ফুফু শাশুড়ি
লেখা : শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব:১
১!!
_আন্টি আপনার কাঁধের ওখানের থার্ড পেপার দেখা যাচ্ছে।
আন্টি বোধ হয় নিশুর কথার আগা মাথা তেমন কিছু বুঝতে পারেনি। তাই কিছুটা উৎসুক চোখে নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_কী বললে?
_আন্টি আপনার কাঁধে মাল্টি কালারের থার্ডপেপারের ফিতা দেখা যাচ্ছে।
আন্টি আড় চোখে কাঁধের দিকে তাকিয়ে কাঁধের কাছ থেকে জামাটা ঠিক করে নিশুর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
_থার্ড পেপার মানে কী?
_ঐ যেটা ঢাকলে ওটাকেও আমরা থার্ড পেপার বলি। মর্ডান ইউনিকোড ল্যাংগুয়েজ।
_ওহ!
_আন্টি একটা কথা জানার ছিল!
_হুম বলো। তার আগে আন্টি আন্টি বলা বন্ধ করো। আই এ্যাম নট ইউর আন্টি। আমার বয়সও আন্টিদের মত না। আই এ্যাম স্টিল ইয়াং।
নিশু তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে মনে মনে বলল,
_কপাল ভালো যে আপনাকে দাদি ডাকি নি। বয়স তো আমার দাদির চেয়ে বেশি ছাড়া কম হবে না। আবার কথায় কথায় ইংলিশ মারাচ্ছে! হুহ, বুড়ি!
অবশ্য আন্টি নিশুর ভেংচি দেখল না। কারণ নিশু বোরকা পরা, হিজাব দিয়ে নাম মুখ ঢাকা খালি চোখ দেখা যায়। নিশু আন্টির দিকে খানিকটা ঝুকে বলল,
_ঠিক আছে আন্টি ডাকব না। তবে আগে বলুন মাল্টিকালারের থার্ড পেপার কোথায় পেলেন? আমরা তো পাইনা। কোন ব্রান্ড? দেখতে কিন্তু হেব্বি। তারপর চোখ মেরে, ঠোঁট গোল করে শিশ বাজালো নিশু।
আন্টি নাড়েচড়ে দাড়ালেন। জীবনে প্রথম তার মনে হচ্ছে তাকে কেউ ইফটিজিং করছে তাও কোন ছেলে নয় বরং একটা মেয়ে। আন্টি গম্ভীর গলায় বলল,
_তুমি তো ভারী বেয়াদপ মেয়ে। এমন করে ছেলেদের মত চোখ মেরে শিশ দিয়ে কেউ কথা বলে?
_যাহ্ বাবা আপনি এখানে বেয়াদপের কী দেখলেন? এমন ভাবে কথা বলছেন যেনো ব্রান্ড না আপনার সাইজ জিজ্ঞেস করছি। অবশ্য আপনার সাইজ তো পুরো বাচ্চা হাতির সাইজ। মেবি ৪২´´ নাকি ৪৪´´ তাই না আন্টি?
এবার আন্টি যে ভয়ানক ক্ষেপে গেলো তা নিশু ভালো করে বুঝতে পারছে। তাই কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ একটু দূরে গিয়ে বলল,
_ব্রান্ডের নামটা বললে ভালো হতো আন্টি!
তারপর আন্টির অগ্নি চোখ উপেক্ষা করে হাসতে হাসতে ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেলো।
মাসিক (Deposit Premium Scheme ) মানে সহজ ভাষায় DPS লেখাতে ব্যাংকে এসেছিল। সেখানে কতক্ষন লাইনে দাড়িতে থাকতে থাকতে চরম বিরক্তিকর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। ভাবল বোরিংনেস কাটাতে কিছু করবে। তাই চারদিক খেয়াল করতে আন্টির দিকে তাকাতেই মনেহল আন্টি একটু বেশিই ন্যাকা টাইপ আন্টি। কেমন কেমন ভাব করে চারদিকে তাকাচ্ছে। পরনে দামি স্লিকের কামিজ, আর প্লাজু, ওড়নাটাও স্টাইল করে, পিন দিয়ে সেট করা। কতক্ষন পর উফ গরম বলে হাত দিয়ে মুখে ঢঙ্গি ভঙ্গিতে বাতাস করছে। অথচ ব্যাংকে মাথার উপর বড় বড় দুটো ফ্যান ফুল স্পিডে ঘুরছে। নিশু ভাবল ঢঙি আন্টিকে একটু টিজিং করা যাক। যেই ভাবা সেই কাজ।
২!!
ব্যাংকের বাইরে এসে বলল,
_এখন পার্লারে গিয়ে ঝাক্কাস একটা ফেসিয়াল দিতে হবে। নয়ত বিকেলে পেত্মির মত দেখাবে।
বিকালে নিশুকে দেখতে আসবে। অন্য কেউ দেখতে আসলে নিশুর রনচন্ডীর রূপ নিতে দুবার ভাবত না। কিন্তু আজ ওর প্রেমিক আহসানের ওরফে আহুর বাবা মা আর পরিবারের সবাই দেখতে আসবে। সাথে এনগেজমেন্টও হবে। দীর্ঘ চার বছর আহুর সাথে প্রেম করার পর আজ ওদের সম্পর্ক নতুন মোড় নিবে। তাই সুন্দর করে সাজা দরকার। পার্লারে যাবার জন্যই নিশু মূলত বোরকা পরছে। কারণ ফেসিয়াল করে বাড়ি ফেরার সময় স্কিনে রোদ লাগলে প্রবলেম হতে পারে।
পার্লারে গিয়ে মুখে ফেইস মাক্স লাগিয়ে এক্সিকিউটিভ চেয়ারে আরামদায়ক ভঙ্গিতে শুয়ে নিশু ভাবছে, আহুর সাথে বিয়ে করতে ওকে কম ঝামেলা পোহাতে হলো না। আহুকে নিশুর পরিবার মোটেও মানতে চাইল না। নিশুর বাবা যখন বলল এ ছেলে আমার পছন্দ না। তখন নিশু বাবার সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
_আহুর মধ্যে সমস্যা কী? দেখতে সুন্দর, স্মার্ট, উচ্চ শিক্ষিত, ভালো জব করে, বাবার বিশাল সম্পত্তি আছে। এক কথায় সর্বগুণ সম্পন্ন। তবে আহুকে পছন্দ নয় কেন?
_নিশুর বাবা বলল, ছেলের রুচি খারাপ। আর যে ছেলের রুচি খারাপ তার সাথে মেয়ে বিয়ে দিবো না।
_কেন কিভাবে বুঝলে আহুর রুচি খারাপ?
_তোর মত বাজখাঁই, গুন্ডী মেয়েকে যে ছেলে ভালোবাসতে পারে তার রুচি নিশ্চয়ই খারাপ। যে মেয়ে উঠতে বসতে ছেলেদের টিজিং করে, ধরে ধরে ব্যাট দিয়ে পেটায়। সে মেয়েকে কোন ছেলে পছন্দ করছে মানে সে ছেলের রুচি ১০০% খারাপ। তাছাড়া ছেলেটা অতিমাত্রায় ভদ্র। তোর জন্য এমন ছেলে খুঁজবো যে, তোর মত চালাক মেয়েকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে পারে। উঠতে বসতে যে তোকে শিক্ষা দিয়ে দমিয়ে রাখতে পারবে এমন ছেলের কাছে তোকে আমি বিয়ে দিবো। কিন্তু এ ছেলে তো পুরাই ভদ্রের বাপ। তুই ওকে উঠতে বসতে মারলেও বিড়ালের মত বসে থাকবে কোন টু টা শব্দ করবে না। আমি বাপ হয়ে জেনে শুনে আমার বাজখাঁই বজ্জাত মেয়ের সাথে ওমন ভালো ছেলের বিয়ে দিয়ে ছেলেটার জীবন কী করে নষ্ট করি বল!
বাবার কথা শুনে নিশু এমন ভাবে হা করল যে, মনে হয় ওর আলজিব্বাহ্ পর্যন্ত দেখা যায়। নিশু রাগে হুংকার দিয়ে বলল,
_তুমি আমার বাবা হয়ে আমাকে এমন বলতে পারলে?
_বাবা বলেই বলতে পারলাম। নয়ত বাহিরের লোক বললে তুই এতক্ষনে তাকে নাকানি চুবানি খাওয়াতি।
_তুমি আমার বাবা নামের শত্রু।
_সে যাই বলিস আহুর সাথে আমি তোর বিয়ে দিবো না।
_বিয়ে দিবা না।
_নাহ্।
_তবে শোন বিয়ে না দিলে আমি বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে আহুকে বিয়ে করব। তারপর তিনমাস পর এসে বলব বাবা তুমি নানা হবে। তখন মজা বুঝবে!
মেয়ের কথা শুনে নিশুর বাবা নিজামউদ্দীনের প্রেশার হাই হয়ে গেলো। উনি জানে নিশু যা বলে তা করে দেখায় তাই কোন উপায় না পেয়ে বিয়েতে মত দিলেন।
নিশু পার্লার থেকে বের হয়ে টুকটাক কিছু শপিং করে বাসায় চলে গেলো।
৩!!
সন্ধ্যার পর নিশু শাড়ি পরে লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে সেজে পাত্র পক্ষের সামনে গেলো। আহু হা করে তাকিয়ে থাকল কতক্ষন। নিশুর দুলাভাই আহুকে নিশুর পাশে বসালো ছবি তোলার জন্য। সবাই দুজনার জুটির বেশ প্রশংসা করল। আহু মৃদু স্বরে বলল,
_নিশু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
_তাহলে গালে একটা চুমো খাও।
_কী বলছো এসব! বড়রা শুনলে কী ভাববে!
_তোমার মত হাদারাম বয়ফ্রেন্ড যেনো কারো কপালে না জুটে। চার বছরের প্রেমে নিজে থেকে জড়িয়েও ধরলে না। চারটা বছর পুরো ওয়েস্ট।
_বিয়ে হলে তারপর।
নিশু কিছু বলতে নিবে তখন একজন বলল,
_কী ফুসুর ফুসুর হচ্ছে দুজনার মধ্যে হুমম! এমন কারো কথায় নিশু চোখ তুলে তাকিয়ে মুখ হা হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে চোখ দুটো খুলে বাইরে পড়বে। কারণ যে কথা বলছে সে আর কেউ নয় ব্যাংকের সে আন্টি। নিশু মনে মনে বলছে,
_এই মাল্টিকালার মালটা এখানে কী করছে? আমাকে চিনে ফেললে তো ক্যাচাল হয়ে যাবে।
তখন পাস থেকে নিশুর শ্বাশুড়ি বলল,
_বৌমা ওনি তোমার ফুফু শ্বাশুড়ি।
নিশু ফুফু শ্বাশুড়ি নাম শুনে ভিরমি খাবার জোগার হলো।
চলবে______
গল্পের কাহিনী, চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ফুফু শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব:২
_বৌমা ওনি তোমার ফুফু শ্বাশুড়ি।
নিশু ফুফু শ্বাশুড়ি শুনে ভিরমি খাবার জোগার হলো।
_নিশু খুব নিচু স্বরে বলল, আসসালামু আলাইকুম।
আওয়াজটা শুনেই চমকে উঠলেন রেশমী (ফুফু শ্বাশুড়ি)। তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল নিশুর দিকে নিশু মনে মনে দোয়া ইউনূস, আয়াতুল কুরসী, কালিমা, যত ধরনের দোয়া ও জানে সব পড়তে লাগল।
রেশমী নিশুর কাছে এসে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,
_কই দেখি আমার দিকে তাকাও তো?
নিশু ঢোক গিলে তার দিকে তাকাল। রেশমী নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_তোমার সাথে কী আমার আগে কোথাও দেখা হয়েছে?
_নিশু মনে মনে বলল, মাল্টিকালার মালটা থুক্কু মানে ফুপুটা আমায় চিনে ফেলেনিতো আবার? আল্লাহ মালুম। কিন্তু মুখে মেকি হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল, জি না ফুফু আম্মা। আমি আপনাকে আগে কখনো দেখি নাই।
_ওহ আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তোমার চোখ আগে কোথাও দেখেছি। তোমার গলার স্বরটাও বেশ চেনা চেনা লাগছে। আচ্ছা তুমি বোরকা পরো?
_একদম না। আমার বোরকা পরতে একদম ভালো লাগে না।
_ওহ।
_আজ কী বের হয়েছিলে?
_জি না ফুফু আম্মা। সারাদিন ঘরে ছিলাম। মা আমাকে দুধের সর, হলুদ, নিম পাতা, গোলাপের পাপড়ি বেটে পেস্ট করে সেটা আমার মুখে লাগিয়ে দিয়েছিল। সারা দিন মায়ের সাথেই ছিলাম। বিশ্বাস না হলে বাবা মাকে জিজ্ঞেস করুন।
নিশুর মা সুমি বেগম নিশুর কথা শুনে থতামতা খেয়ে গেলেন। ওনি মনে মনে বলছে, পাজি মেয়েটা র্নিঘাত কোন বদমাইশি করছে। এখন কী সুন্দর করে মিথ্যা বলে আমায় ফাসিয়ে দিলো। এখন আমাকেও ওর জন্য মিথ্যা বলতে হবে। এ মেয়ের জ্বালায় আল্লাহ র্নিঘাত আমাকে নরকে পাঠাবে। আমি তো ওর মত পানির মত মিথ্যা বলতে পারি না। তবুও চেষ্টা করতে হবে। মানে মানে বিয়েটা হয়ে গেলে পুরো এলাকা হাপ ছেড়ে বাঁচবে। এ তো মেয়ে না টাইম বোম, যার ঘড়ির কাটা নষ্ট যখন-তখন, যেখানে-সেখানে ধুমদাম ফেটে যায়। রেশমী নিশুর মায়ের দিকে তাকাতেই সুমি বেগম একটু হেসে বলল,
_জি বেয়ান সত্যি বলছে, সারাদিন আমার সাথেই ছিলো।
রেশমী আরো কিছু বলতে গেলে আহুর মা আহিয়া বেগম বলল,
_কী শুরু করলি রেশমী? প্রশ্ন ব্যাংক খুলে বসলি এখানেও। এখানে পুলিশগিরি করিস না বোন। যা বৌমাকে আর্শিবাদ কর।
৪!!
রাতে আহু নিশুকে ফোনে জিজ্ঞেস করল,
_নিশু সত্যি করে বলো তো ব্যপার কী? ফুপি কী তোমাকে চিনে?
_হ্যাঁ আবার না?
_মানে?
নিশু ব্যাংকের ঘটনা খুলে বলল। আহু শুনে হা হয়ে বলল,
_সর্বোনাশ টিজিং করার আর লোক পেলে না তাও রেশমী ফুফুকে!
_কেন তোমার ফুফু কী বাঘ না ভাল্লুক।
_তার চেয়েও বেশি।
_হোয়াই বেবি!
