অধিকার
লেখক A Al Mamun
পর্ব :- ১
–আমি পারবো না.. ছেড়ে দে প্লিজ…।
–আর একটু, হয়ে গেছে।
–এটা খুবই বিরক্তিকর। কেনো আমাকে দিয়ে এসব করাচ্ছিস?
–তুই ই তো পারবি এই কাজটা করতে। তুই ছাড়া আর কাউকে পাবো?
–প্রতিবারই আমাকে? কেনো? নতুন কাউকে খুজে নে না। ঘরের কেউ যদি জানতে পারে তাহলে আমাকে মেরে ফেলবে।
–এত ভয় পাশ কেনো? আমি আছিতো।
–তুই কি করবি? আব্বায় যদি জানতে পারে তাহলে আমাকে খুন করবে।
–বকবক করিস নাতো, হয়ে গেছে।
–ছাড় এবার…..
কি ভাবছেন আপনারা? চিন্তা বদলান…..
এতক্ষণ যাদের মধ্যে কথা চলছে তারা হলো মামুন আর প্রিয়া…
দুজন চাচাতো জেঠাতো ভাই-বোন। দুজনই সমবয়সী এবং সহপাঠী।
আজ প্রিয়াকে দেখতে ছেলে আসছে। তাই বিয়ে ভাঙার জন্য মামুনের সাহায্য নিচ্ছে।
না না, ওসব কিছু না। প্রিয়া মামুনকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে আর মেকআপ করে দিচ্ছে।
গত ৪-৫ টা প্রস্তাবও প্রিয়া আর মামুন মিলে এভাবে ভেঙেছে।
ছেলেকে মেয়ের সাথে কিছুক্ষণ আলাদা কথা বলতে দেওয়া হয়, তখনই প্রিয়া ছেলেকে ইশারায় নিজের রুমে ডাকে।
যেখানে আগে থেকেই মামুনকে সাজিয়ে রাখা হয়।
তারপর কি হয়?
পড়েই নিন…….
.
–যা আয়নার সামনে যা, দেখ তোকে কত সুন্দর লাগছে।(প্রিয়া)
–আমাকে এই অবস্থায় যদি কেউ দেখে ফেলে, আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারবো না। কি করছিস আমার সাথে?(মামুন)
–তুই চুপ থাকবি? এত ভীতু কেনো তুই? কিচ্ছু হবে না। যা বলেছি শুধু তাই করবি।
–যদি কিছু হয়ে যায়, তোর খবর আছে।
–কিছু হবে না। আমি আছিতো।
–আচ্ছা।
যথা সময়ে পাত্রপক্ষ প্রিয়াকে দেখতে আসে।
সবার দেখাশোনা শেষে পাত্রকে প্রিয়ার সাথে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হয়।
প্রিয়া দ্রুত হেটে আগেই রুমে চলে আসে। এবং বাথরুমে ঢুকে পড়ে, যেখানে আগেই মামুন ছিলো।
–হ্যালো, কোথায় আপনি?(পাত্র)
–আসছি, আপনি একটু বসুন,আমার চোখে কি যেনো পড়েছে। মুখ ধুয়ে এক্ষুনি আসছি।(প্রিয়া)
–ঠিক আছে।
একটু পর মামুন প্রিয়ার সাজে হাতে টাওয়েল নিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে বাথরুম থেকে বের হয়ে আসে।
–আপনি ঠিক আছেনতো? কি পড়েছে চোখে?
–আর বলবেন না, কি যে পড়েছে চোখে?(কিছুটা মেয়েদের মতো করে)
পাত্র এমন গলার আওয়াজে বেশ অবাক হয়।
–একি, আপনার গলার আওয়াজ এমন লাগছে কেনো?
–আমি নার্ভাস হয়ে গেলে আমার আওয়াজ এমনই হয়ে যায়।
–আপনার মুখ থেকে টাওয়েলটা একটু সরান।
মামুন ধীরেধীরে টাওয়েলটা মুখ থেকে সরায়
–একি.. কে আপনি?(পাত্র কিছুটা দুরে সরে যায়)
–আমি প্রিয়া,আপনার হবু বউ।
–না না,আপনি অন্য কেউ। একটু আগেতো আপনি এমন ছিলেন না।
–জানি মুখ ধুয়েছি বলে মেকআপটা একটু সরে গেছে, তাই বলে এভাবে অপমান করবেন?
–অপমান? আমি এই বিয়ে করছি না।
বলেই পাত্র দৌড়ে চলে গেলো।
প্রিয়া আর মামুন দুজনই অট্টহাসি হাসতে থাকে।
একটু পর খবর আসে পাত্র পক্ষের মেয়ে পছন্দ হয়নি।
পুরো পরিবার খুব অবাক হয়।
কেননা প্রিয়া দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। মেয়ে পছন্দ হয়নি এই কথাটা প্রিয়ার সাথে যায় না।
–দেখ প্রিয়া, আমি আর এই কাজ করতে পারবো না।
–কেনো পারবি না? তুই না করলে আমার বিয়েটা যে হয়ে যাবে। আর আমি এক্ষুনি বিয়ে করতে চাই না।
–তাই বলে এভাবে? তুই চাচা-চাচিকে বল।
–বলেছি, লাভ হয়নি।
–আমি আর পারবো না এই কাজ করতে।
বলেই মামুন হনহন করে প্রিয়ার রুম থেকে চলে আসে।
.
প্রিয়া আর মামুনেরা যৌথ পরিবার না,
মামুন যখন নিজের কক্ষে ফিরে আসে… তখন সে তার মা-বাবার কিছু কথোপকথন শুনতে পায়।
তাদের কথা গুলো ছিলো এমন যে….
“প্রিয়ার কি সমস্যা থাকতে পারে? মেয়েতো রুপে, গুণে মাশাল্লাহ। তাহলে পর পর ৪টা প্রস্তাব এভাবে ফিরিয়ে দিলো কেনো? মেয়ের কোনো দোষ নেইতো? মনে হচ্ছে ওকে কবিরাজ দেখানো দরকার”
তখনই মামুন কথার মাঝখানে ঢুকে পড়ে।
–কি বলছো মা এসব? প্রিয়ার কোনো সমস্যা নেই। ও নিজেই এই সমন্ধ গুলো নষ্ট করছে।
–মানে?
–মানে ও এখন বিয়ে করতে চায় না, তাই এই বিয়ের প্রস্তাব গুলো আমাকে দিয়েই ভাঙিয়েছে।
–তোকে দিয়ে?
–হ্যা..। (মামুন পুরোটা ওর বাবা মাকে খুলে বলে)
পুরোটা শোনার পর মামুনের বাবা মামুনকে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
তখনই দরজায় এসে দাড়ায় প্রিয়া।
মামুনকে চড় মারায় দৌড়ে মামুনের কাছে আসে।
–কি হয়েছে জেঠু, ওকে কেনো মারছো?
–তোরা দুজন মিলে কি শুরু করেছিস? কেনো একে একে বিয়ের সমন্ধগুলো ভেঙে দিচ্ছিস?
–এই জন্য ওকে কেনো মারছো? ও তো আমার কথায় এসব করেছে। ওর কোনো দোষ নেই।
–দোষ কার সেটা পরে দেখছি, চল তোর বাবা মায়ের কাছে…..
–জেঠু, আমি এখন বিয়ে করবো না। প্লিজ….
–কেনো করবি না?
–আমি আরো পড়তে চাই, আর এখনো কি আমার বিয়ের বয়স হয়েছে? কেনো আমাকে এত তাড়াতাড়ি পর করে দিচ্ছো তোমরা? আমি কি বোঝা হয়ে গেছি?
–বোঝা নারে মা… এটা যে সব বাবা মায়েরই দায়িত্ব। তাছাড়া তোর বাবা মা কত কষ্ট করে সমন্ধ গুলো নিয়ে আসছে, তুই এমন করছিস শুনলে কি তোর বাবা মা কষ্ট পাবে না?
–ওনাদের একটু বলো না…. আমি এখন বিয়ে করবো না।
একটু ভেবে চিন্তে উত্তর দিলো
–ঠিক আছে, তুই ঘরে যা, আমি তোর বাবার সাথে কথা বলছি।
–আচ্ছা, আয় মামুন…….
বলেই মামুনকে নিয়ে প্রিয়া নিজের ঘরে হাটা দেয়।
মামুন এখনো এক গালে হাত দিয়ে আছে।
–কিরে মামুন? গালে এভাবে হাত দিয়ে আছিস কেনো?(প্রিয়ার মা)
–ওকে জেঠু মারছে..(প্রিয়া)
–কেনো কেনো?
–কি জানি, জেঠুকে জিজ্ঞেস করো…
প্রিয়া মামুনকে নিজের রুমে এনে বসায়।
–খুব লেগেছে?(প্রিয়া)
–আমি তোর সাথে আর কথা বলবো না।(মামুন)
–কেনো?
–তোর জন্য বাবা আমাকে মারলো।
–তুই এত বোকা কেনো? সব জেঠুকে বলে দিয়েছিস… মারবে নাতো কি করবে?
–তোর কি মনে হয়? আমি বোকা?
–তা নয়তো কি?
–আমি বোকা না… মা তোকে নিয়ে বললো কবিরাজের কাছে যাবে… তাই আমি বললাম তোর সেরকম কোনো সমস্যা নেই…। বিয়ে আমরা মিলেই ভাঙছি।
–সেটা তোর বলার দরকার ছিলো? গাঁধা কোথাকার….
–এখন তুইও বক….
–তোর জন্য আমার খুব চিন্তা হয়…। তোর ভবিষ্যৎ কিভাবে যাবে? এখনও তুই বাচ্চাদের মতো কথা বলিস।
–তোকে এত চিন্তা করতে হবে না… সর…..
.
প্রিয়াকে সরিয়ে মামুন বেরিয়ে আসে….
প্রিয়া বরাবরই মামুনের প্রতি দূর্বল….।
পরিবারে যখনই কেউ মামুনকে বকাবকি করে তখনই প্রিয়া তার বিপক্ষে চলে যায়, সেটা মামুনের বাবা মা বা প্রিয়ার নিজের বাবা মা যেই হোক না কেনো।
এবং প্রিয়া মামুনকে সবসময় আগলে রাখে।
এই বিয়ের প্রস্তাবগুলো ভাঙার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মামুন…।
প্রিয়া এটা জানে যে ওর বিয়ে হয়ে গেলে মামুনকে দেখে রাখার মতো আর কেউ থাকবে না।
যদিও মামুন ততটা বোকা নয় যতটা প্রিয়া ভাবে।
ছোটবেলায় একদিন মামুন তার এক বন্ধুর সাথে মারামারি করে বাড়ি ফিরে ছিলো।
মামুনের মা এর ওপর আবার মারে… যেটা সাধারণত আমাদের বাঙালি মায়েরা করে থাকে।
“যা খেলতে, মানা করছিলাম না? গেলি কেন? যা আরো খেলতে। বলেই মার শুরু”
এমন হয়েই থাকে.. যাকগে, কাজের কথায় আসি….
সেদিন মামুনের মা মামুনকে মেরেছিলো….
প্রিয়ার বয়স তখন ১২-১৩ বছরের মতো হবে।
হাতে লাঠি নিয়ে মামুনের মাকে মারতে গিয়েছিলো। বাড়ির সবাই খুব অবাক হয়ে সেদিন প্রিয়ার দিকে চেয়ে ছিলো।
একটা মানুষ কতটা রাগ হলে এমন করতে পারে…।
প্রিয়া মামুনের মায়ের ওপর রাগ করে প্রায় ৬-৭ মাস কথা পর্যন্ত বলে নি।
আজ যখন মামুনের বাবা মামুনকে চড় দিয়েছিলো, তখন প্রিয়াকে দেখেই উনি ঘাবড়ে যান।
কারন প্রিয়া যদি এর জন্য উল্টাপাল্টা কিছু বলে দেয়, তাহলে মানইজ্জত থাকবে না।
এবাড়ির কেউ প্রিয়ার সামনে মামুনকে মারা তো দুরের কথা, বকতে পর্যন্ত পারে না।
মামুন যথেষ্ট স্মার্ট ও বুদ্ধিমান ছেলে। কেবল বাড়ির মানুষদের সম্মান করে একটু সহজ সরল ভাবে চলার চেষ্টা করে।
এজন্য প্রিয়া মামুনকে বোকা ভাবে।
–কিরে প্রিয়া কই যাস?(প্রিয়ার মা)
–মামুনকে খাবার দিতে।(প্রিয়া)
–কেনো? কি হয়েছে?
–আজ জেঠু ওকে মেরেছে। তুমিতো জানোই ওর কি রাগ, আমি সিওর ও এখনো কিছু খায়নি।
–ওর ঘরে বাবা মা আছে, ওরা দেখবে। এতো রাতে তোকে ও ঘরে যেতে হবে না।
–কেনো? গেলে কি হয়েছে?
–এত বুঝতে হবে না, যা ঘরে যা।
–একদম না…। আগে ওকে খাবার দিয়ে আসি, এর পর।
–প্রিয়া…. বেয়াদবি করিস না.। ঘরে যা….
কে শোনে কার কথা, প্রিয়া সোজা মামুনের ঘরে চলে আসে…।
–হাতে কিরে প্রিয়া?(মামুনের মা)
–মামুন খাইছে?(প্রিয়া)
–না, রাগ করে দরজা লাগিয়ে রাখছে।
–আমি জানিতো এমন হবে। তাই খাবার নিয়ে আসছি।
–এদিকে আয় মা….
–হুম বলো.।।
–তুই ওর থেকে কিছুদিন দুরে থাক। কয়দিন পর তোর বিয়ে হয়ে গেলে তখন কি করবি? মানুষ অভ্যাসের দাস…
–কি বলছো জেঠিমা? দুরে থাকবো? তোমরা তো ওর খেয়াল রাখতে পারোই না, আবার আমাকে নিষেধ করছো।
–তোর বিয়ে হয়ে গেলে তখন কি করবি?
–আমিতো বিয়েই করবো না।
–কেনো?
–আমার ইচ্ছা তাই।
–তুই বার বার এই ঘরে আসিস, তোর মা বকে না?
–একটু আগেও তো এখানে আসতে নিষেধ করছে।
–তাহলে আসলি কেনো?
–তোমার ছেলের জন্য। আমি জানি ও খায় নি। শুধু শুধু আমার জন্য ও মার খেয়েছে। কারনটা যদি আমি না হতাম তাহলে জেঠুর আজ খবর আছিলো…
–জেঠুকে কেউ এভাবে বলে?
–ওকে মারলে এভাবেই বলবো।
–ও কি এখনো ছোট যে তুই ওকে নিয়ে এতো ভাবিস?
–আমার তো তাই মনে হয়।
–পাগলি একটা… যা খাবার দিয়ে আয়।
–আচ্ছা।
.
কয়েকবার দরজা ধাক্কানোর পর মামুন দরজা খোলে….
–কেনো এসেছিস?(মামুন)
–তুই খাচ্ছিস না কেনো?(প্রিয়া)
–আমার খিদে নেই।
–গরুর মাংস ভুনা করে নিয়ে এসেছি। খাবি না?
—
–খাবি? নাকি নিয়ে যাবো?
–আমার কিন্তু খুদা নেই। খাওয়ার ইচ্ছাও নেই। কিন্তু তুই এতো করে জোর করছিস, না খেলে তো রাগ করবি..। দে….।
–না না, আমি রাগ করবো না। তোর ইচ্ছা না করলে খাওয়া লাগবে না। আমি নিয়ে যাচ্ছি।
—
–ঘুমা, আমি গেলাম।
মামুন টান দিয়ে হাতের বাটি টা রেখে দিলো।
–তুই যা, বাটি থাক।
–খাবি যখন এতো ন্যাকামো করিস কেনো?
–ঠিক আছে, এই নে খাবো না।
–আবার রাগ দেখাচ্ছিস? একটা দিবো কিন্তু।
–দে…
প্রিয়া আলতো করে মামুনের কপালে একটা পাপ্পি দিয়ে দেয়।
–এটা কি হলো?
–কিছু না, খেয়ে নে। আমি গেলাম।
বলেই প্রিয়া দ্রুত মামুনের রুম ত্যাগ করে।
এমনটা রোজ হয়… প্রথমে ব্যাপারটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতো না।
কিন্তু এখন সবাই মাথা ঘামায়…।
কারন ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে।
বিপরীত আকর্ষণ থাকতেই পারে…
দুজনকে দুজনের থেকে যতটা দুরে রাখা যায় তাদের জন্য ততটাই মঙ্গল।
মামুনকে যতবারই দুরে পাঠানোর চিন্তা ভাবনা করা হতো ততবারই প্রিয়া বাড়ির সবার সাথে ভয়ংকর ব্যবহার করতো…।
তাই মামুনকে কেউ আর দুরে কোথাও পাঠায়নি…।
প্রিয়ার এসব পাগলামি মামুন খুব উপভোগ করতো।
এর মধ্যেই মামুনের বাবা মামুনকে একটা চাকরিতে জয়েন করিয়ে দেয়।
যার জন্য প্রিয়া আর মামুনের মধ্যে কিছুটা দুরত্ব তৈরি হয়।
রাতে যখন মামুন ঘরে ফিরতো দেখতো প্রিয়া রুমে বসে আছে…।
দুজন অনেক্ষন গল্প করতো…।
কেউ এসে বিরক্ত করতে পারতো না…। কারন সবাই জানে প্রিয়া কেমন।
এভাবেই দিনগুলো চলতে থাকে।
হঠ্যাৎ একদিন কোনো নোটিশ ছাড়াই মামুনকে অন্য জায়গায় বদলি করা হয়।
প্রিয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে।
প্রিয়া সরাসরি মামুনকে এসে বলে, যেনো চাকরিটা ছেড়ে দেয়।
কিন্তু মামুন বাবার অমতে যেতে পারেনি।
স্বইচ্ছায় চলে গেলো বদলি স্থানে…। খালার বাসা থেকে কর্মস্থল কাছাকাছি হওয়ায় মামুন সরাসরি খালার বাসায় ওঠে।
প্রিয়া যাওয়ার আগে একটা শর্ত দিয়েছিলো।
প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে আসতে হবে। তা না হলে প্রিয়া নিজেই চলে আসবে।
সবচেয়ে বড় সমস্যাটা হলো মামুনের খালার বাড়িতে ওঠা।
মামুনের একটা খালাতো বোন আছে. নাম অনি।।। যাকে প্রিয়া দুচোখে দেখতে পারে না।
অনি এ বাড়িতে বেড়াতে আসলে সারাক্ষণ মামুনের সাথে লেপ্টে থাকতো।
যা প্রিয়ার একদম পছন্দ ছিলো না।
কিন্তু মামুন এখন গিয়ে সেই বাড়িতেই উঠেছে…. রাগে প্রিয়ার শরীর গিজগিজ করছে….
.
রাতে প্রিয়া মামুনকে ফোন দেয়…।
–পৌছাতে কোনো সমস্যা হয়নিতো?(প্রিয়া)
–না না, কোনো সমস্যা হয়নি।(মামুন)
–কি কি বলছি সব মনে আছে তো?
–হ্যা হ্যা বাবা, সব মনে আছে। আর কয়বার বলবি?
–কাজ করার জন্য গিয়েছিস… যেনো কাজেই মনোযোগ থাকে। ওই মেয়েটার থেকে সবসময় দুরে দুরে থাকবি।
–ও আমার খালাতো বোন… কথা বললে সমস্যা কি?
–এখন এসে তোকে জুতোপেটা করবো… যেটা বলছি সেটা শোন।
–ঠিক আছে বলবো না..।
–কাজে যাওয়ার আগে আর কাজ থেকে এসে প্রথম আমাকে ফোন দিবি।
–আচ্ছা.।।.
–এবার খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
–আচ্ছা..। তুইও খেয়ে নে।
–হুম…
—
–মামুন
–বল
–আমাকে কি মিস করছিস?
–সকালেই তো তোকে দেখে আসলাম।
–কেনো জানি তোকে খুব মিস করছিরে…।
–তুই একটা পাগল, ঘুমিয়ে যা।
–কেনো আমাকে রেখে দুরে গেলি?
–১সপ্তাহ পর আসবো তো… কেনো এমন করছিস?
–জানি না…. আমার কান্না চলে আসছে।
–প্রিয়া… কাঁদবি না, কাঁদলে আর ফোন দেবো না।
–আমি আর কাঁদবো না।
–লক্ষি মেয়ের মতো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
–তুই কেনো আমাকে মিস করছিস না?
–আবার শুরু করলি?
–আমাকে মিস কর না.. মিস করলে কি হবে তোর? আমিও তো মিস করছি তোকে।
–আচ্ছা বাবা, তোকেও আমি খুব মিস করছি, হয়েছে?
–মন থেকে তো বলিস নি, তবুও হয়েছে।
–এবার ঘুমা, আন্টি খেতে ডাকছে।
–আচ্ছা যা।
–ভালো থাকিস।
–তুইও, আমিতো নেই, তাই এবার নিজের খেয়াল রাখাটা শেখ
–আচ্ছা শিখে নিবো, বাই।
.
প্রিয়া মন মরা হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
–প্রিয়া, খেতে আয়…(প্রিয়ার মা)
–খাবো না।
–কেনো?
–আমি জেঠিমার কাছে যাচ্ছি….
বলেই প্রিয়া মামুনের মায়ের কাছে চলে আসে।
–কিরে প্রিয়া, ঘুমাসনি?
–তোমার ছেলে কি আমাকে ঘুমাতে দিছে?
–কি করেছে ও?
–কেনো ওকে দুরে পাঠিয়ে দিলে? তুমি যানো না ওর সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারি না।
–পাগলি মেয়ে একটা, বস এখানে….
–আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
–কেনো?
–মামুনকে ফিরিয়ে আনো।
–দেখ মা, ওর সামনে পুরো ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। তুইতো জানিস ও কেমন মানুষ, আমাদের থেকে দুরে থেকে নিজেকে বুঝতে শিখুক। বাহিরে দুনিয়াটা কেমন তা জানুক..। সারাজীবন কি বাবা মায়ের আচলের নিচে থাকবে?
–তাই বলে দুরে কেনো? বাবাও তো বাড়িতে থেকে কাজ করে, জেঠুও…। তাহলে ও কেনো দুরে?
–তুই কি চাস না ও নিজেই নিজের ভবিষ্যৎটা গড়ে তুলুক?
–হ্যা চাই তো।
–তাহলে ওকে সেটা করতে দে।
–আচ্ছা, আর তুমি মাকে বলে দিবা আমাকে যেনো আর বিয়ের কথা না বলে। শুনলাম ২ দিন পর নাকি কে যেনো আমাকে দেখতে আসবে। যদি মানসম্মান ঠিক রাখতে চায় তাহলে এক্ষুনি মা আর বাবাকে বলে দাও।
–দেখ প্রিয়া, তুই একটা মেয়ে, মেয়েরা খুবই কোমল মনের হয়। আর মেয়েদের এতো রাগ দেখানোটা ঠিক না। তোর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।
–তোমাকে বলার ছিলো বলে দিয়েছি…। আমি মনটাও কোমল, এবং তা শুধু মামুনের জন্য।
বলেই প্রিয়া হনহন করে নিজের রুমে চলে যায়।
মামুনের মা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।
কারন সবাই জানে প্রিয়া মামুনকে নিয়ে কতোটা অধিকারসূচক।
সে মামুনের জন্য যা তা করে ফেলতে পারে।
রাতে মামুনের মা বাবা দুজন ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করে…
–শুনছেন?
–হ্যা
–প্রিয়ার আচার-আচরন তো আমার কাছে ভালো মনে হচ্ছে না।
–কেনো? কি করেছে ও?
–আজ আমাকে বললো যদি কেউ ওর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে তাহলে নাকি ও মান সম্মানে আঘাত করবে।
–এমন কেনো বললো?
–কেনো আবার? আপনার ছেলের জন্য।
–মেয়েটা ভীষণ রাগি, এই মেয়েটার ভবিষ্যৎ কি হবে?
–যা হওয়ার হবে? মামুনকে ওর থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেই হলো।
–আচ্ছা, ওদের বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়?
–আপনি কি পাগল হলেন? ওর সাথে আমার ছেলের বিয়ে আমি কিছুতেই দেবো না।
–আচ্ছা, তোমার কি মনে হয়? প্রিয়া মামুনের বিয়ে অন্য কোথাও হতে দিবে? ছোট বেলা থেকে ওদের দুজনকে দেখছি, সবসময় প্রিয়া মামুনকে প্রোটেক্ট করে রাখতো। সবসময় ওর সাথে থাকতো। তুমি মা হয়েও ছেলের শাশন করতে পারতে না প্রিয়ার জন্য। এই মেয়ে কি এত সহজে তোমার ছেলেকে ছেড়ে দিবে?
–এত কিছু বুঝি না, আমার ছেলের বিয়ে আমি প্রিয়ার সাথে দেবো না।
–দেখা যায়, এ নিয়ে আর ভেবো না…।
.
আজ প্রায় ২দিন যাবত প্রিয়া খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
কাউকে বলছে না না খাওয়ার কারনটা কি। ডাক্তার এসেও বললো শারীরিক কেনো সমস্যা নেই।
মামুনের মা ঠিকই আন্দাজ করে নিয়েছে কেনো খাচ্ছে না।
৩দিনের দিন প্রিয়া ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার এসে স্যালাইন দিয়ে যায়।
রাতে মামুন ফোন দিলে প্রিয়ার মা ফোন তোলে।
–হ্যালো প্রিয়া…
–কেমন আছিস মামুন?
–আমি ভালো আছি চাচি, তোমরা কেমন আছো?
–আমরাতো ভালোই আছি, কিন্তু প্রিয়া অসুস্থ।
–প্রিয়া অসুস্থ? কি হয়েছে ওর?
–তুই যাওয়ার পর থেকে ও খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এখন বিছানায় পড়ে আছে, ডাক্তার এসে স্যালাইন দিয়ে গেছে।
–কি বলছো এসব? ও তো আমাকে কিছুই বললো না, আমি এক্ষুনি আসছি।
–কি বলছিস?
–আমি আসতেছি।
বলেই মামুন ফোনটা কেটে দেয়।প্রায় ৩ঘন্টা পর মামুন বাড়ি এসে পৌছায়।
এসেই সোজা প্রিয়ার কাছে।
–প্রিয়া……
–(প্রিয়া চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে)
–প্রিয়া……
–(চোখ মেলে দেখে মামুন সামনে বসে আছে, এক লাফে উঠে মামুনকে জড়িয়ে ধরে)
.
.
.
চলবে………
অধিকার
লেখক A_Al_Mamun
পর্ব :- ২
.
-প্রিয়া……
–(প্রিয়া চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে)
–প্রিয়া……
–(চোখ মেলে দেখে মামুন সামনে বসে আছে, এক লাফে উঠে মামুনকে জড়িয়ে ধরে)
–কি করছিস? ছাড়… এক্ষুনি চাচি চলে আসবে।
–কেনো তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেলি? আমি তোকে না দেখে একদম থাকতে পারছি না।
–কেনো পারছিস না?
–তুই জানিস না?
–না জানি না।
–তুই ছাড়া যে আমি একদম শুন্য।
–তুই খাওয়া দাওয়া করছিস না কেনো?
–আমার কিছুই করতে ইচ্ছে করছে না।
–আমি গেলাম মাত্র ৩ দিন হলো, এতেই এই অবস্থা?
–কেনো গেলি? তোকে না দেখে আমার কখনো একটা দিন কাটেনি, আর আজ ৩ দিন পর তোকে দেখছি।
–তোর বিয়ে হয়ে গেলে তো শশুড় বাড়ি থাকবি, তখন কি হবে?
–আমি কোথায়ও যাবো না।
–খিদে পেয়েছে?
–হুম খুব।
–দাড়া, আমি নিয়ে আসছি।
.
মামুন একটা প্লেটে করে প্রিয়ার জন্য খাবার নিয়ে আসে।
মামুনের মা এই ব্যাপারে বেশ অবাক হয়।
বলা নেই কওয়া নেই কাউকে না জানিয়ে প্রিয়ার জন্য এভাবে চলে এলো?
কিন্তু এই ব্যাপারে তিনি ছেলেকে কিছুই বললেন না।
প্রিয়াকে খাবার খাইয়ে রাতে মামুন আবার নিজের গন্তব্যে রওয়ানা দেয়।
যাওয়ার সময় প্রিয়া মামুনকে অনেক্ষন জড়িয়ে রেখেছিলো।
মামুন ইদানিং বুঝতে পারছে প্রিয়ার কেয়ারিংটা অন্য লেভেলের।
প্রিয়ার প্রতিটা ছোয়ায়, প্রতিটা কথায় অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে।
যা প্রিয়ার আচরনে আগে কখনো এমন কিছু মামুন ফলো করেনি।
এভাবে প্রায় ১মাস কেটে যায়। সপ্তাহে ১দিন মামুন বাড়ি এসে থাকতো।
এবং প্রতিদিন প্রিয়ার সাথে ফোনে কথা হতো।
এমনই এক রাতে ফোনে দুজনের কথা চলছিলো…..
