প্রিয়তমা

প্রিয়তমা♥️

writer-সালসাবিল সারা

পর্ব -১

*

*

প্রত্যেকদিনের মত আজও বারান্দার একপাশ থেকে অন্য পাশে হাঁটতে হাঁটতে পড়া মুখস্ত করতে লাগলাম..কপাল কুঁচকে প্রত্যেকটা পড়াকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবে পেটের ভিতর গিলতে লাগলাম যেনো লেখার সময় বা পড়ার সময় পেট থেকে পড়া গুলা বের হয়..কারণ একটাই সাদিফ ভাইয়া মানে আমার হোম টিউটর যার সামনে আসলে সব পড়া আমার পেটে আসে কিন্তু মুখে আসে না আর পেতে হয় তাকে কঠিন শাস্তি..এসব শাস্তির কথা ভাবতেই  মুখ একদম টমেটোর মত লাল হয়ে যায় রাগে.. সাদিফ ভাইয়া তো অপরিচিত কেউ নয় আমারই আপন বড় খালার ছেলে..তাও যে কেন এই লোকটা আমাকে এত অপমান করে.. উনাকে কি আমি একবারও পড়াতে বলেছি আমি!!!!আর উনারও কি কষ্ট হয় না এতদূর আমাকে পড়াতে আসতে!!উনার মাথায় মাথার স্ক্রু মনে হয় লুজ এসব ভেবেই আনমনে হেসে উঠলো শেফালী…

 

*

*

*

🌸

 

শেফা ও শেফা সাদিফ আসছে…মায়ের ডাকে নিজ ভাবনা থেকে ফিরে এলো শেফালী… সাদিফ এর নাম শুনে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে আল্লাহ্ এর নাম নিয়ে রুমে এলো বারান্দা থেকে..বেড থেকে ওরনা ফুল দিয়ে বডি পেঁচিয়ে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে আগাচ্ছি আর দোআ করতে লাগলাম আল্লাহ্ যেনো আজকে কোনো মাইর কপালে না রাখেন… একটা আমিন করলাম..

 

ভাইয়া আসসালামুআলাইকুম!!!!! শেফালীর আওয়াজে মাথা তুলে তাকালো সাদিফ..গ্রিন কালার চোখগুলো দেখলেই আমার মনটা একদম অশান্ত হয়ে উঠে.. কিন্তু কেনো?? তা জানিনা….।।

অসভ্যের মত না তাকিয়ে থেকে বস…. সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে যে একটু ভালোলাগা টা আসছিল মনে তা নিমিষেই ফুশ হয়ে গেলো..মনে মনে একশো টা গালি দিয়ে বসে পড়লাম টেবিলে … ম্যাথ বই যেই মাত্র ওপেন করলাম সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে আমার আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো…

 

🌸

 

“বারান্দায় ওরনা ছাড়া দাড়িয়ে কাকে ফিগার দেখাচ্ছিলি??”ছি ছি!! কি লজ্জার কথা!!উনার মুখে কি একটুও লজ্জা শরম নেই!!কিছু না বলে মাথা নিচু করে রাখলাম না বলাই ভালো এই মানুষটার সাথে কথা ..”কি সমস্যা তোর বেআদব কথা বলিস না কেনো!?তুই যে সুন্দর ফর্সা তোর রূপ অনেক এসব মহল্লার সবাইকে দেখাইতে তোর খুব ভালো লাগে তাই না!!” উনার কথা শুনে আর চুপ থাকতে পারলাম না একটা জবাব দিয়েই দিলাম..”আমার বারান্দা আমার বাড়ি আমি কি করবো না করবো আপনার কি!!আর আপনার এত কাজ থাকতে এত বড় বিজনেস থাকতে আপনি আমাকে কেন পড়ান !!! পড়াতে আসেন ভালো কথা এসব কথা বলার আপনি কে!!?”

 

গালটা প্রচণ্ড জ্বলছে…কথাগুলা বলে দম নিতে পারলাম না সাদিফ ভাইএর হাতের থাপ্পড় টা আমার হজম করতে হইলো… রাগে দুঃখে গালের ব্যথায় চুপচাপ চোখের পানি ফেলতে লাগলাম আর মনে মনে উনাকে অভিশাপ দিলাম উনার বউ যেন উনাকে কামড়ে মাংস তুলে ফেলেন…

 

🌸

 

“ন্যাকামি বাদ দিয়ে ম্যাথ সব করবি তুই আজকে…তুই এত অসভ্য আমার মুখে উত্তর দিচ্ছিস…সময় আসুক সব উত্তর আমি দিবো এখন ম্যাথ কর..না পারলে আজকে বুঝবি মজা”

 

কি আর করবো মাও সব কাহিনী দেখলো দরজায় দাঁড়িয়ে কিছু বললো না ..কি আর বলবে উনার গুণধর বোনের ছেলে তার রাগ উঠলে সে তার বাপ কেউ মানে না…..

 

কোনমতে ম্যাথ এর প্রবলেম টা শেষ করলাম যাক মাইর খেলাম না যদিও ৩টা ভুল ছিল তাও কেনো মারলেন না জানিনা আমি…হঠাৎ আমার গালে হাত দিয়ে বলতে লাগলেন “উল্টা পাল্টা কথা বলবি তো মাইর খাবি…তুই জানিস না মুখে মুখে তর্ক আমি অপছন্দ করি”…কেন জানি আবারো কান্না আসলো.. হয়তো উনার সফ্টলি ব্যাবহার তাই আমি এতক্ষণ চাচ্ছিলাম.. যাক উনার হাত টা সরিয়ে দিবো ভাবার আগেই উনি হাত সরিয়ে নিয়ে গালে বরফ লাগাতে বললেন…আমি হ্যাঁ না কিছুই বললাম না…টেবিলে হাত দিয়ে জোরে বারি দিলেন উনি আর আমি কে‌ঁপে উঠলাম..দ্রুত মাথা নাড়ালাম যার অর্থ  হুম আমি লাগাবো…

 

চোখ তুলে তাকালাম উনার দিকে ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন….বুকের মধ্যে কেমন জানি ধুক ধুক করে উঠলো.. হঠাৎ আমার গাল টেনে বললেন..”হুয়াই সো কিউট”!!!!……

 

উনার এই ব্যাবহারে আমি উনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলাম আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম এই মানুষটার এত রূপ কেমনে!!? হাউ!!!???

 

চলবে…..♥️

(বি. দ্র.এটা আমার লেখা প্রথম গল্প অনেকটা নার্ভাস আমি..আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে গল্পটা..অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আমাকে কেমন লাগলো.. হ্যাপি রিডিং♥️)

 

নিত্য নতুন গল্প পেতে নিচের গ্রুপের জয়েন হয়ে সাথে থাকুন 👇

 

 

 

প্রিয়তমা♥️

writer-সালসাবিল সারা

পর্ব-২+৩

*

*

বরফ ঘষছি গালে আর আয়নায় ডান গালটা দেখতে লাগলাম.. তিনটা লাল দাগ স্পষ্ট..কেমন লম্বা লম্বা আঙ্গুল রে বাবা!!!যেমন লম্বা সাদিফ ভাই তেমন লম্বা তার আঙ্গুলগুলো!!…এক রাশ বিরক্তি নিয়ে এসব বরফ লাগানো অফ করে দিয়ে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লাম..ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুক এ লগ ইন করলাম উদ্দেশ্য কিছু সুন্দর গল্প পড়া.. যেই একটা ভালো গল্প পেয়ে পড়া শুরু করলাম এমন সময় মেসেঞ্জার এ টুং করে মেসেজ আসলো..”এই পুচকি মেয়ে পড়া না পড়ে এখন এফবি তে কি করিস!?ছেলেদের সাথে লাইন মারার টাইম না এখন..পড়া সব কমপ্লিট করে রাখ..নাইলে কালকে বাম গালটাতে পাঁচ আঙ্গুলেরই চাপ বসে যাবে..বাই দা ওয়ে গালে বরফ লাগিয়েছিস!??”

 

*

*

🌸

মেসেজ পড়ে আমি শোয়া থেকে বসে গেলাম.. সাদিফ ভাইয়ার মেসেজ!!!.. হায় আল্লাহ্ কি ভাষার শ্রী!!..আমি কখন আবার ছেলের সাথে কথা বললাম!!..আর লাইন মারার ই বা কি..কত ছেলে আগে পিছে ঘুরে কখনো তো চোখ তুলে তাকালামও না আর এই লোকটা কিনা!!! ওহ বাবা!! আবার বরফ লাগলাম নাকি জিজ্ঞেস ও করলো..হাহ কত দরদ!!! মারার সময় দরদ কই ছিল!? নাহ এই বিষয়ে আর ভাবা যাবে না.. জঘন্য লোক!!রিপ্লাই এ একটা সেন্টি ইমোজি দিয়ে ফেসবুক থেকে লগআউট করেই পড়া শুরু করে দিলাম…পড়তে পড়তে কখন দশটা বেজে গেলো হুশ ছিল না..যাক অনেকক্ষণ পড়লাম.. রুম থেকে বের হয়ে দাদীর কাছে গেলাম এই তিন ঘণ্টা রুম থেকে বেরই হলাম না মাও ভাবলো পড়ছি তাই কেউ ডিস্টার্ব করতে আসেও নি..

 

**

**

আমাকে দেখেই দাদী একটা কিউট হাসি দিয়ে বললো “শেফালী ফুল যে!! আয় বুড়ির পাশে বসে একটু পা টা মালিশ করে দে”আমিও হেসে দাদীকে জড়িয়ে ধরে গালের সাথে গাল ঘষে দিলাম আর দাদী আমার কুটকুট করে হাসতেই শুরু করলো..আমিও হেসে দাদীর পা মালিশ করতে লাগলাম…

দাদী তার আর দাদার প্রেমের কাহিনী বলা শুরু করলো ..এই আর নতুন কি..তবে যতবারই শুনি ততবারই মনে হয় কি প্রেম ছিল তাদের দুজনের!!..দাদার অভ্যাস গুলা কেন জানি মনে হয় সাদিফ ভাইয়ার সাথে হুবহু মিলে যায়..কারণ দুইজনের অভ্যাসই এই রাগে বোম আর এই একদম ভালো মানুষ….

**

 

**

দাদীকে খাবার দিয়ে মায়ের ডাকে মায়ের কাছে গিয়ে দেখি মা খাবার নিয়ে বসে আছে..মা আর আমি একসাথে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম..কিন্তু খাবারের চেয়েও বকা বেশি খেতে হয়.. কারণ একটাই আমি ভাত পছন্দ করি না.. আর শুধু মা না গুষ্টির সবাই আর স্পেশালি মি. সাদিফ ভাইয়া এই ভাত আর খানার কারণে আমাকে বকে সবসময়..বাট আই রিয়েলি হেইট খানা অ্যান্ড আই কান্ট লাভ দেম এভার!!!…এই বকা গুলা শুনলে বাবা আর ভাইয়ার কথা অনেক মনে পড়ে …বাবাই ছিলেন যে আমাকে অনেক ভালবাসতো..দুইবছর আগে বাবা আমাকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন…বাবার কথা ভাবতেই চোখে পানি চলে আসলো..কারণ, ভিতর টা যে ভিষন পুড়ে যায়..!!আর ভাইয়া সে আপাদত স্পেন এ..বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরে ভাইয়া.. আর বড় খালুই তাদের স্পেনের বিজনেস দেখাশুনা করার জন্যে ভাইয়া কে পাঠিয়ে দেয় স্পেনে আর আমাদের সংসারটাকে রক্ষা করতে সাহায্য করেন… 

*

*

 

🌸

সকালে কলেজ যেতে হবে তাই মা কে কাজে সাহায্য করে মায়ের সাথেই শুয়ে পড়লাম..বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মায়ের সাথেই থাকি..এখনো এই অভ্যাস বদলায় নি আর না কখনো বদলাবে!!…

 

আধা ঘণ্টা ধরে শুয়ে আছি ঘুমের “ঘ” ও আসছে না.. ফেসবুকেও লগিন করতে মন চাচ্ছে না এই সাদিফ ভাইয়া নামক আতঙ্কের জন্যে!!..উনার নাম মনে আসতেই পুরানো স্মৃতি মনে চলে আসলো…!!!

 

*

*

তিন বছর আগের কথা!!..আমি সবে মাত্র ক্লাস নাইন এ.. ডে শিফট হওয়ায় স্কুল থেকে আসতে আসতে প্রায় বিকাল হতো..আর স্কুল থেকে এসেই ফরয কাজ ছিল আমার গোসল করা… কাধ থেকে ব্যাগ রেখে স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে গোসল করতে চলে গেলাম…হঠাৎ ভাইয়া আর মায়ের চিৎকার শুনে আমি কোনমতে গোসল সেরে কাপড় পরে রুম থেকে বের হয়ে অবাকভাবে তাকিয়ে থাকলাম..একটা ছেলে লম্বায় ছয় ফুট তো হবেই..উনি আমার বড় ভাই মানে রাফসান ভাইয়ের কলার ধরে অনবরত থাপ্পড় দিতেই থাকলো.. মা ঐ লম্বুর হাত ধরে টানছিলেন ..আর ভাই… সে তো “ছাড় সাদিফের বাচ্চা ছাড়”!!বলেই চিল্লাচ্ছিল..ছোটো মানুষ আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না তখন মাথাটা পুরাই ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যাচ্ছিলো.. কি যেন ভেবে আমি এক দৌড়ে ঐ লম্বুর পা ধরে বসে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম..”প্লিজ লম্বু ভাই ছেড়ে দেন ভাইয়া কে”..ঘটনার আকস্মিকতায় তৎক্ষণাৎ লম্বু ভাই ভাইয়ার কলার ছেড়ে দিয়ে আমার দুই বাহু ধরে উঠে দাড় করালেন!!..কান্না করার ফলে আমার মুখ তখন লাল টমেটো..আর ভেজা চুল সব মুখের উপরে..উনি আস্তে করে মুখের উপরের চুলগুলো সরিয়ে দিলেন আর নিচের ঠোঁট চেপে হাসি দিলেন…চুল সরানোর পর আমি মাথা বেশ উঁচু করে উপরে লম্বু ভাইটাকে দেখলাম!! উফফ..কি সুন্দর সেই হাসি!!আর এইদিকে আমাকে এভাবে কান্না করতে দেখে মা আর ভাইয়া উনার কাছ থেকে আমাকে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বিকট ভাবে হাসতে লাগলেন..আমি এই ঘটনার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না…

 

মা হেসে হেসে বলতে লাগলেন..আরে শেফা ফুল!! এইটা তোর বড় খালার ছেলে…তোর সাদিফ ভাই!!আর রাফসান কে মারার কারণ হলো আজকেই ছেলেটা স্পেন থেকে আসলো আর তোর গুণধর ভাই তাকে রিসিভ করতেই গেলো না… তাই সাদিফ অনেক রেগে আছে… এতক্ষণে আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম… আর আড় চোখে উনাকে দেখতে লাগলাম..উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ে ব্ল্যাক কালার শার্ট টা খুবই মারাত্নক লাগছিল আর উনার চুল দাড়ি সব কি সুন্দর সেটিং করা যেন এই দাড়ি আর চুলের কাটিং টা তার জন্যেই করা…

 

“কিরে রাফসান, ছোট খালা এটা কি আমাদের পুচকি শিফু নাকি!!”সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে আমি অবাক…! উনি আমাকে চিনে!!আবার মনে মনে ভাবলাম চিনবে না কেনো উনি আমাকে সেই ছোটো থেকেই চিনে..মায়ের মুখ থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে বুঝলাম আমি ছোট থাকতেই উনি স্পেনে পাড়ি জমান উনার বাবার সাথে আর ছোট থেকে ঐখানেই বড় হলেন..এখন গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফিরলেন… উনি স্পেনে পাড়ি জমানোর সময় আমার বুদ্ধিও হয়নি…কারণ বুদ্ধি হলে নিশ্চয়ই উনাকে আমি মনে রাখতাম…সেদিন উনি আমাকে যতক্ষণ দেখছিলেন ততক্ষণ পুচকি টমেটো বলে খেপাচ্ছিলেন আর হো হো হাসছিলেন…লজ্জায় আমি তখন কিছুই ভাবতে পারছিলাম না.. নিচের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলাম..সেই দিনই মনে হয় আমার সাথে উনার একমাত্র ভালো ব্যাবহারের দিন ছিল.. কারণ এর পর থেকেই উনার তুই তোকারি আর আমাকে ইনসাল্ট করা উনার রুটিনে যুক্ত করে নিলেন……

 

🌸

 

অতীতের ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে

নিজের করা বোকামির কথা ভেবে নিজেই হেসে লজ্জায় লাল..মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে দিলাম মাও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন…

*

*

ঐদিনের দিনটা আমার জীবনের অনেক লজ্জাময় একটা দিন ছিলো!!……এসব ভাবতে ভাবতেই মা কে জড়িয়ে ধরে একটা প্রশান্তির ঘুম দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আর ভাবছি…

 

 

আমার মত বোকাও হয় নাকি!!!!!

 

চলবে…♥️

 

কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন কমেন্ট করে… হ্যাপী রিডিং♥️

 

প্রিয়তমা♥️

writer- সালসবিল সারা

পর্ব-৩

*

*

ফজরের আযানের মধুর ধ্বনিতে ঘুম ভেঙে গেলো..এটা আমার প্রত্যেকদিনকার রুটিন..নিজেকে অনেক লাকি মনে হয় যে ফজরের নামাজটা মিস যায় না!!.. ওযু করে মায়ের পাশেই বসে পড়লাম নামাজে.. নামাজ শেষ করে দাদীর কাছে গেলাম কিন্তু দাদী নামাজ শেষে ঘুম!!..একবার চিন্তা করলাম ছাদ থেকে ঘুরে আসি কিন্তু একা যাওয়ার সাহস আমার নেই বাপু!!!..ঘড়িতে মাত্র সাড়ে ছয়টা তাই ভাবলাম ঘুমে পড়াটাই ভালো কারণ কলেজ আমার দশটা থেকে..সো নয়টায় উঠলেই হবে..ফ্রেশ হতে দশ মিনিট,রেডি হতে দশ মিনিট আরো বাকি চল্লিশ মিনিটের অনেক আগেই সাদিফ ভাইয়ার স্কিলফুল ড্রাইভিং আমাকে কলেজ এ পৌঁছায় দিতে সক্ষম হবে এটা আমার বিশ্বাস..!!যাক হিসাব নিকাশ শেষ এবার ঘুমানোর পালা…ঘুম মানেই সুখ আর সুখ!! আহহা…!

 

*

*

🌸

“শেফা ফুল উঠে যা না দেখ সাদিফ এসে বসে আছে..ছেলেটা আর কতক্ষণ ওয়েট করবে বল তো মা?! উঠ উঠ”!!.. সাদিফ ভাইয়ার নাম শুনে এক লাফে উঠে বসলাম..সকালটাই এই হিটলারের নামটা শুনতে হইলো .. আল্লাহ্ জানেন আজ কপালে কি আছে!!..

উফ মা তোমার এই বোনের ছেলের কি আর কোনো  কাজ নেই ..প্রত্যেকটা দিন কেমনে পারে আমাকে আনা নেওয়া করতে!!.তার উপর উনার এতো বড় বিজনেসের চাপ…!!!.উত্তরে মা কিছুই বললেন না মুচকি হেসে চলে গেলেন…হাহ!!মা আমাকে ইগনোর করলো!!! ঘড়িতে দেখলাম মাত্র আটটা ত্রিশ তার মানে এই সাদিফ ভাইয়া এখানেই নাস্তা করবেন..এত বড়লোক মানুষ সাদিফ ভাইয়া তার বাসায় কি নাস্তা নেই??!!যাক আমার কি উনার যেখানে মন চায় সেখানে খাক..ফ্রেশ হয়ে রেডি হলাম..ঘড়িতে ৯.২৭..ইচ্ছা করেই লেট করা নাইলে সাদিফ ভাইয়া আমাকে নাস্তার টেবিলে ইনসাল্ট করবেন আর পরোটা গিলাবেন!!… এরপর ব্যাগটা নিয়ে আস্তে ধীরে বের হয়ে ডাইনিং এর দিকে আগাতে লাগলাম কচ্ছপের গতিতে..

 

*

*

সাদিফ ভাইয়া গাড়ি চালাচ্ছে আর আমি উনার পাশে বসে আছি গাল ফুলিয়ে…কঠোর মনের মানুষটা আমাকে একটা সম্পূর্ণ পরোটা খাইয়ে তারপরই টেবিল থেকে উঠতে দিলেন..আমিও কম না চেয়ার থেকে উঠার সময় উনার পায়ে একটা জোরে পারা দিলাম!! বাট হি ডিডনট রিএক্ট!! উল্টো উনি মা কে হেসে  বললেন..

“ছোট খালা আজকাল দেখি পিঁপড়াও হাতির সাথে লাগতে আসে”..!!

এই কথাটা শুনে একদম মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো….

 

“লাল টমেটো..তুই ক’টা প্রেম করিস রে!!?”..উনার কথা শুনে মেজাজ একদম বিগড়ে গেলো..একে তো সকালের কাহিনী আবার এখন এই আজব প্রশ্ন..!!আসেলেই উনি একটা গন্ডার…!

 

উত্তরে বললাম….

“এইতো টাইম পাস দুইজনের সাথে করি..এমনি ফোনে কথা বলে চারজনের সাথে লাইন করি আর রিয়েল লাভ টার জন্যে ওয়েটিং লিস্টে পাঁচজন রেখেছি ….!!  স্পিডে এই কথা গুলা বলে দম ফেলার  আগেই সাদিফ ভাইয়া অনেক জোরেই ব্রেক করলেন আর আমার মুখটা শক্ত করে চেপে ধরে বললেন.. “এত চালাকি করার চেষ্টাও করবি না.. গলা টিপে মেরে ফেলবো একেবারে বেয়াদব”

 

আমার মনে হচ্ছিলো দাঁত গুলা সব ভেঙে যাচ্ছে… রাগে ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি পরতেই আছে..এত নির্দয় এই লোকটা!!

*

*

“নাম.. গাড়ি থেকে”!! উনার চিল্লানিতে আত্মা কেঁপে উঠলো..কোথায় আছি না আছি দেখলাম না নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে নেমে দেখি কলেজেরই সামনে..!

আর পিছে ফিরে তাকালাম না হেঁটে চলে যাচ্ছিলাম.. কিন্তু পিছন থেকে আবির আমার ক্লাসমেট, ও ডাক দিলো..আমি ওর সাথে কথা বলতে বলতে কলেজের ভিতর চলে গেলাম…

 

*

*

🌸

 

আর এদিকে শেফালীকে অন্য ছেলের সাথে দেখে সাদিফের মাথায় হাই পাওয়ারে রাগ উঠে গেলো……

 

“এত সাহস তোমার শেফা!!..আমার সামনে অন্য ছেলের সাথে কথা বলার শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে!!”..কথাগুলা নিজে নিজে বলে জেল দিয়ে সেট করা চুলগুলো ঠিক করে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অফিসে চলে গেলো….!!

 

*

সারাদিন ক্লাসে একটুও ভালো লাগলো না শেফালীর..এত অপমান এই লোকটা কেন করে আমাকে!!!আর কলেজ টা থেকে একা একা ছুটির আগে বেরও হওয়া যায় না!!!কিন্তু আজকে লাস্ট ক্লাসটা হবে না ভেবেই আনন্দে মন নেচে উঠলো…যাক আজকে ঐ মি. সাদিফ এর সাথে যেতে হবে না..মা কে বলবো কলেজ শেষ হয়ে গিয়েছিলো আর্লি.. তাছাড়া আজকে সারাদিনই ফোন অফ রেখেছিলাম রাগে সো মা কে আলাদা মাসআলা এড করে বলবো মোবাইল এ চার্জ ছিল না.. তাই সাদিফ ভাইয়াকে আর কল ও দিতে পারি নাই।।!!নিজের কাধে নিজেই চাপড় দিয়ে বললাম..” ইউ আর সো ট্যালেন্টেড শেফা”… যেই ভাবা সেই কাজ..একা একা হাঁটতে লাগলাম..কারণ এদিকে রিক্সা পাওয়া যায় না আর আমার বান্ধবীদের সবার বাসা অন্য দিকে..