_ফুপিকে আমাদের পুরো বংশের লোক ভয় পায়। ওনি রাজশাহী জেলার ডেপুটি কমিশনার ছিলো। দীর্ঘদিন পুলিশী কাজে দেশ সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। বিয়ে পর্যন্ত করেনি। জানো ফুফু তার জীবনে পাঁচটা এনকাউন্টার করছে।
নিশুর হাত থেকে ধুম করে ফোনটা পড়ে গেলো। ফোনটা তুলে বলল,
_লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, সুব্হানাকা ইন্নি কুন্তু মিনায যালিমীন। দোয়া ইউনূস পড়ে বলল, তোমার ফুফু এত ভয়ানক?
_জি। আমার বাবা তার বড় ভাই, তবুও বাবা তাকে ভয় পায়। আমাদের বাড়িতে তার কথার নড়চড় হয়না। সে গত বছর অবসর নিছে। একবছর আমেরিকা তার ছেলে রিমন এর কাছে ছিলো।
_এই না বললে, সে বিয়ে করেনি তবে ছেলে কোথা থেকে আসছে? লাউগাছ থেকে ছিড়ে আনছে নাকি।
_নিশু পুরা কথা তো শুনবা?
_রিমন আমার বড় ফুপির ছেলে। রেশমী ফুপি ছোট। বড় ফুপি রিমনের জন্মের পর মারা যায়। রেশমী ফুপিই তখন রিমনকে নিজের ছেলের মত মানুষ করতে থাকে। রিমন তাকে মা বলেই ডাকে। আর আমরা সবাই সেটা জানি আর মানি।
_ওয়াও তোমার ফুপি তো জোশ একজন মহিলা।
_জি। কিন্তু রাগী ভিষন। যদি কোন ভাবে জানতে পারে তুমি এ অকাজ করছো তাহলে বিয়ের কথা ভুলে যাও।
_আমি কী ইচ্ছা করে করছি নাকি!
_জি আপনি ইচ্ছে করেই করছেন।
_আহু।
_হুম।
_এখন কী হবে?
_দোয়া করো যাতে তোমাকে চিনতে না পারে।
নিশু চুপ করে রইল। আহু সেটা দেখে বলল,
_নিশু
_হুম
_থার্ড পেপার মানে কী?
_তোমার মাথা আমার মুন্ডু।
৫!!
দুদিন দিন পর রেশমী তার কলেজের এক কাজে নিশুদের এলাকায় গেলো। বহু পুরানো এক বান্ধবীর সাথে গতকাল তার দেখা হয়েছে। সে এ এলাকায় থাকে। আজ সারাদিন বান্ধবীর বাসায় থাকা প্ল্যান করে আসছে সে। আহুও তার সাথে আসছে। রেশমীকে তার বান্ধবীর বাসায় নামিয়ে দিয়ে আহু নিশুর সাথে দেখা করবে।
কিন্তু নিশুদের রাস্তার মোড়ে আসতেই রাস্তার অপজিট দিকে তাকাতেই আহুর চোখ খুলে হাতে পরার উপক্রম হলো। রাস্তার অপজিড সাইডে নিশু কটা ছেলেকে ব্যাট দিয়ে আচ্ছামত পিটানি দিচ্ছে। আহু রেশমীর দিকে তাকাতেই রেশমী বলল,
_আহু ওটা তোর হবু বৌ নিশীথিনী না।
_না একদম না ফুপি। তুমি ভুল দেখছ। চলো তোমাকে তোমার বান্ধবীর বাসায় দিয়ে আসি।
_না আমি ভুল দেখিনি। ওটা নিশ্চয়ই নিশু। চলত।
রেশমী আহুর হাত ধরে টেনে রাস্তার অপর পাশে যেতে নিলো। আহু মনে মনে বলল,
_গেলো গেলো। আমার বিয়েটা গেলো! ওরে নিশু তুমি কেন করো হিসু। না মানে সাপের মস হিস হিস। সবসময় নাকের ডগায় রাগ নিয়ে ঘোরো। বেচারা কোন ছেলের জানি হাত পা ভাঙছে আজ। আচ্ছা নিশু কী বিয়ের পর এমন থাকবে! আমাকেও কী মারবে। কথাটা ভাবতেই আহুর গা ঝাড়া দিলো।
রাস্তর ওপর পাশে গিয়ে ভির ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেখল। একটা ছেলে রাস্তায় বসে কাঁদছে। আর দুটো বলছে,
_ভাইরে মেয়েদের হাতে মার খেয়েছিস বলে কাঁদিস না। আমরাও তো খেয়েছি আমরা কী কাঁদছি।
ছেলেটা ইইইইইই——- এ্যা—— করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
_শালা তোদের মত দুটো দামরা বন্ধু থাকতে একটা মেয়ে আমাকে এমন ভাবে মারল। শালা এমন এমন জায়গায় ব্যাট দিয়ে মারছে যে, না কাউকে দেখাতে পারব আর না সহ্য করতে পারব আর না নিজে নিজে ব্যথার মলম লাগাতে পারব।
ওদের এমন উদ্ভ্রট কথা শুনে পাশের লোকজন মুখ টিপে টিপে হাসছে। রেশমী একজনকে জিজ্ঞেস করল,
_ভাই কী হয়েছে এখানে?
_আর বলবেন না আপা ঐ তিন হারামজাদা একটা মেয়েকে দেখে শিশ মেরে টিজ করছিল। সেটা দেখে আরেকটা মেয়ে ওদের আচ্ছমত ধোলাই দিছে।
_মেয়েটা কোথায়?
_জানিনা। হুট করে কোথায় যেনো গায়েব হয়ে গেলো।
রেশমী লোকটাকে ধমক দিয়ে বলল,
_গায়েব কি করে হয়! আহু চল নিশুদের বাসায়।
_ফুপি সেখানে কেন যাবে? তোমার বান্ধবী তো ওয়েট করছে।
_আরে রাখ তো বান্ধবী চল আমার সাথে।
রেশমী নিশুদের বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলে, আহু ছেলেগুলোর কাছে গিয়ে বলল,
_ভাই কাঁদিস না। তুই এমন এলাকায় এসে মেয়েদের টিজ করলি যেখানে কিনা এক সিংহী থাকে।
_ছেলেটা চোখ মুছে বলল, ভাই তুমি কে?
_আমি ঐ সিংহীর কবলে আটকা পড়া এক নিরীহ হরিণ। ছাগল বলতে পারতাম কিন্তু তাতে সম্মানে লাগে। তার থেকে হরিণ বেটার। চলি ভাই। যাবার আগে সাবধানে যাস। তোর প্যান্টের পিছন দিক ছিড়ে গেছে। ভিতরের স্বস্তা আন্ডারওয়্যার দেখা যাচ্ছে। মেয়েদের হাতে মার খেতে আসলে একটু ব্রান্ডের জিনিস পরে আসতে হয়। বোকা ছেলে।
ছেলেগুলো বোকার মত আহুর দিকে তাকিয়ে রইল। আহু দ্রুত গতিতে হেঁটে রেশমীর কাছে গেলো।
নিশুর বাবা রেশমী আর আহুকে দেখে খানিকটা অবাক হলেন।
চলবে______
।
ফুপু শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব:৩
নিশুর বাবা নিজামদ্দীন আহু আর রেশমীকে দেখে ভিতরে স্বাগতম জানালেন। তিনি যে রেশমীকে দেখে একটু অবাক হয়েছেন তা তো বোঝাই যাচ্ছে। তারপর মুখটা হাসি হাসি করে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করল। রেশমী তার প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলল,
_নিশু কোথায়?
নিজামদ্দীন কী বলবে? সে তো নিজেই জানে না নিশু কোথায়! মেয়েটা কোথায় কখন যায় তা কাউকে বলে না। ইদানিং নিশুকে নিয়ে তিনি বেশ ভয়েই থাকে। তিনি তাদের প্রশ্নের জবাব এড়াতে নিশুর মা সুমিকে ডাক দিয়ে বলল,
_নিশাদ এর মা ও নিশাদের মা দেখো কারা এসেছে।
(নিশাদ নিশুর বড় ভাই। নিশুর থেকে ছয় বছরের বড়। আর নিশুর এমন গুন্ডী হবার পিছনে পুরো কৃতিত্ব তার। ছোট বেলা থেকেই নিশাদ নিশুকে শিখিয়েছে অন্যায় করলে সহ্য না করতে। মেয়ে বলে কেউ পুলিং করলে তাকে মেয়েদের পাওয়ার দেখিয়ে দিতে। সাধারনত বাঙালী পরিবারের সবাই নিজেদের ঘরের মেয়েকে গান, নাচ, কবিতা লেখা শিখায় কিন্তু নিশাদ নিশুকে মার্শাল আর্ট শিখিয়েছে। নিশাদ চেয়েছিল নিশুকে বক্সিং চ্যাম্পিয়ান বানাবে কিন্তু উন্নত ব্যবস্থা না থাকায় সেটা হলো না। নিশু যখন কাউকে মেরে আসে নিশাদ তখন বোনকে আদর করে বলে আমার বাঘিনী। কেউ নিশুর নামে নালিশ করলে নিশাদ বিচার না করে উল্টা তাকে শাসিয়ে দেয়। নিশাদের কারণে বাড়ির কেউ নিশুকে কিছু বলতে পারে না। নিশাদ নিশুকে এতটা ভালোবাসে যে বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেলে মেয়েকে সরাসরি বলে, আমার বোনের দুষ্টুমি যদি সহ্য করতে না পারো তবে বিয়ে হবে না। বা বিয়ের পর যেদিন আমার বোনকে কটু কথা বলবে সেদিন আমার বাড়িতে শেষ দিন হবে। এই জেদের কারণে বিয়ে পর্যন্ত হচ্ছিল না নিশাদের। কিন্তু বর্তমানে নিশু নিজে মেয়ে দেখার দায়িত্ব নিয়েছে। সবার ধারণা এবার নিশাদ বিয়ের পিঁড়িতে বসবে।)
নিজামদ্দীনের ডাক শুনে সুমি ভিতর থেকে বের হলো। রেশমীকে দেখে তিনিও খানিকটা অবাক হলেও কুশল বিনিময় করলেন। রেশমী তাকেও জিজ্ঞেস করল,
_নিশু কোথায়?
_সুমি বলল, নিজে রুমে।
আহু মনে মনে বলল, নিশু এর মধ্যে রুমে এসে পড়ছে। বাহ্। অবশ্য ও তো নিশু। ওর দ্বারা কিছু অসম্ভব নয়! রেশমী সুমির দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমি কী নিশুর রুমে যেতে পারি?
_হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।
রেশমী আহুকে সাথে নিয়ে নিশুর রুমের সামনে গিয়ে দেখল দরজা ভেজানো। তিনি দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। নিশু ঘুমাচ্ছে। রেশমী কিছুক্ষন নিশুর দিকে তাকিয়ে থেকে আহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমার বোধয় দেখার ভুল হয়েছে। যাই হোক আমি নিচে বেয়ানের সাথে কথা বলি। তুই ওর সাথে কথা বল।
আহু মনে মনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। রেশমী রুম থেকে যেতেই আহু নিশুর দিকে তাকাল। মেয়েটা ঘুমের ভান ধরে থাকলেও কি সুন্দর লাগছে! আহুর নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_নিশু তুমি তো আমার মনটা চুরি করে নিছো। নিশু তখনও চোখ পিটপিট করে ঘুমের ভান ধরে রইল।
আহুর মাথায় একটু দুষ্টমি বুদ্ধি আসল। নিশুর রুমের দরজাটা বন্ধ করে, টুপ করে নিশুর চাদরের ভিতর ঢুকে নিশুকে গভীর ভাবে জড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমো খেলো।
নিশু লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
আহু নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_এই প্রথম তোমাকে এত লজ্জা পেতে দেখলাম। কিউট লাগছে।
নিশু চোখ মেলে আহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_তোমার দেখছি বেশ সাহস হয়েছে।
আহু নিশুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
_সাহস সবসময় ছিলো নিশু। শুধু দেখায়নি। আর সাহস না থাকলে তোমার মত বাঘিনীকে নিজের ভালোবাসার জালে কী করে আটকাতাম। তোমার মত বাঘিনীকে বদ করতে বাঘ হওয়া দরকার।
_আসছে আমার বাঘরে। গায়ে শক্তি আছে নাকি। ছাড়ো উঠব।
আহু নিশুকে এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, নিশু নড়তেও পারছে না। আহু হাসি দিয়ে বলল,
_নিশু আরো শক্তি দেখবে?
নিশু নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে বলল,
_ছাড়ো কেউ এসে পড়লে কী বলবে?
_কী বলবে? আমার হবু বৌ। তার রুমে আসলে কে কী বলবে?
_হবু বৌ পুরোপুরি বৌ নয়। ইডিয়েট ছাড়ো।
_ওহো। বাঘিনী আজ বাঘের জালে পরাস্ত তবে।
নিশু হাসি দিলো। আহু আবার নিশুর মাথায় চুমো খেয়ে বলল,
_সকাল সকাল ছেলে গুলোকে মারলে কেন?
_হারামিগুলায় মেয়েদের সাথে ইতরামি করছিল। ওদের ছেড়ে দিবো নাকি?
_একটুর জন্য ফুপির হাত থেকে বেঁচে গেছো।
_হ্যাঁ আমি তোমাদের দেখেই সাইলেই নিয়ে ফুড়ুৎ হয়েছি।
_হা হা হা। নিশু
_হু।
_তোমাকে এভাবে বুকে জড়িয়ে ধরে মনে হচ্ছে কোন রেশমের পুতুল জড়িয়ে ধরেছি। এই রেশমের মত নরম হাত দিয়ে ছেলেদের কেন পিটাও।
_ছেলেদের না পিটালে আমার হাত নিসপিস করে।
_পাগলী কোথাকার! চলো ফুপি নিচে বসে আসে।
_তুমি যাও আমি চেইঞ্জ করে আসছি। পরনের ড্রেস দেখলে ফুপি পাক্কা বুঝে যাবে ওটা আমি ছিলাম।
_আচ্ছা।
৬!!
আহু নিশুর রুম থেকে বের হতেই নিশাদের সামনে পড়ল। নিশাদকে আহু কিছুটা ভয় পায়। আহু মাথা নিচু করে সালাম দিলো।
_আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
_কেমন আছেন?
_ভালো তুমি।
_জি ভালো।
_নিশুর রুমে কী করছিলে?
_শুয়ে——
_কী? আমার বোনের সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করলে খবর আছে।
_না না কিছু করিনি। আমি তো দেখা করতে আসছিলাম। আপনার কী মনে হয় নিশুর মত মেয়ের সাথে উল্টা পাল্টা করা সহজ নাকি!
_না করলেই ভালো। বিয়ের আগে বা পড়ে আমার বোনকে কোন রকম কষ্ট দিলে মনে রেখো। তা তোমার কাজ কেমন চলছে?
আহু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল, এই দুই ভাই বোনের কারণে আমার হার্টে সমস্যা হবেই হবে। তারপর হাসি দিয়ে বলল,
_আপনাদের দোয়ায় বেশ ভালো।
নিশাদ আহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
_আহু।
_জি ভাইয়া।
_তোমার কাজিন অনু কেমন আছে?
_আপনি অনু কথা কেন জিজ্ঞেস করছেন?