–তোর খালাতো বোন কাছে আসার চেষ্টা করে নাতো?
–আমি আসতে দিলে তো আসবে….
–একদম আসতে দিবি না।
–কিন্তু আন্টি বললো কাল অনিকে নিয়ে মার্কেটে যেতে। ওর নাকি কাল বার্থডে, তাই কিছু কেনা কাটা করবে..।
–তো তোকে যেতে হবে কেনো?
–আন্টি ব্যস্ত থাকবে, তাই আমাকে যেতে বললো।
–যাবি না।
–আন্টি খারাপ ভাব্বে।
–যদি তুই যাস তাহলে আমি আবার খাওয়া বন্ধ করে দিবো।
–আচ্ছা আমি কারো সাথে মিশি বা না মিশি, তোর কি সমস্যা?
—
–কি হলো? উত্তর দে…।
–তুই এটা বলতে পারলি?
–কেনো বলবো না? ও আমার খালাতো বোন, ওর সাথে কথা বললে তোর কি সমস্যা হবে?
—
–উত্তর দে
–বল, তোর যার সাথে ইচ্ছা বল। আমি আর কখনো কিচ্ছু বলবো না। তুই খুশি থাক…।
প্রিয়া ফোনটা কেটে দিয়ে ফোন অফ করে ফেলে।
মামুন ভালো করেই বুঝতে পারে প্রিয়া রাগ করেছে।
মামুনের কেমন যেন সন্দেহ হতে থাকে।
প্রিয়া ভালোবেসে ফেলেনিতো? ওর আচার-আচরন তো তেমনই মনে হচ্ছে।
মামুন চাচির ফোনে ফোন করে…
–চাচি প্রিয়া কোথায়?
–মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে, দরজা লাগানো।
–ঘুমায়নি, ওকে ফোনটা দাও।
–ওর ফোনে কল দে।
–ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
–আচ্ছা দাড়া, আমি দিচ্ছি…।
একটু পর প্রিয়াকে প্রিয়ার মা ফোন ধরিয়ে দেয়।
–তুই ফোন বন্ধ করেছিস কেনো?
–আমার ফোন আমি বন্ধ করেছি, তোর সমস্যা কি?
–রাগ করেছিস?
–না
–তুই যদি আমার সাথে এমন করিস তাহলে এবার আমি খাওয়া বন্ধ করে দিবো।
–তোর খালাতো বোন আছে না, ও তোকে খাইয়ে দিবো।
–আমাকে শুধু এটা বল, ওর সাথে কথা বললে কি সমস্যা?
–ওকে আমার একদম সহ্য হয় না।
–কেনো?
–জানি না, ও কেনো তোর সাথে এতো মিশে?
–মিশলে তোর কষ্ট হয়?
–হ্যা
–কেনো হয়?
–জানি না।
–আচ্ছা, ওর সাথে আর মিশবো না।
–সত্যিতো?
–হ্যা সত্যি…। এবার খুশি?
–হ্যা
–আচ্ছা প্রিয়া, আমি কি প্রেম করতে পারবো না?
–কার সাথে করবি?
–কোনো মেয়ের সাথে তো করতে দিবি না, তোর সাথেই করি।
–কি বলছিস?
–আচ্ছা বাদ দে, আমি অন্য কাউকে খুজে নিবো।
–তোকে যদি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখি তাহলে ওই মেয়েকে নয়, তোকেই আমি খুন করবো।
–পারবি?
–হ্যা পারবো… তোকে মেরে আমিও মরে যাবো।
–তুই মরবি কেনো?
–তোকে ছাড়া আমি কি নিয়ে বাঁচবো?
–সারাজীবন কি আমাকে তোর সাথেই থাকতে হবে?
–হ্যা।
–এভাবেই? আমার বিয়ে হয়ে গেলেও?
–আমাকে বিয়ে করবি?
–কি বলছিস? আমি তোর জেঠাতো ভাই।
–হুম জানি, তোকে ছাড়া আমি একদম বাঁচতে পারবো না। সারাজীবন তোকে আমার পাশে চাই।
–বাবা মা শুনলে কি হবে জানিস?
–আমি কাউকে পরোয়া করি না। সেটা তুই নিজেও জানিস…। আর তোকে কেউ আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না সেটাও সবাই জানে।
–তুই আমায় ভালোবাসিস?
–জানি না।
–তুই আগের থেকে অনেকটা বদলে গেছিস…।
–কেমন?
–তোর আচার-আচরনে বুঝতে পারি তুই আমাকে কতোটা ভালোবাসিস।
–সত্যি?
–হ্যা
–আমি ফোন কেটে দিচ্ছি।
–কেনো?
–আমার লজ্জা লাগছে…।
–হঠ্যাৎ?
–একটু একা একা লজ্জা পেতে দে না
–তুই অনেকটাই পাগলরে প্রিয়া…।
–হুম তোর জন্য।।
–পাগলি একটা….
–তোর
–যা ঘুমা
–তুইও, আর শোন, কাল একদম ওই মেয়ের সাথে কোথাও যাবি না।
–আচ্ছা।
.
প্রিয়া আজ বেশ খুশি, কারনটা সে নিজেই জানে না।
মামুন আজ ১ম নিজের মুখে ভালোবাসার কথা বলেছে।
প্রিয়া দৌড়ে জেঠিমার কাছে চলে যায়…।
–কিরে? ঘুমাসনি?
–তোমার ছেলে আমাকে ঘুমাতে দিলো?
–কি করেছে ও?
–আমাকে ভালোবাসার কথা বলেছে। এখন আমার লজ্জা পাচ্ছে।
–তুই কি সত্যিই পাগলরে প্রিয়া?
–জেঠিমা, তুমি জানো না, মামুন আমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে।
–আমাকে কেনো বলছিস এসব?
–তোমার ছেলেকে আমায় দিয়ে দাও না। আমি ওকে আগলে রাখবো।
–কি বলছিস এসব তুই? ও তোর জেঠাতো ভাই….।
–তো কি হয়েছে?
–তোর বাবা শুনলে কি হবে জানিস?
–জেঠিমা, আমাকে কি তোমার পছন্দ না?
–হ্যা, তোকে আমি খুবই পছন্দ করি। তাই বলে এসব?
–তুমিতো জানোই, আমি এমনই।
–তুই এখন ঘরে যা, এসব কেউ শুনলে কি বলবে? কাউকে এসব বলবি না। যা ঘুমা…
–আমি জানি, তুমি আমায় মোটেও পছন্দ করো না। ছোট বেলা থেকেই তুমি আমাকে জানো, এখন এটাও জেনে নাও, মৃত্যু ছাড়া মামুনকে কখনো কেউ আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না।
–প্রিয়া, তুই পুরো পাগল হয়ে গেছিস, যা ঘরে যা।
–মনে রেখো কথাটা…
বলেই প্রিয়া নিজের রুমে চলে আসে।
প্রিয়া একদমই স্পষ্টভাষী, কাউকে পরোয়া করে না। বিশেষ করে মামুনের বেলায়…।
ছোট বেলা থেকে কোনো মেয়েকে মামুনের আশে পাশে ভিড়তে দেয় নি।
কেবল অনি মামুনের খালাতো বোন হওয়ায় অনিকে কিছুই করতে পারছে না।
তবুই প্রিয়া যতটুকু পারে মামুনকে আগলে রাখার চেষ্টা করে।
মামুনের মা প্রিয়ার কথাগুলো খুবই সিরিয়াসলি নেয়।
কারন উনি ভালো করেই জানেন প্রিয়া কেমন…
মামুনের কাজের চাপ বেশি থাকায় এই সপ্তাহ বাড়িতে আসতে পারেনি।
প্রিয়া বেশ মন খারাপ করে.।।
তবুও মামুন প্রিয়াকে বুঝিয়ে সুজিয়ে রাগ ভাঙায়।
মামুন বাড়িতে না আসায় মামুনের বাবা মামুনকে দেখতে তার খালার বাসায় যায়।
রাতে প্রিয়ার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে মামুন বারান্দার কাছে যায়।
হঠ্যাৎ তার বাবা আর আন্টি এবং আঙ্কেলের কিছু কথা মামুনের কানে আসে।
মামুন ফোনটা রেখে দিয়ে দেয়ালে কান পাতে…
কারন কথা মামুনের ব্যাপারেই চলছিলো।
–আপা আমাকে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলো। জানি না আপনার মতামত আছে কিনা, তাই আপনার সাথে ব্যাপারটা চুড়ান্ত করতে চাই।(আঙ্কেল)
–হ্যা বলুন না।(বাবা)
–আপা বলেছিলো উনি মামুনকে বিয়ে করাতে চান।
–এত তাড়াতাড়ি? ওর কি বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে?
–তা নয়, শুনলাম বাড়িতে নাকি সমস্যা হচ্ছে?
–কিসের সমস্যা? আমি তো জানি না।
–আপনার ভাইয়ের মেয়ে নাকি সমস্যা করছে…।
–সেটা আপনার কানে কেনো আসলো? বাড়ির বিষয় বাড়িতেই আছে।
মামুন বেশ অবাক হয়, প্রিয়া বাড়িতে কি সমস্যা করছে? যা এ বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছে, অথচ এখনো আমিই জানি না।
–না ভাই সাহেব, ওরকম কিছু বলছি না। আসলে আপা আমাকে মামুনের জন্য আমার মেয়ে অনিকে চেয়েছিলো।
–আমাকে তো কিছুই বলেনি। আমাকে না বলেই আমার ছেলেকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে?
–না ভাই, আপনি ভুল বুঝছেন, আপা আমাকে বললো আপনি যদি রাজি হন তবেই আপা রাজি হবে, উনি শুধু এটাই বলেছেন যে মামুনের জন্য অনিকে ওনার পছন্দ।
–আমি বাড়ি গিয়ে মামুনের মায়ের সাথে আলোচনা করে আপনাদের রেজাল্টটা জানিয়ে দিবো।
–আপনি কি রাজি না?
–আপনি বুঝতে পারছেন না বিষয়টা, এই একটা ডিসিশন ৩টা পরিবার তছনছ করে দিবে।
–মানে বুঝলাম না।
–আমি মনে মনে আমার ভাইয়ের মেয়ে প্রিয়াকে মামুনের জন্য ঠিক করে রেখেছি।
–ওও, আগে বলবেন তো অনিকে আপনার ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ না।
–তা নয় ভাই, প্রিয়াকে আমার ঘরে বউ করে তোলার কারন আছে। মেয়েটা অসম্ভব রকমের ভালো একটা মেয়ে। কোনো দিক দিয়ে প্রিয়ার কমতি নেই, তবে ওর একটাই দুর্বলতা। সেটা হলো মামুন। মামুনের কিছু হলে প্রিয়া আর নিজের মধ্যে থাকে না। তখন আমি নিজেও প্রিয়াকে ভয় পাই। প্রিয়া যদি এটা জানতে পারে যে মামুনকে অনির সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবে ও অনির অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলবে। এজন্য আমি চাইনা এই সম্পর্কটা আর আগে বাড়ুক।
–ঠিক আছে ভাই সাহেব, আপনার ছেলের জন্য যেটা ভালো হয় সেটাই করুন।
–ধন্যবাদ ভাই, আমাকে বুঝতে পারার জন্য।
.
মামুন বেশ মনোযোগ সহকারে কথা গুলো শুনলো।
এবং এটা বুঝতে পারলো যে প্রিয়া মামুনকে কতোটা ভালোবাসে, আর বিষয়টা বাবাও যানে। তাহলে তো প্রিয়া আর মামুনের মাঝে আর কোনো বাধাই নাই।
মামুন বেশ খুশি হয়।
–প্রিয়া, তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
–আগে বল ফোন কাটলি কেনো?
–বলছি তো, আগে আমি কি বলি শোন।
–হ্যা বল।
–তুই কি সারাজীবনের জন্য আমার হবি?
–হ্যা, তুই তোর করে নিবি?
–আমি সারাজীবনের জন্য তোকে আমার করে নিতে চাই। বিয়ে করবি আমাকে?
–হুম,
–বাবা আজ আঙ্কেলকে তোর আর আমার কথা বলছিলো, আমি শুনেছি।
–কি বলছিস? সত্যি?
–হুম…
–কিন্তু জেঠিমা কি মানবে? আমি জানি জেঠিমা আমাকে পছন্দ করে না।
–মানবে, বাবা ঠিক মানিয়ে নিবে… তুই কোনো চিন্তা করিস না
–তুই প্লিজ তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়।
–কেনো?
–তোর থেকে আর দুরে থাকতে পারছি না।
–ওই বেয়াদব, আমি তোর জেঠাতো ভাই, কি বলিস এসব?
–তুই আগে বাড়ি আয়,এরপর দেখাচ্ছি।
–কি দেখাবি?
–যা দেখতে চাইবি…. প্লিজ তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়।
–আচ্ছা, পরের সপ্তাহই আসবো।
–আমার জন্য কি আনবি?
–বলবো না, সারপ্রাইজ…..
–আচ্ছা, প্লিজ তাড়াতাড়ি আসিস…।
–ওকে…. যা ঘুমা।
–তুইও ঘুমা।
.
প্রিয়া আজ খুশিতে মরে যাওয়ার মতো অবস্থা।
আবারো দৌড়ে জেঠিমার কাছে হাজির।
–জেঠিমা জেঠিমা……
–কিরে প্রিয়া, হাপাচ্ছিস কেনো? কি হয়েছে?
–তুমি দাদি হতে যাচ্ছো।
–কিহ???? (ঘাবড়ে গিয়ে জেঠিমা ২কদম পিছিয়ে পড়ে।)
–আরে ভয় পেও না, আমিতো মজা করছি….।(বলেই প্রিয়া হাসতে থাকে)
–তবেরে….
দুজনই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে…।
–আমিতো ভয় পেয়ে গেছিলাম, শয়তান মাইয়া কোনানকার…।
–ভয় কেনো পাইছো? তুমি দাদি হতে চাও না?
–কেনো চাইবো না? কিন্তু তুই ভাবে বলছিস ভয় না পেয়ে উপায় আছে?
–জেঠিমা, আমি তোমারে কতোটা ভালোবাসি, আর তুমি? আমাকে একটুও পছন্দ করোনা।
–পছন্দ করি না কে বললো?
–তাহলে আমাকে তোমার ঘরের বউ করে নাও না।
–তুই আবারও উল্টাপাল্টা বকতেছিস।
–না জেঠিমা, আমি ঠিকই বলছি। আমি তোমাদের সাথেই থাকতে চাই, রাখবে না?
–তুই জানিস তুই কি বলছিস?
–হ্যা, আমি যা বলছি ভেবে চিন্তেই বলছি।
–আচ্ছা আমি দেখি কি করা যায়, তুই গিয়ে ঘুমা।
–আচ্ছা….
প্রিয়া আজ বেশ খুশি… মনের মানুষটা রাজি, জেঠু রাজি, জেঠিমাও আশ্বাস দিয়েছে।
যেনো কোনো বাঁধাই আর গ্রাস করতে পারবে না।
সব কিছুর শেষে হবে শুধু ভালোবাসা ভালোবাসা আর ভালোবাসা।
প্রিয়া আর মামুন ফোনেই প্রেম চালিয়ে যায়।
আর ২ দিন পরই মামুন বাড়ি আসবে।
মামুন প্রতি সপ্তাহে বাড়ি আসে, কিন্তু কোনো বার এমন অনুভূতি প্রিয়ার হয়নি।
এবার যেনো নতুন কিছু হতে চলেছে।
প্রিয়া অনেক্ষন যাবত মামুনকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে,
কিন্তু মামুন ফোন তুলছে না।
প্রিয়ার খুব রাগ হয়, ইচ্ছে করছে ওই বাড়িতে গিয়ে চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে।
প্রায় অনেক রাত হয়ে গেছে। কিন্তু মামুন ফোন তুলছে না।
প্রিয়া কল দিতে দিতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় নিজেই বুঝতে পারে নি।
হঠ্যাৎ গভীর রাতে ফোনের শব্দে প্রিয়ার ঘুম ভাঙে।
মামুন ফোন করেছে।
প্রিয়া মনে মনে ঠিক করে নেয় অনেক বকা দিবে…
–ঘুমিয়ে গেছিস?(মামুন)
–সমস্যা কি তোর? কখন থেকে কল দিচ্ছি। ফোন তুলছিস না কেনো? কিসের এতো ব্যস্ততা? সেটা কি আমার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ?
–অনেক রাত হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়।
বলেই মামুন কল কেটে দেয়। প্রিয়া বেশ অবাক হয়, কি হয়েছে ওর? কেনো কল কেটে দিলো?
নেটওয়ার্ক সমস্যা ভেবে প্রিয়া আবার কল দেয়।
কিন্তু মামুন ফোন তুলছে না।
এভাবে কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরও মামুনের কোনো খবর নেই।
রাগ করে প্রিয়া ঘুমিয়ে পড়ে।
.
পরদিন সারাদিন কিছুক্ষণ পর পর প্রিয়া মামুনকে কল দিতে থাকে।
কিন্তু মামুনের ফোন বন্ধ।
প্রিয়া বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। মামুনের কিছু হয়ে যায়নি তো?
ও কি অসুস্থ হয়ে গেছে?
কোনো উপায় না পেয়ে প্রিয়া সোজা জেঠিমার কাছে চলে যায়।
–জেঠিমা…..
–হুম
–মামুনের ফোন বন্ধ কেনো?
–আমি কি করে বলবো?
–একবার তোমার ফোন দিয়ে কল দাও না…।
–কেনো? কি দরকার ওকে?
–ওর সাথে কথা বলবো।
–এতো কিসের কথা?
–একটা কল দাও না প্লিজ।
–কাল ও বাড়িতে আসবে তখন কথা বলিস।
–এখন একটা ফোন দাও না, দিলে কি হয়?
–জালাচ্ছিস কেনো? যা ঘরে যা।
প্রিয়া কোনো কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে আসে।
কারন বোঝাই যাচ্ছে, জেঠিমার ব্যবহার কেমন যেনো বদলে গেছে।
প্রিয়া মনে মনে ঠিক করে নেয় কাল মামুন আসলে সবার সামনে নিজের মনের কথা বলে দিবে।
জেঠু আর জেঠিমার কাছ থেকে মামুনকে সারাজীবনের জন্য চেয়ে নিবে।
আর শুধু একটা দিন, এরপর আর কোনো সংগ্রাম করতে হবে না।
মামুনের জন্য আর কারো সাথে লড়তে হবে না।
কারন এতদিন হারানোর ভয় থাকলেও কাল থেকে আর সেই ভয়টা থাকবে না।
পুরো দিন মামুনের সাথে যোগাযোগ করেও কেনো লাভ হয়নি।
গভীর রাতে মামুনের ফোনে প্রিয়ার ঘুম ভাঙে।
–কি ভাবিস কি নিজেকে? কেনো কষ্ট দিচ্ছিস? সারাদিনে একবারও ফোন দিস নি। ফোন বন্ধ কেনো থাকে? তোর জন্য কতবার চোখ দিয়ে পানি ফেলতে হয়েছে আমাকে সেটার কোনো খবর রাখিস?
–খেয়েছিস?
–তোকে আমি কি বলছি আর তুই কি বলছিস?
–আমাকে ক্ষমা করে দে প্রিয়া….
–মামুন, কি হয়েছে তোর? এমন করে বলছিস কেনো?
–আমি পারিনি তোকে দেওয়া কথা রাখতে…. পারিনি..
প্রিয়া ফোনের ওপাশ থেকে মামুনের কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়…
–কি হয়েছে তোর? বল না…. কেনো কাঁদছিস? আমারও কান্না চলে আসছে?
–প্রিয়া,,, তোকে বড্ড বেশি ভালোবাসিরে…. আমি পারবোনা তোকে ছেড়ে থাকতে। তোর মুখটা আজ বার বার চোখের সামনে ভাসছে। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আর কখনো এই মুখ তোকে দেখাবো না
–এই মামুন, কি হয়েছে তোর? কেনো এসব বলছিস? তুই বাড়ি আয় প্লিজ
–ভালো থাকিস, বাবা মায়ের খেয়াল রাখিস। পারলে আমাকে ভুলে যাস।
বলেই মামুন ফোনটা কেটে দেয়।
প্রিয়ার মাথা যেনো ঘুরছে, কি হচ্ছে এসব? মামুন কি কোনো ভুল পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে? না কিছুতেই এটা হতে দেওয়া যাবে না।
প্রিয়া দৌড়ে জেঠিমার কাছে যায়, পুরো বাড়ির একটা মানুষও জেগে নেই, সবাই ঘুমাচ্ছে।
জেঠিমার দরজায় টোকা দিলে জেঠিমা বেরিয়ে আসে।
–প্রিয়া তুই? এতো রাতে? হাপাচ্ছিস কেনো?
–মামুনের অনেক বড় বিপদ, ওকে বাঁচাতে হবে।
–বাঁচাতে হবে? কি হয়েছে?
–আমাকে ফোন করেছিলো, বললো আর কখনো কাউকে এই মুখ দেখাবে না, যেনো ওকে ভুলে যাই।
–কি করেছে মামুন?
–আমি জানি না, ও বাড়িতে চলো।
–এতরাতে কিভাবে? এখন গাড়ি কোথায় পাবো? দাড়া আমি ফোন দিয়ে দেখি…
মামুনের মা ওই বাড়িতে ফোন দেয়।
–বোন দেখতো আমার ছেলেটা কোথায়।
–কেনো আপু? কি হয়েছে?
–আগে ওকে দেখ।
–আচ্ছা,
মামুনের আন্টি জানালা দিয়ে উকি দেয়।
–আপু, ও মনে হয় কাজ করছে, টেবিলে বসে কি যেনো লেখালিখি করছে।
–সব ঠিক আছে তো?
–হ্যা ঠিকই আছে, কেনো? কিছু হয়েছে?
–না, কিছু হয় নি। এখন রাখি, কাল কথা বলবো।
–আচ্ছা।
.
ফোনটা রেখেই জেঠিমা প্রিয়াকে জোরে একটা ধমক দেয়।
–কেনো তুই একটু পর পর এসে জালাচ্ছিস? শান্তিতে থাকতে দিবি না নাকি?
–জেঠিমা, আমি সত্যি বলছি। মামুন ঠিক নেই। ওই বাড়িতে চলো প্লিজ।
–যা ঘরে যা, একদম জ্বালাবি না আর।
–প্লিজ জেঠিমা, চলো…. ওর বিপদ
প্রিয়া ওখানেই কেঁদে দেয়। অনেক অনুরোধ করার পরও জেঠিমাকে রাজি করাতে পারেনি।
–শুনো জেঠিমা, যদি ওর কিছু হয়, আমি সব শেষ করে দেবো।
–তুই তো অনেক বেয়াদব হয়ে গেছিসরে প্রিয়া।
–ওর জন্য আমি সব করতে পারি, যদি মামুনের কিছু হয়ে যায়, আমি কাউকে ছাড়বো না। কথাটা মনে রেখো।
বলেই প্রিয়া হনহন করে নিজের ঘরে চলে যায়।
মামুনের মা ওই বাড়িতে আবার ফোন দেয়।
–বোন, আমার ছেলে ঠিক আছে তো?
–হ্যা আপু, ঠিকই আছে।
–কি করেছিস তুই?
–এমন প্ল্যান করেছি যে কাজ হয়ে গেছে। তবে প্ল্যানটা অনেক খারাপ ছিলো। এই জন্য নিজের কাছেও খারাপ লাগছে। তবুও যা হয়েছে ভালো হয়েছে।
–তুই মামুনের দিকে নজর রাখ.. ও যদি কোনো কান্ড করে বসে শেষে সব শেষ। ওকে আপাতত একা থাকতে দে.. কাল বাড়ি আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
–ঠিক আছে আপু, তুমি কেনো চিন্তা করো না।
–আচ্ছা
মামুনে আন্টি ফোনটা কেটে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো।
হঠ্যাৎ মামুনের রুম থেকে কেমন যেনো গোঙানোর আওয়াজ শোনা যায়।
আন্টি দৌড়ে মামুনের জানালার কাছে আসে…
ভেতরে তাকিয়ে দেখে মামুন অনির মুখ চেপে ধরে আছে আর অনি গোঙাচ্ছে।
এমন ভাবে অনির মুখ চেপে ধরা হয়েছে যে অনির নিশ্বাস নেওয়াটা কষ্টসাধ্য।
.
.
.
চলবে…….
অধিকার
লেখক A_Al_Mamun
পর্ব :- ৩
.
মামুনের রুম থেকে কেমন যেনো গোঙানোর আওয়াজ শোনা যায়।
আন্টি দৌড়ে মামুনের জানালার কাছে আসে…
ভেতরে তাকিয়ে দেখে মামুন অনির মুখ চেপে ধরে আছে আর অনি গোঙাচ্ছে।
এমন ভাবে অনির মুখ চেপে ধরা হয়েছে যে অনির নিশ্বাস নেওয়াটা কষ্টসাধ্য।
আন্টি ভেতরে এই অবস্থা দেখে চিৎকার করা শুরু করে।
কিন্তু মামুনের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।
আন্টির চিৎকার শুনে আঙ্কেলও দৌড়ে আসে।
দুজন জানালার সামনে দাড়িয়ে মামুনকে ডাকতে থাকে।
কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
মামুন অনিকে দেয়ালের দিকে জোরে একটা ধাক্কা দেয়।
দেয়ালের সাথে মাথায় আঘাত লেগে অনি ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়।
কপাল ফেটে ফ্লোরে রক্ত পড়তে থাকে। সেদিকেও মামুনের কোনো খেয়াল নেই।
টেবিলের ওপর রাখা ফল কাটার ছুরিটা হাতে নিয়ে নিজের পেটেই ছুরিটা ঢুকিয়ে দেয় মামুন
কোনো উপায় না পেয়ে আঙ্কেল দরজা ভাঙতে বাধ্য হন।
মামুন দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে।
আর পুরো ফ্লোরে রক্তের স্রোত বইছে। সেদিকেও মামুনের কোনো খেয়াল নেই।
এমন মনে হচ্ছে যেনো মামুন নিজেই জানে না কি হচ্ছে।
–হ্যালো আপু..
–হ্যা বল
–যত তাড়াতাড়ি পারো (——) হাসপাতালে চলে আসো
–কেনো?
–মামুন আর অনি দুজনই হাসপাতালে ভর্তি
–কিহ? কি হয়েছে আমার ছেলের?
–তোমার ছেলে অনিকে হত্যা চেষ্টা এবং নিজে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে। তাড়াতাড়ি চলে এসে।
–আমি এক্ষুনি আসছে।
.
মামুনের মা খুবই ভয় পেয়ে যায়।
প্রিয়া কি তাহলে ঠিক বলেছিলো? কেনো তখন প্রিয়ার কথা বিশ্বাস করলো না?
প্রিয়া যদি এখন এটা জানতে পারে তাহলে পুরো বাড়িতে এখন হাঙ্গামা শুরু হবে…
প্রিয়াকে কিছু না জানিয়েই মামুনের মা হাসপাতালে চলে যায়…।
মামুন আর অনি দুজনের অবস্থা গুরুতর…
–বোন, কি হয়েছিলো?
–তুমি কল কেটে দেওয়ার পর আমার কানে একটা গোঙানোর শব্দ আছে… মামুনের রুমের সামনে গিয়ে দেখি (________) এই অবস্থা। এই সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে কেনো ও নিজেকে শেষ করতে চাচ্ছিলো আমার মাথায় আসছে না।
–কি করেছিস তোরা ও সাথে?
–তুমি বলেছিলো যেভাবেই হোক অনির সাথে যেনো ওর বিয়ে হয় সেই ব্যবস্থা করতে।
–হ্যা বলেছিলাম, কিন্তু তুই কি করেছিস?
–ওকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করেছি।
–মানে?
–তুমিতো জানোই তোমার আর আমার গলার আওয়াজ অনেকটা মিল… তাই কিছু কথা রেকর্ড করে মামুনকে শুনিয়েছি…
–কি রেকর্ড করেছিলি?
–অনেক কিছুই বলেছি, এটাও বলেছি যে ছোট বেলায় আমি তোর বিয়ে অনির সাথে দিবো বলে ওর বাবা মাকে কথা দিয়েছি,,, কালকের মধ্যে অনিকে বিয়ে করে বাড়ি না আসলে তুই আমার মরা মুখ দেখবি… আর এটাও শুনে রাখ, প্রিয়ার সাথে আর কখনো কথা বলবি না। এমন আরো অনেক কিছু বলেছি। কিন্তু এসবের জন্য মামুন এত বড় কান্ড করে বসবে এটা আমি ভাবি নি।
–কি করেছিস তুই এটা?
–আমাকে ক্ষমা করে দাও আপু.. আমি বুঝতে পারি নি। আমার জন্য আমার মেয়েটাও এখন শাস্তি পাচ্ছে।
.
