বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া

বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ,

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

ভূমিকা

نحمده ونصلي على رسوله الكريم أما بعد

ইলমে ওহী ও উলূমে নবুওয়াতই প্রকৃত ইলম। এ ইলমই পারে তমসাচ্ছন্ন মানব সমাজকে আলোকোজ্জ্বল মুক্তির রাজপথে উঠিয়ে নিয়ে আসতে, সভ্যতার আলো ঝলমল ঠিকানায় পৌঁছে দিতে। এই ইলম ও সেই অনুযায়ী আমলই মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে। মানুষের মাঝে জাগিয়ে তোলে মানবতাবোধ। মানুষের মধ্যকার কু- প্রবৃত্তি দমন করে তাকে করে ফেরেশতার মতো পবিত্র চরিত্রের অধিকারী। স্রষ্টার প্রেম ও তাঁর সান্নিধ্য চেতনায় মানবাত্মাকে করে উন্মুখ। জাগতিক মোহজান ছিন্ন করে মানুষ তখন ছুটে চলে জান্নাত লাভের আশা নিয়ে। এ চেতনার সমৃদ্ধ মানুষই ইহজগতেও রচনা করে অনাবিল এক জান্নাতী পরিবেশ।

তাই সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে এই ইলমকে ধারণ, বহন, প্রচার ও প্রসারের প্রাণান্তকর প্রয়াস চলে আসছে। উলামা, ফুকাহা, মুজাদ্দেদীন, মুহাদ্দিসীন ও সুলাহায়ে উম্মাত অত্যন্ত বিশ্বস্ততা, বিচক্ষণতা, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নিরলস সাধনার মাধ্যমে এই ইলমের হেফাজত ও ইশাআতের কাজ আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। বাতিলের রক্তচক্ষু, শাসকদের নির্যাতন, কুচক্রীদের প্রলোভন বা জাগতিক ভোগ-বিলাসের মোহ কোনো কিছুই তাদেরকে আপন কর্তব্য থেকে মোটেই বিচ্যুত করতে পারেনি।

ভারতবর্ষে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে সাহাবায়ে কেরামের যুগেই। তখন থেকেই ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের প্রয়াস চলে আসছিল। ফলে ভারতবর্ষে ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক প্রচলন ঘটে। মুসলিম শাসনের দীর্ঘ সাতশ বছরে মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষা ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে এতটাই অগ্রসর হয়ে যায় যে, কোনো নগর বন্দর এমন ছিল না যেখানে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এমনকি গ্রাম-পল্লী পর্যন্ত এ শিক্ষার বিস্তার ঘটে। এ শিক্ষাধারার অনুসারীরাই ভারতবর্ষে ইসলামী আদর্শ বিস্তারে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।

সেযুগে পৃথিবীর সমৃদ্ধ জনপদ হিসাবে বিদেশীরা আসত ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে। অন্য বৈদেশিক কোম্পানিগুলোর মতো ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে এসে একদিন এ দেশের রাজক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়। ক্ষমতার আসন পাকা করার জন্য তারা সুদূরপ্রসারী আগ্রাসী তৎপরতা শুরু করে। অর্থনৈতিক শোষণের মাধ্যমে পঙ্গু করে দেয় এ দেশের মানুষকে, স্তব্ধ করে দেওয়া হয় রাজনৈতিকভাবে পুনরুত্থানের সম্ভাবনা। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে পরিবর্তন করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এ দেশের মানুষের মন- মস্তিষ্ক। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অচল করে আদর্শিক চেতনার ভিত্তিতে জেগে ওঠা সম্ভাব্য বিপ্লবের পথ চিরতরে রুদ্ধ করে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়।

তাদের ক্ষমতার বিস্তার দেখে এ দেশের অধিকাংশ মানুষ পরাধীনতার জীবন গ্রহণ করে নিলেও সত্যের অতন্দ্র প্রহরী স্বাধীনচেতা উলামায়ে কেরাম তা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। তারা স্বাধীনতার পক্ষে অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকেন নীরবে নিরবচ্ছিন্নভাবে। বিরোধিতা, বিদ্রোহ ও যুদ্ধ-বিগ্রহের উপর্যুপরি কর্মসূচি দিয়ে অতিষ্ঠ করে তোলেন ক্ষমতাসীন ইংরেজদেরকে। ফলে উলামায়ে কেরামের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের স্টিম রোলার, তাদের সহায়-সম্পদ হয় বাজেয়াপ্ত। জেল-জুলুম, হত্যা- নির্যাতন, দেশান্তর ও দ্বীপান্তর কিছুই বাদ যায়নি। কিন্তু কোনো কিছুই তাদেরকে দমিত করতে পারেনি। তাদের ছড়ানো সেই চেতনা ক্রমান্বয়ে আন্দোলিত হতে থাকে সারা দেশে। ইংরেজরা বিষয়টি অনুধাবন করে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অচল করে দেওয়ার হীন মানসে সব সরকারি জায়গীর ও অনুদান বন্ধ করে দেয় এবং ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিতদেরকে সরকারি চাকুরি থেকে বঞ্চিত করে তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। কিন্তু আলেম সমাজ এতে দমবার পাত্র নন। তারা জনসাধারণের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে ইলমে দীন হেফাজতের নতুন পন্থা উদ্ভাবন করে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তুললেন

দারুল উলুম দেওবন্দ। ক্রমশ সারা দেশে একই ধারা ও প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠে হাজার হাজার ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার পাশাপাশি আজাদীর দীক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে দেওয়া হতো এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তাদের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীনতার চেতনা। দারুল উলূম দেওবন্দ ও তার অনুসারী এই সব ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নীরবে চেতনা বিলায় স্বাধীনতার। ফলে সারা দেশে দানা বেঁধে ওঠে এক নীরব আন্দোলন। ইংরেজদের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য সহায়-সম্বলহীন অবস্থার মাঝেই অগ্রসর হতে থাকে এই শিক্ষা ব্যবস্থা। দীনের দাওয়াত ও প্রচার-প্রসারে তাদের অবদান সর্বজন স্বীকৃত, বাতিল কুসংস্কার প্রতিরোধে তাদের রয়েছে এক উজ্জ্বল দীর্ঘ ইতিহাস। কিন্তু যা বাস্তব তা হলো দীনি তা’লীম ও তারবিয়াতের কাজ উপমহাদেশের সর্বত্র বিচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে, ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতিষ্ঠান। দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষা কারিকুলামকে মূল হিসাবে সামনে রেখে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তার অভিরুচির অনুকূলে সময়ের দাবির নিরীখে শিক্ষা কারিকুলাম ও পাঠ্যসূচিতে সংস্কার করতে থাকে। ফলে একই ধারার অনুসারী এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কারিকুলামে মৌলিক ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অমিল সৃষ্টি হয়। শ্রেণির নামকরণ, বর্ষ নির্ধারণ এমনকি পাঠ্যসূচিতেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তা ছাড়া সামষ্টিক উদ্যোগে যে উন্নতি ও অগ্রগতি হওয়া সম্ভব, তা থেকে জাতি বঞ্চিত

থাকে। সময়ের সাথে পাল্লা দেওয়ার প্রয়োজনে শিক্ষা ধারায় সংস্কারের যে প্রয়োজন তাও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জিত হয়নি।

সব সমস্যাকে কাটিয়ে উঠে ধর্মীয় শিক্ষাকে একটি অভিন্ন খাতে পরিচালিত করার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি সমন্বিত ও সার্বজনীন উদ্যোগের। তা ছাড়া বিংশ শতকের শুরুতে বাতিলের প্রচার করা সাংগঠনিকভাবে তৎপরতা শুরু করে। ফলে বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে ওঠা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় হিমশিম খেতে থাকে। বাতিল যেভাবে আসে তার মোকাবেলাও সেভাবেই করতে হয়- এটা ইতিহাসের অমোঘ শিক্ষা। তাই সংগঠিত বাতিলকে রোখার যুগোপযোগী কর্মসূচি গ্রহণের তাগিদে বিংশ শতকের শেষার্ধের শুরুভাগে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করার এবং একই কারিকুলাম ও সিলেবাসের আওতায় শিক্ষাকে আরও গঠনমুখী, গতিশীল ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয়। অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কোথাও কোথাও জেলাভিত্তিক ঐক্যও গড়ে ওঠে। কিন্তু ব্যাপক ভিত্তিতে এ সব ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বৃহত্তর ঐক্যের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ গৃহীত হয় যথেষ্ট বিলম্বে। ১৯৭৮ ঈসায়ি সালে ঢাকার শায়েস্তা খাঁ হলে সর্বদলীয় উলামায়ে কেরামের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বাংলাদেশের সকল কওমী মাদরাসাকে এক সূত্রে গ্রথিত করার সুমহান লক্ষ্যে ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ নামে জাতীয় পর্যায়ে একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। সেই থেকেই যাত্রা শুরু হয় এই প্রতিষ্ঠানের। নিরবচ্ছিন্ন কর্মতৎপরতার মাঝ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ তার সুদীর্ঘ যাত্রাপথে মুসলিম উম্মাহর সংকটকালে যথাযথ দিকনির্দেশনার পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষা পদ্ধতির সংস্কার, নেসাব ও সিলেবাস সংশোধন, শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রচেষ্টা, পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার এবং এ দেশের কওমী মাদরাসাগুলোকে দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শিক কাঠামোর ভিত্তিতে আকাবির ও আসলাফের চিন্তাধারার ওপর এক সূত্রে গ্রথিত করার মহৎ উদ্যোগও চালিয়ে যাচ্ছে। নেসাবের ভিন্নতার সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য যুগপ্রেক্ষাপট সামনে রেখে সারা দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের নিকট গ্রহণযোগ্য এবং জাতির জন্য কল্যাণকর একটি নেসাবের খসড়া প্রাথমিকভাবে পেশ করে ক্রমান্বয়ে তা সংস্কারের মাধ্যমে আরও ফলপ্রসু, কল্যাণকর ও যুগোপযোগী করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তেমনি সারা দেশের কওমী মাদরাসাসমূহের পরিচালনা পদ্ধতি ও পরিচালনাবিধি তথা গঠনতন্ত্রে যে ভিন্নতা রয়েছে তা দূরীকরণের প্রচেষ্টাও পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে।

