অদৃশ্য এক সত্তা

সাল ২০১২ আমি তখন দশম শ্রেণীতে পড়ি। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে সে সময় আমি ২৬ দিনের জন্য কোমায় চলে যাই। আমাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল অনেকদিন। জ্ঞান ফেরার পর আমার হাত পা অসাড় হয়ে গিয়েছিল। পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলাম। হাত, পা নাড়াতে পারতাম না। শুধু শুনতে পারতাম আর বলতে পারতাম। সে সময় একভাবে শুয়ে থাকতে থাকতে আমার পিঠে ঘা হয়ে পুঁজ বের হত। কথা বলতে পারলেও কোনোকিছু চিবিয়ে খেতে পারতাম না। জিহ্বা নাড়াতে পারতাম না। আর সে সময়টার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা কষ্ট এবং প্যারানরমাল ঘটনার শিকার হয়েছি তাই এই বলতে যাচ্ছি এখন। আমার তুলে ধরা কাহিনিকে সুন্দর করার জন্য কিছুটা মিথ্যার সংমিশ্রণ করতে পারি। তবে মূল ঘটনা সত্যকে কেন্দ্র করেই হবে।

সাল ২০১২, মার্চ মাস। খাওয়া দাওয়া শেষে আমি আমার রুমে শুইতে যাই। খাটে শুইতে যাওয়ার সময় মাথার পেছন দিকটা খাটের ফুলের সাথে লেগে আচমকা আঘাত পায়। সে সময় আমার কেমন যেন খারাপ লাগতে শুরু করল। পুরো মাথা ব্যথা হয়ে চোখ ঝাঁপসা হতে লাগল। মনে হলো কোনোকিছু এসে আমার বুকে চেপে বসেছে৷ এতটা খারাপ লাগছে যে আমি কথা বলতেও পারছি না। জিহবা নাড়াতেও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। একটা সময় মনে হলো গলায় কেউ চেপে ধরেছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমার মনে হচ্ছিল কেউ আমার গলায় আঙ্গুল বা কিছু দিয়েছে। যাতে করে আমি গড়গড় করে রক্ত বমি করতে শুরু করি। একটা পর্যায়ে নাক দিয়েও ব্লাড বের হওয়া শুরু হয়। আমার চোখে ভয়ংকর এক আবছা অবয়ব ভেসে উঠে। এরপর আমার কী হয় আমার মনে নেই। আমি পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যাই।

ঘটনা ঘটে রাতে আর আমাকে আবিষ্কার করা হয় সকালে। আমার মা আমাকে ডাকতে গিয়ে লক্ষ্য করে আমার নাক আর মুখ দিয়ে ব্লাড যাচ্ছে। আর পুরো খাট ব্লাড দিয়ে মেখে আছে। আম্মু এটা দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে। তখন আমরা কিশোরগন্জ থাকতাম। তাই আমাকে সরাসরি নিয়ে যায় আমাদের এলাকার হাসপাতালে। মফস্বলে থাকায় সবাই ভেবেছিল আমি হয়তো বিষ খেয়েছি। আর সেজন্য মনে হয় আমার গলা, নাক দিয়ে ব্লাড বের হয়েছে। কারণ আমার বয়সটাও তখন কম। সবেমাত্র ক্লাস টেনে উঠেছি। এরকম ধারণা করাটা অস্বাভাবিক না। তার উপর শরীরের কোনো জায়গায় কোনো ক্ষত নেই। জলজ্যান্ত স্বাভাবিক মানুষ ঘুমাতে গিয়েছিলাম। সুতরাং আমার পরিবারও বুঝতে পারছিল না আমার কী হয়েছে৷ আর আমি তো অজ্ঞান থাকায় কোনো কিছু ব্যখ্যা দিতেও পারিনি। যার দরুণ আমার ভুল চিকিৎসা হয়। অবস্থার অবনতি হয়।

এরপর দিক, বেদিক না পেয়ে আমাকে নিয়ে আসা হয় সরাসরি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে। সেখানে আমি ছিলাম টানা তিনদিন। তবে আমার অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। সব মিলিয়ে আমাকে রেফার করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজে। সেখানে আমাকে দেখার পর অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে, ঘন্টা তিনেক রেখে তারা আশা ছেড়ে দিয়েছিল। আমার শ্বাস বন্ধ ছিল ফলস্বরূপ আমাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তারপর শুরু হয় নতুন অধ্যায়ের সূচণা। সে মৃত আমি কীভাবে আবার বেঁচে উঠি সেটাই বলব পরের পর্বে। আর জ্ঞান হারানোর আগে সে ভয়ানক জিনিসটায় বা কী ছিল সেটার ব্যখ্যা করা হবে আস্তে আস্তে।