অনির জ্ঞান ফিরলেও মামুনের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারনে মামুনকে (O নেগেটিভ) রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।
কিন্তু প্রয়োজনের সময় কোথাও রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
হঠ্যাৎ মামুনের মায়ের মনে পড়ে প্রিয়ার রক্তের গ্রুপ (O নেগেটিভ)।
কিন্তু কিভাবে? উনি প্রিয়াকে ভালোভাবেই চেনেন।
প্রিয়া যদি জানতে পারে মামুনের এই অবস্থা। তাহলে এখানে এসে কি করবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
কিন্তু এই মুহুর্তে এসব চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। যা হওয়ার হবে, এখন এখানে প্রিয়াকে লাগবেই।
–হ্যালো…
–প্রিয়া…
–হ্যা জেঠিমা..
–তুই এক্ষুনি (—–) হাসপাতালে আসতে পারবি?
–কেনো?
–আমি এখানে একটা কাজে এসেছি… একা তো, তুই আসলে ভালো হতো।
–আচ্ছা, আমি আধা ঘন্টার মধ্যেই আসছি।
–তাড়াতাড়ি আয়।
প্রিয়া খুব দ্রুত হাসপাতালে চলে যায়, যে করেই হোক জেঠিমার মন জয় করতে হবে।
হাসপাতালে পৌছে জেঠিমাকে ফোন দেয়.।।
–কোথায় তুমি? আমি চলে এসেছি।
–তুই সোজা রেসিপশানের সামনে আয়।
–আচ্ছা।
প্রিয়া ওখানে পৌছেই জেঠিমাকে দেখতে পায়।
–কি হয়েছে জেঠিমা? তুমি হাসপাতালে কেনো?
–আমার পরিচিত এক বান্ধবি এখানে ভর্তি, ওকে দেখতে এসেছি।
–ও আচ্ছা, চলো, বাসায় যাবে না?
–প্রিয়া, আমার একটা কথা রাখবি?
–বলো না জেঠিমা, তুমি বলেছো আর আমি শুনিনি এমন কখনো হয়েছে? তবে তোমাকেও আজ আমার একটা অনুরোধ রাখতে হবে।
–আজ তোর সব কিছুই শুনবো…
–আচ্ছা বলো, কি করতে হবে আমাকে?
–একজনকে রক্ত দিতে হবে।
–রক্ত? কাকে?
–আমার সেই বান্ধবিকে?
প্রিয়া ২য় বার না ভেবেই হ্যা বলে দেয়…
কারন জেঠিমার মন জয় করা যে খুব দরকার।
.
রক্ত দেওয়া শেষ….
–চলো জেঠিমা, যাকে রক্ত দিলাম তাকে একবার দেখে আসি।
–এখন তার অপারেশন চলছে, সুস্থ হলে আমরা একিসাথে দেখতে আসবো।
–আচ্ছা
–এবার বল, তোর কি অনুরোধ রাখতে হবে??
–চলো না একবার মামুনকে দেখে আসি। ওর জন্য আমার কেমন যেনো লাগছে। কাল রাতে আমাকে বলেছিলো ও আর কখনো আমাকে ওর মুখ দেখাবে না। আমার ওর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। চলো না জেঠিমা.।।।(কথা গুলো বলতে প্রিয়ার ঠোট কেঁপে ওঠে)
জেঠিমারও চোখে পানি চলে আসে।
প্রিয়াকে কি করে এখন মামুনের কাছে নিয়ে যাবে?
ও যে এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
প্রিয়া যদি এখন মামুনের ব্যাপারে এটা জানতে পারে তাহলে কি হবে আল্লাহই ভালো জানে।
–দেখ মা, ও বোধয় তোর সাথে রাগ করছে। এখন গেলে হয়তো রাগ দেখাতে পারে। কিছুদিন পর আমি নিজেই তোকে ওর সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাবো।
–সত্যি বলছো?
–হ্যা বাবা, সত্যি বলছি।
প্রিয়া খুশিতে হাসপাতালে সবার সামনেই জেঠিমাকে জড়িয়ে ধরে।
–তুই বাসায় চলে যা, আমি একটু পর আসবো।
–তোমার সাথে একসাথেই যাই না।
–না না, তোর মা চিন্তা করবে। বাসায় চলে যা।
–চিন্তা করবে না।
–বললাম না বাসায় যেতে…
প্রিয়া বুঝতে পারে জেঠিমা রেগে যাচ্ছে।
তাই কথা না বাড়িয়ে সোজা বাড়ি চলে যায়।
–আপু আপু, রক্তের ব্যবস্থা হলো?
–হ্যা বোন, হয়েছে…
–আলহামদুলিল্লাহ… এবার ভালোয় ভালোয় অপারেশনটা হলেই হয়।
–আচ্ছা, আমাকে এটা বল, অনি কেনো মামুনের রুমে গিয়েছিলো?
–মামুন খাবার খেতে আসছিলো না। অনেক রাত হয়ে যাওয়ার পরও খাবার খেতে আসেনি।তাই অনিকে দিয়ে খাবার পাঠিয়েছিলাম। এর মধ্যেই এসব ঘটে গেলো।
–সব আমার জন্যই হয়েছে। আজ যদি আমার জন্য আমার ছেলের কিছু হয়ে যায়, তাহলে আমি যে মা হিসেবে অনেক বড় অপরাধী হয়ে যাবো। কি করে নিজেকে ক্ষমা করবো?
–কাঁদছো কেনো আপু? অন্যায়টা আমার ছিলো। আমি বুঝতে পারিনি মামুন এমন করবে।
ও প্রিয়াকে চায়, এই জন্যই হয়তো এমন করেছে।
–আল্লাহ, আমার ছেলেটাকে সুস্থ করে দাও…।
প্রিয়া বাড়ি এসে বার বার মামুনকে ফোন দেয়।
কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
এভাবে ৩-৪ দিন কেটে যায়।।
প্রিয়া যেনো পুরো পাগল হয়ে গেছে।
ছোট বেলা থেকে এমন কখনো হয়নি যে প্রিয়া মামুনের সাথে ৩-৪ দিন কথা বলেনি।
এদিকে মামুনের মা ছাড়া এই বাড়ির কেউ মামুনের এই দুর্ঘটনা সমন্ধে জানে না।
প্রিয়া প্রতিদিন জেঠিমাকে বলে মামুনের সাথে দেখা করবো, জেঠিমা পুরো ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়।
কারন প্রিয়ার কথা রাখা এই মুহুর্তে সম্ভব নয়।
.
মামুনের অবস্থা এখন কিছুটা আশংকা মুক্ত।
হুস না থাকা অবস্থায় মামুন প্রিয়াকে ডাকতে থাকে।
কিন্তু এই মুহুর্তে প্রিয়াকে ডাকা সম্ভব নয়।
অনি এসে মামুনের পাশে বসে।
বাকি সবাই কেবিনের বাহিরে…
মামুনের একটা হাত অনি নিজের হাতে নিয়ে বসে আসে।
মামুনের মা কেবিনে প্রবেশ করে দেখে অনি মামুনের হাত ধরে বসে আছে।
–অনি……..
–হ্যা খালামনি…
–কি করছিস?
–মামুন ভাইয়ার সাথে বসে আছি।
–বাড়ি চলে যা, অনেক দিন ধরেই তো এখানে আছিস। ওর জ্ঞান ফিরলে ফোন দিবো, তখন আসিস।
–না না, ডাক্তার বলেছে আজ বা কালকের মধ্যেই ভাইয়ার হুস ফিরবে। এখন যাবো না।
–ও না তোকে মারতে চেয়েছিলো, তাহলে কেনো এত দরদ দেখাচ্ছিস?
–আমার দোষে আমাকে মেরেছে। মামুন ভাইয়ার কোনো দোষ নেই।
–কি করেছিলি তুই?
–তুমি জানো, মামুন ভাইয়া সুইসাইড নোট লিখছিলো। আমি খাবার দিতে গিয়ে দেখি কি যেনো লিখছে। আমাকে দেখেই লেটার টা লুকিয়ে ফেলে। অনেক চেষ্টা করেও দেখতে পারিনি। তাই জেদ ধরে ওখানেই বসে ছিলাম, আমাকে অনেক বার বের করে দিতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি বের হইনি। ওনার হাত থেকে লেটার টা টান দিয়ে নিয়ে নেই। পড়ে দেখি ওটা সুইসাইড নোট, ওটাতে লেখা ছিলো “মা আমি তোমাকে কারো কাছে ছোট হতে দিবো না, কিন্তু এতে প্রিয়াকে দেওয়া কথা রাখতে পারছি না। প্রিয়া যদি জানতে পারে আমি অনিকে বিয়ে করেছি, তাহলে ও অনিকে মেরে ফেলবে না হলে নিজেই আত্মহত্যা করে ফেলবে। তুমিতো জানোই প্রিয়া কেমন… আমি চাই না আমার জন্য কারো জীবন নষ্ট হয়ে যাক। না পারবো তোমাকে কষ্ট দিতে, না পারবো প্রিয়াকে কষ্ট দিতে। তাই আমি নিজেই চলে যাচ্ছি। প্রিয়া কে দেখে রেখো মা…”
মামুন ভাইয়ার এই লেটারটা পড়ে আমি মাকে ডাক দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু উনি আমার মুখ চেপে ধরেন। বুঝতে পারছিলাম আমার জন্যই ভাইয়া এমন একটা ডিসিশন নিতে যাচ্ছে, অথচ কিসের বিয়ে কার সাথে বিয়ে কিছুই আমি জানতাম না। কখন আমার সাথে মামুন ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে সেটাও আমি জানতাম না। মামুন ভাইয়ার হাতে একটা কামড় দিয়েছিলাম, তাই আমাকে দেয়ালের দিকে ধাক্কা দেয়, আর আমি দেয়ালে বারি খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
–তোর উছিলায় আল্লাহ আমার ছেলেটাকে বাঁচিয়েছে।
–খালামনি, কেনো আমার সাথে মামুন ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করছো? তুমি তো আগে থেকেই জানতে ও প্রিয়াকে পছন্দ করে।
–আমি যে ভুল করেছিরে মা… কিন্তু আমি আমার ভুল সুধরে নেবো। তুই এখন বাসায় চলে যা..
–মামুন ভাইয়ার জ্ঞান ফিরলে তারপর যাবো।
–আমি প্রিয়াকে আসতে বলেছি আজ, ও তোকে মামুনের সাথে এখানে দেখলে সমস্যা করতে পারে, তুই চলে যা, আমি ফোন দিলে আবার আসিস….
.
অনি তখন পর্যন্ত মামুনের হাতটা ধরে রেখেছিলো।
পেছন থেকেই প্রিয়ার আওয়াজ আসে…
–জেঠিমা…..
প্রিয়ার আওয়াজ শুনেই মামুনের মা চমকে ওঠে, যেনো কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠলো।
–প্রিয়া.. তুই এখানে? আয় বাহিরে আয়।
–তোমার বোনকে দেখলাম বাহিরে, উনিই বললো তুমি এখানে আছো।
–আচ্ছা চল বাহিরে চল।
–আরে, অনিও তো এখানে, ওটা কে?
(মামুনের মুখ পর্যন্ত একটা চাদর দিয়ে ঢাকা, আর মুখে অক্সিজেন মাস্ক থাকায় প্রিয়া মামুনকে চিনতে পারেনি)
–তুই বাহিরে আয়, তোকে সব বলছি।
–আন্টি এখানে, অনিও এখানে। মামুন এসেছে?
–তোকে বলছিতো, আয় না…..
প্রিয়া জেঠিমার সাথে আবার বাহিরে আসে…
–ও জেঠিমা, বলো না মামুন এসেছে?
–মামুন আসলে কি করবি?
–অনেকদিন ওকে দেখি না। আমাকে মামুনের কাছে নিয়ে চলো না জেঠিমা…। ওকে দেখবো।
–মামুন আসেনি।
–কোথায় মামুন?
–তুই যদি আমার কথা শুনিস তাহলে তোকে একটা কথা বলবো।
–আমিতো তোমার সব কথা শুনি।
–এবারও শুনতে হবে।
–হ্যা শুনবো তো, বলো না…।
–এটা একটা হাসপাতাল, আমার কথা শুনে কোনো রকম রিয়েক্ট করতে পারবি না।
–কি বলবে তুমি?
–আগে আমাকে ছুয়ে কথা দে, একদম শান্ত থাকবি…।
–মামুনের কিছু হয়ে যায় নি তো?
–তোকে কি বলছি আমি?
–হ্যা আমি একদমই শান্ত থাকবো… কিচ্ছু বলবো না। বলো না মামুনের কিছু হয়ে যায় নি তো?
–আয় আমার সাথে?
প্রিয়াকে আবার মামুনের কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়।
–জেঠিমা, ওটা কে?(মামুনকে দেখিয়ে)
–যাকে তুই রক্ত দিয়েছিস…।
প্রিয়া ধীরেধীরে মামুনের কাছে যায়, এবং বুঝতে পারে শুয়ে থাকা ব্যাক্তি টাই মামুন,
মামুনের গায়ে রাখা চাদরটা সরিয়ে প্রিয়া দেখতে পায় পেটে ব্যান্ডেজ করা।
অনি তখনো মামুনের হাত ধরে একপাশে বসে আছে।
প্রিয়ার চোখদুটো রক্তের মতো লাল হয়ে যায়।
প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে অনি ভীষন ভয় পায়।
মামুনকে ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে খালামনির পেছনে চলে যায়।
প্রিয়া মামুনের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
জেঠিমা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে মামুনের এই অবস্থা দেখে প্রিয়ার শক লেগেছে।
–প্রিয়া…..
—
–প্রিয়া…..
—
–প্রিয়া…(একটা ঝাকি দিয়ে)
প্রিয়া যেনো চমকে ওঠে।
একপা দুপা করে প্রিয়া পেছনে যেতে থাকে এবং দেওয়ালের সাথে গিয়ে পিঠ ঠেকে।
প্রিয়া কাঁদছে না, কিন্তু দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।
–এতদিন ধরে কেনো আমার থেকে বিষয়টা লুকিয়ে গেছো? কেনো ওর এই অবস্থা করেছো? আমার সাথে কথা বলতো এই জন্য? নিজের ছেলেকেই মেরে ফেলতে চাচ্ছিলে?
–প্রিয়া, একটু শান্ত হয়ে বস মা….
–একদম আমার কাছে আসবে না। তোমার মনে কখনো আমার জন্য ভালোবাসা দেখিনি। তাই বলে নিজের ছেলেকে আমার থেকে দুরে সরানোর জন্য মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলে? যদি ওর কিছু হয়ে যায়, কাউকে ছাড়বো না আমি… কাউকে না।
–এদিকে আয় মা… আমার কথা শোন।
প্রিয়া ডাক্তারি ঝুড়ি থেকে একটা ছুরি হাতে নেয়। এবং মামুনের মাথার পাশে গিয়ে বসে।
–যদি কেউ কাছে আসো খুব খারাপ হয়ে যাবে।
–প্রিয়া, কি করছিস তুই? ছুরিটা রেখে দে।
–তুমি যদি এক পা সামনে আসো, তাহলে আমি ভুলে যাবো তুমি আমার জেঠিমা…।
জেঠিমা মনে মনে যা ভেবেছিলো ঠিক তাই হয়েছে।
প্রিয়ার ভয়ে এখন আর সামনেও যাওয়া যাবে না।
বাড়ির সবাইকে বিষয়টা জানানো হয়। সবাই মামুনকে দেখতে আসে, কিন্তু কেউ সামনে যেতে পারেনি।
টানা ২দিন প্রিয়া মামুনের মাথার পাশে বসে আছে আর অঝোরে কাঁদছে। সারাদিন মামুনের পাশেই বসে থাকে, রাতে ওখানেই বসে বসে ঘুমায়। একমুহূর্তের জন্যও মামুনকে ছেড়ে কোথাও যায় নি।
২দিন পর মামুনের জ্ঞান ফিরে,
প্রিয়া কেবিনের একপাশে মামুনের হাত ধরে বসে আছে।
এক দৃষ্টিতে মামুন প্রিয়ার দিকে চেয়ে আছে… কেউ কোনো কথা বলছে না।
কিন্তু দুজনের চোখেই পানি.।
মামুনের জ্ঞান ফিরেছে এই খুশিতে কেউ কেবিনে প্রবেশ করতে পারেনি।
কারনটা ছিলো প্রিয়া…
–তুই আমাকে একা রেখে চলে যেতে চেয়েছিলি?(বলেই মামুনের গালে আস্তে করে একটা চড় দেয়)
—
–একবারও ভাবলি না আমি কি নিয়ে বাচবো, কেনো এমন করলি? আমার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য? একবার বললেই পারতি, তোর থেকে অনেক দুরে চলে যেতাম।
মামুন হাত দুটো সামনের দিকে বাড়িয়ে প্রিয়াকে বুকে টেনে নেয়)
প্রিয়াও গুটি মেরে মামুনের বুকে আশ্রয় নেয়। দুজন খুব কাঁদছে… দরজার সামনে দাড়িয়ে মামুনের মা ও কাঁদছে।
নিজের একটি ভুলের জন্য ছেলেকে হারাতে বসেছিলো।
–তুই আমাকে ভালোবাসিস?(প্রিয়া)
–হুম(মামুন)
–সারাজীবন আমার সাথে থাকবি?
–হুম
দরজার সামনে প্রিয়ার বাবা দাড়িয়ে আছে।
–বাবা, ওকে নিয়ে আমাদের ঘরে যেতে দেবে?
প্রিয়ার এমন কথায় উনি বেশ অবাক হন।
–হ্যা, ও আমাদের ঘরে যেতেই পারে, সমস্যা কি?
–না, ও এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবে।
–কি বলছিস মা? ওর ঘর রেখে আমাদের ঘরে কেনো?
–তুমি যেতে দেবে?
–হ্যা…
–ঠিক আছে… চল মামুন, তুই এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবি। আর তোকে ওই ঘরে থাকতে হবে না।
–কি বলছিস তুই?
–তুই আর একটা কথা বলবি তো তোকে………….
–আচ্ছা… চল
.
প্রিয়া মামুনকে নিজেদের ঘরে নিয়ে আসে। কিন্তু কেউ কিছুই বলেনি।
কারন প্রিয়া এখন প্রচন্ড রেগে আছে।
রাগ কমে গেলে সব আবার ঠিক হয়ে যাবে।
দুই পরিবার ভালোভাবেই বুঝতে পারে, দুজনের এখন বিয়ে দিয়ে দেওয়া উচিত।
কারন এরা দুজন দুজনকে ছাড়া কিছুতেই থাকতে পারবে না।
মামুন পুরোপুরি সুস্থ হলেই ওদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে।
প্রিয়া সারাক্ষণ মামুনের সেবা যত্ন করে, সব কিছুর খেয়াল রাখে।
কিছুতেই মামুনকে ওর নিজের ঘরে যেতে দেয় না।
মামুন যেতে চাইলে বলে “ওরা তোকে আমার থেকে আলাদা করতে চায়, যাবি না ওই ঘরে”
মামুন প্রিয়ার এসব কর্মকাণ্ডে শুধু হাসে… আর মনে মনে ভাবে।
কি আছে আমার মধ্যে? কেনো আমার কিছু হলে প্রিয়া নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না?
কেনো মেয়েটা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
আমি জানি আমার কিছু হলে প্রিয়া হয়তো মরেই যাবে।
প্রিয়ার মতো শান্তশিষ্ট মেয়ে আমি কোথাও দেখিনি।
খুবই নরম মনের মানুষ, কিন্তু আমার কিছু হলেই প্রিয়া পুরো বদলে যায়।
কেনো এমন হয়?
–প্রিয়া…..
–বল
–আমার একটা কথা রাখবি?
–তুই বললে জীবনটাও দিতে রাজি…
–কেনো তুই এসব করছিস?
–কি করেছি?
–আমার বাবা মায়ের সাথে কেনো এতো বাজে ব্যবহার করছিস?
–তুই জানিস না সেদিন কি হয়েছিলো।
–কি হয়েছিলো?
–তুই আমাকে ফোন দিছেছিলি, আমি দৌড়ে জেঠিমাকে সব বলেছি। বলেছি এখনি ওই বাড়িতে যেতে হবে। তোকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু জেঠিমা যায়নি, উল্টো আমাকে ধমক দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। যদি আমি তোর খালার বাড়ি চিনতাম, তাহলে সেই রাতেই আমি তোর কাছে চলে আসতাম।
–দেখ প্রিয়া, মা এটা বিশ্বাস করেনি যে তার ছেলে এমন কিছু করতে পারে… তাই সে রাতে যায় নি।
–এতকিছু আমি বুঝি না। ওনার কারনেই তোর আজ এই অবস্থা হয়েছে।
–যাই হোক, উনি আমার মা… আমি নিজের ঘরে যাবো।
–না, তোকে আমি যেতে দিবো না।
–কেনো এমন করছিস? তোর জন্য কি আমি আমার বাবা মায়ের সাথেও কথা বলতে পারবো না?
–কথা বল, কিন্তু তুই এখানেই থাকবি।
–না, আমি এখনি ঘরে যাবো, এবং নিজের ঘরেই থাকবো।
–তুই আমার কথা শুনবি না?
–তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
–হ্যা আমি পাগল হয়ে গেছি, তোর জন্য আমি পাগল হয়ে গেছি।
–প্রিয়া… কেনো এমন করছিস? কে আমার ভালো চাইবে আর কে আমার খারাপ চাইবে সেটা বোঝার বয়স আমার হয়েছে।
–হোক, তবুও তুই যাবি না…। আমি যা বলি তা শোন।
–কেনো? আমি কি কখনো নিজের সিদ্বান্ত নিজে নিতে পারবো না?
–পারবি, কিন্তু এখন না।
–তুই কি আমাকে নিজের বসে করে রাখতে চাস?
–তোর কি তাই মনে হয়?
–হ্যা, তুই আমার মাকে যা নয় তা বলেছিস, আমার আন্টিকে বলেছিস। আমি চুপচাপ শুধু শুনে গেছি।
–তোর এই অবস্থার জন্য ওরাই দায়ী।
–তাতে তোর কি? আমার মাকে ভালো মন্দ বলার তুই কে? তোর মায়ের সাথে আমি এমন ব্যবহার করলে তোর ভালো লাগবে?
–কেনো এসব বলছিস? তুই কি আর আমাকে সহ্য করতে পারছিস না?
–তোর ব্যবহার আমার সহ্য হচ্ছে না। মুক্তি দে আমায় তোর এই ব্যবহার থেকে। নিজের ঘরে যেতে দে।
–ঠিক আছে… যা। যাওয়ার আগে তোর থেকে একটা কথা শুনতে চাই।
–কি?
–তুই কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসিস?
–কি মনে হচ্ছে তোর?
–থাক, বলা লাগবে না… তুই যেতে পারিস।
–তুই না বললেও যাবো…। যদি নিজের জেদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারিস তবেই আমার সাথে কথা বলতে আসবি, তার আগে না।
প্রিয়া কোনো জবাব না দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পুকুরঘাটে গিয়ে বসে আছে আর দুচোখ দিয়ে অঝোরে পানি ফেলছে।
একটু পর জেঠিমা সেখানে উপস্থিত হন।
–প্রিয়া….
—
–প্রিয়া… কাঁদছিস কেনো? মামুন বকেছে?(পাশে বসে)
প্রিয়া একটু দুরে গিয়ে বসে…।
–বাব্বাহ, এখনো জেঠিমার ওপর রাগ করে আছিস?
–আমার আর কারো ওপর রাগ নেই।
–মামুন তো তোর কাছেই আছে, আমি কি আর কিছু বলেছি?
–লাগবে না তোমার ছেলেকে, নিয়ে যাও। অনেক অধিকার খাটিয়েছি ওর ওপর,আর না।
–কি হয়েছে প্রিয়া… মামুন কিছু বলেছে? কাঁদছিস কেনো?
–কিচ্ছু হয়নি আমার? আমিতো অনেক খারাপ, তাই কাঁদছি।
–কে বলেছে আমার মেয়েটা খারাপ? আমার লক্ষি মেয়ে… এদিকে আয়।
–না, আমি ভালো না…। তোমাকে অনেক বকাবকি করেছি। আমি অনেক খারাপ।
–কে তোকে খারাপ বলেছে? নামটা বল শুধু।
–কেউ বলেনি।
–মামুন তোকে খারাপ বলছে? আজ ওর খবর আছে।
–শুধু ওকে ছুয়ে দেখো….।
–ও সরি সরি, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম….।
–তোমরা কেউ আমাকে ভালোবাসো না…। আমি আর কারো সাথে কথা বলবো না। তুমি তোমার ছেলেকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দাও আমি কিচ্ছু বলবো না।(বলেই প্রিয়া ডুকরে কেঁদে ওঠে)
–শয়তানটা নিশ্চই তোকে বকাবকি করছে…। আমি কিচ্ছু বলবো না, তুই ওর শাসন করবি। এখন থেকে মামুনের পুরো দায়িত্ব তোর। আমার ছেলেটাকে আমি তোকে দিয়ে দিলাম।
.
.
চলবে……….
অধিকার
লেখক A_Al_Mamun
পর্ব :- ৪
.
–শয়তানটা নিশ্চই তোকে বকাবকি করছে…। আমি কিচ্ছু বলবো না, তুই ওর শাসন করবি। আমার ছেলেটাকে আমি তোকে দিয়ে দিলাম। এখন থেকে মামুনের পুরো দায়িত্ব তোর।
–ও আমাকে বলছে আমি নাকি ওর সব সুখ শান্তি নষ্ট করে দিয়েছি।
–কত বড় বজ্জাত ছেলেটা… আমার লক্ষি মেয়েটাকে এত বড় অপবাদ দিয়েছে? বলতো ওকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়?
–ওকে আজ রাতে খাবার দিবে না…।
–ঠিক আছে,
–না না, ওর কষ্ট হবে। ওকে খাবার দিবে।
–আচ্ছা, তাহলে কি করা যায়?
–আমি ওর সাথে আর কথা বলবো না।
–কথা না বলে থাকতে পারবি?
–হুম পারবো।
–আচ্ছা, দেখি কয়দিন থাকতে পারিস।
–জেঠিমা…. আমি কি সত্যিই তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করেছি?
–নাতো, ওই পাগলটার মাথায় সমস্যা আছে। ওর কথায় একদম কান দিস না। আয় এদিকে আয়….
প্রিয়া চুপটি করে জেঠিমার বুকে আশ্রয় নেয়।
.
মামুন নিজের ঘরে থেকে প্রিয়াকে ডাক দেয়…।
প্রিয়া দৌড়ে মামুনের কাছে যায়, হঠ্যাৎ মনে পড়ে আজ তো মামুনের সাথে কথাই বলবো না…
মামুনের সামনে থেকে মোড় নিয়ে প্রিয়া জেঠিমার কাছে চলে যায়।
–কিরে? কিছু হয়েছে?
–মামুন ডাকছে।
–কাকে?
–আমাকে
–তো যা।
–না, আমি ওর সাথে কথা বলবো না।
–আচ্ছা, তাহলে বস এখানে।
প্রিয়া জেঠিমার সামনে বসে কেমন যেনো ছটপট করতে থাকে…।
–কি হয়েছে? এত উতলা হচ্ছিস কেনো?
–ও ডাকছে।
–তো যা না… বসে আছিস কেনো?
–না যাবো না, ওকে ডাকতে নিষেধ করো। আমার ভালো লাগছে না।
–তুই ওকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেই শাস্তি পাচ্ছিস।
–কি করবো আমি? ওর ওপর একদম রাগ হয় না আমার। এমন কেনো হয় জেঠিমা?
–আমি কি জানি বাবা, আমি ওতো সব বুঝি না।
–জেঠু যখন তোমাকে বকে, তখন তোমার রাগ হয় না?
–তোকে কেনো বলবো?
–বলো না
–না হয় না
–প্রিয়াআআআআআ…………(মামুন)
–ও জেঠিমা, এতো ডাকে কেনো? আমি আর পারছি না।
–গিয়ে দেখ না কি বলে…।
–আমি শুধু গিয়ে দেখবো, কিন্তু কথা বলবো না।
–ঠিক আছে যা.।।।।
প্রিয়া যাচ্ছে মামুনের কাছে… জেঠিমা পেছনে মুচকি মুচকি হাসছে। আর মনে মনে বলছে…. পাগলি একটা।
.
প্রিয়া মামুনের সামনে এসে দাড়ায়।
–তোকে এত ডাকছি, শুনছিস না কেনো?
—
–কি হলো? চুপ করে আছিস যে.
–আমি আর তোর সাথে কথা বলবো না।
–কেনো?
–আমি অনেক খারাপ, তাই…..।
–কে বললো তুই খারাপ?
–তুই বলেছিস।
–আমি কখন বললাম?
–বলিস নি তো কি হয়েছে? এমন কিছুই বুঝিয়েছিস।
–এদিকে আয়।
–না
–কেনো?
–এমনি…
–আমি আসবো?
–না, আসবি না।
ওমনি মামুন প্রিয়াকে পেছন থেকে জাপটে ধরে….
–কোথায় পালাচ্ছিস?
–ছেড়ে দে, জেঠিমা চলে আসবে।
–আসবে না…।
–তবুও ছেড়ে দে, আমার কেমন যেনো লাগছে।
–কেমন লাগছে?
–বুকের ভেতর ধুকধুক করছে।
–কেনো করছে?