_না এমনি। তেমন কিছু না। চলো নিচে।
আহু মনে মনে বলল,
_ওরে শালা তবে নিশু ঠিক বলছিল তুমি মনে মনে আমার বোনের সাথে ইংকু পিংকু করতে চাও। ব্যপার না। নিশুর কাছ থেকে পুরোটা জানতে হবে।
নিশু সুন্দর হালকা রঙের থ্রি পিচ পরে ভদ্র মেয়ে সেজে নিচে গিয়ে, রেশমির সাথে কথা বলল।
_রেশমী বলল, নিশু তুমি মারামারি করতে পারো!
_নিশু খানিকটা থতামতা খেয়ে বলল, মারামারি কিভাবে করে? আমি তো একটা বিড়ালকেও ধমক দিয়ে তাড়াতে পারি না।
পাশে দাড়িয়ে নিশুর চাচি মনে মনে ভাবছে,
_কেমন সহজ সরল সেজে মিথ্যা বলছে দেখো। অথচ সেদিন পাশের পাশার কালো বিড়ালটাকে হাত পা বেঁধে ঘন্টা খানিক রোদে শুয়ে রাখছিল। কারণ বিড়ালটা ওর কেক খেয়েছিল। সেদিনের পর পাশের বাড়ির বিড়ালটা আমাদের বাড়ির এ মুখো হয় না।
গত সপ্তাহে মিনাল কাকার টাকের যে কটা চুল ছিলো সবকটা কেটে ফেলছে। কারণ মিনাল কাকার নাকি চরিত্রে গন্ডোগোল। বেচারা আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে পর্যন্ত যায় না। ওর বিয়ের জন্য এক ঘটক সমন্ধ এনেছিল তাকে চুলকানির এমন ঔষধ দিছে যে সে আমাদের বাড়ির নাম শুনলেও ভয়ে কাঁপে। নিশু চাচিকে ধাক্কা দিতেই তার ধ্যান ভাঙল।
রেশমী আরো কিছুক্ষন কথা বলে চলে গেলো। আহু মৃদু হেসে মনে মনে বলল,
_পাগলী একটা।
৭!!
রাতে আহু নিশুর সাথে ফোনে কথা বলছে। তখন নিশু বলছে,
_আহু তুমি আমাকে যেদিন প্রপোজ করছিলা সেদিনের কথা মনে আছে?
_বাংলা সিনেমায় যেমন মাথায় আঘাত লেগে সব ভুলে যায়। আমার মাথায় তেমন আঘাত লাগলেও আমি ঐ ভয়াবহ দিন ভুলব না
ফুপু শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব:৪
নিশু ওর এক খ্রিষ্টান বান্ধবীর বিয়েতে চার্জে গিয়েছিল। বিয়ের সকল এরেঞ্জমেন্ট শেষ হওয়ার পর। ক্যাথলিক চার্জের সামনে দাড়িয়ে সব বান্ধবীরা ছবি তুলছিলো। নিশুও বান্ধবীদের সাথে ছবি তুলছিল আর কথা বলছিল। নিশু এই প্রথম ক্যাথলিক চার্জে আসে। হিমির বিয়েতে এটেন্ড করার সবচেয়ে বড় কারণ ওদের ধর্মে বিয়ে কিভাবে হয় সেটা সরাসরি দেখবে। টিভিতে নিশু বহুবার চার্জে কিভাবে বিয়ে হয় দেখেছে। কিন্তু সরাসরি দেখার লোভটা সামলাতে পারল না।
বান্ধবীদের সাথে কথা বলার সময় পিছন থেকে কেউ একজন নিশুর ওড়না ধরে হালকা টান দিলো। নিশু পিছনে ফিরতেই আহু হাঁটু গেড়ে বসে সাদা রঙের এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল নিশুর দিকে বাড়িয়ে বলল,
_নিশু আমরা দুজন চার্জের মত একটা পবিত্র স্থানে দাড়িয়ে আছি। আমাদের ধর্মে যেমন মসজিদ পবিত্র, খ্রিষ্টান ধর্মে তেমন চার্জ পবিত্র। এই পবিত্র স্থানে দাড়িয়ে সত্যি মনে বলছি আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। খুব ভালোবাসি তোমায়। তুমি চাইলে এখনই তোমার পরিবারের সাথে কথা বলতে পারি।
নিশু কিছুক্ষন আহুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
_কে আপনি? আমাকে কীভাবে চিনেন?
আহুর হাত থেকে গোলাপের গুচ্ছটা পড়ে গেলো। আহু মুখ ভার করে বলল,
_তুমি সত্যি আমাকে চিনতে পারোনি?
_জি না।
_মাস খানিক আগে তোমার খালামনির বিয়ে আমার ছোট চাচার সাথে হয়েছিল। তখন পরিচয় হলো। তারপর তো তিন চারবার তোমার বাড়িতে গেলাম। আর গতসপ্তাহে তো তোমার সাথে কথাও বলছিলাম। তুমি ভুলে গেলে?
_আমি তো কত লোকের সাথেই কথা বলি সবাইকে কী মনে রাখব নাকি!
_ওহ।
আহুর খুব অভিমান হলো। আহু বিরবির করে বলছে,
_সব লোকের সাথে আমার তুলনা দেয়া কেন লাগবে? সবাই তো তোমাকে ভালোবাসে না। আমি ভালোবাসি। সেদিন তোমার চোখের প্রশংসা করলাম তাও ভুলে গেলা। তোমার খালামনি আর আমার কাকুর বিয়েতে দুজন কত দুষ্টুমি করলাম তাও ভুলে গেলা। আহু দাড়িয়ে নিশুর দিকে তাকিয়ে বলল, দুঃখীত আমি বুঝতে পারিনি তুমি আমাকে চিনো না। আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে খুব ভালোভাবে চিনো। সবার সাথে আমাকে মিলাবে ভাবিনি। যাই হোক দুঃখীত।
আহু সেখানে এক মুহূর্তও দাড়াল না। রাগ করে চলে গেলো।
সেদিন বিকালে আহু কিছু কাজে নিশুদের এলাকায় গিয়েছিল। তখন রাস্তার মোড়ে জটলা বাঁধা দেখে সেখানে গেলো। গিয়ে দেখল নিশু একটা ছেলেকে ভয়ানক পেটাচ্ছে। নিশু সাধারনত জিন্স প্যান্ট আর শর্ট কামিজ পরে প্রায়ই। হয়ত জিন্স পরে মারামারি করতে সুবিধা হয়। ছেলেটা কোনমতে পালিয়ে তো গেলো কিন্তু যাবার আগে চাকু দিয়ে নিশুর হাতে আঘাত করে গেলো। আহু তাড়াতাড়ি নিশুর কাছে গিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে হাতটা বেঁধে দিলো। নিশু আহুর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে গেলে আহু একটা ধমক দিয়ে বলল,
_বেশি নড়লে তুলে একটা আছাড় দিবো। মেয়ে হয়ে ছেলেদের মত থাকো কেন? ঐ মেয়ে সবসময় নাকে ডগায় রাগ নিয়ে ঘোর কেন? নিজের ভিতর একটু মেয়েলীপনা থাকলে তোমার জাত যাবে না।
এই প্রথম বোধয় নিশুকে কেউ ধমক দিয়ে কিছু বলল। অন্য কেউ বললে নিশু তাকে দেখিয়ে দিতো। কিন্তু এ ছেলেকে কী বলবে! ভালোবাসে যে ছেলেটাকে। নিশু মনে মনে বলল, ভাগ্যিস মনের কথা কেউ শুনতে পায় না। নয়ত এ ছেলে শুনে ফেলত আমি ওকে ভালোবাসি। আহু নিশুকে নিয়ে হসপিটালে গেলো। ডাক্তাররা ভালো করে ড্রেসিং করে দিলো। আহু নিশুকে বাসায় নিয়ে এসে সবার সাথে আলাপ করল। নিশুকে বলল,
_ডাক্তার বলছে রাতে জ্বর আসতে পারে। ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।
নিশু মাথা নেড়ে শুধু হ্যাঁ বলল।
রাত বারোটা,
নিশু আহুর নাম্বারে ফোন দিবে কি দিবে না ভাবছে। বহু কষ্টে খালামনিকে ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে ম্যানেজ করে আহুর নাম্বার নিয়েছে। কিন্তু এখন ফোন দিতে ভয় করছে। নিশু মনে মনে ভাবল, আমি নিশু হয়ে ভয় পাচ্ছি তাও ঐ গাঁধাটাকে!
আজ ওকে চার্জে বসে বোকা বানিয়ে একদম ঠিক করেছি। ইডিয়েটা এতদিন আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে অথচ প্রপোজ করার সাহস করেনি। আজ প্রপোজ করল তো করল তাও এত এত মানুষের ভিতর চার্জে বসে। এত মানুষের মধ্যে হ্যাঁ কীভাবে বলি! আমার বুঝি লজ্জা করে না! তাছাড়া নিশাদ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস না করে হ্যাঁ বলি কী করে!
নিশু বিরবির করে আবার বলছে, আমি লজ্জা পেয়েছি এ কথা ওর ঘরের লোক শুনলে নিশ্চিত কিডনী স্টোক মানে কিডনী এ্যাটাক করবে। হার্ট এ্যাটাক বা স্টোক তো কত লোকই করে কিডনী এ্যাটাক কজন করে।
নিশু অনেকক্ষন ভেবে ভেবে ফোনটা হাতে নিয়ে আহুকে কল দিয়েই ফেলল।
এত রাতে ঘুম ঘুম চোখে নিশুর নাম্বার দেখে আহুর সব ঘুম উড়ে গেলো। ফোন রিসিভ করতেই হ্যালো বলার পর দুজনেই খানিক সময় চুপ রইল। আহুকে চুপ দেখে নিশু আহুকে ধমক দিয়ে বলল,
_কী হয়েছে কী? বাদুরের মত চুপ করে আছেন কেন? কথা বলেন না কেন?
_না মানে তুমি এত রাতে আমাকে ফোন দিছো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। তুমি আমার নাম্বার কোথা থেকে পেলে?
_খালামনির কাছ থেকে নিয়েছি। আমাকে অসুস্থ রেখে সেই যে গেলেন, কই একবারও তো ফোন দিয়ে খোঁজ নিলেন না!
_না মানে! যদি কিছু মনে করো!
_এই আপনার ভালোবাসা!
_কী?
_আমি আমার বড় ভাইয়াকে আপনার প্রপোজের কথা বলছি।
আহু ভয় পেয়ে তুতলাতে তুতলাত বলল,
_কী? কেন?
_বাহ,রে ভাইয়াকে না বললে বিয়ে কীভাবে হবে!
_মানে?
_ভাইয়া বলছে আমি কেবল অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি। অনার্স শেষ না হলে বিয়ে দিবে না।
_হ্যাঁ তো।
_দূর কলাগাছের বাদুর জানি কোথাকার! সেই কখন থেকে কী, কেন, হ্যাঁ তো হ্যাঁ তো করে যাচ্ছে। গাঁধার খালতো ভাই বোঝেও না। ভাইয়া আমাদের সম্পর্কে রাজি।
_আঁ। আমাদের আবার কিসের সম্পর্ক! তুমি তো আমায় চিনোই না।
_শালা বাদুর বেশি কথা প্যাচালে ঠ্যাং ভেঙে কলা গাছে ঝুলিয়ে দিবো। তখন মজা বুঝবি।
_নিশু মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ।
_তোর ল্যাংগুয়েজের গুষ্টির টুট টুট টুট। কতক্ষন যাবত এটা বোঝাতে চাইছি আই লাভ ইউ টু। কিন্তু সাহেব কথা প্যাচাচ্ছে। বেশি কথা প্যাচালে আমার মাথা হেব্বি গরম হয়ে যায়।
_মুচকি হেসে আহু বলল, সরি।
_ইট’স ওকে।
_কবে থেকে আমার মত বাদুরকে ভালোবাসেন?
_প্রথম থেকেই।
_তো তখন নাটক কেন করলা?
_তো কী করব? ভাইয়াকে না বলে আমি কোন সিদ্ধান্ত নি না।
_ওহ। তো এখন কী করব!
_আচ্ছা গাঁধার পাল্লায় পড়লাম তো। বলি তোমাকে কী এখন প্রেম করাও শিখাবো!
আহু অট্টহাসি দিয়ে বলল,
_তোমার প্রেম তো মারামারি করা। প্রেম তো আমি তোমায় শিখাবো নিশু। রোজ প্রেমের নতুন নতুন অধ্যায় পড়াবো, শিখাবো। শিখবে?
নিশু লজ্জা পেলেও আহুকে বুঝকে দিলো না। বুঝতে দিলে নিশু আরো লজ্জা পাবে।
সেই থেকে আহুর উপর নিশুর গুন্ডামি শুরু।
৮!!
নিশু চুপচাপ ভদ্র মেয়েদের মত রেশমীর সামনে বসে আছে। রেশমীকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে বেশ রেগে আছে। কিন্তু নিশু রেশমীর রাগের কারণ বুঝতে পারছে না। নিশু মনে মনে বলছে,
_আজ তো কাউকে মারিনি। মানে তিনি আমাকে মারতে দেখেনি তবে কেন রেগে আছে? তাছাড়া আজ আহুদের বাসায় আমাদের বাসার সবাই দাওয়াতে আসছে। তাছাড়া আজকে আমাদের বিয়ের তারিখ ফিক্সট হবে। তবে এ মাল্টিকালার মালটা রেগে আছে কেন? আর রাগছে তো রাগছে আমার দিকে ফুলন দেবীর মত ওমন করে তাকিয়ে আছে কেন? ডাল মে কুচ কালা হে নিশু।
আহু দুবার রুমে ঢুকতে গেছিল রেশমী ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আহু দরজায় কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করছে ভিতরে কী হচ্ছে!
চলবে______
।
ফুপু শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব:৫
আহু দরজায় কান পেতে শোনার অনেক চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুই শুনতে পেলো না। কিছুক্ষন পর রেশমী আর নিশু দুজন হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হলো। আহু চোখ বন্ধ করে মাথা ঝারা দিচ্ছে। আবার চোখে ভালো আঙুল দিয়ে কচলে সামনে তাকিয়ে দৃশ্য দেখে পুরো হা হয়ে গেলো। আহু বিরবির করে বলছে,
_দুই বাঘিনী এক সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। ভয়ানক দৃশ্য। ছোট বেলা থেকে তো জানতাম দুই বাঘিনী এক বনের এক এলাকায় থাকা দুষ্কর এরা দেখছি হেসে হেসে কথা বলছে।
রেশমী সবার সাথে বসে কথা বলার সময় আহু নিশুকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বলল,
_কী ব্যাপার?
_কী ব্যাপার কী?
_ফুপি তোমাকে রুমে নিয়ে গেলো রাগ করে আর বের হলো হেসে। ব্যাপার খানা কী?