অদৃশ্য এক সত্ত্বা
শারমিন আঁচল নিপা
পর্ব-১

[পুরোটায় সত্য ঘটনা। তবে আমি বেশি বড়ো করে দিতে পারব না। যেহেতু আমি এটা প্রতিদিন পোস্ট করব। ছোটো হওয়ার জন্য আন্তরিক দুঃখিত। অনেক দিন পরপর দেওয়ার চেয়ে প্রতিদিন ছোটো করে দেওয়ায় ভালো মনে করি]

অদৃশ্য এক সত্ত্বা
শারমিন আঁচল নিপা

পর্ব -২

ডাক্তার সাময়িকভাবে বলে দিল আমি আর বেঁচে নেই। কথাটা আমার পরিবারের কানে আসতেই সবার মধ্যে বিষাদের সুর বাজা শুরু করল। ঢাকা থেকে কথাটা আমাদের গ্রাম পর্যন্ত চলে এসেছে। আর সবাই সে অবস্থায় যার যার মতো কুরআন খতম দেওয়া শুরু করতে লাগল। আমার খালু আমার জন্য মসজিদে ইয়াতিম বাচ্চাদের দিয়ে কুরআন খতম দেওয়া শুরু করল। আমার আম্মু সেন্সলেস হয়ে যাওয়ায় তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমার আব্বু, ভাইয়েরা সবাই আমার জন্য কাঁদতে লাগল। উল্লেখ্য যে তখন আমার ছোটোবোনের জন্ম হয় নি। সুতরাং আমার পরিবারের একমাত্র কন্যা সন্তান আমি ছিলাম। সুতরাং আমার প্রতি সবার ভালোবাসাও ছিল দ্বিগুণ।

এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তার যখন ডিসচার্জ দিবে আমাকে, ঠিক সে মুহুর্তে লক্ষ্য করল আমি দম নিচ্ছি। আমি বেঁচে আছি। কিছুক্ষণের জন্য দম আটকে হার্টবিট বন্ধ ছিল তাই ডাক্তাররা ভেবেছিল আমি মরে গেছি। আমার বেঁচে থাকার কথা শুনে সবার দেহে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। আবার সবাইকে জানানো হয় আমি বেঁচে আছি। আমার মা জ্ঞান ফিরে কথাটা শুনে সরাসরি নামাজে দাঁড়িয়ে পড়েছিল।

এরপর আমাকে সরাসরি নিয়ে রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। ঢাকা মেডিকেলে ছিলাম টানা ১০ দিন। আমার অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। আমার চিকিৎসা চলমান। তবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অনেক অবহেলা হয়, এটা সবার জানা। যার দরুণ ডাক্তারের পরামর্শে আমাকে আনা হয় ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালে। সেখানে আমার চিকিৎসা চলতে থাকে। ডাক্তার সব ধরণের চেকআপের পরও যখন কোনো রোগ নির্ণয় করতে পারছিল না, তাই বাধ্য হয়ে একটদ সময় আমার বাবা, মাকে বলল

“আপনাদের রোগী বাসায় নিয়ে যান। আর কোনো আশা দেখছি না। এখানে রাখলে শুধু শুধু টাকা খরচ হবে। ”

এটা শুনার পর আমার বাবা মায়ের একটায় কথা ছিল

“আপনারা আমার মেয়েকে রাখুন। টাকা গেলে আমাদের যাবে। যতক্ষণ দম আছে চিকিৎসা করুন। আমাদের মন বলছে আমার মেয়ের সব ঠিক হবে।”

এদিকে আরও ১০ দিন রাখার পরও আমার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। সারা শরীর চেক আপ করেও আমার কোনো রোগ ধরতে পারছিল না। সব মিলিয়ে আমার চিকিৎসা বা শারিরীক কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। বরং দিনকে দিন আমার অবনতি হতে লাগল। টানা চব্বিশ দিন পার হওয়ার পরও কোনো আশার আলো দেখছে না কেউ। এর মধ্যে ছাব্বিশ দিনের দিন চক্ষুগোচর হয় আমার হাঁটু সমান চুল গুলো হঠাৎ করে জট পাঁকাতে শুরু করেছে। বলা চলে একদম জট পাঁকিয়ে গেছে। বিষয়টা একজন নার্স আমার পরিবারকে অবহিত করে। এরপর আমার মায়ের মনে সন্দেহ জাগতে লাগল যে, আমার যেহেতু কোনো রোগ ধরা পড়ছে না। সেহেতু আমাকে হয়তো কোনোকিছু আছর করেছে। আছর মানে হচ্ছে জ্বিন বা ভূতে ধরা।