–আমি কখনো তোর এতোটা কাছে আসিনি। কিছু একটা হয়ে যাবে, ছেড়ে দে প্লিজ।
–কি হবে?
–জানি না।
–তাহলে তো আমি ছাড়ছি না।
ওমনি প্রিয়া হুট করে সামনের দিকে ঘুরে মামুনকে জড়িয়ে ধরে।
–এই পাগলি, কি করছিস?
–কথা বলিস না।
–কেনো?
–এভাবে আমি সারাজীবন পার করে দিতে পারবো।
–বেশ তো, মাকে বল বিয়ে কথা।
–আমাকে এভাবে কিছুক্ষণ থাকতে দে না প্লিজ…।
প্রিয়া বেশ কিছুক্ষন যাবত মামুনকে জড়িয়ে ধরে আছে…।
দুজনের মাঝে এখনো নীরবতা। কেউই আর বাস্তব জগতে নেই, হারিয়ে গেছে সুখের দেশে।
হঠ্যাৎ প্রিয়া মামুনকে ছেড়ে দিলে মামুন নিচে পড়ে যায়।
প্রিয়ার কলিজা যেনো সাথে নেই।
কলিজায় যেনো মোচড় দিয়ে ওঠে।
কি হয়ে গেছে মামুনের?
মামুন চোখ কচলাতে কচলাতে সোজা হয়ে দাড়ায়।
–কি হয়েছে তোর?(প্রিয়া)
–কই?(মামুন)
–পড়ে গেলি যে?
–ঘুমিয়ে গেছিলাম।
–কিহ?
–কি করবো? ঘুম চলে আসলো।
–আমি হারিয়ে গেলাম আমার ভালোবাসার রাজ্যে, আর উনি হারিয়েছে ওনার ঘুমের রাজ্যে। কেমনটা লাগে?(বিড়বিড় করে)
–কি বলছিস?
–কিছু না, যা ঘুমা
বলেই মামুনকে বিছানায় ধাক্কা দেয়, ওমনি মামুন প্রিয়াকে ধরে ফেলে।
ফলে দুজনই বিছানায় এসে পড়ে।
প্রিয়া মামুনের বুকের ওপর এসে পড়ে।
–কি দেখছিস?
–আমার পরিটাকে…।
–আগে দেখিস নি?
–এতো কাছ থেকে না।
–আরো কাছ থেকে দেখবি?
–কতটা?
–এতটা…. (প্রিয়া মুখটা মামুনের মুখের খুব কাছে নিয়ে আসে)
–হুমমমম(মামুনের গলাটা যেনো শুকিয়ে আসে)
–আরো কাছ থেকে দেখবি?
–আর না… আমি মরে যাবো।
–কেনো?
–বুকে হাত দিয়ে দেখ, হার্টবিট কতোটা জোরে চলছে।
–সত্যিই তো, কিন্তু তোকে আজ মেরেই যাবো, আমাকে অনেক কাঁদিয়েছিস। (বলেই প্রিয়া ঠোঁট ____________)
.
একটু পর প্রিয়া দৌড়ে এসে জেঠিমার পাশে বসে।
–কিরে? কেনো ডাকলো?
–এমনিই….
–ওও আচ্ছা…।
প্রিয়া জেঠিমার পাশে বসে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
–প্রিয়া….
–হুম
–হাসছিস কেনো?
–কই?
–এই যে মুচকি মুচকি হাসছিস।
–ও কিছু না। এমনি…।
–হুম, বুঝতে পারছি।
–কি বুঝেছো?
–এটাই বুঝেছি, যে আমি কিছু জানি না।
–আমি ওর সাথে কোনো কথা বলি নি।
–হুম জানি তো….। ভাবছি মামুনের বিয়ে দিয়ে দিবো।
–কার সাথে?
–অনির সাথে।
প্রিয়ার মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে হয়ে যায়।
–অনির সাথে মামুনকে দারুন মানায়, কি বলিস তুই?
–তোমার যা ইচ্ছা…।
প্রিয়া জেঠিমার পাশ থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়
পেছন থেকে জেঠিমা মনে মনে হাসছে আর মনে মনে ভাবছে, নাহ আর বেশি দেরি করা যাবে না, খুব তাড়াতাড়ি ওদের বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।
প্রিয়া ঘরে গিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আর ভাবছে…
জেঠিমা এখনো আমাকে পছন্দ করে না? কেনো বোঝে না মামুনকে আমি কতটা ভালোবাসি।
কেনো এটা জানে না যে ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। আমি কি মামুনের পথের কাঁটা হয়ে গেলাম?
কিন্তু ও তো আমাকেই ভালোবাসে? শেষ বারের মতো জেঠিমার কাছে ওকে ভিক্ষা চাইবো।
আমি পারবো না ওকে ছেড়ে থাকতে।
এদিকে মামুনের মা বাবা প্রিয়ার মা বাবার সাথে কথা-বার্তা বলে ওদের বিয়ে ঠিক করে ফেলে।
যা সম্পূর্ণ মামুন আর প্রিয়ার অজানা….।
রাতে মামুন প্রিয়ার রুমে আসে।
প্রিয়া একপাশ হয়ে শুয়ে আছে…..
–প্রিয়া……
চোখের পানি মুছে প্রিয়া এপাশ ফিরে….
–আজ এতো তাড়াতাড়ি শুয়ে গেলি?
–শরীর ভালো লাগছে না, তাই…।
–কি হয়েছে?
–কিছু না, এমনিই ভালো লাগছে না।
–কিছু হয়েছে?
–না।
–আমাকে তো সব কিছুই শেয়ার করিস।
–আর করবো না, চলে যা…।
–প্রিয়া….. কি হয়েছে তোর?
–কিছু হয়নি…. যা এখান থেকে।
মামুন প্রিয়ার পাশে এসে বসে…. প্রিয়ার হাতটা নিজের হাতে তুলে নেয়।
–কি হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেনো? কেউ কিছু বলেছে?
ওমনি প্রিয়া মামুনকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
–বলনা কি হয়েছে? কেনো কাঁদছিস?
–আমি তোকে ছাড়া কি করে থাকবো? তোকে যে বড্ড ভালোবাসি।
–এতে কান্নার কি আছে পাগলি?
–জেঠিমা বলেছে অনির সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিবে।
–ধুর পাগলি, আমি তোরই আছি। তোকে ছাড়া আর কারো জায়গা নেই আমার জীবনে।
–তুই অনিকে বিয়ে করবি?
–তুই কি চাস? বিয়ে করবো?
প্রিয়া ওমনি মামুনকে ছেড়ে দেয়.।।।
–বিয়ে করবি? তোর জান নিয়ে নেবো আমি।
–নে
–(কলার ধরে) ওই শোন, তুই শুধু আমার… ছোট বেলা থেকে তোকে আগলে রেখেছি কেনো? অনিকে বিয়ে করার জন্য? তুই আমাকে বিয়ে করবি।
–আমি কখন বললাম করবো না?
–চল, জেঠিমাকে বলবি তুই শুধু আমার।
–ধুর পাগলি, এটা মাকে বলা যায়?
–বলতে হবে, নইলে অনির সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দেবে।
–তুই কান্না থামা, তুই থাকতে আমাকে কেউ তোর থেকে নিতে পারবে?
–তাহলে জেঠিমা আমাকে এতো কাঁদায় কেনো?
–দুষ্টমি করেছে।
–আমি এক্ষুনি জেঠিমার কাছে যাবো।
–কেনো?
–বলবো তুই শুধু আমার।
–এদিকে আয় বাবা, আমি এসে ভুল করে ফেলেছি। শুয়ে পড়….। আমিই তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি। তুই তো আমার মান ইজ্জত নিয়ে টানা টানি শুরু করছিস।
–তুই আমাকে একদম ভালোবাসিস না..।(বাচ্চাদের মতো ঠোঁট বাকিয়ে আবার কান্না শুরু করে)
–বাসিতো…। কেনো কাঁদছিস?
–একবার জড়িয়ে ধরবি?
.
মামুন হাত দুটো দুপাশে মেলে দেয়।
ওমনি প্রিয়া মামুনের বুকটা দখল করে নেয়।
–পাগলি একটা…. এতো কাঁদতে হয়?
–আমি কাঁদবো, তোর সমস্যা কি?
–তুই কাঁদলে আমার যে কষ্ট হয়। তোর কান্নাটা যে আমার জন্যই। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়।
–আমি কাঁদলে তোর কেনো কষ্ট হয়?
–তুই যে আমার পাগলি… আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা হলে আমার পরিটার হাসি মুখ।
–আমি হাসলে তুই খুশি হোস?
–হুম…. খুব…। তখন তোকে শুধু দেখতে ইচ্ছে করে।
–আমি অনেক সুন্দর, তাইনা?
–হুম, একদম পরির মতো সুন্দর।
–সত্যি?
–হুম।
–এতো পরির মতো সুন্দর একটা মেয়ে তোকে ভালোবাসে। বিয়ে করতে চায়, তবু জেঠিমা অনির নাম নেয়। আমাকে কেনো তোর সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে না?
–মা তোর সাথে দুষ্টুমি করে।
–শোন, তোর এই বুকে আমার জায়গা। কখনো কাউকে এই বুকে ঠাই দিবি না।
–ঠিক আছে। আর কিছু?
–কখনো আমাকে ছেড়ে যাবি না।
–ঠিক আছে, আর কিছু?
–প্রতিদিন কম হলেও একবার করে বলবি ভালেবাসি।
–ঠিক আছে, আর কিছু?
–সবচেয়ে স্পেশাল
–কি সেটা?
–বিয়ের পর বলবো।
–ঠিক আছে, আর কিছু?
–না।
–এবার ছাড়, আমাকে যেতে হবে।
–এতো তাড়া কিসের? তোর বউতো এখানেই, কোথায় যাবি?
–অনেক্ষন যাবত তোর রুমে, চাচি কি ভাবছে?
–কিছু ভাবছে না।
–ছাড় না, কেউ দেখলে কি ভাববে?
–এতো ভয় পাস কেনো?
–তুই বুঝবি না, আমি এখন যাই, ঘুমিয়ে পড়।
–কাল কিন্তু জেঠিমাকে বিয়ের কথা বলবি।
–আচ্ছা।
.
দুই দিনের মধ্যেই মামুন আর প্রিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।
আর এক সপ্তাহ পরই বিয়ে।
দুজনের খুশি কে দেখে। প্রিয়া খুশিতে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে।
প্রিয়ার খুশিতে সবাই খুশি। বিয়ের আগেই প্রিয়া জেঠু জেঠিমাকে বাবা মা ডাকা শুরু করে দেয়।
সবাই এ নিয়ে খুব হাসাহসি করে। সবচেয়ে বেশি হাসাহসি করে মামুনকে ডাকার স্টাইল দেখে।
কারন প্রিয়া এখন মামুনকে নাম ধরে ডাকে না। “ওগো শুনছো” এভাবে ডাকে।
তুই করেও বলে না। তুমি করে বলে।
নিজের ঘর থেকে হবু স্বামীর ঘরেই বেশি সময় কাটায়।
পুরো ঘর ঘুছিয়ে রাখে। নিজের হবু স্বামীর খুব খেয়াল রাখে।
কারো কোনো বাঁধা নেই।
প্রিয়া এখন মুক্ত পাখির মতো উড়ছে।
রাতে মামুন শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছিলো?
ওমনি প্রিয়া রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়।
মামুনের কাছে এসে বুকের ওপর শুয়ে পড়ে।
–ওরে বাপরে…. তুই এতো ওজন?
–কিহ? আমি ওজন?
–না না, মজা করছিলাম। নাম এবার..
–নামবো না, আমি আজ তোমার সাথ…..
–তুমি না, তুই করেই বল।
–স্বামীকে কেউ তুই করে বলে?
–কেউ না বলুক, তুই বল।
–আচ্ছা।
–এবার বল, কি বলতে চেয়েছিলি?
–আমি আজ তোর সাথে ঘুমাবো।
–কিহ? মা লাঠি নিয়ে আসতেছে।
–কেনো?
–এখনো আমাদের বিয়ে হয়নি।
–কয়েকদিন পর কাগজে কলমে তুই আমার বর হবি। কিন্তু জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমি তোকে আমার করে নিয়েছি। সেই প্রথম থেকেই তুই আমার বর।
–মেরে জানে মান, আর মাত্র ৫ দিন অপেক্ষা কর।
–আমি আর পরছি না।
–কেনো পরছিস না?
–তুই আমার এতোটা কাছে। তবুও _____ _____ _______ _।।
–বুকের ওপর শুয়ে আছিস। আর কতটা কাছে চাস?
–যতটা কাছে আসলে ১+১=১ হবে ততটা কাছে।
–হবে, সব হবে। তোকে নিজের করে পাচ্ছি, এতেই আমি খুশি।
–কিন্তু তোকে তো খুশি লাগছে না।
–কেনো জানি কাউকে নিজের মনের কষ্ট, খুশি কিছুই প্রকাশ করতে পারি না।
–তোর মনের মানুষটা তোর জীবনে চলে এসেছে। এখন থেকে সব পারবি।
–দেখা যাক কি হয়,
–আমার একটা ইচ্ছা পূরণ করবি?
–বল।
–বিয়ের রাতটা আমি তোর সাথে রিক্সায় করে পুরো শহরটা ঘুরতে চাই। তোর কাঁধে মাথা রেখে পুরো শহরকে জানাতে চাই, এই শহরে আমার চেয়ে সুখি ২য় কেউ নেই। আমার এই ইচ্ছেটা পূরন করবি?
–আমার কলিজাটা আমার কাছে একটা আবদার করেছে, আর আমি সেটা করবো না তা কি করে হয়?
প্রিয়া মামুনকে জোরে একটা পাপ্পি দেয়।
–এজন্যই তোকে এত্তগুলা ভালোবাসি।
–আমি যেনো বাসি না!
–জানিস, আমি তোর বউ হবো, এটা ভাবতেই আমার লজ্জা করে।
–কেনো?
–জানি না, আমাকে বউ বলে ডাক।
–এখন?
–হুম
–না, আমারও লজ্জা করছে।
–উলে আমার জামাইটা.। উম্ম্ম্ম্মাহ…
–কথায় কথায় এতো আদর করতে হয়?
–করবো… আমার যখন ইচ্ছা হবে তখনই করবো। তুই আমার..। আমি করবো নাতো কে করবে?
–বাব্বাহ…
–শোন, তোর ওপর শুধু আমার অধিকার আছে, আর কারো নেই। বিয়ের আগ পর্যন্ত তোর ওপর আমার অধিকার ছিলো, বিয়ের পরও থাকবে। বুঝলি?
–জ্বি ম্যাডাম… সব বুঝেছি।
.
সবকিছুই ঠিকঠাক ভাবে চলছে।
খুব ধুমধাম করে দুজনের বিয়েটা হয়ে যায়।
প্রিয়া লম্বা ঘোমটা দিয়ে বাসর ঘরে বসে আছে।
দেরি না করে মামুন দ্রুত বাসর ঘরে ঢুকে পড়ে।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রিয়ার পাশে বসে।
–প্রিয়া, তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস?
–হুম,
–কেনো?
–জানি না,
–কখনো তোর লজ্জা মাখা মুখটা দেখিনি।
–ঘোমটা টা তোল, তাহলেই দেখবি।
–(ঘোমটা সরাতে সরাতে)দেখিতো আমার বউটাকে কেমন লাগছে…..।
ওমনি প্রিয়া মামুনের বুকে মুখ লুকায়।
–কি হলো?
–আমাকে দেখিস না।
–কেনো?
–সত্যিই আমার খুব লজ্জা লাগছে।
–তো আমাকে কি করতে হবে?
–আমায় শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নে…।
–তাহলে লজ্জা ভেঙে যাবে?
–জানি না, কিন্তু সব বাঁধা ভেঙে যাবে। আর আমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে কেউ থাকবে না। কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
–তোকে একটা কথা কখনো বলতে পারি নি।
–কি?
–তোকে খুব ভালোবাসি। নিজের চেয়েও বেশি। কখনো তোকে হারাতে দিবো না। সারাজীবন এই বুকে আগলে রাখবো।
–আজতো আমাদের অনেক কাজ।
–কি কি?
–বাসর রাতে কি হয় জানিস না গাঁধা? তাছাড়া আমাকে নিয়ে পুরো শহরটা ঘুরে আসার কথা, ভুলে গেছিস?
–নাতো? বাহিরে রিক্সা রেখে এসেছি।
–সত্যি?
–হুম
–চল চল.।।।
–এভাবে?
–হুম এভাবেই, চল…
মামুনকে নিয়ে প্রিয়া দৌড়ে গিয়ে রিক্সায় ওঠে।
–ফুসকা খাবি?(মামুন)
–হুম হুম(প্রিয়া)
–মামা, কেনো একটা ফুসকা স্টলে নিয়ে চলেন।(রিক্সাওয়ালাকে)
তখনো রাত বেশি হয়নি। পুরো শহর তখনো সজাগ।
প্রিয়া আজ আরো বেশি খুশি।
কেনো জানি মনে হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখি মেয়েটা প্রিয়া….
প্রিয়া মামুনের হাত ধরে রিক্সায় বসে আছে।
–জানিস, আজ আমি অনেক খুশি।(প্রিয়া)
–কেনো কেনো?(মামুন)
–যা যা চাচ্ছি সবই আমার মন মতো হচ্ছে।
–তাই এতো খুশি?
–হুম…. আমার কি যে করতে ইচ্ছে করছে বুঝতে পারছি না।
–তুই কি পাগল হয়ে গেলি? এতো লাফালাফি করছিস কেনো?
–(আস্তে করে মামুনের কাধে মাথা রেখে) আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না তুই সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে গেছিস। আজ কেনো জানি আমার এত খুশি সহ্য হচ্ছে না।
–খুশি সহ্য হচ্ছে না?
–হুম, আচ্ছা, এতো খুশি সহ্য করতে না পেরে যদি আমি মরে যাই?
–চুপ করবি?
–বল না, তাহলে তুই কি করবি?
–আমি আর কি করবো? অনেক দায়িত্ব বাড়বে আমার।
–কিসের দায়িত্ব?
–একটা মানুষ মরে গেলে তার কাছের মানুষকে অনেক দায়িত্ব নিতে হয় না, ওটাই….।
–কি বললি? তুই কাঁদবি না আমার জন্য?
–কাঁদবো কেনো?
–আমাকে ভালোবাসিস না?
–তুই আসলেই একটা পাগলি।
–আমি বুঝে গেছি, তুই আমাকে ভালোবাসিস না।
–মামা চলে এসেছি…(রিক্সাওায়ালা)
–চল চল, চলে এসেছি।
–তোর সাথে আর কোনো কথা নাই, তোর খাওয়া তুই খা, আমার খাওয়া আমি খাবো।
প্রিয়া রিক্সা থেকে নেমে অভিমান করে রাস্তার ওপারে আগেই ফুসকা স্টলের দিকে পা বাড়ায়।
মামুন হাসতে হাসতে রিক্সা থেকে নামে।
একটা চিংকারের শব্দে মামুন রাস্তার দিকে তাকায়।
প্রিয়া রাস্তার এক পাশে পড়ে আছে। মামুন প্রিয়ার দিকে দৌড় দেয়।
কিন্তু প্রিয়ার কাছে পৌছানোর আগে মামুনেরও এক্সিডেন্ট হয়ে যায়।
দুজন রাস্তার দুপাশে পড়ে আছে…।
.
.
.
চলবে……..
.
.
অধিকার
লেখক A_Al_Mamun
পর্ব :- ৫
.
প্রিয়া রাস্তার এক পাশে পড়ে আছে। মামুন প্রিয়ার দিকে দৌড় দেয়।
কিন্তু প্রিয়ার কাছে পৌছানোর আগেই মামুনের এক্সিডেন্ট হয়ে যায়।
দুজন রাস্তার দুপাশে পড়ে আছে…।
২ দিন পর…….
আজ মামুনের জ্ঞান ফিরেছে।
হাসপাতালের একটা ছোট্ট বেডে শুয়ে আছে।
পরিবারের লোকজন সবাই মামুনের চারপাশে দাড়িয়ে আছে।
চোখ মেলে একনজরে সবাইকে দেখছে মামুন।
হ্যা, সবার সাথে প্রিয়াও আছে। মায়ের হাত ধরে মায়ের পাশেই দাড়িয়ে আছে।
মামুন এক হাত তুলে প্রিয়াকে কাছে ডাকে।
প্রিয়া ধীরেধীরে মামুনের সামনে আসে।
–তুই ঠিক আছিস?(মামুন)
–হ্যা, আমার আবার কি হবে?(প্রিয়া)
–কেনো ওভাবে রাস্তা পার হচ্ছিলি? যদি কিছু হয়ে যেতো!
–রাস্তা পার হয়েছি? কোথায় গিয়েছি?
মামুন অবাক চোখে প্রিয়ার দিকে তাকায়, প্রিয়ার চোখে কোনো রকম অনুভূতি নেই।
মামুন মা আর চাচির দিকেও তাকায়, দুজনই কাঁদছে।
প্রিয়ার কথাবার্তাও কেমন পরিবর্তন হয়ে গেছে।
কেননা মামুন হাসপাতালের বেডে, এমন অবস্থায় প্রিয়ার খুব সাধারন ভাবে দুরে থাকা কেমন যেনো অন্যরকম লাগছে।
মামুনের কথা গুলোর উত্তর দিয়ে প্রিয়া আবার পিছিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে দাড়ায়।
মামুন বেশ অবাক হয়।
উঠতে গিয়েও উঠতে পারলো না। কারন মামুনের পায়ে আঘাত লেগেছিলো।
মামুনের বাবা মা, আর প্রিয়ার বাবা মা যখন মামুনের অবস্থা সম্পর্কে ডাক্তারের কাছে জানতে চেয়েছিলো, তখন ডাক্তার বলেছিলো।
“পায়ে হালকা আঘাত পেয়েছে। তবে আপনাদের থেকে সব কিছু জানার পর এটা মনে হচ্ছে আমার ধারনা ভুল। এর কারন হচ্ছে জ্ঞান ফেরার পরই রুগি সবচেয়ে বড় আঘাতটা পাবে। আর সেটা কেমন আঘাত তা আপনারা তখনই বুঝতে পারবেন। আর এর ঔষুধ হলেন আপনারা।”
এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চললে কয়েক দিনের মধ্যেই শারীরিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
হাসপাতালে সবার সামনে মামুন আর কোনো কথা বাড়ালো না।
সেদিন রাতেই মামুনকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়।
মা বাবা, চাচা চাচি আর প্রিয়া সবাই পাশে আছে।
মামুন সবার সামনে প্রিয়াকে আবার কাছে ডাকে।
–প্রিয়া,,, তোর কিছু হয়েছে?
–নাতো, আমার আবার কি হবে?
–এতো দুরে দুরে আছিস যে।
–কোথায় দুরে আছি, সবার সাথেই তো আছি।
–না, তুই অনেকটা দুরে আছিস। আমার পাশে বস….
প্রিয়া কিছুটা অসস্তি অনুভব করে, তবুও মামুনের কথা মতো তার পাশে বসে।
প্রিয়ার হাতটা মামুন নিজের হাতে তুলে নেয়। ওমনি প্রিয়া হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।
–কি করছিস?(প্রিয়া)
–কি হয়েছে তোর? কেনো এমন করছিস?(মামুন)
–কি করছি আমি?
–এমন ব্যবহার করছিস যেনো আমি তোর পর।
–পর? তুই আমার চাচাতো ভাই, তোর এক্সিডেন্ট হলো, তোকে দেখতে আসলাম। খোজ খবর নিতে আসলাম। তবুও পর বলছিস?
–চাচাতো ভাই? প্রিয়া… তোর কিছু হয়েছে। কি হয়েছে তোর? কেউ কিছু বলেছে?
–আজব তো, তুই এমন ব্যবহার করছিস কেনো?
.
মামুন আবারও মায়ের দিকে তাকায়….। মা মুখটা আচল দিয়ে ঢেকে কেঁদেই যাচ্ছে।
মামুন সবাইকে বাহিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে…
প্রিয়া ব্যতীত সবাই বাহিরে চলে যায়।
–প্রিয়া, তুই আমার সাথে মজা করছিস?
–মজা? মজা কেনো করবো?
–মজা না হলে অবহেলা করছিস কেনো?
–আচ্ছা, আমাকে একটা কথা বলতো, সবাইকে রেখে আমার পেছনে পড়লি কেনো? কি করেছি আমি?
–তুই আমার বিয়ে করা বউ। কেনো এমন ব্যবহার করছিস?
–কিহ? বিয়ে? তোর মাথা ঠিক আছে? এই, তোর মাথায় আঘাত লাগেনি তো? জেঠিমাকে বলতে হবে তোকে আবার ডাক্তার দেখাতে।
–প্রিয়া… কি সব আবল তাবল বকছিস?
–আবল তাবল? আমি তোর চাচাতো বোন, আর আমাকে বলছিস আমি তোর বউ? ছিঃ লজ্জা করছে না তোর?
–মানে?? কি সব বলছিস তুই? আমাদের ভালোবেসেই বিয়েটা হয়েছে। ছিঃ বলছিস কেনো?
–মামুন, কি সব বলছিস আমাকে? আমি তোর বোন….।
মামুন নিমিষেই চুপ হয়ে যায়, আর বুঝতে বাকি রইলো না যে প্রিয়ার কিছু একটা হয়েছে।
প্রিয়া মামুনের সাথে রাগারাগি করে কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে যায়।
পেছন পেছন প্রিয়ার মাও প্রিয়ার রুমে আসে।
–কি হয়েছে মা? কাঁদছিস কেনো?
–মামুন আমাকে উল্টাপাল্টা কত কিছু বলছে।
–কি বলছে?
–আমি নাকি ওকে ভালোবাসি, আর আমাদের নাকি বিয়েও হয়েছে। আমাকে বলছে আমি ওর বউ। কেনো আমাকে এসব বলছে?
–দেখ মা, ও মাত্র হাসপাতাল থেকে এসেছে। এখনো ও অসুস্থ… হয়তো ওর মানসিক অবস্থা ঠিক নেই। এসব ভাবিস না।
–আমি আর ওর সাথে কথাই বলবো না। ওর চাচাতো বোন হই আমি, আমাকে কিভাবে এসব বলতে পারলো?
–শান্ত হয়ে যা মা, ছেলেটা এখন অসুস্থ। একটু বোঝার চেষ্টা কর।
–ঠিক আছে, কিন্তু পরের বার যদি এমন কিছু করে তবে আর ওকে ছাড়বো না, মনে রেখো।
একটু পর জেঠিমা প্রিয়ার রুমে আসে।
–জেঠিমা এসেছো? জানো তোমার ছেলে আমাকে কি বলছে?
–আমি সব শুনেছিরে মা। আর কিছু বলিস না।
–তোমার ছেলেকে আবার ডাক্তার দেখাও। নাহলে পরে পাগল হয়ে যেতে পারে।
–প্রিয়া, কি বলছিস এসব?
–ঠিকই তো বলছি।
–হুম, যদি আমার ছেলে পাগল হয় তবে তার কারন হবি তুই। কথাটা মনে রাখিস।
বলেই জেঠিমা হনহন করে প্রিয়ার রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
প্রিয়ার মা রুমের এক কোনায় দাড়িয়ে আছে।
–দেখো মা, ওরা মা ছেলে আমার সাথে কেমন ব্যবহার করছে। দুজনই পাগল হয়ে যায়নি তো?
–প্রিয়া, চুপ করবি তুই?
–বার বার আমাকে কেনো চুপ করতে বলো? ওরা আমাকে এটা ওটা বলে যায়, ওদের তো কিছু বলো না।
–তোর কি কিছুই মনে নেই?
–মনে নেই? কি বলছো?
–কিছু না, তুই বিশ্রাম নে।
প্রিয়ার মা সোজা মামুনের কাছে চলে যায়।
মামুন একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে এবং চোখ দিয়ে নোনা জল বেয়ে পড়ছে। পাশেই দাড়িয়ে আছে ওর মা।
তার চোখেও পানি।
প্রিয়ার মা মামুনের মায়ের পাশে এসে দাড়ায়।
–কেঁদো না ভাবি, সব ঠিক হয়ে যাবে। মামুনকে সামলাও….। মনে নেই ডাক্তার কি বলেছিলো?
–হ্যা রে বোন, সব মনে আছে আমার। আমার ছেলেটা যে পাথর হয়ে আছে। কি করে ওকে আমি বোঝাবো?
–দাড়াও, আমি বোঝানোর চেষ্টা করছি।
.
চাচি মামুনের পাশে এসে বসে।
–মামুন
—
–মামুন….।
—
–মামুন শুনেছিস? (হালকা একটু ধাক্কা দিয়ে)
–হ্যা হ্যা…
–কেমন আছিস বাবা?
–ভা ভা ভালো…
–কেনো কাঁদছিস বাবা?
–চাচি, প্রিয়া কেনো এমন করছে?
–ওর কোনে দোষ নেইরে বাবা, সবই নিয়তি।
–মানে?