” ধুর আজকে কি সব রিক্সাওয়ালা ভাই কি সব শ্বশুর বাড়িতে নাকি”….

 

হাঁটতে লাগলাম হঠাৎ সামনে খেয়াল করলাম… কলেজের ফেমাস গুন্ডা ইমরান  আর উনার চেলারা.!!!!..অজানা ভয়ে বুকটা ধুক ধুক করে উঠলো… এদেরকেই ত সাদিফ ভাইয়া একদিন অনেক মেরেছিলো আমার সাথে মিসবিহেভ করায়….!!!!

 

যাক বাবা অনেক নায়িকা সেজেছি কিন্তু আর না..উল্টো দিকে হাঁটতে লাগলাম.!!.হঠাৎ করে পিছনে ব্যাগে টান অনুভব করলাম.!!.ফিরে দেখি ঐ গুন্ডা ইমরান আমার ব্যাগ ধরে আছে আর আমার দিকে কেমন লোভাকাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে….!!!!

 

“কি শেফালী নায়িকা আজকে তোমার প্রেমিক পুরুষ কই!!??.. নিতে আসলো না!!? ঐ দিন তো অনেক বড় বড় কথা বলেছিলো..তোমার দিকে তাকালে নাকি আমাকে এই দুনিয়ায় রাখবে না.. আজ যে আমি তোমার সব দিকটাই দেখবো..তখন সে আমাকে কি করবে”!!??এসব বিশ্রী কথা বলেই বাজে ভাবে হাসতে লাগলো শয়তানটা…এদিকে আশে-পাশের সবাই আমাদেরকে দেখে মজা নিতে লাগলো কেউ সাহায্য করবে তো দূরের কথা… এই গুন্ডা কে সবাই ভয় পাই….!!

 

আমার তো ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা তাও সাহস এনে বললাম ..”প্লিজ ভাইয়া…এসব কি ধরনের কথা!?..আমার পথ ছাড়ুন..

কি করছেন কি!! হাত ছাড়ুন আমার… প্লিজ.. হাত ছাড়ুন..!!”ব্যাথায় আমার প্রাণপাখি উড়ে যাচ্ছে..”কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে??.. ছাড়েন..!!

 

🌸

হঠাৎ খেয়াল করলাম আমাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছেন ঐদিকে একটা কার জোরে থেমে গেলো.. কার দেখে চিনতে কষ্ট হলো না কার গাড়ি এটা….কান্না করা অবস্থায়ও মুখে শান্তির হাসি ফুটলো আমার……

 

সাদিফ ভাইয়া কে গাড়ি থেকে নামতে দেখে ইমরান তাড়াতাড়ি শেফালীর হাত টা ছেড়ে দেয়..আর সাদিফ কে দেখেই ইমরানের চেলারা ভৌঁ দৌড় দিলো…

 

সাদিফ এসে শেফালীর দিকে একবার তাকালো তারপর  তার বাম হাতের দিকে যে হাতটা ইমরান ধরে রেখেছিলো…শেফালীর ফর্সা হাতটাতে লাল রক্ত জমাট বেঁধেছে যা একদম স্পষ্ট…শেফালীর বাম হাতের তালুতে সাদিফের হাতটা হালকা ভাবে প্রবেশ করালো… সাদিফের ছোয়া পেয়ে শেফালী উপরে তাকিয়ে দেখলো সাদিফের চোখ ভয়ংকর লাল।।।!!কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই সাদিফ সজোরে একটা লাথি মেরে দিল ইমরান কে..লাথি একদম পেট বরাবর লাগায় এক লাথিতেই ইমরান মাটিতে লুটিয়ে পড়লো…আর শুরু হলো সাদিফের মাইর..শেফালীর হাত ধরে রেখে অনবরত লাথি দিচ্ছে ইমরানকে আর বলতে লাগলো…”তোকে আমি সাবধান করি নি??বল…!!শেফার দিকে আর কখনো চোখ তুলে তাকাতে মানা করি নি!!?? বললল …!!!! সাদিফের চিৎকারে শেফালী সাদিফের হাত জড়িয়ে ধরলো দ্রুত আর সাদিফের বাহুতেই মুখ লুকিয়ে কান্না করতে করতে বললো… প্লিজ ছেড়ে দিন উনাকে উনার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে…শেফালীর এমন অবস্থা দেখে সাদিফ ইমরানকে মাইর দেয়া স্টপ করে ইমরান কে চিল্লিয়ে বললো..”লাস্ট দিন.. আজকেই শেষ দিন তোকে ছেড়ে দিলাম!!..আজকে যদি না থামাতো আমাকে এই মেয়েটা তাহলে আজকেই তোর লাস্ট দিন ছিল এই দুনিয়ায়”…!!

 

এরপর আমার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো সাদিফ ভাইয়া…

 

*

*

🌸

“বেশি চালাক তুই?আজকে যদি এই জানো** বা* তোকে কিছু করতো ভাবতে পারছিস আমার কি হতো!!!??আর কোনো দিন যদি এমন পাকনামি করিস তাহলে তোকেই আমি দুনিয়া থেকে আউট করে দিবো..ভাগ্যিস আজকে খালা ফোন করছিল আগে তোর ফোন অফ থাকায়..!!আর তাই আমি আর্লি রওনা দিলাম…এসে দেখি এই কাহিনী…ইচ্ছা করেই এমন করেছিলি তাই না???আমাকে কষ্ট দিতে..!বদলা নিচ্ছিস সকালের জন্যে!??..আজ আমি টাইম মত না আসলে”…. উনি বাক্যটি শেষ করলেন না…চুপ করে ড্রাইভিং করতে লাগলেন…

 

চুপ করে উনার কথা শুনতে লাগলাম…আসলেই আমার উচিত হয়নি উনাকে এভাবে কষ্ট দেয়া..উনিও তো কত বিজি মানুষ!!!…আমিও না জোশে হুশ হারিয়ে ভালো করিনি..কিন্তু উনিই তো আমাকে সকালে এত অপমান করলেন… নাহ এবার একটু চোখটা বন্ধ করি অনেক মাথা ব্যথা করছে কান্না করার ফলে…

 

চুপচাপ সিটে হেলান দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম…হঠাৎ মাথায় উনার স্পর্শে উনার দিকে ফিরলাম…সবুজ চোখটা কেমন লাল হয়ে আছে..সকালের সেট করা চুল গুলাও এখন এলোমেলো…গায়ে খয়েরি রং এর কোটটাও নেই শুধু শার্ট আর ব্লেজার টা….অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম..আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে উনি ড্রাইভ করতেই লাগলেন.. ঐ এক নজর তাকানোটাতে আমি উনার চোখটা ভালোই পর্যবেক্ষণ করতে পারলাম….

 

এতক্ষণ ট্রাফিক!! একদম বাজে অবস্থা লাগছে আমার.. তাও চুপচাপ বসে রইলাম হেলান দিয়ে চোখ অফ করে..উনার কথায় চোখ খুলে তাকালাম..!!

 

“পানি খেয়ে নে একটু…আর হিজাবটা খুলে ফেল.. মাথায়ও একটু পানি দে.. ভাল্লাগবে তোর..!!!উনার নরম ভয়েসের কথাগুলা শুনে আমি অবাক!!!না বলার ইচ্ছাও নেই কারণ এই মুহূর্তে আমার মাথায় পানি দেয়া অনেক দরকার…মাথা হাত চোখ প্রচণ্ড ব্যথা..!!!

 

কি আর করার..উনার কথা মত সব করলাম.!!.আর আমি জন্মগতই রোগা…!!

 

কিন্তু আমার মাথায় একটা কথা আসছে না।!!!  সকালে আর একটু আগে উনি একদম রেগে বোম্ব!!!..আর এখন একদম শীতল লাইক এ কোল্ড ড্রিংক..!!

 

এত মুড সুইং কেমনে হয় একটা মানুষের..!!! ইয়ে মানে …উনি এমন কেন..!!??

 

চলবে….♥️

 

কেমন লেগেছে গল্প আমাকে অবশ্যই জানাবেন কমেন্ট করে…হ্যাপি রিডিং♥️

 

নিত্য নতুন গল্প পেতে নিচের গ্রুপের জয়েন হয়ে সাথে থাকুন 👇

 

 

 

প্রিয়তমা♥️

writer- সালসাবিল সারা

পর্ব-৪

*

*

তিনদিন ধরে কলেজ যাচ্ছিনা!!..সামনে মিডটার্ম এক্সামও স্টার্ট হবে..কিন্তু অসুস্থ্যতার কারণে যেতে পারি নাই….!!কখন থেকে যে বাহিরের হওয়া খাবো!!!

ভাল্লাগেনা আর এই বন্ধি লাইফ…!!উফফ!!!

আজকে তিনদিন যাবত ঘরে বন্ধি আর হাতে স্যালাইন পুশ করা!!…ঐদিনের ঘটনার পর থেকে শরীরটা একদম নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে!…সেদিন গাড়ি থেকে নামার সময় আমার সম্পূর্ণ দুনিয়া অন্ধকার লাগছিলো..মনে হচ্ছিলো এখনি ধুম করে পড়ে যাবো.!!.হঠাৎ করে কি হলো জানিনা ব্যালেন্স হারাচ্ছিলাম শরীরের আর নিচে পড়ে যাচ্ছি কিন্তু কেউ এসে আমাকে ধরে ফেলে..!!! ব্যস,এতটুকুই…আর কিছুই মনে নেই আমাকে কে ধরলো না কি হলো.!!.. চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম…উফফ!!সে কি যন্ত্রণা মাথায়!!..আশপাশে তাকিয়ে দেখলাম এক হাত মা ধরে আছেন আরেক হাত বড় খালা…আর কেবিনের দরজায় দাঁড়িয়ে খালু ডক্টরের সাথে কথা বলছেন…!!আমাকে চোখ খুলতে দেখে মা বলতে লাগলেন…”শেফা ফুল কেমন লাগছে এখন তোর!!মাথায় কি এখনো যন্ত্রণা করছে”!!..

শুধু মাথা নাড়িয়ে না বললাম…মায়ের কথা শুনেই ডক্টর আর খালু এগিয়ে এলেন আমার দিকে..আর ডক্টর চেকাপ করে বললেন…”আরো চারদিন স্যালাইন দিতে হবে…শরীর বেশি দুর্বল আপনার মেয়ের..আর প্রেসার ও লো..!কি ছোট পাখি এখন থেকে ভালো করেই খাবার খাবে আর নিজের যত্ন নিবে”…ডক্টরের কথায় মুচকি হাসলাম…কিন্তু মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে!!.. সাদিফ ভাইয়া কোথায়!??উনি তো আমার সাথেই ছিলেন…!

 

🌸

 

শেফালী শুধু তার সাথে ঘটে যাওয়া জিনিস গুলাই নিজের মনে এঁকে নিলো..তার অগোচরে যে ঘটনা গুলো ঘটলো তা সে জানেই না…!!!

গাড়ি থেকে নামার আগ থেকেই সাদিফ খেয়াল করলো শেফা ভালো নেই…কিন্তু কিছু বলার আগেই তারা শেফার বাসার সামনে চলে আসে.!!.. সাদিফ গাড়ি থেকে নেমে শেফার সাইডে যাওয়ার আগেই দেখলো শেফা হেলেদুলে নামতে লাগলো..গাড়ির দরজা খুলে দাড়াতেই শেফা পড়েযাচ্ছিলো তবে তার আগেই সাদিফ এসে শেফার কোমর জড়িয়ে ধরে ফেলে আর শেফা সাদিফের বুকেই সেন্সলেস হয়ে যায়…!!

 

“শেফা ফুল এই ফুল ফুল!!..কি হয়েছে তোর..চোখ খুলো না প্লিজ…আর বকা দিবো না তো ফুল তোমাকে!!..সরি প্লিজ!!…ফুল চোখ খুল না”…এসব বলে বলে শেফালীকে গালে হাত দিয়ে ডাকছিলো সাদিফ!!…শেফালী কে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির পিছের সিটে শুইয়ে দিলো আর কল করে ছোট খালা কে আসতে বললো…!!শেফালীর মা তো ওর এই অবস্থা দেখেই কান্না করতে লাগলো…!!ফুল স্পিডে ড্রাইভ করে দশ মিনিটেই হাসপাতালে পৌঁছে গেলো.. এরপর সাদিফই শেফাকে কোলে করে ভিতরে নিয়ে গেলো এমনকি সব ফর্মালিটিস ও সে পূরণ করলো..!!শেফার জ্ঞান আসার দুই ঘণ্টা আগেই সাদিফ অফিস গেলো কিছু জরুরী কাজে..!!!

কিন্তু…!!

 

এই ঘটনার কিছুই শেফালী জানে না!!…

 

আমার সেন্স আসার প্রায় একঘন্টা পরেই দেখলাম সাদিফ ভাইয়া আসছে..কেমন দেখাচ্ছে উনাকে!!মনে হচ্ছে অনেক ক্লান্ত..!!! উনি আসার একটু পরেই আমাকে ডিসচার্জ করে দেয়া হলো…!!

আর বাসায়ই উনি সব ঠিক ঠাক করেছিলেন…!!

 

*

*

🌸

এই তিনদিন উনিই আমাকে স্যালাইন লাগিয়ে দিলেন..এই স্যালাইনের জ্বালায় হাতের উপরিভাগ টা ফুলে গেছে একদম..আর যতবারই সাদিফ ভাইয়া আমাকে স্যালাইন টা লাগিয়ে দেন ততবারই মুখটা এমন বেজার করে ফেলেন..যেন আমার চেয়ে উনি বেশি ব্যথা পাচ্ছেন..!!।  হাহ…!কি অদ্ভুত!!!…

আমার জন্যে এত দরদ নাকি উনাকে না পারতে আমার সেবা করতে হচ্ছে তাই!!??।  হুঁ !!আল্লাহ্ জানেন…!!

 

আজকে খালা আর খালু আসলেন আমাকে দেখতে..অনেক লেকচার দিলেন..ভালো করে খেতে হবে,ওষুধ খেতে হবে..!!.আর খালু ত মাশাল্লাহ!!! জ্ঞান দিতে এক্সপার্ট..!!!উনাদের কথা শুনে শুধু মাথা নাড়ালাম…আজকে আর সাদিফ ভাইয়ার দেখা মিললো না…খালু এখানে তাই হয়তো উনি একসাথে দুইটা অফিস সামলাচ্ছেন…!!!

 

*

*

হাই পাওয়ারের ওষুধগুলো খেলে আর মাথা ঠিক থাকে না ঘুম আসে বেশি…!!..মা আমাকে ভাত ওষুধ খাইয়ে চলে গেলেন কারণ খালু খালা আজ রাতে আমাদের বাসায়ই খাবেন…যাক এতকিছু না ভেবে চোখ অফ করে রাখলাম….!!মা দাদীকে আমার রুমে পাঠালেন..কারণ আমি তো ভীতুর ডিম..!!দাদী মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন…

“শেফা ফুল ঘুমিয়ে যা।।।”….

 

একটা আরামের ঘুম দিলাম…সকালে ঘুম ভাঙলো মায়ের কথা শুনে…এই সকাল বেলা মা কার সাথে কথা বলছে!!!..একটু ভালো করে কান পেতে শুনলাম.. সাদিফ ভাইয়া!!!?এই সকাল বেলা!!..আমি তো কলেজও যাবো না আজকে!!..যাক কিছু করার নেই আমার..কেন আসছেন এখন তা উনারা খালা আর বোনের ছেলে জানেন..আবার চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম…আবার চোখ লেগে এসেছিল..!! হঠাৎ চোখ খুলে দেখি সাদিফ ভাইয়া আমার রুমের সোফায় পা তুলে বসে মোবাইল টিপছেন..ঘুমের কারণে উনাকে ঝাপসা দেখছি..আসলেই কি উনি নাকি স্বপ্ন দেখছি??…উনার কথায় শুনে বুঝলাম না উনি সত্যিই বসে আছেন..!!

 

“কিরে শেফা রাতে কি তুই কোনো ফ্যাশন শো করতে যাস??!!এইভাবে হাতকাটা ড্রেস পরে ওরনা ছাড়া ঘুমাচ্ছিস..!!?আমার যে আর কতবার তোকে ওরনার জন্যে আরো কত কথা বলতে হবে আল্লাহ্ মালুম!!!তোর মত অসভ্য আমি আর দেখিনি..!!! বডি টা তো ভালো করে ঢেকে ঘুমাবি..কখন কার নজর কোথায় পরে কে জানে”..!! এসব বলেই সাদিফ ভাইয়া শব্দ করে হাসতে লাগলেন..!!

 

উনার কথা শুনে আমি চিৎপটাং!!ঘুমানোর সময় কেউ ওরনা দেই নাকি একেবারে কামিজ পড়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে ঘুমায়!!??..কেন রে ভাই আপনি কি মেয়ে যে এত কিছুই জানেন!!!আর ঘুমানোর সময় ওরনা দেয়া কি ফরয!??আমি তো আর কোনো লোককে দেখতে যাচ্ছি না হাত কাটা ড্রেস টা!!।। মাথা মোটা লোক একটা….!! কিন্তু আফসোস আমি  কথা গুলা মনে মনে বললাম..!! নাহয় কে জানে কখন আবার মেরে দেয়!!আর নাহয় একটা বাজে কথা বলে ফেলে!!?? চুপ করে গায়ের চাদরটা টেনে নিলাম..কই চাদর তো ঠিকই আছে…ইচ্ছা করেই উনি আমাকে অপমান করলেন..!!কি নির্লজ্জ!!!!

একটুও তাকায়নি আমি তার দিকে কেন তাকাবো!!!কত সুন্দর সুন্দর কথা বললেন উনি আমাকে সেই খুশিতে নাকি!!? হাহ আমার বয়েই গেছে!!..

বারান্দা থেকে মা বলে উঠলেন …”সাদিফ একটু অপেক্ষা কর বাবা…আমি এখনি তোকে নাস্তা দিচ্ছি আর বড় আপা কে বলিস আমি কালকে উনাকে দেখতে যাবো.. আচ্ছা নাহয় আমি ফোন করে কথা বলে নিবো”!!…

“সমস্যা নেই ছোট খালা তুমি কাজ শেষ করে নাও আর মা কে বলে দিবো আমি”!!..

 

মা বারান্দায়!!উনার কি আক্কেল নেই!!?এই লাগামহীন কথা মা শুনলে কি হতো!!??আর বড় খালারই বা কী হলো!!?

“মা বড় খালার কি হলো?”…

“কাল রাতে এইখান থেকে গিয়ে নাকি তোর খালার সুগার ফল হলো!!…তাইতো আজ ছেলেটা সকাল সকাল এখানে আসছে !!…আর সারাদিনই নাকি আজকে বাইরেই থাকবে..রাতে জানিয়ে ভালো করেছিলি রে সাদিফ!!..সব রান্না শেষ…তোকে প্যাক করে দিচ্ছি আমি .. টাইমলি খেয়ে নিবি.. এখন আয় নাস্তা করে নে..আর শেফা উঠ তো মা!!…মা চলে যাচ্ছে আর সাদিফ ভাইয়া উঠে আমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলো..!!

 

মার কথা শুনে উনার দিকে একটু তাকালাম…কিন্তু চোখ আটকে গেলো উনার গেট আপ এ…একদম সব ফিটফাট!!।। চুল দাড়ি একদম সেট করা… ওমা!! ছেলে তো দেখি নিউ কাট দিলো চুলের..!!বেশ মানিয়েছে.. ব্ল্যাক স্যুট এ বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে আর তার চোখগুলো!!… ওহ মাই আল্লাহ্।।!!! কয়জন মেয়ে আজ উনার প্রেমে পড়বে আল্লাহ্ ই জানেন..!!!

 

“এভাবে দেখিস না আমাকে নজর লাগবে..!আর শুন ভুলেও ওরনা ছাড়া বারান্দায় যাবি না.. ইনফ্যাক্ট ওরনা জড়ানো ছাড়া কোথাও যাবি না..!!ননসেন্স”…!!এসব বলে সাদিফ ভাই চলে গেলেন…

 

এব্বাব্বা… কত ঢং!!! পড়বো না আমি ওরনা হাহ..!!আসছে জ্ঞান দিতে…!!ওরনা ছাড়া আমি কোনোদিন ঘড় থেকেও বের হই নি..!! কাবিল!!মুখ ভেংচিয়ে বসে থাকলাম মা আসার অপেক্ষায়!!!!

*

*

🌸

নাস্তা করে মেডিসিন নিয়ে বসে আছি বিছানায়..দাদী আর মা আছে পাশে..মা বড় খালাকে কল দিয়ে বললেন কাল যাবেন…কিন্তু খালাই মানা করে দিলেন কারণ আমি অসুস্থ তাই..!!! বড় খালা আমাকে উনার জমজ মেয়ে ইতি আপু আর জুমান আপুর মতই ভালোবাসেন..!!আপুরা আজ আমাকে দেখতে আসবেন বলেছেন… দুনোজন অনেক ট্যালেন্টেড..!!ইনফ্যাক্ট ওরা তিন ভাইবোনই ট্যালেন্ট এ ভরপুর.!!..এক্সাম থাকায় এতদিন আসতে পারে নি আমাদের বাসায়.. নাহয় ওরা প্রায়ই আসে!!!

 

*

*

সারাদিন বসেছিলাম তাদের অপেক্ষায়…কালকে নাকি এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে তাই তারা সকালেই তা কমপ্লিট করে এরপর আসবে.!!অপেক্ষা করতে করতে ঘুমে কাত আমি.. !!!বিকালে গাড়ির হর্নের আওয়াজে ঘুম ভেংগে গেলো.. ..!!তিন চার মিনিট পরেই দেখলাম আপুরা হাসিমুখে রুমে আসলো আর আমাকে জড়িয়ে ধরে হালচাল জিজ্ঞেস করতে লাগলো…

 

“শেফা বেবি..কেমন আছিস এখন তুই!!?? ইস শুকিয়ে গিয়েছিস…!!সমস্যা নেই সাদিফ ভাইয়া কে বলবো তোকে বেশি বেশি খাওয়াতে”!!বলেই হাসতে লাগলো….

আমি বিনিময়ে একটু হাসলাম…ওদের সাথে বক বক করতেই লাগলাম..মা এসে খাবার এখানেই দিয়ে গেলেন…কথার মাঝে জুমান আপু বলে উঠলো..!!

আর কখনো ঐ রকম কারবারি কাজ করতে যাবি না..ইমরান ইজ সো ডেঞ্জারাস..!! সাদিফ ভাইয়া আমাদের সব বলেছে…এসব কাহিনী বলার সময়ও ও রাগে সোফাতেই লাথি মেরে দিলো..সেদিন নাকি তুই না ধরলে ও ইমরান কে মেরেই ফেলতো…!!

 

আমি এগুলা শুনে বরফের মত জমে গেলাম..আমার উপর রাগের জন্যে সোফাটা ব্যাথা পেলো..ইসস…!!!

 

*

*

অনেক আড্ডা দিলাম আমরা বোনরা মিলে.!!..একসাথেই খেলাম আমরা সবাই…সাড়ে দশটার দিকে ইতি আর জুমান আপু আমার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে করে চলে গেলেন একাই কারণ ওদের নাকি সকালে আর্লি ক্লাস আছে..!! এরপর মা এসে ওষুধ খাইয়ে দিলেন..!!মেডিসিনের ডোজে চোখ বুজে আসছে..!!কিন্তু তাও শুনলাম সাদিফ ভাইয়া আর মায়ের কথার আওয়াজ…

 

“খালামণি কাল থেকেই ওকে আবার পড়তে বসতে হবে..এতদিনে অনেক পিছিয়ে গিয়েছে”!!..আর আমি স্যালাইন খুলে দিচ্ছি..আজকেই তো শেষ ডোজ ছিল!!!..