 

বস্তুত প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কিছু বিধিবদ্ধ নিয়মনীতি প্রয়োজন। এটিকে আধুনিক পরিভাষায় গঠনতন্ত্র বা পরিচালনা বিধি বলা হয়।

দারুল উলূম দেওবন্দের আদর্শ, চিন্তাধারা ও কারিকুলাম অনুসরণ করে আমরা চলি। আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠালগ্নেই এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সুশৃঙ্খল পরিচালনার জন্য এটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ কাসেম নানুতবী (রহ.) তাঁর পরিশুদ্ধ আতাশক্তি ও বিদগ্ধ চিন্তার আলোকে ৮টি মূলনীতি প্রণয়ন করেছিলেন- যা ইতিহাসে “উসূলে হাশত গানাহ বা মূলনীতি অষ্টক” নামে পরিচিত। তিনি তার বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও রুহানী প্রজ্ঞার আলোকে সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় অনুদানের প্রাচীন প্রথার পরিবর্তে জনসাধারণের সাহায্য-সহযোগিতার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। ৮ দফা মূলনীতি পরিসরে অতিক্ষুদ্র হলেও তাতে একটি দীনি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক পরিষদ, পরিচালকমণ্ডলী, মুহতামিম ও আসাতিযায়ে কেরামের নৈতিক ও আদর্শিক বৈশিষ্ট্য, তাদের করণীয় ও দায়-দায়িত্ব, সিলেবাস ও পাঠদান পদ্ধতি, ছাত্র সংক্রান্ত নীতিমালা, ছাত্রদের সুযোগ-সুবিধা, প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস ও ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা, শিক্ষার দ্রুত সম্প্রসারন করা, চাঁদার মাধ্যমে জনসংযোগ ও ইসলামী ব্যবস্থার পক্ষে জনমত তৈরি, জনগণকে দীনের সাথে সম্পৃক্ত করা, এলাকার জনগণকে দীন সম্পর্কে সচেতন করার সহজতর উপায়, জুহদ ও তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে আত্মত্মশুদ্ধি অর্জন এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ এবং তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠতা অর্জন ইত্যাদি বহুমুখী দিক নির্দেশনা ছিল। পরবর্তী কালের গবেষকরা সেই মূলনীতিগুলো বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সেগুলোকে

‘ইলহামী মূলনীতি’ বলে অভিহিত করেছেন। মূলনীতিগুলো উল্লেখ করে তিনি একথাও বলেছেন, দীনি প্রতিষ্ঠানের জন্য মৌলিকভাবে এ সকল মূলনীতিকে অত্যাবশ্যকীয় মনে করতে হবে। মূলনীতিগুলো ছিল নিম্নরূপ: ১. যথাসম্ভব মাদরাসার কর্তৃপক্ষকে অধিক হারে চাঁদা আদায়ের বিষয়টির প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। নিজেও এর জন্য চেষ্টা করবেন, অন্যের মাধ্যমেও চেষ্টা করাতে হবে। মাদরাসার হিতাকাঙ্ক্ষীদেরও এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ

রাখতে হবে।

২. যেভাবেই হোক মাদরাসার ছাত্রদের খানা চালু রাখতে হবে; বরং ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি করার ব্যাপারে মাদরাসার

হিতাকাঙ্ক্ষী ও কল্যাণকামীদের সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।

৩. মাদরাসার উপদেষ্টাগণের মাদরাসার উন্নতি, অগ্রগতি এবং সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার দিকে সর্বদাই লক্ষ্য রাখতে হবে। স্বীয় মত প্রতিষ্ঠায় একওঁয়েমি যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আল্লাহ না করুন যদি এমন অবস্থা হয় যে, উপদেষ্টাগণ স্বমতের বিরোধিতা কিংবা অন্যের মতের সমর্থন করার বিষয়টি সহনশীলভাবে গ্রহণ করতে না পারেন। তাহলে এ প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিমূল নড়বড়ে হয়ে পড়বে। আর যথাসম্ভব মুক্তমনে পরামর্শ দিতে হবে এবং মাদরাসার শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি লক্ষণীয় হতে হবে। স্বমত প্রতিষ্ঠার মনোবৃত্তি থাকবে না। এজন্য পরামর্শদাতা মতামত প্রকাশকালে তার মতামত গ্রহণীয় হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী থাকবেন না। পক্ষান্তরে শ্রোতাদের মুক্তমন ও সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তা শ্রবণ করতে হবে। এরূপ মনোবৃত্তি রাখতে হবে- যদি অন্যের মত যুক্তিযুক্ত ও বোধগম্য হয়, তাহলে নিজের মতের বিপরীত হলেও তা গ্রহণ করা হবে কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত এমন বিদগ্ধ জ্ঞানী আলেম থেকেও পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবেন- যিনি এ সকল দীনি প্রতিষ্ঠানের হিতাকাঙ্ক্ষী ও কল্যাণকামী। তবে যদি ঘটনাক্রমে উপদেষ্টা পরিষদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের সাথে পরামর্শক্রমে কাজ করে ফেলা হয়, তাহলে কেবল এ জন্য অসন্তুষ্ট হওয়া উচিত হবে না যে, আমার সাথে পরামর্শ করা হলো না কেন। কিন্তু যদি মুহতামিম কারো সঙ্গেই পরামর্শ না করেন তাহলে অবশ্যই উপদেষ্টা পরিষদ আপত্তি করতে পারবে। ৪.

লিপ্ত হবে না। আল্লাহ না করুন, যদি কখনো এরূপ অবস্থা দেখা দেয়, তাহলে মাদরাসার জন্য এটি হবে

বড়ই অকল্যাণকর।

৫. পূর্ব থেকে যে পাঠ্যসূচি নির্ধারিত রয়েছে কিংবা পরবর্তীকালে পরামর্শের ভিত্তিতে যে পাঠ্যসূচি নির্ধারণ করা হবে, তা সম্পন্ন হবে- এই ভিত্তিতেই পাঠদান করতে হবে। অন্যথায় এ প্রতিষ্ঠান সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না, আর যদি হয়ও, তবু তা ফায়দাজনক হবে না।

৬. এ প্রতিষ্ঠানের জন্য যতদিন পর্যন্ত স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হবে। ততদিন পর্যন্ত আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার শর্তে তা এমনিভাবেই চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যদি স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যেমন কোনো জায়গীর লাভ, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, মিল ফ্যাক্টরি গড়ে তোলা, কিংবা বিশ্বস্ত আমির উমারার অনুদানের প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি তাহলে এরূপ মনে হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশার দোদুল্যমান অবস্থা যা মূলত আল্লাহ অভিমুখী হওয়ার মূল পুঁজি, তা হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং গায়েবি সাহায্যের দ্বার রুদ্ধ হয়ে যাবে। তদুপরি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও কর্মচারীদের মাঝে পারস্পরিক বিদ্বেষ ও কলহ-বিবাদ দেখা দেবে। বস্তুত আয়-আমদানি ও গৃহাদি নির্মাণের বিষয়ে অনেকটাই অনাড়ম্বরতা ও উপায়-উপকরণহীন অবস্থা অবলম্বন করার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।

৭. সরকার ও আমির উমারার সংশ্লিষ্টতাও এ প্রতিষ্ঠানের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে হচ্ছে।

৮. যথাসম্ভব এমন ব্যক্তিদের চাঁদাই প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক বরকতময় বলে মনে হচ্ছে, যাদের চাঁদা দানের মাধ্যমে সুখ্যাতি লাভের প্রত্যাশা থাকবে না। বস্তুত চাঁদা দাতাগণের নেক নিয়ত প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক স্থায়িত্বের কারণ হবে বলে মনে হয়।

পরবর্তী সময়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় মুহতামিম হযরত মাওলানা শাহ রফীউদ্দীন (রহ.) যখন ইহতিমামের জিম্মাদারি গ্রহণ করেন তখন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরিচালনার ব্যাপারে ৮ দফা সম্বলিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে মজলিসে শূরাকর্তৃক তা অনুমোদন করিয়ে নেন। সে নীতিমালাতে একটি দীনি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ

প্রশাসনিক বিধি কেমন হওয়া বাঞ্ছনীয়, তার সুষ্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। নীতিগুলো ছিল নিম্নরূপ:

১. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের খুঁটিনাটি কাজকর্মের তদারকি ও পরিচালনার ভার যেমন একজন পরিচালকের মতামত ও

সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিতে হয়, তদ্রূপ এই প্রতিষ্ঠান দারুল উলুমের অভ্যন্তরীণ খুঁটিনাটি কাজকর্ম পরিচালনার ব্যাপারে মুহতামিমের সিদ্ধান্তের ওপর উপদেষ্টা পরিষদ ও পরামর্শ দাতাদের হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে না। তবে প্রত্যেকেই আপন আপন অবস্থানে থেকে পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন এবং নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতে

পারবেন: মজলিসে শূরার সদস্যবৃন্দ যেমন মজলিসে বসে স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করে থাকেন। ২. খুঁটিনাটি কাজকর্মে যারা অধম (মুহতামিম) কে সাহায্য করবেন অথবা পরামর্শ দান করবেন; অধম (মুহতামিম)

তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। তবে কাজ কর্ম পরিচালনার দায়িত্ব অধম (মুহতামিম)-এর ওপরই ন্যস্ত থাকবে। ৩. যদি মুহতামিমের পদক্ষেপ কিংবা কাজকর্ম কোনো ব্যক্তির নিকট (তিনি শূরার সদস্য হোন বা সাধারণ কেউ হোন) ক্ষতিকর বা আপত্তিকর মনে হয়; সে কারণে তিনি মুহতামিমের কাজে কোনোরূপ বাধা সৃষ্টি করতে পারবেন না। বরং এক্ষেত্রে তিনি বিষয়টি শূরার মজলিসে উত্থাপন করে সে ব্যাপারে ফয়সালা গ্রহণ করবেন। শূরায় যা

সিদ্ধান্ত হবে মুহতামিম তা মানতে বাধ্য থাকবেন। সে ব্যাপারে মুহতামিমের কোনো ওজর-আপত্তি চলবে না। ৪. শূরার সকল বৈঠকে মুহতামিমের উপস্থিতি একান্ত অপরিহার্য। তার অনুপস্থিতিতে কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারবে না। যদি মুহতামিমের কোনো কাজ নিয়ে আলোচনা হয়, তবুও তার উপস্থিতি অপরিহার্য। মুহতামিমের কোনো কাজের ব্যাপারে অভিযোগ ও আপত্তি মজলিসে উত্থাপন করার অধিকার শূরার সকল

সদস্যের থাকবে এবং এসব আপত্তি ও অভিযোগের জবাবদিহি করার অধিকার মুহতামিমের থাকবে।

মাদরাসার সকল মুদাররিসকে অবশ্যই সমমনা ও একই চিন্তা-চেতনার অনুসারী হতে হবে। সমকালীন (দুনিয়াদার) আলেমদের মতো নিজ স্বার্থ প্রতিষ্ঠা এবং অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার দুরভিসন্ধিতে কিছুতেই

 

৫. আশু বাস্তবায়নের দাবি রাখে এমন জরুরি কাজ সমাধা করার জন্য শূরার মজলিস আহ্বান করে তা মঞ্জুর করিয়ে নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার সুযোগ যদি না থাকে, তাহলে মুহতামিম সাহেব পত্র মারফত সকলকে তা অবহিত করবেন এবং কাজটি সমাধা করে ফেলবেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে পরবর্তী মজলিসে সকল সদস্য বিষয়টি মঞ্জুর করে নেবেন।

৬. প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আয়ের দায়িত্ব মুহতামিমের ওপর অর্পিত থাকবে। নিয়মিত খাত ও জরুরি খরচের জন্য

একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ (যা শূরা বা আমেলা কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হবে) মুহতামিমের হাতে থাকা একান্ত অপরিহার্য। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ জমা হলে তা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ৭. প্রতিদিন যথাসময়ে মুহতামিমকে মাদরাসায় উপস্থিত হতে হবে এবং সে সময় প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় দায়-

দায়িত্ব ও কাজকর্ম সম্পাদন করতে হবে।

৮. উপর্যুক্ত দফাগুলো শূরাকর্তৃক অনুমোদিত ও স্বাক্ষরিত হতে হবে; যাতে তা মুহতামিমের জন্য সনদ হতে পারে এবং গঠনতান্ত্রিক মর্যাদা লাভ করে।

এই নিয়মনীতিই ক্রমান্বয়ে ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয় সংযোজনের মাধ্যমে দারুল উলূমের ‘কাদীম দস্তুরে আসাসী’ বা প্রাথমিক মূল গঠনতন্ত্রের রূপ লাভ করে। সেই মূল গঠনতন্ত্রে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের কথা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়। যার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ:

১. এ প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হবে শিক্ষার ক্ষেত্রে সামগ্রিকতা সৃষ্টি এবং একটি ব্যাপকতর সিলেবাসের মাধ্যমে শিক্ষাকে পূর্ণাঙ্গ ও সার্বজনীন করে তোলা। শিক্ষার ব্যাপক প্রচার প্রসারের ব্যবস্থাকরণের মাধ্যমে দীনের খেদমত করা।

২. আমল ও আখলাকের দীক্ষা দানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জীবনে ইসলামী ভাবাদর্শের বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো।

৩. ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে সমাজের চাহিদার নিরিখে যুগসম্মত কর্মপন্থা অবলম্বন ও খায়রুল

কুরুনের (সাহাবীগণের যুগের) ন্যায় আখলাকী ও আমলী চেতনা সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া।

৪. সরকারি প্রভাবমুক্ত থেকে ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষা ও চিন্তা-চেতনার স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখা।

. দীনি শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ ৫

এবং দারুল উলূমের সাথে সেগুলোকে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ তাইয়িব সাহেব (রহ.) দারুল উলূমের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বর্ণনাকালে নিম্নোক্ত

শিরোনামগুলো উল্লেখ করেছেন।

১. মাজহাবিয়্যাত অর্থাৎ ধার্মিকতা ও আদর্শের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা।

২. দায়েমী আজাদী বা চিরস্থায়ী সামগ্রিক স্বাধীনতা অর্জন।

৩. মেহনত পসন্দী ও সাদেগী বা পরিশ্রমী ও সহজ-সরল জীবনধারা অবলম্বনের অভ্যাস গঠন করা।

৪. আখলাক ও বুলন্দ কিরদার অর্থাৎ আত্মিক ও নৈতিক চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন ও উন্নত আদর্শের দৃষ্টান্ত সৃষ্টি।

৫.

ইনহিমাকে ইলমী বা শিক্ষা-দীক্ষায় একাগ্রতার পরিবেশ গড়ে তোলা। পরবর্তী সময়ে সেই প্রাথমিক দস্তুরে আসাসীতে পরিমার্জন ও সংযোজন করে দারুল উলুমের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ

গঠনতন্ত্র তৈরি করা হয়। পরবর্তী কালে উপমহাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম মুফতী কিফায়াতুল্লাহ সাহেব (রহ.) দীনি মাদারিসের গঠনতান্ত্রিক বিষয়ে কিছু সংস্কারমূলক প্রস্তাব দিল্লির আমিনিয়া মাদরাসার অষ্টম বার্ষিক সভায় লিখিত আকারে উল্লেখ করেছিলেন। তার প্রস্তাবগুলো নিম্নরূপ:

১. যেহেতু দীনি মাদরাসাসমূহের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন- দীনি ইলমের প্রচার ও প্রসার; অতএব দীনি মাদরাসাসমূহের ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে একটি নীতিমালার আওতায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত এবং পরস্পরে বিরোধিতার ভূমিকায় অবতীর্ণ না হওয়া উচিত।

২. দীনি মাদরাসাসমূহের উন্নতি ও অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়- তার কারকুন অর্থাৎ শূরার সদস্যবৃন্দের ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের আলেম না হওয়া। যদি তাদের অধিকাংশই পাশ্চাত্য চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হন, তাহলে দীনি ইলমের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে তারা যথেষ্ট ওয়াকেফহাল থাকেন না। অপর দিকে অনেক মাদরাসার মুহতামিম দীনি শিক্ষায় যথেষ্ট প্রজ্ঞাবান, তবে হিসাব-নিকাশে পারদর্শী না হন, এ কারণে দীনি মাদরাসাসমূহের শূরার সদস্যবৃন্দের অবশ্যই আলেম ও দিয়ানতদার হওয়া প্রয়োজন। তাহলে তারা দীনি প্রতিষ্ঠানের আদর্শ ও মেজাজ অনুযায়ী শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন; যার ভিত্তিতে সকল ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করা হবে। কেননা শূরাই মূলত নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করে থাকে।