আম্মুর মাথায় এটা আসার সাথে সাথেই আম্মু আমার ফুফাকে জানায়। তখন আমার ফুফা একজন রাকিকে জানালে চুল কাটার পরামর্শ দেয় (রাকি হলো যারা কুরআন সুন্নাহর মাধ্যমে জিন বা বদনজর থেকে মানুষকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করে দেয়)। যদিও আমাকে হাসপাতালে দেখার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে রাকি বর্ণণা শুনে পরামর্শ দিল প্রথমে চুল কাটার।

এ কথা শুনার পর আম্মু ডাক্তারের কাছে এসে চুল কাটার বিষয়টা উপস্থাপন করল। ডাক্তার প্রথমে রাজি না হলেও পরে রাজি হয়েছে। এরপরের দিন আমার চুল কাটার সময় নির্ধারণ করা হয়। আর সেদিন একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে।

চলবে?

অদৃশ্য এক সত্ত্বা
শারমিন আঁচল নিপা
পর্ব-৩

আমার চুল কাটার জন্য সেদিন নার্সকে বলা হয়। নার্স আমার চুল কাটতে গিয়েও কাটতে পারছিল না। যতবার চুল কাটতে যাচ্ছিল ততবার তার হাত কেঁপে উঠছিল। সবমিলিয়ে তিনি চুল না কেটেই বের হয়ে গেলেন। বের হওয়ার পর আমার মায়ের লক্ষ্যগোচর হলো উনি বেশ ভীত হয়ে আছেন। মা উনাকে স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলেন

“চুল কাটা কি শেষ?”

মায়ের কথা শুনে নার্স কোনো জবাব দিল না। সরাসরি ডাক্তারের রুমে গিয়ে জানালো,

তিনি আমার চুল কাটতে পারবেন না। অন্য কাউকে দিয়ে যেন কাটানো হয়। এরপর নার্সকে যখন ডাক্তার জিজ্ঞেস করেছিল কেন তিনি কাটতে পারবেন না। উত্তরে তিনি জবাব দিলেন

“আমি রোগীর চুল যতবার কাটতে গিয়েছি ততবার মনে হয়েছে হাত ধরে কেউ টানছে। আমাকে কেউ বাঁধা দিচ্ছে। আমার মন সায় দিচ্ছে না এমন কাজ করতে। আর রোগীর চুল অস্বাভাবিকভাবে জট পাঁকিয়েছে। আমার একার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব না। স্যার আপনি জুবেদাকে বলেন। তিনি মনে হয় এ কাজ পারবেন।”

ডাক্তার আর নার্সকে কোনোরূপ প্রেসার দিল না। জুবেদা নার্সদের মধ্যে সিনিয়র ছিলেন এবং সাহসী ছিলেন। এরপর ডাক্তার জুবেদাকে দিলেন আমার চুল কাটার দায়িত্ব।

তিনি বেশ সাহস করেই আমার চুল কেটেছেন এবং আমার মায়ের হাতে আমার চুলগুলো হস্তান্তর করেছেন। আমার মা চুলগুলো আমার ফুফাকে দিলে, সেগুলো রাকির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেদিন রাতেই আমার জ্ঞান ফিরে। ২৬ দিন পর আমার জ্ঞান ফিরার পর, আমি হাত মাথায় দিলে লক্ষ্য করি আমার মাথায় চুল নেই। বিষয়টি আমার চক্ষু গোচর হলে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারি না। জোরে চিৎকার দিয়ে আবারও অজ্ঞান হয়ে যাই।

ডাক্তাররা এবার একটা আশার আলো খুঁজে পেল আমাকে নিয়ে। যেখানে আমার জ্ঞান ফিরলছিল না, সেখানে আমার একদিনে এত উন্নতি তাদের একটা নতুন পথ দেখালো।

ডাক্তাররা আবার চিকিৎসা শুরু করল। আগের থেকে আমার অবস্থার উন্নতি ঘটছে। এরপর দুদিন পর আমার জ্ঞান ফিরে। আমার জ্ঞান ফেরার পর আমি আমার হাত, পা নাড়াতে পারছিলাম না এবং চোখেও কিছু দেখতে পারছিলাম না। সব মিলিয়ে বুঝতে পারলাম আমি প্যারালাইজড হয়ে গেছি। তবে আমার বাবা মায়ের তাতে কোনো আফসোস ছিল না। আমার যে জ্ঞান ফিরেছে এতেই তারা খুশি ছিলেন।

একে তো আমি হাত, পা নাড়াতে পারছিলাম না। অন্য দিকে অন্ধের মতো চোখে দেখতে পারছিলাম না। বয়সও কম। সবমিলিয়ে আমার কী অসহায় অবস্থা যাচ্ছিল সেটা কেবল আমি জানি। শারিরীক যন্ত্রণা, মানসিক যন্ত্রণা আমাকে গ্রাস করতে শুরু করে।