“হ্যাঁ বাবা তা তো পিছিয়েছেই.!!. তুই যা ঠিক বুঝিস তাই কর..!!আর মেয়েগুলা তাড়াহুড়া করে চলে গেলো আমি একটু আপার জন্যে খাবার দিচ্ছি ঐগুলা নিয়ে যাস”…!!

 

“আচ্ছা”….!!!

 

ওদের কথাগুলো শুনতে পারছিলাম বাট চোখ খোলার শক্তি পাচ্ছি না… সাদিফ ভাইয়া আমার হাতের স্যালাইন খুলে দিচ্ছে তা বুঝতে পরলাম ঠিকই…..!!!

 

কিন্তু হঠাৎ হাতের উপরিভাগে নরম কিছুর স্পর্শ পেলাম তারপর কপালে!!!..কেন জানি আমার শরীরটা কেঁপে উঠলো.!!..এই স্পর্শটা এমন যেমনটা চুমু দিলে হয়….কিন্তু এই স্পর্শটা মায়ের নয়…মা চুমু দিলে আমার এভাবে শরীর কেঁপে উঠে না…!!

 

তাহলে কি সাদিফ ভাইয়া আমাকে চুমু দিলো!!!.. ওহ নো…!!এটাও কি কখনো সম্ভব!!!??…

 

চলবে…♥️

 

কেমন হয়েছে গল্প অবশ্যই আমাকে কমেন্টস করে জানাবেন..হ্যাপি রিডিং♥️

 

নিত্য নতুন গল্প পেতে নিচের গ্রুপের জয়েন হয়ে সাথে থাকুন 👇

 

 

 

প্রিয়তমা♥️

writer- সালসাবিল সারা

পর্ব-৫

*

*

সময় চোখের পলকে কিভাবে চলে যায় বুঝা ই যায় না!!!.আর একসপ্তাহ পরেই এক্সাম শুরু..!সুস্থ হওয়ার পর থেকে পড়ালেখা,কলেজ আর এক্সামের প্রিপারেশান সব কিছুই একদম হুরুস্তুলভাবে চলছে…!!আজকে দুপুর বারোটা থেকে এডমিট দিবে তাই কোনো ক্লাস হবে না..!!আজকেও সাদিফ ভাইয়া নিতে আসলো…আমি বুঝিনা উনি আমার জন্যে এত কষ্ট করে কেন?!..এমনি অন্যদিন কলেজে যেতে হলে নয়টার পরে আসেন নিতে এরপর অফিস যান আবার বিকালে চারটায় বাসায় দিয়ে যান…আবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে পড়ায়তে আসেন..!!! মানে উনি কি রোবট!!!আরে উনার তো গাড়ি আছে.. বড়লোক মানুষ !!যখন যেখানে ইচ্ছা গাড়িতে করে পিউ করে চলে যেতে পারেন..!!আর আমার বাবাও বেঁচে নেই ভাইয়াও দেশে নেই..তাই হয়ত আমার উপর উনার করুণা হয়!!..তাই আমার উপর দয়া করেই এসব করেন!!!! হুহহহ..বাবা না থাকার কষ্ট.. যার নেই সেই জানেন..!!আজকে বাবাকে বড্ড মনে পড়ছে…!!

 

🌸

 

রেডি হয়ে বের হলাম..আজকে আর কলেজ ড্রেস পড়তে হলোনা!একটা লংটপস পড়ে সুন্দর করে হিজাব বেঁধে নিলাম..ঠোঁটে একটু নুড কালার লিপস্টিক দিলাম আর চোখে একদম চিকন করে আইলাইনার!!….. ইউজালি কলেজে একদম সিম্পল করে যায় নো সাজগোজ!!!!কিন্তু আজকে একটা প্ল্যানিং আছে তাই এই আয়োজন..!!কারণ আজকে ঝুমু আমার কলেজ ফ্রেন্ড ওর বার্থডের ট্রিট দিবে… সাথে আরো আমার অনেক ফ্রেন্ডই যাবে…!! আইডি কার্ড টা নিলাম ব্যাগে.. নাহয় এডমিট নিতে ঝামেলা হবে..!! রান্নাঘর থেকে মা কে বিদায় জানিয়ে আগাচ্ছিলাম সামনে..দেখলাম সাদিফ ভাইয়া সোফায় বসে মোবাইল ইউজ করছেন…!!

 

“সাদিফ ভাইয়া চলেন লেট হয়ে যাচ্ছে”!!..আমার কথায়  উনি মাথা উঠে আমাকে চোখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলেন..

 

“কিরে এইটা কি পড়ছিস..!!আর এত সাজগোজ!!তোর ফিগার ত আমি ভালই স্ক্যান করতে পারছি!!তো আজকে কোন ছেলেকে ফিগার দেখিয়ে তোর রূপের জালে ফাঁসাতে যাচ্ছিস!!!..ডেটিং এ যাবি নাকি”?!!!

উনার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে আসলো…!!আমি এইসব ব্যাপার আমার মাথায়ই আনি নি কখনো..

আর উনি আমাকে কি বলছেন!!!!চোখ মুছে উনার দিকে তাকালাম.. উনি আমাকে এসব বলে মোবাইল চালাচ্ছেন এখনো!!!আজকে তো এই লোক কে কিছু বলবোই!! ডিপ্লি একটা শ্বাস নিয়ে উনাকে বলতে লাগলাম!!!…

“আমি যাবো তো আজকে এই ড্রেস পড়েই যাবো..আমি ডেটিং এ যায় আর যা করি তাতে আপনার কি!!!আর আমি ছেলে পটায়!!!

কলেজে সিনিয়ার,ক্লাসমেট,এলাকার কত ছেলে আমাকে প্রপোজ করে আমি চাইলে অনেক জনের সাথেই প্রেম-রিলেশন করতে পারি..!!আর ইচ্ছা হইলে করবোই..!!আপনি আমাকে এমনিও এসব জিনিসের ট্যাগ লাগিয়ে দিলেন..সো করলেও আপনার কাছে আমি আজ না করে যেমন আছি তেমন ই থেকে যাবো..তাই…”

না আর কথা শেষ করতে পারলাম না।।থাপ্পড় খেয়ে ফ্লোরে পরে গেলাম.. চড়টা এত জোরে লাগেনি কিন্তু তাও ইমব্যালেন্স হয়ে একেবারে ফ্লোরে.. ব্যস চোখে আর পানি বাঁধ মানছে না।।

মায়ের কথা শুনে বুঝলাম চড়টা সাদিফ ভাইয়া না মা মেরেছে…আর আমাকে ফ্লোর থেকে সাদিফ ভাইয়াই জলদি টেনে উঠিয়ে আমার দুই বাহু ধরে বললো … “ব্যথা পেয়েছিস কোথাও”??!!

..উত্তর দিলাম না কিছুই..আমাকে মাইর খাওয়াইছে এখন দরদ দেখায়..!!চোখের  পানির জন্যে সব আনক্লিয়ার লাগছে…

*

*

“বেশি বেড়ে গেছিস তুই শেফা..!!বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না!?? সাদিফ কি এমন বললো যে তুই ছেলেটাকে এত কথা বলছিলি!?..কি শিক্ষা দিলাম আমি তোকে..?? বড়দের সাথে বেয়াদবি করা?

 

মায়ের কথা শুনে বুঝলাম সাদিফ ভাইয়া আমাকে কি বললো তা না শুনেই মা আমাকে মারলো!!তাহলে এখন বলে কি লাভ??মাইর তো খেয়েই ফেলেছি..!!চোখের পানি থামছেনা আমার..কিছু না বলেই রুমে দৌড় দিলাম……

 

“খালামণি শুধুশুধু মারলে ওকে!!.. ও ছোট মানুষ না বুঝে ভুল করেছে তাই বলে মারবে”..???

সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে গা জ্বলে গেলো…নিজের দোষ আবার আমার নামে সাফাই গাচ্ছে… কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা!!?? হুঃ!!

মা কি উত্তর দিলো আর শুনিনি..রুমে এসে মুখ ধুয়ে নিলাম..একটা আবায়া বোরকা পড়ে হিজাব বেঁধে আবারও একটু নুড লিপস্টিক টা লাগলাম…কারণ ক্যাসুয়াল ড্রেসে লিপস্টিক ছাড়া আমার কেমন জানি একদম রোগা রোগা মনে হই।।।!! এই ড্রেসে দেখে উনি মনে হয় একটু শান্তি পেলেন.. কিছুই বললেন না।।।

বাঁকা চোখে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার দিকে কেমন কোমলভাবে তাকিয়ে আছেন….!!আজকে উনার পাশের সিটে বসলাম না পিছের সিটে বসলাম…উনিও কিছু বললেন না..!! হয়ত সকালের জন্যে আমি রেগে ছিলাম তাই!!!!

 

🌸

 

এডমিট নেয়া শেষে সব ফ্রেন্ডসরা মিলে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম..সবাই মিলে ঝুমুকে একটা বড় কেক আর বোরকা হিজাব গিফট করলাম…!! সাদিফ ভাইয়া কে বললাম ছুটি তিন টায়…আর এখন একটা – বত্রিশ.. সো ভাইয়া আসতে লেট আছে..অনেক ছবি তুললাম প্লাস অনেক আড্ডাও দিলাম..!!খাবার দেখে মুখ একদম ছোট হয়ে গেলো..এত্তগুলা বিরিয়ানি!!?সব নষ্ট হবে আর গুনাহ্ও হবে!!কিন্তু না এমনটা হলো না..আমি অল্প খেয়ে বাকিগুলা ওদেরকেই দিয়ে দিলাম..যাক গুনাহ্ থেকে বেঁচে গেলাম… দুইটা চল্লিশের দিকে কলেজে চলে গেলাম আবার।।।সাথে দুইজন ফ্রেন্ডও আছে..ঐদিন একা থেকে যে রিস্ক নিয়েছিলাম তা আমি আর সাত জনমেও নিবো না।।হঠাৎ দেখলাম আমাদের ক্লাসের তিনটা ছেলে জুবাইয়ের, মাহি আর রিপন ওরা আমাদের কাছে এসেই কথা বলতেই লাগলো..!।আমি তো ভয়ে শেষ সাদিফ ভাইয়া দেখলে নিশ্চয় আমাকে আবার অপমান করবেন!!?… পাঁচ মিনিট পরেই দেখলাম উনি চলে আসলেন নিতে..ফ্রেন্ডরা তো উনাকে দেখেই কাত!!কারণ আজকেই উনি গাড়ি থেকে নামলেন আর ওদের সাথে প্রথম দেখা!!..আশেপাশের মেয়েরাও উনাকে দেখেই স্টাইল করে কথা বলছে আর হাসছে… উনি এদিকে আগাচ্ছেন আর আমি আশে পাশে মেয়েদের তামাশা দেখছি!!

অবশ্য উনি অসভ্য আর গন্ডার হলে কি হবে উনি দেখতে বেশ স্মার্ট!!!যেমন লম্বা তেমন অনেক বেশি অ্যাট্রাক্টিভ!!..আমার কাছে এসেই অন্যদেরকে বলতে লাগলেন…”আসসালামুআলাইকুম অ্যান্ড হাই এভরিওয়ান!! আই অ্যাম সাদনান সাদিফ..!!শুরু হয়ে গেলো সবার ইন্ট্রোডিউসিং খেলা..!!উফফ!! কি অসহ্য!!..আচ্ছা আমি কী জেলাস কোনো ভাবেই!!?নো নো শেফালী..কি ভাবছিস এগুলা.. ছি!!

 

উনারা কথা বলছে আর আমি উনার ফেসের দিকে তাকাচ্ছি আর বাকিদের ফেসের দিকে..প্রথমে ভাবলাম উনি এসে দুইটা দিবে চড় ছেলেদের সাথে দাড়িয়ে ছিলাম তাই…কিন্তু এখন দেখি সবার সাথে ফ্রেন্ডলি বিহেভ করছেন!!!যাক হয়ত উনার মধ্যে উন্নতি হচ্ছে..ভেবেই ঠোঁট চেপে হাসলাম…!!উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন ভ্রু কুচকে…!! মাহি এসে আমার সাথে কথা বলতে নিলেই সাদিফ ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে গেলেন..উনার থেকে হাত ছাড়িয়ে পিছের সিটের দিকে যাচ্ছিলাম..কিন্তু উনি আমার হাত ধরে রাগীভাবে বললেন!!..

 

“সকালে কিছু বলিনি বলে ভাবিস না এখন কিছু বলবো না!!!..পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলে ফেলবো শেফা!! রাগাবি না এখন আর..!!দেরি না করে উঠ আমার ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে”!!!..

 

কি আর করার উনার পাশের সিটেই বসলাম.. রাগে উনার দিকে দেখতেই ইচ্ছা করে না…!!

*

*

ফুচকার দোকানের সামনে গাড়ি থামাতে দেখে আমি তো সাত আসমান থেকে পড়লাম..উনার ধারণা ফুচকা নালার পানি দিয়ে বানায়.!!. ডামিশ লোক একটা!!উনি কিছু বলার আগেই আমি নেমে দৌড় দিলাম..যদিও আমার ফুচকা খাওয়া মানা!!.কারণ আমার তলপেটে কিছু প্রবলেম আছে যার কারণে জাঙ্ক ফুড খেলে প্রচন্ড অসহনীয় ব্যথা হয় আর পিরিয়ড হলে এই ব্যাথায় আমি অর্ধমৃত হয়ে যায়!!.অবশ্য এই ব্যাপারটা মা খালা আর আপুরা ছাড়া কেউ জানেন না!!এই ব্যাপারটা এখনো চেপে রাখতে হবে নাইলে সাদিফ ভাইয়া আমাকে ফুচকা খেতে জীবনেও দিবেন না..!!নিজের লোভের জন্যে আজ নিজেকেই বলিদান দিবো!! হাহা…!!তিন প্লেট ফুচকা খেয়ে আহহহ খুব শান্তি লাগছে পেটে..!!

উনিও আমাকে মানা করে নি আজকে..কিন্তু কেন!!?? জানা নেই!!?? একদিন আমি ইতি আপু, জুমান আপু উনাকে বলেছিলাম এই দোকানটাতে আনতে…কিন্তু ফুচকার বদলে এক ট্রাক বকা খাওয়ালেন..!!তাই ভাবছি আজকে উনার কি হলো..!!

 

ওয়েট ওয়েট !!নাকি উনি আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছে!!?? ফুচকায় কি সামহাও বিষ ছিলো!!??

 

🌸

 

“সাদিফ ভাইয়া সত্যি করে বলেন তো আমাকে কেন ফুচকা খাওয়ালেন!??কি মিশিয়ে ছিলেন ফুচকাতে”!!?

কথাগুলা সিটে পা উঠিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে অনেক কৌতূহলী আস্ক করলাম..

“চুপ একদম চুপ..এসব কোন ধরনের ইয়ার্কি..!!??সকালে আমার জন্যে মার খেয়েছিস!!..যা আমার ভাল্লাগেনি..!!কারণ আমার কথা না শুনেই খালামণি তোর গায়ে হাত তুললো..!!তাই তোকে একটা ট্রিট দিলাম নাইলে তোর অভিশাপ লাগতো আমার গায়ে”..!!

 

এই সামান্য কথার মাঝেও ঝাটকি দিতে হয়!!সোজাসুজি বলা যায় না কিছু!!উফফ এই মানুষটা…!!বুঝি না আমি উনাকে..যাক ফুচকা তো খেলাম..!!একটা প্রশান্তির হাসি দিলাম..আর সাদিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনিও মুচকি হাসছিলেন..!!মনে মনে বললাম..নাইস স্মাইল ভাইয়া..!!

 

ভেবেছিলাম মায়ের সাথে আজ কথায় বলবো না কিন্তু পেটের যন্ত্রণায় কিছুই ভাল্লাগছে না.!!গাড়িতেই ব্যথা লাগছিল কিন্তু সাদিফ ভাইয়ার ভয় এ কিছুই বলিনি…!!

“ভিসেট” হচ্ছে ডাক্তার থেকে প্রেস্ক্রাইব করা মেডিসিন এই পেইনের জন্য..এইটা খেয়েই পেট চেপে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছি!! ব্যথায় আমি উঠতেই পারছিনা…!!

*

*

একটু পরে খেয়াল করলাম…

 সাদিফ ভাইয়া আসলেন আমার রুমে আর মা আমার দিকে এগিয়ে আসলেন.. সাদিফ ভাইয়ার ফেস দেখেই আত্মা কেপে যাচ্ছে…!!পড়াতে এসেছিলেন উনি আর মা হয়ত আমার মেডিক্যাল হিস্টোরি উনাকে বলে দিয়েছেন…!!!এখন আমার কি হবে!!ভাবতেই কান্না পাচ্ছে!!!..

 

“এইটা কেন করলি তুই আমার সাথে?..তুই তোর হেলথ সম্পর্কে জানতি.. তাও তুই আমাকে বললি না কেনো”!!? ইচ্ছা তো করছে খুব জোরে একটা থাপ্পর দি তোরে…!!আর কোনোদিন যদি এমন করিস না তুই তোকে আমি ঘড়বন্ধি করবো…!!! খুব জোরে চিল্লিয়ে আমাকে কথাগুলা বললেন!!…

“আম সরি ভাইয়া..!! আমার অনেক মন চাচ্ছিলো খেতে তাই আমি আপনাকে বলিনি..আর কখনো এমন হবে না”..!!মাথা নিচু করে কান্না করতে করতে উনাকে বললাম…

 

“ছোট খালামণি রেডি হও..এখনি ডক্টর দেখাতে যেতে হবে তোমার এই অপদার্থ মেয়েকে… দশ মিনিটে আসো আমি গাড়িতে আছি”…উনার কথা শুনে মা কে মাথা নেড়ে না বলে দিলাম..কিন্তু মাও আজকে আমার সাথে রেগে আছেন আমার ব্যাবহারে…!!!না চাইতেও যেতে হলো ডক্টরের কাছে…আর ডক্টর উনার পরিচিত হবে হয়তো.. নাহয় সিরিয়াল ছাড়া কেউ রোগী দেখে না!!..

 

আমি আর মা গেলাম ভিতরে..চেকাপ করা শেষে ডক্টর ওষুধ লিখে দিলেন…আমরা বের হলাম আর সাদিফ ভাইয়া ঢুকলো উনার চেম্বারে!!.. আল্লাহ্ জানেন কেনো!!?

 

এদিকে মা আমাকে বসিয়ে দিয়ে ওষুধ নিতে চলে গেলেন…কারণ আমার হাঁটতেই কষ্ট হচ্ছে..একটু পেটে চাপ পড়লেই ব্যথা!!…

 

হঠাৎ খেয়াল করলাম সাদিফ ভাইয়া আসলেন আর আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন.!!

আমি উনার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছি..!!

উনি আমার মাথায় বুলিয়ে শান্তভাবে বলতে থাকলেন….”শেফা আর কোনোদিন তুই আমার থেকে কিচ্ছু লুকাবি না..!!নট এ সিঙ্গেল থিং..!!যদি কখনো এমন কাবিলামি করিস তোকে আমি আস্ত রাখবো না”.!!..

 

আমিও ভয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম… উনি মুচকি হেসে মায়ের দিকে ফার্মেসিতে চলে গেলেন…!!

*

*

পেট প্রচণ্ড ব্যথা করছে..!!ঝিম কেটে বসে আছি..!! সাদিফ ভাইয়া আর মা আসলেন..!!আমি দাড়াতেই পারছি না..এটা ডক্টরের চেম্বার তাই কোনো হুইল চেয়ার নেই..!!আস্তে আস্তে দাড়ালাম আর ঠোঁট চেপে ব্যথাটা সহ্য করছিলাম..অনেক কষ্টে দুই কদম দিলাম মা আর সাদিফ ভাইয়ার সাহায্যে..কিন্তু না পেটটা একদম খিচে আছে..!!

 

একটু পরই খেয়াল করলাম আমি শূন্যে ভাসছি!!!!মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম আমি সাদিফ ভাইয়ার কোলে!!!??উনি আমাকে কোলে নিলেন!!??কি সুন্দর করে আমাকে কোলে নিয়ে হেঁটেই যাচ্ছেন গাড়ির দিকে..!!মনে হচ্ছে আমি উনার কাছে তুলোর বস্তা!!মাও সমান অবাক..!!!

 

আমি ভেবে পাচ্ছি না আমি সাদিফ ভাইয়ার কোলে?এটা কি বাস্তব নাকি আমার স্বপ্ন!! …পরীক্ষা করে দেখার জন্যে একটা চিমটি কাটলাম নিজের হাতে!!… উফফ কি ব্যথা..!!

 

তবে উনার স্পর্শে আমার এত্ত ভাল্লাগছে কেন তা আমি বুঝতে পারছি না..!!!

 

সত্যি সত্যিই আমি সাদিফ ভাইয়ার কোলে!!…এই দিনটাও কি আমার জীবনে আসার কথা ছিল!!??

 

চলবে…♥️

 

কেমন হয়েছে গল্প অবশ্যই জানাবেন আমাকে কমেন্টস করে…হ্যাপি রিডিং ♥️

 

নিত্য নতুন গল্প পেতে নিচের গ্রুপের জয়েন হয়ে সাথে থাকুন 👇

 

 

 

প্রিয়তমা♥️

writer-সালসাবিল সারা

পর্ব-৬

*

*

এক্সামগুলো অনেক ভালোভাবেই শেষ হচ্ছে…!!তবে সবচেয়ে আতঙ্কে আছি ফিজিক্স এক্সামটা নিয়ে..!!এত হার্ড সাবজেক্ট ভাবতেই আমার কান্না আসে.!! সাদিফ ভাইয়া থেকেও যে কত মাইর খেলাম এই ফিজিক্সের বাচ্চার জন্যে..!!পরশুই ফিজিক্স এক্সাম..আর আমি মাত্র তিন চ্যাপ্টার শেষ করলাম… সাদিফ ভাইয়া অনেকগুলোই ফিজিক্সের ম্যাথ দিলেন সল্ভ করতে..!!

বাট আমি বরাবরই অলস মানুষ..!!!আল্লাহ্ জানেন আজকে উনি আসলে কি করেন আমাকে!!ঐদিনের পর মানে আমার মেডিক্যাল হিস্টরী জানার পর আমার সব ব্যাপারে আরো কঠোর হয়ে গেলেন..!আগে তো সপ্তাহে মাত্র দুই দিন বাসায় এসে সকালে নাস্তা করতেন কিন্তু এখন রোজই আসে..!!এক্সাম না থাকলেও আসেন আর আমাকে ঘুম থেকে জোর করে মা কে দিয়ে জাগিয়ে তুলেন..!! মানে হয় না এসবের..!!এক্সাম না থাকলেও আমাকে তার জন্যে আটটার দিকে উঠতে হয়..!! এরচেয়ে কষ্ট আর কিছুই হয় না..!!তার চেয়ে আরো প্যারা দেয় নাস্তা খাওয়ার সময়..!!একটা পরোটা তো খাওয়ায় বকা দিয়ে দিয়ে তার উপর আবার পাউরুটি খেতে বলে..!!ইচ্ছা করে তার মাথা ফুটা করে দিই..নিজের মতো মোটা হাতি ভাবছে নাকি!!?? উনি তো মাশাল্লাহ ভালোই খেতে পারেন..!!তিনটা পরোটা আরামসে গিলে ফেলে..!!নিজে খান ভালো কথা ভাই আমাকে নিয়ে কেন টানেন এই খাবারের মাঝে!! ভয়ে তো তারে কিছু বলতেও পারি না..!!বললে তখন হয়তো কে জানে নাস্তার টেবিলটায় আমার মাথায় উল্টায় দেন!?? যাক এসব প্যারার কথা বাদ দিয়ে একটু ফিজিক্সে কনসেন্ট্রেশন করা যাক..!!