এ ছাড়াও আরও কতিপয় প্রস্তাব ছিল যা এখানে উল্লেখ করা হলো না। আমাদের দেশের কওমী মাদরাসাসমূহ তাদের নেসাবের ন্যায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বিধি বা গঠনতন্ত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রেও দারুল উলূম দেওবন্দের গঠনতন্ত্রের মূলনীতিসমূহ অনুসরণ করে। তবে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি রেখে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিবর্তন করতে থাকে। কোথাও গঠনতন্ত্রের ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করে মাদরাসার গঠনতন্ত্রে নীতিগত বিস্তর পরিবর্তন সাধন করা হয়। ফলে নামে দেওবন্দী বলা হলেও পরিচালনা পদ্ধতি আর দেওবন্দী মাদরাসার অনুরূপ থাকেনি। এভাবে একই আদর্শের অনুসারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এটি জাতীয় ঐক্যের পথেও বাধার সৃষ্টি করে। কোথাও কোথাও মাদরাসার কমিটিতে কোনো আলেম না থাকার কারণে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতরা তাদের মর্জি অনুযায়ী মাদরাসা পরিচালনা করেন। এতে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ যে নীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানসমূহকে রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে, তা অনেক প্রতিষ্ঠানেই থাকে না। এ কারণে প্রয়োজন দেখা দেয় এমন একটি মৌলিক দিকনির্দেশনার যা অনুসরণ করে বেফাকভুক্ত কিংবা অন্তর্ভুক্ত হতে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের পরিচালনা বিধি ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে পারে এবং সে ভিত্তিতে একই নিয়মের আওতায় সারা দেশের প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালিত হতে পারে। বেফাকের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এ কাজটি আঞ্জাম দেওয়ার জন্য একটি সাব কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ আলোচনা পর্যালোচনার পর হযরত নানুতবী (রহ.) কর্তৃক রচিত উসূলে হাশত্ গানাহ, মাওলানা রফীউদ্দীন (রহ.) কর্তৃক রচিত ইন্তিজামী উসূলে হাশত গানাহ, মুফতী কিফায়াতুল্লাহ (রহ.)-এর প্রস্তাবাবলি ও দারুল উলূম দেওবন্দের দস্তুর তথা গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে আসলাফ ও আকাবিরের চিন্তাধারার আলোকে একটি গঠনতন্ত্রের খসড়া নমুনা প্রস্তুত করা হয়।

বেফাক এ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, বেফাকভুক্ত সকল মাদরাসাকে অবশ্যই উল্লিখিত ধারাসমূহ অনুসরণ করে তাদের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন/সংশোধন করে নিতে হবে। এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গঠনতন্ত্রের অনুসরণীয় বিধি ও নমুনা গঠনতন্ত্র উপস্থাপন করা হলো। আশা করি প্রতিটি মাদরাসা তার গঠনতন্ত্র এই আলোকে তৈরি করে জাতীয় ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মাঝে ঐক্যের পথ প্রশস্ত করবে এবং বেফাকুল মাদারিসের কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদেরকে সহযোগিতা প্রদান করবে। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ সর্বদা সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে। আল্লাহ আমাদের চলার পথে সহায় হোন। আমীন!

মুহাম্মাদ আবদুল জব্বার (রহ.)

সাবেক মহাসচিব

 

মাদরাসাসমূহের গঠনতন্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে অনুসরণীয় বিধানসমূহ

বেফাকভূক্ত মাদরাসাসমূহের গঠনতন্ত্রে যে সব বিষয় ও ধারা থাকা অপরিহার্য:

১. প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রের শুরুতে অর্থাৎ প্রথম অনুচ্ছেদে একটি ভূমিকা থাকতে হবে; তাতে প্রতিষ্ঠানটির সূচনার তারিখ ও ইতিহাস অর্থাৎ উদ্যোক্তা, ভূমিদাতা, সূচনার প্রক্রিয়া এবং অগ্রগতির মাধ্যমে বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত পৌছার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস অনূর্ধ্ব (ছাপার অক্ষরে) দুই পৃষ্ঠায় উল্লেখ করতেহবে।

২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠানের নাম, নামকরণের তাৎপর্য (যদি থাকে), সংক্ষিপ্ত নাম (যদি থাকে) ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে। মনোগ্রাম উল্লেখ থাকাও কাম্য।

৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠানের অবস্থান অর্থাৎ জেলা, থানা, পোস্ট অফিস, পোস্ট কোড নম্বর, গ্রাম, হোল্ডিং নং ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে। যে ভূমিতে প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান তার পরিমাণ, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, ওয়াকফসূত্রে বা ক্রয়সূত্রে প্রাপ্ত ইত্যাদির উল্লেখ থাকতে হবে।

৪. চতুর্থ অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের বিবরণ পেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নমুনা গঠনতন্ত্রের ৪নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যসমূহ উল্লেখ করত প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকলে তাও উল্লেখ করা যাবে। তবে সংযোজিত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অবশ্যই নমুনা গঠনতন্ত্রে বিবৃত লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক কিংবা তার বিপরীত হতে পারবে না।

৫. পঞ্চম অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠানের চিন্তাধারা ও আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নমুনা গঠনতন্ত্রের ৫ নং অনুচ্ছেদে বিবৃত আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গিটি হুবহু উল্লেখ করতে হবে।

৬. ষষ্ঠ অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ব্যবস্থা, প্রশাসনিক অবকাঠামো এবং তার গঠনপদ্ধতির উল্লেখ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে নমুনা গঠনতন্ত্রের ৬ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত দু’টি মজলিসের মধ্যে মজলিসে শূরা অবশ্যই থাকতে হবে এবং মজলিসে আমেলা প্রয়োজন সাপেক্ষে থাকতে পারে।

৭. সপ্তম অনুচ্ছেদে মজলিসে শূরার গঠন পদ্ধতির কথা উল্লেখ করতে হবে। নমুনা গঠনতন্ত্রের ৭ নং

অনুচ্ছেদে বর্ণিত শূরার গঠন পদ্ধতির মৌলিক বিষয়গুলো বহাল রেখে স্থানীয় প্রয়োজনে আনুষঙ্গিক সামান্য রদবদল করা যাবে, যেমন সদস্য সংখ্যা কমানো-বাড়ানো যাবে। তবে শূরার দুই তৃতীয়াংশ সদস্য অবশ্যই আলেম হতে হবে।

৮. অষ্টম অনুচ্ছেদে মজলিসে শূরার দায়িত্ব ও ক্ষমতার বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। নমুনা গঠনতন্ত্রের ৮ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত দায়িত্ব ও অধিকারগুলোর মৌলিকতা রক্ষা করে প্রয়োজনে কোনো ধারায় সামান্য পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিংবা প্রতিষ্ঠান ছোট হলে সকল ধারা উল্লেখ করার প্রয়োজন নাও হতে পারে।

৯. নবম অনুচ্ছেদে শূরার অধিবেশন সংখ্যা, কোরাম, নোটিশ ইত্যাদি বিষয়ের বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।

১০. দশম অনুচ্ছেদে মজলিসে আমেলার গঠন পদ্ধতি ও কাঠামোর বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। মজলিসে আমেলা অবশ্যই শূরাকর্তৃক মনোনীত হবে এবং মুহতামিম পদাধিকার বলে তার সম্পাদক হবেন। মজলিসে আমেলার মেয়াদ কাল ৩ বছর হবে, প্রয়োজনে কম-বেশি করা যাবে।

১১. একাদশ অনুচ্ছেদে মজলিসে আমেলার দায়িত্ব, ক্ষমতা ও অধিকারের কথা উল্লেখ করতে হবে। নমুনা গঠনতন্ত্রের ১১ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত দায়িত্ব ও অধিকারসমূহের সাথে প্রয়োজনে আরও ধারা সংযোজন করা যেতে পারে।

১২. দ্বাদশ অনুচ্ছেদে মজলিসে আমেলার পদধারীদের যোগ্যতা, দায়িত্ব ও অধিকারের বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। এজন্য নমুনা গঠনতন্ত্রের ১২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত প্রত্যেক পদধারীর যোগ্যতা, দায়িত্ব ও অধিকারের বিবরণে বর্ণিত মৌলিক ধারাগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। মাদরাসার মুহতামিম সম্পাদক থাকবেন। অতএব সম্পাদক হিসেবে মুহতামিম নমুনা গঠনতন্ত্রে আলোচিত সম্পাদকের দায়িত্ব ও অধিকার সংরক্ষণ করবেন।

১৩. ত্রয়োদশ অনুচ্ছেদে মজলিসে আমেলার অধিবেশন সংখ্যা, কোরাম, নোটিশ ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করতে হবে।

১৪. চতুর্দশ অনুচ্ছেদে মুহতামিমের যোগ্যতা, দায়িত্ব ও অধিকারের বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। নমুনা গঠনতন্ত্রের ১৪ নং অনুচ্ছেদের মৌলিক ধারাসমূহ রক্ষা করা এ ক্ষেত্রে অপরিহার্য হবে।

১৫. পঞ্চদশ অনুচ্ছেদে মাদরাসার অভ্যন্তরীণ বিভাগসমূহের বিবরণ উল্লেখ করতে হবে, তাতে প্রত্যেক বিভাগের দায়িত্ব ও অধিকারের বিবরণও উল্লেখ করতে হবে। নমুনা গঠনতন্ত্রের ১৫ নং অনুচ্ছেদ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা নেওয়া যাবে। এ সকল বিভাগ পরিচালনার জন্য অভ্যন্তরীণ পরিচালনাবিধি প্রণয়ন করে নেওয়া বাঞ্ছনীয়। মজলিসে আমেলার মঞ্জুরি ও শূরার অনুমোদন সাপেক্ষে ঐ সব বিধি গঠনতন্ত্রের পরিশিষ্টের মর্যাদা লাভ করবে।

১৬. ষষ্ঠদশ অনুচ্ছেদে মাদরাসার ফান্ডসমূহের বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। কোন ফান্ডের আয়ের উৎস কী হবে এবং ব্যয়ের খাত কী হবে তাও উল্লেখ করতে হবে। ফান্ড সংরক্ষণ পদ্ধতি ও ব্যাংক একাউন্ট কার কার স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে, এই অনুচ্ছেদে তাও উল্লেখ করা অপরিহার্য হবে।