_ব্যাপার হলো তোমার ফুপি জেনে গেছে আমি সেই মেয়ে যে ব্যাংকে তাকে টিজ করেছিল। আর ছেলেদের পিটানী দিতে আমার জুড়ি মেলা ভাড়।
_সর্বনাশ। আমার বোধয় আর বিয়ে হবে না। ও নিশু আমি যে অন্য কাউকে তোমার জায়গায় বসাতে পারব না।
_চুপ। নিশু আহুর কলার টেনে কাছে এনে বলল, আমার জায়গায় অন্য কাউকে বসানোর চিন্তা করলে তুমি জীবনে বাবা হতে পারবে না আহু। পাগলা কুত্তাকে দেয়া ইনজেকশন তোমার বাম্পে দিয়ে দিবো।
_উহু নিশু এসব কী বলো। ভয়ংকর সব কথাবার্তা। তা ফুপি যখন সব জেনে গেলো তখন সে তোমার সাথে হাসতে হাসতে কেন বের হলো?
_তোমার ফুপি পুলিশে থাকাকালীন সবাইকে থার্ডডিগ্রী টর্চার দিতো। আর আমি তাকে অন্যরকম টর্চার করার ভয় দেখিয়েছি।
_অন্যরকম টর্চার! সেটা আবার কী?
_কাম জানু! কাছে আসো! তোমাকে ফ্ল্যাসব্যাক দেখাচ্ছি। আহুর গালে গাল লাগিয়ে নিশু বসল।
রেশমী নিশুকে রুমে নিয়ে গিয়ে বলল।
রেশমী: তুমিই সেই মেয়ে যে ব্যাংকে আমার সাথে বেয়াদপি করেছিলে। সেদিন রাস্তার মোড়েও তুমিই মারামারি করছিলে। তুমি কী ভেবেছিলে, আমাদের আগে জলদি ঘরে গিয়ে ঘুমানোর নাটক করলে পার পেয়ে যাবে। তুমি নিজেকে তো চাদড় দিয়ে ঢেকে রেখেছিলে কিন্তু তোমার কাঁদা মাখা সুজ কিভাবে ঢেকে রাখবে! তোমার ব্যাট, হকিস্টিক। মেয়েদের রুমে সাজার প্রসাধনী থাকে, অথচ তোমার রুমে আমি ব্যাট, হকিস্টিক, চেইন, বক্সিং গ্লাভস থাকে। আর এসব দেখে কী তোমার মনে হয় আমি কিছু বুঝতে পারিনি! তোমাদের এলাকায় খোঁজ নিয়ে জেনেছি এলাকার সবাই তোমাকে খুব ভয় করে। তুমি দেখতে মেয়েদের মত সুন্দরী হলে কী হবে, তোমার ভিতরের চার পাঁচটা গুন্ড ছেলে লুকিয়ে আছে।
নিশু নিজের জামার ভিতরে তাকিয়ে বলল,
নিশু: কোথায় অামার ভিতরে চারপাশটা গুন্ডা? আমি তো আমার ভিতরে সেটা দেখতে পাচ্ছি যা আপনার ভিতরে আছে।
রেশমী নড়ে চড়ে বসে বলল,
রেশমী: ইডিয়েট আমি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা বলছি।
নিশু: অহ।
রেশমী: এখন বলো তোমার মত গুন্ডী মেয়ে যে কিনা রোজ ছেলেদের না পিটালে পেটের ভাত হজম হয় না, যাকে কিনা এলাকার বাচ্চা থেকে বুড়ো লোক গুন্ডী ডাকে তার সাথে আমাদের ছেলের বিয়ে দেয়া ঠিক হবে?
নিশু: অবশ্যই ঠিক হবে।
রেশমী: তোমার একটা পজেটিভ দিক দেখাও।
নিশু: আপনার আহু আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে।
রেশমী: এটা তো আহুর পজেটিভ দিক হলো। তোমার পজেটিভ দিক বলো?
নিশু: এটাই আমার পজেটিভ দিক। যদি বলি আমি আহুকে আমার পুরোটা দিয়ে ভালোবাসি, তবে হয়ত আপনার সেটা বিশ্বাস হবে না। বা বিশ্বাস হলেও আমার ভালোবাসার মূল্যায়ন হয়ত করবেন না। কিন্তু যেখাবে আহু আমার জন্য পাগল সেখানে আপনি আমাকে আহুর বৌ হিসাবে মানতে বাধ্য।
রেশমী: স্মার্ট গার্ল। চালাকি করে সঠিক জায়গায় হাত দিয়েছো।
নিশু: আই নো আই অ্যাম স্মার্ট!
রেশমী: তবুও যদি না মানি তবে?
নিশু: হুম। ফুপু আম্মা আপনি আমাকে বোধয় এখনও চিনতে পারেননি। আই অ্যাম নিশু। কারো কোন কিছু, মানা না মানার পরোয়া আমি করি না। আমি সেটা করি যেটা নিজের মন চায়।
রেশমী: আহু কিন্তু পরিবারকে কষ্ট দিয়ে তোমাকে বিয়ে করবে না।
নিশু: জানি। আমি চাইও না আহু তেমন করুক। যে ছেলে একটা মেয়ের জন্য নিজের অত সুন্দর পরিবার ছাড়তে পারবে তারমানে আমার থেকে ভালো কাউকে পেলে সে আমাকে ছাড়তেও দুবার ভাববে না। আর আমার আহু তেমন নয়।
রেশমী: গুড থিংকিং। আই অ্যাম ইমপ্রেসড।
নিশু: জি ধন্যবাদ।
রেশমী: তবুও তোমার গুন্ডামীর জন্য যদি না মানি? তবে?
নিশু: তাহলে আপনাকে গুন্ডামী দেখবো।
রেশমী: মানে?
নিশু: ফুপু শ্বাশুড়ি আম্মা মনে আছে গত পরশু আপনাকে একটা পাগল কুকুর তারা করছিল। আমি এসে আপনাকে আমার স্কুটারে তুলে নিয়েছিলাম বলে বেঁচে গেছিলেন। নয়ত চৌদ্দটা ইনজেশন লাগত।
রেশমী: তো?
নিশু: তো ভাবুন রোজ যদি কয়েকটা পাগল কুকুর আপনাকে তাড়া করে তবে কেমন হবে?
আপনার নামে বড় বড় বাক্সের কিছু পার্সেল আসল। পার্সেল খোলার সাথে সাথে বাক্সের ভিতর থেকে একশ ইদুর আর একশ ব্যাঙ লাফিয়ে আপনার গায়ে পড়ে সারা ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে তবে কেমন হবে? আরো কিছু বাক্স থেকে তেলাপোকা, টিকটিকি কিংবা কেচো বের হলো তবে কেমন হবে?
রেশমীর গা গুলিয়ে উঠল। নাক মুখ বোচা করে বলল,
রেশমী: নিশু তুমি কী নোংড়া আর ভয়ানক।
নিশু: এর চেয়ে ভয়ানক আরেকটা কথা বলি। তা হলো ফুপু শ্বাশুড়ি আম্মা আপনি দাদি হতে যাচ্ছেন। আহুর সন্তান আমার পেটে।
রেশমী বিছানা লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বলল,
রেশমী: হোয়াট?
নিশু: আরে ফুপু শ্বাশুড়ি হাইপার হবেন না, আপনার প্রেশার বেড়ে যাবে। বিশ্বাস না হলে আহুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন আমার পিঠের ডান পাশে আর নাভির ঠিক নিচে দুটো তিল আছে কিনা। দেখবেন আহু লজ্জায় লাল হয়ে যাবে।
রেশমী কিছুক্ষন নিশুর দিকে তাকিয়ে থেকে নিশুর গালে হাত দিয়ে বলল,
রেশমী: নিশু তুমি ভয়ানক পাগল মেয়ে। আহু সত্যি ভুল কাউকে বাছাই করেনি। যে মেয়ে নিজের কাছের মানুষকে আগলে রাখার চেষ্টা করতে পারে সে নিঃসন্দেহে ভালো স্ত্রী হতে পারে। দোয়া করি তোমরা সুখী হও।
নিশু: আপনি কী বাচ্চার কথা শুনে মেনে নিলেন নাকি!
রেশমী হেসে বলল,
রেশমী: আই নো ইউ আর নট প্রেগনেন্ট। ইউ আর স্টিল ভার্জিন!
নিশু লজ্জা পেয়ে বলল,
নিশু: কী করে বুঝলেন?
রেশমী: তোমার মত মেয়েরা শুধু মুখে মুখে দুষ্টুমি করতে পারে। কাজের বেলায় তেমন নয়। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আহু তোমাকে কাছে টানতে ভয় না পেলেও, তুমি আহুর কাছে যেতে ভয়ানক ভয় পাও। অ্যাম আই রাইট?
নিশু মাথা নিচু করে বলল,
নিশু: বিয়ের আগে ওসব ঠিক না।
রেশমী হেসে বলল, চলো সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
আহু হা হয়ে আছে। নিশু আহুকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
_ঐ পাগল ফ্ল্যাসব্যাক শেষ। তুমি কেন ঘোরে আছো?
_নিশু তোমাদের কথা শুনে মাথা ঘোরাচ্ছে।
_কেন?
_তুুমি তো দেখি সাংঘাতিক মেয়ে!
_সেটা কী তুমি নতুন জানো নাকি?
_হ্যাঁ জানি। নিশু—-
_হু। সত্যি কী তোমার পিঠের ডান পাশে আর নাভির নিচে দুটো তিল আছে?
_কেন?
_একটু দেখি!
_আহু একদম অসভ্যতামি করবা না। চলো বড়দের কাছে।
আহু মেকি রাগ দেখিয়ে বলল,
_থাক দেখান লাগবে না।
নিশু মৃদু হেসে আহুর চুল এলোমেলে করে আহুর গালে একটা চুমো খেয়েই রুম থেকে পালিয়ে গেলো। আহু হাসতে হাসতে বলল,
_পাগলী একটা।
৯!!
সামনের মাসের ২৬ তারিখ আহু আর নিশুর বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হলো। আর তার ঠিক একমাস পর অনু আর নিশাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হলো।
নিশাদ অনুকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করত। কিন্তু বলার সাহস ছিলো না। অনুকে ভালো লাগার সবচেয়ে বড় কারণ ছিলো অনু নিশুকে নিজের ছোট বোনের মত স্নেহ করে। যদিও অনু জানত না নিশাদের বিয়ে নিয়ে এমন উদ্ভট শর্ত আছে। কিন্তু যখন থেকে নিশুর সাথে অনুর পরিচয় তখন থেকেই নিশুর দুষ্টুমিগুলো অনুর খুব ভালো লাগত। সে জন্যই অনু নিশুকে খুব ভালোবাসত। আর সে ভালোবাসা দেখেই নিশাদের মনে অনুর প্রতি ভালোলাগা তৈরী। আর ভালো লাগা ভালোবাসায় রূপ নেয়। কিন্তু বলার মত সাহস নিশাদ বা অনু কেউই করতে পারেনি। যে সমস্যার সমাধান নিশু করে দিয়েছিল। নিশু বুঝতে পারছিল এ অর্কমার ঢেঁকি দুটো কোন কাজে না। তাই বড়দের বলে দুজনার চার হাত এক করে দিলো।
বাড়ির পরিবেশে খুব হাসি খুশিময়। হাসি খুশি যেনো গরম জিলাপী ভাজার গন্ধের মত সারা বাড়িতে মো মো করছিল। কিন্তু কথা আছে অতি হাসি কান্না কারণ হয়!
১০!!
গত পাঁচ ঘন্টা যাবত আহুর বাড়ি থেকে শুরু করে নিশুদের বাড়ির সবাই হন্যে হয়ে নিশুকে খুঁজছে। সকালে নিশুদের রাস্তার মোড় থেকে নাকি কিছু ছেলে নিশুকে কিডনাপ করছে। সে থেকে বাড়ির সবাই পাগলের মত সব জায়হায় নিশুকে খুঁজছে।
চলবে______
ফুপু শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব:৬
অনেক খোঁজাখুজির পর, রেশমীর অনেক চেষ্টার পর নিশুর লোকেশন ট্রেস করা গেছে।
পুলিশ বাহিনী সহ সবাই সেখানে উপস্থিত হলো। লোকেশন ট্রেস করে জায়গা মত পৌঁছাতে প্রায় ঘন্টা খানিকের মত লাগল। একটা বড় বাঙলো বাড়ি। পুলিশ বাড়িটাকে পুরো বাড়িটার চারপাশে আটক করে ভিতরে ঢুকে সামনে দুটো ছেলেকে পেলো। তাদের আটক করে জিজ্ঞাসা করল, নিশু কোথায়? তারা পুলিশের ভয়ে বলল, দোতলায়। অাহু নিশাদ পুলিশের অপেক্ষা না করে, আগেই দোতলায় উঠে ঘর গুলো চেক করতে লাগল। আহু একটা দরজা খুলতেই দেখল ভিতরে চেয়ারের সাথে নিশু বাঁধা। নিশু দরজা খোলার শব্দে আহুর দিকে এক নজড় তাকিয়ে লজ্জায় চোখ নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে রইল। আহু নিশুর দিকে তাকাতেই দেখল ব্লাউজটা কাঁধের কাছ থেকে ছেঁড়া, ভিতরের টপস দেখা যাচ্ছে, পরনের শাড়িটা নেই, শুধু ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে থাকার কারণে, পেট নাভি দেখা যাচ্ছে। গালে চড়ের দাগ। পরপর বেশ কয়েকবার চড় মারলে ঠিক যেমন দাগ বসে তেমন দাগ বসে গেছে গালে। চুলের খোঁপায় পরা রজনীগন্ধা আর গোলাপের ফুলের খোঁপামালার ফুলগুলো ছিড়ে এলোমেলো হয়ে গেছে। আহুর কল্পনায় ছিলো না ও কোন দিন নিশুকে এমন ভাবে দেখবে।
নিশু সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এত শক্ত প্রকৃতির নিশুর আজ নিজেকে মেয়ে বলে পরাজিত মনে হচ্ছে! মাথা নিচু করে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। আজ নিশুর চোখের জলের রং দেখতে স্বচ্ছ হলেও ওগুলো চোখের জল নয় বরং হৃদয় ক্ষরিত লাল রক্ত। এত বছর যাবত যে সবসময় মেয়েদের সম্মান হানি হবার হাত থেকে তাদের বাঁচিয়েছে আজ সে নিজেই চরম লাঞ্চিত হলো। সত্যি আজ নিশুর জন্য বড্ড লজ্জার দিন, অন্যদের যে রক্ষা করতে পারত, সে নিজেকে রক্ষা করতে কী তবে ব্যর্থ হলো?
আহু নিশুর কাছে এসে হাত পায়ের বাঁধনগুলো খুলে দিলো। নিশু মনে মনে ভেবে রেখেছে, আজ থেকে আর ও আহুর দিকে তাকাবে না। তাকানোর মত দৃষ্টি নিশু হয়ত হারিয়ে ফেলছে। আহু নিশুর হাত ধরে বলল,
_নিশু আমার দিকে তাকাও।
নিশু আহুর দিকে না তাকিয়েই বসা অবস্থায় আহুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
_সরি আহু সরি। তোমার জন্য আজ নিশু থেকে তোমার লক্ষী নিশুর মত সেঁজেছিলাম। কিন্তু তোমাকে দেখাতে পারিনি। সরি!