 

🌸

 

আটটা বাজতে চললো তাও এখনো উনি আসছেন না কেনো!!চার বার ফোন দিলাম কল রিসিভ করছিলেন না..!!কেন জানি টেনশন হচ্ছে অনেক..!! মাকে ও বললাম..মা সাথে সাথেই বড় খালাকে ফোন দিলেন…!!

“বড় আপা সাদিফ কই!?..ওকে ফোন দিচ্ছিলো শেফা.. ছেলেটা তো কল রিসিভ করছে না!!..তোমার কি কথা হয়েছে ছেলেটার সাথে”!!?

 

“এই শেফা শুন..!! সাদিফ নাকি অনেক ব্যস্ত আজকে !! সন্ধ্যায় ফোন করে জানিয়েছিলো তোর খালাকে..!!কি সব ফরেইন কোম্পানির সাথে ডিল করবে নাকি.!!আচ্ছা যা তুই নিজে নিজে পড়ে নে”..!! মায়ের কথা শুনে মেজাজ একদম খারাপ হয়ে গেলো..!!আসবেন না একটা কল করে বললে কি এমন হতো!!আমার থেকে আর কষ্ট করে এই থ্রী পিস পড়ে এতক্ষণ ঘোমটা দিয়ে ওয়েট করতে হতো না.!!ধুর ভাল্লাগে না..!!বাসায় সাধারণত টপস আর স্কার্ট ই পড়ি..এইসব পড়ে কি আমি উনার কাছে পড়তে যাবো!!না জানি তখন আবার কি জঘন্য কথা শুনিয়ে দেন..!!এত রিস্ক আমি নি না গো!!

 

*

*

বই নিয়ে বারান্দায় গিয়ে একদম কর্নারে দাড়ালাম..এই দিকটা একদম নির্জন..এইদিকে দাড়ালে কেউ দেখার কোনো স্কোপ থাকে না.!!  চুপচাপ বসে বইয়ে চোখ বুলাচ্ছিলাম!!!..হঠাৎ গাড়ির আওয়াজ শুনে অপর দিকটায় গেলাম!!! একি.. সাদিফ ভাইয়া!!গাড়ি থেকে নেমেই উনি বারান্দার দিকে তাকালেন..!!ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে আর আমিও গাধীর মত উনার দিকে তাকিয়ে আছি…!!!!কিন্তু উনার হাতে সাদা ব্যান্ডেজের মত কিছু দেখলাম মনে হলো!! কিন্তু এত আধাঁরে বুঝতেই পারছিলাম না..!!আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে কিছু না বলেই উনি ভিতরে চলে গেলেন!

 

আমিও দৌড় দিয়ে একেবারে ড্রয়িংরুমের দিকে চলে গেলাম..দেখলাম সাদিফ ভাইয়া সোফায় বসে কোট খুলছেন আর মা সাদিফ ভাইয়া কে হাতে কেমনে ব্যথা পেলো তাই জিজ্ঞাসা করছেন…!!আমি বইটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ওদের কান্ড দেখছিলাম..উনাকে কেনো জানি খুব বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে..!!উনার সেটিং করা চুলগুলো কপালের উপর এসে পড়েছে সব.!!চোখগুলা কেমন জানি হয়ে আছে..!!উনার ব্যান্ডেজের থেকে রক্ত বের হচ্ছে!! একি উনার শার্টের হাতার কুনুয়ের ঐদিকটাও তো লাল হয়ে আছে..!!ভিতরের ক্ষতগুলা  কি কোট ছিল বলে খেয়াল করেননি উনি?!!..উনার দিকে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম..উনি মায়ের সাথে কথা বলতেই ব্যস্ত..!!

সাদিফ ভাইয়া আপনার শার্টের হাতা তো রক্তে লাল হয়ে আছে!! মা এতক্ষণে খেয়াল করলেন!!!..

 

“হ্যাঁ রে সাদিফ শার্টটা খুল!!!শেফা যা তো মা ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে আয়!!.. সাদিফ বাবা আমি তোর জন্যে খাবার রেডি করছি ..ডিনার টা এখানেই করবি।।!!কাজ শেষ করে এসেই কি হয়েছিল ঘটনা শুনবো!!..এখন ড্রেসিং করে নে নাহলে ইনফেকশন হতে পারে”!!..

*

*

 

“আরে খালামণি কিছুই হই নি এসব!!..আমি তো ভাবলাম জাস্ট হাতে ব্যথা পেলাম!!আর এসব ছোটোখাটো ব্যথা আমার গায়ে লাগে না”..!!

বাকি কথা শুনলাম না আর আমি উনার অবস্থা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না..!!

মায়ের কথায় এক দৌড় দিলাম..!! বক্স নিয়ে এসে দেখি সাদিফ ভাইয়া ঐখানে নেই..!!মা থেকে জানতে পারলাম উনি ভাইয়ার রুমে…আমিও আর্লি ভাইয়ার রুমে গেলাম..রুমে গিয়ে আমার চোখ মগজে ঢুকে গেলো!!!

সাদিফ ভাইয়া খালি গায়ে আর প্যান্ট টা হাঁটু পর্যন্ত বটানো..!! পায়েও রক্ত জমাট হয়ে আছে!!আর উনি ড্রেসিং টেবিলে উল্টো দিকে ফিরে পিঠ দেখতে লাগলেন.!!. ওহ মাই আল্লাহ্!!হুয়াই হি ইজ সো অ্যাট্রাক্টিভ!!.উনার এই অবস্থা দেখে চোখ খিচে অফ করে উনাকে ডাকতে লাগলাম!!!

 

“সাদিফ ভাইয়া নেন মেডিসিন..লাগিয়ে নিন”!!..টেবিলে বক্স রেখে দৌড় দিতেই পিছে হাত টান অনুভব করলাম!!..

 

হঠাৎ একটানে উনি আমাকে উনার দিকে নিয়ে নিলেন!

উনার এতজোরে টানে আমাকে একেবারে উনার বুকের উপর নিয়ে ফেললেন!!হাতে প্রচণ্ড ব্যাথায় উফ করে উঠলাম..!!কিন্তু উনি তাও আমাকে ছাড়লেন না উল্টো হাতটা হালকা ভাবে ধরলেন!! উনি আমার মাথা উনার খালি বুকের সাথে চেপে ধরে রাখলেন..!!!আমার যা হাইট আমি উনার মাত্রই বুক সমান….!!পুরো শরীরটা কেঁপে কেঁপে একদম ভাইব্রেটিং হচ্ছে..!!! ……আমার চুলগুলো খুলেই কোমরের নিচে ছড়িয়ে পড়েছে অনেক আগেই!!

 

“আজকে এক মুহূর্তের জন্যে ভেবেছিলাম আমি তোকে মা কে ফ্যামিলি কে আর কখনোই দেখবো না..!!বিশ্বাস করতে পারবি না কিভাবে বেঁচে এসেছি আমি.!!হসপিটালে যেতে বলেছিলো সবাই তবে আমি একদম মন স্থির করতে পারছিলাম না…মায়ের সাথে কথা বলে তোর কাছেই চলে এলাম..!!”

 

উনার কথায় আমি প্রচন্ড অবাক হলেও আমার খুব কান্না আসছিলো কারণ উনার কথা শুনে উনার দিকে একটু তাকিয়ে দেখলাম উনার চোখে পানি..!!সবুজ চোখগুলাতে আমি আজ প্রথম পানি দেখলাম!!..!!কিছুনা ভেবেই উনাকে জড়িয়ে ধরতে হাত পিঠে লাগাতেই উনি ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠলেন.!!!!!..উনাকে ছাড়িয়ে নিলাম..!!

 

সাদিফ ভাইয়া প্লিজ আপনি বসুন আমি ড্রেসিং করে দিচ্ছি.!! এটা বলে যেতে নিলেই উনি আমাকে টেনে নিয়ে আমার মুখে দুহাত রেখে বললেন…

“এই এই হুঃসস!!এই সামান্য ব্যাপারে কান্না কেনো!!আমি মরিনি এখনো! এভাবে কান্না করিও না প্লিজ ফুল!! এখানে খুব ব্যাথা হয় (উনার বুকে হাত দিয়ে)”…!!

 

উনার কথায় অনেক রাগ লাগলো!!মরার কথা কেন আসছে এখানে আজিব!!!ভাল্লাগেনা এসব কথা শুনতে আমার..!!” খাটে বসুন প্লিজ.. অনেক্ষণ ধরে আপনার কথা শুনছি..এবার ড্রেসিং করতে দিন”..!!উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বক্স টা নিয়ে উনার পাশে বসলাম হাতের ক্ষত টা পরিষ্কারের সময় উনি বললেন…

“শেফা তোর এই ফরসা চিকন হাত টা না আমার জিম করা হাতের সাথে খুব মানিয়েছে..!!আই অ্যাম লাভিং দিস!! আর তোর আজকে মাথায় কাপড় কই??আর এই ড্রেসে আবার বারান্দায় কেন গিয়েছিলি”!!?? 

উনার কথাতে রাগ লাগলো না আজকে..সিম্পলি বললাম..”আমি অপর পাশটায় ছিলাম বারান্দার আর গাড়ির হর্ন শুনেই আমি অন্য পাশে এসেছিলাম!!!      

….আমার কোনো শখ নেই নিজের চেহারা অন্যদের দেখানোর”!!

সাদিফ ভাইয়া হেসে বললেন..”আজকে বেশ মুখে মুখে জবাব দিচ্ছিস!!এই ড্রেসে আমার সামনে আসতে ভাল্লাগলো কেন!!?কি ব্যাপার”!!??

উনার কথা শুনে আজকে কেন জানি রাগ হলো না..!!!উনার যে হতে ড্রেসিং করছিলাম ঐ হতেই একটা ঘুষি দিলাম…!!

“হাহা তোর মত পিঁপড়া আমাকে একশোটা ঘুষি দিলেও কিছু হবে না..!! হাহাহাহাহা”…!!! সাদিফ ভাইয়া জোরে জোরে হাসতে লাগলেন এই কথাগুলো বলে..!! আমি

চুপ করে উনার ড্রেসিং করাচ্ছি আর উনি আমার দিকে ভেলকার মত তাকিয়ে আছেন..!!

 

উফফফফ!!এত লজ্জা লাগছে লাগছে কেনো উনার তাকানোতে!!??

 

🌸

 

“আমি মিটিং এ ছিলাম!!!…কানাডা থেকে ক্লাইনটসরা জইন করেছিল..সব ঠিক ছিলো কিন্তু হঠাৎ করেই দেখি একে একে সবাই জ্ঞান হারাচ্ছিলো।।আমি ভাবতে পারছিলাম না কি থেকে কি হলো?!! এরপর ব্যাপার টা আমার মাথায় এলো..কফিতে কিছু মিক্সড  না তো!!! ভাগ্যিস আমি কফিটা খেলাম না!! নাহয় আজকে  কোম্পানি আর আমি কিছুই বেঁচে থাকতো না!!এরপর সাডেনলি লোড শেডিং হয় অ্যান্ড আমার উপর হামলা হতে থাকে..ইমার্জেন্সী সিকিউরিটি বেল  অনেকটা বুদ্ধি খাটিয়ে পুশ করলাম দেন সিকিউরিটি গার্ডরা আসতেই রক্ষা পেলাম..!! তাও পিটিয়েছি চার পাঁচটা কে”…!!তদন্ত শেষে সব কেস জানা যাবে.. !!!!আপাতত রাস্কেলগুলো জেইলে আছে”!!!!!

 

সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে মনে মনে বলতে লাগলাম..

এই লোকটা অনেক সাহসী মাশাল্লাহ নাহলে আধাঁরেও মারপিট করতে পারেন!!!আর আমি পুরাই বেকুব মেয়ে একটা..!!

 

“আচ্ছা বাবা.. লাখ লাখ শোকর আল্লাহ্ এর কাছে.!!তুই বেশি আঘাত পাসনি..!! আয় খেয়ে নে..!!আর শেফা যা দাদীকে খাবার দিয়ে আয় তো!! এরপর তুইও খেয়ে নে”!!

 

“ওহহো !! ……..মা আমি খাবো না ঘুম পাচ্ছে খুব ঘুমাতে গেলাম”..ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে বের হচ্ছিলাম রুম থেকে..!! অমনেই সাদিফ ভাইয়ার গর্জন!!!

“এই অসভ্য ভাত খাবি না মানে কি…!!নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ কেউ বলবে তুই ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে!!?ছোট্ট খুকির মত লাগে দেখতে..!!শুধু ফরসা আর রুপ থাকলে হয় না.!!গায়ে মাংসও থাকতে হবে..!!তুই একটা শুটকিমন্ত্রী”!!!

কিহহ শুটকিমন্ত্রী…!! এত্ত বড় অপমান!!??হাহ একটু আগে তো কত ঢং করছিলো..আহারে কত আদর!!??বাঁশ মারলো বাঁশ..আদর না!!যাক দাদীকে ভাত দিয়ে দাদীর সাথেই বসে খেয়ে নিলাম..উনার সাথে আর খেলাম না…!! সাদিফ ভাইয়া যাওয়ার সময় একটু উঁকি মেরে দেখলাম..ভাইয়ার টি – শার্ট আর একটা ট্রাউজার পড়ে আছেন… বাহ!!ঠিকই ফিটিং হয়েছে..!!

দুইজনই যে খাম্বা আর মাসেলম্যান..!!

 

*

*

যাক অনেক ভালো প্রিপারেশান না নিয়েও অনেক ভালই এক্সাম দিলাম..!!ক্রেডিট টা সাদিফ ভাইয়াকেই দিলাম..!!কারণ উনি যা যা করিয়েছেন সবই কমন আসলো..!!মানুষটার একটু মাথা লুজ..হঠাৎ রেগে বোম্ব হয়ে যান..!!তবে স্যার হিসেবে উনি অনেক জোস!

নাহয় আজকে আমি ফেলটুসের উপাধিতে নাম ছাপাতাম..!!!

 

আমি আর ঝুমু হাঁটছিলাম হঠাৎ দেখলাম.. মাহি আমাদের দিকেই দৌড়ে দৌড়ে আসছিলো..!!!আমি আর ঝুমু একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম..!!

আর ভ্রু কুচকে ইশারা করছিলাম..”কি ব্যাপার”???!!

 

“শেফালী অনেকদিন ধরে বলতে চাচ্ছিলাম আমি তোমাকে লাইক করি..!!অবশ্য লাইক না!!!আই..আই লাভ ইউ..!!প্লিজ বি মাইন..!তোমাকে রাণী করে রাখবো”!!

 

আমি মাহির কথা শুনে কাত!!কি বলে এই ছেলে!!একেবারে হাঁটু ভেঙে বসে গোলাপ দিয়ে প্রপোজ!!!?

হায় আল্লাহ্!! সাদিফ ভাইয়া এসে দেখলে মাহি আর আস্ত থাকবে না..!!

“প্লিজ মাহি উঠো..ভালো দেখাচ্ছেনা এসব..!!মানুষ দেখলে কি ভাববে..!!উঠে যাও প্লিজ”..!!বলেই চলে যাচ্ছিলাম..কিন্তু মাহি আমার হাত ধরে আমাকে রিকুয়েস্ট করতে লাগলো হ্যাঁ বলতে..!!! আমি কিছু বলার আগেই… সাদিফ ভাই এসে প্রথমে আমার হাত ছড়িয়ে নিলেন মাহির হাত থেকে..দেন গোলাপ ফুল গুলো মাহির হাত থেকে ফেলে পা দিয়ে একদম পিষে নিলেন..!!!এরপর মাহির গাল ধরে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো…

 

“ভুল মানুষকে পছন্দ করেছো তুমি..!!শেফালীর বন্ধু বলে কিছু করলাম না.!!নাহলে একদম পিষে ফেলতাম তোকেও এই ফুলগুলোর মত..!!আর কোনোদিন যদি তোকে ওর আশে পাশে দেখি একটা মাইরও মাটিতে পড়বে না!!…মাইন্ড ইট”..!!!

উনার কথা শুনে আমি শুকনো ঢেঁকুর নিলাম ক’ একটা

নাজানি আমাকে কি করবেন এখন!!!???

 

*

*

 

 আমার হাত ধরে স্পিডে হেঁটে গাড়ীর দিকে নিয়ে যাচ্ছেন সাদিফ ভাইয়া!!..উনার হাঁটার স্পিডে আমি রীতিমত দৌড়াচ্ছি..!!গাড়িতে বসিয়ে আমার গাল চেপে ধরে বলতে লাগলেন…”ছেলেটা প্রপোজ করছে আর তুই তামাশা দেখছিলি??..এত বেকুব কেন তুই!!?পাশ কাটিয়ে চলে আসতি..!! নাহয় দুএকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিতি..!!!

আমি গাঁধী কিছু না বলে কান্না করতে লাগলাম!!…..

আসলে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম মাহি প্রপোজ করাতে আর এরপর সাদিফ ভাইয়ার বকা গুলা আর নিতে পারছিলাম না…উনি আমার গাল থেকে হাত নামিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন!

” এত চোখে পানি কোত্তেকে আসে তোর”!!??কিছুই বললাম না আর…চুপ মেরে বাহিরে তাকিয়ে থাকলাম আর ভাবছি..

 

এই মানুষটাই কি আমাকে সেদিন জড়িয়ে ধরে কান্না করছিলেন..!!তাও আমাদেরকে না দেখতে পেয়ে?।।আর এখন..!!সে মানুষটা আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন!!!

 

হঠাৎ দেখলাম বাসার রাস্তা দিয়ে না গিয়ে অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছেন..আচ্ছা এটা তো নিউ রোড হয়েছে..!!!কিন্তু এদিকে কই নিচ্ছেন??!!

আচ্ছা ওয়েট!!! সামহাও উনি কি আমাকে কিডন্যাপ করে দেন মেরে ফেলবেন!!??তাও এই মাহির বাচ্চার জন্যে!!???

 

 ওহ নো!!এখন আমার কি হবে!!! আল্লাহ্ প্লিজ!! এই যাত্রায় আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েন..!!!আমি আর কখনোই ঐ মাহির বাচ্চার সামনে যাবো না!!

 

চলবে…♥️

 

কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন আমাকে কমেন্টস করে…হ্যাপি রিডিং♥️

 

নিত্য নতুন গল্প পেতে নিচের গ্রুপের জয়েন হয়ে সাথে থাকুন 👇

 

 

 

প্রিয়তমা♥️

writer-সালসাবিল সারা

পর্ব -৭

*

*

ঘরে একা একা বোরিং টাইম পাস করছি..!!এক্সাম শেষে এক সপ্তাহ ছুটি পেয়েও বাসায় বসে শোক পালন করতে হচ্ছে..!!মা কে কতবার বললাম একটু ঘুরতে যাবো..!!কিন্তু মা তো নিয়ে যেতেই পারেন না কারণ দাদী অসুস্থ!!!!!দাদীকে একা রেখে যাওয়া জীবনেও ভালো দেখাবে না..! সাদিফ ভাইয়া স্পেনে গিয়েছেন আমার এক্সাম শেষের পরের দিনই!!!কি সুন্দর সব টাইমিং মিলে গেলো!!!!!….একেবারে বরাবর আমার এক্সামের শেষেই!!এর পিছে কোনো রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছি.!!

রুমে বসে আছি আর মোবাইলে মেসেঞ্জার ফেসবুক ডাউনলোড করলাম..এক্সামের জন্যে সব আনইনস্টল করে দিয়েছিলাম!!

ওয়াও এতগুলা মেসেজ”স!!!!!সবাই দেখছি আমাকে অনেক মিস করেছে!!.. হিহিহি!!সবার সাথে মোটামুটি কথা বলে নিলাম.!!হঠাৎ মাথায় খেয়াল আসলো সাদিফ ভাইয়ার প্রোফাইলে একটু গিয়ে ঘুরে আসি..!!উনার আইডিতে ঘুরে তেমন কোনো মেয়ের আইডি পেলাম না..!!যে কয় জন আছে মেয়ে ওরা সবাই উনার নাহয় আমার কাজিন আর দু জন হয়ত ফ্রেন্ড!!তবে সাদিফ ভাইয়ার যে মাঝে মাঝে  কি হয় আল্লাহ্ ই জানেন..!! উনার মাথায় মনে হয় অনেক সময় ভূতে নাচ দেয় নাহয় উনি কেন আমার সাথে মাঝে মাঝে এতো ভালো বিহেভ করেন???!!তবে উনি যখন আমাকে বকা দেন তখন আমার বেশ কষ্ট লাগে..!!মা ভাই বকলেও আমার ততটা কষ্ট লাগে না!!..আর যখন উনি ভালো বিহেভ করেন আমার সাথে তখন ত অনেক বেশি খুশি লাগে.!!পেটে হাজারো প্রজাপতি উড়ে তখন!!..

কিন্তু সাদিফ ভাইয়ার মুড সুইং কখন হয় টা কেউই বুঝতে পারে না.!তবে লাস্ট এক্সামের দিনে শেষ মুহূর্তের ঘটনাটা আমার খুবই ভালো লেগেছিলো ইনফ্যাক্ট ঐ দিনটা আমার মনের স্মৃতিতে একদম ম্যাগনেটের মত চিপকে গিয়েছে..!! ..  সাদিফ ভাইয়াও যে একজন রসিক মনের মানুষ আমি সেদিনই জানলাম!!!..

 

🌸

 

মাহির কারণে আমাকে সাদিফ ভাইয়া কি বকাটাই না দিলেন সেদিন.!!কিন্তু অন্য রাস্তাটা দিয়ে যখন নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মনে হচ্ছিলো উনি আমাকে আজকে শেষই করে দিবেন!!!অনেক ভয়ে কাপা কাপা গলায় সাদিফ ভাইয়া কে ডেকে আস্ক করলাম…

“ভাইয়া কোথায় যাচ্ছি আমরা!!বাসার রাস্তা ত এটা না!

ভাইয়া আমাকে মারবেন না প্লিজ..!!আর কখনো এমন

গাঁধীর মত বসে থাকবো না!!..একদম কঠোর জবাব দিবো সবাইকে..!! আই প্রমিজ”..!!!

 

উনার কোনো হেলদুল হলো না..!!কিন্তু খুব রাগী গলায়

বললেন..!!

 

“আমাকে বলছিস কেন এসব.!!মারবো নাকি আদর করবো তোকে সেটা আমার পার্সোনাল ব্যাপার  আর আমাকে প্রমিজ বলেও কি লাভ??তুই কোন গোয়ালের গরু আমি জানি!!!..সো এসব ফেক প্রমিজ আমাকে দেখাতে আসবি না…!!একটা তেলাপোকা দেখলে সে কান্না করতে থাকে আর সে নাকি কঠোর জবাব দিবে.!!আর কোনো ছেলে যদি তোর দিকে চোখ তুলেও তাকাই  না!!…ঐ দিনই তার এই দুনিয়ায় লাস্ট দিন হবে..!!মাইন্ড ইট”!!.

কথাগুলা বলেই উনি এক হতে ড্রাইভ করছিলেন আর আরেক হাতে উনার চুলগুলো ঠিক করছিলেন.!!একটু

উনার দিকে তাকিয়ে বাইরের দিকে ফিরে বাইরের পরিবেশ দেখছিলাম..!!

ওয়্যাও!!এত্ত সুন্দর এই রাস্তা টা কবে হইলো!!!আসায় ই তো হলো না কখনো..!!মুহূর্তটা এঞ্জয় করছিলাম… কিন্তু সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ রসগোল্লা হয়ে গেলো!!

 

“শেফা হিজাবটা খুলে ফেল তো.!মাথায় বাতাস লাগা!!

নাইলে ঐদিনের মতো আবার সেন্সলেস হয়ে যাবি..সেই 

সকাল থেকেই তো এটা বেঁধে আছিস”..!!

ওয়্যাহ কি সুন্দর করে বললেন কথাগুলা!!যেনো উনার চেয়ে ভদ্র আর কেউই নেই..!!