–এক্সিডেন্ট হওয়ার পর তোকে আর প্রিয়াকে হাসপাতালে আনা হয়েছিলো। ডাক্তার প্রিয়ার সব রিপোর্ট দেখে জানায়, মাথায় আঘাত লাগার ফলে প্রিয়ার জীবন থেকে অনেক স্মৃতি নষ্ট হয়ে গেছে। ওর সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছুই ও ভুলে গেছে। কিন্তু হ্যা, ও আমাদের চিনতে ভুল করেনি। তোর সাথে ঘটে যাওয়া মুহূর্ত, বিয়ে হওয়া, কিছুই ওর মনে নেই।
–কি বলছো এসব?
–আমি ঠিকই বলছি। প্রিয়া সব ভুলে গেছে।
–আমাকে তো ঠিকই চিনতে পেরেছে। তাহলে ২ দিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ভুলে গেলো?
–সবই নিয়তিরে বাবা…। তুই এ নিয়ে কোনো চিন্তা করিস না। আমরা তো আছিই। সব ঠিক হয়ে যাবে।
–না চাচি, যা করার আমিই করবো।
–কি করবি তুই?
–আর কিছু ওর মনে থাকুক বা না থাকুক। আমি আমাকে মনে করিয়েই ছাড়বো।
.
৩-৪ দিন পরই মামুন সুস্থ হয়ে যায়। এই কয়দিন প্রিয়া আর মামুন কেউ কারো সাথে কথা বলেনি।
ঘর থেকে বের হয়ে প্রথমেই প্রিয়ার রুমে আসে।
পুরো রুম ফাকা, মামুন বুঝতে পারে প্রিয়া ওয়াসরুমে আছে।
প্রিয়ার বিছানায় গাঁ এলিয়ে দেয়।
একটু পর প্রিয়া ওয়াসরুম থেকে বের হয়।
–একি, তুই এখানে?
–তোর সাথে কিছু কথা ছিলো, তাই এলাম।
–আমার অনুমতি ছাড়া আমার রুমে কেনো এলি?
–আচ্ছা সরি…
–এরপর থেকে কখনো আমার অনুমতি ছাড়া আমার রুমে আসবি না। বল কি বলবি।
–আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি।
–কি জন্য?
–তোকে কিছু উল্টাপাল্টা কথা বলে দিয়েছিলাম। আসলে আমার মাথা কাজ করছিলো না, তাই কি বলতে কি বলে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি।
–আমি তখনই বুঝেছিলাম, তোর মানসিক অবস্থা তখন ঠিক ছিলো না।
–হ্যা, আর এই জন্যই আমি ক্ষমা চাইতে এসেছি।
–ঠিক আছে, মাফ করে দিলাম। আর যেনো কখনো এসব না বলিস। আমি তোর চাচাতো বোন হই, এটা মাথায় রাখিস।
–এসব বলা তো দুরের কথা, আর কখনো মুখেও আনবো না।
–ঠিক আছে।
প্রিয়া আবার মামুনের সাথে কথা বলা শুরু করে।
প্রিয়ার পুরো অতীত মনে আছে। মনে নেই শুধু অতীতের কিছু ইতিহাস।
মনে নেই মামুনের ভালোবাসা, মনে নেই মামুনের সাথে হওয়া বিয়ের কথা।
মামুনের সুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে খালা আর অনি এসেছে মামুনকে দেখতে।
অনি এখন নিশ্চিন্তে মামুনের কাছে যেতে পারে। প্রিয়ার পক্ষ থেকে কোনো বাঁধা আসে না।
প্রিয়ার সামনেই অনি মামুনের হাত ধরে বসে থাকে। তবুও প্রিয়ার দিক থেকে কোনো রকম সাড়া পাওয়া যায় না।
মামুন নিজেও অনির হাত ছাড়ায় না। সে দেখতে চায় প্রিয়া কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়।
কিন্তু বার বারই মামুন ব্যর্থ।
আজ অনি বাড়ি চলে যাবে। যাওয়ার আগে একবার মামুনের কাছে আসে।
–মামুন ভাই, তোমায় একটা কথা বলবো?
–হ্যা বল।
–কিছু মনে করবে না তো?
–না না, বল।
–প্রিয়ার এমন আচরনে তোমার কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না?
–তুই তো জানিসই প্রিয়া সব ভুলে গেছে। কষ্ট আমি তখনই পেতাম যখন জেনে বুঝে প্রিয়া এমন করতো। কিন্তু ওর যে কিছুই মনে নেই। ও যদি আগের মতো থাকতো, তুই কি আমার সামনে বসে থাকার সাহস পেতি?
–ওর কিছু মনে নেই বলেই তো আজ তোমাকে কিছু বলতে এসেছি।
–কি?
–সবসময় প্রিয়া প্রিয়া করতে। আজ সেই প্রিয়াই তোমায় ভুলে গেছে। যার জন্য তুমি এতটা কষ্ট পাচ্ছো। ভুলে যাও ওকে। এমন কেউ আছে যে তোমায় নিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চায়। যদি তুমি তাকে সেই সুযোগটা দাও।
–মানে? কি বলছিস?
–আমি অনেক আগে থেকেই মনে মনে তোমায় ভালোবাসি। কিন্তু প্রিয়ার জন্য কখনো তা বলা হয়নি। কিন্তু আজ সেই প্রিয়া তোমার জীবনে নেই।
–অনি, তুই ভালো করেই জানিস আমি প্রিয়াকে কতটা ভালোবাসি। আমি তোকে এটা বলতে পারি যে নিজের এই সুখের জীবনটায় অন্ধকার ডেকে আনিস না। কারন ভালোবাসার মানুষের দেওয়া আঘাত খুবই যন্ত্রনার হয়। তুই ভুলে যা আমাকে… আমি কখনোই তোকে ভালোবাসতে পারবোনা। আমার মনে এখনো প্রিয়া আছে, আর থাকবে।
–কেনো ওর জন্য নিজেকে এত কষ্ট দিচ্ছো? যে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে তাকে একটা সুযোগ কি দেওয়া যায় না? হয়তো সে তোমায় প্রিয়ার থেকেও বেশি ভালোবাসে।
–অনি, এমন করিস না। বুঝতে চেষ্টা কর। আমি প্রিয়াকে খুব ভালোবাসি। এবং আমার বিশ্বাস প্রিয়া আবার আমার কাছে ফিরে আসবে।
–আসবে না, এবং আমি অপেক্ষায় রইলাম। একদিন না একদিন তুমি আমাকে মেনে নিবে।
–তুই পাগল হয়ে গেছিস। সব কিছু জেনেও তুই পাগলামি করছিস।
–হ্যা, কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি।
বলেই অনি চলে যায়।
.
–চাচি.।।।
–মামুন তুই? এতো রাতে?
–প্রিয়া কোথায়?
–ঘুমাচ্ছে।
–একবার যাই ওর রুমে?
–ও দেখলে এতরাতে তুলকালাম শুরু করবে।
–কিচ্ছু হবে না। ওকে একবার দেখেই চলে আসবো।
–আচ্ছা যা…
মামুন ধীরেধীরে প্রিয়ার কাছে আসে।
মেয়েটা কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে একপাশ হয়ে ঘুমোচ্ছে।
মামুন ওর মাথার পাশে বসে।
–ঘুমাচ্ছিস? আমার ঘুম নষ্ট করে দিয়ে কিভাবে এতো আরামে ঘুমাচ্ছিস? আমার জন্য কি তোর একটুও মায়া হয় না? জানিস, আজ তোর শত্রু অনি এসে আমাকে বললো ও নাকি আমাকে ভালোবাসে। কেনো তুই এটা শুনলি না, কেনো অনিকে ধমক দিলি না? কোথায় গেলো তোর সেই ভালোবাসা? এভাবে আমাকে ভুলে গেলি? অনি আমার হাত ধরে বসে ছিলো। কিন্তু আমি ছাড়াই নি, ভেবেছি তুই ছাড়িয়ে দিবি। কেনো কিছু করলি না? তুই না বলতি আমর ওপর শুধু তোরই অধিকার আছে। কোথায় গেলো সেই অধিকার? আমি যে রাত জেগে তোর জন্য এভাবে কাঁদি, সেটা কেনো দেখিস না? তুই না আমার চোখের পানি একদমই সহ্য করতে পারিস না। আজ আমি এতো কাঁদছি, তবু কেনো আমার চোখের পানি মুছে দিচ্ছিস না? কতদিন হয়ে গেলো আমার পাগলিটা আমায় ভালোবাসি বলে না, আমায় আদর করে না, জড়িয়ে ধরে না। জানিস, আজ তোর এই কোলবালিশের জায়গায় আমি থাকতাম। কিন্তু তুই সেটা হতে দিলি না। আচ্ছা, আমি যদি এখনও কোলবালিশের জায়গায় হই, তাহলে তুই কি আমাকে মারবি? আজ আমার খুব ইচ্ছে করছে তোর সাথে ঘুমাতে। এক মিনিট, আমি চাচিকে বলে আসি।(কথাগুলো বিড়বিড় করে প্রিয়ার কানের সামনে বললো)
–চাচি
–হুম
–আজ আমি প্রিয়ার রুমে ঘুমাই?
–কি বলছিস? ও যদি দেখতে পায় পুরো বাড়ি মাথায় তুলবে।
–কিচ্ছু হবে না, ও বুঝতেই পারবে না।
–না না, সমস্যা হবে। যাস না ওর রুমে।
–আমি কিচ্ছু করবো না, একদম চুপচাপ থাকবো।
অনেক কষ্টে মামুন চাচিকে রাজি করায়।
.
প্রিয়া এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মামুন ধীরেধীরে প্রিয়ার হাত ছাড়িয়ে কোলবালিশটা নিয়ে নেয় এবং কোলবালিশের জায়গায় নিজেই শুয়ে পড়ে।
প্রিয়া পরম আদরে মামুনকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
দুজন খুবই কাছাকাছি….
মামুনের প্ল্যান ছিলে সকাল হওয়ার আগেই রুম থেকে বের হয়ে যাবে।
কিন্তু মামুনের যখন ঘুম ভাঙে তখন অনেকটা বেলা হয়ে যায়।
প্রিয়ার গরম নিশ্বাস মামুনের মুখের ওপর পড়ছে।
মনের অজান্তেই প্রিয়াকে শক্ত করে বুকে নিয়ে নেয় মামুন।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এখনো প্রিয়া চোখ খুলছে না।
মামুন খেয়াল করে প্রিয়ার পুরো শরীর প্রচন্ড গরম হয়ে আছে।
আর বুঝতে বাকি রইলো না কেনো প্রিয়া চোখ খুলছে না।
কোনো কিছু না ভেবেই মামুন দ্রুত ডাক্তারকে ফোন দেয়।
বাড়িতে ডাক্তার আসার আগ পর্যন্ত কেউ জানতো না প্রিয়া অসুস্থ।
ডাক্তারের সাথে সাথে প্রিয়ার মাও প্রিয়ার রুমে প্রবেশ করে।
প্রিয়ার মা তাকিয়ে দেখে মামুন প্রিয়ার মাথায় পানি দিচ্ছে।
–মামুন, কি হয়েছে প্রিয়ার?
–কিছু হয়নি চাচি… হালকা জ্বর এসেছে।
–আমাকে বললি না কেনো?
–তুমি একদম চিন্তা করো না, আমি আছি তো। ডাক্তারও চলে এসেছে।
–কি আজব কান্ড, আমার মেয়ের জ্বর, অথচ আমিই জানি না।
–চাচি, তুমি শান্ত হয়ে বসো। আগে ডাক্তার দেখুক।
ডাক্তার চেকআপ করে কিছু ঔষুধ দিয়ে চলে যায়।
–দেখো চাচি, ডাক্তার ঔষুধ দিয়ে গেছে। আর চিন্তা করো না। আমি আছি তো।
–তুই থেকে কি করবি? ঘরে চলে যা…।
–চাচি, তুমিতো সবই জানো প্রিয়া আমার কি? তোমার মেয়ে হয় ঠিকই। কিন্তু প্রিয়া আমার বউ। আমার দিক থেকে আমাকে আমার দায়িত্ব পালন করতে দাও।
–যেই মেয়ের এসব কিছুই মনে নেই। তোকে স্বামী হিসেবে মানে না। কেনো তার সেবা করবি? কেনো তার জন্য এখানে সময় নষ্ট করবি?
–আমি জানি, প্রিয়ার আবার সব মনে পড়বে। ও আমাকে মেনে নিবে। তুমি দেখে নিও।
–তাই যেনো হয়।
–আচ্ছা, তুমি এখন যাও, আমি ওকে দেখে রাখবো।
–ও চিৎকার চেঁচামিচি করলে আমালে ডাক দিস।
–আচ্ছা,
.
মামুন প্রিয়ার মাথায় পানি দিচ্ছে। প্রিয়ার পুরো শরীর কাঁপছে। মামুন প্রিয়ার শরীরে কাথা টেনে দেয়।
কিন্তু প্রিয়ার কাপাকাপি বন্ধ হচ্ছে না।
কোনো উপায় না পেয়ে মামুন প্রিয়ার পাশে শুয়ে পড়ে এবং প্রিয়াকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নেয়।
ধীরেধীরে প্রিয়ার কাপুনি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে কাঁথার গরমে আর প্রিয়ার শরীরে গরমে মামুনের অবস্থা খারাপ।
তবুও প্রিয়াকে ছেড়ে দেয় নি।
দুপুরের পর প্রিয়া বিড়বিড় করে মামুনের নাম নিতে থাকে।
মামুন প্রিয়ার মুখে নিজের নাম স্পষ্ট শুনতে পায়।
খুশিতে প্রিয়াকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নেয়।
একটু পরই প্রিয়ার জ্ঞান ফিরে।
প্রিয়া খেয়াল করে কেউ একজন তাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে রেখেছে।
যেখান থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা প্রিয়ার একদম নেই।
চুপচাপ কিছুক্ষণ ওভাবেই থাকে।
একটু পর…..
–কে?(খুবই ধীর গলায় প্রিয়া)
মামুন ভয়ে ছেড়ে দিতে চায়।
–প্লিজ ছেড়ো না। আর কিছুক্ষণ এভাবে রাখো। খুব শান্তি লাগছে।
মামুন আবার শক্ত করে জড়িয়ে নেয়।
প্রিয়া ওভাবেই ধীরেধীরে গোঙাতে থাকে।
–প্রিয়া…।
—
–প্রিয়া….
–উম
–এখন শরীরটা কেমন লাগছে?
–উম
–বিকেল হয়ে এলো, এখনো কিছুই খাসনি। ওঠ, কিছু খেয়ে ঔষুধ খেয়ে নে।
–উমমম
মামুন প্রিয়াকে ছেড়ে দিতে চাইলে প্রিয়া কান্না করার মতো শব্দ করে ওঠে।
তবুও প্রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে সোজা করে বসায়।
প্রিয়া বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছে।
–আয়, হাত মুখ ধুয়ে নে।
–উমমম
–খেতে হবে তো। নাহলে ঔষুধ খাবি কি করে? আয়
প্রিয়া এখনো এক জায়গায় বসে আছে।
কোনো উপায় না পেয়ে প্রিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে ওয়াসরুমে আসা হলো।
মামুন নিজের হাতে সব কিছু করিয়ে আবার রুমে নিয়ে আসে।
চাচিকে দিয়ে খাবার আনানো হলো….
প্রিয়া খেতে না চাইলেও ধমক দিয়ে দিয়ে প্রিয়াকে খাওয়ানো হলো।
খাবার খাইয়ে ঔষুধ খাইয়ে প্রিয়াকে আবার শুইয়ে দেয়।
.
.
চলবে……..
অধিকার
লেখক A_Al_Mamun
পর্ব :- ৬
.
খাবার খাইয়ে ঔষুধ খাইয়ে প্রিয়াকে আবার শুইয়ে দেয়।
–প্রিয়া….
–হুম।
–এখন কেমন লাগছে?
–উমমমম
–আমাকে চিনতে পারছিস?
–হুম
–ঠান্ডা লাগছে?
–হুম
–আবার জড়িয়ে ধরে শুবো?
–উম্মমম
–তুই রাগ করবি না?
প্রিয়া চুপ করে আছে। কোনো কথা না বলে মামুন আবার প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।
–প্রিয়া
–উম
–তুই না বলেছিলি সারাজীবন এভাবে আমায় বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে পারবি। কি হয়ে গেছে তোর? কেনো সব ভুলে গিয়েছিস?
—
–জানি, তোর হুস নেই। নইলে আমায় একদম তোর কাছে আসতে দিতি না। তোর এই অবহেলা একদম সহ্য হচ্ছে না। আমি যে মরে যাবো। তুই কি চাস আমি মরে যাই?
—
–যদি কখনো তোর পুরোনো সব কিছু মনে পড়ে যায়, তাহলে কিভাবে নিজেকে ক্ষমা করবি? আমার একটু কষ্ট হলে বাড়ির কাউকে শান্তিতে থাকতে দিস না। এখনতো নিজেই কষ্ট দিচ্ছিস,, কি করবি তখন?
—
মামুন প্রিয়ার মুখটার দিকে তাকায়….
–আমার পরিটা পুরো বদলে গেছে। যেই পরিটা সব কথা আমাকে হাসিমুখে বলতো সে এখন আমার দিকে তাকিয়ে একবারও হাসে না। কতদিন তোর হাসি দেখি না।
আলতো করে প্রিয়ার ঠোটে একটা পাপ্পি দিয়ে আবার প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
প্রিয়া যেনো শীতের কম্বল জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে।
মামুন যতবারই ছেড়ে দিতে চেষ্টা করেছে প্রিয়ার ততবারই গুঙিয়ে প্রতিবাদ করেছে।
সন্ধ্যায় প্রিয়ার কাপুনি দিয়ে আরো বেশি জ্বর আসে।
ডাক্তার বলেছিলো, ঔষুধ খেলে এমন কাপুনি দিয়ে দ্বিগুণ জ্বর আসবে, এবং তা ধীরেধীরে ছেড়ে দিবে।
ওই সময় যেনো রুগির মাথায় পানি দেওয়া হয় এবং একটা কাপড় ভিজিয়ে শরীরটা মুছে দেওয়া হয়।
রাতে মামুন প্রিয়াকে তুলে আবার খাবার খাইয়ে ঔষুধ খাইয়ে দেয়।
–মামুন, তুই ঘরে চলে যা, সারাদিন ওর কাছে পড়ে ছিলি। এবার গিয়ে একটু ঘুমা।আমি ওর মাথায় পানি দিয়ে শরীরটা মুছে দিবো। যা……
–আমি এখানেই আছি। আর তোমাকে এত কষ্ট করতে হবে না চাচি। আমিই পারবো ওর মাথায় পানি দিতে, শরীর মুছে দিতে।
–না না, আমি আছি। আমি ওর শরীর মুছে দিবো। তুই ঘরে যা।
–চাচি, আমি বুঝতে পারছি তুমি কি বলতে চাচ্ছো। এটা ভুলে যেও না যে প্রিয়া আমার স্ত্রী। ওর কাছে আমি কোনো পরপুরুষ নই। আমার স্ত্রীর খেয়াল আমি ভালোভাবেই রাখতে পারবো।
–পাগলামো করিস না বাবা, ওর হুস ফিরলে ও উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলবে। তুই ঘরে চলে যা।
–তুমি এখান থেকে যাবে? নাকি ওকে আমার ঘরে নিয়ে যাবো?
–এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো বাবা? আমি তোর ভালোর জন্যই বলছি।
–ওকে আমি আমার ঘরে নিয়ে যাচ্ছি। ও সুস্থ হলে নিজেই ফিরবে।
প্রিয়াকে কোলে তুলে মামুন সোজা নিজের ঘরে চলে আসে।
ঘরের সবাই খুবই অবাক।
কারন সবাই এই ভয় পাচ্ছে যে, প্রিয়ার হুস ফিরলে ও যদি মামুনকে ওর সাথে এভাবে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় পায়, তাহলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবে।
মামুন কারো কথার তোয়াক্কা না করে প্রিয়াকে নিজের বিছানায় শোয়ায়।
মা, চাচি সবাই বোঝাতে এসেছে। বিরক্ত হয়ে মামুন দরজা লাগিয়ে দেয়।
প্রিয়ার মাথায় পানি দেওয়া, শরীর মুছে দেওয়া সব মামুন নিজেই করে।
সারারাত এভাবে প্রিয়ার সেবাযত্ন করে।
শেষরাতে মামুন প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
বেশ বেলা করে মামুনের ঘুম ভাঙে।
প্রিয়াকে এখনো জড়িয়ে আছে। প্রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে প্রিয়া এখনো ঘুমাচ্ছে।
শরীরের তাপমাত্রা আগের চেয়ে অনেকটা স্বাভাবিক।
এই সুযোগে মামুন প্রিয়াকে ছাড়াতে চেষ্টা করে।
ঠিক সেই মুহুর্তে প্রিয়ার ঘুম ভাঙতে শুরু করে।
দুহাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে এবার প্রিয়া নিজেই মামুনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
মামুন পাথর হয়ে আছে।
একটুও নাড়াচাড়া করছে না।
মামুনকে জড়িয়ে ধরে প্রিয়া মামুনের শরীরের ওপর গড়াগড়ি করে।
একটু পর প্রিয়া ধীরেসুস্থে উঠে বসে।
চুল ঠিক করতে করতে বিছানায় তাকিয়ে দেখে মামুন ঘুমাচ্ছে।
প্রিয়া দ্রুত নিজের কাপড় ঠিক করে বিছানা থেকে নেমে আসে।
বুঝতে পারছে না কি হয়েছে, মনে মনে ভাবতে থাকে, মামুন এখানে কেনো? ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা মামুনেরই রুম। তাহলে আমি এখানে এলাম কি করে?
কি হচ্ছে এসব?
মামুন সজাগ হয়েও ঘুমের ভান ধরে আছে।
কারন এখন চোখ খুললেই প্রিয়ার বকা খেতে হবে।
মামুনকে অবাক করে দিয়ে প্রিয়া ধীরেধীরে মামুনে ডাকতে থাকে।
–মামুন
—
–এই মামুন
–হুম
–ওঠ না
–কি?
–আমি এখানে কি করে এলাম?
–কাল তোর জ্বর ছিলো, তাই।
–এই রুমে কেনো?
–আমি নিয়ে এসেছিলাম।
–কেনো?
–চাচির শরীরটা ভালো ছিলো না। তাই তোর খেয়াল রাখার জন্য তোকে এখানে নিয়ে এসেছি।
–তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু তুই আমার সাথে এক বিছানায় কেনো?
–তোর মাথায় জলপট্টি দিচ্ছিলাম, কখন ঘুম চলে এসেছে বুঝতেই পারি নি।
–তুই আমার মাথায় জলপট্টি দিয়েছিস?
–হুম, কেনো? দেওয়া যায় না?
–কেনো দিবি?
–তোর ওপর আমার অধিকার আছে। তাই….
–কিসের অধিকার?
–সেটা পরে কোনো সময় শুনিস। এখন বল তোর শরীরটা কেমন আছে?
–হুম ভালো।
–ডাক্তারের ঔষুধে তাহলে কাজ হয়েছে। ঘরে যেতে পারবি? নাকি দিয়ে আসবো?
–যেভাবে এনেছিস সেভাবে?
–মানে?
–আমি যেতে পারবো।
বলেই প্রিয়া নিজের ঘরের দিকে হাটা দেয়।
মামুন মাথা চুলকাতে থাকে, প্রিয়া কি বললো? যেভাবে এনেছিস সেভাবে? কি বোঝালো?
সবকিছু বাদ দিয়ে মামুন এটা শোকর করে যে প্রিয়া বকাবকি করে নি।
আজ অনেকদিন পর প্রিয়া সন্ধ্যা বেলায় মামুনের রুমে আসে।
–প্রিয়া তুই?
–কেনো? আসতে পারি না?
–কেনো পারবি না? এটাতো তোরই ঘর।
–আমার?
–না মানে, কি মনে করে আসলি?
–বিকেলে মা তোর কথা বললো।
–কি বললো?
–তুই সারারাত আমার সেবা করেছিস।
–আর কিছু বলেনি?
–আর কি বলবে?
–কিছু না।
–কাল এই জ্বরের মধ্যে আমি তোকে নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখেছি।
–কি দেখলি?
–সেটা বলবো না।
–বল না প্লিজ।
–না।
–এটা বলার জন্যই এসেছিস?
–না
–তাহলে?
–ধন্যবাদ।
–কেনো?
–আমার এতো খেয়াল রাখার জন্য।
–এই দায়িত্ব তো সারাজীবনের জন্য নিয়ে নিয়েছি।(বিড়বিড় করে)
–কি?
–কিছু না।
–আচ্ছা, আমি যাই।
–প্রিয়া।
–হুম?
হাটু গেড়ে বসে।
–বিকেলে বাজারে গিয়েছিলাম। এই ফুলটা দেখে সুন্দর লাগলো, তাই নিলাম। এই নে।
–কেনো জানি আজ তোর ওপর আমার রাগ আসছে না। তুই কি আমাকে প্রোপজ করছিস যে হাটু গেড়ে বসেছিস।।
–না না, তোকে প্রোপজ করার সাহস আমার আছে? তুই যেই রাগি।
–হয়েছে হয়েছে, দে ফুল দে।
মামুন খুশি মনে প্রিয়াকে ফুলটা দিয়ে দেয়।
প্রিয়া ফুলটা নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
.
মামুনের মনটা আজ বেশ খুশি।
প্রিয়া কেমন যেনো নরম হয়ে গেছে। আগের মতো আজ কোনো রাগ দেখায়নি।
মামুন রাতে প্রিয়ার কাছে আসে।
–প্রিয়া
–হুম
–খেয়েছিস?
–না।
–খেয়ে নে
–না, আজ খেতে ইচ্ছে করছে না।
–কি বলিস? খাবার না খেলে ঔষুধ কিভাবে খাবি?
–ঔষুধ খাওয়া লাগবে না। আমি একদম সুস্থ আছি।
–চুপ কর, খেতেই হবে। ডাক্তার বলেছে পুরো ঔষুধ শেষ করতে হবে।
–আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।
–আমি তোকে খাইয়ে দেই?
–তুই কেনো খাইয়ে দিবি?
–বন্ধু ভেবে তো খেতেই পারিস।
–আমার ইচ্ছে করছে নাতো।
–করবে, দাড়া আমি খাবার নিয়ে আসি।
মামুন একটা প্লেটে করে প্রিয়ার জন্য খাবার নিয়ে আসে।
–হ্যা কর।
–উম….
–খাবার খেয়ে সুন্দর করে ঔষুধ খেয়ে নিবি।
–না খেলে কি হবে?
–কিছু হবে না, তবুও খাবি।
–তুই কালও আমায় খাইয়ে দিয়েছিলি?
–তোর মনে আছে?
–কেনো থাকবে না?
–তোর তো হুস ছিলো না।
–আমার পুরোটা সময় হুস ছিলো। তুই আমার সাথে কি কি করেছিস সব আমার মনে আছে।
–সরি
–কেনো?
–তোকে স্পর্শ করার জন্য।
–তোর স্পর্শে আমি কোনো খারাপ ইঙ্গিত পাইনি। কাল সারাদিন আমার পাশে ছিলি। আমার খেয়াল রেখেছিলি। কিন্তু তোকে মুখ ফুটে কিছু বলিনি।
–থাক, বাদ দে…। খাওয়া শেষ কর।
–কেনো আমার জন্য এতকিছু করলি? কে হই আমি তোর?
–জানতে চাস?
–হুম
–তুই আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। যাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্তও বাঁচতে পারবো না।
–কেনো এসব বলছিস? সেদিনও এসব বলেছিলি। ভেবেছিলাম তুই অসুস্থ, তাই পাত্তা দেই নি। কিন্তু আজ আবার বলছিস।
–হুম।
–তুই এতো বেহায়া কেনো? এতো বকাবকি করি তবু তোর লজ্জা নেই।
–কারন তোকে আমি ভালোবাসি।
–চুপ করবি?
–হুম
–যা ঘরে যা।
–আজ আমার ঘুম হবে না।
–কেনো?
–গত দুইরাত আমার জীবনের সেরা রাত ছিলো। আজ সেগুলোই মনে পড়বে। তাই ঘুম আসবে না।
–তুই আমার সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করিসনি তো?
–কি করবো?
–কিছু না, তুই রাতে আমার সাথে ছিলি, মা তোকে কিছু বলেনি কেনো?
–কি বলবে? নিজের বউয়ের সাথে ঘুমিয়েছি।
–আবারও উল্টাপাল্টা বলছিস কিন্তু।
–সময় হলে বুঝবি আমি কি বলেছি।
–ভাই তুই যা এখান থেকে। তোর মুখ ধীরেধীরে হালকা হয়ে যাচ্ছে।
–যাচ্ছি, নিজের খেয়াল রাখিস।
–হুম।
.