এদিকে জুবেদা নার্স হাসপাতালে আসছে না দুদিন যাবত। আমার মা সবকিছুর মধ্যে এ বিষয়টিও লক্ষ্য করে। তাই তিনি সরাসরি হাসপাতালের রিসিপশনে গিয়ে উনার খোঁজ করে জানতে পারেন তিনি বেশ অসুস্থ। বিষয়টা আম্মুর ভালো ঠেকলো না। তিনি জুবেদার নন্বর জোগাড় করে কল দিলেন। তারপর উনার মুখে কিছু বয়ান শুনে মা স্তব্ধ হয়ে গেলেন।

চলবে?

অদৃশ্য এক সত্ত্বা
শারমিন আঁচল নিপা
পর্ব- ৪

নার্স জুবেদাকে যখন আম্মু কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল তার শরীর কেমন। তখন তিনি আম্মুর পরিচয় জেনে বেশ ভয়ার্ত গলায় আম্মুকে উত্তর দিল

“শারিরীক অবস্থা এখন ভালো। আপনি যদি স্বাভাবিক থাকেন এবং আমার কথা শুনার মতো সময় যদি আপনার থাকে তাহলে বলুন।”

আম্মু কিছুটা আন্দাজ করতে পারছিল উনি কী বলবেন। তাই বেশ স্বাভাবিক গলায় আম্মু উত্তর দিল

“আমি এখন ফ্রি আছি। আপনি চাইলে বলতে পারেন।”

জুবেদা কিছুটা হাঁপানো সুরে বলল

“আমি সেদিন আপনার মেয়ের চুল কাটার সময় বেশ বাঁধা অনুভব করেছি। মনে হচ্ছিল কেউ আমার হাত ধরে রেখেছে। আমাকে কাটতে নিষেধ করছে। তবে সব বাঁধা উপেক্ষা করে আমি চুলটা কাটার সময় কিছু বিষয় লক্ষ্য করি। চুলের কিছু অংশে কাচি চালালে লক্ষ্য করা গেছে লাল লাল টাইপ কী যেন ভেসে উঠেছে। আমি সে অংশ কাটতে গিয়ে কয়েকবার হাতে তীব্র যন্ত্রণা আর ব্যথা অনুভব করেছি। তবুও সমস্ত শক্তি খাটিয়ে আমি চুলটা কাটতে সক্ষম হই। চুল গুলো কাটা শেষে আমি চুলগুলো একত্র করে নিয়ে বাইরে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় মনে হলো কেউ আমাকে পেছন থেকে আচমকা ধাক্কা দিচ্ছে। এ ধাক্কাটা আমি সামলাতে না পেরে পড়েও গিয়েছি। তারপর আবার নিজেকে সামলে নিয়ে পড়া থেকে উঠলাম। উঠার পর বেশ স্বাভাবিক ভাবে আপনাকে চুল গুলো দিয়ে চলে আসলাম। আসার পর থেকে আমার মাথা তীব্র ব্যথা করতে শুরু করল। আমি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে, ছুটি নিয়ে বাসায় চলে এসেছি। বাসায় আসার সময়ও আমার ছোটোখাটো একটা এক্সিডেন্ট হয়। এরপর থেকে টানা জ্বর। আজকে শারিরীক অবস্থা ভালো আলহামদুলিল্লাহ। আর দুদিন রেস্ট নিয়ে হাসপাতালে জয়েন করব। আপনি যদি কিছু মনে না করেন আপনার মেয়ের বিষয়ে আমার একটা কথা ছিল।”

নার্স জুবেদার মুখে এরকম কথা শুনে আমার মায়ের গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। মা কাঁপা গলায় উনাকে সম্মতি দিয়ে বললেন

“আপনি বলেন পারমিশন নিতে হবে না।”

তখন জুবেদা মাকে বুঝিয়ে বলল

“আপনার মেয়ের বিষয়টা আমার কাছে একটু প্যারানরমাল মনে হয়েছে। জ্বিন তো দুনিয়ায় আছে। ভালো জ্বিনও আছে আবার খারাপ জ্বিনও। আপনি একটু অন্য চিকিৎসাও করেন। আপনার মেয়ের কোনো রোগ ধরা পড়ছে না অথচ শারিরীক অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। শুকিয়ে গায়ের হাড্ডি দেখা যাচ্ছে। মাথার চুল অস্বাভাবিকভাবে জট পাকিয়ে গেছে। আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা। সবকিছু অন্যদিক ইঙ্গিত করছে। আপনি একটু ডাক্তারি চিকিৎসার পাশাপাশি অন্য চিকিৎসাও করেন।”

