিয়ে দিলো। জোহানের কোনো হেলদোল দেখা গেলো না। মনে হচ্ছে এমনটা হবে সেটা আগে থেকেই জানতো জোহান।

    তবে রাব্বির অস্থিরতা বাড়তে শুরু করলো। সে আবারও মাহিকে জিজ্ঞেস করলো “বলো তো এনার নাম কি? এই লোকটার বিষয়ে কি কি জানো তুমি বলো তো।” মাহি বিছানায় বসে বললো “ওর নাম তো জোহান, আমাদের বাড়িতে আসতেন উনি। আমি আগে যেই বাসায় ছিলাম সেখানেই তো আসতেন। আগে যে বাচ্চা ছিল আমার, সেটাও তো জোহানের। এই জোহান চুপ করে আছো কেন বলো।”

    রাব্বি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জোহানের দিকে তাকিয়ে আছে। জোহান বুঝতে পেরে চোখের পলক ফেলে ইশারা দিলো। রাব্বির মন মানছে না, এতো বড় একটা সত্যির মুখোমুখি হলো সে। কিন্তু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আগে ভেবেছিল মাহির পরপর দুবার প্রেগন্যান্ট হওয়ার বিষয়টা নেহাৎ কালোযাদু ছাড়া আর কিছু না। তবে এর পেছনে জোহানের হাত থাকবে সেটা আশা করেনি। সাথে মাহির উপরেও বেশ রাগ হলো। মাহি তো রাব্বিকে ভালোবাসতো, তাহলে জোহানের সাথে কিভাবে কি? যখন জোহানকে চিনতেই পেরেছে, তাহলে সজ্ঞানেই যা হওয়ার হয়েছিল।

    মাহিকে ছেড়ে দিয়ে ধপ করে বসে পড়লো রাব্বি। জোহান পাশে এসে কাঁধে হাত রাখতেই গা গুলিয়ে এলো রাব্বির। কিন্তু কিছু করতে না পেরে অসহায় দৃষ্টিতে জোহানের দিকে তাকিয়ে রইলো রাব্বি। জোহান হেঁসে বললো “এই বাড়িতে আসার আগেই কিন্তু তোমাকে আমি সাবধান করেছিলাম মিস্টার রাব্বি। বলেছিলাম কতোটুকু ভরসা করো আমাকে। উত্তরটাও বেশ চমৎকার ভাবে দিয়েছিলে। কিন্তু সেটা তোমার মুখের কথা ছিল। এই যে তোমার মিসেসের কথা শুনে মুহুর্তেই তোমার চমৎকার জবাবের পরিবর্তন হয়ে গেলো। আবারও বলছি শ’য়তানের ধোঁকায় পড়ো না।

    চলবে?…

    চেষ্টা করবো আগামীকাল দুটো পর্ব দেয়ার। খুব শীঘ্রই গল্পের ইতি টানা হবে। তবে কিছু কিছু পাঠক-পাঠিকাদের মন্তব্য অসাধারণ। এরা মনে করে তাদের শুধু পারসোনাল লাইফ আছে, লেখক-লেখিকাদের নেই।

     

     

     

     

     

    #গল্প_কালো_যাদু
    #Writer_Mst_Moni
    #Part_10 (শেষ পর্ব)

    “এই যে তোমার মিসেসের কথা শুনে মুহুর্তেই তোমার চমৎকার জবাবের পরিবর্তন হয়ে গেলো। আবারও বলছি শ’য়তানের ধোঁকায় পড়ো না।”

    রাব্বি কিছুতেই তার মনকে শান্ত করতে পারছে না। না পারছে মাহির কথা অবিশ্বাস করতে, না পারছে জোহানকে অবিশ্বাস করতে। আর যাই হোক এখন এই মুহুর্তে একমাত্র জোহানই পারবে সকল সমস্যার সমাধান করতে। তাই যতোটা সম্ভব চুপ থাকার ট্রাই করলো। বারবার মাহিকে জিজ্ঞেস করে বারবার ওই একই উত্তর পাচ্ছে রাব্বি। তাই বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করাটাও বন্ধ করে দিয়েছে