“না আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না হিজাবে.. আই অ্যাম কমপ্লিটলি ওকে.!!

 

“আবার মুখে মুখে কথা!!গাড়ি থেকে নামিয়ে একদম এই ফাঁকা রাস্তায় রেখে যাবো!!তখন বাসায় আর যেতে

হবে না তোর!! যা বলছি এখনি কর নাহলে…!!!খুল আর্লি হিজাব আর গ্লাসটাও নামিয়ে দে গায়ে প্রাকৃতিক হওয়া লাগা..!!

উনার কথায় অনেক ভয় লাগলো..!!না জানি এই লোক আবার কি করেন!!আর্লি হিজাব খুলে হিজাবের ওরনা টা গলার সাথে ঝুলিয়ে রাখলাম..আর সত্যিই অনেক ভাল্লাগছে এই ঠাণ্ডা বাতাস আর এই লং ড্রাইভ..!!!

 

শেফালী তো নিজের অবস্থায়ই আছে কিন্তু ওর পাশে বসা মানুষটার দিকে একবারও তাকিয়ে দেখলে হয়ত

দেখতে পেত সাদিফ শেফালীর লম্বা চুলের ঘ্রাণে মত্ত!!!

ড্রাইভিং এর পাশাপাশি সাদিফ বাঁকা চোখে শেফালীর 

দিকে তাকাচ্ছে আর তার ফুলটার সাথে এই মুহূর্তটা ফিল করতে ভুললো না!!!

*

*

একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামলো আর সাদিফ ভাইয়া আমাকে বললো..!!

“হিজাবটা পড়ে নে আর্লি..!! এরপর আমরা এখানেই লাঞ্চ করে নিবো”..!!

আমি চুলগুলো ঠিক করতে করতে বললাম…”ভাইয়া আমি আয়না দেখা ছাড়া হিজাব পড়তে পারি না”..!!

উনি আমার কথা শুনে আমার এলোমেলো চুলগুলো উনার ডান হাত দিয়ে ঠিক করে দিতে দিতে বললেন..

“উফফ শেফা!!আমাকে এত জ্বালাস কেন তুই!!??কোথায় ভাবলাম এই নিউ রেস্টুতে তোকে নিয়ে আমি ফার্স্ট লাঞ্চটা করবো!!আর তুই কিনা”!!??

“তো আপনি করে নিন না লাঞ্চ!!..আমি এখানে বসে আছি..আর হিজাব ছাড়া আমার অস্বস্থি লাগে বাহিরে যেতে!আর আমার এমনিও ক্ষিধা লাগে নি”!!

 

“চুপ একদম চুপ.!!তোর এই জীবনে ক্ষিধা লাগবেও না!চুল সেটিং করে হিজাবটা ঠিক ওড়নার মত করে পেঁচিয়ে নে..আমি আসছি”..!!

এটা বলেই উনি রেস্টুরেন্টের ভিতরে চলে গেলেন..!!

কি আর করার আমি উনার কথা মত সব করলাম..!!উনার একটা মোবাইল রাখা আছে সামনের বক্সেই!!..যাক একটু আয়না দেখে নি..!! লক খোলা ছাড়াও ক্যামেরা অন করে দেখে নিলাম..!!না ঠিকই লাগছে কিন্তু চোখটা ফুলে নাক টা লাল হয়ে আছে তখন কান্নার জন্যে…!!

 

🌸

 

জানালায় টোকা দিয়ে উনি আমাকে গ্লাস নামতে  বলতে লাগলেন…গ্লাস নামিয়ে উনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি..!!

 

“লাল টমেটো আমার মোবাইলটা সামনের বক্স থেকে নিয়ে নেমে আয়”..!!আমিও উনার কথা মত কাজ করলাম..!!নেমে আসতে আসতেই উনি উনার আইফোন দিয়ে কার সাথে যেনো কথা বলছেন..!! ওহ উনার তো দুইটা মোবাইল.!!আমি ভুলেই গিয়েছিলাম!! হুঁ.!!!!. বড়লোক মানুষ!!

 

উনি আমার হাত ধরেই রেস্টুরেন্টের ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলেন..!!আমিও আস্তে আস্তে হাটতে লাগলাম উনার পাশে..!!

“স্যার আপনাদের জন্যে পুল সাইডের ঐ দিকেই একটা টেবিল বসিয়ে দিয়েছি..!! নর্থ সাইডে চেষ্টা করেছিলাম বাট ওখানে এখনো কিছু ফিটিংস কমপ্লিট হই নি..!!”

 

“নো প্রবলেম আতিক..থ্যাংকস..!! কাম শেফা ফুল”!!

“এনজয় স্যার..এনজয় ম্যাম”..!!

সাদিফ ভাইয়া আমার হাত ধরে একা একা পুল সাইডের দিকে চলে গেলেন..!!যেন উনার আগে থেকে সব চেনা..!!

সাদিফ ভাইয়া আর আমি একটা সুন্দর টেবিলে বসে আছি আর আশে পাশে দেখছি..!! অনেক সুন্দর বাট বুঝায় যাচ্ছে এখনো কাজ বাকি..!!

 

“আচ্ছা সাদিফ ভাইয়া আপনি এই রেস্টুরেন্টে কেন আনলেন!!এখানে তো মানুষই নেই”..!!??

” কেন মানুষ দেখার বেশি শখ?তুই ই তো বললি তোর নাকি অস্বস্তি লাগে!!??ইস্ট সাইডে গিয়ে দেখ মানুষ কে মানুষে খাচ্ছে!!এত ভিড়”!!(খুব রাগী গলায়)

 

“আপনি কেমনে জানেন এইখানে কোনদিকে কি আছে!!আগে এসেছিলেন”!!?

 

“আমার রেস্টুরেন্ট আমি আসবো না!!”তবে কখনো খাবার টেস্ট করিনি..!!দেখ কি খাবি”..!??(মেনু দিয়ে)

কি আর করার মেনু দেখে আমার জন্যে শুধু পেস্ট্রি নিতে চেয়েছিলাম..!!কিন্তু উনি আমাকে ধমক দিয়ে নিজেই অর্ডার করে নিলেন!!!

হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানী,মোরগ পোলাও,চিকেন মাসআলা এন্ড নান,পেস্ট্রি আর কোল্ড ড্রিংকস…এত্তগুলা খাবার দেখে আমি শেষ..!!উনি বেশ শান্ত গলায় বললেন …

“নে স্টার্ট কর”..!!আমি নেয়ার আগেই উনি আমাকে বললেন ..”হা কর তো”!!! আমার আজকে অবাকের শেষ হচ্ছে না!!ফার্স্ট উনি আমাকে মারেন নি আর সেকেন্ড আমার খাইয়ে দিচ্ছেন..!!চুপচাপ হা করলাম..উনি স্পুন ছাড়াই আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন আর উনার নিচের ঠোঁট চেপে হাসছেন..!!আবার সে হাতে নিজেও খাচ্ছেন!!

কিছুক্ষণ পরে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলাম..!!!!!”কি ব্যাপার হাসছেন কেনো?আর খাবো না প্লিজ !!!

উনি এবার বাম হাত দিয়ে আমার গালে হালকা চেপে ধরে খাওয়াতে লাগলেন বিরিয়ানীটা..আমার বমি আসার উপক্রম হলে তখনই উনি আমাকে ছাড় দিলেন!!!..আর একাই নিজে বাকি সব খাবার ফিনিশ করলেন..!!অবাক হলাম না..মনে মনে মাশাল্লাহ বললাম!!কারণ আমি জানি উনি বরাবরই ভোজন রসিক!!!

খাবার শেষ করার পর উনি আমাকে অন্য প্লেসে নিয়ে আসলেন.. ওয়াও!!এই জায়গা টা কবে হলো?!একদম শান্ত আর নীরব!!..অনেক সুন্দর..!! খেয়াল করলাম একটা দোলনা ছিল গাছের সাথে বাঁধা!!.দোলনা আমার উইকনেস!!আমি সাদিফ ভাইয়াকে রেখেই দৌড় দিলাম..!! সাদিফ ভাইয়া ডেকেই চললেন..”লাল টমেটো আস্তে দৌড়া পড়ে যাবি ত..!!আমি আসছি দাড়া বলছি”..!!

উনার কথা কে শুনে আমি আপন মনে এক দৌড়ে দোলনায় এসে বসে গেলাম..!!

উফফ !!এত আরামদায়ক বাতাসে আর ঠাণ্ডা পরিবেশে দোলনায় দোল খাচ্ছি আর চুল খুলে ওড়নাটা গলায় জড়িয়ে নিলাম… আহা!নিজেকে নায়িকা মনে হচ্ছে !!.হাহাহা..!! সাদিফ ভাইয়া এসে আমার পাশে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়েই থাকলেন..!!

আমি তো আমার মতই আছি..!!সাডেনলি বৃষ্টি চলে আসে আর আমি উঠে উনাকে বলি..”ভাইয়া চলেন বৃষ্টির বেগ বেড়ে যাচ্ছে”!!কিন্তু উনার কোনো রেসপন্স পেলাম না আমার দিকে স্থিরভাবে তাকিয়ে আছেন..!!বৃষ্টিতে আমি প্রায় ভিজে যাচ্ছি আর তখনই কাশি আসতে স্টার্ট করলো..!!এবার উনার হুশ হলো..!! উনি আর্লি উনার কোট টা আমার মাথার উপর দিয়ে দিলেন.!!আর আমার হাত ধরে দৌড়াতে দৌড়াতে বলতে লাগলেন..”দৌড়াও ফুল!!এই জীবন থেমে নেই ফুল..!!!দৌড়াও”…!!

 আর আমি!! এই মুহূর্তটা জাস্ট ফিল করছি আর খিল খিল করে হাসছি..!!গাড়ি অনেকটা দূরেই..!!আরো অনেক পথ বাকি..!!হঠাৎ আমাকে উনি কোলে তুলে নিলেন আর বললেন..

“ফুল প্লিজ কোটটা মাথার উপর ভালো করে ধরো যেন মাথায় পানি না লাগে নাহয় জ্বর উঠবে”..!!

আমি এমন ভাবে ধরলাম কোট টা যেন আমরা দুজনই কভার হই!! উনি একবার আমাকে হালকা উঁচুতে উঠিয়ে টুপ করে একটা কপালে একটা চুমু দিলেন..আর আমি!!আমার তো গায়ে যেনো কেউ কারেন্ট দিয়ে শক দিলো..!!!!উনার কাণ্ডে আমি জমে গিয়েছিলাম…!! ভয় আর লজ্জায় উনার বুকের ভিতরে ঢুকে গেলাম”!!!এই ফিলিংস টা একদম অন্যরকম..!!!

 

মনে মনে ভাবতে লাগলাম উনার মত পাথরও দেখি আনন্দ করতে জানে!!!

 

🌸

 

উফফ!!সেইদিন টা আমার জীবনের অন্যতম ভালো দিন হিসেবে সেভ থাকবে..!! সেই যে উনাকে দেখলাম আর দেখিনি তবে আমি রাফসান ভাইয়া মানে আমার বড় ভাইয়ার সাথে ভিডিও কলে কথা বলার সময় উনি এসে এসে উকি মেরে যান!!!কি হাস্যকর!! এমনি নরমালি কথা বললে কি এমন হয়!!!

 

এভাবেই দিন যাচ্ছিলো একদম পানসা..আর মাত্র তিনদিন বাকি আছে ছুটি শেষ হওয়ার..!!তাই মা ভাবলেন পরশুদিন বাবার জন্যে কুরআন খতম পড়াবেন আর ক্লোজ আত্মীয়দের দাওয়াত দিবেন..!!বড়ভাইয়া রাতে ফোন করলে মা ভাইয়া কে বললেন..

 

“হ্যাঁ রে রাফসান তোর বাবার জন্যে পরশু রাতে একটা খতম পড়াবো ভাবছি আর চাচার,খালার,মামার,ফুফুর ফ্যামিলিকে দাওয়াত দিব… তা তোরা কেমন আছিস আর ঐ রাগী মানুষটা কই..!! সাদিফ বাবা কখন ফিরবে!!??তোর তো আসতে আরো ক’মাস খানেক আছে..!!মিস করছি তোদের.”.!!

 

“ঠিকাছে মা আমি টাকা পাঠাচ্ছি আজকেই..!!আর আমরা ভালো আছি অনেক!! আলহামদুলিল্লাহ্…..!! সাদিফ আছে আমার পাশেই..কাজ করছে.!! সব শুনছেন উনি…আর ওর আসতে আরো দুই সপ্তাহ লাগবে!! ছোটফুলটা কই মা”!!!?আর দাদীই বা কই??

 

“ভাইয়া আমি আছি পাশেই সব শুনছি.!কাপড় আয়রন করছি..!!তোমরা ঐখানে বসে থাকো আর আমি মা খালা আপু আমরাই সব কাজ করবো!!?? এসে যাও না তোমরা”..!!আর দাদী ঘুম..!!

আমার কথার মাঝে মা বলে উঠলেন…

“আরে শেফা ভালো কথা আমার মোবাইল থেকে  তোর বাপ্পি ভাইয়া কে কল দিয়ে বলে রাখ.. ভালো একটা ছাগল কিনতে হবে তাকে..!! আসতে বল কাল..!!”

আমি কিছু বলার আগেই সাদিফ ভাইয়ার আওয়াজ শুনলাম..কিন্তু উনাকে দেখতে পারছি না হয়ত পাশ থেকেই বলছেন…”খালামণি ও বলবে না কোনো ছেলের সাথে কথা আই মিন ও ছোট মানুষ কি বলতে কি বলে ফেলে তাই একেবারে তুমিই বলে ফেলো”..!!!

উনার কথা শুনে অনেক রাগ লাগলো মা ভাইয়ার সামনেও অপমান!!!!হাহ জল্লাদ…!!

কল তখনো কাটেনি আমি মা কে বললাম..মা সব ভাইবোন অনেকদিন পরে মিট করবো তাই না!!সবাই কত মডার্ন হয়ে গেছে এখন..!! হাহ গত বছর দেখেছিলাম সবাইকে ইদে আর দেখাই হলো না..!! খালামণি আর মামারা ছাড়া কেউ তো আসেনা আমাদের এখানে দাওয়াত ছাড়া..!!বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে চাচা ফুফি আমাদেরকে দেখতেই পারে না…এসব বলতেই কান্না চলে আসছে আর মা আমাকে বুকে নিয়ে কপালে চুমু দিলেন!!!

 

ল্যাপটপে তাকিয়ে দেখলাম..ভাইয়া চোখ মুছছে আর সাদিফ ভাইয়া তাকিয়ে আছেন আমাদের দিকে..!!!!এতক্ষণে উনাকে দেখলাম!!!আর উনি ভ্রু কুচকে রাগী ভাবে তাকিয়ে আছেন যেন সামনে পেলেই চড় দিয়ে গাল লাল করে ফেলবেন..!!

*

*

অনেক কাজ পড়ে আছে খালামণি আপুরা আজ সকালেই চলে এসেছেন..আর খালু কসায়ের সাথে সাথেই আছেন…!!বাসায় মেহমান সব রাতে আসবেন.. মামিরা আসবে সন্ধ্যায়…তাই আমি আর আপুরা দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুম দিলাম আমার রুমে আর মা আর খালা ভাইয়ার রুমে ঘুমাচ্ছে..!!

 

মোবাইলে কল আসাতে আমার ঘুম ভেংগে গেলো..!!উফফ রবি অফিসের কল..!!অসহ্যকর..!!

 

কলিং বেলের আওয়াজ শুনে ওড়নাটা মাথায় দিয়ে দরজা খুলতে চলে গেলাম..কারণ মা আর খালা ওষুধ খেয়ে ঘুম… বিকালের আগে উঠবেন না..!!!

 

দরজা খুলে দেখলাম..!! সাদিফ ভাইয়া..!!উনার পাশে উনার লাগেজ, ব্যাগ সবই আছে..!!!দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি অনেক টায়ার্ড আর কেমন জানি ক্ষেপে আছেন.!!

কিন্তু আমার তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে..!! সাদিফ ভাই এখানে কেমনে!!??

 

দু হাতে চোখ কচলিয়ে নিলাম ভালো করে..এটা কি সম্ভব..!!আরে হ্যাঁ এটা ত সাদিফ ভাইয়া!!!

 

স্পেন থেকে বাংলাদেশ আসতে সাড়ে সতেরো ঘণ্টা লাগে ..!!!

 

 তাহলে উনি কখন রওনা দিলেন!!??!?যেদিন কথা বলেছিলাম উনাদের সাথে সেদিনই নাকি??

 

চলবে…♥️

 

কেমন হয়েছে গল্প অবশ্যই জানাবেন আমাকে কমেন্টস করে…হ্যাপি রিডিং ♥️

 

নিত্য নতুন গল্প পেতে নিচের গ্রুপের জয়েন হয়ে সাথে থাকুন 👇

 

 

 

প্রিয়তমা♥️

writer- সালসাবিল সারা

পর্ব- ৮

*

*

সন্ধ্যার দিকে মামা-মামী কাজিনরা সবাই চলে এলো..!

মামার বাড়ি একটু দূরে হওয়ায় মামা তার ব্যাবসা সামলিয়ে আগে আসতে পারেন নি..!!কিন্তু এসেই মামা

কাজে লেগে গেলেন..!!জুরাইন আর জারাভি আমার একমাত্র মামার দুই ছেলে মেয়ে..!!ছোটো ভাইটা বেশিই কিউট!!… বয়স মাত্র আড়াই বছর আর বোনটা ক্লাস ফাইভে..!!জুরাইন তো এসেই আমার কোলে উঠে গেলো আর একটু আধটু কথা বললো..বাবুটা একটু বেশী আদুরে..!! কোলে আসলে আর নামেই না..!!আমাকে অনেক বেশি দেখতে পারে..!!মামী, মা খালা ওদের সাথেই কাজ করছে..!!আমি সে সকাল থেকেই কাজ করছিলাম কিন্তু এখন করতে পারছি না কারণ জুরাইন আমার কোল থেকে নামছে না.!! জুরাইনের সাথে খেলছি আর ভাবছি সাদিফ ভাইয়া কেমনে কভার করলো এত আর্লি বিডিতে আসা!!

 

সাদিফ ভাইয়াকে দেখেই আমার হুশ উড়ে গিয়েছিলো.!

বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো যে উনি আমার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন..!!উনার কথা শুনে বুঝলাম উনি অনেক টায়ার্ড..!!!!

*

*

বাসায় ঢুকতে ঢুকতে আমাকে বললেন..

 

“কিরে সর দরজা থেকে..?!!অনেক টায়ার্ড আমি..!! একবার নিজের বাড়ি আরেকবার এই বাড়ি আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাবো!!…..মা আমাকে একবারও জানালো না ওরা সকালেই এখানে আসবে.!!!!!প্রথমে আমাদের বাসায় গেলাম গার্ডসরা বললেন সবাই নাকি এই বাড়িতে..!! আমার কাছে আমার গাড়ির চাবি ছিলো!! টেক্সী বিদায় করে নিজেই ড্রাইভ করে এসেছি!

 

প্লিজ এক গ্লাস পানি দে”!!..(সোফায় বসে উনার বুটস গুলো খুলতে খুলতে)

 আমি একদৌড়ে গিয়ে পানির বদলে একটু লেবুর শরবত করে দিলাম..সাথে ক’একটা বরফ!!

 

“বাহ!!ভালো করেছিস!!ড্রিঙ্কস টা ভালো ছিল!!মা খালা আর বিচ্ছুগুলো কই”!!??

 

“মা আর বড়খালা তো ওষুধ খেয়ে ঘুম!!আর আপুরাও ঘুম..!!সবাই টায়ার্ড অনেক”!!

 

“তুই ঘুমাস নি??!!তোর চোখের ঘুম কই”??!

 

“না আমিও ঘুমাচ্ছিলাম বাট ফোনে কল এসেই ঘুম ভেঙে দিলো চেক করে দেখলাম রবি অফিসের কল.!! এরপর ত আপনি এলেন”..!!

সাদিফ ভাইয়া এবার উনার জ্যাকেট খুলে আমার হাতে দিলেন আর ব্যাগ দুইটা কাধে ঝুলিয়ে লাগেজটা  হাতে নিয়ে বললেন.. “আয় আমার সাথে..!! গেস্টরুম টা একটু ঝেড়ে দিবি..!!শাওয়ার নিয়ে আমি একটু ঘুমাবো”..!!

“সব রুম আজকে পরিষ্কার করলাম..একদম চক চক করছে রুম ..প্লিজ গিয়ে দেখুন”..!!

উনি হাত উঁচু করে আমাকে বললেন..”একটা দিবো ধরে অসভ্য.. আয় বলছি”..!!

কি আর করার উনার পিছে পিছে গেলাম..!!উনি রুমে গিয়ে উনার পড়নে হাফ হাতার ব্ল্যাক গেঞ্জিটা খুলে ফেললেন তাও আমার সামনে..!!আমি গাঁধীর মত উনার খালি বডিটা অবাক দৃষ্টিতে দেখতেই আছি..!!কি সুন্দর বডি..!!কিন্তু পরক্ষণেই উনার জ্যাকেট দিয়ে আমি আমার মুখ ঢেকে ফেললাম..!!উনি হেসে বলতে লাগলেন..

“যা দেখার তা তো দেখেই ফেলেছিস এখন আর মুখ ঢেকে কি হবে”!!

ছি!! কি বেশরম লোক..!!মুখ থেকে জ্যাকেট সরিয়ে দেখলাম উনি কাপড় নিচ্ছেন লাগেজ থেকে..!!আমি উল্টোদিকে ফিরে বিছানা ঝেরে চলে আসতে নিলে উনি বললেন..

“তোর চাচাতো ফুফাতো ভাইরা কবে আসবে”..??!!আলসেও ওদের কাছে যাবি না…!! ওদের আশে পাশে গেলে তোর পা কেটে রেখে দিবো..!!আর রাতে উঠানেও যাবি না!!..যত কাজ আছে সব বাসার ভিতরে করবি..বাসার বাইরে কিছু লাগল আমাকে জানাবি”..!!আমি কিছু বলার আগেই উনি কাধে কাপড় ঝুলিয়ে ওয়াশ্রুমে চলে গেলেন..!! আমিও আমার রুমে চলে গেলাম..!!

 

🌸

 

রাত আটটার দিকে হুজুর চাচার ফ্যামিলি ফুফুর ফ্যামিলি সবাই চলে এলেন…!হুজুররা এসে কুরআন পড়তে লাগলেন..!আর চাচী ফুফি মাদের সাথেই আছেন..!! সাদিফ ভাইয়া এক ঘণ্টা ঘুম দিয়ে উঠেই কাজে লেগে গেলেন…!!আর আমার অন্য কাজিনগুলা আড্ডা দিচ্ছে বসে বসে.!!চাচাতো বোনদের দেখে খুব রাগ লাগলো..বাবার জন্যে আজকে কুরআন খতম দিচ্ছে আর ওরা কিসব হাফ টপস জিন্স পড়ে আসছে.!

ইতি আপু জুমান আপু আর আমি সবাইকে নাস্তা সার্ভ করছিলাম..!!ফুফি আর দুই চাচী বসে কিসব আলোচনা করছিলেন আর মা খালা মামী কিচেনে..!!

নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে আমি ভাইয়াদের আর আপুদের 

ডাকতে গেলাম..

“ভাইয়া আপু আসেন আপনারা!নাস্তা দিয়েছি টেবিলে”.!