আমার মা নার্সের কথা শুনার পর আর কোনো কথা বলতে পারছিল না। গলা জড়িয়ে যাচ্ছিল বারবার। ছোটো থেকে একটু চঞ্চল স্বভাবের আবার ফর্সা গড়নের হওয়ায় এবং চোখের লেন্স ভিন্ন হওয়ায় আমাকে কিছুটা ফরেনারদের মতো লাগত। তার উপর হাঁটু অবধি চুল যেন সবকিছুর খুটি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই কারও বদ নজর লাগাও অস্বাভাবিক কিছু না। মা কোনো উত্তর দিতে পারল না। এভাবেই কলটা কেটে দিল। কল কাটার পর মায়ের শরীর কাঁপতে লাগল। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে বাবাকে বিষয়টা খুলে বলে। বাবা এসবে একদম বিশ্বাসী না। তাই হুজুর দেখাবে, রাকি দেখাবে এসবে সায় দিল না। তবুও মায়ের জোরাজোরিতে এক পর্যায়ে রাজি হয়। এরপর ফুফা যে রাকির কাছে আমার বিষয়টা নিয়ে কথা বলে বাবাও সে রাকিকে কল করে। ইতোমধ্যে আমার চুলগুলো রাকি নিয়ে যায়। রাকি বুঝতে পারছিল আমার মধ্যে কোনো সমস্যা চলছে। তাই তিনি বাবাকে বললেন

“এভাবে তো আর বুঝা যাচ্ছে না সমস্যা কোথায়। রোগীর পাশে কুরআন তিলাওয়াত করে করে মূল সমস্যাটা বুঝতে হবে। দূরে থেকে এগুলো সম্ভব না।”

এখন হয়েছে নতুন সমস্যা। একে তো বাবা এসব বিশ্বাস করে না। তার উপর এসে চিকিৎসা করতে হবে। এদিকে আমি অবজারবেশনে। আমার কাছে কেউ যাওয়ার পারমিশনও নেই। সব মিলিয়ে এটা সম্ভব না বুঝা যাচ্ছিল। তাই বাবা ফোন কাটার পর মাকে ডিরেক্ট জবাব দিল

“এগুলো সব ধান্দাবাজি। বাদ দাও। মেয়ের চিকিৎসা হচ্ছে হতে দাও।”

মা আর কোনো কথা বলল না। চুপচাপ বসে রইল। মায়ের মনে বিষয়টা শুধু খছখছ করতে লাগল। এরপর থেকে মায়ের মনে নতুন এ বিষয়েই ঘুরতে লাগল। এদিকে আমার চুলগুলো ঐ রাকি কী যেনো করে মাটিতে পুতে ফেলে। আমার অবস্থার একটু উন্নতি হলেও আমার মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে না। সারাদিন কেবল আমার চোখ দিয়ে গড়গড় করে পানি পড়ত। কথা বলতে পারতাম না। চোখে কিছু দেখতে পারতাম না। শরীর নাড়াতে পারতাম না। খাবার দিত নল দিয়ে। এ জীবনটা আমাকে আরও বেশি যন্ত্রণা দিতে লাগল। শারিরীক অবস্থার একটু একটু উন্নতি হলেও আমার মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকল। আরও ১০ দিন অবজারবেশনে রেখে আমাকে দেওয়া হলো কেবিনে। কেবিনে তখন শুধু মাকে এলাউ করত। বাড়তি কোনো লোক ঢুকারও অনুমতি ছিল না৷ যেহেতু আমার কেইসটা ছিল সিরিয়াস। যেদিন আমাকে কেবিনে দেওয়া হয় সেদিনেই মায়ের চোখে পড়ে কিছু অস্বাভাবিক বিষয়।

[আমি ভীষণ ব্যস্ত থাকায় পর্ব ছোটো হয়। বড়ো করে পর্ব লিখতে গেলে আমার ৬,৭ দিন সময় চলে যায়। তাই ১ দিন পর পর পর্ব দিচ্ছি এবং সেজন্য পর্ব ছোটো হয়। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত]

অদৃশ্য এক সত্ত্বা
শারমিন আঁচল নিপা
পর্ব-৫

কেবিনের প্রথম রাতে আমার একদম ঘুম আসতেছিল না। চোখে কিছু না দেখলেও মনে হত চোখে কিছু ভাসছে। কখনও ভয়ংকর অনুভূতি হত আবার কখনও সাবলীল। এ নিয়েই কেবিনের প্রথম দিন আমার। এ জীবনটাও আমার অসহ্য লাগতে শুরু করল। ডিপ্রেশন আমাকে ঘিরে ধরল। যে আমি সারাদিন টইটই করে ঘুরে বেড়াতাম সে আমি আজকে এভাবে পড়ে আছি। নিজের এ অবস্থা নিজেই মানতে পারছিলাম না। এসব ভাবতে ভাবতেই আমার অসাড় দেহ আরও অসাড় করে ঘুম ঝেঁকে বসলো। চোখ দিয়ে গড়গড় করে পানি পড়তে পড়তে আমি ঘুমিয়ে গেলাম।