প্রিয়ার সাথে এলাকার যারই দেখা হয় সেই প্রিয়াকে ভাবি বলে ডাকে।
প্রিয়া জিজ্ঞেস করলে বলে সে মামুনের বউ।
এ নিয়ে প্রিয়া ভীষন রেগে যায়।
বাড়ি এসে সবার সামনে মামুনকে প্রচন্ড অপমান করে।
মামুন চুপ করে একপাশে দাড়িয়ে আছে।
নিজের সব রাগ মামুনের ওপর ঝেড়ে প্রিয়া নিজের রুমে গিয়ে কাঁদতে থাকে।
–মামুন, কেনো তুই চুপ করে আছিস? ওকে সব কিছু খুলে বল। (চাচি)
–তুমি নিজেই নিজের মেয়েকে বোঝাতে পারছো না, আমি কি বোঝাবো?
–আমি কি বোঝাবো? তোর নাম নেওয়া মাত্রই প্রিয়া আর কিছু শুনতে চায় না। ও বলে আমি নাকি প্যাচপ্যাচ করি। আমার আর কি বলার থাকতে পারে।
–মায়ের কথাই ও শোনে না, আমার কথা শুনবে?
–তোর কাছে তো অনেক প্রমান আছে। বিয়ের ছবি, বিয়ের কাগজপত্র, ওকে এগুলো দেখা।
–না চাচি, ও মনে করবে সব বানিয়ে নিয়ে এসেছি। উল্টো হিতে বিপরীত হবে।
–তাহলে কি করবি?
–যা করার আমিই করবো, তোমরা ওকে কিছুই বলবে না।
–এভাবে আর কয়দিন চলবে? (মা)
–চিন্তা করো না মা, সব ঠিক হয়ে যাবে।
–কবে হবে?
–হবে হবে, ধর্য ধরো মা। সব হবে।
রাতে মা মামুনের কাছে আসে।
–মামুন
–হ্যা মা।
–তোকে একটা কথা বলার ছিলো।
–হ্যা বলো না।
–আমার মনে হয় না প্রিয়া কখনো এই বিয়ে মেনে নিবে।
–তুমি আবারও এসব নিয়ে চিন্তা করছো?
–না রে বাবা, আমি তোকে অন্য একটা কথা বলতে এসেছি।
–বলো।
–কাল অনির সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে।
–তো?
–তুই অনিকে বিয়ে কর, মেয়েটাও তোকে পছন্দ করে।
–কি বলছো মা?
–আমি ঠিকই বলছি, ছেলে বিয়ে করিয়েছি, কিন্তু ছেলের বউ এখনো ঘরে তুলতে পারলাম না। আমি চাই তুই প্রিয়ার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দে। কারন প্রিয়া কখনোই ফিরবে না।
–মা, তুমি জানো প্রিয়া এমনি এমনি এমন করছে না। ধীরেধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
–কবে ঠিক হবে? আমি মরার পর?
–মা, কি বলছো এসব?
–ঠিকই বলছি। তুই নতুন করে আবার জীবন শুরু কর। আমি অনির মায়ের সাথে কথা বলছি।
–প্লিজ মা, এমন করো না। আমাকে আর কিছুদিন সময় দাও, আমি প্রিয়াকে ফিরিয়ে আনবো।
–আমি আর ১সপ্তাহ দেখবো। এরপরই অনির সাথে তোর বিয়ে হবে।
–ঠিক আছে।
.
মা রুম থেকে বেরিয়ে যায়, কিন্তু মামুনকে রেখে যায় চিন্তার ধাপে। কি করবে এখন সে?
বিয়ের আগে মাকে অনেক কষ্টে মানিয়েছে। মা রাজি হওয়ার পর বিয়েটাও হলো।
এখন আবার সব কিছু উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে।
মাকে কি আর বোঝানো সম্ভব?
মামুন পুরো দমে তৈরী হয়ে যায়, এই ১ সপ্তাহের মধ্যে প্রিয়াকে ফিরিয়ে আনবে।
তা যে কোনো মূল্যেই হোক না কেনো।
পরদিন সকালে….
প্রিয়া তখনো ঘুমাচ্ছিলো।
–প্রিয়া…..
—
–প্রিয়া ওঠ…. কয়টা বাজে এখনো ঘুমাচ্ছিস।
–উম
–ওঠ….
–কি?
–ওঠ না।
–তুই এখানে?
–হুম
–কেনো এসেছিস?
–তোকে দেখতে।
–কাল এতকিছু বললাম, তবু চলে এলি।
–হুম, কারন আমি বেহায়া।
–তুই তো আগে এমন ছিলি না। কেনো আমার সাথে এমন করিস? কি করেছি আমি?
–আমি কেমন ছিলাম আগে?
–জানি না, কিন্তু এমন ছিলি না।
–আচ্ছা ওঠ। নাস্তা কর। তোকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।
–তোর সাথে আমি কোথাও যাবো না।
–এতো রাগ করিস কেনো? শপিং করতে যাবো।
–তোর শপিং তুই কর, আমি যাবো কেনো?
–আমার হবু বউয়ের জন্য কিছু শপিং করবো। ওর সাইজ তোর মতোই। তাই…
–তোর হবু বউ? কে?
–কে আবার? অনি….
–অনি? ও তোর হবু বউ হলো কবে?
–আগামী সপ্তাহে আমাদের বিয়ে।
–বিয়ে? আমি তো শুনলামই না।
–অনি নাকি আমাকে ভালোবাসে। ও মাকে বলেছে। তাই মা আমাদের বিয়ে ঠিক করেছে।
–তুই রাজি হয়ে গেলি?
–হুম, রাজি না হয়ে কি করবো? সারাজীবন তোর পিছে ঘুরবো?
–তুই তো ওকে ভালোবাসিস না, তাহলে বিয়ে করবি কেনো?
–ও তো আমাকে ভালোবাসে।
–ঠিক আছে, তোর যেমন ইচ্ছা।
–আজ থেকে তোর পিছু নেওয়া ছেড়ে দিবো। তোকে আর বিরক্ত করবো না। তুই খুশি তো?
–হুম
–এতদিন তোকে অনেক কষ্ট দিয়ে এসেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিস।
–ঠিক আছে।
–আমার সাথে শপিং করতে যাবি?
–না।
–কেনো?
–আমার ভালো লাগছে না। তুই যা।
–আচ্ছা।
.
প্রিয়ার ঘুম ভাঙিয়ে নিজের রুমে এসে মামুন কানে হেডফোন লাগিয়ে শুয়ে শুয়ে গান শুনতে থাকে।
এদিকে প্রিয়া বিছানা থেকে উঠে সোজা জেঠিমার কাছে।
–জেঠিমা….
–হুম
–ও জেঠিমা
–বল
–এদিকে তাকাও না
–কি হয়েছে?
–আগামী সপ্তাহে নাকি মামুনের বিয়ে?
–তোকে কে বললো?
–মামুন
–হুম বিয়ে তো।
–কার সাথে?
–আমার বোনের মেয়ে অনির সাথে
–আচ্ছা ঠিক আছে।
–কেনো জিজ্ঞেস করলি?
–মামুনের কথার সত্যতা যাচাই করলাম। ও তো সব মিথ্যা বলে।
–মামুনকে তুই এতো অবিশ্বাস করিস?
–কেনো করবো না? ও আমাকে বলে আমি নাকি ওর বউ। আমাদের নাকি বিয়ে হয়েছে। এমন উল্টাপাল্টা কথা বললে বিশ্বাস থাকে?
–এখন আমিতো বললাম, বিশ্বাস হয়েছে?
–হুম
প্রিয়া জেঠিমার থেকে কনফার্ম হয়ে আবার মামুনের কাছে আসে।
–মামুন
—
–এই মামুন(হালকা ধাক্কা দিয়ে)
–কে?
–আমি, হেডফোন খোল
–কি?
–চল, শপিং করতে যাবি না?
–না
–একটু আগেই তো বললি যাবি।
–এখন বলছি যাবো না।
–কেনো?
–অনি তোর সাথে মিশতে নিষেধ করেছে।
–কিহ? আমার সাথে মিশতে নিষেধ করেছে? কেনো?
–ও চায় না আমি কোনো মেয়ের সাথে মিশি। তুই যা, এখন থেকে আমি আর তোর সাথে কথা বলবো না।
–কি বলছিস?
–ঠিকই বলছি। এমনিতেই তুই আমাকে সহ্য করতে পারিস না। তোকে আর আমার সাথে কথা বলতে হবে না। খুশি থাক।
–আমি কখন বললাম তোর সাথে কথা বলবো না।
–না বললেও আমি বুঝি, তুই আমাকেই বিশ্বাস করিস না। অবিশ্বাসী মানুষের থেকে ধুরে থাক, তোর জন্যই মঙ্গল হবে।
–কে বলেছে আমি তোকে অবিশ্বাস করি?
–একটু আগেই মাকে বলেছিস।
–ওটা আমি এমনি বলেছি। মন থেকে বলি নি।
–আচ্ছা, যা হওয়ার হয়েছে। এখন যা, আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই না। অনি জানতে পারলে কষ্ট পাবে।
–তুই আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবি?
–তুই পারিস, আমি পারবো না কেনো?
–আমিতো পারি না।
–আমি পারবো, যা……
–ওই মেয়েটার জন্য আমার সাথে এমন ব্যবহার করছিস।
–ওই মেয়ে কি? ও আমার হবু স্ত্রী।
–ঠিক আছে, আর তোর সাথে কথা বলতে আসবো না। তুই ভালো থাক…।
–হুম যা….।
মামুন খেয়াল করে প্রিয়ার চোখের কোনে পানি জমে গেছে।
যাওয়ার আগে প্রিয়ার চোখ থেকে পানি ঝরতে থাকে….।
প্রিয়া কোনো রকমে চোখের পানি লুকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
প্রিয়ার এমন আচরনে মামুন ভালো করেই বুঝতে পারে ওর মনে মামুনের জন্য জায়গা আছে।
যদি মনে জায়গা থেকেই থাকে, তাহলে এমন ব্যবহার করে কেনো?
ওর সামনে কি কোনো বাঁধা আছে? কেউ কি ওকে দিয়ে এসব করাচ্ছে? নাকি ওর ধীরেধীরে সব মনে পড়ছে? নাকি এসব মনের টান?
মামুন ইচ্ছে করেই ধীরেধীরে প্রিয়াকে অবহেলা করা শুরু করে।
মামুনের এমন অবহেলায় প্রিয়া ভীষন কষ্ট পায়।
মামুন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রিয়াকে ফলো করতো।
প্রায় সময় প্রিয়া জানালার পাশে মন খারাপ করে বসে থাকে।
মামুনের ভীষন জানতে ইচ্ছে করে, এই মন খারাপের কারনটা কি সে? নাকি অন্য কিছু?
.
.
চলবে……..
অধিকার
লেখক A_Al_Mamun
পর্ব :- ৭
.
মামুনের ভীষন জানতে ইচ্ছে করে, প্রিয়ার এই মন খারাপের কারনটা কি সে? নাকি অন্য কিছু?
১সপ্তাহ শেষ হতে আর মাত্র ১দিন বাকি।
আজকের মধ্যে প্রিয়া ফিরে না আসলে অনিকে বিয়ে করবে বলে মামুন মাকে কথা দিয়েছিলো।
আজ বিকেলে অনিদের পুরো পরিবার মামুনদের বাড়িতে বেড়াতে আসবে।
মামুনের মা সেই সুযোগে বিয়ের কথাবার্তা বলবে বলে প্ল্যান করে রেখেছে।
দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর মামুন প্রিয়ার রুমে আসে।
প্রিয়া জানালার পাশে বসে বাহিরে তাকিয়ে আছে।
–প্রিয়া…
–কে?
–আমি
–তুই আমার কাছে?
–বাহিরে কি দেখছিস?
–কিছু না তো। তুই হঠ্যাৎ আমার কাছে?
–চলে যাবো?
–আমি কি তা বলেছি? তুই না বললি তুই আর আমার সাথে কথা বলবি না।
–বলেছিলাম তো, আজই তো শেষ দিন। এরপর তো আর কথা বলতে পারবো না। তাই এলাম।
–ওওও, কি বলবি?
–তোকে কিছু সত্য কথা বলতে চাই। আজ না বলতে পারলে হয়তো আর কখনো তোকে বলতে পারবো না।
–কি কথা?
–জানি না তুই বিশ্বাস করবি কিনা। কিন্তু পুরোটা শুনে তারপর উত্তর দিবি।
–আচ্ছা।
–আজ থেকে ৩ মাস আগে আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো, তোর মনে আছে?
–হুম
–তার ঠিক দুই দিন আগে আমাদের বিয়ে হয়েছিলো।
–কিহ?
–হুম। তুই আমার বিয়ে করা বউ।
–কি বলছিস?
–তুই আমাকে এতটাই ভালোবাসতি যে তোর ভালোবাসার কাছে সবাইকে হার মানতে হয়েছিলো, এবং আমাদের বিয়ে হয়েছিলো। এখানে সব প্রমান আছে।(একটা ব্যাগ রেখে)
–এখানে কি আছে?
–আমাদের একান্ত কিছু ছবি, বিয়ের ছবি, বিয়ের কাগজ পত্র, এবং সবচেয়ে স্পেশাল ডিভোর্স পেপার।
–মানে?
–এই সব প্রমান দেখার পরও যদি তুই কিছু বিশ্বাস না করতে পারিস, তাহলে আজ রাতের মধ্য এই ডিভোর্স পেপারে একটা সই করে দিস। সারাজীবনের জন্য আমার থেকে মুক্তি পেয়ে যাবি।
–আজ রাতের মধ্যে ডিভোর্স পেপারে সাইন কেনো?
–কারন মায়ের কাছ থেকে এক সপ্তাহের সময় নিয়েছিলাম তোকে ফিরিয়ে আনার জন্য। আজই তার শেষদিন। বিকেলে অনি আসবে। হয়তো কালই আমাদের বিয়ের কথাবার্তা হবে।
যদি তোকে ফেরাতে না পারি তবে অনিকে বিয়ে নয়, আমি দুরে কোথাও চলে যাবো। পারবো না অনিকে বিয়ে করতে। পারবো না তোকে করা প্রতিজ্ঞা ভাঙতে। মাঝে মাঝে আসবো তোকে দেখতে।
–আজ কেনো এসব বলছিস?
–ভেবেছিলাম তুই এসব বিশ্বাস করবি না। তাই…..
–তাহলে আজ কেনো এসব প্রমান নিয়ে এসেছিস?
–কোনো উপায় নেই। তাই…..
–অনিকে বিয়ে করতে তোর কি সমস্যা?
–সমস্যা তুই। কাগজে কলমে তুই আমার স্ত্রী। তোকে ছাড়া আমার এজীবনে আর কারো অস্তিত্ব নেই। খুব ভালোবাসি তোকে….। তুই এটা জানিস না যে তুই আমাকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসতি।
–আমি ভালোবাসতাম? কি বলছিস?
–ঠিকই বলছি, তোর মনে নেই? আগের বার অনির সাথে বিয়ের কথা বলায় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। তখন তুই আমাকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিলি।
–আমি বাঁচিয়েছি?
–হুম
–আমার কিছুই মনে নেই? কবে এসব হয়েছে?
–প্রিয়া, এক্সিডেন্ট তোর আর আমার একসাথেই হয়েছিলো। সেই এক্সিডেন্টে তোর স্মৃতি নষ্ট হয়ে গেছে।
–আমিতো কাউকে ভুলি নি, মা বাবা, জেঠু জেঠিমা, তুই এবং বাকি সবাইকেই আমার এখনো মনে আছে।
–হুম, ডাক্তার বলেছে সবকিছুই ঠিক আছে, শুধু তোর জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু মুহূর্ত তুই হারিয়ে ফেলেছিস।
–আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার খুব মাথা ব্যথা করছে।
–জানি, ডাক্তার বলেছিলো তোকে এসব না বলতে, এতে তোর মানসিক সমস্যা হতে পারে। কিন্তু আজ আমাকে বলতে হলো। ক্ষমা করে দিস। আমি যাচ্ছি…. যদি তুই আমাদের এই সম্পর্কটাকে মেনে না নিস, তাহলে এই ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিস।
–আমাকে একটু ভাবতে দে প্লিজ।
–হুম, ভাব। আজ রাতই ভাবার জন্য শেষ রাত।
বলেই মামুন নিজের ঘরে চলে আসে।
.
বিকেলে অনিরা মামুনদের বাড়ি আসে।
অনি এসেই মামুনের রুমে।
–মামুন ভাই…
–কেমন আছিস?
–আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো?
–ভালো।
–খালামনি আমাকে একটা কথা বললো, জানো আমি আজ কতো খুশি।
–কি বললো?
–তুমি নাকি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছো?
–পাগলি… বস এখানে।
–হুম। বলো…
–তুই আমাকে কতোটা ভালোবাসিস?
–অনেক.
–অনেক কেমন?
–যা বলে বুঝাতে পারবো না।
–তুই তো জানিস আমি প্রিয়াকে কতোটা ভালোবাসি। আর প্রিয়া আমাকে…..। আর তুই এটাও জানিস আমাদের বিয়ে হয়েছে।
–কি লাভ, প্রিয়া তো এখন এসব ভুলেই গেছে। কেনো তুমি এখনো এসব নিয়ে ভাবছো? তুমিও ওকে ভুলে যাও।
–চাইলেই কি সব ভুলে যাওয়া যায়? ও আমার বিয়ে করা বউ। ও সব ভুলে গিয়েছে তো কি হয়েছে? মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমি আছি তো।
–খালামনি যে বললো তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি।
–এই জন্য তুই এতো খুশি?
–হুম
–আমার মনে তোর জন্য ওরকম কোনো অনুভূতি নেই। যা আছে সব প্রিয়ার জন্য, তুই কি চাস যার মনে তোর জন্য চুল পরিমান অনুভূতি নেই তাকে বিয়ে করতে?
–কি বলছো এসব?
–আমি ঠিকই বলছি। আমি প্রিয়াকে ঠকাতে পারবো না। সারাজীবন ওর পাশে থাকবো বলে প্রতিজ্ঞা করেছি। এবং আমি এটা বিশ্বাস করি যে প্রিয়া ফিরবে। নিজের চেনা রুপে ও ফিরে আসবে।
অনি মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
–কিরে? মন খারাপ হয়ে গেছে?
–হুম
–শোন… তুই খুবই লক্ষি একটা মেয়ে… তোর জীবনে আমার চেয়েও সেরা কেউ একজন আসবে। সে এতোটাই সেরা হবে যে তুই ওকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসবি।
–আমি লক্ষি হলে আমাকে তুমি কেনো বিয়ে করবে না?
–কারন আমার জীবনের সাথে কেউ একজন জড়িয়ে আছে। তাকে এভাবে রেখে আমি কিভাবে আরেকটা বিয়ে করবো?
–আমি এতকিছু বুঝি না। আমি তোমাকে ভালোবাসি… আমি জানি ও কখনো কিছুই মনে করতে পারবে না।
–তোর মনে আছে? প্রিয়া তোকে আমার কাছাকাছি দেখলে কি করতো?
–হুম
–ওকে তোর ভয় লাগে?
–আগে লাগতো, এখন লাগে না। কারন এখন তোমার সাথে থাকলে ও কিছু বলে না।
–কিছু বলে না এটা ঠিক, কিন্তু এটা ভুলে যাস না যে ও এখনো আছে।
–ও যেমন তোমাকে ভালোবাসে তেমনি আমিও তোমাকে ভালোবাসি। ও যেমন তোমার ওপর অধিকার দেখায়, আমিও পারি তোমার ওপর অধিকার দেখাতে।
–তুই আসলেই একটা পাগলি মেয়ে…. যা মায়ের কাছে যা। আমি একটু বিশ্রাম নেবো।
–এই অবেলায়?
–হুম, ভালো লাগছে না। এখন যা…।
–আচ্ছা।
.
প্রিয়া নিজের রুমে বসে বসে মামুনের রেখে যাওয়া প্রমানগুলো দেখছে।
বিয়ের ছবিগুলো স্পষ্ট প্রিয়ার… কাগজের সাইনগুলো ও নিজের।
সবচেয়ে বড় কথা হলো নিজেদের একান্ত মুহূর্তের কিছু ছবি আছে… যেগুলোতে প্রিয়া স্পষ্ট নিজেকে মামুনের সাথে দেখতে পায়।
ছবিগুলো নিয়ে চিন্তা করতে করতে একসময় প্রিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
পরদিন সকালে……
দুই ঘরের মাঝামাঝি একটা জায়গায় বাড়ির সবাই একত্রে বসে আছে।
অনি মামুনের ঠিক পাশেই বসে আছে।
এক কথায় অনি আর মামুনের বিয়ের ব্যাপারে কি যেনো আলোচনা চলছে।
প্রিয়ার বাবা মাও সেখানে উপস্থিত।
কিন্তু পরিস্থিতি আজ সবাইকে চুপ করিয়ে রেখেছে।
কেউ উচু গলায় বলতে পারছে না যে এই সম্পর্ক কিছুতেই গড়তে দেবো না।
নিজের মেয়ের জামাইয়ের অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হচ্ছে।
কিন্তু তা ঠেকানো যাচ্ছে না।
প্রিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে সবার সামনে আসে।
প্রিয়াকে দেখে অনি ইচ্ছে করেই মামুনের হাতটা চেপে ধরে।
মিনিট দুইয়েক পর অনি মামুনের হাতটা ছেড়ে দিয়ে মামুন থেকে একটু দুরে গিয়ে দাড়ায়।
মামুন প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে প্রিয়ার চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারন করেছে।
অনি হয়তো ভয় পেয়ে দুরে সরে গিয়েছে।
ঠাসসসসসসসসস………..
সবাই মামুনের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
কি হলো এটা?
মামুন গালে হাত দিয়ে এক নজরে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
ভরা মজলিসে সবার সামনে প্রিয়া মামুনকে চড় মারে।
অনি ভয়ে মায়ের পেছনে গিয়ে দাড়ায়।
–কাল আমাকে ডিভোর্স পেপার দিয়ে গিয়েছিলি তাই না?(প্রিয়া)
–(মামুন হা করে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে)
–এই নে সেই ডিভোর্স পেপার। তোর সামনেই সাইন করে দিচ্ছি। বিয়ে করে সুখে থাক।
যেই না পেপারে কলম বসাতে যাবে আমনি প্রিয়ার বাবা প্রিয়ার হাত ধরে ফেলে।
–এটা কিসের ডিভোর্স পেপার?
–(সবার সামনেই প্রিয়া কেঁদে দেয়) কাল ও আমাকে এটা দিয়ে গিয়েছিলো।
প্রিয়ার বাবা পুরো পেপারটা পড়ে….
–দে, এটাতে সাইন করে দিয়ে দে ওকে। ওর দোষ আমি দিবো না, তোর দোষও আমি দিবো না। সবই নিয়তির দোষ। জানি তোর এই বিয়ের ব্যাপারে কিছুই মনে নেই। তাহলে কেনো এই মিথ্যে মায়াজালে বন্ধি থাকবি। এটাতে সাইন করে ওকে দিয়ে দে মা।
প্রিয়ার দুচোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।
সবাই অবাক চোখে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
কেনই বা প্রিয়া কাঁদছে? যার কাছে কিনা এই বিয়ের কোনো মূল্যই নেই।
.
মামুন ধীরেধীরে প্রিয়ার সামনে এসে দাড়ায়।
–তুই আমাকে মেরেছিস?
–হ্যা মেরেছি। তোকে তো আমি খুন করবো।
মামুন প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়…
মামুনের হাসি দেখে সবাই একটু নয়, বেশ অবাক হয়।
–তোর সব মনে পড়ে গেছে?
প্রিয়া কান্নামাখা মুখটা নিয়ে হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়।
–সত্যি বলছিস?
–হুম…..
সবার সামনেই মামুন প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
দুজন কাঁদছে, খুব কাঁদছে….
সাথে পরিবারের সবাইকে কাঁদিয়েছে।
প্রিয়া মামুনকে ছেড়ে একটু দুরে গিয়ে দাড়ায়…।
এবার মামুন একটু অবাক হয়।
–কি হয়েছে প্রিয়া?
–কাল আমাকে বলেছিলি তুই এই বিয়ে করবি না। কিন্তু কই? তুই তো দিব্যি হাসিখুশি। তোর বিয়ের কথা বার্তাও চলছে। আমাকে এজন্যই ডিভোর্স পেপার দিয়ে এসেছিলি?
—
–কি হলো? চুপ করে আছিস কেনো? জবাব দে…..
–জবাব আমি দিচ্ছি।(মামুনের মা)
–তুমি কি জবাব দেবে জেঠিমা? তুমিই না ওকে এই বিয়ে দেওয়ার জন্য জোর করছিলে?
–হ্যা আমি জোর করেছি। যেই সম্পর্ক নিয়ে ভবিষ্যৎতের কোনো নিশ্চয়তা নেই বলে মনে হচ্ছিলো সেই সম্পর্ক কেই বা রাখতে চাইবে? নিজের ছেলের বউ হওয়ার শর্তেও তুই আসতে যেতে আমার ছেলেকে অপমান করতি। সেগুলো কি সহ্য করার মতো ছিলো?
—
–তবুও আমার ছেলেটা বেহায়ার মতো তোর পিছে লেগে থাকতো।। যখনই কোনো কিছু বলতো তুই আমার ছেলেকে বলতি ও মানসিক ভারসাম্যহীন? এটাও কি সহ্য করার মতো?
—
–ডাক্তার বলেছিলো, যদি কখনো তোকে অতীতের কোনো স্মৃতি মনে করারনোর চেষ্টা করি তাহলে তোর মানসিক সমস্যা হতে পারে। সেই জন্য মামুন কখনো তোকে ২য় বার অতীত মনে করানোর চেষ্টা করেনি।
—
–তবুও তুই আমার ছেলেটাকে যা নয় তা বলে গেছিস। ছেলেটা আমার সারারাত কাঁদতো… কারনটা ছিলি তুই। চোখের সামনে নিজের ছেলের এই কষ্ট মা হয়ে আমি কি করে সহ্য করতাম? চেয়েছিলাম ওকে তোর থেকে দুরে সরিয়ে আনতে।
—
–অনির সাথে ওর বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। সব কিছুই ঠিকঠাক ছিলো। কিন্তু কাল রাতে ও বললো যদি অন্য কোথাও ওর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি তাহলে নাকি খুব খারাপ হয়ে যাবে।
তাছাড়া আরো অনেক কথাবার্তা হয়েছে। এই জন্য আজ আমরা সবাই এখানে একত্র হয়েছি ওদের বিয়ের দেওয়ার জন্য না। বিয়ে নিয়ে যেই কথাবার্তা চলছিলো সেটা শেষ করার জন্য।
–তোমরা জানো আমি জেনে বুঝে এসব কিছু করিনি। তবুও তোমরা আমাকে ওর থেকে আলাদা করতে চেয়েছিলে? ও আমার স্বামী, আমি দেখে নেবো যে আমাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।
–মা, শান্ত হয়ে যা, যা হয়েছে কিছুই জেনে বুঝে হয় নি। এতদিন পর তোর সব মনে পড়েছে এতেই আমরা খুশি। চল ঘরে চল, আর কথা বাড়াস না।(প্রিয়ার মা)
–ছাড়ো আমাকে, তোমরা সবাই একজোট, কাউকে আমি বিশ্বাস করি না।
–প্রিয়া, মা যা বলেছে সব ঠিকই বলেছে। কেনো জেদ করছিস?(মামুন)
–জেদ? তুই তো চুপই থাক।
–আমি কি করেছি?
–কি করে ওই মেয়েটা তোর হাত ধরে বসে ছিলো? সাহস কি করে হয় ওর(অনির) তোর কাছে আসার?(চিৎকার করে)
.
অনি মায়ের পেছনে চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
–তুই তো ওর হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টাও করিস নি। মুক্তি পেতে চেয়েছিলি আমার থেকে?
–আমি মনোযোগহীন ছিলাম, তাই বুঝতে পারিনি। বার বার তোর কথাই মাথায় আসছিলো, তোকে নিয়েই ভাবছিলাম। তাই বুঝতে পারিনি কখন ও আমার হাত ধরেছে।
–একদম কথা বলবি না। তোকে তো আমি পরে দেখে নেবো। অপেক্ষা কর……
–মারবি নাকি?
–দেখবি..। এই মেয়ে, এদিকে আয়…(অনিকে উদ্দেশ্য করে)
অনি ধীরেধীরে মায়ের পেছন থেকে বেরিয়ে আছে।
–তোকে যদি আর কখনো আমার বরের আশেপাশে দেখি, খুব খারাপ হয়ে যাবে। মাথায় রাখিস।
প্রিয়ার এমন রাগে সবাই অবাক চোখে প্রিয়ার দিকে চেয়ে আছে।
কিন্তু কেউ জবাব দিচ্ছে না।
কারন প্রিয়া আগের চেনা রুপে ফিরে এসেছে।
রেগে গেলে সামনে কে আছে তা প্রিয়া দেখে না।
মামুনের হাতটা ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে যায়।
না, কেউ পেছন পেছন যায় নি। সবাই ওপরওয়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছে।
এতদিন পর সবকিছু ঠিক হয়েছে। যাক ওরা, নিজেদের বোঝাপড়া নিজেরাই করে নিক।
প্রিয়া মামুনকে টেনে এনে বিছানায় বসায়।
মামুনও চুপ করে আছে, কিছু বলতে গেলে এখন আস্ত রাখবে না।
–তোর লেগেছে?(প্রিয়া)
প্রিয়ার এমন নরম কথায় মামুন হুসে ফেরে। এতক্ষণ এটাই মাথায় ছিলো না যে প্রিয়া যদি কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকে তবে সেটার কারন হলো মামুন। কিন্তু মামুনের সাথে কখনো রাগারাগি করে না।
–ব্যথা পেয়েছিস?