১৭. সপ্তদশ অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবর্ষের সূচনা ও শেষ এবং সর্বমোট ছুটির দিনের সংখ্যা উল্লেখ করা যেতে পারে।

১৮. অষ্টাদশ অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা কয়টি, কখন কখন হবে তার বিবরণ উল্লেখ করতে হবে।

১৯. ঊনবিংশ অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদেরকে যেসব নিয়ম মেনে চলতে হবে; কর্তৃপক্ষের কার সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করতে হবে, এতদসংক্রান্ত একটি নীতিমালা থাকতে হবে, যা মজলিসে শূরা কর্তৃক অনুমোদিত হবে। যাকে ‘চাকুরি বিধি’ ও ‘আচরণ বিধি’ বলা হবে। নমুনা গঠনতন্ত্রে পরিশিষ্ট নং ১ এর ‘চাকুরী বিধি’ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা গ্রহণ করা যাবে।

২০. বিংশ অনুচ্ছেদে উক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ছুটির সুযোগ-সুবিধা ও নিয়মাবলি সংক্রান্ত বিধি-বিধান গঠনতন্ত্রের একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসাবে পরিশিষ্টে সংযোজন করতে হবে। নমুনা

গঠনতন্ত্রের পরিশিষ্ট নং ২ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা গ্রহণ করা যেতে পারে।

২১ . একবিংশ অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার একটি অনুমোদিত স্কেল থাকতে হবে। স্কেল প্রণয়নের ক্ষেত্রে সুনির্ধারিত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। প্রণীত স্কেল ও

তার নীতিমালা গঠনতন্ত্রের একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসাবে পরিশিষ্টে সংযোজন করতে হবে। বেতন স্কেলের নীতিমালার জন্য নমুনা গঠনতন্ত্রের পরিশিষ্ট নং ৩ দ্রষ্টব্য।

২২. দ্বাবিংশ অনুচ্ছেদে এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষা সিলেবাসের ক্ষেত্রে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ কর্তৃক ঘোষিত সিলেবাস অনুসরণ করবে-একটি স্বতন্ত্র অনুচ্ছেদে একথার উল্লেখ থাকতে হবে।

২৩. ত্রয়োবিংশ অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রয়োজন হলে তা কীভাবে করা হবে গঠনতন্ত্রে তার সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে।

২৪. চতুর্বিংশ অনুচ্ছেদে প্রতিষ্ঠান বিলুপ্তির প্রশ্নে তার সম্পদ কী করা হবে তার বিবরণ গঠনতন্ত্রে বর্ণিত থাকতে হবে।

২৫. পঞ্চবিংশ অনুচ্ছেদে বেফাকুল মাদারিসের ইলহাক বাতিলযোগ্য হওয়া সাব্যস্তকরণ সংক্রান্ত বিধিমালা আলোচনা করা হবে।

এই সকল দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে গঠনতন্ত্র তৈরি করলে তা কীরূপ হবে তা অনুধাবনের জন্য একটি নমুনা গঠনতন্ত্রের কপি যুক্ত করে দেওয়া হলো।

আশা করি এই নমুনা কপি অনুসরণ করে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তার গঠনতন্ত্র তৈরি/নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে নেবে। উল্লেখ্য যে, গঠনতন্ত্রের ক্ষেত্রে এই ধারা অনুসরণ ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানকে মঞ্জুরি প্রদান করা হবে না।

 

 

গঠনতন্ত্রের নমুনা

অনুচ্ছেদ-১

প্রতিষ্ঠানের সূচনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:

(এই অনুচ্ছেদে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান তার সূচনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করবে যা অনূর্ধ্ব দুই পৃষ্ঠার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকবে।)

অনুচ্ছেদ-২

নামকরণ: প্রতিষ্ঠানের নাম……………………………………………………………………………..

সংক্ষেপে………………………………………..… ও বলা যাবে।

অনুচ্ছেদ-৩

অবস্থান: প্রতিষ্ঠানটি……..…………. জেলার………….. নং খতিয়ানের……………………. থানাধীন বা উপজেলার ………………দাগভুক্ত/হোল্ডিং …………….. শতাংশ ………………………..এর নিকট থেকে ওয়াক্তসূত্রে/ক্রয়সূত্রে প্রাপ্ত মোট গ্রামে/মহল্লায় জনাব………………………… জমির উপর বিদ্যমান। ভাড়া বাড়ি হলে লিখতে হবে…………………নং ভাড়া বাড়িতে বিদ্যমান।

অনুচ্ছেদ-৪

প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

১. ইলমে ওহী ও উলূমে নবুওয়াতের বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞানচর্চার লক্ষ্যে কুরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিক্স, আকাইদ, কালাম ও তাসাওউফ-এর শিক্ষাদান এবং এ সকল বিষয়ের জন্য সহায়ক বিষয়গুলো যথা- উসূলে তাফসীর, উসূলে হাদীস, উসূলে ফিক্স, আরবী সাহিত্য, ইলমে নাহব, ইলমে ছরফ, ইলমে বালাগাত, ইলমে আরুজসহ হিকমাত (সাধারণ বিজ্ঞান), ফালসাফা (দর্শন), তর্কশাস্ত্র, সমাজ বিজ্ঞান, বাংলা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের শিক্ষা দান।

২. শিক্ষার্থীরা যাতে জ্ঞান আহরণের সাথে সাথে পূর্ণাঙ্গভাবে সুন্নাতের অনুসারী এবং আকাবির ও আসলাফের আদর্শ ও চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় তারবিয়াতের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ছাত্রদেরকে চরিত্রবান, আদর্শ, ভদ্র ও সমাজ সচেতন নাগরিকরূপে গড়ে তোলার বাস্তব প্রশিক্ষণ দান।

৩. শিক্ষার্থীরা যাতে সর্বক্ষেত্রে দীনের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করতে পারে, তাদেরকে ভাষা সাহিত্যে, লেখায়, বক্তৃতায়, দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে পারদর্শী করে গড়ে তোলা।

৪. ইসলামী আদর্শ, তাহযীব ও তামাদ্দুনের ব্যাপক প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহমুখী ও আল্লাহর দীনের অনুসারী করে গড়ে তোলার যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা, সমাজের সকল মানুষের ঈমান-আকিদা সংরক্ষণের যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং সকল প্রকার বাতিল মতবাদ সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করা।

 

৫. আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীনকে বুলন্দ করার নিমিত্ত সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নিকট দীনের দাওয়াত ও প্রয়োজনীয় দীনি জ্ঞান পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন কামিয়াবী অর্জন করা।

৬. ছাত্রদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যাহত না হয় এমন ধরনের অর্থকরী ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

(প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আরও কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকলে যদি তা উপর্যুক্ত বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়, তাহলে তাও এ স্থলে উল্লেখ করা যাবে।)

অনুচ্ছেদ-৫

প্রতিষ্ঠানের আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি:

১ . কওমী মাদরাসার সংজ্ঞা: ‘কওমী মাদরাসা’ অর্থ আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আত ও দারুল উলূম দেওবন্দের আদর্শ, মূলনীতি ও মত-পথের অনুসরণে মুসলিম জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ইলমে ওহীর শিক্ষাকেন্দ্র:

২. ‘কওমী মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা’:

(ক) ঈমান, তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ (একমাত্র আল্লাহর ওপর নিরঙ্কুশ ভরসা) এবং সর্বাবস্থায় সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার রেজামন্দি ও সন্তুষ্টি অর্জনকে জীবনের পরম ব্রত ও লক্ষ্য স্থির করে একমাত্র আল্লাহ তাআলার সত্তার সাথে ভয় ও আশার সম্পর্ক স্থাপন এবং তাতে

অবিচল থাকা;

(খ) মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী “আমি ও আমার সাহাবীগণ যে মত-পথের উপর প্রতিষ্ঠিত” এর আলোকে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-এর মতাদর্শ অনুসরণে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের মা’সুম (নিষ্পাপ) হওয়ার বিশ্বাস এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের যথাযথ আজমত (মর্যাদা) ও তাঁদের ‘মিয়ারে হক’ (সত্যের মাপকাঠি) হওয়ার বিশ্বাস অন্তরে সুদৃঢ় করা ও তদনুসারে জীবন যাপন;

(গ) চার মাজহাবের প্রতি শ্রদ্ধা ও পরমত সহিষ্ণুতার সাথে হানাফী মাজহাব অনুসরণ;

(ঘ) সুলুক ও আধ্যাত্মিকতায় সুপরিচিত চার তরীকা (চিশতিয়া, সোহরাওয়ারদিয়া, নকশবন্দিয়া- মুজাদ্দিদিয়া ও কাদিরিয়া) সহ সকল হকপন্থি ধারার প্রতি সহনশীল ও উদার মনোভাব পোষণ:

(ঙ) উপমহাদেশের ইসলামী রেনেসাঁর অগ্রদূত হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.)- এর চিন্তাধারার অনুসারী ও অনুগামী হযরত কাসেম নানুতবী (রহ.), হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহ.) প্রমুখ আকাবিরে দেওবন্দের চিন্তা-চেতনার অনুসরণ এবং তা’লীম-তারবিয়াতসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি, আদর্শ ও কর্মপদ্ধতি অনুসরণ:

(চ) বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ কর্তৃক প্রণীত নেসাবে তালীম (পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি) শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, মাদরাসা পরিচালনা ইত্যাদিতে সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা।