আহু নিশুকে জড়িয়ে রইল। কাঁদছে দুজন কিন্তু শব্দহীন বোবা কান্না ওদের, রক্তক্ষরন দুজনার মনে হচ্ছে কিন্তু সেটা অদৃশ্য, বাইরের কেউ তা দেখতে পারবে না। এ রক্তক্ষরনের যন্ত্রণা শুধু এরা দুজনই বুঝতে পারবে, অন্য কেউ নয়!
একটু সময়ের মধ্যেই নিশাদ, রেশমী, পুলিশসহ বাকি সবাই রুমে হাজির হলো। নিশাদ নিজের বোনকে ওমন অবস্থায় দেখে পাথরের মত জমে গেলো। পৃথিবীতে কোন ভাইয়ের কাছে এর থেকে বিভৎস্য দৃশ্য হয়ত আর হতে পারে না। নিজের বোনকে অর্ধনগ্ন দেখার থেকে কষ্টকর আর লজ্জাজনক কোন মুহূর্ত হয়ত কোন ভাইয়ের কাছে নেই।
রেশমী চারপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখতেই এক কর্ণারে নিশুর শাড়িটা দেখতে পেলো। তিনি শাড়িটা এনে নিশুর কাছে দাড়িয়ে বলল,
_আহু তোরা সবাই বাইরে দাড়া আমি নিশুকে শাড়িটা পরিয়ে নিয়ে আসছি।
আহুর কানে কারো কথা যাচ্ছে না। ও তো নিশুকে নিজের মাঝে আকড়ে ধরে রেখেছে। রেশমী আহুর গালে হাত দিয়ে বলল, বাবা সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করিস না।
১১!!
নিশুর কিডনাপ হবার সাতদিন পর।
আগের মত স্বাভাবিক নেই নিশু। সবসময় নিজেকে রুম বন্দী করে রাখে। কারো সাথে কথা বলে না। যে মেয়ে দু ঘন্টা ঠিকমত এক জায়গায় স্থির থাকত না, সে সারাদিন রুমে বসে থাকে। নিজের ভাই থেকে শুরু করে কারো সাথে কথা বলে না। নিশাদের নিজেকে প্রচন্ড অপরাধী মনে হয়। নিজের বোনকে রক্ষা না করতে পারা ভাইয়ের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।
আহু রোজ দেখা করতে এসে ফিরে যায়। রোজ নিশুদের বাড়িতে এসে নিশুর রুমের দরজার কাছে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে। নিশু দরজার অপর পাশে বসে থাকে। আহু কথা বলে নিশু শোনে কিন্তু উত্তর নিশু দেয়না। চুপ করে শোনে আর নীরব কান্না করে। আহু দরজার ওপাশে কান পেতে থাকা নিশুর অস্তিত্ব অনুভব করে। আজও আহু নিশুর রুমের দরজার কাছে বসে রয়েছে! নিশু ঠিক দরজার অপর পাশে। দরজার সাথে কান লাগিয়ে শুনছে আহু কী বলে! আহু দরজার কাছে গিয়ে বলল,
_নিশু——
_নিশু নিশ্চুপ!
_নিশু——-
_নিশু তখনও নিশ্চুপ।
_নিশু আজ তো একটু কথা বলো! গত সাত দিনে তুমি আমার সাথে একটুও কথা বলোনি। আজ একটু বলো প্লিজ। তোমার কন্ঠ না শুনে শান্তি পাচ্ছি না।
_নিশু নিঃশব্দে কাঁদছে।
_নিশু তোমার মনে আছে, মাস চার আগে তুমি একটা মেয়েকে হসপিটালে দেখতে গিয়েছিলে। মেয়েটা সুইসাইড করতে চেয়েছিল, কারণ মেয়েটাকে কেউ রেপ করেছি। তুমিই মেয়েটাকে বুঝিয়েছিলে জোড় করে ছুঁয়ে দিলেই কেউ নষ্ট হয়ে যায় না। মেয়েরা অত সস্তার বস্তু নয় যে জোড় করে ছুঁয়ে দিলে নষ্ট হয়ে যাবে। তুমি তখন মেয়েটাকে #সমীকরণের_মিশ্রণ নামক একটা বই পড়তে দিয়েছিলে যেখানে একটা গল্প ছিলো #আবহমান তুমি বলেছিলে গল্পটার নায়ক মেহেদীর মত ছেলে হয়না। আমি সেই গল্পের নায়ক মেহেদীর মত হতে চাই না। শুধু ওর মত প্রিয় মানুষটার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখতে চাই। নিশু গল্পের রুশা কিন্তু ধর্ষিত হবার পরও নিজের মনোবল অটুট রেখেছিল তবে তুমি আমাদের নিশু হয়েও কেন পারছ না। তুমি তো ধর্ষিতা নও! তোমাকে ওরা শুধু তুলে নিয়ে গিয়েছিল এছাড়া তো তোমার কোন ক্ষতি হয়নি। নিশু প্লিজ একবার আমার মুখোমুখি হও। আমি তোমায় কিছু বলতে চাই।
নিশু দরজা খুলে আহুর পাশে বসে বলল,
_আমার সাথে ওরা ঠিক কী কী করছে শুনবে তুমি! আসো ভিতরে!
১২!!
এলাকার সবার মতে নিশুর ধর্ষন হয়েছে। কিন্তু যেটা পুরোপুরি ঠিক না। নিশুর ধর্ষন হয়নি। শুধু অপহনে করা হয়েছিল।
নিশুকে ওদের এলাকার কমিশনারের ছেলে সাকি তুলে নিয়ে গিয়েছিল। কারণ নিশু সাকিকে একবার সর্বসম্মুখে অপমান করেছিল। নিশু সেদিন সাকিকে অপমান করে ভুল কিছু করেনি। সাকি সেদিন একটা মেয়ের সাথে খুব নোংড়ামি করছিল। আর নিশু সেটার প্রতিবাদ করেছিল মাত্র। সেই রাগটা মিটাতেই সাকি নিশুকে কিডনাপ করেছিল। কিন্তু ওরা নিশুর সাথে তেমন কিছুই করতে পারেনি। সাকি এবং সাকির দুই বন্ধু জাহিদ এবং উজ্জ্বল এর বলা অনুসারে, ওরা নিশুকে সকালে নিশুদের এলাকা থেকে কিডনাপ করে বাঙলোতে আনে ঠিকই কিন্তু তখনই সাকির বাবা জরুরি কাজে তিন জনকেই ডেকে পাঠায়। যার ফলে ওরা নিশুকে অজ্ঞান অবস্থায় বেঁধে রেখে নিজেদের কাজে গিয়েছিল। দুপুরের পর ফিরে সাকি নিশুর কাছে যায়। কিন্তু তখন আবার সাকির বাবা সাকিকে ফোন দেয়, ওর দাদা নাকি মারা গেছে। সাকির দাদা মারা যাবার কথা শুনে সাকি চলে যায় আর জাহিদ, উজ্জ্বলকে রেখে যায় নিশুকে পাহারা দিতে। আর ওদের বলে যায়, ওর আগে যেনো নিশুকে কেউ স্পর্শ না করে। জাহিদ আর উজ্জ্বল সাকিকে ভিষন ভয় পায় তাই সাকির কথার অবাধ্য হয়নি। সাকি আবার ফিরে আসার আগেই পুলিশ সেখানে যায় আর নিশুকে উদ্ধার করে।
পরের দিন সাকিকে আটক করা হয়েছে। কিডনাপিং ও এ্যাটেম টু রেপ করার অপরাধের মামলা করা হয়েছে ওদের নামে। বিচার কার্জ কী হয় দেখা যাক।
১৩!!
আজ নিশু আহুর সাথে নিজের বিয়ে ভেঙে দিয়েছে।
চলবে______
ফুপু শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব: ৭
সাকিকে পুলিশ আটক করার পর আহু আর নিশাদ থানায় গিয়েছিল, থানায় গিয়ে পুলিশকে বলল, দশ মিনিটের জন্য সাকিদের সাথে, ওদের দুজনকে জেলে ঢুকিয়ে দিতে। কিন্তু পুলিশ এমনটা কখনোই করবে না। রেশমী নিশাদ আর আহুকে অনেক ভাবে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠায়।
আজ যদি নিশুকে সবাই ফিরে পেয়ে থাকে তবে সেটা একমাত্র রেশমীর কারণে। রেশমী বহু বছর পুলিশ হিসাকে দেশ সেবায় নিয়োজিত থাকায় ও জানে কখন কী ব্যবস্থা নেয়া দরকার! সেদিন রেশমীর বুদ্ধির জোড়েই নিশুর খোঁজ করা সম্ভব হয়েছিল। নয়ত হয়ত নিশু নামের মেয়েটার সাথে খুব বাজে কিছু হয়ে যেতো।
!!১৩!!
নিশুর রুম থেকে বের হয়ে আহু চুপচাপ নিজের বাড়ি চলে গেলো। কারো সাথে কোন রকমের কথা বলল না। এমনকি যাবার পর দুদিন নিশুর সাথে কোন কথা বলল না।
নিশু আহুর বাবাকে ফোন দিয়ে বিয়েটা ভেঙে দিলো। তিনি কারণ জানতে চাইলে নিশু কিছুই বলল না। নিশু বিয়ে ভেঙে দিয়েছে শুনেও আহু চুপ ছিলো। নিশুর বাড়ির লোক নিশুকে বুঝাচ্ছিল। কিন্তু নিশুর এক কথা ও কাউকে বিয়ে করবে না।
আজ সকালে নিশুর সাথে দেখা করতে অনু আসল। প্রথমে নিশাদের রুমে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখল, নিশাদ আনমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। হাতের জলন্ত সিগারেটটা নিজে নিজেই জ্বলতে জ্বলতে আঙুল ছুঁয়ে দিচ্ছে। কিন্তু নিশাদের নিজের আঙুলের জ্বালা পোড়ায় কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। অনু নিশাদের হাত থেকে সিগারেটটা ফেলে পাশে থাকা গ্লাসে নিশাদের আঙুলটা চুবিয়ে বলল,
_খেয়াল কোথায় তোমার? আঙুল যে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছো! জ্বলানী অনুভব হচ্ছে না নাকি!
_মনের জ্বলানীর কাছে এ জ্বলানি কিছু না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনু নিশাদের কাঁধে হাত দিয়ে বিছানায় বসালো। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে অ্যান্টিবায়োটিক অয়েন্টমেন্ট নিশাদের আঙুলে লাগাতে লাগাতে বলল,
_হাত পোড়ালে বুঝি মন পোড়ানোর কষ্ট কমবে?
_যদি কমে!
_নিজেকে কষ্ট দিলে কখনো মনের কষ্ট কমে না।
_তবে কি করব অনু! আমার ছোট্ট বোনটাকে ওভাবে দেখে আমার কেমন লাগছে তা তোমাকে বোঝাতে পারব না।
অনু নিশাদের হাতদুটো ধরে বলল,
_নিশু তোমার একার না আমারও বোন।
নিশাদ বসা অবস্থায় অনুর কোমর জড়িয়ে ধরে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে বলল,
_আমি কিছু বুঝতে পারছি না অনু। আমার নিশুকে আমি এভাবে দেখতে পারছি না।
অনু নিশাদের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে নিশাদের মাথায় চুমো একে বলল,
_সব ঠিক হয়ে যাবে তুমি চিন্তা করো না। আমাদের নিশু আবার আগের মত হয়ে যাবে।
বেশ কিছুক্ষন অনু এভাবে নিশাদকে জড়িয়ে রাখল। নিশাদ অনুকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায়ই বলল,
_অনু!
_হুম
_নিশু নিজের কোন কথা তোমার কাছে লুকায় না। আমি ভাই তাই হয়ত বলতে লজ্জা পাচ্ছে। তুমি জিজ্ঞেস করে দেখো আহুর সাথে ওর কী সমস্যা হয়েছে? এভাবে বিয়ে কেন ভাঙল!
_আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি টেনশন করো না। আল্লাহ ভরসা।
!!১৪!!
বেশ খানিক সময় অনু নিশুকে বুঝাল। ওসব ঘটনা ভুলে যেতে। এভাবে র্নিজীব না হয়ে আগের নিশু হয়ে যেতে। নিশু শুধু অনুর কথার প্রতিউত্তরে হু হা জবাব দিলো। অনু নিশুকে বিভিন্ন ভেঙে পড়া মানুষ যারা কিনা ঘুরে দাড়িয়েছে তাদের কথা শোনাচ্ছিল। আর বলছিল তারা যদি ঘুরে দাড়াতে পারে তবে নিশু কেন পারবে না। নিশু তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলল,
_অনু আপু আমরা সবসময় অপরকে উপদেশ দি। তাদের বড় বড় মহান ব্যক্তিদের বানী শোনাই। বিভিন্ন মানুষ যারা কিনা ভেঙে পড়েও উঠে দাড়িয়েছে তাদের বানী শোনাই কিন্তু অনু আপু ওসব বানী বই পুস্তকে খাটে, বাস্তব জীবনে নয়! নয়ত ওসব বানী অপরকে শোনান খুব সহজ কিন্তু নিজের বেলায় প্রয়োগ করা খুব কঠিন। এখন তো আমার সেসব মেয়েদের কথা মনে করে হাসি পাচ্ছে যাদের কিনা একসময় আমি বড় বড় কথা বলে ঘুড়ে দাড়াতে বলতাম। তাদের অবস্থা দেখে তখন কষ্ট হতো কিন্তু তাদের ভিতরের ঝড় বোঝার মত সামার্থ্য আমার ছিলো না। শুধু আমি কেন পৃথিবীতে কেউই অন্যের মনের ঝড় বুঝতে পারে না, শুধু একটু বোঝার ভান করে মাত্র। আমার সাথে ঘটার পর আমি বুঝতে পারছি মেয়ে গুলোর মনের অবস্থা কী হয়েছিল! তুমি বুঝতে পারবে না অনু আপু।
_তারা কী তোর বলা মোটিভেশনাল কথা শুনে একটুও মোটিভেট হয়নি? একজনও কী ঘুরে দাড়ায়নি তাদের জীবনে!
_হ্যাঁ দাড়িয়েছে। প্রায় ৭০% শতাংশ দাড়িয়েছে।
_তাহলে!
_কিন্তু ৩০% শতাংশ দাড়াতে পারেনি। আর আমি বোধয় ঐ ৩০% শতাংশে পড়েছি।
নিশুর এমন কথা শুনে অনু একটু রাগ করে বলল,
_বাজে কথা বলিস না নিশু। এসব ন্যাকামি কথায় আমাদের নিশুকে মানায় না। আর তুই আহুকে কী বলছিস? তোর এখান থেকে যাবার পর থেকে ও কারো সাথে কথা বলেনি। ঘর থেকে বের হয়নি। কী হয়েছে তোদের মাঝে?
_ওকে সত্যিটা বলে দিয়েছি।
_কী সত্যি?
_এই যে আমার রেপ হয়নি তবে রেপের থেকে কম কিছু হয়নি।
_মানে?