আমার কথা শুনে ওরা সবাই উঠে ডাইনিং এর দিকে আগাতে লাগলো.. কিন্তু রাব্বি ভাই মানে আমার বড় চাচাতো ভাই আমার কাছে এসে বললো …..”শেফা ফুল তুমি তো দিন দিন অনেক সুন্দর আর আকর্ষণীয় হয়ে যাচ্ছো..!!খুব বড় হয়ে গেছো মনে হয়”!!!!(আমার উপর থেকে নিচে চোখ বুলিয়ে)

উনার কথা শুনে আমার গা কেনো জানি ঘিনঘিন করে উঠলো..!!আর এত্ত রাগ লাগলো..!!সুতির কামিজ পড়লাম আমি আর জর্জেটের ওড়নাটা দিয়ে পুরো আপার বডি হিজাবের মত করে ঢেকে নিলাম আর এই লুইচ্ছা কি বলে.!!আমি কিছু বলার আগেই সাদিফ ভাইয়ার চিৎকার শুনতে পেলাম আর আমি ভয়ে কেপে উঠলাম..

“এই রাব্বি কি বলেছো তুমি ওকে এসব..!!ভাই হয়ে এসব কথা কেমনে বলো নিজের বোনকে?আর ওর নাম শেফালী.. ডোন্ট কল হার শেফা অ্যান্ড স্পেশালি ফুল”!!

“আরে ভাই ওরে কি ডাকবো এটা আমার পার্সোনাল ব্যাপার!!বিদেশ থেকে আসলেন তিন বছর আগে আর এসেই এত দাপট..!!ভালো না এসব!!..আপনি এসবে নাক গলাবেন না..!!ওকে আমি সেই ছোট্ট থেকে চিনি”!!

 

এসব কথা শুনে সাদিফ ভাইয়ার সবুজ চোখ একদম লাল হয়ে গেলো!!বুঝায় যাচ্ছে উনি এখন মার পিটের মুডে..!!তিনি শান্ত গলায় জবাব দিলেন..!!

“চিনো তো চেনা পর্যন্ত থাকো এর বেশি এগোনোর কথা ভুলেও ভেবো না..!!আর ওদের জন্যে তুমি আর তোমার ফ্যামিলি কি আমি ভালো করেই জানি.. এসেছো খাও,চাচার জন্যে প্রে করো দেন বিদায় হও”..!!

 

এসব শুনে রাব্বি ভাই তেড়ে উনার দিকে আসলে উনিও তেড়ে যান রাব্বি ভাইয়ার কাছে..!!আমি আর্লি সাদিফ ভাইয়ার হাত ধরে ফেলি.!!.উনি আমার দিকে ফিরতেই ইশারায় মাথা নাড়িয়ে না বলি..!!!মা খালা ফুফু চাচী উনাদের  আওয়াজ শুনে এসে ওদের ছাড়িয়ে নিলেন..!!

ওরা যেতেই সাদিফ ভাইয়া দেওয়ালে ঘুষি মেরে “ঐ বদমাইশ যেখানে থাকবে ঐখান থেকে দশ ফুট দূরে থাকবি”বলেই চলে গেলো বাইরের দিকে..!!আমি তো ভয়ে কাঁদতে লাগলাম..!!!আজকে বাবার এই দিনে কি কান্ডটাই না ঘটলো…!!! আই অ্যাম মিসিং ইউ বাবা ভেরি মাচহ!!

 

*

*

এরপর বাবার জন্যে মোনাজাত করা হলো..অনেক কান্না করলাম আমি আর মা..বুকের মধ্যে অনেক কষ্ট হচ্ছে বাবার জন্যে..!!আজকে কেন যেন কান্না থামার নামই নিচ্ছে না..!! যতই চোখের পানি মুছি ততই আবার চোখে ভর করছে বাবার জন্যে চাপা কষ্টগুলো..!!ইতি আপু আর জুমান আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে থাকলেন আর আমি মোনাজাত ধরে চোখের জল ফেলছি…!!!মোনাজাত শেষে দেখলাম সাদিফ ভাইয়াও মোনাজাত শেষ করে আমার দিকেই ফিরলেন.. আমার চোখের সামনেই উনি ছিলেন আর আমি দেখিও নি..!!আমার দিকে ফিরে উনি ইশারা করলেন কান্না না করতে..!!আমার আরো কান্না আসলো..!!চুপচাপ দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করতেই আছি..!!

 

🌸

 

মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা করছে কান্নার ফলে… তাও কিছু করার নেই কাজ তো করতেই হবে..!!খাবারের অায়োজনের  জন্যে উঠানে পাঁচটা টেবিল বসানো হয়েছে..আমাদের উঠান বেশি বড় না হলেও ততটাও ছোট নই..তবে টেবিলের আইডিয়া সাদিফ ভাইয়ার ছিল অ্যান্ড উনিই সব ডেকরেশনের ব্যবস্থা করেছেন..

 

এলাকার অনেক মানুষকেও মা দাওয়াত করেছেন আর মা আমাকে ডেকে বললেন বাহিরে মানুষ এসেছে নাকি একটু দেখে আসতে..আর এমনিও ভাইয়া আপুরা সবাই বাইরে হাটাহাটি করছে..!!আমি দরজার মুখে দাড়িয়ে দেখতে লাগলাম সাথে ইতি আপু আর জুমান আপুও আছে…!!প্রায় অনেক মানুষই এসেছে..!!

মাকে খবরটা দিলাম..!! সব কাজিনরা ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর মা আমাকে দিয়ে ওদের জন্যে ফ্রুটস পাঠিয়ে দিলেন…আমি ঐখানে যাওয়ার আগে সাদিফ ভাইয়া এসে হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে নিলেন..আর বললেন…

“তখনের দরজায় দাঁড়ানো টা আমার চোখ এড়িয়ে যায় নি!!..মানা করার পরও কেন যাচ্ছিস ড্রইংরুমে”??!!

কিছুনা বলে চুপ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকলাম..মাথাটা ছিড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়…!!উফফফফ.!

উনি আমার মুখটা উঠিয়ে আমাকে বলতে লাগলেন..

“কি হয়েছে আমার ফুলের!!?আর এত কান্না কেন??খালু উপর থেকে সব দেখছেন..!!এভাবে কান্না করলে তো উনি কষ্ট পাবেন”..!!

তাও কিছু বললাম না..এবার উনি দুই হাতে আমার মুখ ধরে বললেন..”মাথা ব্যাথা করছে”!??

আমি হ্যাঁ বললাম মাথা নাড়িয়ে..!!

এরপর উনি আর কিছু বললেন না..!! জুমান আপুকে ডেকে নিয়ে আপুকে ট্রে টা দিয়ে আসতে বললেন আর ইতি আপুকে বললেন একটু আমার মাথা ম্যাসাজ করে দিতে..!! দুনো বোন ভাইয়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার জন্যে চলে গেলেন…!!

*

*

ইতি আপু আমার মাথা ম্যাসাজ করছে আর আমি জারাভির সাথে কথা বলছি..!!হঠাৎ দেখলাম রাব্বি ভাইয়া, আলী ভাইয়া,জেসমিন আপু আসলেন আমার রুমে..!!আমার খেয়াল হলো আমার তো মাথায় কাপড় নেই..!!ইসস..!!মাথায় যেই কাপড় তুলছিলাম রাব্বি ভাইয়া বলল “থাক না ভালো লাগছে তো”..!!আর বাকি দুজন হাসছে..!! ইতি আপু বলে উঠলো “কোন ধরনের ব্যবহার এসব”.!!??

ওদের কথা শেষ না হতেই সাদিফ ভাইয়া এসে হাজির!

এসেই রাগী গলায় বললেন..!!

“ইতি তোকে আমি কখন থেকে খুঁজছি..আমার সাথে আয়!!… আর শেফা তুই!! তোকে আমি বিকালে কি বলেছিলাম মনে নেই?? জুরাইন কান্না করছে মামী কাজে বিজি.. ওকে কোলে নে যা এখান থেকে..!!

ভাগ্যিস মাথায় কাপড় দিয়েছিলাম আর্লি আর রাব্বি কামিনা ভাইয়ার কথাটাও শুনেননি উনি..!! নাহলে আজকে আবার লড়াই লাগতো..!!

 

জুরাইন এর কাছে গিয়ে দেখি জুরাইন দাদীর পাশে বসে খেলছে…!! সাদিফ ভাইয়া আমাকে মিথ্যা বললো!

আমাকে দেখেই জুরাইন বললো.. “আপ্পি অ্যাসো আমকে কুলে নেও”..!!

“আহা আমার জুরু এখন আপির কোলে উঠবে”!!আসো আমার ময়নাটা!!”

আর রুম থেকে বের হলাম না..দাদীর পাশে শুয়ে থাকলাম আর জুরু আমার সাথে খেলতে থাকলো…!!আত্মীয়রা আমার আর দাদীর সাথে রুমে এসেই দেখা করে চলে গেলেন সবাইই..!!মামা মামী আর খালারা আজকে থাকবেন..!!

মাথা ব্যথার কারণে মুখ লাল হয়ে আছে আমার!!কোনোরকমে একটু খেয়ে জুরাইন কে নিয়ে ড্রইংরুমে বসে আছি..!!আর ইতি আপু জুমান আপু টিভি দেখছেন..মা খালা দাদী কিসব আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত..!!

আর খালু বেচারা ঘুমে কাত অনেক কাজ করেছেন আজ উনি..!!

 

জুরাইনের সাথে খেলছিলাম আমি সাথে জারাভিও এসে যোগ দিলো…!!হঠাৎ সাদিফ ভাইয়া কে এদিকে আসতে দেখলাম..!!উনার হাতে মুখে চুলে পানি লেগে আছে!

এই রাতে উনি গোসল করলো..!!কিন্তু জ্বর উঠলে?? এমনি চিন্তা আসলো তবে মুখ ফুটে কিছুই বললাম না..!! উনি এসে বসলো আমার পাশে আর আমার কোল থেকে জুরাইনকে নিয়ে নিজে আদর করতে লাগলো..!!

 

🌸

 

জারাভি গিয়ে ইতি আপুর কোলে গিয়ে বসলো..!!হঠাৎ উনি রাগী ভয়েজে আমাকে ফিসফিসিয়ে বললেন..!!

 

“এই তোর মাথায় কাপড় কই!!??..আর রাব্বিকে কি তোর এই লম্বা সুন্দর চুলগুলো দেখানো হচ্ছিলো!?.. ও কি কি বলেছে আমি সব শুনেছি..আর তোর জেসমিন আপু রাইট? ও একটা মেয়ে হয়ে ঐ লম্পটের কথায় হাসলো কিভাবে!!??ইচ্ছা তো করছিলো দুনোজনের গলা টিপে ধরি..!!আর তোকে ত ইচ্ছা করেছিলো পিষে একদম শেষ করে করে ফেলি”..!!

উনার কথায় একদম রাগ উঠে গেলো…!!উনাকে বললাম..”আপনি না একটু দু চামচ বেশি বুঝেন!!আপনার বোন থেকে আস্ক করে দেখিয়েন আসল ঘটনা”..!!

 

সাদিফ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আমার নাক টেনে বললেন.. “আই বিলিভ ইউ”..!! 

আমি উনার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম…

 

“এই..!!প্লিজ এভাবে হাসিও না..!! লোভ সামলিয়ে রাখি আমি অনেক কষ্টে”..!!

 

“মানে??কিসের কষ্ট”??!!

 

“কিছুই না!!…..তোমার ছোট্ট ব্রেনে এত কথা সাপোর্ট করবে না!!!তো মাথা ব্যথা কমেছে”..??

 

মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম..আর মনে মনে ভাবছি.. এটা কেমন ধরন প্রশ্নের??প্রথমে ইনসাল্ট এরপর কেয়ার?নাকি প্রথমে কেয়ার এরপর ইনসাল্ট??যাক মাথায় আর প্রেসার দেয়া যাবে না!! সাদিফ ভাইয়ার সব কথা আমার মাথার উপর দিয়ে যায়!!!…

 

জুরাইন একবার উনার কোলে আরেকবার আমার কোলে আসা যাওয়া করছে..!!আর আমিও জুরুর সাথে মজা করে খেলছি আর হাসছি..!!হঠাৎ সাদিফ ভাইয়া একদম আমার গা  ঘেষে বসে একহাত দিয়ে আমার কাধের উপর উঠিয়ে নিলো আর জুরাইনকে উনার পেটের সাথে লাগিয়ে বসালেন..!!আমি উনার কাজের কোনো হাবভাব বুঝলাম না..!!আমি অন্যদিকে সরে যেতে চাইলে উনি রাগী গলায় বললেন..”কি প্রবলেম!!?? নড়বি না একদম”..!!

 

অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি আর ইতি আপু আর জুমান আপু  আমাদেরকে দেখে মুখ টিপে হাসছে আর জারাভি তো গেমসের ভিতরে ওর কোনো হুশ নেই এই দিকে..!! সাদিফ ভাইয়া আপুদেরকে ভ্রু নাচিয়ে আর ইশারা দিয়ে কিছু আস্ক করলেন আর আপুরা হেসে লাইক দেখাচ্ছেন..!!!

মানে কি এসবের আমার ছোট্ট মগজটা আসলেই ধারণ করতে পারলো না..!!!

 

*

*

মা খালামণি আর দাদী,দাদীর রুমে ঘুম আর আমরা ড্রয়িংরুমে আড্ডা দিচ্ছিলাম…মামা মামী জারাভি গেস্টরুমে ঘুম..!!খালু ভাইয়ার রুমে ঘুমাচ্ছে..! সাদিফ ভাইয়া খালুর সাথে ঘুমাবে!!!আপুরা আজকে কেউ ঘুমাবে না বলে ঠিক করলেন..!!আমরা আড্ডা দিচ্ছি আর জুরাইন বিচ্ছুটা না ঘুমিয়ে সাদিফ ভাইয়ার কাধে বসে আছে আর উনি মোবাইলে কি যেন করছিলেন..!!

 

আমার মাথা ব্যথায় চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে..!!কিন্তু তাও বসে আছি ওদের সাথে…!! সাদিফ ভাইয়া হয়ত আমার অবস্থা খেয়াল করলেন আর উনি আমাদের কাছে এসে বললেন…

 

“তোরাও ঘুমাচ্ছিস না ওকেও যেতে দিচ্ছিস না ঘুমাতে..!! যা না ঘুমাইতে শেফাকে দেখ ওর চোখ কেমন লাল হয়ে আছে..!! যা ঘুমাতে..আর এই তুই তোর মুখ নাই? একদম দিবো ধরে একটা অমানুষ!!! ..তিনোটা যা ঘুমাতে জুরাইন কে আমি ঘুম পাড়িয়ে দিবো”..!!

আমরা উনার বকা শুনে একদম চুপ হয়ে গেলাম…চলেই যাচ্ছিলাম কিন্তু উনি আবার ডেকে বললেন..” চল ছবি তুলি”!! আপুরা তো দৌড়িয়ে উনার পাশে দাঁড়ালেন আমি আসলে ইতি আপু সরে আমাকে সাদিফ ভাইয়ার পাশে দাঁড়াতে বললেন আমিও কথামত দাড়ালাম..!! সাদিফ ভাইয়া আমাকে বললেন “এই মাথায় কাপড় দাও”!!…

কিছুই না বলে উনার আদেশ পালন করলাম.!!এরপর সাদিফ ভাইয়া মোবাইলটা জুমান আপুকে দিয়ে বললেন..

“একটা ছবি তুলতো আমার,শেফার আর জুরাইনের”..!!

 

আমি একদম অবাক..!!!উনি আমার কাঁধে এক হাত দিয়ে অন্য হাতে জুরাইনকে কোলে নিলেন!!…উনার দিকে তাকাতেই উনি আমাকে চোখ টিপ দিলেন আর আমি লজ্জায় লাল!!!এটা একটা ক্যান্ডিড ছবি ছিল..!

আরো অনেক গুলা ছবি তুললেন উনি আমার সাথে..!

 

এক এক ছবিগুলা উনি দেখছেন আর আমাকেও দেখাচ্ছেন!!হঠাৎ সাদিফ ভাইয়া আমাকে বললেন…

“দেখ আমরা কত কিউট..!!একসাথে আমাদেরকে মাশাআল্লাহ লাগে..!!! তুই এত ফর্সা কেনরে ফুল!!??তুই একদম বেশি মাশাল্লাহ..!!তোকে শুধু আমি দেখবো..!!কখনো মাথার কাপড় ছাড়া অন্য কোনো কাজিনের সামনেও যাবি না আর বাহিরের মানুষ তো দূরের কথা”..!!!

 

আমি উনার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম..!!

 

উনি না একটু আগে আমাকে কত বকা দিলেন..!!আবার এখন এসব কি বলছেন..!??

 

হ্যায় আল্লাহ্!!!

 

চলবে…♥️

 

কেমন হয়েছে গল্প অবশ্যই আমাকে জানাবেন কমেন্টস করে…হ্যাপি রিডিং♥️

 

নিত্য নতুন গল্প পেতে নিচের গ্রুপের জয়েন হয়ে সাথে থাকুন 👇

 

 

 

প্রিয়তমা♥️

writer-সালসাবিল সারা

পর্ব-১০

*

*

সাদিফ ভাইয়ার হুমকিগুলা আমি জাস্ট ভুলতে পারছিনা..!!আমি কি এমন লুকালাম উনার কাছ থেকে..!!আমার ঠিক মাথায়ই আসছে না..!!খালা মা মামী উনারা প্রায় এক ঘন্টা কথা বলেই ফোন রাখলেন!

উফ এই সাদিফ ভাইয়া নামক আতঙ্ক আমার জীবনটা পানসা করে দিলো রে..!!!আর এদিকে জুমান আপু ইতি আপু আমার পিছু ছাড়ছেই না!!!কি করেছি কি লুকিয়েছি আস্ক করতে করতেই মেরে ফেলছে আমাকে!! আরে ভাই আমি নিজেই জানিনা আর ওদেরকে কি বলবো..!?!!

 

“উফফ আপুরা আমি সত্যিই জানিনা আমি কি করেছি!

তোমাদের ভাইকে কি তোমরা চিনো না?আজ পর্যন্ত আমার কিছুই কি উনার ভালো লেগেছে??!! কাল রাতেও আমার ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিলো আর উনার সাথে আমার দেখা হওয়ার পর থেকে উনি আমাকে উনার মুড অনুযায়ী ডিল করে..!!শুধু আমি কেনো উনি আজ পর্যন্ত কারো সাথেই কি একটু নরমাল ভাবে কথা বলেছেন?!! শুধুই উনি আর তার রাগ”..!!

 

“এইই শেফা হুশ…!!আমার ভাই যেমন হোক সবাইকে অনেক ভালোবাসে.!! হ্যাঁ তবে অনেক রগচটা এটা তো

না মানলে অনেক বড় গুনাহ হয়ে যাবে..!!তবে ওর রাগটার জন্যেই ও এত ফেমাস..!!সবাই ভয় পাই ওকে!

আর তোর উপরের রাগটাই দেখিস শুধু..!!বাকি জিনিস ত তুই বুঝতেই পারিস না…!!আহারে আমার আদরের ছোট বোনটা!!…হাহাহাহা”!!!!

 

এটা বলেই দুইবোন হাসতে লাগলো..!!

 

“আমি না বুঝার কি!!? আমি সব বুঝি..!!রাগী মানুষের রাগ না দেখে কি দেখবো..??উনি ছয় ফুটের একটা লম্বা জিরাফ এটাই!! নাকি উনি দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম ঐটা”?!!কথা গুলা মনে মনেই বললাম..!!

 

এইদিকে সাদিফ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে..!! সাদিফ নিজের বডি মুচছে আর কালকে রাতের পার্টির কথাগুলোই ভাবছে..!! শাওনের সাহস কি করে হয় তার শেফার নামে ফালতু কথা বলার..!!

 

কালকে পার্টিতে সাদিফ তার বাল্যকালের ফ্রেন্ডদের সাথে ভালোই সময় কাটাচ্ছিলো..!! কিন্তু তার ফ্রেন্ড শাওন থেকে জানতে পারলো তার বিয়ের জন্যে মেয়ে চয়েস করে রেখেছে আর মেয়েটা আর কেউ না সাদিফেরই শেফালী..!!শাওনের মুখে শেফালীর নাম আর মোবাইলে শেফালীকে দেখেই সাদিফের মাথায় একদম রক্ত চড়ে গেল..!!সে একটানেই শাওন থেকে মোবাইল নিয়ে শান্ত ভাবেই আস্ক করলো..!!

 

“ছবি কই পাইছিস ওর”?? 

 

শাওন হেসে বললো… “আমার বোন ঝুমু দিয়েছে..!! ওরই ফ্রেন্ড মেয়েটা..!!একদম ভার্জিন জানিস..!!ভদ্র একদম! বাপ মরা মেয়ে বুঝিসই তো!!এসব মেয়েরা খুব সংসার চালাতে জানে..!!মনে কর তোর বন্ধুর ভাগ্য খুলে গেছে”…!!

 

সাদিফ এক আছাড়েই শাওনের মোবাইলটা ফেলে নিজের বুটস দিয়ে একদম ভেঙে ভর্তা করে ফেললো..!!!আর শাওনের কলার ধরে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো…

 

“হাউ ডেয়ার ইউ!!!তুই জানিস তুই কার লাইফে হাত দিয়েছিস?? হেভ ইউ এনি আইডিয়া…!!???ইচ্ছে তো করছে এখনি তোর নাক ফাটিয়ে দি”!!!

 

“সাদিফ ছাড় আমাকে!!তুই সামান্য ঐ পিচ্ছি একটা মেয়ের জন্যে আমার মোবাইল ভাঙলি!!??আর ঐরকম কেন..তোর যা স্টেটাস তোর জন্যে মেয়েরা বিয়ে ছাড়াই বিছানায় শুতে রাজি..!! আর ঐ মেয়েকে যদি তোর এতই ভাল্লাগে তাহলে চল ওকে নিয়ে আমরা বেড শেয়ার করি”!!??

 

ব্যস!!!শুরু হলো সাদিফের মাইর…এক ঘুষিতে বেচারা শাওনের নাক থেকে রক্ত বের হতে লাগলো..!!কিন্তু তাও সাদিফের মাইর থেমে নেই…!!পেট পিঠ কিছুই বাদ রাখেনি…!!শুধুই কেলিয়েছে..!ওর বন্ধুরাও তাকে থামাতে পারছেনা!!!মারতে মারতে সাদিফ চিল্লাতে লাগলো…!!!

 

“কুত্তা* বা* তোর….শেষ তুই আজকে শেষ…!!আমার ফুল আমার শেফাকে কি বললি তুই??!!!সি ইজ মাইন..!! ওনলি মাইন…!! ওর মতো পিউর সোলকে এসব বললি???আজকে থেকে তোর মুখ বন্ধ”…!!

 

এরপর এক লাথি দিয়ে শাওনকে পুলে ফেলে দিলো..আর অন্য ফ্রেন্ডরা কেউ সাদিফকে ধরছে কেউ শাওনকে পুল থেকে উঠাচ্ছে…!!!

 

এরপর ইয়ামিন এসে সাদিফকে অন্যপাশে নিয়ে বললো…!!

 

“রিলাক্স ব্রো..!! হি ইজ কোয়াইট ইঞ্জুরড!!!কেন মারছিলি ওকে”…!!!??

 

সাদিফ কিছুই উত্তর দিল “পরে একদিন বলবো আজ ভাল্লাগছেনা”…!!! এরপর সাদিফ দুইহাতে নিজের চুলগুলো উল্টে নিয়ে ওর ম্যানেজার গালিবকে কল দিয়ে বললো…

 

“শেফার ফ্রেন্ড আছে একটা নাম ঝুমু!!…সামহাও কালেক্ট হার নাম্বার অ্যান্ড সেন্ড মি”!!!!

 

সকালেই পেলো নাম্বার আর ঝুমুকে কল দিয়ে সেদিনের ঘটনা শুনে জনাতে পারলো ঝুমুর বার্থডে ছিলো আর বাবুটা তাকে ভয়ে কিছু না বলে সেদিন অনেক কেয়্যারফুলি সাদিফকে ম্যানেজ করেছে…!!ভাবা যায়???

 

রাগে সাদিফ জাস্ট ড্রিংক করতেই আছে…!!আর  ভাবছে কেমনে পারলো এই পিচ্চিটা তাকে ম্যানেজ করতে..!! হাউ????