—
–আমি ইচ্ছে করে মারিনি। এতোটাই রাগ হয়েছিলো যে কি করেছি বুঝতেই পারি নি। আমাকে ক্ষমা করে দে।
–ধুর পাগলি, আমার একদম লাগে নি।
–তুই আমার হাত ধরে নিলি না কেনো? তাহলে তো আর লাগতো না।
–আমি কি করে জানি যে তুই আমায় চড় মারবি।
–জানবি কিভাবে? তুই তো আমাকে ভালোই বাসিস না।
–তোকে কতটা ভালোবাসি তা আমি ছাড়া কেউ জানে না।
–কেনো তুই আমার থেকে দুরে চলে গিয়েছিলি? আমাকে কি বোঝাতে পারতি না?
–হুম, পারতাম।
–তাহলে কেনো বুঝাসনি? ওই মেয়েটাকে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলো?
–আমি জানতাম একদিন না একদিন তোর সব মনে পড়বে। আবার তুই আমার বুকে ফিরে আসবি।
–একবার বুকে নিবি না?
–পাগলি একটা…. আয়….
ওমনি প্রিয়া মামুনের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।
আবারো কাঁদছে, দুজনই কাঁদছে…….।
এই কান্না কষ্টের না… ফিরে পাওয়া ভালোবাসার আনন্দ….।
–প্রিয়া… কাঁদছিস কেনো?
–তুইও তো কাঁদছিস, আমি কিছু বলেছি?
–তুই আসলেই একটা পাগলি।
–তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি তাই না?
–নাতো
–তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।
–কিভাবে তোর সব মনে পড়লো?
–তোর মনে আছে? আমার জ্বর হয়েছিলো।
–হুম
–তুই মাকে বলেছিলি, আমি নাকি তোর বউ। কিন্তু মা কোনো রিয়েক্ট করেনি। তখন মনের মধ্যে খটকা লাগলো, সত্যিই কি আমি কিছু ভুলে গেছি? মায়ের সামনে তো তুই ওভাবে মিথ্যে বলতে পারিস না।
–এরপর?
–দুইদিন তুই আমার সাথে ছিলি। দিনরাত আমাকে বুকে জড়িয়ে শুয়েছিলি, এক মুহূর্তের জন্যও কোথাও যাস নি। সেদিন আমি তোকে অনুভব করেছি। এমন মনে হয়েছিলো তুই আমার খুব কাছের মানুষ। তাছাড়া কাছের মানুষ ছাড়া কেউ এতোটা যত্ন নিবে না। সেটা তখন বুঝেছিলাম। যতবার আমাকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলি মনে হয়েছিলো আমার কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে।
–বাব্বাহ….
–তোর মনে আছে? যেদিন আমি সুস্থ হয়ে যাই, সেদিন অনেক বেলা করে তোর আর আমার ঘুম ভেঙেছিলো।
–হুম
–তোর আগেই আমার ঘুম ভেঙেছিলো। চোখ মেলে দেখলাম আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছিস। ভেবেছিলাম রিয়েক্ট করবো, কিন্তু পারি নি। মন শায় দেয় নি। তোর বুকের মধ্যে যেনো সর্গ খুজে পেয়েছিলাম। ইচ্ছে করছিলো সারাজীবন ওভাবেই থাকি। ধীরেধীরে তোর ঘুম ভাঙে, তখন আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি।
–তখনই তোর সব মনে পড়ে গিয়েছিলো?
–না……। কাল রাতে তোর রেখে যাওয়া প্রমানগুলো দেখছিলাম। বিয়ের ছবিগুলো দেখলাম। তোর আর আমার তোলা কিছু ব্যক্তিগত ছবি দিয়েছিলি। ছবিগুলো দেখে ধীরেধীরে প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়। এরপর আর কিছুই আমার মনে নেই। আজ সকাল থেকে আমার জীবনটা আগের মতোই স্বাভাবিক।
–জানিস, আমি এখন কতটা খুশি? তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা।
–আমিও
–আমার একটা কথা রাখবি?
–বল
–তুই এক্ষুনি মায়ের কাছে যাবি, গিয়ে ক্ষমা চাইবি।.
.
.
চলবে…….
.
অধিকার
লেখক A_Al_Mamun
পর্ব :- ৮
.
–আমার একটা কথা রাখবি প্রিয়া?
–বল
–তুই এক্ষুনি মায়ের কাছে যাবি, গিয়ে ক্ষমা চাইবি।
–কেনো?
–তুই জানিস তুই মায়ের সাথে কতটা খারাপ ব্যবহার করেছিস?
–জানি… বার বার জেঠিমা কেনো তোকে আমার থেকে আলাদা করতে চায়?
–এতো কিছু জানি না, তুই এক্ষুনি মায়ের কাছে যা, গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নে।
–আমি ওনার সাথে কথাই বলবো না।
–আমার সাথেও বলিস না।
–কি বলছিস?
–ঠিকই বলছি। তোর কি মাথায় এটা থাকে? তুই কার সাথে কথা বলছিস, কি বলছিস। তুই তোর মা বাবাকে, আমার মা বাবাকে যা নয় তাই বলিস। কেনো?
–আমি কি করবো? তখন আমার মাথায় এমন কিছুই আসেনি। তোর জন্য আমি সব করতে পারবো। তোর আর আমার মাঝে কেউ আসলে তখন আমার মাথা ঠিক থাকে না।
–আমি কি এমন বউ ঘরে তুলতে যাচ্ছি যে আমার বাবা মাকে সম্মান করতে পারবে না।
–এমন কেনো বলছিস?
–তুই যদি সবার কাছে ক্ষমা না চাস তাহলে আমি আর তোর সাথে কথা বলবো না।
–না না, আমি সবার কাছে ক্ষমা চাইবো, এমন করিস না প্লিজ।
–কথা দে, আর কখনো আমার জন্য কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবি না।
–হ্যা, করবো না। কথা দিলাম।
–সব সময় সবার মন জয় করে চলবি।
–হুম চলবো।
–আমার লক্ষি বউ হয়ে থাকবি।
–হুম থাকবো।
–চল, সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবি।
–আচ্ছা।
.
প্রিয়া একে একে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়।
–প্রিয়া…..
–হুম।
–আমার ছেলেটা অনেক কষ্ট পেয়েছে। ওকে আর কষ্ট দিস না।
–ঠিইইইইক আছে। ওর দায়িত্ব এখন থেকে আমার। আর কখনো ওকে কষ্ট দিবোনা। আর তুমি যে আমাকে কষ্ট দিছো সেটা?
–তো বলেন মা, আমাকে কি করতে হবে?
–আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতে হবে। আরেকটা শাস্তি হলো আমি তোমাকে সারাজীবন জেঠিমা বলেই ডাকবো।
–ঠিক আছে মা, আমি আপনার কথায় রাজি। আমার ছেলেটাকে দেখে রাখিয়েন।
–ওকে জেঠিমা, ওই দায়িত্ব এখন আমার। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।
মামুন একপাশে বসে বউ শাশুড়ির কথা শুনছে।
একটু আগেও প্রিয়া বললো মায়ের সাথে আর কথা বলবে না।
কিন্তু দুজনের কথাবার্তা শুনে এমন মনে হচ্ছে যে দুজন মনে হয় বান্ধবি।
একজন দায়িত্ব দিচ্ছে, আর একজন দায়িত্ব নিচ্ছে।
রাতে মামুন ঘরে ফিরে দেখে নিজের রুমটা ফুল দিয়ে খুব সাজানো গোছানো।
রুমের এক কোনায় প্রিয়া…. এবং অন্য কোনায় অনি।
দুজন মিলেই রুমটা সাজাচ্ছে।
মামুন বেশ অবাক হয়। এই সাপ আর নেউল দুজন এক হলো কি করে?
আর রুমটাই বা সাজাচ্ছে কেনো?
হালকা একটু গলার আওয়াজ দেয় মামুন…।
–এসেছিস?(প্রিয়া)
–এসব কি?(মামুন)
–এখন বাহিরে যা, ১ঘন্টা পরে আসবি।
–কেনো কেনো?
–তখন আসলে বুঝবি।
–অনি, তুই এখানে?
–ওকে আমি এনেছি।
–কেনো?
–আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছে।
–বাব্বাহ….. আজ সবার সাথে বোঝাপড়া শেষ করে নিয়েছিস। ভালোই তো।
–হুম, যা বাহিরে যা…..।
–যাচ্ছি তো।
.
ঘন্টাখানেক পর মামুন নিজের রুমে ঢোকে।
প্রিয়া বিছানায় লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
মামুন প্রিয়ার পাশে এসে বসে।
ধীরেধীরে প্রিয়ার ঘোমটা টা সরায়…
–আজ খুব সুন্দর লাগছে তোকে।
–আগে কখনো লাগে নি?
–সব সময়ই লাগে।
–কখনো তো বলিস নি।
–সব কিছু কি বলতে হয়?
–হুম
–এসব সাজানোর কারন?
–আমাদের বাসর রাতটা হয় নি….। তা এখনই পূরন করবো।
–তাই?
–হুম… আজ তোর কাছে আমার অনেক আবদার আছে।
–শুনি…. কি কি আবদার।
–আমাকে তুমি বলবি।
–ডান
–খুব ভালোবাসতে হবে।
–ডান
–প্রতিরাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে হবে।
–ডান।
–খুব রোমান্টিক হতে হবে।
–ডান
–আর একটা আছে, কিন্তু বলতে পারছি না।
–কি সেটা?
–আমার লজ্জা করছে।
–আমার বউটার এতো লজ্জা? আগেতো দেখিনি।
–আগেতো এমন পরিস্থিতিতে পড়ি নি।
–আচ্ছা?(এক টান দিয়ে বুকে নিয়ে আসে)
–কি করছো?
–এখন থেকেই তুমি করে? ওকে…… আমি আমার বউকে আদর করবো।
–এই যাহ…. মুখে কিছু আটকায় না?
–আগে বলো, কি জন্য লজ্জা পাচ্ছো?
–বলবো?
–হুম
–আমার….
–হুম তোমার…
–আমার একটা বাবু লাগবে।
বলেই প্রিয়া মামুনের বুকে মুখ লুকায়।
মামুন প্রিয়ার মুখটা ধীরেধীরে উপরে তোলে।
লজ্জায় প্রিয়ার মুখটা লাল হয়ে আছে। একদম চোখে চোখ রাখতে পারছে না।
–আমার পাগলিটাকে লজ্জা পেলে আরো বেশি সুন্দর লাগে। একদম পরির মতো…।
–যাহ…..
–বাবুটা কবে লাগবে?
–জানি নাহ…..
–ভালোবাসো?
–অনেক
–কতটা?
–তুমি বিনা এই প্রিয়া মৃত…. বুঝে নিও
–এতো ভালোবাসো?
–হুম। এই বুকে সারাজীবন থাকতে চাই। এভাবেই…..।
(ওখানে কি হচ্ছে আর কিচ্ছু বলবো না। আপনারা বুঝে নিয়েন)
.
পরদিন সকালে…..
–প্রিয়া…. সকাল সকাল তুই রান্নাঘরে কি করিস?(মামুনের মা)
–নাস্তা বানাতে হবে তো।
–আমি আছি তো। তোকে কষ্ট করতে হবে না।
–কি যে বলো জেঠিমা…. এখন থেকে তো আমাকেই সব দায়িত্ব নিতে হবে।
–বাব্বাহ…. তুই তো অনেক বড় হয়ে গেছিস।
–হুম…. সরো সরো… আমার হাতে অনেক কাজ।
–আমি কি সাহায্য করতে পারি?
–না না, তুমি ঘরে যাও। কষ্ট করতে হবে না। তোমার ঘরের বউ এখন সব দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে।
–আচ্ছা? আমি গেলাম রুমে… কিছু লাগলে ডাক দিস।
–আচ্ছা।
প্রিয়ার শাশুড়ির আর রুম পর্যন্ত যাওয়া হয়নি।
তার আগেই প্রিয়ার চিৎকার শুনে সবাই ছুটে আসে।
মামুন চোখ কচলাতে কচলাতে রান্না ঘরে আসে।
–কি হয়েছে?(মামুন)
–কি আর হবে? মেয়েটা হাত পুড়িয়ে ফেলেছে।(মামুনের মা)
–কই দেখিতো।
প্রিয়া হাতটা লুকিয়ে রেখেছে।
ধীরেধীরে হাতটা সামনে আনে।
–কোথায় পুড়েছে?(মামুন)
–এই যে…।(প্রিয়া)
–কই?
–ভালো করে দেখো, এখানে…।
–কিছুই তো নেই।
–মাত্র কড়াইয়ের ঢাকনার সাথে হাত লেগেছে। দাগ হয়নি কেনো বুঝতে পারছি না।
মামুন এক দৃষ্টিতে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
–এভাবে কি দেখছো?
–এতো জোরে চিৎকার শুনে আমি ভাবলাম কি না কি হয়ে গেলো।
–জেঠিমা দেখছো? আমার হাত পুড়ছে, ও কিছুই করছে না।
–তুই ঘরে যা মা, আমি নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি। (মামুনের মা)
–না, আমি বানাবো।
–আবার হাত পুড়বে।
–তবুও আমি বানাবো।
–আচ্ছা, আমি তোর সাথে আছি। তুই বানা….।
–না না, তুমি রুমে যাও, বিশ্রাম করো। আমি বানিয়ে আনছি।
–হ্যা মা, তুমি রুমে যাও, আমি আছি ওর সাথে।(মামুন)
–দেখে রাখিস ওকে, আবার না হাত পুড়িয়ে ফেলে।
–ঠিক আছে।
মামুনের মা আবার রুমে চলে যায়।
প্রিয়া রান্নার কাজে মনোযোগ দেয়।
মামুন পেছন থেকে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
–কি করছো? ছাড়ো…।
–না
–জেঠিমা আসবে।
–আসবে না।
–তবুও ছাড়ো। আমি রান্না করতে পারছি না।
–ঠিক আছে।
–বাহ্, বললাম আর ছেড়ে দিলে, এই তোমার ভালোবাসা?
–তুমিই তো বললে।
–তো কি হয়েছে? ছাড়বে কেনো?
–ভুল হয়ে গেছে।
–আবার ধরো।
–তোমার রান্নায় সমস্যা হবে না?
–না ধরলে সমস্যা হবে।
–আচ্ছা, আবার ধরছি…।
–এভাবে প্রতিদিন আগে আগে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়বা, তারপর আমার সাথে রান্নাঘরে আসবা। আর আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরবা, বুঝছো?
–প্রতিদিন?
–হুম।
–আমার ঘুম?
–ঘুমাও, কে নিষেধ করলো? নাস্তা পাবে না সকালে…।
–এ কোন জ্বালা?
–এখন থেকে এমনই হবে।
–আচ্ছা আসবো।
–একটা পাপ্পি দাও।
–উমম
–গালে না, ঠোঁটে….
–আমি ব্রাশ করে আসি।
–কেনো? কি সমস্যা? এভাবেই দাও।।
–ব্রাশ করিনি তো।
–তো কি হইছে? গভির রাতে ঘুম ভাঙলে আমি যদি পাপ্পি দিতে বলি, তখনো কি ব্রাশ করতে যাবা?
–এ কোন জ্বালায় পড়লাম?
–তুমি আমাকে একদম ভালোবসো না।
–কে বললো? আমি খুব ভালোবাসি।
–কাকে?
–আমার এই মিষ্টি বউটাকে।
–হয়েছে, এতোবার বলতে হবে না। নাস্তা বানাতে দাও….।
–আচ্ছা বানাও….
.
প্রিয়া নিজ মনে নাস্তা বানাচ্ছে। আর মামুন পেছন থেকে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে প্রিয়ার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
–শুনছো?
—
–এই
—
–তুমি ঘুমিয়ে গেছো?(নিজেকে হালকা ঝাকি দিয়ে)
–উম
–ওঠো… পড়ে যাবে…।
–আর একটু….।
–তুমি রুমে যাও, এখানে থাকতে হবে না। যাও….।
–রাগ করছো?
–রাগ করবো কেনো? পড়ে যাবে তো।
–আচ্ছা আর ঘুমাবো না।
–আমি রাগ করিনি তো, তুমি যাও, আমি একটু পর নাস্তা নিয়ে আসবো।
–আচ্ছা…।
–পাগল জামাই আমার….।(বিড়বিড় করে)
প্রিয়া নিজের মতো করে পুরো সংসারটা গুছিয়ে নেয়।
খুবই সুন্দরভাবে দিনগুলো পার হতে থাকে।
–শুনছো?(প্রিয়া)
–হুম।(মামুন)
–আজ আমার খালামনি ফোন করেছিলো। খালাতো ভাইয়ের বিয়ে…। আমাদের যেতে বলেছে।
–তোমার খালার বাড়িতে গিয়ে আমি কি করবো?
–দাওয়াত দিলো তো। যাবে না?
–আমি যাবো না, তুমি যেও।
–তুমি না গেলে আমিও যাবো না।
–আমি গিয়ে কি করবো?
–আমার সাথেই থাকবে। খালামনি এতো করে বললো, যাবে না?
–আচ্ছা যাবো।
–আমার লক্ষি জামাই…. উম্ম্ম্ম্মাহ
কিছুদিন পরই প্রিয়া আর মামুন প্রিয়ার খালাতো ভাইয়ের বিয়েতে যায়।
–এই শুনো, তুমি একদম আমার পাশেপাশে থাকবে। এখানকার মেয়েদের নজর একদম ভালো না।(প্রিয়া)
–আমার দিকে আবার কে নজর দিবে?(মামুন)
–বলা তো যায় না, মিষ্টির(খালাতো বোন) থেকে দুরে থাকবে।
–কেনো?
–যতবারই আমি এই বাড়িতে এসেছি ততবার ও আমার থেকে কিছু না কিছু রেখে দিয়েছে।
–তুমি কি ভাবছো? এবার আমাকে রেখে দিবে?
–জানি না। তুমি আমার সাথেই থাকবে।
–সবাই আমাকে বলবে বউ পাগল।
–বলুক। তুমিতো আমারই, বললে সমস্যা কি?
–আচ্ছা বাবা, আমিতো আছি তোমার সাথে।
–মামুন ভাই, কেমন আছেন?(মিষ্টি)
–ওই, দুলাভাই বল।(প্রিয়া)
–দুদিন হলো দুলাভাই হইছে, এর আগেতো মামুন ভাই বলেই ডাকতাম। তাই না মামুন ভাই?
–হ্যা, ডাকুক না, সমস্যা কি?(মামুন)
–চুপ করো, ও কতো ঢং করে মামুন ভাই বলে, আমার সহ্য হয় না।(প্রিয়া)
–দেখ আপু, দুলাভাই বলতে পারবো না। মামুন ভাই বলেই ডাকবো।
–আচ্ছা ডাকো আপু, সমস্যা নেই।(মামুন)
–আমাকে একদম আপু বলবেন না। আমি আপনার কিসের আপু? আপনি জানেন আমার বয়স কত?
–কত?
–মাত্র ১৫ বছর। আপনার অর্ধেক। তো আমাকে আপু ডাকেন কেনো? লোকে কি ভাববে? আমার বয়স বেশি হয়ে গেছে?
–ভুল হয়ে গেছে ভাই, মাফ করো।
–এবার ভাই বলতেছেন। আপু, তোর জামাইর মাথায় সমস্যা আছেরে। ডাক্তার দেখা।
–চুপ করবি? যা ঘরে যা, ওকে একটু বিশ্রাম করতে দে।(প্রিয়া)
–আচ্ছা, সকালে কথা বলবো, এখন যাই। বাই মামুন ভাই…।
মিষ্টি দৌড়ে রুম থেকে চলে যায়।
.
–তুমি ওর থেকে একটু দুরে থেকো।
–তোমার খালাতো বোন, অথচ তুমিই বিশ্বাস করছো না।
–মেয়ে মানুষের বিশ্বাস নেই।
–তুমি ছেলে?
–আমারতো একজন আছেই। আমি তাকে নিয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দিবো।
–হয়েছে হয়েছে। এবার শুয়ে পড়ো। কাল তো হলুদ সন্ধ্যা, ঘুমাতে পারবে না।
–হুম। শুনো, কাল আমার পাশেপাশেই থাকবে। কাল মেয়েগুলো সুন্দর করে সাজবে, একদম ওদের দিকে তাকাবে না।
–না না, আমার বউ থাকতে অন্য কারো দিকে আমি তাকাতে পারি?
–হুম, শুধু আমাকে দেখবে।
–ঠিক আছে। আসো বাবু, এবার ঘুমাই।
প্রিয়া দরজা লাগিয়ে মামুনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।
.
পরদিন রাতে সবাই সবার মতো করে ব্যস্ত, মামুন প্রিয়ার খালাতো ভাইয়ের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।
ওমনি প্রিয়া এসে মামুনের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসে।
–কি হলো?(মামুন)
–সবাই সাজতেছে। আমি সাজবো না?(প্রিয়া)
–হুম সাজো, কে নিষেধ করলো?
–তুমি এখানে বসো।
–আমাকে থাকতে হবে কেনো?
–আমি জানি না কিভাবে সাজলে আমাকে সুন্দর লাগবে।
–মিষ্টিকে ডাকো, ও সাজিয়ে দিবে।
–লাগবে না, ও ওর বান্ধবিদের নিয়ে অন্য রুমে সাজতেছে। তুমি বলো আমি কিভাবে সাজবো?
–তুমি সাজলে রাতে আমার ঘুম কম হবে।
–যাহ শয়তান। এভাবে বলো না, আমার লজ্জা করে।
–ওলে আমার লজ্জাবতী। আসো, আমি সাজিয়ে দেই।
–দাও….
রাত তখন অর্ধেক পার হয়ে গেছে। সবাই জোড়ায় জোড়ায় স্টেজে আসছে আর বরের গায়ে হলুদ দিচ্ছে।
প্রিয়া আর মামুন একসাথে বরকে হলুদ দিতে আসে।
পুরো অনুষ্ঠানে হাইলাইট হয়ে ছিলো এই কাপল।
সবাই মামুন আর প্রিয়ার দিকে ডেবডেব করে চেয়েছিলো।
সবার মুখে একই কথা, দুজনকে দারুন মানিয়েছে।
প্রিয়া যেনো লজ্জায় শেষ।
গায়ে হলুদ দেওয়া শেষে দুজন স্টেজ থেকে নেমে এসে একসাথে বসে।
একটু পর মিষ্টি এসে মামুনের পাশে বসে।
–দুলাভাই, আপনাকে তো সেইরকম লাগছিলো।
–তাই নাকি? আর তোমার বোন?
–আমার বোন তো এমনিতেই সুন্দর। জানেন, সবাই আপনাদের দেখে কি বলেছিলো?
–কি?
–দুজনকে দরুন মানিয়েছে।
–তোমাকেও সুন্দর লাগছে।(ভদ্রতার খাতিরে)
ওমনি প্রিয়া মামুনের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
তবুও খালাতো বোন পাশে বসে থাকায় কিছু বলতে বলতে পারেনি।
রাগ করে মামুনের পাশ থেকে উঠে রুমে চলে যায়।
–আপু কি রাগ করলো?
–মনে হয়।
–এতো কেয়ারিংও ভালো না।
–সেটা তোমার বোনকে বোঝাও।
–আমি পারবো না। ও যেই রাগি, আমার দ্বারা সম্ভব না।
–আমি যাই বাবা, নাহলে রাগ করে আমার সাথে কথা বলবে না।
–আচ্ছা যান।
.
মামুন রুমে এসে দেখে প্রিয়া বিছানার একপাশে বসে রাগে ফুলছে।
মনে মনে ভাবতে থাকে, এখন যদি নরম হয়ে কিছু বলি, তাহলে আমার রক্ষা নাই।
মামুন আবার প্রিয়াকে রাগানোর প্ল্যান করে।
–কি হলো? এভাবে চলে এলে যে? চলো, সবাই কত মজা করছে।
–যাও তুমি, মজা করো। আমাকে ডাকতে এলে কেনো?
–মিষ্টি বললো তোমাকে ডাকতে, তাই।
–মিষ্টি বলেছে তাই এসেছো?
–হ্যা, ও বললো কাল আমাকে ওদের গ্রামটা ঘুরে দেখাবে। তোমার খালাতো বোনটা সত্যিই অনেক ভালো।
–তো যাও না ওর কাছে, এখানে কি?
–আচ্ছা, আমি মিষ্টির কাছে যাচ্ছি। তুমি শুয়ে পড়ো।
বলেই মামুন পেছনের দিকে পা বাড়ায়।
–মামুন(করুন সুরে)
–হুম
–আমাকে ছেড়ে যাচ্ছো?😥
–আরে আরে, আমি মজা করছি, সত্যি মজা করছি। কেঁদো না প্লিজ।
–কেনো তুমি এমন করো?😥
–সরি সরি, আর করবো না। কেঁদো না প্লিজ।
–আমি বাড়ি যাবো।
–এখন?
–হুম
–এই মাঝরাতে? বাহিরে ভূত আছে।
–আমি থাকবো না এখানে। কাল সকাল হলেই চলে যাবো।
–আমাকে রেখেই চলে যাবা?
–হুম
–তাহলে আমার কি হবে?
–তোমার শালি আছে না, ও দেখে রাখবে তোমাকে।
ঠিক তখনই মিষ্টি রুমে আসে।
–কি ব্যাপার? আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে? (মিষ্টি)
–না…..।(প্রিয়া)
–আমি শুনেছি তো, তুই যা, দুলাভাইকে আমরা দেখে রাখবো।
–মিষ্টি…. না না না না….।(মামুন মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কথাটা বললো)
প্রিয়া মামুনের দিকে চেয়ে আছে।
–না না, ও মজা করছে।(মামুন)
–মজা না দুলাভাই, আমরা আছিতো আপনার দেখাশোনা করার জন্য। আমার একটা বান্ধবি তো আপনাকে দেখে ক্রাস খাইছে।
–মিষ্টি…. আস্তে…… আমার পুরো বিয়ে খাওয়া মাটি হবে।(আবারও মিষ্টিকে বিড়বিড় করে)
–দুলাভাই, আপনি কি আপুকে ভয় পান?
–নাহ, ওকে ভয় পাবো কেনো? বউকে কেউ ভয় পায়?(শালির সামনে নিজের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য)
–তাহলে এত ভয় পাচ্ছেন যে?
–আমি কোথায় ভয় পাচ্ছি?
–সেটাতো বোঝাই যাচ্ছে।
–যেটা বুঝেছো সেটা ভুল।
–বাদ দেন ওসব। চলেন আমার বান্ধবিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। ওরা আপনার সাথে পরিচিত হতে চায়।
–ভালোয় ভালোয় বিয়েটা খেতে দাও, এরপর সব হবে।
–এইতো….. আপনি আপুকে কতটা ভয় পান বুঝে গেছি। যাই, সবাই গিয়ে বলি আমার দুলাভাইও আপুকে ভয় পায়।
–আরে আরে, না না.।।। মিষ্টি শোনো…। মিষ্টি…. এই যাহ, চলে গেলো। এবার কি হবে? মানইজ্জত সব শেষ।
প্রিয়া রাগি চোখে মামুনের দিকে চেয়ে আছে।
–এভাবে দেখছো যে? আমি কিছু করিনি। তোমার ওই শয়তানের হাড্ডি বোনটাই সব করেছে।
–কাল সকাল হলেই আমি চলে যাবো। তখন তোমাকে আর কাউকে ভয় পেতে হবে না।
–আমার পরিটা রাগ করেছে?
–একদম ছুবে না আমাকে। আমার সাথে আর কোনো কথাও বলবা না।
মামুনের সাথে রাগ করে প্রিয়া শুয়ে পড়ে।
মামুন শত চেষ্টা করেও রাগ ভাঙাতে পারেনি।
সবাই বিয়ের আনন্দে চারদিকে হইহুল্লোর করছে।
এদিকে প্রিয়া একপাশ হয়ে শুয়ে আছে। মামুনও প্রিয়ার পাশে শুয়ে পড়ে।
কারন মামুন ভালো করেই জানে, এখন যদি সে এখান থেকে উঠে বাহিরে যায়, তাহলে প্রিয়া হয়তো এই মাঝরাতেই বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা ধরবে।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রিয়া বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
মামুনও কোনো উপায় না পেয়ে প্রিয়ার সাথে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
খালা, খালু, খালাতো ভাই, খালাতো বোন কেউ প্রিয়াকে আটকে রাখতে পারেনি।
প্রিয়া, বাড়ি এসে রুমের দরজা আটকে দেয়।
–কি হয়েছেরে মামুন? প্রিয়া দরজা আটকে দিলো।(মা)
–কি আর হবে? তোমার বউয়ের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এতগুলো মানুষ ওকে আটকানোর চেষ্টা করেছে। কেউ আটকে রাখতে পারেনি। এসব কোন ধরনের পাগলামি? সব কিছুর একটা লিমিট আছে।
–কি হয়েছে?