_মানে রেপ বলতে তোমরা বোঝ ভার্জিনিটি চলে যাওয়া। হ্যাঁ আমি এখনও ভার্জিন। তবে মলেস্ট বা রেপ বলতে শুধু ভার্জিনিটি চলে যাওয়াকে বুঝায় না। অনেক কিছু বোঝায় আপু অনেক কিছু।
_মানে
_সাকি সেদিন আমার সারা শরীর স্পর্শ করেছে। নোংড়া নোংড়া কথা বলছে। আমার ঠোঁটে ওর নোংড়া ঠোঁট ছুঁয়েছে। বিশ্বাস করো আপু তারপর থেকে নিজের শরীরটাকে ঘৃণা লাগে। মনে হয় শরীরের যেখানে যেখানে ও স্পর্শ করেছে সেখানটা কেটে ফেলি। কিন্তু পারি না। মানসিক ভাবে ও প্রতি সেকেন্ড টর্চার করছে আমায়। ওর বিচ্ছিরি হাসি, নোংড়া কথা, অশ্লীল স্পর্শ সব প্রতি নিয়ত আমার মনে মাথায় ঘুরছে। আর প্রতি নিয়ত নিজেকে ধর্ষিতার মত লাগছে।
আমি আহুকে এটাই বলেছিলাম যে মেয়েকে তুমি চার বছরের অধিক সময় ভালোবেসেও, তার সাথে সম্পর্কে থেকেও তাকে ছুঁয়ে দিতে পারোনি সে মেয়ের সারা শরীরর একটা কুকুর ছুঁয়ে দিয়েছে! পারবে তুমি তেমন মেয়েকে নিয়ে সারা জীবন সংসার করতে! তার সাথে সারা জীবন কাটাতে গিয়ে এটাতো মনে হবে না তোমার আগে তাকে অন্য কেউ তাকে ছুঁয়েছে।
_তো আহু কী বলছে?
_কোন কথা বলেনি, কতক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেছে।
_কী?
_হ্যাঁ আপু। আপু বললাম না বড় বড় ডায়লগ দেয়া সোজা কিন্তু কাজে খাটানো সহজ নয়।
_তোর কী মনে হয় আহু তাদের দলে?
_নাহ্ আমার আহু তাদের দলে না। আমি জানি ও ফিরবে, কিন্তু আমি চাই না ও ফিরুক। পরিস্থিতি বর্তমানে আমাদের পক্ষে না।
_পরিস্থিতি মাই ফুট। এসব ফ্লিল্মি ডায়লগ মারা বন্ধ কর নিশু। আর আহুকে এক্ষুনি ফোন কর।
_সরি আপু সম্ভব নয়। আমি আহুর বাবাকে ফোন করে বলে দিয়েছি বিয়ে হবে না।
_তো! তুই বিয়ে ভাঙছিস অন্য কেউ তোর সাথে একমত না। সবাই চায় বিয়েটা হোক।
_বিয়ে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয় আপু! জীবনে আরো অনেক কিছু আছে।
_ঠিক আছে তবে করিস না বিয়ে। বিয়ে বাদ দিয়ে নিজের লক্ষ্যে এগো। তাও ঘর বন্দী হয়ে থাকিস না।
_আপু প্লিজ এসব কথা বলো না ভালো লাগছে না। তুমি যাও ভাইয়ার সাথে গল্প করো আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাব।
অনু আর কোন কথা বলল না। চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে গেলো। অনু বের হওয়া মাত্রই নিশাদ অনুকে বলল,
_কী হলো, কিছু বলছে ও?
_হুম!
_কী?
_নিশাদ ওকে কিছুদিন সময় দেয়া দরকার। একটা ভয়ানক ঝড় গেছে মেয়েটার উপর। সেটা থেকে ওকে আগে নিজেকে গুছিয়ে উঠতে দাও। আগে নিজেকে বুঝতে দাও।
_কিন্তু অনু, এভাবে একা একা রুম বন্ধ থাকা কোন সলিওশন নয়।
_হুম তা জানি। তবে ওকে কোন মোটিভেশনাল বানী দিয়ে লাভ হবে না। কারণ নিজেই মোটিভেশন দেয়ার রানী।
_তবে কী করব?
_চলো নিশু স্টাইলে কিছু করি।
_মানে?
_নিশু বলে না, মানুষকে শিক্ষা হোক বা মোটিভেশন দুটোই তাকে দিয়ে দেয়ারত হয় যাকে সে ভয় পায়।
_নিশু কাকে ভয় পায়! উল্টো পুরো এলাকা, আত্মীয় স্বজন ওকে জমের মত ভয় পায়।
অনু হেসে বলল,
_নিশু একমাত্র রেশমী আন্টিকে ভয় পায়। দেখা যাক সে কী করতে পারে!
_সে কি রাজি হবে!
_আলবাৎ হবে।
!!১৫!!
রেশমী বসে আছে নিশুর ঠিক সামনে। একটা বড় পার্কের মাঠের মধ্যখানে মুখোমুখি বসে আছে দুজন। রেশমীর হাতে বড় একটা ডান্ডা। রেশমী ডান্ডাটা নাড়াতে নাড়াতে বলল,
_অন ডিউটি থাকা কালীন বহু আসামীকে ডান্ড মেরে ঠান্ডা করেছি। আর তোমার মত পুচকে মেয়েকে পারব না! যে মেয়ে কিনা আমাকে ব্যাঙ, টিকটিকি, ইদুরের ভয় দেখিয়েছিল! ব্যাংকে বসে থার্ড, ফোর পেপার বুঝিয়েছে। তোমার নামে তো ইভটিজিং কেস করা দরকার। মেয়ে হয়ে মেয়েদের টিজ করো। কেন ছেলেরা কী দোষ করছে!
জানো তোমার বয়সে আমি কত ছেলেকে টিজ করেছি। নিশু চোখ বড় বড় করে রেশমীর দিকে তাকাল। রেশমী বলল, ওভাবে তাকিও না। সত্যি সত্যি ইজ করেছি। শুনবে কী কী করেছি?
নিশু মাথা কাত করে সম্মতি দিলো।
তিনি আয়েশ করে ঘাসের উপর বসে বলা শুরু করল,
_কলেজে যাবার পথে এলাকার ছেলেদের গায়ে বেলুনে পানি ভরে তা ছুড়ে মারতাম, সাইকেলের হাওয়া বের করে দিতাম, বেশি তেড়িবেড়ি করলে চাকাসহ খুলে নিয়ে আসতাম। একবার নদীর পাড়ে ঘুরতে গেলাম, দেখলাম আমাদের কলেজের কিছু ছেলে জামা কাপড় খুলে আধা ন্যাংটা হয়ে গোসল করছে। বাস ওদের কাপড় চুরি করে এনে পুরাতন কাপড়ের দোকারে তিন ভাগের এক ভাগ দামে বিক্রি করে দিয়েছিলাম।
নিশু রেশমীর কথা শুনে হা হা করে হেসে লুটিয়ে পড়ে বলল,
_আন্টি আপনি তো আমার থেকে বড় পাজি ছিলেন।
রেশমী বলল,
_জানো তোমার মধ্যে সবচেয়ে কোনগুনটা বেশি ভালো লাগে আমার!
_কী?
ফুপু শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব: ৮
_জানো নিশু তোমার কোন গুনটা আমার সব থেকে বেশি ভালো লাগে।
_কোনটা?
_তুমি নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখো। নিজ সত্ত্বায় স্থির থাকতে জানো তুমি। কিন্তু বর্তমানে তুমি নিজ সত্ত্বা হারাতে বসছো।
_আন্টি আমার এখন সব কিছু বিষাদময় লাগে।
_সামান্য একটা ঘটনায় এমন হলে? তাহলে আমার মত যন্ত্রনা পেলে কেমন করতে? তবে তো তুমি বৈরাগী বা বনবাসী হতে।
_আপনার মত যন্ত্রনা মানে? আন্টি আপনার সাথে কী আমার মত কোন ঘটনা ঘটেছিল?
_এমন নয়, তবে মানসিক প্রেশার তোমার মত ছিলো।
_আন্টি আমাকে বলা যাবে?
_এক শর্তে!
_কী?
_এ ঘটনা তুমি আমি ছাড়া তৃতীয় কেউ জানবে না। এমন কী আহুও না।
_ওকে ডান।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রেশমী বলল,
_জানো আমি বিয়ে কেন করিনি?
_হ্যাঁ দেশ সেবা করবেন বলে!
মৃদু হেসে রেশমী বলল,
_তেমন কিছু না। আমার সাথে বহু মহিলা আছে যারা সংসার সামলেও চাকরি করছে, দেশ সেবা করছে।
_তবে বিয়ে কেন করেননি!
_ছ্যাকা খেয়েছিলাম।
_কী?
_হ্যাঁ একজনকে ভালোবাসতাম তাকে পাইনি বলে বিয়ের কথা আর চিন্তা করিনি। কেন জানি মনে হতো তার স্থান অন্য কাউকে দেয়া সম্ভব নয়।
_কে সে?
_রিমনের বাবা।
_মানে আপনার বোনের স্বামী!
_হ্যাঁ।
_কিন্তু কিভাবে কী? পুরো ঘটনা বলুন না প্লিজ!
_হ্যাঁ বলছি। আমার বড় বোন রোজীনা আর আমি মাত্র বিশ মাসের ছোট বড় ছিলাম। একই সাথে একই ক্লাসে দুজন পড়তাম। বড় আপু ছিলো প্রচন্ড শান্ত মেয়ে আর আমাকে তো দেখোই কেমন। আমাদের দুজনকে মাইনুল স্যার মানে রিমনের বাবা বাসায় এসে পড়াতেন। তখনই আমি স্যারের প্রেমে পড়ে যাই। স্যারের বাবার সাথে আমার বাবার বন্ধুত্ব ভালো ছিলো। তারা দুজন মিলে বড় আপা আর স্যারের বিয়ে ঠিক করে ফেলে।
আমার তখন দম বন্ধ করা অবস্থা হয়েছিল। না পারছিলাম বাবাকে বলতে না স্যারকে। তাদের বিয়ে হবার দুদিন আগে অনেক সাহস করে স্যারকে নিজের মনের কথা বলছিলাম। স্যার শুনে কিছুক্ষন গম্ভীর থেকে বলেছিল, রেশমী তোমাদের দু-বোনকে আমি কখনো সে নজড়ে দেখিনি। তবুও বাবা যখন রোজিনার সাথে বিয়ে ঠিক করল তখন না করিনি। তুমি এখন না বলে আরো আগে বললে হয়ত তোমার বা আমার পরিবারকে কিছু বলা যেতো। যেটা এখন সম্ভব নয়। তুমি আমার চেয়েও ভালো কাউকে পাবে আশাকরি। তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে। তোমাকে এ বিষয়ে বোঝানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
আমি অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। স্যারকে বলেছিলাম আমি জানি এখন কিছু হবার নয়। আমি শুধু চাই আপনি একবার আমায় ছুঁয়ে দিন। আপনার আগে যেনো আমায় কেউ স্পর্শ করতে না পারে! আপনার প্রথম স্পর্শ আমার স্বর্গীয় পাওয়া হবে।
স্যার আমার মাথায় হাত রেখে মৃদু হেসে বলেছিলেন বয়সটা আবেগের তাই আবেগী কথা বলছ। যখন আবেগটা কেটে যাবে তখন এই স্পর্শ অভিশাপ মনে হবে। যাও বাড়ি যাও।
আমি স্যারের কথা শুনিনি, ঝড়ের গতিতে স্যারকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদেছিলাম। স্বার্থপরের মত বলেছিলাম চলুন দূরে কোথাও পালিয়ে যাই। যেখানে আমাদের কেউ জানবে না। স্যার সেদিন আমার মাথায় চুমো এঁকে বলেছিল, ছুঁয়ে দিলাম তোমায়। এর বেশি স্পর্শ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি আমার পরিবারের সম্মান নিয়ে খেলতে পারব না। স্যার সেদিন চলে গেলেন। আমি শুধু কেঁদেছিলাম। সত্যি সেদিন আবেগী হয়ে পড়েছিলা, নয়ত স্বার্থপরের মত নিজের বোনের ঘর ভাঙার কথা বলতে পারতাম না। লজ্জায় সেদিনের পর স্যারের সামনে সহজে যেতাম না। ভুল বসত তার সাথে দেখা হলেও কথা বলতাম না।
বড় আপু আর স্যারের সংসার সুখে চলছিল। বিয়ের দু’বছর পর আপু কনসিভ করে। আমি তখন সিভিল সার্ভিসের ট্রেনিং নিচ্ছিলাম। বাসা থেকে বিয়ের কথা বললেও আমি না করে দিতাম। মনে মনে পণ করেছিলাম যে মন স্যার ছুঁয়েছে সে মনে অন্য কেউ কখনো স্থান পাবে না। আমার বয়স তখন আবেগের ছিলো কিন্তু সিদ্ধান্ত অটল ছিলো।
ট্রেনিং শেষে যেদিন বাড়ি ফিরছিলাম তখন পথে কিছু জটলা দেখে সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখি স্যার একসিডেন্ট করে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে। মন ঐ মুহূর্তে থেমে গিয়েছিল, কিন্তু মাথা ঠিকই কাজ করছিল। স্যারকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম। ডাক্তাররা বলল, বাঁচানো সম্ভব নয়। স্যার শেষ বারের মত আমাকে কিছু বলেছিলেন, স্যার খুব ধীরে ধীরে আমাকে বললেন, রেশমী আমার বিয়ের অনেক আগে থেকে তোমাকে ভালোবাসতাম কিন্তু কিছু ——– । বাকিটা স্যার বলতে পারলেন না। তবে স্যারের এতটুকো কথায় এটা বুঝেছিলাম সেদিন যখন স্যার আমার মাথায় চুমো খেয়েছিলেন সেদিন কেন তিনি কেঁদেছিলেন। তার কান্না করার কারণ জানতে পারলেও, আজও জানতে পারিনি কেন তিনি আমাকে ভালোবাসা সত্ত্বেও আপুকে বিয়ে করল। এই প্রশ্নটার অংকে বহু বছর যাবত মনের মধ্যে কষতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু প্রতিবার ব্যার্থ হয়েছি। এটা এমনই প্রশ্ন যার উত্তর আমি অন্য কারো কাছে জানতে চাইতে পারব না। প্রত্যেকের জীবনে কিছু কিছু উত্তরহীন প্রশ্ন থাকে! আমার জীবনের এ প্রশ্নের উত্তরটাও পাওয়া সম্ভব না। কারণ প্রশ্নটা যার সে তো নেই। আর প্রশ্নটাই এমন যা অন্য কারো কাছে আমি জিজ্ঞেস করতেও পারব না। তাই প্রশ্নটাকে প্রশ্ন হিসাবে রাখলাম এতগুলো বছর। কি মানসিক যন্ত্রনায় আর একাকিত্বে কাটিয়েছি তা কেবল আমি জানি। বন্ধুরা বলত বিয়ে করে নে।
কিন্তু আমি তো এমনি পণ করেছিলাম বিয়ে করব না! আর স্যার মৃত্যুর আগে যা বলল, তাতে বিয়ে করার প্রশ্নই উঠে না।
স্যারের মৃত্যুর শোক আপু নিতে পারল না। রিমন জন্মের সময় মৃত্যু হলো তার। ভেবেছিলাম কোন একদিন আপুকে স্যারের প্রশ্নটা করব। কিন্তু তা আর হলো না। আপু স্যার দুজনেই চলে গেলেন। আমার জন্য রেখে গেলেন প্রশ্ন! তবে তারা দুজনে আমাকে বেঁচে থাকার নতুন জ্যোতি দিয়ে গেলেন। আমার রিমনকে।
আমার পরিবার বিয়ের জন্য কম চেষ্টা করেনি। কিন্তু রিমনের দিকে তাকালে মনে হত ও আপুর নয় আমার সন্তান। স্যার হয়ত কোন কারণে আমাকে বিয়ে করতে পারেন নি তবে ভালো তো বেসেছিলেন। আর তার ভালোবাসার একটা অংশ রিমন। আমার বেঁচে থাকার জন্য এতটুকোই যথেষ্ট।
বিয়ে না করলেও আমি আমার জীবনকে থামিয়ে রাখিনি। জীবনের সকল আনন্দ উপভোগ করেছি। হ্যাঁ একটু ভেঙে পড়েছিলাম তবে জীবনে উঠে দাড়িয়েছি। আবার হাসতে শিখেছি, ভালো থাকতে জানি আমি। জীবনটা কোন বস্তু নয় যে কেউ নাড়া না দিলে স্থির থাকবে। জীবনটা সাগরের ঢেউয়ের মত একটা ঢেউ ভাঙবে নতুন হাজারটা গড়বে। তেমনি কোন ব্যক্তি বা ঘটনার জন্য জীবন থেকে থাকতে পারে না।
জীবনকে সাগরের মত গড়ো যে বিশাল হবে, মহান হবে, নিজের মাঝে ঝড় তুফান জবে কিন্তু কিছুক্ষন পর শান্ত হবে। এবং সে সমুদ্রই থাকবে। সমুদ্রে ঝড় হবে বলে কী সে সমুদ্র থাকে না! হ্যাঁ খানিক ঝড়ে সমুদ্রে কিছুটা এলোমেলো হয় তবে কিছুক্ষন পর ঠিক শীতল হয়।
তোমার জীবনে একটা ঘটনায় তুমি থেমে গেছো অথচ তোমার ভালোবাসার মানুষগুলো তোমার কাছে। আর আমার জীবন সংগ্রামে ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে ফেলছি। পাশে হাত ধরে চলার মত তেমন কাউকে পাইনি। তবুও জীবনটাকে স্থির রাখিনি। আর তোমার নিজের মানুষটা তোমার পাশে আছে। তাছাড়া তোমার পরিবার সবাই তোমাকে সাপোর্ট করে। তবে তোমার কী ভয়! বলো?