কওমী মাদরাসা কখনও এমপিওভুক্ত হবে না।

অনুচ্ছেদ-৬

প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ব্যবস্থা: এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য তিনটি মজলিস থাকবে:

১. মজলিসে শূরা (সর্বোচ্চ পরিষদ)

২. মজলিসে আমেলা (নির্বাহী পরিষদ) 

৩. মজলিসে ইলমী (শিক্ষা পরিষদ)

অনুচ্ছেদ-৭

মজলিসে শূরা গঠন পদ্ধতি: মজলিসে শূরা হবে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দিকনির্দেশনা দানকারী এবং নীতি নির্ধারণী ক্ষমতার অধিকারী সর্বোচ্চ পরিষদ। এই মজলিসের সদস্য কমপক্ষে ১১ জন থেকে সর্বোচ্চ ৩১ জন পর্যন্ত থাকতে পারবে। সকল সদস্য অবশ্যই দারুল উলূম দেওবন্দের আদর্শের অনুসারী উলামায়ে কেরাম হতে হবে। তন্মধ্যে মুহতামিম ব্যতীত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রতিনিধি দুইজন থাকবেন। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ সদস্য দারুল উলূম দেওবন্দের অনুসারী, দীনদার ও আহলে খায়েরদের মধ্য থেকে হতে পারবে। এই মজলিসের কোনো মেয়াদকাল থাকবে না। অর্থাৎ এটি একটি স্থায়ী কমিটি হিসাবে পরিগণিত হবে।

কোনো কারণে মজলিসে শূরার কোনো পদ শূন্য হয়ে পড়লে, মজলিসে শূরার অপর সদস্যগণ নিজেদের মাঝে পরামর্শক্রমে অধিকাংশ সদস্যের সমর্থনে পূর্বোক্ত বৈশিষ্ট্যধারী কোনো ব্যক্তিকে সদস্য হিসাবে মনোনীত করে নেবেন।

শূরার কাঠামো: “মজলিসে শূরার স্থায়ী সভাপতি থাকা অপরিহার্য। একজন বিশিষ্ট আলেমকে স্থায়ী সভাপতি করা হবে। নির্বাচিত সভাপতি সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তবে যদি স্থায়ী সভাপতি না থাকেন কিংবা কোনো কারণে সভাপতি উপস্থিত না থাকেন, তাহলে উপস্থিত সদস্যদের কোনো একজন আলেমকে সভার সভাপতি নির্বাচিত করে সভার কাজ পরিচালনা করতে হবে।” মুহতামিম পদাধিকারবলে মজলিসে শূরা ও আমেলার সম্পাদক থাকবেন। অবশিষ্ট সকলেই সদস্য বলে গণ্য হবেন।

 

অনুচ্ছেদ-৮

মজলিসে শূরার দায়িত্ব ও ক্ষমতা

১. প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ব্যাপারে মজলিসে শূরা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী পরিষদ বলে গণ্য হবে।

২. বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসাবে বেফাকের নীতি-পদ্ধতি,

লক্ষ্য ও আদর্শের আলোকে প্রতিষ্ঠানের জন্য দস্তুর বা গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও সংশোধন, গঠনতন্ত্রের ব্যাখ্যা প্রদান করা। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য বিভাগীয় নিয়ম-কানুন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা।

৩. গঠনতন্ত্রে বর্ণিত আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের আলোকে প্রতিষ্ঠানকে সুচারুরূপে পরিচালনা করা এবং প্রতিষ্ঠানের কল্যাণ, উন্নতি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করা।

৪. প্রয়োজনীয় বিভাগ খোলার অনুমোদন দান, প্রয়োজনীয় সাব-কমিটি গঠন করা এবং তাদের দায়- দায়িত্ব ও মেয়াদ কাল নির্ধারণ করা।

৫. মজলিসে আমেলা গঠন করা।

 

৬. মুহতামিম এর পদ শূন্য হলে নতুন মুহতামিম নিয়োগদান, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর নীতি ও আদর্শের আলোকে মজলিসে আমেলায় প্রস্তাবিত শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ, অপসারণ, পদোন্নতি, পদাবনতি, স্কেল নির্ধারণ, পদমর্যাদা ও পদধারীদের দায়িত্ব ও অধিকারসমূহ নির্ধারণ, প্রয়োজনে নতুন পদ সৃষ্টি এবং সৃষ্ট পদ বিলোপ সাধনের অনুমোদন দান।

৭. মজলিসে আমেলার সুপারিশসমূহ পর্যালোচনা করত মঞ্জুর কিংবা নামঞ্জুর করা।

৮. মজলিসে আমেলার সিদ্ধান্তসমূহ পর্যালোচনা ও সংশোধনীর পর অনুমোদন দান।

৯. মুহতামিম আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠানের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের সংরক্ষণ করবেন। উল্লেখ্য যে, মাদরাসার যাবতীয় সম্পত্তি শরীয়তের বিধান মতে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে গণ্য হয়।

১০. বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব ও বাজেটের অনুমোদন দান।

১১. অভ্যন্তরীণ বিভাগসমূহের পরিচালনার জন্য আমেলা কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার অনুমোদন দান। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

১২. আল্লাহ না করুন যদি কোনো সময় প্রতিষ্ঠান জটিলতার সম্মুখীন হয় কিংবা কোনো কারণে তাতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে তা নিরসনের জন্য ত্বরিৎ উদ্যোগ গ্রহণ করা। মজলিসে শূরা সমস্যা নিরসনে ব্যর্থ হলে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর শরণাপন্ন হওয়া।

 

অনুচ্ছেদ-৯

শূরার অধিবেশন সংখ্যা, নোটিশ ও কোরাম: বছরে একবার অবশ্যই শূরার অধিবেশন আহ্বান করতে

হবে। প্রয়োজনে একাধিকবার সাধারণ অধিবেশন বা জরুরি অধিবেশন আহ্বান করা যাবে। সাধারণ অধিবেশনের নোটিশ ১০ দিন পূর্বে এবং জরুরি অধিবেশনের নোটিশ ৩ দিন পূর্বে দিতে হবে। শূরার অধিবেশনের তারিখ ও আলোচ্য বিষয় মজলিসে আমেলা কর্তৃক নির্ধারিত হবে। মোট সদস্যের এক তৃতীয়াংশের উপস্থিতি দ্বারা কোরাম পূর্ণ হবে।

 

অনুচ্ছেদ-১০

মজলিসে আমেলার গঠন পদ্ধতি এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য:

মজলিসে আমেলা হবে প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহের দায়িত্বশীল মজলিস। মজলিসে শূরার সিদ্ধান্ত ও

দিকনির্দেশনার আলোকে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে আঞ্জাম দান এই মজলিসের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। তবে এই আমেলা যাবতীয় কাজকর্মের জন্য মজলিসে শূরার নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য

থাকবে। এই আমেলার সদস্যগণ শূরা কর্তৃক মনোনীত হবেন। কমপক্ষে ৭ থেকে অনূর্ধ্ব ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে আমেলা গঠন করা যাবে। তন্মধ্যে অধিকাংশ সদস্য আলেম হতে হবে। মজলিসে

আমেলার অবকাঠামো হবে নিম্নরূপ:

১. সভাপতি……………………………………………………….১ জন

২. সম্পাদক (মুহতামিম) ………………………………………১ জন

৩. কোষাধ্যক্ষ ………………………………..১ জন

৪. শিক্ষক প্রতিনিধি………………………২ জন

৫. অবশিষ্ট সকলে সাধারণ সদস্য হিসাবে থাকবেন।

উল্লেখ্য যে, মাদরাসার মুহতামিম পদাধিকার বলে মজলিসে আমেলার সম্পাদক থাকবেন। মুহতামিম শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে মজলিসে আমেলায় প্রতিনিধিত্বের জন্য দুইজন শিক্ষক প্রতিনিধি মনোনীত করবেন।

অনুচ্ছেদ-১১

মজলিসে আমেলার দায়িত্ব, ক্ষমতা ও অধিকার:

১. প্রতিষ্ঠানের আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকল্পে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও সুপারিশমালা প্রণয়ন করা

এবং অনুমোদনের জন্য তা মজলিসে শূরায় পেশ করা।

২ . মজলিসে শূরা কর্তৃক নির্দেশিত এবং অনুমোদিত কার্যাবলি ও পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন করা।

৩. মাদরাসার প্রয়োজনীয় গৃহাদি নির্মাণ, আসবাব সামগ্রীর ব্যবস্থা, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও

আবাসিক ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৪. বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে প্রদত্ত নির্দেশাবলি বাস্তবায়ন করা।

৫. আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা এবং বছরান্তে আমেলার সদস্যদের থেকে তিন সদস্যের একটি

অডিট টিম গঠন করে অভ্যন্তরীণ অডিট করানো। অতঃপর গ্রহণযোগ্য রেজিস্টার্ড চার্টার্ড একাউন্টেন্ট

দ্বারা চূড়ান্ত অডিট করিয়ে তার রিপোর্ট অনুমোদনের জন্য শূরায় পেশ করা।

৬. রসিদ বহি মুদ্রণের অনুমোদন দান।

৭. বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের বাজেট প্রণয়ন করে মজলিসে শূরায় পেশ করা। বিশেষ প্রয়োজনে বাজেট