–ওর খালাতো বোন আমার সাথে দুষ্টুমি করছিলো, এই জন্য….।
–কেনো তুই দুষ্টুমি করতে গেলি? তুই জানিস না মেয়েটা কেমন?
–ওর এই কেমনটা আমার খুবই অসহ্য লাগে। কিনো নিয়ে গিয়েছিলো আমাকে? আবার কেনই বা সবার সামনে এমন পরিস্থিতি তৈরী করে নিয়ে এলো? আমি ওর হাতের পুতুল?
–আস্তে বল বাবা, ও শুনতেছে।
–শুনুক। শোনার জন্যই বলছি।
–চুপ কর।
–কেনো চুপ করবো? জানো কেমন লাগছে আমার? কি ভাবছে সবাই? বউয়ের ভয়ে চুপ করে ছিলাম। বউয়ের পেছন পেছন ওবাড়ি থেকে চলে এসেছি।
প্রিয়া দরজা খুলে বাহিরে আসে।
–কেনো এসেছো? তোমাকে আমি নিয়ে এসেছি? (কাঁদতে কাঁদতে)
–একদম ন্যাকা কান্না কাঁদবি না। বলিস আর কোথাও যেতে।
(প্রিয়া শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে কাঁদছে)
–মামুন, চুপ কর। যা ঘরে যা।(মা)
–আমাকে না, তোমার আদরের বউকে বোঝাও। যত্তসব….।
.
.
.
চলবে…..
অধিকার
লেখক A_Al_Mamun
পর্ব :- ৯(শেষ)
.
প্রিয়া শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে কাঁদছে
–মামুন, চুপ কর। যা ঘরে যা।(মা)
–আমাকে না, তোমার আদরের বউকে বোঝাও। যত্তসব….।
বলেই মামুন নিজের রুমে চলে যায়।
প্রিয়া শাশুড়ির সামনে দাড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
–প্রিয়া, কাঁদছিস? এই পাগলি মেয়ে। এই জন্য কাঁদতে হয়?
–ও আমাকে কতকিছু বললো।
–ও তো একটা শয়তান। তুই আমার রুমে আয়। ওর সাথে আমরা আর কথা বলবো না, আয়।
প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতে শাশুড়ির রুমে আসে।
–তুই এখনো কাঁদছিস?
–ও কেনো এতো রেগে গেলো?
–আবার ঠিক হয়ে যাবে। তুই কেনো ওবাড়ি থেকে চলে এলি? সবাই কি ভাবছে?
–যা ভাবার ভাবুক। ও কেনো অন্য মেয়ের সাথে কথা বলবে?
–ওটা তোর খালাতো বোন।
–তো কি হয়েছে? ও বললো ওর বান্ধবিরা নাকি মামুনকে পছন্দ করেছে। কেনো এমন বলবে?
–তোকে রাগানোর জন্য হয়তো এমন বলেছে।
–বলুক, ওদের কথা আমি ভুলে গেছি। কিন্তু মামুন এমন কেনো? ও কি আর আমাকে সহ্য করতে পারছে না?
–দেখো পাগলি মেয়ে কি বলে। এমনটা কখনো হতে পারে?
–তাহলে এখন কেনো এতো বকা দিলো আমাকে?
–হয়তো রাগ হয়েছে তাই।
–আমি আর কথা বলবো না ওর সাথে।
–দেখো কান্ড, আবার কাঁদছিস কেনো?
–মামুন আমাকে একদম সহ্য করতে পারছে না।
–ও কখন বললো এটা?
–বলেছে। অসহ্য বলেছে, আমার মাথায় সমস্যা বলেছে, যত্তসব বলেছে।
–আমার মেয়েটাকে এতোকিছু বলেছে? আমিতো খেয়ালই করি নি।
–আমি অনেক খারাপ হয়ে গেছি তাই না জেঠিমা?
–কে বললো? তুই তো আমার লক্ষি বউমা। আমার কলিজা….।
–তাহলে ও কেনো আমাকে এতো বকা দিলো?
–ও ভালো না, আয়, আমরা দুজন মিলে প্ল্যান করি। কিভাবে ওকে শায়েস্তা করা যায়।
–কি করবে?
–আজ তুই আমার সাথে ঘুমাবি। ও একা থাাকবে।
–জেঠু?
–তোর জেঠু অন্য রুমে থাকবে।
–মামুন মন খারাপ করবে।
–করুক, আমার ফুলের মতো মেয়েটাকে কাঁদিয়েছে। ওকে শাস্তি দিতে হবে না?
–ও যদি আমাকে ডাকতে আসে?
–যাবি না। বলবি আজ আমার সাথে থাকবি।
–ও আমাকে নিয়ে যাবে। তুমি দেখে নিও।
–নিলে খুশি হবি?
–হুম খুব।
–তাহলে দেখা যাক, নিতে আসে কিনা।
–জেঠিমা, তুমি জিতবে না। ও এসে আমাকে নিয়ে যাবে।
–আসবে না।
–যদি আসে?
–আসলে আমার গলার চেইনটা তোর।
–সত্যি তো?
–হুম সত্যি।
–আচ্ছা।
.
প্রিয়া শাশুড়ির শর্ত শুনে সব ভুলে গেছে। এতক্ষণ কাঁদছিলো, মামুনের কথায় যেই কষ্টটা পেয়েছিলো শাশুড়ির এক কথায় সব ভুলে গেছে।
মামুনের মা মুচকি মুচকি হাসছে আর ভাবছে, মেয়েটা কতটা নিশ্পাপ, পুরো বাচ্চাদের মতো।
মনের কষ্ট সব মুছে গেছে।
প্রিয়া সারাদিন মামুনের সাথে একটা কথাও বলেনি।
মামুনও আগ বাড়িয়ে আর কোনো কথা বলেনি।
রাত তখন প্রায় ১টা, প্রিয়া শাশুড়ির সাথে শুয়ে আছে।
–ও জেঠিমা, ও আসছে না কেনো?
–আমি বলছি না ও আসবে না।
–আসবে আসবে। তুমি দেখো, ও ঠিক আসবে।
–আসলে দেখা যাবে, তুই ঘুমা, অনেক রাত হয়েছে।
–না, মামুন আসবে।
–আসলে তো ডাকবেই। তুই ঘুমা।
–না, ও আমাকে নিয়ে যাবে। আমি ওর সাথে ঘুমাবো।
–ও হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। তুইও ঘুমা। রাত কি কম হলো?
–না, ও ঘুমায়নি।
–তুই কি বাচ্চা মেয়ে? এতো কাঁদিস কেনো?
–মামুন কেনো এখনো আসছে না?
–আচ্ছা বাবা, তুই যা।
–না, ও আমাকে নিতে আসবে। আমি জানি ও আসবে।
–জানলে কাঁদছিস কেনো?
–আমার কিছু ভালো লাগছে না। ওকে ডাকো জেঠিমা।
–পাগলি মেয়েটাকে নিয়ে আর পারি না। ওকে ছেড়ে যখন থাকতে পারবি না, তখন এলি কেনো?
–আমি জানি, ও আমাকে আর সহ্য করতে পারে না।
–আয় মা, আমার সাথে আয়। আমি তোকে ওর কাছে দিয়ে আসছি।
–না, ও আসবে।
প্রিয়া কাঁদতে থাকে। ঘুম ছেড়ে শাশুড়িও প্রিয়ার পাশে বসে আছে।
এক কথায় প্রিয়া বাচ্চাদের মতো আচার-আচরন করছে।
ওর এক কথা, মামুন এসে ওকে রুমে নিয়ে যেতে হবে।
রাত প্রায় ২:৩০মিনিট।
কাঁদতে কাঁদতে প্রিয়া বিছানায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
পাশের রুমেই মামুন ছিলো। মামুনকে মা ডেকে পাঠায়।
প্রিয়ার পাশেই মামুন বসে আছে।
রাত বেশি হওয়ায় কোনো ডাক্তারকে খবর দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে কেউ বেশি হতাস হয়নি, কারন বোঝাই যাচ্ছে প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
তবুও মামুন ডাক্তারকে ফোন দিতে চেয়েছিলো।
কিন্তু মা মামুনকে ডাক্তার ডাকতে দেয়নি।
একটু পরই প্রিয়ার জ্ঞান ফিরে।
প্রিয়া চোখ মেলে দেখে মামুন হাত ধরে পাশেই বসে আছে।
নিমিষেই প্রিয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
–জেঠিমা, দেখেছো? আমি বলেছি না ও আসবে।
–হুম
–আমি জিতে গেছি।
–হ্যা, তুই জিতে গেছিস।
–আমার পুরষ্কার?
–কিসের পুরষ্কার মা?(মামুন)
–আছে, তুই বুঝবি না। তুই রুমে যা।
–আচ্ছা, চলো প্রিয়া।
–ও থাক, ওর সাথে আমার কিছু কথা আছে। একটু পর ওকে পাঠাচ্ছি। তুই যা।
–কি এমন কথা? যে আমার সামনে বলা যায় না।
–তুই যাবি?
–যাচ্ছি তো।
মামুন প্রিয়াকে রেখে একাই নিজের রুমে চলে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ পর প্রিয়া রুমে আসে।
–তুমি ঠিক আছো?(মামুন)
–হুম(প্রিয়া)
–কি ব্যাপার? এতো খুশিখুশি লাগছে?
–এমনি।
–মায়ের চেইন তোমার গলায়? মা দিয়েছে?
–হুম
–এখন কি কিছুটা রাগ কমেছে?
–একটুও রাগ নেই। তুমি আমাকে নিতে এতো দেরি করে আসলে কেনো?
–আমি ভাবলাম তুমি নিজেই চলে আসবে। সরি….
–ঠিক আছে। আমি জানতাম তুমি আসবে। আমাকে ছাড়া তুমি ঘুমাতেই পারবে না।
–এতোকিছু জানো?
–হুম।
–অনেক রাত হয়েছে। আসো ঘুমাবো।
–আচ্ছা।
প্রিয়া মামুনকে জাপটে ধরে শুয়ে পড়ে।
–জানো, তুমি আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছো। তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুমই আসে না।(প্রিয়া)
–তাহলে মায়ের কাছে কিভাবে ছিলে?(মামুন)
–আমি শুধু ছটফট করছিলাম। কখন তুমি আমাকে নিতে আসবে।
–তুমি মায়ের সাথে ঘুমাচ্ছো। এতো রাতে কি করে তোমাকে ডাক দেবো? মা কি ভাব্বে? ছেলে বউ পাগল।
–জেঠিমাই তো বললো তুমি আসবে।
–সেটাতো মায়ের পক্ষ থেকে। কিন্তু আমিতো ওনার ছেলে। আমারও তো একটা লজ্জার ব্যাপার আছে। বোঝো না কেনো?
–সেটাও তো ঠিক। জানো, তুমি আসছিলে না দেখে আমি খুব কেঁদেছি।
–হুম, মা বলেছে।
.
–তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
–বলো।
–তুমি কোনো রিয়েক্ট করতে পারবে না।
–হুম হুম, বলো।
–ঘটনাটা জেঠিমাকে নিয়ে।
–কি সেটা?
–আমি বলতে পারবো না।
–তাহলে থাক।
–শুনবে না?
–না বললে কি করে শুনবো?
–জেঠিমা দাদি হতে যাচ্ছে।
–মানে?
–১+১=১
–মজা করছো?
–উহু
ওমনি মামুনও প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
–সত্যি বলছো? আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমি বাবা হবো?
প্রিয়া মামুনের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে।
যেনো দুনিয়ার সমস্ত লজ্জা আজ প্রিয়াকে ভর করেছে।
–আমি এক্ষুনি মা বাবাকে খবরটা দিয়ে আসি।
–জেঠিমা জানে।
–কিভাবে?
–জেঠিমাই তো আমাকে বললো
–মা খুশি হয়েছে?
–খুব, আমাকে অনেক্ষন জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো।
–চাচা চাচিকে জানিয়েছো?
–জেঠিমা বলবে বলেছে। আমার বলতে লজ্জা করবে।
–ওলে আমার লজ্জাবতি.।। যেদিন তোমাকে আমার করে পেয়েছি সেদিনও এতোটা খুশি লাগেনি আমার, আজ যতোটা লাগছে।
প্রিয়া এখনো মামুনের বুক থেকে মাথা তোলেনি।
–এই পাগলি, সোজা হও।
–না
–আমার বউটাকে একটু দেখি।
–না
মামুন প্রিয়ার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে প্রিয়ার মাথা সোজা করে।
–একি? তোমার চোখে পানি কেনো?(মামুন)
–আমার একটা ছোট্ট বেবি হবে। আমি মা হবো, তুমি বাবা হবে। আমাকেও কেউ আম্মু বলবে। এটা ভাবতেই আমার কতটা আনন্দ লাগছে তোমাকে বোঝাতে পারবো না।
–পাগলি, এই জন্য কাঁদতে হয়?
–আমার জীবনে এতো খুশি কেনো? কেনো আমি এতো সুখি? যাকে ভালোবাসি তাকে পেয়েছি। যেই পরিবারটা চেয়েছি সেটাও পেয়েছি। একটা বেবি চেয়েছিলাম, সেটাও অনাগত। আমি আর পারছি না।
–আমার বেবিটা আমাকে কবে আব্বু বলবে?
–বলবে না। এটা আমার বেবি, তোমার না।
–তাহলে আমি কে?
–আমি কি জানি? তুমি আজ আমাকে অনেক বকা দিছো। আমার বেবি আমি তোমাকে দিবো না।
–রাগ করছো?
–হুম। তুমি কখনো আমাকে এমন বকা দাও নি। আজ কেনো দিলে?
–তুমি সবার সামনে ওরকম করলে কেনো? রাগ তো হবেই।
–তুমি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলবা না।
–আচ্ছা।
–আমি ছাড়া তোমার ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার আর কারো নেই।
–আমাদের বেবি ও না?
–না। শুধু আমি। তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসবে। আর আমি ভালোবাসবো আমার বেবিটাকে।
–এটা কেমন কথা হলো?
–এমনই হবে। তুমি শুধু আমার…। তোমার বুকে আমি থাকবো। আর আমার বেবিটা আমার বুকে থাকবে।
–এ কেমন ভালোবাসা? যে নিজের বেবিটাকে বুকে নিতে পারবো না।
–এজন্যই বলছি আমার বেবি আমি তোমাকে দিবোনা। ওটা শুধু আমার বেবি।
–আচ্ছা তোমার…। আমাকে শুধু আব্বু বললেই হবে।
–আচ্ছা, আমি আমার বেবিকে শিখিয়ে দিবো তোমাকে আব্বু বলতে।
–এবার ঘুমাও। একটু পরই সকাল হয়ে যাবে।
–হুম। এদিকে আসো।
–এই না, সোজা হয়ে ঘুমাও।
–তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুম হয়?
–চেষ্টা করো, জড়িয়ে ধরলে যদি ঘুমের ঘোরে তোমার পেটে যদি চাপ লাগে?
–লাগবে না।
মামুন বাঁধা দিয়েও কিছু করতে পারেনি।
প্রিয়া ঘুমাচ্ছে, মামুনকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমাচ্ছে।
.
সকালে বাড়িতে ডাক্তার আসে।
সবাই পুরো ব্যাপারটা নিশ্চিত হয়।
মামুন অত্মিয় স্বজন সবাইকে মিষ্টি পাঠায়।
প্রিয়ার প্রতি সবার আগের থেকে ভালোবাসা যেনো বহুগুন বেড়ে গেছে।
দুই পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী আসবে।
কারো খুশি যেনো থামছে না।
মামুন প্রিয়ার বেশ খেয়াল রাখে।
নিজের শাশুড়ি, মা, স্বামী এবং বাকি সদস্য সবাই প্রিয়ার যত্ন নেয়।
–শুনছো?
–হুম
–আমি আজ অনুভব করেছি, আমার বেবিটা নাড়াচাড়া করছে।
–কিছু বলেছে?
–বলেনি, তবে বলবে। আমার সাথেই বলবে।
–আমি একটু কথা বলি?
–কিভাবে?
–এই দেখো…
প্রিয়া দাড়িয়ে আছে। মামুন হাটু গেড়ে বসে প্রিয়ার পেটে কান লাগায়।
–আব্বু, আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? শুনো, তোমার আম্মুকে একদম কষ্ট দিবা না। তাহলে কিন্তু আমি তোমার সাথে কথা বলবো না। মনে থাকবে তো?
–হা হা হা, কি করছো? কেউ দেখলে কি বলবে?
–কি বলবে? আমি আমার বেবির সাথে কথা বলছি।
–তুমি কি চাও? ছেলে? নাকি মেয়ে?
–মেয়ে।
–মেয়ে কেনো?
–মেয়েরা বাবা ভক্ত হয়, তাই। আমার তো রাজকুমারী আছেই। এখন আমাদের রাজকন্যার অপেক্ষায় আছি।
–আমি চাই ছেলে হোক।
–কেনো?
–আমি জানি, মেয়ে হলে তুমি আমাকে আর ভালোবাসবে না। সবসময় মেয়েকে নিয়েই থাকবে। মেয়েকেই ভালোবাসবে।
–কে বললো?
–বাবা আমাকে খুব ভালোবাসে। আমিও মায়ের চেয়ে বাবাকে বেশি ভালোবাসি। তাই আমি জানি।
–পাগলি একটা। তোমার ভালোবাসায় এখন পর্যন্ত কেউ ভাগ বসাতে পারেনি। ভবিষ্যৎতেও পারবে না। কিন্তু সন্তানের ভালোবাসা সন্তান ঠিকই পাবে।
–তোমার মধ্যে যদি কোনো পরিবর্তন দেখি, তাহলে তোমাকে আমি খুন করবো।
–তাহলে আমার পরিটাকে কে দেখে রাখবে?
–আমার বেবিটা।
–তারমানে আমাকে মেরেই ফেলবে?
–মারবোই তো, মেরে আমিও মরে যাবো।
–তুমি আসলেই একটা পাগলি মেয়ে।
–জানো, জেঠিমা একটা সুয়েটার বুনতেছে।
–কার জন্য?
–আমাদের বেবির জন্য।
–আমার জন্য তো মা কখনো সুয়েটার বানায় নি। নাতিনাতনি হবে তাই সুয়েটার বানাচ্ছে?
–পাগল একটা। বসো, এসব কেউ বলে?
–সত্যিই মা খুব খুশি হয়েছে, তাই না?
–হুম।
–তুমি খুব সাবধানে থাকবা, একদমই ভারি কাজ করবা না। না পারলে আমাকে বা বাড়ির কাউকে ডাক দিবা।
–আচ্ছা।
–তুমি বসো, আমি খাবার নিয়ে আসি।
.
প্রিয়া চুপচাপ বিছানায় বসে আছে আর ভাবছে।
মামুন আগে থেকেই আমার প্রতি যত্নশীল, কিন্তু এতটা যত্নশীল কখনো দেখি নি।
সব কি আমার বেবিটার জন্য? আমি কি পেরেছি আমার পাগলটাকে খুশি করতে?
ওর ভালোবাসার প্রতিদান দিতে?
কেনো আমি ওকে এতোটা ভালোবাসি?
কেনো ও আমাকে এতোটা ভালোবাসে?
কি আছে আমাদের দুজনের মাঝে?
যতদিন না আমার বেবিটা দুনিয়ায় আসে ততদিন আমার বেবিটাকে আমি খুব যত্ন করে রাখবো।
আমার বেবিটাকে যখন সে কোলে নিবে তখন তার সেই হাসিমাখা মুখটা আমি প্রান ভরে দেখবো।
–আমার পাগলিটা কি ভাবছে?
–কই? কিছুনা তো।
–এই নাও, হা করো…।
–তুমি খাও।
–আগে তুমি খাও, আমার বেবিটার খুদা লেগেছে, ও কাঁদছে। তুমি পেট ভরে খাও।
–পাগল একটা।
–হুম হয়েছে, খাও।
প্রিয়াকে মামুন নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে।
প্রিয়া খাচ্ছে, সাথে চোখের পানিও পড়ছে।
এই যে সুখে অশ্রু। যা মামুন ভালো করেই বুঝতে পারে।
.
এভাবেই সুখের প্রহর গুনতে গুনতে দিনগুলো পার হতে থাকে।
প্রায় ৮ মাস পর………..
–শুনছো?
–হুম
–আজ অফিসে যেও না।
–কেনো?
–আমার শরীরটা কেমন যেনো লাগছে।
–ডাক্তার ডাকবো?
–না, তুমি একটু পাশে থাকো প্লিজ।
–এত কাজ রেখে বসে থাকলে তো চাকরি চলে যাবে।
–ওও, আচ্ছা যাও। জেঠিমাকে একটু ডেকে দিও।
–শরীরটা কি বেশী খারাপ লাগছে?
–না, আমি ঠিক আছি, তুমি যাও।
মামুন ভালো করেই বুঝতে পারে প্রিয়া অভিমান করেছে।
–যদি না যাই?
–তোমার চাকরি চলে যাবে।
–রাগ করছো?
–না।
–কি করে ভাবলে তোমাকে এই অবস্থায় রেখে আমি চলে যাবো।
–তাহলে কেনো বললে?
–দেখলাম তুমি কি বলো।
–আমার ভীষণ ব্যাথা করছে।(নিজের কোমড় চেপে ধরে)
মামুন জোরে জোরে মাকে ডাকতে থাকে।
মামুনের চিৎকারে মামুনের মা, প্রিয়ার মা দুজনই ছুটে আসে।
–কি হয়েছে বাবা?(মামুনের মা)
–প্রিয়া…..(মামুন)
–প্রিয়া, কি হয়েছে মা?
–ভীষণ ব্যাথা করছে।
–সবেতো মাত্র ৮মাস হলো।
–ভাবি, মাঝে মাঝে এর আগেও সব হয়ে যায়। ডাক্তার ডাকা দরকার।(প্রিয়ার মা)
প্রিয়া ধীরেধীরে কান্না শুরু করে দেয়।
মামুন ভালো করেই বুঝতে পারে অবস্থ্যা খুবই সিরিয়াস।
তাই দেরি না করে এম্বুলেন্সে খবর দেয়।
প্রিয়াকে এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মামুন পাশেই প্রিয়ার হাত ধরে বসে আছে।
আর প্রিয়া ছটপট করছে।
–প্রিয়া, তোমার কষ্ট হচ্ছে? আর একটু, আমরা চলে এসেছে।
–আমি আর পারছি না।
–একটু ধৈর্য ধরো প্লিজ।
–আমার খুব ভয় করছে।
–আমি আছিতো।
–আমার পাশে থেকো প্লিজ।
–হুম আমি থাকবো।
–যদি আমি মরে যাই?
–প্লিজ চুপ করো।
–তুমি আর বিয়ে করবে না। তুমি আমার, শুধু আমার। আমাকে ছাড়া আর কাউকে তুমি ভালোবাসতে পারবে না।
–আমি শুধু তোমারই। আর তুমিও শুধু আমার। তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো।
খুব দ্রুত এম্বুলেন্স হাসপাতালে পৌছায়।
প্রিয়াকে অপারেশন থিয়েটারের নেওয়া হয়।
কিন্তু মামুনকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
মামুন দরজার সামনে পায়চারি করছে।
মা আর শাশুড়ি দুজন মামুনকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
সবার মুখে চিন্তার ছাপ।
.
দীর্ঘ ৩ ঘন্টা পর এক মহিলা ডাক্তার বাহিরে আসে।
মামুন ছুটে ডাক্তারের কাছে আসে।
–ম্যাডাম, আমার স্ত্রী কেমন আছে?
–আমি বলবো? নাকি আপনি নিজের চোখে দেখবেন?
–কি হয়েছে ডাক্তার? ও ঠিক আছে তো?
–ডান পাশের রুমটাতে ওনাকে সিফট করা হয়েছে। শুধু আপনি যান।
মামুনের বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়।
প্রিয়ার কিছু হয়ে যায়নি তো? ডাক্তার কেনো এভাবে বলছে?
মামুন ধীরেধীরে কেবিনের সামনে আসে।
দরজা খুলতেই সামনে একটা দোলনা রাখা।
তাতে ছোট্ট একটা ফুটফুটে বাচ্চা হাত পা নাড়াচ্ছে।
মামুন ভালো করেই বুঝতে পারে এটা তারই বাচ্চা।
কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।
চোখ দুটো শুধু প্রিয়াকে খুজছে।
[এখানে প্ল্যান ছিলো প্রিয়াকে মেরে ফেলবো। কিন্তু আমার ৪র্থ পর্বে মামুন আর প্রিয়ার এক্সিডেন্টে আপনারা যেভাবে আমার ইনবক্স আর গল্পের কমেন্ট বক্সে হামলা করেছেন, সেই ভয়ে এবার আর প্রিয়াকে মারার সাহস হয়ে ওঠেনি]
কেবিনের ছোট্ট একটা বেডে প্রিয়া শুয়ে আছে।
মামুন ধীরেধীরে প্রিয়ার পাশে এসে বসে প্রিয়ার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়।
প্রিয়া ধীরেধীরে চোখ খোলে।
–শয়তান, তোকে বলছি আমার পাশে থাকতে, কই ছিলি? কেনো আমার পাশে ছিলি না? যদি আমার কিছু হয়ে যেতো?(প্রিয়া)
–আমি থাকতে তোমার কিছু হতে পারে? তোমার কিছু হলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচতাম?
–জানো, আমার ভীষণ ভয় করছিলো। মনে হলো আমি বুঝি চিরতরে তোমার থেকে দুরে চলে যাচ্ছি
–আর কোনো ভয় নেই। এই তো আমি চলে এসেছি।
–জানো, আমি আজ কতো খুশি।
–কেনো?
–তুমি আমার কাছে একটা মেয়ে চেয়েছিলে। ওপরওয়ালা তোমার সেই কথা শুনেছে। আমি পেরেছি তোমাকে সেই উপহারটা দিতে। ওই দেখো তোমার মেয়ে।
এতক্ষণে মেয়ের কথা মামুনের খেয়ালে আসে।
মেয়েটাকে দ্রুত কোলে তুলে নেয়। প্রিয়া একদৃষ্টিতে মামুনের দিকে চেয়ে আছে, মামুন মেয়েকে কোলে নিয়ে মেয়ের সাথে কথা বলছে।
প্রিয়া মামুনের দিকে চেয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।
কারন প্রিয়া মামুনকে কখনো এতটা খুশি হতে দেখে নি।
মেয়েকে এনে প্রিয়ার পাশে আস্তে করে শুইয়ে দেয়।
প্রিয়া মেয়েকে পরম আদরে জড়িয়ে ধরে।
মামুন পাশেই বসে প্রিয়ার দিকে একনজরে চেয়ে আছে।
–কি দেখছো?(প্রিয়া)
–তোমাকে।
–কেনো?
–আমার মেয়েটা দেখতে একদম ওর মায়ের মতো হয়েছে।
–তাই বুঝি? এজন্যই আমি বলেছিলাম এটা আমার বেবি।
–হুম তোমার, আর তোমরা দুজনই আমার।
এরমধ্যে মামুনের পরিবারের সবাই চলে আসে।
সবাই আজ খুব খুশি
নাতনীকে দেখে দুই বেয়াই আর বেয়ান খুশিতে ছন্নছাড়া।
এবার প্রিয়া আর মামুন বাকিদের কান্ড দেখছে।
মামুন সবাইকে শুনিয়ে একটু জোরেই বলে ওঠে,
“আমি ভেবেছিলাম আমার চেয়ে বেশি খুশি বোধয় আর কেউ হয়নি। এখন দেখি সিরিয়াল অনেক লম্বা”
সবাই মামুনের কথায় একিসাথে হেসে ওঠে।
প্রিয়া মামুনের কানে কানে বলে,
–আমার ভালোবাসার মধ্যে ভাগ বসাতে আমার মেয়ে চলে এসেছে। বাবা, মা, জেঠু, জেঠিমা সবাই এবার নাতনীকে নিয়ে থাকবে।কেউ আর আমাকে ভালোবাসবে না।
–আমি আছিতো। তোমার সব ভালোবাসা আমি পুষিয়ে দিবো।
–হুম, আমার শুধু এক তুমি হলেই চলবে। যার ওপর শুধু আমার অধিকার থাকবে।
–হুম, আমার ওপর শুধু তোমারই অধিকার আছে।
ভালোবাসাগুলো এমনই হয়।
পরিস্থিতি যেমনই হোক, মনের মানুষটা পাশে থাকলে কোন কষ্টই কষ্ট লাগে না।
তাইতো যুগযুগ ধরে ভালোবাসা বেচে আছে, মরলেও তা অমর হয়ে আছে।
এভাবেই বেচে থাকুক ভালোবাসাগুলো।
.
.
.
______সমাপ্ত_______