    জোহানের সাথে আরো একবার মাহির আগের বাড়িতে যেতে হবে। রাব্বির মন চাইছে না রাব্বির সাথে কোথাও যেতে। বিষয়টা বুঝতে পেরে জোহান রাব্বিকে বলে “মিস্টার রাব্বি, তুমি এতোটা মাস ধৈর্য্য ধরে গেলে। আর এখন এই কয়েকটা দিন ধৈর্য্য ধরতে পারছো না? আমার উপরে বিশ্বাস আনতেই পারছো না৷ সত্যিটা জানতে পারলে বিশ্বাস করবে তো?” রাব্বি মাথা নিচু করে জবাব দিলো “কি করবো বলুন, কোনো ওয়াইফ যদি তার সামনে বাচ্চার বাবা অন্য একজনকে বানিয়ে ফেলে তাহলে মনের অবস্থা কেমন হয় বুঝতে পারছেন আপনি?” জোহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বললো “পারছি, তবে তোমাকে সত্যিটা এখনি বলতে পারছি না। তাহলে তোমার মিসেসের ক্ষতি হতে পারে। তাই ধৈর্য্য ধরো।” রাব্বির মন আরো আনচান করতে লাগলো। সত্যি মানে? কি সত্যি লুকিয়ে আছে আবার? এবার কোনো বড়সড় সত্যির মুখোমুখি হতে পারবে না সে। তবে জোহানকে দেখে বরাবরের মতোই মুগ্ধ হচ্ছে রাব্বি। লোকটা আসলেই চমৎকার স্বভাবের মানুষ৷ মনের কথা নিমিষেই বুঝে যায়। এটা তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা নাকি অনুমান শক্তি সেটা বোঝা মুশকিল।

    এক গাদা অনিচ্ছা থাকা সত্বেও জোহানের সাথে মাহির আগের বাড়িতে গেলো রাব্বি। যাইহোক সমস্যাটা তার, জোহানের নয়। তাই জোহানের কথা শুনতেই হবে। জোহান গিয়ে সোজা বাড়ির পেছনের দিকটায় চলে যায়। এদিক ওদিক ঘুরে অনেক চিন্তা ভাবনা করে একটা জায়গায় হাঁটু গেড়ে বসলো। রাব্বিকে ইশারা দিয়ে বললো মাটি খোঁড়ার জন্য কিছু নিয়ে আসতে। রাব্বি গিয়ে বাড়ির ভেতর থেকে একটা কোদাল এনে জোহানের হাতে তুলে দেয়। রাব্বি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জোহানের হাতের দিকে। দেখে বুঝা যাচ্ছে জোহান এসব কাজে বেশ পটু। সে নিপুন হাতে কাজ করে যাচ্ছে। কিছু ক্ষন মাটি খোঁড়ার পর বেরিয়ে এলো একটা ছোট্ট পুতুল। পুতুলের শরীর চুল আর লাল সুতো দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। গোটা কয়েক পিন ফুটানো হয়েছে পুতুলের শরীরে। পুতুলটা দেখে হাসি ফুটলো জোহানের মুখে। এক এক করে বাড়ির চার কোনা থেকে চারটা পুতুল উদ্ধার করলো ওরা। বাড়ির পেছনে থাকা অর্ধ শুকনো গাছের গোড়া থেকে মাটি ওঠানোর পর চুল পাওয়া গেলো বেশ কিছু। চুল গুলো হাতে নিতে নিতে বললো “চুল গুলো গাছের সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছিল মিস্টার রাব্বি। সেই জন্য গাছটা শুকিয়ে গিয়েছে। এবং শুকাতে শুকাতে যেদিন গাছটা পুরোপুরি শুকিয়ে মা’রা যেত। সেদিন আপনার ওয়াইফের জীবনের সমাপ্তি ঘটতো।”
    জোহানের এমন কথায় চমকে যায় রাব্বি। সে কখনোই কালো যাদু বিশ্বাস করেনি। তাই যেই কাজকর্ম হচ্ছে সবটাই নতুন মনে হচ্ছে তার কাছে।

    দুইহাত ভর্তি করে পুতুল এবং চুল নিয়ে রওনা দিলো বাড়ির ভেতরে। ভেতর থেকে যতগুলো তাবিজ পাওয়া গেলো সব খুঁজে খুঁজে একটা ব্যাগে ভরে নিলো জোহান। তারপর রাব্বিকে নিয়ে রওনা দিলো রাব্বির বাড়ির দিকে। পুরোটা রাস্তা রাব্বি এটাই ভেবেছে এরপর কি হবে?
    হুট করেই মাথায় কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরতে থাকে। প্রশ্নগুলো করবে কিনা সেটা নিয়ে কনফিউশানে ছিল রাব্বি। শেষমেশ থাকতে না পেরে প্রশ্ন গুলো করেই বসলো জোহানকে–