রাতে মনে হলো আমার বুকে আবারও কেউ চেপে বসেছে। আর এদিকে আমার মা হঠাৎ করে কেবিনের দেয়ালে খেয়াল করল একটা হাতের ছায়া। মা হাতের ছায়ার উৎস খুঁজতে খুঁজতেই ছায়াটা মিলিয়ে গেল। হুট করে আমার শ্বাসকষ্ট বাড়তে লাগল। মা হন্নে হয়ে ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার এসে আমাকে আবারও চেক আউট করল। টানা আধা ঘন্টা আমার এমন অবস্থা বিদ্যমান রইল। আমার মনে হতো আমি এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলে অনেক ভালো হত।

আধা ঘন্টা পর আমি স্বাভাবিক হলাম। তবে আশানুরূপ কোনো কিছুই অনুধাবন করতে পারল না ডাক্তার রা। এদিকে আমার মায়ের মনে শুধু হাতের ছায়ার বিষয়টা খচখচ করতে লাগল। বাবাকে বিষয়টা বলবে কিনা ভাবতে লাগল। একবার ভাবতে লাগল বাবাকে বলবে আবার ভাবতে লাগল বলবে না। কারণ বাবাকে বললে বাবা এসব বিশ্বাসও করবে না। এটা তার কাছে কেবল মনের ভুল হিসেবেই আখ্যায়িত হবে। তাই মা চুপ রইল।

দিন কাটতে লাগল। আমার শারিরীক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। সারাদিন চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে আমার পিঠে ঘা হতে শুরু করে। সেই ঘা থেকে পুঁজ বের হত। দুর্গন্ধ সৃষ্টি হত। মাঝে মাঝে গলা দিয়ে গন্ধযুক্ত ব্লাড যেত। সব মিলিয়ে আমার কষ্ট যেন আরও বাড়তে লাগল। আমার ওজন কমে ২৭ কেজি হয়ে গেল। শরীরের হাড্ডি ভাসতে লাগল। সামনের দাঁত গুলো শুকিয়ে বের হয়ে গেল। কেমন যেন উদ্ভট লাগত আমাকে। সব মিলিয়ে নরকের মতো জীবন পার করতে লাগলাম। আমার মা কেবল সে সময়টায় কাঁদত। কাঁদতে কাঁদতে একসময় তার চোখের পানিও যেন শুকিয়ে গেল। আর এদিকে আমি আমার হাহাকার প্রকাশ করতে পারছিলাম না আবার সহ্য করার ক্ষমতাও যেন চলে যেতে লাগল।

নার্স প্রতদিন ঘা গুলো এসে পরিষ্কার করে দিয়ে যেত। তবে সেগুলো আর শুকাত না। এমন একটা অবস্থা মনে হচ্ছিল আমার সারা শরীরে পচন ধরবে। আর আমি আস্তে আস্তে মরব। এভাবে কাটল আরও এক মাস। এ একমাসে আমার শারীরিক উন্নতি হলো না। শুধু মাত্র চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়া ছাড়া। তবে সেখানেও ঘটে কিছু বিপত্তি। চোখে দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার পর থেকে আমার মনে হত কোনো বিভৎস কিছু আমার সামনে এসে হানা দিচ্ছে। আমার বুকে ব্যথা শুরু হত এমন কিছু অনুভব করলে। তাই কোনোরকম গলার আওয়াজ বের করে মাকে সবটা খুলে বলি। মা বিষয়টা ডাক্তারকে বললে, ডাক্তার ব্যখ্যা দেয় যে আমি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। অনেকদিন এমন পরিস্থিতিতে থেকে আমার মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছে। তাই অনেককিছু কল্পনা করি। যার জন্য আমার চোখে এগুলো ভাসে। এটা আস্তে ধীরে কাউন্সিলিং করলে ঠিক হয়ে যাবে। এরপর সব ট্রিটমেন্টের সাথে আমাকে কাউন্সিলিং ও করা হয়। তবে কাউন্সিলিং এ আমার তেমন কোনো উন্নতি হলো না। প্রতদিন হাত পায়ের ব্যায়াম, ম্যাসাজ তো ছিলই।

