গল্পের নামঃ অপেক্ষায়
লেখিকাঃ রোজী আক্তার রোজ
‘ও টেপিঁ এ-ই অবেলায় কই যাস?’
বাক-প্রতিবন্ধী মেয়েটা পিছনে ফিরে তাকালো মায়ের দিকে হেসে, বিভিন্ন অঙ্গি-ভঙ্গির মাধ্যমে বোঝালো সে নদীর ধারে যাচ্ছে।
‘এ-ই অসময়ে ঐখানে যেতে নেই মা,ফিরে আয়!’
ততক্ষণে ভোঁ দৌড় দিলো টেপিঁ।তার মন বলছে তার বাবা আজ ফিরে আসবে।নদীর ধারে বসে স্বচ্ছ বিশাল জলরাশির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টেপিঁ। হঠাৎ করে মনে অদূরে একটি নৌকা দেখতেই সে উঠে দাঁড়ালো,চরম উচ্ছাসের সাথে হাত নাড়াতে থাকলো নৌকার উদ্দেশ্যে।সে বুঝতে পারলো নৌকাটি তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে!কাছে আসতেই সে বুঝতে পারলো এগুলো পাকিস্তানি বাহিনী।একবার তার বাবা তাকে দূর থেকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলেছিলো-‘এদের থেকে সবসময় দূরে থাকবে।’
তা-ই সে উঠে দাঁড়ালো পালানোর জন্য।এমন সময় তাঁর পায়ে একটি গুলি করলো পাকিস্তানি বাহিনীর একজন সদস্য।পিছনে ফিরে তাকাতেই বুকে বরাবর ও একটি গুলি ছুড়লো।গুলির আওয়াজে গাছে বসা পাখিগুলো কিচিরমিচির শব্দ করে উঠলো।মাটিতে লুটিয়ে পড়লো টেপিঁর ছোট্ট দেহটি চোখের সামনে ভেসে উঠলো বাবার শেষবারের কথা গুলো-‘মা আমি যাচ্ছি দেশেকে স্বাধীন করে।নদীর ধারে নৌকায় করে আমি আবার ফিরে আসবো।’
স্বাধীন শব্দটি না বুঝলেও নদীর ধারে তাঁর বাবা আবার ফিরে আসবে এটি বুঝেছিলো।বাবার কথা মনে পড়তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো এবং চোখ থেকে একবিন্দু জল ও গড়িয়ে পড়লো।
সে-ই সাথে টেপিঁর রক্তের সাথে নদীর পানির সাথে মিলন হলো।বাবার জন্য অপেক্ষারত মেয়েটি যে আজ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো এটি তাঁর বাবা জানবে?