 

ভাবনা থেকে ফিরে এলো মায়ের ডাকে…

 

“হ্যাঁ রে সাদিফ আজকে তোর বোনদেরও নিয়ে আসিস”!!!

 

“হ্যাঁ আনবো”বলেই সাদিফ ভাবছে…”ওয়েট ফুল আমাকে মিথ্যা বলার শাস্তি পাবে তুমি”…!!

 

🌸

 

মা আর আপুরা মিলে উঠানের খালি প্লেসে সুন্দর সুন্দর ফুলের চারা লাগাচ্ছে আর আমি বারান্দায় দাড়িয়ে একটু পড়ছি আর একটু ওদের কাজে উঁকি দিচ্ছি..!!আমারও ইচ্ছা করছে অনেক ওদের সাথে কাজ করতে..!!কিন্তু পেন্ডিং পড়াগুলো শেষ তো করতেই হবে..!!নাহলে সাদিফ ভাইয়া আমার অবস্থা ডাল করে ফেলবেন.!! চারাগুলো অনেক সুন্দর..!!একটু আগেই মা এগুলো কিনে আনলেন..!!এরমধ্যে ক’একটা গোলাপ, ক’একটা জবা, ক’একটা কদম ফুলের চারা!!

বুঝায় যাচ্ছে অনেক সময় লাগবে তাদের..!!যাক ভালো করে পড়া মুখস্ত করে নি..!!

 

পড়তে পড়তে রুমে এসে এবার শুয়ে শুয়ে পড়তে লাগলাম…!! কবে ঘুমিয়ে গেলাম মনে নেই..!!

 

*

*

এদিকে সাদিফ গাড়ি পার্ক করে তার খালা আর বোনদের সাথে খুব ভালোভাবেই কথা বললো!!..যেন কালকের রাগটা তার মাঝে আর বিদ্যমানই নেই..!!!

 

“খালামণি কি লাগাচ্ছো তোমরা এগুলা…?আমাকে কল দিতে পারতে আমি আরো ক’একটা চারা নিয়ে আসতাম..!! আচ্ছা!!শেফালী ফুলের চারা পেলে না”??

 

“না রে বাবা!!!পাই নি..!!তুই পেলে নিয়ে আসিস.!!আমারও অনেক ইচ্ছা এই দিকটাই (উঠানের একদম ডান পাশে)শেফালী ফুলের গাছ লাগাবো”..!!

 

” ওকে ওকে!!নো ওরিস!!এখন তো অবশ্যই আনবো!!

তোমার ইচ্ছা আমি পূরণ করে দিবো..!!(জড়িয়ে ধরে)

তো বিচ্ছুরা তোদের তিন নম্বর সদস্য টা কই?”

 

“আছে তো..!!বারান্দায় ছিল এই আধ ঘন্টা আগেই..ভিতরে পড়ছে মনে হয়”..!! (ইতি)

 

সাদিফা আর কিছু না বলেই ভিতরে চলে গেলো..!!

“শেফালী বই খাতা নিয়ে আয় ডাইনিং এ”…বলেই সোফায় বসে মোবাইল ইউজ করছে..!!অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও শেফালী না আসাতে শেফালীর মা ডেকে বললো ব্যাপারটা…!!

 

একটু পরেই শেফার মা এসে বললো..

 

“ঘুমিয়ে ছিলো পাগলীটা.!!!.আমি উঠিয়ে দিয়েছি!!!আসছে এখনই..!!সরি রে তোকে এত কষ্ট করতে হয় আমাদের জন্যে..!!কিছু মনে করিস না বাবা”..!!

 

“কি বলছো এসব?? আমাকে তুমি পর ভাবো??!!আমি কি তোমার কাছে রাফসানের চেয়ে কম??!!ভুলে যাও 

এসব কথা তুমি…!!রাফসান থেকে কম ভেবে থাকলেও আজকে থেকে বেশি ভাবতে শুরু করো..!!নাহলে তোমারই ক্ষতি”..!!

বলেই চোখ টিপ দিয়ে তার খালাকে জড়িয়ে ধরলো..

 

“এই নে এগুলা খা..!!আমি বাইরে কাজ করছি তাই ভিতরে আসতে লেট হবে ..!!শেফা নোট পাচ্ছেনা নাকি একটা..ঐটা নিয়েই আসছে”..!!

 

সাদিফ শুধু “হুম”বলেই চাউমিন খেতে লাগলো..!!আর ভাবছে আজকে শেফাকে কিভাবে শাস্তি দিবে??!!

 

🌸

 

ভাইয়া আস্সালামুআলাইকুম!!

 

সাদিফ মাথা উঠিয়ে দেখলো…শেফা সুন্দর করে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বুকের সাথে বই নিয়ে দাড়িয়ে আছে আর মুখটা কেমন গম্ভীর করে রেখেছে..!! হয়ত কাল রাতে আমার কথার জন্যে অনেক কষ্ট পেয়েছে..!! কাল রাতের কথা মনে আসতেই সাদিফের মাথাটা রাগে ফেটে যাচ্ছে…মুহূর্তেই সাদিফের সবুজ চোখ লাল হয়ে গেলো…!!!

 

আমি সাদিফ ভাইয়াকে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একহাতে বই ধরে আরেক হাতে উনার সামনে হাত নাড়িয়ে বললাম..!!

 

“এই যে!!! বসবো না আমি..!!??নাকি এভাবে দাড়িয়ে থাকবো??”

 

আমার বলা শেষ না হতেই যেই হাত বাড়িয়েছি ঐ হাতটা ধরে আমাকে একটানে উনার কাছে নিয়ে গেলেন..!!

 

ঘটনা এত দ্রুত ঘটলো আমি তা বুঝতেই পারিনি..!!আমি গিয়ে পড়লাম উনার উপর..!!একদম উনার মুখের সামনে..!! উনি উনার লাল সবুজ মিশ্রিত চোখগুলো দিয়ে আমাকে দেখেই যাচ্ছেন আর আমি আমার হাতে উনার আচমকা হিংস্র হয়ে উঠার ব্যাথাটা অনুভব করছি…!!কাপা কাপা গলায় সাদিফ ভাইয়া কে বললাম….

 

“ভাইয়া আমার অনেক ব্যথা লাগছে..!!প্লিজ হাতটা ছাড়ুন না”..!!

 

সাদিফ ভাইয়া কিছু না বলে আমাকে একটানে উনার কোলে বসিয়ে নিলেন!!… এরপর এক হাতে উনার মোবাইল বের করে কি যেনো করছিলেন আরেক হাতে আমাকে উনার কোলে আটকে রেখেছেন….!!

আমি ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করতে লাগলাম কিন্তু উনি আমাকে ছাড়বেন না বলে প্রতিজ্ঞা করলেন মনে হয়..!!

 

হঠাৎ উনার মোবাইলে আমার এই ছবিগুলা দেখে আমি অবাক!!এই ছবি উনি কই পেলেন??!আমি কিছু বলার আগেই সাদিফ ভাইয়ার গর্জন শুনে আমি আমার পেটের উপর রাখা উনার হাতাটাই খামচে ধরলাম…

 

“কত্তবড় বেআদব তুই..!!তোর সাহস কি করে হয় আমার পিঠ পিছে এসব করার..??আমিও বা কেমন বোকা..!!যেখানে বিডি আর স্পেনে দুইটা অফিস আর ঐখানের এম্প্লয়স আমার আন্ডারে চলে আমার ভয়ে তারা আমার চোখ ফাঁকি দিতে দুঃস্বপ্নেও ভাবে না.. সেখানে তোর মত এতটুকু একটা ছোট মেয়ে কেমনে আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব কাজ করে?? হাউ???

তোর কি একবারও মনে আসেনি যে সাদিফ জানলে তোর কি হাল হবে!!??আনসার মি ফুল”!!???

 

উনার চিৎকার শুনে কান্না করতে করতে বললাম..

 

“সরি ভাইয়া..!!আসলে ঝুমু অনেক জোর করছিলো ট্রিট দিবে বলে আর সব মেয়ে ছিলো ঐখানে..!!ছেলে থাকলে আমি কখনো যেতাম না ..!! আই সুয়াইর সা”..

 

আমাকে বলতে না দিয়ে উনি আবার বলতে লাগলেন…

 

“তাও তাও তাও…!!!তুই আমাকে বলবি না..!!আমি নিয়ে যেতাম তোকে…আর তোর ঐ ফুলিশ ফ্রেন্ড ওর সাহস কি করে হয় তোর ছবি অন্যদেরকে দেখানোর??..সেটা ওর কাজিন হোক বা ভাই..!!!তোর ছবি দেখানোর অধিকার ওর নেই”..!!!

 

“আমি জানতাম না ও কোনো ছেলেকে আমার ছবি দেখাবে…!!জানলে আমি কখনোই তুলতাম না ছবি..!!আর আপনাকে বলিনি যদি আমাকে যেতে না দিতেন ঝুমুর ট্রিট এ!!… সে ভয়ে বলিনি”..!!!(কান্না করে)

 

এবার উনি আমাকে কোল থেকে উঠিয়ে আমার দুগালে  হাত রেখে বলতে লাগলেন…

 

“কেন আমি বাঘ না ভাল্লুক??এত ভয় কেন পাস আমাকে বল!!!কালকে পার্টিতে গিয়ে সবার সাথে কথা বলছিলাম… অনেক পুরনো ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হলো..!! ঐখানে আমার এক বন্ধু শাওন ওর সাথে কথার বলার এক পর্যায়ে  ও বললো একটা মেয়ে পছন্দ হয়েছে..!! মেয়েটা ওর বোনের ফ্রেন্ড…!!নিজ থেকেই আমাকে ওর মোবাইল থেকে ছবিগুলা দেখাচ্ছিল.!!অনেক মেয়ের মধ্যে সে তোর দিকে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছিলো এই সেই মেয়ে!!!মেজাজটা এতই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে ওর থেকে মোবাইলটা নিয়ে আগে ছবিগুলা নিজের মোবাইলে নিয়ে নিলাম এরপর ওর মোবাইল থেকে সব ডিলিট করলাম..!!! কত্তবড় সাহস ওর আমার জিনিসের ছবি আমাকেই দেখাচ্ছে!! তাও নাকি তার বিয়ের জন্যে আমার জিনিসকেই দেখছে!! হি ইজ সো ব্রেভ না!??!ফ্রেন্ড না হলে না কালকে ওর জীবনের লাস্ট দিন হতো..!!বেঁচে গেলো বেচারা”!!!(ইচ্ছা করেই সাদিফ বানানো স্টোরিটা বললো!!!!… নাহয় মেয়েটা আবার বেশি কান্না করবে সে মারপিট করেছে শুনলে!!.. এরপর আবার তার শরীর খারাপ করবে!!)

 

কথাগুলো বলতে বলতে সাদিফ ভাইয়া আমার গাল টা শক্ত করে চেপে ধরলেন…

 

*

*

“সরি আর কখনো আপনার থেকে কিছুই লুকাবো”….

 

কথাটা বলতেই পারলাম না এর আগেই সাদিফ ভাইয়ার কান্ড দেখে আমি একেবারে কেপে উঠলাম!!

 

উনি আমার হাত জোরে চেপে ধরায় হাতটাতে একদম লাল হয়ে রক্ত জমাট বেঁধেছে!!!!.আর উনি সেই হাতটা ধরে সেখানে ফু দিয়ে চুমু দিতে লাগলেন…!!!

 

কি অবাক কান্ড!!!!

 

আমার কাপাকাপি দেখে উনি রাগী ভয়েজে বললেন..

 

 “কি হয়েছে???দেখছিস না কাজ করছি”!!…কথাটা বলেই আমার দিকে ফিরলেন…

 

“আরে আমার লাল টমেটো!! ইসস গালেও তো লাল হয়ে গেলো..!! এদিকে আয়!!!এত লাল হলে কিভাবে চলবে রে?? ফিউচারে তো আমার তাহলে খুব করুণ অবস্থা হবে!!বাট আই কান্ট হেল্প..!!তোমার জন্যে অনেক সারপ্রাইজ ওয়েট করছে ফুল!!!জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড প্রে”..!! 

 

কথাগুলো একদম লো ভয়েজে বলেই আমাকে উনার কাছে টেনে নিলেন…

 

উফফ উনার এই সফ্ট ভয়েজটা শুনলে বুকের ভিতরে কেমন জানি করে!!!!….আর উনার চুমুতে আমার ঐদিনের ফিলিংসটাই এসেছে…!!!এসব ভাবতেই খেয়াল করলাম উনি আমাকে আবারো উনার মুখের সামনে নিয়ে এলেন…!!!

 

আমার কেন জানি খুব ভয় করছে আর অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে..!!!কিন্তু উনার সেই ডিপ সবুজ চোখগুলার দিকে তাকিয়ে উনাকে দুই হাতে ধাক্কা দিয়ে উনার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম…!!

 

আর আমার কাণ্ডে সাদিফ ভাইয়া হাহা করে হাসছেন..!আর আমাকে বললেন…!!

 

“ভেরি গুড শেফাফুল..!!আমি ছাড়া কেউ এমন কাছে আসতে চাইলেই এভাবে ডিফেন্স করবি…!!! আম ভেরি হ্যাপি নাউ…!!আর এই কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখ যে আমাকে না জানিয়ে আর কখনো কোথাও গেলে তোর বডি আমি চিবিয়ে খেয়ে ফেলবো!…. আর আরেকটা কথা তোর বান্ধবীদের বলবি তোর ছবি যেন কোনো ছেলেকে না দেখায়!! আর ছবি দেয়া তো দূরের কথা!!!!যদি আমি জানি এমন ঘটনা কখনো তাহলে সেদিন আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না তাকে মারতে”…!!

 

“যা মুখটা ধুয়ে আয়!!!…টমেটো লাগছে দেখতে !!ভুল করে যদি খেয়ে ফেলি”!!!??

 

 দু হাত দিয়ে চোখ মুখ মুছে উঠলাম মুখ ধুতে.. তখনই আসলো মা আর আপুরা…

 

“কিরে মুখ চোখ এত ফোলা কেন..!!কিরে ভাই মেরেছিস নাকি ওরে?”(ইতি আপু)

 

“আরে না মারিনি আজকে নাকি সে পড়বে না তাই বকা দিলাম আর তার কান্না শুরু..!!পড়া চোর একটা”!!কিরে যা মুখ ধুয়ে আয় আর্লি শেফা আমার লেট হচ্ছে!!!!(সাদিফ ভাইয়া)

 

আর সাদিফ ভাবছে আজকে শেফাকে একেবারে পিটিয়ে লাল করে ফেলবে…!!কিন্তু সে চেয়েও মারতে পারে নি আজ..!!একটা থাপ্পড়ও উঠলো না আজ তার হাতে!!!স্ট্রেঞ্জ..!!

হয়ত কাল রাতের জন্যে সাদিফ গিল্টি ফিল করছিলো..!! নাহয় আজকে শেফালীকে সে মাইর  দিতোই…!!

*

*

কি রাক্ষস লোকটা!!!এভাবে আমাকে সব দোষ দিয়ে দিলো…!!!হাহ..!!ভালো হবে না আপনার সাদিফ ভাইয়া…!!বলেই আমি মুখ ধুয়ে পড়তে বসলাম..!!

 

নয়টার দিকে পড়া শেষ করে তবেই ছুটি দিলো..!!উনার নাকি তাড়া ছিলো..!!কিন্তু মনে হচ্ছে রাতে খেয়েই যাবেন!!! উফফ সকালেও ভাবি নাই আজ এত কান্ড হবে…!!দুনিয়ার সব লোক উনাকেই পায় আমার কথা বলতে..!!

 

সাদিফ ভাইয়া আমাকে পড়ানোর মাঝেই এশার নামাজ পড়ে নিলেন আর আমি পড়া থেকে উঠেই পড়ে নিলাম !!

 

নামায শেষে মা কে হেপ্ল করলাম খাবার রেডি করতে!!

আমি চিকেন রোস্ট আর বিফ চিলি করলাম..!! আমার এই ডিশগুলো সবাই অনেক পছন্দ করে!!!

 

খাবার খেয়ে আপুদের আর ভাইয়াদের ফ্রুটস দিলাম..আমি ফ্রুটস ও তেমন খাই না..!!!আপুরা জোর করছিলো খেতে..!! আমি না বলতে না বলতেই সাদিফ ভাইয়ার বকা শুরু..!!.!!

 

“এই অমানুষ ফ্রুটস খাবি নাকি আমার হাতের সুস্বাদু থাপ্পড় খাবি??? এখন থেকে অলোয়েজ ফ্রুটস খাবি…!!খালামণি তোমার মেয়ে কে প্রত্যেকদিন ফুলক্রিম মিল্ক আর ফ্রুটস খাওয়াবা…!!নাইলে তোমার মেয়েকে আমি ফিউচারে মেরে মেরে এসব খাওয়াব..!!তখন কিন্তু কোনো নালিশ শুনবো না.!!আমার প্রোপার্টি আমারই ঠিক রাখতে হবে”..!!!

 

উনার কথা শুনে মা আমাকে এক প্লেটে সব ফ্রুটস থেকে দুই টুকরা করে দিলেন…!!

 

আমার আর কি করার সিংহের সামনে বসে আছি..!! হুঁ হা করলেই আমার ঘাড় কামড়িয়ে নিয়ে ফেলবে..!!

হাহ !! ওরে দরদ আমার জন্যে…!!!

 

একে একে ফ্রুটস খাচ্ছি!! অবশ্য খাচ্ছি না গিলছি আর ভাবছি..

 

এই লোকটা না আজকে আমাকে কত কষ্ট দিলো…!!

 

আর এখন ভাব দেখেন উনার..??

 

যেন আমার জন্যে দরদে উনার একেবারে কান্না চলে আসছে..!!!

 

শুধু পারেন ত আমার হাত মুখ চেপে ধরতে আর নিজের দুই কেজি ওজনের হাত দিয়ে আমাকে থাপ্পড় দিতে!!!

 

রাগী মাস্তান একটা…!!!

 

চলবে…♥️

 

কেমন হয়েছে গল্প আমাকে অবশ্যই জানাবেন কমেন্টস করে..!!!হ্যাপি রিডিং ♥️

 

প্রিয়তমা♥️

writer- সালসাবিল সারা

পর্ব-১২

*

*

বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে আসতে আসতেই আপুদের আওয়াজ শুনে মনটা একদম ভালো হয়ে গেলো..!!সারাদিনের মন খারাপটা এখন বিদেয় হবেই…!!!

 

জুমান আপু,ইতি আপু আর আমি আমরা তিনজন একসাথে বের হলাম শপিং এ..!!অনেকদিন পরে আমরা তিন বোনের একসাথে সফর..!!!!!

গাড়িতে বসে আমরা তিনজন রাজ্যের আলাপ শুরু করে দিলাম!!!এক আল্লাহ্ই জানেন আজকে সাদিফ ভাইয়াকে কিভাবে সামলে নিজের প্রাণ নিয়ে বাসায় ফিরলাম..!!হঠাৎ জুমান আপু বলে উঠলো..

 

“এই শেফা আজকে কলেজে কি হয়েছিলো”??

 

“ক..কই?কি হবে..!!এভরিথিং ওয়াস গুড অ্যান্ড ফাইন”! 

 

“এই একদম চালাকি করবি না!!তোর ক্লাসমেট রাহির বোন আমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড আর ওরা তোকে ভালো করেই চিনে”..!!(ইতি আপু)

 

“আরে তেমন কিছু না ..!! উম.. ঐ এমনি আরকি..!!একটা মেয়ে কাহিনী করছিলো”..!!

 

“তুই কান্না করেছিস নাকি?আমাকে কিছুই ক্লিয়ারলি বলেই নি..আমাকে জাস্ট বললো..আজকে কলেজে তোর সাথে কোন মেয়ের নাকি ছেলের প্রবলেম হয়েছে!!??ওর বোন নাকি সরাসরি কিছুই বলে নি..!!আমাকে তোর খোঁজ নিতে বললো..!!আমি ভাবলাম আজকে তোর সাথে দেখা হবে তাই তোর থেকে একেবারে আস্ক করে নিবো!! নাউ টেল আস দ্যা ফুল স্টোরি”!!(ইতি আপু)

 

“আরে না কান্না করিনি আজকে..!!কি আর বলবে ..!! সাদিফ ভাইয়া আর আমাকে নিয়ে অনেক বাজে কথা বলছিলো..!!আর বাবা না থাকার খোটা দিচ্ছিলো এই আরকি”..!!

 

“আর তুই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিলি..!!এই তো!!তুই কি বলতো উত্তর দিতে পারিস না কেনো..!!আমরা কত বুঝায় তোকে..!!যে কেউ ভুল বা খারাপ বললে তাকে উচিত জবাব দিবি..!!(জুমান আপু)

 

“আরে না মেরি মাদার্স!!আমি আজকে কাঁদি নি..!!মুখ শক্ত করে ইচ্ছা মত শুনিয়ে দিয়েছি একদম..!!কি বাজে বাজে কথা বলছিলো..!!! সাদিফ ভাইয়া কে নাকি আমার ভদ্র সুন্দর চেহারা দেখিয়ে আমার প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছি..!!কি বেআদব মেয়ে”..!!

 

“ছি ছি!! … সাদিফ ভাইয়া জানে এসব..!?? তোর টেন্সড ফেস দেখে ভাইয়া কোনো অ্যাকশন নেয় নি?? ঐ মেয়ে আর ছেলেটা বেঁচে আছে তো”??!!(ইতি আপু)

 

“উফফ আজকে যা বুদ্ধি খাটিয়েছি!!!শুনলে অবাক হয়ে যাবে”..!!

 

“আর্লি বল..!!কান্ট ওয়েট!!… বেইব”..!!(জুমান আপু)

 

“সাদিফ ভাইয়া বার বার আস্ক করছিলো ঘটনা কি.!!উনাকে সত্যি বলতে..!!উনি মেরে ফেলবেন ঐ পার্সনকে…!!!

উনার কথা শুনে আমি ভয়ে শেষ..!!মাহি ছেলেটাকে এমনিও উনি পছন্দ করেন না আর ঝুমুকে তো কি করবেন এসব সত্যি জানলে!! ভাবতেই আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছিলো..!!!কিন্তু তোমাদের ছোট্ট বোনটা কি করেছিলো জানো…!!তাহলে মন দিয়ে শুনো…!!!

 

সাদিফ ভাইয়া আমার গালটা আস্তে করে ধরে ভয়ংকরভাবে চিল্লাতেই ছিলেন..!!

 

কিন্তু আমি আজ নিজেই নিজেকেই প্রতিজ্ঞা করলাম উনাকে কোনোভাবেই সত্যি বলবো না…!!নেভার..!!কিন্তু উনি তো নাছোড়বান্দা…!!!তাই বুদ্ধি করে প্রথমে আস্তে আস্তে চোখ একবার অফ করছিলাম আবার অন করছিলাম আর এমন ভাব করেছিলাম যেনো এখনই মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবো..!!আমার অবস্থা দেখে তো উনি একেবারে এই টপিক থেকেই সরেই গিয়েছিলেন..!! ব্যস!!!আমার প্ল্যান সাকসেসফুল!!

আই অ্যাম সো ইন্টিলিজেন্ট..!! তাই না???

 

আপুরা আমার কথা শুনে অবাক..!!

 

উনারা অবাক হয়ে বললেন …..”তুইও যে নাটক করতে পারিস!!! আমরা তা ভাবিনি কখনো”..!!!

 

আপুদের তো অর্ধেক কথা বলিও নি…!!!এসব কথা উনাদের বলা যাবে নাকি….??

 

🌸

 

আসলে আমার অ্যাক্টিংটা সাদিফ ভাইয়া সত্যিই ভেবেছিলেন..!!আর আমি যখন চোখ অফ করে মাথা দুলাচ্ছিলাম তখন আমার অবস্থা দেখে উনার বুকে আমাকে একেবারে চেপে ধরলেন আর আতঙ্কে চিল্লিয়ে উঠলেন…

 

“এইই ফুল কি হয়েছে??এমন করছো কেনো..!!?বেশি খারাপ লাগছে???!!এই উঠো না ফুল”..!!??