বহির্ভূত ব্যয়ের জন্য মুহতামিমের প্রস্তাব লিখিত হওয়া সাপেক্ষে অনুমোদন দান করা।

৮. মজলিসে শূরার তারিখ ও আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করা।

৯. মাদরাসার ফান্ড গঠন এবং আয় বৃদ্ধির যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।

১০. প্রয়োজনে বিভিন্ন কাজ আঞ্জাম দানের জন্য সাব-কমিটি গঠন, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিভাগের পরিচালনা

বিধি প্রণয়ন করা এবং মঞ্জুরির জন্য শূরায় পেশ করা।

১১. প্রয়োজনে মজলিসে আমেলার অনুমোদনক্রমে প্রশাসনিক দক্ষতার অধিকারী এক বা একাধিক যোগ্য

শিক্ষককে নায়েবে মুহতামিম নিয়োগ করা যাবে। যিনি প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রশাসনিক কাজে মুহতামিমকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা প্রদান করবেন এবং মুহতামিম সাহেব কর্তৃক নির্দেশিত দায়- দায়িত্ব আঞ্জাম দেবেন।

অনুচ্ছেদ-১২

মজলিসে আমেলার পদধারীদের যোগ্যতা, দায়িত্ব ও অধিকার:

(১) সভাপতি: যোগ্যতা- যেহেতু সভাপতি প্রতিষ্ঠানের মূল পরিচালক হয়ে থাকেন এবং দীনি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, এর আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য যথার্থভাবে অনুধাবন করা একজন প্রজ্ঞাবান হক্কানী আলেম ছাড়া

সম্ভব নয়, অতএব শূরার সভাপতি পদাধিকার বলে আমেলার সভাপতি হওয়া বাঞ্ছনীয়। যদি কোনো

সভায় স্থায়ী কোনো সভাপতি না থাকেন, তবে উপস্থিত প্রাজ্ঞ কোনো আলেম সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।

 

সভাপতির দায়িত্ব ও অধিকার:

ক. প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, সার্বিক উন্নয়নের পন্থা উদ্ভাবন, মজলিসে আমেলার কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন রাখা এবং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দান এবং তাদের কর্মতৎপরতার উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখা সভাপতির অন্যতম দায়িত্ব বলে গণ্য হবে।

খ. মজলিসে আমেলার সভায় সভাপতিত্ব করা।

গ. আলোচ্য বিষয়ের উপর সদস্যদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ দেওয়া। কেউ বিধি বহির্ভূত কিংবা এজেন্ডা বহির্ভূত আলোচনা শুরু করলে তাকে সংযত করা, কোনো সদস্য অন্য কোনো সদস্যের প্রতি কটাক্ষ করতে চাইলে তাকে বিরত করা। পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিবেশন মুলতবি করা।

ঘ. কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মতানৈক্য দেখা দিলে সংখ্যাধিক্যের মতামত মাথায় রেখে নীতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মতানৈক্যের সময় উভয়দিকে রায়ের সংখ্যা সমান হলে সভাপতি যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।

ঙ. সম্পাদকের মাধ্যমে অধিবেশনের সিদ্ধান্তসমূহ যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করানোর ব্যবস্থা করা এবং পরবর্তী বৈঠকে তা পঠিত ও অনুমোদিত হওয়ার পর রেজুলেশন বহিতে স্বাক্ষর করা।

(২) সম্পাদক: মুহতামিম পদাধিকার বলে কমিটির সম্পাদক গণ্য হবেন। অতএব ১৪ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত মুহতামিমের যোগ্যতাই সম্পাদকের যোগ্যতা বলে গণ্য হবে।

 

সম্পাদকের দায়িত্ব ও অধিকার:

ক. মুহতামিম পদাধিকার বলে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনা, শৃংখলা বিধান এবং উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

খ. সভাপতির অনুমতিক্রমে আমেলার বৈঠক আহ্বান, এজেন্ডা নির্ধারণ, বৈঠকের কার্যবিবরণী তৈরি, রেজুলেশন বহিতে সিদ্ধান্তসমূহ যথাযথভাবে লিপিবদ্ধকরণ।

গ. প্রতিষ্ঠানের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, সকল ডকুমেন্টারি কাগজপত্র ও

রেজিস্টারসমূহ, দলিল দস্তাবেজসমূহ হেফাজত ও সংরক্ষণ করা।

ঘ. প্রতিষ্ঠানের সকল আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব যথানিয়মে সংরক্ষণ করা।

ড. আমেলার অপর সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ, আয়ের নতুন নতুন . মাস শেষে হিসাব রক্ষকের কাছ থেকে আয় ও চ

পন্থা উদ্ভাবন করা সম্পাদকের অন্যতম দায়িত্ব।

ব্যয়ের ব্যালেন্স শিট বুঝে নেওয়া এবং ক্যাশ বহিতে স্বাক্ষর করা এবং নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে তা পেশ করা। সপ্তাহে কমপক্ষে একবার হিসাবপত্রের রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পরীক্ষা করা এবং ব্যয়ের ভাউচারে স্বাক্ষর করা। বছরান্তে আয় ও

ব্যয়ের হিসাব মজলিসে আমেলায় পেশ করা।

ছ. শূরা কর্তৃক অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ী মজলিসে আমেলার মঞ্জুরিক্রমে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় ব্যয়

নির্বাহের দায়িত্ব সম্পাদকের ওপর ন্যস্ত থাকবে। আমেলার পূর্ব অনুমোদন ব্যতীত অনির্ধারিত কোনো খাতে প্রয়োজন হলে মজলিসে ইলমীর সাথে পরামর্শ করে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিজ দায়িত্বে ব্যয় করতে পারবেন। এর বেশি ব্যয় করতে হলে অবশ্যই মজলিসে আমেলার পূর্ব অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

জ. মুহতামিম কাউকে ঋণ দিতে পারবেন না। মজলিসে ইলমীর অবগতি সাপেক্ষে মাদরাসার প্রয়োজনে

ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন।

ঝ. প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীগণ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছে কি না-এর তদারকি করা। দায়িত্ব পালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে প্রথমে সতর্ক করা, প্রয়োজনে মজলিসে ইলমীর মাধ্যমে সমাধান করা।

ঞ. প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে কেউ জড়িত হলে অথবা আর্থিক, নৈতিক অপরাধে লিপ্ত হলে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা এবং মজলিসে আমেলার বৈঠক আহ্বান করে তাতে মঞ্জুরি গ্রহণ করা।

ট. শিক্ষক-কর্মচারীদের ছুটি মঞ্জুর করা।

ঠ. ছাত্রদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও অসুবিধাসমূহ দূরীকরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করা।

(৩) অর্থ সম্পাদক: যোগ্যতা- শরীয়তের পাবন্দ, দীনি শিক্ষার প্রতি অনুরাগী, নিষ্ঠাবান, আমানতদার, সদাচারী, হিসাব-নিকাশে পারদর্শী ও কর্মঠ ব্যক্তিই অর্থ সম্পাদক পদের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব ও অধিকার:

ক. প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা।

খ. যাবতীয় আয় পাকা রসিদ মূলে গ্রহণ করা এবং যাবতীয় ব্যয় পাকা ভাউচারের মাধ্যমে সম্পাদন করা।

গ. নির্বাহী পরিষদের অনুমোদিত খাতে মুহতামিমের মঞ্জুরি সাপেক্ষে অর্থ সরবরাহ করা এবং ব্যয়ের ভাউচারের অনুমোদন দান করা। উল্লেখ্য যে, অর্থ সম্পাদক অনুমোদন না করলে কোনো বিল বা ভাউচারের টাকা পরিশোধ করা হবে না।

ঘ. প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ফান্ডের অর্থ নির্বাহী পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংকে পৃথক পৃথক একাউন্টের মাধ্যমে জমা রাখা। দৈনিন্দিন খরচের জন্য সর্বোচ্চ ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা তিনি নিজ দায়িত্বে (ফান্ডে) রাখতে পারবেন।

ঙ. সভাপতি ও সম্পাদকের সাথে যৌথ স্বাক্ষরে ব্যাংকে একাউন্ট পরিচালনা করা। পাশ বই এবং স্বতন্ত্র

খাতায় ব্যাংকের লেনদেনের হিসাব ফান্ডওয়ারী সংরক্ষণ করা।

চ. প্রত্যেক ফান্ডের হিসাব পৃথক পৃথক ক্যাশ বই ও লেজার বইয়ের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা।

ছ. সকল আয়-ব্যয়ের মাসিক ব্যালেন্স শিট তৈরি করে তাতে সম্পাদকের স্বাক্ষর গ্রহণ করা। প্রতি মাসের

ব্যালেন্স শিট পরবর্তী নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে পেশ করা।

জ. নির্বাহী পরিষদ মনোনীত অভ্যন্তরীণ অডিট টিমের দ্বারা হিসাব অডিট করানোর পর বেফাক কর্তৃক অনুমোদিত রেজিস্টার্ড অডিট কোম্পানি দ্বারা হিসাব অডিট করানো এবং তার রিপোর্ট নির্বাহী পরিষদের নিকট পেশ করা।

ঝ. প্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে নির্বাহী পরিষদের অনুমোদন ব্যতীত কাউকে ঋণ দেওয়া যাবে না এবং কারো কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি ঋণ গ্রহণ করা যাবে না। তবে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণের জন্যও সম্পাদকের মৌখিক অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।