_নিশু নিশ্চুপ।
_নিশু জীবনে অনেক মানুষই আসে যায় কিন্তু আহুর মত ভালোবেসে হাত ধরে রাখার মত সাহস সবাই করে না। তুমি জানো আমি প্রথমে তোমাদের বিয়ে ভেঙে দিতে চেয়েছিলাম।
_কেন?
_প্রথম দিন তোমাকে দেখেই বুঝেছিলাম তুমিই সেই ব্যাংকের মেয়েটা। রাগ ছিলো তোমার উপর খুব।
_প্রথমদিন কী করে চিনলেন?
_তুমি বোরকা পরা ছিলে, মুখে নেকাব বাঁধা ছিলো কিন্তু তোমার ভ্রুর উপরের তিলটা ঠিকই দেখা যাচ্ছিল। তাই তো তোমাকে দেখেই চিনে ফেলছিলাম। বাড়ি গিয়ে আহুকে বললাম এ মেয়েকে বিয়ে করার কোন প্রয়োজন নেই। আহুই আমায় বলেছিল তোমাকে কয়েকদিন দেখে যেনো সিদ্ধান্ত নি। তোমার প্রতি ওর ভরসা অটল। তারপর তোমাকে দেখলাম জানলাম বুঝলাম। তাতে যা মানলাম তুমি ঠিক আমার অতীত। আমিও তোমার মত চঞ্চল ছিলাম। তোমার ভিতর যেনো নিজের ছায়াকে দেখলাম। যে হাসতে হাসাতে, ভাঙতে গড়তে ভালোবাসতে সব জানে। তবে হ্যাঁ তুমি যেমন পানির মত মিথ্যা বলো, আমি তেমন পারি না। হা হা।
_নিশু হাসল।
_তোমার যে অভ্যাস গুলোকে সবাই খারাপ ভাবে সেগুলোকে আহু ভালোবাসে। আর তুমি তাকে ছেড়ে দিচ্ছো! নিশু জীবনের পথে তোমার অভ্যাস গুলোকে খারাপ বলার লোকের অভাব হয় না। কিন্তু সে অভ্যাসগুলোকে ভালোবেসে কেউ তোমাকে ভালোবাসতে চায় তার মানে সে সত্যি তোমাকে চায়। আর তুমি শুধু তাকেই ছেড়ে দিচ্ছো না, ছেড়ে দিচ্ছো নিজের জীবনটাকেও। নিশু জীবনটা খুব ছোট আর ছোট্ট জীবনের প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা সেকেন্ড মূল্যবান। সামান্য একটা ঘটনায় জীবনটাকে থামিয়ে রাখা বোকামি কিনা বলো? তাও তোমার মত মেয়ের। তুমি তো অন্যের অনুপ্রেরণা। তুমি এমন ভেঙে পড়লে তোমার ভরসায় থাকা মানুষগুলোর কী হবে!
_তাহলে কী করব!
_রেশমী কিছুটা রাগ করে বলল, আমার মাথা করবে। গাঁধা যেনো কোথাকার। এতক্ষন কাকে কী বুঝালাম! সব ওয়েস্ট।
_ফুপু শ্বাশুড়ি আম্মা গাঁধা না গাঁধি হবে। আমি ফিমেইল।
_রেশমী একটু দুষ্টুমি করে বলল, কী প্রমাণ তুমি ফিমেইল!
_আপনার আহুর সাথে বিয়ে হবার এক বছরের মধ্যে আপনাকে পাক্কা দাদি বানিয়ে দিবো।
রেশমী হাসল। নিশু বলল,
_চলেন ট্রিট দিবেন আমাকে!
_আমি কেন ট্রিট দিবো ?
_বাহরে এতক্ষন আপনার বকবকানি শুনলাম তাই।
_ওরে পাজি মেয়ে একবার আমাদের বাসায় বৌ হয়ে আসো তখন বোঝাবো শ্বাশুড়ি কাকে বলে!
_আমিও বোঝাবো বৌ মা কাকে বলে শ্বাশুড়ি আম্মা। এমন অত্যাচার করব না যে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি বলবেন।
দুজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। নিশু বলল,
_আন্টি এই ডান্ডাটা কেন নিয়ে আসছেন!
_ভাবছিলাম আমার কথা না শুনলে তখন তোমাকে ডান্ডা মেরে বোঝাব। কিন্তু তুমি বুঝদার তাই ডান্ডার দরকার হয়নি!
_হি হি ডান্ডটা আমাকে ধার দিবেন!
_কেন?
_অনেকদিন কাউকে মারি না। বাড়ি ফেরার পথে কাউকে দু এক ঘা দিয়ে যাবো।
চলবে______
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
ফুপু শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব:৯
!!১৬!!
বাড়ি এসেই নিশু ফ্রিজ খুলে পুডিং খুঁজছে। না পেয়ে চাচিকে বলল,
_চাচি পুডিং নেই!
_ছিলো কিন্তু সকালে টেবিলে রেখেছিলাম তখন পাশের বাসার বিড়ালটা এসে মুখ দিয়েছে বলে ফেলে দিছি।
_পাশের বাসার ঐ কাইল্লা বিলাইডা!
_হুম
_ওরে তো আমি। সেদিন কেক খাইছে আজ পুডিং। কেমন লাগে বলো তো চাচি। আগেরবার তো ওকে পা বেঁধে রোদে রেখেছিলাম এবার গাছে ঝুলিয়ে ট্রিমার দিয়ে গায়ের সব পশম ফেলে ন্যাংটা করে দিবো। লুচ্চা বিড়াল।
_নিশুর চাচি বলল, নিশু ও তোর খাবার খেয়েছে, তাই ছোঁচা বিড়াল হবে। লুচ্চা বিড়াল কী করে হলো?
_না ও শুধু ছোঁচা বিড়াল না লুচ্চা বিড়ালও বটে। ওর চরিত্র খারাপ।
_কেন?
_জানো মন্টি আন্টিদের বিড়াল মিনির সাথে কমাস আগে অশ্লীল অকাজ করছে। যার ফলে মন্টি আন্টিদের অমন সাদা বিড়ালটার পেটে ওর মত কালা কালা বিড়ালে বাচ্চা হইছে। ঐ শালা মন্টি আন্টিগো বিড়ালরে রেপ করছে। ওর নামে রেপ কেস করা দরকার।
_আঁ। মা তুই থাম। শেষ মেশ বিড়ালটার পিছনে পড়লি।
_তো পড়ব না। আমার পুডিং খেয়েছে লুচ্চাটায়। ভাবছি ওর সাথে মন্টি আন্টিদের বিড়ালের বিয়ে দিবো।
_বিড়ালের বিয়ে পরে দিস। আগে নিজের বিয়ে ঠিক কর। আহু আসছে অনেক্ষন। তোর রুমে বসে আছে।
_কখন আসছে!
_আধাঘন্টার মত। তুই যা আমি তোর জন্য পুডিং বানাচ্ছি।
_ওক্কে। ক্যারামেল পুডিং বানাবা কিন্তু।
_আচ্ছা।
নিশু রুমে ঢুকে দেখল, আহু ওর টেবিলে বসে একটা বই পড়ছে। নিশু একটা লম্বা শ্বাস নিলো। তারপর আহুর কাঁধে হাত রেখে বলল,
_কখন এলে?
আহু নিশুর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল,
_কোথায় ছিলে এতক্ষন?
_তোমার রেশমী ফুুপির সাথে!
_কেন?
_আন্টি ডেকেছিল কিছু কথা বলার জন্য।
_ওহ।
তারপর দুজনেই চুপ।
নিশু এসিটা অন করে বিছানায় বসতে বসতে বলল,
_গরম লাগছে খুব আজ। তোমার গরম লাগছে না।
আসলে নিশু ভেবে পাচ্ছে না কী বলবে, তাই এদিক ওদিকের কথা বলছে।
_কিন্তু আহু নিশ্চুপ।
নিশু তা দেখে বলল,
_আচ্ছা তুমি বসো আমি বরং ড্রেস বদলে আসি।
নিশু দাড়াতেই আহুও দাড়িয়ে বলল,
_শোন নিশু!
_হুম।
আহু নিশুকে পুরোপুরিভাবে নিজের মাঝে আবদ্ধ করল। প্রথমে নিশু একটু চকিত হলেও পরোক্ষনে নিজেও মিশে গেলো আহুর মাঝে।
দুজনার হৃদযন্ত্রের গতি বোধহয় আগের থেকে হাজারগুন বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে অস্থিরতা। ভালোবাসাহীনতা পাচ্ছে মধুরতা। আহু বেশ খানিক সময় বাদে নিশুর মুখ নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
_সেদিন কী বললে, অন্য একজন তোমায় নোংড়া ভাবে স্পর্শ করছে, আমি তোমায় মেনে নিতে পারব কিনা! নিশু তুমি ভুলে গেলে আমি গত চার বছরের বেশি সময়ে অগনিতবার তোমাকে জড়িয়ে ধরেছি, স্পর্শ করছি। হ্যাঁ সেই ব্যক্তির স্পর্শ নোংড়া ছিলো, কিন্তু প্রথম স্পর্শ আমার ছিলো আর আমার স্পর্শে তো তোমার প্রতি শুধু পবিত্র ভালোবাসা নিশু। দেখো আজ আবার তোমাকে নিজের মাঝে আবদ্ধ করে তোমার পুরোটায় স্পর্শ করলাম। আজ সে নোংড়া স্পর্শ তোমার শরীর থেকে আমি নিয়ে নিলাম। দিয়ে দিলাম আমার পবিত্র ভালোবাসার প্রলেপ। তোমার পুরোটায় এখন শুধু তোমার আহুর ভালোবাসার প্রচ্ছদ। তুমি এখন আমাতে আচ্ছন্ন।
আহু নিশুর কপালে, গালে, চোখে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল, আমার ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে সেই নোংড়ামি শুষে নিলাম। তুমি এখন আমার ভালোবাসায় ভালোবাসাময়ী। আরো কারো স্পর্শ নেই তোমার শরীরে। তোমার শরীর, মন, আত্মায় এখন আমার বসবাস। তোমার শরীরের প্রতি বিন্দুতে এখন আমার বিচরন। সারা জীবন আমার ছোঁয়াতে আচ্ছাদিত থাকবে তুমি।
নিশুর গাল বেয়ে টুপটাপ জলধারা বর্ষিত হচ্ছে। নিশু চোখ মেলে আহুর দিকে তাকিয়ে নিজের আঙুল দিয়ে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে বলল,
_গত চার বছরে এখানে কখনো তোমার ছোঁয়া পাইনি।
_এটা কী জরুরি এখন?
_তুমিই তো বললে আমার পুরোটা জুড়ে তোমার বিচরন! আমি এ মুহূর্ত থেকে আমার পুরোটায় তোমার বিচরন চাই, তোমার অস্তিত্ব অনুভব করতে চাই।
_তুমি পাগলী নিশু।
_হ্যাঁ তোমার ভালোবাসায়। দাওনা ছুঁয়ে আজ। আজ থেকে নাহয় আমার পুরো নিশ্বাসে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোমার অস্তিত্ব, তোমার বিচরন অনুভব করি।
নিশু আহুর গলা জড়িয়ে খানিকটা উঁচু হয়ে আহুর চোখে ভালোবাসার স্পর্শ দিলো। নিশুর চোখ থেকে তখনো অশ্রু নামক নোনা তরল ঝরছে। আহু নিশুর গালে হাত দিয়ে প্রবল আবেগ, মায়া আর ভালোবাসায় নিশুর ঠোঁটকে ভালোবাসায় জড়ালো।
!!১৭!!
নিশু সাকিকে হকিস্টিক দিয়ে পিটাচ্ছে। নিশাদ আহু তা দেখে হাত তালি দিচ্ছে। গতকাল বিকালে সাকিকে জামিনে বের করা হয়েছিল। আর আজ সকালে সে তার দূর্ভাগ্যক্রমে নিশুর সামনে পড়ে। ব্যস কাজ খতম। বাকি কাজ নিশু করছে। মারতে মারতে ভর্তা বানাচ্ছে। সাকি আ আ করে চিল্লাচ্ছে। আসে পাশে কেউ কিছু বলার সাহস করছে না। কারণ সবাই জানে, যে বলতে যাবে সে নিশুর হকিস্টিকের স্বীকার হবে। তাই চুপচাপ তামাশা দেখাকেই শ্রেয় মনে করল সবাই।
নিশাদ আহু দাড়িয়ে দাড়িয়ে চুপচাপ দেখছে আর হাত তালি দিচ্ছে। পাশ থেকে একজন ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
_আপনারা দুজন ঐ গুন্ডী মেয়েটাকে চিনেন?