    -মিস্টার জোহান, কয়েকটা প্রশ্ন করি?
    -কয়েকটা? হুম করো
    -আচ্ছা শা কে?
    -জানোনা তুমি?
    -না তো!
    -শা হয়তো এক রকমের দেবতা। শ’য়তানদের দেবতা। এরা এই শা কে পূজা করে। অনেক মানুষ আছে যারা এই শ’য়তানকে পূজা করে এবং কালো যাদু চর্চা করে নিজেদের কাজ হাসিল করে নেয়। চীনের কিছু মানুষ যেই শ’য়তানকে পূজা করে তাকে তারা শা বলেই সম্বোধন করে। সেই ধারাটা এখানেও বেশ প্রচলিত।
    -তাহলে শ’য়তানের সাথে মাহির কি শত্রুতা ছিল? যদি কেউ কালো যাদু করতে চায় সোজা কালো যাদুই করবে। শ’য়তান আনলো কেন মাঝে?
    -কালো যাদু সম্পর্কে বুঝো? কালো যাদু করা মানেই ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শ’য়তানের কাছে নিজেকে সপে দেওয়া। সেটা হোক প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে। তাই যেই কালো যাদু করতে যাবে তাকে আগে শ’য়তানের পূজারী হতে হবে। তারপর টুকটাক যাদুর পাশাপাশি কালো যাদুকে ব্যবহার করে এই শা তার শ’য়তানদের দিয়ে মানুষের ক্ষতি করে থাকে। পুরো মানব সমাজে ছড়িয়ে পড়ে।
    -কে করতে পারে এমনটা?
    -যে কেউ হতে পারে। তোমাদের কাছের কেউ হতে পারে। কিংবা শ’ত্রুও হতে পারে। যারা রিভেঞ্জ নিতে চায় তোমাদের থেকে।
    -যে করেছে তার কোনো ক্ষতি করবেন না?
    -আমি ইচ্ছে করে কারো কোনো ক্ষতি করিনা রাব্বি। আমি পাল্টা জবাব দেই, এতে কারো ক্ষতি হলে আমি দায়ী নই।
    -এই শা কে যদি আমরা শেষ করে ফেলি তাহলে কি শ’য়তান সব শেষ হবে?
    -কখনোই না, এরকম হাজার হাজার শা রয়েছে। এক শা কে শেষ করলে, অন্য শা প্রস্তুত।

    কথায় কথায় রাব্বি আর জোহান বাড়িতে পৌঁছে গেলো। মাহিকে নিয়ে আসা হলো। বাড়ির গার্ডেনে বড় করে আগুনের কুন্ডলী তৈরি করে সামনে বসানো হলো মাহিকে। মাহির পেট ফুলে আছে এখনো। সে বারবার জোহানের সাথে কথা বলার জন্য চেষ্টা করছে। রাব্বি কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে আছে।

    জোহান আগুন জ্বালিয়ে মন্ত্র পড়তেই পুরো গার্ডেনে কালো মেঘে ঢেকে গেলো। মনে হচ্ছে এখনি কালবৈশাখী ঝড় শুরু হবে। হালকা হালকা বাতাস বইতে শুরু করলো। জোহান রাব্বিকে বললো মাহিকে শক্ত করে ধরে রাখতে। যতই হোক যেভাবেই হোক মাহিকে যেন না ছাড়ে। জোহান গিয়ে পুরো গার্ডেনের চারপাশে গোল বৃত্ত এঁকে দিলো। যেন মাহি এর বাইরে না যেতে পারে।

    জোহান মন্ত্র পরে পুতুলের শরীর থেকে একটা একটা করে পিন বের করলো। মাহি একেকটা পিন বের করার সাথে সাথে চিৎকার করছে। মনে হচ্ছে কেউ ওর শরীর থেকে পিন বের করছে।
    একটু পরেই পরপর চারটা পুতুল এবং চুলগুলো কুন্ডলীর আগুনে পু’ড়িয়ে ফেললো। পো’ড়ানোর সাথে সাথে মাহি একটু স্বাভাবিক হলো।
    কিছুক্ষন পরে জোহান শা কে ডাকা শুরু করলো। কিন্তু শা আসলো না। আসলো বেশ কিছু কালো ছায়া। দেখে বুঝা যাচ্ছে এগুলো শা এর পোষ্য শ’য়তান। জোহান চিৎকার দিয়ে বললো “আমি তোদের সাথে কোনো বোঝাপড়া করতে চাইনা। যার বোঝাপড়া করার তা আমি শা এর সাথেই করবো। আর যদি তাও সামনে আসিস তবে ম’রতে হবে।”
    সাথে সাথে সবগুলো উধাও হয়ে গেলো। জোহান মাটিতে দাগ কে’টে কে’টে মন্ত্র পড়ে মাহির শরীরে ফুঁ দিতে লাগলো। একটা পান পাতায় তেল মেখে তার উপরে কিছু একটা লিখে আগুনে পুড়িয়ে ফেললো। এটার কোনো কাজ দেখতে না পেয়ে রাব্বি জিজ্ঞেস করলো এটা কিসের জন্য। জোহান জবাব দিলো “এইতো মিনিট বিশেক পরেই টের পাবে।”