ঞ. বিধিবদ্ধ খরচের বেলায় সম্পাদকের পূর্ব অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। আকস্মিক প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা তিনি নিজ দায়িত্বে খরচ করতে পারবেন।

 

ট. হিসাব-নিকাশের কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনক্রমে এক বা একাধিক হিসাবরক্ষক নিয়োগ করে হিসাব বিভাগের কাজ আঞ্জাম দেওয়া যাবে।

অনুচ্ছেদ-১৩

মজলিসে আমেলার অধিবেশন সংখ্যা, নোটিশ ও কোরাম বছরে আমেলার কমপক্ষে চারটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে হবে। প্রয়োজনে আরও অধিক অধিবেশন ও জরুরি অধিবেশন আহ্বান করা যাবে। সাধারণ অধিবেশনের নোটিশ কমপক্ষে পাঁচ দিন পূর্বে এবং জরুরি অধিবেশনের নোটিশ কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা পূর্বে সদস্যগণের নিকট পৌঁছাতে হবে। নোটিশে অবশ্যই অধিবেশনের স্থান, সময়, তারিখ ও আলোচ্য বিষয়ের উল্লেখ থাকতে হবে। মোট সদস্যের এক-তৃতীয়াংশের উপস্থিতি দ্বারা কোরাম পূর্ণ হয়ে যাবে। কোরাম পূর্ণ না হওয়ার কারণে মুলতবি সভায় পুনঃঅনুষ্ঠানের জন্য কোরাম পূর্ণ হওয়ার শর্ত থাকবে না। তবে উক্ত অধিবেশনের নোটিশে ‘কোরাম পূর্ণ না হওয়ার কারণে মুলতবিকৃত সভা’ কথাটি উল্লেখ থাকতে হবে।

অনুচ্ছেদ-১৪

মুহতামিম হবেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক প্রধান। প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষা, তালীম ও তরবিয়তের পরিবেশ বজায় রাখা, ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ, তাদের কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তিনি মজলিসে আমেলার নিকট জবাবদিহি করবেন।

 

ক. মুহতামিমের যোগ্যতা:

(১) মুহতামিম, অনুচ্ছেদ ৫-এ বর্ণিত সকল ধারা-উপধারার বিষয়সমূহের অনুসারী হতে হবে।

(২) কোনো কওমী মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদীস উত্তীর্ণ। আরবী, বাংলা ও উর্দু ভাষায় দক্ষ, ইংরেজি প্রয়োজনীয় পর্যায় পর্যন্ত জানা থাকা কাম্য। ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অধিকারী, প্রজ্ঞাবান, বিচক্ষণ ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের মুহতামিম হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। পূর্ব অভিজ্ঞতা বিশেষ যোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে। বয়স কমপক্ষে ২৮ বছর হওয়া বাঞ্ছনীয়। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ শ্রেণিতে পাঠদানের যোগ্যতাও তার থাকতে হবে এবং হিসাবে পারদর্শী হতে হবে।

 

খ. মুহতামিমের দায়িত্ব, ক্ষমতা ও অধিকার:

১. প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা এবং শিক্ষা-দীক্ষার অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা।

২. ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারীদেরকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করা এবং তাদের মাঝে নিয়মানুবর্তিতা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলার পরিবেশ গড়ে তোলা।

৩. শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও নৈতিক চরিত্রের উৎকর্ষ সাধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৪. শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ছাত্র ভর্তির ব্যবস্থা করা, তাদের এমদাদি খানার মঞ্জুরি দান।

৫. মজলিসে ইলমী গঠন এবং তার কার্যক্রম যথানিয়মে পরিচালনা করা।

৬. শিক্ষক ও কর্মচারীদের ছুটির আবেদন বিবেচনা ও মঞ্জুর করা।।

৭. ছাত্রদের ছুটির আবেদন মঞ্জুর কিংবা নামঞ্জুর করা।

৮. অভ্যন্তরীণ বিভাগসমূহের তদারকি করা এবং প্রয়োজনাদি পূরণ করা। শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না তার খোঁজখবর নেওয়া। কর্তব্য পালনে কারো অবহেলা হলে তাকে সতর্ক করা।

১০. কেউ অসদাচরণ করলে, শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় এমন কোনো কাজ করলে অথবা কারো অস্বাভাবিক কোনো অপরাধ প্রমাণিত হলে মজলিসে ইলমীর সাথে আলোচনা করে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার অধিকার মুহতামিমের থাকবে। তবে এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমেলা/শূরার (প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) বৈঠক আহ্বান করে বিস্তারিত রিপোর্টসহ তা বৈঠকে পেশ করতে। হবে।

১১. সঙ্গত কারণে কোনো ছাত্রকে বহিষ্কার করার প্রয়োজন হলে মজলিসে ইলমীকে অবহিত করে মুহতামিম তা করতে পারবেন।

১২. মাসে অন্তত একবার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় যথা- শিক্ষার মানোন্নয়ন, ছাত্রদের নৈতিক মানোন্নয়ন, অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তিতা, আচার-আচরণ ইত্যাদি বিষয়ের উন্নয়নের জন্য এবং নিজেদের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণ ও প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক মান উন্নয়নের বিষয়ে শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকের ব্যবস্থা করা, এ বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ রেজুলেশন বহিতে লিপিবদ্ধ করা এবং সেগুলো বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

১৩. প্রতি সপ্তাহে একবার শিক্ষকদের জলসার ব্যবস্থা করা। কমপক্ষে প্রতি মাসে দুইবার ছাত্র- শিক্ষকদের সম্মিলিত জলসার ব্যবস্থা করা, যাতে ছাত্রদের আখলাক গঠন, অধ্যয়নে মনোনিবেশ সৃষ্টি, নিষ্ঠার সাথে অধ্যয়ন, একাগ্রতা সৃষ্টি, প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি, দারুল ইকামার নিয়মনীতি মেনে চলার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, আমলের প্রতি উৎসাহ দান, সুন্নতের অনুসরণের অনুপ্রেরণা দান ও আদর্শ মানুষ রূপে গড়ে ওঠার জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় হেদায়েত দান করে আসাতিযায়ে কেরাম নসীহত পেশ করবেন। সম্ভব হলে কোনো বুজুর্গ ব্যক্তিকে দাওয়াত করে এনে তাঁর মাধ্যমে ছাত্রদের নসীহত করানো।

১৪. বছরে কমপক্ষে একবার শিক্ষক, কর্মচারী ও মজলিসে আমেলার সদস্যগণের যৌথ অধিবেশনের ব্যবস্থা করা এবং পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য করণীয়সমূহ উদ্ভাবন করা।

অনুচ্ছেদ-১৫

মাদরাসার অভ্যন্তরীণ বিভাগসমূহ:

মাদরাসার অভ্যন্তরীণ কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য নিম্ন বর্ণিত বিভাগসমূহ থাকতে পারে-

১. ইহতিমাম বিভাগ

৬. ইফতা ও গবেষণা বিভাগ

২. তালীম-তরবিয়ত বিভাগ

৭. দাওয়াত ও ইরশাদ বিভাগ

৩. দারুল ইকামাহ বিভাগ

৮. তাসনীফ ও তাকরীর বিভাগ

৪. মজলিসে ইলমী

৯. মাতবাখ বিভাগ

৫. কুতুবখানা বিভাগ

১০. শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিভাগ

 

বেফাকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

১।  (ক) বাংলাদেশের প্রচলিত কওমী মাদরাসা সমূহকে একটি ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করা ।
(খ) দ্বীন ইসলামের হিফাযত করা।
(গ) তা’লীম তারবিয়াত, দাওয়াত ও তাবলীগ এবং এলায়ে কালিমাতুল্লাহর নিমিত্ত পারস্পরিক সাহায্য সহানুভূতির দ্বার সম্প্রসারণ করা।
২।  কওমী মাদরাসাসমূহকে জনগণের নিকট তাদের একনিষ্ঠ ধর্মীয় খিদমতগার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত করানো ও তাদের প্রিয় করে তোলা ।  দ্বীনী শিক্ষা লাভের প্রতি দেশবাসীকে উৎসাহিত করে তোলা।
৩।  কওমী মাদরাসাসমূহকে বর্তমান যুগের সর্ব প্রকার ফেৎনা-ফাসাদ ও ইসলাম বিরোধী শক্তিসমূহের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করা।
৪।  কওমী মাদরাসাসমূহের তা’লীম ও তারবিয়াতের মান এবং নেছাবে তা’লীম ও তরীকায়ে তা’লীমের মান উন্নত করা ।
৫।  যোগ্য মুদাররিস সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দানের এবং উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা।  প্রয়োজনে বিদেশে প্রেরণের ব্যবস্থা করা।
৬।  মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করা।
৭।  কওমী মাদরাসায় শিক্ষাপ্রাপ্ত উলামায়ে কিরামকে সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৮।  দ্বীনী আরবী শিক্ষার ক্ষেত্রে কওমী মাদরাসাসমূহের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি সকল মহলের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করা।
৯।  কওমী মাদরাসাসমূহের অর্থনৈতিক মানোন্নয়নের পন্থা উদ্ভাবন ও সম্ভাব্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১০।  কওমী মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়নকল্পে বেফাকের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন স্তরের কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা।
১১।  মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নকল্পে আরবী ভাষা এবং মাতৃভাষা বাংলার প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করা এবং এ জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।