নিশাদ গর্ব করে বলল,
_আমার ছোট বোন।
আহু হাত তালি ছেড়ে শিশ বাজিয়ে বলল,
_আমার হবু স্ত্রী।
লোকটা চোখ বড় বড় করে বলল,
_আপনার ছোট বোন, আর আপনার হবু স্ত্রী ছেলেদের পেটাচ্ছে, গুন্ডামী করছে, সেটা দেখে আপনাদের মজা লাগছে।
_আহু বলল, আরে আঙ্কেল ওর এই গুন্ডামী দেখেই তো ওকে ভালোবেসেছি।
_নিশাদ বলল, ওকে মারামারি করা আমি শিখিয়েছি।
লোকটা কিছুক্ষন মাথায় হাত দিয়ে থেকে বলল,
_ভাবছি ডাঃ ইউনুস এর নোবেলটা চুরি করে আপনাদের দুজনকে দিবো।
_আহু বলল, কেন?
_আপনাদের কার্যালাপই তেমন।
_নিশাদ বলল, ধন্যবাদ। যান নোবেলটা নিয়ে আসুন।
লোকটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে চলে গেলো।
আহু নিশাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
_ভাইয়া আওয়ার নিশু ইজ ব্যাক।
_ইয়েস ব্রো।
বেশ খানিক সময় যাবত নিশু শুধু সাকির পিছনে হকিস্টিক দিয়ে মারল। পুলিশ এসে ওকে থামাল। নিশুকে গ্রেফতার করতে পারল না রেশমীর কারণে। রাস্তায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে সাকি। আহু সাকির পাশে বসে বলল,
_কিরে বাচ্চা হারামি কেমন লাগছে! কিডন্যাপ করার আর লোক পেলি না! বেঁছে বেঁছে আমার নিশুকে কিডন্যাপ করলি! এখন মজা বোঝ!
আহু গন্ধ নেয়ার ভঙ্গিতে নাক টেনে বলল,
এই গন্ধ আসছে কিসের রে! শালা মার খেয়ে হিসু করে দিলি নাকি! আসতাগফিরুল্লাহ্ । ছি ছি ছি, কমিশনারের ছেলে হয়ে রাস্তায় মেয়েদের হাতে মার খেয়ে হিসু করে দিলি! মান সম্মান সব মফিজদের বাড়ির বাথরুমে ফেলে এলি।
সাকি ব্যথায় কাতরাতে কারতে বলল,
_সব কটাকে দেখে নিবো। আর নিশুকে ছাড়বো না।
ওকে———, বাকিটা বলার আগে আহু সাকির নাক বরাবর ঘুষি মেরে বলল,
_নিশুকে কিছু করার জন্য তুই ঠিক থাকবি কিনা তার গ্যারান্টি কী? আজ রাতটা সুস্থভাবে কাটিয়ে দেখা! আমি নিশুর সামনে সবসময় সরল সেজে থাকি কারণ নিশু আমাকে তেমন পছন্দ করে। বাকি আমাকে ভালো ছেলে ভাবার কোন কারণ নেই! নিশুর থেকে দূরে থাকা তোর জন্য ফরজ। মনে রাখিস।
আহু যাবার সময় সাকির পাছায় আরেকটা লাত্থি দিয়ে গেলো। বেচারা ব্যথায় চিৎকার দিতে লাগল।
!!১৮!!
নিশাদ অনুকে নিজের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
_অনু আমি বাবা কবে হবো!
অনু কপোট রাগ দেখিয়ে বলল,
_বিয়ের পনেরো দিন পর কোন গাঁধায় বাবা হতে পারে!
_তুমি কী আমাকে গাঁধা বললা?
_তো কী বলব! বিয়ে হলো মাত্র পনেরো দিন, এর মধ্যে বাবা কে হয়? আর আজ তোমার ছোট বোনের বিয়ে। কোথায় তাকে নিয়ে ভাববে তা না করে নিজের বৌকে রুম বন্দী করে বলছে, আমি বাবা কবে হবো।
_তো কী করব? বয়স তো কম হলো না। আমার বন্ধুরা প্রায় সবাই বাচ্চার বাবা হয়ে গেছে। শুধু আমিই কেবল বিয়ে করলাম। তাও ভালো নিশুটা বুদ্ধি করে আমাদের বিয়ে আগে দিলো। নয়ত আবার কোন কুফা লাগত কে জানে!
_ওরে বুইড়া ব্যাটা এক বছর তো সময় দাও। এক বছরের আগে তো বাবা হওয়া সম্ভব না।
_তুমি আমাকে বুইড়া বললা কেন? বয়স তো মাত্র ৩০+।
_বেশি কথা না বলে চলো। বরযাত্রী আসার সময় হয়েছে। আমি নিশুর কাছে যাচ্ছি।
_হু।
চলবে____
আগামী কাল আহু নিশুর বিয়ে সবাই আমন্ত্রিত। আসার সময় গিফ্ট আনতে ভুলবেন না। ইয়ে মানে গিফ্ট এর কথা আমি না, আহু আর নিশু বলছে। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর গল্পটা কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন।
ফুফু শ্বাশুড়ি
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব: ১০ (অন্তিম পর্ব)
!!১৯!!
আহুর রুমে আহুর বিছানার মধ্যখানে বধূ বেশে বসে আছে নিশু। পরনে লাল বেনারসী। গুন্ডী নিশুকে বধূ বেশে এত সুন্দর লাগছে যা কল্পনার বাইরে। নিশু নিজের চুড়িতে আঙুল টানতে টানতে রিনঝিন শব্দের আবেশে হারিয়ে ভাবছে,
_শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয়ে গেলো। সাড়ে চার বছরের অপেক্ষার অবসান হলো। যখন কবুল বলছিলাম, তখন ভয় আর সুখের ছোঁয়া এসে মনকে ঘিরে ধরছিল। আজ থেকে আহু আর আমি দুজন দুজনার। বহু প্রতিক্ষার অবসান হলো দুজনার।
পুরো রুম জুড়ে গোলাপি আর নীল রঙ তার হালকা আলোয় স্নিগ্ধতায় মুড়ে দিয়েছে। এ আলোর কারণে নিশুর চুড়ি আর গায়ের গয়না ঝিকমিক করছে, ঠিক আলোকছটার মত। নিশুর নাকের হীরের নাকফুলটা বারবার চমক দিচ্ছে । এত ভারী শাড়ি গয়না পরেও নিশুর অস্বস্তি লাগছে না। বরং বেশ ভালো লাগছে। ভালো লাগছে আজ আহুর জন্য অপেক্ষা করতে। রুম স্প্রে এর হালকা বেলী ফুলের ঘ্রাণে মন মাতাল মাতাল করছে।
কিছুক্ষন পর আহু এলো। নিশুর মুখোমুখি বসে আঙুল দিয়ে নিশুর চুড়িতে টান দিলো। হালকা টানে চুড়িগুলো রিনঝিন শব্দে নেচে উঠল। নিশু কিছুটা কেঁপে উঠল। আহু নিশুর আঙুলের ভাজে আঙুল ডুবিয়ে বলল,
_তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে নিশু। হালকা গোলাপী আর নীল আলোয় তোমাকে নীল ঝিলে ফোটা গোলাপি পদ্মের মত মায়াবী, র্নিমল আর স্নিগ্ধ লাগছে। তোমার নাকের নাকফুলটা সকাল বেলা সূর্য ওঠার আগে যে তারাটা দেখা যায়, সেই শুকতারার মত জ্বলজ্বল করছে। যা অপরূপ ভাবে চমকাচ্ছে। তোমার চুরির রিনঝিন শব্দ বৃষ্টির মত ছন্দ তুলছে। আর তোমার খোঁপায় লাগালো বেলী ফুলগুলো আমায় মাদকের মত টানছে। আজ তোমার পুরোটা জুড়ে মাদকতা বিরাজ করছে নিশু।
নিশু লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল,
_আহু আমার খুব ভয় করছে।
_আঁ! আমার বাঘিনীর ভয় করছে!
_না ঠিক ভয় না তবে কেমন জানি লাগছে!
_প্রথম রাত তো তাই। পড়ে ঠিক হয়ে যাবে।
আহুর কথা বলার স্টাইল প্রচন্ড দুষ্টু ছিলো।
_আহু ভালো হচ্ছেনা কিন্তু।
_ভালো তো এখন হবে, চলো তোমাকে সুন্দর একটা জিনিস দেখাই।
_কী?
_পূর্ণিমার দুটো চাঁদ একসাথে দেখাবো।
_দুটো চাঁদ?
_হ্যাঁ।
_একটা আকাশের আরেকটা আমার ঘরের নিশু।
_নো ফিল্মি ডায়লগ আহু!
_হা হা হা।
আহু নিশুর হাত ধরে নিচে নামিয়ে নিয়ে বারান্দায় যাবে তখন দরজায় টোকা পড়ল।
আহু কপাল কুচকে চোখে মুখে বিরক্তি ভাব টেনে বলল,
_এ সময় কে আসল?
নিশু নাক ফুলিয়ে বলল,
_আমি কী করে বলব! দরজা খুলে দেখো।
আহু দরজা খুলতেই রেশমী আহুকে ঠেলে রুমে ঢুকে বলল,
_তোদের দুজনকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আমি নিশুর বিয়ের গিফ্ট দিতে এলাম।
_নিশু মৃদু হেসে বলল, গিফ্ট লাগবে না ফুপি দোয়া করলেই হবে।
রেশমী হাসি দিয়ে নিশুর হাতে র্যাপিং পেপার দিয়ে সাজানো পরিপাটি সুন্দর একটা বক্স তুলে দিয়ে বলল,
_হ্যাপি ম্যারেড লাইভ।
নিশু বক্সটা হাতে নিয়ে বলল,
_ধন্যবাদ ফুপি।
_ওয়েল কাম টু অ্যাওয়ার ফ্যামিলি বৌ মা। আজ থেকে রোজ তোমার সাথে, বৌ শ্বাশুড়ি, বৌ শ্বাশুড়ি খেলবো। তার আগে গিফ্টটা খুলে দেখো। আহুকে উদ্দেশ্য করে বলল, আহু তুই অন্য দিকে তাকা! আহু অন্য দিকে তাকানোর পর নিশু বক্স খুলে ৮৮০ ভোল্টের ঝটকা খেলো। চোখ বড় বড় করে রেশমীর দিকে তাকিয়ে বলল,
_এগুলো কী আন্টি!
রেশমী আওয়াজ কিছুটা নিচু করে বলল,
_মাল্টি কালার থার্ড পেপার বৌ মা। কেন তুমি না ব্রান্ড জানতে চেয়েছিলে! তাই পুরো সেটসহ কিনে দিলাম। সাইজ মিলিয়ে নিও। তুমি তো আবার আমার মত মোটু না বরং পাঠকাঠি।
নিশু হাসবে না কাঁদবে ভেবে পাচ্ছে না। বিয়ের দিন শ্বাশুড়ি তার ছেলের বৌ কে এমন উপহার দিতে পারে বলে নিশুর ধারনা ছিলো না। নিশু ঠোঁট বাকিয়ে বলল,
_আপনি এখনো আমাদের ফার্স্ট মিটিং মনে রাখছেন?
_ওটা ভোলা কী এত সহজ বৌ মা! আচ্ছা শোন বিয়ের সময় তোমাদের বাসায় একটা মেয়ে দেখলাম, চেহারা হুবহু তোমার মত। নীল চোখ মেয়েটার। সে কে? আগে তো দেখিনি!
_ও ইশু! আমার বড় কাকার ছোট মেয়ে। এতদিন ভারতের দার্জিলিং এ পড়াশুনা করত। আমার বিয়ে উপলক্ষে আসছে।
_মেয়েটা দেখতে খুব মিষ্টি, লক্ষ্মী, শান্ত। ভাবছি রিমনের সাথে বেশ মানাবে তোমার বোনকে। তুমি কী বলো তোমার পরিবারের সাথে কথা বলব?
কিছুক্ষন ভেবে নিশু বলল,
_হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই বলুন। ইশুর মত মিষ্টি মেয়ে খুব কমই পাবেন।
_আচ্ছা তবে তোমাদের বৌ-ভাতের পর কথা বলব।
_ওকে।
_এখন তোমাদের সময়। ইনজয় বেবি। (চোখ মেরে)
বেস্ট অব লাক সংসার জীবনের জন্য। আর তার সাথে আমার মত ফুফু শ্বাশুড়ির সাথে সারা জীবন কাটাবে বলে স্বাগতম।
রেশমী যেতেই নিশু মাথায় হাত দিয়ে বলল,
_হায়রে গিফ্ট, হায়রে মাল্টিকালার মাল, থুক্কু ফুপু।
আহু কাছে এসে বলল,
_কী গিফ্ট দিলো ফুপি!
নিশু জলদি বক্সটা পিছনে লুকিয়ে বলল,
_কিছুনা কিছুনা।
_আজব, লজ্জা পাচ্ছ কেন দেখি!
_খবরদার একদম হাত দেবে না।
_ওকে কিন্তু বাঘিনীকে আজ তার বাঘের খাচায় বন্দি করবোই।
_আসছে আমার বাঘ রে!
!!২০!!
গভীর রাত,
আহু নিশুর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল,
_নিশু
_হুম।
_ফুুপু ইশুর কথা কী বলছিল?
_ফুপি ইশুকে তোমার ভাই রিমনের বৌ করে আনতে চাচ্ছে!
আহু শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বলল,
_কী?
নিশু হাসতে হাসতে বলল,
_ফুপির মতে ইশু খুবই শান্ত, ভদ্র মেয়ে!
_হায় আল্লাহ্ তুমি ফুপিকে বলোনি তিনটা নিশু চরিত্র মিলে একটা ইশু।
_হি হি হি না। তোমার ফুুপি আমাকে ফুফু শ্বাশুড়ি পানা দেখাচ্ছে। সে তো জানে না ইশুকে ছেলের বৌ করা মানে কী! সে ইশুর চেহারা দেখে ভাবছে মিষ্টি। কিন্তু সে জানে না ইশু তাকে এক হাঁটে ছ’বার বেঁচে সে হাঁট থেকেই ন’বার কিনবে। তোমার ফুপিকে আমি তো কিছুটা ভয় পাই। কিন্তু ইশু——– । তোমাদের বাড়ি থেকে হয়ত তোমার ফুপির রাজত্বে অবসান ঘটবে।
আহু হা হা করে হেসে বলল,
_ফুপি পৃথিবীতে আর মেয়ে পেলো না শেষ পর্যন্ত ইশু! তোমার এলাকায় নিশু বলতে সবাই ভয় পেলেও ইশু বলতে সবাই ছুটে পালায়।
_হ্যাঁ ফুপু শ্বাশুড়ি এখন শুধু শ্বাশুড়ি হবার জ্বালা হারে হারে টের পাবে।
সমাপ্ত
কোন এক নীরব সন্ধ্যায় হয়ত রেশমী আর ইশুকে নিয়ে রচনা করব নতুন বৌ-শ্বাশুড়ি অধ্যায়। ততক্ষন পর্যন্ত সবাই খুব ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটা কেমন লাগল অবশ্যই জানাবেন।