সবকিছু মিলে একবার উন্নতি হয় আবার অবনতি। নল দিয়ে খাবার খাওয়া, নল দিয়েই পি পটি করানো হত। সব মিলিয়ে আমি জীবিত থেকেও মৃত লাশ হয়ে জীবন পার করছিলাম।
আমার জীবনের সকল আশা এক সময় বিনষ্ট হয়ে যেতে লাগল। এ জীবনের থেকে মৃত্যুই শ্রেয় মনে হতে লাগল।

এদিকে মায়ের মন বারবার অন্য কথা বলছিল। এবার মা সিদ্ধান্ত নেয় যত কিছুই হোক আমাকে রাকি দ্বারাও চিকিৎসা করাবে। আম্মুর ভাবনা প্রবলভাবে দৃঢ় হতে লাগল। তাই টানা তিনমাস পর আম্মু সিদ্ধান্ত নিল রাকি দেখাবে এবং যে করেই হোক।

এবার আম্মুর পাগলামিকে কেউ উপেক্ষা করতে পারল না। তাই আমাকে রাকি দেখানো হলো। পাশাপাশি ডাক্তারি চিকিৎসাও করাতে লাগল। রাকি দেখানোর পর কিছু অদ্ভুত জিনিস সবার চক্ষুগোচর হয়।

চলবে?

অদৃশ্য এক সত্তা
শারমিন আঁচল নিপা

পর্ব – ৬

রাকি দেখানোর পর কিছু অদ্ভুত বিষয় পরিলক্ষিত হয়। রাকি কে ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করা হয়। কারণ রোগী না দেখে রাকির পক্ষে চিকিৎসা করা সম্ভবপর ছিল না। দেখা যেত রাকি যখন কোরআন তেলোয়াত করতো তখন অদ্ভুত কিছু আওয়াজ আমার মুখ দিয়ে বের হতো। কখনো কখনো চোখ বড় হয়ে যেত। আবার কখনো কখনো দম বন্ধ হয়ে কাশির বিস্তার হত। আবার কখনো কখনো মনে হতো যে আমার বুকে কেউ পাথর দিয়ে চেপে ধরেছে। আমার দম নিতে কষ্ট হতো। প্রচন্ড রকমের খারাপ লাগতো এবং মাথায় ব্যথার সঞ্চার হতো।

সব মিলিয়ে রাকি প্রথম দিনে বুঝতে পারল আমার সাথে এমন কিছু আছে, যা আমাকে সুস্থ হতে দিচ্ছে না। হতে পারে আমার কিছু আপনজন আমাকে বান মেরেছে অথবা বদ নজর লেগেছে। রাকির নিকট প্রথম দিনেই আমার রোগের ধরন সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভবপর হয়নি। তবে আমার মধ্যে জ্বীন জাতীয় সমস্যা আছে এটা তিনি কনফার্ম করে গেছেন।

রাকি চলে যাওয়ার পর আমার অবস্থা আরো খারাপ হতে শুরু করে। হঠাৎ করে মাথার বাম পাশটা প্রচন্ড আকারে ব্যথা শুরু হতে থাকে। নাক মুখ দিয়ে আবারও রক্ত যেতে শুরু করে। আমার অবস্থার অবনতি দেখে আমাকে আবার অবজারবেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং ডাক্তার কঠোরভাবে বারণ করে দেয় রাকিকে না আসতে। উনি আসার ফলেই আমার শারিরীক অবনতি ঘটেছে। আমার বাবাও বিষয়টা জানতে পেরে মায়ের সাথে অনেক রাগারাগি করেন।

এদিকে আবারও দুদিনের জন্য আমি জ্ঞান হারাই। আমার অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। একে তো ওজন কমে গিয়েছে। তার উপর শরীরে ঘা। সে সাথে পুজরক্ত বমি তো আছেই। সব মিলিয়ে আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর সময় আমি পার করছিলাম মনে হচ্ছিল। এটা যে কতটা কষ্টদায়ক ছিল সেটা মনে হলে এখনও গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। টানা দুদিন পর আমার যখন জ্ঞান ফিরল তখন মনে হলো কেউ আমার পাশে বসে হাসছে আর বলছে।

“আমাদের তাড়াতে চাস তাই না? আমাদের তোর থেকে কেউ তাড়াতে পারবে না। তাড়ানোর কোনো চেষ্টা করলে তোকে এভাবেই কষ্ট দিব।”