 

উনার এমন কণ্ঠ শুনে মোটেও ভাল্লাগছিলো না…!!তাই  অ্যাক্টিং এখন অফ কর দরকার!!!!সো আরেকটা প্ল্যান বানালাম..!! ইয়ে মানে আস্তে আস্তে হু হা করতে করতে চোখ পিটপিট করে উনার শার্ট খামচে ধরে উনাকে দূরে ঠেলছিলাম!!! তখনই উনি আমাকে সিটে বসিয়ে দিয়ে মুখে পানি দিচ্ছিলো আর আমার মুখে আস্তে আস্তে চড় দিয়ে বলছিলো….”হেই ফুল ওয়েক আপ বাবু…!!!প্লিজ ..!!কষ্ট হচ্ছে তোমার??ডক্টরের কাছে চলো”…!!

 

ডক্টরের কথা শুনে খুব ভয় করছিলো মনে..!!তাই একটু অপেক্ষা করেই আস্তে আস্তে চোখ খুললাম আর তখনই সাদিফ ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলেন..!!

 

ইসস কি লজ্জা!!!..

সাদিফ ভাইয়া তো একনাগাড়ে বলতেই ছিলেন…কেমন লাগছে !!!কেমন লাগছে…!!ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ভয়ে অ্যাক্টিংয়ের ডোজ বাড়িয়ে কাপা কাপা কণ্ঠে উনাকে বললাম…

 

“আ আ.. আই অ্যাম ওকে..!!প্লিজ বাসায় যাবো..!! আই নিড শাওয়ার”..!!!

 

“আর ইউ সিউর”??

 

“হুম”…

 

এরপর আর কিছুই বললেন না উনি…!!বাসায় নামিয়ে দিলেন…!!!

 

উফফ আজকে তো সিংহের মুখের থেকে বেঁচে ফিরলাম ..!! আর সাথে বাঁচালাম ঐ দুই অমানুষের প্রাণ…!!

 

*

*

শপিং এ ঘুরছি অনেকক্ষণ হলো…!!এখনো আপুরা কিছুই কিনছেন না আর না আমাকে কিনতে দিচ্ছেন..!!

এত আস্ক করলাম কিছুই বললো না..!! স্ট্রেঞ্জ…!!

 

আর না পেরে আপুকে আস্ক করে উঠলাম…

 

“আজকে কি শপিং করবা নাকি এমনিই ঘুরবো…?? জারাভির জন্যে কি কিনবে ভেবেছো তোমরা”???

 

আরে কিনবো তো..!!ধৈর্য ধর..!! এরপর দেখলাম জুমান আপু একটু দূরে গিয়ে কার সাথে যেন ফিসফিস করে কথা বলছিলেন…!!!আর কিছুই আস্ক করিনি..!!

 

ডল শপ দেখলাম একটা..!!আমরা ঐখানেই গেলাম..!!

 ওয়াও!!!এত্তগুলা পিকাচু ডল..!!কি সুন্দর!!!

আমি গিয়ে একটার পর একটা দেখতেই লাগলাম…!! আপুরা সেম দোকানে অন্যপাশে বার্বিডল আরো অনেক ডল আছে ঐখানে ঐগুলা দেখছে..!!!

 

আমি একটা একটা দেখছি পিকাচু… আর সিলেক্ট করছি কোনটা কোনটা নিবো..!! 

উমমম..!!এই তিনটাই সুন্দর লাগলো…!!একটা আমার জন্যে আর দুইটা জুরু আর জারাভির জন্যে…!!

 

 ডলগুলা নিয়ে পিছে ফিরতেই অনেক জোরে ধাক্কা খেলাম কারো বুকের সাথে….!!!আর ব্যালেন্স করতে না পেরে পড়েই যাচ্ছিলাম কিন্তু কিছু একটার সাথে আটকে গেলাম…!!পড়ার ভয়ে আমার দুইটা ডল হাত থেকে পড়ে গেলো আর অন্য ডলটা দিয়ে আমার মুখের সামনে দিয়ে দিলাম আর অন্য হাতটা দিয়ে কিছু একটা খামচে ধরলাম….!!!

 

এরপর আস্তে আস্তে সামনে থেকে ডলটা সরালাম.. এতক্ষণ চেষ্টা করলাম উঠে দাড়ানোর কিন্তু যে ধরেছে সে মনে হয় আজকে ওয়াদা করলো আমাকে ছাড়বে না!!

 

ডল সরিয়ে নেয়ার পর আমার চোখ বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা…!!

স স সাদিফ ভাইয়া…!!!!উনি এখনো আমার দিকে এক নজরেই তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকা করে হাসছেন আর আমার কোমর জড়িয়ে আছেন!!!

 

“ভাইয়া কি করছেন…!!সবাই দেখছে”…!!!

এবার মনে হলো উনার হুশ হলো…!!আমাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন…!! আশে পাশের সবাই বিনোদন নিচ্ছিলো আর আপুরা তো গালে হাত দিয়ে হাসছে..!!

 

ছি! সবাই কি ভাববে..!!লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে..!!!

 

সাদিফ ভাইয়া ফ্লোর থেকে ডলগুলো উঠিয়ে বললেন..

“এগুলা পছন্দ”???

 

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম…!!

 

এরপর উনি পিকাচু দুইটা রেখে বললেন….”এগুলা ফ্লোরে পড়েছিল….এমন আরও অনেক আছে..!!ঐখান থেকে নাও”..!!

 

কি আর করার উনি যে নিট অ্যান্ড ক্লিন পার্সন!!

আমি আর উনি একদিকে আর আপুরা অন্য দিকে..!!আমি আপুদের কাছে যেতে নিলেই উনি বকা দিচ্ছিলেন..!!কেমন খাটাশ..!!

 

🌸

 

ডলগুলা নিয়ে দাড়িয়ে আছি একপাশে আর আপুরা এখনো সিলেক্ট করতেই আছে…!!!আমি পিকাচুগুলা বুকের সাথে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছি..!!আর আমার সামনে সাদিফ ভাইয়া!!…

 

উনি এমন ভাবে আমার সমানে দাড়িয়ে আছেন হয়তো উনার জন্যে আমাকে দেখাও যাচ্ছে না!!! 

জিরাফ একটা!!!! হঠাৎ উনি আমার দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন…..

 

“এইই মাথায় ওড়না কই তোমার?মার্কেটে আসলে বোরকা পড়া যায় না??আর কখনো যদি দেখি এমন..!! চড় দিয়ে কান ফাটায় দিবো”..!!

 

“আমি পড়তে চেয়েছিলাম..!!আপুরা পড়ে নি তাই আমিও আর পড়িনি..!!তাই”..!!

 

“ওরা না পড়লে নাই!!!..তুমি এমন পাবলিক প্লেসে আসলে বোরকা পড়বা..!!বোরকা পড় নি বুঝলাম..মাথায় কাপড় কই”???

 

“এমনিই”…

 

“গালে ঠাস করে খাওয়ার আগে জলদি মাথায় কাপড় দে!!…আর আমাকে মিথ্যা বলে লাভ নেই!!..আমি জানি তোর আপুরাই তোকে ফোর্স করেছে..!!তোকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে মাথায় কাপড় ছাড়া তোর আনকম্ফোর্টেবল লাগছে..!!!এরপর থেকে নিজের কথা না ভাবলে তুই ডাবল মাইর খাবি..!! গট ইট”?!!??

 

“হুঁ”

 

অনেকক্ষণ ধরে ট্রাই করছি কিন্তু পারছিলাম না মাথায় কাপড় দিতে..!!কারণ হাতে তিনটা বড় পিকাচু…!!

আর না পেড়ে উনাকে ডাকলাম….

 

“সাদিফ ভাইয়া একটু এগুলা নিন না..!!আমি পারছিনা এগুলা নিয়ে মাথায় কাপড় দিতে”..!!!

 

আমার ডাকেই উনি অপরাধীর মত ফেস করে বললেন..

 

“ওহ শিট!!!!আমার খেয়াল ছিলো না তাই বলে কি তুই আমাকে বলবি না…!!এতক্ষণ এগুলা নিয়ে দাড়িয়ে ছিলি..!!আর ঐ দুই বান্দর আজ ইচ্ছা করেই এমন লেট করছে…!!আর্লি মাথায় কাপড় দাও ফুল”..!!

 

কথা গুলা বলতে বলতেই উনি আমার হাত থেকে পিকাচুগুলো নিয়ে নিলেন…

 

এতক্ষণে শান্তি লাগছে!! …উফফ!!! আপুরাও না..!!যাক আপুদের ভাইয়ার সামনে আপুদের নামে বদনাম করবো নাকি..!!!??

 

এরপর সাদিফ ভাইয়া আমার হাত ধরে সামনে আগাতে লাগলেন…!!

 

“হাত ছাড়ুন না..!!আপুরা দেখলে কি ভাববে..!!?আর আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি”..!!??

 

কোনো উত্তরই দিলেন না..!!হাহ!! ভাব দেখলে গায়ে জ্বলে…!!!আমিও আর কিছু বললাম না…!!উনার পাশে হাটতে লাগলাম…!!

 

আপুদের কাছে গিয়ে উনি অাপুদেরকে বকা দিয়ে বললেন..

 

“এতক্ষণ লাগে তোদের…!!!সামান্য পুতুল কিনতে..!!বাকিগুলা কখন কিনবি”..!!??

 

ভাইয়ার বকা শুনে আপুরা বললো….

 

“আরে এতো চিল্লাও কেনো ভাই তুমি???এত চিল্লালে এসেছো কেনো???আমরা কি বলেছি নাকি তোমাকে আসতে”!!??

 

“তোরা একা আসলে একটা কথা”…..এরপর শেফালীর যে হাত ধরে ছিলো সাদিফ সে হাত উঠিয়ে আবার বললো..!!

 

“এই পিচ্চিটার দায়িত্ব কে নিবে??উনার তো নিজের প্রতি কোনো কেয়ার নেই আর তোরা তো নিজেদের কাজেই থাকবি…!!সো ওকে নিয়ে আমি রিস্ক নিতে চায় না”…!!!

 

উনার কথা শুনে আপুরা স্বাভাবিক থাকলেও আমার খুব রাগ লাগলো…!!তাই আমার হাত উনার হাত থেকে ছুটানোর জন্যে ট্রাই করছিলাম কিন্তু উনি আবার আমাকে বকা দিলেন…..

 

“কি সমস্যা তোর??একদম এখানে রেখেই চলে যাবো”..!!

 

উনার কথায় উনার দিকে করুণ ভাবে তাকালাম কিন্তু উনি আপাতত আমার হাত ধরে হাঁটতে ব্যস্ত!!!

 

পিকাচুর টাকা দিতে গেলে আরেক ধমক খেলাম…কিরে ভাই আমি কিনলাম..!!আপনি কেন টাকা দিবেন..!!??আমার কি টাকা নেই..!!কিন্তু দোকানে কিছুই বললাম না..!!কিন্তু দোকান থেকে বের হতেই বলে উঠলাম…

 

” আমার জারাভি,আমার জুরু আর আমার জন্যে কিনলাম ডল…!!আপনি কেন টাকা দিলেন???মা আমাকে টাকা দিয়েছে তো…!!আপনি এগুলা নেন..!!

(ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে)

 

“টাকার গরম এত তোর..!!কিন্তু সরি আমি যে জিনিস কিনে দি তার টাকা আমি নি না..!!আর এত টাকা টাকা লাগিয়েছিস কেন”??!!

 

কিছুই বললাম না আর….!!ইতি আপু বললো…

 

“ছোট্ট বোনু তুই আমার আর জুমানের..!!আমাদের সাথে এসেছিস…!! আর সাদিফ ভাইয়াও আছে সাথে…সো আর মন খারাপ করবি না এই টাকা নিয়ে”!!!

 

আপুদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম…আর সাদিফ ভাইয়ার দিকে তাকানোর জন্য মাথাটা অনেকটা উঁচু করেই তাকালাম…!! উনি আমার হাত ধরে হাঁটতেই আছেন…!!যেনো আমার হাত ধরে হাঁটা ছাড়া উনার আর কোনো কাজ নেই..!!

 

*

*

 

জারাভির জন্যে সুন্দর দুইটা ফ্রক কিনেছে..!!..একটা আপুদের পক্ষ থেকে আরেকটা আমার পক্ষ থেকে!!!..এরপর জুরুর জন্যে সুন্দর দুইটা পাঞ্জাবি!!

আর দুইটা বড় চকলেট বাক্স কিনেছে..!!

এগুলার সব টাকাই সাদিফ ভাইয়া দিয়েছে..!!

 

তবে একটা একটা করে আলাদা প্যাকেট করা..!!আমার তিনটা প্যাকেট আর তিনটা আপুদের…!!!

 

আমার সব জিনিসই সাদিফ ভাইয়ার এক হাতে ধরা!!..

আরেক হাতে আমার হাত ধরে আছেন..!!

 

সাদিফ ভাইয়া আসাতে ড্রাইভার কে আমরা যে গাড়ি করে এসেছিলাম ওটা নিয়ে চলে যেতে বললেন..!!

 আমরা সাদিফ ভাইয়ার গাড়ি করেই বাসায় যাবো..!!

 

আমি মনে করেছিলাম এখন বাসায় চলে যাবো..!!কিন্তু এখন দেখি আপুরা আবার কোন শোরুমের সামনে থামতে বললেন..!!সব জিনিস গাড়িতেই রেখে এখন আবার পাকিস্তানি ব্র্যান্ডের থ্রিপিসের শো রুমে আসলাম..!!

আপুরা এত শপিং কেমনে করে…!!আমিও কম করি না তবে এসব ব্র্যান্ডের দোকানে ঈদ ছাড়া আসায় হয় না..!!আর আপুদের সামান্য জিনিসই ব্র্যান্ডের দোকানে..!!!

 

এবারও সাদিফ ভাইয়া আমার হাত ধরে  হাঁটছেন..!!আর উনার হাত ধরাতে কেনো জানি সিকিউর ফিল হচ্ছে..!!এবার আর কিছুই বললাম না..!!উনার সাথেই হাঁটতে লাগলাম..!!!

 

আপুরা অনেক সুন্দর সুন্দর ড্রেস পছন্দ করছে!!..আমিও তাদের এটা ঐটা পছন্দ করে দিচ্ছি..!!আপুরা আমাকে অনেক বললো ড্রেস দেখতে!

কিন্তু আমার কাছে এসব কেনার টাকা নেই এখন..!!তবে আপুদের বললাম..

 

“তোমরা দেখো সুন্দরী আপুস..!!আমার যা আছে সেগুলো দিয়ে আমার চলবে”..!!

 

কিন্তু আপুরা তাও আমার জন্যে নিজেদের জন্যে ড্রেস দেখতে লাগলো …!!

সাদিফ ভাইয়া কই গেলো আল্লাহ্ জানেন..!!এইখানে এসেই ম্যানেজারকে বলে আমাদের তিনজনকে এক কোণে বসিয়ে দিয়ে কই চলে গেলেন..!!আল্লাহ্ মালুম!!

 

আপুরা নিজেদের জন্যে জনপ্রতি চারটা করে ড্রেস সিলেক্ট করলো আর আমার জন্যে আমি জোর করে না বলা সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে গিয়ে একটা ড্রেস সিলেক্ট করলো..!!অনেক সুন্দর ড্রেসটা…!!!

 

সাদিফ ভাইয়া এসেই দেখতে লাগলেন আমাদের ড্রেস গুলো আর যখন দেখলেন আপুরা চারটা করে নিয়েছে আর আমি একটা তখন উনি আপুদের বকা দিতে লাগলেন…..

 

“নিজেরা তো চারটা করে নিয়েছিস…!!আর ওর জন্যে একটা কেনো..!!??বুঝলাম না ব্যাপারটা..?? দোকানে কি কাপড় কম..!??আর এই তুমি শেফা…!!কি সমস্যা তোমার..!!??একটা কথা কইবার বলা লাগে..!! জুমান ইতি যাই নেয় তুমিও তা নিবা..!! বলিনি আমি”??!!

 

“আপুরা আমাকে বলেছে অনেক…!!আমিই মানা করলাম..!!আমি তো আপনাদের কাজিন..!!আমি কেন আপুদের মত নিবো..??!!আমার জন্যে একটাই অনেক..!!লাগবে না আমার আর..!!আপু সরি তোমরা কিছু মনে করিও না”…!!

 

আমার কথা শুনে সাদিফ ভাইয়া আমার দিকে তেড়ে আসতে চাইলো কিন্তু কিছু না বলেই আবার অন্যপাশে চলে গেলেন….

 

“শেফা তুই পাগল..??তুই জানিস তুই আমাদের কি??!!

সাদিফ ভাইয়া অনেক রাগ করেছে..!!এভাবে কেন ছোট করলি নিজেকে”..!!??

কথাগুলো বলেই ইতি আপু আমাকে একপাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে  বললেন….

 

“তুই আমি জুমান আমরা তিনজনই সেম..!!আর কখনো এসব কথা বলবি না…!!প্রমিজ…!?আর সাদিফ ভাইয়ার সামনে তো একদমই না”…!!!

 

আমি কি ভুল বললাম জানিনা !!!!আর সাদিফ ভাইয়া কেন রাগ করলো তাও জানিনা..!!এখানে রাগের কি?

যা সত্যি তাই বললাম..!!!তারপরও আপুকে জড়িয়ে ধরে উত্তর দিলাম…”ওকে প্রমিজ”..!!

 

*

*

সাদিফ ভাইয়া বিল দেওয়ার সময় দেখলাম আরো তিনটা এক্সট্রা ড্রেস..!!এগুলো খালামনির জন্যে হয়তো…!!

 

ইতি আপু জুমান আপু নিজেদের একটা একটা ড্রেস দিয়ে দিয়ে দিলো ঐখানেই..!! এগুলা কালকে সকালের মধ্যেই রেডি হয়ে যাবে..!! ওয়াহ..!!আর আমার একটা ড্রেস দশ দিন আগে দেয়া লাগে টেইলার্সে..!!ভাবতেই হাসি পেলো..!!!

 

আপুরা কিছু বলার আগেই..!! সাদিফ ভাইয়া ঐ তিন প্যাকেট চেক করে একটা প্যাকেট নিয়ে জুমান আপুকে কি ইশারা করলো আর জুমান আপু প্যাকেট টা নিয়ে দর্জিকে কি কি যেনো বলতে লাগলো…!!

ওদের কথা আমি শুনিনি কারণ তখন মা ফোন করেছিলো…

 

“হ্যাঁ মা এইতো এসে যাচ্ছি….!!হ্যাঁ খেয়েছি অনেককিছুই..!!!এসে যাচ্ছি তো মা..!! হ্যাঁ সাদিফ ভাই”….

 

আর বলতে পারলাম না.. !!সাদিফ ভাইয়া এসে আমার কান থেকে ফোন নিয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে মেইন গেটের দিকে গেল…উনি  ইতি আপুকে কি কি যেনো আস্ক করছে আর আমার দিকে ভিলেনের মত তাকাচ্ছে..!!যেনো আমি একটা আসামী…!!গন্ডার!!!

 

*

*

গাড়িতে সাদিফ ভাইয়া আমার থেকে আস্ক করলো..”কি খেয়েছিস বাসা থেকে আসার সময়”..!!!??

 

“ভ …ভাত”!!!

 

“সত্যি বল কিছুই করবো না”…!!!

 

“আসলে ইয়ে… খেয়েছি তো”..!!

 

“জুমান ইতি তোরা কি জানিস এই বেয়াদবটা সকাল ৯.২০ এ নাস্তা করে সারাদিন কিচ্ছু খাই নি…!!??এটা কি মানুষ..!??কলেজে টিফিনও করে নি বাসায় গিয়ে ভাতও খাই নি..!!! খালাকে বলেছে তোদের সাথে খেয়ে নিবে মার্কেটে”..!!

 

আমি কিছু না বলেই মাথা নিচু করে বসে আছি..!!ধরা পড়ে গেলাম…!!!!

সাদিফ ভাইয়া আমাকে ইচ্ছা মত চিল্লাতেই থাকলেন আর আপুরা উনাকে ঠাণ্ডা হতে বলছেন…!!!

 

কিন্তু সাদিফ ভাইয়া আমাকে উনার ইচ্ছা মতো খানা খাইয়ে এরপর শান্তি হয়েছেন….!!!আর শাস্তি হিসেবে আজকে আমাকে বাসায় না নিয়ে উনাদের বাসায় নিয়ে গেলেন….!!এত জোর করলাম যাবো না..!!কিন্তু উনি তো জল্লাদ… দয়া করেনি..!!মাকে ছাড়া থাকতে আমাকে অনেক ভয় লাগে…!!তবে উনি মার্কেটে থাকাকালীন ই মা থেকে পারমিশন নিয়ে নিয়েছেন!!!

কি চালাক লোক…!!

 

সদিফা ভাইয়াদের বাসাটা বিশাল বড়..!!ডুপ্লেক্স হুয়াইট কালার ঘরটা রাজমহল থেকেও সুন্দর..!!তবে আমার বেশ ভয় লাগে এত বড় ঘড়…!!!

 

আমাকে দেখেই বড়খালার খুশির শেষ নেই..!!

আমাকে দেখেই জড়িয়ে একদম বুকে ঢুকিয়ে ফেললেন….

 

“আমার ফুল যে…!!খুব খুশি হয়েছি..!!তুই আসবি জানলে আমি তোর মাকেও আনিয়ে নিতাম..!!আমি ঘুমাবো তোর সাথে…!!একদম ভয় পাবি না”..!!

 

“হ্যাঁ মা আমাদের রুমে থাকবে তুমি আজকে..!!বাবুটা আর তুমি বেডে একপাশে  আর আমি আর জুমান অন্যপাশে শুবো..!!ওকে”???(ইতি আপু)

আমি আর খালা হেসে বললাম “ওকে”…

 

আপুরা আমরা সবাই ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম..!!নেমেই আমি খালাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলাম..!!

আজ অনেক ঘুরলাম অনেকদিন পর..!!!

 

 খালা আমার মাথায় তেল লাগিয়ে দিচ্ছেন..!!!আর তখন দেখলাম সিড়ি দিয়ে সাদিফ ভাইয়া নামছেন..!!উফফ যে ভাব নিয়ে নামছেন উনি..!!কিন্তু উনাকে এই ঢোলা টি – শার্টে বেশ লাগছে দেখতে..!!! ড্রইং রুম থেকে সিড়ি টা একদম স্পষ্ট..!!উনার হাতে অনেকগুলা প্যাকেট!!! 

 

সাদিফ ভাইয়া এসে খালাকে একটা শাড়ির প্যাকেট দিলেন আর বাকি দুইটি প্যাকেট আমাকে দিয়ে বললেন….”তোর জন্যে”

 

“আমি আমারটা নিয়েছি তো ..!!!এগুলা আমার না”..!!

 

উনি আমার পাশে বসে ফিসফিসিয়ে বললেন…”না নিলে ঝুমু আর মাহি কেউই আস্তো থাকবে না”!!!

 

সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো…!!

আমি উনার দিকে তাকিয়েই আছি…আর উনি আমাকে প্যাকেটগুলো দিয়ে চলে গেলেন…!!

 

আর আমি ভাবছি…!! উনি এই কথা কেমনে জানলেন…?? কিভাবে উনি সব জেনে জান???

 

এই লোক তো খুব ডেঞ্জারাস..!!!

 

চলবে…♥️

 

কেমন হয়েছে গল্প আমাকে অবশ্যই জানাবেন কমেন্টস করে….হ্যাপী রিডিং ♥️

 

নিত্য নতুন গল্প পেতে নিচের গ্রুপের জয়েন হয়ে সাথে থাকুন 👇

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।