    ২০/২৫ মিনিট পরে গেট থেকে লাফাতে লাফাতে গার্ডেনে ঢুকলো তানি। শরীরে ফোস্কা পড়ে বেহাল অবস্থা। সে বার বার বলছে এই জ্বালা থেকে তাকে মুক্তি দিতে। জোহান তানির কথায় কর্নপাত করলো না। জোহান নিজের মতো তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
    তানি গিয়ে রাব্বির পাশে বসে বললো “তুমি এই কাজ করিয়েছো তাইনা? সন্দেহ বসতো করেছো?” জোহান উত্তর দিলো “একদম না, আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি মিস। আমি শুধু তাকে পাল্টা জবাব দিয়েছি যে মাহির ক্ষতি করেছে। এখন এটা যদি আপনার গায়ে লাগে তাহলে আমার কি করার বলুন তো!”
    মাহি আপাতত নিজের মধ্যে নেই। মনে হচ্ছে কেউ ওকে নিয়ন্ত্রণ করছে। রাব্বি ধরে রাখতে পারছে না৷ কিছুক্ষন পর শা তার দলবল নিয়ে হাজির হলে রাব্বি ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে জোহানের দিকে তাকাতেই দেখলো জোহান মুচকি হাসছে। জোহান রাব্বিকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে বললো “ভয় পেয়ো না, সৎ এবং সত্যের জয় সব সময় হয়।” শা চলে আসলে মাহিকে নিয়ন্ত্রণ করা আরো কঠিন হয়ে পড়ে। মাহি রাব্বির কাছে আকুতি মিনতি করে বললো তার ব্যথা লাগছে পেটে। রাব্বি যেন তাকে ছেড়ে দেয়, সে যাবেনা। রাব্বি মাহির কথায় ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে। চোখের পলকেই মাহি আগুনের কুন্ডলীর সামনে থেকে সরে গিয়ে শা এর দলে যোগ দিলো। শা রাব্বিকে ডেকে অদ্ভুত কন্ঠে বললো “তুমি কেমন পুরুষ? যেই পুরুষ তোমার বউকে প্রেগন্যান্ট করেছে সেই পুরুষের সাথে মিশেই আবার তোমার বউকে কষ্ট দিচ্ছো? তোমার তো উচিত এই লোকটাকে আগে খু’ন করা।” জোহান ফিসফিস করে বলতে লাগলো “শ’য়তানের ধোঁকায় পড়ো না, শ’য়তানের ধোঁকায় পড়ো না।”

    মাহি উল্টো হয়ে ঝুঁকে পেছনে হাঁটা শুরু করলো। সাথে গগন ফাটানো হাসি। রাব্বি মাহিকে ধরতে যেতেই কোনো এক অদৃশ্য দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো। জোহান রাব্বিকে ডাক দিয়ে বললো “ধরতে হবেনা ওনাকে, বৃত্তের বাইরে যেতে পারবে না আমি না চাইলে। তুমি পেছনে চোখ কান কিছু দিয়ো না।” রাব্বি জোহানের কথা মতো বসে পড়লো। রাব্বির নাক ফে’টে গেছে। র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে ঠোঁটের উপর থেকে।

    জোহান এবার উঠে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে শা এর সামনে দাঁড়ালো। শা এর মুখ দেখা যাচ্ছে না। শুধু বোঝা যাচ্ছে ধোঁয়ার একটা অবয়ব। জোহান বাঁকা হেসে বললো “দেখেছিস? আমার সামনে তোর আসতেই হলো। বলেছিলাম না আমার সামনে আসবিই তুই।” শা অদ্ভুত কন্ঠে বললো “আমি এসেছি বলেই পেয়েছিস। এবার এসেছি তোকে শে’ষ করতে।”