এ কথাগুলোই আমার কানে আসছিল। হতে পারে এটা আমার মনের ভুল অথবা এটা সত্যই। কথোপোকোথন আস্তে আস্তে অস্পষ্ট হতে হতে থেমে যায়। আমার মাথা হালকা হতে থাকে। মনে হচ্ছিল কোনো বোঝা আমার মাথা থেকে নেমেছে। আস্তে আস্তে শরীরে একটু একটু শক্তি পাচ্ছিলাম। হাত পা পুরোপুরি নাড়াতে না পারলেও একটু একটু নাড়াতে পারছিলাম। এতদিনে পিঠের ক্ষতের জায়গায় কোনো সেন্স ছিল না তাই তেমন একটা ব্যথা অনুভব করিনি। এখন একটু একটু সেন্স আসায় পিঠটায় প্রচুর ব্যথা শুরু হয় আর সে সাথে জ্বলুনি। সেদিন আবার অবজারবেশন থেকে আমাকে কেবিনে দেওয়া হয়। সে সময়ে পরিবারের অবস্থা কতটা সূচণীয় ছিল এখন সেটা আমি একটু হলেও টের পাই। না পারছিল পরিবার সঠিক কোনো চিকিৎসা করতে না হচ্ছিল আমার উন্নতি। একের পর এক টেস্ট করেই যাচ্ছিল তবে মূল রোগটা ধরা পড়ছিল না। সবমিলিয়ে আমার মা বাবা শেষ পর্যায়ে এসে হতাশ হয়ে পড়ে। একে তো টাকার উপর টাকা যাচ্ছে। এত টাকার জোগান দিতেও হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। সব মিলিয়ে হাহাকার করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

মা, বাবা চিন্তায় ঘুমাতে পারত না। আর এদিকে যতই আমার শারীরে সাড় পেতে শুরু করলাম ততই আমার ব্যথা তীব্র হতে লাগত। সারা শরীর ব্যথা করত। পিঠের ক্ষতটা মরিচের মতো জ্বলত। মাথার পেছন দিকটা অসম্ভব হারে ব্যথা করত। আমি একটুও ঘুমাতে পারতাম না। যেদিকে নড়তাম সেদিকে কেবল ব্যথা। শরীরে অসাড়তা কমলেও ব্যথার তীব্রতা বেড়ে গিয়েছিল। যার দরুণ এবার শারিরীক যন্ত্রণা শুরু হয়। সারাদিন রাত শারিরীক যন্ত্রণায় চিৎকার পারতাম। মাথার ব্যথায় মনে হত দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। বারবার মনে হত আমি কেন বেঁচে আছি। এত অসহ্য যন্ত্রণা কেন সহ্য করছি। এর থেকে আমি মরে গেলেই ভালো হত। চিন্তারা সব হানা দিয়ে আমাকে পরপারে যাবার অনুপ্রেরণা দিত।

ডায়বেটিস নেই অথচ পিঠের ঘা টা কোনোক্রমেই শুকাচ্ছিল না। সব মিলিয়ে আমার অবস্থা আরও খারাপ। চিল্লায়ে চিল্লায়ে কাঁদতাম। ব্যথায় কাঁতরাতাম। বারবার মনে হত আমাকে কেউ মারার চেষ্টা করছে। যন্ত্রণা গুলো কেউ ইচ্ছা করে দিচ্ছে। লোমশ কিছু বস্তুর স্পর্শ অনুভব করতাম। সবমিলিয়ে এ সূচণীয় অবস্থার শেষ পরিণতির জন্য দিন গুনতেছিলাম। কিন্তু শেষ যেন আর হচ্ছিল না।

সেদিন রাতে ব্যথার হাই ডোজ ইনজেকশন দেওয়ার পর আমার ব্যথা একটু কমলে আমি ঘুমানোর চেষ্টা করি। একটা পর্যায়ে হালকা ঘুমও হয় আমার। তবে সেটা আসার সাথে সাথে মনে হলো একটা বিভৎস লাশ, আমার উপর শুয়ে আছে। যার সারা শরীরে কাফনের কাপড় মুড়ানো। আমি দম নিতে পারছিলাম না, চোখও খুলতে পারছিলাম না, সে সাথে জিহ্বা নাড়িয়ে কথাও বলতে পারছিলাম না। অনেকক্ষণ এ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। মৃত্যু যন্ত্রণা কী? হয়তো একটু হলেও টের পেয়েছিলাম সেদিন। একটু হলেও বুঝতে পেরেছিলাম জাহান্নামের কষ্ট কত করুণ হতে পারে।

সে কাফন পরা লাশটা যেন হুট করেই সবল হলো আর আমার বুকে এসে চেপে বসল। হাত দুটো দিয়ে আমার গলা চেপে ধরল। যার দরুণ আমার গলা দিয়ে আমার দুর্গন্ধ যুক্ত রক্ত বের হতে শুরু করল। আর তার পর থেকে কাহিনি আবার নতুন মোড় নিল।

চলবে?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।