    জোহান পকেট থেকে একটা পয়সা বের করে মুখ দিয়ে মন্ত্র পড়ে হাত দিয়ে পয়সাটা শা এর কপালে ধরলো। শা কিছু করে ওঠার আগেই চিৎকার করে ছোট হতে শুরু করলো। সমস্ত শ’য়তান এসে জোহানকে ঘিরে ধরলো। মাহিকে এগিয়ে আসতে দেখে জোহান রাব্বিকে বললো দ্রুত মাহিকে ধরে ফেলতে। মাহিকে আ’ঘাত করা যাবেনা। রাব্বি জোহানের কথা মতো মাহিকে ধরে ফেললো।

    শা এর শরীরের ধোঁয়া গুলো উধাও হতে হতে একটা কাঁচের বোতলের মধ্যে ঢুকে গেলো পয়সা সহ। সাথে সাথে সমস্ত শ’য়তান গুলোও পালিয়ে গেলো। জোহান হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

    সমস্ত কিছু নিরব হয়ে গেলো। বাড়িতে মাহির সামনে অপরাধ ভঙ্গিতে বসে আছে তানি। কি বলবে সে বুঝতে পারছে না। মাহি বিশ্বাস করতো তানিকে খুব। তবে রাব্বির সাথে তানিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরেই রাব্বির প্রতি দুর্বল হতে শুরু করে তানি। যার শেষ পরিনতি ছিল এটা। প্রথমে কালো যাদু করিয়েছে, তারপর শ’য়তানের পূজা করে শ’য়তানের মাধ্যমে মাহিকে পরপর দুবার প্রেগন্যান্ট করিয়েছে। এবং শেষের বার শ’য়তান জোহানের রুপ নিয়েই এসেছিল। মাহি কিছু বুঝতেও পারেনি। শুধু একটা অবয়ব দেখেছিল জোহানের। তাই বারবার বলছিল জোহানই বাচ্চার বাবা। সত্যিটা জানার পর রাব্বি মনে মনে লজ্জা পাচ্ছে। না বুঝেই জোহানকে ভুল বুঝেছিল রাব্বি। শা এমনটা করেছিল যেন রাব্বি বর জোহানের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাজে। কিন্তু রাব্বি নিজের মতো ঠিক থাকার কারনে শা এর পরিকল্পনা সফল হয়নি।

    মাহি ক্ষুব্ধ হয়ে তানিকে পুলিশে দিয়ে দিলো। আর যাইহোক যত ভালো বন্ধুই হোক নিজের প্রিয় মানুষের ভাগটা কেউ সহ্য করেনা।
    জোহানের যাওয়ার সময় হয়েছে। সে ফিরে যাবে তার আস্তানায়। যাওয়ার আগে বলে গেলো মাহির বাচ্চাটা জন্ম নেয়ার পরেই মা’রা যাবে। এটা কোনো সন্তান নয়, এটা শ’য়তানের মায়া। তাই মানুষের গর্ভে শ’য়তান জন্ম নিতে পারবে না।

    জোহান চলে গেলো, যাওয়ার আগে আরো একবার মাহিকে দেখে গেলো। সামনে তার উদ্দেশ্যহীন পথ। হয়তো এমন আরো অনেক মাহি-রাব্বিকে বাঁচাতে হবে। তবে এমন মাহিকে হয়তো আর কখনো পাবে না। মনের অপ্রকাশিত অনুভূতি গুলো চিরজীবনের জন্য চাপা রেখে দিলো।

    মাহিকে তার শশুর বাড়ির লোকেরা মেনে নিয়েছে। বাচ্চাটা জন্ম নিয়েছে, তবে মৃ’ত। গত এক বছরের অসুস্থতা যেন এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে। মনে মনে মাহি বেশ খুশি হয়ে বিধাতার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো রাব্বির মতো জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য।

    কালো যাদু আসলেই ভয়ানক এক যাদু। এতে কখনোই খারাপ ছাড়া ভালো হতে পারেনা। তাই সবাই সাবধান হবেন, কারো সাথে কালো যাদুর মতো ঘটনা ঘটলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসা করাবেন।

    ————– –সমাপ্ত—————–

    গল্পটা কেমন হয়েছে জানাবেন। আগামীকাল ভাবছি “কালো যাদু সিজন ২” নিয়ে আসবো। ভিন্ন গল্পে, ভিন্ন কাহিনীতে। সাড়া পেলে তবেই সিজন ২ আনবো। গল্পটা হয়তো ততোটা ভালো হয়নি, চেষ্টা করবো সামনে আরো ভালো করার জন্য।
    ধন্যবাদ সবাইকে, হ্যাপি রিডিং।
    সবাই টাইমলাইনে গল্প নিয়ে একটা করে রিভিউ দিয়ে যাবেন।

     

     

     

    মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।